03-10-2025, 11:25 AM
Durdanto
|
Romance কিছু সম্পর্ক
|
|
03-10-2025, 11:25 AM
Durdanto
03-10-2025, 02:32 PM
(03-10-2025, 03:05 AM)allanderose113 Wrote: সম্মোহিতের মত শুধু পড়েই গেলাম অনেকদিন পর একটা গল্প এতটা ভালো লাগলো। এগিয়ে যান দাদা অনেক ধন্যবাদ ভাই , আপনার কমেন্ট পড়ে খুব ভালো লাগলো । এর আগেও কয়েক জন প্রশংসা করেছিলো কিন্তু এর পর আর তাদের দেখা পাইনি, হয়তো এর পর আর তাদের কাছে ভালো লাগেনি । দেখা যাক আপনার ভাললাগা ধরে রাখতে সক্ষম হয় কিনা এই গল্প । আশা করবো ভবিষ্যতেও আপনার দেখা মিলবে এই থ্রেডে :) (03-10-2025, 11:25 AM)Saj890 Wrote: Durdanto অনেক ধন্যবাদ ভাই , সেই প্রথম থেকেই আপনি আছেন , এর জন্য বিশেষ ধন্যবাদ । :)
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
03-10-2025, 03:07 PM
(This post was last modified: 03-10-2025, 03:12 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[img]<a href=[/img]
" />আমার এক ভাই জান্নাত কে দেখতে খুব আগ্রহী । সেই ভাইয়ের জন্য
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
03-10-2025, 03:14 PM
[img]<a href=[/img]
" />জান্নাত
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
03-10-2025, 08:20 PM
(This post was last modified: 03-10-2025, 08:28 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (খ)
জয় ইদানিং খুব ব্যাস্ত দিন পার করছে । সামনে ছাত্র উইং এর কমিটি ঘোষণা হবে । তাই আবির জয় কে খুব বিজি রাখছে । যে করেই হোক আবির চায় ওর প্যানেল যেন কমিটিতে সবচেয়ে বেশি পদ পায় । তাছাড়া জয় কেও ভালো একটা পদ দেয়ার ইচ্ছা আছে । সমস্যা হচ্ছে জয় হলে থাকে না , যদি হলে থাকতো তাহলে সহজে একটা হলের পদ দিয়ে দেয়া যেতো । আজকে জয়ে কে নিয়ে আবির এক বড় নেতার বাড়িতে এসেছে । বিশাল ক্ষমতাধর নেতা , আসার সময় আবির প্রচুর বাজার সদাই করেছে । মাছ , খাসী , মুরগী কিনে নিয়ে এসেছে । এ কাজে জয় কে পাঠাতে চেয়েছিলো , কিন্তু জয় বাজার করতে জানে না । কোনদিন বাজারে যায়নি । তাই আবির নিজেই গিয়েছে । তবে নেতার বাড়ি জয় কে নিয়ে এসেছে । ইচ্ছা নেতার কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া । প্রায় পনেরো মিনিট হলো আবির আর জয় ওয়েট করছে । আর এই পনেরো মিনিট ধরেই আবির বকবক করে যাচ্ছে । কিন্তু জয় সেসব কিছু শুনতে পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না । হাসপাতালে স্যার ঘটনার পর থেকে , জয় নিজের মাঝে সেই মোটিভেশন আর পায় না । আবির যা করতে বলে সেটাই করে সুধু । নিজ থেকে যে বেশি কিছু করবে সেটা আর করা হয় না । কি করবে ? কেন করবে ? কার জন্য করবে? নিজেকে সুধু এই প্রস্নই করে । যার জন্য কিছু করার বাসনা মনে ছিলো , সে তো ওকে দেখলেই পালিয়ে বেড়ায় , এমন একটা ভাব করে যেন জয় একটা লুচ্চা বদমাশ , ওকে দেখলেই রে*প করে দেবে । না ক্যাম্পাসে দেখা করে , না বাড়িতে আসে আগের মত । জয়ের কাছে মনে হয় ওর ভেতরে যে স্পার্ক ছিলো , সেটা রানী নিজে হাতে নিভিয়ে দিয়েছে । মাঝে মাঝে এটা ভেবে আশ্চর্য লাগে জয়ের যে , একটা মেয়ে এভাবে ওকে নাকে দড়ি লাগিয়ে কিভাবে ঘোরাচ্ছে !!!! আগে যে কাজ জয় নিজে করতো সেটা এখন ওর সাথে হতে দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারে না । সিনয়র জুনিয়র কত মেয়ে ওর জন্য পাগল । এমনকি বিবাহিত এক্স নিলু ও বেশ কয়েকদিন খুচিয়েছে ওকে । জয় ও একবার ভেবেছিলো রানীকে ভুলে থাকার জন্য নিলুর সাথে কিছুদিন ফুর্তি করা যাক । কিন্তু জয় অবাক হয়ে দেখছে , নাহ সেই ফিলটা আর আসে না । রানী মেয়েটা সত্যি সত্যি ওর সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে । নিজে তো গেছেই , সাথে করে ওর লাইফটা মাটি করে দিয়ে গেছে, জয় মনে মনে ভাবে । মনে মনে ভাবে শিকদার পরিবার হচ্ছে কুফা পরিবার , এরা নিজেরাও মরা মানুষের মত থাকে , আর এদের সংস্পর্শে যারা আসে তাদের ও মরা মানুষ বানিয়ে দেয় । “ ওই মিয়া কি ভাবো এতো ? কোন সমস্যা? সমস্যা হইলে ভাই রে বলো , এমন কোন সমস্যা নাই যে তোমার ভাই ম্যানেজ করতে পারে না” আবির জয় কে অমনোযোগী দেখে জিজ্ঞাস করে । জয় দ্রুত নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে , লজ্জিত ভাবে বলে , “ আরে না ভাই কোন সমস্যা না , সমসসায় পরলে তো আপনার কাছেই আসবো প্রথম” “ হুম মনে রাখবা তোমারে আমি আপন ছোট ভাইয়ের মতন দেখি” আবির চিন্তিত ভাবে বলে । আসলে আবির নিজেও দেখছে জয়ের মন বেশিরভাগ সময় ই খারাপ থাকে , পোলাপান ও এই খবর দিয়েছে যে জয় এখন আর আগের মত কাজে ঝাপিয়ে পরে না , বেশিরভাগ সময় হলে আড্ডা দেয় , আর মদ খায় । তবুও জয় কে সাথে রেখছে , কারন জয় অর্ধেক কাজ করেও অন্য সবার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে । এই ধরনের ছেলেই ওর দরকার । খুব বেশি হলে আর দুই বছর ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে আবির । কম তো হলো না প্রায় নয় বছর হতে চলল এই ক্যাম্পাসে ঢুকেছে । ফেইল করে আর নানা ছোট খাটো কোর্সে ভর্তি হয়ে এখনো ছাত্র নাম ধরে রেখেছে । চলে যাওয়ার আগে ক্যাম্পাসে নিজের একটা লোক রেখে যেতে চায় আবির । আবির চিন্তিত ভাবে জয়ের দিকে তাকায় । আবিরের চিন্তার ভাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যখন দেখতে পায় জয় আবার ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেছে । মনে মনে আবির ভাবে , নাহ এরে দিয়ে না হলে , আর পেলে পুষে লাভ নেই , অন্য ব্যাবস্থা করতে হবে । এদিকে জয় আবার রানীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে । ভাবছে রানী কি করে পারলো ওকে এমন একটা অপবাদ দিতে । ওর জন্য কি সুন্দরী মেয়ের অভাব হয়েছে । যে একজন অসুস্থ মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় টাচ করতে যাবে । মেয়েটার মাথায় কি ঘিলু বলতে কিছুই নেই । রানী কি ওর কাছে সুধুই একটা মেয়ে ? আর কারো জন্য না হোক ছোট আব্বুর কথা চিন্তা করে হলেও তো জয় এই কাজ ভুলেও করবে না । আচ্ছা ঠিক আছে , না হয় অসুস্থ অবস্থায় করে ফেলেছে , সুস্থ হওয়ার পর ও কি মাথায় এই চিন্তা আসেনি যে আমার মত একটা ছেলে এই কাজ করতে পারে না? জয় মনে মনে ভাবে । যতই ভাবে রাইর উপর রাগ বাড়তে থাকে । বার বার সিদ্ধান্ত নেয় আর ওই ফালতু গাধা মেয়ের কথা ভাববে না । যেমন ভাই তেমন বোন , ভাই যেমন অন্য কারো ঘারে দোষ দিয়ে নিজে সাধু সাজে । তেমনি বোনও একি কাজ করে । এদের সাথে আর কোন সম্পর্ক নেই আমার , এরা জাহান্নামে যাক , ভাবতে ভাবতে জয়ের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে । কিন্তু মনের একটি গপন কুঠুরি থেকে কেউ একজন বলে ‘ তুই নিজেও তো একবার সামনে গিয়ে দাড়াতে পারিস’ হ্যা পারতাম , কিন্তু ভয় হয় , জয় মনে মনে উত্তর দেয় । জয়ের ভয় হয় এই ভেবে যে , রানী যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলে দেয় । জয় হয়তো রানীর মুখ থেকে আরো কোন অপবাদ সইতে পারবে না । অন্য কেউ ওকে নিয়ে কি ভাবছে সেটা জয়ের কাছে মোটেও ইম্পরট্যান্ট নয় । জয়ের কাছে সুধু রানী কি ভাবছে , সেটাই ইম্পরট্যান্ট । জয়ের মনে আবারো অভিমান চাগাড় দিয়ে ওঠে , ভাবে এই পর্যন্ত রানী ওকে এই চিনলো ? একজন রে*পি*স্ট !!!! জয়ের চিন্তা ভাবনায় ছেঁদ পরল যখন ওদের নেতার সাথে দেখা করার ডাক পরলো । আবির পই পই করে জয় কে বুঝিয়ে বলল , গিয়েই যেন পা ধরে সালাম করে । কিন্তু জয় করলো তার উল্টো , পা ধরে সালাম করা জয়ের স্বভাব নয় , জীবনে কোনদিন নিজের বাবা মা কেই পা ধরে সালাম করেনি আর এ তো সামান্য নেতা । **** বিকেল বেলা জান্নাতের ঘর । জান্নাত ওর পছন্দের জায়গায় বসে আছে । শেষ বিকেলের আলো এসে পরছে ওর গালে । কানে এয়ার বাড গুজে জ্ঞান শুনছে। মনটা ভালো নেই জান্নাতের , মন ভালো না থাকেলেই জান্নাত গান শোনে । গানের করুন সুর একেবারে ওর হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করছে । জান্নাতের মন খারাপের ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে । ক্যাম্পাসে আগের মত আর রাজীবের সাথে দেখা হয়না বলে জান্নাত নিজেই রাজীবের ফ্যাকাল্টিতে গিয়েছিলো । এবং ভাগ্যক্রমে দেখাও হয়ে গিয়েছিলো রাজীবের সাথে । কিন্তু হতাশ হয়েছিলো জান্নাত । এই কয়েদিনে ঠেলে ঠুলে যতটুকু এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের সম্পর্ক , সেই সন্ধার পর সেটা আবার ততটুকুই পিছিয়ে গিয়েছে । রাজীব আবার আগের মত নির্লিপ্ত হয়ে গেছে । আগে যেমন ওদের দেখা হলে কয়েক মুহূর্তের জন্য রাজীবের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠত , এখন সেটাও নেই । দুজন এক সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটালেও কথা হয়েছে খুব কম । বেশিরভাগ সময় চুপ হয়েই থেকেছে । জান্নাত অবশ্য নিজের মনভাব প্রকাশ করেনি প্রথমে । স্বভাব মত ঠাট্টার ছলে বলেছিলো “ কি ব্যাপার , আমার পেছনে লাগা ছেড়ে দিলি যে , ভয় পেয়েছিস?” উত্তরে রাজীব সুধুই মলিন ভাবে হেসেছিলো । রাজীবের ওই মলিন হাসিই জান্নাতকে বলে দিচ্ছিলো রাজীবের মনের কথা । কিন্তু জান্নাত হাল ছারেনি , আবারো কিছুক্ষন পর বলেছিলো “ তোর ব্যাটারির চার্জ কি শেষ হয়ে গেছে ? আবার সাইলেন্ট মুডে চলে গেলি যে , রানী কে কি আবার অসুস্থ হতে বলবো , তারপর আবার আমরা দুজন হসপিটালে গেলে তবে কথা ফুটবে তোর মুখে” রাজীব আবারো মুচকি হেসেছিলো , তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপ ছিলো । জান্নাতের একটু রাগ হয়েছিলো , তাই ও আর কথা বলেনি, মনে মনে ভেবছিলো এতো কেনো? কিছু তো অন্তত বলতে পারে । নিজেকে বড় বেহায়া মনে হচ্ছিলো জান্নাতের । বেশ কিছুক্ষন পর অবশ্য মুখ খুলেছিলো রাজীব , হঠাত করেই বলেছিলো “ তুই খুব ভালো মেয়ে রে জান্নাত……” জান্নাতের মনে হয়েছিলো রাজীব আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো , কিন্তু বলতে পারেনি । রাজীবের কণ্ঠে এমন কিছু একটা ছিলো যে জান্নাত না তাকিয়ে পারেনি । মুখ তুলে রাজীবের মুখের দিকে তাকাতেই জান্নাতের মনে হচ্ছিলো ও রাজীবের ভেতরটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো । রাজীবের মনের ভেতর ঝড় বইছিলো , কি পরিমানে মানসিক চাপের মাঝ দিয়ে যেতে হচ্ছে তার অল্প কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলো জান্নাত । মমতায় ভরে উঠেছিলো জান্নাতের মন । ইচ্ছে হচ্ছিলো রাজীবকে টেনে এনে ওর বুকে এমন ভাবে লুকিয়ে ফেলে যেন আর কেউ খুজে না পায় । এই স্বল্পভাষী লাজুক ছেলেটার প্রতি ওর মনে এতো দরদ কবে থেকে জন্ম নিলো জান্নাত ভেবে পায় না। ভেবে আর কাজ ও নেই। কারন যা হওয়ার হয়ে গেছে । এখন চাইলেও ফেরত যাওয়া সম্ভব নয় , অন্তত জান্নতের পক্ষে ত সম্ভব নয় ই । জান্নাত এই ছেলের জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে লড়াই করতে পারবে । রাজীবের প্রতি দরদ যত বাড়তে থাকে , সেই সাথে পাল্লা দিয়ে রানী আর ছোট আব্বুর উপরে রাগ হয় জান্নাতের । এই দুজনে মিলে ছেলেটাকে পেয়েছে কি ? বাড়িতে কি রান্না হবে ? রাজীব জানে । কে রান্না করবে ? রাজীব করবে ? কাপড় ধুবে কে ? রাজীব। বাবার অসুখ কে দেখবে ? রাজীব । ছোট বোনের সমস্যা , কে দেখে রাখবে ? রাজীব। একটি পরিবারের একজন মা যে কাজ গুলো করে তা এসে পরেছে এই ছেলেটির মাথার উপর । মায়েরা তো আরো বেশি বয়সে গিয়ে এসব সামলায় । কিন্তু রাজীব সামলাচ্ছে আরো অনেক আগে থেকে । তার উপর নিজের ভবিষ্যৎ , রানীর ভবিষ্যৎ এসব নিয়েও ভাবতে হয় । সুধু টাকা উপার্জন ছাড়া একজন বাবার কাজ ও করে যেতে হচ্ছে । হয়তো কিছুদিন পর থেকে টাকা উপার্জনের ভার ও বইতে হবে । আর সেটা ভেবেই বোটানিক্যাল ফটোগ্রাফির সখ বাদ দিয়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে ভর্তি হয়েছে । জান্নাত জানে অনেকেই হয়তো এই সমস্যা গুলোকে তেমন একটা সমস্যা মনে করবে না । হ্যা তাদের জন্য এই সমস্যা কোন সমস্যাই নয় , যারা এই সমসসাগুলো কে পাশকাটিয়ে যেতে পারবে । যেমন রাজীব ইচ্ছে করলেই বলতে পারে বোন উচ্ছনে যাচ্ছে তাতে আমার কি ? আমি তো ওর বাবা না , ওর বাবা আছে , সমস্যা বাবা দেখবে। । কিন্তু রাজীব সে ধরনের ছেলে নয় । রাজীব নিজের জীবন কে পাশকাটিয়ে অন্যের সমস্যা কে আপন করে নেয়ার মত ছেলে । জান্নাতের ইচ্ছে হয় রাজীবের হাত ধরে ওকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে , যেখানে রানী থাকবে না ছোট আব্বু থাকবে না , থাকবেনা রাজীবের ক্যারিয়ার চিন্তা। সেখানে পরম মমতায় ও রাজীবকে জড়িয়ে ধরে রাখবে , আড়াল রাখবে সবার কাছ থেকে , সব সমস্যা থেকে । “ আমার জীবন সমস্যা ময় ……” রাজীব যখন অনেকক্ষণ বিরতি দিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করেছিলো , তখন জান্নাত ওকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে উঠেছিলো “ আমি তোর জন্য নতুন সমস্যা হয়ে আসবো না রাজীব কথা দিলাম , আমি তোর সমস্যা ভাগ করে নেবো” নিজের কণ্ঠে ডেস্পারেশনের পরিমান বুঝতে পেরে জান্নাত নিজেই লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু সেই লজ্জা বেশিক্ষণ স্থাই হতে দেয়নি । জান্নাত জানে লজ্জা পেলে ওর চলবে না । রাজীব কে আর একা ছাড়তে পারবে না ও, রাজীব না চাইলেও ও নিজেকে রাজীবের সাথে জুড়ে দেবে । তা লোকে ওকে বেহায়া ই বলুক আর যাই বলুক । জান্নাতের কথা শুনে রাজীব স্থির হয়ে কিছুক্ষন জান্নাতের দিকে তাকিয়ে ছিলো , চোখে মুখে কিছুক্ষনের জন্য একটা তৃপ্তি ফুটে উঠেছিলো । এক মুহূর্তের জন্য জান্নাতের কাছে মনে হয়েছিলো , রাজীব হয়তো সব ভুলে ওর বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরবে । কিছু সেই ধারনা ভুল প্রমান হতে সময় নেয়নি বেশি । রাজীবের চেহারা থেকে সেই তৃপ্তির আর আশার আলো দূরে সরে গিয়ে , সেখানে জমা হয়েছিলো প্রচণ্ড কষ্টের মেঘ । সেই কষ্ট সামনে কিছু পেয়েও অনিচ্ছা সত্ত্বেও দূরে ঠেলে দেয়ার কষ্ট । “ বিনিময়ে আমি তোর জন্য কি করবো? আমার যে তোর জন্য করার ক্ষমতা নেই , আমি বড় ক্লান্ত রে , বড় ক্লান্ত , এতদিন বুঝতে পারিনি যে আমি ক্লান্ত , তোর সাথে দেখা হওয়ার পর বুঝতে পেরেছি আমি আসলেই ক্লান্ত , আমার মাঝে জীবনী শক্তি বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, কোন রকমে নিজেকে টেনে নিয়ে জাচ্ছি , এমন একটা জীবনী শক্তি হীন মানুষের সাথে তোকে মানায় না , আর আমিও পারবো আমার সাথে তোকে জুড়ে নিয়ে তোর জীবনী শক্তিও শুষে নিতে” জন্নাত রাজীবের বলা প্রতিটা শব্দের সাথে ওর ভেতরে চলতে থাকা ঝড়ের কিছুটা আভাষ পাচ্ছিলো । আর এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলো যে রাজীবের এই কষ্টের জন্য কিছুটা হলেও ও নিজেও দায়ি । রাজীবের জীবন তো চলেই যাচ্ছিলো কোন না কোন ভাবেই । আর সেই শান্ত জীবনে কিছুটা ঢেউ ও নিজেই তুলেছিলো । আর রাজীব তখন বুঝতে পেরেছিলো , ওর যাপিত জীবন ,আর স্বাভাবিক জীবনের মাঝে কতটা তফাৎ । এই লোভ তো জান্নাত নিজেই ওকে দেখিয়েছে । এর পর রাজীব বুঝিয়েছে , কতটা লম্বা পথ পারি দিতে হবে ওকে । জান্নাত রাজীবের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলো ডাক্তারের কথা মত ছোট আব্বু কে রেস্ট দেয়ার জন্য রাজীব নিজে একটা পার্ট টাইম চাকরি খুঁজছে । একটা পেয়েছিলো , সেটাও চলে গেছে । একটা ছোট খাটো চাকরি পেলে ছোট আব্বুকে জোড় করে কিছু ক্লাস কমাতে বাধ্য করতে পারবে । তা ছাড়া রানীর বিয়ের জন্য ও টাকা জমাতে হবে ।বাড়ির টাকা ফেরত দিয়ে ছোট আব্বুর কাছে কিছু আছে , কিন্তু তাতে তেমন কিছুই হবে না । তাছাড়া লেখাপড়ার চাপ , ভালো রেজাল্টের চাপ । ভাল রেজাল্ট না হলে ভালো চাকরি হবে না । রাজীবের মত এসব করতে করতে অনেক সময় গড়িয়ে যাবে । এতদিন পর্যন্ত জান্নাত কে ও ওয়েট করিয়ে রাখতে নারাজ । কিন্তু জান্নাত মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় , ও থাকবে রাজীবের পাশে , বন্ধু হয়েই থাকবে । যতদিন না রাজীব নিজেকে প্রস্তুত ভাবে । কিন্তু মুখে বলে না , জানে মুখে বললে সেটা রাজীবের জন্য সুধু চাপ ই বাড়াবে । জান্নাত যখন চলে আসছিলো তখন রাজীব পেছন থেকে ডেকেছিল । তারপর ব্যাগ থেকে একটা চকলেট এর প্যাকেট বের করে হেসে বলেছিলো , “ আমার কাছে এই আছে , বাকি সুদ আসল মাফ করে দিস , কত দিন যাবত ব্যাগে নিয়ে ঘুরছি তোকে দেয়া হয়নি” রাজীবের ওই মলিন হাসি দেখে , জান্নাত কোন রকমে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না থামিয়েছিলো । দ্রুত পদে সেখান থেকে বিদায় নিয়েছিলো । বুকের ভেতরটা জ্বালা করছিলো খুব , কিন্তু এই ভেবে নিজের জ্বালা ভুলে গিয়েছিলো যে রাজীবের মনে এরচেয়ে বহুগুন বেশি জ্বালা পোড়া তখন চলছে । আজো জান্নাতের চোখ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গালে এসে বিন্দুতে রুপান্তরিত হয় । পরন্ত বিকেলের সূর্যের আলো সেই বিন্দুতে পরে একটা হীরক খণ্ডের মত জ্বলজ্বল করতে থাকে । এই ভেবে জান্নাতের চোখে পানি এসেছে , যে রাজীবের জন্য ও কিছুই করতে পারছে না । এমন অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখতে হচ্ছে । “ তোকে কতবার বলি , সন্ধার সময় লাইট অফ রাখবি না” সূর্য অস্তমিত যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আয়শা ঢোকে মেয়ের ঘরে । মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে , জান্নাত নিজেকে ঠিকঠাক করে নেয় , গালের পানি অনেক আগেই শুকিয়ে গেছে । তবুও একবার গাল মুখে নেয় । “ কিছু বলবে আম্মু” শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে জান্নাত । মেয়ের কণ্ঠ শুনেই আয়শা আন্দাজ করে কিছু একটা হয়েছে , না হলে প্রথমে হুট করে ঘরে ঢোকার জন্য লেকচার দিতো , তারপর লাইট জালানর কারনে বিরক্ত হতো। কিন্তু এসবের কিছুই করেনি জান্নাত । মায়ের মন তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না। “ নারে , কিছু না , তা মা বিকেল টা একা একা না থেকে রানীর সাথে গিয়ে গল্প করলেই তো পারিস , এই সন্ধার আগের সময়টা হলো খারাপ সময় এই সময় একা থাকা ভালো না” রানীর নাম উচ্চারিত হতেই জান্নাতের মনের সব রাগ যেন ফেটে বেড়িয়ে আসে , “ সারাক্ষণ সুধু রানী আর রানী , তোমারা কি কেউ অন্য কাউকে চোখে দেখো না , সব সময় যাকেই দেখি , সেই বলে রানী এই , রানী সেই , রানী অমুক , রানী তমুক, আর কাউকে কি তোমাদের চোখে পরে না , আর ওর দরকার পরলে ও নিজেই আসতে পারে , ওর কাছে যেতে হবে কেন , ও কি ছোট খুকি নাকি?” আয়শা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , বুঝতে পারে না কেন হঠাত এমন ক্ষেপে গেলো জান্নাত । পরমুহুরতে মনে হয় , রানীর প্রতি একটু বেশি খেয়াল রাখছে বলে হয়তো হিংসা হচ্ছে । আবার ভাবে , কিন্তু জান্নাত তো ছোট থেকেই রানীর সাথে হিংসা করে না । সেই ছোট বেলা থেকেই রানীকে আদর করলে ও খুশিই হয় । আয়শা বহু কষ্টে খাটের উপর উঠে মেয়ের পাশে বসে , মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে যায় , কিন্তু জান্নাত ওর হাত সরিয়ে দেয় । “ আরে মা আমার রাগ করিস না , তুই তো সব সময় আমার কাছেই থাকিস , তাছাড়া তুই আমার বুদ্ধিমান লক্ষি মেয়ে , আর রানী আমার বোকা নরম সরম মেয়ে , তাই একটু বলি আরকি” আয়শা মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে রানীর প্রতি কেন একটু বেশি খেয়াল রাখে । জান্নাত বুঝতে পারে যে ওর মা মনে করেছে ও নিজের কথা বলেছে , তাই মা কে ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য বলে “ আমি আমার কথা বলছি না , আরো অনেকেই তো আছে , তাদের কথা তো বলো না” “ আর কার কথা বলছিস ? জয় কি আবার কিছু করলো নাকি ?” আয়শা একটু ভয়ের সাথে বলে , ভাবে জয় হয়তো আবার কিছু করেছে , আর জান্নাত তাই বলছে । এদিকে জান্নাতের আবার কান্না পায় , কারো মনে রাজীবের নাম ই আসে না । রাজীব নামে কেউ যে আছে সেটা যেন সবাই ভুলেই গেছে । সুধু মাত্র দরকার পরলে রাজীবের কথা সবার মনে আসে । জান্নাত মায়ের সামনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না । ওর চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পরতে থাকে । আয়শা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , সেই ছোট বেলার পর মেয়েকে আর কাঁদতে দেখেনি । মেয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় আয়শা । পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে “ আরে কাঁদিস কেন , আমাকে বল মা , কি হয়েছে” আয়শা কোন কুল কিনারা পায় না । শেষে হঠাত মনে পরে জান্নাত কিছুদিন আগে একটা ছেলের কথা বলেছিলো , “ ওই ছেলের সাথে কিছু হয়েছে ? ও কিছু বলেছে তোকে? আমাকে বল , না হলে আমি বুঝবো কি করে” “ না ওই ছেলে এমন ছেলেই না যার আচরনে কারো কান্না আসবে, ওর সেই ক্ষমতা নেই । আর ওই ছেলের কথা তোমাকে ভাবতে হবে না , তোমাদের কাউকে ভাবতে হবে না “ জান্নাত প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে বলে । “ আরে বাবা একদিন আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দে তাহলে না ওর কথা ভাববো “ আয়শা বুঝতে পারে যে ওই ছেলে কিছু করেনি । তবে মেয়ের কান্না ওই ছেলের জন্যই । “ তার আর দরকার হবে না” এই বলে জান্নাত ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে । আয়শা আর কথা বাড়ায় না , সুধু মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে থাকে । ও জানে এখন আর জান্নাত কে খুঁচিয়ে লাভ নেই , আর কোন কথা বের হবে না । হোক হালকা হোক , কাঁদলে মন হালকা হবে । আয়শার মনে সুধু একটাই প্রশ্ন ঘোরে , কে এই ছেলে যার জন্য মেয়ে এমন হাপুস হয়ে কাঁদছে । আয়শা ভাবে , যেই হোক বড় ভাগ্যবান ছেলে , জান্নাতের মত মেয়ের মনে এতো মমতা জন্ম দিতে পেরেছে । আয়শা খুশি হয় , ভাবে মেয়ে জীবনে সেই একজন কে পেয়ে গেছে , যার জন্য নিজের মনের প্রায় সমস্ত ভালোবাসা মায়া মমতা। আয়শা খুশি ও হয় , আবার মনের একটা ছোট্ট কোনে দুঃখ ও দানা বাধে । মেয়ে পর হয়ে গেছে । এখন এ সুধু ওর মেয়ে নেই , অন্য কারো চলার সাথী জীবনসঙ্গী । ছেলেটাকে দেখার খুব ইচ্ছে হয় আয়শার , কে সে , দেখতে কেমন , আচার ব্যাবহার কেমন । মেয়ের এমন ভালোবাসার মূল্য কি সে দিতে পারবে । নিশ্চয়ই পারে , নয়তো মেয়ে এমন করে কেঁদে ভাসাচ্ছে কেন । নিজে একজন নারী হয়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না , যে জান্নাত নিজের জন্য কাঁদছে না , কাঁদছে নিজের মনের মানুষের দুঃখে । অচেনা সেই ছেলের জন্য আয়শার মন মমতায় ভরে ওঠে । মনে মনে না দেখা মানুষটির জন্য দোয়া করে 'তুমি যেই হও , যেখানেই থাকো , ভালো থেকো , আর সব সময় আমার মেয়কে সুখী রেখো , মেয়ের মনে এতো এতো ভালোবাসার জম্ন দিয়ো যেন পুরো জীবন ই মেয়ে এভাবেই তোমার দুঃখে দুঃখী হয় তোমার সুখে সুখী হয়' *****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
04-10-2025, 09:25 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (গ)
জান্নাতের আচরন আজকাল রানীর কাছে কেমন যেন মনে হচ্ছে । কম কথা বলে , ওর মাঝে যে প্রাণবন্ত ভাবটা ছিলো , সেটা তেমন একটা চোখ পরে না । আর সবচেয়ে আজব ব্যাপার হচ্চে , জান্নাত ওকে তেমন একটা সময় দেয় না । আগে নানা কারনে দিনে দুবার একবার বাড়িতে আসতো এখন তাও আসে না । এমন কি ক্যাম্পাসেও তেমন একটা দেখা মেলে না । আগে ক্যাম্পাসে এক সাথে আসতো এখন তাও আসা হয় না । যদিও এক সাথে না আসাটা রানীর করানের হয়েছে । রাজীব কড়া ভাবে বলে দিয়েছে , এখন থেকে রাজীব ওকে নিয়ে আসবে আবার নিজেই বাসায় ফিরিয়ে আনবে । যদি রাজীবের কোন কারনে দেরি হয় , সেই সময়টা রানীকে লাইব্রেরীতে অপেক্ষা করতে হয় । স্কু*ল জীবনের রানীর এতো কড়া শাসন ছিলো না । রাজীব ওকে আজকাল আর বিশ্বাস করে না । রাজীবের ধারনা হয়েছে রানী নেশা টেশা করে অথবা কোন খারাপ ছেলের পাল্লায় পরেছে। মাঝে মাঝে রানীর ইচ্ছে হয় প্রতিবাদ করতে । কিন্তু সাহস হয় না, রাজীবের মুখের দিকে তাকালেই ভয় হয় । এই রাজীব কে ও ঠিক চেনে না । আগে রাজীব বাইরে চুপচাপ থাকলেও ওর সাথে ফ্রি ছিলো , দুজন দুজনের কথা একে অপর কে বলতো । কিন্তু আজকাল রাজীব তেমন কথাও বলে না । কিছু জিজ্ঞাস করলে হু হা করে উত্তর দেয় । রানী মনে মনে খুব ক্ষেপে আছে জান্নাত আর রাজীবের উপর । এ দুজন ই তো ওর সবচেয়ে কাছের মানুষ আর এখন এরাই ওর সাথে এমন আচরণ করছে , যেন ও ওদের কেউই না । রাজীব কে দেখে তো মনেই হয় জাস্ট দায়িত্ব পালন করছে । নইলে হয়তো ওর মুখ দেখার ও প্রয়োজন মনে করতো না । প্রথম প্রথম ভীষণ অভিমান হতো রানীর , এখন অভিমান হয় না । এখন রাগ হয় । হ্যা রানী ওদের দুজনকেই খুব পেরেশান করেছে , এটা রানী মানে । কিন্তু তাই বলে এমন করবে । বিশেষ করে রাজীব , রানী মনে মনে ভাবে, খুব তো বলতো তোর উপর আমি কখনো রাগ করবো না , তুই সুধু আমার ছোট বোন না , তুই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় । তাহলে এমন করছে কেনো? একটু না হয় কষ্ট ই দিয়েছি । ভুল তো মানুষের ই হয় । তাই বলে এমন করবে ? এই যেমন আজকে রানী বিপদে পরেছে , ওর কিছু কেনাকাটা করা বিশেষ জরুরি । কিছু বই কিনতে হবে , সাথে কিছু ইনার ও কিনতে হবে । ব্রার দোকানে তো আর রাজীব কে নিয়ে যাওয়া যায় না । তাই রানী ক্লাস শেষে জান্নাত কে কল করেছিলো । রিকোয়েস্ট করেছিলো ওর সাথে মার্কেটে যেতে । কারন রাজীব সুধু জান্নাতের সাথেই ওকে কোথাও ছাড়তে রাজি আছে । কিন্তু জান্নাত ওকে পাত্তাই দিলো না , ওর নাকি সময় হবে না । রানীও রাগ করে কল কেটে দিয়েছে । এখন দাড়িয়ে আছে রাজীবের জন্য , সাথে তিন ান্ধবী , পায়েল , ঋতু আর নিসা । রাজীব কে রিকোয়েস্ট করবে ওদের সাথে যেন যেতে দেয় । ওরাও বই কিনতে যাবে , রানী ওদের কে দেরি করাচ্ছে । কারন আন্ডারয়ার রানী একা একা কিনতে যেতে পারে না , ওর অস্বস্তি হয় । অবশ্য রানী এটা বলেনি যে ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে । এটা বলতে ওর আত্মসম্মানে লেগেছে । তাছাড়া ওর বন্ধুরা জানলে এই নিয়ে ট্রল করতে ছাড়বে না । পুরো ক্লাস জানিয়ে দেবে । একটু পর ই রাজীবের বাইক এসে থামে , রানী প্রায় দৌরে যায় রাজীবের কাছে । কারন ওর বন্ধুরা বেশ বিরক্ত হচ্ছে , অনেকক্ষণ যাবত ওরা রানীর জন্য অপেক্ষা করছে । “ ভাইয়া আমি ওদের সাথে একটু মার্কেটে যাই , কিছু বই কিনতে হবে , সাথে মার্কেটে টুকটাক কেনাকাটা আছে” রানী একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা তিন জন কে দেখায় । রাজীব রানীর দেখানো তিন মেয়ের দিকে তাকায় , মেয়ে গুলোকে ভদ্র ই মনে হয় ওর কাছে । একটু ভাবে রাজীব , তারপর বলে “ ওদের চলে যেতে বল , আমি নিয়ে জাচ্ছি” রানী এমন ভাবে রাজীবের দিকে তাকায় যেন ও রাজীব এর বলা কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছে না , অবাক এবং কিছুটা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাজীবের দিকে । কিন্তু রাজীব রানীর সেই দৃষ্টিকে পাত্তা দেয় না । নির্লিপ্ত ভাবে বলে “ কই যা, বলে আয় ওদের , আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে , তোকে নামিয়ে দিয়ে আমার একটা কাজে যেতে হবে” রাজীব আরো একটা পার্ট টাইম জব পেয়েছে । রানীকে নামিয়ে দিয়ে সেখানেই যাবে । বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত । “ ভাইয়া প্লিজ , আমি যাবো আর আসবো” রানী মিনতি করে , আসলে এতক্ষণ দেরি করিয়ে ওদেরকে কিভাবে বলবে চলে যেতে , এই ভেবেই রানী খুব লজ্জিত হচ্চে । কি ভাববে ওরা , এর পর হয়তো ওরা ওর জন্য আর কোনদিন ওয়েট করবে না । “ আহা আমি বললাম তো নিয়ে জাচ্ছি , বাইকে গেলে তারাতারি হবে , রিকশায় গেলে জ্যামে পরবি” রাজীব কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলে । রানীর দিকে তাকানোর প্রয়োজন ও মনে করে না । এদিকে প্রচণ্ড রাগে রানীর চোখ টলমল করতে থাকে , মুখ লাল হয়ে যায় , হাতের আঙুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে । কিন্তু রানী আর অনুরধ করে না । রাজীব ওর সাথে যেমন আচরণ করছে তাতে ওর অনুরধ করতে বাধে । রানী ভাবে , রাজীবের কাছে ছোট হওয়ার চেয়ে , ওর ক্লাসমেটদের কাছে ছোট হওয়া ভালো । মাথা নিচু করে রানী বন্ধুদের কাছে ফিরে যায় । এদিকে ওর তিন বন্ধু নিজেদের মাঝে কি নিয়ে যেন হাসাহাসি করছে । রানী ওদের কাছে যেতেই , পায়েল বলে ওঠে “ রানিইইইই , তুই তো দেখি সব সেক্সি ছেলে গুলো দখল করে নিচ্ছিস? কতদিন আগে দেখলাম একটা হাট্টা খাট্টা হাঙ্ক এর সাথে বাইকে করে বেড়িয়ে গেলি , আবার আজকে এই সুইট এর ডিব্বা টা এসেছে তোর জন্য , আমাদের জন্য কিছু রাখ ভাই” পায়েল হলো সেই মেয়ে যে রানীকে জয়ের সাথে দাড়িয়ে কথা বলতে দেখে জিজ্ঞাস করেছিলো , কে এটা। পায়েলের কথা শেষ হতেই বাকি দুজন ও হাসতে শুরু করলো । এমনিতেই রাগান্বিত রানী বন্ধুদের এমন আচরণে আরো রেগে গেলো , একটু রেগেই বলল “ কি যা তা বলিস , না বুঝেই যা মুখে আসে তাই বলিস । এটা আমার ভাই” “ কেমন ভাই ? চাচাতো , মামাতো , খালাতো , ফুফাতো , পাড়াতো , কেমন ভাই?” নিসা নামের মেয়েটি কণ্ঠে আদি রস মিশিয়ে জিজ্ঞাস করে । “ তোদের মত ফালতু মেয়ে আর দেখি নাই , ভাই তো ভাই ই এতো তো তো কি , আর এটা আমার আপন ভাই , মুখ সামলে কথা বল প্লিজ” রানী এবার সত্যি সত্যি বন্ধুদের উপর রেগে গেছে , নিসার বলার ভঙ্গিটা খুবি খারাপ ছিলো । তিন ান্ধবী অবশ্য রানীর রাগ কে তেমন একটা পাত্তা দেয় না , ওরা এই জানতে পেরে খুব খুশি যে রাজীব রানীর ভাই । তিনজন ই রানী কে ধরে , ওদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য । এছাড়া রাজীব কে নিয়ে আপত্তিকর ইংগিত ও করতে থাকে । রানী জানে ওর বন্ধুরা মজা করে এমন করছে । কিন্তু ওর কাছে ভালো লাগে না । রানী বেশ রাগান্বিত ভাবে বলে “ তোদের মত অসভ্য মেয়েদের সাথে আমি কোনদিন আমার ভাইয়ের পরিচয় করাবো না” রানীর এমন রাগ দেখে ওর ান্ধবীরা আরো মজা পায় , ঋতু বলে “ ইস আমাদের না হয় পরিচয় করালিনা , কিন্তু অন্য কেউ কি তোর ভাইয়ের সাথে অসভ্যতা কোনদিন করবে না ? এর চেয়ে ভালো আমরাই না হয় করলাম , আমরা তোর আপান জন , তোর ান্ধবী হি হি হি” “ যা তোরা যা , আমি তোদের সাথে যাবো না” বলে রানী গট গট করে হেটে রাজীবের বাইকের কাছে চলে আসে । পেছন থেকে তিনজন হাসতে হাসতে ওকে ডাকতে থাকে । কিন্তু রানী শোনে না । বাইকের পেছনে উঠে রানী রাগান্বিত ভাবে বলে “ বাসায় চল” রানীর কণ্ঠে রাগের তেজ টের পায় রাজীব , ভাবে বন্ধুদের সাথে যেতে দেয়নি বলে রাগ করেছে , তাই একটু নরম স্বরে বলে “ আমি নিয়ে জাচ্ছি তো , চল” “ না যাবো না , বাসায় চল” রানী আগের মতই রাগান্বিত ভাবে বলে । “ আরে চল একটু দেরি হলে……” রাজীব কথা শেষ করতে পারে না , তার আগেই রানী প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে “ বললাম না আমি যাবো না , কথা কানে ঢুকে না , বাসায় চল , না হয় আমি বাইক থেকে নেমে যাবো” রাজীব আর কথা বাড়ায় না , রানীর দিকে হেলমেট বাড়িয়ে দেয় , নিজেও হেলমেট পরে নেয় । তারপর বাইক ঘুরিয়ে বাড়ির পথ ধরে । রানী এখনো রাগান্বিত তবে রাজীবের উপর থেকে রাগ সম্পূর্ণটা নিজের বন্ধুদের উপরে এসে পরেছে । এখন বরং রাজীবের জন্য একটু দুশ্চিন্তাই হচ্চে । ওর ান্ধবীরা ওর চোখ খুলে দিয়েছে আজকে ।রানী জানে রাজীব খুব হ্যান্ডসাম ছেলে , সুধু হ্যান্ডসাম বললে ভুল হবে । এমন ছেলে হাজারে একটা দেখা যায় কিনা সন্দেহ । এমন হাইট, এমন চেহারা , আচার আচরন কোন দিক থেকে ফেলনা নয়। আগে কোনদিন রানী রাজীবের গুড লুক কে গুরুত্ব দেয়নি , নিজের ভাই বলে , কিন্তু অন্য মেয়েরা তো আর সবাই রাজীবের বোন না । নিশ্চয়ই মেয়েরা রাজীব কে পারসিউ করে । রানী রাজীব কে হাড়ে হাড়ে চেনে , খুব নরম স্বভাবের ছেলে , তা ছাড়া একটু ব্যাকডেটেড ও আছে । আজকালের এই আল্ট্রামরডান মেয়েদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না ও । রানী এই ভেবে চিন্তায় পরে যায় , না জানি ওর সহজ সরল ভাই এমন কোন মেয়ের পাল্লায় পরে যায় । এসব মেয়ে তো ও অনেক দেখছে , একেকজন দশ বারোটা করে রিলেশন করে , একাধিক ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক এদের কাছে কোন ব্যাপার । পায়েল নামের মেয়েটি তো গর্ব করে বলে এখন বর্তমানে ওর তিনটে বয় ফ্রেন্ড সবার সাথেই ফিজিক্যাল রিলেশন আছে । আর ঋতু তো প্রায় ই দামি দামি গিফট এনে দেখায় । এই গিফটের জন্য ভারসিটির এক বুড়ো প্রফেসরের সাথে ফিজিক্যাল রিলেসন রাখে , ওই বুড়া নাকি ওর সুগার ড্যাডি। রানী ভাবে , ওর ভাইকে একটা বিয়ে করিয়ে দিলে ভালো হয় , একটা খুব নম্র সভ্য মেয়ে খুজে আনবে ও ওর ভাইয়ের জন্য। যে মেয়ে রাজীব কে বুঝবে , রাজীব কে ভালোবাসবে । না হলে রাজীব এই স্লাটদের পাল্লায় পরবে । আর একবার যদি মনে দুঃখ পায় তাহলে আর সেই দুঃখ ভুলতে পারবে না রাজীব , কারন ওর ভাই ওর মতই ইমোশনাল , যদিও প্রকাশ করে না কিন্তু রানী জানে। নাকি অলরেডি পরে গেছে ? হঠাত রানীর ম্থায় প্রশ্ন আসে । তারপর মনে মনে ভাবে নিশ্চয়ই রাজীব কোন স্লাটের পাল্লায় পরেছে , নইলে ওর আচরণ এমন হচ্ছে কেনো দিন দিন । যে রাজীব ঘরের সবার খেয়াল রখাতো সেই রাজীব আজকাল ঘরের কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে না ভালো করে । ও নিজে না হয় দোষী , কিন্তু আব্বু , আব্বু কি দোষ করেছে । রাজীব আজকাল আব্বুর সাথেও ভালো করে কথা বলে না । মাঝে মাঝে তো খোঁচা দিয়ে কথা বলে । রানী এসব দেখে কিন্তু কিছু বলে না , কারন ওর বলার মুখ নেই । নিজেই রাজীবের সামনে চোরের মত থাকে । কিন্তু এখন কিছুটা বুঝতে পারছে রানী । এবং রানীর বিশ্বাস রাজীব কোন মেয়ের পাল্লায় পরেছে । আর এই কারনেই রাজীব এমন সেলফিস আচরণ করছে । নিজের পরিবারের মানুষদের প্রতি ওর আর আগের মত টান নেই । পরিবার কে বোঝা মনে হচ্ছে । ধিরে ধিরে রানীর রাগ আবার আবর্তিত হয়ে রাজীবের দিকে ধাবিত হয় । একটু পর আবার রানীর চিন্তা অন্য দিকে ধাবিত হয় , রানীর হঠাত জয়ের কথা মনে পরে । জয়ও এই মেয়েদের মতই , ম্যান স্লাট, ফাকবয় । আর ও এই ম্যান স্লাটের পাল্লায় পরে , নিজের জীবন হেল করে দিয়েছে । আবার এতে জয়ের দোষ ও দেয়া যায় না , ও জেনে শুনেই এই জয়ের পাল্লায় নিজেকে জড়িয়েছে । আসলে এদের আকর্ষণ ই এমন যে এড়িয়ে যাওয়া যায় না । নিজেকে কত বার যে বুঝিয়েছে , যা হয়েছে ভালো হয়েছে , তুই আর জয় একে অন্য জন নস । কিন্তু মন কিছুতেই মানে না , যেদিন থেকে জান্নাত বলল , এটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে । সেদিন থেকেই ওর মন বদ্ধ ভাবে বিশ্বাস করে নিয়েছে , যে ও জয়কে ভুল বুঝেছে । জয় কিছুতেই ওই কাজ করতে পারে না । রানী বারবার নিজেকে বোঝাতে চেয়েছে , যে ছেলে শত শত ( রানীর বাড়িয়ে বলা) মেয়ের সাথে মিথ্যা সম্পর্কে জড়াতে পারে , শারীরিক সুখের জন্য , সেই ছেলেকে কিভাবে বিশ্বাস করা যায় । কিন্তু রানীর মন এসব যুক্তি শুনতে নারাজ । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার ওর মন ওকেই দোষী সাব্যস্ত করে । জয় হলো তুলসি পাতা আর ও হচ্ছে ওভার থিঙ্কার । এরকম নানা মুখি চিন্তা ভাবনায় রানীর মাথার ভেতর জট পাকাতে থাকে । মাথা এলো মেলো হতে শুরু করে । এক পর্যায়ে রানী ভেবেই পায় না কার উপর রাগ করবে । কিন্তু প্রচণ্ড রাগ দানা বাধতে থাকে মনের ভেতর । একটু আগে যে রাজীব কে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিলো , সেই রাজীব কেও অসহ্য লাগতে লাগলো , জয় কে অসহ্য লাগতে শুরু করলো , আব্বু কে একজন মেরুদণ্ডহীন কীট বলে মনে হতে লাগলো , দুনিয়ার সবার উপরেই রাগ হতে লাগলো । আর সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাসায় ঢুকেই । রানী বাসায় ঢুকেই নিজের হ্যান্ডব্যাগ ছুড়ে ফেলে সোফার উপরে । তারপর ধপ করে বসে পরে , ব্যাগের পাশেই । কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ থাকে , আড় চোখে রাজীব কে দেখে একবার । ওর দিকেই তাকিয়ে আছে , কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । আর তখনি আর কাউকে সামনে না পেয়ে , দুনিয়ার সবার রাগ এসে পরলো রাজীবের উপর । এক পা এগিয়ে এসে রাজীব কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রানী বসা থেকে দাড়িয়ে যায়, চিৎকার করে ওঠে , প্রচণ্ড জেদে দিক্বিদিক শূন্য হয়ে আক্রমণ করে রাজীব কে । “ তুই কিছু বলবি না , একটা কথাও যেন ওর মুখ থেকে না বের হয় , তুই ভবেছিস কি নিজেকে ? রাজীব দ্যা গ্রেট , কে তোকে অধিকার দিলো আমাকে আমার বন্ধুদের সামনে অপমান করতে , তুই কে , তুই কি আমার বাবা? আমার মা? না তুই কিছুই না, আমার ব্যাপারে তুই আর নাক গলাবি না , আমি যা ইচ্ছা তাই করবো , যখন ইচ্ছা তখন বের হবো , যখন ইচ্ছা তখন বাসায় আসবো , যার সাথে খুশি তার সাথে যেখানে খুশি সেখানে যাবো” রাজীব যেন একটা স্ট্যাচু হয়ে , রানীর বলা একেকটা কথা ওর কানে তীরের মত আঘাত করতে থাকে । সুধু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না রাজীব । এদিকে রানীর মনের ঝাল এখনো মেটেনি , জাস্ট দম নেয়ার জন্য থেমেছিলো , দম নেয়া হতেই আবার শুরু করে ,এবার আর উঁচু স্বরে , প্রায় গলা ফাটিয়ে “ আমাকে ভয় দেখাস , আব্বুকে বলে দিবি , দে না , যা বলে দে । আমি কি ভয় পাই? এমন আব্বুর আমার দরকার নেই , নিজের ছেলে মেয়ের খেয়াল রাখতে পারে না , নিজের স্ত্রী কে বাঁচিয়ে রাখতে অন্য কারো কাছে হাত পাততে হয়……” এই পর্যায়ে রাজীব আর চুপ থাকতে পারে না , ওকে যা তা বলুক কোন সমস্যা নেই , কিন্তু আব্বুর সম্পর্কে বলা কথা গুল আর হজম হয় না , দাঁতে দাঁত পিষে বলে “ আর একটা কথা আব্বুর সম্পর্কে বললে ……” “ কি করবি , মারবি , মার, মারনা আমাকে” এই বলে রানী এগিয়ে যায় রাজীবের দিকে , আর একটু হলেই ধরে ফেলতো রাজীব কে, ভয়ে রাজীব দু পা পিছিয়ে যায় । আর রানী রাজীব কে ধরতে না পেরে , ফাস্টেসনে প্রায় কেঁদে ফেলে বলে “আমি মরে গেলেই তো তুই আর তোর আব্বু বেঁচে যাস , তোদের বোঝা হালকা হয়ে যায়, তোরা ত এমন ভাব করিস যে তোরা না থাকলে আমি একা বেঁচে থাকতে পারবো না , আসলে তোরা আমাকে ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করিস , নিজদের নেই মুরুদ , একেকটা লুজার , আর সেটা লুকাতে আমাকে ব্যাবহার করিস তুই , আর তোর আব্বু আমার মরা মা কে ব্যাবহার করে , ভাব দেখাস তোরা একেকজন মহান ব্যাক্তি , একজন স্ত্রী শোকে পাথর হয়ে গেছে , আর একজন সংসারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছে , বাইরের মানুষ তো বোঝে না এসব তোদের ভং , সবাই তোদের হাততালি দেয় , বাহবা দেয় । আসল ব্যাপার তো আমি জানি , তোরা হলি একেকজন ধাপ্পাবাজ “ **** লুজার শব্দটা রাজীবের কানে খুব বাজে , আজকাল এই শব্দটা খুব শুনতে হচ্ছে ওকে । ওর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে । অন্তত রানীর মুখ থেকে এই শব্দটা আশা করেনি ও । রাজীবের কাছে মনে হচ্ছে ওর জীবনটাই ভুলে ভরা । ভালো করতে গিয়ে আজ পর্যন্ত সব কিছু গোলমাল ই পাকিয়ে ফেলেছে । ওর কাছে মনে হচ্ছে , এতদিন যে পরিক্ষার খাতায় লিখেছে , এই কয়দিনে সেই পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে । আর খুব বাজে ভাবে ফেইল করেছে ও । প্রথমে রানীর সেই কাটা হাতের দৃশ্য। তারপর নিজে থেকে বাড়িয়ে দেয়া জান্নাতের মত মেয়ের হাত ফিরিয়ে দেয়া । তারপর আজকে রানীর মুখে থেকে এই অপবাদ গুলো। একেকটা ঘটনা যেন বড় বড় একেকটা জিরো। রাজীব নিজের ভাবনায় কিছুটা ডুবে যাওয়ায় রানীর বলা শেষের কথা গুলো শুনতে পায়নি । কিন্তু হঠাত খেয়াল হলো , রানী আর চেঁচাচ্ছে না , তাই রাজীবের ধ্যান আবার রানীর দিকে গেলো , আর হতবাক হয়ে দেখলো রানী আর চেঁচাচ্ছে না , তার জায়গায় বিড়বিড় করছে , ওর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে , কিন্তু জোড় করে খুলে রাখার চেস্টা করছে , রানী ঠিক মত দাড়াতেও পারছে না , টলছে । দ্রুত রাজীব রানীর কাছে এসে রানী কে ধরে ফেলে । রানী শক্তিহীন হাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে , বিড়বিড় করে বলতে থাকে , আমাকে ধরবি না , আমাকে ধরবি না , তোদের ছাড়াও আমি চলতে পারবো , আমি তোদের বোঝা হতে চাই না। কিন্তু রাজীব এসব কথায় কান দেয় না , রানী প্রায় ওর উপর এলিয়ে পরেছে । প্রায় জ্ঞান শূন্য হওয়ায় বেশ ভারি লাগছে । রাজীব ওকে টেনে এনে সোফায় শুইয়ে দেয় , আলতো করে বেশ কয়েকবার আগলে হাত দিয়ে আঘাত করে ডাকে । কিন্তু রানী কোন রেস্পস্ন করে না । রাজীব দ্রুত এক গ্লাস পানি এনে রানীর মুখে ধরে , খাওয়াতে চেষ্টা করে , কিন্তু সফল হয় না , শেষে গ্লাসে হাত ঢুকিয়ে কিছু পানি নিয়ে রানীর চোখে মুখে মাখিয়ে দেয় । হাতের তালু পায়ের তালু পালা করে মালিশ করতে থাকে । সেই সাথে বার বার ডাকতে থাকে নাম ধরে । রাজীব জানে রক্তশূন্যতা র কারনেই এমন হয়েছে । রাজীব ধিরে ধিরে রানী কে চিত করিয়ে শুইয়ে দেয় , শরীর থেকে ওড়না সরিয়ে দেয় যেন বাতাস ঠিক মত লাগে । তারপর রানীর পা একটা একটা করে প্রায় এক ফুট উপরে তুলে ধরে রাখে , প্রতিটা পায়ের নিচে সোফার কুশন দিয়ে দেয় । তারপর লক্ষ্য রাখে রানীর শ্বাস প্রশ্বাসের উপর । মিনিট খানেক পর ই রানী হালকা করে চোখ মেলে তাকায় । মুহূর্ত খানেক তাকিয়ে থেকে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে , চোখের কোন বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে । রাজীব আরো কিছুক্ষন সময় নেয় , তারপর ধিরে ধিরে রানী কে পিঠে হাত দিয়ে উঠে বসতে সাহায্য করে । পানির গ্লাস মুখের সামনে ধরে । রানী কয়েক চুমুক পানি মুখে নিয়ে , আড় চোখে একবার রাজীবের দিকে তাকায় , ঠোঁট দুটো কেঁপে ওঠে রানীর । এ হচ্ছে অসহায়ত্বের কান্না যাকে এতক্ষণ যা ইচ্ছা তাই বলেছে , তার হাতেই এখন ভর দিয়ে বসে আছে । ওর চেয়ে অসহায় এই দুনিয়ায় আর কে আছে । *****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
06-10-2025, 07:52 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (ঘ)
চৌধুরী বাড়ির মত শিকদার বাড়িতে গ্যারাজ নেই । বলতে গেলেই রাজীব ই প্রথম ব্যাক্তি যার বাহন আছে । তাই রাজীব বাইক রাখার জন্য বাড়ির মেইন গেটের পাশে একটা টিন দিয়ে শেড তৈরি করেছে । সেখানে বসেই নিজের বাইকের কিছু পরিচর্যা করছিলো । এমন সময় রানী ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে রাজীবের বাইকের শেডের সামনে এসে দাড়ায় । বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে চুপচাপ , কোন কথা বলে না । গতকালের ঘটনার পর রানীর সাথে রাজীবের আর দেখাই হয়নি । রাতের খাবার রানী নিজের ঘরে খেয়েছে । সকালেও নাস্তার সময় ছিলো না । রাজীব আর রহিমের নাস্তা হয়ে গেলে তবেই খেয়েছে । যদিও রান্না রানী ই করেছে । আজকাল সন্ধ্যায় রাজীব বাসায় থাকে না বলে রান্না পুরোটাই রানী কে করতে হচ্চে । “ আমার ক্লাস আছে আধ ঘণ্টার মাঝে” কোন ধরনের সম্বোধন না করেই রানী বলে , তবে কণ্ঠে রাগের কোন চিহ্ন নেই । রানী যে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা রাজীব আগেই টের পেয়েছিলো , কিন্তু ও নিজেও কিছু বলেনি । রানী কথা বলার পর ঘুরে দাড়ায় , মুখে একটা মলিন হাসি , রাজীব লক্ষ্য করেছে , রানী ওকে ভাইয়া না বলেই কথা বলেছে । “বাইকে কিছু সমস্যা আছে , আমি এখন যেতে পারবো না , তুই চলে যা” রাজীব সত্য কথাই বলে । উত্তরে রানী সুধু “ হু” বলে হাটা শুরু করে , কথা বাড়ায় না । রানী প্রায় মুল ফটকের সামনে চলে গেছে , এমন সময় পেছন থেকে রাজীব ডাক দেয় , “ রানী, শুনে যা” । ডাক শুনে রানী দাড়িয়ে যায় , আবার হেটে রাজীবের সামনে এসে দাড়ায় , রাজীবের দিকে সরাসরি তাকায় না , মাথা নিচু করে নিজের পায়ের নখের দিকে তাকিয়ে আছে । “ সুধু আজকে না , এখন থেকে তুই একাই যাবি , যখন খুশি তখন যাবি , যখন খুশি তখন ফিরবি , যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে যাবি , যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে যাবি , এখন থেকে কোথাও যেতে হলে আমাকে জিজ্ঞাস করার দরকার নেই। “ রাজীবের কথা গুলো শুনে রানীর খুশি হওয়ার কথা , কিন্তু ও আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করে ওর যতটা খুশি হওয়ার কথা ততটা খুশি লাগছে না । চট করে একবার রাজীবের দিকে তাকায় , তবে সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় । রানীর তাকানোর উদ্দেশ্য ছিলো দেখা যে রাজীব রাগ করে এসব বলছে কিনা । কিন্তু রাজীবের অভিব্যাক্তি বোঝা যাচ্ছে না , সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত রাজীব । “ আসলে আমার ই দোষ , একটু বেশি বেশি করে ফেলেছি , তুই এখন বড় হয়েছিস , এখন যদি তোকে আমি ধরে বেধে রাখি ,এটা তোর উপর অন্যায়ই করা হবে । এটা স্বাভাবিক যে তুই রাগ করবি , তাই গতকালের কথায় আমি কিছু মনে করেনি । সত্যি বলতে আমিও যে খুব অভিজ্ঞ মানুষ অথবা জ্ঞানী মানুষ এমন তো নয় । নিজের বুদ্ধিতে যতটুকু কুলিয়েছিলো তাই করেছি , তুই আমার উপর রাগ করে থাকিস না, আমি মনে করেছিলাম ঐসব করলেই তোর জন্য ভালো হবে” রানী মাথা তুলে তাকায় না , দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়াতে থাকে । ওর ইচ্ছা হয় কিছু বলতে , কিন্তু লজ্জায় পারেনা । গতকাল যা করেছে তার পর রাজীবের মুখোমুখি হওয়া ওর জন্য বেশ লজ্জাকর। এদিকে রাজীব বলেই চলছে “ আসলে কি , আমাদের অভ্যাস হয়ে যায় । আমরা মনে করি আমাদের চেয়ে যারা ছোট আছে , তারা সব সময় আমাদের চেয়ে কম বোঝে । কিন্তু কালকে তুই আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছিস, সত্যি বলছি , গতকাল আমি অনেক কিছু শিখেছি । তুই আমাকে শিখিয়েছিস , সব সময় ধরে রাখা ভালো নয় , বুঝতে হবে you have to let them go। আমার উপর রাগ রাখিস না , তোর উপর ও আমার কোন রাগ নেই , যা করেছি ভুলে করে ফেলছি।” রানীর ইচ্ছে হয় রাজীব কে চুপ করতে বলতে । হ্যা রাজীব পুরোপুরি মিথ্যা বলছে না , ইদানিং ওর আচরণ একটু বাড়াবাড়ির দিকেই যাচ্ছিলো । কিন্তু এতে বার বার মাফ চাওয়ার কি আছে । ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে এটাই রানীর কাছে অনেক কিছু। “ তুই এখন বড় হয়েছিস , বুঝ হয়েছে , নিজের ভালো তোর চেয়ে বেশি আর কেউ বুঝতে পারবে না । তবে আমি সুধু একটা কথাই বলবো , কখনো এমন কিছু করবি না , যাতে করে তোর ক্ষতি হয় , নিজের ক্ষতি হয় এমন কাজ করার আগে একবার নয় দশবার ভেবে নিবি । মনে রাখবি এই দুনিয়ায় একজন মানুষের নিজের চেয়ে আপন কেউ নয় , তাই সব সময় নিজেকে প্রাধান্য দিবি, অন্য কিছুই নয় , অন্য কাউকে নয় । আর তুই কালকে বললি যে তুই আমাদের বোঝা । না তুই কারো বোঝা নস , আর আজকে থেকে এমন ভাবে নিজেকে তৈরি করবি , যেন ভবিষ্যতেও কারো বোঝা না হতে হয় । আমি সুধু এটুকুই বলবো , বাকিটা তুই সিদ্ধান্ত নিবি , কিভাবে চললে তুই নিজের আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবি কারো বোঝা হয়ে নয়” “ নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমার দিকে তাকা” রানীকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাজীব ওকে নিজের দিকে তাকাতে বলে । রানী ধিরে ধিরে চোখ তুলে তাকায় । রানী তাকাতেই রাজীব হাসে , বেশ উজ্জ্বল হাসি , কোন ফেক হাসি নয়। হাসতে হাসতে বলে … “ আর তোর প্রতি আমার এই বিশ্বাস আছে যে তুই সঠিক সিদ্ধান্ত নিবি” রাজীবের শেষ লাইনটা শুনে রানীর শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে । এতো বড় একটা কথা এমন একজনের মুখ থেকে এসেছে , যে কিনা গতকাল পর্যন্ত ভাবতো , রানী একটা বাচ্চা মেয়ে। আত্মবিশ্বাসে রানীর শরীর মন ভরপুর হয়ে ওঠে । রানীর ঠোঁটেও একটা আত্মবিশ্বাসী হাসি ফুটে ওঠে । যেন বলতে চাইছে , ‘হ্যা তুই আমাকে বিশ্বাস করে ভুল করিস নি, এটা আমি প্রমান করে দেবো’ রানী আবার পা বাড়ায় বাইরের উদ্দেশ্যে । রানীর মনে এক অন্য ধরনের অনুভুতি হয় । এর আগে অনেকবার এই বাড়ির প্রধান ফটক খুলে বের হয়েছে । কিন্তু আজকের মত অনুভূতি কোনদিন হয়নি । রানীর কাছে মনে হচ্ছে আজকেই প্রথম ও সত্যিকারের বাড়ির বাইরে যাচ্ছে । প্রধান ফটক খুলে রাস্তায় পা রাখতেই মনে হলো , ও মুক্ত , স্বাধীন একজন মানুষ । এই পথ ধরে বহুদুর হারিয়ে যেতে কেউ ওকে মানা করবে না । সব সময় একটা পিছুটান থাকবে না। মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে । মনে হয় ওর দুটো ডানা গজিয়েছে । চাইলে এখনি ফুড়ুৎ করে উড়াল দিতে পারে । রানী গলির মুখে যাওয়ার জন্য হাটা শুরু করে , আজকে আর নিচের দিকে তাকিয়ে হাটে না , এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে হাটে , মুখ হাসি লেগেই আছে। পরিচিত জনের সাথে দেখা হলে হেসে অভিবাদন করছে । পরিচিত জনেরাও ভাবছে , এই মেয়েকে তো আজকে অন্যরকম লাগছে । রাজীবের কথা গুলো ওর আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে উঠিয়ে দিয়েছে । এদিকে রাজীব আবারো বাইক পরিচর্যার কাজে মন দিয়েছে । কিছুক্ষন মন দিয়ে কাজ করার পর হঠাত রাজীবের হাত থেমে যায় । একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় , তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে বলে , “ আম্মু তুমি আমাকে যে পুতুল দিয়ে গিয়েছিলো , আমি এতদিন সেই পুতুলের ব্যাটারি গুলো যথা সাধ্য চার্জ করে দেয়ার চেষ্টা করেছি । কত টুকু পেরেছি জানি না, তবে আমার বিশ্বাস আমার চেষ্টায় কোন কমতি ছিল না। আজকে আমি তোমাকে সাক্ষি রেখে সেই পুতুল কে বাইরের দুনিয়ায় ছেড়ে দিলাম , নিজের জীবন নিজের ইচ্ছা মত সাজানোর জন্য । তুমি সাক্ষি থাকো আম্মু , আমি আজকে যা করলাম ভালোর জন্যই করলাম । এই সাথে দোয়া করো যেন সব কিছু ভালো ভালো হয় । অন্তত তোমার কাছে আমি যেন লুজার না হই” **** চৌধুরী বাড়িতে দ্বিতীয়বার নাস্তার আয়োজন চলছে । প্রথমবার জয়নালের জন্য হয়ে গেছে । দ্বিতীয়বার চলছে জান্নাত আর জয়ের জন্য । সাধারনত তিনবার নাস্তার আয়োজন করা লাগে , কিন্তু আজকে কাকতালীয় ভাবে জান্নাত আর জয় আক সাথেই নাস্তা করতে এসেছে । “ কিরে ? তোকে আজকে একটু সাদা সাদা লাগতেসে?” জান্নাতকে দেখেই বলে ওঠে জয় । “ ফালতু কথা অন্য জায়গায় গিয়ে বল “ জান্নাত জয়ের দিকে না তাকিয়েই উত্তর দেয় “ আরে না ফালতু কথা না , সত্যি সত্যি বলছি” “ তোর কি আমার দিকে বা অন্য কারো দিকে দেখার টাইম আছে ? তুই তো নিজেরে দেইখাই কুল পাস না, আমি আগেও যেমন ছিলাম তেমন ই আছি” “ আরে না না আমি দেখি তো , কিন্তু বলার মত ত কিছু নাই , তুই হলি অডিনারি পারসন , আর আমি হইলাম এক্সট্রা অডিনারি। তাই তোরে নিয়া বলার মত কিছু পাই না” “ যদি সাদা হয়েই থাকি তাহলে ত ভালই হয়েছে , তুই ই তো বলতি আমি কালো বলে আমার বিয়ে হবে না , এখন তো সাদা হয়ে গেছি , এখন তোর চিন্তা কমে গেছে” জান্নাত নির্লিপ্ত ভাবে বলে । “ আরে আরে দাড়া , এতো খুশি হওয়ার কিছু নাই, আমি ওই সাদা বলি নাই , মরা মানুষ যেমন একটু ফ্যাকাসে হয়ে যায় ওই সাদার কথা বলছি” জয় হাসতে হাসতে বলে । জয়ের এমন নির্লজ্জ হাসি দেখে জান্নাতের শরীর রাগে জ্বলে যায় । চোখ গরম করে জয়ের দিকে তাকায় । এদিকে জয় হাসি থামাতে চেষ্টা করছে খুব । অনেক চেষ্টার পর হাসি থামায় , তারপর বলে “ আমি ভাবলাম হয়তো পাশের মরা বাড়ির মরা মানুষ গুলর সাথে বেশি বেশি মেশার কারনে তোর ও মরা রোগ ধরেছে, আমার কথা শোন ওদের সাথে বেশি মিশিস না, ওদের ওই রোগ কিন্তু ছোঁয়াচে” শেষের কথা গুলো বলার সময় জয়ের হাসি মুখটা মলিন হয়ে যায় । আর এই ব্যাপারটা জান্নাতের চোখ এড়ায় না । জান্নাতের দৃষ্টি একটু নরম হয়ে আসে , শেষের দিকে জয়ের কণ্ঠে যে কষ্ট মেশানো ছিলো । ওই কষ্ট ও ফিল করতে পারে । এছাড়া জান্নাত এটাও ভাবে , হয়তো ওর মনের কষ্টের কিছু ছাপ চেহারাতেও পরেছে , আর জয় সেটা লক্ষ্য করেছে । তারপর নিজের স্বভাব মত সেটা ওকে জানিয়েও দিয়েছে । জয় এমনি , স্বাভাবিক ভাবে নিজের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে পারে না । জয় ভাবে কারো জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা দুর্বলতার লক্ষন । জান্নাত ভেবে পায়না জয় এই ধরনের ব্যাপার গুলো শিখল কোথায় , কবে থেকে যে ও এমন হয়ে উঠলো সেটা কেউ জানে না। আর এই কারনেই সবাই জয় কে ভুল বোঝে। জান্নাত আড় চোখে জয়ের দিকে তাকায় , খাচ্ছে , তবে একটু আগের হাসি খুশি ভাবটা নেই । জয়ের জন্য মায়া হয় ওর ,কারন জয় নিজে যে কষ্টের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে , সেই একি কষ্ট জান্নাত নিজেও মনে চেপে রেখছে। জান্নাত ভাবে, নিজের কথা ভাবতে ভাবতে রানী আর জয়ের ব্যাপারটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো ও । রানীকে জান্নাত কথা দিয়ে এসেছিলো । এই ব্যাপারে ও রানী কে হেল্প করবে । এর পর আর কথা হয়ে ওঠেনি । সত্যি বলতে রানীর উপর একটু রেগেই আছে জান্নাত । জান্নাতের ধারনা হয়েছে রানীর জন্যই রাজীব ওর কাছ থেকে দূরে চলে গেছে । তাই রানী আর জয়ের ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হয়নি । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি । নিজে না হয় কষ্টে আছে , তাই বলে অন্য কেও কষ্টে রাখবে । আর এই অন্য কেউ তো ওর পর কেউ না । একজন ওর আপন ভাই , অন্যজন ওর ছোট বেলার বন্ধু । জান্নাত দ্রুত নাস্তা সেরে নেয় । তারপর ব্যাগ গুছিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয় । ঘরের বাইরে বেড়িয়ে যখন প্রধান ফটকের দিকে যাচ্ছিলো । তখন জয় পেছন থেকে ডাকে , ওকে অবাক করে দিয়ে বলে “ চল তোকে বাইকে রাইড দেই” জান্নাত অবাল হয়ে জিজ্ঞাস করে “ তোর বাইক আমাকে নিতে রাজি হবে?” জয় প্রশ্ন শুনে হাসে , বলে “ ব্যাটার পাছার চামড়া তুলে ফেলবো যদি তোকে নিতে রাজি না হয়” “ কি রে , এটা না তোর গার্ল ফ্রেন্ড!!!! ব্যাটা হলো করে থেকে!!!” জান্নাত বিদ্রূপাত্মক স্বরে জয় কে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে । জয় ও একটু লজ্জা পায় , বলে “ আরে ধুর কোনদিন দুষ্টুমি করে বলসি আর তোর এখনো মনে আছে, আয় ওঠ” বাইকে করে যেতে যেতে জান্নাতের বেচারা বাইকের জন্য মায়াই হয় , গার্ল ফেন্ড থেকে কেবারে ব্যাটা !! **** ক্লাস শেষে জান্নাত ভার্সিটি চত্তরে একটা ছোট খাটো প্রটেস্টে কিছু ছাত্র ছাত্রীর ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য এসেছিলো জান্নাত । ইন্টারভিউ শেষে পাশে পার্কের গেটে একটা চায়ের দোকানে এসে দাড়ায় । তখনি কিছু দূরে দেখতে পায় রানী তিন চারজন মেয়ের সাথে পাঁচমিশালী ভর্তা খাচ্ছে । কি নিয়ে যেন ওদের মাঝে প্রচুর হাসাহাসি হচ্ছে । রানী নিজেও হাসছে , আবার রাগ করে কি যেন বলছে । জান্নাত চায়ের অর্ডার না দিয়ে ওই দিকেই যায় । “ বাহ বাহ মহারানী দেখি আজকে দারুন মুডে আছে” একটু খোঁচা দিয়েই বলে জান্নাত । কিন্তু রানীকে দেখে বুঝতে পারে রানী ওর খোঁচা বুঝতে পারেনি । তবে জান্নাত আর খোঁচা খুচির দিকে যায় না । “ আরে জান্নত দেখো না , রানী আমাদের কিছুতেই ওর ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে না” পায়েল জান্নাতের কাছে বিচার দেয়ার মত করে বলে । জান্নাত এই মেয়েগুলো কে আগে থেকেই কিছুটা চেনে । রানীর মাধ্যমেই পরিচয় হয়েছে । কিন্তু রানী জান্নাত কে কোন উত্তর না দিতে দিয়ে বলে “ আমার ভাই কে আমি দেখে শুনে বিয়ে দিবো বুঝলী , তোদের মত মেয়ের পাল্লায় পরলে আমার ভাই শেষ , আমি দেখে শুনে সভ্য শান্ত মেয়ে খুজে আনবো” রানীর কথা শুনে জান্নাত মৃদু হাসে । কিন্তু সেটা কারো চোখ পরে না । এই মেয়দের আলোচনার বিষয় যে রাজীব সেটা বুঝতে পাড়ার পর থেকেই জান্নাতের মুড অফ হয়ে গেছে , এই ধরনের আলচনায় অংশ গ্রহনের ইচ্ছা ওর নেই । এদিকে নিসা ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা টেনে বলে “ এই দেখ আমার মত সতি সাদ্ধি মেয়ে তুই কই পাবি , সারাদিন তোর ভাইয়ের সেবা করবো” নিসার কথা শুনে বাকি মেয়েরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । এর মাঝে ঋতু বলে ওঠে “ কি কি সেবা করবি আমাদের একটু বল না” জান্নাতের আর সহ্য হয় না , রানীকে বলে , “ তোর সাথে কথা ছিলো , একটু এদিকে আয় তো” রানী ও হাফ ছেড়ে বাঁচে , আজেকে পুরোটা সময় ওকে জ্বালিয়েছে ওর তিন ান্ধবী । এমন নির্লজ্জ মেয়েও যে আছে সেটা রানীর জানা ছিলো না । সুন্দর ছেলে দেখলেই এদের লালা ঝরে । একটু দূরে এসে রানী জিজ্ঞাস করে , “ কি বলবি?” আগের মত ভালো মুড জান্নাতের নেই , তাই বলল “ এমনি বলেছি , ওদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলাম , কেমন বেহায়া মেয়ে গুলো, মুখ কিছু আটকায় না ” “ আর বলিস না , আমি এতো করে বললাম , কিন্তু যত বলি তত বেশি করে করে , তাই বলা ছেড়ে দিয়েছি” “ তুই ঘুরিস কেনো ওদের সাথে?” জান্নাত একটু রেগে গিয়েই জিজ্ঞাস করে । “ কি করবো , একা একা তো থাকা যায় না , আর তুই তো আজকাল আসমানের চাঁদ হয়ে গেছিস” রানী যে ওকে হালকা খোঁচা দিয়েছে , সেটা জান্নাত বুঝতে পারে । তাই কথা ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । যে কারনে এসেছিলো সেই আসল কারনে ফিরে যায় । বলে “ তোকে তো আজকে বেশ খুশি খুশি লাগছে , ওই ছেলের সাথে মিট্মাট হয়ে গেলো নাকি , তোর মাঝে তো আলাদা ধরনের ঝলক দেখা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে অন্ধকারে রেখে দিলে তুই লাইটের কাজ করবি” বলে জান্নাত একটু হাসার চেষ্টা করে । জান্নাতের কথা শুনে রানী কিছুটা লজ্জা পায় , মনে মনে ভাবে জান্নাত যদি জানতো ও না জেনে কার কথা বলছে ।“ আরে না রে , ওই সাহস আমার নাই , দেখেলেই ভয় লাগে , এমন ভাবে তাকায় যেন মারবে। তবে কারন একটা কাছে, অবশেষে ভাইয়া বুঝতে পেরেছে যে আমি বড় হয় গেছি , এখন আমাকে কন্ট্রল করার দরকার নেই” রানী একেবারে বাচ্চা মেয়েদের মত খুশি হয়ে বলে । রানীর এমন খুশি হওয়া দেখে জান্নাত একটু হাসে , মনে মনে ভাবে , কেউ কোন কিছু না চাইতেই পেলে তার মূল্য বোঝেনা ,রাজীবের কেয়ার আজকে রানীর কাছে কন্ট্রোল করা মনে হচ্ছে । অথচ জান্নাত দেখছে কিভাবে এক টানা সাত দিন বাসায় না ফিরে রানীর জন্য হসপিটালে কাটিয়েছে রাজীব । “ তা হঠাত তোর ভাইয়ের এমন শুভবুদ্ধি হলো কেন রে?” জান্নাত যদিও হেসে হেসে বলল , কিন্তু মনে রাজীবের জন্য এক ধরনের মমতা বোধ করতে লাগলো, শেষ পর্যন্ত রানীও ওকে ভুল বুঝলো । জান্নাতের প্রস্নে রানী একটু আমতা আমতা করে , একবার ভাবে বলবে না , তারপর আবার ভাবে জান্নত ই তো , ওকে বলা যায় । মিন মিন করে রানী বলল “ গতকাল আমি একটু রাগ করেছিলাম ভাইয়ার সাথে” তারপর আবার নিজের সাইফাই দেয়ার জন্য বলল “ কেনো করবো না বল , এখনো ভাবে আমি ছোট আছি , আমাকে ভার্সিটি নিয়ে আসে , নিয়ে যায় । একা কোথাও যেতে দেয় না। গতকাল তো সব সীমা ছাড়িয়ে গেলো। গতকাল আমি বললাম যে ওদের সাথে একটু শপিঙয়ে যাই , সোজা না করে দিলো !!!! বল ওদের সামনে আমার মান সম্মান কোথায় থাকলো” রানী তিন ান্ধবিকে দেখিয়ে বলে । “ তুই বুঝি খুব সীমার মাঝে ছিলি ? রানী তুই নিজের হাত নিজে কেটেছিস ,তুই কি সেটা ভুলে গেছিস। আমি যদি তোর গার্ডিয়ান হতাম তাহলে আমি ভাবতাম তুই নেশা করিস , তা ছাড়া তুই অজ্ঞান অবস্থায় তোর ওই প্রেমিকের কথা বার বার বলেছিস , ওগো তুমি এমন কেমন করলে , ওগো তুমি আমাকে কষ্ট দিলে কেনো?” জান্নাত একটু ভেংচিয়ে বলে । “ তোর ভাই সেসব শুনেছে , অন্য কোন ভাই হলে কি করতো জানিস? থাপড়ে তোর গালের দাঁত ফেলে দিতো, ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিতো , তারপর বিয়ের বেবস্থা করে ঝামেলা বিদায় করতো” জান্নাত একটু শ্লেষের সাথে বলে । আসলে রাজীব কে রানী ধমকেছে এটা শুনে নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারছে না । যে ছেলে ওর জন্য এতো কিছু করলো তাকেই রানী ভুল বুঝে যা তা বলবে , জান্নাতের কাছে অন্তত এসব গ্রহণযোগ্য নয় । তা ছাড়া জান্নাত শিওর রাজীব নিজের পক্ষে কোন সাফাই দেয়নি । তাই রাজীবের হয় কিছু কথা বলার ইচ্ছা দমিয়ে রাখতে পারলো । “ আর শোন , কেউ সখ করে তোকে ভার্সিটি নিয়ে আসা নিয়ে যাওয়ার ডিউটি করতে চাইবে না, এটা খুব সুখের কাজ নয় , তার উপর রাজীব নিজেও পারট্টাইম জব করছে আজকাল , তোকে বাসায় দিয়ে আসতে যে এক ঘন্টা সময় ব্যয় হয় , সেটা ও চাইলে রেস্ট করতে পারতো” কথা গুলো বলে জান্নাত খুব আরাম পায় । রানীর মুখের দিকে তাকিয়ে রিগ্রেট খোঁজার চেষ্টা করে । কিন্তু তেমন কিছুই দেখতে পায় না । উল্টো হালকা রাগ দেখতে পায় । তাই জান্নাত আর কথা বাড়ায় না , এটা রাজীব আর রানীর ব্যাপার এখানে ওর হস্তক্ষেপ করাই ঠিক হয়নি । এটুকু বলল , কারন রানীর জানা উচিৎ ছিলো কেন রাজীব এসব করেছে । তা ছাড়া নিজের মনের ও কিছুটা তাগিদ ছিলো । রাজীব চুপচাপ সব সহ্য করবে এটা ও হতে দিতে পারে না । এক মুহূর্তের জন্য রানীর মনে কিছুটা খটকা লাগলেও , সেটা স্থাই হলো না , সদ্য প্রাপ্ত স্বাধীনতার কাছে এসব কথা টিকতে পারে না । “ তুই ও ভাইয়ার পক্ষে কথা বলছিস?” রানী বিরক্তি নিয়ে বলে “ না না আমি রাজীবের পক্ষে কথা বলছি না , আমি তোর পক্ষেই বলছি , অতীত যেন ভুলে না যাস সেটা চেষ্টা করছি , এতে তোর ই উপকার হবে, তোর স্বাধীনতা দরকার সেটা তুই নিবি , এটা তোর অধিকার , কিন্তু তার জন্য নিরপরাধ কেউকে যা খুশি তাই বলবি এটা কেমন কথা” জান্নাত কথাগুলো একেবারে শান্ত নির্লিপ্ত স্বরে বলে । এবার রানী ক্ষেপে যায় , বেশ ঝাঁজের সাথে বলে “ আমার ভাই , আমি যা খুশি তা বলবো তাতে তোর কি? আজকাল দেখছি যে সুযোগ পায় সেই জ্ঞান দিতে চায়। আর কিছুদিন যাবত তোর আচরণ ও দেখছি , কাজের অজুহাত দিয়ে আমাকে এড়িয়ে যাস , এতই যদি আমি খারাপ , তাহলে সরাসরি বলে দিস” এই বলে রানী আর দাড়ায় না , গটগট করে হেটে চলে যায় । জান্নাত দাড়িয়ে থেকে সুধু মলিন ভাবে হাসে । রাজীবের জন্য মনটা কেমন করে , সেই সাথে রানীর জন্য ও। *****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
07-10-2025, 12:38 PM
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
08-10-2025, 04:48 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (ঙ)
জান্নাত বাড়িতে এসে আবার নিজের পছন্দের জায়গায় জানালার ধারে এসে বসে । এখান থেকে শিকদার বাড়ির পেছনটা দেখা যায় । ছোট আম্মুর কবর যেখানে । জান্নাত দেখে রাজীব সেখানে দাড়িয়ে আছে । রাজীবের পেছনটা দেখা যাচ্ছে , কিন্তু জান্নাত বুঝতে পারে রাজীব কথা বলছে । কারন ওর মাথা নড়াচড়া করছে । রাজীবের মুদ্রাদোষ হচ্চে , ও কথা বলার সময় মাথা নারে । জান্নাত ভেবে পায় না একজন মানুষের জন্য অন্য একজন মানুষের এতো টান কি করে তৈরি হয় । যেমন টান এখন এই মুহূর্তে রাজীবের জন্য অনুভব হচ্ছে । রানীর মুখে যখন শুনেছিলো রাজীবকে রানী কথা শুনিয়েছে, তখন অনুভুত হয়েছিলো । ইচ্ছে হয়েছিলো রানী কে আরো কড়া কড়া কিছু শুনিয়ে দিতে । যদিও এই ব্যাপারে জান্নাতের নাক গলানোর কোন অদিকার নেই। কিন্তু জান্নাতের মনে হয় , কেউ অধিকার না দিলেও ও রাজীবের জন্য প্রয়োজনে দুনিয়ার সবার সাথে লড়বে । রাজীব যে কষ্ট দেবে , সে ওর জন্য শত্রু । এই মুখচোরা , অভিমানী , নরম মনের ছেলেটির মনে কেউ কষ্ট দেবে , কেউ ওর ক্ষতি করতে আসবে । সেটা ও কোনদিন হতে দেবে না । রানী ওকে যখন প্রশ্ন করেছিলো “তুই কে?” তখন ওর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো “ আমি রাজীবের আর রাজীব আমার “ পাল্টা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়েছিলো “ তুই কে ? আমার রাজীবকে কষ্ট দেয়ার” । কিন্তু পারেনি , পারেনি কারন এই অধিকার রাজীব ই ওকে দেয়নি । তবে আজ এখন এই সিদ্ধান্ত নিলো জান্নাত , রাজীব অধিকার দিক আর না দিক , কাউকে পরোয়া করবে না ও । রাজীবের শরীরে বা মনে আচর কাটতেও কাউকে এলাউ করবে না । জান্নাত জানে , রাজীব আজকে থেকে রানী কে স্বাধীন করে দিলেও ও নিজে এখনো স্বাধীন হয়নি । কারন ওর মন আজকে থেকে আরো বেশি ভীত থাকবে । কারন সারাক্ষণ রাজীব ভাববে কাজটা ঠিক হলো কিনা ? রানী আবার উল্টাপাল্টা কিছু করছে কিনা? বরং আগের চেয়ে আরো বেশি বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা করবে । আরো বেশি চাপ নিয়ে নিবে নিজের উপর । ধিরে ধিরে জান্নাতের অভিমান হতে থাকে , অভিমান হয় রাজীবের উপর । ভাবে , কেন রাজীব আর দশটা সাধারন ছেলের মত হলো না , কেন রাজীব এই বয়সি ছেলে মেয়েদের মত সুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে না । এই দায়িত্বের চাপ এড়িয়ে যাওয়া কোন ব্যাপার ই না । সুধু দরকার ইচ্ছা শক্তির । জান্নাত বিড়বিড় করে বলে ‘একজন মৃত মানুষের অনুরধ রাখতে গিয়ে কেন সুধু সুধু নিজেকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস?’ জান্নাত জানে রাজীব কি সমসার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে । রানীর প্রতি রাজীবের কর্তব্য দায়িত্ব আছে , কিন্তু অধিকার নেই । আর এই কারনেই ওদের এই সম্পর্ক ধিরে ধিরে ইম্ব্যালান্স হয়ে যাচ্ছে । জান্নাত যদি এমন কিছু করতো তাহলে ওর বাবা ওকে যেভাবে টেক কেয়ার করতে পারতো , ঠিক একি ভাবে শাসন ও করতে পারতো , শাসন না মানলে হুমকি দিতে পারতো। কিন্তু রাজীবের বেলায় ব্যাপারটা ভিন্ন । রাজীব টেক কেয়ার তো নিজের তাগিদে করছে , কিন্তু শাসন করতে গিয়েই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে , প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে , অপমানিত হতে হচ্ছে । এসব ভেবে ভেবে জান্নাত অস্থির হয়ে ওঠে । ওর এই অস্থিরতার কারন , সুধু চুপচাপ দেখা ছাড়া ও রাজীবের জন্য কিছুই করতে পারছে না । জান্নাত দেখে রাজীব ধিরে ধিরে কবরের পাশে বসে পড়েছে । এখনো কথা বলে যাচ্ছে , জান্নাত রাজীবের কথা না শুনেই অনুমান করতে পারে , রাজীব কি বলছে । রাজীব ওর মায়ের দেয়া দায়িত্ব নিয়ে মায়ের সাথে কথা বলছে । নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই এখনো শিওর নয় , তাই কৈফিয়ত দিচ্ছে । জান্নাটের পক্ষে এই দৃশ্য দেখা সম্ভব হয় না । জানালা থেকে সরে দাড়ায় । তারপর নিজের ঘর থেকেই বেড়িয়ে যায় । আয়শা তখন বসে বসে একটা উলের টুপি বুনছে । জান্নাত আয়শার পাশে গিয়ে বসে । মেয়ের মুখ দেখেই আয়শা বুঝতে পারে , মেঘ জমেছে । সেই সন্ধ্যায় মেয়ে ওকে ধরে কাঁদার পরে আয়শা বেশ কয়েক দিন চেষ্টা করেছে ওই ছেলের সম্পর্কে কিছু জানতে। কিন্তু জান্নাতের মুখ থেকে কিছুই বের করতে পারেনি । জান্নাত সুধু এটুকু বলছে , ওই ছেলে আর ও সাগরের এপার ওপার দাড়িয়ে আছে , মাঝের সাগরটি দ্বিধা সংকোচ আর ভয়ের বিশাল বিশাল ঢেউএ ভরপুর। মাঝের ওই সাগর পারি দেয়ার ক্ষমতা ওই ছেলের নেই , তাই জান্নাত এখন মাঝ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে,, কিন্তু ওই ছেলে জান্নাতকেও নিজের কাছে আসার অনুমতি দিচ্ছে না। যদি জান্নাত কোনদিন পুরো সাগর পারি দিতে পারে তবেই ওই ছেলের সাথে ওর মিলন হবে। আয়শা এই কথা থেকে সুধু এটুকুই বুঝতে পেরেছে , যে মেয়ে কোন ছেলের জন্য পাগল হয়ে বসে আছে । কিন্তু সেই ছেলে কোন ধরনের সীমা বদ্ধতার জন্য জান্নাত কে আপন করে নিতে পারছে না । আর জান্নাত কেও নিজের কাছে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। মেয়ের এমন দুরবস্থা দেখে আয়শার মন ব্যাথায় ভরে ওঠে । কিন্তু ওর অসহায় ভাবে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই । মেয়ে কিছুতেই সেই ছেলের নাম বলবে না , ঠিকানা বলবে না । আয়শা অনেক ভাবে চেষ্টা করেছে । বলেছে , ও নিজে ওই ছেলেকে দেখবে কথা বলবে , এমনকি ওই ছেলেকে সাহায্য করবে , সমস্যা কাটিয়ে উঠতে । কিন্তু জান্নাত কিছুতেই রাজি নয় । জান্নাতের সাফ কথা , কারো সাহায্য নিয়ে , অথবা কারো কাছ থেকে সাহস ধার করে যদি ওই ছেলে ওকে আপন করতে চায় , তাহলে জান্নাত নিজেই ওই ছেলেকে প্রত্যাখ্যান করবে । ওই ছেলের নিজে থেকেই বুঝতে হবে, জান্নাত ওর জন্য বাড়তি কোন দায়িত্ব নয় , বাড়তি কোন বোঝা নয় । বরং ওর পথ চলার সাথী , সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার ান্ধব । যেদিন ওই ছেলে নিজে এটা উপলব্ধি করতে পারবে । এবং নিজে থেকে এসে জান্নাতের হাত ধরবে । সেদিন ই জান্নাত খুশি মনে সেই ছেলের হাত ধরবে । এর আগে নয় । না হলে আজ না হয় কাল আবার ওই ছেলে এই দ্বিধা দণ্ডে পরবে । আর জান্নাত সেটা কোনভাবেই চায় না। “ কিরে মা কিছু বলবি?’ আয়শা মুখে হাসি টেনে বলে । আয়শা চেষ্টা করে মেয়েকে খুশি রাখতে । সেই দিনের পর থেকে আয়শার মনে এই কথা গেঁথে গেছে যে মেয়ে আর বেশিদিন ওর সাথে নেই । তাই এখন আর খুব বেশি রাগ না হলে মেয়ের সাথে চেঁচামেচি করে না । যথা সম্ভব ভালো আচরণ করার চেষ্টা করে । “ না মা কিছু বলবো না” এই বলে জান্নাত চুপ করে দাড়িয়ে থাকে , কিছুক্ষন পর জান্নাত আয়শা কে জিজ্ঞাস করে “তোমার সাথে একটু বসবো?” “ ওরে আমার মা রে , আমার সাথে বসতে তোর আবার অনুমতি লাগবে!!! বস না” আয়শা হাত বাড়িয়ে মেয়েকে টেনে নেয়, নিজের পাশে বসায় । “ কি করছো?” কিছুক্ষন পর মা কে উল দিয়ে কিছু তৈরি করতে দেখে জান্নাত জিজ্ঞাস করে । “ সামনে শীত আসছে , তাই তোর আব্বুর জন্য একটা কান টুপি , জানিস তো তোর আব্বুর কেমন ঠাণ্ডা সর্দির সমস্যা আছে” আয়শা দুই হাতে কাঁটা চালাতে চালাতেই বলে । কথাটা বলার সময় আয়শার অজান্তেই একটা অন্য রকম হাসি চলে আসে। জান্নাত মায়ের ঠোঁটে সেই হাসি লক্ষ্য করে । এবং অভিজ্ঞতা না থাকলেও জান্নাত এই হাসির অর্থ বুঝতে পারে । জান্নাত বুঝতে পারে এই হাসি তৃপ্তির হাসি । নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু তৈরি করতে পারার আনন্দ । জান্নাত মুগ্ধ হয়ে দেখছে এই হাসিতে ওর মায়ের চেহারার ঔজ্জ্বল্য কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে । ওর মা কে এই মুহূর্তে দেখে মনে হচ্ছে এই মানুষটির মনে কোন দুঃখ নেই । থাকবে কি করে , পুরোটা মন যে ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে আছে । দুঃখের জন্য সেখানে কোন জায়গাই যে অবশিষ্ট নেই। “ কিরে ? এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন?” আয়শা মেয়েকে নিজের দিকে অমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু অবাক হয়। “ তোমাকে দেখি” জান্নাত ছোট করে হেসে বলে । মেয়ের কথা শুনে আয়শা কপাল কুঁচকে তাকায় , তারপর বলে “ আমাকে কি নতুন দেখছিস নাকি আজকে?” “ তা বলতে পারো , তোমার এই দিকটা আগে দেখা হয়নি” জান্নাত রহস্য করে হাসে । মায়ের কাছে কিছুক্ষন বসার পর ওর মন ধিরে ধিরে ভালো হতে শুরু করেছে । মায়েদের এই এক অলৌকিক ক্ষমতা থাকে । তাদের শরীরের ঘ্রান , স্পর্শ এসব থেকে অদৃশ্য কোন শক্তি নিঃসৃত হয় । আর সেই শক্তি মন থেকে সব দুঃখ ঝেটিয়ে বিদায় করে দেয় । সুধু মনই না শরীর ও সুস্থ করার ঔষধি গুন আছে মায়েদের । “ ওরে বাবা , আমার আবার কয়েটা দিক রে!!” আয়শা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে । “ এই যে তুমি আব্বুর জন্য উলের টুপি বুনছ , এটা করার সময় তোমার চেহারায় আলাদা একটা জেল্লা চলে এসেছে , আচ্ছা আম্মু তোমার কি আব্বুর জন্য কিছু তৈরি করতে খুব আনন্দ হয়” মেয়ের কথা শুনে আয়শা চুপ থাকে , মিট্মিট করে হাসে । একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখা যাবে আয়শার গালে হালকা লালিমা দেখা দিয়েছে । বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে “ হ্যা তা তো একটু লাগেই” বলেই আয়শা লিজ্জা মিশ্রিত হাসি হাসে । আয়শা ভাবে মেয়কে লুকিয়ে আর কি লাভ , মেয়ের এখন এমন বয়স হয়েছে , যে মেয়ে এসব বুঝতে শিখবে । “ ওরে আমার আম্মুরে , দেখো কেমন লজ্জা পাচ্ছে” জান্নাত বেশ মন খোলা হাসি হাসে । “ আম্মু জানো তোমাকে দেখে এখন কেমন লাগছে?” জান্নাত হাসতে হাসতে জিজ্ঞাস করে । আয়শা আরো লজ্জা পেয়ে যায় , আর সেটা ঢাকার জন্য কপট রাগের সাথে বলে , “ আমাকে আবার কেমন লাগবে ? যেমন লাগার তেমন লাগছে “ “ উহু দেখে মনে হচ্ছে কোন কিশোরী প্রেম করে ধরা খেয়েছে হি হি হি” জান্নাত খিল খিল করে হেসে ওঠে । “ বেশি ফাজিল হয়েছো!!!” আয়শা চাইলেও নিজের মুখ গম্ভির রাখতে পারে না । মেয়ের সাথে নিজেও হেসে ওঠে । তারপর একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলে “ আমাদের সময় কি এসব ছিলো ? না না ছিলো , অনেকে শুনতাম প্রেম করছে । কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ হয়নি , বুঝে ওঠার আগেই মা জানিয়ে দিলো , আগামি সপ্তায় বিয়ে, আমাদের ওসব নেই , যা দরকার হয় করি , তোমাদের খেয়াল রাখি , ঘর বাড়ি দেখাশুনা করি , এই আমাদের প্রেম” “ একদম মিথ্যা বলবে না আম্মু , আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি , কতটা রোম্যান্টিকটা তোমার মাঝে আছে , টুপিটা বোনার সময় তুমি সুধু দায়িত্ব থেকে বুনছ না , যদি তাই হতো তাহলে তোমার ঠোঁটে অমন হাসি থাকতো না , কাজ করতে কারো ভালো লাগে না , কিন্তু তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি কতটা তৃপ্তি পাচ্ছো আব্বুর জন্য এই টুপি বুনে” “ হু তুমি তো সব বুঝে বসে আছো, তুমি তো আমার মেয়ে না তুমি আমার মা হও” আয়শা কপট রাগের সাথে বলে । “ উহু আমি তোমার মা নই , যদি হতাম তাহলে এতো কম বয়সে বিয়ে দিতাম না, আমি তোমার ান্ধবী” জান্নাত আয়শা কে জড়িয়ে ধরে বলে । আয়শা মেয়ের কপালে একটা চুমু খায় , তারপর হেসে বলে “ একটা কথা ান্ধবী হিসেবে তোকে বলে রাখি , ভবিষ্যতে কাজে দেবে। যতই তোর স্বামীর জন্য কোন কিছু করতে ভালো লাগুক , কিছুতেই সেটা বুঝতে দিবি না , সব সময় ভাব করবি যে তুই খুব বিরক্ত হচ্ছিস , যদি একবার টের পেয়ে যায় তাহলে কিন্তু জীবন শেষ করে দেবে” আয়শার কথা শেষে মা মেয়ে দুজনেই এক সাথে হেসে ওঠে । হাসি শেষে জান্নাত বলে “ আমার কোনদিন কোন স্বামী থাকবে না,” আয়শা অবাক হয়ে তাকায় , ওর মনটা ধক করে ওঠে , ভয় পেয়ে যায় , ভাবে মেয়ে এসব কি বলছে ? মেয়ে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে করবে না ? “ সেকিরে মা তুই বিয়ে করবি না?” আয়শা ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে । জান্নাত মায়ের ভয় বুঝতে পারে , তাই দ্রুত মায়ের ভুল ভাঙ্গিয়ে দেয় , বলে “ না না সেরকম কিছু না , যদি বিয়ে করি , সে আমার স্বামী হবে না “ “ তাহলে কি হবে?” আয়শা এখনো মেয়ের কথার মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারে না , “ শোন আম্মু , স্বামী শব্দের অর্থটা আমার কাছে ভালো লাগে না , আমি যাকে বিয়ে করবো সে আমার স্বামী নয় , আমার একজন অন্যজনের সাথী হবো , কেউ কারো স্বামী নয়, বুঝেছো, স্বামী শব্দটা শুনলেই কেমন মালিক মালিক মনে হয় আর নিজেকে সেই স্বামীর অধিন লাগে , আমি কেন কারো অধিন হতে যাবো , আমি একজন স্বাধীন মানুষ , তোমরা কি আমাকে স্বাধীন ভাবে লালন পালন করছো না?” “ হুম” আয়শা ছোট করে বলে , ওর কাছে ভালোই লাগে , মেয়ে জ্ঞানীর মত কথা বলছে , ওর তো এমন কিছু ভাবনাতেই আসে না। “ তাহলে যেখানে আমার বাবা মা আমাকে স্বাধীন ভাবে লালন পালন করছে , সেখানে আমি কেন যেচে পরে একজন কে স্বামী বানাতে যাবো? যদিও শব্দটা আজকাল আর সেই অর্থে ব্যাবহার করা হয় না , তবুও শব্দটা কলঙ্কিত হয়ে গেছে , কারন এই স্বামী শব্দটা এক সময় ভয়ংকর ছিলো , এখন নখ দাঁত হারিয়ে থুবড়ে পরেছে যদিও। তবুও এই শব্দটা আমার কাছে একটা ক্রিমিনাল হয়েই থাকবে । এখন বুঝতে পেরেছো?” “ কিছুটা” আয়শা হেসে বলে , ভাবে আজকালের ছেলে মেয়েদের চিন্তা ভাবনা কি বোঝা এতো সহজ । আরো কিছুটা সময় জান্নাত আয়শার সাথে কাটায় । তারপর আবার নিজের ঘরে ফেরত আসে । জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখে এখনো রাজীব আছে কিনা । না রাজীব আর সেখানে নেই । জান্নাতের বুকের ভেতর থেকে একটা ভারি নিঃশ্বাস বের হয়ে আসে। মনটা আবার সিক্ত হয়ে আসে রাজীবের কথা ভেবে । এই যে ও এতক্ষণ মায়ের সাথে কাটিয়ে মন হালকা করে এলো । কিন্তু রাজীবের তেমন কেউ নেই । যার কাছে দুটো কথা বলে মন হালকা করবে । তাই সান্তনার জন্য মায়ের কবরের পাশে বসে কথা বলে গেলো। জান্নাত আর জানালার সামনে দাড়ায় না । ওর এখন একটা অনলাইন ওয়ার্কশপ জয়েন করার কথা । ভিডিও এডিটিং এর কাজ শিখছে জন্নাত । ওর ইচ্ছে হয়েছে ইউ টিউবে একটা চ্যানেল খোলার । হঠাত জান্নাতের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো । রাজীব কিছুটা এডিটিং এর কাজ আগে থেকেই জানে । ওর যখন ফটোগ্রাফির সখ ছিলো তখন শিখেছিল । রাজীব কে এই কাজটা অফার করলে কেমন হয় ? জান্নাত নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে । রাজীব তো পার্টটাইম জব করতে আগ্রহী । এই কাজ ই না হয় করলো।তা ছাড়া এই এডিটিং এর কাজ ওর মাথায় ঢুকছে না । সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । জান্নাত ঘড়ির দিকে তাকায় , এখন বাজে প্রায় সাড়ে তিনটা , এর মানে রাজীব কিছুক্ষনের মাঝে বেড়িয়ে যাবে । দ্রুত আয়নার সামনে দাড়িয়ে পোশাক ঠিক করে নেয় । তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় । **** রাজিব আজকে ক্যাম্পাসে যায়নি । অবশ্য একেবারেই বিনা কারনে সেটা বলা যাবে না । আজকে একটি বিশেষ দিন । নভেম্বর মাসের তেরো তারিখ । প্রতিবছর শীতের আগে আগে এই দিনটা আসে । এমনিতে গতকাল থেকেই ওর মন ভালো ছিলো না । গত রাতে নিজের সাথে প্রচুর বোঝাপড়া হয়েছে ওর । প্রায় নির্ঘুম কেটেছে রাতটা । তবে সেই নির্ঘুম রাত বৃথা যায়নি । একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পেরেছিলো ও । এবং সকালে সেই সিদ্ধান্ত রানীকে জানাতে পেরে বেশ হলকা লেগেছিলো । এতে রাজীব খুব খুশি হয়েছে , কারন এই বিশেষ দিনে রাজীব কিছুতেই নিজের মন খারাপ রাখতে চায় না । বাইক ঠিক করে , গোসল করেছে বেশ সময় নিয়ে । সাধারনত রাজীব খুব দ্রুত গোসল সেরে নেয় । কিন্তু আজকে অনেক সময় নিয়ে , খুব ধিরে সুস্থে গায়ে সাবান লাগিয়েছে , তারপর লম্বা সময় শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ছিলো । রাজীবের কাছে মনে হচ্ছিলো , ওর কোন তাড়া নেই । খুব রিলাক্সড লাগছিলো নিজেকে । গোসল শেষে রান্না করেছে , আজকে অনেক দিন পর রান্না করলো । নিজের পছন্দের কিছু ডিস রান্না করলো । ওদের বাড়িতে রান্না খুব বেসিক হয় , কারন কারো ই তেমন একটা সময় হয় না রান্না করার । মুখরোচক খাবার গুলো পাশের বাড়ি থেকেই আসে। তবে বিভিন্ন অকেশনে রান্না করতো রাজীব আর রানী মিলে । যেমন রাজীব অথবা রানীর জন্মদিনে , মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে । আজকে ওর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী । রানী হয়তো ভুলে গেছে , কিন্তু রাজীব এর মনে আছে । রাজীব জানে ওর আব্বুর ও মনে আছে । কারন খুব ভোরে রাজীব যখন ছাদে গিয়েছিলো , সেখান থেকে দেখছে হালকা কুয়াশার চাদর জড়িয়ে রহিম ওর মায়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে আছে । দৃশ্যটা রাজীবের কাছে স্বর্গীয় একটা দৃশ্য বলে মনে হয়েছিলো । ভোরের আলোআঁধারিতে ধোঁয়ার মত ভাসতে থাকা কুয়াসার মাঝে ওর আব্বু দাড়িয়ে আছে । দূর থেকেই রাজীব বুঝতে পেরেছিলো ওর আব্বুর শরীরের একটা আঙুল ও নড়ছে না । তবে শরীর অনড় হলেও নিশ্চয়ই ওর আব্বুর মন ছিলো চঞ্চল । নিশ্চয়ই প্রচুর কথা হচ্ছিলো ওর মায়ের সাথে … রাজীব মনে মনে ভেবেছিলো । রাজীব জানে ওর আব্বু কখনোই ওদের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী ওদের মনে করিয়ে দেয় না । যখন ওরা দুজন ছোট ছিলো তখন তো ওই দিনটা ওদের ঘুরতে নিয়ে যেতো । এখন অবশ্য সে সব করে না , তবে মুখ কোনদিন বলে না , যে আজ তোদের মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী । রাজীব যখন ছোট ছিলো তখন ওর আব্বুর এমন কাজের পেছনে কি মোটিভ ছিলো তা বুঝতে পারতো না । এখনো যে খুব বোঝে এমন নয় , তবে নিজের মত একটা ধারনা করে নিয়েছে । তবে রাজীব কোনদিন ওর মায়ের মৃত্যুর দিন ভোলেনা । না ভোলার বিশেষ কারন আছে । রাজীব সব সময় মায়ের মৃত্যুদিনে হাস্খুসি থাকার চেষ্টা করে । যখন বয়স কম ছিলো তখন যে একেবারে কাঁদে নি এমন নয় । তবে হাসিখুসি থাকার চেষ্টা করেছে। রাজীবের কেন জানি মনে হয় , হাসিখুসি থাকলেই ওর আম্মু খুশি হবে । আর এই হাসি খুশি থাকার অংশ হিসেবেই রাজীব ভালো ভালো রান্না করে । রান্না শেষে তিনটা বক্সে খাবার ভরে নেয় । গত দু বছর যাবত এই কাজ করেছে রাজীব । একটা বাক্স যাবে রাহিম মানে ওর আব্বুর কাছে । অন্য দুটো বাক্সের একটা চৌধুরী বাড়িতে আয়শার কাছে , আর দ্বিতীয়টা যাবে চৌধুরী ফ্লাওয়ার মিলস এ , বড় আব্বুর কাছে । রাজীব নিজেই দিয়ে আসে । তিনজন তিন রকম অভিবেক্তি প্রকাশ করে । রাহিম খাবার পেয়ে সুধু একটু মলিন হাসে , আর কয়েক মুহূর্তের জন্য রাজীবের দিকে মমতা আর বেদনা মিশ্রিত একটা দৃষ্টিতে তাকায় । এর পর কি করে রহিম সেটা দেখার জন্য অবশ্য রাজীব সেখানে থাকে না । রাজীবের মনে হয় এর চেয়ে বেশিক্ষণ ও ওর আব্বুর সামনে দাঁড়ালে দুজনেই কেঁদে ফেলবে । জয়নাল ব্যাস্ত মানুষ , তাই এই দিনটির কথা ওর মনে থাকে না । তবে রাজীব কে বাক্স নিয়ে ঢুকতে দেখেই এতক্ষনের কঠিন চেহারাটা নরম হতে শুরু করে । বুঝে যায় আজকে কি দিন । রাজীবের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে । আর আয়শা রাজীব কে দেখেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না । বেশ কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে বসে থাকে । বসে বসে আফরোজার গল্প করে , নিজদের ছোট বেলার গল্প করে । এই বিশেষ দিনে , রাজীবের জন্য আয়শার সাথে কাটানো এই সময় টুকু আরো বেশি বিশেষ । এই সময় টুকুর জন্যই রাজীব অপেক্ষা করে থাকে । তিন জায়গায় খাবার পৌঁছে দিয়ে রাজীব নিজের মায়ের দিকে একমাত্র জীবিত আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ করে । রাজীবের এক মামা আছে । সে আফরোজার বিয়ের আগে থেকেই মিডল ইস্টে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে । জীবনে সেই মামা কে মাত্র তিন বার দেখেছে রাজীব । একবার নানার ম্রিতুর সময় , তখন আফরোজা জীবিত ছিলো , আর দ্বিতীয়বার নানির মৃত্যুর সময়, তখন আফরোজার মৃত্যু হয়েছে মাত্র মাস ছয়েক হয়েছে । আর তৃতীয়বার হঠাত একদিন এসে উপস্থিত হয়েছিলো , তখন রাজীব অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে । বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছিলো । রাজীবের মামাতো বোনের বিয়ে । সেই বিয়েতে রাজীব আর রানী গিয়েছিলো । কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি । কেউকেই তেমন চেনে না ওরা , অপরিচিত মানুষদের মাঝে এদিক ওদিক কিছুক্ষন ঘুরে ফিরে চলে এসেছিলো রাজীব আর রানী । ফেরার পথে রানীকে দোকানে বসিয়ে বিরিয়ানি খাইয়ে নিয়ে এসেছিলো। রাজীবের মামা এখনো মধ্য প্রাচ্যে ই থাকে । রাজীবের কল পেয়ে প্রথমে চিনতে পারে না । আসলে বছরে একবার যোগাযোগ থাকলে যা হয় আরকি । রাজীব পরিচয় দিলে , তখন চিনতে পারে । কয়েক মিনিট খাপ ছাড়া কথা হয় । তারপর রাজীবের মামা জানায় এখন সে খুব ব্যাস্ত । তারপর কথা শেষ করার জন্য জিজ্ঞাস করে , রাজীবের কিছু লাগবে কিনা ? অথবা রাজীব মধ্যপ্রাচ্যে আসতে চায় কিনা ? ওনার কাছে ভালো ভিসা আছে । রাজীব কোনভাবে ছয় লক্ষ্য টাকা জোগাড় করতে পারলে উনি নিয়ে যাবেন । নিজের কাছে রাখবেন । ভালো বেতন , প্রায় ৪৫ হাজার টাকা । রাজীব হাসে এবং বলে “ না না মামা আপনার এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না , আপনি দোয়া করবেন সুধু” রাজীবের মামা একটু অবাক ই হয় । তারপর সুধু বলে “ও…… ভালো থাইকো মামা” “ আপনিও ভালো থাকবেন , আমাদের জন্য দোয়া করবেন” এই বলে রাজীব ফোন রেখে দেয় । রাজীব জানে ওর মামার ওদের প্রতি তেমন আন্তরিকতা নেই । এটা জেনে বুঝেই কল করে প্রতি বছর। কল করতে ভাল লাগে, বিশেষ করে এই দিনটায় এমন একজনের সাথে কথা বলতে যে কিনা একটি ঔরসে , একি গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে যেই ঔরসে আর গর্ভ থেকে ওর মা জন্ম নিয়েছে । রাজীব এই ভেবে ভালো লাগে যে ওর আম্মু আর ওর মামা দুজনের শরীরে একি রক্ত বইছে , দুজনের ডি এন এ প্রায় একি রকম । ওর মা আর মামা একি মোল্ড থেকে তৈরি দুজন মানুষ । মামার সাথে কথা বলার পর রাজীব আজকের দিনের বিশেষ অতিথির জন্য অপেক্ষা করে । রাজীবের বিশ্বাস ওর মা নিজের আত্মা এই মানুষটির মাঝে রেখে গেছে । এটা রাজীব নিজে নিজে ভেবে নেয়নি , ওর মা ই ওকে বলেছে । আর মায়ের কথা রাজীব বিশ্বাস করেছে , এবং এখনো বিশ্বাস করে , ভবিষ্যতেও করবে । পুরো দুনিয়ার প্রাক্টিকাল নলেজ একত্রিত করেও রাজীব কে ওর এই বিশ্বাস থেকে টলাতে পারবে না । সুধু মা বলে গেছে এই জন্য নয় , এই বিশ্বাস রাজীবের মন কে সেই শান্তি দেয় যা আর কোন কিছুই দিতে পারে না । এই বিশ্বাস নিয়ে রাজীব যখন ওই মানুষটির দিকে তাকায় তখন রাজীবের মন প্রশান্তিতে ভরে যায় । যে প্রশান্তি সুধু সন্তান মায়ের দিকে তাকিয়েই পেয়ে থাকে । ****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
08-10-2025, 04:50 PM
(This post was last modified: 08-10-2025, 04:53 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রানী বাড়িতে যখন ঢোকে তখন প্রায় দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে । ঘরে ঢুকেই দেখে রাজীব বসে আছে । ওকে দেখেই হাসিমুখে উঠে দাড়ায় । রানীর কাছে মনে হয় রাজীব ওর জন্যই অপেক্ষা করে বসে ছিলো । একটু বিরক্ত হয় রানী , ভাবে সকালে রাজীবের লেকচার মনে হয় পুরোপুরি কমপ্লিট হয়নি , আরো কিছু বলতে বাকি রয়ে গেছে । জ্ঞানের কথা শুনতে আর ভালো লাগে না রানীর । ক্যাম্পাসে আজকে জান্নাত ওর মুড অফ করে দিয়েছে । লোকজন ওকে পেয়েছে কি ? মনে মনে ভাবে রানী । যেই সুযোগ পাচ্ছে জ্ঞান ঝেড়ে দিচ্ছে ।
রানী দাড়ায় , মুখে কিছু বলে না । গতকাল যথেষ্ট খারাপ আচরণ করেছে রাজীবের সাথে । তাই আজকে আর করতে চায় না, তবে রানীর মনে হচ্ছে , ও মুখ খুললে খারাপ কিছুই বেরুবে , তাই চুপ করে থাকে । “ যা ফ্রেস হয়ে আয় , তোর জন্য ওয়েট করছি , এক সাথে খাবো” রাজীব রানীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে । রাজীবের কথা শুনে একটু অবাক ই হয়ে রানী , তবে পুরোপুরি সঙ্কামুক্ত হয় না । ভাবে হয়তো খেতে বসে লেকচার শুরু করবে। রানী কোন কোন কথা না বাড়িয়ে দোতলায় চলে যায় । একবার ভাবে রাজীবকে জিজ্ঞাস করে , কেন এতক্ষণ না খেয়ে বসে আছে। কিন্তু জিজ্ঞাস করে না , ভাবে , ও বলবে ভালো ভেবে শোনা যাবে খারাপ । নিজের ঘরে ঢুকে রানী , ফ্যান ছেড়ে বিছানায় কিছুক্ষন বসে , ঠাণ্ডা হয়ে নেয় । তারপর বাথরুমে ঢুকে কাপড় ছেড়ে শাওয়ারের নিচে দাড়ায় । শীতল পানি ওর তপ্ত শরীর কে শীতল করতে শুরু করে । শরীর শীতল হওয়ার সাথে সাথে মন ও কিছুটা শীতল হতে শুরু করে । বেশ অনেকক্ষণ ধরে পানি ঢালে শরীরে । তপ্ত ক্লান্ত শরীরে শীতল পানির স্পর্শ বেশ আরম দেয় ওকে । রানী সাবান মাখতে শুরু করে , নাভির ঠিক উপরে নিচে বেশ কয়েকটা কাটা দাগ , শুকিয়ে গেছে । অল্প কয়েকটি বোঝা যায় । যেগুলো বেশি গভির হয়নি সেগুলো প্রায় দেখাই যায় না । দাগ গুলো দেখে জান্নাতের বলা কথা মনে পরে যায় । নিজের শরীরে বাকি অংশে যেখানে আরো দাগ আছে সেই অংশ গুলো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে । হ্যা জান্নাত ঠিক ই বলেছে , আমি এমন কাজ করেছি , যাতে করে মানুষের মনে হতেই পারে আমি খারাপ পথে চলে গেছি। মনে মনে ভাবে রানী । তারপর আবার এও ভাবে , অন্য কেউ যা খুশি ভাবুক , কিন্তু রাজীব কিভাবে ভাবল , যে ও খারাপ পথে চলে গেছে । আর যদি মনে এই কথা এসেও থাকে , তাহলে কেনো ওর সাথে এসে সরাসরি কথা বলল না? এতটা অবিশ্বাসের মানুষ হয়ে গেছি আমি ? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করে রানী । জীবনের প্রায় উনিশটা বছর এতো সামলে চলার তাহলে মূল্য কি রইলো? আবারো প্রশ্ন করে রানী , কাকে করে ও নিজেই বুঝতে পারে না। কত প্রলোভন ছিলো , স্কু*লের ান্ধবীরা কত মজা করেছে , কিন্তু ও সেসব সযত্নে এড়িয়ে গেছে । তার কোন মূল্যই কেউ দিলো না, একটা ভুল করলো আর অমনি সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো । একটা ভুল করার বিলাসিতাও কি দেখানোর অধিকার ওর নেই ? আবারো রাগটা চড়াও হয় রানীর মনের উপর । রানী শরীরে তোয়ালে প্যাচিয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসে , শরীরে মসচারাজার মেখে ঘরের পোশাক পরে নেয় । তারপর চুল গুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়ে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে আসে । নামতে নামতে মনে মনে ভাবে , রাজীব জ্ঞান দেয়ার ইচ্ছা থাকলে নিজের রিস্কে দিস , আমি যদি তোকে দুঃখ দেয়ার মত কিছু করি , তার দায়ভার আমি নিতে পারবো না , তোকে দুঃখ দিতে চাই না , তুই আমার জন্য যা করেছিস , তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ , কিন্তু আমার ও একটা লিমিট আছে । এসব ভাবতে ভাবতে রানী যখন টেবিলের সামনে এসে দাড়ায় , তখন অবাক হয়ে যায় । টেবিল ভর্তি খাবার , ভুনা খিচুড়ি , মাংস দুই ধরনের , বেগুন ভাজা , আঁচার সাথে একটি কাবাব । “ এত্ত খাবার!!!! বড় আম্মু পাঠিয়েছে?” রানী অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে ? তারপর হঠাত করেই ওর কিছু মনে পরে যায় । জিজ্ঞাস করে “ আজকে কয় তারিখ রে?” রাজীব ছোট্ট করে বলে “তেরো , নভেম্বর” রানী নিজের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় । এই খাবার বড় আম্মু পাঠায়নি , রাজীব নিজেই রান্না করেছে । রানীর মনের রাগ দূর হয়ে সেখানে একটা শূন্যতা এসে ভর করে । চুপ করে চেয়ার সরিয়ে বসে পরে রানী । রাজীব রানীর প্লেটে খাবার তুলে দিতে থাকে , অনেকটা খিচুড়ি দিতে দেখেও রানী কিছু বলে না । একটা ছোট সৃতি ওর চোখের সামনে ভাসতে থাকে , রানীর ভাসা ভাসা মনে আছে , ওর আম্মু মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে , একেবারে সঠিক সময় ওর মনে নেই । তবে মনে আছে মৃত্যুর বেশিদিন আগে নয় , হঠাত এতো সুস্থ হয়ে গিয়েছিল যে ওরা সবাই খুব খুশি হয়ে উঠেছিলো। এতোটাই প্রান শক্তি ফিরে এসেছিলো যে ওর আম্মু নিজে রান্না করেছিলো । যদিও রাজীব আব্বু সবাই হেল্প করেছিলো । সেদিন আম্মু এই ডিশ গুলোই রান্না করেছিলো । রানীর চোখ পানিতে টলমল করতে শুরু করে , কিন্তু কাঁদতে চায় না ও। কাঁদতে চায় না রাজীবের সামনে । কারন ও কাঁদলে হয়তো রাজীব আগের মত ওকে খুকি ভোলানোর মত করে ভোলাতে চেষ্টা করবে । আম্মুর সম্পর্কে আজগুবি কোন গল্প শোনাবে । কিন্তু রানী আর এসব হতে দিতে চায় না , অন্তত রাজীবের সামনে নয় । না হলে রাজীব ভেবে নেবে আজকে সকালে রাজীব যা বলেছে তা ভুল বলছে । রানীকে প্রমান করতে হবে যে ও বড় হয়ে গেছে , ওকে আর বাচ্চাদের মত করে ভোলাতে হবে না , ওর কান্না থামাতে আজগুবি কোন গল্প ফাঁদার আর দরকার নেই । রাজীব খেতে খেতে বার বার চোরা চোখে রানীর দিকে তাকায় । এভাবে লুকিয়ে তাকানোর কারন হচ্ছে , রানী কান্না সামলাতে পারছে না , খেতে খেতে রানীর চোখ দিয়ে দু এক ফোঁটা পানি পরে যাচ্ছে । কিন্তু সেটা লুকানোর চেষ্টা করছে রানী । তাই রাজীব ওকে বুঝতে দিতে চাইছে না যে রাজীব ওর চোখের পানি দেখছে । রাজীব বার বার লুকিয়ে রানীর ভেজা খোলা চুল দেখে । একদম আম্মুর মত, যেমন ঘন কালো তেমনি অনেক চুল । রাজীব এও খেয়াল করে দেখে , ধিরে ধিরে রানী দেখতেও প্রায় আফরোজার মত হয়ে যাচ্ছে । আফরোজার এই বয়সের ছবি রাজীব দেখছে । রাজীব মনে মনে মেলায় , সেই চোখ , সেই নাক সেই ঠোঁট সেই চুল । পার্থক্য সুধু এতটুকু আফরোজা আরেকটু স্বাস্থ্যবান ছিলো। এই বয়সে আফরোজা এক সন্তান জন্ম দিয়ে ফেলেছিলো । রাজীব মনে মনে ভাবে একজনের আত্মা অন্যজনের ভেতরে চলে আসলে মনে হয় ধিরে ধিরে দুজনের চেহারাও এক হয়ে যায় । রাজীব মন ভরে দেখে , ওর কাছে মনে হয় সামনে আফরোজা নিজেই বসে আছে । ***** প্রায় শত্তুর হাজার শব্দ লিখে ফেলার পর একটা চুম্বন দৃশ্য ও না থাকা রোম্যান্টিক গল্পের জন্য একটা ব্যারথতাই বলা যায় । এই দিক থেকে গল্পটা ব্যারথ, আমি মেনে নিচ্ছি ।এবংপাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
09-10-2025, 06:21 AM
Vai protidin apnar golpota porte ashi
Apni golpo ta oshompurno rekhen na ❤️❤️❤️❤️
09-10-2025, 06:41 PM
(09-10-2025, 06:21 AM)Mmc king Wrote: Vai protidin apnar golpota porte ashi খুশি হলাম আপনি গল্পটা পড়ছেন , এবং আপনার লাভ ইমোজি গুলো সাদরে গ্রহন করলাম। কিন্তু ভাই নিয়মিত আপডেট দেয়ার পর ও কেনো আপনার মনে হলো , আমি গল্পটা অসমাপ্ত রেখে যাবো ?আমি তো বরং উল্টো কাজ করছি , খুব দ্রুত আপডেট করার চেষ্টা করছি!!! "প্রায় শত্তুর হাজার শব্দ লিখে ফেলার পর একটা চুম্বন দৃশ্য ও না থাকা রোম্যান্টিক গল্পের জন্য একটা ব্যারথতাই বলা যায় । এই দিক থেকে গল্পটা ব্যারথ, আমি মেনে নিচ্ছি ।এবংপাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।" আর যদি উপরের এই লাইনটা দেখে আপনার মনে শঙ্কা ঢুকে থাকে , তাহলে ভাই আপনি ভুল বুঝেছেন । এটা আমার আত্ম উপলব্ধি । এই গল্পের যারা পাঠক আছেন তারা তেমন একটা ইন্টার্যাকশন করেন না , তাই নিজে কোন কিছু উপলব্ধি করতে পারলে , সেটা পাঠকদের সাথে শেয়ার করি ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
10-10-2025, 05:54 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৭ (চ)
জান্নাত বেশ কয়েকবার বেল বাজানোর পর দরজা খোলে রাজীব । জান্নাত কে দরজার সামনে দেখে , রাজীব একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে । সেদিন ক্যাম্পাসে চকলেট দেয়ার পর আর তেমন একটা কথা হয়নি দুজনের মাঝে । রাজীব নিজেই একটু এড়িয়ে চলতো। ওর লজ্জা হয় জান্নাত কে দেখলে । মেয়েটা নিজে থেকে এগিয়ে এসেছিলো কিন্তু ও নির্দয় ভাবেই ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তবে জান্নাতের মুখে উষ্ণ হাসি দেখে একটু আশ্বস্ত হয় রাজীব । এদিকে রাজীব কে ঘরের পোষাকে দেখে জান্নাত ও একটু অবাক হয় । প্রায় দৌরে এসেছিলো ও । আসলে বুদ্ধিটা মাথায় আসার পর , জান্নাত আর অপেক্ষা করতে পারছিলো না । কোন না কোন বাহানায় তো কিছুটা সময় কাছাকাছি থাকা যাবে । “ কি ব্যাপার আজকে যাবি না?” দরজার সামনে দারিয়েই বলে জান্নাত “ না আজকে ছুটি নিয়েছি” রাজীব যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থেকে উত্তর দেয় । মনে মনে জান্নাতের আচরণে বেশ অবাক হয়েছে ও। জান্নাতের আচরণ দেখে মনেই হচ্ছে না যে এই মেয়েকে অল্প কিছুদিন আগে রিজেক্ট করেছে ও। “ এই বাড়িতে আমাকে কি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে নাকি?” জান্নাত একটু সারকাস্টিক টোনে বলে । “ আরে না না , আয় না ভেতরে আয়” রাজীব দ্রুত দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে যায়গা করে দেয় । লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে যায় । আসলে ওই ঘটনার পর থেকে জান্নাত আর আসে না তো , তাই ওকে দেখে রাজীব একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো । “ রানী নিজের ঘরে আছে” জান্নাত ভেতরে ঢুকতেই রাজীব নিজ থেকেই বলে । তবে বলেই মনে হয় এমন ভাবে বলা হয়তো উচিৎ হয়নি । মনে মনে নিজেকে গালি দেয় রাজীব । এবং জান্নাতের চাহনি দেখে নিশ্চিত হয় , আসলেই এভাবে বলা উচিৎ হয়নি । কয়েক মুহূর্তের জন্য জান্নাতের দৃষ্টিতে একটা চাপা কষ্ট ফুটে ওঠে , কিন্তু জান্নাত দ্রুত সেটা লুকিয়ে ফেলে । আবার সারকাস্টিক টোনে বলে ‘ তাই নাকি? তুই তো দেখছি আজকাল টিভি নিউজ এর মত হয়ে যাচ্ছিস , রেন্ডম নিউজ লোকজনের মুখের উপর ছুড়ে দিচ্ছিস না চাইতেই” রাজীব লজ্জিত হয়ে হাসে , জান্নাতকে এমন খলামেলা ভাবে কথা বলতে দেখে , নিজের আড়ষ্টতা কিছুটা কমে আসে , রাজীব ও হাসতে হাসতে বলে “ তুই তো দেখি একদম নিউজ রুমে বন্দি হয়ে গেছিস? এক্সাম্পল ও দিচ্ছিস নিউজ দিয়ে” “ বাহ তোর তো ভালো উন্নতি হয়েছে , কি ব্যাপার , কিভাবে হলো?” জান্নাত একটু এগিয়ে এসে কোন গোপন কিছু জানতে চাইছে এমন ভাবে জিজ্ঞাস করে । উত্তরে রাজীব কিছু বলে না , সুধু হাসে । জান্নাত রাজীবের মুখ হাসি দেখে খুশি হয় , মনে মনে বলে ‘ এমন হাসি খুশিই থাকবি সব সময় , এটাই আমার চাওয়া , যদি আমি সেই হাসির সাক্ষি নাও হতে পারি আমার আফসোস থাকবে না’ “ আমি তোর কাছেই এসেছি , ভালো হয়েছে তুই ছুটি নিয়েছিস , চল তোর রুমে চল, কথা আছে” যদিও জান্নাতের মাঝে ওদের সেই শেষ সাক্ষতের কোন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না । তবুও রাজীব একটু ইতস্তত করে জান্নাত কে নিজের রুমে নিয়ে যেতে । লিভিং রুমে বসার কথা একবার বলতে গিয়েও থেমে যায় । জান্নাত আবার কি মনে করে বসে, এই ভেবে । “ আরে চল , একা রুমে পেয়ে আমি তোর কোন এডভান্টেজ নিবো না” জান্নাত উচ্চস্বরে হেসে হেসে বলে । “ ধুর কি যা তা বলিস , আমি কি সেরকম কিছু বলেছি নাকি?” রাজীব ভীষণ লজ্জা পায় , “ বলতে হবে কেনো , তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে , আমি রুমের কথা বলতেই , একদন চুপসে গেলো, চেহারাতে একটা অবলা পুরুষ ভাব চলে এলো” হি হি হি “ বাজে , কথা রাখ , চল ভেতরে চল” রাজীব দ্রুত সিঁড়ির দিকে চলে । মনে মনে ভাবে , জান্নাত আগের চেয়ে অনেক ফ্রি আচরণ করছে আজকে , এর আগে কোনদিন এভাবে কথা বলতো না। হয়তো মনের ভাব লুকানোর জন্য এমন ঠোঁট কাটা কথাবার্তা বলছে । রানীর রুম পেরিয়ে যাওয়ার সময় একবার তাকায় রাজীব , দরজা ভেজানো । মনে মনে ভাবে , রানীকে ডেকে নিলে কেমন হয় । নইলে রানী যদি আবার অন্য কিছু ভেবে বসে । কিন্তু আবার নিজেই এই চিন্তা বাদ দিয়ে দেয় । ভাবে , জান্নাতের আসা যাওয়া এ বাড়িতে তো আর নতুন নয় । যদিও আগে রানীর কাছেই আসতো , রাজীবের কাছে এসেছে এবার ই প্রথম । ভাবতে ভাবতে রাজীব ই ঘরে প্রথম প্রবেশ করে , প্রথমেই ওর চোখ যায় বিছনায় , সেখানে ডায়রি টা এখনো পরে আছে । দ্রুত রাজীব সেটা তোষকের নিচে চালান করে দেয় । আর জান্নাত তখনি ঘরে ঢোকে । রাজীব যে কিছু একটা তোষকের নিচে দিয়েছে সেটা ওর চোখে পরে , তাই বলে “ আমাকে দেখে ঘর পরিপাটি করতে হবে না, আমার ঘরের মত অগোছালো ঘর সুধু জয়ের ঘর আছে , সেই তুলনায় তোর ঘর তো অনবেক গোছালো , দেখলে মনে হয় এই ঘরে ব্যাটা ছেলে নয় , মেয়েছেলে থাকে” বলেই জান্নাত আবারো হাসতে লাগলো । তারপর দরজাটা একটু চাপিয়ে দিলো । দরজা চাপাতে দেখে রাজীব ঝট করে ওই দিকে একবার চাইলো , ওর চোখ দুটো তে অবাক দৃষ্টি । এই মেয়ে চাইছেটা কি ? মনে মনে ভাবে ও “ আরে জরুরি কথা আছে , বিজনেস মিটিং ধরে নে, তাই দরজা একটু চাপিয়ে দিলাম, অমন করে তাকানোর দরকার নেই, আর আমি দরজা পুরোপুরি লাগাইও নি , দ্যাখ এখনো ফাঁকা আছে ” এবার জান্নাত একটু বিরক্ত হয়ে বলল রাজীব বিছানায় বসেছে আর জান্নাত রাজীবের পড়ার চেয়ারে । “ শোন , আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে , আমি একটা চ্যানেল খুলতে চাই সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেখানে এমি ভিডিও আপলোড করবো , আমার ইচ্ছা প্রথমে আমি সুধু ভার্সিটি আর এর আশেপাশের ব্যাপার গুলো আমার চ্যানেলে তুলে ধরবো । তারপর ধিরে ধিরে আরো বড় পরিসরে সামাজিক রাজনৈতিক বেপারগুলো নিয়ে বিস্লেসনা মুলক ভিডিও দেবো” কথাটা বলে জান্নাত রাজীবের দিকে তাকায় , রাজীবের কাছ থেকে যেন ওর প্ল্যান সম্পর্কে জানতে চায় । “ এসব তো অনেকেই করছে আজকাল , মন্দ না , তাছাড়া তোর ফিল্ডের সাথে মানান সই আছে” রাজীব ও নিজের অনেস্ট অপিনিওন দেয় । “ কিন্তু তোর হেল্প লাগবে এতে , আমি ভিডিও এডিটিং শেখার চেষ্টা করেছি , কিন্তু পারিনি , তুই তো কিছু এডিটিং এর কাজ জানিস?” “ হ্যা জানি , কিন্তু তোকে শেখাতে পারবো কিনা কথা দিতে পারছি না” “ আরে কে শিখতে চেয়েছে আপনার কাছে স্যার” “ তাহলে?” রাজীব বুঝতে পারছে না জান্নাত এ ব্যাপারে ওর কাছ থেকে কি সাহায্য চায় । “ এর জন্যই আমি এসেছি, আমার প্রস্তাব হচ্ছে তুই এডিটিং ভালো করে শিখে আমাকে ভিডিও এডিট করে দে, তুই আর আমি এই চ্যানেলে পার্টনার” জান্নাতের চোখ চক চক করতে থাকে , যেন এতো ভালো একটা প্রস্তাব দিয়েছে রাজীব সেটা না করতে পারবে না এমন একটা ভাব । রাজীবের একবার মনে হয় হ্যা করে দেয় । আসলে ও এখন একটা চ্যানেলের হয়ে এডিটিং এর কাজ ই করে । ওর নিজের হাই এন্ড কম্পিউটার নেই বলে ওদের অফিসে গিয়ে কাজ করে দেয় । নইলে বাসায় বসেই করতে পারতো । কিন্তু রাজীব নিজেকে সংযত করে । ভাবে জান্নাতের সাথে নিজেকে এভাবে জড়ানো হয়তো ঠিক হবে না । এর আগে যখন জান্নাত কে ফিরিয়ে দিয়েছিলো , তখন ও সত্যি ই নিজের সমস্যা গুলোর জন্য ফিরিয়ে দিয়েছিলো । কিন্তু এর পর ওই ব্যাপার নিয়ে অনেক ভেবেছে রাজীব । ভেবেছে হয়তো ও কাজটা ঠিক করেনি , জান্নাত ওর সাথে থাকলে ওর সমস্যা বাড়বে না বরং কমবে । প্রায় যখন নিজেকে আশ্বস্ত করে ফেলেছে , ঠিক তখনি অন্য একটা চিন্তা এসে মাথায় ঢুকেছে । বড় আব্বুর যা আর্থিক অবস্থা , আর জান্নাতের ফুপুদের যেসব জায়গায় বিয়ে হয়েছে । তাতে করে বোঝাযায় বড় আব্বু জান্নাত কেও তেমন কারো সাথেই বিয়ে দেবে । হ্যা এটা সত্য বড় আব্বু বড় আম্মু ওকে নিজের সন্তানের মত ভালোবাসে । কিন্তু এর মানে এই নয় যে ওকে মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নেবে । তাই ওদের ওই ভালোবাসা কে সম্মান জানিয়ে রাজীব জান্নাতের কাছ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত পাকাপাকি ভাবেই নিয়েছে । কোথায় জান্নাত আর কোথায় ও । এই বাড়িটা ছাড়া ওর আব্বুর আর আছেই বা কি। আর ওর নিজের যোগ্যতাও বা কি । অথচ , জান্নাতের বড় ফুপুর বিয়ে হয়েছে যে পরিবারে তারা ছিলো আগের দিনের জমিদার, এখনো বিশাল ধনী , ছোট ফুপুর বিয়ে হয়েছে এমন ছেলের সাথে যে বিদেশে মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির সি ই ও । ওই লোকের এক বছরের স্যালারি দিয়ে রাজীব দের বাড়ির মত পাঁচটা বাড়ি কেনা যাবে । জান্নাত কে নিশ্চয়ই এমন ঘর দেখেই বিয়ে দেয়া হবে । “ রাজীব নিজের ডিসিশন দেয়ার আগে একটা কথা শুনে রাখ , আমাদের মাঝে আগে যা হয়েছে , ওই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে তুই আমার এই প্রস্তাব বিবেচনা কর । আর তোর সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটা কথা বলে রাখি, আমি ওই রকম মেয়ে না যে তুই আমাকে রিজেক্ট করেছিস বলে আমি তোকে হন্ট করে বেড়াবো, যদি তাই ভেবে থাকিস তুই আমাকে এখনো চিনিস নি, আমার যথেষ্ট আত্মসম্মান আছে” রাজীবের ভাব গতি দেখে জান্নাত বুঝে ফেলেছে , রাজীব কি বলতে চায় । তাই একটু ঝাঁঝের সাথে বলে কথাগুলো । সেই প্রথম থেকেই নিজের মনের আসল ভাব লুকিয়ে সহজ আচরণ করে যাচ্ছে যেন রাজীব বুঝতে পারে , জান্নাত আগের কথা মনে রাখেনি । কিন্তু এই ছেলে এখনো দোমনায় ভুগছে দেখে , আর রাগ চেপে রাখতে পারছে না জান্নাত । রাজীব আর কিছু বলার সাহস পায় না , জান্নাতের মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে না করলে তুলকালাম হয়ে যাবে । তাই রাজীব অন্য পন্থা নেয় । বলে “ কিন্তু আমি তো অন্য একটা জায়গায় আছি এখন” “ প্রথমে একটু স্ট্রাগল হবে , কিন্তু একবার যদি সফল হই তখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না” জান্নাত রাজীব কে কনভিন্স করার চেষ্টা করে । রাজীব একটু চুপ করে থাকে , তারপর নিজের কথা গুলো গুছিয়ে আনে , উল্টা পাল্টা বলে জান্নাতের মনে কষ্ট দিতে চায় না । ভেবে চিন্তে বলে “ দ্যাখ জান্নাত তুই হয়তো বুঝবি না আমার ব্যাপারটা , শরীর খারাপ নিয়ে আব্বু যেভাবে কাজ করে টাকা আয় করছে , ওই টাকা থেকে পকেট মানি নিতে আমার ইচ্ছা হয় না , তাই বর্তমান চাকরিটা আমার খুব দরকার” “ তোর পকেট মানি আমি দেবো” উত্তেজনায় কথা টা বলে ফেলেই জান্নাত বুঝতে পারে ভুল বলে ফেলেছে , রাজীবের মুখের হাসি দেখেই ও বুঝতে পারে কথাটা রাজীব কে হার্ট করেছে । ঠিক ই তো রাজীব কেনো তাকা নেবে ওর কাছ থেকে । জান্নাত নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জিত ভাবে বলে “ সরি , এটা বলা আমার উচিৎ হয়নি” রাজীব ও বুঝতে পারে জান্নাত কথাটা মিন করেনি । তাই বলে “ আরে না আমি কিছু মনে করিনি “ তারপর হঠাত ওর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে , বলে “ আচ্ছা প্রথম দিকে তোর সপ্তাহে কয়টা ভিডিও দেয়ার ইচ্ছে আছে ?” কিছুক্ষন ভাবে জান্নাত , তারপর বলে , “ এই ধর একটা” “ হুম্ম…… কম হয়ে যায় , আর একটু বেশি দিতে হবে , দ্রুত সাবক্রাইবার বাড়ানোর জন্য, সপ্তায় দুটো ভিডিও দেয়া দরকার” এর পর রাজীব জান্নাতের কাছে জানতে চায় কি ধরনের ভিডিও দিতে চায় জান্নাত । জান্নাত ও নিজের প্ল্যান খুলে বলে অনেক সময় নিয়ে । “ এই ধরনের ভিডিও এডিট করতে আমার কোন সমস্যা হবে না, আমি ওই চাকরি করা অবস্থায় ই করে দিতে পারবো” রাজিব একটু ভেবে নিয়ে বলে । জান্নাতের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । সুধু যে রাজীবের কথা চিন্তা করে খুশি হয় জান্নাত, এমনটি নয় , ওর চ্যানেল দ্রুত চালু করা সম্ভব হবে এই ভেবেও খুশি হয় । “ তারপর যখন আরো বড় পরিসরে কাজ হবে , আয় হবে , তখন না হয় আমি ওই কাজ ছেড়ে দেবো” এই বুদ্ধিটা বের করতে পেরে রাজীব নিজেও কিছুটা সস্তি বোধ করে । জান্নাত ও ভীষণ খুশি , “ তাহলে চল আমরা পার্টনারশিপ করে ফেলি , তুই থার্টি আমি সেভেনটি “ রাজীব হাসে , সেই হাসি দেখে জান্নাত বলে , “ উহু হাসলে হবে না, প্রফেশনাল হতে হবে , তুই করবি ভিডিও এডিটিং আমি বাকি সব কাজ করবো , ডাটা সংগ্রহ , স্ক্রিপ্ট , গবেষণা তাই আমার বেশি শেয়ার , বুঝতে পেরেছিস” রাজীব খুব মজা পায় জান্নাতের কথা বলার ধরন দেখে , হেসে বলে “ তাহলে আমিও প্রফেশনাল হওয়ার চেষ্টা করি কি বলিস, আমাকে হাই এন্ড কম্পিউটার দিতে হবে , আর আমি কোন ইনভেস্ট করতে পারবো না” “ এতক্ষনে এসেছিস লাইনে , তাহলে আমরা পার্টনার” এই বলে জান্নাত হাত বাড়িয়ে দেয় , এক মুহুরত ইতস্তত করে রাজীব ও হাত বাড়িয়ে দেয় , হেন্ড শেক করে দুজনে , দুজনেই নিজেদের মনের আসল অভিবাক্তি লুকিয়ে প্রফেশনাল থাকার চেষ্টা করে । তবে পুরোপুরি সফল কেউ হয় না । ওরা দুজনেই একটু বেশি সময়ের জন্য একে অন্যের হাত ধরে রাখে । রাজীব ই প্রথম নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় । আর জান্নাত দ্রুত উঠে চলে যায় , যাওয়ার সময় বলে যায় “ আমাকে কম্পিউটারের জন্য কেমন খরচ হবে সেটা পাঠিয়ে দিস” রাজীব ঘরেই বসে থাকে , মনে মনে ভাবে , কাজটা হয়তো ঠিক হলো না , তবে জান্নাতের খুশি দেখে সেই ভাবনাকে তেমন পাত্তা দেয়না । ভাবে নিজে সংযত থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবে । বিড়বিড় করে বলে ‘ আমাকে সংযত হতেই হবে , এই মেয়েটির মুখের হাসির জন্য হলেও আমাকে সংযত হতে হবে , কারন ওর হাসি আমার কাছে অনেক দামি’ ****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
10-10-2025, 07:06 PM
৭(চ) এর বাকি অংশ.........
দুপুরের খাবার শেষ করে রানী যে নিজের ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি । এমন কি চা খাওয়ার জন্যও না । পুরোটা বিকেল জানালার ধারে বসে ছিলো । রাজীব যখন ওর মায়ের কবরের পাশে ছিলো , ওই সময় জান্নাত ছাড়া রানীও জানাল থেকে দৃশ্যটা দেখছে । মনে মনে ভেবছে , কি করে ও আজকের এই দিনটা ভুলে গেলো । গতকালের ঝামেলা , আজকে সকালের আনন্দ এসব কোন অজুহাত হতে পারে না । রানী ইচ্ছে করেই মায়ের কবরের পাশে যায়নি , ওর কাছে মনে হয়েছে গেলে মা ওকে তিরস্কার করবে , বলেবে _ রাজীব মনে রাখতে পারলো আর তুই পারলি না ? রানী এও ভাবে নিশ্চয়ই মা এখন ওদের দেখে , রাজীবের জন্য দোয়া করছে আর ওর আচরণের জন্য মনে দুঃখ পাচ্ছে । সময় গড়ানোর সাথে সাথে রানীর অভিমান ও বাড়তে থাকে , এক সময় এসে মনে হয় । ওর জীবনে কোন কিছুই ঠিক মত হচ্ছে না । না পড়াশুনা হচ্ছে , না কোন সম্পর্কের দাবি মেটাতে পারছে । জয়ের সাথে এই ভুল বোঝাবুঝির কারন ও নিজেই , তারপর আজকে জান্নাতের সাথেও একটু মনোমালিন্য হয়ে গেলো । জান্নাত ওর ান্ধবী অথচ আজকে কেমন রাজীবের পক্ষ হয়ে এক প্রকার ঝগড়া করলো ওর সাথে । জান্নাতের কি উচিৎ ছিলো না ওকে বোঝার , তা না করে জান্নাত ও রাজীবের পক্ষ নিলো। ধিরে ধিরে ওর সব কাছের মানুষ ওর কাছ থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে । রানীকে প্রচণ্ড ফ্রাস্টেশন আর অনিশ্চয়তা আঁকড়ে ধরে । ওর মনে হয় এভাবে চলতে থাকলে এক সময় ও একা হয় পরবে । কিন্তু অনেক ভেবেও ওর দোষ খুজে পায় না । ভেবে ভেবে আকুল হয় , ও কি এমন করলো যে ওর কাছের মানুষ রা সবাই ওকে ত্যাগ করছে । প্রথমে জয় এখন জান্নাত । আর মা তো সেই ছোট বেলায় ই ছেড়ে গেছে । বাবা থেকেও না থাকার মতই । বিকেলের দিকে রানীর কিছুটা তন্দ্রা লেগে গিয়েছিলো , জানালার গ্রিলে মাথা রেখেই চোখ দুটো বুজে এসেছিলো । কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেয়ে সেই তন্দ্রা কেটে যায় । কিন্তু রানীর উঠতে ইচ্ছে হয় না । বেশ কয়েকবার কলিং বেল বাজে। এর পর রানী বাইরের দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেয়ে আবারো জানালার গ্রিলে মাথা এলিয়ে দেয় । এর কিছুক্ষন পর ই একটা মেয়েলি গলার আওয়াজ ওর কানে আসে । জান্নাত এসেছে , জান্নাতের গলার স্বর চিনতে ওর ভুল হয় না । রানীর বিমর্ষ মন একটু খুশি হয়ে ওঠে । ভাবে জান্নাত হয়তো দুপুরের ওই আচরণের জন্য ওর সাথে মিট্মাট করতে এসেছে। রানী জান্নাতের জন্য নিজেকে তৈরি করে নেয় , মনে মনে ঠিক করে , ও নিজেও নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চাইবে । আপনজনের কাছে ক্ষমা চাইতে দোষ নেই । রানী ওয়েট করতে থাকে , কিন্তু জান্নাত আসে না । রানী আরো ওয়েট করে , ভাবে হয়তো রাজীবের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে। রানী খেয়াল করেছে এর আগে জান্নাত রাজীবের সাথে এতো কথা বলতো না । আর রাজীব তো আজন্ম মুখচোরা । কিন্তু হসপিটালে দুদিন এক সাথে থাকার পর ওদের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে । রানী আরো ওয়েট করে , কিন্তু জান্নাত আসে না । ধিরে ধিরে রানীর মনে অভিমান দানা বাধতে থাকে । বেশ কয়েকবার খিল খিল হাসির শব্দ ও শুনতে পায় রানী । হঠাত করে রানীর মাথায় চিন্তা আসে , শেষ পর্যন্ত রাজীব ওর সবচেয়ে কাছের ান্ধবিকেও ওর কাছ থেকে কেড়ে নিলো। রাজীবের হয় জান্নাতের আজকে ওকালতি , আর এখন ওকে উপেক্ষা করে নিজেদের মাঝে আড্ডা দেয়া এসব কিছুই রানীকে ভাবতে বাধ্য করছে । জান্নাত আর ওর ান্ধবী নেই , ও এখন থেকে রাজীবের বন্ধু । রাজীব ওর শৈশব কৈশোর কন্ট্রোল করেও খান্ত হয়নি , ওর সবচেয়ে প্রিয় ান্ধবিকেও কেড়ে নিয়েছে । সুধু কি তাই ? আজকে এই বিশেষ দিনটাও রাজীব ওর জন্য কঠিন করে তুলেছে । নিজে সব করেছে কিন্তু ওকে একবার ডাক দেয়ার ও প্রায়জন মনে করেনি । রানী মনে মনে ভাবে ওর ভাই কে ও যেমন সহজ সরল ভাবতো । অতটা সহজ রাজীব নয় । রাজীব একটা সাইকো , নিজেকে ভালোমানুষ প্রমান করার জন্য ও নিজের আশেপাশের মানুষদের কে ডি-ফেম করে সুকৌশলে । নিজেকে এভাবে একা পেয়ে রানীর কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলার কাছে জমা হয় । কিন্তু রানী কাঁদে না , কান্নার বদলে রানীর মাঝে দৃঢ় সংকল্প দেখা দেয় । ভাবে আজ থেকে ও ব্যাকস্টেবার রাজীব আর বিশ্বাসঘাতক জান্নাত কে একদম পাত্তা দেবে না। **** জান্নাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষন পর রাজীব বিছানা থেকে উঠে দাড়ায় , তোষকের নিচ থেকে ডাইরি টা বের করে । তারপর নিজের টেবিলের ড্রয়ার খুলে , ডায়রিটা যত্ন সহকারে রেখে দেয় । তারপর চাবি ঘুরিয়ে সেটা নিরাপদ করে তোলে । ঘড়ির দিকে তাকায় রাজীব , প্রায় পাঁচটা বেজে গেছে , বাইরেও আলো কমে এসেছে । জান্নাতের সাথে প্রায় এক ঘণ্টার মত ছিলো ও । অথচ মনেই হয়নি এতটা সময় পেরিয়ে গেছে । মনে হয়েছে কয়েক মিনিট ছিলো জান্নাত । রাজীব ঘর থেকে বের হয় , রানীর ঘরের সামনে এসে দেখে এখনো দরজা লাগানো । ভাবে হয়তো ঘুমাচ্ছে , একবার ভাবে ডাকবে, কিন্তু ডাকেনা । রাজীব ছাদে চলে আসে , অনেকদিন পর বিকেলে ছাদে উঠছে ও । আজকাল আর তেমন ওঠা হয়না । ছাদে উঠেই যে জিনিস ওর চোখে পরে সেটা হচ্ছে , শুকানোর জন্য দেয়া কাপড় গুলো এখনো ছাদেই রয়ে গেছে । রাজীব সেগুলো একটা একটা করে তুলে হাতে নেয় । কয়েকটি কাপড় তোলার পর ই চৌধুরী বাড়ির ছাদ ওর চোখের সামনে চলে আসে । আর সেখানে রাজীব দেখতে পায় জয় কে । দাড়িয়ে আছে , রাজীব আর রানীর মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে । জয় ও শিকদার বাড়ির ছাদের উপরে কিছু একটা নড়াচড়া দেখে এদিকে তাকায় । দুই প্রাক্তন বন্ধুর চোখাচোখি হয় । জয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে । জয় চায়নি এই মুহূর্তে রাজীবের সাথে অথবা রানীর সাথে দেখা হোক । এই দুর্বল মুহূর্তটা ও গোপন রাখতে চেয়েছিলো । রাজীবের দৃষ্টি কিছুটা নরম । জয় আর দাড়ায় না , দ্রুত ছাদ থেকে চলে যায় । রাজীব ও বাকি কাপড় গুলো তুলে নিচে নেমে যায় । ছাদে থাকার পরিকল্পনা বাদ দেয় । **** “ আরে তুই এতো সকাল সকাল?” জয় কে দেখেই জান্নাত ঠ্যাশ দিয়ে বলে । “ আর তুই আমাকে ফলো করার ডিসিশন কবে থেকে নিলি?” জয় উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে “ তোকে ফলো করতে যাবো কোন দুঃখে ? বৃদ্ধ বয়সে আমার ডিপ্রেশনে পরার সখ নাই” “ সাবকন্সাস ভাবে তো করেই ফেললি , আগে আমি ভাবতাম চৌধুরী পরিবারে সুধু আমার মাঝেই হিউমার আছে , ওয়েলকাম টু দ্যা ফ্যামেলি” জয় এই বলে হাত বাড়িয়ে দেয় । “ যাহ ভাগ” এই বলে জান্নাত জয়ের হাত সরিয়ে দেয় । “ এই তোরা কি এক মুহূর্ত ঝামেলা না করে থাকতে পারিস না?” রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে ওঠে আয়শা । তারপর আবার জয়ের উদ্দেশ্যে বলে “ আজকে তোর ছোট আম্মুর মৃত্যু বার্ষিকী , একবার জিয়ারত করে আসতে পারলি না? ” “ উফ আমি তো ভুলেই গেছি” জান্নাত কপালে হাত রেখে বলে । “ আমি করেছি আম্মু” জয় চেঁচিয়ে বলে “ কখন করলি, তোকে তো আজকে দেখলাম ই না” “ এই এখন করে এলাম ছাদ থেকে” “ ছাদ থেকে কেনো, যা সামনে গিয়ে করে আয়” “ চল আমিও যাবো” মাঝ থেকে জান্নাত বলে “ না না তোর যেতে হবে না মা , মেয়েদের কবরের সামনে যাওয়া ঠিক নয় “ আয়শা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বলে । এদিকে জয় এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে “ আম্মু এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে , এখন আমি কবরের সামনে যাবো!!! ছাদ থেকে তো করেই এসেছি” “ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছা করো , ছোট বেলায় তোমাদের ছোট আম্মু কত আদর করতো ভুলে যেয়ো না , আসলে পরের ছেলে কখনো নিজের হয় না” আয়শা বেশ উস্মার সাথে বলে , কিন্তু জয় কে আর যেতেও বাধ্য করে না । সন্ধ্যা হওয়ার বাহান কাজে লেগে গেছে ্ দেখে জয় খুশি হয় । তবে জান্নাত কে বিপদে ফেলতে পিছু হটে না বলে । “ আমি তো তবুও মনে রেখছি , তোমার মেয়ে তো ভুলেই গেছে” “ আমি তোর তোর মত আজাইরা থাকি না , আমার মাথায় সারাদিন প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা ঘোরে, তাই হয়তো ভুলে গেছি” জান্নাত নিজের ডিফেন্সে বলে । “ দুই একটা প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা আমার সাথেও শেয়ার করিস , দেখি তোর কি প্রডাক্টিভ চিন্তা ভাবনা আছে” আয়শা আর দাড়ায় না , এই দুই জনের যুদ্ধ বহক্ষন চলবে আরো । ওর এতো সহ্য ক্ষমতা নেই । **** অনেকক্ষণ জান্নাতের সাথে লড়াই করে জয় নিজের ঘরে চলে আসে । অতীতের কিছু কথা জয়ের মনে পরে । আফরোজা জয় কে সত্যিই অনেক আদর করতো। মাঝে মাঝে রাজীব এই বলে নালিশ করতো যে ওর মা ওর চেয়ে বেশি জয় কে ভালোবাসে । তবে জয় আফরোজার সামনে খুব লাজুক হয়ে যেতো । কেন হয়ে যেতো সেটা মনে পরলে জয়ের এখন খুব হাসি পায় । আফরোজা খুব সুন্দরী ছিলো , আর ছোট্ট জয়ের লজ্জা পাওয়ার এটাই ছিলো কারন । সব জায়গায় জয় ছিলো হিরো , আর আফরোজার সামনে একেবারে মেনি বেড়াল । আর সেটা নিয়ে আফরোজা প্রায়ই মজা করে বলতো “ তুই কি আমার মেয়ের জামাই নাকি রে যে আমাকে দেখলেই লজ্জা পাস?” সবাই খুব হাসত তখন । আর আফরোজা জোড় করে জয় কে ধরে গালে কপালে চুমু খেতো । জয় লিজ্জায় লাল হয়ে যেতো । পুরনো এই সৃতি মনে হতেই জয়ের মনটা ভারি হয়ে আসে । রানীর মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে । মনে মনে ভাবে , তোমার মেয়ে আমাকে রেপিস্ট ভাবে ছোট আম্মু , রেপিস্ট !!! তুমি চিন্তা করতে পারো ? আজকে তুমি থাকলে এর বিচার করতে । **** আজকে মন ভালো থাকায় জয়ের সাথে অনেকটা সময় খুনসুটি করে কাটিয়েছে জান্নাত । এখন নিজের ঘরে আসতেই ওর মনে হলো , রানীর সাথে আজকে কাজটা ঠিক হয়নি , আজকে ক্যাম্পাসেও রানীর সাথে ভালো আচরন করা হয়নি । আবার বিকেল বেলা ওদের বাড়ি গিয়েও ওর সাথে দেখা না করেই চলে এসেছে । আসলে রানীর প্রতি কিছুটা রাগ থেকেই এই কাজ করেছে জান্নাত । কিন্তু এই দিনে রানীর প্রতি রাগ না দেখিয়ে ওর সাথে কিছু সময় ব্যয় করা উচিৎ ছিল বলে মনে হয় জান্নাতের । সেই সাথে ছোট আম্মুর মৃত্যুদিন ভুলে যাওয়া ও উচিৎ হয়নি । যদিও ওর তেমন একটা সৃতি নেই । তবে মায়ের মুখ শুনেছে । কেমন করে ছোট আম্মু কোমর বেধে ঝগড়া করতো যখন কেউ ওকে কালো বলতো । এমন কি জান্নাতের আপন ফুপুদের ও ছাড় দিতো না । যদিও পাড়াপরশি আত্মীয় স্বজনদের মুখ বন্ধ হয়নি , কিন্তু নিজের ঘরের ভেতর অন্তত এই নিয়ে তেমন কিছু সহ্য করতে হয় না জান্নাত কে । সুধু জয় মাঝে মাঝে ওর কালো হওয়ার প্রসঙ্গ তোলে, তাও সেটা দুস্টুমি করে । এর পর জান্নাত ব্যাস্ত হয়ে পরে নিজের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তৈরি হতে । টাকা জোগার করা তেমন কঠিন কিছু হবে না । ওর নিজের ও কিছু টাকা আছে । জান্নাত খরচ করার ব্যাপারে খুব সাবধান থাকে , ফেন্সি পোশাক বা কসমেটিক্সের তেমন সখ নেই ওর । তাই ওর পকেট মানি থেকে অনেক টাকা বেঁচে যায় , তা ছাড়া নানা রকম উৎসবে ওর ফুপুরা ওকে অনেক টাকা দেয় । সেগুলোও জমানো আছে । সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার উপরে । বাকি অল্প যা লাগবে সেটা মায়ের কাছ থেকে ধার করে নেয়ার চিন্তা করে । সুধু মাত্র একটা ভালো ল্যাপ্টপ ছাড়া খুব অত্যাধুনিক কিছু কিনবে না বলে ঠিক করে জান্নাত , বেসিক ইকুইপমেন্ট দিয়ে শুরু করার ইচ্ছা ওর । প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের লিস্ট করা , আর চ্যানেলের ব্যাপারে আর কিছু গভির চিন্তা করতে করতে অনেকটা সময় পার করে দেয় জান্নাত । এরে পর রাতের খাবার খেয়ে , কিছুক্ষন পড়াশুনা করে । তারপর পোশাক চেঞ্জ করে বিছানায় । নিজের আলাদা রুম হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই জান্নাত আবিস্কার করে যে ও মিনিমাম পোষাকে ঘুমাতে সাচ্ছন্দ বোধ করে । এমন কি কৈশোরে বেশ কয়েকবার উলঙ্গ হয়েও শুয়েছে । ওটা আরো বেশি আরামদায়ক । তবে একেবারে উলঙ্গ হয়ে শোয় না জান্নাত , শরীরে একটা ফিনফিনে ঢোলা টি সার্ট আর নিচে সুধুই একটা কটন প্যান্টি। তারপর শরীরে চাদর জড়িয়ে , এসির টেম্পারেচার ২২ তে সেট করে ঘুম । মানুষ ভাবে জান্নাত নিজের বিছানা ছেড়ে অন্য কোথাও ঘুমাতে পারে না , তাই কোন জায়গায় গিয়ে থাকতে চায় না । আসলে জান্নাত সম্পূর্ণ পোশাক পরে ঘুমাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না তাই অন্য কোথাও গিয়ে রাতে থাকতে চায় না । তবে আজকে বিছানায় শুয়েই ঘুম আসলো না , রাজীব কে রাজি করাতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে ওর । বেশ কয়েকবার মন কে শাসন ও করেছে , বলেছে ‘ এই দুষ্ট মন , ওখানে তো খুব বলে এলি যে এটা প্রফেশনার পার্টনারশিপ , তাহলে এখন আহ্লাদে আটখানা কেনো হচ্ছিস? যদি উল্টো পাল্টা কিছু করিস তাহলে কিন্তু তোকে আমি ছারবো না, খুব সাবধানে থাকতে হবে , নো হাঙ্কি পাঙ্কি’ কিন্তু এই শাসনেও কোন কাজ হচ্ছে না , ওর মন ওকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছে সেই সন্ধ্যা থেকেই । এখনো চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে বার বার ওর ঠোঁটে হাসি টেনে দিচ্ছে । যতবার ই মনে আসছে অনেকটা সময় রাজীবের সাথে কাটানো হবে , তখনি সেই দুষ্ট হাসিটা চলে আসছে । সেই সাথে রাজীবের তখনকার মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে যখন ওর দরজা চাপিয়ে দিচ্ছিলো । জান্নাত হাসে একা একা , হাসতে হাসতে বিড়বিড় করে বলে ‘ তৈরি থাকো মি.রাজীব এর পর আমার সাথে বদ্ধ ঘরে অনেক সময় পার করতে হবে , ঐটুকু তেই কেমন চুপসে গিয়েছিলো তোমার মুখ খানা, যেন আমি দরজা বন্ধ করে তোমাকে কিছু করে ফেলবো” হিহিহি করে আবার হাসে জান্নাত । হঠাত করেই জান্নাতের মনে হয় রাজীব কিছু একটা লুকিয়েছিলো ওকে দেখে । জান্নাত প্রথমে ভাবে আন্ডারগারমেন্টস হবে, ভেবে বেশ এমিউসড হয় , জান্নাত মনে করতো ছেলেরা এসব ব্যাপারে তেমন লজ্জা পায় না মেয়েদের মত । জয় তো ওর আন্ডারয়ার খোলাই রেখে দেয় । কিন্তু রাজীব কে দেখে তো মনে হলো বেশ লজ্জা পেয়েছে । পরক্ষনেই অবশ্য এই ধারনাটা বাদ দেয় জান্নাত , রাজীব আসলে তখন লজ্জিত ছিলো না । জান্নাতের কৌতূহল বৃদ্ধি পায় । রাজীব ওর ঘরের কোন একটা জিনিস লুকাচ্ছে , এটা এক ভাবে যেমন খুব সাধারন ব্যাপার , আবার তা নয় ও । জান্নাত আরো একটু ভাবে । একপর্যায়ে নিজের উপর বিরক্ত ও হয় । এই ছোট জিনিসটা নিয়ে ওর এতো কৌতূহল কেনো হচ্ছে এই ভেবে। কিন্তু কৌতূহলটা কিছুতেই দূর করতে পারে না । জান্নাত বুঝে যায় এই কেইস সল্ভ না করে ওর ঘুম আসবে না । তাই সম্পূর্ণ মনোযোগ টেনে একত্রিত করে । জান্নাত একবার কোথায় যেন পড়েছিলো , মানুষের চোখ অনেক কিছুই দেখে সেটা মেমরিতে সেভ করে রাখে । মানুষ ভাবে সে দেখেনি , আসলে সে দেখছে । তাই জান্নাত একাগ্রচিত্তে মনে করার চেষ্টা করে । বেশ কিছুক্ষন পর জান্নাত আবার সি জিনিসটা দেখতে পায় , হ্যা ওটা একটা বইয়ের মত জিনিস । কিন্তু রাজীব বই কেনো লুকাবে !!! ভেবে পায় না জান্নাত। আরো কিছুক্ষন ভাবে , কি বই রাজীব ওকে দেখে লুকাবে । একবার মজার ছলে ভাবে ইরোটিক কোন বই নাতো? তবে সেই চিন্তা বাদ দেয় । মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে রাজীবের মত ছেলে ইরোটিক গল্প পড়বে , এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম । আরো কিছু সময় পার হয়ে যায় , জান্নাত ফ্রাস্টেটেড হয়ে পরে । মাঝে মাঝেই ওর এমন হয় । ছোট খাটো বিষয় না মেলাতে পারলে ওর ঘুম হয় না । যদিও রাজীব ওর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ , তাই বলে রাজীব ওর নিজের ঘরে ওকে দেখে কি লুকালো না লুকালো সেটা ভেবে রাতের ঘুম হারাম করার কোন কারন দেখে না জান্নাত । নিরুপায় হয়ে জান্নাত আবার ভাবতে থাকে । এবং বেশ অনেকক্ষণ পর , ওর মনে একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখা আসে । সেটা হচ্ছে রাজীব যা লুকিয়েছে সেটা কোন বই ছিলো না , সেটা ছিলো একটা ডায়রি । হয়তো রাজীব ডাইরি লেখে এবং সেটা কাউকে জানাতে চায় না । জান্নাত ব্যাপারটা মীমাংসা করতে পেরে খুব শান্তি পায় , এই ভেবে যে এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবে । কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই সেই ডায়রি আবার ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে । ডায়রিটা আধুনিক নয় , দেখেই মনে হচ্ছে অনেক পুরনো আর রঙচঙা ডিজাইন করা পুতি বসানো , মেয়েলি ধরনের ডায়রি । আর ডায়রির উপরে বড় বড় অক্ষরে কিছু একটা লেখা । সেই লেখা জান্নাত দেখেনি । তবে সেটা রাজীব লেখা নয় অথবা রাজীবের সম্পূর্ণ নাম ও নয় । ডায়রিটা রাজীবের হওয়ার সম্ভাবনা নেই । এতো আগে থেকে রাজীব ডাইরি লেখে এটা বিশ্বাস করা কঠিন । এবার অবশ্য খুব বেশি সময় নেয় না জান্নাত । অংক খুব সহজেই মিলে যায় । ওটা একটা মেয়েলি ডাইরি এবং অনেক পুরনো । জান্নাত ভাবে ওটা যেহেতু অনেক পুরনো তাই সেটা রাজীবের মায়ের , মানে আফরোজার ডায়রি । আর আজকে আফরোজার মৃত্যুবার্ষিকী হওয়ায় রাজীব ডাইরিটা ঘেটে দেখছিলো । কিন্তু জান্নাত ভেবে পায় না এই ডায়রি লুকানোর কি আছে । যেহেতু রাজীব পড়তে পারছে , সেহেতু এমন কিছু সেখানে লেখা নেই যা গোপন হতে পারে । *****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না।
12-10-2025, 06:59 PM
কিছু সম্পর্কঃ ৮
ডিসেম্বরের শীতের সকাল , এই সময় ঘুম থেকে উঠতে রানীর বড্ড কষ্ট হয় । আগে রাজীব ডেকে তুলতো এখন আর ডাকে না। তাই প্রথম প্রথম কয়েকটি ক্লাস মিস হয়ে গেছে রানীর । এর প্রতিকার হিসেবে রানী দুটো ঘন্টা বাজানোর ঘড়ি কিনে এনেছে। সাথে তো মোবাইল আছেই । তাতেও রানীর হয় না , ঘুম ভাংলেও কম্বলের ওম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে হয় না । তাও কোনরকম নিজেকে টেনে হিঁচড়ে তোলে । তুললে কি হবে , ঠাণ্ডা মেঝেতে পা ফেলতে ইচ্ছে হয় না । শীতল মেঝতে পা রাখলেই মনে হয় অসংখ্য সূচ পায়ের তালুতে ঢুকে একদম মস্তিস্কে গিয়ে আঘাত করে । কিছুক্ষন আলসেমি করার পর রানী মেঝেতো পা রাখে । কিন্তু এর পরের কথা চিন্তা হতেই আর শরীর চলে না । এই সাত সকালে গোসল করার কথা ভাব্লেই রানীর ইচ্ছে হয় আবার কম্বলের নিচে ঢুকে যায় । শিকদার বাড়িতে গিজারের ব্যাবস্থা কোন বাথ্রুমেই নেই । আগে রাজীব গরম পানি এনে দিতো । এখন আর দিচ্ছে না , আর রানীর নিজের পানি গরম করার ও সময় থাকে না । এখন গরম পানি করতে গেলে ক্লাস মিস হয়ে যাবে । তাই রানী শীতের সকালে গোসল নামক যুদ্ধে গরম পানির রক্ষা কবজ ছাড়াই ময়দানে নেমে পরে । প্রথমেই শাওয়ারের নিচে দাড়ায় না । বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় হাত ছোঁয়ায় , তারপর পা , তারপর মুখে পানি দেয় । তারপর ধিরে ধিরে হাতে পানি নিয়ে শরীরে মাখায় তারপর শোয়ারের নিচে দাড়ায় । এতো কিছু করেও শেষ রক্ষা হয় না , সুচের মত এসে বিঁধে প্রতিটি ফোঁটা । ছিটকে বেড়িয়ে আসে শাওয়ারের নিচ থেকে । আবার দাড়ায় , আবার ছিটকে বেড়িয়ে আসে , এভাবে কয়েকবার পানির সাথে লুকুচুরি করার পর রানীর শরীরের তাপমাত্রা পানির তাপমাত্রার সাথে ম্যাচ করে যায় । ধোয়া ওঠা শীতল পানিতে গোসল সেরে বাথরুম থেকে বেরুতেই আবার আরেক প্রস্থ ঠাণ্ডা ওকে কাবু করে ফেলে । হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে দেয় । সারা শরীরে ময়েসচারাইজ্র লোশান লাগানোর পর শরীর আরো কিছুটা গরম হয় , এর পর হালকা প্রসাধনি ব্যাবহার করে , একটা সাদা লেগিন্স আর ব্রাউন ওয়ান পিস বেছে নিয়ে পরে ফেলে । ওড়নাটা গলায় কয়েক প্যাচ দিয়ে বুকের কাছে জড় করে , তারপর পশমি কারডিগ্যান উপরে চাপিয়ে নেয় । আজকাল সাজগোজের দিকে মনোযোগ কমে গেছে রানীর । না সুধু জয়ের জন্য নয় , এমনিতেও মন ভালো থাকে না , তার উপর পড়াশুনার চাপ ও আছে । অবশ্য এর জন্য রানী নিজেকেও কিছুটা দায়ি করে । ওর দোষ হচ্ছে কিছু মানুষকে নিজের পাওন ভাবা । এর মাঝে এক নাম্বারে রয়েছে রাজীব , দুই নাম্বারে জান্নাত । আজকাল রানী প্রায় ই দেখে জান্নাত আর রাজীব নিজেদের মাঝে কি নিয়ে যেন খুব আলোচনা করে । অনেক সময় এক সাথে কাটায় । এমন নয় যে ওরা রানী কে সাথে থাকতে নিষেধ করে , কিন্তু ওদের আঁচার আচরণে মনেও হয় না যে ওরা ওই মুহূর্তে ওকে ওদের মাঝে চাইছে । রানী প্রথমে ভেবেছিলো রাজীব আর জান্নাতের মাঝে কোন চক্কর চলছে । সিমটম গুলো সেদিকেই ইংগিত করতো । রানী আশ্চর্য হতো এই ভেবে , জান্নাতের মত একটা প্রাক্টিকাল মেয়ে রাজীবের সাথে। কিছুতেই বিশ্বাস হতে চাইতো না । তবুও মেনে নিয়েছিলো রানী । এবং এই ভেবে আশ্বস্ত হয়েছিলো যাক ওরা ওদের মত সময় কাটাক । কিন্তু পরে যখন জানতে পারলো যে ওরা দুজনে মিলে সোশ্যাল মিডিয়ায় কি যেন করছে , তখন রানীর খুব রাগ হলো । মনে মনে ভাবলো ,ওকে একবার বলার ও প্রয়োজন মনে করলো না? এভাবে রাজীব আর জান্নাত মিলে ওকে অবজ্ঞা করলো ? সেই থেকে রানী ওই দুজনের কাছ থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে দূরে সরিয়ে রাখে । রাজীব কে তো মুখেই বলে দিয়েছে , কিন্তু জান্নাত কে মুখে কিছু বলেনি , তবে আচরণে বুঝিয়ে দিয়েছে । রানী ভাবে ওরা যদি ওকে বাইরের মানুষ মনে করতে পারে , তাহলে ও কেনো পারবে না ? আলবৎ পারবে । তবে মাঝে মাঝে রানীর নিজেকে খুব একা লাগে , হ্যা ওর নতুন অনেক বন্ধু হয়েছে , কিন্তু সেই ছেলে বেলা থেকে একসাথে ওরা চারজন । সেই টান কাটিয়ে উঠতে পারে না । তখন খুব মন খারাপ হয় । সেই মন খারাপ ধিরে ধিরে অভিমানে রুপ নেয় । বেশি অভিমান হয় জান্নাতের উপর । রাজীবের সাথে না হয় একটা মনমালিন্য হয়েছে ওর , কিন্তু জান্নাতের সাথে তো কিছুই হয়নি। জান্নাত কেনো এমন করছে । রানী হেটে হেটে গলির মুখে আসে , আজকাল ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা অটো মেইন রাস্তায় বন্ধ করে দিয়েছে । তাই রিক্সা পেতে বেশ সমস্যা হয় । বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে রানী রিক্সা পায় । পায়ে চালিত রিক্সা অনেক সময় লাগে । সি এন জি অটো পেলে ভালো হতো । কিন্তু তেমন একটা পাওয়া যায় না আর ওদের ব্যাবহার ও ভালো না । বিশেষ করে একা মেয়ে মানুষ পেলে যাচ্ছেতাই আচরণ করে । জান্নাত সাথে থাকলে অবশ্য এসব ব্যাপার জান্নাত ভালো ট্যাকল করতে পারে । টুক্টুক করে রিক্সা চালাচ্ছে বৃদ্ধ লোকটা , তবুও শীতের শুষ্ক বাতাস এসে বিধছে মুখে । কিছুক্ষন পর রানী নিজের নাকের অস্তিস্ত আর টের পায় না । তাই বুকের কাছে জমানো ওড়নার কিছু অংশ দিয়ে নাক ঢাকে । আর তখনি একটা বাইক সাঁ করে বেড়িয়ে যায় রানীর রিক্সার পাশ দিয়ে । কালো লেদার জ্যাকেটে জয়ের পিঠ ত্রিশ সেকেন্ডের মত দেখতে পায় রানী । মনটা আর বেশি বিষণ্ণ হয়ে ওঠে । একাকীত্ব আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে । রানী এমন একাকীত্ব জীবনে আর কোনদিন অনুভব করেনি । মনে মনে ভাবে আমার মাঝেই কোন কমতি আছে নিশ্চয়ই নয় তো একে একে সবাই কেনো আমাকে ছেড়ে যাচ্ছে । **** ক্লাসে রানীর মন বসে না , ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ও তেমন ভাবে নিজেকে ইনক্লুড করতে পারে না । এতো মানুষের মাঝে থেকেও নিজেকে কেমন যেন একা একা লাগে । চুপচাপ এক কোনে বসে থাকে । বসে বসে নিজের একাকীত্ব নিয়েই চিন্তা করতে থাকে । “ এই রানী চুপচাপ কেনো” গ্রুপের একটা ছেলে ওর পাশেই এসে বসে একটু নিচু স্বরেই জিজ্ঞাস করে , যেন বাকিরা শুনতে না পায় । হঠাত চিন্তা থেকে বের হয়ে রানী একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে । বিশেষ করে ছেলেটি প্রায় ওর গা ঘেঁষে বসেছে বলে । রানী নিজেকে একটু সরিয়ে নিতে চায় , কিন্তু পারে না , কারন ওর পাশে পায়েল বসে আছে । রানী ছেলেটির দিকে তাকায় , নাম আবরার , ওদের সাথেই ক্লাস করে , ইদানিং ওদের সাথে একটু বেশি মিশছে । “ নাহ এমনি” রানী সামান্য সৌজন্য হাসি হেসে বলে । “ না না আমি বেশ কিছুদিন যাবত দেখছি তুমি কেমন মন মড়া থাকো, কোন সমস্যা?” ছেলেটির গলায় ওর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ পায় । “ আরে না , কিসের সমস্যা “ রানী হেসে আবরার কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে । “ সমস্যা থাকলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো, আরে বন্ধুরা আছে কি কাজে যদি সমস্যা না শেয়ার করতে পারো” আবরার বেশ গায়ে পরা ভাব দেখায় । রানী একটু বিরক্তই হয় , তবে সেটা প্রকাশ করে না । মনে মনে ভাবে, গায়ে পরা ছেলে তো , চিনি না দুদিন হলো এসেছে সমস্যা শেয়ার করতে । “ নাকি তুমি আমাকে বন্ধুই ভাবো না , দেখো আমি কিন্তু তোমাকে বন্ধু ভাবি , যাদের সাথে আমি মিশি, একদম মন থেকে মিশি , তাই তোমার কাছে আমার আচরন গায়ে পরা মনে হতে পারে, আসলে তেমন কিছু নয়” আবরার ক্যাজুয়ালি বলে , রানী বেশ লজ্জায় পরে যায় , ও ভাবে ওর আচরণ কি এতটাই অভিয়াস ছিলো , যে আবরার বুঝে ফেললো । মনে মনে ভাবে ছি ছি ছেলেটা কি ভাববে , তাই তারাতারি বলে “ আরে না তেম্ন কিছুই না , একটু ডিস্টারবড আছি এই যা,” “ তুমি চাইলে আমরা একটু দূরে গিয়ে কথা বলতে পারি” আবরার যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ই ছিলো । রানী মনে মনে প্রমাদ গোনে , ভাবে সুযোগ করে দিলো ও নিজেই । এই ছেলে এই কথা শোনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলো । “ না মানে আমার…” কথা শেষ করতে পারে না রানী । পাশ থেকে পায়েল বলে ওঠে , “ আরে যা না , দুটো সুখ দুঃখের কথা বলেই না হয় আয় , আমরা কি তোর মতন যে কারো ভালো দেখতে পারবো না ,আমরা কিছুই মনে করবো না” পায়েল কথা গুলো সবাইকে শুনিয়েই বলে , আর সবাই এই শুনে হা হা হি হি করতে শুরু করে দেয় । রানী আবরারের দিকে তাকায় , মিট মিট হাসছে । রানীর কাছে মনে হয় এটা আবরার আর পায়েলের প্রি প্ল্যান করা ছিলো । রানী এখন চাইলে উঠে যেতে পারে , কিন্তু সেটা কি ভালো দেখাবে ? মনে মনে ভাবে রানী । রানী উঠে দাড়ায় , মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় , অল্প কিছু কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হবে আবরার যা চাইছে তা হবে না এখানে । কিছুটা দূর গিয়ে দাড়ায় রানী , আবরার ও এসে পাশে দাড়ায় , রানী কিছু বলে ওঠার আগেই আবরার বলে ওঠে “ দেখো তুমি বুঝে গেছো আমি এই ব্যাপারটা পায়েলের সাথে প্ল্যান করে করেছি , এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি , আসলে অনেক দিন যাবত তোমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি , তাই শেষ চেষ্টা হিসেবে এই কাজ করেছি , আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, আমি আশা করবো আমার এই আচরণ দিয়ে আমাকে বিচার করবে না, এটা ছিলো শেষ চেষ্টা” রানী এর উত্তরে কি বলবে ভেবে পায় না , নিজেই নিজের দোষ শিকার করে ফেললে আসলে বলার কিছুই থাকে না , রানী দু হাত বুকের কাছে ভাজ করে দাড়িয়ে জিজ্ঞাস করে “ ওকেবুঝতে পারলাম , তা কিসের জন্য আমার দৃষ্টি আকর্ষণের এতো চেষ্টা , তাছাড়া একা কথা বলার ই দরকার কেনো? আর এতোবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও যখন ব্যারথ হয়েছো , তখন তো বুঝে যাওয়ার কথা আমি হয়তো ইন্টারেস্টেড নই।” কথা গুলো বলার সময় রানীর কণ্ঠ বেশ কঠিন শোনায় , এতটা কঠিন ভাবে রানী নিজেও বলতে চায়নি । “ তার আগে একটা কথা বলি , কিছু মনে করো না “ আবরার অনুমতি চাওয়ার মত করে বলল । রানী কিছু বলল না , চুপ করেই রইলো । আর আবরার সেই চুপ থাকা কে রানীর সম্মতি ধরে নিয়ে বলল “ তোমার ব্যাপারে আমার একটা অব্জারভেশন আছে , সেটা হচ্ছে তুমি যে আমার ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড নও এমনটা কিন্তু নয়। ” “ মানে?” রানী বিরক্তি নিয়ে জিজ্ঞাস করলো । মনে মনে ভাবে- এই ছেলে বলতে চায় কি ? সে কি নিজেকে জ্যোতিষ ভাবে নাকি , যে ওর মনের কথা সব বুঝে ফেলেছে এমন ভাব নিচ্ছে । আর এই কথা বলে কি ছেলেটা বলতে চাইছে যে ওর কোন আচরনে ছেলেটা বুঝতে পারেছে , যে ও এই ছেলের প্রতি ইন্টারেস্টেড । “ আমি বলতে চাচ্ছি ইন্টারেস্টেড হওয়ার জন্য আগে তো আমাকে নোটিস করতে হবে , তুমি আমাকে নোটিস ই করোনি। সুধু আমাকেই নয় , এই যে তুমি আমাদের সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছ , ঘুরে বেড়াচ্ছ , কিন্তু তুমি যেন এখানে থেকেও নেই । তোমার মন অন্য কোথাও আছে , তোমাকে যে একটু খেয়াল করবে সেই বলে দিতে পারবে তুমি খুব একাকি বোধ করছো” রানী আবরারের দিকে তাকায় , বেশ ভালো করেই তাকায় । এর আগেও যে দেখেনি এমন নয় , ক্লাসের সময় দেখছে , ক্যাম্পাসে হাটাচলার সময় দেখছে । তা ছাড়া বেশ কিছুদিন যাবত একি সার্কেলের সাথেই দুজন আছে । কিন্তু আজকের মত ভালো করে কোনদিন তাকায়নি । ছেলেটির চেহারায় এমন কোন বিশেষ কিছু নেই যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে , খুবই সাধারন ছেলে , মাঝারি উচ্চতা , গায়ের রং শ্যামলা । পরনে ফুল স্লিভ চেক সার্ট আর জিন্স , পায়ে স্যান্ডেল । তবে চোখ দুটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত । এক মুহূর্তের জন্য রানীর মুখের রেখা গুলো নমনীয় হয়ে আসে । মনে মনে ভাবে - ছেলেটি তো সত্যি কথাই বলেছে । কিন্তু আবার চেহারায় একটা কঠিন ভাব ফিরিয়ে নিয়ে আসে , আবরার ওর সাথে কথা বলার জন্য যে পন্থা অবলম্বন করেছে সেটা এখনো ওর কাছে জাস্টিফাইড নয় । “তুমি কি সবার ব্যাপারেই এমন চিন্তা ভাবনা করো নাকি?” রানী একটু খোঁচা মেরে জিজ্ঞাস করে আবরার হাসে , বলে “ নাহ , সবার ব্যাপারে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করার সময় বা সাধ্য দুটোর একটাও আমার নেই , তবে কিছু মানুষ আছে যারা তাদের নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে” “ বাহ খুব সুন্দর বললে তো , তোমাকে বাধ্য করে !!! তা আমার তো মনে পরছে না আমি কোনভাবে তোমাকে বাধ্য করেছি” রানীর গলায় ওর রাগের তেজ ফুটে ওঠে । “ না না আমি ওভাবে বলিনি , আসলে তোমাকে দেখে খুব বিষণ্ণ আর একা একা মনে হয় তাই……” “ শোন আবরার , তুমি আমাকে যেভাবে এখানে আসতে বাধ্য করেছো , তারপর ও অনেক সময় তোমার সাথে কথা বলেছি , আমার এখন যেতে হবে, আর একটা কথা শুনে রাখো আমি বিষণ্ণ ও নই একাও নই , আর নিজের অব্জারভেশন ক্ষমতার উপর বিশ্বাস একটু কমাও ” রানী আবরার কে বাকি কথা না বলতে দিয়ে , খুব কঠিন স্বরে এই কথা গুলো বলে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় । কিন্তু আবরার পিছু ছাড়ে না , “ আমি সত্যি সত্যি দুঃখিত , চলো তোমাকে রিক্সা করে দেই , আমার শাস্তি হচ্ছে তোমাকে রেকর্ড পরিমান কম ভারায় আজকে রিক্সা করে দেবো , আমি রিক্সা ভাড়া করার ক্ষেত্রে ওস্তাদ লোক” রানী না চাইতেও ওর মুখে একটা হাসি চলে আসে । হাটা থামিয়ে আবরারের দিকে তাকায় , ছেলেটা বেশ বেহায়া , মনে মনে ভাবে। তারপর বলে “ এটা কি তোমার আরো কোন টেকনিক? মানে আমার ঠিকানা জোগাড় করছো?” “ আমি তোমার ঠিকানা জানি , সুধু আমি না ক্লাসের ৫০ ভাগ ছেলে তোমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে” আবরার এমন ভাবে বলল যেন এটা কোন ব্যাপার ই নয় । “কি বলছো এসব “ রানী চোখ প্রায় কপালে তুলে ফেলে , ওর ক্লাসের ছেলেরা যাদের সাথে ওর রোজ দেখা হয় , এক রুমে বসে ক্লাস করে , ওরা চুপি চুপি ওর বেক্তিগত ইনফরমেশন কালেক্ট করছে !!!, ব্যাপারটা ভাবতেই রানীর শরীরে কেমন যেন একটা শিরশিরে অনুভূতি হয় । অনেকটা এমন যেন শত শত চোখ ওর পেছন পেছন ঘুরছে । “ যা সত্যি, তাই তো বললাম” “ তুমি তো আমার ক্লাসে আসা বন্ধ করে দেবে, তুমি তো ডেঞ্জারাস ছেলে” “ আরে না এসব নিয়ে ভেবো না , এসব খুব নিরীহ কৌতূহল , এটা সবখানেই হয়, এদের মাঝে কেউই তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে না ” “কেনো?” রানী অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে , তবে জিজ্ঞাস করেই রানী বুঝতে পারে , এই কেনোর উত্তর ওর জানার ইচ্ছা নেই , জেনেও ওর কোন কিছু আসবে যাবে না । “ কারন ওদের এক্সপেকটেশন খুব হাই , তাই ওদের ভয় হয় , আর আমার এক্সপেকটেশন কম হওয়ায় , আমার ভয় নেই , তাই আমি এসে দাঁড়িয়েছি “ আবরারের কথা রানীর মাথায় ঢোকে না , রানী জিজ্ঞাস করতে যাবে , কিসের এক্সপেকটেশন , তার আগেই আবরার আবার বলে “ প্লিজ এখন জিজ্ঞাস করো না , কিসের এক্সপেকটেশন , তাহলে আমার ও বিপদ তোমার ও বিপদ” “ বিপদে পরার ইচ্ছা আমার নেই” বলে রানী হাসে । কিছুক্ষনের মাঝেই আবরার রানীর জন্য রিক্সা ঠিক করে ফেলে , একদম সঠিক ঠিকানা দিয়ে দেয় । তবে ভাড়া অন্যদিনের চেয়ে দশ টাকা বেশি । “ তুমি না খুব এক্সপার্ট ?” “ মিথ্যা বলেছি , কারন এই মিথ্যা না বললে তুমি এখনো রেগে থাকতে আর আমি এই পর্যন্ত তোমার সাথে আসতে পারতাম না” আবরার হাসতে হাসতে বলে । রানীও হাসে , মনে মনে ভাবে সত্যিই বলেছে । আবরারের ওই কথাটা ওর রাগ কিছুটা কমিয়েছে । “ এটা হলো একটা টেকনিক , এর মদ্ধমে রাগের বিপরীত শক্তি দিয়ে রাগান্বিত ব্যাক্তিকে আঘাত করা হয়…” “ হয়েছে হয়েছে আমি এই টেকনিক শিখতে চাই না, আচ্ছা আসি” রানী হাসতে হাসতে বলে , টেকনিক যাই হোক কাজ করেছে । এই ছেলের উপর রানী আর এখন রেগে নেই । “ এক মিনিট রানী , আবার কি কথা হবে ? “ আবরারের কণ্ঠে ডেস্পারেসন স্পষ্ট বোঝা যায় । “ আমি জানি না আবরার , তবে এটা জানি তোমার চাওয়া সে যত কম ই হোক , সেটা পুরুন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি চাইলেও পারবো না” রানী বিষণ্ণ চোখে আবরারের দিকে তাকায় , আসলে ছেলেটির জন্য ওর মায়া ই হচ্ছে । ওর জন্য একজন মানুষের চাওয়া অপূরণ থেকে যাবে । এই কথটা রানীকে বেশ কষ্ট দিচ্ছে । কিন্তু ওর করার ও কিছু নেই । আবরারের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে , “ রানী তুমি বুঝতেই পারোনি আমার এক্সপেকটেশন কম বলতে আমি কত কম বুঝিয়েছি , এই যে তুমি বললে , তুমি জানো না , এই অনিশ্চয়তার মাঝেও আমি আশা দেখতে পাই, বাই রানী আবার দেখা হবে” বলে আর আবরার দাড়ায় না । রানী অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আবরারের চলে যাওয়ার পথে । মনে মনে ভাবে , হঠাত করেই একটা ছেলে কোথা থেকে এসে ওর মনের অবস্থা গড়গড় করে বলে দিয়ে গেলো অথচ ওর কাছের মানুষ গুলো বুঝতেই পারছে না । অসুস্থ অবস্থায় একটা ভুলকে জয় আজো মাফ করতে পারলো না । জয় কি একবারের জন্যও ওর মুখের দিকে তাকায়নি । জয় কি আবরারের মত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ওর একাকীত্ব টের পায় না, ওর কষ্ট বোঝে না । ****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না। কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , কখনো ছেড়ে যায় না। |
|
« Next Oldest | Next Newest »
|