09-01-2020, 08:54 PM
ঘুম ভাঙলো পিসির ডাকে, পিসি চা খেতে ডাকছিল। চা খেতে বসে পিসেমশাই জিজ্ঞাসা করলেন, "কি টুকুন বাবু পরীক্ষা তো শেষ, কি ঠিক করলে?"
"এখনো ঠিক করিনি কিছু, দেখি জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোক।" আমি চা খেতে খেতে বললাম।
"শোনো পরীক্ষা তো শেষ এবার বাড়ী ফিরতে হবে তো নাকি? আমরা ভাবছি পরের সপ্তাহে কদিন পুরী বেড়াতে যাবো। ফিরে আসবো ৪ দিন পরে। তারপর না হয় চলে যেও।" পিসেমশাই এর স্বরে একটু কাঠিন্য ছিল যেনো।
"ঠিক আছে, তাই হবে। তবে ও বাড়িতে আমি নাও যেতে পারি, কোথায় যাবো সেটা দেখছি। তোমরা ঘুরে এসো, আমি একাই থাকবো। তোমরা এলে চলে যাবো।" আমি জবাব দিলাম
" দেখো তুমি এখানে থাকলে আমার বা সোমার কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু তোমার ঠাকুমা আর নমিতা বৌদি চান তুমি বাড়ী ফেরো, আমাদের কিছু করার নেই টুকুন আশা করি তুমি বুঝবে।"
"ইটস ওকে পিসেমশাই। আমি বুঝেছি।" বলে আধ খাওয়া চায়ের কাপটা বেসিনে রেখে নিজের ঘরের দিকে গেলাম। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম পিসিমা রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছেন।
এগারো
পিসেমশাই দোকান চলে যেতেই আমি পিসিমার কাছে গেলাম। পিসিমা নিজের ঘরে বসে জামা কাপড় গোছাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে বললেন "আয় বোস।" আমি পিসিমার হাত টা জড়িয়ে ধরে বললাম, "পিসিমা তুমি তখন কাঁদছিলে আমি দেখেছি। তুমি আমার মায়ের থেকেও বেশী। আমি সারাজীবন তোমার অবদান ভুলবো না। তোমাকে কোনোদিন যেনো আমার জন্য দুঃখ না পেতে হয়।"
"আমার ছোট্ট টুকুন বড় হয়ে গেছে। ইচ্ছে হয় তোকে আমার কাছে রেখে পড়াই, স্বাবলম্বী করে তুলি, তুই ভালো স্টুডেন্ট তোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিন্তু আমি পাড়া গাঁয়ের বউ আমার হাত পা বাঁধা। মা চায় না তুই এখানে থাকিস, নমিতা বৌদির সবে বাচ্ছা হয়েছে দেড় মাস হলো। তুই বাড়ীই চলে যা বাবা।" আবার চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো পিসিমার।
"পিসিমা বাড়ী আমি যাবো, তবে থাকবো কিনা জানিনা। আগে ঝুমার বাড়ী যাবো, ও খুব চাপে আছে। তারপর বাড়ী যাবো বাচ্চাটাকে দেখতে। হাজার হোক আমার বোন তো। তুমি আমাকে হাজার পাঁচেক টাকা ধার দিতে পারবে পিসিমা? খুব দরকার, আমি চাকরী পেলেই ফিরিয়ে দেবো।" খুব লজ্জা লাগলেও চাইলাম।
পিসিমা চিন্তিত মুখে বললো,"আমার কাছে তো অতো নেই, দেখি জোগাড় করে দেবো। কাল হলে চলবে তো?"
সম্মতি সূচক ঘাড় নেড়ে চলে এলাম। রাত্রে ঝুমার সঙ্গে কথা হলো, পরশু রোববার ওইদিন ওদের বাড়ী যাবো এই কথা ঠিক হলো।
হরিহরপুর একেবারে আজ গাঁ, বাস থেকে নেমে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। আমি আল ধরে হাঁটছিলাম। সেই কোন সকালে পিসিমার থেকে টাকা নিয়ে বেড়িয়েছি। শুধু পিসিমা জানে আমি কোথায় যাচ্ছি আর কেউ না। এই পৃথিবীতে দুজন নারী কে আমি বিশ্বাস করি, ঝুমা আর পিসিমা আর কাউকে নয়। রাস্তায় মিষ্টি কিনলাম এক প্যাকেট। আল রাস্তা ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার হাঁটার পর একটা মোড় এলো, পাশের ধান জমিতে একজন চাষী কাজ করছিল তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "কাকা হরিহরপুর কোন দিকে?"
"হরিহরপুর এইতো এখান থেকে ডান দিকের রাস্তা ধরো প্রথম গ্রাম। তা কাদের বাড়ী যাবে?"
" মণ্ডলদের বাড়ী"
"কোন মন্ডল?"
"সুবল মন্ডল।"
"অ, সুবল মন্ডল মানে ছোট মন্ডল, আগে নায়েব ছিল সুবলদার দাদু, ওনার বাবা বিষয় আশয় সব হারিয়েছিলেন জুয়াতে। সুবল দার একটা মেয়ে, তারও কপাল খারাপ ৫-৬ বছর সংসার করেই জামাইটা খুন হলো।"
আমি এগুলো সব জানি তাই কথা না বাড়িয়ে রাস্তা ধরলাম। বেলা প্রায় ১১.৩০, সকালে এক কাপ চা খেয়ে বেড়িয়েছি। এই মার্চ মাসেই সূর্য মাথার উপরে উঠেছে, খুব গরম না পড়লেও বেশ গরম। খিদেও পেয়েছে জবর। আমি একটু এগিয়ে ঝুমাকে ফোন করলাম, জানালাম প্রায় এসে গেছি। ও বললো বাড়ীর সামনে খিড়কি পুকুরের সামনে এসে ওকে মিস কল দিতে। আমি ছোটবেলায় মানে ফাইভে পড়ার সময় কাকার বিয়ে হয়েছিল তখন এসেছিলাম বরযাত্রী, মনে আছে একটু একটু। পুকুরের পাড়ে গিয়ে কল করতে হলো না, ঝুমা দাঁড়িয়েই ছিল। আমাকে দেখেই মুক্তোর মতো দাঁত বের করে হাসলো। আমিও হাসলাম। ঝুমাকে দেখলেই আমার সব দুঃখ কষ্ট নিমেষে দূর হয়ে যায়। মনে হয় আমি সব পেয়ে গেছি। ঝুমা একটা নীল শাড়ি আর গায়ে একটা সাদা শাল জড়িয়ে ছিল। অপরূপা লাগছিলো আমার চোখে, আমি আসবো বলে ঝুমা নতুন শাড়ি পড়েছে ভাবতেই কেমন লাগলো একটা, রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আমি এগিয়ে যেতেই বললো "এসো"। জানি ঝুমার মনেও ভয় আছে, একটা অবশ্যম্ভাবী বিবাদের আশঙ্কা আছে, এই কদিন ঝুমার সঙ্গে যতবার কথা হয়েছে ও একটাই কথা বলেছে, "দুজনে একে অপরের পাশে থাকলে কারোর ক্ষমতা নেই আলাদা করার।" আমাদের বাড়ীর ঘটনা হবার পর থেকে ঝুমার নজরে আমি অনেক উপরে উঠে গেছি বুঝতে পারছিলাম।
যখন ঝুমাদের বাড়ীতে ঢুকলাম তখন দাওয়ায় বসে মাছ কাটছিলেন ঝুমার মা। আমার হবু শাশুড়ি। ঝুমার বাবা বোধহয় বাড়ীতে ছিল না। আমি এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে প্রনাম করলাম ওর মাকে। উনি ঘুরে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন, "বেঁচে থাকো বাবা, সোনার দোয়াত কলম হোক। অনেক বড় হও।" ওনাকে ঝুমা নিশ্চই কিছু বলে রেখেছে আগে থেকে এটা বুঝতে পারলাম, কারণ এই উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য আমি তৈরী ছিলাম না। আমাকে একটা মোড়া দিলেন বসতে, তারপরেই ডাক দিলেন "ঝুমা, ও ঝুমা, অর্ণবকে মিষ্টি জল দে।" আমার ভালো নাম অর্ণব। আমি আমার হাতে থাকা জলভরার প্যাকেটটা ঝুমার মায়ের হাতে দিয়েই বললাম, "ব্যস্ত হবেন না, আমি সকালে খেয়ে এসেছি।"
"বসো বাবা বসো, ঝুমার বাবা আসার আগে আমার তোমাদের দুজনের সঙ্গে অনেক কথা আছে। সেই কোন সকালে বেড়িয়েছ, আগে খেয়ে নাও।"
ঝুমা চা আর একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এলো লাজুক মুখ করে। আমাকে দিলো চোখ নামিয়ে, লজ্জা পাচ্ছে মায়ের সামনে, কথাতেই আছে লজ্জা নারীর ভূষণ, আরো সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকে। ঝুমার মা বললো, "লুচি আর আলুর দম কখন দিবি? দেরী করিস না। তোর বাবা আসার আগে ও ভাতটুকু খেয়ে নিক আমি চাই।" ঝুমা "দিচ্ছি মা" বলে রান্নাঘরে চলে গেল।
একটু পরে খেয়ে বসে আছি এমন সময় ঝুমা পাশে এসে দাঁড়ালো, আমি জিজ্ঞাসা করলাম "মা কোথায়?" ও বললো"স্নানে গেছ"। আমি ওকে টেনে আমার কোলে বসালাম। ঝুমা আচমকা সামলাতে না পেরে আমার কোলের উপর পড়ে গেল। তারপর ছটফটিয়ে উঠতে গেল, আমি আমার ঠোঁট ওর ঠোঁটে বসিয়ে দিলাম। আহঃ কি অনির্বচনীয় আরাম, ঝুমা প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে সঙ্গ দিতে শুরু করলো। প্রায় মিনিট দুই চুমু খাবার পর আমি ঠোঁট তুলে ঝুমাকে ভালো করে কোলে বসিয়ে দুধ টিপতে শুরু করলাম। বড় বড় দুধ আমার হাতে আঁটছিলো না। এক হাতে ঝুমার কোমর ধরে ছিলাম। মাঝে মাঝে চুমু খেতে খেতে ঝুমার বুক টিপছিলাম। ঝুমা না না করলেও এনজয় করছিল বুঝতে পারছিলাম। একটু পরে গেট খোলার আওয়াজ পেতেই ঝুমা ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়েই ঘরে ঢুকে গেলো, ঝুমার মা ঢুকে বললো, "বাবা তোমরা দুজনেই আমার ঘরে এসো, আমি ঠাকুর দিয়েই আসছি।" বলে উপরে উঠে গেল। আমি আস্তে করে ডাকলাম "ঝুমু।" ঝুমা বেড়িয়ে এলো।
"কাছে এসো।"
"না তুমি আবার দুষ্টামি শুরু করবে। দস্যি একেবারে।"
"আরে প্রায় দেড় মাস পরে তোমাকে কাছে পেলাম একটু আদর করবো না" আমি দুস্টুমিমাখা স্বরে বললাম।
"ওটা আদর, উফফ কি জোর হাতে, টিপে ব্যাথা করে দিয়েছো। ওরকম করলে কোনোদিন হাত দিতে দেবো না।"
"লোকসান তাহলে তোমারই সোনা।" বলে একটু থেমে জিজ্ঞাসা করলাম, "শাশুড়ি মা কি কথা বলবেন আমার সাথে?"
"বাবাঃ শ্বাশুড়ি বুঝি! বিয়ের আগেই শ্বাশুড়ি! খুব উন্নতি হয়েছে ছেলের।" ঝুমা ঠোঁট উল্টে বললো।
"তাহলে কি দিদুন বলে ডাকবো? বউয়ের মা কে দিদুন।"
"এখন বউ হইনি মহারাজ, দেরী আছে।"
"সে লিগালি না হলেও আমি মনে মনে তোমায় বউ করে নিয়েছি। তুমি নাওনি?"
"দস্যি একটা। শ্বাশুড়ী জমাইয়ে কি কথা হবে আমি কি জানবো? বোধহয় দেনা পাওনার কথা বলবে।" বলে মুচকি হাসলো।
"ও তাহলে অনেক কিছু চাইবো।"
"যেমন?"
"ওনার ঘরের সবচেয়ে সুন্দর আর দামী রত্ন টা চাইবো।"
"যদি না দিতে চান?"
"ছিনিয়ে নিয়ে যাবো
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল, ঝুমা আবার ঘরে ঢুকলো।
ঝুমা আর ওর মা খাটে বসেছিল, আমি সামনে চেয়ারে। ঝুমার মাই প্রথম কথা শুরু করলেন "দেখো বাবা, তুমি বয়সে ঝুমার থেকে অনেকটাই ছোট, তোমার মা বছর খানেক আগে যখন বিয়ের কথা বলেছিলেন আমি অমতই করেছিলাম একটু। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।" একটু থেমে ভালো করে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বললেন, "ঝুমাকে তোমার কাকার সঙ্গে বিয়ে দিলাম, ৭ বছর সংসার করতে না করতেই সে চলে গেল। সোমত্ত মেয়ে, ভরা যৌবন, কিন্তু তোমার ঠাকুমা বাঁজা বাঁজা করে বদনাম করে দিল মেয়েটার। তাই আমার মত ছিল না ও বাড়ীতে আবার বিয়ে দেওয়ার কিন্তু শেষ তিন মাস আমি আমার ঝুমা কে বদলে যেতে দেখেছি। দেখেছি মুখ গোমড়া করে থাকা, কথায় কথায় খিঁচ খিঁচ করা ঝুমা একদম হাসিখুশি। তাই আমি মত বদলেছি। কিন্তু তোমার ঠাকুমা ঝুমার বাবাকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছে। তাই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে আছেন। আমি জানতে চাই তুমি তোমার আর ঝুমার ব্যাপারে কি ভেবেছো? জানি তুমি ছোট অনেক এই বয়েসে এত ভারী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শক্ত তোমার পক্ষে কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যতের প্রশ্ন বাবা।" বলে উনি থামলেন।
ঝুমা এতক্ষন মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল এবার আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি গলা ঝেড়ে বললাম, "আমি আমার জীবনে কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি। ঝুমা জীবনে আসার পর আমার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে, আমি ভালোবাসা কি তা জানতে শিখেছি। আমি ঝুমা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না। আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি অনেক বড় বড় কথা বলতে পারি কিন্তু বলবো না।" তারপর ঝুমার দিকে ঘুরে বললাম, "ঝুমা তোমার হাতটা দাও।" ঝুমা প্রথমে চমকে উঠলেও পরে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো, আমি ঝুমার হাত ধরে বললাম, "আমি আপনাদের ঝুমার কোনো অসন্মান কোনোদিন হয়ে দেবো না, চেষ্টা করবো সারা জীবন যেনো ও সুখে থাকে। ওকে সুখী রাখার জন্য যা করার তাই করবো। আমার যেটুকু সামর্থ্য সেই টুকু উজাড় করে দেবো।" ঝুমা আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। ও জানতেই পারেনি আমি কবে বড় হয়ে গেছি। টপ করে এক ফোঁটা জল পড়লো ওর চোখ দিয়ে, আমি আস্তে করে বললাম, "ঝুমু কেঁদো না ওতে গৃহস্থের অকল্যাণ হয়।" তারপর ওর মায়ের দিকে ঘুরে বললাম, "আমি চাই আপনাকে দিদুন নয় মা বলে ডাকতে, আপনি কি সে সুযোগ দেবেন আমায়?"
"এখনো ঠিক করিনি কিছু, দেখি জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোক।" আমি চা খেতে খেতে বললাম।
"শোনো পরীক্ষা তো শেষ এবার বাড়ী ফিরতে হবে তো নাকি? আমরা ভাবছি পরের সপ্তাহে কদিন পুরী বেড়াতে যাবো। ফিরে আসবো ৪ দিন পরে। তারপর না হয় চলে যেও।" পিসেমশাই এর স্বরে একটু কাঠিন্য ছিল যেনো।
"ঠিক আছে, তাই হবে। তবে ও বাড়িতে আমি নাও যেতে পারি, কোথায় যাবো সেটা দেখছি। তোমরা ঘুরে এসো, আমি একাই থাকবো। তোমরা এলে চলে যাবো।" আমি জবাব দিলাম
" দেখো তুমি এখানে থাকলে আমার বা সোমার কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু তোমার ঠাকুমা আর নমিতা বৌদি চান তুমি বাড়ী ফেরো, আমাদের কিছু করার নেই টুকুন আশা করি তুমি বুঝবে।"
"ইটস ওকে পিসেমশাই। আমি বুঝেছি।" বলে আধ খাওয়া চায়ের কাপটা বেসিনে রেখে নিজের ঘরের দিকে গেলাম। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম পিসিমা রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছছেন।
এগারো
পিসেমশাই দোকান চলে যেতেই আমি পিসিমার কাছে গেলাম। পিসিমা নিজের ঘরে বসে জামা কাপড় গোছাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে বললেন "আয় বোস।" আমি পিসিমার হাত টা জড়িয়ে ধরে বললাম, "পিসিমা তুমি তখন কাঁদছিলে আমি দেখেছি। তুমি আমার মায়ের থেকেও বেশী। আমি সারাজীবন তোমার অবদান ভুলবো না। তোমাকে কোনোদিন যেনো আমার জন্য দুঃখ না পেতে হয়।"
"আমার ছোট্ট টুকুন বড় হয়ে গেছে। ইচ্ছে হয় তোকে আমার কাছে রেখে পড়াই, স্বাবলম্বী করে তুলি, তুই ভালো স্টুডেন্ট তোর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিন্তু আমি পাড়া গাঁয়ের বউ আমার হাত পা বাঁধা। মা চায় না তুই এখানে থাকিস, নমিতা বৌদির সবে বাচ্ছা হয়েছে দেড় মাস হলো। তুই বাড়ীই চলে যা বাবা।" আবার চোখের কোন চিকচিক করে উঠলো পিসিমার।
"পিসিমা বাড়ী আমি যাবো, তবে থাকবো কিনা জানিনা। আগে ঝুমার বাড়ী যাবো, ও খুব চাপে আছে। তারপর বাড়ী যাবো বাচ্চাটাকে দেখতে। হাজার হোক আমার বোন তো। তুমি আমাকে হাজার পাঁচেক টাকা ধার দিতে পারবে পিসিমা? খুব দরকার, আমি চাকরী পেলেই ফিরিয়ে দেবো।" খুব লজ্জা লাগলেও চাইলাম।
পিসিমা চিন্তিত মুখে বললো,"আমার কাছে তো অতো নেই, দেখি জোগাড় করে দেবো। কাল হলে চলবে তো?"
সম্মতি সূচক ঘাড় নেড়ে চলে এলাম। রাত্রে ঝুমার সঙ্গে কথা হলো, পরশু রোববার ওইদিন ওদের বাড়ী যাবো এই কথা ঠিক হলো।
হরিহরপুর একেবারে আজ গাঁ, বাস থেকে নেমে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। আমি আল ধরে হাঁটছিলাম। সেই কোন সকালে পিসিমার থেকে টাকা নিয়ে বেড়িয়েছি। শুধু পিসিমা জানে আমি কোথায় যাচ্ছি আর কেউ না। এই পৃথিবীতে দুজন নারী কে আমি বিশ্বাস করি, ঝুমা আর পিসিমা আর কাউকে নয়। রাস্তায় মিষ্টি কিনলাম এক প্যাকেট। আল রাস্তা ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার হাঁটার পর একটা মোড় এলো, পাশের ধান জমিতে একজন চাষী কাজ করছিল তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "কাকা হরিহরপুর কোন দিকে?"
"হরিহরপুর এইতো এখান থেকে ডান দিকের রাস্তা ধরো প্রথম গ্রাম। তা কাদের বাড়ী যাবে?"
" মণ্ডলদের বাড়ী"
"কোন মন্ডল?"
"সুবল মন্ডল।"
"অ, সুবল মন্ডল মানে ছোট মন্ডল, আগে নায়েব ছিল সুবলদার দাদু, ওনার বাবা বিষয় আশয় সব হারিয়েছিলেন জুয়াতে। সুবল দার একটা মেয়ে, তারও কপাল খারাপ ৫-৬ বছর সংসার করেই জামাইটা খুন হলো।"
আমি এগুলো সব জানি তাই কথা না বাড়িয়ে রাস্তা ধরলাম। বেলা প্রায় ১১.৩০, সকালে এক কাপ চা খেয়ে বেড়িয়েছি। এই মার্চ মাসেই সূর্য মাথার উপরে উঠেছে, খুব গরম না পড়লেও বেশ গরম। খিদেও পেয়েছে জবর। আমি একটু এগিয়ে ঝুমাকে ফোন করলাম, জানালাম প্রায় এসে গেছি। ও বললো বাড়ীর সামনে খিড়কি পুকুরের সামনে এসে ওকে মিস কল দিতে। আমি ছোটবেলায় মানে ফাইভে পড়ার সময় কাকার বিয়ে হয়েছিল তখন এসেছিলাম বরযাত্রী, মনে আছে একটু একটু। পুকুরের পাড়ে গিয়ে কল করতে হলো না, ঝুমা দাঁড়িয়েই ছিল। আমাকে দেখেই মুক্তোর মতো দাঁত বের করে হাসলো। আমিও হাসলাম। ঝুমাকে দেখলেই আমার সব দুঃখ কষ্ট নিমেষে দূর হয়ে যায়। মনে হয় আমি সব পেয়ে গেছি। ঝুমা একটা নীল শাড়ি আর গায়ে একটা সাদা শাল জড়িয়ে ছিল। অপরূপা লাগছিলো আমার চোখে, আমি আসবো বলে ঝুমা নতুন শাড়ি পড়েছে ভাবতেই কেমন লাগলো একটা, রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আমি এগিয়ে যেতেই বললো "এসো"। জানি ঝুমার মনেও ভয় আছে, একটা অবশ্যম্ভাবী বিবাদের আশঙ্কা আছে, এই কদিন ঝুমার সঙ্গে যতবার কথা হয়েছে ও একটাই কথা বলেছে, "দুজনে একে অপরের পাশে থাকলে কারোর ক্ষমতা নেই আলাদা করার।" আমাদের বাড়ীর ঘটনা হবার পর থেকে ঝুমার নজরে আমি অনেক উপরে উঠে গেছি বুঝতে পারছিলাম।
যখন ঝুমাদের বাড়ীতে ঢুকলাম তখন দাওয়ায় বসে মাছ কাটছিলেন ঝুমার মা। আমার হবু শাশুড়ি। ঝুমার বাবা বোধহয় বাড়ীতে ছিল না। আমি এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে প্রনাম করলাম ওর মাকে। উনি ঘুরে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন, "বেঁচে থাকো বাবা, সোনার দোয়াত কলম হোক। অনেক বড় হও।" ওনাকে ঝুমা নিশ্চই কিছু বলে রেখেছে আগে থেকে এটা বুঝতে পারলাম, কারণ এই উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য আমি তৈরী ছিলাম না। আমাকে একটা মোড়া দিলেন বসতে, তারপরেই ডাক দিলেন "ঝুমা, ও ঝুমা, অর্ণবকে মিষ্টি জল দে।" আমার ভালো নাম অর্ণব। আমি আমার হাতে থাকা জলভরার প্যাকেটটা ঝুমার মায়ের হাতে দিয়েই বললাম, "ব্যস্ত হবেন না, আমি সকালে খেয়ে এসেছি।"
"বসো বাবা বসো, ঝুমার বাবা আসার আগে আমার তোমাদের দুজনের সঙ্গে অনেক কথা আছে। সেই কোন সকালে বেড়িয়েছ, আগে খেয়ে নাও।"
ঝুমা চা আর একটা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এলো লাজুক মুখ করে। আমাকে দিলো চোখ নামিয়ে, লজ্জা পাচ্ছে মায়ের সামনে, কথাতেই আছে লজ্জা নারীর ভূষণ, আরো সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকে। ঝুমার মা বললো, "লুচি আর আলুর দম কখন দিবি? দেরী করিস না। তোর বাবা আসার আগে ও ভাতটুকু খেয়ে নিক আমি চাই।" ঝুমা "দিচ্ছি মা" বলে রান্নাঘরে চলে গেল।
একটু পরে খেয়ে বসে আছি এমন সময় ঝুমা পাশে এসে দাঁড়ালো, আমি জিজ্ঞাসা করলাম "মা কোথায়?" ও বললো"স্নানে গেছ"। আমি ওকে টেনে আমার কোলে বসালাম। ঝুমা আচমকা সামলাতে না পেরে আমার কোলের উপর পড়ে গেল। তারপর ছটফটিয়ে উঠতে গেল, আমি আমার ঠোঁট ওর ঠোঁটে বসিয়ে দিলাম। আহঃ কি অনির্বচনীয় আরাম, ঝুমা প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে সঙ্গ দিতে শুরু করলো। প্রায় মিনিট দুই চুমু খাবার পর আমি ঠোঁট তুলে ঝুমাকে ভালো করে কোলে বসিয়ে দুধ টিপতে শুরু করলাম। বড় বড় দুধ আমার হাতে আঁটছিলো না। এক হাতে ঝুমার কোমর ধরে ছিলাম। মাঝে মাঝে চুমু খেতে খেতে ঝুমার বুক টিপছিলাম। ঝুমা না না করলেও এনজয় করছিল বুঝতে পারছিলাম। একটু পরে গেট খোলার আওয়াজ পেতেই ঝুমা ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়েই ঘরে ঢুকে গেলো, ঝুমার মা ঢুকে বললো, "বাবা তোমরা দুজনেই আমার ঘরে এসো, আমি ঠাকুর দিয়েই আসছি।" বলে উপরে উঠে গেল। আমি আস্তে করে ডাকলাম "ঝুমু।" ঝুমা বেড়িয়ে এলো।
"কাছে এসো।"
"না তুমি আবার দুষ্টামি শুরু করবে। দস্যি একেবারে।"
"আরে প্রায় দেড় মাস পরে তোমাকে কাছে পেলাম একটু আদর করবো না" আমি দুস্টুমিমাখা স্বরে বললাম।
"ওটা আদর, উফফ কি জোর হাতে, টিপে ব্যাথা করে দিয়েছো। ওরকম করলে কোনোদিন হাত দিতে দেবো না।"
"লোকসান তাহলে তোমারই সোনা।" বলে একটু থেমে জিজ্ঞাসা করলাম, "শাশুড়ি মা কি কথা বলবেন আমার সাথে?"
"বাবাঃ শ্বাশুড়ি বুঝি! বিয়ের আগেই শ্বাশুড়ি! খুব উন্নতি হয়েছে ছেলের।" ঝুমা ঠোঁট উল্টে বললো।
"তাহলে কি দিদুন বলে ডাকবো? বউয়ের মা কে দিদুন।"
"এখন বউ হইনি মহারাজ, দেরী আছে।"
"সে লিগালি না হলেও আমি মনে মনে তোমায় বউ করে নিয়েছি। তুমি নাওনি?"
"দস্যি একটা। শ্বাশুড়ী জমাইয়ে কি কথা হবে আমি কি জানবো? বোধহয় দেনা পাওনার কথা বলবে।" বলে মুচকি হাসলো।
"ও তাহলে অনেক কিছু চাইবো।"
"যেমন?"
"ওনার ঘরের সবচেয়ে সুন্দর আর দামী রত্ন টা চাইবো।"
"যদি না দিতে চান?"
"ছিনিয়ে নিয়ে যাবো
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শোনা গেল, ঝুমা আবার ঘরে ঢুকলো।
ঝুমা আর ওর মা খাটে বসেছিল, আমি সামনে চেয়ারে। ঝুমার মাই প্রথম কথা শুরু করলেন "দেখো বাবা, তুমি বয়সে ঝুমার থেকে অনেকটাই ছোট, তোমার মা বছর খানেক আগে যখন বিয়ের কথা বলেছিলেন আমি অমতই করেছিলাম একটু। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।" একটু থেমে ভালো করে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বললেন, "ঝুমাকে তোমার কাকার সঙ্গে বিয়ে দিলাম, ৭ বছর সংসার করতে না করতেই সে চলে গেল। সোমত্ত মেয়ে, ভরা যৌবন, কিন্তু তোমার ঠাকুমা বাঁজা বাঁজা করে বদনাম করে দিল মেয়েটার। তাই আমার মত ছিল না ও বাড়ীতে আবার বিয়ে দেওয়ার কিন্তু শেষ তিন মাস আমি আমার ঝুমা কে বদলে যেতে দেখেছি। দেখেছি মুখ গোমড়া করে থাকা, কথায় কথায় খিঁচ খিঁচ করা ঝুমা একদম হাসিখুশি। তাই আমি মত বদলেছি। কিন্তু তোমার ঠাকুমা ঝুমার বাবাকে যা নয় তাই বলে অপমান করেছে। তাই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে আছেন। আমি জানতে চাই তুমি তোমার আর ঝুমার ব্যাপারে কি ভেবেছো? জানি তুমি ছোট অনেক এই বয়েসে এত ভারী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শক্ত তোমার পক্ষে কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যতের প্রশ্ন বাবা।" বলে উনি থামলেন।
ঝুমা এতক্ষন মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল এবার আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি গলা ঝেড়ে বললাম, "আমি আমার জীবনে কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি। ঝুমা জীবনে আসার পর আমার জীবনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে, আমি ভালোবাসা কি তা জানতে শিখেছি। আমি ঝুমা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না। আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি অনেক বড় বড় কথা বলতে পারি কিন্তু বলবো না।" তারপর ঝুমার দিকে ঘুরে বললাম, "ঝুমা তোমার হাতটা দাও।" ঝুমা প্রথমে চমকে উঠলেও পরে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো, আমি ঝুমার হাত ধরে বললাম, "আমি আপনাদের ঝুমার কোনো অসন্মান কোনোদিন হয়ে দেবো না, চেষ্টা করবো সারা জীবন যেনো ও সুখে থাকে। ওকে সুখী রাখার জন্য যা করার তাই করবো। আমার যেটুকু সামর্থ্য সেই টুকু উজাড় করে দেবো।" ঝুমা আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। ও জানতেই পারেনি আমি কবে বড় হয়ে গেছি। টপ করে এক ফোঁটা জল পড়লো ওর চোখ দিয়ে, আমি আস্তে করে বললাম, "ঝুমু কেঁদো না ওতে গৃহস্থের অকল্যাণ হয়।" তারপর ওর মায়ের দিকে ঘুরে বললাম, "আমি চাই আপনাকে দিদুন নয় মা বলে ডাকতে, আপনি কি সে সুযোগ দেবেন আমায়?"