Thread Rating:
  • 124 Vote(s) - 2.97 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica ❣️বৌদিমণি❣️ ﴾ সমাপ্ত ﴿
(03-05-2024, 05:04 PM)বহুরূপী Wrote:
এই গরমে তোমার কমেন্ট দেখে মন জুড়িয়ে গেল। 

তবে আমি আমি কিন্তু নতুন নোই, ফিরে এসে অনেকেই দেখি নেই। 
তাই পাঠক থেকে লেখক হয়েছি মাত্র ,এই যা  Big Grin

হ্যাঁ,  অনেকেই নেই। তাই ফোরামটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে।  

আপনার লেখার বাঁধুনি খুব সুন্দর।  আমরা,  পাঠকরা সব সময়েই আপডেটের জন্য তাগাদা দিই,  সেটা ভালো লেখার আকালের কারনে। আপনি, আপনার সময় নিয়ে লিখুন। 
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(04-05-2024, 05:19 PM)buddy12 Wrote:
হ্যাঁ,  অনেকেই নেই। তাই ফোরামটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে।  

আপনার লেখার বাঁধুনি খুব সুন্দর।  আমরা,  পাঠকরা সব সময়েই আপডেটের জন্য তাগাদা দিই,  সেটা ভালো লেখার আকালের কারনে। আপনি, আপনার সময় নিয়ে লিখুন। 
ফেসবুকে হালকা ভাবে কিছু লিখেছিলাম।তবে এখানে শুধুমাত্র পাঠক হিসেবেই ছিলাম।
তারপর এখান থেকে হঠাৎ লম্বালম্বি ছুটি কাটালাম।
তবে যখন ফিরেছি, তো কয়েকটি গল্প লেখার ইচ্ছে আছে।
আসল সমস্যা ব‍্যস্ততা।তাই আপডেট আসতে হয় দেরি।যাই হোক,ধন্যবাদ
(04-05-2024, 05:00 AM)Aisha Wrote: দারুণ হচ্ছে
ধন্যবাদ
[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
সময় নিয়েই লিখুন।
লাইক ও রেপু দিলাম। 
[+] 1 user Likes buddy12's post
Like Reply
(04-05-2024, 08:58 PM)buddy12 Wrote: সময় নিয়েই লিখুন।
লাইক ও রেপু দিলাম। 

দেখি কালকে আপডেট দিতে পারবো বলে মনে হচ্ছে Shy
[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
(04-05-2024, 08:21 PM)বহুরূপী Wrote: ফেসবুকে হালকা ভাবে কিছু লিখেছিলাম।তবে এখানে শুধুমাত্র পাঠক হিসেবেই ছিলাম।
তারপর এখান থেকে হঠাৎ লম্বালম্বি ছুটি কাটালাম।
তবে যখন ফিরেছি, তো কয়েকটি গল্প লেখার ইচ্ছে আছে।
আসল সমস্যা ব‍্যস্ততা।তাই আপডেট আসতে হয় দেরি।যাই হোক,ধন্যবাদ
ধন্যবাদ

পুরোনো লেখকের প্রতি একটু ভরসা হয় যে লেখা অসমাপ্ত থেকে যাবে না।
[+] 1 user Likes Mamun@'s post
Like Reply
পর্ব ৮

সঞ্জয় সব কাজ সেরে যখন বাড়ি ফিরলো।তখন সূর্যিমামা পশ্চিমে হালকা ঢলে পড়েছে। তালতলার রাস্তায় তখন গাছের দীর্ঘ ছায়া। তবে এখনও সময় আছে অনেকটা।এটা ভেবেই শান্তি লাগছে তার। ভাগ‍্যিস নন্দলাল কে রেখে সে চলে এলো আগে।নয়তো আজ আর মেলায় যাওয়া হবে নাই ভেবেছিল সে।নন্দলালের ওপড়ে তার ভরসা আছে।লোকটা একটু মন্দ হলেও কাজে পাকা।তাই সে যখন বলেছে আজ সন্ধ‍্যের মধ্যেই তার দাদাকে ছাড়িয়ে আনবে,তখন সঞ্জয়ের আর চিন্তা নেই। তার চেয়ে বরং মেলায় না গেলে চিন্তার শেষ ছিল না।নিশ্চয়ই বাড়ির মেয়েরা সেজে বসে আছে।এখন না নিয়ে গেলে অভিমানের কি আর শেষ আছে....!


সঞ্জয়ের মটরসাইকেল টি যখন বাড়ির উঠনে ঢুকলো,ঠিক তখনই হেমলতা দৌড়ে এসে তাকে দুহাতে জড়িয়ে চোখের জলে গায়ের জড়ানো পাঞ্জাবী টা ভিজিয়ে দিতে লাগলো।কোন ভাবেই তার কান্না থামছে না দেখে,শেষমেষ সঞ্জয় কঠিন গলায় লাগালে এক ধমক।

– চুপ কর ফাজিল মেয়ে! উফফ্.. আমার কানটা গেলো একেবারে।

অবশ্য এতে কাজ হবে সে ভাবেনি।তবে সঞ্জয় না ভাবলেও এতে কাজ হলো।হেম কান্না থামিয়ে চুপচাপ তাকে দুহাতে জড়িয়ে রাখলো। সঞ্জয় আবাক হয় মেয়েটার এমন কান্ডে।তবে সে বোঝে খুব ভয় না পেলে হেম তাকে এভাবে বুকে জড়াতে পারতো না।এর আগেও দু একবার হয়েছে এমন।

সঞ্জয় হেমলতা কে দুই বাহুতে ধরে তোলে তার বুক থেকে।দুহাতে অশ্রু মুছে দিয়ে বলে। মহারানীর কি হয়েছে শুনি,এতো কান্না কেন? বৌদিমণি বকেছে বুঝি!

হেম না সূচক মা নাড়ে,বা হাতটি তুলে ইসারা করে বসার ঘরের দিকে।সঞ্জয় আর কিছু না বলে এগিয়ে যায় বসার ঘরের দিকে।হেমলতা এগোচ্ছে তার পেছন পেছন।

বসার ঘরে ঢুকেই সঞ্জয়ের চোখে পরে বসার আসনে বসে আছে ডাক্তার বাবু।তার হাতে চায়ের কাপ।আর তার পাশেই মেঝেতে বসে আছে দেবু।একটু দূরে মিনতী দেবীর ঘরের দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আছে নয়নতারা। সঞ্জয় সেদিকে চোখ ফেরাতেই চোখে চোখে মিলন হলো।সঞ্জয়ের বুকটা কেঁপে উঠলো। নয়নতারার চোখ থেকে মুক্তোর দানার মতো অশ্রু বিন্দু গড়িয়ে পরছে তার ফর্সা গাল বেয়ে। সঞ্জয়ের মনটি ছুটে যেতে চাইলো যেখানে। তবে নিজেকে সামলাতে হলো ডাক্তার বাবুর ডাকে।

– সঞ্জয় আমার সাথে একটু বাইরে এসো তো!

সঞ্জয় চিন্তিত মনে ডাক্তারের পেছন পেছন চললো ভেতরে উঠনের বারান্দার দিকে। তারপর বারান্দায় ছাড়িয়ে নেমেগিয়ে দাঁড়ালো রান্নাঘরে পাশে জাম গাছটার ছায়ায়। ডাক্তার একটি বার বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখে নিল।তারপর নিচু স্বরে বলতে লাগলো।

– তোমার বৌদির বাবার অবস্থা তো খুব একটা ভালো বোধ হয় না,যত শিগরই সম্ভব শহরে নিয়ে যাওয়া দরকার। যদি সম্ভব হয় তো আগামীকালই..

বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো তাদের মাঝে।আর এরমধ্যে বসার ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল নয়নতারা। আজ দুপুরের কিছু আগে থেকেই তার বাবার বুকে ব‍্যথা উঠলো।উপায় না দেখে মিনতী দেবী দেবুকে পাঠিয়ে ডাক্তার বাবুকে আনে।এখন অবস্থা শান্ত হলেও মনের ভেতরে যে ঝড় উঠেছে যেই ঝড়ে দাপটে মাঝে মাঝে ভাসিয়ে দিচ্ছে তার ডাগর নয়ন দুখানি।


ডাক্তার বাবু চলে গেল,দেবু গেল তার পেছন পেছন হাতে কালো ব‍্যাগটি নিয়ে। আর সঞ্জয় বসলো জাম গাছের ছায়ায়।ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করা যায়‌। টাকা সমস্যা নয় তার কাছে।যাওয়ার ব‍্যবস্থা একটু কঠিন হলেও সে জোয়ান পুরুষ মানুষ।তাই এই সব নিয়ে ভাবে না সে। তার ভাবনা বাড়ির মেয়েদের নিয়ে।সে না থাকলে এদের খেয়াল কে রাখবে....

////////

বাড়ি অবস্থা সামাল দিয়ে সঞ্জয় হেম ও নয়নতারাকে নিয়ে এলো নদীর ঘাটে।অবশ্য বাড়িতে এমন অসুস্থ বাবাকে রেখে হেম বা নয়নতারা কেউই আসতে রাজী ছিল না।এমনকি ছোট্ট মেয়ে মন্দিরাও কেমন গুটিসুটি মেরে বসে ছিল বারান্দার এক কোণে।অবশেষে সঞ্জয় আর মিনতী দেবীর ঠেলা ঠেলিতে আসতে রাজি হলো সবাই।

নৌকা ঠিক করে নদী পার হলো তারা।নদীর ও পাড়ে ঘাটে নামতেই পরে ছায়ামতির হাট।আজকে হাটবার বলে মেলা ও হাট বসেছে একসাথে। হাটের রাস্তা থেকে নেমে আলপথে কিছুটা এগুলেই পরে বিশাল মাঠ।মাটে শেষে গ্রামের পথ ও একটা পুরোনো জমিদার বাড়ি চোখে পরে।ঐ বাড়িটাকে ঘিরেই মেলা বসে। চৈত্রসংক্রান্তির মেলা।
অনেক দূর থেকে লোকজন ছুটে আসে মেলায়।
মেলা যখন শুরু হয়, দূর থেকে মেলার গমগমে আওয়াজ শোনা যায়। সঞ্জয়ের এখনো মনে আছে মেলায় প্রতিবার একটি সার্কাসের দল আসে। সেই সার্কাসের দলে থাকে একটি বড় হাতি। থাকে নাগরদোলা। মেলার এক কোনায় দেখানো হয় পুতুল নাচ। আর এই পুতুল নাচ ও সার্কাস দেখাতে নয়নতারাকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিল সে।নয়নতারা মেলায় যতখান থাকতো, সঞ্জয়ের একটি হাত শক্ত করে ধরে রাখতো। অবশ্য এছাড়া উপায় কি! ভরা মেলায় মানুষের পা ফেলানোর জায়গা থাকে না। মানুষে গিজগিজ করে...

এইসব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছিল সঞ্জয়।হটাৎ অনুভব করলো তার ডান হাতটা কেউ দুহাতে জড়িয়ে ধরেছে। সেদিকে তাকিয়ে সঞ্জয় একটু মুচকি হাসলো সে। এতে হেমলতা সাহস পেল কি না বোঝা গেল না। তবে হেম সঞ্জয়ের আরো কাছে চলে এলো।

হেমলতা বরাবরই ভীতুদের কাতারে পরে।একজনের বদলে দুজন দেখলেই তার বুকখানি কেঁপে ওটে।এই মেলা সে প্রতিবার এসেছে তার বাবার সাথে।কিন্তু আজ এ কার সাথে এলো সে! কে হয় সঞ্জয় তার! আজকাল এইসব প্রশ্ন ঘোড়ে তার মাথায়।এই মানুষটির কাছাকাছি থাকলে নিজেকে নিরাপদ লাগে তার।যেমন দিনের শেষ সবাই ঘরে ফেরে।তেমনি বিধাতা যেন বারবারই হেমকে ঠেলে দিচ্ছে এই মানুষটার দিকে।

হেমলতা নিজেও বোঝে সঞ্জয় এখন শুধু তার বলেই নয় পুরো পরিবারের শেষ ভরসা।কিন্তু তবুও বড্ড ভয় হয় তা। এই পাষাণ হৃদয়ের লোকটা যে সব জোর করে ছিনিয়ে নিচ্ছে তার থেকে।হেম হয়েছে তার খেলার পুতুল।যখন খুশি যেভাবে খুশি সে খেলছে হেমলতাকে নিয়ে।প্রতিরাতেই লুকিয়ে সঞ্জয়ের ঘরে যেতে হয় হেমলতাকে।।তারপর অবশ্য আর কিছুই করতে হয়না তাকে। জোরকরে ছিনিয়ে নেয় তার যা প্রয়োজন,আগুন ধরিয়ে দেয় হেমলতার এই নিটোল দেহে। তবে নিভিয়ে দেয় না কখনোই।মাঝেমধ্যে সেই আগুনে দগ্ধ হয় হেমলতা সারা রাত ধরে। ছুটে যেতে মন চায় সঞ্জয়ের কাছে।মন চায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে তার পায়ে। কিন্তু হায় পোড়া কপাল তার,এমন কিছু করা সাহস যে তার নেই। তবে গতকাল সে যায়নি। কিন্তু তা নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে......

– আআঃ...

ভাবতে ভাবতে চমকে ওঠে হেমলতা। সঞ্জয় বুকে জড়িয়ে নিয়েছে তাকে।অস্থির হয়ে ওঠে সে।এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে মাট ছাড়িয়ে সঞ্জয় তাকে নিয়ে এসেছে লোকজনের ভিড়ের বাইরে। হেমলতা ব‍্যাকুল হয়ে খোঁজ তার দিদিকে।তবে কোথায় কি,সঞ্জয় আর সে এখন একটা তাবুর আড়ালে।

- ছি মেলায় এসে এভাবে কাঁদে কেউ,বাবার জন্যে চিন্তা হচ্ছে বুঝি?


অবাক হয় হেম।গালে হাত বুলিয়ে দেখে সত্যিই তো,সে কাঁদছে কেন!দুহাতে চোখ মোছে সে।তারপর ঘাড় উচুঁ করে তাকায় সঞ্জয়ের মুখের দিকে।মনে মনে ভাবে এতো লম্বা কেন এই মানুষটি!ওভাবে ঘাড় বেকিয়ে কথা বলা যায় বুঝি!তবুও হেমলতা মৃদু স্বরে বলে।

– দিদি কোথায়!আমি দিদির কাছে যাবো।
– যাবেই তো,তার আগে ভালো ভাবে চোখ মোছো দেখি,তূমি কাঁদছো এটা দেখে বৌদিমণির মন খারাপ হয়ে যাবে না।

সঞ্চয় তার পাঞ্জাবীর পকেট হইতে একটি রুমাল বের করে। এবং তা দিয়ে হেমের চোখ মুছিয়ে দেয় সে। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল।

– পাগলী একটা,আমাকে এত ভয় কেন শুনি!আমি কি খেয়ে ফেলছি তোমায়।

হেমলতা জবাব দেয় না। মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।হেমকে শান্ত করে নিয়ে সঞ্জয় আবার মিশলো নয়নতারার সাথে।নয়নতারা ছিল তালদিঘির আরো কয়েকটি মেয়ের বউয়ের সাথে। হেমলতাও মিশলো তাদে্য সাথে।আর সঞ্চয় মন্দিরাকে কোলে নিয়ে তাদের পাশাপাশি হাটতে লাগলো।

মন্দিরাকে নাগরদোলায় চড়িয়ে তার সার্কাস দেখতে ঢোকে। হেম ও মন্দিররা সার্কাসের অবাক কাণ্ড দেখে হাততালি দেয়। মঞ্চে বিশাল হাতি একটি বড় তিন চাকার সাইকেল চালাচ্ছে। সাইকেলে পা রাখতেই সব দর্শক আনন্দে চিৎকার করে ওঠে।

হেমলতা ও মন্দিরার মুখে হাসি দেখে সঞ্জয়ের মন পুলকিত হয়।তবে নয়নতারার মুখটি মলিন।সে জোর করে হাসার চেষ্টা করছে।এই ব‍্যাপারটা তার চোখ এড়িয়ে যায় না।এক ঘণ্টা পরই সার্কাস দেখানো শেষ হয়ে যায়। হুড়মুড় করে লোকজন বাইরে বের হতে শুরু করে। বের হওয়ার একটাই গেট। সঞ্জয় তাদের সামনে পাঠিয়ে পেছনের পথ আগলে দাঁড়ায়।মানুষের ঠেলাঠেলির ঝক্কি টা যায় তার ওপরে।

তারপর মেলায় নানাধরনের দোকান ঘুড়তে ঘুড়তে কিছু কেনাকাটা করে তারা। সঞ্জয় নিজেও সবার আড়ালে কিছু কিনে পাঞ্জাবী পকেটে ভরে নিল। এদিকে মন্দিরা একটি পুতুল বগলদাবা করে,একহাতে জিলেপি ও অন‍্য হাতে তার ছোট্ট ভাইয়ের জন্যে নেয়া বেলুন বাঁশিটিতে মাঝে মাঝেই ফুঁ দেয়। একই সঙ্গে তার গাল ও বেলুন দুটোই ফুলতে থাকে। পঁ পঁ শব্দ হয়। তবে ছোট্ট মেয়েটাকে কে বোঝাবে,তার ছোট্ট ভাইটি জন্যে এই বাঁশি বাজানো মুশকিল।

অবশেষে মাঠের এদিকে ধান ক্ষেতের পাশে একটা খালি জায়গায় বসে তারা একটু বিশ্রামের জন্যে।নয়নতারা ও হেমলতা গ্রামের কয়েকটি মেয়ের সাথে বসেছে।এবং এতোক্ষণ পরে নয়নতারার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে।হটাৎ সঞ্জয়ের কি হলো বোঝে না সে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নয়নতারার দিকে। তার বৌদিমণির হাস্যজ্জল সুন্দর মুখটির থেকে চোখ সরাতে পারে না সে। লাল টুকটুকে একটা শাড়ি নয়নতারার দেহে।মাথার কাপড়ের আড়ালে তার লম্বা কোকড়ানো চূলগুলো খোঁপায় করা।সঞ্জয়ের মন আনচান করে সেই খোঁপা খুলে দিতে,ফোলা ফোলা গাল দুটো টিপে দিতে। মনের ভাবনার ভিড় করে,বৌদিমণির গাল টিপলে বা ঐ লাল আভা ঠোঁটে চুমু খেলে কি হবে,সে কি হেমলতার মতোই লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠবে! ভাবনার মাঝে দুই জোরা চোখের মিলন হয়।দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে এক পলকহীন দৃষ্টিতে। সঞ্জয় বোঝা না কি হয়েছে তার,বলা চলে বোঝার চেষ্টাও করে না সে। এদিকে নয়নতারা মুখমণ্ডল লাল করে চোখ নামিয়ে নেয়। বিধাতার এই অদ্ভুত রীতি, মেয়েরা যে বুঝতে পারে পুরুষদের কামনার দৃষ্টি! তাদের থেকে কি আর লুকানো যায়....


ফেরার সময় সার্কাসের প্যান্ডেলের কাছে মন্দিরা হাতি দেখে দাঁড়িয়ে পরে। হাতিটা তখন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। একটা লোক হাতিটাকে কলাগাছের টুকরো খাওয়াচ্ছিল। সঞ্জয় মন্দিরার কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে

– কি হাতিতে চড়ে বসে থাকতে পারবি তো?

মন্দিরা আনন্দে লাফিয়ে উঠলেও নয়নতারা বেকে বসে।সে কোন ভাবেই মেয়েকে হাতির পিঠে ওঠাবে না।তবে সঞ্জয় কি আর সে কথা মানিবে!একটু কথা কাটাকাটির পরে ঠিক হয় সঞ্জয় মন্দিরাকে নিয়ে বসবে। তাই হাতির পিঠে ছড়ে জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে এগিয়ে যায় তারা ঘাটের দিকে। আর এদিকে হেম ও কিছু গ্রামের মেয়ে বউকে নিয়ে আলপথে ঘাটে আসে নয়নতারা।মেলা ভাঙ্গছে এখন। আর তাই দেখে সূর্যটায় পা ডোবাচ্ছে পশ্চিমে। মনে হয় যেন এতখনে ছুটি পেয়েছে সূর্য টা।

ঘাটে এখন অনেক নৌকার ভিড়। তারা যে নৌকোয় এসেছিল সেটিও ঘাটের এপাশে বাঁধা। তারা সবাই নৌকায় ওঠার পরে। নৌকাটি ঘাট ছাড়ে আর ঠিক ওই সময়ই হাতিটা শুঁড় উপরে তুলে বিরাট একটা আওয়াজ করে।সঞ্জয় নৌকার ছইয়ের বাইরে বসে ভাবে। আজ কতদিন পরে সে পরিবার নিয়ে মেলায় এলো সে।আবারও একটি বছর ঘুরে এই মেলা আসবে।তখনকি তার পাশে থাকবে এই মুখগুলো! নাকি চলে আসবে নদীর এই পারে তাকে আবারও একা করে।

ভাবনায় টান পরে সঞ্জয়ের। মুখ তুলে তাকায় সে মাঝির দিকে।বইঠা হাতে মাঝি গাইছে.....

"খাঁচার ভিতর অচিন পাখি"
"কেমনে আসে যায়"
"তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি"
"দিতাম পাখির পায়ে।"

/////

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামলো।নয়নতারা বাড়ির দোরের সমুখে বসেছিল অনেকক্ষণ।তার স্বামী ফিরবে আজ।থানা থেকে ছাড়া পেয়ে একটি বার নিশ্চয়ই আসবে তার কাছে।কিন্তু রাত গভীর হতেই সে আশা ভাঙ্গলো তার। এখন নয়নতারা তার খাটে বসে,হাতে একটা চিরকুট।এটি সে পেয়েছে বিছানা ঝাড় দেবার সময়।চিরকুটে লেখা "রাতে আসবে কিন্তু,ক্ষতিপূরণ এখনো যে অনেক বাকি রয়েছে তোমার" চিরকুট টা দুই একবার পরলো সে। অবশেষে সব হিসেব মিলিয়ে নিয়ে ধিরে ধিরে ঘরের বাইড়ে এলো সে।বাবুর ঘুম খুব কাচাঁ।একবার উঠলে আবার ঘুম পাড়ানো মুশকিল।তাই এতো সতর্কতা।

কিছু দিন ধরে সে দেখছে তার বোনটির পরিবর্তন।কেমন আনমনা হয়ে থাকে,একা একা হাসে।আর সবচেয়ে বড় কথা তার থেকে কথা লুকোয়। তার বোনটি তো আগে এমনছিল না,তবে কি হলো তার।এতদিন ভেবে না পেলেও,আজকে সব হিসেব মিলে গেছে তার। নয়নতারা এক দুটো ঘর খুঁজে নিশ্চিত হলো আগে।তারপর দোতলার সিঁড়ি ধরে ওপরে উঠে গেল। দোতলায় টানা বারান্দার শেষে সঞ্জয়ের ঘরে বাতি জ্বলছে এখনো। নয়নতারা ধিরে ধিরে এগিয়ে গিয়ে দরজার আড়াল থেকে উঁকি দেয় ঘরে। ঘরের ভেতর সে কি দেখবে তা সে আন্দাজ করেই এসেছিল। কিন্তু দৃষ্টি দেখার পরে সে আর থাকিতে পারিলো না। কোন এক কারণে তার নয়ন দুখানি জলে ভাসিলো। সে যে ভাবে আসিয়া ছিল সেই ভাবেই ধিরে ধিরে সরিয়া গেল।


সঞ্জয়ের ঘরে সঞ্জয় বেশ আরাম করে বসে ছিল খাটে পা ঝুলিয়ে। হেমলতা বসে তার পায়ের কাছে মেঝেতে। হেমের শাড়ির আঁচল খানি সঞ্জয়ের ডান হাতের কব্জি তে পেচানো। সুযোগে পেয়ে হেমলতা যেন পালাতে না পারে তার জন‍্যেই এই ব‍্যবস্থা।তবে হেমলতার পালানোর ইচ্ছে ছিল কি! অবশ্য তা বোঝা না গেলেও হেমলতার দেহের কাঁপুনি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

তবে এই কাঁপুনির কারণটি মোটেই সহজ নয়।আজ সঞ্জয় মেলা থেকে দুই প‍্যাকেট কাঁচের চুড়ি নিয়ে এসেছিল।এখন তারই একটি খুলে হেমলতার হাতটি তার হাতে তুলে পরম আদরের সহিত পরিয়ে দিচ্ছিল হেমলতা কে।চুড়ি পড়ানো হলে,সে হেমলতাকে তুলে বসায় তার কোলে। হেমলতার একটি হাত তার হাতে তুলে চুমু খায় সে। তারপর কোমল স্বর বল

– কালকে শহরে যাবো তোমার বাবাকে নিয়ে,কিছু দেবে না আমায়?

হেমলতা তাটায় সঞ্জয়ের পানে,কিন্তু কি বলবে ভেবে পায় না। বলি এই অভাগিনীর কি বা আছে দেবার মত! কিছুই নে শুধুমাত্র চাটনির বয়াম দুখানি ছারা।তাও তো তরই কিনে দেয়া।সে কেন নেবে এগুলো।

– কি দেবে না বুঝি?

হেমলতা এবারে আর চুপ থাকতে পারলো না। মৃদু স্বরে বলল।

– কি দেব আমি,কিছুই যে নেই আমার।
– কিছুই না!

হেম মাথা নাড়িয়ে বলে না। সঞ্জয় কি যেন ভাবে।তার পর বলে।

– তবে একটি প্রতিজ্ঞা দাও আমায়। যাই হোক না কেন তুমি আমার ঘরে বউ হয়ে উঠবে, অন‍্য কারো নয়।

হেমলতা লাজ্জে রাঙা হলো এবারে। কিন্তু এ প্রতিজ্ঞা সে কিভাবে দেয়। বলি ভগ'বান তার কপালে কি লিখেছেন সেকি তা জানে।

তবে সঞ্জয় নাছোড়বান্দা। সে ছাড়বে কেন! অবশেষে হেমকে বাধ্য হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হলো। হায় কপাল!যদি এই অভাগী জানতো সঞ্জয় তাকে কোন বিপদের দিকে ঠেলে দিল তবে কি আর...।না সে যাক গে ওতো পরের কথা। এদিকে কথা বলতে বলতে সঞ্জয়ের হাত দুটো কখন যেন হেমলতার ব্লাউজের ওপড়ে এসে পরেছে। হেমলতা অনুভব করলেও সরে পরার উপায় নেই। সে জানে আর অল্প কিছুক্ষণ পরে তার আঁচল খানি মাটিতে লুটিয়ে পরবে।তারপর সঞ্জয়ের অবাধ্য ঠোঁট জোরা চোষে বেড়াবে তার উর্ধাঙ্গের প্রতিটি নিষিদ্ধ খাঁজে।সে যতোই ছটফট করুক না কেন সঞ্জয় তাহাকে ছাড়িবে না.....অনেক কিছুই তো হলো আজকে।তবে বলি কি যার জন্যে পড়তে আসা তা হতে একটু দেরি হবে আর কি।তো অবশেষে গল্প ভালো লাগলে বলি।গল্পটি চলবে তো?
Like Reply
দারুণ দারুণ হচ্ছে
[+] 3 users Like Aisha's post
Like Reply
সুন্দর হচ্ছে
[+] 3 users Like Ari rox's post
Like Reply
খুব সুন্দর আপডেট। 
লাইক ও রেপু দিলাম। 
[+] 2 users Like buddy12's post
Like Reply
(06-05-2024, 04:52 PM)buddy12 Wrote: খুব সুন্দর আপডেট। 
লাইক ও রেপু দিলাম। 
দাদা তোমার লাইক রেপু না দিলেও চলবে।শুধু মাঝে মাঝে একটা মন ঠান্ডা করা মন্তব্য চাই, আর কিছু না।
তাছাড়া এই গল্পটা নিয়ে আমি খুব একটা আশাবাদী ছিলাম না।পাঠক পাবো এটাই তো ভাবিনি।তাই মন দিয়ে লিখতেও ইচ্ছে হয়নি। তবে গল্পটা শেষ করে "স্বামী" নামে একটা গল্প লিখবো।এবং মন দিয়ে লিখবো তখন ভালো লাগলে লাইক রেপু কমেন্ট যা খুশি দিও Big Grin
(06-05-2024, 01:41 PM)Ari rox Wrote: সুন্দর হচ্ছে
(06-05-2024, 12:02 PM)Aisha Wrote: দারুণ দারুণ হচ্ছে

ধন্যবাদ সবাইকে
[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
yourock horseride
[+] 2 users Like Mamun@'s post
Like Reply
(06-05-2024, 08:48 PM)বহুরূপী Wrote: দাদা তোমার লাইক রেপু না দিলেও চলবে।শুধু মাঝে মাঝে একটা মন ঠান্ডা করা মন্তব্য চাই, আর কিছু না।
তাছাড়া এই গল্পটা নিয়ে আমি খুব একটা আশাবাদী ছিলাম না।পাঠক পাবো এটাই তো ভাবিনি।তাই মন দিয়ে লিখতেও ইচ্ছে হয়নি। তবে গল্পটা শেষ করে "স্বামী" নামে একটা গল্প লিখবো।এবং মন দিয়ে লিখবো তখন ভালো লাগলে লাইক রেপু কমেন্ট যা খুশি দিও Big Grin

ধন্যবাদ সবাইকে

লাইক ও রেপু, লেখকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। 
[+] 2 users Like buddy12's post
Like Reply
(08-05-2024, 08:31 PM)buddy12 Wrote: লাইক ও রেপু, লেখকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। 
 ধন্যবাদ  yourock
[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
(08-05-2024, 08:31 PM)buddy12 Wrote: লাইক ও রেপু, লেখকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। 
[+] 2 users Like Rehan Hot's post
Like Reply
ভালো হচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছি না সঞ্জয় কাকে কামনা করছে, নয়নতারা না হেমলতা, নাকি দুজনকেই। তাহলে কি threesome আসছে। হলে ভালো হয়।
[+] 2 users Like evergreen_830's post
Like Reply
(11-05-2024, 11:59 PM)evergreen_830 Wrote: ভালো হচ্ছে, কিন্তু বুঝতে পারছি না সঞ্জয় কাকে কামনা করছে, নয়নতারা না হেমলতা, নাকি দুজনকেই। তাহলে কি threesome আসছে। হলে ভালো হয়।

 গল্পের কাহিনী টা খুব জটিল নয়।ঐ মাঝে মধ্যে হয়না আপনি যাকে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন,কিন্তু পরিস্থিতি  তার প্রতি ধিরে ধিরে কামোনার অনুভূতি তৈরী করে। এটা তেমনি একটা কাহিনী।
[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
(12-05-2024, 01:20 AM)বহুরূপী Wrote:  গল্পের কাহিনী টা খুব জটিল নয়।ঐ মাঝে মধ্যে হয়না আপনি যাকে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন,কিন্তু পরিস্থিতি  তার প্রতি ধিরে ধিরে কামোনার অনুভূতি তৈরী করে। এটা তেমনি একটা কাহিনী।

আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
[+] 2 users Like buddy12's post
Like Reply
(12-05-2024, 02:00 PM)buddy12 Wrote: আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।

দাদা একটু ব‍্যস্ত সময় কাটছে। লেখালেখির জন‍্যে নিজের যে একান্ত সময়টুকু, তা ঠিক এই ব‍্যস্ততার মাঝে বের করে নিতে পারছি না। তবে চেষ্টা করবো জলদি দেবার।
Like Reply
পর্ব ৯

– ..... এতকিছুর পরেও আবারও ওই লোকগুলোর সাথেই......


মেয়েটির মুখের কথা শেষ হলো না।তার আগেই মেয়েটির বলা সংবাদের ধকল সামলাতে সামলাতে নয়নতারা রান্নাঘরের দরজার পাশে "ধপ" করে বসে পরলো।তাই দেখে মেয়েটি ব‍্যস্ত হয়ে বলল

– কি হলো দিদি!

অবশ্য মেয়েটি যদিও জানে কি হয়েছে,তবুও কৌতুক করবার সুযোগ পেলে ছাড়ে কে!এতদিন ধরে স্বামীর করা অপরাধের নয়নতারাকে পাড়ার কিছু ছেলে বউরে হাস‍্যরশিকের পাত্রী হতে হয়েছিল।এখন সোহম জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাজেন্দ্র রায়ের সাথে গেছে বাইজি খানায়। এই কথা শুনে বুকের ভেতরে কোন এক নরম জায়গায় আঘাত লাগলো নয়নতারার। যেন একটি ত্রিশুল তার বুকখানি এফোর ওফোর করে বিধিয়ে দিল কেউ। এই ব‍্যথা কেহ বুঝিবে আর কেহ আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসিবে,এই কথা নয়নতারার জানতে বাকি নেই। তবে অশ্রু! না অশ্রু বেরোয়নি। কি করেই বা বেরুবে! এই অভাগীনি যে সারাটা রাত কাঁদলো; তার খবর কেইবা রাখে!

পুরো ঘটনা না জানলেও, সোহম যে বাইজি খানায় গেছে,এই কথা গ্রামে রটেছে দ্রুতবেগে। এই লজ্জা কোথায় আর লুকাবে সে! কয়েকদিন আগে সে বড় মুখ করে পাড়ার মেয়েদের বলত স্বামীর তার প্রতি অগাধ ভালোবাসার কথা। কিন্তু এবার! কোথায় মুখ লুকাবি রে তুই পোড়ামুখি! বলি সব দোষ কি আর মিথ্যা ভালোবাসার পর্দায় ঢাকা পরে রে পাগলী।

হেমলতা এতখন বসার ঘরের দরজার আড়ালে দরজার ছিল।আর কেহ না জানলেও তোমরা নিশ্চয়ই জানো, মেয়েটা কেমন মুখচোরা ও ভীতু স্বভাবের।কিন্তু এইবার দিদির এই হাল দেখে ছুটে এলো সে।তবে বলাই বাহুল্য দিদির দুঃখে হেমলতা কি বলে শান্তনা দেবে তা ভেবে পেল না। তার বদলে দুই হাতে দিদির গলা জরিয়ে দিদির কাঁধে মাথাটা নামিয়ে দিল সে....

/////

সঞ্জয় ছিল গঞ্জে। ওখানে থেকে মাঝি পাড়ার এক চেনা নৌকার ব‍্যবস্থা করে। তবে সে একটা গরুর গাড়ি নিয়ে ফিরলো বাড়িতে।

আজ তালতলার চায়ের দোকানটি কোন কারণে বন্ধ। দুই তিনটি ছেলে-মেয়ে দোকানের বাইরের দিকটায় বসে কি যেন করছিল । রাস্তায় বিশেষ কারো সাথে দেখা না হওয়ার কারণে তার দাদার খবর খানি সে শুনলো হেমলতার মুখে। এর সাথে আরো শুনলো নয়নতারা তার সাথে যেতে চাইছে শহরে।

সঞ্জয় এতখন হেমলতাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রান্নাঘরের পাশে জাম গাছটির আড়ালে।সুর্য মাথার ওপড়ে উঠছে ধিরে ধিরে।অন‍্য সব দিনে এই সময়ে নয়নতারার থাকে রান্নাঘরে,সে উনুন জ্বেলে রান্নার বন্দোবস্ত করে।তবে আজ রান্নাঘরটি ফাঁকা।তা কেন বা কি কারণে তা আমরা সবাই ইতি মধ্যেই অবগত।তবে সঞ্জয় শুধু দাঁড়িয়ে ছিল তা ঠিক নয়। সঞ্জয় পাকা খেলোয়াড় বা ব‍্যবসায়ীও বলা চলে। তাই দখল বসিয়ে ভোগ করবে না এমন দয়ালু হলে তার চলবে কেন! অন্তত লাভ টা তো বুঝে নেওয়া চাই।

তাই তো বিচ্ছেদের আগে ভালো মত হাতের ও মুখের সুখখানি করে নিতে ভোলেনি একদমই।পাছে ধরা যেন না পরে সেই জন্যে আজ হেমলতার শাড়ি ও ব্লাউজের ওপড় দিয়েই দুহাতে দুই মাই টেপন এবং সেই সাথে ঠোঁটে, গালে ,গলায় অজস্র চুম্বন শ্রাবণের বারিধারার মতোই যেন আছড়ে পরছিল। এদিকে বেচারী হেমলতা ভয়ে সরা। সে একবার এদিকে পানে চায় তো আর একবার ওদিক পানে।তবে এতে তার বিশেষ লাভের কিছুই হচ্ছে না। কারণ তার চোখের নজরে একদিকে পরছে রান্নাঘরে দেয়াল ও অন্য দিকে তার দিদির বানানো ছোট বাগান টি।তার ওপড়ে সঞ্জয়ের প্রশ্নের জবাবে কথাও ঠিক মত বলতে পারছে না।ভয়ে তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মনে মনে সে যে কোন দেব,তার কাছে প্রনাম ঠুকল। তা বোঝা না গেলেও, সঞ্জয়ের এবারের মতো তাকে ছাড়লো খুব সহজেই। এবং হেমের লজ্জায় রাঙ্গা দুই গালে দুহাত রেখে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল।

– বৌদিমণির সাথে কথা বলছি আমি।বলেইতো আর যাওয়া হয় না।বাবু, মন্দিরা ওরা আছে তো,সে কথা ভেবে দেখবে না।

এই বলে সে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা খাম হাতে নিল সে। সেই সাথে হেমলতার শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিল এক ঝটকায়। হেমলতা দুপা পেছনে সরতে গিয়ে পিঠ ঠেকলো তার গাছে। বোধকরি ছুটে পালাতে মনস্থির করেই পাশ কাটাতে চাইছিল সে। তবে সম্ভব হলো না।সঞ্জয়ের হাতের বিশাল থাবায় আটকে গেল সে। এতক্ষণ ও দুটো টিপে যেন শান্তি হয়নি সঞ্জয়ের।তাই বুঝি শক্ত হাতে আলতো ভাবে আবারও টিপতে লাগলো সে। দুইতিন বার টিপেদিয়ে চারটে আঙ্গুল দিয়ে ব্লাউজের গলায় ধরে কাছে টেনে আনলো হেমকে। বাঁ হাতে খামটা ঢুকিয়ে দিল ব্লাউজের গলার ফাঁক দিয়ে।ঠিক বাম পাশেটায়। এরপর হেমলতার কম্পিত ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে দুই হাত হেমের বুকে রেখে বলল।

– ফিরে আসা পর্যন্ত সামলে রেখো এই দুটি,যত্নের যেন কমতি না হয়।এই দুটি আমার খুবই শখের খেলনা মনে থাকে যেন।

হেমলতা তার লজ্জায় আরক্ত মুখখানি আরো নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। সঞ্জয় চোখের পলকে তাহা লক্ষ্য করিয়া বোধকরি একটু হাসিলো এবং এগিয়ে গেল নয়নতারার ঘরের দিকে....

/////

নয়নতারার ঘরে প্রবেশ করা মাত্র সঞ্জয় দেখলো।নয়নতারা ইতি মধ্যে তার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস একটা কাপড়ে বেধে নিয়ে বসে আছে। তার ভাবখানা এমন যে সে এখনি বেরোয় আরকি। সঞ্জয় অনেকখন বুঝিয়ে অবশেষে নিজেই দমিয়া গেল। নয়নতারার এই রূপ নারী মূর্তিকে টলানো তাহার সাধের বাইরে বলিয়াই মনে হয়।

অবশেষে যখন সবাই দেখলো নয়নতারাকে টলানো রিতিমত অসম্ভব।সেই মুহূর্তে মিনতী দেবী সঞ্জয়কেই বোঝাতে বসিলেন।

– দেখ একটা মেয়ে মানুষ না থাকলেই বা চলবে কেন! আমি তো আর অত ধকল নিয়ে যেতে পারবো না।জানোই তো আমার দূর্বল শরীর। তা বলি কি নয়না না হয় গেল তোমার সাথে।অসুস্থ রোগিটা একটু যত্নআত্তি পাবে।তাছাড়া ওখানে রান্নাবান্নার ব‍্যপার টাও তো দেখতে হবে নাকি!

এই প্রস্তাবে সঞ্জয়কে খুব একটা প্রসন্ন না দেখা গেলেও, নয়নতারা তার পিছু ছাড়লো না।এদিকে দুপুরের ট্রেন মিস হবে বলেই মনে হয় এবং আরো বেশি দেরি করলে রাতের ট্রেন হাতছাড়া হবার ভয় তো আছেই। সুতরাং অবশেষে সঞ্জয়,নয়নতারার বাবা ও নয়নতারা বাবুকে কোলে নিয়ে গরুর গাড়িতে চড়ে বসলো।গাড়িটা চলতে শুরু করা মাত্র নয়নতারা একটি বার পেছন ফিরে দেখলো,তাদের বাড়ির ছাদের দিকে।হেমলতা মন্দিরাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুকখানি কেমন করে উঠলো তার।তবে মন্দিরা মুখে দুঃখের কোন ভাব দেখা গেল না। বোধকরি মন্দিরার মায়ের থেকে মাসির টানেই বেশি। তবে হেমলতা কাঁদছে।মন্দিরা তার ছোট ছোট হাতে বুঝেই তার মাসি চোখের অশ্রু মুছে দিচ্ছে। এই দৃশ্য কিছুটা অবাক করলো তাকে।তার মনটি ভাবতে বসলো,বড় হয়ে তার ছোট্ট মেয়ে ঠিক কার মতো হবে।


তালদিঘি গ্রামটি থেকে শহর অঞ্চলে যাত্রা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। নৌকায় দুই গ্রাম পেরিয়ে তবে মধুপুরের মাঠ—একটা ছোট স্টেশন। ট্রেন দাঁড়ায় কি দাঁড়ায় না। সকালে-বিকেলে দুই চারজন মানুষকে উঠতে-নামতে দেখা গেলেও দুপুরে প্রায়ই অকারণে ট্রেন ক্যাঁচ শব্দে দাঁড়ায়; তারপর ক্যাঁচকোচ শব্দে লোহায় লোহায় ঘষাঘষির আওয়াজ করতে করতে ছাড়ে। তবে ভাগ্য খারাপ, এখন আর দূপুরের ট্রেনটি আর পাওয়ার উপায় নেই।পরের ট্রেনের খবর হতে হতে সন্ধ‍্যে। এদিকে সঞ্জয়ের চিন্তা সময় মত স্টেশনে পৌঁছালে তবে শেষ হয় আর কি।

////////

ছায়ামতির জলে দুটো নৌকা এক সাথে ভাসছে। তীরের পাশে একটা গাছের শেকড়ে নৌকা দুটো বাঁধা।একটি সঞ্জয়ের ও অপরটির অচেনা।তবে একে নৌকা না বলে ডিক্তি বলা ভালাে। আকারে তেমন বড় নয়। চার-পাঁচজন আরােহী বসতে পারে মাত্র।তবে নৌকা টি দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না মোটেও। জলতরঙ্গগুলাে ছলাৎ ছলাৎ করে তীরভূমিতে আছড়ে পড়ছে। আছড়ে পড়ার শব্দ ঈষদুচ্চকিত। মৃদু তরঙ্গাঘাতেই নৌকাটি অল্প অল্প দুলছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি ভেঙ্গে পরে নৌকাটি।

নৌকা থেকে একটু দূরে মাঠে বসে রান্না ব‍্যস্ত দুই রমণী। একজন নয়নতারার ও অন‍্য জন্য অপর নৌকার আরোহী। দুই রমণীর সকল রমণীয়তা তাদের সর্বাঙ্গ জুড়ে। নয়নতারার কথা তোমাদের জানা কথা তবে রমণীটি অতিশয় সুন্দরী। মানুষ যে অর্থে সুন্দরী নারী বােঝে, এই নারী সে অর্থে সুন্দরী নয়। তার শরীরে গৌরবর্ণের আভাসটুকুও নেই। গৌরবর্ণীয় দুর্বলতাটুকু সৌন্দর্য নির্ধারণের মাপকাটি হতে পারে না। যুবতিটির গায়ের রং ঘাের কৃষ্ণবর্ণ। সৌন্দর্য সম্পর্কে আদি বিশ্বাসটুকু মন থেকে ঝেড়ে ফেলে এই রমণীর দিকে তাকালে যেকোনাে বয়সের পুরুষের দৃষ্টি আটকে থাকবে ওই নারীর দেহে। তাকে দেখে মানুষের ইন্দ্রিয়সমূহ চঞ্চল হয়ে উঠবেই। তবে সে যাই হোক কথা হল আমরা এখানে কেন! নদীর এই অংশটি কিঞ্চিৎ সংকুচিত। জলধারা কম স্রোতময়। নর্দীর বুকজুড়ে এখানে ওখানে চর। দূরের একটা চর বৃক্ষময়। ওই চরের পাশ ঘেঁষেই ওপারে যেতে হবে। এই অঞ্চল দিয়ে নদী পারাপারের জন্য লােক আসে। এদিক দিয়ে পারাপারে সময় লাগে কম, তাই নদীর এই অংশটিই পারর্থীদের পছন্দ। পরিশ্রম কম লাগে বলে নৌবাহকেরও পছন্দ এই অঞ্চলটি। তবে অপর নৌকার আরোহী বিপদে পরে নৌকা থামিয়েছে এখানে।তাদের নৌকার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।এটি অবশ্য এক নজর তাকালেই বোঝা যায়। সঞ্জয় ও মেয়েটির স্বামীএকটি গাছের তলায় বসে কথা বলছিল।

– নতুন বৌ নিয়ে শহরে ঘুরতে যাচ্ছেন বুঝি?

– না না দাদা ঘুরতে নয়,আমি কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকি,তাই আরকি।

সঞ্জয় ভালো ভাবে একবার চোখ বুলিয়ে নিল লোকটার ওপরে। বেশ শান্ত ও হাসি খুশি মুখ ছেলেটার। বয়স কম। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হলেই দেখতে বেশ।গায়ের রং শ‍্যামলা।

– দাদা আপনাকে বড্ড অসুবিধায় ফেললাম...

ছেলেটার কথা শেষ হবার আগে সঞ্জয় তাকে থামিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

– অসুবিধায় ফেলেছো কি না তা মধুমতি পৌঁছনোর আগে বোঝা যাচ্ছে না।

ছেলেটি হয়তো কিছু একটা বলতে চাইছিল।কিন্তু সঞ্জয় না দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল নয়নতারার দিকে। নয়নতারার ও মেয়েটি কি নিয়ে যেন কথা বলছিল।সঞ্জয়কে আসতে দেখে কথা থেমে গেল তাদের।এই পর্যন্ত সারাটা পথ নয়নতারা মুখ ভার করে বসে ছিল।এখন তাকে যেন বেশ হাসিখুশী লাগছে।

– বৌদিমণি তোমাদের হলো,ওদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে যে।

কথাটা বলেই সঞ্জয় লক্ষ্য করলো মেয়েটা কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেল।সেই সাথে নয়নতারার মুখখানি কোন কারণে লাল হয়ে উঠেছে।নয়নতারা মৃদু স্বরে বলল।

– আর একটু সময় লাগবে।

সঞ্জয় রিতিমত অবাক হল।নয়নতারা তার সাথে এমন সংকোচের সাথে কথা বলছে কেন বুঝতে পারলো না।তবে সে আর কথা না বারিয়ে সরে পড়লো।

অবশেষে রান্না শেষ হলে সঞ্জয় তারা দিল সবাইকে। তাই নৌকা জলে ভাসিয়ে তারা খেতে বসলো নৌকার ছইয়ের ভেতরে। নতুন বিবাহিত দম্পতিয় এবার তাদের সাথে যাত্রা করলো। নয়নতারা পাশে বসে হাতপাখার বাতাস করছিল।একটু দূরে মেয়েটি বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছে।

– কলকাতায় কিসের কাজ করেন আপনি?

– দাদা কাপড়ের কারখানায়,এই বছর দুই এক ধরে করছি।এবারের ছুটি নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম।

– বিয়ের জন‍্যে বুঝি?

সঞ্জয়ের প্রশ্নে ছেলেটা কি একটা ভেবে তারপর বলল।

– ঠিক তা নয়....আসলে দাদা হয়েছে কি...আসলে..

– বলতে না চাইলে থাক। বৌদিমণি তোমার খেতে বসলে না যে!

– তোমরা খেয়ে নাও আগে। আমি বাবাকে খাইয়ে পরে বসছি।

– দিদি এদিকে এসো তো একটু।

মেয়েটির ডাকে নয়নতারার উঠে গেল যেদিকে।আর একটু পরেই মেয়েটি একহাত ঘোমটা টেনে এসে বসলো নয়নতারার জায়গায়।আর নয়নতারা বাবুকে দুধ খাওয়াতে বসলো ছইয়ের এক কোণে।

– দূরের যাত্রা কেউ এমন ভাঙ্গা নৌকার করে! কি বুঝে ওই নৌকায় উঠেছিলে বলোতো।

সঞ্জয়ের প্রশ্নে ছেলে বেশ লজ্জিত হলো।এবং একটু পরে বলতে লাগলো।

– দাদা কিছু করার ছিল না,আগামীকাল আমার ছুটি শেষ।তার ওপড় বজ্জাত মাঝি আগে বলেনি নৌকার এই অবস্থা।কি করে বুঝবো বলুন তো

সঞ্জয় লক্ষ্য করলো।স্বামীর অপটুতায় কথা বোধ করি তার নববধূর মনে লাগলো।তার হাতপাখার গতি কমতে লাগলো।তাই এই আলোচনা আর এগিয়ে না নেওয়াই ভালো ভেবে সঞ্জয় খাবারের মনোনিবেশ করলো।


তারা যখন স্টেশনে পৌঁছলো তখন সন্ধ্যা নামছে।ট্রেন এখনো আসনি।তাই টিকিট করে বসে থাকা ছাড়া তাহাদের আর বিশেষ কিছুই করার নেই বলেই চলে।তবে নয়নতারার মনটি এখনো ফুরফুরে।সে নতুন সঙ্গী পেয়ে আলোচনা করতে ব‍্যস্ত।

– দাদা!

হঠাৎ ডাকে পাশ ফিরে দেখলো ছেলেটা হাতে সিগারেট লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সঞ্জয়কে দেবে কি দেবে না বা দিলে সঞ্জয় রাগান্বিত হবে কি না,তা ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই ডাকে বসেছে সে।সঞ্জয় ধূমপান যে একদমই করে না তা নয়।শখের বশে শন্তুর চায়ের দোকানে বসে একদুবার টেনে দেখেছে সে।তবে তার ওসব পোষায় না। তবুও সে সিগারেট নিল ছেলেটার হাত থেকে।একটা দুটো টানে আর কিইবা ক্ষতি হবে।

কিছুক্ষণ পরেই দূরথেকে ট্রেনের শব্দ কানে এলো। আর একটু পরেই যাত্রা শুরু হবে গ্রাম ছেরে দূরে।কবে ফিরবে তাও বলা যায়না। হেমলতার কথা হঠাৎ মনে পরলো তার।মেয়েটি নিরীহ।ঠিক লতা গাছের মত।যা পায় তাই আঁকড়ে ধরতে চায়। কিছু বছ‍র আগে যখন বৌদিমণির সাথে দেখা করার অপরাধে হেমলতা তাকে ধরিয়ে দিল।সেদিন দাদা হাতে মার খেতে খেতে সে হেমের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেছিল।তোকেই আমি আমার ঘরে তুলবো,তারপর বোঝাবো মজা,মনে রাখিস এই কথা। হেমলতা তার সেই চোখের ভাষা ঠিক কতটুকু বুঝেছিল তা বলা মুশকিল।তবে ঐদিনের পর তাকে দেখলেই হেমের ছুটে পালানো কি আর কম উপভোগের জিনিস।

– দাদা! ট্রেন চলে এলো যে

ছেলেটির কথায় সঞ্জয় মুখ ফিরিয়ে দেখলো নয়নতারাকে। একটু দূরে নয়নতারা তার বাবাকে জল খাওয়াছিল।সে এগিয়ে গেল সেদিকে।.....গল্পের নায়িকা চললো কলকাতার উদ্দেশ্যে।তবে আমার গল্প চলবে কি না সেই প্রশ্ন রইলো পাঠক পাঠিকাদের কাছে!?
Like Reply
এক কথায় অসাধারণ গল্প।
[+] 2 users Like Lustful_Sage's post
Like Reply




Users browsing this thread: halum.halum, 22 Guest(s)