Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কিছু সম্পর্ক
#61
Very nice
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
(15-09-2025, 07:38 PM)Mmc king Wrote: Porer update er opekkhay aci


পরের আপডেট আপনার অপেক্ষায় আছে  Big Grin

(16-09-2025, 12:26 AM)Saj890 Wrote: Very nice

Thanks
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#63
পড়শি বাড়িঃ ৬ ()

 
[b] [/b]
 
খাওয়া দাওয়া শেষে রাজীব জান্নাত কে বলে তুই ঘুমিয়ে পর , আমি আছি ,প্রয়োজন হলে ডাকবো
 
দরকার নাই , আমার ঘুম নাইজান্নাত নিজের মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বলে । কেবিনের ভেতর নেটওয়ার্ক নাই ই , আর ইন্টারনেট নিয়েছে হসপিটালের ওয়াইফাই থেকে , ভীষণ বাজে , কোন মতে ফেসবুক স্ক্রল করা যায় । নিজেদের সপ্তাহিক পত্রিকার আজকের এডিশনের একটা নিউজ পড়ছে জান্নাত , সরকারি দলের ছাত্র উইং এর একটা অনুষ্ঠান ছিলো দুই দিন আগে। জান্নাত নিজেও সেই অনুষ্ঠান কাভার করতে গিয়েছিলো এক সিনিওরের সাথে । তবুও প্রতিবেদন টা বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছে । সিনিওররা কিভাবে লিখছে সেটা ফলো করলেও অনেক কিছু শেখা যায় ।
পড়তে পড়তে একটা অংশে এসে জান্নাত থেমে যায় , দলের সভাপতি আবির আলমগির বেশ খলাখুলি জয়ের প্রশংসা করেছে । জয়ের মাঝে স্বাভাবিক নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা আছে বলেও নিজের মতামত প্রকাশ করেছে । এছাড়া জয়কে ভবিষ্যতে ভালো পজিশনে দেখতে চায় বলেও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ।
 
জয়কে বেশ ভালোভাবেই প্রমোট করছে এই আবির , নিশ্চয়ই জয় কে নিয়ে ব্যাটার কোন মতলব আছে ,  মনে মনে ভাবে জান্নাত। না হলে একজন সাধারন সদস্য কে এভাবে লাইম লাইটে আনার কোন মানে হয় না ।  জান্নাত জানে জয় কেনো এই রাজনীতি জয়েন করেছে । কিন্তু জান্নাত কিছুতেই জয়ের এই পলিটিক্স জয়েন করা ভালো ভাবে নিতে পারেনি । ওর গাট ফিলিং হচ্চে জয় কে ব্যাবহার করা হবে । এটা সত্যি পলিটিক্স করার জন্য যা যা গুনাবলি দরকার তার বেশিরভাগ জয়ের মাঝে আছে , জয় ক্যারিশমেটিক , ওর সাহস আছে , রিক্স নিতে জানে,  উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে , এমনকি ভালো কাজ করার মন মানসিকতা আছে  । কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ গুন জয়ের মাঝে নেই । সেটা হচ্ছে চিন্তা ভাবনা করে পা ফেলার গুন । আর এর জন্যই জয় ধরা খাবে বলে মনে করে জান্নাত ।  
 
জয়কে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো জান্নাত , কিন্তু জয় ওকে পাত্তা দেয়নি । জান্নাত ও রাগ করে এই ব্যাপারে নাক গলায়নি । ছোট বোন ছাড়া জয় ওকে অন্য কিছু ভাবতেই পারে না । আর এই কারনেই জান্নাতের রাগ হয় ।
 
জান্নাত আড় চোখে খেয়াল করে রাজীব বাইরে বেড়িয়ে গেছে । জান্নাত খেয়াল করেছে সবাই চলে যাওয়ার পর ই রাজীব বেশিক্ষণ ঘরে থাকতে চাইছে না । একবার খাবার আনতে গেলো , এখন খাওয়া শেষে বাইরে বেড়িয়ে গেলো । যতক্ষণ এই কেবিনে থাকছে ততক্ষণ কেমন ইতস্তত করছে । চোখাচোখি হলে চোখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে । জান্নাত রাজীবের এমন আচরনের কারন বুঝতে পারছে না।
 
জান্নাত রানীর দিকে একবার তাকায় । রানী ঘুমাচ্ছে , মাথায় হাত রাখে , নাহ জ্বর আগের মত আর নেই । তাই জান্নাত উঠে পরে , বেড়িয়ে আসে কেবিন থেকে । রাজীব কে দেখে কোরিডোরে হাটছে  । জান্নাত দরজার সামনেই দাড়িয়ে থাকে । রাজীব করিডোরের একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে আবার ফিরতে শুরু করে , দৃষ্টি নিচের দিকে , জান্নাত ওর চেহারা না দেখেই বলে দিতে পারে বেশ চিন্তিত রাজীব । রাজীব কিছুদুর হেটে আসতেই দুজনের চোখাচোখি হয় । হন্তদন্ত হয়ে  হেটে আসে রাজীব , জিজ্ঞাস করে “ কি ব্যাপার কোন সমস্যা?”
 
জান্নাত রাজীবের চিন্তিত মুখ দেখে মুচকি হাসে , বলে “ আরে তুই তো দেখি চিন্তায় চিন্তায় রানীর আগেই মরে যাবি, ডাক্তার কি বলেছে শুনিস নাই? রানীর তেমন কিছুই হয়নি , রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে”
 
রাজীব ও একটু হাসে , মাথা চুল্কে বলে “ আসলে গত দুই তিন বছরে ও তেমন একটা অসুস্থ হয়নাই তো তাই হঠাত করে এই অবস্থা দেখে একটু ঘাবড়ে গেছি”
 
“ গত দুই তিন বছরের পাওয়া সুদে আসলে উসুল করতেসে বুঝলি , আমার মতই ভালো বছরে দুইবার জ্বর , তিনবার সর্দি , ছোট খাটোর উপরে দিয়ে যায়” বলে জান্নাত একটু শব্দ করেই হাসে । রাজীব জান্নাতের হাসি শুনে একবার ভালো করে তাকায় , জান্নাতের দাঁত গুলো খুব সুন্দর , হাসলে খুব সুন্দর দেখায় ।
 
রাজীব একটু  বেশি সময় ধরেই তাকিয়ে থাকে , গত কয়েক দিনের মাঝে , এই হাসি ছাড়া অন্য ভালো কিছুই ওর সামনে ঘটেনি । কিন্তু জান্নাত হাসি শেষে ওর দিকে তাকাতেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় । এর পর দুজনেই কিছুক্ষন চাপচাপ হাটে , দুজনেই ঠোঁটেই একটা মুচকি হাসির রেশ লেগে থাকে ।  জান্নাত মনে মনে ভাবে , ‘বোকা ছেলে , আমি দেখলেই চোখ সরিয়ে নিতে হবে’ । আর এদিকে রাজীব মনে মনে ভাবছে , ‘ মাঝে মাঝেই এমন করে হাসতে পারিস না , নিজের জন্য না হলেও অন্য কারো জন্যও তো হাসতে পারিস’
 বেশ কয়েক মিনিট দুজনেই চুপচাপ হাটে , তারপর রাজীব প্রথম কথা বলে
 
“ আচ্ছা জান্নাত তোকে একটা কথা জিজ্ঞাস করি?’
 
জান্নাতের মন হালকা একটু লাফিয়ে ওঠে , রাজীবের বলার ভঙ্গিতে এমন একটা কিছু ছিলো , জান্নাতের মনে হলো রাজীব এমন কিছু বলবে যা শুনতে ওর ভালো লাগবে , জান্নাত মুখ নিচের দিকে রেখেই ছোট্ট করে বলল “হুম”
 
রাজীব কিছুক্ষন বিরতি নিলো , তারপর বলল “ তুই কিন্তু রানী কে বলবি না”
 
জান্নাত মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো , মনে মনে বলল ‘ আরে শালা বল , এইসব কথা কি মানুষ বলে বেড়ায়’ । কিন্তু মুখে বলল “ না বলবো না” ঠোঁটে এখনো সেই মুচকি হাসি ।
 
“আচ্ছা রানীর কি কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে?”
 
জান্নাতের ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেলো , ঠোঁট একটি সাথে আর একটি চেপে ধরে , বিরক্তি নিয়ে তাকালো রাজীবের দিকে । মনে মনে ভাবছিলো হয়তো রাজীব ওর সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করবে । আর রাজীব জিজ্ঞাস করলো কি ? এতক্ষনের সব ভালোলাগা অনুভূতি ফুস করে উড়ে গেলো ।
 
জান্নাতের এই পরিবর্তন রাজীব ও খেয়াল করলো , তাই দ্রুত নিজেকে ডিফেন্ড করার জন্য বলল “ আরে না না  , তুই যা ভাবছিস তা না , আমি রানীর বেক্তিগত ব্যাপারে স্পাইং করতে চাচ্ছি না , কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্চে রানী কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে , এবং ওদের মাঝে কোন সমস্যা যাচ্ছে”
 
জান্নাত ভ্রু কুঁচকে বলল “ রানীর ব্যাপারে আমার কাছে কেনো জিজ্ঞাস করছো , রানী সুস্থ হলে ওকেই জিজ্ঞাস কইরো” জান্নাতের কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি , সেই সাথে হতাশা । মনে মনে ভাবে , এই ছেলের দ্বারা কিচ্ছু হবে না । কি সুন্দর একটা রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো , আর সেটা কি সুন্দর ভাবেই না নষ্ট করে দিলো ।
 
“ আমি ভেতরে গেলাম” এই বলে জান্নাত আর দাঁড়ালো না । গট গট করে হেটে কেবিনে চলে গেলো ।
 
এদিকে রাজীব বোকার মত দাড়িয়ে রইলো , রানীর কথা জিজ্ঞাস করায় এমন রেগে গেলো কেন জান্নাত সেটাই ওর মাথায় আসছে না ।
 
জান্নাত কেবিনে ঢুকে , রানীকে একবার চেক করে নিলো । তারপর নিজের মোবাইল হাতে নিলো , মেসেঞ্জারে জয়ের ম্যাসেজ এসেছে , “রানীর শরীর কেমন”
 
মেজাজটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো জান্নাতের  , এ জিজ্ঞাস করছে  রানীর বয় ফ্রেন্ড আছে কিনা , ও জিজ্ঞাস করছে , রানীর শরীর কেমন । ওর কথা তো কেউ জিজ্ঞাস করছে না । রাজীবের ঝাল জয়ের উপর তুল্লো জান্নাত লিখে পাঠিয়ে দিলো “ তুই এসে দেখে যা , আমি কি তোর চাকরি করি নাকি”
 ****

 
জয় জান্নাতের ফিরতি টেক্সট দেখে , প্রচণ্ড রেগে গেলো । এই সময়েও কেউ ফাইজলামি করতে পারে কিভাবে সেটা ওর বোধগম্য হয় না ।
“ দ্যাখ ফাইজলামি না করে , যা জিজ্ঞাস করেছি সেটা বল” জয় আবার টেক্সট করলো
 
“ ক্যান তুই এসে দেখে যেতে পারলি না , এতো দরদ , দরকারের সময় তো তোকে পাওয়া যায় না , এখন বাসায় বসে জানতে চাস কি অবস্থা , যাহ ফোট”
 
“তোর মতন এমন বেয়াদপ , ফাজিল মেয়ে আমি আর দেখি নাই” জয় রাগের মাথায় লিখে পাঠালো
 
“ ভালো করে দেখে নে , আর দেখবিও না আমি  হইলাম বেয়াদপ আর ফাজিলের প্রটোটাইপ , আমার  পর আর উৎপাদন  হয় নাই”
 
শেষ টেক্সট লিখে জান্নাত মোবাইল রেখে দিলো , আর ঝগড়া করার ইচ্ছা নেই ।
 
কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো , তারপর ধিরে ধিরে রাগ কমে এলো । তবে একটা মন খারাপ ভাব রয়েই গেলো । রানীকে কিছুটা হিংসা হচ্চে । সবাই রানীর প্রতি কি যত্ন নেয় । বিশেষ করে রাজীব । এমন কি ওর বাবা মা পর্যন্ত তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না ওকে । সব ব্যাপারে ওরা জয়কেই প্রাধান্য দেয় । মাঝে মাঝে জান্নাতের মনে হয় , ওর আশেপাশের লোকজনের কাছে ওর তেমন একটা গুরুত্ব নেই , ও না থাকলেও তাদের কিছু আসবে যাবে না। 
****

 
রাত প্রায় তিনটা পর্যন্ত জেগে রইলো জান্নাত , এর মাঝে রানী একবার ও জেগে ওঠেনি । তাই জান্নাত ঠিক করলো একটু ঘুমিয়ে নেবে । আর জেগে থাকতে পারছে না ও । রাজীব তখনো বাইরেই বসে আছে । জান্নাত উঠে প্রথমে বাথরুমে গেলো । বেড়িয়ে এসে রাজীব কে ডাকার  জন্য দরজা খুলল । দেখলো রাজীব চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে । মাথা নিচের দিকে ঝুকানো ।  যদিও রাজীবের উপর রেগে আছে , আসলে সত্যি বলতে জান্নাত সবার উপর ই রেগে আছে । কিন্তু রাজীব কে দেখে একটু মায়া হলো ।
 
জান্নাত পাশে দাড়িয়ে হালকা ভাবে রাজীবের কাঁধ ধরে ডাকল । চমকে উঠলো রাজীব , “ হ্যা হ্যা কি হয়েছে”
 
রাজীব চমকে ওঠায় জান্নাত একটু দূরে সরে গিয়েছিলো , আবার কাছে এলো , মমতা ভরে হাত রাখলো রাজীবের কাঁধে । ছেলেটা এখনো বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে আচমকা ঘুম ভাঙার কারনে । নরম স্বরে বলল , “ না না কিছু হয় নি” যেন ভয় পাওয়া কোন শিশুকে ভুলাচ্ছে , জান্নাতের আচরণ দেখে তাই মনে হলো ।
 
একটু পর রাজীব ধাতস্ত হয় এলো । হেসে বলল , “ হঠাত ঘুম ভাংলে আমার মাঝে মাঝে এমন হয়” লাজুক হাসল রাজীব , যেন ওর দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ায় একটু লজ্জা পেয়েছে ।
 
“এটা কোন ব্যাপার না , আমার ও এমন হয় “ জান্নাত মিথ্যা করেই বলল , এখনো ওর হাত রাজীবের কাঁধে । ওর ঘুম চলে গেছে । তাই রাজীব কে বলল “ তুই বাইরে না ঘুমিয়ে , ভেতরে এসে ঘুমা”
 
রাজীব ঘড়ি দেখে , প্রায় সোয়া তিনটা বাজে । ওর হুঁশ হলো জান্নাত এতক্ষণ ধরে জেগে আছে । তাই তারাতারি উঠে দাঁড়ালো , বলল “ আরে না , আমার ঘুম হয়ে গেছে , এবার যা তুই ঘুমা”
 
জান্নাত অনেক করে বলেও রাজীব কে রাজি করাতে পারলো না । শেষে নিজেই ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলো । কিন্তু রাজীব কেবিনেও থাকতে চায় না । তাই জান্নাতের রাগ আবার ফিরে এলো , একটু রাগের সাথে বলল “ এতো ভদ্রলোক সাজার দরকার নেই , ঘরে একজন লোক বসে আছে , এই অবস্থায় আমারো ঘুমানোর ইচ্ছা নাই , কিন্তু বিশেষ বিশেষ অবস্থায় এসব ভাবলে চলবে না, রানী জেগে উঠলে কি করবি , আমি একবার ঘুমাইলে শেষ”
 
এর পর রাজীব আর না করতে পারে না  , রানীর বেডের পাশে চেয়ারে গিয়ে বসে , ঘরে সুধু একটা ডিম লাইট জ্বলছে । জান্নাত সোফায় গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে , শরীরের উপর একটা চাদর দেয়া । রাজীব না চাইতেও বার বার অইদিকে চোখ চলে যায়। সরাসরি জান্নাতের কথা ভাবতে ভয় হয় , কিন্তু এমন একজনের জন্য মনটা তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে , যে জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে ওর পাশে থাকবে , ভালো মন্দ দুই সময়েই ওর সাথে থেকে সাহস জোগাবে । যেমনটা জান্নাত এখন ওর পাশে আছে । 

****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#64
 কিছু সম্পর্কঃ ৬(চ)

 
জয় বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে সুধু , কিন্তু ঘুম আসছে না । ভোর হওয়ার অপেক্ষায় সুধু বার বার ঘড়ির দিকে চোখ যাচ্ছে । কিন্তু আজকে যেন ঘড়ির কাটায় কেউ চুম্বক লাগিয়ে দিয়েছে , কিছুতেই নড়তে চাইছেনা । জয় একপর্যায়ে বিছানা থেকে উঠে পরে । ঘরময় পাইচারি করতে শুরু করে । কিন্তু তাতেও লাভ হয় না । জয় সিগারেট ধরায় , একে একে বেশ কয়েকটা সিগারেট শেষ করে ।
 
এক পর্যায়ে ঘরের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসে । জয় ছাদে উঠে আসে , তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । আসলে জয় একটু অবাক ই হয়েছে । রানীর প্রতি একটা টান ও অনুভব করতো সব সময় ই । কিন্তু সেটা এতো শক্তিশালী আজকে রাতে এমন অসহায় পরিস্থিতিতে না পরলে হয়তো বুঝতে পারতো না ।  হয়তো ওর আম্মু আব্বু যেমন বলছে , রানীর অসুখ খুব বেশি কিছু না। কিন্তু জয়ের এই পাশে থাকার আকুতি  রানীর জন্য নয় ,  ওর নিজের জন্যই রানীর পাশে থাকাটা খুব জরুরি । নইলে যে শান্তি পাচ্ছে না । ধিরে ধিরে জয় , রাতের আধারে রানীদের ছাদে চলে আসে । ওর কাছে মনে হয় কিছুটা হলেও রানীর পাশে থাকার অনুভূতি হচ্ছে ।
****

বসে থাকতে থাকতে রাজীবের কিছুটা ঝিমুনি ভাব চলে এসেছিলো , বসে বসে ঘণ্টা দুয়েকের ন্যাপ যদিও কিছুটা চনমনে করতে পেরেছে , কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তি পুরোটা দূর করতে পারেনি । হঠাত রানীর বিছানার উপর নড়াচড়ার শব্দ পেয়ে সেই ঝিমুনি ভাবটা কেটে যায় । তরাক করে এক্টিভ হয়ে ওঠে রাজীব । রানী একটু একটু নড়াচড়া করছে , আর মুখ থেকে অস্ফুস্ট গোঙ্গানি বেড়িয়ে আসছে ।
 
রাজীব দ্রুত উঠে দাড়ায় , হাত রাখে রানীর কপালে । প্রচুর ঘামছে রানী , চুল গুলো সব ভিজে গেছে । রাজীব রানীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে খুব ধিরে ধিরে ওর নাম ধরে ডাকতে থাকে । বেশ কয়েকবার ডাকার  পর দুর্বল ভাবে রেসপন্স করে রানী , প্রায় ফিসফিস করে বলে “তুমি এসেছো?”
 
ডিম লাইটের নীল আলোতে রাজীব লক্ষ্য করে রানীর বন্ধ চোখের কোনা থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে কানের দিকে নেমে যায়।
“ কি বলছিস রে পাগলী আমি আসবো না কেনো” আলতো হাতে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে ,  রাজীব রানীর কানের কাছে মুখ নিয়ে খুব ধিরে ধিরে বলে ।
 
“ কেউ ডাকলে চলে যাবে নাতো” রানী বেশ কষ্ট করে কথা গুলো বলে , রাজীব লক্ষ্য করে রানীর ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গেছে , নিশ্চয়ই গলাও শুকিয়ে গেছে , তাই কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে । রাজীব নতুন কিনে আনা ফ্লাক্স থেকে কুসুম গরম পানি বাটিতে নিয়ে চামচ করে রানীর ঠোঁটে ছোঁয়ায় , একবারে বেশি পানি খেতে দেয়া যাবে না । ধিরে ধিরে দিতে হবে , নার্স বলে গেছে । রাজীব বুঝতে পারে রানী ঘোরের ভেতর কথা বলছে , আর কার সাথে বলছে সেটাও বুঝতে পারে । রাজীবের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে । যদি ওই ছেলের নাম একবার বের করতে পারে , তাহলে ও দেখে নেবে। যাকে এতো কষ্ট করে এতো বড় করেছে , কেউ এসে তাকে কাদিয়ে যাবে সেটা চুপ করে সহ্য করবে না রাজীব।
 
ঠোঁটে পানির স্পর্শ পেয়ে রানী একটু চুমুক দিয়ে ভেতরে নেয় । আর তারপরি চোখ মেলে তাকায় । রাজীব লক্ষ্য করে রানীর দৃষ্টিতে প্রথমে কনফিউশন তারপর ভয় ফুটে ওঠে । দ্রুত পানির বাটি রেখে , আবার মাথায় হাত রাখে , আলতো করে ডাকে, বলে “ এইতো আমি , ভয় নেই , ভয় নেই”
“আমি কোথায় , তুমি কে?” কনফিউসড রানী জিজ্ঞাস করে , কণ্ঠ কেঁপে ওঠে ।
 
“ আমি রাজীব , তোর ভাইয়া”
 
“ ওহ ভাইয়া” এই বলে রানী মুখটা ঘুরিয়ে নেয় , একটা বড় করে নিঃশ্বাস ফেলে । নিজের চেহারায় আশাভঙ্গের  যে ছাপ পড়েছে সেটা লুকায় ।
 
রানীর হতাশা রাজীবের দৃষ্টিও এড়ায় না । বুকটা ভারি হয়ে আসে ছোট বোনের এই কষ্ট দেখে । সেই সাথে রাজীবের লম্বা লিস্টে একটা নতুন fear unlock  হয় । বোন বড় হচ্চে , এখন যদি ভুল মানুষের পাল্লায় পরে তাহলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে ।
 
কয়েক সেকেন্ড পর রানী মুখ ঘুরায় , জিজ্ঞাস করে “ আমি কোথায়?”
 
“ তুই হসপিটালে , তোর  ভীষণ জ্বর ছিলো , আচ্ছা তোর যে জ্বর সেটা আমাকে বলবি না?” রাগ নয় একটু অভিমান করেই বলে রাজীব । একটা সময় ছিলো , একটু হাত ছিলে গেলেই রানী রাজীবের কাছে এসে বলতো , আর এখন এতই বড় হয়ে গেছে যে শরীরে জ্বর নিয়েও বলার প্রয়োজন বোধ করলো না । অবশ্য পরোমুহুরতেই ভাবে , ও নিজেও কি কম উদাসিন হয়ে গেছে , আগে বাড়িতে ঢুকেই বলে দিতো পারতো , কিছু একটা গড়বড় হচ্চে , আর দুদিন জ্বরে ভুগছে রানী অথচ ও বুঝতেই পারেনি । এর কারন হচ্চে রানীর দিকে ভালো করে তাকায়নি ও । নিশ্চয়ই রানী ওর অবহেলা কিছুটা টের পেয়েছে । তাই নিজে থেকে যেচে বলতে আসেনি ।
 
রানী কোন উত্তর দেয় না , সেদিন জয়ের সাথে ভিজে বাড়ী ফেরার পর , ভেজা জামা কাপড় নিয়েই বিছানায় শুয়ে পরেছিলো। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলো খেয়াল নেই । যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন প্রায় ঘণ্টা দুই পেরিয়ে গেছে । সেদিন সন্ধার পর থেকেই মাথা ভার ভার লাগছিলো , সেই সাথে প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা । রাজীব কে বলবে বলবে করেও বলা হয়নি । একে তো নিজের মন খারাপ ছিলো , তার উপর রাজীব প্রতিদিন ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে , একটু রেস্ত নিয়ে আবার রাত জেগে পড়ে । তাই রাজীব কে একটু জ্বর সর্দির জন্য বিরক্ত করতে ইচ্ছে হয়নি ।
 
দুদিন কষ্ট করে কেটে গিয়েছিলো , কিন্তু আজকে দুপুরের পর থেকে শরীর এতো খারাপ হয় , শরীরে ভীষণ কাঁপুনি হচ্ছিলো বলে দরজা জানালা সব বন্ধ করে পাখা বন্ধ করে , শুয়ে ছিলো । শুয়ে পড়ার কিছুক্ষনের মাঝেই রানী এক আনন্দময় দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলো । জয় কিছুক্ষন পর পর ই ওর সাথে এসে দেখা করেছে , একদম ওর বেড রুমে , রানী জিজ্ঞাস করেছিলো , যে জয় এতো সাহস কোথায় পেয়েছে , যে ওর বেড রুমে ঢুকে ওর হাত ধরে বসে আছে , উত্তরে জয় বলেছিলো আমাকে কে আটকাবে?  তোর কাছে আসতে আমাকে আটকাবে এমন কেউ নেই এই দুনিয়ায় । রানী শুনে খুব খুশি হয়েছিলো , ওর কাছে মনে হয়ছে এর চেয়ে বেশি খুশি আর কোনদিন হয়নি, কিন্তু সেটা জয় কে বুঝতে দেয়নি , উল্টো কপট রাগের সাথে বলেছিলো , আমার ভাই আর আব্বু দেখলে তোমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবে ।  জয়কে বেশ বকুনি ও দিয়েছিলো রানী , সেদিন নিলুকে রাইড দেয়ার অপরাধে , জয় কান ধরে বলেছিলো আর কোনদিন হবে না , জয় এই প্রতিজ্ঞা ও করেছিলো যে রানীকে ছাড়া আর কারো দিকে তাকাবে না।   
 
তা ছাড়া  একবার দুবার  আম্মুকেও দেখছিলো ও ,  সেটাও যে ভুল ছিলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না , এমনকি ওই সময়ও রানীর মনে খটকা লেগেছিলো , আম্মু এলো কি করে ?  একবার এসে ফ্যান চালিয়ে দিয়েছিলো,  রানী প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছিলো   , তখন জয় ওর সামনে বসে , ওর হাত ধরে রেখেছে ।  আর একবার ওর শরীরে বরফের মত ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে ছ্যাকা দিচ্ছিলো , তখন অবশ্য জয়  ছিলো না , কারন আম্মু ওকে পেট পিঠ সব জায়গায় বরফ ছ্যাকা দিচ্ছিলো  জয় তখন বেড়িয়ে গিয়েছিলো আম্মুর সামনে লজ্জা পেয়ে ।
 
রানীর মনে হয় ওর ঘুম না ভাংলেই মনে হয় ভালো হতো , ওই দৃশ্য গুলো  সবই  তপ্ত মস্তিস্কের বানানো ছবি হলেও বাস্তবের চেয়ে সুখকর ছিলো ।  
 
নিজের প্রশ্নের জবাবে , রানীকে কোন উত্তর না দিতে  দেখে , আর ওই বিষয় তোলে না রাজীব। এই মুহূর্তে এসব ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না । আর একটু পানি খাবে কিনা জিজ্ঞাস করে  রাজীব।  রানী মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় খাবে না ।
 
“ আর একটু খা , নইলে শরীরে পানির অভাব হয়ে যাবে , কতক্ষণ কিছু খাস না” রাজীব জোর করে রানী কে কয়েক চামচ পানি খাইয়ে দেয় । গরম পানি জ্বর মুখে বিস্বাদ লাগে , কিন্তু রানী বাধ্য হয় ।
 
“ এখন কেমন লাগছে ?” জিজ্ঞাস করে রাজীব ,
 
“ মাথা ব্যাথা , বুকেও কিছুটা ব্যাথা আছে” রানী উত্তরে বলে ।
 
রাজীব একে একে বলতে থাকে কে কে এসেছিলো , কি কি করেছিলো । রাজীব চায় না রানী চুপ থাকুক । চুপ থাকলেই ও কি যেন চিন্তা করে , আর মুখে ব্যথার ছাপ ফুটে ওঠে । তাই রানী কে কথা না বলতে দিলেও সারাক্ষণ নিজে বক বক করতে থাকে । রানীর মন অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা ।
 
রানী একে একে সবার নাম শোনে , কে কি বলেছে , কে কি করেছে সেটা শোনে । কিন্তু যে নামটা শোনার জন্য ওর কান অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো সেই নামটাই রাজীব উচ্চারন করে না । রানী একবার জিজ্ঞাস করতে গিয়েও থেমে যায় । মনে মনে ভাবে একটিবার দেখতে আসার ও সময় পেলো না ।
 
একটু পর রানী জানায় ওর বাথরুম পেয়েছে । তাপর নিজে থেকেই উঠতে চেষ্টা করে । রাজীব দ্রুত ওকে থামিয়ে দেয় । বলে “ জান্নাত আছে , ওকে ডাকি ?”
 
রানী এতক্ষণ জান্নাত কে লক্ষ্য করেনি , রাজীবের কথায় এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে জান্নাত সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে । এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে রানীর ঠোঁটে , ান্ধবীর ঘুমের অবস্থা দেখে । দেখে মনে হচ্ছে একটা কাপড়ের বস্তা । অবশ্য একি সাথে রানীর মন কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে । ওর জন্য নিজের বিছানা ছেড়ে হাসপাতালের সোফায় ঘুমাচ্ছে । অথচ রানী জানে নিজের বিছানা নিয়ে জান্নাত কতটা অবসেসড ।
 
রানী মাথা নেড়ে না করে দেয় , বলে “ তুই আমাকে তুলে দে আমি যেতে পারবো”
 
রাজীব রানীকে প্রায় পাজকল করে তুলে মেঝেতে দারকরিয়ে দেয় । আর তখনি রানী বুঝতে পারে ওর পা দুটো কতটা শক্তিহীন। প্রায় পরে যাওয়া শুরু করে । কিন্তু রাজীব ধরে ফেলে , কোলে করে বাথরুমের একেবারে ভিতরে নিয়ে কমোডের সামনে এনে দারকরিয়ে দেয় । বলে “ আমি বাইরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি , দরকার পরলে ডাকিস”
 
রাজীব দরজা চাপা দিয়ে দাড়িয়ে থাকে ।
 
এদিকে রানী বহু কষ্টে কমোডে বসে , একা হতেই কল্পনা আর বাস্তবতার সাথে পার্থক্য ওর সামনে পরিস্কার হয়ে ওঠে , ওর কল্পনায় জয় বার বার এসেছে , বসে থেকেছে পাশে , অথচ বাস্তবে আসেনি। আর ওখানে  কি স্পষ্ট ভাবেই না আম্মুকে দেখছে ও , কত বাস্তব মনে হচ্ছিলো প্রতিটা স্পর্শ  । মনেই হয়নি ওটা কোন ভ্রম ছিলো , প্রতিটা স্পর্শের সাথেই উপলব্ধি করেছে মায়ের মমতা , যে মমতার জন্য সব সময় ব্যাকুল হয়ে থাকে ওর মন ।
 
দুর্বল শরীর ওর মনকেও দুর্বল করে দেয়, দু হাতে চেহারা ঢেকে হু হু করে কেঁদে ফেলে । চিৎকার করে কাঁদে রানী , কিন্তু একটা শব্দ ও বের হয় না ।
 
এদিকে প্রায় মিনিট পাচেক রানীর কোন শব্দ না পেয়ে রাজীব চিন্তিত হয় , দরজার বাইরে থেকে জিজ্ঞাস করে “ কিরে তোর হয়েছে?”
 
ভাইয়ের ডাক শুনে হুঁশ ফেরে রানীর , কোন রকমে কান্না গিলে নেয় , তারইর ভালো করে মুখ চোখ মুছে নেয় । খুব কসরত করে উঠে দাড়ায় , পোশাক ঠিক করে , কাঁপা গলায় বলে “ আসো”
 
রাজীব ভেতরে ঢুকে রানীকে বেসিনের সামনে দার করায় , রানী হাত মুখে পানি দিলে , আবার কোলে তুলে নেয় । বিছানার সামনে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় । চাদর দিয়ে ভালো মতন ঢেকে দিতে দিতে বলে , “ তোর মনে আছে , আমি যখন ছোট ছিলাম , তখন ভুতে কত ভয় পেতাম , রাতে বাথরুম পেলে তোকে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকতে বলতাম”
 
দুজনেই এক সাথে হেসে ওঠে , পুরনো সৃতি মনে করে, যদিও রানীর হাসি বেশ দুর্বল । রানী বলে , “রাতের বেলাও শান্তিতে ঘুমাতে দিতে না , এমনো অনেক দিন হতো আমি বাথরুমের বাইরে বসে ঘুমিয়ে যেতাম , আর তুমি আমাকে কোলে করে বিছানায় দিয়া আসতে, ঘুমন্ত দারোয়ানে যে তোমার কি লাভ হইতো কে জানে হি হি হি”
 
 কথা গুলো বলা শেষ হতেই রানী খুক খুক করে কাশতে লাগলো । ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাশতে ওর বেশ কষ্ট হচ্ছে , হাত দিয়ে বুকের উপর মালিস করার মত করছে । রাজীব মাথারত পেছনে হাত দিয়ে রানী কে বসায় , তারপর হসপিটালের বেড  এডজাস্ট করে দেয় , যেন রানী হেলান দিয়ে বসতে পারে । কিন্তু রানীর কাশি থামে না , আরো বাড়তে থাকে ।
 
রাজীব কি করবে ভেবে পায় না । দ্রুত পাশে রাখা টেলিফোন তুলে , নার্স স্টেশনে কল করে । এদিকে কাসির শব্দে জান্নাতের ও ঘুম ভাঙ্গে । দ্রুত উঠে আসে জান্নাত , রাজীব কে সরিয়ে দিয়ে , আস্তে আস্তে রানীর বুকে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে ।
এই ফাঁকে নার্স চলে আসে , এসে দ্রুত হাতে নেবুলাইজার প্রস্তুত করতে থাকে । ঘরিতে তখন পৌনে ছয়টা ।
****
 
জয় সূর্য উদয়ের দিকে তাকিয়ে নিজের সিগারেটে শেষ টান দেয় । সেপ্টেম্বরের সকালের বাতাসের হালকা শীতল ছোঁয়া ওর নির্ঘুম চোখে মুখে এসে লাগে । চোখ দুটো বেশ জালা করে ওঠে । ধিরে ধিরে নিজেদের ছাদের দিকে যায় জয় । প্রতিক্ষিত সকাল এসে গেছে , লম্বা একটি রাতের পর । এখন আর কোন বাধা নেই । 
*****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#65
কিছু সম্পর্কঃ ৬ (


 
প্রথমে জয় ট্রিমার নিয়ে নিজের দাড়ি গোঁফ ট্রিম করে নেয় । তারপর  গোসল করে হালকা গরম পানিতে । তোয়ালে দিয়ে শরীর মুখে , তোয়ালে পরে বেড়িয়ে আসে । আয়নার সামনে দাড়ায় , চোখ দুটো হালকা ফুলে আছে আর লাল হয়ে আছে । এ ছাড়া বিনিদ্রার কোন চিহ্ন মেলে না কোথাও। বেশ শার্প দেখাচ্ছে ।
জয়  চুল গুলো সুন্দর করে সেট করে নেয় । আলমারি থেকে ইস্ত্রি করা সাদা সার্ট আর নীল জিন্স বের করে । সার্টের দুটো বোতাম খোলাই রেখে দেয় । লোমহীন সুগঠিত চেস্ট মাসলের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে খোলা বোতামের ফাক দিয়ে ।  স্লিভ  কনুই পর্যন্ত গুঁটিয়ে নেয় , চিকন মোটা অসংখ্য শিরা উপশিরা সজ্জিত হাত উন্মুক্ত করে নেয়  । বেছে বেছে হালকা একটা পারফিউম থেকে কয়েকটা পাফ নিজের সার্টের উপর মেখে নেয় । নিজের ঘড়ির কালেকশন থেকে একটা ঘড়ি নিয়ে পড়ে বাম হাতের কব্জিতে ।
বেড়িয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে বেশ ভালো মত করে নিজেকে আরেকবার আয়নাতে দেখে নেয় । চুল গুলো আর একবার ঠিক করে নেয় । তারপর আয়নায় নিজেকে নিজে একবার উইঙ্ক করে ।
 
কোথায় যাচ্ছিস রে , আমাকে হসপিটাল নিয়ে যাবিনিচ তলায় মায়ের সাথে দেখা হতেই চেঁচিয়ে ওঠে আয়শা । কিন্তু জয় থামে না  , বলে তুমি বাইকে উঠতে পারবে না , তুমি গাড়িতে আসো
বাইরে এসে চোখে সানগ্লাস পরে নিয়ে বাইকে ওঠে । স্টার্ট করে একবারে । মনে মনে ভাবে আজকে দিনটা বেশ ভালো। গলির মাথায় এসে দোকানের সামনে বাইক থামায় , একটা সিগারেট নেয় । ধরাতে যাবে এমন সময় এক বন্ধু এসে বলে আরে ভাই সকাল বেলা গেটাপ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস , পাত্রী দেখতে নাকি?”
 
বন্ধুর কথা শুনে জয় কিছুক্ষন চুপ করে থাকে , তারপর হাসি দিয়ে বলে কথাটা মন্দ বলিসনাই তো , ধরে নে তেমন কিছুই একটা, তবে দেখা দেখি শেষ , আজকে পাকা কথা
 
জয়ের কথা শুনে সেই ছেলেটি একটু অবাক হয়ে যায় । আসলে ও এমনি এমনি জিজ্ঞাস করছিলো , সকাল সকাল জয় কে এভাবে একদম পড়পাটি করে সেজে বের হতে দেখে পাত্রী দেখার কথা বলে । কিন্তু সেটা যে সত্যি হয় যাবে বুঝতে পারেনি, ছেলেটি আধা বিশ্বাস করে ফেলে জয়ের কথা , বলে তাই নাকি , সত্যি বলছিস?”
 
ধুর ব্যাটা তোর কাছে মিথ্যা বলবো কেনো ? তুই কি আমার শালা , যে তোর বোনের সাথে দেখা করতে জাচ্ছি তাই মিথ্যা বলবোজয়ের এমন হাজির জবাবে থতমত খেয়ে যায় ছেলেটি , বলে আরে এমনি বললাম , আমরা কিছু জানলাম না তো তাই , আর তুই যে দেখে শুনে বিয়ে করবি এটা কে ভেবেছে
 
না দেখেই বিয়ে করে ফেলবো!!!” জয় অবাক হওয়ার ভান করে ।
আরে  নারে সেটা বলি নাই ,  মানে এরেঞ্জ মেরেজ করবি সেটা ভাবিনাই , আচ্ছা পাত্রী কোথাকার?” ছেলেটি প্রশ্ন করে ।
 
এরেঞ্জ ম্যারেজ তোকে কে বলল , আর পাত্রী কে সেটা সময় হলে জানবি , এই নে সিগারেট নে , আমি গেলামজয় নিজের আধা খাওয়া সিগারেট ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইক নিয়ে বিকট শব্দ তুলে বেড়িয়ে গেলো । গত বিনিদ্র রাতটি ছিলো ওর জন্য একটা eye openar , গত একটি রাত না ঘুমিয়ে জয় বুঝতে পেরেছে , রানী ওর জন্য কোন সাধারন মেয়ে নয় । আর কোন মেয়ে তো দুরের কথা জয় কোনদিন নিজের বাপ মায়ের জন্য এতটা ব্যাকুলতা অনুভব করেনি । যতটা ব্যাকুলতা রানীর জন্য অনুভব করেছে । জয় জেনে গেছে , she is “THE ONE” । এতদিন যা হওয়ার হয়েছে , আজকে জয় প্রতিজ্ঞা করেছে , রানীকে ওর চাই , জেভাবেই হোক রানীকে ও রাজি করাবে । জয় জানে যদি মায়ের কাছে রানীকে বিয়ে করার কথা বলে , মা এক্ষুনি গিয়ে ছোট আব্বুকে বলবে , আর ছোট আব্বু না করবে না , এটাও জয় জানে ।
 
কিন্তু জয় এভাবে রানীকে পেতে চায় না , জয় রানীকে জয়করে নিয়ে আসতে চায় । ঠিক যেমন একজন রাজা তার রানীকে স্বয়ংবর অনুষ্ঠানে জয় করে ।  রানী নিজে ওর গলায় বিজয় মালা পরিয়ে দিবে । জয় এতোদিনে এটুকু বুঝতে পেরেছে যে রানী নিজেও এটাই চায় । কিন্তু কিছু একটা ওকে পেছন থেকে টেনে ধরে বারবার । জয় সেই টেনে  ধরা দড়ি কেটে ফেলতে চায়। ধিরে ধিরে রানীর মন শরীর এমনকি পুরো পৃথিবীতে সুধু নিজের ছাপ দেখতে চায় । রানীকে সুধু  নিজের করে পেতে চায় , আর কারো ছায়া রানীর উপর থাকবে না । এর জন্য যতদিন অপেক্ষা করতে হবে ও করবে । যত বন্ধুর পথ পারি দিতে হয় , ও দিবে। ভালোবাসার মানুষ কে পেতে গিয়ে যদি একটা রোমাঞ্চকর গল্পই তৈরি না হয় । তাহলে  বুড়ো বয়সে নাতি নাতনির কাছে কি গল্প করবে ।  
 
জয়ের ঠোঁটে একটা কনফিডেন্সের হাসি ফুটে ওঠে, চেহারা থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে কনফিডেন্স  । চোখের সামনে ,  নিকট অতীতে রানীর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ছেড়া ছেড়া অংশ ছবির মত ভেসে ওঠে ।
 
প্রায় আড়াই বছর আগে যেদিন রানীকে জয় প্রথম একজন মেয়ে হিসেবে নোটিস করে , সেদিন জয়ের এইচ এস সি পরিক্ষার পর প্রায় দের বছরের বিরতি দিয়ে রানী প্রথমবার এসেছিলো জয়দের বাড়ি । রানীকে চিনতে পারেনি জয় , তবে সেই মায়াবী সুন্দর মুখটা দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য হাং করে গিয়েছিলো জয়ের সিস্টেম ।  তারপর রানীর সেই মন্মুগ্ধকর নাচ । আজো ভুলতে পারেনি জয় ।
 
এর পর রেগিঙ্গের সেই মুহূর্ত , রানী গোলাপ হাতে চোখ বুজে দাড়িয়ে আছে । ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে । গোলাপের পাপড়ির মতই নিষ্পাপ লাগছিলো সেদিন রানীকে । সেদিনি মুলত জয়ের প্রতিরোধ ভেঙ্গে গিয়েছিলো । আর সেদিন সন্ধ্যায় রানীদের ছাদে , দুই জোড়া চোখের মিলন , জয় জানতে পেরেছিলো রানীর মনেও ওর জন্য বিশেষ স্থান রয়েছে ।
 
এর পর নানা কারনে বেশ কয়েকদিন আর তেমন কিছু না ঘটলেও , আবারো ছাদে রানীর লজ্জা পেয়ে নিচে চলে যাওয়ার আগে ঠোঁটে যে হাসি দেখতে পেয়েছিলো সেটা জয়কে বলেছিলো তোর চান্স আছে
 
আর সবচেয়ে তাজা সৃতি , বৃষ্টি ভেজা রানীর সাথে চায়ের দোকানে কাটানো সেই মুহূর্ত গুলো । রানী যখন ওর শরীর ঢাকার জন্য নিজের ওড়না এগিয়ে দিয়েছিলো , সেই দৃশ্য মনে করে মৃদু হাসি খেলে যায় জয়ের ঠোঁটে । ওই ব্যাপারটা তখন খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি জয় , মজার ছলে ছিয়েছিলো । কিন্তু আজ বুঝতে পারছে , রানীর ওই ওড়না এগিয়ে দেয়ার মাঝে একটা গোপন ম্যাসেজ ছিলো । আর ও গাধা সেই ম্যাসেজ বুঝতে পারেনি ।
 
জয় হসপিটালের গেটে এসে যখন বাইক থামায় , তখন বাজে নয়টা । ভিজিটিং আওয়ার শুরু হবে এখন । জয় রিসেপশনে এসে দাড়ায় , একটা গোমড়া  মুখো লোক বসে আছে । রাজীব রানীর নাম বলে , লোকটি বেশ ধীরেসুস্থে কম্পিউটারে রোগিদের লিস্ট দেখে , তারপর কেবিন নাম্বার জানায় , ৫০৪।
 
মাত্র ভিজিটিং আওয়ার শুরু হওয়ায় লিফটে বিশাল লাইন । তাই জয় সিঁড়ি করে উপরে উঠতে শুরু করে । জিম করা ফিট শরির  জয়ের , ছয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠতে তেমন কোন প্রবলেম হয় না । জয় যখন ৫০৪ লেখা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে তখন ভেতরে বেশ জটলা । কিন্তু এতে জয় থেমে যায় না । দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে পরে । তেবে বেসিদুর আগায় না , দরজার পাশেই দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ায় ।  হাত দুটো ভাজ করে বুকের কাছে রাখে । জান্নাতের সাথে চোখাচোখি হয় , জয় রাগত দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে ।   সাইলেন্টলি বলে , ‘ তোকে পরে দেখে নিচ্ছি। জান্নাত ও কম যায় না , ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে  সাইলেন্টলি বলে গোল্লায় যা তুই
 
এদিকে ডাক্তার রানীকে বলেছে কি ব্যাপার ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো না ? শরীর দুর্বল থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় , আর তখনি এই ধরনের ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ আক্রমণ করে , এখন থেকে ঠিক মত খাবার দাবার খাবে , বুঝলে
 
তারপর রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে ওর নিউমোনিয়া আছে , তবে বেশি গুরুতর কিছু না , তবে শরীর বেশ দুর্বল , ইমিউন সিস্টেম ও দুর্বল , ভালো মত খাওয়া দাওয়া করতে হবে , পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে । নইলে এসব রোগ বালাই লেগেই থাকবে, ঠিক মত খেয়াল রাখবেন , আপনি রোগির কি হন?”
 
রাজীব ছোট করে উত্তর দেয় ভাই
 
বাড়িতে আর কে কে আছে ?” ডাক্তার আবার জিজ্ঞাস করে
 
আব্বু আছেরাজীব এবার ও ছোট করে উত্তর দেয়
 
বুদ্ধিমান ডাক্তার বুঝে নেয়ে বাকিটা , তারপর বলে দেখুন ওর যা সমস্যা তা হচ্ছে ওর শরীরে রক্ত কম , আন্ডার ওয়েট , ইমিউন সিস্টেম দুর্বল , এসব সমস্যা ঔষধ দিয়ে ঠিক করার নয় , ওকে টেক কেয়ার করতে হবে । ঠিক মত খাবার যেন খায় সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে , সুধু খাবার খেলেই হবে না , খেয়াল রাখতে হবে যেন পুষ্টিকর খাবার খায় , আমি বলবো আপনারা একজন ডাইয়েটিশিয়ানের সাথে কন্সাল্ট করুন
 
ঠিক আছে গেলাম , ভালো থেকো , আশা করি দুদিন পর বাড়ি চলে যেতে পারবেএবার  রানী কে উদ্দেশ্য করে শেষ কথা বলে বেড়িয়ে যায় ডাক্তার ।
 
ডাক্তারের এসিস্টেন্ট কম বয়সি মেয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে জয় ছোট করে একটা হাসি দেয় । এসিস্টেন্ট ডাক্তার কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে যায় , কি করবে বুঝতে পারে না , তারপর হড়বড় করে বেড়িয়ে যায় । ব্যাপারটা রাজীব , রানী আর জান্নাত তিনজনের ই নজরে পরে , একেক জনের একেক ধরনের অভিবেক্তি প্রকাশ পায় । রানী মুখ ঘুরিয়ে নেয় , রাজীব তেমন কোন পাত্তা দেয় না , আর জান্নাত বিরক্তি সহকারে মাথা উপরের দিকে তুলে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে , ভাব খানা এমন যে জয়ের এমন আচরণে ওর গার্ডিয়ান হিসেবে খুব বিরক্ত হয়েছে জান্নাত ।
 
ডাক্তাররা সব বেড়িয়ে গেলে , জয় আর রাজীব মুখোমুখি হয় , কয়েক মুহূর্তের জন্য  একটা টেনশন দেখা দেয়ে দুজনের মাঝে  । কয়েক মাস আগে সেই প্রায় হাতাহাতি হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনো তাজা । তবে কেউই কোন রকম রিয়েক্ট করে না , রাজীব কয়েক মুহূর্ত  এক্সপ্রেশনহীন দৃষ্টিতে  জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে  ,  তারপর জয়ের সামনে থেকে সরে যায় । জান্নাতের সাথে কোন একটা বিষয় নিয়ে নিচু স্বরে আলাপ করতে থাকে ।  
 
আর জয় ধিরে ধিরে এগিয়ে যায় রানীর বেডের কাছে , সামনে রাখা চেয়ারে বসে , মুখে গাম্ভীর্য , কিন্তু চোখে একটা পরিত্রিপ্তির ছাপ । গতকাল রাত থেকে যেখানে আসার জন্য ছটফট করছিলো , অবশেষে সেখানে আসতে পাড়ার তৃপ্তি ।
 
কিন্তু রানী জয়ের দিকে তাকায় না , ওর মনে হয় জয়ের দিকে তাকালে ও আরো দুর্বল হয়ে পরবে । নিজেকে হয়তো কন্ট্রোল করতে পারবে না । যে কয়েক মুহূর্তের জন্য জয় কে দেখছে , যখন জয় সেই এসিস্টেন্ট ডাক্তারের সাথে হাসছিলো । তখনি রানীর বুকটা ধক করে উঠেছিলো , বেহুস অবস্থায় ওর তপ্ত মস্তিষ্ক ওকে  যেমন ভাবে জয়ে কে  দেখিয়েছিলো  , ঠিক সেরকম ই লাগছে জয় কে । সাদা সার্ট ব্লু জিন্স , সারটের উপরের দুটো বোতাম খোলা , সেই ফাক দিয়ে বুকের শক্ত মাংস পেশির কিছুটা আভাষ পাওয়া যাচ্ছে । চুল গুলো পরিপাটি করে সেট করা , এমন কি সেই একি পারফিউম । সুধু একটা জিনিস ভিন্ন , কল্পনায় রানী জয়কে ক্লিন সেভেড দেখছে , আর এখন ওর ছোট ছোট হাফ ইঞ্চির মত দাড়ি গোঁফ আছে । আর ঠোঁটে সব সময়ের মত সেই চুটল হাসি ।
 
রানীর মনে হয় জয় এতো সুন্দর আর হ্যান্ডসাম না হলে দুনিয়ার কি এমন ক্ষতি হয়ে যেতো । আর চোখ গুলো , কেন এমন নিষ্ঠুর সুন্দর , টানা ঘন ভ্রুর নিচে  লম্বা সরু তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া , মনে হয় যেন হীরের চাকু , ফালা ফালা করে ফেলছে ভেতর বাহির । এর চেয়ে যদি জয় হাবা কালা বেঁটে খাটো হতো তাহলেই ভালো হতো।
 
ডাক্তার কি বলে গেলো শুনেছিস । ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করবিরাজীব আর জান্নতের উপস্থিতে জয়  নিজের সত্যিকারের ইমোশান লুকিয়ে রেখে , স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা গুলো বলল । কিন্তু রানী মুখ ঘুরিয়ে তাকালো না , এই ব্যাপারটা জয় কে খুব পীড়া দিচ্ছে , এই মুখটা দেখার জন্যই তো গত রাত থেকে ছটফট করছে ।
 
রানী অন্যদিকে তাকিয়েই , ভাবে ‘ ডাক্তারের কথা বলতে এসেছো, একবার ভেবেছো , এমন কেনো হলো , কেন আমি অসুস্থ হলাম’
 
এখন কেমন আছিসজয় আবার স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞাস করে , কিন্তু ওর মন ব্যাকুল হতে থাকে প্রতিটি মুহূর্তের সাথে সাথে , মনে মনে বলে একবার তাকা আমার দিকে , দেখতে দে একবার তোকে , কাল রাত থেকে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে আমার চোখ
 
রানী মনে মনে আবার ভাবে ‘ একবার নিজের দিকে তাকাতেও তো বললে না , যদি বলতে তাহলে নিজেই বুঝতে পারতে কেমন আছি, এমন কেন তুমি ? একবার বলো , আমার দিকে তাকা, দেখো আমি তাকাই কিনা’  
জয় একবার ভালো করে রানীর সমস্ত শরীরে চোখ বুলায় , মন  ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে , এই দু তিনদিনে কি অবস্থা হয়েছে , শরীর আরো শুকিয়ে গেছে , গায়ের রং ফ্যাকাসে । গলার হাড় আরো বেশি করে বেড়িয়ে গেছে । জয়ের  ইচ্ছা হয় ছুয়ে দেখতে , কিন্তু পারে না । যদি কিছুক্ষন একা হতে পারতো , আফসোস হয় জয়ের ।
 
জয় আরো কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো , তখন আয়শা ঢোকে , লিফট করে এসেছে তাই তেমন একটা অসুবিধা হয়নি । পাশে ড্রাইভারের হাতে খাবারের ব্যাগ । রহিম ও এসেছে সাথে । জয় ওদের দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ায় । আয়শা রানীর পাশে চেয়ারে গিয়ে বসে , আর রহিম দাড়িয়ে থাকে মেয়ের পায়ের কাছে ।
 
আব্বু আর বড় আম্মুর উপস্থিতি টের পেয়ে মুখ ফেরায় রানী । নিজের আব্বুর দিকে তাকিয়েই ঠোঁট দুটো ফুলে ওঠে , চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে । জয় কাছে এসে বসার পর যে কান্না দমিয়ে রেখেছিলো , সেটা এখন বেড়িয়ে আসতে শুরু করে । বাবার মুখটা দেখার সাথে সাথে রানী আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারে না ।  
আয়শা দ্রুত রানীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে “ তোর কিচ্ছু হয়নি মা , এইজে দেখ আমরা সবাই আছি , তুই দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবি , কাঁদে না মা , এইভাবে কাঁদলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবি”
 
রহিম নিজেও বেশ অবাক আর অসহায় বোধ করে , রানীকে এর আগে অসুস্থতার জন্য এভাবে কাঁদতে দেখেনি ও । কি করবে ভেবে পায় না । মেয়ের পায়ের কাছেই বেডে বসে পরে , পায়ের তালুতে হাত দিয়ে মালিস করতে করতে বলে , “ আরে বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেনো? এটুকু অসুখে কেউ কাঁদে , বোকা মেয়ে আমার” যদিও রহিম হাসতে হাসতে কথা গুলো বলে , কিন্তু ওর নিজের গলাও ধরে আসে ।
 
জয় , রাজীব আর জান্নাত একটু দূরে দাড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছে , জান্নাত বেশ আশ্চর্য হচ্ছে , তবে সেই সাথে সহানুভুতিও অনুভব করছে । ওর এই  ান্ধবিটি যে সব সময়ই একটু নরম মনের সেটা ও জানে ।
 
রাজীবের মনে একি সাথে দুটো অনুভূতি কাজ করছে , একটি অনুভূতি মমতার , অন্যটি রাগের । রাজীব রানীর এই কান্নার কারন কিছুটা বুঝতে পারছে । তবে কার জন্য রানী এই মনকষ্টের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে তা রাজীব জানে না। আর সেই অজানা মানুষটির উপর ওর রাগ ধিরে ধিরে সময়ের সাথে সাথে বেড়েই যাচ্ছে ।  
 
জয় রানীর এই কান্নার কারন বুঝতে পারছে , মেয়েটা ওর উপর রেগে আছে , ঠিক রেগে নয় , কোন কারনে কষ্টে আছে , আর সেই কষ্টের কিছুটা কারন ও নিজে , সেটা বুঝতে পারছে । কিন্তু বুঝতে পারছে না রানী ওর কোন কাজের জন্য কষ্ট পেয়েছে। জয় মনে মনে ভাবে , ‘ তোকে আমি কোনদিন কষ্ট দেবো না রানী , আজ আমি নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করলাম’ 

*****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#66
কিছু সম্পর্কঃ ৬ ()

 
জয় আর থাকে না সেখানে । এমন অসহায়ের মত দাড়িয়ে রানীর কান্না দেখা ওর জন্য সম্ভব নয়। রানীর চোখে দিয়ে যতটুকু না পানি পরছে তারচেয়ে বহুগুন বেশি রক্তক্ষরণ হচ্চে ওর হৃদয়ে । বেড়িয়ে বাইক স্টার্ট করে , যখন এসেছিলো তখন যেমন কনফিডেন্ট ছিলো এখন আর সেরকম নেই । কনফিডেন্স এর যায়গা দখল করে নিয়েছে কনফিউশন । ভেবে পাচ্ছে না , ও কি এমন করলো যে রানী ওর উপর রাগ করলো ।  
 
জয় সোজা ভার্সিটি চলে এলো , নিজের আড্ডার স্পটে এসে বন্ধু দের মাঝে বসেও ঠিক সবার সাথে মিশতে পারলো না । মনে একটা কাঁটা বিধে আছে । ওর প্রতি রানীর এই অভিমানের কারন কি সেটা নিয়েই ভাবছে । হ্যা গতকাল ও আসতে পারেনি , কিন্তু জয় মায়ের কাছে যতটুকু জেনেছে রানী বেহুস ছিলো । তাই বেহুস রানী কিছুতেই ওই কারনে অভিমান করতে পারে না । জয় ভাবে মনে মনে ।
 
নাহ , প্রথম থেকে ভাবতে হবে , জয় মনে মনে ঠিক করে । জয় ফিরে যায় প্রথম যেদিন নিজের আগ্রহের কথা রানীকে জানিয়ে ছিলো । সেই রেগিঙ্গের দিন , রানীদের ছাদ । দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে , একটু একটু করে দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে আসছিলো । তখনি ছোট আব্বু নিচ থেকে ডেকে ওঠে । এর পর বেশ কয়েকবার রানীর সাথে জয়ের কথা হয়েছে , রানীর লাজুক দৃষ্টি , মুচকি হাসি এসব ই জয় কে ইংগিত দিয়েছে , রানী ইন্টারেস্টেড ।
 
এর পর জয় আরো একটু এগিয়ে গিয়েছিলো , ইঙ্গিতে নিজের ইচ্ছা জানিয়ে দিয়েছিলো , সেদিন ও রানী লজ্জা পেয়েছিলো । তবে জয়ও রানীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট ইংগিত পেয়েছিলো রানীও রাজি । এর পর ঘটলো সেই বাপ্পির ঘটনা , জয় নিজেও বিমর্ষ হয়ে পরেছিলো রাজীবের আচরণে । আর রানীও এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলো , এতে জয় আরো বেশি কষ্ট পেয়েছিলো । যেদিন ওরা চারজন ক্যাম্পাসে বসে বাপ্পির সাথে বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলো , রাজীব বিশাল লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়েছিলো , প্রেম ভালোবাসার বিপক্ষে লুজার একটাজয়ের মুখ থেকে আপনা থেকেই বেড়িয়ে আসে রাজীবের সেদিনের ভাষণের কথা মনে করে ।
 
হঠাত জয়ের মাথায় আসে , আরে সেদিনের পর ই তো রানী আলগা আলগা আচরণ করতে শুরু করে । এড়িয়ে চলতে শুরু করে। জয় ব্যাপারটা তখন লক্ষ্য করেনি , ও নিজেও বিজি ছিলো , নতুন নতুন পলিটিক্স জয়েন করেছে ।  এর পর ই সেই বৃষ্টি ভেজা দুপুর , জয় রানীর চোখে সেদিন দ্বিধা দ্বন্দ্ব স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে , দেখেছে কেমন উদাস চোখে রানী ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো । কেমন ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো রানীকে , মনে হচ্ছিলো নিজের সাথেই লড়াই করে ক্লান্ত হয়ে গেছে । তবে শেষ পর্যন্ত রানীর চোখে আবার সেই স্পার্ক দেখেছিলো জয় , যখন রানী ওর দিকে নিজের ওড়না এগিয়ে দিয়েছিলো ।
 
জয়ের কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায় । আসলে রানী ওর উপর অভিমান করে নেই । রানী প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে। একদিকে ওর প্রতি রানীর টান , অন্যদিকে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা । হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে জয়ের । জয় জানে রানীর এই মানসিক চাপের জন্য কে দায়ি । দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি লুজার রাজীব
 
ওই ব্যাটা রাজীব নিজেও নিজের লাইফ এঞ্জয় করছে না , রানীকেও স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে । নিশ্চয়ই রানীকে নিজের ঐসব মিথ্যা নীতি বাক্য গুলো গুলিয়ে খাইয়েছে । আর  বেচারি রানী সেই কারনে প্রচণ্ড দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে এমন অসুস্থ হয়ে পড়েছে । জয় ডিসিশান নেয় , যে করেই হোক রানীকে ওই লুজারের প্রভাব থেকে মুক্ত করে আনবে । আর এই কাজটি ও নিজের জন্য করবে না , রানীর ভালোর জন্যই করবে ।
*** 


দুপুর দিকে জয় যখন লাঞ্চ করার জন্য কেন্টিনের দিকে যাচ্ছিলো তখন দূর থেকে হঠাত রাজীবের বাইক ওর চোখে পরে যায়  , এডমিন বিল্ডিঙের বাইরে । বুঝতে পারে রাজীব নিশ্চয়ই কোন কাজ করতে এসেছে । দ্রুত নিজের মায়ের মোবাইলে কল লাগায় । আয়শা কল রিসিভ করতেই জয় জিজ্ঞাস করে এখনো হস্পটালে কিনা। উত্তরে আয়শা জানায় , অখানে আর থাকতে দিলো না । ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেছে তাই ।
 
জয় ভাবল এই সুযোগ , নিশ্চয়ই জান্নাত ওখানে একা , এই সুযোগ রানীর সাথে একা সময় কাটানোর চান্স। একটু পর জয়ের একটা ক্লাস আছে , কিন্তু সেটা জয়ের জন্য ইম্পরট্যান্ট নয় । লাঞ্চ করা ভুলে যায় জয় , দ্রুত বাইকে ওঠে , গন্তব্য হসপিটাল। যেখানে আছে  ওর রানী , একজন মেনিপুলেটিভ ভিলেনের খাঁচায় বন্দি। আর জয় যাচ্ছে ওর রানী কে সেই খাঁচা থেকে মুক্ত করতে ।
 
হস্পিটলের সামনে বাইক রেখে জয় দ্রুত পদে ভেতর দিকে এগিয়ে যায় । কিন্তু কেবিন যে অংশে সেদিকে যেতেই ওর পথ রোধ করে দাড়ায় উর্দি পরা রিনাউন কম্পানির দারোয়ান । ভিজিটিং আওয়ার শেষ , তাই যেতে দেয়া যাবে না । জয় খুব করে বোঝায়, কিন্তু কিছুতেই গার্ড ওকে যেতে দেবে না । এই সব গার্ড গুলো খুব এক রোখা হয় । কোন কিছুই এদের মন গলাতে পারে না ।
 
গার্ড জয় কে অবশ্য একটা উপায় বলে দেয় । জয়ের আকুতি শুনে কঠোর গার্ড মন ও গলে যায় । তাই বলে স্যার আমরা তো চাকরি করি , তাই আমার পক্ষে যেতে দেয়া সম্ভব নয় , আপনি এডমিনের সাথে যোগাযোগ করেন
 
জয় এডমিন অফিসে যায় , সেখানে বসে আছেন একজন ৩০-৩২ এর মহিলা । জয়ের ঠোঁটে একটা হাসি খেলে যায়। মনে মনে ভাবে , এবার খেলা হবে , প্রতিপক্ষ ওর চিরচেনা ।
 
আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি?” মহিলা বেশ মিষ্টি করে হেসে বলে । এই ধরনের উন্নত মানের হাসপাতালে কর্মচারীরা খুব ভালো ব্যাবহার করে মানুষের সাথে । এটা ওদের প্রফেশনাল ট্রেনিং , তবে এই প্রফেশনালিজম কে গুরো করে সরবতের মত গুলে খেয়ে ফেলতে জয়ের সময় লাগবে না । এটা জয় ভালো করেই জানে ।
 
মহিলার হাসির জবাবে জয় নিজের ট্রেডমার্ক মেয়ে ভুলানো হাসি ঠোঁটে টেনে আনে । সামনের একটা চেয়ার টেনে বসে পরে ।
 
খুব বিপদে ছিলাম ম্যাডাম , কিন্তু এখন রিল্যাক্সড ফিল করছিজয় সস্তির নিঃশ্বাস ফেলার ভান করে । জয়ের এমন উত্তর শুনে সামনে বসা এডমিন অফিসার , একটু অবাক হয়ে যায় । জয় এই কনফিউসড চেহারা দেখে তৃপ্তি পায় । মেয়েদের কাছ থেকে কোন কিছু আদায় করতে হলে প্রথমে তাদের কনফিউসড করতে হবে , এটাই প্রথম সুত্র ।
 
আপনাকে দেখেই মনে হচ্ছে , একমাত্র আপনিই আমাকে হেল্প করতে পারবেনকনফিউসড এডমিন অফিসার কে আরো একটু কনফিউশনে ফেলে দেয়ার জন্য জয় আবার বলে ।
 
মানে? কিছুই বুঝতে পারছি নাসামনে বসা সুদর্শন ছেলেটির এমন কথাবার্তা শুনে একটু আশ্চর্য হয়ে এডমিন অফিসার বলে।
 
নিলা ম্যাম , আমি একটা ঝামেলায় পরেছি , আমাদের প্রফেসর আমাকে একটা কাজ দিয়েছে , সেই কাজ নিয়ে ঝামেলা , বুঝতেই পারছেন প্রফেসরের কাজ করতে না পারলে , উনি বিরক্ত হবেন , আর বিরক্ত হলে পরিক্ষায় মার্ক কম আসবে
 
জয় চেহারায় একটা করুন ভাব নিয়ে আসে কথা গুলো বলার সময় , এক ফাঁকে টেবিলে রাখা নেইম  প্লেট থেকে মহিলার নাম জেনে নিয়েছে ।
 
হঠাত অপরিচিত একজনের মুখ নিজের নাম শুনে আরো একটু অবাক হয়ে যায় , নিলা । “ কিন্তু আমি আপনাকে কি হেল্প করতে পারি” কনফিউজড টোনে বলে নিলা ।
 
আপনাদের হাসপাতালে আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে ভর্তি আছে , এই মেয়ে আবার প্রেফেসরের বেশ প্রিয় , আপনার মত একজন মেয়ে  নিশ্চয়ই জানেন এই বুড়ো প্রফেসর গুলো মেয়েদের প্রতি কেমন অবসেসড থাকে
 
এডমিন অফিসার নিলা এখনো কনফিউসড , কিন্তু আপনার মত মেয়ে , এই কথা গুলো শুনে  কিছুটা রাগ করেছে , কারন আপনার মত মেয়ে এই কথাগুলো একটু নেগেটিভ ভাবেই ব্যাবহার করা হয় , বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপার। হাতাকাটা ডিপ নেক  ব্লাউজ পরা নিলা এই ধরনের কথা বেশ নিয়মিত শুনতে পায় । তবে সেই সাথে একটু খুশি ও হয়েছে  , আজকাল আর কেউ মেয়ে বলে না , সবাই বলে মহিলা ।
 
এদিকে জয় বলেই চলছে , “ সুন্দরী মেয়ে দেখেলে তো এই বুড়ো গুলর অবস্থা টাইট , আপনি তো নিশ্চয়ই বোঝেন
 
এবার নিলা একটু হেসে ওঠে , সামনে বসা ছেলেটি যে ওকে ইঙ্গিতে সুন্দরীও বলে ফেলেছে সেটাও বুঝতে পারলেন। এই সাথে এও বুঝতে পারলেন , ছেলেটি নিজের কাজ হাসিলের জন্য এসব মাসকা মারছে । এমনি এমনি তো এতো বড় হাসপাতালের এডমিন অফিসার হয়নি । তবে এমন সুদর্শন একটা ছেলে সামনে এসে এমন মাসকা মারলে কার না ভালো লাগে। একে তো সুদর্শন তার উপর বলার ভঙ্গিও বেশ নজরকারা । নিলার ও ভালো লাগলো ।
 
নিজের প্রফেশনালিজম ভুলে নিলা একটু শব্দ করেই হাসল , অফিসের কাজের চাপ , বাড়িতে সন্তান স্বামীর দায়িত্বের চাপ সামলে চলতে চলতে মন নীরস হয়ে যায় । মাঝে মাঝে এমন কিছু ছোট ছোট ঘটনা মন চাঙ্গা করে তোলে । হ্যা তা তো বুঝিই , এখন বলুন আমি কি করতে পারি
 
জয় মহিলার হাসি দেখে বুঝতে পারে , কাজ হয়ে গেছে , মনে মনে নিজেকে বাহবা দেয় , ভাবে এমন কোন মেয়ে নেই যে ওর চার্ম কে অস্বীকার করতে পারে । ছুড়ি থেকে বুড়ি । কিন্তু সরাসরি নিজের কাজের কথা বলে না জয় , মহিলাকে আরো একটু তুষ্ট করতে হবে , এখন সরাসরি কাজের কথা বললে মহিলা বুঝে যাবে যে সুধু কাজ হাসিলের জন্য ও এতক্ষণ তেল মেরেছে। জয় বলল আমাকে বুড়া খাটাসের খড়গ থেকে রক্ষা করেন প্লিজ, আমার বিশ্বাস আপনি আমাকে হেল্প করবেনকথা গুলো বলে একটা নিষ্পাপ হাসি উপহার দিলো , নিলাকে
 
নীলাও মজা পায় , কথা এগিয়ে নিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় , সারাদিন তো সুধু এই সমস্যা সেই সমস্যা , রোগীদের রাগান্বিত আত্মীয়স্বজন দের সামলে কেটে যায় । এর ফাঁকে একটু মজা করলে দোষ কি । আপনার এই বিশ্বাস কি করে হলো?” নিলা অবাক হওয়ার ভান করে ।
জয় নিলার কথা বলার ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারে , এই মহিলা প্রস্তুত এখন মোক্ষম কোপ দিতে হবে কিভাবে আবার , আপনাকে দেখে , এমন সুন্দরী একজন মানুষ কিছুতেই খারুস মনের অধিকারি হতে পারে না”  খুব সস্তা মানের ডায়লগ , তবে নিলার ভালই লাগলো
 
হি হি হি । তেল দিচ্ছেন ভাই । তেল দিতে হবে না , বলেন আপনার জন্য কি করতে পারি”  ,
 
“ আপনি ই পারেন আমাকে ওই লম্পট প্রেফেসরের খড়গ থেকে রক্ষা করতে” জয় বেশ নাটকিয় ভঙ্গি করে বলে , আর সেটা দেখে নিলা অফিস এর নিয়ম কানুন ভুলে বেশ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে , তারপর বলে
 
“ সেটা কিভাবে ?”
 
“ আমাকে ওই সুন্দরী রোগির সাথে দেখা করতে দিয়ে , খুব সামান্য ব্যাপার, আপনার জন্য কোন ঘটনাই না”  
 
“ সত্যি করে বলেন তো ওই সুন্দরী রোগি আপনার কি হয়” একটু সামনে এগিয়ে এসে , ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাস করে নিলা।
 
“ আপনার কসম করে বলছি ম্যাডাম , আমার সুধুই ক্লাসমেট হয় ” জয় ও হেসে বলে , এখন যদি নিলা বুঝতেও পারে তাতেও ক্ষতি নেই ।
 
“ আমার কসম খেয়ে মিথ্যা বললেন , এখন যদি আমার কিছু হয়ে যায়” নীলাও হালকা মজা করতে ছারে না ।
 
“ না না আপনার কিছুই হবে না , এখনো সত্যিই কিছু নেই , তবে আপনি যদি এখন যেতে দেন , তাহলে কিছু হলেও হতে পারে”  জয় করুন চোখে তাকায় নিলার দিকে ।
 
নিলা কিছুক্ষন জয়ের দিকে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে , তারপর একটা পাশ এগিয়ে দেয় , দেয়ার সময় বলে , “কাজ হলে কিন্তু কফি পাওনা থাকবে আপনার কাছে”  জদিও নিলা সত্যি সত্যি কফি খাওয়ার আশা রাখে না , এমনিতেই কথার কথা বলল।
 
জয় ও হেসে হেসে পাশ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো , যাওয়ার সময় আর একবার ঘুরে দাড়িয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি উপহার দিলো নিলাকে। তারপর বেড়িয়ে গেলো ।
 
জয় বেড়িয়ে যাওয়ার পরও নিলার সেই ভালোলাগা অনুভূতি অনেকক্ষণ রয়ে গেলো । মনে মনে ভাবল , বেশ অধভুত ছেলে তো , তবে মন ভালো করার ক্ষমতা আছে ছেলেটার মাঝে ।

*****
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 3 users Like gungchill's post
Like Reply
#67
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#68
(23-09-2025, 08:48 AM)Saj890 Wrote: Darun

ধন্যবাদ
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#69
Waiting for next part. More of jannat please.
[+] 1 user Likes Robikhan11827's post
Like Reply
#70
(26-09-2025, 12:32 AM)Robikhan11827 Wrote: Waiting for next part. More of jannat please.

আপনাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম ভাইয়া , উত্তর এখনো পাইনি । অপেক্ষায় থাকলাম ।
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
Like Reply
#71
কিছু সম্পর্কঃ ৬ ()

 
গার্ডের চোখের সামনে দিয়ে পাশ কার্ড দেখাতে দেখাতে জয় লিফটের দিকে এগিয়ে যায় । ভিজিটিং আওয়ার নয় বলে লিফটের সামনে ভিড় নেই । দুজন নার্স সুধু জয়ের সাথে লিফটে , একজন ছেলে একজন মেয়ে । জয় মেয়েটির  দিকে তাকিয়ে অল্প হাসে। মেয়ে নার্সটি বেশ লজ্জা পেয়ে যায় , নিচের দিকে তাকিয়ে হাসে । সেটা দেখে পাশের ছেলে নার্সটি বেশ গম্ভির ভাবে তাকায়।
 
মনে মনে জয় হাসে , ভাবে ওদের মাঝে মনেহয় কোন সম্পর্ক আছে । কিন্তু বেশিক্ষণ ভাবার সময় পায় না , লিফট দ্রুত ওকে নির্ধারিত ফ্লোরে নিয়ে আসে । বের হওয়ার সময় জয় দুজনের উদ্দেশ্যে হাত নারে । করিডোর ধরে হেটে  হেটে ৫০৪ লেখা দরজার সামনে এসে দাড়ায় । অবাক হয়ে খেয়াল করে ও বেশ নার্ভাস । খুব আশ্চর্য হয় , জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের সামনা সামনি হতে নার্ভাস ফিল করছে ।
 
জয় এক পাশের ভ্রু উঁচু করে , নিজের দিকেই তাকায় । মনে মনে বলে , ‘ ওই ব্যাটা জয় তোর আবার কি হলো? নার্ভাস হওয়া যাবে না একদম , ফ্রন্ট ফুটে খেল ব্যাটা , তুই তো বাঘের বাচ্চা। একটা বড় করে শ্বাস নেয় , বেশ শব্দ করে আবার সেই বাতাস ফুস্ফুস থেকে বের করে দেয় । তারপর দরজার নব ধরে মোচড় দেয় । কিন্তু সেটা ভেতর থেকে বন্ধ ।
 
জয় দরজায় মৃদু টোকা দেয় । দুবার টোকা দেয়ার পর জান্নাত দরজা খুলে দেয় । জয় কে দেখে বেশ অবাক হয় জান্নাত । ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে জয়ের দিকে ।
 
ঢুকতে দিবি , না দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকবিজয় জান্নাতের অবাক দৃষ্টি দেখে হেসে বলে ।
 
তুই এখানে ?” জান্নাত দরজা থেকে দূরে গিয়ে প্রশ্ন করে । ওর কণ্ঠ শুনেই বোঝা যায় কতটা অবাক হয়েছে জান্নাত । কোন আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে থাকলে জয় কে ধরে বেধেও নেয়া যায় না । আর আজকে দুইবার চলে এসেছে । জান্নাতের ইন্টুএশন বলছে ডাল ম্যা কুছ কালা আছে , কি সেই কালা জিনিসটা কি জান্নাত বুঝতে পারে না ।
 
জয় প্রথমেই রানীর দিকে নজর দেয় , কিন্তু ওকে হতাশ হতে হয় , রানী ঘুমাচ্ছে । জয় সোফার দিকে এগিয়ে যায় , হাত পা ছড়িয়ে বসে পরে । তারপর জান্নাতের দিকে তাকায় । জান্নাত দু হাত বুকের কাছে ভাজ করে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে , ওর দৃষ্টিতে এখনো সেই প্রশ্ন ঝুলছে , ‘ তুই এখানে
 
আরে এলাম দেখতে তোর কি অবস্থা , কাল রাত থেকে আছিস ঠিক মত ঘুমাইতে পারলি কিনা , খাওয়া দাওয়া হইসে কিনাজয় হাসতে হাসতে বলে । যদিও এখনো গত রাতে জান্নাতের বেয়াদবি এখনো ভুলতে পারেনি , তবে জয় এখন জান্নাত কে ক্ষেপাতে চায় না । গতকালের ওই প্রতিশোধ অন্য কোন একদিন নিয়ে নেবে ।
তাই!!! আমার প্রতি তোর এতো দরদজান্নাত জয়ের কথায় যতটা না অবাক হয়ে তারচেয়ে বেশি অবাক হওয়ার ভান করে। জয় কে জান্নাত হাড়ে হাড়ে চেনে , নিশ্চয়ই ওর কোন মতলব আছে , মতলব ছাড়া ও কোন কাজ করে না ।
 
তুই না স্বীকার করলে কি হবে , আমি তো আর ভুলে যেতে পারি না যে তুই আমার দশটা না পাঁচটা না  একটা মাত্র ছোট বোনজয় আহ্লাদি একটা ভাব নিয়ে বলে ।
 
ওরে ওরে আমার বড় ভাইয়া রেজান্নাত ও বেঙ্গ করে বলে , এখনো জয়ের দিকে চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে , ও চায় কি চেতা বুঝতে চেষ্টা করছে ।
 
আচ্ছা এসব বাদ দে , তুই খেয়েছিস?”
 
না এখনো খাইনি
 
তাহলে যা বিরিয়ানি নিয়া আয়এই বলে মানিবেগ থেকে টাকা বের করে দেয় , তারপর আবার কি যেন ভাবে , তারপর বলে নাহ বিরিয়ানি না , বিরিয়ানি খেলে ঘরে গন্ধে ভরে যাবে , এক কাজ কর , সামনে পিজ্জা হাট আছে , একটা পিজা নিয়ে আয়, দুজনে খাই , আমিও খাই নাই
 
যা ভাগ , এই রোদে আমি বের হইতে পারবো না , তুই নিয়া আসতে পারলি নাজান্নাত রেগে গিয়ে চেয়ারে বসে পরে।
 
এই আমি কি শুনলাম , তোর মত একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেয়ে সামান্য রোদের ভয়ে বাইরে যেতে চায় না, কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে!!!” জয় সত্যি সত্যি অবাক হয়েছে এমন ভাব করে বলে । তারপর আবার বলতে শুরু করে আমাদের দুর্ধর্ষ সাংবাদিক জান্নাত চৌধুরী , রোদের ভয়ে বাইরে যাচ্ছে না , এই খবর বাইরে রটলে কি হইবো তুই জানিস”  জয় একদম জান্নাতের দুর্বল পয়েন্টে আঘাত করে ।  জয় জানে এবার আর জান্নাতের অন্য কোন পথ খোলা নেই । ওকে যেতেই হবে , কারন ওর ইজ্জতের সাওয়াল ।
 
জয়ের হাতে একটা হাজার টাকার নোট , জান্নাত মনে মনে হিসাব করে , একটা পিজ্জা ৮০০ বেঁচে যাবে দুশো । কিন্তু মাত্র ২০০ টাকার জন্য এই দুপুর বেলা বের হতে মন চায় না ।  জান্নাত বলে আরো টাকা লাগবে”  
 
বলার সাথে সাথে জান্নাত কে অবাক করে দিয়ে জয় আরো একটা হাজার টাকার নোত বের করে দেয় । চোখে মুখে অবিশ্বাস নিয়ে জান্নাত জয়ের হাত থেকে টাকা নেয় । জান্নাত জানে জয় কিপ্টে না , কিন্তু সুধু ওর বেলাতেই টাকা খরচ করতে বাধে জয়ের। কিন্তু আজকে এমন উদার আচরণ দেখে অবাক না হয়ে পারে না । তার উপর গতকাল রাতে ওর সাথে বাধাবাধি হয়ে গেছে এক দফা । তারপর ও জয় এতো উদার আচরণ করছে !! জান্নাতের মন খুতখুত করতে থাকে , মাথার ভেতর টর্নেডো চলছে , ভেবে বের করার চেষ্টা করছে , জয় কি চায় , এটা কি ওর প্রতিশোধের জাল?
 
যদিও টাকা হাতে নেয় তারপর ও ওঠে না জান্নাত চোখ সরু করে তাকিয়ে থাকে ।  
“ কিরে যা , এমন ইদুরের মত তাকিয়ে আছিস ক্যান?” জয় একটু বিরক্ত হয়েই বলে ।
 
“ সত্যি করে বল তোর কোন মতলব নাই তো?” জান্নাত জিজ্ঞাস করে , আসলে পিজ্জা খাওয়ার এই সুযোগ ও ছাড়তে চাইছে না । ওর মা যে রান্না করে নিয়ে এসেছে , সে সব খাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই । আবার বাইরেও যেতে পারছিলোনা , কারন রানী একা থাকবে, এই ভেবে ।
 
“ দে ভাই তুই আমার টাকা দে , তোর যাওয়া লাগবে না” জয় সত্যি সত্যি বিরক্ত হওয়ার ভান করে ।
 
“ না থাক জাচ্ছি , তবে তুই কিন্তু ঠিক মত খেয়াল রাখিস , আবার বের হয়ে এদিক সেদিক চলে যাস না , রানীর কাশি উঠলে ঐখানে একটা ইনহেলার আছে সেটা দিবি , এর পর ও যদি না থামে নার্স ডাকবি” জান্নাত জয় কে সব কিছু দেখিয়ে দেয় ।
 
“ যা রে আমার আম্মা , আমারে এতো শিখাইতে হবে না, আমি ম্যানেজ করে নিবো” জয় তাড়া দেয় , মনে মনে অবশ্য জান্নতের গুষ্ঠি উদ্ধার করছে । কারন রাজীব চলে আসলে সব ভেস্তে যাবে ।  
 
জান্নাত নিজের ওড়না নিয়ে মাথায় স্কার্ফের মত পরে নেয় , তারপর আরো একবার জয় কে সাবধান করে বেড়িয়ে যায় ।
 
জান্নাত চলে যেতেই জয় রানীর বেডের পাশের চেয়ারে বসে , রানী ঘুমাচ্ছে , মলিন মুখটা দেখতে একটা নিষ্পাপ শিশুর মত লাগছে । চোখ দুটো কোটরের ভেতর চলে গেছে অনেকটা , চোখের নিচে হালকা কালির দাগ ও পরেছে । জয়ের মন ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে ওঠে , প্রচণ্ড দরদে , হৃদপিণ্ডে কাঁপুনি অনুভব করে । ছুঁয়ে দেখার কামন বহু কষ্টে প্রশমিত করে ।
 
ঘুমের মাঝে রানীর মুখতায় একটা প্রশান্তির ছাপ পরেছে । জয়ের ইচ্ছে হয় না রানীকে তুলতে । কিন্তু ওর যে রানীর সাথে কথা বলা ভীষণ জরুরি । আর সময় ও হাতে নেই , জান্নাতের সর্বমোট পঁয়তাল্লিশ থেকে এক ঘন্টা সময় লাগবে । আর রাজীব কখন চলে আসবে তার ঠিক নেই ।  জয় ধিরে ধিরে নিজের মুখ রানীর কানের কাছে নিয়ে যায় , প্রথমেই ডাকে না , আসলে ডাকতে পারে না । কারন এই প্রথম জয় রানীর এতো কাছাকাছি এসেছে । অসুস্থ থাকায় রানী কোন ধরনের সুগন্ধি ব্যাবহার করেনি । রানীর শরীরের ন্যাচারাল সুবাস এসে জয়ের নাকে লেগেছে ।  
 
রানীর শরীরের সুবাস যেন কোন শক্তিশালী ড্রাগের চেয়ও শক্তিশালী । মুহূর্তে জয়ের শরীর মন কে অবস করে ফেলে । এতোটাই প্রভাব বিস্তার করে জয়ের উপর যে জয় সরে যেতে চেয়েও যেতে পারে না । জয় মনে মনে ভাবে রানী কি ভাবাবে যদি এখন জেগে উঠে এই অবস্থা দেখে । তাই জয় মনের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে সরে আসার সিধান্ত নেয় , কিন্তু ওর মস্তিস্কের লাগাম যেন অন্য আর একজনের হাতে । সেই অন্য একজনটা সিদ্ধান্ত নেয় , আর একবার মন ভরে শ্বাস নেবে । লম্বা করে শ্বাস টানে , আর তখনি জেগে ওঠে রানী ।

****
 
জান্নাত পিজ্জার দোকানে বসে বসে ওয়েট করছে , সাধারনত এরা ২০ মিনিট সময় নেয় , কিন্তু আজকে অনেক ভিড় । তাই বোঝাই যাচ্ছে বেশ দেরি হবে । জান্নাত বসে বসে গত রাতের কথা চিন্তা করতে থাকে । ভোরে যখন রানী কাশতে কাশতে খুব পাচ্ছিলো তখন ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় । ঘুম ভেঙ্গে দেখে রাজীব বোকার মত দাড়িয়ে আছে । কি করবে বুঝতে পারছে না । এদিকে রানী কাশতে কাশতে বার বার বুক খামছে ধরছে । এই পরিস্থিতে কি করতে হবে জান্নাতের ও তেমন কোন আইডিয়া ছিলো না। কিন্তু হঠাত করেই ওর মনে পরে যায় , একবার ওর বুকেও কফ জমে গিয়ে কাশতে খুব কষ্ট হতো , তখন ওর মা বুকে হাত দিয়ে মালিশ করে দিলে একটু আরাম হতো । তাই দ্রুত রাজীব কে সরিয়ে দিয়ে রানীর বুকে হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে ।
 
রানীর বুকে হাত বুলাতে বুলাতে রাজীবের দিকে একবার তাকিয়েছিলো , দিশেহারা দৃষ্টি দেখতে পেয়েছিলো জান্নাত । তখন গত রাতে রাজীবের আচরণের কারনে যে রাগ হয়েছিলো সেটা চলে যায় । সেই জায়গাটা নিয়ে নেয় মায়া , হ্যা মায়ায় ভরে উঠেছিলো জান্নাতের মন রাজীবের জন্য । মায়ের আদর বঞ্চিত এই ছেলেটি  সুধু যে নিজে একা একা বড় হয়েছে এমন নয় , ছোট বোন কেও বড় করেছে । জান্নাত এই ভেবে খুব কাতর হয়েছিলো যে , না জানি কতদিন এমন দিশেহারা হতে হয়েছে ছেলেটাকে। জান্নাত কিছুটা জানে যে ছোট আব্বু ওদের তেমন কোন সময় দিতে পারে নি , প্রায় ওর মা বাবা কে এ নিয়ে কথা বলতে শুনতো ও। তখন ওই কথার তাৎপর্য বুঝতে পারেনি জন্নাত । কিন্তু রাজীবের দিশেহারা দৃষ্টি দেখে , বুঝতে পেরেছিলো , এই দুই ভাই বোন মা হীন জীবনে কত শক্ত সময় পার করেছে , যা জান্নাত বা জয় চিন্তাও করতে পারবে না ।
 
জান্নাত তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো , এই দুজনের সাথে ও সব সময় থাকবে । যত কঠিন সময় ই আসুক , নিজে যেখানেই থাকুক । রাজীব আর রানীর জন্য সবসময় ওর  সময়ের কিছুটা হলেও বরাদ্দ থাকবে । বিশেষ করে রাজীবের জন্য , এই ছেলেটাকে ও একা থাকতে দেবে না , কিছুতেই না । জান্নাত জানে ওর চলার পথ সহজ হবে না , রাজীব জীবনেও মুখ ফুটে বলবে না । কারন ওর সমস্তটা জড়িয়ে রয়েছে দায়িত্ব আর কর্তব্যের চাদর । আর রাজীব সুচারু রুপে পালন ও করছে এইসব কর্তব্য । আর এই কারনেই জান্নাত রাজীব কে এতো পছন্দ করে । জান্নাতের মনে আছে , রাজীবের এইচ এস সি পরিক্ষার রেজাল্টের পর যখন ওরা এসেছিলো । তখন জান্নাত দু থেকে দেখেছিলো , রাজীব কি সুন্দর ভাবেই  মায়ের জন্য কান্নারত রানী কে হ্যান্ডেল করেছিলো। কতটা কম্প্যাশন আর সফটনেস এর সাথে ছোট বোনের মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে গিয়েছিলো । সেদিন ই জান্নাত রাজীবের জন্য প্রথম বিশেষ একটা অনুভূতি অনুভব করে । জান্নাত চায় রাজীবের মত একজন ওর জীবনেও আসুক । ওকে এভাবে ট্রিট করুক ।  
 
নার্স এসে যখন রানীকে নেবুলাইজার দিয়ে শান্ত করে , এর কিছুক্ষন পর রানী ঘুমিয়ে পরে । এর পর রাজীবের সাথে অনেক কথা হয়েছে জান্নাতের । না রাজীব রোমান্টিক কথাও বলতে পারে না , হাস্যকর জোকস ও পারে না । রাজীব নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনিয়েছে , রানীকে নিয়ে ওর প্ল্যান শুনিয়েছে , এবং গতকাল থেকে যে একটা ব্যাপার রাজীব কে খুব ভাবাচ্ছে সেটাও শুনিয়েছে । রাজীব বলেছিলো যে রানীর সাথে কোন একটা ছেলের সম্পর্ক আছে , এবং রানী বার বার ঘুমের ঘোরে সেই ছেলের সাথে কথা বলেছে । এওং জান্নাতের সাহায্য চেয়েছে যেন কে ওই ছেলে , সেটা খুজে বের করতে পারে । রাজীব চায় না রানী কোন ভুল মানুষের পাল্লায় পরুক । জান্নাত কথা দিয়েছে , যে ও হেল্প করেবে ।
 
হঠাত করেই জান্নাতের মাথায় একটা প্রশ্ন আসে । সকালের রাজীব আর ওর মাঝে কনথপকথন থেকে এবং জয়ের উটভট আচরনের কারনেই প্রশ্নটা আসে মাথায় । রাজীবের বলা ওই ছেলে জয় নয় তো ? প্রশ্নটা মনে জাগতেই জান্নাত ভীষণ চিন্তায় পরে যায় ।
 
একে একে অনেক গুলো ব্যাপার জান্নাতের চোখের সামনে ভেসে ওঠে । আগে এই ব্যাপার গুলোকে তেমন একটা পাত্তা দেয়নি ।আসলে তখন গুরুত্বই দেয়নি । জান্নাতে দেখছে সিএ উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় থেকেই জয়রে নাম উঠেই রানীর ঠোঁটে একটা লাজুক হাসি ফুটে ওঠে । অথবা জয় কে দেখলেই কেমন লাল হয়ে যায় , চোরা চোখে তাকায় । অথবা জান্নাতদের বাড়ি আসার সময় চোখে কাজল দিয়ে আসে , কলাপে ছোট করে টিপ দেয় , একদম পরিপাটি ভাবে আসে , জান্নাত ওই সময় কোনদিন রানী কে সাধারন ঘরের পোষাকে ওদের বাড়ি আসতে দেখনি । কোনদিন যদি জান্নাত রানী কে সাথে করে নিয়ে আসতে চেয়েছে , আর তখন যদি জয়ের বাড়ি থাকার সম্ভাবনা থেকেছে , রানী কোন না কোন বাহানা দিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে , বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তবে এসেছে । এর জন্য মায়ের কাছে জান্নাত প্রচুর কথা শুনছে , ওর মা সব সময় রানী কে এমন পরিপাটি থাকার জন্য খুব পছন্দ করে , আর জান্নাত কে অগোছালো থাকার কারনে কথা শোনায় । আজ পর্যন্ত জান্নাত রানীর এসব আচরণ নিয়ে কিছু ভাবেনি ।
 
তা ছাড়া বেশ কয়েকবার জান্নাত লক্ষ্য করেছে , জয় আর রানীকে রানীদের ছাদের উপর । জন্নাত একবার জিজ্ঞাস করেছিলো , কিন্তু রানী কোন উত্তর দেয়নি , এড়িয়ে গিয়েছিলো । এ ছাড়া ক্যাম্পাসেও রানী আর জায় কে কয়েকবার দেখছে ।
 
আর আজকে জয়ের বার বার হসপিটাল চলে আসা , ওকে পিজ্জা নিতে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া । জান্নাত্য যত ভাবে তত ওর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে । জয় ওর নিজের ভাই , কিন্তু রানী আর রাজীব ও ওর পর নয় । রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও একি পরিবার হিসেবে বড় হয়েছে ওরা । তা ছাড়া রাজীব আর জয়ের মাঝে আগে ভাইয়ের মত সম্পর্ক থাকলেও এখন সম্পর্ক ভালো নয় । দুজনের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে , এবং দুজনেই একটু বেশি বেশি রিয়েক্ট করেছে । কিন্তু এখন যদি রাজীব জানতে পারে জয় ই রানীর সেই মিস্ট্রি বয় ফ্রেন্ড তাহলে হয়তো ওদের সম্পর্ক আর কোনদিন জোড়া লাগবে না । কারন রাজীব রানীর শরীরের এই হালের জন্য ওই ছেলেকে প্রক্ষান্তরে জয় কেই দায়ি মনে করছে ।
 
তা ছাড়া জয়ের ইতিহাস জান্নাত জানে , ছোট বোন বলে কোনদিন এসব নিয়ে আলাপ হয়নি । কিন্তু জান্নাত জানে , জয় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে । তাছাড়া জয়ের অতীত বাদ দিলেও জয় রানীর জন্য সঠিক ছেলে নয় । হ্যা জয় ওর ভাই , তাই বলে বোনের মত ান্ধবিকে তো জেনে শুনে এমন একজনের কাছে ছেড়ে দিতে পারে না । জয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে , কোন বিসয়ে  সিরিয়াস নয় । আর রানীর মত একটা নরম মনের মেয়ে জয়ের এই আচরণ সহ্য করতে পারবে না ।
 
আর এমন যদি হয় , তাহলে সুধু সমস্যা জয় আর রানীর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে না , দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবারের সবার উপর এর প্রভাব পরবে ।
 
এসব ভাবতে ভাবতেই অর্ডার করা পিজ্জা চলে আসে । জান্নাত দাম মিটিয়ে বেড়িয়ে এসে রিক্সা নেয় । রিক্সায় বসে বসে জান্নাতের মনে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলতে থাকে , ভেবে পায় না ও কি করবে । যদি ওর অনুমান সত্যি হয় , তাহলে কি ও রাজীব কে জানাবে ?  যদি জানায় এর ফলাফল কি হবে , রাজীব কি সব জেনেশুনে রানীর সাথে জয়ের সম্পর্ক মেনে নেবে । কারন এই দুনিয়ায় জয় কে সবচেয়ে ভালোভাবে চেনে রাজীব । জয়ের সব কীর্তির সাক্ষি রাজীব । কোন ভাই ই বোনের জন্য এমন ছেলে চাইবে না ।
 
আর এতে করে রানীর রিএকশন ই বা কি হবে , কত দূর এগিয়ে গেছে জয় আর ও? রাজীব যদি বাধা দেয় তাহলে কি রানী আর রাজীবের সম্পর্কের অবনতি হবে না? রানী কি মুখ বুজে ওর ব্যাক্তিগত ব্যাপারে রাজীবকে হস্তক্ষেপ করতে দেবে ?
 
হাসপাতালের একদম কাছাকাছি এসে জান্নাত সিদ্ধান্ত নেয় , সুধু অনুমানের উপর কোন সিদ্ধান্ত ও নেবে না । এই নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করবে । জয় বা রানী কে সরাসরি জিজ্ঞাস করে লাভ নেই । হাতে প্রমান নিয়ে ও এই দুজনের সামনা সামনি হবে।
 
যত দ্রুত সম্ভব জান্নাত রানীর কেবিনে চলে আসে , দরজা খোলা , ভেতরে রানী একা বসে , মুখ থমথমে , চেহারায় একটা কনফিউশন দেখা যাচ্ছে , সেই সাথে ভয় ।
জান্নাত জিজ্ঞাস করে “ জয় কোথায়?”
 
রানী ওর দিকে না তাকিয়েই জবাব দেয় “ চলে গেছে”
 
জান্নাত দেখে যদিও রানী উত্তর দিয়েছে , কিন্তু ওর মন এই কামড়ায় নেই । খুব সিরিয়াস কিছু একটা ঘটেছে বুঝতে পারে জান্নাত  । কিন্তু জান্নাত বুঝতে পারে না কি ঘটেছে । তবে যা ঘটেছে তা যে রানীকে সমূলে নাড়িয়ে দিয়েছে , তা রানীর ফ্যাকাসে মুখ দেখেই বলে দেয়া যাচ্ছে । পিজ্জা খাওয়ার কথা ভুলে যায় জান্নাত । ভয়ের একটা হিম শীতল স্রোত জান্নাতের মেরুদণ্ড বেয়ে নামে । একজন মেয়ে হওয়ার কারনে ও বুঝতে পারছে , সাধারন কথাকাটা কাটি ওদের মাঝে হয়নি । একটি মেয় সুধু মাত্র ঝগড়ার কারনে এমন মুখ করে বসে থাকবে না । হ্যা কান্না করতে পারে , নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে । কিন্তু এমন ভীত আর কনফিউজড হবে না । জান্নাতের কাছে মনে হয় জয় কিছু একটা করেছে , রানী জয়ের কাছ থেকে আশা করেনি ।
 
ধিরে ধিরে জান্নাত রানীর দিকে এগিয়ে যায় । ওর ভাবতেও ভয় লাগে যদি জয় উল্টাপাল্টা কিছু করে থাকে তাহলে দুই পরিবারের মাঝে কি ঝড় শুরু হবে । আর ওর আর রাজীবের শুরু না হওয়া গল্পের ও বা কি এন্ডিং হবে ?
 
****
 
রাজীব হসপিটালে ফেরে প্রায় বিকেল পাঁচটায় । জান্নাত ওকে ভরসা দিয়ে পাঠিয়েছে যে , ও রানীর খেয়াল  রাখবে । অবশ্য এতে রাজীবের খুব উপকার হয়েছে । জান্নাত মেয়েটার জন্য অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে রাজীবের মনে । ভাবে সব সময় যদি এমন কেউ ওর পাশে থাকতো । তাহলে জীবন কত সহজ হতো । গত রাত প্রায় নির্ঘুম কেটেছে , তারপর ও আজকে একটুও ক্লান্তি লাগেনি । বার বার মনে হয়েছে , কেউ একজন ওর পাশে আছে । যত কষ্টই হোক এমন কেউ আছে যে ওর কষ্ট ভাগ করে নেবে । ঘুম নেই গোসল নেই তবুও মন ছিলো ফুরফুরে । সেউ ফুরফুরে মন নিয়েই রাজীব ৫০৪ নাম্বার কেবিনের দরজা ঠেলে ঢোকে , মনে আশা জান্নাতের হাসি মুখটা দেখবে ।
 
কিন্তু  রুমে ঢুকেই , মনের সেই ফুরফুরা ভাব উধাও হয়ে যায় । রুমের ভেতর যেন একটা গুমট বাতস আটকে আছে । এয়ার ফ্রেশনারের সুগন্ধ আর এসির শীতল বাতাস ছাপিয়ে যার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি বোঝা যাচ্ছে । রাজীব প্রথমে জান্নাতের মুখের দিকে তাকায় , ওর মুখ থমথমে । তারপর রানীর দিকে তাকায় , দেখেই বোঝা জাচ্ছে কান্না আটকে রেখছে ।
 
রাজীবের বুক ধড়াস করে ওঠে , কি হতে পারে এই ভাবতে ভাবতে মাথা হ্যাং করে যায় । একবার ভাবে রানীর কি অন্য কোন অসুখ ধরা পরেছে , ডাক্তার কি পরে আর কিছু টেস্ট করিয়েছে । কিন্তু এতো কম সময়ে কি এসব বুঝতে পারা সম্ভব?
 
রাজীব রানীর কাছে যায় , জিজ্ঞাস করে “ কিরে তোর কি হয়েছে?”
 
রাজীবের গলার স্বর যেন রানীর চোখের বাধে হাতুরির আঘাত করে । ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে রানী , না সুধু চোখের পানিতে সীমাবদ্ধ নেই এই কান্না । শব্দ করে বাচ্চা মেয়ের মত কাঁদতে থাকে , আর বার বার বলতে থাকে “ ভাইয়া আমাকে বাসায় নিয়া চল , আমি আর থাকবো না এইখানে”
 
রাজীব আর জান্নাত দুজনেই অনেক বোঝাতে চেষ্টা করে , কিন্তু রানী কিছুতেই মানবে না । রানী কে সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে রাজীব জান্নাতের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায় । সেই দৃষ্টির উত্তরে জান্নাত সুধু লজ্জিত দৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। রাজীব কে বলেছিল রানীর খেয়াল রাখবে , কিন্তু সেই কাজ ও করতে পারেনি । তাই জান্নাত ভীষণ ভাবে লজ্জিত । সুধু রাজীবের কাছেই লজ্জিত নয় , নিজের কাছেও লজ্জিত । যদি ও তখন রানীকে জয়ের কাছে না রেখে যেতো তাহলে আর এই সমস্যা হতো না ।
 
কিন্তু জান্নাত রাজীব কে বুঝতে দেয় না যে ও বাইরে গিয়েছিলো , যদিও রাজীব এ ব্যাপারে কিছুই জানতে চায় নি । জানতে চাইলে কি বলবে তাই ভেবে জান্নাতের গলা শুকিয়ে আসে ।
 
এদিকে রাজীব পরেছে অথৈ সাগরে । রানীর এই দিকটার সাথে অনেকদিন সাক্ষাত হয় না ওর । আগে রানী প্রায় এমন জেদ করতো । কিন্তু তখন রানী  ছিলো ছোট , নানা রকম ভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিতো রাজীব । এমন কি রানী মাঝে মাঝে রাজীব কে আঁচরে কামড়ে নিজেই শান্ত হয়ে যেতো । রানী এই ধরনের আচরণ করতো যখন বাইরে কেউ ওর সাথে কোন খারাপ আচরণ করতো । মুখচোরা রানী বাইরে কিছু বলতে বা করতে পারতো না , কিন্তু ঘরে এসে প্রচণ্ড জেদ করতো ।
 
কিন্তু বয়স বারার সাথে সাথে এই সমস্যাও কমে এসেছিলো ।  বেশিরভাগ সময় নিজের মাঝেই চেপে রাখতো , মাঝে মাঝে রাজীব বুঝতে পারলে , খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে সান্তনা দিতো । কিন্তু এই এডাল্ট রানীকে কি করে শান্তো করবে রাজীব বুঝে পায় না । তবুও জিজ্ঞাস করে “ কি হয়েছে তোর , কে কি বলেছে?”
 
প্রস্নটা করেই জান্নাতের দিকে তাকায় রাজীব , ভাবে প্রশ্নটা করা ওর উচিৎ হয়নি , কারন এখানে সুধু জান্নাত ই ছিলো । আর জান্নাত রানীকে কখনোই এমন কিছু বলবে না বা করবে না যে রানী এমন করবে । রাজীব নিজের সরবচ্চ চেষ্টা করে , রানী কে থামানোর । কিন্তু সফল হয় না ।শব্দ করে বিলাপ করে কাঁদে রানী ।
 
এদিকে জান্নাত ওর মা কে কল করে । শুনে আয়শা বিচলিত হয়ে ওঠে । রানীর সাথে ফোনে কথা বলতে চায় , কিন্তু রানী নারাজ । শেষে উপায় না দেখে আয়শা বলে “ তোরা থাক আমি আসছি”
 
আধ ঘন্টার মাঝে আয়শা, রহিম আর জয়নাল এসে হাজির হয় । কিন্তু ততক্ষণে রানী একদম চুপ হয়ে গেছে । কারো সাথে কথা বলে না । তবে বাড়ি যাওয়ার জেদ ও করে না ।
 
রাজীব জানে কাজটা ঠিক হয়নি , রানীর মনের ঝড় থামেনি । জাস্ট দরজা জানালা গুলো বন্ধ হয়েছে । রানী এতো মানুষের সামনে কখনোই নিজের মনের দরজা জানালা খুলবে না । আজকেও অনেক রাত পর্যন্ত সবাই থাকে । এবং আয়শা ঘোষণা করে যে আজকে ও থাকবে । আজকে আর কেউ বাধা দেয়না । বিশেষ করে জান্নাত , কারন জান্নাতের ভয় হয় সবাই চলে গেলে যদি রাজীব এই নিয়ে আলোচনা করতে চায় তাহলে ও কি উত্তর দেবে । তাছাড়া জয়ের সাথে ওর বোঝাপড়া আছে , কি এমন করেছে জয় যে রানী এমন করছে ।
 
****
 
জান্নাত বসে আছে , কান শার্প । রাত প্রায় সারে বারোটা , জয় এখনো বাসায় ফেরেনি । জয়নাল এই নিয়ে কিছুক্ষন আগে রাগারাগি করে ঘুমাতে গেছে । জেগে আছে জান্নাত নিজের নখে  দাঁতে শাণ দিচ্ছে । আজকে আর বড় ভাই ছোট বোনের সম্পর্ক মাথায় রাখবে না ও । ঘটনার আকস্মিকতায় রাজীব হয়তো ওকে ঠিক ভাবে জিজ্ঞাস করেনি । কিন্তু রাজীব জিজ্ঞাস করবে । আর তখন হয়তো জান্নাত বলতে বাধ্য হবে যে ও বাইরে গিয়েছিলো , এবং তখন জয় ছিলো রানীর সাথে । জান্নাত যদি সত্যি না জানতে পারে তবে , এই নিয়ে জল অনেক দূর গড়াতে পারে । সত্যটা বের করতে পারলে জান্নাত নিজেই রানীর সাথে কথা বলে এসব মিটিয়ে নিতে পারবে । পারতেই যে হবে ওকে , কারন এই দুই পরিবারের সম্পর্ক ওর কাছে অনেক মূল্যবান । রাজীব ওর কাছে অনেক মূল্যবান । ও কিছুতেই রাজীব কে হারাতে পারবে না । ওর জীবনে রাজীবের খুব দরকার , আর রাজীবের জীবনেও ওকে দরকার ।
 
প্রায় মিনিট পনেরো পর দরজা খোলার খুট শব্দ শুনতে পায় জান্নাত । ঘর থেকে বের হয় , দোতলা থেকে নিচের হল ঘরের দিকে তাকায় । না দরজা বন্ধ , তাহলে কি ও ভুল শুনেছে । নিজের ঘরের দিকে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় । আর তখনি সিগারেটের গন্ধ এসে নাকে লাগে । ছাদের সিঁড়ি থেকে কেউ একজন নামছে । পরমুহুরতেই মুখোমুখি হয় জয় আর জান্নাত । জয়ের চোখ লালচে । হঠাত জান্নাত কে সামনে দেখে একটু ভড়কে যায় । দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করে জয় । আর তখন জান্নাত সিগারেটের গন্ধ ছাড়াও আরো একটি গন্ধ পায় । চোখ সরু করে তাকায় ভাইয়ের দিকে । শাণ দেয়া নখ আর দাঁত বের করে আনে। নিচু কিন্তু বেশ দৃঢ় স্বরে জিজ্ঞাস করে “ তুই কি করেছিস?” 

******
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#72
.....
Like Reply
#73
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#74
(28-09-2025, 01:27 AM)akashahmed4444 Wrote: .....

আকাশ  ভাই , আমি যে কোন ধরনের মন্তব্য পড়তে আগ্রহী । বুঝতেই পারছেন অভুক্ত ব্যাক্তিকে যা  দিবেন সে তাই খাবে । যে কোন ধরনের মন্তব্যই আমাকে আনন্দ দেবে ।প্রশংসা হোক আর সমালোচনা । 

(28-09-2025, 11:06 AM)Saj890 Wrote: Darun

ধন্যবাদ
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#75
কিছু সম্পর্কঃ ৬ ()  



জান্নাতের দিকে তাকিয়েই জয় বুঝতে পারে জান্নাত আজকে মুডে আছে । তাই লাগতে  চায় না জান্নাতের সাথে  , এমনিতেও ও নিজে খুব সুবিধাজনক অবস্থায় নেই । হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘোটনার পর থেকেই ওর মস্তিস্ক কাজ করছে না । তার উপর কিছু মদ্যপান করেছে । ও জানে জান্নাতের সাথে ঠিক পেরে উঠবে না ।
 
রানীর ঘুম ভেঙ্গে যেতেই জয় দ্রুত নিজের মুখ সরিয়ে নিয়েছিলো । কিন্তু ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে , রানী ভীষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে । জয় ও অনেক চেষ্টা করেও নিজের চেহারা থেকে ভয়ের ছাপ মুছে ফেলতে পারেনি । জয় মনে মনে নিজেকে গালি দিয়েছে , ও জানে যে ও কোন খারাপ কিছু করতে যায়নি , তবুও কেন ওর চোখে মুখে এমন ভয়ের ছাপ থাকবে ।
 
জয় অসহায় চোখে দেখছে , রানীর অবাক দৃষ্টি ধিরে ধিরে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে রুপান্তরিত হতে । অবিশ্বাস আর ভয় নিয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে ধিরে ধিরে নিজের হাত বুকের দিকে তুলে বুক ঢাকার চেষ্টা করেছে রানী । আর জয় তখনি বুঝতে পেরেছে রানীর মন থেকে ওর প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে । জয়ের মুখ থেকে আপনা থেকেই বেড়িয়ে এসেছিলো ওহ শীট , ওহ শীট । রানীর চোখে ওর প্রতি ভয় আর অবিশ্বাস দেখে জয়ের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো । কি করবে বুঝতে পারছিলো না ।
 
এদিকে সময়ের সাথে সাথে রানী নিজেকে আরো গুঁটিয়ে নিচ্ছিলো , ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো পারলে সেই মুহূর্তে নিজেকে ভ্যানিশ করে ফেলতো । জয় রানীকে বোঝাতে গিয়ে রানীর দিকে হাত বারিয়েছিলো  , বলতে চেষ্টা করেছিলো রানী বিশ্বাস কর…” কিন্তু শেষ করতে পারেনি নিজের বাক্য । তার আগেই রানী ভয়ে আঁতকে উঠে পেছনে চলে গিয়েছিলো আরো , রানীর ছলছল করতে থাকা চোখ গুলো যেন ওকে বার বার জিজ্ঞাস করছিলো , ‘ কেনো ? কেনো করলে আমার সাথে এমন,’   
 
জয় ভেবে পাচ্ছিলো না কিভাবে রানীকে বোঝাবে , ওর প্রতি অবিশ্বাস কিভাবে দূর করবে । প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিলো নিজের উপর । জয় উঠে দাড়িয়ে নিজের চুল নিজে খামচে ধরে , মেঝেতে পা ঠুকেছিলো । জয় জানে তখন ওর এমন আচরন করা ঠিক হয়নি। ওর ওমন আচরণ রানীর মনে আরো ভয় ধরিয়ে দেবে ।
 
এবং হয়েছিলোও তাই । রানীকে দেখে মনে হচ্ছিলো ও চিৎকার করবে । তাই জয় আরো ক্ষেপে গিয়েছিলো , ও ভেবেছিলো রানী কি ওকে এটুকুও কি চেনে না , রানী কি জানে না ওর দ্বারা এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করা সম্ভব নয় । ধিরে ধিরে জয়ের রাগ রানীর উপর সিফট হতে শুরু করেছিলো । রানীর অমন ভয়ার্ত দৃষ্টি , মুখ ফুটে না বলা অবিশ্বাস আর সহ্য হচ্ছিলো না জয়ের ।
শেষ পর্যন্ত জয়ের রাগ বিস্ফোরিতো হয়েছিলো ।  বেড়িয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে বলে এসেছিলো হ্যা আমি খারাপ ছেলে , ভবিষ্যতে আমার কাছ থেকে বেঁচে থাকিস , নইলে আজ যা করতে পারনি , সেটা করে দেবো”  
 
কথা শেষ করে জয় আর দাড়ায়নি , হসপিটাল হলেও দরজা একটু জোরেই লাগিয়ে ছিলো । সোজা গিয়েছিলো ভার্সিটির একটা হলে , যেখানে পার্টির ছেলে পেলে থাকে । সময় মতই গিয়েছিলো জয় , ছোট খাটো পাণের উৎসব চলছিলো  । জয় ও যোগ দিয়েছিলো , তবে উৎসব করার জন্য নয় , প্রচণ্ড রাগ থেকে । আর রাগের সাথে পান করলে যা হয় তাই হয়েছিলো উল্টা পাল্টা মাতলামি করছিলো ।
 
সন্ধার পর দলের এক ছোট ভাই ওর বাইকে করেই ওকে নামিয়ে দিয়েছিলো । এবং মাতাল জয় ওই ছেলেকে নিজের বাইক নিয়ে যেতে পারমিশন ও দিয়ে দিয়েছিলো । যা এপর্যন্ত আগে কোনদিন ঘটেনি । আসলে জয়ের তখন আর কোন দিকেই খেয়াল ছিলো না । বার বার চোখের সামনে রানীর ওই অবিশ্বাস আর ভয়ের দৃষ্টি ভাসছিলো ।  
 
হলের ভেতর খেয়েও খান্ত হয়নি । বগল দাবা করে কিছুটা নিয়ে এসেছিলো । এতক্ষণ রানীদের ছাদে বসে সেটা শেষ করেছে । তারপর টলতে টলতে সেই কাঠের তক্তা পেরিয়ে নিজেদের ছাদ হয়ে বাসার ভেতর এসেছে ।
 
কি করেছি মানে ? বুঝতে পারছিস না , হালকা পার্টি করেছিজয় জানে জান্নাত কি বলতে চাইছে , তারপরো না বোঝার ভান করে ।
 
জান্নাত অবশ্য জয়ের কথায় আশ্বস্ত হয় না , জান্নাত জানে জয় ওর প্রশ্ন ঠিক ই বুঝতে পারছে , জয় এতক্ষণ বাড়িতেই ছিলো , এবং ছাদে বসে মদ পান করেছে । জয় মাঝে মাঝেই ড্রিঙ্ক করে , এটা জান্নাত ভালোভাবেই জানে । কিন্তু জয় প্রতিদিনের মাতাল নয় । মাঝে মাঝে পার্টিতে খায় , এটাও জানে । তাই এটা নিয়ে জান্নাতের বা ওদের বাবার কোন সমস্যা নেই । সুধু মাঝে মাঝে মা ঝালেমা করে । তবে আজকে জয়ের ড্রিঙ্ক করার উদ্দেশ্য যে পার্টি করা নয় সেটাও জান্নাত বুঝতে পারছে । জান্নাতের ভয় হয় , জয় এমন কি করেছে, যে রাতের বেলা ছাদে বসে ড্রিঙ্ক করতে হচ্ছে । জয় যে রানীদের ছাদে ছিলো সেটা জান্নাত জানে না ।
 
তুই বুঝতে পেরেছিস আমি কি করার কথা জিজ্ঞাস করেছি, রানী কে কি বলেছিস রানী , আর পিজ্জা না খেয়ে চলে এলি কেনো?  আর সবচেয়ে বড় কথা রানীর সাথে তোর কাহিনি কি?”
 
আমি আবার রানী কে কি বলতে যাবো? আর হঠাত একটা কাজ পরে গেলো তাই চলে এসেছিলাম , বুঝিস ই তো রাজনীতি করিজয় খুব ঠাণ্ডা ভাবে উত্তর দেয় । আর এই ব্যাপারটা জান্নাত কে আরো বেশি কৌতূহলী করে তোলে । জয়কে জেরা করা হচ্ছে , তারপরো জয়ের এমন কুল থাকার কথা না । 

রানীর সাথে তোর সম্পর্কটা কি ?” জান্নাত বেশ ঝাঁজের সাথে জিজ্ঞাস  করে , মাতালের সাথে কথার প্যাচ খেলার ইচ্ছা ওর নেই ।
 
সম্পর্ক আবার কি ? আমার প্রতিবেশী , ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছিজয় অবাক হওয়ার ভান করে ।
 
জয় আমার সামনে ডাম্ব প্লে করবি না একদম , সত্যি করে বল , একজন প্রতিবেশীকে দেখতে তুই এক দিনে দুবার হসপিটালে গিয়েছিস?”   যেন খুব অবাক হয়েছে জান্নাত এমন একটা ভাব নিজের কণ্ঠে নিয়ে আসে । তারপর আবার , রাগত স্বরে জিজ্ঞাস করে সত্যি বল জয় আমার কাছে , তুই ভেবেছিস একবার , তুই যাদের প্রতিবেশী বলে উড়িয়ে দিচ্ছিস ওরা আমাদের কত আপনজন , ছোট আব্বুর কথা ভাব তোকে আমাকে কত স্নেহ করে , নিজের ছেলে মেয়ের মত , রাজীব তোর কত ভালো বন্ধু?” এটুকু বলে জান্নাত একটু থামে । জান্নাত দেখতে পায় রাজীবের কথা বলায় জয়ের ঠোঁটে একটা তাচ্ছিল্য ভরা হাসি ফুটে ওঠে
 
সত্যি করে বল ভাই , তুই রানীকে কি বলেছিস , রানী অমন করলো কেনো?”  জান্নাত এবার একটু নরম স্বরে বলে ।
 
রানী অমন করলো কেনএই কথা গুলো জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো , কিছুক্ষন মুখ বুজে থেকে তারপর জিজ্ঞাস করলো , “ কেমন করেছে
 
খুব কান্নাকাটি করেছে , বার বার বাড়ি চলে আসতে চেয়েছে, আমি ওকে এভাবে কোনদিন কাঁদতে দেখিনি , সত্যি করে বল ভাই , তুই কি ওকে এমন কিছু বলেছিস ……… তুই কি উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস , আমার কাছে লুকিয়ে লাভ কি ? আমার বুঝতে বাকি নেই তোদের মাঝে কিছু চলছে , এতটা ডাম্ব ভাবিস না আমাকে
 
জয় কোন উত্তর দেয় না , নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় , কিন্তু নাছোড় বান্দা জান্নাত পেছন পেছন যায় । জয় দরজা বন্ধ করার আগেই ঢুকে পরে ।
 
কিরে উত্তর দিলি না , তোর কাছে সম্পর্কের মূল্য না থাকতে পারে , আমার কাছে আছে , আমি কিছুতেই ওদের সাথে এমন করতে দেবো না , আর রানীর সাথে তোর যাই চলছে , সেটাও আমি দেখবো , আমি তোকে রানীর কাছেও ভিরতে দেবো না
 
জান্নাত চাপা স্বরে বললেও ওর কণ্ঠ থেকে প্রচণ্ড রাগ আর জেদ টের পাওয়া যাচ্ছে । এবং জয় ও সমান ইন্টেন্সিটিতে উত্তর দিলো তবে উত্তর দেয়ার আগে এক চোট হেসে নিলো , হাসি শেষে বলল যা তোর যা ইচ্ছা কর , হ্যা আমি রানীকে ভালোবাসি , পারলে ঠেকা আমাকে , তুই কেন এই দুনিয়ার কেউই আমাকে ঠেকাতে পারবে না , কেউ না , তুই , আব্বু , ছোট আব্বু , রাজীব , রানী , এমন কি আমি নিজেও নিজেকে ঠেকাতে পারবো না
 
যদিও জয় এখন মাতাল , কিন্তু জয়ের বলার ধরন দেখে জান্নাত বুঝতে পারে , জয় এই ব্যাপারে বেশ সিরিয়াস । যদি সিরিয়াস না হতো তাহলে এভাবে বলতো না , এড়িয়ে যেতো । যতই চেপে ধরা হোক না কেন জয়ের মুখ থেকে বের করা যেতো না ।
 
জান্নাত অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে , ওর মনে ভয় শেকড় গারতে থাকে । ও জানে জয় আর রানী দুজন দুই দুনিয়ার বাসিন্দা । ওদের এই সম্পর্ক সুধুই সমস্যা বাড়াবে । কিন্তু জয় যে রানীর পরতি অবসেসড সেটা জয়ের বলার ধরন দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে । আর জয়ের এই অবসেশন এই দুই পরিবারের জন্য সুধুই দুঃখ বয়ে আনবে ।
 
হ্যা তোকে ঠেকাবো আমি , আমি কিছুতেই রানীর মত একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে দেবো না , রাজীব আমাকে বলেছে , রানী বেহুস অবস্থায় বার বার একটি ছেলের সাথে কথা বলেছে , রাজীব জানে না সেই ছেলে কে , কিন্তু এটা জানে রানীর এই অসুস্থতার জন্য ওই ছেলে দায়ি , তুই ভেবে দেখছিস রাজীব জানতে পারলে কি হবে?”
 
জয়ের চোখ দুটো ধপ করে জ্বলে ওঠে , হিস হিস করে বলে ওই শালা লুজার আমাকে কি করবে , আমি কি ওকে ভয় পাই  নাকি? আর রানীর এমন অবস্থার কথা বলছিস , এর জন্য আমি নই ওই লুজার দায়ি , নিজের বানোয়াট নীতি বাক্য রানীকে গুলিয়ে খাইয়েছে , রানী কে একটা রোবটে পরিনত করেছে , ওই রাজীবের জন্যই রানী দোটানায় পরে এমন হয়েছে , রানীও চায় জীবন উপভোগ করতে , কিন্তু রাজীব শালা প্রতিবার পেছন থেকে টেনে রাখে , নিজে একটা লুজার হয়েছে রানীকেও লুজারে পরিনত করতে চায়”  কথা গুলো শেষ করে জয় দেয়ালে একটা ঘুষি মারে ।
 
কাকে তুই লুজার বলছিস?” জান্নাত ও পার্য চেঁচিয়ে ওঠে । রাজীব কে লুজার বলায় প্রচণ্ড রাগ হয় ওর । দায়িত্ব পালন করা তোর কাছে লুজার হওয়া হতে পারে , আর কারো কাছে নয় , আর  তুই জীবন উপভোগ করা বলতে কি বোঝাস ? আশেপাশের কারো কথা চিন্তা না করে সুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করাকে তুই জীবন উপভোগ করা বুঝিস ? যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তুই তো জীবনের মানেই বুঝিস না”  রাগের কারনে জন্নাত  বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে । হাসপাতালে এক রাত থেকে রাজীব আর রানীর জীবনের স্ট্রাগল ও নিজের চোখে দেখেছে , তাই বাপ মায়ের আদরে বখে যাওয়া জয়ের মুখে রাজীব সম্পর্কে এই ধরনের কথা শুনে ওর মাথায় আগুন উঠে গেছে ।
 
আর রানীর প্রতি এতো দরদ তোর , তাহলে তোর কারনে এমন কষ্ট কেনো পাচ্ছে ও?”
 
জয় আবার ক্ষেপে ওঠে,  বলে কারন ওই শিকদার বাড়ির প্রতিটা মানুষ একেকটা চিড়িয়া । এদের সবার চিড়িয়াখানায় থাকা উচিৎ , এরা সব সময় অজুহাত খোঁজে নিজেদের খামতি লুকানোর জন্য , কোন ছুতা পেলেই এরা এমন একটা অবস্থার তৈরি করে যেন সবাই ওদের ভিক্টিম ভাবে, ভিক্টিম সাজতে এরা খুব পছন্দ করে , দেখিস না রাজীব কে , ছোট আব্বুও কম যায় না , কি সুন্দর আমার আব্বুর টাকা এতদিন আটকে রেখে আবার চোখের পানিতে বাড়ি ফেরত নিয়ে নিলো, স্বার্থপর একেকটা”  
 
জয়!!!” জান্নাত অবিশ্বাস নিয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন । ছোট আব্বু সম্পর্কে জয় এই ধরনের কথা বলতে পারে সেটা জান্নাত কোনদিন চিন্তাও করেনি । “ তুই যে এতো বড় ছোটলোক সেটা আমি আগে জানতাম না , আমি ভাবতাম তুই আর যাই হোস ছোটলোক না , কিন্তু তুই আমার সেই ধারনা ভুল প্রমানিত করে দিলি । যাই হোক , একটা কথা শুনে রাখ , ওই টাকা আব্বুর ছিলো , তাই আব্বু কি করবে সেটা আব্বুর ব্যাপার । নিজে টাকা কামিয়ে তারপর আব্বুর টাকার হিসাব নিতে আসিস , তখন দেখা যাবে তোর মুরুদ কত, আর আজকে তোকে একটা কথা বলে রাখি , আর যাই করিস , আমার সামনে যদি ছোট আব্বুর সম্পর্কে এই ধরনের কথা বলসি , আর কেউ কিছু বলুক আর না বলুক আমি তোকে ছারবো না” এই বলে জান্নাত বেড়িয়ে যেতে নেয় , ভাবে মাতাল জয়ের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই । এখন যত কথা বলবে ততই ঝামেলা হবে ।
 
যেতে যেতে জান্নাত দরজার সামনে দাড়ায় , ভাবে আর একটা কথা বলা দরকার , জান্নাত জয়ের দিকে তাকায় , দেখে জয় নিজের বিছানায় বসে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে , “ এই শোন , আর একটা কথা শুনে রাখ , এর পর তোকে যদি রানীর আশেপাশে দেখি , তবে আমি আব্বুর কাছে বিচার দেব”
 
****
 
রানী বেডে শুয়ে আছে ঘুম আসছে না , কিন্তু এতক্ষণ ঘুমের ভান করেছে , সোফায় আয়শা শুয়ে আছে  , রজিব বাইরে হাটছে । নিজের আচরনের কারনে রানী বেশ লজ্জিত বোধ করে। কি একটা সিন তৈরি হলো আজকে … ভাবে রানী । কিন্তু ওই সময় ওর মন এতো খারাপ ছিলো যে বলার মত না , এখনো আছে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারছে না । কিভাবে প্রকাশ করবে , অন্য কেউ হলে বলে দিতো , কিন্তু কার নামে নালিশ করবে , যাকে নিয়ে অসংখ্যবার স্বপ্ন দেখেছে তার নামে !!! এর আগে কোনদিন কিছু নিয়ে এতো দুঃখ পেয়েছে কিনা সন্দেহ আছে ।
 
দুঃখ পাবেই বা না কেনো? যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখছে সেই  যদি ওর ঘুমের মাঝে একা পেয়ে এমন করে !!! প্রথমে রানীর বিশ্বাস হতে চায়নি , নিজের কানের কাছে গরম নিশ্বাসের ছোঁয়া পেয়ে , আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় । চোখ খুলতেই দেখে ওর গলার কাছে একজন মানুষ এর মাথা , প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় রানী । সভাবিক ভাবেই রানীর শরীর রিএক্ট করে , ঝট করে উঠে বসতে চায়। আর তখনি দেখতে পায় মানুষটা কে । এতো আশ্চর্য হয়েছিলো রানী বলার মত না ।
 
কিছুতেই রানীর বিশ্বাস হচ্ছিলো না জয় এমন করতে পারে । ওর নিজের হাত আপনাতেই ডিফেন্সিভ পজিশনে চলে আসছিলো। ভয়ে রানীর গলা শুকিয়ে গিয়েছিলো , ভয় এই ভেবে হচ্ছিলো যে জয় যদি এখন আরো এগুতে চায় , তাহলে ও কি করবে , যাকে ও মনে প্রানে চায় , সেই যদি ওকে অপমান করার চেষ্টা করে তাহলে ওর কি হবে ?
 
সেই ভয় থেকেই জয় যখন দ্বিতীয় বার ওর দিকে হাত বাড়ায় তখন আঁতকে ওঠে রানী । মনে মনে বার বার বলছিলো ‘ জয় তুমি এমন কেনো করলে , নিজের নারী সত্ত্বা জাগ্রত হওয়ার পর থেকে মনে মনে সুধু তোমাকেই কামনা করেছি , আর তুমি আমাকে এভাবে অপমান করলে’
 
মুখেও বলতে চেয়েছিলো , কিন্তু বলতে পারেনি । বোবা হয়ে গিয়েছিলো তখন । আর তখনি জয় প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলো । জয়ের রাগ দেখে রানী আরো ভেঙ্গে পরেছিলো , নিজের শরীরের প্রতি ওর ঘৃণা জেগে উঠেছিলো , ভেবেছিলো ওর শরীরের ই সব দোষ , জয় ওকে না চেয়ে ওর শরীর চায় । নিজের শরীরের কাছে নিজের স্বত্বার এমন পরাজয় রানীর কাছে সহ্য হচ্ছিলো না ।
 
আর তখনি জয় ওকে থ্রেট করে বেড়িয়ে যায় । ধরাম করে যখন দরজা আটকে যায় , তখন ওর কাছে মনে হতে থাকে এই পুরো পৃথিবীতে ও একা , এবং ওর শরীরে এক টুকরো কাপড় ও নেই । বিবস্ত্র লজ্জিত ওর দিকে তাকিয়ে , ঘরের দরজা জানালা , দেয়াল , আসবাবপত্র সব হাসছে , লালসার দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে । ওরা যেন বলছে , তোর শরীরটাই তোর সব , এই শরীর ছাড়া তুই আমাদের মতই ক্লিব । তোর মন নেই প্রান নেই আছে সুধু  কিছু রক্ত আর মাংস । তোকে সবাই তোর এই ফর্সা চামড়া , আর নরম মাংসের জন্যই পছন্দ করে । গরু ছাগল কে যেমন জবাই করার আগে খুব খাতির যত্ন করা হয় তোকেও জয় এই জন্যই ভুলাচ্ছিলো । আজকে তোকে একা ঘরে পেয়ে জয় মাংসের লোভ সামলাতে পারেনি । তোর নরম বুকে দাঁত বসাতে চেয়েছিলো , তোর নোনা চামড়া জিভে চেটে নোনতা স্বাদ নিতে চেয়েছিলো ।
 
এর কিছুক্ষন পর জান্নাত ঘরে ঢোকে , জান্নাত জয় কে না পেয়ে বেশ অবাক হয় । ওকে জয়ের কথা জিজ্ঞাস করে । তখন রানী খুব কষ্ট করে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সুধু বলতে পারে “ চলে গেছে”
 
জান্নাত অবশ্য কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলো । কিন্তু রানী যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার । কিন্তু সন্ধার পর যখন রাজীব ঢোকে তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না । কারন জীবনে যত সমস্যা এসেছে রানী রাজীবের সাথে শেয়ার করেছে । রাজীব যেমন করেই হোক ওর সমস্যা ভুলিয়ে দিয়েছে । কিন্তু আজকে আর বলতে পারবে না , কিভাবে বলবে? কার নামে বলবে ? জয়ের নামে ? ওর একান্ত কাম্য পুরুষের নামে ? কি বলবে ? আমার কামনার পুরুষ আমাকে একা পেয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় …… আর চিন্তা করতে পারছিলো না , নিজের অসহায়ত্ব ওকে পাগল করে তুলছিলো । তাই তখন  নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ছিলো রানী । জান্নাতের উপস্থিতি তখন ওর মাথায় ছিলো না ।
 
রানী মাথা তুলে বড় আম্মুর দিকে একবার তাকায় । ঘুমাচ্ছে আয়শা । রানী মনে মনে ভাবে এর পর জয়ের সাথে দেখা হলে ও কিভাবে মুখ দেখাবে ।
 
****
 

 
রাজীব করিডোর ধরে হাঁটছে আর ভাবছে সাথে জান্নাত থাকলে ভালো হতো , জান্নাত পাশে থাকলে বিপদের সময় ও মনে শক্তি থাকে । রাজীবের কাছে মনে হচ্ছে সামনে ওর বড় বিপদ আছে । রাজীব মনে মনে বলে ‘ আমার যত বড় বিপ্পদ ই হোক তুই আমার পাশে থাকিস জান্নাত , তুই সাথে থাকলে কোন বিপদ ই আমাকে দুর্বল করতে পারবে না’
 
****
 
জান্নাত নিজের বিছানায় শুয়ে আছে , জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ওর মুখের উপর এসে পরছে । বার বার রাজীবের অসহায় মুখটা ওর চোখে ভেসে ওঠে । রানী যখন রাজীবকে ধরে কাদছিলো , রাজীব বার বার অসহায় চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছিলো। রাজীব যতবার তাকাচ্ছিলো ততবার ই জান্নাতের মন মমতায় ভরে উঠছিল কানায় কানায় । ইচ্ছে হচ্ছিলো রাজীবের হাত ধরে সাহস যোগায় , বলে ‘তুই চিন্তা করিস না আমি আছি তোর পাশে’
 
****
 
জয় এখনো মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে , ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে , কিন্তু মাথা তুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না । কেউ ওর ভেতরটা দেখতে পায় না , সবাই ওর উপরটা দেখেই বিচারের ফলাফল দিয়ে দেয় । আর সবারটা জয় মাফ করতে পারে , কিন্তু রানী আচরন কিছুতেই মাফ করতে পারে না । জয় চায় রানী ওর ভেতর টা দেখুক , ওকে বুঝুক । আর কেউ না বুঝলেও চলবে ।
 
****
 
আরো একজনের নির্ঘুম রাত কাটছে । জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে ভাবছে , সব কিছু কি ভুল ছিলো । পুরো অংক কষে ফলাফল কি শূন্য হবে । ছেলে মেয়েরা সভ্য শান্ত , ভালো স্টুডেন্ট , কিন্তু ওরা কি সুখী । স্বাভাবিক জীবন কি ওদের আছে । আর দশটা এই বয়সি ছেলে মেয়ের মত ওরাও কি স্বাধীন নাকি দায়িত্ব , কর্তব্যের বেড়াজালে আটকে হাঁসফাঁস করছে । নিজের বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে রহিম । মনে মনে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে ‘ হে খোদা তুমি আমার ছেলে মেয়ে কে স্বাভাবিক জীবন দাও” 

***** 

কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply
#76
Darun
Like Reply
#77
কিছু সম্পর্কঃ ৭

 
ডাক্তার বলেছিলো তিনদিনের মাঝে বাড়ি চলে আসতে পারবে রানী , কিন্তু সেই তিনদিন সাত দিনে গিয়ে ঠেকেছিলো । বাড়িতে এসেও বেশ অবসন্ন ছিলো রানী , খাওয়া দাওয়ায় রুচি নেই । কিছুই প্রায় খেতে চায় না । এক মাত্র আয়শা এলে তবে কিছু খায় । আয়শা খুব আদর করে খাওয়ায় রানীকে । খাওয়া শেষেও রানীকে নিয়ে অনেকক্ষণ সময় কাটায় আয়শা । রানী আয়শার বুকে মাথা রেখে বসে থাকে ।
 
একজন ডায়েটিশিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো রানীকে , মিনিমাম ৫৫ কেজি ওজন করতে বলা হয়েছে । কিন্তু ৪৯ এ এসে আটকে আছে রানী । মাংস খেলেই নাকি ওর বমি হয় ।  সেমিস্টার ফাইনালে ওর অসুস্থতার প্রভাব বেশ ভালোভাবেই পরেছে । ভার্সিটির প্রথম সেমিস্টারেই এই অবস্থা দেখে রানী আরো অবসন্নতায় ভুগতে শুরু করেছে ।
 
তবে ওর চারপাশের মানুষ গুলোর চেষ্টায় ধিরে ধিরে কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে । কিছুটা ওজন বৃদ্ধি হতে শুরু হয়েছে । জান্নাত রানীকে চোখে চোখে রাখে । তবে তেমন কষ্ট করতে হয় না । রানী নিজেই জয় কে এড়িয়ে চলে । এমন কি জয় নিজেও না পারতে রানীর সামনে পড়তে চায় না ।
 
রাজীব ও আজকাল যতটা সম্ভব বাইরে কম সময় কাটায় । ক্লাস শেষে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফিরে আসে । যতটা সম্ভব রানীর সাথে সময় কাটায় । এমনিতেই বসে বসে কথা বলে , মাঝে মাঝে জান্নাত এসে যোগ দেয় । তিনজনে বসে লম্বা আড্ডা দেয় । এ দুজনের সাথে রানী যখন থাকে , তখন সময়টা ভালই কাটে , কিন্তু একা হলেই সমস্যা । মাঝে মাঝে নিজের শরীরে ক্ষত করতে মন চায় । নিজের শরীর ওর কাছে একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিনত হয়েছে । একা শুয়ে শুয়ে শরীরের সাথে অন গড়া কথা বলে । বেশিরভাগ সময় সেই আলোচনা ঝগড়ায় পরিনত হয় । তখনি রানীর ইচ্ছে হয় শরীরে ক্ষত তৈরি করতে ।
 
একদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে জেনারেল স্টোর থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে হঠাত কি মনে করে একটা ব্লেড কিনে নিয়ে আসে । হেটে হেটে যখন বাড়ি ফিরছিলো , তখন বার বার ইচ্ছে হয়েছে ব্লেড টি ফেলে দিতে । কিন্তু ফেলে দেয় না রানী । নিজের বিছানার গদির নিচে রেখে দেয় । রাতের বেলা রানীর মনে অস্থিরতা দেখা দেয় । বার বার ও বিছানার নিচে রাখা ব্লেডের কথা ভাবতে থাকে । ধিরে ধিরে উঠে বসে রানী , বুকের ভেতর হৃদপিণ্ড ডাবল টাইম কাজ করতে থাকে । ধক ধক শব্দ রানী নিজেও শুনতে পায় । রানীর হাতের তালু ঘেমে আসে , কপালেও বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেয় । কিন্তু মনের ভেতর থেকে কে যেন সুধু বলতে থাকে , নে নে ব্লেড হাতে নে , যার জন্য তোর এই অবস্থা তাকে সাঁজা দে । তোর শরীর যদি সুন্দর না থাকে তাহলে মানুষ তোকে দেখবে , তোর শরীর নয় ।
 
রানী ব্লেড হাতে নেয় , মোবাইলের লাইট জ্বালায় , বাম হাতের দিকে তাকায় , কি সুন্দর দেখতে , কোমল ত্বক , খুব ফর্সা , নীল শিরা দেখা যাচ্ছে , চামড়ার উপরে প্রায় অদৃশ্য কিছু লোম । তুই খুব সুন্দর নারে?’ রানী অস্ফুস্ত স্বরে জিজ্ঞাস করে । কেউ একজন ওর কানে বলে হ্যা সুন্দর ,তাইতো জয় আমাকে দেখে নিজের ধৈর্য ভাঙতে বাধ্য হয়েছিলো হা হা হা
 
না তুই জয় কে সিডিউস করেছিসরানী কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে
উত্তরে সেই কণ্ঠ তাচ্ছিল্যের স্বরে হাঁসে , বলে তুই তাই ভাবিস, না? আরে জয় যদি সত্যি সত্যি তোকে চাইতো , তাহলে কি নিলুর সাথে সেদিন ঐ ভাবে চলে যেতো ? তোর সামনে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতেও ভয় পেতো , জয় আসলে আমাকে চায় , আর আমার এসব কোন সমস্যা নেই , জয় হাজার মেয়ের সাথে ফস্টিনস্টি করুক , তাতে আমার কি , আমার ওর স্পর্শ পেলেই চলবে”  
 
আজকে আমি তোর অহংকার ভেঙ্গে দিচ্ছি দাড়াএই বলে রানীর ঠোঁটে একটা ক্রূর হাসি ফুটে ওঠে । ডান হাতে ব্লেড নিয়ে ধিরে ধিরে বাম হাতের দিকে এগিয়ে আসে । রানীর ডান  হাত কাঁপছে , তৃতীয় একটা  একটা কণ্ঠ ওকে বলতে থাকে , “রানী এ কাজ করিস না, তুই কি করছিস , নিজের ক্ষতি করছিসকিন্তু রানী তৃতীয় কণ্ঠের কথায় কর্ণপাত করে না । এদিকে দ্বিতীয় কণ্ঠও আর্তনাদ করতে থাকে , বার বার রানীর পায়ে পড়তে থাকে । রানী এক পৈশাচিক আনন্দ পায় । কনুই থেকে একটু উপরে পর পর কয়েকটা পোচ দেয় । প্রথমে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের হয় , লম্বা কাটা জায়গায় , তারপর বড় বড় ফোঁটায় রক্ত ঝরতে থাকে । রানী আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করে । ও কোন ব্যাথা পাচ্ছে না ।  
 
এর পর থেকে প্রায় রাতেই রানী এই কাজ করতে থাকে , হাত পা পেট শরীরের যে সব যায়গা সচরাচর ঢাকা থাকে সেসব জায়গায় ব্লেড দিয়ে কাটতে থাকে । রানীর দাগহীন শরীরে প্রায় দেখতে পাওয়া যায় না এমন অসংখ্য দাগে ভরে ওঠে ।
 
এর পর থেকে রানী বেছে বেছে লম্বা হাতার জামা কাপড় পরতে শুরু করে । কেউ তেমন কিছু খেয়াল করে না । কিন্তু দিনে দিনে রানীর ভয় বাড়তে থাকে , রাতে যখন এ কাজ করে তখন রানী খুব মজা পায় । কিন্তু দিনের বেলা প্রচণ্ড ভয় পায় । কতবার ব্লেড ফেলে দিয়েছে , কিন্তু আবার কিনে নিয়ে আসে ।
 
কারো কাছে বলতেও সাহস পায় না । বললে যদি পাগল ভাবে । এর মাঝে রানী একটা আয়োডিনের বোতল আর কিছু তুলা কিনে এনে ওর ঘরে লুকিয়ে রেখছে । রাতের বেলা শরীর কাটে দিনের বেলা আয়ডিন লাগায় ।
 
****
 
রাজীব ভেবে পায় না , আজকাল কি জান্নাতের সাথে এমনি এমনি দেখা হচ্ছে , নাকি ও ইচ্ছে করেই এমন সব জায়গায় থাকছে যেখানে জান্নাতের থাকার কথা । আজো দুবার দেখা হয়ে গেছে । প্রথমবার কথা হয়নি , হাসি বিনিময় হয়েছে , তবে দ্বিতীয়বার জান্নাত ওকে ডেকেছে ।
 
জান্নাত ডাকতেই রাজীব লজ্জায় লাল হয়ে গেছে । যেন চোর ধরা পরেছে এমন অবস্থা । জান্নাতের সামনে দাড়াতেই জান্নাত বলল কিরে তোর চেহারা এমন লাল কেনো?” বলে জান্নাত হাঁসে । হাসিতে মুক্ত ঝরে , এমন অনেক মানুষ আছে যাদের সুধু ঠোঁট হাঁসে না , ঠোঁটের সাথে চোখ ও হাঁসে । জান্নাত সেই দলের মানুষ । বড় বড়  টানা চোখ দুটোতে হাসির ঝলক দেখতে পায় রাজীব। বাদামি চোখের মনি দুটো  বুদ্ধি আর আত্মবিশ্বাসে চকচক করছে । রাজীব ভাবে এই আত্মবিশ্বাসের সিকিভাগ ও যদি ওর থাকতো তাহলে কত ভালো হতো । হয়তো জান্নাত কে মুখ ফুটে বলতে পারতো , যে ওর হাসি কত উপকারি জিনিস , ঔষধি ক্ষমতা আছে ওর হাসির ।  আজকাল জান্নাত চশমা পরে । খুব মানিয়েছে জান্নাত কে , চশমা ওর বড় বড় টানা চোখের সৌন্দর্য কমানোর চেয়ে বাড়িয়েছে বেশি ।  
 
চশমা পছন্দ হয়েছে? তোর লাগবে? খুলে দেবো?” রাজীব কে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জান্নাত সহাস্যে প্রশ্ন করে । এবং বেশ মজা পায় এই দেখে যে রাজীব ঘাবড়ে গেছে ওর প্রশ্ন শুনে । কি বলবে বুঝতে পারছে না । শব্দের জন্য হাতরে ফিরছে । বেশ কিউট লাগছে রাজীব কে বিব্রত অবস্থায় । নাকের ডগায় হালকা ঘাম জমে উঠেছে । জান্নাত বেশ  মজাও পাচ্ছে আবার মায়াও হচ্ছে ।
 
শেষে জান্নাত ই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে , বলে “ তুই তো দেখি মজা করাও বুঝিস না, আরে চশমার কথা মজা করে বলেছি”
জান্নাতের রিনিঝিনি হাসির সাথে রাজীবও হাঁসে , কিছুটা স্বাভাবিক হয় রাজীব । এদিকে জান্নাত মনে মনে ভাবে  ‘আরে বুদ্ধু , তোর জায়গায় অন্য কোন ছেলে হলে এই সুযোগ ছারতো না , আমার চোখ নিয়ে কবিতা ফেঁদে ফেলতো , আর তুই গাধা উত্তর ই দিতে পারলি না, না জানে আমার কপালে কোন দুঃখ আছে, এই আধুনিক যুগের বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভাঙ্গতে না জানি আমার কত সময় লাগবে , তবে সমস্যা হচ্ছে আমি  নিজে মেনকার মত সুন্দরীও না  , নাচতেও জানি না’   
 
“ তা মিস্টার রাজীব শিকদার আজকাল বিতর্ক ছেড়ে গোয়েন্দা হওয়ার সখ হয়েছে নাকি?” জান্নাত রাজীব কে আরো একটা সুযোগ দেয় , যেন রাজীব কিছু একটা রোম্যান্টিক বলার সুযোগ পায় । কিন্তু হতাশ হয়ে দেখে , এই সুযোগ ও রাজীবের মাথার উপর দিয়ে গেছে । ওর প্রশ্ন শুনে হাবলার মত তাকিয়ে আছে । জান্নাতের ইচ্ছে হয় দেয়ালে নিজের মাথা ঠুকে দেয় ।
 
“ কেন আমি আবার কি করলাম” রাজীব অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে ,
 
“ এই যে আমার পেছনে লেগেছিস?” জান্নাত ডেসপারেট হয়ে এটেম্পট করে ।
 
“ আমি কই তোর পেছনে লাগলাম?” রাজীবের ফর্সা মুখ কিছুটা লাল হয় , রাজীব বুঝতে পারে , জান্নাত ওদের এই বার বার দেখা হওয়া কে ওর ইচ্ছাকৃত ব্যাপার বলে ধরে নিয়েছে ।
 
“ ধরা খেয়ে যাবি কিন্তু , সাংবাদিকের পিছু নেওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা না ,”
 
“ তাই ? আমি যদি একি দাবি করি? যে তুই আমার পিছু নিয়েছিস” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
 
“ এটা কোন গুরুতর ব্যাপার না , একজন সাংবাদিক যে কারো পিছনে লাগতে পারে , কিন্তু সাংবাদিকের পিছনে লাগে সুধু মাত্র ক্রিমিনালরা , বুঝেছিস”
 
রাজীব হাঁসে , জান্নাতের সাথে কথা বলতে ওর সব সময় ই ভালো লাগে । তবে ইদানিং সুধু ভালো লাগাই নয় , রাজীবের কাছে মনে হয় জান্নাতের সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্য ওর মন অধির হয়ে অপেক্ষা করে । “ তা আমি কি ক্রাইম করলাম?”
“ তোর ক্রাইম হলো ……” জান্নাত কথা শেষ করতে পারে না , একটা সিনিয়র মেয়ে ওকে হাত তুলে ডাক দেয় । আর জান্নাতের সাথে সাথে মনে পরে যায় , এর সাথে ওর একটা হলে যাওয়ার কথা , সেই হলের বসবাস অযোগ্য পরিস্থিতির  রিপোর্ট করতে  যাওয়ার কথা ।
“ এই আমি গেলাম রে পরে কথা হবে” এই বলে জান্নাত আর দাড়ায় না , প্রায় দৌরে চলে যায় । রাজীব জান্নাতের চলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে । মন কিছুটা আশাহত হয়েছে বললে ভুল হবে না । তবে এই অল্প সময় টুকু ও কম কিছু নয় । রাজীবের কাছে মনে হয় সারাদিনের জন্য চার্জ হয়ে গেছে ও ।
 
“ ওই ইয়াম্মি চিজ টা কে রে” জান্নাত  এসে সাম্ননে দাড়াতেই । সিনিয়র মেয়েটি জান্নাতকে জিজ্ঞাস করে ।
 
“ ইয়াম্মি না পানসে সেটাই তো এখনো বুঝতে পারলাম না” জান্নাত রাজীবের দিকে একবার তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলে ।
 
“ মানে কি?” সিনিয়র মেয়ে চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাস করে , তার আবার বলে “ চেখে দেখিস নাই এখনো? এই জিনিস ফেলে  রাখতে আছে , তুই না পারলে আমাকে বল”
 
“ আরে না না তোমার কষ্ট করতে হবে না , আমি সময় মত চেখে নেবো” জান্নাত হাসতে হাসতে বলে ।
 
“ দেরি করিস না , এমন লাল্টু ছেলে কেউ না কেউ ফুসলিয়ে নিয়ে যাবে, আমি না হয় ছেড়ে দিলাম , অন্য কেউ কিন্তু ছাড়বে না, হা হা হা”     
 
“ কি যে বলো না , এ যাবে অন্য কারো সাথে , আমার সামনেই পারলে ঘোমটা দিয়ে ঘোরে” জান্নাত একটু মন মরা হয়ে বলে ।
 
“ গে নাকি, আজকাল তো এদের সংখ্যা গানিতিক হাড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে??”
 
“ কি জানি , হতেও পারে “ জান্নাত মজা করে বলে , আবার একবার রাজীবের দিকে তাকায় মুখে হাসি নিয়ে ।
 
“ একদিন চেপে ধরে নিজের টেরিটোরি মার্ক করে দে না, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারবি , আর এটাও বুঝে যাবি গে কিনা” সিনিয়র মেয়েটি জান্নাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে । শুনে জান্নাত হা হা করে হেসে ওঠে , একবার রাজীবের দিকে তাকায় , রাজীব তখনো দাড়িয়ে আছে , ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
 
“ না না ভাই ওটা ছেলেদের অধিকার , ওটায় হাত দিলে আবার পুরো বিশ্ব হতভম্ব হয়ে যাবে , নীল ড্রামের মত সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার নাম জনপ্রিয় হয়ে যাবে , আর পুরুষ জাতী এখন যেমন নীল ড্রামের কারনে  বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছে তখন আবার প্রেম করতেও ভয় পাবে , বড় ভীতু  প্রজাতি এরা”     
 
এদিকে রাজীব দূর থেকেই জান্নাতের হাসজ্জল মুখটা দেখছে । চলে যাবো বলেও যাওয়া হচ্ছে না । বেশ কয়েকবার জান্নাত ওর দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কি যেন বলেছে । রাজীব বুঝতে পারছে ওকে নিয়েই আলাপ হচ্ছে । কিন্তু রাজীবের এতে কিছু এসে যায় না । রাজীব তন্ময় হয়ে সুধু জান্নাত কেই দেখে যাচ্ছে । একটা মেয়ে যাকে ও প্রায় জন্ম থেকেই চেনে , ভেবে পায় না কি করে সেই মেয়েটার প্রতি এতো টান হঠাত করেই অনুভূত হয় ?
 
রাজীব ভেবে পায় না এই জান্নাতের মাঝে এমন কি আছে যা আগে ছিলো না । নতুন করে কি এমন যোগ হলো যা রাজীব কে চুম্ববক এর মত টানছে । রাজীব একটু অতীতে ডুব দেয় । তখন রাজীব অন্য রকম ছিলো । বেয়াড়া রাজীব অন্য কারো সাথে যেমন তেমন জান্নাতের সাথে সব সময় ই ভালো আচরণ করতো । কলেজ থেকে ফেরার সময় প্রায় ই জান্নাতের জন্য চকলেট নিয়ে আসতো , আর রানীকে লুকিয়ে তা জান্নাত কে দিতো । রাজীব ভাবে , জান্নাতের প্রতি টান সেই ছোট বেলা থেকেই ছিলো , কিন্তু মাঝে সেটা নানবিধ কারনে চাপা পরে গিয়েছিলো । আবার সেটা নতুন করে জেগে উঠেছে , এবং দ্বিতীয়বার আর বেশি শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে । 

*****

সবাইকে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা , দুর্গা মা আমাদের সবার মনের দুঃখ ক্লেশ মুছে দিয়ে আনন্দে ভরিয়ে দিন । 

কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 2 users Like gungchill's post
Like Reply
#78
কিছু সম্পর্কঃ ৭ ()

 
সন্ধার পর রাজীব নিজের পড়ার টেবিলে বসে আছে , তবে বইয়ে ওর মন নেই । কিছুক্ষন আগে পর্যন্ত জান্নাত ওর আর রানীর সাথেই ছিলো । কিছুক্ষনের জন্য রানী রান্না ঘরে চা করতে গিয়েছিলো । রানী নিজে থেকে চা করতে যেতে চাওয়ায় রাজীব খুশিই হয়েছিলো । খুশি হওয়ার করান দুটো , প্রথম কারন হচ্ছে রানী ধিরে ধিরে নিজের স্বাভাবিক লাইফে ফিরছে । আর দ্বিতীয় কারন হচ্ছে জান্নাতের সাথে কিছুটা একা সময় পাওয়া ।  পরন্ত বিকেলে এমন নরম রোদে বারান্দায় জান্নাতের সাথে একা বসতে পারা রাজীবের জন্য আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত ব্যাপার । এমন নয় যে , রাজীব এই সুযোগে জান্নাতের হাত ধরে বসে , দু লাইন প্রেমের কবিতা শুনিয়ে দেবে । সেই ক্ষমতা এখনো রাজীবের হয়নি । তবে দুজন মুখোমুখি বসে থাকাও ওর জন্য অনেক পাওনা ।
 
রাজীব চুপ করে বসে থাকেই তুষ্ট ছিলো , কথা শুরু করেছিলো জান্নাত । হঠাত রাজীব কে অবাক করে দিয়ে পুরনো দিনের কথা তুলে এনেছিলো । জান্নাত বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলেছিলো রাজীব তোর মনে আছে একদিন তুই আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলি?” কথাটা বলার সময় জান্নতের ঠোঁটের কোনে একটা মিষ্টি হাসি লেগে থাকা , যেন ও সেই দৃশ্য এখনো চোখের সামনে দেখতে পারছে ।
 
রাজীব মাথা চুলকায় , তারপর লজ্জিত ভাবে হেসে  বলে হ্যা মনে আছে , সেদিন একটু বেশি ই করে ফেলেছিলাম
 
ঘটনাটা এই শিকদার বাড়ির সামনেই ঘটেছিলো।  বিকেল বেলায় রাজীব রানী জান্নাত আর জয় আরো কিছু ছেলে পেলের সাথে খেলছিলো । সেই সময় জান্নাত আর রাজীবের মাঝে ঝগড়া লেগে গিয়েছিলো । জান্নাতের দাবি রাজীব আর জয় চিট করেছে । আর রাজীবের দাবি ওরা চিট করেনি । জয় চুপ ছিলো পুরো সময় । আসলে চিট করেছিলো জয় । ঝগড়ার এক পর্যায়ে জান্নাত রাজীব কে ধাক্কা দেয় , আর তখন রাজীব ক্ষেপে গিয়ে জান্নাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় , তার তাতে জান্নাতের হাটুর কাছে অনেকটা ছিঁড়ে গিয়েছিলো । দরদর করে রক্ত পরছিলো । রাজীব যদিও তখন রাগে গরগর করছিলো , কিন্তু রক্ত দেখে ভড়কে গিয়েছিলো ।
 
এর পর বেশ কয়েকদিন রাজীবের সাথে জান্নাতের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিলো । তারপর একদিন রাজীব দুপুর বেলায় জান্নাতদের বাড়ি গিয়ে জান্নাত কে ডেকে আনে । ডেকে আনে বললে ভুল ই হবে , রাজীব জান্নাত কে প্রায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে । জান্নাত কিছুতেই আসবে না । রাজীবের হাতে ধুম ধাম কিল ঘুষি লাগিয়ে যাচ্ছিলো লাগাতার । শেষে এক পর্যায়ে বাড়ির নির্জন একটি কোনে এনে ছেড়ে দেয় জান্নাত কে । রাগে ফুঁসতে থাকা জান্নাত রাজীবের উপর কিল ঘুষির বৃষ্টি বর্ষণ শুরু করে দিয়েছিলো ছাড়া পেয়ে । কিন্তু রাজীব ছিলো একদম নিথর । যখন জান্নাত একটু শান্ত হয়ে আসে , তখন রাজীব ওকে একটা কাগজ আর কিছু চকলেট দেয় ।
 
জান্নাত তখনো রাজীবের দিকে সন্দেহর চোখে তাকাচ্ছিলো , ও ভাবছিলো রাজীব নিশ্চয়ই কোন প্রাঙ্ক করার মতলবে আছে । ধিরে ধিরে জান্নাত কাগজ খোলে । সেখানে ছেলেমানুষি হাতের লেখা মাফ করে দে আর কোনদিন তোকে মারবো না, কানে ধরলাম
 
জান্নাত হেসে রাজীব কে মাফ করে দিয়েছিলো , মাফ করে দেয়ার মুক্ষ কারন চকলেট ছিলো না , ওই কানে ধরার কথাটাই জান্নাতকে বেশি খুশি করেছিলো । তবে সেই খুশির অনুভূতি খুব দ্রুত চলে গিয়েছিলো । কারন রাজীব তখন হঠাত করেই জান্নাত এর গালে একটা চুমু খেয়ে দৌর দিয়েছিলো । সিনেমায় নায়ক নাইকার চুমু খাওয়া দেখে ওই সময়ের কম বয়সি রাজীবের মনে হয়েছিলো জান্নাত কে চুমু  খাওয়া উচিৎ ।
 
জান্নাত অবাক হয়ে রাজীবের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো । তবে হাতের চকলেট বেশিক্ষণ জান্নাত কে ওই চুমুর কথা ভাবতে দেয়নি । এর পর বেশিদিন রাজীবরা এই বাড়িতে থাকেনি । আর এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর রাজীব আর আগের রাজীব ছিলো না ।
 
ধাক্কাটাই কি সুধু বেশি বেশি  ছিলো না আরো কিছু ছিলো সাথে ”  জান্নাত রাজীবের লাজুক হাসি দেখে ওকে আরো একটু বিব্রত করার জন্য বলে , বিব্রত অবস্থায় রাজীব কে খুব কিউট লাগে দেখতে ।
 
রাজীব অবাক হয়ে জান্নাতের দিকে তাকায় , ওই কথা যে জান্নাতের মনে থাকবে সেটা রাজীব ভাবেনি , কারন ওই সময়কার বেশিরভাগ কথাই রানীর মনে নেই , জান্নাত তো রানীর বয়সিই ।
 
রাজীব হাঁসে , বলে তখন ছোট ছিলাম তাই কত কিছুই ত না বুঝে করে ফেলতাম
 
এর পর যে প্রায় প্রতিদিন আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতি সেটা কি না বুঝেই করতি?” জান্নাত একটু মন মরা হয়ে বলে ।
 
জান্নাত কে হঠাত এমন মন মরা হয়ে উঠতে দেখে রাজীব অস্থির হয়ে ওঠে , নিজেকে নিজেক গালি দেয় , মনে মনে ভাবে কি দরকার ছিলো অমন করে বলার , কথা গুছিয়ে বলতে না পারার জন্য আরো এক দফা গালি দেয় নিজেকে ।
 
আরে না না আমি ওভাবে বলতে চাইনিরাজীব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলে
 
তাহলে কিভাবে বলতে চেয়েছিস?”
 
কি বলবো , এর পর জীবনে কত কিছু ঘটে গেলো , সময়ের সাথে সাথে আমি আর আগের রাজীব থাকতে পারলাম না, সব কিছুতেই সংকোচ সব কিছুতেই দ্বিধা রাজীব একটু উদাস হয়ে বলে ।
 
রাজীবকে হঠাত এমন উদাস হয়ে যেতে দেখে জান্নাত দ্রুত পরিস্থিতি পরিবর্তন করার চেষ্টা করে , বলে এখন যদি আমি আমার পাওনা চকলেট গুলো  সুদ সমেত ফেরত চাই। তাহলে কেমন হবে?” কথা গুলো বলে জান্নাত মাথা নিচু করে লাজুক ভাবে হাসে ।
 
রাজীব জান্নাতের কথা শুনে অবাক হয়ে জান্নাতের দিকে তাকায় , জান্নাত একটু লাজুক ভাবে হাসছে , কিন্তু ওর চোখ জোড়া অন্য কথা বলছে , ওরা জেন চাইছে রাজীব কিছু একটা বলুক , জেনতেন ভাবে নয় খুব সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়ে বলুক । রাজীব চেষ্টা করে , কিন্তু কিছুতেই ওর মুখ থেকে শব্দ বের হয় না ।
 
কিন্তু রাজীবের উত্তর দেয়ার সুযোগ হয় না , কারন রানী চা নিয়ে ফিরে আসে , জান্নাতের শেষ কিছু কথা রানী শুনে ফেলে, “ কিসের সুদ , কি কেমন হবে? তোরা কি সুদি কারবার চালু করতে যাচ্ছিস নাকি?”
 
হঠাত এমন করে রানীর আগমনে রাজীব আর জান্নাত দুজনেই একটু অনভিপ্রেত হয়ে যায় , দুজন দুদিকে তাকিয়ে বলে আরে না না । তেমন কিছু না
রানীর কাছে দুজনের আচরণ ই কেমন যেন ঠেকে , কপাল কুঁচকে দুজনের দিকেই তাকায় , এদিকে জান্নাত আলোচনার মোড় অন্যদিকে ফেরানোর জন্য বলে চায়ে চিনি কম হয়েছে রে, একটু চিনি এনে দে না
 
তুই নিয়ে আয় , চা বানিয়ে খাওয়াবো আবার চিনিও এনে দেবো , যাহরানী একটু ক্ষেপে গিয়ে বলে । আর জান্নাত যেন এই সুজগেই ছিলো , দ্রুত চিনি আনার জন্য । আর রাজীব অন্য দিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দেয় । রানী রাগান্বিত ভাবে জিজ্ঞাস করে , “ তোর ও কি চিনি লাগবে?”
 
রানী নিজের চায়ের বদনাম সহ্য করতে পারে না । তাই রাজীব বলে নাহ ঠিক আছে
 
এখন পড়ার টেবিলে বসে সেই দৃশ্য মনে পরে রাজীবের মনটা ভালোলাগায় ভরে ওঠে । নিজের ডায়রি নেয় , আগামি কালের  to do লিস্টে একটা কাজ যোগ করে , লেখে , ‘জান্নাতের জন্য চকলেট কেনা।  
 
****
 
জান্নাত বিছানায় হাঁটু ভাজ করে বুকের কাছে এনে বসে আছে , না চাইতেও ঠোঁটে বার বার একটা হাসি চলে আসছে । ছোট বেলার সেই ঘটনাটা আজকে ও ইচ্ছে করেই তুলেছে । রাজীব কে হিন্টস দেয়ার জন্য । রাজীব ভেবেছে ও সেই ঘটনা ভুলে গিয়েছিলো , হ্যা একটা সময় পর্যন্ত ওই ঘটনা জান্নাত ভুলেই গিয়েছিলো । কিন্তু রাজীব যখন আবার ফিরে এলো পাকাপাকি ভাবে তখন হঠাত একদিন , সেই নির্জন কোনটা দেখেই জান্নাতের ওই ঘটনা মনে পরে গেলো । জান্নাতের মনে পরে গেলো , ওর ফার্স্ট কিস আসলে এই লাজুক ছেলেটি । কথা মনে পরতেই জান্নাতের এতো আনন্দ হয়েছিলো যে জান্নাত নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলো । বার বার নিজেকে প্রশ্ন করেছিলো , ছোট বেলায় ওই ছোট্ট একটা ঘতনাকে নিজের প্রথম চুম্বন ভেবে এতো আহ্লাদী হওয়ার কি আছে ? কিন্তু কোন কিছুই জান্নাত কে নিজের অবস্থান থেকে টলাতে পারেনি । জান্নাত অবউঝ বয়সেই সেই চুম্বনকেই নিজের প্রথম চুম্বন ভেবে নিয়েছে ।
 
এমন নয় যে জান্নাত এর পর আর চুম্বনের স্বাদ নেয়নি , দশম শ্রেণীর শেষের দিকে একটা ছেলেকে ওর ভালো লেগেছিলো , খুব যে ভালো লেগেছিলো তেমন নয় , তবে কিউরিসিটি থেকে দুজনে চুমু খেয়েছিলো । একাদশ শ্রেণিতেও একজনের সাথে অল্প কিছুদিনের সম্পর্ক ছিলো , সেই সম্পর্ক ও চুম্বন পর্যন্ত গড়িয়েছিলও । কিন্তু ওই ছেলদের সাথে সৃতি গুলো জান্নাতের মনে কোন রকম দাগ কাটতে পারেনি , যেমনটা কেটেছে অবুঝ বয়সের সেই অবুঝ চুমু ।
 
আর তাইতো আজকে সব লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে নিজে থেকেই সেই পুরোনো সৃতি রাজীব কে মনে করিয়ে দিয়ে এলো, যদি পুরনো সৃতি মনে হতে রাজীবের মনেও কিছুটা স্পৃহা জেগে ওঠে ।
 
কিরে এই ভর সন্ধ্যায় লাইট বন্ধ করে রেখছিস কেন?”  এই বলে আয়শা  জান্নাতের ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দেয় ।
 
আয়শার কথা গুলো , আর লাইটের আলো ,  জন্নাতের ধ্যান সেই প্রথম চুম্বন থেকে সরিয়ে বর্তমানে নিয়ে আসে ।
 
আহা আম্মু , খালি বিরক্ত করোবিরক্ত হয় জান্নাত । আধো অন্ধকারে একটা রোম্যান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো , আয়শা এসে সেটা ভেস্তে দিলো
 
হ্যা আমি তো সুধু বিরক্তই করি , যেদিন থাকবো না সেদিন বুঝবিআয়শা একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ।
 
মায়ের এমন নিঃশ্বাস ফেলা দেখে , জান্নাতের বিরক্তি কিছুটা কমে আসে , মা না থাকার পরিণতি রাজীব আর রানী কে দেখেই কিছুটা আঁচ করতে পারে ও।  বিছানা থেকে উঠে এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে , বলে ইশ আমার আম্মুটারে , একদম ননীর পুতুল টা , কিছু বললেই মন খারাপ করে হাসতে হাসতে মায়ের গালে গাল ঠেকায় ।
 
মেয়ের এমন আহ্লাদি আচরণে আয়শার মনটাও কিছুটা আপ্লূত হয় , তবুও কপট রাগের সাথে বলে হ্যা তোমারা তো আমাকে ননীর পুতুল বানিয়েই রেখছো , সারাদিন চুলার কাছে দাড়িয়ে রান্না তো তুমি , তোমার আব্বু আর তোমার ভাই করে
 
ইশিরে আমার অভিমানি আম্মুটা রাগ করেছে , তুমি বোঝ না , এই বয়সি মেয়েদের ঘরের লাইট কখন বন্ধ থাকে ? এই বয়স কি তুমি পার করনি খুকি?” এই বলে জান্নাত মায়ের থুতনি আঙুল দিয়ে ধরে নাড়িয়ে দেয় ,
 
হুম , তোমার বয়স আসার আগেই ান্ধবীর বিয়েতে গিয়ে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে , আমাকে কেউ জিজ্ঞাস ও করেনিআয়শা এখনো কপট রাগ ধরে রাখে , “ আমরা এইসব লাইট বন্ধ করাকরি কারবার কিছুই বুঝতাম না”  যদিও আয়শা জানে ও ডাহা মিথ্যা বলছে । এই সময় ওর ও গিয়েছে । তবে বিয়ের পর ।
 
তাই নাকি !! তবে আমার আব্বুর মত একটা হ্যান্ডসাম হাজবেন্ড পেয়ে নিশ্চয়ই মনে আর দুঃখ ছিলো না?”
 
এবার আয়শা হেসে ফেলে , বলে হয়েছে হয়েছে , এহ আমার হ্যান্ডসাম রে , এর চেয়ে অনেক হ্যান্ডসাম ছেলে আমার পেছনে ঘুরতো , তোমার আব্বু বোঝে কি , বোঝে সুধু কত বস্তা গমে কত বস্তা আটা ময়দা হয়
 
এই যে আয়শা বেগম একদম মিথ্যা বলবে না আমার আব্বুর নামে, কতবার দেখছি রাতে ফেরার সময় বেলি ফুলের মালা আনতে
 
আয়শা হাসে , তবে চোর ধরা পরার পর যেমন হাসি দেয় তেমন হাসি , মেয়ে নিজের রোম্যান্টিক লাইফের সন্ধান পেয়ে গেছে জেনে কিছুটা লজ্জাও পায় । তাই দ্রুত টপিক চেঞ্জ করতে চায় , বলে ওই সব রাখো , আমার মেয়ের হঠাত লাইট বন্ধ রাখতে মন চাইলো কেনো সেটা বলো, কোন বদ ছেলে  কি পেছনে লেগেছেবলার সময় আয়শা ভ্রু নাচিয়ে হাসে , মেয়ের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ওর দুশ্চিন্তা ছেলে কে নিয়ে । ছেলের কীর্তি কলাপ ভাসা ভাসা কিছুটা জানে , কিন্তু ছেলের সাথে তো এসব নিয়ে আলোচনা করাও যায় না।
 
আমি কি আর তোমার মত টুস্টুসি ফুল্টুশি নাকি যে ছেলেরা আমার পেছনে লাইন দেবে। আমি হলাম কালো বোঁচা মেয়েজান্নাত মিথ্যা মন খারাপ করে বলে ।  
 
এই খবরদার , আমার মেয়েকে কালো বোঁচা বলবি না , আমার মেয়ে দেখতে কি মিষ্টি , এমন চোখ কজনের আছে হ্যা , আর কি সুন্দর লাগে হাসলেআয়শা রেগে যায় , সত্যি বলতে মেয়ে কালো হয়েছে বলে প্রথম প্রথম আয়শার মনে দুঃখ ছিলো , রানী অমন ফর্সা আর জান্নাত হয়েছে কালো । কোনদিন ঈর্ষা না হলেও একটা চাপা  দুঃখ ছিলো । আর থাকবেই বা না কেন আশেপাশের মেয়েরা , এমন কি জান্নাতের ফুপুরাও জান্নাত কে কালো বলতো ।
 
তবে আফরোজা ওকে একদিন কড়া ভাবে শাসন করেছিলো এর জন্য । বুঝিয়েছিলো , যদি মা হয়ে ও নিজেই হীনমন্যতায় ভোগে তাহলে এই মেয়ে কোনদিন নিজেকে নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে পারবে না , সব সময় সংকোচ থাকবে কালো বলে । সেই থেকে আয়শা কোনদিন মেয়েকে বুঝতে দেয়নি যে মেয়ে কালো । কেউ যদি কোনদিন বলতো তাহলে আফরোজা আর ও দুজনে মিলে ঝগড়া লাগিয়ে দিতো । এর পর থেকে পাড়া পড়শি তো দুরের কথা কোনদিন জান্নাতের ফুপুরাও জান্নতের গায়ের রং নিয়ে কথা তুলতে সাহস করেনি ।
 
তাই নাকি ? তাহলে বলছো , ওই হাবা ছেলেটা তোমার মেয়েকে পছন্দ করবেজান্নাত মা কে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে ।
 
কোন হাবা ছেলে , একদিন নিয়ে আয় না আমার সামনে , আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি
সময় হলে নিয়ে আসবো , এখন বলো তুমি কি কাজে এসেছিলে জান্নাত এই বিসয়ে মায়ের সাথে আর কথা বলতে চায় না । নইলে মা ছাড়বে না ।
 
ওহ দেখ ভুলেই গেছি , রানীর জন্য সুপ রান্না করেছি , কিন্তু আজকে হাটুতে এতো ব্যাথা করছে যে যেতে পারছি না , তুই দিয়ে আয় না মা আয়শা করুন স্বরে বলে , সাধারনত জান্নাত এই কাজ করতে চায় না । সেই ভয় থেকেই আয়শা এমন ভাবে বলল ।
 
ওকে মাম্মি জাচ্ছি , যাও তুমি রেডি করে আনোকিন্তু আয়শা কে অবাক করে দিয়ে জান্নাত একবারেই রাজি হয়ে যায় ।  
 
আয়শা একটু অবাক হলেও কিছু বলে না । সুপ রেডি করার জন্য চলে যায় । আর মা চলে যেতেই জান্নাত আয়নার সামনে দাড়ায় । চুল গুলো গুছিয়ে নেয় , পোশাক পরিপাটি করে নেয় । নিজেকে বার বার আয়নায় দেখে নিজেই হাসে । বলে রেডি থাকো হাবা ছেলে , আমি আসছি
সুপের বাটি নিয়ে জান্নাত কে সদর দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখে আয়শার মনে একটা ব্যাপার কাঁটার মত বিঁধে । মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে , ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে । মেয়ে আর বেশিদিন ওর সাথে থাকবে না । তখন বাড়িতে আয়শার সময় কিভাবে কাটবে সেটা ভেবে আয়শার মন ভার হয়ে আসে । এই বাড়িতে এক মাত্র জান্নত ই মায়ের সাথে খোলা মনে গল্প করে । জয়নাল আর আগের মত সময় দেয় না । ব্যাবসার কাজ শেষে বাড়ি ফিরেই খাওয়াদাওয়া করে টিভিতে টকশো দেখে । আর জয় তো জয় ই কথন বাড়িতে থাকে কখন থাকে না সেটাই বলা মুশকিল । আজকাল তো আরো বেশি বাড়িতে পাওয়া যায় না । কি রাজনীতিতে ঢুকেছে , কত ভাবে বুঝিয়েছে আয়শা কিন্তু লাভ হয়নি । মাঝে মাঝে আয়শা ভাবে ছেলের একটা বিয়ে করিয়ে দিবে , পাত্রীও মনে মনে ঠিক করে রেখেছে , কিন্তু জয়ের আচরণ দেখে সাহস হয় না ।
 
****

 
কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#79
জান্নাত হাসি মুখে কলিং বেল বাজায় , একটু পর সেই দরজা খোলে , যাকে জান্নাত আশা করেছিলো । রাজীব , জান্নাত কে দেখেই হাসে । জান্নাত ও মুচকি হাসে , সুপের বাটি দেখায় । রাজীব দরজা থেকে সরে দাড়ায় , দোতলার দিকে ইশারা করে । কোন কথা বিনিময় হয় না , জান্নাত দোতলায় উঠতে শুরু করে । আর রাজীব সেদিকে তাকিয়ে থাকে ।

 
যতক্ষণ দেখা জায় ততক্ষণ তাকিয়ে থাকে । তারপর রাজীব সোফায় বসে টিভি দেখতে থাকে ।
 
এর মিনিট খানেক পর , উপর থেকে একটা চিৎকার শুনতে পায় , জান্নাতের গলা কি করছিস তুই রানী!!!”
 
তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে রাজীব , ধক করে ওঠে বুকের ভেতর । লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ভাঙ্গতে থাকে , একেক বাড়ে দুটো করে। রানীর ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে রাজীবের চোখ দুটো বিস্ফোরিত হয়ে ওঠে । রানী দু হাতে মুখ ঢেকে আছে , পরনে সুধু একটা চেমিসোল আর পা জামা । বাম বাহুতে কনুই থেকে একেবারে উপর পর্যন্ত রক্তে ভেসে যাচ্ছে । রাজীবের পা যেন বরফের মত জমাট বেধে গেছে ।
 
মিনিট পনেরো পর ,
রানী এখনো কাঁদছে , তবে ওর বাম বাহুতে আর রক্ত নেই । সেখানটা গজ কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো , রাজীব রানীর সামনে বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে । জান্নাত রানীর পাশে । ঠিক সেই সময় নিচে দরজা খোলার শব্দ হয় । আর সেই শব্দ পেয়ে রানী চোখ খুলে চায় , চোখ দুটো লালচে হয়ে উঠেছে কাঁদতে কাঁদতে । রাজীব ও তাকায় রানীর দিকে ।
 
ভাইয়া আব্বুকে বলসি না প্লিজ”  রানীর চোখে মুখে প্রচণ্ড ভয়ের ছাপ । ওর আব্বু জানলে কি হবে , সেটা ভাবতেই রানীর শরীর হিম হয়ে আসে ।
 
কিন্তু রাজীবের চেহারাতে প্রচণ্ড রাগ , দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগে ফেটে পরছে ও । চাপা সরে হিসিয়ে ওঠে রাজীব কেন বলবো না , বল আমাকে কেনো বলবো না? আব্বুর কি জানার অধিকার নেই ? যে তার মেয়ে কি করছে আজকাল
 
রানী দ্রুত রাজীবের হাত ধরে ফেলে ,  মিনতি ভরা দৃষ্টিতে তাকায় , ভাইয়ের দিকে , এর আগে এমন ভাবে ক্ষেপে উঠতে রাজীব কে দেখেনি ও, ভয়ে চুপসে যায় রানী , “ আব্বু জানলে আমি আর মুখ দেখাতে পারবো নারানী হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে
 
তুই মুখ দেখাতে পারবি না , তোর সমস্যা , সব কিছুতেই সুধু তুই আর তুই , আমি আর আব্বু তো তোর কাছে কিছুই না , যদি হতাম তাহলে আজকে এই দৃশ্য দেখতে হতো নারাজীব রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে ।
 
এদিকে জান্নাত নিজেও রাজীবের রাগ দেখে একটু ভড়কে গেছে , তাই এতক্ষণ চুপ ছিলো , কিন্তু দ্রুত কিছু করতে হবে এই একটা তাগিদ ভেতর থেকে উপলব্ধি করে , ছোট আব্বু জানতে পারলে এটা নিয়ে অনেক কিছু হবে । সবাই জেনে যাবে , হয়তো চাপে পরে রানী জয়ের নাম বলে দিবে । আর জয়ের নাম উঠে আসলে কি হতে পারে জান্নাত আর সেটা ভাবতে চায় না ।
 
জান্নাত রাজীবের কাঁধে হাত রাখে , নিজের কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখার যথা সম্ভব চেষ্টা করে বলে তুই নিচে যা , ছোট আব্বুকে এখনি কিছু বলিস না , আমি কথা বলছি”  জান্নাত যতটা সম্ভব কনভেন্সিং ভাবে বলার চেষ্টা করে ।
 
প্রথম কয়েক মুহূর্ত জান্নাত ভাবে কাজ হয়তো হয় নি , কিন্তু এর পর রাজীবের দৃষ্টি নরম হয়ে আসে । একবার রাগান্বিত , না ঠিক রাগান্বিত নয় , ব্যাথা ভরা দৃষ্টিতে রানী দিকে তাকিয়ে নিচে চলে যায় ।
 
রহিম ছেলের থমথমে মুখ দেখে , জিজ্ঞাস করে , “ কিরে কোন সমস্যা
 
রাজীব কয়েক মুহূর্ত ভাবে , তারপর বলে নাহ তো
 
ওহ তাই, আমি ভাবলাম …” আর কথা বাড়ায় না রহিম , ধিরে ধিরে সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরের দিকে যায় ।  
 
রাজীব না চাইলেও রহিমের প্রতি ওর রাগ হয় , বেশ সিরিয়াস ধরনের রাগ । মনে মনে ভাবে এই লোকটার জন্যই আজকে এই অবস্থা । ছেলে না বলল অমনি উনি নিশ্চিন্ত হয়ে চলে জাচ্ছেন । কেন আরো একবার ভালো করে জিজ্ঞাস করলে কি হতো? অন্য বাবা মা রা কেমন জোঁকের মত লেগে থাকে ছেলে মেয়ের পেছনে । আর উনি একবার জিজ্ঞাস করেই খালাস । যেন কোন দ্বায় দায়িত্বই নেই । রাজীব বিড়বিড় করে বলে ‘ সব দায়িত্ব সুধু আমার , আর উনি দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন ‘
 
বাপের প্রতি অভিমানে , রাজীবের গাল বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে নিচে মেঝেতে পরে । এমন নির্দয় , নির্লিপ্ত বাপ ও জীবনেও দেখেনি । নিজের সন্তানদের মনের অবস্থা যে বাপ চোখে দেখে না সে কেমন বাপ । রাজীব ভাবে , এর চেয়ে পুরোপুরি এতীম হলেই ভালো হতো । এমন বাপ থাকার চেয়ে না থাকা ভালো ।
 
রাজীবের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় , ‘ আব্বু তুমি তোমার মেয়ের ভার নাও , আমি আর পারছি না , আমার নিজের ও জীবন আছে , আমিও স্বাভাবিক জীবন চাই , যেখানে আমি জান্নাতের মত কারো হাত ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিনা কোন টেনশনে বসে থাকতে পারবো , আমাকে ভাবতে হবে না আমার ছোট বোন কোন লাফাঙ্গার পাল্লায় পরে গোল্লায় যাচ্ছে নাকি, আমাকে দ্রুত লেখাপড়া শেষ করে চাকরির চিন্তা করতে হবে না , অন্য ছেলেরা যেমন নিশ্চিন্ত হয়ে ছাত্র জীবন উপভোগ করছে তেমনি আমিও করতে চাই , আব্বু তুমি কি অন্ধ হয়ে গেছো , এসব কি তোমার নজরে পরে না , আর কত স্বার্থপরের মত নিজেকে দূরে রাখবে’
 
কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে , রাজীব কি ভেবে যেন গর থেকে বেড়িয়ে যায় । নিজের বাইকে উঠে স্টার্ট দেয় । তারপর বিকট শব্দ তুলে বেড়িয়ে যায় , গলিতে থাকা লোকজন রাজীবের বাইকের স্পিড দেখে অবাক হয়ে তাকায় ।
 
গলির সামনে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো জয় , নিজের কিছু বন্ধুর সাথে , বিকট শব্দে সাঁ করে একটি বাইক বেড়িয়ে যেতে দেখে অবাক হয়ে তাকায় , ভাবে ওকে ছাড়া এই গলি দিয়ে কে এতো স্পিডে বাইক হাঁকাচ্ছে , “ কোন বাইঞ্চো… “ বলতে গিয়েও থেমে যায় জয় , বাইকের নাম্বার ওর চেনা , বাইকের উপরে সাওয়ার ও ওর চেনা ।
 
বিড়বিড় করে বলে ‘ শিকদারের ব্যাটা কি কুত্তা খেয়ে পাগল হইসে নাকি?’ ঠোঁটে হাসি টানতে চেয়েও পারে না । মনে একটা অস্থিরতা অনুভব করতে থাকে । জয়ের আশেপাশের ছেলে গুলোও অবাক হয় , মহল্লার ভালো ছেলে রাজীব প্রচণ্ড গতিতে বাইক হাঁকাচ্ছে   এটা ওদের চিন্তার ও অতীত । সবাই জয়ের দিকে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকায় ।
 
জয় মলিন হেসে বলে “ শালার মরার ইচ্ছে হইসে” তারপর আরো একটু হেসে বলে “ যাক অন্তত কিছু একটা করার তো ইচ্ছা হইসে হা হা হা”
 
আড্ডা আর আগের মত জমে না। তবুও জয় প্রায় ঘন্টা খানেক সেখানে থাকে  । তারপর জয় বাড়ি ফিরে আসে ।  টেবিলে ওর আম্মু রাতের খাবারের আয়োজন করছে । জয় কে দেখেই আয়শা বলে “ এসেছেন ? আজকাল তো আপনাকে রাত বারোটার আগে বাড়িতেই পাওয়া যায় না  , জান হাত মুখ দুয়ে খেতে আসেন”  
 
জয়নাল সোফায় বসে টিভি দেখছে , আলচনায় যোগ দেয়ার কোন ইচ্ছা নেই , মারকাটারি টকশো চলছে টিভিতে ।
জয় মায়ের টিপ্পনির কোন উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের ঘরে চলে যায় , কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে । তবে ওর মাথার ভেতর এখনো রাজীবের বাইক নিয়ে সাঁ করে চলে যাওয়া ঘুরছে ।
 
“ জান্নাত কই আম্মু?” খেতে বসে জান্নাত কে না দেখে প্রশ্ন করে জয়
 
“ রানীর জন্য স্যুপ পাঠিয়েছি “ আয়শা কাজের ফাঁকে উত্তর দেয়
রানীর নাম উচ্চারিত হতেই জয় কিছুক্ষন চুপ থাকে । এই নামটা শুনলেই ওর নানা রকম অনুভূতি অনভুত হয় । একি সাথে অভিমান আর অনুসুচনা এসে ঘিরে ধরে ওকে । জয় আর কোন কথা বলে না  , খাওয়া শুরু করে ।
 
**** 
 
রানী জান্নাতের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে , আর জান্নাত অবাক হয়ে বসে আছে । জয় এই ধরনের কাজ করবে সেটা ওর ধারনার বাইরে ছিলো । রানীর কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না , আবার রানী মিথ্যা বলবে এটাও মেনে নিতে পারছে না। রানী জয়ের নাম নেয়নি । কিন্তু জান্নাত জানে যে ছেলের কথা রানী বলেছে সেটা জয় ই । অবশ্য জান্নাত রানীকে বুঝতে দেয়নি যে ও জানে ।
রানী এতক্ষণ যাবত যা বলেছে তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে ;  একটা ছেলেকে রানী খুব পছন্দ করে সেই অনেক আগে থেকেই , কিন্তু ছেলেটি ওকে তেমন একটা পাত্তা দিতো না । আর রানী ও সাহস করে কোনদিন কিছু বলেনি । কিন্তু ইদানিং ছেলেটি নানা ভাবে হিন্টস দিতে শুরু করে ,  এ পর্যন্ত দুজনের একজন ও নিজেদের মনের কথা খুলে বলেনি । কিন্তু ওই ছেলের আচরণে স্পষ্ট বোঝা যায় ছেলেটি রানীর সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে চায় । মাঝে একবার রানী নানা রকম ভয়ে ছেলেটিকে এড়িয়ে চলতো । কিন্তু ছেলেটি নানা ছুঁতয় না না অসিলায় ওর সাথে কথা বলতো , ধিরে ধিরে রানীর মনের বাধ ভাঙ্গতে শুরু করে । কিন্তু ওই ছেলেটি মাঝে মাঝে এমন কাজ করে তাতে রানীর মনে হয় , ছেলেটি ওকে নিয়ে ঠিক সিরিয়াস নয় । এমনিতেই খেলা করছে ওকে নিয়ে। এই নিয়ে রানী মন কষ্টে ভুগেছে খুব । এরি মাঝে একদিন ছেলেটি রানীর অজান্তে রানীর শরীর স্পর্শ করতে চেয়েছে ( রানী হসপিটালের কথা চেপে গেছে)। এর পর থেকে রানীর নিজের শরীরের প্রতি ঘেন্না জন্মেছে । মাঝে মাঝে নিজের শরীর কে ওর নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয় । তখন রানী নিজের শরীরের ক্ষতি করার জন্য বেল্ড দিয়ে কাটে ।  রানীর মনে বদ্ধ ধারনা জন্মেছে ওই ছেলেটি সুধু ওর শরীর চেয়েছে , ওকে নয় ।
 
জান্নাত রানীকে অনেক করে বোঝাতে চেয়েছে , যে সম্পর্ক সুধু দুঃখ বয়ে আনে , সেই সম্পর্ক থাকার চেয়ে না থাকা ভালো । ওই ছেলে যদি এই ধরনের কাজ করে থাকে , তাহলে এতে রানীর কোন দোষ নেই । রানী কেন নিজেকে এভাবে কষ্ট দেবে । সুধু যে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে এমন নয় । রানী নিজের সাথে সাথে নিজের আশেপাশের মানুষ গুলোকেও কষ্ট দিচ্ছে । রানীর উচিৎ চেই ছেলেকে সম্পূর্ণ ভাবে ভুলে যাওয়া । নিজেকে নিয়ে ভাবা , নিজের আপনজনদের নিয়ে ভাবা । ওই ছেলেকে নিয়ে ভেবে কেনো রানী নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবে ।
 
কিন্তু রানী এসব কিছুই শুনতে চায় না । ওর একটাই কথা , নিজের মাঝে নারী স্বত্বার জন্ম থেকেই রানী ওই ছেলেকেই সুধু ভেবেছে , আর কাউকে কোনদিন কল্পনা করাও ওর পক্ষে সম্ভব নয় । রানী যেখানেই তাকায় সুধু ওই ছেলেকেই দেখে । নিজের জীবনের সাথী হিসেবে আর কাউকে কল্পনা করা রানীর পক্ষে সম্ভব নয় । ওর মন ঐভাবে ট্রেইন্ড নয় । ওর মন ওই একজনেই এটকে গেছে , সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয় ।
 
সেদিন রাতে জয়ের বলা কথা গুলো মনে পরে যায় জান্নাতের , জয় বলেছিলো “ রানী আর ওর মাঝে কেউ বাধা হতে পারবে না, এমন কি জয় নিজেও জয় কে বাধা দিতে পারবে না”
আর এদিকে রানী বলছে জয় কে ছাড়া ও আর কাউকে কল্পনা করতে পারবে না । জান্নাত ভাবে এরা দুজন ই দুজনের জন্য পাগল তাহলে এতো নাটক কেনো ? আর জয় ই বা এমন কাজ কেনো করলো যাতে করে রানীর মনে এমন ধারনা জন্ম নেয়।
 
 
 
বোঝাতে বোঝাতে জান্নাত এক পর্যায়ে রেগে যায় , কঠিন স্বরে বলে “ যা ইচ্ছা তাই কর তুই , আমি আর এর মাঝে নেই , আমি বুঝি না একটা ছেলে তোকে এভাবে অপমান করলো , আর তুই এখনো ওই ছেলের নাম জপে যাচ্ছিস , আমি হলে ওই ছেলেকে ওই মুহূর্তে ছুড়ে ফেলে দিতাম”
 
রানী এর উত্তরে কিছুই বলে না , ডুকরে ডুকরে কাঁদে সুধু । এতে জান্নাত আরো ক্ষেপে যায় । রানীর কাঁধ ধরে ঝাঁকায় বলে “ তাহলে তুই কি করতে চাস , নিজেকে এভাবে নষ্ট করবি?”
 
“ না , আমি ওকে চাই , আর কিছুই চাই না” রানী কান্নার মাঝে অস্ফুস্ট স্বরে বলে , তারপর একা একাই বলতে থাকে “ কেন তুমি এমন করেল , তুমি কি বঝো না আমার সব কিছুই তোমার জন্য”
 
জান্নাত আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না । একবার ইচ্ছে হয় রাজীব কে কল করে সব বলে দেয় । কিন্তু রাগের মাথায় আসা এই চিন্তা নিজেই বাতিল করে দেয় । প্রচণ্ড রাগ নিয়ে রানীর দিকে তাকায় , দাঁতে দাঁত চেপে বলে ।
 
“ তাহলে যা ওই ছেলের কোলে উঠে বসে থাক গে , আর যাওয়ার আগে ছোট আব্বুকে , রাজীব কে বলে যা  তোকে নিয়ে যেন আর না ভাবে, সুধু সুধু ওদের কেন বিরম্বনা দিচ্ছিস”  
 
রানী এবার সোজা হয়ে বসে , দু হাতে চোখের পানি মোছে , তারপর শক্ত গলায় বলে “ আমার জন্য কারো দুঃখ হোক আমি চাই না , আমিই চলে যাবো দূরে , আম্মু যেমন চলে গেছে “
 
“ বাহ বাহ “ হাত তালি দিয়ে ওঠে জান্নাত , “ তাহলে যাওয়ার আগে ছোট আব্বুর এই ১৮ বছর ফিরিয়ে দিয়ে যা , রাজীবের কথা না হয় বাদ ই দিলাম , আমরা তো আরো দুরের , তোর জন্য সুধু ওই ছেলেই বড় হয়ে গেলো”
 
জান্নাতের কথা শুনে রানী আবার কাঁদতে শুরু করে । জান্নাত একটু শান্ত হয় , বড় করে একটা নিঃশ্বাস নেয় । তারপর রানীর পাশে বসে , নরম স্বরে বলে “ রানী বোন আমার , আমার কথা শোন , আমার মনে হয় তোদের মাঝে কোন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে , প্রথমে তুই শক্ত হ , তারপর ওই ছেলের সাথে খলাখুলি কথা বল , প্রয়োজনে আমি তোর সাথে থাকবো”
 
জান্নাতের কথা শুনে রানী কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে । ওর মনে আরো একটি ভয়ের উদয় হয় । রানী ভাবে , যদি সত্যি সত্য ও জয় কে ভুল বুঝে থাকে , তাহলে বিনা অপরাধে জয় কে এতো বড় অপবাদ দেয়ার পর কিভাবে জয় কে মুখ দেখাবে । রানী চোখে সেদিনের দৃশ্য আবার ভেসে ওঠে । ও সন্দেহের দৃষ্টিতে জয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো , আর জয়ের চোখে মুখে ছিলো ভয় । হ্যা জয় ভয় পেয়েছিলো । জয় কেন ভয় পেলো , রানী ভাবে । আর জয় হাত বাড়িয়ে ওকে কি বলতে চেয়েছিলো ? আর জয়ের সেই ফ্রাস্টেশন , সেটা কি কারনে , নিশ্চয়ই জয়েকে নিয়ে ওর মনে ভুল ধারনার কারনে এই জয় অনম করেছিলো । রানী যতই ভাবে ততই ভয় কুঁকড়ে ওঠে । না বুঝে এতো বড় একটা অপবাদ ও জয় কে দিয়েছে । এখন ও কি করবে ? জয় কি ওকে মাফ করবে ।
অস্থির হয়ে ওঠে রানীর মন , রানীর কাছে মনে হয় ও শ্বাস নিতে পারছে না । বার বার নিজের গালে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হয় । কেন এতদিন ওর মাথায় এলো না , যে ব্যাপারটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে । কেন জয়কে অবিশ্বাস করলো ও ।
 
জয়ের বলা শেষ কথা গুলো মনে পরে যায় , “ হ্যা আমি খারাপ ছেলে ………” রানী আর ভাবতে পারে না , দু হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে ওঠে । কতটা দুঃখ পেলে জয় ওই কথা গুলো বলেছে।
 
“ কি হলো আবার কাঁদছিস কেনো? আমি বললাম তো এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে । আর আমি তোকে হেল্প করবো ওই ছেলের সাথে কথা বলতে ” জান্নাত রানী কে আবার কাঁদতে দেখে একটু অবাক হয়েই বলে ।
 
রানী কাঁদতে কাঁদতেই বলে “ যদি সত্যি সত্যি ভুল বুঝে থাকি আমি , তাহলে কি হবে?”
 
“ কি হবে আবার , লায়লা মজনুর মিলন হবে , তুই তোর সখের পুরুষের গলায় ঝুলে থাকবি” জান্নাত একটু হাসতে হাসতে বলে
 
“ না না আমি ওর সামনে দাড়াতে পারবো না , কত বড় মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি , আমি মুখ দেখাবো কি করে” এই বলে রানী আবার কাঁদতে শুরু করতেই , জান্নাত রানীর মুখ চেপে ধরে , বলে “ খবরদার একদম কাদবি না , কাঁদলে আমি তোর ওই ছেলেকে  অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো , আর মুখ দেখাতে না মারলে মাস্ক পরে যাস , এখন থাম আমার মা”   
 
“ শোন , নিজেকে স্থির কর , তারপর সামনে গিয়ে দাড়া , সোজা প্রশ্ন কর , প্রয়োজনে আমি থাকবো, তুই নিজেকে কখনো একা ভাব্বি না , জানিস সবাই তোকে নিয়ে কত চিন্তায় আছে “
 
রানী ধিরে ধিরে একটু শান্ত হয় , তারপর জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে ।
 
জান্নাত রানীর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে “ তুই এতো চোখের পানি কথায় পাসরে ,আমাকে একটু ঠিকানা দিবি , যদি কোনদিন লাগে কিনে আনবো”
 
জান্নাতের কথা শুনে রানীও এই দুঃখের মাঝে হেসে ওঠে ।
 
জান্নাত মনে মনে ভাবে , এই ভুল বোঝাবুঝি কথাটা আগে কেন মাথায় এলো না । তাহলে আর এতো ঝামেলা হতো না । রানী তো এই কথাটা শোনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলো ।
 
বেশ কিছুক্ষন পর জান্নাত প্রশ্ন করে “ রাতের খাবারের কি অবস্থা?”
 
আর তখনি রানীর হুঁশ হয় , বলে “ এখন তো ভাইয়া রান্না করে , আমি জানি না”
“ দাড়া আমি দেখছি “  এই বলে জান্নাত উঠে যায় । রান্না ঘরে গিয়ে দেখে কিছুই রান্না হয়নি । জান্নাত ভাবে তাহলে এখন ছোট আব্বু কি খাবে ? আর কি জবাব দেবে রান্না না হওয়ার । জান্নাত রাজীব কে খোঁজে , কিন্তু কোথাও দেখতে পায় না । রাজীবের মোবাইলে কল করে , কিন্তু সেটাও নিরুত্তর ।
 
জান্নাত ভেবে পায় না কি করবে ? আসলে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কোন দিন পরতে হয়নি । পরিবারের মানুষ কি খাবে সেটা ওর চিন্তার বিষয় নয় । তাই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে অথৈ সাগরে পরে জান্নাত । একবার ভাবে মা কে গিয়ে বলবে , মা কোন না কোন বেবস্থা করে দেবে । কিন্তু সেই চিন্তাও বাদ দেয় । নানা ধরনের প্রশ্ন উঠবে । জান্নাত আবার কল করে রাজীব কে , কিন্তু এবারো রাজীব কল রিসিভ করে না । রাজীব কে নিয়েও চিন্তা হয় ।
 
কিছুক্ষন নখ কামড়ানোর পর হঠাত জান্নাতের মাথায় বুদ্ধি আসে । দ্রুত উপরে উঠে রানীর কাছে যায় । জিজ্ঞাস করে রানীর কাছে টাকা আছে কিনা । রানী জান্নাতের টাকা চাওয়া দেখে একটু অবাক হলেও নিজের কাছে থাকা কিছু টাকা বের করে দেয়। জান্নাত সেই টাকা নিয়ে দ্রুত গলির মাথায় গিয়ে খাবার কিনে নিয়ে আসে ।
 
 
****
 
রাজীব অনেকক্ষণ বাইক চালিয়ে একটা নির্জন জায়গায় পেয়ে সেখানে বসে থাকে । প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে ওর , সব অভিমান নিজের বাপ আর মৃত মায়ের উপর । কেনো ওরা ওকে এই ধরনের পরস্থিতি তে ফেলে দিলো । বার বার এই প্রস্নই করেছে একা একা । ওরা কি বোঝে না , ও একটা মানুষ , যার কিছু সখ আহ্লাদ আছে , আর কতদিন বাপ মায়ের দায়িত্ব ওকে বহন করতে হবে। ওর কি এই বয়সে ছোট বোনের জন্য চিন্তা করার কথা ?
 
বার বার মনের পর্দায় ভেসে উঠেছে জান্নাতের সাথে কাটানো এই কয়দিনের সৃতি গুলো । রাজীব ভাবে ওর কি এই ধরনের জীবন কাটানোর অধিকার নেই ? মনে মনে বাবা মায়ের কাছে জবাব চায় । কিন্তু রাজীব চাইলেও সেরকম কিছু করতে পারছে না । ওর জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করতে হচ্চে রানীর পেছনে । আর কতদিন এভাবে চলবে , রাজীবের ইচ্ছে হয় সব কিছু ছেরেছুরে কোথাও চলে যায় ।
 
নিজের বাবা মা কে উদ্দেশ্য করে  চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়  ও রানীর বাবা কিনবা মা নয় , রানীকে ও জন্ম দেয়নি । তাহলে কেন রানীর দায়িত্ব ওর নিতে হবে । কেন ও আর দশটা ছেলের মত নিজের জীবন চালাতে পারবে না । কেন জান্নত কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারবে না । বার বার পারিবারিক বাধা এসে দাঁড়াবে ওর সামনে ।
 
তাও যদি সফল ভাবে রানীর দেখাশোনা করতে পারতো , সেটাও হচ্ছে না ওকে দিয়ে । মাত্র কয়েক দিন জান্নাতের প্রতি কিছুটা মনযোগী হয়েছে , আর তাতেই সব কিছু অগোছালো হয়ে গেছে  । কত দিন যাবত এই ধরনের কাজ করছে রানী  কে জানে। ওর নাকের ডগায় বসে রানী এসব করছে আর ও টের  পায়নি । এছাড়া কোন ধরনের নেশা ধরেছে কিনা সেটাও দেখতে হবে । রাজীব শুনেছে এভাবে কাঁটা ছেরা নাকি নেশা গ্রস্থ ছেলে মেয়েরা করে থাকে । ভার্সিটি তে নেশার বড় রেকেট আছে বলে রাজীব জানে । ভালো ভালো ছেলে মেয়েরা এই নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে । রানীও কি জড়িয়ে গেছে কিনা কে জানে ।
 
এসব ভাবতে ভাবতে রাজীবের নিজের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে । জীবনটা ধিরে ধিরে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে । কতদিন এই বিষাক্ত জীবনের ভার বহন করতে পারবে সেটা রাজীবের কাছে পরিস্কার নয় । রাজীব নিজের ভাগ্য নিয়ে অনেকক্ষণ নিজের সাথেই যুদ্ধ করে , ভাবে ও চাইলেই নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে । সুধু এতটুকুই করতে হবে যে , কেউকে নিয়ে না ভেবে সুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে । যেমন জয় সুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে , রানী যেমন নিজেকে নিয়ে ভাবে তেমন ।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজীব পরাজিত হয় , মেনে নেয় পরাজয় ই ওর ভাগ্য । জয় যেমন ওকে লুজার বলে , আসলেই ও লুজার । রাজীব ফিরতি পথ ধরে , ভবেছিলো আজকে বাসায় ফিরবে না । কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে না। নিজের ভাগ্য কে মেনে নিয়ে ফিরে আসে বাসায় । ও চাইলেও নির্লিপ্ত ভাবে থাকতে পারবে না , এটা ওর ভাগ্যের লিখন ।
 
রাজীব যখন বাসায় ঢোকে তখন জান্নাত টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে । রাজীব কে দেখে জান্নাত মিস্টি করে হাসে , ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞাস করে কোথায় ছিলো ও । কিন্তু রাজীব হাসতে পারে না , ওর বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে চায় ।  ভাবে এতো সুন্দর একটা দৃশ্য প্রতিদিন দেখার সৌভাগ্য ওর কোনদিন ও হবে না । জান্নাত হয়তো এভাবেই  টেবিলে খাবার সাজাবে , কিন্তু সেটা ওর জন্য নয় , অন্য কারো জন্য । কারন ওর মত লুজারের জন্য কেউ অপেক্ষা করবে না । সব দায়িত্ব কর্তব্য শেষ করে রাজীব যখন প্রস্তুত হবে , তখন জান্নাত হয়তো অনেক দূর চলে যাবে । ধরা ছোঁয়ার বাইরে ।
 
রাজীব জিজ্ঞাস করে “ খাবার এলো কিভাবে”
 
“ উড়ে এসেছে , তুই কোথায় ছিলি , কেউ একজন ঠিক ই বলেছে , শিকদার বাড়ির সব কটা একেকটা চিড়িয়া , বলা নেই কওয়া নেই হাওয়া হয়ে গেলি” জান্নাত হালকা ঝাঁজের সাথে বলে ।
 
রাজীব উত্তরে কিছু বলে না , তবে মনে মনে বলে ‘ আরো কিছু বল প্লিজ , শুনতে ভালো লাগছে’
 
কিছুক্ষন পর রানী আর রহিম নিচে নেমে আসে , জান্নাত কে টেবিল সাজাতে দেখে রহিম খুশি হয়ে বলে “ একদম আমার মায়ের মত হয়েছে রে , বেঁচে থাকো মা , অনেক কষ্ট করলি আজকে”
 
“ কি কষ্ট করলাম , নিজে তো আর রাধি নি , দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছি , এটা যে কেউ করতে পারে “ জান্নাত হেসে বলে , ওর কাছে নিজেকে কেমন জানি বউ বউ লাগছে ।
 
“ কিন্তু যেভাবে সাজিয়েছিস , খাবার গুলো আর দোকানের মত লাগছে না রে , আমার মায়ের হাতে ছোঁয়া পেয়ে ঘরের খাবার হয়ে গেছে”  জান্নাত যখন রহিমের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছিলো তখন রহিম এ কথা বলে ।
 
জান্নাতের একটু লজ্জা লজ্জা লাগে , জান্নাত কোনদিন ভাবেনি এভাবে কোনদিন খাবার পরিবেশন করবে ও । তবে করতে খারাপ লাগছে না । মনে হচ্ছে ও শিকদার পরিবারের অংশ হয়ে নিজেও চিড়িয়া হয়ে গেছে ।
 
জান্নাত নিজেও খেতে বসে , টুকটাক যা কথা হয় , তা জান্নাত আর রহিমের মাঝেই হয় । রানী একদম মাথা নিচু করে চোরের মত খেতে থাকে । আর রাজীব খেতে খেতে মন ভরে জান্নাত কে দেখে নেয় । কারন ও শিওর এই দৃশ্য আর দেখা হবে না ওর । 

*****

কেউ কথা রাখে না 
আসবো বলেও আসে না। 
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব , 
কখনো ছেড়ে যায় না।
[+] 1 user Likes gungchill's post
Like Reply
#80
সম্মোহিতের মত শুধু পড়েই গেলাম অনেকদিন পর একটা গল্প এতটা ভালো লাগলো। এগিয়ে যান দাদা
For Telegram gossip group Inbox or scan avater
Like Reply




Users browsing this thread: Fardinddx, Nil roy, 1 Guest(s)