29-08-2021, 08:38 PM
৬ দিন পর করন আর জাহা গুড্ডি মুনিয়া কে নিয়ে এল। বছর ১৯ বয়েস কিন্তু ঠিক মতো সুষম খাবার না পেয়ে সৌন্দর্যর অভাব চেহারায়। করন জাহাকে বুঝিয়ে দিল “ দ্যাখ , মেয়ে দুটো লম্বা, সাধারন বাঙ্গালির তুলনায়। গুড্ডির চোখ মুখ ভালো বললে কম বলা হয়। মুনিয়া ও সুন্দরী। তুই যেতে দে ৩ মাস, পাড়ার ছেলেরা তোর বাড়ির সামনে লাগাবে লম্বা লাইন”। জাহার মনে ছুয়ে গেল “তোর বাড়ির “ শুনে। আদি আর মুনমুন এল ৩ দিন বাদে। প্রথম দিনই জাহা দুইজনকে একতলার বড় ঘর, প্রায় ১৫০ স্কয়ার ফুট হবে, সেখানে দুটো তক্তপোষ এ সুন্দর বিছানা। মশারি গোটানো পায়ের দিকে । এমনকি কোল বালিশ অবধি আছে। সঙ্গে বাথরুম লাগোয়া দেখিয়ে
………এইটি তোদের রাত্রিবেলার ঘর। আর সারাদিন-রাত্রি তোরা যেখানে খুশি, মানে ওপর নিচ যেতে পারবি।গুড্ডি , মুনিয়া আমি আর কর্তা ওপরে থাকি , তবে আমরা বিবাহিত নই। এর মানে বুঝে নে। তোরা কর্তাকে বাবজি বলে ডাকবি বাবা নয়। অথবা কর্তাবাবা যেটা তোদের ইচ্ছা আর আমাকে মাসি……দুই অনাথ মেয়ে ঘাড় নাড়ান ছাড়া কি করতে পারে?
……।।মেয়েরা শোন, তোরা যাতে নিজেদের পায়ে দাড়াতে পারিস, আমি সেই ব্যাবস্থা করব। তা হোল ঘরে বসে রান্না আর ঘর মোছা ছাড়াও ব্যায়ম করতে হবে। তোদের ক্লাবে ভর্তি করে দেব। সেখানে তোদের শেখাবে, বক্সিং, ক্যারাটে এই সব। বছর খানেক শিখলে তৈরা কোথাও সিকুরিটির কাজ পেয়ে যাবি অথবা কোন ওই ধরনের অফিসে ঢুকতে পারবি। সকালে উঠে দৌড় লাগাবি, জাহা সঙ্গে যাবে। আর কোন ছেলে পিছনে লাগলে বা তোদের যদি ভালো লাগে আমাকে জানাবি। আমি দেখব বকাটে, লাফাঙ্গা কিনা। মাথায় ঢুকেছে ? প্রতি মাসে হাত খরচা পাবি। লেখাপড়া করতে চাইলে কলেজে ভর্তি করে দেব। দুটো এক সাথেও করতে পারবি। ক্যারাটে, বক্সিং আর কলেজ
……হ্যাঁ বাবজি……২ দিন পর থেকে শুরু হোল দুই কন্যার ব্যায়ম আর ক্যারাটে, সকালে দৌড়। জাহা সঙ্গে যায়, তবে ৬-৭ মিনিটের বেশি দৌড়াতে পারেনা। আশ্চর্য দুই মেয়ে ই কলেজে ভর্তি হয়েছে আর মন দিয়ে কলেজ যায়।
আদি আর মুনমুন দুই মেয়ের দিকে চেয়ে
……কর্তা একজন আমাদের সাথে?
………কেটে পড়। ওরা আমার মেয়ে। আচ্ছা আদি তোমার মেয়ের কোন বিশেষত্ব আছে চেহারায়, এই মানে কোন জন্ম দাগ, বা আঁচিল এই রকম কিছু?
……মিষ্টির বাঁ দিকের পাছায় একটা বেশ বড় কালো ছোপ আছে। এ বাদে সেরকম কিছু মনে পড়ছে না
………ঠিক আছে, এটাও কাজে লাগবে। ……দুজনের অনাথ আশ্রম থেকে বাবা বা পরিবার বলে যে নাম বা ঠিকানা আছে তা একেবারে বাজে। একজনের নাম অনিল কাপুর আরেকজনের বাবা অমিতাভ বচ্চন। করন শুনে একটু গম্ভীর হয়ে
………আদি আমার মনে হয় ওদের বাবা বল বা গার্জেন তারা বোম্বে তে থাকে। তাই ওইরকম নাম। এই বাংলায় কেউ ফলস নাম দিলে কি দেবে? কোন ক্রিকেটার বা ফুটবলের কোন নাম করা প্লেয়ার এর নাম অথবা এখানকার কোন আর্টিস্ট এর নাম, দেখা যাক রফিক মিয়াঁ কি খবর আনে।
শীতকাল এসে পড়ছে। কিন্তু বাচ্চু এইবার আসতে পারবে না ওর কলেজের ১২ ক্লাসের পরিক্ষা। পাশ করলে মিলিটারি অফিসারের ট্রেনিং এর জন্য মিলিটারি একাডেমী তে যাবে। করন সেই জন্য ঠিক করলো সবাই মিলে বাচ্চুর কাছে যাবে, একদিন হোটেলে থাকবে বাচ্চু ও থাকবে ওদের সাথে। ৬ জন মিলে এক বিরাট ভাড়া গাড়ি করে বাচ্চুর কলেজে হাজির। খুশীতে ফেটে পড়ছে বাচ্চু। জাহা দেখছে আর ভাবছে “এ আমার বাচ্চু? রফিকের মার খেয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম একে জড়িয়ে? ”। ৫ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। সুন্দর স্বাস্থ্য। মাকে ধরে কোলে তুলে নেচে নিল একটু। বন্ধু কে ধরে আর ছাড়ে না। গুড্ডি আর মুনিয়া কে দেখেই পিছনে লেগেছে। পুরো ২৪ ঘণ্টা কোথা দিয়ে কেটে গেল কেউ জানে না।
………বন্ধু আমি যাব তোমাদের সাথে ২ দিনের জন্য। মা , ষাব……।আব্দার বাচ্চুর।
………না পরীক্ষা দিয়ে আসবি। আমি আসব তোকে নিয়ে যেতে
……মা দু দিন তো, প্লিস
……না…। গম্ভীর জাহা
………জাহা চলুক না দু দিনের জন্য
………না………করন কথা বাড়াল না। জানে জাহা না বললে হ্যাঁ করান যাবে না। আদি আর মুনমুন খুব খুশি কলকাতা থেকে বেরতে পেরে। গাড়ি তে জাহা জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে, ধ্রুত চলে যাওয়া গাছ, লাম্প পোস্ট, ক্ষেত । সে দেখছে এক ১২ বছরের মেয়েকে তার নিজের কাকা ;., করছে সবাই জানার পর সেই কাকা মেয়েটার মাথা চিপে ধরেছে পুকুরের জলে। মা প্রানপন চেষ্টা করছে ছাড়ানোর । ধাক্কা দিয়ে ফেলে আবার চেপে ধরছে। মেয়েটা দম নিতে পারছে না চি চি করছে। তার মা এক রাম দা এনে তার কাকার হাতে কোপ দিতে কাকা তাকে ছেড়ে মাকে মারতে লাগলো। আনুদি তখন গ্রামে, করনের বাড়ি থেকে ছুটিতে গেছে, কাকাকে পুলিশের ভয় দেখাতে তবে ছাড়ল। “ বাচ্চু, না, না। আর কয়েকটা মাস বাবা, আর মাত্র ২ মাস। তুই যখন অফিসার হবি আমি তোকে নিয়ে সেই জানোয়ারের সামনে দাড় করিয়ে বলব “ বাচ্চু এই জানোয়ার আমার ১২ বছর বয়েসে ;., করেছিল। আর একটু সময় দে বাবা”………গুড্ডি আর মুনিয়া লক্ষ করেছে মাসির চোখে জল। মুনিয়া গলা জরিয়ে বুকে মাথা রাখল।
এক বছর ৩ মাস হয়ে গেছে রফিক গেছে, করন ভাবছে কি করা যায়। জাহা বলছে ” আর কটা দিন দেখুন। ও ঘাগু মাল। কিছু খবর আনবেই” । জাহা সঠিক চিনেছে রফিক কে। একবছর ৪ মাস পার করে এল
……… কর্তা সেলাম
………আরে সাজাহান, কি খবর তোর? চিন্তায় মারা পরবো
………কর্তা খুব ভালো খবর আবার খুব খারাপ খবর। প্রথম থেকে শুনুন । যে জেলে ওই শম্ভু প্রসাদের সাথে আলাপ হয়, সেই জেলের এক পাহারাদার আমাদের গ্রামের এক জনের কি রকম কুটুম্ব। এই টুকু জানতাম। তাকে গিয়ে ধরলাম—ওস্তাদ ওই শম্ভু প্রসাদের একটা ফটো দাও।। সে শুনে মারে আর কি।‘’ শালা তুই আমার চাকরি খাবি” আমিও নাছোড়বান্দা। শেষে ২ হাজার টাকা দিলাম। তার কয়েকদিন পর শম্ভু প্রসাদের ঠিকানা দিয়ে বলল “ ওর ধারে পাশে ষাস না। এনকাউনটারের অর্ডার আছে । এই নে ঠিকানা আর ভাগ। সেই ঠিকানা বালিয়া জেলায়। সেখানে গিয়ে ওই ঠিকানা আর শম্ভু প্রসাদের নাম বলতেই , কি মার মারল আমায়। শেষে গাছে বেঁধে পিটানি “বল শম্ভু কোথায়, কি দরকার তোর, কোথায় আলাপ?” আমি যতো বলি আমি বাঙ্গালি আমার কথা শোন, তত মার। “বাংলার থেকে মেয়ে চুরি করেছিস” এই মার খেতে খেতে পকেট থেকে যা ছিল বার করলো। আপনি আমার বিষয়ে যে লিখে দিয়েছিলেন সেই কাগজ পেয়ে” বল এখানে কি লেখা আছে?” আবার মার। কপাল ভালো পাশের বাড়ির একটি মেয়ে কলেজে পরে। সে ইংরাজি জানে।তাকে দিল ওই কাগজ। সে অনেকক্ষণ ধরে পড়ে বলল যে আমার নাম কি , এই চিঠি কে দিয়েছে এই সব। তখন আবার বাঁধন খুলে গায়ে হাতে তেল মালিশ, জল, খাবার খুব যত্ন। যখন সব খুলে বললাম। তখন যে মারছিল সে বলল” শম্ভু প্রসাদ অনেক দিন মারা গেছে। আমার পাশের পাড়ায় থাকত, খুব কুস্তি লড়ত। আমাদের ভগ্নীপতি নকুল শর্মা ওর সাথে কুস্তি লড়ত।নকুল এই তল্লাটের নামি কুস্তীগির। নকুল ওই নাম ভাঁড়িয়ে সব কুকর্ম করে বেরায়”
……সে এখন কোথায়?......।
……জানি না। ওর একটা মেয়ে ছিল কলকাতায়, গরম জলে পড়ে মারা যায়। আমার বোনের অসাবধানতায় আর আমার বোনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে যেখান থেকে পারত ছোট মেয়ে চুরি করে আনত। তখন নকুল এক বাচ্চা চুরি করে এনে তাকে দেয়। তাই নিয়ে সে ভালো ছিল কিন্তু আমার বোন ধীরে ধীরে প্রায় পাগল হয়ে যায়। ওই অবস্থায় নকুল মেয়েটাকে নিয়ে এসেছিলো যদি আমরা মানুষ করি। খুব সুন্দর দেখতে। আমাদের সংসারে ওই মেয়ে মানায় না। আমরা জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারি যে ও চুরি করেছে তখন আমরা ৪ জন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে নকুলকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু থানার পথে এক গ্রামে নকুল আমাদের ৩ জনকে প্রচণ্ড মেরে মেয়েটাকে নিয়ে পালায়। তার পর থেকে কোন খবর নেই। শেষ খবর দিয়ে ছিল যে আমাদের বোন বোম্বে তে এক সরকারি হাস পাতালে মারা গেছে।“ আমি নকুলের শালার কাছ থেকে সেই সরকারি হাসপাতালের নাম নিয়ে গেলাম বোম্বে। থাকতাম রেল ষ্টেশন এ। আর ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করতে থাকি নকুলের ঠিকানার। কেউ কি দেয়, পয়সা খাইয়ে, আপনার চিঠি দেখিয়ে ঠিকানা নিয়ে গিয়ে দেখি সে উধাও। তবে এক সেলুনের, ওই রাস্তার সেলুন, এক জন লক্ষিকান্তপুরের, তাকে সব জানিয়ে বলে এসেছি খোঁজ রাখতে।
………এই এক বছর তোমার ওই ১০০০০ টাকায় কি করে্ চলল ………জাহার প্রশ্ন
………শিল্প শিল্প, জাহা। কদর তো দিলি না এ এক শিল্প……মুখ টিপে হাসে রফিক
………রফিক তুই পুলিশে চাকরি করলে উন্নতি করতিস। শাবাশ রফিক , শাবাশ। তুই এইবার বোম্বে যাবি ৬ মাসের জন্য। সাথে আমার ২ মেয়ে যাবে। বেশি রিস্ক নিবি না। মেয়েরা ক্যারাটে , নানচাকু বক্সিং শিখছে নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারে এই ১ বছরের ট্রেনইং এ। কিন্তু সাবধান ৩-৪ জন একসাথে এ্যাটাক করলে মুশকিল। এখনও সেই অবধি যায় নি। তবুও তোর সঙ্গে যাক । হাতে কলমে শিখুক। এখন বস, খা, বিশ্রাম নে আর কবে যাবি ঠিক কর।……… এদিকে দুই কন্যা লাফাচ্ছে বোম্বে যাবে মিষ্টির খোজে। করন জাহা কে বলল মেয়েদের ডেকে দিতে। জাহা নীচে ঘরে ঢুকতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল। দুই সখী পুরো নগ্ন। দরজার দিকে পিছন ফিরে গায়ে ক্রিম মাখছে। পাছা থাই চক চক করছে। একটু দাঁড়িয়ে গভীর ভাবে দেখল জাহা, তারপর ওপরে উঠে করন কে বলল কিছু।
বোম্বেতে রফিক যেখানে উঠলো তা আসলে রেলের জমির ওপর গড়ে ওঠা ঘুপচি। ২৫ টা ঘুপচির জন্য একটা পায়খানা আর রাস্তার ধারে চান। দুই মেয়ের বিশেষ হেল দোল নেই। সকালে উঠে ট্রাক স্যুট পড়ে দৌড়াতে যায়, সেই মাথে কিছু ব্যায়ম করে ঘরে ফিরে বিস্রাম নিয়ে রফিকের সাথে রেল ষ্টেশন এ অপেক্ষা করে। রফিকের সেই সেলুনের বন্ধু জানিয়েছে যে এক পাহারাদারের থেকে খবর সংগ্রহ করেছে যে রাইভাল গ্যাং এর সাথে বন্দুকের লড়াইতে নকুল আহত হয় ডান পায়ে।খুব অল্প খুড়িয়ে হাটে, একটু লক্ষ করলে বোঝা যায় ওর খোঁড়ান। মহারাষ্ট্র পুলিশ ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে নকুলের মাথার দাম। এ ছাড়া নানা রোগ ভোগে নকুল এখন আর ডাকাতি খুন এই সব করেনা। তার পুরানো সাগরেদরা তাকে মাসে মাসে মাসোহারা দেয় বদলে রফিক তাদের মাল নিজের কাছে রাখে বা বিক্রি করে পয়সা দেয়। রফিকের গ্যাং রেলের যাত্রী দের লুট করে বা সুযোগ বুঝে হাত সাফাই করে।
রফিক তাই সারাক্ষন সেই নির্দিষ্ট ষ্টেশনে খোঁজ লাগায় নকুলের। মেয়েদের নকুলের চেহারার একটা আবছা আন্দাজ দিয়েছে। সেই মতো গুড্ডি দাড়ায় ষ্টেশন এর গেটের মুখের একটু পিছনে আর মুনিয়া দাড়ায় ওভার ব্রিজের সিঁড়ির নীচে। রবিবার বাদে রোজ ৩ জনের এই রুটিন। এইরকম একদিনে সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরবে ৩ জন সিঁড়ির নীচে জড় হয়েছে। রফিক লক্ষ করেনি অনেকদিন ধরে একজন ওভারব্রিজের ওপর থেকে ৩ জনের ওপর নজর রাখছে। একটু ছোট মতো পাজামা, পাঞ্জাবি একটু চাপা। মাথার চুল উঠে গেছে প্রায়, দাড়ি আছে গোঁফ কামান এইরকম দেখতে একজন লোক। সেইদিন ভিড় একটু কম রফিক এসে দাঁড়িয়েছে একা। সেই লোক শিড়ি দিয়ে নেমে এল কয়েকধাপ ডান হাত পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকান। সেই অবস্থায় পকেটের রিভল্বার তাক করেছে রফিকের দিকে। ঠিক করেছে, রিভল্ভার বার না করে ওই অবস্থায় গুলি চালাবে রফিকের ওপর। নিখুত তাক করেছে , ট্রিগার টিপবে, সেই মুহূর্তে রফিকের সামনে এসে দাঁড়াল দুই মেয়ে। “ শুয়ার কি অউলাদ, আজ বাচ গায়ি, কিন্তু তুই মিষ্টি কে পাবি না, কিছুতেই না, মিষ্টি আমার মেয়ে”। হঠাৎ গুড্ডি ওপরে তাকিয়ে দেখে ফেলে রফিককে আঙুল তুলে দেখায়। রফিক ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে না দেখতে ফর্সা । তবুও আন্দাজে দূর থেকে নকুল ভেবে ধাওয়া করলো ৩ জন। মস্ত ভুল করে বসলো। সেই পালাতে পালাতে এমন গলিতে ঢুকে যে কোথায় উবে গেল ভালো ভাবে বুঝতে না বুঝতেই, সেই নির্জন গলিতে ৫-৬ জন দাঁড়িয়ে পড়ল ওদের ঘিরে। বোম্বে শহরের সব থেকে খতরনাক গলির ভিতর একটি গলি। সেই গ্যাং দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলে পিছন থেকে কোমর জড়িয়ে তুলেছে, রফিক রোগাটে হলে কি হবে শরীরে কশ আছে। পিছন থেকে একটা দেড় ফুটের মতো লাঠি বার করে ঝাপিয়ে পড়ল । মেয়েরা ঘুসির সাথে সাথে নানচাকু বার করে চালাচ্ছে। কিন্তু ওই গ্যাং এর মুল লক্ষ মেয়েরা। দুই মেয়েকে এক গাড়িতে ওঠাবেই। দুই মেয়ে প্রচণ্ড মারছে, গ্যাঙের ছেলে গুলো ও মারছে, শেষে যখন প্রায় তুলে ফেলেছে এমন সময় গুলির শব্দ আর ২ জন লুটিয়ে পড়ল ওই গ্যাঙের।বাকিরা হোকচকিয়ে গেলেও একজন রিভলবার বার করে তাক করেছে। আবারও গুলি সোজা তার কপালে। রফিক সঙ্গে সঙ্গে “ছোট” বলে হাক দিয়ে দৌড় লাগাল, মেয়েরাও সাথে সাথে রফিকের সাথে দৌড়।এ গলি ও গলি ঘুরে ঘুরে মিনিট ৫ পর বড় রাস্তায় এসেই রফিক এক অটো ধরে দুই মেয়েকে তুলে পালাল। হাপাচ্ছে ৩ জনেই। কিন্তু রফিক বুদ্ধিমান। তার ডেরার বেশ খানিক দূরে উল্টো দিকে অটো ছেড়ে বাকি পথ হেটে ফিরল। “ কাকা অটো ছাড়লে কেন?’। আরে গুড্ডি, পুলিশ আসবে বাড়ির সামনে নামলে আর ধরবে। তাই।“ । দুই মেয়ে ঘরে ফিরে রফিক কে নিয়ে পরল।নানা জায়গা ফেটে গেছে, কপালে বেশ লেগেছে, রফিক কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। মেয়েরা জোর করে ওষুধ লাগাল। করন কে ফোন করতে করন বলল “ এখুনি ফিরে আয় রফিক ২-৩ দিনের ভিতর”। একটু মন মরা হয়ে গেল রফিক। ৪ লক্ষ টাকা পেত ধরতে পারলে। এই খোঁজ রফিকের কাছে তার পৌরষের খোঁজ। রফিক দেখিয়ে দিতে চায় জাহাকে যে সে পুরুষ। সেও সাফল্ল্য পেতে পারে কঠিন কাজে। জাহার তাচ্ছিল্য ভাবে কথা, আঘাত করে রফিক কে। জাহাকে বাড়ি থেকে মেরে বের করে দিয়েছিলো, এখন অপরাধ বোধ হয় সেইজন্য। ছোট মনে হয় নিজেকে জাহার সামনে। রফিক জাহার সামনে এমন ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে চায়, যে জাহা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে রফিক এক পুরুষ। হাতছাড়া হতে চলেছে সেই সুযোগ। পরের দিন সকালে চা খেতে বেরিয়েছে ৩ জন। এক দল লোক যাচ্ছে গায়ে ছাই, মাটি এই সব মেখে। “ কুস্তি, হ্যাঁ, রফিক কুস্তি ভালবাসে”। সঙ্গে সঙ্গে করন কে ফোন “ কর্তা আর ১ মাস, ব্যাস। আমি একটা ফন্দী এঁটেছি, যদি কিছু না হয় তাহলে ফিরে যাব আর এক মাস”। পরের দিন থেকে কোথায় কোথায় শনিবার রবিবার কুস্তি হয় আসে পাশে খোঁজ নিয়ে প্রতিটি আসরে হাজির। একটু দূর থেকে। চলে আসবে মনস্থির করেছে, এই রকম সময় এক রবিবার এক কুস্তির আসরে রফিক লক্ষ করলো দর্শকের ভিতর একটি লোক বার বার বেরিয়ে এসে বলে দিচ্ছে এই প্যাচ মার ওই প্যাচ মার।। খুব উত্তেজিত লোকটি। একটু ভেবে লোকটি যেই আবার এগিয়ে এসেছে “ এই অতুল, অতুল”।একটু দূর থেকে অতুল আর নকুল শুনলে এক রকমই লাগবে। রফিক লক্ষ করলো লোকটি থমকে গেল। তারপর চারিদিকে চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে ভিড়ের পিছন দিকে দিয়ে বেরিয়ে হাটা লাগাল। রফিক অনুসরন করলো বাঁ দিক ঘেঁষে। অর্থাৎ লোকটির পিছন দিকে বাম পাশে থেকে। করন শিখিয়েছে যে কোন মানুষ পিছন ফিরে তাকালে ডান কাঁধ এর উপর দিয়ে তাকাবে। বাঁ দিক দিয়ে নয়। অনেক ঘুরে ঘুরে লোকটি বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তা, তারপর বড় গলি, ছোট গলি ঘুরে ঘুরে একটি বাড়ির সামনে এসে গা ঘেঁষে এক সিঁড়ি বেয়ে উঠলো। রফিক দাঁড়িয়ে রইল গলির মুখে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর লোকটি বেরিয়ে এক ওষুধের দোকানে ঢুকে কিছু কিনে , বেরিয়ে রুটি আর তরকারি নিয়ে আবার সেই বাড়িতে গেল। রফিক ওষুধের দোকানে গিয়ে এ কথা ও কথা বলতে বলতে জিজ্ঞাসা করলো “ একটু আগে নকুল এসেছিলো না, আরে কুস্তিগীর, কি নিল?”
……নকুল কে? ও তো শেখ রফিক, ইনসুলিন নেয় ……রফিক প্রায় লাফ দিয়ে উঠেছিল উত্তেজনায়, কোনক্রমে সামলে নিল নিজেকে। আরও কিছু সময় অপেক্ষার পর সন্তর্পণে ওই ঘরের কাছে এসে দেখল, যে দেড় তলার ওপরে একটা ছোট ঘর। সিঁড়ি খুব সরু। ঘরের পাশে ওই গলির ময়লা ফেলার জায়গা। স্তূপীকৃত হয়ে আছে কয়েকদিনের ময়লা, কি নেই সেখানে, মড়া বেড়াল , থেকে বাড়ির আনাজের অংশ সব। রফিক ওই ময়লার ওপরে উঠলো বেড়ালের মতো ধীর পায়ে। একটি ঘুলঘুলির থেকে কিছু বড় এক জানালা।ঘর থেকে রেডিওর গান শোনা যাচ্ছে জোরে। ফাক দিয়ে দেখল নকুল স্নান সেরে গামছা পরে একটা ধুপ জ্বালিয়ে দেয়ালের ক্যালেন্ডার সরিয়ে বজরংবলির ছবিকে পুজো করছে। ছোট একটা ঘণ্টা নাড়ছে। রেডিওর শব্দে বাইরে কেউ শুনতে পাচ্ছে না। রফিল লাফ দিয়ে নেমে নোংরা মেখে ছুটছে। এখুনি কর্তাকে জানাবে। এর ভিতর নামল বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি ফিরে প্রথমেই করন কে “ কর্তা এখুনি আসুন। এক্ষুনি। হ্যাঁ নকুল আমার মুঠোয়।“ ভাসা ভাসা শুনে করন জানাল আগামি কাল আসবে। এর পর দুই মেয়েকে সারাদিনের কথা জানিয়ে আগামি কালের প্লান আঁটল।
করন প্রথম প্লেনে জাহা, আদি মুনমুন কে নিয়ে বোম্বে পৌঁছেই প্রথমে নকুলের থাকার জায়গার থানায় গিয়ে খোঁজ করলো কোন প্রাইজ ঘোষণা হয়েছে নাকি। থানার ইন চার্জ দিনেশ শিন্দে
………আচ্ছা আপনি কি এসওজি( স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ) এ ছিলেন? অর্চনা জোশীর ছেলে কে উদ্ধার করেছিলেন? ……।।করন হেঁসে হ্যাঁ বলতে , ওফিসার উঠে দাঁড়িয়ে
………স্যার চিনতে পারলেন না? আমি দীনেশ। আপনি অর্চনার ছেলেকে উদ্ধার করে আমার কি উপকার যে করেছিলেন , তা ভুলবো না। পুলিশ মেডেল পেয়েছিলাম আর প্রমোশন। আপনাকে জানিয়েছিলাম স্যার
………ওহ, আপনি? এইবার মনে পড়েছে। আমাকে গোয়া যাবার নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন? মনে পড়েছে
………স্যার বলুন কি করতে পারি
………নকুল শর্মা। এই লোকটি সম্পর্কে জানতে চাই………চোখ কপালে তুলে
………ওরে বাবা, ওই রকম ধুরন্ধর কালপ্রিট আমি জীবনে দেখিনি। নকুল আর ওর বন্ধু একনাথ রাম খুন করেছে, বাচ্চা চুরি করে বিক্রি করেছে কিন্তু ধরতে পারিনি। একনাথ পুলিশের সাথে গুলির লড়াইতে মারা যায় কিন্তু নকুল ঠিক বেঁচে যায়
………যদি তাকে ধরিয়ে দি?
………সরকার ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে।আর অন্তত ১২ টা কেস সল্ভ হবে।
করন সিন্ধে কে নিয়ে আড়ালে কি সব কথা বলে “ রাত ৮ টার সময়। কিন্তু টপ সিক্রেট।
………একদম, এইবার প্রমোশন ইনস্পেক্টর, স্যার, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
জাহাকে নিয়ে করন এক হোটেলে উঠে রফিক আর দুই মেয়েকে ডেকে নিল। হোটেলের দুই ঘরে থাকবে সবাই। পুরুষ এক ঘরে মহিলারা অন্য ঘরে। রফিক সকাল থেকে নকুলের গলির সামনে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে , একজন আসবে তাই। দুপুরে এল রফিকের সেই সেলুনের বন্ধু। তাকে সব বুঝিয়ে রফিক একটু আলাদা থাকল দূর থেকে। রাত ৮ টা বাজলে রফিক দেখল নকুল বেরিয়ে ওই ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর রুটি নিয়ে ঘরে গেল। সিন্ধে তার লোকজন নিয়ে এলাকা ঘিরে নিয়েছে। রফিক দুই মেয়েকে নিয়ে নকুলের ঘরে গিয়ে” দরজা খোল রফিক, দরজা খোল”
……কে ?
……।।ওস্তাদ খুলেই দেখ ?
নকুল অল্প করে দরজা খুলতেই রফিক আর দুই মেয়ে ঝাপিয়ে পরে নকুলকে চিত করে দিল। কিন্তু শক্তি ধরে নকুল। ওই রকম অসুখে ভুগেও, এক লহমায় রফিক কে ছিটকে ফেলে গুলি চালাল। সঙ্গে সঙ্গে মুনিয়ার নান চাকু আছড়ে পড়ল তার হাতে। গুলি লক্ষ ভ্রষ্ট হয়ে রফিকের ডান হাতে ওপরে লাগতে রফিক “উঁহু” করে বসে পড়ল। দুই মেয়ে ততক্ষনে নকুলকে চিত করে ফেলে সমানে ঘুসি মারছে। নকুল শুধু আটকে যাচ্ছে, একবারও মেয়েদের ওপর হাত তোলেনি। । গুড্ডি লাফ দিয়ে নকুলের বুকে বসে মুখে পাঞ্চ করতে খপ করে ধরে নিল নকুল” ছাড় আমার হাত ছাড়” নকুল ততক্ষনে অন্য হাত ধরে নিয়েছে। গুড্ডি টের পাচ্ছে নকুলের শক্তি। দারোগা সিন্ধে, করন আদি সবাই ঘরের ভিতর। সিন্ধের হাতে রিভল্ভবার। গুড্ডি প্রানপন চেষ্টা করছে আর চেঁচাচ্ছে ” কেন তুমি মিষ্টি কে চুরি করেছ? কোথায় মিষ্টি
, কোথায় আছে মিষ্টি?
………।তু বেটি, তুহি মিষ্টি গুড্ডি, মেরি প্যারে গুড্ডি।……কানের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। মস্তিস্ক তার পর নির্দেশ পাঠায়। গুড্ডির মস্তিস্ক অবশ হয়ে গেছে। ঘরের সবাই থমকে, করন ছাড়া। গুড্ডি ঝুকে পরে দেখছে নকুলকে, দুই চোখ খুঁজে বেরাচ্ছে কাকে, তার বাপুজিকে? হথাত সমস্ত মহল্লাকে সচকিত করে বুকফাটা আর্তনাদ
………বাবুজি? বাবূজী………। কি বলছ বাবুজি, আমি ই গুড্ডি?......। ধীরে ধীরে উঠে বসেছে নকুল
…… হ্যাঁ মেরে বাচ্চে। তুই ই মিষ্টি। …।।গুড্ডির এলাকা ফাটানো তীব্র চিৎকার
………বাবুজি। তুমি আমার মাকে খুন করেছ, বাবুজি………। করন এসে গুড্ডি কে সরিয়ে নিল। আদি নকুলের রিভল্ভবার তুলে য়ে তাক করেছে, শিন্দে চট করে রিভল্ভবার কেড়ে
………না। আপনি ওকে কোন শাস্তি দিতে পারেন না।
………আমাকে মেরে কি করবে আদি। আমার একটা কিডনি নষ্ট। ৪০০ ওপর সুগার, অবস্থা ভালো না। তুমি আমাকে মারলে তোমার জেল হবে, তোমার মেয়েকে আবার হারাবে আদি।……… । করন সরিয়ে নিয়ে গেল আদিকে। গুড্ডি বাঁ মিষ্টি উথালি পাথালি কাঁদছে। আদি জীবনে প্রথম তার মিষ্টিকে জড়িয়ে রাখল।
………চাচা, আমি মুনিয়া। আমার বাপু কোথায়, তুমি জান?
……… কাছে আয় মা। আমি আর বাঁচব না।তাই সব বলে দেব। একনাথ তোর বাপু না রে বেটি। শুনুন দারোগা সাহেব। আমি বাচ্চা চুরি করতে চাইনি। আমার মেয়ে গরম জলে পরে মারা যায় আর আমার বৌ পাগল হয়ে গেল। ষার তার বাচ্চা চুরি করে আনত। সেইদিন আদির বাড়ির ওই ঘটনার পর আমি গুড্ডিকে নিয়ে আসি। শ্যামনগরের এক জুট মিলে কাজ নিয়ে থাকতাম। একদিন একনাথ রাম, মুনিয়ার বাপু, এই বোম্বের এক মহিলার মেয়েকে চুরি করে আমার বাসায় নিয়ে যায় কলকাতার কোন বড়োলোকের কাছে বেচবে। আমি হতে দিই নি। বাচ্চা দের নিয়ে ব্যাবসা করব না। মিষ্টির ১০ বছরের মাথায় আমার বৌ মারা যায়। তার আগেই সে পাগল হয়ে গেছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম যদি আমার শালারা গুড্ডি কে রাখে, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। টার আগে থেকেই আমরা থাকতাম বোম্বে তে। কিন্তু ওদের যখন বছর ১০ বয়েস তখন কলকাতার কাছে এক অনাথ আশ্রমে দি। বাঙ্গালির মেয়ে বাংলায় থাকুক এই ভেবে। আর আমিও তখন বাঙ্গালি হয়ে গেছি। ৪ বছর আগে রাম পুলিশের গুলিতে মারা গেলে আমি আর আশ্রমে যাই নি। মুনিয়াকে কি বলব এই ভেবে। আমি অনেক খুন করেছি, ডাকাতি করেছি কিন্তু বাচ্চা নিয়ে ব্যাবসা করিনি। গুড্ডি কে নিজের মেয়ে ভাবতাম। সত্যি বলছি। আদির মা আর বউকে খুন করেছি তার কারন গুড্ডিকে নেব বলে। আদি আমি কিন্তু গুড্ডি কে ভালবাসি বঙ্গাগলি তে দুই মেয়েকে সেলিমের দল তুলে নিয়ে যেত, হ্যাঁ আমি গুলি চালিয়েছিলাম আমার মেয়েদের বাঁচানোর জন্য।
……তুমি আমাকে বেসাহারা করে দিয়েছ বাবুজি, বেসাহারা।
………গুড্ডি একবার কাছে আসবি , একবার
……না। নকুল তোমার প্রতি গুড্ডির আর কোন মায়া নেই। তুমি ওর মা, ঠাকুমা কে খুন করেছ। ওর বাবার জীবন ছারখার হয়ে গেছে তোমার জন্য। মিষ্টি যাবে না।………করন কঠিন স্বরে জানাল
আদি মিষ্টি কে জরিয়ে চুপ করে রইল।
………কর্তা আমার ব্যাপার টা দেখুন। দারোগা সাহেব কে জিজ্ঞাসা করুন , আমি ওই ৪ লক্ষ টাকা পাব তো? এই দেখুন গুলি খেয়েছি?
………হ্যাঁ রফিক, তুমি পাবে আমি তোমারনাম ওপর তলায় জানাব, যাতে তুমি টাকা পাও। হ্যাঁ নকুল, এইবার তুই আমায় বল, এই মুনিয়ার মা কে কোথায় থাকে?
……ওর মায়ের নাম সাধনা, জুহুর সমুদ্রের কাছা কাছি কোথায় ওদের বাড়ি, এই টুকুই জানি।
সবাইকে নিয়ে থানায় নিয়ে এজাহার লিখে, রফিক কে হাসপাতালে পাঠিয়ে, সিন্ধে জুহু থানায় খবর পাঠাল বছর ১৬-১৭ আগে সাধনা বলে কোন মহিলার মেয়ে চুরির ডাইরি আছে কিনা।
সেই রাতে হোটেলের ঘুরে আদি মিষ্টি কে নিয়ে মুনমুন কে “ মুন, এই আমাদের মেয়ে। এই আমার মিষ্টি”। আবেগের রাত , সেই রাত। জাহা আগলে রেখে মিষ্টিকে
……কর্তা আর আমি জানতাম। ঘরে কাপড় ছাড়ার সময় পিছনে কেউ আছে কিনা তো দেখিস না, তাই আমি দেখতে পেয়েছিলাম তোর জন্ম দাগ, তোর পাছার বাঁ দিকে । কর্তা বলল ওকে বলার দরকার নেই। গুড্ডি আগুনের ওপর হাঁটছে, ঠিক পাশ করবে পরীক্ষা। কর্তা , পাশ করেছে? করন উঠে এসে
……আমার মেয়ে কখনও ফেল করতে পারে না
……বাবজি তুমি কার খোঁজ করতে পাঠিয়েছিলে আমায়
………নিজেকে। তুই নিজেকে খুঁজে পেয়েছিস। তুই খুঁজে পেয়েছিস তোর বাবাকে আর তোর মা আর ঠাকুমার হত্যাকারিকে। মুনিয়াও তাই । ওর পরিবারের হত্যাকারি নকুল আর একনাথ। মা, আমরা সবাই খোঁজ করি কিছু না কিছুর।সব সময়।
সবাইকে আরও ৪ দিন থাকতে হোল বোম্বে তে। মুনিয়ার মায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। বেশ বড়োলোকের গৃহিণী। তার স্বামিকে খুন করে একনাথ শিশু নিয়ে পালিয়েছিল।তাই যখন সিন্ধে তাকে বলল
………আপনার ডান দিকে প্যান্ট আর টি সার্ট পরা মেয়েটি আপনার ১৭ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে……… মহিলা শুনে মুনিয়া কে দেখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজ্ঞান হয়ে গেলেন ঘটনার আকস্মিকতায়। কিন্তু মুনিয়া তার বাড়ি যেতে পারল না কেননা ডিএনএ টেস্ট না করে নির্ণয় করা যাবে না।আদি, গুড্ডি আর সাধনা মুনিয়ার ডিএনএ টেস্ট করতে ৪ দিন লেগে গেল রফিক কে হাসপাতালে রেখে ৪ দিন পর সবাই ফিরল কলকাতায়। ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কারের জন্য সিন্ধে রফিকের নাম সুপারিশ করেছে। টাকাটা রফিক পাবে।
………এইটি তোদের রাত্রিবেলার ঘর। আর সারাদিন-রাত্রি তোরা যেখানে খুশি, মানে ওপর নিচ যেতে পারবি।গুড্ডি , মুনিয়া আমি আর কর্তা ওপরে থাকি , তবে আমরা বিবাহিত নই। এর মানে বুঝে নে। তোরা কর্তাকে বাবজি বলে ডাকবি বাবা নয়। অথবা কর্তাবাবা যেটা তোদের ইচ্ছা আর আমাকে মাসি……দুই অনাথ মেয়ে ঘাড় নাড়ান ছাড়া কি করতে পারে?
……।।মেয়েরা শোন, তোরা যাতে নিজেদের পায়ে দাড়াতে পারিস, আমি সেই ব্যাবস্থা করব। তা হোল ঘরে বসে রান্না আর ঘর মোছা ছাড়াও ব্যায়ম করতে হবে। তোদের ক্লাবে ভর্তি করে দেব। সেখানে তোদের শেখাবে, বক্সিং, ক্যারাটে এই সব। বছর খানেক শিখলে তৈরা কোথাও সিকুরিটির কাজ পেয়ে যাবি অথবা কোন ওই ধরনের অফিসে ঢুকতে পারবি। সকালে উঠে দৌড় লাগাবি, জাহা সঙ্গে যাবে। আর কোন ছেলে পিছনে লাগলে বা তোদের যদি ভালো লাগে আমাকে জানাবি। আমি দেখব বকাটে, লাফাঙ্গা কিনা। মাথায় ঢুকেছে ? প্রতি মাসে হাত খরচা পাবি। লেখাপড়া করতে চাইলে কলেজে ভর্তি করে দেব। দুটো এক সাথেও করতে পারবি। ক্যারাটে, বক্সিং আর কলেজ
……হ্যাঁ বাবজি……২ দিন পর থেকে শুরু হোল দুই কন্যার ব্যায়ম আর ক্যারাটে, সকালে দৌড়। জাহা সঙ্গে যায়, তবে ৬-৭ মিনিটের বেশি দৌড়াতে পারেনা। আশ্চর্য দুই মেয়ে ই কলেজে ভর্তি হয়েছে আর মন দিয়ে কলেজ যায়।
আদি আর মুনমুন দুই মেয়ের দিকে চেয়ে
……কর্তা একজন আমাদের সাথে?
………কেটে পড়। ওরা আমার মেয়ে। আচ্ছা আদি তোমার মেয়ের কোন বিশেষত্ব আছে চেহারায়, এই মানে কোন জন্ম দাগ, বা আঁচিল এই রকম কিছু?
……মিষ্টির বাঁ দিকের পাছায় একটা বেশ বড় কালো ছোপ আছে। এ বাদে সেরকম কিছু মনে পড়ছে না
………ঠিক আছে, এটাও কাজে লাগবে। ……দুজনের অনাথ আশ্রম থেকে বাবা বা পরিবার বলে যে নাম বা ঠিকানা আছে তা একেবারে বাজে। একজনের নাম অনিল কাপুর আরেকজনের বাবা অমিতাভ বচ্চন। করন শুনে একটু গম্ভীর হয়ে
………আদি আমার মনে হয় ওদের বাবা বল বা গার্জেন তারা বোম্বে তে থাকে। তাই ওইরকম নাম। এই বাংলায় কেউ ফলস নাম দিলে কি দেবে? কোন ক্রিকেটার বা ফুটবলের কোন নাম করা প্লেয়ার এর নাম অথবা এখানকার কোন আর্টিস্ট এর নাম, দেখা যাক রফিক মিয়াঁ কি খবর আনে।
শীতকাল এসে পড়ছে। কিন্তু বাচ্চু এইবার আসতে পারবে না ওর কলেজের ১২ ক্লাসের পরিক্ষা। পাশ করলে মিলিটারি অফিসারের ট্রেনিং এর জন্য মিলিটারি একাডেমী তে যাবে। করন সেই জন্য ঠিক করলো সবাই মিলে বাচ্চুর কাছে যাবে, একদিন হোটেলে থাকবে বাচ্চু ও থাকবে ওদের সাথে। ৬ জন মিলে এক বিরাট ভাড়া গাড়ি করে বাচ্চুর কলেজে হাজির। খুশীতে ফেটে পড়ছে বাচ্চু। জাহা দেখছে আর ভাবছে “এ আমার বাচ্চু? রফিকের মার খেয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম একে জড়িয়ে? ”। ৫ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। সুন্দর স্বাস্থ্য। মাকে ধরে কোলে তুলে নেচে নিল একটু। বন্ধু কে ধরে আর ছাড়ে না। গুড্ডি আর মুনিয়া কে দেখেই পিছনে লেগেছে। পুরো ২৪ ঘণ্টা কোথা দিয়ে কেটে গেল কেউ জানে না।
………বন্ধু আমি যাব তোমাদের সাথে ২ দিনের জন্য। মা , ষাব……।আব্দার বাচ্চুর।
………না পরীক্ষা দিয়ে আসবি। আমি আসব তোকে নিয়ে যেতে
……মা দু দিন তো, প্লিস
……না…। গম্ভীর জাহা
………জাহা চলুক না দু দিনের জন্য
………না………করন কথা বাড়াল না। জানে জাহা না বললে হ্যাঁ করান যাবে না। আদি আর মুনমুন খুব খুশি কলকাতা থেকে বেরতে পেরে। গাড়ি তে জাহা জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরে, ধ্রুত চলে যাওয়া গাছ, লাম্প পোস্ট, ক্ষেত । সে দেখছে এক ১২ বছরের মেয়েকে তার নিজের কাকা ;., করছে সবাই জানার পর সেই কাকা মেয়েটার মাথা চিপে ধরেছে পুকুরের জলে। মা প্রানপন চেষ্টা করছে ছাড়ানোর । ধাক্কা দিয়ে ফেলে আবার চেপে ধরছে। মেয়েটা দম নিতে পারছে না চি চি করছে। তার মা এক রাম দা এনে তার কাকার হাতে কোপ দিতে কাকা তাকে ছেড়ে মাকে মারতে লাগলো। আনুদি তখন গ্রামে, করনের বাড়ি থেকে ছুটিতে গেছে, কাকাকে পুলিশের ভয় দেখাতে তবে ছাড়ল। “ বাচ্চু, না, না। আর কয়েকটা মাস বাবা, আর মাত্র ২ মাস। তুই যখন অফিসার হবি আমি তোকে নিয়ে সেই জানোয়ারের সামনে দাড় করিয়ে বলব “ বাচ্চু এই জানোয়ার আমার ১২ বছর বয়েসে ;., করেছিল। আর একটু সময় দে বাবা”………গুড্ডি আর মুনিয়া লক্ষ করেছে মাসির চোখে জল। মুনিয়া গলা জরিয়ে বুকে মাথা রাখল।
এক বছর ৩ মাস হয়ে গেছে রফিক গেছে, করন ভাবছে কি করা যায়। জাহা বলছে ” আর কটা দিন দেখুন। ও ঘাগু মাল। কিছু খবর আনবেই” । জাহা সঠিক চিনেছে রফিক কে। একবছর ৪ মাস পার করে এল
……… কর্তা সেলাম
………আরে সাজাহান, কি খবর তোর? চিন্তায় মারা পরবো
………কর্তা খুব ভালো খবর আবার খুব খারাপ খবর। প্রথম থেকে শুনুন । যে জেলে ওই শম্ভু প্রসাদের সাথে আলাপ হয়, সেই জেলের এক পাহারাদার আমাদের গ্রামের এক জনের কি রকম কুটুম্ব। এই টুকু জানতাম। তাকে গিয়ে ধরলাম—ওস্তাদ ওই শম্ভু প্রসাদের একটা ফটো দাও।। সে শুনে মারে আর কি।‘’ শালা তুই আমার চাকরি খাবি” আমিও নাছোড়বান্দা। শেষে ২ হাজার টাকা দিলাম। তার কয়েকদিন পর শম্ভু প্রসাদের ঠিকানা দিয়ে বলল “ ওর ধারে পাশে ষাস না। এনকাউনটারের অর্ডার আছে । এই নে ঠিকানা আর ভাগ। সেই ঠিকানা বালিয়া জেলায়। সেখানে গিয়ে ওই ঠিকানা আর শম্ভু প্রসাদের নাম বলতেই , কি মার মারল আমায়। শেষে গাছে বেঁধে পিটানি “বল শম্ভু কোথায়, কি দরকার তোর, কোথায় আলাপ?” আমি যতো বলি আমি বাঙ্গালি আমার কথা শোন, তত মার। “বাংলার থেকে মেয়ে চুরি করেছিস” এই মার খেতে খেতে পকেট থেকে যা ছিল বার করলো। আপনি আমার বিষয়ে যে লিখে দিয়েছিলেন সেই কাগজ পেয়ে” বল এখানে কি লেখা আছে?” আবার মার। কপাল ভালো পাশের বাড়ির একটি মেয়ে কলেজে পরে। সে ইংরাজি জানে।তাকে দিল ওই কাগজ। সে অনেকক্ষণ ধরে পড়ে বলল যে আমার নাম কি , এই চিঠি কে দিয়েছে এই সব। তখন আবার বাঁধন খুলে গায়ে হাতে তেল মালিশ, জল, খাবার খুব যত্ন। যখন সব খুলে বললাম। তখন যে মারছিল সে বলল” শম্ভু প্রসাদ অনেক দিন মারা গেছে। আমার পাশের পাড়ায় থাকত, খুব কুস্তি লড়ত। আমাদের ভগ্নীপতি নকুল শর্মা ওর সাথে কুস্তি লড়ত।নকুল এই তল্লাটের নামি কুস্তীগির। নকুল ওই নাম ভাঁড়িয়ে সব কুকর্ম করে বেরায়”
……সে এখন কোথায়?......।
……জানি না। ওর একটা মেয়ে ছিল কলকাতায়, গরম জলে পড়ে মারা যায়। আমার বোনের অসাবধানতায় আর আমার বোনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে যেখান থেকে পারত ছোট মেয়ে চুরি করে আনত। তখন নকুল এক বাচ্চা চুরি করে এনে তাকে দেয়। তাই নিয়ে সে ভালো ছিল কিন্তু আমার বোন ধীরে ধীরে প্রায় পাগল হয়ে যায়। ওই অবস্থায় নকুল মেয়েটাকে নিয়ে এসেছিলো যদি আমরা মানুষ করি। খুব সুন্দর দেখতে। আমাদের সংসারে ওই মেয়ে মানায় না। আমরা জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারি যে ও চুরি করেছে তখন আমরা ৪ জন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে নকুলকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু থানার পথে এক গ্রামে নকুল আমাদের ৩ জনকে প্রচণ্ড মেরে মেয়েটাকে নিয়ে পালায়। তার পর থেকে কোন খবর নেই। শেষ খবর দিয়ে ছিল যে আমাদের বোন বোম্বে তে এক সরকারি হাস পাতালে মারা গেছে।“ আমি নকুলের শালার কাছ থেকে সেই সরকারি হাসপাতালের নাম নিয়ে গেলাম বোম্বে। থাকতাম রেল ষ্টেশন এ। আর ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করতে থাকি নকুলের ঠিকানার। কেউ কি দেয়, পয়সা খাইয়ে, আপনার চিঠি দেখিয়ে ঠিকানা নিয়ে গিয়ে দেখি সে উধাও। তবে এক সেলুনের, ওই রাস্তার সেলুন, এক জন লক্ষিকান্তপুরের, তাকে সব জানিয়ে বলে এসেছি খোঁজ রাখতে।
………এই এক বছর তোমার ওই ১০০০০ টাকায় কি করে্ চলল ………জাহার প্রশ্ন
………শিল্প শিল্প, জাহা। কদর তো দিলি না এ এক শিল্প……মুখ টিপে হাসে রফিক
………রফিক তুই পুলিশে চাকরি করলে উন্নতি করতিস। শাবাশ রফিক , শাবাশ। তুই এইবার বোম্বে যাবি ৬ মাসের জন্য। সাথে আমার ২ মেয়ে যাবে। বেশি রিস্ক নিবি না। মেয়েরা ক্যারাটে , নানচাকু বক্সিং শিখছে নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারে এই ১ বছরের ট্রেনইং এ। কিন্তু সাবধান ৩-৪ জন একসাথে এ্যাটাক করলে মুশকিল। এখনও সেই অবধি যায় নি। তবুও তোর সঙ্গে যাক । হাতে কলমে শিখুক। এখন বস, খা, বিশ্রাম নে আর কবে যাবি ঠিক কর।……… এদিকে দুই কন্যা লাফাচ্ছে বোম্বে যাবে মিষ্টির খোজে। করন জাহা কে বলল মেয়েদের ডেকে দিতে। জাহা নীচে ঘরে ঢুকতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল। দুই সখী পুরো নগ্ন। দরজার দিকে পিছন ফিরে গায়ে ক্রিম মাখছে। পাছা থাই চক চক করছে। একটু দাঁড়িয়ে গভীর ভাবে দেখল জাহা, তারপর ওপরে উঠে করন কে বলল কিছু।
বোম্বেতে রফিক যেখানে উঠলো তা আসলে রেলের জমির ওপর গড়ে ওঠা ঘুপচি। ২৫ টা ঘুপচির জন্য একটা পায়খানা আর রাস্তার ধারে চান। দুই মেয়ের বিশেষ হেল দোল নেই। সকালে উঠে ট্রাক স্যুট পড়ে দৌড়াতে যায়, সেই মাথে কিছু ব্যায়ম করে ঘরে ফিরে বিস্রাম নিয়ে রফিকের সাথে রেল ষ্টেশন এ অপেক্ষা করে। রফিকের সেই সেলুনের বন্ধু জানিয়েছে যে এক পাহারাদারের থেকে খবর সংগ্রহ করেছে যে রাইভাল গ্যাং এর সাথে বন্দুকের লড়াইতে নকুল আহত হয় ডান পায়ে।খুব অল্প খুড়িয়ে হাটে, একটু লক্ষ করলে বোঝা যায় ওর খোঁড়ান। মহারাষ্ট্র পুলিশ ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে নকুলের মাথার দাম। এ ছাড়া নানা রোগ ভোগে নকুল এখন আর ডাকাতি খুন এই সব করেনা। তার পুরানো সাগরেদরা তাকে মাসে মাসে মাসোহারা দেয় বদলে রফিক তাদের মাল নিজের কাছে রাখে বা বিক্রি করে পয়সা দেয়। রফিকের গ্যাং রেলের যাত্রী দের লুট করে বা সুযোগ বুঝে হাত সাফাই করে।
রফিক তাই সারাক্ষন সেই নির্দিষ্ট ষ্টেশনে খোঁজ লাগায় নকুলের। মেয়েদের নকুলের চেহারার একটা আবছা আন্দাজ দিয়েছে। সেই মতো গুড্ডি দাড়ায় ষ্টেশন এর গেটের মুখের একটু পিছনে আর মুনিয়া দাড়ায় ওভার ব্রিজের সিঁড়ির নীচে। রবিবার বাদে রোজ ৩ জনের এই রুটিন। এইরকম একদিনে সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরবে ৩ জন সিঁড়ির নীচে জড় হয়েছে। রফিক লক্ষ করেনি অনেকদিন ধরে একজন ওভারব্রিজের ওপর থেকে ৩ জনের ওপর নজর রাখছে। একটু ছোট মতো পাজামা, পাঞ্জাবি একটু চাপা। মাথার চুল উঠে গেছে প্রায়, দাড়ি আছে গোঁফ কামান এইরকম দেখতে একজন লোক। সেইদিন ভিড় একটু কম রফিক এসে দাঁড়িয়েছে একা। সেই লোক শিড়ি দিয়ে নেমে এল কয়েকধাপ ডান হাত পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকান। সেই অবস্থায় পকেটের রিভল্বার তাক করেছে রফিকের দিকে। ঠিক করেছে, রিভল্ভার বার না করে ওই অবস্থায় গুলি চালাবে রফিকের ওপর। নিখুত তাক করেছে , ট্রিগার টিপবে, সেই মুহূর্তে রফিকের সামনে এসে দাঁড়াল দুই মেয়ে। “ শুয়ার কি অউলাদ, আজ বাচ গায়ি, কিন্তু তুই মিষ্টি কে পাবি না, কিছুতেই না, মিষ্টি আমার মেয়ে”। হঠাৎ গুড্ডি ওপরে তাকিয়ে দেখে ফেলে রফিককে আঙুল তুলে দেখায়। রফিক ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে না দেখতে ফর্সা । তবুও আন্দাজে দূর থেকে নকুল ভেবে ধাওয়া করলো ৩ জন। মস্ত ভুল করে বসলো। সেই পালাতে পালাতে এমন গলিতে ঢুকে যে কোথায় উবে গেল ভালো ভাবে বুঝতে না বুঝতেই, সেই নির্জন গলিতে ৫-৬ জন দাঁড়িয়ে পড়ল ওদের ঘিরে। বোম্বে শহরের সব থেকে খতরনাক গলির ভিতর একটি গলি। সেই গ্যাং দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলে পিছন থেকে কোমর জড়িয়ে তুলেছে, রফিক রোগাটে হলে কি হবে শরীরে কশ আছে। পিছন থেকে একটা দেড় ফুটের মতো লাঠি বার করে ঝাপিয়ে পড়ল । মেয়েরা ঘুসির সাথে সাথে নানচাকু বার করে চালাচ্ছে। কিন্তু ওই গ্যাং এর মুল লক্ষ মেয়েরা। দুই মেয়েকে এক গাড়িতে ওঠাবেই। দুই মেয়ে প্রচণ্ড মারছে, গ্যাঙের ছেলে গুলো ও মারছে, শেষে যখন প্রায় তুলে ফেলেছে এমন সময় গুলির শব্দ আর ২ জন লুটিয়ে পড়ল ওই গ্যাঙের।বাকিরা হোকচকিয়ে গেলেও একজন রিভলবার বার করে তাক করেছে। আবারও গুলি সোজা তার কপালে। রফিক সঙ্গে সঙ্গে “ছোট” বলে হাক দিয়ে দৌড় লাগাল, মেয়েরাও সাথে সাথে রফিকের সাথে দৌড়।এ গলি ও গলি ঘুরে ঘুরে মিনিট ৫ পর বড় রাস্তায় এসেই রফিক এক অটো ধরে দুই মেয়েকে তুলে পালাল। হাপাচ্ছে ৩ জনেই। কিন্তু রফিক বুদ্ধিমান। তার ডেরার বেশ খানিক দূরে উল্টো দিকে অটো ছেড়ে বাকি পথ হেটে ফিরল। “ কাকা অটো ছাড়লে কেন?’। আরে গুড্ডি, পুলিশ আসবে বাড়ির সামনে নামলে আর ধরবে। তাই।“ । দুই মেয়ে ঘরে ফিরে রফিক কে নিয়ে পরল।নানা জায়গা ফেটে গেছে, কপালে বেশ লেগেছে, রফিক কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। মেয়েরা জোর করে ওষুধ লাগাল। করন কে ফোন করতে করন বলল “ এখুনি ফিরে আয় রফিক ২-৩ দিনের ভিতর”। একটু মন মরা হয়ে গেল রফিক। ৪ লক্ষ টাকা পেত ধরতে পারলে। এই খোঁজ রফিকের কাছে তার পৌরষের খোঁজ। রফিক দেখিয়ে দিতে চায় জাহাকে যে সে পুরুষ। সেও সাফল্ল্য পেতে পারে কঠিন কাজে। জাহার তাচ্ছিল্য ভাবে কথা, আঘাত করে রফিক কে। জাহাকে বাড়ি থেকে মেরে বের করে দিয়েছিলো, এখন অপরাধ বোধ হয় সেইজন্য। ছোট মনে হয় নিজেকে জাহার সামনে। রফিক জাহার সামনে এমন ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে চায়, যে জাহা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে রফিক এক পুরুষ। হাতছাড়া হতে চলেছে সেই সুযোগ। পরের দিন সকালে চা খেতে বেরিয়েছে ৩ জন। এক দল লোক যাচ্ছে গায়ে ছাই, মাটি এই সব মেখে। “ কুস্তি, হ্যাঁ, রফিক কুস্তি ভালবাসে”। সঙ্গে সঙ্গে করন কে ফোন “ কর্তা আর ১ মাস, ব্যাস। আমি একটা ফন্দী এঁটেছি, যদি কিছু না হয় তাহলে ফিরে যাব আর এক মাস”। পরের দিন থেকে কোথায় কোথায় শনিবার রবিবার কুস্তি হয় আসে পাশে খোঁজ নিয়ে প্রতিটি আসরে হাজির। একটু দূর থেকে। চলে আসবে মনস্থির করেছে, এই রকম সময় এক রবিবার এক কুস্তির আসরে রফিক লক্ষ করলো দর্শকের ভিতর একটি লোক বার বার বেরিয়ে এসে বলে দিচ্ছে এই প্যাচ মার ওই প্যাচ মার।। খুব উত্তেজিত লোকটি। একটু ভেবে লোকটি যেই আবার এগিয়ে এসেছে “ এই অতুল, অতুল”।একটু দূর থেকে অতুল আর নকুল শুনলে এক রকমই লাগবে। রফিক লক্ষ করলো লোকটি থমকে গেল। তারপর চারিদিকে চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে ভিড়ের পিছন দিকে দিয়ে বেরিয়ে হাটা লাগাল। রফিক অনুসরন করলো বাঁ দিক ঘেঁষে। অর্থাৎ লোকটির পিছন দিকে বাম পাশে থেকে। করন শিখিয়েছে যে কোন মানুষ পিছন ফিরে তাকালে ডান কাঁধ এর উপর দিয়ে তাকাবে। বাঁ দিক দিয়ে নয়। অনেক ঘুরে ঘুরে লোকটি বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তা, তারপর বড় গলি, ছোট গলি ঘুরে ঘুরে একটি বাড়ির সামনে এসে গা ঘেঁষে এক সিঁড়ি বেয়ে উঠলো। রফিক দাঁড়িয়ে রইল গলির মুখে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর লোকটি বেরিয়ে এক ওষুধের দোকানে ঢুকে কিছু কিনে , বেরিয়ে রুটি আর তরকারি নিয়ে আবার সেই বাড়িতে গেল। রফিক ওষুধের দোকানে গিয়ে এ কথা ও কথা বলতে বলতে জিজ্ঞাসা করলো “ একটু আগে নকুল এসেছিলো না, আরে কুস্তিগীর, কি নিল?”
……নকুল কে? ও তো শেখ রফিক, ইনসুলিন নেয় ……রফিক প্রায় লাফ দিয়ে উঠেছিল উত্তেজনায়, কোনক্রমে সামলে নিল নিজেকে। আরও কিছু সময় অপেক্ষার পর সন্তর্পণে ওই ঘরের কাছে এসে দেখল, যে দেড় তলার ওপরে একটা ছোট ঘর। সিঁড়ি খুব সরু। ঘরের পাশে ওই গলির ময়লা ফেলার জায়গা। স্তূপীকৃত হয়ে আছে কয়েকদিনের ময়লা, কি নেই সেখানে, মড়া বেড়াল , থেকে বাড়ির আনাজের অংশ সব। রফিক ওই ময়লার ওপরে উঠলো বেড়ালের মতো ধীর পায়ে। একটি ঘুলঘুলির থেকে কিছু বড় এক জানালা।ঘর থেকে রেডিওর গান শোনা যাচ্ছে জোরে। ফাক দিয়ে দেখল নকুল স্নান সেরে গামছা পরে একটা ধুপ জ্বালিয়ে দেয়ালের ক্যালেন্ডার সরিয়ে বজরংবলির ছবিকে পুজো করছে। ছোট একটা ঘণ্টা নাড়ছে। রেডিওর শব্দে বাইরে কেউ শুনতে পাচ্ছে না। রফিল লাফ দিয়ে নেমে নোংরা মেখে ছুটছে। এখুনি কর্তাকে জানাবে। এর ভিতর নামল বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি ফিরে প্রথমেই করন কে “ কর্তা এখুনি আসুন। এক্ষুনি। হ্যাঁ নকুল আমার মুঠোয়।“ ভাসা ভাসা শুনে করন জানাল আগামি কাল আসবে। এর পর দুই মেয়েকে সারাদিনের কথা জানিয়ে আগামি কালের প্লান আঁটল।
করন প্রথম প্লেনে জাহা, আদি মুনমুন কে নিয়ে বোম্বে পৌঁছেই প্রথমে নকুলের থাকার জায়গার থানায় গিয়ে খোঁজ করলো কোন প্রাইজ ঘোষণা হয়েছে নাকি। থানার ইন চার্জ দিনেশ শিন্দে
………আচ্ছা আপনি কি এসওজি( স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ) এ ছিলেন? অর্চনা জোশীর ছেলে কে উদ্ধার করেছিলেন? ……।।করন হেঁসে হ্যাঁ বলতে , ওফিসার উঠে দাঁড়িয়ে
………স্যার চিনতে পারলেন না? আমি দীনেশ। আপনি অর্চনার ছেলেকে উদ্ধার করে আমার কি উপকার যে করেছিলেন , তা ভুলবো না। পুলিশ মেডেল পেয়েছিলাম আর প্রমোশন। আপনাকে জানিয়েছিলাম স্যার
………ওহ, আপনি? এইবার মনে পড়েছে। আমাকে গোয়া যাবার নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন? মনে পড়েছে
………স্যার বলুন কি করতে পারি
………নকুল শর্মা। এই লোকটি সম্পর্কে জানতে চাই………চোখ কপালে তুলে
………ওরে বাবা, ওই রকম ধুরন্ধর কালপ্রিট আমি জীবনে দেখিনি। নকুল আর ওর বন্ধু একনাথ রাম খুন করেছে, বাচ্চা চুরি করে বিক্রি করেছে কিন্তু ধরতে পারিনি। একনাথ পুলিশের সাথে গুলির লড়াইতে মারা যায় কিন্তু নকুল ঠিক বেঁচে যায়
………যদি তাকে ধরিয়ে দি?
………সরকার ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে।আর অন্তত ১২ টা কেস সল্ভ হবে।
করন সিন্ধে কে নিয়ে আড়ালে কি সব কথা বলে “ রাত ৮ টার সময়। কিন্তু টপ সিক্রেট।
………একদম, এইবার প্রমোশন ইনস্পেক্টর, স্যার, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
জাহাকে নিয়ে করন এক হোটেলে উঠে রফিক আর দুই মেয়েকে ডেকে নিল। হোটেলের দুই ঘরে থাকবে সবাই। পুরুষ এক ঘরে মহিলারা অন্য ঘরে। রফিক সকাল থেকে নকুলের গলির সামনে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে , একজন আসবে তাই। দুপুরে এল রফিকের সেই সেলুনের বন্ধু। তাকে সব বুঝিয়ে রফিক একটু আলাদা থাকল দূর থেকে। রাত ৮ টা বাজলে রফিক দেখল নকুল বেরিয়ে ওই ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর রুটি নিয়ে ঘরে গেল। সিন্ধে তার লোকজন নিয়ে এলাকা ঘিরে নিয়েছে। রফিক দুই মেয়েকে নিয়ে নকুলের ঘরে গিয়ে” দরজা খোল রফিক, দরজা খোল”
……কে ?
……।।ওস্তাদ খুলেই দেখ ?
নকুল অল্প করে দরজা খুলতেই রফিক আর দুই মেয়ে ঝাপিয়ে পরে নকুলকে চিত করে দিল। কিন্তু শক্তি ধরে নকুল। ওই রকম অসুখে ভুগেও, এক লহমায় রফিক কে ছিটকে ফেলে গুলি চালাল। সঙ্গে সঙ্গে মুনিয়ার নান চাকু আছড়ে পড়ল তার হাতে। গুলি লক্ষ ভ্রষ্ট হয়ে রফিকের ডান হাতে ওপরে লাগতে রফিক “উঁহু” করে বসে পড়ল। দুই মেয়ে ততক্ষনে নকুলকে চিত করে ফেলে সমানে ঘুসি মারছে। নকুল শুধু আটকে যাচ্ছে, একবারও মেয়েদের ওপর হাত তোলেনি। । গুড্ডি লাফ দিয়ে নকুলের বুকে বসে মুখে পাঞ্চ করতে খপ করে ধরে নিল নকুল” ছাড় আমার হাত ছাড়” নকুল ততক্ষনে অন্য হাত ধরে নিয়েছে। গুড্ডি টের পাচ্ছে নকুলের শক্তি। দারোগা সিন্ধে, করন আদি সবাই ঘরের ভিতর। সিন্ধের হাতে রিভল্ভবার। গুড্ডি প্রানপন চেষ্টা করছে আর চেঁচাচ্ছে ” কেন তুমি মিষ্টি কে চুরি করেছ? কোথায় মিষ্টি
, কোথায় আছে মিষ্টি?
………।তু বেটি, তুহি মিষ্টি গুড্ডি, মেরি প্যারে গুড্ডি।……কানের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। মস্তিস্ক তার পর নির্দেশ পাঠায়। গুড্ডির মস্তিস্ক অবশ হয়ে গেছে। ঘরের সবাই থমকে, করন ছাড়া। গুড্ডি ঝুকে পরে দেখছে নকুলকে, দুই চোখ খুঁজে বেরাচ্ছে কাকে, তার বাপুজিকে? হথাত সমস্ত মহল্লাকে সচকিত করে বুকফাটা আর্তনাদ
………বাবুজি? বাবূজী………। কি বলছ বাবুজি, আমি ই গুড্ডি?......। ধীরে ধীরে উঠে বসেছে নকুল
…… হ্যাঁ মেরে বাচ্চে। তুই ই মিষ্টি। …।।গুড্ডির এলাকা ফাটানো তীব্র চিৎকার
………বাবুজি। তুমি আমার মাকে খুন করেছ, বাবুজি………। করন এসে গুড্ডি কে সরিয়ে নিল। আদি নকুলের রিভল্ভবার তুলে য়ে তাক করেছে, শিন্দে চট করে রিভল্ভবার কেড়ে
………না। আপনি ওকে কোন শাস্তি দিতে পারেন না।
………আমাকে মেরে কি করবে আদি। আমার একটা কিডনি নষ্ট। ৪০০ ওপর সুগার, অবস্থা ভালো না। তুমি আমাকে মারলে তোমার জেল হবে, তোমার মেয়েকে আবার হারাবে আদি।……… । করন সরিয়ে নিয়ে গেল আদিকে। গুড্ডি বাঁ মিষ্টি উথালি পাথালি কাঁদছে। আদি জীবনে প্রথম তার মিষ্টিকে জড়িয়ে রাখল।
………চাচা, আমি মুনিয়া। আমার বাপু কোথায়, তুমি জান?
……… কাছে আয় মা। আমি আর বাঁচব না।তাই সব বলে দেব। একনাথ তোর বাপু না রে বেটি। শুনুন দারোগা সাহেব। আমি বাচ্চা চুরি করতে চাইনি। আমার মেয়ে গরম জলে পরে মারা যায় আর আমার বৌ পাগল হয়ে গেল। ষার তার বাচ্চা চুরি করে আনত। সেইদিন আদির বাড়ির ওই ঘটনার পর আমি গুড্ডিকে নিয়ে আসি। শ্যামনগরের এক জুট মিলে কাজ নিয়ে থাকতাম। একদিন একনাথ রাম, মুনিয়ার বাপু, এই বোম্বের এক মহিলার মেয়েকে চুরি করে আমার বাসায় নিয়ে যায় কলকাতার কোন বড়োলোকের কাছে বেচবে। আমি হতে দিই নি। বাচ্চা দের নিয়ে ব্যাবসা করব না। মিষ্টির ১০ বছরের মাথায় আমার বৌ মারা যায়। তার আগেই সে পাগল হয়ে গেছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম যদি আমার শালারা গুড্ডি কে রাখে, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। টার আগে থেকেই আমরা থাকতাম বোম্বে তে। কিন্তু ওদের যখন বছর ১০ বয়েস তখন কলকাতার কাছে এক অনাথ আশ্রমে দি। বাঙ্গালির মেয়ে বাংলায় থাকুক এই ভেবে। আর আমিও তখন বাঙ্গালি হয়ে গেছি। ৪ বছর আগে রাম পুলিশের গুলিতে মারা গেলে আমি আর আশ্রমে যাই নি। মুনিয়াকে কি বলব এই ভেবে। আমি অনেক খুন করেছি, ডাকাতি করেছি কিন্তু বাচ্চা নিয়ে ব্যাবসা করিনি। গুড্ডি কে নিজের মেয়ে ভাবতাম। সত্যি বলছি। আদির মা আর বউকে খুন করেছি তার কারন গুড্ডিকে নেব বলে। আদি আমি কিন্তু গুড্ডি কে ভালবাসি বঙ্গাগলি তে দুই মেয়েকে সেলিমের দল তুলে নিয়ে যেত, হ্যাঁ আমি গুলি চালিয়েছিলাম আমার মেয়েদের বাঁচানোর জন্য।
……তুমি আমাকে বেসাহারা করে দিয়েছ বাবুজি, বেসাহারা।
………গুড্ডি একবার কাছে আসবি , একবার
……না। নকুল তোমার প্রতি গুড্ডির আর কোন মায়া নেই। তুমি ওর মা, ঠাকুমা কে খুন করেছ। ওর বাবার জীবন ছারখার হয়ে গেছে তোমার জন্য। মিষ্টি যাবে না।………করন কঠিন স্বরে জানাল
আদি মিষ্টি কে জরিয়ে চুপ করে রইল।
………কর্তা আমার ব্যাপার টা দেখুন। দারোগা সাহেব কে জিজ্ঞাসা করুন , আমি ওই ৪ লক্ষ টাকা পাব তো? এই দেখুন গুলি খেয়েছি?
………হ্যাঁ রফিক, তুমি পাবে আমি তোমারনাম ওপর তলায় জানাব, যাতে তুমি টাকা পাও। হ্যাঁ নকুল, এইবার তুই আমায় বল, এই মুনিয়ার মা কে কোথায় থাকে?
……ওর মায়ের নাম সাধনা, জুহুর সমুদ্রের কাছা কাছি কোথায় ওদের বাড়ি, এই টুকুই জানি।
সবাইকে নিয়ে থানায় নিয়ে এজাহার লিখে, রফিক কে হাসপাতালে পাঠিয়ে, সিন্ধে জুহু থানায় খবর পাঠাল বছর ১৬-১৭ আগে সাধনা বলে কোন মহিলার মেয়ে চুরির ডাইরি আছে কিনা।
সেই রাতে হোটেলের ঘুরে আদি মিষ্টি কে নিয়ে মুনমুন কে “ মুন, এই আমাদের মেয়ে। এই আমার মিষ্টি”। আবেগের রাত , সেই রাত। জাহা আগলে রেখে মিষ্টিকে
……কর্তা আর আমি জানতাম। ঘরে কাপড় ছাড়ার সময় পিছনে কেউ আছে কিনা তো দেখিস না, তাই আমি দেখতে পেয়েছিলাম তোর জন্ম দাগ, তোর পাছার বাঁ দিকে । কর্তা বলল ওকে বলার দরকার নেই। গুড্ডি আগুনের ওপর হাঁটছে, ঠিক পাশ করবে পরীক্ষা। কর্তা , পাশ করেছে? করন উঠে এসে
……আমার মেয়ে কখনও ফেল করতে পারে না
……বাবজি তুমি কার খোঁজ করতে পাঠিয়েছিলে আমায়
………নিজেকে। তুই নিজেকে খুঁজে পেয়েছিস। তুই খুঁজে পেয়েছিস তোর বাবাকে আর তোর মা আর ঠাকুমার হত্যাকারিকে। মুনিয়াও তাই । ওর পরিবারের হত্যাকারি নকুল আর একনাথ। মা, আমরা সবাই খোঁজ করি কিছু না কিছুর।সব সময়।
সবাইকে আরও ৪ দিন থাকতে হোল বোম্বে তে। মুনিয়ার মায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। বেশ বড়োলোকের গৃহিণী। তার স্বামিকে খুন করে একনাথ শিশু নিয়ে পালিয়েছিল।তাই যখন সিন্ধে তাকে বলল
………আপনার ডান দিকে প্যান্ট আর টি সার্ট পরা মেয়েটি আপনার ১৭ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে……… মহিলা শুনে মুনিয়া কে দেখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজ্ঞান হয়ে গেলেন ঘটনার আকস্মিকতায়। কিন্তু মুনিয়া তার বাড়ি যেতে পারল না কেননা ডিএনএ টেস্ট না করে নির্ণয় করা যাবে না।আদি, গুড্ডি আর সাধনা মুনিয়ার ডিএনএ টেস্ট করতে ৪ দিন লেগে গেল রফিক কে হাসপাতালে রেখে ৪ দিন পর সবাই ফিরল কলকাতায়। ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কারের জন্য সিন্ধে রফিকের নাম সুপারিশ করেছে। টাকাটা রফিক পাবে।