16-09-2024, 07:42 PM
তিনতলায় উঠে তাকিয়ে দেখলো করিডোরের একদম শেষে অদিতির দিদির ঘরের দরজা খোলা এবং সেখানে দরজার কাছে একটা চেয়ারে কৌতূহল নিয়ে বসে আছে গার্গী। তমালকে দেখেই গার্গী ডাকলো, তমালদা, এদিকে এসো। তমাল এগিয়ে গেলো সেদিকে।
ঘরের সামনে যেতেই বছর পয়ত্রিশের একজন মহিলা বেরিয়ে এসে বললো, এসো ভাই, ভিতরে এসো। আমি মৌপিয়া, অদিতির দিদি। তমাল ভিতরে ঢুকে দেখলো অদিতিও বসে আছে খাটের উপরে। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো তমাল। বছর তিনেকের একটা বাচ্চা খেলা করছে সোফায় বসে। তমাল বুঝলো সে শিখা, মৌপিয়ার মেয়ে।
মৌপিয়া বললো, এসেই শুনেছি তুমি এসেছো। বন্দনা বলেছে। কিন্তু তুমি বিশ্রাম নিচ্ছিলে বলে আর বিরক্ত করিনি। একটু চা খাবে নাকি তমাল? তমাল বললো, তা মন্দ হয় না। মৌপিয়া ইন্টারকমের বোতামে চাপ দিয়ে চারকাপ চায়ের অর্ডার দিলো।
কিছুক্ষণের ভিতরে চায়ের সাথে গরম গরম শিঙাড়াও এলো। এখানকার শিঙাড়া গুলো কলকাতার মতো নয়, ভিতরের পুর কালচে রঙের আর চটকে মাখা। তবে খেতে মন্দ না!
গার্গী জিজ্ঞেস করলো, নতুন চাকরিটা কি হলো? নাকি আমার সাথেই যাবে দিল্লিতে কয়েকদিনের জন্য? তমাল বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো না। মন দিয়ে শিঙাড়া চিবোতে লাগলো। তিন জোড়া চোখ আলাদা আলাদা ভাষা নিয়ে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুঝে সে ইচ্ছা করেই উত্তর দিতে দেরী করছে। শিঙাড়া শেষ করে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, বাহ্! বেশ চা!
গার্গী রেগে গিয়ে বললো, ধুৎ! বলো না, কি বললেন পিসিমা? কাজটা নিচ্ছো?
তমাল মাথা নেড়ে বললো, হুম, চাকরিটা হয়েই গেলো। আর মাইনেটাও বিশাল!
তিনজনের মুখে তিন রকম অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো কথাটা শুনে। গার্গী বোধহয় একটু হতাশ, মুখে যাই বলুক, তাকে অদিতির হাতে ছেড়ে দিয়ে দিল্লি চলে যেতে তার একটু কষ্টই হচ্ছে বোধ হয়। অদিতির গাল আবার লাল হয়ে উঠলো আর হালকা একটা হাসি দেখা গেলো ঠোঁটের কোনায়। পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাবার টিকিট কনফার্ম হলে যেমন খুশির হাসি দেখা যায়, অনেকটা সেরকম। মৌপিয়ার ভুরু দুঁটো অল্প কুঁচকে উঠেই সোজা হয়ে গেলো।
গার্গী বললো, মাইনে কতো!
তমাল ধমক দিয়ে বললো, চুপ! এই মেয়ে জানোনা, পুরুষের মাইনে আর মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাসা করতে নেই। গার্গী এমন একটা ভাব করলো মুখে যেন বকুনি খেয়ে বাচ্চা মেয়ে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। সবাই তা দেখে হাসতে শুরু করলো। কয়েক সেকেন্ড পরে গার্গীও যোগ দিলো সাথে।
মৌপিয়া বললো, তাহলে চল সবাই মিলে নুনিয়া নদীর ধারে ফুচকা খেয়ে তমালের নতুন চাকরি সেলিব্রেট করে আসি। অদিতি আর গার্গীও হৈ হৈ করে উঠলো প্রস্তাব শুনে। এদের বাড়ি থেকে নুনিয়া নদীর ধার হাঁটা পথ, তাই যে যেমন পোশাকে ছিলো সেটা আর বদলালো না। চুল টুল বেঁধে, হালকা প্রসাধন করেই বেরিয়ে পড়লো বাইরে।
আসার পথে, দোতলায় পিসির ঘরের সামনেই দেখা হয়েছিলো মিষ্টির সাথে। তার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে মৌপিয়া বললো, আমরা একটু নুনিয়া নদীর পাড়ে ঘুরে আসছি। ভাই ফিরেছে নাকি? বন্দনা নীরবে মাথা নাড়ে জানালো আসেনি। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না,এতে সে খুশি হয়নি মোটেই।
বাড়ির বাইরে এসে গার্গী বললো, বন্দনা বোধহয় একটু কষ্ট পেয়েছে, ওকেও নিয়ে এলে হতো! ঝাঁঝিয়ে উঠলো অদিতি। ছাড়তো! বড্ড বেশি গায়ে পড়া মেয়ে। ওকে আনার কি আছে? পিসির পেয়ারের মেয়ে, পিসির দেখাশুনা করুক। আদিখ্যেতা করে আবার "মা" ডাকে পিসিকে। পাজির পা ঝাড়া একেবারে।
মৌপিয়া অদিতির কথা সমর্থন করলো। ঠিক বলেছিস আদি, সব ব্যাপারে নাক গলানো চাই ওর। আর বড্ড হিংসুটে। সব কিছু গিয়ে লাগাবে পিসিকে।
বন্দনার উপর অদিতির রাগের কারণটা বুঝলো তমাল। কিন্তু মৌপিয়াও কি সেই একই কারণে তার উপরে ক্ষুব্ধ? বেচারা বন্দনা, অনেক শত্রু পুষেছে সে বাড়িতে। বন্দনার সাথে কথা বলে বুঝে নেবে ভাবলো তমাল।
নুনিয়া নদীর ধারটা বেশ সুন্দর। শান বাঁধানো, মাঝে মাঝে বসার বেঞ্চি পাতা। ঘাটও রয়েছে একটা। খুব বড় নদী নয়, তবে জল রয়েছে বেশ। বিকেলে হয়তো ভীড় বেশি হয়, এখন সন্ধ্যা উতরে গেছে, তাই খুব বেশি লোকজন নেই। আলো ঝলমলে নয় জায়গাটা। রাস্তার অল্প পাওয়ারের আলো গাছের ফাঁক গলে নেমে একটা আলো আঁধারি পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রেমিক প্রেমিকার জন্য আদর্শ পরিবেশ। চড়া আলো তাদের প্রেমের মোহজালের জন্য ক্ষতিকর।
ফুচকাওয়ালা অদিতিদের বেশ ভালো রকমই চেনে। তারা কাছে যেতেই যেভাবে খৈনী খাওয়া দাঁত বের করে অভ্যর্থনা জানালো তাতেই বোঝা যায়। তার উপরে তিন তিনটে অসাধারণ সুন্দরী যুবতী মেয়ে ভর সন্ধ্যে বেলা তার হাতের কাজ পরখ করতে এলে তার ফুচকা-জীবনের উদ্দেশ্য সফল হবে এতে আর আশ্চর্য কি! শুধু সাথে তমালের মতো একটা ফেউ নিয়ে না এলে আরও খুশি হতো।
যত্ন করেই খাওয়ালো ফুচকা ওয়ালা। ঝাল, টক্, নুন কে কেমন খায় জানে দেখলাম সে। তার হাতের স্বাদও ভালো। ফুচকা তো সবার একই হয়, স্বাদের তফাৎ হয় ফুচকাওয়ালার হাত ভেজানো জলে। গার্গীতো দেখলাম খেয়েই চলেছে। তমাল কনুই দিয়ে তাকে আলতো একটা গুঁতো মেরে ফিসফিস করে বললো, পছন্দ হয়? প্রস্তাব দেবো নাকি? ভেবে বলো, সারাজীবন কোলে বসিয়ে ফুচকা খাওয়াবে! গার্গী চোখ বড় বড় করে শব্দহীন ধমক দেবার চেষ্টা করলো বটে কিন্তু তার চোখের আয়তন তার ফুচকা ভর্তি গালের চেয়ে কিছুতেই বড় হলো না।
ফুচকা শেষ করে চারজন একটা বেঞ্চিতে এসে বসলো। শিখা অন্য একটা বেঞ্চিতে বসে মোবাইলে গেম খেলে চললো। টুকটাক কথা হচ্ছিলো নিজেদের ভিতরে। হঠাৎ গার্গী বললো, তুমি দিদির সাথে কথা বলো, আমি আর অদিতি একটু সেন্ট্রাম মল থেকে ঘুরে আসি। বেশিক্ষণ সময় নেবো না। শিখাকেও নিয়ে যাচ্ছি। তারপর গলা নামিয়ে বললো, এদের জন্য কিছু আনা হয়নি, চট্ করে নিয়ে আসি, বুঝলে?
তমাল ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। যাবার আগে অদিতি মৌপিয়াকে বললো, দিদি আমাদের দেরি হলে তমালদাকে নিয়ে বাড়ি চলে যাস। তারপরে তিনজনে চলে গেলো সেন্ট্রাম মলের দিকে। এদের বাড়ি থেকে মিনিট দশেকের পথ।
দুজনে একা হয়ে যেতেই মৌপিয়া তমালের একটু কাছে সরে এসে বসলো। তমাল পকেট হাতড়ে সিগারেট প্যাকেট খুঁজলো। নেই, আনা হয়নি। সে মৌপিয়াকে বললো, দিদি একটু বসুন, আমি একটা সিগারেট নিয়ে আসি। মৌপিয়া কটাক্ষ করে বললো, তুমিও দিদি বলবে? খুব বুড়ি হয়ে গেছি, তাই না? তমাল তাড়াতাড়ি বললো, না না, বুড়ি হবেন কেন? আসলে অদিতির দিদি, তাই আমিও দিদি বললাম।
মৌপিয়া মনে হলো একটু আহত হয়েছে। বললো, দিদি শুনলেই মনে হয় বুড়ি হয়ে গেলাম। একটু ম্লান হেসে বললো, আসলে স্বামী সুখ তো বেশিদিন জোটেনি কপালে, তাই এখনি নিজেকে বুড়ি ভাবতে খারাপ লাগে। আর তুমি তো আমার চেয়ে খুব বেশি ছোট নও, আমরা বন্ধু হতে পারিনা তমাল?
তমাল বললো, নিশ্চয়ই পারি। এখন থেকে তাহলে আমরা বন্ধু মৌপিয়া।
বন্ধু হলে আমাকে মৌ ডেকো। আর বন্ধুত্ব সেলিব্রেট করার জন্য আমার জন্যও একটা সিগারেট এনো, বলেই চোখ টিপলো মৌপিয়া।
তমাল হেসে নিজের বুড়ো আঙুল উঁচু করে দেখিয়ে সিগারেটের খোঁজে চলে গেলো। সিগারেটের দোকানটা ফুচকাওয়ালার পাশেই। তাকে আবার আসতে দেখে দাঁত বের করলো সে। এখন ফাঁকাই আছে। সে দোকানদারকে এক প্যাকেট গোল্ডফ্লেক আর দেশলাই দিতে বলে ফুচকাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো, এরা তোমার রেগুলার কাস্টমার, তাই না?
ফুচকাওয়ালার হাসি আরো চওড়া হলো। বললো, ওই বড় বাড়ির দিদিমনিদের কথা বলছেন? হ্যাঁ প্রায়ই আসেন। তবে বড় দিদি বেশি আসেন না। আসেন ছোটদিদি আর আরও একজন দিদিমনি আছে না,সে। তমাল বললো, বন্দনা? ফুচকাওয়ালা বললো, নাম তো জানিনা বাবু, তবে অল্প বয়স।
তা সে কি একাই আসে? জিজ্ঞেস করলো তমাল।
না, সাথে একজন সুন্দর দেখতে দাদাবাবু আসে, কোঁকড়াচুল। বেশ মানায় দুজনকে।
কখন আসে তারা? একটু রাত করেই আসে, তবে মাসখানেক আর আসছে না।
তমাল অনুমান করলো বন্দনা রাজীবের সাথে আসে, এবং রাজীবের অ্যাক্সিডেন্টের খবর সে জানে না। বড়লোক বাড়ির খবর খুব একটা হাওয়ায় ওড়ে না অবশ্য!
আর ছোটদিদি কি একাই আসে? আবার জানতে চাইলো তমাল।
হ্যাঁ সে ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে আসে। তবে বছর খানেক আগে ছোট দিদিও ওই দাদাবাবুর সাথে আসতো।
সিগারেট দেশলাই নিয়ে তমাল এসে বসলো মৌয়ের পাশে। সে তমালের গা ঘেষে বসে হাত পাতলো। তমাল প্যাকেট এগিয়ে দিতেই অভ্যস্ত হাতে একটা সিগারেট বের করে নিলো। তমাল নিজে একটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে দেশলাই জ্বেলে দুটোই ধরিয়ে দিলো। মৌপিয়া লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে আয়েশ করে টানতে লাগলো।
তমাল বললো, কাশলে না তো? তারমানে স্মোক করা অভ্যেস আছে? মৌ বললো, আগে বরের সাথে বসে খেতাম। তার মদের নেশা ছিলো খুব। যেদিন বাড়িতে খেতো, আমাকে সঙ্গ দিতে হতো। সে সিগারেট খেলে আমাকেও খেতে হতো। তখন অভ্যেস হয়ে গেছিলো। এবাড়িতে চলে আসার পরে আর খেতাম না। তারপরে রাজীব আবার মাঝে মাঝে খাওয়াতো।
তমাল বললো, রাজীব? সে তোমাকে সিগারেট খাওয়াতো?
কথাটা বলা ঠিক হয়নি বুঝতে পেরে আমতা আমতা করলো মৌপিয়া। না, মানে খাওয়াতো বলতে, দু একবার খাইয়েছে। ওই যে বললাম, নিজেকে বুড়ি ভাবতে আমার ভীষণ আপত্তি, তাই তাকেও বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলাম।
আর বন্ধুত্ব সেলিব্রেট করতে তার সাথে সিগারেট খেতে? তমাল ছোট্ট একটা খোঁচা দিলো তাকে। কিন্তু খোঁচাটা গায়েই মাখলো না মৌপিয়া। বললো, হ্যাঁ।
রাজীবের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন ছিলো? জিজ্ঞাসা করলো তমাল।
ওই যে বললাম, বন্ধু! উত্তর দিলো মৌপিয়া।
-শুধু বন্ধু?
এবারে চুপ করে রইলো মৌ। তমাল বললো, বলতে না চাইলে থাক। তুমি নিশ্চয়ই জানো কে রাজীবকে ছুরি মেরেছে, তা খুঁজে বের করার জন্য তোমার পিসি আমাকে ভার দিয়েছেন। আমি প্রফেশনাল ইনভেস্টিগেটর। আমি শুধু অদিতির বন্ধু হয়ে এখানে আসিনি মৌ। আমার কাছে কিছু লুকিও না, তাতে সবার ভালো হবে। অপরাধী শাস্তি পাবে।
মৌ আরও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, ভরা যৌবনে স্বামী ছেড়ে গেলে মেয়েদের কি কষ্ট তোমাকে বোঝাতে পারবো না তমাল। বড় একা লাগে। জীবনটা অর্থহীন মনে হয়। তখন একজন বন্ধু লাগে, কারও স্পর্শ লাগে। আমাদের বাড়িটা বড় স্বার্থপর, কেউ কারো জন্য একটু সময়ও দিতে নারাজ। কিন্তু রাজীব দিতো। সে আমাকে বুঝতো। আমার জীবনটা ভরিয়ে দিয়েছিলো রাজীব। আবার সব শূন্য হয়ে গেলো।
বলতে বলতে তমালের একটা বাহু জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মাথা রাখলো মৌ। তার স্তনের গরম স্পর্শ অনুভব করলো তমাল। এতো বড় বাড়ির মেয়ের এমন সস্তা ব্যবহার ভীষন অবাক করলো তমালকে। কিন্তু নিজের বিবেক মৌপিয়ার দিক থেকে ভাবতে বাধ্য করলো তাকে। মেয়েটার একাকিত্ব, তার অসহায়ত্ব মনটা নরম করে দিলো। সে মৌ এর হাতে নিজের হাত রেখে বললো, বুঝতে পারছি মৌ। সব বুঝতে পারছি। চলো এবার ফেরা যাক্, অনেক্ষণ বাইরে আছি।
দুজনে দোতলায় উঠে দেখলো রাহুল ফিরেছে, তার ঘরে আলো জ্বলছে। মৌপিয়া রাহুলের দরজায় নক্ করলে রাহুল দরজা খুললো। কিন্তু তাদের ভিতরে আসতে বললো না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বিরক্ত হয়েছে মৌপিয়াকে এসময়ে দেখে। সাথে আবার উটকো একটা কাকে এনেছে। রাহুলের ভুরুদুটো বিরক্তিতে কুঁচকে আছে।
মৌপিয়া বললো, ভাই, এ হলো তমাল, অদিতির বন্ধু। রাহুলের ভুরুর বক্রতা আরও বৃদ্ধি পেলো, হয়তো অদিতির বন্ধুকে মৌপিয়ার সাথে দেখে।
- অ, তা কি দরকার?
- রাজীবের কেসটা সমাধান করতে পিসি ওকে অ্যাপয়েন্ট করেছে। ও প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর।
- হুহ্! পুলিশের পর এবারে টিকটিকি? ভালো!
বলেই পিছন ফিরে ঘরের ভিতরে চলে গেলো। যদিও মুখের উপরে দরজা বন্ধ করলো না, কিন্তু তার হাবে ভাবে প্রকাশ পেলো যে সেটা করতে পারলেই বেশি খুশি হতো।
ভাইয়ের রূঢ় ব্যবহারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো মৌপিয়া। তমালের দিকে তাকিয়ে অহেতুক হাসলো। তমাল চোখের পাতা ঝাপটে বোঝালো, কোনো অসুবিধা নেই, সে কিছু মনে করেনি।
তিনতলায় উঠে দেখলো অদিতিরা এখনো ফেরেনি। মৌপিয়া বললো, চলো আমার ঘরে বসবে। একা একা কি করবে তোমার রুমে গিয়ে?
মৌ এর ঘরে গিয়ে তমাল কল করলো গার্গীকে। সে জানালো আরও ঘন্টা খানেক লাগবে তাদের আসতে। তমাল কে বসিয়ে মৌ ফ্রেশ হতে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফিরলো একটা নাইটি পরে। ডিপ গলার নাইটি, বুকের খাঁজ পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে উপর থেকেই। ভাবভঙ্গীও বেশ অন্তরঙ্গ। তমাল কিছু বলছে না দেখে সে পাশে এসে বসলো, বললো, কি আমাকে কি এখনো বুড়ি মনে হচ্ছে?
তমাল বললো, পয়ত্রিশে কেউ বুড়ি হয়? এখনই তো আগ্নেয়গিরি সব চেয়ে সক্রিয় থাকে!
মৌ'য়ের চোখের তারা ঝিলিক দিয়ে উঠলো তমালের এই কথায়। সে খিলখিল করে হেসে উঠে বললো, বাব্বা! বেশ কাব্য করে বললে তো? তারপর হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো, ঠিক বলেছো, কি এক ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি বুকের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছি আমি, কেউ বোঝে না। সব সময় উত্তপ্ত লাভা টগবগ করে ফুটছে, কিন্তু বাইরে আসার পথ খুঁজে পায় না।
রাজীব চেষ্টা করেনি সেই লাভার স্রোত বাইরে আনতে? আচমকা প্রশ্ন করলো তমাল।
থমকে গেলো মৌপিয়া। বলবে কি বলবে না সেই দ্বিধায় ভুগলো কয়েক সেকেন্ড। তার পরে বললো, হ্যাঁ করেছিলো। সাধ্য মতো চেষ্টা করতো সে। কিন্তু দরকার ছিলো বিস্ফোরণের, সে একটা কোদাল দিয়ে চেস্টা করেছিলো! তবু আমার এই অভিশপ্ত জীবনে একটা আশার আলো ছিলো রাজীব। কিন্তু ওই যে, সেও বোধহয় আমাকে বুড়ি মনে করেছিলো। কচি জিনিসের দিকেই তার নজর ছিলো বেশি।
মৌপিয়া কি ইঙ্গিত করছে তা বেশ বুঝতে পারছে তমাল। তবে কোনো মন্তব্য না করে চুপ করে থাকাই সমীচীন মনে হলো তার।
রাজীবকে কে মারার চেষ্টা করতে পারে বলে তোমার মনে হয়? প্রসঙ্গ পালটে জিজ্ঞাসা করলো তমাল।
আমি সত্যিই জানি না তমাল, সাথে সাথে উত্তর দিলো মৌপিয়া।
-জানার কাজটা আমার, তুমি শুধু তোমার কাকে সন্দেহ হয়, সেটা বলো।
- বলা ঠিক কিনা জানিনা, কিন্তু ওই পুঁচকে ছুড়িটা সব করতে পারে। ভীষন হিংসুটে আর প্রতিহিংসাপরায়ণ।
- কে বন্দনা?
উপর নীচে মাথা দোলালো মৌপিয়া।
- ও তো একটা বাচ্চা মেয়ে?
- বাচ্চা! মাই ফুট! তোমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে। তার উপর পিসির আস্কারায় সাপের পাঁচ পা দেখেছে যেন। কাউকে কিছু পেতে দেখলেই ওরও চাই, সে যেভাবেই হোক!
- রাজীবকেও?
নাক দিয়ে ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করলো মৌপিয়া। তারপর বিড়বিড় করে কিছু বললো, যা শুনতে পেলোনা তমাল। অনুমান করলো বন্দনাকে গালি দিলো মনে মনে।
- কি মনে হয়, সিঁড়িতে কিছু ফেলে রেখেছিলো সে ই?
ভুরু কুঁচকে তাকালো মৌপিয়া। চোখে মুখে অর্থ বুঝতে না পারার দৃষ্টি।
- তুমি একবার সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গেছিলে না? শুনেছি সিঁড়িতে কিছু পড়েছিলো?
চোখ বড়বড় করে তমালের দিকে তাকালো মৌ। তারপর বললো, হতে পারে, হ্যাঁ হ্যাঁ, এটা সম্ভব! আগে তো ভেবে দেখিনি? আমি তো ভেবেছিলাম শিখা বোধহয় খেলতে খেলতে সিঁড়িতে শ্যাম্পু ফেলেছিলো, তাই চুপ করে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে শিখা শ্যাম্পুর বোতল পাবে কিভাবে? বাথরুমে রাখা শ্যাম্পুর বোতলও ওইটুকু মেয়ের নাগালের বাইরে। তাহলে ওটা ওই সর্বনাশীরই কাজ!
- আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম মৌ, সঠিক জানি না। তাছাড়া তোমার ক্ষতি করে বন্দনার কি লাভ?
- ঈর্ষা, তমাল ঈর্ষা! রাজীব যাতে আমার কাছে আসতে না পারে, তার কম চেষ্টা তো করেনি মেয়েটা? রাজীব আমার ঘরে এলেই কোনো না কোনো বাহানায় সে চলে আসতো। ইস্ এতোদিন মনে আসেনি কথাটা!
-রাজীব সাধারণত তোমার কাছে কখন আসতো?
-প্রথম প্রথম রাতেই আসতো। শিখাকে ঘুম পাড়িয়ে আমরা ওর পড়ার ঘরে চলে যেতাম। পাছে আদি দেখে ফেলে সন্দেহ করে তাই পরের দিকে আর রাতে কিছু করতাম না আমরা। কিছুদিন পরে অদিতি ফ্যাক্টরি যাওয়া শুরু করলো, তখন শিখাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে দিনের বেলাই হতো।
- অদিতি বুঝতে পারেনি কিছু বলে তোমার মনে হয়?
- মনে তো হয়না আদি কিছু বুঝেছে।
তমাল চট্ করে একবার ঘড়ি দেখে নিলো। ফোন করার পরে চল্লিশ মিনিট মতো হয়েছে। কি করছে রে বাবা মেয়ে দুটো? পুরো মলটাই উঠিয়ে নিয়ে আসবে নাকি?
- এতো ঘড়ি দেখছো কেন? আমার সঙ্গ ভালো লাগছে না? পালাতে চাইছো?
বলতে বলতে প্রায় তমালের চেয়ারের হাতলে এসে বসলো মৌপিয়া। নিজের খোলা হাতের উপর একটা গ্রীষ্মের দুপুরের গরম হাওয়ার হলকার মতো অনুভব করলো তমাল। উফফফ্ এতো গরম শরীর মৌ'য়ের?
না না, পালাবো কেন? দুটো মেয়ে গেছে, সাথে একটা বাচ্চা, তাই.... অজুহাত দেবার চেষ্টা করলো তমাল।
সাথে আদি আছে তো, চিন্তা করছো কেন? এটা আমাদের রাজত্ব, এখানে কেউ কিছু করতে সাহস পাবে না... বলতে বলতে তমালের আরও কাছে সরে এলো মৌপিয়া। তারপর হঠাৎ তমালের চুল গুলো খাঁমচে ধরে মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো। তমালের মনে হলো দুটো হট ওয়াটার ব্যাগের মাঝে কেউ চেপে ধরেছে তার মুখটা!
তমাল অচমকা এই ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতেই আরও জোড়ে আঁকড়ে ধরলো মৌপিয়া। ওহহ্ তমাল... বড় একা আমি.. প্লিজ.. প্লিজ আমায় দূরে ঠেলে দিও না... গুঙিয়ে উঠলো মৌ। তারপরে নিজের ঠোঁট দুটো নির্মম ভাবে নামিয়ে আনলো তমালের ঠোঁটের উপর।
কতোখানি ক্ষুদার্ত মৌপিয়া বুঝতে পারলো তমাল। তার ঠোঁট দুটো মুহুর্তের ভিতরে চুষে কামড়ে প্রায় ফুলিয়ে ফেললো সে। এলোপাথাড়ি চুমুতে ভরিয়ে দিলো তার সারা মুখ। মৌয়ের একটা হাত তার চুল খাঁমচে ধরে আছে, অন্য হাতটা অস্থির ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বুকে। তার অভিমুখ নিম্নগামী, ক্রমশ ধাবমান তমালের দুই থাইয়ের মাঝে!
তখনি দরজার হ্যাচ্ টা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে ঘুরতে শুরু করলো। তমালকে ছেড়ে দিয়ে ছিলা ছেঁড়া ধনুকের মতো ছিটকে দূরে সরে গেলো মৌ। ঘরে ঢুকলো শিখা। বুকে চেপে ধরে আছে বিশাল সাইজের একটা টেডি বিয়ার। টেডির আড়ালে রয়েছে বলে সে প্রথমেই তমাল আর মৌয়ের একে অপরের সাথে জোড়া লেগে থাকাটা দেখতে পেলো না। শিখা ঘরে ঢুকেই টেডিটা সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে ধপাস করে বসলো সেটার পাশে।
মৌপিয়া পিছন দিক থেকে টেনে নেমে আসা ম্যাক্সির গলাটা উপরে তুলে নিলো। আড়াল হলো তার প্রচন্ড গতিতে ওঠানামা করা ভারী স্তনদুটো। মুখটা মুছে নিলো হাতের উলটো পিঠ দিয়ে। নিজের মুখের কাম উত্তেজনার লক্ষন গুলো লুকাতে সে শিখার পাশে গিয়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো। আড় চোখে তাকালো তমালের দিকে। সেই চোখে স্পষ্ট অপ্রাপ্তির হতাশা। শিখার মাথাটাকে তমালের মাথা মনে করে বুকের সাথে চেপে রইলো।
শিখা দরজাটা হাট করে খুলে দিয়েছিলো। সিঁড়িতে গার্গী আর অদিতির গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু একটা নিয়ে তুমুল হাসি ঠাট্টা চলছে দুজনের মধ্যে। তমাল নিজের এলোমেলো চুল ঢাকতে দুহাতের আঙুল চালিয়ে আরও এলোমেলো করতে লাগলো। ভাগ্যিস মৌপিয়া আগেই ফ্রেশ হয়ে এসেছিলো, নাহলে তার লিপস্টিকের দাগ তাদের ছোট্ট খন্ডযুদ্ধের সাক্ষী দিতো চিৎকার করে। মৌয়ের পারফিউমের গন্ধও আর নেই। বদলে কাম উত্তেজিত যুবতী নারীর ঘামের গন্ধ লেগে আছে সারা মুখে, গলায়। মনে মনে সাবধান করলো তমাল নিজেকে, গার্গী আর অদিতির থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে স্নান না করা পর্যন্ত।
শপিং ব্যাগের পাহাড় নিয়ে ঢুকলো অদিতি আর গার্গী। তমালকে নিজের চুল টানতে দেখে থমকে গেলো দুজনে। অদিতি বললো, কি হলো তমালদা? শরীর খারাপ? তমাল বললো, আরে নাহ্, মাথাটা একটু ধরেছে। একটা শাওয়ার নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
গার্গী কিন্তু ভুরু কুঁচকে দেখলো তমালকে। চট্ করে একবার মৌপিয়ার দিকেও তাকালো, সে তখনো মেয়েকে আদর করার ভান করে চলেছে। গার্গী বললো, হুম, ধকল গেছে বেশ মনে হচ্ছে। তুমি বরং রেস্ট নাও তমালদা!
শপিং ব্যাগগুলো তিনজনে মিলে অদিতির ঘরে রাখা হলো। গার্গী বললো, তুই ফ্রেশ হয়ে নে, আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথে চা খাবো। এগুলো ডিস্ট্রিবিউটও করতে হবে তো? অদিতি ঘাড় নেড়ে ঢুকে গেলো বাথরুমে।
গার্গী কিন্তু নিজের ঘরে না গিয়ে চলে এলো তমালের ঘরে। এসেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে তমালের কাছে এসে দাঁড়ালো। কয়েক সেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে থেকে নাকটা তমালের গলায় ঘষে নিলো। যখন মুখ তুললো, তার ঠোঁটের কোনে একটা ফাজিল হাসি খেলা করছে। ভ্রুকুটি করে বললো, গন্ধটা খুব সন্দেহজনক! অদিতি এই গন্ধ ধরতে না পারলেও আমি কিন্তু উত্তেজিত নারী পুরুষের ফেরোমেনের গন্ধ চিনি তমালদা! কি করছিলে তোমরা মৌ'দির ঘরে?
তমাল ধপাস্ করে বিছানায় বসে পড়ে বললো, বাপরে! এতোক্ষণ জংলী মৌমাছির কবলে ছিলাম, এখন আবার পড়লাম জংলী বিল্লির পাল্লায়! শান্তি নেই!
চোখ বড়বড় করে গার্গী বললো, মানে! এর ভিতরে মৌপিয়াসী মৌমাছির মধু চুরিও করে নিয়েছো?
তমাল তাড়াতাড়ি বললো, আরে না না, তোমরা এসে পড়লে তাই রক্ষে। নাহলে মৌমাছি তার মধু জোর করে আমাকে খাইয়েই ছাড়তো। শুধু হুল ফোটানোর সুযোগ পেয়েছে মাত্র।
ইসসসস্ তাহলে আর একটু পরে ফিরলে ভালো হতো বলছো? তমাল লাফিয়ে উঠে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বললো, মধু সাবধানে রসিয়ে খেতে হয়, তাড়াহুড়ো করতে নেই, নাহলে মধুর বদলে হুলের জ্বালাই সইতে হয়... যাও ফ্রেশ হয়ে নাও, আমার ও এক কাপ কড়া লিকার চা দরকার।
গার্গী সবার জন্যই কিছুনা কিছু এনেছে। বাড়ির কাজের লোকজন, এমনকি ড্রাইভার এবং দারোয়ানও বাদ যায়নি। পিসির জন্য এনেছে একটা শাড়ি ও দামী কাশ্মীরি শাল। দাদার জন্য পুমা টি শার্ট।
তমাল নিজের ঘরেই ছিলো। সবার উপহার বিলি শেষ হলে অদিতি আর গার্গী এলো তমালের ঘরে। অদিতিকে তমালের কাছে রেখে গার্গী, একটু আসছি... বলে বেরিয়ে গেলো। ফিরলো দু মিনিটের ভিতরে। তার হাতে একটা ব্রাউন পেপারে মোড়া ছোট্ট প্যাকেট। সেটা তমালের হাতে দিয়ে বললো, এটা তোমার জন্য। অদিতি যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা গেলো। এর মানে এই উপহার অদিতির সামনে কেনা হয়নি।
তমাল খুললো প্যাকেটটা। ভিতরে তিন প্যাকেট আই-পিল! গার্গী বললো, বন্ধুর নিরাপত্তার কথা ভেবে কিনে আনলাম। তোমাদের খুব কাজে লাগবে এটা!
তমাল বললো, এ উপহার তো আমার জন্য নয় গার্গী। এ জিনিস নারী জাতীর নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হয়।
গার্গী ইশারায় অদিতিকে দেখিয়ে বললো, তাহলে যার লাগবে তাকেই দাও।
বাজ পাখি যেভাবে ইঁদুরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যেভাবেই গার্গীকে আক্রমণ করলো অদিতি। বিছানায় ফেলে চেপে ধরলো তাকে। তারপর চিমটি, খোঁচা, সুড়সুড়ি অনেক রকম মেয়েলি অস্ত্র প্রয়োগ করলো তার উপর। তমাল হাসতে হাসতে দেখতে লাগলো দুইবন্ধুর মল্ল যুদ্ধ।
কিছুক্ষণ পরে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে বসলো দুজনে। অদিতি বললো, তোকে আর ভদ্র সমাজে রাখা যাবেনা গার্গী, তুই একদম বুনো হয়ে গেছিস।
গার্গী বললো, বুনো নয় রে, বল প্র্যাকটিকাল। দেখ আমি তো পরশু চলে যাবো। তুই তমালদাকে ছাড়বি না, আর তুই ছাড়লেও তমালদা তোকে ছাড়বে না। লাগালাগি তোদের হবেই। তখন কোথায় এসব খুঁজতে যাবি, তাই বন্ধু হিসাবে আমি তো উপকারই করলাম। দেখিসনা, বন্ধুদের বিয়ে হলে ফুলশয্যার খাটে কন্ডোমের প্যাকেট বন্ধুরাই রেখে আসে? তমালদা আবার কন্ডোম পছন্দ করে না, তাই এটাই দিলাম।
অদিতি লজ্জা পেয়ে বললো, ইস্, কি মুখের ভাষা। তুই খা ওগুলো!
গার্গী হেসে বললো, দেশে ফিরে যেদিন তমালদা কে মেইল করেছি, সেদিন থেকেই রোজ পিল খাই আমি। ওসব আমার লাগবে না।
অদিতি বললো, বাব্বা! একেবারে প্লেটে সাজিয়ে নিজেকে উপহার দিয়েছে মেয়ে। কখন কিনলি এসব? ও, বুঝেছি, এই জন্যই মাথা যন্ত্রণার ওষুধ কিনবি বলে ফার্মাসি খুঁজছিলি?
গার্গী অদিতিকে চোখ মেরে বললো, আজ্ঞে হ্যাঁ ম্যাডাম।
ডিনারের পরেও অল্প কিছুক্ষণ গল্প করলো তিনজনে। তারপর গার্গী বললো, তুমি আজ একাই শুয়ে পড়ো তমালদা। আজ তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। আজ আমি আর অদিতি পুরানো একটা খেলা প্র্যাকটিস করবো দুজনে। তাছাড়া অদিতির উপহারটাও দেওয়া হয়নি এখনো। শুধু দিলেই তো হবে না, ব্যবহার বিধিও শিখিয়ে দিতে হবে তো?.. বলেই চোখ টিপলো।
অদিতি বললো, আবার কি উপহার? দিলি তো কতো কিছু?
গার্গী অদ্ভুত একটা মুখোভঙ্গী করে বললো, এটা বড়দের উপহার! সবার সামনে দেওয়া যায় না। চল চল, অনেক সময় লাগবে বোঝাতে। তারপর অদিতিকে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো গার্গী তমালের ঘর থেকে। তমাল জানালার ধারে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
*************
ঘরের সামনে যেতেই বছর পয়ত্রিশের একজন মহিলা বেরিয়ে এসে বললো, এসো ভাই, ভিতরে এসো। আমি মৌপিয়া, অদিতির দিদি। তমাল ভিতরে ঢুকে দেখলো অদিতিও বসে আছে খাটের উপরে। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো তমাল। বছর তিনেকের একটা বাচ্চা খেলা করছে সোফায় বসে। তমাল বুঝলো সে শিখা, মৌপিয়ার মেয়ে।
মৌপিয়া বললো, এসেই শুনেছি তুমি এসেছো। বন্দনা বলেছে। কিন্তু তুমি বিশ্রাম নিচ্ছিলে বলে আর বিরক্ত করিনি। একটু চা খাবে নাকি তমাল? তমাল বললো, তা মন্দ হয় না। মৌপিয়া ইন্টারকমের বোতামে চাপ দিয়ে চারকাপ চায়ের অর্ডার দিলো।
কিছুক্ষণের ভিতরে চায়ের সাথে গরম গরম শিঙাড়াও এলো। এখানকার শিঙাড়া গুলো কলকাতার মতো নয়, ভিতরের পুর কালচে রঙের আর চটকে মাখা। তবে খেতে মন্দ না!
গার্গী জিজ্ঞেস করলো, নতুন চাকরিটা কি হলো? নাকি আমার সাথেই যাবে দিল্লিতে কয়েকদিনের জন্য? তমাল বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো না। মন দিয়ে শিঙাড়া চিবোতে লাগলো। তিন জোড়া চোখ আলাদা আলাদা ভাষা নিয়ে তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুঝে সে ইচ্ছা করেই উত্তর দিতে দেরী করছে। শিঙাড়া শেষ করে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, বাহ্! বেশ চা!
গার্গী রেগে গিয়ে বললো, ধুৎ! বলো না, কি বললেন পিসিমা? কাজটা নিচ্ছো?
তমাল মাথা নেড়ে বললো, হুম, চাকরিটা হয়েই গেলো। আর মাইনেটাও বিশাল!
তিনজনের মুখে তিন রকম অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো কথাটা শুনে। গার্গী বোধহয় একটু হতাশ, মুখে যাই বলুক, তাকে অদিতির হাতে ছেড়ে দিয়ে দিল্লি চলে যেতে তার একটু কষ্টই হচ্ছে বোধ হয়। অদিতির গাল আবার লাল হয়ে উঠলো আর হালকা একটা হাসি দেখা গেলো ঠোঁটের কোনায়। পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাবার টিকিট কনফার্ম হলে যেমন খুশির হাসি দেখা যায়, অনেকটা সেরকম। মৌপিয়ার ভুরু দুঁটো অল্প কুঁচকে উঠেই সোজা হয়ে গেলো।
গার্গী বললো, মাইনে কতো!
তমাল ধমক দিয়ে বললো, চুপ! এই মেয়ে জানোনা, পুরুষের মাইনে আর মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাসা করতে নেই। গার্গী এমন একটা ভাব করলো মুখে যেন বকুনি খেয়ে বাচ্চা মেয়ে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। সবাই তা দেখে হাসতে শুরু করলো। কয়েক সেকেন্ড পরে গার্গীও যোগ দিলো সাথে।
মৌপিয়া বললো, তাহলে চল সবাই মিলে নুনিয়া নদীর ধারে ফুচকা খেয়ে তমালের নতুন চাকরি সেলিব্রেট করে আসি। অদিতি আর গার্গীও হৈ হৈ করে উঠলো প্রস্তাব শুনে। এদের বাড়ি থেকে নুনিয়া নদীর ধার হাঁটা পথ, তাই যে যেমন পোশাকে ছিলো সেটা আর বদলালো না। চুল টুল বেঁধে, হালকা প্রসাধন করেই বেরিয়ে পড়লো বাইরে।
আসার পথে, দোতলায় পিসির ঘরের সামনেই দেখা হয়েছিলো মিষ্টির সাথে। তার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে মৌপিয়া বললো, আমরা একটু নুনিয়া নদীর পাড়ে ঘুরে আসছি। ভাই ফিরেছে নাকি? বন্দনা নীরবে মাথা নাড়ে জানালো আসেনি। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না,এতে সে খুশি হয়নি মোটেই।
বাড়ির বাইরে এসে গার্গী বললো, বন্দনা বোধহয় একটু কষ্ট পেয়েছে, ওকেও নিয়ে এলে হতো! ঝাঁঝিয়ে উঠলো অদিতি। ছাড়তো! বড্ড বেশি গায়ে পড়া মেয়ে। ওকে আনার কি আছে? পিসির পেয়ারের মেয়ে, পিসির দেখাশুনা করুক। আদিখ্যেতা করে আবার "মা" ডাকে পিসিকে। পাজির পা ঝাড়া একেবারে।
মৌপিয়া অদিতির কথা সমর্থন করলো। ঠিক বলেছিস আদি, সব ব্যাপারে নাক গলানো চাই ওর। আর বড্ড হিংসুটে। সব কিছু গিয়ে লাগাবে পিসিকে।
বন্দনার উপর অদিতির রাগের কারণটা বুঝলো তমাল। কিন্তু মৌপিয়াও কি সেই একই কারণে তার উপরে ক্ষুব্ধ? বেচারা বন্দনা, অনেক শত্রু পুষেছে সে বাড়িতে। বন্দনার সাথে কথা বলে বুঝে নেবে ভাবলো তমাল।
নুনিয়া নদীর ধারটা বেশ সুন্দর। শান বাঁধানো, মাঝে মাঝে বসার বেঞ্চি পাতা। ঘাটও রয়েছে একটা। খুব বড় নদী নয়, তবে জল রয়েছে বেশ। বিকেলে হয়তো ভীড় বেশি হয়, এখন সন্ধ্যা উতরে গেছে, তাই খুব বেশি লোকজন নেই। আলো ঝলমলে নয় জায়গাটা। রাস্তার অল্প পাওয়ারের আলো গাছের ফাঁক গলে নেমে একটা আলো আঁধারি পরিবেশ তৈরি করেছে। প্রেমিক প্রেমিকার জন্য আদর্শ পরিবেশ। চড়া আলো তাদের প্রেমের মোহজালের জন্য ক্ষতিকর।
ফুচকাওয়ালা অদিতিদের বেশ ভালো রকমই চেনে। তারা কাছে যেতেই যেভাবে খৈনী খাওয়া দাঁত বের করে অভ্যর্থনা জানালো তাতেই বোঝা যায়। তার উপরে তিন তিনটে অসাধারণ সুন্দরী যুবতী মেয়ে ভর সন্ধ্যে বেলা তার হাতের কাজ পরখ করতে এলে তার ফুচকা-জীবনের উদ্দেশ্য সফল হবে এতে আর আশ্চর্য কি! শুধু সাথে তমালের মতো একটা ফেউ নিয়ে না এলে আরও খুশি হতো।
যত্ন করেই খাওয়ালো ফুচকা ওয়ালা। ঝাল, টক্, নুন কে কেমন খায় জানে দেখলাম সে। তার হাতের স্বাদও ভালো। ফুচকা তো সবার একই হয়, স্বাদের তফাৎ হয় ফুচকাওয়ালার হাত ভেজানো জলে। গার্গীতো দেখলাম খেয়েই চলেছে। তমাল কনুই দিয়ে তাকে আলতো একটা গুঁতো মেরে ফিসফিস করে বললো, পছন্দ হয়? প্রস্তাব দেবো নাকি? ভেবে বলো, সারাজীবন কোলে বসিয়ে ফুচকা খাওয়াবে! গার্গী চোখ বড় বড় করে শব্দহীন ধমক দেবার চেষ্টা করলো বটে কিন্তু তার চোখের আয়তন তার ফুচকা ভর্তি গালের চেয়ে কিছুতেই বড় হলো না।
ফুচকা শেষ করে চারজন একটা বেঞ্চিতে এসে বসলো। শিখা অন্য একটা বেঞ্চিতে বসে মোবাইলে গেম খেলে চললো। টুকটাক কথা হচ্ছিলো নিজেদের ভিতরে। হঠাৎ গার্গী বললো, তুমি দিদির সাথে কথা বলো, আমি আর অদিতি একটু সেন্ট্রাম মল থেকে ঘুরে আসি। বেশিক্ষণ সময় নেবো না। শিখাকেও নিয়ে যাচ্ছি। তারপর গলা নামিয়ে বললো, এদের জন্য কিছু আনা হয়নি, চট্ করে নিয়ে আসি, বুঝলে?
তমাল ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো। যাবার আগে অদিতি মৌপিয়াকে বললো, দিদি আমাদের দেরি হলে তমালদাকে নিয়ে বাড়ি চলে যাস। তারপরে তিনজনে চলে গেলো সেন্ট্রাম মলের দিকে। এদের বাড়ি থেকে মিনিট দশেকের পথ।
দুজনে একা হয়ে যেতেই মৌপিয়া তমালের একটু কাছে সরে এসে বসলো। তমাল পকেট হাতড়ে সিগারেট প্যাকেট খুঁজলো। নেই, আনা হয়নি। সে মৌপিয়াকে বললো, দিদি একটু বসুন, আমি একটা সিগারেট নিয়ে আসি। মৌপিয়া কটাক্ষ করে বললো, তুমিও দিদি বলবে? খুব বুড়ি হয়ে গেছি, তাই না? তমাল তাড়াতাড়ি বললো, না না, বুড়ি হবেন কেন? আসলে অদিতির দিদি, তাই আমিও দিদি বললাম।
মৌপিয়া মনে হলো একটু আহত হয়েছে। বললো, দিদি শুনলেই মনে হয় বুড়ি হয়ে গেলাম। একটু ম্লান হেসে বললো, আসলে স্বামী সুখ তো বেশিদিন জোটেনি কপালে, তাই এখনি নিজেকে বুড়ি ভাবতে খারাপ লাগে। আর তুমি তো আমার চেয়ে খুব বেশি ছোট নও, আমরা বন্ধু হতে পারিনা তমাল?
তমাল বললো, নিশ্চয়ই পারি। এখন থেকে তাহলে আমরা বন্ধু মৌপিয়া।
বন্ধু হলে আমাকে মৌ ডেকো। আর বন্ধুত্ব সেলিব্রেট করার জন্য আমার জন্যও একটা সিগারেট এনো, বলেই চোখ টিপলো মৌপিয়া।
তমাল হেসে নিজের বুড়ো আঙুল উঁচু করে দেখিয়ে সিগারেটের খোঁজে চলে গেলো। সিগারেটের দোকানটা ফুচকাওয়ালার পাশেই। তাকে আবার আসতে দেখে দাঁত বের করলো সে। এখন ফাঁকাই আছে। সে দোকানদারকে এক প্যাকেট গোল্ডফ্লেক আর দেশলাই দিতে বলে ফুচকাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো, এরা তোমার রেগুলার কাস্টমার, তাই না?
ফুচকাওয়ালার হাসি আরো চওড়া হলো। বললো, ওই বড় বাড়ির দিদিমনিদের কথা বলছেন? হ্যাঁ প্রায়ই আসেন। তবে বড় দিদি বেশি আসেন না। আসেন ছোটদিদি আর আরও একজন দিদিমনি আছে না,সে। তমাল বললো, বন্দনা? ফুচকাওয়ালা বললো, নাম তো জানিনা বাবু, তবে অল্প বয়স।
তা সে কি একাই আসে? জিজ্ঞেস করলো তমাল।
না, সাথে একজন সুন্দর দেখতে দাদাবাবু আসে, কোঁকড়াচুল। বেশ মানায় দুজনকে।
কখন আসে তারা? একটু রাত করেই আসে, তবে মাসখানেক আর আসছে না।
তমাল অনুমান করলো বন্দনা রাজীবের সাথে আসে, এবং রাজীবের অ্যাক্সিডেন্টের খবর সে জানে না। বড়লোক বাড়ির খবর খুব একটা হাওয়ায় ওড়ে না অবশ্য!
আর ছোটদিদি কি একাই আসে? আবার জানতে চাইলো তমাল।
হ্যাঁ সে ওই বাচ্চাটাকে নিয়ে আসে। তবে বছর খানেক আগে ছোট দিদিও ওই দাদাবাবুর সাথে আসতো।
সিগারেট দেশলাই নিয়ে তমাল এসে বসলো মৌয়ের পাশে। সে তমালের গা ঘেষে বসে হাত পাতলো। তমাল প্যাকেট এগিয়ে দিতেই অভ্যস্ত হাতে একটা সিগারেট বের করে নিলো। তমাল নিজে একটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে দেশলাই জ্বেলে দুটোই ধরিয়ে দিলো। মৌপিয়া লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছেড়ে আয়েশ করে টানতে লাগলো।
তমাল বললো, কাশলে না তো? তারমানে স্মোক করা অভ্যেস আছে? মৌ বললো, আগে বরের সাথে বসে খেতাম। তার মদের নেশা ছিলো খুব। যেদিন বাড়িতে খেতো, আমাকে সঙ্গ দিতে হতো। সে সিগারেট খেলে আমাকেও খেতে হতো। তখন অভ্যেস হয়ে গেছিলো। এবাড়িতে চলে আসার পরে আর খেতাম না। তারপরে রাজীব আবার মাঝে মাঝে খাওয়াতো।
তমাল বললো, রাজীব? সে তোমাকে সিগারেট খাওয়াতো?
কথাটা বলা ঠিক হয়নি বুঝতে পেরে আমতা আমতা করলো মৌপিয়া। না, মানে খাওয়াতো বলতে, দু একবার খাইয়েছে। ওই যে বললাম, নিজেকে বুড়ি ভাবতে আমার ভীষণ আপত্তি, তাই তাকেও বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলাম।
আর বন্ধুত্ব সেলিব্রেট করতে তার সাথে সিগারেট খেতে? তমাল ছোট্ট একটা খোঁচা দিলো তাকে। কিন্তু খোঁচাটা গায়েই মাখলো না মৌপিয়া। বললো, হ্যাঁ।
রাজীবের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন ছিলো? জিজ্ঞাসা করলো তমাল।
ওই যে বললাম, বন্ধু! উত্তর দিলো মৌপিয়া।
-শুধু বন্ধু?
এবারে চুপ করে রইলো মৌ। তমাল বললো, বলতে না চাইলে থাক। তুমি নিশ্চয়ই জানো কে রাজীবকে ছুরি মেরেছে, তা খুঁজে বের করার জন্য তোমার পিসি আমাকে ভার দিয়েছেন। আমি প্রফেশনাল ইনভেস্টিগেটর। আমি শুধু অদিতির বন্ধু হয়ে এখানে আসিনি মৌ। আমার কাছে কিছু লুকিও না, তাতে সবার ভালো হবে। অপরাধী শাস্তি পাবে।
মৌ আরও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, ভরা যৌবনে স্বামী ছেড়ে গেলে মেয়েদের কি কষ্ট তোমাকে বোঝাতে পারবো না তমাল। বড় একা লাগে। জীবনটা অর্থহীন মনে হয়। তখন একজন বন্ধু লাগে, কারও স্পর্শ লাগে। আমাদের বাড়িটা বড় স্বার্থপর, কেউ কারো জন্য একটু সময়ও দিতে নারাজ। কিন্তু রাজীব দিতো। সে আমাকে বুঝতো। আমার জীবনটা ভরিয়ে দিয়েছিলো রাজীব। আবার সব শূন্য হয়ে গেলো।
বলতে বলতে তমালের একটা বাহু জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মাথা রাখলো মৌ। তার স্তনের গরম স্পর্শ অনুভব করলো তমাল। এতো বড় বাড়ির মেয়ের এমন সস্তা ব্যবহার ভীষন অবাক করলো তমালকে। কিন্তু নিজের বিবেক মৌপিয়ার দিক থেকে ভাবতে বাধ্য করলো তাকে। মেয়েটার একাকিত্ব, তার অসহায়ত্ব মনটা নরম করে দিলো। সে মৌ এর হাতে নিজের হাত রেখে বললো, বুঝতে পারছি মৌ। সব বুঝতে পারছি। চলো এবার ফেরা যাক্, অনেক্ষণ বাইরে আছি।
দুজনে দোতলায় উঠে দেখলো রাহুল ফিরেছে, তার ঘরে আলো জ্বলছে। মৌপিয়া রাহুলের দরজায় নক্ করলে রাহুল দরজা খুললো। কিন্তু তাদের ভিতরে আসতে বললো না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বিরক্ত হয়েছে মৌপিয়াকে এসময়ে দেখে। সাথে আবার উটকো একটা কাকে এনেছে। রাহুলের ভুরুদুটো বিরক্তিতে কুঁচকে আছে।
মৌপিয়া বললো, ভাই, এ হলো তমাল, অদিতির বন্ধু। রাহুলের ভুরুর বক্রতা আরও বৃদ্ধি পেলো, হয়তো অদিতির বন্ধুকে মৌপিয়ার সাথে দেখে।
- অ, তা কি দরকার?
- রাজীবের কেসটা সমাধান করতে পিসি ওকে অ্যাপয়েন্ট করেছে। ও প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর।
- হুহ্! পুলিশের পর এবারে টিকটিকি? ভালো!
বলেই পিছন ফিরে ঘরের ভিতরে চলে গেলো। যদিও মুখের উপরে দরজা বন্ধ করলো না, কিন্তু তার হাবে ভাবে প্রকাশ পেলো যে সেটা করতে পারলেই বেশি খুশি হতো।
ভাইয়ের রূঢ় ব্যবহারে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো মৌপিয়া। তমালের দিকে তাকিয়ে অহেতুক হাসলো। তমাল চোখের পাতা ঝাপটে বোঝালো, কোনো অসুবিধা নেই, সে কিছু মনে করেনি।
তিনতলায় উঠে দেখলো অদিতিরা এখনো ফেরেনি। মৌপিয়া বললো, চলো আমার ঘরে বসবে। একা একা কি করবে তোমার রুমে গিয়ে?
মৌ এর ঘরে গিয়ে তমাল কল করলো গার্গীকে। সে জানালো আরও ঘন্টা খানেক লাগবে তাদের আসতে। তমাল কে বসিয়ে মৌ ফ্রেশ হতে গেলো। কিছুক্ষণ পরে ফিরলো একটা নাইটি পরে। ডিপ গলার নাইটি, বুকের খাঁজ পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে উপর থেকেই। ভাবভঙ্গীও বেশ অন্তরঙ্গ। তমাল কিছু বলছে না দেখে সে পাশে এসে বসলো, বললো, কি আমাকে কি এখনো বুড়ি মনে হচ্ছে?
তমাল বললো, পয়ত্রিশে কেউ বুড়ি হয়? এখনই তো আগ্নেয়গিরি সব চেয়ে সক্রিয় থাকে!
মৌ'য়ের চোখের তারা ঝিলিক দিয়ে উঠলো তমালের এই কথায়। সে খিলখিল করে হেসে উঠে বললো, বাব্বা! বেশ কাব্য করে বললে তো? তারপর হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো, ঠিক বলেছো, কি এক ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি বুকের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছি আমি, কেউ বোঝে না। সব সময় উত্তপ্ত লাভা টগবগ করে ফুটছে, কিন্তু বাইরে আসার পথ খুঁজে পায় না।
রাজীব চেষ্টা করেনি সেই লাভার স্রোত বাইরে আনতে? আচমকা প্রশ্ন করলো তমাল।
থমকে গেলো মৌপিয়া। বলবে কি বলবে না সেই দ্বিধায় ভুগলো কয়েক সেকেন্ড। তার পরে বললো, হ্যাঁ করেছিলো। সাধ্য মতো চেষ্টা করতো সে। কিন্তু দরকার ছিলো বিস্ফোরণের, সে একটা কোদাল দিয়ে চেস্টা করেছিলো! তবু আমার এই অভিশপ্ত জীবনে একটা আশার আলো ছিলো রাজীব। কিন্তু ওই যে, সেও বোধহয় আমাকে বুড়ি মনে করেছিলো। কচি জিনিসের দিকেই তার নজর ছিলো বেশি।
মৌপিয়া কি ইঙ্গিত করছে তা বেশ বুঝতে পারছে তমাল। তবে কোনো মন্তব্য না করে চুপ করে থাকাই সমীচীন মনে হলো তার।
রাজীবকে কে মারার চেষ্টা করতে পারে বলে তোমার মনে হয়? প্রসঙ্গ পালটে জিজ্ঞাসা করলো তমাল।
আমি সত্যিই জানি না তমাল, সাথে সাথে উত্তর দিলো মৌপিয়া।
-জানার কাজটা আমার, তুমি শুধু তোমার কাকে সন্দেহ হয়, সেটা বলো।
- বলা ঠিক কিনা জানিনা, কিন্তু ওই পুঁচকে ছুড়িটা সব করতে পারে। ভীষন হিংসুটে আর প্রতিহিংসাপরায়ণ।
- কে বন্দনা?
উপর নীচে মাথা দোলালো মৌপিয়া।
- ও তো একটা বাচ্চা মেয়ে?
- বাচ্চা! মাই ফুট! তোমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে। তার উপর পিসির আস্কারায় সাপের পাঁচ পা দেখেছে যেন। কাউকে কিছু পেতে দেখলেই ওরও চাই, সে যেভাবেই হোক!
- রাজীবকেও?
নাক দিয়ে ঘোঁৎ করে একটা শব্দ করলো মৌপিয়া। তারপর বিড়বিড় করে কিছু বললো, যা শুনতে পেলোনা তমাল। অনুমান করলো বন্দনাকে গালি দিলো মনে মনে।
- কি মনে হয়, সিঁড়িতে কিছু ফেলে রেখেছিলো সে ই?
ভুরু কুঁচকে তাকালো মৌপিয়া। চোখে মুখে অর্থ বুঝতে না পারার দৃষ্টি।
- তুমি একবার সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে গেছিলে না? শুনেছি সিঁড়িতে কিছু পড়েছিলো?
চোখ বড়বড় করে তমালের দিকে তাকালো মৌ। তারপর বললো, হতে পারে, হ্যাঁ হ্যাঁ, এটা সম্ভব! আগে তো ভেবে দেখিনি? আমি তো ভেবেছিলাম শিখা বোধহয় খেলতে খেলতে সিঁড়িতে শ্যাম্পু ফেলেছিলো, তাই চুপ করে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে শিখা শ্যাম্পুর বোতল পাবে কিভাবে? বাথরুমে রাখা শ্যাম্পুর বোতলও ওইটুকু মেয়ের নাগালের বাইরে। তাহলে ওটা ওই সর্বনাশীরই কাজ!
- আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম মৌ, সঠিক জানি না। তাছাড়া তোমার ক্ষতি করে বন্দনার কি লাভ?
- ঈর্ষা, তমাল ঈর্ষা! রাজীব যাতে আমার কাছে আসতে না পারে, তার কম চেষ্টা তো করেনি মেয়েটা? রাজীব আমার ঘরে এলেই কোনো না কোনো বাহানায় সে চলে আসতো। ইস্ এতোদিন মনে আসেনি কথাটা!
-রাজীব সাধারণত তোমার কাছে কখন আসতো?
-প্রথম প্রথম রাতেই আসতো। শিখাকে ঘুম পাড়িয়ে আমরা ওর পড়ার ঘরে চলে যেতাম। পাছে আদি দেখে ফেলে সন্দেহ করে তাই পরের দিকে আর রাতে কিছু করতাম না আমরা। কিছুদিন পরে অদিতি ফ্যাক্টরি যাওয়া শুরু করলো, তখন শিখাকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে দিনের বেলাই হতো।
- অদিতি বুঝতে পারেনি কিছু বলে তোমার মনে হয়?
- মনে তো হয়না আদি কিছু বুঝেছে।
তমাল চট্ করে একবার ঘড়ি দেখে নিলো। ফোন করার পরে চল্লিশ মিনিট মতো হয়েছে। কি করছে রে বাবা মেয়ে দুটো? পুরো মলটাই উঠিয়ে নিয়ে আসবে নাকি?
- এতো ঘড়ি দেখছো কেন? আমার সঙ্গ ভালো লাগছে না? পালাতে চাইছো?
বলতে বলতে প্রায় তমালের চেয়ারের হাতলে এসে বসলো মৌপিয়া। নিজের খোলা হাতের উপর একটা গ্রীষ্মের দুপুরের গরম হাওয়ার হলকার মতো অনুভব করলো তমাল। উফফফ্ এতো গরম শরীর মৌ'য়ের?
না না, পালাবো কেন? দুটো মেয়ে গেছে, সাথে একটা বাচ্চা, তাই.... অজুহাত দেবার চেষ্টা করলো তমাল।
সাথে আদি আছে তো, চিন্তা করছো কেন? এটা আমাদের রাজত্ব, এখানে কেউ কিছু করতে সাহস পাবে না... বলতে বলতে তমালের আরও কাছে সরে এলো মৌপিয়া। তারপর হঠাৎ তমালের চুল গুলো খাঁমচে ধরে মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরলো। তমালের মনে হলো দুটো হট ওয়াটার ব্যাগের মাঝে কেউ চেপে ধরেছে তার মুখটা!
তমাল অচমকা এই ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতেই আরও জোড়ে আঁকড়ে ধরলো মৌপিয়া। ওহহ্ তমাল... বড় একা আমি.. প্লিজ.. প্লিজ আমায় দূরে ঠেলে দিও না... গুঙিয়ে উঠলো মৌ। তারপরে নিজের ঠোঁট দুটো নির্মম ভাবে নামিয়ে আনলো তমালের ঠোঁটের উপর।
কতোখানি ক্ষুদার্ত মৌপিয়া বুঝতে পারলো তমাল। তার ঠোঁট দুটো মুহুর্তের ভিতরে চুষে কামড়ে প্রায় ফুলিয়ে ফেললো সে। এলোপাথাড়ি চুমুতে ভরিয়ে দিলো তার সারা মুখ। মৌয়ের একটা হাত তার চুল খাঁমচে ধরে আছে, অন্য হাতটা অস্থির ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বুকে। তার অভিমুখ নিম্নগামী, ক্রমশ ধাবমান তমালের দুই থাইয়ের মাঝে!
তখনি দরজার হ্যাচ্ টা ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দে ঘুরতে শুরু করলো। তমালকে ছেড়ে দিয়ে ছিলা ছেঁড়া ধনুকের মতো ছিটকে দূরে সরে গেলো মৌ। ঘরে ঢুকলো শিখা। বুকে চেপে ধরে আছে বিশাল সাইজের একটা টেডি বিয়ার। টেডির আড়ালে রয়েছে বলে সে প্রথমেই তমাল আর মৌয়ের একে অপরের সাথে জোড়া লেগে থাকাটা দেখতে পেলো না। শিখা ঘরে ঢুকেই টেডিটা সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে ধপাস করে বসলো সেটার পাশে।
মৌপিয়া পিছন দিক থেকে টেনে নেমে আসা ম্যাক্সির গলাটা উপরে তুলে নিলো। আড়াল হলো তার প্রচন্ড গতিতে ওঠানামা করা ভারী স্তনদুটো। মুখটা মুছে নিলো হাতের উলটো পিঠ দিয়ে। নিজের মুখের কাম উত্তেজনার লক্ষন গুলো লুকাতে সে শিখার পাশে গিয়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো। আড় চোখে তাকালো তমালের দিকে। সেই চোখে স্পষ্ট অপ্রাপ্তির হতাশা। শিখার মাথাটাকে তমালের মাথা মনে করে বুকের সাথে চেপে রইলো।
শিখা দরজাটা হাট করে খুলে দিয়েছিলো। সিঁড়িতে গার্গী আর অদিতির গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিছু একটা নিয়ে তুমুল হাসি ঠাট্টা চলছে দুজনের মধ্যে। তমাল নিজের এলোমেলো চুল ঢাকতে দুহাতের আঙুল চালিয়ে আরও এলোমেলো করতে লাগলো। ভাগ্যিস মৌপিয়া আগেই ফ্রেশ হয়ে এসেছিলো, নাহলে তার লিপস্টিকের দাগ তাদের ছোট্ট খন্ডযুদ্ধের সাক্ষী দিতো চিৎকার করে। মৌয়ের পারফিউমের গন্ধও আর নেই। বদলে কাম উত্তেজিত যুবতী নারীর ঘামের গন্ধ লেগে আছে সারা মুখে, গলায়। মনে মনে সাবধান করলো তমাল নিজেকে, গার্গী আর অদিতির থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে স্নান না করা পর্যন্ত।
শপিং ব্যাগের পাহাড় নিয়ে ঢুকলো অদিতি আর গার্গী। তমালকে নিজের চুল টানতে দেখে থমকে গেলো দুজনে। অদিতি বললো, কি হলো তমালদা? শরীর খারাপ? তমাল বললো, আরে নাহ্, মাথাটা একটু ধরেছে। একটা শাওয়ার নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
গার্গী কিন্তু ভুরু কুঁচকে দেখলো তমালকে। চট্ করে একবার মৌপিয়ার দিকেও তাকালো, সে তখনো মেয়েকে আদর করার ভান করে চলেছে। গার্গী বললো, হুম, ধকল গেছে বেশ মনে হচ্ছে। তুমি বরং রেস্ট নাও তমালদা!
শপিং ব্যাগগুলো তিনজনে মিলে অদিতির ঘরে রাখা হলো। গার্গী বললো, তুই ফ্রেশ হয়ে নে, আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে একসাথে চা খাবো। এগুলো ডিস্ট্রিবিউটও করতে হবে তো? অদিতি ঘাড় নেড়ে ঢুকে গেলো বাথরুমে।
গার্গী কিন্তু নিজের ঘরে না গিয়ে চলে এলো তমালের ঘরে। এসেই দরজা লাগিয়ে দিয়ে তমালের কাছে এসে দাঁড়ালো। কয়েক সেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে থেকে নাকটা তমালের গলায় ঘষে নিলো। যখন মুখ তুললো, তার ঠোঁটের কোনে একটা ফাজিল হাসি খেলা করছে। ভ্রুকুটি করে বললো, গন্ধটা খুব সন্দেহজনক! অদিতি এই গন্ধ ধরতে না পারলেও আমি কিন্তু উত্তেজিত নারী পুরুষের ফেরোমেনের গন্ধ চিনি তমালদা! কি করছিলে তোমরা মৌ'দির ঘরে?
তমাল ধপাস্ করে বিছানায় বসে পড়ে বললো, বাপরে! এতোক্ষণ জংলী মৌমাছির কবলে ছিলাম, এখন আবার পড়লাম জংলী বিল্লির পাল্লায়! শান্তি নেই!
চোখ বড়বড় করে গার্গী বললো, মানে! এর ভিতরে মৌপিয়াসী মৌমাছির মধু চুরিও করে নিয়েছো?
তমাল তাড়াতাড়ি বললো, আরে না না, তোমরা এসে পড়লে তাই রক্ষে। নাহলে মৌমাছি তার মধু জোর করে আমাকে খাইয়েই ছাড়তো। শুধু হুল ফোটানোর সুযোগ পেয়েছে মাত্র।
ইসসসস্ তাহলে আর একটু পরে ফিরলে ভালো হতো বলছো? তমাল লাফিয়ে উঠে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে বললো, মধু সাবধানে রসিয়ে খেতে হয়, তাড়াহুড়ো করতে নেই, নাহলে মধুর বদলে হুলের জ্বালাই সইতে হয়... যাও ফ্রেশ হয়ে নাও, আমার ও এক কাপ কড়া লিকার চা দরকার।
গার্গী সবার জন্যই কিছুনা কিছু এনেছে। বাড়ির কাজের লোকজন, এমনকি ড্রাইভার এবং দারোয়ানও বাদ যায়নি। পিসির জন্য এনেছে একটা শাড়ি ও দামী কাশ্মীরি শাল। দাদার জন্য পুমা টি শার্ট।
তমাল নিজের ঘরেই ছিলো। সবার উপহার বিলি শেষ হলে অদিতি আর গার্গী এলো তমালের ঘরে। অদিতিকে তমালের কাছে রেখে গার্গী, একটু আসছি... বলে বেরিয়ে গেলো। ফিরলো দু মিনিটের ভিতরে। তার হাতে একটা ব্রাউন পেপারে মোড়া ছোট্ট প্যাকেট। সেটা তমালের হাতে দিয়ে বললো, এটা তোমার জন্য। অদিতি যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা গেলো। এর মানে এই উপহার অদিতির সামনে কেনা হয়নি।
তমাল খুললো প্যাকেটটা। ভিতরে তিন প্যাকেট আই-পিল! গার্গী বললো, বন্ধুর নিরাপত্তার কথা ভেবে কিনে আনলাম। তোমাদের খুব কাজে লাগবে এটা!
তমাল বললো, এ উপহার তো আমার জন্য নয় গার্গী। এ জিনিস নারী জাতীর নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হয়।
গার্গী ইশারায় অদিতিকে দেখিয়ে বললো, তাহলে যার লাগবে তাকেই দাও।
বাজ পাখি যেভাবে ইঁদুরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যেভাবেই গার্গীকে আক্রমণ করলো অদিতি। বিছানায় ফেলে চেপে ধরলো তাকে। তারপর চিমটি, খোঁচা, সুড়সুড়ি অনেক রকম মেয়েলি অস্ত্র প্রয়োগ করলো তার উপর। তমাল হাসতে হাসতে দেখতে লাগলো দুইবন্ধুর মল্ল যুদ্ধ।
কিছুক্ষণ পরে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে বসলো দুজনে। অদিতি বললো, তোকে আর ভদ্র সমাজে রাখা যাবেনা গার্গী, তুই একদম বুনো হয়ে গেছিস।
গার্গী বললো, বুনো নয় রে, বল প্র্যাকটিকাল। দেখ আমি তো পরশু চলে যাবো। তুই তমালদাকে ছাড়বি না, আর তুই ছাড়লেও তমালদা তোকে ছাড়বে না। লাগালাগি তোদের হবেই। তখন কোথায় এসব খুঁজতে যাবি, তাই বন্ধু হিসাবে আমি তো উপকারই করলাম। দেখিসনা, বন্ধুদের বিয়ে হলে ফুলশয্যার খাটে কন্ডোমের প্যাকেট বন্ধুরাই রেখে আসে? তমালদা আবার কন্ডোম পছন্দ করে না, তাই এটাই দিলাম।
অদিতি লজ্জা পেয়ে বললো, ইস্, কি মুখের ভাষা। তুই খা ওগুলো!
গার্গী হেসে বললো, দেশে ফিরে যেদিন তমালদা কে মেইল করেছি, সেদিন থেকেই রোজ পিল খাই আমি। ওসব আমার লাগবে না।
অদিতি বললো, বাব্বা! একেবারে প্লেটে সাজিয়ে নিজেকে উপহার দিয়েছে মেয়ে। কখন কিনলি এসব? ও, বুঝেছি, এই জন্যই মাথা যন্ত্রণার ওষুধ কিনবি বলে ফার্মাসি খুঁজছিলি?
গার্গী অদিতিকে চোখ মেরে বললো, আজ্ঞে হ্যাঁ ম্যাডাম।
ডিনারের পরেও অল্প কিছুক্ষণ গল্প করলো তিনজনে। তারপর গার্গী বললো, তুমি আজ একাই শুয়ে পড়ো তমালদা। আজ তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। আজ আমি আর অদিতি পুরানো একটা খেলা প্র্যাকটিস করবো দুজনে। তাছাড়া অদিতির উপহারটাও দেওয়া হয়নি এখনো। শুধু দিলেই তো হবে না, ব্যবহার বিধিও শিখিয়ে দিতে হবে তো?.. বলেই চোখ টিপলো।
অদিতি বললো, আবার কি উপহার? দিলি তো কতো কিছু?
গার্গী অদ্ভুত একটা মুখোভঙ্গী করে বললো, এটা বড়দের উপহার! সবার সামনে দেওয়া যায় না। চল চল, অনেক সময় লাগবে বোঝাতে। তারপর অদিতিকে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলো গার্গী তমালের ঘর থেকে। তমাল জানালার ধারে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
*************