13-01-2020, 05:29 PM
সুবল বাবু সাইকেল নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। ঝুমা শাকসব্জি নিয়ে ভিতরে গেল রাখতে। আমাকে লক্ষ্য করেননি ভদ্র লোক তখনও। প্রভা দেবী বললেন, "ওগো শুনছো, দেখ কে এসেছে?"
"এই অসময়ে কে এলো আবার।"
"অর্ণব এসেছে ওদের বাড়ী থেকে কথা বলতে।"
"কে অর্ণব?"
"আরে ঝুমার শ্বশুরবাড়ীর তরফে।"
"কেন কি দরকারে এসেছে? বলেই তো দিয়েছি, একবার ভুল করেছি ও বাড়ীতে মেয়ে দিয়ে আর দেবো না।"
"আরে ছেলেটা এসেছে ওর কথা শোনো, নাকি বাইরে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে?"
সুবল বাবু ঘরে ঢুকে দাওয়ায় উঠে এলেন। আমি তখন ঘরে বসে।
তেরো
সুবল বাবু খাটে বসে ছিলেন, আমি চেয়ারে।
"একটা কথা সোজা করে বলি তোমায়, ঝুমাকে বিয়ের আশা ছেড়ে দাও। আমি মেয়ে দেবো না ও বাড়িতে। আমার মেয়েকে গলায় কলসি বেঁধে জলে ভাসিয়ে দেবো তাও আচ্ছা কিন্তু কেষ্টপুরের সরকার বাড়ীতে দেবো না।"
"আহা ওর কথাটা তো শোনো।" প্রভা দেবী বললেন।
"শোনার কিছু নেই প্রভা, আমি ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছি।"
"তবু শোনো। ও একটা সবে উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া ছেলে তোমার মেয়ের জন্য এতদূর এসেছে ওর কথাটা শুনেই দেখো একবার।" প্রভা দেবী বেশ দৃঢ় স্বরে বললেন।
আমি তখন নির্বাক শ্রোতা, দরজার কপাটের ও পাশে ঝুমার নির্বাক উপস্থিতি ও বুঝতে পারছিলাম।
আমি ঝুমার মা কে যা বলেছিলাম সেটারই পুনরাবৃত্তি করলাম ওর বাবার সামনে, শুধু এটুকু জুড়ে দিলাম সাথে, "আপনার মেয়ের সুখের কোনো অভাব কোনোদিন হবে না। আমার নিজের ডাল ভাত না জুটলেও আপনার মেয়ের জুটবে। আর এমনিতেই বাড়ির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ক্ষীণ।"
উনি সব শুনে বললেন, "আমরা ভদ্রলোক, তায় তুমি আত্মীয়, এসেছো, খাওয়া দাওয়া করো, তারপর চলে যাও।" তারপর প্রভা দেবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "প্রভা আমাকে আর অর্ণবকে খেতে দাও। ও বেলাবেলি বেড়িয়ে পড়ুক নইলে লাস্ট বাসটা মিস করবে।" বলে উঠে পড়লেন। প্রভা দেবী শেষ চেষ্টা করলেন, "ঝুমাকে অন্তত একবার জিজ্ঞাসা করো, প্লীজ।"
এবার সুবল বাবু বেশ রাগী গলায় বললেন, "যা বলার বলে দিয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত ফাইনাল। কোনো কিন্তু নেই। বোশেখ মাসে ঝুমার বিয়ে দেবো শীতলাতলার স্বপন বিশ্বাসের সঙ্গে। ছেলেটার বউ মারা গেছে সাপে কেটে। ছেলে ভালো, গ্রামেই থাকবে মেয়ে। ওদের দাবী দাওয়া নেই সেরকম।"
"সেকি!!!! ওই ৫০ বছরের বুড়োর সঙ্গে ঝুমার বিয়ে!!!! তুমি মেনে নেবে? ওর বড় মেয়েটাই তো টুকুনের থেকে বড়।" শাশুড়ী মা প্রায় কেঁদে ফেললেন। আমার মাথায় প্রায় বজ্রাঘাত হলো। সুবল বাবু বললেন, "আমার বাপ দাদারা অনেক পাপ করেছে। স্বপনের দাদু মরেছিল আমার দাদুর জন্যে, সেই পাপ স্খলন হবে একটু। আমি পুকুর থেকে স্নান সেরে আসছি, দেখো অর্ণব যেনো খেয়ে যায়।" বলে উনি বেরিয়ে গেলেন।
উনি বাড়ির বাইরে যেতেই ঝুমা ঘরে ঢুকে খাটে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। প্রভা দেবী মেয়ে কে ধরে বললেন, "ওঠ ঝুমা, এটা কাঁদার সময় নয়।" তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন, "তোমাকে সাত দিন সময় দিচ্ছি বাবা, তুমি ঝুমাকে সাত দিন পর মানে পরের রোববার নিয়ে যাও বাড়ী থেকে, টাকা পয়সা আমার কাছে যা আছে সব দেবো। তুমি নিজের পায়ে না দাঁড়ানো অবধি ঝুমার আর তোমার চলে যাবে।" তারপর ঝুমার হাত টা আমার হাতে দিয়ে বললেন, "আমার মেয়ের অতবড় সব্বনাশ হবে আর আমি দেখবো সে হবে না। আমি বেঁচে থাকতে তোর বাবাকে অনর্থ করতে দেবো না।" আমি ঝুমার হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম, ঝুমার মায়ের মুখটা অবিকল পুজোর প্যান্ডেলের মা দুর্গার মতো লাগছিলো। আমি ঝুমার হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে ওনাকে প্রনাম করলাম উনি আশীর্বাদ করলেন তারপর আমি বললাম, "মা, আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রাখবো। আজ অনেক দেরী হয়ে গেল, আমি আসছি। আপনি ব্যবস্থা করুন পরের রোববার আমি ঝুমাকে নিয়ে যাবো।" বলে উঠে পড়লাম। ঝুমার মা বললেন, "দাঁড়াও আমি একটু আসছি।" উনি বেরিয়ে যেতেই ঝুমা আমাকে জাপটে ধরলো। এতক্ষন যেনো আশ্রয় খুঁজচ্ছিলো সেটাই পেলো আমার বুকে। আমি আস্তে আস্তে বললাম, "ভালোবাসি, এই মেয়েটাকেই ভালোবাসি।"
ঝুমাও ফিসফিসিয়ে বললো, "এক আকাশ ভালোবাসি এই পাগলটাকে।"
"তুমি তৈরী থেকো ঝুমা আমি আসছি তোমায় নিতে, যে ভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হলো না কিন্তু পূর্বজন্মে কোনো পুন্য করেছিলাম তাই তোমাকে পাচ্ছি। না পেলে বাঁচতাম না।" ঝুমা আমার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বললো, "ওরকম বলে না।" এমন সময় প্রভা দেবী ঢুকছেন দেখে আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল। প্রভা দেবী আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, "এগুলো রাখো, আমার জমানো, আরো আছে পরে দেবো। তুমি সাতদিনে সব ব্যবস্থা করে ফোন কোরো। এবার বেরিয়ে পড়, মনে রাখবে সময় কম, জানি তোমার বয়স কম তবু যা করার তোমাকেই করতে হবে।"
"টাকা আমি নিতে পারবো না মা। আশীর্বাদ করুন তাহলেই হবে।"
"মা দিলে ছেলেকে না করতে নেই। তোমায় যখন চাকরী হবে, অনেক উন্নতি হবে তখন ফেরৎ দিয়ো। এখন রাখো ১০০০০ আছে।"
আমি কিছু না বলে টাকাটা পকেটে রেখে বেরিয়ে এলাম।
রাস্তায় যেতে যেতে ভাবছিলাম ৭ দিন, মাত্র ৭ দিন আছে আমার হাতে। খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ সময়, জীবনের অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি এবং ঝুমা। ঝুমা আমায় বিশ্বাস করেছে, এ বিশ্বাসের মর্যাদা আমায় রাখতেই হবে। ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম।
"এই অসময়ে কে এলো আবার।"
"অর্ণব এসেছে ওদের বাড়ী থেকে কথা বলতে।"
"কে অর্ণব?"
"আরে ঝুমার শ্বশুরবাড়ীর তরফে।"
"কেন কি দরকারে এসেছে? বলেই তো দিয়েছি, একবার ভুল করেছি ও বাড়ীতে মেয়ে দিয়ে আর দেবো না।"
"আরে ছেলেটা এসেছে ওর কথা শোনো, নাকি বাইরে দাঁড়িয়েই সব কথা বলবে?"
সুবল বাবু ঘরে ঢুকে দাওয়ায় উঠে এলেন। আমি তখন ঘরে বসে।
তেরো
সুবল বাবু খাটে বসে ছিলেন, আমি চেয়ারে।
"একটা কথা সোজা করে বলি তোমায়, ঝুমাকে বিয়ের আশা ছেড়ে দাও। আমি মেয়ে দেবো না ও বাড়িতে। আমার মেয়েকে গলায় কলসি বেঁধে জলে ভাসিয়ে দেবো তাও আচ্ছা কিন্তু কেষ্টপুরের সরকার বাড়ীতে দেবো না।"
"আহা ওর কথাটা তো শোনো।" প্রভা দেবী বললেন।
"শোনার কিছু নেই প্রভা, আমি ডিসিশন জানিয়ে দিয়েছি।"
"তবু শোনো। ও একটা সবে উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া ছেলে তোমার মেয়ের জন্য এতদূর এসেছে ওর কথাটা শুনেই দেখো একবার।" প্রভা দেবী বেশ দৃঢ় স্বরে বললেন।
আমি তখন নির্বাক শ্রোতা, দরজার কপাটের ও পাশে ঝুমার নির্বাক উপস্থিতি ও বুঝতে পারছিলাম।
আমি ঝুমার মা কে যা বলেছিলাম সেটারই পুনরাবৃত্তি করলাম ওর বাবার সামনে, শুধু এটুকু জুড়ে দিলাম সাথে, "আপনার মেয়ের সুখের কোনো অভাব কোনোদিন হবে না। আমার নিজের ডাল ভাত না জুটলেও আপনার মেয়ের জুটবে। আর এমনিতেই বাড়ির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ক্ষীণ।"
উনি সব শুনে বললেন, "আমরা ভদ্রলোক, তায় তুমি আত্মীয়, এসেছো, খাওয়া দাওয়া করো, তারপর চলে যাও।" তারপর প্রভা দেবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "প্রভা আমাকে আর অর্ণবকে খেতে দাও। ও বেলাবেলি বেড়িয়ে পড়ুক নইলে লাস্ট বাসটা মিস করবে।" বলে উঠে পড়লেন। প্রভা দেবী শেষ চেষ্টা করলেন, "ঝুমাকে অন্তত একবার জিজ্ঞাসা করো, প্লীজ।"
এবার সুবল বাবু বেশ রাগী গলায় বললেন, "যা বলার বলে দিয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত ফাইনাল। কোনো কিন্তু নেই। বোশেখ মাসে ঝুমার বিয়ে দেবো শীতলাতলার স্বপন বিশ্বাসের সঙ্গে। ছেলেটার বউ মারা গেছে সাপে কেটে। ছেলে ভালো, গ্রামেই থাকবে মেয়ে। ওদের দাবী দাওয়া নেই সেরকম।"
"সেকি!!!! ওই ৫০ বছরের বুড়োর সঙ্গে ঝুমার বিয়ে!!!! তুমি মেনে নেবে? ওর বড় মেয়েটাই তো টুকুনের থেকে বড়।" শাশুড়ী মা প্রায় কেঁদে ফেললেন। আমার মাথায় প্রায় বজ্রাঘাত হলো। সুবল বাবু বললেন, "আমার বাপ দাদারা অনেক পাপ করেছে। স্বপনের দাদু মরেছিল আমার দাদুর জন্যে, সেই পাপ স্খলন হবে একটু। আমি পুকুর থেকে স্নান সেরে আসছি, দেখো অর্ণব যেনো খেয়ে যায়।" বলে উনি বেরিয়ে গেলেন।
উনি বাড়ির বাইরে যেতেই ঝুমা ঘরে ঢুকে খাটে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। প্রভা দেবী মেয়ে কে ধরে বললেন, "ওঠ ঝুমা, এটা কাঁদার সময় নয়।" তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন, "তোমাকে সাত দিন সময় দিচ্ছি বাবা, তুমি ঝুমাকে সাত দিন পর মানে পরের রোববার নিয়ে যাও বাড়ী থেকে, টাকা পয়সা আমার কাছে যা আছে সব দেবো। তুমি নিজের পায়ে না দাঁড়ানো অবধি ঝুমার আর তোমার চলে যাবে।" তারপর ঝুমার হাত টা আমার হাতে দিয়ে বললেন, "আমার মেয়ের অতবড় সব্বনাশ হবে আর আমি দেখবো সে হবে না। আমি বেঁচে থাকতে তোর বাবাকে অনর্থ করতে দেবো না।" আমি ঝুমার হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম, ঝুমার মায়ের মুখটা অবিকল পুজোর প্যান্ডেলের মা দুর্গার মতো লাগছিলো। আমি ঝুমার হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে ওনাকে প্রনাম করলাম উনি আশীর্বাদ করলেন তারপর আমি বললাম, "মা, আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রাখবো। আজ অনেক দেরী হয়ে গেল, আমি আসছি। আপনি ব্যবস্থা করুন পরের রোববার আমি ঝুমাকে নিয়ে যাবো।" বলে উঠে পড়লাম। ঝুমার মা বললেন, "দাঁড়াও আমি একটু আসছি।" উনি বেরিয়ে যেতেই ঝুমা আমাকে জাপটে ধরলো। এতক্ষন যেনো আশ্রয় খুঁজচ্ছিলো সেটাই পেলো আমার বুকে। আমি আস্তে আস্তে বললাম, "ভালোবাসি, এই মেয়েটাকেই ভালোবাসি।"
ঝুমাও ফিসফিসিয়ে বললো, "এক আকাশ ভালোবাসি এই পাগলটাকে।"
"তুমি তৈরী থেকো ঝুমা আমি আসছি তোমায় নিতে, যে ভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে হলো না কিন্তু পূর্বজন্মে কোনো পুন্য করেছিলাম তাই তোমাকে পাচ্ছি। না পেলে বাঁচতাম না।" ঝুমা আমার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বললো, "ওরকম বলে না।" এমন সময় প্রভা দেবী ঢুকছেন দেখে আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল। প্রভা দেবী আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বললেন, "এগুলো রাখো, আমার জমানো, আরো আছে পরে দেবো। তুমি সাতদিনে সব ব্যবস্থা করে ফোন কোরো। এবার বেরিয়ে পড়, মনে রাখবে সময় কম, জানি তোমার বয়স কম তবু যা করার তোমাকেই করতে হবে।"
"টাকা আমি নিতে পারবো না মা। আশীর্বাদ করুন তাহলেই হবে।"
"মা দিলে ছেলেকে না করতে নেই। তোমায় যখন চাকরী হবে, অনেক উন্নতি হবে তখন ফেরৎ দিয়ো। এখন রাখো ১০০০০ আছে।"
আমি কিছু না বলে টাকাটা পকেটে রেখে বেরিয়ে এলাম।
রাস্তায় যেতে যেতে ভাবছিলাম ৭ দিন, মাত্র ৭ দিন আছে আমার হাতে। খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ সময়, জীবনের অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমি এবং ঝুমা। ঝুমা আমায় বিশ্বাস করেছে, এ বিশ্বাসের মর্যাদা আমায় রাখতেই হবে। ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম।