Thread Rating:
  • 36 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica তার ছিঁড়ে গেছে কবে
#81
অসাধারণ আপডেট, পড়ে খুব ভালো লাগলো। এর পরের অংশ পড়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
এ আপডেট মন্তব্য দেওয়ার মত সাহস নেই।
শুধু বলবো ভালোবাসা অনেক পেয়েছি ??
Like Reply
#83
(২৫)


বুঝি ভোলার বেলা হল


সে দিন ভুবনেশ্বর এয়ারপোর্টে প্লেন থেকে নেমে সৌমাভ যখন বাইরে এল, তখন প্রায় সন্ধ্যে নেমে গেছে। এয়ারপোর্টের বাইরে বসেই প্রথমে ছেলেমেয়েকে পেট ভরে আগে বোতলে করে আনা দুধটা খাইয়ে দিল। তার পরে ওদের হিসুপটিতে ভেজা কাপড়গুলো একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলল। ও প্রথমে ঠিক করেছিল, প্লেন থেকে নেমে সোজা চলে যাবে বারিপদা। সেখানেই অফিসের দেওয়া একটা বাড়িতে থাকত জয়ন্ত ও জয়তী। এইটুকু ও জানে। বাকিটা রাতে কয়েক জনকে ফোন করে জেনে নেবে না হয়। ওদের কোনও সন্তান হয়নি, সেটাও ও জানত। এখন দেখল, ওকে দুটো চার মাসের শিশুকে নিয়ে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার রাস্তা যেতে হবে। এদিকে সন্ধ্যা নেমে গেছে। সে দিনের মতো একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরে বেরোবে বলে ঠিক করল। সেই মতো একটা হোটেলে গিয়ে ঘর নিল এবং সেখানেই দুটো বাচ্চার জন্য দুধ ও নিজের জন্য ডিনারের অর্ডার দিল। সকালের ব্রেকফাস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় কিছুই খায়নি ও। হোটেলের ঘরে ঢুকে আগে বাচ্চাদুটোকে জাগিয়ে দিল। ওরা এখন খেলবে। খেলুক, তা হলে রাতে ভাল করে ঘুমোবে। বিরাট বিছানায় দুই ভাইবোনে শুয়ে হাতপা নেড়ে নানা রকম আওয়াজ করে নিজেদের মতো খেলতে লাগল। সে দিকে একবার তাকাতেই সকালের কথাগুলো মনে করে চোখে জল এসে গেলেও চোয়াল শক্ত করে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে একটা গাড়ি বুক করে নিল হোটেল থেকেই। ভোর পাঁচটায় বেরোবে ওরা। রাস্তায় সমস্যা না হলে ১১টার মধ্যে ঢুকে যাবে। তার পর দ্রুত স্নান সেরে ফ্রেস হয়ে এল। ততক্ষণে বাচ্চাদের দুধ এসে গেছে। ও ঠিক করল আগে নিজে খাবে, তার পর বাচ্চাদের খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও একটু ঘুমনোর চেষ্টা করবে। হোটেলে স্নানের পরে শরীর এখন ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু তা-ও সব সেরে বাচ্চাদুটোকে খাইয়ে দিতেই ওরা ঘুমিয়ে পড়ল। হোটেলের রিসেপশনে ফোন করে ওকে ভোর চারটেয় তুলে দিতে বলে আরও একবার গাড়ির কথা মনে করিয়ে দিল। তার পর বালিশে মাথা রাখল বটে, কিন্তু ঘুম আর আসে না। ক্রমাগত সকালের ওই ঘটনা, ঈশিতার চিৎকার-শীৎকার, আন্দামান থেকে ফেরা অবধি ঈশিতার আচরণ, ওর বাড়ির লোকের আচরণ, গুঞ্জার ছেলেমানুষি মাখা ভালবাসা সব মনে পড়তে লাগল। ছোট থেকে বহু কষ্ট করে বড় হলেও সৌমাভ সেই ভাবে কখনও কাঁদেনি। আজ কিছুক্ষণ কাঁদল। তার পর একসময় ক্লান্ত শরীর-মন নিয়ে ঘুমিয়েও পড়ল।

ভোরে সময়মতো উঠে দ্রুত বাথরুমের কাজ সেরে সব গুছিয়ে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে নীচে নেমে দেখল গাড়ি রেডি। চালককে সব বুঝিয়ে একটাই অনুরোধ করল, ‘‘খুব সাবধানে চালাবেন, এই দুটো শিশুর সেফটি আপনার হাতে। আর যদি পারেন, বেলা বাড়ার আগেই যতটা বেশি জোরে চালিয়ে এগোনো যায়, দেখুন।’’ গাড়ি পাঁচটার আগেই রওনা হয়ে গেল। চালকের অসাধারণ হাত এবং বারিপদা যাওয়ার ভিতরের রাস্তাঘাট জানা থাকায় ওরা দশটার একটু পরেই পৌঁছে গেল বারিপদা। ইতিমধ্যে একবার দুটো বাচ্চাই জেগে ওঠায় হোটেল থেকে আনা দুধ ওদের খাইয়ে দুটোকে দুই থাইয়ে বসিয়ে দিল। ওরা নিজেদের মতো ব্যস্ত হয়ে গেল। পথে একফাঁকে গাড়ি থেকে নেমে জয়ন্তদের বাড়ির ঠিকানাটা জেনে নিল উড়িষ্যার বন দফতরের এক পরিচিত লোকের থেকে। যদিও তাকে বলল না যে ও এখন সেখানে যাচ্ছে। বলল, পরে একসময় দেখা করতে যদি যায়, তাই ঠিকানাটা দরকার। সৌমাভ জানে, ঈশিতার কীর্তিকলাপ কাল ও ফাঁস করার পরে এবং কুট্টি-মুট্টিকে নিয়ে চলে আসার পরে এ বারে ওকে এবং কুট্টি-মুট্টিকে খোঁজা শুরু করবে ঈশিতাদের বাড়ির লোক। যে ভাবেই হোক বিয়ে দিয়ে দেওয়া মেয়েকে কলঙ্কমুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠবে ওদের বাড়ির লোক। তার আগেই দুই সন্তানকে নিয়ে ওকে সরে যেতে হবে নিরাপদ জায়গায়।

বিস্তর খোঁজাখুঁজি করে সৌমাভ যখন জয়ন্তর ছোটখাটো একতলা বাড়িটার দরজার বেল বাজাল, তখন বেলা ১১টা। দরজা খুলে একটা অচেনা লোক, কোলে দুটো দুধের শিশু— এই সব দেখে চমকে গেল জয়তী। সৌমাভ নিজের পরিচয় দিতেই জয়তী ওকে চিনতে পারল। তিন বছর দিল্লিতে একই ঘরে থাকত সৌমাভ ও জয়ন্ত। দু’জনেই দু’জনের খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। সৌমাভর সব কথাই ওকে জয়ন্ত বলেছিল। ফলে আড়ষ্টতা কেটে গেল অল্পক্ষণের মধ্যেই। ওদের বাড়ির সর্বক্ষণের অল্পবয়সী কাজের মেয়েটির হাতে দুটো শিশুকে দেখভালের ভার দিয়ে দু’জনে কথা বলতে বসল।

সৌমাভ খেয়াল করল, জয়তীর বয়স ২৩-২৪ মতো। দেখতে খারাপ না, শরীরস্বাস্থ্যও বেশ আকর্ষণীয়। স্বামী হারানোর যন্ত্রণা থাকলেও তা এই কয়েক দিনে অনেকটাই সামলে উঠেছে। জানতে পারল, সরকারের তৎপরতায় সে দিন রাতেই জয়ন্তর দাহ মিটেছে। জয়ন্তর বাড়ির লোকজনের পাশাপাসি জয়তীর মা-বাবা এমনকি দাদা-বৌদিও এসেছিলেন। কিন্তু পরের দিনই তাঁরা সকলে ফিরে গেছেন। আসলে জয়ন্তর সঙ্গে জয়তীর প্রেমের বিয়েটা দু’বাড়ির কেউই মেনে নেয়নি। তাই এই অবস্থাতেও তাঁরা পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টে নানা রকম দোষারোপ করে যে যার মতো চলে গেছে। ও নিজের মতো একাএকাই কাছের একটা মন্দিরে গিয়ে শ্রাদ্ধের কাজ করেছে। সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল সৌমাভ! জয়তী অবশ্য এ সব নিয়ে একটুও ভেঙে পড়েনি। বরং বলল, ওর চাকরির ব্যাপারটা দ্রুত প্রসেসে চলে যাবে বলে সে দিনই মন্ত্রী নিজে আশ্বাস দিয়েছেন। তখন ও কোথায় থাকবে জানে না, তবে আর বিয়ে করার ইচ্ছে নেই ওর। বাকি জীবনটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই কাটিয়ে দেবে, সে মনের জোর ওর আছে। দরকারে কোনও শিশুকে দত্তক নেবে। সব শুনে সৌমাভ ওকে বলল, ‘‘আপনি কালই একবার দেখা করুন। এ দিক থেকে চিঠিটা ছাড়া হলে বাকিটা আমি দেখে দেব, চিন্তা করবেন না।’’ জয়তী ওকে অনুরোধ করল আপনি ছেড়ে তুমি বলতে, কারণ বয়সে জয়ন্ত ওর চেয়ে অনেক বড়। হাসিমুখে সে কথা মেনে নিল সৌমাভ। তার পর ওদের বাড়ির ফোন থেকেই দিল্লিতে মাথুর স্যারকে ফোন করে জয়ন্তর ব্যাপারটা বলতেই তিনি বললেন, ‘‘আমি শুনেছি। ওর স্ত্রী চাকরিটা পাবেন। যদিও শুরুতে ক্লারিকাল পোস্ট হবে, তবে পরে পরীক্ষা দিয়ে প্রোমোশান পাবেন অনেক। বয়স কম, ফলে অসুবিধা হবে না। অনেক সিনিয়ার পোস্টে থেকেই রিটায়ার করতে পারবেন। তবে চিঠি না এলে তো কিছু করতে পারব না রে! আর তুই কবে জয়েন করবি ভদ্রায়? ওখানে কিন্তু খুব চাপ হবে। অনেক কাজ দেখার আছে। তার পর একগাদা জায়গায় পরপর ট্রান্সফার নিবি। যা-ই কর, নিজের সার্ভিস বুকটা ঠিক রাখিস আর শরীরের যত্ন নিস। বউমাকে সাবধানে রাখিস। ছেলেমেয়েদেরও। কেমন? আর আমি দেখছি, আমার সেক্রেটারিকে দিয়ে ওদের মন্ত্রীকে বলে কাল-পরশুর মধ্যে জয়ন্তর স্ত্রীর বিষয়টা প্রসেস করে দিতে। ওনাকে বলিস, কাল-পরশুর মধ্যে ডিএম অফিসে দেখা করতে। আর তো ক’টা দিন। তার মধ্যে যতটা পারি, ভাল কাজ করে রাখি’’ বলেই হোহো করে হেসে উঠে ফোনটা রাখলেন। ও মাথুর স্যারকে ঈশিতার প্রতারণা ও নোংরামির কথাটা বলতে পারল না কিছুতেই। বলতে পারল না, কী অবস্থায় ও আছে এবং কেনই বা এই ভাবে কলকাতা ছেড়ে পরপর ট্রান্সফারের আব্দার করেছে মাথুর স্যারের কাছে।  

ফোনটা রেখে জয়তীকে সব কথা খুলে জানাল। বলল, ‘‘তুমি কালই যাও ডিএম অফিসে। দেখো মন্ত্রী কী করেন। আর সব ডকুমেন্ট গুছিয়ে নিয়ে যাবে। মনে হচ্ছে, দিন পনেরোর আগেই তোমার কেসটা হয়ে যাবে।’’ সৌমাভর ফোন এবং এখন এই বলার ভঙ্গিতে জয়তী বুঝল, লোকটা বেশ প্রভাবশালী। না হলে এই ভাবে কথা বলতে পারত না। ফোনের ওপারের লোকটা কে ছিলেন, সেটা ও বুঝতে পারেনি। এটুকু বুঝেছে, তিনি দিল্লির কোনও বড় কর্তা। অনেকটা নিশ্চিন্ত হল। তার পর সৌমাভকে দ্রুত স্নান সেরে খেয়ে নেওয়ার অনুরোধ করল। জয়ন্ত মারা যাওয়ার পর থেকে মাছ-মাংস খায়নি ও, তাই নিয়ে দুঃখ করতেই সৌমাভ বলল, ‘‘ও সবের কোনও প্রশ্নই নেই। জয়ন্ত আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এই অবস্থায় তুমি মাছ-মাস দিলেও আমি খেতাম না। স্রেফ সেদ্ধভাত। তা ছাড়া কাল থেকে খুব হেকটিক চলছে, ও সব খেলে শরীর খারাপ লাগবে। তুমি বরং এক কাজ করো, তুমিও স্নান সেরে এসো, একসঙ্গেই খেয়ে নিই। তার পর একটু রেস্ট নেব।’’

খেতে বসে কথায় কথায় জয়তী জানতে চাইল সৌমাভর বিষয়ে। সৌমাভর এখন আর কোনও সঙ্কোচ নেই। অকপটে আন্দামানে বিয়ে থেকে গত কাল দুপুরের ঘটনা— সব উগড়ে দিল। এমনকি আলাদা করে গুঞ্জার কথাও বলে বলল, ‘‘জানো তো, ওদের বাড়িতে আমি গোড়া থেকেই কেমন অচ্ছুৎ ছিলাম। বুঝতে পারতাম, কিন্তু ঈশিতার কথা ভেবে চুপ করে যেতাম। ঈশিতার তখন অবশ্য আমার কথা নিয়ে ভাবারই সময় ছিল না। সেটাও বুঝতে পারতাম। ও তখন যে নিজেকে বদলাতে শুরু করেছে, সেটা অবশ্য বুঝতে পারিনি। কিন্তু ওই একটা পুঁচকে মেয়ে গুঞ্জা আমাকে সবথেকে বেশি বুঝত। আমি না বললেও বুঝে যেত কত সময়! ওর জন্য খারাপ লাগে।’’ কথায় কথায় ঈশিতা কোন কলেজের ছাত্রী জেনে চমকে উঠল জয়তী। ওই একই কলেজ থেকে তো ও নিজেও পাশ করেছে। টানা তিন বছর কলেজের জিএস হয়েছিল। এমনকি পাশ করার পরেও প্রায় বছর তিনেক কলেজ ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সূত্রে কলেজে প্রায়ই যেত। গত বছরও জয়ন্তে নিয়ে কলকাতায় এসেছিল যখন, তখন কলেজের রিউইনিয়নেও গিয়েছিল জয়তী। ঈশিতার কোনও ছবি আছে কি না জানতে চাইলে সৌমাভ ব্যাগ খুলে অ্যালবামটা বের করে ছবিটা দেখাতেই চিনতে পারল ও। গত বছরই ইলেভেন থেকে টুয়েলভে ওঠা এই মেয়েটা গান গেয়ে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ভাল আবৃত্তিও করেছিল। অন্য দিকে রাহুল নামের ছেলেটা সম্পর্কেও ও সে বারই শুনেছিল। কিন্তু ঈশিতাকে দেখে তো মনে হয়নি তখন যে ও রাহুলের সঙ্গে প্রেম করে। অবশ্য কয়েক ঘন্টায় কী বা বোঝা যায়! বরং রাহুলকে নিয়ে ‘দুবে মানেই দেবে’ অশ্লীল রসিকতা শুনে খুব বিরক্ত হয়েছিল জয়তী। কলেজ ইউনিয়নের মেয়েদের বলেছিল, তোরা কিছু করতে পারিস না? বিয়ে এবং দুই সন্তানের মা হওয়ার পরেও সেই ছেলের সঙ্গে এই ভাবে জড়িয়ে ওই নোংরামি করেছে ঈশিতা? বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল জয়তী। সৌমাভর প্রতি সহানুভূতিতে ওর মনটা ভরে গেল। অনেকক্ষণ চুপ করে সব কথা নিজের মধ্যেই নাড়াচাড়া করল। তার পরে মুখ তুলে বলল, ‘‘সৌমাভদা, তোমার কথা জয়ন্তর কাছে অনেক শুনেছি। তুমি অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় পৌঁছেছো। ও তোমাকে যে ভাবে ঠকিয়েছে, আর সেটা জানতে পেরে তুমি যেটা করেছো, সেটা একদম ঠিক। আমি বলছি তোমায়, তুমি কোনও ভুল করোনি।’’ গত কাল থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা পরে এই প্রথম কারও কাছে সব কথা বলে এমনিতেই অনেক হাল্কা বোধ করছিল সৌমাভ। জয়তীর কথায় এ বার ও প্রায় কেঁদে ফেলল কৃতজ্ঞতায়। জয়তীর একটা হাত ধরে ধরা গলাতেই বলল, ‘‘তোমাদের মতো বন্ধু থাকে বলেই কিছু লোক অনেক বাধা টপকেও মাথা উঁচু করে থাকে। থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইওর মরাল সাপোর্ট জয়তী, থ্যাঙ্ক ইউ!’’

ও দিকে জয়তীর বাড়ির কাজের মেয়েটার কোলে দিব্যি ততক্ষণে স্নান করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে দুই খুদে। জয়তীই জানাল, মেয়েটি অতি গরিব ঘরের। ওর নাম সুভদ্রা। ওদের বাড়ি ঢেঙ্কানলে। আদিবাসী হলেও ক্লাস টেন অবধি পড়েছিল গ্রামের কলেজে। রেজাল্টও খারাপ না। ওর মা গ্রামের এক মন্দিরের পুরোহিতের সঙ্গে পালিয়ে যায়, তার পর গ্রামে টিকতে না পেরে বাবাকে নিয়ে পালিয়ে আসে শহরে। তখনই একজনের সূত্রে ওকে নিজের বাড়িতে রেখে দেয় জয়তীরা। সে প্রায় দু’বছর হতে চলল। মেয়েটি প্রায় ওদের ঘরের লোক। বয়স প্রায় ঈশিতারই মতো। জয়তীকে দিদিমণি বলেই ডাকে।

খেয়ে উঠে দুই ছেলেমেয়েকে পাশে নিয়ে দুপুরে প্রায় ঘন্টাতিনেক ঘুমিয়ে সৌমাভ যখন উঠল, তখন প্রায় সন্ধ্যা। এখন ওর অনেক ফ্রেস লাগছে। ওদিকে দুই খুদে উঠেই কান্নাকাটি শুরু করতেই সুভদ্রা এসে ওদের কোলে নিয়ে বাইরে চলে গেল। তার পর ভাল করে দুধ খাইয়ে ফ্রেস করে গায়ে গরম জামা চাপিয়ে ওদের নিয়ে খেলতে শুরু করল। সৌমাভও উঠে ফ্রেস হয়ে চা খেয়ে জয়তীদের বাড়ির সামনের ছোট্ট বাগানটায় বসল। দেখল, কর্তাগিন্নি মিলে বেশ কয়েকটা গাছ লাগিয়েছে। এর মধ্যেই জয়তী এসে ওর সঙ্গে গল্প জুড়ে দিল। নানা কথা, নানা বিষয়। সৌমাভ আসার পরে ওর সঙ্গে কথা বলে এবং নিজের ভবিষ্যত নিয়ে আশা পাওয়ার পরে ওর মুখচোখ এখন অনেক ফ্রেস। দু’একটা হাসিঠাট্টাও হল দু’জনে। কথায় কথায় গত এগারো মাসের অনেক টুকরো ঘটনা, টুকরো জিনিস জয়তীকে বলল সৌমাভ। জয়তীও চুপ করে শুনল, কাঁদলও নীরবে। ও বুঝে গেছে, যত বলবে, তত হাল্কা হবে লোকটা। একই সঙ্গে বুঝল, ঈশিতাকে কী পাগলের মতো ভালবাসে সৌমাভ, যে এত কিছু সহ্য করেও এগারো মাস ধরে শুধু একতরফা ভালই বেসে গেছে প্রতিদানের আশা না করে। এবং এও বুঝল, আজও সৌমাভর মনে ঈশিতা ছাড়া অন্য কোনও মেয়ে নেই। রাত বাড়লে এক সময় ঘরে এল। সৌমাভ অবাক হয়ে দেখল, ওকে দেখেও দুই খুদে ওর কোলে না এসে বরং হাতপা নেড়ে দুর্বোধ্য ভাষায় সুভদ্রার সঙ্গে খেলে যাচ্ছে। সুভদ্রাও ওদের সঙ্গে তাল দিয়ে হেসে গড়িয়ে যাচ্ছে। ভাল করে লক্ষ্য করে দেখল, আদিবাসী হলেও সুভদ্রার গায়ের রং তুলনায় পরিস্কার। শরীর-স্বাস্থ্যও বেশ ভাল। সেটার একটা কারণ হতে পারে, এই বাড়িতে প্রায় দু’বছর ধরে যত্নে থাকার ফলে হয়েছে। ওর সুভদ্রাকে খুঁটিয়ে দেখা দেখে জয়তী চোখের ইশারায় মশকরাও করল।
Like Reply
#84
(২৬)


খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি...

রাতে খাবারের পরে আজ সুভদ্রার সঙ্গেই ঘুমোল দুই খুদে। এর মধ্যে বাবার কোলে এসে কিছুক্ষণ কাটালেও সুভদ্রা ডাকতেই ওর কোলে দিব্যি চলে গেল। সুভদ্রা দু’জনকে নিয়ে শুতে গেলে সৌমাভ বারান্দায় এসে একটা ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। ওর এখন ঘুম পাচ্ছে না। শরীর-মন অনেক হাল্কা লাগছে। কিছুক্ষণ পরে খাবার টেবিল গুছিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বাইরে এসে জয়তী প্রশ্ন করল, ‘‘সৌমাভদা, তুমি সিগারেট খাও? আসলে জয়ন্ত খেত তো, তাই জিজ্ঞাসা করছি। কিছু মনে কোরো না প্লিজ।’’ সৌমাভ কোনও দিন সিগারেট-মদ না খেলেও আজ এই কথাটায় কেমন যেন হয়ে গেল। বলল, ‘‘খেতাম না, কিন্তু এবার থেকে খাব’’, বলেই হেসে ফেলল। জয়তীও হেসে ফেলে ভিতরের ঘর থেকে একটা প্রায় গোটা প্যাকেট সিগারেট আর লাইটার এনে ওকে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে কাছেই বসল। রাতে অনেকক্ষণ অবধি গল্প করল দু’জনে। জয়তীই জানাল, বিয়ের পরের কয়েকটা মাস বাদ দিলে জয়ন্ত অফিস নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকত। যে কারণে ওদের এখনও সন্তান হয়নি। ও বারবার বলার পরেও জয়ন্ত নাকি গা করত না। বলতে বলতে একসময় কেঁদে ফেলল জয়তী। সৌমাভ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘‘কেঁদো না। এখন আর কী হবে? এগুলো আগে জানলে ওকে না হয় বলতাম। কিন্তু আমি নিজেও গত তিন বছর আন্দামানে আর এক বছর ধরে এই সবে জড়িয়ে এমন অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম যে....’’, কথাটা শেষ করতে পারল না সৌমাভ। জয়তী মুখ ঝামটে বলল, ‘‘বলেও কোনও লাভ হত না। ওর বাবা হওয়ার ক্ষমতাটাই ছিল না যে’’, বলেই উঠে চলে গেল। সৌমাভ বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থেকে আর একটা সিগারেট খেয়ে শুতে গেল, তখন প্রায় মধ্যরাত।

সকালে বেলা করে ঘুম থেকে উঠে সৌমাভ দেখল, দুটো বাচ্চাকে নিয়ে সুভদ্রা বিস্তর কুস্তি করছে আর নিজের ভাষায় কথা বলতে বলতে হেসেই যাচ্ছে। ওদের পাশে দাঁড়িয়ে সে সব দেখেশুনে হেসে গড়িয়ে পড়ছে জয়তীও। গত কাল রাতের ওই সব কথার কোনও ছাপ ওর চোখেমুখে নেই। সৌমাভকে উঠতে দেখে জয়তী বলে উঠল, ‘‘তুমি তাড়াতাড়ি চা-জলখাবার খাও। আমার রান্নাবান্না শেষ। আমি একটু ডিএম অফিসে যাব ওই চিঠির কিছু এগোল কি না, জানতে। তুমি যাবে আমার সঙ্গে?’’ এমনিও আজ সারাদিনে সৌমাভর কোনও কাজ নেই। বাচ্চাদুটো যে ভাবে সুভদ্রার সঙ্গে লেপ্টে আছে, তাতে ও বেশ নিশ্চিন্তই। ও বলল, ‘‘আমি চট করে ফ্রেস হয়ে আসছি, অল্প চা-বিস্কুট খেয়েই চলো দেখি কী হল’’, বলেই বাথরুমে গেল। জয়তীও রান্নাঘরে ঢুকে চা-জলখাবার বানিয়ে বাচ্চাদুটোর দুধ ইত্যাদি নিয়ে সুভদ্রাকে টুকটাক নানা কাজের কথা বলে দিল এই ফাঁকে। সৌমাভ ফ্রেস হয়ে এসে চা আর দুটো টোস্ট কোনও রকমে খেয়েই জয়তীকে বলল, ‘‘দেরি না করে দ্রুত চলুন ম্যাম,’’ বলেই হেসে ফেলল। জয়তীও হাসতে হাসতে ওর পিঠে একটা আলতো কিল মেরে দু’জনে একসঙ্গে বেরোল।

ডিএম অফিসে যেতেই জয়তীকে আজ বিস্তর খাতির করা হল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা পরে খোদ ডিএম ওদের নিজের ঘরে ডেকে কথাও বললেন। জানালেন, আজ-কালের মধ্যেই সম্ভবত চিঠি এসে যাবে। সঙ্গে সঙ্গেই ওকে খবর দিয়ে বা ফোন করে ডেকে পাঠিয়ে হাতে চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হবে। খবরটা পেয়ে জয়তীর মতোই মনটা খুশি হয়ে গেল সৌমাভর। দু’জনে হাসিমুখেই বেরিয়ে এল ডিএম অফিস থেকে।

বাড়ি ফিরে দেখল, সুভদ্রা বাইরের বসার ঘরে দুটোকে নিয়ে খাওয়াতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে যাচ্ছে। এই বারে হাল ধরল সৌমাভ। গত কাল এ বাড়িতে পা দেওয়া অবধি ছেলেমেয়েকে সেই ভাবে সৌমাভ ধরেইনি বলা যায়। এসে অবধি ওরা সুভদ্রার কাছেই রয়েছে, ওই ওদের জন্য সব করেছে। এ বার সৌমাভ দুজনকে একসঙ্গে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ আদর করে শান্ত করল। তার পর সুভদ্রাকে বলল, ‘‘এ বারে তুমি পারবে, না আমিই খাইয়ে দেব?’’ সুভদ্রা ওর কথা বুঝতে না পেরে জয়তীর দিকে তাকাতে জয়তী ওর ভাষায় বুঝিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে নিজের বেডরুমে ঢুকে গেল। সুভদ্রা একগাল হেসে দুটোকে কোলে নিতে গেল। সে সময় আচমকাই সুভদ্রার ভরাট বুকে হাত লেগে গেল সৌমাভর। অনিচ্ছাকৃত হলেও সৌমাভ প্রচন্ড লজ্জায় পড়ে গেল। সুভদ্রার কিন্তু কোনও বিকার নেই, ও দুটোকে নিয়ে নিজের ভাষায় ওদের সঙ্গে বকবক করতে করতে খাওয়ানোর জন্য পাশের ঘরে নিয়ে গেল। আর নিজের অস্বস্তিটা চাপা দিতে তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়াল সৌমাভ।
Like Reply
#85
(২৭)


অন্তরে পেয়ে বাহিরে হারাই



পাশের ঘরের দরজায় দাঁড়ানো জয়তীর চোখে পড়েছিল ব্যাপারটা। সুভদ্রা ঘর ছাড়তেই মুচকি হেসে একটা ইঙ্গিত করে বলল, ‘‘খারাপ না কিন্তু’’, বলেই পাশের ঘরটায় ঢুকে গেল। সৌমাভ আরও অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়ে ব্যাপারটায় যে ওর কোনও দোষ নেই বোঝাতে একেবারে বেখেয়ালে জয়তীর বেডরুমে ঢুকে পড়েই থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। জয়তী ততক্ষণে শাড়ি-ব্রাউজ খুলে শুধু একটা প্যান্টি পরে ব্রায়ের হুক খুলছে। ও তড়িঘড়ি বেরোতে যেতেই জয়তী বলল, ‘‘অনেক হয়েছে, এবারে আমার ব্রায়ের হুকটা খুলে দাও, বীরপুরুষ কোথাকার’’ বলে হাসতে হাসতে এসে সৌমাভর হাত ধরে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দরজায় ছিটকিনি তুলে চোখেমুখে দুষ্টুমি মাখিয়ে তাকিয়ে রইল।

২৩-২৪ এর ভরাট যুবতী শরীর, নিটোল দুটো মাই, অল্প মেদ জমা কোমর, উল্টোনো কলসির মতো পাছা, সুঠাম পা, ঘাড় বেয়ে পিঠের মাঝখান অবধি মোটা চুলের গোছা— সব মিলিয়ে মারাত্মক সেক্সি শরীর জয়তীর। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাবে বুঝে সৌমাভ আরও থতমত খেয়ে গেল। তার উপর দুটো ঘর পরে সুভদ্রা আছে ওরই দুই সন্তানকে নিয়ে, এ দিকে ভর দুপুরবেলা— ওর মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। বিষয়টা বুঝে ওই অবস্থাতেই এসে সৌমাভর হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল জয়তী। তার পরে নিজেই ব্রায়ের হুক খুলে প্যান্টিও খুলে ফেলল নিঃসঙ্কোচে। তার পরে একটা নাইটি হাতে নিয়ে সৌমাভর মুখটা তুলে বলল, ‘‘তুমি হয়তো আমাকে নোংরা মেয়ে ভাবছ, ঈশিতার মতো। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমার বন্ধু গত দু’বছরে আমাকে ছুঁয়েও দেখেনি! আমি প্রথমে বুঝতাম না, ভাবতাম সারাদিনের কাজের চাপে ক্লান্ত হয়তো। পরে একদিন চেপে ধরায় বুঝেছিলাম, ওর ইরেকশনের সমস্যা আছে। ওর সিমেনও খুব পাতলা। ডাক্তাররা বলেই দিয়েছিলেন, ও কোনও দিন বাবা হতে পারবে না। সেটাও মেনে নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু একটা শিশুকে দত্তক নেওয়ার জন্য হাতেপায়ে ধরেছিলাম। উনি বলেছিলেন, অন্যের রক্তকে পালন করতে পারবেন না! কোনও দিন আমার কথাটা ভাবেইনি তোমার বন্ধু, সরি, কিছু মনে কোরো না। তা ছাড়া ও বরাবরের মতো চলে গেছে, তাই ঈশিতার মতো ওকে ঠকানোর কাজও আমি করছি না। শুধু তুমি একটা কথা বলো তো, আমি কী নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাব? আজ যদি চাই, তোমার ওই দুটোর মতো অন্তত একটাও যদি আমার কোলে আসে, সেটা খুব দোষের? আমি কি এত নোংরা?’’ বলে ওই অবস্থাতেই সৌমাভর বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠল জয়তী।

সৌমাভ এই বারে বুঝল। প্রায় এক বছর পরে কোনও নগ্ন নারী শরীর তার সামনে, সমর্পণের অপেক্ষায়। বহু দিন পরে সামনে মাংস দেখলে বাঘের যেমন হয়, তেমনই ওর শরীরও সাড়া দিচ্ছে। কিন্তু তার মধ্যেই নিজেকে সংযত রেখে ও আস্তে করে জয়তীর মুখটা তুলে ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বলল, ‘‘তুমি নোংরা নও, খারাপ তো কোনওভাবেই নও। কিন্তু জয়ন্ত আমার বন্ধু ছিল, এখন আমি তোমাকে ওর মতো করে কিছু করলে সেটা অন্যায় হবে না? তা ছাড়া আমি যদি আজ তোমাকে আদর করি, শরীরে শরীর মেলাই, তা হলে আমার সঙ্গে ঈশিতার কী ফারাক থাকবে বলো?’’ জয়তী কথাটা শুনে চমকে উঠল। বুঝল, সৌমাভ অন্য ধাতুতে গড়া। ও মাথা নিচু করে বাথরুমে ঢুকে গেল। ঢোকার আগে গলায় দুষ্টুমি নিয়ে সৌমাভর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, ‘‘এখন আলাদা করে স্নান করতে গেলে দেরি হয়ে যাবে, চলো একসঙ্গেই স্নান করি।’’ জয়তীর এই কথাটায় ফের আন্দামান থেকে ফিরে আসার আগের কয়েকটা দিনের ছবি ভেসে উঠল সৌমাভর চোখে। ও আর ঈশিতা কী ভাবে বাথরুমে ঢুকে স্নানের নামে চোদাচুদিতে মেতে উঠত সেই সময়! দ্রুত নিজেকে সামলেও নিল। যে প্রতারণার শিকার ও হয়েছে, তাকে আর নিজের তো বটেই কুট্টি-মুট্টির জীবনেও ছায়া ফেলতে দেবে না ও। নিজের দুই ছেলেমেয়ের জন্যই ওকে অনেক দিন ধরে অনেক কাজ করতে হবে। ও হেসে বলল, ‘‘না তুমি স্নান করে নাও, আমি একটু বাইরে বসি’’, বলে ঘরের বাইরে চলে গেল।


স্নান সেরে বেরিয়ে জয়তী দেখল সৌমাভ বাইরের বারান্দায় বসে আছে। ও সৌমাভকে স্বাভাবিক গলাতেই স্নান সেরে আসতে বলল। তার পর দু’জনে মিলে খেল, অনেকক্ষণ গল্পও করল। বাথরুমে গিয়ে জয়তী নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিল। ওর শরীরের খিদে আছে এটা ঠিক, সৌমাভ জয়ন্তর বয়সী, দেখতেও বেশ ভাল, স্টাউট চেহারা— সব মিলিয়ে প্রেমে পড়ারই মতো। তবু কোথাও যেন অন্যদের থেকে অনেক আলাদা। ও ঠিক করল, বাকি ক’টা দিন সৌমাভর সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই মিশবে। সেই মতো খাবার টেবিলে অনেকক্ষণ গল্প করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করল ও। সৌমাভও ওর মনের অবস্থা বুঝে সেই ভাবেই কথা বলে গেল। কেউ বুঝতেই দিল না একে অন্যকে, কয়েক ঘন্টা আগেই কী হতে চলেছিল পাশের ঘরটায়। বরং খাওয়া শেষের মুখে সৌমাভকে বলল, ‘‘তুমি জয়ন্তর যেমন বন্ধু ছিলে, তেমনই আমারও বন্ধু হও না প্লিজ। কাল এসে থেকে তুমি আমার সঙ্গে বন্ধুর মতোই ব্যবহার করেছো, আমাকে শান্ত করেছো, আমার ভালর জন্য দিল্লিতে ফোন করে তাগাদা দিয়েছো। তুমি সত্যিকারের বন্ধু। আর জানো তো, একসঙ্গে তিন পা হাঁটলে বন্ধু হয় বলে একটা প্রবাদ আছে। আমি কাল থেকে তোমার সঙ্গে পা মিলিয়ে অন্তত তিনশো পা হেঁটেছি।’’ সৌমাভ হেসে ফেলল।  খাওয়া মিটলে বাইরের ঘরের সোফায় শুয়ে পড়ল সৌমাভ। ওর শরীর, মন দুটোই এখনও প্রচন্ড ক্লান্ত। বিষয়টা বুঝে জয়তীও আর ঘাঁটাল না। টেবিল গুছিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে সেও ঘুমিয়ে পড়ল কয়েক মিনিটের মধ্যে।
[+] 10 users Like Choton's post
Like Reply
#86
(২৮)


এবার উজাড় করে লও


সেদিন বিকেলে সৌমাভর ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে। উঠে দেখল শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। কারণটা বুঝতে ওর অসুবিধা হল না। গত প্রায় ৪৮ ঘন্টা ধরে ওর উপর দিয়ে যে ঝড় গেছে, গত এগারো মাস ধরে যে অবহেলা উপেক্ষা আর প্রতারণা ওকে পেতে হয়েছে, আজ যেন অনেকটা শান্ত লাগছে নিজেকে। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে বারান্দায় এসে দেখল, সুভদ্রা দুটোকে নিয়ে সামনের ছোট মাঠটায় মাদুর পেতে খেলছে। খেলছে মানে দুর্বোধ্য, অর্থহীন কিছু শব্দ আর হাসি ছাড়া বোঝা গেল না। ওর বেশ ভাল লাগল। কোথাকার কোন আদিবাসী মেয়ে, রক্তের সম্পর্ক তো দূর, কয়েক ঘন্টা আগেও চিনত পর্যন্ত না, অথচ গত কাল থেকে মায়ের স্নেহে দুটো শিশুকে পরম যত্নে রাখছে ওই মেয়েটাই। অথচ ওদের আসল মা? মনটা ফের বিষিয়ে গেলে একটু। এর মধ্যেই জয়তী ওকে চা দিয়ে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসল। টুকটাক কথার মধ্যেই সন্ধ্যে গাঢ় হচ্ছে দেখে বাচ্চাদুটোকে নিয়ে সুভদ্রাকে ঘরে যেতে বলল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সুভদ্রা উঠে ওদের নিয়ে ঘরে ঢুকে গেল।

বারান্দায় পাশাপাশি বসে চা খাওয়ার পরে সৌমাভ একটা সিগারেট ধরাল। গত কাল রাত থেকে শুরু করার পরে খুব বেশি না খেলেও আজ সারা দিনে এটা ওর তৃতীয় সিগারেট। একমনে সিগারেটে টান দিতে দিতে লাল। জয়তী ওর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘তোমার খারাপ লাগেনি তো? আসলে আমি নিজেকে....’’ কথাটা শেষ হল না। সৌমাভ বলল, ‘‘প্লিজ, তুমি এরকম করলে আমি নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাব।’’ সৌমাভ ফের একটা সিগারেট ধরাল, আর জয়তী চেঁচিয়ে সুভদ্রাকে চা করতে বলল। চা খেতে খেতে দু’জনে এমনি নানা কথা বলতে শুরু করল। যদিও তার অনেকটা অংশ জুড়ে রইল ঈশিতা, ওদের বাড়ির লোকের কথা, ওদের মধঅযেকার ফাটল ও কবে টের পেয়েছিল, কিন্তু ঈশিতাকে বলতে গেলেও কথাই হত না। এত ব্যস্ত রাখত নিজেকে। শেষে গুঞ্জা ওকে চেপে ধরায় কিছু কিছু কথা বলেছিল। সুভদ্রা মন দিয়ে শুন। বুঝল, সৌমাভ অনেক যন্ত্রণা থেকে কথাগুলো বলছে। রাতের খাবার দেওয়ার সময় আবার দুটোকে নিয়ে অনেকক্ষণ খেলা করল সৌমাভ। এই দুটোই ওর প্রাণ। যে করেই হোক ঈশিতাদের পরিবারের ছোঁয়া বাঁচিয়ে এদুটোকে বড় করতে হবে, এখন এটাই ওর চিন্তা। কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তা হল, ও নতুন জায়গায় গেলে সেখানে এদুটোকে দেখবে কে? সৌমাভ ভেবে নিল, পরে জয়তীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা হবে। রাতে খেয়ে উঠে আবার বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে অনেক দিন পরে গান ধরল সৌমাভ, নিচু কিন্তু ভরাট গলায়,

‘‘খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে।

কত রাত তাই তো জেগেছি বলব কী তোরে॥

প্রভাতে পথিক ডেকে যায়, অবসর পাই নে আমি হায়--

    বাহিরের খেলায় ডাকে সে, যাব কী ক'রে॥’’

শেষের লাইনটা গাওয়া থামতেই ওকে চমকে দিয়ে পাশ থেকে জয়তীর নীচু কিন্তু সুরেলা গলা ভেসে এল, তবে কয়েকটা লাইন বাদ দিয়ে ধরল সে—


‘‘যে আমার নতুন খেলার জন, তারি এই খেলার সিংহাসন,

    ভাঙারে জোড়া দেবে সে কিসের মন্তরে॥’’

শেষ দুটো লাইন গেয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে মুখ ঢাকল জয়তী। সৌমাভ ওর মানসিক যন্ত্রণা বুঝে কিছু বলল না, শুধু আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘‘নিজেকে শক্ত করো। অনেক পথ যেতে হবে তোমাকে।’’ কথাটা শুনেই সৌমাভর বুকে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে জয়তী বলল, ‘‘তোমার বন্ধু যদি এইটুকুও বুঝত, আমার কোনও দুঃখ থাকত না। কিন্তু অত ঝামেলা করে বিয়ে করার পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে ও যে এমন বদলে যাবে, ভাবিনি। সত্যি বলছি সৌমদা, অন্য ভাবে নিও না, একটা সন্তান পেলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বাকিটা কাটাতে পারব। তা ছাড়া তোমার মতো বন্ধু পাশে থাকবে, তুমি দেখো, আমি সব সামলে নিতে পারব। আর মন খারাপ করব না, প্রমিস।’’ সৌমাভ ওকে সামলাতে সামলাতে কিছুক্ষণ মজা করল। জয়তীর মনের মেঘটা কেটে গেল অনেকটা। সে দিন অনেকক্ষণ গল্প করল দুজনে বসে। সৌমাভ একসময় দ্বিধা কাটিয়ে জয়তীকে বলল, ঈশিতা সে দিন কী ভাবে রাহুলের উপরে উঠে ওকে কী করছিল এবং সে সময় কী কী বলছিল। ঈশিতার ভাষা এবং আচরণে আরও একবার স্তম্ভিত হয়ে গেল জয়তী। চুপ করে থেকে বলল, ‘‘এই সব কথা স্বামী-স্ত্রীর একান্ত মুহূর্তের কথা। জয়ন্তও আমাকে বলত। প্রথম প্রথম অস্বস্তি হলেও পরে কিন্তু ভাল লাগত, বিশেষ করে ওই সব সময়। কিন্তু নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে? ছিঃ।’’ তার পরেই গলাটা গম্ভীর করে বলল, ‘‘ওর ওই সব কথা এবং কাজেই স্পষ্ট, ঈশিতা রাহুলের সঙ্গেই শুতে চাইত। তুমি ছিলে ওর স্টপগ্যাপ পুতুল। ফলে তুমি যেটা করেছো, সেটা কতটা ঠিক বুঝতে পেরেছো?’’ সৌমাভও সেটা স্বীকার করে নিল। সে দিন রাতে খাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ দুই খুদের সঙ্গে কোস্তাকুস্তি করল সৌমাভ। তাতে যোগ দিল জয়তী এবং সুভদ্রাও। একটা সুখী পরিবারের আবেশ যেন। তার পর রাতে খেয়ে সুভদ্রা বাচ্চাদুটোকে কোলে তুলে চলে যেতেই ও একটা সিগারেট ধরিয়ে এসে বসল বাইরের বারান্দায়। একটু পরেই জয়তীও এল। দু’জনে অনেকক্ষণ গল্প করল। জয়ন্তর কী হয়েছিল, ও কখন খবর পেল, বাড়ির লোক আর ফোন করেছিল কি না, এই সব নানা কথার পরে দু’জনে শুতে গেল।

পরদিন সকালে ওর ঘুম ভাঙাল জয়তীই। তাকিয়ে দেখল, বেশ বেলা হয়েছে। প্রায় এগারোটা। জয়তী স্নান সেরে সেজেগুজে একদম বাইরে যাওয়ার পোশাকে। ও অবাক হয়ে তাকাতেই বলল, ‘‘ডিএম অফিস থেকে ফোন করেছিল, চিঠিটা আজই গিয়ে সই করে নিতে হবে। তুমি ফ্রেস হয়ে চা আর হাল্কা জলখাবার খাও। এসে একসঙ্গে খাব। আজ মাছ আনিয়েছি, দুপুরে ভাল করে খাব সবাই মিলে, কেমন? আমি একটু পরেই চলে আসব। তার পর তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে।’’

জয়তী বেড়িয়ে যেতে ও উঠে ফ্রেস হয়ে চা-বিস্কুট খেয়ে দুটো খুদেকে নিয়ে মেতে রইল। এর ফাঁকে টুকটাক সুভদ্রার সঙ্গেও কথা বলল। এই দু’দিনে সুভদ্রা অনেক সহজ হয়ে গেছে ওর কাছে। তবে ওড়িয়া ছাড়া অন্য ভাষা সে রকম বলতে পারে না। হিন্দি বললেও সেটা ভাঙাভাঙা। সৌমাভ জানল, ওরা ঢেঙ্কানল থেকে এসে ভুবনেশ্বরে কয়েক মাস ছিল। তখন একটা রাস্তার ধারের খাবার হোটেলে বাপ-বেটিতে কাজ করত। সেখানে বাবা মারা গেলে কিছু বদ লোক ওর পিছনে পড়ে যায়। সেখানেই বাস-লরির ড্রাইভার-খালাসিদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ও হিন্দি যেটুকু শিখেছে। কিছু কিছু ইংরেজি কথাও জানে, তবে সেসব কলেজে পড়তে গিয়ে জেনেছিল। সৌমাভ বুঝল, মেয়েটির মেধা আছে, ঘষলে উন্নতি করতে পারে।
Like Reply
#87
(২৯)


নিভৃত প্রাণের দেবতা

ঘন্টাদুয়েক পরে জয়তী ফিরল, হাসিমুখেই। ঢুকেই সুভদ্রাকে বলল, বাচ্চাদুটোকে খাইয়ে তুইও খেয়ে নে। আমি একটু পরে খাব, কেমন? বলে সৌমাভর হাতে চিঠিটা দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই সৌমাভ ওর হাত ধরে বলল, একি করছ? জয়তী একটুও দ্বিধা না করে বলল, ‘‘তোমার জন্য এত তাড়াতাড়ি কাজটা পেলাম। এই প্রণামটা তোমার প্রাপ্য।’’ তবু সৌমাভ ওকে প্রণাম করতে দিল না। তার পর খাবার টেবিলেই চিঠিটা নিয়ে দু’জনে আলোচনায় বসল। সুভদ্রা যতক্ষণ খেল, ততক্ষণ দুই খুদের একজন সৌমাভর কোলে, একজন জয়তীর কোলে রইল। চিঠিটা ভাল করে পড়ে সৌমাভ বলল, ‘‘তোমাকে খুব দ্রুত জয়েন করতে বলেছে। মনে হচ্ছে, অন্তত তিন বছর এখানে কাজ করতে হবে। তবে মাইনের যা স্কেল, তা জয়ন্তর প্রায় অর্ধেক। তবে একার পক্ষে খারাপ না। তিন বছর পরে সাধারণত ট্রান্সফার হয়। সেটা আমি দেখছি, যদি তোমাকে খুব তাড়াতাড়িই কলকাতায় ফেরানো যায়। কারণ, যতই হোক, ওটা তোমার নিজের শহর। এখানে একা থাকার তুলনায় ওখানে থাকা তোমার পক্ষে নিরাপদ। বিষয়গুলো আবেগের নয়, যুক্তির। আর একটা জিনিস, এটা এখানকার অফিস তোমায় জয়েন করার পরপরই জানিয়ে দেবে, এই বাড়িটা জয়ন্তর নামে অ্যালট ছিল। জয়েন করার পরেই এটা কিন্তু তোমায় ছেড়ে দিতে হবে। এখানে যতদিন চাকরি করবে, কোনও মেস বা বাসাবাড়ী নিয়ে থাকতে হবে। কলকাতায় গেলে নিজের মতো থাকতে পারবে। আর সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, তোমাকে একটা অন্তত প্রোমোশন পেতে হবে ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা দিয়ে। সেটা পাশ করতে না পারলে কিন্তু পাতি কেরানির দিন কাটাতে হবে।’’

মন দিয়ে সৌমাভর কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে জয়তী বলল, ‘‘আমাকে তো বলেছে, ৩১ ডিসেম্বর অবধি এই বাড়িতে থাকতে পারব। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জয়েন করলে ভাল। তুমি বলো, কী করব?’’ সৌমাভ বলল, দ্রুত জয়েন করে যাও। কিন্তু বাড়িটা পারলে ৮-১০ তারিখের মধ্যে ছেড়ে দাও। তা হলে ডিপার্টমেন্টের লোকেরা অন্তত এটা প্রথম থেকেই বুঝবে, যে তুমি অকারণ সুযোগ নাও না। তুমি চাইলে সরকারের কাছে আবেদন করে আরও ৬ মাস এই বাড়িতে থাকতেই পারো, কিন্তু সেটা সুযোগ নিচ্ছ বলে মনে করবে ডিপার্টমেন্ট। তোমার সম্মান নষ্ট হবে। ফলে যা করার তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেবে।’’ জয়তী বুঝল, নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হওয়ায় সৌমাভ এই বিষয়গুলো কত ভাল বোঝে এবং যা বলল, সবই ওর ভালর কথা ভেবেই বলল। সৌমাভর উপরে ওর শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। ও বলল, ‘‘ঠিক আছে, তাই করব। আপাতত কোনও মেসে থাকব, তার পর বাড়ি দেখব না হয়।’’ জয়ন্ত কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে উঠে গিয়ে দিল্লিতে একটা ফোন করল। তবে এ বার মাথুর স্যারকে নয়, জয়রাজন স্যারকে। জয়তীর সমস্যাটা খুলে বলে অনুরোধ করল, যাতে ওকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কলকাতায় হাজরা অফিসে ট্রান্সফার করানো যায়, ওখানে বেশ কয়েকটা পোস্ট খালি আছে। জয়রাজন ওকে বললেন, ‘‘তুই চারটে নাগাদ একটা ফোন কর। দেখছি।’’ এই সব কথার ফাঁকেই ওদের কোলে থাকা দুই খুদের মুখে সুভদ্রা দুধের বোতল গুঁজে দিল। ওদের খাওয়া হতে হতেই ওর নিজেরও খাওয়া শেষ হলে টেবিল গুছিয়ে ওদের কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গেল।

ফোনটা রেখে সৌমাভ জয়তীকে বলল, ‘‘চট করে স্নান খাওয়া সেরে নিতে হবে। আমি চারটে নাগাদ দিল্লিতে ফোন করি, তার পরে দেখছি। এদিকে আমাকে আর এক-দু দিনের মধ্যে ভদ্রায় যেতে হবে। কাল গিয়ে টিকিট কাটতেই হবে। ফলে আজ অনেক কাজ।’’ স্নান-খাওয়া সেরে বসার ঘরের সোফাতেই জয়তীর পাশে বসল সৌমাভ। তার পর বলল, ৪টে নাগাদ ফোন করে যদি কাজটা হয়, তার পর তোমাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে। জয়তীও মাথা নাড়ল। আগে কখনও চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকায় ও জানে, এখন এই সব কথাগুলো শুনে রাখলে পরে সমস্যা কম হবে বা হবেই না হয়তো।

চারটে নাগাদ জয়রাজনকে ফোন করে অবাক হয়ে গেল সৌমাভ নিজেও। জয়তীর সমস্যা বুঝে ওকে সরাসরি কলকাতা অফিসে জয়েন করার ব্যবস্থা তিনি করে ফেলেছেন বলে জানালেন। সেই মতো চিঠি আজই ফ্যাক্স করে দেওয়া হয়েছে ডিএম অফিসে। পয়লা জানুয়ারি থেকে জয়তীকে কলকাতায় জয়েন করতে হবে। সিসিএ (সিটি কম্পেনসেটারি অ্যালায়েন্স) বাবদ মাইনেও কিছুটা বেশি পাবে ও। বলে সৌমাভকে দ্রুত ভদ্রায় জয়েনের কথাটা মনে করিয়ে ফোন রাখলেন তিনি।
Like Reply
#88
লেখা নিয়ে কোন কথা হবে না।
মনে হয় সাইটে একটা ক্লাসিকের জন্মের সাক্ষী হয়ে থাকছি।
আজকের পাঁচটা রেপুই দিয়ে দিলাম।

লেখা এগিয়ে চলার প্রত্যাশায়।

congrats
yr):





গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।

[+] 2 users Like মাগিখোর's post
Like Reply
#89
যদিও পুরো পুরি পড়ি নি,তবে গল্প দুরন্ত গতিতে এগুচ্ছে, চালিয়ে যান।❤️
আমার একটা প্রশ্ন ছিল? আপনি  স্মরণজিৎ চক্রবর্তী'র উপন্যাস পড়েছেন কখনো?

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

[+] 2 users Like বহুরূপী's post
Like Reply
#90
(06-05-2025, 07:18 AM)বহুরূপী Wrote: যদিও পুরো পুরি পড়ি নি,তবে গল্প দুরন্ত গতিতে এগুচ্ছে, চালিয়ে যান।❤️
আমার একটা প্রশ্ন ছিল? আপনি  স্মরণজিৎ চক্রবর্তী'র উপন্যাস পড়েছেন কখনো?

Thik ei prosno ta amar mone o ase6ilo.. Heart
Like Reply
#91
Apnar ager golpo ta o pore6i.. etao por6i r vab6i ato taratari r ato boro update apni kivabe di6en...ki bole apnar lekhar prosonsha korbo bujhte parchi na. Golpo ta j kono erotic site a por6i seta o bhule jai porte porte. Golpe jounota ase6e golpota k agie nie jaor jonno etai aro besi valo lage. Ato kom somayer modhe ato boro update di6en Tao ei quality......  Apnar jonno onek onek valobasa roilo
Like Reply
#92
অপূর্ব। অসাধারণ আপডেটগুলো। পড়ে এত ভালো লাগলো যে প্রশংসা করার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছিনা। এর পরের আপডেট পড়ার জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply
#93
মন্ত্রমুগ্ধ!!! শুধুই... মন্ত্রমুগ্ধ!!!
[+] 1 user Likes ray.rowdy's post
Like Reply
#94
(৩০)



এবার ভাসিয়ে দিতে হবে

সৌমাভর মুখে সব শুনে প্রায় আল্হাদে আটখানা হয়ে গেল জয়তী। ও স্থান-কাল ভুলে সৌমাভকে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে লজ্জা পেয়ে গেল। তার পর একটু সামলে নিয়ে বলল, এবার বলো, কী করব? সৌমাভ বলল, ‘‘চলো একসঙ্গেই বেরোই। তমি ডিএম অফিসে যাও, আমি প্লেনের টিকিটটা দেখি। তার আগে একটা কথা তোমাকে বলি। তুমি কলকাতায় চলে যাবে। এ বারে তোমার সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের চাকরি হয়ে যাওয়ায় হয়তো তোমার মা-বাবাও আগের মনোভাব বদলে তোমাকে আবার সংসারে থাকতে বলবেন। না হলেও নিজের শহরেই নিজের মতো ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া করে থাকতে পারবে। কিন্তু সুভদ্রার কী হবে? দেখো, আমি এবারে স্বার্থপরের মতো নিজের কথা বলি। কলকাতা ছাড়ার পরে এখানে এসে অবধি সুভদ্রাই ওদের মায়ের কাজটা করছে, মায়ের যত্নে রেখেছে। ওরাও দুই ভাইবোন ওর কাছেই বেশি থাকছে, সবই করছে। আমি যদি ওকে আমার সঙ্গে ভদ্রায় নিয়ে যাই, তোমার আপত্তি আছে? আমার কাছে লুকিয়ো না, মনের কথা বলো। আর আমি ওকে অযত্নে রাখব না, নিজের ছেলেমেয়ের সঙ্গেই বড় করব, পড়াশোনাও শেখাব। ভয় নেই, আমি রেপিস্ট নই। ওর কোনও ক্ষতি করব না, এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো।’’

সৌমাভর কথাটা শেষ হল না, জয়তী ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, ‘‘তুমি কেমন, তা আমাকে বোঝাতে এসো না। তুমি যে রেপিস্ট নও, বিকৃত মানসিকতার নও, তুমি যে কাউকে ঠকাতে পারো না, সেটা গত তিনদিনে বুঝে গেছি। সুভদ্রার কথাটা বলে তুমি আমাকেও অনেকটা ভারমুক্ত করলে। কলকাতার বাড়িতে ফিরলেও আমার বাবা-মা ওকে মেনে নেবেন না। তখন বিপদে পড়বে ওই মেয়েটাই। বরং ও তোমার কাছে ভাল থাকবে। কুট্টি-মুট্টিও ওর খাছে ভাল থাকবে। তুমি নিশ্চিন্তে অফিসের কাজ করতে পারবে, ছেলেমেয়েকে নিয়ে চিন্তায় নিজের কাজের ক্ষতি করবে না। আমি আজ ওকে বুঝিয়ে বলব, মনে হয় ও রাজি হবে। ওরও মায়া পড়ে গেছে কুট্টি-মুট্টির উপরে।’’ এই সব কথা বলতে বলতেই দু’জনে রেডি হয়ে বাইরে এসে একটা রিক্সা নিল। ডিএম অফিস যেতে অন্তত মিনিট দশেক লাগবে। কাছেই একটা ট্রাভেলের অফিসও আছে। সেটা গত কালই সৌমাভ দেখে নিয়েছে।

ডিএম অফিসে পৌঁছে নামার আগে সৌমাভ ওকে বলল, ‘‘ফ্যাক্সের কথাটা জেনে সেটার কপি সঙ্গে করে তবে বেরোবে। আমি টিকিটটা দেখছি। মিনিট কুড়ি পরে একসঙ্গে তিনটে টিকিট কাটল ব্যাঙ্গালোরের। আরও দু’দিন পরের টিকিট পেল। তার মানে পরশুই ভুবনেশ্বরে চলে যেতে হবে। ব্যাঙ্গালোর থেকে ভদ্রা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। ও ঠিক করল, নেমে একটা গাড়ি ভাড়া করবে। ট্রাভেল অফিসটায় রিকোয়েস্ট করতে তাঁরা পরশু সকালে বারিপদা থেকে ভুবনেশ্বর অবধি একটা গাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হল। সামান্য কিছু এডভান্স করতে হল তার জন্য।

টিকিট কেটে বেরিয়ে দেখল জয়তীর মুখের হাসিটা আরও চওড়া। হাতে এক টুকরো কাগজ। দেখিয়ে বলল, ‘‘ওরা এরকম ফ্যাক্স পেয়ে অবাক হয়ে গেছে! ভাবছে মহিলার খুব ক্ষমতা। ওরা তো সত্যিটা জানে না। যাক তোমার কী হল?টিকিট পেলে?’’ সৌমাভ জানাল, পরশুর পরের দিন ওদের ফ্লাইট, ও পরশু ভুবনেশ্বরে চলে যাবে, সেখান থেকেই পরের দিন ভোরের ফ্লাইট। গাড়িভাড়ার কথাটাও বলল। এই বারে জয়তীর মুখের সমস্ত হাসি যেন কেউ কেড়ে নিল। মুহূর্তের মধ্যে চোখটা জলে টলটল করে উঠল। সৌমাভ বুঝল, তার পর নিচু গলায় বলল, বাড়ি চলো, ওখানে কথা হবে। এখানে রাস্তার মধ্যে কাঁদলে লোকে হাসবে।

জয়তী কথা না বাড়িয়ে আবার একটা রিক্সায় উঠে সৌমাভর হাতটা জড়িয়ে বসে রইল চুপচাপ। সৌমাভ বুঝেও কিছু বলল না। বাড়ি ফিরে বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরাল। জয়তী ঘরে ঢুকল শাড়ি বদলাতে। সব সেরে ম্যাক্সি পরে দুকাপ চা নিয়ে এসে পাশে বসে বলল, ‘‘তুমি পরশু চলে যাবে, কুট্টি-মুট্টি এমনকি সুভদ্রাও। আমি একদম একা হয়ে যাব’’, বলেই কেঁদে ফেলল ঝরঝর করে। সৌমাভর ওকে কাঁদতে দিল। ও বুঝতে পারছে, জয়তীর মধ্যে একটা ঝড় উঠেছে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। ও কিছুক্ষণ পরে জয়তীর মুখটা তুলে বলল, ‘‘পরশু তুমিও যাবে আমাদের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে। সেখান থেকে ট্রেনে বা বাসে কলকাতা ফিরবে। আপাতত কিছু জিনিস-ডকুমেন্ট নিয়ে যাও। পরে কাউকে নিয়ে এসে এখান থেকে সব নিয়ে যেও। আজ রাতে বা কাল সকালে বাবা-মাকে জানিয়ে দাও। তাঁরাও খুশি হবেন।’’ এই প্রস্তাবটা মনে ধরল জয়তীর। ও সৌমাভকে আদর করে বলল, ‘‘তাই করব। তুমি সবদিক থেকেই আমার লাইটহাউস।’’ বলে সৌমাভর কাঁধে মাথা রেখে বলল, ‘‘আমার কথাগুলো শোনো। ভুল বললে ঠিক করে দেবে। কাল সকালে আমি সুভদ্রাকে সবটা বলব, মনে হয় না আপত্তি করবে। তার পরে দেখছি কী করা যায়। আর তোমার জিনিসপত্র, ওর জিনিসপত্র কাল দুপুরে আমি সুভদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে গোছাব। আমার নিজের গোছগাছ খুব কিছু নেই। কিছু গয়না, জামা-শাড়ি আর ডকুমেন্ট, ব্যাঙ্কের বই, পলিসির কাগজ— এই সব। ফলে ওটায় বেশি সময় লাগবে না। জয়ন্তর জামাকাপড় এখানে কোনও আশ্রমে দিয়ে দেব। আর এই সব আসবাবের মধ্যে শুধু আমার ঘরের খাটবিছানা আমি কলকাতায় নিয়ে যাব। এটা একেবারে আমার নিজের, জয়ন্ত এতে কোনওদিন শোয়ওনি। বাকি বেশিরভাগই তোমাদের অফিস থেকে দেওয়া, সেগুলো ওদের নিয়ে যেতে বলে দেব। তুমি চিঠিটা ড্রাফট করে দিও, আমি সই করে দেব। ফলে আমার লাগেজ বলতে একটা বড় সুটকেস আর বড়জোর দুটো বড়ব্যাগ হবে। বাকি শাড়ি এবং অন্যান্য যা আছে দিয়ে দেব। কিছু সুভদ্রাকেও দেব। আর ওর নিজস্ব যা কিছু লাগবে, সে সব কাল আমি সুভদ্রাকে কিনে দেব। আর একটা কথা, আমি কলকাতায় জয়েন করে একটু কাজ বুঝেই কিন্তু মাসে অন্তত একবার ভদ্রায় যাব। তোমাদের সংসারটা একটু গুছিয়ে দেব, আমার কাজ নিয়ে জেনে নেব। তোমার থেকে ভাল মাস্টার পাব না আমি।’’ বলে হেসে ফেলে আবার বলল, ‘‘তোমার ওখানকার ঠিকানা-ফোন নম্বর কলকাতা অফিসে আমার নামে চিঠি লিখে পাঠাবে। মনে থাকবে?’’ জয়ন্ত একমনে শুনতে শুনতে বলল, ‘‘একদম ঠিকঠাক প্ল্যান। পরশু খেয়েদেয়ে বেরোব, তা হলে ভুবনেশ্বর ঢুকতে বেশি রাত হবে না। রাতে বিশ্রামও হবে সবার।’’ তার পরেই ঝট করে হাতটা বের করে উঠে বলল, ‘‘ওই ট্রাভেল অফিসটা দেখি খোলা কি না, তা হলে তোমার টিকিটটা যদি ওরা কালই করে দেয়, তা হলে চিন্তা থাকবে না। আমরা ভোরে প্লেন ধরব, তার এক-দেড় ঘন্টার মধ্যে তুমি ট্রেনে চেপে বসবে। আমি এখনই তোমাকে হাজরা অফিসের নম্বর দিয়ে দিচ্ছি, তুমি বরং তোমার বাড়ির নম্বরটা আমাকে দাও। আমি ওখানে পৌঁছে সুভদ্রাকে দিয়ে ফোন করাব। তা হলে সব দিক সামলানো যাবে।’’ বলেই উঠে ফোনটা নিয়ে পড়ল। জয়তী এই ফাঁকে ওর বাড়ির নম্বরটা লিখে দিল একটা কাগজে। ফোনে কথা বলতে বলতেই সৌমাভও কলকাতা অফিসের নম্বর ওকে লিখে দিল। ফোন রেখে হাসিমুখে জয়তীকে বলল, ‘‘ওরা কাল দেখবে, ফার্স্টক্লাসে যদি হয় সবচেয়ে ভাল।’’
[+] 8 users Like Choton's post
Like Reply
#95
(৩১)

এবার বিদায়বেলার সুর



পরের দিন সকালে সৌমাভ উঠে দেখল, ওর কোলের মধ্যে দুটো খুদে! একটু অবাক হলেও দুটোকে জড়িয়ে মনে মনে অনেকটা আরাম পেল। ওদের জন্যই ওর সব কিছু। তার পর টুক করে বাথরুম ঘুরে একেবারে ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দুটোকে কোলে নিয়ে দেখল বাইরের ঘরে যেন দক্ষযজ্ঞ চলছে। ওকে দেখেই সুভদ্রা দৌড়ে গিয়ে চা নিয়ে এল, সঙ্গে পরোটা আর আলুভাজা। দুটো খুদেকে কোলে বসিয়ে খেতে খেতে নিজের মতো ভাবনায় ডুবে গেল ও। কাল রাতেই একসময় মনে এসেছিল ব্যাপারটা। দুই ছেলেমেয়ের নাম বদলের। ঈশিতাদের বাড়ির দেওয়া নাম না রেখে ও নিজের মতো নাম রাখবে। মনে মনে নামদুটোও ঠিক করে নিল— ছেলে অরণ্য এবং মেয়ে মৃত্তিকা। ডাকনাম জংলা এবং মাটি। এবং আর কারও সঙ্গে কথা না বলে নিজের মতো করে এই দুটো নামই ঠিক করে ফেলল। এ ব্যাপারে জয়তীকেও কিছু বলল না। কিছুক্ষণ পরে বেশ কয়েকটা ব্যাগ আর একটা বড় সুটকেস বেঁধেছেঁদে আরও দুকাপ চা নিয়ে সোফায় এসে বসে সৌমাভকে একটা কাপ ধরিয়ে জয়তী বলল, ‘‘আমি সুভদ্রাকে বলেছি। ও খুব খুশি। আর একটা কথা, ও পড়তে চায়, সেটা কি তুমি রাজি?’’ সৌমাভর কাছে ব্যাপারটা মেঘ না চাইতে জল। ও হিসেব করে দেখল, আপাতত তিন বছর দুই খুদে ঘরেই থাকবে। এই সময়টায় সুভদ্রাকে ও কিছুটা পড়াশোনা শিখিয়ে দিতে পারলে পরবর্তী কালে ও কাজে বেরোলেও সুভদ্রা ওদের পড়াশোনার ব্যাপারটা সামান্য হলেও হেল্প করতে পারবে। ও খুশি হয়েই বলল, ‘‘ও না বললেও ওকে আমি পড়াবই। আর ঠিকমতো না পারলে ওকে মারব, এটা বলে দিও।’’ বলে একবার একটু হেসেই গম্ভীর হয়ে গেল। জয়তী সেটা লক্ষ করে প্রশ্নটা করতেই খুব নিচু গলায় বলল, ‘‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারবে না জেনে খারাপ লেগেছিল, জানো। নিজের উদ্যোগে ঈশিতাকে কলকাতায় এনে সব ব্যবস্থা করেছিলাম। ভাবিনি পড়ার নাম করে আমাকে এভাবে ঠকাবে!’’ বলে চুপ করে গেল। জয়তীও আর ঘাঁটাল না ওর মন বুঝে। ও বুঝে গেছে, সৌমাভ যতই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক, ঈশিতার নোংরামি আর ওকে ঠকানোটা মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছে না, পারবেও না কোনও দিন।

সেদিনটা ওদের গোছাগুছিতেই কেটে গেল। মাঝে সৌমাভকে সঙ্গে করে জয়তী ব্যাঙ্কে গিয়ে প্রায় সব টাকা তুলে নিল, সঙ্গে লকারের গয়নাও। টাকা কম নয়, জয়ন্তর মৃত্যুর পরে রাজ্য, কেন্দ্র এবং বিভিন্ন সংস্থার থেকে অনেক টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। প্লাস জয়ন্তর সঞ্চয়। বেশ কয়েক লাখ টাকা। জয়ন্ত ওখানেই ওকে বসিয়ে এমন ভাবে টাকাগুলো এমন ভাবে নানা পলিসিতে ফিক্সড করল, যাতে দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকেই সেগুলো ভাঙানো যায়। আর হাজার পঞ্চাশ টাকা জয়তী হাতে রাখল। কখন কী কাজে লাগে। ও ঠিক করে নিয়েছে, কলকাতায় ফিরেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে নেবে। লকারও নেবে। সব সারতে অনেক বেলা হয়ে গেল। খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়েই বিকেলে সবাই মিলে বেরোল, বাজার করতে। অনেক কেনাকাটা করা হল। ওদিকে ট্রাভেলের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওরা অনেক কষ্টে একটা এসি ফার্স্টক্লাস পেয়েছে। টিকিটটা নিয়ে টাকা মিটিয়ে দিল। গাড়ির ব্যাপারেও কথা ফাইনাল করে টাকা মিটিয়ে দিল। তার পরে সবাই ঘরে এসে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল। সেই ফাঁকে সুভদ্রার সঙ্গে ভাঙা হিন্দি আর ইংরেজি মিশিয়ে কিছু কথা বলল সৌমাভ। তার পর শুতে গেল।

পরদিন দুপুরে খেয়ে সব গুছিয়ে ওরা ভুবনেশ্বর বেরিয়ে গেল। এমনিই এখানে জয়তীর বিশেষ কেউ চেনাশোনা নেই, ফলে কাউকে সেভাবে বলার দরকার হল না। তবে তিন বছরের বাসা ছেড়ে যাওয়া, জয়ন্তর অপমৃত্যু, গত কয়েক দিনের আনন্দের রেশ— সব মিলিয়ে ওর মন খারাপ করে দিল। কিন্তু দ্রুত সামলে নিল। রাতে আটটার মধ্যে ভুবনেশ্বরে পৌঁছে গাড়িটা ছেড়ে দিল। তার পর একটা হোটেলে দুটো ঘর বুক করল। একটায় ও থাকবে, অন্যটায় জয়তী, সুভদ্রা এবং দুটো বাচ্চা। রাতে দেখা যাবে। হোটেলে আর কেউ ব্যাগ খোলাখুলি করল না। পরদিন ভোরে সৌমাভ বেরোবে পাঁচটায়, জয়তী সাড়ে পাঁচটায়। সৌমাভর ফ্লাইট সাতটায়, কিন্তু আগে গিয়ে অনেক হ্যাপা থাকে। জয়তী সোজা গিয়ে স্টেশনে উঠে ট্রেনে চেপে বসবে। সেই মতো রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিল সবাই। বাচ্চাদুটোর জন্য গরম দুধ বানাতে হোটেলে অনুরোধ করলে ওরা রাজিও হল। সেই রাতে দুটো বাচ্চা আর সুভদ্রাকে নিয়ে জয়তী এক ঘরে শুল, অন্য ঘরে সৌমাভ।

ভোরে উঠে সবাই দ্রুত গোছগাছ সেরে নিল। তার পর জয়তী এক এক করে সুভদ্রাকে জড়িয়ে অনেকক্ষণ কাঁদল। কেঁদে ফেলল সুভদ্রাও। ওকে প্রায় রাস্তা থেকে তুলে এনে নিজের বড় দিদির মতো করে রেখেছিল জয়তী। তার পর কুট্টি-মুট্টিকেও অনেক আদর করল। শেষে সুভদ্রার সামনেই সৌমাভকে বুকে জড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদল কিছুক্ষণ। হঠাৎ মনে পড়ার মতো করে সৌমাভ জয়তীকে বলল, জানুয়ারির শেষ দিকে কুট্টি-মুট্টির মুখেভাত। ফলে ওকে আসতেই হবে। সেই মতো দু’তিন দিনের ছুটি ম্যানেজ করে প্লেনের টিকিট যেন কলকাতায় ফিরেই কেটে নেয়। এর পরে আর দেরি না করে আর একপ্রস্ত আদর করে ওরা নেমে গেল। জয়তী নিজের ব্যাগ নিয়ে নামবে এ বার, ওর গাড়িও এসে যাবে কিছুক্ষণ পরে।
[+] 9 users Like Choton's post
Like Reply
#96
(৩২)

আশায় বাঁধি বুক

 
অ্যাবর্শন করে ফেরার পথে ঈশিতার ওই কান্নায় মন খারাপ হয়েছিল ওর মেজদির। তিনি বাড়ি ফিরে সোজা নিজের বরকে ডেকে পাঠিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললেন। তার পর বড়দিকে এবং বড় জামাইবাবুকেও ডেকে নিয়ে চার জনে বিস্তর কথা হল। জানা গেল, সৌমাভর ওই ঘটনার দিন কয়েক পরেই দুই জামাইবাবু হাজরা অফিসে গেছিলেন, কিন্তু কোনও কাজের কাজ হয়নি। সৌমাভর খোঁজ কেউই দিতে পারেননি। বিস্তর ধরাধরি করে শুধু এটুকু জানা গেছে, সে দিন আচমকাই বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ দিল্লি থেকে ওর রিলিজ অর্ডার চেয়ে পাঠানো হয়। দিল্লির বিশেষ অর্ডারে একঘন্টার নোটিসে ও হাজরা অফিস থেকে রিলিজ পেয়েছে, তাও সেই অর্ডার সোজা দিল্লিতে গেছে। তবে একটুকু জানা গেছে, ও চাকরি ছাড়েনি। এর পরে আরও কয়েকটা জায়গায় ওঁরা খোঁজ নিয়েছেন, এমনকি দিল্লিতেও দু’দিনের জন্য গিয়েছিলেন দু’জনে মিলে। খুঁজে খুঁজে সৌমাভদের ফরেস্টের অফিসেও গিয়েছিলেন এমনকি দু’দিন প্রায় সারা সকাল-দুপুর-বিকেল সেই অফিসের নীচে অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু সৌমাভর খোঁজ পাননি। ওই সময় বহু দিন সবাই ঈশিতাকে নিয়ে, ওর নতুন জায়গায় ভর্তি ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত ছিল। তা ছাড়া দুই দিদির সংসারও রয়েছে। এর মধ্যেই জানুয়ারিতে বিশ্বজিৎবাবু আচমকা কাকদ্বীপে বদলি হয়ে চলে গেছেন। তাঁর সেই যাওয়াও বেশ নাটকীয়। সকালে সবাই যখন জলখাবার খেতে বসেছে, সে সময় নিজের একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে বেরনোর সময় সবাইকে চমকে দিয়ে শুধু স্ত্রীকে বলেছেন, ‘‘আমি অন্যত্র ট্রান্সফার হয়ে চলে যাচ্ছি। মরে গেলে তোমরা খবর পাবে, তুমি পেনশনও পাবে। সব ব্যবস্থা করা আছে। আর পারলে ওখানে গিয়ে নতুন করে আমার মুখ পুডি়য়ো না। বাকি কটা দিন একটু সম্মান, একটু শান্তি নিয়ে বাঁচতে দিও।’’ স্ত্রীর কান্না, মেয়েদের চোখের জল কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করেই ট্যাক্সিতে চেপে বসেছিলেন। তার পর থেকে মাসে একলাইনের একটি চিঠি আসে বাড়ির ঠিকানায়— ‘ভাল আছি’। ব্যাস, আর একটিও বাড়তি শব্দ থাকে না। ঈশিতা বোঝে, ওর জন্যই ওর নিজের সংসার তো বটেই, হাসিখুসিতে ভরা এই সংসারটাও ধ্বংস হতে বসেছে। মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে।

ঈশিতার অ্যাবর্শনের দিন ওই কান্নার পরে সেদিন কথাবার্তার সময় দুই জামাইবাবু জানালেন তাঁরা কতদূর কি করেছেন। যদিও তাতে লাভ কিছু হয়নি। এ নিয়ে দুই দিদি মুখ ঝামটা দিলে চার জনে বেশ কিছুটা কথাকাটাকাটিও হল। ঠিক হল, পরের দিনই ফের হাজরা অফিসে গিয়ে একবার খোঁজ নেওয়া হবে। সেদিন ওর যে ড্রাইভার ছিল, তাকে যদি খুঁজে পাওয়া যায়, তা হলে অনেক তথ্য মিলবে বলে আশাবাদী হলেন সবাই। আগের দিন বহুক্ষণ অপেক্ষা করেও সেই ড্রাইভারকে ধরা যায়নি। পরের দিন সকাল ১১টা নাগাদ ছ’জনে মিলে হানা দিলেন হাজরা অফিসে। গুঞ্জাকে একরকম জোর করেই নিয়ে গেছিল মেজদি। কারণ ও বুঝে গেছিল, দু’জনের মধ্যে অন্য রকম কেমিস্ট্রি আছে। তাই আর গুঞ্জাও ওদের সঙ্গে গেলে হয়তো কোনও আলো দেখা যাবে।

হাজরা অফিসে পৌঁছে আলাদা করে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে দুই জামাইবাবু সেই ড্রাইভারের খোঁজ পেলেন। তাকে ডেকে তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাবু সেদিন শিয়ালদা অবধি গিয়ে দুটো ফাইলের জন্য ফেরত গিয়েছিলেন বেলেঘাটায়। তখন ১১টা। তার পরে একগাদা ব্যাগ, ফাইল আর দুটো বাচ্চাকে নিয়ে নীচে নেমে ওকে উল্টোডাঙ্গা যেতে বলেছিল। সেখানে একটা বাড়িতে নেমে ওর হাতে কিছু টাকা আর একগাদা ফা্ইল নিয়ে বডবাবুকে দিতে বলেছিল। তবে বাবুকে সেদিন নিচে নামার পরে অন্যদিনের চেয়ে আলাদা লেগেছিল। বারবার দুহাতে বাচ্চাদুটোকে আঁকড়ে ধরছিল, এমনকি কয়েকবার নিজের মুখ ঢেকেও বসেছিল। কেন কে জানে। ও আর কিছু জানে না। ড্রাইভারকে অনেক অনুরোধ করার পরে সে জানাল, ও গলিটা চেনে, কিন্তু বাড়িতো চেনে না।

উল্টোডাঙ্গা? সেখানে কে থাকে? ঈশিতা কখনও উল্টোডাঙ্গায় ওর কেউ থাকে বলে শোনেনি। কথাটা মেজদিকে বলতেই সে পাল্টা বলে উঠল, ‘‘তুই? তুই ওর কিছু জানার চেষ্টাই কোনওদিন করিসনি। ফলে ওর কে কোথায় চেনাশোনা আছে, সে সব তুই কি করে জানবি? হুঁ! এ সব ফালতু ভান করা ছাড়।’’ ঈশিতাকে সবার সামনে প্রায় মাটিতে মিশিয়ে গুঞ্জার হাত ধরে বলল, ‘‘সোনা বোন আমার, এখন রাগ করে থাকিস না। তোর সৌমদাকে খুঁজতেই হবে। তুই জানিস কিছু? উল্টোডাঙার কথা তোকে কোনওদিন কিছু বলেছে?’’ ঈশিতা বুঝল, স্ত্রী হিসেবে ওর যা দাবি, তার থেকেও যেন বেশি দাবি গুঞ্জার। কিন্তু গুঞ্জাও বলল, ও কোনওদিন এটা শোনেনি। এই বারে সবাই আতান্তরে পড়ল। গুঞ্জাকে বাইরে রেখে পাঁচ জনে আলাদা করে ফের ভিতরে ঢুকে নানা টেবিলে বসা লোকেদের কাছে সৌমাভ সরকারের খোঁজ নিতে লাগল। কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারল না। জনাচারেক লোক জানালেন, আন্দামান থেকে এখানে এসে মাত্র ১১ মাস কাজ করেছিলেন। এই অফিসের অনেকের অনেক পেন্ডিং কাজও সৌমাভস্যার করে দিয়েছিলেন পুজোর পরে। কালীপুজোর সময় প্রচন্ড জ্বর হওয়ায় বেশ কয়েক দিন অফিস ছুটি নিয়েছিলেন, তবে পরে সেই সময়কার কাজও সেরে গেছেন।

কালীপুজোর সময় সৌমাভর প্রচন্ড জ্বর হয়েছিল? ঈশিতা এখন আর অবাক হয় না বা কাঁদে না এ সব শুনে। তবে এই খবরটায় ওর চোখে জল এল। সেটা দেখে দুই জামাইবাবু ওকে নিয়ে নীচে এসে বললেন, ওঁরা দেখতে গেছিলেন বেলেঘাটায়। বোঝাই যাচ্ছিল, সৌমাভ প্রচন্ড অসুস্থ। কিন্তু অনেক অনুরোধ করার পরেও ও কাঁকুরগাছির বাড়িতে যেতে রাজি হয়নি, উল্টে ওঁদের অনুরোধ করেছিল কাউকে যেন না বলে! ঈশিতা আর নিজেকে সামলাতে পারল না। ওর মনে হল, জন্মদিনের দিন তো বটেই, তার পরেও কয়েকটা দিন জ্বরে প্রায় বেঁহুশ হয়ে একাএকা পড়েছিল সৌমাভ, কিন্তু কাউকে জানতে পর্যন্ত দেয়নি! ও যেন জানতে না পারে, সে কারণেই দুই জামাইবাবুকে ওই ভাবে বলেছিল বোধহয়! আর সে দিন ও কত আনন্দ করেছিল বাড়িতে! কিন্তু সৌমাভ কেন এল না, সে কথা ওর মনেই পড়েনি! ওই সময় টানা তিন-চার দিন সৌমাভ না আসার পরে ওর একটু উদ্বেগ হলেও দিন সাতেক পরে সৌমাভকে দেখে আর কিছু মনে হয়নি। দু’চোখে জল নিয়ে দেখল, এই প্রথম গুঞ্জার চোখেও জল। ওকে প্রশ্ন করে দিদিরা বুঝল, এই খবরটা গুঞ্জাকেও দেয়নি সৌমাভ। ওর ভয় ছিল, যদি গুঞ্জা বলে দেয়! ঈশিতা বুঝল, ভালবাসা তো দূর, ও সৌমাভর স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি কোনওদিন। আন্দামানে তবু যেটুকু পেরেছিল, কলকাতায় পা দিয়ে সেটুকুও হেলায় ভাসিয়ে দিয়েছিল নিজের খেয়ালখুশিতে!

ওরা চুপচাপ সবাই দাঁড়িয়ে এ বার কী করা যায় ভাবছে, এমন সময় ঈশিতার মনে হল উপর থেকে নীচে নামছেন এক মহিলা, যার মুখ যেন ওর খুব চেনা চেনা লাগছে! কোথায় যেন দেখেছে? ও দ্রুত হেঁটে মহিলার সামনে গিয়ে প্রশ্ন করল, ‘‘দিদি, আপনি কি এই অফিসেয কাজ করেন? মানে, আমার খুব চেনা লাগছে আপনাকে। আসলে...’’, কী বলবে বুঝতে পারছিল না ঈশিতা। ওর মনে হল, মহিলা ওর চেয়ে কিছুটা বড় তবে ওর দুই দিদির থেকে ছোট। সিঁথি সাদা, মানে হয়তো এখনও বিয়ে করেননি। মহিলা ওর অবস্থা দেখে হেসে ফেলে কলেজের নামটা বলতেই এবার ঈশিতার মনে পড়ল, আরে উচ্চমাধ্যমিকের সময় তো কে যেন বলেছিল, ওদের কলেজের জয়তীদির নাকি বিয়ে হয়েছে এক ফরেস্ট অফিসারের সঙ্গে! কিন্তু ওরা তো উড়িষ্যায় থাকত? তা হলে কি ডিভোর্স হয়ে গেছে? না হলে সিঁথিতে সিঁদুর নেই কেন? এই সব ভাবনার মধ্যেই জয়তী হেসে বলল, ‘‘তুই কি ঈশিতা?’’ এ বারে চমকে উঠল ছ’জনই! ঈশিতার নাম জানেন এই মহিলা? জয়তী খুব আস্তে করে বলল, ‘‘আমার হাজব্যান্ড জয়ন্ত গত বছর নভেম্বরে উড়িষ্যায় খুন হন। কাঠচোররা খুন করেছিল। তার পরে আমি এই চাকরিটা পাই, এখন এখানেই কাজ করি। জানুয়ারি থেকে। কিন্তু তুই এখানে কেন? চাকরি হয়েছে? আরে দারুণ ব্যাপার তো’’, বলে পিঠটা চাপড়ে দিল।

ঈশিতার মনে পড়ল, সেই সর্বনাশা শুক্রবার সকালে সৌমাভ একটা ফোন পেয়ে খুব আপসেট হয়ে পড়েছিল। ওকে বলেছিল, ‘‘আমার এক বন্ধুকে কাঠচোরেরা গুলি করে খুন করেছে।’’ সেই বন্ধুই কি জয়তীদির বর জয়ন্ত? ও প্রশ্নটা করেই ফেলল। বলল, ‘‘জয়ন্তদার কাছে সৌমাভ সরকার বলে কোনও বন্ধুর কথা শুনেছো?’’ এই বারে হেসে ফেলল জয়তী। বলল, ‘‘শুধু শুনেছি না, খুব ভাল করে চিনিও। তবে এখন কথা বলতে পারব না। এই আমার ঠিকানা, কাছেই একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট। একাই থাকি। বিকেলে আয় কথা হবে।’’ বলে উপরে উঠে গেল।
[+] 9 users Like Choton's post
Like Reply
#97
(৩৩)


মাঝের কিছু কথা



জয়তী ডিসেম্বরের এক তারিখ রাতেই কলকাতায় পৌঁছে প্রথমে নিজের বাড়িতে যায়। কিন্তু পরদিন সকালে দাদা-বৌদির গোমড়া মুখ আর মা-বাবার মুখে বারবার অলুক্ষুণে শব্দটা শুনে বুঝে যায়, এই বাড়িতে ওর আসা তো বটেই আগামী দিনে থাকাও কঠিন হবে। তবে মুখে কিছু না বলে ফ্রেস হয়ে কিছু না খেয়েই ব্যাগে রাখা প্রায় সব টাকাই সঙ্গে নিয়ে অফিসে এসে নিজের চিঠিটা দেখায়। ওকে জানানো হয়, ১ জানুয়ারি থেকে জয়েনিং। ফলে এই ক’টা দিন ওর কোনও কাজ নেই। তবে ও যেন ২৫ তারিখের আগেআগে একদিন এসে দেখা করে যায়। সেদিন ওর কয়েকটা ডকুমেন্টের কপি দিয়ে গেলে ভাল। তা হলে ১ তারিখেই আইকার্ড থেকে শুরু করে সব হাতে পেয়ে যাবে। ও অনেক অনুরোধ করে সে দিনই সব ডকুমেন্ট জমা করে দিল দুপুরের মধ্যে। তার পরে নিচে এসে একটা দোকানে ঢুকল খেতে। ওর মাথা তখন নানা চিন্তায় জর্জরিত। এখনও ২০-২২ দিন বাপের বাড়িতে থাকতে গেলে মা-বাবা তো বটেই, দাদা-বৌদির আচরণ কী হবে, ভেবেই শিউড়ে উঠল। ও যে চাকরি নিয়ে ফিরে এসেছে, সেটা ওরা জানে না। ভেবে নিয়েছে ঘাড়ের বোঝা হয়ে ফিরে এসেছে। ও ঠিক করল, এই ক’টা দিন ভদ্রায় থেকে আসবে। তার আগে সৌমাভর ভদ্রার অফিসের ঠিকানাটা দরকার, ফোন নম্বরও। আবার সেই অফিসে গিয়ে খোঁজ করতেই পেয়ে গেল। সেই সঙ্গে এক জনকে অনুরোধ করল, যদি ওর থাকার মতো অফিসের কাছাকাছি কোনও ফ্ল্যাট বা বাসা ভাড়া পাওয়া যায়, ও এসে সেখানেই উঠবে। তার পর একটু খোঁজখবর করে একটা ট্রাভেল অফিসে গিয়ে পরদিন ভোরের ফ্লাইটের টিকিট কাটল। সে রাতে ঘরে ফিরেও কিছু খেল না, বরং নিজের জিনিষপত্র গুছিয়ে নিল। এমনকি সব ডকুমেন্টসও। সকালে উঠে কাউকে কিছু বলল না, শুধু নিজের অল্প কিছু জামাকাপড় একটা ব্যাগে ভরে রেখে দিল খাটের নীচে। ভোরে উঠে রওনা দিল।

সে বার টানা ২০ দিন ভদ্রায় ছিল জয়তী। ও বেলার দিকে ব্যাঙ্গালোরে নেমে ভদ্রার অফিসে ফোন করে কপালজোড়ে সৌমাভকে পেয়েও যায়। সৌমাভ একটু অবাক হলেও সব শুনে ওকে বলল, তুমি ওখান থেকেই সোজা গাড়ি ভাড়া করে চলে এসো। কারণ এখন আমি যেতে গেলে পাঁচ ঘন্টা অন্তত অপেক্ষা করতে হবে। তার পর ফিরতে আরও পাঁচ ঘন্টা। তার থেকে তুমি এখনই রওনা দিলে বিকেলের মধ্যে চলে আসতে পারবে। যুক্তিটা মনে ধরল জয়তীর। ও সেই মতো এয়ারপোর্ট থেকেই সোজা ভদ্রার গাড়ি বুক করে নিল। এবং দেখল, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ও পৌঁছে গেছে ভদ্রায়। সৌমাভ আগেই বলেছিল, কোথায় গাড়ি দাঁড় করাতে হবে, সেখানেই নিজে দাঁড়িয়ে দিল। ও গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে সোজা দৌড়ে এসে সৌমাভকে জড়িয়ে বলল, ‘‘আমার কোনও উপায় ছিল না, বিশ্বাস কর।’’ সৌমাভ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ব্যাগটা নিজে নিয়ে বলল, আগে ঘরে চল, ফ্রেস হও। তার পর সব শুনব।

ঘরে এসে ব্যাগটা রাখতেই ছুটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল সুভদ্রা। সৌমাভ আগেই জানিয়েছিল, আজ ওর দিদিমণি আসবে। ও খুব খুশি। জয়তী দ্রুত বাথরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে আসতে না আসতেই ওর জন্য চা এবং একগাদা খাবার এনে হাজির করল সুভদ্রা। দুটো খুদে তখন বিছানায় শুয়ে নিজেদের মতো কুস্তি করে চলেছে। জয়তী সোজা দুটোকে জাপ্টে ধরে বেশ কিছুক্ষণ উমমমমম করে আদর করল, চুমু খেল। ওরাও খিলখিলিয়ে উঠল আদরে। তার পরে ধীরেসুস্থে চা-খাবার খেল। সেই কোন সকালে বেড়িয়েছে। তার পরেই খেয়াল করল, সৌমাভ ওকে নামিয়ে কোথায় গেল? সুভদ্রাকে প্রশ্ন করায় জানতে পারল, সৌমাভর অফিসে খুব চাপ চলছে, রোজই অনেক রাত করে ফিরছে।  

সেদিন অবশ্য সৌমাভ বেশি রাত করল না। ফিরে স্নান সেরে ফ্রেস হয়ে এসে সবাইকে নিয়ে কেতে বসে গেল। খেতে খেতেই জয়তীর ঘটনা সব শুনল। ও যে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকার কথা ভেবেছে, তাতে ওর সেফটি নিয়ে একটু আপত্তি করলেও অবশ্য সব কথা শুনে বিষয়টা মেনে নিল। খেয়ে উঠে বাইরের বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে একটা সিগারেট ধরাল। সুভদ্রা আগেই বাচ্চাদুটোকে ঘুম পাড়াতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও জানে, এখন দু’জনে গল্প করবে অনেকক্ষণ।

খেয়ে উঠে জয়তীর শরীর তখন ছেড়ে দিচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে। তবু বাইরে এসে সৌমাভর পাশে বসল। টুকটাক কথার পরে সৌমাভ ওকে শুতে যেতে বলে বলল, কাল সকালে একটা দরকারি কথা আছে। একটু অবাক হল জয়তী, কী এমন কথা যা, এখন বলা যাবে না। ও চাপাচাপি করতে সৌমাভ বলল, এই ক’দিনে ও সুভদ্রার সঙ্গে কথা বলেছে। ওর ইচ্ছে, স্থানীয় একটা চার্চের কলেজে ওকে ভর্তি করে দেবে একেবারে ক্লাস ইলেভেনে। তা হলে পরের বছর ও হায়ার সেকেন্ডারি দিতে পারবে। চার্চের কলেজটা সরকারি অ্যাফিলিয়েটেড। ফলে পাশ করলে পরে কলেজে ভর্তি হতেও সমস্যা হবে না। তবে এ সবের জন্য একটু মোটা টাকা ডোনেশন দিতে হয়েছে ওকে। এখন জয়তী যে কটা দিন থাকবে, ওকে যদি একটু পড়াশোনার অভ্যাসটা ফিরিয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে ইংরেজি বলা ও লেখা। এবং তার সঙ্গে অবশ্যই হিন্দি। বাংলা ও নিজে শেখাবে, তবে সেটা পরে। সৌমাভ জানাল, কাজের চাপে ও একদমই সময় দিতে পারছে না। চার্চের কলেজ শুরু হয়ে যাবে জানুয়ারি থেকেই। ফলে যতটা এগিয়ে রাখা যায়, আর কি। সুভদ্রার জন্য অনেক বইও কিনে এনেছে, সেগুলো কলেজই বলে দিয়েছিল। ফলে জয়তী একটু হেল্প করলে ভাল হয়। তা ছাড়া জানুয়ারি থেকে সব সাবজেক্টের টিচারও দিয়ে দেবে যাতে সমস্যা না হয়। জয়তী এতে খুশিই হল। ও বুঝতে পারল, সুভদ্রার জীবনেও দিনবদল হতে চলেছে। সৌমাভ ওকে শক্ত পায়ে দাঁড় করানোর জন্যই এসব করছে। যদিও সুভদ্রার প্রতি সৌমাভর কোনও শারিরীক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে কি না, ও জানে না। এখন সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতেও ওর ইচ্ছে করছে না। ও বসে বসে হাই তুলছে দেখে সৌমাভ একরকম জোর করেই ওকে শুতে পাঠিয়ে দিল। পরদিন ভোরে ঘুম ভেঙে জয়তী দেখল, সৌমাভ বাইরের ঘরে সোফায় ঘুমিয়ে। ওকে ডেকে তুলে কারণ জিজ্ঞাসা করে জানল, রাতে কিছু কাজ ছিল। তখন সে সব সেরে সোফাতেই শুয়ে পড়েছে। উঠেই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে শুধু একটু চা খেয়ে বেড়িয়ে গেল। জয়তীকে বলল, সুভদ্রার বিষয়টা দেখতে আর আজ রাত থেকে সুভদ্রা, জয়তী এবং দুটো বাচ্চা বড় খাটে শোবে, ও ছোট খাটেই কটা দিন ঘুমোবে।

পরের কুড়ি দিন যেন নিমেষে কেটে গেল জয়তীর। বহু দিন পড়াশোনার বাইরে থাকা সুভদ্রাকে সংসারের সব দিক সামলে পড়াতে বসানোটা প্রথম দিকে বেশ সমস্যা হলেও সপ্তাখানেক পর থেকে নিজের আগ্রহেই সুভদ্রা দ্রুত শিখতে শুরু করল। এবং সবাইকে অবাক করে ইলেভেনের পড়া বেশ কিছুটা এগিয়েও নিল। জয়তী দেখল, পড়া শেষ করার জন্য দরকারে অনেক রাত অবধি বইখাতা নিয়ে বসছে সুভদ্রা। এবং লেখা বা পড়া মুখস্ত শেষ করে তবেই শুতে যাচ্ছে। ওর এই আগ্রহটা ভাল লাগল জয়তীর। টানা ওকে পড়িয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে দিল। এদিকে সৌমাভ রোজই প্রায় ভোরে বেড়িয়ে যায়, ফেরে বিধ্বস্ত অবস্থায় রাতে। দু’জনে কথা প্রায় হয়ই না। একদিন তার মধ্যেই একটু তাড়াতাড়ি ফেরার পরে দু’জনে গল্প করতে বসল পাশাপাশি। জয়তী জানল, ভদ্রার যে এলাকাটা রিজার্ভ ফরেস্ট করার জন্য সরকার চাপ দিচ্ছে, সেটা বিরাট এলাকা। তার জোন ভাগ করা, সীমানা নিয়ে সরকার এবং গ্রামবাসীদের জট কাটানোর মত অনেক ঝামেলা চলছে। সেদিন দু’জনে অনেক রাত অবধি জেগে গল্প করল, গানও গাইল একসঙ্গে। তবে সৌমাভর একটা কথা ওকে নাড়া দিল। সৌমাভ বলল, ‘‘তোমার বয়স অনেক কম। আবেগে না ভেসে এ বারে কাউকে পছন্দ হলে ভেবেচিন্তে একটা বিয়ে করার কথা ভাব। আমি তোমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু হয়েই থাকব। কিন্তু তুমি তো জান, আমার পক্ষে আর কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। এমন নয় যে আমি ঈশিতার কাছে ফিরে যাব। আমি আর কাউকে স্ত্রী হিসেবে মানতেই পারব না। ও সুখী হোক, এটাই চাই। কিন্তু ছেলেমেয়েদের বড় করতে হবে তো আমাকেই। সুভদ্রাকেও ওর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সংসার ছেড়েও সংসারে জড়িয়ে গেছি, ভুল বুঝো না।’’

আর পারল না জয়তী। লোকটা কতটা সৎ এবং খাঁটি, সেটা ও আগেই বুঝেছে। লোকটার দায়িত্ববোধও নিজে দেখেছে। সবচেয়ে বেশি ভাল যাকে বেসেছিল, যাকে সবচেয়ে বেশি কাছে টানতে চেয়েছিল, তার কাছ থেকেই দিনের পর দিন উপেক্ষা এবং শেষে অতবড় প্রতারণার আঘাত নীরবে সহ্য করেও সব দিকে খেয়াল রেখে চলেছে। এবং সবটাই জয়তীর চেয়ে বেশি কেউ জানে না। তা ছাড়া জয়তীর ব্যাপারে যা করেছে, তাতে ওর কাছে কৃতজ্ঞতার সীমা নেই। প্রচন্ড আবেগে সৌমাভকে বুকে টেনে বিছানায় ফেলে ওর উপরে উঠে বলল, ‘‘তোমার সব কথা রাখার চেষ্টা করব। বিয়ে কাউকে করব কি না, জানি না। করলেও তোমার মত ছাড়া করব না। আর একটা কথা, আমাকে ভুলে যেও না প্লিজ’’, বলে কেঁদে ফেলল। সৌমাভ ওকে অনেক আদর করে শান্ত করে শুতে পাঠাল।

ডিসেম্বরের ২৪ তারিখে কলকাতায় ফিরল জয়তী। এই ক’দিনে ও সুভদ্রাকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পেরেছে। মেয়েটাও যেন কিসের তাগিদে জীবন বাজি রেখে প্রায় পড়াশোনা করতে মরিয়া। কলকাতায় ফিরে অফিসের একজনকে ফোন করে নতুন বাড়ির খোঁজ নিতে গিয়ে জানল, বাড়ি মিলেছে, অফিসের থেকে দূরেও নয়। ও যে কোনও দিন শিফট করতে পারে। জয়তী ঠিক করল, দেরি করবে না। তখনই একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি গিয়ে নিজের যেটুকু মালপত্র ছিল নিয়ে নতুন বাড়িতে চলে এল। ঠিক করল, পরের ক’দিনে সংসার গুছিয়ে নেবে।

পরের দু’মাসে নিজের সংসার গোছানো, ফ্ল্যাটে বাড়তি সিকিউরিটি হিসেবে কোলাপসিবল লাগানো, ডাবল ইয়েল লক লাগানোর বুদ্ধিটা ওকে সৌমাভই দিয়েছিল। সেই সঙ্গে একটা আইহোলও লাগাল। যোগাযোগ করে বারিপদার ফ্ল্যাট থেকে নিজের সেই খাট এবং অন্যান্য আসবাব এনে সব সাজিয়ে ফেলল। এদিকে নতুন অফিস, চাপও প্রচুর। তা ছাড়া ও আগে কখনও চাকরি করেনি। তাই সৌমাভর সঙ্গে রোজ কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শিখতে লাগল। সৌমাভর কথা অফিসের লোকেদের তাড়া দিয়ে বাড়িতে ফোনের কানেকশনও পেয়ে গেল ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। এর মাঝে জানুয়ারিতে দু’দিনের জন্য ভদ্রায় গেছিল জয়তী। তবে এবারে ওর টিকিট কেটে পাঠিয়েছিল সৌমাভ। ফোন করে কারণ জানতে চাইলে বলেছিল, ‘‘এখন সংসার গোছাতে হবে, তোমার অনেক কাজ। টাকা নষ্ট করো না।’’ জয়তী বুঝেছিল, লোকটার দায়িত্ববোধ কত প্রবল।
[+] 11 users Like Choton's post
Like Reply
#98
(06-05-2025, 12:57 AM)Nam:);pradip lahiri Wrote: অসাধারণ আপডেট,  পড়ে খুব ভালো লাগলো। এর পরের অংশ পড়ার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলাম।

অনেক ধন্যবাদ।  Namaskar
[+] 2 users Like Choton's post
Like Reply
#99
(06-05-2025, 02:54 AM)Shorifa Alisha Wrote: এ আপডেট মন্তব্য দেওয়ার মত সাহস নেই।
শুধু বলবো ভালোবাসা অনেক পেয়েছি ??

Namaskar Namaskar Namaskar অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
[+] 1 user Likes Choton's post
Like Reply
(06-05-2025, 06:52 AM)মাগিখোর Wrote:
লেখা নিয়ে কোন কথা হবে না।
মনে হয় সাইটে একটা ক্লাসিকের জন্মের সাক্ষী হয়ে থাকছি।
আজকের পাঁচটা রেপুই দিয়ে দিলাম।

লেখা এগিয়ে চলার প্রত্যাশায়।

congrats
yr):

ক্লাসিক বলবেন না প্লিজ। এই ফোরামে অনেক ক্লাসিক লেখা আছে।  তাদের অনেকেই আর লেখেন না, এটা কষ্টের। ফোরামেরও গুণগত মান অনেক পড়ে গেছে। এখন বেশির ভাগ লেখা যে ধরণের হয়, সেই রকম একটা লেখা আমার খসড়া করা আছে প্রায় 3/4 মাস ধরে। এটা প্রায় শেষ। আর কয়েকদিনের মধ্যে এটা শেষ করে সেটা ধরে শেষ করব। তারপর...মুশকিল হল আমার কম্পিউটারটি দেহ রেখেছে। এই লেখাটা মোবাইল এ সেভ করা বলে দিতে পারছি। কম্পিউটার সারাতে না পারলে ওটা নতুন করে লিখতে হবে। ততদিন এনার্জি থাকা কঠিন আমার পক্ষে।
[+] 2 users Like Choton's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)