Thread Rating:
  • 101 Vote(s) - 3.32 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
  

।।২০।।


বাসায় ফিরে দেখল সকালের বাসী কাগজ নিয়ে বাবা বসে আছে।ট্যুইশনির কথা শুনে মা বিরক্ত হয়ে বলল,সামনে তোর পরীক্ষা না? 
--আমি তো রাতে পড়ি।
--তোর পড়াশুনায় কি টাকার ঘাটতি হচ্ছে?
--হিমু শোনো।ও ঘর থেকে বাবার গলা পাওয়া গেল।
--হ্যা আসছি।
হিমানীদেবী চলে গেলেন।মনোসিজ দরজার আড়াল থেকে শোনার চেষ্টা করে বাবা কি বলে।বাবা কথা বলে কম কিন্তু প্রতিটি কথা মনোসিজের কাছে মনে হয় মূল্যবান।বাবার সততা আত্মসম্মানবোধের জন্য মনোসিজ গর্ববোধ করে।তাদের প্রাচুর্যে ভরা সংসার নয় কিন্তু কোনোদিন বাবাকে কারো কাছে হাত পাততে দেখেনি।
স্বামীর কাছে গিয়ে বললেন,কি বলছো বলো।
--শোনো হিমু প্রশ্নটা অভাবের নয়।নিজের কাজ ঠিকমতো করে টিউশনি করতে চায় করুক না।টাকাটা বড়কথা কথা নয় আসল কথা এতে আত্মনির্ভরতা বাড়ে।আমি কি বললাম তুমি বুঝেছো?
--বুঝেছি।হিমানীদেবী স্বামীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,তোমার শরীর ভাল আছে তো?
মনোময়বাবু হাসলেন,ইদানীং তুমি আমার শরীর নিয়ে খুব ভাবছো।
--ভাববো না।তুমি যা মুখে আসে বলবে--আমি ভাবলেই দোষ?
--অত না ভেবে নিজেকে প্রস্তুত করো।ভাল মন্দ যাহাই আসুক সত্যরে লও সহজে।
--আবার?আবার তুমি আরম্ভ করলে?
--তোমার উদবেগ আমাকে আনন্দ দেয়।
মনোসিজ আর দাঁড়ায় না।দ্রুত ঘরের দিকে পা বাড়ায়।বাবা কিসে আনন্দ পায় শুনে মজা লাগল।একজনের উদবেগে আরেকজন মজা পায় ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে।ভালো কিছু খেলে ভালো কিছু দেখলে ভাল কিছু শুনলে যখন আরেকজনের কথা মনে পড়ে একেই বলে বুঝি একাত্মতা।
খাওয়া দাওয়ার পর একটু গড়িয়ে নেয় মনোসিজ।ওদিকে বেলা গড়াতে থাকে।চোখ লেগে গেছিল চোখ মেলতে কানে এল রান্না ঘরে খুটখাট শব্দ।মা হয়তো চা করছে।প্রথমদিন একটু সকাল-সকাল যাবে।কিভাবে শুরু করবে মনে মনে ছক কষে।যাবার পথে একটা বর্ণপরিচয় দ্বিতীয়ভাগ কিনে নেবে।চর্চার অভাবে বাংলা শব্দ ভাণ্ডার খুবই দুর্বল।ভাবতে ভাবতে ঝিমুনি এসে যায়।রাতের অনিদ্রা দিনে ঘুমিয়ে পূরণ করা যায় না।তবে কাজের মধ্যে থাকলে অসুবিধে হয়না।

সাধন কর্মকার বাসায় ফিরতে লীলাবতী জিজ্ঞেস করেন,কি বলল উকিল?
--এক গেলাস জল দাও।
বৈঠকখানায় ঢূকে পোশাক বদলে ধুতিটা হাটু অবধি তুলে সোফায় বসতে লীলাবতী জল নিয়ে ঢুকলেন।হাত বাড়িয়ে গেলাস নিয়ে এক নিশ্বাসে জল্টুকু পান করে বললেন,উকিলরা তো মক্কেলকে উৎসাহ দেবেই।
--ফ্লাট তো ঠাকুর-পোর টাকায় কেনা।লীলাবতী বললেন।
--উকিলবাবুও সেকথা বললেন।বৌমার নামে ফ্লাট হলেও তার তো কোনো উপার্জন ছিল না।আমি ভাবছি বৌমার বাপের বাড়ীর কথা।কর্মকারদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে আপত্তি তাদের টাকা নিতে লজ্জা করেনা?
--বামুনের মেয়ে কি কেলেঙ্কারিই করল।
--তোমার ছেলেরা বাড়ী নেই?
লীলাবতীর মুখ দেখে বুঝতে পারেন সাধনবাবু বললেন,দোকানে বসবে না সারাদিন খালি টো-টো ছেলে দুটো যদি মানুষ হত তাহলে এই বয়সে--।
--বড়ছেলের চারতলার ফ্লাট পছন্দ নয়।
--গাছে কাঠাল গোফে তেল।এভাবে চললে গাছ তলাতেও ঠাই হবে না।
লীলাবতী কোনো কথা বলে না।দিনের বেলা যত জারিজুরি লীলাবতী জানে,রাতের বিছানায় এই মানুষটা তার গোলাম।
 মনোসিজ কলিং বেল টিপতে দরজা খুলে দিলেন মিসেস পাকড়াশী।
--ওয়েলকাম ইয়াং ম্যান।উশ্রীকে দেখতে না পেয়ে মিসেস পাকড়াশী টয়লেটের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,হোয়াট আর ইউ ডুইং সো লং টিমে--।
ছাদ থেকে নামতে নামতে উশ্রী সাড়া দিল,এ্যাম হিয়ার হোয়াই আর ইউ শাউটিং মম।
ঘরে ঢুকে মনসিজকে দেখে বলল গুদ এভিনিং স্যার।
মনোসিজ মনে মনে ছকে নিয়েছে কিভাবে শুরু করবে।মিসেস পাকড়াশী থাকেন স্টাডি রুমের পাশের ঘরে,স্টাডিতে কি হচ্ছে সেদিকে সজাগ কান।
মনোসিজ শুরু করে,আমি দু-একটা কথা আগে বলতে চাই।মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই--।
--বিকলপ?
--আই মিন অল্টারনেটিভ।সে যে ভাষাই হোক না।অনেকে ইংরেজী বলতে পেরে আত্মশ্লাঘা বোধ করে--
--আত্তসলাগা?
--মনে মনে অহঙ্কার বোধ করে।এটা এক ধরণের হীনমন্যতা।কি বলছি বুঝতে পারছ--?
--বাংলা বুঝতে পারি।আপনি বলুন স্যার।
--এক জায়গায় পড়েছি মাও-জে-দং--তুমি মাওয়ের নাম শুনেছো?
--ইয়া হি ইজ আ প্রেসিডেণ্ট অফ চায়না কমিউনিষ্ট পার্টি ভেরি পাওয়ারফুল।
--মাও ভাল ইংরেজি জানলেও বিদেশী রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে ইংরেজিতে নয় মাতৃভাষায় কথা বলতেন।এটা তার আত্মমর্যাদাবোধের পরিচয়।মাইকেল মধুসূদন বিদেশী ভাষায় কাব্য চর্চা করতে গিয়ে সফল হননি।সেজন্য তাকে আক্ষেপ করতে হয়েছিল তিনি বলছেন,"হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন/তা সবে অবহেলা করি/ পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমন পরদেশে--। 
--স্যার আপনি সুন্দর বোঝাতে পারেন। ইফ ইউ দোণ্ট মাইন্দ ক্যান আই আস্ক--
মনোসিজ একটু থামল।
উশ্রী জিজ্ঞেস করে,আর ইউ ম্যারেড স্যার?
--আমি বিএসসি ফাইন্যাল ইয়ারের ছাত্র,বিয়ের কোনো প্রশ্নই আসেনা।
--ইউ আর ভেরি কিউট আই লাইক ইউ স্যার।
মনোসিজ রক্তিম হয়,মেয়েটি বেশী পাকা।ইংরেজী মিডিয়ামে পড়া মেয়েগুলো একটু বেশি পাকা হয়।
এইভাবে মনোসিজের টিউশনি চলতে থাকে।প্রথমদিকে যেমন ভেবেছিল মেয়েটিকে পরে বুঝেছে মেয়েটি খুব সহজ সরল।সারাক্ষন কলেজে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বাসায় মায়ের কড়া শাসনে হাপিয়ে উঠেছিল।মনোসিজকে পেয়ে প্রাণখুলে কথা বলার সুযোগ পেয়ে খুব খুশী।কলেজে ওর বন্ধুদের প্রায় সকলের বয়ফ্রেণ্ড আছে সেজন্য তার কোনো আক্ষেপ নেই।আরো জানার আকাঙ্খ্যার রুদ্ধ দ্বার যেন খুলে গেছে মনোসিজকে পেয়ে।বাংলা শিখতে শিখতে কখনো বিষয় হতে অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে দুজনে।কথা বলার সময় খেয়াল থাকে না মনোসিজ ওর টিচার।একদিন তো বলেই ফেলল "ইউ আর ভেরি ইম্ম্যাচিওর।"
মনোসিজ রাগ করেনি হেসেছিল।সত্যি কথা বলতে কি ছাত্রীটির প্রতি সমস্ত বিরূপতা ধীরে ধীরে কেটে গিয়ে একসময় ভাল লাগতে শুরু করে।  
[+] 12 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 25-08-2021, 12:14 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)