Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
(18-10-2022, 12:34 AM)Monen2000 Wrote:
                         ষোড়োদশ পর্ব

তোমাকে আগেই বলেছিলাম মামা ওটাকে বাঁচিয়ে রেখো না, শেষ করে দাও কিন্তু তুমি... সামনের টেবিলে একটা চাপড় মেরে উত্তেজিত ভাবে কথাটা বলে রকি, তারা এখন সেই বাড়িতে আছে যেখানে এআরসিকে বন্দী করে রেখেছিল তারা মানে বীরেন বাবু তার ভাই ধীরেন বাবু, রকি, জগা এবং বাইরে আরো কয়েকজন লোক আছে। বীরেন ভট্টাচার্যের মুখ থমথমে তিনি বুঝতে পারছেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে মস্ত ভুল করে ফেলেছেন ,নিশ্চিত জয়ের দিকে এগোচ্ছিলেন কিন্তু এখন একেবারে দু দুটো ধাক্কা একসাথে খেয়েছেন, দুটো নয় আসলে তিনটে, ওদিকে আমির নামের এআরসির পোষা কুত্তাটা বেঁচে গেছে, দুই বস্তি দখল হতে হতে হয়নি তার দলকে পালিয়ে আসতে হয়েছে আর তিন তার কবল থেকে এআরসি পালিয়ে গেছে। এরমধ্যে প্রথম শেষেরটাই তাকে বেশী ভাবাচ্ছে বস্তি দখলটা তার ইগোর ব্যাপার ছিল কিন্তু এখন.. তিনি ভালো করেই জানেন এ খেলার নিয়ম এআরসি তো বলেওছিল "আমাকে মেরে ফেল আমি যদি এখান থেকে বেঁচে বেরোতে পারি তাহলে তোকে বাঁচতে দেবো না", এখন সেই এআরসি বেঁচে এখান থেকে বেরিয়ে গেছে এবার সে অ্যাটাক করবে কখন কোথায় কিভাবে আন্দাজ করা মুশকিল, এর থেকে মেরে ফেললেই বোধহয় ভালো হতো টাকা উদ্ধারের লোভে এখন তার প্রাণ সংশয় হয়ে গেছে, বীরেন ভট্টাচার্যের চোখে আবার বাণিজ্যনগরীতে ঘটা সেই রাতের ঘটনা মনে পড়লো যখন এআরসির লোকেরা হোটেলে তার চোখের সামনে তাণ্ডব চালিয়েছিল, বীরেন বাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে।
ছোটোমামা ছোটোমামা তুমি কি ভাবছো বলোতো? ধীরেন বাবুকে চুপচাপ দেখে প্রশ্নটা করে রকি।
ধীরেন বাবু চমক ভেঙে জেগে ওঠেন "অ্যাঁ, হ্যাঁ কিছু বলছিস?
বলছি তুমি চুপচাপ কি ভাবছো?
ভাবছি এই এআরসিকে এত চেনা চেনা কেন লাগছে কে ও?
তুমি এখন এইসব ভাবছো? আগে ওকে কিভাবে শেষ করা যায় সেটা ভাবো?
এবারে বীরেন বাবু কথা বলেন "খুলে বলতো তুই কি ভাবছিস?"
দাদা ওর মুখটা ভালো করে দেখেছিলে? আমি দেখেছিলাম কার সাথে যেন একটা মিল আছে, কিন্তু কে সেটাই মনে পড়ছে না।
মামা এখন ওইসব ভেবে কি লাভ? ও আমাদের শত্রু, ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট।
শত্রুতার একটা কারন থাকে রকি, আর এআরসির ক্ষেত্রে সেই কারনটা জানার জন্য ওর পরিচয় জানাটা জরুরী।
কারন আবার কি এই শহরের দখল নেওয়া।
সেটা হলে তোর বড়োমামাকে ওর শহরে পেয়েও ছেড়ে দিত না, বা এখানে নিজে আসতো না নিজের কোনো লোক বা ভাড়া করা সুপারি কিলার দিয়েই আমাদের মেরে দিতে পারতো।
তুই কি বলতে চাইছিস ধীরেন?
দাদা ও যেটা চাইছে সেটা ক্ষমতা নয়, প্রতিশোধ। ভেবে দেখো ও কিন্তু চাইলেই তোমাকে মারতে পারতো কিন্তু মারেনি বা নিজের অন্য লোক পাঠিয়ে এখানেও আমাদের মারতে পারতো কিন্তু সেটা করেনি নিজে এসেছে শুধু তাই নয় আমাদের মারার আগে আমাদের থেকে এক এক করে কিছু না কিছু কেড়ে নিচ্ছে, না দাদা এ শুধু ক্ষমতা বা শহর দখল নয় এটা প্রতিশোধ ও এয়ন কেউ যে প্রতিশোধ নিতে এসেছে।
কে হতে পারে?
সেটাই তো ধরতে পারছি না দাদা। এইসময় ধীরেন বাবুর ফোন বেজে উঠলো "তোমার আবার কি হলো?
তাথৈ এখনো বাড়ি ফেরেনি। সরমা দেবীর উদ্বিগ্ন গলা।
তাথৈ বাড়ি ফেরেনি মানে?
জানিনা কখন বেরিয়েছে বলে যায়নি, ইদানিং মনটাও ভালো ছিল না ওর।
কেন কি হয়েছে?
জানিনা, জিজ্ঞেস করলে কিছু বলে না, তুমি একবার ফোন করে কথা বলো না।
ঠিক আছে দেখছি।
কি হয়েছে? ধীরেন বাবু ফোন রাখার পরে প্রশ্নটা করেন বীরেন ভট্টাচার্য।
আর বোলো না দাদা মেয়েটাও মায়ের মতো হয়েছে একটু শান্তি দিল না সেই ছোটো থেকেই আমাকে... হটাৎ তিনি চুপ করে গেলেন যেন কিছু একটা মনে পড়েছে তার।
কি হলো চুপ করে গেলি কেন?
ধীরেন বাবু কথা না বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর জগার পিছনে গিয়ে হটাৎ তার মাথা ধরে টেবিলের উপর চেপে ধরলেন, এই দেখে বীরেন বাবু এবং রকি দুজনেই হতবাক হয়ে গেল।
কি হয়েছে দাদা? কোনোমতে কথা বলে জগা।
আমি তোকে একটা প্রশ্ন করবো তার সোজা সত্যি উত্তর দিবি।
কি কথা?
ষোলো বছর আগে রুদ্রের সাথে ওর ছেলে-ব‌উকেও তুই শেষ করে দিয়েছিলি নাকি ওর ছেলে বেঁচে গিয়েছিল?
প্রশ্নটা শুনে বীরেন বাবু, রকি এবং জগা তিনজনেই চমকে ওঠেন, "এটা কি বলছেন দাদা?"গুঙিয়ে ওঠে জগা তার মাথা এখনো টেবিলে চেপে ধরে রেখেছেন ধীরেন বাবু।
সত্যি বল জগা। চেঁচিয়ে ওঠেন ধীরেন বাবু।
বলছি বলছি, ওর ছেলে আর ব‌উ পালিয়ে যায় আমি চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি তাই...
এবার ধীরেন বাবু জগাকে তুলে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন "ইচ্ছা করছে তোকে এখনই শেষ করে দি‌ই", তারপর একটা ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বীরেন বাবুর উদ্দেশ্যে বলেন: এই এআরসি আর কেউ নয় ওই।রুদ্রের ছেলে অভয়, আর ও এখানে এসেছে প্রতিশোধ নিতে এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই সেই জন্যই ওর মুখটা চেনা চেনা লাগছিল, রুদ্রের সাথে মুখের আদলের মিল আছে।
এবার বীরেন বাবু জগাকে কাছে ডাকেন, "আমার ভুল হয়ে গেছে দাদা" হাতজোড় করে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে আসে জগা, কাছে এলে বীরেন বাবু।হটাৎ নিজের পায়ের এক পাটি জুতো খুলে তাই দিয়ে জগাকে মারতে থাকেন। তারপর বলেন "আমার সামনে থেকে বেরিয়ে যা জগা, নেহাত এতগুলো বছর আমার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলি তাই প্রাণে না মেরে আরেকটা চান্স দিচ্ছি, যে করেই হোক এই এআরসি কে আমার চাই জ্যান্ত বা মৃত, যদি পারিস তবেই আমাকে নিজের মুখ দেখাবি নচেৎ নয়"। জগা আর কোনো কথা না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

"বাবু পালা তোর মাকে নিয়ে পালা"
না বাবা, গেলে তিনজনেই যাবো।
বাবু কথা শোন, তোর মাকে নিয়ে যা।
হটাৎ একটা কানফাটানো আওয়াজ সাথে একটা আর্তনাদ।
"তোর মাকে দেখিস বাবু, তোর মাকে দেখিস"।
না... বাবা....বাবা...না...বাবা...
"মিস্টার অভয়... মিস্টার অভয়" দূর থেকে কে যেন অস্পষ্ট ভাবে তার নাম ডাকছে কিন্তু...
বাবা...বাবা.... বাবাআআআআআ। হঠাৎই চোখ খুলে উঠে বসে অভয়, কপালে  ঘাম জমে গেছে, বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে,হটাৎ পাশে "মিস্টার অভয়" শুনে পাশে তাকায় দেখে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে, লোক নয় ডাক্তার, তার পিছনে একজন লেডি নার্স, এবার অভয় ভালো করে চারপাশটা দেখে যে কোথায় শুয়ে ছিল সে? তার গায়ের জামাটা খুলে ফেলা হয়েছে, পরনে এখন অন্য একটা পোশাক ইউনিফর্ম জাতীয় কোনো হাসপাতালের পেশেন্ট ড্রেস।
আমি কোথায়? জিজ্ঞেস করে অভয়।
আপনি এখন হাসপাতালে
আমি এখানে কিভাবে এলাম?
আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে এনেছে?
কে এনেছে? অভয়ের স্বরে বিস্ময়।
আপনার ওয়াইফ মিস্টার অভয়।
কে আমার ওয়াইফ? আমার কোনো ওয়াইফ নেই আর আমার নাম রয়।
কিন্তু যে মেয়েটি আপনাকে এখানে এনেছে তিনি তো বললেন আপনি তার হাজব্যান্ড?
অজ্ঞান হবার আগে পর্যন্ত তো ব্যাচেলর ছিলাম, জ্ঞান হবার পরে হাজব্যান্ড কিভাবে হয়ে গেলাম?
কেমন হাজব্যান্ড আপনি? নার্সের কথা আসে এবার,আপনার ওয়াইফ আপনাকে এখানে আনার পর থেকে পাগলের মতো কান্নাকাটি করছে, না খেয়ে না ঘুমিয়ে আপনার পাশে বসে থেকেছে, আপনাকে কত ভালোবাসেন আর আপনি?
অভয় চুপ করে শুনতে থাকে নার্স আবার শুরু করেন: আপনি সেই গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় এখানে এসেছেন তারপর থেকে আজ এই সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরলো, আপনার স্ত্রী আপনার পাশেই বসে ছিলেন সমানে কেঁদে চলেছেন।
তা আমার এই ওয়াইফটি এই মুহূর্তে কোথায়?
বাইরে ঠাকুরের সামনে প্রার্থনা করছেন।
অভয় আস্তে আস্তে বেড থেকে নামছে দেখে ডাক্তার জিজ্ঞেস করেন "কি হলো কোথায় যাচ্ছেন?"
আমার এই ওয়াইফকে দেখতে, এখন তো শুধু হাজব্যান্ড হয়েছি, এখন না গেলে পরে না জানি আরও কত কি হয়ে যাবো। বলে আস্তে আস্তে কেবিনের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, এরপর দেখে একদিকে একটা ছোট ঠাকুরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে প্রার্থনা করছে, যদিও অভয় মেয়েটার শুধু পিছন দিকটাই দেখতে পারছে তবুও কেন যেন তার মনে একজনের মুখের ছবি ভেসে ওঠে এবং কেন যেন মনে হতে থাকে যে সামনে দাঁড়ানো এই মেয়েটি সে ছাড়া আর কেউ নয়, অভয় আস্তে আস্তে মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আর চিনতে অসুবিধা হবার কথা নয়,  সে কয়েক সেকেণ্ড মেয়েটির প্রার্থনারত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার কঠিন বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি পেটা করতে থাকে, তার ইচ্ছা করছে এই মুহুর্তে মেয়েটিকে কাছে টেনে নিতে হয়তো নিতো‌ও কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পরে সেই একরাতে রেস্টুরেন্টের বাইরে একটা ছেলের বলা একটা কথা "ও আমার গার্লফ্রেন্ড", নিজেকে সামলে নেয় অভয় "আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন মিস্ ভট্টাচার্য?"।

জ্যেঠিমা শেফালী দেবীর কাছ থেকে সত্যিটা জানার পর থেকেই তাথৈএর আর কোনো কিছু ভালো লাগছে না, সারা রাত ঘুমায়নি খালি কেঁদেছে, ভোর থাকতে থাকতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে কিছু ঠিক নেই, নিজেই গাড়ি চালিয়ে যায় মাঝে মাঝে যখন খুব কান্না পাচ্ছে তখন গাড়ি থামিয়ে স্টিয়ারিংএ মাথা রেখে কাঁদতে থাকে, একবার ভাবে অভয়ের কাছে যাবে যদিও জানে যে অভয় দেখা করবে না কিন্তু তবুও যাবে, একবার ভেবেছিল সুইসাইড করবে কিন্তু পরক্ষণেই রাতে জ্যেঠিমার কথা মনে পড়লো "এমন কিছু করিস না যাতে তোর মা কষ্ট পায়, তোর মায়ের তুই ছাড়া কেউ নেই", কিন্তু সে করবে কি? অভয় ওকে কাছে টেনে নেবে না আর অভয়কে ছাড়া থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
এতদিন তাও একটা বিশ্বাস ছিল যে একদিন অভয়ের কাছে ঠিক ফিরবে কিন্তু এখন তো সেটাও নেই, সারাদিনটা এভাবেই কাটালো তাথৈ, বাড়ি থেকে ফোন করলে ধরেনি কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আসলে কিছু করতেই ইচ্ছা করছে না, সারাদিন কিছু খায়নি, খাওয়ার কথা মনেই হয়নি কখনো রাস্তার পাশে ফাঁকা মাঠ দেখে গাড়ি থামিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকে, ছোটোবেলায় অভয়ের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে করে তারপর আবার গাড়িতে চাপে আবার কখনো মন্দির দেখে সেখানে গিয়ে অভয়ের নামে পূজো দেয়।
সন্ধ্যা প্রায় পার হয়ে গেছে কিন্তু তাথৈএর হুঁশ নেই, শহরের বাইরের দিকে একটা হাইওয়ে ধরে গাড়ি চালাচ্ছে সে রাস্তাটা ফাঁকাই গাড়ি চলাচল প্রায় নেই সোজা রাস্তা চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে চলেছে সে কোথায় উত্তর নেই কেন সেটার‌ও উত্তর নেই মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে "আচ্ছা এই রাস্তায় কি অ্যাক্সিডেন্ট হয় না? এক্ষুনি যদি কোনো লরি ওকে চাপা দিয়ে চলে যায় তাহলে? কি ভালো হয় সব কষ্ট থেকে মুক্তি"।
এইসব ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায় হটাৎ গাড়ির সামনে একজনকে চলে আসতে দেখে সজোড়ে ব্রেক কষে, লোকটা তার গাড়ির বনেটের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে তারপর নীচে পরে যায় একটু বিরক্ত হয় তাথৈ কোথায় সে মরার কথা ভাবছে তা না অন্য একজন তার গাড়ির সামনে মরতে চলে এসেছে, গাড়ি থেকে নেমে সামনে যায় তাথৈ দেখে একটা ছেলে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে আছে মুখটা লম্বা এলোমেলো চুলে ঢাকা, গায়ে শার্টের বোতাম আটকানো নেই, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে রাস্তাটা ফাঁকা একটা লোক চোখে পরছে না। তাথৈ ঝুঁকে ডাকে "শুনছেন? হ্যালো" উত্তর না পেয়ে মুখ থেকে চুলগুলো সরায় আর সঙ্গে সঙ্গে যেন ওর মাথায় বজ্রপাত হয়।
অভয়.. আর্তনাদ করে ওঠে তাথৈ তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ে, অভয়.. অভয় কি হয়েছে তোমার? অভয়...। তাথৈ এবার লক্ষ্য করে অভয়ের খোলা শার্টের নীচে বুকে পেটে অনেকগুলো লম্বা কালশিটে দাগ বুঝতে বাকী থাকে না যে কেউ বা কারা প্রচণ্ড মারধর করেছে অভয়কে,  "অভয় তোমার কিচ্ছু হবে না অভয়.." কোনোমতে অজ্ঞান অভয়কে প্রথমি বসিয়ে তারপর একটা হাত নিজের কাঁধে নিয়ে অনেক কষ্টে দাঁড় করায় তারপর কোনোমতে গাড়ির ব্যাকসিটে শুইয়ে দেয়, এবং তাড়াতাড়ি নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করে।
লোকজনকে জিজ্ঞেস করে কাছাকাছি একটা হাসপাতালে পৌঁছে তাথৈএর কান্না আরও বেড়ে যায় কিছুতেই সে অভয়কে ছেড়ে যাবে না, ডাক্তার অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন বারবার বলেন বাইরে যেতে কিন্তু তাথৈ অনড় সে উল্টে এক‌ই কথা বলতে থাকে কোনোমতেই সে তার স্বামীকে ছেড়ে যাবে না, কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান অভয়ের মাথায় হাত বোলাতে থাকে বলতে থাকে "অভয় অভয় প্লিজ চোখ খোলো অভয়, ডাক্তার ওর কি হয়েছে চোখ খুলছে না কেন?"
ওনার শরীরের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে ওনাকে কেউ প্রচণ্ড মারধর করেছে তাতেই জ্ঞান হারিয়েছেন।
ওকে বাঁচান ডাক্তার, ওকে বাঁচান প্লিজ।
আগে আপনি শান্ত হোন।
পুরো রাত এমনকি পরের দিন সকালেও  অভয়ের জ্ঞান ফেরেনি দেখে তাথৈ আরো ভয় পেয়ে যায়।
ডাক্তার আশ্বাস দেন "আপনি চিন্তা করবেন না মারের আঘাত এবং দুর্বলতার জন্যই উনি এখনো অজ্ঞান"
কিন্তু ও ঠিক হয়ে যাবে তো?
সেরকমই আশা করছি, ইন্টারনাল কোনো আঘাত হয়নি যা হয়েছে বাইরে।খুব সম্ভবত ওনাকে টর্চার করা হয়েছে সাধারণ রাস্তার মারামারি নয় এটা আপনি বরং পুলিশে একটা খবর দিতে পারেন।
ঠিক আছে আমি সেটা পরে ভেবে দেখবো, আপাতত আপনি ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করুন। মাঝে একবার অল্প সময়ের জন্য অভয়ের জ্ঞান ফেরে যদিও সে পুরোপুরি চেতনায় ছিল না, চোখ‌ও খোলেনি বিড়বিড় করে কিছু একটা বলতে গিয়ে পারে না তারপর আবার যে কে সেই, তাথৈ আর থাকতে পারে না, কেবিনের বাইরে একটা ছোট্ট ঠাকুরের সিংহাসন দেখেছিল সেখানে গিয়ে হাতজোড় করে এক মনে প্রার্থনা করতে থাকে।

"আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন মিস্ ভট্টাচার্য?" প্রশ্নটা শুনেও তৎক্ষণাৎ চোখ খোলে না তাথৈ আরো কিছুক্ষণ পরে প্রার্থনা সেরে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অভয়ের দিকে ফেরে অনেকদিন পর দুজনের চোখাচোখি হয় যদিও কেউ কোনো কথা বলে না, তাথৈ কোনো কথা না বলে পিছনে ফিরে কেবিনের দিকে যায় পিছনে অভয়,কেবিনে ঢুকে তাথৈ ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে "এখন ওকে কেমন দেখলেন ডক্টর?"
আপনাকে তো আগেই বলেছি ওনার কোনো ইন্টারনাল আঘাত হয়নি, তাই..
আমি ঠিক আছি ডক্টর, থ্যাংকস।
সব কৃতিত্ব আপনার ওয়াইফের তিনিই আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন।
আপনি আমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন, আমাকে যেতে হবে।
আরো কিছুটা সময় থেকে যান।
আমি থাকতে পারবো না ডক্টর, আমাকে যেতে হবে।
ডাক্তার আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে যান, কেবিনে এখন অভয় আর তাথৈ অভয় বেডের পাশে টেবিলে একটা জলের বোতল দেখে সেটা হাতে নেয়।
কি হয়েছিল তোমার? তাথৈ প্রশ্ন করে।
বললে বিশ্বাস করবেন? এক নিঃশ্বাসে অনেকটা জল খেয়ে বোতলটা আবার যথাস্থানে রেখে উত্তর দেয় অভয়।
বলেই দেখো।
আপনার জ্যেঠু আর বাবার বন্দী ছিলাম মনের সুখে ঠ্যেঙিয়েছে একেবারে আড়ং ধোলাই যাকে বলে, আরেকটা রাত থাকলে মেরেই ফেলতো।
তাথৈ কোনো কথা বলে না অভয় আবার বলে "কিন্তু আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না?"
কোন প্রশ্ন?
ওই যে আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি এখানে নিজেকে অন্য একজনের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত দিয়েছেন?
অভয়.. তুমি বারবার কেন এরকম বলছো, আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে?
আমার নাম রয় আর আমি আপনাকে কি কষ্ট দিলাম?
কষ্ট দাওনি?
কি কষ্ট?
তাথৈ কোনো কথা না বলে অভয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভয় আবার প্রশ্ন করে "আপনি আমাকে কোথায় আর কিভাবে পেলেন?"
তাথৈ তাকে রাস্তায় পাওয়ার পুরো ঘটনাটা বলে সব শুনে অভয় বলে "থ্যাংকস, তারমানে আপনি অনেকক্ষণ বাড়ি থেকে বাইরে আছেন, আপনার এবার বাড়ি ফেরা উচিত"।
আমি তো বাড়ি ফিরবো বলে বেরোইনি, তাই যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
আপনার বাড়ির লোক খুঁজবে তারা চিন্তা করবেন সাথে আপনার বয়ফ্রেন্ড‌ও।
তাথৈ বুঝতে পারছে অভয় তাকে ইচ্ছে করে আঘাত করছে অন্য কাউকে তার বয়ফ্রেন্ড বলে, সে বললো: আমি চলে গেলে তুমি খুশী হবে?
আমার খুশীর কথা আপনার ভেবে লাভ নেই।
অভয়..... 
আমার নাম রয়।
তুমি সত্যিই চাও যে আমি চলে যাই?
অভয় চুপ করে আছে দেখে আবার বলে: কি হলো বলো তুমি সত্যিই চাও যে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই?
অভয় তাও চুপ করে থাকে, তাথৈ আর থাকতে পারে না তার ভীষণ কান্না পায় কিন্তু কোনোমতে চোখের জল সামলে বলে: বেশ, তুমি যখন চাইছো আমি চলেই যাবো চিরদিনের জন্য আর কখনও তোমার কাছে আসবো না আর কখনও তুমি তাথৈএর মুখ দেখতে পারবে না। বলে এক ছুটে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
তাথৈ বেরিয়ে যাওয়ার পরমুহূর্তেই অভয়ের মাথায় তাথৈএর কথাটা স্ট্রাইক করলো, কি বলে গেল? চিরদিনের জন্য মানে? বিদ্যুৎ ঝলকের মতো একটা চিন্তা ওর মাথায় আসতেই "ওহ্ শিটঃ" বলেই সেও ছুট লাগায়, তাড়াতাড়ি লিফটের কাছে এসে দেখে দুটোই নেই অভয় লক্ষ্য করে একটা লিফট একদম গ্ৰাউণ্ড ফ্লোর থেকে উপরে উঠছে সুতরাং ওটায় তাথৈ যায়নি এত তাড়াতাড়ি সেটা নীচে গিয়ে ফিরতে পারে না, অপর লিফট্ টা উপরের ফ্লোরে উঠেছে অভয়ের বুঝতে বাকী র‌ইলো না তাথৈ উপরে গেছে সে লিফটের জন্য আর সে কি করতে যাচ্ছে সেটা বুঝতেও অসুবিধা হবার কথা নয়, অভয় প্রাণপণে পাশের সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে উঠতে লাগলো।

অভয়ের কেবিন থেকে বেরিয়েই তাথৈ দৌড়াতে লাগলো, সে ঠিক করে নিয়েছে এবার কি করবে, আর নয় অনেক হয়েছে, আর পারছে না সে, অভয় চায় সে চলে যাক বেশ তাহলে তাথৈ চলেই যাবে চিরদিনের জন্য যাবে এবং সেটা অভয়ের চোখের সামনে থেকেই, আজ না হোক একসময় তো অভয় তাকে ভালোবাসতো তাই ওর সামনে দিয়েই ও নিজের জীবন শেষ করবে।
লিফটটা থামতেই সে ঢুকে একদম টপ ফ্লোরের বোতাম টিপে দিল, লিফট থামতেই সে বেরিয়ে এল এটা হাসপাতালের একদম উপরের ভাগ, এখানে পেশেন্টরা থাকে না একসাইডে কয়েকটা রুম বোধহয় স্টাফদের জন্য, আর অন্য দিকে কিছুটা অংশ নিয়ে একটু খোলা ছাদের মতো আছে যদিও চারিদিকে ঘেরা কোমর সমান উঁচু পাঁচিল দেওয়া সেখানে স্টাফরা বা পেশেন্টরা মাঝে মাঝে খোলা হাওয়া খেতে আসে, এই মুহূর্তে ওই জায়গাটায় কেউ নেই তাথৈ দৌড়ে ওদিকে গেল তারপর কোমরের উপরে উঠে দাঁড়ালো, চোখ বন্ধ করে নীচে লাফ মারতে যাবে হটাৎ পিছন থেকে একটা শক্ত হাত তার হাতটা ধরে এক হ্যাঁচকা টানে তাকে  উপর থেকে নীচে নামিয়ে আনলো এবং নীচে যাতে পরার আগে আরেকটা হাত শক্ত করে তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিল তারপর আস্তে করে দাঁড় করালো।
চোখ খুলেই যে তার হাত ধরে টেনে নামালো তাকে দেখেই এক ঝটকায় ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে কয়েকপা পিছনে সরে এল।
কি করতে যাচ্ছিলে এটা?  বলো কি করতে যাচ্ছিলে? অভয় প্রচণ্ড রেগে গেছে তার বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে।
কে আপনি? আপনি এখানে কেন? তাথৈও এবার তেজের সাথে উত্তর দেয়।
আগে বলো কি করতে যাচ্ছিলে তুমি এটা?
আপনি কেন আমার হাত ধরেছেন? কোন অধিকারে ধরেছেন? কোন অধিকারে আমাকে প্রশ্ন করছেন? আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে স্পর্শ করার বা কোনো প্রশ্ন করার বুঝতে পেরেছেন মিস্টার রয়?
আমি জানি আমার কোনো অধিকার নেই, আমার অধিকার এবং আমার যোগ্যতা দুটোই তুমি আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলে ষোলো বছর ধরে আগে আমি আমার যোগ্যতা বা অধিকার কোনোটাই ভুলিনি..
তাহলে অধিকার পার করলেন কেন? আপনি তো আমাকে ঘেন্না করেন তাহলে কেন বাঁচালেন আমাকে? বলুন..আমাকে বাঁচালেন কেন? আপনিই তো বললেন যেন আমি চলে যাই কারণ আপনি আমাকে ঘেন্না করেন, আমি তো চলেই যাচ্ছিলাম তাহলে আটকালেন কেন? বলুন।
কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি, আজ‌ও খুব ভালোবাসি। যে কথাটাকে এতবছর অভয় নিজের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিল সেটা হটাৎ সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে বেরিয়ে এল। কথাটা শুনে তাথৈ চুপ করে র‌ইলো কিন্তু অভয় বলে চলে: আমি তোমাকে কোনোদিন ঘেন্না করিনি শুধু ভালোবেসেছি এটা জানার পরেও যে তুমি আমাকে ঠকিয়েছো, তুমি অনেক আগেই আমার বিশ্বাস ভেঙে আমার ভালোবাসাকে পায়ের তলায় মাড়িয়ে  এগিয়ে গিয়েছিলে, কিন্তু তবুও তোমাকে ভালোবেসে এসেছি, কতবার ভেবেছি তোমাকে ভুলে তোমার মতো এগিয়ে যাবো কিন্তু পারিনি, কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারিনি তাই আজ‌ও তোমার আঘাত লাগলে আমার কষ্ট হয় আর এখন তো তুমি....
ভালোবাসায় বিশ্বাস থাকে অভয়, যেটা আমি করেছিলাম এত বছর তোমার থেকে দূরে থাকার পরেও বিশ্বাস ছিল যে একদিন তোমার কাছে ফিরবো, নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে যে যাওয়ার আগে তোমাকে জানিয়ে যেতে পারিনি তোমার কোনো ধারণা আছে এত বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি? ফিরে এসে শুনলাম তুমি আর নেই মারা গেছো কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি অপেক্ষা করে গিয়েছি তোমার... কিন্তু তুমি..
আমি তোমাকে ভালোবাসিনি? 
ভালোবাসলে অবিশ্বাস করতে না, এটা বিশ্বাস করতে না যে তোমার তাথৈ তোমাকে ঠকাতে পারে।
ওয়াও... এখন সব দোষ আমার? 
হ্যাঁ তোমার দোষ, তুমিই আমাকে অবিশ্বাস করেছিলে 
আর তোমার সেই ম্যাসেজ সেটা?
কোন ম্যাসেজ? তাথৈ ভীষণ অবাক হয় কারণ এই ম্যাসেজের কথা তাকে অমিয়‌ও বলেনি।
ও মনে নেই বুঝি? ওই ম্যাসেজটা যেটা তুমি আমাকে পাঠিয়েছিলে এটা বলে যে তুমি চলে যাচ্ছো কারণ আমি তোমার যোগ্য ন‌ই।
আমি তোমাকে কোনো ম্যাসেজ পাঠাইনি অভয়..
তাহলে তোমার ফোন থেকে আমাকে কে ম্যাসেজ করেছিল?
আমি জানিনা, 
বেশ.. তাহলে আমি যখন ফোন করছিলাম তখন ধরছিলে না কেন? কেন নিজের দিদিকে দিয়ে দিয়েছিলে ফোনটা?
তাথৈ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে: আমি বললে বিশ্বাস করবে? কারণ তুমি তো অলরেডি ধরেই নিয়েছো আমি তোমাকে ঠকিয়েছি।
আচ্ছা শুনি..
সেদিন আমার সাথে তোমার কথা হয়নি এমনকি কোনো ম্যাসেজ‌ও করিনি কারণ আমার কাছে ফোন ছিল না, সেদিন জ্যেঠু হটাৎ বললেন আমাকে পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে হবে আমি যেতে চাইনি কিন্তু কাউকে কিছু বলার উপায় ছিল না, যাওয়ার আগে পিসি আমার থেকে ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল তারপর কি হয়েছিল আমি জানিনা, আমি সত্যিই জানিনা।
এবার অভয়ের অবাক হবার পালা কারণ এটা সে ভাবতেও পারেনি অথচ সেদিন সত্যিই এক মহিলা কথা বলেছিল। তাথৈ বলে চলে: তুমি বুঝবেও না এই কটা বছর আমার কিভাবে কেটেছে যার সাথে কথা না বললে দেখা না করলে আমি থাকতে পারতাম না দিনের পর দিন তার সাথে কথা বলতে পারছি না, দেখা করতে পারছি না, ফিরে এসে শুনি এক দুর্ঘটনায় তুমি... 
শেষ‌ই হয়ে যেতাম নেহাত আয়ু ছিল তাই বেঁচে গেছি কিন্তু আমার বাবা পারেননি.. কিন্তু ওর থেকে আমি মরে গেলেই ভালো হতো অন্তত এত কষ্ট পেতে হতো না।
দুজনের মধ্যে আরো অনেকক্ষণ বাক বিতণ্ডা চললো দুজনের মনের ভিতরে জমা কথাগুলো বেরোতে থাকে দুজনের ভিতরের জমা কথা, রাগ, অভিমান বাঁধ ভেঙ্গে নদীর উচ্ছ্বল স্রোতের মতো বেরিয়ে আসতে থাকে।
একসময় তাথৈ বলে: আমার জ্যেঠু তোমার সাথে যা করেছে তারপরে তুমি তো আমাকে ঘেন্নাই করতে তাহলে আমাকে মরতে দিলে না কেন, বললে তো চলে যেতে, চলেই তো যাচ্ছিলাম
তুমি কোনোদিন‌ও আমাকে বুঝবে না, আমি তোমাকে কখনো ঘেন্না করিনি, করতে পারিনি আর তোমার জ্যেঠু যা করেছে তার জন্যও না, আমার রাগ হয়েছিল কারণ আমি ভাবতে পারিনি যে তোমার থেকে আঘাত পাবো, তুমি আমাকে ঠকাবে খালি ভাবতাম জীবনে একবার তোমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করবো কেন করেছিলে এরকম আমার সাথে।
তাহলে জিজ্ঞেস করোনি কেন? মন্দিরের পিছনে তো দেখা হয়েছিল।
হ্যাঁ, বহু বছর পরে তোমাকে সেদিন দেখেছিলাম খুব ইচ্ছা করছিল সেদিন তোমাকে কাছে টেনে নিতে কথা বলতে।
তাহলে বলোনি কেন?
পারিনি কারণ তখন তোমার সেই ম্যাসেজ আর তোমার দিদি আর ওই মহিলার কথা মনে পড়ে তাই আর পারিনি।
সেদিন যদি একবারও আমার দিকে মন দিতে তাহলে শুনতে পেতে যখন তুমি আমার হাত ধরেছিলে তখন তোমার নামটাই বেরিয়েছিল আমার মুখ থেকে।
না শুনিনি, পরে আবার দেখলাম তোমাকে রেস্টুরেন্টে যদিও জানতাম না তোমরা ওখানে যাবে তাহলে যেতাম না পরের দিন তোমার জন্মদিন ছিল সেদিন‌ও খুব ইচ্ছা করছিল তোমার কাছে যেতে তোমাকে উইশ করতে।
তাহলে আসোনি কেন? আমি তো এসেছিলাম তোমার কাছে তুমি নিজের পরিচয় দাওনি, আমাকে সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে এড়িয়ে চলে গিয়েছিলে। তাথৈ এবং অভয় দুজনেই উত্তেজিত স্বরে কথা বলতে থাকে তাথৈ এবার এগিয়ে এসে দুহাতে অভয়ের কলার দুটো চেপে ধরে বলে: বলো কেন সেদিন নিজের পরিচয় দাওনি... কেন?
কেন পরিচয় দেবো? বেশ খুশীতেই তো ছিলে ওই সাম্যর সাথে।
বাইরে থেকে দেখেই বুঝে গেলে আমি খুশী আছি?
বাইরে থেকে কেন বুঝবো? আমার সামনে দাঁড়িয়ে সাম্য আমাকে বলছে তুমি ওর গার্লফ্রেন্ড আর তোমরা দুজনে দুজনকে খুব ভালোবাসো একসাথে সবাই মিলে টাইম এনজয় করতে বেরিয়েছো তাহলে কেন নিজের পরিচয় দেবো, বলো কেন নিজের পরিচয় দিয়ে তোমার খুশিতে বিঘ্ন ঘটাবো? আমি কোনোদিন‌ও তোমার খুশী নষ্ট করতে চাইনি সেদিন বাড়ি ফিরে ইচ্ছা করছিল... যদি মায়ের চিন্তা না থাকতো তাহলে হয়তো সেদিনই নিজেকে শেষ করে দিতাম।
ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে নিলে?
কেন করবো না, তুমিও তো চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছিলে তাহলে কেন বিশ্বাস করবো না।
আমি ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি ওর কথা শুনিই নি কারণ আমি তোমাকে দেখছিলাম।
যদি শুনতেও তাহলেই বা কি করে নিতে?
তাহলে যে থাপ্পড়টা পরদিন ওকে একাকী মেরেছিলাম সেটা তখনই সবার সামনে মারতাম।
তুমি সাম্যকে থাপ্পড় মেরেছিলে? অভয়ের স্বরে অবাক ভাব।
হ্যাঁ।
কেন?
ও আমার হাত ধরেছিল তাই।
ও হাত ধরেছিল বলে তুমি থাপ্পড় মারলে, কেন? 
কারণ একজন ছাড়া আর কারো আমার হাত ধরার অধিকার নেই।
আর সেই একজনটা কে?
ছিল একজন, এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি কারণ সে খালি আমাকে কষ্ট দিতে জানে, এর থেকে তো..
ওই সাম্য ভালো? তাহলে যাও ওর কাছে আমি তো বললাম যেতে কিন্তু এখানে হাইজাম্প মারতে এসেছো কেন?
বেশ করেছি তুমি কে জিজ্ঞেস করার?
আমি আবার কে? আমাকে তুমি বাঁচিয়েছো তাই আমারও দায়িত্ব..
দরকার নেই তোমার দায়িত্ব পালনের?
সত্যি বলোতো তুমি হাইজাম্প মারতেই এসেছিলে তো? না মানে যে মেয়ে অন্ধকারে ভয় পায় সে এত উঁচু বিল্ডিং থেকে নীচে জাম্প মারবে এটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।
তাথৈ শুনে আবার ঘুরে পাঁচিলের উপর উঠতে গেল সঙ্গে সঙ্গে অভয় আবার ওর একটা হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিল, অভয় বুঝতে পেরেছে সে এতবছর একটা ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে ছিল তাথৈ ওকে ঠকায়নি তারা দুজনেই পরিস্থিতি আর কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। হাত টানার সাথে তাথৈ অভয়ের কাছে চলে আসে দুজনে পরস্পরের একদম কাছে চলে এসেছে পরস্পরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়্যাম সরি তাথৈ, আমার তোমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত ছিল কিন্তু কি করবো বলো তোমার ফোন থেকে ওরকম ম্যাসেজ তারপর তুমি ফোন ধরছো না, তারপর তোমার দিদি আর ওই মহিলার ওরকম কথাবার্তা অন্য কিছু মাথায় আসেনি।
তাথৈ এতক্ষণ কান্না আটকে রেখেছিল এবার পুরো ভেঙে পরলো, "কেন বলো কেন এটা ভাবলে যে আমি তোমাকে ঠকাবো? কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ভুলে অন্য কাউকে মন দেবো? আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি আর আজ‌ও তোমাকেই ভালোবাসি।
আমিও তো শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি।
মিথ্যে বলছো তুমি, আমাকে তুমি ভালোবাসোনা সেই জন্যই ওই কলোনিতে তোমার কাছে গেলে তুমি দেখা করতে না, আমাকে তাড়িয়ে দিতে।
তোমার কি মনে হয় প্রথম দিন আমি না চাইলে তোমাকে ওরা আমার বাড়িতে ঢুকতে দিত? আমি তোমাকে কাছ থেকে দেখতে চাইছিলাম, তোমার সাথে একা কিছু সময় কাটাতে চাইছিলাম, কিন্তু নিজের পরিচয় দিতে পারিনি।
আমি তো বারবার বোঝাচ্ছিলাম যে আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি তবুও তুমি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলে আবার তারপর থেকেতো তুমি দেখাই করতে না।
আসলে সেদিন তুমি তোমার জ্যেঠুর কাজকে সাপোর্ট করেছিলে তাই রাগ হয়েছিল..
আমি জানতাম না, সত্যিই জানতাম না, একবার তো পুরো সত্যি বলতে পারতে, বলোনি কেন?
বললাম না পারিনি তোমার মনে তোমার জ্যেঠু আর বাবার যে জায়গাটা আছে সেটা খারাপ করতে পারিনি।
তুমি হয়তো জানোনা আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন যেন কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় না দি‌ই।
অভয় দুটো হাত দিয়ে তাথৈএর দুটো গাল ধরে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ওর চোখের জল মুছে দিল তারপর বললো: তাথৈ আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোনো।
কি?
তোমার জ্যেঠু আর আমার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, প্রথমে এটা শুধুমাত্র আমার নিজস্ব প্রতিশোধের লড়াই ছিল কিন্তু এখন অনেক গরীব অসহায় মানুষছর ভাগ্য জড়িয়ে গেছে যারা আমার উপরে ভরসা করে আছে তাই আমি এখানে থেকে পিছনে হটতে পারবো না, আর তোমার বাবাও তোমার জ্যেঠুর সঙ্গ ছাড়বেন না তাই..
তুমি কি বলতে চাইছো?
আমি চাইনা তুমি কোনো রকম দ্বিধা বা কষ্টের মধ্যে কাটাও তাই তুমি ফিরে যাও আর আমাকে ভুলে যাও।
মুহূর্তে তাথৈ নিজেকে ছাড়িয়ে পিছনে সরে গেল তারপর একটু জোর গলায় বললো: এটা তুমি বললে কি করে?
তাথৈ..
আগে বলো এটা বললে কি করে?
অভয় তাথৈএর কাছে গিয়ে দুহাতে ওর দুটো হাত ধরে তারপর বলে: একটু বোঝার চেষ্টা করো আমি বীরেন ভট্টাচার্য আর ওনার ভাই মানে তোমার বাবাকে ছাড়তে পারবো না, আমি ওনাদের ক্ষমা করতে পারবো না তাই আমি নিজে কি করে আশা করবো যে তুমি তোমার পরিবারের লোকেদের ক্ষতিকারীকে ক্ষমা করবে, তাই আমি চাই।
তুমি তো ক্ষতি করছো না।
মানে?
আমি ছোটো থেকেই দেখেছি জ্যেঠু জ্যেঠিমাকে আর বাবা মাকে অত্যাচার করতো এমনকি মারধর পর্যন্ত, আমি কখনো কিছু বলিনি কারণ মা বারণ করতেন, কিন্তু ওনারা তোমার‌ও ক্ষতি করেছেন শুধু তাই নয় জ্যেঠিমা বলছিলেন ওনারা আরও অনেক লোকের ক্ষতি করেছেন তাই ওনাদের শাস্তি পাওয়া দরকার, আর এই লড়াইতে আমি তোমার সঙ্গে থাকবো।
তাথৈ তুমি তোমার জ্যেঠুকে চেনোনা, উনি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবেন না আর আমাদের এই লড়াইতে তোমার গায়ে যদি একটাও আঁচড় পরে তাহলে সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
আর আমার থেকে দূরে থাকতে পারবে? হ্যাঁ এখন তো পারবেই, কিন্তু আমি পারবো না।
তাথৈ তুমি এখনো বোঝোনি তোমার থেকে দূরে থাকতে চাওয়াটা আমার জন্য কতটা কষ্টকর,আমি তোমাকে..
তুমি আমাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবে না আর। অভয়কে কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে উঠলো তাথৈ...
বললাম তো না তবুও তুমি যদি জোর করো তাহলে তুমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যিই আত্মহত্যা করবো, বাড়িতে কিন্তু তুমি আমাকে আটকাতে পারবে না।
তাথৈ... বেশ জোরেই নামটা নেয় অভয়, বলেছিলাম না এরকম কথা বলবে না
তাহলে তুমিও আর আমাকে দূরে যেতে বলবে না, আমি তোমার থেকে দূরে গিয়ে আর থাকতে পারবো না। তাথৈ অভয়কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে, অভয়‌ও আর কিছু বলে না সেও দুহাতে তাথৈকে বাহুবন্দী করে নেয়, প্রথমবার তারা পরস্পরকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করে কিশোর অবস্থায় তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে একটা গণ্ডি টেনেছিল কিন্তু আজ সেই গণ্ডি নেই তাই তাদের বাধাও নেই।

বিদ্র: দুটো পার্ট দিলাম আশা করছি সবার ভালো লাগবে, আগের দুটো পার্টে সবাই ভালো রেসপন্স দিয়েছিলেন যে পছন্দ হয়েছে এটাও জানাবেন কেমন হয়েছে।
আর ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিতে ভুলবেন না, এবং খারাপ লাগলেও কমেন্ট করে জানাবেন।

?
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(24-10-2022, 10:04 PM)Monen2000 Wrote:
                           সপ্তদশ পর্ব

নীচে নেমে নিজের কেবিনের দিকে যেতে যেতে বেশ কিছু লোককে দেখে অভয় যাদের আপাতদৃষ্টিতে অন্যান্য পেশেন্টদের বাড়ির লোক বা নার্সিং হোমের স্টাফ মনে হলেও অভয়ের ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে ওঠে। কেবিনে ঢুকে দেখে সেখানে ডাক্তার এবং হাতে স্ক্যালপেল, সিজার (সোজা ভাষায় কাঁচি) ইত্যাদি র ট্রে হাতে লেডি নার্স উপস্থিত সাথে আরো একজন লোক আছে যিনি স্টাফ ড্রেস পরে থাকলেও অভয়ের সন্দেহ হয় যে সে আদৌ স্টাফ কি না।

তো ডক্টর আমার ডিসচার্জের সমস্ত ফর্মালিটি কমপ্লিট?
আপনাকে এখন ছাড়া যাবে না।
মানে?
আপনি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নন।
আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।
সেটা আমি ঠিক করবো, ডাক্তার আমি।
অভয় দেখে ডাক্তার একটা ওষুধ সিরিঞ্জে ভরছেন, কিন্তু তার হাত কাঁপছে চোখেমুখে প্রচণ্ড টেনশন।
কি হয়েছে ডক্টর?
কিছু না এবার আপনি বেডে শুয়ে পড়ুন।
এটা কিসের ইঞ্জেকশন?
ব্যাথার।
আমার দরকার নেই, আপনি আমার ডিসচার্জের ব্যবস্থা করুন।
বললাম তো আপনাকে এখন ডিসচার্জ করা যাবে না।
কিন্তু আমি আর এখানে থাকতে পারবো না।
এবার তাথৈ কথা বলে: ডক্টর আপনি তো তখন রাজী হয়েই গেলেন ওর ডিসচার্জের জন্য তাহলে এখন..
ডক্টর আমি তাই আমি ঠিক করবো পেশেন্ট কখন ডিসচার্জ হবে, নিন এখন শুয়ে পড়ুন। শেষের কথাটা অভয়কে বলা।
আমি ইঞ্জেকশন নেবোনা ডক্টর। অভয় দাঁড়িয়েই কথাটা বললো।
ইঞ্জেকশনতো নিতেই হবে।
বললাম তো না।
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকে স্টাফ ড্রেস পরা লোকটা পিছন থেকে একটা দড়ি দিয়ে হটাৎ অভয়ের গলায় ফাঁস লাগালো যদিও অভয়‌ও মুহুর্তের মধ্যে একটা হাত ফাঁস আর গলার মাঝে দিয়ে ফাঁসটা গলায় বসে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছে কিন্তু ডাক্তার ইঞ্জেকশনটা লাগাতে যেতেই অপরহাতে ডাক্তারের কবজি ধরে নেয়, অভয় তাথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে: পালাও তাথৈ, কিন্তু তাথৈ অভয়কে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতেই লেডি নার্স একটা স্ক্যালপেল তাথৈএর গলায় ধরে।
ডাক্তার গায়ের জোরে চেপে ইঞ্জেকশনটা অভয়ের শরীরে ঢোকাতে চেষ্টা করছেন, সুঁচের মুখ এখন অভয়ের বুকের অনেকটা কাছে চলে এসেছে, অপরদিকে অভয়ের গলায় ফাঁস আরো দৃঢ় হচ্ছে, এখন ফাঁস মুক্ত হতে গেলে দুটো হাত লাগবে অথচ ডাক্তারের হাত ধরে থাকায় সেটা পারছে না। এখানে মুশকিল আসান হলো তাথৈ হটাৎ একটা ধাতব আওয়াজের সাথে একটা মেয়েলি আর্তনাদ শুনে সবাই মুহুর্তের জন্য ওদিকে তাকায় দেখে তাথৈ কোনোভাবে নিজেকে মুক্ত করে সার্জারি ইনস্ট্রুমেন্টের ট্রে দিয়ে সজোরে লেডি নার্সের মাথায় আঘাত করেছে, এইটুকু অবসর পেয়ে অভয়‌ও একটা পা একটু ভাঁজ করে সজোরে চালায় ডাক্তারের তলপেটে ডাক্তার ছিটকে পিছনে গিয়ে পড়ে তারপর বা অনুইটা উপরে তুলে পিছনে চালায় আর সেটা লাগে পিছনের লোকটার মুখে সঙ্গে সঙ্গে গলায় ফাঁসটা খুলে যায় এবার অভয় লোকটার মাথা ধরে দেয়ালে ঠুকে দেয় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে এবং লোকটা একটা আর্তনাদ করে মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এবার বলোতো ডাক্তার ওটা কিসের ওষুধ ছিল সিরিঞ্জে ঘুমের নাকি বিষ?
জানিনা আমাকে ওরা দিতে বলেছিল তবে বিষ ছিল বোধহয়, আমি দিতে চাইনি বিশ্বাস করুন।
সেটা আপনার হাত কাঁপা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল।
ওরা হাসপাতালে ঢুকে আছে আমাকে হুমকি দেয় আমি যদি না করি তাহলে ওরা এখানে সবাইকে... কথা শেষ হলো না হটাৎ আঃ করে ডাক্তার বেডে শুয়ে পড়লো, তাথৈ এবার ট্রে দিয়ে ডাক্তারের মাথায় আঘাত করেছে, অভয় তাকিয়ে দেখে সে রাগে ফুঁসছে।
এটা কি করলে? জিজ্ঞেস করে অভয়।
বেশ করেছি, উনি একজন ডাক্তার, পেশেন্টকে মারার কথা ভাবাও পাপ আর উনি আমার সামনে আমার অভয়কে বিষ দিতে চাইছিলেন।
অভয়ের মনে পরলো ছোটোবেলায় কলেজের একটা ঘটনা, তখন ক্লাসের প্রায় সবাই জানে অভয় আর তাথৈএর সম্পর্কের কথা যদিও সাম্য এবং ওর কাছের কয়েকজন বন্ধু মানতে পারেনি এটা একদিন সাম্যর এক বন্ধু অভয়কে অপমান করে অভয়রা আর্থিকভাবে গরীব ছিল সেটা নিয়েই কথা শোনায় এদিকে ছোটো থেকেই অভয়ের আত্মসম্মানবোধ প্রবল, তারপর সে তাথৈএর থেকে দূরে থাকতে শুরু করে এমনকি কথা বলাও বন্ধ করে দেয়, তাথৈ এসবের কিছু জানতো না আর অভয় বলেওনি, তাই তাথৈ বুঝতে পারছিল না হটাৎ কি হলো যাতে অভয় তার সাথে এমন করছে।
একদিন ছুটির পরে অভয় ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন সময় ক্লাসের একজন ছুটে ছুটে এসে অভয়কে বলে: অভয় তাড়াতাড়ি চল।
কোথায়?
তাথৈ দেখ কি শুরু করেছে।
কি করছে?
চল গিয়ে দেখবি।
অভয় গিয়ে দেখে তাথৈ রনংদেহী মূর্তি ধরে হুঙ্কার ছাড়ছে ওর হাতে লম্বা একটা ডান্ডা আর কিছুদিন আগে যে ছেলেটা অভয়কে অপমান করেছিল সে একটা বেঞ্চের নীচে লুকিয়ে আছে, সাম্য, বৃষ্টি, সুস্মিতা আরও কয়েকজন মিলেও তাথৈকে শান্ত করতে পারছে না। তাথৈ একটা কথাই বলছে "সরে যা সবাই ওর সাহস হয় কি করে অভয়কে অপমান করার আজ ওকে মারবোই"।
অভয় অবাক হয়ে দেখছিল পাশ থেকে একজন বললো: তাথৈকে কেউ বলেছে যে তোকে অপমান করেছে ওরা তাই.. তুই  ওকে থামা অভয়।
ততক্ষণে তাথৈএর ওই রনংদেহী রূপের সামনে আর হাতে ডান্ডা দেখে কেউ ওর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছে না, যারা ওকে আটকাচ্ছিল তারাও ভয়ে সরে গেছে, তাথৈ ডান্ডাটা দিয়ে সজোরে ছেলেটাকে মারতে যাবে কিন্তু পিছন থেকে অভয় ডান্ডাটা ধরে একটানে ছিনিয়ে নেয়, তাথৈ ঘুরে অভয়কে দেখে
অভয়: কি করছো টা কি এটা?
তাথৈ কয়েকমিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে অভয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারপর পাশ কাটিয়ে চলে যায় অভয় ডান্ডাটা অন্য একজনকে দিয়ে তাথৈএর পিছনে ছুট লাগায়।
আজ তুমি কি করতে যাচ্ছিলে তাথৈ? ওরকম কেউ করে?
তাথৈ উত্তর দেয় না চুপ করে থাকে দেখে অভয় আবার বলে: কথা বলবে না? আচ্ছা তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করাটা আমার ঠিক হয়নি, আমার ভুল হয়ে গেছে এবার তো কথা বলো।
তাথৈ তাও কথা বলছে না দেখে অভয় তার স্পেশাল ট্রিক ইউজ করে যদিও এটায় রিস্ক আছে কিন্তু তাথৈ এরপর কথা না বলে থাকতে পারবে না সে জানে
তুমি কথা বলবে না, বেশ তাহলে আমি আর থেকে কি করবো আমি যাই, ওহ্ ভালো কথা তুমি জানো আজ একজন মেয়ে আমাকে লাভলেটার পাঠিয়েছে, কলেজের পরে দেখা করতে বলেছে, ঠিক আছে আমি আসছি তুমি থাকো।
এরপর আর তাথৈ চুপ থাকতে পারে না যদিও তাথৈ জানে এসব অভয়ের চালাকি কেউ ওকে লাভলেটার দেয়নি কিন্তু তবুও সে চুপ থাকতে পারে না মুহূর্তে অভয়ের কলার চেপে ধরে: খুব শখ না অন্য মেয়ের কাছে যাওয়ার আজ তোমাকেই ডান্ডা পেটা করবো অসভ্য ছেলে।
অভয় হাসছে দেখে তাথৈ আরও রেগে যায় গজরাতে থাকে: কে লাভলেটার দিয়েছে দেখাও তারপর তোমার একদিন আর ওই মেয়েটার একদিন দেখাও।
অভয় হাসতে হাসতে বলে: যাক শেষে কথা বললে আরে কলার ছাড়ো ছিঁড়ে যাবে।
ছিঁড়ুক, আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছিলে কেন?
আচ্ছা বললাম তো ভুল হয়ে গেছে, এবার তো কলার ছাড়ো।
তুমি জানোনা তুমি আমার থেকে একটু দূরে গেলেই আমার কষ্ট হয়।
আচ্ছা বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে, এবার তো হাসো।
তাথৈ অভয়ের কলার ছেড়ে একটা বাহু জড়িয়ে ধরে, পরদিন থেকে আবার দুজনের মধ্যে সব নরমাল তবে এখন আর কেউ অভয়কে অপমান করতে সাহস পায় না, ওই ছেলেটার তরফ থেকেও তাথৈএর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। তাথৈ এমনিতে খুব শান্ত সবার সাথে ভদ্রভাবেই মেশে ওর যত রাগ অভিমান লড়াই সব অভয়ের সাথে কিন্তু কেউ যদি অভয়কে খারাপ কিছু বলে তাহলে তার আর নিস্তার নেই।
আজ তাথৈএর এই রাগী রূপ দেখে কলেজের সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়, কিন্তু নষ্ট করার মতো সময় নেই "আমার ড্রেস কোথায় তাথৈ আর আমার মোবাইল ঘড়ি? জিজ্ঞেস করে অভয়।
বেডের পাশে যে টেবিল আছে ওটার নীচের ড্রয়ারে।
অভয় তাড়াতাড়ি সেগুলো বার করে তাথৈকে বলে: ওদিকে দেখো কেউ আসছে কি না, এদিকে দেখবে না।
কেন?
কেন আবার কি? আমি চেঞ্জ করবো এই পেশেন্ট ড্রেসে বেরোবো নাকি? তাড়াতাড়ি করো।
আমার সামনে পাল্টাও।
এসব কি বলছো তাড়াতাড়ি ওদিকে মুখ ঘোরাও তাকাবে না এদিকে।
তাথৈ যদিও মুখ ঘোরালো কিন্তু মুখ বন্ধ করলো না।
তোমাকে আর কিছু বলার নেই এমন করছো যেন?
যেন কি? অভয় দ্রুত হাতে পেশেন্ট ড্রেস ছেড়ে অন্য পোশাক পড়তে পড়তে বলে কথাটা।
কিছু না, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এখন আমি তোমাকে না তুমি আমাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে আমাদের বাচ্চা সহ।
ইসসস কি মেয়ে রে, একটুও লজ্জা করে না তোমার এগুলো বলতে?
লজ্জা কেন করবে, যা সত্যি সেটাই বলেছি, কি স্বপ্ন দেখেছিলাম আর কি হচ্ছে?
কি স্বপ্ন দেখেছিলে?
আমার একটা ছোট্ট হাসিখুশি পরিবার হবে শ্বশুর শাশুড়ি, স্বামী আর অনেকগুলো ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে।
নাঃ ডেঁপোমিটা একটুও কমেনি দেখছি, যাইহোক চলো।
পোষাক পাল্টে অভয় তাথৈএর হাত ধরে কেবিন থেকে বাইরে আসে আসার আগে ডাক্তারের গোঙানির আওয়াজ শুনে তাথৈ আবার ওনার চোয়ালে একটা ঘুষি মেরে আসে। বাইরে এসেই অভয় বোঝে তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় তাকে সঠিক সংকেত দিচ্ছিল, বাইরে যারা আছে তাদের মধ্যে অন্তত ছজন তাকে মারতে বা আবার ধরে নিয়ে যেতে এসেছে কিন্তু ওরা জানলো কিভাবে যে অভয় এখানে? 
এখন এসব ভাবার সময় নেই, এখন ওদের মোকাবেলা করতে হবে। অভয়ের শরীরে ব্যাথা পুরো না কমলেও আগের থেকে অনেক কম আর দুর্বলতাও অনেক কমে গেছে, অভয় একবার তাথৈএর দিকে তাকালো ওর চোখেমুখে ভয়, অভয় তাথৈকে নিজের পিছনে সরিয়ে এগিয়ে গেল।
প্রথমে একজন এগিয়ে এল হাতে একটা ছুরি নিয়ে, ছুরিটা চালিয়েও দিল কিন্তু অভয়ের কাছে এসব এড়ানো জলভাত, সে আঘাতটা এড়িয়ে একহাতে লোকটার ছুরি ধরা হাতের কবজি ধরলো তারপর অপর হাত দিয়ে লোকটার কনুই চেপে  হাতটা ছুরি সহ লোকটার পেটের দিকে ঘুরিয়ে দিল বলে ছুরিটা লোকটার নিজের পেটেই ঢুকে গেল, এবার দ্বিতীয় জন খালি হাতে এগিয়ে আসতেই অভয় লোকটার মাথাটা পাশ থেকে ঠেলে পাশের দেয়ালে ঠুকে দিলহ তারপর চোয়ালে সজোড়ে একটা ঘুষি মারলো। এবার একসাথে দুজন এগিয়ে এল, কিন্তু একজনের হাতে পিস্তল অপরজন একটু এগিয়ে এসেছিল তাতেই অভয় সুযোগটা কাজে লাগালো লোকটাকে নিজের গার্ড হিসেবে ব্যবহার করলো, লোকটার হাত দুটো ধরে পিছনে ঠেলে দিল ফলে সে পিস্তলধারী লোকটার গায়ের উপর পরলো এবং দুজনেই টাল সামলাতে না পেরে নীচে পরে গেল, ওঠার আগেই অভয় একজনের হাঁটুতে সজোরে লাথি মারলো ,একটা শব্দ এবং আর্তনাদে বোঝা গেল লোকটার হাঁটু ভেঙে গেছে, এই দেখে বাকী দুজন সটান পিছনে দৌড় লাগালো, পিস্তলধারী লোকটা উপরের সঙ্গীকে ঠেলে সরিয়ে নিজে উঠে দাঁড়ালো তার হাত থেকে পিস্তল ছিটকে পরে গেছে সে খালি হাতেই এগিয়ে এল কিন্তু এবারও অভয় তার আঘাতটা এড়িয়ে তাকে দেয়ালে ঠেলে দিল এবং লোকটা এগিয়ে আসার আগেই একপা তুলে লোকটার তলপেটে লাথি কষালো, এদিকে দুজন আগেই পালিয়েছে কাজেই এই যুদ্ধে সে বিজয়ী, এদিকে যারা সত্যিই কোনো পেশেন্টের বাড়ির লোক ছিল তারাও পালিয়েছে।
এবার আর দেরী না করে তাথৈকে নিয়ে নীচে নামতে থাকে অভয় তবে লিফট বা সাধারনের জন্য ব্যবহৃত সিঁড়ি দিয়ে নয়, এমার্জেন্সী এক্সিট দিয়ে, দুজনে বাইরে এল যেখানে তাথৈ তার গাড়ি পার্ক করেছিল, গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় তাথৈ হটাৎ প্রায় অচেতন হয়ে পরে যাচ্ছিল কিন্তু অভয় ওকে ধরে নিল।
তাথৈ তাথৈ কি হলো তোমার? অভয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
তাথৈ প্রায় অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে ওর উপরে নিজেকে ছেড়ে দেয়, অভয় আরও ভয় পেয়ে যায়: এই তাথৈ কি হয়েছে? তাথৈ।
খানিকক্ষণ পরে অভয় কাছে একটা জলের কল থেকে জল এনে তাথৈএর চোখেমুখে দিতে তাথৈ চোখ খুলে তাকায়।
কি হয়েছিল?
জানিনা মাথাটা হটাৎ ঘুরে গেল? তাথৈ দুর্বল কণ্ঠে বলে।
তুমি না খেয়ে আছো?
তাথৈ উত্তর দেয় না, কিন্তু অভয় জানে এটাই সত্যি, খুব বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে তাথৈএর মাথা ঘোরে, এটা ওর ছোটোবেলার অভ্যাস সেইজন্য যখন অভয়ের জন্য উপোস রাখতো অভয় বারণ করতো কিন্তু তাথৈ শুনতো না আর এখন তো প্রায় দুদিন ও কিছু না খেয়ে আছে। অভয় তাড়াতাড়ি তাথৈকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
এ ঘন্টাখানেক পরে একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পরে তাথৈ অনেকটা সুস্থ বোধ করলো। গাড়িতে ওঠার আগে অভয় তাথৈকে বললো: এবার কোথায় যাবে?
তুমি কোথায় যাবে?
আমাকে বস্তিতে ফিরতে হবে, জানিনা ওখানের অবস্থা কিরকম, মা কেমন আছেন কিছু জানিনা এদিকে আমার ফোনটাও বন্ধ, চার্জ নেই।
আমিতো আগেই বলেছি আমি তোমার সাথেই থাকবো।
তাথৈ আরেকবার ভেবে দেখো
কি ভাববো?
তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো সেটার ব্যাপারে।
এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়ে গেছে অভয়।
তাথৈ তোমার জ্যেঠু আর বাবার সাথে আমার একটা লড়াই চলছে আমি এই লড়াই থেকে পিছিয়ে আসবো না তাই।
তাই কি? তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
তাথৈ আমি চাইনা এই লড়াইতে তোমাকে কষ্ট পেতে হোক বা তোমার কোনো ক্ষতি হোক।
আমার জ্যেঠু আর বাবার সত্যিটা জানার পরেও আমি ওনাদের সাথে থাকবো এটা ভাবলে কিভাবে?
আমার সাথে থাকা এখন তোমার জন্য রিস্কের, দেখলে না ওখানে ওরা আমাকে মারতে এসেছিল, তোমার জ্যেঠু এতক্ষণে তার পুরো দলকে আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন, আর আমি ওনাকে যতদূর চিনেছি উনি নিজের স্বার্থের জন্য তোমার ক্ষতি করতেও পিছপা হবেন না।
তবুও তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
আমি শুধু তোমাকে খুশী আর সুরক্ষিত দেখতে চাই।
আমার খুশি তোমার সাথে, আমার জ্যেঠু যদি ভালো মানুষ হতেন তাহলে আমি কোনো অবস্থাতেই ওনাকে ছাড়তাম না কিন্তু উনি আর আমার বাপি যা করেছেন তার জন্য ওনাদের কঠিন শাস্তি হ‌ওয়া উচিত, তাই আমি তোমাকে এই লড়াইটা বন্ধ করতে বলবো না আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।
তুমি সত্যিই বড়ো হয়ে গেছো।
দুজনে গাড়িতে উঠে পড়লো কিন্তু বেশ কিছুদূর যাবার পরেই হটাৎ গাড়ি থেমে গেল।
কি হলো? তাথৈ জিজ্ঞেস করে।
তেল শেষ।
এবার কি হবে?
আমাদের গাড়িটা এখানেই ছাড়তে হবে, উপায় নেই।
দুজনে গাড়ি থেকে নামলো, আশেপাশে কয়েকটা দোকান আছে কিন্তু বন্ধ, রাত শহরের তুলনায় খুব বেশী নয় কিন্তু তবুও রাস্তায় লোক চলাচল কম, দুজনে যেদিক থেকে এসেছিল তার উল্টোদিকে হাঁটতে লাগলো, কিছু দূর যাবার পরে একটা হোটেলে কিছু লোক দেখে সেখানে যায়, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানে  এখান থেকে অনেকটা দূরে একটা রেলস্টেশন আছে, কিন্তু এখন গাড়ি পাবে না। রাতে কোথাও থাকা যাবে কি না জিজ্ঞেস করায় একজন বললো: না, ওরা এই হোটেলে কাজ করে, এখন বন্ধ করে চলে যাচ্ছে, তবি হোটেলের পাশ দিয়ে একটা পথ দেখিয়ে বলে ওদিকে কিছুদূর গেলে একটা মন্দির আছে, সেখানে আপনারা থাকতে পারেন।
ধন্যবাদ। বলে অভয় আর তাথৈ সেদিকে এগিয়ে গেল, রাতে মন্দিরের চাতালে একটা কোনায় দুজনে আশ্রয় নিল, খানিকক্ষণ পরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো সাথে বজ্রপাত এবং সেরকম জোরে ঠান্ডা হাওয়া,যার ফলে বেশ শীত শীত করতে থাকে, দুজনেরই খুব কষ্ট হচ্ছে তাথৈএর বেশি কারণ সে এর আগে কখনো এরকমভাবে থাকেনি, সে অভয়ের গা ঘেঁষে প্রায় গুঁটিসুঁটি মেরে কোনোমতে সহ্য করতে থাকলো
আমি আগেই বলেছিলাম আমার সাথে থেকোনা, তুমি শুনলে না এখন দেখছো তো কত কষ্ট হচ্ছে, রীতিমতো ঠাণ্ডায় কাঁপছো তুমি। তাথৈকে প্রায় নিজের শরীরের সাথে জড়িয়ে কথাটা বলে অভয়।
কেন বারবার এক কথা বলছো, তুমি কেন বুঝতে চাইছো না এইটুকু কষ্টে আমার কিছু হবে না কারন তুমি আমার সাথে আছো কিন্তু তোমাকে ছেড়ে গেলে আমি বাঁচবো না।
অভয় নিজের গায়ের জামাটা খুলে তাথৈএর শরীরে জড়িয়ে দেয়, এতে তার নিজের কষ্ট আরো বেড়ে যায় কারণ সে সম্পূর্ণ খালি গা।
এটা কি করছো? জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
এটা জড়িয়ে নাও।
তোমার ঠান্ডা লাগবে।
আমার অভ্যাস আছে।
না অভয় তোমার শরীরে জামা ছাড়া কিছু নেই, জামাটা পরে নাও।
না, তোমার বেশি ঠান্ডা লাগছে, তুমি জড়িয়ে নাও।
দুজনে কোনোমতে সময় কাটাতে থাকে এবং গুটিসুটি মেরে কোনোমতে বৃষ্টির জলের ছাট থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে দুজনে সকালের আলো ফোটবার অপেক্ষা করতে থাকে, মন্দিরের চাতালে থাকায় তবুও কিছুটা রক্ষে, একটু আগুন জ্বালানো গেলে আরও ভালো হতো কিন্তু প্রথমত দেশলাই আনতে মনে ছিল না ওদের তাছাড়া মন্দিরের চাতালে আগুন জ্বালাবেই বা কিভাবে? ভোরের ঠাণ্ডা হাওয়ায় দুজনের কষ্ট আরও বেড়ে যায় ওরা ভেবেছিল ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই আবার র‌ওনা দেবে কিন্তু ঠাণ্ডায় এমন অবস্থা হয় যে তারা ভোরের আলো ফোটার অনেকক্ষণ পরেও অসাড় হয়ে থাকে, ধীরে ধীরে সূর্যের আলো আরো বাড়লে ঠাণ্ডা ভাবটা কিছুটা কমে, আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার হ‌ওয়ার সাথে সাথেই দুজনে আবার বেরিয়ে পরে।
একটা ট্রেকারে করে দুজনে যখন স্টেশনে পৌঁছায় তখন বেলা আরও বেড়েছে, স্টেশন চত্ত্বরে লোক বেশি নেই টিকিট কেটে প্লাটফর্মে যায়, চোখে মুখে জল দেয়। অনেকগুলো ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে টাইম দেখে ওরা একটা কামরায় ওঠে ওঠার আগে অভয় লক্ষ্য করে কয়েকজন লোক পাশের কামরায় উঠলো, লোকগুলোকে দেখে অভয়ের ঠিক ভালো লাগলো না।
ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে অভয় তাথৈকে নিয়ে নেমে গেল এতে তাথৈ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি হলো এই ট্রেনে..
পরেরটায় যাবো আসো।
তাথৈএর হাত ধরে পাশের প্লাটফর্মে যাওয়ার জন্য ফুটব্রীজে উঠতে উঠতে হটাৎ অভয়ের চোখে পড়লো সেই লোকগুলো দ্রুতপায়ে তাদেরই দিকে হেঁটে আসছে এবার আর অভয়ের সন্দেহ র‌ইলো না যে ওরা ওদের‌ই পিছনে আছে, কিন্তু কথা হলো ওরা অভয় আর তাথৈএর ব্যাপারে জানছে কিভাবে? কিভাবে জানছে ওরা কোথায়?।
অভয়ের মুখ গম্ভীর দেখে তাথৈ একটু অবাক হয়, জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছে তোমার?
কিছুনা।
কিছু তো একটা হয়েছে।
আমাদের পিছনে লোক লেগেছে।
কি? তাথৈ চারপাশে শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকায়।
ওইভাবে দেখতে পাবে না, কিন্তু কথা হচ্ছে ওরা জানছে কিভাবে আমরা কোথায়?
তোমার কি মনে হয়?
আমাদের দুজনের কারো কাছে ট্র্যাকার আছে?
ট্র্যাকার?
লোকেশন ট্র্যাকার, যেটা দিয়ে কারো লোকেশন ট্র্যাক করা হয়, এবং খুব সম্ভবত সেটা তোমার কাছে।
এটা কি বলছো?
দেখো তোমার জ্যেঠুর স্থির বিশ্বাস ছিল আমি ওনার কবল থেকে পালাতে পারবো না এবং উনি যখন খুশি আমাকে মেরে ফেলতে পারবেন তাই আমার আশেপাশে ট্র্যাকার লাগানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই।
কিন্তু আমার কাছে কেন?
কারণ তুমি ওই পরিবারের মেয়ে,যদি খুব ভুল না করি তাহলে তোমার এবং তোমার দিদির লোকেশন সবসময় নজরে রাখার জন্যই উনি তোমাদের দুজনের সাথেই ট্র্যাকার ফিট করেছেন।
কিন্তু তাহলে গতরাতে ওরা আমাদের কাছে পৌঁছালো না কেন?
এটা খুব ভালো প্রশ্ন করেছো তুমি। তারপর কিছু একটা ভেবে অভয় বলে: গতকাল রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল তাও বজ্রপাত সহ।
তাতে কি?
বজ্রপাতে হয়তো ট্র্যাকিং ডিভাইসটা নেট‌ওয়ার্কের সাথে কানেকশন হারিয়ে ফেলেছিল, সকালে আকাশ পরিষ্কার হতেই আবার সব ঠিক হয়ে গেছে, এছাড়া আর কোনো ব্যাখ্যা মাথায় আসছে না, কিন্তু আমাদের সাথে ট্র্যাকিং ডিভাইস আছে এটা শিওর।
বিশ্বাস করো আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা।
আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি না তাথৈ, আমার তোমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
কেন?
তোমার জ্যেঠুকে তুমি কতটা চেনো জানিনা কিন্তু যেটা আমি বলেছিলাম উনি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কারো ক্ষতি করতে পারেন।
তাথৈ চুপ করে থাকে কিন্তু অভয় বলে চলে: জানি কথাগুলো তোমার খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই সত্যি উনি এমন একজন মানুষ যিনি নিজের ছেলেকেও প্রাণে মারবার ভয় দেখান শুধুমাত্র ছেলের মাকে নিজের নিয়ণ্ত্রনে রাখবেন বলে।
মানে,এটা কি বলছো তুমি জ্যেঠুমণির ছেলে?
হ্যাঁ, ওনার আরও একজন ছেলে আছেন এবং তার মাকে তুমি হয়তো চেনো?
কে?
তুমি তোমার দিদি বৃষ্টির মাসিকে চেনো?
শিউলী মাসি?
হ্যাঁ, উনি এবং ওনার ছেলে রোহিত।
শিউলী মাসি তো নিরুদ্দেশ।
না,তাকে এতবছর এই শহরেই রেখেছিলেন বীরেন বাবু, একটা বিশেষ কারনে তাকে মারেননি।
তুমি শিউলী মাসির কথা কিভাবে জানলে?
জেনেছি, তোমার জ্যেঠু নিজের ওই ছেলের প্রতি কোনো দায়িত্ব‌ই পালন করেননি এমনকি নিজের স্বীকৃতিটুকুও দেননি, শুধু শিউলী দেবীকে কিছু টাকা দিতেন মাসে মাসে।
একজন মানুষ এতটা নীচে কিভাবে নামতে পারে? তাথৈএর গলায় রাগ, ঘেন্না, চাপা কষ্ট মেশানো।
ক্ষমতার লোভ এবং ক্ষমতা অর্জনের পরে তাকে নিয়ণ্ত্রন না করতে পারা এই দুইতেই তিনি এতটা নীচে নেমেছেন।
আর আমার বাপি? তার তরফ থেকেও কি আমার কোনো ভাই বোন আছে?
বোধহয় না, তবে উনি অসম্ভব দাদাভক্ত, বীরেন ভট্টাচার্যের প্রায় সব খারাপ কাজের সঙ্গী উনি।
জানো ছোটোবেলায় না আমি বাপিকে মাকে মারতে দেখেছি, কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না খুব ভয় পেতাম, কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ওনাদের মতো খারাপ ন‌ই।
আমি জানি, একবার তোমাকে অবিশ্বাস করে ভুল করেছিলাম দ্বিতীয় বার করবো না।

আমিরকে দেখে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় বিদিশার, এক নতুন অনুভূতি যেটা আগে কখনো অনুভব করেনি, সে বুঝতে পারে না এটাই কি ভালোবাসা? সে কি আমিরকে ভালোবেসে ফেলেছে? আমিরের সাথে আলাপ বেশী দিনের নয়,রয়ের সাথে পরিচয়ের পরে প্রায়ই ও রয়ের বাড়িতে আসতো অবশ্য‌ই রয়কে বলে, মাঝে মাঝেই রয় থাকতো না কিন্তু নিজে না থাকলেও আমিরকে রেখে যেত, বিদিশার‌ও খারাপ লাগতো না আমিরের সঙ্গ দুজনে গল্প করতো, ধীরে ধীরে আমিরের সঙ্গ আরও ভালো লাগতে থাকে, তার সাথে ভালো লাগতে থাকে এই আমিরকে এমন নয় যে রয়কে সে অপছন্দ করে কিন্তু রয় স্রেফ বন্ধু, অথচ আমির.. সে তার থেকে বেশী কিছু কিন্তু ঠিক কি সেটা বিদিশা বুঝতে পারতো না, কিন্তু এইকদিন রয়ের অনুপস্থিতিতে আমিরকে ভেঙে পরতে দেখে বিদিশার খুব কষ্ট হয়, আমিরকে সে এইভাবে কল্পনাও করতে পারে না, সে অনেক চেষ্টা করেছে আমিরকে বোঝানোর অনেকবার বলেছে কিন্তু লাভ হয়নি আজ আবার ওকে ভেঙে পরতে দেখে আর থাকতে পারলো না বিদিশা বললো "আমির, এইভাবে ভেঙে পরতে নেই, রয় তোমাকে ভরসা করতো তোমার বিপদের কথা শুনে কিছু না ভেবে ছুটে গিয়েছিল এখন তোমার উচিত ওকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা"।
কিন্তু ওকে পাবো কোথায়? ওর ফোনটাও বন্ধ।
আমির ওর গাড়িতে ও ছিল না, হয়তো বীরেন ভট্টাচার্য ওকে কোথাও আটকে রেখেছে, টর্চার করছে, আমাদের উচিত যেভাবেই হোক ওকে খুঁজে বার করা।
যদি এটা সত্যি হয় তাহলে আমি ওকে খুঁজে বার করবোই কিন্তু..
কিন্তু কি আমির?
আম্মিকে আর কতদিন মিথ্যা বলবো? আমার আম্মি যাওয়ার পরে উনি‌ই আমাকে নিজের ছেলের মতো কাছে টেনে নিয়েছিলেন কোনোদিন রয়ের সাথে আমার তফাৎ করেননি আর আমি.. আমির কাঁদতে থাকে।
বিদিশা ওর কাছে বসে আমিরকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকে: আমির তুমি ওনাকে আম্মি বলেছো আর রয় তোমাকে ভরসা করতো তাই ওনার দায়িত্ব তোমাকে দিয়েছে এখন তুমি ওনার খেয়াল রাখবে না তো কে রাখবে?
কিন্তু আমি আর পারছি না ওনাকে মিথ্যা বলতে।
এটুকু আমাদের করতেই হবে আমির, নাহলে রয় ফিরে এলে কি উত্তর দেবো?
আমির আবার ভেঙে পরে বিদিশার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে বিদিশা আমিরের মাথায় পিঠে হাত বোলাতে থাকে।
বীরেন ভট্টাচার্যের অবস্থা এখন পাগলপ্রায়, একে তো এআরসি তার লোকদের মেরে পালিয়েছে তার সাথে টাকা আর শিউলীর হদিশ ও নিয়ে গেছে ,রকি আর ধীরেন ঠিকই বলেছিল ওকে শেষ করে দেওয়াই উচিত ছিল, জগা অবশ্য খবর দিয়েছিল যে এক হাসপাতালে ও আছে সেখানেও লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেখান থেকেও বেঁচে গেছে, তিনি ভালো করেই জানেন এআরসি এখন একা, ওকে শেষ করার এটাই উপযুক্ত সময় এআরসি একবার যদি নিজের দলের কাছে পৌঁছাতে পারে তাহলে আবার পুরো শক্তি দিয়ে তার উপরে আঘাত হানবে আর সেটা কত ভয়াবহ কত নির্মম, কত নৃশংস হতে পারে তার একটা ছোট নমুনা তো বাণিজ্যনগরীতে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন, সেদিনের ঘটনা মনে পরতেই বীরেন ভট্টাচার্যের সারা শরীরে আতঙ্কের চোরাস্রোত বয়ে যায়, কিন্তু এআরসি এখনো তার দলের কাছে পৌঁছাতে পারেনি এটাই ভরসা সে এখনো একা... না একা নয় তার সাথে আরও একজন আছে যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, যে এখন তার সাথে আছে তার ভাইজি তাথৈ।
তিনি তার ভাইকে বলেন: ধীরেন ওকে খুঁজে বার কর, এআরসিকে বাঁচতে দেওয়া যাবে না ওকে শেষ করতেই হবে।
তুমি চিন্তা কোরো না দাদা ওর পিছনে আমার লোক ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে একটু সুযোগ এলেই শেষ করবে।
কিন্তু ওর সাথে তাথৈ আছে।
তাথৈএর জন্যই তো ওর খোঁজ পেলাম, আগে ওই এআরসিকে শেষ করি তারপর তাথৈএর ব্যবস্থা করবো। ধীরেন ভট্টাচার্য ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর বীরেন ভট্টাচার্য জগাকে বললেন: কি রে খুব তো বলেছিলি ওই এআরসিকে তুই শেষ করবি কি হলো?
দাদা ছোটদাদার মতো আমার লোকেরাও ওদের পিছনে লেগে আছে কিন্তু তাথৈ দিদিমণির জন্য কিছু করতে পারছে না।
তাহলে দুটোকেই শেষ কর।
এটা কি বলছেন দাদা? জগা যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা ওর গলার স্বরেই বোঝা যাচ্ছে।
ঠিকই বলছি, ও ওই ছেলেটার সাথে গেছে আমাদের ছেড়ে তাই আমিই বা কেন ওর কথা ভাববো?
কিন্তু ছোটদাদা?
তোকে যা বলেছি সেটা কর, ধীরেন যদি ওর মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে পারে তো ভালো নাহলে তুই ওকেও ওই এআরসির সাথে শেষ করে দিবি, বুঝেছিস?
হ্যাঁ দাদা, বুঝেছি।
আর এটা যেন কেউ না জানে,মনে থাকবে?
হ্যাঁ দাদা।
ট্রেন নিজের গতিতে এগিয়ে চলেছে একের পর এক স্টেশন আসছে আবার পিছনে চলে যাচ্ছে লোক উঠছে আবার নেমেও যাচ্ছে অভয়দের কামরায় খুব ভিড় নেই, মোটামুটি খালি‌ই বলা চলে, তাথৈ আর অভয় একটা বেঞ্চে বসে আছে তাথৈ জানালার ধারে আর পাশে বসে অভয় ওর মাথায় এখন অনেক চিন্তা ঘুরছে, তার মধ্যে মায়ের চিন্তা, বস্তির লোকেদের চিন্তা আর এইমুহূর্তে যেটা সবথেকে বেশি ভাবাচ্ছে সেটা হলো ওদের পিছনে ধাওয়া করা লোকগুলো, এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই যে ওরা ট্র্যাকারের সাহায্যেই ওদের লোকেশন ট্র্যাক করছে কিন্তু কোথায় ট্র্যাকিং ডিভাইসটা?
একসময় অভয় দেখে তাথৈ ঘুমে ঢুলছে যেটা স্বাভাবিক এই কদিনে মেয়েটার উপর থেকে কম ধকল যায়নি অভয়কে হাসপাতালে আনা সেখানে রাত জেগে থাকা তার আগে বাড়ি থেকে না জানি কখন বেরিয়েছে তার উপরে গত রাতেও ঘুম হয়নি। অভয় তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের কাঁধে টেনে নেয়, তাথৈ একবার অভয়ের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত মনে অভয়ের কাঁধে মাথা রাখে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।
অভয় একদৃষ্টিতে তাথৈএর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, এই মেয়েটাকে সে ভুল বুঝেছিল মেয়েটা শুধু তার জন্য এতগুলো বছর অপেক্ষা করে আছে আর সে... ভুল বুঝে তাকে রীতিমতো কষ্ট দিয়ে গেছে। তাথৈএর মুখের উপর চুল আসছিল অভয় সেটা সরিয়ে দেয়, নিজের মনেই বলে "তোমার জ্যেঠু আর বাবার সাথে আমার লড়াই শেষ হবার পরে যদি তুমি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে কথা দিচ্ছি কখনো তোমার চোখে জল আসতে দেবো না , তোমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবো, কিন্তু জানিনা আমার হাতে তোমার বাবা আর জ্যেঠুকে মরতে দেখার পরেও তুমি আমার সাথে থাকতে রাজী হবে কি না, যদি নাও হ‌ও তাহলেও আমি সারাজীবন তোমাকেই ভালোবেসে যাবো।"
ঘুমন্ত অবস্থায় তাথৈএর মুখ আরও সুন্দর আর‌ও নিষ্পাপ লাগে অভয়ের সে একদৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে হটাৎ তার নজর পরে তাথৈএর গলায় একটা চেন আর লকেটের উপর, সোনার চেন এবং লকেটটাও সোনার। লকেটটা দেখে একটা সম্ভাবনা মাথায় আসে অভয়ের সে একবার কামরায় আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়, যদিও লোক বেশি নেই এবং তাদের দিকে কারোরই নজর নেই তবুও সে সোয়াস্তি পায় না।
অভয় ভাবতে থাকে যে কি করা যায়?, যে লোকগুলো তাদের পিছনে ধাওয়া করছে তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বীরেন ভট্টাচার্যকে বলে দিয়েছে তার কথা অত‌এব তাদের ঝেড়ে ফেলতেই হবে কিন্তু কিভাবে? ট্রেনের কামরায় কাজটা একটু মুশকিল, আবার প্ল্যাটফর্মে নেমে ওদের মোকাবেলা করাও যাবে না সেখানেও লোক থাকবে তাছাড়া তাথৈকে একা ছাড়তে মন চাইছে না, শেষপর্যন্ত অভয় ঠিক করলো সে কিছুক্ষণের জন্য প্ল্যাটফর্মে নেমে যাবে এছাড়া উপায় নেই।

?
Like Reply
(28-10-2022, 09:19 PM)Monen2000 Wrote:
                            ঊনবিংশ পর্ব

অভয়... তাথৈ অভয়ের অবস্থা দেখে চিৎকার করে ওঠে অভয় তাকিয়ে দেখে সাম্য জোরপূর্বক তাথৈকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, অভয় কোনোমতে খুঁড়িয়ে ওকে বাঁচাতে ছোটে ,ওকে আসতে দেখে সাম্য পিস্তল চালায় কিন্তু তাথৈ ওর হাতে আঘাত করায় লক্ষ্য মিস করে, সাম্য মিস করলেও অভয় করে না সাম্য মাটিতে লুটিয়ে পরে।
তাথৈ আর অভয় মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকা ধীরেন বাবুর কাছে যায়, তার এখন মৃতপ্রায়।
বাপি.. তাথৈ আবার ধীরেন বাবুর কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে ডাকে। ধীরেন বাবু চোখ খোলেন, তার ঠোঁট নড়ছে যেন কিছু বলার চেষ্টা করছেন আস্তে আস্তে আওয়াজ বেরোয়: অ...ভ..য়।
অভয়ের পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি আগের কাটা জায়গা থেকে আবার রক্তপাত শুরু হয়েছে তার উপরে নতুন আঘাত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আস্তে আস্তে এসে ধীরেন বাবুর কাছে আসে ওনাকে ধরে তোলার চেষ্টা করে বলে: একটু সহ্য করে থাকুন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তাথৈ ওনাকে ধরে তুলতে চেষ্টা করো।
না.. অনেক কষ্টে কথাটা বলেন ধীরেন বাবু, একটু ঢোঁক গিলে আবার বলতে থাকেন: অন্তত.. আমার মেয়েকে বাপির খুনির সাথে থাকতে হবে না।
বাপি...
অ...ভ...য় আমার অপরাধের শাস্তি আমার মেয়েটাকে দিও না।
ধীরেন বাবু এসব কথা পরে হবে, আপাতত হাসপাতালে চলুন।
আমার সময় শেষ, আমার মেয়েটাকে দেখো। আর কথা বলতে পারলেন না ধীরেন বাবু মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন, তাথৈ চিৎকার করে নিজের বাবার মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পরলো।
অভয় তাথৈএর পাশে গিয়ে ওকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, এমন সময় কয়েকটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই অভয় কপালে একটা জোরে আঘাত পেয়ে ছিটকে পরে হাত থেকে পিস্তলটা পরে যায়,  দেখে জগা দাঁড়িয়ে আছে আর আঘাতটা ওই করেছে পিস্তলের গ্ৰিপের তলা দিয়ে, কপালে কেটে রক্ত বেরোতে থাকে, এমনিতেই অভয় আগের রক্তপাতে কিছুটা দুর্বল তারপরেও তাড়াতাড়ি উঠতে যায় কিন্তু আবার থুতনিতে জগার ঘুষি খেয়ে ছিটকে পরে।
অভয়.. তাথৈ তাড়াতাড়ি ওর কাছে আসে, দুজনে দেখে জগার পিছনে আরো কয়েকজন পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে আছে, জগা কথা বলে: তুই দাদাকে মারতে এসেছিলি এবার কি করবি? সেদিন বাণিজ্যনগরীতে আমাদের অপমান করেছিলি আজ তোকে মেরে প্রতিশোধ নেবো, দাদার আদেশ তোকে আর ওই তাথৈকে দুজনকেই শেষ করতে। বলে পিস্তল উঁচিয়ে ট্রিগার টিপতে যাবে কিন্তু তার আগেই অভয় হাতের কাছে একটা ছোট ইটের টুকরো পেয়ে সেটা জগার কপালে ছুঁড়ে মারে জগা আবার কপালে হাত দিয়ে পিছনে সরে যায় আর অভয় জগার হাতে এক লাথি মারে ফলে জগার পিস্তল ছিটকে পরে তখনই একটু দূর থেকে পরপর কয়েকটা পিস্তলের আওয়াজ হতে থাকে এবং জগার পিছনে যারা ছিল তারা মাটিতে লুটিয়ে পরতে থাকে।
কয়েকজন লোক পিস্তল হাতে ওদের ঘিরে ফেলে জগাও আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এরা যে ওর নিজের দলের লোক নয় সেটা আর বলে দিতে হয় না। অভয়‌ও তাকিয়ে আছে, তাথৈ ওর কাছে ঘেঁষে অভয়কে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
রয়। অতি পরিচিত কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে অভয়, আমিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখে হাসি ফোটে, আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে যায় আমির‌ও এগিয়ে আসে যেন কত বছর পর দুই বন্ধুর দেখা হলো এমনভাবে দুজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।
তুমি ঠিক আছো? ব্যাগ্ৰভাবে জিজ্ঞেস করে অভয়।
তুমি কেমন আছো, কোথায় ছিলে এতদিন, তোমার ফোন বন্ধ কেন? এক নিশ্বাসে প্রশ্ন করতে থাকে আমির।
অভয় উত্তর দিতে যাবে এমন সময় একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে জগাকে চেপে ধরে আছে দুজন আর জগা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে, আমির হুকুম দেয়: বশির দেখছো কি ওকে এখনি শেষ করো 
দাঁড়াও। অভয়ের দৃঢ় কণ্ঠ, হাত ছাড়ো ওর।
দুজন হাত ছেড়ে দেয়, জগা অগ্নিদৃষ্টিতে অভয়কে যেন জ্বালিয়ে দিতে চায়, অভয় বলে: কি বলছিলি আমাকে মারবি তারপর তাথৈকে মারবি, যা ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখা যদি ক্ষমতা থাকে ওকে টাচ করে দেখা। বলে জগার চোয়ালে এক ঘুষি মারে জগা কয়েক পা পিছিয়ে যায় কিন্তু এগিয়ে এসে এবার অভয়কে এক ঘুষি মারে, সঙ্গে সঙ্গে অভয়ের দলের লোকেরা পিস্তল উঁচু করে কিন্তু অভয় ওদের থামায়, তারপর আবার জগা মারতে এলে ওর হাতটা ধরে মোচড়িয়ে নিজে জগার পিছনে গিয়ে কোমরে এক লাথি মারে জগা হুমড়ি খেয়ে নীচে পরে, অভয়‌ও খোঁড়াতে থাকে, শরীরে আঘাত থেকে রক্তপাত চলছে, এবার আমিরের দিকে  হাত বাড়ায় সে, আমির বোঝে কি চাইছে, সে নিজের পিস্তলটা এগিয়ে দেয়, পরপর পিস্তলের  কয়েকটা কানফাটানো আওয়াজের সাথেই জগার দেহটা নিথর হয়ে যায়।
দুর্বল শরীরে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই আমির এসে ধরে নেয়, শুনতে পায় অভয় বলছে: আমির যে করেই হোক সরমা দেবী মানে তাথৈএর মা কে ভট্টাচার্য বাড়ি থেকে বার করে আনতে হবে।
হয়ে যাবে, চিন্তা কোরো না।
তারপর অভয় আস্তে আস্তে তাথৈএর কাছে যায় ও তখন আবি নিজের বাবার মৃতদেহের কাছে বসে কাঁদছে, অভয় ওর পাশে বসে কাঁধে একটা হাত রাখে, তাথৈ সঙ্গে সঙ্গে অভয়কে জড়িয়ে ধরে অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পরে।

শ্মশানে যে ইলেকট্রিক চুল্লিতে ধীরেন বাবুর দেহ জ্বলছে তার সামনে তাথৈ আর সরমা দেবী বুকফাটা বিলাপ করছেন, তাথৈএর ফোন থেকে ওনাকে ডেকে বাড়ির বাইরে এনে এখানে আনতে অবশ্য কোনো অসুবিধা হয়নি, এখানে এসে মেয়েকে দেখে আর তআর সাথে স্বামীর মৃতদেহ দেখেই ভেঙে পড়েন তিনি, যতই স্বামী বেঁচে থাকতে মারধর করুক স্বামী তো, এতগুলো বছর একসাথে সংসার করেছেন, মা মেয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে অভয় ,কপালে কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো, গায়ের জামাটা খুললে আরো অনেক কেটে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া যাবে, সে গম্ভীর মুখে থাকলেও তার চোখেমুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট, এই কষ্ট তাথৈএর জন্য তাকে কাঁদতে দেখার কষ্ট যদিও সে নীজেও ধীরেন ভট্টাচার্যকে মারতে চেয়েছিল হয়তো মারতো‌ও কিন্তু এখন তাথৈকে ওর বাবার জন্য কাঁদতে দেখে ওর সত্যিই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ধীরেন বাবুর চিতা ভস্ম নদীতে বিসর্জন দেওয়ার সময় অভয় তাথৈএর সাথে যায়, বিসর্জন দেওয়ার পরে অভয় তাথৈকে বুকে টেনে নেয়, তাথৈও অভয়ের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে কেঁদে ভাসাতে থাকে।
রয়ের বাড়িতে বাগানের কাজ করছিল বিদিশা, সেই কখন আমির বেরিয়ে গেছে কোথায় গেছে কেন গেছে কিছু বলে যায়নি, কখন ফিরবে সেটাও না, এদিকে অমৃতাদেবী তাকে প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকেন প্রথমে রয়ের আর তারপর আমিরের ওরা কোথায় গেছে, কি করছে কখন ফিরবে ইত্যাদি, বলাবাহুল্য কোনোটার উত্তর‌ই বিদিশার কাছে নেই, ভাসা ভাসা উত্তর দিয়ে বাইরে বাগানে বেরিয়ে আসে সে।
বাগানে একটা ফুলগাছে জল দিচ্ছিল বিদিশা তার এখন সত্যিই চিন্তা হচ্ছে রয়ের জন্য ছেলেটা কোথায় গেল? যতই সে আমিরকে সান্ত্বনা দিক যে ওর কিছু হয়নি কিন্তু ওর নিজের মনেও ভয় বাড়তে থাকে বীরেন ভট্টাচার্য যে ধরনের লোক তাতে নিজের শত্রুকে যদি হাতে পান তাহলে ছেড়ে দেবেন না এটা হলফ করে বলা যায়। তার জন্য কত কিছু করেছে রয় তাকে রকির কবল থেকে উদ্ধার করেছে অতীনের হাতে মরা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে, একটা আশ্রয় দিয়েছে সব থেকে বড়ো কথা নতুন জীবন শুরু করার রাস্তা ও কারণ দিয়েছে আর আজ সেই নিঁখোজ।
আনমনে এইসব‌ই চিন্তা করছিল বিদিশা, মাঝে কয়েকবার আমিরকে ফোন করেছিল কিন্তু আমির ধরেনি এতে চিন্তা ও ভয় দুটোই বেড়ে গেছে। হটাৎ একটি পরিচিত কণ্ঠে পরিচিত ডাক শুনে চমকে ওঠে বিদিশা
হ্যালো বিউটিফুল। বিদিশা তাকিয়ে দেখে রয় দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে হাসি থাকলেও সেটা যেন হতাশার, নিজের কষ্টকে লুকোনোর। "রয়" বলে হাতের জলের ক্যানটাকে নীচে রেখে এক ছুটে এসে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে "কোথায় ছিলে তুমি, তোমার মাথায় চোট লাগলো কিভাবে?"
বলছি, আগে বলো তুমি কেমন আছো?
আমি ঠিক আছি কিন্তু.. সব বলবো আগে মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
বৌদি.. তাথৈ যে এখানে বিদিশাকে দেখে অবাক হয়েছে সেটা বোঝাই যায় শুধু তাথৈ নয় সরমা দেবীও বিদিশাকে দেখে অবাক হয়েছেন তেমনি বিদিশাও ওদের দেখে অবাক হয়েছে, সে অভয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
তোমাকে সব বলবো, আর তাথৈ তোমাকে বলেছিলাম না আমার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তোমার পরিচিত একজনকে বিপদে পরতে হয়েছিল।
কিন্তু সেটা যে বৌদি সেটা বলোনি তুমি।
হুমম তা বলিনি।
রয়, এই তাহলে তোমার সেই নিজস্ব কথা যেটা তুমি কাউকে বলোনি?

সেটা বলতে পারো।
অভয়... বাইরে কথাবার্তার আওয়াজ শুনে অমৃতাদেবী এবং বিন্দু মাসি বেরিয়ে এসেছেন, অভয় গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।
কোথায় ছিলি তুই, ওরা বলছিল তুই মিটিংয়ে গেছিস কিন্তু তোর ফোন কেন বন্ধ আর তোর কপালে ব্যান্ডেজ কেন? অভয়ের গায়ে নতুন জামা তাই তিনি শরীরের চোটগুলো দেখতে পেলেন না।
মা... মা আমি ঠিক আছি, আমার ফোনে চার্জ শেষ এবার সেদিন তাড়াহুড়োতে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তাই চার্জার নিতে ভুলে গেছি।
কিন্তু তুই অন্য কারো ফোন থেকে আমার সাথে কথা বলিসনি কেন?
সেটা হয়নি মিটিংয়ের পরে খুব ক্লান্ত ছিলাম আর তাছাড়া নেট‌ওয়ার্কের প্রবলেম করছিল।
কিন্তু বাবু তোর কপালে কি হয়েছে? কথাটা বললেন বিন্দু মাসি।
অভয় এবার মাকে ছেড়ে বিন্দুমাসিকে জড়িয়ে ধরে বলে: ও কিছু না একটু ছোট্ট চোট লেগেছে।
বাবু.. অমৃতাদেবী ডাকেন কিন্তু তার দৃষ্টি তাথৈ আর সরমাদেবীর দিকে।
সরমা দেবী এগিয়ে আসেন তারপর দু হাত জোড় করে বলেন: একসময় আমরা পরস্পরের খুব ভালো বান্ধবী ছিলাম, কিন্তু আমার ভাসুর আর স্বামী তোমাদের সাথে যা করেছে সেটার ক্ষমা হয়না জানি কিন্তু তবুও আমি ক্ষমা চাইছি।
কিন্তু তোমার গায়ে সাদা থান কেন? আর তোমার সিঁথি খালি কেন?
কারণ আমার স্বামী তার পাপের সাজা পেয়েছেন, তিনি আর বেঁচে নেই।
সরমা দেবীকে এভাবে দেখে এই প্রশ্নগুলো বিদিশার মনেও জেগেছিল এখন উত্তর শুনে সে আমিরের দিকে তাকায়, আমির ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালে সে তাথৈএর কাছে গিয়ে তাকে সান্ত্বনার ভঙ্গিতে কাঁধে হাত দেয়, তাথৈ বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে।
তোমার স্বামী যখন সাজা পেয়েছেন তখন তো আর কিছু বলার নেই আমার, এসো তোমরা ভিতরে এসো।
আমার আরেকটা অনুরোধ আছে, যদি রাখো।
কি বলো?
আমার মেয়েটা তোমার ছেলেকে খুব ভালোবাসে ওকে যদি তুমি... নিজের ছেলের ব‌উ করো।
অমৃতাদেবী তাথৈএর কাছে আসেন, তাথৈও দুহাত জোড় করে বলে : আমার বাবার জন্য আমি..
তোমার বাবা যা করেছেন সেটা তার সাথেই চুকে গেছে, কাজেই তার জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।
তুমি কি রাজী ওকে..আবার প্রশ্ন করেন সরমা দেবী।
শুধু আমি না অভয়ের বাবাও রাজী ছিলেন ওকে ঘরে আনার জন্য, পরিস্থিতির জন্য কাজটা দেরী করতে দেরী হয়েছে আর কিছু না। তাথৈ প্রণাম করতে যেতেই অমৃতাদেবী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
ওনারা ভিতরে চলে যাওয়ার পরে আমির অভয়কে জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছিল বলোতো?
অভয় সব কথা খুলে বলে, আমির‌ও সব বলে এটাও বলে বশির‌ই ওকে বাঁচিয়েছে।
আমাকে কি করে খুঁজে পেলে?
তোমার গাড়িটা ওভারব্রিজ থেকে নীচে ফেলে দেয় ওরা ফলে আগুন লেগে যায় বা লাগিয়ে দেয় কিন্তু ওতে তোমাকে না পেয়েও আমি ভেঙে পড়লেও বিদিশা মানতে রাজী হয় না ও বারবার বলতে থাকে তুমি বেঁচে আছো, তাই তোমার খোঁজ চালাতে থাকি।
তারপর?
স্টেশনে বাথরুমে কয়েকজনের অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়ার খবর পাই তখনই ধারণা হয় ওটা হয়তো তোমারই কাজ আর তুমি হয়তো ফিরছো তার পরের সব স্টেশনে লোক থাকে যে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই জানাতে।
বুঝলাম, তারপর?
তারপর একজন বলে একটা স্টেশনে একজনের উপর দশজনের মতো অ্যাটাক করেছে কিন্তু পেরে উঠছে না তখন আর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ওটা তুমি কারণ একা দশজনের সাথে লড়ার মতো খুব কম লোক‌ই আছে, আর তোমাকে লড়তে তো আমি নিজের চোখে অনেকবার দেখেছি তখনই আমি বেরিয়ে পড়ি আর বশিরকেও ডেকে নিই।
ধন্যবাদ, তোমরা না গেলে হয়তো আমার আর তাথৈএর লাশটা ধীরেন বাবুর পাশে পরে থাকতো।
এবার কি করবে? আমির জিজ্ঞেস করে।
বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করবো আবার কি।
বস উনি এবার‌ও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, জিতলে সিএম হয়ে যাবেন। বশির জানায় অভয়কে।
কিন্তু উনি জিতবেন না, জেতা তো দূরে থাক ওনাকে ভোটে দাঁড়াতেই দেবো না, তবে তার আগে আরো একটা কাজ করতে হবে।
কি বস?
মাহমুদ আর উসমানকে খুঁজে বার করতে হবে, আমি মাহমুদকে বলেছিলাম বীরেন ভট্টাচার্যের আগে ওদের শেষ করবো, তুমি পারবে বশির ওদের খুঁজে বার করতে?
ওদের খোঁজ পেয়ে যাবেন।
গুড।
বশির চলে যাচ্ছিল, অভয় ডাকলো: বশির শোনো।
হ্যাঁ বস বলুন।
আমিরকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। বলে বশিরকে জড়িয়ে ধরে অভয়, এতে বশির যেন বিষ্ময়ে হতবাক এবং অভিভূত হয়ে যায়।

বীরেন বাবু আপনি বরং এখন কিছুদিন পরিবারের দিকে নজর দিন, এবার নাহয় ইলেকশনে নাই দাঁড়ালেন। কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য, নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে সামনে বসা লোকটার কলার ধরে চেয়ার থেকে তুলে বললেন: এই চ্যাটার্জি বীরেন ভট্টাচার্য কি করবে আর না করবে সে বিষয়ে আপনাকে জ্ঞান দিতে হবে না, বীরেন ভট্টাচার্য সেটাই করে যেটা সে নিজে ঠিক করে।
এই চ্যাটার্জি হলেন বীরেন ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক দলের আরেকজন নেতা, বয়স আন্দাজ ৫৫ কি ৫৬ হবে, মাথায় ইতিমধ্যে টাক পরে গেছে, গায়ের রঙ শ্যামলা, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা, হাতের আঙুলে একাধিক আংটি। এবার ইলেকশনে বীরেন বাবু জিতলে তিনি সি‌এম হবেন তিনি নিশ্চিত‌ও ছিলেন যে তিনিই জিতবেন কিন্তু বর্তমানে এআরসি তার কবল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তার মনে ভয় ঢুকে গেছে তার উপরে তার ডানহাত স্বরূপ ভাই ধীরেন বাবু আর বাম হাত স্বরূপ বিশ্বস্ত অনুচর জগা মারা যাওয়ায় পুরোপুরি একা হয়ে গেছেন, এই অবস্থায় যেকেউ হলে ইলেকশনে দাঁড়ানোর আগে ভালো করে ভেবে নিত, কিন্তু তিনি বীরেন ভট্টাচার্য ভাঙবেন তবু মচকাবেন না, ক্ষমতা অর্জনের সুযোগ থাকলে তিনি সেটা কিছুতেই ছাড়বেন না, এদিকে যদি বীরেন বাবু ইলেকশন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে সিএম সবার চান্স সবথেকে বেশী এই চ্যাটার্জি বাবুর তাই তিনি সাহস করে কথাটা বলেই ফেললেন এতে যে বীরেন বাবু এতটা ক্ষেপে যাবেন সেটা তিনি আন্দাজ করতে পারেননি।
মিনমিন করে তিনি বলেন: বীরেন বাবু আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনার জন্যই বলছিলাম আপনার ভাই আর জগা একসাথে মারা গেলেন এখন আপনার মনমেজাজ..
আমার মন মেজাজ ঠিক আছে তার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না, আর এটা ভাববেন না যে আমি কিছু বুঝিনা, আপনি কেন আমাকে সরে যেতে বলছেন খুব ভালো করে জানি।
চ্যাটার্জী ভয়ে ঢোঁক গিললেন, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারলেন না।
বীরেন বাবু বলে চলেন: আমি ইলেকশনে দাঁড়াবো, জিতবো এবং সিএম এর গদিতে বসবো, দেখি কে আমাকে আটকায়?
কি...কিন্তু দলের অনেকেই আপনার বিরুদ্ধে, তারা চায়না যে এবার আপনি ভোটে দাঁড়ান।
যারা চায়না তাদের সব কটাকে নিয়ে আমার সাথে মিটিং ফিক্স করুন, তারপর আমি দেখছি, বুঝেছেন?
হ্যাঁ, আমি ব্যবস্থা করছি, কিন্তু দলে কানাঘুষো চলছে এআরসি আপনার বিরুদ্ধে আছে আর এআরসির ক্ষমতা কারো অজানা নেই তাই আগে ওর ব্যবস্থা করুন। চ্যাটার্জি বাবু উঠে বেরিয়ে গেলেন।
মামা, চ্যাটার্জি কথাটা ভুল বলেনি, এআরসির কথাটা ভুললে চলবে না কিন্তু? এবার রকি মুখ খোলে।
ভুলিনি রকি, এবার একটা এস্পার ওস্পার করতেই হবে কিন্তু আবার ওকে বস্তির বাইরে আনবো কিভাবে?
আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
কি প্ল্যান?
তোমার মনে আছে যখন ও আমাদের হাতে বন্দী ছিল তখন মাহমুদকে থ্রেট করেছিল যে পালাতে পারলে ওদের দুই ভাইকে আগে শেষ করবে, আমি শিওর এখন ও ওদের দুইজনকে খুঁজছে।
আমি বুঝেছি তোর কথা, ভালো আইডিয়া কিন্তু ও কি টোঁপটা গিলবে?
গিলবে, একবার ও বাইরে আসুক আর ফিরতে পারবে না।
কিন্তু যদি ও না আসে?
ও না এলে ওর পোষা কুকুরটা তো আসবে, ওকেই ধরবো কান টানলেই মাথা আসবে।
অতটা সোজা নয়, আগে একাই আমাদের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়েছে আর এখন তো ওর সাথে ওর পুরো দল থাকবে।
এছাড়া আর কোনো উপায় আছে তোমার কাছে?
বীরেন বাবুকে চুপ করে থাকতে দেখে রকি আবার বলে: একটু রিস্ক তো নিতেই হবে মামা আর তাছাড়া তুমিই তো বললে এবার একটা এস্পার ওস্পার করতেই হবে।
ঠিক আছে, তবে খুব সাবধানে এগোবি ও কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস এক কাজ কর দলের সবাইকে নিয়ে যা।
দরকার নেই মামা।
যা বলছি শোন।
না মামা এতে ওর সন্দেহ হবে, আমি বেছে বেছে লোক নিয়ে নেবো।
শুধু একটাই কাজ বাকি যেভাবেই হোক এআরসির কাছে উসমান আর মাহমুদের লুকোনোর জায়গার হদিশ পৌঁছে দিতে হবে।
হয়ে যাবে, ও নিয়ে চিন্তা করিস না,তবে তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে।
কি?
চ্যাটার্জি তো মিটিং ফিক্স করবে তারপর আমার সামনে সবাই রাজী হলেও পরে পিছনে ছুরি মারার সুযোগ খুঁজবে।
তাহলে কি করতে হবে?
ওদের সবার উপরে ২৪ ঘন্টা নজর রাখার ব্যবস্থা কর।
কিন্তু কেন?
যাতে এআরসি বা অন্য কেউ ওদের ভয় বা লোভ দেখিয়ে আবার আমার বিরুদ্ধে না নিয়ে যেতে পারে।
চ্যাটার্জীকেও?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে আমি দেখছি।
আরেকটা কাজ বোধহয় তুই ভুলে যাচ্ছিস
কি মামা?
বিদিশা, ওর কোনো খোঁজ পেলি?
না, তবে আমি নিশ্চিত সেদিন অতীনের হাত থেকে এআরসি‌ই ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছে।
ওকে কোথায় রেখেছে খুঁজে বার করে শেষ করে দে।
ওই বস্তিতে নিজের বাড়িতেই ওকে রেখেছে আমি নিশ্চিত আগে এআরসিকে খতম করি তারপর বস্তিতে ঢুকে বিদিশাকে পুঁতে রেখে আসবো।

নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে বুকের উপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল অভয় হটাৎ একটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে দেখে তাথৈ এসেছে চা নিয়ে।
আসো, 
এই নাও তোমার চা।
তুমি নিজে এলে না তোমাকে কেউ পাঠালো?
কেন আমি নিজে আসতে পারি না?
অবশ্যই পারো। অভয় তাথৈএর হাত থেকে পেয়ালা নিয়ে সেটা পাশে রেখে তাথৈএর হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।
কিছু বলবে? তাথৈ জিজ্ঞেস করে, ওর মুখ শুকনো শুকনো, চোখের নীচে জলের দাগ, নিশ্চয়ই কাঁদছিল।
অভয় কিছু বলছে না দেখে তাথৈ আবার জিজ্ঞেস করে: কিছু বলবে?
কেন, না বললে আমার পাশে বসবে না?
না না সেটা কেন কিন্তু বাড়িতে বড়োরা আছে।
সেইজন্য? নাকি আমার উপর রেগে আছো।
তোমার উপর রেগে থাকবো কেন?
তোমার বাপির জন্য? 
আসলে মুখে যতই বলি যাই বলি বাপি তো।
আমার জন্যই আজ তোমাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে, সেদিন যদি আমার বাবার পরিবর্তে আমি মারা যেতাম তাহলে হয়তো..
অভয়.. তাথৈ কথাটা শেষ করতে দেয় না অভয়ের মুখ চেপে ধরে। তোমাকে হারিয়েও যে কষ্ট পেতাম না এটা কি করে ভাবলে? তোমাকে হারালে হয়তো আমিও মরে যেতাম। তাথৈ অভয়ের বুকে মাথা রাখলো অভয় আলতো করে তাথৈএর মাথায় হাত বোলাতে থাকে।
আর কখনো এরকম বলবে না, বাবাকে হারিয়েছি এখন তোমাকে হারাতে পারবো না। তাথৈ প্রায় কেঁদে ফেলে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়।
তাথৈ, চা দিতে গিয়ে ওখানেই বসে গেলি, এদিকে আয় মা। সরমা দেবীর ডাকে দুজনেই চমকে ওঠে।
আসছি মা‌। তাথৈ উঠে যেতে চায় কিন্তু অভয় আবার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দুজনেই শোনে বিন্দুমাসির গলা: আহা এখানে আবার ওর কি কাজ, ওদের কথা বলতে দাও না।
কি করছো, মা চলে আসবে, ছাড়ো। তাথৈ হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।
একটু পরে আমির ঘরে ঢোকে, অভয়ের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তরে বলে: খবর আছে একটা।
সেটা তো বুঝতেই পারছি, নাহলে আর ওনাকে ছেড়ে আমার কাছে কেন?
আমির প্রথমে হতভম্ব আর তারপর বুঝতে পেরে লজ্জায় ওর দুটো কান লাল হয়ে যায় বলে: না সেরকম কিছু নয়।
দেখো ভায়া, আমাকে শেখাতে এসো না এসব আমার জানা আছে তবুও তোমার ভাগ্য ভালো।
আমির চুপ করে থাকে মুখে লাজুক হাসি নিয়ে, অভয় বলে চলে: আমি সত্যিই খুব খুশি তোমাদের জন্য, বিদিশা অনেক কিছু হারিয়েছে এবার হয়তো ওর পাওয়ার সময় এসেছে।
আমি কোনোদিন ভাবিনি এরকম হবে, কিভাবে যেন হয়ে গেল।
ওটা হয়েই যায়, প্ল্যান করে ভালোবাসা হয় না।
তোমার আর তাথৈএর কিভাবে হয়েছিল?
সে আরেক কেস, বললাম না তোমার ভাগ্য ভালো তাথৈএর মতো মেয়ের পাল্লায় পরলে আর দেখতে হতো না।
আমি এই ঠিক আছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা সুখী হবে।
আমি পুরো চেষ্টা করবো ওকে সুখী রাখার।
আচ্ছা এবার বলো কি খবর এনেছো?
বীরেন ভট্টাচার্য ভোটে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু পার্টির অনেকেই চায়না তাই..
তাই উনি কি করেছেন? ওদের হুমকি দিয়েছেন?
একটা মিটিং ডেকেছিলেন সেখানে সেটাই করেছেন নিশ্চয়ই।
খুব ভালো এটাই চাইছিলাম, এতে আমাদের সুবিধাই হবে।
ওনাদের মেরে ফেললে কি সুবিধা হবে?
মারবেন না।
তুমি শিওর?
মেরে ফেললে প্রবলেম বাড়বে তাই এখনই মারবেন না কিন্তু আমি নিশ্চিত ওদের সবার উপর নজর রাখা হবে।
তাহলে কি হবে এবার?
বীরেন ভট্টাচার্যের দলে ওনার পরেই যার জায়গা তার নাম যেন কি.. চ্যাটার্জি বলে কেউ তাইনা?
হ্যাঁ, বীরেন ভট্টাচার্যের পরেই ওনার জায়গা, যদি কোনো কারণবশত বীরেন বাবু সরে যান তাহলে উনি‌ই নেক্সট দাবীদার।
উনিও মিটিংয়ে ছিলেন নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ।
একবার চ্যাটার্জীর সাথে কথা বলতে হবে, দরকার আছে।
তুমি নিজে যাবে?
উঁহু, ফোনেই কথা বলবো।
উনি শুনবেন?
শুনবেন, চ্যাটার্জী কোথায় আছে খোঁজ নাও।

নিজের একাধিক ফ্ল্যাটের একটা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে একাকী বসে ছিলেন চ্যাটার্জী বাবু, মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে একাকী থাকার জন্য এখানে আসেন তিনি আজ‌ও তাই এসেছেন আর বীরেন বাবু তাকে একপ্রকার হুমকি দিয়েছেন তিনি ভালো করেই জানেন বীরেন ভট্টাচার্য কেমন লোক, মানুষ খুন করা ওর কাছে জলভাত।
কত আশা করেছিলেন যে ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বীরেন বাবু আর ভোটে দাঁড়াবেন না এবং তিনি হবেন পরবর্তী সিএম অথচ এখন...  বীরেন বাবুর জয় ঠেকায় কে? কেন যে এআরসি ওকে মারছে না কে জানে?
সামনে টেবিলে রাখা হুইস্কির বোতল থেকে কিছুটা গ্লাসে ঢেলে এক চুমুক দিলেন চ্যাটার্জী বাবু, কি করা যায় ভাবছেন এমন সময় ফোন বেজে উঠলো, বেজায় বিরক্ত হলেন তিনি, এখন আবার কে ফোন করলো?
হ্যালো, কে বলছেন? 
চ্যাটার্জী বাবু? 
একটা অচেনা পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পান চ্যাটার্জী বাবু, তিনি বলেন: বলছি আপনি কে?
এআরসি।
নামটা শুনেই নেশা ছুটে যায় তার "এ...আর..সি মানে...মানে'
মানে মানে করার কিছু হয়নি আমি এআরসি বলছি।
কিন্তু আপনি আমার নম্বর..
জোগাড় করার উপায় আছে।
কিন্তু আমাকে ফোন করার কারণ..
কারণ আছে বলেই ফোন করেছি, আমি আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই।
ডিল.. কিরকম ডিল?
আমি জানি আপনি এবার ইলেকশনে জিতে সিএমের গদিতে বসতে চান কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য থাকতে সেটা সম্ভব নয় কি তাইতো?
হ্যাঁ.. মানে আপনি কিভাবে?
কিভাবে জানলাম সেটা বড়ো কথা নয়।
আপনি কি চাইছেন বলুন তো?
তার আগে আমি কি দিতে পারি সেটা বলি?
কি?
আমি আপনাকে সিএমের গদিতে বসাতে পারি।
চমকে উঠলেন চ্যাটার্জী বাবু তিনি ঠিক শুনছেন তো? কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলেন: কি...কিন্তু কিভাবে.. বী..বীরেন বাবু তো।
ওনাকে আমি সামলে নেবো কিন্তু আপনাকে সাহায্য করতে হবে।
কি..কি সাহায্য?
আপনাকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
উনি জানতে পারলে আমাকে শেষ করে দেবেন।
সেই সুযোগ উনি পাবেন না এটা আপনাকে আশ্বস্ত করছি।
কি করতে হবে?
উনি আপনাদের দলের বেশ কয়েকজনকে মিটিংয়ে ডেকেছিলেন, খুব সম্ভবত আপনাদের সবাইকে হুমকি দিয়েছেন তাইতো?
হ্যাঁ,
এবার শুনুন আপনাকে কি করতে হবে,  আপনি শুধু সময় মতো তাদের এবং তাদের পরিবারকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে উস্কানি দেবেন যাতে তারা পুরোপুরি বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হয়ে যায়।
কিন্তু কেউ কি আমার কথা শুনবে?
আপনার অনুগতদের দিয়েই শুরু করবেন, তারা তো নিশ্চয়ই শুনবে।
আর বাকিরা?
তারাও করবে সে ব্যবস্থা আমি করবো।
কিন্তু এর বিনিময়ে আপনি কি চান?
আপনার সাথে সুসম্পর্ক, আমরা কেউ একে অপরের শত্রু ন‌ই তাই বন্ধু হতে ক্ষতি কোথায়? আপনি সিএম হয়ে আমাকে সাহায্য করবেন বিনিময়ে আমি আপনাকে তবে আপাতত আমাদের দুজনের এক‌ই শত্রু বীরেন ভট্টাচার্য, এবার বলুন আপনি রাজী কি না?
কিন্তু আপনি যে আমাকে ঠকাবেন না তার প্রমাণ কি?
এআরসি কখনও কথার খেলাপ করে না, আপনি যতক্ষণ আমার বন্ধু থাকবেন ততক্ষণ আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না কিন্তু যদি শত্রুতা করেন তখন আমিও পিছু হটবো না।
আমি কি এখনই শুরু করে দেবো?
না, আমি ফোন করে জানিয়ে দেবো, গুড নাইট।
কাজটা কিন্তু সহজ নয়? অভয় ফোনটা রাখার প্রায় সাথে সাথেই প্রশ্নটা করে আমির।
কোন কাজটা?
ওই যে সবাইকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার।
উপায় আছে আমির।
কি উপায়?
বলবো ,তবে আগে যে কাজে যাচ্ছি সেটা সেরে আসি।
কাজ? আমরা যাচ্ছি তোমার সেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে, কি যেন নাম অমিয়।
হ্যাঁ।
কিন্তু ওর কাছে কি কাজ?
কিছু না, এমনই বন্ধুর সাথে দেখা করে আসি।

অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের চায়ের দোকানে একটু চা খেতে ঢুকলো অমিয়, ঢুকে দেখে সামনে বেঞ্চিতে একজন তার‌ই বয়সী ছেলে বসে আছে তাকে সে চেনে কি যেন নাম.. আমির, অমিয় এগিয়ে গেল।
চিনতে পারছেন? মিস্টার আমির?
পারছি অমিয় বাবু।
আপনি এখানে?
আপনার সাথেই দেখা করতে।
আমার সাথে কেন? শুনে বেশ অবাক হয় অমিয়।
দরকার আছে রে গাঁড়ল তাই আসতে হলো, হটাৎ পিছনে তৃতীয় ব্যক্তির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে অমিয়, দেখে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে এ‌ও তার‌ই বয়সী তবে এর মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু ঠিক মনে পড়ছে না।
ওরকম হাঁ করে কি দেখছিস গাঁড়ল? আবার এই "গাঁড়ল" কথাটা শুনে ধা করে মনে পরে যায়, এই কথাটা একজন‌ই ওকে বলতো..
অভয়.. তুই.. তুই..
যাক চিনতে পারলি তবে। অভয় এসে নিজের ছোটোবেলার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে‌।
তুই কোথায় ছিলি এতদিন? কি হয়েছিল তোর সাথে?  আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি কেন? বল উত্তর দে এক নিঃশ্বাসে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে অমিয়।
অভয় একটু হেসে বলে আস্তে আস্তে ভাই আগে শান্ত হয়ে বস সব বলছি তার আগে পরিচয় করিয়ে দি‌ই এই হচ্ছে আমির আর আমির এর কথা তো বলেছি এ হচ্ছে অমিয় আমার কলেজের বন্ধু।
হ্যাঁ আমি ওনাকে চিনি আগে কথা হয়েছে। বলে অমিয়।
তখন আমার কথাতেই ও তোকে আমার কাছে যেতে দেয়নি।
তার মানে তাথৈ ঠিক বলেছিল যে তুই ওই বস্তিতে থাকতি?
এখনও থাকি।
আমার সাথে দেখা করিসনি কেন? আমি কি তোর..
আমি তোর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ভাই কিন্তু আমি তখন দেখা করলে তুই আর তোর পরিবার বিপদে পরে যেত তাই দেখা করিনি।
কিন্তু তুই এতদিন কোথায় ছিলি, আর কাকীম কেমন আছেন?
অভয় সব বলতে থাকে, অমিয়র পরিবারের সবার খবর নেয় বহুবছর পরে দুই বন্ধু আবার হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে, এবার অবশ্য আমির‌ও ওদের সঙ্গে থাকে আমির আর অমিয়র মধ্যে বেশ ভাব হয়ে যায়।
একসময় অভয় বলে: তুই এখনো বৃষ্টিকে পছন্দ করিস তাই না?
বৃষ্টির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আর তাছাড়া আমার কাছে আমার বন্ধুর মূল্য অনেক বেশী, ওরা তোর সাথে যা করেছে তার পরে তো..
আমি জানি তুই এখনো বৃষ্টিকে পছন্দ করিস, আর ও এখন তোর সাথে যোগাযোগ রাখছে।
তুই কিভাবে জানলি?
তাথৈ বলেছে।
তাথৈ? তুই আবার ওর সাথে?
হ্যাঁ, অভয় সব কথা ওকে বলে। শুনে অমিয় বেশ খুশীই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে বলে:, যাক অবশেষে তোরা এক হলি।
এবার তুইও বৃষ্টিকে ক্ষমা করে দে।
অমিয় চুপ করে থাকে, কথা বলে না, অভয় বলে চলে: তুই ওর সাথে কথা বল, যদি মনে হয় ও বদলাবে না তাহলে তো কিছু করার নেই কিন্তু যদি মনে হয় যে ও বদলাতে পারে বা বদলাতে চাইছে তাহলে তোর উচিত ওকে একটা সুযোগ দেওয়া।

মসজিদে নামাজ শেষ করে বাইরে এসে জুতো পড়ছে মাহমুদ চারিদিকে সতর্ক এবং সন্ত্রস্ত দৃষ্টি যেন কোনো কিছু বা কারোর ভয় পাচ্ছে, এবার উসমান বেরিয়ে এল ওর চোখেমুখেও ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। দুই ভাই আস্তে আস্তে একটু দূরে রাস্তার পাশে ফুটপাত সংলগ্ন করে রাখা নিজেদের জিপের দিকে এগোতে থাকে, হটাৎ উসমানের সন্দেহ হয় যে কেউ ওদের উপর নজর রাখছে, সে দ্রুত চারপাশের লোকদের উপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয় সব কিছু স্বাভাবিক তবুও সন্দেহটা যায় না।
কি দেখছো ভাইজান? দাদাকে প্রশ্ন করে মাহমুদ।
কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে।
কথাটা শুনে মাহমুদ ও একবার চারিদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়, বলে: কেউ তো চোখে পরছে না হতে পারে এটা তোমার মনের ভুল।
হতে পারে তবে সতর্ক হয়ে থাকা ভালো, আমরা এআরসির সাথে শত্রুতা করেছি আর ও বীরেন বাবুর কবল থেকে বেঁচে বেরিয়ে এসেছে এবার আবার ও অ্যাটাক করবে।
কিন্তু রকি ভাই তো বললেন যে উনি আমাদের সুরক্ষা দেবেন।
এআরসির ক্ষমতা কত তুই জানিস না নাকি? তোর মনে হয় ওর সামনে বীরেন বাবু বা রকি নিজেদের ছেড়ে আমাদের কথা ভাববে?
আমার এখন তো মনে হচ্ছে আমরা ভুল করেছি।
আমারও সেটাই মনে হচ্ছে, চল তাড়াতাড়ি পা চালা। দুই ভাই হাঁটার গতি বাড়ায়, জিপের কাছে গিয়ে উঠতে যাবে দেখে আরেক বিপত্তি কিভাবে যেন জিপের একদিকের সামনে এবং পিছনের টায়ার পাংচার হয়ে গেছে, জিপের উল্টো দিকে গিয়ে দেখে একদিকের না জিপের সবকটা টায়ার‌ই পাংচার হয়ে গেছে।
ভাইজান এটা কিভাবে হলো? শঙ্কিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে মাহমুদ।
আমরা ফেঁসে গেছি, এটা জেনে বুঝে করা হয়েছে।
এবার কি হবে?
পালা‌। বলে উসমান দৌড়াতে যাবে কিন্তু পারে না মসজিদের সামনে অনেক গরীব নিঃস্ব লোক বসে থাকে যারা ভিক্ষা করে দিন কাটায়, তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ এখন পাল্টে গেছে হাতে পিস্তল নিয়ে ওদের দুইভাইকে ঘিরে ধরে বেশী না এই ৭-৮ জন, দুইভাই বিস্ফারিত চোখে ওদের দেখতে থাকে তারা বোঝে তাদের পালানোর সব রাস্তা বন্ধ।
কি ভেবেছিলি? এত সহজে পালিয়ে বেঁচে যাবি? প্রশ্নটা শুনে দুই ভাইয়ের নিঃশ্বাস ভয়ে প্রায় আটকে যাওয়ার অবস্থা, এই আওয়াজ তারা চেনে এটা আমিরের আওয়াজ, দুই ভাই শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে যে ৭-৮ জন ওদের ঘিরে রেখেছে তারা পিছু হটছে আর দুজন তাদের দিকে এগিয়ে আসছে, একজন আমির আর অপরজন নিঃসন্দেহে এআরসি ওরফে রয় যদিও সে চোখে গগলস্ পরে আছে মুখ একটা কালো স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা গায়ে কালো জ্যাকেট যার হুডিটা মাথায় ঢাকা দেওয়া আছে, মুখ দেখা না গেলেও এই গগলস্ এই জ্যাকেট তাদের চেনা এটা এআরসি।
আর কোনো রাস্তা না দেখে দুই ভাই হাত জোড় করে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে পরে এবং কেঁদে ফেলে, "আমাদের ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দিন বস", "আমরা আর এরকম করবো না, আমাদের একটা সুযোগ দিন" দুইভাই কাঁদতে কাঁদতে আমির আর রয়ের পা জড়িয়ে ধরে, কিন্তু যখন আমির কথা বললো তখন পরিষ্কার বোঝা গেল যে এতে ওদের মন গলবে না। আমির কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ দুই ভাই উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করে যাকে বলে অট্টহাসি, একসময় হাসি থামিয়ে উসমান বলে: কি ভেবেছিলি আমরা এইভাবে প্রার্থনা করবো? আমি জানতাম তোরা আসবি আমাদের খুঁজতে।
কি বলছো ভাইজান? মাহমুদ সত্যিই অবাক হয়।
হ্যাঁ, ভয় পাস না মাহমুদ ওরা আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না বরং আজ এখানে ওরা দুজনেই শেষ হবে।
উসমানের কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রায় ১৫ জন লোক ওদের সবাইকে ঘিরে ফেলে এমনকি যে ৭-৮ জন প্রথমে উসমান আর মাহমুদকে ধরেছিল তাদের‌ও এবং প্রত্যেকের হাতে অটোমেটিক পিস্তল ফলে আমির ও তার লোকেদের নড়াচড়া বন্ধ করতে হলো তারা অসহায়ের মতো পিস্তল ফেলে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। এবার উসমানের দেখাদেখি মাহমুদ‌ও হাসতে শুরু করে "কি রে আমির, কি রে এআরসি.. মারবি না আমাদের? হ্যাঁ?" "মার... এখন মার আমাদের"

একটা জিপের আওয়াজ পেয়ে আমির ও রয় ঘুরে দেখে রকি এসেছে, আমির ও রয়ের চোখাচোখি হয় এবং দুজনের ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা দেখা দেয়। জিপ থেকে নেমে রকি ওদের দিকে এগিয়ে আসে।
রকি ভাই এই নিন আপনাদের আমানত। সহাস্যে কথাটা বলে উসমান
এআরসি.. রকির গলায় আনন্দের সীমা অতিক্রম করেছে ফাইনালি, আবার আমরা মুখোমুখি সেদিন ঠিক মতো আলাপ হয়নি।

বি দ্র: গত আপডেটটা একটু ছোটো হয়ে যাওয়ায় অনেকেই একটু মনক্ষুন্ন হয়েছিলেন, তখন বলেছিলাম যে ক্লাইম্যাক্স সহ বড়ো আপডেট তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু ক্লাইম্যাক্স না হলেও আরো দুটো আপডেট দিলাম আশা করছি ভালোই লাগবে।
ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে দেবেন এবং খারাপ লাগলে সেটাও কমেন্ট করে জানাবেন।

?
Like Reply
(07-11-2022, 02:32 PM)Monen2000 Wrote:
                            বিংশ পর্ব

রয় চুপ করে থাকে, রকি আমিরের দিকে ফিরে বলে: আর তোর সাথে তো আমার দেখাই হয়নি, যাইহোক তোদের মারার আগে আলাপটা হয়ে ভালোই হলো। রয় তবুও চুপ করে আছে দেখে রকি আবার হাসতে হাসতে বলে: চিন্তা নেই মামা ভুল করেছিলেন সেদিন তোকে জ্যান্ত ছেড়ে রেখে আমি সেই ভুল করবো না।

রয় এবং আমির দুজনেই চটপট একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নেয়, আশেপাশের লোকজন এই একাধিক পিস্তলধারীকে দেখে ভয়ে সরে গেছে, বেশ ফাঁকাই হয়ে গেছে জায়গাটা। মুখ ঢাকা থাকায় রয়ের মুখের ভাব বোঝা না গেলেও যে কোনো কারনেই আমিরের মুখের ভাব পাল্টে গেছে তার চোখেমুখে একটা চাপা উত্তেজনা যেন সে যেটা চাইছে সেটাই হচ্ছে,  রকি এবার রয়কে উদ্দেশ্য করে বলে "কি রে মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না কেন তুই নাকি আমাদের শেষ করবি মামাকে থ্রেট দিয়েছিলি এখন চুপ কেন, আমার ছোটোমামাকে একা পেয়ে মেরেছিস, এবার কি করবি?"
এবার আমির কথা বলে আর তার স্বরে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই: আপনার মামাকে আমরা মারিনি অন্য লোক মেরেছে।
তোর মনে হয় তোর কথা বিশ্বাস করবো?
সেটা আপনার নিজস্ব ব্যাপার।
রকি এবার এগিয়ে এসে আমিরের একদম মুখোমুখি দাঁড়ায় বলে: বিদিশাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস? আমি জানি ও তোদের সাথেই থাকে।
ও যেখানেই আছে ভালো আছে। আমির নির্ভয়ে উত্তর দেয়।
"ভাইজান এবার এদের শেষ করে দিন"। মাহমুদ রকিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলে।
পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে কথাটা শুনেছেন মিস্টার রকি? আওয়াজটা শুনে রকি অবাক হয়ে যায় এমনকি উসমান ও মাহমুদ‌ও, কথাটা আমির বলেনি বলেছে তার পাশে দাঁড়ানো রয় কিন্তু ওর আওয়াজ এরকম নয়, এবার ওদের আশ্চর্যভাবটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে আমিরের পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা নিজের চোখ থেকে গগলস্ খোলে তারপর মাথা থেকে হুডিটা সরায় সবাই অবাক হয়ে দেখে এর চুল রয়ের মতো বড়ো নয় ছোটো আর সবশেষে মুখের স্কার্ফটা খুলতেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় দেখে যাকে এতক্ষণ তারা রয় ভাবছিল সে আসলে অন্য কেউ রয় আসেনি, উসমানের মুখ থেকে একটা নাম উচ্চারিত হয় "বশির"।
হ্যাঁ, উসমান আমি, যখনই খবর পেলাম যে তোরা এভাবে খোলাখুলি বাইরে আসছিস তখনই বুঝেছিলাম যে এটা ফাঁদ, বসকে ধরার জন্য তাই ওনাকে কিভাবে আগে আসতে দি‌ই বল? তাই নিজেই চলে এলাম আমি জানতাম আমার হাইট, বডির শেপ বসের মতো,ওনার মতো সাজলে মুখ না দেখে বা আওয়াজ না শুনে আমাকে চেনা মুশকিল। এদিকে তোদের শাস্তি তো দিতে হবে তাই না, গদ্দারি করেছিস তার শাস্তি তাই চলে এলাম। তোদের মতো গদ্দার মসজিদে ঢুকে সেটাকে নাপাক করেছিস, আমি তো তোদের ওখানেই শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বসের হুকুম মসজিদে রক্তপাত চলবে না, তাই বাইরেই মারবো তোদের।
এদিকে নিজের প্ল্যান ফেল হয়ে গেছে দেখে রকি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের লোকদের বললো: শেষ করে দে এদের। কিন্তু হুকুমটা তামিল হবার আগেই হটাৎ কোথা থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলো না, রকির পাশে দাঁড়ানো দুজন বডিগার্ডের কপাল ফুটো করে দুটো বুলেট বেরিয়ে গেল এবং আর আমিরের দলের যারা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কারো হাতে ম্যাজিকের মতো ধারালো ছুরি চলে এল এবং কিছু বোঝা বা করার আগেই  তারা ঘুরে  রকির দলের লোকদের গলায় পেটে বা পাঁজরে চালাতে শুরু করে, সাথে কয়েকজন পিস্তল উঠিয়ে নেয় এবং তার থেকেও আশ্চর্যের আশেপাশে এতক্ষণ কাউকে দেখা না গেলেও হটাৎ আশেপাশের বিভিন্ন ছোটোখাটো গলি থেকে অনেকগুলো লোক পিস্তলহাতে বেরিয়ে আসে, পরপর পিস্তলের আওয়াজ হতে থাকে একটা সময় সম্বিত ফিরে পেয়ে রকি উসমান এবং মাহমুদ দেখে তাদের চারপাশে তাদের দলের লোকদের রক্ত মাখা লাশ পড়ে আছে, উসমান এবং মাহমুদ পালাতে যায় কিন্তু আবার ধরা পরে যায়, যে লোকটা আমিরের পাশে রয় সেজে দাঁড়িয়ে ছিল সে এবার রকির মুখোমুখি হয় একটা পিস্তল রকির মাথায় ঠেকিয়ে বলে: রয়কে খুঁজছিলেন না আপনাকে ওর কাছেই নিয়ে যাবো‌। রকি বাধা দিতে গিয়েও পারে না তখনই মাথার পিছনে একটা আঘাত পেয়ে চোখে অন্ধকার নেমে আসে।
অনেকক্ষণ পরে যখন রকির চোখ খোলে তখন প্রথমে বুঝতে পারে না কোথায় আছে  ধীরে ধীরে ধাতস্থ হয়ে দেখে ও একটা চেয়ারে বসে আছে জায়গাটা একটা বড়ো গোডাউন মনে হয় তার, এবার দুজন লোকের চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে পাশের দিকে তাকায়, কিছুক্ষণ থেকেই চিৎকার শুনতে পারছিল এখন তাকিয়ে  দেখে একটু দূরে দুজনকে দুহাত উপরে ঝুলিয়ে বেধে রাখা হয়েছে আর জনা ২০ মতন লোক পাঞ্চিং ব্যাগের মতো ওদের বুকে পিঠে মুখে পাঞ্চ করে যাচ্ছে ,ওদের চিনতে পারে রকি উসমান ও মাহমুদ। রকি উঠতে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই একজন বলে: চেষ্টাও করবেন না মিস্টার রকি আপনার দিকে দুটো পিস্তল তাক করা আছে উঠলেই ওরা গুলি চালাবে, রকি গলাটা চিনতে পারে ওই বশির বলে লোকটার, সে বলে: আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছিস?
বশির এবার রকির সামনে আসে বলে: আপনি বসের সাথে দেখা করতে চাইছিলেন না তাই নিয়ে এসেছি, ওই যে বস।
বশির যেদিকে দেখায় সেদিকে তাকায় রকি দেখে উসমান ও মাহমুদকে যেখানে পেটানো হচ্ছে তার পাশেই একজন দাঁড়িয়ে আছে তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না রকির একেই সে কিছুদিন আগে হাত পা বাঁধা অবস্থায় দেখেছে এআরসি ওরফে রয়, পরনে কালো ফুলস্লিভ শার্ট যার স্লিভদুটো কবজির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো আর বুকের কাছে শার্টের একটা বোতাম খোলা সাথে কালো জিন্সের ট্রাউজার, চোখে কালো গগলস্। এবার রয় এগিয়ে এসে রকির উদ্দেশ্যে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দেয় করমর্দন করার জন্য "হ্যালো রকি, আমাদের আবার দেখা হলো,বুঝতেই পারছেন যে আপনি যেমন আমাকে ধরার জন্য টোঁপ ফেলেছিলেন ঠিক তেমনি আমিও আপনাকে ধরার জন্য ফাঁদ পেতেছিলাম, যাকে বলে এক তীরে দুই শিকার"। রকি হাত মেলায় বলে: আমাকে মারবি তো? নে মার।
আপনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা ছিল না কিন্তু আমাদের দুজনের পরিচিত একজনের সাথে আপনার শত্রুতা আছে, আর সে প্রতিশোধ চায় আমি তাকে কথা দিয়েছি তার প্রতিশোধে আমি তার পাশে থাকবো তাই আপনাকে এখানে তার কাছে নিয়ে এসেছি এরপর সে যা করবে সেটাই হবে। রয় থামলে রকি কথা বলা শুরু করে "বিদিশার জন্য এতকিছু? কেন ওকে পছন্দ ওকে বিয়ে করবি নাকি?"
রয়ের সাথে আমির‌ও এসেছিল রকির কথা শুনে সে থাকতে পারে না এসে এক থাপ্পড় লাগায় রকির গালে, আবার মারতে যাচ্ছিল কিন্তু রয়ের "আমির.. রিল্যাক্স" শুনে থেমে যায়। রকি আবার ব্যাঙ্গ করে"আরিব্বাস একটা ফুলের পিছনে দুটো মৌমাছি?"
আজ বুঝলাম বিদিশা আপনাকে কেন এত ঘেন্না করে, আমার‌ই ইচ্ছা করছে মেরে আপনার মুখ ফাটিয়ে দিতে। শান্ত কণ্ঠে বলে রয়।
তাহলে আর দেরী কেন আয়। রকি এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দুটো হাত মুঠো করে রয়কে লড়াইয়ের জন্য আহ্বান করে, দেখে রয়ের ঠোঁটে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দেখা যায়।
ওর চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করো রয়, প্রত্যেকেরই শেষ ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। এক মেয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে এল ,রকি আওয়াজটার উৎস লক্ষ্য করে তাকাতেই বিদিশাকে দেখতে পেল ,সঙ্গে সঙ্গেই এবার তার মুখে ব্যাঙ্গাত্মক হাসির সাথে ব্যাঙ্গ মিশ্রিত কথা: আরে বেবি... তুমি এখানে আর আমি তোমাকে কোথায় না কোথায় খুঁজছি, কেন বেবি নিজের স্বামীকে ছেড়ে থাকতে ভালো লাগছে?
স্বামী? আমার নিরপরাধ বাবাকে মারার পরেও তোমার লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে একথা বলতে?
রকি আবার হাসতে লাগলো তারপর হাসি থামিয়ে বললো: ঠিক আছে আমি না হয় নাই হলাম তা এই দুজনের মধ্যে কে? দুজনেরই দেখলাম তোমার প্রতি সমান দরদ।
তোমার নোংরা মনে নোংরামি ছাড়া এর থেকে ভালো আরকি আশা করতে পারি?
কি করবো বলো, আমি এরকমই তা এবার কাকে পাঠাচ্ছো আমার সাথে লড়তে? তবে যদি আমি জিতি তাহলে?
তাহলে?
তাহলে আমাকে এখান থেকে জ্যান্ত যেতে দিতে হবে আর তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে।
আর যদি তুমি হেরে যাও?
তাহলে আমাকে মেরে দিও।
আমি রাজী।
বেশ তাহলে পাঠাও কাকে পাঠাবে, তবে যাকেই পাঠাও নিজে তৈরি থেকো তার মরামুখ দেখার জন্য।
আমি তৈরী আছি তোমার মরামুখ দেখার জন্য।
কথাটা শুনে আবার রকি একটু হেসে রয়ের দিকে তাকিয়ে বললো: তাহলে তুই আসবি, আয়।
রয় ওরফে অভয় একটু হেসে নিজের দুহাতে কনুইয়ের কাছে শার্টের হাতাটা ধরে একটু টেনে উপরে তুলে এগিয়ে গেল এবং পরক্ষনেই রকি আক্রমণ করলো সে একসময় স্টেট লেভেলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল এবং নিঃসন্দেহে একজন সেরা মুষ্টিযোদ্ধা সে আর তার নীতি হলো অ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্স, বরাবরই সে প্রতিপক্ষকে  কোনো সুযোগ না দিয়ে আগে আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করায় বিশ্বাসী সেটাই সে করে এসেছে আজ‌ও সে তাই করলো, কিন্তু সে জানেনা আজ যে তার সামনে তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে নিজেও একজন সেরা ফাইটার।
পরপর রকির আঘাতগুলো প্রতিহত করছে অভয়, কখনো মাথা সরিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে তো কখনো রকির হাতটা নিজের হাত দিয়ে আটকে যাচ্ছে, এবং ফাঁক পেলে নিজেও আঘাত করছে যেটা রকিও প্রতিহত করছে, এইভাবে বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেল কেউ কাউকে ঘায়েল করতে পারলো না সমানে সমানে টক্কর চলছে, হঠাৎ রকির একটা মুষ্টি প্রহার আটকাতে অভয়ের একটু দেরী হয়ে গেল ফলে আঘাতটা সোজা ওর চোয়ালে আঘাত করলো, অভয় কয়েকপা পিছিয়ে গেল ওর ঠোঁটের কোন থেকে একটু রক্ত বেরিয়ে এল পরক্ষনেই সে এগিয়ে এসে ঘুষি পাকিয়ে রকির চোয়ালে আঘাত করতে গেল কিন্তু পারলো না রকি অভয়ের মুষ্টিটা ধরে ফেললো তার হয়তো ইচ্ছা ছিল অভয়ের হাতটা মোচড়িয়ে বা আঘাত করে ভেঙে দেওয়ার কিন্তু সেটা করার আগেই অভয় ঘুরে রকিকে নিজের পিছনে পিঠের দিকে নিয়ে কনুইটা তুলে পিছনে চালিয়ে দিল আর সেটা সোজা গিয়ে লাগলো রকির নাকে, রকি অভয়ের হাত ছেড়ে দিয়ে কয়েকপা পিছিয়ে নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরলো যখন হাত সরালো তখন দেখা গেল রকির নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে।
রকি বা হাতের তালুর উল্টোপিঠ দিয়ে কিছুটা রক্ত মুছে নিল তারপর আবার এগিয়ে এল এবার আরও ক্ষিপ্র আরও দ্রুত গতিতে আঘাত করছে অভয়‌ও ঠিক ততোধিক দ্রুততায় ততোধিক ক্ষিপ্রতার সাথে আঘাতগুলো প্রতিহত করছে কিন্তু তাও কয়েকটা আঘাত অভয়ের চোয়ালে, পেটে এসে লাগলো, বদলে অভয়ের কয়েকটা আঘাত‌ও রকির চোয়ালে নাকে গিয়ে লাগলো আরও খানিকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও কেউ কাউকে হারাতে পারলো না। রকি বলে উঠলো "তুই তো বিদিশাকে হতাশ করছিস ও কত আশা নিয়ে তোকে আমার সাথে লড়তে পাঠালো আর তুই.."।
অভয় ব্যাঙ্গের উত্তর দেয় না ,শুধু ঠোঁটের কোণে একটা ছোট্ট হাসি দেখা দেয়। রকি এগিয়ে আসে অভয়ের চোয়াল লক্ষ্য করে ঘুষি চালায় অভয় ঘুষিটা ধরে নেয় কিন্তু রকি অপর হাত দিয়ে অভয়ের তলপেটে পাঞ্চ মারে অভয় কয়েকপা পিছিয়ে যায় ,এবার রকি এগিয়ে আসে পরপর দ্রুতগতিতে দুহাতে অভয়ের চোয়াল মুখ লক্ষ্য করে ঘুষি চালাতে থাকে কিন্তু অভয় হাত দিয়ে সেগুলো ব্লক করতে থাকে মাঝে হঠাৎ রকি হাঁটু উঠিয়ে আঘাত করতে গেলে অভয় নিজের একটা কনুই হাঁটুর উপর আঘাত করে এতে রকি হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে পারে না এটা ঠিক তবে পরমুহূর্তেই একটা হাত দিয়ে অভয়ের চোয়ালে একটা মোক্ষম পাঞ্চ মারে।
আবার রকি পরপর ঘুষি মারতে থাকে এবং অভয়‌ও আগের মতো ব্লক করতে থাকে এবারও রকি আবার তার হাঁটু উপরে তোলে তবে এবার অভয় তার কনুইয়ের বদলে হাঁটু তুলে আঘাতটা ব্লক করে এবং রকি হাত দিয়ে আঘাত করতে গেলে সেটা এড়িয়ে রকির চোয়ালে পাঞ্চ মারে এবার রকি কিছুটা পিছিয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনেই আবার এগিয়ে এসে আঘাত করতে যায় এবারও দুজনের মধ্যে অনেকক্ষণ সমানে সমানে লড়াই চলে, দুজনেই দুজনের আঘাত ব্লক করে নিজেকে বাঁচিয়ে অপরকে আঘাত করার চেষ্টা চালাতে থাকে একসময় অভয় রকির হাতটা ধরে আঘাতটা আটকাতেই রকি চকিতে লুকিয়ে রাখা একটা ছোট্ট ছুরি অন্য হাতে বার করে দ্রুত পেট লক্ষ্য করে চালিয়ে দেয় কিন্তু সেটা খেয়াল করে অভয় আঘাতটা এড়ানোর জন্য পিছনে সরে আসে তবুও ছুরিটা অভয়ের পেটের চামড়া ছুঁয়ে যায় এবং ছুরিটা ধারালো হবার জন্য কিছুটা কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। আমির সেটা দেখেই রকিকে মারার জন্য পিস্তল বার করতেই অভয় হাত উঁচু করে বারণ করে তারপর আবার রকির উদ্দেশ্যে একটা বিদ্রুপের হাসি দিয়ে ওকে আক্রমণ করার জন্য ইশারা করে, এতে রকি একটু অবাক এবং রেগে যায় সে ছুরি হাতে এগিয়ে আসে এবং দ্রুতগতিতে ছুরি দিয়ে অভয়কে আঘাত করার চেষ্টা করতে থাকে কখনো ডানহাতে ছুরি ধরে অভয়ের গলা লক্ষ্য করে চালায় তো কখনো মুহূর্তের মধ্যে বা হাতে নিয়ে পেটে ঢোকাতে চেষ্টা করে, অভয়‌ও ক্রমাগত আঘাতগুলো কখনো এড়িয়ে যেতে থাকে তো কখনো রকির হাত ধরে আঘাতগুলো আটকে দিতে থাকে মাঝে অবশ্য রকি চকিতে আঘাতের লক্ষ্য পাল্টে ফেলে মানে অভয়ের গলা লক্ষ্য করে চালিয়ে চকিতে অন্য হাতে ছুরি নিয়ে একটু ঝুঁকে অভয়ের থাইয়ে বা পেটে চালায় কয়েকবার একটু কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে এইভাবে চলতে চলতে একসময় অভয় রকির ছুরি ধরা ডানহাতের আঘাতটা মাথা সরিয়ে এড়িয়ে যায় এবং রকির কবজিটা ধরে ফেলে পরক্ষনেই নিজের  বা হাঁটুটা তুলে রকির ডান পাঁজরে সজোরে আঘাত করে, একটা "আঃ" আর্তনাদের সাথে রকি কয়েকপা পিছিয়ে বা হাত দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত পাঁজর চেপে ধরে ছক হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পরে, সুযোগটা কাজে লাগায় অভয় কারণ সে এখন জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছে সে এবার এগিয়ে যায় কি টেক্সট রকি পাঁজরে ব্যাথা নিয়েও উঠে দাঁড়িয়ে আবার অভয়কে আঘাত করতে এলে অভয় আবার আঘাতটা এড়িয়ে রকির থুতনিতে একটা আপারকাট পাঞ্চ মারে রকি ছিটকে পিছনে মাটিতে পড়ে যায় এবং তার হাত থেকে ছুরিটা একটু তফাতে পরে যায়, কিন্তু রকিও একজন চ্যাম্পিয়ন ফাইটার সে সঙ্গে সঙ্গে উঠে ছুরি ছাড়াই আঘাত করতে এলে অভয় তার কমন অথচ ভীষণ কার্যকরী ট্যাকটিক্স ব্যবহার করে, এক পা তুলে রকির এক পায়ের পাতা মাটিতে চেপে ধরে আর এক হাত দিয়ে রকির চোয়ালে ঘুষি চালায় রকি আঘাতটা ছড়ানোর জন্য মাথাটা পিছনে সরিয়ে আঘাতটা এড়ালেও একটা পা মাটির সাথে অভয় চেপে ধরে থাকায় শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে না এবং একটা তীব্র আর্তনাদ করে মাটিতে পরে যায় এবং বলাবাহুল্য রকির‌ও একটা পায়ের পাতার জয়েন্ট ভেঙে গেছে।
অভয় এর আগেও কয়েকবার এটা করতে চেষ্টা করেছে কিন্তু রকি সঠিক সময়ে সরে যাওয়ায় সফল হয়নি অবশেষে হয়েছে রকি মাটিতে পরে কাতরাতে থাকে আর যন্ত্রনায় আর্তনাদ করতে থাকে অভয় রকির কাছে গিয়ে ওর চোয়ালে একটা মোক্ষম পাঞ্চ মারে। এবার বিদিশা এগিয়ে রকির সামনে আসে অভয় পিছিয়ে যায় যাওয়ার আগে বিদিশাকে বলে: তোমাকে বলেছিলাম না তোমার প্রতিশোধ পূরণ হবে, আমি সাহায্য করবো আমি আমার কথা রেখেছি, যাও নিজের প্রতিশোধ পূরণ করো।
বিদিশার হাতে পিস্তল রকি এবার বিদিশার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় কোনোমতে বলে: কি মারবে আমাকে?
বিদিশা শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়: তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি পারলে পরের জন্মে একজন ভালো মানুষ হয়ে জন্মিও। কথাটার সাথে সাথেই পিস্তল পরপর কয়েকবার গর্জে ওঠে এবং রকি দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

খবরটা এসে পৌঁছানো মাত্র বীরেন ভট্টাচার্যের পায়ের তলার মাটি সরে গেল তার ভাইয়ের পরে এবার তার ভাগ্নে রকিও... পুলিশ থেকে অবশ্য তাদের বডি শনাক্তের জন্য ডেকেছে কিন্তু বীরেন বাবু জানেন রকি এআরসির পিছনে ছিল আর এআরসি যে কতটা ভয়ানক সেটার প্রমাণ তো তিনি অনেক আগেই পেয়েছেন তবুও তিনি রকিকে পাঠিয়েছিলেন এআরসির পিছনে, রাগে দুঃখে হতাশায় নিজের মাথার চুল টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে বীরেন বাবুর।
মর্গে নিজের ছেলের মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৈশালী দেবী তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন শেফালী দেবী ও বৃষ্টি কিছুটা দূরে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছেন বীরেন বাবু। শ্মশানে রকির দেহটা চুল্লিতে ঢোকানোর সাথে সাথেই বৈশালী দেবী ভাইয়ের কাছে এসে চেঁচাতে শুরু করেন, "বীরেন তুই এখনো দাঁড়িয়ে থাকবি? আমার ছেলেকে যে বা যারা মেরেছে তাদের তুই ছেড়ে দিবি? আমার ওদের লাশ চাই, রক্ত চাই" বীরেন বাবু দিদির কথায় কোনো উত্তর না দিলেও শেফালী দেবী আর চুপ থাকতে পারেন না এত বছরের বিবাহিত জীবনে যেটা করেননি সেটাই এখন করলেন নিজের স্বামীর উদ্দেশ্যে উঁচু গলায় কথা বললেন "দেখছো তোমার পাপের পরিণাম? প্রথমে তোমার ভাই গেলো আর এখন রকি, জানিনা তোমার আর কত পাপের শাস্তি পাওয়া বাকি আছে আমাদের"।
এবার বীরেন বাবুও গর্জে ওঠেন: পাপ নয় ভুল একটা ভুল করেছিলাম তার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে কিন্তু আমিও বীরেন ভট্টাচার্য, এত সহজে হারবো না ওই রুদ্রের ছেলে অভয়কে এবার নিজের হাতে শেষ করবো"
চেষ্টা তো করেছিলে ষোলো বছর আগে তুমি তোমার দিদি আর ঠাকুরপো সাথে জগাও ছিল সবাই তাদের পাপের শাস্তি পেয়েছে এবার তোমার পালা, এবার তো অন্তত নিজেকে শোধরাও।
অনেক কথা হয়েছে তোর... এত বছর আমার পায়ের তলায় ছিলি আর আজ..
আর আজ মুখ ফুটেছে, শেষের কথাটা বলেন বৈশালী দেবী একটু থেমে তিনি আবার বলতে শুরু করেন: আজ তোমার মুখ ফুটেছে শেফালী ভুলে যাচ্ছো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো।
না, তবে আপনি ভুলে যাচ্ছেন আজ রকির এই অবস্থা শুধুমাত্র আপনাদের জন্য।
চোপ গর্জন করে ওঠেন বীরেন বাবু , তিনি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই বৃষ্টির কাছে বাধা পান, বৃষ্টি বলে: মা তো ভুল কিছু বলেনি, রকি দাদা কি কি করতো সেটা আমরা সবাই জানি, বৌদিকে কিরকম মারতো অত্যাচার করতো সেটাও আমরা দেখেছি।
এখন দেখছি তোমার‌ও মুখ ফুটেছে বৃষ্টি। চাপা গর্জনে কথাটা বলেন বীরেন বাবু।
যেটা সত্যি সেটাই বলছি ড্যাডি, তোমাদের করা অন্যায়ের শাস্তি আমরা ভোগ করছি যে তাথৈ আগে আমার সাথে কথা না বলে থাকতো না সে এখন আমার থেকে দূরে দেখাও করে না ,যে ছেলেটা একসময় আমাকে ভালোবাসতো সে এখন আমাকে ঘেন্না করে শুধুমাত্র তোমাদের জন্য, আর তোমাদের কথা শুনে আমি ছোটোবেলায় যে অন্যায়টা করেছিলাম তার জন্য কিন্তু আঃ। হটাৎ বৃষ্টি আর্তনাদ করে ওঠে কারণ বৈশালী দেবী এখন ওর চুলের মুঠি চেপে ধরেছেন এবং ক্রুদ্ধ স্বরে বলতে থাকেন: আমরা যা করেছি বেশ করেছি, আবার করবো যে আমার ছেলেকে মেরেছে তাকে আর তার পুরো পরিবারকে জ্যান্ত পোড়াবো।
ওকে ছেড়ে দাও দিদি, শেফালী দেবী অনুরোধ করতে থাকেন,বৃষ্টিও আর্তনাদ করতে থাকে কিন্তু বৈশালী দেবী তাতে কর্ণপাত করেন না তিনি এক‌ইভাবে বলতে থাকেন: তবে তার আগে তোদের মা-মেয়ের উচিত শিক্ষা দেবো। কিন্তু তিনি কিছু করার আগেই শেফালী দেবী নিজের মেয়েকে ছাড়িয়ে নেন, বৈশালী দেবী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবার বৃষ্টিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই শেফালী দেবী নিজের মেয়েকে আড়খল করে বলতে থাকেন: আপনারা কি মানুষ? এতটা নীচে একজন মানুষ কিভাবে নামতে পারে?
দেখবি তুই? তাহলে দেখ বলে এবার বীরেন বাবু তার স্ত্রী শেফালী দেবীর গলা টিপে ধরেন আর চিৎকার করে বলতে থাকেন "আজ সবাইকে শেষ করে দেবো"
ড্যাডি.. বৃষ্টি ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, "ছাড়ো মা কে ছাড়ো" বীরেন বাবুকে একটা ধাক্কা দিয়ে নিজের মাকে ছাড়িয়ে নেয় বৃষ্টি, শেফালী দেবী কাশতে থাকেন, বৃষ্টি বলতে শুরু করে "তোমরা মানুষের‌ও অধম, পিশাচ তোমরা"
মনে হচ্ছে আজ মা-মেয়ে দুটোকেই শেষ করতে হবে। বলে ক্রুদ্ধ বৈশালী দেবী বৃষ্টির দিকে এগিয়ে যেতেই ,চকিতে বৃষ্টি নিজের গোড়ালির কাছে জিন্সের তলায় লুকোনো পিস্তল বার করে আনে আর সটান সেটা নিজের পিসির দিকে তাক করে, এক মুহূর্ত থমকে যান বৈশালী দেবী, কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্যের কয়েকজন লোক বৃষ্টিকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই বৃষ্টি ওদের দিকে পিস্তল ঘোরায় বলে: কেউ আমাদের ধরার চেষ্টা করলে আমি গুলি চালাবো।
চালা গুলি। বীরেন বাবুর গুরুগম্ভীর স্বর শোনা যায়, তিনি এগিয়ে আসছেন বৃষ্টির দিকে।
ড্যাডি আমি কিন্তু চালিয়ে দেবো।
চালা গুলি, মেয়ে হয়ে নিজের বাবার দিকে পিস্তল ধরেছিস, নিজের মেয়েই শত্রু হয়ে গেছে আর বীরেন ভট্টাচার্য শত্রুর শেষ রাখে না। বীরেন ভট্টাচার্য এগোতে থাকেন আর বৃষ্টি এবং সরমাদেবী পিছোতে থাকেন তাদের চোখে ভয়। হঠাৎই সরমাদেবী মেয়ের হাত থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে সেটা সোজা নিজের স্বামীর দিকে উঁচিয়ে ধরে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: পালা বৃষ্টি, পারলে তাথৈএর সাথে যোগাযোগ কর, ও অভয়ের কাছে আছে।
মা তুমিও চলো, আমি তোমাকে একা ছেড়ে..
কথা বাড়াস না বৃষ্টি পালা নাহলে এরা তোকে মেরে ফেলবে। ইতিমধ্যে বীরেন বাবু এগিয়ে এসে নিজের স্ত্রীর হাত থেকে পিস্তল কেড়ে নিতে চাইছেন কিন্তু সরমাদেবী ছাড়তে চাইছেন না এই নিয়ে ধস্তাধস্তি চলছে, বৃষ্টি তবুও দাঁড়িয়ে আছে দেখে সরমাদেবী আবার বলেন: দৌড়ো বৃষ্টি, পালিয়ে যা। এবার বৃষ্টি দৌড়াতে যেতেই বৈশালী দেবী কয়েকজনকে হুকুম দেন ওকে ধরার কিন্তু তখনই সরমাদেবী একটা জোরে ধাক্কায় বীরেন বাবুকে মাটিতে ফেলে দিয়ে আগুয়ান লোকদের উদ্দেশ্যে পরপর দুটো গুলি চালান, একজনের গায়ে গুলি  লাগায় সে একটা আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
বৃষ্টি দাঁড়িয়ে থাকিস না পালা। এবার মায়ের কথা শোনে বৃষ্টি সে দৌড় লাগায় কিন্তু তখনই বীরেন বাবু উঠে নিজের স্ত্রীকে ধরতে এগিয়ে আসতেই তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান সরমাদেবী কিন্তু অনভ্যস্ত হাতে চালানোর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে গুলি লাগে বৈশালীদেবীর বুকে, রক্তাক্ত অবস্থায় একটা চিৎকার করে মাটিতে পড়ে যান পরক্ষনেই বীরেন বাবুর হাতের পিস্তল গর্জে ওঠে এবার সরমাদেবী মাটিতে পড়ে যান।
"তোরা যা বৃষ্টিকে ধরে আন ও যেন কোনোমতেই পালাতে না পারে" পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকেন বীরেন বাবু, তার লোকের বেরিয়ে যায়। দৌড়াতে থাকে বৃষ্টি, একটু আগেই সে পরপর দুবার পিস্তলের আওয়াজ শুনেছে সাথে দুজন মহিলার চিৎকার চিনতে কষ্ট হয়নি তার একজন তার পিসি আর অপরজন তার মা, বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসতে চায় কিন্তু তার মনে পবে তার মা তাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণ দিয়েছে, তাই তাকে পালাতে হবে তার মায়ের বলিদান ব্যার্থ হতে দেবে না সে।
আরো জোরে দৌড়াতে থাকে সে শ্মশান থেকে বেশ কিছুটা দূরে গাড়ি চলাচলের রাস্তা, সেখানে বাসস্টপ আছে সেদিকে দৌড়াতে থাকে, একটু পরে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে দুহাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁফাতে শুরু করে কিন্তু পিছনে একাধিক পায়ের আওয়াজ পেয়ে সে বোঝে তাকে ধাওয়া করা হচ্ছে, সে আবার দৌড় লাগায়।
কোনোমতে বাসস্টপে পোঁছেই যে বাসটা সবার আগে এল সেটাতেই উঠে গেল বৃষ্টি কোথায় যাবে সেটাও দেখলো না অবশ্য কোথায় যাবে সেটাই তো জানেনা মনে পড়লো মা বলেছিলেন তাথৈএর কাছে যেতে, তাথৈ অভয়ের কাছে আছে। অভয়.. ও বেঁচে আছে? কিন্তু থাকলেও ও কোথায় আছে সেটা বৃষ্টির জানা নেই তাথৈকে ফোন করতে পারে কিন্তু তাথৈ তো এখন ওর সাথে কথাই বলতে চায় না ও কি ফোন ধরবে?
অনেক ভেবে তাথৈকে ফোন করে বৃষ্টি কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাথৈএর ফোন সুইচড অফ, এবার সত্যিই ভয় করতে থাকে বৃষ্টির এবার কি করবে, কোথায় যাবে? হটাৎ ওর মনে পড়লো অমিয়র কথা অমিয় নিশ্চয়ই জানে তাথৈ আর অভয় কোথায় আছে কিন্তু অমিয়‌ও তো ওকে ঘৃণা করে ও কি সাহায্য করবে? অমিয়‌কে ফোন করে বৃষ্টি কিন্তু অমিয় ওর ফোন ধরে না একটু পরে আবার ফোন করলে কেটে দেয় নিজের মনেই নিজেকে ব্যাঙ্গ করে বৃষ্টি, নিজেকেই বলে: আমাকে এখন সবাই ঘেন্না করে, কেন বাঁচতে চাইছি এর থেকে তো মারা গেলেই ভালো হতো। কিন্তু পরক্ষনেই মায়ের মৃত্যুর কথা মনে পড়তেই ঠিক করে তাকে বাঁচতে হবে, তার মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাই প্রথমে দোনোমোনো করলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি ঠিক করে সে অমিয়র সাথে দেখা করে সাহায্য করবে। বাসে একদম পিছনে গিয়ে একটা সিট পেয়ে বসে দুহাতে নিজের মুখ ঢাকে বৃষ্টি, লুকোনো মুখ চোখের জলে ভিজে যায় যদিও সবার অলক্ষ্যেই থাকে ব্যাপারটা, একটু পরে চোখের জল মুছে নেয় এখন চোখের জল ফেলার সময় নয়।
কিছুক্ষণ পরে যখন একটা বাসস্টপে নামলো বৃষ্টি তখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে অমিয়র বাড়ি চেনে না সে কিন্তু অফিসটা চেনে সেখানেই যাওয়া ঠিক করে বৃষ্টি একটা অটো নিয়ে অমিয়র অফিসে পৌঁছে সিকিউরিটির কাছ থেকে জানতে পারেও আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে অমিয় এইমাত্র বেরিয়ে গেছে, বৃষ্টি জানে অমিয় মাঝে মাঝে অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের চায়ের দোকানে আড্ডা দেয় বৃষ্টি সেই দিকে ছূটলো। চায়ের দোকানের কাছে পৌঁছেও বৃষ্টি অমিয়কে যদিও দেখতে পেলো না কিন্তু যাদের পেলো তাদের দেখে ওর হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল ,এদের সে চেনে তার ড্যাডির হয়ে কাজ করে নির্ঘাত ওকে খুঁজছে, বৃষ্টি চট করে একটু আড়ালে লুকিয়ে গেল।
একটু পড়ে লোকগুলো অন্যদিকে চলে গেলে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে চায়ের দোকানে অমিয়র খোঁজ করে জানে অমিয় এখান থেকেও একটু আগে বেরিয়ে গেছে,  বৃষ্টি জানে অমিয় ওর ফোন ধরবে না তাই চায়ের দোকানের দোকানদারের থেকে ফোন চেয়ে অমিয়কে ফোন করে কিন্তু এবারও দুর্ভাগ্য যে অমিয়র ফোন বিজি পরপর কয়েকবার করে কিন্তু প্রতিবারই বিজি, শেষে হতাশ হয়ে ফোনটা ফেরত দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
আর কিছু করার নেই বৃষ্টির, ওর সব রাস্তা বন্ধ কিন্তু তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে তাথৈকে আরেকবার ফোন করে যদিও ওর মনে আর বেশি আশা নেই, তবুও যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ এইভেবে ফোন করেছে যদি তাথৈএর ফোন চালু হয় এবং তাথৈ ফোন ধরে তাহলে তাথৈর কাছে সাহায্য না চাইলেও অন্তত ক্ষমা চেয়ে নেবে কারণ এইভাবে একা বেশীক্ষণ সে তার ড্যাডির লোকেদের থেকে পালাতে পারবে না ধরা পড়বেই। ফোনটা কানে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে এবার অবশ্য তাথৈএর ফোন চালু হয়েছে কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছে তাথৈ ধরছে না, বৃষ্টি ভাবছে ফোন কেটে দেবে এমন সময় ওপাশ থেকে ভেসে এলো "কি হয়েছে বল"।
হ্যালো, হ্যালো তাথৈ
বল কি হয়েছে?
তাথৈ আমাকে বাঁচা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
কারা? কি হয়েছে তোর?
তাথৈ ওরা মাকেও মেরেছে এবার আমার পিছনে ধাওয়া করছে।
কারা? তুই শান্ত হ আগে তারপর বল কি হয়েছে?
হ্যালো হ্যালো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না বৃষ্টি কারণ ঠিক তখনই ফোনের চার্জ শেষ হয়ে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল, ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ দুচোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে বৃষ্টি, তার বন্ধ চোখ দিয়েও জল ঝড়ছে সে জানে আর কোনো উপায় নেই সে একবার চারিদিকে তাকায় অনেক পথচারীদের দেখলেও একটু আগের দেখা নিজের ড্যাডির লোকদের দেখতে পায় না। বৃষ্টি হাঁটতে থাকে কোথায় যাচ্ছে কার কাছে যাচ্ছে কোনো ঠিক নেই ফোন বন্ধ থাকায় তাথৈকে জানাতে পারেনি কোথায় আছে কাজেই ওর থেকে সাহায্য পাওয়ার আশাও নেই, অন্য কারো থেকে ফোন করে লোকেশন দিতে পারে কিন্তু ও আসার আগেই যে ওর ড্যাডির লোকগুলো ওকে ধরে ফেলবে না তার গ্যারান্টি নেই, এদিকে তৃষ্ণায় গলা কাঠ, ক্ষিদেতে পেটে মোচড় দিচ্ছে, একটু এগিয়ে একটা ফাস্টফুডের দোকান দেখতে পেলো বৃষ্টি সেখানে ঢুকে আগে অনেকটা জল খেয়ে তেষ্টা মেটালো, তারপর খাবার খাবে বলে অর্ডার দিতে গিয়ে মনে পড়ে ওর কাছে বেশি ক্যাশ নেই যা ছিল সেটা গাড়ি ভাড়ায় খরচ হয়ে গেছে আর অল্প যা আছে সেটায় এখানে খাওয়া হবে না, অন্য কোনো কমদামি খাবারের দোকান খুঁজতে হবে বেশী ক্যাশ কখনোই সঙ্গে রাখার অভ্যাস নেই, বেশিরভাগ সময় মোবাইল থেকেই পেমেন্ট করে দেয় কিন্তু এখন সে উপায়‌ও নেই, আরও কিছুটা জল খেয়ে দোকান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে ও খেয়াল‌ও করে না যে দোকানে ঢোকা ইস্তক একজোড়া চোখ অবাক দৃষ্টিতে ওর কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।
সবে দোকানের বাইরে পা দিয়েছে এমন সময় বৃষ্টি শুনতে পেলো "ওই যে ওখানে ধর ওকে", তাকিয়ে দেখে লোকগুলো ফিরে এসেছে, সে আবার দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড় লাগায় পিছনে লোকগুলো দৌড়াতে থাকে কিন্তু কজন শক্ত সমর্থ জোয়ান লোকের সাথে সে পারবে কেন লোকগুলো ওর অনেক কাছে চলে এসেছে ওকে প্রায় ধরেই ফেলবে এমন সময় বৃষ্টির সামনে এক বাইক এসে থামে আর চালক বলে: তাড়াতাড়ি উঠে এসো। বাইক চালক হেলমেট করে থাকায় প্রথমে চিনতে পারে না বৃষ্টি তাই একটু হকচকিয়ে যায়, চালক আবার বলে "কি হলো উঠে আসো" শুনে তাড়াতাড়ি বাইকের পিছনের সীটে উঠে বসে আর সঙ্গে সঙ্গে বাইক দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়।
ওই লোকগুলো তোমার পিছনে পড়েছিল কেন? জিজ্ঞেস করে বাইক চালক, কিন্তু বৃষ্টি চুপ করে থাকে তার এখন হতবিহ্বল অবস্থা এই চালক একজন ছেলে এবং সবথেকে বড়ো ব্যাপার একে সে চেনে, মুখ না দেখলেও গলার আওয়াজে চিনেছে, অমিয়... যার সাথে দেখা করার জন্য এতক্ষণ ধরে সে পাগলের মতো ছুটছে কিন্তু সবজায়গায় শোনে সে চলে গেছে কিন্তু ওর সৌভাগ্য ঠিক সময় ওর সামনে চলে এলো।  বৃষ্টি পিছন থেকে দুহাতে অমিয়কে আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রাখে কিন্তু চালকের প্রশ্নের উত্তরের বদলে বলে "ওরা কিন্তু এখন তোমার‌ও পিছনে পড়বে"
কিন্তু ওরা কারা? আর বীরেন ভট্টাচার্যের মেয়ের পিছনে পড়েছেই বা কেন? এত সাহস এই শহরে কার?
ওরা বীরেন ভট্টাচার্যের‌ই লোক।
অবাক হয় অমিয় বলে "তোমার ড্যাডি তোমাকে ধরতে লোক পাঠিয়েছেন কেন?"
অনেক লম্বা ঘটনা।
তুমি আমাকে খুঁজছিলে কেন?
কারণ তোমার কাছে আসতেই আমার মন চেয়েছে তাই, তোমাকে তো ফোন‌ও করেছিলাম তুমি ধরোনি।
হ্যাঁ মিটিংয়ে ছিলাম পরে কাজের চাপে কলব্যাক করতে ভুলে গেছি, এবার বলোতো কি হয়েছে? ও এই নাও এটা খেয়ে নাও আর তারপর হেলমেট পড়ে নাও। কথাটা বলে অমিয় একটা প্যাকেট বৃষ্টির হাতে দেয়।
বৃষ্টি সেটা নিতেই অমিয় আবার বলে: আপাতত এটাই খেয়ে নাও, কি আর করবো বলো তোমার পছন্দের খাবার এইমুহূর্তে আনতে পারলাম না তার জন্য দুঃখিত।
বৃষ্টি বোঝে অমিয় এখনো ওর উপরে রেগে আছে সে চুপ করে প্যাকেট খোলে তাতে একটা রোল আছে, বৃষ্টি চুপচাপ খেতে থাকে, মাঝে একবার জিজ্ঞেস করে: তুমি খেয়েছো?
হুম।
সত্যি বলছো?
তুমি যে দোকান থেকে জল খেলে ওখানেই আমি খাচ্ছিলাম তুমি খেয়াল করোনি।্ও আচ্ছা।
এবার সব খুলে বলোতো।
বৃষ্টি একে একে সব বলতে থাকে এমনকি ওকে পালাতে বলে মায়ের ওদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কথাও, অমিয় চুপ করে শুনতে থাকে হটাৎ রাস্তায় একটা বাঁক নেওয়ার সময় বৃষ্টি ওদের পিছনে তাকায় আর তাকাতেই ওর বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে তাড়াতাড়ি অমিয়কে বলে "আরো জোরে চালাও ওরা আমাদের পিছু নিয়েছে" অমিয় বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয় কিন্তু এখন মাঝরাত নয় যে রাস্তা ফাঁকা থাকবে তাই না চাইলেও মাঝে মাঝে ওকে স্পিড কমাতে হচ্ছে। বৃষ্টি ভয়ার্ত গলায় বলে "ওরা আমার পিছনে আছে তুমি এক কাজ করো"। অমিয় বুঝতে পারে বৃষ্টি কি বলতে চাইছে সে বলে "চুপ করে বসে থাকো"। বৃষ্টি আবার বলে "তুমি আমাকে কোথাও নামিয়ে চলে যাও ওরা ধরতে পারলে তোমাকে ছাড়বে না"। অমিয় এবার ধমক দেয় "বললাম তো চুপ করে থাকতে, আমাকে ভাবতে দাও", বৃষ্টি চুপ করে যায় কিন্তু অমিয় একহাতে পকেট থেকে মোবালটা বার করে কাকে যেন ফোন করে তারপর আবার পকেটে রেখে দেয় বৃষ্টি বোঝে অমিয় হেডফোন লাগিয়ে রেখেছে।

?
Like Reply
(07-11-2022, 02:33 PM)Monen2000 Wrote:
                            একবিংশ পর্ব

বীরেন ভট্টাচার্যের হেড অফিসে আগুন, কিন্তু কেন? কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অভয়কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করে আমির ,মাহমুদ আর উসমানকে ওদের বিশ্বাসঘাতকতার চরম শাস্তি দিয়েছে এরপর রকির দেহ যাতে ওর পরিবারের হাতে পৌঁছে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করে ফিরে এসে দুই বন্ধু বাগানে বসে নিজেদের পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করছে তখনই অভয় বলে কথাটা যে সে এখন বীরেন ভট্টাচার্যের অফিসে অর্থাৎ যেখান থেকে উনি নিজের সব কাজ কারবার কন্ট্রোল করেন সেখানে আগুন লাগাতে চায়, তার‌ই উত্তরে আমির প্রশ্নটা করে।
দরকার আছে আমির আর আমিও তোমাদের সাথে যাবো।
সে নাহয় আগুন লাগানো গেল কিন্তু হটাৎ ওখানে কেন? মানে কোনো বিশেষ কারণ কি?
হ্যাঁ।
ওহ্ ঠিক আছে কখন করতে হবে? 
আজ রাতেই।
ঠিক আছে। আমির উঠতে যায় কিন্তু অভয় বসতে বলে, আমির আবার বসে পড়ে, একটু চুপ করে থেকে অভয় বলতে থাকে: তুমি হয়তো ভাবছো আমি কি পাগলামি শুরু করেছি, কিন্তু ওখানে আগুন লাগাতে চাওয়ার একটা উদ্দেশ্য আছে।
আমির চুপ করে শুনতে থাকে অভয় বলতে থাকে: তুমি হয়তো ভুলে গেছো যে জমিটায় বীরেন ভট্টাচার্য নিজের সমস্ত পাপের কন্ট্রোল রুম বানিয়েছেন সেটা একসময় আমাদের ছিল, আমার বাবা খুব কষ্ট করে ওইটুকু জমি কিনে একটা ছোটো বাড়ি বানিয়েছিলেন, আমাদের কাছে সাক্ষাৎ স্বর্গ ছিল ওটা কিন্তু একরাতে বীরেন ভট্টাচার্য আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে আমাদের স্বর্গকে নরকে পরিণত করেছেন, আমার বাবার স্মৃতিধন্য জমি ওটা আমার কাছে পরম পবিত্র কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য ওখানে বসে অজস্র পাপ করেছেন ফলে ওটা অপবিত্র হয়ে গেছে তাই ওটাকে আবার পবিত্র করতে হবে, আগুন দিয়েই ওই জমিকে অপবিত্র করার সূচনা করেছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য আর আমি আগুন লাগিয়েই আমি আবার ওই জমিকে পবিত্র করবো।
তুমি চিন্তা কোরো না হয়ে যাবে। অভয়ের কথা শেষ হতেই বলে ওঠে আমির।
আরেকটা কাজ করতে হবে।
কি?
শিউলী দেবীর দেওয়া ব্রহ্মাস্ত্রটা প্রয়োগ করার সময় এসে গেছে।
আমিরের মুখে হাসি দেখা দেয় বলে: তাহলে তো ওনার খেল খতম।
হ্যাঁ, এবার সময় হয়েছে শেষ আঘাতটা করার, রকির মৃত্যুর পর উনি আর চুপ করে থাকবেন না, এখন উনি আমাকে শেষ করার জন্য যা করা সম্ভব তাই করবেন আমার পরিচিত কাছের মানুষদের মারার চেষ্টা করবেন সাথে ক্ষমতা অর্জনের জন্য ভোটে জিতে সিএমের গদিতে বসতে চাইবেন কিন্তু ওনার ইচ্ছা অপূর্ণ রয়ে যাবে, আমি পূরণ হতে দেবো না।
দুই বন্ধু আলোচনা করছে এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে তাথৈ এসে দাঁড়ায় ওকে দেখে দুজনেই একটু অবাক হয় অভয় জিজ্ঞেস করে: কিছু বলবে?
হ্যাঁ, মানে।
কি হয়েছে? কিছু দরকার?
একটা কথা ছিল, কিন্তু বুঝতে পারছি না কিভাবে বলবো?
তুমি কবে থেকে আমাকে কিছু বলার আগে ভাবতে শুরু করলে?
একটু ভেবে তাথৈ বলেই ফেলে "এক্ষুনি বৃষ্টির ফোন এসেছিল"
ও, তা কি বললো?। অভয়ের গলা নিস্পৃহ। 
কিসব উল্টোপাল্টা বকছিল, বললো কারা জ্যেঠিমাকে মেরেছে এখন ওকে মারতে চায়। 
তো তুমি কি চাও আমি ওর খোঁজ করি?
হ্যাঁ, আমি জানি ও তোমাকে অপমান করেছিল কিন্তু আজ ওর কথাবার্তা কেমন শোনাচ্ছিল তুমি যদি একবার..
এটা তুমি কি বলছো তাথৈ? পিছন থেকে কখন যেন বিদিশা এসে দাঁড়িয়েছে, কথাটাও সেই বললো।
বৌদি বিশ্বাস করো আজ বৃষ্টির আওয়াজ নরমাল ছিল না।
হতে পারে আবার এটাও হতে পারে এটা বীরেন ভট্টাচার্যের নতুন প্ল্যান।
মানে? কথাটা তাথৈকে বেশ অবাক করে বোঝা যায়।
বীরেন ভট্টাচার্য খুব ভালো করেই জানেন যে তোমাদের দুই বোনের পরস্পরের মধ্যে খুব মিল, তাই একজনের বিপদের কথা শুনে অপরজন ঠিক থাকতে পারবে না যেখানেই থাকুক সে আসবেই।
তাতে কি হলো?
তুমি এখনো বুঝতে পারছো না, বীরেন বাবু এখন যেনতেনভাবে রয়কে মারতে চাইবেন আর উনি এটা ভালো করেই জানেন যে রয়কে মারা তো দূর এখন ওর অবধি পৌঁছানো ওনার পক্ষে ইমপসিবল, কিন্তু যদি কোনোভাবে রয়ের কোনো দুর্বলতা হাতে পান তাহলে সহজেই রয়কে পেয়ে যাবেন ঠিক যেমন আগের বার আমিরকে ব্যবহার করেছিলেন।
তাথৈ বুঝলো ব্যাপারটা সে বলে:কিন্তু কেন জানিনা আজ বৃষ্টির গলা অন্যরকম শোনালো, এখন ওর ফোনটাও বন্ধ, বারবার বলছিল ওকে বাঁচাতে। বলে অভয়ের দিকে তাকালো, কভয় বুঝলো তাথৈ কি বলতে চাইছে কিন্তু বিদিশা যেটা বলছে সেটাও যুক্তিযুক্ত আবার যদি সত্যিই বৃষ্টির কোনো বিপদ হয় তাহলে অভয়ের উচিত ওকে বাঁচানো, বিপন্নকে বাঁচানোর শিক্ষাই সে পেয়েছে তার বাবা এবং গুরুর কাছ থেকে।
আমার মনে হয় বিদিশা ঠিক বলছে এটা প্ল্যান হতে পারে। বলে আমির‌। অভয় উত্তর দেওয়ার আগেই ওর মোবাইলটা বাজতে শুরু করে, ফোনটা রিসিভ করে সে "বল"
ভাই, আই নিড ইওর হেল্প। ফোনের ওপাশ থেকে অমিয়র গলা শোনা যায়।
তোর আবার কি হয়েছে?
বীরেন ভট্টাচার্যের লোকজন বৃষ্টিকে তাড়া করছে, আর আমি ওকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছি কিন্তু জানিনা কতক্ষণ পারবো?
তোরা কোথায়?
বাইকে করে পালাচ্ছি, কিন্তু যেখানেই যাচ্ছি যেদিকেই যাচ্ছি ওরা ঠিক খোঁজ পেয়ে যাচ্ছে।
গাঁড়ল কোথাকার, আমার বাড়ির দিকে আয়, আমিও বেরোচ্ছি।
থ্যাংকস ভাই।
তুমি যাবে? ফোন রেখে অভয় বেরোনোর উদ্যোগ করতেই জিজ্ঞেস করে আমির।
হ্যাঁ, যেতেই হবে, সত্যি মিথ্যা যাই হোক অমিয় এখন বৃষ্টির সাথে আছে আর দুজনের পিছনেই লোক তাড়া করছে।
ঠিক আছে আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমিও যাবো। তাথৈ বলে ওঠে।
না, তুমি এখানে থাকবে।
অভয় আমি যাবো, প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো।
তাথৈ আমার উপরে ভরসা রাখো।
তাথৈ আর কিছু না বলে চুপ করে যায়।
 দুই বন্ধু বেরিয়ে আসে গাড়িতে উঠতে উঠতে অভয় আমিরকে বলে আমির নিকুঞ্জকে ফোন করো।
একটু ফাঁকা রাস্তা পেয়ে অমিয় বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে পিছনে বৃষ্টি দুহাতে ওকে আঁকড়ে ধরে আছে হটাৎ একটা কানফাটানো আওয়াজ আর ওদের মাথার পাশ থেকে কি যেন বেরিয়ে গেল বুঝতে অসুবিধা হলো না যে পিছনে যারা তাড়া করছে এতক্ষণ অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল আসছিল এখন তারা এখন গুলি চালাচ্ছে, পরপর আরও কয়েকটা গুলি চললো কিন্তু বাইরের স্পিডের জন্যই হোক বা সৌভাগ্যের জন্য গুলিগুলো ওদের লাগেনি নাহলে... সামনে একটা সিগন্যাল অমিয় লক্ষ্য করে হলুদ হয়ে আছে এক্ষুনি লাল বাতি জ্বলবে কিন্তু এখন থামলে অবধারিত মৃত্যু সে বাইকের স্পিড আরো কিছুটা বাড়িয়ে দেয়।
বেশ কিছুদূর পর্যন্ত পিছনে কাউকে ওদের তাড়া করতে না দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হয় অমিয় এবং বৃষ্টি দুজনেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। "তুমি তো আমাকে পছন্দ করো না তাহলে আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিলে কেন? বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে।
তুমি আমাকে না কোনোদিন বুঝেছো না বুঝবে।
তাহলে বুঝিয়ে দাও।
তুমিও তো আমাকে পছন্দ করো না তাহলে আমার কাছে এলে কেন?
ভেবেছিলাম তুমি জানো তাথৈ কোথায় আছে।
ওহ।
বৃষ্টি আরও জোরে আঁকড়ে ধরে অমিয়কে, বলে: জানিনা কেন যখন ওরা আমাকে তাড়া করছিল তখন যে দুজনের কথা মনে পড়েছে তাদের একজন তাথৈ আর অপরজন তুমি, আমার মা আমাকে বাঁচাতে নিজে..... আমি শেষবারের মতো দেখতেও পেলাম না।
আয়্যাম সরি।
বৃষ্টি অমিয়র পিঠে মাথা রাখে, অমিয় বোঝে বৃষ্টি কাঁদছে সে বাঁধা দেয় না সে একমনে বাইক চালাতে থাকে কিন্তু আর কতদূর, ইসস যদি শুরুতেই অভয়ের বাড়ির দিকে আসার কথাটা মনে পড়তো তাহলে হয়তো এতক্ষণে ওর সাথে দেখাও হয়ে যেত তাড়াহুড়োয় সে বৃষ্টিকে নিয়ে উল্টো দিকে চলে গিয়েছিল তারপর অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসছে, অভয়‌ও আসছে বললো কিন্তু ও খুঁজে পাবে ওদের? অমিয়র মনে একটু শঙ্কা দেখা দিতেই নিজেই সেটা উড়িয়ে দিল, অভয় যখন বলেছে ও আপছে তখন ও ঠিক খুঁজে নেবে ও ছোটো থেকেই নিজের কথা রাখে।
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই হটাৎ একটা ক্রসিং পার হবার সময় সাইড থেকে একটা মারুতি এসে ওদের প্রায় ধাক্কা মারছিল কিন্তু অল্পের জন্য অমিয়রা বেঁচে যায়, বাইকটা একটু থামিয়ে পিছনে ঘুরে কিছু বলতে যাচ্ছিল সে কিন্তু পিছন ঘুরতেই তার হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল, যারা তাদের তাড়া করছিল তারা যেভাবেই হোক ওরা ঠিক অমিয়দের খুঁজে পেয়েছে, অমিয় তাড়াতাড়ি সামনে ঘুরে আবার বাইকে স্পিড তোলে সঙ্গে সঙ্গে পিছনের গাড়িটাও ওদের ধাওয়া করে, অমিয়র বাইকের খুব কাছেই চলে এসেছে গাড়িটা ওটার উদ্দেশ্যে বাইকটাকে ধাক্কা মারা, মেরেই দিচ্ছিল কিন্তু মোক্ষম সময়ে একটা গুলির আওয়াজ আর তারসাথে টায়ার ফাটার কানফাটানো আওয়াজ এবং গাড়িটা একদিকে কেদরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো, কৌতূহলবশত ব্যাপারটা কি দেখার জন্য অমিয় বাইক থামিয়ে পিছনে ঘুরে তাকায় দেখে ওদের পিছনে যারা তাড়া করছিল সেটার পিছনে আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে, অমিয় দেখলো পিছনের গাড়িটা থেকে নেমে এলো অভয় আর আমির এবং যারা ওকে আর বৃষ্টিকে তাড়া করছিল তারা মোট পাঁচজন  টায়ার ফাটা গাড়ি ছেড়ে অশ্রাব্য অশ্লীল গালাগালি দিতে দিতে বেরিয়ে আসতেই অভয় আর আমির ওদের দিকে গুলি চালাতে থাকে প্রত্যুত্তরে এরাও গুলি চালাতে থাকে, অমিয় বৃষ্টিকে নিয়ে বাইক ছেড়ে রাস্তার পাশে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে।
দুতরফ থেকেই অনবরত গুলি চলতে থাকে একদিকে আমির আর অভয় গাড়ির দরজার আড়াল থেকে চালাচ্ছে অপরদিকে এই পাঁচজন‌ও তাই, একসময় হটাৎ অভয় নিজের জায়গা ছেড়ে এগিয়ে এলো পিছন থেকে আমির ওকে কভার করছে, আসতে আসতে অভয় দুজনকে আর আমির দুজনকে স্পট ডেড করে দিল বাকি একজন ওর বিরুদ্ধে দুজন পিস্তলধারীকে দেখে নিজের পিস্তল ফেলে মাথার উপর দুটো হাত তুলে স্যারেণ্ডার করলো সাহস পেয়ে অমিয় আর বৃষ্টি বেরিয়ে এল। অভয় জিজ্ঞেস করলো: তোরা ঠিক আছিস?
হ্যাঁ।
অভয়.. তুই মানে আপনি। বৃষ্টি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে তবে সেটা অভয়কে জীবিত দেখে না আগে রেস্টুরেন্টের ঘটনা মনে করে বোঝা যায় না। অভয় এবার স্যারেণ্ডার করা লোকটাকে বলে: তোরা ওদেরতাড়া করছিলি ধরতে পারলে মেরে দিতি এখন তোর সাথে কি করবো? লোকটা চুপ করে থাকে সে বোঝে তাকে জ্যান্ত ছেড়ে দেবে না, অভয় পিস্তল লোকটার কপাল লক্ষ্য করে চালিয়ে দেয়।
বৃষ্টি এবং অমিয়র নিয়ে অভয় আর আমির বাড়ির বদলে একটা হাসপাতালে এসে মর্গের সামনে দাঁড়াতেই বৃষ্টি অবাক হয়ে যায়, অভয় নামতেই সে জিজ্ঞেস করে: এখানে?
আসো। অভয় শান্ত স্বরে উত্তর দেয়, মর্গের ভিতরে ঢোকে সবাই সেখানে একজন কর্মী ৎঅভয়কে দেখেই এগিয়ে আসে বলে "এদিকে আসুন স্যার" বলে ওদের একটা ডেডবডির কাছে নিয়ে যায় তারপর বডির মুখের ঢাকাটা খুলে দেয়, বৃষ্টি প্রথমে চমকে ওঠে তারপর নিজের মায়ের মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, অমিয় কিছু বুঝতে না পেরে অভয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আমির কথা বলে: বীরেন বাবু ওনাকে শ্মশানে গুলি করে ফেলে চলে যান, ওখানের কয়েকজন লোক ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন কিন্তু বাঁচাতে পারেন নি। তারপর যে কর্মীটা ওদের নিয়ে এসেছে তাকে দেখিয়ে বলে ইনি আমাদের পরিচিত উনি চিনতে পেরেছিলেন এটা কে তখনই উনি আমাদের জানান আমরা শেফালী দেবীর বডি রেখে দিতে বলি যাতে বৃষ্টি ম্যাডামকে নিয়ে আসতে পারি।
আমাদের কিভাবে খুঁজলে?
উপায় আছে, অভয় বলে, তোকে তো ফোন‌ও করেছিলাম তুই ধরিসনি তোর ভাগ্য ভালো ওই ক্রসিংটায় আসতে আসতে তোদের দেখতে পেয়েছিলাম যাইহোক আপাতত ওর কাছে যা, ওকে সামলা। বলে অমিয়কে বৃষ্টির কাছে যেতে ইঙ্গিত করে।
সকালে শ্মশানে নিজের মায়ের অন্তিম সংস্কার করে বৃষ্টি সোজা একটু দূরে দাঁড়ানো অভয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় ওর মুখে এখন কান্নার বদলে একটা কাঠিন্য এসেছে, এসে সটান বলে: অভয় তুমি আমার একটা কাজ করবে?
কি?
 বীরেন ভট্টাচার্যকে মারতে হবে?
ওর কথা শুনে অভয় তো বটেই এমনকি পাশে দাঁড়ানো অমিয় থেকে শুরু করে তাথৈ এবং সরমাদেবী পর্যন্ত অবাক হয়ে যায়।
বৃষ্টি আপাতত একথা থাক।
না অভয়, তুমি হেজিটেট কোরো না, ওই লোকটা আমাকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছিল তার থেকেও বড়ো আমার মাকে মেরেছে এর প্রতিশোধ তো আমি নেবোই, তুমি ওনাকে না মারলে আমি মারবো।
বৃষ্টি আমার কথা শোনো, এখন বাড়ি চলো, এসব কথা পরে ভাবা যাবে তবে তোমাকে এতটা আশ্বস্ত করছি যে উনি ওনার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পাবেন আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
আমি এখন‌ই ওনাকে মারতে চাই। বলে বৃষ্টি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অমিয় আর তাথৈ এসে ওকে ধরে, বৃষ্টি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে: ছাড়ো আমাকে আমি..
বৃষ্টি বৃষ্টি আমার কথা শোনো। অমিয় বৃষ্টিকে নিজের কাছে টেনে ধরে বলে, আপাতত শান্ত হয়ে যাও পরে যদি অভয় কিছু না করে তখন তুমি যা করার কোরো আমি যাবো তোমার সাথে। বৃষ্টি অমিয়র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অমিয় ওকে নিজের বুকে টেনে নেয়। গাড়িতে ওঠার সময় অভয় আমিরকে বলে: আমির তুমি ওদের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যাও আমি একটু পরে আসছি
তুমি এখন কোথায় যাচ্ছো। আমির অবাক হয়।
কাজ আছে এসে বলবো।
একা যাবে?
হ্যাঁ, চিন্তা কোরো না আমার কিছু হবে না আর অমিয় তোকেও এখন তোর বাড়ি ফিরতে হবে না তুই বৃষ্টির সাথে থাক।
কিন্তু অভয়।
তোর কোম্পানির এমডিকে আমি ফোন করে দেবো, চিন্তা নেই তোর চাকরী যাবে না, দরকার হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করবি। 
সাবধানে যাও আর তাড়াতাড়ি ফিরো। তাথৈ বলে অভয়কে, উত্তরে অভয় সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ে। আমির ওদের নিয়ে চলে যেতেই অভয় একটা ক্যাব বুক করে তাতে উঠে পড়ে ওর গন্তব্য শহরের পুলিশের হেড কোয়ার্টার, সেখানে পুলিশ কমিশনারের অফিস।
ফাঁকা বাড়িতে এখন মাঝে মাঝে সত্যি সত্যিই বীরেন ভট্টাচার্যের ভয় করে, বাড়িটা যেন এক কালান্তক রাক্ষসের মতো তাকে গিলে নিচ্ছে, পুরো বাড়িটায় এখন তিনি একা অবশ্য শুধু বাড়িতেই তার জীবন‌ও এখন একা সবসময়ের ছায়াসঙ্গী যে দুজন ছিল তার ভাই আর জগা তারা গেছে, দিদি গেছে, ভাগ্নে গেছে, স্ত্রী গেছে একটু আগে লোক খবর দিল যারা তাদের র মেয়েকে তাড়া করছিল রাস্তায় তাদের কয়েকজনের লাশ পাওয়া গেছে কিন্তু তার মেয়ের কোনো পাত্তা নেই মেয়েও তাকে ছেড়ে চলে গেছে, আরেকজন খবর দিল তার নিজের অফিস আগুনে পুড়ে গেছে কিছু অবশিষ্ট নেই বেঁচে থেকে কি করবেন তিনি, নিজের পিস্তলটা মাথায় ঠেকিয়েও নামিয়ে নেন তিনি, না এখন মরলে চলবে না তিনি বীরেন ভট্টাচার্য একসময় তার নামে পুরো শহরের লোক ভয়ে কাঁপতো তিনি তার কোনো শত্রুকেই পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেন নি তাই শেষ শত্রুকেও না মেরে তিনি মরবেন না ,অভয়.. হ্যাঁ অভয় রায় চৌধুরী ওই রুদ্রের ছেলে ওকে না মেরে তিনি মরবেন না যেভাবেই হোক ওকে তিনি মারবেন‌ই ওর জন্যই তার সব গেছে কি কুক্ষণেই যে ওকে হাতে পেয়েও সঙ্গে সঙ্গে না মেরে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিজের গালেই চড় মারতে থাকেন বীরেন বাবু, সেই তার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এমনকি তার অফিসে আগুন যে এই অভয় লাগিয়েছে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত, তিনি ঠিক করেন যেভাবেই হোক তিনি অভয়কে শেষ করবেন। 
এইসব ভাবছেন এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠলো নাম্বারটা দেখে বুঝলেন পুলিশ ডিপার্টমেন্টের একজন ফোন করেছে
হ্যালো, বীরেন বাবু?
বলছি।
একটা খারাপ খবর আছে স্যার।
বীরেন বাবু ভাবেন তার জীবনে আর কি খারাপ খবর বাকি থাকতে পারে? জিজ্ঞেস করেন: কি খবর?
আপনার নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে, আপনাকে অ্যারেস্ট করার জন্য পুলিশ আপনার বাড়ির উদ্দেশ্যে র‌ওনা দিয়ে দিয়েছে।
হোয়াট?
হ্যাঁ, স্যার।
কিন্তু কেন?
আপনি খবর দেখছেন না?
খবর?
হ্যাঁ, দেখুন।
বীরেন বাবু ড্রয়িংরুমে টিভিটা অন করে একটা নিউজ চ্যানেল চালান এবং যেটা দেখলেন সেটা দেখার পর তার মুখে প্রথমে ভয় তারপর রাগের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেলো এবং অবশেষে ঘৃণা, তিনি অনুচ্চস্বরে প্রথমে শিউলী দেবী ও পরে অভয়ের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালি দেন।
স্যার আপনি কোথাও গা ঢাকা দিন। ফোনের ওপাশের আওয়াজে চমক ভাঙে।
ফোনটা রাখার পরেও বীরেন বাবুর রাগ কমে না, তিনি পরপর অনেকগুলো নিউজ চ্যানেল ঘুরিয়ে দেখেন প্রতিটা চ্যানেলেই এক‌ই দৃশ্য।
বেশ কয়েকবছর আগে তখন তিনি সদ্য ইলেকশনে দাঁড়িয়েছেন সেইসময় প্রোমোটিংএর জন্য একটা জমি পছন্দ হয় সেই জমিতে একটা পরিবার বাস করতো স্বামী-স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা আর ১২-১৩ বছরের একটা কিশোর, তাদের কাছে জমিটা চেয়েছিলেন কিন্তু তারা অস্বীকার করে পরে তাদের ভয় দেখালে হুমকি দিলে তারা পুলিশের কাছে গিয়ে ডায়রী করে আসে এদিকে সেইসময় তার নামে কোনো খারাপ কিছু রটলে তার পলিটিক্যাল কেরিয়ার ওখানেই ইতি হয়ে যেত তাই তিনি ওই পরিবারের সবাইকে নিজের হাতে খুন করেন কিন্তু বুঝতে পারেন নি সেইখানে উপস্থিত তার দলের একজন লুকোনো ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটা রেকর্ড করে যেটার সাহায্যে সে পরে বীরেন বাবুকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে ফলে তাকেও সরিয়ে দেন তিনি কিন্তু ভিডিওটা উদ্ধার করতে পারেন না, পরে কিভাবে যেন সেটা শিউলীর হাতে আসে যেটা দিয়ে সেও তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে শিউলীকেও শেষ করে দিতেন কিন্তু শিউলীর কাছে ভিডিও কিভাবে এলো এটা খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন যে লোকটা প্রথম ভিডিওটা রেকর্ড করেছিল সে তার এক বন্ধুর কাছে ভিডিওটা রেখেছিল সেই বন্ধু আবার শিউলীর পরিচিত ছিল ভিডিওটা সেই শিউলীকে দেয়,  বীরেন বাবু অনেক চেষ্টা করেও সেই বন্ধুটির খোঁজ পাননি এদিকে শিউলীকে মারলে সে যদি ভিডিওটা ছড়িয়ে দেয়, সেই ভয়ে শিউলীকে মারতে পারেননি উল্টে তাকে এবং তার ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়। সেই ভিডিওটাই এখন ভাইরাল হয়েছে এবং তিনি নিশ্চিত এর পিছনেও অভয়ের হাত, অভয়‌ই যে শিউলীকে তার কবল থেকে মুক্ত করে নিয়ে গিয়েছিল এটা তিনি জানেন এবং শিউলীই যে অভয়কে ভিডিওটা দিয়ে গিয়েছে এব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই যেটা অভয় এখন সুযোগ বুঝে প্রকাশ করেছে, টিভি বন্ধ করে বীরেন বাবু ফোনটা হাতে তুলে নেন তিনি একটা নাম্বার ডায়াল করেন একটু পরেই ওপার থেকে আওয়াজ আসে "হ্যালো"
হ্যালো চ্যাটার্জী?
বলুন। মিস্টার চ্যাটার্জির কণ্ঠে তাচ্ছিল্য এবং ব্যাঙ্গ।
আমি কেন ফোন করেছি সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
আপনি কি চান?
আপনার সাহায্য বিনিময়ে আমি আপনাকে..
শুনুন বীরেন ভট্টাচার্য বীরেন বাবুকে থামিয়ে মাঝপথে বলে ওঠেন মিস্টার চ্যাটার্জী, আপনি এখন কাউকে কিছু দেবার অবস্থায় নেই, পুলিশ আপনার পিছনে, এআরসি আপনার পিছনে এখন তো পুরো শহরের লোক আপনার পিছনে পড়বে, আমি আপনাকে সাহায্য করে নিজের জন্য বিপদ ঢেকে আনতে পারবো না আর তাছাড়া হবু সিএমের পক্ষে একজন ক্রিমিনালকে সাহায্য করাটা উচিত হবে না।
হ্যালো, চ্যাটার্জী, হ্যালো.. বীরেন বাবু কিছু বলতে পারেন না তার আগেই মিস্টার চ্যাটার্জী ফোন কেটে দিয়েছেন। বীরেন বাবু বুঝতে পারছেন এখনি তাকে পালাতে হবে নাহলে তিনি বাঁচতে পারবেন না, ধরা পড়ে যাবেন তখনই ড্রাইভারকে ডেকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন, যখন তার গাড়িটা ভট্টাচার্য ম্যানসনের গেট ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন বীরেন বাবু খেয়াল করলেন উল্টোদিক থেকে একটা পুলিশের জিপ তার বাড়ির দিকেই আসছে তিনি ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালাতে হুকুম দেন, ড্রাইভার তৎক্ষণাৎ সে হুকুম তামিল করে, এদিকে বীরেন বাবুকে অ্যারেস্ট করতে আসা পুলিশরাও খেয়াল করেছে বীরেন বাবুর গাড়িটা দ্রুত চলে যাচ্ছে তারাও স্পিড বাড়িয়ে পিছনে ধাওয়া করতে থাকে, একজন পুলিশ ওয়াকিটকিতে খবর পাঠিয়ে দেন যে বীরেন ভট্টাচার্য পালানোর চেষ্টা করছেন।
বীরেন বাবু অবশ্য বেশীদূর পালাতে পারেন না একটু পরেই তিনি যেদিকে যাচ্ছেন সেদিক থেকে একটা পুলিশের জিপ এসে তার পথ আটকে দাঁড়ায়, নিজের গাড়িটাকে পিছনে নিতে বলে দেখেন পিছন থেকেও আরেকটা পুলিশের গাড়ি এসে পড়েছে, এবার একটা গাবি থেকে একজন পুলিশ মাইকে বীরেন বাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন স্যারেণ্ডার করতে, কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য যে সহজে স্যারেণ্ডার করবেন না সেটা বুঝতে তাদের একটু দেরি হয়, মাইকের আওয়াজের উত্তরে বীরেন বাবুর গাড়ি থেকে সামনে পুলিশের গাড়ি এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চলতে থাকে, ফলে কয়েকজন পুলিশ গুরুতর আহত হন ,এবং বাকিরা নিজেদের আড়াল করেন এইটুকু সময়ে বীরেন বাবুর ড্রাইভার সামনের পুলিশের গাড়িটাকে কোনোমতে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায় কিন্তু পিছনের গাড়িটা পিছনে ধাওয়া করতে থাকে এবার বীরেন বাবু পিছনের গাড়িটার উদ্দেশ্যে গুলি চালাতে থাকেন, প্রত্যুত্তরে সেখান থেকেও গুলি চলতে থাকে, বীরেন বাবু হয়তো পালাতে সক্ষম হতেন কিন্তু পারলেন না কারণ ঠিক এইসময় একটা গুলি তার গাড়ির টায়ারে লেগে টায়ার ফেটে যায়, ড্রাইভার কোনোমতে গাড়িটা উল্টে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়, বীরেন বাবু বোঝেন আর উপায় নেই কারণ তার পিস্তলেও গুলি নেই যে তিনি পুলিশের উপরে চালাবেন তিনি গাড়ি থেকে নেমে দুহাত উপরে তুলে স্যারেণ্ডার করেন।
থমথমে মুখ নিয়ে কোর্টে ঢুকলেন বীরেন বাবু তিনি ভালো করেই জানেন তার বিরুদ্ধে যা প্রমাণ আছে তাতে হয়তো আজ‌ই কোর্ট তার রায় দিয়ে দিতে পারে। পার্টি তাকে বরখাস্ত করেছে, পুরো শহরের লোক তার কুশপুত্তলিকা পোড়াচ্ছে, তাকে গালাগালি দিচ্ছে ,শাপশাপান্ত করছে এতদিন যারা তার সামনে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতো না তারা এখন তার সামনে গলা তুলে কথা বলার সাহস পাচ্ছে, কোর্ট চত্ত্বরে অজস্র লোকের ভিড় সবাই তার ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে, বেশ কয়েকজন তো জুতো ছুঁড়ে মারছে তার উদ্দেশ্যে, এছাড়া টমেটো, পচা ডিম তো আছেই। পাবলিকের এত রোষের কারণ প্রায় তার সব কুকীর্তি ফাঁস হয়ে গেছে শুধু যে ওই একটা পরিবারকে খুন তাই নয়, আরও অনেকেই যারা এতদিন তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেতো, তার থেকে পালিয়ে লুকিয়ে আত্মগোপন করে ছিল তারাও এখন গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে, মিডিয়ায় লোক‌ও কিভাবে যেন তাদের খোঁজ পেয়ে গেছে, অবশ্য বীরেন বাবু খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন এসবের পিছনে কে, শুধু একবার এখান থেকে বেরোতে পারলেই হলো অভয়কে তিনি শেষ করবেন‌ই দাঁতে দাঁত চেপে নিজের মনেই প্রতিজ্ঞা করেন তিনি, তিনি চারিদিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাতে থাকেন যেন ভিড়ের মধ্যে কাউকে খুঁজছেন, হটাৎ  একজন কনস্টেবলের সাথে চোখাচোখি হয় তার, কনস্টেবলটি ঘাড় ঘুরিয়ে ইশারা করে একদিকে তাকায় বীরেন বাবু সেদিকে তাকিয়ে একজনকে দেখতে পান তারপর পরপর আরো কয়েকজনকে তার ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি দেখা যায় ত র মানে সব ব্যবস্থা কমপ্লিট এখন সুযোগ ও সময়ের অপেক্ষা।
গ্ৰেপ্তারের পরে প্রথমে পুলিশ তাকে ১৪ দিনের হেফাজতে রাখে যদিও তার উপরে কোনোরকম শারীরিক বা মানসিক টর্চার করা হয়নি, তাকে কোনোকিছু জিজ্ঞাসাবাদ‌ও করা হয়নি যেন সবকিছুই আগে থেকে সাজানো ছিল ,একটা নাটকের উপস্থাপনার জন্য শুরুতে যেমন একটু সময় লাগে সেই সময়টাই হলো ওই ১৪ দিন, জেলে খুব সাধারণভাবেই দিন কাটছিল তার শুধু খাওয়া দাওয়ায় একটু অসুবিধা হচ্ছিল, যদিও এর আগে কয়েকদিন জেলের খাবার খেতে হয়েছিল কিন্তু সেটা বহুবছর আগে তারপর আর তাকে জেলে ঢোকানো তো দূরের কথা তার গায়ে হাত দেওয়ার সাহস হয়নি কারো। তবুও তিনি চুপচাপ সব সহ্য করে দিন কাটাচ্ছিলেন আর একটাই কথা বারবার জপে যাচ্ছিলেন মনে মনে "অভয় তোকে আমি ছাড়বো না"। গার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য কয়েদিরা সবাই তাকে একপ্রকার পাগল বলেই ধরে নিয়েছে,  তিনদিন আগে প্রতিদিনের থালায় জেলের খাবারের বদলে একটা টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার এলো একজন কনস্টেবল আর তার সাথে একটা গ্ৰাম্য মহিলা এল খাবারটা নিয়ে, নিজের সেলে তখন একাই ছিলেন তিনি প্রথমে অবাকই হয়েছিলেন বীরেন বাবু কারণ তিনি এটা আশা করেননি খেতে সংকোচ করছিলেন তিনি যদি বিষ মেশানো থাকে, কিন্তু মহিলার "খেয়ে লিন বাবু, আমি অনেক কষ্ট করে বানিয়ে এনেছি" শুনে টিফিন ক্যারিয়ার খুলতে থাকেন, জিজ্ঞেস করেন "তুই কে?আমার জন্য খাবার এনেছিস যে, তোকে তো চিনতে পারছি না?"
আমাকে আপনি চেনেন না বাবু, কিন্তু আমার মরদকে চেনেন হয়তো আপনি ওর অনেক উপকার করেছেন।
কি নাম তোর মরদের?
বাপ্পা বাবু?
বাপ্পা? এই নামে তো কাউকে চিনি না।
মুখ দেখলে হয়তো চিনতে পারবেন বাবু।
তা সে আসেনি কেন?
সে জোগাড় করতে ব্যাস্ত।
জোগাড়? কিসের জোগাড়?
আপনাকে বার করে নিয়ে যাওয়ার। শেষের কথাটা অবশ্য বলেন কনস্টেবল আর সেটা গলার আওয়াজ অনেকটা নামিয়ে। চমকে ওঠেন বীরেন বাবু সোজা তাকান কনস্টেবলের দিকে, কনস্টেবল একবার চারিদিকে তাকিয়ে কেউ লক্ষ্য করছে কি না দেখে গলাটা আরও নামিয়ে বলে "স্যার একদম ভিতরের খবর পেয়েছি আপনার বিরুদ্ধে সব প্রমাণ তৈরি, সেইজন্যই কেউ আপনাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করছে না নেহাত ফর্মালিটির জন্য জেল হেফাজতে রেখেছে, একজন উঁচু পজিশনের প্রচণ্ড ক্ষমতাধর  কেউ একজন সব প্রমাণ তুলে দিয়েছে, সেই নাকি কমিশনারের সাথে মিটিং করে  সব ব্যবস্থা করেছে"।
বীরেন বাবুর বুঝতে বাকি র‌ইলো না সে কে, এটা অভয় ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না, তিনি কনস্টেবলকে জিজ্ঞেস করেন: কিন্তু আমাকে কিভাবে বার করবেন?
এখন নয় স্যার আপনাকে ঠিক সময়ে জানাবো এখন আপনি খেয়ে নিন। বীরেন বাবু আর দ্বিরুক্তি না করে খাবারটা খেয়ে নেন, পরের দিন আবার খাবার এলো পরের দিন আবার তবে এবার খাবারের সাথে একটা ছোটো চিরকুট পেলেন তিনি তাতে লেখা "সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে, আগামীকাল কোর্টের রায় যাই হোক বেরোনোর পরে কাজটা করা হবে, তৈরী থাকবেন"। বীরেন বাবু পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও তিনি তৈরী থাকেন দেখাই যাক না যদি সত্যিই পালানোর সুযোগ আসে তাহলে ক্ষতি কোথায়? এখন তার একটাই লক্ষ্য যেভাবেই হোক অভয়কে শেষ করা।
কোর্টে ঢুকে শান্তভাবে আসামীর কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান বীরেন ভট্টাচার্য বাইরে তখনও ক্ষিপ্ত জনতা তার ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার। বীরেন বাবু চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকেন, একবারে প্রথমেই চোখে পড়ে বৃষ্টিকে, একেবারে প্রথম সারিতে বসে আছে সে সোজা বীরেন বাবুর দিকে তাকিয়ে চোখেমুখে অসম্ভব ঘৃণা,তার এক পাশে একটা ছেলেকে দেখেন সে বৃষ্টির একটা হাত চেপে ধরে আছে অপর পাশেই বসে থাকতে দেখেন সরমাদেবীকে এবং তার পাশে বসে ওটা কে? বীরেন বাবু অবাক হয়ে দেখেন বিদিশা বসে তার পাশে তাথৈ, তার পরিবারের যারা আছে তারা সবাই আছে এবং তারা প্রত্যেকেই ঘৃণাভরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার কোর্টরুমের দরজার দিকে চোখ পড়তেই তিনি হতবাক হয়ে যান এ কাকে দেখছেন তিনি ও কে দাঁড়িয়ে আছে? এত বছর পরে দেখেও ঠিক চিনতে পেরেছেন তিনি, ষোলো বছর আগের সেইরাতে তিনি শেষ দেখেছিলেন যে রাতে তিনি রুদ্র আর তার পরিবারকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেইরাতে তার চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক বেঁচে থাকার নিজের ছেলে আর স্বামীকে বাঁচানোর আকুতি আর আজ তার চোখেও ঘৃণা, অমৃতা.. অমৃতা রায় চৌধুরী ,রুদ্রের স্ত্রী অভয়ের মা, অমৃতা যে বেঁচে আছে বা বেঁচে থাকতে পারে এটা তার একমুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি এমনকি অভয় বেঁচে আছে এটা জানার পরেও নয়।
অমৃতাদেবী এগিয়ে এসে তাথৈএর পাশে বসেন তখন‌ও তার দৃষ্টি সোজা বীরেন বাবুর দিকে, বীরেন বাবু মনে মনে খুশীই হন অভয় তার থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এবার তার পালা প্রথমে অভয়ের চোখের সামনে ওর মাকে মারবেন তারপর ওকে আজ‌ই অমৃতাদেবীকে শেষ করবেন তিনি। এবার দরজা দিয়ে যাকে ঢুকতে দেখেন বীরেন বাবু তাকে দেখে তার হাত নিশপিশ করতে থাকে, অভয় ঢুকছে বহুকাল হয়ে গেল নিজের হাতে কাউকে মারেননি তিনি তার হয়ে জগা এবং অন্যান্য লোকেরাই কাজটা করে দিত কিন্তু আজ তার সেই কাজটাই নিজের হাতে করতে ইচ্ছে করছে, ইচ্ছা করছে এখনই গিয়ে অভয়ের গলা টিপে ধরেন অতিকষ্টে নিজেকে সংবরণ করেন তিনি, না আগে ওর সামনে ওর মাকে শেষ করবেন তারপর ওকে, অভয় ঢুকতে ঢুকতে চোখ থেকে চশমাটা খুললে তিনি দেখেন সেও তা দিকে তাকিয়ে আছে, তার ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি সেও এসে অমৃতাদেবীর পাশে বসলো তার দৃষ্টিও সোজা বীরেন বাবুর দিকে।
বিচার শুরু হলে একে একে প্রায় সব সাক্ষ্য‌ই তার বিরুদ্ধে আসতে থাকে বলাইবাহুল্য  তার পক্ষে শহরের কোনো উকিল‌ই না দাঁড়াতে চাওয়ায় নিয়মমাফিক সরকারের তরফ থেকে একজনকে ঠিক করা হয় কিন্তু তিনি টিকতেই পারছেন না, আর সবশেষে যখন বহুবছর আগে করা খুনের ভিডিওটা আর তার সত্যতার প্রমাণ দেওয়া হলো তখন অবশ্য আর কিছু করার ছিল‌ও না, স্বভাবতই বিচারক তার মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেন তার এত ক্রাইম এবং এত প্রমাণ যে এটাই হ‌ওয়ার ছিল।
কোর্ট থেকে বেরোতেই জনতার উল্লাস দেখতে পান বীরেন বাবু, একটু দূরে অভয়, অমৃতা আর বাকীদের দেখেন তিনি। তাকে দেখে অভয় তার কাছে এগিয়ে আসে বলে "বলেছিলাম না আপনাকে বাঁচতে দেবো না, আমি সবসময় আমার কথা রাখি"। কোর্টের ভিতরে তাকে বেশি কথা বলতে হয়নি, বলেন‌ওনি তিনি, চুপ করেই দাঁড়িয়েছিলেন বলা যায় কিন্তু এবার তিনি মুখ খোলেন "আজ আমিও তোকে বলছি ঠিক যেমনভাবে তোর বাপকে মেরেছিলাম ঠিক সেভাবেই তোকে মারবো তবে তার আগে...."
তাহলে দেখাই যাক।
বেশ, দেখাই যাক।
অভয় পিছনে ফিরে গেল পুলিশ আবার  বীরেন বাবুকে নিয়ে পুলিশ ভ্যানের দিকে এগোতে থাকে যখন তারা পুলিশ ভ্যানটার প্রায় কাছেই চলে এসেছেন জাস্ট একটু দূরে তখনই আচমকা ঘটে গেল ব্যাপারটা একটা ছোটো বিস্ফোরণের শব্দে পুলিশ ভ্যানটা মাটি থেকে ছিটকে উপরে উঠে তারপর আবার নীচে আছড়ে পড়লো এবং তাতে আগুন লেগে গেল ঘটনায় আকস্মিকতায় বীরেন বাবু এবং তার সঙ্গের পাঁচজন পুলিশ‌ও ছিটকে কয়েকপা পিছনে পড়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে পরপর আরো কয়েকটা গাড়িতে বিস্ফোরণ এবং এক‌ইভাবে গাড়িগুলোতে আগুন লেগে গেল সঙ্গে সঙ্গে কোর্ট চত্ত্বরে হুড়োহুড়ি লেগে গেল যারা এতক্ষণ বীরেন ভট্টাচার্যের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিল এবং রায় ঘোষণার পরে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল তারাই এখন প্রাণভয়ে পালানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করে দিল, এর‌ইমধ্যে বীরেন দুজন লোক মুখ ঢেকে দৌড়ে বীরেন বাবুর কাছে গিয়ে তাকে ধরে তুললো পুলিশগুলো তাকে ধরার জন্য রিভলবার বার করলে লোকগুলো লাথি মেরে বীরেন বাবুকে ছাড়িয়ে নেয়, কিন্তু বীরেন বাবুর দুহাতে তখনও হাতকড়া তবুও তিনি একটা রিভলবার তুলে নেন তারপর সঙ্গের পুলিশগুলোর উদ্দেশ্যে চালিয়ে দেন, পুলিশগুলোকে মেরে বীরেন বাবু লোকদুটোর সাথে দৌড়াতে থাকেন।
বীরেন বাবুর সাথে কথা বলে অভয় ফিরে এসেছে, অমৃতাদেবী জিজ্ঞেস করলেন "তুই ওনার কাছে গিয়েছিলি কেন?"
এমনি চলো। সবাই গাড়িতে উঠতে যাবে এমন সময় পরপর বিস্ফোরণ অমৃতাদেবী, সরমা দেবী সহ তাথৈ এবং বৃষ্টিও হতবাক হয়ে যায়, এরপর হঠাৎই পরপর গুলির শব্দ, কোর্ট চত্ত্বরে সবাই হুড়োহুড়ি করছে অভয় তাড়াতাড়ি সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে। একটা গাড়ির আওয়াজ পেয়ে অভয় দেখে একটা গাড়ি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কোর্ট চত্ত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, হটাৎ গাড়িটার একটা জানালার কাঁচ নীচে নেমে যায় এবং সেটা থেকে একটা রিভলভার ধরা হাত বার হয় সাথে বীরেন বাবুর মুখ, অভয় সভয়ে দেখে বীরেন বাবু গুলি চালাতে উদ্যত তবে তার লক্ষ্য সে নয় তার লক্ষ্য তার মা সঙ্গে ঈ সে বা হাত দিয়ে মাকে ঠেলে সরিয়ে দেয় কিন্তু গুলিটা তার বা হাতের বাহুতে লাগে রক্ত বেরোতে থাকে, অমৃতাদেবী সহ বাকিরা ভয়ার্ত গলায় চিৎকার করে ওঠেন "অভয়"। অভয় মাটিতে পড়ে যায় সে ডানহাতে বাহু চেপে বীরেন বাবুর দিকে তাকায় দেখে গাড়িটা বেরিয়ে যাচ্ছে বীরেন বাবু আরও কয়েকবার ট্রিগার চাপলেন কিন্তু গুলি বেরোচ্ছে না দেখে রিভলভার ফেলে দিলেন গাড়িটাও তাকে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
অমৃতাদেবী তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে এসে কাঁদতে শুরু করেন অভয় কোনোমতে বলে "মা, তুমি ঠিক আছো?"
হ্যাঁ, বাবু, তোর কিচ্ছু হবে না।
আমি ঠিক আছি মা। এটুকু বলেই অভয় জ্ঞান হারায়।

বিদ্র: গল্পটা প্রায় শেষ হয়েই এসেছে আর হয়তো একটা কি দুটো আপডেটেই শেষ হয়ে যাবে, এতদিন যারা পাশে ছিলেন লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করেছেন তাদের ধন্যবাদ যারা শুধু পড়ে চলে গেছেন তাদের‌ও ধন্যবাদ, আশা করবো শেষ ল্যাপেও পাশে থাকবেন।

?
Like Reply
(11-11-2022, 09:43 PM)Monen2000 Wrote:
                        অন্তিম পর্ব (পার্ট-)

অভয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, আমির ওখানেই ছিল ও তো পাগলের মতো করতে থাকে,  কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার জানায় গুলিটা অভয়ের বাহুর অনেকটা মাংস খুবলে নিয়ে বেরিয়ে গেছে, অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় একটু দুর্বলতা আসতে পারে, তবে চিন্তা নেই ওয়াশ করে স্টিচ করে ব্যাণ্ডেজ করে দিয়েছেন, এবং ব্যাথার ওষুধ‌ও দিয়ে  দিয়েছেন, সবাই গিয়ে দেখা করতে পারেন। সবার আগে অমৃতাদেবী ভিতরে ঢুকলেন দেখেন তার ছেলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, খালি গায়ে বাহুতে অনেকটা জায়গা জুড়ে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা, তিনি ছেলের মাথায় হাত বোলান, অভয় চোখ খুলে মায়ের চোখে জল দেখেই বলে "মা আমি ঠিক আছি তুমি কেঁদোনা"। কিন্তু তবুও অমৃতাদেবী কেঁদেই চলেন, অমৃতাদেবীর পিছনে একে একে ঢোকে আমির, তাথৈ এবং বাকিরা এর মধ্যে আমির আর তাথৈএর চোখেও জল তাই দেখে অভয় বলে "আরে সবাই কাঁদছো কেন আমি এখনো বেঁচে আছি, মরিনি"
এক থাপ্পড় মারবো। অমৃতাদেবী রেগে যান, অভয় হাসতে থাকে "মা, আমি ঠিক আছি"
তুই কেন আমাকে ঠেলতে গেলি, গুলি লাগতো আমার লাগতো।
মা, আমি থাকতে তোমার গায়ে আমি লাগতে দিতাম এটা তুমি ভাবলে কিভাবে?
আর তোর যে লেগেছে?
আমার কিছু হয়নি, বাড়ি চলো ক্ষিদে পেয়েছে।
ডাক্তার যদিও ছাড়তে চাইছিলেন না কিন্তু অভয়ের জিদের কাছে শেষপর্যন্ত ছাড়তে বাধ্য হন, বাড়িতে আসতেই বিন্দু মাসিও তাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন তাকেও অনেক কষ্টে সামলাতে হয়। খাওয়ার পরে নিজের রুমে একা একটু বিশ্রাম করছে অভয় ওষুধের প্রভাবে ব্যাথাটা কিছুটা কম হটাৎ দরজায় নক করার আওয়াজ শুনে দেখে তাথৈ।
"আরে তাথৈ আসো" বলে তাড়াতাড়ি একহাতে ভর দিয়ে উঠতে যায় কিন্তু অপর হাতে ব্যাথায় "আঃ" করে ওঠে তাথৈ তাড়াতাড়ি এসে ওকে ধরে ওর চোখে জল।
তাথৈ তুমি কাঁদছো কেন?
তাথৈ দুহাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে " আমার পরিবারের জন্য তোমার বাবা আজ বেঁচে নেই, তোমাকে না জানি কত কষ্ট করতে হয়েছে, আজ সেই আমার জ্যেঠুই মাকে মারতে চাইছিলেন আর এখন তোমার.... আমি যতই অস্বীকার করি কিন্তু এটা তো সত্যি যে আমি ওই বীরেন ভট্টাচার্যের পরিবারের মেয়ে"
তাথৈ.. এসব কি বলছো?
আমি হয়তো তোমার জীবনে অভিশাপ।
তুমি কি চলে যেতে চাইছো?
এতেই বোধহয় তোমার জন্য ভালো হবে।
এদিকে এসো, বসো। অভয় তাথৈকে কাছে ডাকে, তাথৈ বিছানায় অভয়ের ডানদিকে বসে, ও এখনো কেঁদে চলেছে, অভয় বলে "সত্যি বলোতো তুমি চলে যেতে চাইছো অন্য কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি?"
কথাটা শুনে তাথৈ অভয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বোঝে সে মজা করছে সে চুপ করে থাকে, অভয় আবার বলে "বেশ তুমি যখন চলে যেতে চাইছো তখন তোমাকে আটকাবো না ভালোই হলো আমিও ববিতার কাছে যেতে পারবো"
ববিতা কে? এবার ধীরে ধীরে আসল তাথৈ বেরিয়ে আসছে যে অভয়ের আশেপাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। অভয় বোঝে সেটা, মনে মনে বলে "এইতো এটাই তো চাইছিলাম" মুখে বলে "ববিতা একজন হিরোইন"
হিরোইন?
হ্যাঁ, মা ওকে ঠিক করেছিলেন আমার সাথে বিয়ের জন্য, একটা হোটেলে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
তাথৈএর বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে সে বলে "তুমি দেখাও করতে গিয়েছিলে?"
হ্যাঁ, ওহহ কি দেখেছিলাম আজ‌ও চোখে ভাসে।
কি দেখেছিলে?
দুজনে ফোনে কথা বলেই ঠিক করেছিলাম যে হোটেলে দেখা করবো তারপর লাঞ্চ একসাথে সারবো, তা সেখানে গিয়ে শুনি উনি সুইমিং পুলে গেছেন স্নান করতে আমাকেও যেতে বলেছেন, গেলাম গিয়ে দেখি উনি সাঁতার কাটছেন আমাকে দেখে জল থেকে উঠে এলেন কি বলবো তোমাকে মাত্র একটা  টু-পিস মনোকিনি পড়েছিলেন পুরো শরীর থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে শরীরের প্রতিটা কার্ভ দেখতে পাচ্ছি উফফফফ, জল থেকে উঠে ধীরে ধীরে আমার কাছে এলেন  হ্যালো বললেন আমি তখন‌ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মুখে কথাই বেরোচ্ছে না।
অভয় রায় চৌধুরী। তাথৈ ঝাঁপিয়ে পড়ে অভয়ের উপর কিন্তু অভয় ডানহাত দিয়ে তাথৈকে নিজের বুকে চেপে ধরে, তাথৈ অভয়ের জামা খামচে ধরে বলতে থাকে "আমি জানতাম তোমার চরিত্র খারাপ, অসভ্য ছোটোলোক ছেলে খালি অন্য মেয়ের দিকে নজর ঘোচাচ্ছি অসভ্যতামি"
বা রে তুমিই তো বললে তুমি চলে যাচ্ছো তো আমি সারাজীবন একা থাকবো নাকি?
আমি কোথাও যাবো না, দেখি তুমি কোন হিরোইনের কাছে যাও।
তার মানে তুমি যাবে না?
না। আবার টু পিস দেখছিলেন উনি
শুধু টু পিস কেন ডিনারটা একসাথে সারলে হয়তো..
আবার ডিনার?
হ্যাঁ আমাকে ইনভাইট করেছিলেন তো ডিনারে নেহাত আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ চলে এসেছিল তাই নাহলে।
তাথৈ আর সহ্য করতে পারে না, এক ঝটকায় নিজেকে অভয়ের বুক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে "বেশ যাও তুমি তোমার ববিতা হিরোইনের কাছে আমি চললাম" বলে বিছানা থেকে নামতে যেতেই অভয় আবার তাথৈএর হাত ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।
ছাড়ো আমাকে, যাও তোমার হিরোইনের কাছে। তাথৈ মুখে একথা বললেও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করে না।
অভয় শান্ত স্বরে ওকে বলে "এই তো বললে তুমি যাবে না, আমাকে হিরোইনের কাছে যেতে দেবে না"
তাথৈ চুপ করে অভয়ের বুকে মাথা রেখে বসে থাকে, অভয় বলে চলে "আমাদের সাথে যা হয়েছিল সেটা তোমার জন্য হয়নি, তুমি আমার জীবনে অভিশাপ নয় তাথৈ আর কখনো এরকম বলবে না, আমি আগেও বলেছি আজ আবার বলছি তোমার জ্যেঠু যা করেছেন তার জন্য আমি কখনো তোমাকে দায়ী করিনি, আমি তোমাকে ভালোবাসি তাথৈ"
তাহলে ওই ববিতাকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়েছিলে কেন?
বললাম তো মা বলেছিল।
"মাকে বলতে পারলে না তুমি আমাকে ভালোবাসো, যদি সত্যিই বিয়ে করতে বলতেন তখন?" তাথৈএর কথা শুনে অভয় হেসে ওঠে।
"হাসছো কেন?"  জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
কারণ ওসব কিচ্ছু নয়।
তারমানে মা বলেননি?
না, হ্যাঁ মা মেয়ে দেখছিলেন এটা ঠিক তবে ওদের সবাইকেই আমি মানা করে দিয়েছিলাম।
আর ববিতা?
ওনার সাথে দেখা হ‌ওয়া আর তার পরের ঘটনা পুরোটাই সত্যি তবে আমি হোটেলে ওনার সাথে দেখা করতে যাইনি গিয়েছিলাম আমার একটা মিটিংয়ে, কোইন্সিডেন্টলি উনিও ওখানে ছিলেন।
আর তুমি ওনাকে ওইভাবে দেখলে?
ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, হয়ে গেছে।
তোমাকে আমি.. বলে তাথৈ একটু ছটফট করতেই অভয় "আঃ" করে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে তাথৈ ভয়ার্ত গলায় "অভয়.. কোথায় লাগলো?"বলে ওঠে।
আমি ঠিক আছি। অভয় আবার তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের বুকে টেনে নেয়।
আমার ভীষণ ভয় করছে অভয়? একটু পরে তাথৈ বলে।
কেন?
জ্যেঠু পালিয়ে গেছেন, উনি আবার তোমার ক্ষতি করতে চাইবেন, কোর্টের সামনেই তো মাকে মারতে চাইলেন, আমার সত্যিই খুব ভয় করছে।
আমার উপর বিশ্বাস আছে?
নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি তোমাকে।
তাহলে ভয় পেয়ো না।
কিন্তু উনি যদি..
উনি আর কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না, চিন্তা কোরো না।
আসবো অভয়। হটাত দরজার সামনে বৃষ্টির আওয়াজ শুনে অভয় আর তাথৈ আলাদা হয়ে বসে।
আসো।
বৃষ্টি ভিতরে ঢোকে ওর চোখেও জল। "কি হয়েছে তুমি আবার কাঁদছো কেন?" জিজ্ঞেস করে অভয়।
আমি বুঝতে পারছি না কি বলবো, তুমি সেদিন আমাকে বাঁচালে আর আজ আমার বাবা আমার তোমাকে..আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি।
বৃষ্টি তোমার বাবা যা করেছেন তার জন্য তুমি দায়ী ন‌ও তবে আমি আশা করবো তুমি নিজেকে পাল্টেছো, তোমার ইগো তোমার অহংকার কমেছে।
বৃষ্টি চুপ করে শুনতে থাকে অভয় বলে চলে "ভেবোনা তোমাকে কথা শোনাচ্ছি কিন্তু এটাই সত্যি তোমার মধ্যে আগে খুব অহংকার ছিল, তবে এখন সেটা না থাকলেই ভালো, যাইহোক অমিয় কোথায়?"
ও বাইরে ওই কি যেন নাম আমিরের সাথে আছেহ ডাকবো?
না থাক,অমিয় তোমাকে খুব ভালোবাসে পারলে ওকে..
তোমার বন্ধু তোমাকে বেশি ভালোবাসে সেইজন্য এত বছর পরে আমি যখন ওকে পাল্টা প্রপোজ করি তখন ও রিফিউজ করে।
তবুও তোমাকে বিপদে দেখে এসেছিল তো?
হ্যাঁ।
তাহলে?
অভয় তুমি সত্যিই আমার ড্যাডির জন্য আমার উপরে রেগে নেই?
না, আর যদি কিছু মনে না করো এখন আমাকে আর তাথৈকে একটু একা ছেড়ে দেবে প্লিজ।
বৃষ্টি একটু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। অভয় আবার তাথৈকে কাছে টেনে নেয়।

"এখন আবার দুইজন কোথায় যাচ্ছিস?" রাতে অভয় আর আমির বেরোনোর উদ্যোগ করছিল, এমন সময় অমৃতাদেবী ঘরে এসে ব্যাপারটা দেখে কথাটা বললেন।
মা, একটা কাজ এসে গেছে সেটাই সারতে যাচ্ছি।
কোথাও যাবি না তুই এখন, সকালে যা ফাড়া গেছে তারপর এখন বেরোনোর নাম নিবি না।
মা..
বললাম তো না, কিছু বলা হয়না বলে যা খুশি তাই শুরু করেছিস।
মা, আমি ঠিক আছি, খানিকক্ষণের কাজ সেরেই চলে আসবো আর আমির‌ও তো থাকছে আমার সাথে।
অমৃতাদেবী এবার আমিরের দিকে তাকান বলেন "আমির, তোর‌ই বা এখন বেরোবার কি দরকার?"
আম্মি, মানে মানে...
মানে মানে কি করছিস...
মা আমি ওকে ডেকেছি তুমি চিন্তা কোরো না, আমি চলে আসবো।
তুই শুনবি না আমার কথা, তোর হাতে এখনো ব্যাণ্ডেজ কত রক্ত বেরিয়েছে আর তুই
অভয় মাকে জড়িয়ে ধরলো বললো: তুমি চিন্তা কোরো না, যাও ঘুমিয়ে পড়ো ওষুধ খেয়েছো?
তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো এখন? দরজার কাছে এবার তাথৈএর আওয়াজ শোনা গেল।
এবার তুমিও? শোনো আমার একটা কাজ আছে সেটা সারতে যাচ্ছি।
কিন্তু তোমার হাতে..
দেখনা মা, তুই ওকে আটকা এত রাতে এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছে আবার। তাথৈএর কথা মাঝখানে আটকে বলে ওঠেন অমৃতাদেবী। তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই অভয় বলে "মা বললাম তো একটা কাজে যাচ্ছি"। অমৃতাদেবী গজগজ করতে থাকেন "শুনবি না আমার কথা, পুরো বাপের মতো হয়েছে"। অভয় মাকে ধরে বিছানায় বসায় তারপর পায়ের কাছে বসে বলে "মা, আজকে ছেড়ে দাও এরপর তুমি যা বলবে শুনবো"
তোর কিছু হয়ে গেলে আমি..
আম্মি আমি থাকতে ওর কিচ্ছু হবে না, কোর্টে আমি ছিলাম না কিন্তু এখন আমি থাকবো ওর সাথে। এবার আমির‌ও অমৃতাদেবীর পায়ের কাছে বসে কথাটা বলে।
মা, যাও তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কথাটা বলে অভয় উঠে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই তাথৈএর দিকে চোখ পড়ে, ওর মুখ দেখে বোঝা যায় ও চায়না অভয় এখন কোথাও বেরোক কিন্তু বলতে পারছে না, অভয় সেটা বোঝে তাথৈএর একটা গালে আলতো করে হাত দিয়ে বলে "মায়ের খেয়াল রেখো, আমি চলে আসবো"। বলে আর কোনো কথা বলার অবকাশ না দিয়ে অভয় আর আমির বেরিয়ে যায়, গাড়িতে উঠে অভয় আমিরকে জিজ্ঞেস করে "ইঞ্জেকশনটা এনেছো?"
হ্যাঁ, এই নাও। বলে আমির একটা ইঞ্জেকশন আর একটা অ্যাম্পুল দিয়ে বলে "এটাতে বেশ কিছুক্ষণের জন্য তোমার ব্যাথা কম ফিল হবে", অভয় সিরিঞ্জে ওষুধ নিয়ে শার্টের হাতাটা গুটিয়ে ইঞ্জেকশনের সুঁইটা নার্ভে ঢুকিয়ে দেয়, গাড়ি স্টার্ট দেয় আমির বলে "আর দুদিন রেস্ট নিয়ে কাজটা করলে হতোনা?"
হয়তো হতো কিন্তু আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষ করতে চাই তারপর একটা স্বাভাবিক সুস্থ জীবন কাটাতে চাই।
কাজটা নাহয় আমি করে দিতাম।
না আমির ঋণটা আমার উপর তাই শোধ‌ও আমি‌ই করবো।
আমির আর কোনো কথা না বলে গাড়ি চালাতে থাকে।

"বললাম তো যতক্ষণ না ওই অভয়কে শেষ করতে পারছি ততক্ষণ আমি শান্তি পাবো না" দেয়ালে একটা চাপড় মেরে কথাটা বললেন বীরেন বাবু, কোর্ট থেকে পালিয়ে এসেছেন বলা ভালো তাকে নিয়ে আসা হয়েছে কিন্তু আসার আগে ওই অভয়ের সামনে ওর মাকে মারবেন বলে গুলি চালিয়েছিলেন কিন্তু অভয় এবারও ঝর মাকে বাঁচিয়ে নেয় যদিও ও নিজে আহত হয়, আবার রিভলভার চালিয়েছিলেন কিন্তু গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কিছু হয়নি। বীরেন বাবু খুব ভালো করেই জানেন যে এতক্ষণে একদিকে পুলিশ আর অপরদিকে অভয়ের দলের লোক পুরো শহরে তাকে খুঁজতে শুরু করেছে, কি অবস্থা হয়েছে তার এই কদিন আগেও এই শহরের বেতাজ বাদশা ছিলেন তিনি তার সামনে দাঁড়ানোর সাহস হতো না কারো আর আজ তাকে এই শহরেই লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে, যারা তাকে কোর্ট থেকে নিয়ে এসেছে তারা শহরের একা অনামী হোটেলে রেখেছে, এরকম হোটেলে থাকার কথা তিনি কোনোদিন ভাবতেও পারেননি আর আজ... সব ওই অভয়ের জন্য, এখানে এসেই তিনি একজন ঢ্যাঙা মতো একটা লোককে দেখেন যে নিজেকে বাপ্পা বলে পরিচয় দেয়, বীরেন বাবুর যদিও মনে পড়ে না যে উনি ওকে আগে দেখেছেন কি না কিন্তু এইমুহূর্তে ওর উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই, ওকেই বললেন যেভাবেই হোক ওই অভয়কে মারতে চান তার ব্যবস্থা করে দিতে, উত্তরে বাপ্পা বললো "আপাতত কিছুদিন শান্ত হয়ে থাকতে, পরে সুযোগ আসবেই" কিন্তু বীরেন বাবু জানান যতক্ষণ না উনি অভয়কে শেষ করছেন ততক্ষণ উনি শান্ত হতে পারবেন না। শেষমেশ বাপ্পা জানায় "ঠিক আছে স্যার, আমি চেষ্টা করছি"
আরেকটা কথা বাপ্পা।
বলুন।
অভয়ের আগে ওর মাকে মারতে চাই।
কিন্তু স্যার।
কোনো কিন্তু নয়, ওর চোখের সামনে ওর মাকে মারবো তারপর ওকে, ওর বাবাকে মেরেছিলাম বলে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছে এবার দেখি ওর মাকে মারার পরে ও কি করে?।
ঠিক আছে স্যার, আমি দলের যারা বেঁচে আছে তাদের সাথে যোগাযোগ করছি।
কর তবে বেশি সময় নিস না।
সেই রাতেই বাপ্পা এসে বীরেন বাবুকে নিয়ে চললো, বীরেন বাবু "কোথায় যাচ্ছি" জিজ্ঞেস করায় বললো "একজনের সঙ্গে দেখা করতে"
কার সঙ্গে?
ওই অভয়ের একজন শত্রু, বাণিজ্যনগরী থেকে এসেছেন।
কে তিনি?
নাম এখনো জানিনা তবে ওই অভয় তার‌ও অনেক ক্ষতি করেছে।
তুই কিভাবে জানলি?
উনি নিজে আপনার খোঁজ করতে লোক লাগিয়েছিলেন।
এত তাড়াতাড়ি খোঁজ পেয়ে গেলেন? বীরেন বাবুর গলায় সন্দেহ।
তাড়াতাড়ি নয়তো অনেকদিন থেকেই সত্যি বলতে উনিই আপনাকে পালাতে সাহায্য করেছেন ওনার সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারতাম না আমাদের দলের প্রায় সবাইকেই শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
কি বলছিস তুই?
ঠিকই বলছি স্যার, কাউকে পুলিশ দিয়ে এনকাউন্টার করিয়ে দেওয়া হয়েছে তো কাউকে নিজেই গুম করে দিয়েছে ওই অভয়।
বীরেন বাবু আর অবিশ্বাস করতে পারলেন না, এতদিনে তিনি বুঝতে পেরেছেন এই অভয়ের ক্ষমতা কতটা তিনি জিজ্ঞেস করলেন "এখন তো আমার আর ক্ষমতা নেই তাহলে তোর এই ইনি আমাকে ডেকেছেন কেন?"
সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন তবে আমার যতটুকু মনে হচ্ছে উনি আপনার সাথে কোনো ডিল করতে চাইছেন যেটাতে আপনার এবং ওনার দুজনেরই লাভ হবে।
কিন্তু আমার এখন ক্ষমতা নেই তাহলে?
উনি দেখা করতে চেয়েছেন করুন তারপর দেখা যাবে, এইতো আমরা প্রায় এসেই গেছি।
বাপ্পার কথাটা বীরেন বাবু মেনে নিলেন মনে মনে বললেন "ঠিকই তো দেখাই যাক না কি চান, তারপর ব্যবস্থা করা যাবে"। বীরেন বাবু দেখলেন বাপ্পা একটা বন্ধ কারখানার সামনে এসে গাড়ি থামালো, এই কারখানাটার আশেপাশের অনেকটা জায়গা খালি জনশূন্য এলাকায় এবং এই কারখানাটা তিনি চেনেন তিনি জানেন কারণ এটা তার‌ই ছিল এখান থেকেই তার ড্রাগসের চালান হতো পরে নারকোটিকস্ ডিপার্টমেন্টের অফিসাররা বন্ধ করে দেয়, যদিও বীরেন বাবুর নাম জড়ায়নি, তার ভাই ধীরেন বাবু সব সামলে নিয়েছিলেন, বীরেন বাবু প্রথমে না বুঝলেও এখন তিনি বুঝেছেন যে এটা বন্ধ করার পিছনে অভয়ের হাত আছে, তিনি একটু অবাক হয়ে বাপ্পাকে জিজ্ঞেস করেন "এখানে?"
হ্যাঁ স্যার আসুন।
দুজনে ভিতরে ঢোকেন একটা বড়ো হলঘর টাইপের জায়গায় আসেন এখানে ড্রাগস চালান হবার জন্য প্যাকিং হতো কিন্তু সেখানে প্রথমে কাউকে না দেখতে পেয়ে বীরেন বাবু একটু অবাক হন সন্দিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করেন "কি রে এখানে তো কেউ নেই, এখানে কেন আনলি আমাকে?"
"কারণ ওকে আমি বলেছি তাই।" তৃতীয় ব্যক্তির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠেন বীরেন বাবু, আওয়াজটা পরিচিত গলার হলেও তিনি এখানে সেটা আশা করেননি আওয়াজটা যেদিক থেকে এসেছে তিনি সেদিকে ফিরলেন, এতক্ষণ অত বড়ো হলঘরে অল্প আলোর দু-তিনটে বাল্ব জ্বলছিল ফলে বেশিরভাগই অন্ধকার হয়ে ছিল এখন হটাৎ পরপর বেশ কয়েকটা হ্যাজাক লাইট জ্বলে উঠলো, বীরেন বাবু তাকিয়ে দেখলেন হলঘরের একটা দিকে একটা টেবিলের উপরে বসে আছে তার জাতশত্রু এআরসি ওরফে অভয় রায় চৌধুরী।
বীরেন বাবু সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরে বাপ্পার দিকে ফেরেন কিন্তু ততক্ষণে সে নিঃশব্দে আরো।পিছনে সরে গিয়েছে, বীরেন বাবু এটাও লক্ষ্য করলেন যে এখানে তিনি বাপ্পা আর এআরসি ছাড়া আরও লোক আছে অর্থাৎ তার পালাবার রাস্তা বন্ধ, তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
"আপনি নিশ্চয়ই আমাকে এখানে দেখে অবাক হয়েছেন তাই না?" ব্যাঙ্গের স্বরে জিজ্ঞেস করে অভয়, কিন্তু বীরেন বাবু কোনো কথা বলেন না অভয় টেবিল থেকে নেমে আস্তে আস্তে বীরেন বাবুর কাছে আসে বলে "আপনি খেয়াল করেছিলেন যে যেকটা গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে তার একটিতেও কোনো লোক ছিল না বা যারা আপনাকে নিয়ে আসতে গেছে তারা কারো উপর গুলি চালায় নি বুঝতে পারছেন না?"
বীরেন বাবু তবুও চুপ করে তাকিয়ে আছে দেখে অভয় আবার বলতে শুরু করে "তাহলে আপনাকে খুলেই বলি, আপনাকে কোর্ট চত্ত্বর থেকে বার করে আনার পুরো প্ল্যানটা আমার ছিল,আমিই ওই কনস্টেবল, বাপ্পা এবং ওর ওয়াইফকে পাঠিয়েছিলাম থ্যাংক ইউ বাপ্পা"
কি যে বলেন স্যার কি এমন করেছি আপনি না থাকলে ব‌উ বাচ্চা নিয়ে না খেতে পেয়ে মরে যেতাম, তার বিনিময়ে এটুকু করতে পেরেছি এ তো আমার সৌভাগ্য স্যার।
"হ্যাঁ যেটা বলছিলাম সবকিছু আমার প্ল্যানেই ছিল শুধু একটা জিনিস ছাড়া, আমি ভেবেছিলাম আপনি পালানোর চান্স পেলে আগে পালানোর কথাই ভাববেন কিন্তু আপনি যে রিভলবার জোগাড় করে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাটাক করবেন এটা ভাবতে পারিনি, অবশ্য পুলিশকে মারায় আমার সুবিধাই হয়েছে পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এখন আপনার বিরুদ্ধে, কিন্তু আপনি আরও একজনকে মারতে চেয়েছিলেন, আমার মাকে তাইতো?"
"দুর্ভাগ্য গুলিটা তোর হাতে লাগে" এতক্ষণে মুখ খুললেন বীরেন বাবু, "আমি ভেবেছিলাম তোর সামনে তোর মাকে মারবো ঠিক যেভাবে তোর বাপকে মেরেছিলাম"
"আপনার মধ্যে একটুও মনুষ্যত্ব নেই না? জীবনে কত পাপ করেছেন আপনার সাথে আজ কেউ নেই আপনার ছায়াসঙ্গী যেদুজন ছিল আপনার ভাই আর জগা তারা নেই আপনার দিদি আর ভাগ্নে নেই আপনার স্ত্রীকে আপনি মেরেছেন আপনি আপনার মেয়েকে মারতে লোক পাঠিয়েছেন, আপনার ছেলে আপনাকে কোনোদিন চিনবে না।"
আমার ছেলে?
"আপনার আর শিউলী দেবীর ছেলে, আমি ওর কথা জানি। আপনি একবারও আয়নায় নিজেকে দেখেছেন? মানুষ রূপী পশু আপনি, আপনি কোর্ট থেকে পালানোর সুযোগ কাজে না লাগিয়ে আবার আমার মাকে মারতে চেয়েছিলেন কি ভেবেছিলেন আমার মাকে মারতে পারবেন? আমার মায়ের গায়ে যদি একটা আঁচড় লাগতো না তাহলে ওখানেই আপনাকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতাম। আর আপনাকে কেন কোর্ট থেকে নিয়ে এসেছি জানেন? যাতে নিজে হাতে আপনাকে মারতে পারি, আপনি সমাজের চোখে একজন পলাতক আসামী, যে কোর্ট থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে আপনি আজীবন সেটাই থাকবেন কেউ জানবে না আপনার কি হয়েছে, ঠিক যেভাবে এই শহরে আমাদের নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিলেন, আপনি পিছন থেকে আমার বাবাকে পিঠে গুলি করেছিলেন কিন্তু আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার চোখে চোখ রেখে আপনার কপালে গুলি করবো" অভয় নিজের ডান হাতের তর্জনী নিজের কপালে ঠেকায়।
"তুই ঠিক বলেছিস আজ আমি একা আমার সাথে কেউ নেই সারাজীবন যে ক্ষমতার পিছনে ছুটেছি আজ সেই ক্ষমতাও হারিয়েছি, আমার মেয়ে আমার সাথে নেই যে ভাই সবসময় আমার পাশে থাকতো সে আজ নেই, আমার দিদিও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, আমার সিএম হবার স্বপ্ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, আর এইসব তোর জন্য তোকে আমি ছাড়বো না" বলে বীরেন বাবু অভয়ের দিকে তেড়ে এলেন এবং এসেই অভয়ের চোয়ালে একটা ঘুষি মারলেন তারপর একটু ঝুঁকে গুঁতোনোর মতো অভয়ের কোমর ধরে ঠেলে পিছনে নিয়ে যেতে লাগলেন,পিছনের দেয়ালে অভয়কে ফেলে দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অভয়‌ও বেশ কয়েকপা পিছিয়ে গেল কিন্তু তারপর নিজেকে সামলে নিল বীরেন বাবু আর ঠেলে ওকে নড়াতে পারছেন না, অভয় দুহাতের কনুই দিয়ে বীরেন বাবুর পিঠে সজোড়ে আঘাত করতে থাকে কিন্তু তবুও বীরেন বাবু ওকে ছাড়েন না শেষে নীচ থেকে হাঁটু উপরে তুলে বীরেন বাবুর পেটে আঘাত করতে থাকে এর ফলে বীরেন বাবুর হাত অভয়ের কোমর থেকে একটু আলগা হয় আর অভয় তৎক্ষণাৎ বীরেন বাবুর কোমর ধরে আলুর বস্তা তোলার মতো দুহাতে মাথার উপরে তুলে মাটিতে আছাড় মারে, বীরেন বাবুর মুখ থেকে একটা "আঃ" আর্তনাদ বেরিয়ে আসে, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ান একসময়ে তিনি তার নিজের এলাকার নাম করা মস্তান ছিলেন মারামারিতে যথেষ্ট পটু ছিলেন এবং এলাকায় যথেষ্ট আতঙ্ক ছিল তার আজ বয়স হলেও এখনো শরীরে যথেষ্ট শক্তি ধরেন তিনি আবার অভয়কে আঘাত করতে উদ্যত হন, এদিকে অভয়‌ও যেন এরকমই একটা কিছুর প্রত্যাশা করছিল সেইজন্য সে পিস্তল বার না করে খালি হাতেই লড়াই করছে। বীরেন বাবু এগিয়ে এসে অভয়ের চোয়ালে আঘাত করেন ,অভয় এক পা পিছিয়ে যায় আবার বীরেন বাবু এগিয়ে আসেন তবে এবার আঘাতটা অভয়ের বাহাতের বাহুতে করেন তিনি জানেন ওখানেই তার চালানো গুলি লেগেছিল, আঘাতের ফলে অভয়ের ওই অংশের শার্ট রক্তে ভিজে যায় বীরেন বাবু আবার ওখানে আঘাত করেন এবার কিছুটা রক্ত শার্টের গোটানো স্লিভেল থেকে বেরিয়ে কবজিতে পৌঁছায় কিন্তু ইঞ্জেকশনের জন্যই হোক বা নিজের ইচ্ছাশক্তির জন্যই হোক অভয় ব্যাথাটা সহ্য করে নেয়, বীরেন বাবু তৃতীয় বার আঘাত করতে এলে সে বাহাতে আটকে ডান হাতে বীরেন বাবুর চোয়ালে আঘাত করে হ বীরেন বাবু কয়েকপা পিছিয়ে যান, কিন্তু পরক্ষনেই আবার অগ্ৰসর হলে অভয় ডান পা তুলে ওনার বুকে সজোড়ে একটা লাথি মারেন, বীরেন বাবু আঘাতটা সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যান।
"উঠুন.. উঠুন" অভয় ডাকতে থাকে, বীরেন বাবু উঠে আবার অভয়ের বাহাতের বাহুতে আঘাত করে, এবার অভয়ের ব্যাথা অনুভূত হয় তার চোখমুখ একটু কুঁচকে যায় কিন্তু বীরেন বাবু আবার আঘাত করতে উদ্যত হলে আবার সে হাতটা ধরে অপর হাত দিয়ে বীরেন বাবুর তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মারে, তারপর হাতটা ছেড়ে দিয়ে আবার বুকে জোড়ে লাথি মারে, বীরেন বাবু আবার নীচে পড়ে যান কিন্তু এবার তিনি দ্রুত উঠতে পারেন না, কোনোমতে উঠে অভয়কে আবার মারতে চাইলে আবার অভয় হখত ধরে অপর হাতে তলপেটে পরপর ঘুষি মারতে থাকে, তারপর চোয়ালে একটা ঘুষি মারে, বীরেন বাবু কয়েকপা পিছিয়ে যান কিন্তু তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে আর তার লড়ার শক্তি নেই তার দমেও ঘাটতি পড়েছে তিনি টলছেন কোনোমতে এগিয়ে আসছেন কিন্তু অভয়ের ঘুষি, লাথি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন, তারপর আবার উঠছেন আবার মার খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন, এভাবে কিছুক্ষণ চললো একসময় দেখা গেল বীরেন বাবু আর পারছেন না, তখন অভয় পিস্তল বার করলো বললো "বলেছিলাম না আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার চোখে চোখ রেখে কপালে গুলি করবো" কথাটা বলে অভয় সোজা পিস্তলটা বীরেন বাবুর কপালে তাক করে এতক্ষণে বীরেন বাবু বুঝতে পারেন কি হতে যাচ্ছে, তিনি ডুকরে কেঁদে ওঠেন বারবার অনুরোধ করতে থাকেন তাকে না মারার জন্য "অভয়.. অভয় আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে মেরোনা দয়া করো আমাকে, অভয়.." কিন্তু অভয় তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে ট্রিগার চাপে, সঙ্গে সঙ্গে একটা আওয়াজ আজ বীরেন বাবুর কপালে আর মাথার পিছনে গুলি ঢোকা আর বেরোনোর ছিদ্র হয়ে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে এল এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, কিন্তু অভয়ের যেন শান্তি হলো না সে পাগলের মতো মৃত বীরেন বাবুর উপরে পিস্তলের বাকি গুলি চালাতে লাগলো আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো "কেন আমার বাবাকে মেরেছিলেন, কেন? এখন দেখান আপনার ক্ষমতা উঠুন" শেষে যখন আর গুলি বেরোচ্ছে না তখন পিস্তল ফেলে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে একবার চেঁচিয়ে উঠলো "বাবাআআআআআআ আমি প্রতিশোধ নিয়েছি, তোমাকে যে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিল আমি তাকে শেষ করেছি, বাবাআআআআ" তারপর মাথা নীচু করে দুহাতে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে।

বেশ কয়েকমাস পরে,
বাণিজ্যনগরীতে এআরসি ম্যানসনে তুমুল ব্যাস্ততা আর লোকজনের ভিড়, অমৃতাদেবী আর বিন্দুমাসির  দম ফেলবার ফুরসৎ নেই ওনারা অতিথি আপ্যায়নে এবং তাদের দেখাশোনায় ব্যস্ত আর হবে নাই বা কেন? শহরের বেতাজ বাদশা, বিজনেস টাইক্যুন "এআরসি"র বিয়ের রিসেপশন, কিছুদিন আগেই সে বাণিজ্যনগরীতে ফিরেছে আর আসার কয়েকদিন পরে বিয়ে করেছে বিয়েটা অনাড়ম্বরভাবে হলেও রিসেপশন বড়ো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হচ্ছে,   শহরের সব বড়ো বড়ো বিজনেসম্যান, ফিল্মস্টার, পলিটিশিয়ান রা আসছে সাথে সাধারণ মানুষরা তো আছেই, বিশেষ করে অসংখ্য ছোটো ছোটো বাচ্চারা তারা আনন্দ করছে এসব দেখে পণ্ডিতজী অভয়ের কাছে এলেন বললেন "রয় তোমার নিজের সিকিউরিটির প্রতি একটু নজর দেওয়া উচিত"
কেন?
কেন আবার বলতে হবে? এই শহরে তোমার কত শত্রু আছে তার হিসাব রাখো?
দরকার কি আপনি আছেন তো?
যদি আমিই তোমাকে মারতে চাই?
চলুন নিরিবিলিতে চলুন সেখানে মারবেন।
পণ্ডিতজী কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বলেন "তুমি শোধরাবে না, তাই না?"
অভয় শান্ত স্বরে বলে "পণ্ডিতজী এই সব লোকেরাই আমাকে তখন আপন করে নিয়েছিল যখন আমার কিছু ছিল না একদম নিঃস্ব ছিলাম, আর আজ সবকিছু হয়েছে বলে ওদের কিকরে দূরে সরিয়ে দি‌ই বলুন, তাহলে আমিও কি বেইমানের দলে পরবো না?"
"আহমেদ ঠিকই বলতো রয়, তুমিই ওর পরে ওর জায়গা সামলানোর যোগ্য লোক,সবসময় আহমেদের মতো সবার কথা ভাবো অসহায়, দুর্বলদের পাশে থাকো কিন্তু রয় তুমি এখন অনেক উঁচুতে চলে গেছোতুমি এখন এআরসি"
তাতে কি হয়েছে?
ধরো যদি কখনো আবার কেউ আসে যারা এদের কষ্টের কারণ হয় তখন তুমি যে উচ্চতায় চলে গেছো সেখান থেকে নেমে আসবে? এআরসি কি আসবে?
না, এআরসি আসবে না, আসবে রয়, এই শহর আমাকে নতুন জীবন দিয়েছে, বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছে এই শহরে সবারই অধিকার আছে ভালো ভাবে বাঁচার, স্বপ্ন দেখার কিন্তু যেটা আপনি বললেন যদি কেউ সেই অধিকার কেড়ে নিতে চায় তাহলে রয় তার জীবন কেড়ে নেবে।
এটাই শুনতে চাইছিলাম রয়, ক্ষমতা তোমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে কি না সেটাই দেখতে চাইছিলাম। পণ্ডিতজী রয়কে জড়িয়ে ধরলেন, একটু পরে অভয় তাথৈএর কাছে গিয়ে দেখে সেখানে বিদিশা, আমির, বৃষ্টি আর অমিয় মিলে কথা বলছে, তাকে দেখে অমিয় বললো "তারপর তুই এখানেই থাকবি?"
এটাই এখন আমার শহর।
আর ওইটা?
ওখানেও যাবো, ওখানেও তো কাজ আছে।
বৃষ্টি বললো "অভয় বলাটা উচিত হবে কি না জানিনা তাও বলছি, আমাদের যত বিজনেস আছে আমি চাই সব তুমি নাও এবার"
না বৃষ্টি ওগুলো তোমার আমার দরকার নেই।
আমারও দরকার নেই, আমি অমিয়র সাথে এই ভালো আছি।
তাহলে এক কাজ করো ওগুলো যোগ্য উত্তরাধিকারীর জন্য তোলা থাক।
কে?
তোমার ভাই, তোমার বাবার ছেলে।
বৃষ্টি অবাক হয় কিন্তু তাথৈ ওকে শিউলী দেবীর ব্যাপারে বলে তখন বৃষ্টি বলে "বেশ তবে তাই হোক কিন্তু মাসির ব্যাপারে যখন তুমি জানো অভয় তখন ডাকলে না কেন আজ?"
ডেকেছি কিন্তু রোহিতের পরীক্ষা চলছে তাই আসতে পারেননি, পরে এসে তোমাদের সাথে দেখা করবেন। তবে শুধু আমার বাবার জমিটা যেটা তোমার বাবা নিয়েছিলেন ওটা আমি নিলাম।
বেশ, তাই হবে। বৃষ্টি শান্ত স্বরে বললো।
অমিয়র মুখ একটু ছোটো দেখে অভয় জিজ্ঞেস করে "কি রে তোর আবার কি হলো?"
তোরা এখানে থাকবি, আমাকে ওখানে ফিরে যেতে হবে, আবার কবে তোদের সাথে দেখা হবে কে জানে।
তা কেন? আমির বলে ওঠে, অমিয় তুমি যে কোম্পানিতে কাজ করো সেটার একটা ব্রাঞ্চ এই শহরে আছে আর ওই কোম্পানির এমডি আমাদের পরিচিত তোমাকে এখানে ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে আসছি চিন্তা কোরো না।

?
Like Reply
(11-11-2022, 09:44 PM)Monen2000 Wrote:
                         অন্তিম পর্ব (পার্ট-)

রাতে নিজের রুমে ঢুকলো অভয়, পুরো ঘরটা চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে, তার উপরে সুগন্ধি ছড়ানো হয়েছে ফলে পুরো ঘরেই সুগন্ধে ভরপুর, উচ্চ পাওয়ারের লাইট নয়, ছোটো ছোটো প্রদীপের মতো দেখতে লাইট দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।এছাড়া সারা ঘরে লাইটিংএর আলো আঁধারির খেলা চলছে,  মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে আলপনার মতো সাজানো হয়েছে, বিছানাতেও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো আর তার উপরে ঘোমটা টেনে বসে আছে তাথৈ, পরনে সোনালী রঙের জড়ির কাজ করা টকটকে লাল চোলি ও সেম ডিজানের টকটকে লাল লেহেঙ্গা, মাথায় টিকলি, যেটা সিঁথিতে সিঁদুরের উপরে আছে, কানে ঝুমকো, নাকে নোলক, গলায় সোনার চেইন এবং মঙ্গলসূত্র, দুহাতে মেহেন্দি, কবজির অনেকটা উপর পর্যন্ত সেম লাল রঙের চুরি সাথে সোনার বেশ কয়েকটা চুরিও আছে, দুহাতে এবং দুপায়ের নখে কাপড়ের সাথে ম্যাচিং লাল নেলপালিশ, ঠোঁটেও লাল লিপস্টিক, কপালে টিপ, পায়ে নূপুর। অভয় আস্তে আস্তে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল, তাথৈও ঘোমটার ভিতর থেকে দেখছে তার প্রিয়তম পুরুষটিকে, অভয়ের পরনে সিলভার রঙের ডিজাইন করা কালো কুর্তা পাঞ্জাবি, গলায় উত্তরীয়, ক্লিন শেভড গাল এবং ঘাড় পর্যন্ত  লম্বা চুল একটু ছোটো করে কাটা,।মাঝখান থেকে সিঁথি করে দু সাইডে পিছন দিকে আচড়ানো, অভয় এমনিতেই সুদর্শন কিন্তু আজ তাথৈ যেন চোখ ফেরাতে পারে না সে ঘোমটার ভিতর থেকেই একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে অভয়কে।
অভয় বিছানায় বসে আস্তে করে ঘোমটা তোলে এতক্ষণে তাথৈএর মুখ দৃশ্যমান হয় তার কাছে, অত্যন্ত মোহময়ী লাগছিল তাথৈকে, এতক্ষণ তাথৈ অভয়কে দেখছিল এখন অভয়‌ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে হারিয়ে যেতে থাকে এতে খুব সম্ভবত তাথৈ একটু লজ্জা পায় সে চোখ নামিয়ে ফেলে বলে "কি দেখছো?"
তোমাকে।
কেন? এত দেখার কি আছে?
তুমিও তো দেখছিলে আমাকে।
বেশ করেছি, আমার বর আমি দেখছিলাম।
তাহলে আমিও বেশ করেছি আমার ব‌উকে আমি দেখছিলাম। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ তারপর অভয় বলে "তোমার মনে আছে তোমার কাছে আমার একটা জিনিস পাওনা বাকি আছে?"
তাথৈ মুখ তুলে তাকায় ওর ভ্রু কুঁচকে গেছে বলে "কি জিনিস?"
কেন মনে নেই? তুমি বলেছিলে তোমার যেদিন ১৮ বছর বয়স হবে সেদিন দেবে।
একটু ভাবতেই তাথৈএর মনে পড়ে যায় কয়েকবছর আগের সেই পুরনো মন্দিরের পিছনের বাগানের বটতলায় এক বিশেষ দিনের কথা, সঙ্গে সঙ্গে সে আবার লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলে বলে "তুমিই আসতে দেরী করেছো আমি কি করবো?"
কি করবে মানে? আজ দেবে।
হবে না, তুমি দেরী করে ফেলেছো।
ঠিক তো?
হুমম।
বেশ তাহলে আমিও চললাম।
চললাম মানে কোথায়?
কেন তোমাকে বলেছি তো ববিতা আমাকে ডিনারে ডেকেছিল, মায়ের কথায় দেখা করতে গিয়েছিলাম শুধু এটুকুই মিথ্যা ছিল এটুকু বাদে বাকিটা সত্যি ছিল ,এখনো আমাকে ডাকছে ডিনারে।
তাথৈএর মুখ গম্ভীর হয়ে গেল সে অভয়ের কুর্তার কলার ধরে বিছানায় টেনে শুইয়ে ওই বুকের উপর চেপে বললো "মিস্টার অভয় রায় চৌধুরী একটা কথা মন দিয়ে শোনো আর মগজে ঢুকিয়ে নাও আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এখন তুমি আমার, শুধু আমার অন্য কোনো মেয়ের দিকে যদি তাকিয়েছো তাহলে তোমার জন্য কতটা খারাপ হবে সেটা তুমি ভাবতেও পারছো না"
কি করবে?
দেখতেই পারবে, মা তো বলেই দিয়েছেন ওনার ছেলেকে শোধরানোর দায়িত্ব উনি আমাকে দিয়েছেন।
অ্যাঁ।
আজ্ঞে হ্যাঁ এবার বুঝতে পারছো তো যে আমি পার্মিশন পেয়েই গেছি।
অভয় এবার এক ঝটকায় তাথৈকে বিছানায় শুইয়ে নিজে ওর পাশে কাত হয়ে শুয়ে শরীরের অর্ধেক তাথৈএর উপর তুলে বলে "মিসেস তাথৈ রায় চৌধুরী, আমি এখন সেই পুরনো অভয় নেই যে তোমার হাত‌ও ধরবে না এখন এই অভয় নিজের পাওনা কখনো ছাড়ে না, আমার যেটা পাওনা সেটা তো আমি নেবোই"।
কি চাই তোমার?
অভয় কথা না বলে আস্তে আস্তে নিজের ঠোঁট দুটো তাথৈএর দুটো ঠোঁট লক্ষ্য করে নামিয়ে আনে, তাথৈ দুহাতে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে তবে এবার আর তাকে অপেক্ষা করতে হয় না বা কারো ডাক‌ও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, দুজনেই একে অপরকে গাঢ় প্রেমচুম্বনে আবদ্ধ করে।
প্রায় ১২০০ মাইল দূরে অন্য এক শহরের শিব মন্দিরের চাতালে এখন সাধু রাত্রির জন্য আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, একজন‌ই প্রধান গুরু বাকিরা তার শিষ্য, রাতে গুরুকে না ঘুমিয়ে একটু দূরে একটা বট গাছের উপরে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার এক শিষ্য জিজ্ঞেস করেন "গুরুদেব, ওখানে কি দেখছেন?"
তুমিও দেখো কি দেখতে পারছো?
শিষ্যটি গাছের দিকে তাকায় আকাশে তখন পূর্ণিমার সম্পূর্ণ উজ্বল চাঁদ দেখা যাচ্ছে যার আলোয় চারিদিক উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, একটু ভালো করে দেখতেই শিষ্যটি দেখতে পেলেন গাছের একদম উপরের দিকে একটা ডালে একটা পাখির বাসা এবং তাতে দুটো পাখি বসে আছে একে অপরের গা ঘেঁষে একে অপরের চঞ্চুতে চঞ্চু লাগিয়ে কখনো গলায় গলা ঘষে আদর প্রকাশ করছে, প্রেম নিবেদন করছে। যদিও শিষ্য ঠিক বুঝতে পারলেন না ওটা কি পাখি? তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে গুরুর দিকে তাকালেন, গুরু একটু স্মিত হেসে বললেন "আজ ওদের মিলনের রাত, এত বছরের অপেক্ষা, বিরহ আজ শেষ আজ ওরা চিরতরে একে অপরের কাছে বাধা পড়ে গেছে অবশ্য এটা তো হওয়ার‌ই ছিল, ওদের ভাগ্য‌ই তো ওদের এক সাথে বেধে রেখেছে ওদের তো এক হতেই হতো। শিষ্য বুঝলেন তার গুরু পাখি দেখিয়ে অন্য কারো কথা বলছে কিন্তু কে সেটা বুঝতে পারছে না এতক্ষণে বাকি শিষ্যরাও উঠে পড়েছে তারা গুরুকে ঘিরে বসে পড়েছেন তাদেরই একজন জিজ্ঞেস করেন "গুরুদেব তাহলে তো ওদের জীবন এবার সুখেই কাটবে কারণ আপনিই বলেছিলেন ভালোবাসাই জীবনে সুখের সন্ধান দেয়"।
গুরু আবার স্মিত হাসি দেন, বলেন "সুখ বা দুঃখ কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়, সেটা চক্রাকারে আবর্তিত হতে থাকে ঠিক যেমন দিন আর রাত এর বিরাম নেই চলতেই থাকে ঘুরতেই থাকে"।
তার মানে গুরুদেব আবার ওদের জীবনে দুঃখ নেমে আসবে?
জীবনের পরীক্ষা তো চলতেই থাকে, সেই পরীক্ষা থেকে পালানোর উপায় নেই।

বাণিজ্যনগরীর এক অন্ধকার ঘরে, পুরো অন্ধকার নয় একটা নাইটল্যাম্প জ্বলছে ঘরে তাতে ঘরটাকে আরও রহস্যময় মনে হচ্ছে, সোফার উপর এক তরুণী যুবতী বসে আছে বয়স ২৭-২৮, পরনে একটা পরু স্ট্রিপের টপ, আর শর্ট প্যান্ট সোফার সামনে দুটো অ্যালকোহলের বোতল যার একটা পুরো এবং অপরটা অর্ধেক খালি পাশে একটা গ্লাস আর একটা পাত্রে বরফ, আর একটা জলের জগ,  টেবিলেই একটা ল্যাপটপ রাখা তাতে স্ক্রিনে এক দম্পতির ছবি, অভয় আর তাথৈএর ছবি, যুবতী গ্লাসে কিছুটা অ্যালকোহল ঢেলে তাতে কিছুটা জল মেশায় তারপর দুটো বরফের টুকরো গ্লাসে দেয় এবার গ্লাসটা হাতে তুলে এক চুমুকে প্রায় শেষ করে ফেলে। এই সময় দরজায় নক হবার শব্দ আসে, যুবতী নেশা জড়ানো গলায় বলে "আসুন"
একটা পুরুষের অবয়ব দেখা যায়, যুবতী বলে "আপনার ভাইকে এআরসি জেলে দিয়েছিল মনে আছে?"
আছে। পুরুষটি গম্ভীরকণ্ঠে বলে।
প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছা করে না?
না।
না? যুবতীটি বিস্ময় প্রকাশ করে।
না।
তাহলে এখানে এসেছেন কেন?
আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে।
কি?
আমার ভাইকে এআরসি জেলে দিয়েছিল এটা ঠিক কারণ সে একটা গর্হিত অপরাধ করেছিল এবং সেখানে সে আত্মহত্যা করে কিন্তু এআরসি আমার সাথে শত্রুতা করেনি, কিন্তু এখন যদি আমি ওর বিরুদ্ধে কিছু করি তাহলে ও আমাকে শেষ করতে দুবার ভাববে না।
আপনি ওকে ভয় পাচ্ছেন?
এই শহরের প্রায় সবাই ওকে যেমন ভয় পায় তেমনি সম্মান করে আবার অনেকে ভালো‌ওবাসে, আপনার সাথে আমার পারিবারিক পরিচয় আছে তাই সাবধান করছি, এআরসির বিরুদ্ধে যাবেন না কারণ ও যদি জানতে পারে তাহলে আপনাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, এআরসি ছাড়ুন আমির যদি জানতে পারে কিংবা আমির‌ও ছাড়ুন এই শহরের যেকোনো সাধারণ খেটে খাওয়া লোক যদি জানতে পারে যে আপনি এআরসির ক্ষতি করতে চাইছেন তাহলে ওরাই আপনাকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করবে তাই..
বেরিয়ে যান এখান থেকে। হটাৎ যুবতী চিৎকার করে ওঠে, বেরিয়ে যান নাহলে এখন আমি আপনাকে মেরে ফেলবো।
পুরুষটি বেরিয়ে যায়, ঘরে যুবতী একা সে ল্যাপটপের ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, এবার সে স্বগতোক্তি করতে থাকে "ছোটো থেকেই যেটা আমার পছন্দ হয়েছে সেটা আমি নিয়েছি এটাই আমার অভ্যাস, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছিল এআরসি, সেই তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম একটা বারে, আমাকে একা পেয়ে যখন কিছু বদমাইশ ছেলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল তখন তুমি আমাকে ওদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলে, তারপর অনেক খুঁজে তোমার সম্বন্ধে জানলাম তোমার অফিসে তোমার পিএ হিসাবে চাকরি নিলাম যাতে সবসময় তোমার কাছে থাকতে পারি তোমার পাশে থাকতে পারি, তারপর থেকে প্রতিদিন চেষ্টা করতাম তোমাকে ইমপ্রেস করার, তোমার মন জয় করার কিন্তু পারিনি, তুমি আমার দিকে নজর‌ই দাওনি তবুও আমি চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম কিন্তু আজ তুমি কোথা থেকে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে বিয়ে করে নিয়েছো... এটা আমি কিছুতেই সহ্য করবো না, তুমি আমার আর যদি তোমাকে আমি নিজের করে না পাই তাহলে তোমাকে অন্য কারো হতেও দেবো না, ওই মেয়েটা তাথৈ ও আমাদের মাঝে এসে ভুল করেছে ওকে সরতে হবে, আর তা নাহলে তোমাকে এই পৃথিবী থেকে সরতে হবে, আমাকে ইগনোর করে তুমি আমাকে অপমান করেছো তার মূল্য তো চোকাতেই হবে মিস্টার এআরসি, হয় তোমাকে নিজের করে নেবো ওই তাথৈকে মেরে আর নাহয় তোমাকে মেরে আমাকে অপমান করার প্রতিশোধ নেবো... প্রতিশোধ



                                  সমাপ্ত

বিদ্র: এটাই এই গল্পের অন্তিম পর্ব যদি ইচ্ছা হয় তাহলে লাইক এবং রেপু দেবেন, আর যদি না হয় দেবেন না কিন্তু একটা জিনিস আমি চাইবো সেটা হলো রিভিউ আর সেটা সৎভাবে, যেখানে ভুল হয়েছে সেটা বলবেন যেখানে খামতি রয়েছে সেটাও বলবেন, এটুকু আশা তো করতেই পারি, নয়কি?

যাইহোক আপাতত আর লেখার ব্যাপারে কিছু ঠিক করিনি, হয়তো লিখবো হয়তো না, কিন্তু যদি লিখি তাহলে আবার দেখা হবে, ততদিন বিদায়, সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

?Awesome lekhoni... Amamzing !!
[+] 1 user Likes Bohemian-M's post
Like Reply
(17-05-2024, 06:46 PM)Bohemian-M Wrote: ?Awesome lekhoni... Amamzing !!

ধন্যবাদ  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
মোনেন ভাই
নতুন খাবারের স্বাদ না পেয়ে পুরনো খাবার দিয়েই আবারো পেট ভরাচ্ছি।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক বসাতেই পড়লাম।এরপরে পড়বো ধূসর পৃথিবী।
এ গল্পের শেষের দিকে আমি রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম।এজন্যই এ গল্পে আমার কোন কমেন্ট নেই।
সময় ও সুযোগ করে আমাদের জন্য নতুন গল্প নিয়ে আসুন।
লাইক রেপু ও রেটিং।


-------------অধম
Like Reply
(26-05-2024, 11:58 PM)অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। Wrote: মোনেন ভাই
নতুন খাবারের স্বাদ না পেয়ে পুরনো খাবার দিয়েই আবারো পেট ভরাচ্ছি।শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক বসাতেই পড়লাম।এরপরে পড়বো ধূসর পৃথিবী।
এ গল্পের শেষের দিকে আমি রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম।এজন্যই এ গল্পে আমার কোন কমেন্ট নেই।
সময় ও সুযোগ করে আমাদের জন্য নতুন গল্প নিয়ে আসুন।
লাইক রেপু ও রেটিং।


-------------অধম

ধন্যবাদ, আসলে নতুনকোনো প্লট মাথায় আসছে না, এলে সময় বুঝে লিখবো। তবে আমি আমার লাস্ট লেখা ছেড়েছি অনেকদিন হলো এখনো অনেকেই পড়ছে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Monen dada protishod-2 lekha suru koro


My pain is constant and sharp, and I do not hope for a better world for anyone. ArrowNamaskar


[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
(02-08-2024, 12:11 AM)Patrick bateman_69 Wrote: Monen dada protishod-2 lekha suru koro

ধন্যবাদ আমাকে মনে রাখার জন্য Namaskar
কিন্তু এখন মাথায় কোনো প্লট নেই আর তাছাড়া সময়‌ও হয় না ইচ্ছেও হয় না, যদি কখনও লিখি তাহলে পোস্ট করবো।
Namaskar Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply




Users browsing this thread: 14 Guest(s)