Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
বাড়ি ফিরে জয়ন্ত দেখলে অংশু চুপ করে গোঁ মেরে কেমন বসে আছে। বললে---কি হল? কিছু হয়েছে?
---আমি কাল মায়ের কাছে যেতে চাই বাবা।
জয়ন্ত অবাক হল। বলল---কেন? কাল তো তোর কলেজ আছে।
---এখন তেমন ইম্পরট্যান্ট ক্লাসও হচ্ছে না। বেশিদিন থাকব না। সপ্তাহ খানেক পরেই ফিরে আসবো।
---অতদিন কলেজ-টিউশন কামাই করবি? পিছিয়ে যাবি তো!
অংশু দৃঢ় গলায় বলল---বই পত্তর নিয়েই যাবো। আমার ভালো লাগছে না। আমি মায়ের কাছে যাবো।
ছেলেমানুষের মত জেদ করে বলল অংশু। জয়ন্তের কোনো ইচ্ছে নেই ছেলে-মেয়েদের তাদের মায়ের প্রতি অধিকার কেড়ে নিতে। বলল---হোক। গেলে পরে তোর দিদার জন্য প্রেসার মেশিনটা দিয়ে আসিস। তাহলে আর কুরিয়ার সার্ভিসের রিস্ক নিতে হবে না।
অংশু যেন একটু রেগেই আছে, জয়ন্ত বুঝতে পারলো। কিন্তু কার ওপর, কেন, সে বুঝতে পারলো না। বলল---চা খাবি?
***
রাতে ডিনারের পর জয়ন্তের মনে এলো ঐ ব্রাউন প্যাকেটটার কথা। সুচি অর্ডার করেছিল। স্যানিটারি ন্যাপকিন বলেই ভেবেছিল জয়ন্ত। কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিন বা অর্ডারই করবে কেন? আজকাল মুদির দোকানেও স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখে। তাছাড়া খামের আকার দেখে তা মনে হয় না। তবে কি সুচির কোনো প্রয়োজনীয় ওষুধ কিংবা ওর মায়ের জরুরী ওষুধ? তাহলে মন্টুর ঐ কর্মচারী বলতে ইতস্তত হবে কেন?
জয়ন্ত বাদামি খামটা খুলতেই চমকে উঠল। এক জোড়া কন্ডোমের প্যাক। কন্ডোম! সুচি কি তবে গফুরের জন্য কন্ডোম অর্ডার করেছিল! গফুর কি এতটাই অযোগ্য যে কন্ডোমটুকু কিনতে পারে না! ওটাও সুচিকে কিনতে হয়। হবেই না কেন? একটা মাতাল, তালহীন ভবঘুরে ভিখারি, তার কোনো কিছুতেই যোগ্যতা আছে নাকি!
কন্ডোমের প্যাকেটের গায়ের লেখা দেখেই জয়ন্ত চমকে উঠল বেজায়। যেন স্পষ্ট করে গফুরের যোগ্যতার কথা লেখা আছে। এই কন্ডোম কোনো সাধারণ কন্ডোম নয়, এই কন্ডোম সচরাচর ফার্মেসিগুলোতে রাখে না। ভারতীয়রা কন্ডোম কেনার সময় তার ব্র্যান্ড, ফ্লেভার কিংবা আকার নিয়ে সচেতন নয়। ক্রেতা কন্ডোম চাইলে ফার্মেসির লোকেরা একটা গড়পড়তা সাইজের কন্ডোম দিয়ে থাকে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ থাকে তাদের জন্য কন্ডোম নির্দিষ্ট আকারের নিতে হয়। সুচিকেও তাই নিতে হয়েছে।
জয়ন্ত জানে কন্ডোম সাধারণত স্মল, রেগুলার, লার্জ এবং এক্সট্রা লার্জ সাইজের হয়। ভারতীয় কাস্টমাররা স্মল কিংবা রেগুলার সাইজটাই মূলত ক্রয় করে। দোকানিও এমন সাইজ দিলে জানে মোটামুটি ফিট করে যায়। কিন্তু এর বাইরেও কোনো কোনো পুরুষের লিঙ্গের আকার বড় হলে লার্জ, বেশ বড় হলে এক্সট্রা লার্জ নিতে হয়। কিন্তু সুচি যে কন্ডোমের প্যাক নিয়েছে তার আকার এক্সট্রা লার্জ জাম্বো।
কন্ডোম সম্পর্কে জয়ন্তের ধারণা তৈরি হয়েছিল, একবার ডাক্তাদের সংগঠন থেকে ও' এইডস সচেতনতা প্রসারের ক্যাম্পে গিয়েছিল। সে সময় তাকে এইচ আইভি ভাইরাস নিয়ে যেমন পড়াশোনা করতে হয়েছিল, তেমন তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও জানতে হয়েছিল। সেখানেই সুস্পষ্ট ধারণা ছিল কন্ডোম সংক্রান্ত। যা বেশিরভাগ ভারতীয়রা জানে না বা জানারও প্রয়োজন পড়ে না। কারণ ভারতীয়দের লিঙ্গের আকার গড়পড়তা থাকে। এক্সট্রা লার্জ কন্ডোম মূলত পুরুষের লিঙ্গের আকার বেশ দীর্ঘ হলে আবশ্যিক ব্যবহারের দরকার পড়ে। তা নাহলে, কন্ডোম ছিন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে। অবাঞ্ছিত গর্ভবস্থা বা যৌন সংক্রমণ তাতে হতে পারে। ভারত উপমহাদেশে ছাড়াও আফ্রিকা হল এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যাধিক্যের মহাদেশ। আফ্রিকান স্টাডিজের জন্য জয়ন্ত জেনেছিল এক্সট্রা লার্জ কন্ডোম আবার এক্সএল, মাক্স, ম্যাক্সি, ম্যাক্সিমাম এবং জাম্বো হয়ে থাকে। কোম্পানির দেওয়া এই বিচিত্র নাম আসলে পুরুষের লিঙ্গের আকারের ভিত্তিতে। এই জাম্বো হল কোম্পানিগুলির তৈরি সবচেয়ে বড় আকারের কন্ডোম। এইডস আক্রান্ত দেশ কঙ্গোর পুরুষদের অনেকেরই লিঙ্গের আকার অস্বাভাবিক রকম বড় হয়। তাদের জন্য এই জাম্বো প্যাক কন্ডোম বেশ উপযোগী। ভারতের বাজারেও জাম্বো প্যাক মেলে বটে, তবে তার চাহিদা থাকে না বলে বেশিরভাগ ফার্মেসি রাখে না। সুচি অর্ডার করেছে। মন্টুর কথা অনুযায়ী বেশ কয়েকবার এসেছিল ওর দোকানে। শেষাবধি এই জাম্বো প্যাক অর্ডার কি আসলেই প্রমান করে সুচির প্রেমিক গফুরের লিঙ্গ অস্বাভাবিক রকম বড়! এটাই কি গফুরের যোগ্যতা?
পুরুষের লিঙ্গ বড় হলেই সে নারীকে যৌন তুষ্ট করতে পারবে এই ধারনা যে ভ্রান্ত জয়ন্ত চিকিৎসক হিসেবে বিলক্ষণ জানে। পুরুষের স্ট্যামিনা, নারী দেহকে বুঝতে পারা, ফোর প্লে করার দক্ষতাই আসল। তবে বড় পুরুষাঙ্গ যে একেবারেই ভূমিকা রাখে না, তা নয়। তাই তো বরাবর যৌনতার ক্ষেত্রে পুরুষের বড় পুরুষাঙ্গের কদর হয়ে এসেছে। তবে এমন অস্বাভাবিক রকম বড় হলে আবার মেয়েদের কষ্ট হয়। সব মেয়েদের নাও হতে পারে। অবাঞ্ছিত প্রেগনেন্সির ভয় যে সুচিরও আছে, জয়ন্ত সেটা বুঝতে পারে। এ' বয়সে প্রেগনেন্ট হওয়া অনেক বেশি ঝুঁকির। তাছাড়া গফুরের মত ফুটপাতে ঘোরা, মদ্যপ নোংরা লোকের নানা যৌনরোগও থাকতে পারে। ওর স্ত্রী নিজেই তো একসময় যৌনকর্মী ছিল। অর্থাৎ গফুরের যৌন পল্লীতে যাতায়াতের অভ্যেস ছিল। সুচির মধ্যে নিশ্চিত যৌন সংক্রমণের ভয় আছে। সত্যিই বিস্মিত হচ্ছে জয়ন্ত, এরপরেও সুচি কি করে পারে এমন লোককে জীবন সঙ্গী করতে পারে! শুধুই কি ঐ বড় লিঙ্গের বাসনা!
জয়ন্ত কত কিছুই ভেবে যাচ্ছে, বড্ড অস্বস্তি হল যখন সে টের পেল, সে আসলে নিজের স্ত্রী ও তার প্রেমিকের যৌন সম্পর্কের মূল্যায়ন করছে এতক্ষন ধরে। নিকৃষ্ট চিন্তা মনে হল তার। অংশুর পায়ের শব্দে সে দ্রুত কাগজে মুড়ে রাখলো কন্ডোমের প্যাক দুটি।
+++++
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
পর্ব: ২৯
---অংশু, পৌঁছে ফোন করিস। ট্রেনে কিছু আনহেলদি কিনে খাস না।
জয়ন্ত ছেলেকে কথাটা বললে। ঠিক যেমন ওকে ওর মা বলত। এখন জয়ন্তই যেন মায়ের দায়িত্বও সামলাচ্ছে। অবশ্য সে পুরুষ মানুষ, সুচির যেটা স্বাভাবিক চরিত্র, সেটা জয়ন্তের ক্ষেত্রে সময়ের প্রেক্ষিতে গড়ে উঠছে।
প্রেসার মেশিনটা দেবার সময় জয়ন্ত ভেবেছিল কন্ডোমের বাক্সগুলোও পাঠিয়ে দেবে অংশুর হাতে। সুচিকে অপমানিত করবার এ' এক অনবদ্য সুযোগ ছিল। তাছাড়া সুচি নিশ্চিত এ বয়সে গর্ভবতী হতে চাইবে না, তাই এমন মদ্যপ প্রেমিককে আটকাতে কন্ডোম তার জরুরী। কিন্তু পরক্ষণে জয়ন্ত ভাবলে সে দায়িত্ব জয়ন্তের নাকি। সুচির জীবনের দায় দায়িত্ব এখন তার নয়। স্ত্রী ও সদ্য হয়ে ওঠা প্রাক্তন স্ত্রীয়ের ফারাকটা সে হিসেব করে নিয়েছে।
অংশুর হাতে কন্ডোমের বাক্স দিলে পরে অংশু যদি সন্দেহ করে খুলে দেখে! তবে আরেক কেলেঙ্কারি হবে। তারচেয়ে না হয় থাক। সুচি বুদ্ধিমতী, যতই ভবঘুরে প্রেমিকের পাল্লায় তার মাথা নষ্ট হয়ে যাক, তার বুদ্ধিশুদ্ধি নির্ঘাত এখনো যায়নি। সে নিশ্চই ব্যবস্থা করেছে গফুর নামক উন্মাদটার সাথে অবাঞ্ছিত গর্ভবস্থা আটকাতে। তাছাড়া সুচি এখন তেতাল্লিশ, যতই তার পিরিয়ডস স্বাভাবিক হোক, গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কমই। এছাড়া সুচি পিলও নিতে পারে। এ বয়সে গর্ভবতী হওয়াও খুব রিস্ক।
হঠাৎ করে জয়ন্ত ভাবলে, এতক্ষণ ধরে সে কি ভাবছে! তার প্রাক্তন স্ত্রীর বর্তমান সঙ্গীর দ্বারা প্রেগনেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা! জয়ন্তের হাসপাতালে অনেক মহিলারাই আসেন যারা চল্লিশের পর গর্ভবতী হয়েছেন। অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেক্ষেত্রে মূলত হতদরিদ্র বস্তির মহিলারাই বেশি। কিছু ভদ্রমহিলা অবশ্য অনেক চেষ্টার পর বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন এমন আছেন। অবশ্য আজকের দিনে আইভিএফ আছে। স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তদের জন্য এটা একটা যুগান্তকারী সলিউশন।
যাইহোক সুচিকে যে এখনো জয়ন্ত ভালোবাসে, সুচিত্রা জয়ন্তের সঙ্গে বাইশ বছর ঘর করেছে, তার আগে তাদের প্রেম, তাদের পারিবারিক সম্পর্ক, তাদের দুটি সন্তান। এসবের পরে কি সে শঙ্কিত হবে না? বিশেষ করে কোনো অবাঞ্ছিত যৌন রোগের স্বীকার যদি সুচি হয়ে থাকে ঐ নোংরা ভবঘুরে ফেরেব্বাজের জন্য! জয়ন্তের শঙ্কা হয়। বহু ফুটপাতের মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয় গনোরিয়া, সিফিলিসের মত মারাত্মক যৌন রোগ নিয়ে। এইডসও যে কলকাতার ফুটপাতের লোকেদের মধ্যে দেখা যায় না তা নয়, বরং এইডস যৌনপল্লীর বহুগামী লোকেদের মধ্যে কিংবা যৌনকর্মীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। গফুর রাস্তায় মদ খেয়ে পড়ে থাকে, ঘুরে বেড়ায়, যৌনপল্লীতে যেত বলেই হাসিনাকে বিয়ে করেছিল, নানা অবাঞ্ছিত রোগ থাকবে না, নিশ্চিত করে কে বলতে পারে!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা মনে পড়ল জয়ন্তের। অল্পবয়সী তরুণী গর্ভবতী হয়ে সন্তানের জন্ম দিতে ওদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তরুণী সম্ভ্রান্ত পরিবারের। স্বামী পুলিশে ছিল। তরুণীর সদ্যজাত সন্তানের মধ্যে এইচআইভি পাওয়া যায়। ফলত তরুণীর দেহেও মেলে। এ বিষয়ে তরুণীর শ্বশুরবাড়ীর পরিবার ঐ তরুণীকেই লাঞ্ছিত করেছিল। একাধিক কেস কাছারির মধ্যে আচমকা তরুণীর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তরুণীর বাপের বাড়ীর পরিবারের প্রবল দাবীতে কোর্টের তত্বাবধানে তরুণীর স্বামীর ব্লাড রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায় স্বামীর দেহেও এইচআইভি। এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তরুণী নয়, দায়ী স্বামীটিই ছিল। নিয়মিত যৌনপল্লীতে যাতায়াত ছিল ঐ পুলিশকর্মীর। এমন কত কিছুই ডাক্তারি জীবনে দেখেছে জয়ন্ত। সে সব লিখলে পরে একটা সাহিত্য হতে পারে বৈকি।
অংশু মায়ের কাছে যাচ্ছে। একটা চাপা আনন্দ যেমন আছে, তেমন বড্ড রাগ রয়েছে ভেতরে। মাকে মারধর করে গফুর। এ সে বরদাস্ত করবে না। যদি তেমন দেখে সে কি করবে ঠিক করতে পারছে না যদিও। লোকটাকে তাড়িয়ে দেবে দিদার বাড়ি থেকে।
গফুরের প্রতি যেটুকু সিমপ্যাথি তার মায়ের ডায়েরি পড়ে তৈরি হয়েছিল সেটাও তার নষ্ট হচ্ছে। মায়ের ডায়েরিটা সঙ্গে করে এনেছে ও'। মায়ের হাতে দিয়ে দেবে। মা যদি সন্দেহ করে যে সে ডায়েরি পড়েছে কিনা, সে সরাসরি জানিয়ে দেবে অপরের চিঠিপত্র, ডায়েরি এসব পড়ার তার অভ্যাস নেই।
ট্রেনটা বড্ড ধীর গতিতে চলছে। এ লাইনে ট্রেনে বড্ড ভিড় হয়। কত বিচিত্র লোক প্রতিদিন যাতায়াত করে। একা দিদার বাড়ি আসা তার এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। গোবিন্দপুরে দিদার বাড়িটা এমনিতেই ওর বড্ড পছন্দ। গাছ-গাছালি, দীঘি, ঝোপঝাড়, সেকেলে মোটা থামওলা বাড়ি আর তারচেয়ে বেশি নীরব-নির্জনতা ওর বড্ড ভালো লাগে। দিদার জন্য সুগার ফ্রি মিষ্টি নিয়েছে সে, ডালিয়া মাসির জন্য শাড়ি, বিট্টু-লাট্টুর জন্য দুটো খেলনা বন্দুক।
মায়ের আলমারি ভর্তি শাড়ি, যেমনকে তেমন রয়ে গেছে। সবমিলিয়ে সাত-আটকের বেশি শাড়ি নিয়ে আসেনি মা গোবিন্দপুরে। বাবা কাল কেমন এক অভিমান ভরা রাগান্বিত স্বরে বললে "অংশু তোর মায়ের শাড়িগুলো পড়ে থেকে এ বাড়িতে নষ্ট হবে কেন? যার জিনিস তাকে দিয়ে দিস।''
অংশু আলমারি খুলে চমকে গেছিল। মায়ের অন্তত চল্লিশটি শাড়ি সুসজ্জিত আলমারিতে। অত শাড়ি, অথচ মাকে পরতেই দেখে না। অত জিনিস অংশুর পক্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সে মায়ের আটটি শাড়ি বাছাই করে নিয়েছে। যার থেকে একটা আলাদা করে রেখেছে ডালিয়া মাসিকে দেবার জন্য।
***
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
হাসপাতাল গেটে ঢুকে জয়ন্ত চমকে গেল। বেশ ভিড়। আজ আবার কি হল? কলকাতা শহরে হাসপাতালে প্রতিদিনের নানা গল্প আছে। জয়ন্তকে দেখে ডাঃ মিত্র জানালে চারটি সন্তানের পর পার্ক সার্কাসের জনৈক বত্রিশ বর্ষীয়া সুফিয়া বিবি পঞ্চম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছেন। রুগীর পরিবারের দাবী ডাক্তারদের গাফিলতিতেই মৃত্যু। রুগী নাকি তাদের সম্পূর্ন সুস্থ ছিল। মিডিয়াও হাজির হয়েছে, স্থানীয় কাউন্সিলর এসে শাসিয়ে গেছেন হাসপাতালের নার্স, আয়াদের।
ডাঃ মিত্র বললেন---কাউন্সিলর বিকাশ বণিক নাকি আবার আড়ালে সিস্টারদের বলেছেন, কিছু মনে করবেন না, পেশেন্ট পার্টি যে এলাকার তারা আমার পুরনো ভোটার। তাই একটু আধটু তাল দেবার জন্য আপনাদের বললাম। আমি সামলে নেব সব।
জয়ন্ত হাসলো। এমন ঘটনা কলকাতার হাসপাতালগুলিতে আকছার হয়। তা বলে ডাক্তারদের গাফিলতি যে হয় না অনেক সময় তা নয়, ডাঃ মৃদুল নন্দীর মত লোকেদের পাল্লায় পড়লে এমনও হয়।
একজন সিনিয়র সিস্টার এসে বললে---স্যার, সব মিটলো তো, এখন মিডিয়া এসে ঝামেলা পাকাচ্ছে!
---কেন কি হল? প্রশ্ন করলেন ডাঃ মিত্র।
---সুপারকে ঘিরে ধরে এক এক রকম প্রশ্ন করছে আর এক এক রকম খবর পরিবেশন করছে।
জয়ন্ত বললে---মিডিয়া মিডিয়ার কাজ করছে। ঝামেলা না পাকালে কি মিত্র দা সন্ধের চায়ের কাপে খবর জমে?
সিস্টার ও ডাঃ মিত্র দুজনেই সহমত হয়ে হাসলে। তারপর সিস্টার চলে যেতে ডাঃ মিত্র বললে---ডাঃ দাশগুপ্ত, একটা কথা বলব বলে...
---কি বলুন তো?
---যদিও আপনার একান্ত ব্যক্তিজীবনের কথা। আপনার কি স্ত্রীয়ের সাথে সেপারেশন হয়েছে?
জয়ন্ত মুচকি হেসে বলল---সেপরেশন নয়, ডিভোর্স। আমার এক্স ওয়াইফ এখন হুগলিতে পোস্টিং। ওনার বাপের বাড়িতে। আমি এখন হাত-পা ছাড়া সিঙ্গেল মানুষ।
---উনি তো কলেজ টিচার? ছেলে-মেয়ে? মেয়ে তো বোধ হয়...ভুল যদি না বলি আইআইটিতে?
---হুম্ম। ছেলে-মেয়ে এডাল্ট। তারা তাদের জগৎ নিয়ে আছে। আমরা বয়স্কালে না হয় আলাদাই থাকলাম।
বিষয়টা হালকা করলে জয়ন্ত। ডাঃ মিত্র মৃদু হেসে বলল--ওহ, তাহলে মিউচুয়ালি আপনারা আলাদা হয়েছেন, বেশ বেশ ভালো সিদ্ধান্ত। এখন স্বাধীন জীবনে অনাবিল আনন্দ।
***
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
অংশু গোবিন্দপুর পৌঁছল সকাল এগারোটা নাগাদ। বড় রাস্তা ধরে হেঁটে পৌঁছল দিদার বাড়িতে। বড় বারান্দা আর দোতলা বাড়ির ওপর নুয়ে থাকা বিশাল শিরীষ গাছটা দেখলে প্রাণ ভরে যায় অংশুমানের। বারান্দায় খেলা করছিল বিট্টু আর লাট্টু। অংশুকে দেখে ওরা দৌড়ে এলো। বিট্টু আগেই এসে জাপ্টে ধরল---দা..আ..দা..আ..আ..
লাট্টুটা ছোট। ও' পরে এসে পৌঁছল। দুজনেই অংশুকে পেয়ে বড্ড খুশি। অংশু বলল---কি রে তোরা কি করছিস?
বিট্টু মাটির ঢেলা দেখিয়ে বলল---দাদা, দেখো আমি কি বানিয়েছি?
---কি ওটা?
---লাটিম?
ওমনি লাট্টু বললে---দাআআ আমালটা দেকো..
অংশু দেখলে ওর হাতেও মাটির ঢেলা। দুজনেই কাঁচা মাটি নিয়ে খেলছিল। ডালিয়া দেখতে পেয়ে বললে----হায়! হায়! দেখলি তোর ভালো জামা কাপড়ের গায়ে বজ্জাত দুটো মাটি লেপে দিল! ভাগ এখান থেকে!
অংশু হেসে বলল---না না। কোথায়? মাটি লাগেনি তো। ডালিয়া মাসি ভালো আছো?
ডালিয়া বিস্মিত হয়ে বললে---তুই একা এসেছিস? দাদাবাবু কোথায়?
---হ্যা। বাবা আসবে না।
---তোর বাবাকে জানিয়েছিস? আমি কাল যা বললাম?
অংশু গম্ভীর হয়ে বলল---না। বাবা জানলে সমস্যা বাড়বে।
---ওমা! কি অলুক্ষনে কথা! তুই ছেলে মানুষ, তোর মায়ের মাথার ভুত নামাবি কি করে? আর ঐ লোককে শায়েস্তা করতে তুই পারবি নে, একটা পাষন্ড জানোয়ার!
---মা কোথায়?
---কোথায় আবার? কলেজে গেছে। আয় আয় ভেতরে আয়। আমি বাপু এ' বাড়ির কে? সুচি দি'র এসব কান্ডকারখানা আর সহ্য করতে পারছি না। আমার খুড়তুতো দাদা ডাকে, তার কাছে চলে গেলে পরে বাঁচি। তারপর আর আমার এ' বাড়ির ভালো-মন্দের দায় নেই।
পিঠের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে দিদার বাড়ির বড় বারান্দায় জুতো মোজা খুলতে লাগলো অংশু। ডালিয়া আবার বলল---খবরদার! তোর মাকে আবার বলিস না, আমি তোকে খবর দিয়েছি।
অংশু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা দিদার ঘরে ঢুকে পড়ল। শয্যাশায়ী দিদা এবারও চিনতে ভুল করলেন। অংশু আবার পরিচয় দিলেই বৃদ্ধা নাতির হাতটা ধরে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন---তোর মায়ের সাথে দেখা হয়েছে?
---না, মা তো কলেজে গেছে।
---তোর দিদি এসেছে নাকি? দেখিনি মেয়েটাকে কতদিন! কি যেন নাম রে?
অংশু হেসে বলল---পিউ। দিদি এখন চেন্নাইতে। আইআইটি কলেজে পড়ে।
---এতটুকু মেয়েকে এদ্দুরে পড়তে পাঠিয়ে দিল তোর বাবা-মা! বলিহারি তোর মাকে!
তারপর বৃদ্ধা হাঁক দিলেন---ডালিয়া, অংশুকে কিছু খেতে দিলি?
ডালিয়া নিয়ে গেল অংশুকে। পিছু নিয়েছে বিট্টু-লাট্টুও। ওরা অংশুকে ছাড়তেই চায় না। অংশু বলল---ডালিয়া মাসি, এখন তো সবে সাড়ে এগারোটা বাজে। একেবারে দুপুরে ভাতই খাবো।
---তাহলে দেরি করছিস কেন? সেই কখন বের হয়েছিস। যা স্নান করে নে।
বিট্টু-লাট্টুর তখনও অংশুর সঙ্গে লেগে থাকায় বিরক্ত ডালিয়া মাসি চোখ বিস্ফোরিত করে বকা দিলে ওদের---ওর পেছন পেছন ঘুরছিস কেন? সারাদিন বাড়ির ক্ষতি না করলে...
অংশু বললে---আঃ ওদের বকছ কেন ডালিয়া মাসি?
অংশুর কথার গুরুত্ব না দিয়ে ডালিয়া বিড়বিড় করতে লাগলো তখনও---তোর মা 'ই লাই দিয়েছে ওদের...যেমন বাপ, তেমন ছা দুটো...নাগরের বাচ্চার জন্য পিরিত দেখলে গা জ্বলে যায়। পেটের ছেলে-মেয়েকে ছেড়ে এসে ধাড়ি বাচ্চা দুটোকে কেমন দিনরাত মাই খাওয়াচ্ছে! পোয়াতি না হয়েও গাভীন হয়েছে যে!
এত ঘিনঘিনে গেঁয়ো অশালীন কথা মায়ের সম্পর্কে শুনতে ভালো লাগছে না অংশুর। জিজ্ঞেস করল ডালিয়া মাসিকে--কিন্তু আমার এসব ব্যাগ পত্তর?
---তোর মায়ের ঘরে রাখগে যা।
অংশু মায়ের ঐ ছোট ঘরটার দরজা ঠেলে ঢুকল। ঘরটা মা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে এ' কদিনে। এতবড় বাড়িতে দুই তলা মিলিয়ে অনেকগুলো ঘর। তবু মা তার শৈশবের ঘরটাই এখনো থাকবার জন্য বেছে নিয়েছে। ঘরের দেয়ালে ফাঁদ আর নেই। বুক সেলফ গোছানো। এ' ঘরের সেকেলে পালঙ্ক খাটটা বেশ উঁচুতে। পায়ার তলায় ইট দিয়ে উঁচু করা। অংশু তার ব্যাগটা পাশের পুরোনো কাঠের চেয়ারে রাখলো। গায়ের শার্টটা খুলে আলনা থেকে একটা গামছা নিতে গেলেই ডালিয়া মাসি ঘরে ঢুকে তৎক্ষনাৎ রে রে করে বাধা দিলে, বললে---ছিঃ ছিঃ! এটা নিস না। নোংরা দেখছিস না!
অংশু খেয়াল করল গামছাটা মোটেই নোংরা নয়। এটা মায়েরই ব্যবহার করা। তাই বললে---কোথায় নোংরা? এটা তো মায়ের!
---তোর মায়ের হলে কি হবে। কাল দুপুরে তোর মায়ের এই গামছা দিয়েই না সে তার পীরিতের নাগরের গা মোছাচ্ছিল। এ' ঘরে তোর থাকার ব্যবস্থা করাই ভুল হয়েছে। দাঁড়া দোতলার ঘর একটা আমি পরিস্কার করে দিচ্ছি।
---কেন? এ'ঘরই তো বেশ। মায়ের সাথেই থাকবো।
অংশু সেবার যখন এসেছিল তখন মায়ের এই ছোট ঘরখানা বেশ পছন্দ হয়েছিল। তাই সে খুব সরলভাবেই বলল তার পছন্দের কথা। মুখ ঝামটা দিয়ে উঠল ডালিয়া মাসি। বলল---এ' ঘরে কি তোর মা একা থাকে? হতচ্ছাড়া ভিখিরি নোংরা মাতালটাও যে তোর মায়ের সাথে শোয়! আর জুটেছে নাগরের দুটো বদের ধাড়ি বাচ্চা।
ডালিয়া মাসি গ্রাম্য মহিলা। পড়ালেখা তেমন নেই। তাই অংশুর সামনেও কোনো রাখঢাক করছে না। অংশু বলল---গফুর মায়ের সাথে এ' ঘরেই থাকে?
---থাকে মানে? গা জ্বলে যায়। একটা ইকলেজের দিদিমণি, ডাক্তারের বউ হয়ে কিনা...একটা রাস্তার মাতালকে নিয়ে সংসার পেতেছে... সুচি দি'র পেটের ছেলে তুই, তোকে কি বলব! তুই নিজেই দেখবি তোর মায়ের নোংরামো। ছিঃ ছিঃ, রাত ভিতে ঘুমাতেও পারবিনে। সারারাত আলো জ্বলবে ঘরে...আর লটরপটর, মারধর...গালি গালাচ...! দু বাচ্চার মা হলি, এ বয়সে এত কিসের গতরের খিদে! বুঝিনা বাপু!
অংশুরও অস্বস্তি হচ্ছে। তার সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষটি, তার চোখে এ যাবৎ দেখা আদর্শ নারী তার মায়ের সম্পর্কে খারাপ কথাগুলি শুনতে মোটেই ভালো লাগছে না। সে বলল---ডালিয়া মাসি, সে লোকটা এখন কোথায়?
---কোথায় কে জানে! নেশাভান করে ফিরবে কখন, তারপর ঘরময় উৎপাত শুরু করবে...
***
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
চন্দন চলে যাওয়ায় পর এতদিন হলেও জয়ন্তের গাড়ি ড্রাইভ করতে মাঝে মধ্যে সমস্যায় পড়তে হয়। সিগন্যালগুলো বুঝে ওঠা সবসময় ঠিক হয় না। সতর্ক থাকতে হয়। চন্দন ছিল পেশাদার ড্রাইভার। জয়ন্তের হাত তো আর ওর মত পোক্ত নয়। দেড়টা বাজে ঘড়িতে। এক পশলা বৃষ্টিতে গাড়ির কাচ খানিক ভিজেছে।
গাড়ি গ্যারেজ করে কাচটা মুছে দিল জয়ন্ত। সিঁড়ি ভেঙে গুটি গুটি পায়ে উঠতে বড্ড ক্লান্তি লাগছিল। ক'দিন ধরে ভাবছিল নিজের প্রেসারটা একবার চেক করে দেখবে। সে আর হল না।
এর মাঝে টেলিফোন করে অংশু জানালো সে গোবিন্দপুর ভালোয় ভালোয় পৌঁছে গেছে। খেয়ে-দেয়ে মায়ের ঘরেই শুয়েছিল অংশু। মায়ের এই ঘরটা বড্ড ছোট হলেও এ ঘরের ভেতর একটা ঘর আছে। বন্ধ দরজাটা দেয়ালে সেবার দেখেছিল অংশু। ঘুম ধরে গেছিল তার। বাইরে শব্দ শুনে বুঝল মা এসেছে।
অংশুকে দেখে সুচিত্রা ভীষণ থতমত খেলো। অংশুও বুঝল মায়ের এই চমকের কারণ। তারপর মা বললে---তুই কখন এলি? একা এলি?
---হ্যা। ছোট্ট করে উত্তর দিল অংশুমান।
অংশ লক্ষ্য করছে মাকে। মায়ের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা। না, মা যেন তার সেই আগের মতই। একটা গাঢ় মেরুন রঙা তাঁত শাড়ি পরেছে। কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে হাতের কব্জি ঘড়িটা খুলতে খুলতে বলল---ভালোই হয়েছে। কাল ভোরে স্বপ্ন দেখলাম তোকে আর পিউকে। বড্ড মন খারাপ করছিল রে। তোর কলেজ নেই?
---কলেজে তেমন ক্লাস হচ্ছে না। আমারও মন খারাপ করছিল মা। তাই চলে এলাম।
মাকে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে অংশু। বললে---মা কিছু ভালো লাগে না। বড্ড মন খারাপ করে।
সুচিত্রা অংশুর চিবুকে হাত বুলিয়ে ছেলেকে চুমু খেল গালে কপালে। আদর করে বললে---মা পাগল ছেলে আমার। তোর বাবা কেমন আছে?
অংশু কোনো উত্তর দিল না। মায়ের কলেজ ফেরত ঘামে ভেজা গায়ে লেপ্টে সে স্নেহশীতল আদর পেতে উদগ্রীব। ইচ্ছে হল কান্নায় ফেটে পড়তে। বললে---কলকাতায় ফিরে চলো না মা? ভালো লাগে না।
ছেলের দুটো গাল চেপে চুমু দিয়ে সুচি বললে---ধুর পাগল ছেলে। আমি কি অনেক দূর চলে গেছি নাকি? এসেছিস যখন ভালো হয়েছে। এরকমই যখন ইচ্ছে হবে মায়ের কাছে চলে আসবি।
মা শাড়িটা বদলে সায়া ব্লাউজ পরা অবস্থায় আরেকটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ল। স্নান করে বেরিয়ে এলো ঘরোয়া একটা সবুজ সুতির শাড়ি পরে। বলল---ডালিয়া খেতে দিয়েছে তোকে।
---হ্যা।
অমনি ডালিয়া বলে উঠল---সেই তো এগারোটায় ভাত খেলি। এখন কিছু খাবি বাবু?
মা চুল বাঁধতে বাঁধতে বললে--চল বাবু, আমার পাতে বসে খেয়ে নিবি আবার।
অংশু মানা করে বলল---এখন আর কিছু খাবো না, মা। বড্ড বেশি ভাত দিয়েছিল ডালিয়া মাসি।
বিট্টু হাতে প্লাস্টিকের বন্দুকের ট্রিগার টেনে শব্দ করে বললে---মা, দেখো...
---এটা কোথায় পেলি? ভাই কোথায়?
---দাদা দিয়েছে। ভাই ঘুমিয়ে গেছে।
সুচি অংশুর দিকে তাকিয়ে বললে---বাচ্চা দুটোকে সারাদিন দেখার কেউ থাকে না। ডালিয়া ওদের সহ্য করতে পারে না।
মা চলে যাবার পর অংশুর বিছানায় লাফিয়ে উঠে পড়ল বিট্টু। দাদার উপর চেপে হুটোপুটি করতে লাগলো।
***
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
টিভিতে দুটি খবরই বারবার দেখাচ্ছে; এক হাসপাতালে ডাক্তারের গাফিলতিতে রোগী মৃত্যু, আরেকটি উত্তরবঙ্গে নাকি খুব বৃষ্টি হয়েছে। আর কলকাতায় বৃষ্টি কোথায়! এক পশলা হয়েই আকাশ ফাঁকা। জয়ন্ত লক্ষ্য করল বিকেলের আকাশ পরিচ্ছন্ন।
ছাদ বারান্দা হতে ঘরে এলো সে। সকালের কাগজটা বোধ হয় বার দুয়েক পড়া হল। লম্বা করে দেহটা মেলে দিল বিছানায়। ছবি রান্নাঘরে কাজ সেরে বললে---দাদা, আসি গো।
ছবি বেরিয়ে যাবার মিনিট পাঁচকের মধ্যেই ঘুম ধরে গেছিল জয়ন্তের। কলিং বেলের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। এই ভর সন্ধ্যায় এ বাড়িতে কে এলো!
গ্রিল গেটের ওপারে কম বয়সী কয়েকটা ছোকরা। ওদের কয়েকজনকে এই পাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে আগেও দেখেছে জয়ন্ত। পাড়ারই ছেলে বলে মনে হল। সে বললে---কি ব্যাপার?
---ডাক্তার বাবু, আমরা নব যুবক সঙ্ঘ থেকে এসেছি। পূজার চাঁদার জন্য।
---পূজার চাঁদা? এতদিন আগে থেকে?
ওদের মধ্যে একটি ছেলে হেসে উঠে বলল---কত আর দিন হবে। আজ নিয়ে ছাব্বিশ দিন বাকি। দেখেননি ফুটবল মাঠের পাশে প্যান্ডেল উঠছে।
জয়ন্ত বিরক্ত হয়ে বলল---কত দিতে হবে?
----দু' হাজার টাকা।
জয়ন্ত পুজোর চাঁদা এত দেয়ার পক্ষপাতী নয়। সে বলল---দু' হাজার মানে? আমি কি টাঁকশাল চালাই নাকি? এরপর তো আরো কত ক্লাব আসবে। সবাইকে কি এমন বিলোতে থাকবো নাকি?
সর্দার গোছের ঐ ছেলেটা ঠাট্টা করে বলল---পাড়ার পুজো। আপনার চেম্বারের একদিনের আয়েই পুজোটা উতরে যাবে...
কথার মাঝপথে জয়ন্ত বললে---আমি চেম্বার করি না। পাঁচশ টাকার একটাকাও বেশি দেব না।
---বৌদি নেই? বৌদি থাকলে বেশি দিতেন। পাশ থেকে আর একটা ছোকরা বলল।
জয়ন্ত হেসে বললে---বৌদি থাকলে আরো কম দিত। বৌদিকে তো চেন না। ফালতু খরচের লোক ও' নয়। যা বলছি তাই লেখো।
চাঁদার রশিদ কেটে পয়সা নিয়ে ওরা চলে গেল। জয়ন্ত চা বসালো সসপ্যানে। টিভিটা চালিয়ে দিল সশব্দে। একইভাবে কর্কশ শব্দে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন খবর সঞ্চালিকা। দু'পাশে এক দল লোকের ভিড়। যারা প্রতিদিনই সন্ধে হলে বিতর্ক সভায় এসে চেঁচামেচি জুড়ে দেয়। আজকের বিষয় ডাক্তারের অবহেলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভাঙছে। কাউন্সিলর বিকাশ বণিকও হাজির। বেশ গলা চড়িয়ে পেশেন্ট পার্টিরই পক্ষ নিচ্ছেন তিনি।
***
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
সন্ধেবেলা মায়ের কলেজটার দিকে ফাঁকা রাস্তা ধরে বেড়াতে গিয়েছিল অংশু। ঝিঁঝিঁপোকার ডাক আর ঘন নিস্তব্ধতার জনহীন রাস্তা। ফিরল যখন বেশ ঘুটঘুটে অন্ধকার। বাড়ির আলোগুলো জ্বলছে, বারান্দাটায় নিকষ কালো অন্ধকার। মা আর ডালিয়া মাসি রান্নাঘরে। বিট্টু-লাট্টু মায়ের ঘরে।
অংশু এখনো গফুরকে দেখতে পায়নি এ' বাড়িতে। মাকেও এ' নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। সে সোজা রান্না ঘরে ঢুকে বলল---মা, খিদে পেয়েছে।
সুচিত্রা তখন কড়াইতে মাছ ভাজছিল। ডালিয়া আনাজ করছে। সে বলল---মুড়ি খাবি?
সুচি জানে তার ছেলে একদম মুড়ি পছন্দ করে না। তাই বলল---সাতটা বাজলো। অল্প কিছু খেয়ে নে। ম্যাগি করে দিচ্ছি।
অংশু দিদার ঘরে হাজির হল। দিদা মৃদু ঘুমে আচ্ছন্ন। সে হালকা ঠেলা দিয়ে বললে---দিদা, ঘুমিয়ে পড়লে নাকি?
বৃদ্ধা মানসী দেবী ঘুরে তাকালেন নাতির দিকে। তারপর বললেন---অংশু?
---হুম্ম। খেয়েছ?
---এই তো তোর মা খাবার দিয়ে গেল।
অংশুর হাতটা চেপে ধরলেন তার দিদা। অংশু হেসে বলল---দিদা, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
---কি কথা? তুই কিছু মুখে দিয়েছিস বাবা?
---মা ম্যাগি করে দিচ্ছে। খাবো। বলছি গফুরকে চেনো?
---কে অমর রে? আর কদিন বাঁচবো...
অংশু হেসে বলল---অমর নয় গো দিদা, গফুর? গফুরকে চেনো? আলি চাচার ছেলে?
---আলির ছেলে? সে কবেকার কথা, গফুর তার নাম ছিল। এ বাড়িতেই তো বড় হল। বাপের মত চেহারা ছিল ছেলেটার। বাপ যেমন দশাসই চেহারার, তেমন ছিল গফুর। ছোট থেকেই ডানপিটে। সে ছেলে বাড়ি ছেড়ে পালালো।
---কেন পালালো, দিদা?
অংশু বুঝল বিছানা শয্যাশায়ী দিদা বয়সের ভারে কিছু মনে করতে পারছে না। অংশু মনে করিয়ে দিতে বললে---ঝুমুর মাসি কে মনে আছে?
---ঝুমুরকে মনে থাকবে না কেন? ডালিয়া তো তার মায়ের পেটের বোন। মালতি হল গিয়ে তোর দাদুর মামার মেয়ে। সে তোর মায়ের পিসি। মালতির দুই মেয়ে, ঝুমুর আর ডালিয়া। বড় মেয়েটা যে মরল এ বাড়িতেই।
---কি করে মরল? দিদা?
---দীঘির জলে ডুবে মরল। সাঁতার জানতো মেয়েটা। তাও মরল রে।
দিদা কি কিছুই জানে না? ঝুমুর মাসির মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, আত্মহত্যা, এ কথা কি দিদার কাছেও গোপন রেখেছিল দাদু কিংবা মা? অংশু বললে---সেই গফুর এসেছে জানো দিদা?
---কে গফুর?
অংশু মনে মনে হাসলে। দিদা আবার ভুলে যাচ্ছে সব। পুনরায় বলল---আলি চাচার ছেলে গফুর, যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছিল। সে এসেছে জানো?
---গফুর এসেছে? কোথায়? ওর বোন জামিলা, খানাকুলের ছুতোর ফরিদের ছেলে রশিদের সাথে বিয়ে হয়েছে। রশিদ তো আসতো আগে, কাঠের কলকব্জা ভাঙলে সারিয়ে দিত। সেও আর আসে না।
অংশু বুঝলে দিদার স্মৃতিভ্রম হয়েছে। সবকিছুই গুলিয়ে ফেলেছে বারবার।
এর মাঝেই ছেলেকে প্লেটে করে ম্যাগি দিয়ে গেল সুচি। বলল---দিদার সাথে গল্প কর। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সারাদিন ধকল গেছে তো খুব।
বৃদ্ধা মানসী দেবী বাধা দিয়ে বললেন---দিদা-নাতিতে একটু গল্প করতে দিবি নে? আর ক'দিন বাঁচবো?
ম্যাগি খেতে খেতে দিদার সাথে নানাবিধ গল্প করতে লাগলো অংশু। জানলো খানাকুলে বিয়ে হয়েছে গফুরের বোন জামিলার। জামিলার বর রশিদ কাঠের মিস্ত্রী। ভালোই লাগছে এমন নির্জন গ্রাম্য পরিবেশে বয়স্কা দিদার সাথে গল্প করতে। অংশু আবার বললে---ঝুমুর মাসি মরল কি করে, দিদা?
---কে?
বৃদ্ধা বোধ হয় শুনতে পেলেন না। অংশু আর কথা বাড়ালো না। মায়ের ঘরে এসে বিট্টু-লাট্টুর সাথে খেলতে লাগলো। ওরা বড্ড আনন্দ পেয়েছে অংশুর আগমনে। রান্নাঘর থেকে মা আসতেই মায়ের কোলে উঠে পড়ল লাট্টু। মা বলল---আব্বা, আসার আগে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। নাহলে কিন্তু আব্বা বকবে?
লাট্টুকে বিছানায় নিয়ে পাশ ফিরে শুলো মা। মা আঁচলের ভেতর হাত ভরে ব্লাউজের হুক খুলতেই বেরিয়ে পড়ল পুষ্ট ঠাসা দুধেল একটা স্তন। তীব্র ফর্সা সেই স্তনে ঘরের বৈদ্যুতিক আলো পড়ে আরো উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করেছে। মুহূর্তের মধ্যে লাট্টু ওটা মুখে পুরে নিয়ে টানতে লাগলো। অপর স্তনটাও ব্লাউজের আবরণ হতে বের করে আনলো মা। বিট্টুকে বললে---আয়।
বিট্টু লাফ মেরে খাটে উঠে মায়ের পিঠের দিক থেকে ঝুঁকে পড়ে মাই টানতে লেগেছে। অংশুর চোখের সামনে মায়ের উন্মুক্ত দুই স্তনে লালিত হচ্ছে গফুরের দুটি সন্তান। মা ওভাবেই শুয়ে থেকে স্তন্যদান করতে করতে বললে---পিউ ফোন করেছিল গতকাল, ও' হোস্টেল পেয়েছে। তোর বাবা জানে?
----হুম্ম। দিদি ফোন করে জানিয়েছে। ও হ্যা, বাবা দিদার জন্য প্রেসার মেশিন পাঠিয়েছে।
অংশু ব্যাগ খুলে প্রেসার মেশিনের বাক্সটা বার করল। বলল---মা, আমাকেও শিখিয়ে দিও কেমন প্রেসার চেক করতে হয়।
সুচিত্রা হেসে বলল---ওসব তোর বাবার কাছে শিখে নিস। তোর ঠাকুমা যখন বেঁচে ছিলেন, তখন তোর বাবা একদিকে হাউসস্টাফ অপর দিকে এমডি করছে। সময় কোথায়, আমাকেই শিখিয়ে দিল সব। আমিই তো তোর ঠাকুমার প্রেসার চেক করে লিখে রাখতাম সব।...তোর ঐ বড় ব্যাগে এত কি রয়েছে?
অংশু বললে---মা তোমার শাড়িগুলো। বাবা বললে নিয়ে যেতে।
---তোর বাবা বোধ হয় আমার কোনো জিনিসই ও' বাড়িতে রাখা পছন্দ করছে না।
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
অংশু ব্যাগ থেকে কয়েকটা বই বার করে হাতে দিল। বলল---এগুলো তোমার সাবজেক্টের বই। ভাবলাম তোমার স্কু লের জন্য লাগতে পারে তাই নিয়ে এলাম।
অংশু খেয়াল করলে মায়ের নজরে এসেছে বইগুলোর মাঝে নীল ডায়েরিখানি। বললে---ওমা! আমার ডায়েরিও নিয়ে এসেছিস। ওই টেবিলে সব রেখে দে বাবু।
---সে জানি না কি আছে সব, বই না ডায়েরি। খুলে দেখিনি এসব বই।
অংশু মায়ের টেবিলে বইগুলো রাখতে রাখতে বুঝিয়ে দিলে যে সে মায়ের ডায়েরি পড়েনি। যাতে মাকে কোনোরকম অস্বস্তিকর দুশ্চিন্তায় না পড়তে হয়।
চুকচুকিয়ে দুধপান করে যাচ্ছে বিট্টু-লাট্টু। লাট্টু মায়ের গায়ে লেপ্টে বুকে মুখ গুঁজে রয়েছে। বিট্টু মায়ের স্তনের বোঁটাটাকে রবারের মত টেনে মুখে ধরে রেখেছে। ওর চোখ অংশুর দিকে। স্তনবৃন্তটা মুখ থেকে বার করে বিট্টু বললে---মা, দাদা ভাইকে যে বন্দুকটা দিয়েছিল, সেটা ভেঙে ফেলেছে।
মা বলল---কি করে?
হাত নেড়ে বিট্টু বোঝাতে লাগলো---খেলতে খেলতে মুড়ে ভেঙে ফেলল!
ওমনি বেড়াল ছানার মত মায়ের গায়ে লেপ্টে থাকা দুগ্ধপানরত লাট্টু স্তন ছেড়ে বলে উঠল---মা...লা...,বিট্টু দাদা... আমালটা নিয়ে খেলছিল...লা..তালপলে...বলল...
মা হেসে ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল---হোক। বুঝেছি। পরে নতুন কিনে দেব।
অংশু লক্ষ্য করল মায়ের ডান স্তনের বৃন্তটা বিট্টুর মুখ থেকে বের হতেই ওর থেকে ঝরে পড়ল এক ফোঁটা দুধ মায়ের শাড়িতে। বিট্টু-লাট্টু পুনরায় চুষতে শুরু করেছে মায়ের বুকের দুধ। মা বললে---আর কত খেলনা যে তোদের চাই? সেদিন গোবিন্দপুর বাজারে গেল আমার সাথে, কি বায়না খেলনার জন্য। দু ভাইতে খেলতে গিয়ে নিমেষে ভেঙে ফেলেছে।
ডালিয়া এসে হাজির হল তক্ষুনি। বললে---সুচি দি, এবার ভাতটা বসিয়ে দিই? নাকি সবজিটা আছে করে নেব?
মা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললে---ভাতটা বসিয়ে দে। একটু নরম করবি। এমন ভাত করলি, লাট্টুটা কাল খেতে পারলো না।
ডালিয়া মাসির মুখমন্ডলে বিট্টু-লাট্টুকে মায়ের স্তনদানরত শায়িত অবস্থায় দেখে একটা বিরক্তির ছাপ দেখা দিল। কিছু একটা বিড়বিড়িয়ে বলল বটে, শোনা গেল না।
***
রাত বাড়লে নির্জনতাও বাড়ে। অংশু কলকাতা শহরে এমন নির্জনতা কল্পনা করতে পারে না। বড্ড ভালো লাগে তার এই গোবিন্দপুরের রাত। এতবড় বাড়ি। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে, চাঁদ আছে কিনা আকাশে কে জানে। থাকলেও একফালি হবে। ঝিঁঝির ডাক ছাড়া তেমন কোনো শব্দ নেই। একটা নেড়ি কুকুর রয়েছে, বারান্দায় ওঠার মুখে সিঁড়িতে বসে রয়েছে সে অলস কুন্ডলী পাকিয়ে।
মা বিট্টু লাট্টুকে খাওয়াচ্ছে। ডালিয়া মাসির পানের নেশা। রান্না ঘরে পান সাজিয়ে বসেছে। বললে---অংশু, পান খাবি নাকি?
সুচিত্রা ডালিয়ার দিকে বারণ করবার ভঙ্গিমায় চোখ বড় করে তাকালো। অংশু ডালিয়া মাসির পান খাবার প্রস্তাব দেওয়াতে ফিক করে হেসে ফেলল। ছেলে দুটোর খাওয়া সেরে ওদের নিয়ে উঠে গেল মা। অংশু বললে---সারাদিনে ক'টা পান খাও ডালিয়া মাসি?
---ক'টা মাত্র। চার-পাঁচটার বেশি না। আগে অনেক খেতুম রে। পান খাবার নেশা ধরালো মামীমা, মানে তোর দিদা। মামী যখন মিষ্টি পান মুখে ঠেসে ফর্সা মুখটার ঠোঁট দুপাটি লাল করে নিত, তার কি সুগন্ধ! সে দেখেই মামীকে বললুম একদিন পান সেজে দিতে। সেই থেকেই নেশা।
হঠাৎ করে রান্নাঘরের আলো নিভে গেল। ডালিয়া মাসি বললে---যাঃ গেল মুখপোড়া!
অংশু বুঝলে বিদ্যুৎ গেছে। তৎক্ষনাৎ মায়ের গলা শোনা গেল---ডালিয়াআআ...
মা বিট্টু লাট্টুকে ঘুম পাড়াতে নিয়ে গেছে। ডালিয়া মাসি হ্যারিকেনটা জ্বেলে দিয়ে বলল---অন্ধকারে বসে থাকিস না বাবু। রাতে বোড়া সাপের উপদ্রব খুব। আমি যাই তোর মায়ের কাছে হ্যারিকেন দিয়ে আসি। তোর দিদার ঘরেও অন্ধকার।
অংশু বললে---তাহলে আমাকে দাও। আমি হ্যারিকেনটা মায়ের ঘরে দিয়ে আসি। তুমি বরং দিদার ঘরে আলো জ্বেলে এসো।
অংশু হাতে হ্যারিকেন নিয়ে মায়ের ঘরে যেতেই দেখলে মা মশারি মেলে দুটো বাচ্চাকে নিয়ে শুয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ইলেকট্রিক পাখা বন্ধ। এমন গরমে কি করে মশারির ভেতর রয়েছে কে জানে!
অংশু বললে---মা হ্যারিকেনটা টেবিলের ওপর রাখলাম।
মা বললে---অংশু? তোর ডালিয়া মাসি কোথায়?
---দিদার ঘরে আলো জ্বালছে।
---এসেছিস যখন হাতপাখাটা দিয়ে যা না বাবা। যা গরম, প্রতিদিন হয়েছে এসময় ঠিক ইলেকট্রিক যাওয়া!
বড্ড বিরক্তি সহকারে কথাটা শোনালো মা। অংশু দেখলে বুকসেলেফের পাশেই তালপাতার পাখা। মশারি তুলে ওটা হাতে দিতে গিয়ে দেখলে লাট্টু ঘুমিয়ে গেছে মায়ের ডান দিকে। মা ওর দিকে পিঠ করে বাম দিক ঘুরে শুয়েছে। ঐ গরমেও বিট্টু মাকে পাক দিয়ে জড়িয়ে দুধপান করছে। মা ওকে বাতাস করতে করতে বললে---ঘেমে গেছে একদম ছেলেটা!
মায়ের ভারী দুধে ভরা সাদা স্তনটা ওর মুখের টানে ফুলে উঠছে। নির্জন রাত্রিতে চুকচুক করে স্তন টানার শব্দটা স্পষ্ট হচ্ছে অংশুর কানে। অংশু চলে এলো দিদার ঘরে। ডালিয়া মাসি একটা লন্ঠন জ্বেলে দিয়ে গেছে। বড্ড মিচমিচে তার আলো। বৃদ্ধা মানসী দেবী ঘরের মধ্যে কারোর প্রবেশের সাড়া পেয়ে বলে উঠল---কে কে?
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
---আমি গো দিদা! হেসে বললে অংশু।
---অংশু?
---হ্যা।
---ক'টা বাজলো রে?
---ক'টা আবার? সাড়ে আটটা হবে।
রান্নাঘরে কড়াইতে তেলে আনাজ ছাড়লো ডালিয়া মাসি। নির্জনতাকে ভঙ্গ করে তীক্ষ্ণ শব্দে ভরে গেল রান্নাঘর। এই রান্নাঘরটা সেকেলে। আজকের ফ্ল্যাটবাড়ির মত ছোট নয়। বেশ বড় লম্বা। পুরোনো দিনে একেই বোধ হয় রান্নাশাল বলা হত। ডালিয়া মাসি বললে---একসময় এখানে কাঠের উনোনে রান্না হত। মা আর মামীমা রান্না করত। জ্বালের তো অভাব নেই এ বাস্তুতে। গেরামের দু একটা বোস্টমী বউ আসে মাঝে মধ্যে। মাথায় করে জ্বাল নিয়ে যায়।
অংশু বললে---ডালিয়া মাসি। এই বাস্তুটা কত ডেসিমেল গো?
---ডেসিমেল-টেল বুঝিনা বাপু। মামীমা বলে চার বিঘার চেয়ে সামান্য বেশি এই বাস্তু। মামার তো জমিও আছে। চাষও হয়। ভাগ কে চাইবে? ভাগ চাষীরা মেরে সব বসে আছে। কে সেসব উদ্ধার করবে? সুচি দি'ই তো ওয়ারিশ। সে যদি এসব না ভাবে, কে ভাববে? হ্যা রে অংশু সিনু আসবে আর দেশে?
অংশু হেসে বললে---সিনু মাসি? না না। ওখানেই ওরা সেটল। এখন তো ওরা আমেরিকার নাগরিক। যোগাযোগও তেমন রাখে না।
জমি সংক্রান্ত অংশুর কোনো ধারণা না থাকলেও সে জানে তাদের কলকাতার বাড়িটা মাত্র পাঁচ ডেসিমেল জায়গার ওপর। দাদুর বাড়ির এই বাস্তু কম করে দেড়শ থেকে দু'শ ডেসিমেল তো হবেই। সে বললে---মাসি? এই দীঘিতে মাছ আছে?
---থাকবে না কেন? থাকবে বৈকি। আগে তো এই দীঘির জলে স্নান করা, মাছ ধরা হত। তখন কি আর এসব নলকূপ ছিল। তোদের তো আবার কলকাতায় পাম্প মোটর বসে গেছে। এই দীঘিতেই মরল আমার দিদি।
---ঝুমুর মাসি?
ডালিয়া কড়াইটা ঢাকা দিয়ে ওভেনটা কমিয়ে বলল---তুই জানলি কোথা থেকে?
---মা প্রায়শই বলে ঝুমুর মাসির কথা।
ডালিয়া মাসি বললে---হ্যা, সুচি দি আর ঝুমুর দি ছিল হরিহর আত্মা। সিনু আর আমি তো অনেক ছোট।
---তাহলে তুমি গফুর কে দেখোনি আগে? বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল অংশু।
ডালিয়া বললে---দেখিনি কেন? দেখেছি তো। সে ছোটবেলায়। শুনেছি ছোট থেকেই নাকি অমন বখাটে ছিল। পালিয়ে গেল যখন তখন তো আমি দশ বছরের। আমার কাকার ঘরে থাকতাম। আসলে আমরা দুই বোন হলে পরে আমার বাপ মাকে ছেড়ে আবার বিয়ে করে, কিন্তু আমার ছোটকাকা ছিল দরদী। তার পড়ালেখা ছিল কিনা। সে বলল ছোট মেয়েকে আমি মানুষ করব। চৌদ্দ বছর পর্যন্ত কাকা-কাকীর কাছে থেকেছি। সেভেন পর্যন্ত পড়েছি। সেই কাকার ছেলেই তো দিল্লিতে থাকে। আমার চেয়ে ছোটো। বলে ডালি দি চলে আয় দিল্লি। তার ছেলেমেয়েগুলো ছোটো ছোটো, দেখাশোনা করার কেউ নেই।
অংশু দেখলে ডালিয়া মাসি অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছে, তাই সে পুনরায় বললে---গফুরকে তাহলে তুমিও আগে চিনতে?
---চিনতাম মানে ঝুমুর দির মুখে শুনতাম আলি চাচার ছেলে গফুর দা'র কথা। দেখেছিলাম দু একবার পূজার সময়। আলি চাচাকে তো দেখিসনি অংশু, এই গফুরের মত লম্বা চওড়া ছিল। কিন্তু কি ভদ্র মানুষ ছিল জানিস। মু-সলমান হলেও এ বাড়ির ভরসার লোক ছিল। মা, মামীর মুখে শুনেছি। আর এই গফুর মাতালকে দেখ, স্বভাব চরিত্র কোনোটাই আলি চাচার না!
অংশু আর ডালিয়ার কথার মধ্যেই সুচিত্রা হ্যারিকেন হাতে হাজির হল। বলল---কি রে রান্না শেষ?
---মাছটা তুমি রাঁধো বাপু। আমি আর পারবনি।
মা কোমরে শাড়ির আঁচল বেঁধে মাছগুলোতে নুন-হলুদ মাখাতে লাগলো। আর বলল---ডালিয়া দোতলার ঘরটা পরিস্কার করে দিয়েছিস? রাতে অংশু ওখানে শুয়ে পড়ুক।
অংশু উঠে এলো রান্নাঘর থেকে। চারপাশ ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। রান্নাঘরে ছাড়া কেবল দিদার ঘরে মিচমিচে আলো। চওড়া বারান্দায় মেলানো লম্বা কাঠের চেয়ার। অংশু বসে রইল ঐ অন্ধকারে। ডালিয়া মাসি একটা টর্চ লাইট দিয়েছে অংশুকে। ভাবলে কি আর করবে, একটু ঘোরাফেরা যাক। তারপর খানিক সময় পেরোতেই টর্চ জ্বেলে সে ঢুকল মায়ের ঘরের মধ্যে।
মায়ের ঘরের বিছানায় খাটটা বেশ উঁচুতে ও ছোটও। ওখানে দুটো বাচ্চা ঘুমিয়ে রয়েছে। মশারির দড়িটা বাঁধা আছে এই পুরোনো মজবুত মেহগিনি খাটের স্ট্যান্ডগুলোতে। মায়ের ঘরের ভেতরেই উত্তরমুখো দেয়ালে একটা দরজা আছে। সেবার যখন এসেছিল এই দরজায় একটা জং পড়া তালা দেওয়া ছিল। অংশু দেখলে এবার তালা দেওয়া নেই, বরং শেকল দেওয়া কেবল। বোঝা গেল এই দরজা দিয়ে পাশের ঘরে যাওয়া যায়। পাশের ঐ ঘরে বোধ হয় কেউ থাকে না। তার ঠিক পরেই দিদার ঘর। পরে দোতলার সিঁড়ি ও বিশাল রান্নাঘর।
ভেতরের এই দরজাটা খুলল অংশু। খুলে টর্চের আলো ফেলতেই ভুল ভাঙলো তার। এই ঘর আসলেই অব্যবহৃত নয়। বরং বলা ভালো মায়ের ছোট ঘরের সাথে এই সংলগ্ন ঘরটা আসলে একটাই ঘর। সেপারেট দেয়াল করে দরজা একটা করা। ঠিক একই রকম দোতলাতে যে ঘরে অংশুর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে, সে ঘরেও এমন ভেতর দিয়ে দরজার মাধ্যমে পাশের ঘরের সংযুক্তি আছে। অংশু বুঝতে পারলে নীচতলা আর দোতলা একই আদলেই তৈরি। শুধু নিচতলায় যেখানে লম্বা রান্নাঘর আছে, দোতলায় সেখানে বেশ বড় বারান্দা। ঠিক অংশুদের বাড়ির ছাদ বারান্দার মত। তবে তার চেয়ে ঢের বড়।
অংশু আলো ফেলে ঢুকল ঐ ঘরে। ঘরের মধ্যে গুমোট গরম বেশ। চমকে উঠল এ ঘরেও অনেক জিনিসপত্র রাখা। একটা সেকেলে একই রকম পায়ার তলায় ইট দিয়ে উঁচু করে রাখা পালঙ্ক খাট। একটা বন্ধ বড় আলমারি। একটা বুক সেলফ, একটা আলনা, আলানাতে মায়েরই শাড়ি, ব্লাউজ, ব্রেসিয়ার। জানলা রয়েছে ঘরটার পাশের ঘরগুলোর মতই পশ্চিমমুখো। ওপর পাল্লা দুটো খোলা। বাড়ির পেছনের বারান্দা দিয়েই কেবল এ ঘরের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়।
অংশু পেছনের বারান্দায় গিয়ে দেখলে দীঘির জলে একফালি চাঁদের ছায়া। দৈত্যাকার কালো কালো সব গাছ। বাড়ির পেছন দিকের এই ঝোপ জঙ্গল আর দীঘি দেখলে সত্যিই ভয় করবে। এই দীঘির জলেই ডুবে মরেছিল ঝুমুর মাসি। গা ছমছম করে উঠল অংশুর। আর না থেকে চলে এলো বাড়ির সামনের বারান্দায়।
***
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
রান্নাঘরে মা আর মাসির গলার স্বর মিলছে। রান্নার সাথে সাথে ওরা কথা বলছে। ভাঙা পিচের রাস্তা থেকে শ'মিটার মোরাম রাস্তা ধরেই এই বাড়ি। প্রায় আধঘন্টা একা নিঃঝুম বসেছিল অংশু। এই এতক্ষনে টের পেল ভাঙা পিচ রাস্তাটা দিয়ে একটা মোটর সাইকেল চলে গেল। ঐ রাস্তা গেছে মায়ের কলেজের দিকে।
অংশুর মনে পড়ল সেবার যখন এসেছিল এই রাস্তাতেই দেখা হওয়া সেই লোকটার কথা। অংশুকে মোটর বাইকে করে মায়ের কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়েছিল লোকটা। সে লোকই বলেছিল এ রাস্তা দিয়ে আজকাল লোকের যাতায়ত খুবই কম। মূল গোবিন্দপুর গাঁয়ে যাবার আরেকটা শর্টকাট রাস্তা আছে। ওটাই লোকে ব্যবহার করে। কলেজ পেরিয়ে নিকটবর্তী যে বৈষ্ণব পাড়া আছে, তা এখান থেকে প্রায় এক কিমি দূরে। ঐ গ্রামে যাবার রাস্তাও ঐ শর্টকাট দিয়ে তাড়াতাড়ি হয়।
আচমকা বারান্দায় ভুত দেখার মত চমকে উঠল অংশু। একটা লম্বা ছায়মূর্তি এ বাড়ির দিকেই এগিয়ে আসছে। অংশু দ্রুত টর্চের আলো ফেলল লোকটার দিকে। দীর্ঘকায় চেহারার গফুরকে চিনতে ভুল হবার কথা নয় অংশুর। খালি গায়ে কাঁধের ওপর জামাটা ফেলে লম্বা লোকটা এগিয়ে আসছে। হাঁটার তালে একটা মৃদু দুলুনি আছে। কাছে আসতে বোঝাই যায় নেশাগ্রস্ত। নোংরা চুল দাড়ি সেই আগের মতই আছে, তীব্র কটু ঘাম আর সস্তার দিশি মদের গন্ধ ওর গা হতে ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে।
অংশুর দিকে লাল চোখে তাকালো গফুর। তারপর খুব কর্কশ স্বরে হাঁক ছাড়লো---সু-চি--ই-ই-ত্রা!
অংশুর নাকে ঠেকছে ঘিনঘিনে মদের উৎকট গন্ধ। সারাদিন লোকটাকে দেখা যায়নি এ বাড়িতে। রাতে লোকটা মদ খেয়ে এসেছে। রান্না ঘর থেকে হ্যারিকেন হাতে মা' বেরিয়ে এলো তৎক্ষনাৎ। তারপর হাসিমুখে বললে---ও' আমার ছেলে অংশু। চিনতে পেরেছো?
গফুর তার নেশাতুর লাল চোখ দিয়ে অংশুকে দেখল একবার, তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল---জা..নি। তোর...ব্যা-টা..কে। তু-ই..আমার.. ঘরে..আয়..এ-খন-ই।
মা বললে---যাচ্ছি। রান্নাটা সেরেই আসছি।
মাতাল গফুর উত্তেজিত হয়ে বলল---মাগী...খান-কি..তোর...রান-না-র..মা-কে...চুদি,...শালী। এখুনি..আয়..বল..ছি..কু..ত্তি...
মা কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে গেল অংশুর সামনে। অংশু দেখল মা'কে লজ্জিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। তারপর প্রতিবাদহীনভাবে হ্যারিকেন হাতে লোকটার পিছু পিছু চলে গেল মায়ের ঐ ছোট্ট ঘরে, যেখানে খানিক আগে অংশু গিয়েছিল, এখন বিট্টু-লাট্টু শুয়ে আছে। সে ঘরের দরজা দড়াম করে লেগে গেল তৎক্ষনাৎ। নিমেষে ঘরের ভেতরের ঘর-এর দরজাটাও লেগে যাবার শব্দ শোনা গেল।
---শা-আ-লি! ব্যাটা এস-ছে বলে..খু-উ-উ-ব ঢং...তো-র..না? খাওয়া-ই-ছিস..আমার..ছানা..দুটা-কে মাই?
---আঃ গফুর দা..
---খুল...খান-কি-চুদি...ল্যাং-টা...করে..
মায়ের মিনমিনে প্রত্যুত্তর শুনতে পেল অংশু---গফুর দা! বাইরে শুনতে পাবে.. আস্তে..
---গুদ-মারা-নি...শুন-লে..কি! আমি আ-মার...মে-য়ে-ছেলে-কে...চুদব....তাতে কার-কি? ন-খরা..কর-বি..না, তা-নালে..রেন্ডি..তোকে..তোর ব্যাটার সা-মনে...ফেলে...
---আঃ গফুর দা!
ঠাস করে একটা শব্দ কানে এলো অংশুর, যেন চড় চাপড়ের শব্দ, সেই সাথে দুদ্দাড় করে কিছু একটা হল। আর অমনি মায়ের কাকুতি মিনতি মিশ্রিত স্বর---আঃ! মাগো! লাগছে! দাঁড়াও...ছিঁড়ে যাবে! খুলতে দাও..লক্ষ্মীটি...
অংশুর পা কম্পমান। গায়ে উত্তেজনা, লোমকূপ খাড়া হয়ে উঠছে তার। আচমকা ঘরের ভেতর হতে মদ্যপ গফুরের অশ্লীল গালাগালি যা শোনা যাচ্ছিল তা যেন হারিয়ে গেল খানিক মধ্যেই। মায়ের গুনগুন প্রত্যুতরগুলোও অস্পষ্ট হয়ে উঠল।
রান্না ঘরের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ডালিয়া মাসিকে এতক্ষণ লক্ষ্য করেনি অংশু। ডালিয়া মাসি ফিসফিসিয়ে বলল---যদ্দিন থেকে এসেছে মাতালটা, এই হচ্ছে প্রতিদিন। তোর মা'ও বলিহারি! ছেলের সামনেও...ছিঃ ছিঃ!
গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে ঢুকে গেল ডালিয়া মাসি। অংশু দিদার ঘরে এসে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলে। কিছুই শোনা যায় না সে ঘর হতে। বরং বারান্দা হতে শোনা যায় ইতিউতি কিছু শব্দ।
দিদা ঘুমিয়ে পড়েছে। অংশুর অস্বস্তি বাড়ছে। সে বেরিয়ে এলো, মায়ের ঘরের জানালা দিয়ে দেখলে অন্ধকার ঘরে মশারির ভেতর বিট্টু-লাট্টু ঘুমোচ্ছে। ভেতরের দরজার তলা দিয়ে আলো এসে পড়েছে মেঝেতে। ও'ঘর থেকেই খানিক কর্কশ গলার স্বর ভেসে আসছে গফুরের। মূলত অশ্লীল গালি করছে মাকে! একটা দুটো যা কানে আসছে, জঘন্য সে ভাষা। মাঝে মধ্যেই উদ্ভট শব্দ। যেন কিছু ভেঙে পড়বে। লোকটা মা'কে মারধর করছে নাকি? বেজায় রাগ হতে লাগলো অংশুর। কেন মা ঐ লোককে এত প্রশ্রয় দিচ্ছে! শুধু ঝুমুর মাসির হত্যার দায়, শুধু বাবার ওপর প্রতিস্পৃহা?
গা হাতে যে ক্রোধের আগুন ফুটছে টগবগিয়ে সদ্য তারুণ্যের দিকে ধাবিত অংশুমানের গায়ে। তার জন্মদাত্রী মায়ের গায়ে লোকটা হাত তুলবে এত স্পর্ধা? হঠাৎ করে লোকটার চেঁচামেচি থেমে গেছে মনে হল। কি হল হঠাৎ? না শোনা যাচ্ছে মাতাল গফুরের অশ্লীল গালি বর্ষণ, না মায়ের গলার অস্পষ্ট মিনমিনে স্বর।
এবার ক্রোধের সাথে ভয়, ভীতি, অনুসন্ধিৎসা তৈরি হল তার। মায়ের কোনো বিপদ হল না তো! অংশু উদগ্রীব হয়ে পড়ল। ঘরটার পেছনেই কেবল জানলা আছে। অধৈর্য্য অংশু দ্রুত পায়ে চলে এলো মায়ের ঘরের পেছনের দিকটায়। কাছে আসতেই দুরন্ত চপেটাঘাতের শব্দ। যেন কেউ চাপড় মেরে তালি দিচ্ছে! তালির পর তালি, তালির পর তালি; এক অদ্ভুত অবিরাম শব্দ। বড্ড দ্রুত এবং জোরালো ভাবে এ শব্দ বিরামহীন হয়েই চলেছে!
মায়ের এই ঘরের জানালার ওপরের পাল্লা দুটি খোলাই রয়েছে এখনো। সে এক মুহূর্ত ভাবলে কি করা উচিত তার? এমন তালির পর তালির উদোম শব্দ তাকে খুব বেশি ভাবারও সুযোগ দিল না। রেলিংয়ের সামনে আড়াল হতে দাঁড়িয়ে পড়ল সে।
সম্পূর্ন অনাকাঙ্খিত দৃশ্যে তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল আচমকা!
চলবে।
The following 25 users Like Henry's post:25 users Like Henry's post
• Atonu Barmon, crappy, ddey333, dpbwrl, Gl Reader, Helow, Hunter23, IndronathKabiraj, Maleficio, Manofwords6969, N080THY, Pmsex, PrettyPumpKin, ray.rowdy, Realbond, Rinkp219, Sad Ash Rafa, Sage_69, Sandyds, Shorifa Alisha, sona das, Sumit22, Thomascrose, Voboghure, মিসির আলি
Posts: 621
Threads: 7
Likes Received: 6,298 in 575 posts
Likes Given: 46
Joined: Jan 2019
Reputation:
1,615
পরবর্তী আপডেট এক হপ্তার মধ্যে আসবে।
Posts: 338
Threads: 4
Likes Received: 2,079 in 299 posts
Likes Given: 221
Joined: Dec 2023
Reputation:
741
সব গল্পের মত প্রথম সেক্স সিন এই গল্পেও আগুন লাগিয়ে দিবে আশা করি।
Posts: 24
Threads: 0
Likes Received: 23 in 13 posts
Likes Given: 45
Joined: Nov 2024
Reputation:
2
আপডেট যতি দেড়ীতে আসুক কিন্তু যখন এসেছে তখন তৃপ্তি পাওয়ার মত বড় আপডেট। লেখার মধ্যেই একটা আগুন আছে, পরবর্তী আপডেটে ধুম মাচাবে মনে হচ্ছে। দারুণ ❤️❤️
•
Posts: 559
Threads: 7
Likes Received: 652 in 353 posts
Likes Given: 2,723
Joined: Nov 2019
Reputation:
67
যথারীতি অনবদ্য। চালিয়ে যান দাদা।
•
Posts: 7
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 0
Joined: Aug 2024
Reputation:
0
•
Posts: 2
Threads: 0
Likes Received: 0 in 0 posts
Likes Given: 0
Joined: Dec 2024
Reputation:
0
(10-01-2025, 10:10 PM)Henry Wrote: পরবর্তী আপডেট এক হপ্তার মধ্যে আসবে।
Opekhai thakbo...dada
•
Posts: 35
Threads: 0
Likes Received: 18 in 13 posts
Likes Given: 109
Joined: Jul 2022
Reputation:
3
(10-01-2025, 10:09 PM)Henry Wrote: মায়ের এই ঘরের জানালার ওপরের পাল্লা দুটি খোলাই রয়েছে এখনো। সে এক মুহূর্ত ভাবলে কি করা উচিত তার? এমন তালির পর তালির উদোম শব্দ তাকে খুব বেশি ভাবারও সুযোগ দিল না। রেলিংয়ের সামনে আড়াল হতে দাঁড়িয়ে পড়ল সে।
সম্পূর্ন অনাকাঙ্খিত দৃশ্যে তার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল আচমকা!
চলবে।
পাশবিক সঙ্গম দেখে অংশুর কামনার স্ফূরণ হওয়া স্বাভাবিক। সেকি ডালিয়া মাসির / কিম্বা মায়ের সঙ্গমপ্রার্থী হবে?
•
Posts: 142
Threads: 0
Likes Received: 68 in 55 posts
Likes Given: 82
Joined: Oct 2024
Reputation:
3
Always hit apnar update
Porer porbe er agun er opekhai amra
•
Posts: 891
Threads: 2
Likes Received: 807 in 364 posts
Likes Given: 36
Joined: Dec 2018
Reputation:
132
Ohhh ki lekha. Fatafati. Charom.
•
Posts: 295
Threads: 0
Likes Received: 115 in 95 posts
Likes Given: 6
Joined: Aug 2021
Reputation:
0
হেনরী স্যার যদি দহনের মতো এই গল্পেও হারামী মায়ের কঠিন শাস্তি না হলে খুবই দুঃখ পাবো।
•
|