11-05-2020, 11:47 AM
২.৪
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাদশা শাহরিয়ার রাজ্যকার্যে চলে গেল। সেদিন রাতে একটু আগে ঘরে ফিরলো। রাতে তিনজন একসাথে খাবার খেলো।
বাদশা নিজহাতে বউকে আর শালীকে মুখে তুলে খাইয়ে দিল। খাওয়া শেষে বিছানায় গিয়ে আরিয়াকে একদফা চূদে নিল।
চোদাচুদি শেষ হলে নাদিয়া বোনের পাশে এসে শোয়, আর আরিয়া গল্প বলা শুরু করে:
.............................................
তৃতীয় পথিকের গল্প শুনে দৈত্য খুশি হয়ে বলল: তোমার গল্প আমার অনেক ভালো লেগেছে। শর্ত অনুযায়ী বণিকের বাকি পাপ মাফ করে দিলাম।
বনিকের দিকে ফিরে বলল: যাও বণিক, তোমাকে মাফ করে দিলাম। যেখানে খুশি চলে যেতে পারো।
তারপর দৈত্য বাতাসে মিলিয়ে গেল।
এবার বণিক ওই তিন পথিককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল: তোমরা আমার অনেক বড় উপকার করেছ। তোমাদের কারণে আমার জীবন বেঁচে গেছে। আজকে আমার বাড়িতে তোমাদের দাওয়াত।
বণিকের প্রস্তাবে তিন পথিক রাজি হয়ে গেলো। তারপর সবাই একসঙ্গে বণিকের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
বণিক বাড়ি ফিরে দেখে খুব হৈচৈ। বাড়িতে ছেলেমেয়েরা সবাই জোরে জোরে কান্নাকাটি করছে, আর তার বউ কাঁদতে কাঁদতে একটু পর পর অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। বণিক বাড়ি ফেরা মাত্র বউয়ের দেখল, তার বউয়ের কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে।
সে তার জামাইকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল আর কান্না করতে লাগলো। বণিক সান্তনা দিয়ে বলল: আরে আমার কিছু হয়নি। আমি তো কোন অপরাধ করিনি, খোদা আমাকে ঠিক ঠিক বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
তারপর সবাইকে তিন পথিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল উনাদের উসিলাতেই আজকে আমি বেঁচে গেছি। আজ রাতে সবাইকে বিস্তারিত জানাবো।
তারপর বণিক তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে গেল। একটা বড় ঘরে তিন পথিকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। আর তাদের পশুগুলোকে গোয়ালঘরে রাখা হয়।
সেদিন রাতের বেলা বাড়িতে বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসে। সবাই জানত বণিক দৈত্যর হাতে মারা গেছে।
খানপিনার পরে গল্পের আসর বসে। আশেপাশের আরো লোক আসে। সবাই দৈত্যের সাথে ঘটে যাওয়া বণিকের গল্প শুনে। তিন পথিক তাদের গল্প শোনায়।
গভীর রাতে সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়। ওদেরকে তাদের ঘরে ছেড়ে এসে বণিক নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
মাঝপথে একবার গোয়াল ঘরে উঁকি দিয়ে পশুগুলোর অবস্থা দেখে আসে। ভিতরে দেখে আরেক কাহিনীচলছে। একটা কুকুর ছাগলকে আরেকটা কুকুর খচ্চরকে লাগাচ্ছে।
বণিক ভাবে এরা বাইরে বাইরে পশু হলেও এদের ভিতরের আসল রূপ তো রয়ে গেছে। তারা তো সব গল্পই শুনেছে। ছাগল কুকুর আর খচ্চর হলেও তারা আসলে মানুষ।
বণিক ঘরে গিয়ে তার বউয়ের সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। তিন পথিক বণিকের বাড়ীতে আরো দুইদিন বেড়ায়। তারপর যে যার মত চলে যায়। এরপর বণিক তার বউ বাচ্চা সংসার নিয়ে অনেকদিন সুখে শান্তিতে বসবাস করে।
সমাপ্ত
আরিয়া গল্প বলা শেষ করে চুপচাপ শুয়ে থাকে। নাদিয়া বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে: আপু, তুমি অনেক মজার গল্প শোনালে।
আরিয়া: আরে এ আর কি এমন গল্প, এর থেকেও বেশি চমৎকার গল্প আমি জানি।
নাদিয়া: তাই নাকি আপু? মাত্র তো রাত শুরু হয়েছে, তুমি আরেকটা গল্প বলো।
বাদশা আরিয়ার গালে চুমু দিয়ে বলে: হ্যাঁ আরিয়া, আমিও শুনতে চাই সেই গল্প, যেটা এই তিন পথিকের গল্প থেকেও বেশি ইন্টারেস্টিং!
আরিয়া: অবশ্যই জাহাপনা, আপনি শুনতে চাচ্ছেন আমি অবশ্যই নতুন গল্প শোনাবো, তাহলে শুনুন জাহাপনা।
আরিয়া নতুন গল্প বলা শুরু করে:
দৈত্য ও জেলের গল্প:
এক দেশে ছিল এক জেলে। সে ছিল অনেক গরিব। বউ বাচ্চা নিয়ে সমুদ্রের ধারে ছোট্ট কুটিরে বসবাস করত।
সে প্রতিদিন শুধু পাঁচবার নদীতে জাল ফেলত তার থেকে বেশিও না, কমও না। এই পাঁচবার জালে যা মাছ উঠতো, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতো।
তেমনি একদিন দুপুরবেলা সমুদ্রে জাল ফেলে। প্রথমবার জালে একটা গাছের গুড়ি ওঠে।
দ্বিতীয়বার জাল ফেলে দেখল খুব ভারী লাগছে। মনে মনে আশা করলো, যাক মনে হয় ভালো মাছ পাওয়া গেছে। জাল উঠিয়ে দেখে, হায় হায় তো একটা মরা গাধা। গাধাটাকে জাল থেকে বের করে রাখল।
তৃতীয়বারের মত জাল ফেলল। জাল উঠিয়ে দেখে বড় একটা মাটির হাঁড়ি পুরো কাদায় ভর্তি। তার মন অনেক খারাপ হয়ে গেল।
চতুর্থবার জাল ফেলল। এবারও দেখল অনেক ভারী, জাল উঠিয়ে দেখে বিভিন্ন ভাঙ্গাচুরা ময়লা ভর্তি।
এবার সে মনের দুঃখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলো: হে খোদা, তোমার কি ইচ্ছা তো জানিনা, চার চারবার জাল ফেললাম ভাগ্যে কিছুই জুটলো না, আজকে কি আমরা তবে না খেয়ে থাকবো? শেষবার জাল ফেলে দেখি তোমার কি ইচ্ছা হয়।
তারপর জেলে পঞ্চমবারের মতো পানিতে জাল ফেলে। এবার দেখে অনেক ভারী, নিশ্চয়ই কোন পাথর আটকেছে, হাত নাড়াতে পারছে না। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে অনেক কষ্টে জাল তুলতে পারল।
দেখে একটা তামার কলসি, অনেক ভারী। কলসির মুখ লোহার ঢাকনা দিয়ে শক্ত করে আটকানো। আর তাতে "দাউদ এর পুত্র বাদশা সোলেমান" এর সিল মারা আছে।
জেলে ভাবলো যাক যেহেতু বাদশা সোলেমানের কলসি আবার অনেক ভারী, নিশ্চই ভিতরে কিছু না কিছু দামি জিনিস আছে। কিছু না থাকলেও এই কলসিটা বেঁচেই হাজার খানেক টাকা পাওয়া যাবে।
কিন্তু একি জ্বালা, কলসিটা তো নাড়ানোই যাচ্ছেনা, অনেক ভারী, ভিতরে কি সোনা টোনা আছে নাকি! শুনেছি আগের কালের রাজা-বাদশারা কলসিতে করে সোনা রুপা টাকা-পয়সা ঘরে সেগুলা লুকিয়ে রাখত।
এটাও যদি এমন কিছু হয়? তাইলে তো কাম সারছে, এক দিনেই কোটিপতি হয়ে যাবে! সবই খোদার ইচ্ছা। কিন্তু সিলমোহর মারা মুখটা না খোলা পর্যন্ত তো কিছুই বোঝা যাবে না।
অনেক চেষ্টা করার পরে মুখটা খুলতে পারল। ঢাকনা খোলার সাথে সাথেই ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে লাগল আশেপাশে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, দু চোখে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
তারপর আস্তে আস্তে ধোঁয়া থেকে একটা বড় দৈত্যের আাকার ধারণ করল। সে এক ভয়ানক দৈত্য, বিশাল শরীর, লম্বা লম্বা চুল-দাড়ি, দাঁতগুলো সাদা পাথরের মত চকচক করছে।
ভয়ঙ্কর চেহারার দৈত্যকে দেখে জেলের কলিজাটা শুকিয়ে গেল, সারা শরীর অবশ হয়ে যেতে লাগল। ভয়ে চোখ দাঁতকপাটি লেগে যাবার যোগাড়, দু চোখ খুলে তাকানোরও সাহস হচ্ছে না।
এবার দৈত্য চিৎকার করে উঠলো: আল্লাহ ছাড়া আর কোন খোদা নাই, আর সোলেমান তার নবী।
তারপর জেলের দিকে ফিরে, মাথা নত করে হাতজোড় করে বলতে লাগলো: সম্রাট সুলেমান, আমার মালিক, আমাকে হত্যা করো না আর কখনো তোমার অবাধ্য হবো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
দৈত্যের আচরণে এবার জেলের একটু সাহস হলো। সে বলল: ও মহান দৈত্য, তুমি বাদশা সুলেমানের ভয় কাঁদছো কেন? সুলেমান তো সেই আঠারোশো বছর আগেই মারা গেছে! তারপর দুনিয়াতে আরো কত কিছু হয়ে গেল।
কিন্তু বাদশা সুলেমান কেন তোমাকে কলসিতে বন্দী করে রেখেছিল? জেলের কথা শুনে দৈত্যের ধরে প্রাণ ফিরে এল। সে জেলেকে বলল: তুই কি সত্যি বলছিস, সুলেমান এখনো বেঁচে নেই?
জেলে বলল: হ্যাঁ দৈত্য আমি সত্যি বলছি। বাদশা সোলেমানও এখন বেঁচে নেই, আর তার রাজত্বরও কোন অস্তিত্ব নেই।
দৈত্য: তাইলে শোন জেলে, খোদা ছাড়া আর কাউকে আমি মানি না। তুমি আমাকে বন্ধুত্ব থেকে মুক্ত করেছো, তোমার জন্য আছে সুসংবাদ। খুব চমৎকার একটা খবর নিয়ে এসেছি আমি।
জেলে আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করলো: কি? কি সেই চমৎকার খবর?
দৈত্য গর্জে উঠে: মৃত্যু! তোর জন্য আমি এনেছি মরনের সংবাদ, আর সেই মৃত্যু হবে ভয়াবহ মৃত্যু!
.............................................
এতটুকু বলার পর আরিয়া খেয়াল করল ভোর হয়ে আসছে, সে গল্প বলা থামিয়ে দিল। নাদিয়া তার বিছানায় চলে গেল। বাদশা শাহরিয়ার বেগম আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।