22-08-2021, 07:49 PM
(This post was last modified: 17-12-2021, 12:08 PM by kumdev. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
।।১৮।।
সাধন কর্মকারের জুয়েলারী ব্যবসা।তাকেও হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে।এতদিন বিধবা ভাই-বৌয়ের খোজ নেয়নি এখন দরদ উথলে পড়ছে।অঝোরে কাদছেন মৃণালিণী দেবী,বিভুতি বাবু মাথায় হাত দিয়ে বসে।ময়না তদন্ত শেষ হলে মৃতদেহ দেওয়া হবে।ওয়াশ করলেও বিষ রক্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।মৃতদেহ কাকে দেওয়া হবে এই নিয়ে শুরু হয়েছে টানা পোড়েন।
সাধনের দাবী তার সহোদর ভাইয়ের বউ।বিয়ের পর বাপের বাড়ীর হক থাকে না। হাসপাতাল চত্বরে মায়ের কান্না অবশেষে সুপারের সিদ্ধান্ত মৃতার বাবাকেই সৎকারের অধিকার দেওয়া হল।
পূর্ণেন্দু বাসায় ফিরলে এলিনা বলল,বেরোলে বাড়ীর কথা খেয়াল থাকে না।
--আজ তোমার অফডে অন্য দিন তুমি কখন ফেরো?
--ঠিক আছে আমিও এবার থেকে কখন ফিরি দেখবে।
পূর্ণেন্দু পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমি মজা করে বললাম।
মজা খারাপ লাগেনা আসল জিনিসটা যদি একটু-- এলিনা মনে মনে ভাবে।এলিনা বলল,হয়েছে হয়েছে এবার হাত-মুখ ধুয়ে এসো।
এলিনাকে অন্যদিনের চেয়ে আজ একটু মুডি মনে হচ্ছে।ইয়াং বন্ধুরা এসেছিল নাকি?হাত-মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসে জিজ্ঞেস করে,তোমার ইয়াং বন্ধুরা এসেছিল?
তাতাই একথা কেন জিজ্ঞেস করল?চোখ তুলে বলল,ওদের সময় কোথায়?হঠাৎ একথা কেন জিজ্ঞেস করলে?
--না আসারই কথা।আজ একটা স্যাড ব্যাপার ঘটে গেছে।
এলিনার ভ্রু কুঞ্চিত হয়,কিসের স্যাড ব্যাপার?
--তুমি শোনোনি কিছু?
--কি করে শুনবো আমি কি বাইরে বাইরে ঘুরি?
--কিশোরের বউ মারা গেছে।
--হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল না?
--হ্যা ওয়াশ করে ডাক্তারবাবুরা চেষ্টা করেছিল।ততক্ষনে বিষ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেহে।কিশোরের দাদা হাসপাতালে গেছিল।
--কেন ভাই-বৌয়ের মৃতদেহ দেখতে।
--শুনলাম কিশোরের ফ্লাটটা হাতাবার মতলব।মানুষ এত লোভী হয়--।
মনোসিজের কথা মনে পড়ল।ছেলেটার অবস্থা তেমন ভাল নয় শুনেছে তবু অন্যের জিনিসের প্রতি কোনো লোভ নেই।কত ভাবে চেষ্টা করেছে ওকে সাহায্য করার কোনো সুযোগই দেয়নি।
মনোসিজ চুপচাপ বসে আছে।পূর্ণিমা কর্মকার মারা গেলেন আর তার পতন হল।এলিনা বৌদি তাকে হারিয়ে দিল।তার মধ্যে প্রবৃত্তি ছিল বলেই এলিনা বৌদি জাগাতে পেরেছে।নিজেকে অসুচি মনে হতে থাকে।
বঙ্কা লক্ষ্য করে মনা তখন থেকে চুপচাপ।জিজ্ঞেস করে,পূর্ণিমাবৌদির জন্য খারাপ লাগছে?
--মৃত্যু মাত্রই দুঃখজনক। কতভাবেই মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়।
কথাটা কানে যেতে শুভ বলল,আসলে লজ্জায় সুইসাইড করেছে।
মনোসিজ ফ্যাকাসে হাসে।সে যে কথা বলতে চায় তা এদের বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়।মনোসিজ উঠে দাঁড়ায় বলে,আজ আসি রে।
দিলীপ এসে ধরল বলল,আজ এলিনা তো?
--কলেজ থেকে ফিরতে দেরী হয়ে গেছিল।
একটা মিথ্যে ঢাকতে আরেকটা মিথ্যে বলতে হয়।এইভাবে ধীরে ধীরে নীচে নামতে থাকে মানুষ।
--আজ মিনু বাংলা পড়িয়েছে।শালা ভালই পড়ায় মাইরি।মিনুই আমার কথা ভাবে।বাড়িতে কেউ আমার সঙ্গে কথা বলে না।
একবার বলতে ইচ্ছে হল মিনুকে দেখে মেয়েদের একটু সম্মান করতে শেখ কিন্তু মনে এলেও বলতে পারেনা।মনোসিজ বলল,আজ আসি শরীরটা ভাল নেই।
তখনো রাত নামেনি তবু মনে হয় পৃথিবীটা বড় অন্ধকার।মনোসিজ ক্লান্ত পায়ে বাড়ীর দিকে হাটতে থাকে।অন্যদের মত হয়ে যাচ্ছে নিজেকে মনে মনে ভাবত অন্যর থেকে আলাদা।ভুল মানুষমাত্রই করে একথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চায় মনোসিজ।
বাসায় ফিরতে দরজা খুলে হিমানীদেবী বললেন,বাবা তোর শরীর খারাপ?
--কেন?
--চোখ মুখ কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।
মনোসিজ কি বলবে নিজের ঘরে চলে গেল।