07-09-2020, 12:46 AM
আপডেট ৮:
ঘুম থেকে উঠে আজ নিজেকে অনেক ফ্রেস লাগছিলো অনুপমার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘড়িতে সাতটা বাজছে। মনে পড়লো তার আটটা থেকে নাচের কলেজ। এই বাড়িতেই সে কলেজটা খুলেছে। নাগেশ্বরের কথাতেই। নিজের দুঃখ কিছুটা ভোলার জন্য নাগেশ্বরের সাথে কথা বলে সেই মতো ব্যবস্থা করেছে সে। সেই মতো আজ তিনমাস হলো সে বাচ্ছাদের জন্য কলেজ তা খুলেছে। জনা দশেক খুদে শিক্ষার্থী তার। ঝটপট নিজেকে রেডি করলো অনুপমা। আজ যেন সমস্ত কাজেই সে আলাদা উৎসাহ পাচ্ছে। সালোয়ার কামিজ পরে নিচে নেমে এলো।
রান্নাঘরে এসে দেখলো, মালতি ব্রেকফার্স্ট রেডি করে ফেলেছে। মালতিকে তারা দিলো অনুপমা। মালতি টেবিলে খাবার সাজাতে সাজতে অনুপমার দিকে একটু অবাক চোখে তাকালো। অনুপমা নাগেশ্বরের ব্যাপারে খোঁজ নিলো। তার শশুরমশাই ব্যায়াম শেষ করে নিজের ঘরেই ব্রেকফার্স্ট শেষ করেছে। বিয়ের পর থেকে দুপুর আর রাতের খাবার বাদ দিয়ে, একসাথে দেখা হয় না। কিন্তু অনুপমা আজ খেতে খেতে ববললো - মাসী কাল থেকে বাবার আর আমার ব্রেকফার্স্ট এখানেই দেবে। আমি আজ বাবার সাথে কথা বলে রাখবো।
মালতি অনুপমার কথায় খুশি হলো। বললো - সেতো খুব ভালো বৌদিমণি। মানুষটা একা একা থাকে আর তুমিও। তুমি বললে শুনবে আমি বললে পাত্তায় দেবে না। যা হয়ে গেছে তা গেছে, কিন্তু তোমরা দুজনে মুখ গোমড়া করে থাকো দেখে আমারি কষ্ট হয়।
অনুপমা এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইলো। বললো - মাসী, তুমি আজ দুপুরে কি করছো।
- তেমন কিছু না বৌদিমণি। কেন বোলো, তোমার কি কিছু করে দিতে হবে? বোলো আমি করে দোবো।
- সেরকম কিছু না মাসী, আসলে এই বাড়িতে কথা বলার কাওকে পাইনা। তাই তোমার সাথেই একটু কথা বলে সময় কাটাবো ভাবছিলাম।
মালতি আরো খুশি হলো। - ঠিক আছে বৌদিমণি, খাবার পরে আমি কাজ গুছিয়ে তোমার ঘরে চলে যাবো।
খাবার শেষ করে অনুপমা উঠে পড়লো। তার খুদেরা আসতে শুরু করেছে। আজ নাচে নিজের মনের খুশির ছোঁয়া তাদের লাগলো। তারা তো খুব খুশি। এতদিন গোমড়া মুখ দেখেছে তারা, আজ হাসিখুশি অনুপমাকে দেখে তারাও খুশি হয়ে উঠলো।
নাচের কলেজ এগারোটায় শেষ করে সে নিজের ঘরে এলো। অন্যদিন সে এই সময়টা ক্লান্ত মনে করতো, তাই শুয়ে পড়তো। কিন্তু আজ যেন তার কোনো ক্লান্তি নেই। ঘরে এসে বাথরুমে গিয়ে ভালো করে চান করলো। সাথে নিজের দেহের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করলো। নিজের নির্লোম যোনীটা দেখে নিজেই খুশি হলো। বাথরুমের আয়নায় নিজের শরীর টা ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। কোথাও কোনো খুঁত রয়ে গেছে কিনা। শেষে সন্তুষ্ট হয়ে ভেজা শরীরে তোয়ালে মুড়ে বেরিয়ে এলো। আলমারি থেকে একটা কমলা রঙের শিফন শাড়ি বেছে নিলো, সাথে ম্যাচিং সায়া আর ব্লাউস। ব্রা আর প্যান্টিটা সাদা কালারের বেছে নিলো। তারপরে সময় নিয়ে সাজতে বসলো। এই করতেই তার দু ঘন্টা চলে গেলো। অন্যদিন সে শুধু সালোয়ার কামিজ পরেই থাকত, শুধু রাতে শোবার আগে চেঞ্জ করে রাত্রিবাস পড়তো। কিন্তু এখন থেকে যে নতুন জীবন সে শুরু করতে চলেছে।
কাঁটায় কাঁটায় দুপুর একটার সময় সে রান্নাঘরে চলে এলো। নাগেশ্বর দুপুরের খাবার ঠিক একটার সময় খায়। মালতি অনুপমার নূতন রূপ দেখে রীতিমতো অবাক। কিন্তু মনের কথা মনে চেপে সে খাবার পরিবেশন করতে লাগলো। নাগেশ্বরও অনুপমার এই রূপ দেখে অবাক হয়েছে। সাথে মনে মনে খুশি হলো। যাক মেয়েটা সাজগোজ করেছে, মনটা ভালো থাকবে। তাও খেতে খেতে বললো - আজ কি কোন অনুষ্ঠান আছে বৌমা।
- না বাবা। এমনি অনেকদিন সাজিনি, তাই ভাবলাম একটু সাজবো। কেন আপনার ভালো লাগছে না।
- তা কেন হবে বৌমা। তুমি সাজলে তোমাকে খুব ভালো লাগে। তোমাকে আজ বেশ হাসিখুশিও লাগছে বৌমা। এটাই তো চাই বৌমা। তুমি মুখ ভার করে থাকো, আমারি কষ্ট হয়।
- ঠিক আছে বাবা, এবার থেকে আমি সেজে গুজেই থাকবো। মুখ ভার করবো না বাবা।
- না না, আমি তোমাকে জোর করছি না, বৌমা।
- না বাবা, আমি নিজের মন থেকেই বলছি বাবা। সাজার পরে আমার নিজের মনটাও খুব ভালো লাগছে। তাই আমিও ঠিক করেছি, আমি এবার থেকে সেজেগুজেই থাকবো। আমি নিজের মতো সাজলে আপনার অসুবিধা নেই তো বাবা।
- আমার কেন অসুবিধা হবে। তুমি নিজের মতো করে সাজলে, সেটাই তো সবচেয়ে ভালো সাজ। তাতেই তো তোমাকে সুন্দরী লাগবে। জোর করে সাজলে সেটা ঠিক যেন মানায় না। তবে যাই বোলো বৌমা তোমাকে আজ হাসিখুশি দেখে আজ আমার মনটাও বেশ ভালো লাগছে।
- থ্যাংকস বাবা। আর একটা দাবি আছে বাবা।
- ওরে বাবা , কি দাবী।
- কিছু না, কাল থেকে আপনি এই নীচেতে বসেই ব্রেকফাস্ট করবেন। আপনার ছেলের জন্য আমি চাইনা আপনি শুধু শুধু কষ্ট পান।
- কষ্ট তো শুধু আমার একার না বৌমা, আর তার জন্য নয়, আমি তোমার জন্য কষ্ট পাই।
- যে আমার কোনো কিছুরই দায়িত্ব নেয়নি, তার কথা আমি আর ভাবতে চাইনা বাবা। আমি ওটা ভুলতে চাই। ওটা একটা দুর্ঘটনা হিসাবে শুধু মনে রাখতে চাই।
- বেশ, তাই হবে বৌমা। ভালো কথা মনে করালে। এতদিন আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। কিন্তু আজ নিয়ে নিলাম।
- কিসের ব্যাপারে বাবা।
- তেমন কিছু না, পরে বলবো তোমায়।
খাবার পরে নাগেশ্বর নিজের ঘরে চলে এলো। আজ তার মন থেকে একটা বোঝা নেমে গেছে। নিজের স্ত্রীর প্রতি কোনো দায়িত্ব দেবরাজ পালন করেনি। তাই তিনি মনে মনে ঠিক করেছিলেন কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। কিন্তু আজ নিয়ে নিলেন। তাই নিজের ঘরে এসে নিজের পরিচিত এক উকিল কে ফোন করলেন। তাকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সেই মতো ব্যবস্থা করতে বললেন।
এদিকে মালতি নিজের হাতের কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি অনুপমার ঘরে এসে হাজির হলো। তার মন বলছিলো, আজ কিছু একটা ঘটবে।
মালতিকে আসতে দেখে অনুপমা খাটে হেলান দিয়ে বসলো। মালতি মাটিতে বসতে গেলে অনুপমা বাধা দিলো। বললো - মাসী, তুমি এই বাড়ির কাজের লোক নও, বাবা তোমাকে এই বাড়ির একজন ভাবে। আর আমিও, তাই আর কখনো মাটিতে বসবে না।
মালতি কথা না বাড়িয়ে খাটের এক কোনে বসলো।
অনুপমা মালতির কাছ থেকে এই বাড়ির পূর্বইতিহাস জানতে লাগলো। কথায় কথায় অনুপমা জিজ্ঞাসা করলো - আচ্ছা মাসী একটা কথা বলবে।
- হাঁ বোলো বৌদিমণি।
- বাবা, আর বিয়ে করলেন না কেন? আমার শাশুড়ি মা মারা যাবার সময় ওনার বয়স তো বেশি ছিল না ?
- তোমার মতন বৌদিমণি। দাদাবাবুর বাবা অনেক বলেছিলেন কিন্তু দাদাবাবু রাজি হননি। আসলে দাদাবাবু খুব ভালোবাসতেন বৌদিমণিকে , মানে তোমার শাশুড়িকে।
- কিন্তু এত দিন ধরে নিজেকে শুধু শুধু কষ্ট দিলেন। ছেলেও তো বাবার কথা একবার ভাবলো না ওনার ভাগ্যটাই খারাপ।
- তা যা বলেছো বৌদিমণি। তোমার আর দাদাবাবুর ভাগ্য যেন এক। কিছু মনে করো না বৌদিমণি, মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো।
- না মনে করিনি মাসী। আচ্ছা মাসী, তোমাকে বলেই জিজ্ঞাসা করছি, শুধু মেয়েলি কৌতূহল। বাবা কি তাহলে তারপর থেকেই এই রকম নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন।
মালতি বুদ্ধিমতী মেয়ে। অনুপমার এই কথায় সে ভালো করে অনুপমা কে দেখলো। তার কাছে অনেকটাই যেন পরিষ্কার হলো অনুপমার আজকের এই বদলের কারণ। বেশকিছু অল্প বয়সী মেয়েও তো দাদাবাবুর শয্যাসঙ্গী হয়েছে সে জানে। দাদাবাবুর ওই রূপের আগুনে পুড়েছে। তাদের কে সাজিয়ে গুছিয়ে সেই তো পাঠিয়ে ছিল। দাদাবাবুর কোনটা ভালো লাগে তা সে জানে। দাদাবাবুই তাকে বলেছিলো। অনুপমা অস্বস্তিতে পড়লো। মালতির তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকাটা সে সহ্য করতে পারলো না। নিজের থেকেই সে মাথা নিচু করে নিলো। মালোতি একটু চুপ করে থেকে উঠে দাঁড়ালো। অনুপমা ভয় পেলো, তাহলে কি তার সব কিছু বৃথা হয়ে গেলো। কিন্তু অনুপমাকে অবাক করে মালতি ঘরের দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে আবার খাটে এসে বসলো। তারপর বললো - বৌদিমণি, তুমি নির্ভয়ে এবার বোলো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, প্রাণ থাকতে আমার কাছ থেকে কেও কোনো কথা বার করতে পারবে না। কেও না বুঝুক, আমি তো বুঝি বৌদিমণি, তোমার কষ্ট।
অনুপমা চোখ তুলে তাকালো মালতির দিকে। তার অজান্তেই তার চোখ ছলছল করে উঠলো। কিন্তু একটু সামলে বললো - মাসী আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববে নাতো।
মালতি অনুপমার কাছে এগিয়ে এসে বসলো, তারপর নিচু গলায় বললো - যদি ভাবতাম, তাহলে দরজাটা বন্ধ করতাম না মা।
এই মেয়েটার প্রতি মালতির একটা দুর্বলতা হয়ে গেছে। নিজের ছেলে পুলে নেই তার। তাই মনে মনে অনুপমাকে মালতি মেয়ের চোখেই দেখে এখন। মালতির কাছে মা ডাক শুনে অনুপমা আরো নরম হলো। বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকলো। মালতি অপেক্ষা করছিলো। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে অনুপমা বললো - আসলে, মাসী, মনে মনে আমি ভালোবেসে ফেলেছি ওই মানুষটাকে। এতদিন ভাবতাম, যাই মানুষটাকে তো চোখের সামনে দেখতে পাবো। কিন্তু কালকে সিদ্ধান্ত নিলাম, একবার চেষ্টা করে দেখিনা, যদি ওনার মনে আমার একটা জায়গা তৈরী করতে পারি। এখন তুমি যদি হেল্প কোরো মানে সাহায্য করো। তোমাকে লোকাতে চাইনি, তাই তোমাকে বললাম।
- চাওনি ভালো করেছো বৌদিমণি, আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারতে না। তবে তুমি চিন্তা করো না বৌদিমনি, আমিও চাই তোমাদের দুজনের একটা হিল্লে হোক। তোমাদের দুজনের গোমড়া মুখ দেখতে দেখতে আমার জীবনটা ঝালাপালা হয়ে গেলো।
মালতীর কপট রাগের কথাই অনুপমা হেসে ফেললো। বললো - ঠিক আছে মাসী, এবার তাহলে তুমি বোলো কি করবো। তোমার বেশ বুদ্ধি আছে। তোমার দাদাবাবুকে কি ভাবে ঘায়েল করতে পারা যাই বোলো।
অনুপমার কথায় মালতিও হেসে ফেললো, বললো - তার আমি কি জানি ছুড়ি, তুই মতলব করছিস, তুই ভাব কিভাবে আমার দাদাবাবুকে পটাবি।
- ইস, মাসী, কি অসভ্য তুমি।
বলে খিলখিল করে হেসে ফেললো। মালতিও যোগ দিলো। হাসি থামলে মালতি বললো - আমার কাছে উপায় জানতে হলে তো, পারিশ্রমিক লাগবে আমার।
- তাই তা কি দিতে হবে বোলো।
- কিছু না, আমাকে তাড়াতে পারবি না, ব্যাস।
- শুধু শুধু তোমাকে তাড়াতে যাবো কেন।
- তা কি জানি, তোমরা দুজনে দুধে আমে মিশে যাবে মাঝখান থেকে আমি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাবো।
ঘুম থেকে উঠে আজ নিজেকে অনেক ফ্রেস লাগছিলো অনুপমার। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ঘড়িতে সাতটা বাজছে। মনে পড়লো তার আটটা থেকে নাচের কলেজ। এই বাড়িতেই সে কলেজটা খুলেছে। নাগেশ্বরের কথাতেই। নিজের দুঃখ কিছুটা ভোলার জন্য নাগেশ্বরের সাথে কথা বলে সেই মতো ব্যবস্থা করেছে সে। সেই মতো আজ তিনমাস হলো সে বাচ্ছাদের জন্য কলেজ তা খুলেছে। জনা দশেক খুদে শিক্ষার্থী তার। ঝটপট নিজেকে রেডি করলো অনুপমা। আজ যেন সমস্ত কাজেই সে আলাদা উৎসাহ পাচ্ছে। সালোয়ার কামিজ পরে নিচে নেমে এলো।
রান্নাঘরে এসে দেখলো, মালতি ব্রেকফার্স্ট রেডি করে ফেলেছে। মালতিকে তারা দিলো অনুপমা। মালতি টেবিলে খাবার সাজাতে সাজতে অনুপমার দিকে একটু অবাক চোখে তাকালো। অনুপমা নাগেশ্বরের ব্যাপারে খোঁজ নিলো। তার শশুরমশাই ব্যায়াম শেষ করে নিজের ঘরেই ব্রেকফার্স্ট শেষ করেছে। বিয়ের পর থেকে দুপুর আর রাতের খাবার বাদ দিয়ে, একসাথে দেখা হয় না। কিন্তু অনুপমা আজ খেতে খেতে ববললো - মাসী কাল থেকে বাবার আর আমার ব্রেকফার্স্ট এখানেই দেবে। আমি আজ বাবার সাথে কথা বলে রাখবো।
মালতি অনুপমার কথায় খুশি হলো। বললো - সেতো খুব ভালো বৌদিমণি। মানুষটা একা একা থাকে আর তুমিও। তুমি বললে শুনবে আমি বললে পাত্তায় দেবে না। যা হয়ে গেছে তা গেছে, কিন্তু তোমরা দুজনে মুখ গোমড়া করে থাকো দেখে আমারি কষ্ট হয়।
অনুপমা এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইলো। বললো - মাসী, তুমি আজ দুপুরে কি করছো।
- তেমন কিছু না বৌদিমণি। কেন বোলো, তোমার কি কিছু করে দিতে হবে? বোলো আমি করে দোবো।
- সেরকম কিছু না মাসী, আসলে এই বাড়িতে কথা বলার কাওকে পাইনা। তাই তোমার সাথেই একটু কথা বলে সময় কাটাবো ভাবছিলাম।
মালতি আরো খুশি হলো। - ঠিক আছে বৌদিমণি, খাবার পরে আমি কাজ গুছিয়ে তোমার ঘরে চলে যাবো।
খাবার শেষ করে অনুপমা উঠে পড়লো। তার খুদেরা আসতে শুরু করেছে। আজ নাচে নিজের মনের খুশির ছোঁয়া তাদের লাগলো। তারা তো খুব খুশি। এতদিন গোমড়া মুখ দেখেছে তারা, আজ হাসিখুশি অনুপমাকে দেখে তারাও খুশি হয়ে উঠলো।
নাচের কলেজ এগারোটায় শেষ করে সে নিজের ঘরে এলো। অন্যদিন সে এই সময়টা ক্লান্ত মনে করতো, তাই শুয়ে পড়তো। কিন্তু আজ যেন তার কোনো ক্লান্তি নেই। ঘরে এসে বাথরুমে গিয়ে ভালো করে চান করলো। সাথে নিজের দেহের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করলো। নিজের নির্লোম যোনীটা দেখে নিজেই খুশি হলো। বাথরুমের আয়নায় নিজের শরীর টা ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। কোথাও কোনো খুঁত রয়ে গেছে কিনা। শেষে সন্তুষ্ট হয়ে ভেজা শরীরে তোয়ালে মুড়ে বেরিয়ে এলো। আলমারি থেকে একটা কমলা রঙের শিফন শাড়ি বেছে নিলো, সাথে ম্যাচিং সায়া আর ব্লাউস। ব্রা আর প্যান্টিটা সাদা কালারের বেছে নিলো। তারপরে সময় নিয়ে সাজতে বসলো। এই করতেই তার দু ঘন্টা চলে গেলো। অন্যদিন সে শুধু সালোয়ার কামিজ পরেই থাকত, শুধু রাতে শোবার আগে চেঞ্জ করে রাত্রিবাস পড়তো। কিন্তু এখন থেকে যে নতুন জীবন সে শুরু করতে চলেছে।
কাঁটায় কাঁটায় দুপুর একটার সময় সে রান্নাঘরে চলে এলো। নাগেশ্বর দুপুরের খাবার ঠিক একটার সময় খায়। মালতি অনুপমার নূতন রূপ দেখে রীতিমতো অবাক। কিন্তু মনের কথা মনে চেপে সে খাবার পরিবেশন করতে লাগলো। নাগেশ্বরও অনুপমার এই রূপ দেখে অবাক হয়েছে। সাথে মনে মনে খুশি হলো। যাক মেয়েটা সাজগোজ করেছে, মনটা ভালো থাকবে। তাও খেতে খেতে বললো - আজ কি কোন অনুষ্ঠান আছে বৌমা।
- না বাবা। এমনি অনেকদিন সাজিনি, তাই ভাবলাম একটু সাজবো। কেন আপনার ভালো লাগছে না।
- তা কেন হবে বৌমা। তুমি সাজলে তোমাকে খুব ভালো লাগে। তোমাকে আজ বেশ হাসিখুশিও লাগছে বৌমা। এটাই তো চাই বৌমা। তুমি মুখ ভার করে থাকো, আমারি কষ্ট হয়।
- ঠিক আছে বাবা, এবার থেকে আমি সেজে গুজেই থাকবো। মুখ ভার করবো না বাবা।
- না না, আমি তোমাকে জোর করছি না, বৌমা।
- না বাবা, আমি নিজের মন থেকেই বলছি বাবা। সাজার পরে আমার নিজের মনটাও খুব ভালো লাগছে। তাই আমিও ঠিক করেছি, আমি এবার থেকে সেজেগুজেই থাকবো। আমি নিজের মতো সাজলে আপনার অসুবিধা নেই তো বাবা।
- আমার কেন অসুবিধা হবে। তুমি নিজের মতো করে সাজলে, সেটাই তো সবচেয়ে ভালো সাজ। তাতেই তো তোমাকে সুন্দরী লাগবে। জোর করে সাজলে সেটা ঠিক যেন মানায় না। তবে যাই বোলো বৌমা তোমাকে আজ হাসিখুশি দেখে আজ আমার মনটাও বেশ ভালো লাগছে।
- থ্যাংকস বাবা। আর একটা দাবি আছে বাবা।
- ওরে বাবা , কি দাবী।
- কিছু না, কাল থেকে আপনি এই নীচেতে বসেই ব্রেকফাস্ট করবেন। আপনার ছেলের জন্য আমি চাইনা আপনি শুধু শুধু কষ্ট পান।
- কষ্ট তো শুধু আমার একার না বৌমা, আর তার জন্য নয়, আমি তোমার জন্য কষ্ট পাই।
- যে আমার কোনো কিছুরই দায়িত্ব নেয়নি, তার কথা আমি আর ভাবতে চাইনা বাবা। আমি ওটা ভুলতে চাই। ওটা একটা দুর্ঘটনা হিসাবে শুধু মনে রাখতে চাই।
- বেশ, তাই হবে বৌমা। ভালো কথা মনে করালে। এতদিন আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। কিন্তু আজ নিয়ে নিলাম।
- কিসের ব্যাপারে বাবা।
- তেমন কিছু না, পরে বলবো তোমায়।
খাবার পরে নাগেশ্বর নিজের ঘরে চলে এলো। আজ তার মন থেকে একটা বোঝা নেমে গেছে। নিজের স্ত্রীর প্রতি কোনো দায়িত্ব দেবরাজ পালন করেনি। তাই তিনি মনে মনে ঠিক করেছিলেন কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। কিন্তু আজ নিয়ে নিলেন। তাই নিজের ঘরে এসে নিজের পরিচিত এক উকিল কে ফোন করলেন। তাকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে সেই মতো ব্যবস্থা করতে বললেন।
এদিকে মালতি নিজের হাতের কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি অনুপমার ঘরে এসে হাজির হলো। তার মন বলছিলো, আজ কিছু একটা ঘটবে।
মালতিকে আসতে দেখে অনুপমা খাটে হেলান দিয়ে বসলো। মালতি মাটিতে বসতে গেলে অনুপমা বাধা দিলো। বললো - মাসী, তুমি এই বাড়ির কাজের লোক নও, বাবা তোমাকে এই বাড়ির একজন ভাবে। আর আমিও, তাই আর কখনো মাটিতে বসবে না।
মালতি কথা না বাড়িয়ে খাটের এক কোনে বসলো।
অনুপমা মালতির কাছ থেকে এই বাড়ির পূর্বইতিহাস জানতে লাগলো। কথায় কথায় অনুপমা জিজ্ঞাসা করলো - আচ্ছা মাসী একটা কথা বলবে।
- হাঁ বোলো বৌদিমণি।
- বাবা, আর বিয়ে করলেন না কেন? আমার শাশুড়ি মা মারা যাবার সময় ওনার বয়স তো বেশি ছিল না ?
- তোমার মতন বৌদিমণি। দাদাবাবুর বাবা অনেক বলেছিলেন কিন্তু দাদাবাবু রাজি হননি। আসলে দাদাবাবু খুব ভালোবাসতেন বৌদিমণিকে , মানে তোমার শাশুড়িকে।
- কিন্তু এত দিন ধরে নিজেকে শুধু শুধু কষ্ট দিলেন। ছেলেও তো বাবার কথা একবার ভাবলো না ওনার ভাগ্যটাই খারাপ।
- তা যা বলেছো বৌদিমণি। তোমার আর দাদাবাবুর ভাগ্য যেন এক। কিছু মনে করো না বৌদিমণি, মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেলো।
- না মনে করিনি মাসী। আচ্ছা মাসী, তোমাকে বলেই জিজ্ঞাসা করছি, শুধু মেয়েলি কৌতূহল। বাবা কি তাহলে তারপর থেকেই এই রকম নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছেন।
মালতি বুদ্ধিমতী মেয়ে। অনুপমার এই কথায় সে ভালো করে অনুপমা কে দেখলো। তার কাছে অনেকটাই যেন পরিষ্কার হলো অনুপমার আজকের এই বদলের কারণ। বেশকিছু অল্প বয়সী মেয়েও তো দাদাবাবুর শয্যাসঙ্গী হয়েছে সে জানে। দাদাবাবুর ওই রূপের আগুনে পুড়েছে। তাদের কে সাজিয়ে গুছিয়ে সেই তো পাঠিয়ে ছিল। দাদাবাবুর কোনটা ভালো লাগে তা সে জানে। দাদাবাবুই তাকে বলেছিলো। অনুপমা অস্বস্তিতে পড়লো। মালতির তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকাটা সে সহ্য করতে পারলো না। নিজের থেকেই সে মাথা নিচু করে নিলো। মালোতি একটু চুপ করে থেকে উঠে দাঁড়ালো। অনুপমা ভয় পেলো, তাহলে কি তার সব কিছু বৃথা হয়ে গেলো। কিন্তু অনুপমাকে অবাক করে মালতি ঘরের দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে আবার খাটে এসে বসলো। তারপর বললো - বৌদিমণি, তুমি নির্ভয়ে এবার বোলো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি, প্রাণ থাকতে আমার কাছ থেকে কেও কোনো কথা বার করতে পারবে না। কেও না বুঝুক, আমি তো বুঝি বৌদিমণি, তোমার কষ্ট।
অনুপমা চোখ তুলে তাকালো মালতির দিকে। তার অজান্তেই তার চোখ ছলছল করে উঠলো। কিন্তু একটু সামলে বললো - মাসী আমাকে খারাপ মেয়ে ভাববে নাতো।
মালতি অনুপমার কাছে এগিয়ে এসে বসলো, তারপর নিচু গলায় বললো - যদি ভাবতাম, তাহলে দরজাটা বন্ধ করতাম না মা।
এই মেয়েটার প্রতি মালতির একটা দুর্বলতা হয়ে গেছে। নিজের ছেলে পুলে নেই তার। তাই মনে মনে অনুপমাকে মালতি মেয়ের চোখেই দেখে এখন। মালতির কাছে মা ডাক শুনে অনুপমা আরো নরম হলো। বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকলো। মালতি অপেক্ষা করছিলো। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে অনুপমা বললো - আসলে, মাসী, মনে মনে আমি ভালোবেসে ফেলেছি ওই মানুষটাকে। এতদিন ভাবতাম, যাই মানুষটাকে তো চোখের সামনে দেখতে পাবো। কিন্তু কালকে সিদ্ধান্ত নিলাম, একবার চেষ্টা করে দেখিনা, যদি ওনার মনে আমার একটা জায়গা তৈরী করতে পারি। এখন তুমি যদি হেল্প কোরো মানে সাহায্য করো। তোমাকে লোকাতে চাইনি, তাই তোমাকে বললাম।
- চাওনি ভালো করেছো বৌদিমণি, আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারতে না। তবে তুমি চিন্তা করো না বৌদিমনি, আমিও চাই তোমাদের দুজনের একটা হিল্লে হোক। তোমাদের দুজনের গোমড়া মুখ দেখতে দেখতে আমার জীবনটা ঝালাপালা হয়ে গেলো।
মালতীর কপট রাগের কথাই অনুপমা হেসে ফেললো। বললো - ঠিক আছে মাসী, এবার তাহলে তুমি বোলো কি করবো। তোমার বেশ বুদ্ধি আছে। তোমার দাদাবাবুকে কি ভাবে ঘায়েল করতে পারা যাই বোলো।
অনুপমার কথায় মালতিও হেসে ফেললো, বললো - তার আমি কি জানি ছুড়ি, তুই মতলব করছিস, তুই ভাব কিভাবে আমার দাদাবাবুকে পটাবি।
- ইস, মাসী, কি অসভ্য তুমি।
বলে খিলখিল করে হেসে ফেললো। মালতিও যোগ দিলো। হাসি থামলে মালতি বললো - আমার কাছে উপায় জানতে হলে তো, পারিশ্রমিক লাগবে আমার।
- তাই তা কি দিতে হবে বোলো।
- কিছু না, আমাকে তাড়াতে পারবি না, ব্যাস।
- শুধু শুধু তোমাকে তাড়াতে যাবো কেন।
- তা কি জানি, তোমরা দুজনে দুধে আমে মিশে যাবে মাঝখান থেকে আমি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাবো।