03-11-2025, 01:54 PM
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
|
Romance কিছু সম্পর্ক
|
|
03-11-2025, 01:54 PM
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
03-11-2025, 02:19 PM
(This post was last modified: 03-11-2025, 02:20 PM by ধূমকেতু. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(03-11-2025, 01:53 PM)gungchill Wrote: প্রতিটা সম্পর্কই আলাদা , প্রতিটা সম্পর্কের দাবিও আলাদা থাকে । দেখা যাক আমাদের কুশীলবেরা কতটা এই সম্পর্ক গুলোর দাবি মেটাতে সক্ষম হয় । ধন্যবাদ। প্রশংসা শুনতে আমার বেশ ভালো লাগে। লেখা খুব ভালো। সত্যি প্রচুর উন্নতি হয়েছে। সামনের দিকে হয়তো খুঁত বের করতে পারবো না। কি কমেন্ট করবো সেটাই এখন ভাবছি।
03-11-2025, 03:07 PM
(03-11-2025, 02:19 PM)ধূমকেতু Wrote: ধন্যবাদ। আমারো প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে , খুঁত থাকবেই , সব সময় তো আর এক রকম যাবে না । আমি আবার সোজা লাইনে চলতে পারি না , মাঝে মাঝেই লাইনচ্যুত হই । চরিত্র গুলোর সমালোচনা করবেন । বলার তো কত কিছুই আছে ।
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
03-11-2025, 08:15 PM
লিস্টেড।
হাতে সময় করে পড়তে হবে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথম সিজন আমার দুনিয়া
দ্বিতীয় সিজন মিমের দুনিয়া
***************************************************
![]()
04-11-2025, 02:56 PM
(03-11-2025, 08:15 PM)Ra-bby Wrote: লিস্টেড। জেনে খুশি হলাম আপনি আমার গল্প সর্ট লিস্ট করে রেখেছেন , সময় করে পড়ার জন্য । যদি সময় করে পড়েতে পারেন , তাহলে অবশ্যই নিজের মতামত জানাবেন । প্রতিটা পাঠকের মতামত আমার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । ভালো লাগলে না বললেও চলবে , কিন্তু কোন অংশ নিয়ে খটকা লাগলে , পছন্দ না হলে , অবশ্যই দয়া করে বলবেন । আমি ভীষণ ভাবে ইন্টারেস্টেড বিপরিত মতামত শোনার জন্য । যে কোন কিছুই বলতে পারেন , কোন ধরনের দ্বিধা না রেখে ।
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
04-11-2025, 04:46 PM
৬(খ) পর্যন্ত পড়ে আমার অভিমত হলো-----"গল্পের প্লট সুন্দর" "লিখার স্টাইল আসতে ধিরে ইম্প্রভড হচ্ছে" "আপনার লিখার প্রতি ভালোবাসা ব্যাপক।"
লিখতে থাকেন, আমিও সময় সুযোগ খুজে বাকিটুকুও টুক করে পড়ে ফেলবো। অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথম সিজন আমার দুনিয়া
দ্বিতীয় সিজন মিমের দুনিয়া
***************************************************
![]()
04-11-2025, 06:20 PM
(04-11-2025, 04:46 PM)Ra-bby Wrote: ৬(খ) পর্যন্ত পড়ে আমার অভিমত হলো-----"গল্পের প্লট সুন্দর" "লিখার স্টাইল আসতে ধিরে ইম্প্রভড হচ্ছে" "আপনার লিখার প্রতি ভালোবাসা ব্যাপক।" অনেক ধন্যবাদ আপনার অবজারভেশন শেয়ার করার জন্য
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
একটা রিপু করেছি। সময় নিয়ে দেইখেন। পার্সনাল প্রশ্ন আর কি
অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথম সিজন আমার দুনিয়া
দ্বিতীয় সিজন মিমের দুনিয়া
***************************************************
![]()
04-11-2025, 08:11 PM
(This post was last modified: 04-11-2025, 08:13 PM by gungchill. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
(04-11-2025, 08:07 PM)Ra-bby Wrote: একটা রিপু করেছি। সময় নিয়ে দেইখেন। পার্সনাল প্রশ্ন আর কি ভাই আমি PM করে দিয়েছি । তবে আমি পাঠকদের অনুরোধ করবো , কোন চরিত্রের মাঝে নিজেকে কল্পনা না করতে । বিশেষ করে রাজীবের , ভবিষ্যতে গল্প পড়তে অসুবিধা হবে ।
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
05-11-2025, 08:00 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (খ)
জান্নাত অস্থির হয়ে এদিক-ওদিক পায়চারি করছে।বারবার জয়ের নম্বরে ফোন দেয়, কিন্তু জয় ধরছেই না।প্রতিবার কল কেটে যাওয়ার সাথে সাথে জান্নাতের অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়।মনে মনে ভাবে, কেন যে রানীকে ওভাবে বলতে গেলাম! এখন যদি উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যায়?যেভাবে সামান্য কারণেই রানী অজ্ঞান হয়ে যায়,এটা তো অনেক বড় ব্যাপার।জান্নাতের হাত-পা কাঁপছে হালকা, বুকের ভেতর ভার হয়ে আছে অজানা ভয়।ফোনের স্ক্রিনে জয়ের নামটার দিকে তাকিয়ে কাতর স্বরে বলে “ প্লিজ ধর , প্লিজ ফোনটা ধর ভাই” “হ্যাঁ বল।” অবশেষে জয় কল রিসিভ করতেই জান্নাতের মনে একটুখানি স্বস্তি আসে। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ টেকে না।রানীর কথা জিজ্ঞাস করতেই জয় অভিযোগের স্বরে যা বলে তা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতের হাত পা হিম হয়ে যায় । জয়ের গলায় যে বিরক্তি আর ক্ষোভ, সেটা জান্নাত একদম স্পষ্ট বুঝতে পারে।ওর মনে হয়, জয় নিশ্চয়ই রানীর উপর রেগে গেছে, হয়তো বকাঝকা ও করেছে । আর এখন রানী জয়ের সাথে নেই ।এই ভাবনাটা জান্নাতকে আরও ভীত করে তোলে। জান্নাত ভাবে এই অবস্থায় রানী একা একা কি করবে কে জানে ? প্রশ্নটা করেই জান্নাত উত্তর খুজতে যায় না । কারন উত্তর ওর পছন্দ হবে না । জান্নাত সময় নষ্ট করে না , সরাসরি নিউজ টা দেয় জয় কে আর বলে , জয় যেন দ্রুত রানী কে নিয়ে চলে আসে। জয় যখন নিউজটা শুনেই কল কেটে দেয় , তখন জান্নাত আবারো পাইচারি করতে থাকে । আর বার বার প্রার্থনা করতে থাকে , জয় যেন রানীকে নিয়ে ভালোয় ভালোয় চলে আসতে পারে । জান্নাত আর জয় কে কল করে না , কিন্তু অধির হয়ে জয়ের কলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । মাঝের তিন চার মিনিট জান্নাতের কাছে তিন চার ঘণ্টা মনে হয় । কিন্তু জয় যখন আবার ফোন করে ঠিকানা চায় , তখন আবার শান্ত হয় জান্নাত । মনে মনে ভাবে যাক শেষ পর্যন্ত সমাধান হয়েছে । জয় কে জিজ্ঞাস করতে যাবে রানীর কি অবস্থা তখন জয় আবার কল কেটে দেয় । জান্নাত পাশের চেয়ারে বসে , একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়ে । ডান হাতে কলাপ চেপে ধরে ভাবে , দিন দিন ওর কি হয়ে যাচ্ছে ? এমন ইরেস্পন্সিবল আচরণ ও কেন করছে বার বার । হ্যাঁ রাজীব কে এভাবে কাঁদতে দেখে , ওর নিজের মনের অবস্থা ভালো নেই । নিজে রাজীবের জন্য কিছু করতে না পাড়ায় নিজের উপর ও কিছুটা বিরক্ত। কিন্তু এসব তো আর এমন নিরবুদ্ধিতার এস্কিউজ হতে পারে না । দিন দিন নিজের মাঝে সহনশীলতা কমে যাওয়ায় জান্নাত কিছুটা ভীত হয় । আবার রাজীবের চিন্তা ওর মনে ফিরে আসে , ভাবে রাজীব কি করে পারে ? বা এতোদিন কিভাবে পেড়েছে ? আশ্চর্য হয় জান্নাত । সেই সাথে রাজীবের প্রতি স্রদ্ধাও বৃদ্ধি পায় । শত চাপেও কোনদিন রাজীব কে নিজের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতে দেখেনি ও। জান্নাত আড় চোখে কিছুদুর দাঁড়ানো রাজীব কে দেখে । একেবারে শান্ত দেখাচ্ছে রাজীব কে , এখনো ওর বড় আব্বুর সাথে কথা বলছে । দেখে মনে হচ্ছে জয়নালের আব্বু অসুস্থ আর রাজীব জয়নাল কে সান্তনা দিচ্ছে । জান্নাত উঠে দাড়ায় , হেটে হেটে আবার সবাই যেখানে আছে , সেখানে চলে আসে । কিছুটা নির্ভার লাগছে এখন নিজেকে । “ জয় কে কল করেছি , ও রানী কে নিয়ে আসছে” কথাটা জান্নাত ওর বাবা মায়ের দিকেই তাকিয়ে বলে । কিছুক্ষন আগে নিজের আচরণের কারনে কিছুটা লজ্জিত লাগে । “ আসুক আজকে লাফাঙ্গাটা , ওর লাফাঙ্গা গিরি আমি ছুটিয়ে দেবো” জয়নাল চাপা গর্জন করে , “ আব্বু এখানে কি চেঁচামেচি করে কোন লাভ হবে ? আরো অসুবিধা হবে, প্লিজ এখানে কিছু বলো না” জান্নাত এবার খুব ধীরেসুস্থে জয়নাল কে বুঝিয়ে বলে। রেগে বা বিরক্তি নিয়ে নয় । জয়নাল ও জান্নাতের কথায় কিছুটা শান্ত হয় । মেয়ের আচরণে কিছুটা পরিবর্তন দেখে হয়তো জয়নালের আচরনেও পরিবর্তন আসে । একটু নরম দৃষ্টিতে তাকায় মেয়ের দিকে । রাজীবের সাথে চোখাচোখি হয়ে জান্নাতের রাজীব হালকা ইশারায় যেন বলতে চায় , “হ্যাঁ এবার ঠিক আছে” উত্তরে জান্নাতও শুষ্ক হাসি হাসে , মনে মনে প্রার্থনা করে , রানী যেন আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়্যে যায় , নইলে এই ছেলেটার উপর আরেক বিপদ এসে পরবে । তখন রানীকে সামলাতে হবে । তবে জান্নাতের মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে । এতক্ষণ কি আর রানী এমন অবস্থায় থাকবে ? “ তোমারা সবাই চা খাবে?” জান্নাত সবার উদ্দেশ্যে বলে , কিন্তু কেউ উত্তর দেয় না । ঠিক আছে , আমি নিয়ে আসছি , এই বলে জান্নাত আবার চলে যায় চা আনতে । আসল উদ্দেশ্য জয় কে আর একবার কল করবে। রানীর কি অবস্থা সেটা জানার চেষ্টা করবে । **** জয় সামনের প্যাসেঞ্জার সিটে বসেছে , আর রানী পেছনে , জয়ের সাথে বসতে চাচ্ছিলো না । জয় যখন নরম স্বরে বলল “ তোর আব্বুর কাছে নিয়ে যাবো” তখন রাজি হয়েছে । জয় সামনে বসলেও তাকিয়ে আছে পেছনে , রানীর প্রতিটা মুভমেন্ট লক্ষ্য করছে। সময়ের সাথে সাথে জয়ের উদ্বেগ বেড়েই চলছে । কারন রানীর হাত কাঁপছে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে । চোখে ভয় , চোখের মনি স্থির নয় , এদিক সেদিক দেখছে । দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঠিক কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না । জয় দুই একবার কথা বলার চেষ্টা করেছে , কিন্তু এতে কাজ তো হয়ই নি উল্টো আরো ভয় পেয়ে গেছে । তাই সেই চেষ্টা বাদ দিয়েছে । ঠিক সেই মুহূর্তে জান্নাতের কল আসে , জয় রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে জান্নাত প্রশ্ন করে “ রানীর অবস্থা এখন কেমন ? তোদের আসতে আর কত সময় লাগবে?” “ রাস্তা ফ্রি আছে , হয়তো আর পনেরো মিনিট, কিন্তু আমি রানীর অবস্থা কিছুই বুঝতে পারছি না , মনে হচ্ছে আমাকে ভয় পাচ্ছে , আমি একটু রাগ হয়েছিলাম , কি করবো বল , একটা রেস্টুরেন্টে ছিলাম , ওয়াশ রুমে গেলো ভালো , ফিরে এসে যেন আমাকে চেনেই না , রাগ উঠে গিয়েছিলো” জয় কথা গুলো খুব নিচু স্বরে বলে , “ আমিও যে কোন আক্কেলে ওকে বলতে গেলাম…… উফ…” “ আচ্ছা চিন্তা করিস না , হস্পিটালেই তো আসছি , যা হবে দেখা যাবে” জয় জান্নাত কে আশ্বস্ত করার জন্য বলে । “ ঠিক আছে আমি গেটে দাঁড়াচ্ছি” এই বলে জান্নাত কল কেটে দেয় জয় আবার রানীর দিকে তাকায় , দেখে রানী আড় চোখে ওকে দেখছে , কিন্তু সরাসরি চাইছে না । জয় রানীর দিকে তাকিয়ে উষ্ণ হাসি হাসে , চেষ্টা করে রানীকে আশ্বস্ত করতে । কিন্তু কোন কাজ হয় বলে মনে হয় না । উল্টো রানী আরো কুঁচকে যায় , নিজের উপর ভীষণ রাগ হয় জয়ের । নিজেকে বড্ড অপ্রয়োজনীয় মনে হয় । ওর সবচেয়ে পছন্দের মানুষটি এমন কষ্ট পাচ্ছে , ও কিছু তো করতেই পারেনি , উল্টো আরো সমস্যা তৈরি করেছে । রানীর এমন ভয়ার্ত অসহায় মুখের দিকে তাকাতে পারছে না , বুকের ভেতরটা বার বার মোচড় দিচ্ছে । নিজেকে এতো ছোট কোনদিন মনে হয়নি । জয় আর পেছনে তাকিয়ে থাকতে পারে না , সামনের দিকে তাকায় । রাস্তা ফাঁকা , দুপুরে লাঞ্চের সময় ঘণ্টা খানেকের জন্য রাস্তা ফাঁকা থাকে । আর সেই সময়টাই ওরা পেয়েছে । জয় ড্রাইভার কে ইংগিত করে একটু দ্রুত চালানোর জন্য **** জান্নাত গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল, চোখ বারবার ঘুরে বেড়াচ্ছিল জয়ের বাইক খুঁজে।তাই ওদের গাড়িটা যখন এসে সামনে থামল, প্রথমে বুঝতেই পারেনি।জয় যখন গেট খুলে নেমে জান্নাতের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল তখন জান্নাত ওদের দেখতে পেলো। বাইক না দেখে জান্নাতের মুখে হালকা বিস্ময় ফুটল, চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল “বাইক বাদ দিয়ে গাড়ি কেন?” জয় কোনো কথা না বলে শুধু চোখের ইশারায় রানীর দিকে দেখিয়ে দিল। ওর মুখের গম্ভীর ভাব, আর বাইকের বদলে গাড়ি, সব মিলিয়ে জান্নাতের বুঝতে বাকি রইল না, রানীর অবস্থা ও যা ভেবেছিল, তার চেয়েও খারাপ।হাত নাড়িয়ে জান্নাত রানীর কথা জানতে চাইল।জয় মৃদু স্বরে বলল, “গাড়ির ভেতর দেখ, বের করতে পারিস কিনা।” জান্নাত দরজা খুলতে গেল, কিন্তু লক করা। ড্রাইভারকে বলতেই সে লক খুলে দিল। দরজা খুলে জান্নাত রানীর দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। রানীর চোখের দৃষ্টি যেন অচেনা, অস্বাভাবিক, শূন্য। একটু ভয়ও পেল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিল। হাসি মুখে নরম স্বরে বলল, “তুই এসেছিস, চল, তোকে ছোট আব্বুর কাছে নিয়ে যাই।” জান্নাত নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।দেখে, রানী কিছুটা ইতস্তত করছে।এমন সময় সামনে থেকে ড্রাইভার বলে ওঠে, “ম্যাডাম, উনার কি মাথায় সমস্যা?” জান্নাত এক মুহূর্তে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় ড্রাইভারের দিকে।ওর সেই দৃষ্টিতে ড্রাইভারের সব দাঁত যেন মুহূর্তেই আবার মুখের ভেতর ঢুকে যায়।তারপর জান্নাত আবার রানীর দিকে ঘুরে তাকায়, হাসি মুখে বলে,“ছোট আব্বু কতক্ষণ যাবত তোর জন্য অপেক্ষা করছে জানিস? আয়, আমি নিয়ে যাচ্ছি তোকে।” “আব্বু” শব্দটা শুনতেই রানীর ভেতর হালকা চাঞ্চল্য আসে।একবার ভালো করে জান্নাতের দিকে তাকায়, তারপর ধীরে ধীরে নিজের কম্পিত হাত বাড়িয়ে দেয়।জান্নাত খুব আলতো করে সেই হাত ধরে, যেন স্পর্শে নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা করছে , বলার চেষ্টা করছে, ভয় পাস না, আমি আছি। রানী ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নেমে আসে। নেমেই রানীর চোখে জয়ের দিকে যায় , জয় ও রানীর দিকে তাকায় । দুজনার চোখ এক হতেই রানী দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নেয় । কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে রানী , যেন জয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে চায় । জয় আর জান্নাত দুজনেই বিষয়টা টের পায়। জান্নাত হাত তুলে ইশারা করে, “এখন আসিস না।” প্রচণ্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও জয় মেনে নেয়, শুধু রানীর জন্য। রানী আর জান্নাত ভেতরে চলে যায় । এই মুহূর্তে রানীর ওর প্রয়োজন নেই, এই ভাবনাটা জয়ের বুকের ভেতর ছুরি হয়ে বিঁধে যায়। গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে জয় কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। একটা সিগারেট ধরায়, লম্বা একটা টনে ধোয়া গুলো সব বুকের ভেতর নিয়ে নেয়। আগুনে তামাক পোড়ার পট পট মৃদু শব্দ শুনতে পায় , সেই সাথে জয় টের পায়, ওর ভেতরেও কিছু একটা জ্বলছে।না আছে ধোঁয়া, না আছে শব্দ, তবু সেই আগুনের জ্বলন টের পায় জয় । ****
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
05-11-2025, 08:03 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (খ) এর বাকি অংশ.........
ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পথে জান্নাত নরম স্বরে বার বার রানীকে আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করে , ওর Intuition ওকে বলছে , রানীকে এখন আশ্বস্ত করা খুব জরুরি , জয় না বুঝেই ওর সাথে হয়তো কঠোর হয়েছিলো , তাই রানী জয়ের সামনে ভীত হয়ে উঠছে । যদিও জান্নাত বুঝতে পারছে ওর আশ্বাস বানীতে রানী সম্পূর্ণ রুপে নির্ভার হচ্ছে না , এখনো ওর চোখে অনিশ্চয়তা , ভয় আর দ্বিধা , এমনকি জান্নাতের মনে হচ্ছে রানী ওকে সম্পূর্ণ ভাবে চিনতেও পারেনি । তবে জান্নাত অনুভব করছে রানীর হাতের কম্পন কিছুটা কমে এসেছে । মনে মনে জান্নাত সান্তনা খোঁজে , অন্তত একটা কিছু তো ঠিক হচ্ছে । “ এইতো আর অল্প একটু , তারপর আমরা ছোট আব্বুর কাছে চলে আসবো” লিফটের বদ্ধ পরিবেশে, লোকজনের মাঝে রানীকে আবারো কিছুটা অস্থির হয়ে উঠতে দেখে , জান্নাত আর একবার রানীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে । আলতো করে রানীর হাতটা ধরেই রেখছে জান্নাত । কিছুক্ষনের মাঝেই নির্দিষ্ট ফ্লোরে লিফট এর দরজা খুলে যায় । জান্নাত রানীর দিকে তাকিয়ে ম্রিধু স্বরে বলে , “ এই তো চলে এসেছি “ কথাটা বলার সময় জান্নাত ঠোঁটে মৃদু একটা উষ্ণ হাসি ধরে রাখে , রানীর বিশ্বস্ততা অর্জন করার জন্য । আসলে ভেতরে ভেতরে ও বেশ চিন্তিত , লজ্জিতও । রানীর এই অবস্থার জন্য ওর ভুমিকাটা বেশ বড় । হসপিটালের লম্বা করিডোর ধরে হেটে আসছে জান্নাত আর রানী , জান্নাত আগে আগে , রানী ওর পেছন পেছন । রানী বার বার এদিন সেদিক তাকাচ্ছে ভীত দৃষ্টিতে , আর জান্নাত মনে মনে অনুশোচনায় ভুগছে । এইতো কিছুক্ষন আগে , রাজীবের জন্য সহানুভুতি দেখাতে গিয়ে সবার উপর বিরক্ত হয়েছিলো । আর এখন সেই বিরক্তির ফসল নিজের হাতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে , রাজীবের ঘারে চাপিয়ে দেয়ার জন্য । রাজীবের জন্য ওর সেই অবুঝ মমতার কি লাভ হলো ? মনে মনে ভাবে জান্নাত । উল্টো ক্ষতিই হলো , এখন আরো একটা বাড়তি দায়িত্ব রাজীব কে পালন করতে হবে । আরো একটু বাড়তি চাপ । প্রতিটা পদক্ষেপের সাথে সাথে জান্নাতের পা দুটো ভারি হয়ে আসছে । রাজীবের যতটা কাছাকাছি যাচ্ছে ততই অনুশোচনাটা ওর মনের উপর চাপ বাড়াচ্ছে । কিছুদুর এগিয়ে যেতেই জান্নাত রাজীব কে দেখতে পায় । রাজীব জয়নালের সাথে কি নিয়ে যেন আলোচনা করছে । শান্ত নির্লিপ্ত চেহারা , কিন্তু জান্নাত তো জানে ভেতরে কতটা ভেঙ্গে পরা , জানাত যদি পারতো তাহলে এখন রানীকে কোথাও লুকিয়ে রাখতো । কিন্তু সেটা সম্ভব নয় , জান্নাত নিজেও তাই জানে । তাইতো ধির লজ্জিত পদক্ষেপে রানীকে নিয়ে এগিয়ে যায় । রানীর দিকে তাকিয়ে বলে “ এইতো চলে এসেছি ঐ যে দেখ রাজীব দাড়িয়ে আছে” জান্নাত রাজীবের দিকে হাত তুলে দেখায় । রাজীবের নামটা শুনতেই রানীর মাঝে চাঞ্চল্য দেখা দেয় , দ্রুত পা চালায় রানী , তাল মেলানোর জন্য জান্নাত কেও দ্রুত পা ফেলতে হয় । রাজীব ঠিক তখন জয়নালের সঙ্গে এই কিছুক্ষণ আগে ডাক্তারের বলা কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করছিল। ডাক্তার জানিয়েছে—আপাতত তেমন ভয় নেই, তবে আরও কিছু টেস্ট করা হবে, ভবিষ্যতের ঝুঁকি বোঝার জন্য। রহিমকে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। দু’দিন সেখানে থাকতে হবে। এই সময় রাজীবের চোখ পড়ে জান্নাত আর রানীর দিকে। ওরা তখন মাত্র দশ ফুট দূরে। প্রথমে রাজীবের দৃষ্টি পড়ে জান্নাতের উপর—খেয়াল করে, জান্নাত খুব যত্ন করে রানীর হাত ধরে নিয়ে আসছে। দৃশ্যটা দেখে রাজীবের মনের ভেতর হালকা একটা প্রশান্তি ছুঁয়ে যায়। এই দুঃসময়েও মেয়েটা নিঃস্বার্থভাবে পাশে আছে—এই ভেবে ওর মনে কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে। রাজীব মৃদু হেসে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে নড করে , কিন্তু জান্নাতের ঠোঁটে হাসির বদলে , চেহারায় একটা দুশ্চিন্তার ছাপ দেখতে পায় । আর তখনি রাজীব রানীর দিকে ভালো করে তাকায় , এক মুহূর্তেই রাজীবের ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে যায়। ভেতর থেকে কেউ যেন বলে ওঠে, “কিছু একটা ঠিক নেই” রাজীব তাড়াতাড়ি লম্বা পা ফেলে ওদের দিকে এগিয়ে আসে। ভালো করে তাকিয়ে দেখে, রানীর চোখে ভয়, যা এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক। কিন্তু সেই ভয়ের ভেতরেও একটা দিশেহারা ভাব, এমন এক শূন্য দৃষ্টি যা রাজীবকে অস্বস্তি দেয়। ভয় আর দিশেহারার বাইরেও কিছু আছে, যা রাজীব ঠিক বুঝে উঠতে পারে না , একবার চকিতে জানাতের দিকে তাকায় রাজীব , চোখে জিজ্ঞাসা । কিন্তু জান্নাতের কাছ থেকেও কোন উত্তর আসে না । “ রানী , কি হয়েছে , ভয় পেয়েছিস? এই যে দ্যাখ, এইতো আমি , আমরা সবাই আছি” খুব শান্ত কণ্ঠে বলে রাজীব, ধীরে ধীরে দু’হাত রাখে রানীর কাঁধে, এমন সতর্কভাবে, যেন হঠাৎ নড়াচড়ায় রানী চমকে না ওঠে । যার উপর ছোটবেলা থেকে নির্ভর করে এসেছে, সেই নির্ভর যোগ্য বিশ্বস্ত মানুষটির স্নেহময় কণ্ঠস্বর, পরিচিত ছোঁয়া, আর উষ্ণ উপস্থিতি যেন জাদুর মতো কাজ করে। রানীর চোখের ভয় আস্তে আস্তে ম্লান হয়, শরীরের কম্পন কমে আসে। আশপাশের পরিবেশ ও নিজের অবস্থান সম্পর্কে সে ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে ওঠে। রানীর চোখে সেই দিশেহারা ভয় , ধিরে ধিরে কমতে থাকে, সেই শূন্য স্থান দখল করে নেয় , নোনা পানি । প্রথমে রানীর ঠোঁট দুটো ফুলে ওঠে , তারপর চাপা স্বরে “ভাইয়া …… আব্বু……” বলে রাজীব কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে । রানীর এই অবস্থা দেখে , জয়নাল আর আয়শা এগিয়ে আসে , ওদের দুজনের চোখে মুখেই উৎকণ্ঠা , আর সহানুভুতি। আয়শা রানী কে ধরতে যায় , আর জয়নাল কিছু বলতে যায় । কিন্তু রাজীব ওদের ইশারা করে , দুজন কেই থেমে যেতে অনুরধ করে । জান্নাত , আয়শা আর জয়নাল তাকিয়ে থাকে । জান্নাত মনে মনে একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে , রানী কে কাঁদতে দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয় । জান্নাতের অসস্তির কারন ছিলো , গাড়ি থেকে এ পর্যন্ত আসার সময় রানী একটা কথাও বলেনি । জান্নাতের কাছে ব্যাপারটা ঠিক স্বাভাবিক মনে হয়নি । উল্টো রানী চিৎকার করে কাঁদলেই সেটা স্বাভাবিক বলে মনে হতো জান্নাতের কাছে। রানীর কান্নার শব্দে করিডোরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, তবু সেই কান্নার মধ্যেই যেন রানী কে কল করার পর , এই প্রথমবার একটু শান্তির ছোঁয়া পায় জান্নাত। এতক্ষণ বেশ চাপের মাঝে ছিলো । “ শশশ…… কিচ্ছু হয় নি……… আব্বু একদম ঠিক আছে ……… কোন ভয় নেই……… এই তো আমরা সবাই আছি ……… কিচ্ছু হবে না ……সব ঠিক হয়ে যাবে …” রাজীব স্নেহভরে যত্নের সাথে রানীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রায় ফিসফিস করে কথা গুলো বার বার রানীর কানের কাছে বলতে থাকে । এরই মধ্যে দর্শকের সংখ্যা তিন থেকে চার হয়। জয় এসে দাঁড়িয়েছে সবার কাছ থেকে একটু দূরে। ভগ্ন হৃদয়ে তাকিয়ে আছে রানীর ক্রন্দনরত শরীরের দিকে। নীরব করিডোরে সেই কান্নার শব্দ বারবার ধাক্কা দিচ্ছে ওর বুকের ভেতরে। একবারের জন্য জয় ও জান্নাতের চোখাচোখি হয়। জান্নাত হাত তুলে ইশারায় জানায়, সব ঠিক আছে।জয় নিঃশব্দে মাথা নাড়ে। সামান্য স্বস্তি আসে বটে, কিন্তু সেই স্বস্তির ভেতরও লেগে থাকে এক অদ্ভুত ভার।রানীর এই অবস্থায়, এতক্ষণ ধরে জয় নিজের ভেতরে অসংখ্য অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেছে, ভয়, অপরাধবোধ, অস্থিরতা, আর একটুকরো অসহায় ভালোবাসা। কিছুক্ষণ পর রাজীব খুব নরম হাতে রানীকে নিজের বুক থেকে আলাদা করে । “তুই একটু বস,” —রাজীবের কণ্ঠে অনুরোধের সুর। কিন্তু রানী মাথা নাড়ে, বসতে চাচ্ছে না জানিয়ে দেয়। আশেপাশের অপরিচিত চোখগুলো তাকে এখনো অস্বস্তিতে রেখেছে। রাজীব ধৈর্য ধরে বলে, “অনেক দূর থেকে এসেছিস… একটু বিশ্রাম নে, তারপর তোকে আব্বুর কাছে নিয়ে যাবো।” রানী এবার রাজীবের কথায় সাড়া দেয়। রাজীবের দেখানো চেয়ারে ধীরে ধীরে বসে পড়ে। চোখ এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে দেখতে চায়, কিন্তু রাজীব সেটা হতে দেয় না , সম্পূর্ণ মনোযোগ ওর নিজের দিকে আকর্ষণ করে । নিজে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে রানীর সামনে, নরম স্বরে জিজ্ঞেস করে— “একটু পানি খাবি? গলাটা শুকিয়ে গেছে, তাই না?” রানীর কান্না তখন অনেকটা কমে এসেছে, এখন সুধু কিছুক্ষন পর পর নাক টানছে। মাথা নেড়ে জানায়, ও পানি খাবে। জয়নাল এগিয়ে দেয় বোতলটা, রাজীব সেটা নিয়ে রানীর হাতে তুলে দেয়। রানী কয়েক চুমুক খায়, তারপর রাজীব বোতলটা নিয়ে পাশে রাখে। এরপর খুব আলতো করে রানীর দুই হাত নিজের হাতে নেয়। “আমার সাথে সাথে শ্বাস নে তো…” —কথাটা বলেই রাজীব গভীর শ্বাস নেয়। রানীও ওর মতো করে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে। প্রথমে তাল মেলাতে পারে না, তারপর ধীরে ধীরে দু’জনের শ্বাসপ্রশ্বাস এক হয়ে যায়। চোখে মুখে শান্তি নামে, শরীরের কম্পন মিলিয়ে যায়, রানী আস্তে আস্তে নিজের ভেতর ফিরে আসে। জান্নাত, জয়, আয়শা আর জয়নাল , চারজনেই নীরবে দেখছে এই দৃশ্য। কেউ কিছু বলে না, তবু তাদের মুখে ফুটে ওঠে ভেতরের কথাগুলো, বিস্ময়, মায়া, স্বস্তি, অপরাধবোধ। বিশেষ করে জয় , ওর মুখে জমে থাকা অনুতাপ যেন আরও ঘন হয়ে ওঠে। ওর চোখের সামনের দৃশ্যটা এই মুহূর্তে যেন ওর অক্ষমতা ওর চোখের সামনে তুলে ধরেছে , নিষ্ঠুর এক আয়নার মতো। রানীর প্রতি নিজের ভালোবাসা থাকলেও, আজ সে কিছুই করতে পারেনি। বরং নিজের অজান্তেই পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। অথচ রাজীব কি সুন্দর আর যত্নের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে । জীবনে এই প্রথমবার জয় নিজেকে এত হালকা মনে করে। যে ছেলেটা ভাবতো , মুখে যা বলে তা করে দেখানোর ক্ষমতা ওর আছে, আজ বুঝতে পারছে, কিছু জিনিস আছে যা ইচ্ছাশক্তিরও বাইরে। রানীর অবস্থা একটু ভালো হতে দেখে ওর বুকটা হালকা লাগে, কিন্তু সেই হালকা হওয়ার ভেতরেই যেন সূক্ষ্ম একটা সূচ ফোঁটে একটা অদৃশ্য ঈর্ষা। মনে হয়, রাজীবের জায়গায় কেন ও নিজে নেই? কেন রানীর চোখের নিরাপত্তা অন্যের উপস্থিতিতে জেগে ওঠে, ওর নিজের উপস্থিতিতে নয়? যে রানীকে ও একান্ত নিজের করে পেতে চায় , যে রানীর হৃদয়ে সুধু ওর নিজের ছাপ ছাড়া আর কেউকে চায় না , কেন ও সেই রানীর দায়িত্ব সম্পূর্ণ রুপে নিতে ব্যারথ হচ্ছে । এসব অনুভুতির মাঝেও জয় রাজীবের প্রতি অল্প হলেও কৃতজ্ঞতা বোধ করে । জান্নাতের মনের অবস্থা জয়ের ঠিক উল্টো। রাজীবকে এতটা শান্ত ও দক্ষভাবে পরিস্থিতি সামলাতে দেখে তার মনে এক অদ্ভুত স্বস্তি নামে। সেই স্বস্তির ভেতর মিশে আছে একরাশ গর্বও। যেন নিজের মানুষকে নতুন করে চিনে ফেলেছে ও। হঠাৎই জান্নাতের মনে উপলব্ধি জাগে, যদি সত্যিই রাজীবের সহমর্মী হতে চায়, তবে রাজীবের কাছের মানুষগুলোর প্রতিও ওকে সমান সহানুভূতিশীল হতে হবে। রাজীবের কাঁধে বোঝা বাড়ছে, তাই ওর প্রিয় মানুষদের প্রতি বিরক্তি দেখানো মানে, আসলে রাজীবকেই কষ্ট দেওয়া, এই সত্যটা যেন আজ প্রথমবার গভীরভাবে টের পায় জান্নাত। রাজীব কাউকেই বোঝা ভাবে না, সেটা তো চোখের সামনেই প্রমাণ হয়ে আছে। রানীর অবস্থার উন্নতি দেখে রাজীবের মুখে যে স্বস্তি, যে নিঃশব্দ পরিতৃপ্তির ছায়া ফুটে উঠেছে, সেটাই বলে দিচ্ছে, এই মানুষগুলোই রাজীবের পৃথিবী, রাজীবের প্রাণের মানুষ। জান্নাত ভাবে রাজিব কে আপন করে পেতে চাইলে এদের কেও আপন করে নিতে হবে , যেমন করে রাজীব নিয়েছে । সময়ের সাথে সাথে রানীর অবস্থার আরও উন্নতি হতে থাকে। রাজীব পুরোপুরি সন্তুষ্ট হলে, ওর হাত আলতো করে চেপে ধরে হাসিমুখে বলে, “ভয় পেয়েছিলি খুব?” রানীর চোখে তখনো বিভ্রান্তি। যেন কয়েক মিনিট আগের কিছুই স্পষ্ট মনে নেই। “ঠিক বুঝতে পারছি না… তবে মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছিলাম। একটা দরজা খুলছিল না, কেউ খুব রেগে গিয়েছিল… কী যেন…” রাজীব রানীকে আর আগে বাড়তে দেয় না। মৃদু হাসে, বলে “হয়েছে, ওসব কিছু না। আর ভয় পেয়েছিলি কেন? আমি আছি না? আমি থাকতে তোর ভয় কিসের?” বলতে বলতেই রাজীবের গলা হালকা কেঁপে ওঠে, কিন্তু মুখে হাসিটা লেগেই থাকে। রানীও হেসে ফেলে নির্ভার, শান্ত হাসি। “আমি জানি…” বলে থেমে যায়, তারপর হঠাৎই কিছু মনে পড়ে যায় ওর, চিন্তিত স্বরে বলে “ভাইয়া, আব্বু কেমন আছে?” রাজীব সান্ত্বনার স্বরে বলে, “আব্বুর তেমন কিছু হয়নি। উনি এখন ডাক্তারদের কেয়ারে আছেন, অবজারভেশনে রেখেছে।” “তুই মিথ্যা বলছিস না তো ভাইয়া?” রাজীব হালকা মুচকি হাসে, “তুই কি বোকা মেয়ে, যে আমি তোকে মিথ্যে বলে ভুলিয়ে রাখবো? তুই আমার বুদ্ধিমতী বোন। আমি জানি তুই সব পরিস্থিতি সামাল দিতে জানিস। এখন চল এমারজেন্সিতে , তোকে একটু চেকআপ করিয়ে নিই।” “আমাকে কেন? আমার কী হয়েছে? আমি তো…” রানী অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে । পেছন থেকে আয়েশা সাবধানে বলে ওঠে “যা না, একবার দেখিয়ে আয় না।” এখন কথা বলা ঠিক হবে কিনা আয়শা বুঝতে পারে না, তাই আয়েশার কণ্ঠে দ্বিধা মেশানো ভয়ও স্পষ্ট। জয়নালও সায় দেয়, “হ, একটু দেখিয়ে আয় মা, সাবধানতার জন্য।” এতক্ষনে রানী অন্যদের উপস্থিতি টের পায় , বুঝতে পারে না এতক্ষণ ওর সাথে কি হচ্ছিলো । ও বুঝতে পারে বেশ কিছুক্ষন আগেই ও এসেছে । তাহলে বড় আম্মু , বড় আব্বু , জান্নাত , জয় এদের এতক্ষণ খেয়াল করেনি কেনো ? রানী মাথায় একটা ভোঁতা ব্যাথা টের পায় । বেশ দুর্বল বোধ করছে রানী। বসা থেকে উঠতেই মাথাটা হালকা ঘোরে। রাজীবের হাত ধরেই জরুরি বিভাগের দিকে হাঁটে সে, পাশে জান্নাত। জয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একবার তাকায় রানী। জয়ের চোখে অনুতাপ, আর রানীর চোখে……আশ্চর্যভাব……আর কোনো ভয় নেই। উল্টো, তাতে আছে একটুখানি নির্ভরতার ছোঁয়া। যেন জয়ের উপস্থিতি ওকে এই দুঃসময়ে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। প্রথমে একটু অবাক হলেও জয় বুঝে ফেলে, রেস্তোরার ঘটনার কিছুই রানীর স্পষ্ট মনে নেই। শুধু ভাঙা ভাঙা কিছু টুকরো আছে । দরজা বন্ধ, ভয়, আর কারও রাগ। কিন্তু সেই ‘কেউ’ যে জয়, সেটা ওর মনে নেই। আর তখনই জয়ের বুকের ভেতর আবার অপরাধবোধের ভার নেমে আসে, এক নিঃশব্দ অনুশোচনার মতো। *****
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
05-11-2025, 09:07 PM
আবেগ ঘন একটা পরিবেশ ছিল আজ।
আমারো ছোট বোন আছে, রানির মতো, কিন্তু রাজীবের মতো এমন হতে পারবো কিনা জানিনা। পড়তে পড়তে হাড়িয়ে গেছিলাম, বুক টা কেমন যেন ভার হয়ে গেল জয়ের মতো, নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে এখন। Writing was very good, full of emotions, ☺️ I don't have words, so..... You can imagine the rest. Take love ?
06-11-2025, 12:59 PM
(05-11-2025, 09:07 PM)ধূমকেতু Wrote: আবেগ ঘন একটা পরিবেশ ছিল আজ। মানুষের যেমন সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হয় , তেমনি প্রতিটা সম্পর্কের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও পুষ্টিকর খাবার দরকার পরে । এইসব পুষ্টিকর খাবারের মাঝে একটা হচ্ছে “ নিজেকে ছোট মনে করা” তবে এটা বেশি হয়ে গেলে আবার ক্ষতিও হতে পারে । আবার ভুল কারনে অথবা ভুল সময়ে ব্যাবহার করতে গেলেও ক্ষতি হতে পারে । পরিমিত আর সঠিক সময়ে নিজেকে ছোট মনে করতে পারলে , বেশ ভালো রকম পুষ্টি পাওয়া যায় , বলে আমার মনে হয় । কেউ একজন আমার গল্প পড়ে আবেগ আপ্লূত হয়েছে এটা আমার জন্য একটা বড় পাওয়া । একই গর্ভ আর ঔরসে জন্ম নেয়া মানুষ গুলোর মাঝে যে সম্পর্ক । এর চেয়ে কমপ্লেক্স সম্পর্ক আমি আর দেখিনি । বড় জটিল এই সম্পর্ক । ধাপে ধাপে রুপ বদলায় । বলতে গেলে প্রতিটা সম্পর্কই ধাপে ধাপে রুপ বদলায় । তবে আমার মতে এই সম্পর্কটা একটু বেশিই বদলায় । এই পর্যন্ত মানুষ যত গুলো সম্পর্কের সাথে পরিচিত , বলতে গেলে প্রায় সব সম্পর্কের স্বাদ এই একটি সম্পর্কে পাওয়া সম্ভব । আপনিও ভালোবাসা নেবেন । ভালো থাকবেন ।
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
06-11-2025, 01:28 PM
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
07-11-2025, 08:04 PM
আগ্রহে বসে থাকার মতই চলছে গল্প। বসে আছি। অধীর আগ্রহে।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথম সিজন আমার দুনিয়া
দ্বিতীয় সিজন মিমের দুনিয়া
***************************************************
![]()
08-11-2025, 12:55 PM
(07-11-2025, 08:04 PM)Ra-bby Wrote: আগ্রহে বসে থাকার মতই চলছে গল্প। বসে আছি। অধীর আগ্রহে। পুরোটা শেষ করে ফেললেন ?
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
তাই তো বললাম
অসমাপ্ত আত্মজীবনী প্রথম সিজন আমার দুনিয়া
দ্বিতীয় সিজন মিমের দুনিয়া
***************************************************
![]()
11-11-2025, 03:52 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (গ)
জয়নাল কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না । রাজীবের অনেক বোঝানো, আশ্বাস আর অনুরোধে অবশেষে বাড়ি যেতে রাজি হয়েছে । রানীকেও ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছে, বলেছে রাতে একদম নির্বিঘ্ন ঘুম হতে হবে। রাজীব চেয়েছিল ওকে আগেই পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু রানী রাজি হচ্ছিল না, একবার আব্বুকে দেখে যাবে, এই জেদ নিয়ে বসেছিল। শেষে রাজীবও ভেবেছিল, একবার দেখা হলে বরং ওর মনটা শান্ত হবে। সবাই চলে যাওয়ার পর রাজীব একাই থেকে গেল। এখন CCU-তে রহিম সারা রাত পর্যবেক্ষণে থাকবে, তাই অন্য কারো কিছু করার নেই। শুধু যদি হঠাৎ ডাক পড়ে, সেই ভেবেই রাজীবের থাকা। ও বসে আছে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে। চারপাশ নিস্তব্ধ, একটা টিভি চলছে , মিউট করা । মাঝে মাঝে দূরের করিডোরে নার্সদের পদশব্দ শোনা যায় সুধু। রাতের খাবারের চিন্তা নেই, কারণ জান্নাত যাওয়ার আগে ওকে জোর করে খাইয়ে রেখে গেছে। রাজীবের খাওয়া নিশ্চিত করতে জান্নাত নিজেই থেকে গিয়েছিল, রানীকে পাঠিয়ে দিয়েছিল আয়েশা আর জয়নালের সঙ্গে। রাজীব যতক্ষণ খাচ্ছিল, জান্নাত ঠিক সামনে বসে ছিল— একদৃষ্টে তাকিয়ে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে রাজীবের চোখ চলে যাচ্ছিল জান্নাতের দিকে। ওর এমন মমতাভরা দৃষ্টি রাজীবকে অচেনা এক উষ্ণতায় ভরিয়ে তুলছিল। কেউ যেন নিঃশব্দে খেয়াল রাখছে তার প্রতিটি গ্রাসে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে। রাজীবের মনে পড়ে না , কোনদিন কেউ , এমন করে ওর খাওয়ার দিকে চোখ থেকেছিলো কিনা? তার পর ভাবে হয়তো অনেক বছর আগে, মা যখন বেঁচে ছিলো। তখনই মনে এক অদ্ভুত লোভ জেগে উঠল রাজীবের , ভাবল থাকুক না তাকিয়ে , খাওয়ার সময় সামনে কেউ বসে পরম মমতায় তাকিয়ে আছে , সেটা রাজীবের কাছে ভালোই লাগছিলো । রাজীব না চেয়েও বারবার তাকিয়ে ফেলছিল জান্নাতের দিকে এখন এই নিঃসঙ্গ অয়েটিং রুমে বসে ভাবছে , এই এক জান্নাত কিন্তু কত রূপ ! কখনো স্বাধীনচেতা, সমাজের নিয়মভাঙা এক তরুণী, যে নিজের ছন্দে, নিজের নিয়মে বাঁচতে জানে। আবার কখনো স্থির, প্রজ্ঞাবান, কঠিন পরিস্থিতিতেও আশ্চর্য দক্ষতায় সামলে নেয় সব। রাজীবের মনে পড়ে, বেশি দিন আগের কথা নয়, একবার ও খুব বিশ্রীভাবে জান্নাতের বুকের দিকে তাকিয়ে ফেলেছিল। নিজের উপর প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মেছিলো । ভেবেছিল, জান্নাত হয়তো আর ওর মুখ দেখবে না। কিন্তু না, জান্নাত কী অদ্ভুত কোমলতায় ওর লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েছিল! এমন আচরণ করেছিল যেন কিছুই ঘটেনি। রাজীব যে একজন মানুষ , রক্ত মাংসের মানুষ সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলো । রাজীবের মনে হয় , জান্নাত সুধু সেদিন ওকে লজ্জা থেকেই সুধু বাচায়নি , সেদিন জান্নাত রাজীবকে শুদ্ধ করেছিলো । আবার এই একই জান্নাত, হালকা তামাশা আর হাস্যরসে পুরো পরিবেশ বদলে দিতে পারে। তখন মনে হয়, ওর ভেতরে কোনো গভীরতা নেই, নিছক এক কিশোরী মাত্র। আবার সেই সেই জান্নাত যখন রেগে যায়, সামনে দাঁড়ানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। কেউ সামনে দাড়াতে পারে না । আর আজ, সেই একই মুখে মমতার ছায়া, এমন শান্ত, এমন উষ্ণ, রাজীবের বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে ওঠে , ভাবে জান্নাতের চোখে আজকে ও যা দেখছে , তা ছিলো মাতৃ মমতার মত অকৃত্রিম মমতা , যে মমতার জন্য রাজীবের মন আজন্ম তৃষ্ণার্ত । **** হাসপাতালেও একই ধরনের অনুভূতি হচ্ছিল, সারাক্ষণ রানী ওর আশেপাশেই ছিল, কিন্তু জয়ের মনে হচ্ছিল রানী যেন ওর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রানীর পাশে গিয়ে যে দুটো সান্তনার কথা বলবে, যা একটু সাহস যোগাবে, সেই সাহস জয়ের হয়নি। হোটেলে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির অনুতাপ সারাক্ষণ জয়ের মন ও শরীরকে যেন অসার করে রেখেছিল। বাসায় ফিরে প্রথমে ফ্রেশ হয় জয় ,। কিছুক্ষন পর খাওয়ার ডাক এলে বলে দেয় ও খাবে না । কিছু খাওয়ার মত অবস্থা ওর নেই । সেই যে সকালে নাস্তা করে বের হয়েছিলো এর পর আর খাওয়া হয়নি ।তবুও ক্ষুধা টের পাচ্ছে না , ক্ষুধা টা নষ্ট হয় গেছে , জয়ের মনে হচ্ছে ওর গলা দিয়ে খাবার নামবে না , তাই সুধু সুধু চেষ্টা করার মানে হয় না ।
একবার ভাবে রানী কে দেখে আসবে , কিন্তু সেই চিন্তাও বাদ দেয় । ঘরের দরজা লাগিয়ে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরায়।
কিছুতেই জয়ের মনে শান্তি আসছে না , বার বার হসপিটালের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে । তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলো , এমন কি রাজীবের প্রতি কিছুটা কৃতজ্ঞতা বোধ ও এসেছিলো । কিন্তু এর পর যতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে , জয়ের মন থেকে ঐ স্বস্তি আর কৃতজ্ঞতা বোধ দূর হয়ে সুধুই পরাজয়ের গ্লানি আর অপরাধবোধ রয়ে গেছে ।
ফিরতি পথে রানীকে বলা কথাগুলো বার বার একেকটা তির হয়ে ওর বুকে এসে বিঁধেছে । “ আমার সাথে থাকলে তোর মনে হবে , জীবন অতটা কঠিন নয়” ……… “ তোকে এতোদিন যা যা শেখানো হয়েছে আমি একটা একটা করে সব উপড়ে ফেলবো” নিজের বলা এই কথাগুলো খুব বেশি ফাঁকা মনে হয় ।
সিগারেটের স্বাদ বিস্বাদ লাগে , ছুড়ে ফেলে দেয় বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে । তারপর নিচে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট লাল আগুনের পতন , চরকির মত ঘুরতে ঘুরতে নিচের দিকে যাচ্ছে । পতনের সাথে সাথে কিছু স্ফুলিঙ্গও ছড়িয়ে পরে চারদিকে , তারপর ধিরে ধিরে অন্ধকারে হারিয়ে যায় ।
জয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সেই অন্ধকারে—
মনে হয়, ভেতরেও যেন ঠিক এমনই কোনো আগুন নিভে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে, নিঃশব্দে। এক মুহূর্তের জন্য প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় জয় । ভেতরের এই আগুনটাই যে জয়ের প্রান ভোমরা । এটা নিভে গেলে ও বাচবে কি করে । কিন্তু পরমুহুরতেই জয় নিজেকে সামলে নেয় , জয়কে সাহায্য করে রানীকে করা ওর একটা প্রতিজ্ঞা । জয় রানীর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলো , “আমি সুধু তোর কাছেই পরাজয় স্বীকার করবো দুনিয়ার আর কারো কাছে নয়”
জয়ের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে , ও জানে এর পর ওর করনীয় কি । নিজের এমন শোচনীয় পরাজয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজের করনীয় সম্পর্কে একদম পরিস্কার ধারনা নিয়ে জয় দ্বিতীয় সিগারেটে আগুন ধরায় । এবার আর স্বাদ তেঁতো লাগে না । বরং শেষ শীতের ঈষৎ শীতল বাতাসে , সিগারেটের তপ্ত ধোয়া ওর বুকে উষ্ণতার প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় ।
অনেকটা নির্ভার হওয়ার পর রানীকে দেখার জন্য ওর মন ছটফট করতে থাকে । একি ছাঁদের নিচে ওরা দুজন , এই তথ্যটা যেন হঠাত ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । শরীরে মনে অজানা এক শিহরণ ওঠে ।
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
11-11-2025, 03:57 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৯ (গ) এর বাকি অংশ.........
সিগারেট শেষ করে জয় জান্নাতের দরজার সামনে এসে দাড়ায় , মৃদু টোকা দেয় , ভেতর থেকে আওয়াজ আসে “ দরজা খোলা” । জয় নিঃশব্দে দরজা খোলার চেষ্টা করে , কিন্তু পুরনো দিনের ভারি কাঠের দরজা মৃদু প্রতিবাদ করে নিজের বার্ধক্যের কথা জানান দেয় ।
জান্নাতের ঘরে একটা নরম আলোর লাইট জ্বলছে । সব সময়ের মত অগোছলো , এখানে সেখানে ব্যবহার করা জামা কাপড় পরে আছে, বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে , যেখানে ওদের থাকার কথা নয় । আর সেই অগলাছালো ঘরে , রানীর শান্ত স্নিগ্ধ ঘুমন্ত মুখটা যেন বড্ড বেমানান ঠেকে জয়ের কাছে । বিছানার ঐ অংশটা যেন আলোকিত হয়ে আছে, যেখানটায় রানী শুয়ে আছে । রানীর ঘুমন্ত মুখটা এতোটাই শান্ত মনে হচ্ছে , যেন শত শত ঘুমের পরীরা ওকে ঘিরে রেখেছে । জয় অপলক তাকিয়ে থাকে , নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে রানীর নাকের সুক্ষ ফুলে ওঠা , মাঝে মাঝেই পাপড়ির ভেতরে চোখের মনির দৌড়াদৌড়ি , জয়ের ভাবতে ভালো লাগে রানীর চোখের তারা দুটো হয়তো ওকেই খুজে ফিরছে ।
জয়ের ঠোঁটে নিজের অজান্তেই একটা হাসি ফুটে ওঠে , রানীর ফুলের মত নিষ্পাপ মুখটা দেখে জয়ের মনে পুরনো এক তাড়নার নতুন জন্ম হয় । অনাঘ্রাতা এই ফুল্টিকে একান্ত নিজের করে পাওয়ার তীব্র আখাঙ্কা বুকে ডঙ্কা বাজাতে থাকে । সেই সাথে একটা ভালো লাগা শরীর মন কে প্রশান্ত করে , এই আশ্বাস দেয় , এই ফুলটির জম্ন ওর জন্যই হয়েছে। যেমন ইভের সৃষ্টি হয়েছিলো এডামের জন্য । এই ফুলের ঘ্রান সুধু ওর মনকেই সুরভিত করবে , এর সৌন্দর্য সুধু ওর চোখের তৃষ্ণা মেটাবে । অপেক্ষা সুধু ফুলটিকে তার নিজের জন্য নির্ধারিত ভাসে সাজিয়ে রাখার । আর সেই ভাস যে জয়ের নিজের হৃদয় , সে ব্যাপারে জয়ের বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই ।
“ হ্যালো , এখানে আমিও আছি, মিস্টার লস্ট ইন থট” জান্নাত ইঙ্গিতপুরন দুষ্টুমির হাসি মিশিয়ে বলে , জয় যে আশপাশ ভুলে গেছে , সেদিকেই জান্নাতের ইংগিত ছিলো ।
জান্নাতের ইচ্ছা পূরণ হলো , রানীর প্রতি জয়ের অখণ্ড মনোযোগে বাধা পরল , জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হাসল , জয়ের স্বভাব বিরুদ্ধ কিছু লজ্জাও সেই হাসিতে মিশে রইলো ।
“ ওহো , লজ্জা পাচ্ছিস মনে হয় , আমার লজ্জাবতী ভাই” জান্নাত আরো একটু দুষ্টুমি করে বলল । তারপর স্বাভাবিক ভাবে বলল “ আয় ভেতরে আয়, দরজায় দাড়িয়ে আছিস কেন “
জয় ঘরে ঢোকে , জান্নাতের দুষ্টুমি ভরা চোখে জয় কে ফলো করছে , কিন্তু জয় সেটা অগ্রাহ্য করে ফাঁকা চেয়ারে বসে পরে । তারপর জিজ্ঞাস করে “ তারপর কি অবস্থা?”
“ কার অবস্থা জানতে চাইছিস , আমার ? না রানীর? রানী ঠিক আছে , মরার মতন ঘুমাচ্ছে , বোমা ফাটলেও উঠবে না , আর……… যদি আমার কথা জিজ্ঞাস করে থাকিস … আমি তোর রানীর যত্ন নিচ্ছি সাথে সাথে একটা স্ক্রিপ্ট এর খসড়া করছি , আজকে রাতেই আবরার কে পাঠাতে হবে”
আবরারের নামটা উচ্চারিত হতেই , জয়ের ভ্রু কুঁচকে যায় । একটু বিরক্তি নিয়েই জানতে চায় , “ কোন আবরার?”
জান্নাত হাসে , হাসতে হাসতেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে “ সেই আবরার”
জয়ের চোয়াল কিছুটা শক্ত হয় , একটা নিঃশ্বাস ফেলে , ওকে দেখে মনে হয় কিছু একটা বলতে চেয়েও সেটা গিলে নিয়েছে । এক মুহূর্ত সময় নেয় তারপর বলে “ তুই কি ঠিক করেই নিয়েছিস , যাদের আমি পছন্দ করি না , বেছে বেছে তাদেরকেই তোর দলে রাখবি” জয়ের বলার টোনে , রাগ বা বিরক্তি না থাকলেও একটা অসন্তোষের রেশ রয়েছে ।
জান্নাত জয়ের অসন্তোষ টের পায় , তবে স্বাভাবিক ভাবে যেমন উত্তর দিতো , আজকে তেমন দেয় না , কিছুটা নরম কিন্তু দৃঢ় ভাবে বলে “ এখানে তুই দলাদলি কোথায় পেলি , আমার কাছে মনে হয়েছে ওদের এক্সপারটিজ আমার দরকার আছে , তাই ওদের কে আমার কাজের সাথে জুড়ে নিয়েছি , তুই এটা বেক্তিগত ভাবে নিচ্ছিস কেন , সেটাই আমি বুঝতে পারছি না”
“ তুই বুঝতে পারবি না , কারন তুই মেয়ে , একটা ছেলেকে আর একটা ছেলেই ভালো করে চেনে, এই আবরারের মোটিভ আমি খুব ভালোকরে জানি”
“ আমি জানি না তুই কি বুঝেছিস , বা জেনেছিস , কিন্তু আমার কাছে আবরার কে ভালই মনে হয়েছে , সহজ সরল ছেলে , আমরা কেউই যখন রানীর পাশে ছিলাম না , তখন কিন্তু এই আবরার ই ওর পাশে ছিলো , আবরারের সাথে থেকে রানীর একাডেমিক পারফর্মেন্স কিন্তু বেশ উন্নতি ই হয়েছিলো” কথাগুলো বেশ দ্রিরতার সাথে বলে জান্নাত , জয়ের স্টেট্মেন্ট কে চেলেঞ্জ করে যেন।
কিন্তু জয়ের মাঝে ফাইটিং স্প্রিট দেখা যায় না , উল্টো ওর চোখে মুখে একটা নিরাশার ছাপ পরে , দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে “ হ্যাঁ বাকি সবাই রানীর জন্য উপকারি বন্ধু , সবাই রানী কে বোঝে , আবরার রানীর পড়াশুনায় হেল্প করে , রাজীব সারাক্ষণ খেয়াল রাখে , তুই বিপদে পাশে থাকিস , আমিই সুধু এক মাত্র ব্যাক্তি যে কিনা রানী কে বুঝি না রানীর জন্য সুধু সমস্যাই তৈরি করি, রানীও আজকে আমাকে এই একি কথা বলেছে , প্রমান এমন হাতেনাতে পেয়ে যাবো ভাবতে পারিনি” কথা গুলো বলে জয় উপরে সিলিঙের দিকে তাকায় , জান্নাতকে নিজের চেহারা যেন দেখতে দিতে চায় না ।
জান্নাত নিজের চেয়ার থেকে একটু ঝুকে সামনের দিকে আসে হাত দিয়ে জয়ের হাটুতে বেশ কয়েকবার ট্যাপ করে । কয়েক মুহূর্ত সেখানেই হাত রাখে , তারপর নরম সরে বলে “ আজকের ঘটনার কথা ভেবে বলছিস?…… আজকের ঘটনার জন্য তোর চেয়ে আমার ভুমিকা বড় , তুই একা কেন চাপ নিচ্ছিস? রানীকে দেখে সাধারন একটা বোকা মেয়ে মনে হলেও ওকে হ্যান্ডেল করা কিন্তু সহজ নয়, এটা তোকে আমি আগেও বলতে চেয়ে ছিলাম , কিন্তু তুই আমাকে ভুল বুঝেছিলি”
“ তোর ব্যাপারটা আর আমার ব্যাপার কি এক হলো” এই বলে জয় জান্নাতের দিকে তাকায় , তারপর রানীর ঘুমন্ত মুখের দিকে , ঐ দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে “ আমার অন্তত বোঝার উচিৎ ছিলো , এখন দেখছি সবাই রানী কে বোঝে সুধু আমিই বুঝি না , তা ছাড়া না বুঝতে পারলেও আমার তখন অমন আচরণ করা ঠিক হয়নি , হ্যাঁ আমি বুঝতে পারিনি যে রানী একটা দুঃসংবাদ শুনে ভয় পেয়েছে , কিন্তু তাতে কি ? কোন পরিস্থিতিতেই কি আমার অমন আচরণ করা ঠিক হয়েছিলো? আমি কি বলেছি জানিস …… তুই জাহান্নমে যা , তারপর একা ছেড়ে দিয়েছি”
জান্নাত অনুধাবন করতে পারে , যে জয়ের ভেতরে কি চলছে , ও নিজেও এই আগুনে পুরেছে আজকে , তাই জান্নাত জয় কে কিছুটা ভার মুক্ত করার চেষ্টা করে , বলে “ জয় , একটা মানুষের সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য আশেপাশে একটা আপন মানুষের বলয় তৈরি করতে হয় , একেক জন আপন মানুষের কাজ ভিন্ন ভিন্ন রোল প্লে করা, কেউ বন্ধু হয়ে পাশে থাকে , কেউ পরিবার হয়ে সাহস যোগায় , কেউ জীবন সঙ্গি হয়ে চলার পথে সঙ্গ দেয় , জয় তোদের সামনে অনেক সময় আছে , ধিরেধিরে তোরা একে অপরের জন্য একজন ভালো জীবন সঙ্গি হয়ে উঠবি বলেই আমার বিশ্বাস , তোদের দুজনের মাঝেই সেই ইচ্ছা আমি দেখছি। কিন্তু তাড়াহুড়ো করিস না , এতে ভালোর চেয়ে মন্দ হবে”
জয় ছোট্ট করে হাসে , কিন্তু সেটা মাত্র এক মুহূর্তের জন্য , তারপর ওর চেহারায় দৃঢ় সংকল্পের ছাপ পরে , জান্নাতের দিকে তাকায় , চোখে আত্মবিশ্বাস “ দেখিস তুই , রানীর পুরোটা জগত জুড়েই সুধু আমি থাকবো , ওর সব দায়িত্ব আমি নেব , কোন কিছুর জন্যই রানীকে অন্য কারো মুখাপেক্ষি হতে হবে না,”
জান্নাত জয়ের দিকে ভাল করে তাকায় , তারপর ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে আনে , জান্নাতের হাসি দেখেই বোঝা যাচ্ছে , জয়ের সাথে একমত নয় ও , জান্নাত আর কথা বাড়াতে চায় না , নিজের ভাই কে চেনে বলেই জান্নাত এই সিধান্ত নেয় । ও জানে এখন জয় কে কোন কিছু বুঝিয়ে লাভ হবে না । তার চেয়ে ভালো , পরিবেশ হলকা করার সিদ্ধান্ত নেয় , হাসি আর একটি চওড়া করে বলে
“ ওকে ঠিক আছে , কিন্তু আজকে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস?”
“কি?” জয় একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞাস করে ,
“ আজকে আমারা দুই ভাই বোন কিন্তু দারুন টিম ওয়ার্ক করেছি , ইতিহাসে কিন্তু এটা খুব বিরল ঘটনা” জান্নাত হাসতে হাসতে বলে ।
“মানে?” জয় জান্নাতের কথার মাথা মুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারে না ।
“ মানে আমি রানীকে ভয় পাইয়ে দিয়েছি , আর তুই সেটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিস , কি সুন্দর টিম ওয়ার্ক দেখছিস , আমাদের উচিৎ এই অকেশন সেলিব্রেট করা , লেটস সেলিব্রেট ব্রো…… কফি খাবি?”
জান্নাতের এমন হঠাত টপিক পরিবর্তন করায় , জয় প্রথমে অবাক হলেও , সেটা বেশিক্ষণ স্থাই হয় না , ও নিজেও হেসে ওঠে , বলে “ওকে খাওয়া যায়”
“ তাহলে যা দুই কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আয়” জান্নাত হাস্য উজ্জ্বল মুখে বলে ,
জান্নাতের কথা শুনে জয় যেন আকাশ থেক পরে , বিস্মিত হয়ে বলে “ মানে ? অফার করলি তুই , আর বানাবো আমি!!!”
“ তো? অফার করেছি , এর মানে এই নয় যে আমি বানাবো, তাছাড়া তোর গার্ল ফ্রেন্ডের দেখাশুনা করার মহান দায়িত্ব আমার কাঁধে , এটা ফেলে আমি তো সামান্য কফি বানাতে যেতে পারি না” জান্নাত বেশ সিরিয়াস টোনে বলল
“ আমার কফি খাওয়া লাগবে না , আমি গেলাম” এই বলে জয় উঠতে চায় ,
কিন্তু জান্নাত সাথে সাথেই বাধা দেয় “ উহু উহু এটা চলবে না , কফির নাম যেহেতু উঠেছে , সেহেতু কফি খেতেই হবে , আর তোর সাথে বকর বকর করে আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে , এখন এই স্ক্রিপ্ট শেষ করতে অনেক রাত হবে , এখন যদি কফি না পাই আমার ঘুমে ধরবে , আর ঘুম তারানোর জন্য আমার গান শুনতে হবে , আর গান শুনলে যদি রানী জেগে যায়”
জয় বুঝতে পারে জান্নাত কি করতে চাইছে , ওকে দিয়ে কফি বানিয়ে নিতে চাইছে , কিন্তু জয় ও ছেড়ে দেয়ার পাত্র না “ তুই কি আমাকে ব্যাক্মেইল করছিস ? তুই আমাকে চিনিস না?” হুমকির স্বরে বলে জয় ।
“ নো মাই ডিয়ার ব্রো , এটা ব্ল্যাক মেইল নয় , আমি তোর প্রেমের পরিক্ষা নিতে চাচ্ছি , এক কাপ কফি বানানোর কষ্ট তোর কাছে বড় , না তোর গার্ল ফ্রেন্ডের ঘুম ” জান্নাত জয়ের হুমকি থোরাই কেয়ার করে । এমন ভাব নিয়ে বলে ,
জয় কিছুক্ষন চুপ করে থাকে , এক দৃষ্টিতে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকে । কিন্তু জান্নাত পাত্তা দেয় না , ও নিজেও নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে জয়ের দিকে । জয়ের দৃষ্টিতে নগ্ন হুমকি , যেন বলতে চাইছে , ভেবে দ্যাখ এর পরিনাম কি হবে , আর জান্নাতের নির্লিপ্ত দৃষ্টি বলতে চাইছে , আই ডোন্ট কেয়ার। বেশ কিছুক্ষন চলে এই গেম , তারপর জয় ই প্রথমে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় , বলে
“ ওকে ফাইন , এনে দিচ্ছি কফি”
জান্নাত বিজয়ীর হাসি হাসে ।
মিনিট পাচেক পর জয় এক কাপ কফি নিয়ে ঢোকে , জান্নাতের সামনে রেখে বলে , “ মনে থাকবে আমার”
“ তোর কফি কই?” যেন খুব অবাক হয়েছে , এমন ভাবে বলে জান্নাত
“ আমি কফি খাবো না , তুই খা” এই বলে জয় আবার বেড়িয়ে যেতে নেয় , জান্নাত আবার পেছন থেকে ডাকে ,
“ জয় আর একটা কথা”
“ কি বলবি তারাতারি বল”
“ কিছু টাকার দরকার ছিলো , আমার হাত একদম খালি , বুঝতেই পারছিস , টাকার চিন্তা হলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা , দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুমালে আমি আবার নাক ডাকি , রানীর যদি আবার ডিস্টার্ব হয় …… ভাবিস না আমার জন্য বলছি , রানীর কথা ভেবেই……”
“ কত?” জান্নাতের কথা শেষ হওয়ার আগেই বলে জয় ।
“ মাত্র পাঁচ হাজার”
“ আমার কাছে নেই ?” জয় সত্যি করেই বলে , আজকে হোটেলের বিল দেয়ার পর ওর কাছে এতো ক্যাশ নেই ।
কিন্তু জান্নাত নাছোড় বান্দা , সাথে সাথেই অন্য অপশন বের করে ফেলে , বলে “ তোর কার্ড হলেই হবে”
জয় বুঝে ফেলে , জান্নাত কোমর বেধেই নেমেছে , আজকে ওর নিস্তার নেই । ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় , তারপর কিছুক্ষন পর আবার জান্নাতের ঘরে এসে , নিজের কার্ড ছুড়ে দেয় , আর জান্নাতের দিকে একটা জলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, বলে “ ১৮১১৪৯, পাসওয়ার্ড”
পাসওয়ার্ড দেখে জান্নাতের চোখ বড় বড় হয় “ এতো বড় পাসওয়ার্ড , তোর মনে থাকে?”
“ এটা স্পেসাল পাসওয়ার্ড তোর মত গাধা বুঝবে না” এই বলে জয় আর দাড়ায় না , কিছুটা রাগ কিছুটা আশংকা ওকে আর দাড়াতে দেয় না , আরো একটু থাকলে না জানি আর কি কি দাবি করে বসবে জান্নাত , মনে মনে ভাবে জয় । শেষ বারের জন্য একবার রানীকে দেখে বেড়িয়ে যায় । আর তখনি জান্নাত পেছন থেকে ডাকে ।
“ আবার কি হলো ?” এবার জয় সত্যি সত্যি বিরক্ত হয়ে উঠেছে । ওর কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি , এমন কি গলাও একটু চড়ে গেছে ,
“ আর একটা অনুরধ , আজকে রাতে আর আমার ঘরের সামনে আসবি না, আমি দরজা লাগিয়ে দিচ্ছি , এর পর দরজায় টোকা পরলে আমি রানীকে জাগিয়ে দেবো” জান্নাত প্রচ্ছন হুমকির স্বরে বলে ।
জয় কোন উত্তর দেয় না , বেড়িয়ে যাওয়ার আগে আর একবার রানীর ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের উপর চোখ বুলিয়ে দরজা লাগিয়ে বেড়িয়ে যায় । নিজের ঘরে যেতে যেতে জয় মনে মনে বলে , আর কিছু দিন , তারপর সুধু এক ছাঁদের নিচে নয় , আমরা একি ঘরে একি বিছানায় থাকবো । সারা জীবন , যত দিন বেঁচে থাকি । জয় চলে যাওয়ার পর জান্নাত কফির কাঁপে চুমুক দেয় , প্রচুর চিনি হয়েছে , জান্নাতের মুখ মিস্টির কারনে বিকৃত হয়ে ওঠে । তারপর কফির কাপ রেখে পাসওয়ার্ডের দিকে তাকায় , মুখে বলে “হুম………স্পেসাল পাসওয়ার্ড না” জান্নিনাতের মাথার পোকা গুলো জেগে ওঠে । নিজের বিরক্তিকর অভ্যাসটার জন্য জান্নাত নিজেকে নিজে গালি দেয় , এই পাসওয়ার্ড ক্রেক না করা পর্যন্ত ওর শান্তি আসবে না । অন্য কাজে মনও দিতে পারবে না । কিন্তু ভাগ্য ভালো বলতে হবে , জয় এসব ব্যাপারে খুব প্রেডিক্টেবল , অন্তত জান্নাতের কাছে । আর ঘরে হিন্টস মজুদ থাকায় ক্র্যাক করতে সময় লাগলো না । মাত্র পাঁচ মিনিট , এই পাসওয়ার্ড কিভাবে এলো বুঝে গেলো । “ শালা একটা ক্রিঞ্জ” মুখ সুধু এটাই বলল । তারপর আবার লিখতে শুরু করে , জান্নাটের আঙ্গুল ল্যাপ্টপের কি বোর্ডে দ্রুত গতিতে চলতে থাকে , সেই সাথে জান্নাতের মুখ এক টুকরো হাসি । এই হাসি নিকট ভবিষ্যতে জয়ের সাথে ওর লড়াইয়ের কথা ভেবে। সুধু স্ক্রিপ্ট লেখা , ভিডিও ধারন ও এডিট হতে যতদিন সময় লাগে । ভয় একটাই আবরার না আবার ভয় পেয়ে যায় । তখন জান্নাত কে নিজের ই কষ্ট করে স্ক্রিপ্ট লিখতে হবে । জান্নাত জানে রাজীব ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করে , যদিও রাজীব জয়ের ইনভল্ভমেন্ট না জেনেই বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে । কিন্তু জান্নাত এসব ব্যাপারে রাজীব কেন দুনিয়ার কারো কথাই শোনে না । ভিডিওর বিষয় কি হবে , এ ব্যাপারে জিন্নাতের ডিসিশন ই ফাইনাল । আর কেউ এখানে হাত দেয়ার এখতিয়ার রাখে না । ****
কিছু প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে, ঠিক আমার মতো — অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ। |
|
« Next Oldest | Next Newest »
|