Thread Rating:
  • 132 Vote(s) - 3.06 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ভাঙনের পরে
এলোমেলো বইখাতাগুলো গুছাতে গিয়ে অংশুর চোখে পড়ল মায়ের ঐ নীল মোড়কের পুরনো ডায়েরিটা। পরে পড়বে বলে আড়াল করে রেখেছিল সেদিন সে। তারপরে আর মনে নেই ওর। 

ডায়েরির পাতা ওল্টাতে গিয়ে প্রথম পাতায় চোখ আটকালো ওর। মা ছবি এঁকেছে সুন্দর করে এক গুচ্ছ ফুলের। মা যে অত ভালো ছবি আঁকতে পারে তা অংশু দেখেছে আগেও। ওর স্কু লের নাইনের প্রাকটিক্যাল খাতায় মা'ই ছবিগুলো সব এঁকে দিয়েছিল। 

ডায়েরির প্রথম পাতায় মায়ের সুশ্রী গোটা গোটা হাতের লেখায় ভরা নজরুলের 'অনাদৃতা' কবিতার প্রথম দুই পংক্তি: 

ওরে অভিমানিনী
অমন করে বিদায় নিবি ভুলেও জানিনি 

আমি সুচিত্রা বাগচী। এখনো বিয়ে হয়নি আমার। বিয়ে হলে আমি সুচিত্রা দাশগুপ্ত হব। আমার পিতা নিকুঞ্জবিহারী বাগচী আমার ভবিতব্য ঠিক করে গেছেন। জয়ন্ত দাশগুপ্ত আমায় স্বামী, প্রেম সবই। জয়ন্তকে যখন আমি প্রথম দেখি, সেই প্রথম দেখা আমার বিশেষ কিছু মনে নেই। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ জয়ন্তকে আমি দেখেছি তখন আমি কিশোরী ক্লাস নাইনের ছাত্রী। মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ফর্সা সুদর্শন ছিমছাম ছেলেটা আমাকে ফিসফিসিয়ে দুর্গাপূজার মন্ডপে সবার আড়ালে বলেছিল "সুচি, তুমি কি জানো তোমার বাবা আর আমার বাবা ঠিক করেছেন তুমি আমার বউ হবে?" তার আগে কানাঘুষো শুনিনি যে তা নয়। আমি লজ্জা পেয়ে আমার পিসতুতো বোন ঝুমুরকে বলেছিলাম একদম মিথ্যে নয়। মা আর অপরাজিতা কাকিমা যে কথা সেদিন আলোচনা করছিল তা সত্যি। আমার মুখের লাজুকতা দেখে ডানপিটে মেয়ে ঝুমুর বলেছিল "আহারে আমাদের সুচিত্রা, ডাক্তারের বউ হবে বলে এখন থেকেই লজ্জা"। সেদিন থেকে আমি মনে মনে ডাক্তারের বউ।
অপরাজিতা কাকিমা জয়ন্তের মা। আমার হবু শাশুড়ি। আমায় মেয়ের মতই দেখেন। আমি শুনতাম মেয়েদের শাশুড়িরা দজ্জাল হয়। ঝুমুর বলেছিল বিয়ে হলে পরে অপরাজিতা কাকিমাও আর মেয়ের চোখে দেখবে না। তখন শাশুড়ি-বৌমা বিবাদে ডাক্তার বাবুর মাথা খাবো নাকি দুজনে। সেসব মিথ্যে কথা। বিয়ের পর তা মোটেই হয়নি। থাক সেসব কথা। এই ডায়েরি আমি লিখছি যখন আমার পেটে আমার প্রথম সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায়। আমার আর জয়ন্তের ভালোবাসার সন্তান। 
কিন্তু এই ডায়েরি আমি লিখছি, এক পাপবোধ থেকে। যে পাপ আমি এক আচমকা নোংরা ঈর্ষায় করেই করেছি। যে ঈর্ষার ফলশ্রুতি মোটেই ভালো হয়নি। কেউ জানবে না আমার এই পাপ কর্মে কার কি ক্ষতি হয়ে গেল। আমি চাই না, আমার আগত সন্তানের উপর আমার সেই পাপের ছায়া পড়ুক। ঝুমুর, আমায় মাফ করে দে। তুই নেই, এখন আর আমাকে মাফ করে দেবার কেউ নেই। আমার প্রেম, স্বামী জয়ন্তের কাছেও যা আমি আড়াল করে গেছি। গফুর দা নেই। হারিয়ে গেছে আজ কতবছর হল। যদি তার সাথে দেখা হত সেও হয়ত আমাকে মাফ করত কিনা জানা নেই। ঝুমুর, এই ডায়েরি আমার স্বীকারোক্তি। আমাকে ব্যক্ত করার জায়গা। তানাহলে এই পাপ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। 

ঝুমুর, সেই ছেলেবেলা মনে আছে? আমি কত শান্ত, তুই কত ডানপিটে বলে পিসি বলত 'হলে পরে সুচিত্রার মত হ'। বিশ্বাস কর ঝুমুর, তুই আমার পিঠোপিঠি, আমার বাবা তোদের আশ্রয় দিয়েছে বলে আমি কখনো তোকে আলাদা করে দেখিনি। তুই বরং বলতিস সেই ছোট থেকে 'সুচি তোরা কত বড়লোক, তুই কত ফর্সা, কত পড়ালেখা' ইত্যাদি ইত্যাদি। ঝুমুর তুই হয়ত কালো, মা বলেন কালো গড়নে তুই অপরূপা। অথচ তুই সারাজীবন আমাকেই সুন্দরী বলে গেলি। 

ঝুমুর, চন্দননগর থেকে গোবিন্দপুর যখন যেতাম, শুধু তোর টানেই যেতাম। কত কত দস্যিপনা তোর। মনে আছে সেই আম গাছে উঠে কাঁচা আম পেড়ে খাওয়া? তরতরিয়ে গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে উঠে বসলি তুই। আর আমি রোগ পাতলা হয়েও ভয় খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর তুই ঠাট্টা করে বললি 'সুচি, তুই শহরের মেয়ে, পারবিনে। নীচে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আম ভেঙে দিচ্ছি, তুই পাকড়াও কর।' জেদ চেপে গেল আমার। বাবা বলতেন 'সুচিত্রা আমার জেদি মেয়ে। হঠ করে কেউ টের পায় না, ওর এমন শান্ত চেহারায়।' সত্যিরে ঝুমুর, আমি জেদ করে উঠে পড়লাম গাছে সেদিন। তুই হাত বাড়িয়ে আমাকে টেনে তুললি। সেদিন আমি অত উঁচু থেকে আকাশ দেখেছিলাম। এত উঁচু থেকে দেখা যাচ্ছিল বাড়ির ছাদ, দীঘি, আমাদের বসত পেরিয়ে গোবিন্দপুরের ঐ বিল। যে বিলে একদিন মাছ ধরতে যাবেন বলে আলি চাচা। জেদ করেছিলাম আমরা। বাধ্য হয়ে আমাদের মেয়ে দুটোকে ডিঙিতে করে নিয়ে গেছিলেন চাচা। ঝুমুর ঐ আম গাছের মগ ডালে সেদিন আমি আরো কিছু দেখেছিলাম। একজন রক্তমাংসের মানুষ। তুই অত উঁচুতেও ফিসফিসিয়ে বলেছিল 'ও হচ্ছে গফুর দা, আলি চাচার ছেলে।' 
গফুর দা'কে দূর থেকেই দেখেছি। প্রথম দিকে বাড়ির কেয়ারটেকার আলি চাচার ছেলে বলে ধারে কাছে ভিড়তো না আমাদের। আমাদের চেয়ে বছর পাঁচ-ছয়ের বড় গফুর দা কেমন যেন গম্ভীর স্বভাবের। কালো কালো সুঠাম গায়ে তখন চাচার সঙ্গে কাঠ ফাটাচ্ছিল ও'। তুই ওর ঘর্মাক্ত শরীরের দিকে চেয়ে কেমন এক উতলা হয়ে চেয়েছিল। আমি তখন নিস্পৃহ, নিরীহ এক বোকা মেয়ে। তোর ঐ চাহুনি বুঝতে পারিনি। ঝুমুর, আসলে তুই'ই আমার বয়ঃসন্ধির গাইড। পুরুষ-নারীর রহস্য যে শুধু বায়োলজি বইতে মুখ ডুবিয়ে জানা যায় না, তা তোর কাছেই জেনেছিলাম। 
একদিন দীঘির জলে স্নান করতে গিয়ে তোর ফ্রক পরা বুক দেখিয়ে বলেছিলি 'সুচি দেখতো, আমার মাই দুটো বড় হচ্ছে কিনা?' আমি অশ্লীল শব্দ শুনে লজ্জায় কোনো উত্তর দিতে পারিনি। তুই আমার লাজে রাঙা গম্ভীর চশমা চোখা মুখ দেখে বলেছিলি 'এখনই বয়স রে সুচি, এই বয়সেই মেয়েদের দুধ ওঠে'। বিশ্বাস কর ঝুমুর, আমি সেদিন আড়ালে নিজের জামা নামিয়ে দেখেছিলাম নিজের সাদা সাদা মসৃন বুক। তোর দুটো বাড়ছে, আমার যেন পুরুষালি হয়ে রয়েছে একই রকম। বড্ড ঈর্ষা হল প্রথমবার তোর সাথে। 
গভীর রাতে একদিন তোকে দেখেছিলাম প্যান্টির ভেতর হাত ঢুকিয়ে কিসব করতে। তোর চোখ মুখগুলো কেমন করছিল সেদিন। আমি ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়েছিলাম। একবিন্দু ঘুমোতে পারিনি সেইরাতে। সেই দিন ঠিক করেছিলাম, তুই অসভ্য মেয়ে, তোর সাথে আর মিশব না। কিন্তু আমরা যে ছিলাম গলায় গলায় বন্ধু। পারিনি, পরদিন আবার মিশে গেলাম তোর সাথে। তোর সৌজন্যে পরিচয় হল গফুর দা'র সাথে। ঘুড়ি ওড়ানো শিখিয়েছিল গফুর দা'ই। আমি শিখিনি। কিন্তু তুই বেশ গফুর দা'র গায়ে পড়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলি। তোদের অমন করে দেখতে বড্ড অসভ্য ঠেকছিল আমার।
কিশোরী বয়সে তুই হলি পাকা গ্রামের মেয়ে। যেমন ডানপিটে, তেমন দুঃসাহসী, তেমনই বন্ধু। আর আমি হলাম শহরের বড়োলোকি পড়ুয়া বাবা-মায়ের ভালো মেয়ে। মোটা পাওয়ারের চশমার ওপর দিয়ে রাগী রাগী ভাবে দেখতাম বলে গফুর দা বলত 'ঝুমুর, তোর এই চাশমিশ বোন সুচিত্রার এত রাগ কেন রে?'
জয়ন্তের সাথে আমার প্রেম শুরু হবার আগেই তুই আর গফুর দা' প্রেমে মত্ত হয়ে পড়লি। আড়ালে আবডালে তোরা মাঝে মধ্যেই হারিয়ে যেতিস কেন বুঝিনি। একদিন দীঘির জলে নেমে আমি প্রায় ডুবুডুবু তুই গিয়ে টেনে আনলি আমাকে। গফুর দাও সেদিন জলে ছিল। তুই জানিস না ঝুমরি, মা সেদিন খুব বকেছিল। যে মা আলি চাচাকে নিজের বাড়ির কেয়ারটেকার নয় দেওরের মত দেখত, সেই মা বলেছিল 'সুচিত্রা, ঐ গফুরের সাথে তোদের এত মেলামেশা কেন রে? ওরা মু-সলমান জানিস না। কেয়ারটেকারের ছেলে। খবরদার মিশবি না।'

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
তারপর দূরত্ব বেড়ে গেল তোদের সাথে। গফুর দা আর তুই তখন প্রেমে মত্ত। গোবিন্দপুর এলে আমি একা হয়ে যাই। একদিন তুই বললি আমি কেন আর আগের মত থাকছি না। ততদিনে আমি একটু একটু করে বড় হচ্ছি। তোর গফুর দা'র প্রতি প্রণয়ের গাঢ়ত্ব আমার ভালো ঠেকছে না। বাবা জানলে যে বিপদ হবে বুঝতে পারছি। গফুর দা পড়াশোনা করেনি, বদমেজাজি। সারাদিন ফুটবল খেলে ঘুরে বেড়ায়। শোনা যায় তদ্দিনে গফুর দা কুসঙ্গে পড়ে গাঁজা খায় ফুটবল মাঠের ওদিকে ভাঙা একটা বাড়িতে। একদিন তোকে বারণ করলাম। গফুর দা মোটেও ভালো ছেলে নয়, সুদর্শন তো নয়ই, গায়ের রঙটা মাটির কত কুচ্ছিত। তুই বললি ' সুচি, পুরুষ মানুষ মানে শুধু দেখতে শুনতে কার্তিক ঠাকুর হবে তা নয় রে। পুরুষ মানুষের পরিচয় তার কঠোরতায়। দেখিসনি গফুর দা'কে? কেমন শক্তিশালী, লম্বা চওড়া। উফঃ সুচি গফুর দা যদি আমাকে তার দাসী বানিয়ে রাখে, আমি রাজি। কি গায়ের জোর।' 

আমি অবাক হয়ে তোর বর্বর ধ্যান ধারণার কথা শুনেছিলাম। তুই নিজের জামা খুলে তোর বুক দেখিয়ে হি হি করে হাসতে হাসতে বললি 'দেখ সুচি, কেমন টিপে টিপে লাল করে দিয়েছে গফুর দা।' কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল তোর কথায়। একদিন দেখলাম নিজের চোখে ঝিলের দক্ষিণ দিকে ঝোপের আড়ালে তুই বসে আছিস। দীর্ঘ চেহারার গফুর দা গাঁজার নেশায় ঢুলুঢুলু চোখে তোর বুকে হাত দিয়েছে। বড্ড নিষ্ঠুর ভাবে তোর বুকে ওর হাত ঘুরছে। 
আরেকদিন মধ্যরাতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফিরলি তুই। বললি 'সুচি, মামীর ঘর থেকে বোরোলিন আন'। আমি বললাম কি হয়েছে? তোর মুখে লাজুক হাসি। তুই সেদিন কুমারীত্ব হারালি গফুর দা'র কাছে। আমি পরে বুঝেছিলাম। তারপর থেকে গফুর দা'র প্রতি তোর অবসেশন যেন চূড়ান্ত। গফুর দা বিড়ি ধরাতে চাইলে তুই রান্না ঘর থেকে দেশলাই এনে দিতিস। এমনকি আলি চাচার বিড়ি চুরি করে তুই গফুর দা'কে দিয়েছিস। আমার মনে হত গফুর দা তোকে সত্যিই একজন দাসী হিসেবে ব্যবহার করছে। তোকে বললে তুই বলতিস মেয়েদের ওপর পুরুষ মানুষ নাকি কতৃত্ব ফলালেই সুখ। 

ততদিনে জয়ন্তের সাথে প্রেম আমার পত্র লেখালেখিতে বেড়ে উঠেছে। আমরা একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসছি। তুই সব জানতিস। জয়ন্ত সেবার দুর্গা পুজায় এলো গোবিন্দপুরে। আমি আর ও' পাশাপাশি অঞ্জলি দিলাম। জয়ন্ত সেবার আমাকে জানালো ভালোবাসার কথা। বিশ্বাস কর আমরা শুধু একে অপরের সাথে কথা বলেছি, ও' বলেছে কলকাতা নিয়ে, মেডিক্যাল সায়েন্স নিয়ে আর কবিতা নিয়ে। ও' সেদিন আমাকে পূর্ণেন্দু পত্রীর একটা কবিতা শুনিয়েছিল। জয়ন্ত যে এত ভালো আবৃত্তি করে আগে আমি জানতাম না। তোদের মত আমরা রগরগে হতে পারিনি। জয়ন্ত যে গফুর দা'র মত কর্কশ ব্রুটেল প্রেমিক নয়, আমার ভালো লেগেছিল তাতে। কিন্তু অদ্ভুত অনুভূতি হত যত বেশি তুই আর গফুর দা'কে দেখতে লাগলাম। গফুর দা নাকি গাঁজা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে তোর কথায়! আমি ভাবতে পারছিলাম না, গফুর দা'র মত বদমেজাজি রগচটা লোকেও প্রেমে পড়ে এসব করতে পারে। 

আস্তে আস্তে গফুর দা আর তোর প্রণয় যেন আমাকে বিষিয়ে দিতে লাগলো ভেতরে ভেতরে। তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিক দেব। জয়ন্ত ব্যস্ত ওর লেখাপড়া নিয়ে। তুই অনেক আগেই পড়া ছেড়ে দিলি। সেবার গোবিন্দপুরে বেশ বড় করে দূর্গা পূজা হল। বড্ড রাগ হচ্ছিল তোর আর গফুর দাকে দেখে। রাগটা যে কেন হত বুঝিনা। হয়ত কোনো এক অজ্ঞাত কারণে ঈর্ষা হচ্ছিল তোর ওপর। যে গফুর দা'কে কুৎসিত দানব, রগচটা, বদমেজাজি বলে মনে করতাম, সেই গফুর দা'র দীর্ঘ পেশল বলিষ্ঠ চেহারা, ছ ফিটের উচ্চতা, কঠোর মুখখানি দেখলে আমার ভেতরে ভেতরে বড্ড ভয় হত। একদিন তোদের দুজনকে দোতলার ঘরে সারারাত দেখেছিলাম লুকিয়ে। এত তীব্র পাশবিক তোদের সম্পর্ক দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। তুই যে কতৃত্ব বলিস তার নমুনা আমি দেখেছিলাম সেদিন। 

প্ৰতি মুহূর্তে সেই রাতের কথা মনে করলে আমার সদ্য যৌবনা দেহে ভয় হত, অস্বস্তি হত। আমার ভালোবাসা জয়ন্তও কি এভাবে...। ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম আমি। বিশ্বাস কর ঝুমুর, আমি নিষ্পাপ ছিলাম। গফুর দা'কে তুই যে কঠোর পুরুষ বলে আমার সামনে তুলে ধরতিস, তাতে ভয়ই পেয়েছি সর্বদা। গফুর যেন কখনো কখনো জানোয়ারের মত ঝাঁপিয়ে পড়ত তোর ওপর। আমি ভয় পেতাম। তুই বলতিস ওটাই নাকি ভালোবাসা। ভালোবাসা নাকি বিভিন্ন রকমের হয়।

Like Reply
আসলে তুই আমার মনে অদ্ভুত অদ্ভুত সব বীজ বপন করে দিয়েছিলি। সেই তোদের প্রেমের শুরুর দিন থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘর্মাক্ত সবল দীর্ঘ গফুর দা'কে তুই যখন দেখতিস, আর গফুর দা'র শরীর নিয়ে তোর কামনার বিবরণ দিতিস, তখন লাজুক ভাবে আমি তোর কথা শুনতাম। কখনো অনুসন্ধিৎসু, কখনো ভয়ে কুঁকড়ে ওঠা একটা সাধারণ মেয়ের মত। গফুর দা'র মাকলেজানিটি নিয়ে তোর কামনা-বাসনগুলি আমার মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করত। আমি ভাবতাম তুই খুব দুঃসাহসী। আমি ঠিক তোর উল্টো। বনেদী রক্ষণশীলতা, পড়াশোনা, আর জয়ন্তের প্রতি আমার ভালোবাসাই আমার সর্বস্ব। জানিনা হয়ত আমি অবদমিত ছিলাম কিনা। সেই অবদমন থেকেই কি আমি তোর প্রতি নির্দয় হলাম! গফুর দা'র সাথে তোর সম্পর্কটা ততদিনে আলি চাচার চোখে পড়েছে। আলি চাচা আর গফুর দা'র ঝামেলা হয়েছে বলে তুই জানালি। তোরা পালিয়ে যাবার কথা ভাবছিস। গফুর দা তখন ডানকুনি জুটমিলে কাজ করছে। আলি চাচা যে একদিন বাবাকে সব কথা বলে দেবে, তোরা কেউই জানতিস না। গফুর দা'কে তোর পাঠানো চিঠিগুলো আমিই পোস্ট করতাম। আর সেই চিঠি একদিন বাবার হাতে পড়ল। বাবা আসলে ঠান্ডা মাথায় এক বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। তোকে ভালোবাসতেন বাবা। নিজের মেয়েই মনে করতেন। হয়ত গফুর দা'র মত বেজাত বখাটে রগচটা ছেলের হাতে তোকে তুলে দিতে চাননি। এছাড়া বাবার মধ্যে ছিল সম্ভ্রান্ত বাগচী বাড়ির সম্মান নিয়ে অদ্ভুত এক সেকেলে রক্ষণশীলতা। বাবা নির্দেশ দিলেন এই চিঠি ফেরত পাঠাতে। তার জন্য বাবা আমাকে মিথ্যে বলতে নির্দেশ দিলেন। আর আমি সেখানেই বিশ্বাসঘাতিকা হয়ে উঠলাম। বাবা তার এক পোস্টমাস্টার বন্ধুকে দিয়ে ফেরত যাবার স্ট্যাম্প বসালো চিঠিতে। আমি বাবার ভালো মেয়ের মত তোকে মিথ্যে বললাম। তোর গফুর দা'র সাথে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেই চিঠি আর পৌঁছল না গফুর দা'র কাছে। হয়ত ঐ চিঠির কাতর আবেদন পেলে গফুর দা ফিরে আসতো তোর কাছে। নিয়ে পালাতো তোকে। পরিণতি পেত তোদের প্রেম। নিছকই ঈর্ষায় নাকি শুধু বাবার আনুগত্যে তোদের সম্পর্ক ভেঙে দিতে পেরে বড্ড আনন্দ পাচ্ছিলাম জানি না। কিন্তু হঠাৎ করে যেদিন গোবিন্দপুর থেকে খবর এলো তুই দীঘির জলে ডুবে মরেছিস, সেদিন মনটা বড্ড কাঁপছিল। যে মেয়ে সাঁতারে পারদর্শী, আমাকেই কিনা বাঁচিয়েছিল একদিন, সে জলে ডুবে মরতে পারে না। আমি কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ঝুমুর, আমি জানি তুই জলে ডুবে মরিসনি। তুই আত্মহত্যা করেছিস। সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়লাম যখন জানলাম তোর মৃত্যুর পর বাবা কিছু একটা চেপে যাচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টকে চেপে দিতে বাবা পুলিশের কর্তাকে বেশ কিছু টাকা পয়সা দিলেন। হ্যা, তুই একা মরিসনি। তোর সাথে মরেছে পৃথিবীর আলো না দেখা তোর আর গফুর দা'র সন্তান। মরবার সময় তোর পেটের সন্তান ছিল তিনমাসের। 

তুই জানিস ঝুমুর, গফুর দা সেদিন এসেছিল। সবার অলক্ষ্যে তোর মৃতদেহটি একটিবার দেখে চলে গেছে। আজ এতদিন পরে আমি কেন এত কথা লিখছি? আমার পেটে আমার আর আমার স্বামী জয়ন্তের ভালোবাসার সন্তান বেড়ে উঠছে। গত সপ্তাহে ডাক্তার দেখাতে যাবার পথে কলকাতার রাস্তায় দিকভ্রান্তের মত এক ভবঘুরেকে হাঁটতে দেখলাম ফুটপাতে। সে আর কেউ নয় ঝুমুর, তোর প্রেমিক গফুর দা। তখন জয়ন্ত থাকায় আমি একটিবার গিয়ে ক্ষমা চাইতে পারিনি গফুর দা'র কাছে। এক অপরিসীম পাপবোধ থেকে আজ গেছিলাম গফুর দা'র খোঁজে। পার্ক সার্কাসের একটা ঝুপড়ি ঘরে সংসার পেতেছে গফুর দা। কোনো এক যৌনকর্মীকে বিয়ে করে ঠাঁই দিয়েছে। মেয়েটির নাম হাসিনা। বড্ড ভালো মেয়ে। গফুর দা'র আশ্রয় পেয়ে নতুন জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখে ও'। গফুর দা'র আর ওর একটি পাঁচ মাসের মেয়ে আছে। কিন্তু হতভাগ্য হাসিনা। ওর কাছে জানলাম গফুর দা বিয়ে করে ও'কে ঠাঁই দিলেও সংসারে মন বসায়নি। গফুর দা'র মন জুড়ে এখনো শুধুই তুই, ঝুমুর। বেচারা হাসিনা শত চেষ্টা করেও মন পায় না তার স্বামীর। শুধু শরীরের জন্যই গফুর দা আসে হাসিনার কাছে। যে গফুর দা তোর জন্য নেশা ছেড়ে জুটমিলে কাজ নিয়েছিল, সে এখন নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে। 
ঝুমরি, আমার পেটে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে। শুধু তুই নয়, তোর সন্তানের অপমৃত্যুও আমার কারণে। আমার সন্তান যেন আমার পাপের ভাগীদার না হয়। এক না বলা যন্ত্রনা থেকেই আমার এই স্বীকারোক্তি, ঝুমরি। মাফ করে দিস আমায়। মাফ করে দিস।  

অংশু এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল মায়ের ডায়েরি। অদ্ভুত এক সমাপতন। পরের পাতাগুলোতে সদ্য মা কিছু লিখতে চেয়েছে। কিন্তু কাটাকুটি করে শেষাবধি কিছুই লেখা হয়নি। এই প্রথম গফুর নামক লোকটির প্রতি অংশুর মনে দয়া দাক্ষিণ্য জন্ম নিল। ঝুমুর মাসি বা গফুরের প্রেম পত্র সে আগেও পড়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রেমের ট্রাজেডিতে যে মায়ের এই ভূমিকা ছিল তা অংশুর জানা ছিল না। বড্ড সংবেদনশীল লেখা মায়ের এই ডায়েরি। মা তার এই ডায়েরি লেখার মাধ্যমে নিজের না বলা পাপকে স্খলণ করতে চেয়েছে। 

অংশু দেখল বিট্টু-লাট্টু তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খেলনার সম্ভার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলায়। অংশুর নিজেরও মায়া তৈরি হল ওদের দুজনের ওপর। ওরা যে কোনো দোষ করেনি। ওদের বাবা তার প্রেমিকার স্মৃতিতে মদ্যপ হয়ে ভবঘুরে উন্মাদ। ওদের মা দুরারোগ্য ক্যানসারে মারা গেছে। কেউ নেই ওদের। একমাত্র মা'ই তো ওদের শেষ ভরসা। অংশুর মনটা হালকা হয়ে উঠল। বড় হচ্ছে সেও যে। কত দিন দিনান্ত তাকেও যে পার করতে হবে। 

চলবে।
Like Reply
দারুণ। চালিয়ে যান, দাদা।
Like Reply
Darun hoyeche Henry dada..
Like Reply
দাদা অনেক অনেক ধন্যবাদ। দারুণ হয়েছে।
পরবর্তী আপডেট অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply
Uuu ufffff kono kotha hobe sir
Just Awosome
Tumi guru ki na paro
Lot's of love Henry sir ❤️
Like Reply
গফুর আর সূচির নিকাহ হলে তবেই বোধহয় এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়..
[+] 4 users Like Pmsex's post
Like Reply
(25-10-2024, 11:48 PM)Henry Wrote: ঝুমরি, আমার পেটে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে। শুধু তুই নয়, তোর সন্তানের অপমৃত্যুও আমার কারণে। আমার সন্তান যেন আমার পাপের ভাগীদার না হয়। এক না বলা যন্ত্রনা থেকেই আমার এই স্বীকারোক্তি, ঝুমরি। মাফ করে দিস আমায়। মাফ করে দিস।  

অংশু এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল মায়ের ডায়েরি। অদ্ভুত এক সমাপতন। পরের পাতাগুলোতে সদ্য মা কিছু লিখতে চেয়েছে। কিন্তু কাটাকুটি করে শেষাবধি কিছুই লেখা হয়নি। এই প্রথম গফুর নামক লোকটির প্রতি অংশুর মনে দয়া দাক্ষিণ্য জন্ম নিল। ঝুমুর মাসি বা গফুরের প্রেম পত্র সে আগেও পড়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রেমের ট্রাজেডিতে যে মায়ের এই ভূমিকা ছিল তা অংশুর জানা ছিল না। বড্ড সংবেদনশীল লেখা মায়ের এই ডায়েরি। মা তার এই ডায়েরি লেখার মাধ্যমে নিজের না বলা পাপকে স্খলণ করতে চেয়েছে। 

অংশু দেখল বিট্টু-লাট্টু তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খেলনার সম্ভার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলায়। অংশুর নিজেরও মায়া তৈরি হল ওদের দুজনের ওপর। ওরা যে কোনো দোষ করেনি। ওদের বাবা তার প্রেমিকার স্মৃতিতে মদ্যপ হয়ে ভবঘুরে উন্মাদ। ওদের মা দুরারোগ্য ক্যানসারে মারা গেছে। কেউ নেই ওদের। একমাত্র মা'ই তো ওদের শেষ ভরসা। অংশুর মনটা হালকা হয়ে উঠল। বড় হচ্ছে সেও যে। কত দিন দিনান্ত তাকেও যে পার করতে হবে। 

চলবে।

বড় মর্মস্পর্শী লেখা।
Like Reply
অনবদ্য একটা ক্লাসিক রচনা লর্ড হেনরির !!   clps clps yourock


আজকাল অবশ্য কেন জানিনা লর্ড উপাধি পরিত্যাগ করেছেন উনি। Iex
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(25-10-2024, 11:48 PM)Henry Wrote: অংশু এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল মায়ের ডায়েরি। অদ্ভুত এক সমাপতন। পরের পাতাগুলোতে সদ্য মা কিছু লিখতে চেয়েছে। কিন্তু কাটাকুটি করে শেষাবধি কিছুই লেখা হয়নি। এই প্রথম গফুর নামক লোকটির প্রতি অংশুর মনে দয়া দাক্ষিণ্য জন্ম নিল। ঝুমুর মাসি বা গফুরের প্রেম পত্র সে আগেও পড়েছে। কিন্তু তাদের এই প্রেমের ট্রাজেডিতে যে মায়ের এই ভূমিকা ছিল তা অংশুর জানা ছিল না। বড্ড সংবেদনশীল লেখা মায়ের এই ডায়েরি। মা তার এই ডায়েরি লেখার মাধ্যমে নিজের না বলা পাপকে স্খলণ করতে চেয়েছে। 

অংশু দেখল বিট্টু-লাট্টু তখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খেলনার সম্ভার ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলায়। অংশুর নিজেরও মায়া তৈরি হল ওদের দুজনের ওপর। ওরা যে কোনো দোষ করেনি। ওদের বাবা তার প্রেমিকার স্মৃতিতে মদ্যপ হয়ে ভবঘুরে উন্মাদ। ওদের মা দুরারোগ্য ক্যানসারে মারা গেছে। কেউ নেই ওদের। একমাত্র মা'ই তো ওদের শেষ ভরসা। অংশুর মনটা হালকা হয়ে উঠল। বড় হচ্ছে সেও যে। কত দিন দিনান্ত তাকেও যে পার করতে হবে। 

চলবে।

অংশুর মনে ওর মা এবং গফুরের সম্পর্ক নিয়ে মায়া রচিত হল। এই মায়া তাকে ওদের দুজনের সম্পর্ককে অপেক্ষাকৃত ক্ষমার আলোয় দেখতে সাহায্য করবে যেখানে বাবা ও মিতার সম্পর্কে ওর মন কঠিন।
Like Reply
নিঃস্বার্থ মা প্রথম দিকে, গল্পের শেষে বুকে মোচড় দেওয়া টান
এক কথাই বেদনা দায়ক গল্পের বিল্ডআপ। দেখি পরবর্তী পর্বে কি আশে । আর এক কথাই যদি এই পর্বের বিশ্লেষণ করি তা হলো অন্তরে জ্বালা ধরানো পর্ব। দাদা সত্যি কথা বলতে এই পর্বের কারনে সামনের পর্বে পেন্ট ভিজাতে চাই তাই একটা সলিড আগুন লাগানো পর্ব চাই। এখন আমি ব্যাঙ্গালুরুতে আছি সামনের মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত থাকবো। ঐ হিসেবেই পর্ব দিন।
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
Like Reply
এতো সুন্দর লেখা।উফফ অনবদ্য
Like Reply
Comment kore kodor kora possible na amar pokkhe.......
Story ta apnar onno golpo gulor theke mysterious
Just awesome........
Like Reply
kono kotha hobe na , anobadyo!
Like Reply
Henry sir update Kobe asbe plz bolun
Like Reply
Dada update please
Like Reply
Update please
পাঠক
happy 
Like Reply
খুব সুন্দর লেখা.
Like Reply
Dada update koi
Like Reply




Users browsing this thread: Ghost1041, 71 Guest(s)