Thread Rating:
  • 29 Vote(s) - 3.48 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery ভাঙনের পরে
#41
Dada update please
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
Upload please. We are waiting for your magic ✨
Like Reply
#43
as usual অসাধারণ শুরু  yourock লাইক আর রেপু দিলাম আপনাকে। পরবর্তী আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম।

[Image: Images-2-2-1.jpg]

Like Reply
#44
সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামীকাল আপডেট আসবে।
[+] 6 users Like Henry's post
Like Reply
#45
(31-08-2024, 11:22 PM)Henry Wrote: সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামীকাল আপডেট আসবে।

Sudhu cholbe na sir 
Sob kichu jordar chutbe 
Apni sudhu update ekto boro kore deben 
Lot's of love Henry sir ❤️❤️
[+] 1 user Likes Realbond's post
Like Reply
#46
Waiting eagerly sir
Like Reply
#47
Henry dada update
[+] 1 user Likes Revik's post
Like Reply
#48
আজ কি আপডেট আসবে!?
[+] 1 user Likes Pmsex's post
Like Reply
#49
Dada update ki asbe ajke?
Like Reply
#50
Waiting for update
Like Reply
#51
পর্ব: ২

অংশুকে ট্রেনে তুলে দিয়ে জয়ন্ত রওনা হল হাসপাতালের দিকে। ওর মা পই পই করে বলে দিয়েছে দিদার বাড়ি পৌঁছে যেন টেলিফোন করে।
জয়ন্ত হাসপাতালে ঢুকেই দেখল একটা গোলমাল বেঁধেছে। কোনো এক পেশেন্ট পার্টির দাবী ডাক্তারেরা তাদের রোগীকে মেরে ফেলেছে।
ভিড় সামলে ঢুকল জয়ন্ত। ডঃ মিত্র বললেন--সাবধান, ডঃ দাশগুপ্ত। পেশেন্ট পার্টি স্থানীয় বস্তি থেকে এসেছে। যে কোনো মুহূর্তে বাড়াবাড়ি করতে পারে।

জয়ন্ত ডঃ মিত্রকে জিজ্ঞেস করল---কোন ডাক্তার ছিলেন?

---ডঃ নাগ।

নামটা শুনে একটু বিরক্ত হল জয়ন্ত। এই নিয়ে তিনটে কেস হল ডঃ মৃণ্ময় নাগের। জয়ন্ত ঢুকে গেল ওয়ার্ডে। একের পর এক পেশেন্ট দেখছিল সে, ঠিক তক্ষুনি বাইরে একটা হল্লা। একজন জুনিয়র ডাক্তার বললেন---পুলিশ এসেছে।

জয়ন্ত দেখল পুলিশ পেশেন্ট পার্টিকে শান্ত করছে। সামনের ডেস্কেই প্রেসক্ৰিবশন রাখা। জয়ন্ত প্রেসক্ৰিবশন পড়ে বুঝতে পারছে ডাঃ নাগ আবার অতিরিক্ত কিছু ওষুধ দিয়েছেন। মেডিসিন কোম্পানির কমিশনের লোভে এমনটা বহু ডাক্তার করে থাকেন। তবে ডঃ নাগেরটা বাড়াবাড়ি। অবশ্য ডঃ নাগ খুব প্রভাবশালী। রাজনৈতিক শিবিরে ওঠাপড়া আছে। সব সামলে নেন। কিন্তু এর তো একটা প্রতিকার দরকার। বারবার এমন করে যাবেন, তা তো চলতে পারে না।

ডঃ মিত্র বললেন---কি করবেন, ওর যে মিনিস্ট্রিতে হাত রয়েছে। কাছের লোক কিনা।

জয়ন্ত গম্ভীর নিশ্বাস ফেলল, আর শব্দ করল---হুম্ম!
***

অংশু কতদিন পর দিদার বাড়ি এলো। ছোটবেলায় এখানে এলে তার যেতেই ইচ্ছে হত না। অংশুর দাদু যখন বেঁচে ছিলেন, বলতেন এই বাড়িটা নাকি অংশুর দাদুর ঠাকুরদা বানিয়েছিলেন। দেখলেই অবশ্য বোঝা যায়, সেকেলে আদলে বানানো দোতলা বাড়িটার দালান কোঠাগুলি মোটা মোটা।
দিদার কাছে গিয়ে অংশু বললে---দিদা কেমন আছো?

শায়িত বৃদ্ধা চিনতে পারলেন না নাতিকে। বললেন---কে বলতো?

---অংশু।

---অংশু? বৃদ্ধা এখন ভুলে যান সবকিছু। মনে করালে মনে পড়ে।

পাশেই ছিল সর্বক্ষণ দেখাশোনা করার জন্য অংশুর মায়ের এক এক দূর সম্পর্কের অবিবাহিতা পিসতুতো বোন ডালিয়া। অংশু শুনেছিল মায়ের কাছে ডালিয়া পিসির একটি দিদি ছিল তার নাম ঝুমুর। মায়ের সমবয়সী। সেই ঝুমুর মাসি নাকি মায়ের প্রানের বন্ধু ছিল ছোটবেলায়। মায়েরা যখন চন্দননগরে থাকতো, তখন নাকি ঝুমুর মাসি একদিন বাড়ির দীঘিতে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায়। মায়ের মুখে বহুবার সেই ঝুমুর মাসির স্মৃতিচারণ শুনেছে অংশু।

ডালিয়া মাসি অবশ্য মায়ের চেয়ে বছর ছয়-সাতেক ছোট। সে বললে---মামী, সুচি দি'র ছেলে গো।

---ও সুচির ছেলে..অংশু..! অংশুর হাতটা মুঠিয়ে ধরলেন বৃদ্ধা। তারপর বললেন---তোর মা আসেনি?

---আসবে। মায়ের ট্রান্সফার হয়েছে এখানেই গোবিন্দপুরের স্কুলে।

ডালিয়া বলল---হ্যা রে অংশু, পিউ এলো না?

---দিদির তো সেমিস্টার। সামনে আইআইটির কাউন্সিলিং।

অংশুর মনে পড়ল মাকে একটা ফোন করে দিতে হবে। মা এখন স্কুলে। সে দ্রুত দিদার বাড়ির ল্যান্ড ফোন থেকে মাকে জানিয়ে দিল পৌঁছে যাবার কথা।
***
[+] 9 users Like Henry's post
Like Reply
#52
আজকে ডিউটি শেষ হবে দুটোর দিকে। ফলে লাঞ্চটা জয়ন্ত বাড়িতে গিয়েই করবে। চন্দন ড্রাইভ করছিল। বলল---স্যার, কাল যে লোকটা এসেছিল আপনার সাথে দেখা করতে, ওকে চেনেন?

---কাল? কে বল তো? জয়ন্ত মনে করতে পারলো না।

---ঐ যে আপনি ডিউটি শেষ করে বেরবার সময়...

মনে পড়ল জয়ন্তের। হেসে বলল---ওঃ, তুই ঐ লোকটার কথা বলছিস? কি যেন নাম বলেছিল...গফুর...

---কাল খবর পেলাম ওর সম্পর্কে। থাকে পার্ক সার্কাসে, ফুটপাথে কোথাও। এক নম্বরের গাঁজাখোর, নেশা ভান করে ঘুরে বেড়ায়। আর এভাবে টাকা চায়।

জয়ন্ত হাসলো। মনে মনে ভাবলো সে ঠিকই চিনেছে লোকটাকে। এত অপরিচ্ছন্ন, জামা কাপড় ময়লা, নোংরা চেহারার লোক আর যাইহোক সংসারী নয়। চন্দন গাড়িটা টার্ন নিয়ে বাইপাস ধরে এগোতে লাগলো।
***

ডালিয়া মাসির খুব বেশি পড়াশোনা নেই। এ' বাড়িতে ছোট থেকে আছে। ঝুমুর মাসি যখন মারা যায় তখন নাকি মায়ের পিসির একমাত্র সম্বল ছিল এই ডালিয়া মাসি। সেই থেকে ডালিয়া মাসি তার অসুস্থ মায়ের জন্য বিয়ে থা না করে রয়েই গেল মামাবাড়িতে। এখন ডালিয়া মাসির মা বেঁচে নেই। সে দিদার দেখাশোনা করে, নিজে রেঁধে খায়। অংশুর দুপুরের আহারের রান্না ডালিয়া মাসিই করেছে।

খাবার পরে বড় ঘরটার দরজা খুলে দিল ডালিয়া মাসি। হালকা ঝাড়পোঁছ করে একটা কাচা বিছানা চাদর পেতে দিল বিছানায়। বললে---অনেক পরিশ্রম হয়েছে, বিশ্রাম কর অংশু। এই ঘরে ছিল দুজনের, তোর মা আর তার প্রাণের বন্ধু আমার আপন আপন মায়ের পেটের ঝুমুর দি'র। বিয়ের আগে তোর মা এলে ঝুমুর দি'র সাথে এ ঘরেই থাকতো।

ঘরটা এখনো বেশ গোছানো হয়ে আছে। কিন্তু বহুদিন খোলা হয়না বলে একটা গুমোট গন্ধ আছে। ইতিউতি ফাঁদও জমেছে। গন্ধটা কাটাতে মাথার কাছে জানালাটা খুলে দিল অংশু। পেছনেই দীঘি। এই দীঘির গল্প মায়ের কাছে শুনেছে অংশু। এই দীঘিতেই তো ঝুমুর মাসি ভর দুপুরে স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে যায়। দিদা বলে এই দীঘিতে নাকি যক্ষ আছে। সেই যক্ষই নাকি ঝুমুর মাসিকে টেনে নিয়ে গেছে। অংশু অবশ্য সেসব বিশ্বাস করে না। দিদার এই আজগুবি গল্প নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার।
বরং মায়ের মুখে ছিল এ' ঝিল নিয়ে নানা সুন্দর স্মৃতিচারণ। চন্দননগর থেকে স্কুল ছুটিতে যখন মা দাদুর সাথে দেশ বাড়িতে আসতো তখন এই দিঘিতে মাছ ধরা হত। আর যে মাছ উঠত তা নাকি সামান্য রেখে বাকিটা গ্রামে বিলিয়ে দেওয়া হত। এ' বাড়িতে নাকি একসময় দুর্গাপূজাও হত বিশাল। সেই পূজাতেই নাকি বাবাও আসতো শৈশবে। ঠাকুর্দা আর দাদু ছিলেন ঘনিষ্ট বন্ধু। সব কথা অংশু আর তার দিদি মিলে মায়ের কাছে বহুবার শুনেছে।

এখন ঘুম পাচ্ছে অংশুর। জয়ন্তের মত টানটান হয়ে শোয়া তার অভ্যেস। ওভাবেই শুয়ে রইল ও'। এখানে বইয়ের থাকে কত বই। এক আধটা উপন্যাস গল্প ছাড়া, বেশিরভাগই বোধ হয় পড়ার বই। এ' বই নিশ্চই মা আর ঝুমুর মাসির। মা এসব বই কোনোকিছুই বিয়ের পর নিয়ে যায়নি। অংশু জানে তার মা খুব যত্নশীল। বইগুলোয় সব ধুলোবালি, ফাঁদ জমেছে। মা এলে নিশ্চই সব গুছিয়ে রাখবে।
***

এসময় বাড়ি এলে নিজেকেই গেট খুলতে হয় জয়ন্তের। সুচিত্রা স্কুলে, পিউ কলেজে। ছবি কাজ করে চলে গেছে। গেট খুলে ঢোকার মুখে কানে এলো ঘোষবাড়ির কুকুরটা আবার ঘেউ জুড়েছে।

জামাকাপড় বদলে স্নানে গেল জয়ন্ত। খাবার গুছিয়ে টেবিলে ঢেকে রেখে গেছে সুচি। জয়ন্ত খাওয়া সেরে দাঁতে কাঠি করতে করতে এলো বারান্দায়। ঘোষ বাড়ির কোনো শব্দ আর নেই। কুকুরের হাঁক ডাক নেই। মিতা ঘোষকেও আর দেখা যাচ্ছে না। জয়ন্ত কাগজটা পড়তে লাগলো। টিভিটা চালিয়ে দিল কিছুক্ষণ। খবরের চ্যানেলের উৎকট শব্দ আর ভালো লাগলো না।
ঘুমোতে যাবে রেডি হচ্ছে সে, ঠিক সেই সময় পিউ এসে হাজির হল কলেজ থেকে। সোফায় ব্যাগটা ছুঁড়ে দিয়ে বললে---বাবা, ছবি মাসি চলে গেছে?

---হুম্ম। সে তো আমি আসার আগেই কাজ করে পালিয়েছে।

পিউ জামা কাপড় না বদলেই সোফায় বসে পড়ল টিভির রিমোট নিয়ে। তারপর বলল---খিদে পেয়েছে!

জয়ন্ত সুচি না থাকলে ছেলে মেয়ের জন্য সামান্য টিফিন বানিয়ে দেওয়ার কাজটা কখনো কখনো করে দেয়। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল---কেন, সকালে ভাত খেয়ে যাসনি? নুডলস বানিয়ে দেব?

ব্যাজার মুখে তাকালো পিউ বাবার দিকে। জয়ন্ত বললে---তাহলে ডাবল ডিমের অমলেট?

---না...গররাজি হল মেয়ে।

---তাহলে কি খাবি? আমি তোর মায়ের মত আর কিছু রাঁধতে পারবো না।

পিউ বললে---মা আসুক। তারপর।

---তোর মা আসতে সেই চারটে। এতক্ষন না খেয়ে থাকবি?

কথা শেষ করতে না করতেই পিউ ফ্রিজ থেকে চকোলেটের বার বের করে কামড় দিতে দিতে বলল---ভাই পৌঁছে গেছে?

---হুম্ম। তোর মাকে ফোন করে জানিয়েছে।
***
[+] 9 users Like Henry's post
Like Reply
#53
অংশুর ঘুম ভাঙলো সন্ধের দিকে। ডালিয়া মাসি এসে বললে--চা খাস তো অংশু?

অংশু মাথা নাড়লো। চা দিয়ে গেল ডালিয়া মাসি। অংশু চায়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় এসে দাড়ালো। গাছ-গাছালি ঘেরা নির্জন এই জায়গাটা বিকেলে যেন আরো নিঃসঙ্গ হয়ে রয়েছে। অংশু চা শেষ করেই বেরিয়ে পড়ল দাদুর পৈতৃক এই দশ কাঠা জমির বসত বাড়ি দেখতে। জঙ্গলাকীর্ন বড় দীঘিটার আগে একটা ডোবা মত আছে সেটা কখনো দেখেনি অংশু। ঐ ডোবার ধারেই ঝোপঝাড় ভরা একটা দু' কামরার টালির চাল দেওয়া ঘর। বহুদিন কেউ থাকে না বোধ হয়।

অংশু ভাবলো এ জায়গা দিদা মারা যাবার পর কি হবে? অংশুর কোনো মামা নেই। আছে একমাত্র এক মাসি। সুচির ছোটোবোন সানন্দাকে সিনু মাসি বলেই ডাকে অংশু-পিউরা। মেসো আর্মির অফিসার ছিল। চল্লিশ বছরে রিটায়ার্ডমেন্টের পর সপরিবারে আমেরিকায় সেটল। ওখানেই মাসি থাকে। মাসির ছেলে পল্টু অংশুরই সমবয়সী। এই বাড়ির ওয়ারিশ বলতে মা আর সিনু মাসি। এত বিশাল এলাকা ঝোপ ঝাড়, গাছ গাছালি কে রক্ষনাবেক্ষন করবে?

অংশু জানে মা এখানে এসে থাকলে পরে খানিকটা হয়ত দেখাশোনা হবে। কিন্তু এতবড় বসত জমি মা কি একা পারবে? তাছাড়া অংশুর বাবা জয়ন্তের শ্বশুরের এই ভিটে মাটি নিয়ে আগ্রহ নেই।

অংশু দীঘির ধারে বসল খানিকক্ষণ। বেশ নিবিড় ঘন সবুজ শ্যাওলায় ঢেকেছে। পাখির কিচিরমিচির অনবরত লেগেই আছে।
অংশু ভাবলো আজ একবার গিয়ে দেখবে গোবিন্দপুর গ্রামটা। মায়ের ট্রান্সফার হওয়া ঐ আপার প্রাইমারি স্কুলটাও দেখে আসবে।

ডালিয়া মাসিকে বলে বেরোলো অংশু। বেরোনোর সময় ডালিয়া মাসি বললে---রাস্তা যদি ভুলে যাস, তবে লোককে জিজ্ঞেস করে নিস নিকুঞ্জ বাগচীর বাড়ি কোথা?

অংশু হাঁটা দিল। খানিক হেঁটেই বুঝল দাদুর বাড়িটা থেকে মূল গোবিন্দপুর গ্রাম অনেক দূরে। অন্তত দুই কিমি হবে। দাদুর বাড়ি ঠিকানাটা গোবিন্দপুর হলেও জাতীয় সড়কের গায়ে পিচ রাস্তা ধরেই খানিক নেমে বটতলা দিয়ে যে মোরাম গেছে, সেই মোরাম গিয়ে শেষ হয়েছে দাদুর বাড়িতে।

অংশু হাঁটতে হাঁটতে একটা মুদির দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারলো মূল গোবিন্দপুর গ্রাম এখানেই। দোকানে কেউ নেই। বাইরে কেবল একটা বেঞ্চ। সেখানে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছেন এক বয়স্ক বৈষ্ণব। গলায় তার তুলসী মালা দেখে তাই মনে হল অংশুর। এক মনে লোকটি জাল বুনে যাচ্ছে। অংশু দেখেছে গ্রামে গঞ্জে বয়সকালে বহু লোকে এই জাল বোনার কাজ করে। শহরে বয়স হলে লাফিং ক্লাব আর মর্নিং ওয়াকে গিয়ে দাদুরা গপ্প জুড়ে দেন। সেসব শুনতে অবশ্য খারাপ লাগে না অংশুর। তবে অনেকক্ষেত্রে এসব বুড়োদের আড্ডায় নতুনদের প্রতি তাচ্ছিল্য থাকে। যা অংশুর একদমে ভালো লাগে না।

অংশু লোকটিকে জিজ্ঞেস করল---গোবিন্দপুর আপার প্রাইমারী স্কুলটি কোথায় বলতে পারেন?

লোকটা মোটা মোটা কালো ফ্রেমের চশমা দিয়ে তাকালো। তারপর বললে---পেরাইমারী ইস্কুল। সামনেই আছে ইকটা।

---প্রাইমারি না আপার প্রাইমারি।

লোকটা বোধ হয় বুঝল না। অংশু আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে আরেকটি মাঝ বয়সী লোকের দেখা পেল। সেই লোকটিও প্রাইমারী স্কুলের কথা বললেও আপার প্রাইমারীটা ঠিক সমঝে উঠতে পারলো না।
অনেককেই অংশু তারপর জিজ্ঞেস করল। গোবিন্দপুর থেকে আরো দূরে খানাকুল হাইস্কুল পর্যন্ত ঠিকানা দিল লোকে, কিন্তু অংশু যা খুঁজছে তা কেউ বলতে পারল না।

আরো খানিকটা এগিয়ে গেল অংশু। গ্রামের রাস্তা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামছে। অংশু একটি বেঁটে মত লোকের খোঁজ পেল। এবারটা না খোঁজ পেলে সে ফিরে যাবে। কাল আবার না হয় খোঁজ করবে।
অংশু জিজ্ঞেস করল লোকটিকে---কাকু, গোবিন্দপুর আপার প্রাইমারি স্কুলটা কোথায় বলতে পারেন?

লোকটা অংশুকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে বললে---এখন তো ইস্কুল বন্ধ হয়ে গেছে বাবু।

---হ্যা। কিন্তু জানেন কি স্কুলটা কোথায়?

লোকটা বললে---আছে একটা আপার প্রাইমারী। ক্লাস টেন পর্যন্ত। তবে সে তো পিচ রাস্তার ধারে।

অংশু ধন্যবাদ দিল লোকটিকে। কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিল তক্ষুনি। পিচ রাস্তা দিয়েই তো সে এলো কই কোনো স্কুল দেখেনি তো।

ফিরে যাবার পথেই দাদুর বাড়ি যাবার পিচ রাস্তা। অন্ধকার হয়ে গেছে। জাতীয় সড়কে উঠে হাঁটা দিল অংশু। সাঁই সাঁই করে লরিগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে, মাঝে মধ্যে এক আধটা ছোট গাড়ি। তা নাহলে নির্জন। জাতীয় সড়ক থেকে ডান দিকে বড় পিচ রাস্তা। এই রাস্তা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে অংশুর জানা নেই। হয়ত গোবিন্দপুর গ্রামেও মিলতে পারে। তবে অংশুর দাদুর বাড়ি এই রাস্তার গায়ে ছোট মোরাম রাস্তা ধরে। যে মোরাম রাস্তায় শেষ কবে মোরাম পড়েছিল বোঝা যায় না। কারণ এই শ' মিটার খানেক রাস্তা শুধুমাত্র বাগচী বাড়িতে গিয়েই শেষ হয়েছে। কারোর ব্যবহারে লাগে না। তাই হয়ত এখানকার প্রশাসন গুরুত্ব দেয়নি।

মোরাম রাস্তার মুখে এসে বাড়ির দিকে যাওয়ার পথেই অংশু ভাবল উল্টো দিকটা দেখা হয়নি। হয়ত ওদিকেই স্কুলটা থাকতে পারে। ভাবতে না ভাবতেই পেছন থেকে একটা মোটর বাইকের আলো এসে থামালো। ঠিক যেন বাইকটা ঘাড়ের উপর উঠে পড়বে।
[+] 7 users Like Henry's post
Like Reply
#54
চমকে উঠল অংশু। পেছন ঘুরে দেখলে বাইক আরোহী ঐ বেঁটে লোকটা। বললে---দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? সামনেই স্কুল। আমিও যাচ্ছি ওদিকে, নামিয়ে দেব।

অংশু একটু ইতস্তত বোধ করছিল। জানা নেই শোনা নেই, একটা অপরিচিত লোকের এমন নির্জন গ্রাম্য রাস্তায় বাইকে ওঠাটা ঝুঁকি হবে না তো। পরক্ষণেই ভাবলো সে একটা ষোল-সতেরো বছরের ছেলে, ভয় কিসের তার। বাইকে উঠে বসল অংশু। লোকটা বলল---কার ঘরের ছেলে তুমি?

----নিকুঞ্জ বাগচী আমার দাদু।

---ও বাগচী বাড়ি? তাই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে?

---হ্যা।

লোকটা যেন হঠাৎ অংশুর প্রতি সম্মান বাড়িয়ে দিল। বললে---বাগচী বাড়িতে তো এখন কেউ থাকে না। তোমরা শহর থেকে এসেছ নাকি?

----থাকে তো, আমার দিদা।

লোকটা বিস্মিত হল। তারপর হেসে বলল---এ' রাস্তা দিয়ে যাতায়াত লোকে আজকাল কমই করে। আমিও তেমন একটা যাই না। গোবিন্দপুর যেতে এ রাস্তা অনেক সময় নেয়। এছাড়া রাস্তার অবস্থাও ভালো নয় দেখছ!

হ্যা ঠিকই। অংশু লক্ষ্য করল পিচ রাস্তা হলেও রাস্তা যত এগোচ্ছে তত তার ভাঙন। মোটরবাইকের আলোয় দেখা যায় উঠে যাওয়া পিচের মাঝে ঘাস জমে গেছে কোথাও কোথাও।

লোকটা বললে---নিকুঞ্জ বাগচীর কেউ হও যেন বললে?

---নাতি। স্বল্প কথায় উত্তর দিল অংশু।

লোকটা বলল---নিকুঞ্জ বাবুর তো দুই মেয়ে ছিলেন। ওরা তো চন্দননগরে থাকতো। তুমি কোন মেয়ের ছেলে।

---বড় মেয়ে...

---আচ্ছা আচ্ছা। ভারী ভালো মানুষ ছিলেন নিকুঞ্জ বাগচী। আমরা অবশ্য খুব ছোট বেলায় তার কাছে এসেছি। তিনি গ্রামে এলে আমাদের মা ঠাকুমারা শরীর খারাপ হলে তার কাছে নিয়ে যেতেন ওষুধ দিতে। কোনোদিন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে পয়সা নেননি।

অংশু বললে---আরো কতদূর?

---এই তো সামান্য।

বলেই লোকটি আবার কথা শুরু করল। বললে---তোমার দাদু এত বড় বাড়ি, বাস্তু রেখে গেছেন। আজ আর কেউ দেখাশোনার নেই। আমরাও বহুদিন এ রাস্তায় আসি না বলে কেউ আসছে কিংবা থাকছে কিনা জানি না। ভালো লাগলো তোমরা এসেছ শুনে।
স্কুলটার সামনে নামিয়ে দিল লোকটা। চলে যাবার সময় লোকটাকে আবার ধন্যবাদ দিল অংশু। লোকটা অংশুর দু' হাত চেপে ধরল। বললে---তুমি আমার ছেলের বয়সী হলেও, তুমি বাগচী বাড়ির ছেলে। ধন্যবাদ দেবার দরকার নেই।

দোতলা স্কুল। দুই তলা মিলিয়ে গোটা পনেরো রুম হবে। আপার প্রাইমারী স্কুলগুলি যে হাইস্কুলের মত বড় হয় না তা জানে অংশু। বালিগঞ্জে মায়ের স্কুলটা দেখেছে অংশু। সেও খুব বড় নয়। অংশু দেখল এলাকায় আশেপাশে একটি মুদির দোকান ছাড়া কিছু নেই। অংশুকে এমন অন্ধকারে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দোকানি লোকটি বেরিয়ে এলো। এ লোকের গলাতেও তুলসী মালা। নিশ্চই এখানে কোথাও বৈষ্ণবদের গ্রাম আছে।

লোকটি কর্কশ গলায় বললের---কি হে ছোকরা? অন্ধকারে কি করছ?

অংশু হেসে বললে---এই স্কুলটা দেখছি। আসলে আমার মায়ের এখানে ট্রান্সফার হয়েছে, তাই দেখতে এলাম। স্কুলটা কেমন?

লোকটা বললে---আচ্ছা আচ্ছা। এই স্কুলে? ছাত্র-ছাত্রী তো মাত্র একশ জনেরও কম হবে, দু'জন সার। চলবে কি করে? এখানেও সরকার নতুন মাস্টার পাঠাচ্ছে নাকি? বেশ বেশ।

অংশু অবাক হল। সে যদিও মা-বাবার আলোচনায় শুনেছে আপার প্রাইমারী স্কুলগুলির অবস্থা এখন ভীষন খারাপ। তবুও মায়ের বালিগঞ্জের স্কুলে তো পাঁচ শ'এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী আছে।

লোকটা বলল---একজন আছে বয়স্ক মাস্টারমশাই। অনেক দূর থেকে আসেন। তিনিই হেড স্যার, আরেকজন আছে সেও খানাকুলের লোক। একসময় স্কুলটা ভালো চলত বৈকি। এখন গেরামের লোক বাচ্চাকাচ্চাকে নস্করপুরের হাইস্কুলে পাঠায়। এ' ইস্কুল চলছে পঞ্চাশটা বাচ্চা লিয়ে আরকি।

মনে মনে অংশু ভাবলো ভালোই হল, মায়ের কাজের চাপ এখানে কম। এখন দিদাকে সময় দেওয়াটা খুব জরুরী। এই স্কুলে থাকলে মা দিদার কাছে সারাক্ষণ থাকতে পারবে।

অংশু বলল---স্কুল কতক্ষন হয়?

লোকটা তাচ্ছিল্য করে বলল---কি আর হয়? এগারোটায় শুরু হয়ে তিনটায় ছুটি হয়ে যায় আর কি।

লোকটা বোধ হয় দোকানটা বন্ধ করতে চলেছে। অংশু জার থেকে দশটা চুইংগাম নিয়ে দশটাকা দিল লোকটাকে। লোকটা বললে---এখানে এসেছ কার বাড়িতে ছোকরা?

বাগচী বাড়ি তথা অংশুর দাদু নিকুঞ্জবিহারী বাগচীর যে এখানে বেশ সম্মান আছে আগেই বুঝেছে অংশু, তাই সে বুক চিতিয়ে বললে--আমি নিকুঞ্জ বাগচীর নাতি।

লোকটা হাঁ করে তাকিয়ে রইল অংশুর দিকে। বললে---কই ডালিয়া তো কিছু বলল না? সে তো একটু আগেই এসেছিল তেল মশলা কিনতে। তুমি তাহলে নিকুঞ্জ ডাক্তারের নাতি?

---হ্যা।

বুড়ো লোকটা তখন থেকে যেভাবে কর্কশ কন্ঠে কথা বলছিল এখন যেন মোমের মত গলে গেল। বলল---বাগচী বাড়িতে আগে বিশাল দুগ্গা পূজা হত। দু' গেরামের লোক খাওয়াতো। সেসব দিন চলে গেছে। তার মানে তোমার মা মানে নিকুঞ্জ ডাক্তারের মেয়ে এই ইস্কুলের দিদিমণি হয়ে আসছে?

---হ্যা।

---সে ছোটবেলায় দেখেছি তাকে। বাঃ বাঃ। যাও বাবা অন্ধকার হয়ে গেছে। এ' রাস্তায় তো লোক চলাচল হয় না। সাপ খোপের আড্ডা আছে।
***
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply
#55
জয়ন্তের ঘুম ভাঙল মা-মেয়ের চেঁচামেচিতে। হাউসকোট পরা সুচিত্রা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে বলল----তুমি ঘুমাচ্ছ! তোমার মেয়েকে দেখো, ভর সন্ধেবেলা সেজেগুজে কোথায় চলেছে!

জয়ন্ত ঘুম ভাঙা চোখে বালিশের তলা থেকে চশমাটা খুঁজে চোখে আটকে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। জিন্স আর টপ পরে পিউ তখন ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছে। জয়ন্ত কড়া গলায় বললে---কোথায় যাচ্ছিস রে?

---বাবা, আজ শিল্পার জন্মদিন। না গেলে খুব রাগারাগি করবে।

---কে শিল্পা? জয়ন্ত প্রশ্ন করল।

সুচি বললে---কে আবার, তোমার ঐ বন্ধু পুলিশে আছে...রজতাভর মেয়ে।

রজতাভ মল্লিক জয়ন্তের বন্ধু বলার চেয়ে বলা ভালো পেশেন্ট। সেই সূত্রে পরিচয়। ওর মেয়ে শিল্পা পিউর ক্লাসমেট। জয়ন্ত এবার সুচিত্রার দিকে তাকিয়ে বললে---আঃ, সুচি, যাক না মেয়ে বড় হয়েছে...।

---বড় হয়েছে বলেই তো চিন্তা। ছেলে-মেয়ে দুটো বড়ই খালি হয়েছে, বুদ্ধিশুদ্ধি বাড়েনি। ঝাঁঝিয়ে উঠল সুচি।

জয়ন্ত হেসে বলে---বুদ্ধিশুদ্ধি বাড়েনি বলছ মানে? আমাদের ছেলে মেয়ে দুটো পড়াশোনায় কম কে?

---পড়াশোনায় ভালো হলেই শুধু হয় না। আজকালকার দিনে চতুরও হতে হয়। তোমার কি? সংসারের সব দায় তো আমার।

পিউ আড়াল হতেই সুচির কাঁধে মুখ নামিয়ে জয়ন্ত বললে---আচ্ছা আচ্ছা রনচন্ডী দেবী, এবার চুপ করো। আমি রজতাভকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। ও' যেন অনুষ্ঠান শেষে পিউকে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে।
***

অংশু বাড়ি ঢুকতেই ডালিয়া মাসি বললে---কোথায় গিয়েছিলি? আমি দুশ্চিন্তা করছি এতক্ষন! তোর মা যদি এখুনি ফোন করত কি জবাব দিতাম?

অংশু বলল---ঘুরে এলাম এলকাটা। মায়ের নতুন স্কুলটাও দেখে এলাম।

----ওমা! সে স্কুল তো সামনে। সে আবার দেখতে যাবার কি দরকার?

---সে তো গিয়েই বুঝলুম। হোক, ডালিয়া মাসি কিছু খেতে দাও দেখি।

ডালিয়া মাসি গরম পেঁয়াজি ভেজেছে। সঙ্গে মুড়ি, ছোলা আর চানাচুর তেল মেখে খেতে খারাপ লাগলো না অংশুর।
অংশুরা শহরে জলখাবারে একেবারেই মুড়ি খায় না। কিন্তু গ্রামীন মানুষ যে মুড়িটাকেই আজও প্রেফার করে, সেটা অংশু জানে।

এর মাঝে একবার বাড়িতে ফোন করতে হবে। ঠিক তক্ষুনি ডালিয়া মাসি দাদুর বাড়ির বড় রান্না ঘর থেকে বললে---অংশু, টেলিফোনটা বাজছে। দেখ, তোর মা ফোন করেছে হয়ত।
***

পিউ যাবার পর জয়ন্ত টিভির চ্যানেল বদলে বদলে দেখছিল। ল্যান্ড ফোনটা বেজে উঠতেই রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সুচিত্রা। ফোনটা ধরে কার সাথে কথা বলছে বুঝতে পারছে না জয়ন্ত। প্রথমে ভাবলো অংশুর সাথে কথা বলছে হয়ত। কিন্তু এখুনি তো ছেলের সাথে কথা হল। এটুকু বোঝা যাচ্ছে কারোর শরীর খারাপ নিয়ে কথা হচ্ছে।

টেলিফোনটা রেখেই সুচি বললে---ঘোষ দা'র বোধ হয় প্রেসার ফল করেছে। মিতা ফোন করছিল, যাও না গো একটু।

মিতার বাড়ি যেতে হবে, কেমন একটা অনুভূতি হল জয়ন্তের। মিতার স্বামী অসুস্থ, এর চেয়ে মিতার কাছাকাছি যাবার সুযোগ যেন জয়ন্তকে শিহরিত করছে। অবশ্য উনপঞ্চাশ বছরের একজন ডাক্তার সে, তার তরুণের মত আবেগ দেখানো চলে না।

সে ট্রাউজারের উপর জামাটা চাপিয়ে নিল। স্টেথো, প্রেসার মাপার যন্ত্র সহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল।

ঘোষ বাড়ির কলিং বাজাতেই সবার প্রথম বাজখাঁই শব্দে তেড়ে এলো জার্মান শেপার্ড কুকুরটা। পেছনে ওর চেন ধরে সামলাতে ব্যাস্ত মিতা।

---টনি...টনি... সাইলেন্ট...টনি...

কুকুরটা মিইয়ে গেল। জয়ন্ত ঢুকতেই আবার একবার সে তেড়ে আসার চেষ্টা করল বটে, কিন্তু মিতার অনুশাসনে সে পুনরায় মিইয়ে গেছে।
মিতার মুখে মৃদু সৌজন্যতার হাসি। সে বলল---আসুন।
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply
#56
সিঁড়ি দিয়ে উঠছে জয়ন্ত। মিতার পিছু পিছু। মিতা আজও শাড়ি পরেছে, আজ শাড়ির রঙ মেরুন। জয়ন্তের চোখ অনুসরণ করছে মিতার নিতম্বদেশ। উদ্ধত নিতম্বে হাঁটার সাথে এক অপরূপ ছন্দ আছে।
জয়ন্ত দোতলার যে ঘরে ঢুকল সে ঘরে নানা বাদ্য যন্ত্র ঠাসা। বোঝা গেল নির্মল ঘোষ আসলেই একজন সঙ্গীতশিল্পী মানুষ। ঘোষ বাবু শুয়ে আছেন ইজি চেয়ারে। তার কোমরের নীচের অংশ অসাড়। হাত জোড় করে নমস্কার করলেন তিনি।
জয়ন্তও নমস্কার করল। বললে---কেমন আছেন?

নির্মল ঘোষের বয়সটা যেন জয়ন্তের চেয়েও বেশি বলে মনে হল জয়ন্তের। কাঁপা কাঁপা গলায় বললে---ভালো নেই।

---কেন ভালো নেই? ওষুধ খাচ্ছেন ঠিক করে?

স্টেথো বুকে বসাতে বসাতে জিজ্ঞেস করল জয়ন্ত। একে একে সে প্রেসার, হার্টবিট সব চেক করল। রোগী দেখার সময় ডাক্তার জয়ন্তের খেয়াল নেই তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মায়াবী রমণী মিতা।
মিতা বললে---চা করে আনি?

---চা। নাঃ। এইতো বাড়িতে খেয়ে এলুম।

---কেন সুচিত্রা বৌদির হাতের চা ছাড়া আর কারোর হাতের চা খাবেন না ঠিক করেছেন নাকি?

জয়ন্ত হাসলো সামান্য। সাদা কাগজে কয়েকখানি ঔষধ লিখে দিল সে। নির্মল ঘোষকে বলল---চিন্তার কিছু নেই, তেমন কিছু না। সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিছুক্ষন পরেই মিতা এসে বলল---পাশের ঘরে আসুন। ওখানে চা দিয়েছি।

মিতা তাকে নিভৃতে আহ্বান করছে। জয়ন্ত জানে রাস্তার ওপারেই তার নিজের স্ত্রী রান্না ঘরে। এই সামান্য দূরত্বটুকু অতিক্রম করে তার কি পরস্ত্রীর সাথে গল্প করা চলে।

মিতা তখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে। জয়ন্ত চায়ে চুমুক দিয়ে বললে---বেশ ভালো?

---কি?

----আপনার হাতের চা।

মিতা হাসলো। বলল---কেমন দেখলেন।

জয়ন্ত তাকালো মিতার দিকে। ভরাট মুখে টানাটানা চোখ, পরিণত দেহের সর্বত্র প্রয়োজন মত মাংস। কোমরে হালকা মেদের ভাঁজ, যা সুচিরও আছে। কিন্তু সুচি এই নারীর কাছে বুড়িয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়ানো এক চিমসে নারী। আঁচলের আড়ালেও মিতার ভারী স্তন জোড়া টের পাওয়া যায়। জয়ন্ত বলল----ভালোই। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ওষুধ দিয়েছি...সময় মত খাওয়াবেন।

জয়ন্ত দেখল মিতা যেন আনমনা হয়ে কিছু ভাবছে। জয়ন্ত ঘরের এদিক ওদিক তাকালো। এ' ঘরেও নানা বাদ্যযন্ত্র। জয়ন্ত বলল---আপনিও সঙ্গীতের সাধিকা?

মিতা হাসলো। বলল---না, এসব আমার স্বামী বাজাতেন।

জয়ন্ত চা শেষ করল। উঠে যাবার জন্য রেডি হল। চায়ের কাপ নিয়ে গেল মিতা। জয়ন্ত মিতাদের দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ঠিক যে জায়গাতেই মিতা দাঁড়িয়ে থাকে। জয়ন্ত নিজে মেপে নিল সে ঠিক উল্টো দিকে কোন জায়গায় দাঁড়ায়।

---কি দেখছেন?

চমকে উঠল জয়ন্ত। মৃদু সামাল দিয়ে বলল---দেখছি আপনাকে ঠিক কোন জায়গা থেকে দেখা যায়।

----আপনি বুঝি আমাকে দেখেন।

হঠাৎ করে এত সাহসী বাক্য বিনিময় হয়ে যাবে ওরা বোধ হয় দু'জনের কেউই বুঝতে পারেনি। জয়ন্তের অনুভূতিগুলো এখন তারুণ্যের মত। সে বললে---শুধু কি আপনার স্বামীকে দেখতে সিঁড়ি ভেঙে এলাম তাহলে?

মিতা আচমকা জয়ন্তের নাগালে উঠে এসে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল জয়ন্তের ঠোঁটে। চুম্বন আকস্মিক হলেও এটাই যেন এই মুহূর্তের ভবিতব্য ছিল। মিতা সুচির মত খাটো নয়, ফলত জয়ন্তের অসুবিধা হচ্ছে না। মিতাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে সেও তখন মিতার সিক্ত ঠোঁটের স্বাদ গ্রহণ করছে। এই বিশেষ মুহূর্তে তারা সরে এলো ঘরের মধ্যে। চুম্বন থামতেই মিতা বললে---আপনি এখন আসুন।

জয়ন্তের কোনো জোরাজুরি নেই। সে তার ব্যাগটা তুলে নিল। সিঁড়ির কাছে এগিয়ে দিল মিতা। জয়ন্ত পেছন ঘুরে দেখল মিতার টানাটানা চোখে জলের আস্তরণ। হয়ত জয়ন্ত চলে গেলেই সে চোখে বাঁধ ভেঙে বন্যা নামবে। জয়ন্ত পুনরায় মিতার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, কপালে চুমু খেল তার। এটুকু অনুভূতি প্রাপ্য ছিল মিতার।
***
[+] 12 users Like Henry's post
Like Reply
#57
রাতের রান্নায় ডালিয়া মাছ ভেজে দিয়েছে। সেই সাথে সামান্য সবজি। অংশু তখন দিদার সাথে গল্পে মত্ত। বৃদ্ধা মানসী দেবী তখন অংশুকে শোনাচ্ছে এ বাড়িতে দুর্গাপূজার ইতিহাস, তার শ্বশুরের গল্প, আরো অনেক।

ডালিয়া বললে---অংশু, চল বাবা, খেয়ে নে। রাত হল যে।

অংশু খেতে বসল টেবিলে। পুরোনো দিনের কাঠের টেবিল। অংশুদের বাড়ির স্টেইনলেস স্টিল আর কাচের সৌখিন ডাইনিং টেবিল নয়।

খাবার সময় ডালিয়া বললে---তোর মা এলে আমি নিশ্চিন্ত হব।

অংশু মজা করে বলল---কেন গো ডালিয়া মাসি। মা এলে বুঝি তুমি ছুটি কাটাতে কাশ্মীর চলে যাবে?

----না রে, আমার খুড়তুতো দাদার দিল্লিতে বড়ো ব্যবসা আছে, ওর বউ বাঙালি না। সেও ব্যবসার কাজে হাত লাগায়। বাচ্চা কাচ্চার দেখাশোনার জন্য দাদা প্রায়ই বলে এখানে চলে আয়, আরামে থাকবি, বাচ্চাগুলোর দেখাশোনা করবি।

---তাহলে তুমি মায়ের ঘাড়ে সব চাপিয়ে পালাবে?

---পালাবো না? শুধু মামীর জন্য আমাকে পড়ে থাকতে হচ্ছে। আমার আর কে কোথায় আছে বল? সুচি দি বা সিনু কেউই তো এদ্দিন খোঁজ খবর নিল না এ' বাড়ির। আমি আছি বলেই না এত বড় বাড়ি, বাস্তু সব রক্ষা পেয়েছে।

কথাটা অবশ্য ঠিক, অংশু মনে মনে ভাবল। মা-বাবা কিংবা মাসি-মেসো কাউকেই এ' বাড়ি নিয়ে আগ্রহী দেখেনি সে। মাসি-মেসো যে কোনোদিন এ' বাড়িতে আসবে না সে কথা অংশুও জানে।

ডালিয়া বলল----তোকে আরেকটু ভাত দিই?

---না না, থাক। রাতে কম খাই।
***

জয়ন্ত খাবার টেবিলে বসে রয়েছে। মুখোমুখি সুচিত্রা। পিউ বন্ধুর বাড়িতে ডিনার করে এসেছে। ও' নিজের ঘরে ব্যস্ত। সুচি বলল---কেমন দেখলে ঘোষ দা'কে?

অন্যমনস্ক ছিল জয়ন্ত। সুচি পুনরায় বললে---কি গো?

জয়ন্ত মাছ চিবোতে চিবোতে বলল---কি?

---কেমন দেখলে ঘোষ দা'কে?

সুচিত্রার দিকে তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছে জয়ন্তের। এ' এক পাপবোধ নাকি মনস্তাত্বিক আলোড়ন সে বুঝতে পারছে না। বলল---তেমন কিছু না। প্যারালাইসিস রোগী, প্রেসার কখনো বাড়ে, কখনো ফল করে। ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।

সুচিত্রা বিড়বিড় করে বলল---বেচারা মিতা। মেয়েটা খুব ভালো জানো। বিয়ে করেছিল বাড়ির অমতে নিজের গানের শিক্ষককে। ঘোষ দা'র বয়স ওর চেয়ে ঢের বেশি।

সুচির কথাগুলি কানে যাচ্ছিল জয়ন্তের। কিন্তু সে নির্বিকার ছিল। সে জানে মিতাকে সে জয় করতে পেরেছে। কিন্তু সে দুই সন্তানের পিতা, একজন প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। এই বয়সে এসে মিতার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার আকাঙ্খা যা কিছু তার আছে, সবটাই খুব সাংঘাতিক।

সুচিত্রার আগেই জয়ন্তের খাওয়া হয়ে গেল। সুচি লক্ষ্য করল তার স্বামী আজ খুব বেশি খেল না। জয়ন্ত ডিম আলোয় শুয়ে রয়েছে একা। নতুন উদ্দীপনা যেমন আছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণের মত, তেমনই দ্বিধা। সুচিকে ঠকানো। সুচি বনেদী রক্ষণশীল বাড়ির মেয়ে। মাত্র ক্লাস নাইনে পড়বার সময়ই জেনে যায় তার বাবার বন্ধুর ছেলে ডাক্তারির ছাত্র জয়ন্ত দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে ঠিক করা আছে। তারপর জয়ন্ত আর সুচির চিঠি লেখা, প্রেম বিনিময় হয়েছে সুদীর্ঘ সময়। সুচির জীবনে যে সে ছাড়া আর কোনোদিন কেউ ছিল না জয়ন্ত জানে। কিন্তু জয়ন্তের জীবনে বারবার নারী এসেছে। সুচির সাথে যখন তার প্রেম গভীর, তখন মেডিক্যাল কলেজে তার সহপাঠীনি রূপসা বলে একটি মেয়ের সাথে কিছুদিন ক্যাজুয়াল প্রেম চলেছিল তার। সুচিত্রা অবশ্য তা জানে। কিন্তু এখন সে বিবাহিত। একুশ বছর তার দাম্পত্য জীবন কেটেছে। তার দুটি বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে-মেয়ে আছে। অথচ উনপঞ্চাশ বছর বয়সে এসে এই রোমাঞ্চ সে ত্যাগ করতে পারছে না কেন?

এখনো রান্না ঘরে ঠুংঠাং শব্দ। সুচি কাজে ব্যস্ত। জয়ন্ত পঞ্চাশ ছুঁও বয়সেও সুদর্শন, সামান্য চুল পাতলা হয়েছে তার যদিও। পেটের কাছে মেদও হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার জয়ন্ত দাশগুপ্ত যে সুদর্শন মানুষ এ' কথা সকলেই বলেন। জয়ন্ত এর আগে এই বিষয়টাতে কখনো গর্ববোধ করেনি। কিন্তু আজ মনে হল যদি তার পৌরুষ এখনো আকর্ষণ করে নারীকে, তবে জীবনে একটু রোমাঞ্চ অন্যায় কি। সুচিত্রা বুড়িয়ে যাচ্ছে, তার সেই সক্ষমতা না থাকলে জয়ন্ত কেন তার সক্ষমতাকে জলাঞ্জলি দেবে।
***
[+] 11 users Like Henry's post
Like Reply
#58
অংশু শুয়ে শুয়ে আছে অনেকক্ষন। ঘুম আসছে না তার। এ' ঘরে যে ঘড়িটা আছে সেটা বন্ধ। নিজের হাতঘড়িটা দেখল অংশু; সাড়ে দশটা। কলকাতা শহরে এ'সময় ঘুমায় না কেউ। উঠে বসল সে। 

বইয়ের থাক জুড়ে বেশিরভাগ মায়ের কলেজের অনার্সের বই। কিছ বই ঝুমুর মাসিরও। অংশু বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো, যদি কোনো গল্পের বই পায়। একটি থাকে তার নজরে এলো গচ্ছিত করে রাখা রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমের বই। বেশিরভাগ সব বাংলা ধ্রুপদী যুগের সাহিত্য। এসব অংশুর একদমই পড়তে ভালো লাগে না। একটা বই অবশ্য আছে শরদিন্দুর ব্যোমকেশ সমগ্র। অংশু বইটা টানতে যেতেই হুড়মুড়িয়ে পড়ল একগুচ্ছ কাগজের তাড়া। 

সে কাগজগুলি সযত্নে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারলো এগুলি কারোর লেখা চিঠি। চিঠি মানে পোস্টকার্ড নয়। চিরকুটে লেখা চিঠির কাগজ পুরোনো হতে হতে হলদে হয়ে গেছে। চিঠিগুলি সব মিলিয়ে গোটা পঞ্চাশেক তো হবেই। একটা পিন আপ করে কেউ যেন সযত্নে গুছিয়ে রেখেছে। অংশু চিঠির হাতের অক্ষর দেখে হেসে ফেলল। এই হাতের লেখা আর কারো নয়, তার বাবার। প্রেম করার সময় তার বাবার মাকে লেখা চিঠি সমগ্র। 
বাবার বাংলা হাতের লেখা অংশু খুবই কম দেখেছে। চিঠিতে আবার বাবা কোথাও কোথাও কবিতার পংক্তি রেখেছে সন্তর্পনে। যার বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রনাথেরই। বেশ কিছু রোমান্টিক শব্দ চয়ন করেছে বাবা। অংশুর হাসি পাচ্ছিল। 

ব্যাঘাত ঘটিয়ে ডালিয়া মাসি জলের গেলাস এনে বললে---অংশু, ভাত খাবার পর জল খেলি না তো.. তোর মা আমাকে পই পই করে বলে দিয়েছে, তোর নাকি জল কম খাওয়ায় অভ্যাস আছে। তাই সুচি দি বলেই দিয়েছে তোকে সময় মত জল দিয়ে যেতে। 

হাসলো অংশু। বলল---মায়ের এই এক স্বভাব। বাড়িতে সর্বক্ষণ জল খেয়েছি কিনা এই নিয়ে বিরক্ত করা। 

জলটা খেয়ে নিয়ে সে গেলাস ফেরত দিল। বলল---ডালিয়া মাসি, এই সব বই কি মায়ের?

----তোর মায়েরও আছে। ঝুমুর দি'রও আছে। তবে ঝুমুর দি তো পড়ালেখা বেশি করেনি। তার বই কম, তোর মায়েরই বেশি। আমি সেভেন কেলাস পর্যন্ত পড়েছি। এত বই টই বুঝি না। 

অংশু বললে---ঝুমুর মাসি শুনেছি মায়ের খুব কাছের ছিল।

---ছিল মানে। একেবারে পিঠোপিঠি। সুচি দি শহরের পড়ালেখা করা মেয়ে বলে কখনো কোনো নাক উঁচু ভাব ছিল না। ঝুমুর দি'র জন্য এটা ওটা কত কি আনত। বদলে সুচি দি কে আঁচল ভরে তেঁতুল, আম খাওয়াত ঝুমুর দি। আমি আর সিনু তো তখন ছোট, তাই ওদের পিছু নিতাম।

ডালিয়া চলে যাবার পর চিঠিগুলি যেখানে ছিল সেখানেই রেখে দিল অংশু। ভাবলো বাড়ি ফিরলে চিঠিগুলি নিয়ে দিদিকে দেখাবে। তখন ভাই-বোন মিলে মজা করবে বাবা-মায়ের সাথে। 

ব্যোমকেশ সমগ্রটা খানিক অংশ উই পোকায় কেটেছে। মায়ের যত্ন থাকলে বইগুলোর হাল এমন হত না। অংশু বইটা এনে বিছানায় শুয়ে পড়ল। দু' পাতা পড়তে পড়তে পড়তে চোখে ঘুম এলো তার। বুকের ওপর থেকে বইটা নামিয়ে রাখতে গিয়েই বইয়ের ভেতর থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ পড়ল মেঝেতে। 

অংশু কাগজের ভাঁজটা তুলে খুলে ফেলে প্রথমে ভেবেছিল কোনো শিশুর হাতের লেখায় হিজিবিজি শব্দ। পরে পড়ে বুঝতে পারলো এ'ও একখান চিঠি। চিঠিটা লেখা হয়েছে 'ঝুমরি'কে। ঝুমরি যে ঝুমুর মাসি, সেটা বুঝতে অংশুর সমস্যা হল না। কে লিখেছে তার নামের উল্লেখ নেই। বোধ হয় প্রেমিক ধরা পড়ার ভয়ে নাম লেখেনি। তবে হাতের লেখা বড্ড বিশ্রী, অজস্র বানান ভুল, দীর্ঘ ই-হ্রস্ব ই'য়ের বড্ড গোলযোগ। চিঠিটার বিষয়বস্তু স্পষ্ট। এ' এক প্রেমপত্র:

ঝুমরি, 
আমি যে তোকে ভালোবাসি তুই সেটা জানিস। তাহলে কেন আজ এলি না। আমি কি দোষ করেছি? 

ব্যাস, এতটুকুই লেখা। তবে এইটুকু লিখতে গিয়ে প্রেমিককে বড্ড বেগ পেতে হয়েছে। একাধিক বানানের ভুল ও মাত্রাছাড়া লেখা। অংশু বুঝতে পারছে এই প্রেমিক নেহাতই কোনো প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি না পেরোনো ব্যক্তি। 
[+] 10 users Like Henry's post
Like Reply
#59
ব্যাস, এতটুকুই লেখা। তবে এইটুকু লিখতে গিয়ে প্রেমিককে বড্ড বেগ পেতে হয়েছে। একাধিক বানানের ভুল ও মাত্রাছাড়া লেখা। অংশু বুঝতে পারছে এই প্রেমিক নেহাতই কোনো প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি না পেরোনো ব্যক্তি।  

ঝুমুর মাসির প্রেমিকের চিঠি। অন্যের চিঠি না পড়াই ভালো। তাই চিঠিটা যেমন ছিল বইয়ের মধ্যে রেখে দিল সে। বইটা যেমন ছিল সে জায়গায় রাখতে গিয়ে দেখল, এমন ভাঁজ করা অনেক কাগজ রয়েছে। এখানে এমনভাবে রয়েছে যেন ঝুমুর মাসি কাগজগুলি লুকাতে চেয়েছে। 

অংশু অনুসন্ধিৎসায় কাগজের ভাঁজগুলি টেনে আনলো ওখান থেকে। পরের চিঠিটা পড়ে চমকে উঠল অংশু। চিঠিতে লেখা:
 
ঝুমরি, 
আমরা যখন দুজনেই ভালোবাসি কেউ বাধা হতে পারবে না। সে আমার বাপও না। তুই যদি পালাতে রাজি না হোস, আমি খুন করে ফেলব নিজেকে।

এই চিঠিতেও সেই ভাঙা ভাঙা হাতের লেখা। অজস্র বানান ভুল। কিন্তু চিঠির বিষয়বস্তু প্রমান করে যে ঝুমুর মাসির প্রেমিক এক তীব্র প্রেমে উন্মাদ। চিঠির ছত্রে ছত্রে সেই আস্ফালনের ছাপ। অংশু আজকালকার দিনের ছেলে, তার বড্ড হাসি পাচ্ছে চিঠিগুলি পড়ে। তাদের ক্লাসে অর্পিতা বলে একটি মেয়েকে এমনই উন্মাদ প্রেমের চিঠি লিখে বসে একটি ছেলে। পরে জানা যায় সেই চিঠি লিখেছে তাদেরই জুনিয়র এক মোটা মত ছেলে। তাকে নিয়ে সেসময় হাসি ঠাট্টা কম ছিল না। 

অংশু পরের চিঠিটি খুলতেই দেখল এই চিঠি খানিক বড়। আর তাতে প্রেমিককে লিখতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বানানের দফারফা এখানেও। তবে চিঠির বিষয়বস্তু বড্ড অশ্লীল। এখানে চিঠিতে ঝুমুর মাসিকে ঝুমরি নয়, 'ঝুমরি মাগী' র মত অশ্লীল সম্বোধন করেছে প্রেমিক। হ্যা অংশু ঠিকই দেখছে। চিঠিটি এরকম: 

ঝুমরি মাগী, 
শালী, তোকে এত ভালোবাসি, তুই জানিস না? কেন প্রতিবাদ করে পালিয়ে আসতে পারলি না খানকি? কত স্বপ্ন দেখেছিলাম তোকে নিয়ে মাগী কলকাতা চলে যাবো। ঘর বাঁধবো। কারখানায় কাজ নিয়েছি। আমি না হয় গরীব। বাগচী বাড়ির মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে কেন। কিন্তু ঝুমরি, তুই তো বলেছিলি গরীবের বউ হবি। বিশ্বাস কর ঝুমরি, কত স্বপ্ন, একটা ছোট ঘর হোক আমার। তুই আমি আর আমাদের একগাদা বাচ্চা, সব শেষ করে দিলি খানকি মাগী। বড়লোক বাড়ির মেয়ে তুই, তোকে বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে আমার। আমি চললাম, আর ফিরব না। তোর দুদুতে যে সেদিন কামড়ে দাগ করেছি, সেটাই আমার সারাজীবনের জন্য তোর কাছে স্মৃতি চিহ্ন। সারাজীবন তুই সেটা বয়ে বেড়াবি।

কি অশ্লীল ভাষা! বানানের পর বানান ভুল, লোকটা যে পাগল প্রেমিক শুধু নয়, পারভার্টও বুঝতে পারছে অংশু। কিন্ত এতক্ষন যেটা অংশু মনে করেছিল ওয়ান সাইডেড লাভ। সেটা নয়। ঝুমুর মাসিও এই পাগল প্রেমিককে ভালো বাসতো তবে। 

পরের চিঠিটা অন্যরকম। এ' চিঠি আগে পড়লে ভালো হত। তখন বোধ হত প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের মোড় খারাপ দিকে যায়নি। এ চিঠির সারবত্তা এরকম: 

ঝুমরি,
আমি কাউকে ভয় পাই না। যেদিন তুই প্রথম বলছিলি তুইও ভালোবাসিস, আল্লার কসম সেদিন থেকে আমি আর কাউকে ভয় পাই না। দেখ ঝুমরি, আমার ভালোবাসার জন্য আমি সব করতে পারি। আমরা দুজনে পালিয়ে দূরে চলে যাবো। তাড়াতাড়ি জানা। 

এই চিঠিতেও পালানোর প্রস্তাব। ঝুমুর মাসির মেজাজী প্রেমিক যেন বড্ড হঠকারী। প্রেমিকের হাতের অক্ষর, বানানের ছিরি দেখা বোঝা যায় প্রেমিক প্রাথমিকের গন্ডি পেরোয়নি। মায়ের কাছে শোনা ঝুমুর মাসি নাকি টেন পর্যন্ত পড়ে আর লেখা পড়া করেনি। ঝুমুর মাসির বাবা, মানে মায়ের ঐ দূর সম্পর্কের পিসিমশাই নাকি দুই মেয়ে হবার পর স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে পালান। তখন থেকেই নাকি দাদুই আশ্রয় দিয়েছিল ঝুমুর মাসীদের। তা হলে কেন এত বাধা ছিল দুজনের জীবনে? অবশ্য অংশু ভাবলে তখনকার দিনে অবশ্য প্রেম-ভালোবাসায় একটা পারিবারিক আপত্তি থাকতো। 

'আল্লার কসম' শব্দটা এড়িয়ে গেছিল অংশু। হঠাৎ করে তার মনে দানা বাঁধলো, ঝুমুর মাসির এই প্রেমিক কি ছিল কোনো মু-সলিম যুবক? সেজন্যই কি তাদের প্রেমে এত বাধা ছিল! একটা সিমপ্যাথি তৈরি হল ঝুমুর মাসি আর তার প্রেমিকের জন্য। যাইহোক না কেন, তারা একে অপরকে ভালোবাসতো। বহু প্রতিবন্ধকতায় তাদের প্রেম দানা বাঁধেনি। আর ঝুমুর মাসিই অকালে চলে গেল একদিন। 
 
গফুর দা, 

আমার চিঠির উত্তর দাও সোনা। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তার জন্য কোনো বাধা, বিপত্তি, প্রভেদ মানিনি। আমি শুধু জানি আমার গফুরের কাছেই আমি মুক্ত পাখি হতে পারি। গফুর দা, তুমি কি তোমার ঝুমরিকে সেই মুক্ত পাখি হতে দেবে না? আমি আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না তোমাকে ছাড়া সোনা। নিয়ে চলো আমাকে তুমি, তোমার সংসারে। গফুর দা, লক্ষ্মী সোনা আমার, রাগ করো না। রাগ হলে তুমি সেদিনের মত না হয় আবার মেরো আমাকে। তোমার অধিকার আছে আমাকে মারধর করার। তবু আমার ওপর বিশ্বাস হারিয়ো না সোনা।জানি না আলি চাচার সাথে তোমার কি ঝগড়া হয়েছে তারপর। কেন তুমি ঘর ছেড়ে পালালে। বাড়িতে এখনো কেউ কিছু জানতে পারেনি। আমি অপেক্ষা করব গফুর দা। ফিরে এসে নিয়ে যাও আমাকে। আমরা অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো। তোমার বউ হবার জন্য সারাজীবন হলেও অপেক্ষা করব। 

ইতি 
তোমার ঝুমরি। 

অংশু বিস্মিত। ঝুমুর মাসিকে তার গফুর নামক প্রেমিক মারধর পর্যন্ত করেছে, তাও এই আনুগত্য! তাও ঝুমুর মাসির চিঠিতে উপচে পড়ছে প্রেম, প্রেমিকের প্রতি আনুগত্য, পালানোর পরিকল্পনা। চিঠির ঠিকানা ডানকুনির কোনো জুটমিল। চিঠিতে পোস্ট অফিসের শীল দেখে অংশু বুঝতে পারছে এই চিঠি ফিরে এসেছে। গফুরের কাছে পৌঁছায়নি। এমন চিঠি অংশুদের বাড়িতেও লেটার বক্সে আসে। বাবার পাঠানো কোনো দরকারী চিঠি ঠিকানায় না পৌঁছালে ফিরে আসে। 

অংশুর ঘুম আসছে না। ঝুমুর মাসি মারা গেছে আকস্মিক দুর্ঘটনায়। তার এই প্রেমিক গফুর জানে কিনাও জানা নেই। চিঠি পড়েই বোঝা যায় ঝুমুর মাসি যত বেশি প্রেমের প্রতি আনুগত্যশীলা, তার প্রেমিক তত বেশি উৎশৃঙ্খল বদমেজাজী। তবু তো তাদের গভীর প্রণয় ছিল। সেই প্রণয় পরিণতি পায়নি।

চিঠিগুলি যেমন যেখানে ছিল রেখে দিল অংশু। বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল সে। নাঃ ঘুম আসছে না। ঝুমুর মাসি ও তার প্রেমিকের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে অংশুর। গফুর হয়ত বদমেজাজী প্রেমিক ছিল। কিন্তু সে তো ভীষণ ভালোবাসতো ঝুমুর মাসিকে। গফুরের লেখা দু' নম্বর চিঠিটা বড্ড অশ্লীল, যৌনকাতর। অংশু বয়ঃসন্ধির ছেলে। চিঠির প্রতিটা বাক্য ভাবলেই তার শরীরে শিহরণ জাগাচ্ছে। 

অংশু ভাবলো এসব তার ভুলে যাওয়া দরকার। যাইহোক ঝুমুর মাসি দূর সম্পর্কে তার মায়ের বোন। তাদের এই যৌনকাতর ভালোবাসার চিঠি পড়ে যে শিহরণ হচ্ছে তা অনৈতিক।  

চলবে।
[+] 15 users Like Henry's post
Like Reply
#60
Ei jhumri ashole Suchitra noy to!
Great story
[+] 1 user Likes Sumit22's post
Like Reply




Users browsing this thread: Chunilal, 20 Guest(s)