Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
পরদিন....
সময় বিকেল চারটে। মুখার্জি বাড়ি আজ লোকে লোকারণ্য। এতো মানুষ একসাথে অনেকদিন আসেনি এ বাড়িতে। সাধারণত কোনো উৎসবে এভাবে সবাই সম্মিলিত হয়, তফাৎ শুধু আজ কোনো মুখরতা নেই। মৃদু গুঞ্জনে ফিসফিস করে এ ওর সাথে কথা বলে চলেছে। একটা চাপা উত্তেজনা ফুটে উঠেছে সবার মুখে। সুরেশ চাকলাদার, রামহরি আর সুলতা দেবী নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, হয়তো পুরানো দিনের স্মৃতিচারণ করছে। রাজীব চুপচাপ এক কোনে বসে আছে। বন্দনা বসেছে মধুছন্দা দেবীর পাশে। মৌপিয়া, গার্গী আর অদিতি পাশাপাশি ঘরের এক কোনে বসে আছে। গার্গী আজ সকালেই ফিরেছে। কাল রাতেই ফেরার কথা থাকলেও ট্রেন ভীষণ লেট থাকায় সকালেই নেমেছে আসানসোলে। রাহুল আর রিনি অরোরাও পাশাপাশি বসে আছে কিন্তু রাহুল মুখ নীচু করে মোবাইলে ব্যস্ত। ঘনশ্যাম, দারোয়ান গনেশ আর বিনোদ একটা আলাদা দলে বসে আছে।
সবাই অপেক্ষা করছে দুজন মানুষের জন্য, চিত্তরঞ্জনের ওসি ইন্সপেক্টর বাসুদেব গড়াই এবং ডাঃ চৌধুরী। হোমের ম্যানেজার রাখাল রায়কে নিয়ে প্রথমে ঘরে ঢুকলেন ইন্সপেক্টর গড়াই। অনেকটা দূর থেকে এসেছেন বলে চুলগুলো উসখোখুসকো। কিন্তু তার মুখে একটা বিশ্বজয়ের হাসি লেগে আছে। তমালকে দেখে একটা অর্থপূর্ণ হাসি দিলেন। অবশ্য কাল রাতেই তমালের সাথে তার কথা হয়ে গেছে। জগনকেও সাথে করে এনেছেন, তবে সে আছে নীচে পুলিশের গাড়িতে। প্রয়োজন হলে উপরে আনা হবে। ইন্সপেক্টর ঘোষ উঠে গিয়ে তার সাথে করমর্দন করে তাকে নিজের পাশে সোফায় বসালেন। রাখাল রায় মোটা শরীর নিয়ে এই ঠান্ডা ঘরেও দরদর করে ঘামছে। বারবার রুমাল দিয়ে মুখ মুছছে। কিছুক্ষণ কুশল বিনিময়ের পরে তমাল ইন্সপেক্টর ঘোষের কানে কানে কিছু বলতেই তিনি বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।
এতোক্ষণ একটা ঘরোয়া পুনর্মিলন এর মতো ছিলো, কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি একটু ভারী করে তুললো ঘরের পরিবেশ। তাছাড়া নীচেও বেশ কিছু কনস্টেবল নিয়ে তিনখানা পুলিশের জিপ দাঁড়িয়ে আছে। পাড়ায়ও একটা কৌতুহল জাগিয়ে তুলেছে জিপগুলো। এবাড়িতে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কানাঘুষো শুনলেও আসল খবর কেউ জানতো না। আজ পুলিশের আগমন সেই কৌতুহল অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ছোটখাটো একটা ভিড় জমেছে বাড়ির সামনে। কিন্তু সম্ভ্রান্ত বাড়ি, তাই গেটের সামনে লোকজন নেই। তারা বিভিন্ন বাহানায় সময় কাটাচ্ছে মুখার্জি বাড়ির সামনে। আশে পাশের ছোট দোকানগুলোর বেচাকেনা আজ অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সিগারেটের দোকানের, যেন আজ আসানসোলের এই দোকান থেকে সিগারেট কিনলে লটারি পাওয়া যাবে,এরকম একটা ভিড় দেখা যাচ্ছে।
তমাল ইচ্ছা করেই কোনো কথা বলছে না। মুখে একটা কাঠিন্য ফুটিয়ে তুলেছে জোর করে। সে যেন বোঝাতে চাইছে এই ক'দিন মুখার্জি বাড়িতে আতিথ্য গ্রহন করা তমাল সে নয়, বরং দায়িত্ববান কর্মসচেতন একজন সত্য সন্ধানী সে। এমনকি অদিতি, মৌপিয়া আর বন্দনার কাছেও তাকে কেমন অচেনা, অজানা, রহস্যময় লাগছে।
ফোন থেকে মুখ তুলে রাহুল বললো, আমরা কি এবার শুরু করতে পারিনা তমাল বাবু, আর কতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে? তমাল বললো, বহু বছর অপেক্ষা করে আছে একটা প্রশ্ন, তার উত্তর কি এতো সহজে পাওয়া যায় রাহুল বাবু? একটু ধৈর্য্য ধরুন। তমাল প্রথমদিকে রাহুলকে রাহুল বাবু বললেও ইদানিং বলছিলো না। রাহুল এবং তুমিতেই নেমে এসেছিলো আলাপচারিতা। তার মুখে বাবু এবং আপনি সম্বোধন শুনে এবং গলার রুক্ষতা অনুভব করে একটু চমকে উঠলো রাহুল। মুখ নীচু করে নিলো। রিনি অরোরা তার হাতে হাত রেখে মৃদু একটা চাপ দিলো।
আধ ঘন্টা খানেক পরে প্রায় একসাথেই ঢুকলেন ডঃ চৌধুরী এবং ইন্সপেক্টর ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। তমাল তাকাতে মিঃ ঘোষ মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। তার হাতে একটা ফোটো ফ্রেম এবং একটা পলিথিন প্যাকেট। ডঃ চৌধুরী কে ধাতস্থ হতে অল্প সময় দিলো, তারপর উঠে দাঁড়ালো তমাল। সাথে সাথে ঘরের সবাই চুপ করে গেলো, যেন এইমাত্র ক্লাস রুমে হেডস্যার ঢুকলো। নিরবতা নেমে এলো ঘরে।
তমাল এ ক'দিন মুখার্জি বাড়িতে বেশির ভাগ সময় পায়জামা পাঞ্জাবি পরেই কাটিয়েছে। বাইরে গেলে জিন্সের উপরে টিশার্ট পরেছে। কিন্তু আজ পরেছে ফর্মাল ড্রেস। একটা দামী প্যান্টের উপর মেরুন শার্ট টানটান করে গুঁজে পরেছে। ভীষণ স্মার্ট আর হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। সেই সাথে যেন একটু দূরের তমাল হয়ে গেছে সবার।
এটা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক খেলা। তমাল জানে রাজীবকে খুনের চেষ্টা করার সময় খুনী মেরুন কালারের শার্ট পরে ছিলো। তাই কাল বিকালে সে মার্কেট থেকে শার্ট টা কিনে এনেছে অপরাধীর মনের উপরে চাপ তৈরি করার জন্য। উঠে দাঁড়িয়ে কথা শুরু করার আগে সে একটা দীর্ঘ বিরতি নিলো। পুরো ঘর উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
তমাল বলতে শুরু করলো, প্রথমেই এই বাড়ির সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই,কারণ যে আন্তরিক ব্যবহার এ বাড়িতে পেয়েছি তা কখনো ভুলবো না। কিন্তু একটা কাজ নিয়েই আমি এ বাড়িতে এসেছিলাম। সে কাজ আমি শেষ করতে পেরেছি কি পারিনি, সেটা সময় বলবে, কিন্তু সবার আগে আমি মধুছন্দা দেবীকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। তমালের মুখে তার নাম উচ্চারিত হতেই তিনি মুখ তুলে তার দিকে তাকালেন।
তমাল বললো, আমি যেদিন এবাড়িতে আসি, তার পরদিন আপনি আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মনে আছে? আপনি বলেছিলেন, আমি যদি অপরাধিকে ধরে দিতে পারি, আপনি আমাকে পারিশ্রমিক হিসাবে এক লক্ষ্য টাকা দেবেন। সেই অফারটা কি এখনো আছে?
এই খবরটা কয়েকজন জানলেও টাকার পরিমানটা কেউ জানতো না। তাই ঘরে উপস্থিত সবাই একটু অবাক হয়ে তাকালো। মধুছন্দা দেবীর কিন্তু কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। তিনি মৃদু হেসে বললেন, আমার কথার নড়চড় হয়না তমাল, আমি তো তোমাকে সেদিনই অগ্রীম দিতে চেয়েছিলাম?
তাহলে এখন দিন। এই কেসে আমাকে শারীরিক এবং মানসিক, দুভাবেই প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাই তখন মনে না হলেও এখন মনে হচ্ছে টাকাটা আমার প্রাপ্য। মধুছন্দা দেবীর মুখে একটা বাঁকা ব্যাঙ্গের হাসি ফুটে উঠলো। তিনি বন্দনার দিকে তাকিয়ে বললেন, মিষ্টি, ড্রয়ার থেকে আমার চেক বইটা নিয়ে এসো তো? সাথে সাথে বন্দনা উঠে চলে গেলো ঘর থেকে।
যেখানে আজকের সমাবেশ হয়েছে এটাও দোতলায়। এটা একটা কনফারেন্স রুমের মতো বড় ঘর। আগে অফিসের কাজ কর্ম হতো, এখন ফাঁকাই পড়ে আছে। বন্দনা দু মিনিটের ভিতরে চেক বই নিয়ে ফিরে এলো। মধুছন্দা দেবীর হাতে দিতেই তিনি খসখস করে টাকার অংকটা লিখে সই করে দিয়ে তমালের দিকে তাকালেন। তমাল বললো, অ্যাকাউন্ট পেয়ী করে দিন, নামটা আমি বসিয়ে নেবো। মধুছন্দা দেবী সেটা করে তাচ্ছিল্যের সাথে চেকটা বাড়িয়ে দিলেন তমালের দিকে। তমাল হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে মধুছন্দা দেবীকে ধন্যবাদ দিয়ে বুক পকেটে রেখে দিলো চেকটা।
তারপর তমাল ঘরের মাঝে এসে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো, এখন আমি যে যে কথা গুলো বলবো, বা আপনারা যা বলবেন, সবই রেকর্ড করা হবে পুলিশের খাতায়। তাই জানা থাকলে কেউ সত্য গোপন করবেন না, তাতে বিপদ বাড়বে। ইতিমধ্যেই এই বাড়ির প্রায় সকলেই আমাকে বেশ কিছু মিথ্যা কথা বলেছে। কিছু মিথ্যা নিস্পাপ, নিজের লজ্জা বা সংকোচ আড়াল করতে, কিছু মিথ্যা গুরুতর। আজ আমার কথায় হয়তো অনেক গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাবে, কিন্ত একটা বড় অপরাধের উপর থেকে পর্দা সরাতে গিয়ে সেইসব ব্যক্তিগত ক্ষতির জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন সকলে।
কেউ কোনো কথা বললো না দেখে তমাল আবার বলতে লাগলো, এই বাড়িতে একটা অপরাধ ঘটেছে, খুনের চেষ্টা। কিন্তু খুনের চেষ্টা আসলে খুনই। ইচ্ছা করে খুনের চেষ্টা করা যায়না। অপরাধী খুনই করতে চায়, কিন্তু ভাগ্যজোরে ভিকটিম বেঁচে যায়। তাই এই অপরাধের গুরুত্ব কিছু কম হয়না তাতে।
এই অপরাধের শিকার হয় রাজীব বাবু। কিন্তু কেন? কি তার অপরাধ? তিনি তো এই বাড়ির একজন সাধারণ কর্মচারী মাত্র, ফ্যাক্টরির অ্যাকাউন্টেন্ট। তাকে খুনী কেন পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে চাইবে? খুনের কেসের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোটিভ। খুনির মোটিভ খুঁজে বের করতে শুরু করি আমি, কারণ অনেক সময় আত্মরক্ষার জন্যেও খুন হয়ে থাকে। যদিও এক্ষেত্রে সেটা হয়নি।
রাজীব বাবু সম্পর্কে খোঁজ খবর করতে থাকি। তিনি নিসন্দেহে একজন প্রতিভাবান হিসাবরক্ষক। খোঁজ নিয়ে জেনেছি তার একাডেমিক রেজাল্টও খুব ভালো। কিন্তু তার অনেকগুলো দুর্বলতাই তার এই পরিনতির জন্য দায়ী। প্রথমত তিনি মাত্রাতিরিক্ত কৌতুহলি, নিজের সীমা ছাড়িয়ে যান কৌতুহল মেটাতে। সেই সাথে ভীষন রকম লোভী। দ্বিতীয়ত তিনি নারী শিকারি। মেয়েদের দেখলেই তার মাথা ঠিক থাকে না। ব্যাঙ্গালোরে পড়াশুনা করার সময়ও তিনি অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেখানেও তার বেশ বদনাম হয়,এমনকি একটা মানসিক প্রতারণা কেসে পুলিশের খাতায় নামও আছে তার। পরে অবশ্য মিটমাট হয়ে যায়। তাই ব্যাঙ্গালোর তার জন্য নিরাপদ ছিলো না। নিজের রাজ্যে ফিরে আসাই ভালো, এটা বুঝতে পারেন।
ভাগ্য তার ভালোই বলতে হবে, এক পরিচিত জনের কাছ থেকে খোঁজ পান মুখার্জিরা একজন অ্যাকাউন্টেন্ট খোঁজ করছে। সুযোগটা সে লুফে নেয়। কাজ শুরু করে মুখার্জি বাড়িতে থেকেই। কিছুদিনের মধ্যেই সে ধরে ফেলে হিসাবে গড়বড় আছে। তার কৌতুহলি মন শুধু হিসাব ছাড়িয়ে আরো অনেক দূর পৌঁছে যায়। সেই সাথে এই বাড়িতেই পেয়ে যায় তিন তিনজন যুবতী নারী। কাজের সাথে সাথে শিকারেও ব্যস্ত হয়ে পরে সে। নিজের আকর্ষণীয় চেহারা, মধুর স্বভাব আর যৌন আকর্ষনের জাল ছড়িয়ে জড়িয়ে ফেলে তাদের।
কিন্তু লোভী স্বভাবের দোষে অল্পতে খুশি হতে সে শেখেনি। একজনে খুশি হতে পারলো না সে। সবার দিকেই হাত বাড়ালো। এমনকি তাতেও খুশি না হয়ে নাটক সাজিয়ে সে ডেকে আনলো প্রাক্তন প্রেমিকা রিনি অরোরা কে ব্যাঙ্গালোর থেকে। সে বুঝেছিলো এই বাড়িতে অনেক রহস্য আছে। ব্ল্যাকমেইল করে প্রচুর ধনলাভ সম্ভব। তারজন্য তার একজন সহকারী হলে ভালো হয়। রিনিকে প্রস্তাব দেয় এবং রিনিও সেটা গ্রহন করে। ব্যাঙ্গালোরে থাকতেই রিনি ভালোবাসার মিথ্যা অভিনয়ে সম্পর্ক তৈরি করে রাহুলের সাথে। পরে রাহুল ফিরে এলে তাকে চাকরির প্রয়োজন জানিয়ে নিজেও চলে আসে এখানে। রাহুল বাবুও প্রণয়ীকে নিজের পিএ হিসাবে নিযুক্ত করেন।
এই পর্যন্ত বলে তমাল একটু থেমে ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। অদিতি, মৌপিয়া আর বন্দনা লজ্জায় মুখ নীচু করে আছে। তাদের জন্য খারাপ লাগলেও তমাল নিরুপায়, সত্য তাকে প্রকাশ করতেই হবে, তবে খেয়াল রাখবে যাতে খুব বেশি অপমানিত না হয় তারা। এতোক্ষন রিনি অরোরা রাহুলের হাত ধরে ছিলো। এবারে সেও হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নতমস্তকে বসে আছে। রাজীব যেন কিছুই হয়নি এভাবে ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তমাল আবার বলতে শুরু করলো।
-এখন প্রশ্ন হলো রাজীবের উপর এই আক্রমণ আসলে কোন দিক থেকে এসেছে? তার অতিরিক্ত কৌতুহলে গোপন কথা জেনে যাবার জন্য? নাকি প্রেমের বিশ্বাসঘাতকতায় তৈরি হওয়া যৌন ঈর্ষা? দুটোই খুব শক্ত মোটিভ। মেয়েরা প্রেমে আঘাত পেয়ে বিশ্বাসঘাতক প্রেমিককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে, এরকম উদাহরণের অভাব নেই অপরাধ জগতে। তাহলে কে হতে পারে সেই আততায়ী? লিস্টে আছে বন্দনা, অদিতি, মৌপিয়া এবং রিনি অরোরা। রিনিকে বাদ দেওয়া যেতে পারে কারণ খুনের চেষ্টা হয়েছিলো মুখার্জি বাড়িতে, গভীর রাতে, যে সময়ে রিনি এখানে উপস্থিত ছিলো না। কিন্তু রাহুলের সেই মোটিভ ছিলো।
রাজীবের কথায় রিনি রাহুলের সাথে প্রেমের অভিনয় শুরু করলেও ধীরে ধীরে সে সত্যিই রাহুলের প্রেমে পড়ে যায়। রাজীবকে সাহায্য করতে অস্বীকার করে। সে জানতো রাজীব বড় কোনো ষড়যন্ত্র করছে, তাই রাজীব ছুরিতে আহত হবার পরে ফ্যাক্টরিতে আমি যেদিন যাই সেদিন রাজীবের ঘরে সে প্রমাণ খুঁজছিলো অবশ্য রাহুলের ক্ষতি করতে নয়, তাকে বাঁচাতে। রিনি জানতো কি ধরনের কাজ রাজীব করছিলো।
লক্ষনীয় বিষয় হলো, বাড়ির সবাই এবং পুলিশ এই অপরাধের জন্য রাহুল বাবুকেই দোষী মনে করছে। ক্রাইম সিনে তাকে রাজীবের রক্ত মেখে ছুরি হাতে বসে থাকতে দেখা গেছে। ছুরিটিও তার ব্যক্তিগত সংগ্রহের ছুরি। কিন্তু তার মোটিভটা কি? দিদি এবং বোনের উপরে রাজীবের অশালীন অনধিকার হস্তক্ষেপ? নাকি অফিসের কোনো ব্যাপার? সেই কি টাকা সরাচ্ছিলো? রাজীব জানতে পেরেছিলো বলে তাকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো? অথবা রাহুল যদি রিনির সাথে রাজীবের পূর্ব প্রনয়ের কথা কোনোভাবে জেনে গিয়ে থাকে তাহলে ঈর্ষা এবং প্রতারণার জন্য রাজীবের উপর প্রতিহিংসা মেটাতেই পারে। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ চিৎকার করে বলছে যে সেই খুনি, আই মিন খুনের চেষ্টাকারী। কিন্তু প্রমাণ গুলো বড্ড বেশি চিৎকার করছিলো। যেন সারা পৃথিবীকে গলা তুলে বলতে চাইছিলো, যে দেখো, আমি খুন করেছি, তোমরা আসছো না কেন? আমি আর কতোক্ষণ তোমাদের প্রমাণ দেবার জন্য ভিকটিমের মাথা কোলে নিয়ে বসে থাকবো তারই রক্ত মেখে নিজের কেনা ছুরি হাতে নিয়ে। এসো গ্রেফতার করো আমাকে।
তবুও তাকে ছুরি চালাতে কেউ দেখেনি,অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শী কেউ নেই। সুতরাং শুধু অনুমান ভিত্তিক অভিযোগে এবং সারকমস্টেনশিয়াল এডিডেন্সের ভিত্তিতে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। হতেও পারে অপরাধ অন্য কেউ করেছে, সে হয়তো বাইরে এসে ভিকটিমের অবস্থা দেখে হতবুদ্ধি হয়ে তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলো, কারণ খুনের চেষ্টাটা হয় ঠিক তার ঘরের সামনে। এছাড়া রাজীবের বর্ননা অনুযায়ী অপরাধী খুনের চেষ্টার সময় একটি মেরুন শার্ট পরে ছিলো। সেরকম শার্ট রাজিবের ঘরে পাওয়া যায়নি। অবশ্য সে সরিয়েও ফেলতে পারে।
তাহলে বাকী রইলো এ বাড়ির তিন যুবতী মেয়ে। আমার প্রথম সন্দেহ পড়ে অদিতির উপরে। মৌপিয়া স্বামী পরিত্যক্তা। জৈবিক চাহিদায় হয়তো জড়িয়ে পড়ে রাজীবের সাথে, কিন্তু তার সামাজিক কলঙ্কের ভয় আছে। সে প্রতারিত হলেও সরাসরি খুনের সাথে নিজেকে জড়াতে চাইবে কেন? বিশেষ করে যখন তার একটি ছোট মেয়ে আছে? তবে তাকেও ক্লিন চিট দেওয়া সম্ভব নয় কারণ তার আলমারিতে একটি মেরুন শার্ট আছে। যদিও তাতে কোনো রক্তের দাগ আমি খুঁজে পাইনি।
বন্দনা অল্প বয়সী মেয়ে। চপলতা এবং অপরিনত বুদ্ধি তাকে রাজীবের দিকে আকর্ষিত করতে পারে, কিন্তু খুন করতে হলে সে অন্য কোথাও করতে পারতো। সে সুযোগ তার ছিলো আমি জানি। তাছাড়া সে এই বাড়িতে আশ্রিতা। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এতো বড় দাও খেলবে কি?
অদিতি কিন্তু এতো দুর্বল নয়। সে বুদ্ধিমতি, শিক্ষিতা, শারীরিক ভাবেও দূর্বল নয়, এবং বহুদিন হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছে। এবং ফোন কল রেকর্ড বলছে সেই রাতে অদিতি ফোন করেছিলো রাজীবকে। হয়তো তাকে ডেকে আনে নীচে। তারপর সুযোগ বুঝে ছুরি বসিয়ে দেয় রাজীবের পিঠে। তার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো তার কাছে রাহুলের সেই ছুরির মতো একটি ছুরি আছে। এছাড়া তার কাছে একটি লাল রঙের শার্টও আছে। কম আলোতে লাল রঙকে মেরুন বলে ভুল হতেই পারে। অদিতিই প্রথমে রাজীবের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরে অন্য মেয়েদের সাথে, বিশেষ করে নিজের দিদি এবং আশ্রিতা বন্দনার সাথে রাজীবের সম্পর্ক সে মেনে নিতে না পারলে খুনের শক্ত মোটিভ তার আছে।
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
ঘরের সবাই যেন জমে পাথর হয়ে আছে। একের পর এক নতুন তথ্যে সবাই হতচকিত হয়ে পড়েছে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের গোপন সংবাদ সবার সামনে ফাঁস হয়ে যাওয়ার সংকোচও যোগ হয়েছে তার সাথে। বেশ কিছুক্ষণ পরে কথা বললো ইনস্পেকটর গড়াই। তিনি বললেন, অপরাধের হাতিয়ার যখন অদিতির কাছে পাওয়া গেছে, এবং সেই যখন ভিকটিম কে এতো রাতে ডেকে এনেছিলো, তখন প্রবলেমটা কোথায়?
তমাল উত্তর করলো, প্রবলেম আছে ইনস্পেকটর গড়াই। হাতিয়ার এক রকম দেখতে হলেই যে তা খুনের চেষ্টার হাতিয়ার হবে, তা কিন্তু নয়। পিস্তলের গুলিতে খুন তো কতোই হয়, তার মানে তো সব পিস্তল ব্যবহারকারী খুনি নয়? এই হাতিয়ারই আমার মনে প্রথম সংশয় তৈরি করে। রাহুলের উপহার পাওয়া নেপালী ছুরিটা অপরাধে ব্যবহার হবার কারণ কেউ ইচ্ছা করে খুনের দায়টা রাহুলের উপরে চাপাতে চেষ্টা করেছিলো। অপরাধী একটা মস্ত ভুল করে এখানেই। সে ভেবেছিলো রাহুল ছুরি জোড়া নেপাল থেকে আনে, তাই আসানসোলে এই ছুরি পাওয়া যাবে না বেশি। বৈশিষ্ট্য যুক্ত ছুরি, যে কেউ দেখলেই বলে দেবে ওটা রাহুলের ছুরি। সুতরাং ঠিক ওই রকম একটা ছুরি যোগাড় করতে পারলেই রাহুলকে ফাঁসিয়ে দেওয়া যাবে।
অপরাধী ঠিক তাই করলো। রাহুলের ছুরি দুটো থেকে একটা ছুরি সরানোর চেষ্টা হয়তো করেছিলো সে, কিন্তু তার আগেই রাহুল একটা ছুরি অদিতিকে দিয়ে দিয়েছিলো কোনো কাজে। অন্য ছুরিটাও পাওয়া গেছে রাহুলের বাইয়ের তাকের পিছনে ধুলো মাখা অবস্থায়। অর্থাৎ কেউ সেটা সম্প্রতি ব্যবহার করে সেখানে রেখে দেয়নি, বরং অসাবধানতায় হারিয়ে গিয়ে বহুদিন সেখানেই পড়ে আছে সেটা। এই বাড়িতেই আমার একজন গোপন সহকারী সেটা খুঁজে পায়। তাহলে একই রকম দেখতে আর একটা ছুরি এলো কোথা থেকে?
অপরাধী আসানসোলের এক কিউরিও শপ থেকে কিনে আনে ঠিক ওই রকম দেখতে এক জোড়া ছুরি। মজার কথা হলো ছুরিটা নেপালী হলেও আসানসোলে দুস্পাপ্য নয়, আমিও এক জোড়া কিনেছি সেই দোকান থেকে। এবং আমি ছাড়াও আর কে কিনেছিলো সেটাও জানতে পারি দোকানদারের কাছ থেকে। দোকানদার ছবি দেখে সনাক্ত করেছে।
কিন্তু অপরাধী যেটা জানতো না, তা হলো প্রত্যেকটা ছুরি হুবহু এক রকম দেখতে হলেও ছুরির বাটের নীচে সিরিয়াল নাম্বার খোদাই করা আছে। ভালো করে লক্ষ্য না করলে বোঝাই যায়না এতো ছোট নাম্বার গুলো। আর নাম্বার গুলো জোড়ায় জোড়ায় লেখা। যেমন রাহুলের কাছে যে ছুরি দুটো ছিলো, তার সিরিয়াল নাম্বার হলো ছিয়ানব্বই এবং সাতানব্বই। আমি যে ছুরি দুটো কিনে আনি, সেই ছুরি দুটোর নাম্বার হলো একশো বাইশ এবং একশো তেইশ। কিন্তু রাজীবকে যে ছুরি দিয়ে খুন করার চেষ্টা করা হয়, সেটার নাম্বার হলো দুশো তেরো।
এটা থেকেই পরিস্কার হয়ে যায় অপরাধী নিজের অপরাধ রাহুল বাবুর উপরে চাপাতে চেয়েছিলো। প্রশ্ন হলো, কেন? শুধু অপরাধ ঢাকার জন্য নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে? এই পর্যন্ত বলে তমাল এগিয়ে গিয়ে টেবিল থেকে জলের বোতল তুলে নিয়ে কয়েক ঢোক জল খেলো। ঘরের ভিতরে নিরবতা নেমে এলো।
তমাল আর কোনো কথা বলছে না দেখে অধৈর্য্য হয়ে উঠছে সবাই। এতোক্ষণ সবাই পাথরের মূর্তির মতো বসে ছিলো। এবারে ঘরের ভিতরে নড়াচড়া শুরু হলো। মৃদু গুঞ্জন ও টের পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত সবাই পাশের ব্যক্তির সাথে সম্ভাব্য খুনি কে হতে পারে তাই নিয়ে আলোচনা করছে।
এবারে ধৈর্য্য হারালো মধুছন্দা দেবী। তিনি বললেন, সবই তো বুঝলাম। এও হতে পারে সেও হতে পারে, কিন্তু আসলে খুনী কে সেটা কি নিশ্চিত হতে পেরেছো তুমি তমাল? নাকি শুধুই টাকাটা নিয়ে সময় নষ্ট করছো? আমার বয়স হয়েছে, এভাবে বেশিক্ষণ বসে থাকতে কষ্ট হয়। ওষুধ খাবার আর চোখে ড্রপ দেবারও সময় হয়ে গেছে।
তমাল জলের বোতল হাতে নিয়েই ঘুরে দাঁড়ালো। তারপর বন্দনার দিকে ফিরে বললো, তুমি মায়ের আই ড্রপটা এনে দাওতো। তারপরে মধুছন্দা দেবীর দিকে ফিরে বললো, আর একটু অপেক্ষা করুন, সব জানতে পারবেন। বন্দনা প্রায় ঝড়ের গতিতে চোখের ওষুধ নিয়ে এলো। ঢাকনা খুলে ওষুধটা মধুছন্দা দেবীর চোখে দিতে গেলে তমাল সেটা হাত থেকে নিয়ে মধুছন্দা দেবীর হাতে দিয়ে বন্দনাকে বললো, আমার ঘরে টেবিলের উপরে সেই ডায়েরিটা আছে নিয়ে এসো তো? উনি নিজেই দিয়ে নেবেন ড্রপ।
মধুছন্দা দেবী বন্দনাকে আবার কাজে পাঠানোতে বিরক্ত হলেন। মুখ ব্যাজার করে নিজের দু ফোঁটা ড্রপ নিজের চোখে ঢেলে নিলেন। তারপর কয়েকবার চোখ পিটপিট করে তমালের দিকে তাকিয়ে বললেন, বলো কে রাজীবকে খুন করার চেষ্টা করেছিলো? বুঝতে পেরেছো, নাকি পারোনি?
তমাল বললো, বুঝতে তো দুদিন পরেই পেরেছিলাম, কিন্তু নিশ্চিত হলাম আপনি আমাকে চেকটা সই করে দেবার পরে। আর নিসন্দেহ হলাম এই মাত্র।
মধুছন্দা দেবী যেন থমকে গেলেন। গম্ভীর গলায় বললেন, কি বলতে চাইছো পরিস্কার করে বলো। তমাল এবারে ঘরের অন্যদের দিকে ফিরে বললো, আচ্ছা এই চেক সই করা আর চোখে ড্রপ দেওয়ার ভিতরে আপনারা কোনো অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছেন? সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বললো না। কিছুক্ষণ পরে ইন্সপেক্টর ঘোষ বললেন, উনি দুটো কাজই বা হাতে করলেন।
তমাল হাততালি দিয়ে উঠলো। সাবাস ইন্সপেক্টর ঘোষ, এই জন্যই বলে পুলিশের চোখ। একদম ঠিক বলেছেন। মধুছন্দা দেবী বাহাতি। ওনার প্রায় সব কাজই বন্দনা করে দেয়, তাই কারো চোখে পড়েনা এটা, কিন্তু এই খুনের চেষ্টায় এটা খুব বড় একটা প্রমাণ। ফরেনসিক রিপোর্ট পরিস্কার বলছে ছুরির আঘাতের ধরন এবং গতিপথ থেকে নিশ্চিত বলা যায় অপরাধী ছিলো বাহাতি। এখানে ডঃ চৌধুরী আছেন, তিনি আমার যুক্তি সমর্থন করবেন বলেই আমার ধারণা। তিনিই প্রথম এ বিষয়ে আলোকপাত করেন আমার কাছে।
অর্থাৎ অন্য কেউ নয়, রাজীবকে খুনের চেষ্টা করেছিলেন আপনি, শ্রীমতি মধুছন্দা মুখার্জি! টাকার লোভে চেকটা আপনাকে দিয়ে সই করাইনি আমি ম্যাডাম, সেই জন্য ওটায় আমার নামও লেখাইনি। আমি আপনার মতো লোভি নই!
ঘরে বোমা পড়লেও বোধহয় এতো অবাক হতো না কেউ। কয়েক মুহুর্ত পরে হেসে উঠলেন মধুছন্দা দেবী। বললেন, আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো, তোমার মতো অযোগ্য লোককে তদন্তের ভার দেওয়াই আমার ভুল ছিলো। আমি খুনের চেষ্টা করলে নিজেই তোমাকে অপরাধী খোঁজার ভার দেবো কেন?
তমাল বললো, ঠিক এই কারণেই দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন আমি অনভিজ্ঞ শখের গোয়েন্দা, আপনার মতো ধুরন্ধর মহিলার টিকিও ছুঁতে পারবো না। আর নিজেই নিয়োগ করেছেন বলে আমি আপনাকে সন্দেহও করবো না। তার উপর এক লক্ষ টাকার লোভ তো আর সোজা কথা নয়! তবে আপনার জানা উচিৎ বেশিরভাগ অপরাধীই ঠিক এই ভুলটা করে, পুলিশ এবং গোয়েন্দা কেউই বন্ধু হয়না, তাদের যতোই ঘুষ দেবার চেষ্টা করেন না কেন?
এতোক্ষণে বিস্ময় কাটিয়ে উঠে রাহুল জিজ্ঞেস করলো, আমি তো কিছুই বুঝলাম না ফরেনসিকের ব্যাপারটা। আর পিসির কি লাভ রাজীবকে খুন করে? আর উনি তো চোখেও ভালো দেখতে পাননা?
তমাল বললো, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি রাহুল বাবু। এখনি এতো অবাক হবেন না। হতবাক হবার এখনো অনেক কিছু বাকী আছে, সময় মতো জানতে পারবেন। ফরেনসিকের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছি এখন। মধুছন্দা দেবী রাজীবকে খুনই করতে চেয়েছিলেন। ওনার চোখের সমস্যাটা ওনার একটা জব্বর অ্যালিবাই। আমি ডঃ চৌধুরীর সাথে কথা বলে জানলাম যে রোগটা নাম ম্যাকুলার ডিজেনারেশন। এই রোগে রুগী কখনো বেশ পরিস্কার দেখতে পান, আবার কখনো ঝাপসা। সব সময় যে কম দেখেন তা কিন্তু নয়।
সেইদিন রাতে রাজীবকে যে অদিতি ফোন করেছিলো সেটা আগেই বলেছি। কিন্তু যেটা বলিনি, সেটা হলো অদিতির কল করার দশ মিনিট আগে উনি নিজেও রাজীবকে কল করেন। সম্ভবত নীচে তার ঘরে আসতে বলেন। কেন, সেটা আমি অনুমান করতে পারি, সময় মতো বলবো। শুধু এটুকু বলি, রাজীব মধুছন্দা দেবীকে ব্ল্যাকমেইল করছিলো। সেই লেনদেন বিষয়ক কথা বলতেই সম্ভবত এসেছিলো রাজীব। রাজীবের লোভ দিন দিন বেড়েই উঠছিলো, তাই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন মধুছন্দা দেবী। তার একজন সঙ্গীও আছে, চিরসঙ্গীও বলা যায়, তার কথা পরে বলছি।
মধুছন্দা দেবীর সাথে কথোপকথন এর মাঝেই সম্ভবত অদিতির কলটা আসে রাজীবের কাছে। মধুছন্দা দেবী কোনো ভাবে স্ক্রিনে অদিতির নামটা দেখে ফেলেন এবং তখনি ঠিক করে ফেলেন আজই সঠিক সময় পথের কাঁটা সরিয়ে দেবার। রাজীব বেরিয়ে যেতেই তিনি কল করেন তার অপরাধ সঙ্গীকে। দুজনে মিলে প্রায় একটা নিশ্ছিদ্র প্ল্যানও বানিয়ে ফেলেন। রাজীব চলে যায় অদিতির সাথে দেখা করতে। কি রাজীব, আমার অনুমানে কোনো ভুল আছে কি?
রাজীব এতোক্ষণ চুপ করে মাথা নীচু করে ছিলো। এবারে মুখ তুলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। বললো, আপনি সম্পূর্ণ সঠিক বলছেন। উনি আমাকে ডেকে পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। ব্ল্যাকমেইলিং বন্ধ না করলে বিপদ হবে আমার, সেটাও বলেন। তখনি কল করে অদিতি। আমি উপরে চলে যাই অদিতির সাথে কথা বলতে।
তমাল জিজ্ঞেস করলো, অদিতির কল আসার পরে তুমি ফোনে কিছু বলেছিলে কি? রাজীব বললো, না তো,শুধু বলেছিলাম,আসছি।
এগজ্যাক্টলী! ওই টুকুই যথেষ্ট ছিলো। অর্থাৎ তুমি যে তখনি নিজের ঘরে না গিয়ে তিনতলায় অদিতির কাছে যাবে এটা মধুছন্দা দেবী বুঝে যান। সাথে সাথেই উনি কল করেন নিজের দোসরকে। ছুরি আগেই যোগাড় করা ছিলো, দরকার ছিলো একটা আবরণ যা শাড়িতে রক্ত লাগা আটকাতে পারে। সেটা সঙ্গীই যোগাড় করে দেয়। এক্ষেত্রে সেটা ছিলো একটা মেরুন শার্ট, ওনার দোসরের।
এবার আপত্তি জানালো ইন্সপেক্টর গড়াই। তিনি বললেন, তুমি বলছো যে একজন সঙ্গী ছিলো,সঙ্গিনী নয়, অর্থাৎ পুরুষ। তাহলে সেই সঙ্গী আঘাত না করে উনি মহিলা হয়ে কেন করলেন?
তমাল বললো, আমি নিজেও এটা নিয়ে চিন্তা করেছি ইনস্পেকটর গড়াই। এর কারণ হলো, তিন তলা থেকে রাজীবকে আবার দোতলায় নিয়ে আসতে একটা ডাইভারশন দরকার ছিলো। কিছু একটা না শুনলে রাজীব নীচে আসতো না। কোনো জোরালো শব্দ টাইপের কিছু। কারণ নাম ধরে ডাকলে অদিতি সাক্ষী রয়ে যেতো। জোরালো শব্দ তৈরি করার ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীই বেশি উপযুক্ত ছিলো। তাই ছুরি চালানোর দায়িত্ব মধুছন্দা দেবী নিজের হাতে তুলে নেন।
মধুছন্দা দেবী এবং তার সঙ্গী দোতলায় কান পেতেই ছিলো। রাজীব অদিতির ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পায়। সে কৌতুহলি হয়ে দোতলায় নেমে আসে। মধুছন্দা দেবী সম্ভবত নিজের দরজার পর্দার পিছনে লুকিয়ে ছিলেন। তার সঙ্গী কিভাবে শব্দ করেছিলো তা জানা যায়নি। হয়তো এক তলার ল্যান্ডিংয়ে লাফিয়ে নামে। রাতে সেটা যথেষ্ট জোরে শব্দই ছিলো, আবার এতো জোরে ছিলো না যাতে অন্যেরা শুনতে পায়। মনে রাখতে হবে এই শব্দের কথা রাজীব ছাড়া কিন্তু কেউই বলেনি।
রাজীব নেমে আসে, কিন্তু দোতলায় কাউকে দেখতে পায়না। অথচ সে স্পষ্ট শুনেছে শব্দটা। এমনিতেই তার কৌতুহল বেশি, সে ঝুঁকে পড়ে শব্দের উৎস সন্ধান করতে থাকে। মধুছন্দা দেবীর জন্য এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হয়না। ঝুঁকে রয়েছে রাজীব। এই অবস্থায় ছুরি মারার জন্য তার পক্ষে আদর্শ উচ্চতা। তিনি পর্দার পিছন থেকে বেরিয়ে এসে গেঁথে দিলেন ছুরিটা রাজীবের পিঠের বা দিকে, হৃদপিণ্ড বরাবর। মনে রাখতে হবে মধুছন্দা দেবীর ঘরটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে বা দিকে। অর্থাৎ ঝুঁকে থাকা রাজীবের ডান দিক থেকে এসেছিলেন তিনি।
এক আঘাতেই রাজীবের ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতো যদি না নীচে কিছু দেখতে না পেয়ে সে হঠাৎ সোজা হয়ে দাঁড়াতো। টাইমিংটাই বাঁচিয়ে দিলো তাকে। একে তার পিঠের উচ্চতা বেড়ে গেলো, তার উপর অবস্থান আনুভূমিক থাকে লম্ব হয়ে গেলো। তবুও বাঁচতে পারতো না যদি আততায়ী ডানহাতি হতো। আমি ফরেনসিক রিপোর্ট এবং ডঃ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি যে ছুরিটা পিঠের বাদিকে ঢুকে পাঁজরে ধাক্কা খেয়ে ডানদিকে সরে শিরদাঁড়ায় আটকে যায়। ভেবে দেখুন, ডানহাতি কেউ মারলে ছুরি ঢোকার পরে বাদিকে যেতো এবং হৃদপিণ্ড বিদ্ধ করতো। বাহাতি কেউ আঘাত করেছিলো বলেই ডানদিকে বেঁকে গেছিলো গতিপথ, তাই বেঁচে যায় রাজীব। আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, মধুছন্দা দেবী ছাড়া এই বাড়িতে আর কেউ বাহাতি নেই।
তমাল একটা বিরতি নিতেই আবার গুঞ্জন উঠলো ঘরে। এবার একটু জোরেই। সত্যের আকস্মিক অভিঘাত সবাইকে চমকিত করেছে। মধুছন্দা দেবী তখন মরিয়া হয়ে বললো, এসব মনগড়া গল্প শুনিয়ে তুমি কোর্টে কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না। আমার উকিল দু দিনেই আমাকে বের করে আনবে। তমাল হেসে বললো, কোর্টে প্রমাণের দায়িত্ব তো আমার নয় ম্যাডাম, সেটা ইন্সপেক্টর ঘোষের কাজ। উনি কিন্তু একটু আগে শুধু শুধু বাইরে যাননি, আপনার দোসরের ঘর খানাতল্লাশি করতে গেছিলেন। কি কি পেয়েছেন, তার কাছেই শুনুন নাহয়? তমাল ইন্সপেক্টর ঘোষের দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, একটা মেরুন শার্ট, তাতে রক্তের পুরানো দাগ। অবশ্য ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট কার রক্ত সেটা বের করে ফেলবে। একটা নেপালি ছুরি পাওয়া গেছে। মিঃ তমালের কথা মতো নীচের নাম্বারটা দেখেছি আমি, দুশো বারো। তমাল বললো আর যে ছবিটা দেওয়ালে টাঙানো ছিলো, সেটা এনেছেন তো মিঃ ঘোষ? ইন্সপেক্টর ইন্দ্রজিৎ ঘোষ তমালের প্রশ্নে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। তমাল বললো, ওটার প্রয়োজন হবে একটু পরে। মধুছন্দা দেবীর চোয়াল ঝুলে পড়লো এবার।
ইন্সপেক্টর ইন্দ্রজিৎ ঘোষ উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে অপেক্ষারত মহিলা কনস্টেবল কে ডাকলেন। তাকে মধুছন্দা দেবীকে নিয়ে যেতে বলতেই তমাল বাঁধা দিলো। বললো, আরে দাঁড়ান দাঁড়ান ইনস্পেকটর ঘোষ। গল্প যে সবে শুরু! এখনো যে অনেক বাকী। ওনাকে যে লাগবে এই রঙ্গমঞ্চে। শুভ কাজটা আর একটু পরেই করুন। আপনার কেসটা আরও পোক্ত হতেও পারে। কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোতেও তো পারে?
এবারে ঝাঁঝিয়ে উঠে দাঁড়ালেন মধুছন্দা দেবী। বললেন, না আর অপেক্ষা করার দরকার নেই। নিয়ে চলুন আমাকে। বেশ করেছি মেরেছি! দু পয়সার কর্মচারী দিনের পর দিন আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে যাবে আর আমি সেটা সহ্য করবো? নিয়ে চলুন আমাকে, আমি যা বলার থানায় গিয়ে আমার উকিলের সামনে বলবো। শহরের সেরা উকিল অ্যাপয়েন্ট করবো আমি। দেখি আমাকে এই সামান্য কেসে ক'দিন আটকে রাখে?
তমাল জিভ দিয়ে চুক চুক করে আওয়াজ করে বললো, এহ্ হে! কেসটা খুব সামান্য হয়ে গেলো, তাই না? তা বলে যান রাজীব আপনাকে ব্ল্যাকমেইল কেন করছিলো? কি এমন গোপন কথা জানতে পেরেছিলো সে, সেটা তো বলে যান? মধুছন্দা দেবী গজগজ করতে করতে বললো, আমি আমার উকিলের উপস্থিতি ছাড়া আর একটা কথাও বলবো না।
তমাল বললো, আরে আপনাকে তো এখনো অফিশিয়ালি গ্রেফতারই করা হয়নি? উকিল তো পাবেন গ্রেফতার হবার পরে। ততোক্ষণ আমার গল্পটাই নাহয় শুনে যান। আমি তো পাতি গোয়েন্দা, তাই ভুল ভ্রান্তি হলে ধরিয়ে দেবেন, কেমন?
তমাল এবারে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ঘরের মাঝখানে বসলো। তারপর বলতে শুরু করলো।
এই মুখার্জি বাড়ি একটা আলিবাবার গুহার মতো। যেখানেই চিচিং ফাঁক বলেছি, সেখানেই রহস্য বেরিয়ে এসেছে। মূল গল্পটার শুরু হয়েছিলো বছর পঞ্চান্ন আগে। যখন রমাপতি মুখার্জি বলে একজন মানুষ তার বন্ধু সুরেশ চাকলাদার কে সঙ্গে নিয়ে নতুন ব্যবসা খোঁজার জন্য দুমকার পথে যাত্রা করে। তারা দুজন কারা, নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না? রমাপতি হলেন রাহুলের পিতামহ আর সুরেশ বাবু তো এখানে উপস্থিত আছেনই। এই ঘটনা কিছুটা আমার সুরেশ বাবুর কাছে শোনা, বাকীটা নিজে অনুসন্ধান করে বের করেছি।
তমাল বলে চললো, রমাপতি খবর পেলো দুমকার পথে জামুন্ডির দিকে পালজোরি অঞ্চলে নতুন নতুন অভ্রখনি আবিস্কার হচ্ছে। শিক্ষিত বুদ্ধিমান রমাপতির ভবিষ্যতে মাইকা বা অভ্রের আকাশ ছোঁয়া সম্ভাবনার কথা বুঝতে দেরি হলো না। সে বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে গেলো সেখানে। কিন্তু জায়গাটা ছিলো আদিবাসী অধ্যুষিত। থাকার ভালো হোটেল পাওয়া মুশকিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে হরিপুরা বলে একটা গ্রামে এক হো উপজাতি পরিবারে কিছুদিনের জন্য থাকার জায়গা পেলো দুই বন্ধু।
হো উপজাতিরা এমনিতে উদার মনের, নারী স্বাধীনতার অভাব নেই তাদের মধ্যে কিন্তু জাত্যাভিমান ভয়ঙ্কর। বৈবাহিক বা শারীরিক সম্পর্ক তারা অন্য গোত্রের কারো সাথে সহ্যই করতে পারে না। কিন্তু রমাপতি অন্য চরিত্রের। সেখানে রমাপতির আলাপ হয় সেই বাড়ির মেয়ে সুলতা হো এর সাথে। পুরো মুখার্জি বাড়িটাই যৌনতার একনিষ্ঠ পুজারি, তাই রমাপতি এবং সুলতার ভিতরেও শারীরিক সম্পর্ক হতে বেশিদিন লাগলো না।
ওদিকে বাড়িতে রমাপতির সুন্দরী স্ত্রী রয়েছে। তাকেও অবহেলা করতে পারে না। তাই আসানসোল আর হরিপুরা যাতায়াত চলতে লাগলো। সেই সাথে দুই নারীর সাথেই চলতে লাগলো রমাপতির যৌনতা। সুরেশ চাকলাদার সবই জানতেন, কিন্তু বন্ধুকে কিছু বলতে সাহস পেতেন না কারণ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো না, সংসার বলতে গেলে রমাপতির দয়াতেই চলতো।
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
এভাবে চলতে চলতে একদিন সুলতা হো অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এই খবর হরিপুরা গ্রামে জানাজানি হলে দুজনেই যে খুন হবে, তা বুঝতে পেরেছিলো তারা। সুতরাং মাইকার ব্যবসা ভুলে তিনজনে প্রাণ নিয়ে পালালো। কিন্তু যাবে কোথায়? অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা নিয়ে তো আর স্ত্রীর কাছে গিয়ে ওঠা যায় না? দায়িত্ব নিলেন সুরেশ বাবু। তার কথা রমাপতির স্ত্রী বিভাবতী দেবী বেশ মান্য করতেন। তিনি বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করলেন বিভাবতী দেবীকে। অনেক মান অভিমানের পরে রাজি হলেন তিনি। সুলতা দেবীকে নিয়ে বাড়িতে এলেন রমাপতি। যথা সময়ে জন্ম নিলো একটি কন্যা সন্তান। নাম রাখা হলো মধুছন্দা!
নৈশব্দের এমন ভয়ঙ্কর অভিঘাত হতে পারে সেটা সেই ঘরে উপস্থিত না থাকলে বোঝা যেতো না। কেউ কোনো টু শব্দটি করলো না, কিন্তু সবার চোখ বিস্ফারিত হয়ে আছে। স্বাভাবিক রয়েছে শুধু তিন জন, সুরেশ চাকলাদার, সুলতা দেবী, আর মধুছন্দা দেবী নিজে। এরা বিষয়টা আগেই জানে, তাই নতুন করে কোনো অনুরনন হয়নি। মধুছন্দা দেবীকে সন্তান স্নেহে কখনো হয়তো কথাটা বলে থাকবেন সুলতা দেবী।
নতুন খবরটা সবাইকে হজম করতে একটু সময় দিয়ে তমাল আবার বলতে শুরু করলো। বিভাবতী দেবী কিন্তু উদার মনের মহিলা ছিলেন। স্বামী এবং বংশের অপযশের কথা ভেবে মধুছন্দা দেবীকে নিজের সন্তান পরিচয় দিয়েই মানুষ করতে লাগলেন। পরে তার একটি ছেলে জন্মায়, নাম শুভেন্দু মুখার্জি, রাহুলের বাবা।
মধুছন্দা দেবী বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তার জিনে থাকা ব্যভিচারী স্বত্তাও বড় হতে থাকে। পাড়ার ছেলেদের চোখের মনি আর রাতের উষ্ণ কল্পনা হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু ততোদিনে সমাজে একটা উঁচু জায়গা করে নিয়েছে মুখার্জি পরিবার। তাই বাড়ির বাইরে নিজের যৌন চাহিদা মেটাবার সুযোগ ছিলোনা তার। কিন্তু শরীরের ক্ষুধা যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, সে উঁচু নীচু, মালিক কর্মচারী বোঝে না, খিদে মেটাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। মুখার্জি বাড়িতেই এক যুবক কর্মচারী সনতের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মধুছন্দা দেবী। প্রেমের সম্পর্ক যখন শরীর দাবী করতে থাকে তখন তার হাত ধরে ঘর ছাড়েন তিনি।
এখানেই সে সাহায্য পায় তার বর্তমান সাথী, সব পাপ কাজের দোসর ঘনশ্যাম তিওয়ারির। বাড়ির ড্রাইভার ছিলো সে। মনে মনে মধুছন্দা দেবীর একজন মৌন পুজারী ছিলো সেও। গভীর রাতে গাড়িতে করে সনত আর মধুছন্দা দেবীকে রেখে আসে চিত্তরঞ্জনে। কিন্তু জানাজানি হবার পরেও কিছুতেই সে স্বীকার করেনা কোথায় তাদের রেখে এসেছে। সেই অপরাধে চাকরি যায় তার। ঘনশ্যাম নিজেও গিয়ে ওঠে মধুছন্দা আর সনতের বাড়িতে।
তারপরে বহু বছর আর তাদের কোনো খোঁজ খবর ছিলো না। ইতিমধ্যে রমাপতি বাবু দেহ রাখলেন। শুভেন্দু বাড়ির কর্তা হলেন। তিনি কিন্তু ছিলেন দৈত্যকুলে প্রহ্লাদের মতো ভালো মানুষ। মধুছন্দা দেবী ঘর ছাড়ার পরে যখন রমাপতি ভীষণ রেগে গিয়ে সবার সামনে তাকে ত্যাজ্য কন্যা ঘোষনা করলেন, তখনো শুভেন্দু আপত্তি জানিয়েছিলো।
শুভেন্দু কিন্তু ভুললো না তার দিদিকে। সে বিশ্বস্ত কর্মচারী রামহরি কে মধুছন্দা দেবীর সন্ধান করতে লাগিয়ে দিলেন। অনেক খুঁজে রামহরি যোগাড়ও করে ফেললো তাদের ঠিকানা। সেটাই তার কাল হলো। ঠিকানা যোগাড় করতে গিয়ে রামহরি মুখার্জি বাড়ির এইসব কেচ্ছা জেনে ফেললো। ফলে চাকরি গেলো তারও।
ওদিকে সনত ছিলো অকর্মণ্য প্রকৃতির। কাজকর্ম কিছুই করতো না, বসে বসে খেতো। মধুছন্দা দেবী বাড়ি ছাড়ার সময় অনেক টাকাকড়ি গয়নাগাটি নিয়ে গিয়েছিলেন। সেগুলো ভেঙেই চলতে লাগলো সংসার। ঘনশ্যামই বরং আনন্দভবন হোমে একটা ড্রাইভারের চাকরি জুটিয়ে সংসার চালাতে লাগলো। পাশাপাশি কাজ করতো একটা গ্যারেজে। সনতের অপদার্থতা ধীরে ধীরে যুবক ঘনশ্যামের প্রতি আকৃষ্ট করে তুললো মধুছন্দা দেবীকে। তখনি খবর পেলো ঘনশ্যাম যে গ্যারেজে কাজ করতো সেটা বিক্রি হবে। তিনি নিজের গয়না বিক্রি করে গ্যারেজটা কিনে নেবার জন্য টাকা দিলেন ঘনশ্যাম কে। ঘনশ্যাম গ্রাম থেকে ডেকে নিলো ছোট ভাই জগন তিওয়ারি কে।
এই গয়না বিক্রি কিন্তু সহ্য হলোনা সনতের। সে অশান্তি শুরু করলো। রোজ অশান্তি হতে লাগলো। ক্রমে সেটা সহ্যের শেষ সীমায় পৌঁছালো। তখনি একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হলো সনত। কেউ তাকে আর কোনোদিন দেখেনি। মধুছন্দা দেবী আর ঘনশ্যামের ভিতরে আর কোনো বাঁধা রইলো না। তারা স্বামী স্ত্রীর মতো থাকতে শুরু করলো। সনতের নিরুদ্দেশ হবার দু বছরের মাথায় মধুছন্দা দেবীর কোল আলো করে একটা কন্যা সন্তান এলো। স্বামী নিরুদ্দেশ হবার দুবছর পরে সন্তান এলে সেই সন্তান যে স্বামীর নয়,সেই সময় চিত্তরঞ্জনের ছাব্বিশ নম্বর রাস্তায় এই ঘটনা যে বিস্তর আলোড়ন তুলেছিলো তা মধুছন্দা দেবীর প্রাক্তন বাড়িওয়ালা বেশ পরিস্কার মনে করতে পারলেন।
কিন্তু কোথায় গেলো সনত? তার বাড়ি থেকেও কোনো খোঁজ করা হয়নি, মুখার্জি বাড়ি থেকে খোঁজ করার তো প্রশ্নই ওঠেনা। সবাই জানলো ঝগড়া করে নিরুদ্দেশ হয়েছে সনত। কিন্তু পাপ কখনো চাপা থাকে না। আর মদের নেশার মতো এতো খারাপ জিনিস আর নেই। পেটে বেশি পরিমান পড়লে অনেক গোপন কথাই বেরিয়ে আসে বমির মতো। আমার ড্রাইভার মদনকে পাঠিয়ে সেই টোপই দিয়েছিলাম আমি। সে ও ড্রাইভার, তাই জগনের গ্যারেজে গাড়ি সারানোর বাহানায় তার সাথে বন্ধুত্ব করতে দেরি হয়নি মদনের। তারপরে মদের ঠেকে একটু ভালো মদ বেশি পরিমান খাইয়ে দিতেই অনেক খবর বেরিয়ে এসেছে। পরিস্কার খবর নয়, একটু আভাস মাত্র। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট।
আমি নিজে গিয়ে দেখে আসি বাড়িটা। কোথায় খুঁজতে হবে বলে দিতেই বাকী কাজ করেছেন ইন্সপেক্টর বাসুদেব গড়াই। পাঁচিলের পাশের এক পরিত্যক্ত পাতকুয়ো থেকে উদ্ধার হয়েছে নরকঙ্কাল। সনতের মা এখনো জীবিত আছেন। আশাকরি তার সাথে ডিএনএ ম্যাচ করালেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে যে সনত নিরুদ্দেশ হয়নি, ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে তাকে। এখন খুনটা মধুছন্দা দেবী নিজে করেছিলেন, না কি ঘনশ্যাম অথবা জগন, সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দুই থানার মহিলা এবং পুরুষ পুলিশ কর্মীদের। শুনেছি থানায় এতো খাতির যত্ন করা হয় যে কিছুই গোপন থাকে না।
একনাগাড়ে কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছে তমাল। বললো, একটু চায়ের ব্যবস্থা হলে মন্দ হতো না। দুজন মানুষ আর কখনো মুখার্জি বাড়ির চা খাবেন কি না ঠিক তো নেই? কথাটা শুনে মৌপিয়া উঠে গিয়ে চায়ের কথা বলে এলো ডাইনিংয়ে।
মধুছন্দা দেবী যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না। এমনকি তিনি যে নিশ্বাস নিচ্ছেন সেটাও ভালো করে ঠাহর না করলে বোঝা যায় না। ঘনশ্যাম কিন্তু জ্বলন্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তমালের দিকে। দেখলে মনে হয় যেকোনো সময় ঝাঁপিয়ে পড়বে তার উপর। অল্প সময়ের ভিতরেই চা এসে গেলো। পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে তমাল আবার শুরু করলো।
- এতোক্ষণ যা বললাম, সেসব খবর মুখার্জি বাড়িতে না পৌঁছালেও মধুছন্দা দেবীর মা হবার খবর কিন্তু ঠিকই পৌঁছালো। বাচ্চার বাবা কে, সেটাও অনুমান করতে পারলো তারা। শুভেন্দু বাবু আর ঠিক থাকতে পারলেন না। একদিন ছুটে গেলেন দিদির কাছে। তাকে ফিরে আসতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু বাচ্চাটার সাথে মুখার্জি বাড়ির কোনো রকম সম্পর্ক অস্বীকার করলেন তিনি। অনেক বুঝিয়েও লাভ হলো না। মেয়েকে ছাড়া মধুছন্দা দেবী ফিরতে চাইলেন না।
অনেক বুঝিয়ে শুভেন্দু বাবু বাচ্চাটাকে আনন্দভবন বলে একটা হোমে পাঠিয়ে দিতে মধুছন্দা দেবীকে রাজি করালেন। সেখানে বাচ্চার নাম রাখা হলো বন্দনা। পিতার নাম ঘনশ্যাম তিওয়ারি, মা মধুছন্দা তিওয়ারি। শুভেন্দু বাবু বাচ্চাটার সমস্ত রকম দায়িত্ব নিলেন। এমনকি নিজের প্রতিপত্তি খাটিয়ে হোমে তার সুরক্ষার ব্যবস্থা ও করে দিলেন।
তমাল এই পর্যন্ত বলে বন্দনার দিকে তাকালো। দেখলো সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মধুছন্দা দেবীর দিকে। মধুছন্দা দেবী তখন মুখ নীচু করে আছেন। ঘরের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বন্দনার দিকে। এতোদিন যে নিজেকে যার পালিতা কন্যা ভেবেছে, হঠাৎ সে তার আত্মজা জানার পরে কি অবস্থা হতে পারে মেয়েটার মনে, সেটা অনুভব করে বন্দনার জন্য কষ্ট হলো তমালের।
কিন্তু গল্প যে এখনো শেষ হয়নি! তাই তমাল ভাবাবেগ বাদ দিয়ে কর্তব্যে মনোনিবেশ করলো। সে বলতে লাগলো, শুভেন্দু বাবু অনেক চেষ্টা করেছিলো দিদিকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু বন্দনাকে মুখার্জি বাড়িতে জায়গা দেবেন না, এই ছিলো তার শর্ত। কিন্তু অন্তরের বন্ধন যে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্ত বন্ধন! মধুছন্দা দেবী কিছুতেই বন্দনাকে ছাড়া ফিরতে রাজি হলো না।
মুখার্জি বাড়ির সম্পদ লক্ষ্মী তখন কল্পতরু হয়ে উঠেছেন। সম্পদে ঐশ্বর্যে ভরিয়ে দিয়েছেন। সেই খবর মধুছন্দা দেবীর কানেও পৌঁছালো। কন্যা স্নেহে অন্ধ হলেও প্রকৃতিগত লোভকে তিনি জয় করতে পারলেন না। মনে মনে এই অতুল ঐশ্বর্য ভোগ করার বাসনা জেগে উঠলো। পরিকল্পনা করতে শুরু করলেন তার একান্ত অনুচর ঘনশ্যামের সাথে। ঠিক করলেন শুভেন্দুকে সরিয়ে দিয়ে মুখার্জি বাড়ির সম্রাজ্ঞী হয়ে বসবেন তিনি নিজে।
পরের বার শুভেন্দু বাবুকে সস্ত্রীক যেতে বললেন চিত্তরঞ্জনে। বোধহয় বলেছিলেন যে তিনি বন্দনাকে ছাড়া ফিরে যেতে রাজি। ভালোমানুষ শুভেন্দু এই গভীর চক্রান্তের কিছুই জানতে পারলেন না। স্ত্রীকে নিয়ে দিদিকে ফিরিয়ে আনতে চিত্তরঞ্জনে গেলেন। মধুছন্দা দেবীরা তখন আগের পুরানো বাড়ি ছেড়ে ঘনশ্যাম আর জগনের গ্যারেজের পাশেই একটা বাড়িতে উঠে এসেছেন। সেখানে পৌঁছে খাওয়া দাওয়া সারলেন তারা। ড্রাইভারকে অন্য কোনো কাজে পাঠিয়ে জগনকে নিয়ে ঘনশ্যাম কারগরি ফলালো গাড়িতে। তারপরে কোনো বাহানায় একাই ফেরত পাঠালেন তাদের। ফেরার পথে হাই রোডে উঠে গাড়ি গতি তুললেই ব্রেক এবং স্টিয়ারিং ফেল করে সোজা ধাক্কা মারে ছুটন্ত লরির সাথে। সাথে সাথে মারা যান শুভেন্দু বাবু আর তার স্ত্রী এবং ড্রাইভার।
রাগে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালো রাহুল। দাঁতে দাঁত চেপে বললো, তমাল তুমি যা বললে, তা কি সত্যি না তোমার অনুমান? তমাল তাকে শান্ত হতে বললো। রিনি তার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিতে চেষ্টা করলো, কিন্তু সে বসলো না। দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু মেলে তাকাতে লাগলো মধুছন্দা এবং ঘনশ্যামের দিকে। তমাল বললো, যা বললাম, সব সত্যি। আমি কয়েকদিন আগে কুলটি যাবো বলে চিত্তরঞ্জন গিয়েছিলাম। আগে থেকে জানালে জগনকে ধরা যেতো না। সেখানে জগনকে গ্রেফতার করেছেন ইন্সপেক্টর গড়াই। সে সব কিছু স্বীকার করেছে। জগন এখন এই বাড়ির নীচেই পুলিশের গাড়িতে অপেক্ষা করছে, ইচ্ছা হলে ডেকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন। রাহুল চিৎকার করে বললো, আমিও দেখবো এরা ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচে কিভাবে। এতো বড় নৃসংস কাজ মানুষ কিভাবে করতে পারে?
তমাল বললো, শুধু আপনার বাবা নন, আপনাদের তিন ভাইবোনকেও সরিয়ে দেবার চেষ্টা হয়েছে। মনে করুন মৌপিয়ার সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যাওয়া, অদিতির ফুড পয়জনিং, আপনার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট, সবই এদের কীর্তি। সেগুলোতে সফল না হয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন মধুছন্দা দেবী। রাজীবকে খুন করে আপনাকে খুনের অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়া। সেই চেষ্টায় সফল হলে এর পরে পালা আসতো অদিতি আর মৌপিয়ার।
একজন মাতৃসমা নারীর এমন কুটিল মনের পরিচয় পেয়ে ভাষা হারিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো রাহুল। সুরেশ বাবু বললেন, আপনি বলুন তমাল বাবু, আমরা পুরোটা শুনতে চাই। আপনি কিভাবে এদের সন্ধান পেলেন?
তমাল বললো, ধর্মের চাকা ঘোরানোতে আপনার অবদান কম নয় সুরেশ বাবু। আপনিই প্রথম হিসাবের অসঙ্গতি ধরতে পেরেছিলেন। সেখান থেকেই এদের শেষের শুরু। শুভেন্দু বাবুকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করার পরে মুখার্জি বাড়ির শুভার্থী হয়ে এসে জুড়ে বসেন মধুছন্দা দেবী। শুভেন্দু বাবু দিদির কথা বাড়িতে আলোচনা করতেন না। তাই অন্য সদস্যরা বন্দনার কথা বা তলে তলে এতো কিছু ঘটে যাওয়ার আভাসটুকু পর্যন্ত পায়নি। পিসি ফিরে এসে সংসারের এবং ব্যবসার হাল ধরেছে বলে অদিতি মৌপিয়া এবং রাহুল বেশ নিশ্চিন্ত ছিলো। মা কে হারিয়ে মাতৃসমা পিসিকেই আশ্রয় করে বাঁচতে চেয়েছিলো তারা।
পিসি কিন্তু তাদের আপন করে নিলো না। তার অন্তরের বন্ধন অটুট রইলো একমাত্র বন্দনার প্রতি। নাটক সাজিয়ে নিজের মেয়েকেই দত্তক নিলেন তিনি। কিন্তু খল চরিত্র বেশিদিন উৎপাত না করে থাকতে পারে না। এই পাপের ভাগীদার জগন শুরু করলো ব্ল্যাকমেইলিং। সনত এবং শুভেন্দু বাবুর খুনের কথা সে জানতো। তবে আমার মনে হয় এই কাজে জগনের সাথে ঘনশ্যামও যুক্ত। মধুছন্দা দেবী ফিরে এসেই রাণী হয়ে বসলো। অথচ তার ভাগীদার ঘনশ্যামকে ফিরিয়ে আনলো ড্রাইভার করে। কেউ জানতো না তাদের সম্পর্কের কথা। যারা জানতো তারা আর বেঁচে নেই। তার বাড়িতে নিজের ইমেজ ঠিক রাখতে ঘনশ্যামকে ড্রাইভারর্স কোয়ার্টারেই রাখতে হলো। এতে অপমানিত হলো ঘনশ্যাম। বদলা নিতে ভাইয়ের সাথে ব্ল্যাকমেইলিং এর খেলায় নামলো সে।
মাসে মাসে একটা বড় অংকের টাকা ঘনশ্যাম মধুছন্দা দেবীর কাছ থেকে নিয়ে পাঠাতে লাগলো জগনের অ্যাকাউন্টে। আয় ব্যয়ের হিসাবে গড়মিল হতে লাগলো। সেই গড়বড় ধরে ফেললেন অভিজ্ঞ অ্যাকাউন্টেন্ট সুরেশ বাবু। ফলে চোর অপবাদ দিয়ে তাকে বরখাস্ত করে রাজীবকে বহাল করা হলো।
রাজীবের কাছেও গোপন থাকলো না সেটা। কিন্তু সুরেশ বাবুর মতো এই পরিবারের একান্ত অনুগত ছিলো না সে। তার কৌতুহলী মন আসল কারণ খুঁজতে শুরু করলো। যেভাবেই হোক জেনে গেলো রাজীব। একজন অ্যাকাউন্টেন্ট এর কাছে ব্যাংক স্টেটমেন্ট যোগাড় করা কঠিন কিছু নয়। শুধু ব্ল্যাক মেইলিং নয়, শুভেন্দু বাবুর অ্যাক্সিডেন্টও যে সাজানো সেটাও সে জেনে যায়। আমি সেটা জানতে পারি তার কম্পিউটার থেকে আর তার নিজের লেখা একটা ডায়েরি থেকে।
গুপ্ত কথা জানার পরে রাজীবও ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়লো। সেও শুরু করলো ব্ল্যাকমেইলিং। ডায়েরিতে প্রথমে সে জগনের ব্ল্যাকমেইলিং এর র্যানসাম দেওয়ার তারিখ গুলো লিখেছিলো। তারপর নিজে কবে কবে কতো টাকা নিয়েছে সেটাও ডায়েরিতে শেষের দিকে লিখে রেখেছে। কিন্তু মাঝেখানে একটা পাতায় একটা তারিখ লেখা দেখে আমি খোঁজ নিয়ে জানি যে সেটা শুভেন্দু বাবুর অ্যাক্সিডেন্টের তারিখ। তখনই বুঝে যাই রাজীব কি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছিলো মধুছন্দা দেবীকে। কারণ শুধু তছরুপের জন্য ব্ল্যাকমেইল করলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিলেই চুকে যেতো, টাকা দেবার দরকার হতো না।
মধুছন্দা দেবী পড়লেন বিপদে। রাহুল ফিরে আসার পরে ব্যবসার বেশির ভাগ দায়িত্ব তার হাতে। এতো টাকা জোগাড় করতে হিমসিম খেতে লাগলেন তিনি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো তার। তার উপরে নিজের মেয়ের সাথে রাজীবের শারীরিক সম্পর্কের খবর কানে যেতেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মরতে হবে রাজীবকে। খুনের একটা নেশা আছে। সফল ভাবে দু দুটো খুন করে ধরা না পড়ে সাহস আর অহংকার বেড়ে গেছিলো মধুছন্দা-ঘনশ্যাম জুটির। তাই আরও একটা খুনের পরিকল্পনা করলো তারা। সাথে বাই ওয়ান গেট ওয়ান অফারের মতো রাহুলকে জড়িয়ে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করলেন।
সবই ঠিকঠাক চলছিলো। খুনের হাতিয়ার, যোগাড় করে অপেক্ষা করতে লাগলেন সুযোগের। কিউরিও দোকান থেকে ঘনশ্যাম কিনে আনলো অবিকল একই রকম একজোড়া ছুরি। দোকানদার ঘনশ্যামের ছবি দেখে সনাক্ত করেছে।
সুযোগ এলো, কিন্তু ভাগ্য রাজীবকে সহায়তা করে মধুছন্দা দেবীর প্ল্যান ভেস্তে দিলো। পিসি হয়ে বাপ মরা ভাইপোর জন্য কিছু না করলে খারাপ দেখায় তাই পুলিশের কাছে রাহুলের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ তুলে দিয়ে ভাব করলেন তিনি নিরপেক্ষ তদন্ত চান। এই সময়ে এলাম আমি। আমার বয়স দেখে উনি আরও একটু ভালো পিসি সাজবেন বলে ঠিক করলেন। ভাইপো কে বাঁচাবার জন্য আমাকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে চাইলেন। নিয়োগ করলেন আমাকে। এবং নিজের কফিনের শেষ পেরেকটা পুঁতে দিলেন তখনই। আমার ট্র্যাক রেকর্ড জানলে হয়তো এই ভুল করতেন না।
তমাল থামতেই মৌপিয়া জিজ্ঞেস করলো, বন্দনা যে পিসিরই মেয়ে সেটা তুমি কিভাবে জানলে? তমাল বললো, প্রথম সন্দেহ হয় তার কথার অসংগতি দেখে। তিনি বলেছিলেন বন্দনাকে প্রথম দেখেন ঘনশ্যাম হোম থেকে নিয়ে আসার পরে। কিন্তু বন্দনা বলেছে সে ছোট বেলা থেকেই মাঝে মাঝে মধুছন্দা দেবীর বাড়িতে যেতো ঘনশ্যামের সাথে। তারপরে একদিন আমি বন্দনার ঘরে তার খুব ছোটবেলার একটা ছবি দেখতে পাই, হোমে তোলা। সেই একই বয়সের একটা ছবি মধুছন্দা দেবীর ঘরেও আছে। তখন থেকেই সন্দেহ হয়, কিন্তু শিওর হই হোমের ফাইল ঘাটতে গিয়ে। সেখানে মধুছন্দা দেবীর কোলে শিশু বন্দনার একটা ছবি পাই, পাশে ঘনশ্যাম ঘনিষ্ঠ ভাবে দাঁড়ানো। হয়তো কোনো জন্মদিনে বাবা মায়ের সাথে বন্দনার ছবি ওটা। সেই ছবিটা চুরি করি আমি, সেটা এখন আমার কাছে। বলেই নিজের পকেট থেকে ছবিটা বের করে টেবিলে রাখলো সে। রাখল রায়ের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো তমাল, কি রাখাল বাবু, ছবিটা হোমের ফাইলে ছিলো তো? সে মাথা নেড়ে সায় দিলো।
তমাল বললো, এই একই ছবি, শুধু মধুছন্দা দেবীকে কেটে বাদ দিয়ে নিজের ঘরে বাঁধিয়ে রেখেছিলো ঘনশ্যাম, সেটা ইনস্পেকটর ঘোষ একটু আগেই তার ঘর থেকে নিয়ে এসেছেন। আর কিছুই বুঝতে বাকী থাকে না। তমাল থামতেই ইনস্পেকটর ঘোষ বাঁধানো ছবিটা তুলে সবাইকে দেখিয়ে দিলেন।
অদিতি প্রশ্ন করলো আচ্ছা তমালদা, তুমি বললে বন্দনা পিসির মেয়ে, তাহলে পিসি বন্দনাকে দত্তক নিতে গেলো কেন? পিসির উত্তরাধিকারী তো বন্দনা এমনিতেই ছিলো?
তমাল বললো, দেখো অদিতি মধুছন্দা দেবী একজন ধুরন্ধর মহিলা। তিনি সবদিক বিচার করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি জানতেন যে তিনি রমাপতি বাবুর অবৈধ সন্তান। ভারতের সংবিধানের ১৯১৫ সালের প্রণোদিত আইনে অবৈধ সন্তানও বাবা মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। কিন্তু ১৯৫৫ এর সংশোধিত ধারা ১৬(৩) অনুযায়ী অবৈধ সন্তান শুধু মাত্র বাবা মায়ের উপার্জিত ধনের উত্তরাধিকার বহন করে। তোমাদের পরিবারের সম্পত্তির সিংহভাগ উপার্জন করেছে তোমার বাবা শুভেন্দু মুখার্জি। একদিন তোমাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম নিশ্চয়ই মনে আছে? কিন্তু মধুছন্দা দেবী তো রমাপতি বাবুর অবৈধ সন্তান, শুভেন্দু বাবুর অর্জিত সম্পত্তিতে তার কোনো অধিকার নেই।
যদিও সেই পরিমানটাও কম নয়। পৈতৃক বাড়ি এবং আসানসোলের দোকান গুলো তোমার ঠাকুরদার আমলে করা। সেগুলোতে তার অধিকার আছে, যা পরবর্তীকালে বন্দনা পাবে। কিন্তু এখানেও একটা প্রবলেম আছে। বন্দনা আবার সনত বাবু এবং মধুছন্দা দেবীর বৈধ সন্তান নয়। সে ঘনশ্যাম আর মধুছন্দা দেবীর অবৈধ সন্তান। কিন্তু মধুছন্দা দেবীর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ছাড়া নিজের উপার্জিত সম্পত্তি কিছু নেই। তিনি পড়ে গেলেন ধন্ধে। যদি বন্দনার জন্ম পরিচয় জানাজানি হয়ে যায়, তাহলে তো সে কোনো সম্পত্তি পাবে না অবৈধ সন্তান হবার কারণে। সেই জন্যই নিজের সন্তানকেই মধুছন্দা দেবী দত্তক নিয়ে বৈধ বানিয়ে নিলেন যাতে মুখার্জি পরিবার থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে যা কিছু পাবেন, পুরোটাই যেন বন্দনা পায়।
গার্গী বললো, বাপরে! উনি এতো কিছু ভেবেছেন? তাহলে বন্দনা তো এই পরিবারের সম্পত্তির একটা অংশ পাবে, কি বলো?
" না, এই পরিবারের এক কানাকড়িও পাবে না। মধুও পাবে না, তার মেয়েও পাবে না!" তমাল উত্তর দেবার আগেই একটা জোরালো নারী কন্ঠ শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন সুলতা দেবী। তমাল বললো, আইন কিন্তু অন্য কথা বলছে পিসি। সুলতা দেবী বললেন, এতোক্ষণ আমি সব কথাই শুনছিলাম। মধু সম্পত্তি তখনই পাবে যখন সে এই পরিবারের সন্তান হবে, বৈধ বা অবৈধ। কিন্তু সে এই পরিবারের সন্তানই নয়। রমাপতি বাবু তার বাবা নয়।
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
এবার তমাল নিজেও চমকে গেলো এই অকল্পনীয় খবরে। ঘরে এখন একটা পিন পড়লেও সেটা বজ্রপাতের মতো শোনাবে এমন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না বিস্ময়ে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছেন মধুছন্দা দেবী নিজে। তার চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে আছে, চোয়াল ঝুলে পড়েছে। এ খবর যে তার কাছেও নতুন সেটা তার ভেঙে পড়া চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এতো দিন ধরে এতো প্ল্যানিং, এতো নৃশংসতা, এতো নাটকীয়তা সব মাঠে মারা যেতে বসেছে।
কোনো রকমে ঢোক গিলে সে ভাঙা গলায় বললো, কি... কি বলছো তুমি মা? তুমি নিজেই তো বলেছিলে আমি তোমার আর বাবার মেয়ে? সুলতা দেবী মাথা উঁচু করে বললেন, হ্যাঁ বলেছিলাম। বলেছিলাম কারণ বড় বাবু আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন এ কথা আমি যেন কখনো প্রকাশ না করি। তিনি চেয়েছিলেন যেন তুমিও এই পরিবারের মেয়ে হয়ে ওঠো। কিন্তু তুমি অন্যায়ের সব সীমা অতিক্রম করেছো। বাড়ি থেকে পালিয়ে বড় বাবুর অসম্মান করেছো, মেনে নিয়েছি। ফিরে এসে সম্পত্তি দখল করেছো, মেনে নিয়েছি, কারণ ভেবেছিলাম তুমি ছোটবাবুর সন্তানদের ঠকাবে না। কিন্তু এ কি শুনছি আমি? তুমি খুনী! তুমি ছোট বাবুকে খুন করেছো? নিজের স্বামীকে খুন করেছো? হিসাব বাবুর সাথে অবিচার করেছো? রাজীবকে খুন করতে চেয়েছিলে? এতো নীচ তুমি? আমরা হো উপজাতিরা খুন করি শুধু নিজেদের আদর্শের জন্য। সাহেবদের সাথে লড়েছি, তাদের মেরেছি দেশের জন্য! আমরা নিজেদের গোত্র বাঁচাতে খুন করি, কিন্তু সম্পত্তির লোভে খুন করি না। তুমি হো গোত্রকে অপমানিত করেছো। আমার কাছে দেবতার তুল্য বড় বাবুর পরিবারের ক্ষতি করেছো, তাই আমাকে প্রতিজ্ঞা ভাঙতে হলো। জানি বড় বাবু স্বর্গ থেকে আমাকে এজন্য ক্ষমা করবেন।
মধুছন্দা দেবীকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো রাজকীয় মহলের ভগ্নস্তূপ। কোন রকমে মুখ তুলে বললেন, তাহলে কে আমার বাবা! বলো মা, অন্তত এটুকু জেনে যাই আমি! কি আমার জন্ম পরিচয়?
সুলতা দেবী বললেন, বড় বাবু আর হিসাব বাবু তখন ব্যবসার কাজে হরিপুরা গ্রামে গেলেন। আমার বাবার সাথে পরিচয় হয় তাদের এক অভ্র খনিতে। থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না বলে আমাদের বাড়িতেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। খনিটা ছিলো সাহেবদের। সেই খনির ম্যানেজার ব্লেক সাহেবের বাড়িতে আমি পরিচারিকার কাজ করতাম। বয়স অল্প ছিলো, সাহেব বাড়ির জাঁকজমক দেখে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। সাহেবের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। এদিকে বড় বাবুরও আমাকে ভালো লেগে যায়। কিন্তু তখনি আমি বুঝতে পারি আমার পেটে তুমি এসেছো।
আমি জানতাম আমাদের গোত্র এটা কিছুতেই মেনে নেবে না। সিংবোঙ্গার কাছে বলি দেবে আমাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। বড় বাবুকে সব খুলে বলি। তিনি আমাকে নিয়ে পালিয়ে চলে আসেন। অন্যের পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। নিজের স্ত্রীকে বললেন আমার পেটে তার সন্তান। বড় গিন্নীও আমাকে মেনে নিলেন। বড় বাবু ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে কোনো দিন আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে কেউ তাড়িয়ে না দেয়,এমন কি নিজের ছেলেকেও বলে গেলেন সে কথা। এমন একটা পরিবারের সন্তান সন্ততির এতো বড় বিপদে চুপ করে থাকলে সিংবোঙ্গা আমাকে কোনোদিন পৃথিবী প্রদক্ষিনের অনুমতি দেবেন না, অন্ধকূপে বন্দী হয়ে থাকবো মৃত্যুর পরে।
দুহাতে মুখ ঢেকে তখন মধুছন্দা দেবী ঝরঝর করে কেঁদে চলেছেন। বন্দনা তার মাথায় হাত রেখে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র কিছুক্ষণ আগে যে নিজের জন্ম পরিচয় পেয়ে আবেগে ভেসে গেছিলো, এখন তার পৃথিবীটা শূন্য মনে হচ্ছে। ভাবছে এতো সব কিছু না জানাই তো ভালো ছিলো। সত্য যদি এতো যন্ত্রণা দেয়, তাহলে মিথ্যার কোলেই তো আরামে কাটিয়ে দেওয়া ভালো ছিলো!
তমাল ইশারা করতেই ইনস্পেকটর ঘোষের আদেশে দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কনস্টেবল এসে ঘনশ্যাম আর মধুছন্দা দেবীকে নিয়ে গেলো। ধীরে ধীরে সুলতা দেবী উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। ঘরের অন্য সবাই চুপচাপ বসে রইলো।
মিনিট পনেরো পরে সবাই একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে তমাল বললো, আমি রাহুলের কাছে একটা অনুমতি চাই, কারণ এই মুখার্জি বাড়ির কর্তা এখন সে। সবাই তমালের দিকে তাকালে সে বললো, আমি বন্দনাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাই। তার লেখাপড়া এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবার সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর এই এক লাখ টাকার চেকটা আমি সুরেশ বাবুকে দিতে চাই। তোমার আপত্তি নেই তো রাহুল?
রাহুল উঠে এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো তমালকে। তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বেয়ে নামছে। ভেজা গলায় সে বললো, না তমাল, বন্দনা কোথাও যাবে না। সে আমাদের ছোট বোন হয়ে এই বাড়িতেই থাকবে। তার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের। সুরেশ বাবুও আজ থেকে আমৃত্যু এই বাড়িতে থাকবেন। তার সেই পুরানো নিজের ঘরেই। রামহরি কাকারও যেন কোনো কষ্ট না হয়, সে খেয়ালও আমি রাখবো। তুমি মুখার্জি পরিবারের জন্য যা করলে, তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, তোমার জন্য মুখার্জি বাড়ির দরজা সারাজীবনের জন্য খোলা রইলো তমাল। পিসি যে চেকটা তোমাকে দিয়েছে সেটা তোমারই রইলো। এছাড়াও আমি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কিছু দিতে চাই, প্লিজ না কোরোনা তমাল।
সেদিন রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। ডাইনিং টেবিলে তমালের এতো।প্রশংসা চলছে যে সে রীতিমতো অস্বস্তি বোধ করছে। তাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য গার্গীর কদরও বেড়ে গেছে অনেক। ডিনার শেষ করে রাহুল নিজের ঘরে চলে গেলে গার্গী বললো, আচ্ছা তমালদা, একটা প্রশ্ন আমার মনে আসছে বারবার, একটু ক্লিয়ার করে দাও। তমাল বললো, কি প্রশ্ন? গার্গী জিজ্ঞেস করলো সেই রাতে পিসি রাজীবকে কল করেছিলো কেন, সে তো বুঝলাম, কিন্তু অদিতি কেন তাকে কল করেছিলো?
তমাল তাকিয়ে দেখলো, অদিতির গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে গার্গীর প্রশ্ন শুনে। সে বললো, এই উত্তর আমার চেয়ে অদিতির মুখের পরে শুনে নিলে ভালো হয়। আমি অনুমান করতে পারি, কিন্তু অদিতি সত্যিটাই বলবে। বেচারিকে আর লজ্জা দিয়ে কি লাভ? মৌপিয়া হৈ হৈ করে উঠলো। বললো, না তোমার মুখেই শুনতে চাই। মিলিয়ে দেখতে চাই গোয়েন্দা তমাল ঠিকঠাক অনুমান করতে পারে কি না?
তমাল বললো, বেশ বলছি। অদিতি আমাকে মিথ্যা বলেছিলো যে প্রায় সাত মাস রাজীবের সাথে তার কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। আমার ধারনা ওই ঘটনার তিন থেকে চার সপ্তাহের আগেই অন্তত একবার তাদের শারীরিক মিলন ঘটে, এবং সেই মাসে অদিতি পিরিয়ড মিস করে। সে ভয় পায়, ভাবে প্রেগন্যান্ট হয়েছে সে। সে রাতে সম্ভবত এই কথা জানাতেই সে কল করে ডাকে রাজীবকে। অদিতি জানতো না তখন রাজীব মধুছন্দা দেবীর ঘরে আছে। রাজীব তার ঘর থেকে অদিতির ঘরে যায়, এবং তার পরে কি হয় তা তো তোমরা জানোই। কিন্তু অদিতির ঘরের ভিতরে সেদিন কি হয়েছিলো, সেটা আমি সত্যিই জানি না। এই কথা বলার সাথে সাথে অদিতির এক জোরালো চিমটিতে আউচ্ বলে চেঁচিয়ে উঠলো তমাল।
গার্গী গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বললো, অদিতি প্রেগন্যান্ট! তমাল হাসতে হাসতে বললো, না কিছুই হয়নি তার। আমি অদিতির আলমারিতে জামা কাপড়ের পিছনে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কার্ডটা দেখেছি। নেগেটিভ! অবশ্য আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বন্দনাও সেটা দেখেছে, তাই না? বন্দনা লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলো যেনো। মৌপিয়া অদিতিকে জিজ্ঞেস করলো, কি রে, তমাল ঠিক বলছে? মুচকি হেসে মাথা নাড়লো অদিতি।
তারপর একটু গম্ভীর হয়ে তমাল বললো, এবার একটা জরুরী কথা বলি। সকালে শালিনী কল করেছিলো। কলকাতায় একটা কেসে আমাকে দরকার। আমাকে কালই ফিরতে হবে। গার্গী কি আমার সাথেই ফিরবে? তমালের কথা শেষ হতেই সবাই মিলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে লাগলো। অন্তত আরো দিন তিনেক থেকে যেতে হবে সবার দাবী। কিন্তু তমাল তাদের বোঝালো সেটা সম্ভব নয়। পরে আবার আসবে তমাল।
তখন গার্গী একটা প্রস্তাব দিলো। বললো, একটা কাজ করা যেতে পারে। কথা ছিলো তমালদা এখানের কাজ মিটিয়ে গরলমুরিতে কিছুদিন থাকবে কলকাতায় ফেরার আগে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব হচ্ছে না, ওকে কলকাতায় ফিরতেই হবে। তাই আমি ভাবছি কাল আমি গাড়ি নিয়েই ওকে কলকাতায় ছাড়তে যাবো। কয়েকদিন কলকাতায় কাটিয়ে ওকে আবার গরলমুরিতে নিয়ে আসবো। আর তোমরা এখান থেকে গরলমুরিতে আসবে। আসার সময় কুহেলি কে তুলে নেবে। জমিয়ে মজা করা যাবে, কি বলো?
সবাই রাজি হলো প্রস্তাবে। কিন্তু মৌপিয়া বললো তুমি খুব চালাক গার্গী। আমাদের কাছ থেকে তমালকে সরিয়ে নিয়ে কলকাতায় একা ভোগ করতে চাও! সেটা হতে পারে যদি আজ রাতটা আমরা তমালের সাথে কাটাই এক ঘরে! তমাল বললো আমি নেই, চার চারটে জংলী বিল্লিকে আমি একা সামলাতে পারবো না। অসম্ভব। অদিতি বললো, তোমাকে সামলাতে কে বলেছে? আজ আমরা বনভোজন করবো একটা শিকারে। গার্লস, গেট রেডি ফর দ্যা লাস্ট সাপার! সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো... ইয়াহুউউউ!
এর পরে কি হলো সেটা কেউ জিজ্ঞেস করোনা, কারণ তমাল আর উত্তর দেবার মতো অবস্থায় নেই। আপাতত কিছুদিন সে সম্পূর্ণ বিশ্রামে আছে!
(সমাপ্ত)
বন্ধুরা কেমন লাগলো গল্প জানাতে ভুলবেন না। আপাতত কিছুদিন বিশ্রামে যাচ্ছি। বিশ্রাম কতো লম্বা হবে সেটা নির্ভর করবে আপনাদের ফিডব্যাক আর মেইলের উপর। যদি তমালের অনুপস্থিতি আপনাদের খারাপ লাগে তাহলে হয়তো জলদি ফিরবো। নাহলে লম্বা বিশ্রাম বা অবসর নেবো। তবে পাঠিকাদের স্পেশাল আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। তারা যোগাযোগ করলে দুজনে মিলে নতুন নতুন গল্প তৈরি করতে পারি গোপনে, কি বলেন? আমার মেইল আইডি জানা আছে তো? ভালো থাকবেন সবাই... সাময়িক বিদায় বন্ধুরা!
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Posts: 499
Threads: 0
Likes Received: 203 in 194 posts
Likes Given: 353
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
great ending. pls come back soon.
Posts: 1
Threads: 0
Likes Received: 0 in 0 posts
Likes Given: 57
Joined: Oct 2019
Reputation:
0
•
Posts: 67
Threads: 0
Likes Received: 45 in 30 posts
Likes Given: 11
Joined: Jan 2020
Reputation:
1
অসাধারণ, গোয়েন্দা তমাল না কি চোদনবাজ তমাল কে বেশী ভালো ঠিক বলতে পারছি না। বাংলায় একটা কথা আছে "জাতে মাতাল, তালে ঠিক"। কথাটি একদম তমালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অদিতি কে চুদেছে অনেক, গার্গির বন্ধু, কিন্তু সন্দেহ করতে ছাড়ে নি। আবার একটি গল্পের অপেক্ষায়। দেখা যাক এবার অদিতির কোন বন্ধুর হেল্প করতে তমাল আসে। কারণ লিংক টা এরকম চলছে শিপ্রা>কুহেলী>গার্গী>অদিতি। এইভাবেই তমালের গোয়েন্দা কীর্তি আর চোদার কীর্তির প্রচার হচ্ছে। তাই এবার দেখবো গার্গীর কোন বন্ধুকে বাঁচাতে বা চুদতে তামাল ফিরে আসে।
Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
(24-05-2025, 09:22 AM)evergreen_830 Wrote: অসাধারণ, গোয়েন্দা তমাল না কি চোদনবাজ তমাল কে বেশী ভালো ঠিক বলতে পারছি না। বাংলায় একটা কথা আছে "জাতে মাতাল, তালে ঠিক"। কথাটি একদম তমালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অদিতি কে চুদেছে অনেক, গার্গির বন্ধু, কিন্তু সন্দেহ করতে ছাড়ে নি। আবার একটি গল্পের অপেক্ষায়। দেখা যাক এবার অদিতির কোন বন্ধুর হেল্প করতে তমাল আসে। কারণ লিংক টা এরকম চলছে শিপ্রা>কুহেলী>গার্গী>অদিতি। এইভাবেই তমালের গোয়েন্দা কীর্তি আর চোদার কীর্তির প্রচার হচ্ছে। তাই এবার দেখবো গার্গীর কোন বন্ধুকে বাঁচাতে বা চুদতে তামাল ফিরে আসে।
ধন্যবাদ। লিংক রাখতে হচ্ছে, কারণ মেইন স্ট্রিমে তমাল অন্য নামে রহস্য সমাধান করে। এখানে শুধু পাঠক পাঠিকাদের পরিচিতজনের কেসই হাতে নেয়। দেখা যাক এবার অদিতি কোনো রহস্যের সন্ধান দেয় নাকি নতুন কেস আসে। নতুন কেসে সমস্যা হলো, সেখানে গিয়েই তো আর চোদাচুদি শুরু করে দেওয়া যায় না? এদিকে এগুলো আবার চটি, ও জিনিসের ঘাটতি হওয়া যাবে না। তাই কারো লিংকে যাওয়াই ভালো।
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 2 in 2 posts
Likes Given: 219
Joined: May 2019
Reputation:
0
25-05-2025, 08:51 PM
(This post was last modified: 25-05-2025, 08:53 PM by free123skk. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(24-05-2025, 09:22 AM)evergreen_830 Wrote: অসাধারণ, গোয়েন্দা তমাল না কি চোদনবাজ তমাল কে বেশী ভালো ঠিক বলতে পারছি না। বাংলায় একটা কথা আছে "জাতে মাতাল, তালে ঠিক"। কথাটি একদম তমালের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অদিতি কে চুদেছে অনেক, গার্গির বন্ধু, কিন্তু সন্দেহ করতে ছাড়ে নি। আবার একটি গল্পের অপেক্ষায়। দেখা যাক এবার অদিতির কোন বন্ধুর হেল্প করতে তমাল আসে। কারণ লিংক টা এরকম চলছে শিপ্রা>কুহেলী>গার্গী>অদিতি। এইভাবেই তমালের গোয়েন্দা কীর্তি আর চোদার কীর্তির প্রচার হচ্ছে। তাই এবার দেখবো গার্গীর কোন বন্ধুকে বাঁচাতে বা চুদতে তামাল ফিরে আসে।
•
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 2 in 2 posts
Likes Given: 219
Joined: May 2019
Reputation:
0
(23-05-2025, 08:19 PM)kingsuk-tomal Wrote: এবার তমাল নিজেও চমকে গেলো এই অকল্পনীয় খবরে। ঘরে এখন একটা পিন পড়লেও সেটা বজ্রপাতের মতো শোনাবে এমন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না বিস্ময়ে। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছেন মধুছন্দা দেবী নিজে। তার চোখ দুটো বিস্ফারিত হয়ে আছে, চোয়াল ঝুলে পড়েছে। এ খবর যে তার কাছেও নতুন সেটা তার ভেঙে পড়া চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এতো দিন ধরে এতো প্ল্যানিং, এতো নৃশংসতা, এতো নাটকীয়তা সব মাঠে মারা যেতে বসেছে।
কোনো রকমে ঢোক গিলে সে ভাঙা গলায় বললো, কি... কি বলছো তুমি মা? তুমি নিজেই তো বলেছিলে আমি তোমার আর বাবার মেয়ে? সুলতা দেবী মাথা উঁচু করে বললেন, হ্যাঁ বলেছিলাম। বলেছিলাম কারণ বড় বাবু আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন এ কথা আমি যেন কখনো প্রকাশ না করি। তিনি চেয়েছিলেন যেন তুমিও এই পরিবারের মেয়ে হয়ে ওঠো। কিন্তু তুমি অন্যায়ের সব সীমা অতিক্রম করেছো। বাড়ি থেকে পালিয়ে বড় বাবুর অসম্মান করেছো, মেনে নিয়েছি। ফিরে এসে সম্পত্তি দখল করেছো, মেনে নিয়েছি, কারণ ভেবেছিলাম তুমি ছোটবাবুর সন্তানদের ঠকাবে না। কিন্তু এ কি শুনছি আমি? তুমি খুনী! তুমি ছোট বাবুকে খুন করেছো? নিজের স্বামীকে খুন করেছো? হিসাব বাবুর সাথে অবিচার করেছো? রাজীবকে খুন করতে চেয়েছিলে? এতো নীচ তুমি? আমরা হো উপজাতিরা খুন করি শুধু নিজেদের আদর্শের জন্য। সাহেবদের সাথে লড়েছি, তাদের মেরেছি দেশের জন্য! আমরা নিজেদের গোত্র বাঁচাতে খুন করি, কিন্তু সম্পত্তির লোভে খুন করি না। তুমি হো গোত্রকে অপমানিত করেছো। আমার কাছে দেবতার তুল্য বড় বাবুর পরিবারের ক্ষতি করেছো, তাই আমাকে প্রতিজ্ঞা ভাঙতে হলো। জানি বড় বাবু স্বর্গ থেকে আমাকে এজন্য ক্ষমা করবেন।
মধুছন্দা দেবীকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো রাজকীয় মহলের ভগ্নস্তূপ। কোন রকমে মুখ তুলে বললেন, তাহলে কে আমার বাবা! বলো মা, অন্তত এটুকু জেনে যাই আমি! কি আমার জন্ম পরিচয়?
সুলতা দেবী বললেন, বড় বাবু আর হিসাব বাবু তখন ব্যবসার কাজে হরিপুরা গ্রামে গেলেন। আমার বাবার সাথে পরিচয় হয় তাদের এক অভ্র খনিতে। থাকার জায়গা পাচ্ছিলেন না বলে আমাদের বাড়িতেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন। খনিটা ছিলো সাহেবদের। সেই খনির ম্যানেজার ব্লেক সাহেবের বাড়িতে আমি পরিচারিকার কাজ করতাম। বয়স অল্প ছিলো, সাহেব বাড়ির জাঁকজমক দেখে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। সাহেবের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। এদিকে বড় বাবুরও আমাকে ভালো লেগে যায়। কিন্তু তখনি আমি বুঝতে পারি আমার পেটে তুমি এসেছো।
আমি জানতাম আমাদের গোত্র এটা কিছুতেই মেনে নেবে না। সিংবোঙ্গার কাছে বলি দেবে আমাকে। আমি ভয় পেয়ে যাই। বড় বাবুকে সব খুলে বলি। তিনি আমাকে নিয়ে পালিয়ে চলে আসেন। অন্যের পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিলেন। নিজের স্ত্রীকে বললেন আমার পেটে তার সন্তান। বড় গিন্নীও আমাকে মেনে নিলেন। বড় বাবু ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে কোনো দিন আমাকে এই বাড়ি ছেড়ে কেউ তাড়িয়ে না দেয়,এমন কি নিজের ছেলেকেও বলে গেলেন সে কথা। এমন একটা পরিবারের সন্তান সন্ততির এতো বড় বিপদে চুপ করে থাকলে সিংবোঙ্গা আমাকে কোনোদিন পৃথিবী প্রদক্ষিনের অনুমতি দেবেন না, অন্ধকূপে বন্দী হয়ে থাকবো মৃত্যুর পরে।
দুহাতে মুখ ঢেকে তখন মধুছন্দা দেবী ঝরঝর করে কেঁদে চলেছেন। বন্দনা তার মাথায় হাত রেখে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র কিছুক্ষণ আগে যে নিজের জন্ম পরিচয় পেয়ে আবেগে ভেসে গেছিলো, এখন তার পৃথিবীটা শূন্য মনে হচ্ছে। ভাবছে এতো সব কিছু না জানাই তো ভালো ছিলো। সত্য যদি এতো যন্ত্রণা দেয়, তাহলে মিথ্যার কোলেই তো আরামে কাটিয়ে দেওয়া ভালো ছিলো!
তমাল ইশারা করতেই ইনস্পেকটর ঘোষের আদেশে দুজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কনস্টেবল এসে ঘনশ্যাম আর মধুছন্দা দেবীকে নিয়ে গেলো। ধীরে ধীরে সুলতা দেবী উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। ঘরের অন্য সবাই চুপচাপ বসে রইলো।
মিনিট পনেরো পরে সবাই একটু স্বাভাবিক হয়ে এলে তমাল বললো, আমি রাহুলের কাছে একটা অনুমতি চাই, কারণ এই মুখার্জি বাড়ির কর্তা এখন সে। সবাই তমালের দিকে তাকালে সে বললো, আমি বন্দনাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাই। তার লেখাপড়া এবং নিজের পায়ে দাঁড়াবার সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর এই এক লাখ টাকার চেকটা আমি সুরেশ বাবুকে দিতে চাই। তোমার আপত্তি নেই তো রাহুল?
রাহুল উঠে এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলো তমালকে। তার চোখ দিয়ে জলের ধারা বেয়ে নামছে। ভেজা গলায় সে বললো, না তমাল, বন্দনা কোথাও যাবে না। সে আমাদের ছোট বোন হয়ে এই বাড়িতেই থাকবে। তার সমস্ত দায়িত্ব আমাদের। সুরেশ বাবুও আজ থেকে আমৃত্যু এই বাড়িতে থাকবেন। তার সেই পুরানো নিজের ঘরেই। রামহরি কাকারও যেন কোনো কষ্ট না হয়, সে খেয়ালও আমি রাখবো। তুমি মুখার্জি পরিবারের জন্য যা করলে, তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না, তোমার জন্য মুখার্জি বাড়ির দরজা সারাজীবনের জন্য খোলা রইলো তমাল। পিসি যে চেকটা তোমাকে দিয়েছে সেটা তোমারই রইলো। এছাড়াও আমি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কিছু দিতে চাই, প্লিজ না কোরোনা তমাল।
সেদিন রাতে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। ডাইনিং টেবিলে তমালের এতো।প্রশংসা চলছে যে সে রীতিমতো অস্বস্তি বোধ করছে। তাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য গার্গীর কদরও বেড়ে গেছে অনেক। ডিনার শেষ করে রাহুল নিজের ঘরে চলে গেলে গার্গী বললো, আচ্ছা তমালদা, একটা প্রশ্ন আমার মনে আসছে বারবার, একটু ক্লিয়ার করে দাও। তমাল বললো, কি প্রশ্ন? গার্গী জিজ্ঞেস করলো সেই রাতে পিসি রাজীবকে কল করেছিলো কেন, সে তো বুঝলাম, কিন্তু অদিতি কেন তাকে কল করেছিলো?
তমাল তাকিয়ে দেখলো, অদিতির গাল দুটো লাল হয়ে উঠেছে গার্গীর প্রশ্ন শুনে। সে বললো, এই উত্তর আমার চেয়ে অদিতির মুখের পরে শুনে নিলে ভালো হয়। আমি অনুমান করতে পারি, কিন্তু অদিতি সত্যিটাই বলবে। বেচারিকে আর লজ্জা দিয়ে কি লাভ? মৌপিয়া হৈ হৈ করে উঠলো। বললো, না তোমার মুখেই শুনতে চাই। মিলিয়ে দেখতে চাই গোয়েন্দা তমাল ঠিকঠাক অনুমান করতে পারে কি না?
তমাল বললো, বেশ বলছি। অদিতি আমাকে মিথ্যা বলেছিলো যে প্রায় সাত মাস রাজীবের সাথে তার কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। আমার ধারনা ওই ঘটনার তিন থেকে চার সপ্তাহের আগেই অন্তত একবার তাদের শারীরিক মিলন ঘটে, এবং সেই মাসে অদিতি পিরিয়ড মিস করে। সে ভয় পায়, ভাবে প্রেগন্যান্ট হয়েছে সে। সে রাতে সম্ভবত এই কথা জানাতেই সে কল করে ডাকে রাজীবকে। অদিতি জানতো না তখন রাজীব মধুছন্দা দেবীর ঘরে আছে। রাজীব তার ঘর থেকে অদিতির ঘরে যায়, এবং তার পরে কি হয় তা তো তোমরা জানোই। কিন্তু অদিতির ঘরের ভিতরে সেদিন কি হয়েছিলো, সেটা আমি সত্যিই জানি না। এই কথা বলার সাথে সাথে অদিতির এক জোরালো চিমটিতে আউচ্ বলে চেঁচিয়ে উঠলো তমাল।
গার্গী গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বললো, অদিতি প্রেগন্যান্ট! তমাল হাসতে হাসতে বললো, না কিছুই হয়নি তার। আমি অদিতির আলমারিতে জামা কাপড়ের পিছনে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কার্ডটা দেখেছি। নেগেটিভ! অবশ্য আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট বন্দনাও সেটা দেখেছে, তাই না? বন্দনা লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলো যেনো। মৌপিয়া অদিতিকে জিজ্ঞেস করলো, কি রে, তমাল ঠিক বলছে? মুচকি হেসে মাথা নাড়লো অদিতি।
তারপর একটু গম্ভীর হয়ে তমাল বললো, এবার একটা জরুরী কথা বলি। সকালে শালিনী কল করেছিলো। কলকাতায় একটা কেসে আমাকে দরকার। আমাকে কালই ফিরতে হবে। গার্গী কি আমার সাথেই ফিরবে? তমালের কথা শেষ হতেই সবাই মিলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে লাগলো। অন্তত আরো দিন তিনেক থেকে যেতে হবে সবার দাবী। কিন্তু তমাল তাদের বোঝালো সেটা সম্ভব নয়। পরে আবার আসবে তমাল।
তখন গার্গী একটা প্রস্তাব দিলো। বললো, একটা কাজ করা যেতে পারে। কথা ছিলো তমালদা এখানের কাজ মিটিয়ে গরলমুরিতে কিছুদিন থাকবে কলকাতায় ফেরার আগে। কিন্তু সেটা তো সম্ভব হচ্ছে না, ওকে কলকাতায় ফিরতেই হবে। তাই আমি ভাবছি কাল আমি গাড়ি নিয়েই ওকে কলকাতায় ছাড়তে যাবো। কয়েকদিন কলকাতায় কাটিয়ে ওকে আবার গরলমুরিতে নিয়ে আসবো। আর তোমরা এখান থেকে গরলমুরিতে আসবে। আসার সময় কুহেলি কে তুলে নেবে। জমিয়ে মজা করা যাবে, কি বলো?
সবাই রাজি হলো প্রস্তাবে। কিন্তু মৌপিয়া বললো তুমি খুব চালাক গার্গী। আমাদের কাছ থেকে তমালকে সরিয়ে নিয়ে কলকাতায় একা ভোগ করতে চাও! সেটা হতে পারে যদি আজ রাতটা আমরা তমালের সাথে কাটাই এক ঘরে! তমাল বললো আমি নেই, চার চারটে জংলী বিল্লিকে আমি একা সামলাতে পারবো না। অসম্ভব। অদিতি বললো, তোমাকে সামলাতে কে বলেছে? আজ আমরা বনভোজন করবো একটা শিকারে। গার্লস, গেট রেডি ফর দ্যা লাস্ট সাপার! সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো... ইয়াহুউউউ!
এর পরে কি হলো সেটা কেউ জিজ্ঞেস করোনা, কারণ তমাল আর উত্তর দেবার মতো অবস্থায় নেই। আপাতত কিছুদিন সে সম্পূর্ণ বিশ্রামে আছে!
(সমাপ্ত)
বন্ধুরা কেমন লাগলো গল্প জানাতে ভুলবেন না। আপাতত কিছুদিন বিশ্রামে যাচ্ছি। বিশ্রাম কতো লম্বা হবে সেটা নির্ভর করবে আপনাদের ফিডব্যাক আর মেইলের উপর। যদি তমালের অনুপস্থিতি আপনাদের খারাপ লাগে তাহলে হয়তো জলদি ফিরবো। নাহলে লম্বা বিশ্রাম বা অবসর নেবো। তবে পাঠিকাদের স্পেশাল আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। তারা যোগাযোগ করলে দুজনে মিলে নতুন নতুন গল্প তৈরি করতে পারি গোপনে, কি বলেন? আমার মেইল আইডি জানা আছে তো? ভালো থাকবেন সবাই... সাময়িক বিদায় বন্ধুরা! Excellent
Posts: 810
Threads: 4
Likes Received: 841 in 422 posts
Likes Given: 2,497
Joined: Nov 2022
Reputation:
93
অন্তরের বন্ধন গল্পটি শেষ হয়েছে।
তবে লেখক ও পাঠকদের বন্ধন আরো দৃঢ় হয়েছে।
আমি প্রথম দিকেই কমেন্টে বলেছিলাম ছন্দা দেবী দোষী, এজন্যই গত পর্বে বলেছিলাম তাকে একটু, যাক সে কথা।
আপনার লেখা চারটি গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ লেগেছে আমার কাছে। কারণ এ গল্পের ঘোরপ্যাঁচ অভূতপূর্ব ছিল।
পরের গোয়েন্দা গল্পের জন্য চাতক পাখির মত অপেক্ষায় রইলাম।
আশা করি অতি শীঘ্রই কাশ্মীরে কেলেঙ্কারির নতুন আপডেট পাব। সম্ভব হলে অঙ্কিতার সাথে বাজে ব্যবহার করা রাতুল কে কঠিন একটি শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
লাইক ও রেপু।
-------------অধম
Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
(27-05-2025, 03:33 AM)অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। Wrote: অন্তরের বন্ধন গল্পটি শেষ হয়েছে।
তবে লেখক ও পাঠকদের বন্ধন আরো দৃঢ় হয়েছে।
আমি প্রথম দিকেই কমেন্টে বলেছিলাম ছন্দা দেবী দোষী, এজন্যই গত পর্বে বলেছিলাম তাকে একটু, যাক সে কথা।
আপনার লেখা চারটি গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ লেগেছে আমার কাছে। কারণ এ গল্পের ঘোরপ্যাঁচ অভূতপূর্ব ছিল।
পরের গোয়েন্দা গল্পের জন্য চাতক পাখির মত অপেক্ষায় রইলাম।
আশা করি অতি শীঘ্রই কাশ্মীরে কেলেঙ্কারির নতুন আপডেট পাব। সম্ভব হলে অঙ্কিতার সাথে বাজে ব্যবহার করা রাতুল কে কঠিন একটি শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
লাইক ও রেপু।
-------------অধম
ধন্যবাদ! সব গল্পই শেষ হয় একদিন। হুম তুমি প্রথমেই বলেছিলে মধুছন্দা দেবী দোষী। গল্পে সেটা বহুবার প্রকাশ করা হয়েছে ইঙ্গিতে। বিশ্ব সাহিত্যে অনেক গোয়েন্দা গল্প আছে যেখানে দোষী কে সেটা আগেই বলে দেওয়া হয়। ডিডাকশন টা হয় মোটিভের উপরে। এই গল্পটাতেও আমার সেটাই ইচ্ছা ছিলো, তাই দোষীকে খুব বেশি লুকানোর চেষ্টা করিনি। তবে তোমাকে একটা অনুরোধ করছি, কোনো গোয়েন্দা বা রহস্য সিরিজ চলাকালীন এই ধরনের মন্তব্য আগে ভাগে ওপেন ফোরামে করবে না। তাতে দুটো ক্ষতি হয়।
১) লেখক সেটা দেখে তার মনের ভিতরে তৈরি হওয়া প্লটটা বদলাতে শুরু করেন। ফলে গল্পের ক্ষতি হয়। লেখক যেভাবে গল্প ভেবেছিলেন সেটা আর থাকে না। গল্প লেখকদের মানস-সন্তান, তার মনের মতো হলেই সব চেয়ে উৎকৃষ্ট হয়। আমি নিজেও অন্য রকম ভেবেছিলাম গল্পটা, কিন্তু তোমার কমেন্টের পরে চেঞ্জ করতে হয়েছিলো। তোমরা কোনোদিন সেই টুইস্টটা জানতে পারলে না। হয়তো অন্য কোনোদিন অন্য কোনো গল্পে সেই চমকটা আনবো।
২) সবাই তোমার মতো বুদ্ধিমান নাও হতে পারে। যারা ধারাবাহিক ভাবে গল্পটা পড়ছে, তাদের মনেও একটা খেলা চলতে থাকে, দোষী কে জানার জন্য। সেটা এক এক পর্বে এক এক জনের উপরে গেলেই গোয়েন্দা গল্পের মজা। তাদের রসভঙ্গ হয় আগেভাগে মন্তব্য করলে। এতে নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করা যায় ঠিকই কিন্তু অন্যদের কথাও ভাবা উচিৎ ব্রাদার।
তুমি মনে হয় কাশ্মীর গল্পটা মন দিয়ে পড়োনি। সেখানে তমাল পুলিশ বা গোয়েন্দা নয়। সাধারণ একজন মানুষ। আর রাতুল অংকিতার পাস্ট। সে গল্প বলছিলো। তাকে শাস্তি কিভাবে দেবে তমাল। দিলে সেটা হবে গল্পের গরু গাছে ওঠা।
তবে তুমি চটি গল্পের মনোযোগী পাঠক। তোমার মতামত স্পষ্ট এবং বিষয়ভিত্তিক। ফিডব্যাক দেবার জন্য ধন্যবাদ।
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
Posts: 3
Threads: 0
Likes Received: 2 in 2 posts
Likes Given: 9
Joined: Mar 2021
Reputation:
0
osadharon. khub valo laglo. kasmire kelenkari ta likhun ebar.
Posts: 47
Threads: 0
Likes Received: 23 in 16 posts
Likes Given: 11,174
Joined: Jun 2023
Reputation:
0
এটা শেষ করার পর কাশ্মীরে কেলেঙ্কারি গল্পটা তুমি শেষ করবে বলেছিলে , সেটা নিশ্চয়ই মনে আছে ?????
Posts: 810
Threads: 4
Likes Received: 841 in 422 posts
Likes Given: 2,497
Joined: Nov 2022
Reputation:
93
এজন্যই আমি ঐ দিনই কিন্তু কমেন্টটা ড এডিট করে দিয়েছিলাম।
গল্প যেভাবেই লিখুন না কেন। আশা করি আমাদের আশার চাইতেও ভালো হবে।
যত শীঘ্র সম্ভব কাশ্মীরে কেলেঙ্কারি গল্পটার নতুন আপডেট নিয়ে আসুন।
-------------অধম
Posts: 45
Threads: 0
Likes Received: 17 in 17 posts
Likes Given: 405
Joined: Jan 2021
Reputation:
0
অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ
Posts: 286
Threads: 10
Likes Received: 984 in 221 posts
Likes Given: 169
Joined: Feb 2019
Reputation:
182
(28-05-2025, 02:21 AM)jktjoy Wrote: অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ অসাধারণ
অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ
kingsuk25@ জিমেইল ডট কম
•
Posts: 287
Threads: 0
Likes Received: 194 in 172 posts
Likes Given: 157
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
কি আর বলবো, শুধু এটুকু বলি গোয়েন্দা গিরিকে পাশে রেখে যে মেয়েগুলো বর্ণনা দিয়েছেন সেগুলো একদম নিখুঁত বলতে গেলে আর জায়গা গুলোর বর্ণনা এমন ভাবে দিয়েছেন যেটা সত্যি অন্তর থেকে অনুভব করা যায়। সবশেষে বলছি যারা এই গল্পটি পড়বে একদম সময় উসুল গল্প। তমাল দাদাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর থ্রিলার গোয়েন্দা গল্প লিখার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা ভালোবাসা রইলো। ভবিষ্যতে গল্পের অপেক্ষায় থাকব খুব।
Posts: 6
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 18
Joined: May 2025
Reputation:
0
vai khub valo hoise ekishathe onek nirasho hoilam, karon erokom lekha abr kobe pabo tar thik nei, tobe eto valo valo story deyar jonno dhonnobad
Posts: 1
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 0
Joined: Jul 2025
Reputation:
0
গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। এই রকম গোয়েন্দা গল্প আরো চাই। কিন্তু এই গল্পে শালিনীর কথা অনেক কম বলা হয়েছে। তমালের জীবনে শালিনীর ভুমিকা বেশি আছে। এই রকম গোয়েন্দা গল্পে শালিনীর পার্ট আরেকটু বেশি রাখা হোক। তাহলে আরও বেশি ইন্টারেস্টিং হবে গল্প।
|