Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (জ)
নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে রানীর ঘর থেকে তড়িঘড়ি করে চলে এসেও লাভ হয়নি । রান্না করতে করতে পুরোটা সময় আত্মগ্লানিতে ভুগেছে রাজীব । মন অন্য দিকে থাকায় বেশ কয়েকবার এক্সিডেন্টও হয়েছে । হাত কেটে গেছে , গরম ছ্যাকা খেয়েছে, দুবার লবন দিয়েছে সব্জিতে ।
আর এখন খেতে বসেও সেই ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছে না । আর এই ভাবনার ছাপ রাজীবের চেহারাতে এতো গভির ভাবে পরেছে যে , রহিম আর রানীর চোখ ও এড়ায় না । একবার তো রহিম জিজ্ঞাস করেই ফেলে , “ রাজীব তোর কি হয়েছে মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?” জয়ের শরীর খারাপ দেখে এসেছে সকাল বেলা , তাই রহিমের মনে হয়েছে রাজীবের শরীর ও হয়তো খারাপ হতে পারে । আর শরীর খারাপ হলেও চাপা স্বভাবের রাজীব হয়তো কিছু বলবেও না ।
তাই যখন রাজীব “ কিছু না তো” বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে , তখন রহিম রাজীবের কপালে হাত দিয়ে একবার দেখে । যখন দেখে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আছে তখন আশ্বস্ত হয় । তবুও বলে “ দেখিস এখন সময় ভালো না চারদিকে জ্বর সর্দি হচ্ছে , সাবধানে থাকিস”
এদিকে ফুরফুরে মেজাজে থাকা রানী দুষ্টুমি করার সুযোগ হাতছারা করে না , “ আব্বু ভাইয়া নাকি ভুত দেখছে , তাই ওর এই অবস্থা”
রাজীব চট করে একবার রানীর দিকে তাকায় , রানীর হাস্য উজ্জ্বল চোখে মুখে খুজে দেখে এ ব্যাপারে রানী কিছু জানে কিনা । মনে মনে ভাবে , রানী যদি বুঝে থাকে তাহলে আর লজ্জার শেষ থাকবে না । কিন্তু রাজীব দেখে রানীর মাঝে তেমন কোন লক্ষন দেখা যায় না । রাজীব একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে , মনে মনে ভাবে - ধুর , এতো বেশি বেশি ভাবছি কেন? রানী জানবে কি করে? আসলে রানী যখন ‘দেখছে’ শব্দটা ব্যাবহার করেছে তখন ই রাজীবের মস্তিষ্ক রিয়েক্ট করেছে ।
“ তুই এই শহরে ভুত কোথায় পেলি রে ব্যাটা?শহরের লাইটের আলো আর গাড়ির হর্ন শুনে ভুত সব পালিয়েছে, ওদের এখন চাচা আপন প্রান বাচা অবস্থা ” এই বলে রহিম হো হো করে হেসে ওঠে । রাজীবের যে ভুতে ভয় আছে , এটা রহিম জানে। কিন্তু এখনো এই বয়সে এসে ওর ছেলে যে ভুতে ভয় পায় , এই ব্যাপারটা রহিমের কাছে হাস্যকর লাগে । তাই নিজেও একটু মজা করতে ছাড়ে না ।
“ তুই ডিমের কুসুম গুলো ফেলে দিচ্ছিস কেনো?” রাজীব কথার মোড় ঘুরানোর জন্য রানীর ডিমের কুসুম না খাওয়ার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার ।
“ আমার বমি পায়” রানী ঠোঁট উল্টে বলে । সেই ছোট বেলা থেকেই রানী ডিম সেদ্ধর সুধু সাদা অংশ খায় , ডিমের কুসুম খেতে ওর ভালো লাগে না ।
“ এরকম করলে কি চলবে মা? এইজে আজকে আমরা কেউ ছিলাম না , যদি একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো? ভাগ্য ভালো জান্নাত চলে এসেছিলো, নইলে কি হতো একবার ভবেছিস?” রাহিমের একটু আগের হাস্য উজ্জ্বল মুখটায় দুশ্চিন্তার ছাপ পরে । এ সমস্যার সমাধান ওর জানা নেই । কাজের জন্য ওকেও বাইরে যেতে হয় , মাঝে মাঝে রাজীব কেও বাইরে থাকতে হয় । সেই সময়টা রানী একাই বাসায় থাকে ।
“ আমি কি করবো আব্বু , আমি খেতে পারি না”
“ এই দেখ আমি শিখিয়ে দেই কিভাবে খেতে হবে” এই বলে রহিম ডিমের কুসুমে লবন লাগায় , তারপর রানীকে কে দেয় , “ এবার খেয়ে দেখ তো পারিস কিনা , একটু একটু করে না একেবারে পুরোটা মুখে দিয়ে দে”
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখ দিতে হয় রানীকে , মুখে দিতেই রানীর পেটের নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসতে চায় । মুখ থেকে ফেলে দেয় , অর্ধেক চাবানো ডিমের কুসুম।
সেই আওয়াজে রাজীবের ধ্যান ভাঙ্গে , রহিমের মুখ জান্নাতের নাম উচ্চারিত হওয়ার পর রাজীব আবার নিজের চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলো । রানী যখন ওয়াক করে শব্দ করে তখন আবার ফিরে আসে । দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় । রানী পানি মুখে দিয়ে কুল্কুচি করে মুখের ভেতর লেগে থাকা বাকি কুসুম গুলো ধুয়ে ফেলতে চায় । গন্ধে ওর আরো বমি হতে চায় , কুল্কুচি শেষে রানী খুজতে থাকে কোথায় ফেলবে , রাজীব দ্রুত একটা খালি পেয়ালা এগিয়ে দেয় , রানী মুখের পানি সেখানেই ফেলে । ওর চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে , পাশে থাকা একটা লেবুর টুকরো মুখে দিয়ে দেয়।
“ তোর তো দেখি খুব খারাপ অবস্থা রে মা , একটা ডিমের কুসুম খেতে পারিস না?” রহিম চিন্তিত স্বরে বলে ।
“ আমি নানা ভাবে চেষ্টা করেছি , কিন্তু একেবারে ভাজা ভাজা না হলে ও খেতেই পারে না “ রাজীব পাশ থেকে বলে ।
“ তুই যা ঠিক মত খেতে পারিস , সেটাই না হয় বেশি করে খাবি” রহিম রানী কে উদ্দেশ্য করে বলে , ডিমের ব্যাপারে এক প্রকার হাল ছেড়েই দিয়েছে ও। যেই দৃশ্য একটু আগে দেখলো , তারপর আর কিছু বলার থাকে না ।
“ তাহলে তো হয়েছে , তাহলে বাড়িতে ভাত ডাল বাদ দিয়ে , চটপটি, ফুচকা্, পাঁচমিশালি ঝাল আঁচার এসব বানাতে হবে” রাজীব কিছুটা সারকাজ কিছুটা বিরক্তি মিশিয়ে বলে ।
“ তুই কি চিকেন ও খেতে পারিস না?” রাহিম চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাস করে ,
“ খাই তো” রানী নিচু স্বরে বলে । আড় চোখে একবার রাজীবের দিকে তাকায় ।
“ হ্যা , বিরিয়ানি রান্না করে দাও , ফ্রাই করে দাও , সাধারন ভাবে রান্না করলে এক পিস কোন মতে খায়”
খাওয়া দাওয়া নিয়েই আলাপ চলতে থাকে শিকদার পরিবারের তিন সদস্যের মাঝে । রাজীব ও কিছুটা স্বস্তি বোধ করে । কারন এই পারিবারিক আলোচনা ওকে জান্নাতের চিন্তা থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায় ।
রাতের খাওয়ার প্রায় ঘণ্টা খানেক পর , রাজীব রানীর জন্য একটা ইন্সটেন্ট রামেন রান্না করে আর সাথে এক গ্লাস দুধ নিয়ে রানীর ঘরে যায় । ডিমের কুসুম খাওয়ার পর রানীর আর ভাত খাওয়া হয়নি । রানী কে খাইয়ে রহিম কে এক কাপ দুধ দেয় । তারপর রাতের মত কাজ শেষে নিজের ঘরে আসে ।
নিজের ঘরে একা হতেই রাজীব কে আবার গ্লানি চেপে ধরে । কি করে মুখ দেখাবে জান্নাত কে সেটাই ভাবে । রাজীব একবার ভাবে ও হয়তো বেশি বেশি রিয়েক্ট করছে । কিন্তু পরক্ষনেই সেই ভাবনা বাতিল করে দেয় । মনে মনে বলে ‘রাজীব তুই কাকে বোকা বানাতে চাচ্ছিস? নিজেকে নিজে?’
রাজীব যখন জান্নাতের কাছে ধরা খেয়ে গিয়েছিলো তখন , জান্নাতের চোখে ও স্পষ্ট দেখছে , যে জান্নাত জানে ও কোথায় তাকিয়ে ছিলো ।
****
রাত সাড়ে বারোটা সময় রানীর মোবাইল টুং করে শব্দ করে ওঠে । এটা রানীর টেক্সট এর নোটিফিকেশন টোন । খুব ধিরে হয় শব্দটা । কিন্তু রানীর বুকের ভেতর ঢংঢং করে ডঙ্কা বাজায় এই শব্দটা । কেমন করে যেন রানী জেনে গেছে এই টেক্সট কে পাঠিয়েছে। শুয়ে শুয়ে রানী জয়ের কথাই ভাবছিলো , ভাবছিলো সন্ধার সেই মুহূর্ত গুলো , জয়ের প্রতিটা স্পর্শ যেন এখনো ওর শরীরে লেগে আছে । সেই সময় চরম মুহূর্তে পেনিক করে গিয়েছিলো ঠিক ই । কিন্তু এখন সেই স্পর্শ গুলো হৃদয় দিয়ে অনুভব করছে । সেই সাথে রানীর শরীর মন যেন একি সাথে হাজার খানেক অনুভুতির মিশ্র স্রোতের উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে ।
টুং……… টুং
বুকের ধুকপুকানি যেন প্রতিটা মুহূর্তের সাথে বেড়ে যাচ্ছে । কম্পিত হাতে রানী মোবাইল হাতে নেয় , চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস নেয়। মোবাইল আনলক করে , কম্পিত আঙ্গুলে । ডিজিটাল স্ক্রিনে খুদে খুদে অক্ষর গুলো যেন জয় কে ওর সামনে এনে দাড় করিয়েছে।
প্রথম টেক্সট ঃ এখন কেমন আছিস ?
এক মিনিট বিরতি দিয়ে ,
দিতিওঃ রেগে আছিস এখনো? রেগে থাকার ই কথা । তোকে ওই অবস্থায় রেখে চলে এলাম একবার দেখতেও গেলাম না এর পর ।
তৃতীয়ঃ দেখতে যাবো কোন মুখে বল । ওই সময় যা করলাম তোর সাথে………
একেকটা টেক্সট পড়ছে , আর রানী অবাক হয়ে দেখছে , একটা ছোট টেক্সট ম্যাসেজের কি পরিমান ক্ষমতা থাকতে পারে । একটা প্রশান্তি ওর শরীরের প্রতিটি কোষে কোষে অনুতে পরমানুতে পৌঁছে দিচ্ছে ।
এরি মাঝে জয়ের আরো একটা টেক্সট আসে ,
জয়ঃ আমি কথা দিচ্ছি রানী , আর কোনদিন তুই আমাকে ওই অবস্থায় দেখবি না , রানী আমি তোকে কোনদিন কষ্ট দেবো না । এখন এই মুহূর্ত থেকে আমি অন্য এক জয় । যে তোর মনেকে বোঝার চেষ্টা করবে , তোকে বোঝার চেষ্টা করবে , জানার চেষ্টা করবে । সুধু তোকে পাওয়ার চেষ্টা নয় ।
রানী টাইপ করতে শুরু করে , বার বার লেখে , আবার ডিলিট করে দেয় , রানী মনে হয় , কোন শব্দ দিয়েই ও ওর এই মুহূর্তের মনের অবস্থা জয় কে বোঝাতে পারবে না । এরি মাঝে জয় আবার টেক্সট করে ,
জয়ঃ তুই আমার হওয়ার আগে , আমি তোর হয়ে যাবো রানী , আমাকে আর একটি বার সুযোগ দে , I LOVE YOU RANI , আমি তোর জন্য পাগল হয়ে আছি , তুই যদি আমাকে সুযোগ না দিস। তাহলে তুই ছাড়া এই দুনিয়া আমার জন্য মরুভুমি হয়ে যাবে , যেখানে ধুলিকনা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না ।
রানীর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় কান্না ঝরে পড়ছে , ওর কাছে মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা এখনি ফেটে যাবে । এমন কেন হচ্ছে ও জানে না । আজ তো ওর আনন্দের দিন , যাকে সেই কিশোরী বয়স থেকে কামন করে আসছে , সেই পুরুষ আজ নিজে এসে ধরা দিয়েছে , এমন এমন সব কথা বলছে যা শোনার জন্য ও তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করে ছিলো । তাহলে ওর এমন অসহ্য যন্ত্রণা কেন হচ্ছে ?
এর উত্তর রানী নিজের মনের ভেতর ই খুজে পায় । রানীর এই অসহ্য জন্ত্রনার কারন ওর ভেতরে জমা হওয়া না বলতে পারা কথা গুলো , যা ও জয়কে বলতে চায় । এতো এতো কথা সেখানে জমা হয়েছে যে সেগুলো একবারে বুক ফেটে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু বলতে পারছে না ।
রানী হাত চলায়
রানিঃ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জয় , এই মুহূর্তে তোমার হাত ধরে থাকতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে … আজকে রাতে এই ঘরে একা থাকলে আমি মরে যাবো …
রানী নিজের বিছানায় শুয়েই নিঃশব্দে কাঁদতে থেকে , না রানী মিথ্যা বলেনি , সত্যিই ওর এই মুহূর্তে জয়কে পাশে পেতে ইচ্ছে হচ্ছে । ওর মনে হচ্ছে জয়ের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কিছুক্ষন কাঁদতে পারলে ওর মন ভালো হয়ে যেতো ।
****
জয় রানীকে টেক্সট করছিলো নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে । প্রথম কয়েকটি টেক্সট পাঠানোর পর রানী যখন রিপ্লে দিচ্ছিলো না তখন জয়ের মনে কু ডাকতে শুরু করেছিলো । যদিও জান্নাত ওকে বলেছিলো রানীর মাঝে কোন নেগেটিভ কিছু দেখেনি । কিন্তু জান্নাতের সেই আশ্বাস বানী জয়ের তখন আর বিশ্বাস হচ্ছিলো না । ধিরে ধিরে সেই ভয় আতঙ্কে রুপ নিচ্ছিলো । ঠিক তখনি রানী টেক্সট করে ,
রানী লিখে পাঠিয়েছে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে , এই মুহূর্তে ও একা থাকতে পারবে না । রানীর পাঠানো শব্দ গুলো দেখে জয় তড়াক করে উঠে বসে , বসা থেকে দাড়িয়ে যায় । ওর প্রেয়সী সাধনার নারী ওকে ডেকেছে , এই ডাক উপেক্ষা করার শক্তি জয়ের নেই। সেই সাথে দুনিয়ায় এমন কোন শক্তিও নেই যা ওকে এই কাজ করতে বাধা দেবে ।
জয় সুধু এটুকু সময় ব্যয় করে যতটা সময় লাগে লিখতে “ রানী আমি আসছি , তুই ছাদের দরজা খোল”
জয় নিজের চাবি নেয় , তারপর ছাদের দরজা খুলে কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই রানীদের ছাঁদে চলে আসে । ছাদের দরজার সামনে অস্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকে জয় , ওর বুকের ভেতর তোলপাড় চলছে , রানী ওকে ডেকেছে , ওর রানী ওকে ডেকেছে। জয়ের আর তড় সইছে না , যদি সম্ভব হতো দরজা ভেঙ্গে ও ভেতরে চলে যেতো ।
জয়ের হাত কাঁপছে , মাঘ মাসের তীব্র শীতে নয় , জয়ের হাত কাঁপছে প্রচণ্ড উত্তেজনায় , প্রচণ্ড আবেগে । মিনিট খানেক সময় জয়ের কাছে মনে হয় সহস্র বছর পেরিয়ে গেছে । ওর মনে হয় ওর হৃদপিণ্ড ধুকপুক করছে না মনে হচ্ছে , সেটা লাফাচ্ছে । রানী কে দেখাঁর জন্য এক মুহূর্ত অপেক্ষা সইছে না ।
জয়ের কাছে মনে হয় রানীদের ছাদের দরজা খুলছে একেবারে স্লো মোশানে , এতো ধিরে ধিরে যেন একেক সেন্টিমিটার ফাঁকা হতে এক ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে । জয় শ্বাস রোধ করে অপেক্ষা করে , দরজার ওপাসেই রয়েছে ওর কাঙ্ক্ষিত নারী ।
****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
23-10-2025, 05:29 PM
(This post was last modified: 23-10-2025, 08:31 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (জ) এর বাকি অংশ .........
জয়ের টেক্সট পেয়ে , রানী বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে । ওর বিশ্বাস হতে চায় না , জয় এটা লিখেছে , ওর এক কথায় জয় এত রাতে এভাবে চলে আসতে রাজি হয়েছে !!!! জয়ের এই আচরণ রানীকে দারুন আপ্লূত করে , আবেগে কাঁপতে থাকে রানী । আরো বেশি কান্না পেতে থাকে রানীর , একটু আগে লেখা জয়ের কথাগুলো যে মিথ্যা ছিলো না , তার প্রমান মেলে জয়ের এভাবে চলে আসতে চাওয়ার মাধ্যমে । রানীও পাগলের মত ঘর থেকে বের হয় , এমন কি শীতের পোশাক পরতেও ভুলে যায় । কিন্তু ঘর থেকে বের হয়েই ওর মনে কিছুটা ভয় ঢোকে , ভাবে যদি ওর আব্বু আর ভাই জেগে যায় ? ওদের এভাবে দেখে ফেলে ?
রানী কিছুটা স্থির হয় , আলতো পায়ে খুব ধিরে ধিরে নিচে নামে, ছাদের চাবি নেয় , তারপর আবার ধিরে ধিরে উপরে উঠে আসে , খুব ধিরে ধিরে ছাদের দরজা খোলে, উত্তেজনায় আবেগে উৎকণ্ঠায় রানীর হাত কাঁপে । বুকের ভেতর ধুকপুকানি , দরজার ওপাশেই দাড়িয়ে আছে ওর কামনার পুরুষ , যে এতো রাতে ওর একটি ডাকেই সাড়া দিতে চলে এসেছে, কোন কিছু না ভেবেই। রানীর শরীর মন শিহরিত হয় , কথাটা ভাবতেই ।
দরজা খুলে যেতেই রানী জয় কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে , মুখে সেই চেনা হাসি । জয় কে দেখার সাথে সাথে রানীর মন থেকে সব ভয় উৎকণ্ঠা এক পলকে উধাও হয়ে যায় । ওর শরীর মন এই মুহূর্তে সুধু একটা জিনিস ই চায় , সেটা হচ্ছে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটির বুকে আশ্রয় নিতে । প্রায় দৌরে দুজনের মাঝের জায়গাটুকু পেরোয় রানী , জাপটে ধরে জয় কে , এক ইঞ্চি দূরত্ব ও দুজনে মাঝে বরদাস্ত করে না ও এমন ভাবে নিজেকে জয়ের সাথে জড়িয়ে নেয়।
রানীর এমন দৌরে এসে জড়িয়ে ধরার কারনে জয় একটু নড়ে ওঠে । কিন্তু নিজের জায়গা থেকে সরে না । রানীর উষ্ণ শরীর ওর শরীরের সাথে মিশে যেতেই জয়ের ঠোঁটের হাসি আরো চওড়া হয় , রানীকে নিজের বাহু দিয়ে বেষ্টন করে আরো শক্ত করে নিজের সাথে লেপ্টে নেয় ।
এদিকে রানী জয়ের কাঁধে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদেই চলছে , কিছুক্ষনের মাঝেই জয় টের পায় ওর টিশার্ট ভিজে গেছে । কিন্তু জয় রানীকে থামানোর কথা চিন্তা করে না । জয় বুঝতে পারে রানী কান্নাই রানীর ভালোবাসার প্রমান হয়ে ওকে ভেজাচ্ছে । জয় মনে মনে বলে - ভিজিয়ে দে আমাকে , আমি সাড়া জীবন এভাবেই সিক্ত হতে চাই তোর ভালোবাসায় ।
কতক্ষণ পর রানী মাথা তোলে সেটা কেউ হিসাব রাখে না । রানী মাথা তুলেতেই জয়ের সাথে মুখোমুখি দাড়ায় , দেখে জয় ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছে । হঠাত ই রানীকে কিছুটা লজ্জায় পেয়ে বসে । মনে মনে ভাবে - আমাকে কাঁদিয়ে শয়তানটা কেমন মিট্মিট হাসছে। শয়তান একটা । রানী নিজের দৃষ্টি অবনত করে , ওর ঠোঁটেও একটা লজ্জা মিশ্রিত মৃদু হাসু দেখা দেয় । নিজেকে একটু আলগা করার চেষ্টা করে জয়ের কাছ থেকে । কিন্তু জয় বাধা দেয় , আগের মত শক্ত করে চেপে রাখে না , তবে ছেরেও দেয় না । আঁকড়ে ধরে রাখে নিজের সাথে ।
নিজের বুকে জমানো কথা গুলো সব কান্না হয়ে ঝড়ে পড়ার পর রানীর নিজেকে বেশ হালকা লাগছে । সেই সাথে জয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলেও মনে হচ্ছে। রানীর কাছে মনে হচ্ছে এই বুকে মাথা রেখে ও দুনিয়ার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যেতে পারবে । না সুধু দুঃখ কষ্ট না , ও এই দুনিয়াটাই ভুলে যেতে পারবে ।
আরো কিছুক্ষন এভাবে ওরা একে অপর কে জড়িয়ে দাড়িয়ে থাকে , আশপাশ থেকে যদি কেউ দেখে থাকে , তাহলে হয়তো এই দৃশ্যটা চিরদিন তাদের মাথায় গেঁথে থাকবে । গভির রাতে চাঁদের আলোয় দুই যুবক যুবতি একে অপর কে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে । আশেপাশের কোন কিছুতেই ওদের ভ্রূক্ষেপ নেই , ওরা মজে আছে একে অপরের মাঝে ।
“নিচে তাকিয়ে আছিস কেন ? আমার দিকে তাকা” কিছুক্ষন পর জয় ফিসফিস করে বলে ,
কিন্তু রানী জয়ের কথা শোনে না , নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকে , ভীষণ লজ্জা হতে থাকে ওর । সেই সাথে নিজের অবস্থা সম্পর্কেও সচেতন হয়ে ওঠে । এখানে আসার আগে রানী শুয়ে ছিলো , সোজা শোয়া থেকে উঠে এখানে চলে এসেছে । আর অনবরত কান্না করার কারনে মুখের অবস্থাও করুন হয়ে আছে । যেদিন থেকে একজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে জয় ওর কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করতে শুরু করেছিলো । সেদিনের পর থেকে জয়ের সামনে কোনদিন এলোমেলো ভাবে যায় নি রানী। এমন কি জান্নত হঠাত এসে যখন ওদের বাসায় নিয়ে যেতো তখন ও রানী অল্প সময়ের মাঝে নিজেকে পরিপাটি করে নিতো ।
একে তো এই রাতের বেলা জয় কে এভাবে ডেকে নিয়ে আসার লজ্জা , তার উপর নিজের এই হালের জন্য রানী জয়ের দিকে মুখ তুলে তাকাতে লজ্জা হয় । মনে মনে নিজের আচরণের কথা ভাবে রানী , কেমন করে ও জয় কে ওই সময় এ কথা বলেছিলো !!! ভাবতেই এখন অবাক লাগছে । তবে মিথ্যা বলেনি , এটা ও জানে । এখন এই মুহূর্তে যদি জয়ের সাথে না থাকতো , তাহলে হয়তো ওর দম বন্ধই হয়ে যেতো ।
“ এখনো এতটা রেগে আছিস যে আমাকে বঞ্চিত রাখতে চাস ? আমার রানীকে চাঁদের আলোয় কেমন দেখা যায়, সেটা থেকে আমাকে বঞ্চিত রাখতে চাস?” জয় রানীর আর কাছে এসে আবারো ফিস্ফিসিয়ে বলে । এতটা কাছে চলে এসেছে জয় , যে রখন জয়ের কপাল রানীর কপালে প্রায় ঠেকে আছে । জয় কথা বলার সময় ওর নিঃশ্বাস রানী নিজের উপর টের পায় । সেই সাথে জয়ের মুখে “ আমার রানী” কথাটা রানীকে ভীষণ ভাবে পুলকিত করে , রানী লিটারেলি একবার কেঁপে ওঠে ।
জয় রানীকে নিজের ব্যাস্টন থেকে মুক্ত করে দেয় , তারপর দু পাশ থেকে রানীর মুখ নিজের তালু বন্দী করে । তারপর বলে , “ তুই আমাকে অন্য শাস্তি দে রানী , কিন্তু এই সাঁজা দিস না” বলার সময় আবেগে জয়ের কণ্ঠ কেঁপে ওঠে ।
জয়ের হাত রানীর মুখে লাগতেই রানী শিউড়ে ওঠে , শব্দ করে নিঃশ্বাস নিয়ে , এক পাশে মুখ সরিয়ে নিতে চায় । কিন্তু জয় ওর মুখ একি জায়গায় ধরে রাখে , ধিরে ধিরে সোজা করতে শুরু করে । রানী আর বাধা দেয় না , তবে আপনা থেকেই ওর চোখ দুটো বুজে আসে । আবেগে ঠোঁট দুটো কাঁপতে থাকে ।
জয় চাঁদের আলোতে রানীর মুখ তুলে ধরে , জয় প্রান ভরে দেখে , রানীর ঠোঁটের কম্পন , চোখের পাপড়ির অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া , শুকিয়ে আসা অশ্রু ধারা , নাক ফুলে ফুলে ওঠা , সেই সাথে কিছু এলো মেলো দল ছুট চুলের উড়তে থাকা । কিছু কিছু সৌন্দর্য আছে , যা দেখলে মানুষের বুকের ভেতর হু হু করে ওঠে । জয় জীবনে প্রথম সেই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ।
জয়ের কাছে মনে হয় এই মুহূর্তে ওর হাতের তালুতে বন্দী মুখটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর , সবচেয়ে নিষ্পাপ সবচেয়ে কোমল। জয় একবার চাঁদের দিকে তাকায় , যেন তুলনা করতে চায় । দেখতে চায় চাঁদ সুন্দর না ওর প্রেয়সী । দ্বিতীয়বার আর চাঁদের দিকে চাওয়ার ইচ্ছে হয় না জয়ের ।
রানীর সাজসজ্জা হীন , কোমল মুখের মসৃণ নরম ত্বকের গোলাপি আভা রানীর ভেতরের কমলতা পবিত্রতার যে বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে তার কাছে চাঁদের আলো ও মলিন মনে হচ্ছে । জয় বুকের ভেতর একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করে । নিজেকে ওর দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পাষণ্ড বলে মনে হয় । কয়েক ঘণ্টা আগেও এই সব কিছু দেখেও ও দেখতে পায়নি । এমন পবিত্র মুখের অধিকারিণী কে যা ইচ্ছা হয় তাই বলেছে , চেয়েছে এমন কোমল একটি ফুল কে কলঙ্কিত করতে । নিজেক বড্ড অযোগ্য মনে হয় জয়ের ।
কিন্তু হতাশা জয় কে পেয়ে বসে না , বরং জয় আরো বেশি দৃঢ় হয় নিজের সঙ্কল্পে । জয় আবারো সংকল্প করে রানীকে আর কোনদিন কোন কষ্ট নিজে তো দিবেই না , অন্য কোন ভাবেও যেন কষ্ট না পায় সে ব্যাবস্থাও করবে ।
“ রানী চোখ খুলে তাকা, আমার চোখে দেখ , আমি চাই আমি আজকে যে সংকল্প করলাম সেটা যেন তুই ও অনুভব করতে পারিস, প্লিজ আমার দিকে তাকা” জয় কাতর স্বরে অনুরধ করে ।
জয় দেখতে পায় রানীর চোখের মনি বেশ কয়েকবার ডান থেকে বায়ে , বাঁ থেকে ডানে নড়াচড়া করে , তারপর ধিরেধিরে রানী চোখ খোলে , পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় জয়ের চোখে , ঠোঁট এখনো কাঁপছে । রানীর নির্মল আর দিঘির পানির মত টলটলে চোখে গভির বিশ্বাস আর নির্ভরতা । এই বিশ্বাস আর নির্ভরতা যে কারো মনেই গভির ভালোবাসা মমতা জন্মাতে সক্ষম । জয়ের খেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হলো না ।
রানী চোখ খুলে জয়ের চোখের দিকে তাকাতেই ওকে আবেগের এক বিশাল ঢেউ এসে আঘাত করলো , জয়ের চোখে যা দেখতে পাচ্ছে , সেটা দেখার জন্য ও যেন আজন্ম অপেক্ষা করে ছিলো , আর সেই অপেক্ষার অবসান হলো আজ এই মুহূর্তে , চাঁদের মায়াবী আলোয় নির্জন ছাদের উপর দাড়িয়ে । রানী জয়ের চোখে দেখতে পেলো ওর জন্য গভির ভালোবাসার সংকল্প । নিজেকে রানীর এতো নির্ভার আর কোনদিন লাগেনি । মনে হচ্ছে এতদিন যে জীবনের ভার ওকে বহন করতে হয়েছে , সেটা আজ থেকে আর একা বহন করতে হবে না । কেউ একজন পরম যত্নে সেই ভার বহন করবে । রানীর ঠোঁটে আপনা থেকেই একটা হাসি চলে এলো ।
রানী দেখলো জয় খুব ধিরে ধিরে ওর দিকে নিজের মাথা এগিয়ে আনছে , জয় কি চাইছে সেটা রানীর বুঝতে অসুবিধা হলো না । বুঝতে পেরেই রানীর নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো , এক মুহূর্তের জন্য আতংক এসে ভর করলো রানীর মনে । ভাবল আবার সন্ধার মত কিছু না হয়ে যায় । রানীর অজান্তেই রানী কিছুটা পিছিয়ে এলো ।
ব্যাপারটা জয়ের চোখ ও এড়ালো না , সাথে সাথেই নিজেকে সংবরণ করে নিলো । রানীর আতঙ্কিত মুখের দিকে তাকিয়ে আশ্বাসের হাসি হাসল ।
দুজনের মাঝে আবার নীরবতা নেমে এলো , জয়ের ঠোঁটে হাসি দেখেও রানী নিজেকে আশ্বস্ত করতে পারলো না । গিল্টি ফিল হতে লাগলো ওর , ভাবলো , এ ও কি করলো । এখানে অয় নিজে থেকে আসেনি , ও ডেকে এনেছে । ওর এক ডাকেই ছেলেটা চলে এসেছে , অথচ ও এমন অপরিপক্ক আচরন করছে ।
“ রানী , আমার কথা শোন , আমি মাইন্ড করিনি , একদম না “ জয় হাসি মুখে বলল , রানীর চেহারায় চিন্তার ছাপ দেখে ও বুঝে ফেলেছে রানী এই আচরণের জন্য গিল্টি ফিল করছে ।
“ জয় …… আমি আসলে , কি ভাবে বলবো” রানী কিছু একটা বলতে যায় , কিন্তু সঠিক শব্দ খুজে পায় না ।
রানীকে এভাবে স্ট্রাগল করতে দেখে জয় রানীর ঠোঁটে আঙুল রেখে থামিয়ে দেয় বলে “ শশশ… কিচ্ছু বলতে হবে না , আমি তোকে পুস করবো না , আমি তো বলেই দিয়েছি , তুই আমার হওয়ার আগে আমি তোর হয়ে যাবো , রানী সত্যি বলছি , আমি তোর হয়ে গেছি , এখন আমাকে নিয়ে কি করবি এটা তোর ব্যাপার , আমি তোর ব্যাপারে নাক গলাবো না, তুই নিশ্চিত থাক”
রানী আবার মাথা নিচু করে ফেলে , ভেবে পায় না ওর মনে কেন দ্বিধা হচ্ছে , সামনে দাঁড়ানো মানুষটা নিজেকে এভাবে ওর সামনে এনে রাখছে অথচ ও কিছুতেই কেন লজ্জা ভাঙ্গতে পারছে না । মনে মনে রানী বলে ‘ আমাকে কিছুটা সময় দাও জয়’
“ তোর জন্য পৃথিবীর সব সময় আমি এনে দিলাম রানী , যত সময় তোর দরকার তুই নিয়ে নে”
রানী ঝট করে জয়ের দিকে তাকায় , ভাবে জয় কি করে ওর মনের ভাষা বুঝতে পারলো । আসলে তেমন কিছু হয় নি , জয় ওর কথার কন্টিনিউটি থেকেই এ কথা বলেছে ।
রানীকে এভাবে তাকাতে দেখে জয় হাসে , চায় রানীকে আশ্বস্ত করতে । পরিবেশ টা একটু গুমট হয়ে গেছে , তাই জয় পরিবেশ হালকা করার জন্য , বিশেষ করে রানীকে স্বাভাবিক করার জন্য । একটু উচ্চ শব্দে হাসতে থাকে । হঠাত জয়ের এমন হাসি দেখে রানী বিভ্রান্ত হয়ে জয়ের দিকে তাকায় । চোখে জিজ্ঞাসা “ কি করছো , তোমার হাসি নিচ পর্যন্ত চলে যাবে যে?” আতঙ্কিত হয়ে রানী একটি এগিয়ে আসে ।
জয় হাসতে হাসতেই রানীর নাকের দিকে ইংগিত করে , প্রচুর কান্না করার কারনে রানীর কিছুটা সর্দি লেগে গেছে , তাই নাক থেকে তরল সচ্ছ কিছু পানি বেরুচ্ছে , জয় তার দিকেই ইংগিত করে । কিন্তু রানী বুঝতে পারে না । তাই ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাস করে , কি হয়ছে ।
জয় হাসতে হাসতেই বলে ,” আচ্ছা বল তো তুই যে আমাকে ভিজিয়ে দিলি , এর কত পারসেন্ট চোখের পানি আর কত পারসেন্ট নাকের?”
রানী প্রথমে জয়ে কথা বুঝতে পারে না , কিছুটা সময় লেগে যায় বুঝতে , তারপর যখন বুঝতে পারে তখন বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। হাত দিয়ে জয়ের বুকে আঘাত করে , রেগে গিয়ে বলে “ আমাকে কাঁদতে দেখে খুব মজা পেয়েছো তাই না?” এই বলে রানী আবার ও জয় কে আঘাত করতে যায় , কিন্তু এবার জয় রানীর হাত ধরে ফেলে । নিজের কাছে টেনে আনে , পেছন থেকে রানী কে নিজের বাহু বন্ধনে নিয়ে নেয় । রানী পিঠ এখন জয়ের বুকের সাথে । জয়ের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেছে , রানী এখন আর গিল্টি ফিল করছে না ।
“ কে বলল আমি তোকে কাঁদতে দেখলে খুশি হই” জয় রানীর কানের কাছে মুখ এনে বলল
জুয়ের মুখ রানীর কানের কাছে চলে আশায় , রানী একটু সুড়সুড়ি বোধ করে , একটু কুঁচকে গিয়ে বলে “ এই আমার কান্না নিয়ে মস্করা করছো , হাসছো , আমি জানি তুমি তখনো হাসছিলে”
“ হ্যা হাসছিলাম , তবে এ জন্য হাসছিলাম , কারন আমি বুঝতে পারছিলাম , তোর কান্না কষ্টের কান্না নয় , তোর অশ্রু হয়ে তোর মনের কথা গুলো বেড়িয়ে আসছিলো , আর আমি সেগুলো হৃদয় দিয়ে উপভোগ করছিলাম , ওগুলো ছিলো আমার প্রতি তোর ভালাবাসা , এবার সেটা নাকের পানি ই হোক আর চোখের পানি”
নাকের পানির কথা আবার ওঠায় রানী ছিটকে জয়ের বাহু থেকে বেড়িয়ে আসে , “ ভালো হবে না বলে দিচ্ছি”
জয় হাসে , বলে “ আয় না কাছে এসে দাড়া খুব শীত লাগছে” বলে রানী কে আবার ধরতে যায় , কিন্তু রানী সরে যায় ।
“ উহু তোমার মত শয়তানের সাথে আমার কথা নেই যাও” ভীষণ লজ্জা হয় , আর সেই লজ্জা রাগ হয়ে বেড়িয়ে আসে ।
“ সত্যি সত্যি শীত করছে , তুই জানিস আমার জ্বর” জয় কাতর গলায় বলে ,
কিন্তু রানীর তেমন ভাবান্তর হয় না “ বলে নাহ তোমার শাস্তি , এতো দুষ্ট কেন তুমি?”
“ আরে দুষ্ট বলেই তো তোর মত মিষ্টি একটা মেয়ে পেয়েছি” জয় হাসতে হাসতে বলে , তারপর আবার রানীকে কাছে আসার কথা বলে ,
রানীর রাগ কিছুটা কমে আসে , মনে মনে ভাবে , এই জ্বর নিয়েও জয় ওর ডাকে চলে এসেছে , রানী কাছে যায় না তবে নরম কণ্ঠে বলে “ আমি সত্যি ভাবিনি তুমি এতো রাতে আসবে” কথা গুলো বলে রানী জয়ের দিকে তাকায় , রানীর চোখে জয়ের জন্য গর্ব , প্রশংসা , ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদ দেখা যায় ।
“ তুই ডেকেছিস , আর আমি আসবো না !!!” জয় যেন অবাক হয়ে , তারপর আবার বলে “ এই ক্ষমতা আমার জন্মের সময় ই আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে , তোকে অবজ্ঞা করার ক্ষমতা আমার নেই রানী”
রানী ছলছল চোখে জয়ের দিকে তাকায় , জয়ের জন্য ওর মন ভালোবাসা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে । নিজের মাঝে দারুন আত্মবিশ্বাস অনুভব করে , মনে মনে ভাবে , জয় যদি এভাবে ওর পাশে থাকে তাহলে কোন দুঃখ , কোন কষ্ট কোন বাধাই ওর কাছে কিচ্ছু মনে হবে না , জয়ের হাত ধরে চোখ বন্ধ করে এসব বাধা পেরিয়ে যেতে পারবে ও ।
“ সত্যি বলছো” রানী ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে
“ হ্যা তিন সত্যি বলছি , এখন তো কাছে আয়” জয় রানী কে ধরে টনে , এবার সফল হয় জয় । বলতে গেলে রানীই ওকে সফল হতে সাহায্য করে । কিছুক্ষন জয়ের সাথে মিশে দাড়িয়ে থাকে । জয়ের সান্নিধ্য উপভোগ করে , জয় যে ওর জন্য অসুস্থ শরীর নিয়ে এই রাতের বেলা চলে এসেছে , এই ব্যাপারটা রানীর জন্য জয়ের সান্নিধ্য আরো বেশি উপভোগ্য করে তোলে । জয়ের শরীরের স্পর্শ ওর শরীরে আরামদায়ক উষ্ণতা পাস করতে থাকে । এই উষ্ণতা ভালোবাসার উষ্ণতা । রানীর ইচ্ছা হয় আরো অনেকক্ষণ এভাবে দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে । পারলে সাড়া রাত এভাবেই দাড়িয়ে থাকতো । কিন্তু সেটা উচিৎ হবে না , তাই রানী আবার নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় ,
‘ এখন তোমার যাওয়া উচিৎ জয়” খুব ধিরে ধিরে বলে রানী , যেন ওর কথা ও নিজেই বিশ্বাস করছে না , এমন শোনায় ।
কিন্তু জয় কোন উত্তর দেয় না , রানীকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে , জয়ের নিঃশ্বাস রানীর কাঁধে পরে , শিউড়ে উঠে রানী চোখ বন্ধ করে ফেলে , সন্ধার সেই পাগলাটে সময়ের কথা মনে পড়ে যায় ।
বেশ কিছুক্ষন পর আবারো অনিচ্ছা সত্ত্বেও রানী আবার জয় কে তাগিদ দেয় , এবার বলে “ তোমার শরীর খারাপ হবে জয়”
কিন্তু জয় বলে “ তুই সাথে থাকলে আমার কিচ্ছু হবে না”
শুনে রানী হাসে , “ কিন্তু আর বেশিক্ষণ থাকলে আমিও অসুস্থ হয়ে যাবো” রানী এবার নিজের বাহানা দেয় , না হলে যে জয় শুনবে না সেটা রানী জানে । এবার জয় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাড়ে , বলে “ মনে রাখিস ডেকে এনে তাড়িয়ে দিচ্ছিস”
“ আচ্ছা মনে রাখবো , পরে সুদে আসলে শোধ করে দেবো” রানী লজ্জায় লাল হয়ে বলে , এরকম একটা কথা যে ওর মুখ থেকে এই মুহূর্তে বেড়িয়ে আসবে , সেটা যদি ওকে অন্য কেউ কিছুক্ষন আগেও বলতো তবে সেটা রানী নিজেও বিশ্বাস করতো না।
রানীর কথা শুনে জয়ের মুখে একটা দুষ্ট হাসি চলে আসে , দুষ্টুমি করে বলে “ কিভাবে শোধ করবি , তার স্যাম্পল যদি দিতি একটু এখন তাহলে ভালো হতো না”
“ তুমি যাবে না আমি আব্বুকে ডাকবো?” রানী চোখ পাকায় , ওর ঠোঁটে এখনো লজ্জা মিশ্রিত হাসি ,
“ ছোট আব্বু এলে আমি মোবাইল বের করে দেখিয়ে দেবো, ছোট আব্বু বুঝে যাবে ঘটনা কি , তখন তোকে আজকেই আমার সাথে পাঠিয়ে দেবে হা হা হা ”
“ ইশ সখ কত “ এই বলে রানী ঠেলে ঠেলে জয় কে ওদের বাড়ির কার্নিশের দিকে নিয়ে যায় ,
“ তুই এই রাতে আমাকে ফেরত পাঠাচ্ছিস , আমি যদি এখন চাঁদ টপকাতে গিয়ে পরে যাই” জয় গলার স্বর করুন করার চেষ্টা করে ।
জয়ের এমন করুন স্বর শুনে রানী না হেসে পারে না , হাসতে হাসতে বলে “ তুমি যেই বান্দর , তোমার কিচ্ছু হবে না”
জয় রেলিঙ্গের উপর পা দেয় , দিয়ে আবার বলে “ দেখিস কিন্তু “
“দেখছি” বলে রানী হাসে ,
“ তাহলে দেখ” এই বলে জয় কাঠের তক্তায় পা রাখে , ঠিক মাঝ বরাবর গিয়ে ভাব করে ওর ব্যালান্স হারিয়ে গেছে।
রানী বুঝতে পারে না জয় ইচ্ছা করেই এমন করেছে , এক মুহূর্তের জন্য রানীর দুনিয়া কেন কক্ষপথে থেমে যায় । চিৎকার করে ওঠে রানী । রানীর কাছে মনে হয় ওর আত্মা খাঁচা ছেড়ে বেড়িয়ে যাবে । বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে জয়ের দিকে ।
এদিকে জয় চিৎকার শুনে নিজেকে ঠিক করে নেয় , দ্রুত পার হয়ে বলে ‘ এই আমার কিচ্ছু হয় নি “
রানী বুক ধরে দাড়িয়ে থাকে , ওর কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে । বুকের ভেতর ধরফর করছে । রানীর অবস্থা দেখে জয় একবার ভাবে আবার পেরিয়ে আসবে , আর ঠিক তখনি , নিচ থেকে ডাক আসে , “ রানী , এই রানী ……”
ডাক শুনেই হুঁশ ফিরে আসে রানীর , দ্রুত জয় কে চলে যেতে বলে , জয় ও শুনেছে ডাক , জয় হাসে , রানীকে একটা ফ্লাইং কিস দেখায় তারপর তারপর রানীর কাছ থেকেও উত্তর চায় । রানী মাইর দেখায় , জয় মানে না , শেষে আর না পেরে রানী দু হাতে দুটো ফ্লাইং কিস দেখায় , তারপর জয় হাসতে হাসতে ছাদ থেকে নেমে যায় । জয় কে যেতে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে রানী আতংকে ওর চেহারা দেখার মত হয়েছিলো। দ্রুত ছাদের মাঝা মাঝি চলে আসে । আর তখনি রাজীব ছাঁদে আসে ।
“ চিৎকার করলি কেন ? তুই এখানে কি করছিস? কি হয়েছে?” হতবাক রাজীব রানীর দিকে তাকিয়ে বলে ।
*****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
Posts: 71
Threads: 1
Likes Received: 275 in 63 posts
Likes Given: 52
Joined: Feb 2025
Reputation:
62
লাভ ইজ বিউটিফুল, আজকের আপডেট পড়ার শেষে এটাই বার বার মনে পড়ছে। পুরো সিনটাই খুব রোমান্টিক ছিলো।
আর আপনি হয়তো ফেসবুকে প্রেমের গল্প একসময় খুব পড়তেন, তার একটা প্রভাব আপনার লেখায় আছে, এতো দিন খুব বেশি ছিলো, আজকে একটু কম মনে হচ্ছিলো, এটা কমিয়ে আনবেন। গল্পটাকে সময় দিলে আমি মনে করি সেটা চলে যাবে।
স্টোরি টেলিং নিয়ে কোনো কথা হবে না, টপ নচ। এতো সহজ আর মেদহীন ভাষা, পড়তে আড়াম অনুভূত হয়।
ধীরে ধীরে হয়তো যৌনতার দিকে এগোচ্ছে, কান্ট ওয়েট, ইট উইল বি থ্রিলিং।
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
23-10-2025, 08:02 PM
(This post was last modified: 23-10-2025, 08:16 PM by gungchill. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
(23-10-2025, 06:51 PM)ধূমকেতু Wrote: লাভ ইজ বিউটিফুল, আজকের আপডেট পড়ার শেষে এটাই বার বার মনে পড়ছে। পুরো সিনটাই খুব রোমান্টিক ছিলো।
আর আপনি হয়তো ফেসবুকে প্রেমের গল্প একসময় খুব পড়তেন, তার একটা প্রভাব আপনার লেখায় আছে, এতো দিন খুব বেশি ছিলো, আজকে একটু কম মনে হচ্ছিলো, এটা কমিয়ে আনবেন। গল্পটাকে সময় দিলে আমি মনে করি সেটা চলে যাবে।
স্টোরি টেলিং নিয়ে কোনো কথা হবে না, টপ নচ। এতো সহজ আর মেদহীন ভাষা, পড়তে আড়াম অনুভূত হয়।
ধীরে ধীরে হয়তো যৌনতার দিকে এগোচ্ছে, কান্ট ওয়েট, ইট উইল বি থ্রিলিং।
আমার ফেসবুক একাউন্টই কোনদিন ছিলো না
তবে প্রভাব আছে ,ইউটিউবে কিছু শর্টস ভিডিওতে আমি কিছু ফেসবুক এবং এযুগের লেখকদের লেখার কিছু শর্টস দেখছি , এবং সেখান থেকে কিছু পুশ করার চেষ্টা করেছি ।আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষ তা পছন্দ করবে । আমার কাছে চরিত্র গুলোই এমন মনে হয়েছে, বিশেষ করে রানী আর জয় ।
তবে আপনি যে দীপাবলির ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও গল্পটা পড়েছেন এর জন্য ধন্যবাদ । এবং আপনাকে দীপাবলির শুভেচ্ছা ।
হ্যা আমার কাছে লিখার সময় মনে হয়েছে একটু বেশি আবেগ ঘন করে ফেলেছি ।আর এই আবেগি দৃশ্যটা ভবিষ্যতে আমাকে বেশ ভোগাবে। ভবিষ্যতে আমি নিজের সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না , সুধু এই অংশটার কারনে ।
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
•
Posts: 135
Threads: 0
Likes Received: 70 in 37 posts
Likes Given: 165
Joined: May 2024
Reputation:
1
Ekhon shudhu rajib ar jannater miloner pala❤️❤️
Posts: 71
Threads: 1
Likes Received: 275 in 63 posts
Likes Given: 52
Joined: Feb 2025
Reputation:
62
23-10-2025, 11:58 PM
(This post was last modified: 24-10-2025, 12:10 AM by ধূমকেতু. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(23-10-2025, 08:02 PM)gungchill Wrote: আমার ফেসবুক একাউন্টই কোনদিন ছিলো না 
তবে প্রভাব আছে ,ইউটিউবে কিছু শর্টস ভিডিওতে আমি কিছু ফেসবুক এবং এযুগের লেখকদের লেখার কিছু শর্টস দেখছি , এবং সেখান থেকে কিছু পুশ করার চেষ্টা করেছি ।আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষ তা পছন্দ করবে । আমার কাছে চরিত্র গুলোই এমন মনে হয়েছে, বিশেষ করে রানী আর জয় ।
তবে আপনি যে দীপাবলির ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও গল্পটা পড়েছেন এর জন্য ধন্যবাদ । এবং আপনাকে দীপাবলির শুভেচ্ছা ।
হ্যা আমার কাছে লিখার সময় মনে হয়েছে একটু বেশি আবেগ ঘন করে ফেলেছি ।আর এই আবেগি দৃশ্যটা ভবিষ্যতে আমাকে বেশ ভোগাবে। ভবিষ্যতে আমি নিজের সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না , সুধু এই অংশটার কারনে ।
না না, আবেগ ঠিক আছে। আবেগ না থাকলে গল্প হৃদয় ছুঁয়ে যায় না। যদি না হঠাৎ করে সম্পর্কে ডাউনস চলে আসে। তবে আমার বিশ্বাস আপনি সেটাকে ট্যাকেল করে দিতে পারবেন।
অন্ধকার দেখার কিছুই নেই। যদি মনে হয় গল্প আগাচ্ছে না, টেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে, তখন কয়েক দিনের ব্রেক নিতে পারেন, একটা না একটা প্লট মাথায় চলেই আসবে।
আপনি যা লিখবেন আমরা তাই পছন্দ করবো। জাস্ট ডোন্ট রাশ। সময় নিয়ে আগান, ইট উইল বি এ গ্রেট স্টোরি, পাশে আছি সবসময়।
এবার একটু রাজীবকে নিয়ে কিছু লিখুন, ও আমার খুব পছন্দের।
আর আপনাকেও দীপাবলির শুভেচ্ছা।
Posts: 538
Threads: 0
Likes Received: 244 in 233 posts
Likes Given: 452
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(23-10-2025, 09:02 PM)Mmc king Wrote: Ekhon shudhu rajib ar jannater miloner pala❤️❤️
রাজীবের পালা ও আসবে , সাথে আরো অনেক কিছু , আশা করি ধৈর্য ধরে গল্পটা পড়বেন আর নিজদের মূল্যবান ফিডব্যাক দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন । অনেক ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য ।
(23-10-2025, 11:58 PM)ধূমকেতু Wrote: না না, আবেগ ঠিক আছে। আবেগ না থাকলে গল্প হৃদয় ছুঁয়ে যায় না। যদি না হঠাৎ করে সম্পর্কে ডাউনস চলে আসে। তবে আমার বিশ্বাস আপনি সেটাকে ট্যাকেল করে দিতে পারবেন।
অন্ধকার দেখার কিছুই নেই। যদি মনে হয় গল্প আগাচ্ছে না, টেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে, তখন কয়েক দিনের ব্রেক নিতে পারেন, একটা না একটা প্লট মাথায় চলেই আসবে।
আপনি যা লিখবেন আমরা তাই পছন্দ করবো। জাস্ট ডোন্ট রাশ। সময় নিয়ে আগান, ইট উইল বি এ গ্রেট স্টোরি, পাশে আছি সবসময়।
এবার একটু রাজীবকে নিয়ে কিছু লিখুন, ও আমার খুব পছন্দের।
আর আপনাকেও দীপাবলির শুভেচ্ছা।
অবশ্যই আপনার সাজেশন গুলো আমাকে অনেক সাহায্য করে ।আমি সময় নিয়ে লিখতে চেষ্টা করবো , এবং আমার সাধ্য মত চেষ্টা করবো আরো উন্নতি করতে । দেখি আপনার এক্সপেকটেশন আর আমার সাধ্য দুটো ম্যাচ করে কিনা ।
আপনিও রাজীব কে নিয়ে লিখতে বলেছেন , হ্যা রাজীব ও আসবে , তবে হয়তো জয় আর রানীর মত করে নয় । ওর স্ট্রাগল টা ভিন্ন । আশা করি আমি সেটা পাঠক দের বুঝাতে সমর্থ হয়েছি ।যদি সেটা না বুঝিয়ে থাকতে পারি সেটা আমার ব্যারথতা ।
(24-10-2025, 03:46 PM)Saj890 Wrote: Very good
অনেক ধন্যবাদ ভাই ।
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ঝ)
জয় যখন ছাদ থেকে নেমে আসছিলো , তখন ওর সাথে জান্নাতের দেখা হয়ে যায় । জন্নাত ও চিৎকার শুনে বেড়িয়েছে । চিৎকার টা এমন ছিলো যা সুধু সেই সময় নির্ঘুম মানুষ ই শুনতে পাবে । তাই হয়তো ওর বাবা মা এখনো ঘুমাচ্ছে । নিজেদের বাড়ির এতো কাছে এমন চিৎকার শুনে জান্নাত ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে । আর তখনি জয়ের সাথে ওর মুখোমুখি । জয় কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও বিছানা থেকে ওঠেনি ,
“ ছাঁদ থেকে এলি”
জয় ও জান্নাত কে দেখে থমকে গেছে , হেসে বলল “ হ্যা”
“ বিড়ি খেতে?” জান্নাত প্রশ্ন করলো
“ হু”
“ যাক এতোদিনে তোর শুভবুদ্ধি হয়েছে , আচ্ছা একটা চিৎকারের শব্দ পেলাম মনে হলো , তু শুনেছিস ? আমাদের ছাঁদ থেকেই এলো মনে হচ্ছে?”
জান্নাতের কৌতূহল অবশ্য জয় উড়িয়ে দেয় , বলে “ কই আমি তো শুনলাম না , কি না কি শুনেছিস , কান ভালো মত পরিস্কার কর” কথা গুলো বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় ,
জয়ের বলার ভঙ্গি দেখেই জান্নাতের বুঝতে আর কিছু বাকি থাকে না , মনে মনে হাসে আর ভাবে ‘ এই দুজনের সাগা আর শেষ হবে না’ মনে মনে এই ভাবতে ভাবতে জান্নাত আবার নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় , তখনি জয় ওকে পেছন থেকে ডাক দেয় “ জান্নাত শোন”
জান্নাত ঘুরে দাড়ায় , দেখে জয় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায় । জান্নাত ভ্রু নাচিয়ে ইঙ্গিতে জানতে চাইলো , কি ব্যাপার।
এক মুহূর্ত ভাবল জয় , তারপর মুচকি হেসে বলল “ থ্যাংকস”
জয়ের মুখে ধন্যবাদ নামক শব্দ শুনে বেশ আশ্চর্য হলো জান্নাত , জান্নাত জানে এই শব্দটা বলতে জয়ের কত কষ্ট হয়েছে, বিশেষ করে যখন ধন্যবাদ টা ওকে দিচ্ছে , এমন ই সম্পর্ক ওদের দুজনের । এতো এতো ঝগড়া এতো এতো দ্বিমত যে খুব সাধারন ধন্যবাদ বলেতেও বাধে। জান্নাত হাসতে হাসতে বলল “ কিরে তোর আবার জ্বর বারলো না তো?”
জয় ও হাসে , তারপর বলে “ নারে , তুই আজকে আমাদের জন্য অনেক করেছিস”
“ ওমা… এখনি আমাদের হয়ে গেছে!!!! তোরা তো কিছুদিন পর (মি এন্ড মিসেস জয় চৌধুরী নামের টিশার্ট পড়ে ঘুরবি রে”
জয় সুধু হাসে কিছু বলে না , তারপর একটু পর বলে ।” তোর সাথে আজকে কাজটা আমার ঠিক হয়নি , আমি আম্মুকে বুঝিয়ে বলবো”
জয়ের মুখে এই কথা শুনে , জান্নাত আরো বেশি অবাক হয় , বলে “ এক মিনিট , এক মিনিট , আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ? জয় নিজের কোন কাজকে ভুল বলছে!!! কেউ আমাকে ধর, আমি আর নিতে পারছি না” এই বলে জান্নাত মিথ্যা মাথা ঘোরানর ভাব করে । তারপর আবার বলে “ এতে তোর ই ভালো হবে অবশ্য , আমি এতক্ষণ জেগে জেগে রিভেঞ্জ প্ল্যান করছিলাম”
জান্নাতের কথা শেষ হতেই জয় আবার মুখ খোলে ।
“ তবে আমার কথা ভেবে দেখিস , আমি তো তোকে চিনি , তাই তুই কোন দিকে যেতে চাচ্ছিস সেটা আমি বুঝতে পারছি। আর যেভাবে তুই এগিয়ে যাচ্ছিস তাতে কিছুদিনের মাঝে মানুষের নজরে পরে যাবি , আমি যতটুকু পারবো তোকে বাঁচাতে চেষ্টা করবো” জয় এবার সিরিয়াস হয়ে বলে , ওর কণ্ঠ শুনেই বোঝা যায় ও বেশ চিন্তিত ।
“ আরে ধুর আমার ভিডিও কয়জনি বা দেখে” জান্নাত নিজের কাজ কে ডাউনগ্রেড করে , যেন জয়ের শঙ্কা কিছুটা দূর হয় ।
“ নারে , দেখে , আরো দেখবে , তুই একেবারে ন্যাচারাল এই ক্ষেত্রে , তোর প্রেজেন্টেশন বেশ ভালো , টপিক গুলো ও মানুষ কে আকৃষ্ট করে”
জান্নাত জয়ের বলা কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারে না , একদিনে জয় ওর এতো প্রশংসা করছে যা , কল্পনার ও অতীত , সারাজীবন সুধু ওর কাজ কে খাটো করার চেষ্টা করেছে , হেসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে ওর সব প্রচেষ্টা । জান্নাত সন্দেহের দৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকায় , বলে “ আমাকে তেল মারছিস না তো?”
“ তোকে তেল মারতে যাবো কোন দুঃখে , আমার কি তেলের খনি আছে নাকি?” জয় আবার নিজের স্বাভাবিক টোনে কথা বলতে শুরু করে ,
“ তুই আমার ভিডিও দেখছিস?” এই বলে জান্নাত , জয়ের এক্সপ্রেশন খেয়াল করে , এবং নিজের উত্তর পেয়ে যায় , হাসতে হাসতে বলে “ হ্যা দেখেছিস, লুকিয়ে লাভ নেই , দেখেছিস সেটা বোঝাই যাচ্ছে, আচ্ছা আগে বল , লাইক করেছিস কিনা?”
জান্নাতের বেশ ভালো লাগে জয় ওর ভিডিও দেখছে শুনে , জান্নাত বুঝতে পারেনি , জয়ের কমপ্লিমেন্ট ওর কাছে এতোটা ইম্পরট্যান্ট হবে । সত্যি বলতে জান্নাত কোনদিন ভাবেনি জয় ওর ভিডিও দেখবে , তাই জান্নাত ওকে তেমন ভাবে বলেও নি কোনদিন , কত মানুষ কে দিয়ে সাবস্ক্রিবশন করিয়েছে , জোড় করে ভিডিও দেখিয়েছে । কিন্তু জয় কে কোনদিন বলেনি। এর জন্য জান্নাত মনে মনে কিছুটা লজ্জিত হলো । তবে ওর মনটা ভালো হয়ে গেলো , সেই সাথে জয় কে আজকে রানীদের বাসা থেকে ফেরার পর যা বলেছিলো তা নিয়েও কিছুটা গিল্টি ফিল হতে লাগলো , জান্নাত বলেছিলো , জয়ের মত ছেলেকে ও রানীর যোগ্য মনে করে না ।
“ তুই যে আমার ভিডিও দেখিস , শুনে ভালো লাগলো, তবে আরো ভালো লাগবে যদি তুই আমার উপর কিছুটা বিশ্বাস রাখিস , আমি যা করছি বুঝে শুনেই করছি ” জান্নাত দুষ্টুমি ছেড়ে স্বাভাবিক ভাবে বলে ,
“ ওকে , তুই আমার উপর বিশ্বাস না রাখতে পারলেও আমি রাখবো” জয় হেসে হেসে বলে
“ সন্ধার জন্য খোঁটা দিলি?” জান্নাতও হাসে ,
“ নাহ , খোঁটা না , তুই মিথ্যা বলিস নি , আমি হলেও তাই করতাম , তবে তোকে আমি এনশিওর করতে চাই , এখন থেকে বিশ্বাস রাখতে পারিস” জয় মুখে হাসে টেনে রেখেই কথা গুলো বলে , তবে বেশ দৃঢ় ভাবে বলে ।
“ ওকে ব্রো , এখন গেলাম ঘুম পাচ্ছে , আমি তো তোর মত নতুন প্রেম শুরু করিনি , আমার ভাই ঘুম আছে” জান্নাত পরিবেশ হালকা করার জন্য বলে । জান্নাতের বলার ধরন দেখে জয় ও হাসে ,
“ আর একটা কথা” এই বলে জয় একটু ইতস্তত করে ,
“ কি বলবি…… বল আজকে তোর একশো খুন মাফ”
জয় হাসে , কিন্তু ওর মুখে একটা দ্বিধা , যেন ভাবছে কথাটা বলবে কিনা ? কিন্তু সেই দ্বিধা কাটিয়ে বলে “রাজীব কে বাদ দিয়ে কি কাজটা করা যায় না , ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি , ওকে দেখে মনে হবে একজন সাধু পুরুষ কিন্তু ভেতরটা একদম ফাঁকা”
জান্নাত উত্তর দিতে গিয়েও থেমে যায় , নিজের চরকায় তেল দেয়া টাইপ একটা কঠিন কথা বেড়িয়ে আসতে চেয়েছিলো , কিন্তু এই সময় সেটা ও বলতে চাইলো না , একটু ভেবে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল “ আজকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তুই রানীকেও তো হাড়ে হাড়ে চিনতি? কিন্তু তোর চেনা কি সঠিক হয়েছে?”
জয় এক মুহূর্তের জন্য থেমে যায় , ভাবে এর উত্তর কি দেবে , তারপর একটু ভেবে নিয়ে বলে “ রানীর কথা আলাদা ওকে আমি ভালো করে চিনি হয়তো দু বছর হবে, তাই হয়ত আমার ভুল হয়েছে , কিন্তু রাজীব কে আমি সেই ছোট বেলা থেকেই চিনি , ওর অভ্যাস বিপদ দেখলে কেটে পরা , দায়িত্ব নিতে ভয় পায় , ও একটা………”
জান্নাত হাত তুলে , জয় কে থামিয়ে দেয় , বলে “ জয় তুই ধরেই নিয়েছিস আমার বিপদ হবে , আর যেহেতু আমি একটা মেয়ে , তাই আমাকে রক্ষা করার জন্য একজন ছেলে দরকার , আর রাজীব সেই ছেলে , ব্যাপারটা এমন নয় “ এই বলে জান্নাত কঠিন চোখে জয়ের দিকে তাকায় , কিন্তু জয়ের মাঝে তর্ক করার কোন লক্ষন দেখা যায় না । তাই জান্নাত ও একটু সিথিল হয়ে আসে , তারপর আবার বলে ,
“ রাজীব আর আমি এ জন্য এক সাথে কাজ করছি না , যে ও একটা ছেলে আর আমার সুরক্ষা করতে পারবে , তখন আমার একজন ভালো এডিটর দরকার ছিলো , আর রাজীব এভেইলেবল ছিলো , এর বেশি কিছুই না “ এটুকু বলে জান্নাত আবার একটু বিরতি নেয় , একটু ভেবে নিয়ে বলে ,
“ তা ছাড়া একেক জন মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি একেক রকম , তুই রাজীব কে যেভাবে দেখছিস , আমি হয়তো অন্য ভাবে ওকে জেনেছি , তোর ব্যাপার আর আমার ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন, এক্সপেকটেশন ও ভিন্ন , তাই ফলাফল ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি , এন্ড ওফ ডিসকাশন , আমি আর এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না , আশা করি তুই আমার দিকটা বুঝবি”
জয় কাঁধ ঝাঁকায় , তবে আর কোন তর্ক করে না । এই মুহূর্তে তর্ক করার মত মন মানসিকতা ওর নেই । সত্যি বলতে জান্নাতের এমন রাজীবের সাথে ওঠাবসা ওর তেমন একটা ভালো লাগে না । কি যেন একটা মনের ভেতর খচ খচ করে ওদের এক সাথে দেখলে । জয়ের মনে হয় রাজীবের মত একটা স্বার্থপর ছেলের এ বাড়ির কারো সাথেই ঘনিষ্ঠতা থাকা উচিৎ নয় । ওর মতে রাজীব এমন একটা ছেলে যে যেখানেই যাবে , কাউকে না কাউকে হতাশ করবে । নিজেরটা ছাড়া আর কারো ইমোশান বোঝার ক্ষমতা রাজীবের নেই ।
জান্নাত আর দাড়ায় না নিজের রুমে চলে আসে । জয় কে এই মুহূর্তে যা বলে এসেছে , তা যে সম্পূর্ণ সত্যি নয় সেটা জান্নাত জানে । তবে নিজের মনের সেই কথা রাজীবকেও বলেনি । রাজীব ও জানে ওদের এই পার্টনারশিপ সুধুই প্রফেশনাল , এর বেশি কিছু নয় । কিন্তু জান্নাত তো জানে , রাজীব কে অফার করার আগে , ওর মনে কি ছিলো ।
জান্নাত বিছানায় শুয়ে পরে , একটু আগেও জান্নাত রাজীব কে নিয়েই ভাবছিলো ।
জান্নাত ভাবছিলো ,
কি করে , রাজীবের আজকের আচরণ জান্নাত বেশ অবাক করেছে । এবং তার চেয়েও বেশি অবাক হয়েছে নিজের আচরণে । তখন ওর তো রাগ বা লজ্জা হয় ই নি , উল্টো এই নিয়ে রানীর সাথে দুস্টুমিও করে এসেছে । বলতে গেলে , রাজীবের আচরণের চেয়ে নিজের আচরণে বেশি অবাক হয়েছে জান্নাত । রাজীব একটা ছেলে , ও হয়তো অসাবধানতা বসত তাকিয়েই ফেলেছে , এবং তাকানোর পর এক মুহূর্তের জন্য চোখ সরাতে পারেনি । এরকম তো শত শত ঘটনা ওর সাথে ঘটে , রিকশা ওয়ালা , দোকানদার , পথচারি , সহপাঠী , এমন কি বুড়ো প্রফেসর পর্যন্ত বাদ যায় না । তাদের দৃষ্টি তো আরো জঘন্য থাকে । এক সময় ছিলো যখন জান্নাত এসব দেখতো , রিয়েক্ট করতো এখন আর করে না । বয়স হওয়ার সাথে সাথে জান্নাতের চিন্তা ভাবনাও পরিনত হয়েছে । এসব দৃষ্টি লেহন ওকে আর ভাবায় না , বরং জান্নাত পাত্তাই দেয় না ।
কিন্তু রাজীবের দৃষ্টি ওকে ভাবিয়েছে , সুধু ভাবায় নি , শরীর মন দুটোতেই প্রভাব ফেলেছে । এ পর্যন্ত দুবার এমন হলো , একবার যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষা দেয়ার জন্য রাজীব রানী আর ও এক বাইকে করে যাচ্ছিলো । সেদিন অবশ্য জান্নাত লজ্জা পেয়েছিলো । সেদিন বাইকে বসে রাজীবের সাথে নিজের শরীরের কন্টাক্ট হওয়া নিয়ে বেশ সচেতন ছিলো জান্নাত । তখনো যে রাজীবের প্রতি ওর ভালো লাগা ছিলোনা তেমন নয় । বেশ ভালো রকম ই ছিলো ।
জান্নাত অবাক হয়ে ভাবছিলো , এই কয়েক মাসে নিজের মাঝে কি বিশাল পরিবর্তন এসেছে । সভাবিক ভাবে দেখতে গেলে রাজীবের কাজটা খারাপ বলেই গণ্য হবে , কিন্তু জান্নাত কিছুতেই রাজীবের ওর দিকে ও ভাবে তাকানো কে খারাপ বলতে পারছিলো না। মেলাতে পারছিলো না রাস্তা ঘাটে ঐ অপরিচিত মানুষ গুলোর সাথে । জান্নাতের কাছে রাজীবের ঐ ক্ষণিকের দৃষ্টি আনন্দময় বেশ ইমোশনাল লেগেছিলো । শরীরে একটা ভালোলাগার অনুভূতি এই ভেবে ছড়িয়ে পড়েছিলো , রাজীব ওকে আকর্ষণীয় ভাবে । জান্নাতের কাছে মনে হচ্ছিলো , ও যেন মনে মনে চাইছিলো রাজীব এমন কিছু একটা করুক ।
অন্য কেউ তাকালে যেখানে বিরক্তি আর ইরিটেশন লাগে , সেখানে রাজীব তাকানোতে ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছিলো , ভেতরে একটা উষ্ণতা অনুভব করেছিলো , সেই উষ্ণতার রেশ রয়ে গিয়েছে এখন পর্যন্ত । জান্নাত রাজীবের ওভাবে তাকানোতে নিজের মাঝে একটা আত্মবিশ্বাস খুজে পেয়েছে , ওর কাছে মনে হয়েছিলো , রাজীবের কাছে ও বিশেষ কেউ ।
এসব নিয়ে যখন ভাবছিলো তখনি জান্নাত চিৎকারের শব্দ শুনতে পায়। এবং চিৎকার শুনে জান্নাত ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছিলো।
****
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
Yesterday, 04:52 PM
(This post was last modified: Yesterday, 04:57 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ঝ) এর বাকি অংশ
চিৎকার শোনার আগে রাজীব জেগেই ছিলো । আজ নিজের আচরণে বেশ বিরক্ত রাজীব । তাই ঘুম আসছিলো না । বেশ কয়েকটি কারনে রাজীব নিজের উপর বিরক্ত ।
প্রথমত , নিজের উপর কন্ট্রোল না থাকায় রাজীব খুব অবাক হয়েছে , এতদিন রাজীব ভাবতো ওর নিজের উপর কন্ট্রোল আছে , কিন্তু আজকে সেই বিশ্বাস কিছুটা হলেও কমেছে । ঐ বিশেষ মুহূর্তে রাজীব নিজের ইচ্ছা কে কন্ট্রোল করতে পারেনি ।
দ্বিতীয়ত , রাজীব ভাবছে ওর মাঝে সংবেদনশীলতা কমে গেছে , এক দুর্ঘটনার কথা শুনে বাসায় এসেছিলো ও , যদিও বাসায় এসে দেখছে সব কিছু আন্ডার কন্ট্রোল , তবুও ঐ পরিস্থিতিতে ওর অমন আচরণ , সুধু ওর সংবেদনশীলতার অভাব ই নয় , মানুষ হিশেবেও নিজের কাছে নিজেকে ছোট করে ফেলছে ।
তৃতীয় যে কারণটা রাজীব কে ভোগাচ্ছে সেটা হচ্ছে , রাজীবের শরীর বার বার জেগে উঠছে , যতবার সেই দৃশটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে , রাজীবের শরীর রিয়েক্ট করেছে । এমন নয় যে এর আগে রাজীব কোনদিন জৈবিক চাহিদা অনুভব করেনি । একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে রাজীব এর আগেও জৈবিক চাহিদা বোধ করেছে , এবং একজন সাধারন ভার্জিন ছেলে যেভাবে নিজের জৈবিক চাহিদা মেটায় রাজীব ও তাই করেছে । কিন্তু আজকে রাজীব যে পরিমান গ্লানি বোধ করছে এর আগে কোনদিন করেনি ।
আর সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা রাজীব কে ভোগাচ্ছে সেটা হচ্ছে । জান্নাত যখন নিজে যেচে এসে ওকে সুযোগ দিয়েছিলো , সেই সুযোগ পেয়েও যখন জান্নাত কে আপন করে নেয়ার সাহস ওর হয়নি । তখন কি করে জান্নাতের একটা বিশেষ অঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে ? জান্নাত কে এভাবে ট্রিট করা রাজীবের চোখে জান্নাতের জন্য বড় ধরনের অপমান । আর জান্নাতের মত মেয়ে এমন অপমান প্রাপ্য নয় , সুধু জান্নাত কেন কোন মেয়েই এই ধরনের আচরণ ডিজারব করে না । ভালবাসা ছাড়া কামনা আর যাই হোক সম্মানজনক কিছু নয় ।
রাজীবের মনে হচ্ছিলো , দিন দিন ও একটা সংবেদন হীন , অনুভূতিহীন জীবজন্তুতে রুপান্তরিত হচ্ছে , যার মাঝে মানবিক গুণাবলীর বদলে রয়েছে সুধুই পাশবিক চাহিদা । আর এভাবেই যখন রাজীব নিজেকে শাসন করছিলো ঠিক তখনি একটা চিৎকারের শব্দ শুনতে পায় , চিৎকার টা খুব লাউড না হলেও রাজীব রানীর গলা চিনতে পারে । তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে বিছানা থেকে , প্রথমে রানীর ঘরে যায় , কিন্তু সেখানে রানী নেই , নিচে নামে লাফিয়ে লাফিয়ে , রান্না ঘরে দেখে , সেখানেও নেই , বাথরুম খোঁজে , সেখানেও নেই ।
রাজীব ভেবে পায় না , কি হলো , এতো রানী চিৎকার করলো কেন ? আর গেলোও বা কোথায় ? কি মনে করে রাজীবের মনে হলো একবার ছাঁদে দেখেবে , ভাবা মাত্র রাজীব ছাঁদে গেলো , গিয়েই ও অবাক হয়ে গেলো , রানী দাড়িয়ে আছে, ছাদের প্রায় মাঝামাঝি। হতভম্ব হয়ে রাজীব জিজ্ঞাস করলো , “ চিৎকার করলি কেন ? তুই এখানে কি করছিস? কি হয়েছে?” রাজীবের মাথা কাজ করছে না , এতো রাতে , রানী ছাঁদে , তার উপর চিৎকার দিলো , রাজীব আশেপাশে তাকায় , কোন কিছু বা কাউকে দেখতেও পায় না।
রানীও চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে , কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছে না , প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছে ও । ভাবছে রাজীব যদি সন্দেহ করে? তাহলে কি হবে ?
রাজীব চারপাশ একবার দেখে সন্তুষ্ট হয় না , রাজীব চারপাশের কার্নিশ গুলো চেক করে , পুরনো দিনের বিল্ডিং গুলোতে বড় বড় কার্নিশ থাকে , আর রাতের বেলা সেখানে চোর লুকিয়ে থাকে । বিশেষ করে , নিচু বিল্ডিং গুলোয় । রাজীবদের দোতলা বাড়ির কার্নিশে এর আগেও চোর ধরা পড়েছিলো ।
এদিকে রানী এখনো ভাবছে কি উত্তর দেয়া যায় , মনে মনে জয়ের উপর ভীষণ ক্ষেপে আছে , কেন যে অমন করতে গেলো , না হলে তো ওর চিৎকার করার দরকার হতো না । আর কত সাহস , রাজীব ডাকার পর ও যায় নি , ঠায় দাড়িয়ে ছিলো , দাঁত বের করে হাসছিলো , রানীর এখন সেই হাসি মনে পরে গা জ্বলে ওঠে । সেই সাথে একটা চোরা ভালো লাগাও অনুভুত হয় । এই মহাবিপদের মাঝেও রানীর ঠোঁটে একটা হাসি চলে আসে । “পাগল একটা” , আপনা থেকেই রানীর মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে,
“হাসছিস কেন?” রাজীব ততক্ষণে ওর কাছে চলে এসেছে , ওর একটা হাত কনুই এর কাছথেক ধরেছে , “ চল নিচে চল, ইস কি ঠাণ্ডা হয়ে আছে , তোর কি বুদ্ধি সুদ্ধি কোনদিন ই হবে না” রাজীব রানীকে হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে ।
রানীর রুমে ঢুকে , রাজীব জিজ্ঞাস করে “ এখন বল এই রাতে ছাঁদে গিয়েছিলি কেন?” রাজীব নিজেও শীতের পোশাক ছাড়া , আর এই অল্প সময়েই ওর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে । একটু কাঁপুনি ও লাগছে । তাই ওর কণ্ঠে একটু বিরক্তিভাব আছে , সুধু কণ্ঠেই না , রাজীব মনে মনে বেশ বিরক্ত। রানীর এমন আচরণের কোন অর্থই খুজে পাচ্ছে না ও ।
“ মন ভালো ছিলো না , তাই গিয়েছিলাম” রানী মিথ্যা খুজে না পেয়ে সত্যি ই বলে । তবে অর্ধেক সত্যি ।
চট করেই রাজীবের মাথা গরম হয়ে ওঠে , কঠিন একটা কথা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয় । হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ হয়ে আসে । রাজীব নিজের রাগ টের পায় , একটু আগে ও এ কথাই ভাবছিলো , নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে ও । রাজীব চোখ বন্ধ করে , একটা লম্বা শ্বাস নেয় , আর ছাড়ে । রাজীবের হাত দুটো বুকের কাছে ভাজ করা ছিলো , সেখান থেকে একটা হাত ছুটিয়ে কপালের কাছে নিয়ে এসে , দু আঙ্গুলে কপালে মালিস করে । রাজীব নিজের উপর কন্ট্রোল ফিরে পেতে চেষ্টা করে।
রানী চুপ করে বসে আছে বিছানার কিনারায় পা ঝুলিয়ে , রাজীবের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে বুঝতে পারে ও রাগ হচ্ছে । নিজেকে তৈরি করে নেয় লেকচার শোনার জন্য । তবে আজকে আর ফাইট করার ইচ্ছে নেই । আজকে ওর মন বেশ ভালো , তা ছাড়া একদিনের জন্য যথেষ্ট নাটক হয়েছে বলে মনে হয় ওর ।
কিন্তু রাজীব লেকচার দেয় না , এই পরিস্থিতিতে কি করতে হবে , সেটা ও জানে , অনেক আগেই ওকে শেখানো হয়েছিলো , এবং যে শিখিয়েছিলো সে খুব যত্নের সাথে শিখিয়েছিলো ।
“শীতের পোশাক পরে গেলেই হতো , কেমন শীত পরেছে দেখছিস , এমন ভাবে গেলে তো আবার অসুস্থ হয়ে যাবি” রাজীব রানীর পাশে বসতে বসতে একেবারে শান্ত গলায় বলে ।
রাজীবের এমন আচরণে বেশ অবাক হয় রানী , ও ভেবেছিলো রাজীব এখন রেগে গিয়ে লেকচার দেবে , এবং সেই মত প্রস্তুত হয়েই ছিলো রানি । কিন্তু রাজীবের উল্টো আচরনে অবাক হয়ে গেছে । অবাক হলেও মনে মনে খুশি ই হয়েছে । রাজীব রাগ করেনি বা কিছু সন্দেহ করেনি দেখে , নিজেকে নির্ভার লাগছে ।
“এই দ্যাখ পায়েও কিছু পরে যাসনি , কিছুদিন আগেও না তুই নিউমোনিয়া থেকে উঠলি? এবার হলে কিন্তু বেশ সমস্যা হবে” এই বলে রাজীব রানীর একটা পা তুলে , পায়ের পাতা হাত দিয়ে ঝেড়ে দেয় , তারপর অন্যটা । তারপর বলে , “ নে কম্বলের নিচে যা , এই রাতে আর পা ধুতে হবে না,”
রানীও রাজীবের কথা মত পায়ের উপর কম্বল দিয়ে দেয় , ভাবে শুয়ে পরবে , কিন্তু রাজীব যায় না । রাজীব কে দেখেই বোঝা যায় এখনো ওর প্রশ্ন করা শেষ হয়নি , তাই রানি শোয় না , বসে থাকে ।
“ চিৎকার করেছিলি কেন ? কিছু দেখে ভয় পেয়েছিস?” রাজীব নরম গলায় জিজ্ঞাস করে । আসলে রাজীব চিন্তাও করতে পারে না , রানী এই রাতে এমন অবস্থায় কোন ছেলের সাথে ছাঁদে গিয়েছিলো , তাই ঐ ধরনের চিন্তা ওর মাথায় ই আসে না ।
এদিকে রাজীবের প্রশ্ন শুনে রানীর ঘাম দিয়ে জ্বর নামার মত হয় , কারন ওকে আর বানিয়ে কিছু বলতে হবে না, রাজীব ই বলে দিয়েছে কি দেখে ও ভয় পেয়েছিলো । রানি সুধু মাথা নাড়ায় ।
রাজীব উঠে দাড়ায় , রানীর ঘরেই একটা ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার ব্যাগ আছে। মাঝে মাঝে রানীর এটা দরাকার পরে , তলপেটে গরম সেঁক দেয়ার জন্য । রাজীব সেটা নেয় , ভেতরে পানি দেয়াই আছে , রাজীব ব্যগের তারটা প্লাগিন করে দেয় ।
তারপর ওয়ারড্রপ এর সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়েই জিজ্ঞাস করে “ কি দেখে ভয় পেয়েছিলি?” রাজীবের মুল লক্ষ্য রানী নিজের মন খারাপের কথা বলায় ওর সাথে কিছুক্ষন কথা বলা ।
এবার রানী বিপদে পরে আবার , কি বলবে ? মনে মনে ভাবে মিথ্যা বলার একশো এক টেকনিক এই বইটা কিনতে হবে । কিন্তু রাজীব ওকে আবার বাঁচিয়ে দেয় । নিজেই বলে , “ ছায়া টায়া দেখেছিস?”
রানী অনেক কষ্টে নিজের হাসি লুকায় , মনে মনে ভাবে রাজীব কি বোকা , নিজেই উত্তর সব ওকে শিখিয়ে দিচ্ছে । রানী আবার মাথা নাড়ায় । মুখে একটা ইনোসেন্ট ভাব বজায় রাখে রানী , যেন রাজীব ওর ভেতরের হাসি টের না পায় ।
“ আরে ও কিছু না , জোছনা রাতে হয়তো উপর দিয়ে প্যাঁচা উড়ে গেছে , সেই ছায়া পরেছে” একটু হেসে বলে রাজীব , রানীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে ।
ঠোঁট চেপে হাসি লুকিয়ে রানী মাথা দুলায় , যেন রাজীবের কথায় শ্বায় দিচ্ছে , কিন্তু মনে মনে বলে ‘ প্যাঁচা নয় , বান্দর এসেছিলো একটা, ভীষণ পাজি একটা বান্দর’
আর বেশ কিছুক্ষন রাজীব , এটা ওটা বলে , ওয়াটার ব্যাগ টা নিয়ে রানীর পায়ের কাছে কম্বলের নিচে দিয়ে দেয় । তারপর বলে “ ঘুমা , এবার যেন আর শরীর খারাপ না হয় , গতবারের তোর রেজাল্ট কিন্তু ভালো ছিলো না” এবার কিন্তু সি জি পি এ ভালো করতে হবে , নইলে কিন্তু পরে আর টেনে তুলতে পারবি না , বুঝছিস?”
“ হু” রানী ছোট্ট করে উত্তর দেয় , ভাবে তারাতারি বিদায় হলেই ও বাঁচে । কারন ওর পেট ফেটে হাসি আসছে , রাজীব গেলেই ও হাসবে ।
“ এর পর রাত বিরাতে মন খারাপ হলে , ছাঁদে যেতে ইচ্ছে হলে , আমাকে ডাকবি , তুই আমি দুজনে মিলে ভুতেদের সাথে আড্ডা দিয়ে আসবো , বুঝলি?” রাজীব বেড়িয়ে আসার আগে একটু ফানি হওয়ার চেষ্টা করে । হেসে হেসে কথাগুলো বলে ।
রানী শুয়ে শুয়ে ভাবলেশ হীন ভাবে মাথা নাড়ায় ।
রাজীব বেড়িয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করার সময় আবার বলে “ আমার দরজা খোলাই রাখবো , ভয় পেলে ডাকিস “ রাজীব রানীর দরজা ও পুরোপুরি লাগায় না , কিছুটা ফাঁকা রেখে দেয় ।
রাজীব নিচে নামে , ছাদের চাবি ঠিক জায়গা মতন রাখার জন্য , মাঝে মাঝে সকাল বেলা ওর আব্বু ছাঁদে যায় । চাবি জায়গা মতন রেখে , কিচেনে যায় , ঘুম যে আসবে না ওর জানা হয়ে গেছে , তাই এক কাপ চা বানায় , নিচে বসে বসেই চায়ে চুমুক দেয়। রাজীবের কাছে মনে হয় , আসলে ও মানুষ নয় , বরং একটা রোবট , যেভাবে ওকে প্রগ্রাম করা আছে , ও সেভাবেই আচরণ করে। এই যে একটু আগে রানীর সাথে ও যা যা করে এলো , এ সব ই খুব যত্নের সাথে ওর মাথায় প্রগ্রাম করা আছে । একজন খুব সুনিপুন ভাবে এই প্রগ্রাম করে রেখে গিয়েছে । তাই রাজীব তৎক্ষণাৎ বুঝে যায় কি করতে হবে , কি করতে হবে না।
“বড্ড স্বার্থপর তুমি… আমাকে রোবট বানিয়ে ফেলেছো। কী ক্ষতি হতো তোমার, যদি অন্তত কিছুটা আমিকে আমার মাঝে রেখে যেতে? তাহলে হয়তো আমি আজ এভাবে অন্যদের কাছে হেরে যেতাম না।আমি জয়ের কাছে হেরেছিলাম, আজ জান্নতের কাছেও হারলাম।তুমি কি এমনটাই চেয়েছিলে? চেয়েছিলে আমি যেন একা হয়ে যাই?
তাহলে তোমার কাজ সহজ হতো, তাই না?হয়েছে তাই ,একটু আগেই তো দেখলে… খুশি হয়েছো তুমি?”
কথাগুলো বলে রাজীব চুপচাপ অর্ধেক খালি চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখের কোণ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে সেই পেয়ালায়।নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ রাতে , টুপ করে পড়া সেই শব্দ রাজীবের কানে ধ্বনিত হয়।মনে হয়, যেন কেউ তাকে বলে দিচ্ছে —[i]“[/i]তুই একা… তোর চারপাশ কোলাহলহীন, শান্ত, নীরব।”
“সেই কচি বয়স থেকেই তুমি এসব ভাবনা এমনভাবে আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে আর কিছু ভাবার সুযোগই পাইনি। অন্য কোনো সম্পর্কের দাবি কীভাবে পূরণ করতে হয়, জানি না। তুমি আমাকে মানসিকভাবে অচল করে দিয়েছো…ঠিক আছে, আমি একাই থাকবো।তবুও তুমি খুশি থেকো…কারো না কারো তো খুশি থাকা উচিত।”
****
টুং……
জয়ঃ তোর ভাইয়ের লেকচার শেষ হয়েছে?
রানীঃ হুম , তুমি এতো নিখুত ভাবে টাইমিং করলে কি করে ?
জয়ঃ ঐ শালাকা কে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি , (হাসির ইমোজি)
রানীঃ এই খবরদার গালি দিবে না , তুমি ঐ সময় অমন না করলেই তো হতো , আমি চিৎকার ও দিতাম না আর রাজীব ও এসে ঢুকত না । (এংরি)
জয়ঃ আমি গালি দিলাম কোথায় ( কনফিউসড) , ও তো আমার শালা ই হয় । আর চিৎকার দিয়েছিস , ভালো করেছিস , এখন থেকেই প্র্যাকটিস কর , জীবনে এরকম চিৎকার আরো অনেক দিতে হবে ( mischivous)
রানীঃ কেন? চিৎকার কেন করতে হবে ?
জয়ঃ তুই বুঝবি না , তুই এখনো ছোট , তোকে পেলে পুষে বড় করতে হবে…… (sly grin) আর শোন , কাল থেকে আমার সাথে ক্যাম্পাসে যাবি , এই দুইদিন আমি একটু বিজি থাকবো পার্টির কাজে । তাই হয়তো তোকে একা বাসায় আসতে হবে , তারপর থেকে আমার সাথেই আসবি ।
রানীঃ ওকে …
রানীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে , কাল থেকে জয়ের সাথে বাইকে করে ……… ভাবতেই ওর কেমন কেমন জানি লাগে … রানীর মনে হয় , আর কোন কিছু নিয়েই ওকে আর কোন চিন্তা করতে হবে না , ওর হয়ে সব জয় ই করে দেবে । ও সুধু ভাবনাহীন ভাবে উড়ে বেড়াবে , আর …… লজ্জা পায় রানী , বুকের কাছের কম্বল মুঠি করে ধরে , চোখ বন্ধ করে আর বলে “ সুধু তোমাকে ভালোবাসবো”
****
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৮ ( ঝ) এর শেষ অং...
জান্নাত বিছানায় শুয়ে আছে , বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেছে , এখনো ঘুম আসছে না । বার বার সুধু রাজীবের কথাই মনে আসছে , চোখের সামনে রাজীবের সেই দৃষ্টি , আর শরীরে মেখে আছে , আরামদায়ক উষ্ণতা । প্রিয় মানুষের চোখে ওর প্রতি আকর্ষণ দেখে , এক আনন্দময় আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ মন । ‘ আমি ওর চোখে আকর্ষণীয় , ও আমাকে কামনা করে , আমাকে চায় , আমি ওর কাছে বিশেষ কেউ’ এই ভাবনা গুলো বার বার ফিরে আসে মনে ,
তবে মনের এক কোনে একটা কিছু বার বার ওকে বিচলিত ও করে , সেটা হচ্ছে রাজীব নিশ্চয়ই ভীষণ চাপের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে । জান্নাত যেটুকু রাজীব কে চেনে , তাতে জান্নাতের মনে হয় রাজীব নিজেকে নিজে দোষারোপ করছে এমন কাজের জন্য । তখনি ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সময় , জান্নাত রাজীবের চোখে ভীষণ লজ্জা আর পরাজয়ের গ্লানি দেখতে পেয়েছিলো ।
জান্নাত ভাবে _ রাজীব নিশ্চয়ই ওর আমন আচরণ কে , আমার জন্য অপমানকর ভেবে নিয়েছে । ব্যাটা বুদ্ধু তো জানে না , ও আমার মনে কোন স্থান দখল করে আছে ।
জান্নাত মোবাইল হাতে নেয় , মনে মনে ভাবে - ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজের মনের ভাব লুকাতে নেই , মনের কথা নিজের অবস্থানের কথা খুলে বলতে হয় , রাজীব আমাকে না ভালোবাসুক আমি তো বাসি । আমি কেন ওকে কষ্টে রাখবো ।
জান্নাত টেক্সট করে ,
জান্নাতঃ ঘুমিয়েছিস?
রাজীব ও নিজের বিছানায় এসেছে এই মাত্র , মনটা একেবারে ফাঁকা হয়ে আছে । ও জানে আজ থেকে ও জান্নাতের কাছে নিজের সম্মান হারিয়েছে । এই যখন ভাবছিলো , তখন ঠিক ঐ মুহূর্তে ওর মোবাইল বেজে ওঠে ,
রাজীব নিজের মোবাইল হাতে নেয় , স্ক্রিনে জান্নাতের নাম দেখে , অবাক হয়ে যায় । ভাবে জান্নাত হয়তো ওকে কিছু কথা শোনাবে এজকের কাজের জন্য , হয়তো বা বলবে জান্নাতের পক্ষে ওর মত পারভারট এর সাথে কাজ করা সম্ভব নয় । রাজীব চ্যাট এর এপস ওপেন করে , মনে মনে ভাবে , বলুক , ওর বলার অধিকার আছে , আর আমার জন্য ও সঠিক সাঁজা হবে ।
রাজীবঃ নাহ
জান্নাতঃ কেনো ? আজকে তো আর কোন কাজ নেই ?
রাজীবঃ ঘুম আসছে না , মাঝে মাঝে মানুষ এমন সব কাজ করে , যার ফলে নিজেকে নিজেই আর সম্মান করতে পারে না ।
জান্নাতঃ রাজিব তুই কি ভাবছিস , তুই আমার সাথে এমন কিছু করেছিস?
রাজীবঃ হ্যা
জান্নাতঃ তুই এর আগেও আমার সাথে অন্যায় আচরণ করেছিস রাজিব , তখন কি তোর ঘুম এসেছিলো?
রাজীবঃ জান্নাত তুই কি বলতে চাইছিস!!! আমি , না না আমি আর কোনদিন … এমন করিনি
জান্নাতঃ (মৃদু হাসির ইমোজি) মজার ব্যাপার হলো , যেটাকে অন্যায় ভেবে তুই ঘুমাতে পারছিস না , সেটা আমার কাছে অন্যায় ই নয় । আর যখন আমার প্রতি সত্যি কারের অবিচার করেছিলি , তখন তুই বুঝতেই পারিস নি , যে তুই অবিচার করেছিস । ঘুমা রাজিব , আজকে তো তোর ভালো ঘুম হওয়ার কথা , সেদিন যখন ঘুমাতে পেরেছিলি , আজকে তো নাক ডেকে ঘুমাতে পারবি ।
রাজীবঃ আমি সত্যি বুঝতে পারছি না , প্লিজ একটু খুলে বল
জান্নাতঃ এসব কথা খুলে সুধু একবার ই বলা যায় , আমি সেটা বলেছিলাম , তুই বুঝিসনি , এখন ঘুমা , আমাকেও ঘুমাতে দে , কাল দেখা হবে ।
জান্নাত মোবাইল রেখে দেয় , আগের মত এখন আর খুশি নয় ও । ভেতরে সেই উষ্ণ ভালোলাগাটা দখল করে নিয়েছে , চাপা ব্যাথা । “ তুই কি সত্যি বুঝিস না ? নাকি না বুঝার ভান করে থাকিস? তুই বুঝিস না , আমি তোকে ভালোবাসি , তুই কোথায় তাকালি , কিভাবে তাকালি এসব আমার কাছে কিছুই নয় , তুই আমাকে আপন ভাবতে পারিস কি না সেটাই আমার জন্য মুক্ষ” বিড়বিড় করে বলে জান্নাত ।
এদিকে রাজিব , কনফিউসড হয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে , ও বুঝতে পেড়েছে জান্নাত কি বলতে চেয়েছে ।কিন্তু রাজিব বুঝতে পারছে না , জান্নাতের মত একটা মেয়ে কিভাবে ওর মত একটা ছেলেকে এমন ভাবে ভালোবাসতে পারে , কিভাবে সম্ভব।
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
Posts: 71
Threads: 1
Likes Received: 275 in 63 posts
Likes Given: 52
Joined: Feb 2025
Reputation:
62
রানি সব দিক দিয়েই রাজীবের অপর নির্ভরশীল। এখন জয়ের উপর ও কিছু দিক দিয়ে নিভর্রশীল হয়ে গেলো।
যেই জিনিসটা আমাকে ভাবাচ্ছে তা হলো, বিয়ের পর রাজীবের প্রভাব ও কতটা কাটাতে পারবে? ছোট বেলার থেকেই রাজীবের শুদ্ধ চরিত্রের সাথে পরিচিত ও। জয় রাজীবকে কতটা রিপ্লেস করতে পারবে? রাজীবের কেয়ার, যত্ন, ভালোবাসা, রানিকে বুঝতে পারা জয় কতটা পারবে।
রানির বেশির ভাগ কাজই রাজীব করে। জয় তো এগুলো করবে না, তখন রানির খুব কষ্ট হবে।
জয়ের মতো ছেলেরা এ ধরনের কাজ করে না। করতে পারে না। প্রাণ দিয়ে হয়তো ভালোবাসবে কিন্তু রানি পুরুষ চেনে, যেমন রাজীবকে , জয়ের মধ্যেও এটাই খুঁজবে। হুম্যান সাইকোলজি । এটা ও করবেই।
জয় কিভাবে ট্যাকেল করবে সেটাই দেখার।
Posts: 6
Threads: 0
Likes Received: 7 in 6 posts
Likes Given: 5
Joined: Nov 2021
Reputation:
0
রাণীর সব খানেই রাজীবকে লাগে, রাজীব ছাড়া অচল, আবার ওই সব সময় রাজীবকে অবজ্ঞা করে, চুচ্ছ তাছিল্য করে। সরাসরিতো করেই মোনে মোনেও করে। এটা আমার হৃদয়ে বেদনার জন্ম দিলো অনেক। তবে রাজীব আসলেই এতো অপমান ডিজার্ভ করেনা।
Posts: 538
Threads: 0
Likes Received: 244 in 233 posts
Likes Given: 452
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(Yesterday, 07:19 PM)ধূমকেতু Wrote: রানি সব দিক দিয়েই রাজীবের অপর নির্ভরশীল। এখন জয়ের উপর ও কিছু দিক দিয়ে নিভর্রশীল হয়ে গেলো।
যেই জিনিসটা আমাকে ভাবাচ্ছে তা হলো, বিয়ের পর রাজীবের প্রভাব ও কতটা কাটাতে পারবে? ছোট বেলার থেকেই রাজীবের শুদ্ধ চরিত্রের সাথে পরিচিত ও। জয় রাজীবকে কতটা রিপ্লেস করতে পারবে? রাজীবের কেয়ার, যত্ন, ভালোবাসা, রানিকে বুঝতে পারা জয় কতটা পারবে।
রানির বেশির ভাগ কাজই রাজীব করে। জয় তো এগুলো করবে না, তখন রানির খুব কষ্ট হবে।
জয়ের মতো ছেলেরা এ ধরনের কাজ করে না। করতে পারে না। প্রাণ দিয়ে হয়তো ভালোবাসবে কিন্তু রানি পুরুষ চেনে, যেমন রাজীবকে , জয়ের মধ্যেও এটাই খুঁজবে। হুম্যান সাইকোলজি । এটা ও করবেই।
জয় কিভাবে ট্যাকেল করবে সেটাই দেখার।
আমরা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার ভুল বুঝে থাকি । আমরা মনে করি একটা সম্পর্ক অন্য একটা সম্পর্ক দিয়ে রিপ্লেস করা যায় । আমার কাছে এটা ভুল মনে হয় । আমার কাছে মনে হয় একটা সম্পর্ক অন্য একটা সম্পর্ক দিয়ে রিপ্লেস তো দুরের কথা সাবস্টিটিউট ও করা যায় না ।
আমার মনে হয় না আপাতত জয়ের এই ব্যাপারটা ট্যাকল করতে হবে ।যেটা আপনি উল্লেখ্য করেছেন । আমার মনে হয় রানী কিছুদিন নতুন একটা মানুষ কে নিয়ে ওর যে কৌতূহল তাতেই মজে থাকবে। তার উপর জয় রানীর দেখা অন্য পুরুষদের চেয়ে পুরো উল্টো চরিত্রের , এতে রানী আরো বেশি নতুন জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে । তাই আপাতত এই ব্যাপারটা উঠে আসবে না । তবে আসবে , যখন আসবে তখন আমরা দেখবো , জয় কি করে হ্যান্ডেল করে । জয় কি রানীকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে নাকি নিজে বদলে যেতে হতে বাধ্য হবে ?
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
•
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(Yesterday, 11:32 PM)mukta02 Wrote: রাণীর সব খানেই রাজীবকে লাগে, রাজীব ছাড়া অচল, আবার ওই সব সময় রাজীবকে অবজ্ঞা করে, চুচ্ছ তাছিল্য করে। সরাসরিতো করেই মোনে মোনেও করে। এটা আমার হৃদয়ে বেদনার জন্ম দিলো অনেক। তবে রাজীব আসলেই এতো অপমান ডিজার্ভ করেনা।
নারে ভাই , আমার মনে হয় আপনি রানীকে একটু ভুল বুঝেছেন , তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নয় । লাস্ট আপডেটে তো নয় ই ।ঐ যে বোকা বলেছে সেটা তুচ্ছ করে বলেনি । আমরা নিজদের অতি পরিচিত কাছের মানুষ ,যাদের আমরা ভালোবাসি , তাদের কিন্তু একটু বোকাই মনে করি । একটু ভেবে দেখবেন আমার এই পয়েন্ট টা ।
যেমন আমার কথাই ধরেন না ,আমার যখন ১৫-১৬ বছর বয়স তখন থেকেই আমি আমার মা কে বোকা মনে করি । কারন অনায়েসে আমি তাকে বোকা বানাতে পারি ।এমন কি আমার চেষ্টা ও করতে হয় না , উনি নিজেই বোকা বনে যায়। এমন এমন কাজ আমি করি , যা উনি বিশ্বাস ই করবে না আমি করতে পারি । এর জন্য তো আমি তাকে তুচ্ছ করি না । বরং আহ্লাদ করে বোকা ভাবি । সে কি বোকা ? না সে ভীষণ বুদ্ধিমান ।
ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য ।
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
Posts: 215
Threads: 3
Likes Received: 285 in 135 posts
Likes Given: 165
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(Today, 09:53 AM)Saj890 Wrote: Very good
থ্যাংকস ভাই ।
সব প্রশ্নের উত্তর নেই,
তবু প্রশ্নগুলো বেঁচে থাকে,
ঠিক আমার মতো —
অর্ধেক জেগে, অর্ধেক নিঃশব্দ।
•
|