10-12-2019, 10:27 PM
আমরা দুজনে আবার নিজেদের জায়গায় বসতেই ওয়েটার ঢুকলো। আমার কাছে সব মিলিয়ে ৫০০ টাকা ছিল, বিল হয়েছিল ৩৭০ টাকা। ঝুমা দিতে যাচ্ছিল, আমি ওর হাত চেপে ধরে নিজে দিলাম। ঝুমা মুচকি হাসলো।
সাত
ভ্যানটা গ্রামের মোড়ে নামিয়ে দিলো আমাদের দুজনকে। আমি আগে আগে হাঁটছিলাম আর ঝুমা পিছনে, পাশে হাঁটতে লজ্জা পাচ্ছিল ও। আজ থেকে দশ বছর আগে এই গ্রামেই ঝুমার বিয়ে হয়েছিল আমি সেদিন বরযাত্রী গেছিলাম, কত আনন্দ হয়েছিল। বিয়ের পর বাসর ঘরে নিয়ে গিয়ে মা বলেছিল যা নতুন কাকীর কোলে বস, আমি লাজুক মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঝুমা হাত বাড়িয়ে কোলে টেনে নিয়েছিল। ভাগ্যের পরিহাসে, সেই ঝুমাকেই আমি বিয়ে করবো কিছুদিন পরে। মনে করে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। ঝুমা অনেকটা মাথায় ঘোমটা টেনে ছিল, অবিকল নববধূর মতো।
বাড়ীতে ঢুকেই বুঝতে পারলাম পরিবেশ থমথমে, ছোটকা দাওয়ায় বসে নখ কাটছিলো, মোক্ষদা মাসী কলতলায় মাছ কুটছিলো, মা বোধহয় রান্নাঘরে ছিল আর ঠাকুমা শুয়ে ছিল ঘরে। আমি বাড়ী ঢুকেই গলা খাঁকারি দিলাম। ছোটকা আমাকে দেখেই হেসে বললো "আরে টুকুন কেমন আছিস?" আমি কিছু বলার আগেই চেঁচিয়ে বললো "নমিতা দেখো কে এসেছে?"
আমার পিছনে ঝুমাকে লক্ষ্য করেনি ছোটকা কিন্তু মোক্ষদা মাসী ঠিক লক্ষ্য করেছিল, মোক্ষদা মাসী চেঁচিয়ে বললো "বড় বৌদি তোমার ছেলে একা আসেনি বউ নিয়ে এয়েছে।" বলেই হ্যা হ্যা করে হেসে উঠলো। আমি লজ্জা পেলাম ঝুমা আমার পিছনে থাকলেও বুঝতে পারলাম ও আরো লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো, বললো, "টুকুন তোর বাবার পাশে মোড়ায় বস, আমি জল খাবারের জোগাড় করি।" তারপরেই ঝুমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললো, "মুখপুড়ি আমার সঙ্গে আয়।" ছোটকা আমার থেকে মাত্র ৫ বছরের বড়, সেই ছোটকাকে মা আমার বাবা বলে সম্মোধন করলো দেখে কেমন যেনো অস্বস্তি হলো। মায়ের পেটটা বিরাট উঁচু হয়েছে, আট মাস হয়ে গেছে, এক মাস পরেই ডেলিভারি। আমার ভাই / বোন হবে, ভেবে আবার অস্বস্তি হচ্ছিল। মোক্ষদা মাসী মাছ ধুয়ে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ এতদিন জা কে সব হাতে ধরে শিখিয়েছিলে এবার সেই জা কেই বৌমা মনে করে সব শেখাতে হবে।" ছোটকা মুচকি মুচকি হাসছিল, আমায় বললো, "কি রে পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন চলছে?"
"ভালো, তোমার কলেজ কেমন?"
"ওই চলছে।"
"ঠাকুমা কোথায়?"
"মা ঘুমোচ্ছে, বিকেলে কথা বলিস।"
"না আমি পাঁচটার লোকাল ধরবো, চারটে নাগাদ বেড়িয়ে যাবো।"
"সে কি? রাত্রে খেয়ে থেকে কাল যাবি।"
"আরে না না বই আনিনি।"
"আমার পুরোনো বই গুলো আছে, ওগুলো নিয়ে নিস।"
"কিন্তু ঝুমা, মানে মেজো কাকী তো বাড়ীতে বলে আসেনি।"
"সে তোর মাকে বলে দিচ্ছি মেজো বৌদির বাড়ীতে ফোন করে দেবে। কতদিন পরে এলি, আজকের রাত টা থেকে যা।"
আমি মেজকাকী কে ঝুমা বলছিলাম আর ছোটকা মেজো বৌদি, অদ্ভুত একটা জগাখিচুড়ি রিলেশনশিপের কথা হচ্ছিল। দুজনেই বুঝতে পারছিলাম অসামঞ্জস্যটা কিন্তু দুজনেই এক্ষেত্রে অসহায় ছিলাম। মা ঝুমা কে নিয়ে বেড়িয়ে এলো এসেই বললো, "উপরে চল, দু জনের সঙ্গেই আমার কথা আছে।"
আমি বললাম, "যা কথা হবে সবার সামনেই হবে, ঠাকুমা উঠুক আমি কথা বলে নেবো, আলাদা করে নয়। ছোটকা এখন বাড়ীর গার্জেন ওর ও থাকা উচিৎ।" আমার স্বরের দৃঢতায় চমকে উঠলো মা আর ছোটকা, ঝুমা এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। মা আবার বললো, "সব কথা হবে, আমারও একটা দায়িত্ত্ব আছে। কিন্তু তার আগে তোর আমাদের অবস্থা বোঝা উচিৎ।"
"দেখো মা আমি এখানে ঝগড়া করতে আসিনি। কিন্তু দায়িত্বের কথা বোলো না, আমার মাধ্যমিকের বছরে তুমি নিজের বিয়ের জন্য আমাকে পিসির বাড়ী পাঠিয়ে নিজের দায়িত্ব খুব পালন করেছ। যাই হোক, আমি আমারটা বুঝে নেবো। ঠাকুমা উঠুক একেবারে কথা হবে।" মা শুনে অপরাধবোধে মাথা নামিয়ে নিলো। ছোটকা বললো, "আরে টুকুন তুই যা, জামাকাপড় ছেড়ে রেস্ট নে। নমিতা তুমি মেজো বৌদিকে ঘরে পড়ার কাপড় দাও। আর বৌদির বাবাকে ফোন করে দাও। ওরা রাত্রে আজ থেকে কাল ফিরবে।" আমি উপরে উঠে সোজা চিলেকোঠায় চলে গেলাম। গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো বিকেল পাঁচটায়, ঠাকুমার চিৎকারে। তড়িঘড়ি নীচে নামতে নামতে শুনলাম ঠাকুমা বলছে, "ওই মাগী আমার ছেলেকে খেয়েছে, ওই মাগী বাঁজা মাগী, এখন কচি নাতিটার মাথা খাবে, বড় বৌমাকে বলেছিলাম ওই মেয়ে মানুষকে আবার ঘরে তুলো না কিন্তু শুনবে আমার কথা কেউ? দেখো কোনো লজ্জা নেই, হাঁটুর বয়েসী ছেলেটার খাটে উঠতে মুখিয়ে আছে, কোনো লজ্জা শরমের বালাই নেই।" আমি নীচে নেমে দেখলাম ঝুমা হাউহাউ করে কাঁদছে, ছোটকা বাড়ীতে নেই, মা ঝুমা কে সামলাচ্ছে। আমি নীচে নেমে বললাম, "ঠাকুমা চুপ করো, আমি এখানে কথা বলতে এসেছি, তোমার আজেবাজে কথা শুনতে নয়।" এবার মায়ের দিকে ঘুরে বললাম, "মা তোমার লজ্জা লাগছে না, ঠাকুমা এই সব উল্টোপাল্টা বলছে, ঝুমাকে অপমান করাই উদ্দেশ্য হলে বোলো এক্ষুনি চলে যাচ্ছি এখান থেকে।" আমি কোনোদিন এই ভাবে কথা বলিনা, তাই ঠাকুমা শুনে হকচকিয়ে গেল। এমন সময় ছোটকা ঢুকলো বাড়ীতে, পরিস্থিতি আন্দাজ করেছিল বোধহয়। এবার আমি আবার বললাম, "আমি একটাই কথা বলবো, আমি ঝুমাকেই বিয়ে করবো, কোনো পণ যৌতুক আমার চাই না। যদি অসুবিধা থাকে কারোর তো বলো।"
ঠাকুমা চেঁচিয়ে উঠলো, "ওই তো কালনাগিনী কানে বিষ ঢেলেছে কচি ছেলেটার, যে ছেলে সাত চড়ে রা কাড়তো না সে কিনা চোপা করছে মুখে মুখে।" ছোটকা বললো "আহঃ মা চুপ করো না।" অন্যসময় হলে ঝুমা উপযুক্ত জবাব দিতো ঠাকুমাকে কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য তাই দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছিলো।
আমি বললাম, "আজ অনেক দেরী হয়েছে তাই আজ যাবো না। কাল ভোরের ট্রেনে ফিরবো। পরীক্ষা আমি পিসির বাড়ী থেকেই দেবো। তারপর আমি ফিরবো এখানে। আমি ভালো রেজাল্ট করলে সায়েন্স নেবো, জয়েন্ট দেবো, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ঝুমাকে বিয়ে করবো। তোমাদের কারোর কোনো অসুবিধাতে আমার কিস্যু যায় আসে না। আমি এখন বঙ্কুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, ফিরে এসে চিলেকোঠায় পড়তে বসবো, কারোর কিছু বলার থাকলে বলে দিয়ো, আর মা রাত্রের খাবার উপরে পাঠিয়ে দিও।"এক নিঃশ্বাসে বলে আমি ঝুমার দিকে তাকিয়ে বললাম, "ঝুমা তোমার কাউকে ভয় পাবার দরকার নেই, যারা বড় তাদের সন্মান করা কর্তব্য, কিন্তু কেউ অপমান করলে চুপ করে থেকো না।" ঝুমা হাউহাউ করে কেঁদে ফেললো, মা মেঝেতে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ঘষছিলো আর ছোটকা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়েছিল। সবচেয়ে শকড ছিল ঠাকুমা, পুরো বোবা হয়ে গেছিলো। আমি কিছু না বলে উপরে উঠে গেলাম।
বাড়ী থেকে বেরোনোর পর আমার নিজের উপর গর্ব হচ্ছিল। ঝুমার যে দায়িত্ব আমি নিয়েছি সে দায়িত্ব পালন করতে আমি সক্ষম সেটা বুঝতে পারছিলাম।
সাত
ভ্যানটা গ্রামের মোড়ে নামিয়ে দিলো আমাদের দুজনকে। আমি আগে আগে হাঁটছিলাম আর ঝুমা পিছনে, পাশে হাঁটতে লজ্জা পাচ্ছিল ও। আজ থেকে দশ বছর আগে এই গ্রামেই ঝুমার বিয়ে হয়েছিল আমি সেদিন বরযাত্রী গেছিলাম, কত আনন্দ হয়েছিল। বিয়ের পর বাসর ঘরে নিয়ে গিয়ে মা বলেছিল যা নতুন কাকীর কোলে বস, আমি লাজুক মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঝুমা হাত বাড়িয়ে কোলে টেনে নিয়েছিল। ভাগ্যের পরিহাসে, সেই ঝুমাকেই আমি বিয়ে করবো কিছুদিন পরে। মনে করে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। ঝুমা অনেকটা মাথায় ঘোমটা টেনে ছিল, অবিকল নববধূর মতো।
বাড়ীতে ঢুকেই বুঝতে পারলাম পরিবেশ থমথমে, ছোটকা দাওয়ায় বসে নখ কাটছিলো, মোক্ষদা মাসী কলতলায় মাছ কুটছিলো, মা বোধহয় রান্নাঘরে ছিল আর ঠাকুমা শুয়ে ছিল ঘরে। আমি বাড়ী ঢুকেই গলা খাঁকারি দিলাম। ছোটকা আমাকে দেখেই হেসে বললো "আরে টুকুন কেমন আছিস?" আমি কিছু বলার আগেই চেঁচিয়ে বললো "নমিতা দেখো কে এসেছে?"
আমার পিছনে ঝুমাকে লক্ষ্য করেনি ছোটকা কিন্তু মোক্ষদা মাসী ঠিক লক্ষ্য করেছিল, মোক্ষদা মাসী চেঁচিয়ে বললো "বড় বৌদি তোমার ছেলে একা আসেনি বউ নিয়ে এয়েছে।" বলেই হ্যা হ্যা করে হেসে উঠলো। আমি লজ্জা পেলাম ঝুমা আমার পিছনে থাকলেও বুঝতে পারলাম ও আরো লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো, বললো, "টুকুন তোর বাবার পাশে মোড়ায় বস, আমি জল খাবারের জোগাড় করি।" তারপরেই ঝুমার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললো, "মুখপুড়ি আমার সঙ্গে আয়।" ছোটকা আমার থেকে মাত্র ৫ বছরের বড়, সেই ছোটকাকে মা আমার বাবা বলে সম্মোধন করলো দেখে কেমন যেনো অস্বস্তি হলো। মায়ের পেটটা বিরাট উঁচু হয়েছে, আট মাস হয়ে গেছে, এক মাস পরেই ডেলিভারি। আমার ভাই / বোন হবে, ভেবে আবার অস্বস্তি হচ্ছিল। মোক্ষদা মাসী মাছ ধুয়ে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললো, "হ্যাঁ হ্যাঁ এতদিন জা কে সব হাতে ধরে শিখিয়েছিলে এবার সেই জা কেই বৌমা মনে করে সব শেখাতে হবে।" ছোটকা মুচকি মুচকি হাসছিল, আমায় বললো, "কি রে পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন চলছে?"
"ভালো, তোমার কলেজ কেমন?"
"ওই চলছে।"
"ঠাকুমা কোথায়?"
"মা ঘুমোচ্ছে, বিকেলে কথা বলিস।"
"না আমি পাঁচটার লোকাল ধরবো, চারটে নাগাদ বেড়িয়ে যাবো।"
"সে কি? রাত্রে খেয়ে থেকে কাল যাবি।"
"আরে না না বই আনিনি।"
"আমার পুরোনো বই গুলো আছে, ওগুলো নিয়ে নিস।"
"কিন্তু ঝুমা, মানে মেজো কাকী তো বাড়ীতে বলে আসেনি।"
"সে তোর মাকে বলে দিচ্ছি মেজো বৌদির বাড়ীতে ফোন করে দেবে। কতদিন পরে এলি, আজকের রাত টা থেকে যা।"
আমি মেজকাকী কে ঝুমা বলছিলাম আর ছোটকা মেজো বৌদি, অদ্ভুত একটা জগাখিচুড়ি রিলেশনশিপের কথা হচ্ছিল। দুজনেই বুঝতে পারছিলাম অসামঞ্জস্যটা কিন্তু দুজনেই এক্ষেত্রে অসহায় ছিলাম। মা ঝুমা কে নিয়ে বেড়িয়ে এলো এসেই বললো, "উপরে চল, দু জনের সঙ্গেই আমার কথা আছে।"
আমি বললাম, "যা কথা হবে সবার সামনেই হবে, ঠাকুমা উঠুক আমি কথা বলে নেবো, আলাদা করে নয়। ছোটকা এখন বাড়ীর গার্জেন ওর ও থাকা উচিৎ।" আমার স্বরের দৃঢতায় চমকে উঠলো মা আর ছোটকা, ঝুমা এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। মা আবার বললো, "সব কথা হবে, আমারও একটা দায়িত্ত্ব আছে। কিন্তু তার আগে তোর আমাদের অবস্থা বোঝা উচিৎ।"
"দেখো মা আমি এখানে ঝগড়া করতে আসিনি। কিন্তু দায়িত্বের কথা বোলো না, আমার মাধ্যমিকের বছরে তুমি নিজের বিয়ের জন্য আমাকে পিসির বাড়ী পাঠিয়ে নিজের দায়িত্ব খুব পালন করেছ। যাই হোক, আমি আমারটা বুঝে নেবো। ঠাকুমা উঠুক একেবারে কথা হবে।" মা শুনে অপরাধবোধে মাথা নামিয়ে নিলো। ছোটকা বললো, "আরে টুকুন তুই যা, জামাকাপড় ছেড়ে রেস্ট নে। নমিতা তুমি মেজো বৌদিকে ঘরে পড়ার কাপড় দাও। আর বৌদির বাবাকে ফোন করে দাও। ওরা রাত্রে আজ থেকে কাল ফিরবে।" আমি উপরে উঠে সোজা চিলেকোঠায় চলে গেলাম। গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো বিকেল পাঁচটায়, ঠাকুমার চিৎকারে। তড়িঘড়ি নীচে নামতে নামতে শুনলাম ঠাকুমা বলছে, "ওই মাগী আমার ছেলেকে খেয়েছে, ওই মাগী বাঁজা মাগী, এখন কচি নাতিটার মাথা খাবে, বড় বৌমাকে বলেছিলাম ওই মেয়ে মানুষকে আবার ঘরে তুলো না কিন্তু শুনবে আমার কথা কেউ? দেখো কোনো লজ্জা নেই, হাঁটুর বয়েসী ছেলেটার খাটে উঠতে মুখিয়ে আছে, কোনো লজ্জা শরমের বালাই নেই।" আমি নীচে নেমে দেখলাম ঝুমা হাউহাউ করে কাঁদছে, ছোটকা বাড়ীতে নেই, মা ঝুমা কে সামলাচ্ছে। আমি নীচে নেমে বললাম, "ঠাকুমা চুপ করো, আমি এখানে কথা বলতে এসেছি, তোমার আজেবাজে কথা শুনতে নয়।" এবার মায়ের দিকে ঘুরে বললাম, "মা তোমার লজ্জা লাগছে না, ঠাকুমা এই সব উল্টোপাল্টা বলছে, ঝুমাকে অপমান করাই উদ্দেশ্য হলে বোলো এক্ষুনি চলে যাচ্ছি এখান থেকে।" আমি কোনোদিন এই ভাবে কথা বলিনা, তাই ঠাকুমা শুনে হকচকিয়ে গেল। এমন সময় ছোটকা ঢুকলো বাড়ীতে, পরিস্থিতি আন্দাজ করেছিল বোধহয়। এবার আমি আবার বললাম, "আমি একটাই কথা বলবো, আমি ঝুমাকেই বিয়ে করবো, কোনো পণ যৌতুক আমার চাই না। যদি অসুবিধা থাকে কারোর তো বলো।"
ঠাকুমা চেঁচিয়ে উঠলো, "ওই তো কালনাগিনী কানে বিষ ঢেলেছে কচি ছেলেটার, যে ছেলে সাত চড়ে রা কাড়তো না সে কিনা চোপা করছে মুখে মুখে।" ছোটকা বললো "আহঃ মা চুপ করো না।" অন্যসময় হলে ঝুমা উপযুক্ত জবাব দিতো ঠাকুমাকে কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্য তাই দাঁত দিয়ে নখ খুঁটছিলো।
আমি বললাম, "আজ অনেক দেরী হয়েছে তাই আজ যাবো না। কাল ভোরের ট্রেনে ফিরবো। পরীক্ষা আমি পিসির বাড়ী থেকেই দেবো। তারপর আমি ফিরবো এখানে। আমি ভালো রেজাল্ট করলে সায়েন্স নেবো, জয়েন্ট দেবো, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ঝুমাকে বিয়ে করবো। তোমাদের কারোর কোনো অসুবিধাতে আমার কিস্যু যায় আসে না। আমি এখন বঙ্কুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, ফিরে এসে চিলেকোঠায় পড়তে বসবো, কারোর কিছু বলার থাকলে বলে দিয়ো, আর মা রাত্রের খাবার উপরে পাঠিয়ে দিও।"এক নিঃশ্বাসে বলে আমি ঝুমার দিকে তাকিয়ে বললাম, "ঝুমা তোমার কাউকে ভয় পাবার দরকার নেই, যারা বড় তাদের সন্মান করা কর্তব্য, কিন্তু কেউ অপমান করলে চুপ করে থেকো না।" ঝুমা হাউহাউ করে কেঁদে ফেললো, মা মেঝেতে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ঘষছিলো আর ছোটকা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়েছিল। সবচেয়ে শকড ছিল ঠাকুমা, পুরো বোবা হয়ে গেছিলো। আমি কিছু না বলে উপরে উঠে গেলাম।
বাড়ী থেকে বেরোনোর পর আমার নিজের উপর গর্ব হচ্ছিল। ঝুমার যে দায়িত্ব আমি নিয়েছি সে দায়িত্ব পালন করতে আমি সক্ষম সেটা বুঝতে পারছিলাম।