23-07-2020, 03:51 PM
গাড়ি রাস্তায় বের হতেই “স্যার আপনি একা ঘুরতে যাচ্ছেন?”
“হ্যাঁ।” চোখ সামনে রেখে গাড়ি চালাতে হবে, এই উচ্ছল তরঙ্গিণীর দিকে তাকালে এই বৃষ্টিতে গাড়ি নিয়ে আমাকে যমালয়ের পথ ধরতে হবে, সেটা আমি চাইনা।
“আমার না খুব ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে লঙ ড্রাইভে যেতে।” গলায় বেশ উচ্ছাসের সুর।
চালানর ফাঁকে আড় চোখে তাকাই মাঝে মাঝে ওর দিকে। মাঝে মাঝে দু হাত তুলে আড়ামড়া ভাংছে দেসদিমনা, ছোটো হাঁটার টপ, ভাঁজ হয়ে কুঁচকে গিয়ে বগল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, মসৃণ ত্বক, ছিটেফোঁটা রোঁয়ার নাম গন্ধ নেই। গা থেকে বেশ কেমন একটা মন মাতানো গন্ধ বের হচ্ছে, সাথে সাথে সারাদিনের একটা ক্লান্তির আঘ্রাণ মিশে সেই সুবাস আমার নাকের ভেতর দিয়ে মাথায় গিয়ে মাথার ঘিলুটা নিয়ে লোফালুফি খেলছে।
“তো বের হও না কেন?”
“কে নিয়ে যাবে আমাকে স্যার?” আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে বলল “আপনি?”
ভাবছিলাম বলে ফেলি, চল আমার সাথে ঘুরতে বেশ মজা করব, কিন্তু সেটা ঠিক বের হল না, হয়তো আমার বয়স আর অফিসের পদ আমাকে বাধা দিল “কেন, তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যাবে।”
বয়ফ্রেন্ড নামটা শুনে দেসদিমনা যেন একটু ক্ষুণ্ণ হল “না স্যার, আমার নেই।”
আমি তো প্রায় আকাশ থেকে পড়ার মতন “কি বল তুমি, এত সুন্দরী মেয়ের কোন বয়ফ্রেন্ড নেই?”
হেসে বলে “না স্যার, একা আছি অনেক ভালো আছি।” তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল “আপনি ও তো একা একা ঘুরতে যাচ্ছেন, কোন সাথী না নিয়ে।”
বড় পুরানো ব্যাথার জায়গায় ঘা দিল দেসদিমনা, উত্তর দেবার ভাষা হারিয়ে ফেললাম আমি। আমার সাথি আমার স্ত্রী, বড় ভালবাসার পাত্রী, সুকন্যা, আমার বুকের বাঁ দিক জুরে এখন ঘর বেঁধে আছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, ঠিক চোদ্দ বছর আগে আমাকে হটাৎ একদিন টাটা বাই বাই করে সেই যে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ল আর জাগাতে পারলাম না আমি। ডাক্তারের দিকে চোখে আকুতি নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম, একবার সুকন্যা কে ঘুম থেকে ভাঙ্গানর জন্য, কিন্তু কেউ শোনেনি আমার কথা। সবাই আমাকে বলল যে আমার সুকন্যা নাকি আর নেই, কি করে বিশ্বাস করি নেই, তার আগের দিন রাত পর্যন্ত আমি ওর হাত ধরে বসে ছিলাম হস্পিটালের বিছানার পাশে। আমাকে বলেছিল “সিগারেট বেশি খেওনা, আমার বুকে বড় ব্যাথা করে। আর স্নান করার পরে ভালো করে মাথা মুছবে না হলে তোমার সাইনাসের ধাত আছে কখন আবার সর্দি লেগে যাবে মাথা ব্যাথা শুরু করবে।”
আমি ডাক্তারকে বলেছিলাম যে আমার বাচ্চা চাইনা আমার সুকন্যা কে ফিরিয়ে দিক। না, কেউ আমার কথা শোনেনি, না ডাক্তার না উপরওয়ালা। বাচ্চাটা নাকি গলায় নাড়ি জড়িয়ে ভ্রুনের মধ্যে রাতেই মারা গেছিল, ব্লাডারে প্লাসেন্টা বিষাক্ত হয়ে গেছিল, কেউ বাঁচেনি। অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে সুকন্যা অপারেশান টেবিলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল। আমার সামনে শুধু তার সাদা কাপড়ে ঢাকা পার্থিব শরীর পরে ছিল। সুকন্যার মাথা কোলে নিয়ে কান্নার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।
আমি নিরুত্তর, এই বেদনা কাউকে বলার নয়। দেসদিমনা আমাকে জিজ্ঞেস করল “কি হল স্যার, চুপ করে গেলেন কেন? কিছু উল্টো পাল্টা জিজ্ঞেস করে ফেললাম নাকি আমি?”
চোখ দুটো জ্বালা করছে, কাঁদতে পারিনা সর্বসমক্ষে “না কিছু না।” বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম “ছাড়ো ওসব পুরানো কথা, তোমার কথা বল।”
“ঠিক আছে স্যার, মনে হল খুব একটা ব্যাথার জায়গায় নাড়া দিয়ে দিলাম আমি। সরি স্যার।”
“দ্যাটস ওকে।”
“আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেই জায়গাটা কেমন?” সুরে একটু কৌতূহল।
“দারুন জায়গা, তিন বার গেছি। পাহাড় আমাকে ভীষণ ভাবে টানে, আমার মনে হয় যেন ওখানে থেকে যাই, কিন্তু পাপী পেট, কাজকর্ম না করলে খাবো কি।” হেসে উত্তর দিলাম। কাল্কাজি এসে গেছে, আমি গাড়ি ধিরে করে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “তোমার বাড়ি কোনদিকে?”
মাথা নিচু করে হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলা করছে দেসদিমনা, আমার প্রশ্ন শুনে মাথা না উঠিয়ে বলল “স্যার এই বৃষ্টিতে আমার ঘরে যেতে ইচ্ছে করছেনা, খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।”
“বেশ তো, যখন তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড হবে তখন সে নিয়ে যাবে তোমাকে।” আমি হেসে উত্তর দিলাম। দেসদিমনা নিরুত্তর, আমি জিজ্ঞেস করলাম আবার “তোমার বাড়ি কোনদিকে বল। তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে বের হতে হবে।”
আমার দিকে তাকাল দেসদিমনা, দু’চোখ কেমন যেন ভাসাভাসা “আপনার সাথে যেতে পারি, স্যার?”
আমি প্রথমে ঠিক করে ধরতে পারিনি কি বলছে মেয়েটা, আমি অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কি বলছ?”
“চলুন না স্যার, বেড়িয়ে পরি এই বৃষ্টির রাতে। যেখানে আপনি যাচ্ছেন, সেখানে।”
“কি বলছ তুমি, সেটা একবার ভেবে দেখেছ। তোমার বাড়ির লোক কি ভাববে, আর আমি কেন নিয়ে যাবো তোমাকে?”
“আমি তো এখানে মেসে থাকি, একটা ফোন করেদিলে হল। আপনি সাথে নিয়ে যাবেন কিনা সেটা বলুন।”
এটা ঠিক কি রকম মেয়ের পাল্লায় পরা গেল, অফিসের জুনিয়র কলিগ, আমার চেয়ে বয়সে প্রায় বছর পনের ছোটো মেয়েটা। আমি হেসে বললাম “তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। না বাড়ি যাও, বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম কর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
আওয়াজ শুনে মনে হল যেন একটু অভিমান হয়েছে দেসদিমনার “ঠিক আছে স্যার, আমাকে এখানে নামিয়ে দিন আমি অটো নিয়ে বাড়ি চলে যাবো।”
কি মুশকিলে পরা গেল মেয়েটাকে নিয়ে, বৃষ্টি হয়েই চলেছে তবে হাওয়া আর চলছেনা, শুধু ঝিরঝির করে অঝর ধারা ঝরে চলেছে কালো মেঘের থেকে। আমি গলার স্বর যথেষ্ট নরম করে বললাম “ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম?”
গাড়ি ধিরে ধিরে এগিয়ে চলেছে, এই রকম ভাবে চললে আমার যাওয়া হয়ে গেছে। গাড়ির ভেতরে বসা এক রমণী যে আবার একটু অভিমান করে বসে আছে। কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছি না। আমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চোখ রেখে বলল “ঐ সামনের বাঁ দিকে টার্ন নেবেন, চারটে ব্লক ছেড়ে আমার মেস।” আমি একবারের জন্য ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলাম দেসদিমনার দিকে, জানালার বাইরে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে। চেহারার উদাসিনতা দেখে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়েই আমাকে বলল “এই রকম এক বৃষ্টির রাতে আমার ব্রেকআপ হয়েছিল, তাই আমার মনটা কেমন করে উঠলো। আপনার তো জেনে দরকার নেই, আপনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে ঘুরতে যান।”
মেয়েটার মুখ দেখে আমার মনের ভেতরটা হটাৎ করে কেমন উদাসিন হয়ে গেল। বুকের ভেতরটা আকুলি বিকুলি করে উঠলো, এত সুন্দরী একটি মেয়ে আমার ভ্রমন সঙ্গিনী হবে, এটা ভেবে আমার ভেতরে যেন একটা আগুন জ্বলে উঠল।
আমি দেসদিমনার দিকে তাকিয়ে বললাম “ওকে, একটা সর্তে নিয়ে যেতে পারি। আমার কোন ব্যাক্তগত ব্যাপারে তুমি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।”
আমার কথা শুনে যেন লাফিয়ে উঠলো দেসদিমনা, হাসিতে যেন উতফুল্লর ছোঁয়া, যেন অনেকদিন পরে একটা বাঁধা তোতাপাখী ছাড়া পেয়েছে “সত্যি আমাকে নিয়ে যাবেন।”
আমি হেসে উত্তর দিলাম “হুম, যাও তাড়াতাড়ি নিজের জামা কাপড় নিয়ে আসো আমি দাঁড়িয়ে আছি।” গাড়ি ততক্ষণে ওর বাড়ির নিচে এসে দাড় করিয়ে দিলাম।
“আপনি একটু দাঁড়ান আমি এখুনি আসছি।” গাড়ির দরজাটা কোনো রকমে খুলে আমার দিকে যেন একটা মিষ্টি চুমু ছোঁড়ার মতন মুখ করে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল।
“হ্যাঁ।” চোখ সামনে রেখে গাড়ি চালাতে হবে, এই উচ্ছল তরঙ্গিণীর দিকে তাকালে এই বৃষ্টিতে গাড়ি নিয়ে আমাকে যমালয়ের পথ ধরতে হবে, সেটা আমি চাইনা।
“আমার না খুব ইচ্ছে করে বৃষ্টিতে লঙ ড্রাইভে যেতে।” গলায় বেশ উচ্ছাসের সুর।
চালানর ফাঁকে আড় চোখে তাকাই মাঝে মাঝে ওর দিকে। মাঝে মাঝে দু হাত তুলে আড়ামড়া ভাংছে দেসদিমনা, ছোটো হাঁটার টপ, ভাঁজ হয়ে কুঁচকে গিয়ে বগল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, মসৃণ ত্বক, ছিটেফোঁটা রোঁয়ার নাম গন্ধ নেই। গা থেকে বেশ কেমন একটা মন মাতানো গন্ধ বের হচ্ছে, সাথে সাথে সারাদিনের একটা ক্লান্তির আঘ্রাণ মিশে সেই সুবাস আমার নাকের ভেতর দিয়ে মাথায় গিয়ে মাথার ঘিলুটা নিয়ে লোফালুফি খেলছে।
“তো বের হও না কেন?”
“কে নিয়ে যাবে আমাকে স্যার?” আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে বলল “আপনি?”
ভাবছিলাম বলে ফেলি, চল আমার সাথে ঘুরতে বেশ মজা করব, কিন্তু সেটা ঠিক বের হল না, হয়তো আমার বয়স আর অফিসের পদ আমাকে বাধা দিল “কেন, তোমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যাবে।”
বয়ফ্রেন্ড নামটা শুনে দেসদিমনা যেন একটু ক্ষুণ্ণ হল “না স্যার, আমার নেই।”
আমি তো প্রায় আকাশ থেকে পড়ার মতন “কি বল তুমি, এত সুন্দরী মেয়ের কোন বয়ফ্রেন্ড নেই?”
হেসে বলে “না স্যার, একা আছি অনেক ভালো আছি।” তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল “আপনি ও তো একা একা ঘুরতে যাচ্ছেন, কোন সাথী না নিয়ে।”
বড় পুরানো ব্যাথার জায়গায় ঘা দিল দেসদিমনা, উত্তর দেবার ভাষা হারিয়ে ফেললাম আমি। আমার সাথি আমার স্ত্রী, বড় ভালবাসার পাত্রী, সুকন্যা, আমার বুকের বাঁ দিক জুরে এখন ঘর বেঁধে আছে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, ঠিক চোদ্দ বছর আগে আমাকে হটাৎ একদিন টাটা বাই বাই করে সেই যে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ল আর জাগাতে পারলাম না আমি। ডাক্তারের দিকে চোখে আকুতি নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম, একবার সুকন্যা কে ঘুম থেকে ভাঙ্গানর জন্য, কিন্তু কেউ শোনেনি আমার কথা। সবাই আমাকে বলল যে আমার সুকন্যা নাকি আর নেই, কি করে বিশ্বাস করি নেই, তার আগের দিন রাত পর্যন্ত আমি ওর হাত ধরে বসে ছিলাম হস্পিটালের বিছানার পাশে। আমাকে বলেছিল “সিগারেট বেশি খেওনা, আমার বুকে বড় ব্যাথা করে। আর স্নান করার পরে ভালো করে মাথা মুছবে না হলে তোমার সাইনাসের ধাত আছে কখন আবার সর্দি লেগে যাবে মাথা ব্যাথা শুরু করবে।”
আমি ডাক্তারকে বলেছিলাম যে আমার বাচ্চা চাইনা আমার সুকন্যা কে ফিরিয়ে দিক। না, কেউ আমার কথা শোনেনি, না ডাক্তার না উপরওয়ালা। বাচ্চাটা নাকি গলায় নাড়ি জড়িয়ে ভ্রুনের মধ্যে রাতেই মারা গেছিল, ব্লাডারে প্লাসেন্টা বিষাক্ত হয়ে গেছিল, কেউ বাঁচেনি। অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে সুকন্যা অপারেশান টেবিলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল। আমার সামনে শুধু তার সাদা কাপড়ে ঢাকা পার্থিব শরীর পরে ছিল। সুকন্যার মাথা কোলে নিয়ে কান্নার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি।
আমি নিরুত্তর, এই বেদনা কাউকে বলার নয়। দেসদিমনা আমাকে জিজ্ঞেস করল “কি হল স্যার, চুপ করে গেলেন কেন? কিছু উল্টো পাল্টা জিজ্ঞেস করে ফেললাম নাকি আমি?”
চোখ দুটো জ্বালা করছে, কাঁদতে পারিনা সর্বসমক্ষে “না কিছু না।” বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বললাম “ছাড়ো ওসব পুরানো কথা, তোমার কথা বল।”
“ঠিক আছে স্যার, মনে হল খুব একটা ব্যাথার জায়গায় নাড়া দিয়ে দিলাম আমি। সরি স্যার।”
“দ্যাটস ওকে।”
“আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেই জায়গাটা কেমন?” সুরে একটু কৌতূহল।
“দারুন জায়গা, তিন বার গেছি। পাহাড় আমাকে ভীষণ ভাবে টানে, আমার মনে হয় যেন ওখানে থেকে যাই, কিন্তু পাপী পেট, কাজকর্ম না করলে খাবো কি।” হেসে উত্তর দিলাম। কাল্কাজি এসে গেছে, আমি গাড়ি ধিরে করে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “তোমার বাড়ি কোনদিকে?”
মাথা নিচু করে হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলা করছে দেসদিমনা, আমার প্রশ্ন শুনে মাথা না উঠিয়ে বলল “স্যার এই বৃষ্টিতে আমার ঘরে যেতে ইচ্ছে করছেনা, খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে।”
“বেশ তো, যখন তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড হবে তখন সে নিয়ে যাবে তোমাকে।” আমি হেসে উত্তর দিলাম। দেসদিমনা নিরুত্তর, আমি জিজ্ঞেস করলাম আবার “তোমার বাড়ি কোনদিকে বল। তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমাকে বের হতে হবে।”
আমার দিকে তাকাল দেসদিমনা, দু’চোখ কেমন যেন ভাসাভাসা “আপনার সাথে যেতে পারি, স্যার?”
আমি প্রথমে ঠিক করে ধরতে পারিনি কি বলছে মেয়েটা, আমি অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কি বলছ?”
“চলুন না স্যার, বেড়িয়ে পরি এই বৃষ্টির রাতে। যেখানে আপনি যাচ্ছেন, সেখানে।”
“কি বলছ তুমি, সেটা একবার ভেবে দেখেছ। তোমার বাড়ির লোক কি ভাববে, আর আমি কেন নিয়ে যাবো তোমাকে?”
“আমি তো এখানে মেসে থাকি, একটা ফোন করেদিলে হল। আপনি সাথে নিয়ে যাবেন কিনা সেটা বলুন।”
এটা ঠিক কি রকম মেয়ের পাল্লায় পরা গেল, অফিসের জুনিয়র কলিগ, আমার চেয়ে বয়সে প্রায় বছর পনের ছোটো মেয়েটা। আমি হেসে বললাম “তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। না বাড়ি যাও, বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম কর সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
আওয়াজ শুনে মনে হল যেন একটু অভিমান হয়েছে দেসদিমনার “ঠিক আছে স্যার, আমাকে এখানে নামিয়ে দিন আমি অটো নিয়ে বাড়ি চলে যাবো।”
কি মুশকিলে পরা গেল মেয়েটাকে নিয়ে, বৃষ্টি হয়েই চলেছে তবে হাওয়া আর চলছেনা, শুধু ঝিরঝির করে অঝর ধারা ঝরে চলেছে কালো মেঘের থেকে। আমি গলার স্বর যথেষ্ট নরম করে বললাম “ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম?”
গাড়ি ধিরে ধিরে এগিয়ে চলেছে, এই রকম ভাবে চললে আমার যাওয়া হয়ে গেছে। গাড়ির ভেতরে বসা এক রমণী যে আবার একটু অভিমান করে বসে আছে। কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছি না। আমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে চোখ রেখে বলল “ঐ সামনের বাঁ দিকে টার্ন নেবেন, চারটে ব্লক ছেড়ে আমার মেস।” আমি একবারের জন্য ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলাম দেসদিমনার দিকে, জানালার বাইরে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে। চেহারার উদাসিনতা দেখে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। বাইরের বৃষ্টির দিকে তাকিয়েই আমাকে বলল “এই রকম এক বৃষ্টির রাতে আমার ব্রেকআপ হয়েছিল, তাই আমার মনটা কেমন করে উঠলো। আপনার তো জেনে দরকার নেই, আপনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে ঘুরতে যান।”
মেয়েটার মুখ দেখে আমার মনের ভেতরটা হটাৎ করে কেমন উদাসিন হয়ে গেল। বুকের ভেতরটা আকুলি বিকুলি করে উঠলো, এত সুন্দরী একটি মেয়ে আমার ভ্রমন সঙ্গিনী হবে, এটা ভেবে আমার ভেতরে যেন একটা আগুন জ্বলে উঠল।
আমি দেসদিমনার দিকে তাকিয়ে বললাম “ওকে, একটা সর্তে নিয়ে যেতে পারি। আমার কোন ব্যাক্তগত ব্যাপারে তুমি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।”
আমার কথা শুনে যেন লাফিয়ে উঠলো দেসদিমনা, হাসিতে যেন উতফুল্লর ছোঁয়া, যেন অনেকদিন পরে একটা বাঁধা তোতাপাখী ছাড়া পেয়েছে “সত্যি আমাকে নিয়ে যাবেন।”
আমি হেসে উত্তর দিলাম “হুম, যাও তাড়াতাড়ি নিজের জামা কাপড় নিয়ে আসো আমি দাঁড়িয়ে আছি।” গাড়ি ততক্ষণে ওর বাড়ির নিচে এসে দাড় করিয়ে দিলাম।
“আপনি একটু দাঁড়ান আমি এখুনি আসছি।” গাড়ির দরজাটা কোনো রকমে খুলে আমার দিকে যেন একটা মিষ্টি চুমু ছোঁড়ার মতন মুখ করে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল।