07-01-2020, 11:18 PM
সারা রাত একটা আবেশ একটা অদ্ভুত তৃপ্তি আমাকে ঘিরে রেখেছিল। ভালোবাসার কোনো মাত্রা হয় না, কোন বাধা মানে না। আমি যেন সময়ের আগেই বড় হয়ে গেছি। ঝুমা আজ থেকে ২ বছর আগেও চূড়ান্ত ঘরোয়া কিন্তু মুখরা একটা বউ ছিল, এখন যেন সে অষ্টাদশী প্রেমিকা। আমি আর তার ভাসুরপো নই প্রেমিক। সামনেই পরীক্ষা তাই মোবাইলে ঝুমার ছবিতে একবার চুমু খেয়ে পড়ায় মন দিলাম। সারারাত ঘুমাইনি, ভোরের আলো ফুটতেই নীচে এলাম, দেখি বারান্দায় ঝুমা মোড়ায় বসে আছে, আমি ওকে আস্তে আস্তে বললাম, "গুড মর্নিং সোনা।" ঝুমা চোখ তুলে হাসলো, মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতগুলো বেড়িয়ে এলো। যেনো একরাশ শিউলি ফুল শীতের নরম সকালে শিশিরের উপর পড়লো। আমি বললাম "তৈরী হয়ে নাও ঝুমু, কেউ জেগে ওঠার আগেই বেরোবো।"
দশ
সারারাস্তা ঝুমা আমার পাশে হাতে হাত রেখে বসেছিল। ওকে বললাম "তোমাকে তোমাদের গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসি।"
ঝুমা বললো "কোনো দরকার নেই, তুমি যাও গিয়ে মন দিয়ে পড়ো। আর পরীক্ষা না শেষ হওয়া অবধি দিনে দুবারের বেশী কথা নয়।" বলে মুচকি হাসলো।
"আমি তো থাকতে পারবো না।"
"আমি তো তোমারই আছি, সারাজীবন তোমার পাশটিতে থাকতে চাই। এই কদিন পড়ে নাও ভালোকরে বাবু। আমাকে ওদিকটা সামলাতে হবে, তুমি পরীক্ষা দাও তারপর আমাদের বাড়ী এস।" আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো এক্ষুনি ঝুমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াই, বলি 'আপনার মেয়েকে আমি ভালোবাসি, ওকে আমি বিয়ে করবো।' কিন্তু আমি এখনো স্বাবলম্বী নই, আমাকে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
পিসির বাড়ী এসে কারোর সঙ্গে কথা না বলে ঘরে চলে এলাম। খানিক্ষন পড়ার পর, স্নান করে খেতে গেলাম, দেখলাম পিসি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমি কি ব্যাপার জিজ্ঞাসা করতে বলল "দেখ টুকুন তোদের জন্য আমার বাড়ীতে ঝামেলা হচ্ছে সকালে মা ফোন করে তোর পিসেমশাই কে যা নয় তাই বলেছে। আমরা নাকি তোকে ঝুমার সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে উৎসাহ দিচ্ছি, তোকে ওদের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। এভাবে আমি পারবো না।"
"পিসি তুমি এই মুহূর্তে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বললেও আমার কিছু করার নেই কিন্তু আমি তোমায় নিজের মায়ের থেকে বেশি ভালোবাসি তাই একটাই রিকোয়েষ্ট পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি আমায় থাকতে দাও। আমি তারপর নিজে চলে যাবো।"
পিসির চোখে জল চলে এলো, উঠে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো পিসি, ঠিক নিজের ছেলের মত, তারপর চোখ মুছে বলল, "আমার ইচ্ছায় হলে আমি তোর বিয়ে এই বাড়ী থেকেই ঝুমার সঙ্গে দিতাম কিন্তু পারবো না রে। তুই অনেক বড় হবি দেখে নিস। তুই ঝুমাকে অনেক খুশীতে রাখবি জানি। ভালো করে পড় বাবা।"
পিসি আমাকে মায়ের মত জড়িয়ে ধরে ছিলো, ঠিক যেমন মা জড়িয়ে ধরতো ১০ বছর আগে। পিসিকে ঢিপ করে একটা প্রণাম সেরে আমি পড়তে চলে গেলাম। বায়লজি ভালো করে পড়ছিলাম আমার সাবজেক্টটা ভালো লাগে। সন্ধ্যাবেলায় ঝুমু ফোন করে খুব কাঁদছিলো ওর বাবা নাকি বলেছে আর আমাদের বাড়ী গেলে কেটে রেখে দেবে। আমার খুব রাগ হলেও কিছু বলার ছিল না বা করার ছিল না।
সব পরীক্ষা বেশ ভালো হলো, ঝুমার সঙ্গে এই কদিন সকালে বিকেলে কথা হলেও বেশিক্ষন কথা হয়নি, শেষ পরীক্ষার আগে বঙ্কু ফোন করে জানালো আমার মায়ের মেয়ে হয়েছে। পরীক্ষার পর একদিন দেখে আসবো ঠিক করলাম। শেষ পরীক্ষা অঙ্ক ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েই দেখি ঝুমা দাঁড়িয়ে আছে, আমি পুরো সারপ্রাইজড। ঝুমা এগিয়ে এসে হেসে বললো, "কেমন পরীক্ষা হলো?" আমি বললাম "ভালো। চলো কোথাও গিয়ে বসি।"
বিবেকানন্দ পার্কে এসে বসলাম, লোকে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল বারবার কারণ একটা উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া কলেজ ড্রেস পড়া ছেলে আর একটা বয়সে বড় শাড়ি পড়া মেয়ে এই সময় পার্কে সত্যি খুব অদ্ভুত দৃশ্য।
ঝুমা আমার কাঁধে মাথা রেখে বললো "এবারে কি করবে?"
"জয়েন্টের রেজাল্ট টা বেরোক, ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হবে না, ভাবছি জেনারেল ফিজিক্সে অনার্স পড়বো।" আমি অসহায় গলায় বললাম। কারণ আমি জানি ডাক্তারি পড়তে যা টাকা দরকার সেটা আমি বাড়ী থেকে পাবো না।
ঝুমা জিজ্ঞাসা করলো "কেন, ডাক্তারি হবে না কেন?এবারে না পেলে আবার জয়েন্ট দাও।"
"না আশাকরি পাবো, কিন্তু অনেক টাকার ব্যাপার।"
"টাকা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। আমি জোগাড় করবো।"
"ছি, আমি তোমার থেকে টাকা নিতে পারবো না। তাছাড়া তুমিই বা পাবে কোথায়?"
"আমার গয়না আছে ১৫ ভরি বিয়ের সময় বাবা দিয়েছিল, তারপর জমি বেচে দেবো?" ঝুমা দৃঢ় স্বরে বললো।
"আমি তোমার কোনো টাকাই নেবো না। ডাক্তারি পড়লে মিনিমাম ৭ বছর লাগবে দাঁড়াতে। কিন্তু জেনারেল পড়লে তিন বছরে গ্রাজুয়েট তারপর একটা কিছু জুটিয়ে নেবো। আমাকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।" আমি বললাম।
"তুমি ডাক্তার হলে আমি সব ফিরে পাবো, তুমি আমার অহংকার গর্ব হবে, তোমার জন্য যে টুকু করার আমি করবোই, কোনো বাধা মানবো না। ধার হিসেবে নিয়ো।" ঝুমার গলায় এমন কিছু একটা ছিল যা আমার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিলো।
ঝুমা কিছুক্ষন বসার পর বললো, "সামনের রোববার আমাদের বাড়ী এসো, আমি তোমাকে সঙ্গে নিয়েই বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই। তোমার বড্ডো ধকল গেল, তোমাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবো।" আমি জানি ঝুমা দারুন রাঁধে, আমি হেসে বললাম, "দই চিকেন রেঁধে রেখো আমি আসবো।" বলেই ঝুমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, ঝুমা নিজের মুখ সরিয়ে অনেকে দূরে সরিয়ে বললো, "এখানে নয় প্লিজ।"
"ধুর কবে যে তোমায় নিজের করে পাব। খালি তুমি বাধা দাও। চুমুও খেতে দাও না ঠিক করে।" আমি বিরক্তিরস্বরে বললাম।
ঝুমা প্রথমে লজ্জা পেলেও পরে একটু থেমে বললো, "নিজেকে উজাড় করে দেবো তোমায়। সমর্পন করবো নিজেকে, খুব তাড়াতাড়ি।" লাজুক স্বরে বলেই উঠে পড়লো।
এরপর ঝুমা কে বাসে তুলে দিয়ে আমি পিসির বাড়ী ফিরলাম। আমার সব হতাশা কোথায় চলে গেছে, আছে শুধু বড় হবার প্রত্যয়। ঝুমার বাবার সঙ্গে কথা বলে তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে নেবো, কলেজ শুরুর আগেই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
দশ
সারারাস্তা ঝুমা আমার পাশে হাতে হাত রেখে বসেছিল। ওকে বললাম "তোমাকে তোমাদের গ্রামে ছেড়ে দিয়ে আসি।"
ঝুমা বললো "কোনো দরকার নেই, তুমি যাও গিয়ে মন দিয়ে পড়ো। আর পরীক্ষা না শেষ হওয়া অবধি দিনে দুবারের বেশী কথা নয়।" বলে মুচকি হাসলো।
"আমি তো থাকতে পারবো না।"
"আমি তো তোমারই আছি, সারাজীবন তোমার পাশটিতে থাকতে চাই। এই কদিন পড়ে নাও ভালোকরে বাবু। আমাকে ওদিকটা সামলাতে হবে, তুমি পরীক্ষা দাও তারপর আমাদের বাড়ী এস।" আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো এক্ষুনি ঝুমার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াই, বলি 'আপনার মেয়েকে আমি ভালোবাসি, ওকে আমি বিয়ে করবো।' কিন্তু আমি এখনো স্বাবলম্বী নই, আমাকে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
পিসির বাড়ী এসে কারোর সঙ্গে কথা না বলে ঘরে চলে এলাম। খানিক্ষন পড়ার পর, স্নান করে খেতে গেলাম, দেখলাম পিসি মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমি কি ব্যাপার জিজ্ঞাসা করতে বলল "দেখ টুকুন তোদের জন্য আমার বাড়ীতে ঝামেলা হচ্ছে সকালে মা ফোন করে তোর পিসেমশাই কে যা নয় তাই বলেছে। আমরা নাকি তোকে ঝুমার সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে উৎসাহ দিচ্ছি, তোকে ওদের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। এভাবে আমি পারবো না।"
"পিসি তুমি এই মুহূর্তে আমাকে এখান থেকে চলে যেতে বললেও আমার কিছু করার নেই কিন্তু আমি তোমায় নিজের মায়ের থেকে বেশি ভালোবাসি তাই একটাই রিকোয়েষ্ট পরীক্ষা শেষ হওয়া অবধি আমায় থাকতে দাও। আমি তারপর নিজে চলে যাবো।"
পিসির চোখে জল চলে এলো, উঠে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো পিসি, ঠিক নিজের ছেলের মত, তারপর চোখ মুছে বলল, "আমার ইচ্ছায় হলে আমি তোর বিয়ে এই বাড়ী থেকেই ঝুমার সঙ্গে দিতাম কিন্তু পারবো না রে। তুই অনেক বড় হবি দেখে নিস। তুই ঝুমাকে অনেক খুশীতে রাখবি জানি। ভালো করে পড় বাবা।"
পিসি আমাকে মায়ের মত জড়িয়ে ধরে ছিলো, ঠিক যেমন মা জড়িয়ে ধরতো ১০ বছর আগে। পিসিকে ঢিপ করে একটা প্রণাম সেরে আমি পড়তে চলে গেলাম। বায়লজি ভালো করে পড়ছিলাম আমার সাবজেক্টটা ভালো লাগে। সন্ধ্যাবেলায় ঝুমু ফোন করে খুব কাঁদছিলো ওর বাবা নাকি বলেছে আর আমাদের বাড়ী গেলে কেটে রেখে দেবে। আমার খুব রাগ হলেও কিছু বলার ছিল না বা করার ছিল না।
সব পরীক্ষা বেশ ভালো হলো, ঝুমার সঙ্গে এই কদিন সকালে বিকেলে কথা হলেও বেশিক্ষন কথা হয়নি, শেষ পরীক্ষার আগে বঙ্কু ফোন করে জানালো আমার মায়ের মেয়ে হয়েছে। পরীক্ষার পর একদিন দেখে আসবো ঠিক করলাম। শেষ পরীক্ষা অঙ্ক ছিল। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েই দেখি ঝুমা দাঁড়িয়ে আছে, আমি পুরো সারপ্রাইজড। ঝুমা এগিয়ে এসে হেসে বললো, "কেমন পরীক্ষা হলো?" আমি বললাম "ভালো। চলো কোথাও গিয়ে বসি।"
বিবেকানন্দ পার্কে এসে বসলাম, লোকে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল বারবার কারণ একটা উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া কলেজ ড্রেস পড়া ছেলে আর একটা বয়সে বড় শাড়ি পড়া মেয়ে এই সময় পার্কে সত্যি খুব অদ্ভুত দৃশ্য।
ঝুমা আমার কাঁধে মাথা রেখে বললো "এবারে কি করবে?"
"জয়েন্টের রেজাল্ট টা বেরোক, ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হবে না, ভাবছি জেনারেল ফিজিক্সে অনার্স পড়বো।" আমি অসহায় গলায় বললাম। কারণ আমি জানি ডাক্তারি পড়তে যা টাকা দরকার সেটা আমি বাড়ী থেকে পাবো না।
ঝুমা জিজ্ঞাসা করলো "কেন, ডাক্তারি হবে না কেন?এবারে না পেলে আবার জয়েন্ট দাও।"
"না আশাকরি পাবো, কিন্তু অনেক টাকার ব্যাপার।"
"টাকা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। আমি জোগাড় করবো।"
"ছি, আমি তোমার থেকে টাকা নিতে পারবো না। তাছাড়া তুমিই বা পাবে কোথায়?"
"আমার গয়না আছে ১৫ ভরি বিয়ের সময় বাবা দিয়েছিল, তারপর জমি বেচে দেবো?" ঝুমা দৃঢ় স্বরে বললো।
"আমি তোমার কোনো টাকাই নেবো না। ডাক্তারি পড়লে মিনিমাম ৭ বছর লাগবে দাঁড়াতে। কিন্তু জেনারেল পড়লে তিন বছরে গ্রাজুয়েট তারপর একটা কিছু জুটিয়ে নেবো। আমাকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।" আমি বললাম।
"তুমি ডাক্তার হলে আমি সব ফিরে পাবো, তুমি আমার অহংকার গর্ব হবে, তোমার জন্য যে টুকু করার আমি করবোই, কোনো বাধা মানবো না। ধার হিসেবে নিয়ো।" ঝুমার গলায় এমন কিছু একটা ছিল যা আমার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিলো।
ঝুমা কিছুক্ষন বসার পর বললো, "সামনের রোববার আমাদের বাড়ী এসো, আমি তোমাকে সঙ্গে নিয়েই বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই। তোমার বড্ডো ধকল গেল, তোমাকে নিজে রেঁধে খাওয়াবো।" আমি জানি ঝুমা দারুন রাঁধে, আমি হেসে বললাম, "দই চিকেন রেঁধে রেখো আমি আসবো।" বলেই ঝুমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম, ঝুমা নিজের মুখ সরিয়ে অনেকে দূরে সরিয়ে বললো, "এখানে নয় প্লিজ।"
"ধুর কবে যে তোমায় নিজের করে পাব। খালি তুমি বাধা দাও। চুমুও খেতে দাও না ঠিক করে।" আমি বিরক্তিরস্বরে বললাম।
ঝুমা প্রথমে লজ্জা পেলেও পরে একটু থেমে বললো, "নিজেকে উজাড় করে দেবো তোমায়। সমর্পন করবো নিজেকে, খুব তাড়াতাড়ি।" লাজুক স্বরে বলেই উঠে পড়লো।
এরপর ঝুমা কে বাসে তুলে দিয়ে আমি পিসির বাড়ী ফিরলাম। আমার সব হতাশা কোথায় চলে গেছে, আছে শুধু বড় হবার প্রত্যয়। ঝুমার বাবার সঙ্গে কথা বলে তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে নেবো, কলেজ শুরুর আগেই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।