16-08-2021, 05:19 PM
(This post was last modified: 14-12-2021, 07:21 PM by kumdev. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
।।১৩।।
নিজের সঙ্গে নিজেই বাজী ধরে এলিনা,মনোসিজ আসবে কি আসবে না।ছেলেটার অবচেতনে ভালোবাসার জন্য একটা কাঙালীপনা লক্ষ্য করেছে।বাইরে একটা ডাকাবুকো ভাব থাকলেও ছেলেটীর মন নরম প্রকৃতি।বহু মানুষের সঙ্গে মিশেছে এলিনা সেই অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে পাছে কোনো দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে সেজন্য এড়িয়ে চলে মেয়েদের।মাকে খুব ভালবাসে সম্ভবত মেয়েদের প্রতি সেজন্য একটা সমীহবোধ ওকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।তার ধারণা মনোসিজ আসবে।তবে কিছুটা খেয়ালী ধরণের সেজন্য আশঙ্কা হয় তার ধারণা নাও মিলতে পারে।
--ম্যাম আসতে পারি?কেটির কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ে।চোখ তুলে বলল,হ্যা এসো।
কেটি ভেতরে ঢুকে সামনা সামনি বসে জরুরী আলোচনা শুরু করে।
তিনদিন অপেক্ষা করার পর পূর্ণিমা স্থির করল আজ নিজে মহাকরণে যাবে।কেডিকে আগে কিছু বলার দরকার নেই মহাকরনে গেলেই তো দেখা হবে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কুমারী মেয়ের মত সাজগোজ করল।ছোটো নোটবুকে কেডির ডিটেলস লেখা আছে।অতবড় অফিসার খুজে নিতে অসুবিধে হবার কথা নয়।কেডি তার পরিচিত জানলে সবাই তাকে খাতির করবে।মিনিট তিনেক হেটে বাস রাস্তা।বাস স্টপে অপেক্ষমান যাত্রীদের দেখে মনটা নেচে উঠল।ঐ ছেলেটাই তো ভজুকে মেরেছিল।কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে বলল,তুমি মনোসিজ না?
আলাপ না থাকলেও মিসেস কর্মকারকে মনোসিজ চেনে বলল,হুউম।
--কোথায় যাবে?
--কলেজ যাচ্ছি।
ছেলেটি আলাপী নয় সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়।আপনি কোথায় যাচ্ছেন এরকম কিছু জিজ্ঞেস করবে আশা করেছিল।অগত্যা পূর্ণিমা নিজেই বলে,আমি মহাকরণে যাচ্ছি।
মহাকরণে কেন যাচ্ছে কি এমন দরকার পড়ল মহাকরণে যাবার সেসব জানার কোনো আগ্রহ নেই।
--তুমি আমার সঙ্গে যাবে?লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেলে পূর্ণিমা।
--আমার কলেজ আছে।
বোকাচোদা কলেজ আছে সেতো জানি।একজন মহিলার আহবানে মানুষ কত জরুরী কাজ ফেলে ছুটে যায়।ক্যালানে বলে কিনা কলেজ আছে।তবু হাল ছাড়েনা পূর্ণিমা বলল,একদিন এসো না আমার ফ্লাটে।একা থাকি গল্প করা যাবে।
বাস আসতে আলাপ এগোয় না।পূর্ণিমাকে ওঠার পরিসর দিয়ে মনোসিজ পরে উঠল।
শিব মন্দিরের স্টপেজে নেমে পড়ল জানলা দিয়ে দেখল পূর্ণিমা।ফ্লাটে এলে ভাল করে আলাপ করা যাবে।ছেলেটি মেরে কেটে তার চেয়ে আট-ন বছরের ছোটো হবে।বাস ছেড়ে দিতে মহাকরণ কেডির চিন্তায় ডুবে যায় পূর্ণিমা।বউবাজারে নেমে বাকী পথ হেটে যাবে মনে মনে স্থির করল।ফেরার সময় কেডির গাড়িতে ফিরবে।
ক্লাসে ঢুকে অনির্বাণের পাশে বসে সঞ্জীবকে না দেখে জিজ্ঞেস করল,সঞ্জীব আসেনি?
--মনি কলেজে ক্লাস করতে গেছে আমাকে বলল,প্রক্সি দিতে।
মনোসিজ হেসে বলল,একদিন ধরা পড়লে বুঝতে পারবে।
স্যার ঢুকতে ক্লাসে নীরবতা নেমে এল।
দোলতলায় উঠে পূর্ণিমা এদিক-ওদিক তাকায়।করিডোরে এক-আধজন যাতায়াত করছে।মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোককে পান চিবোতে চিবোতে আসতে দেখে পূর্ণিমা এগিয়ে গেল।শান্তিবাবুর সঙ্গে এক ভদ্রমহিলাকে কথা বলতে দেখে মনীশ কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি ব্যাপার শান্তিবাবু?
--এই মহিলা কেডিকে খুজছেন,পুরো নাম বলতে পারছেন না।
--আপনি কেদারদাকে চেনেন না?
--ও হ্যা কেদার দাস।আমার খেয়াল হয়নি।আপনি ঐ বেঞ্চে একটু বসুন আমি ডেকে দিচ্ছি।
পূর্ণিমা বেঞ্চে বসে স্বস্তির শ্বাস ফেলে।কেডিকে একডাকে চেনে উনি চিনতেই পারছেন না।ভাগ্যিস ঐ ইয়াং ছেলেটা এল।কিছুক্ষন পর ধুতির উপর শার্ট গায়ে হ্যাংলা মত একটা লোক এসে জিজ্ঞেস করল,আপনি কাউকে খুজছেন?
পূর্ণিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আমি কেডির কাছে এসেছি।
--আমিই কেডি।বলুন কি দরকারে এসেছেন?
--আপনি?উনি একজন সরকারী আমলা।মোটা মত সরকারী গাড়ীতে অফিসে আসেন।
--পুরো নাম কি বলুন।
--পুরো নাম ঠিক জানিনে সবাই ওকে কেডি বলেই চেনে।
--সরকারী মানে?
--নীল বাতি লাগানো নম্বর প্লেটে লেখা আছে গভ.অফ ডব্লিউবি।
ভদ্রলোক কিছুক্ষন ভেবে জিজ্ঞেস করেন,কি দরকারে এসেছেন আমাকে বলা যাবে?
পূর্ণিমা ধন্দ্বে পড়ে যায়।লোকটাকে চেনে না জানে না কোনো ফাদে পড়ে যাবে নাতো?
--থাক অসুবিধে থাকলে দরকার নেই।আমি এখানে বিশ বছর চাকরি করছি কেদার দাস বললে সবাই চিনবে।অনেক আমলাকে চিনি কিন্তু কেডি এই প্রথম আপনার কাছে শুনলাম।
--উনি আমাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন বলেছিলেন।
--চাকরি?দূরে ইয়াং ছেলেটাকে দেখে মনীশ বলে ডাকলেন।মনীশ কাছে আসতে বললেন,এই মহিলা বলছেন কেডি ওনাকে চাকরি করে দেবেন।
মনীশ ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,টাকা পয়সা কিছু নিয়েছে?
পূর্ণিমা কি করে বলবে কি নিয়েছে?সাত পাচ না ভেবে বলল,হ্যা নিয়েছে।
--কত টাকা?
--সর্বস্ব নিয়েছে।
একটি ছেলে চায়ের কলসী নিয়ে যাচ্ছিল মনীশ তাকে ডেকে চা দিতে বলল,ম্যাডামকেও দে।
ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন কৌতূহলী মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ে।একজন জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার মনীশ?
--আর বলিস না।চাকরি দেবার নাম করে এক ফেরেব্বাজ ভদ্রমহিলার সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে।
--কেমন দেখতে বলুব তো?
--পঞ্চাশের উপর বয়স মোটামত তার গাড়ীর নম্বর--।যতদূর সম্ভব পূর্ণিমা ওদের বলে।
--মিনীশ এসি সাহেব ওর অফিসে আছে।ওনাকে এসির কাছে নিয়ে যা।
মনীশের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণিমা মহাকরণের একটি দপ্তরে নিয়ে গেল।সেখানে অনেক পুলিশ ঘোরাফেরা করছে।
মনীশ ভিতরে ঢুকে বলল,স্যার এই মহিলা--।
--এখানে কেন থানায় নিয়ে যান।
--না স্যার খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে নিয়ে এলাম।
--আচ্ছা আপনি যান।পূর্ণিমার দিকে তাকিয়ে বললেন,আপনি বসুন।
ক্লাস শেষ হতে মনোসিজ বাস স্টপেজে গিয়ে বাসের অপেক্ষা করে।পিছন থেকে কাধে হাত পড়তে তাকিয়ে দেখল সঞ্জীব।
মনোসিজ বলল,এভাবে ক্লাস ফাকি দিয়ে কতকাল চালাবি?
সঞ্জীব গলা জড়িয়ে ধরে টানতে টানতে কিছুটা নিয়ে যেতে দেখল একটি মেয়ে মিট্মট করে হাসছে।মনোসিজ বলল,ছাড় বাস আসছে।
--কত বাস আসবে যাবে।চল এক কাপ চা খাই।নিকি এসো।
মেয়েটী সম্ভবত মনীন্দ্র কলেজের ছাত্রী।সঞ্জীব ওখান থেকে এই মেয়েটিকে জুটিয়েছে।তিনজনে একটা রেস্টোরেণ্টে ঢুকলো।
--আমার বেস্ট ফ্রেণ্ড মনোসিজ।উচ্চ মাধ্যমিকে দারুণ রেজাল্ট করেছে।
সঞ্জীব লাজুক হাসল।
--আমি দর্শন অনার্স করছি।নিকি বলল।
অন্য দিকে তাকিয়েও মনোসিজ বুঝতে পারে মেয়েটি তাকে আড়চোখে দেখছে।চা দিয়ে গেল।চায়ে চুমুক দিতে দিতে নিকি বলল,তোমাকে কেয়ার কথা বলিনি,খুব মজা হয়েছে।
--কেয়া যার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলে?
--হ্যা একটা ছেলে সিনেমা হলে নিয়ে গিয়ে যা অসভ্যতা করছিল শেষে অর্ধেক দেখে পালিয়ে এসেছে।
মনোসিজ ভাবে দিলীপের কথা বলছে নাতো?সেই মেয়েটাও বলেছিল দর্শন নিয়ে অনার্স করছে।কৌতূহল চেপে চায়ে চুমুক দিতে থাকে।
--কিছু কিছু ছেলে এরকম হারামী হয়।সঞ্জীব বলল।
মহাকরণে অফিসার অনেক তথ্য নিল।এমন খুচিয়ে খুচিয়ে জিজ্ঞেস করছিল মনে হয় সন্দেহ করছে কেডি তাকে চুদেছে।বিধ্বস্ত মন নিয়ে বাসার দিকে রওনা হল পূর্ণিমা।সব স্বপ্ন যেন পুরানো বাড়ীর মত তার মাথায় ভেঙ্গে পড়েছে।