Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
(01-03-2024, 12:34 AM)Monen2000 Wrote: কিসের কথা বলছেন বুঝতে পারলাম না?
মোনেন ভাই
আশা করি ভালো আছেন।এভাবে ডুব দিয়ে থাকলে আমরা কি ভালো থাকি বলুন।প্রায় ৯ মাস পর দেখা দিলেন।
জানি অনেক অভিমান বা অভিযোগ আছে কারো কারো উপর।আমরা সকলেই তো দোষ করিনি।তাহলে আমরা যারা আপনার লিখার পাঠক আছি তারা কেন শাস্তি পাবো।
সব মান অভিমান ভুলে নতুন গল্পে হাত দিন।
নতুন গল্পের প্রতিক্ষয় রইলাম।


-------------অধম
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(01-03-2024, 12:34 AM)Monen2000 Wrote: কিসের কথা বলছেন বুঝতে পারলাম না?

এতো বুঝে কি করবেন! কিছু কথা রহস্যময় হয়ে থাকাই ভালো।
 নতুন গল্প শুরু করুন অপেক্ষায় থাকবো,তবে রোমান্টিক গল্প অনুরোধ রইলো Heart 
[+] 1 user Likes ৴৻সীমাহীন৴'s post
Like Reply
(01-03-2024, 06:10 AM)অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। Wrote: মোনেন ভাই
আশা করি ভালো আছেন।এভাবে ডুব দিয়ে থাকলে আমরা কি ভালো থাকি বলুন।প্রায় ৯ মাস পর দেখা দিলেন।
জানি অনেক অভিমান বা অভিযোগ আছে কারো কারো উপর।আমরা সকলেই তো দোষ করিনি।তাহলে আমরা যারা আপনার লিখার পাঠক আছি তারা কেন শাস্তি পাবো।
সব মান অভিমান ভুলে নতুন গল্পে হাত দিন।
নতুন গল্পের প্রতিক্ষয় রইলাম।


-------------অধম
ধন্যবাদ এত ভালোবাসার জন্য কিন্তু সত্যিই এখন কোনো প্লট মাথায় নেই আর তাছাড়া কাজের চাপে সময় হচ্ছে না। প্লট এবং সময় হলে অবশ্যই লিখবো।
(01-03-2024, 08:28 AM)৴৻সীমাহীন৴ Wrote: এতো বুঝে কি করবেন! কিছু কথা রহস্যময় হয়ে থাকাই ভালো।
 নতুন গল্প শুরু করুন অপেক্ষায় থাকবো,তবে রোমান্টিক গল্প অনুরোধ রইলো Heart 

ধন্যবাদ। লেখার প্লট নেই আর সময়‌ও হচ্ছে না হলে অবশ্যই লিখবো
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
বাসর ঘরের মসলাটা ভাল করে দিতে পারতেন।
[+] 1 user Likes alex2023's post
Like Reply
(19-08-2022, 10:05 AM)Monen2000 Wrote:
                               ট্রেলার

একজন বিজনেস টাইক‍্যুন যাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে একটা স্বপ্ন নাকি দুঃস্বপ্ন?

একজন যুবতী যে তার ছোটোবেলার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলেছে, হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু ভোলেনি আজ‌ও খুঁজে বেড়ায় তার প্রেমিককে যে তাকে আশ্বাস দিয়েছিল "আমি আছি তো"

একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্যক্তি, পুরো শহরে যার আধিপত্য, পুরো শহরের লোক যার নামেই তটস্থ, যার বিরুদ্ধে কথা বললে আর বেঁচে থাকা যায় না।
একটা কালো ছায়া মূর্তি যে অতীতের অন্ধকার থেকে উঠে এসেছে অতীতের সব হিসেব বুঝে নেওয়ার জন্য।


শীঘ্রই আসছে "প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ" এর প্রথম পর্ব

Good starting
Like Reply
(19-08-2022, 11:44 PM)Monen2000 Wrote:
                              প্রথম পর্ব

ঘরে পুরো অন্ধকার কিছু দেখার উপায় নেই শুধু একজন নারী ও একজন পুরুষের কথাবার্তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে

নারী: কি যে বলো, কিভাবে করবো উনি আমার দাদা
পুরুষ: তোমার নিজের দাদা নাকি? কোথায় কোন দূর সম্পর্কের দাদা
নারী: তাহলেও, দাদা তো
পুরুষ: তো সারাজীবন এইভাবেই থাকবে নাকি? আর তাছাড়া এতগুলো টাকাও হাতছাড়া হয়ে যাবে না করলে আমাদের ছেলের কথাটাও তো ভাবতে হবে ওরো তো একটা ভবিষ্যত আছে, না না মণি এই কাজটা করতেই হবে।
নারী: কত টাকা?
পুরুষ: অনেক, সেইসঙ্গে একটা ফ্ল্যাট‌ও পাওয়া যাবে।
নারী: সত্যি বলছো?
পুরুষ: একদম সত্যি, দাদা তো বললেন, তুমি খালি জিনিসটা খাবারের সাথে মিশিয়ে ওদের তিনজনকে খাইয়ে দেবে বাকিটা দাদা বুঝে নেবে।
নারী: কোনো ঝামেলা হবে না তো?
পুরুষ: কিচ্ছু হবে না। 
পুরুষের একটু হাসির আওয়াজ এলো সাথে নারীর আওয়াজ: উহ কি করছো ছাড়ো ছেলে জেগে যাবে
পুরুষ:এখন তোমাকে ছাড়তে ইচ্ছা করছে না, চলো আজ একটু করি। একটু পরে নারীটার আঃ করে একটু আওয়াজের সাথে একটু হাসির আওয়াজ এলো তারপর পুরুষ নারী দুজনের ঘনঘন কিন্তু মৃদু শিৎকারের আওয়াজ আসতে লাগলো তারপর আবার চুপচাপ।

                        **----------**
শহরের এক বিলাসবহুল বাড়ি জুড়ে এখন চরম ব্যাস্ততা দেখা যাচ্ছে, চাকরদের দম ফেলবার ফুরসত নেই, দরজা সাজানো, ঘর ডেকোরেট করা, কোথায় কোথায় নোংরা জমে আছে সেটা চেক করা এবং পরিষ্কার করা ইত্যাদি আর সবকিছুর উপর কড়া দৃষ্টি রেখেছেন এক ষাটোর্ধ্ব মহিলা।
ইনি বৈশালী দেবী, আর এই বিলাসবহুল বাড়িটি শহরর দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা বীরেন ভট্টাচার্যের, যিনি সম্পর্কে বৈশালী দেবীর ভাই, জামাইবাবু মারা যাওয়ার পরে বীরেন ভট্টাচার্য দিদি ও তার একমাত্র ভাগ্নেকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন, সেই থেকে বৈশালী দেবী ও তার ছেলে এখানেই থাকেন। বীরেন ভট্টাচার্য শুধু যে একজন রাজনৈতিক নেতা তাই নয় পুরো শহর জুড়ে তার আধিপত্য, প্রথম জীবনে একজন প্রোমোটার ছিলেন বীরেন বাবু তারপর ধীরে ধীরে উন্নতি করে আজকে এই ক্ষমতা অর্জন করেছেন, নিজের ব্যাবসা যেমন বাড়িয়েছেন তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ভোটে জিতে নেতা হয়েছেন অবশ্য লোকমুখে এও শোনা যায় যে এই ক্ষমতা অর্জন টা সৎ উপায়ে করেননি বীরেন বাবু এর জন্য নাকি বহু লোককে খুন করেছেন কিন্তু কখনো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই পুলিশ তার গায়ে হাত দিতে পারেনি আর এখন তো পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তার হাতের মুঠোয়, এখন তার লক্ষ্য নিজের শহর ছেড়ে অন্য শহরে তার ব্যাবসা আর ক্ষমতার প্রসার করা, বিশেষত বাণিজ্যনগরীতে পা জমানো কিন্তু সেখানে অন্য ক্ষমতাধর ব্যাবসায়ীদের ভিড় তাই তিনি ঠিক পাত্তা পাচ্ছেন না তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই নিজের শহরেই আরও বেশি করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন,আর তার সবকাজে তার সাথে থাকে তার বিশ্বস্ত অনুগত ভাই ধীরেন ভট্টাচার্য, দাদার মতো এনাকেও শহরের লোক কম ভয় পায় না, দাদার হুকুমে করতে পারেন না এমন কাজ নেই দাদা অন্ত প্রাণ ধীরেন বাবুর।
এই ভট্টাচার্য বাড়িতে এই যে এত আয়োজন তার কারণ আজ বাড়ির সবার প্রিয় ছোটো মেয়ে তাথৈ তার পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরছে, এই তাথৈ ধীরেন বাবুর একমাত্র মেয়ে আর বীরেন বাবুর‌ও এক মেয়ে আছে নাম বৃষ্টি, কিছু বছর আগে দুই বোনকেই পড়াশোনা করার জন্য অন্য শহরে নিজের এক আত্মীয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন বীরেন বাবু, বৃষ্টি কিছুদিন আগে ফিরে এসেছে আর আজ আসছে তাথৈ।
প্লেনে ফার্স্ট ক্লাসে জানালার ধারের একটি সিটে বসে বাইরের দিকে দেখছে এক যুবতী, যুবতীটি ফর্সা গায়ে একটা সাদা শার্ট, আর নীল জিন্স, চোখে মাথায় চুলটা হাল্কা লাল রঙ করা পনিটেল করে বাধা, মুখে সবসময় একটা গাম্ভীর্য, অনেকদিন পরে নিজের শহরে নিজের বাড়িতে ফিরছে সে তবুও তার মুখে হাসি নেই।
বিমানবন্দরে প্লেন ল্যাণ্ড করলে পরে যুবতীটি চেকিংএর ফর্মালিটি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল যেখানে তার জন্য নীল গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির ড্রাইভার তাকে দেখে বললো: ওয়েলকাম ম্যাডাম
যুবতী: থ্যাংক ইউ
ড্রাইভার লাগেজগুলো গাড়ির পিছনে ঢুকিয়ে দিল আর যুবতীটি গাড়ির ব্যাকসিটে উঠলো, তারপর ড্রাইভার সামনে স্টিয়ারিং এ বসে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো "বাড়ি তো ম্যাডাম?"
যুবতীটি: হুম।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করলো।
একটু ভুল হলেই চাকরদের কড়া বকুনি দিচ্ছেন বৈশালী দেবী, মাঝে মাঝে কিচেনে গিয়ে দেখছেন রান্না ঠিক ঠাক হচ্ছে কি না, আজ যে তার মেয়ে আসছে, কত বছর পরে ,মেয়ের প্লেন ল্যাণ্ড করে গেছে অনেকক্ষণ আগেই বাড়ির ড্রাইভার ফোন করে জানিয়েছিল, যখন তখন চলে আসবে, হটাৎ হাক পাড়লেন "বৌমা"
এক যুবতী তার সামনে এসে নতমস্তকে দাঁড়ালো, বৈশালী দেবী বললেন: সব ব্যবস্থা হয়েছে? ও কিন্তু এক্ষুনি চলে আসবে, নাকি নিজের কোনো পার্টিতে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত?
যুবতী: হয়েছে মা, আপনি একটু দেখে নিন। ইনি বৈশালী দেবীর ছেলে রকির ব‌উ বিদিশা, ব্যবস্থা দেখে বৈশালী দেবী খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করলেন না, বললেন: আরতির থালা সাজানো হয়েছে?
বিদিশা: হয়েছে মা।
এমন সময় কলিং বেল বাজার আওয়াজ, বৈশালী দেবী বিদিশাকে বলেন: যাও আরতির থালা নিয়ে এসো, একজন চাকর দরজা খোলে এবং দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনিই তাথৈ তার জন্যই এত আয়োজন তাথৈ ঘরে তিনি ঢুকতে গিয়েই বাধা পায় সামনে বৈশালী দেবী দাঁড়িয়ে আছেন হাতে একটা থালায় জ্বলন্ত প্রদীপ আর কিছু ধান-দুব্বো নিয়ে।
বৈশালী দেবী তাথৈএর আরতি করেন তারপর বলেন : আয় এবার ভিতরে আয় মা।
তাথৈ ঘরে ঢুকে মহিলার  পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন, মহিলা আশীর্বাদ করেন "সুখে থাক মা, দীর্ঘজীবী হ"
তাথৈ: তুমি কেমন আছো পিসি?
বৈশালী দেবী: আমার মেয়ে চলে এসেছে, আর কিভাবে খারাপ থাকবো?
বলে তাথৈকে বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকেন। তারপর খোশগল্প চলতে থাকে
তাথৈ: বাপি কোথায়? আর মা? আর জ্যেঠুমণি-বড়মা?
বৈশালী দেবী উত্তর দেবার আগেই দরজার বাইরে থেকে সমবেত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে এইতো আমরা, আমাদের তাথৈ মার জন্য গিফ্ট নিতে গিয়েছিলাম। তাথৈ এবার একে একে সবাইকে প্রণাম করে তারপর বলে কি গিফ্ট?
দুজন পুরুষের‌ই গলায় মোটা সোনার চেন, পুরুষ্ট গোঁফ হাতের আঙ্গুল জুড়ে সোনার আংটি মাথায় কাচাপাকা মেশানো চুল, যিনি বয়সে বড়ো তার মুখ ঔদ্ধত্য ফুটে বেরোচ্ছে তিনিই যে বীরেন ভট্টাচার্য সেটা আর বলে দিতে হয় না, তিনি বলেন: তার জন্য তো বাইরে আসতে হবে, এসো বাইরে এসো।
সবাই বাইরে যায় গিয়ে দেখে বাড়ির গেটের বাইরে আরো একটা নতুন কেনা সিলভার রঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে
তাথৈ: এটা আমার জন্য?
বীরেন বাবু: একদম, এটা শুধু আমার তাথৈ মার জন্য।
তাথৈ আনন্দে লোকটির গলা জড়িয়ে ধরে "থ্যাংক ইউ জ্যেঠুমণি"।
সন্ধ্যাবেলায় তাথৈ একটা ফোন করে "হ্যালো, মিস্টার গুপ্ত?
ফোনের অপর প্রান্তে: বলুন ম্যাডাম
তাথৈ: আপনার সাথে দেখা করতে চাই, আধঘন্টার মধ্যে আপনার অফিসে আসছি
ফোনের অপর প্রান্তে:ঠিক আছে ম্যাডাম
মিস্টার গুপ্ত নামক ভদ্রলোকের অফিসে টেবিলের একদিকের চেয়ারে স্যুট-বুট পড়া ব্যাক্তি অর্থাৎ মিস্টার গুপ্ত বসে আছেন আর অপর দিকের একটা চেয়ারে তাথৈ বসে আছে।
মিস্টার গুপ্ত: এবার বলুন ম্যাডাম?
তাথৈ: আপনাকে যে কাজটা দিয়েছিলাম করেছেন?
মিস্টার গুপ্ত: হ্যাঁ
তাথৈ: খোঁজ পেয়েছেন?
মিস্টার গুপ্ত: না, ম্যাডাম, ওদের এক আত্মীয় থাকে আপনার জ্যেঠুর খুব পরিচিত তারা তাদের কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু তারা তো শুনে আকাশ থেকে পড়লেন বললেন ওরা তো বহুবছর আগে এক দুর্ঘটনায় সবাই মারা গেছে।
তাথৈ হতভম্ব হয়ে গেল বললো: সবাই মারা গেছে? কিভাবে?
মিস্টার গুপ্ত: বললাম যে একটা দুর্ঘটনায়, কি দুর্ঘটনা সেটা অবশ্যি বললেন না তারা।
তাথৈ: ওই আত্মীয়ের কাছে ছেলেটির কোনো ছবি আছে?
মিস্টার গুপ্ত: সেই ছোটোবেলার একটা ছবি পেয়েছি
তাথৈ: দিন
মিস্টার গুপ্ত তাথৈকে একটা ছবিটা দিল
তাথৈ: ধন্যবাদ, আপনার পেমেন্ট আপনি পেয়ে যাবেন আর এই ব্যাপারে যেন আর কেউ না জানে
মিস্টার গুপ্ত: ঠিক আছে ম্যাডাম, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ম্যাডাম?
তাথৈ: কি?
মিস্টার গুপ্ত: ছেলেটি কি বিশেষ কেউ?
এবারে জ্বলে উঠলো তাথৈ: সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে আমি বাধ্য ন‌ই, আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে আর এই সম্বন্ধে কেউ যেন কিছু না জানে।

"কোথায় গিয়েছিলি তুই?" ঘরে ঢুকতেই প্রশ্নটা করেন বৈশালী দেবী  উদ্দেশ্য তাথৈ
তাথৈ উত্তর দিল: একটু বেরিয়েছিলাম
বৈশালী দেবী: কোথায়?
তাথৈ: একটু শহর দেখতে
বৈশালী দেবী: ঠিক আছে বলবিনা যখন আর কি বলবো, আমি তো আর মা ন‌ই, যে আমাকে সব কথা বলবি
তাথৈ (একটু রাগের সাথে):  পিসি, বলেছি না এসব কথা কখনো বলবে না, এসব কথা আমার পছন্দ নয়
বৈশালী দেবী: তাহলে বল কোথায় গিয়েছিলি?
তাথৈ: বললাম তো একটু ঘুরতে। বলে আর প্রশ্ন করার অবকাশ না দিয়ে উপরে চলে এল, উপরে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসে তাথৈ ছবিটি খুলে দেখে, একজন কিশোরের ছবি, ফর্মাল শার্ট প্যান্ট পরা, শার্টের হাতা দুটো কবজির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো, গলার কাছে শার্টের একদম উপরের একটা বোতাম খোলা, পায়ে বুট,  চোখে সানগ্লাস, হাতে একটা ঘড়ি একটা ব্যাগ একটা  কাঁধ থেকে পিছনে ঝুলছে, ছেলেটি হাঁটছে পাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে, ছেলেটি হাঁটছে বা ওই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে তখনই তোলা হয়েছে ছবিটা।
তাথৈ একদৃষ্টিতে অনেকক্ষণ দেখতে থাকে ছবির কিশোরটিকে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে মনে মনে ভাবে "তাহলে কি সত্যিই সে হারিয়ে ফেললো অভয়কে?" ছবিটি দেখতে দেখতে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চোখ থেকে, কিছুক্ষণের জন্য তাথৈ ফিরে গেল তার ছোটোবেলায় কলেজ জীবনে যখন একটা ছেলে রোজ‌ই দূর থেকে তাকে লক্ষ্য করতো, কাছে আসতো না কিন্তু লক্ষ্য করতো তারপর ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হলো, নাম জানলো ছেলেটার নাম অভয়, খুব ভালো লাগতো তাথৈ এর অভয়ের সাথে থাকতে ওর সাথে ছুটির পরে ঘুরতে, একদিন ঘুরতে ঘুরতে দুজনে পাড়ার এক শিব মন্দিরের পিছনে গিয়েছিল জায়গাটা দিনের বেলাতেও অন্ধকার থাকে ঘন গাছপালার জন্য, অন্ধকারে ছোটো থেকেই ভয় তাথৈ এর সেদিন ও মন্দিরের পিছনে গাছপালার অন্ধকারেও ভয় পাচ্ছিল সেটা বুঝেছিল তার সঙ্গীটি তার হাত ধরে বললো "ভয় নেই, আমি আছি তো",.. 
"তাথৈ এই তাথৈ" হটাৎ সম্বিত ফিরে পেল তাথৈ বৃষ্টি এসেছে তার বন্ধু তার দিদি বৃষ্টি। তাড়াতাড়ি ছবিটা নিজের ব্যাগে লুকিয়ে রাখলো তাথৈ। ঘরে ঢুকলো আরো একজন তন্বী যুবতী বয়স তাথৈ এর মতোই তবে কথাবার্তায় তাথৈ এর উল্টো, তাথৈ এর কথাবার্তা ভদ্র মার্জিত কিন্তু এর কথার প্রতিটা স্বরে অহংকার ফুটে বেরোয় এর‌ই নাম বৃষ্টি, পরনে একটা টপ আর হট প্যান্ট, স্তনদুটো যেন টপ ফেটে বেরোতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
 দুই বোন একে অপরকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরলো তারপর তাথৈ বললো: কি রে কোথায় ছিলি? আমাকে আনতেও যাসনি,এসেও এতক্ষণ পরে দেখা দিলি
বৃষ্টি: ওই একটু কাজ ছিল
কি কাজ?
তোর জন্য গিফ্ট আনতে গিয়েছিলাম
কি?
"এই দেখ" বলে বৃষ্টি তাথৈকে একটা প্যাকেট দিল, বললো: এটা কাল পড়বি।
কাল কি আছে?
আরে ড্যাডি তোর আসার জন্য মন্দিরে পূজো রেখেছে,
জ্যেঠুমণি সত্যিই পারে বটে
তুই ড্যাডির লাডলি আর আমি কাকাইয়ের
দুজনেই হাসতে লাগলো

গভীর রাত, কিন্তু রাতের অন্ধকার দূর হয়ে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়, আগুন লেগেছে, বাইরে কিছু লোকের পৈশাচিক উল্লাস তাদেরই একজন বললো "দেখিস যেন কেউ বাঁচতে না পারে, সবকটাকে একসাথে পুড়িয়ে মারবো আজ, আমার সাথে লাগতে আসা, আমাকে অপমান করা" লাগা আগুন, আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে সাথে লোকগুলোর অট্টহাসি...
ঘুম ভেঙে চমকে উঠলো এআরসি, একটা বিশ্রী স্বপ্ন দেখেছে সে, কপালে ঘাম জমে গেছে, এই একটা দুঃস্বপ্ন বিগত ১৫ বছর ধরে নিয়মিত দেখে আসছে সে, কিছুতেই এই স্বপ্ন পিছু ছাড়ছে না, হয়তো সে নিজেই পিছু ছাড়াতে চাইছে না।
সে হাতঘড়ি দেখলো তখনও সকাল হতে কিছু দেরী আছে, সে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো, বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল তারপর ট্রেনিং রুমে ঢুকলো প্রথমে কিছু ফ্রি হ্যাণ্ড এক্সারসাইজ, তারপর কিছু যোগ-ব্যায়াম আর শেষে মার্শাল আর্ট প্র্যাকটিস, তারপর স্নান করে ব্রেকফাস্ট করে অফিস এটা তার রোজকার রুটিন, শহরের তো বটেই দেশের বড়ো ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টদের একজন এআরসি, বাণিজ্য নগরীর তো বটেই দেশের সবথেকে ইয়ং বিজনেস টাইক্যুন, টাকার অভাব তো নেই তার সাথে সমাজে বেশ কিছুটা প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, কিন্তু তাও যেন কিছু আছে যেটা এখনো তার পাওয়া বাকি, সেটার জন্যই সে ছুটে চলেছে।
ওয়ার্ক‌আউট শেষে বাথ নিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসলো, বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকারা পরিবেশন করছে, খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো: মা কোথায়?
একজন পরিচারকের উত্তর: ম্যাডাম পূজোয় বসেছেন।
এআরসি: শোনো আমি কিছুদিনের জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছি, মায়ের খেয়াল রাখবে তোমরা আর কোনো দরকার বা অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করবে, ঠিক আছে? আর মাকে ওষুধপত্র যেন ঠিকঠাক খাওয়ানো হয়।
"এত‌ই যদি মায়ের জন্য চিন্তা তাহলে এবার একটা ব‌উ নিয়ে আয় ঘরে" কথাটা এলো ঠাকুরঘরের দরজার দিক থেকে, এক মহিলা হাতে থালায় কিছু নিয়ে আসছেন।
এআরসি: তোমার পূজো হয়েছে? তো এবার খাবে এসো।
মা: আগে মাথাটা এদিকে আন,ঠাকুরের আরতি নে আর টিকা লাগা
"তুমি জানো আমি এসব বিশ্বাস করি না, তুমি করো তাই আমি তোমার জন্য ঠাকুরঘর বানিয়ে দিয়েছি, আমাকে এর মধ্যে জড়িও না" গম্ভীর গলায় বলে এআরসি।
মহিলা তাও ছেলের মাথায় প্রদীপের আরতি দিয়ে কপালে টিকা পড়িয়ে দেন, তারপর বলেন: কোথায় যাচ্ছিস তুই?
একটু কাজ আছে, কদিনের জন্য শহরের বাইরে যাচ্ছি ব্যাবসার জন্য তবে তোমার চিন্তা নেই কোনো দরকার পড়লেই ফোন করবে চলে আসবো।
খালি কাজ আর কাজ এবার একটু নিজের কথা ভাব কতবার বলেছি বিয়ে কর কিন্তু তুই..
মা তোমাকে বলেছি না..
কথা শেষ করতে দেন না মহিলা বলেন: তোর অফিসে তো অনেক মেয়ে কাউকে তোর পছন্দ হয়না? হলে নিয়ে আয় বাড়িতে একদিন
গুরুগম্ভীর গলায় উত্তর আসে: মা তোমাকে কতবার বলেছি না এইসব বিয়ের প্ল্যান এই মুহূর্তে আমার নেই।
তোর বাবার কত ইচ্ছা ছিল ছেলের বিয়ে দেবেন, নাতি-নাতনীদের সাথে খেলা করবেন কিন্তু.. কথা শেষ করতে পারেন না মহিলা চোখে জল চলে আস, আঁচলের খুট দিয়ে চোখ মোছেন। এআরসি নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু তার চোয়াল কঠিন হয়ে যায় যেন নিজেই কোনো কাজ সম্পন্ন করার প্রতিজ্ঞা করে। তারপর নরম গলায় মাকে বলে: তুমি সাবধানে থাকবে, ওরা সবাই থাকবে তোমার দেখাশোনা করার জন্য।
মা: আমাকেও নিয়ে চল তোর সাথে
এবার নয়,এবার আমাকে একাই যেতে হবে।
কখন বেরোবি?
কাল সকালে, আজ কয়েকটা মিটিং আছে সেগুলো সেরে নিয়ে কাল বেরোবো
কবে ফিরবি?
ঠিক নেই, চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ফিরতে।
বাণিজ্য নগরীর এক বহুতল অফিস, এআরসি এর অফিস কনফারেন্স রুমে মিটিং চলছে, বেশ কিছুক্ষণ পরে মিটিং শেষে কনফারেন্স রুম খালি হলো শুধু রয়ে গেলেন এআরসি তার পিএ ও একজন এমপ্লয়ী।
একটা ফাইল চেক করে দরকার মতো স‌ই করতে করতে এআরসি কথা বললো: শুনুন আমি কিছুদিনের জন্য বিজনেস পারপাসে শহরের বাইরে যাচ্ছি, কবে ফিরবো কিছু ঠিক নেই আমি যতদিন না আসছি কোনো ডিলের কনফার্মেশন করবেন না, আর মিটিংগুলো সব পোস্টপোন করুন নিতান্তই যদি না করা যায় তাহলে বলবেন আমি ভিডিও কলে আমি জয়েন করবো ঠিক আছে?
রুমে উপস্থিত বাকি দুজনে ঘাড় নেড়ে বললো: ঠিক আছে স্যার
আর যদি কোনো দরকার মনে করেন তো তৎক্ষণাৎ আমাকে ফোন করবেন, মনে থাকবে?
ওকে স্যার।
আর একটা কথা অফিসের সবাইকে একটা ব্রিফিংয়ে ডাকুন আমি কথা বলবো।
ব্রিফিংয়ে অফিসের সবাইকেই মোটামুটি এক‌ই কথা বললো এ‌আরসি, অফিসের সবাই জানে যে যেকোনো দরকারেই তাদের বস তাদের পাশে থাকে তারাও বসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে, তাই অফিস ছেড়ে কদিনের জন্য বাইরে যেতে বেশি ভাবতে হয় না এআরসিকে।

শহরের একটা ঘিঞ্জি এলাকা, যেখানে মূলত ছোটো বড়ো অপরাধীরা থাকে, গুণ্ডা-মস্তানদের এলাকা এখানেই একটা ছোটো ঘরে কয়েকজন বসে তাস পেটাচ্ছে সামনে কয়েকটা কাঁচের বোতল রাখা আর কয়েকটা গ্লাস। একমনে তাস খেলছে, কয়েকজন দেখছে আর মাঝে মাঝে টিপ্পনী কাটছে, হটাৎ একজনের মোবাইল বেজে উঠলো নাম্বারটা দেখে যেন চমকে উঠলো শহরের নামকরা মাস্তান উসমান, রিসিভ করে কানে দিল ফোন "হ্যালো, আদাব সার"
আদাব উসমান
বলুন কি হুকুম?
হুকুম এবার থেকে বস দেবেন
বস? যেন অবাক হলো উসমান
হ্যাঁ, তিনি শহরে এসে গেছেন, তোমার ওখানে আসছেন যে কোনো সময় পৌঁছে যাবেন, তৈরী হ‌ও আমরা আসছি
কি বলছেন? বস এখানে? হটাৎ?
সেটা নাহয় তাকেই জিজ্ঞেস করো,
থতমত খায় উসমান না না ঠিক আছে, কিন্তু...
কথা আর শেষ হলোনা ফোন কেটে গেছে, বাকি সাথীরা খেলা বন্ধ করে অবাক হয়ে তাদের নেতার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, নেতার মুখে এখন স্পষ্ট ভয়ের ছাপ
একজন জিজ্ঞেস করলো: কি হলো ভাইজান?
উসমান একটা ঢোঁক গিলে উত্তর দিলো: এগুলো সব সরিয়ে ফেল, বস আসছেন।
এই একটা কথাতেই ভয়টা সবার মধ্যে সঞ্চারিত হলো তারা কিছুক্ষণ একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো তারপর তাড়াতাড়ি উঠে সবকিছু সরিয়ে ফেললো। খানিক পরেই ওই ছোট্ট ঘরটাতে দুজন লোক ঢুকলো তার মধ্যে যিনি লিডার গোছের তিনি বয়সে যুবক, তার পরনে কালো জ্যাকেট কালো জিন্স, পায়ে কালো বুট, চোখে কালো গগলস্, নাকের একটু উপর থেকে গলা পর্যন্ত একটা রুমাল দিয়ে বেঁধে ঢাকা আছে, উসমান তাদের দেখে বললো: সেলাম বস, সেলাম ভাইজান আসুন
আগন্তুক দুজন ভিতরে ঢুকলো, লিডার যুবকটি ঢুকে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারপর নিজের সঙ্গীর উদ্দেশ্যে বললো "ইনফরমেশন জোগাড় করতে বলেছিলাম, হয়েছে আমির?"
লিডারটির সাথে যিনি এসেছিলেন তিনি বললেন: ভিতরে চলো, বলে দুজন ভিতরে ঢুকলো ছোটো ঘরটার ভিতরের দিকে আরো একটা দরজা আছে সেটা খুলে ভিতরের অন্য আরেকটা ঘরে সবাই ঢুকলো, বাইরের দরজাটা একজন বন্ধ করে দিল, এই ঘরটা আগেরটার থেকে তুলনামূলকভাবে বড়ো একদিকের দেয়ালে সাদা পর্দা আছে আর সামনে টেবিলে প্রজেক্টার, উল্টোদিকের একটা চেয়ারে লিডার যুবকটি বসলো বললো: এবার বলো কি খবর জোগাড় করেছো তোমরা?
প্রজেক্টার চালু হলো,সামনের পর্দায় ছবি ফুটে উঠলো এরপর অনেকক্ষণ ধরে পর্দায় কখনো কিছু পুরুষের, কখনো কিছু মহিলার কখনো কিছু মেয়েদের আবার কখনো কয়েকটা বাড়ির ছবি ভেসে উঠতে লাগলো আর তার সম্পর্কে জানতে লাগলো লিডার যুবকটি।
এই কজন ছাড়া কয়েকজনের সম্পর্কে জানতে বলেছিলাম
হ্যাঁ, সেটাও হয়েছে
পর্দায় এবার পরপর একজন পুরুষ একজন মহিলা আরেকজন যুবকের ছবি ভেসে উঠলো এবং আমির নামের লোকটি তাদের সম্পর্কে বলে যেতে লাগলো
এই দুজন স্বামী-স্ত্রী আর ইনি এনাদের ছেলে, স্বামী-স্ত্রী বহুবছর আগে মহিলার কোনো এক দূর সম্পর্কের দাদার আশ্রয়ে এসেছিলেন কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় ওই দাদা আর তার পুরো পরিবার মারা যায় তারপর কিছুদিনের জন্য এনাদের অবস্থা ফিরে যায়, কিন্তু বর্তমানে লোকটির মদ আর জুয়ার অভ্যাসের জন্য আবার পুরনো অবস্থায় ফিরে এসেছে।
আর ওনাদের ওই ছেলে?
ও বাপের চেয়ে দু কাঠি উপরে মদ-জুয়ার সাথে ড্রাগস আর মেয়েদের অভ্যাস‌ও আছে, আরেকটা খবর আছে বস
বলো
শোনা যায় এই মহিলা নাকি ওই নেতার..
কি? 
মানে..
রক্ষিতা?
হ্যাঁ, বস এবং সেটা এখনও
ওনার ছেলে আর স্বামী জানেন?
ছেলে জানেন কি না শিওর ন‌ই তবে স্বামী হয়তো জানেন নাহলে ওর মদ আর জুয়ার টাকা আসবে কোথা থেকে? আর ছেলেটি অবশ্য এখন ওই নেতার ভাগ্নে রকির গ্ৰুপ জয়েন করেছে, ওদের সাথেই থাকে।
গুড, তবে ইনফরমেশন জোগাড় ছাড়া আরও কিছু কাজ বলেছিলাম
এবার উসমান উত্তর দিল: হয়েছে বস, এই শহরে এই এলাকার মতো আরো এলাকা আছে যেখানে আমাদের মতো ছেলেরা থাকে যাদের ওই বড়ো বড়ো উঁচু মহলের লোকজন ব্যাবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা এবার থেকে আপনার হয়ে কাজ করবে।
তারা বিশ্বস্ত? তোমার কি মনে হয়?
সেটা তো ঠিক বলা মুশকিল
আর তোমার নিজের লোকজন?
ওরা পুরো বিশ্বস্ত স্যার কেউ নেমকহারামি করবে না
আর করলে কি হতে পারে সেটাও নিশ্চয়ই বলে দিয়েছো?
দিয়েছি স্যার
আমির.. লিডার যুবকটি তার সঙ্গীকে কিছু একটা ইশারা করলো, আমির নামের লোকটি দুটো টাকার বাণ্ডিল উসমানের হাতে দিল এবার আবার লিডার যুবকটি বললো "শোনো উসমান তোমার দলের প্রতিটা লোক যেমন খবর জোগাড় করছে তেমনি করে যাবে ওই লোকগুলোর প্রতিটা পদক্ষেপের খবর আমার চাই কার সাথে দেখা করছে কি করতে চাইছে, ওদের ব্যাবসা, ওদের বাড়িতে কে কে আসছে সব বুঝেছো?
উসমান: বুঝেছি বস আর চিন্তা করবেন না ওই বাড়িতে আমাদের লোক আছে সব খবর আপনি পাবেন।
-গুড।
এবার আমির নামের লোকটি বললো: আগামীকাল মন্দিরে পূজো দিতে আসবেন সপরিবারে, যদি হুকুম করো তো ওখানেই সবকটাকে..
লিডার যুবকটি: না, এত সহজে যদি ওকে মারতে হতো তাহলে আমার এখানে আসার দরকার‌ই বা কি ছিল? তোমার কি মনে হয়? আমি এখানে না এসে ওকে খতম করাতে পারতাম না?
আমি: তা নয় বস
লিডার যুবক: ওকে আমি এত সহজে মারবো না, তিলে তিলে একটু একটু করে শেষ করবো, ওর থেকে সবকিছু কেড়ে নেবো
কিন্তু স্যার লোকটার ক্ষমতা অনেক এখন আবার মণ্ত্রীও হয়েছে, পুলিশের উঁচু কর্তারা ওর হাতের মুঠোয়
সেইজন্যই তো বলছি, ওর থেকে ওর সব ক্ষমতা অধিকার কেড়ে নেবো ওর সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে দেবো। তারপর নিজেই রিমোট দিয়ে ছবি ঘুরিয়ে একটা ছবি পর্দায় আনে যুবকটি  সামনের স্ক্রিনের উপর ওঠা প্রৌড় লোকের ছবির দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো যুবকটি, তারপর নিজের মনে মনে বললো: বীরেন ভট্টাচার্য নিজের বাকি দিনগুলো আনন্দ করে নাও পরিবারের সাথে, তোমার অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, তোমার অতীতের কুকীর্তির সব হিসাব নেওয়ার জন্য তোমার অতীতের অন্ধকার থেকে উঠে এসেছি আমি।

Good
Like Reply
(21-08-2022, 08:58 PM)Monen2000 Wrote:
                              দ্বিতীয় পর্ব

বড়ো শিবমন্দির, পূজোর আয়োজন হচ্ছে, বাইরে লোকের ভিড় তার মাঝে সিকিউরিটি গার্ডদের কড়া নজর, শহরের নামকরা ব্যাক্তি বীরেন ভট্টাচার্য আসছেন সাথে আসছেন তার ভাই ধীরেন ,দুই ভাইয়ের দুই স্ত্রী এবং দুই ভাইয়ের বড়ো দিদি বৈশালী দেবী আর দুই ভাইয়ের দুই মেয়ে বৃষ্টি ও তাথৈ।

বীরেন ভট্টাচার্য শহরের একজন গণ্যমাণ্য ব্যাক্তি, শুধু যে একজন বড়ো বিজনেসম্যান তাই নয়, বর্তমানে ভোটে জিতে মণ্ত্রীও হয়েছেন, শহরের লোক তাকে যতটা সম্মান করে তার থেকে বেশি ভয় করে, তিনি যেখানে থাকেন সেখানে সবাই তাকে যমের মতো ভয় পায়, সবাই জানে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরোধিতা করা মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা, সহজে কেউ তাকে ঘাটায় না কারণ বীরেন ভট্টাচার্য যার পিছনে লাগেন তাকে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দেন।
মন্দির চত্বরে তার গাড়ি আসতেই লোকজন ভয়ে সরে যায়, জায়গা ছেড়ে দেয়, তার পিছনে আরো কয়েকটা গাড়ি প্রথমে কয়েকজন বডিগার্ড নেমে এলাকাটা ভালোভাবে পরখ করে নেয় তারপর একে একে বীরেন ভট্টাচার্য ও তার পরিবারের লোকজন নেমে আসে এবং মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায়।
মন্দিরের ভিতরে যতক্ষণ ভট্টাচার্য পরিবার থাকবে ততক্ষণ অন্যান্য সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ, তবুও লোকজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে পূজো শেষে আজ বীরেন ভট্টাচার্যের ভাইঝি তাথৈ নিজে হাতে সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করবেন। অনেক নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে তারাই ভিড় নিয়ণ্ত্রন করছে।
পূজো শুরু হয়েছে একে একে ভট্টাচার্য পরিবারের সবাই শিব লিঙ্গের উপর দুধ ঢালছে, ফুল-বেলপাতা দিচ্ছে এমন সময় নিরাপত্তারক্ষীদের টপকে এক শতছিন্ন কাপড় পরা, নোংরা উসখো-খুসকো চুল বোঝাই পাগলী গোছের মহিলা মন্দিরে উঠে এলো তারপর বিকট অট্টহাসি হাসতে লাগলো আর বলতে লাগলো "পূজো করে কিচ্ছু হবে না, তুই মরবি কেউ বাঁচাতে পারবে না" সবাই চমকে উঠলো
পাগলী আবার বলে উঠলো "যতই বাবার মাথায় জল ঢাল তোর পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়েছে, তোর পাপের ক্ষমা নেই, তুই মরবি, তোর পরিবারের সবকটা পুরুষ মরবে" এটা এক সন্তান হারা মায়ের অভিশাপ, এইসময় নিরাপত্তারক্ষীরা দৌড়ে এল কিন্তু পাগলীকে ধরার আগেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেল, বীরেন ভট্টাচার্য সহ উপস্থিত সবাই থতমত খেয়ে গেল।
পূজো শেষ হবার মুখে এমন সময় মন্দিরের গেটের কাছে কিছু গণ্ডগোলের আওয়াজ আসতে লাগলো, ধীরে ধীরে তা বাড়তে শুরু করে, পূজো শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন বীরেন ভট্টাচার্য ,নিজের প্রধান বডিগার্ডকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে, বাইরে ঝামেলা কিসের?
উত্তরে বডিগার্ড বললো: বাইরে কয়েকজন সাধু গোছের লোক এসেছে, মন্দিরে ঢুকতে চায়, কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেওয়ায় তারা ঝামেলা করছে।
শুনে গেটের কাছে এগিয়ে গেলেন বীরেন ভট্টাচার্য, কিন্তু তিনি পৌঁছনোর আগেই নিরাপত্তারক্ষীর দল মারধর শুরু করেছে কয়েকজন সাধুর আঘাত লেগে রক্তপাত হচ্ছে, বীরেন ভট্টাচার্য এসে তাদের বললেন: আপনারা পরে ঢুকবেন এখন আমার পরিবার পূজো দিচ্ছে। কথার মাঝেই পুরো ভট্টাচার্য পরিবার গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, একজন সাধু ফুঁসে উঠলেন "বাবার মন্দিরে সবাই সমান আমরা এখনই ঢুকবো, আপনি পূজা সেরে নিন তারপর আমরা করবো"
বললাম তো এখন হবে না, চুপচাপ সরে যান নাহলে...
বীরেন ভট্টাচার্য... চিৎকার করে উঠলেন সেই সাধু খুব অহংকার হয়েছে না? মনে রেখো বেশি অহংকার পতনের মূল, তোমার‌ও পতনের সময় এসে গেছে সপরিবারে বিনাশ হবে, আর তোমার বিনাশ করবে যে সে আসছে... মৃত্যুর কোল থেকে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আসছে সে তোমার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে, সমূলে বিনাশ হবে তুমি, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার শেষ সময় আসন্ন, আমার কথাটা মনে রেখো। এই বলে সেই সাধু তার সকল।সাধু সাথীদের নিয়ে মন্দির চত্ত্বর ছেড়ে চলে গেলেন।
বীরেন ভট্টাচার্য পরিবার সহ আবার মন্দিরের ভিতরে চলে এলেন, কিন্তু এখন আর কারো মুখে প্রসন্নতা নেই বিশেষ করে তিন মহিলার মুখে তাদের মুখে ভয়ের ছায়া স্পষ্ট, মন্দির চত্ত্বরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
পূজোর পরে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে বিতরণ করছে তাথৈ এবং বৃষ্টি দুই বোন, হঠাৎ তাথৈ দেখলো একটু দূরে সেই পাগলীটা দাঁড়িয়ে আছে যে খানিকক্ষণ আগে তার জ্যেঠুমণি কে শাপশাপান্ত করছিল, কিন্তু তাও সে কিছুটা প্রসাদ একটা শালপাতার থালায় নিয়ে এগিয়ে গেল পাগলীটার দিকে পাগলীটার কাছে গিয়ে বললো নাও খাও ঠাকুরের প্রসাদ, পাগলীটা যেন খুব খুশী হলো থালাটা হাতে নিয়ে তাথৈ এর দিকে তাকিয়ে বললো: তুই খুব ভালো, তুই খুব সুখী হবি খুউউব সুখী হবি কিন্তু তার আগে পাপীদের বিনাশ হবে
তারপর একটু থেমে আবার বললো: সে আসছে তোকে নিয়ে যেতে...
তাথৈ হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো: কে আসছে আমাকে নিয়ে যেতে?
পাগলীটা আবার বললো: এলে চিনতে পারবি.. বলে আবার দৌড়ে পালিয়ে গেল।
তাথৈ একটু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে র‌ইলো, কি বলে গেল পাগলীটা?
বীরেন ভট্টাচার্য ও তার পরিবার এখনো মন্দিরে আছেন সন্ধ্যা আরতি করে ফিরবেন নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন, বৈশালী দেবী বললেন: হ্যারে বীরেন তখন ওই পাগলী আর ওই সাধু কিসব বলে গেল?
বীরেন ভট্টাচার্য একটু বিরক্ত হলেন বললেন: তুমি এইসব নিয়ে বেকার চিন্তা করছো
বেকার চিন্তা নয় রে বীরেন অনেক সময় লোকের অভিশাপ লেগে যায়।
কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য কে ছোঁয়ার সাহস কোনো অভিশাপের হবে না বিশেষ করে এক পাগলী আর এক ভিখারী সাধুর অভিশাপ, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
বৈশালী দেবী যদিও চুপ করে গেলেন কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে চিন্তাটা যায়নি।
হটাৎ বীরেন ভট্টাচার্য বলে উঠলেন আরে তাথৈ মা কোথায় ধীরেন?
এবার সবাই খেয়াল করলো তাথৈ আশেপাশে কোথাও নেই বীরেন ভট্টাচার্য হাঁক পাড়লেন বৃষ্টি মা
বৃষ্টি তখন সেই মন্দিরে আসা তার বাবার বন্ধুদের ছেলেমেয়েদের সাথে গল্প করছিল, বাপের ডাক শুনে দৌড়ে এলো
ডাকছো ড্যাডি?
তাথৈ কোথায়?
তাথৈ তো এখানেই ছিল, আশেপাশেই আছে
মানে? কোথায় তাথৈ? এক্ষুনি ডেকে আনো আমার সামনে
আনছি ড্যাডি বলে বৃষ্টি উঠে তাথৈকে খুঁজতে চলে গেল।

মন্দিরের পিছনে একটা বড়ো বাগান আছে আম জাম অশ্বথ্ব বট গাছে ভরা তার মধ্যে একটা বটগাছের কাছে বটগাছের গোঁড়ায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাথৈ তার দুচোখে জল, এত বছর পরেও গাছটা ঠিক চিনতে পেরেছে তাথৈ, এই গাছের তলাতেই সে আর অভয় বসে গল্প করতো তাথৈ অন্ধকারে ভয় পায় এটা বুঝতে পেরে এখানেই তার হাতদুটো ধরে বলেছিল "ভয় নেই আমি আছি তো"। তাথৈএর চোখ থেকে জল গাল বেয়ে পড়ছে "কেন চলে গেলে অভয়? কেন? কেন তোমার তাথৈকে একা রেখে চলে গেলে?"
হটাৎ তার মনে পরলো কিছুক্ষণ আগে পাগলীটার কথা "তুই সুখী হবি... সে আসছে তোকে নিয়ে যেতে"
কিন্তু তার সুখ তো অভয়ের সাথে.. তবে কি তবে কি অভয়...
হঠাৎ একটা পায়ের আওয়াজ কানে এলো তাথৈ এর, চমকিয়ে উঠলো সে চারদিকে দেখলো কিন্তু কাউকে দেখতে পারলো না কিন্তু শুনতে পারলো আওয়াজটা ক্রমেই তার দিকে এগিয়ে আসছে, এবার ভয় পেল তাথৈ বললো: কে? বৃষ্টি তুই?
কিন্তু কোনো উত্তর নেই, হটাৎ তাথৈ পিছন ফিরে দৌড়াতে গেল আর তখনই কিসে একটা হোঁচট খেল কিন্তু পরে গেল না পরে যাওয়ার আগেই একটা শক্ত হাত পিছন থেকে তার একটা হাত ধরে ফেললো.
অভয়... তাথৈ এর মুখ থেকে বেরিয়ে এল, যদিও সেটা এতটাই আস্তে যে অন্য কারো শুনতে পাওয়ার কথা নয়, সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখলো একটা ছেলের দাঁড়িয়ে আছে তার হাতটা ধরে, ছেলেটির গায়ে কালো জ্যাকেট, জ্যাকেটের চেন খোলা এবং ভিতরে যে গেঞ্জিটা দেখা যাচ্ছে সেটাও কালো, সাথে কালো জিন্স, মাথায় টুপি, মুখটা নাকের একটু উপর থেকে গলা পর্যন্ত রুমাল দিয়ে বেঁধে ঢেকে রেখেছে, আর চোখে কালো গগলস্, তাথৈ বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে র‌ইলো ছেলেটির দিকে ছেলেটিও পাল্টা তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে।
এবার ছেলেটা হাতটা ছেড়ে গম্ভীর স্বরে বললো "দেখে চলতে পারেন না এক্ষুনি তো পড়ে গিয়ে আঘাত পেতেন"
আপনার জন্যই তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম উত্তর দিল তাথৈ
আচ্ছা মেয়ে তো আপনি, আপনাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচালাম আর আপনি আমাকেই ব্লেম করছেন?
থ্যাংক ইউ
ওয়েলকাম। বলে ছেলেটি চলে যাচ্ছিল
আপনি কে? জিজ্ঞেস করলো তাথৈ
"বিপদ" দাঁড়িয়ে ঘুরে উত্তর দিল ছেলেটি
মানে?
আপনি‌ই তো বললেন যে আমার জন্য আপনি পরে যাচ্ছিলেন তার মানে আপনার জন্য তো আমি বিপদ
আসলে আপনার পায়ের আওয়াজ শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
আপনি তো খুব স্পেশাল মেয়ে দেখছি কেউ বিপদের পায়ের আওয়াজ পায় না অথচ আপনি পেয়েছেন।
নিজেকে আমার বিপদ বলে নিজের‌ই বিপদ বাড়াচ্ছেন, আমার জ্যেঠুমণি কোনো বিপদকেই আমার কাছে পৌঁছাতে দেন না তার আগেই আমার থেকে দূরে সরিয়ে দেন।
ঠিক যেভাবে ওনার বিরুদ্ধে কথা বলা লোকেদের এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেন? ছেলেটির গলার স্বরে রাগ আর ঘৃণা ফুটে উঠলো।
তাথৈ একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে মন্দিরের দিক থেকে বৃষ্টির "তাথৈ এই তাথৈ" ডাক শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি আসছে, সে তাথৈ এর কাছে এসে বললো "কি রে তুই এখানে কি করছিস? ওদিকে ড্যাডি তোকে খুঁজছে"
তাথৈ বললো: এই যে দেখ না এই ছেলেটা... বলে ছেলেটাকে দেখাতে গিয়ে ফিরে তার কথা আটকে গেল, সেখানে কেউ নেই
বৃষ্টি আবার বলে: কি রে কি দেখছিস? কোন ছেলেটা?
কিছু না, চল।

শ্মশানে একটা চিতা জ্বলছে দাউদাউ করে, ইলেকট্রিক চুল্লিতে প্রচণ্ড ভিড় তাই কাঠের চুল্লিতেই জ্বালানো হয়েছে, এক পাগলী অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছে, পাগলীটার তিনকূলে কেউ নেই তাই পুলিশ লাওয়ারিশ লাশ বলে চালিয়ে দিচ্ছিল কিন্তু হটাৎ কজন লোক এসে লাশটা দাবি করে প্রথমে দিতে না চাইলেও পরে দিতে বাধ্য হন ইনস্পেকটর সরকার কারণ উপর মহল থেকে অর্ডার এসেছিল,যদিও দিয়েও কোনো ক্ষতি হবে না তাই আর মাথা ঘামান নি, চিতা থেকে একটু দূরে কালো জ্যাকেট, কালো জিন্স পরা যুবকটি একদৃষ্টিতে চিতার লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে ছিল তার চোখের কালো গগলসের কাঁচেও যেন আগুন লেগেছে, মুখে ইস্পাত কাঠিন্য।
হটাৎ তার পিছনে আরো একজন এসে দাঁড়ালো, সামনের ছেলেটা একটু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তারপর বললো: খোঁজ পেয়েছো আমির?
আমির: পেয়েছি, এই শ্মশানেই আপাতত আছেন কিন্তু ওনারা এখান থেকে যেতে চাইছেন না।
ঠিক আছে চলো,আমি গিয়ে কথা বলছি।
কিন্তু ওনাদের সামনে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? গতকাল‌ই ওনারা সবার সামনে বীরেন ভট্টাচার্যকে অভিশাপ দিয়েছেন।
সেইজন্যই যাওয়া দরকার আমির।

ঘাটের কাছে একটু ফাঁকা জায়গায় কয়েকজন সাধু বসে কলকে টানছিল, হটাৎ দুজন তাদের দিকে আসছিল একজন খানিকক্ষণ আগেই এসেছিল অপরজন নতুন,  তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে একজন সাধু বললেন: বলেছি না এখান থেকে আমরা যাবো না, শ্মশানঘাটটা তোদের একার না
নতুন আসা ছেলেটা সেই সাধুর সামনে বসে বললো: এই জায়গাটা যদি আমার হতো তবে এখান থেকে আপনাদের সরানোর ক্ষমতা কারো হতো না, কিন্তু এটা আমার নয় সেই জন্যই চলে যেতে বলছি।
ছেলেটার গলার স্বরে কিছু একটা ছিল যেটা সাধুটাকে অবাক করে, তিনি শান্ত স্বরে বললেন: এখান থেকে কেন যাবো? সবাইকেই তো এখানেই আসতে হবে।
ছেলেটা: ঠিক কিন্তু আপনাদের এখানে আসার সময় এখনো আসেনি আর আমি চাইনা সেটা এত তাড়াতাড়ি আসুক।
সাধু তাকিয়ে র‌ইলেন ছেলেটার দিকে
ছেলেটা আবার বললো: গতকাল আপনি একজনকে অভিশাপ দিয়েছেন, 
সাধু: তাতে কি? ওই অহংকারী ওটার‌ই যোগ্য
ছেলেটা: আপনার একটু আগে আরো এক পাগলী তাকে এক‌ই অভিশাপ দিয়েছিল, ওই যে ওখানে তার চিতা জ্বলছে, ভেবে দেখুন সে একটা পাগলীকেও ছাড়ছে না।
সাধুজী একটু মৃদু হেসে বললেন: আমি বুঝতে পেরেছি তুই কে, তুই পারবি তুই সফল হবি ওই পাপীর পাপের সাম্রাজ্যের বিনাশ করতে
ছেলেটা: আমাকে সফল হতেই হবে, কিন্তু এবার আপনারা এখান থেকে চলে যান
সাধু: আমরা যাবো না আর তুই আমাদের চিন্তা ছেড়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যা
কিন্তু সাধুজী
কোনো কিন্তু না, আমাদের আশীর্বাদ তোর সাথে থাকবে কিন্তু একটা কথা মনে রাখবি রাক্ষসের বিনাশ করতে করতে নিজেই যেন ওর মতো আরেকটা রাক্ষস না হয়ে যাস।
মনে থাকবে সাধুজী। ছেলেটা উঠে চলে গেল।
পিছন থেকে ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে সাধু অস্ফুটস্বরে: তোকে তো আসতেই হতো, তোর জন্যই তো সে অপেক্ষা করে আছে
পিছন থেকে আরেকটা সাধু বললো: কে গুরুদেব? কে ওই ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছে?
প্রধান সাধু: ভালোবাসা, যাকে উপেক্ষা করতে চাইলেও পারবে না ও, সেই ক্ষমতাই ওর নেই।
শ্মশানের বাইরে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সেটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ছেলেটা তার সঙ্গীকে বললো: ওদের খোঁজ নিয়েছো?
আমির: নিয়েছি, ছজন ছিল ওরাই গাড়িতে পিষে গিয়েছিল ওই পাগলীকে
ওরা এখন কোথায়?
বীরেন ভট্টাচার্য একটা নতুন হোটেল তৈরী করছে তার‌ই কনস্ট্রাকশন সাইটে আছে
ঠিক আছে, বীরেন ভট্টাচার্যকে প্রথম ধাক্কা দেওয়ার সময় এসে গেছে। দুজন গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটা স্টার্ট নিল।
একটা হোটেল তৈরির কাজ চলছে, তার‌ই কনস্ট্রাকশন সাইটে একটা কালো গাড়ি ঢুকলো আরো কয়েকটা গাড়িও এসে গেছে একটু আগে সেটা থেকে উসমান আর তার দলের বেশ কয়েকজন নেমে এসেছে এবার কালো গাড়িটা থেকে নামলো আমির এবং তার লিডার ছেলেটি
আমির: ওরা সব এখনো এখানেই আছে উসমান?
হ্যাঁ, ভাইজান সবকটা এখন মাতাল হয়ে আছে
"ভালো জায়গা বেছেছে ওরা" লিডার ছেলেটির মুখে একটু হাসি দেখা যায় তারপর আবার বলে "কোথায় আছে ওরা?
এইযে এইদিকে আসুন, উসমান পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে। ততক্ষণে সন্ধ্যা পার হয়ে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে, হোটেলটি অনেকটা জমি জুড়ে হচ্ছে তাই আশেপাশের অনেকটা জায়গাই এখন সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, কোথাও কোনো লোক নেই তার‌ই মাঝে অন্ধকারে কয়েকটা কালো ছায়ামূর্তি প্রেতের মতো এগিয়ে চলেছে তাদের শিকারের দিকে।
কনস্ট্রাকশন সাইটের একটা খোলা জায়গায় গোল হয়ে বসে আছে কয়েকটা লোক, মাঝে একটা এমার্জেন্সী লাইট জ্বলছে তার আলো খুব বেশি ছড়ায়নি, লোকগুলো একসাথে বসে মদ খাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে, বোঝাই যাচ্ছে আজ ওদের মনে খুব ফূর্তি, ওদের‌ই একজন টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো
আড্ডার একজন জিজ্ঞেস করলো: কোথায় যাচ্ছিস?
উঠে যাওয়া লোকটা উত্তর দিল: একটু মুতে আসি। লোকটা টলতে টলতে চলে গেল বাকীরা আবার মদ্যপানে মজে র‌ইলো, ওদের থেকে একটু দূরে প্রস্রাব করতে গিয়ে ছিল প্যান্টের চেন সবে খুলেছে এমন সময় সামনে একটা কালো মূর্তি এসে দাঁড়ালো, এক‌ই সময় লোকটার পিছনেও একটা মূর্তি চলে এসেছে এবং মাতাল লোকটিকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই পিছনের জন মাতাল লোকটির মুখ চেপে ধরেছে এবং সামনের জন দু-পায়ের মাঝে পুরুষাঙ্গে সজোড়ে লাথি মারে একটা। একটা গোঙানির আওয়াজ কানে আসে বাকি লোকগুলোর, মাতাল হলে কি হবে সঙ্গে সঙ্গে তারা সতর্ক হয়ে গেল, সবাই উঠে আলাদা আলাদা হয়ে নিজেদের সঙ্গীকে খুঁজতে লাগলো।
একটা একতলা বাড়ির সামনে একটা নীলরঙের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, গাড়ির নম্বর দেখে শহরের যে কেউ বলে দেবে যে এটা বীরেন ভট্টাচার্যের গাড়ি, আর বাড়িটা আসলে তার‌ই বাগানবাড়ি এখানে মাঝে মাঝেই রাতের দিকে মেয়েমানুষ নিয়ে ফূর্তি করতে আসেন বীরেন বাবু যেমন আজ এসেছেন, আজকের মেয়েমানুষটা আর কেউ নয় তার‌ই হয়ে কাজ করা একজনের ব‌উ।
বাগানবাড়ির ভিতরে একটা ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন মণি সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে, মণির বর্তমান বয়স ৪৫ বছরের আশেপাশে, শ্যামলা গায়ের রঙ, পেটে অল্প একটু চর্বি আছে, তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন উপরে সিলিং থেকে ঝোলা ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে শরীরটা কাঁপছে কারণ তার শরীরের উপর উঠে তার যোনিতে নিজের পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে রতিক্রিয়ায় ব্যস্ত বীরেন ভট্টাচার্য, বীরেন বাবুও সম্পূর্ণ নগ্ন, তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে তবুও তার থামার লক্ষণ নেই, বেশ কিছুক্ষণ পরে হটাৎ বীরেন বাবুর মুখ থেকে আরামদায়ক শব্দ বেরিয়ে এল এর একটু পরে তিনি মণির শরীরের উপর থেকে উঠে এলেন একটা জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললেন তারপর নিজের পাজামা-স্যাণ্ডো গেঞ্জি পরে তার উপর একটা পাঞ্জাবী পরতে পরতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, মণি তখনও বিছানায় এক‌ই ভাবে হাত-পা ছড়িয়ে নগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছে তার দু-চোখ থেকে জলের ধারা বয়ে গেল সে জানে এ তার পাপের শাস্তি, এ থেকে তার মুক্তি নেই যে পাপ সে করেছে আজ থেকে ১৫ বছর আগে, তার‌ই শাস্তি সে ভোগ করে চলেছে, মণির চোখে যেন তার অতীত জীবনের ঘটনা ভেসে উঠলো....
মদন মণিদের‌ই পাড়ার ছেলে, মণির সাথে মদনের পরিচয় ছিল ধীরে ধীরে তা প্রেমে পরিবর্তিত হয় যদিও মণির বাড়ি থেকে মদনকে মানতে চায়নি কারন এক তো মদন কি কাজ করে তা কেউ জানে না তার উপরে মদনের মদের অভ্যাস, কিন্তু মণি সেসব গ্ৰাহ্য করেনি, বাড়ির অমতে পালিয়ে বিয়ে করেছিল মদনকে, পালিয়ে এসেছিল দূর সম্পর্কের এক দাদার কাছে, আশ্রয় নেয় দাদার বাড়িতে,দাদা রুদ্র রায় চৌধুরী, বৌদি অমৃতা আর তাদের একমাত্র ছেলে অভয় এই তিনজন নিয়েই দাদার সংসার, দাদা-বৌদি দুজনেই ধার্মিক, সদাচারী এবং সাত্ত্বিক প্রকৃতির মানুষ, দাদা-বৌদি দুজনের মুখেই সবসময় হাসি লেগে থাকে কখনো অসৎ পথ হয়েছেন বা কখনো কাউকে ঠকিয়েছেন একথা তাদের অতি বড়ো নিন্দুকেও বলতে পারবে না, পরোপকারী সদা শান্ত মানুষটিকে পাড়ার সবাই পছন্দ করেন, আর পছন্দ করবেই না কেন সবাই জানে দরকারে যদি রুদ্রবাবুর কাছে যাও তো উনি সাধ্যমত সাহায্য করবেন, রুদ্রবাবু এবং ওনার স্ত্রী দুজনেই পরোপকারকে নিজেদের ধর্ম মনে করেন, এবং এই শিক্ষাই তারা তাদের একমাত্র ছেলে অভয়কেও দেন।
 মা- বাবার মতো অভয়‌ও একজন সৎ চরিত্রের ছেলে, সজ্ঞানে কাউকে ঠকানোর কথা সে চিন্তাও করে না, বাবা-মার দেওয়া শিক্ষা সে সর্বদা  মেনে চলতে চেষ্টা করে, অভয় যত বড়ো হতে লাগলো রুদ্রবাবু তার আচার ব্যবহার দেখে তত খুশী হতে থাকেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন তার ছেলে মেধাবী হিসেবে অসাধারণ তো বটেই সাথে একজন মানুষের মতো মানুষ হচ্ছে।
বোনের পালিয়ে বিয়ে করা মন থেকে মেনে না নিলেও বোন আর ভগ্নিপতি কে তাড়িয়ে দেননি রুদ্র বাবু, কিছুদিন পরে দাদার বাড়ি ছেড়ে কিছুটা দূরে একটা বাড়ি ঠিক করে নিজেদের মতো থাকতে শুরু করে মণিরা, মদন একসময় এলাকার উঠতি প্রোমোটার বা গুণ্ডা বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে কাজ করতে শুরু করে, এরপর মণির কোলে আসে তার আর মদনের ছেলে বিকি, ভালো ভাবেই দিন কাটছিল মণির, কিন্তু একসময় বীরেন বাবুর নজর পরে রুদ্রদার জমির উপর ওখানে তিনি প্রোমোটিং করে বিল্ডিং বানাতে চান, অনেক কষ্ট করে নিজের চেষ্টায় বেশ কিছুটা জমি কিনে তাতে একটা বাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন রুদ্রদাদা, বাড়ির চারিদিকে অনেক ফুল গাছ লাগিয়ে চমৎকার সাজিয়েছিলেন বৌদি, স্বভাবতই জমিটা বীরেন বাবুকে দিতে অস্বীকার করে রুদ্রদা ফলে বীরেন ভট্টাচার্য রেগে যায়, তারপর একরাতে মদন তাকে বলে বীরেন ভট্টাচার্য অনেক টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দেবে বলেছে যদি তারা বীরেন ভট্টাচার্য কে সাহায্য করেন রুদ্র রায় চৌধুরী ও তার পরিবারকে খুন করতে, দু-পরিবারের মধ্যে খাবারের আদান-প্রদান ছিল‌ই, মণির কাজ ছিল এক রাতে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে তিনজনকে খাইয়ে দেওয়া, প্রথমে রাজী না হলেও পরে টাকা আর ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজী হয়ে যায় মণি, একরাতে কিছুটা পায়েস রান্না করে তাতে বিষটা মিশিয়ে দাদার বাড়িতে দিয়ে এসেছিল মণি, সেই তার শেষ দেখা দাদা-বোদি আর অভয়কে।
এরপর কথামতো টাকা আর একটা ফ্ল্যাট দিয়েছিল বীরেন ভট্টাচার্য কিন্তু সেই টাকা মদ আর জুয়ায় ওড়াতে সময় লাগেনি মদনের, একসময় ফ্ল্যাটটাও বিক্রি করে দিতে হয় এবং শেষে আবার হাত পাততে হয় বীরেন ভট্টাচার্যের কাছে তবে এবারও বিনিময়ে মদনের থেকে কিছু চেয়েছিল বীরেন ভট্টাচার্য, সে মণিকে ভোগ করতে চেয়েছিল বলাইবাহুল্য মদন রাজী হয়ে যায়, মণিকে মদন‌ই এই বাগানবাড়িতে নিয়ে এসে বীরেন ভট্টাচার্যের বিছানায় সঁপে দেয় সেই শুরু, সেই থেকে এত বছর ধরে মণিকে ভোগ করে আসছে বীরেন ভট্টাচার্য প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও ছেলে বিকির কথা ভেবে সহ্য করতো ধীরে ধীরে সয়ে যায় একবার তো পেটে বাচ্চাও চলে এসেছিল কিন্তু বীরেন বাবু শুধু যে বাচ্চাটা নষ্ট করেছিল তাই নয় ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঝামেলা না হয় তার পাকাপাকি ব্যাবস্থাও করেছিল, বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছে মণি কিন্তু ছেলে বিকির মুখটা মনে হতেই আর সাহস হয়নি, ছেলের মুখটা মন পড়তেই সম্বিত ফেরে মণির উঠে কাপড় পরে নেয়।
মণিকে ভোগ করার পরে বীরেন ভট্টাচার্য বেরিয়ে আসলেন বাইরে বসার ঘরে যেখানে এখন তার ড্রাইভার ও মদন বসে গ্লাসে মদের পেগ বানিয়ে খাচ্ছে, বীরেন বাবু ওদের পাশে বসলেনড্রাইভার কাম বিশ্বস্ত অনুচর জগা তাকেও একটা গ্লাসে পেগ বানিয়ে দিল, সেটা হাতে নিয়ে একটু চুমুক দিয়ে তৃপ্তিসূচক আওয়াজ করে বললেন: বুঝলে মদন, তোমার ভাগ্যটা ভালো এরকম একটা ব‌উ পেয়েছো আজ থেকে তো দেখছি না, কিন্তু এখনো স্বাদ একটুও কমেনি এক‌ইরকম আছে।
মদন নামের রোগা লোকটা নোংরা দাঁত বার করে যে হাসিটা দিল সেটা দেখে যে কেউ ঘেন্নায় মুখ ফিরিয়ে নেবে, মদন বললো: আজ্ঞে, আপনিই তো সব আপনি খুশি থাকলেই আমরা খুশি। এমন সময় বীরেন বাবুর মোবাইল বেজে উঠলো, ফোনটা কানে দিয়ে একটু পরেই গম্ভীর হয়ে গেলেন বীরেন বাবু ফোন রাখার আগে একটা মাত্র শব্দ বললেন তিনি "আসছি", তারপর জগাকে বললেন "এক্ষুনি বেরোতে হবে চল" জগা আর বীরেন বাবু উঠে চলে গেলেন, বীরেন বাবুর মুখ দেখে মদন আর কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পেল না।

?
Like Reply
(01-09-2022, 10:11 PM)Monen2000 Wrote:
                               ট্রেলার

শিউলী দেবী রয়কে বলেন ভট্টাচার্য পরিবারের ভিতরেই একজন আছে যে ভট্টাচার্য পরিবারের হয়েও তাদের নয়, সে রয়কে সাহায্য করতে পারে।
কে সে?

প্রতিবছরের মতো এবছরেও তাথৈ অভয়ের জন্য শিবরাত্রির উপোস রেখেছে, মন্দিরে পূজোর পরে তার সঙ্গে দেখা সেই সাধুর যে বীরেন ভট্টাচার্য কে সর্বনাশের অভিশাপ দিয়েছিল।
সে কি তবে তাথৈ কেও অভিশাপ দেবে? নাকি আশীর্বাদ?

জানতে নজর রাখুন পরবর্তী পর্বে 

শীঘ্রই আসছে "প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ" এর পঞ্চম পর্ব

!
Like Reply
(04-09-2022, 12:26 AM)Monen2000 Wrote:
                               পঞ্চম পর্ব

"কি রে তোর পূজো হলো?" প্রশ্নটা করলো বৃষ্টি উদ্দেশ্য তাথৈ, তাথৈ তখন শিবলিঙ্গের মাথায় দুধ ঢেলে পূজো দিয়ে হাতজোড় করে চোখ বুজে প্রণাম করছে, প্রণামটা একটু বেশি সময় ধরে চলছে দেখে প্রশ্নটা করে বৃষ্টি।
আরও একটুক্ষণ পরে চোখ খোলে তাথৈ বলে "তোর সবকিছুতে এত অধৈর্য কেন?"
আমার ক্ষিদে পেয়েছে
তাহলে উপোস রাখতে গেলি কেন?
মা জোর করছিল তাই এখন চল।
এমন সময় মন্দিরের পুরোহিত বললেন: তুমি একটুও বদলাওনি তাথৈ মা সেই ছোট্ট থেকেই দেখছি ভেবেছিলাম বাইরে পড়তে গিয়ে পাল্টে গেছো কিন্তু আজ বুঝলাম আমি ভুল ছিলাম।
তাথৈ: আর আমি পাল্টাবো‌ও না ঠাকুরমশাই। বলে তাথৈ প্রণাম করতে গেলো
পুরোহিত মশাই তাথৈকে বাধা দিয়ে বললেন: ঠাকুরের সামনে অন্য কাউকে প্রণাম করতে নেই, কিন্তু আমি আশীর্বাদ করছি তুমি সুখী হ‌ও মা।
এসময় বৃষ্টি আবার তাড়া দিল "তুই আসছিস কিনা বল?"
তাথৈ: তুই এগো আমি আসছি। বৃষ্টি চলে গেল
তারপর তাথৈ বললো: ঠাকুরমশাই একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ঠাকুরমশাই: বলো মা
তাথৈ: অভয়ের কোনো খবর জানেন?
পুরোহিত মশাই যেন একটু চমকে উঠলো তারপর বললো: তাকে তো বহুবছর দেখিনি, কিন্তু শুনেছি..
তাথৈ: সেটা আমিও শুনেছি যে একটা দুর্ঘটনায় অভয় আর ওর পরিবার মারা গেছে কিন্তু..
"কিন্তু তোর মন কি বলে?" হটাৎ তৃতীয় কণ্ঠস্বর শোনা গেল তাথৈ যেদিক থেকে আওয়াজ আসছে সেদিকে তাকিয়ে দেখলো একজন সাধু প্রশ্নটা করেছেন, একটু ভালো করে দেখতেই তাথৈএর মনে পরলো এই সাধু‌ই কিছুদিন আগে তার জ্যেঠুমণিকে শাপ-শাপান্ত করেছিল।
"কি রে তোর মন কি বলে?" আবার প্রশ্ন করেন সাধু।
"আমার বিশ্বাস ও বেঁচে আছে, একদিন ও ফিরবেই" উত্তর দেয় তাথৈ।
আর যদি না ফেরে? যদি সত্যিই ও মারা গিয়ে থাকে?
তবুও আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো, দরকার পরলে পরজন্মেও করবো।
সাধু একটু স্মিত হেসে বলেন: তাহলে নিজের বিশ্বাসের ভিত দুর্বল হতে দিস না, এই বিশ্বাসের জন্যই একদিন তাকে তোর কাছে ফিরতেই হবে, কিন্তু তার আগে যে তোকে পরীক্ষা দিতে হবে।
তাথৈ একটু অবাক হয় বলে: কিসের পরীক্ষা?
সাধু: সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারিস কি না?
তাথৈ: মানে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না
সাধু: সময় হলেই বুঝতে পারবি তবে একটা কথা মনে রাখবি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোস করবি না, অন্যায় যেই করুক যত আপন জন‌ই করুক যদি অন্যায়ের সাথ দিস তাহলে সব হারাবি আর যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিস তাহলে যা খুঁজছিস তা পাবি। বলে সাধু চলে গেল তাথৈ কিছুক্ষণ হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

"আপনার ছেলের অ্যাডমিশন হয়ে গেছে, ওকে ওখানে যেতে হবে" শিউলী দেবীকে খবরটা দিল রয়
শিউলী দেবী: কিন্তু ওখানে ওর দেখাশোনা কে করবে?
ওখানে আরও অনেক বাচ্চারা পড়াশোনা করে, তাদের দেখাশোনা করার জন্য লোক থাকে তারাই করবে।
কিন্তু..
আর কোনো কিন্তু নয়, বীরেন ভট্টাচার্য কিন্তু আপনাদের পাগলা কুকুরের মতো খুঁজছে, তাই আগে আপনার ছেলেকে এখান থেকে সুরক্ষিত জায়গায় সরিয়ে ফেলা দরকার।
শিউলী দেবী আর দ্বিরুক্তি করলেন না তিনি জানেন রয় যেটা বলেছে সেটা ভীষণ সত্যি। রাতে শিউলী দেবী রয়কে ওখানেই খেয়ে যেতে বললেন রয় বারণ করলো না, সে লক্ষ্য করেছে এই কদিনে তির প্রতি শিউলী দেবীর ব্যবহার একটু পাল্টে গেছে একটু গা ঘেঁষে বসা, জল দেবার সময় বুক থেকে আঁচল পরে যায় ইত্যাদি মনে মনে হাসে রয় শিউলী দেবী যে তাকে সিডিউস করার চেষ্টা করছেন এটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পারে,কম মহিলা তো দেখেনি সে প্রায় সবাই শিউলী দেবীর মতো এরা প্রত্যেকেই যৌনপিপাসু, এদের যৌন ক্ষিদে প্রবল আর যদি এদের সেই ক্ষিদে মেটানো যায় তাহলে তাদের মুখ থেকে অনেক কথাই বেরিয়ে আসে। ডিনার করার সময় বাইরে হটাৎ বজ্রপাতসহ জোরে বৃষ্টি শুরু হলো, ডিনার কমপ্লিট করে দুজনে অনেকক্ষণ গল্প করলো মূলত শিউলী দেবী‌ই বলছিল রয় শুনছিল কিন্তু এমন কোনো কথা মুখ থেকে বেরোলো না যা রয়ের কাজে আসতে পারে তবুও সে মন দিয়ে শুনতে লাগলো, রোহিত মানে শিউলী দেবীর ছেলে পাশের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন বৃষ্টি থামলো না তখন রয় শিউলী দেবী বললেন: আজ আর আপনার যাওয়া হবে না, এই বৃষ্টি থামবে না।
রয়: অসুবিধা নেই, আমার গাড়ি আছে আমি চলে যাবো।
কিন্তু কেন? এখানেই থেকে যান আজ রাতটা, বেকার বেকার ভিজবেন কেন?
দুজনে জানলার কাছে এসে দাঁড়ায়।
রয়: কি ব্যাপার বলুন তো? আপনি আমাকে এখানে আটকাতে চাইছেন?
শিউলী দেবী: না মানে ঠিক তা নয় আসলে..
রয় জানে শিউলী দেবী কি চান সে মনে মনে হাসলো বেশ তবে তাই হোক, সে বললো: আসলে কি? আমি কিছু বুঝিনি ভেবেছেন? আমার গা ঘেঁষে বসা, আমার সামনে আঁচল ফেলে দেওয়া, লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ড্রেস চেঞ্জ করা দেখা এসবই লক্ষ্য করেছি আমি।
শিউলী দেবী কিছুক্ষণ রয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলেন, রয় আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে যায়, শিউলী দেবীর কোমর ধরে একটানে নিজের কাছে টেনে আনে, তারপর আস্তে আস্তে শিউলী দেবীর ঠোঁট লক্ষ্য করে নিজের ঠোঁট এগিয়ে আনে, শিউলী দেবী বলেন "আমার ছেলে ওঘরে শুয়ে আছে আর আমি তোমার থেকে বয়সে অনেক বড়ো"।
রয় শিউলী দেবীর কোমর ছেড়ে পিছনে সরে গেল বললো: অলরাইট হয়তো আমার‌ই ভুল।
শিউলী দেবী সোজা রয়ের আস্তে আস্তে পিছনে সরে যাওয়া দেখছেন। রয় জানে শিউলী দেবী তাকে যেতে দেবেন না আর ঠিক সেটাই হলো
"দাঁড়াও" বলে উঠলেন শিউলী দেবী তারপর দ্রুতপায়ে রয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে রয়ের দুকাঁধ ধরে নিজের দিকে টেনে এনে নিজের ঠোঁট রয়ের ঠোঁটে লাগিয়ে দেন।
বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুম্বনে লিপ্ত থাকে তারপর শিউলী দেবী একটু পিছনে সরে বুক থেকে আঁচলটা সরিয়ে সেটা রয়ের দিকে বাড়িয়ে দেন রয় আঁচলটা ধরে আস্তে আস্তে টানতে থাকে আর শিউলী দেবী ঘুরতে থাকেন ফলে খুব তাড়াতাড়ি তার শরীর থেকে পুরো শাড়িটা খুলে যায়, এরপর দুজনেই ড্রয়িংরুমে মেঝেতেই শুয়ে পরে নীচে শিউলী দেবী আর তার উপরে রয়, সে তখন শিউলী দেবীর শরীরের বাকি কাপড়গুলো এক এক করে খুলছে আর শিউলী দেবীর পুরো শরীরে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
শিউলী দেবী ভাবছেন "অবশেষে রয় তার কাছে ধরা দিল", তিনি চোখ বুঝে তার শরীরের উপর রয়কে উপভোগ করতে থাকেন, তার দুটো উদ্ধত স্তনের উপর রয়ের হাতের চাপ তাকে ব্যাথা দিচ্ছে না, সুখের আরও গভীরে নিয়ে যাচ্ছে।
একটু পরেই দুটো সম্পূর্ণ নগ্ন মানুষকে একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকতে দেখা গেল, প্রতিবার শিউলী দেবীর দুপায়ের মাঝের গহ্বরে রয়ের পুরুষাঙ্গ যখন ঢুকছে তার মুখ থেকে শিৎকার বেরোচ্ছে, তিনি রয়কে দুহাতে আরো আঁকড়ে ধরছেন নিজের উপর, দুপা দিয়ে রয়ের কোমর জড়িয়ে ধরেছেন, রয় যখন তার স্তনবৃন্ততে মুখ দিচ্ছে জিভ দিচ্ছে শিউলী দেবী বুঝছেন এত সুখ তিনি এর আগে কোনোদিন পাননি ,দুজনেই ঘেমে একসার হয়ে গেছে কিন্তু তাও তাদের কামক্রীড়া শেষ হয়নি কতক্ষণ এভাবে তারা ছিল দুজনের কারোরই হুশ নেই শেষে একসময় শেষ হলো দুজনের মুখ থেকেই আরামদায়ক শিৎকার বেরিয়ে এল, রয় এবার শিউলী দেবীর শরীরের উপর থেকে নেমে তারপাশেই শুয়ে পরলো, আর শিউলী দেবী.. তিনি চোখ বন্ধ করে এতক্ষণ ধরে কাটানো মুহুর্তগুলো উপভোগ করতে থাকলেন।

বীরেন ভট্টাচার্যের নিজস্ব অফিস ঘরে মুখোমুখি বসে বীরেন এবং ধীরেন ভট্টাচার্য দুজনের মুখেই চিন্তার ছাপ কিছুতেই তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না যে তার দশজন লোককে মেরে ফেলেছে তার শিউলীকে নিয়ে গেছে, ওদিকে সমর সরকার কে এমন মারধর করেছেন যে লোকটা মারাই গেছে, যদিও অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে বলে ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছেন কিন্তু মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত তার মুখে একটাই কথা ছিল যে তিনি বীরেন ভট্টাচার্যের লোকদের মারেননি।
"এবার কি করবে দাদা?" জিজ্ঞেস করলেন ধীরেন বাবু।
সেটাই তো ভাবছি, মরার আগে কেউ মিথ্যা বলে না, সরকার যদি এটা না করে থাকে তাহলে কে?
আমাদের পুরনো কেউ কি যাকে আমরা ভাবছি মেরে ফেলেছি কিন্তু সে বেঁচে আছে?
যদি সেটা হয় তাহলে কে হতে পারে?
রুদ্র রায়চৌধুরী আর তার ব‌উ আর ছেলে?
চমকে ওঠেন বীরেন ভট্টাচার্য যেন বহু পুরনো কোনো কথা মনে পরে যায়।
ধীরেন বাবু আবার বলেন: ওদের তিনজনের কারো লাশ‌ই কিন্তু আমরা দেখিনি শুধু জগার কথায় বিশ্বাস করেছিলাম।
বীরেন বাবু তৎক্ষণাৎ বেল বাজান, ঘরে একজন লোক ঢুকলো তাকে বললেন: জগা কোথায়? তাকে ভিতরে পাঠা।
একটু পরে জগা ভিতরে ঢুকলো লোকটার পালোয়ানের মতো চেহারা মাথায় খুব ছোট করে ছাটা চুল, পুরুষ্ট গোঁফ, গালে হাল্কা দাঁড়ি তবে যেটা দেখার সেটা হলো চোখ, একদম খুনে চোখ যে কেউ দেখলে ভয় পাবে, এই লোকটা বীরেন বাবুর বশংবদ, তার হুকুমে করতে পারেন না এমন কাজ নেই কতলোকের যে লাশ ফেলেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
"ডাকছিলেন দাদা?" ভিতরে ঢুকে বলেন জগা।
হ্যাঁ, তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করছি সত্যি কথা বলবি
কি দাদা?
তোর রুদ্র রায়চৌধুরী কে মনে আছে?
একটু ক্ষণ ভুরু কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করলো তারপর বললো ওই মদনের ব‌উএর দাদা?
হ্যাঁ সেই, ওর সাথে ওর ব‌উ অমৃতা ছিল আর একটা ছেলে ছিল, মনে আছে?
আছে দাদা, ছেলেটার তো আবার বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার শখ হয়েছিল তাথৈ দিদিমণির সাথে ঘুরতো, কি যেন নাম ছিল হ্যাঁ মনে পরেছে অভয় কিন্তু এতবছর পরে ওদের কথা কেন দাদা?
তুই বলেছিলি তুই নিজের হাতে ওদের তিনজনকে মেরে লাশ পুড়িয়ে ফেলেছিস।
একটু ঢোঁক গিলে জগা বললো: হ্যাঁ দাদা, সেটাই করেছিলাম।
"তুই সত্যি বলছিস?" এবার প্রশ্নটা করলেন ধীরেন ভট্টাচার্য।
জগা উত্তর দেয়: মিথ্যা বলবো কেন? যেটা করেছিলাম সেটাই বলেছিলাম কিন্তু কেন দাদা?
বীরেন বাবু গম্ভীর গলায় বলেন "জগা কেউ একজন আমার পিছনে লেগেছে, শিউলীকে নিয়ে গেছে যদি শিউলী মুখ খোলে ভেবে দেখেছিস কি হবে? কি করছিস তুই আর তোর লোকেরা? এখনো ওর কোনো খোঁজ পেলি না, হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে নাকি?
দাদা, আমার লোকেরা এখনো পুরো শহর জুড়ে খুঁজেই চলেছে।
খুঁজে বের করতেই হবে জগা, খুঁজে বের করতেই হবে, যা এখন।
জগা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বীরেন ভট্টাচার্য ভাইকে বললেন: আরেকটা খবর এসেছে ধীরেন
কি দাদা?
কেউ বৃষ্টি আর তাথৈএর ব্যাপারে খোঁজখবর করছে
সে কি? কে?
সেটা জানলে তো হয়েই যেতো যদি খুব ভুল না করি তাহলে আমাদের এই নতুন বা পুরনো শত্রু।
রকিকে ডেকে নেবো?
এখনই ডাকার দরকার নেই, তুই ওর কাছে আরও কজন বডিগার্ড পাঠিয়ে দাও আর বাড়ির দুই মেয়ের সুরক্ষা বাড়িয়ে দে।

"তুমি নিশ্চিত ওখানে বীরেন রোহিতের ক্ষতি করতে পারবে না?" শিউলী দেবী রয়কে প্রশ্নটা করেন, দুজনেই তখন নগ্ন হয়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে ড্রয়িংরুমে মেঝেতে, কিছুক্ষণ আগেই তারা ইন্টিমেট হয়েছিল ,তারপরেই এই প্রশ্ন।
"ওখানে খোঁজ‌ই পাবে না আর যদি পায়‌ও যদিও সেটার চান্স প্রায় নেই কিন্তু যদি পায় তাহলেও ওর ক্ষতি করতে পারবে না কারণ ওর সুরক্ষার জন্য লোক থাকবে" বললো রয়।
শিউলী দেবী: বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে তোমার কিসের শত্রুতা?
রয়: উনি আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন শুধু তাই নয়, আমার পরিবারের‌ও।
শিউলী দেবী: ওকে শেষ করতে হলে আগে ওর ক্ষমতাকে শেষ করতে হবে, আর সেটার জন্য ওর ব্যাবসাগুলোকে কারণ ওখান থেকেই ও অঢেল টাকা ইনকাম করে।
রয়: সেটা আমিও জানি, কিন্তু লিগ্যাল বিজনেস ছাড়াও তো ইল্লিগ্যাল বিজনেস আছে।
শিউলী দেবী: আছে কিন্তু সেগুলোর খবর আমি জানিনা তাই.. আমি বলতে পারবো না।
রয়: সেটা জানা তোমার পক্ষে সম্ভব‌ও নয়, ওগুলোর খবর প্রধানত খুব বিশ্বস্ত লোকের কাছেই থাকে, আর নতুবা থাকে পরিবারের লোকের কাছে, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে ওর পরিবারের কেউ সে খবর বাইরের কাউকে দেবে না।
দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তারপর শিউলী দেবী হটাৎ বললেন: আছে, একজন আছে যে তোমাকে সবটা না হলেও কিছু খবর দিতেই পারে
রয় একটু অবাক হয় বলে: কে?
শিউলী দেবী: বিদিশা
রয়: বিদিশা মানে বীরেন ভট্টাচার্যের ভাগ্নে রকির ব‌উ?
শিউলী দেবী: হ্যাঁ,ওই
রয়: কিন্তু উনি কেন আমাকে সাহায্য করবেন?
কারণ ও নিজেও ওই পরিবারকে খুব একটা পছন্দ করে না, তোমাকে সাহায্য করতে পারলে ওই পারবে।

"রকি, রকি ভট্টাচার্য" দেওয়ালের পর্দায় একজনের ছবি ফুটে উঠেছে সেটা দেখিয়েই কথাটা বললো উসমান "বীরেন ভট্টাচার্যের দিদি বৈশালী ভট্টাচার্যের ছেলে মহিলা স্বামী মারা যাওয়ার পরে ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন এবং বাপের বাড়ির নামটাই ব্যবহার করেন তাই রকির নামের পরে ভট্টাচার্য"।
তা এই রকি করেটা কি?
বীরেন আর ধীরেন ভট্টাচার্যের মতো এটাও শয়তানের আরেকটা অবতার, নেশা, মারামারি মেয়ে এসব ছাড়া কিছুই জানেনা, তবে এখন নাকি মামার অবৈধ ব্যাবসাগুলো সামলায়, কিছু বছর আগে বীরেন ভট্টাচার্য এর বিয়ে দেন কিন্তু তারপরেও এর বাইরের মেয়েদের দিকেই নজর বেশি।
কি ধরনের ব্যাবসা? আর সেগুলো অপারেট করে কোথা থেকে?
এক্সটর্শান, কিডন্যাপিং তো আছেই এছাড়া মদের ঠেক চালায় তার পরে ইমপোর্ট এক্সপোর্টের ব্যাবসাও চালায়, আর অফিস তো একটা নয় তবে মেইন অফিসে সে কম আসে ওখানে বীরেন ভট্টাচার্য বসেন।
কোথায় সেটা?
আপনার মনে আছে স্যার তাথৈ ভট্টাচার্যের এক প্রেমিকের কথা বলেছিলাম অভয়।
হ্যাঁ, তো তাতে কি?
যে জমিটায় ওই অভয়দের বাড়ি ছিল ওটা এখন বীরেন ভট্টাচার্যের, ওখানেই ওনার অফিস, ওখান থেকেই বীরেন ভট্টাচার্য সব কন্ট্রোল করেন।
আর বিদিশা ভট্টাচার্য?
এরপর পর্দায় একটা মেয়ের ছবি ভেসে আসে বয়স রয়ের থেকে একটু ছোটো ২৯-৩০এর মধ্যে, স্লিম চেহারা, পরিষ্কার রঙ, মাথায় লম্বা কোকড়ানো চুল।
ইনি বিদিশা ভট্টাচার্য নেতা অনিমেষ ব্যানার্জীর মেয়ে, কিছু বছর আগে অনিমেষ ব্যানার্জী একটা কেসে ফেঁসে যান তার চেয়ার তো যাবেই এমনকি তিনি জেলেও যেতে পারেন এমন অবস্থায় বীরেন ভট্টাচার্য তাকে বাঁচিয়ে দেন এবং বিনিময়ে..
বিনিময়ে বীরেন ভট্টাচার্য ভাগ্নে রকির জন্য এই ব্যানার্জীর মেয়েকে ব‌উ করে নিয়ে আসেন।

"তাহলে অবশেষে তোমার শিউলী দেবী মুখ খুললেন?" প্রশ্নটা এল আমিরের মুখ দিয়ে।
আমার শিউলী দেবী?
তাছাড়া আর কার?
যার‌ই হোক আমার নয়।
তোমাদের মধ্যে যা হয়েছে তার পরেও বলছো?
বলছি।
সত্যি মহিলা পারেন বটে, পাশের ঘরে ছেলে ঘুমিয়ে আছে আর এদিকে উনি বয়সে অনেকটা ছোটো ছেলের সাথে ইন্টিমেট হচ্ছেন।
যে মহিলা নিজের দিদির স্বামীর সাথে দিদি বেঁচে থাকতে সম্পর্কে জড়াতে পারেন তার থেকে আর কি আশা করো তুমি?
তোমার কি মনে হয়? বিদিশার সম্পর্কে যা বললেন সেটা সত্যি? মানে ওই মেয়ে কি আমাদের হেল্প করবে?
দেখা যাক তবে যদি এটা সত্যি হয় যে রকি ওকে মারধর করে, আর ওনার বিয়েটা যদি একটা ব্যাবসা হয় তাহলে করতেও পারেন।
আর সেটা কিভাবে বুঝবে?
বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়িতে তোমার লোক আছে বলছিলে না? তাকে বলো নজর রাখতে।
তাতে হবেটা কি?
কোন খবর কখন কাজে লেগে যায় সেটা কে বলতে পারে?

একটা রেললাইনের উপরের গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরী ওভারব্রিজের ধারে একাকী দাঁড়িয়ে নীচের দিকে দেখছিলেন বিদিশা ভট্টাচার্য, হাতে একটা ছোট পকেট ফ্লাস্ক, বলাইবাহুল্য সেটা অ্যালকোহলের সেটা মাঝে মাঝে মুখে দিয়ে একটু একটু করে পান করছিলেন তিনি, পরনে একটা সিল্কের ট্রান্সপারেন্ট শাড়ি, স্লিভলেস ব্লাউজ যার পিঠ অনেকটা খোলা, মাথায় চুলটা খোপা করে রেখেছে, ঠোঁটে লিপস্টিক, গলায় একটা মঙ্গলসূত্র, সিঁথিতে অল্প একটু সিঁদুর, দুহাতে ভর্তি চুড়ি, নিজের মনে ড্রিংক করছিলেন আর আনমনে কি যেন ভাবছিলেন এমন সময় কাছেই একটা ছেলের "হ্যালো বিউটিফুল" শুনে না তাকিয়েই "গেট লস্ট" বলে এক‌ই ভাবে নীচে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে র‌ইলেন আর ক্রমাগত ফ্লাস্ক থেকে ড্রিংক করতে লাগলেন, ছেলেটা কিন্তু গেলোনা তার পাশে এসে বললো "নীচে ঝাঁপ দেওয়ার প্ল্যান করছেন? তা পঞ্জিকা দেখে এসেছেন?"
এবার বিদিশা একটু চেঁচিয়ে উঠলো "আই সে গেট লস্ট"।
আর যদি না যাই?
জুতিয়ে গাল ছিঁড়ে নেবো ইউ স্কাউন্ড্রেল।
এইভাবে একা করে ড্রিংক করে কোন ব্যাথাটা ভুলতে চাইছেন মনের না শরীরের?
এবার বিদিশা পাশে তাকালো দেখলো প্রায় তার‌ই বয়সী একটা ছেলে, মাথায় ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল, বেশ হ্যাণ্ডসাম চেহারা, পরনে একটা জ্যাকেট আর জিন্স। কিছুক্ষণ ছেলেটাকে নিরীক্ষণ করে বললেন: আপনি কি বলতে চাইছেন?
"আপনি যে ব্লাউজটা পরেছেন সেটা পিঠের দিকে অনেকটাই ডিপ করে খোলা আর একটু ভালো করে দেখলেই সেখানে লম্বা দাগগুলো বোঝা যাচ্ছে আর এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনার চোখের পাতা ভেজা অত‌এব.." চুপ করলো ছেলেটা।
বিদিশা: আমাকে একটু একা থাকতে দিন, প্লিজ আপনি চলে যান।
ছেলেটা: কেউ একজন বলেছিল দুঃখ শেয়ার করলে কমে আর আনন্দ শেয়ার করলে বাড়ে।
বিদিশা: আমি কোনোকিছু শেয়ার করতে চাই না।
ছেলেটা: আচ্ছা বেশ, আপনাকে শেয়ার করতে হবে না কিন্তু আমি তো এখানে থাকতে পারি।
বিদিশা: বেশ, আপনি থাকুন আমি চললাম।
বলে বিদিশা চলে যাচ্ছিল কিন্তু ছেলেটা বললো: অন্য কোথাও যাচ্ছেন সুইসাইড পয়েন্ট দেখতে?
বিদিশা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো: আমি সুইসাইড করতে যাচ্ছি এটা আপনার মনে হলো কেন?
ছেলেটা: অনুমান, ঠিক নাও হতে পারে।
বিদিশা: না ঠিক নয়, আমি সুইসাইড করতে যাচ্ছি না আমার সে উপায় নেই।
ছেলেটা: যদি কিছু মনে না করেন কেন একথা বলছেন জানতে পারি?
বিদিশা: সবকথা আপনাকে বলতে যাবোই বা কেন? কে আপনি?
ছেলেটা: আমার নাম রয়, আর আমি আপনার বন্ধু বা পরিচিত না হতে পারি কিন্তু শত্রু ন‌ই।
বিদিশা রয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে র‌ইলো সুদর্শন দেখতে তাতে সন্দেহ নেই কি মনে হতে সে।আবার এসে রয়ের পাশে দাঁড়ালো বললো: আমি বিদিশা, বিদিশা ভট্টাচার্য, বীরেন ভট্টাচার্যের ভাগ্নে রকির ব‌উ।
রয়: আচ্ছা তা বীরেন ভট্টাচার্যের ঘরের ব‌উ এইভাবে এখানে একা কেন?
বিদিশা: ভাবছি যে আমি কি অপরাধ করেছি যে আমাকে...
বিদিশা চুপ করে গেল
রয়: আপনাকে একা বেরোতে দিয়েছে? স্ট্রেঞ্জ।
বিদিশা একটু বিষন্ন হেসে বললো: আমার প্রতি নজর দেওয়ার প্রয়োজননেই ওদের, আমাদের বিয়েটা শুধু একটা বিজনেস, রকি কোনোদিনই আমার প্রতি মনোযোগ দেয়নি ভালোবাসা তো কোন ছাড়
রয়: আর আপনি? আপনি ওকে ভালোবেসেছিলেন?
বিদিশা: ওরকম শয়তান কে ভালোবাসা যায় না, ও শুধু জানে অত্যাচার করতে মারধর করতে। বলতে বলতে বিদিশার মুখে একটু রাগ ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল, তারপর দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো:মাপ করবেন আপনাকে এসব বলা ঠিক হয়নি, আমি যাই বলে চলে যাচ্ছিল।
রয় বললো: যাবেন কিভাবে? গাড়ি আছে?
বিদিশা: না, দেখি ক্যাব নিয়ে নেবো।
রয়: যদি আমাকে বিশ্বাস করেন তাহলে আমি লিফট দিতে পারি।
বিদিশা: আপনি বীরেন ভট্টাচার্য আর রকিকে ভয় করেন না? ওরা যদি জানতে পারে যে আপনি ওদের ঘরের ব‌উএর সাথে ফ্লার্ট করছেন তাহলে আপনাকে খুন করতে দু-বার ভাববে না।
রয়: আমার কাউকে ভয় করে না আর তাছাড়া আপাতত আমার চিন্তা না করলেও চলবে আপনার।
বিদিশা: আপনি কে বলুন তো? কি চান আপনি?
রয়: বললাম তো আমি রয়, আর ধরে নিন আপাতত আপনার একাকীত্বে সঙ্গ দিতে চাই।
বিদিশা: আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি যার ভয়ে পুরো শহরের লোক তটস্থ হয়ে থাকে আপনি সেই বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ির ব‌উএর সাথে ক্রমাগত ফ্লার্ট করে যাচ্ছেন।
রয়: আর আপনি সেটা এনজয়‌ও করছেন, তাইতো?
বিদিশা কিছু বললো না রয়ের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো, আবার ফ্লাস্কটা মুখে দিতে যাবে এমন সময় রয় বললো: ওটা রেখে দিন, ওটা খেয়ে কিছু হয় না।
বিদিশা: আপনি জানেন না, এটা ব্যাথা কমাবার অব্যর্থ ওষুধ।
রয়: না, ওটা ব্যাথার ওষুধ নয়, ওটা কোনো কিছুরই ওষুধ নয়।
বিদিশা: আপনি কেন আমার সাথে লেগে আছেন?
রয়: বললাম তো আমি আপনার একাকীত্বের সঙ্গী।
বিদিশা: এটা মনের আর শরীরের দুজায়গার‌ই ব্যাথার ওষুধ।
রয়: আপনার ব্যাথা কমে?
বিদিশা চুপ করে র‌ইলো।
রয়: চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দি‌ই
বিদিশা: আমি তো এখন বাড়ি যাবো না।
তাহলে কি করবেন?
জানিনা, এখন এভাবেই থাকবো।
আপনার হাজবেন্ড এবং বাড়ির লোক চিন্তা করবে।
বললাম না আমার জন্য চিন্তা করার সময় ওদের নেই।
বিদিশা আবার ফ্লাস্কটা মুখে দিতে যেতেই রয় সেটা কেড়ে নিল।
কি হলো ওটা ফেরত দিন।
না।
আপনার মর্জি নাকি?
হ্যাঁ।
কে আপনি, যে আপনার মর্জি মতো চলতে হবে আমাকে?
আপাতত বন্ধু ভেবে নিন।
আমার কোনো বন্ধু নেই।
আমি আছি তো।
আপনার নাম ছাড়া কিছু জানিনা আর বলছেন বন্ধু?
এইবলে বিদিশা ব্রিজের ধারে ঘুরে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো এবং তক্ষুনি ব্যাথায় একটু চোখ বন্ধ করে সরে এলো, রয়ের বুঝতে বাকি র‌ইলো না যে ওর পিঠে মারের জায়গায় ব্যাথাটা আছে এখনো।
সে বললো: চলুন।
কোথায়? বললাম না আমি এখন বাড়িতে ফিরবো না।
আপনার বাড়িতে না, আমার বাড়িতে।
বিদিশার মুখে আবার একটু রাগের আভাস দেখা গেল, বললো: আপনার সাহস তো কম নয়?
আপনার পিঠে এখনো ব্যাথা আছে, ওখানে  মলম লাগাবেন, তাহলে ব্যাথাটা কমবে, আপনি যখন নিজের বাড়ি যেতে চান না তখন আমার বাড়ি চলুন রাস্তায় ওখানে মলম লাগানো যাবে না।
আমার দরকার নেই আমি ঠিক আছি, আপনি চলে যান।
আপনার এখনো ব্যাথা আছে, তাই কথাটা বললাম।
বিদিশা আবার রয়ের দিকে তাকালো।
রয় বললো: আমি কাউকে জোর করিনা বেশ আমি চলে যাচ্ছি, গুড বাই। বলে সে চলে গেল একটু দূরে তার গাড়ি দাঁড় করানো ছিল গাড়িতে উঠে সবে চাবি লাগিয়ে স্টার্ট দিতে যাবে এমন সময় জানালায় ঠকঠক আওয়াজ হলো তাকিয়ে দেখে বাইরে দাঁড়িয়ে বিদিশা, রয় একটু অবাক‌ই হলো কারণ সে ভেবেছিল বিদিশা আসবে না। সে দরজার লক খুলে দিলে বিদিশা গাড়িতে উঠে সামনে তার পাশে বসলো।
রয়: কোথায় যাবেন?
বিদিশা: কেন? আপনি‌ই তো আপনার বাড়িতে ইনভাইট করলেন।
আপনার বাড়িতে খুঁজবে না?
ওরা জানে আমি আমার এক বান্ধবীর বাড়িতে আছি।
শহরের একটু বাইরের দিকে রয়ের নিজস্ব একটা বাড়ি আছে, মানে ওই বাগানবাড়ি টাইপের, একতলা একটা বাড়ি দেখতে খুবই সাধারণ কিন্তু আশেপাশে অনেকটা এরিয়া জুড়ে এলাকার সাধারন বাসিন্দাদের সাথে মিশে তার দলের লোক বাস করে তারা সশস্ত্র খালি চোখে দেখে তাদের সাধারণ লোক‌ই মনে হয় কিন্তু তাদের রাখা হয়েছে রয়ের বডিগার্ড হিসেবে যাতে কোনো শত্রু আচমকা আক্রমণ না করতে পারে।
"এখানে আপনি একা থাকেন?" রুমে ঢুকে বিদিশা জিজ্ঞেস করলো।
হ্যাঁ, তবে আপনার ভয়ের কিছু নেই আমি রেপিস্ট ন‌ই, আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন, ডিনারে কি খাবেন?
আপনার চাহিদা তো বেড়েই চলেছে এখন আবার আমাকে ডিনারে ইনভাইট করছেন?
আপনি আমার গেস্ট গেস্টকে তো খালি পেটে রাখা যায় না, বলুন কি খাবেন?
আপনি যা খাওয়াবেন। বলে রয়ের দেখানো ওয়াশরুমে চলে গেল বিদিশা, যেতে যেতে শুনলো রয় কাকে যেন ফোন করে রুমালি রুটি, ডিম তরকা আর মাটন কষা অর্ডার করলো।
একটু পরে ওয়াশরুম থেকে জিজ্ঞেস করলো বিদিশা: আপনার কাছে আমার পরার জন্য কিছু আছে?
রয় একটা গাউন ওয়াশরুমে এগিয়ে দিল, একটু পরে সেটা পরেই বেরিয়ে এল বিদিশা ভিজে চুলগুলো পিঠের উপর এলানো, বললো: নতুন গাউন কার জন্য কিনেছিলেন?
ধরে নিন আপনার জন্য।
 মলমটা কি আমাকেই লাগাতে হবে কারণ সেটা সম্ভব নয়।
আপনি বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন আর গাউনটা পিঠের উপর থেকে একটু নামিয়ে নিন, আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।
আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কেন আপনার সব কথা আমি মেনে চলেছি।
মেনে এখনো পর্যন্ত তো আপনার ক্ষতি হচ্ছে না।
বিদিশা বেডরুমে গিয়ে নরম বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে পরলো তারপর গাউনটা সামনের দিক থেকে খুলে পিঠের উপর থেকে কিছুটা নামিয়ে দিল যদিও কোমর থেকে বাকি নিম্নাঙ্গ ঢাকা, আর উবুড় হয়ে থাকার জন্য সামনের দিকটাও চাপা পরে গেছে, পিঠের উপর থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে ফেললো, এতে রয়ের সামনে বিদিশার খোলা পিঠের উপর আঘাতের দাগগুলো স্পষ্ট উন্মুক্ত হলো।
রয় প্রথমে একটা আইসপ্যাকে কিছুটা বরফ নিয়ে আঘাতের জায়গাগুলোয় লাগাতে লাগলো, মাঝে মাঝে বিদিশা ব্যাথায় আঃ করতে থাকে, একটু পরে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর বললো "আপনি কিছুক্ষণ এইভাবে শুয়ে থাকুন, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি"।
কিন্তু বিদিশা একটু পরেই উঠে পরলো ঘরের ভিতরে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।
"কি দেখছেন?" রয় ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে এসে বললো।
আপনার ঘরটা।
আরো একটু পরে অর্ডার দেওয়া খাবার চলে এল। রয় বললো: আসুন ডিনার রেডি।
বিদিশা ডাইনিং টেবিলে বসতে রয় বললো: আপনি কখনো ক্যাণ্ডেল লাইট ডিনার করেছেন?
না, আমার হাজবেন্ডের মধ্যে এতটুকুও রোমান্টিকতা নেই।
যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আজ আমি ব্যবস্থা করতে পারি।
আপনি কি চাইছেন বলুন তো?আমার জন্য এতকিছু কেন করছেন?
আমি শুধু আপনার মুখে হাসি ফোটাতে চাইছি, তো আপত্তি আছে?
না, নেই।
রয় তখন রুমের লাইট নিভিয়ে ডাইনিং টেবিলে কয়েকটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলো, দুজনে চুপচাপ ডিনার করতে থাকলো মাঝে মাঝেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। ডিনারের পরে কিছুক্ষণ বসে দুজনে গল্প করলো দুজনেই নিজেদের কিছু কিছু কথা বললো যেমন পছন্দের হিরোইন কে, কেমন সিনেমা পছন্দ এইসব।
একসময় বিদিশা জিজ্ঞেস করলো: এই যে কয়েক মিনিটের আলাপে আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন, এবং প্রায় অর্ধনগ্ন করেও ফেললেন এরকম কটা মেয়েকে করেছেন?
রয়: বাড়িতে আপনিই প্রথম।
আর বাইরে?
না, বাইরেও খুব বেশি না তবে বিশ্বাস করুন আমি কাউকেই জোর করিনা, আমার কথা তো শুনলেন এবার আপনি বলুন।
আমি পড়তে চেয়েছিলাম, লয়্যার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু...
তা এখন পড়ছেন না কেন? আপনিই তো বললেন ও বাড়িতে আপনার প্রতি নজর দেওয়ার কেউ নেই।
কি হবে? আমি একজন বন্দী, লয়্যার হলেও সেটা পাল্টাবে না।
আমি মুক্ত হতে চাইছেন না কেন? আপনার হাজবেন্ডের কাছে মুক্তি চান।
সেটা সম্ভব নয়, বীরেন ভট্টাচার্য হতে দেবেন না।
তার মানে সারাজীবন এইভাবেই থাকবেন? অত্যাচার সহ্য করবেন?
এছাড়া আর উপায় নেই।
আছে, উপায় আছে।
মানে?
আমি আপনাকে মুক্ত করতে পারি।
বিদিশা যেন হতবাক হয়ে গেল এই কথা শুনে বললো: আপনি জানেন আপনি কি বলছেন?
জানি।
আর তারপর কি আপনার কাছে আসবো?
না, নিজের মতো করে বাঁচবেন লয়্যারের পড়াশোনা কমপ্লিট করবেন।
বিদিশা হো হো করে হেসে উঠলো, বেশ কিছুক্ষণ হেসে বললো: আপনি কি বলুন তো? আমার সাথে যে ফ্লার্টিং করছেন সেটা এবার থামান, আপনি বোধহয় এই শহরে নতুন তাই জানেন না যে বীরেন ভট্টাচার্য কে? তার ক্ষমতা কত? তাই এসব কথা বলেছেন।
"আমি সিরিয়াস" গম্ভীরভাবে বললো রয়। বিদিশা ও কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে বললো: আমার মনে হয় এবার আমার যাওয়া উচিত। বলে উঠতে যেতেই রয় বললো "রাত অনেক হয়েছে শুয়ে পড়ুন"। বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
বিদিশা ভেবে পেলনা যে  রয় ওকে যেটা বললো সেটা সত্যি না ও মশকরা করছে, কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য নিজের স্বার্থে ওকে নিজের বাড়ির ব‌উ করে এনেছেন তাই উনি কিছুতেই চাইবেন না যে বিদিশা ওনার কবল থেকে মুক্তি পাক তাহলে বিদিশার বাবাও বীরেন ভট্টাচার্যের কবলে থাকবে না আর এই শহরে বীরেন বাবুর বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস কার‌ও নেই, কিন্তু বিদিশা যে আর সত্যিই পারছে না শুধু যে রকির অত্যাচার তা তো নয় ওর মা বৈশালী দেবীও এক‌ই রকম। এইসব ভাবতে ভাবতেই বিদিশা ঘুমিয়ে পড়লো।
ওদিকে ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় শুয়ে রয় ভাবছে, বিদিশার উপর বাজী খেলে ও ভুল করলো না তো, শিউলী বলেছে বিদিশা সাহায্য করতে পারে, কিন্তু যদি না করে? বা আদৌ ওর সাহায্য করার মতো কোনো ক্ষমতা আছে কিনা সেটারই তো ঠিক নেই, বিদিশা যদি সাহায্য না করে তাহলে আবার নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে হবে, আবার নতুন করে প্ল্যানিং করতে হবে, শেষটায় নিজের মনেই বললো রয়: যাই হয়ে যাক সে বীরেন ভট্টাচার্যের শেষ দেখে ছাড়বে।

"এখন তো মনে হচ্ছে ওই সরকার‌ই সব করেছিল" বললেন ধীরেন বাবু উদ্দেশ্য দাদা বীরেন ভট্টাচার্য। অফিসে বসে কথা বলছিলেন দুজনে।
বীরেন বাবু: কিন্তু খটকাটা কিছুতেই যাচ্ছে না।
কিসের খটকা?
মরার আগে কেউ মিথ্যা বলে না, আর তাছাড়া শিউলীর‌ও তো কোনো খোঁজ পেলাম না, ওর ছেলের কলেজে খোঁজ নিয়েছিলাম।
কি বললো?
টিসি নিয়ে গেছে।
তার মানে নিজেই পালিয়েছে।
ওকে খুঁজতেই হবে ধীরেন, নাহলে ফাঁড়াটা রয়েই যাবে কখন যে কি করে বোঝা মুশকিল।
আমাদের লোক খুঁজেই চলেছে, কতদিন আর লুকোবে?
কিন্তু ধর যদি কেউ সাহায্য করে তখন?
কে হতে পারে?
তোর বৌদি, হাজার হোক বোন তো, আর তাছাড়া...
তাছাড়া কি?
কে বৃষ্টি আর তাথৈএর সম্বন্ধে খোঁজখবর করছিল?
হয়তো সে এই সরকারের লোক?
তাহলে তো বলতে হয় বিপদ এখনো কাটেনি।
তাহলে এখন কি করতে বলছো?
সরকারের অনুগত যারা ছিল তাদের সাথে কথা বল, হয় তারা আমাদের সাথ দেবে আর নাহয়...
বুঝেছি, ঠিক আছে তাই হবে।

Interesting
Like Reply
(07-09-2022, 10:29 AM)Monen2000 Wrote:
                               ট্রেলার

মন্দিরে সাধু তাথৈকে বলে সে যেন কোনোদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে ,যদি করে তাহলে সব হারাবে।

ওদিকে বিদিশা রয়কে বলে সে তখনই রয়কে বিশ্বাস করবে যখন সে রকির দলের দুজনকে মারবে।

বিদিশা কি সত্যিই সাহায্য করবে রয়কে?

এদিকে বীরেন ভট্টাচার্য জানতে পারে যে রকির দলের দুজন লোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা রকির খুব ঘনিষ্ঠ।

তাথৈ নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে আসছে জন্মদিনে যদি অভয় ওর সামনে না আসে বা অভয়ের কোনো চিহ্ন না পায় তাহলে সে সুইসাইড করবে।

অভয় কি বেঁচে আছে? থাকলেও সে কি আসবে?

জানতে নজর রাখুন পরবর্তী পর্বে 

শীঘ্রই আসছে "প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ" এর ষষ্ঠ পর্ব
Smile
Like Reply
(09-09-2022, 10:44 AM)Monen2000 Wrote:
                                ষষ্ঠ পর্ব

সকালে ঘুম ভেঙ্গে বিদিশা কিছুক্ষণ সময় নিল কোথায় আছে সেটা বুঝতে, তারপর মনে পরলো গতরাতের সমস্ত ঘটনা এমনকি রয়ের প্রস্তাবটাও মনে পরলো। রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে কয়েকবার ডাক দিল "রয়.. রয়"।
"গুড মর্ণিং.... ঘুম হলো?" জিজ্ঞেস করলো রয়, সে তখন কিচেনে।
বিদিশা প্রত্তুত্তরে বললো: গুড মর্ণিং, বেশ ভালো ঘুম হয়েছে।
পিঠের ব্যাথা কমেছে?
অনেকটা।
চা না কফি?
কফিই হোক।
রয় একটা ট্রে তে দু-কাপের মতো গরম জল, দুধ, কফি আর সুগার কিউব নিয়ে এল তারপর কফি তৈরি করতে করতে জিজ্ঞেস করলো: সুগার কিউব কটা?
তিনটে।
রয় কফির পেয়ালা বিদিশার হাতে তুলে দিল, বিদিশা একটা চুমুক দিয়ে বললো: উমমম নাইস... আপনার তো অনেক ট্যালেন্ট, এরকম কফি বানাতে পারেন, কয়েক মিনিটের আলাপে একজন মেয়ে যে আবার একজনের বউ তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলেন এবং নিজের বেডরুমে থাকতে দিলেন কিন্তু সেই মেয়েটার বাধা দেওয়ার প্রয়োজনটুকু মনে হলো না।
রয়: কফিটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
বিদিশা হটাৎ গম্ভীর হয়ে গেল বললো: আপনি কাল রাতে যা বলেছিলেন মনে আছে?
কোনটা?
ওই আমার মুক্তির ব্যাপারে
হ্যাঁ, মনে আছে।
আপনি সিরিয়াস?
একদম।
বীরেন ভট্টাচার্যকে ভয় পান না?
বলেছি তো আমি কাউকে ভয় পাইনা।
বিনিময়ে আপনি কি চান?
তার মানে আপনি রাজী?
আগে জানতে চাই আপনি কি চান?
আপাতত আপনার মুক্তি
ফ্লার্টিং বন্ধ করুন, সিরিয়াসলি বলুন কে আপনি? আমার পিছনে পরেছেন কেন? আর আমার এরকম উপকার করতে চাইছেন কেন?
কেউ তখনই বন্দী থেকে মুক্তি পায় যখন সে নিজে মুক্ত হতে চায়, আপনি যদি মুক্তি চান তাহলে আপনাকে যা করতে হবে তাতে আমারও উপকার হবে।
কিরকম উপকার?
সেটা না হয় এখন নাই শুনলেন।
আপনি বলছেন আপনাকে বিশ্বাস করতে অথচ আপনি আমাকে বিশ্বাস করছেন না।
আমি বীরেন ভট্টাচার্যের সর্বনাশ চাই।
স্তম্ভিত হয়ে গেল বিদিশা, কিন্তু রয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলো রয় সিরিয়াস বললো: কিন্তু আপনি যে মাঝপথে আমাকে বিট্রে করবেন না তার প্রমাণ কি?
রয়: আমি তো আপনাকে বিশ্বাস করছি।
দুজনে বেশ কিছুক্ষণ পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বিদিশা বললো: আমার মুক্তি শুধু মাত্র ওদের মৃত্যুতে সম্ভব, বলুন আপনার সাহস আছে? বলুন?
আমার সাহসের কি প্রমাণ চান?
যদি কাউকে মারতে বলি মারবেন?
আমি নির্দোষ, নিরপরাধ দের মারি না।
বীরেন ভট্টাচার্য বা রকি ভট্টাচার্যের দলের কেউ নির্দোষ নিরপরাধ নয়। বিদিশা চেঁচিয়ে উঠলো।
রয়: কাকে মারতে হবে?
সত্যি পারবেন তো?
কাকে?

"কিসব মেয়ের ছবি দেখাচ্ছেন ঠাকুরমশাই ধূর একজনকেও আমার ছেলের পাশে মানাবে না" বেশ কয়েকটা মেয়ের ছবি দেখতে দেখতে বললেন এআরসির মা।
ঠাকুরমশাই: মানাবে না? আচ্ছা তাহলে একে দেখুন। বলে আরো একটা ছবি বের করেন তিনি তারপর বলেন: অনেক বড়োলোকের মেয়ে,এর পরিবার এর জন্য খরচ‌ও করবে অনেক, অনেক কিছু দেবে।
কেন আমার ছেলে ভিখারী নাকি? ওর নিজের অনেক আছে তার পরে কারো থেকে কিছু দরকার নেই আমার টাকাপয়সা চাই না, কিন্তু মেয়েটি যেন ভালো হয় আমার ছেলেকে সুখী রাখে সে গরীব হলেও চলবে আমাদের আর কিছু চাই না।
এমন সময় এবাড়িতে যে মহিলা সবসময়ের জন্য থাকেন তিনি হাতে একটা ফোন নিয়ে এলেন বললেন: বোন নাও তোমার ছেলে ফোন করেছে।
হ্যালো, 
তুমি আবার ওই পুরোহিতকে ডেকেছো মেয়েদের ছবি নিয়ে?
এই তোকে কে বললো বলতো? দিদি তুমি বলেছো?
আমি ওখানে নেই ঠিকই কিন্তু তোমার উপর সবসময় আমার নজর আছে।
মায়ের উপর নজর রাখা হচ্ছে কেন?
মা, তোমাকে বলেছি না আমার বিয়ের চিন্তা ছাড়ো।
কেন ছাড়বো? আমার কোনো শখ-আহ্লাদ নেই?
কি শখ আহ্লাদ?
নাতি-নাতনীর মুখ দেখবো না?
মা, এসব ছাড়ো আর ঠাকুরমশাইকে ফোনটা দাও।
না, তুই ওনাকে কিছু বলবি না উনি আমার কথায় এসেছেন,বেচারী ভয়ে ভয়ে আছেন।
মা..
তুই আসবি কবে?
খুব তাড়াতাড়ি আসবো, আরো কয়েকটা মিটিং আছে সেগুলো শেষ করেই আসবো, আর এইসব ফালতু চিন্তা ছাড়ো।
তোর কথাতে নাকি?
হ্যাঁ
তুই কোথায় এখন? আমাকেও নিয়ে চল তোর কাছে
না মা আর তো কটা দিন তারপরেই আমি ফিরে আসবো ততদিন তুমি কিন্তু সাবধানে থাকবে সব ওষুধ ঠিকঠাক খাবে, আচ্ছা মাসিকে ফোনটা দাও।
তুই ভালো আছিস তো, ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করছিস তো?
হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি
তোর গলাটা যেন কেমন লাগছে?
ও কিছুনা, মা।
তুই তাড়াতাড়ি ফিরে আয়, তারপর তোর একটা বিয়ে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত।
মা... মাসিকে ফোনটা দাও।
হ্যাঁ বাবু বল।
মায়ের যেন কোনোরকম অযত্ন না হয়, ওষুধ যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে আনিয়ে নেবে, ঠিক আছে?
ঠিক আছে বাবু।
আর নিজের‌ও খেয়াল রেখো, ছাড়ছি।
ঠিক আছে।

"দাদা দাদা রঘু আর লাল্টুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওদের ফোন‌ও সুইচড অফ" হাঁফাতে হাঁফাতে একজন এসে খবরটা রকিকে দিল, রকি তখন ফোনে মামা বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে কথা বলছিল। গলার স্বর নামিয়ে বললো: খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানেটা কি?
দাদা ওরা তো ওখানে গিয়েছিল অনেকক্ষণ আগে তারপর থেকে ওদের আর খোঁজ নেই ফোন করছি বন্ধ আছে।
কথাটা যে রকির ফোনের ওপারে থাকা বীরেন বাবুর কানেও গেছে সেটা এবার বোঝা গেল ফোনের থেকে তার গলা ভেসে এল: কি হয়েছে রকি? কাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?
রঘু আর লাল্টুকে।
ওই যে দুজন সবসময় তোর সাথে থাকে? কোথায় গিয়েছিল ওরা?
আসলে ওরা গিয়েছিল... ওই একটু মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে।
ওরা বিশ্বস্ত?
এতদিন আমার সাথে আছে কখনো অবিশ্বাস করার মতো কিছু করেনি।
ওদের খুঁজে বের কর, যদি অন্য কারো কাছে মুখ খোলে তখন...
খুলবে না ওরা জানে মুখ খুললে ওদের কি দশা হবে।
তবুও ওদের খুঁজে বার কর।
ঠিক আছে মামা।

"কোনোদিন মেয়ে দেখোনি?" আচমকা প্রশ্নে হতচকিত হয়ে যায় অভয়, সামনে দাঁড়িয়ে যে কিশোরীটি রাগী মুখে প্রশ্নটা করেছে সে এই বছরেই কলেজে এসেছে, যবে থেকে ওকে দেখেছে অভয়ের খালি ওকে দেখতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝেই তাকিয়ে থাকে ওর দিকে তার বেশি কিছু নয় কয়েকবার চোখাচোখিও হয়েছে আর আজ এই প্রশ্ন।
"কি হলো কোনোদিন মেয়ে দেখোনি?" আবার প্রশ্ন করে মেয়েটি, কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না অভয় তাই চুপ করে থাকে। কলেজে টিফিনের সময় ক্যান্টিনে বসে ছিল অভয় তখনই তার কাছে এসে প্রশ্নটা করে মেয়েটা, ক্যান্টিনে বেশি কেউ ছিল না যারা ছিল তারা ওই মেয়েটার সাথেই থাকে সবসময় এবার তারা এগিয়ে এলো এদের মধ্যে একটা মেয়ে বললো: অই হয়েছে রে তাথৈ? কোনো প্রবলেম?
তাথৈ: না,তোরা যা আমি আসছি।
মেয়েটি: ঠিক তো?
তাথৈ: হ্যাঁ বৃষ্টি ঠিক।
ওই গ্ৰুপে আরো একটা ছেলে ছিল নাম সাম্য সে বললো: কিছু হলে বলো তাথৈ।
তাথৈ: না, সাম্য তুই যা। সবাই চলে গেলে তাথৈ আবার অভয়কে জিজ্ঞেস করলো: কি হলো উত্তর দাও।
অভয়: সরি, আমি বুঝতে পারিনি এতে তোমার সমস্যা হয় আর তাকাবো না।
তাথৈ কিছুক্ষণ রাগী চোখে অভয়কে দেখে চলে যায় এরপর থেকে তাথৈ লক্ষ্য করে সত্যিই অভয় আর তার দিকে তাকায় না, এমনিতে অভয় তার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি, কোনোদিন নিজে থেকে এসে কথাও বলেনি শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখতো কিন্তু এখন সেটাও বন্ধ। আরও কিছুদিন লক্ষ্য করলো তাথৈ সত্যিই ছেলেটার কথার দাম আছে, আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলো তাথৈ, অভয় পড়াশোনায় যথেষ্ট মেধাবী, ক্লাসের শিক্ষকরাও তাকে পছন্দ করেন।
কিন্তু ক্লাসের যেসব ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় ভালো বা শিক্ষকদের প্রিয় তারা মূলত ক্লাসের সামনের দিকে বেঞ্চগুলোতে বসে ব্যতিক্রম অভয় তাকে কোনোদিন সামনের দিকে বসতে দেখা যায় না সে বসে পিছনের দিকের বেঞ্চগুলোতে আর তার সাথে যারা বসে তাদের ভালো ছাত্র যাকে বলে তাদের মধ্যে ধরা যায় না, ওই সোজা ভাষায় 'ব্যাকবেঞ্চার', কিন্তু অভয় ওদের সাথে কেন মেশে, ওদের সাথেই কেন ক্লাসে বসে সেটা শিক্ষকরা ভেবে পান না অনেক চেষ্টা করেন অভয়কে সরিয়ে আনতে, কখনো যদি ওদের পাশ থেকে উঠিয়ে অন্য জায়গায় বসান তো ক্লাস শেষে আবার অভয় ফিরে যায় নিজের বন্ধুদের কাছে, কিন্তু অভয়কে কিছু বললেই সে শুধু সুন্দরভাবে একটা হাসি দেয়।
শিক্ষকরা অভয়কে যেমন ভালোবাসেন তেমন মাঝে মাঝে রেগেও যান রাগের কারন আর কিছুই না ক্লাসের পরীক্ষার খাতায় লেখা উত্তর, সেটা অভয়সহ আরো চার থেকে পাঁচ জন ছেলের পুরো এক‌ই হয় কয়েকজন বানান ভুল করে এই যা, আর শিক্ষকেরা ভালো করেই জানেন যে উত্তরের মূল উৎস অভয়ের খাতা তার থেকেই বাকীদের উত্তর সরবরাহ হয় অভয়ের যেখানে ভুল হয় তাদের‌ও সেখানে ভুল হয়।
তাথৈ এবার সত্যিই কৌতূহলী হলো অভয়কে মতো মেধাবী ছেলে ব্যাকবেঞ্চার কেন? এব্যাপারে একদিন ক্লাসের একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করায় মেয়েটা বললো "ও ওইরকম, যাদের সাথে কেউ মেশেনা ও তাদের সাথেই থাকে মেশে, এমনকি পরীক্ষাতেও ওর জন্যই ওই ছেলেগুলো পাশ করে"।
একদিন পরীক্ষা হলে অঙ্ক পরীক্ষার দিন যথারীতি অভয় লিখে যাচ্ছে এবং তার বন্ধুদের সরবরাহ করে যাচ্ছে, একসময় অ্যাটেণ্ডেন্ট ধরে ফেললেন এবং অভয়কেই সরিয়ে দিলেন বসালেন তাথৈএর পাশে, তাথৈ লেখার সাথে মাঝে মাঝেই দেখছিল যে অভয় ওর বন্ধুদের সাহায্য করছে লিখতে, কিন্তু ওকে সরিয়ে দেওয়ায় ওর বন্ধুদের মুখ কালো হলেও অ্যাটেণ্ডেন্টের মুখে একটু হাসি দেখা গেল।
বললেন: এবার মন দিয়ে পরীক্ষা দে অভয়।
অভয় একবার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে আবার পরীক্ষায় মন দিল, একটু পরে পিছন থেকে আওয়াজ এল "অভয় অভয়"
অভয় বুঝলো তার পিছনে বসা মেয়েটা ডাকছে, ও একটু পিছনে সরে গেল। তাথৈএর কানেও গেল ডাকটা সে ঘাড়টা একটু ঘুড়িয়ে দেখলো সুস্মিতা ডাকছে অভয়কে, অবাক হলো তাথৈ সুস্মিতা কোনোদিন অভয়ের সাথে কথা বলেনি সে থাকে তাথৈদের সাথে মাঝে মাঝে তো সাম্যর সাথে মিলে অভয়কে ব্যঙ্গ করতে ছাড়ে না।
সুস্মিতা বললো: কটা অঙ্ক দেখা না অভয় নাহলে ফেল করে যাবো, প্লিজ দেখা।
অভয়: আমি চাপা দি‌ইনি পাশে রাখছি দেখে দেখে লিখে নাও। দুজনেই ফিসফিসিয়ে কথা বলছে, বলাইবাহুল্য যে সুস্মিতার পরীক্ষা ভালোই হলো এবং সেটা অভয়ের জন্যই, কিন্তু পরীক্ষার পরে অভয় আবার ওর বন্ধুদের কাছে, সুস্মিতাকে সে চেনেই না।
তাথৈ এবার বাস্তবিকই আকৃষ্ট হলো অভয়ের প্রতি এখন সেই মাঝে মাঝে অভয়কে দেখে কিন্তু অভয় তাথৈএর দিকে আর তাকায় না এমনকি তাথৈকে এড়িয়ে চলে ওর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
একদিন ক্যান্টিনে তাথৈ, বৃষ্টি আর তাদের বন্ধুরা বসে গল্প করছে, তাথৈ কিছু বলছে না সে অভয়ের কথা চিন্তা করছে এমন সময় সাম্য বললো: কাল বিকেলে কি করছো তাথৈ? কাল তো রবিবার বিকেলে ফ্রী আছো তো?
তাথৈ: কেন?
সাম্য: কাল বিকেলে আমাদের পাড়ার মাঠে এসো একটা ফুটবল ম্যাচ আছে, ওই অভয়দের পাড়ার টীমের সাথে।
বৃষ্টি: তুই খেলতে পারিস? হারাতে পারবি?
সুস্মিতা: কি যে বলিস বৃষ্টি সাম্য খেলবে ফুটবল?
বৃষ্টি আর সুস্মিতা হাসছে দেখে সাম্য যেন রেগে গেল বললো: ঠিক আছে তোরাও আয় দেখবি, আসবে তো তাথৈ?
তাথৈ যেন অন্যমনস্ক ভাবটা কাটিয়ে বললো: কি কি বলছিস?
বৃষ্টি: সাম্য খেলা দেখতে আমণ্ত্রন করছে, ওদের পাড়ার টীমের সাথে অভয়দের পাড়ার টীমের খেলা।
তাথৈ: অভয় খেলবে?
সাম্য: এখনো জানিনা, খেলতে পারে, আসবে তো?
বৃষ্টি: ঠিক আছে আমরা আসবো।
পরদিন বিকেলে ফুটবল ম্যাচ দেখতে তাথৈ, বৃষ্টি, সুস্মিতা এবং আরো কয়েকজন মেয়ে খেলা দেখতে এসেছিল, মাঠে অনেক দর্শক হয়েছে এবং তাদের মধ্যে আরো অনেক মেয়েও আছে যাদের কেউ সাম্যদের জন্য হাততালি দিচ্ছে তো কেউ অভয়দের জন্য, অভয় খেলছে। দুটো দল‌ই ভালো খেলছে বৃষ্টি, সুস্মিতা সহ আরো অনেকেই সাম্যর জন্য চিয়ার করছে শুধু তাথৈ বাদে সে অভয়কে একদৃষ্টে লক্ষ্য করছে।
খেলায় কিন্তু সাম্যর দল হেরে গেল অভয়ের দল জিতলো বটে কিন্তু সাম্যর একটা ট্যাকেলে পায়ে চোট পেল অভয়, একটু খেলা শেষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে লাগলো অভয়কে ওভাবে দেখে তাথৈএর যেন কি একটা হয়ে গেল কিন্তু কেন হচ্ছে বুঝতে পারছিল না তার ইচ্ছা করছিল অভয়ের কাছে যেতে অথচ অভয়ের কাছে যেতেও পারছে না কারন সে তখন তার দলের ছেলেদের সাথে আছে, এদিকে বৃষ্টি ক্রমাগত সাম্যকে টিটকারী দিয়ে যাচ্ছে সাম্য মাথা নীচু করে আছে, যদিও তাথৈএর ভীষণ রাগ হচ্ছিল অভয়কে ওভাবে মারার জন্য।
এমন সময় পাশ থেকে একজন অচেনা মেয়ে কাকে যেন বললো: আরিব্বাস ছেলেটাকে দেখ কি হ্যাণ্ডসাম রে।
তাথৈ ওদের দৃষ্টিকে অনুসরণ করে দেখলো ওরা অভয়কে দেখে কথাটা বলছে, সে এখন জার্সি খুলে ফেলেছে খালি গা বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পরছে, এবার একজন জলের বোতল এগিয়ে দিল অভয় সেটা উঁচু করে জল খেতে লাগলো কিছুটা জল মুখ থেকে বেরিয়ে গলা বেয়ে পরতে লাগলো, তাথৈ লক্ষ্য করলো শুধু সেই মেয়েটা না আরও কয়েকটা মেয়ে অভয়ের দিকে একদৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে আছে এমনকি সুস্মিতাও..
একটু পরে অভয় সাম্যর দিকে এগিয়ে এল হ্যাণ্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে বললো: তুইও ভালো খেলেছিস সাম্য, খেলায় হারজিত আছেই সো মাইণ্ড করিস না। সাম্য কিন্তু হাত মেলালো না রাগী চোখে অভয়কে যেন মাপতে লাগলো।  অভয় এখনো খালি গায়ে, তাথৈ দেখলো আশেপাশের মেয়েগুলো তখনও অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ,তাথৈএর মাথায় কেন যেন রাগ উঠে গেল সেটা সে নিজেও বুঝলো না অভয়কে বললো: তোমার মতো অসভ্য ছোটোলোকের সিমপ্যাথির দরকার নেই সাম্যর, ও নীচু মনের ছেলে নয় যে এরকম একটা ম্যাচে হেরে মনখারাপ করে বসে থাকবে।
এই অতর্কিত আক্রমণ এবং অপমানে অভয় হতভম্ব হয়ে গেল সে বললো: আমি তো জাস্ট...
তাথৈ: দরকার নেই বললাম তো, এখন এখান থেকে বিদায় হ‌ও।
অভয় আর কিছু না বলে মাথা নীচু করে যেতে যেতে শুনলো পিছনে তাথৈ বলছে: নির্লজ্জ ছোটোলোক ছেলে কোথাকার?
পরদিন কলেজে যথারীতি তাথৈ ক্লাসের প্রথমদিকে ওর গ্ৰুপের সাথে বসেছে, একটু পরেই অভয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এসে পিছনের দিকে চলে গেল বোঝাই যাচ্ছে ওর পায়ের ব্যাথাটা এখনো কমেনি। ছুটির পরে কিন্তু তাথৈ অভয়কে খুঁজতে লাগলো, অভয়ের বন্ধুদের জিজ্ঞেস করে জানলো যে ওকে কলেজের মাঠের দিকে যেতে দেখা গেছে তাথৈ ওইদিকে দ্রুত পায়ে চলে গেল।
মাঠে গিয়ে একটু এদিক ওদিক খুঁজতেই অভয়কে দেখতে পেল তাথৈ, অভয় তখন কাছেই একটা বড়ো গাছের ছায়ায় বসে আঘাত প্রাপ্ত পা থেকে বুট মোজা খুলে তাতে বরফ ঘষছে, ওর ব্যথাটা যে এখনো বেশ ভালো মতোই আছে সেটা মাঝে মাঝে ওর চোখ-মুখ কুঁচকে যাওয়া থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
তাথৈ জানতো কলেজের পাশের এক দোকানে ছোটো পাউচে করে ঠান্ডা জল কিনতে পাওয়া যায় সে তাড়াতাড়ি ওই দোকানের দিকে গেল।
পায়ের ব্যাথাটা যে এত সহজে কমবে না বুঝতে পারছিল অভয়, সাম্য যে ওকে কাল ইচ্ছা করে মেরেছে সেটাও বুঝেছিল কিন্তু সবথেকে যেটা খারাপ লাগছিল সেটা তাথৈএর ব্যবহার কিন্তু কেন খারাপ লাগছিল সেটা বুঝতে পারছিল না। আজ কলেজে ঢোকার আগে পাশের দোকানে বরফের কথা বলে রেখেছিল ছুটির পর ওখান থেকেই বরফ নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে পায়ে ঘষছিল আর তাথৈএর খারাপ ব্যবহারের কথা ভাবতে লাগলো কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পরেছিল এমন সময় পায়ে একটা নতুন স্পর্শ পেয়ে চমকে তাকিয়ে দেখে তাথৈ ওর সামনে বসে ওর পায়ে বরফ ঘষছে।
তাড়াতাড়ি বলে উঠলো: কি করছো পা ছাড়ো।
তাথৈ উত্তর না দিয়ে অভয়ের পায়ে বরফ ঘষতে লাগলো অভয় এবার একটু রাগের সঙ্গেই বললো: দেখো আমার আর অপমানিত হবার শখ নেই, প্লিজ তুমি এখান থেকে যাও... ছাড়ো আমি‌ই চলে যাচ্ছি। বলে উঠতে যেতেই তাথৈ ধমকে উঠলো: চুপচাপ বসো এখানে, ওঠার চেষ্টা করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
অভয়: পা থেকে হাত সরাও। অভয় তাথৈএর হাত সরাতে গেল, তাতে তাথৈ যেন আরো রেগে গেল আবার ধমক দিল: চুপ করে বসতে পারছো না?
তারপর আবার নিজে নিজেই গজরাতে লাগলো: অসভ্য অভদ্র ছেলে..
এবার অভয়‌ও রেগে গেল বললো; তুমি ছাড়ো, যা করেছো তারজন্য ধন্যবাদ। বলে আবার উঠতে গেল অমনি তাথৈ বললো: প্লিজ বসো। কিন্তু এবারে তাথৈএর গলায় ধমক নেই উল্টে তার গলা কাঁপছে অভয় অবাক হয়ে দেখলো তাথৈ হাতের উল্টোপিঠে নিজের চোখদুটো মুছে নিল, তাথৈ কাঁদছে..
অভয় বললো: বাঃ চোট লেগেছে আমার, আবার আমাকেই বারবার অপমান করছো সেটাও মেনে নিলাম কিন্তু তুমি কাঁদছো কেন?? কেউ দেখলে ভাববে আমি তোমাকে কাঁদিয়েছি। তাথৈ আবার নিজের চোখ মুছলো, অভয় তাথৈএর হাত থেকে বরফ নিতে গেল কিন্তু তাথৈ দিল না নিজেই চেপে ধরে থাকলো, অভয় বললো: তুমি কাঁদছো কেন সেটা তো বলবে?
তাথৈ: তোমার খুব ব্যথা করছে না?
অভয় একটু অবাক হলো এই মেয়েটার হয়েছে টা কি? কাল এত অপমান করলো আজ আবার নিজে এসে বরফ লাগাচ্ছে, একটু পরে তাথৈ বললো: তুমি বসো আমি আরেকটু বরফ নিয়ে আসি। বলে তাথৈ উঠতে যেতেই অভয় বাধা দিল "এই না তার দরকার নেই আমি ক্রেপ বেধে নিচ্ছি, কিন্তু তুমি কাঁদছিলে কেন?"
তাথৈ আবার বসে বললো: দাও আমি বেধে দিচ্ছি। বলে অভয়ের হাত থেকে ক্রেপটা নিয়ে নিল, অভয় বললো: সত্যি বলোতো কি হয়েছে তোমার? কাল আমাকে কত অপমান করলে আর আজ আমার চোটে বরফ লাগালে এখন ক্রেপ বাঁধছো, ব্যাপারটা কি?
তাথৈ এবার আবার ঝাঁঝিয়ে উঠলো: বেশ করেছি, পায়ে চোট লেগেছে হাঁটতে পারছে না সেদিকে হুঁশ নেই উনি জার্সি খুলে বডি দেখাচ্ছেন.. আর ওদেরও লজ্জা নেই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
অভয়: আমি জার্সি খুলেছি বলে তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? আমার গরম লাগছিল তাই খুলেছি আর কারা দেখছিল?
দেখোনি? ওই মেয়েগুলো।
তাতে তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?
না দেখবে না।
অভয় কিছুটা বুঝতে পারলো মনে মনে হাসলো তারপর বললো: কেন? দেখবে না কেন?
অভয়ের পায়ে ক্রেপ বাঁধা হয়ে গিয়েছিল, তাথৈ এবার অভয়ের পাশে ওর গা ঘেঁষে বসে বললো: না দেখবে না আমার ভালো লাগে না।
অভয় হেসে উঠলো সেটা দেখে তাথৈ একটু রেগে গেল বললো: তুমি হাসছো কেন?
কিছুনা, এমনি। 
এইভাবেই তাথৈ আর অভয়ের বন্ধুত্ব হলো, এরপর দিন তাথৈ ক্লাসে সামনের দিকে না বসে পিছনে চলে এল, যে বেঞ্চে অভয় বসেছিল সেখানে, অভয়ের পাশে একটা ছেলে বসে ছিল তাকে বললো: এই তুই অন্য জায়গায় বস, আমি এখানে বসবো।
শুনে অভয় ও তার বন্ধুরা অবাক হলো, তাথৈএর বন্ধুরাও অবাক হলো সাম্য তো এসে বললো: তুমি এখানে বসবে কেন? আমাদের সাথে বসবে চলো।
তাথৈ বললো "না, আমি এখানে বসবো" তারপর আবার অভয়ের পাশে বসা ছেলেটাকে বললো: কি হলো? বললাম যে অন্য জায়গায় বসতে। ছেলেটা একবার অভয়ের দিকে তাকালো অভয় ইশারা করতে সে উঠে পিছনের বেঞ্চে গেল এবং তাথৈ সেখানে বসলো, সাম্য অভয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে চলে গেল।
অভয় বললো: ও কিন্তু রেগে গেল।
রাগুক...তোমার পায়ের ব্যথা কমেছে?
হ্যাঁ, অনেকটা কম।
এরপর তাথৈ আর অভয়ের ঘনিষ্ঠতা ক্লাসের প্রায় সবাই লক্ষ্য করলো, সে এখন অভয়ের পাশে ছাড়া বসে না, দিনে দিনে দুজনেই বুঝলো তাদের মধ্যে যেটা আছে সেটা শুধু বন্ধুত্ব না, সেটা তার থেকে বেশী কিছু, দুজনে পরের ক্লাসে উঠলো, কলেজ ছুটির পরে দুজনে একসাথে ঘোরে ,বেশিরভাগ সময় পাড়ার শিবমন্দিরের পিছনের বাগানে একটা বটগাছের তলায় বসে গল্প করে। তাথৈ এর অভয়ের আরেকটা স্বভাব ভালো লাগে সেটা হলো অভয় কিন্তু কখনো তাদের সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে তাথৈকে স্পর্শ করে না বা এমন কিছু দাবী করে না যেটাতে তাথৈ অস্বস্তি বোধ করবে এমনকি কখনো নিজে থেকে তাথৈএর হাত‌ও ধরে না একটা শালীনতার দূরত্ব বজায় রাখে, তাথৈ‌ই বেশিরভাগ সময় অভয়ের পাশে হাঁটতে হাঁটতে ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে। একদিন অভয় তাথৈএর সাথে ঘুরছিল আরেকটু হলেই মায়ের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছিল, তাড়াতাড়ি পাশে আড়ালে তাথৈকে নিয়ে লুকিয়ে পরে, তাথৈ জিজ্ঞেস করে: কি হলো?
অভয়: আমার মা
তাথৈ এবার দুষ্টুমি শুরু করলো "আমি আলাপ করবো"বলে অমৃতা দেবীর দিকে যেতেই অভয় পথ আটকে দাঁড়ালো বললো "দেখা করবে মানে?"
তাথৈ: কথা আছে
কি কথা?
আছে
কোনো কথা নেই, এখানে লুকিয়ে থাকো
না আমি দেখা করবো আন্টির সাথে, কথা আছে
আবার.. কি কথা?
আমাদের সম্পর্কের কথা বলবো, ওনাকে জানিয়ে রাখতে হবে তো নাকি?
কি জানাবে?
তোমার জন্য যাতে মেয়ে না দেখে
মানেটা কি? আমাকে আজ বাড়ি থেকে তাড়ানোর প্ল্যান করছো নাকি? প্লিজ এরকম কোরো না
তাথৈ হো হো করে হাসতে লাগলো, অমৃতা দেবী আশেপাশে নেই এটা নিশ্চিত হবার পর আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে দুজন তাথৈএর হাসি তখনও থামেনি দেখে অভয় গম্ভীরমুখে বলে: এবার কিন্তু আমিও আন্টির সামনে গিয়ে বলবো...
তাথৈ: আমার মা সব জানে
কি? কিভাবে? 
আমাদের একসাথে দেখে ফেলেছিল, বাড়ি যেতেই চেপে ধরেন।
কি বললেন?
সব শুনে বললেন এখন এসবের সময় নয় মন দিয়ে পড়াশোনা করো, আমি তোমার কথা বললাম যে তুমিও সবসময় এই কথাই বলো।
তোমার সেটাই করা উচিত।
মনে আছে তো দুদিন পর শিবরাত্রি?
কি? শিবরাত্রি তো কি হয়েছে?
আমি উপোস রাখবো তোমার জন্য।
কেন কি দরকার?
দরকার আছে তোমাকে কিন্তু ওইদিন দেখা করতে হবে।
কি? কেন?
ওইদিন সন্ধ্যায় মন্দিরের পিছনের বাগানে আসবে, আমি তোমার হাতে জল খেয়ে উপোস ভাঙবো।
তাথৈ ওসব সিনেমায় ভালো লাগে, তোমার উপোস রাখার দরকার নেই।
ঠিক আছে তোমাকে আসতে হবে না। বলে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে থাকে।
তাথৈ শোনো তুমি এর আগে উপোস করেছো? করোনি তো তাহলে?
তাথৈ কোনো কথা বলছে না দেখে শেষে বলে: ঠিক আছে আমি আসবো।
তবুও তাথৈ কথা বলছে না দেখে বললো: আবার কি হলো? বললাম তো আমি আসবো।
তাথৈ এবার মুখ ফেরায় বলে: সত্যি বলছো?
তোমাকে মিথ্যা বলেছি কখনো?
শিবরাত্রির সন্ধ্যায় পূজোর পরে অভয়কে মন্দিরের পিছনে আসতে ম্যাসেজ করে নিজে যায় কিন্তু অন্ধকারে বরাবরই ভয় তাথৈএর, মন্দিরের সামনেটা আলোয় ঝলমল করছে কিন্তু পিছনে বাগানে আলো নেই তাই বেশ অন্ধকার, তাথৈ ভয় পেলেও চলে যায় না হটাৎ পিছনে পায়ের শব্দ শুনে চমকে ঘুরে দাঁড়ায়, অভয় এসেছে সে এসে এই প্রথম নিজে থেকে তাথৈএর একটা হাত ধরে বলে "ভয় নেই আমি আছি তো"।
একটা জিনিস তাথৈর সহ্য হয় না সেটা হলো অন্য কোনো মেয়ের অভয়ের ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করা যদি কেউ করে তাহলে প্রচণ্ড রেগে যায় আর ঝালটা মেটায় অভয়ের উপর। একদিন ক্লাসে তাথৈ আসার আগে অভয়ের পাশে এসে বসেছিল সুস্মিতা তাথৈ এসে ওকে বারবার সরতে বলার পরেও সে সরলো না অভয়‌ও কিছু বললো না দেখে সে পিছনের বেঞ্চে ঠিক অভয়ের পিছনে বসলো, এবং পুরো দিনটা পিছন থেকে অভয়কে খোঁচা দল আর চিমটি কাটতে থাকে, সুস্মিতা যতবার অভয়ের গা ঘেঁষে আসে ততবার অভয় হয় খোঁচা নয়তো চিমটি অনুভব করে, একবার তো সুস্মিতা কি একটা কথায় হাসতে হাসতে অভয়ের হাত ধরতেই একটা জোড়ে চিমটি খেল অভয়।
ছুটির পরে তাথৈ রেগে কোনো কথা না বলে হনহন করে বেরিয়ে গেল, অভয়‌ও কোনোমতে ব্যাগ গুছিয়ে ছুট লাগালো। "তাথৈ এই তাথৈ শোনো" অভয় ডাকতে লাগলো কিন্তু তাথৈ কোনো কথা না বলে জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো, অভয় এবার তাথৈএর কাছে গিয়ে বললো: কি হয়েছে বলবে তো? তুমি কথা বলছো না কেন?
তাথৈ ঝংকার দিয়ে উঠলো: কেন যার সাথে বসেছিলে তার কাছে যাও, আমার কাছে কেন?
অভয়: আমি কোথায় বসেছিলাম? ওই তো এসে বসলো।
তাথৈ তেমনি তেজের সঙ্গে বললো: ও এসে বসলো আর তুমি বসতে দিলে?
কি করবো বলো? বেঞ্চটা তো আমার একার নয়..
তুমি ওকে ওঠালে না কেন?
ও তোমার কথা শুনলো? তোমারই তো বন্ধু।
তুমি উঠে এলে না কেন? তুমি জানোনা তোমার পাশে আমি বসি?
এবার অভয় ফাঁপড়ে পরলো বললো: আচ্ছা নেক্সট টাইম যদি বসে তাহলে উঠে আসবো।
ঠিক তো?
ঠিক।
এবার তাথৈ অভয়ের একটা হাত জড়িয়ে ধরলো অভয় একটা হাঁফ ছেড়ে বললো: যাক রাগ কমলো।
তাথৈ: তুমি জানোনা তোমার পাশে অন্য মেয়েকে আমার সহ্য হয় না, তুমি শুধু আমার, শুধু আমার।

নিজের রুমের ব্যালকনিতে একটা আরামকেদারায় বসে অভয়ের সাথে পরিচয় থেকে ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের কথা ভাবছিল তাথৈ হাতে অভয়ের সেই ছবিটা যেটা মিস্টার গুপ্তকে দিয়ে জোগাড় করিয়েছিল, এবার অভয়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে যেন অভয়কেই বলছে এমনভাবে বলতে থাকে "কাল আমার জন্মদিন অভয়, এরকমই এক জন্মদিনের ঠিক আগের দিন তোমার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল তারপর আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি, তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা করে যাচ্ছি, জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো সেদিন বাইরে যাওয়ার আগে তোমাকে বলে যেতে পারিনি, কিন্তু তার কারণ ছিল সেটা তুমি ফিরে এলেই বলবো কিন্তু এবার তোমাকে ফিরতেই হবে আমার কাছে, আমি আর তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। আমার উপর তোমার রাগ অভিমান সব আমি মেনে নেবো তোমার অধিকার আছে সেটার কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার অধিকার নেই। আজ আমি তোমাকে বলছি এই জন্মদিনে যদি তুমি না আসো বা তোমার বেঁচে থাকার কোনো চিহ্ন না পাই তবে বুঝবো তুমি আর বেঁচে নেই আর তাহলে আমারও বেঁচে থাকার কোনো মানে থাকবে না তাই এই জন্মদিনে যদি তোমাকে বা তোমার উপস্থিতির কোনো প্রমাণ না পাই তাহলে এই জন্মদিন‌ই আমার মৃত্যুদিন হবে,আমি নিজেকে শেষ করে দেবো... আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে তোমাকে ফিরতেই হবে...প্লিজ অভয় এবার ফিরে এসো, ফিরে এসো আমার কাছে"। তারপর যেন অভয়কেই চুম্বন দিচ্ছে এমনভাবে ছবিটা নিজের ঠোঁটে ছোঁয়ালো তাথৈ।

clps
Like Reply
(14-09-2022, 10:38 PM)Monen2000 Wrote:
                               সপ্তম পর্ব

"তাথৈ এই তাথৈ" ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলো বৃষ্টি, তাথৈ তৎক্ষণাৎ ফটোটা লুকিয়ে ফেলে।
"কি রে তুই এখনো রেডি হোসনি? জিজ্ঞেস করে বৃষ্টি।
কেন? রেডি হবো কেন? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
তোকে বললাম যে আজ বেরোবো, বাইরে ডিনারে যাবো।
তুই যা, আমার ইচ্ছা নেই।
উঁহু ইচ্ছা নেই বললে তো হবে না, যেতেই হবে, চল চল।
বৃষ্টিতে জোরাজুরিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিয়ে একটা চুরীদার আর পাজামা পরলো, গলায় ওড়না নিয়ে কপালে ছোট্ট একটা টিপ পড়লো আর চুলটা একটু আঁচড়িয়ে পিঠের উপর খোলা রাখলো। এর বেশি সাজলো না তাথৈ, এমনিতেও খুব বেশি সাজে না তাথৈ একে তো না সাজলেও তাকে দেখতে বেশ ভালোই লাগে আর সে যাকে দেখানোর জন্য সাজবে সেই অভয়‌ই তো কাছে নেই এইসব ভেবেই সে বেশি সাজে না,  বৃষ্টি অবাক হলো বললো: হয়ে গেল, এইভাবে বাইরে যাবি?
তাথৈ: হ্যাঁ, এতেই যথেষ্ট।
কিন্তু...
কোনো কিন্তু নয় আমি গেলে এভাবেই যাবো, নাহলে তুই একাই যা।
বৃষ্টি আর কিছু বললো না, দুজনে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে একটা মারুতি স্যুমো দাঁড়িয়ে আছে এবং তার ভিতরে বসে আছে ওদের কলেজের বন্ধু-বান্ধবী যাদের মধ্যে সুস্মিতা এবং সাম্য ছাড়াও আরও কয়েকজন আছে।
সাম্য তাথৈকে দেখে বললো: কেমন আছো তাথৈ? অনেক বছর পরে দেখা হলো, চিনতে পারছো?
তাথৈ: তুই সাম্য তো?
যাক চিনতে পেরেছো তাহলে।
গাড়িতে একজন নতুন ছেলে ও মেয়ে ছিল বৃষ্টি ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
সাম্য ড্রাইভার সিটে বসে আছে সে বললো: তাথৈ এসো সামনে বসো। তাথৈ মানা করতে যাবে কিন্তু বৃষ্টি জোর করায় বসতেই হলো। সবাই একটা রেস্টুরেন্টে এলো।
রেস্টুরেন্টে সবাই ঢুকে দেখে প্রতিটা টেবিল জুড়ে অনেকটা ৮-৯ বছরের বাচ্চা ছেলেমেয়েরা য়ভর্তি,বাচ্চারা প্রত্যেকেই  নতুন পোশাক আশাক পরে আছে, তবে ওরা যে খুবই গরীব ঘরের ছেলেমেয়ে সেটা বোঝা যাচ্ছে, ওদের সবার মুখে হাসি সবার সামনে খাবার-দাবার ভর্তি।
সুস্মিতা বললো: এ মা এখানে তো সব টেবিল ভর্তি, চল অন্য কোথাও যাই
সাম্য: না, কেন এখানেই থাকবো, দাঁড়া ম্যানেজারের সাথে কথা বলি। বলে সাম্য একজন ওয়েটারকে বললো ম্যানেজারকে ডাকতে।
ম্যানেজার এসে বললো: সরি স্যার, আজ সবকটা টেবিল বুকড হয়ে গেছে।
সাম্য: এই ভিখারীদের জন্য টেবিল বুকড? কে করেছে?
ম্যানেজার আঙুল দিয়ে কফি কাউন্টারের দিকে দেখালো ,সাম্য তাকিয়ে দেখে সেখানে একটা তাদেরই বয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে আর মোবাইলে কি যেন করছে ছেলেটাকে দেখে সুস্মিতা এবং আরেকটা মেয়ে বললো: ওয়াও কি হট রে, দেখ তাথৈ।
তাথৈ: তোদের সব ছেলেই হট লাগে। বলে আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়েই চোখ আটকে গেল তাই দেখে দুটো মেয়ে বললো: কি রে এখন নিজে দেখছিস কেন?
কিন্তু তাথৈএর কানে এখন কোনো কথা ঢুকছে না সে একদৃষ্টে ছেলেটাকে দেখছে, ছেলেটা একটা কালো শার্ট ইন করে পরে আছে যার বুকের কাছে একটা বোতাম খোলা, ফুলস্লিভ শার্ট কিন্তু স্লিভ দুটো হাতের কব্জির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো, নীচে কালো জিনস, পায়ে পাওয়ার শ্যু চোখে গগলস্ মাথায় ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল, সামনের দিকে মাঝখানে সিথি কাটা তারপর দুসাইডে আলাদা ভাবে ব্যাকব্রাশ করা কপালের উপরে চুলটা ঢেউ এর মতো উঁচু হয়ে দুদিকে নেমে পিছনে চলে গেছে, সাথে একেবারে ক্লিন শেভড মুখ ছেলেটার।
এরমধ্যেই বৃষ্টি ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেছে বললো: এই যে মিস্টার, শুনুন।
ছেলেটি এবার মুখ তুলে বৃষ্টিকে দেখলো তারপর বললো: ইয়েস।
এই ভিখিরির বাচ্চাদের জন্য আপনি টেবিল বুক করেছেন?
ছেলেটা একটুক্ষণ চুপ থেকে বললো: হ্যাঁ, আর ওরা ভিখিরি নয়।
ওদের সরিয়ে নিন, আমরা বসবো।
এখনো ওদের খাওয়া হয়নি, হলেই সরে যাবো।
উঁহু এখনই ছাড়ুন
সেটা সম্ভব নয়।
আপনি জানেন আমি কে?
এইসময় ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে ছেলেটাকে বললো: স্যার প্লিজ, আপনি...
ছেলেটা কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো: আমি যখন টেবিল বুক করেছিলাম তখন কি আপনি ক্লজ দিয়েছিলেন যে যদি কোনো বড়োলোকের অশিক্ষিত অহংকারী আদরের দুলালী এলে আমাকে টেবিল ছাড়তে হবে? দেননি তো? দিলে আমি টেবিল বুক করতাম‌ই না, কিন্তু এখন যতক্ষণ না ওদের খাওয়া শেষ হচ্ছে ততক্ষণ আমি টেবিল ছাড়বো না।
"ইউ আর ইনসাল্টিং মি" দাঁত কড়মড় করে বললো বৃষ্টি।
এবার সাম্য এগিয়ে গেল বললো: এই শুনুন, অনেকক্ষণ থেকে আপনার বকবক সহ্য করছি, এখন চুপচাপ ওই ভিখিরিগুলোকে নিয়ে কেটে পরুন নাহলে আপনার কোনো আইডিয়া নেই আমি কি করতে পারি?
"আপাতত তিনটে কাজ করতে পারেন, খাবার প্লেট হাতে নিয়ে খেতে পারেন, অপেক্ষা করতে পারেন, অন্য কোথাও যেতে পারেন, কোনটা করবেন সেটা আপনাদের ডিসিশন।
সুস্মিতা বললো: সাম্য, বৃষ্টি ছাড় অন্য কোথাও চল।
না, এখানেই থাকবো এরা যখন সরবে না তখন এদের প্লেটগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেবো। বলে সাম্য পাশের একটা টেবিল থেকে বাচ্চাদের সামনে থেকে একটা প্লেট তুলে ফেলতে গেল কিন্তু প্লেট ধরার আগেই ছেলেটা বা-হাতে সাম্যর কবজি ধরে হাতটা একটু তুলে একটু চাপ দিল ফলে কব্জিটা বাকি হাতের থেকে নীচের দিকে বেঁকে গেল, এবার ডানহাতে চশমাটা খুলে এক পা এগিয়ে সাম্যর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো: আর কখনো যদি কারো মুখের সামনে থেকে খাবার তুলে ফেলার চেষ্টা করতে দেখি তাহলে হাতটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবো।বলে একটা হাল্কা ধাক্কা দিল যার ফলে সাম্য কয়েক পা পিছিয়ে এল, ছেলেটার চোখ মুখে রাগ আর ঘৃণার অভিব্যক্তি স্পষ্ট।
ছেলেটার গলার আওয়াজ শুনে তাথৈ আরও অবাক হয়, এই আওয়াজ সে কদিন আগেই শুনেছে, মন্দিরের পিছনে বটগাছের তলায়, নিজেকে বিপদ বলে পরিচয় দিয়েছিল, এটা সেই ছেলেটা... কিন্তু গলার স্বরের থেকেও তাথৈএর যেটা দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সেটা হলো ছেলেটার মুখ, চশমা খোলার পরে ছেলেটার পুরো মুখটা দেখতে পাচ্ছে আর মুখের আদলটার তার অতি প্রিয় একজনের সাথে মিল আছে তার থেকেও যেটা তাথৈকে ভাবাচ্ছে সেটা হলো ছেলেটার পোশাক পরার ধরন, বুকের কাছে শার্টের একটা বোতাম খোলা, স্লিভদুটো কব্জির একটু উপর পর্যন্ত গোটানো এগুলো সব‌ই তার অতি পরিচিত অন্যান্যদের চোখে খুবই সাধারণ এগুলো, কিন্তু তাথৈএর চোখে এগুলো কোথাও যেন আলাদা, তার পরে ছেলেটার চশমা খোলার স্টাইল, মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ভাঁজ করে মধ্যমা এবং বুড়ো আঙুল দিয়ে চশমার ফ্রেমটা ধরে খুললো এভাবেই আরেকজনকে বহুবার চশমা খুলতে দেখেছে তাথৈ যার জন্য এতবছর সে অপেক্ষা করে আছে ,যাকে সবাই মৃত বললেও তার মন মৃত মানতে রাজী নয় তার অভয়।
সাম্য আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ওদের গ্ৰুপের আরও একটা ছেলে এসে ওকে টেনে বাইরে নিয়ে গেল, বৃষ্টি আগুনে দৃষ্টি দিয়ে বেরিয়ে গেল, শুধু তাথৈ যেতে যেতেও ছেলেটাকে দেখতে থাকে, ছেলেটা তখন এক‌ই ভাবে চশমার ফ্রেমটা ধরে চোখে পরে নিল। বাইরে এসে সাম্য গজরাতে লাগলো "আজ শালাকে ছাড়বো না, মেরেই ফেলবো, আমার গায়ে হাত দেওয়া" যে ছেলেটা সাম্যকে ধরে বাইরে নিয়ে এসেছিল সে বললো : দাঁড়া আরও ছেলে ডাকছি।
গ্ৰুপে আরো একটা মেয়ে ছিল সে বললো: কি দরকার, চল না অন্য কোথাও যাই।
সাম্য: না, ওকে শিক্ষা না দিয়ে যাবো না, কাল তাথৈএর জন্মদিন, এই রেস্টুরেন্টটা শহরের নামী রেস্টুরেন্ট তাই ওর জন্যই এখানে আসা, আর এখানেই ও খাবে।
তাথৈএর অবশ্য এসব কথা কানেও ঢুকছে না সে তখন অন্যমনস্ক হয়ে ওই অচেনা ছেলেটার কথা ভাবছে... কিন্তু ছেলেটা সত্যিই অচেনা কি?
একটু পরেই লাইন দিয়ে বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো বেরিয়ে এল সাথে দুজন স্যুট-বুট পরা, চোখে কালো চশমা দেওয়া লোক লোকদুটোর যে ভীষণ মাসল্ সেটা বোঝা যাচ্ছে আর সবার পিছনে ছেলেটা, আর তখনই চারটে বাইকে ৭-৮ জন মস্তান টাইপের ছেলে রেস্টুরেন্টের সামনে এলো ওদের দেখে সাম্য আর অপর ছেলেটা এগিয়ে গেল কিছু কথা হলো ওদের মধ্যে তারপর ওরা এগিয়ে এল। বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো তখন দুটো স্যুমো গাড়িতে উঠতে শুরু করেছে।
সাম্য হুংকার দিল: কি রে আমার হাত নাকি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিবি? তা এখন পালাচ্ছিস কেন? দম শেষ?
ছেলেটা একবার ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো কিন্তু ওর সাথে যে দুজন লোক এগিয়ে আসতে গেল, হাত তুলে ওদের থামিয়ে বললো: তোমরা প্রতিটা বাচ্চাকে সেফলি ওদের বাড়িতে পৌঁছে দাও।
কিন্তু বস্
যা বললাম করো, ওদের আমি হ্যান্ডেল করে নেবো, যাও।
ইয়েস বস। বলে বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে গাড়িতে তুলে চলে গেল, এবার ছেলেটা সাম্যদের দিকে ফিরলো একই ভাবে চোখ থেকে আবার চশমাটা খুলে শার্টের পকেটে রেখে বললো: আপনারা সত্যিই লড়াই চান?
লড়াই নয় বে আজ তোর হাত-পা ভেঙে এখানেই ফেলে রাখবো।
রেস্টুরেন্ট কিন্তু এখন খালি আছে আপনারা গিয়ে নিজেদের টাইম এনজয় করতে পারেন।
মস্তান ছেলেদের একজন বললো: কেন বে? ভয় লাগছে?
না, কিন্তু আমি লড়াই চাইছি না তাই।
এবার সাম্য তাথৈকে দেখিয়ে বললো: ওই মেয়েটাকে দেখছিস? ও আমার গার্লফ্রেন্ড তাথৈ, ওকে আমি খুব ভালোবাসি ওকে ট্রিট দিতে এনেছিলাম কিন্তু তুই ওর ইভিনিংটা নষ্ট করেছিস, এর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে। বলে সাম্য আক্রমণ করলো কিন্তু সাম্যর ঘুষিটা ছেলেটা এড়িয়ে গেল, এবার বাকি ছেলেগুলো‌ও একসাথে আক্রমণ করলো। বৃষ্টি, তাথৈ, সুস্মিতা এবং ওদের সাথে থাকা অপর মেয়েটা দেখতে থাকলো এই অসম লড়াই একদিকে সাম্য আর ওর ৭-৮ জন বন্ধু আর অপরদিকে একা ওই অচেনা ছেলেটা, সাম্য আর ওর বন্ধুরা যেটা করছে সেটাকে লড়ার চেষ্টা বলা গেলেও ছেলেটা যেটা করছে সেটাকে খেলা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না সে অনায়াসে প্রতিটা প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতিটা আঘাত এড়িয়ে যাচ্ছে নয়তো হিত দিয়ে প্রতিহত করছে বদলে কারো হাত ধরে একটু মোচড় দিয়ে গালে থাপ্পড় মারছে বা কাউকে পিঠে ধাক্কা মেরে ফেলে দিচ্ছে তো কাউকে ঠেলে আরেক ছেলের গায়ে ফেলে দিচ্ছে, কিন্তু কাউকেই গুরুতর আঘাত করছে না একটু পরেই সাম্য আর ওর বন্ধুরা এখানে ওখানে ছিটকে পরে গেল, ছেলেটা তখন সবাইকে বললো: আশা করি এবার শখ মিটেছে?
উত্তরে সাম্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো: তোকে আজ খুন করবো। বলে ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেল কিন্তু ছেলেটা সাম্যর ঘুষিটা হাত দিয়ে প্রতিহত করে সাম্যর মুখে প্রথমবার ঘুষি মারার জন্য উদ্যত হতেই তাথৈ বলে উঠলো: না... তারপর ছেলেটার সামনে এসে হাত জোড় করে বললো: প্লিজ ওকে আর ওর বন্ধুদের ছেড়ে দিন, এখানে রক্তারক্তি করবেন না, আমি ওদের হয়ে ক্ষমা চাইছি, আসলে কাল আমার জন্মদিন তাই ওরা আমার জন্য একটা ট্রিটের ব্যবস্থা করেছিল, আর সেটা ব্যাহত হ‌ওয়ায় একটু বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছে, প্লিজ ওকে আঘাত করবেন না।
ছেলেটা এবার সাম্যকে ছেড়ে বললো: মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে। তারপর আবার পকেট থেকে চশমা নিয়ে চোখে পরে নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল, তাথৈ একটু পিছনে গিয়ে বললো: আপনি কে? মানে আপনার নামটা?
প্রশ্নটা শুনে ছেলেটা গাড়ির দরজা খুলতে যাচ্ছিল প্রশ্ন শুনে ঘুরে দাঁড়ালো, তাথৈ আবার বললো: প্লিজ এখন এটা বলবেন না যে আপনার নাম বিপদ, আপনার আওয়াজ শুনে চিনলাম, সেদিন মন্দিরের পিছনে এই পরিচয় দিয়েছিলেন, আজ আসল নামটা বলবেন কি?
ছেলেটা বললো: বিপদ পরিচয়টাই থাকুক না, সেদিন আপনি আমার জন্য বিপদে পড়েছিলেন আর আজ আপনার বয়ফ্রেন্ড ও তার বন্ধুরা বিপদে পড়লো, কাজেই আপনাদের জন্য ওই পরিচয়টাই থাকুক।
তাথৈ: প্লিজ আপনার আসল নামটা বলুন।
ছেলেটা: আপনার বয়ফ্রেন্ড হয়তো পছন্দ করছে না যে আপনি তাকে ছেড়ে আমার সাথে কথা বলছেন, আর তাছাড়া আমার পরিচয় জেনে আপনার কোনো লাভ‌ও নেই কাজেই আপনার বয়ফ্রেন্ডের কাছে যান।
তাথৈ বলতে যাচ্ছিল যে সাম্য ওর বয়ফ্রেন্ড নয় কিন্তু তার আগেই ছেলেটা গাড়িতে উঠে দরজার বন্ধ করে দিয়েছে, তাথৈ আর কিছু বলতে পারলো না, ছেলেটা চলে গেল, তাথৈএর মুখ থেকে একটা নাম উচ্চারিত হলো.... অভয়।
রাতে সাম্যর গাড়ি করেই তাথৈ আর বৃষ্টি বাড়ি ফিরলো, গাড়ি গেটে থামতেই তাথৈ গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে ভিতরের দিকে হাঁটা দিল, সাম্য একটু অবাক হলো,একটু ক্ষুন্ন‌ও হলো, কিন্তু বৃষ্টি এক ছুটে গিয়ে তাথৈকে ধরে বললো: কি রে তুই সাম্যকে ইগনোর করে চলে এলি কেন? ও বেচারা তোর সাথে একটু কথা বলবে বলে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর সাথে আবার কি কথা বলবো?
কেন? কাপলস্‌রা যা বলে
তাথৈ অবাক হয়ে বলে: মানে? এসব কি বলছিস তুই?
আচ্ছা বাবা ঠিক আছে তুই একা গিয়ে কথা বল, আমি ভিতরে যাচ্ছি।
এবার তাথৈ জোর গলায় বললো: তোর যা ইচ্ছা তাই কর, কিন্তু ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই আর আমরা কাপলস্ ন‌ই। বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল, বৃষ্টি ঘুরে দেখে সাম্য এগিয়ে এসে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে জিজ্ঞাসা, বৃষ্টি ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বললো: ও বোধহয় তোর আজকের হারটা সহ্য করতে পারেনি তাই রেগে আছে।
তাথৈ নিজের রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল তারপর অভয়ের ছবিটা বার করে বলতে লাগলো: আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো ,আজকে ওটা তুমিই ছিলে আমি জানি, তোমাকে চিনতে আমার ভুল হবে না... কিন্তু তুমি নিজের পরিচয় দিলেনা কেন? তাহলে কি তুমি আমাকে চিনতে পারোনি? না, সেটা নয় আমি যখন তোমাকে চিনতে পেরেছি তখন তুমিও আমাকে চিনতে পেরেছো তাহলে? তাহলে কেন নিজের পরিচয় না দিয়ে এড়িয়ে গেলে আমাকে?
হঠাৎ তাথৈএর মনে পরলো ছেলেটা সাম্যকে তাথৈএর বয়ফ্রেন্ড বলছিল তাথৈ আবার ছবিটাকে বলতে শুরু করলো: তুমি কি এটা ভেবেছো যে আমি তোমাকে ভুলে সাম্যকে.. সেই জন্যেই নিজের পরিচয় দিলে না, সেদিন‌ও নিজের পরিচয় লুকিয়েছিলে... তুমি এটা কি করে ভাবলে যে আমি তোমাকে ভুলে যাবো? না.. তুমি যদি আমাকে ভুল বুঝেও থাকো তাহলে সেটা ভাঙাবো আমি, তার আগে তোমাকে খুঁজে বার করতে হবে।
তাথৈ ফোন তুলে একটা নাম্বারে কল করলো: হ্যালো মিস্টার গুপ্ত?
বলুন ম্যাডাম।
আপনাকে একজনের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে।
কে?
সে এখন কি নাম ব্যবহার করে জানিনা, তাকে একটা রেস্টুরেন্টে দেখেছি।
কিন্তু..
আমি রেস্টুরেন্টের অ্যাড্রেস আপনাকে টেক্সট করছি আপনি যান আমি ম্যানেজারকে বলে দেবো সে আপনাকে ফুটেজ দেখিয়ে দেবে, তার সাথে অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েও এসেছিল।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
ফোন রেখে আবার ছবিটা হাতে নেয় তাথৈ, বলতে থাকে: এবার আমি তোমাকে খুঁজে বার করবোই অভয়, যতই নিজেকে লুকিয়ে রাখো.. আর তারপর আর তুমি আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না।

আবছা অন্ধকার ঘরে একটা ছেলে সামনে ঝোলানো পাঞ্চিং ব্যাগে অবিরাম পাঞ্চ মেরে যাচ্ছে, একটু দূরে দেয়ালে একটা ছবি লাগানো আছে যার উপর একটা লাইট ফোকাস করা আছে তাথৈএর ছবি। ছেলেটা বেশ খানিকক্ষণ ধরে পাঞ্চ করে গেল এবং সেটা বক্সিং গ্লাভস ছাড়াই মারছে, একটু পরে থেমে পাঞ্চিং ব্যাগটা ধরে তাতে মাথা ঠেকিয়ে হাঁফাতে লাগলো।
খানিকক্ষণ এইভাবে থেকে ছবিটার সামনে গেল এবং ছবিটাকেই উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো: কাল তোমার জন্মদিন, আরও একটা বছর কেটে গেল, তুমি আর তোমার পরিবার সবকিছু ভুলে অনেক এগিয়ে গেছো কিন্তু আমি পারিনি ১৬ বছর ধরে প্রতিশোধের জ্বালায় জ্বলছি, আজ তোমাকে আবার দেখলাম তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে, তখন ছোটো ছিলাম বুঝিনি তোমাকে আলাদা ভেবেছিলাম তাই আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা নিয়ে খুব সহজেই খেলা করেছিলে, এখন বুঝি তুমিও তো ওই ভট্টাচার্য পরিবারের‌ই মেয়ে, আলাদা হবেই বা কি করে?
কিন্তু আমি কেন তোমার কথা ভাবছি? তুমি তো বেশ সুখেই আছো সাম্যর সাথে তাই থাকো অভয় আর কোনোদিন তোমার জীবনে তোমার আর সাম্যর মাঝে আসবে না, কিন্তু যেটার জন্য আমি এসেছি সেই প্রতিশোধ আমি নেবোই।
হটাৎ ফোন বেজে উঠলো, কালো মূর্তিটা ফোনটা কানে ধরে ছোট্ট "হুম" শব্দ করলো, তারপর ওদিকের কথা শুনে ফোনটা রেখে আবার ছবির সামনে এলো,বললো: কাল তোমার জন্মদিন আমার তরফ থেকেও গিফ্ট থাকবে তবে সেটা বোধহয় তোমাদের কারোর‌ই পছন্দ হবে না বিশেষ করে বীরেন ভট্টাচার্যের।

কপালে একটা চুম্বনের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো তাথৈএর, চোখ মেলে দেখে সামনে তার মা সরমা দেবী বসে আছেন এবং একটু আগে তিনিই তাথৈএর কপালে স্নেহচুম্বন দিয়েছেন।
সরমা দেবী: শুভ জন্মদিন তাথৈ।
থ্যাংক ইউ মা।
ভালো থাক, সুস্থ থাক তোর সব মনোবাসনা পূর্ণ হোক।
এবার হবে, হবেই।
পুরো ভট্টাচার্য পরিবারে সাজো সাজো রব, বাড়ির সবার প্রিয় মেয়ে তাথৈএর জন্মদিন আজ,আত্মীয়রা আসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই, সবাই তাথৈকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সন্ধ্যা হতেই অন্যান্য অতিথিরা আসছে, তাথৈ আর বৃষ্টির বন্ধুরাও আসছে, বিরাট বড়ো কেক আনা হয়েছে, তাথৈ নতুন চুরীদার পাজামা পরেছে অসাধারণ সুন্দর লাগছে তাকে, কিন্তু তার মুখে হাসি নেই, কেউ জন্মদিনের অভিনন্দন জানালে একটা শুকনো হাসি হাসছে শুধু।
"হ্যাপি বার্থডে টু ইউ" একটু অন্যমনস্ক হয়ে ছিল তাথৈ, অভিনন্দন টা পেয়ে তাকিয়ে দেখে সামনে ৬ ফুটের উপরে লম্বা এক মাসলম্যান দাঁড়িয়ে আছে। সে উত্তর দিল: থ্যাংক ইউ।
পাশ থেকে বৃষ্টি বললো: তোর এখন আসার সময় হলো দাদা?
সরি, একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।
ওদিকে দেখ বৌদি কেমন একা হয়ে আছে।
রকি একবার আড়চোখে বিদিশাকে দেখে নিল কিছু বললো না। কেক কাটার পরে একসময় বৃষ্টি তাথৈকে টেনে বাড়ির ছাদে নিয়ে গেল, তাথৈ কি দরকার জিজ্ঞেস করায় বললো "চল না গিয়েই দেখ"। ছাদে গিয়ে দেখে সেখানে সাম্য দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টি বললো: সাম্য এই নে কি বলবি বলছিলি, তোর কাছে কিন্তু ধার র‌ইলো। বলে বৃষ্টি নীচে নেমে গেল।
"রঘু আর লাল্টুকে খুঁজে পেলি রকি?" তাথৈএর জন্মদিনের পার্টির মাঝেই ভাগ্নেকে প্রশ্ন করেন বীরেন ভট্টাচার্য।
না মামা, এখনো পাইনি তবে খোঁজ চলছে।
ওদের খুঁজে বার করা দরকার, ওরা কারো কাছে মুখ খুললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
কিন্তু ওরা যদি নিজেরাই পালিয়ে যায়? শেষের প্রশ্নটা করেন ধীরেন ভট্টাচার্য।
হুমমম, এখন সেটাই মনে হচ্ছে সরকার মরার পরে অনেকদিন আর কিছু হয়নি,এখন আবার। গম্ভীর মুখে বলেন বীরেন বাবু।
কিন্তু ওরা পালাবে কেন দাদা?
কারণ ওরা যা চাইছিল তা পেয়ে গেছে হয়তো...
কি মামা?
তুমি জানোনা? চাপা ধমক লাগান বীরেন বাবু, তারপর একটু থেমে বলেন: ওগুলো ওখান থেকে সরাতে হবে, ওরা ওগুলোর খবর জানে, খুব সম্ভবত ওগুলোর জন্যই পালিয়েছে।
তাইতো, ওগুলোর কথা মাথাতেই আসেনি।
কিন্তু মামা ওরা অনেক বছর ধরে আছে এর আগে কখনো এমন কিছু করেনি যাতে ওদের...
কখনো করেনি বলে কি এখনো করবে না? ওরা শুধু ওটার খবর জানে তাই নয় অনেক বছর থাকার দরুন আরও অনেক খবর জানে সেগুলো যদি কারো কাছে ফাঁস করে দেয় কি হবে ভেবিছিস রকি? না, আর সময় নষ্ট করা যাবে না এক্ষুনি যেতে হবে ধীরেন, আজ রাতেই ওগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে, ড্রাইভারকে গাড়ি বার করতে বল, আগে ওগুলো সরাই তারপর কাল বাকী কাজ সারবো।
একটু পরেই তিনজন বেরিয়ে গেল, কিন্তু তিনজনের কেউ লক্ষ্য করলো না যে তিনজনের এই কথোপকথন আরেকজন শুনছিল...... বিদিশা।
তিনজন বেরিয়ে যেতেই বিদিশা একটু আড়ালে গিয়ে একটা ফোন করে একদম আস্তে আস্তে বলে.... "হ্যাঁ, শোনো বীরেন ভট্টাচার্য, তার ভাই আর রকি কোথায় যেন গেল, কিছু একটা জিনিস লুকোনো জায়গা থেকে সরানোর জন্য, যেটার খোঁজ জানে ওই দুজন"।

ছাদে তাথৈকে সাম্যর সাথে রেখে বৃষ্টি নীচে চলে গেল, তাথৈ এবার একটু রাগী স্বরে বললো: এসবের মানে কি সাম্য?
আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
কি? আর এখানে এভাবে কেন?
আসলে যেটা বলতে চাই সেটা..
কি বলতে চাস তাড়াতাড়ি বল।
আই লাভ ইউ।
কি? কি বললি? সাম্যর কথাটা ঠিকমতো অনুধাবন করতে পারে না তাথৈ।
আই লাভ ইউ তাথৈ।
একটুক্ষণ সময় নিল তাথৈ উত্তরটা মনে মনে সাজিয়ে নিল বোধহয়। তাথৈকে চুপ থাকতে দেখে সাম্য আবার বললো: কিছু বলছো না? তবে কি তোমার দিক থেকেও সম্মতি বলে ধরে নেবো?
না, গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয় তাথৈ তারপর আবার বলে: আমি তোকে কোনোদিন সেভাবে দেখিনি ভাবিওনি, তোকে আমি বন্ধু হিসেবেই দেখেছি তার বেশি কিছু নয়।
কিন্তু কেন? আমার মধ্যে কি খারাপ আছে তাথৈ? আমি সেই ছোটোবেলা থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।
কিন্তু আমি বাসি না, আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।
কে সে? এবার সাম্যর গলাতেও রাগের আভাস।
তোকে বলার কোনো প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতা কোনোটাই নেই আমার। বলে ঘুরে চলে যাচ্ছিল তাথৈ কিন্তু সাম্য দৌড়ে তাথৈএর সামনে এসে ওর পথ আটকায়, ওর মুখে এখন জিঘাংসার ছাপ সে বললো: কেন? কেন তুমি বারবার আমাকে রিফিউজ করো, কেন? কলেজে থাকতেও তুমি আমাকে ছেড়ে ওই ভিখিরির কাছে যেতে.. কি যেন নাম ছিল হ্যাঁ অভয়, ওই ভিখিরি অভয়ের কাছে যেতে আর আজ‌ও তুমি আমাকে..
চুপ.. গর্জে ওঠে তাথৈ তারপর সমান তেজের সাথে বলে "অভয়ের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না"
সাম্য কিছুক্ষণ চুপ করে তাথৈএর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলে: অভয়... তুমি এখনো ওই ভিখিরিকে ভালোবাসো? ওই ভিখিরির জন্য তুমি আমাকে রিফিউজ করছো?.... তারপর তাথৈএর একটা হাত ধরে তাথৈকে কিছু বোঝানোর স্বরে বলে: তাথৈ তাথৈ  ওই অভয় তোমার যোগ্য কোনোদিন ছিল না, আর তাছাড়া ও এখন আর বেঁচে নেই.. তুমি একবার আমাকে বোঝার চেষ্টা করো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, ওই অভয় তোমাকে কি দিয়েছে যার জন্য ও মরে যাওয়ার পরেও তুমি ওকে ভালোবাসছো? প্লিজ তাথৈ প্লিজ আই লাভ ইউ।
তাথৈ গম্ভীর স্বরে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে বলে: আমার হাত ছাড় সাম্য, দেখ এইসব চিন্তা বাদ দে, তুই অন্য কোনো মেয়ে দেখ..
আমার অন্য মেয়ে চাই না, আমার তোমাকে চাই.. তাথৈ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি খুব...।
সাম্য হাত ছাড়, আমার হাতটা ছাড়।
না ছাড়বো না আগে বলো তুমিও আমাকে ভালোবাসো, বলো..।
সাম্য... এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় তাথৈ তারপর সাম্যর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে তারপর বাঘিনীর মতো ফুঁসতে ফুঁসতে বলে: পরের বার আমার হাত ধরা তো দূর, ধরার কথা ভাবার আগে এই থাপ্পড়টা মনে রাখবি, আমি তোকে কোনোদিন‌ও ভালোবাসবো না কারণ আমি তোর থেকে অনেক অনেক ভালো ছেলেকে ভালোবাসি...এবং সেটা অভয়, আর আমি চিরকাল ওকেই ভালোবেসে যাবো, তা ও বেঁচে থাকুক কি না থাকুক।
থাপ্পড়টা শুধু গালে না পুরো শরীরে জ্বালা ধরায় সাম্যর এবার সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে: কিন্তু কোথায় অভয়? ও এখন কোথায়? মরে গেছে... আর ওকে কে মেরেছে জানো?
তাথৈ অবাক হয়, জিজ্ঞেস করে: কে মেরেছে?
তোমার পরিবারের লোকেরা, তোমার আদরের জ্যেঠুমণি ও তোমার বাপি.... হিংস্র কণ্ঠে উত্তর দেয় সাম্য।
মাথায় বজ্রপাত হলো যেন তাথৈএর, হতবুদ্ধি হয়ে যায় কোনোমতে বলে: মিথ্যে কথা, মিথ্যে কথা বলছিস তুই...
তুমি না মানতে চাও মেনো না কিন্তু এটাই সত্যি তোমার পরিবার ওর আর ওর পরিবারের সাথে যা করেছে তাতে যদি ও বেঁচেও থাকতো তাহলেও তোমাকে ঘেন্না করতো, তোমার মুখ পর্যন্ত দেখতে চাইতো না। বলে হনহন করে চলে গেল, আর তাথৈ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে বীরেন ভট্টাচার্য ,ধীরেন ভট্টাচার্য আর রকিকে নিয়ে একটা নীল গাড়ি তীব্র গতিতে এগিয়ে চলেছে রাতের বেলা এমনিতেও রাস্তায় গাড়ি চলাচল কম কাজেই গাড়ির স্পিড একটু বেশীই চড়েছে, একটা অন্ধকার গোরস্থানের গেটের সামনে এসে গাড়ি দাঁড়ালো, তিনজন গাড়ি থেকে নামলেন পিছনে আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়াতে সেটা থেকে জগা আরও কয়েকজন নামলো, গোরস্থানের আশপাশটা বেশ ফাঁকা লোকজন তেমন নেই আর এই রাতে তো থাকার কথাও নয়।
গোরস্থানের গেটে লোক নেই দেখে অবাক হন বীরেন বাবু এখানে নিজে প্রভাব খাটিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাহারার বন্দোবস্ত করেছেন, অবশ্যই নিজের বিশ্বস্ত লোকদের রেখেছেন তারা জানেনা এখানে কি আছে বা কেন এখানে পাহারা দিতে হবে,কিন্তু তারা এখন নেই অগত্যা নিজেরাই গেট খুলে এগিয়ে যান, কিছুদূর এগিয়ে বামে তারপর কিছুটা গিয়ে আবার ডানে বেঁকে যেখানটায় আসেন সেখানে সারিবদ্ধ ভাবে কবর... প্রত্যেকের হাতে হাই পাওয়ারের টর্চ জায়গাটা থেকে অন্ধকার দূর করেছে... কিন্তু সেই আলোতে সামনে যা দেখলেন বীরেন ভট্টাচার্য তাতে তার মুখের অন্ধকার কোনো কিছুতেই দূর হবে বলে মনে হয় না, চেনার জন্য কয়েকটা কবরে চিহ্ন দিয়ে রেখেছিলেন এবং চিহ্ন দেওয়া প্রতিটা কবর খোঁড়া হয়েছে আর সেগুলোর মধ্যে যা রাখা ছিল সেগুলো নেই কে বা কারা অলরেডি সাফ করে দিয়েছে, তার বদলে তার বিশ্বস্ত পাহারাদার দের লাশ পরে আছে।
হটাৎ দলের গুণ্ডাগোছের লোক আরো একজনকে ধরে আনলো "দাদা দাদা, এই দেখুন একে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখেছিল"
কে করেছে এসব? জিজ্ঞেস করে জগা
লোকটা মিনমিন করে উত্তর দেয়: কজন লোক, মুখ দেখিনি কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল তবে ওরা রঘু আর লাল্টুর নাম নিচ্ছিল,আমার হাত-পা বেঁধে মুখে একটা কাপড় ঢুকিয়ে বেঁধে দেয় যাতে আওয়াজ না করতে পারি, আমাকেও মেরে ফেলতো কিন্তু..
কিন্তু কি?
ওদের মধ্যে একজন আপনাকে একটা কথা বলতে বলে গেছে, বলেছে এইজন্যই আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে।
কি কথা?
না মানে.. ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো লোকটা।
কি কথা? আবার গর্জে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য
বলেছে যে "বীরেন ভট্টাচার্য এলে বলবি ওর দিন শেষ হয়ে আসছে, খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যু ওর সামনে এসে দাঁড়াবে ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক"।
গম্ভীর আর রাগী মুখে বললেন: যেভাবেই হোক ওদের দুজনকে আমার চাই... ওদের পরিবারের প্রত্যেককে ধরে আন... ওরা কোথায় আছে জিজ্ঞেস কর না বললে সবকটাকে শেষ করে দে।

ধীরে ধীরে চোখ মেলার চেষ্টা করে রঘু, সারা শরীরে অসম্ভব যণ্ত্রনা প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে বর্তমানে ওদের দুটো হাত একসাথে উপরে করে বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে কিন্তু শরীরটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সামনে ঝুঁকে পড়েছে, একটা হাল্কা গোঙানির শব্দ পেয়ে পাশে তাকানোর চেষ্টা করে ঘাড়টা অল্প ঘুড়িয়ে দেখে এক‌ইভাবে লাল্টুকেও বেঁধে রাখা হয়েছে এবং ওর মুখ থেকেই গোঙানির শব্দ আসছে, দুজনের কারো শরীরেই পোষাক নেই। একটু একটু করে কদিন আগের রাতের ঘটনা মনে পরে রঘুর।

একদিন আগের রাতে
রঘু আর লাল্টু দুজনেই গিয়েছিল শহরের একটা বেশ্যাপল্লীতে,ওখানে বিজলীর গভীর ক্লিভেজ, প্রায় পুরো উন্মুক্ত পিঠ, চর্বিযুক্ত পেট আর সুগভীর নাভির প্রদর্শনের নাচ দেখছিল ,নেশাটাও হয়েছে জব্বর এমন সময় লাল্টু একটু উঠে বাইরে যায় ইয়ে করতে,কিছুক্ষণ পরে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসে বলে: রঘুদা রঘুদা বাইরে একটা জব্বর মাল দেখলাম, বিরাট বড়ো বড়ো দুটো জাম্বুরা বুকে, পাছার দাবনাদুটো‌ও বড়ো।
কি বলছিস বে? 
ঠিকই বলছি দাদা চলো তুমি দেখবে, এর আগে দেখিনি মাগীকে...
দুজনে বাইরে আসে, বড়ো দুধ‌আলা মাগীদের প্রতি দুজনেরই লোভ। বাইরে এসে লাল্টু যার দিকে ইশারা করে তাকে দেখে রঘু বুঝতে পারে যে লাল্টু বাড়িয়ে বলেনি, বছর ৩৫ হবে হয়তো মাগীর, একটা কালো স্লিভলেস ব্লাউজ, একটা কালো রঙের পেটিকোট পরে দাঁড়িয়ে আছে খদ্দেরের আশায়, ব্লাউজটা কোনোমতে ধরে রেখেছে জাম্বুরাদুটো যে কোনো সময়ে ব্লাউজ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে, চর্বিযুক্ত তুলতুলে পেট,একটু মেদ আছে, গভীর নাভি হ ওরা দুজন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো কিছুক্ষণ।কিন্তু এ কি ওরা দুজন এগোতেই মাগীটা যেন কোথায় হাঁটা লাগালো।
"না আজ এই মাগীকে ছাড়া যাবে না চল আজকে এই মাগীকেই চুদবো" বলে টলতে টলতে পিছু নিল রঘু সাথে লাল্টুও গেল।
এই মাগী দাঁড়া... এই ছিনাল কোথায় যাচ্ছিস? টলতে টলতে দুজনে পিছু নেয় খানিক আগে দেখা মহিলার, কিন্তু মহিলা দাঁড়ানোর বা ফিরে দেখার প্রয়োজনটুকুও মনে করে না, কথা বলা তো দূরস্ত, সে সমানে হাঁটতে থাকে ক্রমে সে বেশ্যাপল্লী থেকে কিছুটা দূরে একটা নির্জন অন্ধকার জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পরে আর তার পিছু পিছু আসে মাতাল রঘু আর লাল্টু।
"এই তো মাগী দাঁড়িয়েছে, এত ছিনালি কেন মাগী? খুব রস না? আজ তোর সব রস বার করবো।" কথাগুলো জড়ানো কণ্ঠে বলে রঘু, ঠাণ্ডা কণ্ঠে উত্তর দেয় মহিলা: আয় তবে... দেখি তোদের দম।
রঘু আর লাল্টু টলতে টলতে এগোতে যেতেই পিছন থেকে দুজন লোক ওদের ধরে ঘাড়ের কাছে ইঞ্জেকশন দিয়ে একটা তরল পুশ করে সঙ্গে সঙ্গে দুজন এলিয়ে পরে। মোটর গাড়ি এগিয়ে আসে তার থেকে কটা লোক নেমে এসে পিছনে ডিক্কি খোলে তাতে দুটো অজ্ঞান বডি তোলা হয়। মহিলা এতক্ষণ দেখছিল এবার একজনকে বলে: আমি আমার কাজ করেছি এবার আপনাদের পালা.. আশা করি আপনাদের বস নিজের কথা রাখবে?
উত্তরে লোকটা কাউকে ফোন করে তারপর বলে: বস্ উসমান বলছি, কাজ হয়ে গেছে আর..
এটুকু বলে ফোনটা মহিলার হাতে দিয়ে বলে বস্ কথা বলতে চায়, মহিলা ফোনটা কানে দিয়ে "হ্যালো" বলতেই ফোনের ওপার থেকে কথা আসে "গুড জব"।
এবার আপনি আপনার কথা রাখুন।
আপনি ওদের সাথে গাড়িতে উঠুন, চিন্তা নেই ওরা আপনাকে যেখানে নামাবে সেখানে আমার লোক থাকবে বাকি রাস্তা সে নিয়ে যাবে।
আমি কোথায় যাচ্ছি?
এই শহর থেকে দূরে একটা অনাথ আশ্রমে, যেখানে কিছু প্রতিবন্ধী বাচ্চা ছেলে-মেয়ে থাকে তাদের দেখাশোনা করবেন আশা করি এতে আপনার আপত্তি নেই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ফোন কেটে উসমানকে ফেরত দিলে উসমান একটা শাড়ি দেয় মহিলাকে, সেটা পরে গাড়িতে উঠলে গাড়ি স্টার্ট নেয়।

Good
Like Reply
(07-12-2022, 08:05 AM)Monen2000 Wrote: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার রিভিউ এবং সাজেশনের জন্য।
'... আমার বাচ্চা' বা 'প্রতিশোধ' কোনোটার‌ই  ২য় পার্ট লেখার ব্যাপারে এখনও কিছু ভাবিনি যদি ভাবি তাহলে অবশ্যই আপনার সাজেশনগুলো‌ও মাথায় রাখবো।

হ্যাঁ ফুটবল দেখি ক্লাব ও দেশ দুটোরই দেখি তবে কাকে সাপোর্ট করি সেটা থাক কারণ মিল না হলে আবার একটু ক্ষুন্ন হতে পারেন  Big Grin 
প্রতিশোধ ২ এর আপডেট নেই ইনফ্যাক্ট আমি বন্ধ‌ই করে দিয়েছিলাম লেখা কারণ এই ফোরামে অনেক ভালো ভালো লেখকের অসাধারণ সব লেখা আছে তাদের সামনে আমার নিজের লিখতে সংকোচ হচ্ছিল তবুও কয়েকজন বন্ধু পাঠকের  উৎসাহে আবার লেখা শুরু করেছি সেটা শুরু করে এখানে নোটিফিকেশন দিয়ে দেবো, আশা করি তখনও পাশে থাকবেন।  Namaskar
"প্রতিশোধ ২ এর আপডেট নেই ইনফ্যাক্ট আমি বন্ধ‌ই করে দিয়েছিলাম লেখা কারণ এই ফোরামে অনেক ভালো ভালো লেখকের অসাধারণ সব লেখা আছে তাদের সামনে আমার নিজের লিখতে সংকোচ হচ্ছিল... Daarun bolechhen dada, kintu nijeke chhoto kore dekhchhen keno? Be smart to contunue writing and prove you are one of the best.
Like Reply
(18-09-2022, 01:01 PM)Monen2000 Wrote:
                            অষ্টম পর্ব

কতক্ষণ পরে জানে না মুখে জলের ঝাপটা পেয়ে জ্ঞান ফেরে রঘু আর লাল্টুর, মদের নেশার অভ্যাস আছে বলেই হয়তো মাথাটা পরিষ্কার থাকে চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি হচ্ছে, ওরা কোথায়? সাথে এটাও অনুভব করে যে ওরা বন্দী ওদের দুটো হাত মাথার উপর বেঁধে রাখা হয়েছে, কিন্তু কেন সেটা জানেনা কিছু বলার আগেই ওদের চারিপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক ওদের দুজনকে পাঞ্চিং ব্যাগ ভেবে নেয়... ঘুষিগুলো এলোপাথাড়ি বুকে পেটে তলপেটে, পিঠে, কাঁধেহ কোমরে, পরতে থাকে কয়েকটা ঘুষিতো চোয়ালে আর থুতনিতে এসে লাগে, বেশকিছুক্ষণ একটা দল হাতের সুখ করে নেয় ওদের পিটিয়ে তারপর ওরা সরে গেলে আরেকদল এসে এক‌ইভাবে পেটানো শুরু করে কতক্ষণ ঠিক জানেনা কিন্তু একসময় দুজনেই আবার জ্ঞান হারায়, কতক্ষণ পরে ওরা জানেনা একসময় আবার জ্ঞান ফেরে, এবার পুরো শরীরে অসম্ভব যণ্ত্রনা অনুভব করে, চোখে আবছা ভাব কিছুক্ষণ পরে স্পষ্ট না।দেখতে পেলেও বুঝতে পারে সামনে কিছুটা দূরে চেয়ারে একজন বসে আছে তার উদ্দেশ্যেই কোনোমতে গোঙাতে গোঙাতে রঘু বলে: তোরা কারা... আমাদের এখানে এনেছিস কেন?? আমরা.. আমরা কে জানিস?
উত্তরে আরও একটা ঘুষি সজোরে এসে রঘুর চোয়ালে লাগে, এত কিছুর পরেও তেজ কমে না রঘুর বলে: কি চাস তোরা? বল কি চাস?
তুই কি দিতে পারবি? গম্ভীর গলায় কছ যেন বলে কথাটা ঠিক ঠাহর করতে পারে না রঘু।
আমি কিছু জানিনা, কিছু জানিনা।
তোর কাছে তো কিছু জানতে চাইনি..... আসলে তোকে টর্চার করে মারতেই এনেছি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তুই কিছু জানিস....
আমি কিছু জানিনা, কিছু জানিনা। আবার গোঙাতে গোঙাতে বলে রঘু,পাশে তখন চুপচাপ হাঁফাচ্ছিল লাল্টু, কোনোমতে চোখদুটো টিপে ভালো করে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করে লাল্টু, তখনই একটা জিনিস লক্ষ্য করে আর করতেই ভয়ে ওর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, ওরা দুজনেই সম্পূর্ণ উলঙ্গ আর দুজনের পেনিসে একটা তার লাগানো আছে এতক্ষণ পুরো শরীরের ব্যাথার জন্য আলাদা করে কোনো কিছু অনুভব করেনি কিন্তু এখন দেখলো পেনিসে লাগানো তারটা  একত্রে একটা কারেন্টের কানেকশনের সখথে যুক্ত মাঝে কিছুদূর চেয়ারে একজন বসে আছে তার পায়ের কাছে সুইচ জাতীয় একটা জিনিস বুঝতে বাকি র‌ইলো না যে ওই সুইচে চাপ দিলেই ইলেকট্রিক শক লাগবে ওদের.....
তো সোজাসুজি বলবি নাকি......? আবার গম্ভীর গলায় প্রশ্ন আসে।
বললাম না আমি কিছু জানিনা, আমাকে মেরে ফেলতে এনেছিস তো, মেরে ফেল।
তোদের এত সহজে মারবো বলে তো আনিনি। এইসময় একজন এগিয়ে এসে রঘুর পায়ের কাছে বসলো তারপর একটা সাঁড়াশি নিয়ে রঘুর দু পায়ের দুটো বুড়ো আঙুলের নখ এক হ্যাঁচকা টানে উপড়ে নিল, যণ্ত্রনায় চিৎকার করে উঠলো রঘু।
এবার বলবি? গম্ভীর গলায় আবার প্রশ্ন আসে।
না, কোনোমতে যণ্ত্রনাটা সহ্য করে বলে রঘু।
এবার উপরে বাঁধা দুহাতের দুই বুড়ো আঙুলের নখ‌ও উপড়ে নিল, আবারও একটা চিৎকার শোনা গেল।
এবার?
না, কিছু জানিনা।
রঘু যতটা সাহসী আর শক্ত লাল্টু ততটা নয়, এতদিন তারা অন্যকে টর্চার করেছে কিন্তু কেউ তাদের স্পর্শ পর্যন্ত করেনি আর আজ.... রঘুর অবস্থা দেখে সে অর্ধেক ভয়ে আধমরা হয়ে গেছে, এবার সভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে চেয়ারে বসা লোকটা আর কিছু না বলে পায়ের কাছে সুইচটায় চাপ দিল আর সঙ্গে সঙ্গেই দুজনে পুরুষাঙ্গে তীব্র ইলেকট্রিক শক্ অনুভব করলো, যা ক্রমে তাদের পুরো শরীরে ছড়িয়ে গেল, কয়েক সেকেন্ড তারপর থেমে গেল, এরপর কয়েকমিনিট কোনো কিছু হলো না, তারপর আবার সুইচে চাপ এবং আবার শক্, এবার আগের থেকে কয়েকসেকেণ্ড বেশি তারপর আবার থেমে গেল।
শক খেয়ে রঘু আর লাল্টু দুজনেই আনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে গেল, এবার গম্ভীর গলায় ব্যাঙ্গাত্মক আওয়াজ এল: আমি এটা অনেকক্ষণ করতে পারি কিন্তু তোরা কি সহ্য করতে পারবি?
কোনোরকমে গোঙাতে গোঙাতে রঘু বললো: তোর যা খুশি কর কিন্তু...
কথাটা শেষ করতে পারলো না কারণ আবার শক্ শুরু হয়েছে, কয়েক সেকেন্ড তারপর আবার বন্ধ, লাল্টু বুঝতে পারলো, লোকটা তাদের এখন মারবে না, এইভাবেই টর্চার করবে.. কিন্তু সে আর বেশিক্ষণ টর্চার সহ্য করতে পারবে না, গম্ভীর স্বরে লোকটা আবার জিজ্ঞেস করলো: এবার বলবি?
বলার সাথেই একজন এসে রঘুর হাতের একটা আঙুলের নখে সাঁড়াশি লাগিয়ে টান মারতে উদ্যত হলো, প্রশ্ন শেষ হতেই হ্যাঁচকা টান এল আর আবার রঘুর চিৎকার, এবার আর লাল্টু সহ্য করতে পারলো না, কান্নায় ভেঙে পড়ে বললো: বলছি বলছি।
রঘু যন্ত্রনায় গোঙাতে গোঙাতে কোনোমতে বললো: এ... এ তুই কি বলছিস লাল্টু? দাদা.... দাদা জানতে পারলে...
বাকি কথাটা শেষ করার আগেই রঘুর মুখে একটা ঘুষি এসে লাগলো, এবার যে লোকটা রঘুর নখ উপড়ে ফেলছিল সে লাল্টুর দিকে গিয়ে ওর হাতের একটা নখ চেপে ধরলো,লাল্টু কোনোমতে বললো: না.. কিছু করবেন না আমি বলছি।
এরপর লাল্টু একনাগাড়ে বলে গেল সে যা জানতো, রঘু মাঝে মাঝে যখনই বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে তখনই একটা ঘুষি হয় রঘুর চোয়ালে নতুবা থুতনিতে লাগতে লাগলো। লাল্টু একে একে বললো শহরের কোন গোরস্থানের কোন কোন কবরে বীরেন ভট্টাচার্যের  কোটি কোটি টাকা লুকোনো আছে, যেগুলো রকির সাথে গিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল তারা, সাথে অবশ্যই থাকতেন ধীরেন ভট্টাচার্য এবং জগা সেখানে কতজন লোক আছে পাহারার জন্য। আরও বললো কোথা থেকে মেয়েদের তুলে এনে রাখা হয় ও তারপর পাচার করা হয়, কোন কোন জায়গায় চোলাই মদের ঠেক আছে, তবে বীরেন ভট্টাচার্যের আরও অনেক ব্যাবসা থাকলেও সেগুলোর ব্যাপারে জানে না সে।

বর্তমান সময়

সাম্যর কথাটা শুনে বেশ কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে র‌ইলো তাথৈ তার কানে সাম্যর একটা কথাই শুধু বাজছে "অভয় তোমাকে ঘেন্না করতো, তোমার মুখ পর্যন্ত দেখতে চাইতো না। তারপর একছুটে নীচে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়, বেডসাইড টেবিলের একটা ড্রয়ার থেকে অভয়ের ছবিটা বার করে সামনে ধরে  অপ্রকৃতিস্থের মতো বলতে থাকে: তুমি আমাকে ঘেন্না করো অভয়? সেইজন্যই কি দুবার সামনে এসেও পরিচয় দাওনি আমাকে এড়িয়ে গেছো... বলো না তুমি আমাকে ঘেন্না করো? না, তুমি আমাকে ঘেন্না করতে পারো না আমার উপর তোমার রাগ অভিমান থাকতে পারে কিন্তু তুমি ঘেন্না করতে পারো না,  দুচোখ থেকে অঝোড়ে জল পরতে থাকে, পা কাঁপতে থাকে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না একসময় মেঝেতে বসে পরে তাথৈ, প্রেমিকের ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে, কতক্ষণ ছিল খেয়াল নেই হটাৎ দরজায় মায়ের আওয়াজ শুনে সম্বিত ফেরে, তাড়াতাড়ি চোখ মুছে উত্তর দেয় "আমি ঠিক আছি, একটু একা থাকতে চাই মা, প্লিজ এখন যাও"।
সরমা দেবী অবাক হন কিন্তু আর কোনো কথা বলেন না জানেন তার মেয়ে এখন দরজা খুলবে না তাই তিনি চলে যান, ঘরের ভিতর তখন তাথৈ চোখের জল মুছে আবার ছবিটা সামনে ধরে তার মুখ এখন কঠিন হয়ে গেছে তারপর ছবিটাকে উদ্দেশ্য করে বললো: আমি জানিনা সাম্য যা বলে গেল সেটা সত্যি কিনা, কিন্তু সত্যিটা আমি খুঁজে বার করবোই, যদি সাম্য মিথ্যা বলে থাকে তাহলে ওকে আমি ছাড়বো না আর যদি এটা সত্য হয় যে আমার বাপি আর জ্যেঠুমণি তোমার আর তোমার পরিবারের ক্ষতি করেছে তাহলে আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে ওনাদেরকেও শাস্তি পেতে হবে, পেতেই হবে, আমি কোনোদিন কারো সাথেই অন্যায় মেনে নি‌ইনি আর এখানে তো তোমার সাথে অন্যায়ের প্রশ্ন এটা ছাড়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, কিন্তু আগে আমাকে সত্যিটা জানতে হবে।
এরপর আবার ফোনটা হাতে নিয়ে একটা কল করে: হ্যালো মিস্টার গুপ্ত।
আমি চেষ্টা করছি ম্যাডাম ওই ছেলেটার খোঁজ পাওয়ার, পেলেই আপনাকে জানাবো।
ঠিক আছে কিন্তু আপনাকে এর সাথে আরেকটা কাজ করতে হবে।
কি ম্যাডাম?
আপনার মনে আছে কিছুদিন আগে অভয় নামে একজনের খোঁজ করতে বলেছিলাম, আপনি বলেছিলেন ওরা দুর্ঘটনায় মারা গেছে?
মনে আছে ম্যাডাম।
আপনাকে ওই দুর্ঘটনা সম্বন্ধে জানতে হবে, কি হয়েছিল, আদৌ দুর্ঘটনা কি না? নাকি কারো হাত ছিল এর পিছনে থাকলে কে?
এটা তো অনেক বছর আগের কথা।
জানি এটা অনেক বছর আগের কথা কিন্তু কেউ তো থাকবে যিনি অভয়দের চিনতেন এবং জানেন ওদের সাথে আদতে কি হয়েছিল।
ঠিক আছে ম্যাডাম আমি চেষ্টা করছি।


"ওরা কি এখনো বেঁচে আছে?" প্রশ্নটা করে বিদিশা, সে তখন রয়ের বাড়িতে ওর বেডরুমে আগের দিনের মতো অর্ধনগ্ন হয়ে উবুড় হয়ে শুয়ে আছে, পরনের যেটুকু আবৃত আছে সেটা রয়ের দেওয়া গাউন দিয়ে, হাতে একটা মোবাইলে ভিডিও চলছে যেখানে রঘু আর লাল্টুকে টর্চার করার ভিডিও চলছে।
"না, এখনো বেঁচে আছে" বিদিশার পিঠের খোলা স্থানে কয়েকটা আঘাতের দাগ স্পষ্ট তাতে বরফ ঘষছে, এই আঘাতগুলো সদ্য হয়েছে।
ওদের তুললে কিভাবে?
ওদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে।
মানে?
ওদের উপর নজর রেখেছিলাম, খবর পেলাম যে ওরা নারীদেহের প্রতি একটু বেশীই লোভী ব্যস ওটাকেই টোপ হিসেবে ব্যবহার করলাম।
কোনো মেয়েকে ইউজ করেছো?
একজন এসকর্ট পোশাকী নাম জুলি, একবার বিয়ে ভেঙে লগ্নভ্রষ্ঠা হন তারপর আর বিয়ে হয়নি, বাড়িতে অসুস্থ বৃদ্ধা মা আছেন, চাকরি খুঁজছিলেন তোমার মামাশ্বশুর চাকরি দেবার নাম করে ওকে ভোগ করেন তারপর ওই নিষিদ্ধপল্লীতে পাঠিয়ে দেন, উনি পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে এই লাইনে এসেছিলো কিন্তু এখান থেকে মুক্তি চাইছিল।
তারপর?
তারপর আর কি? আমার লোক জুলির কথা বলে, ওর সাথে দেখা করি, ওনাকে বলেছিলাম কোনোভাবে ওদের সিডিউস করে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে আসতে,বিনিময়ে তাকে একটা ভালো সুস্থ জীবন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ব্যাস।
ওই মহিলাকে কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য খুঁজবে।
ওই মহিলাকে আমি একটা নতুন জীবনের সন্ধান দিয়েছি এখন উনি বীরেন ভট্টাচার্যের আয়ত্তের বাইরে, যদি না আবার যেঁচে ফিরে আসেন।
জিজ্ঞেস করবে না ওদের কেন মারতে বলেছিলাম? বিদিশা প্রশ্ন করলো।
না। ছোট্ট উত্তর দেয় রয়।
কিন্তু বিদিশা বলতে থাকে: আমাদের বাড়িতে মানে আমার বাপের বাড়িতে এক মাসি কাজ করতো, তার স্বামী মারা গিয়েছিল শুধু একটা মেয়ে ছিল বয়স ১৭ কি ১৮ হবে নাম পিঙ্কি, প্রায়ই আমার কাছে আসতো দিদি দিদি বলে, পড়াশোনায় খুব আগ্ৰহ, কিন্তু টিউশনি রাখার সাধ্য ছিল না, তাই আমি দেখিয়ে দিতাম, আমার আর রকির আশীর্বাদের দিন রাতে হটাৎ ও কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে আসে, আমি জিজ্ঞেস করলে বলে ওই জানোয়ারদুটো ওর সাথে অসভ্যতামি করেছে, কিন্তু যেকোনো কারনেই হোক সেদিন কিছু করতে পারেনি, আমার সাথে রকির বিয়ের দিন রাতে হঠাৎই ও কোথায় যেন হারিয়ে যায়, অনেক খোঁজা হয় পুলিশেও খবর দেওয়া হয় কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না, দুদিন পর পুলিশ আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা মাঠের ধারে ওর নগ্ন, রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায় বোঝাই যায় যে ওকে......। বাকিটা শেষ করতে পারে না বিদিশা।
রয় বলে: কিন্তু সেটা ওরা দুজন করেছে বুঝলে কিভাবে?
রকির সাথে ওদের কথাবার্তা লুকিয়ে শুনে ফেলেছিলাম, রকি‌ই পিঙ্কিকে ওদের হাতে তুলে দিয়েছিল। এখনো পিঙ্কির দিদি ডাকটা কানে ভাসে জানো, সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি যদি কোনোভাবে ওদের শাস্তি দেওয়া যায়, কারণ রকির ঘনিষ্ঠ হবার জন্য ওদের আইনি পথে কোনো শাস্তি হয়নি, ওই মাসিও মেয়ের শোক সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল।
বিদিশার বা কানের উপর চুল এসে পড়েছিল সেটা আঙুল দিয়ে সরিয়ে  রয় বলে: ওদের এখনো অনেক টর্চার সহ্য করতে হবে, তারপর মারবো, কিন্তু এবার রকির‌ও ব্যবস্থা করতে হবে, ওর হাতটা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু কাল যখন ও আমাকে মারছিল তখন আমার ব্যথার চেয়ে আনন্দ হচ্ছিল বেশি,বুঝতে পারছিলাম কোনো কারনে ও প্রচণ্ড অস্থির কিন্তু কেন জানিনা।
অস্থির নয় অপমানিত।
কেন?
তুমি আমাকে বলেছিলে মনে আছে যে ওরা কি একটা খুঁজতে বেরিয়েছে।
হ্যাঁ, মনে আছে কিন্তু
শহরের একটা গোরস্থানে কয়েকটা কবরের মধ্যে বীরেন ভট্টাচার্যের কালো টাকা লুকোনো ছিল..
বিদিশা হেসে উঠলো: তার মানে তো..
রয়: বীরেন ভট্টাচার্যের কোমর ভেঙে গেছে, কিন্তু তবুও উনি উঠে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবেন, এবার ও আবার উঠে দাঁড়ানোর আগে আবার আঘাত করবো, এবার ভট্টাচার্য পরিবারের সর্বনাশের শুরু।
বিদিশার পিঠের আঘাতে বরফ ঘষে জায়গাটা পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিল রয়, কাজটা হতেই বললো: নাও এবার তুমি রেস্ট নাও আমি বাইরে আছি। বলে উঠতে যেতেই বিদিশা রয়ের একটা হাত চেপে ধরলো বললো: তুমি রোজ রোজ বাইরে যাবে কেন?
তা নয়তো কি তোমার সাথে এক রুমে থাকবো?
কেন আমি অচ্ছুৎ নাকি?
অচ্ছুৎ হতে যাবে কেন?
তোমাকে আজ বাইরে যেতে হবে না।
তোমার আজ কি হয়েছে বলোতো?
আমি আজ খুব খুশি, ওই দুজনকে আরও টর্চার করো।
সে তো  করবোই, নাও এখন ঘুমিয়ে পড়ো।
আমার এখন ঘুম না অন্য একটা কিছু চাই।
কি চাই?
উত্তরে বিদিশা উবুড় থেকে সোজা হয়ে শুয়ে রয়ের ধরে থাকা হাতটাতে এক টান মারলো, হটাৎ এই টানে টাল সামলাতে না পেরে রয় বিদিশার উপর হুমড়ি খেয়ে পরলো, এবার বিদিশা দুহাতে রয়ের গলা জড়িয়ে বললো: আই ওয়ান্ট আ গুড এণ্ড হার্ড সেক্স, রাইট নাও... ফাক মি রয়।
হোয়াট.. আর ইউ ক্রেজি?
নো, আয়্যাম সিরিয়াস... কেন আমার মধ্যে কোনো প্রবলেম আছে নাকি?
বিদিশা আমি তোমাকে আগেই বলেছি তুমি আমার থেকে অনেক ভালো ছেলে ডিসার্ভ করো।
আমি তো আমাকে বিয়ে করতে বলছি না, ধরে নাও এটা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড।
আই ডোন্ট থিংক দিস ইজ আ গুড আইডিয়া।
নো, দিস ইজ আ ভেরী গুড আইডিয়া।
বাট.... কথা বন্ধ হয়ে গেল রয়ের, কারন ততক্ষণে বিদিশা রয়ের মাথার পিছনে একটু চেপে নিজের দিকে নিয়ে নিজের ঠোঁটদ্বয় রয়ের ঠোঁটদ্বয়ে আটকে দিয়েছে, রয় আর দ্বিরুক্তি করলো না বা বাধা দিল না, বিদিশার ডাকে সারা দিল।  দুজনেই এক অপরের ঠোঁটদ্বয় চুষতে শুরু করলো, বিদিশা তো নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে ফেললো সে পাগলের মতো রয়ের ঠোঁটদুটো চুষতে লাগলো তুলনায় রয় সংযত কিন্তু সেও বিদিশার ঠোঁট চুষে খেতে লাগলো, একটু পরে রয় নিজের জিভটা বিদিশার মুখের মধ্যে ওর জিভের সাথে টাচ করলো দুটো জিভ এবার একসাথে খেলতে শুরু করলো, বিদিশা হটাৎ নিজের ঠোঁট দিয়ে রয়ের জিভ টেনে ধরে চুষতে ল গলো যেন ওখানে মধুর স্বাদ পেয়েছে। বেশকিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর বিদিশা হাত দিয়ে রয়ের গায়ের কালো রঙের স্যান্ডো গেঞ্জিটা মাথা গলিয়ে খুলে ফেললো, তারপর আবার দুজনে ফেঞ্চ-কিসে মনোনিবেশ করলো, অনেকক্ষণ পরে রয় বিদিশার ঘাড়ে গলায় নিজের নাক মুখ ঘষতে শুরু করলো এবং মাঝে মাঝে চুমু দিতে থাকে।
বিদিশা চোখ বুজে মুহূর্তটা উপভোগ করতে থাকে, এর আগে নিজের স্বামী রকির সাথে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কিন্তু সেইসময় না বিদিশার মন ছিল, না শারীরিক আকাঙ্খা ফলে সেটা স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক যৌনমিলনের বদলে হয়ে গেছে ;.,, সেখানে রকি নির্মমভাবে শুধু বিদিশার শরীরটাকে খুবলে খেয়ে নিজের যৌন ক্ষিদের নিবৃত্তি করেছে, কিন্তু রয় সেরকম নয়,সে বিদিশার শরীরের প্রতিটা বিন্দুকে কামোত্তেজনায় উদ্দীপিত করছে, ঘাড়- গলা ছেড়ে রয় এখন একটু নীচে বিদিশার বুকে নেমে এসেছে, বিদিশার স্লিম ফিগারে স্তনদুটো খুব বড়ো নয় বরং সাধারণ মিডিয়াম সাইজের স্টিলের উল্টানো বাটির মতো, আর তার মাঝখানে বাদামী রঙের বোঁটা এবং বোঁটাকে ঘিরে একটা বাদামি রঙের বৃত্ত।
রয় দু-হাতে দুটো স্তন চেপে ধরে তারপর প্রথমে বাঁদিকের স্তনটার বোঁটা সহ অনেকটা অংশ মুখে পুরে নেয়, সঙ্গে সঙ্গে বিদিশা নিজের নীচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে ওর মুখ থেকে "উমম" শব্দ বেরিয়ে আসে, মুখের ভিতরে রয় জিভ দিয়ে বিদিশার বোঁটাটা নাড়াতে থাকে, এবং নিজের বা হাত দিয়ে বিদিশার ডান স্তনের উপরে বোলাতে থাকে, বিদিশা এবার রয়ের মাথার চুলে বিলি কাটতে শুরু করে, এইভাবে কিছুক্ষণ বিদিশার বাদিকের স্তনটা চোষার পরে ডানদিকের স্তনটা মুখে পুরে চোষা শুরু করে। এইভাবে অনেকক্ষণ ধরে পালা করে বিদিশার দুটো স্তন ভালো করে চুষে সেগুলো ছেড়ে আরো নীচে নামে, এবার পেট হয়ে নাভীর গর্তে জিভ ঢোকায়, সঙ্গে সঙ্গে বিদিশার পুরো শরীরটা কেঁপে উঠলো। বিদিশার সাথে রকির মনের মিল কোনোদিন‌ই হয়নি, ভালোবাসা তো দূরের কথা আসলে রকির মতো পাষণ্ডকে বিদিশা ভালোবাসতে পারেনি, ওর সাথে বিয়েটাকে নিজের ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছিল। তারপর যখন রয়ের সাথে আলাপ হলো তখন মুখে না বললেও বিদিশা মনে মনে এই সুগঠিত চেহারার সুদর্শন ছেলেটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল, রয়ের কথায় সে ইমপ্রেস তো হয়েছিল‌ই তার উপর কেন যেন প্রথম থেকেই ওর প্রতি বিশ্বাস জেগে উঠেছিল, তাই খুব সহজেই রয়ের সাথে ওর বাড়িতে এমনকি ওর বেডরুম পর্যন্ত চলে এসেছিল, আগের দিন যদি রয় চাইতো তাহলে হয়তো বিদিশা তখনই ওর সাথে....
কিন্তু সেদিন হয়নি তো কি হয়েছে, আজ হচ্ছে। প্রথমে রয় রাজী না হ‌ওয়ায় বিদিশা ভেবেছিল আজ সে রয়কে যেভাবে হোক উত্তেজিত করে কন্ট্রোলহীন করবে কিন্তু এখন বিদিশা বুঝলো রয়‌ যা শুরু করেছে তাতে সে নিজেই কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে। রয় এখন বিদিশার দুটো পা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিদিশা উঠে বসলো পরনের গাউনটা পুরো খুলে ফেললো, এখন পুরো নগ্ন সে, গাউনের নীচে কোনো অন্ত‌র্বাস ছিল না, হাতে শাখা-পলা তো কোনোদিন‌ই পরে না আর মাথায় সিঁদুর যা থাকে সেটা এখন নেই, রয়ের বাড়িতে এসে শাওয়ার নিয়ে ছিল তখন ধুয়ে গেছে, রয় এবার বিদিশার পরিষ্কার করে ছাটা যোনীপথের মুখে নিজের মধ্যমা আঙুলটা ঘষতে লাগলো তারপর আস্তে আস্তে সে আঙুলটা যোনীপথের ভিতরে ঢোকালো, বিদিশা আহহ করে উঠলো, রয় আবার নিজের ঠোঁটদ্বয় বিদিশার ঠোঁটদ্বয়ে মেলালো কিন্তু এর সাথে বিদিশার যোনীর ভিতরে অঙ্গুলি করতে শুরু করে, ধীরে ধীরে গতি বাড়াতে থাকে, এবার কিস ছেড়ে বিদিশা শিৎকার করে ওঠে "আহহহহ ওহহহহ উম্মম্ম আহহ" এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বিদিশার যোনিতে অঙ্গুলি করতে করতে রয় আঙুলটা বার করে নিল, বিদিশা তখন যৌন‌উত্তেজনার টপ গিয়ারে উঠতে শুরু করেছে, ওর মনে হলো রয় আর কিছুক্ষণ অঙ্গুলি করলেই তার রাগমোচন হতো, এবার রয় যেটা করলো সেটার অনুভব বিদিশা এর আগে কখনো পায়নি আঙুল বার করে রয় বিদিশার যোনিতে নিজের মুখ নিয়ে গেল এবং পাঁপড়ি দুটোয় আলতো করে জিভের ছোঁয়া দিল, একটু পরেই সে নিজের জিভটা বিদিশার যোনি গহ্বরে ঢুকিয়ে দিল, বিদিশার পুরো শরীর অজানা অনুভূতিতে শিহরিত হয়ে আবার কেঁপে উঠলো, তার মুখ দিয়ে তখন "আহহহহ উমমমমমম সসসসসসসস আহঃ"শিৎকার বেরোতে থাকে সে একহাতে নিজের একটা স্তন মর্দন শুরু করেছে এবং অপর হাতে রয়ের মাথার চুলে বিলি কাটতে শুরু করেছে, একটু পরেই বিদিশা বুঝলো সে আর থাকতে পারছে না তার রাগমোচন হবে, কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে রয় মুখটা সরিয়ে নিল, কিন্তু তাতে কিছু আটকালো না, প্রথমবারের মতো বিদিশা "আহহহ আহহহহ ওহহহহ" শিৎকার করতে করতে জল খসালো।
এবার বিদিশা এক হাতে রয়ের গলা জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে আবার কিস শুরু করলো অপর হাতে রয়ের পাজামার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে ওর জাঙ্গিয়ার উপর দিয়ে পেনিসের উপর হাত দিল, হাত দিয়েই বুঝলো সেটা যথেষ্ট বড়ো এবং একদম মুগুরের মতো না হলেও মোটা সে জাঙ্গিয়ার ভিতরে হাত দিয়ে নির্লোম, পরিষ্কার পেনিসটা বাইরে বার করে আনলো এবং আস্তে আস্তে উপর নীচে করে খেঁচা শুরু করলো ফলে এবার সেটার বাস্তবিক সাইজ বুঝলো বিদিশা রকিরটাও প্রায় এক‌ইরকম, একটু আগে রয় বিদিশার ঘাড়ে গলায় মুখ ঘষছিল চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছিল, এখন বিদিশা সেটা শুরু করলো রয়ের ঠোঁট ছেড়ে সে গলায় ঘাড়ে চুমু দিতে থাকে রয়‌ও কম যায় না সে বিদিশার একটা কানের লতি আস্তে কামড়ে ধরলো সাথে বিদিশার নরম মোলায়েম নগ্ন পিঠে নিজের দুটো হাত বোলাতে থাকে, বিদিশা এবার তার সঙ্গীর পুরুষাঙ্গ খেঁচা ছেড়ে মুখটা বুকে এনে চুমু খেতে থাকে, নারীদের মতো পুরুষদের‌ও বুকের দুসাইডে দুটো ছোট্ট নিপল থাকে যদিও সেদুটো নিষ্ক্রিয় অঙ্গ, বিদিশা এবার হটাৎ করেই রয়ের এই দুটো নিষ্ক্রিয় নিপলে জিভের স্পর্শ করলো রয় একটু হেসে বললো: কোথা থেকে শিখলে এটা?
কেন? সঙ্গীকে কি তুমি একাই উত্তেজিত করতে পারো?
রয় এবার বিদিশার ঠোঁটে স্মুচ করলো।
বিদিশা: আর সহ্য হচ্ছে না এবার আমার ভিতরে আসো।
রয় বিদিশাকে হাল্কা ঠেলে বেডে নরম ম্যাট্রেসের উপর ফেলে দিল তারপর নিজের পাজামা আর জাঙ্গিয়া খুলে বিদিশার দুপা ধরে নিজের দিকে একটু টেনে ডানপাটা নিজের বাকাঁধে তুলে নিল অপর পা টা নিজের কোমরের সাইডে আনতেই বিদিশার যোনিমুখ উন্মোচিত হলো কিন্তু রয় সোজাসুজি সেখানে নিজের পেনিস ঢোকালো না যোনির মুখে ঘষতে লাগলো কয়েকবার শুধু মুণ্ডিটা ঢোকাতেই বিদিশা "আঃ"করে উঠতেই আবার বার করে নিল বলাইবাহুল্য এইরকম টিজ করার ফলে বিদিশা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠছিল, কামুক স্বরে বলতে থাকে: প্লিজ আঃ এভাবে আমাকে টিজ কোরো না, প্লিজ।
রয়: আর ইউ এনজয়িং ইট?
বিদিশা: প্লিজ এন্টার নাও ইনসাইড মি।
কিন্তু রয় তাও এক‌ইভাবে বিদিশাকে টিজ করে যেতে লাগলো। এবার হটাৎ যে পাটা রয়ের কোমরের পাশে ছিল সেটা দিয়ে রয়ের কোমরের একটা দিক পেঁচিয়ে ধরে উত্তেজিত কণ্ঠে বললো: গিভ ইওর কক্ ইনসাইড মি রাইট নাও অর আই উইল কিল ইউ।
এবার রয় আর টিজ করলো না একটু জোরে একটা চাপ দিল তাতে তার পেনিসের অনেকটাই বিদিশার ভিজে যোনিগহ্বরে ঢুকে গেল, বিদিশা "আঃআহহহ আউচচ" করে উঠলো, ওর একটা হাত মাথার উপরে ছড়ানো অপর হাতে নিজের একটা স্তনের উপরে। রয় আস্তে আস্তে  মিডিয়াম লয়ে ঠাপ মারা শুরু করলো।
বিদিশা: আহহহ আহহহ ওহ শিট শিট আহহহ উম্মম্মম্ম আঃ শিৎকার করতে থাকলো। রয় ঠাপের সাথে একটা হাত বাড়িয়ে বিদিশার উন্মুক্ত স্তনটা ধরে টিপতে থাকে, এভাবে কিছুক্ষণ ঠাপের পরে কাঁধ থেকে বিদিশার পাটা নামিয়ে দুইপায়ের ফাঁকে নিজের কোমরটা নিয়ে গিয়ে বিদিশার উপর চলে যায় রয় এবং মিশনারি পোজে ঠাপানো শুরু করে, বিদিশার মুখ থেকে শিৎকার বেরোতে পারে না কারন তখন রয় আবার নিজের ঠোঁটদ্বয় বিদিশার ঠোঁটজোড়ায় লক করেছে, বিদিশা দুহাতে রয়ের পিঠ নিজের বুকে আঁকড়ে ধরে, কিসের পরে রয় আবার বিদিশার ঘাড়ে গলায় মুখ ঘষতে থাকে, চুম্বন দিতে থাকে এর সাথে সমানে ঠাপ তো চলছেই, সারা ঘরময় থপথপ আওয়াজ হচ্ছে সাথে বিদিশার শিৎকার "আহ্হ্হ্হ্হ্.... আঃআহহহ... উহ্হ্হ্হ্হ্.... রয় আহহহ ইওর কক্ ফিলস্ সো গুড আহহহহহহহহহ
একটু পরে বিদিশা রয়কে ঠেলে নিজের উপর থেকে সরিয়ে পাশে ফেলে তারপর উঠে রয়ের পায়ের কাছে গিয়ে পেনিসটা হাত দিয়ে ধরে আস্তে আস্তে উপর নীচে করতে থাকে, তারপর আস্তে আস্তে প্রথমে মুণ্ডিটা তারপর পুরো পেনিসটা মুখে নিয়ে নেয় এবং চোষা শুরু করে, ভালো করে থুতু দিয়ে মাখায় রয়ের পেনিসটা তারপর আবার মুখে পুরে চোষা শুরু করে ওর মুখ থেকে এখন "ওক্‌ওক্‌ওক্‌ওক্‌ওক্" শব্দ বেরোতে থাকে। পুরো পেনিসটা ভালো করে নিজের থুতু দিয়ে মাখিয়ে বিদিশা থামে, থামে বললে ভুল বলা হবে, এবার সে তার সঙ্গীর কোমরের উপরে উঠে বসে এবং হাত দিয়ে রয়ের পেনিসটা নিজের যোনীমুখে ধরে ঢুকিয়ে নেয়, "আহহহহহ" মুখ থেকে একটা শিৎকার বেরিয়ে আসে তার তারপর নিজেই কোমরটা উপরনীচ করতে থাকে, একটু পরে রয় দুহাতে বিদিশার কোমরটা ধরে তলঠাপ দেওয়া শুরু করে, "আহহহ উহহহহহহহ ওহ ফাক ওহ ফাক আঃআহহহ" শিৎকার বেরোতে থাকে বিদিশার মুখ থেকে, এবার কোমর ছেড়ে দুহাতে বিদিশার দুলতে থাকা দুটো স্তন চেপে ধরে রয়, এতে যেন বিদিশার কামোত্তজনা চরমে পৌঁছায় সে বুঝতে পারে আবার রাগমোচন হবে তার। দুজনে পজিশন চেঞ্জ করে,বিদিশা নীচে আর রয় তার উপরে আবার মিশনারি পোজে দুটি নরনারী আদিম খেলায় মেতে থাকে, "ডোন্ট স্টপ ডোন্ট স্টপ আয়্যাম কামিং এগেইন, ডোন্ট স্টপ" বলতে বলতে দুপা দিয়ে রয়ের নগ্ন কোমর পেঁচিয়ে ধরে, আহহহহহহ ওহ মাই গড ওহহহহ ফাককক আঃ করতে করতে বিদিশা বোঝে রয়ের‌ও বেরোবে কারণ সে ঠাপের গতি একটু বাড়িয়েছে, একটা সময় দুজনেই আর থাকতে পারে না প্রথমে বিদিশা দ্বিতীয়বারের মতো রাগমোচন করে এবং একটু পরে রয়ের কোমরটাও স্থির হয়ে যায়, বিদিশা অনুভব করে তার যোনীগহ্বর রয়ের লিঙ্গ নিঃসৃত বীর্যে ভরে যাচ্ছে, দুজনেই কিছুক্ষন জড়িয়ে শুয়ে হাঁফাতে থাকে, একটু পরে বিদিশা উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে তারপর আবার রয়ের পাশে শুয়ে পরে।

নিজের অফিসে একা বসে ছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য একটু পর বাইরে থেকে ভাই ধীরেন বাবুর গলার আওয়াজ এল "দাদা বাড়ি চলো রাত হয়েছে"।
তুমি যাও আমি একটু পর আসছি, এখন একটু একা থাকতে চাই।
আসলে বাইরে যতই নিজেকে শক্ত দেখান ভেতর অনেকটাই ভেঙে পরেছেন বীরেন বাবু, তার এতবছরের সঞ্চিত ধন কেউ এভাবে সাফ করে দিয়ে যাবে এটা কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার কিন্তু সেটা তো হয়েছে, এখন কথা হচ্ছে কে করেছে?। গত কয়েকমাস ধরেই বুঝতে পারছিলেন কেউ বা কারা যেন তার পিছনে লেগেছে, তার কন্সট্রাকশন সাইটে তার‌ই দলের লোকদের মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে, তার রক্ষিতাকে কেউ সাথে নিয়ে গেছে সেখানেও তার দলের কিছু লোককে শেষ করেছে, তার সঞ্চিত ধন সাফ করেছে এবং তারপরেও খবর পেয়েছেন যে শহর জুড়ে তার যে কটা চোলাই মদের ঠেক ছিল সবকটায় হামলা হয়েছে সব শেষ করে দিয়েছে। বীরেন বাবু ভেবেছিলেন এসব সরকারের কাজ তাই তাকে শেষ করেছেন কিন্তু তারপরেও...... কে করেছে সেটা কিছুতেই ধরতে পারছেন না।
ছোটো থেকেই মস্তান গোছের ছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য, কলেজে উচ্চশিক্ষা পাঠের সময়‌ই ভাই এবং ক্লাসের আরও কয়েকজন ছেলে নিয়ে দল গড়েছিলেন তারপর কলেজে উঠে দলে আরও ছেলে যোগ দেয়। কলেজ ছাড়ার পরে প্রমোটিংএর ব্যাবসা শুরু করেন বাপের‌ও অনেক টাকা ছিল দুনম্বরি টাকা তাই ব্যাবসা শুরু করতে অসুবিধা হয় নি, এই প্রোমোটিংএর ব্যাবসার সাথে এলাকায় নিজের ক্ষমতা দেখাতে শুরু করেন, দলে যারা ছিল তারাও তো খুব সুবিধার ছিল না তার‌ই মতো ছিল, কত লোকের জমি কেড়ে নিয়েছেন কত লোককে স্রেফ গায়েব করে দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই, কত মেয়ে-ব‌উদের সর্বনাশ করেছেন তার হিসাব নেই, বাপের টাকা আর কিছু ক্ষমতাশালী লোকের সাথে পরিচয় থাকার জন্য কয়েকবার জেলে গিয়েও ছাড়া পেয়েছিলেন তার বেশি কিছু হয়নি, ধীরে ধীরে তার দাপট এত বাড়তে থাকে যে সবাই তার নাম শুনলেই ভয়ে কাঁপতে থাকতো। এই আতঙ্কটার জন্যেই এতদিন কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি ,একজন ছাড়া... রুদ্র, রুদ্র রায় চৌধুরী।
বীরেন ভট্টাচার্য অতীতের কোনো এক স্মৃতির অতলে তলিয়ে যান, এই রুদ্র রায় চৌধুরীকে ছোটো থেকেই চিনতেন তিনি, দুজনে আলাদা কলেজে পড়তেন একবার ইন্টার কলেজ কম্পিটিশনে দেখা হয়েছিল, দুজনের কলেজ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছিল কিন্তু ফাইনালে রুদ্রবাবু নাচিয়ে ছেড়েছিলেন বীরেন ভট্টাচার্যকে বলাইবাহুল্য রুদ্রবাবুর কলেজ জিতেছিল এবং সেরার পুরষ্কার উঠেছিল রুদ্রবাবুর হাতে। তারপর দুজনের মোলাকাত হয় কলেজে, এক‌ই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন যদিও স্ট্রিম আলাদা, বীরেন বাবুর কমার্স আর রুদ্রবাবুর সায়েন্স, দুজনের বিল্ডিং আলাদা কিন্তু ক্যাম্পাসে, ক্যান্টিনে বা কমনরুমে মাঝে মাঝেই সাক্ষাৎ হতো। আর তারপর তো রুদ্রবাবু তার‌ই এলাকায় জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে থাকতে এলেন স্ত্রী আর একরত্তি ছেলেকে নিয়ে।
দুজনের সামাজিক ব্যাবধান অনেকটাই ছিল, বীরেন ভট্টাচার্য আর্থিক দিক থেকে অনেকটাই ধনী ছিলেন রুদ্রবাবুর তুলনায়, রুদ্রবাবু কোনোমতে কিছুটা জমি কিনে তাতে একটা একতলা বাড়ি করেছিলেন, এলাকায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন রুদ্র বাবু, ভীষণ পরোপকারী ছিলেন তিনি এবং তার স্ত্রী, তার উপর নির্ভিক স্পষ্টবাদী। এইভাবেই সময় কাটতে থাকে ধীরে ধীরে বীরেন ভট্টাচার্য বুঝতে পারছিলেন যে এলাকায় তার আধিপত্য বিস্তারের প্রধান কাঁটা হয়ে উঠছেন রুদ্রবাবু, এলাকার প্রায় বেশিরভাগ মানুষই তার সাথে থাকে, তাকে ভালোবাসে। ধীরে ধীরে রুদ্রবাবুর প্রভাব এতটাই বিস্তৃত হয় যে বীরেন ভট্টাচার্য প্রমাদ গোনেন, দুজনের বেশ কয়েকবার ঝামেলা‌ও হয়, বীরেন ভট্টাচার্য ই ঝামেলা করেন হুমকিও দেন কিন্তু রুদ্রবাবু তাতে বিশেষ বদলান না, তারপর শেষে যখন তিনি জানতে পারেন যে এলাকা থেকে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য তাকে বাদ দিয়ে রুদ্রবাবুর ধাম চিন্তা করছে পার্টি তখন আর চুপ করে বসে থাকতে পারেন না, এরমধ্যেই তিনি জানতে পারেন যে রুদ্রবাবুর ছেলে কিশোর অভয়ের সাথে তার কিশোরী ভাইঝি তাথৈএর একটা সম্পর্কের গুজব ছড়াচ্ছে, রাগে পুরো শরীর জ্বলতে থাকে তার ব্যাটার বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার শখ হয়েছে, এবং শিক্ষা দিতেই হবে, তখন তিনি স্থির করেন যে এই রুদ্র রায় চৌধুরীকে সপরিবারে শেষ করবেন তিনি।
প্রথমটায় ভাইকেই দায়িত্ব দেন তিনি কাজটা করার কিন্তু পরে বুঝতে পারেন কাজটা শুধু করলেই হবে না এমন ভাবে করতে হবে যাতে লোকজন ক্ষেপে না যায়, তাই একরাতে দলবল সহ হামলা করেন রুদ্রবাবুর বাড়িতে যদিও তার একটু আগেই রুদ্রবাবুর এক দূর সম্পর্কের বোনের স্বামী মদন যে তার হয়ে কাজ করে সে খবর দেয় কাজ হয়ে গেছে, তার স্ত্রী ধীরেন বাবুর কথামতো বিষটা পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু তাও নিশ্চিন্ত হন না বীরেন ভট্টাচার্য, রাতের অন্ধকারে দলবল নিয়ে গিয়ে রুদ্রবাবুর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন, পরদিন এলাকায় বিশ্বস্ত লোক দিয়ে রটিয়ে দেন যে কারেন্টেথ লাইনে শর্টসার্কিট করে আগুন লেগে গেছে।, এলাকার কয়েকজন তার নামে পুলিশে কমপ্লেইন জানিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে যোগাযোগ থাকায় খুব একটা ঝামেলায় জড়াননি বীরেন ভট্টাচার্য, যদিও পরে যেকজন তার বিরুদ্ধে পুলিশে গিয়েছিল সবকটাকে সাবাড় করেছিলেন।
এও আজ প্রায় ১৫-১৬ বছর আগের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন তাদের কথা এই সেদিন ভাই ধীরেন আবার রুদ্রের নামটা নেওয়ায় মনে পরে তার,তারপর আজ হটাৎ আবার মনে পরলো, এই যে অফিসে বসে আছেন তিনি এই অফিসটা যে জমিতে সেখানেই বাড়ি ছিল রুদ্রবাবুর, রুদ্রবাবু আর তার পরিবার মারা যাবার পরে অধিকার করেন তিনি, কিন্তু সেদিন যেকোনো ভাবেই হোক আগুন থেকে বেঁচে যায় রুদ্র আর তার পরিবার এটা একটু পরেই বুঝতে পারেন তিনি, বাড়ির পিছন দিক থেকে পালাতে দেখে ধাওয়া করেন , বীরেন ভট্টাচার্যের করা একটা বুলেট লাগে রুদ্রবাবুর পিঠে কিন্তু তাও নাগাল পান না তাদের, পুরো দলকে চারিদিকে ছড়িয়ে খুঁজতে পাঠান তিনি, শেষে তার বিশ্বস্ত জগা এসে উৎফুল্ল গলায় জানায় দাদা, শেষ করে দিয়েছি... তিনজনকে মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছি, আশেপাশে আনেকটা জায়গা ফাঁকা ছিল ফলে পতিবেশীরা কিছু জানতে পারেনি, শুধু তাই নয় আগুনে তো রুদ্রবাবুরা মারা যাননি কিন্তু সবার কাছে আগুনে মরাটাই প্রমাণিত করতে রাতারাতি তিনটে লাশ মর্গ থেকে সরিয়ে এনে এই আগুন লাগা বাড়ির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন, ওদের আত্মীয় বলতে ওই বোন আর তার স্বামী মদন ছিল শুধু সুতরাং ওদের দিয়েই মিথ্যা শনাক্ত করিয়েছিলেন যে আগুনে পোড়া তিধটে বডি রুদ্রবাবু তাঁর স্ত্রী আর ছেলের।
হটাৎ করে সম্বিত ফিরে জেগে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য এতবছর পরে না জানি কেন পুরনো কথা মনে পরলো তার সাথে কিছুদিন আগে তাকেই উদ্দেশ্য করে বলা কটা কথা মনে পরলো "তোমার‌ও পতনের সময় এসে গেছে সপরিবারে বিনাশ হবে, আর তোমার বিনাশ করবে যে সে আসছে... মৃত্যুর কোল থেকে মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আসছে সে তোমার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে, সমূলে বিনাশ হবে তুমি", বীরেন ভট্টাচার্য বুঝলেন অজানা ভয়ে তার পা আড়ষ্ট, কাঁপছে, কে আসছে তার মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে?


বিদ্র: এর আগে কোনোদিন‌ও থ্রিলার লিখিনি, লেখার কথা ভাবিওনি, এই সাইটেই অন্য একটা চটি গল্প লিখতে গিয়ে খেয়াল খুশী মতো বাড়িয়ে চলেছিলাম তখনই এক পাঠক বন্ধু বলে থ্রিলার লিখতে, তাই এটা শুরু করি যদিও এটা থ্রিলার কি না সেটা পাঠকরাই বিচার করুন, একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে এই গল্পটাতে ভিউ বাড়লেও রেটিং ঠিক বাড়ছে না, আমার এই গল্পে রগরগে সেক্স তেমন নেই তাই হয়তো পাঠকদের পছন্দ হচ্ছে না, সেরকম হলে স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন, আমি বন্ধ করে দেবো যদিও আমার সেই পাঠক বন্ধু সমানে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে আরও লেখার উৎসাহ দেন তাই লেখাটা হয়তো সম্পূর্ণ করবো কিন্তু সেটা এখানে আর আপডেট দেবো কি না সেটার সিদ্ধান্ত পাঠকদের উপরেই দিলাম।
Namaskar Namaskar

Good
Like Reply
(28-09-2022, 10:35 PM)Monen2000 Wrote:
                               দশম পর্ব


দূর থেকে পাঁচিল ঘেরা বাগানবাড়ি আর তার বাইরের বড়ো গেটটা দেখে আনন্দে উত্তেজনায় বুকটা ধুকপুক করছিল তাথৈএর কিন্তু অকষ্মাৎ কিছু গুণ্ডা প্রকৃতির লোক তার গাড়ির সামনে এসে তার রাস্তা দাঁড়িয়েছে। গতকালই মিস্টার গুপ্তর সাথে দেখা করেছিল সে,
খোঁজ পেয়েছেন, জানতে পেরেছেন ও কোথায় থাকে?
ওই বাচ্চাগুলোর খোঁজ পেয়েছি, ওরা সবাই একটা কলোনিতে থাকে আর সেখানকার এক কলেজে পড়ে, সেদিন ওদের একজনের জন্মদিন ছিল তাই ওদের খাওয়াতে নিয়ে এসেছিল।
আর ও কোথায় থাকে?
বাচ্চাগুলোই বললো ওই কলোনির একটু ভিতরের দিকে একটা বাগানবাড়ি গোছের বাড়ি আছে ওখানে থাকে।
আপনি দেখেছেন?
না গিয়েছিলাম কিন্তু ওই এলাকার লোক ওই বাগানবাড়ির ধারেকাছে বাইরের কাউকে ঘেঁষতে দেয় না, অনেকটা দূর থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে।
বাচ্চাগুলো ওর নাম বলেছে?
হ্যাঁ বলেছে তো, ওরা  "রয় দাদা" বলে ডাকে।
খুব ভালো কাজ করেছেন, আচ্ছা আপনাকে যে আরেকটা কাজ বলেছিলাম সেটা করেছেন?
ওটা কি জানতেই হবে আপনাকে? এবারে তাথৈ লক্ষ্য করলো ভদ্রলোকের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ, যেন কাউকে ভয় পাচ্ছেন।
একথা কেন বলছেন, কি জানতে পেরেছেন?
না মানে ম্যাডাম। তাথৈ স্পষ্ট বোঝে মিস্টার গুপ্ত কিছু বলতে চেয়েও বলছেন না।
কি বলতে চান স্পষ্ট বলুন।
ম্যাডাম আপনি যার কথা বলছিলেন তাদের বাড়িটা চিনতেন?
না, কখনো যাইনি কেন বলুনতো?
কিছু লোকের সাথে কথা হয়েছে, বেশিরভাগই ওদের চেনে না, জানে না তবে খুব পুরনো বাসিন্দাদের কয়েকজন এখানো অল্প অল্প মনে রেখেছে ওদের বিশেষ করে ওই ছেলেটা কি যেন নাম? হ্যাঁ, অভয় ওর বাবা আর মাকে, ওনাদের খুব খাতির ছিল এলাকায়, খুবই সজ্জন মানুষ ছিলেন দুজনে।
কিন্তু ওনাদের হয়েছিল কি?
বাড়িতে আগুন লেগেছিল, তারা বলে শর্টসার্কিট হয়েছিল।
কারো হাত থাকতে পারে?
বলা মুশকিল তবে দুটো জিনিস খেয়াল করেছি
কি?
এক ওনাদের এক আত্মীয় থাকেন সেটা তো বলেছি আগে আপনাকে, ওই অভয়ের পিসি থাকেন তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম আগের বার যখন গিয়েছিলাম তখনও খেয়াল করেছিলাম আর এবারও করেছি
কি?
ভদ্রমহিলা জানেন ওদের কি হয়েছিল কিন্তু কারো ভয়ে লুকিয়ে যাচ্ছেন।
কার ভয়ে বলে আপনার মনে হয়?
সে উত্তর এখনো পাইনি।
আর দ্বিতীয় জিনিস কি খেয়াল করেছেন?
হয়তো কাকতলীয় হতে পারে কিন্তু যেখানে ওদের বাড়ি ছিল সেই জায়গাটায় এখন আপনার জ্যেঠু মিস্টার বীরেন ভট্টাচার্যের অফিস, আর শুনলাম অভয়ের বাবার সাথে নাকি আপনার জ্যেঠুর ঠিক সদ্ভাব ছিল না, ঝামেলা ছিল।
হতবাক হয়ে যায় তাথৈ, তবে কি সাম্য সত্যি বলেছিল? ঠিক বিশ্বাস হয় না তাথৈএর তার দৃঢ় বিশ্বাস কোথাও ভুল হচ্ছে তার জ্যেঠুমণি এমন কাজ করতেই পারেন না, সেইদিন থেকে সে এই প্রার্থনাই করে এসেছে যে সাম্য যা বলেছে তা যেন মিথ্যা হয়। সে ঠিক করে আগে অভয়ের কাছে আসবে তার থেকেই জানবে সত্যিটা, তাই আজ সকাল হতে না হতেই সে একাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে রাস্তার নির্দেশনা মিস্টার গুপ্তর থেকেই নিয়ে নিয়েছিল।
"ওদিকে যাওয়া বারণ"  তাথৈএর রাস্তা যারা আটকেছিল তাদেরই একজন তার গাড়ির জানালার কাছে এসে কথাটা বলে।
কেন?
কেন কথার উত্তর নেই।
এখান থেকে ফিরে যান।
ওই বাড়িতে কে থাকেন? একথার উত্তর না পেয়ে তাথৈ আবার প্রশ্ন করে: কি হলো বলুন এ বাড়িতে কে থাকেন?
উত্তরে লোকটা বলে: এখান থেকে ফিরে যান।
আমার ওখানে যাওয়াটা জরুরী।
কিন্তু আপনাকে যেতে দেওয়ার হুকুম নেই। এবার আরেকজন জানালার কাছে এসে কথাটা বলে।
প্লিজ ওনাকে আমার কথা বলুন, বলুন তাথৈ এসেছে তাহলেই...
আর কিছু বলার আগেই ওদের একজনের ফোন বাজলো, কথা বলার পরে লোকটা তার সঙ্গীকে বললো: বস ওনাকে যেতে দিতে বললেন।
এবার লোকটা তাথৈকে বললো: যান, তবে গাড়িটা গেটের বাইরে রেখে যাবেন, ওই দেখুন একটা বটগাছ আছে ওর তলায় গাড়িটা দাঁড় করিয়ে ভিতরে যান। বড়ো গেট খুলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে তাথৈ দেখলো রাস্তার একপাশে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এই গাড়িটা তাথৈ চিনতে পারলো সেদিন রাতে রেস্টুরেন্টে এই গাড়ি করেই.... তাথৈ বুঝতে পারলো তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে, মেইন গেট থেকে একটা পায়ে চলার নুড়ি পথ সোজা চলে গেছে, দুদিকে সুন্দর করে ছাটা সবুজ ঘাস তার উপর অনেক রকম ফুলগাছ টবে করে বসানো আছে, সে আস্তে আস্তে বাড়ির দরজার কাছে গেল দরজা বন্ধ আছে কলিং বেল বাজাতে যাবে এমন সময় পুরুষকণ্ঠে "হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?" শুনে চমকে পিছনে ফিরলো কয়েকহাত দূরে হাতে প্রুনিং নাইফ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
তাথৈএর পরনে সোনালী রঙের কাজ করা দুধ সাদা হাফ স্লিভ চুরিদার সাথে এক‌ইরকম পাজামা, দুহাতে অনেকগুলো রঙিন চুরি, মাথায় চুলটা  হাফ-আপ, হাফ-ডাউন খোঁপা করা, উল্টোদিকে যে দাঁড়িয়ে আছে তার গায়ে একটা কালো ভেস্ট যার উপর লাল পাইপিং করা, আর কালো রঙের পাজামা পায়ে চপ্পল, হাতে প্রুনিং নাইফ, বোঝাই যাচ্ছে যে সে বাগানে কাজ করছিল। দুজনে একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো, তাথৈ বুঝলো সে চিনতে ভুল করেনি তার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে অভয়।।

তাথৈ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না, এক ছুটে অভয়ের কাছে গিয়ে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলো ,তারপর পাগলের মতো অভয়ের কপালে দুগালে চুম্বন দিতে থাকে, চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পরছে, কাঁদতে কাঁদতে বলছে "জানতাম আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো, যে যাই বলুক আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তুমি একদিন ফিরে আসবে আমার কাছে"। অভয় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাথৈ আবার বললো: কি হলো অভয়, তোমার কি হয়েছিল? কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? জানো আমি তোমাকে কত খুঁজেছি" তবুও অভয় কথা বলছে না দেখে তাথৈ বললো: কি হলো অভয় তুমি কথা বলছো না কেন? তারপর অভয়ের দুগাল ধরে বলে: বুঝেছি তুমি রেগে আছো আমার উপর, আচ্ছা আমি সরি বলছি এবার হয়েছে? কি হলো এবার কথা বলো, অভয় উত্তর দিল: হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?। তাথৈ অবাক হলো সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় "এক্সকিউজ মি" শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখে এতক্ষণ সে কল্পনার জগতে চলে গিয়েছিল, বাস্তবে সে এখনো এক‌ই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
এবার তাথৈ বললো: তুমি হয়তো আমাকে চিনতে পারছো না আমি..
আমি জানি আপনি কে মিস্ তাথৈ ভট্টাচার্য, কিন্তু আপনি এখানে কেন সেটা জানিনা।
আসলে আমি... তাথৈ তোতলাতে থাকে।
আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন?
কথাটা তাথৈএর বুকে তীরের মতো বিঁধলো, সে বললো: তুমি যাকে আমার বয়ফ্রেন্ড বলছো সে আমার বয়ফ্রেন্ড নয়।
হুমম, অভয় একটা ব্যাঙ্গাত্মক শব্দ করলো।
তাথৈ তাড়াতাড়ি আবার বললো: তুমি বিশ্বাস করো ও আমার বয়ফ্রেন্ড নয়।
আমি কি বিশ্বাস বা না করি তাতে কি যায় আসে? বলতে বলতে সে একটু দূরে একটা জলের কল খুলে ভালো করে হাত পা আর মুখ ধুয়ে নিল তারপর ঘাসের উপর রাখা একটা ভি গলা ফুলস্লিভ টিশার্ট পরে "আসুন" বলে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল, তাথৈ‌ও ঢুকলো।
চা না কফি? জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা।
চা।
একটু পরেই ট্রে তে গরম জল, সুগার কিউবের ডিব্বা, দুধ এবং টি ব্যাগ নিয়ে এসে চা তৈরি করতে লাগলো, তাথৈ লক্ষ্য করলো ছেলেটা জিজ্ঞেস টরলো না যে তাথৈ কটা সুগার কিউব নেবে যেন সে আগে থেকেই জানে এমন ভাবেই দুটো কিউব মিশিয়ে একটা টি ব্যাগ কাপে দিয়ে তাথৈএর দিকে এগিয়ে দিল, তাথৈ নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বললো: তোমার মনে আছে যে আমি দুটো সুগার কিউব খাই চায়ে?
সামনের ছেলেটা তখন নিজের জন্য চা তৈরি করে চুমুক দিতে যাবে, প্রশ্নটা শুনে চমকে তাথৈএর দিকে তাকালো, বললো: মানে?
সুগার কিউব,আমি কটা সুগার কিউব নি‌ই এটা খুব বেশি লোক জানে না। 
ছেলেটা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো: আন্দাজে চালিয়েছি, এবার বলুন আপনি এখানে কেন এসেছেন?
তাথৈ মনে মনে বললো: আমি জানি তুমি অভয়, তবুও আমি দেখতে চাই তুমি কতদিন নিজেকে আমার থেকে লুকিয়ে রাখো, একবার শুধু জানতে পারি যে তুমি কেন নিজেকে লুকাচ্ছো।
মুখে বললো: কেন আপনার অসুবিধা হয়েছে? তাহলে দুঃখিত।
দুঃখিত হবার কিছু হয়নি কিন্তু এভাবে একজন অচেনা লোকের বাড়িতে এলেন.. নাকি প্লট দেখতে এসেছিলেন?
প্লট? কিসের প্লট?
কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাথৈএর দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো: আপনি সত্যিই জানেন না নাকি না জানার অভিনয় করছেন?
অভিনয় মানে?
আপনার জ্যেঠুমণি এবং আপনার বাবা এখানকার লোকদের উচ্ছেদ করে এখানে একটা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চান, আপনার আর আপনার কাজিনের নামে।
এসব কি বলছো?
যেটা সত্যি, অবশ্য এটা নতুন নয় এর আগেও অনেকলোকের অনেককিছু কেড়ে নিয়েছেন তারা।
"আমি বিশ্বাস করি না" বেশ জোরের সঙ্গেই বললো তাথৈ।
সেটা আপনার ইচ্ছা।
প্রমাণ দিতে পারেন? এতক্ষণ তাথৈ তুমি করে কথা বলছিল এখন আপনি করে বলতে শুরু করলো।
আপনাকে প্রমাণ দিতে আমি বাধ্য ন‌ই।
প্রমাণ নেই তো দেবেন কোথা থেকে? আমার বাপি এবং জ্যেঠুমণি খুব ভালো মানুষ তারা কখনো কারো সাথে অন্যায় করতে পারেন না, আমি নিজে ওনাদের দুঃস্থ লোকেদের সাহায্য করতে দেখেছি।
সব ভাঁওতাবাজি, বাইরের যে কোনো লোককে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন সত্যিটা জানতে পারবেন।
ওরা তো আপনার অনুগত, আপনার শেখানো বুলি‌ই আওড়াবে।
কিন্তু আপনার জ্যেঠুমণি আর বাবা যদি এত‌ই ভালো আর পরোপকারী হন তাহলে ওই গরীব লোকেরা ওনাদের বিরুদ্ধে যাবেই বা কেন?
ওদের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে।
যে চোখ খুলে ঘুমায় তাকে জাগানো যায় না।
নিজের বাবার নামে এরকম শুনে তাথৈ রেগে যায় সে একটু জোরেই বলে: আমার বাপি কারো সাথে কখনো কোনো অন্যায় করেন নি,বরঞ্চ যারা অন্যায় করে তাদের শাস্তি দেন, হয়তো এমনই কাউকে অন্যায়ের শাস্তি দিতে দেখেছেন তাই, আমার বাপি যদি কারো সাথে কিছু করে তার মানে সে কোনো খারাপ লোক ছিল কোনো খারাপ কাজ করেছে তাই বাপি তাকে শাস্তি দিচ্ছিল, আমার বাপি কোনো অন্যায় করতেই পারে না।
নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো নিরপরাধ মানুষকে খুন করা, কারো জমি দখল করার জন্য পরিবার সহ কারো বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এটা অন্যায় নয়?
আপনি মিথ্যা বলছেন, আমার বাপি যদি কোথাও আগুন লাগিয়েও থাকে তাহলে হয়তো সেখানে কোনো খারাপ কাজ হতো বা খারাপ লোক থাকতো..
মিস তাথৈ ভট্টাচার্য... তাথৈকে চমকে দিয়ে রাগে প্রায় চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা, কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়, কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে থেকে নিজেকে সামলে নেয়, নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তারপর বলে: কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তাকে খারাপ লোক বলাটা ভদ্রতা নয়, আপনাকে প্রথমে ওদের থেকে আলাদা ভেবেছিলাম কিন্তু দেখছি আপনিও ওদের থেকে কিছু কম নন, আপনার পরিবার যা করে সেটা হয়তো আপনার কাছে খুবই সাধারণ বিষয় তাই ওটা আপনার চোখেও অন্যায় নয় হাজার হোক আপনি নিজেই তো ওই পরিবারের সন্তান নিজেও না জানি কত ছেলের সাথে অন্যায় করেছেন, তাদের জীবন বরবাদ করেছেন।
এবারে তাথৈএর মনে আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে তার সামনে যে বসে আছে সে অভয় ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না, এই এক‌ইভাবে নিজের রাগকে বহুবার কন্ট্রোল করতে দেখেছে অভয়কে, এ অভয় ছাড়া আর কেউ নয়, সে বললো: আমি কোনোদিন কখনো কারো সাথেই কোনো অন্যায় করিনি।
হয়তো করেছেন নিজের সুন্দর চেহারা আর মিষ্টি কথার জালে ফাঁসিয়ে না জানি কত ছেলের জীবন নিয়ে খেলেছেন, তাদের জীবন বিষিয়ে দিয়েছেন।
আপনি আমাকে অপমান করছেন, আমি কখনো কারো জীবন নিয়ে খেলিনি।
খেলেছেন, হয়তো আপনার মনে নেই কিন্তু হতেই পারে যে কারো একজনের বিশ্বাস ভেঙেছেন, আর সেটা আপনার কাছে এতটাই সাধারণ বিষয় যে সেটা আপনার চোখে অন্যায় নয় তাই ভুলে গেছেন অথচ যার সাথে করেছেন সে না বাঁচতে পারছে না মরতে।
তাথৈএর কথা বন্ধ হয়ে গেল, সে মনে মনে ভাবছে: এসব কি বলছে অভয়? সে কার জীবন নিয়ে খেলেছে? কার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, অভয়ের? কিন্তু অভয় এটা কেন ভাবছে অভয় তো জানে যে সে তাকে কতটা ভালোবাসে।
আপনি কিসের কথা বলছেন? আমি কার সাথে কি করেছি?
সময় করে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন, নিজের অতীতে ডুব দেবেন, মনে পড়লেও পড়তে পারে, বললাম তো আপনার কাছে সেটা সাধারণ ঘটনা কিন্তু যার সাথে করেছিলেন হয়তো তার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে, তার জীবন থেকে বিশ্বাস ভালোবাসা সব শেষ হয়ে গেছে।

নদীর ঘাটে একটা সিঁড়িতে একা বসে আছে তাথৈ গতকাল থেকে তার মনটা ভালো নেই বুঝতে পারছে সে একটু খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে অভয়ের সাথে তার রাগ কমাতে গিয়ে আরো বাড়িয়ে দিয়ে এসেছে। আসলে নিজের বাপির বিরুদ্ধে কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল তার উপরে অভয় একদম অপরিচিত মানুষের মতো ব্যবহার করছিল,একবার তো তাথৈএর মনে হয়েছিল যে সে ভুল করছে না তো এই ছেলেটা যদি অভয় না হয় তখন? কিন্তু এখন তাথৈ শতভাগ নিশ্চিত যে ওটাই অভয়, কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না অভয় কেন তার সাথে এমন ব্যবহার করলো সে কি এমন করেছে, হ্যাঁ একটা ভুল করেছে অভয়কে জানিয়ে যেতে পারেনি যে তাকে বাইরে পাঠানো হচ্ছে পড়াশোনা করার জন্য, কিন্তু তার‌ও কারণ ছিল, অভয় যদি জিজ্ঞেস করতো তাহলে নিশ্চয়ই বলতো, কিন্তু এখন সে কি করবে? অভয় তার উপর আগে থেকেই রেগে ছিল এখন তো আরো রেগে গেছে।
আরেকটা কথা অভয় বলেছিল যে তার জ্যেঠুমণি আর বাপি কারো জমি দখল করার জন্য তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, কাদের বাড়িতে? অভয়দের? কিন্তু সেটা জানবে কিভাবে তাথৈ একবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করলো কিন্তু ফোন সুইচড অফ, ফোন রেখে সে ঘাটে চারিদিকে দেখতে লাগলো।
ঘাটের অনেক জায়গায় অনেক কাপলরা বসে আছে, একে অপরের হাত ধরে, কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, এইসব‌ই সে দেখতে থাকে হটাৎ একটা কাপলকে দেখে তার চোখ আটকে যায় সেখানে দুজন কিশোর-কিশোরী বসে আছে দুজনের পরনেই কলেজ ড্রেস বোঝাই যাচ্ছে হয় কলেজ ছুটির পরে এসেছে না হয় পালিয়ে এসে প্রেম করছে কিন্তু তাথৈএর চোখ আটকালো অন্য কারনে ওরা দুজন একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে আছে, কিশোরী মেয়েটির চোখ বন্ধ সে তার প্রেমিককে বাধা তো দিচ্ছেই না উপরোন্ত তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এতে খুব খুশি। ওদের দিকে দেখতে দেখতে তাথৈ‌এর বহুকাল আগে এক বিকেলের কথা মনে পরে..
এই তুমি কি করছো এটা, বন্ধ করো। চোখ পাকিয়ে পাশে বসা প্রেমিক অভয়কে হুকুম করে কিশোরী তাথৈ।
কেন কি হয়েছে?
এক্ষুনি বন্ধ করো।
না, আরেকটু
এক্ষুনি বন্ধ করো বলছি, লোকে কি বলবে?
আরে কি সমস্যা?
আর এখানে লোক কোথায়? আর দেখলে তারা কিছু ভাববে না।
তাই বলে তুমি ব‌ই নিয়ে প্রেম করতে আসবে? আর এসেই ব‌ই খুলে বসবে? কখনো শুনেছো কেউ প্রেম করতে এসে ব‌ই পড়ে?
শোনো আমি বলি কি তুমিও একটা ব‌ই পড়ো সামনে পরীক্ষা, এইসব প্রেমের চক্করে যদি রেজাল্ট খারাপ হয় না তাহলে দুজনের বাড়ি থেকেই সবকটা বাটাম পিঠে পরবে একটাও নীচে পরবে না।
তাহলে বাড়িতেই থাকতে পারতে প্রেম করতে আসার কি দরকার ছিল?
তুমি না দিনদিন বড্ড ডেঁপো মেয়ে হয়ে যাচ্ছো।
কি...ডেঁপো মেয়ে মানে??
এঁচোড়ে পাকা মানে বোঝো?
তবে রে, আমি এঁচোড়ে পাকা আর তুমি কি? বলে তাথৈ অভয়ের পিঠে আর বাহুতে  চটাস চটাস করে চড় মারতে থাকে।
আঃ কি মেয়ে রে.. গুণ্ডা পুরো।
কথা শুনে তাথৈ আরও রেগে যায় "আমি গুণ্ডা"বলে আরো কয়েকটা চড় বসিয়ে দেয় অভয়ের পিঠে।
দেখ খালি মারছে এর থেকে তো ওই মেয়েটা ভালো ছিল ওর কাছে গেলেই ভালো হতো, কত ভালো ব্যবহার করে।
"কোন মেয়েটা?" কথাটা শুনে চড় থামিয়ে জিজ্ঞেস করে তাথৈ।
ওই যে কি যেন নাম তোমারই তো বন্ধু। 
কথাটার সাথে অভয়ের ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে ওঠে ,তাতে যেন আগুনে ঘি ঢালে চকিতে তাথৈ অভয়ের শার্টের বুকের কাছটা খামচে ধরে বলে "তার আগে আমি তোমাকে খুন করবো আর নিজেও মরবো, দেখি তখন কার দিকে তাকাও" কথার পরে আবার যথেচ্ছভাবে চড়, চিমটি দিতে থাকে তাথৈ।
অ্যাঁ.. আঃ তাথৈ.. কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে।
হ্যাঁ... অসভ্য ছোটোলোক ছেলে, খালি অন্য মেয়ের দিকে নজর, আমার তোমার সাথে থাকাই ভুল হয়েছে, আমি চলেই যাবো। কথাটা বললেও তাথৈ যায় না শুধু অভয়কে ছেড়ে দিয়ে পাশে বসে থাকে, অভয় আবার ব‌ইতে মন দেয়। একটু পরে ফোঁপানির আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে তাথৈ মাথা নীচু করে কাঁদছে.. অভয় জানে তাথৈ এরকমই এক্ষুনি রাগ দেখাচ্ছে তো পরমুহূর্তেই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে, সে তাথৈকে বলে: আবার কাঁদছো কেন? আচ্ছা এই নাও ব‌ই বন্ধ করলাম। বলে সত্যি সত্যিই হাতের ব‌ইটা বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় তবুও তাথৈএর কান্না থামছে না দেখে আবার বলে: এবার তো ব‌ই‌ও বন্ধ করে দিয়েছি আবার কি হলো?
"তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না" ফোঁপাতে ফোঁপাতে উত্তর দেয় তাথৈ।
তাথৈ... তুমি জানো আমার বাবা-মায়ের পরে আমি যদি কাউকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি তাহলে সেটা তুমি।
তাহলে তুমি বললে কেন যে অন্য মেয়ের কাছে যাবে?
আরে আমি তো মজা করছিলাম, তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবো?
তাথৈ চুপ করে থাকে অভয় আবার বলতে থাকে: আমি তোমাকে ছেড়ে কারো কাছে যাবো না।
এবার তাথৈ অভয়ের একটা বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলে: তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো।
তাথৈ.. একটু জোরে নামটা নেয় অভয়, তারপর আবার শান্ত হয়ে বলে: বলেছি না এরকম বলবে না।
এবার তাথৈএর ঠোঁটেও হাসির রেখা দেখা যায় সে সোজা অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে তার কান্না থেমে গেছে অভয়‌ও তার দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের মনেইয়এক নতুন অনুভূতি, এক নতুন অজানা আকর্ষণ অনুভব করে, যেন কিছু একটা দুজনকে পরস্পরের কাছে টানছে, আস্তে আস্তে দুজনের মুখ এগিয়ে যায় আসন্ন মুহূর্তের জন্য তাথৈএর দেহমন এক অজানা অনুভূতিতে ভরে ওঠে সে দুচোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকে নিজের ঠোঁটে অভয়ের ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার জন্য, উত্তেজনা বাড়তে থাকে সারা শরীরে শিহরণ জেগে ওঠে কিন্তু এখনো স্পর্শ পাচ্ছে না কেন?
ব্যাঁ.......ব্যাঁ
একটু দূরে হটাৎ একটা ছাগলের ডাকার আওয়াজটা শুনে দুজনেই সচকিত হয়ে ওঠে, তাথৈএর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু অভয় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে একটু পরে তাথৈএর দিকে না তাকিয়েই বলে: আমি দুঃখিত জানিনা আমার কি হয়েছিল.. আমার এরকম করাটা উচিত হয়নি।
তাথৈ অভয়ের মুখটা ধরে নিজের দিকে ঘোরায়। অভয় আবার বলে "আয়্যাম সরি তাথৈ"।
তাথৈ একহাতে অভয়ের দুটো চোখ চেপে ধরলো তারপর একে একে অভয়ের দুটো গালে দুটো চুম্বন দিয়ে অভয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো: আপাতত এটাই নাও ওটা পরে হবে, যেদিন আমরা দুজনেই আঠারো বছরের হবো সেদিনই নাহয় আমাদের প্রথম কিসটা হবে।
তারপর চোখ ছেড়ে দেয়, "আমি অপেক্ষায় থাকবো" মুখে হাসি নিয়ে বলে অভয়।

নিজের মোবাইলে ক্যামেরায় তোলা মিস্টার গুপ্তর দেওয়া অভয়ের ছবিটার ছবি দেখতে থাকে তাথৈ তারপর ছবিটাকেই উদ্দেশ্য করে বলে: আমাদের প্রথম কিসটা এখনো বাকি আছে কিন্তু, মনে আছে তো? জানি তোমাকে আরও রাগিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তুমিও তো কিছু বললে না খালি বলছো আমি তোমার সাথে কিছু করেছি যাতে তোমার জীবন নষ্ট হয়েছে কিন্তু আমি কি করেছি....  না.. আমাকে জানতেই হবে যে করেই হোক আমাকে জানতেই হবে যে আমি তোমার সাথে কি করেছি আর আমার বাপি‌ই বা কি করেছে?। তাথৈ আবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করে কিন্তু ফোন এখনও বন্ধ।

নিজের অফিসে ভাগ্নে রকি এবং আরো কয়েকজনের সাথে মিটিং করছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য তার লক্ষ্য নিজেদের কনস্ট্রাকশন সহ অন্যান্য ব্যাবসা আছে সেগুলো দিয়ে নিজের ক্ষতির কিছুটা পূরণ করা।
"শোন রকি", ভাগ্নেকে উদ্দেশ্য করে বললেন বীরেন বাবু, "প্রজেক্টটা আমরা পাবো এটা তো শিওর আর বাজেটও অনেক, তাই কোনো গাফিলতি বা ভুল কিন্তু বরদাস্ত করবো না, এখন থেকে এটাতেই পুরো মন দিয়ে কাজ করবে"।
ঠিক আছে মামা।
আমাদের পরিচিত সব ইনভেস্টরদের সাথে কথা হয়েছে তাদের সাথে শুধু ফর্মালিটির জন্য ডিল সাইন করতে হবে, তারা সবাই ইনভেস্ট করতে রাজী হয়েছে।
ওই রঘু আর লাল্টুর জন্য আমাদের প্রফিট কমে যাবে ওদের একবার হাতে পাই মামা...
এটা তো বুঝতেই পারছো যে কেউ বা কারা আমাদের পিছনে লেগেছে কিন্তু কে সেটা ধরতে পারছি না সে নিশ্চয়ই এবারও আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাই সজাগ থাকতে হবে।
কিন্তু মামা কে ক্ষতি করতে চাইছে সেটা তো খুঁজে বার করতে হবে।
সেটা হবে কিন্তু...
বীরেন ভট্টাচার্য কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন ধীরেন বাবু পিছনে জগা।
"আয় ধীরেন আয়" বীরেন ভট্টাচার্য ভাইকে ঢুকতে দেখে বললেন "এই রকিকে বলছিলাম যে এবার মন দিয়ে কাজ করতে হবে, অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে"
কিন্তু ধীরেন বাবু তাতে বিশেষ উৎসাহ দেখালেন না তিনি বেজার মুখে বললেন: একটা খারাপ খবর আছে দাদা।
খারাপ খবর... কি?
কন্ট্রাক্টটা আমরা পাইনি। ঘরের মধ্যে বাজ পরলেও বীরেন ভট্টাচার্য এতটা আশ্চর্য হতেন না তিনি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে আগামী পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের কন্ট্রাক্টটা তারাই পাবেন, এত বছর সেটাই হয়ে এসেছে এই শহরে কোনো বড়ো কনস্ট্রাকশনের কাজ হলে সেটা তাদের কোম্পানি ছাড়া আর কারো কাছে যেত না, একে তো তিনি একজন মণ্ত্রী, তার উপর লোকবল অনেক আর তার ক্ষমতার কথা সবাই জানে তাই তিনি ছাড়া আর কাউকে কন্ট্রাক্ট দেওয়ার কথা কেউ ভাবেও না আর সাহস‌ও হয় না।
কিন্তু আজ এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো ধীরেন বাবুর কথাটা কেউই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
রকি: কি? আমরা পাইনি.. এটা কিভাবে সম্ভব?
সম্ভব হয়েছে রকি, বললেন ধীরেন বাবু।
কে পেয়েছে? কিভাবে? এই শহরে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস কার আছে? ও ঠিক আছে যেই পাক... দেখে নেবো, মাথায় পিস্তল ঠেকালেই সব বাপ বাপ বলে কন্ট্রাক্ট ছেড়ে দেবে, আর তাও না ছাড়লে খালাস করে দেবো।
এবারে জগা মুখ খোলে: যে পেয়েছে তার মাথায় পিস্তল ঠেকানো তো দূর তার মাথার একটা চুল‌ও ছুঁতে পারবে না তুমি।
কেন.. কে পেয়েছে? জিজ্ঞেস করে রকি। কিন্তু জগা উত্তর না দিয়ে বীরেন বাবুর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে ঢোঁক গেলে।
কি হলো জগাদা বলো কে পেয়েছে? আবার জিজ্ঞেস করে রকি। কিন্তু তাও জগা চুপ করে থাকে।
"কে পেয়েছে ধীরেন?" গুরুগম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করেন বীরেন বাবু।
দাদা কন্ট্রাক্ট পেয়েছে.... এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ।
নামটা শুনে চমকে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য তার মুখে একে একে ভয় রাগ ঘৃণা সবকিছুই প্রতিফলিত হলো।
ধীরেন বাবু বলে চলেন: ওদের‌ই পুরো বিজনেসের একটা উইং কনস্ট্রাকশনের বিজনেস করে,সবথেকে বড়ো কথা ওদের মতো বড়ো ইন্ডাস্ট্রি নিজে বিড পেপার জমা দিয়েছে, পুরো দেশে ওদের সুনাম আছে তাই...
রকি: কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, ওরা বাণিজ্যনগরী ছেড়ে হটাৎ আমাদের শহরে এলো কেন?
"কারন এই একটা শহরেই ওর আধিপত্য বাকি আছে, তাই এখন এই শহরে হাত বাড়িয়েছে" উত্তর দেন ধীরেন বাবু।
"অর্ধেক শহরে" গম্ভীর কণ্ঠে বলেন বীরেন বাবু, একটু থেমে আবার বলেন "অর্ধেক শহরে অলরেডি দখল নিয়ে নিয়েছে"
কি বলছো দাদা? 
ঠিক বলছি, তোর মনে আছে তাথৈ আর বৃষ্টির জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চেয়ে একটা বস্তি খালি করতে চেয়েছিলাম।
হ্যাঁ ,মনে আছে।
"ওটা উচ্ছেদ করা যাবে না উপর থেকে অর্ডার এসেছে, আর এটা যে এই এআরসি র কাজ সেই কথাটা কানে এসেছে, আর এটাও কানে এসেছে যে ওই বস্তির লোকেদের সাহস খুব বেড়ে গেছে, ওই এলাকায় বাইরের লোক ঢোকা বারণ এমনকি পুলিশ‌ও ঢুকতে পারে না"।
এসব কি বলছো দাদা?
ঠিক বলছি।
এবার কি করবে মামা?
আপাতত আমাকে একা থাকতে দাও।
সবাই জানে এটা হুকুম আর এই হুকুম অমান্য করার সাহস কারো নেই তাই সবাই বেরিয়ে গেল।

"এআরসি এআরসি এআরসি আমার পথে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লোকটা" সবাই বেরিয়ে যেতেই রাগে ফেটে পড়লেন বীরেন ভট্টাচার্য। তার অনেকদিনের স্বপ্ন বাণিজ্যনগরীতে নিজের ব্যাবসার প্রসার বাড়ানো কিন্তু তিনি সফল হননি কারণ সেখানে তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই এআরসি, পুরো বাণিজ্যনগরী ওর হুকুমে চলে সেখানকার প্রতিটা লোকের মুখে তার নাম, দেশের ইয়াং বিজনেস টাইক্যুন অথচ বাইরের কেউ তাকে চেনে না, তার ছবি কোথাও বেরোয় না, কোনো বিজনেস পার্টি সে অ্যাটেণ্ড করে না, কোনো সাংবাদিক তার লাইভ ইন্টারভিউ নিতে পারে না, কে এই এআরসি কেমন দেখতে তার পরিবারে কে কে আছে সেটা বাইরের কেউ জানে না, যারা জানে তারা কারো কাছে মুখ খোলে না অথচ পুরো শহরের লোক তার নাম জানে কেউ তার নাম শুনলে আতঙ্কে প্রায় হার্টফেল করে তো কেউ দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে।
বানিজ্যনগরীর একটু বাইরের দিকে বিশাল বাংলো তার, বাংলো না বলে রাজপ্রাসাদ বলা ভালো যেটাকে সে সুরক্ষিত করে প্রায় দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে ভিতরে সুরক্ষা তো আছেই তার উপরে ওই বাংলোকে ঘিরে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যারা বাস করে তারাও অচেনা, অজানা কাউকে ওদিকে যেতে দেয় না। বীরেন বাবু অনেক চেষ্টা করেছেন এই এআরসির সম্পর্কে জানতে, অনেক লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সবাই জাস্ট নিঁখোজ হয়ে গেছে, কয়েকজন ছোটোখাটো ব্যাবসায়ীকে লোভ দেখিয়ে নিজের সাথে নিয়েছিলেন বীরেন বাবু কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে।
দুই বছর আগে একবার খোদ বীরেন বাবু নিজে গিয়েছিলেন তার সাথে দেখা করতে সাথে জগা এবং আরো কয়েকজন ছিল অফিসে ঢুকতে না পেরে বাংলোর দিকে গিয়েছিলেন কিন্তু ঢুকতে পারেননি, ভেবেছিলেন বাইরের লোকের সাথে কথা বলে খবর বার করবেন, এই আশায় এক চায়ের দোকানে ঢোকেন, ওখানে আরও অনেক লোক ছিল। এটা ওটা কথার পরে আসল কথা পাড়লেন কিন্তু সবাই কথা পাল্টে যেতে থাকে বা ছড়িয়ে যেতে থাকে, বীরেন বাবু ভেবেছিলেন টাকার লোভ দেখালে হয়তো কাজ হাসিল হয়ে যাবে তাই টাকার অফার করেছিলেন কিন্তু তার বদলে যেটা হয়েছিল সেটা আমৃত্যু তার মনে থাকবে, মুহূর্তের মধ্যে চায়ের দোকানে উপস্থিত প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র উঠে এল, এছাড়াও আশেপাশে থাকা বেশ কয়েকজন এগিয়ে এল তাদের হাতেও উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র, জগা আর তার সাথে যারা গিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের কোমরে একটা পিস্তল গোঁজা ছিল সেটা তারা বার করতে যেতেই দেখলো তাদের প্রত্যেকের মাথা লক্ষ্য করে অন্তত ৫টা রাইফেল উদ্যত হয়ে উঠলো, এমনকি চায়ের দোকানির হাতেও একটা পিস্তল উঠে এসেছে আর সেটা সে সটান বীরেন বাবুর কপালে ঠেকালো, বীরেন বাবু অবাক অথচ সভয়ে দেখলেন এক নিরীহ চায়ের দোকানির মুখ মুহূর্তে একটা জাত খুনির মুখে বদলে গেল, দোকানি শীতল কণ্ঠে বললো: তোকে বিনা পয়সাতেই খবর দিচ্ছি তবে তার আগে একটা উপদেশ.. এখান থেকে চলে যা আর কোনোদিন এখানে আসবি না, এবার খবর.. এআরসির সাথে সেই দেখা করতে পারে যার সাথে এআরসি দেখা করতে চায় তার বাইরে কেউ দেখা করতে পারে না যদি কেউ করতে চায় তাহলে তাকে আর এই পৃথিবীতে দেখা যায় না, চল এবার যা এখান থেকে। বীরেন ভট্টাচার্যকে তারা জ্যান্ত ফেরত পাঠালো বটে তবে শাস্তিস্বরূপ প্রত্যেককে জামাকাপড় খুলিয়ে শুধুমাত্র নিম্নের অন্তর্বাস পরিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে এলাকা থেকে অনেকটা বাইরে বার করে দিল, ভাগ্য ভালো ছিল যে কোনো মিডিয়া ডাকেনি নাহলে সেদিনই তার সব সম্মান শেষ হয়ে যেত। বীরেন ভট্টাচার্য অপমান হজম করার লোক নন, তাই তিনি ঠিক করেছিলেন রাতে ওই এলাকায় হামলা করে তাদের যারা অপমান করেছে তাদের শেষ করবেন, যদি তাদের নাও পান তাহলে ওখানে যেপব বাড়িতে ঢুকে যারা থাকবে সবাইকে শেষ করবেন, এই উদ্দেশ্যে তিনি নিজের শহর থেকে দলের কয়েকজন লোককে ডেকে পাঠান, একটা ছোট্ট লজের রুমে  সবাইকে নিয়ে হামলার প্ল্যান করছেন এমন সময় কোনোভাবে খবর পেয়ে সেখানে আগে হামলা চালায় এআরসির লোকেরা এই অতর্কিত হামলায় তার দলের প্রায় সবাইকে মেরে ফেলে ওরা কিন্তু অদ্ভুতভাবে বীরেন বাবু এবং জগাকে এবারও ছেড়ে দেয়, সেই থেকে আর ওদিকে পা বাড়াননি বীরেন বাবু..
আজকেও সেই রাতের ঘটনা মনে পরায় তার কপালে ঘাম দেখা যায়, পা কাঁপতে থাকে নেহাত চেয়ারে বসে ছিলেন নাহলে নির্ঘাত পরে যেতেন, লোকগুলো তার দলের লোকগুলোকে শুধু মারছিল না রীতিমতো নৃশংসভাবে মারছিল, যখন তাদের তাণ্ডব শেষ হয় তখন পুরো ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে, বীরেন বাবু আর জগার পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি, দুজনেই ভয়ে আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছেন। সেই এআরসি এখন তার শহরে হাত বাড়িয়েছে, তবে কি এতদিন তারসাথে যা যা হয়েছে তার পিছনে এই এআরসি? এই এআরসি তার পিছনে লেগেছে? বীরেন বাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যায় তিনি সেদিনের ঘটনা মনে করে  শিউরে ওঠেন, বীরেন বাবু ভালো করেই জানেন যে এই এআরসির সাথে লড়ার ক্ষমতা তার নেই, তিনি নেতা হতে পারেন কিন্তু সেটা শুধু এই রাজ্যের, অথচ এআরসির দল দেশের সব শহরে ছড়িয়ে আছে, তার আধিপত্য শুধু এই শহরে তাও তার অর্ধেক নিয়ে নিয়েছে এআরসি। কিন্তু তিনি বীরেন ভট্টাচার্য এত সহজে হার মানবেন না তিনি টেবিলের উপরে রাখা ফোনটা তুলে কাউকে ফোন করেন তারপর স্পিকার চালু করে টেবিলে রাখেন একটু পরে ওপার থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা যায় "হ্যালো"
অতীন আমি বীরেন ভট্টাচার্য বলছি।
এতদিন পর আমাকে মনে পরলো কেন?
তোমার অনেকদিনের শখ এই শহরে পোস্টিং নেওয়ার, আমি সেটা করতে পারি..
হঠাৎ... কিন্তু এই উপকারের বিনিময়ে আপনি কি চান?
এআরসি।
এআরসি?
এআরসির সম্পর্কে সব খবর চাই, তুমি পুলিশের লোক ওর সম্পর্কে খোঁজখবর জোগাড় করতে হবে।
আপনি জানেন আপনি কার সম্পর্কে কথা বলছেন?
জানি।
তাহলে এটাও জানেন যে ওর বিরুদ্ধে যারা স্পাইং করতে গেছে সবাই গায়েব হয়ে গেছে, বাণিজ্যনগরীতে রাজ করে ও, ওখানের কেউ ওর বিরুদ্ধে যাবে না।
ও এই শহরে আছে।
আপনি শিওর?
পুরো না, আমার একটা কন্ট্রাক্ট ও ছিনিয়ে নিয়েছে, আমাকে একটা বস্তি উচ্ছেদ করতে দিচ্ছে না, ওই বস্তিতে বাইরের কেউ ঢুকতে পারে না খুব সম্ভবত ওখানেই ও আছে, এবং আমার পিছনে লেগেছে।
বেশ.. আমি চেষ্টা করবো কিন্তু সফল হবো কিনা এখনই কথা দিতে পারছি না, কাজটা রিস্কি আর সফল হলে কি পাবো?
আগে সফল ‌হ‌ও।
যদি হ‌ই তখন?
কি চাও তুমি?
আপনি জানেন।
নিজের লিমিট ক্রশ কোরো না অতীন ,বৃষ্টি আমার মেয়ে।
উঁহু আমার চয়েস পাল্টে গেছে বৃষ্টি নয় তাথৈ... আমার তাথৈকে চাই।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন বীরেন বাবু তারপর বলেন তোমার ট্রান্সফার অর্ডার তোমার হাতে চলে যাবে, যত তাড়াতাড়ি চলে আসো।

বি দ্র: আশা করছি এই পর্বটা সবার ভালো লাগবে, আর ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে পাশে থাকবেন।
আরো একটা কথা যাদের শুধু অজাচার বা সেক্স রিলেটেড গল্প পছন্দ তাদের উদ্দেশ্যে বলি এই গল্পে অজাচার বা সেক্স কোনোটাই তেমন নেই, তবুও যদি স্রেফ গল্প পড়তে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই পড়ে দেখবেন, ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু আর খারাপ লাগলে সেটাও কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ।

Good
Like Reply
(03-10-2022, 01:01 AM)Monen2000 Wrote:
                           একাদশ পর্ব

"তুমি আবার ওই পুরোহিত ব্যাটাকে বাড়িতে ডেকেছো?" ফোনেই মাকে জিজ্ঞেস করে এআরসি, নিজের অফিসে বসে ফোনে মায়ের সাথে কথা বলছে সে।
এই বাড়িতে পূজো দেবো না নাকি?
এত পূজো করো কেন?
ফালতু বকিস না কি জন্য ফোন করেছিস বল।
আমি একটা বড়ো প্রজেক্টের কন্ট্রাক্ট পেয়েছি ,একটা পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট।
কয়েকবার ঠাকুরের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে ছেলেকে বলেন: তুই আরও উন্নতি কর.. আজ তোর বাবা থাকলে খুব খুশি হতেন ছেলের এই উন্নতি দেখে।
মায়ের কথা শুনে মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় এআরসির, সে বলে: আমি জানি বাবা যেখানেই আছেন আমাকে দেখে খুশীই হচ্ছেন।
তোর কাজ তো হয়ে গেছে মনে হচ্ছে তাহলে এবার ফিরে আয়।
আসবো আর একটু বাকি আছে সেটা শেষ করেই ফিরবো।
আমার ছেলে কি ফিরবে?
মানে? কি বলছো তুমি মা?
বলছি তুই তো ফিরবি কিন্তু আমার ছেলে কি ফিরবে?
প্রশ্নটার তাৎপর্য বুঝতে একটু সময় নেয় এআরসি, সে চুপ করে থাকে।
আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আন... আমি আর কিচ্ছু চাই না।
মা...
তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না.....কিসব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে আমাদের ছেলে অ..
মা। মাকে কথাটা শেষ করতে দেয় না, তুমি যার কথা বলছো সে মারা গেছে আর মারা যাওয়া লোক ফিরে আসে না।
বাবু.. তুই
ওই নামটা নেবে না.. তুমি যাকে ফেরত চাইছো সে দুর্বল ছিল তাই নিজের বাবাকে বাঁচাতে পারেনি কিন্তু এখন যে আছে সে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর, যাকগে ওসব ছাড়ো তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
আছে.. আচ্ছা শোন কটা মেয়ের ছবি বেছে রেখেছি তুই এলে দেখবি নাকি পাঠিয়ে দেবো তোর কাছে?
মা... তোমাকে বলেছি না এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দিতে।
একদম বাজে বকবি না, উনি বিয়ে করবেন না সারাজীবন এভাবেই থাকবি নাকি?
কারো কোনো ক্ষতি তো হচ্ছে না।
হটাৎ ছেলেকে একটা প্রশ্ন করেন এআরসির মা: আচ্ছা বাবু তুই কি এখনো ওই মেয়েটাকে..
না... মায়ের কথা শেষ করতে না দিয়েই জোরে উত্তর দেয় এআরসি।
তাহলে?
আমার জীবনে ওর জন্য আর কোনো জায়গা নেই।
তাহলে সমস্যা কিসের, কেন বিয়ে করতে চাইছিস না?
ছাড়ো ওসব।
সব‌ই তো ছাড়তে বলছিস, আচ্ছা তুই কোথায় আছিস আমাকে নিয়ে চল না তোর কাছে।
দরকার কি? আমিও তো আর কিছুদিন পরেই ফিরবো
অনেকদিন ধরেই এক কথা বলে যাচ্ছিস, সত্যি বলতো তুই কোথায় আছিস?
আমি কাজের জন্য শহরের বাইরে আছি, বলেছি তো তোমাকে।
তুই এখন আমাদের ওই শহরে আছিস তাই না?
চমকে ওঠে এআরসি, বুঝতে পারে তার মা ঠিক আন্দাজ করেছে সে চুপ করে থাকে।
কি রে বল তুই ওখানেই গেছিস না?
না, তবে কন্ট্রাক্ট টা ওই শহরের পেয়েছি তাই ওখানে যেতে হবে।
তুই মিথ্যা বলছিস, তুই ওখানেই আছিস..
এআরসি বোঝে তার মা সব আন্দাজ করেছে তাই চুপ করে থাকে।
কি রে তুই ওখানেই গেছিস না?
বললাম তো না আমি অন্য জায়গায় আছি, পরে ওখানে যেতে হবে।
আচ্ছা আমিও যাবো।
মা তুমি
আমি কোনো কথা শুনতে চাই না,আমি যাবো তোর কাছে, আমি তোর বাবাকে হারিয়েছি কিন্তু এখন তোকে হারাতে পারবো না। কেঁদে ওঠেন তিনি।
মা..
না.. আমি কোনো কথা শুনতে চাই না আমি যাবো।
ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি তবে এখন নয় আর কিছুদিন পর, তুমি এলে তোমার হাতে পূজো দিয়ে নতুন কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু করবো, এখন ছাড়ছি।

কথা বলার সময় এআরসির মায়ের পাশে এসে বসেছেন তিনি যাকে নিজের দিদি বলে সম্মান দেন এআরসির মা আর তার ছেলে মাসি বলে সম্মান দেয়, সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় যখন দুই মা আর ছেলে এই নতুন শহরে আসেন তখন ইনি‌ই কাছে টেনে নেন, নিজের বস্তির ঘরে থাকতে দেন, দুনিয়ায় কেউ নেই তার এদিকে মা-ছেলের‌ও কেউ নেই তাই মিলেছিল ভালো। পরে ধীরে ধীরে যখন অভয় বড়ো বিজনেসম্যান হয়ে ওঠে নিজস্ব বাংলো তৈরি করে তখন মায়ের সাথে মাসিকেও নিয়ে আসে, যখন বস্তিতে থাকতেন তখন ওখানের অনেকেই ওনাকে বিন্দু মাসি বা বিন্দু দি বলে ডাকতো তাই উনিও প্রথমে বিন্দু দি বলে ডাকতেন পরে শুধু দিদি হয়ে যায় ডাকটা।
"কি বললো তোর ছেলে, কোথায় গেছে ও?" জিজ্ঞেস করেন বিন্দু দি।
সেখানেই গেছে যেখানে ওর যাওয়া ঠিক হয়নি।
তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না, বাবু আমাদের খুব ভালো কত লোকের আশীর্বাদ আছে ওর উপর, ওর কোনো ক্ষতি হবে না।
তাই যেন হয় দিদি, তাই যেন হয়।
আর কোন মেয়ের কথা বলছিলি যেন?
ছিল একটা মেয়ে, খুব বড়োলোকের মেয়ে.... আমার ছেলেটা খুব ভালোবাসতো ওকে, ছোটোবেলার প্রেম আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো ভুলে গেছে কিন্তু বোধহয় আমি ভুল করেছি... ছেলেটা আমার এখনো ভোলেনি ওকে।

মায়ের সাথে কথা বলে ফোনটা টেবিলে রেখে দেয় এআরসি, মায়ের কথাগুলো তাকে ভাবায়, তার কানে বাজতে থাকে মায়ের বলা কথাগুলো "তুই না জানি কত কি হয়ে গেছিস তোকে আজকাল চিনতেই পারি না.....কি সব নাম রেখেছিস নিজের, কেউ ডাকে রয় নামে তো কেউ ডাকে এআরসি নামে কিন্তু এসবের মাঝে তোর বাবার দেওয়া নামটা হারিয়ে গেছে", সত্যিই তো সে কেন নিজের নাম লুকিয়ে বেড়াবে? সে কেন তার বাবার দেওয়া পরিচয় লুকিয়ে রাখবে.... বাবা.. মনে করতেই এআরসির চোখে এক সদাহাস্য মধ্যবয়স্ক মানুষের মুখটা ভেসে ওঠে তার সাথে কানে বাজতে থাকে ছোটো থেকে শোনা ডাক যেটা সে আর কোনোদিন শুনতে পারবে না, বাবার মুখে তার নাম "অভয়" তার বাবা রুদ্র রায় চৌধুরী তার মা অমৃতা রায় চৌধুরী আর সে অভয় রায় চৌধুরী তিনজনের কি সুন্দর জীবন ছিল, কিন্তু সব শেষ করে দিয়েছে, তার বাবাকে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে ওই লোকটা ওই বীরেন ভট্টাচার্য... "আর তাথৈ?" অভয় ওরফে এআরসির ভিতর থেকে কেউ যেন প্রশ্নটা করে, হ্যাঁ.. তাথৈ, অভয় ভালোবেসেছিল ওকে খুব ভালোবেসেছিল কিন্তু বুঝতে পারেনি যে তাথৈ ওর সাথে খেলা করছে, টাইমপাস করছে কখনো বুঝতেই পারেনি বুঝলো সেদিন যেদিন অভয়ের ফোন তাথৈ ধরলো না বদলে হটাৎ করেই একটা ম্যাসেজ এল ফোনে "আমি চলে যাচ্ছি পড়াশোনা করতে, তোমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাইনা. ভেবে দেখলাম আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হতেই পারে না তোমার সেই যোগ্যতা বা স্বচ্ছলতা কোনোটাই নেই, আমার তুলনায় তোমার স্ট্যাণ্ডার্ড অনেক নীচুতে, তোমার মতো গরীবের সাথে আমি থাকতে পারবো না আর তাছাড়া আমার বাড়িতে ঠিক বলেছে এখন কেরিয়ার গড়ার সময়, তাই আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে কন্টাক্ট করার চেষ্টা কোরো না" ম্যাসেজটা পড়ে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল অভয় প্রথমে ভেবেছিল তাথৈ মজা করছে, তাই ফোন করেছিল একবার.. দুবার.. পরপর বেশ কয়েকবার করেছিল কিন্তু তাথৈ ধরেনি, একটা বন্ধুর ফোন থেকে কল করেছিল নিজে কনফারেন্স কলে থেকে তখন ফোনের ওপার থেকে একটা মেয়ের উত্তর এল "কেন বারবার বিরক্ত করছো ওকে, বুঝতে পারছো না ও তোমার মতো ভিখিরির সাথে রিলেশন রাখতে চায় না তাই ফোন ধরছে না" অভয় কাতরভাবে বলেছিল একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই, আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে, এখন হয়তো রেগে আছে প্লিজ একবার ফোনটা দিন"
এবারে এক মহিলা কথা বললেন: না, ওর সাথে কথা বলা যাবে না, কেন বুঝতে পারছো না যেটাকে তুমি ভালোবাসা ভাবছো সেটা জাস্ট টাইমপাস ছিল, তুমি ভাবলে কিকরে যে তাথৈ তোমার মতো একজন লোয়ার ক্লাস ছেলেকে পছন্দ করবে?, তুমি তাথৈ‌এর যোগ্য ন‌ও, ওকে নিজের মতো থাকতে দাও আর ওকে বিরক্ত কোরো না। ফোনটা কেটে গিয়েছিল, যে দুজন কথা বলেছিল তারা উভয়েই তাথৈ‌এর খুব কাছের মানুষ।
আমি তো ওকে ভুলে গিয়েছিলাম, তাহলে কেন... কেন আজ‌ও ওকে দেখলে দুর্বল হয়ে পরি.. সত্যিই তো তখন তাথৈদের তুলনায় অনেক গরীব ছিলাম আমরা, আর বড়োলোকের মেয়েরা এটাই করবে সেটাই তো স্বাভাবিক, বৃষ্টিও তো ওরকম একটু আর্থিকভাবে গরীব পরিবারের ছেলেদের দুচোখে সহ্য করতে পারতো না ,তাথৈ আলাদা হবে কিভাবে এক‌ই পরিবারের মেয়ে তো, তবুও কেন মনে হয় যে ও এখনো সেই ছোটোবেলার সেই সরল তাথৈ আছে কেন মনে হয় যে ওর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মিথ্যা ছিল না? না মিথ্যা নয় সত্যি ছিল কিন্তু সেটা শুধু অভয়ের কাছে, তাথৈ‌এর কাছে তো শুধু খেলা ছিল একটু টাইমপাস। না... আর ওর কথা ভাববো না নিজের কাছেই যেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় অভয় ওরফে এআরসি, আমি এখানে প্রতিশোধ নিতে এসেছি বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করতে এসেছি আর সেটাই করবো...অভয় মরে গেছে ,এখন শুধু একটা প্রেতাত্মা বেঁচে আছে, এই প্রেতাত্মা শুধু প্রতিশোধ নিতে চায় আর সেটা সে নেবেই কেউ আটকাতে পারবে না।
ফোনের শব্দে তন্ময়ভাবটা কাটে অভয়ের বিদিশা ফোন করেছে ফোনটা রিসিভ করে "হুমমম, বলো"
এটা কিভাবে করলে? বিদিশার গলায় আনন্দ অবাক দুটোই আছে।
বলেছিলাম তো যে বীরেন ভট্টাচার্য কন্ট্রাক্ট পাবে না।
কন্ট্রাক্ট এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ পেয়েছে, ওদের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
সম্পর্ক যাই থাকুক যেটা বললাম সেটাই হবে।
তুমি আসলে কে বলোতো?
তুমি জানো আমি কে?
সেটা তো মুখোশ, মুখোশের পিছনে তুমি কে?
সেটা নাহয় নাই জানলে, মুখোশটাই এখন আসল।
তুমি কি কোনোভাবে এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাথে জড়িত?
সেসব কথা থাক না, পরে নাহয় কোনো একদিন বলবো।
একটা খবর দেওয়ার আছে।
বলো
বীরেন ভট্টাচার্য একজন পুলিশ অফিসারকে ট্রান্সফার করিয়ে এখানে আনছেন।
তুমি চেনো?
অতীন সান্যাল, রকির বন্ধু, রকির মতোই ক্রিমিনাল মাইণ্ডেড বরং কিছু ক্ষেত্রে ওর থেকেও বেশী ধূর্ত আর শয়তান আজ আমাদের বাড়িতে আসছে।
ওকে নির্ঘাত আমার পিছনে লাগানো হবে।
কি করবে তুমি এবার?
যা করতে এসেছি সেটাই।
এই অতীনের থেকে সাবধানে থেকো।
ওর সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই কিন্তু যদি ও শত্রুতা শুরু করে তাহলে শেষ আমি করবো।
ঠিক আছে আমি এখন রাখছি পরে দেখা করবো।
হুমম, তুমি সাবধানে থাকবে তোমার উপর নজর রাখা হতে পারে।
বিদিশার ফোনটা রাখতেই আরেকটা ফোন ঢুকলো এআরসি ওরফে রয়ের ফোনে "খবর পেয়েছো?"
পেয়েছি বস
কোথায় আছেন?
ভদ্রমহিলা এখন এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন।
আর ওনার একটা চেম্বার ছিল যেখানে উনি পেশেন্ট দেখতেন সেটা?
সেটা অন্য একজন নিয়ে নিয়েছেন।
নিয়ে নিয়েছেন মানে?
আসলে বস, ওই মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পরে স্বামীর ভাইয়েরা ওনার উপর খুব জুলুম করে, মহিলা নিজে শিক্ষিত হলেও ওনার সেই লোক পরিচিতি ছিল না, আর তাছাড়া একা মহিলা, একটা মেয়ে আছে যিনি বিয়ে করে বিদেশে সেটল্‌ড্, মায়ের খবর নেন না, এদিকে ওই স্বামীর ভাই ভয় দেখিয়ে চেম্বারটা আর ওনার বাড়িটা নিজের নামে লিখিয়ে নেন আর ওনাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন।
ওই চেম্বারে এখন কে বসেন?
ওই মহিলার দেওর, উনিও ডাক্তার তবে একদম চশমখোর ডাক্তার, এছাড়াও অনেক রকম দুনম্বরি ব্যাবসা করেন সব খবর পেয়েছি প্রমাণ সহ।
বেশ, শোনো তোমাকে কি করতে হবে। বলে ফোনেই কিছু ইনস্ট্রাকশন দেন এআরসি।
হয়ে যাবে বস।
গুড।

"আনন্দময়ী" বৃদ্ধাশ্রমে সবাই চিন্তিত, উদ্বিগ্ন কারণ তাদের এই পরিবারের একজন হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাকে দেখছেন তাদেরই বৃদ্ধাশ্রমের এক বৃদ্ধা, একসময় একটা নোটপ্যাডে কিছু লিখলেন খসখস করে, লিখে ওখানের লেডি ইনচার্জ কে সেটা দিয়ে বললেন "এই ইঞ্জেকশনটা দরকার এখনই", কিন্তু লেডি ইনচার্জ দোনোমোনো করছেন দেখে আবার বললেন "কি হলো, বললাম না ইঞ্জেকশনটা এখনই লাগবে"।
না, আগে ডাক্তার আসুক তারপর।
ডাক্তার আসতে দেরি হচ্ছে, ইঞ্জেকশনটা এখনই আনিয়ে দিন।
বললাম তো ডাক্তার না এলে কিছু হবে না, তারপর কিছু হয়ে গেলে দায় আমার উপর এসে পড়বে, ডাক্তার ডাকা হয়েছে তিনি আসছেন।
কিন্তু।
কোনো কিন্তু নয়।
"আপনি যার সাথে কথা বলছেন উনি নিজেই একজন ডাক্তার, কাজেই ওনার বলা ওষুধ আনলে কোনো প্রবলেম হবে না" হটাৎ একটা নতুন কণ্ঠস্বরে দুজনেই চমকে ওঠেন, তাকিয়ে দেখেন একটা ফর্সা সুগঠিত চেহারার যুবক দাঁড়িয়ে আছে। যুবকটা এগিয়ে গিয়ে হটাৎ বৃদ্ধাকে প্রণাম করেন।
থাক থাক বাবা।
দিন আমাকে ইঞ্জেকশনের নামটা দিন।
কাগজটা নিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আরো একটা ছেলেকে বলে "আমির, যাও এই ইঞ্জেকশনটা তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো"। "একদম নয়" প্রায় চেঁচিয়ে ওঠেন লেডি ইনচার্জ "বললাম না ডাক্তার না এলে কিছু হবে না, আর তাছাড়া আপনি কে?"
আমি কে সেটা বলছি কিন্তু একটা কথা এখানে কেউ একজন অসুস্থ হয়েছেন বুঝতে পারছি, ঠিক আছে আমি ইঞ্জেকশনটা আনাচ্ছি না, কিন্তু ডাক্তার আসার আগে বা দেরি করে আসার জন্য যদি ওনার কিছু হয় তাহলে আপনাকে কিন্তু আমি ছাড়বো না, যাবজ্জীবন জেলের ঘানি টানাবো"
এই হুমকিতে ইনচার্জ একদম গুটিয়ে যান, ছেলেটা সঙ্গীকে বলে: যাও নিয়ে এসো।
এবারে বৃদ্ধা বলেন: তুমি কে বাবা, ঠিক চিনলাম না তো।
কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।
চেনো কিভাবে?
বলছি তবে আগে যা করছিলেন সেটা করুন চলুন।
দুজনে ভিতরে যান পেশেন্টের কাছে, একটু পরেই আমির নামের যুবকটা ইঞ্জেকশন নিয়ে এসেছে, কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এলেন যদিও প্রয়োজনে ছিল না ইঞ্জেকশনের প্রভাবে অসুস্থ বৃদ্ধা অনেকটা সুস্থ হয়েছিলেন।
"এবার বলোতো তুমি কে?" বৃদ্ধাশ্রমের পিছনদিকে একটা ছোট্ট বাগান আছে সেখানে বেতের মোড়ায় বসে আগন্তুকের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করেন বৃদ্ধা।
আপনি আমাকে মনে রেখেছেন কি না জানিনা তবে আমি বলছি দেখুন মনে করতে পারেন কি না।
তুমি আমাকে চেনো?
ডাঃ দাশগুপ্ত একরাতে অল্প কিছুক্ষণ পরিচয় হয়েছিল আমাদের হ আপনি আমার বিপদের সময় আমাকে সাহায্য করেছিলেন, যদিও তারপরে আপনার বিপদের সময় আমি আপনার পাশে থাকতে পারিনি, তার জন্য ক্ষমা চাইছি।
তুমি আমার নাম জানো? বৃদ্ধার গলায় বিস্ময়।
জানি তবে তার আগে এটা দেখুন। বলে মোবাইলে একটা ডেথ সার্টিফিকেটের ছবি দেখায়, বলে: মনে করুন তো প্রায় ষোলো বছর আগের এক রাতে একজন মহিলা তার একটা ছেলে আর তার স্বামী আপনার চেম্বারের সামনে এসেছিল, মহিলার স্বামীর গুলি লেগেছিল অনেক রক্তপাত হয়, আপনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেন, ওই চেম্বারেই সার্জারির যা ইনস্ট্রুমেন্ট ছিল তা দিয়েই কোনোমতে সার্জারি করে গুলি বার করেন কিন্তু... তারপর.. আর কিছু বলতে পারে না, যুবটির দুচোখ জলে ভরে ওঠে।
আর কিছু বলতে হলোনা ডাঃ দাশগুপ্তকে, তার‌ও দুচোখ জলে ভরে যায় "মনে পড়েছে, কত বড়ো হয়ে গেছো তুমি... তোমার মা কেমন আছেন? কি যেন নাম ছিল তোমার?"
অভয়, আর আমার বাবার নাম রুদ্র রায় চৌধুরী, আপনি তারপর আপনার স্বামীর হাসপাতাল থেকে আমার বাবার জন্য ডেথ রিজন লিখিয়ে নেন যাতে অন্তত ডেথ সার্টিফিকেট টা পাওয়া যায়, তারপর আপনি আর আপনার হাজবেন্ড মিলে আমার বাবার...অন্তিম সৎকারের ব্যবস্থা করেন।
দুঃখের কথা ওর থেকে বেশি কিছু করতে পারিনি তোমাদের জন্য।
কি বলছেন আপনি, আপনি যা করেছেন তা সেই মুহূর্তে কেউ করবে না,তখনও আমাদের পিছনে ওই শয়তানগুলো পাগলা কুকুরের মতো পরেছিল, আপনারা নিজেদের বিপদ অগ্ৰাহ্য করে আমাদের লুকিয়ে রাখেন তারপর এই শহর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
কিন্তু তুমি এই শহরে ফিরলে কেন?
কিছু ঋণ বাকি থেকে গেছে সেগুলো শোধ করতে এসেছি, সুদেআসলে শোধ করতে এসেছি।
ওই ভয়ংকর লোকটা এখন আরও ক্ষমতাশালী হয়েছে।
আমি ওর থেকেও ক্ষমতাশালী আর ভয়ংকর হয়েছি, যাকগে এটা ধরুন আপনার জিনিস আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। বলে একটা দলিল বৃদ্ধার হাতে দেয় অভয়।
ডাঃ দাশগুপ্ত অনেকক্ষণ ধরে পুরো দলিলটা বারবার পড়েন তারপর অবাক চোখে তাকান সামনে বসা অভয়ের দিকে। অনেকক্ষণ পরে কান্নাভেজা চোখে বলেন: এটা? কিভাবে করলে, কেন করলে?
কিভাবে করলাম সেটা থাক, আর কেন করলাম. ধরে নিন এটা আমার কৃতজ্ঞতার নিদর্শন ,যদিও আপনি আমাদের জন্য যা করেছেন তার তুলনায় এটা কিছুই না, তবুও।
আমার দেওর যদি কোর্টে যায়?
গেলে যাবে, তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন উনি যাবেন না গেলে উনি‌ই ফেঁসে যাবেন।
কিন্তু এখন এটা নিয়ে আমি কি করবো?
আগে যা করতেন, অসহায় লোকেদের সাহায্য করা, আর আপনি চাইলে আপনার নিজের বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারেন।
না তার দরকার নেই, এখন এরাই আমার পরিবার, এটাই আমার বাড়ি, ওই চেম্বারে গিয়ে একদিন সবার সাথে দেখা করে আসবো।
বেশ আমার নাম্বার নিয়ে নিন যেদিন যেতে চাইবেন বলবেন আমি গাড়ি পাঠিয়ে দেবো আর যে কোনো দরকারে আমাকে ফোন করবেন।
বেঁচে থাকো বাবা, তুমি আমার স্বামীর স্মৃতিটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো তোমার এই ঋণ
এটা ঋণ নয়.. তাই শোধবোধের প্রশ্নই ওঠে না, চলি।

"তাথৈ, কি রে রুমে একা একা কি করছিস?" তাথৈ‌এর রুমে আসে বৃষ্টি, মনে মনে একটু বিরক্ত হয় তাথৈ তার মনমেজাজ আজ কদিন থেকে ভালো নেই, মিস্টার গুপ্তর ফোন সমানে বন্ধ আছে ওনার অফিসেও ফোন করে পাচ্ছে না, এদিকে আবার অভয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল পরপর দুদিন কিন্তু দুদিন‌ই তাকে এলাকার লোকেরা ঢুকতে দেয়নি ফিরিয়ে দিয়েছে তাথৈ অনেকবার বলেছে: আমি তো এর আগে এসেছিলাম, আপনারা আপনাদের বসকে জিজ্ঞেস করুন, ওরা বলেছে: এখন যেতে দেওয়ার হুকুম নেই, উনি‌ই বারণ করেছেন আপনি ফিরে যান।
তাথৈ বুঝতে পেরেছে অভয় রেগে আছে তাই সে তাথৈ‌এর সাথে দেখা করতে চাইছে না, তাই সে নিজেকে একপ্রকার গৃহবন্দী করে রেখেছে, আর এখন হটাৎ তার রুমে বৃষ্টির আগমন।
কি রে একা একা কি করছিস?
কিছু না।
কিছু না? বেশ তাহলে চল আমার সাথে।
কোথায়?
চল না।
না, আগের বার তুই সাম্যর সাথে আমাকে একা ছাদে রেখে এসেছিলি, আমি আর তোর সাথে যাচ্ছি না।
তোর আর সাম্যর মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে? যাই নিয়ে হোক মিটিয়ে নিবি চল।
বললাম তো আমি যাবো না।
কেন যাবি না কেন? আরে কাপলস্‌দের মধ্যে একটু আধটু ঝামেলা হয় কিন্তু তাইবলে কথা বলবি না?
শোন বৃষ্টি তোকে আজ শেষবারের মতো বলছি আমার আর সাম্যর মধ্যে কোনো রিলেশন নেই, আমরা কাপলস্ ন‌ই।
কিন্তু সাম্য তোকে ভালোবাসে।
আমি বাসি না, এটা তুই নিজেও ভালো করে বুঝে নে আর ওকেও বুঝিয়ে দিস।
তুই কি বলতো সাম্যর মতো একটা ভালো ছেলেকে রিফিউজ করছিস।
তোর যদি ওকে এত ভালো লাগে তুই জুড়ে যা ওর সাথে।
তোর কপালে ওই অতীন সান্যাল আছে।
মানে, কি বলতে চাইছিস তুই?
ড্যাডি আর কাকার কথা শুনলাম ওই অতীন নাকি তোকে বিয়ে করতে চেয়েছে আর ড্যাডির আপত্তি নেই।
এইসময় তাথৈ‌এর মা সরমা দেবী ঘরে ঢুকলেন তাকে দেখে বৃষ্টি বললো: তোর বিশ্বাস না হলে কাকীকে জিজ্ঞেস কর।
তাথৈ ওর মায়ের দিকে তাকালো, সরমা দেবী ঘরে ঢুকতে ঢুকতে শুনেছেন দুই বোনের কথাবার্তা কাজেই তাথৈ‌এর দৃষ্টির মানে বুঝতে অসুবিধা হলো না, তিনি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন।
বৃষ্টি: দেখলি তো এবার বল ওই অতীনকে বিয়ে করবি নাকি সাম্যকে?
দুজনের একজনকেও নয়।
সরমা দেবী: তোর জ্যেঠুমণি কিন্তু অতীনকে প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন।
তাথৈ: কিন্তু আমি করিনি আর কখনো করবো‌ও না।
বৃষ্টি: আচ্ছা এখন চল, এমনি ঘুরে আসবো, সাম্যর সাথে কথা বলতে না চাস বলিস না।
সরমা দেবী: যা মা ঘুরে আয়।

বীরেন ভট্টাচার্যের অফিসে তার সামনে অতীন সান্যাল বসে, সুগঠিত সুঠাম চেহারা রকির মতোই লম্বা গায়ের রঙ শ্যামলা, নাকের নীচে একটা গোঁফ আছে আর অধরের নীচে ছোট্ট একটু দাঁড়ি এটুকু ছাড়া আর গালে দাঁড়ি নেই।
কোনো খোঁজ পেলে অতীন?
এখনো পাইনি, আপনি ঠিকই বলেছেন ওই বস্তিতে বাইরের লোক সহজে ঢুকতে পারবে না।
গিয়েছিলে তুমি?
হুমম, কিন্তু ঢুকতে পারিনি।
তো এবার কি করবে?
ওই বস্তিটার উল্টোদিকে কিছুটা দূরে একটা বাগানবাড়ি গোছের বাড়ি আছে না?
হ্যাঁ, আছে অনেক পুরনো বাড়ি।
যদি আমার অনুমান ভুল না হয় তাহলে আমরা যাকে খুঁজছি সে ওখানেই আছে।
কিন্তু ওখানে তো ঢুকতে পারবে না।
সেটাই তো ভাবছি, আচ্ছা ওখানে ঢোকার অন্য রাস্তা বা গলি নেই? আপনি তো ওই জায়গাটা ভালোই চেনেন।
যেকটা রাস্তা বা গলি আছে সবকটায় পাহারা থাকে।
২৪ ঘন্টাই?
হ্যাঁ,
আপনি একটা কাজ করতে পারবেন?
কি?
আমাকে একটা সার্চ ওয়ারেন্টের ব্যবস্থা করে দিন, ওটা নিয়ে লিগ্যালি ঢুকবো।
এর আগেও কিন্তু আমি এই চেষ্টা করেছি,কিন্তু তৎক্ষণাৎ উপর থেকে অর্ডার এসেছে ওয়ারেন্ট ক্যানসেল করতে হবে, আর যাকে পাঠানো হয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আমি নিশ্চিত এবারও তাই হবে, কিন্তু এবার খবর না নিয়ে আমি ফিরবো না।
উপর থেকে অর্ডার এলে?
আমার কাছে খবর যাবে কিভাবে যদি তখন ফোন বন্ধ থাকে? একবার জানতে পারি ওখানে কে থাকে তারপর বাকীটা ভাবা যাবে আর হ্যাঁ সাথে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট নামের জায়গাটা খালি রাখবেন পরে বসিয়ে নেবো।
ঠিক আছে আমি কাল‌ই ব্যবস্থা করে দেবো।
উঁহু কাল‌ই নয় আরও কটা দিন যাক।
বেশ তুমি যখন বলবে আমি ব্যবস্থা করে দেবো।
তাথৈ‌এর সাথে কথা বলেছেন?
কি ব্যাপারে?
আপনি ভুলে গেছেন নাকি?
আগে যে কাজটা দিয়েছি সেটা করো, তারপর তাথৈ‌এর কথা ভাববে।

"তুই এইজন্য আমাকে নিয়ে এসেছিস?" বিরক্তির সুরে প্রশ্নটা করে তাথৈ উদ্দেশ্য বৃষ্টি। দুইবোন একটা শপিংমলে এসেছে এখানে কিছু শপিং করে মাল্টিপ্লেক্সে একটা সিনেমা দেখবে তারপর রাতে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ডিনার করে বাড়ি ফিরবে এই ছিল পুরো দিনের প্ল্যান।
সেইমতো এসে দেখে শপিং মলের বাইরে সাম্য, সুস্মিতা এবং আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দুজন যেতেই বৃষ্টি কায়দা করে সাম্য আর তাথৈকে একসাথে করে দিল বললো: তোরা এবার নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নে। উত্তরে তাথৈ প্রশ্ন করে বলাইবাহুল্য সেদিন সাম্য তাথৈকে ওদের পরিবার সম্পর্কে যা বলেছে সেটা তাথৈ‌ বাড়িতে কাউকে জানায়নি ফলে বৃষ্টি জানেনা যে সেদিন দুজনের মধ্যে কি হয়েছিল সে শুধু জানে কোনো কারনে দুজনের মনোমালিন্য হয়েছে।
বৃষ্টি: ঠিক আছে দুজন কথা বলে নিস, কথা বলতে তো প্রবলেম নেই।
মলে ঘুরতে ঘুরতে তাথৈকে একটু একা পেয়ে সাম্য বলে: তাথৈ আয়্যাম সরি, সেদিনের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত, সেদিন আমার একটু রাগ হয়েছিল তাই...
দেখ সাম্য আমি তোকে আগেও বলেছি আজ‌ও বলছি আমি তোকে ভালোবাসিনা, তুই কেন বুঝতে চাইছিস না?
তাহলে আমাকে ডেকেছো কেন?
আমি কাউকে ডাকিনি ইনফ্যাক্ট আমার এখানে আসার‌ই ইচ্ছা ছিল না বৃষ্টি জোর করলো বলে এলাম।
এইসময় বৃষ্টি সহ বাকিরা ওদের কাছে এলো, বৃষ্টি বললো: কি রে তোরা পিছিয়ে পরছিস কেন?
তাথৈ রাগী গলায় উত্তর দিল: তোর সাথে আর কোনোদিন বাইরে বেরোবো না, এটাই শেষ।
তাথৈ ছাড়া বাকিরা সকলেই কিছু না কিছু কিনেছে, সাম্য তাথৈকে একটা ড্রেস কিনে দিতে চেয়েছিল কিন্তু তাথৈ স্পষ্ট মানা করে দিয়েছে। সিনেমা শুরু হতে এখনো কিছুটা দেরী আছে তাই সবাই ঠিক করলো ফুডকোর্টে গিয়ে হাল্কা কিছু খেয়ে নেবে।

"তোদের কি হয়েছে বলতো" প্রশ্নটা বৃষ্টি করে সাম্যকে, সবাই এক‌ই টেবিলে বসে আছে গল্প, হাসি-ঠাট্টা চলছে শুধু তাথৈ‌এর মুখ গম্ভীর, এবার সে একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি বলে উঠে যেতেই বৃষ্টি প্রশ্নটা করে।
"ও এখনো ওই অভয়কে ভালোবাসে" দাঁত চেপে বৃষ্টিকে জানায় সাম্য,।
"অভয় কে সাম্য" উপস্থিত সকলের মধ্যে সাম্যর নিজের কয়েকজন বন্ধু ছিল তাদেরই একজন এবার প্রশ্ন করে।
সাম্য উত্তর দেবার আগেই সুস্মিতা নামের মেয়েটা বলে: এক মিনিট অভয় মানে? মানে কলেজের সেই হ্যাণ্ডসাম ছেলেটা?
হ্যাঁ। ছোট্ট উত্তর দেয় সাম্য।
বলিস কি রে সাম্য। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে সুস্মিতা।
কিন্তু ওকে এটা বুঝতে হবে যে অভয় মরে গেছে আর তাছাড়া ও কোনোদিন‌ও তাথৈ‌এর যোগ্য ছিল না। কথাটা বলে বৃষ্টি।
কিন্তু কিভাবে? সাম্যর গলায় জিজ্ঞাসা।
বৃষ্টি: তোকে যেভাবেই হোক ওর মন জিততে হবে, নাহলে ড্যাডি একটা অন্য ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেবে।
কে সে?
আছে দাদার বন্ধু পুলিশে চাকরি করে, ভালো না ছেলেটা আগে আমার পিছনে ছিল, এখন তাথৈ‌এর পিছনে।
তোর পিছনে?
হ্যাঁ, যখন পড়াশোনার জন্য বাইরে ছিলাম প্রায়ই ফোন করতো, কথা বলতো, ওই ক্ষেপের প্রেম যাকে বলে আরকি তারপর আমাদের ব্রেকআপ হয়ে যায়।
কিন্তু তাথৈ তো আমার সাথে কথাই বলতে চায় না।
চেষ্টা করে যা।

ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তাথৈ আবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করলো কিন্তু এবার‌ও ফোন বন্ধ , অন্যমনস্ক ভাবে তাথৈ হাঁটতে শুরু করে, ভাবতে থাকে কিভাবে সত্যিটা জানা যায়, অভয় তো দেখাই করছে না খুব রেগে আছে নিশ্চয়ই।
হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ একজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে হুঁশ ফিরলো "আয়্যাম এক্সট্রিমলি সরি, আসলে আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম"।
ইটস্ ওকে। একটা যুবকের সাথে ধাক্কা লেগেছে, বয়স তার‌ই মতো একটু বড়ো হবে ছেলেটা, একটু শ্যামবর্ণ, রোগা চেহারা, মাথায় ছোটো করে কাটা চুল। তাথৈ‌এর কেন যেন চেনা লাগলো ছেলেটার মুখটা কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না, ছেলেটাও কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
তাথৈ: আপনাকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কোথায় দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না।
ছেলেটি: আমি দুঃখিত আমার মনে হয় না যে আমরা আগে মিট করেছি। বলে চলে গেল তাথৈ দেখলো ছেলেটার গন্তব্য ফুডকোর্ট, সে এসে বৃষ্টির পাশে নিজের চেয়ারে বসলো। লক্ষ্য করলো ছেলেটাও একটু দূরে একটা টেবিলে বসেছে সাথে আরো একজন স্যুট পরা লোক, ছেলেটা সঙ্গের লোকটিকে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখাচ্ছে।
ছেলেটা যাই বলুক তার দৃঢ় বিশ্বাস ওই ছেলেটাকে সে আগে দেখেছে কিন্তু কোথায় সেটাই মনে পরছে না, তাথৈ মাঝে মাঝে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো, সুস্মিতা ব্যাপারটা খেয়াল করলো বললো: ছেলেটার দিকে কি দেখছিস তাথৈ? পছন্দ?
ওকে ভীষণ চেনা চেনা লাগছে কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না, বৃষ্টি দেখ..
বৃষ্টি দেখলো কিন্তু কিছু বলার আগেই অন্য একটা ছেলে বললো: এক্স বয়ফ্রেন্ড নয়তো?
না.. কিন্তু। এতটা বলেই তাথৈ থেমে গেল তারপর সোজা উঠে ছেলেটার কাছে গেল ততক্ষণে তার সঙ্গের লোকটা চলে গেছে, ছেলেটা তাথৈকে দেখে হকচকিয়ে গেল বললো: আপনি?
তাথৈ: তুই অমিয় না? আমাকে চিনতে পারছিস না? আমি তাথৈ, একসাথে কলেজে পড়তাম।
আমি দুঃখিত কিন্তু আমার মনে পরছে না, আমি চিনতে পারছি না।
ততক্ষণে বাকীরাও এগিয়ে এসেছে তাদের দেখে তাথৈ বললো: এই দেখ অমিয় এদের মনে পরেছে? বৃষ্টি, সুস্মিতা, সাম্য আমরা সবাই একসাথে পড়তাম।
অমিয় বলে ছেলেটা এবার একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে র‌ইলো, সেটা দেখে বৃষ্টি বললো: চিনতে পেরেছো তাহলে? তুমি এখানে?
এখানে আসা বারণ আছে নাকি, জানতাম না তো? অমিয় কথাটা এমনভাবে বললো যাতে স্পষ্ট বোঝা গেল যে সে এদের চিনতে পেরেছে।
তাথৈ এবার বললো: তাহলে বলছিলি কেন যে চিনতে পারিসনি?
কারণ আমি চিনতে চাইনি তাই।
কেন?
আমার ইচ্ছা।
বড্ড অহংকার হয়েছে তোমার। শেষের কথাটা বৃষ্টি বললো।
অহংকার আমার হয়নি আর হবেও না, বরং তোমার আরও বেড়েছে।
মুখ সামলে কথা বল। সাম্য প্রায় হুমকির সুরে বললো।
অমিয় শান্ত স্বরে বললো: মিস্টার সাম্য, আমি এখানে ঝামেলা করতে চাই না, আপনারা আপনাদের টাইম এনজয় করুন, আমি আসি। বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তাথৈ ডাকলো: অমিয়, তোর সাথে দেখা হয়ে ভালোই হয়েছে আমার কিছু জরুরী কথা আছে, প্লিজ তোর নাম্বারটা দে, আমি পরে যোগাযোগ করবো।
কিন্তু আপনার সাথে তো আমার কোনো কথা নেই মিস্ ভট্টাচার্য।
তুই এভাবে বলছিস কেন?
যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
কথা আমার আছে, প্লিজ নাম্বারটা দে।
বৃষ্টি: ওর নাম্বার নিয়ে কি করবি তুই?
দরকার আছে।
ওর সাথে তোর কি দরকার?
আছে, তোর জেনে কাজ নেই তোরা যা, অমিয় নাম্বার টা দে।
না, আমার নাম্বার নিয়ে কাজ নেই আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।
সুস্মিতা: তাথৈ ছেড়ে দে, ও বোধহয় অক‌ওয়ার্ড ফিল করছে বৃষ্টির সামনে।
কেন?
বৃষ্টি: কলেজে থাকতে আমাকে প্রপোজ করেছিল, আমি রিফিউজ করেছিলাম। কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠলো শুধু অমিয় আর তাথৈ বাদে।
এবার অমিয় শান্ত স্বরে বললো: বিশ্বাস করুন তারজন্য আমি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
বৃষ্টি অবাক হয়ে বললো: তার মানে?
তখন ছোটো ছিলাম বুঝিনি এখন বুঝি কি ভুল করেছিলাম, ভাগ্য ভালো যে আপনি রিফিউজ করেছিলেন নাহলে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যেত।
অমিয়। রাগের সঙ্গে বললো বৃষ্টি, তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো।
একদম না, আসলে কি বলুন তো আপনার মতো মেয়েরা শুধু টাকা আর আর্থিক স্বচ্ছলতাকেই ভালোবাসে, অন্য কাউকে ভালোবাসতেগ পারে না, তাই কোনো ছেলেও আপনাদের মতো মেয়েদের সত্যি ভালোবাসতে পারে না, কাজেই যদি আপনি আমার সাথে থাকতেন তাহলে না আপনি খুশি হতেন আর না আমি তার থেকে এই ভালো আপনিও খুশী আছেন আর আমিও।
বৃষ্টি রাগী গলায় বললো: কি বলতে চাইছো আমি কাউকে ভালোবাসতে পারি না? সত্যিটা স্বীকার করছো না কেন যে তুমি আমার যোগ্য‌ই ছিলে না।
স্বীকার করলাম তো যে আমি আপনার যোগ্য ছিলাম না আর এখনো ন‌ই।
এবারে তাথৈ জিজ্ঞেস করলো: অভয়ের খবর জানিস অমিয়?
প্রশ্নটা শুনে অমিয় চুপ করে র‌ইলো কিন্তু সাম্য রেগে চলে গেল সাথে বৃষ্টি বাদে বাকীরাও গেল।
তাথৈ: কি হলো অমিয়, আমি জানি তুই অভয়ের খুব ভালো বন্ধু ছিলি ওর খবর জানিস?
জানি।
ও কোথায় জানিস?
আপনি সত্যিই জানেন না নাকি..
কি জানিস ওর সম্পর্কে?
ও ষোলো বছর আগে পরিবারসহ মারা গেছে, একটা কথা বলুন তো ওর খবর জেনে আপনার কি হবে? বেঁচে থাকতে ওর সাথে যা করেছেন তাতে শান্তি হয়নি নাকি? যে মরার পরেও ওর পিছু ছাড়ছেন না।
মানে কি বলতে চাইছিস?
কেন নাটক করছেন?
ভদ্রভাবে কথা বলো। গর্জে উঠলো বৃষ্টি।
তাথৈ ওকে থামিয়ে বললো: কি করেছি আমি, প্লিজ বল অমিয়, প্লিজ।
থাকনা ছেলেটা তো মারা গেছে, এখন আর ওকে নিয়ে টানাটানি করে কি হবে? তার থেকে আপনি আপনার লাইফে খুশি থাকুন আর আমাকে আমার লাইফে খুশি থাকতে দিন। বলে অমিয় চলে গেল, হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে তাথৈ বৃষ্টিকে বললো: তুই যা আমি আসছি, বলে দৌড় লাগালো, এস্কেলেটর দিয়ে নেমে কিছুটা দৌড়ে অমিয়কে ধরলো তাথৈ।
আবার কি হলো? বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করে অমিয়।
প্লিজ আমাকে বল আমি কি করেছি, প্লিজ বল।
কেন? এখন এতবছর বাদে অভয়ের জন্য ভেবে কি হবে তাথৈ? যখন ও বেঁচে ছিল তখন তো ওর ভালোবাসা এক ঝটকায় ভুলে চলে গিয়েছিলে তাহলে এখন ওর মৃত্যুর পরে..
অভয় বেঁচে আছে।

yourock
Like Reply
(03-10-2022, 01:07 AM)Monen2000 Wrote:
                            দ্বাদশ পর্ব

কি? কথাটা ঠিক বিশ্বাস হয় না অমিয়‌র। কলেজে অভয়ের সবথেকে কাছের বন্ধুদের একজন ছিল অমিয়, একটু ভীতু প্রকৃতির ছেলে ছিল তাই সাম্য আর ওর দলবল অমিয়কে উত্যক্ত করতো, কিন্তু একটা সময় পরে ওদের মাঝে অমিয়কে প্রটেক্ট করার জন্য অভয় ঢাল হয়ে দাঁড়াতো, সেই থেকে দুজনের বন্ধুত্ব, অভয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে একেবারে ভেঙে পরেছিল অমিয় পরে ওর পরিবারের লোক ওকে সামলে নেয়।
কি বললে তুমি, মানে আপনি? অমিয়র গলায় তখনও অবিশ্বাস।
ও বেঁচে আছে আর এই শহরেই আছে,
কি? কোথায়? তুমি কিভাবে জানলে?
এসো আমার সাথে সব বলছি, দুজনে একটু ফাঁকা জায়গায় গিয়ে কথা বলতে থাকে।
আমি ওকে দেখেছি ওর সাথে কথা বলেছি কিন্তু কেন জানিনা ও নিজেকে আমার কাছে লুকিয়ে গেছে আসল পরিচয় দিচ্ছে না।
সেটাই তো স্বাভাবিক, তুমি যা করেছো ওর সাথে।
আরে কি করেছি সেটা তো বলবে?
তোমার সত্যিই মনে নেই?
অমিয় বিশ্বাস করো আমি ওর সাথে কখনো খারাপ কিছু করিনি, সে চিন্তাও আমি করতে পারি না কারন আমি ওকে আজ‌ও ভালোবাসি।
তাহলে ষোলো বছর আগে সেইদিন ওর সাথে কথা বলোনি কেন?
কোনদিন?যেদিন ছেলেটা পাগলের মতো তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু তুমি ওর সাথে কথা বলোনি ওর ফোন ধরোনি, তখন ও আমাকে বলে তোমাকে ফোন করতে নিজে কনফারেন্স কলে ছিল কিন্তু তখনো তো তুমি কথা বলোনি নিজের ফ্যামিলির লোকেদের দিয়ে বলিয়েছিলে, ওকে অপমান করিয়েছিলে? কেন তাথৈ? ওর সাথে এমনটা কেন করেছিলে? আমার এখনো মনে আছে ছেলেটা পাগলের মতো করছিল তোমার সাথে কথা বলার জন্য, কিন্তু তুমি...
এসব কি বলছিস তুই?
সত্যি বলছি আমি নিজে ফোনের লাইনে ছিলাম, ওকে বলা প্রতিটা শব্দ এখনো আমার মনে আছে, এসব না করলেই পারতে, ও গরীব ছিল কিন্তু তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো, আমরা সবসময় ওর সাথে থাকতাম আমরা জানি, আমাদের সাথে থেকেও তোমার কথা বলতো.. আফশোষ ওকে শেষবারের মতো দেখতেও পাইনি।
কে কি বলেছিল অমিয়?
তুমি সত্যিই জানো না?
তাথৈ মাথা নেড়ে উত্তর দেয়: না অমিয়,বিশ্বাস কর আমি সত্যিই কিছু জানি না, আমি আজ‌ও ওকে ভালোবাসি, প্লিজ বল ওকে কে কি বলেছিল?
সবটা শুনে তাথৈ‌এর ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেল, বললো: গলাটা কার ছিল?
একজন মহিলা ছিল তিনি কে জানিনা আর..
আর?
আর বৃষ্টি ছিল, ওই অভয়কে বলে যে তুমি ওর মতো ভিখিরির সাথে রিলেশন রাখতে চাও না তুমি ওর সাথে কথা বলতে চাও না ও যেন তোমাকে বিরক্ত না করে আরো কত কি।
তাথৈ চুপ করে শুনলো সবটা, সে এখন বুঝতে পারছে অভয়ের কথাগুলোর মানে।
আচ্ছা অমিয়, ওদের বাড়িতে আগুন লাগলো কিভাবে জানো?
না, সেই রাতেই ওর সাথে আমার শেষ কথা হয়, যাই হয়ে যাক মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল, তোমার থেকে আঘাত পেয়ে প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছিলকিন্তু আমি জিজ্ঞেস করায় বললো "আমি ঠিক আছি, তুই শুয়ে পর কাল কথা হবে", সেই শেষ কথা ওর সাথে পরদিন শুনি যে...কিন্তু তুমি ওকে কোথায় দেখেছো আমাকে নিয়ে যাবে ওর কাছে?
যাবো, কিন্তু এখন হবে না, ও এখন যেখানে থাকে সেখানে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না, আমাকে একবার দিয়েছে তারপর আর না।
বেশ, ঠিক আছে।
এই কবছরে ও তোর সাথে যোগাযোগ করেনি?
না, কেন করবে? আমার দরকারে ও আমার পাশে থাকতো অথচ ওর দরকারে আমি থাকতে পারিনি।
বাড়িতে এসে তাথৈ কারো সাথে কথা বললো না ,নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল তারপর অভয়ের ছবিটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। "বিশ্বাস করো আমি তোমাকে চিট করিনি, তোমাকে ঠকাই নি" অভয়ের ছবিটা কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে তাথৈ যেন অভয়কেই কথাগুলো বলছে এভাবে, তাথৈএর দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে, "তুমি একবার তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতে? কেন করলে না?, আমাকে তোমার সাথে দেখা করতেই হবে, সত্যিটা তোমার জানা দরকার কাল‌ই যাবো তোমার কাছে"।
হটাৎ দরজায় ঠক্‌ঠক্ আওয়াজ হয় সাথে বৃষ্টির গলা "তাথৈ একটু দরজা খোল কথা আছে"
তুই চলে যা এখন আমাকে একটু একা থাকতে দে।
প্লিজ একবার দরজা খোল, প্লিজ।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও চোখ মুছে দরজা খুললো ভেবেছিল বৃষ্টিকে কটা কড়া কথা শোনাবে কিন্তু ওর অবস্থা দেখে আর কিছু বলতে পারলো না, বৃষ্টির চুল এলোমেলো, দুচোখে কাজল ছড়িয়ে গেছে, চোখদুটো ফুলে আছে কাঁদছিল বোঝাই যাচ্ছে।
তাথৈ: তোর কি হয়েছে?
বৃষ্টি: আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?
কি?
ওই অমিয় যা বললো সেটাই কি সত্যি?
তাথৈ‌এর মাথায় রাগ উঠে গেল তবুও নিজেকে শান্ত করে বললো: কোনটা?
ওইযে আমি নাকি কাউকে ভালোবাসতেই পারি না আর আমি কোনো ছেলে আমাকে ভালোবাসতে পারে না।
তুই নিজে কি ভাবিস?
তুই বল না, সত্যি কথাটা?
তার আগে আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?
কি?
যেদিন আমাকে পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠানো হয় সেদিন অভয় আমার ফোনে ফোন করেছিল? প্রশ্নটার সাথে তাথৈ লক্ষ্য করলো যে বৃষ্টির মুখের ভাব বদলাতে শুরু করেছে সেখানে এখন ধীরে ধীরে ভয় দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টি কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বললো: ক‌ই না তো? কে বলেছে তোকে এসব?
অমিয়।
ও মিথ্যা কথা বলছে।
আমি যদি বলি তুই মিথ্যা বলছিস?
মানে? বৃষ্টির স্বরে এখন ভয় সুস্পষ্ট।
সেদিন শুধু অভয় নিজে ফোন করেনি এমনকি আরও একজন কে দিয়ে ফোন করিয়েছিল নিজে কনফারেন্সে ছিল আর তখনই তোর সাথে ওর কথা হয়।
হতে পারে অত বছর আগের কথা ঠিক মনে নেই।
অভয়কে কেন অপমান করেছিলি? কেন ওকে আমার নামে মিথ্যা বলেছিলি?
তুই এসব কি বলছিস তাথৈ?
সেটাই যেটা সত্যি।
আমার কিছু মনে নেই। বলে চলে যাচ্ছিল বৃষ্টি।
তাথৈ বললো: তুই জিজ্ঞেস করছিলি না যে অমিয় যেটা বলেছে সেটা সত্যি কি না?
বৃষ্টি ঘুরে দাঁড়ালো।
তাথৈ: অমিয় সত্যি বলেছে,তুই শুধু টাকা-পয়সাকে ভালোবাসিস, আর কাউকে নয়।
তাথৈ....
ঠিক বলছি, এটা ভাবিস না যে তুই আমার সাথে যা করেছিস তার জন্য বলছি, তার জন্য নয় আবার তুই অমিয়কে রিফিউজ করেছিলি সেটার জন্যও নয়, আমি সত্যি বলছি তুই কোনোদিন সত্যিকারের ভালোবাসা কি সেটাই বুঝিস নি ভালোবাসা কখনো টাকা পয়সা দেখে হয়না অনেক গরীব মানুষ‌ও ভালোবাসতে পারে আবার অনেক ধনী লোক‌ও ভালোবাসা কাকে বলে জানে না, পারলে টাকা পয়সা নয় কারো মনটাকে ভালোবাসিস, দেখবি জীবনটা অনেক সুখের হবে।
তাথৈ‌এর কথা শুনে বৃষ্টি কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর বলে: সেদিন আমি যা করেছিলাম সেটা পিসির কথা শুনে করেছিলাম।
তাথৈ চুপ করে থাকে,বৃষ্টি বলে চলে "সেদিন তোর থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে তোকে আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, পরদিন তোর জন্মদিন ছিল বোধহয় সেইজন্যই অভয় ফোন করেছিল তোকে উইশ করার জন্য কিন্তু পিসি কেটে দেয় তারপর আমাকে বলে যা বলছি লিখে মেসেজ কর, আমি তাই করি কিন্তু তাও অভয় ফোন করতে থাকে, তখন আমাকে শিখিয়ে দেয় কি বলতে হবে, এবার অমিয় ফোন করে, কিন্তু ফোনে অভয়ের আওয়াজ শুনেই পিসি আমাকে কথা বলতে বলে আমিও ওনার শেখানো কথাগুলো বলি, কাকী বারন করছিল কিন্তু উনি ধমকে চুপ করিয়ে দেন"।
তারপর অভয় কি বলেছিল?
ও তোর সাথে কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু এবার পিসি নিজে ফোন নিয়ে আবার ওকে কথা শোনায়।
এই কথাটা তুই আমার থেকে লুকিয়েছিলি কেন?
কারণ পিসি ভয় দেখিয়েছিল বলেছিল যে ওনার কথা না শুনলে ড্যাডিকে বলে দেবে, আর তুই তো জানিস আমি ড্যাডিকে কতটা ভয় পাই কিন্তু বিশ্বাস কর তারপর কি হয়েছে আমি জানিনা, পরে পিসি‌ই জানায় যে অভয়রা একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।

এবার সত্যি সত্যিই বীরেন ভট্টাচার্যের সর্বনাশ শুরু হয়েছে তার লোকজনদের মারা হচ্ছে, নিজের শহরেই কনস্ট্রাকশনের অর্ডার চলে গেছে, সর্বোপরি তার জমানো গুপ্তধন কেউ লুটে নিয়ে গেছে আর এখন...
তার চোরাচালানের ব্যাবসায় হামলা হয়েছে, সোনার বিস্কুট চালান করতে গিয়ে বামাল সমেত তার দলের বেশ কয়েকজন লোক ধরা পরেছে, মাল লুকোনোর গোডাউনে হামলা হয়েছে সর্বোপরি মদন গ্ৰেপ্তার হয়েছে এখন মদন মুখ খুললেই তিনি ফাঁসবেন। নিজের শহরের পুলিশ তার হাতের মুঠোয় কিন্তু তারা জানিয়েছে এই কাজ আরও উপর মহলের, তারা কিছু করতে পারবে না।
বীরেন বাবু স্পষ্ট বুঝতে পারছেন কোনো ক্ষমতাধর লোক তার পিছনে লেগেছে আর সেটা কে তাও তিনি বুঝতে পারছেন রাগে তার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে, তিনি বুঝতে পারছেন না কে এই এআরসি কেন তার পিছনে লেগেছে? সেটা কি শুধু ও্য শহরে নিজের ব্যাবসা ছড়ানোর চেষ্টা করার জন্য নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? নাকি কোনো পুরনো শত্রু ফিরে এসেছে এআরসি নাম নিয়ে।
বীরেন ভট্টাচার্য কাউকে ফোন করেন "হ্যালো, অতীন"
বলুন।
তোমাকে এই শহরে কেন আনা হয়েছে?
আমি শুনেছি আপনার সাথে কি হয়েছে? কিন্তু ওতে আমার সত্যিই কিছু করার নেই ওটা আরও উপর মহল থেকে হয়েছে।
আমি জানি সেটা, কিন্তু তুমি কবে ওই বস্তিতে যাবে?
ওটা ছাড়ুন আপাতত আপনার যে লোক অ্যারেস্ট হয়েছে তার কি করবেন? ও মুখ খুললে কিন্তু আপনি শেষ হয়ে যাবেন।
এটা ওই এআরসির কাজ।
সত্যি বলুন তো আপনি এই এআরসির সাথে ঠিক কি করেছিলেন?
বাণিজ্যনগরীতে আমার ব্যাবসা শুরু করতে গিয়েছিলাম।
যদি সত্যিই ও আপনার পিছনে পরে থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র এই কারনে নয়, আরও বড়ো কোনো কারন আছে।
সেই জন্যই তো জানতে চাইছি ও আসলে কে? কেন এই শহরে এসেছে কেন আমার সাথে শত্রুতা করছে?
আপনি জানেন আপনার ভাগ্নেব‌উ এর নিয়মিত ওখানে যাতায়াত আছে?
বিদিশা? বীরেন ভট্টাচার্য যেন বিশ্বাস করতে পারেন না, এটা ঠিক যে তার এই ভাগ্নেব‌উটির প্রতি তিনি দৃষ্টি রাখেন না তার দৃঢ় বিশ্বাস যে ভীতু প্রকৃতির এই মেয়েটি এমন কিছু করতে পারে না যাতে তার ক্ষতি হয়।
হুমম বিদিশা, সেখানে প্রায়ই যায় আমি দেখেছি আমার লোক দেখেছে।
ঠিক আছে ওর ব্যবস্থা আমি করছি আগে তুমি এআরসির সম্বন্ধে খবর নাও।
আগে ওই মদনের ব্যবস্থা করুন, বিদিশা বা এআরসি পালিয়ে যাচ্ছে না কিন্তু মদন বেশিদিন চুপ থাকবে না ও মুখ খুললে আপনাকে পালাতে হবে।
ওদের তিনটে কেই শেষ করে দেবো।

মণির এখন পাগলের মতো অবস্থা, মদন চোরাচালানের অপরাধে পুলিশের হাতে ধরা পরেছে এদিকে তআর ছেলে বিকির‌ও ফোন বন্ধ, তাই সে ঠিক করে বীরেন বাবুর সাথে দেখা করবে এখন আর বীরেন বাবু তাকে ডাকেন না অনেকদিন হয়ে গেল মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল সে কিন্তু এখন দরকারটা তার, কিন্তু বীরেন বাবুকে এখন কোথায় পাবে তিনি কোথায় আছেন সেটা সে জানে না, মণি ঠিক করলো আগে বীরেন বাবুর বাড়িতেই যাবে, এমন সময় দরজায় টোকা পরলো মণি ভাবলো তার ছেলে বিকি ফিরে এসেছে বোধহয় তাড়াতাড়ি দরজা খুলেই তার মুখটা শুকিয়ে গেলো দরজায় বিকি না রকি এবং তার সাথে আরো চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তাদের কয়েকজনকে সে আগে দেখেছে, বিকির সাথে দেখা করতে মাঝে মাঝেই আসতো।
দাদাবাবু আপনি এখানে?
মামা পাঠালেন।
দাদাবাবু বিকির কোনো খোঁজ জানেন? ওর ফোনটা বন্ধ আছে।
জানি তো। বলে সবাই ঘরের ভিতরে ঢুকে এল।
জানেন? কোথায় আছে?
ওকেও পুলিশে ধরেছে।
কিন্তু ও তো আপনার সাথে কাজ করতো।
তাই বুঝি? রকির গলায় বিদ্রুপের সুর।
দাদাবাবু আপনার মামাকে বলে বিকি আর ওর বাবাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করুন, ওরা তো আপনাদের কাজ‌ই করতো। মণি কাঁদতে থাকে।
পুলিশ ওদের এত সহজে ছাড়বে না।
বীরেন বাবু চাইলে সব পারেন, ওনাকে একবার বলুন না, নাহলে আমাকে নিয়ে চলুন ওনার কাছে?
তার দরকার নেই বললাম না মামাই পাঠিয়েছেন আমাদের।
কি জন্য?
পরে বলছি তার আগে একটা কথার উত্তর দিন তো
কি কথা?
আমার মামার সাথে শুয়ে কেমন লাগে?
প্রশ্নটা শুনে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করে মণির, সে বলে: আ..আপনি এটা কি বলছেন?
ন্যাকামি করবেন না তো আমি জানি মামার সাথে আপনার কি রিলেশন?
আপনি এসব কি বলছেন?
কখনো আমাদের‌ও চান্স দিয়ে দেখুন, সত্যি বলছি মামার থেকেও মজা পাবেন।
এসব কি বলছেন আপনি..
বারবার এক কথা বলছেন কেন? কি বলছি সেটা তো বুঝতেই পারছেন। রকি ও তার সঙ্গীরা হাসতে লাগলো।
রকি আবার বলে: আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বিকি আর ওর বাপকে ছাড়িয়ে আনবো, কিন্তু বিনিময়ে আমাকেও কিছু দিতে হবে।
মণি বুঝলো রকি কি বলতে চাইছে নিজের উপরেই ঘেন্না হচ্ছে তার সে বললো: দাদাবাবু আপনি আমার ছেলের বয়সী।
আপাতত ছেলের চিন্তা করুন, আর তাছাড়া একটা রাত‌ই তো কেউ কিচ্ছু জানবে না।
আমার সাথে এরকম করবেন না, আমি কিন্তু পুলিশকে গিয়ে বলবো যে আমার স্বামী আর ছেলে আপনাদের হয়ে কাজ করতো।
তাই নাকি? তাহলে যান তবে তুই পুলিশের কাছে পৌঁছনোর আগে তোর স্বামী আর ছেলে কোথায় যাবে সেটা ভেবে দেখ। রকি এবার আপনি ছেড়ে তুই করে কথা বলতে থাকে।
মণি মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে। রকি বোঝে এটাই মণির সম্মতি সে মণির হাত ধরে টেনে ভিতরে বেডরুমে নিয়ে যায় সাথে তার ৫ জন বন্ধুও যায়।
নিজের মামার উপযুক্ত ভাগ্নে হলো রকি যেমন ক্ষমতা লোভী তেমনি নির্দয় তেমনি নারীমাংস লোভী ,নিজের মামার রক্ষিতা মণির উপরে অনেকদিন থেকেই লোভ তার কিন্তু মামার ভয়ে কিছু করতে পারছিল না, সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, বিকিকে নিজের দলে নেওয়ার আসল উদ্দেশ্য এটাই ছিল, আজ যখন বীরেন বাবু বলছিলেন যে মদন ও তার ছেলে-ব‌উকে শেষ করে দিতে হবে তখন রকি সেখানে উপস্থিত ছিল সে যেতেই কাজটা নিয়েছে, উদ্দেশ্য শেষ করার আগে মণিকে ভোগ করা, সাথে দলের আরও ৪ জন বন্ধুকে ডেকে নিয়েছিল ওদের‌ও মণির উপর লোভ যথেষ্ট।
মণির পরনে একটি নীল রঙের ফুল প্রিণ্ট করা সুতির হাতকাটা নাইটি, ভিতরে ব্লাউজ নেই, বুকে দুটো পাহাড় উঁচু হয়ে আছে, হাতে শাখা-পলা, সিঁথিতে মোটা করে সিঁদুর। রকি ভিতরে গিয়ে পিছন থেকে মণির বগলের তলা দিয়ে হাত দিয়ে নাইটির উপর দিয়ে মণির দুধদুটো চেপে ধরে, মণি জানে তার কাছে আর কোনো রাস্তা নেই সে চুপ করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে ভাবে এই অপমান‌ও তার কপালে ছিল? সব‌ই তার পাপের ফল, যাইহোক যদি এতে তার স্বামী আর ছেলে ভালোভাবে ফিরে আসে তাহলে সে এটাও মেনে নেবে।
রকি ধীরে ধীরে মণির দুটো স্তনের উপর চাপ বাড়াতে থাকে, শুধু চাপ নয় চটকাতে থাকে এবার চোখ খুলে দেখে রকির বন্ধুরা সবাই ইতিমধ্যে সব জামা প্যান্ট খুলে নগ্ন হয়ে গেছে এবং নিজেদের পুরুষাঙ্গ মৈথুন করতে শুরু করেছে।
এবার রকি কোমরের নীচ থেকে তুলে মাথা গলিয়ে খুলে ফেললো সঙ্গে সঙ্গে মণি দুহাত বুকের কাছে চেপে ধরে স্তনদুটো আড়াল করার চেষ্টা করে, এবার রকির এক বন্ধু এসে মণির পেটিকোটের গিঁটটা খুলে দিতেই সেটাও খুলে নীচে পরে যায় মণি এখন সম্পূর্ণ নগ্ন এবার রকিও নিজের পোষাক খুলে নগ্ন হলো। সে এবার মণির সামনে এসে মণির ঠোঁটে নিজের ঠোঁট লাগিয়ে মণির ঠোঁটরস চুষে খেতে লাগলো, রকির দুজন বন্ধু মণির দুদিকে গিয়ে ওর দুহাতে নিজেদের পুরুষাঙ্গ ধরিয়ে দিল বললো: খেঁচে দে।
মণি জানেবাধা দিয়ে লাভ হবে না তাই সে চুপচাপ ওদের হুকুম তামিল করতে থাকে এবার রকি মণির ঠোঁট ছেড়ে ওর দুটো স্তনে মনোনিবেশ করলো পাগলের মতো ওদুটো চটকাতে লাগলো স্তনবৃন্তদুটো জোরে টিপে টেনে ধরলো মণি ব্যাথায় "আঃ আস্তে দাদাবাবু" করে ওঠে।
রকির আরও দুজন বন্ধু মণির পিছনে গেল একজন ওর পুরো পিঠ চাটতে থাকে অপর জন প্রথমে পাছার দুটো দাবনায় জোরে জোরে কয়েকটা থাপ্পড় মারে মণি ব্যথায় আঃ করতে থাকে, এরপর সে থাপ্পড় বন্ধ করে মেঝেতে বসে মণির দুপায়ের মাঝে মাথা ঢুকিয়ে মণির যোনিতে মুখ লাগায়।
মণির পুরো শরীর কেঁপে ওঠে, এর আগে ওখানে কেউ মুখ দেয়নি বীরেন বাবু আর মদন দুজনেই শুধু যোনিতে পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে খুব বেশি হলে নিজেদের পুরুষাঙ্গ মণির হাত দিয়ে মৈথুন করানো আর মণির স্তনমর্দন এর বেশি কিছু নয়, অপরদিকে রকি আর তার বন্ধুরা মণির শরীরের প্রতিটা বিন্দু ভোগ করছে, মণির মন আর মস্তিষ্ক এসব মানতে তৈরি নয় কিন্তু তার শরীর নিষিদ্ধ সুখে ডুবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, মণির বয়স কম হয়নি কিন্তু এরকম সে কখনো অনুভব করেনি।
ওদিকে রকি এবার মণির স্তনদুটো মুখে পুরে চোষা শুরু করেছে, স্তনবৃন্তদুটো পালা করে জিভ দিয়ে নাড়াচ্ছে মাঝে মাঝে তাতে কামড়ে দিচ্ছে, তৎক্ষণাৎ মণি ব্যাথায় "আঃ কি করছেন আস্তে লাগছে" কিন্তু ওদিকে আরেকজন তার যোনি চাটছে সেই সুখ ব্যাথা ভুলিয়ে দিচ্ছে, এবার সে যোনিতে নিজের একটা হাতের মধ্যমা আর অনামিকা ঢুকিয়ে নাড়াতে শুরু করে, মণির মনে হয় সে সুখে পাগল হয়ে যাবে সে ভুলে গেল যে এই ছেলেগুলো সবাই তার থেকে বয়সে অনেক ছোটো, এরা থাকে ভয় দেখিয়ে সঙ্গমে বাধ্য করেছে সে "আঃ উহহহ আহহহহ উমমমম" শিৎকার করতে থাকে, ছেলেটা মণির যোনি খেঁচার সাথে হটাৎ অপর হাতে মণির একটা দাবনা ধরে পোঁদের ফুটোয় জিভ লাগায়।
এদিকে যে দুজন নিজেদের পুরুষাঙ্গ মৈথুন করাচ্ছিল তারা এবার মণির দুটো হাত মাথার উপরে তুলে ধরলো তারপর দুজনে মণিরপরিষ্কার দুটো বগলে জিভ দিয়ে চাটতে থাকে,যে পিঠ চাটছিল সে এবার সামনে এসে কিছুক্ষণ মণির ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে কিস করতে থাকে তারপর রকি একটা স্তন ছেড়ে দিতেই সে সেটার উপর হামলে পড়লো রকির মতোই চুষতে কামড়াতে থাকে মণি আর থাকতে পারে না একদিকে একজন তার যোনি মৈথুন করছে আর পোঁদের ফুটো চাটছে দুজন তার দুবগল চাটছে আর দুজন তার স্তনের উপর অধিকার করেছে, সে আজ রাতে প্রথমবারের জল খসালো, এবারে ৫জন ছেলে তাকে ছেড়ে ঘিরে দাঁড়ালো মণি তখন ব্যাথা আর সুখের অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতিতে ডুবে আছে এবার রকি তার মাথায় চাপ দিয়ে তাদের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসালো, ৫জন এবার নিজেদের উত্থিত পুরুষাঙ্গ মণির মুখের সামনে ধরলো একজন বললো: নে এবার এটার যত্ন নে,
মণি: মানে?
মানে? এগুলোকে ভালো করে চুষে দে।
এবার মণির পুরো শরীর জুড়ে ঘেন্না ফিরে এলো সে বললো: আমি এর আগে এসব করিনি।
করিসনি তো কি আজ  করবি,নাহলে কিন্তু...
মণি আর কিছু বললো না, চোখ বুঝে মুখটা হা করতেই রকি নিজের পুরুষাঙ্গ মণির মুখে ঢুকিয়ে দিল, আর সেটা যথেষ্ট বড়ো ছিল মণির প্রায় বমি হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা কিন্তু কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল, একটু পরে দেখা গেল সে যথেষ্ট স্বাভাবিক ভাবেই ব্লোজব দিচ্ছে সবাইকে, মণির মুখের লালায় ৫ জনের পুরুষাঙ্গ চকচক করতে লাগলো।
এবার রকি মণিকে ধরে তুললো তারপর নিজের দিকে পিছন ঘুরিয়ে মণিকে বেন্ড করে দাঁড় করালো তারপর পিছন থেকে হাঁটু একটু ভাঁজ করে ঝুঁকে মণির যোনির মুখে নিজের পুরুষাঙ্গ সেট করে আবার হাঁটু সোজা করে দাঁড়িয়ে জোরে এক ঝটকায় পুরো পুরুষাঙ্গটা মণির যোনিতে ঢুকিয়ে দিল, মণি চিৎকার করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই একজন ওর মুখে নিজের পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে দিল ফলে মুখ থেকে গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কিছু বেরোলো না, রকির মনের সুখে নিজের বন্ধুর মাকে ঠাপানো শুরু করলো অবশ্য বন্ধু বলা যায় না সে যে উদ্দেশ্যে বিকিকে সাথে নিয়েছিল সেটা পূরণ হয়েছে।
মণির মুখের সামনে দুজন দাঁড়িয়ে আছে তারা পালা করে ব্লোজব নিচ্ছে আর বাকি দুজন মণিকে দিয়ে নিজেদের পুরুষাঙ্গ খেঁচিয়ে নিচ্ছে, বেশ কিছুক্ষণ মণির যোনিতে ঠাপানোর পরে রকি পোঁদের ফুটোয় অনেকটা থুতু ফেললো তারপর সেখানে পুরুষাঙ্গটা সেট করে একটা জোরে ধাক্কায় অনেকটা ঢুকিয়ে দিল এবারও মণির মুখে একজনের পেনিস থাকায় গোঙানি ছাড়া কিছু বেরোলো না।
রকি: উহহ আহহহ শালী জীবনে কম মাগী চুদিনি কিন্তু এরকম জব্বর মাল প্রথম চুদছি, আজ বুঝতে পারছি মামা কেন তোকে ছাড়তে চায় না, উহহহ কি টাইট পোঁদ।
একজন বললো দাদা এবার আমাদের‌ও চান্স দাও, রকি আরও কয়েকটা ঠাপ মেরে বেরিয়ে এল যদিও ওর এখনো বীর্য পাত হয়নি, এবার একজন মেঝেতে শুয়ে মণিকে তার উপর বসতে বললো মণি যথারীতি নিজের যোনিতে ছেলেটার পুরুষাঙ্গটা ঢুকিয়ে বসলো ছেলেটা দুহাতে মণির দুটো স্তন চেপে ধরে তলঠাপ দিতে থাকে, রকি এবার সামনে এসে মণির মুখে নিজের পেনিস ঢুকিয়ে দেয় মণির মুখ থেকে "ওক ওক ওক" বেরোতে থাকে দুজন ছেলে মণির দুহাতে নিজেদের পুরুষাঙ্গ ধরিয়ে দেয় মণি জানে কি করতে হবে, অপরজন এবার সোজা পিছনে এসে সোজা মণির পোঁদে নিজের পুরুষাঙ্গ ঢুকিয়ে দেয়, মণি চিৎকার করতে গিয়েও পারে না কারন রকি ওর মাথা ধরে নিজের পেনিসের উপর চেপে রেখেছে। দুজন ঠাপানো শুরু করে একজন বলে: আহহহ সত্যি দাদা এমন মাগী এর আগে চুদিনি। খানিকপরে আবার অন্য দুজন মণির যোনি আর পোঁদ অধিকার করে চুদতে থাকে।
ঘরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ওরা মণিকে ভোগ করলো না, প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে পালা করে ৫জন মণিকে উল্টেপাল্টে চুদলো, মণি বুঝতে পারলো যে ওরা ওষুধ খেয়ে এসেছিল তার অবস্থা এখন পুরো কাহিল ইতিমধ্যে সে আরো দুবার জল খসিয়েছে, তার স্তনসহ পুরো শরীরে আঁচড় কামড়ের দাগ পরে গেছে তবুও তার রেহাই নেই ৫ জন সমানে পালা করে ওকে চুদে যাচ্ছে, তার শরীরে এখন আর শক্তি নেই  এবার একসময় ওরা মণিকে ছেড়ে আবার ঘিরে দাঁড়ালো মণি বুঝলো যে ওদের বীর্যপাত হবে কিন্তু সে বুঝলো না ওরা দাঁড়িয়ে পরলো কেন? সে তখনো ওদের মাঝে মেঝেতে বসে আছে।
এবার রকি বললো মুখ খোল মাগী তোর মুখে ফেলবো আমরা।
মণি কাতরভাবে বললো: দাদাবাবু এটা করবেন না আমার ঘেন্না লাগছে।
কিন্তু আমাদের লাগছে না, আমরা সবাই তোর মুখে ফেলবো আর তোকে সবটুকু গিলে খেতে হবে, তাড়াতাড়ি মুখ খোল।
দাদাবাবু এটা পারবো না।
তাহলে তোর ছেলেকে..
আচ্ছা আচ্ছা খুলছি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মণি হা করে রকি মণির মুখে পেনিসটা ঢুকিয়ে দেয় আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আহহহহ আহহহহ করে ওর মুখের ভিতরেই বীর্যপাত করে, মণি জানে এরা যা বলেছে সেটাই করতে হবে ,তাই সে মুখ বন্ধ করে গিলে খায়, ঘেন্নায় ওর চোখ বন্ধ হয়ে কুঁচকে যায় বমি আসতে থাকে, কিন্তু সে সামলে নেয় এবার আরেকজন তার মুখে পেনিস ঢোকায়, এইভাবে সবাই তার মুখে বীর্যপাত করে এবং সবটুকু তাকে গিলে খেতে হয়।
কিছুক্ষণ পরে সবাই পোষাক পরে নিয়েছে, মণিও আবার ওর নাইটিটা পরে নিয়েছে, সে বলে: দাদাবাবু আপনি যা বলেছেন আমি করেছি এবার এবার আমার ছেলে আর স্বামীকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করুন।
রকি একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে: অবশ্যই শুধু তাই নয় তোকেও ওদের কাছে পোঁছে দেবো। বলার সঙ্গে সঙ্গেই পিছন থেকে একজন মণির গলায় দড়িতে ফাঁস পেঁচিয়ে ধরে।

অফিসে কনফারেন্স রুমে মিটিং করছিল এআরসি, অন্যান্য যাই করুক কাজের প্রতি সর্বদা নিঁখুত থাকার চেষ্টা করে সে, যে হোটেলের কনস্ট্রাকশনের অর্ডারটা পেয়েছে সেটা নিয়েই মিটিং হচ্ছিল, একজন প্রেজেন্টেশন দেখাচ্ছিল বাকিরা শুনছিল দরকার মতো প্রশ্ন করছিল। প্রেজেন্টেশন শেষ হলে রুমে সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো, প্রথম মুখ খুললো এআরসি: খুব ভালো হয়েছে, তোমাকে আরও একবার এটা প্রেজেন্ট করতে হবে তবে সেটা ক্লায়েন্টদের সামনে আমি ওদের সাথে মিটিং ফিক্স করছি, ওদের অ্যাপ্রুভালটা দরকার।
মিটিং শেষে সবাই বেরিয়ে গেল, কনফারেন্স রুম থেকে বাইরে আসতেই দেখে আমির অপেক্ষা করছে, তাকে দেখে এগিয়ে আসে।
চলো আমার কেবিনে আসো আমির। দুজনে কেবিনে ঢোকে, এআরসি কফি অর্ডার করে একটু পরেই কফি চলে আসে।
বলো আমির কি খবর?
মদনের জেলের মধ্যে হার্ট‌অ্যাটাক হয়, তাতে ও...
ওটা হার্ট‌অ্যাটাক নয় ও যাতে মুখ না খুলতে পারে তাই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ডাক্তার কনফার্ম করেছে।
ডাক্তারকে টাকা দিয়ে কিনতে কতক্ষণ? আর তাছাড়া বীরেন ভট্টাচার্যের ভয়‌ও তো আছে,
হতে পারে।
আচ্ছা মদনের ছেলে ব‌উএর কি খবর?
পুলিশ ধরেছিল কিন্তু পালানোর চেষ্টা করায় এনকাউন্টার করে দিয়েছে আর ব‌উ নিজের ঘরে সুইসাইড করেছে।
তিনজনকেই শেষ করে দিয়েছে, যদিও বীরেন ভট্টাচার্য এটা না করলেই অবাক হতাম।
আরেকটা খবর আছে।
কি?
পুলিশ ডিপার্টমেন্টে আমাদের যে লোক আছে সে খবরটা দিয়েছে।
কি খবর?
বীরেন ভট্টাচার্য সার্চ ওয়ারেন্ট আর অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টের অর্ডার দিয়েছে।
আমি শিওর আমাদের বস্তিতে।
ওটা ক্যানসেল করাতে সমস্যা হবে না বীরেন ভট্টাচার্যের উপরের লোককে একটা ফোন করতে হবে শুধু, কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না।
কি?
এই অফিসার অতীন সান্যাল ও হটাৎ আমাদের পিছনে পড়লো কেন?
ওকে বীরেন ভট্টাচার্য ব্যবহার করছে।
কি করবে তুমি এবার? এই অতীন সান্যালের একটা ব্যবস্থা করতে হবে, আমাদের বস্তিতে ঢোকার চেষ্টা করেছে, বাইরে নিজের লোক ফিট করে রেখেছে।
তুমি বলো কি করা যায়?
যতদূর খবর পেয়েছি এই অতীন সান্যাল সৎ পুলিশ কোনোদিন‌ও ছিল না অত্যন্ত কোরাপ্টেড একজন অফিসার ও এর আগে যেখানে পোস্টেড ছিল সেখানেও কম কুকীর্তি করেনি।
ওর সাথে আমার শত্রুতা নেই কিন্তু ও আমার রাস্তায় আসছে তাই ওকে বোঝাতে হবে যে এই লড়াইতে ওর জায়গা নেই মুখের কথায় শুনলে ভালো নাহলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
বারে অ্যালকোহলের গ্লাস হাতে বসে ছিল অতীন সান্যাল সামনে আরেকজন যুবক বসে ছিল তার‌ও হাতে অ্যালকোহলের গ্লাস।
চিন্তা করিস না সাম্য, যা প্ল্যান করেছি সেটাই হবে।
কিন্তু অতীনদা কবে? ওই তাথৈ আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল যতদিন না প্রতিশোধ নিতে পারছি আমার শান্তি হবে না।
তোর প্রতিশোধ পূরণ হবে আর আমারও হবে।
তোমার?
হুমমম, বীরেন ভট্টাচার্যের হয়ে আমি অনেক কাজ করেছি কিন্তু উনি নিজের কাছের এক অফিসারের জন্য আমাকে অন্য জায়গায় ট্রান্সফার করেছিল আর এখন দরকারে আমাকে ডেকেছে, রকি ওর ভাগ্নে কথায় কথায় আমাকে অপমান করতো, ছোটো করতোৎআর ওর মেয়ে বৃষ্টি ওর তো অহংকারে মাটিতে পা পরে না।
কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য যদি কথার খেলাপ করে, যদি তাথৈ‌এর সাথে তোমার বিয়ে দিতে অস্বীকার করে?
তাহলে ওনার সম্পর্কে যে কথাগুলো শুধু আমি জানি সেগুলো পুরো শহর জানবে আর তাছাড়া এখন আমাদের প্রতিটা কথোপকথন আমি রেকর্ড করি, সেগুলো ভাইরাল হয়ে যাবে।
খুব ভালো করেছো অতীন দা।আচ্ছা শোনো আমি যাই তুমি থাকবে না যাবে?
আমি আরেকটু থাকবো, তুই যা।
সাম্য চলে যাওয়ার অনেক পরে বারের ম্যানেজার এসে ইনস্পেকটর অতীন সান্যালকে বললেন: স্যার আপনার জন্য একটা ফোন এসেছে।
অতীন অবাক হয়, তার জন্য ফোন তাও বারে? তবুও সে গিয়ে ফোনটা ধরে হ্যালো
অতীন সান্যাল? একটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা যায়।
বলছি, কে বলছেন? উত্তর দেন অতীন সান্যাল।
আমি কে সেটা ইম্পরট্যান্ট নয় কিন্তু যা বলছি সেটা ইম্পরট্যান্ট, আপনি কেন বীরেন ভট্টাচার্যের পুতুল হয়ে ওর কথায় নাচছেন?
তুই কে বে? যে তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে?
আমি কিন্তু আপনার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলছি তাই..
তুই জানিস তুই কার সাথে কথা বলছিস?
জানি, আর আপনি এতদিন যেখানে পোস্টেড ছিলেন সেখানে আপনার সমস্ত কীর্তির ব্যাপারেও জানি তার প্রমাণ‌ও আছে।
তুই কি আমাকে হুমকি দিচ্ছিস?
হুমকি মনে করলে তাই, আপনি বীরেন ভট্টাচার্যের কথামতো কাজ করা বন্ধ করুন নাহলে আপনার‌ও বিপদ উপস্থিত হবে।
এই শোন আমি সেটাই করি যেটা আমি নিজে ঠিক করি।
আপনি তাহলে শুনবেন না আমার কথা?
না শুনবো না।
বেশ, তাহলে আপনার বিপদের জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন আমি না।
চোপ, করবি তুই.. হ্যালো হ্যালো কথা বলছিস না কেন বে?
ফোন রেখে দেয় অতীন সান্যাল তারপর আবার অ্যালকোহলের গ্লাস হাতে নেয়। গভীর রাতে নেশায় চুর হয়ে টলতে টলতে বার থেকে বেরিয়ে নিজের জিপের দিকে এগোতে থাকে অতীন, জিপে উঠতে যাবে এমন সময় ঘাড়ে একটা সুঁই ফোটার মতো কিছু ফোঁটে তারপর আর কিছু মনে নেই তার।
অতীন সান্যালের যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে দেখে একটা হাইওয়ের ধারে তার জিপে শুয়ে আছে, বাইরে লোকজনের কোলাহলের শব্দ শুনতে পেয়ে ধীরে ধীরে জিপ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে মিডিয়ার লোকজন তাকে ঘিরে প্রশ্নবানে বিদ্ধ করতে থাকে "একজন পুলিশ অফিসার হয়ে নেশা করে কেন গাড়ি চালাচ্ছিল?", "সে কবে থেকে ড্রাগে আসক্ত?", "তার গাড়িতে পাওয়া টাকার বাণ্ডিল গুলো কিসের? কার থেকে পেয়েছে?" ইত্যাদি।

অফিসে নিজের কেবিনে টিভিতে ইন্সপেক্টর অতীন সান্যালের সাসপেন্ড হবার খবর দেখতে দেখতে হাসছিল এআরসি আর আমির।
আমির বললো: সত্যি বলছি লোকটা যদি সৎ হতো তাহলে হয়তো এটা করতাম না কিন্তু।
তাহলে আমিও এটা করতাম না আমির।
এইসময় এআরসির ফোন বেজে ওঠে, আমির জিজ্ঞাসা করে: কার ফোন?
বিদিশার। ছোট্ট উত্তর এআরসির তারপর ফোনটা কানে দেয় "বলো"
খবর শুনেছো? বিদিশার গলা উত্তেজিত।
কোন খবর?
ওই অতীন সান্যালের খবরটা?
হ্যাঁ, শুনেছি।
ওটা কি তোমার কাজ?
এমন কেন মনে হলো তোমার?
এমনি, তবে ঠিকই আছে লোকটা প্রচণ্ড শয়তান আর ও নাকি তাথৈকে মানে আমার ছোটো ননদকে বিয়ে করতে চায়।
কথাটা শুনে এআরসি একটু চুপ করে থাকে, বিদিশা আবার বলে: কিন্তু এখন মনে হয় না সেটা হবে।
জানিনা, হতেও পারে।
কিন্তু আমি চাইনা সেটা হোক।
কেন?
তাথৈ খুব ভালো মেয়ে, এই বাড়িতে ওই একজন‌ই আছে যে আমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে না, ও আর ছোটো মামী এই দুজন।
বুঝলাম।
মেয়েটা কদিন থেকে বেশ মনমরা হয়ে আছে কেন।ঠিক বুঝতে পারছি না, ভাবছি তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দেবো আমি শিওর তুমি ওর মন ভালো করে দেবে।
একদম নয়, ওর সাথে আমি দেখা করতে চাই না। কথাটা বেশ জোরের সঙ্গেই বলে এইরসি, শুনে কিছুটা হকচকিয়ে যায় বিদিশা সে বলে: আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম রয়, তুমি এত রিয়্যাক্ট করছো কেন?
আমি সরি বিদিশা।
তুমি কি ওকে চেনো?
না আর আমি চিনতেও চাই না, তুমিও ওকে আমার কথা বলবে না।
আচ্ছা ঠিক আছে, রাখছি এখন।
হুমমম।
ফোনটা রাখতেই আরেকটা ফোন ঢোকে, সেটা দেখে ভ্রুদুটো একটু কুঁচকে যায় এআরসির সে তাড়াতাড়ি ফোনটা কানে দেয়, ওপারের কথা শুনে বলে : আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসছি।
ফোন রাখার পরে আমির জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছে?
আমির আমাকে এখনই ফিরতে হবে।
ফিরতে হবে?
হ্যাঁ, মায়ের শরীরটা খারাপ হয়েছে আমি বাণিজ্যনগরী ফিরে যাচ্ছি কিছুদিনের জন্য।
কি হয়েছে আম্মির?
সেটা না গেলে বুঝতে পারবো না, মাসি বললেন না।
আমিও যাবো।
এখনই নয়, তুমি চলে গেলে প্রবলেম হবে, তুমি এখানকার কাজগুলো দেখো, বিশেষ করে আমাদের নতুন কনস্ট্রাকশনের সাইট, বীরেন ভট্টাচার্য চুপ থাকার লোক নয়।
তুমি চিন্তা কোরো না, আমি সব সামলে নেবো, তুমি ওদিকে যাও।
ঠিক আছে।
আর গিয়ে আমাকে আম্মির খবর দেবে।
ওকে।

"খুব তো বড়ো বড়ো লেকচার দিচ্ছিলে যে ওই বস্তি থেকে এআরসিকে বার করে আনবে, কি হলো? উল্টে তো ওই তোমার মুখে কালি লেপে দিল" চেঁচিয়ে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য, তার সামনে এখন মাথা নীচু করে বসে অতীন সান্যাল, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে সবকটাই প্রমাণ সহ, জেলেও যেতে হয়েছিল এখন জামিনে ছাড়া পেয়েছে কিন্তু চাকরি চলে গেছে।
আপনাকে তো বলেছিলাম যে এআরসির সাথে লড়াই সহজ নয়।
তাহলে দায়িত্ব নিয়েছিলে কেন? বারণ করে দিতে?তোমাকে এখানে ট্রান্সফার করিয়ে আনাই আমার ভুল হয়েছে।
রাগে অতীনের হাত নিশপিশ করতে থাকে ইচ্ছা করে এখুনি বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করে দিতে, কিন্তু কোনোমতে নিজেকে সামলায়।
বীরেন বাবু বলে চলেন:কি যেন বলেছিলে? তাথৈকে চাই, তাথৈ অত সস্তা নয় বুঝেছো?
এআরসিকে আমি ছাড়বো না আর তার উপায়‌ও জানা আছে।
উপায়? কি উপায়?
আপনার ভাগ্নেব‌উ বিদিশা, ওর ওই বস্তিতে নিয়মিত যাতায়াত আছে,
রাইট রাইট তুমি বলেছিলে বটে, তুমি কি করতে চাও?
ওকে তুলে এনে সব কথা ওর পেট থেকে বার করতে হবে।
বেশ, তুমি আপাতত রকির সাথেই থাকো, তোমরা দুজনে বন্ধু ছিলে তাই একসাথে থাকতে অসুবিধা হবে না।
রকি রাজী হবে?
আমি বলে দেবো আর তাছাড়া বিদিশার ব্যাপারে ও তোমাকে সাহায্য করতে পারে, বিদিশা রকিকে যমের মতো ভয় পায়।
বেশ তাই হবে, আরেকটা কথা
কি?
তাথৈকেও ওখানে যেতে দেখা গেছে যদিও ঢুকতে দেয়নি বোধহয়।
তাথৈ?
হ্যাঁ, ওর সাথে একটু কথা বলবেন।


বিদ্র: দুটো আপডেট একসাথে দিলাম, আশা করি ভালোই লাগবে, ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিতে ভুলবেন না আর খারাপ লাগলে সেটাও জানাবেন।
ধন্যবাদ

Very good
Like Reply
(08-10-2022, 11:59 PM)Monen2000 Wrote:
                             ত্রয়োদশ পর্ব

অভয়ের কাছে যেতে গিয়ে আবার বাধা পায় তাথৈ, ওখানকার লোকেরা ওকে যেতেই দেয় না আজ যদিও ও একা আসেনি সাথে অমিয়কেও নিয়ে এসেছে, যদিও অমিয় আসতে চায়নি ওর কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি যে অভয় বেঁচে আছে ও বারবার বলেছে "আপনার ভুল হচ্ছে মিস্ ভট্টাচার্য, অভয় বেঁচে থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করতোই"
কিন্তু তবুও তাথৈ কোনোমতে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে, কিন্তু ঢুকতে দিলে তো। তাথৈ বারবার ওদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে ওকে ওদের বস চেনে এর আগেও সে দেখা করে গেছে কিন্তু কে শোনে কার কথা।
"কি হচ্ছে এখানে?" একটা পুরুষ টণ্ঠ শুনে সবাই চমকে তাকায়, তাথৈ আর অমিয় দুজনেই লক্ষ্য করে যে আগন্তুক কে দেখে ওখানের লোকগুলো সম্মানের সাথে এগিয়ে যায় গিয়ে কিছু বলে, তারপর আগন্তুক তাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে: আপনি এখানে কি করছেন মিস্ ভট্টাচার্য?।
আপনি আমাকে চেনেন?
আপনার সাথে সম্মুখ পরিচয় এর আগে হয়নি।
ওহ, আমি অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম আর ও অমিয় ও অভয়ের সাথে দেখা করতে এসেছে।
এইসময় একজন লোকাল লোক এগিয়ে এসে আগন্তুককে বলে: দেখুন না ভাইজান কতবার বলেছি যে ওই নামে এখানে কেউ থাকে না তবুও উনি শুনছেন না।
ঠিক আছে তুমি যাও। লোকটা চলে গেলে তাথৈ বলে: দেখুন আমি এর আগে এসে অভয়ের সাথে দেখা করে গেছি, কিন্তু এখন আর আমাকে যেতে দিচ্ছে না আপনি প্লিজ আমাদের যেতে দিন।
কোনো লাভ নেই, আপনি যার সাথে দেখা করতে এসেছেন তিনি এখন এখানে নেই, কবে ফিরবেন ঠিক নেই, কাজেই আপনারা ফিরে যান, আর তার নাম রয়।
কিন্তু..
কোনো কিন্তু নয় আমি চাইলে আপনাদের এখান থেকে বার করে দিতে পারতাম কিন্তু সেটা করিনি, এবার আপনারা নিজেই চলে যান।
তাথৈ আর অমিয় ফিরে আসছে এমন সময় আমিরের ফোন বাজলো, সে ফোনটা কানে দিয়ে বলে "বলো, সব ঠিক আছে?"।

অফিসে মায়ের শরীর খারাপের খবরটা শুনেই কোনোমতে তাড়হুড়ো করে বাণিজ্যনগরীতে নিজের বাংলোয় ফেরে এআরসি। মায়ের রুমে ঢুকে দেখে তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন পাশে মাসি বসে আছে।
কি হয়েছে মা? এখন কেমন আছো? ডাক্তার কোথায়?
আস্তে আস্তে বাবু আগে শান্ত হয়ে বস তারপর বলছি। কথাটা বললেন মাসি।
আগে বলো কি হয়েছে? ডাক্তার কোথায়, আসেনি?
ডাক্তার এসেছিল দেখে গেছে।
কি হয়েছে?
কিছুনা, পূজোয় উপোস রেখেছিল তাই শরীর দুর্বল ছিল তাই মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিল।
এত পূজো আর উপোস কিসের? প্রায় গর্জে ওঠে এআরসি।
এই শুরু হলো। আস্তে আস্তে বলে এআরসির মা অমৃতাদেবী।
আমি ভালোভাবে বলছি এসব বন্ধ করো নাহলে কিন্তু..
নাহলে কি করবি?
এবাড়িতে পূজোআচ্চা বন্ধ করে দেবো।
তোর কথামতো নাকি?
হ্যাঁ, আমার কথা মতো।
তোর বাড়ি বলে যা খুশি করবি?
যদি তাই মনে করো তাহলে তাই।
দিদি, চলোতো ওর বাড়িতে ওই থাকুক আমরা চলে যাবো।
তোমরা মা-ব্যাটায় কথা বলো আমি নীচে যাই। বলে বিন্দু মাসি চলে গেলেন।
তোমাকে কে বেরোতে দেয় আমি দেখবো, পূজো করে শরীর খারাপ করলে এখন কোন ঠাকুর দেখতে আসছে?
বাবু, তোকে বলেছি না এসব বলবি না। এবার অমৃতা দেবীও গর্জে উঠলেন, কিন্তু শরীর দুর্বল তাই আবার বিছানায় এলিয়ে পরলেন।
মা.. তুমি ঠিক আছো? আচ্ছা আচ্ছা তুমি পূজো করো কিন্তু উপোস করার কি দরকার?
এত‌ই যদি মায়ের চিন্তা তাহলে কোথায় ছিলি এতদিন? 
মা তোমাকে তো বলেছি আমি কোথায় ছিলাম..
এবার ওসব ছাড় অভয়, ওসব পুরনো কথা, এখানে আমরা নতুন জীবন শুরু করেছি।
যতদিন না ওই লোকটাকে শেষ করছি ততদিন আমি শান্তিতে থাকতে পারবো না মা, ওই লোকটা আমার বাবাকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে, আমাদের যে জমিতে আমরা নিজেদের স্বর্গ বানিয়েছিলাম ওই জায়গায় লোকটা নিজের পাপের হেড অফিস করেছে, আমাদের শান্ত সুখী আনন্দের জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে, ওকে আমি ছাড়বো না।
আর ওই মেয়েটা?
কোন মেয়েটা? অবাক হয় এআরসি।
ওই যে যার সাথে তুই কলেজে..
না, ওর সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই।
তোর বাবার কিন্তু ওকে খুব পছন্দ ছিল, কি যেন নাম?
ওর কথা ছাড়ো মা, ও ওর পরিবারের মতোই, একটুও আলাদা নয়।
আলাদা হতেও তো পারে।
না, আলাদা নয় আর ওর কথা ছাড়ো, তুমি রেস্ট নাও।
তুই কি আবার যাবি?
যাবো, তবে আগে তুমি সুস্থ হবে তারপর।
পরদিন লাঞ্চে অনেকদিন পর মায়ের হাতের রান্না খেলো এআরসি, ছেলেকে কাছে পেয়ে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
এবার কিন্তু আমি তোর সাথে যাবো। খাওয়া শেষ হতেই ছেলেকে কথাটা বললেন অমৃতাদেবী।
এখনই কি? তুমি আরও সুস্থ হ‌ও তারপর যেয়ো।
আমি ঠিক আছি, এবার আমি কোনো কথা শুনবো না তোর সাথে যাবোই।
মা..
না, তুই এবার নিয়ে যাবি ব্যাস।
আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখন যাও রেস্ট নাও, যখন আমি যাবো তখন দেখা যাবে।
মা চলে যাওয়ার পর এআরসি ফোন করে "হ্যালো, আমির?"
বলো, সব ঠিক আছে?"।
হ্যাঁ।
আম্মির শরীর ভালো?
হুমমম, আগের থেকে বেটার,আচ্ছা শোনো মা এবার আমার সাথে আসতে চাইছে।
তাতে অসুবিধা কোথায়?
অসুবিধা তেমন কিছু না, তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
কি বলো?
একটা নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট দেখো, ভাড়া পাওয়া গেলে ভালো নাহলে কিনে নাও।
দরকার কি, আমি যে ফ্ল্যাটে থাকি ওখানে থাকবেন।
সেটা হয় না আমির।
কেন উনি আমার আম্মি নন?
সেটা নয়, প্রবলেম টা অন্য, ওই এরিয়াটা বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ির খুব কাছে, ওখানে তোমার থাকাটা জরুরী আর ওখানে সিকিউরিটি কম, মাকে সিকিউরিটি ছাড়া রাখতে সাহস হয় না।
ঠিক বলেছো, তোমার ওখানেই তো আম্মি থাকতে পারে।
উঁহু ওখানে বিদিশা আসে।
তাতে কি হয়েছে? তুমি ওখানেই আসো আম্মিকে নিয়ে, ওখানে সিকিউরিটি বেশী আমি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছি তাছাড়া ওখানে বাগান আছে, ওনার ভালো লাগবে।
একদিকে ঠিক।
তাহলে সেটাই করো, আচ্ছা শোনো একটা কথা আছে।
বলো।
মিস্ ভট্টাচার্য এসেছিলেন সাথে একজন ছেলে, বললো তোমার ছোটোবেলার বন্ধু।
কি নাম?
অমিয়, আমি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঠিক করেছো, আচ্ছা তাহলে ওটাই করো সিকিউরিটি বাড়িয়ে দাও আমি আমার বাড়িতেই মা আর মাসিকে নিয়ে যাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে।

একটা কর্পোরেট অফিসে উচ্চপদে কাজ করে অমিয়, অফিসের পরেও এমন কিছু কাজ থাকে যেগুলো তাকে বাড়িতে সেরে রাখতে হয়, সেদিন‌ও অফিস থেকে ফিরে  কাজ করছিল এমন সময় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল, হ্যালো কে বলছেন?
আমি। একটা মেয়ের গলা শোনা যায়।
কে আমি?
বৃষ্টি। নামটা শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় অমিয় কোনো কথা বলে না, ফোনের ওপার থেকে ক্রমাগত ভেসে আসতে থাকে  হ্যালো.. হ্যালো শুনতে পাচ্ছো?
আমাকে কেন ফোন করেছেন? গম্ভীরকণ্ঠে বলে অমিয়।
আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
কিন্তু আমি চাই না।
অমিয় প্লিজ দেখা করো প্লিজ আমার কিছু কথা আছে।
কিন্তু আমার কোনো কথা নেই।
অমিয়... তুমি আমাকে কলেজে প্রপোজ করেছিলে, আমাকে আরেকবার সুযোগ দেবে?
অমিয়‌ বিস্মিত হয়, সে বুঝতে পারে না যে সে জেগে আছে না স্বপ্ন দেখছে?
কি হলো দেবে?
আপনার আজ কি হয়েছে মিস্ ভট্টাচার্য?
এবারে তাথৈ‌এর আওয়াজ আসে সে বলে: ওকে আরেকটা সুযোগ দে না, প্রত্যেককেই তো দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিত।
না মিস্ ভট্টাচার্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সুযোগ হয়না।
এরকম বলিস না অমিয়।
দেখুন সত্যি বলছি আমি এখনো আপনার দিদির যোগ্য হ‌ইনি, আর ওনাকে খুশী রাখার মতো আর্থিক সামর্থ্য‌ও আমার এখনো হয়নি,আপনার দিদি আমার সাথে সুখী হবে না আর আমি ওনাকে কষ্ট দিতে চাইনা,
অমিয় বৃষ্টি সত্যি নিজেকে বদলাতে চাইছে, ওকে একটা সুযোগ দে।
বদলাবে, কেন? উনি যেরকম আছেন ভালো আছেন সুখে আছেন তাহলে নিজেকে বদলাবেন কেন?
তুমি কি এখন আমাকে ভালোবাসো না? প্রশ্নটা বৃষ্টি করে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে অমিয়। 
কি রে উত্তর দে? এবারে তাথৈ প্রশ্ন করে,অমিয় উত্তর দেয় কিন্তু উত্তরটা তাথৈ‌এর বুকে তীরের মতো বিঁধে যায়।
"শেষবার অভয়ের সাথে আমার কি কথা হয়েছিল জানেন? আপনি তো ওর ফোন ধরেননি, আপনার দিদি কথা বলেছিল এবং কি বলেছিল সেটা তো আগেই বলেছি, সেদিন আপনার দিদি ফোন কাটার পরে ও আমাকে একটা কথা বলেছিল জানেন?"
কি কথা?
আপনার কাছ থেকে ঠকে গিয়ে ছেলেটার মন ভেঙে গিয়েছিল ও বলেছিল "আমি যা ভুল করেছি তুই কোনোদিন করিস না অমিয়, কোনোদিন নিজের লেভেলের থেকে উঁচু লেভেলের কাউকে ভালোবাসিস না, কোনোদিন না"।
আমি ওকে ঠকাইনি অমিয়।
সেসব কথা এখন অর্থহীন, কারণ ও বেঁচে নেই।
তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই অমিয় বলে: ছাড়ুন ওর কথা, আপনার দিদিকে বলবেন নিজেকে বদলানোর দরকার নেই ,উনি যেমন আছেন সেরকমই থাকুন কেউ না কেউ তো ঠিক পছন্দ করবেই ওনাকে, গুড নাইট।

"তুই এখানে থাকিস?" ছেলের বাগানবাড়িটা।দেখে প্রশ্ন করেন অমৃতাদেবী।
হ্যাঁ।
ভালো জায়গাটা। এবার কথাটা বলেন বিন্দু মাসি, তাকেও নিয়ে এসেছেন অমৃতাদেবী, দুইজন ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি আর বাগানটা দেখছিলেন পিছনে এআরসি আর আমির। এমন সময় এআরসির ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে, সেটা পড়ে ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়, আমির লক্ষ্য করে সেটা জিজ্ঞেস করে "কার ম্যাসেজ?"
বিদিশার।
কি লিখেছে।
আমির আমাকে এখনই যেতে হবে, তুমি মা আর মাসিকে সামলাও।
আরে হয়েছে টা কি?
বিদিশা ইজ ইন গ্ৰেট ডেঞ্জার, আই হ্যাভ টু সেভ হার।
কি বিপদ?
রকি, ও বিদিশাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তুমি ওকে খুঁজবে কোথায়? রকি ওকে যেকোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারে আর তাছাড়া রকি বিদিশার হাজবেন্ড ও বিদিশাকে কোথাও নিয়ে যেতেই পারে।
কোনো একটা কারনে বিদিশার সন্দেহ হয়েছে, ও আমার কাছে হেল্প চেয়েছে, আর আমিও ওকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওকে প্রোটেক্ট করবো।
কিন্তু তুমি ওদের পাবে কোথায়?
নিকুঞ্জ আছে না।
নিকুঞ্জ? মানে ওই ছেলেটা যে মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে আমাদের হয়ে।
হুমম।
আরে হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওকেও তো এখানে নিয়ে এসেছি আমরা, কিন্তু তুমি একা যাবে? কয়েকজন কে নিয়ে যাও।
অত সময় নেই, তুমি মা আর মাসিকে দেখো, আমার কিছু হবে না।
কোথায় যাচ্ছিস তুই? ছেলেকে প্রশ্নটা করেন অমৃতাদেবী।
একটা ছোট্ট কাজ এসেছে সেখানেই যাচ্ছি, আমির র‌ইলো আমি একটু পরেই চলে আসবো।

হাইওয়ে ছেড়ে পাশের কাচা রাস্তায় গাড়িটা ঢুকতেই বিদিশার সন্দেহটা দৃঢ় হয়, আর ভয়টা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আজ সকাল থেকেই রকি অদ্ভুতভাবে ভালো ব্যবহার করছে তার সাথে যেটা সে আগে কখনো করেনি, একসময় বলে আজ ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো সারাদিন ওর সাথে কটাবে। তখনই সন্দেহ হয়েছিল বিদিশার তাই একসময় সুযোগ বুঝে রয়কে ম্যাসেজ করে সাহায্যের আর্তি জানায়, কিন্তু এইখানে রয় খুঁজে পাবে ওকে?
কাঁচা এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে কিছুটা গিয়ে একটা পাঁচিল ঘেরা গোডাউনের ভিতরে ঢোকে গাড়িটা, বিদিশা লক্ষ্য করে পাঁচিল আর গোডাউনের মধ্যবর্তী এলাকায় অনেককটা বড়ো বড়ো গাছ রয়েছে, সবথেকে বড়ো কথা পুরো এলাকাটায় বেশ কয়েকজন রাইফেলধারী দাঁড়িয়ে আছে, আরও একজনকে চোখে পড়লো লম্বা মতো, মাথায় টাক, গায়ের রঙ শ্যামলা শরীরের পেশীর আধিক্য এতটাই যে একে দানব বলা উচিত।
বিদিশা ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে রকি বলে: ওকে আমরা পালোয়ান বলে ডাকি, একটা সময় কুস্তি করতো এখন আমার হয়ে কাজ করে, কারো শরীরের হাড় ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে ও এক্সপার্ট।
"আমাকে এখানে কেন এনেছো" ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে বিদিশা।
এখানে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
সারপ্রাইজ?
হুমমম, চলো ভিতরে চলো। দুজনে গোডাউনের ভিতরে ঢোকে, বিদিশা লক্ষ্য করে গোডাউনটা ফাঁকা সে রকিকে জিজ্ঞেস করে: এখানে কিসের সারপ্রাইজ?
ওয়েলকাম... ওয়েলকাম। হটাৎ তৃতীয় কণ্ঠস্বরে বিদিশা চমকে ওঠে, অতীন সান্যাল দাঁড়িয়ে আছে তবে গায়ে পুলিশের উর্দি নেই ফরমাল পোষাক পরা, চোখে একটা সানগ্লাস।
উনি এখানে কি করছেন?
ওকে আমি ডেকেছি তাই।
তুমি, কেন?
একটা ছোট্ট কাজের জন্য।
কাজ, কি কাজ?
হটাৎ একটা গোঙানির শব্দ পেয়ে বিদিশা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে, দেখে দুজন লোক অন্য একজনকে ধরে নিয়ে আসছে, বোঝাই যাচ্ছে এই তৃতীয় ব্যাক্তিটিকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে, সে হাঁটতে পারছে না ওই দুজন তাকে টানতে টানতে এনে ধুপ করে মেঝেতে ফেলে দিল। এবারে বিদিশা চিনতে পারে তার বাবা অনিমেষ বাবু।
বাবা। একটা আর্তনাদ করে বিদিশা ছুটে যেতে চায় কিন্তু রকি তার হাত ধরে ফেলে, বিদিশা কাঁদতে শুরু করে "বাবা.. বাবা"
আরে তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছেন, তবে কতক্ষণ থাকবেন জানিনা।
রকি.. কেন করছো তুমি এরকম, উনি তোমার কি ক্ষতি করেছেন?
ক্ষতি তুমি করেছো, তার শাস্তি তো পেতে হবে তাই না?
আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি? বিদিশা নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু রকির শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়।
যে বস্তিটা মামা উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না, ওখানে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না অথচ তুমি ওখানে অনায়াসে ঢুকে যাও কিভাবে, কার কাছে যাও? রকির প্রশ্ন শুনে বিদিশা হতভম্ব হয়ে যায়, সে চুপ করে থাকে, 
কি হলো উত্তর দিন। এবার অতীন কথা বলে। দেখুন আপনি উত্তর দিয়ে দিলে আমরা আপনি এবং আপনার বাবাকে যেতে দেবো আর না হলে...
রকি বিশ্বাস করো, আমি ওদিকে..
আমার লোক আপনাকে ওখানে যেতে দেখেছে, কাজেই মিথ্যা বলে লাভ নেই। বিদিশাকে কথা শেষ করতে দেয়না অতীন, সে গিয়ে নীচে পরে থাকা অনিমেষ বাবুর পেটে এক লাথি মারে।
বাবা... বিদিশা আবার আর্তনাদ করে ওঠে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে, কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয়। অতীন পরপর আরও কয়েকটা লাথি মারে, অনিমেষ বাবুর মুখ থেকে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে আসে। বিদিশা কাঁদতে থাকে "রকি.. রকি প্লিজ ওনাকে আর মারতে বারন করো, প্লিজ"।
তাহলে বলো ওখানে কে থাকে, কার কাছে যাও?
বিদিশা চুপ করে আছে দেখে রকি আবার বলে: কি হলো উত্তর দেবে না?
আপনি এআরসির কাছে যান, তাই না? কথাটা অতীন বলে।
এআরসি? বিদিশা বেশ অবাক হয়েছে বোঝা যায়।
নামটা কোনোদিন শোনোনি? এআরসি.. এআরসি ইণ্ডাস্ট্রিজ এর মালিক যে মামার কন্ট্রাক্ট ছিনিয়ে নিয়েছে।
এসব কি বলছো তুমি?
এবার বলোতো ওখানে এআরসির সাথে আর কে কে থাকে? আর কি জানো তুমি ওর সম্বন্ধে?
বিদিশা চুপ করে আছে দেখে অতীন বলে: এভাবে উনি মুখ খুলবে না রকি।
তাহলে তুই মুখ খোলা, তোকে পুরো স্বাধীনতা দিলাম।
অতীন দুজন লোককে ইশারা করতেই ওরা মেঝেতে প্রায় মূর্ছিত অনিমেষ বাবুকে আবার মারতে শুরু করে, বিদিশা আর্তনাদ করতে থাকে "রকি... রকি বাবা আমার বাবা"।
উত্তরটা দিয়ে দাও।
আমি সত্যিই এআরসিকে চিনি না, বিদিশা কাতরাতে থাকে। রকি কিছু বলতে যাচ্ছিল এমন সময় এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠে "হ্যাঁ, মামা বলো"
তুই কোথায়?
এইতো আমার ব‌উএর সাথে টাইম স্পেন্ড করছি সাথে শ্বশুর ও আছেন।
কিছু বললো?
এখনো না, তবে খুব তাড়াতাড়ি বলে দেবে।
ওখানে অতীন আছে না?
হ্যাঁ, আছে।
ও ওদের সামলে নেবে, তুই এখানে চলে আয় কাজ আছে।
কি কাজ মামা?
আয় তারপর বলছি, তাড়াতাড়ি চলে আয়।
ঠিক আছে মামা। ফোনটা রেখে রকি বলে: শোন অতীন মামা আমাকে ডাকছে, আমাকে যেতে হবে তুই এদের সামলে নে।
ওকে।
রকি...রকি..। রকিকে চলে যেতে দেখে বিদিশা আর্তচিৎকার করতে থাকে, কিন্তু রকি সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে চলে যায়।
ওয়েল ওয়েল বিদিশা ম্যাডাম, এবার তাড়াতাড়ি মুখ খুলুন আমার ধৈর্য্য কিন্তু খুব কম।
ওখানে আপনারর যম থাকে অতীন সান্যাল। বিদিশা ঘৃণাভরে কথাটা বলে।
আমার যম? হো হো করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো অতীন তারপর বলে আমার যম এখনো জন্মায়নি।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস পতন ডেকে আনে, জানেন তো? তেজের সঙ্গে উত্তর দেয় বিদিশা।
আমার পতন ছাড়ুন, আপাতত নিজের বাবার কথা চিন্তা করুন, রকি আমাকে পুরো পার্মিশন দিয়ে গেছে আপনার মুখ খোলার জন্য আমি যা খুশি করতে পারি, অত‌এব তাড়াতাড়ি মুখ খুলুন, কেন নিজের আর নিজের বাবার বিপদ বাড়াচ্ছেন?
বললাম তো এআরসি বলে কাউকে আমি চিনি না।
আপনি চেনেন, আপনি ওই বস্তিতে যার কাছে যান তার নাম এআরসি, সে এআরসি ইণ্ডাস্ট্রিজ এর মালিক এই শহরে বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে শত্রুতা শুরু করেছে।
বিদিশার বিস্মিতভাব প্রতি মুহুর্তে বাড়তে থাকে, অতীন বলে চলে: আমার চাকরি চলে যাওয়ার পিছনে ওই আছে, আমি জানি ওকে আমি ছাড়বো না।
ও এআরসি কি না জানিনা কিন্তু ও আপনাদের থেকে অনেক অনেক ভালো একজন মানুষ।
এই তো মুখ খুলছে, এবার বলুন তো ওর সম্বন্ধে আর কি কি জানেন?
কিছু না কারণ জানার দরকার হয় নি।
আবার মিথ্যা শুরু করলেন... দেখুন আমিও খারাপ ন‌ই যদি না কেউ আমাকে খারাপ করে আর আপনি আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করছেন।
আমি সত্যিই ওর সম্বন্ধে কিছু জানিনা আর ওর নাম এআরসি নয়।
তাহলে কি?
রয়।
রয়?
হ্যাঁ রয়। এবার তো আমি যা জানি সব বলে দিয়েছি এবার আমাকে আর আমার বাবাকে যেতে দিন।
আসল কথাটা কি বলুন তো আপনাদের যেতে দেওয়ার হুকুম নেই, বীরেন ভট্টাচার্য স্পষ্ট বলেছেন আপনাদের দুজনকেই যেন শেষ করে দি‌ই। বিদিশা স্তম্ভিত হয়ে গেল, সে কিছু করার আগেই পরপর দুটো কানফাটানো আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে অতীনের যে দুজন লোক তার মূর্ছিত বাবার পাশে ছিল তাদের হাতে দুটো পিস্তল আর সেটা সটান তার বাবার দিকে তাক করা, বিদিশা "বাবা.." বলে ছুটে অনিমেষ বাবুর নিথর দেহটার কাছে গেল তারপর তার মাথার কাছে বসে তার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো, পিস্তলধারী দুজন তখন বিদিশার মাথায় পিস্তল ছোঁয়ালো...

গাড়িতে উঠেই এআরসি নিকুঞ্জকে ফোন করে ব্লুটুথ হেডফোনটা কানে লাগিয়ে নেয়, এই নিকুঞ্জ বলে ছেলেটা তার দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, বয়স ২৫-২৬ হবে, ছিপছিপে দোহারা চেহারা খুব একটা চোখে পরার মতো নয় কিন্তু যেজন্য এআরসি ওকে নিজের দলে রেখেছে সেটা হলো ও একজন হ্যাকার, আর যে কারো ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করতে পারে, গরীব অনাথ এই ছেলেটি চাকরির জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেছে শেষে অন্ধকার জগতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের খপ্পড়েও পড়েছিল বেশ কয়েকবার, এআরসি ছেলেটার দক্ষতা দেখে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজের দলে ভিড়িয়েছে সেই থেকে ছেলেটি তাকে খুবই সম্মান করে,এবং তার সাথেই থেকেছে, খুব তাড়াতাড়ি এআরসি বুঝতে পারে এই ছেলেটি সত্যিই তার খুব কাজে আসবে তাই সে পার্মানেন্টলি তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়, মাঝে মাঝেই নিজের সাথে নিয়ে যায়।
"হ্যালো নিকুঞ্জ?"
বলুন স্যার।
তোমাকে একজনের লোকেশন বার করতে হবে, আমি ডিটেইলস পাঠিয়ে দিয়েছি, সাথে আমাকেও কানেক্ট করে নাও আমাকে ডিরেকশন দিতে পারবে। একটু পরে নিকুঞ্জ বলে "স্যার এই নাম্বার তো বন্ধ আছে, আর বন্ধ নাম্বার ট্র্যাক করা যায় না"।
ঠিক আছে আমি আরো একটা নাম্বার পাঠাচ্ছি।
নিকুঞ্জের ইনস্ট্রাকশন মতো চলছিল এআরসি, নিকুঞ্জের কথা মতো হাইওয়ের রাস্তা ধরে চলছিল সে,
স্যার, নাম্বারটা মুভ করছে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে।
মানে?
হ্যাঁ স্যার, আপনার কাছাকাছি চলে এসেছে। একটু পরেই এআরসি দেখে একটা গাড়ি উল্টোদিক থেকে তার দিকে এগিয়ে আসছে, গাড়িটা তার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল... রকি তাকে খেয়াল করেনি, বা করলেও এড়িয়ে গেল। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় এআরসি, সে কি দেরী করে ফেললো আসতে?রকি কি অলরেডি বিদিশাকে...
স্যার... স্যার শুনছেন। ফোনে নিকুঞ্জের গলা ভেসে আসতে থাকে।
নিকুঞ্জ, যে এরিয়ায় এতক্ষণ লোকেশন দেখাচ্ছিল ওটা এখান থেকে কোনদিকে কতদূর?
বেশি দূর নয়, কিন্তু স্যার।
তুমি জায়গাটার ডিরেকশন দাও। নিকুঞ্জের কথামতো এআরসি হাইওয়ে ছেড়ে কাঁচা রাস্তায় গাড়ি ঘোরালো।
স্যার, আপনি সোজা চলতে থাকুন, ওখান থেকে কিছুটা দূরে লোকেশন ছিল।
ঠিক আছে।
পাঁচিল ঘেরা গোডাউনটা থেকে কিছুটা দূরেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে নামলো এআরসি, খুব সন্তর্পণে পাঁচিলের কাছে যায়, পাঁচিলটা প্রায় তার কাঁধ পর্যন্ত উঁচু, গেট দিয়ে ঢুকতে পারবে না এটা আর তাকে বলতে হবে না, সে একটু ঝুঁকে পাঁচিল ধরে ধরে ঢোকার জায়গা খুঁজতে থাকে, একটু পরেই মেইন গেট থেকে কিছুটা সরে এসে গোডাউনের পিছন দিকে দেখে প্রায় পাঁচিলের গা ঘেষে একটা পড়ো গাছ, কোনোমতে পাঁচিলের উপরে উঠে গাছে চড়তে পারে তাহলে ঘন পাতার আড়ালে থেকে জায়গাটা ভালো করে দেখে নিতে পারবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ প্রথমে পাঁচিলের উপর থেকে অল্প উঁকি মেরে কেউ নেই দেখে মুহূর্তের মধ্যে দুহাতে পাঁচিলের উপরে ভর দিয়ে উঠে সেখান থেকে গাছে লাফিয়ে ঘন পাতার আড়ালে লুকোলো এআরসি সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে র‌ইলো যদিও সময় বয়ে যাচ্ছে বিদিশা কি অবস্থায় আছে এখনো জানে না সে, বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না তাকে গোডাউন আর পাঁচিলের মধ্যবর্তী জমিতে বেশ কয়েকজনকে টহল দিতে দেখলো তাদের প্রত্যেকের হাতে রাইফেল, পিছন দিকে বড়ো গাছের আধিক্য বেশি,  গাছে থেকেই কোমরের পিছনে গোঁজা পিস্তলটা বার করে এআরসি তারপর ম্যাগাজিনটা খুলে বুলেট চেক করে নেয় এবার পকেট থেকে সাইলেন্সার বার করে পিস্তলের নলে লাগিয়ে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামে পা টিপে টিপে অথচ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে অপর একটা গাছের আড়ালে লুকোয় দেখে একজন ওদিকেই আসছে টহল দিতে, লোকটা এসে কয়েকসেকেণ্ড দাঁড়িয়ে আশেপাশে নজর বোলায় তারপর আবার যাওয়ার জন্য পিছনে ফেরে সঙ্গে সঙ্গে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে পিছন থেকে লোকটার মুখ একহাতে চেপে ধরে অপর হাতে কপালের পাশে কানের উপরে পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার চাপে এআরসি আস্তে আস্তে লোকটার নিথর দেহটা মাটিতে শুইয়ে এগিয়ে যায়।
সঙ্গীর আসতে দেরী দেখে একজন ওদিকে আসে সামনে নিজের সঙ্গীর লাশ দেখে চেঁচাতে যাবে এমন সময় আচমকা একটা বুলেট তার কপালের একেবারে মাঝখান ভেদ করে বেরিয়ে যায়, মাটিতে পরার আগে তাকেও ধরে ফেলে এআরসি আস্তে আস্তে তাকেও মাটিতে শুইয়ে দেয়।
এক এক করে টহল দিতে থাকা সবকটাকে শেষ করে সে, সবাইকেই যে কাছে গিয়ে শেষ করে এমন নয় ,দূর থেকেও শ্যুট করে, এআরসি যাকে বলে ক্র্যাকশট্ অর্থাৎ ওর গুলি খুব একটা ফস্কায় না, শেষ জনকে শেষ করে সবে ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় সামনে যাকে দেখে তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে, তার সামনে এক দানব দাঁড়িয়ে আছে, একে টহল দিতে দেখেনি তাই কথা জানতে পারেনি ভাগ্য ভালো লোকটা এখনো চেঁচায়নি, আরেকটা ভালো কথা ওর হাতে কোনো অস্ত্র নেই এদিকে ম্যাগাজিনের গুলি শেষ, এ দানব তাকে নতুন ম্যাগাজিন লোড করার টাইম দেবে না তাই পিস্তলটা আবার কোমরের পিছনে গুঁজে খালি হাতেই মোকাবেলা করার জন্য তৈরি হয়।
পালোয়ান নামের যে দানব এই মুহূর্তে এআরসির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে পরপর বেশ কয়েকটা ঘুষি চালালো তার চোয়াল লক্ষ্য করে কিন্তু প্রতিটা ঘুষি‌ই খুবই ক্ষিপ্রতার সাথে এড়িয়ে গেল, ঘুষিগুলোর একটাও যদি তার চোয়ালে লাগতো তাহলে নির্ঘাৎ চোয়ালের হাড় ভেঙে যেত। পরপর ঘুষিগুলো না লাগায় পালোয়ান যেন আরো রেগে গেল সে এবার এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে লাগলো, কিন্তু তার সমস্যা হচ্ছে তার চেহারা, তার গায়ে জোর অনেক বেশি কিন্তু গতি অনেক স্লথ অপরদিকে এআরসির শরীর এই দানবের তুলনায় যথেষ্ট ছোটো এবং তার রিফ্লেক্স অনেক দ্রুত, সে সবকটা ঘুষি‌ই এড়িয়ে গেল, এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ চললো, এআরসির কয়েকটা পাঞ্চ পালোয়ানের পেটে বুকে লাগলেও তেমন এফেক্ট পরলো না, উল্টে পালোয়ানের একটা ঘুষি সে এড়াতে পারলো না যদিও সে দুহাত ঠিক মুখের সামনে গার্ড করে চোয়ালটা বাঁচালো কিন্তু ঘুষির জোরের জন্য পিছনে ছিটকে পরলো, পালোয়ানটা এবার এগিয়ে এসে একটা লাথি মারতে চাইলো কিন্তু এআরসি একপাশে সরে গিয়ে লোকটার উ
ঊরুতে প্রচণ্ড আঘাত করে লোকটা কয়েকপা পিছনে পরে যায় এবার আবার ঘুষি পাকিয়ে তেড়ে এল কিন্তু এবার এআরসি ঘুষি এড়িয়ে পিছনে গিয়ে পালোয়ানের ডান পাঁজরে একটা লাথি কষালো, অন্য কেউ হলে পাঁজরে হাত দিয়ে বসে পরতো কিন্তু পালোয়ানের তেমন কিছু হলো না, সে আবার ঘুষি মারতে উদ্যত হলো কিন্তু এআরসি তার থেকে অনেক দ্রুত গতির ফাইটার, অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে এআরসি আবার ঘুষি এড়িয়ে পিছনে গিয়ে আবার ডান পাজরে পরপর কয়েকটা লাথি মারলো এবার পালোয়ানটা পাজরে হাত দিয়ে একটা হাঁটু ভাঁজ করে মাটিতে বসলো, লোকটা চেঁচাতে যাবে কিন্তু পারলো না, এমন সময় তার ব্রহ্মতালুতে একটা প্রচণ্ড আঘাত হলো এবং পর মুহূর্তেই গলায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো, কপাল থেকে ঘাম ঝেড়ে ফেললো এআরসি পিস্তলটা বার করে তাতে নতুন ম্যাগাজিন লোড করছে এমন সময় গোডাউনের ভিতরে পরপর দুটো গুলির আওয়াজ এল, আর দেরি করলো না একটা বুলেট মাটিতে পরে থাকা পালোয়ানের মাথায় লক্ষ্য করে চালিয়ে দৌড়ে ভিতরে গেল।

মৃত বাবার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছিল বিদিশা কিন্তু একটু পরেই যেন শোকে পাথর হয়ে গেল, এবার তার মাথায় পিস্তল ঠেকানো হয়েছে সে চোখদুটো বন্ধ করে, অতীনের বিদ্রুপ মেশানো কণ্ঠ শুনতে পেলো সে: কি করবো বলুন মিসেস ভট্টাচার্য? বীরেন ভট্টাচার্য হুকুম দিয়েছেন অবজ্ঞা করতে পারবো না।
লোকদুটো ট্রিগার চাপতে যাবে এমন সময় অতীন লক্ষ্য করে হটাৎ কি একটা তাদের কপালের একেবারে মাঝখান ভেদ করে যায়, আর লোকদুটো কাটা গাছের মতো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে  সে নিজের পায়ে মোজার মধ্যে রাখা পিস্তলটা খুলে আনতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের খুব কাজে মাটিতে একটা বুলেট এসে লাগে সঙ্গে সঙ্গেসে সোজা হয়ে কয়েকপা পিছিয়ে যায়, গোডাউনের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে এক অচেনা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে তার‌ই দিকে পিস্তল উঁচিয়ে, এবার সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
হটাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পরে অতীন সান্যাল "এআরসি... এআরসি" বলে আবার হাসতে থাকে, একটু পরে হাসি থামিয়ে বলে "আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে স্বয়ং এআরসি এখানে এসেছে, এই আপনি খুব অবাক হচ্ছেন না যে আমি চিনলাম কিভাবে? এটা আমার অনুমান আর আমার অনুমান যে নির্ভুল সেটা আপনিও জানেন আর আমিও জানি"।
এআরসি একবার বিদিশার দিকে একবার মৃত অনিমেষ বাবুর দিকে তাকায় যদিও তার হাতের পিস্তল অতীনের দিকে স্থির, বিদিশাও একবার এআরসির দিকে তাকায়। আবার অতীনের গলা শোনা যায় "কি করবো বলুন বীরেন ভট্টাচার্যের হুকুম ছিল, তাই পালন করতে হয়েছে"।
এআরসি আবার অতীনের দিকে তাকায় রাগী গলায় বলে "কাজটা ঠিক করেননি"
এখন কি করবেন, আমাকে গুলি করবেন?
ইচ্ছা তো সেরকমই আছে।
না, এবার বিদিশা কথা বলে, ও আমার বাবাকে খুন করার আগে যণ্ত্রনা দিয়েছে মারধর করেছে, ওকেও ওইভাবে যণ্ত্রনা দিয়ে মারো রয়, ওইভাবে মারো।
পিস্তলটা আবার পিছনে গুঁজে নেয় এআরসি দেখে অতীন বলে: হাতাহাতি লড়াই.. গুড, অনেকদিন পর কাউকে পেলাম যে আমার সাথে হাতাহাতি করতে চাইছে, আমি জানিনা বাইরে পালোয়ান সহ আমার অতগুলো লোককে কিভাবে এড়িয়ে নিঃশব্দে তুই ভিতরে এলি তবে এখান থেকে তুই আর বেঁচে ফিরতে পারবি না।
এড়াবো কিভাবে? আপনার প্রতিটা লোকের সাথেই আমার মোলাকাত হয়েছে এমনকি ওই পালোয়ানের সাথে একটু কসরৎ ও করেছি যদিও সবকটাই এখন যমের বাড়ি, আর খুব শীঘ্রই আপনিও যাবেন।
তাই নাকি তাহলে আয় আগে তোর হাতপা ভাঙবো তারপর তোর চোখের সামনে ওই বিদিশাকে মারবো, ওকেই বাঁচাতে এসেছিলি না? তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলে: বীরেন ভট্টাচার্য বলেছেন ওনার শত্রুদের শেষ করলেই উনি ওনার ভাইঝির সাথে আমার বিয়ে দেবেন, তাথৈ... আমার আর তর স‌ইছে না তাথৈ‌এর জন্য, ওকে..
কথাটা শেষ করে না কিন্তু ওটুকু শুনেই এআরসির মাথায় রাগ উঠে যায় সে দ্রুত পায়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে এগিয়ে এসে ডানহাত দিয়ে এক ঘুষি মারতে যায়, কিন্তু অতীন বা হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে তারপর ডানহাতে তার পেটে কয়েকটা সজোরে ঘুষি মারে এবং একটা লাথি, এআরসি ছিটকে কয়েকহাত পিছিয়ে পড়ে যায়, অতীন শুধু পুলিশ অফিসার নয় একসময় সে ও রকি স্টেট লেভেলে বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিল তার উপর পুলিশের ট্রেনিং কাজেই সে নিজেও একজন দক্ষ ফাইটার সেটা আর না বললেও চলে।
ঘুষি আর লাথি খেয়ে এআরসির দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে কিন্তু তাও নিজেকে সামলে নেয় আবার উঠে আক্রমণ করে কিন্তু এবারেও সে অতীনকে আঘাত করতে পারে না বরঞ্চ অতীন আবার তার আঘাতকে আটকে তাকে একটা ঘুষি মেরে ছিটকে ফেলে দেয়।
এবার বিদ্রুপের হাসি শুনতে পায় এআরসি সাথে কিছু কথা "ইসস মেয়েটাকে বাঁচাতে এলি আর ওর সামনেই মার খাচ্ছিস, জানিস শুধুমাত্র তোর জন্য মেয়েটার বাবা মারা গেল",  একথা শুনে আবার এআরসির রাগ সপ্তমে চড়ে সে উঠে আক্রমণ করতে গিয়েও করে না, থেমে যায় সে বুঝতে পারে সে ভুল করছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রফেশনাল ফাইটার এবং যথেষ্ট এক্সপার্ট, এরকম লোকেদের সাথে লড়াইতে জিততে গেলে তাকে ফোকাস করতে হবে আর তার জন্য নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আবার আওয়াজ আসে "কি রে থেমে গেলি? ভয় পেয়ে গেলি নাকি?" তারপরেই আবার বিদ্রুপের হাসির শব্দ শোনে সে, কিন্তু এবারে সে ভুল করে না,সে হাত এগিয়ে দুটো আঙ্গুল দিয়ে অতীনকে ডাকে যেন চ্যালেঞ্জ জানায়, অতীন একটু অবাক হয় কিন্তু তারপরেই একটু মুচকি হেসে এআরসির দিকে তেড়ে আসে ঘুষি মারার জন্য কিন্তু এবারে এআরসি অতীনের ঘুষিটা ঠিক সময়ে একটু সরে এড়িয়ে যায়, কিন্তু অতীনের কবজি ধরে এবং পায়ে একটা ল্যাং মারে ফলে অতীন নিজের নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে ফেলে এবং এআরসি তার কবজি টেনে ছুঁড়ে ফেলে দেয় অতীন কিছুটা দূরে গিয়ে পরে, চোখ থেকে চশমাটা খুলে পড়ে যায় তার।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ উঠে ঘুরে দাঁড়ায় এবার এগিয়ে এসে দুহাতে এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে থাকে কিন্তু এআরসি নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখটা শিল্ড করে ঘুষি গুলো আটকাতে থাকে, কিন্তু এবার অতীন হটাৎ ঘুষি চালানোর টার্গেট পালটে তার পেটে চালায়, দুসেকেন্ডের মতো দেরী হয়েছে হাতটা নামাতে ফলে ঘুষিটা আবার সজোরে এআরসির বুকের একটু নীচে লাগে সে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
কিন্তু অতীন আবার এগিয়ে এসে আগের মতো এলোপাতাড়ি ঘুষি চালাতে থাকে এবং এআরসি আবার শিল্ড করতে থাকে কিন্তু এবার এআরসি হটাৎ অতীনেরর ঘুষি ওর মুখে লাগার আগে বা হাতে একটা মোক্ষম আপার কাট পাঞ্চ মারে অতীনের থুতনিতে, অতীন কয়েকপা পিছিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।
কিন্তু আবার উঠে দ্রুত এগিয়ে এসে পা তুলে লাথি মারতে যায় কিন্তু এআরসি লাথিটা এড়িয়ে একহাতে তার পা ধরে অপর হাতের কনুই দিয়ে হাঁটুতে জোড়ে আঘাত করতে থাকে, দু-তিনটে আঘাত খাবার পরে অতীন অপর পাটা শূন্যে তুলে লাথি মারতে যায় কিন্তু এআরসি ধরে থাকা পা টা টেনে ছেড়ে দিয়ে সরে আসে, ফলে লাথিটা তার না লাগলেও অতীন মাটিতে বেকায়দায় পড়ে যায় এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
তাও উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে আসে ঘুষি মারার জন্য কিন্তু পায়ে চোট পাওয়ার জন্য অতীনের গতি কিছুটা কমে গেছে, এআরসি সহজেই ঘুষিটা এড়িয়ে যায় এবং আবার আগের মতো কবজিটা ধরে ফেলে তবে এবার ছুঁড়ে না ফেলে হাতটাকে টেনে সোজা করে ধরে কনুইয়ের জয়েন্টে জোড়ে আঘাত করে "মট" করে একটা শব্দ হয় এবং অতীন আঃ করে আর্তনাদ করে ওঠে, হাত ভেঙে গেছে।
কিন্তু তাও হার স্বীকার না করে অপর হাতটা দিয়ে ঘুষি মারতে যায়, এবার এআরসি নিজের একটা পা দিয়ে অতীনের এগিয়ে থাকা পায়ের পাতাটাকে চেপে ধরে শরীরে ঠেলা মারে এতে অতীন টাল সামলাতে পারে না পড়ে যায় কিন্তু একটা পা এআরসি মাটির সাথে চেপে ধরায় পুরো শরীরটা বেখাপ্পা হয়ে পড়ে এবং আরেকটা "মট" করে শব্দ আর অতীনের আগের থেকে জোরে আর্তনাদের শব্দে বোঝা যায় একটা পা‌ও ভাঙলো।
এবার সে আর মাটি থেকে ওঠে না ঘষটে ঘষটে গোঁগোঁ করতে করতে পিছনে সরতে থাকে, এআরসি ওর দিকে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে, কোমরের পিছন থেকে পিস্তলটা হাতে নেয় তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে ওকে ডাকে, বিদিশা উঠে ওর পাশে এলে পিস্তলটা ওর হাতে ধরিয়ে দেয়, বিদিশা অতীনকে লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করে, একসময় ক্রমাগত ট্রিগার চাপতেই থাকে পুরো ম্যাগাজিন খালি করেও তার হুঁশ হয় না সে ট্রিগার চাপতেই থাকে, যদিও সাইলেন্সার লাগানো থাকায় কোনো আওয়াজ হয় না।
Good
Like Reply
(09-10-2022, 12:06 AM)Monen2000 Wrote:
                             চতুর্দশ পর্ব

শ্মশানের পাশে নদীতে সদ্য ভস্মীভূত করা দেহাবশেষ ভাসিয়ে দিচ্ছে বিদিশা, কিন্তু তার চোখে জলের বদলে আগুন জ্বলছে, একটু দূরে ঘাটের উপরে দাঁড়িয়ে আছে এআরসি, রকির গোডাউন থেকে অনিমেষ বাবুর মৃতদেহটা নিয়ে সটান মিসেস দাশগুপ্তর হাসপাতালে গিয়েছিল, তিনি যতটা সম্ভব গোপনে ফর্মালিটি সারেন তারপর শ্মশানে এসে দেহ জ্বালানো আর এখন অস্থি বিসর্জন, যদিও এগুলো মৃতের ছেলের করার কথা কিন্তু এইমুহূর্তেয়অনিমেষ বাবুর পরিবারে একমাত্র মেয়ে বিদিশা কাছে আছে বলে সেই করলো, পুরো সময়টায় একটা কথাও বলেনি সে।
অস্থি বিসর্জন হয়ে গেলে বিদিশা জলে ডুব দেয় তারপর বাকি আচার অনুষ্ঠান সারে, এরপর এআরসিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে হনহন করে কোথাও যেতে থাকে। রয় ওরফে এআরসি তার পিছু নেয় "বিদিশা শোনো কোথায় যাচ্ছো?" কিন্তু বিদিশা উত্তরের বদলে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়, পিছনে রয় একটু দৌড়ে তার একটা হাত ধরে সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় হাতটা ছাড়িয়ে নেয় বিদিশা তারপর তেজের সঙ্গে রয়কে বলতে থাকে "কোন অধিকারে তুমি আমার হাত ধরেছো? আজ আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন শুধু তোমার জন্য, যতদিন তুমি আমার জীবনে আসোনি ততদিন সব ঠিক ছিল"।
রয় চুপ করে সব অভিযোগ মেনে নিতে থাকে, বিদিশা বলে চলে "কেন এলে তুমি আমার জীবনে? 
বিদিশা শান্ত হ‌ও আমি সব বলছি।
আমি আর তোমার কোনো কথা শুনবো না, আমি এখনই যাবো আর ওই রকি আর বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করবো। বলে বিদিশা আবার এগিয়ে যায় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই রয় তার হাতটা ধরে টেনে নেয় বলে "বিদিশা শান্ত হয়ে আমার কথা শোনো"।
কেন শুনবো তোমার কথা, কে তুমি? কখনো রয় কখনো এআরসি, কি তোমার আসল পরিচয়?"
আমি যেই হ‌ই তোমার বন্ধু।
আমি বিশ্বাস করি না, তুমিই বলতে না তোমার মধ্যে তো কোনো ইমোশন নেই, আমি বুঝতে পারছি তুমি শুধু আমাকে ইউজ করেছো, আর আজ তার পরিণাম আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে, আর এবার আমি ওদের মারবো।
হ্যাঁ আমার মধ্যে কোনো ইমোশন নেই ঝাঁঝিয়ে ওঠে রয়, তুমি যেতে চাও তবে যাও,  কি ভেবেছো তুমি বীরেন ভট্টাচার্য এখন তোমাকে স্বাগত জানাবে যে আসো বৌমা আমাকে মেরে যাও, তোমাকে দেখতেই গুলি করে মারবে।
বিদিশা এবার চুপ করে রয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, রয় বলে চলে "কি জানো তুমি আমার সম্বন্ধে? তুমি শুধু আমার বাইরেটা দেখেছো ,ভিতরটা না, মানছি যে হয়তো আমার জন্য আজ তোমার বাবা নেই কিন্তু ভেবে দেখো তুমি যেটাকে জীবন বলে মেনে নিয়েছিলে সেই জীবন কি তোমার বাবা তোমাকে দিতে চেয়েছিলেন? না, উনি নিশ্চয়ই দিনরাত তোমার জন্য কষ্ট পেতেন, আর যে কষ্টটা তুমি আজ পাচ্ছো, আমি সেটা ষোলো বছর আগে ভোগ করেছি আজ‌ও করে চলেছি, আমার মধ্যে কোনো ইমোশন নেই কারণ সেটাকে ষোলো বছর আগে শেষ করেছে ওই বীরেন ভট্টাচার্য, আমার বাবাকেও আমার চোখের সামনে গুলি করে বীরেন ভট্টাচার্য আর ওর দলের লোক, আমার চোখের সামনে আমার বাবা মারা যান তুমি তাও প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছো, আজ এখানে নির্ভয়ে তোমার বাবার সৎকার করছো কিন্তু তখন আমি প্রতিশোধের ভাবনা তো দূরের কথা বাবার অন্তিম কাজ কিভাবে শেষ করে মাকে নিয়ে সুরক্ষিত পালিয়ে যাবো সেই চিন্তা করছি কারণ তখন‌ও আমাদের পিছনে বীরেন ভট্টাচার্য আর ওর দলের লোক পাগলা কুকুরের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
কে তুমি, কি হয়েছিল তোমার সাথে? বিদিশার স্বর এখন অনেকটাই শান্ত। দুজনে গিয়ে ঘাটের নির্জন এলাকায় গিয়ে বসে তারপর রয় শুরু করে তার কাহিনী, তার অতীতের কাহিনী যেটা সে এতদিন কারো কাছে প্রকাশ করেনি ,
আমার যে দুটো নাম তুমি জানো সেগুলো নকল নয় আমার আসল নামের সাঙ্কেতিক প্রতিরূপ, আমার আসল নাম অভয় রায় চৌধুরী, আমি এই শহরেই থাকতাম আমার বাবা আর মায়ের সাথে। ওই যে জমিতে এখন বীরেন ভট্টাচার্য তার হেড অফিস খুলেছে যেখান থেকে ও এখন ওর সমস্ত লিগ্যাল- ইল্লিগ্যাল বিজনেস অপারেট করে সেটা আমাদের ছিল, খুব সুখেই আমরা তিনজন, আর্থিক স্বচ্ছলতা হয়তো তেমন ছিল না কিন্তু জীবনে সুখ ছিল, আনন্দ ছিল। ভেবেছিলাম এরকম সুখে আনন্দে সারা জীবনটা কেটে যাবে আমি মা বাবা আর...
আর?? রয় থামতেই প্রশ্নটা করে বিদিশা, তার কণ্ঠে তখন রাগের বদলে উৎসুকতা, সে বুঝতে পারলো রয় কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে রয় আবার শুরু করে,
কিন্তু আমাদের সেই আনন্দের জীবনে কুদৃষ্টি দিল বীরেন ভট্টাচার্য, তার নজর পরলো আমাদের জমিটার উপর সেখানে সে প্রোমোটিং করতে চায়, কিন্তু আমার বাবা তাকে জমি দিল না, ওই জমিটা যে শুধু আমার বাবা পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কিনেছিলেন তাই নয় ওই জমিতে আমার মা নিজের হাতে অনেক গাছ লাগিয়ে বাগান করেছিলেন ওই জমিটা আমাদের কাছে সাক্ষাৎ স্বর্গ ছিল, কিন্তু ওই জমিটা তাকে না দেওয়ায় বীরেন ভট্টাচার্য রেগে গেল, অথচ সে বাবাকে বেশি কিছু বলতে বা করতে পারছিল না কারন এলাকায় ভালো পরোপকারী মানুষ হিসেবে আমার বাবার খুব সুনাম ছিল, সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসতো, তারপর একসময় ইলেকশনে বাবাকে দাঁড় করানোর অফার করেন এলাকার নেতারা যদিও আমার বাবা বারন।করেছিলেন কিন্তু এতে বীরেন ভট্টাচার্যের আক্রোশ চরমে পৌঁছায়, সে ঠিক করে আমাদের শেষ করে দেবে, এলাকায় এমন অনেক লোক ছিল যারা পেটের দায়ে বীরেন ভট্টাচার্যের চাকরি করলেও আমার বাবার, আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন তারা বাবাকে সাবধান করেন, যদিও আমার বাবা এতটাই ভালো মনের মানুষ ছিলেন যে কেউ যে তার এত বড়ো ক্ষতি করতে চাইবে এটা বিশ্বাস করেননি, একরাতে আমার বাবা মা ঘুমিয়ে পরলেও একটা বিশেষ কারণে আমি ঘুমাইনি, গভীর রাতে হটাৎ আমার কানে কিছু আওয়াজ আছে আর সাথে একটা গন্ধ পেট্রোলের গন্ধ আর সেটা বাইরে থেকে আমাদের ঘরে ছেটানো হচ্ছে একটু পরেই আমাদের স্বর্গে আমাদের বাড়িতে আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু আগুন লাগানোর কিছু আগেই বাবার এক শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু ফোন করে আমাদের সতর্ক করে দেন ফলে আমরা আগুন লাগার একটু আগেই আমাদের বাড়ির পিছন দিকের একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাই, কিন্তু দুর্ভাগ্য কি জানো? বীরেন ভট্টাচার্যের দলে এমন একজন ছিল যে আমাদের আত্মীয় আমার পিসেমশাই তিনি জানতেন আমাদের বাড়ির পিছনের এই দরজার কথা আর তিনি বীরেন ভট্টাচার্য কে সেটার কথা বলে দেন, ফলে আমরা আগুন থেকে বেঁচে গেলেও বীরেন ভট্টাচার্যের হাত থেকে বাঁচতে পারি না, তারা বুঝতে পারে যে আমরা আগুনে মরিনি তখন তারা আমাদের তাড়া করে।
তারপর? রয় আবার একটু থামতেই প্রশ্ন করে বিদিশা, রয় আবার শুরু করে,
আমার বাবার সেই বন্ধু একটা অটো জোগাড় করে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাতে উঠে আমরা পালানোর চেষ্টা করি কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারি সেটা সম্ভব নয় কারণ পিছনে আরো দ্রুত গতির গাড়িতে ওরা তাড়া করছে, তখন বাবার সেই বন্ধু আমাদের বাঁচানোর জন্য আমাদের একজায়গায় নামিয়ে নিজে অন্য দিকে অটো নিয়ে গিয়ে বীরেন ভট্টাচার্যের লোকদের ডিস্ট্র্যাক্ট করার চেষ্টা করেন, এদিকে আমরা অন্য পথে যত দ্রুত পালাতে থাকি, কিন্তু বেশিদূর যাবার আগেই একটা অস্পষ্ট আর্তনাদ ভেসে আসে বাবার বন্ধুর মরণ আর্তনাদ। তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আবার আমাদের পিছু নেয় একটু পরেই পিছন থেকে একটা বুলেট আমার বাবার পিঠে এসে লাগে, ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি সেটা বীরেন ভট্টাচার্য চালিয়েছে, আমাদের সৌভাগ্য যে যে রাস্তায় আমরা যাচ্ছিলাম সেখানে একটু দূরেই একটা রেললাইনের ক্রসিং ছিল, আর সেখানে পাশাপাশি দুটো লাইনের একটায় একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল, আমরা মানে আমি আর মা কোনোমতে বাবাকে নিয়ে.. প্রথম লাইনটা পার করে ওটাতে উঠলাম কিন্তু ওরা লাইনটা পার করার আগেই সেই লাইনে একটা ট্রেন চলে আসে ফলে ওদের কিছুটা দেরী হয়ে যায়, এদিকে আমার বাবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রিটমেন্ট দরকার, তাই কয়েকটা স্টেশনে পার করে একটা জংশনে নামি, বাবার অবস্থা তখন আরও খারাপ অনেক রক্ত বয়ে গেছে, কোনো মতে একটা ডাক্তারের চেম্বারের সামনে পৌঁছাই, সেখানে এক লেডি ডাক্তার প্র্যাকটিস করতেন, তিনি ওই চেম্বারেই থাকা নূন্যতম সার্জারি কিট দিয়ে বাবার সার্জারি করেন, বুলেটটা বার করলেও বাবা....
বিদিশা লক্ষ্য করে রয়ের চোখ থেকে জল পড়ছে, সে সত্যিই অবাক হয় সে ভাবতেও পারে না যে এই ছেলেটা কাঁদতেও জানে, সে বলে: তারপর কি করলে?
ওই ডাক্তার মহিলা আর ওনার স্বামী আমাদের পাশে দাঁড়ান, বাবার অন্তিম কাজটা পূরণ করি, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি যে তখনও আমাদের পিছনে পাগলা কুকুর তাড়া করছে, আমার বাবা বা মা কোনোদিকেই কোনো আত্মীয় ছিল না, এক ছিল পিসি আর পিসেমশাই যারা আমাদের মারার জন্য বীরেন ভট্টাচার্যকে সাহায্য করছে,  আমার মা তখনও বাবার শোক কাটাতে পারেননি, আমি ভালো করে কাঁদতেও পারিনি কারণ তখন আমার মাথায় ঘুরছে বাবার শেষ কথা "মাকে দেখিস বাবু", তাই কোনোমতে মাকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে পালিয়ে গেলাম ওই ডাক্তার দম্পতি সাহায্য করেছিলেন, কিন্তু যাবো কোথায়? রাজ্য ছেড়েই চলে গেলাম, সেখানে গিয়ে আবার বাঁচার নতুন সংগ্ৰাম শুরু হলো ততদিনে অভয় মরে গেছে জন্ম নিয়েছে রয়... আর তার অনেক বছর পরে এআরসি।
আয়্যাম সরি, বিদিশার গলা এখন পুরো শান্ত। রয় বলে: আমি তোমাকে সত্যিই ইউজ করবো ভেবেছিলাম কিন্তু যতদিন গেল বুঝলাম তুমিও আমার মতো ওদের অত্যাচারের শিকার তখন আর পারিনি তোমাকে ইউজ করতে, আমি জানি আমাকে বিশ্বাস করা তোমার পক্ষে কঠিন কিন্তু তাও আমি বলছি তোমার প্রতিশোধ পূরণ হবে, আমি থাকবো তোমার পাশে একজন বন্ধু হয়ে, কিন্তু এখন যদি তুমি যাও তাহলে মারা পরবে, আর সেটা হলে তোমার প্রতিশোধ তো পূরণ হবেই না তোমার লয়্যার হ‌ওয়াও হবে না, তুমিই বলেছিলে না যে ওটা শুধু তোমার নয় তোমার বাবার‌ও স্বপ্ন ছিল, সেটা পূরণ করবে না?
আয়্যাম সরি রয়, আমি বুঝতে পারিনি যে.. তোমাকে দেখে কখনো বোঝা যায়নি যে তোমার...
আমার অতীত এরকম?
হ্যাঁ, কিন্তু তুমি তখন কি একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলে?
ওটা আমার নিজস্ব, ওটা আমি কাউকে বলিনি ওটা আমার নিজের‌ই থাক।

বিদিশাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই অমৃতাদেবী হামলে পড়লেন ছেলের উপর "কোথায় গিয়েছিলি তুই? আর.." এটুকু বলে বিদিশার দিকে তাকালেন।
মাসি ওকে ভিতরে নিয়ে যাও আর তোমার একটা শাড়ি দাও ওকে পরতে আমি পরে ওর জন্য ড্রেস এনে দেবো আর কিছু খেতে দাও। তারপর বিদিশার দিকে তাকিয়ে রয় বলে: যাও ভিতরে গিয়ে চেঞ্জ করে রেস্ট নাও।
বিদিশা ভিতরে চলে যেতেই মায়ের ৎজিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে পরলো। "তুমি যেটা ভাবছো সেটা একদমই নয়, ও আমার বন্ধু আমাকে অনেক কাজে হেল্প করেছে আর আজ ওর চোখের সামনে ওর বাবাকে... বাইরে থাকলে ওকেও মেরে দেবে তাই এখানে নিয়ে এসেছি" মাকে কথাটা বলেই বাইরে এসে বাগানে রাখা একটা বেতের মোড়ায় বসে, সামনে আমির।
কি হয়েছিল? জিজ্ঞেস করে আমির। একে একে সবকথা তাকে বলে রয়, শেষে বলে "যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে আমির, তুমি চাইলে বাণিজ্যনগরী ফিরে যেতে পারো"
হটাৎ একথা কেন বলছো?
বললাম যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, এবার খালি আঘাত-প্রত্যাঘাত হবে।
তাহলে তুমিও জেনে রাখো এই আমির তোমার সাথে সারাজীবন থাকবে, সব পরিস্থিতিতে থাকবে। দুজনে কিছুক্ষণ চুপ থাকে এই সময় একজন এসে বলে "দাদা, একটা ছেলে আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে"।
মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে রয় জিজ্ঞেস করে "কি নাম?"
নাম.... অমিয় বললো। নামটা শুনে মোবাইল ঘাটা বন্ধ করে সামনে তাকায় রয়।
এই ছেলেটাই বোধহয় আগে একদিন এসেছিল, একা এসেছে?
হ্যাঁ, ভাইজান।
দেখা করবে তুমি?
না।
তুমি চেনো ওকে?
হ্যাঁ।
তাহলে দেখা করে নাও।
না, আমির তুমি যাও আর ওকে বলে দাও ও যেন আর এখানে না আসে।
একথা কেন বলছো? এই বস্তির উপর বীরেন ভট্টাচার্যের নজর আছে, বিদিশা এখানে ঘনঘন আসতো তাই বিপদে পড়েছিল ও বারবার এলে ওকেও বিপদে পরতে হবে।
ঠিক আছে যাচ্ছি কিন্তু তুমি নিজে ওর সাথে দেখা করলে।
আমি পরে দেখা করে নেবো।

আজ আবার বস্তিতে ঢুকতে গিয়ে বাধা পায় অমিয়, তাথৈ বারবার বলছে যে অভয় বেঁচে আছে আর এই বস্তিতেই থাকে, কিন্তু কথাটা বিশ্বাস হয় না অমিয়‌র তাই আবার সে একাই চলে এসেছে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে আজ সে ঠিক করেছে যাকে তাথৈ অভয় বলে ভাবছে তার সাথে দেখা না করে যাবে না, এই সময় সেই আগের দিনের দেখা ছেলেটা এসে বললো: আপনি আবার কেন এসেছেন?
অমিয় বলে: আপনি জানেন আমি কেন এসেছি, আমার প্রিয় বন্ধু এখানে থাকে বলে শুনেছি আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি।
কিন্তু তিনি এখন ব্যস্ত।
প্লিজ ওনাকে একবার বলুন যে
আপনি এখান থেকে চলে যান, আর কখনো এখানে আসবেন না
কিন্তু.
কোনো কিন্তু নয়, আপনি চলে যান।
বাধ্য হয়েই অমিয় ফিরতি পথ ধরে, একটু দূরে আড়াল থেকে সবটাই দেখছিল অভয় সে স্বগোতোক্তি করে "আমাকে ক্ষমা করিস ভাই অমিয় কিন্তু এই মুহূর্তে আমি তোর সামনে যেতে পারবো না, এতে তোর‌ই বিপদ বাড়বে, আমার কাজ শেষ হলে আমি নিজে তোর কাছে যাবো।

রাতে নিজের রুমের ব্যালকনিতে বসে চিন্তা করছে তাথৈ যে এবার সে কি করবে? অমিয় জানিয়েছে তাকে ওই বস্তি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে, বলাইবাহুল্য ওকেও আর ঢুকতে দেওয়া হবে না, এদিকে ক্রমাগত মিস্টার গুপ্তকে ফোনে না পেয়ে সে ওনার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে কিছুদিন আগে এক রোড অ্যাক্সিডেন্টে ওনার মৃত্যু হয়েছে, যদিও কয়েকজন বললো মৃত্যুটা নাকি সন্দেহজনক। বাড়িতে সবার মুখ গম্ভীর, সে জানতে পেরেছে ওই অতীন সান্যাল মারা গেছে আর তার বৌদি বেপাত্তা, জ্যেঠুমণি আর তার বাপি সবসময় রেগে আছে বাড়িটায় সবসময় একটা থমথমে ভাব। সে ভাবতে থাকে কিভাবে সত্যিটা জানা যায়, একটা সত্যি সে জেনেছে এবার বাকিটা কিন্তু জানবে কার থেকে?
তাথৈ? সরমা দেবী ঘরে ঢুকলেন সাথে আরও একজন মহিলা বয়স সরমা দেবীর থেকে একটু বেশী একটু পৃথুলা এনারো গায়ের রং ফর্সা তবে সরমা দেবীর মতো নয় ইনি শেফালী ভট্টাচার্য বীরেন ভট্টাচার্যের স্ত্রী এবং বৃষ্টির মা।
আসো মা, আরে জ্যেঠিমা আসো।
কি করছিস তুই? জিজ্ঞেস করেন সরমা দেবী।
কিছুনা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না, সেগুলোই চিন্তা করছিলাম।
তুই কোনো পরীক্ষা দিচ্ছিস নাকি? প্রশ্নটা করেন শেফালী দেবী।
দিচ্ছি তবে জীবনের পরীক্ষা।
মানে।
কিছুনা তোমরা বলো, কোনো দরকার ছিল?
কেন দরকার ছাড়া আসা যায় না?
সেটা নয়, আসলে এখন হটাৎ আমার রুমে তাই..
একটা কথা জানার ছিল। বলেন শেফালী দেবী।
কি?
বৃষ্টির কি হয়েছে রে? কয়েকদিন থেকে দেখছি মেয়েটা একদম চুপ মেরে গেছে।
ও কিছুনা সামান্য ব্যাপার একটা কয়েকদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
সামান্য ব্যাপার? কিন্তু ব্যাপারটা কি?
তাথৈ বলতে ইতস্তত করছে দেখে এবার সরমা দেবী জিজ্ঞেস করেন: কি হয়েছে বৃষ্টির?
একজন ওর ইগো ওর অহংকারে আঘাত করেছে।
মানে?
তাথৈ বৃষ্টি আর অমিয়র ব্যাপারটা সব বলে এমনকি কলেজে থাকতে বৃষ্টির ওকে রিফিউজ থেকে এখন বৃষ্টির ওকে প্রপোজ আর অমিয়র রিফিউজ অব্দি।
এই ছেলেটা কেমন? সব শুনে প্রশ্ন করেন শেফালী দেবী।
যে ছেলে তোমার মেয়ের মুখের উপর তার প্রপোজাল রিফিউজ করতে পারে, যে তোমার মেয়ের মুখের উপর বলতে পারে আমি আপনার যোগ্য ন‌ই কারণ আপনি টাকা আর নিজেকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারেন না, যে বলতে পারে আপনাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছিলাম আপনি রিফিউজ করায় আমার জীবন বেঁচে গেছে সেই ছেলে কেমন ভেবে দেখো।
সত্যি আমার মেয়েটা পুরো ওর বাবা আর পিসির মতো কেন হলো কে জানে?
সত্যি জ্যেঠিমা ওর ইগো প্রচণ্ড।
ওই ছেলেটার সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবি?
কেন?
বলতাম যে আমার মেয়েটাকে যদি..
কোনো লাভ নেই, ও আমাদের পছন্দ করে না।
কেন?
বৃষ্টি আর পিসি মিলে একজনের সাথে খুব অন্যায় ব্যবহার করেছে।
তুই কি রুদ্রবাবুর ছেলের কথা বলছিস, যে তোকে..
হ্যাঁ, অভয়, অভয় ওর খুব ভালো বন্ধু ছিল।
কি অবস্থা পাপ করলো বড়োরা আর শাস্তি পাচ্ছে মেয়েদুটো।
কখনো কখনো ইচ্ছা করে এই বাড়ির সবার..
দিদি... শেফালী দেবী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সরমা দেবী আটকালেন।
তাথৈ বুঝলো তার জ্যেঠিমা কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন কিন্তু সে তখন আর পীড়াপীড়ি করলো না কারণ তার মা তাকে বলতে দেবেন না। সে জানে আজ রাতে জ্যেঠিমা একা থাকবেন জ্যেঠুমণি বলে গেছেন তিনি ফিরবেন না, সে অপেক্ষা করতে থাকে, রাতে সবাই যে যার নিজের ঘরে গেলে তাথৈ আস্তে আস্তে জ্যেঠিমার ঘরে যায়, অতো রাতে তাকে দেখে কিছুটা আশ্চর্য হন শেফালী দেবী।
কিছু বলবি তাথৈ?
হ্যাঁ, আমি কিছু জানতে চাই।
কি?
তখন তুমি কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলে সেটা কি?।
শেফালী দেবীর বুকে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়, তিনি একটা ঢোঁক গিলে কোনোমতে বলেন: ক‌ই কিছু না তো।
তাথৈ এগিয়ে এসে জ্যেঠিমার দুটোহাত শক্ত করে ধরে তারপর বলে: জ্যেঠিমা প্লিজ বলো, এই বাড়ির লোকেরা কি সত্যিই ভালো নাকি ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘোরে?
চুপ কর তাথৈ, তোর পিসি বাড়িতে আছে, সে শুনতে পেলে সর্বনাশ হবে।
তাহলে বলো।
কি?
ষোলো বছর আগে আমাকে হটাৎ করে এই শহর থেকে দূরে সরানো হলো কেন? শুধু পড়াশোনা কারণ নয় এটা আমি জানি।
শেফালী দেবী একটা বড়ো নিঃশ্বাস ফেলে বলতে থাকেন: যাতে তুই ওই ছেলেটার সাথে মেলামেশা না করতে পারিস।
আমি খবর নিয়েছি ওদের বাড়িতে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যার ফলে ওরা সবাই মারা যায়, এতে কি কারো হাত ছিল?
শেফালী দেবী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন তারপর বলেন কোনো দুর্ঘটনা হয়নি, ওটাকে দুর্ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছিল।
মানে?
রুদ্রবাবু মানে ওই ছেলেটা কি যেন নাম অভয়, ওর বাবার সাথে তোর জ্যেঠুর একটু ঝামেলা ছিল ওদের জমিটা তোর জ্যেঠু্ চাইছিলেন কিন্তু রুদ্রবাবু দিতে রাজী হননি এর সাথে এলাকার লোক তাকে বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা করে এগুলো তোর জ্যেঠুর সহ্য হয়নি তার উপরে তোর সাথে ওনার ছেলের সম্পর্ক... তোর জ্যেঠুকে তুই কি ভাবিস জানিনা কিন্তু উনি মোটেই ভালো লোক নন, কত লোকের যে সর্বনাশ করেছেন কত লোকের সর্বস্য কেড়ে নিয়েছেন তার হিসাব নেই।
তাথৈ বুঝতে পারে সেদিন কেন অভয় রেগে গিয়েছিল সে বলে: অভয়দের বাড়িতে আগুনটা তাহলে?
তোর জ্যেঠু, বাবা আর ওদের দলের লোকেরা মিলে লাগিয়েছিল, তোর পিসিও এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল, উনি‌ই প্রথম বলেন ওদের মেরে ফেলার কথা।
রাত শুয়েও তাথৈএর ঘুম আসেনা তার চোখ থেকে অবিরাম জল পড়েছে, সে বুঝতে পেরেছে অভয়ের কাছে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ তার, সে জানে অভয় তার বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো আর সেই বাবাকেই.... সে বুঝতে পারে না যে তার এখন কি করা উচিত? একবার কি অভয়ের কাছে যাবে? কিন্তু ও তো এখন দেখা করতেই চায় না, তাহলে কি করবে তাথৈ? কাঁদতে কাঁদতেই অভয়ের ছবিটা হাতে নেয় কোনো কথা বলে না শুধু ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তাথৈ ঠিক করে একবার শেষবারের মতো অভয়ের সাথে দেখা করবে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য আগের বার শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে বলে যেতে পারেনি কিন্তু এবার সে অভয়কে বলেই যাবে, তবে শহর ছেড়ে নয় পৃথিবী ছেড়ে।

বেশ কয়েকবার ফোন করেও যখন আমিরের ফোন বন্ধ পেলো তখন দুশ্চিন্তা হলো এআরসি ওরফে রয় ওরফে অভয়ের, এমন তো হবার কথা নয়, সে আমিরকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে রেখেছে যাতে কোনো অবস্থাতেই আমির ফোন বন্ধ না করে তাহলে ওর ফোন বন্ধ কেন? রাতে ঘুমিয়ে পরলেও ফোন চালু রাখার কথা তাহলে? মাথায় নানা দুশ্চিন্তা আসতে থাকে আমিরের কোনো বিপদ হয়নি তো? যতই হোক এই শহরে এখন বীরেন ভট্টাচার্যের হুকুম চলে, আর আমিরের লড়াই নয় এটা ও শুধু বন্ধুত্বের খাতিরেই এখানে থেকে গেছে এখন ওর কিছু হয়ে গেলে অভয় নিজেকে কোনোদিন‌ও ক্ষমা করতে পারবে না।
হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো, মাহমুদের ফোন এই মাহমুদ উসমানের ছোটো ভাই, কিন্তু এখন ও ফোন করছে কেন? ফোনটা কানে দেয় অভয় "বলো মাহমুদ"
বস আপনি কোথায়? মাহমুদের গলায় ভীতির ছাপ।
কেন কি হয়েছে?
স্যার আপনি এখনই।একটা জায়গায় আসতে পারবেন?
কোথায় আর কেন?
মনে হয় আমির ভাইজানের খুব বিপদ?
হোয়াট? প্রায় গর্জে ওঠে অভয়।
হ্যাঁ বস আজ একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে একটা মেয়ের সে আমাকে বলে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ওর কাছে প্রমাণ আছে, এবং আমরা যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কাজ করছি সেটা উনি জানেন, তাই প্রমাণটা আমাদের দিতে চান।
মেয়েটা কে আর আমরা যে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে আছি সেটা জানলো কিভাবে?
কে জানিনা বস তবে বললো উনিও বীরেন ভট্টাচার্যের পিছনে পরে আছেন অনেকদিন ধরে, আমাকে বললো যদি প্রমাণ নিতে চান তাহলে বসকে বলবেন এই নাম্বারে ফোন করতে।
তারপর?
তারপর আমি আমির ভাইজানকে বলি ব্যাপারটা উনি ফোন করেন, মেয়েটা টাকা চায়।
আর তোমরা টাকা নিয়ে বেরিয়ে পরো তাইতো?
মানে হ্যাঁ বস, এখানে এসে আমির ভাইজান আমাকে একটু দূরে অপেক্ষা করতে বলে নিজে একাই যান, অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু উনি ফিরলেন না।
ইউ ফুল আর তুমি এটা এতক্ষণ পরে আমাকে জানাচ্ছো? আমাকে ঠিকানটা দাও আমি আসছি আর অন্যদের বলে দিচ্ছি ওখানে পৌঁছে যেতে।
বস আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন, আমি বাকিদের ডেকে নিচ্ছি।
ঠিক আছে, যতক্ষণ না আমরা পোঁছাচ্ছি তুমি নিজের খেয়াল রাখো।
"এমন বোকামি কেন করলে আমির" স্বগোতোক্তি করে দ্রুত গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয় অভয়। মাহমুদের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে দেখে সেখানে একটা পুরনো কারখানা আছে, কিন্তু সে আর কাউকে দেখতে পারে না তবে কি এখনো কেউ এসে পৌঁছায়নি? মাহমুদ কোথায়? ওকেও কি ধরে নিয়েছে নাকি আমির আর মাহমুদকে.. চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে অভয়ের সে দ্রুত পায়ে কারখানার ভিতরে ঢুকে যায় কিন্তু সেখানেও  অন্ধকার শুধু একটু দূরে একটা ঘরে একটা নাইট বাল্ব জ্বলছে বলে মনে হলো অভয় তাড়াতাড়ি ওই ঘরে যায় কিন্তু সেখানেও ফাঁকা, না ফাঁকা নয় সেখানে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে মাহমুদ, তাড়াতাড়ি সে মাহমুদের বাধন খুলে তাকে মুক্ত করে "মাহমুদ মাহমুদ, তুমি ঠিক আছো? আমির কোথায়?"
বস্ ভাইজানকে ওরা অন্য ঘরে আটকে রেখেছে মারধর করছে।
কোথায়?
আসুন। বলে কোনোমতে উঠে দাঁড়ায় মাহমুদ তারপর পথ দেখিয়ে নিয়ে চলে, কিছুদূর গিয়ে একটা বড়ো ফাঁকা ঘরে পৌঁছায় ওরা, হটাৎ পরপর অনেককটা বড়ো লাইট জ্বলে ওঠে তার কয়েকটা সোজা অভয়ের মুখ লক্ষ্য করে এই অপ্রত্যাশিত আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায় হখত দিয়ে মুখটা আড়াল করে অভয় এবার হটাৎ তার ষষ্ঠেন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠে তাকে বিপদের ইঙ্গিত দেয় সঙ্গে সঙ্গে সে কোমরের পিছনে রাখা পিস্তলটা নিতে চায় কিন্তু পারে না সেই মুহূর্তে ঘাড়ের কাছে একটা সুই ফোটার মতো ইঞ্জেকশন ফোঁটে কোনোমতে ঘাড় ঘুরিয়ে বোঝে শুধু আমির নয় সে নিজেও বোকামি করে ফেলেছে, একটা হাত দিয়ে মাহমুদের গলা টিপে ধরতে যায় কিন্তু তখনই পিছন দিকে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় দুচোখে অন্ধকার নেমে আসে তারপর আর কিছু মনে নেই।

রয়ের বাড়ি থেকে ফিরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ঢোকার আগেই থামতে হয় আমিরকে শহরের বিলাশবহুল এই অ্যাপার্টমেন্টটা তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে এখান থেকে কিছুটা দূরেই বীরেন ভট্টাচার্যের বাড়ি এখানে বীরেন বাবুর দলের লোকজন যেমন থাকে তেমনি থাকে তাদের দলের লোকজন। গেটের সামনেই তাকে গাড়ি থামাতে হয় কারণ উসমান এসে দাঁড়িয়েছে, আমির গাড়ি থেকে নামে
কি ব্যাপার উসমান, এখন এখানে?
ভাইজান একটা খবর ছিল আপনাকে ফোন করছিলাম কিন্তু নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলাম না তাই নিজে চলে আসতে হলো।
কি খবর?
আমার ভাই মাহমুদ খবরটা এনেছে, ওর সাথে নাকি একজন মেয়ে দেখা করেছে যার কাছে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে, কিন্তু উনি শুধু আমাদের বসকেই দেবেন এদিকে আপনি তো জানেন আমি বসকে একটু ভয় পাই তাই আপনাকে জানালাম।
মেয়েটা কে?
তা জানিনা মেয়েটা পরিচয় দেয়নি, সে বলেছে যদি প্রমাণ নিতে চায় তাহলে যেন গিয়ে দেখা করে।
কি প্রমাণ?
একটা ভিডিও আছে নাকি।
আমির ফোন বার করেছে দেখে উসমান জিজ্ঞেস করে: বসকে ফোন করছেন?
হ্যাঁ।
ভাইজান যদি কিছু মনে না করেন আমি একটা কথা বলি।
বলো।
ভাইজান আগে চলুন আমরা গিয়ে প্রমাণটা হাতিয়ে নি‌ই তারপর নাহয় সোজা বসের ওখানে যাবো, দেরী করলে যদি ওই মেয়েটা হাতছাড়া হয়ে যায় বা ধরুন বীরেন ভট্টাচার্য জানতে পেরে গেল তখন তো ওই মেয়েটার জীবন ডেঞ্জার হয়ে যাবে।
আমির একবার উসমানের দিকে তাকায় একটু দোনোমনো করে, রয়কে না জানিয়ে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? শেষমেশ বলে: ঠিক আছে চলো গাড়িতে বসো।
তুমি ঠিক জানো মেয়েটা কোথায় আছে? জিজ্ঞেস করে আমির।
মাহমুদ মেয়েটার পিছু নিয়ে দেখে এসেছে, আপনি চলুন।
গাড়ি চালাতে চালাতে আমিরের ফোনে টুং করে ম্যাসেজ ঢোকে, স্টিয়ারিং এ একটা হাত রেখে অপর হাতে মোবাইলটা নিয়ে মেসেজটা দেখে তার দলের বশিরের ম্যাসেজ "ভাইজান সাবধানে থাকুন উসমান আর মাহমুদ গদ্দারি করেছে", ম্যাসেজটা পড়ে আমির পাশে বসা উসমানের দিকে তাকায় সেও সোজা আমিরের দিকে তাকিয়ে আছে কয়েকসেকেণ্ড তারপর হটাৎ চকিতে উসমান কোমরে গোঁজা একটা ছুরি বার করে আমিরকে আঘাত করতে যায় আর আমির বাহাতের কনুই দিয়ে উসমানকে আঘাত করে কিন্তু এর ফলে স্টিয়ারিং এ আমিরের নিয়ণ্ত্রন হারিয়ে যায় গাড়িটা রাস্তার পাশে কেদরে গিয়ে একটা গাছে ধাক্কা মারে দুজনেই সামনে হুমড়ি খেয়ে পরে।
উসমানের হাত থেকে ছুরিটা গাড়িতে নীচে পরে যায়, আমির এই সুযোগে আরো একটা মোক্ষম ঘুষি মারে উসমানের চোয়ালে সে অচেতন হয়ে যায়, আমার এবার গাড়িটা চালানোর চেষ্টা করে কিন্তু বোঝে গাছে ধাক্কা খেয়ে কিছু একটা খারাপ হয়েছে এ গাড়ি এখন চলবে না, সে গাড়ি থেকে নেমে আসে, তার নিজের মাথায় চোট লেগেছে, বুকেও লেগেছে কিন্তু এখন এসব ভাবার সময় নেই তাড়াতাড়ি আবার গাড়ি থেকে ফোনটা আনতে গিয়ে পায়না, নীচে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই ফোনটা হাতে ঠেকে সেটা নিয়ে বেরিয়ে আসে, রয়কে জানাতে হবে তাড়াতাড়ি রয়কে ফোন করতে গিয়ে থেমে যায় কারণ তখনই আরও একটা গাড়ি এসে থামে এবং সেটা থেকে যারা নামে তারা যে তার বন্ধু নয় এটা দেখেই বুঝতে পারে, আমির উল্টোদিকে দৌড়াতে শুরু করে কিন্তু বেশীদূর যেতে পারে না ধরা পরে যায়, লোকগুলো এবার হামলে পড়ে, আমির একাই ওদের সাথে লড়ার চেষ্টা করে কিন্তু তারা সংখ্যায় অনেক তাই বেশীক্ষণ যুঝতে পারে না আচমকা চোয়ালে একটা মোক্ষম ঘুষি খেয়ে ছিটকে পড়ে, এবার লোকগুলো তার উপর লাথির বর্ষণ করতে থাকে।
একটু পরে চারজন লোক তার দুটো হাত ধরে টেনে দাঁড় করায়, সে দেখে ইতিমধ্যে উসমানের জ্ঞান ফিরেছে, সে মুচকি হেসে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, আমির একটু থুতু ফেলে ঘৃণাভরে বলে: উসমান গদ্দার।
কি করবো ভাইজান? বাইরের শহর থেকে এসে আমাদের উপর হুকুম চালাবে এটা কতদিন সহ্য করবো আর তাছাড়া..
তাছাড়া?
সামনে ইলেকশন বীরেন বাবু নিশ্চিত জিতবেন এবং এবার উনি‌ই সিএম হচ্ছেন, উনি কথা দিয়েছেন আমাকে আর আমার ভাইকে ওনার ক্যাবিনেটে কোনো না কোনো পদ দেবেন বলেছেন।
আর তোরা বোকার মতো ওনার কথায় বিশ্বাস করলি? একটু ব্যাঙ্গাত্মক হাসি হাসে আমির, এই হাসিতে উসমানের মুখটা গম্ভীর হয়ে যায় সে এগিয়ে এসে আমিরের তলপেটে পরপর কয়েকটা ঘুষি মারে, আর্তনাদ করে ওঠে আমির।
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে আছিস তবুও তেজ কমেনা তোর?
আমিরের মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখা দেয়, তারপর আবার সে বলে: মেরে দে আমাকে কিন্তু তারপর রয় তোদের কি অবস্থা করবে তোরা ভাবতেও পারছিস না।
রয়... তোকে খুব ভালোবাসে না?
নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসে।
সেইজন্যই তোর বিপদের কথা শুনে তোকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই বীরেন বাবুর জালে ধরা পড়বে, 
কথাটা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় আমির, উসমান আবার বলে: ঠিকই শুনছিস তুই আমার ভাই মাহমুদ ওকে তোর বিপদের কথা জানাবে তারপর ওকে নিয়ে সোজা বীরেন বাবুর হাতে তুলে দেবে তারপর যা করার উনি করবেন।
আমির হিংস্র জন্তুর মতো ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়, ওর এই প্রচেষ্টা দেখে উসমান ও বাকি লোকগুলো হাসতে থাকে।
"গদ্দার, নেমকহারাম" আমির ফুঁসতে থাকে রাগে ঘেন্নায়, কিন্তু বেশীক্ষণ নয় আবার তলপেটে কয়েকটা ঘুষি খেয়ে গোঙাতে থাকে।
আচ্ছা ওর নাম কি সত্যিই রয়? কারণ বীরেন বাবু বলছিলেন ওর নাম এআরসি?
আমির চুপ করে থাকে।
বলবি না? ঠিক আছে। যাক অনেক সময় দিয়েছি তোকে এবার তোকে শেষ করতে হবে আরও অনেক কাজ আছে ,বস্তি উচ্ছেদ করতে হবে।
ওই বস্তির একটা লোকের গায়েও যদি আঁচড়‌ও পরে তাহলে তোকে আমি ছাড়বো না উসমান।
তাই বুঝি? কিন্তু তুই সেটা করবি কিভাবে? তোকে তো এখানেই মেরে ফেলে যাবো। এবার উসমান পাশের একজনের হাত থেকে পিস্তলটা নেয় তারপর আমিরের বুকের দিকে তাক করে, কিন্তু তবুও আমির ঘৃণাভরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মনে মনে বলতে থাকে "আমাকে ক্ষমা কোরো রয়, আমি তোমার হেফাজত করতে পারলাম না, আমি আম্মির হেফাজত করতে পারলাম না"। হটাৎ গুলি চলার কানফাটানো আওয়াজ হয়, প্রথমে একটা তারপর একসাথে পরপর অনেকগুলো।

গভীর জল থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসার মতো অচেতনতার গভীর অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে চেতনার আলোয় ফিরছিল অভয়, ধীরে ধীরে তার জ্ঞান ফিরলো, চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্ৰত হলো তবুও তাড়াহুড়ো না করে যেভাবে আছে সেইভাবেই র‌ইলো সে, সব ঘটনা একে একে মনে পরলো, বোঝার চেষ্টা করলো বর্তমানে কোথায় আছে সে, কিভাবে আছে, তার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? আরও একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো আমির কোথায়? কি হয়েছে ওর, ওকে কি এরা মেরে ফেলেছে?
কোথায় আছে সে বোঝা মুশকিল, কিন্তু খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে আছে সেটা বুঝতে পারলো, হাত পা চারটে শক্ত দড়ি দিয়ে বাধা আছে, নড়ার উপায় নেই তার উপরে একটু নড়ার চেষ্টা করতেই অনুভব করলো পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা,অভয় বুঝলো অজ্ঞান অবস্থায় তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করলো সে এক বিশেষ সাধনা বা মেডিটেশনে লিপ্ত হলো ওই বন্দী অবস্থাতেই।
তার গুরু শেখর রাও তাকে মার্শাল আর্টের বিভিন্ন টেকনিকের সাথে একটি বিশেষ গুপ্ত বিদ্যা শিখিয়েছিলেন নিজের মধ্যেই নিজের আরো এক বিকল্প সত্তাকে জাগ্ৰত করার, এই বিশেষ বিদ্যাটি শেখর রাও শিখেছিলেন এক পাহাড়ি উপজাতির লোকের থেকে, এই বিদ্যাটির ফলে দেহ ও মনের শক্তিকে একত্রিত করে তাদের চেতনাকে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়, তখন দেহের আঘাত যত বড়োই হোক সেটা আহত করে না, শেখর রাও নিজে একজন কম্যাণ্ডো প্লাস এজেন্ট ছিলেন অসংখ্য বার তাকে শত্রুর হাতে আটকা পরে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তখন এই বিশেষ বিদ্যাটির সাহায্যে তিনি আঘাত সহ্য করে নিতেন। পরবর্তীকালে তিনি এই বিদ্যাটি সযত্নে শেখান তার যোগ্যতম শিষ্য অভয়কে যদিও এটা এক দুদিনের ব্যাপার নয় দিনের পর দিন অভ্যাস করতে হয়, সাধনা করে যেতে হয় তবে আয়ত্তে আসে। আহমেদ ভাইয়ের দলে থাকার সময় কয়েকবার তাকে এই বিদ্যা প্রয়োগ করতে হয়েছে আর আজ আবার করতে হবে, আঘাত টা সহ্য করতে হবে
হটাৎ মুখে জলের ঝাপটা এসে লাগে অভয়ের, ধীরে ধীরে চোখ খোলে।সামনে কয়েকজন গুণ্ডা প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য, দুপাশে একটু পিছনে রকি আর ধীরেন ভট্টাচার্য, বীরেন বাবু তার কাছে এগিয়ে আসেন "অবশেষে আমাদের দেখা হলো, মিস্টার এআরসি, দেখুন আপনার শহরে আপনি দেখা করতে আসেননি কিন্তু আমার শহরে আমি এসেছি"।

বি দ্র: দুটো আপডেট দিলাম আশা করছি সবার ভালো লাগবে। ভালো লাগলে সবাই লাইক এবং রেপু দেবেন এই আশা রাখি আর খারাপ ল গলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Good
Like Reply
(18-10-2022, 12:19 AM)Monen2000 Wrote:
                         পঞ্চদশ পর্ব

স্বয়ং বীরেন ভট্টাচার্য যে। কোনোমতে কথা বলে অভয়।
হুমম, আমাকে আসতেই হলো ,কিছু কথা জানার আছে।
আমাকে মেরে ফেল এরকম সুযোগ বারবার পাবি না,
মেরেই ফেলতাম কিন্তু তারপর ভাবলাম বাণিজ্যনগরীতে তুই আর তোর লোকেরা আমার সাথে যা করেছিস সেটার প্রতিশোধ না নিয়ে এত সহজে মারবো কেন?
অভয়ের ঠোঁটে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে ওঠে সে বলে: আমাকে মেরে ফেল আমি যদি এখান থেকে বেঁচে বেরোতে পারি তাহলে তোকে বাঁচতে দেবো না।
তোর মনে হয় আমি তোকে এখান থেকে বেঁচে বেরোতে দেবো? আচ্ছা একটা কথা বলতো।
কি কথা?
আমার পিছনে পরলি কেন? শুধুমাত্র বাণিজ্যনগরীতে নিজের ব্যাবসা ছড়াতে চেয়েছি তাই?
অভয় উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছে দেখে আবার জিজ্ঞেস করেন প্রশ্নটা কিন্তু তাও অভয় চুপ করে থাকে।
বলবিনা? আচ্ছা অন্য প্রশ্ন করছি আমার সমস্ত টাকা তুই নিয়েছিস আমি জানি? কোথায় টাকাগুলো?
বিলিয়ে দিয়েছি।
কাদের?
অনেকেই আছে যাদের তুই সর্বনাশ করেছিস।
শিউলী কোথায়?
তোর নাগালের বাইরে।
কোথায়?
অভয় এবার চুপ করে যায়। বীরেন ভট্টাচার্য এবার একহাতে অভয়ের লম্বা চুল টেনে ধরেন "বল কোথায় আছে আমার টাকা, বল"
বললাম তো বিলিয়ে দিয়েছি।
ওত টাকা তুই বিলিয়ে দিয়েছিস এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
সেটা তোর ব্যাপার।
শিউলীকে কোথায় রেখেছিস?
অভয় আবার চুপ হয়ে যায় দেখে বীরেন বাবু বলেন: বলবিনা। আচ্ছা সত্যি বলতো তুই কে?
আমার নাম তো জানিস "এআরসি"
ওটা তো আসল নয়, তোর আসল নাম কি?
আবার অভয় চুপ করে যায়।
এটাও বলবিনা বেশ তোর ইচ্ছা,এবার বীরেন বাবু একজনের হাত থেকে রবারের চ‌ওড়া শক্ত অথচ নমনীয় লম্বা একটা বেল্টের মতো জিনিস হাতে তুলে নেন বোঝাই যায় এগুলো দিয়েই এতক্ষণ ওরা অভয়কে মেরেছে "তবে এটা জেনে রাখ তোকে এখনই মারবো না আরও অনেক হিসাব বাকি আছে আগে তোর মুখ থেকে শিউলীর ঠিকানা আর আমার টাকার হদিস বার করবো তারপর তিলে তিলে মারবো" বলে ওই বেল্ট দিয়ে অভয়কে মারতে শুরু করেন, কিছুক্ষণ পর থেমে বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস ফেলতে থাকেন।
অভয় বিদ্রুপের স্বরে বলে: ভুল করছিস, মেরে ফেল আমাকে। কথাটা বলার সাথেই চোয়াল একটা ঘুষি খেলো অভয় আর ঘুষিটা মেরেছে রকি। এবার রকির পিছনে মাহমুদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে একটা প্রশ্ন করে অভয় "কেন এরকম করলে মাহমুদ, কেন বিশ্বাসঘাতকতা করলে?"
মাহমুদ হেসে বলে "সেটা না জানলেও চলবে"
আমির কোথায় মাহমুদ?
বডিটা নিয়ে উসমান ভাইজান কি করেছে বলা মুশকিল।
দোয়া করো আমি যেন এখান থেকে বেঁচে বেরোতে না পারি, আর যদি পারি তাহলে বীরেন ভট্টাচার্যের আগে তোমাদের দুই ভাইকে মারবো। কথাটা বলার সাথে সাথে পেটে দুটো ঘুষি আছড়ে পরে তারপর রকির গলা শুনতে পায়: মামা বলোতো এটাকে এখানেই খতম করে দিচ্ছি।
সবুড় কর রকি এত তাড়া কিসের, আগে আমার অপমানের জ্বালাটা নেভাই।
আবার বিদ্রুপের হাসি শোনা যায় অভয়ের মুখ থেকে সাথে কিছু কথা "ওই অপেক্ষায় থাকিস না বীরেন ভট্টাচার্য, তাহলে তোর জীবন নিভে যাবে"।
রকি এবার পিস্তল বার করে কিন্তু এবারও বীরেন বাবু তাকে নিরস্ত করেন,তারপর কয়েকজনকে আদেশ দেন "একে সামলে রাখবি যেন পালাতে না পারে, তোরা এর খাতিরযত্ন করতে থাক, কিন্তু দেখিস মেরে ফেলিস না" তারপর অভয়ের দিকে ফিরে বলেন "আমি আসছি বস্তিটা দখল করতে হবে, এতদিন তুই আটকে রেখেছিলি, এখন তুইও ওখানে নেই আর তোর সেই বিশ্বস্ত কুকুর টাও নেই তাই আমাকে আটকানোর কেউ নেই"।
কথাটা শুনেই চমকে ওঠে অভয় ওখানে মা আছে, এই লোকটা মাকে দেখতে পেলে তাকে ছাড়বে না কিন্তু এইমুহূর্তে সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না, কোনোমতে যদি হাতদুটো মুক্ত করতে পারতো, যদিও এই শহরে আসার সাথে সাথেই মায়ের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছে ওখানে বাণিজ্যনগরী থেকে আনা নিজের অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক আছে যার কথা সে আর আমির ছাড়া কেউ জানেনা তাদের কাজ সাধারণ ভাবে বসবাস করা কিন্তু যদি কখনো প্রয়োজনে হয় তাহলে তৎক্ষণাৎ মাকে নিয়ে বস্তি ছেড়ে চলে যাবে এইরকমই হুকুম দেওয়া আছে আর অভয় জানে ওই লোকগুলো তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। বীরেন বাবু বলে চলেন: ওরা এতদিন আমাকে জ্বালিয়েছে আজ আমি ওদের পুরো বস্তি জ্বালিয়ে দেবো"।
বীরেন ভট্টাচার্য... একটা শান্ত অথচ দৃঢ় স্বর শোনা যায় অভয়ের মুখ থেকে যা করার কর কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রাখিস না।
চিন্তা করিস না, বস্তি দখল করে এসে তোকে মারবো ততক্ষণ আমার লোকেরা তোর খাতিরযত্ন করবে। বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বীরেন বাবু আর তার পিছনে রকি ও ধীরেন বাবু, যাওয়ার আগে ধীরেন বাবু অভয়ের কাছে এসে তাকে বললেন: কে তুই? তোকে আমার ভীষণ চেনা চেনা লাগছে।
আপনার দাদা ভুল করলেন আমাকে বাঁচিয়ে রেখে, চিন্তা নেই কথা দিচ্ছি যেদিন আমার পরিচয় পাবেন সেদিন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে।
তার আগে আমি তোকে শেষ করবো।
ধীরেন... বীরেন বাবুর ডাক শোনা যায়, ধীরেন বাবু অভয়কে ছেড়ে বেরিয়ে যান।
দাদা ওকে ছেড়ে দিয়ে ভুল করছো।
কে বললো ওকে ছেড়ে দেবো, আগে শিউলীর হদিস আর এটা জানি আমার টাকা কার কার কাছে রেখেছে তারপর ওকে মেরে ফেলতে কতক্ষণ।
ওর মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে কার সাথে যেন মিল আছে।
হুমম এটা তুই ঠিক বলেছিস, আমারও সেটাই মনে হচ্ছিল, ঠিক আছে বস্তিতে যে বাড়িতে ও থাকতো সেখানে কিছু না কিছু ঠিক জানা যাবে।
বীরেন ভট্টাচার্য আর তার সাথের লোকজন ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে অভয় একটু ধাতস্থ হয়ে ভালো করে চেয়ে দেখে ঘরে এখন টোটাল চারজন লোক আর চারজন‌ই পুরো গুণ্ডা প্রকৃতির, ওরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে অভয়ের জিনিসগুলো নিয়ে।
একজন বলে ঘড়িটা নিশ্চয়ই খুব দামী।
হ্যাঁ, মোবাইলটাও।
জুতো জোড়া দেখো, দামি তো বটেই বিদেশি কোম্পানির মনে হচ্ছে।
অভয় ওদের উদ্দেশ্যে বলে: দেখে কি লাভ? বীরেন ভট্টাচার্য ওগুলো কোনোদিন‌ও তোমাদের দেবে না, কিন্তু আমি দিতে পারি।
লোকগুলো এবার একসাথে ওর দিকে তাকায়, একজন বলে: তোর কি মনে হয় আমাদের লোভ দেখালে তোকে যেতে দেবো?
আমি শুধু সত্যিটা বললাম আর সেটা তোমরাও জানো।
তার দরকার নেই তোকে মারার পরে এগুলোই আমরা ভাগ করে নেবো।
ওগুলো আমি এখান থেকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো।
তোর এখনো মনে হয় তুই এখান থেকে পালাতে পারবি?
সেটা দেখতেই পারবে।
তবে রে। বলে লোকগুলো আবার অভয়ের জিনিসগুলো রেখে ঘরের এক কোনে রাখা কয়েকটা নীরেট রবারের ডাণ্ডা হাতে নেয়, অভয় আবার চোখ বন্ধ করে মেডিটেশনে ডুবে যেতে থাকে, জামাটা অনেক আগেই খুলে ফেলা হয়েছে গায়ের গেঞ্জিটাও আগের প্রহারের পরে অক্ষত নেই সেটাও গায়ে নেই, শুধু জাঙ্গিয়া পরে আছে সে, খালি গায়ে পিঠে বুকে পাঁজরের উপর একের পর এক আঘাত পরতে থাকে একটা সময় আবার সে অচেতনতার অন্ধকারে তলিয়ে যায়।

আমাকে ক্ষমা কোরো রয়, আমি তোমার হেফাজত করতে পারলাম না, আমি আম্মির হেফাজত করতে পারলাম না"। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছে আমির, রয় তাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখে ভালোবাসে তার আম্মিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে আর এখন সে রয়ের আম্মিকে বাঁচাতে পারছে না, ওই বস্তিতে যদিও আম্মির হেফাজতের জন্য লোক আছে কিন্তু তারা কি সময় মতো আম্মিকে নিয়ে বেরোতে পারবে? আমির আর ভাবতে পারে না সে চোখ বন্ধ করে, হটাৎ গুলি চলার কানফাটানো আওয়াজ হয়, প্রথমে একটা তারপর একসাথে পরপর অনেকগুলো, আমির অনুভব করে যারা তার হাত ধরে রেখেছিল তারা মাটিতে পরে গেল আর উসমান ও আরো কয়েকজন পালাচ্ছে, আমিরের পিছন থেকে কেউ বা কারা ওদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে।
আমির পিছনে ফিরে তাকায় দেখে বশির ও আরও কয়েকজন উসমান আর তার দলের উপর আক্রমণ করেছে, এবার বশির আমিরের কাছে আসে "ভাইজান আপনি ঠিক আছেন?" তারপর বাকিদের উদ্দেশ্যে হুকুম দেয় "এই ওদের পিছু নে সবকটাকে শেষ করবো"।
আমির ওদের থামায়: এখন দরকার নেই বশির কিন্তু.. কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় সে তারপর একটু চুপ থেকে বলে তুমি কিভাবে জানলে যে উসমান গদ্দারি করেছে?
ভাইজান ওর উপর অনেকদিন থেকেই আমার নজর ছিল, কিন্তু প্রমাণ পাইনি।
এখন কি এমন প্রমাণ পেয়েছো?
আপনি বলেছিলেন মনে আছে যে বীরেন ভট্টাচার্যের কাছাকাছি থাকবে এমন একজন ফিট করতে?
হ্যাঁ।
সেরকম লোক ছিল সেই বলেছে যে ইদানিং বেশ কয়েকদিন ধরে উসমান আর ওর ভাই মাহমুদ ঘনঘন বীরেন ভট্টাচার্যের সাথে দেখা করছে আগে যেত না এখন কয়েকদিন ধরে যাচ্ছে দীর্ঘক্ষণ কথা বলছে, যদিও কি কথা হতো সেটা সে জানতে পারেনি।
তারপর?
তারপর আজ সে আমাকে জানায় বীরেন ভট্টাচার্য ভয়ংকর কিছু প্ল্যান করেছে তখনই আমি আপনার ওখানে যাই কিন্তু আমি পৌঁছনোর আগেই আপনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান‌
তখনই তুমি আমাদের পিছু নাও এবং আমাকে ম্যাসেজ করো।
না, আমি আপনার অ্যাপার্টমেন্টের সিকিউরিটি র সাথে কথা বলি, সেই বলে আপনি এই কিছুক্ষণ আগে একজনের সাথে বেরিয়ে গেছেন, আমি বুঝতে পারি সে কে তবুও উসমানের ছবি দেখিয়ে শিওর হ‌ই।
তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কিভাবে?
আমি সিকিউরিটি কে জিজ্ঞেস করে জেনে নি‌ই আপনি কোনদিকে গেছেন, তারপর ওইদিকে র‌ওনা দি‌ই ভাগ্য ভালো রাস্তাতেই আপনাদের পেয়ে যাই, নাহলে কোথায় নিয়ে যেতো বলা মুশকিল।
ম্যাসেজটা যে ওকে নিয়ে ছিল সেটা কোনোভাবে ও বুঝতে পারে, কিন্তু তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি ঠিক টাইমে না এলে..
আমি ট্রাফিক সিগন্যালে একটু আটকে পরি তারপর আবার একটা লরি আমাদের সামনে অনেকক্ষণ থাকায় পিছিয়ে পড়ি ,তারপর রাস্তায় আপনার গাড়িটা গাছের সাথে ধাক্কা লেগে থাকতে দেখি তখনই বুঝি আপনি কাছাকাছি কোথাও আছেন তারপর খুঁজতে খুঁজতে চলে আসি ইস যদি আরেকটু আগে আসতে পারতাম  তাহলে আপনাকে এতটা কষ্ট পেতে হতো না।
যাইহোক বশির এখন তাড়াতাড়ি চলো বস্তিতে হামলা হবে তার আগে আমাদের ওখানে গিয়ে বসকে সব জানাতে হবে,আমাদের ওখানের লোকদের বাঁচাতে হবে আর আরো একজনকে বাঁচাতে হবে তাড়াতাড়ি চলো।
কিন্তু ভাইজান এইমুহূর্তে আপনার চোট লেগেছে আগে ডাক্তারের কাছে চলুন।
তার সময় নেই তাড়াতাড়ি চলো।
গাড়িতে উঠেই আমির বশিরের কাছে ফোন চায় ওর ফোনটা উসমান ভেঙে দিয়েছে, ফোন নিয়ে সে রয়কে ফোন করে কিন্তু এখন রয়ের ফোন সুইচড অফ, আমিরের দুশ্চিন্তা শতগুণ বেড়ে যায়, একটু পরেই তারা বস্তিতে পৌঁছায় তখন সেখানে রীতিমতো ফায়ারিং চলছে, এই এলাকায় আগে থেকেই পুলিশের লোকের ঢোকা বারণ আছে তার উপর বীরেন ভট্টাচার্য নিজের প্রভাব খাটিয়ে আজ রাতে এদিকে কোনো অবস্থাতেই পুলিশের না আসার ব্যাপারটা আরো পোক্ত ও সুনিশ্চিত করেছেন তাই দুপক্ষই নিশ্চিন্তে গুলি চালাচ্ছে, যদিও বীরেন ভট্টাচার্য উপস্থিত নেই কিন্তু জগা রকি সহ বীরেন ভট্টাচার্যের দলের বেশ কয়েকজন বড়ো বড়ো মাথা আছে সাথে আরও কিছু লোক।
বীরেন ভট্টাচার্য ভেবেছিলেন এআরসি আর আমিরের অনুপস্থিতিতে বস্তিতে তার দলের লোকদের আটকানো তো দূরের কথা সামনে আসতেও কেউ সাহস পাবে না, উসমান ও মাহমুদের সাহায্যে খুব সহজেই এখানকার দখল নিতে পারবেন কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টো বশির আগেই এখানের কয়েকজনকে জানিয়ে দিয়েজিল যে উসমান আর মাহমুদ গদ্দারি করেছে তাই মাহমুদকে আসতে দেখেই এলাকার লোক আটকে দেয় ফলে দুপক্ষে ফায়ারিং শুরু হয়ে যায়।
মাহমুদ একপ্রকার নিশ্চিত ছিল যে তার দাদা আমিরকে খতম করে দিয়েছে তাই সে নিশ্চিন্ত মনে সাহসের সাথে বস্তিতে ঢুকে পরেছিল কিন্তু হঠাৎ করেই আমিরকে আসতে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো, বস্তির দিক থেকে তাদের উপর ফায়ারিং তো হচ্ছিলোই এখন পিছন থেকেও আমির বশিররা গুলি চালাতে লাগলো যদিও লড়াইটা একেবারে খোলা মাঠে হচ্ছিল না পুরো বস্তিটা অনেকটা এলাকা জুড়ে এবং তার মধ্যে অসংখ্য অলিগলি আছে, সেখানেই প্রায় প্রতি গলিতে কারো না কারো লাশ পড়ে আছে বা কোথাও কেউ আহত হয়ে গোঙাচ্ছে।
বস্তিটা এবং এখানকার অলিগলি বশির আর মাহমুদের দলের লোক এবং বস্তির বাসিন্দারা খুব ভালো করে চেনে আমির‌ও এতদিন ঘুরে ভালোই চিনে গেছে কিন্তু রকি জগা আর ওদের নিজস্ব দলের লোকেরা ততটা ভালো চেনেনা তার উপরে রাতের বেলা, ফলে তাদের লুকোনোর জায়গা র‌ইলো না এবং যেখানেই যায় বা লুকোতে চেষ্টা করে সামনে বিপক্ষের লোক তাদের খুঁজে পায়, একে একে তারা মারা মরতে লাগলো মাহমুদ ও বুঝলো এখানে সে আর বেশীক্ষণ থাকতে পারবে না থাকলে মারা পড়বে ফলে সে পালাতে বাধ্য হলো অপরদিকে রকি জগা এখনো বেঁচে আছে বটে কিন্তু তারাও বুঝলো এখান থেকে না পালালে তারা বাঁচবে না ফলে তারাও পিছু হটলো এবং কোনোমতে বস্তি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে বাঁচলো।
যুদ্ধ জয়ের পর সবাই হর্ষধ্বনি করে উঠলো কেউ সিটি দিচ্ছে, কেউ তালি মারছে শুধু আমির বাদে, সে দ্রুত বাড়ির দিকে গেল পিছু পিছু বশির এবং আরও কয়েকজন গেল। গেট ঠেলে ঢুকেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল "সর্বনাশ হয়ে গেছে" কারণ সেখানে রয়ের গাড়িটা নেই, আর সে খুব ভালো করেই জানে রয় বেরোলে গাড়ি নিয়েই বেরোয় গাড়ি নেই মানে রয় নেই আমির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো, কিন্তু বেশিক্ষণ না আম্মির কথা মনে পড়তেই সে ছুটে বাড়ির ভিতরে গেল কেউ নেই সে জানে এখানে একটা দ্বিতীয় দরজা আছে এমার্জেন্সীতে বেরোনোর জন্য, সে তৎক্ষণাৎ ওটা দিয়ে বেরিয়ে ছুট লাগালো, বাড়ির পিছনের দিকে ওদিক দিয়ে একটা রাস্তা আছে সেটা দিয়ে কিছুদূর গিয়ে বস্তির একেবারে উল্টোদিকে বেরোনোর রাস্তা আছে সেখান থেকে বেরোলে একটা খাল পড়বে সেটা পার করার একটা ছোট্ট কাঠের সাঁকো আছে সেটা পার করলেই আরেকটা কলোনি আছে সেটার ভিতর দিয়ে সোজা অনেকটা গেলে কলোনি ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে একটা হাইওয়ে পরে, আমির ওই রাস্তা দিয়েই ছুটে চলে পিছনে বশির আর কয়েকজন আসছে, বস্তিটা পেরিয়ে খাল পার হয়ে কলোনির ভিতর দিয়ে দৌড়ে হাইওয়ের সামনে আসে কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে পায় না, একটু এদিক ওদিক খুঁজতেই দেখে রাস্তার একদম উল্টোদিকে কিছুটা ডানদিকে একটা বাসস্টপে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে চিনতে অসুবিধা হয়না আমিরের এক দৌড়ে রাস্তাটা কোনোমতে পার করে সেখানে পৌঁছে দুই হাঁটতে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁফাতে থাকে, আম্মি, বিন্দু মাসি আর বিদিশা ঠিক আছে, ঠিক সময়ে তাদের বাইরে বার করে আনা হয়েছে।

কতক্ষণ পরে অজ্ঞান হয়ে ছিল বুঝতে পারে না অভয় এখন রাত না দিন সেটাও বুঝতে পারে না, ঠিক আগের বারের মতোই তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে নিজের চেতনা সম্পূর্ণ জাগ্রত হবার অপেক্ষা করতে থাকে, বুঝতে পারে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে তাকে সারা গায়ে ব্যাথা কিন্তু গুপ্ত মেডিটেশনের জন্য সেগুলো সহ্য করে নেয়, আরেকটা জিনিস খেয়াল করে এখন তাকে মেঝেতে উবুড় করে শুইয়ে রাখা হয়েছেহ শেষ বার যখন জ্ঞান ছিল তখন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়ে ছিল, যদিও এখনো তার হাতপা বাঁধা আরেকটা জিনিস তার প্রচণ্ড পিপাসা পেয়েছে গলা শুকিয়ে কাঠ এবং ক্ষিদেও পেয়েছে সেই মাহমুদের কথা শুনে বেরোনোর আগে খেয়েছিল তারপর কতক্ষণ যে পেটে কিছু পড়েনি তা আন্দাজ করা কঠিন।
এখান থেকে পালাতে গেলে আগে গায়ে কিছুটা শক্তি দরকার তার থেকেও বড়ো কথা অন্তত হাতদুটো মুক্ত করতে হবে, কিন্তু কিভাবে? সে চুপ করে পরে র‌ইলো আবার মেডিটেশনে ডুবে গেল দেহে যতটুকু শক্তি আছে তা একত্রিত করার চেষ্টা করতে থাকে, সাথে মানসিক শক্তিকেও কিন্তু সমস্যা হলো মন তারবশীভূত কিন্তু এইমুহূর্তে শরীরের উপর যা অত্যাচার হয়েছে তাতে তাকে বশে আনা কিছুটা কঠিন তার উপরে অভুক্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় আছে সে।
হাতপা বাধা অবস্থাতেই উবুড় হয়ে ছিল অভয় এবার একটু নড়ার চেষ্টা করতেই বুঝলেন শরীরের অবস্থা যতটা ভেবেছিল তার থেকেও খারাপ মারের যন্ত্রণা তো আছেই তার উপর প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে, অভয় আরও কিছুক্ষণ অসাড় হয়ে পড়ে র‌ইলো, একসময় আবার গাঢ় ঘুমে ডুবে গেল যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে কিছুটা চাঙ্গা লাগছে যদিও পেটে ক্ষিদে ,গলায় তৃষ্ণা আর শরীরে ব্যাথা তিনটেই আছে, সে আস্তে আস্তে নিজের হাতদুটো মুক্ত করতে চেষ্টা করে এখান থেকে পালাতে হলে আগে হাতপা বাঁধন মুক্ত করতে হবে। দুটো হাত একসাথে কবজির কাছে দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে বাধা ছিল ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ ধরে দুটো কবজি নাড়িয়ে দাঁত দিয়ে চেষ্টা করে কয়েকটা প্যাচ থেকে মুক্ত করলো কিন্তু এখনো কিছুটা বাকী এদিকে তার বড়ো বড়ো নিঃশ্বাস পড়ছে আরও কিছুক্ষণ পরে দুটো হাত‌ই বন্ধন মুক্ত করতে সক্ষম হলো, এখানকার গুণ্ডাদের ঘটে তেমন কিছু নেই হ এই দড়িটাই যদি নাইলনের সরু অথচ শক্ত দড়ি হতো তাহলে খুলতে পারতো না কারণ সেক্ষেত্রে দড়িটা চামড়া কেটে মাংসে বসে যেত
অভয় দুহাতে ভর দিয়ে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু পারলো না সারা গায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা সে আবার চেষ্টা করলো কিন্তু এবারও ব্যার্থ হলো, তৃতীয় বারে ব্যাথা সহ্য করে কোনোমতে উঠে বসলো, তারপর আস্তে আস্তে পায়ের বাঁধনটা খুলে নিল এখন সে সম্পূর্ণ বন্ধন মুক্ত, আস্তে আস্তে উঠে ঘরের ভিতরেই পায়চারি করতে থাকে কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপেই মনে হচ্ছে য়যেন কেউ শরীরে বিদ্যুৎ শক্ দিচ্ছে, বেশীক্ষণ থাকতে পারলো না, আবার মেঝেতে বসে হাঁফাতে লাগলো, এখান থেকে পালাতে হলে এখানের গার্ড যারা আছে তাদের মোকাবেলা করতেই হবে আর তার জন্য আগে শরীরের ব্যাথাটার সাথে যুঝতে হবে। অনেকক্ষণ বসে থাকার পরে বন্ধ দরজার ওপাশে পায়ের আওয়াজ শুনতে পায় বেশি না একজনের, অভয় বোঝে এটাই সুযোগ সে মেঝেতে পরে থাকা যে দুটো দড়ি দিয়ে তাকে বাধা হয়েছিল সেই দুটো নিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকে দুহাতে দড়ির দুটো প্রান্ত ধরে, একটু পরেই দরজা খুলে একজন ভিতরে ঢুকলো কিন্তু সে কিছু করা বা বোঝার আগেই পিছন থেকে তার গলায় দড়িটা পেঁচিয়ে ধরে অভয়, লোকটা ছটফট করতে থাকে অভয় জানে এইভাবে সে বেশীক্ষণ ধরে থাকতে পারবে না তার শরীর এখন দুর্বল যতটুকু শক্তি সে সঞ্চয় করতে পেরেছে তা মেপে ব্যবহার করতে হবে।
এবার দড়ির দুটো প্রান্ত বাহাতে ধরে ডানহাতের তালুর কোনা দিয়ে লোকটার মাথার পিছনে আঘাত করে, প্রথম আঘাতে কিছু হয় না, লোকটা তখন‌ও নিজেকে মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে এবার অভয় দ্বিতীয়বার আবার আঘাত করে এবার আগেরবারের থেকে একটু বেশি জোড়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটা অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। অভয় এবার দ্রুত লোকটার গা থেকে জামা প্যান্ট খুলে পরে নেয় ঠিকঠাক ফিটিং হয় না কিন্তু আপাতত এতেই কাজ চালাতে হবে। এবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে এমন সময় বাইরে আরো একজনের পায়ের আওয়াজ পায় সে তৎক্ষণাৎ আবার দরজার আড়ালে চলে যায়, আরেকটা লোক টলতে টলতে তার সঙ্গীকে ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢোকে এবং ঢুকেই মেঝেতে একজনকে পরে থাকতে দেখে ভালো করে দেখার জন্য একটু ঝুঁকতেই অভয় পিছন থেকে একেও মাথায় আঘাত করে সঙ্গে সঙ্গে এও লুটিয়ে পরে এবার এর পকেট সার্চ করে নিজের মোবাইলটা পেয়ে যায় যদিও সেটা সুইচড অফ হয়ে গেছে সাথে কিছু টাকা আর একটা পিস্তল পায়।
এবার আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসে, দেখে এক কোনে একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে বাকি দুজন মদ খাচ্ছে, নেশার জন্যই বোধহয় ওরা অভয়ের উপস্থিতি এখনো টের পায়নি, অভয় জানে সুস্থ থাকলে এই দুজনকে একসাথে ঝেড়ে ফেলা তার কাছে কিছুই নয়, কিন্তু শরীরের এই দুর্বলতায় সেটা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু উপায় নেই একদিকে সুবিধা ওরা নেশা করে আছে। অভয় প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে একজনের পিছনে গেল তারপর আচমকাই পিস্তলের বাট দিয়ে ওর মাথায় মারলো সঙ্গে সঙ্গে তার মাথাটা টেবিলের উপর পরে গেল আঘাতের জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে, প্রথমেই গুলি চালালো না কারণ গুলির আওয়াজে যদি বাইরে কেউ থাকে সে ভিতরে চলে আসবে তখন অভয়ের পালানো আটকে যেতে পারে, এই হটাৎ আক্রমণে অপরজন হতভম্ব হয়ে যায় সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই অভয় তার দিকে পিস্তল তাক করে ইশারায় দুহাত মাথার উপর তুলতে বলে লোকটা তাই করে, অভয় জিজ্ঞেস করে: বাইরে কেউ আছে?
লোকটা ঘাড় নেড়ে না জানায়, অভয় আবার জিজ্ঞেস করে আমার ঘড়ি কোথায়?, লোকটা নিজের পকেট থেকে অভয়ের হাতঘড়িটা বার করে টেবিলের উপর রাখে, "আমার জুতো?" শুনে লোকটা চোখ দিয়ে একটা জায়গায় দেখায়।
"নিয়ে আয়"
লোকটা আস্তে আস্তে এগোতে থাকে অভয় ধীরে ধীরে ওর পিছনে যেতে থাকে এবার  বারান্দার এক কোণে যেতেই অভয় নিজের জুতো জোড়া দেখতে পায় এগুলো বোধহয় সত্যিই ওদের পছন্দ হয়েছিল, লোকটা এতক্ষণ অভয়ের দিকে পিছন ফিরে ছিল এবার সে ঘোরার আগেই অভয় একেও পিস্তলের বাট দিয়ে অজ্ঞান করে,পিস্তল চালালো না কারণ এর কথা সে বিশ্বাস করেনি যদি বাইরে কেউ থাকে তখন? কিন্তু না জুতো পড়ে ঘড়ি নিয়ে বাইরে আসে, আসার আগে প্রথম জনের মতো বাকিদের পকেট থেকেও যত টাকা ছিল সব নিয়ে এসেছে, সেদিন আমিরের বিপদের কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে ওয়ালেটটা আনেনি তারপর মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে, গাড়িটাও নেই কাজেই ক্যাশ টাকার প্রয়োজনে হবে বুঝেই সে টাকাগুলো নিয়ে নেয়, বাইরে এসে দেখে কেউ নেই, ঘড়ির সময় দেখে বোঝে রাত হয়ে গেছে কিন্তু এটা সেই জায়গা নয় যেখানে তাকে ধরা হয়েছিল, তাকে অজ্ঞান অবস্থায় অন্যত্র নিয়ে আসা হয়েছে, আর ওর গাড়িটাও নেই, কোথায় ওকে নিয়ে এসেছে সেটা এই মুহুর্তে বোঝা মুশকিল আন্দাজমতো একটা দিকে সে যত দ্রুত সম্ভব দৌড়াতে থাকে যদিও শরীরের এই অবস্থায় সেটা একটু জোরে হাঁটার‌ই সমান, সে জানে চারজনের জ্ঞান যে কোনো সময় ফিরে আসবে কারণ আঘাতগুলো ঠিক মতো হয়নি আর জ্ঞান ফিরে এলেই ওরা অভয়কে খুঁজতে বেরোবো, তার আগেই একটা সুরক্ষিত জায়গায় যেতে হবে অভয়কে।
অভয় প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে কিন্তু বেশিক্ষণ পারে না একটু পর পর‌ই হাঁফাতে থাকে, কিছুক্ষণ এইভাবে চলার পরে কিছুটা দূরে গাড়ি চলাচলের আওয়াজ পায় যদিও খুব কম,মনে হয় সেদিকে রাস্তা আছে। অভয় নতুন উদ্যমে সেদিকে যেতে থাকে সত্যিই একটা হাইওয়ে আছে, গাড়ি চলাচল কম, এদিক ওদিক চাইতেই একদিকে একটা গাড়ি আসতে দেখে অভয় সেদিকে হাত  নাড়াতে নাড়াতে দৌড়াতে থাকে গাড়িটা কে চালাচ্ছে সেটা দেখার সময় নেই, কিন্তু আর পারে না একে খালি পেট, তার উপরে পিপাসায় গলা কাঠ অনেকক্ষণ থেকেই পালানোর তাড়ায় যেখানে বন্দী ছিল সেখানে জল খেতে ভুলে গেছে, সব থেকে বেশি শরীরের যন্ত্রণা নিয়ে এতটা পথ দৌড়ে এসেছে, সে গাড়ির বনেটের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে তারপর নীচে পরে যায়, ভাগ্য এবারেও ভালো যে গাড়ির ড্রাইভার সঠিক সময়ে গাড়ির ব্রেক কষেছিলেন, অজ্ঞান হবার আগে অভয় কারো একটা পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।

"আমির তুমি এখানে, আর এত হাফাচ্ছো কেন? হঠাৎই আমির এবং সাথে আরো কয়েকজনকে দৌড়ে তাদের দিকে আসতে দেখে প্রশ্নটা করেন অমৃতাদেবী।
কিছুনা আম্মি দৌড়াতে দৌড়াতে আসছিলাম যাতে দেরী না হয়ে যায়।
দেরী কিসের আর তোমার বন্ধু কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না, এদিকে এরা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
আম্মি সেইজন্যই তো দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম।
মানে।
আসলে প্রথমে ঠিক ছিল আমরা আবার নিজেদের শহরে ফিরে যাবো, রয় ওদিকে একটা মিটিং সেরে।সোজা এয়ারপোর্টে দেখা করবে তাই এদের বলে আপনাদের নিয়ে যাচ্ছিল।
তা এখন কি হয়েছে?
এখন ওর যাওয়াটা একটু আটকে গেছে আরেকটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং এসে গেছে, বুঝতেই তো পারছেন নতুন কনট্র্যাক্ট পেয়েছি আমরা তাই, এদিকে আপনারা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবেন তাই আমি দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম আরকি।
তুমি সব কথা বলছো না, আমার ছেলের কিছু একটা বিপদ হয়েছে আমি বুঝতে পারছি।
আম্মি আম্মি আমার কথা শুনুন ওর কিছু হয়নি এইতো খানিকক্ষণ আগেও ওর সাথে আমার কথা হয়েছে, মিটিংয়ে ঢোকার আগে মোবাইল বন্ধ করতে হবে তাই আমাকে জানিয়ে দিয়েছে, আপনি চলুন ঘরে গিয়ে রেস্ট নেবেন।
তুমি সত্যি বলছো, আমার ছেলের সাথে তোমার কথা হয়েছে?
হ্যাঁ, আম্মি হয়েছে।
অমৃতাদেবীর কপালে ভ্রুকুটি তাও থেকেই যায় যদিও তিনি মুখে কিছু বলেন না। প্রায় ভোররাতে অমৃতাদেবী ও বিন্দু মাসি ঘুমিয়ে পড়লে বিদিশা আমিরকে চেপে ধরে "আমির এবার সত্যিটা বলো তো, রয় কোথায়?"
বললাম তো একটা মিটিংয়ে।
উঁহু, মিটিং নয়, এখান থেকে যখন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় তখন একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে নিয়ে যাওয়া হয় আর সেটা এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য নয়, আসল ব্যাপারটা কি?
কি আবার আসল ব্যাপার? বললাম তো রয় মিটিংয়ে যান আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
বিদিশা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু এমন সময় বশির ছুটতে ছুটতে আসে "ভাইজান ভাইজান" ওর গলায় আতঙ্ক দুঃখ সব একসাথে।
কি  হয়েছে বশির?
আপনি একবার চলুন।
কোথায়?
চলুন না।
কোথায় সেটা তো বলবে? শেষের কথাটা বলে বিদিশা। কিন্তু বশির কিছু বলে না।
আমি এখন আম্মিকে একা ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না বশির।
ভাইজান আম্মি এখন ঘুমিয়ে আছেন কিন্তু..
কিন্তু কি হয়েছে সেটা তো বলবে। এবার বিদিশার গলায় একটু রাগ।
ভাইজান ওইদিকে একটা গাড়ি ওভার ব্রিজ থেকে নীচে রেললাইনের উপরে পরে গেছে মানে গাড়ি পাওয়া গেছে ভাঙাচোরা অবস্থায় আর গাড়িটা বসের গাড়ির মতো লাগছে।
আমির সঙ্গে সঙ্গে বশিরের কলার চেপে ধরে"কি বলছো বশির, ভেবে বলছো?"
ভাইজান সেইজন্যই তো বলছি আপনি একবার চলুন আপনি ঠিক চিনতে পারবেন, আর আম্মির খেয়াল আমার লোকেরা রাখবে তাছাড়া বীরেন ভট্টাচার্য একবার মাত খেয়েছে এত তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বার অ্যাটাক করবে না।
দ্বিতীয় বার? তারমানে আগে একবার অ্যাটাক হয়েছে? কাল রাতেই তাই না? সত্যি বলো আমির.. রয় কোথায়?
আমির উত্তর দেবে কি তার মাথা কাজ করছে না, বিদিশা আবার বলে "আমির তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি"।
বসকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিনমিন করে বশির উত্তর দেয়।
তোমার নাম বশির না? চলো আমি যাবো আমির থাকুক এখানে। বলে হাঁটা লাগায়, পিছনে বশির যায় এবং সব শেষে আমির। যেতে যেতে বিদিশা জিজ্ঞেস করে "এসব কিভাবে হলো আমির?"
আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। সারা রাস্তা আর কেউ কোনো কথা বলে না, স্পটে পৌঁছে সবাই দেখে পুলিশ ঘিরে রেখেছে জায়গাটা আর লোকজন ভীড় করে আছে, ট্রেন চলাচল আপাতত বন্ধ। আমিররা ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়, পুলিশকে বলে গাড়িটা দেখতে গিয়ে দেখে একটা ভাঙা এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া একটা গাড়ির অবশেষ পরে আছে, এবং এদিক ওদিক গাড়ির কিছু পুড়ে যাওয়া বা কিছু আধপোড়া অংশ ছিটকে পরে আছে।
আশেপাশের লোকজন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে, পুলিশের একজন আমিরের দিকে এগিয়ে আসেন আমিরকে জিজ্ঞেস করেন "গাড়িটা কি আপনাদের কারো?
অফিসার গাড়িটা তো পুরো পুড়ে গেছে শনাক্ত করা যায় এমন কিছু পেয়েছেন? গাড়ির ভিতরে কেউ ছিল?।
না, গাড়ির ভিতরে কোনো বডি এখনো পাইনি তবে ফরেনসিক এলে আরও ক্লিয়ার হবে,তবে একটা জিনিস পেয়েছি এই দেখুন।বলে অফিসারটি একটা গাড়ির নাম্বার প্লেট দেখায় তারপর বলেন "এটা কোনো কারনে উপর থেকে নীচে পরার সাথে সাথে খুলে ছিটকে অন্য জায়গায় পরে তাই আগুনে তেমন ক্ষতি হয় নি, নাম্বারপ্লেটটা দেখতেই হাত থেকে পরে যায় আমিরের, সে নিজেও কয়েকপা পিছনে পিছিয়ে যায় প্রায় পরে যাচ্ছিল কিন্তু বিদিশা ধরে ফেলে সে হাঁটু মুড়ি বসে পরে, একজন শিশুর মতো চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।
বিদিশা ওকে সান্ত্বনা দিতে গিয়েও পারে না কারণ তার‌ও তখন কান্না পাচ্ছে তবুও কোনোমতে নিজেকে সামলে আমিরের সামনে গিয়ে ওর মুখটা ধরে বলে "ছিঃ আমির এভাবে কাঁদছো কেন? শুনলে না অফিসার কি বললেন কোনো বডি পাওয়া যায় নি, তার মানে রয়ের কিছু হয়নি"।
কিন্তু... কিন্তু ওই গাড়িটা রয়ের।
হতে পারে, কিন্তু রয় তো ওর মধ্যে নেই।
আমি আম্মিকে কি বলবো, কি জবাব দেবো?
বিদিশার কাছেও একথার উত্তর নেই আর থাকলেও সে দিতে পারতো না কারণ তখন তার‌ও সংযম ভেঙে গেছে তার‌ও চোখ থেকে জল পরছে, কিন্তু আমিরের অবস্থা তার থেকেও খারাপ, বিদিশা হটাৎ আমিরকে জড়িয়ে ধরে, আর আমিরের যেন এখন হুঁশ নেই সে বিদিশার কাঁধে মাথা থেকে অঝোড়ে কাঁদতে থাকে।

?
Like Reply




Users browsing this thread: 15 Guest(s)