Posts: 75
Threads: 0
Likes Received: 115 in 74 posts
Likes Given: 290
Joined: Jun 2021
Reputation:
16
(30-04-2025, 02:42 AM)Choton Wrote: হ্যাঁ ম্যাডাম। এটা 90's এর ঘটনা থেকে শুরু। তবে শেষ হবে নতুন শতকে। ভালো লাগছে কিনা জানাবেন প্লিজ। আমার আগের গল্পটার কয়েকজন পাঠক, যাদের উৎসাহে এটা শুরু করেছি, তাদের অনেকে এটা পড়ছেন না হয়তো। বা ভালো লাগছে না তাদের। কেন জানি না তাদের খুব মিস করছি। আবার আপনাদের মত পাঠকদের উৎসাহ ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন সবাই।
নব্বই এর দশকে আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজি আসেনি কিন্তু :)
•
Posts: 112
Threads: 0
Likes Received: 98 in 51 posts
Likes Given: 431
Joined: Oct 2024
Reputation:
11
একবার মনে হচ্ছে গল্পটা একদম শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে,
আবার মনে হচ্ছে এখনও অনেকটা পথ বাকী।
সে যাই হোক আপাতত একটা ভরপুর আপডেটের অপেক্ষায় আছে সবাই। সাথে আমিও।
•
Posts: 1,058
Threads: 6
Likes Received: 2,553 in 636 posts
Likes Given: 1,323
Joined: Apr 2024
Reputation:
765
(19-05-2025, 02:11 AM)indecentindi Wrote: নব্বই এর দশকে আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজি আসেনি কিন্তু :)
না, এই কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়।
আসলে আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজি নব্বইয়ের দশকে নতুন ছিল না। আল্ট্রাসাউন্ড (ultrasound) বা সনোগ্রাফি (sonography) চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯৫০–৬০ এর দশক থেকেই। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি সীমিত কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, সময়ের সাথে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে।
ঐতিহাসিক পটভূমিতে বলতে গেলে বলতে হয়;-
- ১৯৫৮: ডোনাল্ড ও ব্রাউন নামক দুই ব্রিটিশ গবেষক প্রথমবারের মতো গর্ভাবস্থার পর্যবেক্ষণের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করেন।
- ১৯৭০-এর দশকে: আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি অনেক দেশে আরও উন্নত হয় এবং গর্ভকালীন শিশু পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত ব্যবহার শুরু হয়।
- ১৯৮০-এর দশকে: উন্নত দেশগুলোতে এটি স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হয়ে ওঠে।
- ১৯৯০-এর দশকে: ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শহরাঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। যদিও গ্রামীণ এলাকায় তখনও কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল।
- নব্বইয়ের দশকে আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ছিল এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছিল।
- তবে গ্রামাঞ্চলে বা অনুন্নত এলাকায় তখনও এটি সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি।
Posts: 150
Threads: 2
Likes Received: 451 in 157 posts
Likes Given: 142
Joined: Nov 2024
Reputation:
194
ছোটন তোমার দীর্ঘ অনুপস্থিতি আমাদের মনে আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে কারণ আমরা এখানে অনেক ভালো অসমাপ্ত গল্প দেখতে পাই। আর এই গল্পটা এই ফোরামে লেখা সর্বকালের সেরা গল্পের একটা। তাই প্লিজ তাড়াতাড়ি নতুন আপডেট দিয়ে তোমার পাঠক/পাঠিকাকুলের মনে জন্মানো আশঙ্কাকে দূর কর। পরবর্তী আপডেটের জন্য আর যে তর সইছে না।
Posts: 133
Threads: 0
Likes Received: 43 in 35 posts
Likes Given: 4
Joined: Jul 2024
Reputation:
0
•
Posts: 100
Threads: 0
Likes Received: 77 in 52 posts
Likes Given: 205
Joined: Aug 2022
Reputation:
5
(05-05-2025, 02:25 AM)Choton Wrote: (২৩)
আমার সত্য মিথ্যা সকলি
দীর্ঘ সময় ধরে চিঠিটা পড়ে অবশেষে থামল ঈশিতার মেজদি। তার পর কাগজগুলো টেবিলে রেখে মুখ ঢেকে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। ওর কান্না দেখে ঈশিতার মা এবং বড়দিও ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ওঁরা সকলেই বুঝতে পেরেছেন, বড় দুই জামাইয়ের তুলনায় তাকে যে কিছুটা অবহেলা করা হত, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি সৌমাভর। বিশেষ করে ঈশিতার মা। লজ্জায় মাথা মাটিতে মিশিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি বারবার। তার পরেই মেয়ের দিকে চোখ গেল তাঁর! পাথরের মতো বসে আছে ঈশিতা। চোখে শূন্য দৃষ্টি! ঠোঁটদুটো কাঁপছে! ওকে নাড়া দিয়ে একবার ডাকতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল ঈশিতা।
হুমম, চমৎকার লেখনী।
তবে ঈশিতা মনে হয় আউটলাইয়ার। নাহলে মাত্র ১৮ বছরের বাচ্চা মেয়েকে অতখানি কামার্তা কখনও দেখিনি যে স্বামীকে ভুলে যায় চট করে। সাধারণতঃ ১৮ বছরের বাচ্চা মেয়েরা বয়স্ক পুরুষদের মোহ ত্যাগ করতে পারে না। আমার বউ আমার থেকে ১২ বছরের ছোট। তার কাছে তার সহপাঠীরা ছেলেমানুষ লাগত। উদয়শঙ্করের সঙ্গে অমলা শঙ্কর ১৫ বছরেই প্রেমে পড়েছিলেন। এটি অবশ্য পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিশোর বয়সে মাসি পিসিদের প্রতি আকর্ষণ সবাই অনুভব করে। কেন? কারণ নারী দেখতে পায়। সমবয়স্কদের বাচ্চা মেয়ে বলে মনে হয়।
দ্বিতীয়তঃ আপনার নারী চরিত্রের একটি প্রবণতা দেখেছি। তাদের স্নায়ু খুব দুর্বল। প্রায় শরৎচন্দ্রের কালের নারীদের মত। তারা কথায় কথায় জ্ঞান হারায়। এ যুগে অত জ্ঞান হারান নারী আমি অন্ততঃ একটাও দেখিনি। কম নারী দেখিনি। আমার বয়স কিন্তু ৫২ বছর। জেন এক্স।
Posts: 100
Threads: 0
Likes Received: 77 in 52 posts
Likes Given: 205
Joined: Aug 2022
Reputation:
5
(06-05-2025, 03:26 AM)Choton Wrote: (২৫)
সৌমাভ খেয়াল করল, জয়তীর বয়স ২৩-২৪ মতো। দেখতে খারাপ না, শরীরস্বাস্থ্যও বেশ আকর্ষণীয়। স্বামী হারানোর যন্ত্রণা থাকলেও তা এই কয়েক দিনে অনেকটাই সামলে উঠেছে। জানতে পারল, সরকারের তৎপরতায় সে দিন রাতেই জয়ন্তর দাহ মিটেছে। জয়ন্তর বাড়ির লোকজনের পাশাপাসি জয়তীর মা-বাবা এমনকি দাদা-বৌদিও এসেছিলেন। কিন্তু পরের দিনই তাঁরা সকলে ফিরে গেছেন। আসলে জয়ন্তর সঙ্গে জয়তীর প্রেমের বিয়েটা দু’বাড়ির কেউই মেনে নেয়নি। তাই এই অবস্থাতেও তাঁরা পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টে নানা রকম দোষারোপ করে যে যার মতো চলে গেছে। ও নিজের মতো একাএকাই কাছের একটা মন্দিরে গিয়ে শ্রাদ্ধের কাজ করেছে। সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল সৌমাভ! জয়তী অবশ্য এ সব নিয়ে একটুও ভেঙে পড়েনি। বরং বলল, ওর চাকরির ব্যাপারটা দ্রুত প্রসেসে চলে যাবে বলে সে দিনই মন্ত্রী নিজে আশ্বাস দিয়েছেন। তখন ও কোথায় থাকবে জানে না, তবে আর বিয়ে করার ইচ্ছে নেই ওর। বাকি জীবনটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দেবে, সে মনের জোর ওর আছে। দরকারে কোনও শিশুকে দত্তক নেবে। সব শুনে সৌমাভ ওকে বলল, ‘‘আপনি কালই একবার দেখা করুন। এ দিক থেকে চিঠিটা ছাড়া হলে বাকিটা আমি দেখে দেব, চিন্তা করবেন না।’’ জয়তী ওকে অনুরোধ করল আপনি ছেড়ে তুমি বলতে, কারণ বয়সে জয়ন্ত ওর চেয়ে অনেক বড়। জয়ন্তর বয়স ৩০ না? মাত্র ছয় বছরে বড়।
Posts: 100
Threads: 0
Likes Received: 77 in 52 posts
Likes Given: 205
Joined: Aug 2022
Reputation:
5
(08-05-2025, 03:52 AM)Choton Wrote: (৩৫)
বারবার সৌমাভ এবং কুট্টি-মুট্টির কথা শুনতে শুনতে নীরবে কেঁদেই যাচ্ছিল ঈশিতা। ও জানে, জয়তীদি যা বলেছে একটুও মিথ্যে না, ভুল তো নয়ই। ও বুঝতে পারছে, কুট্টি-মুট্টিকে আর কোনও দিন কোলে নেওয়া তো দূর, ও দেখলেও চিনতে পারবে না। নিজের সন্তানদেরই ও আর কোনওদিন কাছে পাবে না হয়তো। সৌমাভকেও কি পাবে? সৌমাভ সিগারেট খাচ্ছে? তা-ও এতগুলো করে? জয়তীর কথাগুলো ওর ভিতরটা তখন তোলপাড় করে দিচ্ছে। ও আর পারল না, চেয়ারে বসে বসেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। এই রে আবার সেন্সলেস! স্মেলিং সল্ট আনো!
Posts: 100
Threads: 0
Likes Received: 77 in 52 posts
Likes Given: 205
Joined: Aug 2022
Reputation:
5
(08-05-2025, 03:53 AM)Choton Wrote: (৩৬)
তার দীপের আলো কে নিভালো
ঈশিতার সারা শরীরে কাঁটা তুলে ওপাশ থেকে সেই বরাবরের শান্ত গলা ভেসে এল টেলিফোনের রিসিভারে। ঈশিতা তখন রিসিভারে কান ঠেসে ধরেছে, যাতে কথাগুলো সব শুনতে পায়। ও প্রান্ত থেকে তখন সৌমাভ বলছে, ‘‘সরি গো। ঈশিতা রায়চৌধুরীর কাছে আমি আর ফিরতে পারব না। আমি তো ওর নকল বর, ওর আসল স্বামী কে, সেটা আমি সেদিন নিজে জেনেছি, শুনেছি। তবে তুমি বললে, ছেলেমেয়েকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেব। আমার পক্ষে ওকে আর স্পর্শ করা সম্ভব নয় জয়তী। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস, যা ভেঙে গেলে কোনও দিন জোড়া লাগে না। কাঁচের থেকেও পলকা জিনিস হল বিশ্বাস। তা ভাঙলে হাজার চেষ্টাতেও জোড়া লাগে না। কথাটা ওকে অনেকবার বলেছি। জীবনে অনেক ধাক্কা, কষ্ট, অপমান সহ্য করে এখানে এসেছি তো, আমি পারব না গো, সরি। তা ছাড়া গত বছর জানুয়ারিতে কলকাতায় ফিরে শেষ দিন অবধি ওর উপেক্ষা, অবহেলা, ওর বাড়ির লোকের ব্যবহার সব যদি ভুলেও যাই তোমার কথা মেনে, তা হলেও বলো তো, ওর পাশে আমি শোব কী করে? ওর সেদিনের প্রতিটা কথা, প্রতিটা শব্দ আজও আমার রাতের ঘুম নষ্ট করে। এমন নয় যে ও সেদিন রে*ড হয়েছিল। তা হলে ওকে আমি সবদিক থেকে রক্ষা করতাম, পাশে দাঁড়াতাম। ওর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যেতাম। কিন্তু তা তো হয়নি। সেদিন ও নিজের ইচ্ছেয় নিজের দেহ তুলে দিয়েছিল ওর প্রেমিকের কাছে। সে সব আওয়াজ, কথাবার্তা অনেকটা আমি নিজের কানে শুনেছি। তার পরে কিসের জোরে কোন ভরসায় ওকে আর বিশ্বাস করব, বলো? ও যে আবার সেই একই কাজ করবে না, সেটা কীকরে মেনে নেব? আমি অফিসে চলে গেলে ও যে আবার অন্য কারও নীচে শোবে না, এই রাহুলের সঙ্গেই লুকিয়ে লুকিয়ে লীলাখেলা চালাবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? এখন কাঁদছে, সেদিন ভুলে যেতে কতক্ষণ? আন্দামানের ভালবাসার নাটকটা ভালই করেছিল, কিন্তু সেই নাটকটাও ও কলকাতায় নামার আগেই বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়েছিল। আমি বুঝতে পারিনি বোকা বলে। ওর সঙ্গে আমার বিবাহিত জীবন মাত্র এক মাস কয়েক দিন। সেটা ওর কাছে পুতুলখেলা হতে পারে, আমার কাছে দাম্পত্য ছিল। কাগজে-কলমে যাই বলা হোক, দিন-তিথি যা-ই হোক, আমার দাম্পত্য জীবন মাত্র একমাস এবং কয়েকটা দিন মাত্র। ভাবতে পারো? কলকাতায় পা রেখেই ও নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছিল। তখন দাম্পত্য বলতে যা বোঝায়, তা অন্তত ওর মধ্যে আর ছিল না। রাতে পাশে শুলেও কতদিন ক্লান্তির নাম করে আমার পাশ থেকে সরে গেছে। এবং সেটা ওই ঘটনার দিন সকাল পর্যন্ত। এ বার ভাবো। তবে আমি ওকে ছাড়া অন্য কোনও মেয়েকে কোনওদিন ভালবাসিনি, আগামী দিনেও বাসব না। ওকেই ভালবেসে যাব। ও ছাড়া অন্য কোনও মেয়ের শরীর কোনওদিন ছুঁইনি, ছোঁবও না কোনওদিন। কিন্তু ও তো তা নয়। ওর প্রেমিক আছে। একটাকে জেনেছি, আরও কত আছে কে জানে? তোমার কথা মেনে আমি ফিরে এলে ও যে আবার সেই সব দিনে ফিরে যাবে না, সেই কাজগুলোই করবে না, সেটা তুমি বলতে পারো? এবারে তুমি ভাল করে ভেবে জানিয়ো, ছেলেমেয়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হলে ভাল, আমি মেনে নেব। তুমি তো বলেছো, তুমি আমার ভাল বন্ধু। ভেবে জানিয়ো, আমি তোমার কথা মেনে নেব। আমি শুধু এটুকু তোমাকে বলে দিচ্ছি, আমার জীবিত শরীর ও আর কোনও দিন স্পর্শ করতে পারবে না।’’ বলেই ফোনটা রেখে দিল।
কত মাস পরে গলাটা শুনছিল ঈশিতা! কিন্তু সৌমাভর শেষের দিকের কথাগুলো শুনতে শুনতেই জ্ঞান হারাল গত কালের মতো। জয়তী বুঝল, মানসিক ধাক্কা সামলাতে পারেনি। এও বুঝল, সৌমাভর এই পাহাড় ভাঙা অসম্ভব। ওর পক্ষে তো বটেই। অনেকক্ষণ পরে ঈশিতার জ্ঞান ফিরল। ধীর পায়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে জলে ভরা চোখ নিয়ে জয়তীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আমি সারাজীবন অপেক্ষা করব জয়তীদি। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব। তবু দেখো, একবার হলেও ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারব। সে যেদিনই হোক, আমি পারবই।’’ বলে নেমে গেল।
বেশ চমৎকার মেলোড্রামা। সুখপাঠ্য। একটু চিত্তরঞ্জন মাইতি গোছের ছাপ আছে যদিও। এই রে, আবার জ্ঞান হারাল নায়িকা।
কিন্তু একটি পুরুষ এত সহজে ভালবাসে? শারীরিক ভালবাসায় উন্মাদনা থাকলেও গভীর ভালবাসা জন্মাতে বহুদিন লাগে। সৌমাভর ভালবাসা, না অভিমান বোঝা দুষ্কর।
Posts: 100
Threads: 0
Likes Received: 77 in 52 posts
Likes Given: 205
Joined: Aug 2022
Reputation:
5
(19-05-2025, 08:00 AM)বহুরূপী Wrote: না, এই কথা সম্পূর্ণ সত্য নয়।
আসলে আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজি নব্বইয়ের দশকে নতুন ছিল না। আল্ট্রাসাউন্ড (ultrasound) বা সনোগ্রাফি (sonography) চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯৫০–৬০ এর দশক থেকেই। যদিও প্রাথমিকভাবে এটি সীমিত কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, সময়ের সাথে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে।
ঐতিহাসিক পটভূমিতে বলতে গেলে বলতে হয়;-
- ১৯৫৮: ডোনাল্ড ও ব্রাউন নামক দুই ব্রিটিশ গবেষক প্রথমবারের মতো গর্ভাবস্থার পর্যবেক্ষণের জন্য আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করেন।
- ১৯৭০-এর দশকে: আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি অনেক দেশে আরও উন্নত হয় এবং গর্ভকালীন শিশু পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়মিত ব্যবহার শুরু হয়।
- ১৯৮০-এর দশকে: উন্নত দেশগুলোতে এটি স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি হয়ে ওঠে।
- ১৯৯০-এর দশকে: ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শহরাঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়ে যায়। যদিও গ্রামীণ এলাকায় তখনও কিছুটা সীমাবদ্ধতা ছিল।
- নব্বইয়ের দশকে আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তি ছিল এবং চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছিল।
- তবে গ্রামাঞ্চলে বা অনুন্নত এলাকায় তখনও এটি সর্বজনীন হয়ে ওঠেনি।
আমার কলকাতার কোনও হাসপাতালে এর প্রচলন ছিল না। প্লেন তৈরি করেছিলেন রাইট ব্রাদার্স ১৯০৩ সালে। তার মানে এই নয় যে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড়তে শুরু করেছিল ১৯০৩ সালে। গ্রামাঞ্চলে এখনো আসেনি আল্ট্রাসউন্ড।
Posts: 1,058
Threads: 6
Likes Received: 2,553 in 636 posts
Likes Given: 1,323
Joined: Apr 2024
Reputation:
765
(20-05-2025, 03:16 AM)prataphali Wrote: আমার কলকাতার কোনও হাসপাতালে এর প্রচলন ছিল না। প্লেন তৈরি করেছিলেন রাইট ব্রাদার্স ১৯০৩ সালে। তার মানে এই নয় যে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ উড়তে শুরু করেছিল ১৯০৩ সালে। গ্রামাঞ্চলে এখনো আসেনি আল্ট্রাসউন্ড।
প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ পরিষেবা শুরু হয় ১৯১৪ সালে, ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে টাম্পা পর্যন্ত (স্প্যানিশ রিভার এক্সপ্রেস)। এটি একটি ছোট উড়োজাহাজে একবারে মাত্র এক যাত্রী বহন করত। একথা আমার অজানা নয়। তবে আমি যে কথা বলেছি সে কথাও মিথ্যা নয়। মেয়ে শিশু হত্যার ইতিহাস জেনে আসুন,বাকিটা এমনি বুঝে যাবেন।
আর একটা কথা,উনি কি গ্রামের গল্প লিখছেন নাকি?
Posts: 32
Threads: 0
Likes Received: 9 in 9 posts
Likes Given: 1
Joined: May 2022
Reputation:
0
চমৎকার লেখেন আপনি; নিজের জন্য হলেও লিখবেন। ছাড়বেন না। নিজের শখের জায়গাটা ছাড়লে একান্ত নিজের বলে কিছু থাকে না। যখন একা থাকবেন - বাকি সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত - তখন এরাই হবে আপনার সেরা সঙ্গী। আপনার বয়স জানিনা - জবিনের অনেকটা পেরিয়ে এসে এটা আমার সেরা উপলব্দি
Posts: 112
Threads: 0
Likes Received: 98 in 51 posts
Likes Given: 431
Joined: Oct 2024
Reputation:
11
(20-05-2025, 05:27 AM)বহুরূপী Wrote: প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ পরিষেবা শুরু হয় ১৯১৪ সালে, ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে টাম্পা পর্যন্ত (স্প্যানিশ রিভার এক্সপ্রেস)। এটি একটি ছোট উড়োজাহাজে একবারে মাত্র এক যাত্রী বহন করত। একথা আমার অজানা নয়। তবে আমি যে কথা বলেছি সে কথাও মিথ্যা নয়। মেয়ে শিশু হত্যার ইতিহাস জেনে আসুন,বাকিটা এমনি বুঝে যাবেন।
আর একটা কথা,উনি কি গ্রামের গল্প লিখছেন নাকি?
একদম উচিত জবাব।
ঠিকই তো ছোটন'দা তো গ্রামের গল্প লিখছে না।
ধন্যবাদ বহুরুপী দাদা।
•
Posts: 765
Threads: 0
Likes Received: 411 in 328 posts
Likes Given: 2,364
Joined: Dec 2021
Reputation:
15
এই গল্পের সঙ্গে এইসব পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা করে কি লাভ? এতে গল্পের মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়। এরথেকে গল্প উপভোগ করাই উচিত।
Posts: 150
Threads: 2
Likes Received: 451 in 157 posts
Likes Given: 142
Joined: Nov 2024
Reputation:
194
(20-05-2025, 12:14 PM)Mohomoy Wrote: একদম উচিত জবাব।
ঠিকই তো ছোটন'দা তো গ্রামের গল্প লিখছে না।
ধন্যবাদ বহুরুপী দাদা।
সবই তো বুঝলাম মোহময় কিন্তু আমরা 'তাঁর ছিঁড়ে গেছে' এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা খালি নিজেদের মধ্যে কোন মডেলের এয়ারক্র্যাফট, জেটলাইনার না প্রপেলার, কত সালে এই এয়ারক্র্যাফট মডেল চালু হয়েছিল এসব নিয়ে তর্কবিতর্ক করতে গিয়ে খেয়ালই রাখিনি যে অনেকদিন ধরে এই প্লেনের পাইলটেরই দেখা নেই।
Posts: 112
Threads: 0
Likes Received: 98 in 51 posts
Likes Given: 431
Joined: Oct 2024
Reputation:
11
(20-05-2025, 01:05 PM)prshma Wrote: সবই তো বুঝলাম মোহময় কিন্তু আমরা 'তাঁর ছিঁড়ে গেছে' এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা খালি নিজেদের মধ্যে কোন মডেলের এয়ারক্র্যাফট, জেটলাইনার না প্রপেলার, কত সালে এই এয়ারক্র্যাফট মডেল চালু হয়েছিল এসব নিয়ে তর্কবিতর্ক করতে গিয়ে খেয়ালই রাখিনি যে অনেকদিন ধরে এই প্লেনের পাইলটেরই দেখা নেই।
দুর্দান্ত বলেছো প্রিয় বন্ধু।
আসলেই তো পাইলট কোথায়?
তবে কি প্লেন ছেড়ে রকেট নিয়ে চাঁদ অথবা মঙ্গলে চলে গেলো!!
আমাদের কে কি আর ভাল্লাগছে না.....
Posts: 612
Threads: 0
Likes Received: 288 in 274 posts
Likes Given: 538
Joined: Jan 2024
Reputation:
7
Eagerly waiting for update
•
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
শারিরীক অসুস্থতার জন্য অনেকদিন লেখাটা দিতে পারিনি। সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আজ পুরোটা দিচ্ছি। কয়েকটা কথা। 1989 এ কলকাতার Medinova (Lake er kache) আমার gastric ulcer এর জন্য ultrasound kora হয়েছিলো। secondly golpota 1991 e ভারতের আর্থিক সংস্কারের 4/5 বছর পর থেকে shuru. Around 1995/6 আর 18 বছরের মেয়ে হলেও তার শরীরের কিছু চাহিদা থাকতেই পারে, specially post marriage, post period and finally getting her crush. Psychology খুব জটিল হয় অনেকের ক্ষেত্রে। আর তার পরের ঘটনাগুলো কিন্তু যে কারো nurve কে Weak করার জন্য যথেষ্ট। বারবার senseless হওয়া কি খুব abnormal?
•
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(৪৮)
মামন-পিসির তাড়া খেয়ে ফ্রেস হয়ে বাবার সমাধির সামনে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে প্রণাম করল দুই ভাইবোন। তার পর চোখ মুছে ঘরে ঢুকে দেখল, মামন আর পিসির সঙ্গে গল্প করছে ওদের মা। ওদের দেখে তাড়াতাড়ি উঠে আগে কাপে চা ঢেলে প্লেটে বিস্কিট দিল ঈশিতাই। কোনও কথা না বলে দু’জনে চুপচাপ খেতে লাগল। তার মধ্যেই পিসি হুকুম জারি করল, ‘‘কুট্টি, বাইকে মাকে নিয়ে শান্তিনিকেতন যা। মা ওখানে বেশ কয়েকটা কাজ করবে। যেখানে যাবে, সঙ্গে নিয়ে যাবি। আর হুড়ুম-দুড়ম করে চালাবি না, এই বয়সে পড়ে গেলে কেলেঙ্কারি। ফেরার পথে মায়ের ঘাড়ে সব চাপাবি না, নিজে বইবি। আর এখন দেরি না করে কিছু গিলে উদ্ধার করো সবাইকে।’’ কুট্টি কথাগুলো শুনে ভেঙচে দিল। তার পরেই কাপ রেখে পিসির গলা জড়িয়ে ধরে কানেকানে কী সব বলল, পিসি শুনে উল্টে ওরই কান ধরে ‘বাঁদর ছেলে’ বলে পিঠে একটা চড় মেরে বলল, ভাগ! ঈশিতা কিছু না বুঝতে পেরে সুভদ্রার দিকে তাকাতেই ও চোখের ইশারায় বলল, পরে বলছি। কুট্টি ঘর থেকে বেরোতেই চা শেষ করে পিছন পিছন গেল মুট্টিও। নিশ্চয়ই কথা বলবে দুই ভাইবোনে পিসির কথাটা নিয়ে। ওরা ঘর ছাড়তেই জয়তী মুচকি হেসে ঈশিতা ও সুভদ্রাকে বলল, ‘‘কুট্টি এখনও দ্বিধা ঝেড়ে ফেলতে পারেনি। আমাকে বলল, মায়ের সঙ্গে তুমিও চলো না! ও একা যাবে, তাও মাকে সঙ্গে নিয়ে, মা মা বলে ডাকতে হবে— সব মিলিয়ে একটা দ্বিধা এখনও ওর আছে। মুট্টিরও তাই। সে কারণেই আজ কুট্টিকে একা পাঠাব। আর তুই ওদের আজ সকালে জলখাবার খাওয়াবি। একটা থালায় খাবার বেড়ে দু’জনকে মুখে তুলে তুলে খাওয়াবি। এটা ওদের ছুটির আব্দার। তবে যেন বুঝতে না পারে, আমরা বলেছি।’’ জয়তীর কথা শেষ হতেই সুভদ্রা বলল, ‘‘আর বড়দি শোন, ওই ডাক ওদের বেরোতে সময় লাগবে। এখন যেটা ডাকবে, সেটা স্বতঃস্ফূর্ত না। নেহাত ডাকের জন্য ডাকা। মন থেকেই ডাকবে এক সময়। তবে খুব দেরি হবে না মনে হল। তোমাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আজ সকালে যা বলেছো, ব্যাস! শুধু নিয়ম করে রোজ সকালে তুলবে এই রকম আদর করেই। আর রাতে পারলে যে কোনও একটার খাটে পাশে শুয়ে আদর করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করবে। কথা বলবে না, গুনগুন করে গান গাইবে। ওদের জড়তা আছে, সেটা তোমাকেই নানা ভাবে কাটাতে হবে। পারলে প্রথম ক’দিন না হোক, পরের দিকে রাতে ওদের পাশে শুয়েই ঘুমোবে। তোমার গলা ভাল, ফলে ওদের ভাল লাগবে। আর ওরা কি খেতে ভালবাসে, সেটা বলে দেব। কলকাতায় গিয়ে একেক দিন একেকটা পদ রাঁধবে। আমি ভুল ধরব, দিদিভাইও ভুল ধরবে। ওরা কী বলে, শুনে যাবে। আমাদের মত না নিয়ে ওদের মতে পরের দিন রাঁধবে। যত কথা বাড়বে, তত সহজ হবে।’’
ওদের এই কথাবার্তার মধ্যেই বুড়ি এসে জানাল, ঈশিতার দুই দিদি-জামাইবাবু ফ্রেস হয়ে চা খাচ্ছেন। এবার জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে যাবেন। ওরা এঘরে আসবেন কি না, জানতে চাইছেন। ঈশিতা শান্ত গলায় বলল, হ্যাঁ আসতে বলো।
দুই দিদিই কয়েক মিনিটের মধ্যে এ ঘরে ঢুকলেন। তিনজনে খাটে বসে চায়ের কাপ নিয়ে গল্প করছে দেখে একটু অবাক হলেও কিছু বললেন না। দু’জনে দুটো চেয়ার টেনে বসে জয়তীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘হ্যাঁরে, ওরা কাছা পরবে না? বাবার কাজ কবে করবে? কী ভাবে, কোথায় করবে? কাল জিজ্ঞাসা করা হয়নি।’’ সুভদ্রা শান্ত গলায় বলল, ‘‘ওদের বাবা এ সব করতে মানা করে গেছেন। কোনও নিয়ম মানা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সবাইকেই। এমনকি নিরামিষ খেতেও বারণ করেছেন।’’ বলে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘ জানো বড়দি, ও কিচ্ছু মানত না। বলত, সব মানুষের তৈরি ভুলভাল নিয়ম। ওসব না মেনে প্রকৃতিকে ভালবাস, মানুষকে ভালবাস, সব পাবি। কোনও নিয়মে নিজেদের বাঁধবি না।’’ ঈশিতা জানত এগুলো। বুঝল, শেষ দিন অবধি নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থেকে গেছিল লোকটা। কী জেদ! তার পরেই মনে হল, ওই জেদ ছিল বলেই ওই রকম একটা সিদ্ধান্ত ওই মুহূর্তে ঠান্ডা মাথায় নিয়েছিল। অন্য কেউ হলে হাতেনাতে ধরে নানা রকম অশান্তি করত, মারধরও হয়তো করত। ঘটা করে ডিভোর্স দিত, তার পরে আবার বিয়ে করত। কিন্তু ওর মানুষটা একই রকম থেকে গিয়েছিল। অবশ্য ওর নিজের মানুষ বলার মতো জোরটা তো ঈশিতা নিজেই রাখেনি। শুধু মানুষটা না, ছেলেমেয়েদুটোও একদম ওর নিজের হয়ে ওঠেনি, বরং তারা অনেক বেশি অন্যদের আপন হয়ে গিয়েছে। ওর চোখদুটো অজান্তেই জলে ভরে গেল। সুভদ্রা, জয়তী দু’জনেই লক্ষ্য করল, কিন্তু কিছু বলল না।
কিছুক্ষণ পরে বুড়ি জলখাবারের জন্য ডাকল। সুভদ্রার ইশারায় ও ঘরেই বসে রইল। জয়তী দুই দিদি, জামাইবাবুকে নিয়ে উঠে যেতেই পিছন পিছন কুট্টি-মুট্টিও উঠতে গেল। ঈশিতা ছেলেমেয়ের হাত ধরে বলল, ‘‘কোথাও যেতে হবে না। আজ আমার কাছে খাবি তোরা।’’ কিছুটা হতভম্ব দুই ভাইবোনকে ঘরে রেখে নিজে রান্নাঘরে গিয়ে বুড়িকে জিজ্ঞাসা করে দু’জনের মতো খাবার নিয়ে এল। ঘরে ঢুকে দেখল, তখনও দুই ভাইবোন মাটির দিকে তাকিয়ে। ঈশিতা বুঝল, এ দ্বিধা বড় দ্বিধা। ও কিছু না বলে দু’জনের মাঝখানে থালা নিয়ে বসে লুচি ছিঁড়ে তাতে তরকারি দিয়ে দুই ভাইবোনকে খাওয়াতে লাগল। ওর চোখ ফেটে জল আসছে তখন। এই কাজ তো ওরই করার কথা ছিল গত আঠেরো বছর ধরে। ও পারেনি। সুভদ্রার কথায় আজ ও করার সুযোগ পেয়েছে মাত্র। কিন্তু চোখের জল চোখেই জমা রেখে চুপচাপ খাওয়াতে লাগল দু’জনকে। কোনও কথা না বলে দু’জনেই খেতে লাগল। বেচারাদের কাল থেকে সে ভাবে খাওয়াই হয়নি। খুব দ্রুত লুচিগুলো শেষ হয়ে গেলে ও দৌড়ে ফের রান্নাঘরে গিয়ে আরও কয়েকটা লুচি এবং বেশ কিছুটা তরকারি নিয়ে এল। সেটুকুও দু’জনকে খাইয়ে ওখানেই রাখা জলের বোতল থেকে জল নিয়ে দু’জনের মুখ আলতো করে মুছিয়ে কুট্টিকে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘‘তুই রেডি হ। আমি বেরোব।’’ কুট্টি-মুট্টি একসঙ্গেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ও রান্নাঘরে গিয়ে থালাটা জল দিয়ে ধোওয়ার আগে তাতে লেগে থাকা একটুখানি তরকারি আঙুল দিয়ে জিভে ঠেকাল, যেন প্রসাদ। তার পরে থালা ধুয়ে অনেকটা জল খেয়ে ঘরে ঢুকে শাড়ি বদলে ফোনটা নিয়ে বাইরে এল। জয়তী, সুভদ্রা আর দিদিরা তখন অন্য ঘরে খেতে খেতে গল্প করছে। ও সেখানে গিয়ে দুই দিদি-জামাইবাবুকে প্রণাম করে বলল, ‘‘তোমাদের সঙ্গে কাল থেকে কথাই হল না। কলকাতায় ফিরে দেখা করব, কেমন? সাবধানে যেও’’ বলে সবাইকে টাটা করে দাওয়া থেকে নিচে নেমে দেখল, কুট্টি বাইক নিয়ে রেডি। মাথায় হেলমেট। ও আসতেই কোনও কথা না বলে ওর হাতে একটা হেলমেট তুলে দিল। ঈশিতা একটু হেসে বলল, ‘‘ওটা পড়লে আমার দমবন্ধ লাগবে। তুই হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে নে।’’ বলে বাইকে উঠে একপাশ করে বসে কুট্টির কাঁধে হাত রাখল। বাইক ছাড়ার মুহূর্তে পিছন থেকে জয়তীর গলা শুনল, ‘‘ওকে ভাল করে ধরে বস, না হলে উল্টে পড়ে যাবি।’’ ঈশিতা শুধু হাসল একটু।
বেশিক্ষণ লাগল না রতনপল্লীতে নিজের বাড়িতে আসতে। অভ্যাস মতো পাশের বাড়িটার দিকে আজ তাকাতে গিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। ওই বাড়িতে গুঞ্জা ভাড়া থাকে ওর বর আর সন্তানকে নিয়ে। কুট্টিকে নিয়ে চাবি খুলে ঘরে ঢুকে ওকে বসাল। তার পর ওর কাজের দিদিকে ফোন করে আসতে বলল। ফ্রিজ খুলে দেখল, কয়েকটা মিষ্টি আছে। দ্রুত মিষ্টিগুলো কুট্টিকে একটা প্লেটে দিয়ে বলল, ‘‘সকালে লুচি খেয়ে জল খাসনি। মিষ্টিগুলো খেয়ে জল খা। তার পরে চা খাবি,। আমি একগাদা কাজ করব। দরকার হলে তোকে বলব হেল্প করতে। এখন চুপ করে এগুলো খেয়ে নে।’’ বলে ঘরে ঢুকে দ্রুত আলমারি খুলে ব্যাঙ্কের বই থেকে শুরু করে নিজের সব সার্টিফিকেট, আর শাড়ি-ব্লাউজ ভরে নিল। টাকাপয়সা নিজের হাত ব্যাগে রেখে গয়নাগুলোও ব্যাগে ভরল। তার পরে এ ঘরে ঢুকে কুট্টিকে বলল, উপরের ঘরগুলো দেখি, কিছু আছে কিনা। বলে উপরে গিয়ে আরও কিছু জিনিস নিয়ে নীচে এসে চা বসিয়ে একটা প্যাডের পাতা ছিঁড়ে রেজিগনেশন লেটার লিখল। মাঝে ইচ্ছে করেই কুট্টিকে দুটো বানান জিজ্ঞাসা করল। চিঠিটা লেখা হলে কুট্টিকে দিয়ে পড়িয়ে সই করল। কুট্টি লক্ষ্য করল, সইটা ঈশিতা সরকার নামেই করছে মা। তার মানে এত বছরেও বাবার টাইটেলটা ছাড়েনি মা। একটু অবাক হলেও ভাল লাগল ওর। সই করে চিঠিটা একটা খামে ভরল, তবে আঠা দিয়ে সেঁটে দিল না। ওটার জেরক্স করাবে কয়েক কপি, না হলে পরে সমস্যা হতে পারে। ততক্ষণে কাজের দিদি এসে গেছেন। তাঁর কাছে থাকা চাবিটা নিয়ে তাঁকে একবারে তিন মাসের মাইনে দিয়ে বলল, ‘‘আমি কলকাতায় চলে যাচ্ছি। তোমাকে আর আসতে হবে না।’’ বহুদিনের পুরনো লোক, কেঁদে ফেলল। তাকে স্বান্তনা দিয়ে নিজের বেশ কয়েকটা শাড়ি দিয়ে দিল। তিনি চোখ মুছে চলে গেলে মুচকি হেসে কুট্টিকে বলল, ‘‘ভার কমালাম আর কি!’’ সব সেরে একটা বড় ব্যাগে নিজের কিছু অতি প্রিয় আর প্রয়োজনীয় জিনিস ভরে আট বছরের এই বাড়ি ছেড়ে নির্ভার হয়ে বাইরে এসে দরজায় ভাল করে তালা দিল। তার কুট্টিকে বলল, ‘‘একবার ইউনিভার্সিটি যাব, আর পথে একটা সাইবার কাফে পড়বে, সেখানে একটু যাব। চিঠির পাশাপাশি মেলটাও করে রাখতে হবে। ওখানে তুই ঢুকবি আমার সঙ্গে।’’ সাইবার কাফতে ঢুকে একজন কর্মীকে চিঠিটার জেরক্স করিয়ে আনতে বলে কুট্টিকে পাশে নিয়ে রেজিগনেশন মেল করতে শুরু করল। এর মধ্যে ছেলেটা তিন কপি জেরক্স করে দিয়েছে। সেটা হাতে নিয়ে মূল চিঠিটা আঠা দিয়ে সাঁটল ভাল করে। ওটা জমা দেবে ডিপার্টমেন্টে। কাফেটার ছোকরা একজন কর্মী ভালই চেনে ইউনিভার্সিটির দিদিমণিকে। সঙ্গে একটা ছেলেকে দেখে একটু বিস্মিত হয়ে বলল, ‘‘দিদি, ইনি কে?’’
গত ১৮ বছরে এই প্রশ্নটা প্রথম শুনল ঈশিতা। এত বছরে চেনা-অচেনা কেউ ওকে এই প্রশ্নটা করেনি। সুযোগই পায়নি কেউ। চিঠিটা ততক্ষণে লেখা শেষ। পরপর ইমেল অ্যাড্রেসগুলো লিখে মেলগুলো সেন্ড করে চেয়ার ছেড়ে উঠে চোখের জলটা আড়াল করে গলাটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে বলল, ‘‘এটা আমার বড় ছেলে গো। আমার যমজ ছেলেমেয়ে। ছেলে সাড়ে তিন মিনিটের বড়, তাই ও বড় ছেলে। ওর নাম অরণ্য সরকার। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। এখন বড় হয়েছে, তাই আমি চাকরি ছেড়ে ছেলেমেয়ের কাছে থাকব বলে চলে যাচ্ছি। তোমাদের সঙ্গে অনেকগুলো দিন থাকলাম। তোমরা ভাল থেকো, কেমন?’’ বলে ছেলের হাত ধরে রাস্তায় নামল। চোখের কোন দিয়ে তখন জল গড়িয়ে পড়ছে। কুট্টি সেটা দেখল, বুঝলও। কিন্তু কিছু বলল না। গলাটা নরম করে বলল, ‘‘ওঠো, তোমার ইউনিভার্সিটির রাস্তাটা চিনিয়ে দিও। আমি চিনি না।’’
কাল সৌমাভর মৃত্যুর পর থেকে এই প্রথম ছেলে সরাসরি ওর সঙ্গে কথা বলল। কিন্তু তাও মা শব্দটা বেরোয়নি ওর মুখ থেকে! ঈশিতার বুকের ভিতরে আনন্দ আর কষ্টের কান্না যেন ঢেউ দিয়ে উঠছে। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে বাইকের পিছনে উঠে বসে ডিরেকশনটা ভাঙা গলায় বলে ছেলের কাঁধে মাথা রাখল। ওর চোখ দিয়ে নিঃশব্দে জল গড়িয়ে ছেলের পিঠটা ভিজিয়ে দিতে লাগল। ঠিক সকালের মতো। ইউনিভার্সিটির অফিসে ঢুকে ওর ডিপার্টমেন্টের এক কর্মীর হাতে চিঠিটা দিয়ে তাঁকেও ছেলে দেখিয়ে একগাল হাসল। তার পর একটা রিসিভড কপি নিয়ে বাইরে এসে ছেলেকে বলল, ‘‘এবার ব্যাঙ্কে যাব। সেখানেও কয়েকটা চিঠি দিতে হবে, ফর্ম নিতে হবে। আজ দুপুরে বাইরে খাবি? এখানে খুব ভাল একটা ভাতের হোটেল আছেl ব্যাঙ্ক থেকে ঘুরে সেখানে তোকে খাইয়ে বাড়ি ফিরব, কেমন?’’ ব্যাঙ্কে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগল। সঞ্চয়ের টাকা অনেকটাই তুলল। বিভিন্ন সেভিংস কী করে কী করবে, তা জেনে বেশ কয়েকটা নমিনি ফর্ম তুলে বেরোল। আবার একটা কি মনে পড়তে ব্যাঙ্কে ঢুকল। দেখল ছেলে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কানে নিল।
ব্যাঙ্কের কাজ মিটিয়ে ছেলের বাইকে উঠে বলল, ‘‘চল, তোকে হোটেলটায় নিয়ে যাই।’’ বলে ডিরেকশন দিতে দিতে নিয়ে গেল। পথে একজন চেনা উকিলের কাছ থেকে কয়েকটা কোর্ট পেপার নিয়ে নিল। হোটেলে ঢুকে মাছ-মাংস, মিষ্টি দই মিলিয়ে একগাদা খাবারের অর্ডার দিয়ে ওকে নিয়ে হাত ধুয়ে এসে একটা বড় টেবিলে বসে ফিক করে হেসে বলল, ‘‘আমার পাশে বস। তোকে খাইয়ে দেব। লজ্জা পাবি না তো?’’ তার পর কি মনে হতে হুড়মুড় করে উঠে গিয়ে সাত-আটজনের মতো খাবার ভাল করে ফয়েল প্যাক করতে বলে আর শুধু একপ্লেট মাছভাত আর মিষ্টি দই টেবিলে দিতে বলে এসে বসল।
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(৪৯)
১৮ বছরের জন্মদিনে নিজের আর বোনের জন্ম, বড় হওয়া, মামন, পিসি, বাবা— সব মিলিয়ে অনেক কথা শুনেছিল অরণ্য। মৃত্তিকাও। সেদিন থেকে যে মাকে দেখার জন্য হাঁকপাঁক করছিল, কাল বাবার মৃত্যুর পর থেকে তাকে অনেকক্ষণ ধরে দেখেছে। সকালে ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না, দুই ভাইবোনকে নিজে হাতে খাইয়ে দেওয়া— সব দেখেছে। একটু আগে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ওকে ছেলে বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ওর পিঠে মাথা রেখে ফেলা চোখের জলও টের পেয়েছে। বুঝতে পারছে, মানুষটা নতুন জীবন পাচ্ছে ওদের দুই ভাইবোনের কাছে থাকলে। কিন্তু কি বলে ডাকবে এঁকে? মা? সত্যিই তো ওদের মা, কিন্তু তার পরেও....মামন? মামনের অভিমান হবে না তো? পিসি? ওরা দূরে সরে গেলে.... মাথার মধ্যে নানা চিন্তা পাক খাচ্ছে কুট্টির। তার উপর একটু আগে আসা পিসি আর মামনের ফোনে জেনেছে, সকালে নিজে হাতে ওদের পাশে বসিয়ে পেটভরে খাইয়ে দিলেও নিজে শুধু একটু জল খেয়েই বেরিয়েছে! বলতে গেলে কাল সকালের সেই মুড়ি, মাছভাজা আর চা বাদ দিলে গত ২৪ ঘন্টারও বেশি কিছুই খায়নি মানুষটা! তার পরেও চোখেমুখে তার কোনও চিহ্ন নেই! অবাক হয়ে প্রশ্নটা করতেই পিসি বলল, ‘‘এই প্রশ্নটা তুই করবি। আমি না। মা তোর, তোর বোনের।’’ মামনও একই কথা বলে জানিয়েছে, ‘‘দুপুরে যদি বাইরে খাস, আজ তোর দায়িত্ব নিজে হাতে মাকে খাইয়ে দেওয়া।’’
ঈশিতা টেবিলে এসে বসে দেখল, ছেলে একমনে মাথা নিচু করে কি ভাবছে। ও বুঝতে পারছে, ছেলেমেয়ের মনের দ্বন্দ্বটা। পরিস্থিতি হালকা করতে ছেলেকে বলল, ‘‘এখান থেকে বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগবে বল তো? এখন প্রায় দুটো বাজে।’’ চমকে উঠে একটা কথা বলার মতো সুযোগ পেয়ে কুট্টি খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘‘মিনিট তিরিশ-পঁয়ত্রিশ।’’ ঈশিতা বলল, ‘‘এখনই মামন আর পিসিকে বলে দে, আমরা দুপুরের খাবার নিয়ে ফিরছি। এখন তোকে শুধু একটু মাছভাত খাইয়ে বাকি সব খাবার প্যাক করে বাড়ি ফিরে সবাই মিলে খাব, কেমন?’’ কুট্টি একটু অবাক হলেও ফোন করে সবটা জানিয়ে বলল, ‘‘ঠিক আছে, তবে আজ আমি তোমাকে আগে খাইয়ে দেব, তার পর তুমি খাইয়ে দিও, কেমন?’’ ঈশিতা অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইল। তার পর খুব নিচু গলায় বলল, ‘‘কিন্তু সোনা, আমি ক’টা দিন তো মাছ-মাংস খাব না।’’ ছেলে একই রকম শান্ত গলায় বলল, ‘‘বাবা যেটা বলে গেছে, সেটা আমরা সবাই মানব। তাই কোনও কথা শুনব না, মাছভাত তোমায় খেতেই হবে।’’ ঈশিতা মাথা নিচু করে নিল ছেলের কথা শুনে। টপটপ করে চোখের জল পড়তে লাগল টেবিলে।
এরমধ্যে একটা লোক মাছভাত আর দইয়ের পাত্র দিয়ে বলে গেল, অর্ডার প্যাক হচ্ছে। দশ মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে। ঈশিতা হাত বাড়ানোর আগেই প্লেটটা টেনে নিয়ে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত মেখে হাতে করে ঈশিতার মুখের সামনে ধরল কুট্টি। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দুচোখ ভরা জল মোছার চেষ্টাই করল না ঈশিতা। একগাল মাছভাত খেয়ে এবার প্রায় প্লেটটা কেড়ে নিয়ে ছেলের গালে খাবার তুলে দিল ও। মা ছেলে প্রায় যুদ্ধ করল খাওয়া নিয়ে। ঈশিতার চোখের জল সমানে গড়িয়ে পড়তে থাকল, কুট্টি অবশ্য নির্বিকার। খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে প্যাকেটগুলো এসে গেল। প্যাকেটের বহর আর সাইজ দেখে কুট্টির মাথা খারাপ হয়ে গেল। এত খাবার? কতজন মিলে খাবে? ও মুখ খুলে ঈশিতার দিকে তাকাতেই বলল, ‘‘আজ সবাই মিলে একসঙ্গে খাব। তুই কয়েকটা নিয়ে বস। আমি বাকিগুলো নিচ্ছি।’’ বাইকে উঠে প্যাকেটগুলো নানা কায়দা করে ঝুলিয়ে নিল কুট্টি। ঈশিতা আগের মতোই বসে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘‘তাড়াতাড়ি চল। ওরা না খেয়ে আছে।’’ শুধু ওরা? নিজে যে কিছুই না খেয়ে আছে ২৪ ঘন্টার বেশি? প্রশ্নটা মুখে এলেও গিলে নিল কুট্টি। এমনিই কথায় কথায় কাঁদছে, আবার কাঁদতে শুরু করে দেবে, বুঝতে পারছে ও। তাই কথা না বাড়িয়ে বাইক ছোটাল। আসার সময়ের থেকে একটু জোরেই। বুঝতে পারল, ওর কাঁধে মাথা রেখে ওকে শক্ত করে ধরে বসে আছে পিছনের মানুষটা।
হিসেবের থেকে কিছুক্ষণ আগেই পৌঁছে গেল ওরা। বাইক থেকে নেমে ঈশিতা ব্যাগ আর কয়েকটা প্যাকেট হাতে নিয়ে এগোল। পিছনে কুট্টি। ওদের হাতে প্যাকেটের বহর দেখে চমকে উঠল সবাই। কিন্তু ঈশিতার চোখমুখের দিকে তাকিয়ে একমাত্র জয়তী বুঝতে পারল, কতটা আনন্দে ভাসছে ঈশিতা। ওর মনে পড়ল, প্রথম দিককার সেই মুখটা। লজ্জা, অপরাধবোধ, মানসিক যন্ত্রণা আর নিজের উপরে ঘৃণায় কালো ছোপ পড়া মুখটা রাতারাতি কয়েক ঘন্টায় খুশিতে যেন ঝলমল করছে। ও প্যাকেটগুলো জয়তী আর সুভদ্রার হাতে দিয়ে বলল, ‘‘তোমরা বসে পড়ো। ভাগ করো সব। বুড়িকে আর ওর মেয়েকেও ডেকে নাও। আমি মাথায় একটু জল ঢেলেই আসছি। ওদের খাইয়ে দেব।’’ বলে নিজের ব্যাগটা নিয়ে সৌমাভর সেই ঘরটায় ঢুকে পড়ল। জয়তী আর সুভদ্রা মুখ টিপে হাসল শুধু।
কোনও মতে স্নান সেরে একটা শাড়ি পড়ে খাবার ঘরটায় ঢুকেই সুভদ্রা আর জয়তীর মুখ ঝামটানি খেল ঈশিতা। এত খাবার! রাতেও তো শেষ হবে না সবাই মিলে খেলেও। ঈশিতা মুচকি হেসে বলল, ‘‘সব হবে। দাও, ওদের খাবারটা কই। কত বেলা হয়ে গেছে, ওদের খিদে পেয়ে গেছে!’’ পাশে বসা সুভদ্রা মুচকি হেসে একটা বড় থালা দেখিয়ে বলল, ‘‘ওটায় নিয়ে বস। তার পর দরকার মতো বাটি থেকে নিয়ে নিও।’’ বলে ছেলেমেয়েকে ডাকল। ওরা সকালের মতোই কিছুটা জড়োসড়ো ভাবে এসে দাঁড়িয়ে গেল। কোথায় বসবে ঠিক করতে পারছে না। মামন, পিসি নাকি আবার মা? ওদের দ্বিধা দেখে জয়তী এক ধমক দিয়ে দুজনকেই ঈশিতার দু’পাশে বসিয়ে ইশারায় সুভদ্রাকে ওর পাশে ডেকে নিল। ঈশিতা বিস্মিত হয়ে প্রশ্নটা করতেই জয়তী একটু ধমকের সুরে বলল, ‘‘মুখোমুখি না বসলে কথা বলা যায়? এবার বল, তোর কাজ কতটা হল।’’ ঈশিতা থালায় অনেকটা ভাত নিয়ে একটার পর একটা পদ মেখে একবার ছেলেকে একবার মেয়েকে খাওয়াতে খাওয়াতে গল্পে মেতে উঠল। সেই সঙ্গেই কবে কলকাতায় ফিরবে, কী ভাবে যাবে এই সব হাবিজাবি কথা বলতে বলতে খাইয়ে দিল দু’জনকে। সুভদ্রা খেতে খেতেই লক্ষ্য করল, ঈশিতা একগাল ভাতও খায়নি। কনুইয়ের গুঁতোয় বিষয়টা জয়তীকে দেখাল। জয়তী মুট্টিকে ইশারা করল, সে মুখ ভেটকে বলল বুঝতে পারছি না। কুট্টি তখন চিংড়ির খোলা ছাড়িয়ে খেতে ব্যস্ত। একটু পরে ও যখন মুখ তুলল, দেখল পিসি আর মামন ওকে ইশারায় কিছু বলছে। ঈশিতা তখন ওদিকে মুখ করে মেয়েকে খাওয়াতে ব্যস্ত। বিষয়টা বুঝেই লাফ দিয়ে খাওয়া ছেড়ে উঠে দৌড়ে দিয়ে মুখটা ধুয়ে এসে ঈশিতার কোলের কাছ থেকে থালাটা প্রায় কেড়ে নিল কুট্টি। তার পরে পিসি আর মামনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘হোটেলে জোর করে দু’গাল খাওয়াতে পেরেছি।’’ তার পরেই ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘নিজে যদি না খাবে, তা হলে এত আনালে কেন?’’ বলেই বেশ কিছুটা ভাত সেই থালায় দিয়ে বলল, ‘‘আগে নিজে খাবে, তার পর বাকিরা খাবে।’’ বলে মুট্টির হাত ধরে তুলে মুখ ধুতে পাঠিয়ে দিল। নিজেও দুদ্দাড় করে চলে গেল। ওর কান্ড দেখে জয়তী আর সুভদ্রা হেসে ফেলল। তার পরেই তাকিয়ে দেখল, ভাতের থালার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে ঈশিতা। ওরা খাওয়া ছেড়ে উঠে ঈশিতার সামনে বসে গায়ে হাত দিতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল ও। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। জয়তী বিষয়টা বুঝল। সকাল থেকে ছেলেমেয়েকে এ ভাবে পেয়ে, খাইয়ে দিতে পেরে অনেক দিনের চেপে রাখা আবেগ এবার বাঁধ ভেঙে দিয়েছে, নিজের খাওয়ার কথা ভুলেই গেছে ঈশিতা যেন! বিষয়টা বুঝল সুভদ্রাও। কোনও কথা না বলে ছেলেমেয়েকে ডেকে এনে সামনে বসিয়ে বলল, ‘‘এতক্ষণ ধরে তোদের খাওয়াল, এবার তোরা খাইয়ে দে। না হলে খাবে না। যত পাগল নিয়ে আমার হয়েছে জ্বালা!’’
মামনের ধমক শুনে কুট্টি থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলেও মুট্টি একটুও দেরি করল না। ওখানেই ধপ করে বসে থালাটা টেনে ভাত মেখে ঈশিতার মুখের সামনে ধরল। ঈশিতা চোখভরা জল নিয়ে তাকাতেই বলল, ‘‘অনেক বেলা হয়েছে, কাঁদবে পরে। আগে খাও।’’ বলে পরপর কয়েকটা গাল ভাত খাইয়ে দাদার দিকে তাকিয়ে খিঁচিয়ে উঠল, ‘‘মাছটা বেছে দিতে পারছিস না? জল কোথায়?’’ ততক্ষণে জয়তী আর সুভদ্রার খাওয়া শেষ। ওরা থালাতেই হাত ধুয়ে বসে বসে দেখল, মেয়ের হাত থেকে ভাত খাচ্ছে ঈশিতা আর দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অল্প কিছুটা খেয়ে অবশ্য আর খেল না। বলল, রাতে ভাল করে খাব। বলে উঠতে যেতেই মাথাটা একটু টলে গেল। কুট্টি হাত ধরে তুলে মুখ ধুইয়ে মামনের ঘরের বড় বিছানাটায় শুইয়ে দিল। সুভদ্রা একটু ভয় পেলেও জয়তীর দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত হল। তার পর মুট্টিকে বলল, ‘‘যা গিয়ে দাদাকে নিয়ে মায়ের কাছে শো। মনে হয়, শরীরটা খারাপ লাগছে। তোরা থাকলে সুস্থ বোধ করবে।’’
এই বারে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল দুই ভাইবোনেই। ছুটিছাটা থাকলে দুপুরে খেয়ে হয় মামন নয় পিসির কাছে শোয় তারা। সকালে মা গিয়ে ঘুম থেকে তুলে বুকে টেনে অনেকক্ষণ কেঁদেছে ঠিক, কিন্তু তাই বলে এখন মায়ের কাছে গিয়ে শুতে হবে? ওদের মুখ দেখে জয়তী এবং সুভদ্রা বুঝল, বড় দোটানায় পড়েছে। কিন্তু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বলল, ‘‘মুট্টি রাতে মায়ের কাছে শুস আজ। আর কুট্টি এখন তুই যা। পরপর মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার উপর কাল থেকে আজ এতবেলা অবধি প্রায় না খাওয়া। ঘুমোয়ওনি রাতে।’’ কুট্টি আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ গিয়ে ঈশিতার পাশে শুল, কিন্তু ঘুমোল না।
ঈশিতা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়েছিল। টানা বহু বছরের মানসিক চাপ ওকে ভিতরে ভিতরে অনেকটাই ক্ষইয়ে দিয়েছিল। তার উপর কাল থেকে চলা ঘটনা, আজ ছেলেকে জড়িয়ে তার বাইকে বসা, প্রথমে ছেলে এবং পরে মেয়ের হাতে ভাত খাওয়া— সব মিলিয়ে সেই চাপ আচমকা কমে যাওয়ায় ওর শরীরটা ছেড়ে দিয়েছিল। তবে ঘুমটা সে ভাবে হল না। একবার পাশ ফিরতে গিয়ে বুঝল, ওর পাশে কেউ শুয়ে আছে। প্রথম অনভ্যাসের ধাক্কায় চমকে উঠতে গিয়েও চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখল, কুট্টি বালিশে মাথা রেখে চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে। ও কিছু না বলে পরম নিশ্চিন্তে কুট্টির গায়ের উপরে হাত দিয়ে শুয়ে রইল। কুট্টির চটকাটা ভেঙে গেলেও মামন আর পিসির ভয়ে ওই ভাবেই শুয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ পরে সুভদ্রা ঘরে উঁকি মারল। বাইরে তখন সন্ধ্যে নেমেছে। ও মামনকে ডেকে ফিসফিস করে বলল, ‘‘আমি উঠব, টয়লেটে যাব। তুমি এবার ওনাকে তোল।’’ ঈশিতা বুঝল, বাইরে যতই স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করুক, ছেলে বা মেয়ে কেউই ওকে এখনও মা বলে ডাকছে না। ও হাতটা আলতো করে সরিয়ে নিতে গিয়েও নিল না। ও জানে, ওই ডাক ও সহজে শুনতে পাবে না। সময় লাগবে অনেক। সুভদ্রা এবং জয়তী দু’জনেই ওকে সেটা বলেওছে। তবু এত বছর পরে ওর ভিতরের ঝড়টা কেউ বুঝতে পারছে না। সুভদ্রা আস্তে করে ওর হাতটা তুলে নিজের কোলে নিল। কুট্টি উঠে যেতেই যেন ঘুম ভেঙে গেছে, এই রকম চোখমুখ করে উঠে বসল ঈশিতা। তার পর একগাল হেসে বলল, ‘‘ভয় পাস না, আমার কিছু হয়নি।’’ সুভদ্রা পাল্টা হেসে বলল, ‘‘ওঠো, চা খাব।’’ বাইরে এসে চোখেমুখে জল দিল। ডিসেম্বরের প্রায় শেষ। শীতের কামড় এখন প্রচন্ড। তবে ওর গায়ে শুধুই একটা চাদর। জয়তী তাই নিয়ে একটু বকাবকি করল, সুভদ্রাও। ও হেসে ম্যানেজ করে বলল, ‘‘চা করো, আমি আসছি।’’ বলে সুভদ্রার থেকে একটা মোমবাতি চেয়ে নিয়ে সৌমাভর সমাধির কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে সেটাকে জ্বালিয়ে অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে প্রণাম করল। তার পর সৌমাভর সমাধিতে মাথা ঠেকিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলল। তার পর উঠে ঘরে ঢুকল। ওর চোখমুখ এখন অনেক শান্ত। দাওয়া থেকে জয়তী এবং সুভদ্রা দু’জনেই ওকে দেখছিল। ও উঠে দাঁড়াতেই দু’জনে ঘরে ঢুকে গেল। চা খেতে খেতে ঠিক হল, পরশু সবাই মিলে কলকাতা চলে যাবে। কাল একটা গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া হবে, তাতেও সবাই চলে যাবে। আবার জানুয়ারির শেষের দিকে কয়েকের জন্য আসা যাবে। এমনিও গত কয়েক মাস প্রতি শুক্রবার সুভদ্রা অফিস করে চলে আসত। সোমবার গিয়ে আবার অফিস করত। মাঝেমধ্যে জয়তী এবং ছেলেমেয়েরাও ওই ভাবেই আসত। আবার সেই ভাবেই আসা-যাওয়া করতে হবে। সে দিন রাতে মুট্টি ওর পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে গভীর রাত অবধি জেগে মেয়েকে অনেক আদর করল ঈশিতা। মেয়ে ঘুমিয়ে গেলে নিঃশব্দে উঠে ফের সৌমাভর সমাধির উপরে মাথা রেখে অনেকক্ষণ শুয়ে রইল। কাঁদল, কথা বলল, গুনগুন করে গান করল, নালিশ করল। নিশুতি রাত, তায় শীতকাল। কে দেখবে ওকে! প্রাণভরে আজ এত বছর পরে যেন স্বামীর সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলল ঈশিতা। ভোর হচ্ছে বুঝে আবার চুপিসাড়ে গিয়ে মেয়ের পাশে শুয়ে গায়ে কম্বলটা টেনে নিয়েছিল। মেয়ের সঙ্গে এক কম্বলের নীচেই শুয়েছিল সে রাতটা। তবে ঘুমোয়নি।
পরের দিনও ঈশিতা একই ভাবে সকালে উঠে আদর করে মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে ছেলেকে তুলেছিল। তার পরে সবাই মিলে চা খেয়ে জলখাবার খেয়ে ঘরের জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করেছিল। কুট্টি-মুট্টি গেছিল গাড়ি ভাড়া করতে। এবারে পাঁচ জন মিলে যাবে, তাই বড় গাড়ি না করলে ঠাসাঠাসি হবে। ঈশিতার নিজের যা কিছু, তা শান্তিনিকেতন থেকেই একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগে করে এনেছিল। সেটা খোলেইনি। সুভদ্রা ও জয়তীর অনুমতি নিয়ে ও শুধু সৌমাভর বিছানার একটা চাদর আর সৌমাভর একটা গায়ে দেওয়ার চাদর ব্যাগে ভরে নিল। তার পরে রান্নাঘরে বুড়ির সঙ্গে হাত মিলিয়ে রান্না করা, দুপুরে ছেলেমেয়েকে পাশে বসিয়ে খাওয়াল, নিজেও খেল। সবার সঙ্গে গল্পও করল। কিন্তু আজও ওর খাওয়ার পরিমাণ দেখে মনটা খুঁতখুঁত করল জয়তীর। এত কম খেলে ও যে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়বে, সেটা নিয়ে ওর সন্দেহ নেই। ও ঠিক করল বিষয়টা নিয়ে সুভদ্রার সঙ্গে কথা বলবে আগে। আজ সবাই শুয়ে পড়লেও দুপুরে আর শুল না ঈশিতা। বরং সবাই শুয়ে পড়লে চলে এল সৌমাভর সমাধির পাশে। একসময় সেখানেই শুয়ে পড়ল। কিন্তু জয়তীর চিৎকারে উঠে এসে হাতমুখ ধুয়ে আবার গত কালের মতো মোমবাতি জ্বেলে অনেকক্ষণ প্রণাম করল। তার পর ঘরে এসে জয়তীকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘‘অনেক দিনের না পাওয়াটা যতটা সম্ভব পাওয়ার চেষ্টা করছি গো। তাই ওর পাশ থেকে উঠে আসতে ভাল লাগে না। তার মধ্যে কাল চলে যাব, এই শীতে লোকটা একা শুয়ে থাকবে....।’’ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সে সময় সুভদ্রা বা ছেলেমেয়ে কেউই ঘরে ছিল না। জয়তী বুঝল, বাইরে যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক, ঈশিতার আচরণে কিছু একটা অসঙ্গতি দেখা দিচ্ছে। কলকাতায় ফিরে এটা নিয়ে বসতে হবে বলে ঠিক করল।
সে দিন রাতেও মেয়ের পাশ থেকে নিঃশব্দে উঠে প্রায় সারারাত সৌমাভর সমাধির পাশে বসে বসে অনেকক্ষণ নিজের মনেই কথা বলে গেল ঈশিতা। ও জানতেও পারল না, পরপর দু’দিনই ওকে ওখানে প্রায় সারারাত বসে থাকতে দেখেছে একজন, বুড়ি। রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে ভোরে ওঠা বরাবরের অভ্যাস বুড়ির। তার মধ্যে ওর ঘর থেকে ওই জায়গাটা স্পষ্ট দেখা যায়। প্রথম দিন ঈশিতা আর সুভদ্রা যে ওখানে অনেক রাত অবধি বসে কান্নাকাটি করেছে, সেটা ও দেখেছিল। তার পরের দু’দিন ঈশিতা রাতে যত নিঃশব্দেই ঘর থেকে বেরোক, বুড়ি ঠিকই টের পেয়েছিল। তার পরে ভাল করে দেখে নিশ্চিত হয়েছিল।
|