Thread Rating:
  • 6 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
জীবনের সুখের জন্য
#3
বিদিশা আর কথা বলার সুযোগ দিলো না, ফোনটা কেটে দিলো। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে উঠে পড়লাম বাড়ীর দিকে যাবার জন্য। দিনটা ভালই গেল।
আমি বাড়ি পৌঁছে দেখি মিতা বসে টিভি দেখছে। আমি ঢুকতেই জিজ্ঞেস করল, ‘চা খাবে?’
আমি বললাম, ‘তুমি চা খাওনি?’
ও মাথা নাড়াতে আমি বললাম, ‘ঠিক আছে তুমি টিভি দেখ আমি চা বানিয়ে আনছি।‘ বলে আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম। চা বসিয়ে মুড়ির টিনটা বার করলাম আর পেঁয়াজ তেল দিয়ে ভাল করে মুড়ি মেখে চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম। আমি আর মিতা চা খেলাম আর কিছুটা সময় ওর সাথে টিভি দেখলাম। ওকে দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে ওর ফেভারিট সিরিয়াল দেখছে। আমি ওকে ডিস্টার্ব না করে একটা সিগারেট খেতে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। সিগারেটের ধোঁয়া গিলতে গিলতে বিদিশার কথা ভাবছি। মনে হচ্ছে বন্ধুত্বটা ভালই হবে। ওকে মনে হল খুব মিশুকে। বন্ধুত্ব করতে জানে। দেখা যাক কালকে কি কথা হয়।
তারপরের দিন অফিসে বসে কাজ করছি এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো। দেখি নিকিতা। হ্যালো বলতে নিকিতা বলল, ‘স্যার, কাল কথা হোল বিদিশার সাথে? কেমন লাগলো?’
আমি ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘থ্যাঙ্ক উ নিকিতা বিদিশার নাম্বারটা দেবার জন্য। মনে হোল ওর সাথে বন্ধুত্বটা জমবে।‘
নিকিতা জবাবে বলল, ‘উ আর ওয়েলকাম স্যার। আপনার ভাল লাগলে আমারও খুব ভাল লাগবে। চালিয়ে যান আর যদি কোন প্রব্লেম হয় আমাকে ফোন করবেন কেমন? ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, আপনি তো আপনার বন্ধু পেয়ে গেলেন, বৌদির কি হবে?’
আমি একটু অবাক হলাম। বৌদির কি হবে মানে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘বৌদির আবার কি হবে? বৌদির তো কোন অসুবিধে নেই।‘
নিকিতা একটু অবাক হবার ভান করে বলল, ‘বারে, আপনি মনের সুখে বন্ধুর সাথে কথা বলবেন আর বউদি একলা সময় কাটাবে নাকি? আপনি তো আচ্ছা মানুষ!’
আমার মনে একটা তরঙ্গ বয়ে গেল। সত্যি তো এটা তো আমার মনে আসি নি। মিতা তো আরও একা হয়ে যাবে। যদি বিদিশা কোথাও ঘুরতে যেতে বলে আমি তো চলে যাবো কিন্তু ওর সাথে তো তাহলে এটা বিস্বাসঘাতকতা হবে। আমার সুখের কথাই শুধু চিন্তা করব আমি। এতো স্বার্থপর আমি। একটুও ভাবলাম না মিতার জন্য। অথচ নিকিতাকে দেখ। ও কে আমার যে এইসব ও চিন্তা করবে। কিন্তু ও তো করেছে। আমি তো করিনি। আমি একটা গোমরানো নিশ্বাস ছেড়ে নিকিতাকে বললাম, ‘সত্যি নিকিতা আপনার খেয়ালের জন্য ধন্যবাদ। আমি একদম ভুলে গেছি মিতার কথা।‘
নিকিতা বলে উটলো, ‘মিতা বুঝি বৌদির নাম? খুব সুন্দর নাম তো।‘
আমি জবাব দিলাম, ‘হ্যাঁ, মিতা আপনার বৌদির নাম। কিন্তু ওর জন্য কি করি বলুন তো?’
নিকিতা উত্তর দিলো, ‘বলতে পারি যদি আপনি আমাকে আপনি বলা ছেড়ে তুমি বলেন।‘
আমি বললাম, ‘ওকে। আমি তুমি বলতে পারি যদি আমাকে তুমি বলতে পারো।‘
নিকিতা একটু চিন্তা করে বলল, ‘ওকে, আমার আপত্তি নেই। আমরা তো এখন বন্ধু। আমিও তোমাকে তুমি করে বলব।‘
আমি বললাম, ‘থ্যাঙ্ক উ।‘
নিকিতা বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ তাহলে কি করবে বৌদির জন্য?’
আমি- কি করি বলতো? আমার মাথাতে কিছু আসছে না।
নিকিতা- তোমার মাথাতে আসবে না। কারন তুমি নিজেকে ছাড়া আর কিছু ভাবো না।
আমি মনে মনে ভাবলাম তাই কি। আমি নিজেকে ছাড়া কিছু ভাবি না। এই মুহূর্তে তো তাই মানে হয়। আমি তো ওর জন্য একবারও চিন্তা করি নি।
আমি জবাব দিলাম, ‘তুমি হয়তো ঠিক বলছ নিকিতা, আমি আমার জন্যই হয়তো শুধু চিন্তা করি।‘
নিকিতা সুন্দর করে হেসে উঠে বলল, ‘বাবা, কি অভিমান তোমার। আমি একটু মজা করছিলাম। আমি বুঝতে পেরে গেছি যে বৌদির জন্য তোমার টান ভালই আছে। যাহোক যে বুদ্ধিটা আমি এখন দোবো সেটা আগে চিন্তা করে তবে জবাব দিও।‘
আমি শুধু বললাম, ‘বল শুনি।‘
নিকিতা উত্তর দিলো আস্তে আস্তে, ‘বৌদির ফোন নাম্বারটা আমাদের ক্লাবে রেজিস্ট্রি করিয়ে দাও। বৌদিকে বন্ধু যোগার করে দেবার দায়িত্ব আমার থাকবে।‘
আমি একদম আকাশ থেকে পড়লাম নিকিতার কথা শুনে। একি বলছে ও? মিতা যদি শোনে যে আমি ওর নাম্বার দিয়েছি তাহলে তো যতটা সম্পর্ক ছিল নিমেষে চূর্ণ হয়ে যাবে। আমি ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম, ‘না না নিকিতা এটা।সম্ভব নয়।‘
নিকিতা নাছোড়বান্দার মতো বলে উঠলো, ‘কেন সম্ভব নয়। ভয় পাচ্ছ পাছে যদি বৌদি জেনে ফেলে তুমি ওর নাম্বার দিয়েছ এখানে?’
মেয়েটা কি অন্তর্যামী নাকি। যেটা ভাবছি সেটা বলছে? আমি বেগতিক দেখে বললাম, ‘হ্যাঁ তাই।‘
নিকিতা আদুরে গলায় বলল, ‘আরে মশাই আমি কি বৌদিকে বলব যে তুমি নাম্বার দিয়েছ না বৌদি জানতে পারবে যে ও এই ক্লাবের মেম্বার। বৌদির সাথে তো আমার কোন কথাই হবে না। যা কথা হবে আমি যে ছেলেকে নাম্বার দেবো তার সাথে। অবশ্য একটা ব্যাপার হতে পারে সেটা হোল যদি ছেলেটা বলে দেয় ও আমাদের ক্লাব থেকে নাম্বারটা পেয়েছে।‘
আমি যেন সুত্র পেয়েছি এই সমস্যা থেকে বাঁচার। আমি বলে উঠলাম, ‘হ্যাঁ ঠিকই তো, যদি ছেলেটা বলে দেয়। আমিও তো বিদিশাদের বলেছি।‘
নিকিতা একটু ভাবুক গলায় বলল, ‘এটা একটা সমস্যা ঠিকই তবে সমাধান আছে এর।‘
আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, সমাধান? এর আবার কি সমাধান থাকতে পারে? আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি সমাধানের কথা বলছ তুমি?’
নিকিতা উত্তর দিলো, ‘ধর ছেলেটা বলল আমি এই ক্লাবের থেকে নাম্বারটা পেয়েছি। বৌদি হয়তো তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে ক্লাবের কথা। তুমি না বললেই হোল অবশ্য বোকার মতো যদি তুমি আগেভাগে বলে না দাও।‘
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম, ‘নিকিতা, তুমি কি আমাকে এতো বোকা মনে করো? আমি তো যা করেছি ওকে না জানিয়ে।“
ও বলল, ‘ঠিক। তুমি বলোনি। তাহলে ব্যাপারটা এরকম হতে পারে আরও দু তিনজন ক্লাবের নাম নিল। বৌদি থোরি খোঁজ করতে যাবে ক্লাবের ব্যাপারে। ভুলভাল ফোন ভেবে হয়তো কথা বলবে না। এর মধ্যে যে ম্যানেজ করতে পারবে সে পারবে।‘
নিকিতা আমার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। আমি জবাব দিলাম, ‘এতো হুড়োহুড়ি করো না। আমাকে একটু সময় দাও ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে। আমি তোমাকে বলছি একটু পড়ে।‘
নিকিতা উত্তরে বলল, ‘ঠিক আছে টেক উর টাইম। আমাকে পড়ে ফোন করো। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থেকো, আমি ভাল ছেলের সন্ধান দেবো।‘
আমার মাথাটা ঘুরছে নিকিতাকে শোনার পর। কি করব, নিকিতাকে ফেলতে পারছি না। কেমন যেন ঘোরের মতো লাগছে। মিতা ছেলেদের সাথে কথা বলে না তা নয়, বরং ভালইবাসে কথা বলতে। ও যখন কোন পার্টিতে যায় তখন বেশিরভাগ সময় ও ছেলেদেরই সাথে কথা বলে ঠিক তা বলে অচেনাদের সাথে নয়। অবশ্য এমন কোন ঘটনা ঘটে নি যেখানে ও আপত্তি জানিয়েছে অচেনাদের সাথে কথা বলতে। বাট দিস ইস ডিফারেন্ট। তবে অন্য দিক দিয়ে দেখলে ব্যাপারটার ভিতর খুব একটা রিস্ক নেই। শি হ্যাঁজ টু চুস। যদি মনে হয় ওর মনের মতো তাহলে কথা বলবে আর যদি না মনের মতো হয় জয় রামজিকি। কথা না বললেই হোল। অন্তত আমি বা নিকিতা সিনের মধ্যে আসছি না এটা সিওর। কে জানে মিতার হয়ত ভাল লাগতেও পারে। লেট আস ট্রাই।
আমি আবার নিকিতাকে ফোন করলাম। নিকিতা বলল, ‘কি হোল বন্ধু, কিছু ঠিক করলে?’
আমি বললাম, ‘নিকিতা, ব্যাপারটা বেশ এক্সসাইটিং। আমি ভাবলাম একবার ট্রাই করতে দোষ কি। যখন আমরা কেউ সিনে আসছি না।‘
নিকিতা বলে উঠলো, ‘একদম ঠিক। উ আর সো রাইট। ওকে আমি দেখছি।‘
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, ‘কিন্তু ফি?’
নিকিতা হেসে জবাব দিলো, ‘নো ফি, ইটস ফ্রী। তোমার অফিস টাইম বল কটা থেকে কটা?‘
আমি অবাক হলাম, ‘কেন, অফিস টাইম এর সাথে আবার কি রিলেশন?’
ও উত্তর করল, ‘আছে বাবা আছে। তুমি কি ভাবো বৌদি তোমার সামনে ওদের সাথে কথা বলবে? তুমি বলেছিলে?’
সো রাইট শি ইস। আমি আমার টাইম বলে দিলাম। নিকিতা আবার হেসে বলল, ‘আমাকে কিন্তু দোষ দিও না যদি বৌদি তোমার হাত ছাড়া হয়ে যায়।‘
আমিও মজা করে বললাম, ‘তাতে কি, তোমাকে ডেকে নেবো।‘
দুদিন পড়ে আমি যখন অফিস থেকে ঘরে এলাম, মিতা আমার চা নিয়ে এলো। টেবিলের ওপর কাপটা রেখে বলল, ‘জানো মোবাইল এবার বন্ধ করে রেখে দিতে হবে।‘
আমি চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম, ‘কেন কি হোল আবার? মোবাইল এর উপর রাগ কিসের?’
মিতা কটকট করে বলে উঠলো, ‘আর বল কেন, আজ দুদিন ধরে কতগুলো ছেলে ফোন করে বলে যাচ্ছে যে তারা নাকি আমার ফোনে নাম্বারটা কোন একটা ক্লাব মারফৎ পেয়েছে। আমি ওদের বন্ধু হতে ইচ্ছুক কিনা। বল দেখি কি ঝামেলা। কোথা থেকে আমার নাম্বার পেল কে দিলো মাঝখান থেকে আমাকে ডিস্টার্ব করা।‘
আমি আশ্চর্যের ভাব দেখিয়ে বললাম, ‘আরে এতো অদ্ভুত ব্যাপার। তুমি জানো না অথচ ছেলেগুলো তোমার নাম্বার জানে। কি করে?’
মিতা ততোধিক রাগ দেখিয়ে বলল, ‘সে আমি বলব কি করে? আমি তো আর ওদের নাম্বার দিই নি।‘
আমি ঠোঁট উলটে বললাম। ‘সে তো ঠিকই। কিন্তু নাম্বার তো আমিও দিই নি। তাহলে?’
মিতা হাত নেড়ে জবাব দিলো, ‘ছেড়ে দাও। উত্তর না পেয়ে ঠিক বন্ধ করে দেবে ফোন করা।‘
আমি একটু খুশি হলাম যে যাক আমাকে সন্দেহ করে নি। কিন্তু ও যদি কল একসেপ্ট না করে তাহলে আমার আর নিকিতার প্ল্যান তো ঠিক হোল না। তবুও কয়েকদিন ওয়েট করা যাক। দেখি কি হয়।
নিকিতাকে এ ব্যাপারে আমার খবর দেওয়া হয়ে গেছে। ও আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছে এই বলে যে বৌদি তো এ ব্যাপারে অভ্যস্ত নয়, আরও কয়েকদিন দেখা যাক। আমিও ভাবলাম সবুরে মেওয়া ফলে। দেখাই যাক না কি হয়। অন্তত আমার রিস্ক নেই এটা তো বুঝে গেছি। কয়েকদিন বাদে মিতার ফোনে একটা কল এলো শুনলাম। মিতা ফোনটা দেখে উঠে বাইরে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পারে ফিরে এলো টিভির ঘরে। মুখে একটা পাতলা হাসি। আমি ভাবলাম হাসি তো ফাঁসি। আমরা কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করি না কার কল এলো, কি বলল। এটা আমাদের একদম প্রথম থেকে আন্ডারস্ট্যান্ডিং। আমরা বলেই নিয়েছিলাম জিজ্ঞেস করাতে মনে হয় স্বাধীনতা হরন হচ্ছে। তাই। যাহোক আমি অবশ্য শিওর নই যে এটা ওর কোন অজানা বন্ধু।
ইতিমধ্যে আমার আর বিদিশার একটা ছোট ট্যুর হয়ে গেল। আসলে অফিসের জন্য আমাকে অনেক জায়গাতে ট্যুর করতে যেতে হয়। সেদিনকে আমার ডিরেক্টর আমাকে ডেকে বলল, ‘গৌতম তোমাকে একটা টেন্ডারের ব্যাপারে দুদিনের জন্য ঝারসুগুদাহ যেতে হবে। টেন্ডারটা আমাদের চাই। তুমি কোম্পানির প্রোফাইল নিয়ে ওদের সাথে কথা বলে আসো। কি কাজ, কতো টাকার কাজ, কবে শুরু হতে পারে, টেন্ডার কবে দেবে। সব খবর নিয়ে এসো। শার্প।‘
আমি মিতাকে খবরটা জানালাম যে দুদিন আমাকে বাইরে থাকতে হবে। মিতা এখন এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কিছু মনে করে না। ওর অভ্যেস হয়ে গেছে। আমাকে কোম্পানির কাজ করে যেতে হবে এবং বাইরেও যেতে হবে। ও প্রশ্ন করল, ‘কবে যেতে হবে?’
আমি জবাব দিলাম, ‘ট্রেনের টিকিট কেটে তোমাকে জানাচ্ছি।‘
বিদিশার সাথে আমি নিয়মিত কথা বলে গেছি। ও আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। তখনো পর্যন্ত আমরা কেউ কারোকে দেখিনি। শুধু গলার আওয়াজ শুনে গেছি। দুজনেই আমরা একমত যদি আমরা আরও ভালো করে নিজেদের বুঝতে চাই তাহলে একবার দুজনের দেখা হওয়া ভালো। আর আমার মতে এই ট্যুরের থেকে ভালো সুযোগ আর হবে না। মিতার কাছেও ব্যাপারটা অজানা থাকবে আর আমরা সুযোগ পাব নিজেদেরকে ভালো ভাবে জেনে নিতে। ওর ছেলে এখন বাইরে থেকে পড়াশুনা করছে। তাহলে ছেলে ওয়িল নট বি অ্যা প্রব্লেম। দেখি একবার ফোন করে। আমি বিদিশাকে রিং করলাম। কিছুক্ষণ রিং বাজার পর ও ফোন তুলে বলল, ‘বল। হঠাৎ এই সময়ে?’
আমি জবাব দিলাম, ‘প্রয়োজন পড়লো বলে ফোন করলাম। কেন বিজি নাকি? তাহলে পড়ে ফোন করব।‘
ও তড়িঘড়ি উত্তর দিলো, ‘আরে এতো ভদ্র কেন আজ? এই ফোনটার জন্য তো ওয়েট করি। সেটাও পড়ে বলে ছেড়ে দেবে?’
আমি হেসে উত্তর দিলাম, ‘আর এ বান্দা, এ কি ওয়েট করে না? যাহোক, একটা সুযোগ আছে যদি রাজি থাক তো বলতে পারি।‘
সে উত্তর করল, ‘আরে শুনলামই না তো কি করে রাজি আছি বলব। আগে তো বল?’
আমি বললাম, ‘কোম্পানির কাজে আমাকে দুদিন বাইরে যেতে হচ্ছে। যদি বল তো একসাথে যাওয়া যেতে পারে।‘
আমি ভেবেছিলাম ও আমতা আমতা করবে। কিন্তু ও উত্তর করল, ‘কবে?’
আমি জবাব দিলাম, ‘এই ধর দুদিন বাদে।‘
ও একটু সময় নিয়ে বলল, ‘ওকে আমি রাজি। চল ঘুরে আসি।‘
ব্যাপারটা এতো সহজে মিটে যাবে আমি এক্সপেক্ট করি নি। যাহোক ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি ট্রেনের দুটো ১ম এসির টিকিট কেটে নিলাম। এটা একটু গোপনে আমাকে করতে হল কোম্পানিকে না জানিয়ে। কারন সাধারনত আমি প্লেন এ যাতায়াত করি। প্লেন এ করে ভুবনেশ্বর হয়ে তবে আমার ঝারসুগুদাহ যাওয়ার কথা। কিন্তু এখন আমি ট্রেনে যাবো যেটা কোম্পানি আমাকে প্রশ্ন করতেই পারে। তাই যখন শচিন আমাকে জিজ্ঞেস করলো প্লেনের টিকিট কাটবে কিনা আমি ওকে না করে দিলাম। বললাম আমি এখনো ঠিক করি নি কবে যাবো। দরকার পড়লে আমি নিজে টিকিট কেটে নেবো। ও ঠিক আছে বলে চলে গেল। আমি নিশ্ছিন্ত হয়ে গেলাম কোথাও কোন সন্দেহর আবকাশ না থাকায়।
বিদিশার সাথে ঠিক ছিল ও হাওড়া স্টেশনে আমার সাথে দেখা করবে। গিতাঞ্জালী ট্রেন। দুপুর ২।৩০ এ হাওড়া থেকে ছারে। আমি মিতার কাছ থেকে বেড়িয়ে হাওড়া পৌঁছে গেছি। ২০ নাম্বার প্লাটফর্মে এসে ওয়েট করছি। বিদিশা বলে দিয়েছিল ও একটা সবুজ শাড়ি পড়ে আসবে আর হাতে একটা লাল ব্যাগ থাকবে। আমি এধার অধার বিদিশাকে খুঁজছি। ঘড়িতে তখন প্রায় পৌনে দুটো বাজে। ট্রেন প্লাটফর্মে লাগিয়ে দিয়েছে। প্রায় দুটো বাজতে পাঁচ মিনিটে দূর থেকে এক সবুজ শাড়ি হাতে ঝোলানো একটা লাল ব্যাগ নিয়ে এক ভদ্রমহিলাকে আস্তে দেখলাম। আমি শিওর এটাই বিদিশা। বেশ লম্বা। দূর থেকে ফর্সাই মনে হচ্ছে। চালচলন বেশ স্মার্ট। একটু কাছে আসতেই আমি একটু এগিয়ে গেলাম। আমাকে ও দেখছিল। আমি আরেকটু এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বিদিশা?’
আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। বলল, ‘হ্যাঁ, আপনি গৌতম, তাই তো?’
আমি ঝুঁকে ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিতে ও ব্যাগটা সরিয়ে নিল। বলে উঠলো, ‘আরে বাবা, খুব একটা ভারি না। আমিই পারবো। চল, ট্রেন দিয়ে দিয়েছে?’
আমি উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ, ওই তো।‘
দুজনে এগিয়ে গিয়ে এইচ এ ১ কামরাতে উঠে গেলাম। টিকিট কাতবার সময় বিদিশার টাইটেল না জানা থাকায় আমারটা লিখেছিলাম। পরিণতি এটা হোল যে আমাদের দুই বার্থের একটা কুপ পেয়ে গেলাম। জেনারেলি কাপল হলে ওরা এটাই দেয়। দুজনে ঢুকে গেলাম। বিদিশা কুপ দেখে বলে উঠলো, ‘গৌতম, মনে হচ্ছে একটু চালাকি করেছো।কোন খারাপ মতলব নেই তো।‘ খুব জোরে হেসে উঠলো সে।
আমি হেসে উত্তর দিলাম, ‘কূপটা দেখে সন্দেহ করছ তো? এটা তো আমার মামার রেল নয় যে আমি বন্দোবস্ত করব। লাক ছিল পেয়ে গেলাম।‘
আমার ব্যাগ আর ওর ব্যাগটা বার্থের নিচে রেখে আমরা সিটের উপর বসলাম। আমি লক্ষ্য করে দেখি যে খাবার জল নেই। আমি ওকে ওয়েট করতে বলে নিচে নেমে দুটো জলের বোতল কিনে নিলাম। উপরে কামরাতে ঢুকে ওকে প্রশ্ন করলাম, ‘বাড়ীর থেকে খেয়ে বেরিয়েছ না খাবার কিনবো?’
বিদিশা জানালা দিয়ে স্টেশনের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো, ‘হ্যাঁ বাবা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। এখন তুমি আমার গার্জেন। প্রয়োজন কিছু হলে বলে দেবো। আমার জন্য চিন্তা করো না।‘
ট্রেনটা একটু দুলে উঠে চলতে শুরু করলো। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ২/৩১ বাজে। দুজনে চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। টিকিট চেকার ঢুকে টিকিট দেখতে চাইলে আমি পকেট থেকে টিকিট বার করে হাতে দিলাম। চেকার চার্টের সাথে মিলিয়ে বলে উঠলো। ‘গৌতম সেন, বিদিশা সেন। থ্যাঙ্ক উ।‘ চেকার টিকিটটা ফিরিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলে আমি টিকিটটা পকেটে রাখতে গিয়ে দেখি বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি টিকিটটা রাখতে রাখতে ভুরু নাচাতে ও বলল, ‘পদবী জানলে কি করে?’
আমি ধরা পড়ে গিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলাম, ‘আকচুয়ালি তোমার পদবিটা তো আর জানি না আবার সেই মুহূর্তে বলতে হবে বলে নিজেরটাই বলে দিয়েছিলাম। আই এম সরি।‘
বিদিশা তার ফর্সা হাতটা আমার থাইয়ের উপর রেখে আমাকে বলল, ‘নেভার মাইন্ড। আমারও পদবী সেন।‘ বলে খুব সুন্দর করে হেসে উঠলো। আমি ওর সুন্দর দাঁতের সেট দেখে ভাবলাম ভগবান ছপ্পর ফারকে দিয়েছে।‘
ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর হাতটা এখনো আমার থাইয়ের উপর রাখা। আঙ্গুলগুলো পেলব। নখে সবুজ নেল পালিশ। হাতে সবুজ চুরি। সো ম্যাচিং। শরীর স্বাস্থ্য খুব ভালো। জানি না এই রকম মেয়ে একা আছে কি না আরও ছেলে বন্ধু আছে। বিশ্বাস করা মুশকিল এ ধরনের সুন্দরী মেয়ে একা লাইফ কাটাবে।
সাঁতরাগাছি পেরিয়ে যেতে ও মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, মুখে মুচকি হাসি, ‘কি বন্ধুকে পছন্দ হয়েছে?’
আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। তারপর বললাম, ‘পছন্দ? হুম, বিশ্বাস করবে কি করবে না জানি না তবে আমি খুব লাকি তোমাকে বন্ধু পেয়ে। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার পাশে বসে আছো। তোমাকে যখন প্রথম দেখলাম হেঁটে আস্তে আমি ভাবিনি ওটা তুমি হতে পারো।‘
ও একটু হেসে আবার জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলো। আমি ওর লম্বা ঘন চুলের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম সত্যি বিশ্বাস হয় না যে তুমি এখনো একলাই থাক আর আমার সাথে তুমি বেড়িয়ে এসেছ। ভাগ্য কতোটা ঠিক পড়ে বোঝা যাবে।
আমি ওকে যাচাই করার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর আমাকে? আমাকে দেখে কেমন লাগলো তোমার?’
ও আবার আমার দিকে মুখ ঘোরালো। একটু দেখে আমাকে বলল, ‘বলতে পারছি না। বলতে হলে একটু উঠে দাঁড়াতে হবে। দাঁড়াও দেখি একটু সোজা হয়ে।‘
আমি ভাবলাম আবার ঠিক মুরগী করার তাল করেছে। তবুও আমি একটু ইতস্তত করে উঠে দাঁড়ালাম। ও উঠে দাঁড়ালো আর আমার হাত দুটো কোমরের পাশে ভাঁজ করে
রেখে বলল, ‘হ্যাঁ এই ভাবে, বি স্মার্ট।‘
(১ম পর্ব সমাপ্ত)
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
[+] 1 user Likes stallionblack7's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: জীবনের সুখের জন্য - by stallionblack7 - 20-01-2019, 02:14 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)