Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(06-05-2025, 07:18 AM)বহুরূপী Wrote: যদিও পুরো পুরি পড়ি নি,তবে গল্প দুরন্ত গতিতে এগুচ্ছে, চালিয়ে যান।❤️
আমার একটা প্রশ্ন ছিল? আপনি স্মরণজিৎ চক্রবর্তী'র উপন্যাস পড়েছেন কখনো?
স্মরণজিতের একদম শুরুর দিকে গোটা চারেক উপন্যাস পড়েছিলাম। বাটা নগরের ফুটবল খেলা নিয়ে লেখা এবং আর কিছু। তারপর থেকে আর পড়া হয়নি। গত 5/6 বছর mainly Crime এর উপর লেখা, পুরোনো কিন্তু ইন্টারেস্টিং কিছু ক্রাইম And punishment জাতীয় লেখা,Case study, psychological লেখা অনেক পড়েছি, এখনও পড়ছি। তবে চোখের সমস্যা আর সময়ের অভাবে বহুদিন পড়া হয়নি অনেক কিছু। আপনি যে সত্যি সময় করে আমার লেখা পড়েছেন, আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(05-05-2025, 01:47 PM)prshma Wrote: উফফ গল্প পুরো জমে ক্ষীর। কি টান টান উত্তেজনা। ছোটন তুমি এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলে ???? কি উচ্চমানের লেখা। একটা সেক্স স্টোরি ফোরামেও যে যৎসামান্য সেক্স সিনের বর্ণনা যুক্ত একটা গল্প এতটা জনপ্রিয় হতে পারে সেটা মনে হয় তুমিই প্রথম করে দেখালে। তুমি প্রমাণ করে দিলে যে এই ফোরামের পাঠক/পাঠিকারা শুধুমাত্র সেক্স সিনের বর্ণনা পড়তে এখানে আসে না। একটা ভালো স্টোরিলাইন যুক্ত গল্প যদি এই ফোরামের পাঠক/পাঠিকারা পায় তাহলে তারা সেটাকে গ্রহণ করতে কোনরকম দ্বিধাবোধ করবে না তাতে সেক্স যত কমই থাক না কেন। তুমি তোমার রচিত দুটো গল্প দিয়ে এই ফোরামে গজিয়ে ওঠা অনেক মিথই ভাঙতে সক্ষম হয়েছো।
৯০ এর দশকের গল্প বলে তুমি যে ৮০-৮৫ কোটির দেশ বলেছো, ভুল করে ১৪০ কোটি বলে ফেলনি সেটা minute detailing এর প্রতি তোমার তীক্ষ্ণ নজরেরই প্রমাণ।
তবে এক জায়গায় তুমি উইথড্রল স্লিপে ৫০,০০০/- টাকা তোলার কথা লিখেছো কিন্তু ৯০ এর দশকে উইথড্রল স্লিপে এক দিনে যে কোন একটা ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে মাত্র ১,০০০/- টাকাই তোলা যেত। তার বেশি তুলতে হলে বেয়ারার চেক দিতে হত। তবে এতে ভেবো না যে আমি তোমার সমালোচনা করছি, আমার এটা চোখে পড়েছে তাই বললাম।
ভুল না করলে আর আমি কেন?  তবে আপনি আমায় প্রথম থেকেই উৎসাহ দিয়েছেন, তাই আমি কৃতজ্ঞ। ওটা সত্যিই বাজে ভুল।
•
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(07-05-2025, 12:57 AM)ray.rowdy Wrote: মন্ত্রমুগ্ধ!!! শুধুই... মন্ত্রমুগ্ধ!!!
 সত্যি ভালো লাগলো আপনার উৎসাহ।
•
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(01-05-2025, 12:35 PM)Nazia Binte Talukder Wrote: বাহ বেশ ভালোই লিখছো ছোটন।তোমার লেখা পরে নিজের পুরানো লেখগুলোর কত মনে পড়ছে ১০-১২ বছর কিছুই লিখিনা আর।গো এহেড।
•
Posts: 1,058
Threads: 6
Likes Received: 2,553 in 636 posts
Likes Given: 1,323
Joined: Apr 2024
Reputation:
765
(07-05-2025, 03:45 AM)Choton Wrote: স্মরণজিতের একদম শুরুর দিকে গোটা চারেক উপন্যাস পড়েছিলাম। বাটা নগরের ফুটবল খেলা নিয়ে লেখা এবং আর কিছু। তারপর থেকে আর পড়া হয়নি। গত 5/6 বছর mainly Crime এর উপর লেখা, পুরোনো কিন্তু ইন্টারেস্টিং কিছু ক্রাইম And punishment জাতীয় লেখা,Case study, psychological লেখা অনেক পড়েছি, এখনও পড়ছি। তবে চোখের সমস্যা আর সময়ের অভাবে বহুদিন পড়া হয়নি অনেক কিছু। আপনি যে সত্যি সময় করে আমার লেখা পড়েছেন, আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।
তবে কি আশা করা যায় আমরা কিছু Erotic Thriller টাইপ গল্প পাবো? যদিও আমি রোমান্টিক থ্রিলার ধাঁচের গল্প পড়ি বেশি।
তবে এই টাইপের লেখক-লেখিকা সব উধাও হয়ে গেছে। এই সব নিয়ে কেউ এখন লেখালেখি করছে না।আশা করি আপনি কিছু দেবেন গল্প প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের। ❤️
Posts: 787
Threads: 7
Likes Received: 872 in 481 posts
Likes Given: 4,231
Joined: Nov 2019
Reputation:
92
যথারীতি অনবদ্য। চালিয়ে যাও।
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(৩৪)
তারে দেহ গো আনি
আজ অফিসে একসঙ্গে পাঁচজনকে নানা টেবিলে ঘুরতে দেখে জয়তী প্রথমে বুঝতে পারেনি। পাশে এক সহকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছিল, ওরা নাকি সৌমাভস্যারের খোঁজ করছে। আগেও কয়েকবার এসেছিল, কেন কে জানে। বারবার বলা হয়েছে, সৌমাভস্যার এই অফিসে আর কাজ করেন না, তবু আসে! ভদ্রলোক বেশ বিরক্ত। তখনই একঝলক দেখে ঈশিতাকে চিনতে পারে ও। তা ছাড়া সৌমাভর অ্যালবামেও ঈশিতার ছবি দেখেছিল। পরে অবশ্য ঈশিতার সব ছবি ওর সঙ্গে বসেই কেটে কেটে একটা বাক্সে করে ওর হাত দিয়ে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাতে উপরে ঠিকানা লেখা এবং ভিতরে গুঞ্জাকে লেখা দু-তিন লাইনের একটা চিঠিও ছিল, সেটাও জয়তী জানে। ও ইচ্ছে করেই ঈশিতাদের সামনে দিয়ে তখন নিচে নামছিল। ভেবেছিল, ঈশিতা ওকে চিনতে না পারলে ও নিজেই পরিচয় দেবে। ওর শোনা দরকার, ঈশিতা বা তার বাড়ির লোক কী বলে। গুঞ্জাকে একঝলক দেখেই চিনেছিল। ঈশিতার চেয়েও যেন বেশি সুন্দরী, গায়ের রংটা একেবারে গোলাপী। চোখমুখে একটা আশ্চর্য সরলতা। ভারী মায়া মাখানো। ওদের বিকেলে ওর ফ্ল্যাটে আসতে বলে উপরে গিয়ে সোজা ফোন করল সৌমাভর অফিসে। পেল না। একঘন্টা পরে সৌমাভ পাল্টা ফোন করলে ওকে বলল, ‘‘ঈশিতারা তোমার খোঁজে এই অফিসে এসেছে। আগেও নাকি কয়েক বার এসেছিল। তখন আমি ছিলাম না বা জানতে পারিনি। আজ ওদের আমার ফ্ল্যাটে ডেকেছি বিকেলে। আমি ৫টায় ঢুকব, ওরা হয়তো পিছন পিছনই ঢুকবে। তুমি পাঁচটা ১০-১৫ নাগাদ আমাকে ফোন করবে। আমি রং নম্বর বলে রিসিভারটা নামিয়ে রাখব। জিজ্ঞাসা করলে বলব, কথার সময় যাতে ডিস্টার্ব না হয়, তাই ক্রেডেলে রাখব না। তুমি শুনো সব কথা, আমি কি বলি, সেটাও শুনো। আমি কোনও ভুল বললে পরে বুঝিয়ে বোলো। তার পর সব ঠিক কোরো।’’ সৌমাভ হাহা করে হেসে উঠে বলল, ‘‘যথা আজ্ঞা দেবী’, বলে ফোনটা রেখে দিল।
বিকেল হতেই আকাশ মেঘে ঢাকল। জয়তী একটু তাড়াতাড়ি নীচে নেমে একগাদা খাবার কিনল। আরও কয়েকটা টুকিটাকি জিনিস কিনে ফ্ল্যাটের নিচে পৌঁছে দেখল, ছয়জনই হাজির। ও দিকে মেঘ আরও ঘন হয়েছে, যখন তখন বৃষ্টি নামবে। দ্রুত ওদের নিয়ে উপরে উঠল। ফ্ল্যাটের একের পর এক দরজা খোলা দেখে ঈশিতার মেজদি বলেই ফেললেন, ‘‘বাবা, এত সিকিউরিটি?’’ জয়তী মুচকি হেসে বলল, ‘‘একে একা থাকি, বদ লোকের তো অভাব নেই। তা ছাড়া উটকো লোক কেউ এলে যাতে সহজে ঢুকতে না পারে, সেই জন্য আইহোলও লাগিয়েছি। বাড়িতে ফালতু লোক ঢুকতে দিই না। অপছন্দের কেউ জোর করে ঢুকতে এলে লাথি মেরে বের করে দেব, এটুকু মনের জোর আছে। তাতেও না হলে চেঁচিয়ে পাড়া জাগিয়ে দেব না! যাক, আপনারা আসুন, আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসছি।’’ জয়তীর কথাগুলো শুনে ঈশিতার দুই দিদিই ওর মুখের দিকে তাকাল। ঈশিতা মাথা নামিয়ে নিল। বড়দি অপছন্দের লোককে লাথি মেরে বের করে দেওয়ার কথা যে সেদিন রাতে বলেছিল, সেটা মনে পড়ল তিন জনেরই।
জয়তী ঘরে ঢুকে আগে ওদের সবাইকে খাবার টেবিলে বসিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে চা বসাল। চা হয়ে গেলে ঢেলে সবাইকে কাপে করে দিয়ে বলল, ‘‘এবার একটু বসুন, আমি চট করে ফ্রেস হয়ে নিই।’’ বলে পাশের ঘরে গেল। এর মধ্যে বৃষ্টি নেমে গেছে তুমুল জোরে। সঙ্গে ঝড়। দ্রুত বাইরের দিকের জানলাগুলো বন্ধ করে শোয়ার ঘরে গিয়ে শাড়ি-শায়া খুলতে খুলতে জয়তী সুরেলা গলায় গেয়ে উঠল, ‘‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়, এমন দিনে মন খোলা যায়—’’ গাইতে গাইতেই বাথরুমে ঢুকে হাত-পা ধুল। তবে গান থামায়নি। বাথরুম থেকে যখন ঘরে ঢুকল, তখন ও গাইছে, ‘‘দু’জনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখী, আকাশে জল ঝরে অনিবার—’’। ঈশিতার মনে পড়ল, আন্দামানে থাকার সময় একদিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছিল সন্ধ্যায়। সেদিন সৌমাভ অফিস থেকে ফিরে চা খেতে খেতে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কয়েকটা গান গাইছিল নিজের মতো করে। একসময় ও আর সৌমাভ দু’জনে মিলে এই গানটা গেয়েছিল খুব মজা করে। ঈশিতা একটা লাইন, সৌমাভ তার পরের লাইনটা— এই করে গেয়ে শেষ অংশটুকু দু’জনে একসঙ্গে গলা মিলিয়েছিল। তার পরে ভেসে গিয়েছিল চরম আদরে। আজ এমন পরিবেশে আবার সেই একই গান এবার জয়তীর গলায় শুনে চোখ জলে ভরে গেল ঈশিতার। কী সব আনন্দের দিন ও নিজেই হারিয়ে ফেলেছে নিজের দোষে! এর মধ্যেই বাইরের বসার ঘরে ফোনটা বাজল। জয়তী মুচকি হেসে গান থামিয়ে বেরিয়ে এসে দ্রুত ফোনটা ধরল। ওপাশে সৌমাভর গলা শুনেই গম্ভীর ভাবে রং নম্বর বলে ফোনের রিসিভারটা পাশে নামিয়ে রাখল। তার পর নিজেই সাফাই দিল, ‘‘কথার মধ্যে ফোন এলে বিরক্ত লাগে। কে না কে উটকো লোক...মহা জ্বালা।’’ বলে নিজের চা নিয়ে এসে বসে বলল, ‘‘হ্যাঁ, বল। তোরা সৌমাভদার খোঁজ করছিলি কেন?’’
ঈশিতা জানাল, এক বছর আগে ডিসেম্বরে ওর বিয়ে হয় সৌমাভর সঙ্গে। সৌমাভ তখন আন্দামানে। হঠাৎ করেই বিয়েটা ঠিক হয়, তাই রেজিস্ট্রিও হয়নি ওদের। একমাস পরে ওরা কলকাতায় ফেরে। বেলেঘাটায় একটা বড় ফ্ল্যাটও ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু দেখা যায়, ও ততদিনে প্রেগনেন্ট। তার উপর সামনে উচ্চমাধ্যমিক। তাই ও বাপের বাড়ি চলে আসে। তার পর পেটে যমজ বাচ্চা ছিল, ডেলিভারি এবং তার পরেও বেশ কয়েক মাস ও বাপের বাড়িতেই থেকে যায়। এর ফলে সৌমাভর সঙ্গে ওর একটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়। গত নভেম্বরে ও বেলেঘাটার বাসায় ফিরলেও কলেজের নানা অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিল, তাই ওদের বিবাহবার্ষিকীটা পালন হয়নি। সেটা যেদিন করা হবে বলে ঠিক হল, সেদিন বেলার দিকে সৌমাভ অফিসে যাওয়ার পরে ওদের কলেজের এক বন্ধু এসেছিল ওর কাছে। তার সঙ্গে বসার ঘরে ও কথা বলছিল, বাচ্চাদুটো বাইরের ঘরে কটে শোয়ানো ছিল। সৌমাভ একসময় ঘরে ঢুকে এটা নিয়ে ভুল বুঝে রেগেমেগে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে চলে গেছে। বহু খুঁজেও তার সন্ধান মেলেনি। এটুকু বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। ওর দুই দিদিও চোখে হাত চাপা দিলেন। শুধু গুঞ্জা অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
সব দেখে এবং ঈশিতার কথাগুলো শুনে রাগে গা জ্বলে গেল জয়তীর। সব হারিয়েও এখনও এত মিথ্যে কথা বলছে? এখনও নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে? সৌমাভ ভুল বুঝে চলে গেছে? ও আর নিজেকে সামলাতে পারল না। চায়ের কাপটা নামিয়ে গলাটা শক্ত করে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘এবার তোদের কয়েকটা কথা বলি। তোর বা তোদের পছন্দ না হলে চলে যাস, দরজাটা পিছন দিকে।’’ ঈশিতা আর ওর দুই দিদি হাঁহাঁ করে কিছু বলতে যেতেই হাত তুলে তাদের থামিয়ে দুই জামাইবাবুর দিকে তাকিয়ে গুঞ্জাকে দেখিয়ে বলল, ‘‘ও খুব ছোট। আপনারা দু’জন ওকে নিয়ে পাশের ঘরে চলে যান বা একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়ান। বৃষ্টি থেমে গেছে, সমস্যা হবে না।’’ ওর কথার ভঙ্গিতে চমকে উঠল সবাই। এই এত হাসিখুশি, গান গাওয়া মেয়েটার এত বদল! ওরা তিন জন ঘর ছেড়ে বাইরে যেতেই জয়তী সেই একই স্বরে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘তুই আগাগোড়া আমাকে একটা ডাঁহা মিথ্যে গল্প বললি। এবার আমি তোকে বলি। সৌমাভদা সেদিন কোনও ভুল বোঝেনি, ভুল করেওনি।’’ তার পরেই দুই দিদির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আপনারা সেদিন কখন পৌঁছেছিলেন বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে?’’ তিন জনেই তখন হতভম্ব। বুঝতে পারছে, জয়তী অনেক কিছু জানে। দুই দিদিই আমতা আমতা করে বলল, ‘‘ওই সাড়ে তিনটে হবে।’’ জয়তী কিছুক্ষণ কর গুনে বলল, ‘‘আপনারা কি সেদিন সৌমাভদার ফোন পেয়ে গিয়েছিলেন ওই সময়?’’ দুই দিদিই সেই একই রকম হতভম্ব অবস্থায় বলল, ‘‘হ্যাঁ, একটা দশ-পনেরো নাগাদ ফোন করে তাড়াতাড়ি বেলেঘাটার বাড়িতে যেতে বলেছিল।’’ এবার জয়তী বলতে শুরু করল, ‘‘তার মানে সকাল দশটায় সৌমাভদা অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিকেল অন্তত তিনটে— মানে প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে সেদিন তুই আমাদের কলেজের সবচেয়ে নোংরা ছেলেটার সঙ্গে সেক্স করেছিলি এবং সেটাও খুব নোংরা ভাবে। দুটো চার মাসের শিশুকে বেডরুমের বাইরে অনাথের মতো ফেলে রেখে ভিতরের ঘরে সৌমাভদার বিছানাতেই এমন ভাবে সেক্স করেছিস, যা দরজা থেকে শোনা গিয়েছিল! সেটা না বলে তুই আমার কাছে মিথ্যে কথা বললি ফালতু ফালতু। সেদিন কলকাতা ছেড়ে দুটো খুদেকে নিয়ে ভুবনেশ্বরে গিয়ে পরদিন সকালে সৌমাভদা আমার কোয়ার্টারে পৌঁছয়। দুপুরে খাওয়ার পরে চেপে ধরাতে তোর পুরো গল্পটা শুনি। আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি প্রথমে। পরে রাহুল দুবে নামটা শুনে বুঝি, একটুও মিথ্যে বলছে না। আমি মাঝেমাঝেই কলকাতায় আসতাম। তখনই কলেজে এবং আরও নানা জায়গায় ওর কীর্তিকলাপের খোঁজ পেয়েছি। ও যে সেদিন তোর সঙ্গে কী করেছিল, সেটাও এবারে এসে জানলাম, কেউ কেউ জানে। আমি নিজে টানা তিন বছর কলেজে জিএস ছিলাম, তার পরেও বহুদিন, মানে বিয়ের পরে উড়িষ্যা যাওয়া অবধি কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ইউনিয়নের সুবাদে। ফলে সবই খবর পাই। তুই সেদিন কতটা নোংরামি করছিলি ওই অতক্ষণ ধরে, সেটা আমি বলতে পারব না। আমি সৌমাভদার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী। আমার কাছে বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিল সৌমাভদা। সব কথা বলতেও পারেনি। বলেওনি। তবে এমনি অনেক কথা বলেছিল। তোর এক বছরের বিয়ে বিয়ে নাটকের গল্প। আরও অনেক কিছু। আর এখন তোরা মিথ্যে গল্প ফেঁদে সৌমাভদার খোঁজ পেতে চাইছিস? শোন, আমার স্বামী জয়ন্ত আর সৌমাভদা তিন বছর দিল্লিতে একঘরে ছিল। জয়ন্তর কাছেই শুনেছিলাম, ওই অল্প বয়সে অত ভাল কাজ করার সুবাদে ও তখন ডিপার্টমেন্টে সবার কাছে খুব পপুলার ছিল। তার উপর ওই রকম ঝকঝকে, সুন্দর স্বাস্থ্য, হাসি-মজা, গান নিয়ে মেতে থাকা একটা ইয়ং ছেলে। মেয়েদের সঙ্গে বেশি মিশতে পারত না, মুখচোরা বলে। বহু মেয়ে তো বটেই, অনেকের বাবা-মা-দাদা-দিদিরা ওর সঙ্গে বাড়ির মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য এমনকি জয়ন্তকেও হাতেপায়ে ধরেছে কতবার। এমনকি অনেক বিবাহিতা মহিলাও ওকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল বলে ট্রান্সফার নিয়ে পালিয়ে আন্দামানে চলে গিয়েছিল। এ সবই আমাকে জয়ন্ত বলত আর হাসত। আমি জয়ন্তর মুখ থেকে গল্প শুনে সৌমাভদাকে চিনেছিলাম। পরে আমার কোয়ার্টারে গিয়ে তিন দিন ছিল, তখন আরও বেশি করে চিনেছিলাম। অমন খাঁটি হীরে হয় না। ছোটবেলায় মা এবং চাকরি পাওয়ার পরপরই বাবাকে হারানো সৌমাভদার কেউ ছিল না। এমনকি বাবার শ্রাদ্ধও করেছিল দিল্লি কালীবাড়িতে, জয়ন্ত ওর সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ করেছিল। যে লোকটাকে স্বামী হিসেবে পাওয়া বহু মেয়ের স্বপ্ন ছিল, তাকে তুই স্রেফ ইউজ করেছিস ঈশিতা! একটাও মিথ্যে বলবি না, নিজের জালে নিজেই জড়াবি। নিজের আপনজন বলতে কেউ ছিল না বলে সৌমাভদা তোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল, আর তুই? তুই রাহুল দুবেকে নিয়ে শুতে চেয়েছিলি! এটাই তোদের মধ্যেকার সবচেয়ে বড় ফারাক। তুই বাপের বাড়ি যাওয়ার আগেপরে একবারও সৌমাভদার কথাটা চিন্তাই করিসনি। নিজের স্বার্থ ভেবে গিয়েছিস। আজ যাকে স্বামী বলে ক্লেম করছিস, সে একা একা থাকবে কেমন করে, সে কেমন আছে, কী খায়, তার শরীর কেন ভাঙছে, এ সব দেখার মানসিকতাই তোর ছিল না। কেন তোর সঙ্গে কম কথা বলে, কেন তোর কাছে শুতে চায় না, কেন তোকে কাছে টানে না, কেন তোর সামনে বা তোকে সঙ্গে নিয়ে আগের মতো গান করে না, এ সব নিয়ে ভাববি কখন? তোর তো সব জুড়ে তখন রাহুল দুবের সঙ্গে শোয়ার চিন্তা! তুই ভেবেছিলি, আমি সুন্দরী, তাই যা করব, সবাই সেটা মেনে নেবে। তুই তো বটেই, গুঞ্জা বাদে তোদের ফ্যামিলির সবাই সৌমাভদাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড বলে ধরে নিয়েছিলি ঈশিতা। তাই না মনে রেখেছিলি তার জন্মদিন, না মনে রেখেছিলি নিজেদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী, যেটা যে কোনও মেয়ের কাছে বিয়ের পরে সবচেয়ে স্মরণীয় দিন। এমনকি এ বছর জানুয়ারিতে যে তোর দুই ছেলেমেয়ের মুখেভাত হয়ে গেছে এবং সেটাও এই জায়গাটা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে, সেটাও তো জানিস না! জানতে পারলে হয়তো আবার সেখানে গিয়ে মিথ্যে বলে নাটক করতিস কোনও। আর জানবি কি করে? শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না, অনেক কষ্ট করতে হয় একটা মা-কে। তাই এখন সৌমাভকে ভালবাসি বলে ফালতু নাটক করিস না, ওই রাহুলকেই পারলে বিয়ে কর। সৌমাভদার চরিত্র শুধু না, মানসিকতাও ইস্পাতের মতো। ও সে দিন একবার যখন সব নিজের চোখে দেখে, কানে শুনে অতক্ষণ সময় নিয়ে ওই বাড়ি থেকে নিজের সব কিছু, এমনকি কুট্টি-মুট্টিকেও নিয়ে চলে ছেড়ে গেছে, তখন মনে করিস না তুই আর কোনও দিন ওকে পাবি।’’ কথাগুলো বলতে বলতে হাঁপাচ্ছিল জয়তী। রাগে ওর শরীর তখনও জ্বলছে। একটু জল খেয়ে বলল, ‘‘তোদের বাড়ির লোকেরাও ওকে কোনও দিন সেই সম্মানটাই দেয়নি, যেটা ওর প্রাপ্য ছিল। একমাত্র গুঞ্জা, ওই ছোট্ট মেয়েটা ওকে বুঝত। গুঞ্জাকে শুধু বোন নয়, নিজের বন্ধু হিসেবে দেখত সৌমাভদা। তাই এমন অনেক কথা তার সঙ্গে শেয়ার করত, যেগুলো স্ত্রী এবং বন্ধু হিসেবে তোর সঙ্গে শেয়ার করার কথা ছিল। তোর এত উপেক্ষা, অবহেলার পরেও শুধু তোর সম্মানের দিকে তাকিয়ে, তোকে অন্ধের মতো ভালবেসে, কুট্টি-মুট্টি হওয়ার পরে তাদের দিকে তাকিয়ে একবুক অভিমান আর তোর উপেক্ষা সহ্য করেও সব মেনে নিয়েছিল। যদিও তোর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল তুই যেদিন ওকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়িতে প্রথম রাত কাটিয়েছিলি। তার ঠিক আগে আগে কী একটা ঘটনা ঘটেছিল, সেটাতেও সৌমাভদা খুব আঘাত পেয়েছিল তোর কথার ভঙ্গিতে। সেটা আমাকে বলেনি অবশ্য। আর তুই নাকি ওর বউ বলে নিজেকে দাবি করিস? ছ্যাঃ। ও যে গান গাইত, তার মানে কোনওদিন বোঝার চেষ্টা করেছিস ঈশিতা? জানতে চেয়েছিলি কোনওদিন বুকে মাথা রেখে, কেন গাইলে তুমি এমন গান? কী হয়েছে তোমার, আমায় বলো? কোনওদিন করিসনি। পাত্তাই দিসনি। এমনকি তোর সামনে ও যে গাইত না আর, সেটা নিয়ে কোনও দিন জানতে চেয়েছিলি? চ্যালেঞ্জ করতে পারি, তোর মত মেয়ে সেটা করেনি। ওই যে বললাম, তুই সৌমাভদাকে একটা ফালতু এবং টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছিলি। তোর হয়তো অঙ্ক কষাই ছিল, পাশটাশ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ওকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কারও গলায় ঝুলে পড়বি। তাই আন্দামান থেকে ফেরার পরেই নিজের স্বরূপ দেখাতে শুরু করেছিলি। সৌমাভদা খুব বোকা, তাই অতদিন লেগেছিল তোকে চিনতে। অন্য যে কোনও লোক হলে প্রথম তিন মাসেই তোকে চিনে ফেলত।’’ কথা শেষ করে এ বারে টেবিলে মাথা রেখে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল জয়তী।
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(৩৫)
ব্যথায় কথায় দিন চলে যায়
ঈশিতা বুঝতে পারছে, সৌমাভ বহু মাস ধরে ওর বদল লক্ষ্য করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল একটু একটু করে। ও অনেক দেরিতে বুঝলেও সৌমাভকে কাছে টানার চেষ্টা বাপের বাড়িতে থাকার সময় তো বটেই, বেলেঘাটার বাসায় ফিরেও করেনি। অথচ রোজ প্রতিজ্ঞা করত নিজের কাছে। সেই সব প্রতিজ্ঞাগুলো কত ফাঁকা এবং অসাড় ছিল, আজ আবার জয়তীদি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে জয়তীদিকে বা ওর ছোট বোন হিসেবে গুঞ্জাকেও এমন বহু মনের কথা বলেছে, যেগুলো আসলে স্ত্রী হিসেবে একমাত্র ওকেই বলার ছিল সৌমাভর। কিন্তু ও শুনতেই চায়নি। ও আসলে সৌমাভকে বোঝেইনি কোনও দিন, সেটা এখন ফের ওর নিজের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল। ওর ভালবাসার ফাঁকিটা সেদিন রাহুলের সঙ্গে শোয়ার পরের নানা ঘটনায় ধরা পড়েছিল সবার কাছে, আজ জয়তীদি ফের ওকে সবার সামনে প্রায় ল্যাংটো করে দিল! ঈশিতা মাথা তুলতেই পারছিল না। মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছিল। ওর দুই দিদিরও অবস্থা একই।
নিজেকে একটু সামলে জয়তী বলল, ‘‘নভেম্বরের ফার্স্ট উইকে জয়ন্ত খুন হয়। আমি তখন পাগলের মতো সৌমাভদার খোঁজ করেছি। জানতাম, জয়ন্তর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল সৌমাভদা। আন্দামানে চিঠি পাঠিয়েছি, সেটা ফেরত এসেছে। দিল্লিতে যোগাযোগ করেও পাইনি। তখন দিল্লি অফিসে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলাম, যদি কোনও ভাবে ওকে খবর দেওয়া যায়। ঈশিতা, আমার বয়স বেশি না। তোর থেকে কিছুটা বড়। সদ্য স্বামীকে হারিয়েছি। স্বামীর আদর-ভালবাসা সবই পেয়েছি। ভরা যৌবন। সৌমাভদাকে দেখে আমারও প্রচন্ড লোভ হয়েছিল, ইচ্ছে হয়েছিল কাছে পেতে। সব খুলে তার সামনেও গেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। বুঝেছিলাম, ওই পাথরে দাগ টানা যাবে না। তা ছাড়া তোকে কতটা ভালবাসত বা এখনও ভালবাসে, সেটা ওই তিন দিনে রাতের দিকে সৌমাভদার অজস্র গান শুনে বুঝতে পেরেছিলাম। আমি সম্পূর্ণ বাইরের লোক হয়ে যেটা বুঝেছিলাম, সেটা তুই কিন্তু কোনওদিনই বুঝিসনি? বোঝার চেষ্টাই করিসনি আসলে। আর তুই দাবি করছিস, তুই নাকি তার স্ত্রী? আমার আচরণে ওকে পাওয়ার জন্য অস্থিরতা বুঝে সৌমাভদা নিজের প্রভাব খাটিয়ে আমাকে তড়িঘড়ি কলকাতায় পাঠিয়ে দিল। অথচ আমার চাকরি পাওয়ার চিঠি এসেছিল বারিপদায়। সৌমাভদা কলকাতায় আমাকে পাঠিয়ে দেয়, কারণ এই শহরটা আমার কাছে নিরাপদ, আমার নিজের শহর। বহু চেনাজানা লোক আছে। এত ভাবতে পারে লোকটা! সৌমাভদা দেবতা রে, অন্তত আমার কাছে। যে লোকটা কোনও দিন কোনও নেশা করেনি, সে এখন দিনে তিন-চার প্যাকেট সিগারেট খায়! মদও ধরেছে। ঠিকমতো খায় না, ঘুমোয় কম। সারাদিন কুট্টি-মুট্টিকে নিয়ে চিন্তা করে। আমি লোকটার সর্বনাশ টের পেয়েছি, তাই বলে ফেললাম। যদিও এ সবে তোর কিছুই যায় আসে না, তবু।’’ তার পরেই একটা কথা বলল জয়তী, ‘‘একটা কথা বলছি, অন্য ভাবে নিস না। জয়ন্তর কাছে শুনতাম, ও জঙ্গল, গাছ, মাটি খুব ভাল করে চিনত। সে কারণে বহু সময় জঙ্গলে সার্ভে করতে গিয়ে গাছের নড়াচড়া, মাটির গন্ধ, বাতাস শুঁকে বিপদের গন্ধও টের পেত। অনেকবারই এমন ঘটনা নাকি ঘটেছে। জয়ন্ত নিজে কতবার তার সাক্ষী। আমার শুনে বিশ্বাস হত না। কিন্তু তোর ঘটনা শোনার পরে অনেক ভেবে একদিন মনে হয়েছিল, ও হয়তো তোদের মধ্যেকার ভাঙনের গন্ধটা টের পেয়েছিল। না হলে সেদিনই কেন ফাইল ফেলে যাবে, কেন তোকে না ডেকে নিজেই গেট খুলে ঘরে ঢুকবে, কেনই বা তার আগের দিন অবধি তোকে ঠিক মতো ছোঁবেও না, কেনই বা তোর বাপের বাড়িতে কি একটা ঘটনার পরে তোর সঙ্গে ওই বাড়িতে বহু দিন এক ঘরে থাকলেও এক বিছানায় শোয়া তো দূর, বিছানাটাও নাকি ছুঁত না, কেনই বা নিজের শরীর খারাপের কথাটাও তোর কাছে গোপন রাখবে— অনেক প্রশ্ন জানিস। ও মনে হয় গন্ধ পেয়েছিল তুই ওকে ঠকাতে পারিস। তাই নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছিল।’’ কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশ কিছুক্ষণ নীরবে কাঁদল। গোটা ঘরের বাকি তিনটে লোক যেন পাথর তখন। এক সময় উঠে চোখ মুছে বাইরে দাঁড়ানো ঈশিতার দুই জামাইবাবু এবং গুঞ্জাকে নিজে হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়ে আবার চা করে আনল।
সবাইকে চা-মিষ্টি দিয়ে নিজে ঈশিতার পিছনে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘‘কিছু মনে করিস না রে। তুই আমার ছোট বোনের মতো, অনেক কথা বলে ফেলেছি। রাগ-অভিমান সব এক হয়ে গিয়েছিল। ওই লোকটা, সত্যি করেই একটা ভগবান। ভগবানকে সবাই পায় না, অনেকে পেয়েও হারিয়ে ফেলে। তুই হারিয়ে ফেলেছিস। নিজের দোষে, নিজের শরীরের খিদেয়, নিজের কামনায় অন্ধ হয়ে। জানি তোর খারাপ লাগছে, কিন্তু লোকটাকে মনে হয় না তুই আর কখনও খুঁজে পাবি। পেলেও চিনতেও পারবি না। এমনকি নিজের ছেলেমেয়েদেরও চিনতে পারবি না হয়তো কোনও দিন। আজ আমার কথাগুলো তোর বা তোদের সবার খারাপ লেগেছে জানি, কিন্তু বিশ্বাস কর, এগুলো তোর জানা উচিত ছিল। আমি কুট্টি-মুট্টিকে নিয়ে সারাদিন থাকতাম, খেলা করতাম। দেখতাম সৌমাভদা একা মনে চুপ করে বসে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে। ভাল করে খেতও না। কত রাত অবধি জেগে থেকে একা একা কত গান গাইত। অথচ জয়ন্তর কাছে তো শুনতাম, কী ভীষণ মজা করত, হাসিঠাট্টা করা ছেলে। খুব কষ্ট পেয়েছি রে, তাই তোকে এ সব বললাম। মনে করিস না কিছু,’’ ওর চোখের জলে তখন ঈশিতার কাঁধ ভিজে গেছে। নিজেকে একটু সামলে জয়তী বলল, ‘‘প্রার্থনা করি, তুই যেন খুব শিগগিরই ওদের খুঁজে পাস। যে ভুল করেছিস, তার জন্য যেন আর কষ্ট পেতে না হয় তোদের। বিশেষ করে কুট্টি-মুট্টির জন্য খুব কষ্ট হয় রে। ওইটুকু দুটো শিশু, নিজেদের মাকেই পায় না!’’ বলে আবার কেঁদে ফেলল।
এতক্ষণ ধরে নীরব হয়ে থাকা ঈশিতার মেজ জামাইবাবু এ বার বললেন, ‘‘কিছু মনে করবেন না, আপনি অনেক কিছু জানেন। কিন্তু ও কোথায় আছে এখন বলতে পারেন? দরকারে আমরা সবাই যাব। ঈশিতা ভুল করেছে, অন্যায় করেছে। সব ঠিক। আমরাও করেছি। আমরা সবাই মিলে ক্ষমা চেয়ে যে করেই হোক ওদের ফিরিয়ে আনব।’’ জয়তী একটু হেসে মাথা নেড়ে বলল, ‘‘কোথায় গেছে জানি না। বলেনি। হয়তো ভয় ছিল, যদি আপনাদের বলে দিই। আর সবচেয়ে বড় কথা, ওর যোগাযোগ অনেক দূর। আমার মতো সাধারণ একজন ক্লার্কের পক্ষে সেটা জানা কঠিন। এমনকি আমাদের বড়বাবু অবধি জানেন না। কারণ ওর সবটাই কন্ট্রোল করে দিল্লি। ও যেখানে চাইবে, একঘন্টার মধ্যে চলে যেতে পারবে, এতটাই ওর ক্ষমতা।’’
বারবার সৌমাভ এবং কুট্টি-মুট্টির কথা শুনতে শুনতে নীরবে কেঁদেই যাচ্ছিল ঈশিতা। ও জানে, জয়তীদি যা বলেছে একটুও মিথ্যে না, ভুল তো নয়ই। ও বুঝতে পারছে, কুট্টি-মুট্টিকে আর কোনও দিন কোলে নেওয়া তো দূর, ও দেখলেও চিনতে পারবে না। নিজের সন্তানদেরই ও আর কোনওদিন কাছে পাবে না হয়তো। সৌমাভকেও কি পাবে? সৌমাভ সিগারেট খাচ্ছে? তা-ও এতগুলো করে? জয়তীর কথাগুলো ওর ভিতরটা তখন তোলপাড় করে দিচ্ছে। ও আর পারল না, চেয়ারে বসে বসেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
ঈশিতার এই অবস্থা দেখে চমকে গেল জয়তী। সৌমাভর কাছে অ্যালবামে দেখা ছবির থেকে অনেক বদলে গেছে ঈশিতা। চেহারা খারাপ হয়েছে, পোশাকও অতি সাধারণ বলতে যা বোঝায় তাই। শুধু কপালে সিঁদুর আর হাতে শাঁখা ছাড়া শরীরে একটা গয়নাও নেই। ও তাড়াতাড়ি করে চোখেমুখে জল ছিটিয়ে ঈশিতার জ্ঞান ফেরাল। জ্ঞান ফিরতেই আচমকাই মাটিতে আছড়ে পড়ে জয়তীর পা ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ঈশিতা। বলতে লাগল, ‘‘একবার তুমি আমাকে ওদের কাছে নিয়ে চল জয়তীদি, যা বলবে করব। আমি অন্যায় করেছি, ভুল করেছি। কিন্তু এ ভাবে আমার সব শেষ হলে আমি বাঁচব কী নিয়ে?’’ কথাগুলো বলতে বলতে হাঁফাতে লাগল ঈশিতা। জয়তীরও কান্না পেল খুব। ও নিচু হয়ে বসে ঈশিতাকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলল, ‘‘তোর ভুলটা এত বড় আর সেটা লোকটার এমন জায়গায় আঘাত করেছে যে, সেটা আর বোধহয় ঠিক হবে না রে। আমি তোকে মিথ্যে আশা দিচ্ছি না, তবু বলছি, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব সৌমাভদাকে খুঁজে পেতে। তবে আজ-কাল-পরশু নয়, হয়তো দু’তিন বছর বা তারও অনেক বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তবে চেষ্টা করব রে। ততদিন তোকে অপেক্ষা করতে হবে, ওটাই তোর প্রায়শ্চিত্ত। কী করবি বল? সবচেয়ে বড় কথা কি জানিস, তুই কলকাতায় ফিরে অবধি শুধু ওকে দিনের পর দিন উপেক্ষা করিসনি, স্ত্রী হিসেবে ওর প্রতি কোনও দায়িত্বই পালন করিসনি একদিনের জন্যও। অথচ তুই সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে ভাল করে জানতিস, তুই ছাড়া লোকটার নিজের কেউ নেই। একটা লোকও না। তা-ও কুট্টি-মুট্টি হওয়ার পরে তোকে নিয়ে তিনজন ছিলি ওর প্রাণ। সেই তুই সব জেনেও তার স্ত্রীর দায়িত্ব পালন তো দূর, বন্ধুর দায়িত্বও পালন করিসনি। এমনকি ও অফিস বেড়িয়ে যাওয়ার পরেই রাহুলকে ঘরে ডেকে এত ভয়ঙ্কর নোংরামি করেছিস এবং সেটাও এমন কুৎসিৎ ভাবে, যে সে ধাক্কা সামলানো যে কারও পক্ষেই অসম্ভব। তোর নিজের ক্ষেত্রে হলেও তুই এই কাজই করতিস। তবু বাচ্চাদুটোর জন্যই আমি চেষ্টা করব। জানি না সৌমাভদার সঙ্গে যদি দেখা হয়ও, আমার কথা শুনবে কি না বা রাখবে কিনা। আমি তার বন্ধুর স্ত্রী, সেই বন্ধু আবার নিজেই মারা গেছে। ফলে আমার তো তার উপরে কোনও জোরই নেই। তবু তোকে বলছি, আমি চেষ্টা করব শুধু কুট্টি-মুট্টির জন্যই। আর একটা কথা, এর মাঝে যদি বিয়ে করিস, আমাকে একটি বার জানাস। তা হলে আর এই সব করার দরকার হবে না।’’ জয়তীর মুখে বিয়ের কথা শুনে ফের হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল ঈশিতা। বলল, ‘‘আমার সব কিছুর দিব্যি দিয়ে বলছি, আমি সারাজীবন ওদের জন্য অপেক্ষা করব। আমি সব কিছু করতে রাজি। যা বলবে, সব। শুধু একবার ওদের এনে দাও।’’ জয়তী অনেক কষ্টে ওকে ঠান্ডা করে খোঁজ নেব বলে আশ্বাস দিয়ে ওদের বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে সবাইকে বাড়ি পাঠাল।
প্রায় দুঘন্টার বেশি সময় ধরে অফিসের ফোন থেকে করা এসটিডি কলটা ধরে রেখেছিল সৌমাভ। ঈশিতারা বেড়িয়ে যেতেই দরজা ভাল করে আটকে এ বারে রিসিভারটা তুলে প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠল জয়তী। কেঁদেও ফেলল। সৌমাভকে বলল, ‘‘শুনলে সব? বিশ্বাস করো, এই ঈশিতাকে দেখলে তুমিও চিনতে পারবে না! কঙ্কাল হয়ে গেছে ও! সাজপোশাক, চোখমুখ— সব কিছু দেখে ওকে চেনা কঠিন। এটা ঠিক ও অন্যায় করেছে, প্রথমে আমাকে মিথ্যেও বলেছে। কিন্তু এতবড় শাস্তিটা এ বার তুমি ভাবো প্লিজ সৌমদা, প্লিজ’’, বলতে বলতে কেঁদে ফেলল জয়তী।
ওপ্রান্তে বেশ কিছুক্ষণ পরে কথা বলল সৌমাভ। ওর গলাটা ধরা ধরা। শুধু বলল, ‘‘রাখছি। পরে কথা হবে। কাল সন্ধ্যায় ফোন করব।’’ জয়তী বুঝল, এতক্ষণ ধরে বলা সব কথা এবং ঘটনা-কান্নাকাটি শুনে হয়তো নিজেও চোখের জল ফেলেছে সৌমাভ। ওর কি মনে হল, ঈশিতাদের বাড়ির নম্বরে ফোন করল। ফোন ধরল গুঞ্জা। ও হ্যালো বলতেই গুঞ্জা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তার পরে একটু সামলে ঈশিতাকে ডেকে দিল। জয়তী ওকে পরের দিন বিকেলে ওর ফ্ল্যাটে আসতে বলল। জয়তী ঠিক করে নিয়েছে, একবার শেষ চেষ্টা ও করবে।
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(৩৬)
তার দীপের আলো কে নিভালো
পরের দিন অফিস করে নীচে নেমে দেখল ঈশিতা সেই আগের দিনের জামাকাপড়েই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এককোনে। জয়তীর মনটা কেঁদে উঠল। ওর হাত ধরে আগের দিনের মতোই নিজের ফ্ল্যাটে এল। গোটা রাস্তায় ঈশিতা একটা কথাও বলল না। জয়তী আগে থেকেই খাবার আনিয়ে রেখেছিল। ঘরে বসিয়ে ওকে খাবার-চা দিয়ে নিজে ফ্রেস হয়ে বসে চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, ‘‘শোন, আমাকে আজ সৌমাভদা ফোন করতে পারে। সেই জন্যই তোকে ডেকে আনিয়েছি। বহু জনকে কাল রাতে ফোন করেছি, বলেছি আমার খুব দরকার। আমার মনে হয়, খবর পেলে ও ফোন করবে। একটা ট্রাই নি, আর কী করব। তুই চুপ করে বসবি, কোনও আওয়াজ করবি না। যদি বোঝে আমি তোকে পাশে বসিয়ে ফোন করছি, তা হলে কিন্তু আমার সত্যিকারের বিপদ হলেও ও আর বিশ্বাস করবে না। আর সৌমাভদা কী রকম লোক, সেটা তোকে বলি শোন।’’ বলে জয়তী কী ভাবে সৌমাভর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল, সেটা বলল। তার পর বলল, ‘‘তুই সত্যি করে বলত, সৌমাভদা কি সেক্স করতে পারে না? নাকি চাইত না?’’ ঈশিতা বলল, ‘‘খুব ভাল আদর করত গো, বিশ্বাস করো।’’ এই বারে জয়তী আরও রেগে গিয়ে বলল, ‘‘তা হলে কেন তুই সব ছেড়ে বাপের বাড়িতে মরতে পড়েছিলি? একদিনও মনে হয়নি, লোকটার কাছে যাই, আদর করি, আদর খাই? তাও এক-দু দিন নয়, টানা এগারো মাস! কেন যাসনি ওর কাছে? ওর আদরের থেকে রাহুলের সেক্স বেশি পছন্দের বলে? রাহুলের সঙ্গে সেক্স করবি বলে যেতি না ওর কাছে? এমনকি ছুঁতিসও না?’’ ঈশিতা কাঁদতে কাঁদতেই বলল, ‘‘বিশ্বাস কর, পরীক্ষাটা ভাল করে দিতে চেয়েছিলাম। তার মধ্যে পেটে দুটো বাচ্চা। ওরা হওয়ার পরে যখন শরীর সারল, ততদিনে কলেজ খুলে গেছে। তার পর পুজো এল। তার পর কলেজে অনুষ্ঠান নিয়ে চাপ..... আমার অনেকবার মনে হত ওর কাছে যাই, আবার আগের মতো আদর করি, কিন্তু হয়ে উঠত না।’’ এই বার বিদ্রুপে মুখ বাঁকিয়ে জয়তী বলল, ‘‘তোর কাছে সব কিছু খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, শুধু যাকে স্বামী বলে দাবি করিস, সে বাদে! বাহ! বাহ! তার পরে? এগারো মাস বাদে বাপের বাড়ি থেকে ফিরেও তো আট-নয় দিন হাতে পেয়েছিলি? ওহ, তখন তো তুই কলেজ নিয়ে ব্যস্ত, সাবাস! আর যেদিন ব্যস্ততা কমল, সেদিন রাহুলের সঙ্গে তিন-চার ঘন্টা ধরে চোদাচুদি করলি! তুই সেদিন রাহুলের কথায় ওর উপরে উঠে ঠাপিয়েছিলি, নিজের বাচ্চাদের জন্য রাখা বুকের দুধ চোদাতে চোদাতে খাইয়েও দিয়েছিলি। আর এ সবই লোকটা নিজে কানে শুনেছে বরাবরের মতো ছেড়ে আসার জন্য তৈরি হতে হতে। এর পরেও তুই আশা করিস, ওই লোকটা তোর কাছে ফিরবে? নাকি তুই ওকে সত্যি ভালবাসিস, এটা আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবি? জয়তীর মুখে চোদানো, ঠাপানো কথাগুলো শুনে চমকে উঠল ঈশিতা। জয়তী বলল, ‘‘ভুলে যাস না, আমিও কলকাতার মেয়ে, কলেজেও পড়েছি। এ সব শব্দ আমার কাছে নতুন না। চমকে যাস না, এ সব কথা তুইও বলিস, অন্তত রাহুলের কাছে তো বলেছিলি বটেই।’’ ঈশিতার মনে পড়ল, সত্যিই তো সে দিন ও রাহুলের কথায় ওর উপরে উঠে বলেছিল, আমি এই ভাবে ঠাপাতে পারব না। তার পর রাহুল জোর করায় কয়েকটা ঠাপ মেরে থেমে গিয়ে নিজে রাহুলের নিচে চলে গিয়েছিল ঠাপ খেতে। এগুলো জয়তীদি জানল কী করে? ওর অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে জয়তী বলল, ‘‘সৌমাভদা আমাকে রেখেঢেকে যতটা বলা যায়, বলেছে। বাকিটা আমি ধরে নিয়েছি। এবং মনে হয় না, ভুল ধরেছি। নিজের বিয়ে করা স্বামীর সঙ্গে চোদাচুদি করতে হয়, করা যায়, তাকে আদর করতে হয়, তার আদর পেতে হয়। এগুলো মনে রাখিসনি, চেষ্টাও করিসনি। কিন্তু রাহুলের সঙ্গে চোদাতে তোর সমস্যা হয়নি, কী বল?’’ ঈশিতা মাথা নিচু করেই বসে রইল। ও জানে, একটা শব্দও মিথ্যে নয়। তার পরে ওকে আরও চমকে দিয়ে জয়তী বলল, ‘‘কী জানিস, আর কয়েক বছর পরে কুট্টি-মুট্টি যদি আলাদা ভাবে তোর হাত ধরে, তুই ওদের চিনতেও পারবি না। ওদের স্পর্শ বোঝা তো দূর। নিজের ছেলেমেয়ের কথা ছাড়, ওদের তুই সেভাবে কাছেই টানতে পারিসনি কোনওদিন। কলেজ, ফাংশন, রাহুল নিয়ে মেতেছিলি। যার চলে যাওয়া নিয়ে এত নাটক করছিস তোর পরিবারের সকলে মিলে, সেই সৌমাভদাও যদি কোনও দিন কোনও ভাবে ভিড়ের মধ্যে তোর হাত ধরে বা গায়ে হাত দেয়, তুই তার স্পর্শ বুঝতেও পারবি না, এটা তোকে বলে দিলাম। শেষ কবে সৌমাভদাকে বুকে টেনেছিলি, মনে আছে? মনে নেই। শেষ কবে দু’জনে প্রাণভরে সেক্স করেছিলি মনে আছে? নেই। যে লোকটার স্পর্শই তুই মনে রাখার চেষ্টা করিসনি প্রায় এক বছর ধরে, তাকে তুই পেতে চেয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছিস? আমি লোকটার সঙ্গে শোয়ার জন্য গায়ে একটা সুতো না রেখে তাকে জাপ্টে ধরেছিলাম। সে আমাকে কিছু করেনি। আলতো করে সরিয়ে দিয়ে শুধু বলেছিল, ‘আমি যদি আজ তোমার সঙ্গে সেক্স করি, তা হলে ঈশিতার সঙ্গে আমার ফারাকটা কোথায় থাকবে?’ দ্যাখ, প্রায় একবছর তোরা সেক্স করিসনি, তার পরেও লোকটা আমাকে ওই অবস্থায় পেয়েও কিচ্ছু করেনি। এই লোকটাকেই তুই ঠকিয়েছিলি টানা কত দিন ধরে, নিজেকে প্রশ্ন কর।’’ ঈশিতা মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে।
এর মধ্যেই ক্রিংক্রিং করে টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে উঠল। ঈশিতা চমকে উঠলেও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জয়তী বুঝল, সৌমাভ ফোন করেছে। ধীর পায়ে উঠে ফোনটা তুলে হ্যালো বলার পাশাপাশি ঈশিতাকে ডেকে পাশে বসিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করে থাকতে বলল। তার পরে আগের রাতের মতোই ঝাঁঝ মেশানো গলায় সৌমাভকে বলল, ‘‘কাল ঈশিতারা অফিস এবং তার পরে আমার বাড়িতে এসেছিল। আমিই ওদের নিয়ে এসেছিলাম সব শুনব বলে। তুমি বিশ্বাস কর, আজও ঈশিতা আমার অফিসের নীচে এসে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। ওকে দেখলে কান্না পাচ্ছে সৌমদা। কঙ্কালে পরিণত হয়েছে। তুমি আর ওকে ছেড়ে থেকো না, নিজেও কষ্ট পেয়ো না। কুট্টি-মুট্টির জন্য হলেও ফিরে এসো ওর কাছে। ও ভুল করেছে, স্বীকারও করেছে। তুমি যা শাস্তি দেবে, ও মাথা পেতে নেবে বলেছে। তুমি একবার ভরসা কর, প্লিজ’’, বলে কেঁদে ফেলল গত কালের মতো।
ঈশিতার সারা শরীরে কাঁটা তুলে ওপাশ থেকে সেই বরাবরের শান্ত গলা ভেসে এল টেলিফোনের রিসিভারে। ঈশিতা তখন রিসিভারে কান ঠেসে ধরেছে, যাতে কথাগুলো সব শুনতে পায়। ও প্রান্ত থেকে তখন সৌমাভ বলছে, ‘‘সরি গো। ঈশিতা রায়চৌধুরীর কাছে আমি আর ফিরতে পারব না। আমি তো ওর নকল বর, ওর আসল স্বামী কে, সেটা আমি সেদিন নিজে জেনেছি, শুনেছি। তবে তুমি বললে, ছেলেমেয়েকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেব। আমার পক্ষে ওকে আর স্পর্শ করা সম্ভব নয় জয়তী। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস, যা ভেঙে গেলে কোনও দিন জোড়া লাগে না। কাঁচের থেকেও পলকা জিনিস হল বিশ্বাস। তা ভাঙলে হাজার চেষ্টাতেও জোড়া লাগে না। কথাটা ওকে অনেকবার বলেছি। জীবনে অনেক ধাক্কা, কষ্ট, অপমান সহ্য করে এখানে এসেছি তো, আমি পারব না গো, সরি। তা ছাড়া গত বছর জানুয়ারিতে কলকাতায় ফিরে শেষ দিন অবধি ওর উপেক্ষা, অবহেলা, ওর বাড়ির লোকের ব্যবহার সব যদি ভুলেও যাই তোমার কথা মেনে, তা হলেও বলো তো, ওর পাশে আমি শোব কী করে? ওর সেদিনের প্রতিটা কথা, প্রতিটা শব্দ আজও আমার রাতের ঘুম নষ্ট করে। এমন নয় যে ও সেদিন রে*ড হয়েছিল। তা হলে ওকে আমি সবদিক থেকে রক্ষা করতাম, পাশে দাঁড়াতাম। ওর জন্য সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যেতাম। কিন্তু তা তো হয়নি। সেদিন ও নিজের ইচ্ছেয় নিজের দেহ তুলে দিয়েছিল ওর প্রেমিকের কাছে। সে সব আওয়াজ, কথাবার্তা অনেকটা আমি নিজের কানে শুনেছি। তার পরে কিসের জোরে কোন ভরসায় ওকে আর বিশ্বাস করব, বলো? ও যে আবার সেই একই কাজ করবে না, সেটা কীকরে মেনে নেব? আমি অফিসে চলে গেলে ও যে আবার অন্য কারও নীচে শোবে না, এই রাহুলের সঙ্গেই লুকিয়ে লুকিয়ে লীলাখেলা চালাবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? এখন কাঁদছে, সেদিন ভুলে যেতে কতক্ষণ? আন্দামানের ভালবাসার নাটকটা ভালই করেছিল, কিন্তু সেই নাটকটাও ও কলকাতায় নামার আগেই বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়েছিল। আমি বুঝতে পারিনি বোকা বলে। ওর সঙ্গে আমার বিবাহিত জীবন মাত্র এক মাস কয়েক দিন। সেটা ওর কাছে পুতুলখেলা হতে পারে, আমার কাছে দাম্পত্য ছিল। কাগজে-কলমে যাই বলা হোক, দিন-তিথি যা-ই হোক, আমার দাম্পত্য জীবন মাত্র একমাস এবং কয়েকটা দিন মাত্র। ভাবতে পারো? কলকাতায় পা রেখেই ও নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছিল। তখন দাম্পত্য বলতে যা বোঝায়, তা অন্তত ওর মধ্যে আর ছিল না। রাতে পাশে শুলেও কতদিন ক্লান্তির নাম করে আমার পাশ থেকে সরে গেছে। এবং সেটা ওই ঘটনার দিন সকাল পর্যন্ত। এ বার ভাবো। তবে আমি ওকে ছাড়া অন্য কোনও মেয়েকে কোনওদিন ভালবাসিনি, আগামী দিনেও বাসব না। ওকেই ভালবেসে যাব। ও ছাড়া অন্য কোনও মেয়ের শরীর কোনওদিন ছুঁইনি, ছোঁবও না কোনওদিন। কিন্তু ও তো তা নয়। ওর প্রেমিক আছে। একটাকে জেনেছি, আরও কত আছে কে জানে? তোমার কথা মেনে আমি ফিরে এলে ও যে আবার সেই সব দিনে ফিরে যাবে না, সেই কাজগুলোই করবে না, সেটা তুমি বলতে পারো? এবারে তুমি ভাল করে ভেবে জানিয়ো, ছেলেমেয়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হলে ভাল, আমি মেনে নেব। তুমি তো বলেছো, তুমি আমার ভাল বন্ধু। ভেবে জানিয়ো, আমি তোমার কথা মেনে নেব। আমি শুধু এটুকু তোমাকে বলে দিচ্ছি, আমার জীবিত শরীর ও আর কোনও দিন স্পর্শ করতে পারবে না।’’ বলেই ফোনটা রেখে দিল।
কত মাস পরে গলাটা শুনছিল ঈশিতা! কিন্তু সৌমাভর শেষের দিকের কথাগুলো শুনতে শুনতেই জ্ঞান হারাল গত কালের মতো। জয়তী বুঝল, মানসিক ধাক্কা সামলাতে পারেনি। এও বুঝল, সৌমাভর এই পাহাড় ভাঙা অসম্ভব। ওর পক্ষে তো বটেই। অনেকক্ষণ পরে ঈশিতার জ্ঞান ফিরল। ধীর পায়ে গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার আগে জলে ভরা চোখ নিয়ে জয়তীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘আমি সারাজীবন অপেক্ষা করব জয়তীদি। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করব। তবু দেখো, একবার হলেও ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারব। সে যেদিনই হোক, আমি পারবই।’’ বলে নেমে গেল।
Posts: 128
Threads: 3
Likes Received: 1,082 in 119 posts
Likes Given: 0
Joined: Apr 2024
Reputation:
200
(৩৭)
দিন তো চলি গেল
কেটে গেছে আরও ১৭ বছর। এর মধ্যে কেন্দ্রে, রাজ্যে সরকার বদল এবং আরও নানা বদল এসেছে। আর ঈশিতাদের পরিবারে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা না লিখলেই নয়। ঈশিতার বাবা কাকদ্বীপ থেকে ঘুরে ঘুরে শেষে বাঁকুড়ায় যান। সেখানেই রিটায়ারমেন্টের কয়েকদিন আগে নিজের সব সম্পত্তি এবং টাকা স্ত্রী ও মেয়েদের নামে করে উইল করে সেটা কলকাতার এক বন্ধুকে পাঠিয়ে দেন। এবং অদ্ভুত ভাবে তার কয়েক দিনের মধ্যে তিনি লরি চাপা পড়ে মারা যান। কেউ কেউ বলে, উনি ইচ্ছে করেই সেদিন গাড়ি চাপা পড়েন। দেহ হাসপাতালে পাঠিয়ে লোকজন যখন ব্যাঙ্কে খবর দেয় এবং তার পরে বহু খুঁজে তাঁর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়, ততক্ষণে বিশ্বজিৎবাবুর দেহে পচন ধরতে শুরু করেছে। স্থানীয় হাসপাতালে পোস্টমর্টেমের পরে বেওয়ারিশ লাশের মতো পড়েছিলেন বহুক্ষণ। ব্যাঙ্কের কর্মীরাই তাঁকে শ্মশানে নিয়ে যায়। চিতায় তোলার একটু আগে পরিবারের সকলে এসেছিল, ঈশিতাও। পোস্টমর্টেমের পরে আগাগোড়া কাপড়ে মোড়া ছিল দেহটা। বহু অনুরোধেও শেষবারের মতো তাঁর মুখটাও দেখতে পায়নি ওরা কেউ। একপ্রকার নীরবেই নিজের জীবন শেষ করে বরাবরের মতো রায়চৌধুরী পরিবার থেকে চলে গেলেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
ঈশিতা রবীন্দ্রভারতীর পড়া শেষ করে মাস্টার্স এবং তার পরে পিএইচডি করে। তার পরে একটি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করে। সেখানে ভাল না লাগায় চলে যায় বিশ্বভারতীতে। সেখানেই রতনপল্লীতে একজনের পুরনো একটা বাড়ি কিনে ফেলে। বেশ বড় জায়গা নিয়ে বাড়িটা। একটা স্থানীয় মেয়ে সকাল-বিকেল এসে কাজ করে দেয়। বাকি সময়টা একাই থাকে। বছরখানেক হল সময় কাটাতে একটা গানের কলেজ চালু করেছে। নিজের মতো গান আর পড়াশোনা নিয়েই থাকে। চোখমুখের সেই মলিনতা মুছে এখন আগের মতোই সুন্দরী হয়ে উঠেছে। তবে শরীরটা একটু ভারী হয়েছে, যদিও তাতে রূপ যেন আরও বেড়েছে। সৌমাভ চলে যাওয়ার প্রথম দশ বছর কেটে যাওয়ার পরে আর শাঁখা-সিঁদুর পড়ে না। যার জন্য পরা, তারই যখন খোঁজ নেই, কী হবে ও সব করে? ওদিকে গুঞ্জা জিওগ্রাফি নিয়ে পড়ে মাস্টার্স করে একটা কলেজে পড়ানোর চাকরি পেয়েছে। ওর উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের দিন একটা চিঠি পেয়েছিল। তাতে শুধু লেখা ছিল, ‘‘কনগ্র্যাচুলেশনস গুঞ্জাবতী। পারলে ডক্টরেট করে নে, কলেজে পড়াতে পারবি।’’ সঙ্গে একটা মোটা টাকার চেক। আর কিচ্ছু না। ওরা সবাই বুঝেছিল, আড়ালে থেকে হলেও সব খবর রাখে সৌমাভ, শুধু নিজের বা কুট্টি-মুট্টির খবর যাতে ওরা না পায়, সেটার দিকে খেয়াল রাখে অনেক বেশি। তাই কোনও চিঠিতেই পোস্ট অফিসের ছাপও থাকে না। আর কোনও চিঠি পায়নি গুঞ্জা তার সৌমদার কাছ থেকে। ঈশিতার সঙ্গে গুঞ্জার দূরত্ব এই ক’বছরে অনেক কেটেছে। ঈশিতা আসার কয়েক বছর পরে সেও বিশ্বভারতীতে পড়ানোর চাকরি নিয়ে চলে আসে। তবে দিদির বাড়িতে থাকে না, পাশেই একটা ছোট বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকে। কয়েক বছর পরে বিয়ে করে স্থানীয় একটি ছেলেকে। বিশ্বভারতীরই কর্মচারী সে। বয়সে গুঞ্জার থেকে বেশ বড়, তবে ‘মাস্টারনী’ বউ এবং তার ‘বিয়ে না হওয়া মাস্টারনী’ দিদিকে বেশ সমীহ করে। ভয়ও পায় মনে মনে। দুই দিদির ছেলেমেয়েরা এখন বেশ বড়। বড়দির ছেলে যাদবপুরে মাস্টার্স করার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশুনা করে। মেজদির মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলকাতারই নামী কলেজে বিএসসি পড়ছে। দুই দিদিই সময় পেলে চলে আসে ঈশিতার বাড়িতে। থাকার জায়গার অভাব নেই, এলে মনটাও ভাল হয়ে যায়। ওই কদিন গুঞ্জাও এসে থাকে ওদের কাছে। ওর বিয়ের বেশ কয়েক মাস পরে একটা ছোট বাক্স এসেছিল, উপরে লেখা ছিল ‘প্রতি, ঐশী রায়চৌধুরী’। কে পাঠিয়েছে এটা, বুঝতে না পেরে গুঞ্জা বাক্সটা খুলে দেখেছিল, একটা ছোট বাক্সে একজোড়া ভারী সোনার দুল আর একটা পাতায় সেই মুক্তোর মতো হাতের লেখায় কবিতা—
‘‘.....একটা জন্ম জোড়াতালির, ভাত কাপড়ের তক্কে তক্কে
একটা জীবন মাথা গোঁজার ফন্দি খুঁজে,
একটা জীবন বাক্স মাথায় ভুল শহরে
ভুল ঠিকানায় ঘুরে ঘুরে,
একটা জন্ম এমনি এমনি কেটে গেলো,
একটা জীবন দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে।
তোমার (তোর) সঙ্গে ভালো করে কথা বলাই হলো না।’’
বিয়ে করেছিস, ভাল থাকিস। আনন্দে থাকিস। — সৌমাভ সরকার।
কবিতাটা আগে একবার কোথাও পড়েছিল, মনে হয় তারাপদ রায়ের লেখা। ওর ঠিক মনে পড়ল না। কিন্তু চিঠিটা পড়তে গিয়ে গুঞ্জা অবাক হয়ে গিয়েছিল। সৌমাভদা ওকে এ বার আর গুঞ্জাবতী বলে সম্বোধন করেনি? এমনকি চিঠির শেষেও সৌমদা না লিখে সৌমাভ সরকার লিখেছে! শেষ পর্যন্ত ওকেও ঈশিতার মতো দূরে সরিয়ে দিল সৌমদা? কীসের অভিমানে? তবে সৌমাভর ওই চিঠির খবরে ভিতরে ভিতরে আনন্দ পেয়েছিল ঈশিতা। গুঞ্জার প্রতি সৌমাভর টানকে একসময় ওর প্রেম মনে হয়েছিল। আজ ওর নিজের ধারণা কত বড় ভুল, নতুন করে বুঝল ঈশিতা। দুচোখ ভরে গিয়েছিল জলে।
জয়তীর সঙ্গে ঈশিতার যোগাযোগ সেদিনের পর থেকে অনেকটা বেড়েছে। তবে ঈশিতা বিশ্বভারতীতে চলে আসায় সেই যোগাযোগে ভাঁটা পড়লেও মোবাইলে যোগাযোগ আছে। ঈশিতারা যেদিন ওর কাছে গেছিল, তার মাসখানেক পরেই এপ্রিলে জয়তী বিয়ে করে তাদেরই কলেজের এক বছরের এক সিনিয়রকে। জয়তীর একটি ছেলে হয় বিয়ের নয় মাসের মধ্যেই। জয়তীদির বর রঙ্গনদা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে বেশ উঁচু পদে আছেন। পার্টি এবং অন্যান্য নানা ছুতোয় প্রচুর মদ খান। বছর দুয়েকের মধ্যে তাঁর মেয়েঘটিত দোষের কথাও কানে এল জয়তীর। সেটা নিয়ে সে বেশ বিরক্ত। মাঝে একদিন নিজের খেয়ালে গল্প করতে করতেই ঈশিতাকে বলেছিল, ‘‘রঙ্গনেরও এর ওর সঙ্গে চোদানোর বাতিক আছে বলে শুনেছি। যেদিন ধরতে পারব, সৌমাভদার মতোই লাথি মেরে সংসার ছেড়ে বেরিয়ে যাব। তবে ছেলেকে নিজের কাছেই রাখব।’’ কথাটা বলে একটু পরেই খেয়াল হতে ঈশিতার হাত ধরে বলেছিল, ‘‘তোকে মিন করে কিছু বলিনি, প্লিজ বিশ্বাস কর। ছেলের দিব্যি দিয়ে বলছি।’’ ঈশিতাও বুঝেছিল, বেখেয়ালেই এর ওর সঙ্গে শোয়ার কথাটা বলে ফেলেছিল জয়তীদি। জেনেছিল, ছেলের নাম রেখেছে সমুদ্র। তবে জয়তী এটা ঈশিতাকে বলেনি যে, ওই নামটা বেছে দিয়েছিল সৌমাভই। বিয়েতে না এলেও পরে এসে দেখা করে গিয়েছিল সৌমাভ। অনেক উপহারও দিয়েছিল। ওর সঙ্গে এসেছিল সুভদ্রা এবং কুট্টি-মুট্টিও। ওরা ততদিনে প্রায় ন’মাসের হয়ে গিয়েছে। সুভদ্রার যত্নে দু’জনের শরীরস্বাস্থ্য বেশ ভাল। জঙ্গলের নির্মল পরিবেশে ওদের গড়নও সুন্দর হয়েছে। সুভদ্রাকে দেখে রীতিমতো চমকে গেছিল জয়তী। মাত্র কয়েক মাসেই কী পরিবর্তন! ঢেঙ্কানলের সেই আদিবাসী মেয়েটার এখন ঝকঝকে চোখমুখ, হাঁটাচলায় বেশ স্মার্ট, ফিগারও হয়েছে দেখার মতো। যত্নে থাকার কারণে গায়ের রং এখন বেশ উজ্জ্বল। তবে ওকে দেখে আগের মতোই নিচু হয়ে প্রণাম করে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘‘তোমার জন্যই নতুন জীবন পেয়েছি, এটা আমি ভুলব না।’’ জয়তী দেখেছিল, সব কিছুর মধ্যেও কুট্টি-মুট্টির দিকে কড়া নজর সুভদ্রার। দুটোর খাওয়া নিয়ে বিস্তর ঝামেলা, কিন্তু সুভদ্রা হাসিমুখেই ওদের সামলাত।
সে বারে কলকাতায় এসে সুভদ্রাদের জয়তীর কাছে জিম্মা রেখে আর একটা কাজ করেছিল সৌমাভ। বর্ধমানে ওর পৈত্রিক গ্রাম ভেদিয়ায় গিয়েছিল। যদিও আসলে সেটা ভেদিয়া থেকেও বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে, প্রায় বীরভূমের সীমানায়। অজয় বাঁধের কাছে একটা গ্রামে। সেখানে নিজেদের বাড়ি খুঁজে বের করে। প্রায় ভাঙাচোরা বাড়িটা মেরামত করে এবং আশপাশ মিলিয়ে বেশ কয়েক বিঘা জমি কিনে বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলে। তার পরে জমির সীমানা বরাবর বেশ কয়েকটা গাছ লাগায়। এমনিই গাছ ওর প্রাণ। বরাবর জঙ্গলকে ভালবেসেছে। তাই অনেক গাছ লাগিয়েছিল। তার মধ্যে গোটা পাঁচেক আমগাছ ছাড়াও কাঁঠাল, জামের মতো ফলের গাছের পাশাপাশি শিমূল, সেগুন, জারুল, পলাশের মতো গাছও ছিল। আর লাগিয়েছিল পাশাপাশি তিনটে নিমগাছ ও দুটো কৃষ্ণচূড়া ও দুটো রাধাচূড়া। দুটো ছোট পুকুরও কাটিয়েছিল পরে একবার এসে। সে কারণে প্রয়োজনে নিজের বাড়ির সীমানা বাড়িয়ে আরও বেশ কিছুটা জমি কিনেছিল। একই সঙ্গে বম্বের স্টাফ-বন্ধুদের থেকে জেনে পরের কয়েক বছরে ধাপে ধাপে নিউটাউনে প্রায় জলের দরে চার-পাঁচ কাঠা করে বেশ কয়েকটা প্লট কিনে ফেলেছিল। কয়েক বছর পরে সুভদ্রা কলকাতায় চাকরি সূত্রে মেসে থাকছে দেখে ওকে জোর করে লোন নিতে বাধ্য করে একটা ছোট বাড়িও তুলিয়েছিল তারই একটায়। অবশ্য সৌমাভ নিজেও বেশ কিছু টাকা দিয়েছিল। পরে বাড়িটা দোতলা করা হয়। সেখানেও প্রচুর গাছ লাগায় সৌমাভ। এই সব জমিজমার দলিল, কাগজ সব সুভদ্রার কাছে রেখে দিয়েছিল সৌমাভ। কয়েক বছর পরে ওকে নমিনিও করে দিয়েছিল, বহু আপত্তি সত্ত্বেও।
ভদ্রা থেকে এক বছর পরে বদলি হয়ে বম্বে আসে সৌমাভ। জয়রাজন স্যারকে ধরাকরা করে সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্কে জয়েন করে। প্রথমে তড়োবায় যাওয়ার কথা ভাবলেও ছেলেমেয়ে এবং সুভদ্রার পড়াশোনার কথা ভেবেই বম্বে বেছে নিয়েছিল। বম্বে আসার কয়েক মাস পরে সুভদ্রাকে ভদ্রার মিশনারি কলেজ থেকেই ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা দিতে নিযে গিয়েছিল সৌমাভ। সে সময় কুট্টি-মুট্টিও স্বাভাবিক ভাবেই ওদের সঙ্গে ছিল। বম্বেতে এসে সৌমাভ একটা পুরনো মারুতি গাড়ি কেনে আর্মি অকশন থেকে। বম্বের বাসা থেকে গাড়িতে অফিস যেতে ওর বেশি সময় লাগে না। সুভদ্রা ভালভাবেই পাশ করে সায়েন্স নিয়ে বম্বের একটা কলেজে ভর্তি হয়। তখন সৌমাভর ছেলেমেয়ের বয়স প্রায় দুই। সুভদ্রার জেদাজেদিতেই দুই ছেলেমেয়েকে কাছেই একটা প্রাইভেট নার্সারি কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিল। বছর খানেক পরে সেই কলেজটা ওঠে যাওয়ায় একটা নামকরা মিশনারি কলেজে ভর্তি করতে গিয়ে সৌমাভ এমন একটা কান্ড করে বসল, যা ওর মতো সব কাজে নিখুঁত মানুষের কাছে আশা করা যায় না। ছেলেমেয়ের বয়সের হিসেব না করেই চার বছর কয়েক মাসের অরণ্য এবং মৃত্তিকাকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দিল। সব শুনে মাথায় হাত পড়ল সুভদ্রার। ও বিস্তর চেঁচামেচি তো করলই সেই সঙ্গে বোঝাল, হিসেব মতো ১৪ বছরে ক্লাস টেন এবং ১৬ বছরে ক্লাস টুয়েলভের পরীক্ষা দেবে দু’জন। এত কম বয়সে চাপ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়ল দু’জনেই। তার পরে ঠিক করা হল, দেখা যাক। ওদের অবাক করে দিয়ে ক্লাসের সবচেয়ে ছোট দুই ছেলেমেয়ে প্রতিবারই ভাল রেজাল্ট করে সুভদ্রার হিসেব মতোই ১৪ এবং ১৬ বছরে দুটো বড় পরীক্ষা পাশ করে ফেলল।
সুভদ্রার জীবন এখন আমূল বদলে গেছে। ঢেঙ্কানল থেকে বাবার হাত ধরে অনেক অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করে ভুবনেশ্বরের হোটেলে এসে কাজ নিয়ে চিল-শকুনের নজর এড়িয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে একসময় বারিপদায় জয়ন্ত-জয়তীর সংসাররে ঠাঁই হয়েছিল ওর। সেখান থেকে আজ সে বড় সরকারি অফিসার। সৌমাভ ভদ্রায় আসার পর থেকেই ওর দুই খুদে সন্তান এবং সংসারের সব ভার কাঁধে নিয়ে রীতিমতো গিন্নি হয়ে উঠেছে। সৌমাভর উৎসাহে এবং চেষ্টায় মাস্টার্স শেষ করে সৌমাভর কথাতেই সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বড় পদেই চাকরি করছে সে। এদিকে দুই ছেলেমেয়ে বড় হলেও সুভদ্রার মন পড়ে থাকত ওদের দিকেই। তাই টাকাপয়সার পরোয়া না করেই প্রথম কয়েক বছর প্রতি দু’সপ্তাহ অন্তর শুক্রবার অফিস থেকে বেরিয়ে ফ্লাইট ধরে বম্বে যেত, সোমবার সকালের ফ্লাইটে ফিরে অফিস জয়েন করত। কলেজে ছুটি থাকলে ছেলেমেয়ে নিয়ে সৌমাভ কলকাতায় আসত। তখন জয়তীও এসে আড্ডা মেরে যেত ওদের সঙ্গে। জয়তীর ছেলের সঙ্গে কুট্টি-মুট্টির বয়সের ফারাক বেশি না। তবে ও পড়ে নিচু ক্লাসে। দুই ছেলেমেয়ে ক্লাস টেন পাশ করার পরে জয়তী ও সুভদ্রার জেদাজেদিতে বোম্বের পাট চুকিয়ে পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় ফিরল সৌমাভ। জয়েন করল সল্টলেকের অফিসে।
সুভদ্রার বয়স এখন প্রায় ৩৬। সৌমাভ যখন ওকে প্রথম দেখে, তখন ও হিসেব মতো ও ঈশিতার থেকে সামান্য ছোট ছিল। দুই ছেলেমেয়ে এবং সৌমাভকে নিয়ে তার ভরা সংসার। সৌমাভর পদবীই ব্যবহার করে। তবে একটা চাপা কষ্ট আর অভিমান ওর আছে। সৌমাভর কাছে সব রকম ভাবে ধরা দিতে চেয়েও পারেনি। এমনকি বহুবার মুখে বলে কাজ না হওয়ায় নিজেকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে সৌমাভর বিছানায় রাতে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেও সাড়া পায়নি। বরং সৌমাভ খুব স্নেহের সঙ্গে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে, ‘‘পরে তোকে সব বলব, তুই ভুল বুঝিস না।’’ সুভদ্রা গ্র্যাজুয়েশন করার পরে একদিন রাতে ওকে পাশে বসিয়ে ঈশিতা এবং ওর নিজের সব কথা খুলে বলেছিল। প্রায় ভোররাত অবধি সব বলেছিল সৌমাভ আর সুভদ্রা অঝোরে কেঁদেছিল প্রায় পুরো সময়টাই। আরও বেশি টান অনুভব করেছিল সৌমাভর জন্য, কুট্টি-মুট্টির জন্য। তার পরে সৌমাভর বহু অনুরোধ, রাগারাগি, অভিমানেও ও বিয়ে করেনি। ও কুট্টি-মুট্টিকে প্রথম দিন থেকে সন্তানের মতো পালন করেছে। আজও করে। কুট্টি-মুট্টি ওকে ছোট থেকেই মামন বলে ডাকে। তবে ওকে ‘গার্ডি’ বলে খেপায় দু’জনেই। গার্ডিয়ান থেকে ‘গার্ডি’। এত বড় হয়েও ভুল করলে দু’জনেই মারধর খায় সুভদ্রার কাছে। মুখে না বললেও এবং সামাজিক স্বীকৃতি না পেলেও সুভদ্রা মনে মনে নিজেকে সৌমাভর স্ত্রী হিসেবেই মেনে নিয়ে সংসারের সব ভার হাতে নিয়েছে। ও চাইলে, বিশেষ করে চাকরি পাওয়ার পরে বিয়ে করতেই পারত অন্য কাউকে। কিন্তু সেটা ও করেনি। সৌমাভর শরীরটা পায়নি বটে, কিন্তু দুই ছেলেমেয়ে, সংসার, সম্মান, টাকাপয়সা, জমি, বাড়ি— সব আছে ওর। এমনকি সৌমাভকে জড়িয়ে শুয়েও থাকে বহু দিন। কিন্তু তাতে যৌনতা থাকে না। প্রথম প্রথম সুভদ্রা চাইলেও সৌমাভর সব কথা শোনার পরে আর এ নিয়ে এগোয় না। জয়তীও ওকে বলেছিল, সেও পেয়ে চেয়েছিল, কিন্তু পায়নি। সুভদ্রা এটা মেনে নিয়েই আছে। প্রথম কয়েক বছর যৌবনের চাহিদা, শরীরের টান ওকে ভিতরে ভিতরে জ্বালাত। কিন্তু পরে ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। অরণ্য এবং মৃত্তিকা দু’জনেই বাবার কাছে গান শিখেছে যত্ন করে। দারুণ ভাল ছবিও আঁকে। বিশেষ করে ক্যানভাসে রং-তুলি দিয়ে ছবি ফুটিয়ে তোলায় দু’জনেরই হাত অসাধারণ। এখন তারা কলেজে পড়ছে।
ছেলেমেয়ের ১৮ বছরের জন্মদিনের কয়েক দিন আগে সৌমাভ জয়তী এবং সুভদ্রা দু’জনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলল অনেকক্ষণ ধরে। জয়তীর সঙ্গে রঙ্গনের ততদিনে ডিভোর্স হয়ে গেছে। জয়তীর আশঙ্কা মতোই নিজের বাড়িতে একটি মেয়ের কামিজের ভিতরে হাত ঢোকানো অবস্থায জয়তীর কাছে ধরা পড়ে যায়। খোরপোষ হিসেবে টাকা নেয়নি জয়তী, তবে সল্টলেকে রঙ্গনদের পৈত্রিক বাড়িটা নিজের নামে করে নিয়েছিল। জয়তীর বাড়ি থেকে সুভদ্রার বাড়ি বেশি দূরে নয়। কুট্টি-মুট্টি ওকে পিসি বলে ডাকে। আলাদা করে দু’জনের সঙ্গে কথা বলার পরে এক দিন দু’জনকে পাশাপাশি বসিয়ে কথা বলল সৌমাভ। জানাল, আর কয়েক মাস পরে ও পঞ্চাশে পা দেবে। সৌমাভ স্পষ্ট করেই বলল, ‘‘ছেলেমেয়ে অ্যাডাল্ট হয়েছে, এবার সত্যিগুলো জানুক। না হলে পরে যদি কোনও সমস্যা হয়।’’ অনেকক্ষণ ইতস্তত করে দু’জনেই তাতে সায় দিল। ঠিক হল, ওদের সামনেই সব জানাবে সৌমাভ। যে সব কথা সৌমাভ বলতে পারবে না, সেগুলো জয়তী কিছুটা বাকিটা সুভদ্রা জানাবে দু’জনকে। সৌমাভ এই বার ওর লেখা একটা মোটা ডায়েরি তুলে দিল জয়তীর হাতে বলল, ‘‘ভদ্রায় যাওয়া থেকে লেখা শুরু করেছি। আগের সব কথাও আছে। এই ক’বছরের কথাও। যতটা পেরেছি, মনে করে করে লিখেছি। তোমাদের দু’জনের কাছে আমার লজ্জা নেই। তোমাদের দু’জনকেই আমি ছুঁয়ে থেকেছি এত বছর। তাই সব তোমাদের কাছে বলতে পারি। এটা তুমি পড়ে পরে সুভদ্রাকে দিও। সুভদ্রা মনে করলে ছেলেমেয়েকে দেবে পড়তে।’’ আরও দু’টো খবর ও জানাল, যা চমকে দিল জয়তী ও সুভদ্রা দু’জনকেই। ১৮ বছর আগে ঈশিতার কীর্তিকলাপ জানতে পেরে বেলেঘাটার যে বাড়ি থেকে ও কুট্টি-মুট্টিকে নিয়ে চলে গিয়েছিল, সেই বাড়ি ও পরের বছর জানুয়ারিতে ছেলেমেয়ের মুখেভাত উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসে কিনে নিয়েছিল। পুরো বাড়িটাই। দোতলার বাড়িওয়ালা তাঁর পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন কয়েক মাস পরে। নীচ তলার দোকানগুলোর ভাড়া জমা পড়ে একটা অ্যাকাউন্টে। আর তিনতলার ওদের সেই ফ্ল্যাটটা একই রকম ভাবে বন্ধই ছিল। সেটাকে ও একাধিক তালা মেরে প্রায় সিল করে দিয়েছিল। দ্বিতীয়টা হল, বছর কয়েক আগে সামার ভেকেশনে কুট্টি-মুট্টি কলকাতায় তাদের মামনের কাছে এসেছিল। ওই সময় বম্বেতে অফিসেই একটা হার্ট অ্যাটাক হয় সৌমাভর। দিন কয়েক হাসপাতালে থেকে ছাড়া পেলেও বহু দিন ওষুধ খেতে হয়েছে। ব্লাড সুগারও ধরা পড়েছে। শরীর একেবারে ভেঙে গেছে। ১৮-১৯ বছর আগেই সেই ঝকঝকে, চনমনে, নীরোগ, সৌমাভ বদলাতে শুরু করেছিল বহু বছর আগেই। এখন নানা রোগে শরীর ভেঙে একটা জীর্ণ দশা তার। আরও নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। তাই ও এবার ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নেবে। সেই ২৩-২৪ বছর বয়সে চাকরিতে ঢুকেছে। ২৫ বছর ধরে নিজের শরীর ও মনের উপর অনেক অত্যাচার চেয়ে বা না চেয়ে করেছে। তার ফল এখন বেরোচ্ছে। ও আর চাকরি করতে চায় না। এ বার বিশ্রাম নেবে। চাকরি ছাড়লেও যে পেনশন পাবে, তা নেহাত কম নয়। প্রথম খবরটায় চমকে গেলেও দু’জনেই বুঝেছিল, বাড়িটার প্রতি মায়া আছে সৌমাভর। কলকাতায় এসে ওই বাড়িতেই ঈশিতাকে নিয়ে উঠেছিল, ওই বাড়িতেই ঈশিতাকে এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিল, তাই ওটা হাতছাড়া করতে চায়নি ও। কিন্তু দ্বিতীয় খবরটা শুনে দু’জনেই প্রচন্ড কেঁদেছিল। কেন বলেনি, ওরা কি কেউ নয়, এই সব নানা কথা উঠেছিল। সৌমাভ উঠে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে দু’জনে বুকে টেনে বলেছিল, ‘‘তোমাদের থেকে আপনজন আমার কেউ নেই দুনিয়ায়। ছেলেমেয়ের সঙ্গে রক্তের টান, আর তোমাদের সঙ্গে আমার প্রাণের টান। তোমরা দু’জনেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারতে, কিন্তু তা করোনি। তোমরাই আমার সবকিছু। আমি ওটা বলিনি, কারণ তোমাদের চিন্তায় ফেলতে চাইনি।’’ সৌমাভর চাকরি ছাড়ার খবরে অবশ্য বেশি খুশি হয়েছিল সুভদ্রা। এবার সব সময় কাছে পাবে নিজের মানুষটাকে। খুশি হয়েছিল কুট্টি-মুট্টিও।
The following 19 users Like Choton's post:19 users Like Choton's post
• ADINATH, ashim, batmanshubh, bismal, Dipto78, HideandSeek123, kapil1989, KingisGreat, Mohomoy, New Avatar, peachWaterfall, pradip lahiri, prataphali, prshma, ray.rowdy, Shorifa Alisha, চন্দ্রচূড় চৌহান, বহুরূপী, মাগিখোর
Posts: 2,653
Threads: 30
Likes Received: 5,062 in 1,436 posts
Likes Given: 7,233
Joined: Sep 2023
Reputation:
1,030
গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।
Posts: 612
Threads: 0
Likes Received: 288 in 274 posts
Likes Given: 538
Joined: Jan 2024
Reputation:
7
•
Posts: 6
Threads: 0
Likes Received: 5 in 4 posts
Likes Given: 13
Joined: May 2025
Reputation:
0
Apurbo Lekha r Atulanio. Ami shudhu apnar lekhae comment korar jonno registration korlam. Tbe doa kore ae last update jeno shesh update nahoe. Karon nahole shob character er nabola kotha toe jabe, jemin dui chele mea ki shesh ondhi tader mae ke dekhte pelo baro hoe, tader ma ki tader ke chinte parlor? Erakom onek prosno ache mone. Tae doa kore shesh ta bhalo kore korben, jemon apnar onno galpo ta "Bhitur Dime" korechen. NEXT UPDATE ER JONNO WAIT KORCHI ADHIR BHABE
•
Posts: 6
Threads: 0
Likes Received: 5 in 4 posts
Likes Given: 13
Joined: May 2025
Reputation:
0
Extraordinary lekha, next update er jonno adhir agrohe wait korchi, hopefully eta last update noe, onek kotha roe geche, golpo tar sesh odhya gulo porar opekkhae roelam. Next update er opekkhae.
•
Posts: 150
Threads: 2
Likes Received: 451 in 157 posts
Likes Given: 142
Joined: Nov 2024
Reputation:
194
08-05-2025, 11:32 AM
(This post was last modified: 08-05-2025, 11:34 AM by prshma. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(06-05-2025, 12:50 AM)Mohomoy Wrote: সু স্বাগতম Prshma.
যাক অবশেষে অবরোধ তুলে নেয়া হলো তাহলে....
তোমাকে ফোরামে ফিরে পেয়ে সত্যিই খুউব খুউব ভালো লাগছে।
তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আমার কাছে কোন ভাষা নেই মোহময়। আজ শুধু তোমাদের unwavering সাপোর্টের কারণে আমি অবরোধ মুক্ত হতে পেরেছি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো যে কোন দুজন লেখক ও লেখিকা তাদের পেটোয়া কিছু চ্যালাচামুন্ডাদের দিয়ে এই কাজটা করিয়েছিল। তবে কথায় আছে যে 'ধর্মের কল বাতাসে নড়ে'। আমাকে আটকানোর জন্য এত ষড়যন্ত্র করার ফলাফল হল যে তার থ্রেড শুধু ফোরাম থেকে সরিয়েই দেওয়া হলনা উপরন্তু থ্রেডটা ক্লোজ পর্যন্ত করে দেওয়া হল।
Posts: 112
Threads: 0
Likes Received: 98 in 51 posts
Likes Given: 431
Joined: Oct 2024
Reputation:
11
(08-05-2025, 11:32 AM)prshma Wrote: তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আমার কাছে কোন ভাষা নেই মোহময়। আজ শুধু তোমাদের unwavering সাপোর্টের কারণে আমি অবরোধ মুক্ত হতে পেরেছি। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো যে কোন দুজন লেখক ও লেখিকা তাদের পেটোয়া কিছু চ্যালাচামুন্ডাদের দিয়ে এই কাজটা করিয়েছিল। তবে কথায় আছে যে 'ধর্মের কল বাতাসে নড়ে'। আমাকে আটকানোর জন্য এত ষড়যন্ত্র করার ফলাফল হল যে তার থ্রেড শুধু ফোরাম থেকে সরিয়েই দেওয়া হলনা উপরন্তু থ্রেডটা ক্লোজ পর্যন্ত করে দেওয়া হল।
আহ! কি আনন্দ! এরচেয়ে ভালো খবর আর কি হতে পারে!!!
থ্রেড ক্লোজ!!! ওরা ভাবতো যে ওরা বিরিয়ানি রান্না করছে। কিন্তু ভুলে গিয়েছিল প্রতিদিন বিরিয়ানি কেউ-ই খেতে পছন্দ করে না।
যারা সমালোচনা নিতে অক্ষম তারা সবদিক থেকেই অক্ষম।
Posts: 112
Threads: 0
Likes Received: 98 in 51 posts
Likes Given: 431
Joined: Oct 2024
Reputation:
11
সব গুলো রেপু দিয়ে দিয়েও মন ভরলো না।
•
Posts: 765
Threads: 0
Likes Received: 411 in 328 posts
Likes Given: 2,364
Joined: Dec 2021
Reputation:
15
অসাধারণ, অপূর্ব বললেও কম বলা হবে, এর পরের অংশ পড়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
•
Posts: 246
Threads: 0
Likes Received: 152 in 123 posts
Likes Given: 14
Joined: Dec 2022
Reputation:
2
•
|