Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মাঝে মাঝে আনন্দযাপনও বেশ কষ্টের হয়ে ওঠে। ভগবানের আশীর্বাদে দু-দশ টাকার হিসেব হয়ত আমাদের অনেককেই করতে হয় না। ওইটুকু খরচ করার সামর্থ্য দিয়েছেন। সেই আনন্দযাপন করতে গিয়েও অদ্ভুত একটা কষ্ট ঘিরে ধরল। ছেলেটার বয়েস কত আর হবে পাপানের থেকে বছর দুয়েকের বড় হবে। কিন্তু লম্বা-চওড়ায় ছোট। সামনে এসে মিষ্টি করে বলল, মাসিমণি কমলালেবু নেবে? খুব মিষ্টি। ছোট্ট ঝুড়িতে অল্প কমলা রয়েছে।
মুখটা ভারি মায়া মাখানো। মাসিমণি ডাকটাও খুব মিষ্টি করে বলল। বললাম, ঠিক বলছিস মিষ্টি হবে?
ঘাড় নেড়ে ব্যবসাদারী ঢঙে বলল, নাহলে পয়সা ফেরত।
দুটো লেবু হাতে নিয়ে বললাম, এই দুটো তুই আগে খেয়ে বল মিষ্টি কিনা। অপ্রস্তুত হয়ে বলল, আমি খেয়ে কী হবে? তোমায় ভেঙে দিই তুমি খাও।
আমি বললাম, ওসব হবে না। তোকে খেয়ে বলতে হবে মিষ্টি না টক। এই দুটোর টাকাও আমিই দেব। খেয়ে বল কেমন? যদি টক হয় তো তোর মুখ দেখেই বুঝে যাব আমি। একমুখ হেসে বলল, তুমি কি ডাক্তার? মুখ দেখেই বুঝে যাবে?
আমি বললাম, বিশাল ডাক্তার আমি। তুই খা আগে।
একটা লেবু নিয়ে ভেঙে বেশ তারিয়ে তারিয়ে খেয়ে বলল, দেখো আমার মুখ দেখো...টক হলে আমি জিভে আওয়াজ করতাম। মিষ্টি বলেই তো, সোনা মুখ করে খাচ্ছি। আহা শৈশব এখনও রয়ে গেছে।
দ্বিতীয় লেবুটা খাওয়ার আগে বলল, মাসিমণি এটার দামও তুমি দেবে?
আমি হ্যাঁ বলতেই বলল, তাহলে এটা বাড়ি নিয়ে যাই। বোনের জন্য, ও খাবে। আসলে নারায়ণজ্যাঠা এইগুলো বেচে দিলে আমায় টাকা দেয়। নারায়ণজ্যাঠার ফলের দোকান। বুঝলাম, কোনো ফলের দোকান থেকে অল্প ফল নিয়ে এসে বিক্রি করে ঘুরে ঘুরে। তার বিনিময়ে অল্প টাকা পায়। দুটো লেবুর একটা আবার বোনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা। আমার আনন্দযাপনে একমুঠো কষ্ট ঢেলে দিলো যেন। আজ ব্যাগ বোঝাই করে পাপানের ছোট হওয়া নতুন নতুন জামা, জুতো... একবার দুবার পরা সোয়েটার বয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
দেখি আনন্দযাপন হয় কিনা।
কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে প্লেটে সাজিয়ে দিলে মুড থাকলে খাওয়া, না থাকলে খাবো না বলা আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা বুঝলই না জীবনযুদ্ধ কার নাম! এতটুকু ছেলে জানে শীতের পড়ন্ত বিকেলের মধ্যে অন্তত পঞ্চাশটা লেবু বেচতে পারলে দশটাকা পাওয়ার মূল্য কী!
শৈশব বড় তাড়াতাড়ি চলে যায় এদের জীবন থেকে। অথবা আসেই না।
মুড অফ, ডিপ্রেশন, প্রাইভেসি, অ্যাডোলেসেন্ট পিরিয়ড এসব কথার মানেই জানে না ওরা। শুধু একটাই অনুভূতি সদা জাগ্রত...খিদে পাওয়া।
জীবনটা বড্ড হিসেবি, একটু হাসি দিতে গিয়েও দেয় না। ঠিক যেন রোদ ঝলমল আকাশে একটুকরো মেঘের আনাগোনা। একটা লেবু খেয়েই মনে পড়ে যাওয়া বাড়িতে বোন আছে।
©কলমে-অর্পিতা সরকার
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
"শ্বশুরবাড়ির লোক আমাকে যে এভাবে টুপি পরিয়ে দেবে আমি ভাবতেও পারিনি।আমার বিয়ে বেশিদিন হয়নি,কিন্তু এর মধ্যেই আমি গন্ডোগোলের আগাপাশতলা আঁচ করতে পেরেছি।আমার বউ এর নাম ইন্দিরা।আমার বউ এমনিতে সুন্দরী, গলার কণ্ঠস্বর ও মিষ্টি কিন্তু ওর একটা অদ্ভুত রোগ আছে,যেটা আমাকে বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ী থেকে কেউ জানায়নি, আমি বিয়ের কিছুদিন পর নিজে থেকেই জানতে পেরেছি।রোগের নাম ও অদ্ভুত, পিকিউলিয়ার কন্ডাক্টর সিন্ড্রোম। মানে,আমার বউ থেকে থেকে বাসের কন্ডাক্টরের মতো আচরণ করে ওঠে।অবচেতন মনেই। সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি। প্রথম যেদিন টের পেলাম,সেদিন আমাদের ফুলসজ্জা। আমাদের যেহেতু দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল,তাই আমি ঠিক করেছিলাম ওকে সহজ হবার জন্য সময় দেবো।স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা নতুন পরিবারের সদস্য হয়েছে সে,তার কাছে প্রায় সবকিছুই নতুন।সে ডিভোর্সি ও নয়,আমাদের দুজনেরই এটা প্রথম বিয়ে,তাই বিয়ে নিয়ে তার অভিজ্ঞতাও নেই বিশেষ।দু একটা বিয়ে করলে হয়ত ধাতস্থ হতো।আমি তাই ঠিক করেই নিয়েছিলাম,ফুলসজ্জার রাতে দু একটা কথা বলেই ঘুমিয়ে পড়বো।সারাদিনের খাটাখাটনিতে দুজনেই ক্লান্ত থাকবো। সেটাই বরং ভালো হবে। আমি সেইমতো সবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর দরজায় ছিটকিনি তুলে দিয়ে বিছানায় বউ এর পাশে এসে বসলাম।দেখলাম ও চুপ করে বসে আছে।আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।দু একটা কথা না বললেও নয়।অভদ্রতা হয়।কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে শেষমেশ বললাম,"তুমি নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে আছো।" ইন্দিরা মাথা নাড়ল।আমিই আবার বললাম,"তাহলে শুয়েই পড়ো নাকি!" ইন্দিরা বোধহয় বুঝল ওর ও দু একটা কথা বলা উচিৎ।ও ইতস্ততভাবে বলল,"না না কথা বলুন না।" আমি এক মিনিট ভেবে বললাম,"তুমি সহজ হতে পারো আমার সাথে।আমাকে আপনি করে বলতে হবেনা।আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো নিঃসন্দেহে।আমার সাথে ইয়ার্কি মারতে পারো।মানে ফ্র্যাঙ্ক হতে পারো।" ইন্দিরা লাজুক মুখেই আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠল,"কই আপনার টা দেখি।" এই আমি যে আমি এতক্ষণ ফ্র্যাঙ্ক হবার ব্যাপারে এত কথা বললাম,সেই আমিও লজ্জা পেয়ে গেলাম।কোনোরকমে বললাম,"মানে আজকেই! মানে এত তাড়াতাড়ি না করলেও হবে ।" ইন্দিরা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি জেগে রইলাম . . . . অনেকক্ষণ . . . . অপেক্ষায় . . . ? শেষে হতাশ হয়ে ভোর চারটের সময় ঘুমোতে গেছিলাম।তখন কি আর জানতাম ইন্দিরা আমার কাছে টিকিট চাইছিল.. অন্যকিছু না.. যাকগে। আমার তাড়া ছিলনা বাপু। তখনও কিছু আন্দাজ করতে পারিনি।ইন্দিরা আমার সাথে তেমন কথা বলতোনা।ইশারায় ইঙ্গিতে কথা বলতো।মাঝেমাঝে মনে হতো আমার বউ হয়ত বোবা।তাতে অবশ্য আমার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছিলনা। মুখ খোলেনা খোলেনা,কিন্তু যেদিন মুখ খুলল সেদিন গোটা বাড়িতে হইচই পড়ে গেলো।প্রথমেই বলে রাখি আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি।এই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগে যখন সবাই আলাদা আলাদা কক্ষপথে নিজস্ব পেয়ার তৈরি করে ইলেকট্রনের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে আমার বাবা আর জ্যাঠা সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসাথে থাকবে আমাদের পৈতৃক ভিটেয়।আমিও তাই আমার জেঠতুতো দাদার সাথেই বড়ো হয়েছি।আমাদের মধ্যে বেশ মিলমিশ।ভালোবাসা।যাইহোক কথা থেকে সরে যাচ্ছি। আমাদের এই পুরোনো বাড়িতে একটাই সমস্যা আর সেটা হল বাথরুম। গোটা বাড়িতে মাত্র দুটো বাথরুম।একটা বাড়ির বাইরের দিকে।সেটায় খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ যাইনা।বাড়ির মধ্যে যে বাথরুম টা আছে সেটাই সবাই ব্যবহার করি।ইন্দিরা সেদিন স্নান করতে ঢুকছিল,হঠাৎ আমার জ্যাঠা পেটে হাত দিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলে, "বৌমা তুমি একটু বাইরেরটায় যেতে পারবে। আমার ভীষণ এমারজেন্সি এসেছে।" আমার জ্যাঠা সরল মানুষ। সরল মনেই কথাটা বলেছিল।সে আর কি করে জানবে আমার বউ প্রত্যুত্তরে আচ্ছা না বলে বলবে,"চলুন চলুন ভিতরে চলুন।আরও একজনের জায়গা হবে।" কথাটা শুনেই তো আমার জ্যাঠার ফেটে গিয়েছিল.... . . . . চোখ . . বিস্ময়ে . . এই ঘটনাটা আমাদের বাড়িতে আমাশার মতো ছড়িয়ে পড়ল।জেঠু এরপর আর কোনোদিনই ইন্দিরার মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখায় নি। বেশ কয়েকদিন ট্রমাতেও ছিলেন।ইন্দিরাও দরজায় খিল তুলে বসেছিল।সবাই আড়ালে কথা বলতে শুরু করেছিল।ব্যাপারটা আমার খারাপ লাগল ।ইন্দিরার সাথে আমার কমদিনের পরিচয় হলেও সে আমার বউ।আর তাছাড়া ইন্দিরা এরকম ভাবে বললোই বা কেন! সেটা জানাও প্রয়োজন। আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে সরাসরি ওকে প্রশ্ন করলাম,"আচ্ছা তুমি সত্যিই জেঠুকে ওই কথাটা বলেছো?" ইন্দিরা নিরুত্তর। আমি আবার প্রশ্ন করলাম,"কেন বলেছো?"। এবার একটু কড়া ভাবে। বুঝলাম ও ঘামতে শুরু করেছে। তবুও কোনো উত্তর দিলনা।আমি থাকতে না পেরে গলাটা আর একটু তুলে দিলাম,"বলবে কি কিছু?" দেখলাম ইন্দিরা চোখে জল চলে এসেছে।ও ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,"আমি ইচ্ছে করে বলিনি।এটা আমার একটা রোগ।" "রোগ?",আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম,"তোমার বাথরুমে যেতে গেলে সঙ্গে কাউকে লাগে? আমাকে বলতে।জেঠুকে কেন বলতে গেলে?" ইন্দিরা কেঁদে উঠল,"আসতে। আসতে।লেডিস আছে।" আমি চমকে উঠলাম।ঘরের বাইরে থাকা আমার মা আরও চমকে উঠল।মায়ের হাত থেকে গরম চায়ের কাপ পড়ে গিয়ে ভেঙে টুকরোটুকরো হয়ে গেলো। আমাদের কথা এগোলোনা আর। কিন্তু আমার মনে সন্দেহ দানা বেঁধে গেল,কিছু একটা ঘোটালা আছে।আমাকে জানতে হবে।ঠিক করলাম একেবারে কোম্পানিতে গিয়েই খোঁজ নেবো,ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্ট টা কি,কারন আমি তো "হ্যান্ডেল উইথ কেয়ার" করেছি। তাই সেই মুহূর্তে আর কিছু বললাম না।ইন্দিরাকে শান্ত করলাম।ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,"আচ্ছা তোমাকে আর কিছু বলতে হবেনা।আমি বুঝতে পেরেছি।আমি জেঠুমণিকে বুঝিয়ে বলে দেবো।" দুদিন পরে শ্বশুরবাড়িতে গেলাম।আমাকে দেখে শ্বশুরমশাই এর কপালে ভাঁজ দেখা দিল।আমি সরাসরি তাকে প্রশ্ন করলাম,"আপনার মেয়ের রোগ টা কি বলুন তো।" শ্বশুর মশাই এড়িয়ে যেতে চাইলেন,"কি রোগ থাকবে? কিছু তো নেই। তুমি বসো।আমি ইন্দিরার মাকে চা করে আনতে বলি।" আমি শ্বশুরমশাই এর হাত ধরে ওনাকে বসিয়ে দিলাম,"পরিষ্কার করে বলুন তো।ব্যাপার টা কি।আপনার মেয়ে নিজে আমাকে বলেছে ওর রোগ আছে। কি রোগ সেটা বলেনি। বাড়িতে এমনি তেই অনেক ক্যাচাল হয়ে গেছে।আপনি আর কথা ঘোরাবেন না প্লীজ।" শ্বশুরমশাই বুঝলেন। পালাবার আর পথ নেই। উনি আমতাআমতা করে আমাকে সবটা বললেন।শুনে তো আমার মাথায় হাত।এরকম আবার হয় নাকি? এ তো প্রথম শুনছি। কেউ থেকে থেকে বাস কন্ডাক্টরের মতো হয়ে যায়! আমি ঘটনাগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম।দুয়ে দুয়ে চার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাও,এ আবার কি অদ্ভুত রোগ রে বাবা। আমি হাজার টা চিন্তা করতে করতে যখন বাড়ি ফিরি তখন দেখি বাড়ি পুরো শুনশান। জ্যাঠারা কেউ বাড়িতে নেই।বাবাও নেই। কেবল এক কোণে আমার মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমি ব্যাগ নামিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলাম,"মা কি হয়েছে গো? কাউকে দেখছিনা।" মা কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,"সবাই অর্পিতাকে নিয়ে নার্সিংহোমে গিয়েছে।" "বৌদি নার্সিংহোমে।",আমি চমক উঠলাম,"কি হয়েছে? " মা ফোঁস করে উঠল,"কি আবার হবে। তোমার ওই গুণধর বউ এর জন্য এবার আমাদের বাড়িতে আগুন লাগবে।" আমি ঢোক গিললাম,"কেন ইন্দিরা আবার কি করল?" মা যেন আরও ক্ষেপে গেল,"কি করেছে? অর্পিতা ছাদে রেলিঙে ভর দিয়ে কাপড় মেলছিল।তোমার বউ হঠাৎ করে আমার সামনেই ওকে ডেকে বলল,'বাঁয়ে বাঁয়ে'। বেচারি অর্পিতা বাঁদিকে কাত হতেই ধড়াম করে ছাদ থেকে পড়ে গেল।কে জানে কত গুলো হাড় ভেঙেছে!" আমি আঁতকে উঠলাম।মাকে কি করে বলবো,তোমার বৌমা জাত কন্ডাক্টর। চুপচাপ কেটে পড়েছি ওখান থেকে। আপাতত ভাড়াবাড়িতে আছি। বাবা ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।একটা ফ্ল্যাট খুঁজছি।এখানেও বেশিদিন থাকা যাবেনা।দুদিন আগেই আমার বউ বাড়িওয়ালী কে জিজ্ঞেস করেছে, "কোথায় নামবেন দিদি?"????
✍️অর্ক ব্যানার্জী"
সংগৃহিত
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
02-01-2024, 12:21 PM
(This post was last modified: 03-01-2024, 10:10 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রাস্তায় যে কোন লোককে দেখলেই চেনা লাগে। মনে হয় আমার পূর্ব পরিচিত।
কাছে গিয়ে একটু হেসে বলি, "কি, ভালো আছো তো? বহুদিন পর, তা এখন আছো কোথায়?"
সে আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে, "ঠিক চিনলাম না তো?"
ভুল হয়েছে বুঝতে পেরে ব্যাপারটাকে ম্যানেজ করার জন্য বলি, "তুমি অশোকদা না?"
এরকম কতবার হয়েছে।
বছর তিনেক আগে এরকম বেশ কয়েকটা কেস খেয়েছি। মাছের বাজারে কালো ঢ্যাঙামত লোকটাকে দেখে মেজমামা ভেবে হেঁট হয়ে প্রণাম করতেই ভদ্রলোক হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, যেন ব্যপারটা তার কাছে নবম আশ্চর্য। তখনই বুঝলাম রং নাম্বার হয়ে গেছে।
বললাম, "ভালো আছেন তো মেজোমামা? কতদিন পর দেখা।"
ভদ্রলোক হাঁক মেরে ষন্ডামার্কা হেবোকে ডেকে আমাকে দেখিয়ে বললেন, "মালটাকে চিনে রাখ, বাজারময় লোকের সামনে আমায় মামা বলেছে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছ বলে এ যাত্রায় রক্ষা পেলে, নইলে লকআপে ঢুকিয়ে রুলের গুঁতো দিয়ে মামারবাড়ির ভোগে পাঠিয়ে দিতাম।"
পরে জানলুম উনি থানার মেজোবাবু। ভুল করে পুলিশকে না হয় মায়ের ভাই বলে ডেকেই ফেলেছি এতে এত রেগে যাবার কি আছে? এরপর সত্যিমামার সংগে অনেকবার দেখা হয়েছে, ভয়ে আমি এড়িয়ে গেছি। মাকে দুঃখ করে বলেছেন, "বাপিটা কেমন পাল্টে গেল, এখন আর চিনতেই পারে না।"
কয়েকদিন পর আবার একটা কান্ড ঘটল ঠিক পুজোর আগে আগে। আমার শালির কাছাকাছি বিয়ে হয়েছে, পুজোর বাজার সে এখান থেকেই করে। সন্ধ্যার আবছা আলোয় তাকে শালি বলেই মনে হল। একটু মজা করার জন্যে কাগজের ঠোঙায় দশটাকার বাদামভাজা নিয়ে সারারাস্তাটা বাদাম খেয়ে খোলাগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে ওর পিঠে মারছিলুম। সে দুএকবার পিছন ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলও। ঘরে ফেরার বাঁদিকের গলিতে সম্বন্ধির বাড়ি আর ডানদিকে আমার। সে যখন বাঁদিকে ঢুকল, তখন মনে পড়ল, আরে এ তো বৌদি ! আমি পৌঁছানোর আগেই বৌদি ফোনে বৌকে সব বলে দিয়েছে। ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমার বউ এই মারে তো সেই মারে।
চৌমাথার মোড়ে বিকেল বেলায় দুটো ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে নেতাজীর স্ট্যাচুর নিচে বসে ঠোঙায় ঝালমুড়ি খাচ্ছিলুম। একটা বুড়োমতো লোককে দেখে খুব চেনা মনে হল। সামনে আসতে রাস্তা আটকে বললুম, "দাদু, এখন শরীর কেমন? মিশনে গিয়েছিলেন বুঝি?"
উনি আশ্চর্য হয়ে খানিক তাকিয়ে, আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে গম্ভীর মুখে শুধু, "হুঁ" বলে চলে গেলেন। বুঝতে পারলুম আবার মিস ফায়ার। সারারাস্তা ভদ্রলোককে মনে করার চেষ্টা করলুম, কিন্তু কিছুতেই স্মৃতির পুনরুদ্ধার করতে পারলুম না। বাড়ি এসে বউএর কয়েকশো গালাগাল শোনার পর বুঝলুম উনি আমার শ্বশুরমশাই ছিলেন।
হায়দরাবাদ বেড়াতে গিয়ে এশিয়ান ইনস্টিটিউটে বউকে ডাক্তার দেখাচ্ছি। বউ হিন্দি জানে না, তাই সমস্যাগুলো আমি ডাক্তারকে বলার পর ডাক্তার বললেন, " নাম বলুন।"
বিশ্বাস করুন, বউএর নামটা কিছুতেই মনে পড়ল না। ডাক্তার তিনবার নাম জিজ্ঞেস করার পর হাঁ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি বউএর দিকে তাকিয়ে বললাম, "উনি নাম জিজ্ঞেস করছেন, নিজের নামটা অন্তত বলো, ওটাও কি আমায় বোলে দিতে হবে?"
খুব জোর রক্ষা পেয়েছি সে যাত্রায়। বউ এখনো জানে না যে আমি তার নাম ভুলে গেছিলাম। জানলে, বিয়ের কুড়ি বছর পর যে বউএর নাম ভুলে যায় তাকে নির্ঘাত নিজের নামটা ভুলিয়ে ছাড়ত !
ইদানিং বউকেও ঠিকমতো চিনতে পারি না। ও আর আগের মত নেই। ছেলেমেয়েরাও দেখতে দেখতে কত বদলে গেল, কিন্তু আমার মনের ক্যানভাসে আঁকা তাদের সেই ছোটবেলার ছবি, বড় হল না। ফলে এখন সব অচেনা লাগে। মোবাইলে রাখা অনেক আগের মায়ের সেই সুন্দর মুখটা এখন বড্ড বুড়িয়ে গেছে, চেনা যায় না। আমিও কি আগের মত আছি? কালের তালে সবাই একটু একটু করে পাল্টাতে পাল্টাতে এখন নতুন মানুষ। সবকিছু চেনা অচেনার আবছায়া।
লুকিয়ে তিনখানা ডাক্তার দেখিয়েছি। সবাই একগাদা টেস্ট করিয়েছেন আর ওষুধ খাইয়েছেন। কোন লাভ হয়নি। বউ একটু আধটু ডাক্তারিটা জানে, সে বলল এ রোগের নাম নাকি ভীমরতি এবং এর একমাত্র ওষুধ ক্যালানি।
রোগের নাম আর দাওয়াই শুনেই এখন আমি শুধরে গেছি, চেনাচেনা লাগলেও আমি আর আগ বাড়িয়ে কথা বলি না, এমনকি সত্যি কোনো চেনা লোক আমার সামনাসামনি এলেও এড়িয়ে চলে যাই।
হঠাৎ করে যদি দেখা হয়ে যায় আর আমি যদি না চিনতে পারি, আপনারা কিছু মনে করবেন না। ক্ষমাঘেন্না করে এই অধমকে একটু মাফ করে দেবেন পিলিজ।
( সংগৃহীত)
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দম্পতি, দম্পতী
তারাপদ রায়
দম্পতি বানানে হ্রস্ব ই-কার এবং দীর্ঘ ঈ-কার দুই-ই চলে। একবার এক বাংলার মাস্টারমশাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এর মধ্যে কোন বানানটা বেশি ঠিক বা বেশি শুদ্ধ। তিনি বলেছিলেন, দুটোই শুদ্ধ, দুটোই ঠিক আছে; যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা জমজমাট, প্রগাঢ় তখন অবশ্যি দম্পতি বানানের শেষে দীর্ঘ-ঈ দিতে হবে আর যখন ক্ষীণ হয়ে আসবে সেই ভালবাসা, প্রেম যখন সংকীর্ণ তখন নিতান্ত হ্রস্ব-ই-তেই চলবে। প্রথমে হ্রস্ব-ই-কারের একটি প্রান্তিক কাহিনী বলে নিই। কলকাতার উপকণ্ঠে তিলজলা উপনগরীর এক ভদ্রলোক ওই অঞ্চলেই অবস্থিত সরকারি মানসিক চিকিৎসালয় লুম্বিনি উদ্যানে একদিন সকালে জানতে গিয়েছিলেন যে উদ্যানের পাগলাগারদ থেকে দু’-একদিনের মধ্যে কোনও উন্মাদ পালিয়ে গেছে কি না। উন্মাদাগারের লোকদের প্রকৃত পাগলাদের কাছ থেকে নানা রকম উলটোপালটা প্রশ্ন, যুক্তি, বিশ্লেষণ শোনার নিয়মিত অভ্যাস থাকে, সে তাদের পরিচিত রোগীদের ব্যাপার। কিন্তু বাইরের কোনও ভদ্রলোক যাকে আপাত প্রকৃতিস্থ মনে হচ্ছে তাঁর কাছ থেকে এইরকম প্রশ্ন পেয়ে পাগলাগারদের কর্তৃপক্ষ একটু অবাক হলেন এবং জানতে চাইলেন, কেন এই ভদ্রলোক খোঁজ করছেন দু’-একদিনের মধ্যে কোনও পাগল পালিয়েছে কি না?
তখন সেই জিজ্ঞাসু ভদ্রলোক বললেন, ‘দেখুন, আজ দু’দিন হল আমার স্ত্রীকে বাড়িতে দেখতে পাচ্ছি না। পাড়ায় কানাঘুষো শুনছি সে নাকি কার সঙ্গে পালিয়ে গেছে। তাই আপনাদের এখানে জানতে এসেছি, এখান থেকে কোনও পাগল পালিয়েছে কি না?’ উন্মাদাগার কর্তৃপক্ষ কিছু বুঝতে না পেরে বিব্রত বোধ করে শুধু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মানে?’ ভদ্রলোক ম্লান হেসে বললেন, ‘মানে আর কী? পাগল ছাড়া কে আর আমার বউকে নিয়ে পালাবে, কিছুতেই বুঝতে পারছি না?’
সংস্কৃতে একটা কী যেন কথা আছে, ‘গৃহিণী গৃহমুচ্যতে’ কালিদাস নামে এক সরল প্রকৃতির কবি বোধ হয় অনন্তকাল আগে এ রকম কথা বলেছিলেন। কথাটার ব্যঞ্জনা একটু গভীর, গৃহিণী মানেই গৃহ, ঘরসংসার, স্বামীর চেয়ে সংসারে স্ত্রী কিছু কম নন, এই কথাটা বলারই অভিপ্রায় ছিল মহাকবির। সরল বাংলায় গৃহিণী গৃহমুচ্যতের অনুবাদ করেছিলেন এক বাঙালি গৃহস্থ, গৃহিণী গৃহ মুছছে অর্থাৎ বউ ঘর মুছছে, মুছবে।
অবশ্য এর চেয়ে অনেক বিপজ্জনক হলেন পুরনো দিনের ইংরেজি কবি জন ড্রাইডেন। ড্রাইডেন লিখেছিলেন তাঁর সহধর্মিণীর সম্ভাব্য এপিটাফ, স্ত্রীর কবরের উপরে মর্মর ফলকে লেখা থাকবে এই দুই পঙক্তি :
‘এইখানে শায়িত আমার স্ত্রী, থাকুন তিনি শান্তিতে,
আর আমিও থাকি, আমিও থাকি শান্তিতে।’
অবশ্য প্রথমা মৃত অবস্থায় শান্তিতে থাকছেন বলেই দ্বিতীয় জন অর্থাৎ স্বামী দেবতা জীবনে শান্তি পাচ্ছেন।
যা হোক, স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার নিয়ে তুচ্ছ রসিকতা থেকে বৃহৎ বিশ্লেষণ—সমস্ত ভাষায়, সাহিত্যে, হাজার হাজার তার উদাহরণ। বর বড় না কনে বড়, বিয়েবাড়ির বাসরঘরে এ নিয়ে ঠানদিদিদের রসিকতা আজও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে একথা বলা যায় না।
ইতিপূর্বে স্বামী-স্ত্রীর কিছু কিছু ব্যাপার নিয়ে এই কলমে সামান্য আলোকপাত করার চেষ্টা করেছিলাম। আমার এক বন্ধুপত্নী তথা বান্ধবী অনুযোগ করেছেন সেটা নাকি ছিল বড়ই পুরুষঘেঁষা, পক্ষপাতদুষ্ট। এবার আমার চেষ্টা হবে এই পক্ষপাতের অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়া।
সুতরাং আমি সেই গল্পটা কিছুতেই বলতে পারব না যেখানে ক্লান্ত ও অসুস্থ স্বামীর ডাক্তারি পরীক্ষার পর ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, ‘বেশ কিছুদিনের জন্যে সম্পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন,’ এবং তারপরে একটি কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্ত্রীকে সেটা নিয়মিত খেতে কারণ স্ত্রীর স্নায়ুশান্তি না হলে স্বামীর বিশ্রাম হবে না। আরেকটা গল্প আছে ওই অসুস্থ স্বামীকে ডাক্তার দেখানো নিয়েই যেখানে ডাক্তারবাবু অনেকক্ষণ রোগীকে নানারকম প্রশ্ন-টশ্ন জিজ্ঞাসা করে অবশেষে বুঝতে পারেন যে স্বামী বেচারা বাকশক্তিরহিত, একেবারেই কথা বলতে পারে না। স্ত্রী তো একথা শুনে হতভম্ব, ‘সে কী?’ সে মহিলা দিনরাত নিজের কথার তোড়ে খেয়ালই রাখেননি পতিদেবতা কবে থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
এসব গল্প থাক। পথপ্রান্তে শোনা একটি নরম কথোপকথন উদ্ধৃত করছি :
‘কাল রাতে তোমাকে যে অতি সুন্দরী মহিলার সঙ্গে দেখলাম, মহিলাটি কে?’
‘বলতে পারি। কিন্তু প্রতিজ্ঞা কর, আমার স্ত্রীকে কখনও বলবে না।’
‘কী করে বলব, আমি তো তোমার স্ত্রীকে চিনিই না।’
‘যদি কখনও পরিচয় হয় তা হলেও বলবে না।’
‘না বলব না। নিশ্চিতভাবে তুমি আমাকে জানাতে পার ওই মহিলাটি কে?’
‘ওই মহিলাটিই আমার স্ত্রী।’
সকলের স্ত্রী অবশ্য এত সুন্দরী হয় না। সুন্দরী স্ত্রী নাকি জন্ম-জন্মান্তের ভাগ্যের ব্যাপার। সহস্র বর্ষের শুধু সাধনার ধন নয়, সহস্র বর্ষের ভাগ্যের ধনও সুন্দরী ভার্যা।
(এ বিষয়ে অধিক আলোচনায় যাওয়া আমার পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, স্বগৃহে প্রহৃত হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। তার চেয়ে মানে মানে প্রসঙ্গান্তরে যাওয়া নিশ্চয় নিরাপদ।)
সেই এক বিরহতাড়িত স্বামী দূরপ্রবাসে এক সকালবেলায় চায়ের দোকানে গিয়েছিলেন, সেখানে চায়ের দোকানদারকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘ভাই, বেশ ঠান্ডা এক কাপ চা দাও, চিনি বেশি, দুটো কালো পিঁপড়ে আর দুধের সর যেন পেয়ালায় ভাসে। সঙ্গে দাও দুটো মিয়ানো বিস্কুট। আর তোমার ওই উনুনের পেছনে যে মোটা মেয়েটি কয়লা ভাঙছে তাকে একটা ছেঁড়া বাজারের ব্যাগ আমার মুখে ছুড়ে দিতে বলো। আমার বড় বাড়ির কথা, বউ-এর কথা মনে পড়ছে। আমি হোম-সিক, মন হু হু করছে। এটুকু এই বিদেশি মেহমানের জন্যে দয়া করে করো।’
এই ভদ্রলোককে আমরা কি স্ত্রৈণ বলব? নাকি তাঁর স্ত্রীর প্রতি মমতাপরায়ণ হব? অথবা সত্যিই মমতাপরায়ণ হতে পারি সেই কৃপণ ও সাংঘাতিক হিসেবি যুবকের নববিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি, যে যুবক বিয়ের পর পয়সা সাশ্রয় করার জন্যে স্ত্রীকে ফেলে রেখে নিজে একাই মধুচন্দ্র অর্থাৎ হানিমুন যাপন করতে গিয়েছিলেন।
আর অবশ্যই মমতা দেখাব সেই মার্কিন সাহেবকে যাঁর স্ত্রী প্রতি সন্ধ্যায় তাঁর স্বামী কাজ থেকে ফিরে আসার পর তাঁর স্বামীর কোটে জামায়, অন্য রমণীর কেশ সংগ্রহ করতেন। সোনালি পিঙ্গল বা কৃষ্ণবর্ণের দীর্ঘ কেশ যদি সেই মহিলা কোনওদিন আবিষ্কার করতে পারতেন স্বামীর পরিচ্ছদে তা হলে স্বভাবতই উত্তেজিত হতেন। তবে যেসব দিন অনেক খুঁজেও কোনও পররমণীর সন্দেহজনক কেশই উদ্ধার করতে পারতেন না, সেদিন অধিকতর উত্তেজিত হয়ে স্বামীকে গালাগাল করতেন, ‘ছিঃ, ছিঃ, তোমার এত অধঃপতন হয়েছে, তোমার রুচি এত নেমে গেছে! সারাদিন একটা টেকো ন্যাড়া মেয়েছেলের সঙ্গে কাটিয়ে এলে।’
অনেক স্ত্রী স্বামীর উপর রাগ করে পিত্রালয়ে বা অন্যত্র চলে যান। গিয়ে বুঝতে পারেন এর ফলে তাঁর বর অনেক শান্তিতে বসবাস করা আরম্ভ করেছে এবং তখন সেটা সহ্য করতে না পেরে আবার ফিরে আসেন। যারা ভাবে রাগ কমে গেছে, নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে অথবা স্বামী- সংসারের প্রতি মায়াবশত ফিরে এসেছে তারা স্ত্রী-মনস্তত্ত্বের কিছুই জানে না।
ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন, সহধর্মিণী হলেন যৌবনের প্রেমিকা, মধ্যজীবনের সঙ্গিনী আর বার্ধক্যের সেবিকা। এদিকে অস্কার ওয়াইল্ড স্ত্রীদের সমবেদনা জানিয়ে বলেছিলেন, যে কোনও মহিলার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হল, তার অতীত হল তার প্রেমিকের আর তার ভবিষ্যৎ হল তার স্বামীর।
আমরা এত গোলমেলে কথার কচকচিতে নেই। দাম্পত্য প্রেম সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ ভাষণ শুনেছিলাম, আমাদেরই এই শহরের এক ক্লাবের ঝুল বারান্দায়। এক অশ্রুময়ী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বারান্দার এক কোণে অন্ধকারে, দাঁড়িয়ে স্বামীকে অভিযোগ করছিলেন, ‘তুমি এখনও বলছ আমাকে ভালবাস? যদি সত্যিসত্যিই আমাকে ভালবাস, তবে তুমি আমাকে বিয়ে করলে কেন?’
কিপলিং, ভারতরত্ন রুডইয়ার্ড কিপলিং, গদ্যে-পদ্যে অনেক উলটোপালটা গোলমেলে কথা বলেছেন, তবে বিয়ে করার বিষয়ে একদা একটা মারাত্মক কথা বলেছিলেন, ‘He travels the fastest who travels alone,’ অর্থাৎ ‘একলা চলো রে’, যে একলা যাবে সেই সবচেয়ে তাড়াতাড়ি যাবে।
এই একলা-দোকলার ব্যাপারে বেশ বড় সমস্যা সিনেমা-থিয়েটার-রেস্টুরেন্টগুলির। দম্পতির জন্য সেখানে পাশাপাশি জোড়া চেয়ার, জোড়া আসন চাই। প্যারিসের একটা বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে দম্পতির জন্যে একটা অদ্ভুত বন্দোবস্ত আছে। না, কোনও আলাদা ছোট খুপচি অন্ধকার কেবিন বা ঘর নয়, যেমন এই শহরে বা যে কোনও শহরেই কোনও কোনও দোকানে আছে। প্যারিসের রেস্টুরেন্টটির আয়োজন খুব মজার এবং স্বামীর পক্ষে তৃপ্তিদায়ক ও সম্মানজনক। রেস্টুরেন্টে চেয়ারে বসার পর স্বামী-স্ত্রী দু’জনের হাতে তারা দুটি একই রকম দেখতে মেনু ধরিয়ে দেয়। কিন্তু স্ত্রীর মেনুটিতে সব বাড়ানো, ফাঁপানো মারাত্মক দাম। আর যা আসল দাম, দোকানের যা প্রকৃত মেনু বা খাদ্যমূল্যতালিকা সেটা ধরিয়ে দেওয়া হয় স্বামীকে। মানে সহধর্মিণী যখন ভাবছেন তিনি আটাশ টাকা দামের চিলি চিকেন খাচ্ছেন স্বামীর মেনু ও দোকানের বিল অনুযায়ী তার প্রকৃত দাম সাড়ে বারো টাকা মাত্র।
স্বামীদের চিরদিনের চেষ্টা স্ত্রীকে ঠকানো। এইরকম রেস্টুরেন্টে দোকানদারের সহায়তায় বিনা চেষ্টায় স্ত্রীকে ঠকিয়ে তাঁরা নিশ্চয়ই আত্মসুখ বোধ করেন। তবে সুখের কথা পৃথিবীর সব স্বামী একরকম নয়।
অনেকদিন আগে উঠে যাওয়া ধর্মতলা স্ট্রিটের একদা বিখ্যাত ও জমজমাট কমলালয় স্টোর্সে একদিন শেষ রাতে এক চোর ধরা পড়েছিলেন। পুলিশের অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় তস্কর ব্যক্তিটি ওই রাতে চারবার পরপর কমলালয় স্টোর্সের পেছনের জানলার গরাদ ভেঙে ঢোকেন এবং তাঁর স্ত্রীর জন্যে একে একে চারবার পর পর চারটি ভাল শাড়ি চুরি করে আনেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় তস্করপ্রিয়ার কোনওটাই পছন্দ হয় না। কোনওটার পাড় বড় বেশি চওড়া, সেকেলে, আবার কোনওটা বড়দির ননদের একটা শাড়ির মতো অবিকল; যে শাড়িটা কিছুটা পছন্দ হয়েছিল তার রং বড় বেশি পানসে, ট্যালটেলে। তস্কর বেচারা আর দশজন পুরুষমানুষের মতোই শাড়ির এত রকমসকম মোটেই বোঝে না। সুতরাং চতুর্থবারের পর পঞ্চমবার যখন তিনি শাড়ি পালটাতে ঢুকতে যাচ্ছেন, তখন কাক-ডাকা শুরু হয়ে গেছে; ফাস্ট ট্রাম ধর্মতলা স্ট্রিটে ঘটাং ঘটাং চলছে গঙ্গাযাত্রীদের নিয়ে, আর এই মহানগরীর অধুনা অবলুপ্ত ফরাসেরা হাইড্রান্ট থেকে পাইপ দিয়ে জল তুলে রাস্তা ধুচ্ছে। এই পঞ্চমবারে প্রবেশের মুখে প্রায় প্রকাশ্য দিবালোকে তস্কর স্বামী সদ্যনিদ্রোত্থিত ভোজপুরী দারোয়ানের হাতে ধরা পড়ে যান।
তবে এর চেয়েও মর্মান্তিক কাহিনী অন্য এক দম্পতির। এই দম্পতির স্বামী-স্ত্রীর উভয়েরই পূর্ব বিবাহ ছিল। বিবাহ-বিচ্ছেদের পর তাদের বর্তমান বিবাহ সংঘটিত হয়। এদিকে ভদ্রমহিলার আগের এক পুত্র, ভদ্রলোকের আগের স্ত্রীর এক পুত্র। এই দুই পুত্রই আলোচ্য দম্পতির সঙ্গে থাকে। ইতিমধ্যে বিধির বিধানে এই স্বামী-স্ত্রীরও একটি পুত্র হল। আগের দুই পক্ষের দুই পুত্র কিন্তু তাদের অর্ধভ্রাতা অর্থাৎ এই নবাগত তৃতীয়টিকে দু’চোখে দেখতে পারে না। এই পরিবার আমাদের পুরনো পাড়ার শেষপ্রান্তে একটা একতলা বাড়িতে থাকতেন। বিয়ের বছর পাঁচ-সাত পর থেকে এই বাড়ি থেকে অনবরত গৃহিণীর আর্ত আবেদন শোনা যেত স্বামীর উদ্দেশে, ‘ওগো তাড়াতাড়ি এসো। এদিকে যে সর্বনাশ হয়ে গেল। তোমার ছেলে আর আমার ছেলে দু’জনে মিলে আমাদের ছেলেকে মেরে ফেললে।’
মজার কথা যথেষ্ট হল, এবার অন্তত একটা গুরুগম্ভীর কথা না বললে সুধী পাঠক কলকে দেবেন না। আর বলবই যদি সামান্য বলব কেন? ইউরোপীয় প্রবন্ধ সাহিত্যের জনক যাঁকে বলা হয়, সেই ফরাসি গদ্যকার যার ছায়ায় ইংরেজি গদ্য অনেকখানি লালিত, সেই মাইকেল ইকুয়েম দ্য মনটেইন (অথবা মিলেল মতে অথবা মনটে, অথবা মনটেগ, অথবা ইত্যাদি ইত্যাদি, ফরাসিবিদরা নিজগুণে মুখ কলমকারকে ক্ষমা করবেন) যা লিখেছিলেন আদর্শ দম্পতি সম্পর্কে সেকথাটা বলা যাক। কথাটা ভদ্রলোক কিন্তু আজকে বা গতকাল বলেননি, বলেছিলেন চারশো বছর আগে। এই সুপ্রাচীন ফরাসি সাহেবের মতে আদর্শ দম্পতি হল সেই পরিবার যেখানে স্ত্রী অন্ধ এবং স্বামী কালা। স্বামী যা করছে স্ত্রী দেখতে পাবে না, স্ত্রী যা বলছে স্বামী শুনতে পাবে না, তা হলেই সংসার সুখের হবে।
এককালে পানের দোকানে দোকানে কাচের মধ্যে লেখা থাকত, ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ সেসব রোমান্টিক পানের দোকান, সেই সব রঙিন কাচ আর সেইসব সুখপ্রদ রমণীরা যাদের মুখচ্ছবি ফুটে থাকত প্রস্ফুটিত রক্তপদ্মের মাঝখানে; তারা কোথায় গেল, কবে গেল?
কয়েক সপ্তাহ আগে আমাদের এক গ্রাম সম্পর্কের আত্মীয় মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আছেন শুনে দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম সত্যিই শেষ নিশ্বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন, তবে জ্ঞান রয়েছে টনটনে। বিছানার পাশেই বসে রয়েছেন তাঁর পঞ্চাশ বছরের সঙ্গিনী সতীসাধ্বী স্ত্রী। আমাকে দেখে আমার সেই গ্রামদাদার মুখ একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বললেন, ‘তুমি এসে ভাল করেছ, মৃত্যুর আগে তোমাকে দু’-চারটে কথা জানিয়ে যেতে চাই। দ্যাখো পশ্চিমবাড়ির নগেনের কাছে আজ প্রায় চার বছর হল তিনশো টাকা পাই। কিছুতেই দেয়নি, আমার মৃত্যুর পর অন্তত যাতে তোমার বউদিকে টাকাটা দেয়, তুমি একটু দেখো। আর সামনের ঘরের ভাড়াটে দু’মাস ভাড়া দেয়নি।…’ এইভাবে তিনি বিশদভাবে বলে যেতে লাগলেন কোথায় তাঁর কী পাওনাগণ্ডা আছে তার কথা। মধ্যে মধ্যেই তাঁর স্ত্রী স্বগতোক্তি করতে লাগলেন, ‘সত্যি দ্যাখো ভাই, তোমার দাদার কী বিচক্ষণ বুদ্ধি। সব কথা মনে রেখেছেন, শরীরের এই অবস্থাতেও খুঁটিনাটি কিছু ভোলেননি।’ কিন্তু ইতিমধ্যে আমার সেই গ্রামদাদা তাঁর মৌখিক হিসাবপত্রের ডান কলমে চলে গেছেন, সেখানে দায়দেনার কথা। তিনি সবে বলতে আরম্ভ করেছেন, ‘আর শোনো, আমার পিসতুতো ভাই গজেন আমার কাছে সাতশো টাকা পাবে, মাকালী ফার্নিচার পাবে বাইরের বারান্দার দুটো নতুন চেয়ারের দাম… ’ কিন্তু তিনি তাঁর বিবরণ সমাপ্ত করতে পারলেন না, আমার গ্রামবউদিদি ডুকরে কেঁদে উঠলেন, ‘ওগো কী আবোলতালোল বকছ গো, ও ভাই, তোমার দাদার বুঝি শেষ অবস্থা, এ যে প্রলাপ বকা শুরু করেছে!’
এই দাম্পত্য কাহিনীর শেষ মুহূর্তে অত্যন্ত বিনীতভাবে একটি ব্যক্তিগত কাহিনীও গোপনে, পাঠিকাদের নিবেদন করছি। কোনও একটি নিভৃত কারণে আমার প্রাণাধিকা গৃহিণীকে আমি একটি ভাল সেন্ট, যাকে অধুনা পারফিউম বলে, দেব বলে আজ কিছুদিন কথা দিয়েছি। গন্ধদ্রব্য বিষয়ে আমার অজ্ঞতা অপরিসীম। তা ছাড়া শিশি বা মোড়ক দেখে সেন্টের সুবাস অনুমান করা অসম্ভব। এর মধ্যে একদিন মিনিবাসে এক সুবেশা তরুণী যাচ্ছিলেন, ঠিক আমার পাশে বসে। তাঁর সর্বাঙ্গের বিদেশি কুসুমের মৃদু গন্ধ আমাকে সচেতন করে তুলল। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, ‘দেখুন কিছু মনে করবেন না, আমার স্ত্রীর জন্যে একটা পারফিউম কিনতে হবে। আপনার পারফিউমের সৌরভটা বড় ভাল, দয়া করে ব্র্যান্ডটা যদি বলেন।’ তরুণীটি চাপা হেসে বললেন, ‘না, না, এ সেন্ট স্ত্রীকে কিনে দেবেন না। রাস্তাঘাটে যত আজেবাজে লোক তা হলে জানতে চাইবে কী সেন্ট, কত দাম? কোথায় পাওয়া যায়? মিছে হয়রানি করবে। গায়ে পড়ে কথা বলবে।’
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*পশ্চিমবঙ্গের সরকারী কলেজে চাকরি পাওয়া মাস্টারমশাই কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে নদীর ওপর সাঁকো পার হচ্ছিলেন। ক্লান্ত হয়ে মাঝপথে বসে নতুন কেনা পেন দিয়ে খাতার উপর কিছু লিখতে গিয়ে আকস্মিক ভাবে মাস্টার মশাইয়ের হাত থেকে পেনটা পড়ে যায় নদীর জলে। মাস্টার মশাই হায় হায় করে উঠলেন, আজ সকালেই নগদ দশ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। এর মধ্যে মাস্টারের বিলাপ শুনে নদীর জলে প্রবল ঢেউ উঠতে শুরু করেছে, তারপর মূহুর্তে নদীর বুক চিরে জলদেবতা উঠে এলেন এবং মাস্টার মশাই এর বিলাপের কারণ জানতে চাইলেন।*
*মাস্টার মশাই জানতে চাইলেন তিনি কে ? উত্তরে আগন্তুক বললেন যে তিনি জলদেবতা!*
*এরপর সব কিছু শুনে জলদেবতা জলে ডুব দিলেন ও কিছুক্ষণ পরে উঠে এসে মাস্টারকে একটা পেন দেখিয়ে বললেন যে এটা তাঁর কি না ? মাস্টারের কাঠুরিয়ার গল্প মনে গেল, তাই বললেন প্রভু আমি সামান্য মাস্টার, রুপোর পেন কোথায় পাবো ?*
*জলদেবতা মুচকি হেসে আবার জলে ডুব দিলেন খানিক পরে উঠে এলেন একটি দামী পাথরখচিত সোনার পেন নিয়ে। ভালো করে দেখে নিয়ে মাস্টার বললেন হে জলদেবতা আপনি এক সামান্য শিক্ষকের সাথে কেন রসিকতা করছেন? এটাতো সোনার পেন, আমার সাধ্যের বাইরে।*
*জলদেবতা আবার জলে ডুবে গেলেন, এবার মাস্টারের নতুন কেনা জেল পেনটি নিয়ে উঠে এলেন। মাস্টারমশাই বলে উঠলেন, প্রভু এটাই আমার পেন।*
*জলদেবতা ধন্য হলেন শিক্ষকের সততায়, মুগ্ধ হয়ে তিনটি পেনই তাঁকে দিলেন। বললেন তুমি বাস্তবিকই গুরু হবার যোগ্যতম ব্যক্তি।*
*তিনি খুশিতে ডগমগ হয়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে সবকথা খুলে বললেন, কিন্তু স্ত্রী কিছুতেই কথা মানতে চায় না! শেষে বাধ্য হয়ে ঘটনাস্থলে স্ত্রীকে নিয়ে এসে কি হয়েছে তার বিবরণ দিচ্ছেন আর স্ত্রী পাকা গোয়েন্দার মতো সমস্ত ঘটনা একে একে জোড়া লাগিয়ে বুঝতে চাইছেন! এমন সময় হঠাৎ এপাং ওপাং ঝপাং করে পা পিছলে সাঁকো থেকে মাস্টারনি জলে তলিয়ে গেলেন..!*
*আবারো সেই একইভাবে জলে প্রবল ঢেউ উঠল, জলদেবতা উঠে এলেন এবং সব শুনে জলে ডুব দিলেন, এবং সোজা ক্যাটরিনা কাইফকে নিয়ে উঠে এলেন। শিক্ষককে দেখিয়ে জানতে চাইলেন যে এটি তাঁর স্ত্রী কিনা? শিক্ষক কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে মহা উৎসাহে বলে বসলেন, হ্যাঁ প্রভু ইনিই আমার স্ত্রী !*
*জলদেবতা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গিয়ে বললেন নরাধম, পাপী, দুশ্চরিত্র মাস্টার, আমি তোকে অভিশাপ দিচ্ছি!*
*মাস্টারমশাই দুই হাত জোড় করে বলল, আমার অপরাধ নেবেন না প্রভু, দয়া করে একটু আমার লজিক্যালি কথাটা শুনুন। আমি অন্যায় কিছুই করিনি, আগের বারে খুশি হয়ে তিনটি পেনই আমাকে দিয়ে দিয়েছেন, এবারও যদি আমি ক্যাটরিনাকে দেখে না বলতাম আপনি আবার ডুব দিয়ে প্রিয়াংকা চোপড়া কিংবা ঐশ্বরিয়া রাইকে তুলে আনতেন, তারপর না বলতেই আমার স্ত্রীকে!*
*প্রভু আপনি খুশি হয়ে যদি তিন তিনটিকেই আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেন, আমিতো মরার আগেই মরে যেতাম।*
*পে কমিশন নেই, কেন্দ্রীয় হারে ডি এ অনেক বাকি, নিয়োগ দুর্নীতিতে চাকরিটা থাকবে কিনা জানিনা, প্রতিদিন কতজনের চাকরি চলে যাচ্ছে। তাই একটিতেই নাভিশ্বাস উঠবে। বাকি তিনজনকে সামলাতে পারবো না। অনেক ভেবে অগত্যা ক্যাটরিনাতেই রাজি হয়েছি।*
*পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা।*
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*Sala da Pranzo*
আমাদের পাড়ায় অনুপ্রাণিত কালুর চপের দোকান। বছর চারেক আগে একটা টিনের চালার দোকানে কড়াই, স্টোভ নিয়ে ব্যবসার শুরু। আজ তার নিজের দোতলা বাড়ির এক তলায় একটা অংশে টেবিল চেয়ার পাতা ছোট্ট সুন্দর দোকান। ডেইলি সেল প্রায় ৫/৬ হাজার টাকার। কালুর সঙ্গে প্রেম স্বপ্নার। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবার আপত্তি চপশিল্পপতির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। স্বপ্নার বিয়ে হলো কালুর তিনভাগের একভাগের রোজকার করা KFC এর সুট টাই শোভিত কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে।
হায়রে এই আমাদের দেশ! বিজ্ঞাপনের বিপণন কৌশলে আমরা হাফ আতেল বাঙালীরা সাউথ সিটি তে ডেসার্ট মারছি, কিন্তু চন্দননগরের জলভরাকে জাতে উঠতে দিচ্ছি না। আমরা আসলে নিজেদের উৎকর্ষতাকে নিজেরাই বিশ্বাস করি না, ভরসা করি সাত সমুদ্র তেরো নদী ছুঁয়ে আসা সর্টিফায়েড কপি : কি ডাক্তার, কি জামাই, কি ওষুধ, কি খাবার!
কিছুদিন মন খারাপ করে বসে থাকার পর হাফসোল খাওয়া কালু বুঝতে পারল কলকাতাকে লন্ডন বানাতে গেলে যেমন লেকটাউনে বিগ বেন এর প্রয়োজন, কিংবা বিশ্ব বাংলা বানাতে গেলে যেমন পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের সবগুলোকে ইকো পার্কের আওতায় আনতে হয়েছে, তেমনি বাঙালীর এই নিজেকে অবমূল্যায়ন করার প্রবণতা এবং বিশ্বজনীনতার প্রতি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নিউ টাউন ইকো স্পেসের সামনে একটা বাংলা খাবারের বৈশ্বয়িক রেস্তোরাঁ খুলে ফেললো যার
নাম দিল *"La Sala da Pranzo di Kalu"* সংক্ষেপে LSPK, আর খাদ্যতালিকায় সমস্ত বাংলা খাবারের নাম ইংরেজি কিংবা অন্য কোন বিদেশী ভাষায় লিখে দিল। আই টি সেক্টরের কুল স্মার্ট ছেলেমেয়েগুলো সেই খাবার খাওয়ার জন্য হামলে পড়ল।
LSPK র কিছু খাবারের উদাহরণ -
*রোসেটো আল্জফার্নো*
এটা বস্তুত লাল শাক দিয়ে মাখা ভাত। দাম - ৩৭৫ টাকা প্লেট। বাড়িতে আপনাকে দিলে আপনি কি খাবেন? নাকি নাক সিটকবেন!!! অথচ Sala da Pranzo তে সব সোনা মুখ করে খাচ্ছে।
*নাচোজ উইথ সালসা*
খাস্তা নিমকি, কাঁচা টমেটোর চাটনির সাথে। দাম - ২০০ টাকা।খাস্তা আর কাঁচা টমেটোর চাটনি শুনলে কেই বা আর ২০০ টাকা দেবে। কিন্ত এটা যে নাচোজ!
*সিনোমিনে সুফলে*
সুজির হালুয়া। দাম - ১৭৫ টাকা! বাড়িতে মা ঠাকুমার হাতে এই টাকায় ২৫ জনের হয়ে যাবে।
*রাইস সুপ উইথ লেমন গ্রাস*
লেবু পাতা দিয়ে ভাতের মাড়। দাম - ১৫০ টাকা। কুল স্মার্ট ছেলেমেয়েগুলো বুক ফুলিয়ে বলে, - "I am having RICE SOUP WITH NACHOS"। কে আর বলতে পছন্দ করবে খাস্তার সংগে ভাতের মাড় খাচ্ছি রে!
*ইন্ডিলাচা*
কালুর ছেলেবেলায় মা পরোটার ভেতরে সবজী ভরে হাতে ধরিয়ে দিত। কালু সেটাকেই একটু ঘষামাজা করে নিয়ে একটা গ্লোবাল নাম চিপকে দিয়েছে। দাম- ২০০ টাকা।
*গ্রাম জুস উইথ পিপার*
ঠেলা ওয়ালার ঘটিতে তৈরি ১০টাকার ছাতুর সরবত।
"ছাতু" বললে লোকে গেঁয়ো ভাববে বা হীন দৃষ্টিতে দেখবে। কিন্তু এটাই Sala da Pranzo তে বসে ১৫০ টাকা দিয়ে পাবলিক দিব্যি খাচ্ছে।
*জাপানিজ রাইস ওয়াইন*
ওটা একটু সুগন্ধি সহযোগে পরিবেশিত গোদা বাংলায় যাকে বলে হাঁড়িয়া। একবার ঝাড়গ্রামে বেড়াতে গিয়ে এক সাঁওতাল বাড়িতে খেয়েছিল। সেটাই এক গ্লাস ৯০ টাকা।
*চীলড রাইস উইথ গ্রিলড বৃঞ্জাল*
আসলে পান্তা ভাত আর বেগুন পোড়া। বেকার অবস্থায় এটাই ছিল কালুর মেইন খাবার। সেটাই এখন জাতে উঠেছে, দাম - ২২৫ টাকা + GST.
আসলে আমরা অতি আধুনিকরা খাবার নয় খাবারের মোড়কে টাকা চিবিয়ে খেতে পছন্দ করি। আর এটার সুযোগ নিয়েই বুদ্ধিধারী কালু রোজগারের সাথে সাথে জাতেও উঠে গেল। স্বপ্নার ব্যাংক অফিসার বাবা এখন আফসোস করে।
#সংগৃহীত, পরিমার্জিত এবং সংযোজিত
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
13-01-2024, 10:26 AM
(This post was last modified: 14-01-2024, 11:53 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
*বুড়ো হয়ে গেলাম*!!!
"১ টাকায় ৫ টা চকোলেট" পাওয়া থেকে "৫ টাকায় ১ টা চকলেট" পাওয়ার মাঝের সময়টুকুতে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম!
বন্ধুদের "নিচে আয়" থেকে "অনলাইনে আয়" বলার মাঝের সময়টুকুতে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম!
"মা আর পাঁচ মিনিট ঘুমাতে দাও" বলা থেকে নিজের হাতে "অ্যালার্ম বন্ধ" করার মাঝের সময়টুকুতে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম
"চল আগে দেখা করি তারপর প্ল্যান করি" বলা থেকে "আগে প্ল্যান করি তারপর দেখা করি" বলার মাঝের সময়টুকুতে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম!
"আমি বড় হতে চাই" বলতে বলতে "আমি শৈশবে ফিরে যেতে চাওয়ার" সময়টুকুতে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম!
লুকিয়ে সিগেরেট খাওয়া আর ডাক্তারের উপদেশে সিগরেট ছাড়ার মাঝে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম।
চুলে টেরী করে কলেজ কলেজে যাওয়া আর চুলে রং করা আর তা ছেড়ে দেওয়ার মাঝের সময়ে আমরা বুড়ো হয়ে গেলাম।
রাস্তার মোরে দাঁড়িয়ে সবার সাথে তেলে ভাজা খাওয়ার থেকে নিয়মিতভাবে antacids খাওয়ার মাঝে কখন যে বুড়ো হয়ে গেলাম।
কলেজ থেকে ফিরে ফুটবল খেলতে যাওয়া থেকে , বিকেলে চুপ করে বসে থাকার মাঝে কখন যে এত একলা হয়ে গেলাম......
*আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি*---- *বড় হচ্ছি---* বোঝার আগেই অনেক বুড়ো হয়ে গেলাম!!!
কি করে কেটে গেল
২১ থেকে ৬০ এ অবসর
নেবার এই দৌড়?
অবসর নিয়েও এগিয়ে চলেছি সত্তর....আশির দিকে।
কখন যে দিনগুলো কেটে গেল
বুঝতেই পারলাম না।
চলার পথে কত প্রিয়জনকে
হারালাম। প্রানাধিক প্রিয় কত বন্ধু আমায় ছেড়ে চলে গেল।
কি পেলাম,কি হারালাম,
কেন হারালাম,
কি ভাবে পেলাম, কি ভাবে হারালাম
কিছুই বুঝতে পারলাম না।
ছেলে বেলা কত যুগ আগে ছেড়ে পালালো,যৌবন কেটে গেল....
ধিরে ধিরে কখন যে বার্ধক্যের আলিঙ্গন গ্রাস করলো,তাও ঠিক
বুঝতে পারলাম না।
এই তো সেদিন পুত্র ছিলাম,
কি ভাবে,কবে যে শ্বশুর হলাম,
আবার কবে যে বাবা থেকে দাদু হয়ে গেলাম,
তাও বুঝতে পারলাম না।
কেউ বলে ভীমরতি ধরেছে,
কেউ বলে মাথাটা গেছে,
কোনটা যে ঠিক,ঠিক কি যে হয়েছে
বুঝতেই পারলাম না।
প্রথম বাবা মার কথায় চলা,
তারপর বউ এর কথায়,
ফের বাচ্চাদের কথামতো,
নিজের মতো, নিজের খুশিতে,নিজের খেয়ালে
কখন যে চলেছি
বুঝতেই পারলাম না।
বউ বলে এখনও তো বোঝার চেষ্টা করো,
কিন্তু কি যে বুঝব আর কি যে বুঝব না, বা কখন যে না বোঝাই ভালো তা ঠিকমত আজও বুঝতে
পারলাম না।
মন বলে যৌবন আমার হয়নি কো শেষ,
বয়স বলে ছেলেমানুষি করো না,
এইসব ভাবতে গিয়ে কখন যে
শরীরে নানা ব্যথার উৎপাত হয়েছে,
বুঝতেই পারলাম না।
কখন যে মাথায় পড়লো টাক,
চোখে লাগলো চশমা,
সঙ্গে ঝোলা গাল
মুখের চেহারাটাই দিলো বদলে
বুঝতেই পসরলাম না।
চলন্তময় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
বদলেছি আমি,
বদলেছে বহু বন্ধু আমার,
অনেক কেই তো হারিয়েছি, কোন কোন বন্ধু আজও আছে বেঁচে,
তার হিসাবও বুঝতে পারলাম না।
কাল অবধি তো জমিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফুর্তি করেছি, আড্ডা মেরেছি বন্ধুদের সঙ্গে,
কবে যে সমাজে....পাড়ায়... সিনিয়র সিটিজেন তকমা পেয়েছি,
তাও বুঝতে পারলাম না।
সেই জন্য বলি প্রিয় ,
জীবন কে চুটিয়ে উপভোগ করো
যাতে আমার মতো বলতে না হয়
"আমি বুঝতেই পারলাম না"।।
তবে একটা কথা সত্যি যে....এখনও যখন কলেজ কলেজের কয়েকজন বন্ধু একসাথে কোথাও
মিলিত হই....আপনি, তুমি ছেড়ে যেই "তুই" এর সম্ভাষনে নেমে আসি, তখন আর নিজেকে বুড়ো মনে হয়না... এই সত্তরোর্ধ বয়েস তখন নেমে আসে যৌবনের দিনগুলোয়।
তাই নিয়মকরে কলেজ, কলেজের বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা, ফোনে যোগাযোগ রাখা অবশ্য কর্তব্য। নিজে ভালো থাকব অন্যদেরও ভালো রাখব।
সংগৃহীত - অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় ।।।।
Posts: 309
Threads: 0
Likes Received: 221 in 175 posts
Likes Given: 609
Joined: Jan 2019
Reputation:
4
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(22-02-2024, 05:28 PM)nightangle Wrote: dada kamon achan....
খুব ভালো , আপনি কেমন আছেন।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
কিছুদিন আগে কৌতুহলবশত 'হেলিকপ্টারের দাম' লিখে গুগলে সার্চ করেছিলাম। এরপর থেকে আমার জীবন এলোমেলো হওয়ার দশা।
ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম - যেখানেই যাই শুধু বড়লোকী বিজ্ঞাপন। এই ছুটিতে ঘুরে আসুন বুর্জ খলিফা... প্রিয় মানুষকে দিন ডায়মন্ড উপহার... আপনার অপেক্ষায় মিশরের পিরামিড... অগ্রীম বুকিং দিন আইফোন ষোলো... কানাডায় কিনুন স্বপ্নের বাড়ি...
কত আর সহ্য করা যায়?
বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় তাই বের করতেই হলো। গতকাল রাতে সার্চ করেছি - 'ছ্যাড়া জুতা সেলাই করার উপায়!'
সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। বিজ্ঞাপনের লেভেল এখন আমার লেভেলে নেমে এসেছে। আজ সকাল থেকে ইউটিউব আমাকে দেখাচ্ছে - মাত্র ১২০ টাকায় কিনুন দুইটা স্যান্ডেল, সাথে ১০ টাকা ক্যাশব্যাক।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*Translate into English *
ট্রেনে যেতে যেতে বিভিন্ন ইকলেজের মাষ্টারমশাইরা আলোচনা করছিলেন,
"আমাদের ইকলেজের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে, *Translate into English:* প্রশ্ন ছিল,
_রামবাবুর মৃত্যুর পর তাদের একান্নবর্তী পরিবারটি ভেঙে গেল। তাঁর রত্নগর্ভা স্ত্রীও 'হায়! কি হল!' বলে পরলোকগমন করলেন।_
তার উত্তরে এক ছাত্র লিখেছে:
After Rambabu's death their fifty one family broke and his jewel pregnant wife saying 'Alas! What happened!', went to another man.
এটা দেখে আর একটা ইকলেজের মাষ্টারমশাই বললেন,
"এ আর এমন কি ট্রানস্লেশন! আমাদের এক বন্ধু তো লিখেছিল,
_'মেজ বৌমা পাশ ফিরিয়া শোও।_
'Middle wife-mother P. T. O.'
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
।। ভ্রমণ।।
যদি বেড়াতে যাই তোকে নিয়ে কোথাও-
তোর বাবার কি?
আমার সিটের পাশেই তুই বসবি ঘেঁষাঘেষি-
তোর কিলিপ আঁটা চুল - ফরফর করে খুলে যাবে-
লম্পট বাতাস কে শিখিয়ে দেবো-ঠিক কি করে
জানলার ছিটকিনি কে নষ্ট করতে হয়-
বাসের জার্কিংকে বলে দেবো-ঠিক
কখন খুলে ফেলবে তোর বুকের ব্রোচ-ঢাকনা-
বলে দেবো রাস্তা র সব হাম্প -বাম্পার কেও-
সাংঘর্ষিক লাফানো যেন ছুঁইয়ে দেয় তোর কাঁধের
কাঁচা সোহাগ। তোকে নিয়ে যা ইচ্ছে তাই করবো
--? ? ? ? ?
তোর বাপ্ -তার বাপ - তোর চৌদ্দ পুরুষের কি রে???
--এসবই করবো-
তুই আমাকে লম্পট বলবি, বল--
তুই আমাকে অসভ্য ও বলতে পারিস--, বলিস --
তুই আমার নামে এজেন্ট কে কম প্ল্যান ও করতে
পারিস ---করগে যা---
আমি যা খুশি
লন্ডভন্ড করবো, তছনছ।
সবাই বলবে ছিঃ
সবাই ঘৃণা করবে, জানি
বলবে- বংশের কুলাঙ্গার --
এজেন্ট -মাঝপথেই বাস থামিয়ে
প্রচন্ড মার মারবে-
আমি কাঁদবো না--
এক ফোঁটা জল ও পড়বে না-
পাবলিক আমার মাথা ফাটিয়ে দেবে
গলগল করে লাল তাজা রক্ত গড়াবে -
আমি কিছু ই বলবো না-
শুধু আড় চোখ তোর দিকে ই তাকিয়ে থাকবো--
আর শুনবো---
কোনো যাত্রী র ফিসফিস - - বলছে
দেখো, ঐ মেয়েটাও এখন চোখের জল মুছছে।
#
বিশ্বাস আর নাই কর----
আমার শরীরে -মনে এখন
কোনো যন্ত্রনাই নেই রে ।
একটা শীতল হাত -
আস্ত -উপশম হয়ে গেছে ।
তিন সত্যি----
বেদনা নয়, এখন আরাম পাচ্ছি , আরাম।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
একটা রূপকথা
বছর পাঁচেক আগের কথা -
মেয়েটি প্রেমে পড়েছিল।
গভীর সে প্রেম।
পাগলপারা সে প্রেম।
ভালবাসার মতো গভীর সে প্রেম।
প্রেম, তবু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের চোখে যা ‘সুগম’, তেমনি প্রেম কিন্তু না। বরং বেশ একটু ব্যবধান ছিল দুজনের মধ্যে।
বয়সের ব্যবধান।
ভাষা ও সংস্কৃতির ব্যবধান।
আর, তারচেয়েও বেশি করে - অবস্থানের ব্যবধান।
মেয়েটি একজন - সাংবাদিক। যার ক্ষুরধার মস্তিস্ক আর চাবুক কলম আছে। আর অন্যদিকে, প্রেমিকটি বিনোদন জগতের বেশ নামী মুখ।
ভালোই চলছিল দুজনের যাপন। ভালবাসাকেই বাসা বানিয়েছিল মেয়েটা। ভেবেছিল, সেই বাসায় সবটাই বুঝি ভালো, সব কোণেই বুঝি আলো।
কিন্তু এ যে ঘোর কলি! তাই, একদিন মেয়েটি হঠাৎ করেই জানতে পারে ‘নারী’ থেকে ‘মা’ এর উত্তরণ হয়েছে। বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রস্তুত।
খুশি হয়েছিল খুব মেয়েটি। খুশিরই তো খবর! এমন ভাসাভাসি প্রেমের ফল আসছে ঘরে - এর চেয়ে আনন্দের কী কিছু হতে পারে!
কিন্তু, জীবন যে ‘সিনেমা’ নয়, তাই প্রেমিকের কাছ থেকে মেয়েটি পেল অবহেলা এবং, আধুনিক ভাষায় যাকে বলে ‘ঘোস্ট’ করে দেওয়া, অর্থাৎ ব্লক করে দেওয়া ফোন থেকে।
ভাবছেন, এ তো কত হচ্ছে! আজকের ঘটনা তো নয়, যুগ যুগ ধরেই হচ্ছে।
বা ভাবছেন “মেয়েটা কেন অ্যালাও করল?” বা, “মেয়েটারও দোষ আছে!”
তাহলে বলি, গান্ধর্ব মতে বিয়ে হয়েছিল দুজনের। আর মেয়েটা ‘ভালবেসেছিল।’ তাই, কোনো বাধাই বাঁধা মনে হয়নি। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছিল ছেলেটির একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলা। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, মিথ্যে স্বপ্ন।
এবার কি ভাবছেন? “মেয়েটির অ্যাবরশান করানো উচিৎ?”
আজ্ঞে না, এই মেয়ে আমাদের এই অন্য রূপকথার নায়িকা। নিজের দায়িত্ব, আগত সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে নিজেই। আর সেই সঙ্গে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে দিনের পর দিন যে মিথ্যে বলে গেছে, তাকে শাস্তি দেবেই।
একনার ভাবুন তো - যতই আমরা নিজেদের আধুনিক ভাবি না কেন, এখনও পর্যন্ত তো আমাদের সমাজের একটা দাঁত-নখ আছেই, যেটা সময়ে অসময়ে বেরিয়ে পড়ে। আর তার মধ্যে একা একটি মেয়ে, অন্তঃসত্ত্বা, প্রতারিতা, একাকিনী! ক্লান্ত শরীর এবং ততোধিক ক্ষত-বিক্ষত মন।
তবু, একটি বারের জন্যেও হাল ছাড়েনি মেয়েটা। নিজেকে ‘বেচারা’ ভাবেনি। বরং দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে। প্রতারকের বিরুদ্ধে।
অর্থ, আর্থিক সহায়তা চায় না সে। কিন্তু শাস্তি চায় বিশ্বাসঘাতকের।
দুজনের সামাজিক অবস্থানে ফারাক বিস্তর। লোকটি নিজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত। তাই প্রাথমিক ভাবে মিডিয়া থেকে শুরু করে বিনোদন জগৎ - সাহায্য পায় নি মেয়েটা কারোর কাছেই। কিন্তু, ওই যে, হাল ছাড়েনি। কারণ, এটা শুধু তার একার লড়াই ই না, বরং যে প্রাণটি তিলে তিলে বেড়ে উঠছে তার জন্য লড়াই।
অবশ্য তাকেও ক্ষতি করার কম চেষ্টা তো হয়নি! ফুচকা খেতে গেছিল মেয়েটা, হঠাৎ অজ্ঞাত পরিচয় বাইক এসে ধাক্কা মেরে পালিয়েছে, ফোনে একটার পর একটা ‘থ্রেট কলে'র কথা তো ছেড়েই দিলাম।
তবে, এতকিছুর পরেও মেয়েটার লড়াই কিছুটা অন্তত, সফল হয়েছে। “আমি অমুককে চিনিই না” বলেছিল যে লোকটি, তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এফ. আই. আর ও গৃহীত হয়েছে।
মেয়েটি আমার কাছের বন্ধু।
কাজের সূত্রে আলাপ, কখনও দেখা হয়নি, তবু বছরের পর বছর ধরে দেখেছি কিভাবে অবলা প্রাণীদের সন্তানের মতো করে আগলে রেখেছে। তার বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নতা - সবটাই এক্কেবারে অন্যরকম। আর সেই মেয়েটি এমন অবস্থায় আছে - বুকটা আনচান করছিল। তাই আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম “হ্যাঁ রে, ভালবাসিস এখনও?”
খুব শান্ত ভাবে বলেছে “ভালবেসেছিলাম। এখনও বাসি। আর তাই চাই, শাস্তিটা পাক। কর্মফল ভোগ করুক, নইলে মুক্তি নেই।”
চুপচাপ মাথা নেড়েছি আমি।
আর, কুর্ণিশ জানিয়েছি সেই মা কে - যে শত প্রতিকুলতা আর ভাঙা মনের যন্ত্রণা নিয়েও একহাতে আগলে রেখে পালন করছে সন্তানকে, আর অন্যহাতে ধরেছে খড়্গ - সংহারের জন্য।
আইনী কারণে আমি নাম উল্লেখে অপারগ, হয়ত এই লেখা আমার বন্ধুটির চোখেও পড়বে না। কিন্তু আমি সোচ্চারে বলতে চাই যে এমনি মেয়েরা, এমনি শক্ত শিরদাঁড়ার মেয়েরা আরও অনেক, অনেক, অনেক জন্মাক! সত্যপ্রতিষ্ঠার জেদ ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। প্রতারণা করলে শাস্তি পাক দোষীরা।
পাক! পাক! পাক!
চিরকালের চোখের জল আগুন হোক। আর সেই আগুনে শুদ্ধিকরণ হোক সমাজের, মনুষ্যত্বের…
সরস্বতী প্রয়োজনে মাতঙ্গী হোন…
Collected ..
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
রিটায়ার্ড স্বামী হয়েছি, স্বাভাবিকভাবেই বুড়ো হয়েছি,
আমার এই কাহিল অবস্থায়, আমারই হাসি পায়।
1. *সকালে যদি একটু দেরি করে উঠি....*
----------------------------------------------------
স্ত্রী :- রিটায়ার হয়ে মাথা কিনেছ? তোমার মত কেউ ঘুমোয় ? অফিস নেই বলে এত ঘুম ?
2. *আবার যদি সকাল সকাল উঠি।*
–----------------------------------------------
স্ত্রী :- বুড়ো হয়ে গেছ, ঘুম আসে না বলে ভোর পাঁচটায় উঠে সবার ঘুম ভাঙানো? অফিস টফিস তো নেই। চুপচাপ শোও।
3.*রিটায়ার্ড স্বামী যদি বাড়িতেই থাকতে ভালোবাসি ....*
---------------------------------------------------
স্ত্রী :- সকাল সকাল উঠে সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাক। দশবার শুধু চা এর ফরমায়েশ। কে করবে? আমি পারবো না।
4. *যদি বাইরে বন্ধুবান্ধব দের কাছে যাবার অভ্যাস থাকে ....*
-------------------------------------------------------
স্ত্রী :- *কোথায় থাক সারাদিন ? বাড়ির কাজ না কর, বুড়ো হয়েছ সারা দিন টো টো করে না ঘুরে একটু ভগবানের নামও তো করতে পার।*
5.*যদি পূজো আচ্চা ভালোবাসি, একটু বেশি সময় ধরে ঠাকুরঘরে থাকি ....*
-----------------------------------------------------
স্ত্রী :- এ এক হয়েছ বাপু। সারাদিন টিং টিং করে ঘন্টি বাজাচ্ছ। শোন, ওই ঘন্টা নাড়লে যদি উপকার হত তো বিল গেটস আর টাটারা নয় একজন পুজারী বামুনই টাকা কামাতো, নাম করত।
6. *যদি খালি বসে না থেকে কিছু উপার্জনের আশায় বাইরে যাই ....*
-------------------------------------------------------
স্ত্রী :- এদিকে সংসারের জন্যে খেটে খেটে আমার হাড় মাস কালি হয়ে গেল। আর উনি কাজ দেখাচ্ছেন। কাজের নাটক করে ঘুরে বেড়ানো। আমি কি কিছুই বুঝি না ?
7. *যদি স্ত্রী কে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করি....*
------------------------------------------------------
স্ত্রী :- বেড়াবে ? তোমার মুরোদ আমার জানা আছে। পাশের বাড়ির চক্রবর্তী বাবু, রিটায়ারমেন্টের পরে গিন্নি কে নিয়ে শ্রীলঙ্কা বেড়াতে গেল এই বলে রাখলুম ওই হরিদ্বারে গঙ্গা চান করতে যেতে পারব না।
8. *যদি কষ্টে সৃষ্টে টাকাপয়সা জোগাড় করে নৈনিতাল, মিসৌরি কিংবা মাউন্ট আবু নিয়ে যেতে চাই তো ....*
----------------------------------------------------
স্ত্রী :- ভীমরতি আর কাকে বলে। এক তো হাঁটুর ব্যথায় নড়তে পারিনা, তায় এতো খরচ করে এতদূরে বেড়াতে যাচ্ছে। টাকাটা রেখে দাও। নাতির জন্য একটা ল্যাপটপ কিনে দিও, বেচারা বলছিল।
বেচারা এই রিটায়ার্ড বুড়ো কি করে বলুন তো?
(সংগ্রহীত)
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
শরীর_ব্যবসার অজানা দিক নিয়ে লিখবো বলেছিলাম।
শুরুটা আমার পছন্দের প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস দিয়েই করা যাক। আজ রইলো প্রাচীন মিশরের শরীর ব্যবসার কিছু অজানা তথ্য।
#প্রথম_পর্ব
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগেই প্রাচীন মিশরীয়রা জন্মনিয়ন্ত্রণের বেশ কিছু পন্থা আবিষ্কার করেছিল। আসলে প্রাচীন মিশরীয় সমাজে অবাধ যৌন স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্যে এই পন্থা আবিষ্কারে তারা একরকম বাধ্যই হয়েছিল। এই পন্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল মধু আর সোডিয়াম বাই কার্বনেটের এক বিশেষ মিশ্রণ। যৌন মিলনের আগে এই বিশেষ মিশ্রণ নারী দেহের যৌনাঙ্গের ভেতরে প্রলেপের মতন করে লাগানো হতো।
সেই প্রাচীন কালেই এলিট ক্লাসের মিশরীয় নারীরা যৌনতার বিষয়ে যথেষ্ট আধুনিক ছিলেন। শোনা যায় প্রথম যৌবনে ক্লিওপেট্রা নাকি নিজের একাকিত্ব দূর করতে এক রকম ভাইব্রেটর ব্যবহার করতেন। প্যাপিরাস পাতা দিয়ে বানানো এক ধরণের সরু ঠোঙার ভেতরে অসংখ্য জীবন্ত মৌমাছি ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। মৌমাছিদের গুঞ্জনের ফলে যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তাকে নিজের শরীরে উপভোগ করতেন ক্লিওপেট্রা।
প্রাচীন মিশরীয় সমাজ যৌনতা প্রসঙ্গে এতটাই আধুনিক ছিল যে অন্যান্য সভ্যতাগুলোর মতন তারা নারীর কুমারিত্ব নিয়ে বিশেষ বিব্রত হতো না। প্রাচীন মিশরীয় শব্দমালায় ‘ভার্জিন’ বলে কোনও শব্দের উল্লেখই পাওয়া যায় না। বিবাহের সময়ও প্রাচীন মিশরের পুরুষরা নারীদের কুমারিত্ব নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাত না। বিবাহের আগে কোনও নারী যদি স্যাক্রেড প্রস্টিটিউশনের সঙ্গে জড়িত থাকতো তবে তাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হতো।
প্রাচীন মিশরে বিবাহের আগে শারীরিক মিলনকে সহজভাবে দেখা হলেও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বেশ ঘৃণ্য কাজের মধ্যেই পড়তো, বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে। বিবাহের পর অন্য পুরুষের সঙ্গে শারীরিক মিলনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির উদাহরণও রয়েছে প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসে। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সেই শাস্তি ছিল বেশ লঘু।
প্রাচীন মিশরে ডিভোর্সের প্রথা প্রচলিত থাকলেও তা চাইলেই সম্ভব হতো না। মূলত দুটি কারণে ডিভোর্সকে মেনে নিত প্রাচীন মিশরীয় সমাজ। সন্তানহীনতা এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ছিল সেই দুটি কারণ।
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ওরাল সেক্স’এর উদাহরণ কিন্তু প্রাচীন মিশরীয় মাইথোলজিতেই খুঁজে পাওয়া যায়। দেবতা সেথ তার ভাই দেবতা ওসাইরিসকে খুন করেছিলেন তাদের হাফ সিস্টার দেবী আইসিস’কে পাবার জন্যে। ওসাইরিসকে খুন করার পর তার শরীরকে অসংখ্য টুকরো করে নীল নদের উপত্যকায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেবতা সেথ। দেবী আইসিস অবশ্য নিজের ভালোবাসার মানুষ ওসাইরিসকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি নীল নদের বিস্তীর্ণ উপত্যকা জুড়ে ওসাইরিসের শরীরের অংশ খুঁজে একত্রিত করেছিলেন। তবে সব কিছু খুঁজে পেলেও ওসাইরিসের যৌনাঙ্গ খুঁজে পাননি তিনি। ফলে ওসাইরিসের শরীরে প্রাণের সঞ্চার সম্ভব হচ্ছিল না। তখন দেবী আইসিস নীল নদের তীরের পবিত্র মাটি দিয়ে একটি পুরুষাঙ্গ বানান। তারপর মাটির তৈরি সেই পুরুষাঙ্গকে নিজের দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে তাতে উষ্ণতা প্রদান করেন এবং তা ওসাইরিসের শরীরে সঠিক জায়গায় স্থাপন করেন। সঙ্গে সঙ্গে দেবতা ওসাইরিস যৌন উত্তেজনা অনুভব করেন এবং তার শরীরে প্রাণের সঞ্চার হয়।
প্রাচীন মিশরে যৌনাঙ্গের মতন দেখতে অ্যামুলেট পরিধান করার রীতি ছিল। সাধারণত দেবতার মন্দিরে স্যাক্রেড প্রস্টিটিউশনের সঙ্গে যুক্ত নারীরা দেবতার যৌনাঙ্গের আকৃতির অ্যামুলেট পরতেন তাদের দুই বাহুতে।
তথ্য ও রচনা -©️ বিশ্বজিৎ সাহা
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ছেলে মাকে বলছে, মা একটা কথা বলি, আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
--- তুই চাইলে আমি কি না করতে পারি? বল্ তোর সব কথা আমি রাখবো।
--- তোমার বৌ'মা বলছিল তোমার বয়স হয়েছে। এখন তো তোমার শরীরের একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। আর এই বাড়িটা তো খুব একটা ভালো না। ছোট ঘুপচি! তোমার কাশিটাও বেড়ে গেছে। আর ডায়াবেটিস তো আছেই, হার্টের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা..... আরো কতো কি!"
--- হ্যাঁ রে, মনে হয় আর বেশিদিন....!
--- আহ্ থামো তো মা। তোমার সব সময় দেখা শোনার জন্য কাউকে রাখতে হবে।
--আচ্ছা আমাকে তাহলে গ্রামের বাড়িতে...।
--- না না ওই যে বৃদ্ধাশ্রমের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চে ভর্তি করালে কেমন হয়? এটাই বলছিল তোমার বৌ'মা। ওখানে অনেকে থাকবে তোমার মতোই। তাদের সাথে গল্প করতে পারবে আর এ বাড়িতে তো কেউই নেই, আমি ব্যবসায় দৌড়াচ্ছি, তোমার বৌ'মা অফিসে আর মিঠু তো সারাদিনই কলেজে।ওখানে তুমি আরামেই থাকবে মা। এটাই আমার, মানে আমাদের অনুরোধ ছিল।
--- আচ্ছা তুই চাইলে তাই হবে।
--- থ্যাংকস মা......।
--- আচ্ছা কালকে বিকেলেই কিন্তু তাহলে ওখানে যাচ্ছো। তোমার ব্যাগ গুছিয়ে রাখবে।
পরের দিন, অস্বস্তিকর জ্যামে আটকে আছে মা-ছেলে। নীরবতা ভাঙলেন মা.......!
--- বাবা ওখানে আমাকে দেখতে যাবি তো? পারলে একটা ফোন কিনে দিস আমাকে।
--- মা তুমি ফোন দিয়ে কি করবে? ওখানে ফোন আছে তো।
কিছুক্ষন পরে একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে এবার ছেলে বলে উঠলো।
--- নামো মা, এটাই তো ওই বৃদ্ধাশ্রম। বলেছিলাম না তোমার পছন্দ হবে। তোমার জন্য দোতালার দক্ষিণের ঘরটা বুকিং দিয়ে রেখেছি।
টিং ডং টিং ডং (দরজা খুললো)
--- হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ ! হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ 'মা' ! !
দরজা খুলতেই চমকে গেলেন মা। আরে ওই তো তার একমাত্র নাতি আর বৌ'মা কেক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো বেলুন আগে কখনো দেখেননি। এতো আয়োজন করে কখনো কেউ তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানায় নি। আরে, ওই তো তার দুই মেয়ে আর তাদের জামাই দাঁড়িয়ে।ওদেরও ডেকে এনেছে তার পাগল ছেলেটা।
--- হ্যাপি বার্থ ডে মা।
--- তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস (মা কান্না ভেজা কন্ঠে)। কিন্তু, এটা কার ঘর?
--- বাড়ির ফলকে নাম দেখোনি! বাবার নামে রেখেছি। মা পুরো বাড়িটাই আমাদের। এবার তুমি আরামে থাকতে পারবে মা।
--- তুই না ! এমন কি কেউ করে? (কান্না ভেজা চোখে জোরে জোরে মাথা নাড়ছেন। আনন্দে কথা বলতে পারছেন না)
আয়োজন শেষে ঘুমাতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে মায়ের ডাক। হাতের ব্যাগটা আতিপাতি খুঁজে একটা কৌটা বের করে ছেলের হাতে ধরিয়ে দিলেন।
--- নে এটার আর দরকার হবে না। (ইঁদুর বিষ)
চিন্তা করেছিলাম যদি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসিস তাহলে সেদিনই খেয়ে নেবো।
--- ধুর মা কি যে বলো ! এটাই তো আমি কাল রাতেই পাল্টে তোমার ক্যালসিয়ামের ওষুধ ভরে রেখেছি। তুমি ঘুমাও।
মার আজ আর কিছুই চাওয়ার নেই। আর কিছু না হোক তার ছেলেকে অন্তত মানুষ করতে পেরেছে সে। যাক আজকের ঘুমটা সত্যিই আরামের হবে, ঘুমের ঔষুধ খেতে হবে না।
প্রত্যেক সন্তানই যেন মা-বাবাকে এভাবেই ভালোবাসে এবং মা-বাবার শেষ বয়সে যেন তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠায়।
--- সংগৃহীত
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
?বর্তমানের রানার?
রানার ছুটেছে Amazon থেকে বস্তা বইছে কাঁধে
রানার চলেছে Swiggy প্যাকেট সাথে।।
রানার রানার চলেছে রানার
বস্তার ভারে নুয়ে পড়ে কোনো নিষেধ জানে না মানার
দিগন্ত থেকে দিগন্ত ছোটে রানার রানার
কাজ নিয়েছে সে অনেক প্যাকেট আনার রানার রানার।।
রানার রানার জানা অজানার বোঝা আজ তার কাঁধে
বোঝাই scooter রানার চলেছে phone টা রয়েছে হাতে।।
রানার চলেছে বুঝি দেরি হয় হয়
আরো জোরে আরো জোরে হে রানার দুর্বার দুর্জয়।।
তার জীবনের চিন্তার মত কানে বেজে যায় phone,
আরো দেরি আরো দেরি বুঝি হয় ক্রেতার মাথা গরম।।
রাস্তায় তাকে দেখে ,রাগেতে সকলে মুখ ব্যাঁকায়
Scooter ছুটিয়ে পাগলের মতো কেন এ রানার যায়।।
কত সিগনাল ফেল করে ছোটে জোরে।
ঠিকানায় সে যাবেই পৌঁছে মরে ।।
হাত টনটন মাথা ঝমঝম মুখটা হয়েছে কালো
মাভৈ রানার তবুও দৌড়ে চল।।
এমনি করেই যৌবনের বহু আশাকে পেছনে ফেলে
পৃথিবীর যত প্যাকেট রানার পৌঁছে দিয়েছে হেলে ।।
ক্লান্ত শাস ছুঁয়েছে আকাশ মাটি ভিজে গেছে ঘামে,
জীবনের সব শান্তি কে ওরা কিনেছে discount দামে।।
অনেক দুঃখে বহু বেদনায় অভিমানে অনুরাগে
হবে তার প্রিয়া এক দিন শেষে অন্য কারুর বাগে।।
রানার রানার এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
Amazon ছেড়ে Zomato গিয়ে কি হবে?
দিন কবে শেষ হবে?
ঘরেতে অভাব তাই তার কাজ সবার পেটটা ভরা
বিরিয়ানি নিয়ে ঘুরছে তবু
সে খাবার যাবে না ছোঁয়া।
লেখক
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
10-06-2024, 12:57 PM
(This post was last modified: 10-06-2024, 01:38 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অনেকদিন পরে একটা বিয়েবাড়ি...খুব সেজেছে মেয়েটা।
দিদির লাল চকমকি শাড়ি,
পাশের বাড়ির বৌদির থেকে নেওয়া
ঝুটো মালার সেট।
কাজল-কালো চোখে
বড় মায়াবী লাগছে তাকে আজ!
বন্ধুর বিয়ে বলে কথা,
সাজবে না!
ঝলমল করে হাসছে...
স্টলে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেল আটটা-দশটা...
ঝালের চোটে চোখ দিয়ে জল পড়ছে!
খুব আনন্দ করছে মেয়েটা আজ!
শুধু তো বন্ধুর না,
কলেজের সিনিয়ার দাদা ই যে পাত্র।
আনন্দ করবে না!
শালীপক্ষের সাথে মিশে
খানিক কলকল ও তো করে এলো।
খুশিতে মাতোয়ারা মেয়েটা আজ!
এত ঝাল লেগেছে মেয়ের,
আর কিছু খেতেই পারল না!
বেশি ঝাল খেলে যা হয়,
অম্বল -টম্বল হয়ে শরীর খারাপ!
বিয়েটাও পুরো দেখতে পারল না
সিঁদুরদানের আগেই বাড়ি চলে গেল...
একটা সেলফিও তুলল না ঠিকমতো।
ইস!
কী সুন্দর সেজেছিল মেয়েটা আজ
আনন্দে, খুশিতে, হাসিতে প্রাণবন্ত...
আহা,
ওই মায়াবী চোখে
কাঁদছিল মেয়েটা আজ।
সারাদিন ধরে পুড়ছিল যে বড্ড...
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
সেই রবিবারটায়...
সাতমাস আঠেরোদিন হলো এই খাবার ডেলিভারি দেবার অ্যাপে জয়েন করেছে বাবলু।
কিছু করার ছিল না, বাবা একটা অফিসে হাউসকিপিং এর কাজ করতেন। এমনি কাজটা বেশ ভাল ছিল, অফিসের লোকজন ও ভাল ছিল, শনি - রবি দু’দিন অফিস ছুটি থাকত।
কিন্তু হঠাৎ করেই বছরখানেক আগে কোম্পানির বড় সাহেবেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অফিস বন্ধ করে দেওয়া হবে, সবাই বাড়ি থেকেই কাজ করবে, যাতে এই এত বড় অফিসের ভাড়ার টাকাটা আর না লাগে। অফিসের সবাই খুশিও হয়েছিল। কিন্তু বাবলুর বাবার কাজটা চলে গেছিল। তারপর অনেক কাজের চেষ্টা করেছে, একটা কাজ দেবার এজেন্সিতেও নাম লিখিয়েছে বাবা, কিন্তু সব জায়গাতেই “আপনি তো প্রায় ষাট - কাজ করতে পারবেন?” শুনতে হয়েছে।
তখনই এই ডেলিভারি অ্যাপে জয়েন করেছিল বাবলু। ভেবেছিল নাইট কলেজে পড়ে পড়াশোনাটা শেষ করে নেবে, কিন্তু এখন আর সময় হয় না। বেশিরভাগ অর্ডার একটু রাতের দিকেই আসে, আর যতগুলো অর্ডার ডেলিভারি করতে পারবে, তত বেশি টাকা পাওয়া যাবে। তাই পড়াশোনাটা আপাতত বন্ধই আছে বাবলুর - যদিও ওর ইচ্ছে ওপেন ইউনিভার্সিটি তে খোঁজ নিয়ে পড়াশোনা আবার শুরু করার…
বাবার ভাল লাগবে…
বাবলু জানে ওর বাবার খুব ইচ্ছে ছিল ও কোনো অফিসে চাকরি করবে।
“তোমার মতো চাকরি করব, বাবা?” ছোটবেলায় একবার জিজ্ঞেস করেছিল বাবলু। কেন জানি না, বাবা খুব রেগে গেছিলেন শুনে। চিৎকার করে মারতে গেছিলেন।
পরে অবশ্য বুঝিয়ে বলেছিলেন, “আমার মতো না বাবা, অনেক ভাল কাজ করবে। বড় অফিসার হবে। আমার মতো লোকেরা তোমাকে চা, জল দেবে…”
কথা বাড়ায় নি বাবলু, তবে অত ছোটবেলাতেই বুঝেছিল বাবার জন্য অনেক কিছু করতে হবে…
এমন কিছু, যাতে বাবা খুশি হয়...
পড়াশোনায় সেরকম একটা ভাল ছিল না বাবলু, এক পড়া বারবার করে পড়তে হতো, নাহলে মাথায় ঢুকত না, তাও মোটামুটি ভালোই রেজাল্ট হতো। স্যারেরা বলতেন "তোর কিন্তু বুদ্ধি আছে, তলিয়ে ভাবতে পারিস!" তবে অতিমারীর বছরে বাবার অনেক পুরোনো অফিসের চাকরিটা চলে গেল, তখন ও ক্লাস এইট। বছর ঘুরবে ঘুরবে করছে - তখন বাবা এই নতুন অফিসে চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু সেটাও উঠে যাবার পর হয়ে গেল মুশকিল। যাই হোক, বাবার মতের বাইরে গিয়েই এই ডেলিভারি বয়ের কাজটা নিয়েছে ও। ভাগ্যিস সাইকেল টা ছিল, নইলে অবশ্য এই কাজটা করতে পারত না।
আজ আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে সকাল থেকে। খবরে বলেছে কী নাকি একটা মারাত্মক ঝড় আসছে, আমফানের মতোই প্রায়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে আবহাওয়া দপ্তর থেকে। হয়ত সেজন্যই আজ অর্ডার আসছে বেশি। কেউ বাড়ি থেকে বেরোতে চায় না, এদিকে সবার জিনিস ও চাই। ও যে ডেলিভারি অ্যাপের হয়ে কাজ করে, তারা খাবার ছাড়াও বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনের জিনিস এমনকি মদ ও, বাড়িতে ডেলিভারি করে। অন্যদিন এই সময় দুটো বা বড়জোর তিনটে ডেলিভারি হয়, আজ দুপুর না গড়াতেই পাঁচটা অর্ডারের ডেলিভারি দিতে হল।
হোক, হোক! আরও কয়েক টা হোক… যত ডেলিভারি, তত বেশি পয়সা…
লেকটাউনের একটা বাড়িতে ডেলিভারি দিতে হবে এখন। জনপ্রিয় বিরিয়ানির দোকান থেকে মিলিয়ে অর্ডারটা নিয়ে নিল বাবলু। হ্যাঁ এই তো - একটা মাটন বিরিয়ানি, একটা চিকেন চাঁপ আর একটা ফিরনি। এই যাঃ, ভুল হয়ে যাচ্ছিল, এর সাথেই একটা কোল্ড ড্রিংক আছে তো, অফারে! না নিয়ে গেলে আবার এসে আবার যেতে হতো।
বৃষ্টির মধ্যেই সাইকেল চালিয়ে অর্ডারটা দিতে চলে এলো বাবলু। আজ আবার ক্রিকেট ম্যাচ আছে সন্ধ্যেবেলা - ইস যদি এই ঝড়টা আসার ব্যাপার না থাকত, অনেক বেশি অর্ডার আসত আজও। আগে হলে বাবলু নিজেই পাড়ার ক্লাবে চলে যেত খেলা দেখতে, সবাই মিলে মজা করতে করতে খেলা দেখার তো মজাই আলাদা! তবে এখন আর ইচ্ছেই করে না… খালি মনে হয় বাবা কেমন শূন্য দৃষ্টি মেলে দেখেন ওকে রোজ। একদিন তো দুঃঃখ করে বলেই দিয়েছিলেন “কোথায় আমি কাজ করব, তুই পড়াশোনা করবি, আমার জন্য তোর জীবনটা শেষ হয়ে গেল…”
বাবাকে আর কথা বাড়াতে দেয়নি বাবলু। বলে উঠেছিল “তুমি চিন্তা করো না বাবা, আমি খুব ভাল কাজ করব…”
“আর কী কাজ করবি!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন বাবা।
“আরে দেখো না তুমি - এমন কাজ করব যে… ইয়ে… পেপার… পেপারে নাম উঠে যাবে গো!” একগাল হেসে বলেছিল বাবলু।
ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিল ওর মাধ্যমিকে ফার্স্ট হবার - যাতে পেপারে নাম ওঠে! সেই থেকেই মাথায় রয়েই গেছে।
বাবাও হেসে ফেলেছিলেন। সেদিনের মতো বাবার বুকের হাহাকারটা মুখে আসেনি আর…
উফ! এই রাস্তাটা এমন, কিছুতেই ঠি বাড়ি খুঁজে পাওয়া যায় না। বারোর এক নাম্বার বাড়ির পরের বাড়ি হল আঠেরো - মাঝখানের ছ’টা বাড়ি কী মামার বাড়ি চলে গেল!
বাড়িরও মামার বাড়ি! নিজের কথাতেই নিজের হাসি পেয়ে যায় বাবলুর।
নাহ! কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বাড়িটাকে। বাধ্য হয়েই ফোন করে অর্ডার যিনি দিয়েছিলেন তাঁর নাম্বারে।
ইংরিজি গান বাজছে কলার টিউনে।
ফোনটা পুরো রিং হয়ে কেটে গেল। রাস্তাতেও কেউ নেই যাকে জিজ্ঞেস করতে পারে ঠিকানাটা।
ম্যাপেও বোঝা যাচ্ছে না - কাছাকাছিই হবে খুব, কিন্তু …
আবার ফোন করে বাবলু। আবার সেই ইংরিজি গান।
“হ্যালোওওও” বেশ কিছুক্ষণ পরে ফোন ধরল কাস্টমার।
এই ‘হ্যালো’ এমন একটা শব্দ, যেটা অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়। কতরকম মানুষ যে আছে, তাঁদের ‘হ্যালো’ শুনলেই বোঝা যায়। কেউ খুব মিষ্টি করে বলেন “হ্যালোও?” শুনেই বাবলুর মনে হয় গুবলু গাবলু মিষ্টি মানুষ, যেন গেলেই অর্ডারটা নিয়ে এক মুখ হেসে বলবেন ‘থ্যাংক ইউ!” আবার কেউ কেউ ফোন ধরেই হ্যালো বলেন না, বলেন ‘হাঁ?’ শুনেই বাবলুর মনে হয় যেন গুটকা মুখে নিয়ে কথা বলছেন কেউ, খুব রাগী মানুষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অনুমানটা মিলেও যায়। যেমন একবার নাগেরবাজারে একটা দিদি, খুব মিষ্টি গলায় ‘হ্যালো’ বলেছিলেন। আর ডেলিভারি দেবার পরে জোর করে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন একটা ছোট্ট জ্যুসের প্যাকেট, “এত রোদে এসেছ - খেয়ে নিও ভাই” বলে।
কিন্তু এই ‘হ্যালো’টা অন্যরকম। একদম রুক্ষ একটা শব্দ, একটু হাঁফ ধরা গলা।
“স্যার একটা খাবারের ডেলিভারি দেবার ছিল।”
“তো দিন।”
“স্যার অ্যাড্রেসটা একটু বলবেন?”
“মানে?”
“স্যার আসলে খুঁজে পাচ্ছি না।”
“আমি তো অর্ডার দেবার সময় অ্যাপে লিখেছিলাম আমাকে যাতে ফোন না করা হয়!” খুব রাগী গলায় কথা বলছেন উনি।
‘স্যার, আসলে খুঁজে পাচ্ছিনা ঠিক… আমি বারোর এক বাড়িটার কাছে…” কথা শেষ করার আগেই শুনতে পায় “আহহহ” করে একটা আওয়াজ।
নারীকণ্ঠ!
“খুঁজে নে শা লা! খুঁজে পাচ্ছি না আবার কি?” বলে ফোন টা কেটে দিল কাস্টমার।
স্তব্ধ হয়ে গেল বাবলু।
অনেকেই ফোন করে বাড়ির ঠিকানা চাইলে বিরক্ত হন দেখেছে ও। কিন্তু এভাবে কেউ কখনও গালাগালি করেন নি।
চোখে জল এলো বাবলুর।
আজ বাড়ি থেকে বেরোতে দিতে চাইছিলেন না বাবা। বারবার বলছিলেন “এত বৃষ্টি, তারমধ্যে ঝড় আসবে, আজ না গেলেই নয়?”
“আজ তাড়াতাড়ি চলে আসব বাবা” বলে এসেছিল ও।
আসলে এইসব দিনে কাজ করলে কাস্টমার রা অনেকে ‘টিপস’ দেন ওদের, সেই টাকা পুরোটাই ওরা পায়। আর এখন একটা টাকারও কত দাম, জানে ও…
কিন্তু অর্ডারটা ডেলিভারির কি হবে?
ডেলিভারি না হলে পুরো টাকাটাই ওদের পকেট থেকে কেটে নেবে কোম্পানি। এতগুলো টাকা শুধুশুধু জলে দেবে ও?
আবার ফোন করে ওই নাম্বারে বাবলু।
অনেক সময় তো লোকে মুখ ফসকেও গালি দিয়ে দেয়! হয়ত এই কাস্টমার নিজেই এরকম একজন মানুষ।
“উফ, জ্বালিয়ে খেল বাঁ!” ফোন ধরেই বলে উঠল কাস্টমার টা।
এনাকে আর ‘আপনি আজ্ঞে’ করতে ইচ্ছে করছে না, তাও ভদ্রভাবে কথা তো বলতেই হবে! তাই বলে ওঠে “স্যার, আমি কিছুতেই আপনার অ্যাড্রেস টা খুঁজে পাচ্ছি না”
“আহ! শা লী, কু ত্তী - তোর এতবড় সাহস আমাকে কামড়ে দিলি? আহ!” কানের পর্দা যেন ফেটে যাবে এত জোরে চিৎকার করে উঠল লোকটা ফোনে।
কেউ একটা কাঁদছে খুব। নারীকণ্ঠের কান্না!
একটা যেন জোরে আওয়াজ এলো, খুব কাছ থেকেই। তারপর ফোনটা কেটে গেল।
এই সাত মাসে কম ডেলিভারি তো করেনি বাবলু? কতরকম মানুষ দেখেছে। সেই দিদিটার মতো জোর করে জ্যুস দেওয়া মানুষ যেমন দেখেছে, তেমনি খাবার নিয়েও “ডেলিভারি পাই নি” বা “খাবার ঠান্ডা ছিল” বলা মানুষও পেয়েছে বাবলু। কিন্তু এরকম অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি ওর।
কিন্তু আর ফোন করার ও সাহস হচ্ছে না।
বৃষ্টি টা বেড়ে গেল। এই অঞ্চলে আবার একটুতেই জল জমে যায়। এখনই জমতে শুরু করেছে।
পকেট থেকে ফোনটা বের করে আবার ঠিকানাটা দেখে বাবলু
সৃষ্টি আবাসন, ফ্ল্যাট নাম্বার ৬, সেকেন্ড ফ্লোর, ১৭, এ. ডি দত্ত লেন।
এটা বারো, তাহলে… পাশের গলিতে একবার দেখবে? যদি ওখানে থাকে?
পাশের গলির একদম শেষের সবুজ রঙের বাড়িটা ‘সৃষ্টি আবাসন’ । দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ও।
এই ডেলিভারিটা দিয়ে বাড়ি যাবে ও। স্নান করতে হবে ভাল করে, এমনিতেই রেনকোটের নিচে থেকেও ভিজে একশা হয়ে গেছে ও।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ঢুকতে গিয়ে দেখে গেটে তালা লাগানো। সারি সারি লেটার বাক্স আছে, আরেকপাশে ফ্ল্যাটের নাম্বার লেখা কলিংবেল।
এবার তো বেল বাজাতেই হবে।
একটু ভয়ে ভয়েই বেল বাজায় বাবলু।
আবার না ঝাড় খেতে হয় ওকে, এর জন্যেও।
বৃষ্টিটা জোরে নামল আরও। শেড ও নেই একটা, যার নিচে দাঁড়ানো যায়!
“কোন ফ্ল্যাটের অর্ডার?” একতলার বারান্দা থেকে জিজ্ঞেস করেন একজন বয়স্ক মানুষ।
“ফ্ল্যাট নাম্বার ছয়। অভিষেক দত্ত।”
“ও! ওদের সাথে আমাদের কথা নেই, নইলে তোমাকে চাবি দিতাম” বলে ওঠেন উনি।
আবার বেল বাজায় বাবলু।
না, কোনো উত্তর নেই।
“বাবা, দিয়ে দাও না চাবিটা, ছেলেটা ভিজে গেছে একদম, এমনিতেই ওদের বাড়িতে সকাল থেকে ঝগড়া শুরু হয়েছে” কেউ একটা বলে উঠলেন ভিতর থেকে।
“হুম! এই একটা ফ্যামিলি পুরো ফ্ল্যাটের কালচার নষ্ট করে দিল।”
“রোজকার ঝগড়া, গালাগালি, মারামারি। উফ পারা যায় না! এই নাও চাবিটা খোলো, আমি গেটে দাঁড়াচ্ছি, ঢুকে দিয়ে দিও” বলেন বৃ্দ্ধ ।
মাথা নেড়ে ঢোকে বাবলু। ওনার হাতে চাবিটা দিয়ে বলে “থ্যাংক ইউ কাকু”
তারপর ওপরে ওঠে।
বাবা, কোনোক্রমে এই অর্ডার টা দিলে শান্তি।
বেশ সাজানো গোছানো ফ্ল্যাটের দরজা। কোলাপসিবল গেট আটকানো, দু পাশে দুটো গাছ। কাঠের দরজায় চকচকে, পিতলের মতো অক্ষরে দেখা ‘অভিষেক দত্ত। শর্মিলা দত্ত।”
ঘর থেকে ভেসে আসছে তারস্বরে টিভির আওয়াজ। এতটাই জোরে যে বাইরে থেকেও শোনা যাচ্ছে সেই আওয়াজ।
আবার তো কলিং বেলা বাজাতেই হবে। ভয়ে ভয়ে বেল টেপে ও।
তবে এবার, ওকে অবাক করে দিয়েই বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই দরজাটা খুলে গেল।
আর দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই নাকে এসে লাগে ধূপের গন্ধ।
বছর পঁয়তাল্লিশের একজন সামনে। ট্র্যাক প্যান্ট পরা, খালি গা। বুকে ভর্তি লোম।
দেখেই মনে হয় খুব রাগী!
“স্যার, অর্ডার টা।”
“হ্যাঁ ভাই, দিন।” একগাল হেসে বলে লোকটা।
অবাক হয়ে যায় বাবলু ।
“শা লা’ থেকে ‘ভাই’!
“থ্যাংক ইউ স্যার।” শেখানো বুলি আউড়ে বলে ও।
“ওকে, ওয়েলকাম” বলেই তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে দেয় উনি।
একেবারে বাবলুর মুখের ওপর।
“শা লা, তুই শা লা! ছোটলোক একটা! অভদ্র! বাঁদর!” নিজের মনে লোকটাকে গালি দিতে দিতে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নামে বাবলু।
তারপরেই দাঁড়িয়ে যায়!
কিছু একটা - কিছু একটা ভুল হচ্ছে ওর।
কিছু একটা নজর এড়িয়ে গেছে ওর।
কি হতে পারে?
লোকটার পালটে যাওয়া ব্যবহার, এক মুহূর্তের জন্যে হলেও?
নাহ! অন্য কিছু…
ট্র্যাক প্যান্ট… ট্র্যাক প্যান্ট টা ভিজে ছিল না?
আর গায়ে জামা ছিল না … গরমে অনেকে গায়ে জামা না পরেও থাকেন বাড়িতে, কিন্তু কলিং বেল বেজেছে মানে বাইরের কেউ এসেছে, কেউ এভাবে দরজা খোলে নাকি?
অবশ্য - লোকটার যা ব্যবহার, ওকে তো মানুষই ভাবে নি!
নিচে নেমে আসে বাবলু। তারপর ওই বয়স্ক মানুষের ফ্ল্যাটে বেল বাজায়।
কিছু একটা - কিছু একটা ভুল হচ্ছে…
একটা খটকা…
“কাকু, আবার চাবিটা দেবেন? আমি তাহলে বারান্দায় দিয়ে দিতাম আপনাকে” নিচের ফ্ল্যাটে বেল বাজিয়ে বলে বাবলু ।
“হুম” বলে ঘুরে দাঁড়ান উনি। তারপর বলে ওঠেন “ওই অসভ্য ছেলেটাকে বলোনি তো আমি চাবি দিয়েছিলাম?”
“না না”
“যা অসভ্য ছেলে, হয়ত এই নিয়ে আমাদের সাথে ঝামেলা লাগিয়ে দিল!”
“উনি খুব রাগী, তাই না? আমাকেও ফোনে গালাগাল দিয়েছিলেন, আমি ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিলাম বলে।”
“একদম বাজে ছেলে! বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ঝামেলা, অশান্তি। দু’মাস হল ফ্ল্যাটটা কিনেছে, মাথাখারাপ করে দিচ্ছে আমাদের” গজগজ করতে করতে চাবি এনে দিলেন ওকে উনি।
তালাটা খুলতে খুলতে কিছু একটা মনে হল বাবলুর।
বারান্দায় ওই ভদ্রলোক আছেন, চাবিটা নেবার জন্য।
“কাকু, কিছু মনে করবেন না, উনি কি ওনার স্ত্রীকে মারধর করেন?”
“মনে তো হয়। প্রায়ই কান্নাকাটি শুনতে পাই।”
“আপনারা কিছু বলেন নি?”
“এখানে আসার হপ্তা ঘুরতে না ঘুরতেই শুরু হয়েছে! আমি বলতে গেছিলাম, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।”
“ওনার বাড়িতে শুধু ওনার ওয়াইফ ই থাকেন? আর কেউ থাকেন না?”
“না - আর তো কাউকে দেখিনি কখনও।”
“আচ্ছা, কাকু, চাবিটা।”
সাইকেলে উঠে গলিটা পেরিয়ে এলো বাবলু।
আচ্ছা, এত জোরে টিভি মানুষ শোনে? কান খারাপ হয়ে যায় না?
নাকি এত ঝগড়া হচ্ছিল, সেই আওয়াজ ঢাকার জন্যেই টিভি এত জোরে চালানো।
আর সেই ফোনে কান্নাকাটি?
জোরে একটা আওয়াজ?
মনটায় খুব ‘কুডাক’ দিচ্ছে বাবলুর।
কিন্তু ও কী ই বা করতে পারে? বড় জোর ওদের অফিসে অভিযোগ জানাতে পারে কাস্টমার গালি দিয়েছেন বলে। ফোন তো সব রেকর্ড হয়। যদিও আগে কখনও এসব করেনি ও, তাই জানে না আদৌ কাজ হবে কিনা এতে!
ফোনের কথা ভাবতেই আরেকটা কথা মাথায় এলো।
ওর বাবা ই না বলেন “অন্যায় যে করে আর, অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে”!
তাই ফোনটা আরেকবার পকেট থেকে বের করে বাবলু। পুলিশের নাম্বার ১০০ ডায়াল করে বলে ওঠে “স্যার, আমি বাবলু, একটা অ্যাপ থেকে খাবার ডেলিভারি দিতে গিয়ে একজন কাস্টমারকে ফোন করি… স্যার ফোনে খুব চিৎকার শুনি, মার ধরের আওয়াজ শুনি। ওই ফ্ল্যটের নিচে একজন কাকু বলেছেন উনি নাকি রোজ ওনার ওয়াইফকে মার ধর করেন। আমি জানি না কী হয়েছে, কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছে স্যার। মনে হচ্ছে - কিছু একটা ভুল হয়েছে… হ্যালো, হ্যালো… স্যার?”
পরেরদিন কলকাতার প্রায় সব সংবাদপত্রের হেডলাইন -
“ডেলিভারি বয়ের বুদ্ধিমত্তায় সঙ্কটজনক অবস্থায় গার্হস্থ্য হিংসার শিকার গৃহবধূ উদ্ধার। অভিযুক্ত ধৃত।"
“তোর এত বুদ্ধি? এত বোঝদার তুই?” সকাল থেকে কতবার যে বলেছেন বাবা… জল ছলছলে চোখে…
টইটুম্বুর হয়ে যাচ্ছে বাবলু…
কত্তদিন পরে আজ বাবা এত খুশি…
•
|