Thread Rating:
  • 97 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব
#37
।।৪।।

মনসিজ বাস থেকে নেমে হাটতে হাটতে ফিরছে।লোন নিয়ে ফ্লাট কিনেছে বাবা।লোন শোধ করতে বেশ চাপের মধ্যে আছে।ভাবছে টিউশন শুরু করবে।রকে এখনো কেউ আসেনি।বাড়ী চলে যাবে ভাবছে দূর থেকে বঙ্কাকে আসতে দেখে অপেক্ষা করে।সকলে বঙ্কাকে হাভাগোবা মনে করলেও মনোসিজের মনে হয় বঙ্কা খুব সরল সাদাসিধে।বঙ্কা কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,কিরে কলেজ যাস নি?
--কলেজ থেকেই ফিরছি।
মনোসিজ ভাবে টিউশনের কথা বঙ্কাকে বলবে কিনা।বঙ্কা বলে,আজ শালা যা কেলেঙ্কারী হয়েছে।বঙ্কা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে আর কি।আবার কি কেলেঙ্কারীর খবর আনল বঙ্কা।
--ভোরবেলা দিলীপ গিয়ে বাড়িতে হাজির।কাল চিঠি দিয়েছে,স্নিগ্ধা আজ তার কি উত্তর দেয়--।ওদের মর্ণিং কলেজ।বললাম তোমাদের ব্যাপার বঙ্কাকে কেন কাবাব মে হাড্ডি করতে চাও।ও বলল,আজ তো কথা হবেনা ওর কাছ থেকে রিপ্লাইটা নিয়ে আসব।দুজনে হাটতে হাটতে বাস রাস্তায় গিয়ে দেখলাম মেয়েদের জটলা।স্নিগ্ধার পাশে ষণ্ডাগণ্ডা চেহারা ওর দাদা মূর্তিমান রিপ্লাই দাড়িয়ে,দিলীপ বলল বঙ্কা ভাগ।শালা উল্টো দিকে হাটা শুরু করলাম।ভাগ্যিস আমাদের দেখেনি।
--ভদ্রলোক দিলীপের বাড়ী আসতে পারতো?
--অতটা সাহস করবে না।তাছাড়া চিঠি দিলীপ দিয়েছে তার প্রমাণ কি?চিঠীতে দিলীপ নাম দেয়নি।
--দিলীপ কোথায়?
--এসে পড়বে।তুই আবার কিছু বলতে যাসনে।
ভোরবেলা এত কাণ্ড হয়েছে মনোসিজ বুঝতে পারে।বঙ্কা বলল,আমি একটা কথা ভাবি আমার চেহারা ভাল নয় বাপের পয়সা নেই কিন্তু দিলীপের কপালে কেন একটা মেয়ে জুটলো না?
--প্রেম অন্ধ নয় ভাল করে চোখ দিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়।
--মানে প্রেম চোখ দিয়ে দেখে মানে?
--হতে পারে ওদের অবস্থা ভাল কিন্তু দিলীপ মাধ্যমিক পাসও করেনি।কি দেখে মেয়েরা প্রেমে পড়বে বল।
--তুই একটু বুঝিয়ে বল।দুনিয়ার লোক পাশ করছে--।ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আসতে দেখে বঙ্কা বলল,এসব কথা এখন থাক।
--বঙ্কা তোকে একটা কথা বলছি।তোর তো অনেক লোকের সঙ্গে জানাশোনা।দেখিস তো কেউ যদি প্রাইভেট টিউটর রাখতে চায়--মানে মাধ্যমিক অবধি পড়াতে পারবো।
বঙ্কা বলল,তুই দিলীপকে পড়াবি বল আমি এক্ষুনি কথা বলছি--।
--কে আমাদের দিলীপ?
--তোর আপত্তি আছে?
--দিলীপ পড়তে চাইলে অবশ্যই পড়াবো কিন্তু ওর কাছ থেকে টাকা নিতে পারব না।
বঙ্কিম অবাক হয়ে মনোসিজের দিকে তাকিয়ে বলল,গুরু এইজন্য তোমাকে আমার ভাল লাগে।তুমি শালা অন্যদের চেয়ে আলাদা।চিন্তা কোরোনা তোমার টিউশনির ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
রকে বসতে বসতে নির্মল বলল,কে টিউশনি করবে মনা?
--হ্যা দেখিস তো কেউ যদি বলে--ক্লাস টেন অবধি পড়াতে পারবো।ছাত্র হলেই ভাল হয়।
--বছরের শেষ যারা টিউটর রাখে প্রথম দিকেই রাখে।দেখব কেউ বললে বলব।বঙ্কা ইলিনা বৌদি ফোন করেছিল শনিবার যেতে বলেছে।ভাবছি এবার মনাকেও নিয়ে যাবো।বৌদি হেভি মাই ডিয়ার।
ভদ্রমহিলার নাম শুনেছে আলাপ হয়নি।কম্পিউটারে মাস্টার পিস।রকের সামনে দিয়ে গাড়ীতে যেতে দেখেছে।ইলিনা বৌদি বলতে এরা সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।মনোসিজেরও আলাপ করার ইচ্ছে কিন্তু মহিলা বলে উৎসাহ দেখায় নি।মা ছাড়া কোনো মহিলার সঙ্গে তেমন কথা হয়না।
ধীরে ধীরে রকের ভীড় বাড়তে থাকে।নির্মল ইলিনা বৌদির কথা তুলতে আশিস বলল,বাসি খবর আমাকেও ফোন করেছে।
দিলীপকে নিয়ে বঙ্কিম একটু দূরে গিয়ে কি সব কথা বলতে থাকে।কিছুক্ষন পর ইশারায় ডাকতে মনোসিজ উঠে যায়।
বঙ্কিম বলল,বলো গুরু যা বলছিলে।
--তুই তো প্রাইভেটে মাধ্যমিক দিতে পারিস।মনোসিজ বলল।
--তা দিতে পারি কিন্তু কবে পড়েছি সব কি এখন মনে আছে।শালা ফেল করলে লোকে হাসাহাসি করবে।
--লোকে জানবে কেন?
দিলীপ ঠোট ছুচালো করে বলল,হুম-ম-ম।বঙ্কা বলছিল তুই গাইড করবি?
--করতে পারি কোনো টাকা পয়সা নিতে পারব না।
--তাহলেই গাড় মারিয়েছে।
--কেন গাড় মারানোর কি হল?বঙ্কা বলল।
দিলীপ আচমকা মনোসিজকে জড়িয়ে ধরে বলল,আগে কেউ আমাকে এরকম বলেনি।তোর সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি কিছু মনে করিস না।
--ঠিক আছে পরে কথা হবে,বঙ্কা মনে থাকে যেন টপ সিক্রেট।
দিলীপকে জড়িয়ে ধরতে দেখে আশিসের ভ্রু কুঞ্চিত হয়।কি এমন কথা হচ্ছে।শৈবালের দিকে তাকিয়ে বলল,মাগীদের মত ওরা কি এত গুজগুজ  ফুস ফুস করছে?
--এইতো তুমি বঙ্কাকে বলছিলে তুমি নিজেই তো মুখ খারাপ করছো।শৈবাল বলল।
--আমি মুখ খারাপ করলাম?আশিসের গলায় বিস্ময়।
--তুমি বললে না ইয়েদের মত?
একটু দূরে রীমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নির্মল দ্রুত উঠে গেল।কাছে গিয়ে বলল,ওদিকে চলো।
দুজনে হাটতে হাটতে এগোতে থাকে।রীমা বলল,এই ফিরছি খুব ক্ষিধে পেয়েছে।যে জন্য তোমাকে ডেকেছি।
--কলেজ থেকে আসছো?
--হ্যা দেখছো না হাতে বই।এ্যাই শোনো আমার একটা পেন ড্রাইভ পাচ্ছিনা।এলিনাবৌদির বাসায় ফেলে এলাম কিনা মনে করতে পারছিনা।তোমরা তো ওখানে যাও--।
--হ্যা কালকেই যেতে পারি।
--একটু খোজ নিও তো ওখানে ফেলে এসেছি কিনা?
--কি বললে?
--পেন ড্রাইভ।ছোট্ট মত পেন ড্রাইভ বললেই বৌদি বুঝবে।
--কিরে তোরা কি ওখানেই কাটিয়ে দিবি?শুভ বঙ্কাদের দিকে মন্তব্য ছুড়ে দেয়।
ওরা এসে রকে বসতেই শুভ জিজ্ঞেস করল,দিলীপ তোর মিশনের খবর বল।
দিলীপ চোখ তুলে বঙ্কার দিকে তাকাতে বঙ্কা বলল,সকালের পর এই প্রথম শুভর সঙ্গে দেখা।
--মিশন ফেল।দিলীপ বলল।
--রিপ্লাই দেয়নি?
--মেয়েটা হেভি হারামী শালা ওর দাদাকে সঙ্গে করে এনেছে।
আশিস হাত তুলে বলল,আস্তে আস্তে একটা হল্লা আসছে না? কান খাড়া করে আশিস বোঝার চেষ্টা করে।মনে হচ্ছে খাটাল থেকে আসছে এই চলতো--।
সবাই খাটালের দিকে ছুট লাগালো।গিয়ে জানা গেল ছুন্নু মাতাল মাল খেয়ে এসে বউকে পেটাচ্ছে।বউয়ের শাড়ী আলুথালু চুলের মুঠী ধরে আছে ছুন্নু মাতাল।বউটা তারস্বরে চিৎকার করছে।আশিস দ্রুত ছুন্নু মাতালের হাত চেপে ধরে টানতে থাকে।মাতাল টাল সামলাতে না পেরে টলে পড়ে যায়।ছুন্নু মাতালের বউয়ের সঙ্গে সঙ্গে রণং দেহী চেহারা,আপনেরা আসছেন ক্যান? খপরদার বলছি ওর গায়ে হাত দিবেন না।
বউয়ের হুমকিতে ওরা অপ্রস্তুত।মনোসিজ বোঝার চেষ্টা করে যে লোকটা তাকে মারছিল তারই জন্য মহিলা রুখে দাড়িয়েছে।মহিলা তার স্বামীকে সযত্নে মাটি থেকে তুলে দাড় করিয়ে বলল,আপনেরা যান।
--এই সব মাগীর প্যাদান খাওয়াই ভাল।চলতো ফালতু ঝামেলা।কথাটা বলেই আশিস রকের দিকে চলতে শুরু করে।জমে থাকা ভীড় পাতলা হয় ক্রমশ।এত অল্পেতে ব্যাপারটা শেষ হয়ে গেল দেখে কেউ কেউ কিছুটা হতাশ। আশিসের মত সহজে বিষয়টা উড়িয়ে দিতে পারেনা মনোসিজ।বউয়ের যেমন ডাগর চেহারা ইচ্ছে করলে একাই ছুন্নুমাতালকে মোকাবিলা করতে পারতো তবু আঘাতের বদলে স্বামীকে প্রত্যাঘাত করেনি। মনে মনে ভাবে ধন্য ভারতীয় নারী।কেউ তোমাকে বুঝলো না। 
সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে অফিস ফেরৎ মানুষজন একে একে বাড়ি ফিরছে।বাবা ফেরার সময় হয়ে গেছে মনোসিজ বলল,আজ আসিরে।
নির্মল বলল,কালকের প্রোগ্রাম মনে আছে তো?মনোসিজ হেসে বাড়ির পথ ধরে।পিছন থেকে দিলীপ এসে বলল,আমি ঠিক করেছি প্রাইভেটে পরীক্ষা দেব।বাবা শুনলে খুব খুশি হবে।তুই আমাকে পড়াবি কথা দিয়েছিস। 
[+] 14 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ছাইচাপা আগুন ।।কামদেব - by kumdev - 05-08-2021, 08:51 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)