25-06-2020, 08:18 AM
(This post was last modified: 28-06-2020, 10:49 AM by Abirkkz. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
৩.৩
রাতের বেলা সবাই খেতে বসে তিনবোন টেবিলে খাবার সাজায়, দুইটা সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়
সারাদিন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে উদ্যম চোদাচুদি করে সবার পেটে খিদে বাসা বেঁধে আছে, কুলি তো দামি দামি সব খাবার দেখে অবাক, জীবনে এসব খাবারের কথা কল্পনাও করেনি, সে গপ গপ করে খাবার গিলতে লাগলো
ছোট বোন সবাইকে গ্লাসে মদ খেলে দেয় কুলিও একটু মদ পান করে হালকা মাতাল হয়ে যায়, হাবিজাবি গান গাইতে থাকে, তিন বোন মজা করে তার গান শুনতে থাকে
তারা খাওয়া শুরু করবে এমন সময় কে যেন দরজায় টোকা দেয় বড় বোন উঠে গিয়ে দরজা খুলে, একটু পর ফিরে এসে বলে আজ রাতে সত্যিই মজা হবে, তিনজন বিদেশি লোক এসেছে রাতটা এখানে কাটাতে চায় কারো মুখেই দাড়ি-গোঁফ নেই, আর আশ্চর্যের বিষয় হলো তাদের তিনজনেরই বাম চোখ কানা! কানা চোখের উপর কাপড় বাঁধা, তাদের চেহারা দেখে মনে হয় রোম দেশের লোক, ওদের এখানে থাকতে দিলে রাতে ভালই মজা হবে
মেজ বোন বলে তাহলে আর অপেক্ষা করছ কেন, তাদেরকে নিয়ে আসা যাক আর দরজায় লেখা শর্ততে যদি রাজি থাকে তাহলে থাকতে পারে
ছোট বোন উঠে যায় তাদেরকে ঘরে নিয়ে আসে তারা ওই দরজা লেখা পড়ে কথা দেয় শর্ত ভঙ্গ করবে না, তারপর ছোট বোন তিন কানা ফকিরকে নিয়ে খাবার টেবিলে আসে, সবাই তাদেরকে অভ্যর্থনা জানায় ওরা খেতে বসে কুলি ছেলেটার দিকে লক্ষ্য করে, ছেলেটা তখন মদের নেশায় মাতাল
ওকে দেখেই তিন ফকির ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে: সেও মনে হয় আমাদের মতই আরেক সাধু ফকির, দেখে তো তাকে ভালোই মিশুক মনে হচ্ছে
কুলি তাদের কথা শুনে ফেলে আর হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে ঠিক আছে ভাইয়েরা, তোমরা আরো খোলামেলা ভাবে আলাপ করতে পারো এত টেনশন নেওয়ার কিছু নেই, চুপিচুপি গল্প করা লাগবে না
কুলির এমন মাতলামি করা ভঙ্গী দেখে সবাই হো হো করে হেসে উঠে, তিন বোন নিজেদের মাঝে বলাবলি করে, এই কুলি আর বিদেশি সাধু ফকিরদেরকে নিয়ে আমরা মজা করব
তারা তিন ফকিরকে খেতে দেয় তারাও গোগ্রাসে খাবার খেতে থাকে, দেখে মনে হয় অনেকদিন খায়নি, পেট ভরে খেয়ে গলা ভরে মদ পান করে সবাই তখন যখন মদের নেশায় চুর হয়ে আছে
তখন তিন বোন ওই ফকির গুলোর কাছে আবদার করে তাদেরকে গান শোনাতে তখন তারা বলে অবশ্যই গান বাজনা হবে গান হবে কিন্তু গানের জন্য তো বাজনা দরকার তোমাদের ঘরে কি কোন জিনিস আছে?
ছোট বোন উঠে যায় ভেতর থেকে ঢাক-ঢোল সানাই নিয়ে আসে, তারপর তিন বোন বাজনা বাজাতে থাকে আর তিন ফকির গান করতে থাকে আর কুলি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে, এমন সময় আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়
ঘটনা হল খলিফা হারুনুর রশীদ রাত্রেবেলা তখন নগর পরিদর্শনে বেরিয়েছিল, এটা আসলে তার একটা শখ, প্রজারা দিনকাল কেমন কাটাচ্ছে সেই অবস্থা স্বচক্ষে দেখতে প্রায় রাতেই তিনি ছদ্মবেশে বের হয়।খলিফার সাথে থাকে তার মন্ত্রী জাফর আল বার্মাকী এবং তলোয়ার বাহক পাহারাদার মাসরুর
তো নগর ভ্রমণে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই বাড়ির ভেতর থেকে গান-বাজনার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল, জাফরকে বললো জাফর এই বাড়িতে ঢোকার ব্যবস্থা করো এখানে কারা গানবাজনা করতেছে আমি তাদেরকে দেখতে চাই
জাফর খলিফাকে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল ওরা এখানে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গান বাজনা করছে ওখানে কি আপনার যাওয়া ঠিক হবে, মাতাল হয়ে আপনার সাথে কি বেয়াদবি করে বসে তার ঠিক নেই
খলিফা বলে যাইহোক তুমি আমার ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা করো তবে তারা যেন আমার পরিচয় জানতে না পারে
জাফর আর কি করবে, জো হুকুম জাহাপনা বলে ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় তারপর দরজায় নক করে, তখন ছোটবোন দরজা খুলে দেয়
জাফর বলে শোনো মা, আমরা তিবরিয়া দেশের বণিক, দশদিন হল বাগদাদ শহরে এসেছি এখানের আরেক বণিকের বাড়িতে উঠেছি আমাদের জিনিসপত্র তার বাসাতেই আছে, রাতে খাবারের পর আমরা তোমাদের শহর দেখতে বের হয়েছিলাম কিন্তু এখন অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেছি, এখন বাসা খুঁজে পাচ্ছিনা, মনে হয় না আর ফিরে যেতে পারবো, আজ রাতটা যদি তোমাদের এখানে আমাদের আশ্রয় দাও খুব উপকার হবে খোদা তোমাদের মঙ্গল করবেন
ছোট বোন তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলে ভিতরে চলে গেল তারপর দুই অন্য দুই বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে ফিরে গিয়ে বলল আপনারা ভিতরে আসুন আজ রাতে আপনারা আমাদের মেহমান
বাসায় প্রবেশ করতে অন্য দুই বোন ও তাদেরকে স্বাগত জানালো তারপর দরজায় লেখা অঙ্গীকারনামা দেখিয়ে বলল আপনারা যদি শর্তে রাজি থাকেন তাহলে ঘরে থাকেন অন্যথায় চলে যেতে পারেন
জাফর অঙ্গিকার জোরে জোরে পড়ে বললো আমরা রাজি আছি
তারপর তারা তিনজন গিয়ে বসল তিন ফকিরের পাশে মেজো বোন গ্লাসে করে মদ এনে খলিফাকে পান করতে দিল খলিফা বলল আমি তো মা হজ যাত্রী, আমি এসব মদ পান করিনা
তারপর তারা খলিফার জন্য গোলাপ জলের শরবত বানিয়ে আনল খলিফা এবার তৃপ্তি সহকারে শরবত পান করল মনে মনে ভাবল এই মেয়েরা তো খুবই ভালো আচরণ করছে ওদেরকে কাল পুরস্কার দিবে
ওদিকে তিন বোন সবাইকে নিয়ে আহারে বসে গেল খাওয়া দাওয়া শেষ হলে এবার বড় বোন জিজ্ঞাসা করলো আপনাদের কি পেট ভরেছে, আরো কি খাবার দরকার আছে?
সবাই জানালো যে না যথেষ্ট হয়েছে সবার খাবার শেষ এবার সে সবাইকে অনুরোধ করলো, ঘরের মাঝখান থেকে সরে গিয়ে দরজার কাছে বসতে, সবাই উঠে গেলে তিন বোন এবার ঘরের মাঝখানে ভালোমতো পরিষ্কার পরে টেবিলটা উঠিয়ে রাখল
তারপর কুলিকে ডেকে বলল তুমি তো আর বাইরের লোক না তুমি আমাদের ঘরের লোক, এখন তোমাকে একটা কাজ করতে হবে তুমি তৈরি তো?
কুলি সাথে সাথেই গায়ের জামা খুলে পাজামাটা কোমরের সাথে ভালো করে বেঁধে বলল অবশ্যই ম্যাডাম, আমি তৈরি
তারপর বড় বোন তাকে সাথে নিয়ে পাশের একটা ঘরে চলে গেল একটু পর শিকল-বাঁধা দুটো কালো কুচকুচে কুকুরকে নিয়ে ঘরের মাঝখানে ফিরে এলো তারপর কুলির হাতে একটা চাবুক তুলে দিয়ে বলল এই কুকুরটাকে ভাল করে চাবুক মারো
কুলি এক মুহূর্ত অবাক হয়ে আবার সাথে সাথেই বড় বোনের আদেশ মান্য করে চাবুক দিয়ে কুকুরটাকে জোরে জোরে মারতে শুরু করে কুকুরটা ব্যথায় আর্তনাদ করতে থাকে,
এভাবে কিছুক্ষন এভাবে মারার পর বড় বোন কুলিকে থামিয়ে দিয়ে চাবুকটা কেড়ে নেয় আর কুকুরটাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে, কুকুরের চোখের জল চোখের পানি মুছে দেয় মাথায় পিঠে হাত দিয়ে আদর করতে থাকে কপালে চুমু খায়
তারপর দ্বিতীয় কুকুরটাকেও সামনে নিয়ে এসে আবারো কুলির হাতে চাবুক তুলে দিয়ে বলে এবার এটাকে চাবুক মারো
এবারও সেই আগের ঘটনা কুলি জোরে জোরে চাবুক মারতে থাকে কুকুরটা চিল্লাতে থাকে আর কান্না করতে থাকে
তারপর বড় বোন কুকুরটাকে আদর করে দেয় এভাবে একই ঘটনা তিনবার ঘটে
এমন করুণ দৃশ্য দেখে খলিফার মন কষ্টে হুহু করে ওঠে, সে ফিসফিস করে জাফরকে বলে আচ্ছা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করো তো, কুকুরগুলোর সাথে এমন কেন করছে?
জাফর বলে জাঁহাপনা এই বিষয়ে চুপ থাকাই উত্তম হবে, আমরা তো কথা দিয়েছি তাদের কোন বিষয়ে নাক গলাবো না
হারুনুর রশীদও তার কথা মেনে সব কৌতুহল মনের মাঝে চেপে চুপ হয়ে গেল
এবার মেজ বোন ছোট বোনকে বলল এসো এখন আমরা প্রতিদিনের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যা যা করা দরকার তা পালন করি
তারপর ছোট বোন একটা রূপালী কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আসলো, দুই বোন সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, ছোট বোন ওই ব্যাগ থেকে একটা লাল কারুকার্য করা বাঁশি বের করে বাঁশি বাজাতে থাকে, অনেকক্ষণ সুর করে বাঁশি বাজানোর পর হঠাৎ মেজ বোন চিৎকার করে বললো অনেক হয়েছে থাম বোন থাম, খোদা তোমাকে শাস্তি দেবেন!
এই কথা বলেই মেজ বোন পাগলের মত চিৎকার করতে লাগলো আর নিজের পরনের পোশাক খামচে খামচে ছিড়ে কুটিকুটি করতে থাকে, কাপড় ছিড়ে তার শরীর প্রায় উলঙ্গ হয়ে যায় আর সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে
খলিফা লক্ষ্য করলো মেয়েটার সারা শরীরে চাবুকের দাগ
বড় বোন এসে মেজ বোনের মুখের পানি ছিটা দিয়ে দিতে লাগলো, কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে আসে এবং সে নতুন জামা কাপড় পরে উঠে দাঁড়ায়
খলিফা জাফরকে ফিসফিস করে বলল বলে ব্যাপারটা লক্ষ্য করলে? কিছু বুঝলে? মেয়েটার সারা শরীরে চাবুকের দাগ দেখতে পেরেছ? নির্মমভাবে চাবুক মারা আবার মেয়েটার পিঠে চাবুকের দাগ, আমার তো খুবই আশ্চর্য লাগছে, এর সমাধান আমাকে বের করতেই হবে
এবারও জাফর সবিনয়ে বলে জাহাপনা, আপনার শর্তের কথা স্মরণ করুন নিজের কৌতুহল দমন করে করুন, আমরা তো কথা দিয়েছি তাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না, এখন কি কথা ভাঙ্গা ঠিক হবে?
এমন সময় মেজো বোন সেই বাশিটা নিয়ে করুন সুরে বাঁশি বাজাতে থাকে তারপর বাঁশিটা রেখে আবারো সেই আগের মত চিৎকার করতে করতে কাপড় ছিড়ে ফেলে এবারও গায়ে চাবুকের দাগ সে আবার অজ্ঞান হয়ে যায় বড় বোন পানি ছিটা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনে
এভাবে পরপর তিনবার একই ঘটনা ঘটে
ওদিকে তিন ফকির ফিসফিস করে কথা বলতে লাগলো এই কোন পাগলের ঘরে এসে পড়লাম, এরা এমন করছে কেন, আমাদেরকেই না কখন মেরে দেয়!
এবার তাদের ফিসফিসানিতে খলিফাও যোগ দেয়, সে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা ব্যাপারটা কি বলুন তো, তারা এমন করছে কেন?
ফকিররা বলে আরে মশাই, আমরাও তো তাই ভাবছি
খলিফা বলে কি বলেন ,আপনারা এখানে লোক না? আমরা তো ভাবলাম একসাথে বসে আহার করছেন আপনারা হয়তো ঘরের লোক
ফকিররা বলে আরে না মশাই, আমরাই কিছুক্ষণ আগেই এসেছি এতক্ষণ ভালো মত খাওয়া-দাওয়া করলাম, এখন যে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না, তবে ওই যুবক আগে থেকেই ছিল, হয়তো সে সবকিছু জানে
কুলি এতক্ষণ তাদের ফিসফিসানি শুনছিল এবার সে বলল আরে না মশাই, আমিও এই বাড়িতে নতুন, আজ সকালেই এসেছি, যদি জানতাম এমন সব উল্টাপাল্টা কান্ড ঘটবে তাহলে আর এখানে থাকতাম না, তারচেয়ে বরং রাতটা রাস্তাতে কাটিয়ে দেওয়াটাই ভালো হতো, এমন নিষ্ঠুর কাজ করতে হতো না
তারপর ওরা সবাই মিলে পরামর্শ করতে লাগল: আচ্ছা আমরা তো সাতজন ছেলে অর ওরা মাত্র তিনটি মেয়ে, তাদেরকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে? আমরা গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করি কেন তারা এমন নৃশংস নির্মম কাজ করছে, ওরা যদি সোজা কথায় জবাব না দেয় তাহলে তাদেরকে জোর করে কথা আদায় করব
সবাই এই কথায় রাজি হল শুধু জাফর বাদে, জাফর বলল না মশাই এটা হতে পারে না, আপনাদের কি মনে নেই আমরা ওদের মেহমান, তারা আমাদেরকে শর্ত দিয়েছে তাদের কোন বিষয়ে যেন আমরা কৌতুহল না দেখাই, এখন তাদেরই শর্ত না রাখলে তো মেহমানদারীর অপমান করা হবে
ফকিরদের মাঝে থেকে একজন বলে আচ্ছা তারা যা করছে করুক না, সকাল হতে তো কিছু সময় বাকি, তারপর না হয় আমরা যে যার রাস্তায় চলে যাব, তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া কি ঠিক হবে
কিন্তু অন্য ফকিরা বলে না না এমন অদ্ভুত ঘটনার রহস্য জানা লাগে
তারপর জাফর খলিফার কানে ফিসফিস করে বলে জাহাঁপনা আর তো এক ঘন্টার মতো বাকি তারপর তো সকাল হয়ে যাবে তারপর না হয় আপনার প্রাসাদে তাদেরকে ডেকে নিয়ে কি ঘটনা জিজ্ঞেস করা যাবে, আপাতত একটু ধৈর্য ধরুন
কিন্তু খলিফা অধৈর্য হয়ে বলে: না মন্ত্রী আমি তো আর অপেক্ষা করতে পারছি না নিজের কৌতুহল দমন করতে পারছিনা, এদের ঘটনা আমার এখনই জানতে হবে জাফর আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে আর অন্যরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে থাকে, কে মেয়েদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, ঠিক হয় যেহেতু ছেলেটা এখানে বেশি সময় ধরে আছে সেই জিজ্ঞেস করবে
এবার কুলি একটু সাহস করে এগিয়ে গিয়ে বলে: ম্যাডাম আমরা জানতে চাচ্ছি আপনারা কেন ওই কুকুর দুটোকে এমনভাবে চাবুক মারলেন, আবার কেনই বা তাদেরকে আদর করলেন? আর আপনার শরীরেও চাবুকের দাগ কেন? আমাদেরকে দয়া করে বিষয়টা খুলে বলুন
এবার বড় বোন জিজ্ঞেস করে এটা কি তোমার একার প্রশ্ন না সবাই জানতে চেয়েছে কুলি বলে একমাত্র জাফর ছাড়া আমাদের সবারই একই জিজ্ঞাসা
বড় বোন এবার একটু অবাক হয়ে বলল: আপনারা তো আতিথ্যের শর্ত ভঙ্গ করেছেন, আপনাদেরকে তো এর শাস্তি পেতে হবে, আপনারা না কথা দিয়েছিলেন আমাদের কোন ব্যাপারে নাক গলাবেন না, কোন কৈফিয়ৎ চাইবেন না,
কিন্তু এ কেমন ব্যবহার করলেন আপনারা? আদর করে ঘরে এনে জায়গা দিয়ে ভালো মন্দ খাইয়ে কি আমরা অন্যায় করেছি? এই কি মেহমানদারির প্রতিদান?
এই বলে বড় মেয়েটা রাগে চাবুক তুলে মাটিতে তিনবার জোরে জোরে চাবুক মারে আর সাথে সাথেই পর্দার ওপাশ থেকে একটা দরজা খুলে যায়, আর সেখান থেকে ঘরে আসে বিশাল আকারের সাতজন নিগ্রো, সবার হাতেই ধারালো অস্ত্র
এবার বড় বোন আদেশ করে এই অসভ্য লোকগুলোকে একসাথে শিকল দিয়ে বাঁধো
নিগ্রোগুলো তৎক্ষণাৎ তার হুকুম পালন করে সবাইকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলে
এবার কুলি ছেলেটা ভয়ে কেঁদে ফেলল কাঁদতে কাঁদতে বলল আমার কোন দোষ নেই ম্যাডাম, আমাকে তো আপনাকে চিনেনই আমি তো আপনাদের কথা অমান্য করতে পারিনা, সব দোষ এই ফকিরগুলোর, তাদের ফাঁদে পড়ে আমি আপনার আদেশ অমান্য করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন
কুলির কথা শুনে বড় বোন অট্টহাসিতে ফেটে পরলো, তার হাসি দেখে সবাই ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে গেল, না জানি এখন কি করে
বড় বোন সবাইকে লক্ষ্য করে বললো: আমি তোমাদেরকে অসহায় নিরাশ্রয় ভেবে এখানে আশ্রয় দিয়েছি, এখন প্রত্যেকে নিজেদের পরিচয় বলবে, যদি বুঝি যে তোমরা মিথ্যা বলছো, মিথ্যা কথা বলে আমাদের ঘরে ঢুকেছ তাহলে তোমাদের খবর আছে
এবার খলিফা জাফরকে বলল শুনলে তো জাফর আর বাঁচার কোন আশা নাই, ঝটপট আমাদের আসল পরিচয় জানিয়ে দাও, নাইলে বেঘোরে প্রাণ যাবে
জাফর টিটকারি মেরে বলে এটাই তো আমাদের আসল প্রাপ্য, তাই না হুজুর, আমরা তো নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি
খলিফা বলে আরে জাফর, জীবন চলে যাচ্ছে এটা কি তোমার রসিকতা করার সময়
বড় বোন কানা ফকিরদের লক্ষ্য করে বলে এই কথা বল তোমরা তিনজন কি ভাই ভাই হও?
এক ফকির বলে না না, আমরা তিনজন মোটেও ভাই নই বরং আমরা আলাদা আলাদা দেশের বাসিন্দা, ফকির মানুষ কোনমতে খেয়ে পড়ে দিন চলে যায়
অন্য ফকিররাও তার সাথে সায় দেয় দিয়ে বলে আমরা আলাদা দেশের বাসিন্দা ঘটনাচক্রে একত্র হয়েছি, আমাদের জীবনের কাহিনী বড়ই চমৎকার
এবার বড় বোন জিজ্ঞেস করে তোমরা তিনজন কি জন্ম থেকেই অন্ধ?
এক ফকির বলে না আমি জন্মান্ধ না, এক অদ্ভূত ঘটনাতে আমি আমার চোখ হারাই, আমার জীবনের কাহিনীটা অনেক চমৎকার
এবার বড় বোন গম্ভীরভাবে বলে তাহলে তোমাদের জীবন কাহিনী শোনাও যদি শুনে ভালো লাগে তাহলে এখান থেকে নিরাপদে যেতে দিব
এবার কুলি ছেলেটা বলে ম্যাডাম আমি তো গরিব মানুষ, সামান্য কুলি সেটা তো তোমরা জানোই, আমার জীবনে তো অদ্ভুত কোনো ঘটনা নেই, অদ্ভুত যা কিছু হয়েছে সব আজকেই ঘটেছে, সেগুলো তো আর এখানে বলাও যাবে না, আমাকে দয়া করে ছেড়ে দাও