Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
কিছু সম্পর্কঃ ৮ এর বাকি অংশ...... 


আজকাল আবরার আর রানীর মাঝে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে । আবরারের সঙ্গ রানীকে একাকীত্ব থেকে কিছুটা হলেও দূরে রাখে । প্রথম কথা হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন আবরারের সাথে রানী কথা হয়নি । এর পর একদিন  ক্যাম্পাসে দুজন মুখোমুখি হয়ে যায় । আবরার হাসি মুখে সামনে এসে দাড়ায় , বলে একেবারে সামনে পরে গেলেও কি কথা বলা যাবে না ? জাস্ট হাই বলেই না হয় দুজন দুদিকে চলে গেলাম
আবরারের বলার ধরন দেখে রানী না হেসে পারেনি , তারপর রানীই অফার করেছিলো এক সাথে চা খেতে যাওয়ার । সেই থেকেই রানী আর আবরার ভালো বন্ধু হয়ে গেছে । তবে রানী পরিস্কার করে দিয়েছে ওর পক্ষে বন্ধুত্বের বেশি আর কিছু ভাবা সম্ভব নয় । এর কারন ও বলেছে , তবে জয়ের নাম বলেনি ।  আবরার যদিও কোনদিন ওর চাওয়া খুলে বলেনি , তবে ওর রানীর সাথে একান্তে কথা বলার চেষ্টা থেকেই রানী বুঝে নিয়ে ছে আবরারের ইচ্ছা ।
 
তবে আবরার বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলো । আর এই কারনেই রানীর আবরার কে ভালো লাগে । ওর কোন এক্সপেকটেশন নেই । তবে প্রয়োজনের সময় ডাকলেই পাওয়া যায় । এই যেমন আজকে রানী আবরার কে নিয়ে কিছু কাজের জন্য যাচ্ছে । দুজনে এক রিকশায় পাশাপাশি বসেছে । আবরারের আরো একটা জিনিস রানীর ভালো লাগে সেটা হচ্ছে নিজের সীমা বোঝে। এমন ভাবে আবরার রিকশায় বসেছে যেন খুব বেশি টাচ না হয় । আর এই ছোট ছোট ব্যাপার গুলোই রানীর বিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে । রানী নিজের কিছু কিছু কথা আবরারের সাথে শেয়ার করেছে ।
 
আবরার খুব ভালো শ্রোতা , সব কথা মন দিয়ে শোনে । তারপর যদি কিছু বলার হয় বলে , নইলে সুধু শুনেই যায় । তবে সাজেশন দিতে আসে না । সাজেশন দিতে হলেও এমন ভাবে দেয় যেন সেটা সাজেশন না হয় ।
 
তা ছাড়া আবরার খুব ভালো স্টুডেন্ট ওর সাথে থাকতে থাকতে রানীর নিজের লেখাপড়ার উন্নতি ও চোখে পরার মত । গত ক্লাস টেস্টে রানী অসাধারন নাম্বার পেয়েছে । সামনে একটা ক্লাস এসাইনমেন্ট এর কাজ ও আবরার আর রানী এক সাথে করছে । আর সেই এসাইনমেন্টের জন্য প্রায়জনিয় কিছু জিনিস কিনতেই ওরা যাচ্ছে । সেখান থেকে রানীদের বাসায় যাবে । এসাইনমেন্টের কাজ করতে অনেক সময় লাগবে । লাইব্রেরীতে বসে করা যায় , কিন্তু রানীর কাছে এতো লম্বা সময় লাইব্রেরীতে বসতে ইচ্ছে হয় না । আর আরবরার থাকে হলে , তাই ঠিক হয়েছে ওরা রানীদের বাসায় ই বসেব ।
 
প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনে ফেরার পর ওরা রানীদের বাড়ির পথ ধরে । এখন সময় দুপুর দুটো , রানী রানীর মনে শঙ্কা দেখা দেয় । রানী ভাবে , যদি বাড়ি খালি থাকে, তাহলে কি হবে ? রাজীব কি বাড়ি ফিরেছে ? যদি না ফিরে থাকে , আর বাড়ি ফিরে যদি আবরার আর ওকে দেখে তাহলে কি ভাববে?
 
“ কিছু ভাবছিস?” আবরার জিজ্ঞাস করে , বেশ কিছুক্ষন যাবত আবরার দেখছে রানী কি যেন ভাবছে ।
 
“ হুম, না না কিছু না” রানী হেসে বলে ।
 
আবরার আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ায় না , এসাইনমেন্ট নিয়ে আলোচনা করতে থাকে । কিন্তু রানী ওর কথা অর্ধেক বুঝতে পারে বাকি অর্ধেক বুঝতে পারে না । কারন ওর মাথায় এখনো ঘুরছে আবরার কে বাসায় ডাকা ঠিক হলো কিনা । আসলে জীবনে এই প্রথম কোন ছেলেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে , যদিও আবরার ওর বন্ধু । আর বন্ধুত্বে নারী পুরুষ ভেদাভেদ হয় না ।
 
এক পর্যায়ে এসে রানী মনে মনে ভাবে - অনেক হয়েছে , এতো ভেবে চিন্তে আর চলতে পারবে না । ও কোন অন্যায় করছে না , পড়াশুনার জন্য নিয়ে যাচ্ছে  আবরার কে । আর এতো ভেবেই কি হবে , যার যা ভাবার সে ভেবে নিক , এতবছর সামলে চলে কি লাভ হয়েছে ? সবাই তো ধরেই নিয়েছে ও খারাপ হয়ে গেছে । এমনকি নেশা করে বলেও কেউ কেউ ভেবেছে।
 
বাসায় পৌঁছে রানী ব্যাগ থেকে চাবি বের করে , চাবি দিয়ে দরজা খুলতে দেখে আবরার জিজ্ঞাস করে “ বাসায় কেউ নেই?”
“ মনে হয় না , আব্বু সকালে যায় রাত আটটা নয়টার আগে বাসায় ফেরে না , ভাইয়া থাকতে পারে , আবার নাও থাকতে পারে” রানী দরজা খুলতে খুলতে বলে ।
 
“ আর মা ?” আবরার আবার প্রশ্ন করে ।
 
রানী ততক্ষণে দরজা খুলে ফেলেছে । দরজা ঠেলে আবরার কে ভেতরে যাওয়ার ইশারা করে , বলে “ আম্মু কখনোই বাসায় থাকে না” কথাটা বলে রানী একটু হাসে ।
 
আবরার একটু অস্বস্তিতে পরে , ভেতরে ঢুকতে ইতস্তত করে । সেটা দেখে রানী হাসে , বলে “ কিরে ভয় পেয়ে গেলি, আরে আয় , আমরা তো আর প্রেম করতে  বাসায় ঢুকছি না। আমরা পড়াশুনা করার জন্য জাচ্ছি , এতে ভয় কিসের?”
 
আবরার একটু আশ্বস্ত হয় , ভাবে হয়তো রানীর ঘরের মানুষরা একটু প্রগ্রেসিভ টাইপের এসব কিছু মনে করে না । তারপর হেসে বলে “ আরে না ভয় না , ভবালাম তোর বাবা অথবা ভাই কিছু মনে করে কিনা? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো এমন দেখা যায়না”
 
আবরার আর রানী ওদের লিভিং রুমে এসে দাঁড়িয়েছে , রানী ঠিক করে লিভিং রুমে বসেই কাজ করবে। বেড রুমে গিয়ে কাজ করাটা একটু বেশি বেশি হয়ে যায় ।
 
“ কিচ্ছু মনে করবে না , আমার আব্বুর এসব দিকে কোন নজর নেই , আর ভাই কেন কিছু মনে করবে ? আমি কি ও কি করে বেড়াচ্ছে সেসব খবর রাখি , ও কেন আমার ব্যাপারে নাক গলাবে”  রানী আবরার কে আশ্বস্ত করার জন্য বলে । তারপর আবরার কে বসতে বলে , ও নিজের ঘরে যায় ইচ্ছা একটু ফ্রেশ হয়ে আসবে ।
 
আবরার সোফায় বসে , রানীর সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়া দেখে । তারপর চারপাশে তাকিয়ে একবার দেখে । বাড়িটা খুব পুরনো , দেয়াল গুলো বেশ মোটা মোটা , আজকালের বাড়ির দেয়াল এতো মোটা হয় না । মেঝেতে টাইলস করা নেই , সিমেন্টের মেঝে। আবরার ভাবে রানীরা অনেক আগে থেকেই শহরের বাসিন্দা , আবরার এসেছে মফস্বল থেকে । আবরার একবার ভাবে রানীরা ভীষণ ধনী , কিন্তু পরক্ষনেই সেই ধারনা বাদ দেয় , কারন ঘরের আসবাব গুলো নতুন আর পুরাতন মিলিয়ে , নতুন আসবাব গুলো খুব দামি কিছু নয় , তবে রুচিশীল । আবরার ভাবে রানীদের পূর্বপুরুষ এক সময় ধনী ছিলো কিন্তু এখন আর সেই ধন ভাণ্ডার নেই । বসার ঘড়াটা বেশ ছিমছাম করে সাজানো । খুব বেশি মানুষ এ বাড়িতে থেকে না , আর থাকলেও বেশি সময় ঘরে থাকে না । সেটা ঘরের গছানো অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । আবরার রানীর বলা নিজের মা সম্পর্কে লাইনটা ভাবে । আবরার বুঝতে পারে রানীর মা নেই ।  
 
আবরার রানীর একাকীত্বের কারন কিছুটা অনুধাবন করতে পারে । এই বয়সি মেয়েদের মায়ের খুব প্রয়োজন হয় । তা  ছাড়া ওর বাবার সাথেও খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা নেই বলে ধরে নেয় আবরার । রানীর জন্য গভির সহানুভুতি জন্ম নেয় । তাছাড়া আবরার যতদিন যাবত রানী কে লক্ষ্য করেছে , ওর তেমন কোন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও দখেনি , পায়েল নিসাদের সাথে বন্ধুত্ব আছে , কিন্তু তেমন গভির নয়। আবরার ভেবে পায় না এমন একটা মেয়ের কোন বন্ধু কেন নেই ।
 
আর এসব কারনেই আবরারের রানীর প্রতি দুর্বলতা । আর কিছু না হোক , অন্তত বন্ধু হয়ে থাকতে পারলেও ওর ভালো লাগবে । যদিও আবরার এখনো আশা ছেড়ে দেয়নি । আবরার রানীর কাছে জনাতে পেরেছে ও একজন কে পছন্দ করে , সেই কিশোরী বয়স থেকেই সেই ছেলেকে ওর ভালো লাগে, সুধু ভালো লাগাই নয় , মনে মনে ওই ছেলেকে নিয়ে অনেক দূর ভেবে রেখেছে । তবে কোনদিন ওই ছেলের কাছে নিজের মনের কথা বলেনি বা কোনদিন বলার সাহস পায়নি । রানী যখন আবরারের কাছে এই কথা বলেছিলো তখন আবরার খুব কষ্ট করে উচ্চস্বরে হেসে ওঠা থেকে নিজেকে বিরত রেখছিলো ।  
 
আবরারের এই হেসে ওঠার কারন হলো , রানী এমন একটা মেয়ে । যার জন্য ওদের ক্লাসের , না সুধু  ক্লাসের নয় পুরো ডিপার্টমেন্টের  অর্ধেক ছেলে পাগল । তবে কেউই সাহস করে না ওকে এপ্রচ করতে । আর দুই একজন এপ্রচ করলেও রানীর নিরাসক্তি দেখে আর ট্রাই না করেই ভেগে যায়। সবাই ভাবে রানীর মত সুন্দরী মেয়ে নিশ্চয়ই দেমাগি হবে । তাই এপ্রোচ করতে ভয় পায় । কিন্তু আবরার রানীর সাথে মিশে দেখছে । ওর মাঝে রুপের কোন দেমাগ নেই । হ্যা রানীর নিজের সৌন্দর্য নিয়ে কিছুটা ধারনা আছে , কিন্তু ওর সৌন্দর্য কোন লেভেলের , কত শত ছেলে নিজের সব কিছু দিয়ে দিতে রাজি, রানী যদি একবার ইশারা করে  । সেই ব্যাপারে রানীর কোন ধারনা নেই । আবরারের বিশ্বাস রানী কোনদিন এসব ভেবেও দেখেনি ।  
 
আর সেই রানীই যখন বলে , কোন ছেলেকে নিজের মনের কথা বলতে সাহস হয় না । তখন আবরার না অন্য যত ছেলে রানীর জন্য পাগল হয়ে আছে , সবাই স্ট্রোক করে মারা যাবে । আবরারের তো সুধু হাসি এসেছিলো । আবরারের খুব বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো , ‘ রানী তোর মত মেয়ে সুধু চোখের ইশারায় শত শত ছেলে কে নাচাতে পারে, আর তুই কিনা বলছিস কোন ছেলেকে বলতে ভয় পাস তুই তাকে ভালোবাসিস!!! একবার সুধু অন্য কাউকে বলে দেখে , তোর জন্য জীবন দিয়ে দেয়ার মত মানুষের অভাব হবে না’
 
কিন্তু আবরার বলেনি , কারন আবরার রানীর মনের এই ভয় থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছে ওই ছেলের প্রতি রানীর ভালোবাসা কতটা গভির। তা ছাড়া রানীর মন কতটা নিষ্পাপ তার প্রমান ও বহন করে । আবরারের হিংসা হয়েছে সেই ছেলের প্রতি কিন্তু , আবরারের ইচ্ছা হয়নি , রানীর মনে এই ধারনা ঢুকাতে যে রানীর সৌন্দর্যের পাওয়ার কতখানি । হয়তো ওই ছেলের প্রতি রানীর যে টান আছে সেটা কিছুটা হলেও কমে যাবে , যখন রানী নিজের পূর্ণ পটেনশিয়াল সম্পর্কে জানতে পারবে ।
 
  আবরার এও জানে , রানী আর ওই ছেলে ,  দুজনের কেউই এখনো মুখ ফুটে বলেনি একে অপর কে ওরা ভালোবাসে। তবে রানীর কাছে মনে হয়েছে ওই ছেলেও ওকে ভালোবাসে , কিন্তু মাঝে মাঝে আবার মনে হয় , ঠিক ততটা ভালোবাসে না যতটা রানী বাসে । তাই রানী ওই ছেলের কাছ থেকে দূরে থাকতো , রানীর ভয় হতো যদি কোনদিন ওই ছেলে রানীকে অবহেলা করে , তাহলে রানী সেটা সহ্য করতে পারবে না । কিন্তু ওই ছেলে যখনি রানীর সামনে এসে দাড়ায় , কাছে ডাকে তখনি রানীর সব সংকোচ দূর হয়ে যায় ।
 
আবরারের মনে প্রচণ্ড হিংসা জন্ম নিয়েছে ওই ছেলের প্রতি । বেশ কয়েকবার রানীর কাছে ওই ছেলেকে দেখতে চেয়েছে । কিন্তু রানী নাম বলতেও রাজি নয় ।
 
আবরার জিজ্ঞাস করেছিলো ,  রানী কেনো সরাসরি ওই ছেলের সাথে কথা বলে না? উত্তরে রানী জানিয়েছিলো ওদের মাঝে ভুল বঝাবুঝি হয়েছে । শুনে আবরার আর হাসি থামাতে পারেনি , হাসতে হাসতে বলেছিলো “ তোরা ত একে অন্য কে কোনদিন বলিস ই নি , তাহলে এই ভুল বোঝাবুঝি এলো কোথা থেকে?”
 
রানী এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি , তখন আবরার জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই শিওর ওই ছেলে তোকে ভালোবাসে ?”
“ভালোবাসে কিনা জানি না , তবে আমার প্রতি ওর কিছু একটা আছে “ উত্তরে রানী অনেক ভেবে বলেছিলো
 
“ সেটা কিভাবে বুঝতে পেরেছিস?” আবরার একটু বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞাস করেছিলো ।
 
“ ওর চোখ দেখে” রানী লজ্জা মেশানো কণ্ঠে মিন মিন করে বলেছিলো ।
 
শুনে আবরার হা হা করে হেসে উঠেছিলো , সেই হাসি দেখে রানী আরো লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো , আর সেই লজ্জা ঢাকতে রাগে গিয়েছিলো , উঠে আসতে চেয়ে ছিলো , আবরার জোড় করে ওকে বসিয়েছিলো । তারপর বলেছিলো “ তুই কি এই যুগের মেয়ে নাকি ভুল করে মধ্যযুগ থেকে এই যুগে  এসে পড়েছিস ? এই চোখে চোখে ভালোবাসা আজকাল আর হয় না রে , আজকাল ঠোঁটে ঠোঁটে , শরীরে শরীরে ভালোবাসা হয় , ওই ছেলের চোখে যে তুই তোর প্রতি লালসা দেখিস নি তার গ্যারান্টি কি?”
 
উত্তরে রানী সেদিন কিছু বলেনি , তবে আবরারের কথা যে বিশ্বাস ও করেনি , সেটা আবরার বুঝতে পেরেছিলো । উল্টো আবরারের উপর অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো । আর আবরার বুঝে গিয়েছিলো , রানীকে বুঝিয়ে কোন লাভ নেই । কারন ওই ছেলেকে যে খারাপ বলবে সে রানীর কাছে সন্দেহের পাত্র হয়ে যাবে । আবরার জানে হয় রানী কঠিন একটা ধাক্কা খাবে নয়তো ওর মত সুখী মেয়ে আর দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি থাকবে না । তবে কষ্ট হলেও আবরার চায় রানী যেন সুখি হয় , ওই ছেলে যেন রানীকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে । আর যদি ধাক্কা খায় আবরার অবশ্যই রানী পাশে থাকবে ।
 
“ কি রে কি ভাবছিস?” রানী ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে আবরার আনমনা হয়ে কি যেন ভাবছে ।
 
“ নাহ কিছু না তো , তোদের বাসা দেখছি , অনেক পুরনো” আবরার হেসে বলে
 
“ হুম , আমার দাদার বাপ বানিয়েছিলো , আচ্ছা তুই কি এখনো অস্বস্তি তে আছিস , থাকলে বল , আমরা না  হয় অন্য দিন লাইব্রেরীতে বসে কাজ করবো” আসলে রানী নিজেই একটু অস্বস্তিতে আছে এখন , বাথরুমে যখন ফ্রেশ হচ্ছিলো তখন জয়ের চিন্তা ওর মাথায় আসে , জয় যদি কোন ভাবে জানে , তখন কি হবে ?
 
“ আরে না , বস আমরা কাজ শুরু করি” আবরার কনফিডেন্সের সাথে বলে
 
“ দেখিস , আমকে খুশি করার জন্য বলিস না” রানী আবার বলে । কিন্তু আবরার পাত্তা দেয় না । অলরেডি বই খুলে ফেলে । রানী আর এর পর কিছু বলতে পারে না । সুধু মনে মনে বলতে থাকে জয় যেন না জানতে পারে । 

*****

কিছু সম্পর্কঃ ৮ এর প্রথম অংশ পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় । 
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
বিভোর ছিলাম পুরো সময়, অনবদ্য লেখা আপনার। প্লটটাও অসাধারণ।

এই ফোরামে ভালো কাজ খুব কম হচ্ছে। তাই বাংলা গল্প তেমন একটা পড়ি না। কিন্তু আপনার দুটো গল্পই বেশ ভালো। বিশেষ করে এটা। এক বারেই পড়ে ফেললাম।

দিনে দিনে বাংলা ফোরামের মহারথী হয়ে উঠছেন আপনি, তাই আগাম শুভেচ্ছা।
আর একটা এ্যাডভাইছ দেবো, ছোটো মানুষ, ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন,যে কোনো একটি গল্প কন্টিনিউ করুন,(অন্যটা আপাতত বন্ধ রয়েছে, যেটা ভালো সিদ্ধান্ত) দুইটা একসাথে লিখলে অনেক সময় চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়।
গল্পের গতিও বিঘ্নিত হয়, স্বাভাবিক থাকে না।
এই গল্প টি ভালো হচ্ছে, আশা করি রেগুলার আপডেট পাবো। (যা আপনি বরাবর করেন)
ভালোবাসা নেবেন।
[+] 1 user Likes ধূমকেতু's post
Like Reply
অস্তির হইছে thanks
[+] 1 user Likes mukta02's post
Like Reply
(12-10-2025, 10:37 PM)ধূমকেতু Wrote: বিভোর ছিলাম পুরো সময়, অনবদ্য লেখা আপনার। প্লটটাও অসাধারণ।

এই ফোরামে ভালো কাজ খুব কম হচ্ছে। তাই বাংলা গল্প তেমন একটা পড়ি না। কিন্তু আপনার দুটো গল্পই বেশ ভালো। বিশেষ করে এটা। এক বারেই পড়ে ফেললাম।

দিনে দিনে বাংলা ফোরামের মহারথী হয়ে উঠছেন আপনি, তাই আগাম শুভেচ্ছা।
আর একটা এ্যাডভাইছ দেবো, ছোটো মানুষ, ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন,যে কোনো একটি গল্প কন্টিনিউ করুন,(অন্যটা আপাতত বন্ধ রয়েছে, যেটা ভালো সিদ্ধান্ত) দুইটা একসাথে লিখলে অনেক সময় চিন্তা ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়।
গল্পের গতিও বিঘ্নিত হয়, স্বাভাবিক থাকে না।
এই গল্প টি ভালো হচ্ছে, আশা করি রেগুলার আপডেট পাবো। (যা আপনি বরাবর করেন)
ভালোবাসা নেবেন।

অনেক ধন্যবাদ ভাই ধূমকেতু, আপনিও আমার ভালোবাসা নেবেন । 

আপনার এডভাইস কৃতজ্ঞতার সহিত গ্রহন করলাম । ভালো এডভাইস গ্রহন করলে যে ফলাফল ভালো হয় তা আমি এই গল্প দিয়েই প্রমান পেয়েছি । এক বড় ভাই ( বয়সে বড় কিনা জানি না , তবে এই ফরামে তার কাজের দ্বারা সে অবশ্যই আমার  অগ্রজ) আমাকে এডভাইস করেছিলেন যেন আমি  বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লিখি , আমি তার এডভাইস শুনেছিলাম ,অনেকটা গল্প ডিলিট করে দিয়েছিলাম । তবে বড়দের কথা শোনার ফলাফল হাতে নাতে পাচ্ছি । গল্প এখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে , বরং আমি যেভাবে লিখছিলাম তাতেই আমার সমস্যা হচ্ছিলো । কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই বড় ভাইকে আর এই থ্রেডে দেখতে পাইনি , উনি খুব ব্যাস্ত মানুষ মনে হয় ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
(13-10-2025, 01:16 AM)mukta02 Wrote: অস্তির হইছে thanks

অনেক ধন্যবাদ ভাই / বোন ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (


 
রাজীব আর জান্নাত ক্যাম্পাস থেকে এক সাথে বাসায় ফিরেছে । রাজীবের বাইকে করেই দুজনে এসেছে । আর দুজনেই এক সাথে ঢুকেছে জান্নাতের ঘরে । প্রায় তিন ঘন্টার মত দুজন নেক্সট ভিডিও নিয়ে আলোচনা করেছে । জান্নাত ভিদিওর কোন অংশে কি ধরের ভিজুয়াল চাচ্ছে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে রাজীব কে । আর রাজীব সেগুলো নোট করে নিয়েছে । আগামি তিনদিনের মাঝে রাজীব কে এডিটের কাজ শেষ করতে হবে ।
 
জান্নাত আর রাজীবের ভিডিও বেশ ভালো রেস্পস্নস পেয়েছে । চারটা ভিডিও এ পর্যন্ত দিয়েছে ওরা । দুটো প্লাটফর্মে ছেরেছে । দুটুতেই আশাতিত সাফল্য পেয়েছে । প্রথম ভিডিওতেই প্রায় চার হাজার ভিউ । দুটো প্লাটফর্মেই ফোলয়ার আর সাবক্রাবারস হাজারের উপরে ছাড়িয়ে গেছে । তাই দুজনেই খুব খুশি হয়েছে । তাই ওদের কাজের উদ্দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে । ভিউয়ারস দের চাহিদা মেটাতে ওরা বদ্ধ পরিকপ ।
 
রাজীব যখন চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয় তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেছে । দুপুরের খাবার জান্নাতের সাথেই করেছে ।  রাজীব যখন নিজদের বাড়ির দরজার সামনে এসে দাড়ায় , চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই চার জোড়া চোখের সামনা সামনি পরে যায় । ওর দরজা খোলার শব্দ শুনে রানী আর ওর সাথের একটা ছেলে দুজনেই ওর দিকে তাকিয়েছে । রানীর চোখে কোন অভিব্যাক্তি নেই , তবে ছেলেটার চোখে কিছুটা অনিশ্চয়তা ।
 
রাজীব দরজা ধরেই দাড়িয়ে পরে , সামনের দৃশ্যটার ব্যাপারে কিভাবে রিয়েক্ট করবে সেটা বুঝতে পারছে না । এই ধরনের পরিস্থিতির সামনে কোনদিন পরতে হয়নি । রাজীব কয়েক সেকেন্ডে সামনের দৃশ্যটা বিশ্লেষণ করে । রানী বসে আছে সিঙ্গেল সোফায় , আর ছেলেটা ওর পাশের সোফায় বসে আছে , দুজনের সামনেই বই খাতা খোল । ছেলেটির হাতে কলম ধরা । সামনে একটা ল্যাপ্টপ খোলা । নিশ্চয়ই ছেলেটির হবে ।
 
রাজীব এই দৃশে চিন্তিত হওয়ার কোন কিছুই পায় না , তবুও ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না , রানী একা বাড়িতে একটা অপরিচিত একটা ছেলেকে নিয়ে এসছে । কি বলবে রাজীব ঠিক বুঝে উঠতে পারে না । মনে মনে ভাবে এখন ওর কি বলা উচিৎ ।
 
ভাইয়া ও হচ্ছে আমার বন্ধু আবরাররাজীব কে বাঁচিয়ে দিয়ে রানী ই প্রথম কথা বলে ওঠে ।
 
রাজীব নিজের চেহারা নির্লিপ্ত রাখে , আবরার উঠে দাঁড়িয়েছে । রাজীব ভাবে ও কি হ্যান্ডশেক করবে ? তারপর অবশ্য এই চিন্তা বাদ দেয় , নিজের জুতা খুলতে খুলতে সুধু হাই বলে । ছেলেটিও হ্যালো বলে । কিন্তু কিছু তো বলতে হবে , রাজীব ভাবে । তারপর ওর মনে হয় , আরে আজকে তো রান্না হয়নি । রাজীব কথা বলার রাস্তা খুজে পায় , বলে তোরা খেয়েছিস কি? আজকে তো রান্না হয়নিযদিও রাজীব একটু লজ্জিত বোধ করে , রান্না হয়নি বলে ।
 
আমরা বাইরে থেকে খেয়ে এসেছিউত্তরা রানী ই দেয় ।
 
আচ্ছা ঠিক আছে , তোমরা কাজ করো , আমি উপরে যাচ্ছিএই বলে রাজীব চলে আসে ।
নিজের ঘরে এসে রাজীব দ্বিধায় পরে যায় , এখন ও কি করবে ? ওর তো এখন যেতে হবে । কিন্তু যাওয়া কি উচিৎ হবে ? রাজীব সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ।  ঘরে বোনের সাথে একা একটা ছেলেকে রেখে যাওয়া কি স্বাভাবিক কাজ? রাজীব মনে মনে ভাবে । আবার এও ভাবে , ওরা কতক্ষন একা একা ছিলো সেটাও তো ও জানে না । এখন একা রেখে যাওয়া আর না যাওয়ার মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে । তা ছাড়া ওরা লিভিং রুমে বসে পড়াশুনা করছে , এতে খারাপ কি আছে । কিন্তু আশে পাশের মানুষ কি ভাবাবে?
 
বেশ কিছুক্ষন দোমনায় ভুগে রাজীব শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় , ও কাজে যাবে । যেহেতু ও রানীকে নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছে । এখন ওর উচিৎ রানীর সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানানো । রানী যেহেতু এই ছেলেকে বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছে , নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তে নিয়েছে । এখন  রাজীবের উচিৎ হবে না এই সিদ্ধান্ত কে প্রস্নবিদ্ধ করা । তাই রাজীব  তৈরি হয়ে নেয় । তারপর বেড়িয়ে যাওয়ার সময় , রানী আর আবরারের কাছে এসে অন্য একটি সিঙ্গেল সোফায় বসে ।
 
রাজীব কে বসতে দেখে রানী ভ্রু কুঁচকে তাকায় একবার । রাজীব রানীর তাকানোর অর্থ বুঝতে পারে , রানী ভাবছে রাজীব হয়তো ওদের সাথে বসে থাকবে । আবরার ছেলেটাও একটু আড়ষ্ট হয়ে গেছে , একটু আগে যেমন করে রানী কে একটা ব্যাপার বোঝাচ্ছিলো এখন গলায় সেই কনফিডেন্স নেই ।
 
তোমরা দুজন একি ক্লাসেই?” যদিও প্রশ্নটা অমুলক , যেহেতু একি বিষয় পড়ছে , সেহেতু একি ক্লাসে হওয়াই স্বাভাবিক । তবে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র হওয়াও অসাভাবিক নয় । তাই রাজীব প্রশ্নটা করেছে ।
 
জি আমারা ক্লাসমেটআবারার পোলাইটলি উত্তর দেয় ,
 
ওওও , তোমার বাসা কোথায় ?
 
জি আমি হলে থাকি , আমার গ্রামের বাড়ি…” আবরার নিজের বাড়ির নাম বলে ।
 
এদিকে রানী বার বার রাজীবের দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকাচ্ছে , কিন্তু রাজীব সেদিকে পাত্তা দেয় না , বলে তুমি কতক্ষন আছো ?”
 
সেটা ডিপেন্ড করে আমরা কাজ কত দ্রুত শেষ করতে পারবোউত্তরটা এবার রানী দেয় , ওর কণ্ঠস্বর শুনে রাজীব বুঝতে পারে রানী বোঝাতে চেয়েছে ও ওদের ডিস্টার্ব করছে ।
 
আমি এখন বাইরে যাচ্ছি , ফিরতে ফিরতে চার পাঁচ ঘণ্টা লাগবে , তোদের যদি কাজ শেষ হতে দেরি হয় , তাহলে ওকে রেখে দিস আমাদের সাথে খেয়ে যাবে , আমি আসার সময় খাবার নিয়ে আসবোতারপর আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে আমাদের সাথে খেয়ে যেও”  এবার রাজীব রানীর উদ্দেশ্যে বলে । রানী অবাক চোখে রাজীবের দিকে তাকায় , ও এতোটা আশা করেনি ।
 
না না তার দরকার হবে নাআবরার ভদ্রতা করে বলে , আবরার নিজেও একটু অবাক হয়েছে । 

আরে সমস্যা নেই , তোমারা কাজ করো আমি গেলামএই বলে রাজীব বেড়িয়ে আসে ।
 
বাইরে এসে বাইকে উঠতে গিয়ে মনে হয় , কুল হতে গিয়ে  কি একটু বেশি বেশি করে ফেললো নাকি ? আসলে ইদানিং রানী ওর সাথে প্রায় কথা বলে না বললেই চলে । তাই রাজীব ভেবেছে , আজকে একটু কুল আচরন করে রানীর মনে ওর প্রতি কোন অভিমান থাকলে সেটা ভাঙ্গানোর চেষ্টা করার । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটু বেশি বেশি ই হয়ে গেছে । এতটা না করলেও হতো। ছেলেটি আবার না আশকারা পেয়ে বসে ।  
 
একবার ভাবে আজকে ফোন করে বলে দেয় যে আজ আসতে পারবে না , কিন্তু প্রচুর কাজ জমে আছে , না গেলেই নয় । শেষ পর্যন্ত রাজীব বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যায় । কিন্তু চিন্তাটা মাথা থেকে দূর করতে পারে না । শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় , এই ছেলের সম্পর্কে আরো ভালো করে জানতে হবে , কিন্তু কিভাবে জানবে সেটা বুঝতে পারে না । ওর নিজের তো তেমন সময় নেই। কিন্তু হাত গুঁটিয়ে তো বসে থাকা যায় না ।

****
 
রাজীব বেড়িয়ে যেতেই আবরার বলে তোর ভাই তো বেশ কুল, আমাকে দেখেও কিছু বলল না , তারপর আবার বেড়িয়ে গেলো , কিছুই মনে করেনি , আবার রাতে খেয়ে যেতে বলল!!!”
 
আসলে রানী নিজেও একটু অবাক হয়ে গেছে , রাজীব কোন রিএক্ট ই করবে না । এতটা ও ভাবেনি , মনে মনে নিজেক তৈরি করে রেখছিলো রাজীবের সাথে একটা ফাইটের । এছাড়া একটা ভালো সুযোগ হতো রাজীব আর জান্নাতের ব্যাপারে কথা বলার। সেই সুযোগটা হাত ছাড়া হওয়াতে একটু মন খারাপ ই হয়েছে রানী । ওরা দুজন যে ওকে কিছু না বলেই একটা কাজ শুরু করেছে, সেটা রানী জানে , এই নিয়ে রানীর মনে কিছুটা কষ্ট ও আছে । কিন্তু সুযোগ না পেয়ে তেমন কিছু বলতে পারেনি । আজকে হয়তো সুযোগ হতো । কিন্তু রাজীব সেই সুযোগ কেড়ে নিয়েছে ।
 
কুল না ছাই , ও আমাকে সেই ছোট বেলা থেকে কন্ট্রোল করে এসেছেরানী একটু ঝাঁজের সাথে বলে ।
 
বলিস কি ? আমার কিন্তু তেমন মনে হলো না , তা ছাড়া তোর ভাই কি রান্না করে নাকি?”
 
হ্যা , আমিও করি মাঝে মাঝে , এখন আমার ভাইয়ের বন্দনা ছেড়ে কাজে মন দে
 
ওরে বাবা তুই রান্নাও জানিস !!! তুই তো একদম পারফেক্ট ওয়াইফ মেটেরিয়াল , তোর ওই লাভার কিন্তু খুব লাকি হবেআবরার হাসতে হাসতে বলে ,
 
জয়ের কথা উঠতেই রানী একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে , চুপ করে থাকে কিছুক্ষন , মনে মনে ভাবে , যে বোঝার সে না বুঝলে কি লাভ ।
তুই ও কিন্তু কম লাকি নসআবরার আবার বলে ওঠে ,
 
মানে?” রানী আবরারের কথার মানে বুঝতে পারে না , ও কি করে লাকি হয় !! লাকি হলে কি জয় ওর কাছ থেকে দূরে থাকতো । ওর ান্ধবি ওকে ছেড়ে ওর ভাইয়ের সাথে  সারদিন ঘুরে বেড়াতো ?
 
মানে এমন পরিবারে জন্ম নিয়েছিস , তোকে এতো স্বাধীনতা দিচ্ছে!! ভাবতেই অবাক লাগে
 
আবার শুরু করলি , তুই ও কি পায়েল ঋতু আর নিসার মত আমার ভাইয়ের প্রেমে পরে গেলি?” রানী হাসতে হাসতে বলে
 
কিন্তু আবরার রানীর কথা গায়ে মাখে না , বলে সত্যি বলছি
 
কিসের লাকি ? তুই বুঝবি না , তুই তো আর আমাদের সম্পর্কে পুরোপুরি জানিস না উপরে উপরে সব ভালো মনে হয়, আমার ভাইয়ের মত কন্ত্রলিং ফ্রিক আর নেই”  রানী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
 
তুই জানিস , আমার তিন বোন আছে , একদিন আমার চাচা আমার বড় বোন কে এক ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে ফেলে , তারপর বাড়িতে এসে তুলকালাম কাণ্ড , আমার বোন আমার বাবার পায়ে ধরে কেঁদেছে , বার বার বলেছে ওই ছেলের সাথে কোন সম্পর্ক নেই , সুধু কথা বলেছে , কিন্তু আমার বাবার মন টলেনি , নিজের ইজ্জত রক্ষার জন্য , আমার বড় বোন কে তো বিয়ে দিয়েছেই বাকি দুজন কেও বিয়ে দিয়ে দিয়েছে , সব চেয়ে ছোট জনের বয়স কত ছিলো জানিস ?”
 
রানী জিজ্ঞাস করে কত?”  
 
পনেরো,”  
 
রানীর চোখ বিস্ফোরিত হওয়ার অবস্থা হয় বয়স শুনে । নিজের পনেরো বছর বয়সের কথা মনে পরে যায় । সেই বয়সে কোন মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে থাকতে হচ্ছে !! ভাবতেই ওর শরীরের লোম দাড়িয়ে যায় ।
 
থাকিস তো শহরে , এসব দেখিস না ? অথচ দেখ তোর ভাই একদম স্বাভাবিক ভাবে নিলো, আর তুই বলছিস তোকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেছে !!! আমার একটু অবাক ই লাগছে , একদিন খুলে বলিস তো”   
 
আবরারের কথা শুনে রানী গম্ভির ভাবে বলল আমার কি মনে হয় জানিস , আমি তোর কাছে একটা গিনিপিগ তুই আমাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছিস , আমার ব্যাপারে কিছু শুনলেই তোর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে , তুই গবেষণা করতে চাস , এই যেমন আমার ভাইয়ের সম্পর্কে জানতে চাসবলে হেসে ওঠে রানী , তারপর বলে  অনেক হয়েছে এখন কাজে মন দে
 
 আবরার কাঁধ ঝাঁকিয়ে কাজে মন দেয়
 
****
 
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (ক) এর বাকি অংশ......


জান্নাত আজকাল হাওয়ায় উড়ছে । যদি পারতো তাহলে প্রতিদিন একটা করে ভিডিও পোস্ট করতো । লোকজন খুব ভালো রেসপন্স করছে । বেশ কয়েকজনের কমেন্ট দেখে জান্নাত যা বুঝতে পেরেছে তা ওর সহজ আর যুগের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ আলোচনা  ওর সমবয়সী ছেলে মেয়েদের আকৃষ্ট করেছে বেশি । আর জন্নাত শুরু ও করেছে নিজের পরিচিত গণ্ডি থেকে। ওর আলোচনার বিষয় গুলো বেশিরভাগ তরুন পরজন্মের জন্য । তা ছাড়া রাজীব এতো সুন্দর করে এডিট করেছে , সেই সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাবহার করে , কন্টেন্ট অনুযায়ী এতো ভালো ভালো কিছু ছবি এড করেছে যে মানুষ সেগুলো খুব পছন্দ করছে । ওর বয়সি ছেলে মেয়েদের আরো বেশি করে আকৃষ্ট করেছে । তা ছাড়া জান্নাত স্ক্রিপ্ট ও এমন ভাবে তৈরি করে যেন তরুন রা বেশি পছন্দ করে ।
 
আরো একটা ব্যাপার জান্নাতের খুশির কারন , সেটা হচ্ছে রাজীবের সাথে সময় কাটানো । জান্নাত খেয়াল করেছে যখন রাজীব কাজের মাঝে থাকে তখন একেবারে অন্য রকম হয়ে যায় । ওর আমাঝে দ্বিধা সংকোচ কিছুই থাকে না । বেশ সবল ভাবে নিজের পয়েন্ট তুলে ধরে , এমনকি কিছু পছন্দ না হলে অকপটে বলে ফেলে । জান্নাত রাজীবের এই দিকটার সাথে আগে পরিচিত ছিলো না । তাই প্রথম অবাক হলেও এখন বেশ এঞ্জয় করে , রাজীবের ইনপুট গুলো । এমন কি স্ক্রিপ্টেও হেল্প করে রাজীব । একজন মনের মত পার্টনার পেয়ে জান্নাত তাই ভীষণ খুশি হয়েছে ।
 
তবে সবচেয়ে বেশি খুশির কারন হচ্ছে , রাজীবের সাথে প্রচুর সময় কাটাতে পারছে । মাঝে মাঝে জান্নাত দরকার না হলেও রাজীবের হেল্প চায় । রাতে অনেকক্ষণ পর্যন্ত চ্যাট করে । মাঝে মাঝে জান্নাত ইচ্ছে করেই কাজের কথা থেকে দূরে সরে যায়। প্রথম প্রথম রাজীব অবশ্য আবার দ্রুত কাজের কথায় ফিরে আসতো । কিন্তু ধিরে ধিরে রাজীব ও আজকাল সহসাই কাজের কথায় ফিরে যায় না । তবে জান্নাত খুব একটা প্রেস করে না , রাজীবের মাঝে আবার সংকোচ ফিরিয়ে আনতে চায় না ও ।
 
আজকে বিকেলে রাজীব চলে যাওয়ার পর জান্নাত বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে । কিছুক্ষন আগ পর্যন্ত ও যে রাজীব এই ঘরে ছিলো তার এসেন্স অনুভব করে । জান্নাত জানে ওর হাতে বেশি সময় নেই । তবুও এই এল্প কেতু সময় ও নিজের জন্য আলাদা করে রাখে । এই সময়টা ও মনে মনে রাজীবের সাথে মন গড়া কথোপকথন করে । খুব যে রোম্যান্টিক কিছু এমন নয় , জান্নাত নিজের কল্পনায়ও রাজীব কে রোম্যান্টিক বানাতে পারে না ।
 
তবে কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাজীব দুই একবার যে ওর দিকে একটু অন্য রকম ভাবে তাকায় । সেই মুহূর্ত গুলো কে শব্দ দাণ করে জান্নাত । এই যে যেমন আজকে রাজীবের একটা কথা শুনে হঠাত জান্নাত হেসে উঠেছিলো । হাসি শেষে রাজীবের দিকে তাকাতেই , জান্নাত ধরে ফেলেছিলো যে রাজীব ওর দিকে অন্যরকম ভাবে তাকিয়ে আছে । রাজীবের চোখ দুটো যেন কিছু বলতে চাইছে । কিন্তু রাজীব তাতে প্রাণপণে বাধা দিচ্ছে । জান্নাত তাকাতেই রাজীব দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছিলো ।
 
জান্নাত সেই মূক মুহূর্তকে শব্দ দাণ করে ,
 
জান্নাতঃ কি দেখছিস ?
 
রাজিবঃ তোকে
 
জান্নাতঃ আমাকে দেখার কি আছে ? রোজ ই তো দেখছিস ।
 
রাজিবঃ হ্যা দেখছি , কিন্তু যত দেখি ততই দেখার তৃষ্ণা আরো যেন বেড়ে যায় ।
 
জান্নাতঃ তাহলে লুকিয়ে দেখিস কেন?
 
রাজীবঃ লুকিয়ে দেখার মজাই আলাদা , সে তুই বুঝবি না ।
 
জান্নাতঃ তুই বুঝিয়ে দে
 
রাজীবঃ এতো বুঝতে হবে না এখন কাজে মন দে……
 
জান্নাত হাসে , কাল্পনিক কথোপকথন এর এখানেই সমাপ্তিও হয়। বিড়বিড় করে বলে , আমার বোরিং রাজকুমার , কল্পনাতেও তুই আমাকে কাজের জন্য ধমকাস , দাড়া তোকে বাগে পেয়ে নেই একবার , এমন হাল করবো যে কাজের কথা আর কোনদিন মাথায় আসবে না । সারাদিন আমার পেছন পেছন ঘুরবি সুধু ।  তারপর হাসতে হাসতেই ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে । বিকেলের এই সময়টা জান্নাত মায়ের সাথে কাটায় । মায়ের সাথে সময় কাটাতে জান্নাতের আজকাল বেশ ভালো লাগে । ওর আম্মু এখন আর আগের মত চিৎকার চেঁচামেচি করে না। উল্টো ান্ধবীর মত আচরণ করে । মাঝে মাঝেই সেই ছেলের কথা জিজ্ঞাস করে । যার নাম জান্নাত এখন পর্যন্ত মায়ের কাছে গোপন রেখছে ।   
 
জান্নাতের কাছে মনে হয় ওর আম্মুর ওই নাম না জানা অপরিচিত ছেলের জন্য কিছুটা মায়া জন্মেছে । কারন যখন ওই ছেলের কথা জিজ্ঞাস করে তখন ওর আম্মুর চোখে মুখে মমতা ভেসে ওঠে । জান্নাত ভেবে পায় না কি করে একটা অচেনা মানুষের প্রতি একজন মানুষের মনে মমতা জন্ম নেয় । জান্নাত ভাবে , হয়তো এই ধরনের কাজ সুধু মায়েরাই করতে পারে । মাঝে মাঝে তো জান্নাত করে বলে , ওই ছেলের জন্য খাবার নিয়ে যেতে । যেদিন জান্নাত জানিয়েছে ওই ছেলের মা নেই , সেদিন থেকেই এই কথা বলে ওর আম্মু ।
 
জান্নাত মনে মনে ভাবে যদি ওর আম্মু জানতো যে ওই ছেলে প্রায় ই ওনার হাতের রান্না চেটে পুটে খেয়ে যায় । তাহলে কেমন হবে। নিশ্চয়ই ওর আম্মু ধরে ফেলবে ছেলেটি কে । তাই জান্নাত আর কোন হিন্টস দিতে চায় না ।
 
কি ব্যাপার আমার মায়ের দেখি মুখ থেকে হাসি সরতেই চাচ্ছে না, তোর ওই চ্যানেল না কি যেন , খুব ভালো চলছে বুঝি?” আয়শা বিছানায় শুয়ে ছিলো জান্নাত কে দেখে উঠে বসে , আসলে ও জান্নাতের জন্যই অপেক্ষা করছিলো । মেয়েটা আজকাল বিকেলে বাড়িতে থাকলে ওর সাথে সময় কাটায় । আয়শার ভালো লাগে , একাকীত্ব কিছুটা দূর হয় । আগে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ফেলনা মনে হতো , মনে হতো ওর প্রয়োজনীয়তা ধিরে ধিরে সুধু রান্না বান্না আর ঘরকান্নায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে । ও নিজে যে একজন মানুষ , ওর যে মানবিক কিছু চাহিদা আছে সেটা ধিরে ধিরে সবাই ভুলে যাচ্ছে । এমন কি ওর স্বামী পর্যন্ত আজকাল আর মনোযোগ দেয় না ঠিক মত । সুধুই দায়িত্ব পালন করে ।
 
খুব ভালো চলছে আম্মু”  জান্নাত মায়ের পাশে বসতে বসতে বলে ।
 
এই ভিডিও করে কি লাভ হয় রে ? আমি তো কিছুই বুঝি না , তোর আব্বু বলে তুই নাকি কি বাম পন্থি হয়ে যাচ্ছিস , তোর আব্বু কিন্তু খুব চিন্তা করে তোকে নিয়ে”   
 
জান্নাতের একটু রাগ হয় , বলে আমি বাম ডান কোন পন্থিই না , আব্বু নিজে তো বুর্জোয়া পুরুষ তন্ত্রের একজন ভক্ত , তাই তার কাছে এমন মনে হচ্ছে
 
আয়শা অন্য কিছু বুঝতে না পারলেও বাপের উপর মেয়ের রাগ টের পায় , মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে তুই তোর আব্বুর উপর এতো রেগে আছিস কেনো রে? তোর আব্বু কিন্তু তোকে অনেক আদর করে , জানিস তুই যেদিন হলি , সেদিন তোকে কোলে নিয়ে তোর আব্বু কেঁদে ফেলেছিলো , তার একটা মেয়ের খুব সখ ছিলো , মেয়েরা নাকি বাপের নেওটা হয়
 
জান্নাত একটু নরম হয়ে আসে , ওর আম্মু কথা মিথ্যা বলেনি , ওর আব্বু কোনদিন ওকে কড়া ভাষায় কিছু বলেনি । কিন্তু ওর আব্বু এও চায় না যে জান্নাত এসব করুক , জয়নালের ইচ্ছা জান্নাত অন্য মেয়েদের মত হোক , সারাদিন সাজুগুজু করে ঘর ময় নেচে বেড়াক । ওর আব্বুর মতে সেটাই হচ্ছে আদর্শ মেয়ের কাজ । ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা । তবে এও সত্য জান্নাত যা করতে চায় তাতে জয়নাল বাধাও দেয় না , আবার খুশি ও হয় না।  সরাসরি কোনদিন কিছু বলে না । তবে মাঝে মাঝে দু একটা কাজে বাধা দেয় , যেমন জান্নাত একটা বাইক চেয়েছিলো সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছে পরিস্কার ভাষায় ।  
 
আদর করে না কচু করে , একটা বাইক কিনে দিলো না , ছেলেকে তো খুব বাইক দিলো, আর আমার রাজনৈতিক চিন্তাধারা নিয়ে এতো চিন্তিত হচ্ছে , কই ছেলে যখন রাজনীতিতে নাম লেখালো , তখন তো সামনে সামনে একটু হম্বিতম্বি করে , যেই ছেলে সামনে থেকে গেলো অমনি গর্ব করা শুরু করলো , এই বলে যে সে নিজেও চাত্র জীবনে রাজনীতি করেছে , তাই তার রক্ত তার বংশের চেরাগ সোনার টুকরা  ছেলেও করছে , রক্ত বলে কথাজান্নাত একটু ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমান করে বলে ।  
 
আয়শা হাসে , বলে আমার কাছে যেমন বলছিস , এমন করে একদিন বাপের কাছে গিয়ে বল না দেখবি সুরসুর করে দিয়ে দেবে
 
উহু , তুমি কি ভাবো আমি চেষ্টা করিনি , গাল ফুলানো , ঠোঁট ফুলানো , চোখের পানি নাকের পানি সব ট্রাই করেছি , কাজ হয়নিজান্নাত ও হাসে । তারপর বলে এখন আমি নিজের টাকায় কিনবো বাইক দেখে নিও
 
তুই টাকা পাবি কোথায়?” আয়শা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
 
তখন জান্নাত নিজের ভবিষ্যৎ প্ল্যান নিয়ে কথা বলে , কিভাবে এই ভিডিও পোস্ট করে টাকা ইনকাম হয় সেই কথা বলে । এবং সাথে এও জানিয়ে দেয়ে এই কাজ সুধু মাত্র টাকার জন্য ও করছে না ।
 
আয়শা মেয়ের কথা শুনে অবাক হয় , মেয়ের দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায় । সেই দৃষ্টিতে একি সাথে গর্ব আর বিস্বাদ মিশে থাকে । মনে মনে ভাবে ওর ছেলেটা যদি মেয়ের এই গুন পেতো তাহলে ওর আর কোন চিন্তাই থাকতো না । কিন্তু ছেলের সেই দিকে কোন খেয়াল ই নেই । আয়শা বলে না এখনি কিছু করতে হবে , কিন্তু ভবিষ্যতের একটা চিন্তা তো মাথায় থাকতে হবে মাথায়। কি রাজনীতি নিয়ে পরেছে , সারাদিন দেখাই যায় না ।    
 
সত্যি বলছিস?” আয়শা এখনো বিশ্বাস করতে পারে না ।
 
তুমি দেখোনা , যেভাবে চলছে , সেভাবে চলতে থাকলে , আমি এক বছরের মাথায় বাইক কিনে আব্বুকে দেখিয়ে দেবোজান্নাত এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি মেরে বলে ।
 
আমি দোয়া করি তুই অনেক বড় হ , কিন্তু মা কখনো নিজের পিতার সামনে নিজেকে বড় বলে জাহির করিস না , এটা একজন পিতার জন্য সবচেয়ে অপমান জনক, তুই নিজের তাকায় বাইক কিনলে তোর আব্বুর চেয়ে খুশি কেউ হবে না, কিন্তু তুই যদি দেখিয়ে দেয়ার চিন্তা করিস , সেটা কিন্তু তোর জন্যও ভালো কিছু হবে না”  আয়শা খুব নরম সরে জান্নাত কে বুঝিয়ে বলে ।
 
জান্নাত চুপ করে থাকে , মনে মনে ভাবে ওর মা  , কথাটা খারাপ বলেনি , দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা জান্নাত নিজের মনের নোট বুক থেকে কেটে দেয় । তবে বাইক ও কিনবেই , এতে হেরফের হবে না ।
 
আচ্ছা মা ওই ছেলের খবর কি? ওর মাথায় কি একটু বুদ্ধি শুদ্ধি এসেছে , নাকি এখনো বোকাই রয়ে গেছে?”
 
জান্নাত মায়ের কথায় হাসে , তারপর বলে একটু বুদ্ধি হয়েছেবলেই জান্নাত একটু লজ্জা পায় ।
 
একদিন আমার কাছে নিয়ে আয় না , আমি কান ধরে দেখিয়ে দেই , আমার মেয়ের যেমন রুপ তেমন ই গুনআয়শা হাসতে হাসতে বলে ।
 
জান্নাত মায়ের কথা শুনে বেশ মজা পায় , মনে মনে কল্পনা করে ওর আম্মু রাজীবের কাজ ধরে বসে আছে । কল্পনার দৃশ্যটা জন্নাতের হাসি আরো বাড়িয়ে দেয় , হাসতে হাসতেই জান্নাত বলে সময় হলে নিয়ে আসবো , তখন এক কান তুমি ধরবে , আরেক কান আমি ধরবো
 
উহু , সেটা আমি হতে দেবো না , কান সুধু আমিই ধরবো , তোকে ধরতে দেবো না , আমি মা আমি ধরতে পারি , তাই বলে তুই ও ধরবি”  
 
উরি বাবা , তলে তলে এতো, যাকে দেখলে না জানলে না তার প্রতি এতো মায়া জান্নাত  কপট রাগ দেখায় ।
 
হবে না কেনো, যেই ছেলে আমার মেয়ের মনে এতো মায়া জন্মাতে পেরেছে , সে নিশ্চয়ই যেন তেন ছেলে নাআয়শা ও হাসতে হাসতে বলে ।
 
জান্নাত একটু চুপ হয়ে যায় , তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে নরম করে বলে আম্মু তুমি জানো না , এমন কেয়ারিং ছেলে আমি আর দেখিনি , ওকে দেখলে মনেই হয় না ও আমাদের বয়সি, সুধু নিজের কেয়ারটা ই করতে জানে না ” জান্নাত বুঝতে পারে ওর চোখে পানি চলে এসেছে , তাই দ্রুত হাসতে হাসতে আয়শা কে জড়িয়ে ধরে ,  বলে তার আগে তুমি বল , তুমি এমন কুল মা কেমন করে হলে , অন্য মায়েরা ত মেয়ে কোন ছেলের সাথে কথা বলছে শুনলেই রেগে আগুন হয়ে যায়
 
আয়শা হাসে , বলে তুই ই আমাকে এমন হতে বাধ্য করেছিস , তোকে লালন পালন করতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি , যতটা জয়ের ব্যাপারে করতে হয়েছে , আর এখন দেখ তুই কেমন স্বাবলম্বী হয়ে উঠছিস এই বয়সেই, তুই কোন ভুল করবি সেটা আমি বিশ্বাস করি না”  
 
মায়ের কথা শুনে জান্নাতের মনটা প্রশান্তিতে ভরে ওঠে । নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হয় এমন মায়ের পেটে জন্ম নিয়ে।
 
আরো অনেকক্ষণ বসে মায়ের সাথে আলাপ করে জান্নাত । তারপর নিজের ঘরের দিকে যায় । নেক্সট ভিডিওর জন্য কিছু লেখাপড়া করতে হবে । তা ছাড়া ক্লাসের পড়াও কিছু বাকি আছে ।
জান্নাত নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমে মোবাইল চেক করে , এবং সেখানে রাজীবের দুটো মিসড কল , আর দুটো টেক্সট । জান্নাত প্রথমে টেক্সট টা ওপেন করে ।
 
জান্নাত আমাকে একটু যেতেই হচ্ছে , না হলে তোকে কষ্ট দিতাম না , আমাদের বাসায় একটু যাবি? রানীর সাথে একটা ছেলে এসেছে আবরার নামের , ওরা একটা এসাইন্মেন্টের কাজ করছে , বাসায় কেউ নেই , আশেপাশের লোকজন কি ভাববে , প্লিজ আমি তোকে বলেছি বুঝতে দিস না”  
 
প্লিজ কিছু মনে করিস না , আমি জানি তোর অনেক কাজ
 
জান্নাত মনে মনে ভাবে , এতো প্লিজ প্লিজ বলার কি আছে , এমন কি কোনদিন হয়েছে রাজিব বলেছে , সেই কাজ ও করেনি । তারপর আবরার নামটা কোনদিন শুনেছে কিনা সেটা ভাবতে থাকে । কিছুহক্ষন ভেবে সৃতিতে পায় না । এই ভেবেও অবাক হয় রানী বাসায় ছেলে নিয়ে এসেছে !! রানীর কেরেক্টারের সাথে ব্যাপারটা যায় না। কলেজে কোন ছেলে রানীকে এপ্রচ করলে রানী এমন ভাব করতো কোন ছেলে নয় সামনে একটা জোঁক দেখছে । ছেলেটিকে দেখার  খুব ইচ্ছা হচ্ছে , একবার জয়ের কথাও মনে এলো । সেদিন রাতে জয়ের যে অবস্থা দেখছে , তাতে জান্নাতের ভয় হয় । জয় যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ?
 
কিন্তু যাবে কিনা কয়েকবার ভাবে । আজকাল রানী ওর সাথে তেমন একটা ভালো আচরণ করছে না । কি কারনে রানী এমন করেছে , সেটা ও বুঝতে পারে না । হ্যা একদিন রানীকে কিছু কঠিন কথা বলেছিলো । কিন্তু মিথ্যা তো বলেনি কিছু । যা সত্য তাই বলেছে । একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে রানীকে ওর ভুল ধরিয়ে দেয়া ওর কর্তব্য ।   
 
জান্নাত শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় ও যাবে , রাজীবের রিকোয়েস্ট ও ফেলতে পারবে না । যদিও একটু দেরি হয়ে গেছে , রাজিব টেক্সট পাঠিয়েছে প্রায় ঘন্টা খানেক আগে ।
 
জান্নাত আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একটু দেখে নেয় , পোশাক ঠিক আছে কিনা । তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। 

***** 
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 4 users Like gungchill's post
Like Reply
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
কিছু সম্পর্কঃ ৮()

 
 
 
কলিং বেল বাজতেই রানী অবাক হয় , ভাবে এই সময় আবার কে এলো । ওর আব্বু বা ভাইয়া এলে তো ওদের কাছে চাবিই আছে। রানী একটু ভয় পায় , পরিচিত কেউ এলে আবার উল্টাপাল্টা না ভেবে বসে । তাই একবার বেল বাজতেই তড়াক করে উঠে গিয়ে দরজা খোলে । দরজা খুলেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে । সামনে জান্নাত দাড়িয়ে আছে । রানী জান্নাত কে দেখে খুশিই হয় ।
 
কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থাই হয় না । জান্নাত ভেতরে ঢুকে একদম পারফেক্ট অভিনয় করে । নিজের অভিনয় দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায় । জান্নাত একদম অবাক হওয়ার ভান করে বলে এ কে রে রানীবলেই রানীর দিকে এমন ভাবে তাকায় , যেন ওর মাথায় আসমান ভেঙ্গে পরেছে ।
 
রানী খুব বিরক্ত হয় জান্নাতের আচরণ দেখে , কপাল কুঁচকে বলে ও আবরার , আমার ফ্রেন্ড
 
আবরার জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হাসে , জান্নাত ও একটু হাসে । তারপর রানীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বিড়বিড় করে জিজ্ঞাস করে এই কি সেই , মিট্মাট হয়ে গেছে?” যদিও জান্নাত জানে এ সেই ছেলে না , সেই ছেলে এলে এখানে ভুমিকম্প হবে।  
 
নাহ আমি সেই ছেলে নইআবরার হাসতে হাসতে বলে ।
 
জান্নাত আবরারের দিকে তাকায় , ভেবে পায় না এই ছেলে বুঝলো কি করে , আবরার হেসে বলে আমি লিপ রিড করতে জানি, আপনি নিশ্চয়ই জান্নাত, আপনার কথা শুনেছি , ইনফেক্ট আমি আপনার ভিডিও ও দেখছি, আমি একজন সাবস্ক্রাইবার
 
শুনে জান্নাত খুব খুশি হয় , একদম সত্যিকারের খুশি , এখন আর ও অভিনয় করছে না , খুশি হয়ে জান্নাত আবরারের পাশে বগিয়ে বসে । অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে সত্যি?”
 
হ্যা, আমি আপনার সবগুলো ভিডিও দেখছি , আপনি বেশ ন্যাচারালআবরার মুচকি হেসে বলে । এই মেয়ে যে এখানে হঠাত এসে পরেনি সেটা আবরার এর অভিনয় দেখেই বুঝেছে । একে কেউ এখানে পাঠিয়েছে । আর সেই কেউ একজন হচ্ছে রানীর ভাই । রানীর ভাইয়ের প্রতি আবরারের ভালো লাগা একটু বেড়ে যায় , ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমত্তার সাথে হ্যান্ডেল করেছে ব্যাপারটা।
 
এদিকে জান্নাত খুশিতে ডগমগ , এই প্রথম এমন একজনের সাথে দেখা হলো , যে ওর পরিচিত নয় , কিন্তু ওর ভিডিও দেখছে । কিন্তু রানী জান্নাতের এমন খুশি হওয়া পছন্দ করছে না । আবরার ওর বন্ধু , এখন জান্নাত এসে এখানে অনধিকার প্রবেশ করুক সেটা ও চায় না ।
 
ভাইয়া বাসায় নেইরানী বিরক্তি সহকারে একটু কঠিন ভাবেই বলে ।
 
কিন্তু জান্নাত সেদিকে পাত্তা দেয় না , আবরার কে বলে , “ ক্যাম্পাসে দেখা হলে আমাকে মনে করিয়ে দেবেন , এক কাপ চা পাওনা রইলো আপনার
 
জান্নাত আমারা এখানে কাজ করছিরানী আরো বিরক্ত হয় ,  
 
তো করনা , কে বাধা দিলোজান্নাত রানীর দিকে তাকিয়ে বলল ।
 
তুই বাধা দিচ্ছিস , আমি তো বললাম , ভাইয়া নেইরানী নিজের আসনে বসতে বসতে বলল ।
 
আমি কই বাধা দিলাম , আমি সুধু বললাম  আবরার কে আমি চা খাওয়াতে চাই, আর আমি কি রাজীবের কথা জিজ্ঞাস করেছি? আমি তোর কাছেই এসেছি”  
 
আমি আর আবরার এক সাথে কাজ করছি , তুই যদি আবরারের সাথে কথা বলিস তাহলে , কাজ করবো কি করে? আর তোর সাথেও কথা বলার সময় আমার নেই , তুই কি ভাবিস , তুই একাই বিজি থাকিস , আর সবাই শুয়ে বসে সময় কাটায়”  রানী ঝাঁঝের সাথে জান্নাত কে খোঁচা দেয় ।
 
কিন্তু জান্নাত সেই খোঁচা গায়ে মাখে না “ আচ্ছা বাবা তোরা কাজ কর , আমি না হয় আবরার কে আজকেই চা বানিয়ে খাওয়াই
 
কে চা বানাবে ? তুই?” রানী ভ্রু কপালে তুলে জিজ্ঞাস করে ,
 
হ্যা , কেনো?” জান্নাত অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
 
তাহলে আর চা খেতে হবে নারানী হাসতে হাসতে বলে
 
তাহলে এক কাজ কর তুই চা করে নিয়ে আয়জান্নাত রানী কে অবাক করে দিয়ে এই প্রস্তাব করে বসে ।
 
আমি যে কাজ করছি সেটা তোর মাথায় ঢোকে না , তোদের কাজে কি আমি বাধা দেইরানী এবার একটু রেগে গিয়েই বলে
 
আচ্ছা আমি এখন চা খাবো না আবরার দুই ান্ধবীর মাঝে কথা বলে ওঠে । আবরার ওদের দুজনের কথা বার্তা শুনেই বুঝতে পারছে ওরা কতটা ঘনিষ্ঠ । আবার এও বুঝতে পারছে রানী কোন কারনে জান্নাতের উপর রেগে আছে । কারন ও কিছুটা জানে । জান্নাত আর রাজিব এক সাথে জান্নাতের ভিডিওতে কাজ করে , আর রানীকে সময় কম দেয় । এই কারনে রানী কিছুটা রেগে আছে ।
 
আবরারের বাধায় কাজ হয় না , জান্নাত ও কিছুটা রেগে যায় , বলে তুই আসিস আমাদের কাজের সময় কে না করেছে তোকে? , আমরা তোকেও কাজে লাগিয়ে দেবো , আমরা তোকে বাধা মনে করবো না”  
 
আমার তো ঠ্যাকা তোদের ওখানে সেধে যাওয়ার , আমাকে ডেকেছিস তোরা ? তোরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস আমি হলাম দুধভাত”   
 
আবরারের কাছে মনে হয় এই ান্ধবী এখনো দ্বিতীয় শ্রেনির স্টুডেন্ট , কে বলবে এরা দুজন দেশের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রি ।
 
তোকে কি কার্ড ছাপিয়ে দাওয়াত করবো?” জান্নাত বেশ রেগে যায় , তারপর আবার বলে তুয়ি বুঝি সব আমাদের জিজ্ঞাস করে করিস , মনে আছে কি কি করেছিস?” জান্নাত খোঁচা দেয় ।
 
আর সেই খোঁচা খেয়ে রানী তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে কিসের সাথে কি মেলাচ্ছিস , একটা দুর্বলতা পেয়েছিস , তাই এখন সুযোগ পেলেই সেখানে আঘাত করিস , এটাই তোদের স্বভাব , মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়াশেষের কথা বলার সময় রানীর চোখে পানি চলে আসে
 
“ এই খবরদার কেঁদে জেতার চেষ্টা করবি না একদম , আমি রাজিব না যে তোর কান্না  দেখে  ভিজে যাবো , আর তোরা মানে কি বলতে চাস? আমি এখানে একা আছি , আমাকে বল , রাজিব কে টানবি নাজান্নাত একেবারে ফুল ফেজ যুদ্ধের মুডে চলে এসেছে ।
 
টানলে টানবো , তোর কি , রাজিব আমার ভাই , আমি যা খুশি তাই বলবো, তোর কি?”
 
জান্নাতের মাথায় আগুন ধরে যায় , এই অল্প কিছুদিনের মাঝে রানী এই কথটা দ্বিতীয়বার বলে ফেললো , “ রাজিব আমার………” থেমে যায় জান্নাত তারপর খুব ধিরে ধিরে বলে আমারো ভাইয়ের মতকথটা বলতে জান্নাতের খুব কষ্ট হয় ।
 
আবরার এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলো , জান্নাতের কথা ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে । জান্নাতের দিকে তাকায় , একটু ভালোমত দেখে জান্নাত কে । জান্নাত যে কিছুতেই ভাই বলতে চায়নি সেটা আবরার বেশ বুঝতে পারে ।
 
আবরার আর এই যুদ্ধ হতে দিতে চায় না , তাই উঠে দাড়ায় , বলে প্লিজ একটু থামরানীর দিকে তাকিয়ে বলে ,
 
ওকে থামতে বলরানী চেঁচিয়ে ওঠে
 
প্লিজ থামুনআবরার এবার জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে ।
 
জান্নাত বেশ লজ্জা পেয়ে যায় , একটা অপরিচিত ছেলের সামনে ওর যে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি । ও বুঝতে পারে , তাই চুপ হয়ে যায় । নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
 
রানী আর সেখানে দাড়ায় না , দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে যায় ।
 
সেটা দেখে জান্নাত মিনমিন করে বলে , “সরি আপনাদের কাজ ভণ্ডুল করে দিলাম
 
না না সমস্যা নেই, তবে একটা কথা বলি , আমি রানীকে চিনি মাত্র কিছুদিন যাবত , আর আপনারা চেনেন সেই জন্ম থেকেই , আপনাদের চেয়ে আমার বেশি চেনার কথা না ওকে , তবুও একটা কথা না বলেই পারছি না , আপনারা ওকে ওর দুর্বল সময়ে একা ছেড়ে দিয়েছেন , আপনি জানেন আপনি ছাড়া ওর কোন ভালো বন্ধুও নেই”  আবরার একবার ভেবেছিলো অনধিকার চর্চা করবে না , কিন্তু রানীর অবস্থা দেখে না করেও পারে না ।
 
জান্নাতের মাথা এখনো নিচু , তবে রাগ এখনো আছে , “ সেটা  ও নিজেই ওর উপর টেনে নিয়েছে”  ঝাঁজের সাথে বলে জান্নাত।
 
হ্যা সেটা আমি কিছুটা বুঝতে পারছি , তবে একটা কথা ওর এমন আচরণের দোষ কিছুটা আপনাদের উপরেও বর্তায়
 
আবরারের কথা শুনে জান্নাত অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায় , ওর কথা বুঝতে পারে না ,
 
আবরার জান্নাতের চোখে প্রশ্ন দেখে , হেসে বলে আমি বলছি , আপনি সুধু দেখবেন আমি কিছু ভুল বুঝছি কিনা , রানী আপনার আর ওর ভাই রাজীবের সম্পর্কে আমাকে আগেও ভাসা ভাসা কিছু বলেছে , আজকে আপনাদের দুজনের সাথেই ওর সম্পর্ক দেখলাম। আমার কাছে মনে হয় আপনারা দুজন ছিলেন ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ
আমরা এখনো আছি , কিন্তু ও আর আমাদের সহ্য করতে পারছে না, দেখলেন না কেমন করলোজান্নাত আবরারের কথার মাঝখানে ফোঁড়ন কাটল ।
 
নিশ্চয়ই, আপনারা এখনো তাই মনে করেন সেটা আমি জানি, কিন্তু আচরনে কি প্রকাশ পাচ্ছে?” এই বলে আবরার একটু থামে , তারপর বলে দেখুন অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে , তবুও বলছি , আপনি হচ্ছেন ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু , আর ওর ভাইয়ের সাথেও মনে হয় ওর ভালো একটা বন্ডিং ছিলো , কিন্তু ও যখন দেখলো ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ওকে ছেড়ে ওর ভাইয়ের সাথে বেশি সময় কাটাচ্ছে , আর ওর ভাই ও ওকে প্রাধান্য না দিয়ে ওর ান্ধবীর সাথে কোন একটা কিছু করছে , যা ও আগে জানতো না, একবার ভেবে দেখুন তো ওর মনে কি চলতে পারে তখন , বিশেষ করে ও যখন নিজেও একটা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ।
 
আবরার জান্নাতের দিকে তাকায় , তারপর জিজ্ঞাস করে আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমি কি সমস্যার কথা বলছি? আর এই ধরনের মানসিক চাপের সময় মানুষ নিজের কাছের মানুষদেরই জ্বালাতন করে , এটা আপনাদের বুঝতে হবে।”  
 
এর পর আবরার হেসে বলে আচ্ছা মিস জান্নাত আজকে আমি যাই , আপনার কাছে চা পাওনা রইলো , যেদিন আপনি যুদ্ধের মুডে না থাকবেন সেদিন চা খাবো
 
আবরার নিজের জিনিসপত্র গোছগাছ করতে থাকে , আবরারের শেষ কথায় একটু লজ্জাই পায় জান্নাত । একটা অপরিচিত ছেলের সামনে আসলেই বাচ্চাদের মত ঝগড়া করে ফেলেছে ও ।
 
 জান্নাত আবরারের দিকে নতুন ভাবে তাকায় , ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান , অনেক কিছুই বুঝে নিতে পারে ছোট্ট কোন হিন্টস থেকে ।
 
আপনার নাম্বার পেতে পারি?” জান্নাত যেচে গিয়েই নাম্বার চায়
 
অবশ্যইএই বলে আবরার নিজের নাম্বার দেয় । তারপর চলে যায় ।
 
 গলি পার হয়ে মেইন রাস্তায় এসে দাড়াতেই একজন মাঝারি  উচ্চতার  সুদর্শন ছেলের সাথে  চোখাচোখি  হয় আবরারের , ছেলেটা বাইকে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে , রক্ত চক্ষুতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । যদি দৃষ্টির ভস্ম করার শক্তি থাকতো তাহলে ওর হাড়গোড়ও খুজে পাওয়া যেতো না, ছাই হয়ে যেতো। এই ছেলেকে আবরার ক্যাম্পাসে দেখছে , রাজনীতি করে, ভালো ভাষণ দিতে জানে , মেয়েরা এর ভীষণ ভক্ত , স্পোর্টস ক্লাবে এর ছবি দেখছে , গত বছরের টপ স্কোরার ।  
 
আবরার ভেবে পায় না , ভার্সিটির প্লেবয় ওর দিকে কেন এমন ভাবে তাকিয়ে আছে । একবার ভাবে সামনে গিয়ে কথা বলবে । শত হলেও ভার্সিটির বড় ভাই , তার উপর প্রায় সেলেব্রেটি । আবরার যায় না , সিদ্ধান্ত বাতিল করে । মনে মনে ভাবে এই এলাকায় ভার্সিটির কয়জন স্টুডেন্ট আছে , আর এরা সবাই একেকজন মহারথি !! একজন বিনোদিনী রাধে , একজন উঠতি ইউটিউবার, আর এই জন উঠতি রাজনৈতিক নেতা ।  আবরার মনে মনে মজা করে ভাবে । সাথে এও ভাবে এই গলিতে আর আসা যাবে না , নিজেকে বড্ড সাধারন মনে হয় , আবরারের ঠোঁটে একটা হাসি ফুটে ওঠে, নিজের এমন ফানি ভাবনার কারনে ।  
 
আবরার চোখ সরিয়ে নেয় , এমন ঘৃণা পূর্ণ দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ টিকে থাকা যায় না । কিন্তু এই ছেলে ওর প্রতি এমন ঘৃণা  কেন লালন করছে , সেটাই ভাবে আবরার । ও তো এই বিপরীতে রাজনীতিও করে না । একটা চুনোপুঁটি মানুষ ও , ওর মত নিছক এক সাধারন ছেলের জন্য এই , সুদর্শন , ক্ষমতাধর , মেয়েদের হার্ট থ্রব , পপুলার ছেলেটির  তো কোন ধরনের অনুভুতিই থাকার কথা না । যেমন মানুষের পিপড়ার প্রতি মশার প্রতি থাকে না ।
 
হঠাত আবরারের দিমাগ কি বাত্তি জ্বলে ওঠে , ভাবে আরে এটাই  কেষ্ট  ব্যাটা নয় তো ? আবরারের নিজের প্রতি নিজের অনুকম্পা হতে শুরু করে । এই মহারথীদের মাঝে পরে ওর মত নাচিজের জীবনটাই না যায় এবার । জীবন নিয়ে পরে ভাবা যাবে , হলের সিটটাই না যায় সবার আগে । আবরার ভাবে , হলের সিট তো কন্ট্রোল করে রাজনৈতিক নেতারা , বহু কষ্টে মিছিলে অংশ নিয়ে নিয়ে আবরার এই সিট জোগাড় করেছে । আবরার জানে হিংসায় জলতে থাকা প্রেমিকের চেয়ে ভয়ংকর আর কিছুই হয় না । আবরার আপাতত এখান থেকে মানে মানে কেটে পরাই ভালো মনে করে । নিজে বাচলে বাপের নাম ।  আবরার দূর থেকে বাইসেপের সাইজ যা আন্দাজ করতে পারছে তাতে একটি ঘুষি ই যথেষ্ট । আবরার আর রিক্সার জন্য দাড়ায় না । আর একটু সামনের দিকে হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।
****  
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (খ) এর বাকি অংশ......... 



জান্নাত কিছুক্ষন রানীদের লিভিং রুমে দাড়িয়ে থাকে । আবরারের কথা গুলো ওর কানে বাজতে থাকে । জান্নাত মনে মনে কিছুক্ষন আবরারের কথা গুলো ভেবে দেখে । তারপর রানীর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো একে একে বেশ সময় নিয়ে ভাবে । যত ভাবে জান্নাত ততই ভয়ে জড়সড় হয়ে পরে । এক পর্যায়ে এসে ভাবনা গুলো মনের সিন্দুকে তালা লাগিয়ে রেখে দেয় । ভয় হয় জান্নাতের , কারন ভাবনা গুলো যতই ডাল পালা মেলতে থাকে ততই নিজেকে এমন একটা পজিশনে আবিস্কার করে , যা জান্নাত কল্পনাতেও ভাবেনি কোনদিন ।

 
জান্নাত দ্রুত রানীদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় । নিজেদের বাড়ি দরজার সামনে যখন চলে আসে তখন জয় গ্যারেজের দরজা থেকে বেড়িয়ে আসে । জয়ের দিকে তাকাতেই জান্নাতের কলিজা শুকিয়ে যায় । জয়ের মুখ থমথমে , চোখ দুটো লাল বর্ণের । তবে জান্নাত আজকে কোন ফানি স্মেল পায় না । এর মানে জয়  আজকে স্বাভাবিক আছে , আর স্বাভাবিক অবস্থায় ওর রাগ আরো বেশি খারাপ ।
 
কোথায় গিয়েছিলি?” জয় জিজ্ঞাস করে , ওর কণ্ঠের কম্পন দেখেই জান্নাত যা বুঝার বুঝে যায় ।
 
রানীর কাছেকথাটা বলেই জান্নাত নিজেকে তৈরি করে নেয় ।  দেখতে পায় জয় ওর আরো কাছে এগিয়ে এসেছে । প্রায় মুখোমুখি , জয়ের ঠোঁট দুটো রাগে কাঁপছে , চোখ সরু হয়ে এসেছে ,
 
তুই তাহলে সব আগে থেকেই জানিস?” ক্রুদ্ধ জয় চিবিয়ে চিবিয়ে জিজ্ঞাস করে
 
কি জানি আমি আগে থেকে? কি বলছিস তুই ? তোর কি শরীর খারাপ , এমন দেখাচ্ছে কেন? ” জান্নাত জয় কে শান্ত করার জন্য কথা ঘোরানর  চেষ্টা করে
 
তোর কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি , তুই আমার কথা সব জেনেও এভাবে চুপ থাকলিজয় মুখ ঘুরিয়ে নেয় ,
 
আমাকে খুলে বল কি হয়েছে?” জান্নাত না বোঝার ভান করে , ওর ইচ্ছা জয় শান্ত হলে ওকে বুঝিয়ে বলবে ওই ছেলের সাথে রানীর বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছুই নেই । জান্নাত বুঝতে পারছে যে জয় কোন ভাবে টের পেয়ে গেছে যে আবরার রানীদের বাড়ি এসেছিলো ।
 
গো টু হেল , আর তোর ান্ধবিকে বলিস , আমার কাছ থেকে দূরে দূরে  থাকতে , আমার সামনে পরলে আমি কি করবো নিজেও জানি না , সে ছেলে নিয়ে ঘুরবে , না বাড়িতে নিয়ে আসবে সেটা তার ব্যাপার , কিন্তু আমার সামনে যেন না পরে , আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সে নিজে আমার চোখের সামনে ফুর্তি করে বেড়াবে এটা আমি সহ্য করবো নাএই বলে জয় আর দাড়ায় না , ঘরের ভেতর চলে যায় ।   
 
জান্নাত ও পেছন পেছন যায় , জয় কি করতে পারে জান্নাত জানে । একবার ওকে আর রানীকে কলেজ যাওয়ার পথে কিছু ছেলে ডিস্টার্ব করেছিলো বলে জয় সেই ছেলেদের এমন মার দিয়েছিলো , যা নিয়ে পুলিস কেস পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিলো । জয়নাল সেবার জয় কে বাড়ি থেকে প্রায় বের করে দিয়েছিলো । কিন্তু জয় একবারের জন্যও বলেনি ও যা করেছে ভুল করেছে ।  আবরারের জন্য ভয় হয় জান্নাতের ।
 
জয় দাড়া , শোন আমার কথা , আমি বলছি সবজান্নাত পেছন পেছন যায় , এমন ভাবে কথা গুলো বলে যেন অন্য কেউ শুনতে না পারে । কিন্তু জয় আজকে মাতাল নয় , ধরাম করে জান্নাতের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয় । জান্নাত কিছুক্ষন দরজা ধাক্কায় । কিন্তু জান্নাত জানে জয় খুলবে না । তাই কিছুক্ষন পর নিজের ঘরে চলে আসে জান্নাত ।
 
জান্নাত ধপ করে বিছানায় বসে পরে , মনে মনে ভাবে এ ও কি করেছে ? দুই পরিবারের ভালো সম্পর্কের কথা চিন্তা করে একটা ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছে । জান্নাত আবার প্রথম থেকে ভাবে , ধিরে ধিরে ওর ভুল গুলো নজরে আসতে শুরু করে ।
 
প্রথম ভুলঃ যখন ও জানতে পেরেছিলো রানী আর জয়ের কথা , তখন ভয়ে রাজীবের কাছে লুকিয়ে গেছে । তা না করে যদি রাজিব কে একটা ভাসা ভাসা আইডিয়া দিয়ে রাখতো , যদি বলতো ওই ছেলেকে ও চেনে , আর এই বলে আশ্বস্ত করতো যে ও নিজে এই ব্যাপারটা দেখবে ।  
 
দ্বিতীয় ভুলঃ জান্নাত যখন রানীকে হাত কাটতে দেখছিলো , আর জানতে পেরেছিলো রানীর আর জয়ের একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তখন যদি রাজিব কে বুঝিয়ে বলতো , তাহলে হয়তো রাজিব রানীকে এতো চাপে রাখতো না । এতে করে রাজীবের সাথে রানীর সম্পর্কের অবনতিও হতো না । এমনকি হয়তো বা , রাজিব ও ওর কাছ থেকে দূরে চলে যেতো না ।  
 
তৃতীয় ভুলঃ রানীকে না বোঝা , জান্নাত রানীকে বুঝতেই চেষ্টা করেনি । রাজীবের সাথে খারাপ আচরণ করার কারন খুজতে যায়নি । সোজা রানীকে ব্লেইম করেছে । এতে করে ওর সাথেও রানীর সম্পর্ক খারাপ হয়েছে । যখন ওর উচিৎ চিলো রানীকে বেশি সময় দেয়ার , তখন ও রানীকে একা ছেড়ে দিয়েছে । ওর বোঝা উচিৎ ছিলো সবাই এক রকম ভাবে চাপ সামলাতে পারে না । রানীর মানসিক চাপ ও এখন বুঝতে পারছে । চাপে ছিলো বলেই , উল্টো পাল্টা কাজ করেছে । আর ও নিজে হেল্প করার বদলে বিরক্ত হয়েছে।  
 
চতুর্থ ভুলঃ সবচেয়ে বড় ভুল , ও চাইলেই জয় আর রানীর ভুল বুঝাবুঝি দূর করে দিতে পারতো । কিন্তু ও নিজের দুঃখে এতো ডুবে ছিলো যে আশে পাশে ওর আপন আরো কেউ যে সমান দুঃখে দুঃখী , সেটা ওর খেয়াল ছিলো না । সবচেয়ে বড় রিগ্রেট হচ্ছে ও চাইলেই ওদের দুঃখ কমাতে পারতো । এতো বড় সেলফিস ও কবে থেকে হলো সেটাই ভেবে পায় না জান্নাত ।
 
অনুশোচনার আগুনে জান্নাতের ভেতরটা জলতে থাকে , নিজের ভুলের জন্য আরো কয়েকজন দুঃখ পাচ্ছে । জান্নাত সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক ও নিজের ভুল গুলো শুধরে নেবে । জান্নাত নিজের ফোন হাতে নেয় , জয় কে টেক্সট করে  
 
জয় , আমার কথা শোন ভাই , দরজা খোল , আমি সব খুলে বলছি , এই সব আমার দোষে হয়েছে , তুই ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে করিস না , দরজা খোল
 
দু মিনিট অপেক্ষা করে জান্নাত , কিন্তু জয় টেক্সট সিন করে না ।
 
আবার টেক্সট করে জান্নাত ওই ছেলে রানীর বন্ধু , ওরা এসাইন্মেন্টের কাজ করেছে , আমি ছিলাম ওদের সাথেজান্নাত মিথ্যা করে বলে ।
 
কিন্তু জয় এবারো সিন করে না । জান্নাত আবার টেক্সট করে আমি নিজে রানীর সাথে তোর ব্যাপারে কথা বলবো , কালকেই বলবো , বিশ্বাস কর , আমি তো জানি তুই এমন কাজ করতে পারিস না , রানী অসুস্থ ছিলো , তাই তোকে ভুল বুঝেছে
 
জয় এবারো সিন করে না , জান্নাত ফ্রেস্টেসনে এসে মোবাইল ছুড়ে ফেলে । জান্নাত জানে টেক্সট করে কাজ হবে না , ওরা হচ্ছে এক গুয়ের বংশ । আর জয় এই বংশের সবচেয়ে বড় একগুয়ে ।
 
****  
 
জয় ধরাম করে দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসে পরে । কিন্তু বসে থাকতে পারে না বেশিক্ষণ । ওর সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলছে । ওর ইগোতে আজ পর্যন্ত এতো বড় আঘাত কেউ করতে পারেনি । যতটা রানী করেছে । জয় উঠে দাড়ায় , নিজের চুল নিজে খামছে ধরে কিছুক্ষন এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে ।
 
রানী তুই আমাকে চিনিস না , আমি কে তোকে আমি বুঝিয়ে দেবো , আমাকে রেপিস্ট অপবাদ দিয়ে তুই অন্য কারো সাথে ঘুরে বেড়াবি , আর আমি সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো , তুই আমাকে কি ভেবেছিস? A bitch? না না , তুই আমাকে এখনো চিনতেই পানিরস নি ,  তোকে আমি আমার আসল চেহারা দেখাবো , এটা আমার আত্মসম্মানের ব্যাপার”  কথা গুলো বলে জয় আপন মনে হাসে ।
 
আর কিছুক্ষন ঘরময় পায়চারি করে , রাগের মাথায় টেবিল থেকে বই খাতা ছুড়ে ফেলে দেয় । আজ পর্যন্ত যা না করেছে সেটা  করে , ঘরের ভেতর সিগারেট জ্বালায় ।
 
তোর সাথে আমি বেশি ভালো ব্যাবহার করে ফেলেছি , এতদিন ক্যাম্পাসে এই ছেলের সাথে হা হা হি হি করতে দেখেও কিছু বলনি , সেটাকে যদি তুই আমার দুর্বলতা ভেবে নিস তাহলে তুই ভুল করেছিস , তুই আমাকে চিনিস না , এবার চিনবি , আমি তোর এমন হাল করবো ………”
 
তুই কি ভেবেছিস ? আমার জন্য মেয়ের অভাব পরেছে ? চাইলে মেয়ের অভাব হবে না , কিন্তু আমি তোকে চেয়েছি , আর তুই আমার এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিস , আমি যে জিনিস চাই সেটা  আমার চোখের সামনে দিয়ে কেউ নিয়ে যাবে , আমি বসে বসে দেখবো , কক্ষনো না , আমি আর যাই হই স্পাইনলেস নই”
 
জয়ের ইচ্ছে হয় ঘরের সব কিছু ভেঙ্গে চুরে ফেলতে । এমন সময় জয়ের মোবাইল বেজে ওঠে , টেক্সট এর টোন বেজে ওঠে। একবার , দুবার , তিনবারের বার জয় জয় মোবাইল দেয়ালে ছুড়ে মারে । দেড় লক্ষাধিক টাকার মোবাইল ভেঙ্গে চাকনাচুর হয়ে ঘরময় ছড়িয়ে পরে । মোবাইলের আঘাতে সিরামিকের পানি খাওয়ার মগ ভেঙ্গে একটা টুকরা এসে জয়ের ঠিক ভুরুর উপরে এসে লাগে । মুহূর্তের মাঝেই রক্ত এসে জয়ের ডান চোখ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় । কিন্তু সেদিকে জয়ের কোন লক্ষ্য নেই ।   
 
তুই আমাকে মেরে ফেলে নিজে সুখে থাকবি ভেবেছিস ? কক্ষনো না , আমিও তোকে বাচতে দেবো না । তুই আমাকে যে অপবাদ দিয়েছিস , এর পর থেকে আমি আর জীবিত নেই , আমার ভেতরটা মরে গেছে , আমি জম্বি হয়ে গেছি , আমিও তোকে জম্বি বানিয়ে ফেলবো , না না আমি তোকে মারবো না , আমি তাকে মারবো যে তোর কাছে আসার চেষ্টা করবে , হয় তুই আমার হবি , নইলে কারো নয়, আমি চাইলেও তোকে ছাড়তে পারবো না , তুই আমার , যদি আমাদের ভাগ্য ও আমাদের সামনে আসে আমি সেই ভাগ্যকে ছুড়ে ফেলে দেবো”   
 
তুই এটা আমার পাগলামি বলবি , বল , আমি পাগল হতে রাজি আছি , তুই আমাকে দূরে রাখবি রাখ না যতদিন ইচ্ছা হয় রাখ, কিন্তু আমাকে রেখে তুই আর কারো হতে পারবি না , আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি , তুই সুধুই আমার হবি , আমাকে ইশারা দিয়ে আমি তোকে পালিয়ে যেতে দেবো না ”   
 
“তুই কি ভেবেছিস , তোকে আমি আজকে থেকে চাইছি ? না , তোর মাঝে যেদিন নারী স্বত্বার প্রথম পরিস্ফুটন দেখছি , সেদিন থেকেই তোকে পাওয়ার তৃষ্ণা আমি অনুভব করেছি ,  কিন্তু নিজেকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখছিলাম , সুধু পারিপার্শ্বিক ব্যাপার চিন্তা করে , সেই শৃঙ্খল তুই নিজে ভেঙেছিস , তোর কি মনে হয় ? আমার দিকে  তোর  সবার চোখ আড়াল করা দৃষ্টি আমাকেও ফাকি দিতে পেড়েছে ? না পারেনি । তোর সেই ইংগিত পূর্ণ হাসি গুলো কি আমি দেখনি ? আমি চাইলে তোকে অনেক আগেই এক্সপ্লয়েট করতে পারতাম , আমি করিনি । আর এসবের জন্য তুই এখন আমার সাথে  এই আচরন করছিস ? একবার জখন আমি সেকল ভেঙ্গেছি , সেই সেকল আমি আর পরতে পারবো না , কিছুতেই সম্ভব নয় , যে ভাবেই হোক আমার  তোকে চাই, আমি আসছি তুই নিজেকে তৈরি করে রাখ”  
 
এতক্ষনে জয়ের রক্ত চেহারা গড়িয়ে পরনের কাপরে এসে লেগছে । এই অবস্থায় জয়কে দেখতে ভয়ংকর লাগছে । অবশ্য সুধু দেখতেই ভয়ংকর লাগছে না । জয় এখন নিজের ভেতর ভয়ংকর সব চিন্তাভাবনা নিয়ে খেলা করছে । কিভাবে ওর আহত ইগো  রিস্টোর করা যায় , সেই নিয়ে নানা রকম পরিকল্পনা করছে । কতটা কঠিন ভাবে রানী কে আঘাত করা যায় সেই নিয়ে ভয়ংকর সব চিন্তা আসছে ওর মনে ।
 
রাতে খাওয়ার সময় জান্নাত ডাকতে এলেও কোন উত্তর দেয় না , জয় । জান্নাত বাবা মায়ের কাছে মিথ্যা করে বনিয়ে বলে জয় খেয়ে এসেছে তাই খাবে না ।
 
****  
 
জান্নাতের ঘুম আসছে না কিছুতেই । কি ভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না । কারো সাথে যে এই নিয়ে আলাপ করবে তার কোন উপায় নেই । জান্নাত মোবাইল হাতে নেয় । রাত এখন সোয়া বারোটা , করবে না করবে না করেও রাজিব কে টেক্সট করে ,
 
কাজ করছিস?”
 
ত্রিশ সেকেন্ডের মাথায় রিপ্লে আসে হ্যা তুই চিন্তা করিস না , সময় মত হয়ে যাবে
 
জান্নাত হাসে , রাজিব ভাবছে ওর ভিডিওর চিন্তায় ঘুম আসছে না । আসলে আজকে এই মুহূর্তে ভিডিও ওর কাছে এক পয়সার গুরুত্বও রাখে না ।
 
ঘুম আসছে নাজান্নাত জানে এই টেক্সট এর হয়তো কোন মূল্য নেই রাজীবের কাছে , তবুও পাঠায় । কারো না কারো কাছে তো বলতে হবে । না বলতে পারলে যে দম বন্ধ হয়ে আসবে ।
 
কেন? শরীর খারাপ নাকি?” রাজিব দ্রুত রিল্পে করে  
 
শরীর খারাপ আমার তেমন হয় না
 
তাহলে?”
 
জান্নাতের কান্না পায় , মোবাইল রেখে দেয় , তারপর আবার কি ভেবে যেন মোবাইল নেয় । লিখে পাঠায় রাজিব আমার একটা উপকা করতে পারবি ?”
 
কি উপকার ? অবশ্যই , বল কি লাগবে
 
“ তোর কিছু সময় আমাকে দিতে পারবি?”  
 
জান্নাত, দ্রুত এডিট না করতে পারলে সময় মত ভিডিও দিতে পারবি না”  
 
জান্নাতের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে । মোবাইল রেখে দেয় , পাশ ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে । মনে মনে বলে ‘রাজীব তুই এমন কেনো? এমন ভিখেরির মত কিছু সময় চাইলাম , তাও না করে দিলি’
 
প্রায় দু মিনিট পরে ওর মোবাইল বেজে ওঠে , রাজিব টেক্সট করেছে , জান্নাত ভাবে দেখবে না । দেখে কি লাভ । কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখে , রাজিব লিখেছে
 
সরি , আসলে নিয়ম মেনে , ঘড়ি ধরে চলতে চলতে আমি অনেকটা মেশিন হয়ে গেছি , সব সময় মানবিক ব্যাপার গুলো বুঝে আসে না
 
জান্নাত কোন উত্তর দেয় না । একটু পর রাজিব আবার টেক্সট করে , “ আমি হয়তো খুব হেল্প করতে পারবো না , তবে চেষ্টা করবো কথা দিলাম , বল কি বলবি
 
জান্নাত রাজীবের পাঠানো লেখাগুলোর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে । রাজীবের এই ছোট্ট প্রচেষ্টা ওকে অনেকটা মানসিক শক্ত যুগিয়েছে
 
“ রাজীব আমি জানি তোর মানুষর মন কে শান্ত করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে , আজকে সেটা তুই আমার উপর প্রয়োগ কর , আমার মন আজকে বড় অশান্ত , কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না ” জান্নাত লিখে পাঠায় ।
 
“ আমার আবার কবে থেকে এই ক্ষমতা এলো? আমার ক্ষমতা নেই রে আমি বড় সাধারন মানুষ”  
 
“ তুই হয়তো জানিস না তোর ক্ষমতার কথা , কিন্তু আমি দেখছি , তোর মনে আছে , তুই যেদিন রেজাল্ট নিয়ে এসেছিলি , রানী ছোট আম্মুর কবরের পাশে দাড়িয়ে কিভাবে কাদছিলো?”
 
“হু , মনে আছে”
 
“ আমি সেদিন দেখছি , তুই কিভাবে রানীকে হ্যান্ডেল করেছিলি , সেদিন আমার মনে হয়েছিলো রানী কত লাকি। আচ্ছা রাজীব তোর ওই ক্ষমতা কি সুধু তোর আপনজনের জন্যই কাজ করে ? আমাকে কি তুই একটু সময়ের জন্যও আপন ভাবতে পারিস না?”  জান্নাত একটু রাগ , একটু অভিমান মিশিয়ে লেখে ।
 
যা দেখছিস ভুল দেখছিস জান্নাত , আমার অমন কোন ক্ষমতা নেই , আমাকে ওই ভাবে ট্রেইন করা হয়েছে , আমি সুধু মুখস্ত বলে গিয়েছিলাম , আজকাল অবশ্য ওই টেকনিক আর কাজে আসে না , তোর ক্ষেত্রে কি কাজে আসবে ?”
 
একবার ট্রাই করে তো দেখ, ট্রাই না করেই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছিস
 
রাজীব আর টেক্সট করে না , সরাসরি কল করে
 
রাজীবের কণ্ঠ শুনে জান্নাতের মনে চলতে থাকা ঝড় কিছুটা শান্ত হয় । যদিও রাজীবের বলার মত তেমন কিছুই নেই , তবুও চেষ্টা করে নিজের জীবনের ভালো ভালো কিছু সৃতি জান্নাতের সাথে শেয়ার করতে । জান্নাত মন দিয়ে সুধু শোনে । রাত যখন প্রায় আড়াইটা বাজে তখন রাজীব বুঝতে পারে , জান্নাত ঘুমিয়ে পরেছে । রাজীবের কাছে মনে হয় ও বিশ্বজয় করে ফেলেছে । মনে হয় , এই প্রথম জীবনে কোন কাজ করলো যার অর্থ আছে , ইম্পেক্ট আছে ।  
 
*****  
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply
খুব সুন্দর আপডেট। সম্পর্কের দ্বন্দ্ব চরমে, খেলা জমে ক্ষীর। এখন দেখার বিষয় জয় কি করে, যে বেপরোয়া ছেলে, হিংসা সামলাতে না পেরে রানীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিলে বেশ ভালো হয়।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম, গল্পে সবার মুড খুব দ্রুত চেঞ্জ হয়ে যায়, যেমন হঠাৎ রাগ করে বসে হঠাৎ কান্না পায়। সবসময় চোখে বাজে এমন নয় তবে মাঝে মধ্যে কেমন যেন লাগে বিশেষ করে গল্পটা যেখানে খুব বাস্তবের সাথে রিলেট করা যায়।
আর চরিত্র গুলোও যেন কখনো কখনো নিজেদের স্বভাব সিদ্ধ আচরণ থেকে বেরিয়ে যায়।
কিন্তু রাজীব কে নিয়ে কথা হবে না, গল্পের শুরু থেকে এই পর্যন্ত, ঠাই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই আদর্শবান, বাস্তববাদী, দায়িত্বপরায়ন, এক চুলও সরে আসে নি নিজের চরিত্র থেকে। খুব দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ওর। এই গল্পের সবচেয়ে উজ্জ্বলতমও।
রানির জন্য আমার করুণা হয়, ওর কথা পড়লে একটা কথাই মনে আসে, সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। শুধু শুধু নিজের দোষে আপনজনদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করছে। রাজীবকে বুঝি ও ইং সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে ভবিষ্যতে হয়তো আরো দেবে। রানি তো লাজুক, লাজুক পনা থেকে সরে যায় অনেকসময়, একটু বেশিই এগ্রেসিভ হয়ে পরে। রাজীবের সাথে কেন করে এটা আপনি ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু অন্য সবার ক্ষেত্রে তো ও লাজুক, যেমন জান্নাতের সাথে, ঝগড়া করে ফেলছে প্রায়ই।
এগুলো একটু দেখবেন। গল্প আরো সাবলীল হবে।
আরেকটা কথা, একটু যৌনতা কি আসবে না? পড়ে প্রথমে ভেবেছিলাম জয় আর রানির মধ্যে কিছু একটা হবে, কিন্তু ওদের এখন যেই সম্পর্ক তাতে পুনর্মিলননেরই অনেক সময় লাগবে, যৌনতা ঢের দেরী।
তীর্থের কাকের মতো বসে আছি কবে একটা মাসালা আপডেট পাবো।
রানি আর জয়ের মধ্যে হলেই ভালো হয় মানে যৌনতা ওদের উপরই মানাবে।
দেখবেন, বিবেচনা করিয়েন।
[+] 1 user Likes ধূমকেতু's post
Like Reply
(15-10-2025, 07:22 PM)ধূমকেতু Wrote: খুব সুন্দর আপডেট। সম্পর্কের দ্বন্দ্ব চরমে, খেলা জমে ক্ষীর। এখন দেখার বিষয় জয় কি করে, যে বেপরোয়া ছেলে, হিংসা সামলাতে না পেরে রানীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে নিলে বেশ ভালো হয়।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম, গল্পে সবার মুড খুব দ্রুত চেঞ্জ হয়ে যায়, যেমন হঠাৎ রাগ করে বসে হঠাৎ কান্না পায়। সবসময় চোখে বাজে এমন নয় তবে মাঝে মধ্যে কেমন যেন লাগে বিশেষ করে গল্পটা যেখানে খুব বাস্তবের সাথে রিলেট করা যায়।
আর চরিত্র গুলোও যেন কখনো কখনো নিজেদের স্বভাব সিদ্ধ আচরণ থেকে বেরিয়ে যায়।
কিন্তু রাজীব কে নিয়ে কথা হবে না, গল্পের শুরু থেকে এই পর্যন্ত, ঠাই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সেই আদর্শবান, বাস্তববাদী, দায়িত্বপরায়ন, এক চুলও সরে আসে নি নিজের চরিত্র থেকে। খুব দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ওর। এই গল্পের সবচেয়ে উজ্জ্বলতমও।
রানির জন্য আমার করুণা হয়, ওর কথা পড়লে একটা কথাই মনে আসে, সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। শুধু শুধু নিজের দোষে আপনজনদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করছে। রাজীবকে বুঝি ও ইং সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে ভবিষ্যতে হয়তো আরো দেবে। রানি তো লাজুক, লাজুক পনা থেকে সরে যায় অনেকসময়, একটু বেশিই এগ্রেসিভ হয়ে পরে। রাজীবের সাথে কেন করে এটা আপনি ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু অন্য সবার ক্ষেত্রে তো ও লাজুক, যেমন জান্নাতের সাথে, ঝগড়া করে ফেলছে প্রায়ই।
এগুলো একটু দেখবেন। গল্প আরো সাবলীল হবে।
আরেকটা কথা, একটু যৌনতা কি আসবে না? পড়ে প্রথমে ভেবেছিলাম জয় আর রানির মধ্যে কিছু একটা হবে, কিন্তু ওদের এখন যেই সম্পর্ক তাতে পুনর্মিলননেরই অনেক সময় লাগবে, যৌনতা ঢের দেরী।
তীর্থের কাকের মতো বসে আছি কবে একটা মাসালা আপডেট পাবো।
রানি আর জয়ের মধ্যে হলেই ভালো হয় মানে যৌনতা ওদের উপরই মানাবে।
দেখবেন, বিবেচনা করিয়েন।

ভাই , আপনার কমেন্ট দেখে গল্পের চরিত্রদের মত আমার মুড ও দ্রুত চেঞ্জ হয়ে গেলো , একদম কান্না পেয়ে গেলো । হা হা হা মজা করলাম । আসলে এমন কমেন্ট দেখলে মন ভরে যায় । এই পর্যন্ত গল্প যা লিখেছি , কেউই চরিত্র গুলো সম্পর্কে এমন ভাবে আমাকে বলেনি । নিজে থেকেই ভুল ধরার চেষ্টা করেছি , নিজে নিজেই শুধরে নেয়ার চেষ্টা করেছি।যেমন রানীর আচরণ গুলো নিয়ে কিছুটা খটকা লেগেছিলো , তাই আবরারের মাধ্যমে এই পর্বে জান্নাত কে কিছুটা বিশ্লেষণ করিয়েছি । এবংজান্নাত কে এই ব্যাপারে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে ও সিচুয়েশন ঠিক মত হ্যান্ডেল করতে পারেনি ।

আসলে রাজীবের পর রানীর একমাত্র বন্ধু হচ্ছে জান্নাত , সেটা আবরার জান্নাত কে বলেছে ।জান্নাত যেমন বাইরের মানুষদের সাথে সহজে মিশতে পারে রানী পারে না । জান্নাত ছাড়া ওর একমাত্র বন্ধু হয়েছে আবরার , এর কারন জান্নাত আর রাজীবের দূরে সরে যাওয়ায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সে সময় আবরার ওর সামনে এসেছে । এতদিন জান্নাত এমন কিছুই করেনি যেখানে রানীর সাথে ওর ঝগড়া হবে ।আর এখন রানী এমন কেন করছে সেটা আবরার কিছুটা বলেছে । রাজীবর জান্নাতের উপর   ওর রাগের কারন বলেছে   আবরার । আমি নিচে কোট করলাম 

আপনি হচ্ছেন ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু , আর ওর ভাইয়ের সাথেও মনে হয় ওর ভালো একটা বন্ডিং ছিলো , কিন্তু ও যখন দেখলো ওর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ওকে ছেড়ে ওর ভাইয়ের সাথে বেশি সময় কাটাচ্ছে , আর ওর ভাই ও ওকে প্রাধান্য না দিয়ে ওর ান্ধবীর সাথে কোন একটা কিছু করছে , যা ও আগে জানতো না, একবার ভেবে দেখুন তো ওর মনে কি চলতে পারে তখন , বিশেষ করে ও যখন নিজেও একটা সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ।



রানীর চরিত্রটাই আমি এভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি , ডিস্টার্বড একটা চরিত্র । অনেক ছোট বেলায় মা কে হারিয়েছে , বাবাও উদাসিন , প্রায় সম বয়সি ভাইয়ের সাথে বড় হয়েছে , বলতে গেলে সারা জীবন রাজীবের উপর ভর করেই চলেছে । তাই ওর মানসিক গঠন অতটা স্ট্রং নয়। কারন রাজীব নিজেও তখন ছোট ছিলো , তাই রানীকে স্ট্রং করে গড়ে তুলতে পারেনি । তাই রানী নিজেকে সব সময় স্থির রাখতে পারে না ।  

আমার মতে রাজীব হলো এই গল্পের সবচেয়ে উদ্ভট আর অবাস্তব চরিত্র । আমি ইচ্ছা করেই এমন্টা করেছি । তবে রাজীবের এমন হয়ে ওঠার পেছনেও কিছু কারন আমি দেখাবো । 

আর জান্নাত মাত্র একটি কারনে কাঁদে , এমনিতে জান্নাত বেশ স্ট্রং , কিন্তু রাজীবের জন্য ওর মনে মামতা এতো বেশি যে রাজীবের দুঃখেই সুধু ও কাঁদে । আর নিজের প্রতি যখন কোন অবিচার দেখে তখন ওর রাগ হয় । যেটা আগে ওর বাবা মায়ের দুজনের প্রতিই হতো , এখন সুধু বাবার উপরে হয় । 

আর জয় , টিপিক্যাল ইয়ং ব্রাট , আমার খুব পছন্দের চরিত্র ।  বেশ একগুয়ে , একবার যেটা ভেবে নেয় সেটা আর কেউ পরিবর্তন করতে পারে না ।যেমন ধরুন রাজীব যখন রাতের বেলা বাপ্পি কে হেল্প করা নিয়ে রিগ্রেট ফিল করছিলো , তখন জয় ভেবে নিয়েছিলো এই রিগ্রেট রাজীবের মাঝে এসেছে ওর সাথে বন্ধুত্ব রাখার জন্য , যেই ভাবা সেই কাজ , সেই থেকে রাজীবের সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখছে না । 


অল্প কিছু মাসালা খুব   শীঘ্রই  আসবে । 

আরো একটা ভুল কিন্তু হয়েছে আমার , সেটা হচ্ছে ,জান্নাত রাজীব কে কাজ করার জন্য একটা ল্যাপ্টপ দিয়েছিলো , তাহলে রাজীবের সেদিন বাইরে যেতেই কেনো হবে ?  দেখুন  ওপেন ফোরামে গল্প লেখার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে , পাঠক ভুল ধরবে , নিজেদের মতামত দেবে ।  কিন্তু এতদিন সেটাই মিস করছিলাম ।আমি আগেও বলেছি আবারো সবার উদ্দেশ্যে  বলছি , যে কোন ধরনের কমেন্টস আমার কাছে মূল্যবান , লাইক এবং রেপুটেশনের চেয়ো বেশি মূল্যবান । 

জানি না আপনি উত্তর পেয়েছেন কিন ,যদি আরো জিজ্ঞাসা থেকে অবশ্যই করবেন ।এবং অবশ্যই সমালোচনা করবেন ,যদি আমার কাছে উত্তর থাকে আমি দেবো ,যদি না থাকে সামনে গিয়ে আরো ভালো করার চেষ্টা করবো । 

অনেক ধন্যবাদ এমন একটা কমেন্ট করার জন্য ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
কি বলেন? রাজীব আমার খুব পছন্দের। সবচেয়ে ম্যাচিউর আর লজিকাল। যদিও একটু বেরসিক, কিন্তু ওকে যতই পড়েছি আবেগাপ্লুত হয়েছি।
কষ্ট দিয়েন না বেচারা কে। আমরা পাঠকরাও কষ্ট পাবো নাহলে।
আর আপনাকেও ধন্যবাদ, এতো ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য, অনেক চরিত্র গুলো সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা দূর হয়ে গেল।
ভালোবাসা নেবেন ছোট ভাইয়ের।
[+] 1 user Likes ধূমকেতু's post
Like Reply
(15-10-2025, 08:21 PM)ধূমকেতু Wrote: কি বলেন? রাজীব আমার খুব পছন্দের। সবচেয়ে ম্যাচিউর আর লজিকাল। যদিও একটু বেরসিক, কিন্তু ওকে যতই পড়েছি আবেগাপ্লুত হয়েছি।
কষ্ট দিয়েন না বেচারা কে। আমরা পাঠকরাও কষ্ট পাবো নাহলে।
আর আপনাকেও ধন্যবাদ, এতো ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য, অনেক চরিত্র গুলো সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা দূর হয়ে গেল।
ভালোবাসা নেবেন ছোট ভাইয়ের।

নাহ কষ্ট  দেবো কেনো? কষ্ট দিব না ।

আমি একজন পাঠকের কমেন্টের উত্তরে বলেছিলাম এই গল্পের কে প্রধান চরিত্র সেটা পাঠক ঠিক করবে ।এবং একেক জনের কাছে একেক জন প্রধান চরিত্র হবে । অনেকটা তেমন ই হচ্ছে দেখে ভাল লাগলো। আপনার কাছে রাজীব পছন্দ , একজনের কাছে জয় পছন্দ , অন্য একজনের কাছে জান্নাত । কেউ এখনো রানী কে পছন্দ করেনি যদিও ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
এত সুন্দর গল্প কিভাবে চোখের আড়ালেই থাকলো এতদিন সেটাই বুঝে আসছেনা!
এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ফেললাম। যেন হারিয়ে গেছিলাম বেশ কিছু সময়।
দারুন হচ্ছে❤
Heart
[+] 1 user Likes রাত্রী's post
Like Reply
(16-10-2025, 01:44 PM)রাত্রী Wrote: এত সুন্দর গল্প কিভাবে চোখের আড়ালেই থাকলো এতদিন সেটাই বুঝে আসছেনা!
এক নিঃশ্বাসেই পড়ে ফেললাম। যেন হারিয়ে গেছিলাম বেশ কিছু সময়।
দারুন হচ্ছে❤

অনেক ধন্যবাদ রাত্রী , আপনার কিছুটা সময় উপভোগ্য করতে পেরে আমি ও বেশ আনন্দিত বোধ করছি । আশা করছি ভবিষ্যতেও আপনি এই গল্প উপভোগ করবেন ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
(14-10-2025, 06:50 PM)Saj890 Wrote: Darun

আপনার ৫০০ তম পোস্ট যেন এই গল্পেই হয় সেই আশা করছি
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
কিছু সম্পর্কঃ ৮ ()

 
 
আজকাল জয় শিকারির মত ওঁত পেতে থাকে আর রানী শিকারের মত পালিয়ে বেড়ায় ।  রানীর এমন পালানোর তৎপরতার পেছনে জান্নাতের প্রত্যক্ষ হাত আছে । যদিও ওদের দুজনের সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি । বরং সেদিনের ঝগড়ার পর থেকে আরো বেশি অবনতি হয়েছে । দুজনে মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ । তবুও জান্নাত রানীকে বলেছিলো , “ তোকে জয় কেন যেন খুঁজছে, বলেছে তোকে শিক্ষা দিয়ে দেবে , কি করেছিস তুই?”  উত্তরে রানী কিছুই বলেনি , তবে জান্নাত রানীর মুখ শুকিয়ে যেতে দেখে , নিজের কাজ হাসিল হয়েছে বলে ধরে নিয়েছিলো । জান্নাতের ইচ্ছা ও কোন একটা উপায় না খুজে পাওয়া পর্যন্ত রানীকে জয়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা ।
 
 
আর রানীর এমন তৎপর হয়ে যাওয়ায় জয় আরো ফ্রাস্টেটেড হয়ে উঠেছে ।  রানীকে সুধু ক্যাম্পাসেই দেখে ও, একা কোথাও পাওয়া যায় না।  তবে পাব্লিক প্লেসে কোন সিন জয় করতে চায় না । আর ক্যাম্পাসে ওকে অনেকেই এখন চেনে । তাই ক্যাম্পাসেও  সিন করা যাবে না । তবে আবরার নামের ছেলেটার উপর অলরেডি এটাক করে ফেলেছে । নিজে হাত লাগায়নি , জয় খোঁজ নিয়ে দেখছে , আবরার এর টাকার সমস্যা আছে , তাই ওর হলে থাকা বন্ধ করে দিয়েছে , রাজনৈতিক পাওয়ার খাটিয়ে । এই প্রথম জয় নিজের রাজনৈতিক পাওয়ার কারো উপর প্রয়োগ করেছে । হলের অন্য ছেলেরা আবরারের উপর এমন অত্যাচার করেছে যে আবরার হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে । ছেলেটা বিচক্ষণ , বিচার দিতে যায়নি ।  
 
এখন আবরারের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে নিজের খরচ বহন করতে গিয়ে । কোন জায়গায় যে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকবে সেটাও পারছে না । এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয়  নিয়েছে ।  সেই আশ্রয় কতদিন বলবত থাকবে সেটা আবরার জানে না । কিন্তু আবরার রানীকে এই ব্যাপারে কিছু জানায়নি ।   
 
তবে জয় এটুকু করে শান্ত হয়নি , ভেতরে ভেতরে আগ্নেয়গিরির মত শক্তি সঞ্চয় করছে ওর রাগ । যখন যখন ফেটে বেরুবে তখন কি হবে কে জানে ?
 
অবশ্য এর উত্তর পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না। নিজের উত্তাপ কিছুটা দেখিয়ে দিয়েছে জয় । তবে উদর পিন্ডি বুধোর ঘারে দিয়ে দেয়া হয়েছে বলা যায় ।
 
তখন বাজে রাত সাড়ে এগারোটা , রাজীবের ভীষণ মশা লাগছিলো । কিন্তু হাতে প্রচুর কাজ , তাই রাত জেগে কাজ করতে হবে। আজকাল রাজীব ওর অফিসের কাজ ও জান্নাতের কিনে দেয়া ল্যাপ্টপে করে । আগে করতো না , একদিন জান্নাত ই ওকে ধরলো , বলল তুই এখনো কেনো ওই অফিসে যাস? তোর না এখন ল্যাপটপ আছে ?” । রাজীব লাজুক হেসে বলেছিলো , ‘ এটা তো আমাদের চ্যেনেলের ল্যাপটপ , এটাতে কি অন্য অফিসের কাজ করা যাবে?” রাজীবের উত্তর শুনে ভীষণ ক্ষেপে গিয়েছিলো জান্নাত । সেই থেকে রাজীব অফিসের কাজ ও বাসায় বসে করে । এতে রাজীবের অনেকটা সময় বেঁচেছে , পড়াশুনা করার বাড়তি একটু সময় পেয়েছে ।     
 
তাই রাজীব দোকানে যায় , মশা মারার ঔষধ কিনতে , আর জয় ও তখন ফিরছিলো , দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে । গলির ঠিক মাঝামাঝি দুজনে মুখোমুখি । রাজীব স্বাভাবিক ভাবেই জয় কে এড়িয়ে যাচ্ছিলো । এই পরিস্থিতিতে জয় ও সাধারনত এড়িয়ে যায় ।  কিন্তু সেদিন  জয় সেটা হতে দেয় নি , রাজীব কে দেখেই জয়ের মুখ নিশপিশ করতে শুরু করে । রানীর উপরের রাগ কিছুটা রাজীবের উপরে ঢেলে দিতে ইচ্ছা হয় । কারন জয়ের মতে রানীর এতো বড় সাহসের পেছনে রাজীবের মদদ আছে । না হলে রানী কোনদিন এই সাহস করতে পারতো না , ভাইয়ের কথা ছাড়া এক পা ও ফেলে না রানী । (  বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জয়ের ধারনা নেই, রানী যে বিদ্রহ করেছে সেটা ও জানে না)    
 
ভেবেছিলাম তুই একটা স্বার্থপর , কাপুরুষ এখন দেখছি তোর গুণের শেষ নেই , দিন দিন সেগুলো বিকশিত হচ্ছে
 
জয়ের এমন তির্যক মন্তব্যের কোন কারন রাজীব খুজে পায় না। বেশ অবাক হয় , এমনিতে সামনা সামনি হলে তো কথা বলে না।   রাজীব নিজেকে শান্ত রাখে , তবে উত্তর দিতে দেরি করে না , “ আমার কাজ আছে , ফালতু আলাপ করে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার নেই”  রাজীব আবার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ,  
 
কি কাজ করিস সেটা আমি জানি , এরকম কত বাল ফেলবি তুই হা হা হাজয় হাসে , কিন্তু ওর চেহারায় ক্রোধ স্পষ্ট দেখা যায় ।
 
এবার আর রাজীব কোন উত্তর দেয় না , আবার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে , কিন্তু এবার জয় ওর বুকে হাত দিয়ে থামায় । কোথায় যাস ? তোর আসল চেহারা দেখে যা , তুই যে খুব বলতি , আমার ছোট বোনের খেয়াল রাখতে রাখতে আমি নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি , এই তোর খেয়াল রাখা ? বাড়িতে অপরিচিত ছেলে ঢুকছে , সেই খেয়াল তুই রাখিস? তোর না হয় মান সম্মান নেই , আমাদের তো আছে , ছোট আব্বুর তো আছে”  জয় এমন ভাবে কথা গুলো বলে যেন রানীর ও একজন গার্ডিয়ান হিসেবে বলছে । নিজের আসল মোটিভ লুকিয়ে রাখে ।  
 
রাজীব আশেপাশে তাকায় , দেখে কেউ শুনছে কিনা , তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে এসব কথা বলার এটা যায়গা না জয় , তোর যদি এতো চিন্তা থাকে তুই আব্বুর কাছে গিয়ে বল, আমার বাড়িতে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা তোর কাছ থেকে শুনতে হবে না, আমি ভালো করেই জানি কি হচ্ছে না হচ্ছে”    
 
জয়ের মাথায় আগুন ধরে যায় যেন , রাজীব আবরারের ব্যাপারে জানে এই কথা শোনার পর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে , ভাবে তলে তলে এতোদুর এগিয়ে গেছে , বাড়ির মানুষ ও জেনে গেছে । জয় রাজীব কে ধাক্কা দেয় , হিস হিস করে বলে “ আমি জানতাম তুই একটা স্বার্থপর , কিন্তু তুই যে একটা স্পাইনলেস বাস্টার্ড সেটা আমার জানা ছিলো না , যদি জানতাম…… ছিঃ এক সময় আমি তোকে বন্ধু ভাবতাম সেটা ভাবতেও ঘেন্না হচ্ছে , খালি বাড়িতে বোন ছেলে নিয়ে এসে ফুর্তি করবে তোর তাতে কোন সমস্যা নেই !!!!!! থুজয় রাস্তায় থুতু ফেলে ,   
 
এবার আর রাজীব নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না , জয়ের ধাক্কা খেয়ে একটু পিছিয়ে পড়েছিলো , সেই যায়গা টুকু বেশ গতিতে পেরিয়ে এসে শরীরের সব শক্তি দিয়ে জয় কে ধাক্কা দেয় , আচমকা ধাক্কায় জয় নিচে পরে যায় , আশেপাশে দুই একজন লোক উকি দিতে শুরু করেছে , সেটা রাজীবের নজরে আসে , তাই নিচু হয়ে রাগে কাঁপতে কাঁপতে নিচু স্বরে বলে , “ তুই যদি আর একটা বাজে কথা রানীর সম্পর্কে বলবি , তাহলে আমি ভুলে যাবো তুই কে , আমি তোকে সাবধান করে দিচ্ছি , আমাকে যা বলার বল, কিন্তু রানীর সম্পর্কে একটা বাজে কথাও আমি শুনবো না , রানী আমার বোন, আমি নিজের হাতে ওকে বড় করেছি , আমি জানি ও কি করতে পারে , আর কি করা ওর পক্ষে সম্ভব না, আর রানী নিজের বাড়িতে কাকে আনবে কাকে আনবে না এটা ও তোর কাছে জবাবদিহি করবে না”       
 
কয়েক মুহূর্তের জন্য জয় হতবাক হয়ে যায় , হতবাক হওয়ার প্রথম কারন রাজীব যে ওকে ধাক্কা দিয়েছে তার প্রচণ্ডতা , দ্বিতীয় কারন রাজীবের রাগ , জয়ের কাছে মনে হচ্ছে রাজীবের চোখ দুটো যেন ইটের ভাটির মত জ্বলছে । রাজীব যে এরকম রাগান্বিত হতে পারে সেটা ও ভুলেই গিয়েছিলো । সেই ছোট বেলার রাজীব কে এক ঝলকের জন্য যেন দেখতে পায় জয় । প্রচণ্ড জেদ আর মারামারিতে সবার আগে  থাকতো রাজীব ।
 
তবে মুহূর্তের মাঝেই জয়ের ঘোর কেটে যায় , আবার প্রচন্ত জেদ এসে ভর করে , রাজীবের শেষ লাইন ওর কানে বাজতে থাকে , আর সেই জেদ থেকে এমন কথা বলে যা হয়তো অন্য সময় বলতে দশবার ভাবতো , রাজীবের ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পরে যাওয়াতে ওর ইগো ও প্রচণ্ড হার্ট হয়েছে ।
 
হা হা হা , বাড়ি , তোর বাড়ি , রানীর বাড়িএই কথা বলতে বলতে উঠে দাড়ায় জয় , তারপর চেহারা বিকৃত করে বলে এই বাড়ি তোদের কিভাবে হয়েছে সেটা আমি জানি না ভেবেছিসহা হাহা জয় উচ্চস্বরে হাসতে থাকে ,
 
এবার রাজীবের পালা অবাক হওয়ার । রাজীব কোনদিন ও ভাবেনি জয় এই ধরনের কথা বলবে। তারপর আবার নিজেকে নিজেই শুধরে নেয়  । মনে মনে ভাবে , এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে , কিছুক্ষন আগে রানীর চরিত্র নিয়ে কথা বলে জয় সব সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছে , রাজীবের আর রুচি হয় না জয়ের সাথে কথা বলার । ঘুরে বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েও পারে না , পেছন থেকে জয় ওকে টেনে ধরে , নিজের দিকে রাজীব কে ঘুরিয়ে নিয়েই ঘুষি বসিয়ে দেয় রাজীবের মুখ লক্ষ্য করে । নিজের ইগোকে শান্ত করার জন্যই জয় এই কাজ করে । রাজীবের মত একটা ছেলে ওকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে সেটা ও মেনে নিতে পারে না।
 
চাপা একটা কাতর ধ্বনি করে রাজীব নিজের মুখ ঢেকে বসে পরে , জয়ের সাথে রাজীবের শক্তির তুলনা হয় না । দরদর করে রক্ত বেড়িয়ে আসে রাজীবের নাক থেকে । এদিকে জয় যেন উন্মাদ হয়ে গেছে , বার বার রাজীব কে উঠতে বলতে থাকে , বলে ওঠ , তোর মারামারি করার সখ আমি মিটিয়ে দেবো , আয় দেখি তোর কত শক্তি হয়েছে , আমাকে ধাক্কা দিস , কত বড় সাহস, তোরা ভাই বোন মিলে ভেবেছিস কি , তোরা যা ইচ্ছা করবি আর আমরা চুপ করে থাকবো, তোদের রাজত্ব পেয়েছিস হ্যা”   
 
এই ঘটনা দেখে আশেপাশের কিছু লোক এগিয়ে এসে জয় কে থামায় , দুজন লোক রাজীব কে ধরে ওঠায় । কিন্তু জয় কে থামাতে পারে না , ও আস্ফালন করতে থাকে , বলে হিজড়া কোথাকার , যা রাস্তায় গিয়ে ছাইয়া ছাইয়া কর
 
দুজন লোক রাজীব কে নিয়ে গলির মাথায় ফার্মেসীতে নিয়ে যায় । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর , অভিজ্ঞ ঔষধ বিক্রেতা , যে রাজীব আর জয় কে ছোট বেলা থেকেই চেনে , সে অবাক হয়ে বলে জয় তোকে মারলো!!! ঘটনা কি?” রাজীব কোন উত্তর দেয় না । সেটা দেখে লোকটা দুটো ঔষধ দেয় বলে  ভাগ্য ভালো বেশি কিছু হয়নি , এই ঔষধ নিয়ে যা , ব্যাথা বেশি হলে খেয়ে নিস।
 
রাজীব উঠে দাড়াতে গেলে , আবার সেই ফার্মেসীর লোক বলে যদি পুলিস কেস করতে চাস তাহলে মেডিকেলে যা হা হা হা
 
রাজীব মলিন হাসে , হাসতে গিয়ে ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে ।
 
মেইন গেইট খুলে রাজীব খুব ধিরে ধিরে নিজের ঘরে চলে আসে , যদিও এখন এই সময় কেউই ঘর থেকে বের হবে না । তবুও রিক্স নেয় না। নাকের ফুটোয় তুলা গুজে রাখার কৈফিয়ত দিতে পারবে না যদি কেউ দেখে ফেলে  । সেই রাতের কথা আজো  কেউ জানে না । না জয় কাউকে বলেছে, না রাজীব ।   
 
****  
 
রাজীব লুকাতে চাইলেও লুকানো যায়নি শেষ পর্যন্ত , জান্নাত দেখে জিজ্ঞাস করেছিলো , “ এই তোর নাক লাল কেনো , কি হয়েছে। রাজীব প্রথমে কোন উত্তর দিতে পারেনি , অবাক হয়ে সুধু তাকিয়েই ছিলো , জান্নাত যখন আবার আরো একটু ধমকের সুরে জিজ্ঞাস করেছিলো , তখন রাজীব হাসতে হাসতে বলেছিলো , “ ব্যাথা পেয়েছি
 
এরকম ব্যাথা তুই কেমন করে পেলি , কেউকে তো কিছু বললি ও নারাজীব , জান্নাতের কণ্ঠে যে উৎকণ্ঠা আর মমতার মিশেল দেখছিলো , মায়ের মৃত্যুর পর আর কারো মাঝে যা দেখেনি । সেই ছোট বেলায় মায়ের মাঝে  পেয়েছিলো । বড় আম্মু এর কাছাকাছি হলেও জান্নাতের সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠবে না ।
 
প্রচণ্ড একটা ভালো লাগা এসে ভর করেছিলো রাজীবের উপরে । ওর জন্য এমন করার মানুষ ও যে এই দুনিয়ায় আছে সেটা জানতে পেরে নিজেকে বেশ মূল্যবান মনে হচ্ছিলো । শেষ পর্যন্ত রাজীবকে একটা মিথ্যা বানিয়ে বলতে হয়েছিলো ।  কিন্তু সেই মিথ্যা বিশ্বাস করাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো । সেই একি মিথ্যা অবশ্য রানী আর ওর আব্বুকে খুব সহজে খাইয়ে দেয়া গিয়েছিলো । সাবধানে থাকিসএই উপদেশ আব্বুর কাছ থেকে , আর সাবধানে থাকতে পারিস না?” এই ধমক রানীর কাছ থেকে শুনতে হয়েছিলো ।    
 
রাজীব অনেক ভেবেছে , জয়ের এমন আচরণ নিয়ে । রাজীবের মতে , জয় বলতেই পারে , রানী কে ও জান্নাতের মতই মনে করে ।   তাই রানীর এমন আচরণ ওর কাছে দৃষ্টিকটু মনে হতেই পারে । তাই বলে এমন ক্ষেপে যাবে? কিছুতেই কিছু মেলে না । শেষ পর্যন্ত ভাবা বাদ দেয় । এই উপসংহার টনে  , যে জয় কে ও চিনতো , সেই জয় আর নেই , এটা নতুন জয় । যে একজন উঠতি রাজনৈতিক নেতা , ক্ষমতার গরমে কি করছে ও নিজেই জানে না ।
 
রাজীবের মন কিছুটা শান্ত হয় , না হলে শান্তি পাচ্ছিলো না । জয়ের মুখে রানীর চরিত্র নিয়ে বাজে কথা শোনার পর থেকে শান্তিতে ছিলো না , সেই সাথে বাড়ি নিয়ে খোটাও দিয়েছে । ওর বিশ্বাস হচ্ছিলো না এই জয় একদিন ওকে ভাই বলতো । তবে এখন বেশ শান্তি পাচ্ছে । সিদ্ধান্ত নিয়েছে , জয়ের প্রতি আর কোন এক্সপেকটেশন রাখবে না । রাখলে নিজেই দুঃখ পাবে ।
****  
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
কিছু সম্পর্কঃ ৮ (গ) এর বাকি অংশ............




জান্নাত অনেক ভেবেছে , কিভাবে জয়ের আর রানীর ব্যাপারটা সল্ভ করা যায় , কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারছে না । আর এটা এমন একটা ব্যাপার যা কারো সাথে আলাপ করতে ও পারছে না । শেষে একদিন উপায় নিজে হেটেই এলো । আবরার , এই ছেলেটার নাম কেন আগে মনে আসেনি সেটাই জান্নাতের মাথায় ঢোকে না । ও ছাড়া রানীর ব্যাপারটা সুধু এই ছেলেটাই জানে ।

 
আরে জান্নাত কেমন আছেন , চায়ের দাওয়াত কন্তু পেলাম নাজান্নাত বসে বসে রানীর কথাই ভাবছিলো । আজকাল এই কেস ছাড়া আর কোন কিছুই ওর মাথায় থাকে না । এমন সময় আবরার এসে উপস্থিত হয় । আর তখনি জান্নাতের মাথায় আসে , আরে এই ছেলের সাথে তো শেয়ার করা যায় ।  
 
জান্নাত হাসে , বলে আপনার ান্ধবি আমাকে নিস্তার দেবে ? যদি আপনাকে আমার সাথে দেখে, আচ্ছা বাদ দেন , আপনি কেমন আছেন?”
 
আমার আর থাকা …… কেষ্ট ব্যাটার কোপানলে পরেছি
 
আবরারের বলার ভঙ্গি দেখে জান্নাত উচ্চ স্বরে হেসে ওঠে , বলে মানে ? কোন কেষ্ট?”  
 
ফাটা কেষ্ট না , এ একেবারে কালা কেষ্ট , আমাদের বিনোদিনী রাঁধা রানীর কেষ্ট”  
 
জান্নাতের বুঝতে কিছুক্ষন সময় লাগে , আর যখন বুঝতে পারে আবরার জয়ের কথা বলছে , হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরার অবস্থা হয় ওর । জান্নাত বুঝতে পারে এই ছেলের সাথে রানীর এতো ভাল সম্পর্ক এতো কম সময়ে কি করে হলো । এর সাথে কিছুক্ষন কথা বললে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে ।  
 
আপনি জয় কে চেনেন?” জান্নাত অবাক হয়ে জানতে চায় , রানী শেষ পর্যন্ত কারো কাছে অন্তত জয়ের নাম নিয়েছে ।
 
চিনতাম না , এখন হাড়ে হাড়ে চিনতে পারছি, আগে যদি জানতাম ……… , আপনি চেনেন ? ওহ আপনি তো চিনবেন ই একি এলাকায় থাকেন যেহেতু”  আবরার করুন মুখ করে বলে
 
ভাই একটু বেঁচে থাইকেন ? ও ডেঞ্জারাস কিন্তুএই বলে জান্নাত নিজের বাম ভ্রুর উপরে একটা কাটা দাগ দেখায় , “ এটা দেখছেন? এটা ওর হাতের কাজ। ওর কোন জিনিসে কেউ চোখ দিয়েছে এরকম হলে  ভীষণ ক্ষেপে যায় , আমি একবার ওর পছন্দের বাই সাইকেল নষ্ট করেছিলাম”
 
মানে? আপনি তো দেখছি বেশ ভালো করেই চেনেনআবরার একটু অবাক হয় ,  
 
হ্যা তা বলতে পারেন , জন্মের পর থেকে বাড়ি শেয়ার করছি , বাবা মা শেয়ার করছি চিনতে তো হবেই” জান্নাত মুচকি হেসে রহস্য করে বলে ।
 
আবরার হা করে তাকিয়ে থাকে , তারপর কিছুক্ষন পরে বলে “ উনি আপনার ভাই!!!! যাহ বিশ্বাস হয় না”
 
“ কেনো? বিশ্বাস হচ্চে না কেনো?”
 
“ কিভাবে বিশ্বাস হবে বলুন , আপনি এতো ম্যাচিওর , এতো পরিস্কার চিন্তা ভাবনা আপনার , আপনার ভিডিও যত দেখি তত মুগ্ধ হই , আর উনি , কি আর বলবো”
 
জান্নাত হাসে , ওকে ম্যাচিওর আর জয় কে প্রকারান্তে ইম্ম্যাচিওর বলায় বেশ খুশি হয় । “ হ্যা তা বলতে পারেন , আমাদের পরিবারে আমি হচ্ছি  ম্যাচিওর ওয়ান , আর জয় হচ্ছে ডেঞ্জারাস ওয়ান , তা কি করেছে আপনাকে”
 
“ কি করেছে মানে ? রাতের ঘুম হারাম করেছে , হলের ছেলে পেলে লেলিয়ে দিয়েছে , কোন ভাবে প্রান নিয়ে বেঁচেছি”
 
“ ওওও , তাও ভালো , অন্য কারো এতো পাওয়ার থাকলে , সেতো আপনাকে মাইর দিতো, জয় তো সুধু আপনাকে হল ছাড়া করেছে , আমি ভেবেছিলাম মারবে” জান্নাত আবরারের সাথে দুষ্টুমি করে বলে ।  
 
“ ভাই , একটা কথা আছে না , পিঠে সয় , কিন্তু পেটে সয় না, আমার পিঠে পরলে আমি না হয় সহ্য করে নিতাম , কিন্তু লাথিটা পেটে পরেছে যে , এখন ঘর ভাড়া করে থাকার মত অবস্থা আমার নেই” আবরারের মুখটা একটু মলিন হয়ে আসে ।
 
জান্নাতের একটু লজ্জা হয় , আবরার কে একটু ভাল করে দেখে , পায়ের সেন্ডেল বেশ মলিন । জান্নাতের বুঝতে সমস্যা হয় না আবরার ওদের মত ধনীর ঘরের ছেলে না , রানীদের মতও নয় । বেশ কষ্ট করেই লেখাপড়া করছে । একটু আগে আবরারের হলে সিট হারানো নিয়ে রসিকতা করায় বেশ লজ্জিত বোধ করে জান্নাত ।
 
“ আমি ভাবছিলাম একটা কিছু করা দরকার , এভাবে চলতে দেয়া যায় না , ওরা একে অপর কে ভুল বুঝবে , আর পোহাতে হবে আমাদের” জান্নাত একটু রাগত স্বরে বলে ,
 
“ হ্যা , তা তো করতেই হবে , রাঁধা কৃষ্ণ লীলা করবে আর আমরা মাঝে থেকে বিলা হয়ে যাবো , এটা তো চলতে দেয়া যায় না” আবরার নিজের সিরিয়াস্নেস বোঝানোর জন্য এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে আঘাত করে ।
 
“ কিন্তু করবো টা কি করে , আমরা যতই জয় কে বুঝাই , জয় বুঝবে না , আমি এই নিয়ে অনেক ভেবেছি , কিন্তু কোন কুল করতে পারছি না , আপনার কাছে কোন আইডিয়া আছে ?” জান্নাত আবরারের দিকে তাকায় ।
 
 আবরার কিছুক্ষন ভাবে ,  তারপর জান্নাতের দিকে তাকায় , বলে “ আচ্ছা তার আগে একটা কথা বলুন তো , আপনি ঐদিন রানীর সামনে এমন ভাব করলেন যে আপনি জানেন না যে রানীর সমস্যা জয় সাহেব কে নিয়ে , আর এখন দেখছি আপনি সব জানেন, ঘটনা কি?”
 
“ রানী ই আমাকে কোনদিন বলেনি , আমিই চিন্তা ভাবনা করে বের করেছি , তারপর জয়ের সাথে কথা হয়েছে , আর জয় আমার কাছে স্বীকার করেছে , হয়তো আমার ভাই বলে রানী বলতে লজ্জা পেয়েছে , তাই আমিও ভাব করি আমি জানি না”
 
“ তাহলে দেখছি আপনাদের মাঝে কিছু গোপন রাখার মত ব্যাপার সেপার ও আছে , রানী বলেছিলো ও আপনার কাছে সব বলতো”
 
“ এই ঘটনার আগে রানীর জীবনে এমন কিছুই ঘটেনি না আমার কাছে গোপন রাখার মত ছিলো , ওর লাইফ ছিলো একদন সাদাসিধা”  জান্নাত একটু বিরক্তই হলো , আবরারের এমন অফ টপিক নিয়ে কথা বলার কারনে , কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না।
 
“ তা আপনি কি কি গোপন করেছেন রানীর কাছে ? ওহ আর একটা কথা , রাজীব ভাই কেমন আছেন , খুব ভালো লোক কিন্তু উনি , একদম মাই ডিয়ার টাইপ , আমকে সেদিন রাতের খাবার খেয়ে আসতে বলেছিলো” কথা গুলো বলে আবরার জান্নাতের দিকে তাকায় , ঠিক যেমন রিএকশন আশা করেছিলো তেমনি পায় ।
 
“ আমি আপনাকে জিজ্ঞাস করলাম কি আর আপনি বলছেন কি ? রাজীবের খবর রাজীব জানে , আমি কি করে জানবো” জান্নাত এবার বিরক্ত হয় , এবং কিছুটা প্রকাশ ও করে । আবরার ছেলেটার একটা বদ অভ্যাস খুজে পায় ও , এই ছেলে একটু হিন্টস পেলেই দুইয়ে দুইয়ে চার করে ফেলতে পারে । এবং ঠিক বুঝেছে কিনা সেটা পরিক্ষা করেও দেখে ।
 
“ আরে এমনি জিজ্ঞাস করলাম , আপনি আর রাজীব ভাই বেশ ক্লোজ তো , আচ্ছা বাদ দেন , আমি একটা উপায় পেয়েছি , আমার একটা টেকনিক জানা আছে , সেটা হচ্ছে কাটাকাটি টেকনিক “ আবরার খুব কঠিন অংক বোঝাচ্ছে এমন ভাবে বলে ।
 
কিন্তু জান্নাত বুঝতে পারে না , ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করে “ মানে?”  
 
আবরার  আরো উৎসাহী হয়ে ওঠে , ভাব খানা এমন যে জান্নাত একজন মনযোগী স্টুডেন্ট , আর ও টিচার , এখন ও জান্নাত কে বোঝাবে , “ জয় সাহেবের মনে এখন ভীষণ রাগ এবং অভিমান , আর রানীর মনে ভয় এবং অনুশোচনা । এই অনুভূতি গুলো ওদের দুজন কে আলাদা করে রেখছে । এবং অনুভূতি গুলো অনেকটা একে অন্যের বিপরীত অনুভূতি”
 
“ আচ্ছা একটু সহজ করে বলুন না প্লিজ” মাঝে জান্নাত ফোঁড়ন কাটে । মনে মনে বলে , ‘জয় যদি তোর হাড্ডি ভেঙ্গে দিতো তাহলে আমি খুশি হতাম ‘   
“ আরে শুনুন না , এখন আমাদের করতে হবে কি জানেন?”
 
জান্নাত মাথা নেড়ে জানায় ও জানে না।  
 
“ তাহলে শুনুন , আমাদের করতে হবে হচ্ছে , ওদের দুই জন কে এমন পরিস্থিতির মাঝে ফেলে দেয়া যেখানে ওদের অনুভূতি গুলো চূড়ান্ত রুপ নিতে পারবে”  
 
“ সেটা কিভাবে ?”
 
“ ওদের একদম একা কোথাও meet করিয়ে দিতে হবে । একদম একা” আবরার হাত দিয়ে শুনশান পরিবেশের একটা ভঙ্গি করে ।  যেমনটা মানুষ ভুতের গল্প বলার সময় করে থাকে ।
 
“ আরে না জয়ের যা রাগ , যদি কিছু করে ফেলে “ জান্নাত এই প্ল্যান বাতিল করে দেয় ।
 
“ না না তেমন কিচ্ছু হবে না , যখন  জয় সাহেবের রাগ আর অভিমান চূড়ান্ত আকার ধারন করবে , তখন রানীর ভয় আর অনুশোচনা ও চূড়ান্ত আকার নেবে , তখন ওই জনশূন্য জায়গার বাতাসে ভেসে বেড়াবে রাগ আর ভয় , অভিমান আর অনুশোচনা । একদিকে রাগ , একদিকে ভয় , একদিকে অভিমান অন্য দিকে অনুশোচনা । রাগ ভয় অনুশোচনা অভিমান , এই চারের মাঝে তীব্র লড়াই চলবে , রক্ত ক্ষয়ী সেই লড়াইয়ে এই চার একে অন্য কে ধংস করে ফেলবে , এর পর সেখানে থাকবে সুধু জয় আর রানী , আমাদের রাঁধা কৃষ্ণ নিজেদের একদম raw ফর্মে , তখন কি হবে ভেবেছেন একবার…… তখন……”  আবরারের চোখ চকচক করছে , আবরার হাত পা নেড়ে নেড়ে এমন ভাবে কথা গুলো বলছিলো , যেন ও রাগ অভিমান অনুশোচনা এই অনুভূতি গুলো দেখতে পাচ্ছে । যেন আবরার কোন নাটকের দৃশ্য অভিনয় করে দেখাচ্ছে । একপর্যায়ে জান্নাত ও আবরারের বলার ভঙ্গিতে কিছুটা বিমোহিত হয়ে পড়েছিলো , জান্নাতের কাছেও মনে হচ্ছিলো ও দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছে ।  কিন্তু এই পর্যায়ে এসে জান্নাত বলে ওঠে
 
“ প্লিজ স্টপ , এর পর কি হবে আমি আর শুনতে চাই না , ভাবতেও চাই না ,  this is sick,  তবে আপনার বলার ভঙ্গি , আর অঙ্গ ভঙ্গি কিন্তু বেশ , এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিলো দৃশ্যটা আমি দেখছি” জান্নাত বেশ মুগ্ধ হয়েই বলে ।    
 
“ হালকা থিয়েটারের সখ ছিলো, কিন্তু চান্স পাইনি” আবরার কে এই প্রথম জান্নাত লাজুক ভাবে হাসতে দেখে ।  
 
“ কিন্তু আমার যে ভয় থেকেই যাচ্ছে , জয় যদি উল্টা পাল্টা কিছু করে , তখন আমি রা… রানীকে মুখ দেখাবো কি করে”
 
  “ হ্যা তেমন কিছু হলে রাজ…… রানীর কাছে আপনাকে মুখ লুকাতেই হবে হয়তো” আবরার সয়তানি হাসি হেসে বলে ।
 
উত্তরে জান্নাত ও হাসে , ভাবে এর কাছ থেকে মুক্তি নেই , এই ছেলে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে ভালোবাসে ।
“ আচ্ছা বলুন তো আপনি জয় সাহেব কে কতটুকু বিশ্বাস করেন?
 
“ এই ধরনের ব্যাপারে এক ফোঁটাও না” জান্নাত এক মুহূর্ত ও সময় নেয় না উত্তর দিতে ।
 
“ আপনার ভাই কি true man?”
 
“ কি যা তা বলছেন , ও ম্যান না হলে কি আমি ভাই বোলে পরিচয় দিতাম , তখন বলতাম জয় আমার বোন”
 
“ আরে না না সেই ম্যানের কথা জিজ্ঞাস করিনি , জয় সাহেব  কি chivalrous ছেলে?”
 
জান্নাত একটু ভাবে , ভেবে বলে “ জানি না , ওকে প্রেডিক্ট করা মুশকিল , ও আনপ্রেডিক্টেবল”
 
আবরার আরো একটু  ভাবে , একটু বলতে বেশ কয়েক মিনিট চুপ করে থাকে , তারপর বলে “ আচ্ছা এসব বাদ দেন , আপনার কাছে কি মনে হয় আপনার ভাই কি রানী কে সত্যি ভালোবাসে?”
 
“ আমার কাছে তো তাই মনে হয়েছে , সুধু ভালোবাসাতেই সীমাবদ্ধ নেই , ও বেশ অবসেসড রানী কে নিয়ে , রানী সুধু আমার , আমি নিজেও নিজেকে বাধা দিতে পারবো না , এই টাইপ সিনেমার ডায়লোগ ও দিয়েছে”  জান্নাত একটু ভেবে নিয়ে বলে । তারপর আবার বলে “ তা ছাড়া যেদিন আপনি এসেছিলেন , সেদিন ও পারলে আমাকে খেয়ে ফেলে , নিজের মোবাইল টবাইল ভেঙ্গে অস্থির অবস্থা”  
 
“ তাহলে আমার মনে হয় , এই প্ল্যানে কোন ক্ষতি নেই , জয় সাহেব যদি রানী কে আঘাত করেও , এমন ভাবে আঘাত করবে যেটা রানী সহ্য করতে পারবে , আর সেই আঘাতে রানী ক্ষতি নেই , ট্রাস্ট মি”  
 
“ এতো বিশ্বাস নিজের প্লানের উপরে?” জান্নাত ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাস করে ।
 
“ শুনুন , একজন পুরুষ সে যতই বলবান হোক না কেন , নিজের ভালোবাসার নারীকে কখনো আঘাত করে না , আমি নিজেও একজন পুরুষ, সেখান থেকেই বিশ্বাসটা এসেছে ”
 
“ তাহলে যে প্রায় রোজ খবরে শুনি , কুপিয়ে মেরেছে , এখানে লাইভে এসে খুন করেছে , এসব কি?”
 
“ আরে ধুর , ওরা হচ্ছে ফ্রড , নিজেকেই নিজেরা প্রতারিত করে ওরা , ভাব দেখায় ভালোবেসেছি , আসলে কোনদিন বাসেনি, ভালোবাসার একটা বস্তুকে আঘাত করা যায় না , এরা তো মানুষ কে শেষ করে দিচ্ছে, ভালোবাসার মানুষ কে দূরে ঠেলে দেয়া যায় , শেষ করা যায় না , এই ইগো দ্বারা চালিত মানুষ গুলো , প্রভুত্ব আর মালিকানা কে ভালোবাসার মোড়কে মুরিয়ে রেখেছে”
“ নাইস , চলুন আপনার  পাওনা চা আজকেই খাওয়াই” জান্নত উঠে দাড়ায় ,
 
আবরার ও উঠে দাড়ায় , নিজের ঘড়ি দেখে , তারপর বলে , “নাহ আজ নয় , রানী ডেকেছিলো , ওর আসার সময় হয়ে গেছে”
 
“ ওরে বাবা , আপনি এখনো রানীর সাথে ঘুরছেন , আপনার তো বেশ সাহস , জয় যদি এবার সত্যি সত্যি মাইর দেয়”
 
উত্তর আবরার হাসে , হাসিটা অন্যরকম , তবে জান্নাতের কাছে পরিচিত মনে হয় , কিন্তু কোথায় দেখছে ঠিক মনে করতে পারে না ।
****  
 
রানী একটু দূর থেকেই দেখতে পায় আবরার আর জান্নাত কথা বলছে , দেখেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । একবার ভাবে এখান থেকে চলে যাবে , কেমন মেয়ে রে বাবা !!! কিন্তু আবার সিধান্ত চেঞ্জ করে , ওই দিকে এগিয়ে যায় । রানী কে দেখেই জান্নাত দু হাত উপরে তুলে ফেলে , দ্রুত বলে “ আমি তোর বাধু হাইজ্যাক করার জন্য আসিনি । কসম করে বলছি” বলে জান্নাত হাসে
 
রানী কপাল কুঁচকে বলে “ এখানে সবাই স্বাধীন মানুষ , যে যার সাথে ইচ্ছা কথা বলতে পারে , হাইজ্যাকের কথা আসছে কেনো?”
 
উত্তরে জান্নাত কিছু বলে না , বরং আবরারের দিকে তাকিয়ে বলে “ আমি গেলাম , পরে দেখা হবে”
 
“ বাই” আবরার হাত নারে ।
 
জান্নাত চলে যেতেই রানী ভ্রু কুঁচকে তাকায় আবরারের দিকে ,
 
“ আরে আমি তো এসেছি তুই আসতে বলেছিস বলে , এসে দেখি জান্নাত , আমাকে বলল চলুন চা খাওয়াই , আমি তো সাফ বলে দিয়েছি , না এখন সময় নেই , রানী ডেকেছে , জরুরি কথা আছে আমার সাথে”
 
আবরার বেশ গম্ভির ভাবে বলে , সেটা দেখে রানীর কঠিন মুখ একটু নমনীয় হয় । ঠোঁট দুটো বাঁকিয়ে বলে “ ঠিক করেছিস, আর কোনদিন পাত্তা দিবি না”
 
“ অবশ্যই , তুই যেখানে আমি সেখানে , আমি হলাম তোর লেজ “ আবরার এখনো বেশ গম্ভির ভাবে বলে ।
 
রানীর ভ্রু আবার কুঁচকে যায় , বলে “ তুই কি আমার সাথে ইয়ার্কি করছিস আবরার? তুই কি আমাকে পশু ভবেছিস যে আমার লেজ থাকবে”
“ আরে রাগ করিস কেন ? এক সময় মানুষের ও লেজ ছিলো , এখন নেই , আমি হলাম তোর সেই অদৃশ্য লেজ , মানে লেজের মত, তোর পেছন পেছনে ঘুরি “
 
“ আচ্ছা চল লাঞ্চ করে  আসি” রানী আর ওই বিসয়ে কথা বাড়ায় না ।
 
আবরারের চোখ কপালে ওঠে “ আমার সাথে ?”
 
“ হ্যা , একা যাওয়া যাবে না ,প্রবলেম আছে “ রানী নিজের হাত ব্যাগে কি যেন খুজতে খুজতে বলে
 
“ আমার সাথে গেলে আরো বেশি প্রবলেম, জয় সাহেব দেখলে আমাকে শেষ করে ফেলবে, ভাই আমার জীবন একটাই , সেটা আমাই খোয়াতে চাই না , আমার বাপের আর কোন ছেলে নেই , আমিই বংশের বাতি”  আবরার হাত জোর করে নাটকিয় ভঙ্গিতে বলে ।
 
এদিকে রানী বিস্ময় আর আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে , আবরারের কথা শেষ হতেই , রানী তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞাস করলো    “তুই জয় কে চিনিস কি করে ? জান্নাত কে কি বলেছিস?”  
 
“ নাহ তুই কি আমাকে বাচাল ভাবিস? আমি জান্নত কে বলবো যে ওর ভাইয়ের সাথে তোর ইটিস পিটিস চলছে”  
 
রানী একটু রিলিফ ফিল করে , তবে আবরার কে আবার জিজ্ঞাস করে , “তুই জানলি কি করে?”
 
“ আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে , আর আমি জানবো না, সেদিন তোর বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় উনি আমাকে দেখছে”  আবরার বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলে ।
 
কিন্তু এদিকে রানীর হয়ে গেছে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর উপরে বাজ পরেছে । আতংকে মুখ নীল হয়ে গেছে ।  
 
“ এক কাজ কর , তুই এখানে বস , আমি খাবার নিয়ে আসি “
 
আবরারের কথা রানীর কানে যায় না ।  ও ভাবছে এ জন্যই জান্নাত বলেছিলো , জয় ওকে খুঁজছে । রানীর হাত পা হিম হয়ে আসে। কি উত্তর দেবে জয় কে , আর ও উত্তর দিলেই কি জয় বিশ্বাস করবে । নিজেকে নিজেক থাপরাতে ইচ্ছে হয় ওর , বেশি স্বাধীন ভাব দেখাতে গিয়ে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছে ।
 
*****  


এই আপডেট টি অনেকের কাছেই অতি নাটকিয় মনে হতে পারে , বিশেষ করে ওই মারামারির অংশটা । কিন্তু আমি এই নাটকিয়তা না করে থাকতে পারছিলাম না । তাই রিস্ক নিয়ে দিয়েই দিলাম ।  
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply




Users browsing this thread: Fardinddx, Nil roy, 3 Guest(s)