Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
07-04-2024, 11:07 PM
(This post was last modified: 21-12-2024, 08:04 AM by বহুরূপী. Edited 72 times in total. Edited 72 times in total.)
[গল্পটি কাল্পনিক। এর সাথে কোনোরূপ বাস্তবতার মিল নেই। অডিয়েন্সের বিনোদনের উদ্দ্যেশ্যে এই গল্পটির রচনা।]
বৌদিমণি
তালদিঘির মাটিতে এটি এত বড় কোনো ঘটনা ছিল না। মহেশ বাবুর বড় ছেলেটা জুট মিলে কাজ পেয়ে যখন পাশের গ্রামের থেকে বউ নিয়ে এলো; সম্পত্তিতে ভাগ বসিয়ে বাপ মা মরা অসহায় ছোট ভাইকে একা করে, রাত পোহাতে পোহাতে ভিটেমাটি বেঁচে পাশের গ্রামে তার শশুর বাড়িতে গিয়ে উঠলো। কয়েকদিন তালতলায় চায়ের দোকানে মুরব্বিরা চায়ের কাপ মুখে ধরে হুঁকোয় টান মেরে এ ঘটনার সমালোচনা করল বটে; তবে কিছুদিনের মধ্যেই জল থিতল । সোহমের বিবাহ কে আলোচনার বিষয় করে নিলো তারা।আর জঙ্গলার ধারে এক চিলতে জমি জুটল ছোট ভাই সঞ্জয়ের কপালে। কালে কালে ব্যাপারটা ভুলতে লাগলো সবাই।এদিকে খুব কষ্ট করে হলেও, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে সঞ্জয়। জঙ্গলার পাশে ছোট খুপরিটি এখন দোতলা পাকা বাড়ি।গঞ্জে তার এখন তিনখানা মিস্টির দোকান।তার মিস্টি কথা পুরো গঞ্জের লোকের মুখে মুখে ঘোরে। সঞ্জয়ের পড়া লেখায় বাঁঁধা পড়লেও,বড় দাদার থেকে শিক্ষিত সে কম নয় মোটেও।বয়স কম হলেও তার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস আশে পাশের দশগ্রামে কারো নেই। তবে ছেলে খারাপ নয় সঞ্জয়। সুঠাম দেহের গঠন ও উচ্চতা দেখেই ভিমরি খেতে হয় লোকজনকে।তাছাড়া তার দাদার মত ভিতূ ও নেশাগ্রস্ত সঞ্জয় মোটেও নয়। অন্য দিকে নয়নতারা! মানে সঞ্জয়ের বৌদিমণিকে রূপে লক্ষ্মী ও গুণে সরস্বতী বললে মিথ্যে বলা হবে না।নয়নতারা খুব লম্বা নয়।সচরাচর বাঙালি মেয়েরা লম্বা হয় না।নয়নতারাও সেরকমই।পাঁচ ফুট এক কিংবা দুই। তবে অতন্ত্য ফর্সা,দুধে আলতা গায়ের রং।কোমর সরু,উদ্ধত মানানসই পাছা।দুই বাচ্চার মা হলেও শরীরে এক বিন্দু মেদ নেই।স্তনদুটি উন্নত।নতুন মাতৃত্বের দুধে পরিপূর্ণ।কোমড় ছুঁয়ে যাওয়া চুলগুলো কোঁকড়ানো। সবসময় শাড়িই পরে নয়নতারা। সব মিলিয়ে বলা চলে সুন্দর মুখশ্রীর অধিকারী সে। একই সাথে স্নেহময়ী ও কোমল হৃদয় তার। আর সেই জন্যেই বোধ করি স্বামীর শত বাঁধা উপেক্ষা করে অসহায় দেওরটির খোঁজ খবর রাখতো সে। সঞ্জয়ের মুখে বৌদিমণি ডাকটি বেশ ভালো লাগে নয়নতারার।তবে আজ সপরিবারে দেওরের বাড়ির দোরের সামনে বৌদিমণি ডাক শুনতে আসেনি সে।এসেছে ভাগ্যের ফেরে পরে।কারণ তার নেশাগ্রস্ত স্বামীর বদৌলতে আজকে তারা সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে।তাই নিরুপায় হয়ে দুই তিন জায়গায় ঠোকর খেয়ে,অবশেষে সপরিবারে নদী পার হয়ে এসেছে দেওরের কাছে। একটু আশ্রয় ও তার স্বামীর মুক্তি পাওয়ার আশায়।নয়নতারা স্বামী এখন থানায়।স্বামীর জন্যে চিন্তা যেমন হচ্ছে, তেমনি চিন্তা হচ্ছে তার অসুস্থ বাবার সেই সাথে তার মা,নব তরুণী ছোট বোন আর দুটি ছোট ছোট বাচ্চার। এই মূহুর্তে নয়নতারা একটি সাত বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে অশ্রুসিক্ত ছলছলে দুই নয়নে মেঠোপথটির দিকে তাকিয়ে ভাবছে।বড় দাদার এমন অন্যায়ের পরেও সঞ্জয় কি মেনে নেবে তাদের!সেই বৌদিমণি ডাকের কতটুকু অধিকার ফলাতে পারবে সে তার দেওরের মনে। ভাবনার মাঝে হঠাৎ নয়নতারা লক্ষ্য করে।দূর থেকে ছুটে আসছে একটি সুদর্শন যুবক। তার পেছনে একজন একটি মোটরসাইকেল ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছে। আর একটু কাছে আসতেই নয়নতারা কানে আসে সেই অতি চেনা পরিচিত গলার আওয়াজ।সঞ্জয় ছুটে চলে এসেছে সামনে। আর অবাক দুটি চোখে নয়নতারা পানে চেয়ে বলছে। বৌদিমণি তুমি কাঁদছো কেন?
﴾সূচীপত্র﴿
༻সমাপ্ত༺
The following 31 users Like বহুরূপী's post:31 users Like বহুরূপী's post
• adnan.shuvo29, alan07, bad_boy, Bhogu, bluesky2021, dpbwrl, FreeGuy@5757, jktjoy, johndurrant, Kakarot, kapil1989, kinkar, Krishk, Lajuklata, Lustful_Sage, Mamun@, Monkey D. Dragon, mozibul1956, ray.rowdy, Sage_69, san1239, shazana, Sweet angel, UttamChoudhury, WrickSarkar2020, দর্পণ`, বয়স্ক মহিলা প্রেমী, মাগিখোর, হেমেন, ৴৻সীমাহীন৴, •°৹৴°【সামিউল】°৲৹°•
Posts: 156
Threads: 0
Likes Received: 184 in 131 posts
Likes Given: 294
Joined: Oct 2023
Reputation:
6
Posts: 414
Threads: 0
Likes Received: 242 in 225 posts
Likes Given: 298
Joined: Jan 2023
Reputation:
4
Posts: 2,110
Threads: 24
Likes Received: 3,887 in 1,136 posts
Likes Given: 5,006
Joined: Sep 2023
Reputation:
848
ভালো শুরু। চালিয়ে যান।
গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(08-04-2024, 11:18 AM)মাগিখোর Wrote: ভালো শুরু। চালিয়ে যান। (08-04-2024, 09:49 AM)D Rits Wrote: Good start (08-04-2024, 09:24 AM)Mamun@ Wrote: ভালো শুরু,চালিয়ে যান সবাই কে ধন্যবাদ, পাশে থাকবেন আশা করি।
Posts: 311
Threads: 0
Likes Received: 222 in 176 posts
Likes Given: 610
Joined: Jan 2019
Reputation:
4
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(08-04-2024, 05:02 PM)nightangle Wrote: BHalo Hocha....
থ্যাংস ইউ ব্রো
Posts: 295
Threads: 0
Likes Received: 284 in 194 posts
Likes Given: 714
Joined: Apr 2019
Reputation:
20
(07-04-2024, 11:07 PM)বহুরূপী Wrote: তালদিঘির মাটিতে এটি এত বড় কোনো ঘটনা ছিল না। মহেশ বাবুর বড় ছেলেটা জুট মিলে কাজ পেয়ে যখন পাশের গ্রামের থেকে বউ নিয়ে এলো; জমি ভাগ বসিয়ে বাপ মা মরা অসহায় ছোট ভাইকে একা করে রাত পোহাতে পোহাতে ভিটেমাটি বেঁচে পাশের গ্রামে তার শশুর বাড়িতে গিয়ে উঠলো।
কয়েকদিন তালতলায় চায়ের দোকানে মুরব্বিরা চায়ের কাপ মুখে ধরে হুঁকোয় টান মেরে এ ঘটনার সমালোচনা করল বটে; তবে কিছুদিনের মধ্যেই জল থিতল । সোহমের বিবাহ কে আলোচনার বিষয় করে নিলো তারা।
আর জঙ্গলার ধারে এক চিলতে জমি জুটল ছোট ভাই সঞ্জয়ের কপালে। কালে কালে ব্যাপারটা ভুলতে লাগলো সবাই।
পড়তে ভালো লাগছে। লিখে যান। প্যারাগ্রাফে ভেঙে লিখলে আরো সহজপাঠ্য হবে।
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(09-04-2024, 08:03 AM)radio-kolkata Wrote: পড়তে ভালো লাগছে। লিখে যান। প্যারাগ্রাফে ভেঙে লিখলে আরো সহজপাঠ্য হবে।
বলছেন যখন চেষ্টা করবো।তবে একটু আধটু এসে পরলে নিজ গুনে বুঝে নেবেন না হয়।
বাই দ্যা ওয়ে আপনার নামটা ভালো লাগলো radio-kolkata
Posts: 2,733
Threads: 0
Likes Received: 1,206 in 1,062 posts
Likes Given: 43
Joined: May 2019
Reputation:
26
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(10-04-2024, 07:01 AM)chndnds Wrote: Good STarting
থ্যাংস
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
11-04-2024, 06:13 AM
(This post was last modified: 12-04-2024, 02:34 AM by বহুরূপী. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
পর্ব ১
নয়নতারার মুখে বলা কথায়, সঞ্জয় সংক্ষেপে যা বুঝলো।তা হলো,মাদক ও জুয়ার জন্য টাকার ধার দেনায় জড়িত ছিল সঞ্জয়ের বড় ভাই। টাকা পরিশোধ না করতে পারায়।তাদের বাড়ি ঘর দখল নিতে আসে তাদের পাড়াই এক প্রভাবশালী লোক রাজেন্দ্র রায়।সঞ্জয়ের বড় ভাই বাঁধা দিলে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রাজেন্দ্রের মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছে সঞ্জয়ের বড়দা সোহম।এখন সে থানায়।়মুরুব্বীদের আলোচনা শেষে দেখা যায়।সোহম নয়নতারার বাবার থেকে কৌশলে তাদের জমিজমার দলিল নিয়ে জুয়ার বাজিতে বন্ধক রেখেছিল। এখন তার চাকরিটা গেছে থানার মামলায়।এই মূহুর্তে নয়নতারার দাবি তার স্বামী কে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হোক।সোহম যেমনি হোক না কেন; সে তো সম্পর্কে সঞ্জয়ের বড় ভাই।এদিকে সঞ্জয় কথাটা শুনেই নয়নতারা কোল থেকে মন্দিরাকে তার কোলে নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলল।
– ও আমার দারা হবে না বৌদিমণি।
সঞ্জয়ের এমন কঠিন কথা শুনে নয়নতারা ব্যাকুল হয়ে বলল।অতটা নিষ্ঠুর হয় না ঠাকুরপো,দোহাই লাগে ওকে ছাড়িয়ে আনো।নয়তো আমি তোমার দোরে মাথা কুটে মরবো এই বলে দিলাম।কিন্তু নয়নতারার করুণ আকুতি কানে তোলেনি সঞ্জয়।উল্টো শান্ত স্বরে বলল।
– তা মরনা মাথা কুটে,আমি বাঁধা দেবার কে কে শুনি! ঐরকম স্বামীর ঘর করার থেকে মরে যাওয়া ঢের ভালো। কথাটা বলেই সঞ্জয় মন্দিরাকে কোলে করে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে লাগলো।এদিকে নয়নতারা কাঠ হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো।
সে এখন বাড়ির ভেতরের উঠনে রান্নাঘরে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রান্নাঘরে দোরের সরাসরি পঞ্চম দিকে দোতলার সিঁড়ি।আর সিঁড়ির পাশেই বারান্দায় একটা চাটাই পেতে নয়নতারার বাবাকে শুয়েই দেওয়া হয়েছে।তার বাবার মাথার পাশে নয়নতারার মা নিশ্চিন্ত মনে পান সাজতে বসেছে।সঞ্জয়ের যে নয়নতারা প্রতি বিশেষ টান আছে;একথা নয়নতারা মা আগে থেকেই জানেন।তবে বাড়িতে ঢোকার মুখে সঞ্জয় যখন তার বৌদিমণির শাড়ির আঁচল খানি টেনে নিয়ে বাড়ি চাবির গোছাটা বেঁধে দিল। তখন তার আর চিন্তা রইল না।এখন তিনি নিশ্চিন্ত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেবেন মনে মনে তার একটা হিসেব কষছেন।
অন্য দিকে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নয়নতারা ছোট বোন হেমলতা।সে আজকে বড্ড চিন্তিত।সে তার বড় দিদির চারমাসের বাচ্চাটি কে কোলে নিয়ে ঘন ঘন চমকে উঠছিল সঞ্জয়ের কথা বলার ভঙ্গি দেখে ও শুনে।অবশ্য তার ভয় পাবার ন্যায কারণ আছে।যেখানে সঞ্জয় তার আপন মায়ের পেটের দাদাকে ক্ষমা করতে পারছে না; তার বৌদিমণিকে পথে নামানোর অপরাধে। সেইখানে হেমলতার মত পরের ঘরের মেয়েকে কেন ক্ষমা করবে সে!তার যে এখনও স্পষ্ট মনে পরে।তখন দিদির সাথে দেখা করার অপরাধে বছর দুই তিন আগে সে ধরিয়ে দিয়েছিল সঞ্জয়কে তার জামাইবাবুর কাছে।কি মার না খেয়েছে ছেলেটা। কিন্তু একটি কথাও বলেনি।শুধু ক্রুদ্ধ দুই নয়নে হেমলতার পানে তাকিয়ে চুপচাপ সহ্য করে গেছে।আজ এতদিন পরে সেই দৃষ্টি মনে পরতেই হেমলতার বুকটা কেমন করে উঠছে যেন।এমন সময় হঠাৎ কাঁধে হাতের স্পর্শে চমকে উঠলো হেমলতা।
– কি রে এমন চমকে উঠলি কেন?
হেমলতা দিদির প্রশ্নের জবাবে একটু মাথা দুলিয়ে নিরবে বুঝিয়ে দিল কিছু হয়নি।নয়নতারা তার বোনের কোল থেকে তার শিশু পুত্রটিকে কোলে নিয়ে বলল।এটুকু এগিয়ে যা তো,দেবু খাবার নিয়ে এসেছে মনে হয়।খাবার এনে মা বাবাকে দিয়ে দোতলার থেকে মন্দিরাকে নিয়ে আয় যা।
একথা শুনে হেমলতা ব্যস্ত হয়ে বলল।দিদি মন্দিরাকে তুমি নিয়ে এসো।আমি এদিকটা দেখছি।
দুই বোনের মতামত মিলখেলেও; কিছুক্ষণ পরেই দোতলার সিঁড়ি ভেঙে ওপড়ে উঠতে দেখা গেল হেমলতাকে।কিন্তু কেন!ঘটনাটি ঘটলো আচমকাই।সবাইকে খাবার দিয়ে যখন নয়নতারা উঠবে,ঠিক তখনি তার লক্ষ্মীছাড়া পূত্র সন্তান টি হাতপা ছুরে কাঁদতে বসলো।কান্ড দেখ হেমলতাও অবাক হল।দুধ দিতে দেরি হলেও কখনো তো বাবুকে কাদতে দেখেনি সে।তবে আজ কি হল ওর! তবুও হেমলতা এই বলে সামলাতে চাইলেও যে।বাবুকে দুধ খাইয়ে পরে মন্দিরাকে নিয়ে এসো দিদি....। কিন্তু হেমলতার কথা শেষ হবার আগেই,হতভাগা দেবু বলল।বৌদি দাদাবাবু তোমাদের খবর পেয়ে,খাবার ফেলে উঠে এসেছে।তার ওপরে গাড়িটা বসে গেল মাঝ পথে। তারপর তো দেখলেই কেমন দৌড়ে এসে..
উফ্..আজকে সবাই যেন এক জোট হয়েছে হেমলতার বিপক্ষে।
ওপড়ে উঠে হেমলতা ধির পদক্ষেপে এগিয়ে চলল পুবদিকের একদম শেষের ঘরটির উদেশ্যে।তার হাতে খাবারের তালা ও জলের পাত্র।হৃদয়ে একরাশ ভয়।ঘরের সমুখে এসে মেঝের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে কিছু বলতে চাইছিল হেমলতা।তার সেই কষ্টটুকু লাঘব করে সঞ্জয় বলল।
– টেবিলে রেখে দাও,পরে খেয়ে নেব।
একটু চমকে গিয়ে মুখতুলে তাকালো হেমলতা।চোখে চোখে পরতেই একটু কেঁপে উঠলো সে। কোন মতে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে খাবারের পাত্র নামিয়ে,মন্দিরাকে নিতে যেই পেছনে ঘুরেছে।সঞ্জয়কে দেখে আতকে উঠে পেছনে সরতে গিয়ে পরেই যাচ্ছিল সে। শেষ মুহুর্তে সঞ্জয় হাতে ধরে সামলে নিল তাকে।তারপর আচমকা এক হেঁচকা টানে হেমলতার কোমল দেহটা আছড়ে পরলো সঞ্জয়ের বুকের ওপরে। এমন বিপদজনক পতন ঠেকাতে হেমলতা তার দুহাত বুকে সামনে আনলো বটে।তবে গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের করতে পারলো না সে।ভয়ে তার হৃদপিণ্ড যে ঢাকের মতো বাজতে লাগল।হেমলতা মনে হল তার আওয়াজ বুঝি সঞ্জয়ের কানের পর্দায় স্পষ্ট হয়ে ধাক্কা দিচ্ছে।তা না হলে ওমনি কেউ হাসে।
এদিকে হেমলতার করুণ অবস্থা দেখে সঞ্চয় মৃদু হেসে বলল।এতদিন পালিয়ে ছিলে,কিন্ত এবার ক্ষতিপূরণ সুদেআসলে বুঝে নেব আমি।এটুকু বলে হেমলতাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিল সঞ্জয়।কিন্তু ঐটুকু কথায় যথেষ্ট ছিল হেমলতার দূর্বল হৃদয়টাকে দুলিয়ে দিতে।এই ছোট্ট ঘটনাটি তার মনের জমাট বাঁধা কুয়াশা সরিয়ে দিয়ে,এই কথাই যেন জানান দিতে চাইলো যে।পোড়ামুখি এবারের তোর কপাল পুড়লো বলে!
নয়নতারা বাবুকে তার কোল থেকে মায়ের কাছে নামিয়ে দিয়ে,নিচে বাড়ির চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল রান্নাঘরে দিকে। বাড়িটা বেশ বানিয়েছে সঞ্জয়।দোতলা বাড়িটির চারপাশে প্রায়ই দুমানুষ উঁচু দেয়াল তোলা।ভেতরে উঠানটি বেশ বড়।অনেক গুলো বড় বড় গাছ ও এটটা ফুলের বাগান আছে একটা।বাড়িটার ঢুকলেউ বসার ঘর।আর তার সোজাসুজি ভেতরে উঠনে আসার দরজা।দরজা দিয়ে বাইরে এলেই প্রশস্ত লম্বালম্বি টানা বারান্দা। অনেকগুলো ঘর থাকলেও বাড়িটি তার নখদর্পণে!কারণ বাড়িটি করার আগে বৌদি ও ঠাকুরপো মিলে ছক কষে নির্ধারিত করেছে কোথায় কি হবে। নয়নতারা কথামত দোতলা বাড়িটার ভেতরের উঠনে রান্নাঘর ও তার সোজাসুজি বাম পাশে ঠাকুর ঘরটি বানানো হলেও,আপাতত সে দুটোই তালাবদ্ধ। এদিকে সিঁড়িতে উঠতে হাতের বামে পরছে কলপার।কিন্তু তাতে আবার দেয়াল ওঠানো হয়নি।বলাই বাহুল্য নয়নতারা মিথ্যা শান্তনা সঞ্জয় খুব একটা বিশ্বাস করেনি কখনোই। তাছাড়া নয়নতারা নিজেও তো কখনো ভাবেনি ঠাকরপোর সংসারের চাবির গোছা তার আঁচলটা বাঁধা পরবে।
ভাবতে ভাবতে একটা দৈর্ঘ্য শ্বাস ছেরে ডান হাতে শাড়ির আঁচলটা টেনে নিয়ে রান্নাঘরের দোর খুলতে লাগলো সে।বলা চলে নয়নতারা ভেবেই রেখেছে রান্নাঘরটি ফাঁকা দেখবে।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে রান্নাঘরটি ভরা। রান্নার জন্যে প্রয়োজনীয় যা কিছু আসবাবপত্র লাগে,মোটামুটি সবই আছে ঘরটিতে।ঠাকুর ঘরটিও তাই।এসব দেখে নয়নতারা ব্যস্ত হয়ে বাকি ঘরগুলোর তালা খুলে দেখতেই আবারও চোখে জল এলো তার।কিছু সময় আগে,সঞ্জয় যখন তার শাড়ির আঁচলে চাবির গোছাটা বাঁধতে বাঁধতে বলছিল। এই বাড়ি তোমার বৌদিমণি।সবকিছুই তোমার ইচ্ছেমতো তৈরী।এবার ঘরের লক্ষ্মী তার নিজ দায়িত্ব নিজে হাতে তুলে নিলেই আমার মুক্তি।
তবে একটু আগেই যে নয়নতারা ভাব ছিল।তার মিথ্যে শান্তনা গুলো বিশ্বাস করেনি সঞ্জয়! কিন্তু তাহলে বাড়িটিকে নয়নতারা কথা মতো সাজিয়ে রেখেছে কেন।তবে কি তার মিথ্যে শান্তনা গুলিকে যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে সঞ্জয়!
হেমলতা ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে দেখল।তার দিদি বিছানায় বসে তার শাড়ির আঁচলটা চোখে বুলিয়ে নিচ্ছে। ব্যপারটা ঠিক ধরতে না পারলেও হেমলতা বিশেষ কিছুই বলল না দিদিকে।এগিয়ে গিয়ে সে দিদির পাশে বসে ভাবতে লাগলো,নতুন বাড়িতে তাদের নতুন জীবনটি কোন মোড় না জানি নিতে চলেছে...
~~~~~~~~~~~~~~~~
সকালে জলখাবার সেরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেল সঞ্জয়।আর তার পরেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো হেমলতা।বোঝাই যাচ্ছে গতকালের ঘটনাটি দাগ টেনেছে তার মনে।
হেমলতা বারান্দায় পা দিয়েই দেখল,নয়নতারা বাবুকে কোলে নিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছে রান্নাঘরে দোরের সমুখে। অবশ্য করাণটি তার অজানা নয়। সকালবেলা জলখাবার শেষ যখন সঞ্জয় গঞ্জে যেতে উঠছে,ঠিক তখনি নয়নতারা সঞ্জয়ের ডান হাতটি চেপেধরে অনুনয়ের কন্ঠে বলল।
– এবারে মতো ওকে মাফ কর সঞ্জয়।শুনিছি থানার বড় বাবু নাকি খুব মেরেছে ওকে।দোহাই লাগে তোমার দাদাকে ঘরে নিয়ে এসো।
তা সে কথা ইনি কি কানে তুলবে কেন! সে নয়নতারার পানে তাকিয়ে বলল।
– দেখ বৌদিমণি ও কাজ আমার দারা হবে না।তাছাড়া শুনেছি থানার বড় বাবু ঘুসখোর।সিন্দুকের চাবিটি তোমার কাছেই।মন চাইলে দেবুকে নিয়ে দাদাকে ছাড়িয়ে আনো গিয়ে।তবে মনে রেখো! এ বাড়িতে দাদা উঠলে,আমার পা আর এবাড়ির ছায়া....
সঞ্জয়ের কথাগুলো নয়নতারা হৃদয় কাঁপিয়ে দিয়েছিল।তাই তো সে সঞ্জয়ের হাতটি ছেরেদিয়ে মুখে চেপে ধরেছিল সে।
তারপর আর কোন কথা বলার সাহস হয়নি নয়নতারার।নয়নতারা মা অবশ্য বেশ কিছুক্ষণ মেয়েকে বোঝালো।তার স্বামী যা করেছে।তার উপযুক্ত শাস্তি না পেলে তার সাহস যে আরও বেরে যাবে।
তা সে কথা নয়নতারাও জানে। তার সাথে এটাও জানে যে,রাজেন্দ্র রায় কেমন লোক।তাদের পরিবারের সাথে থানার বড়বাবুর বিশেষ সম্পর্ক।এমন অবস্থায় তার স্বামীকে ওদের হাতে ছেড়ে নয়নতারার যে মন বসছে না কোন কিছুতেই।
এদিকে নয়নতারার মা মিনতী দেবী স্বামীকে খাইয়ে নিজে খেতে বসেছিলেন।এমন সময় হেমলতাকে দেখে তার কপালে ভাজ পরলো।মিনতী দেবী প্রথম দিকে সঞ্জয়কে দুচোখে দেখতে না পারলেও,যখন সে উন্নতি পথে হাঁটা লাগালো তখন এনার নজর সঞ্জয়ের উপরে পরতে দেরি হয়নি মোটেও।তবে ছোট মেয়েটার ভাবসাব দেখে তিনি বড্ড হতাশ।ওবাড়িতে সঞ্জয় গেলেই হেমলতা আড়ালে লুকিয়ে পরলেও, উনি ভেবেছিলেন এখানে তেমনটি করার সুযোগ নেই।তিনি মনে মনে ভাবছেন মেয়ের সাথে কথা বলে এই কথা কিভাবে বোঝানো যায় যে হেমলতাকে তিনি সঞ্জয়ের গলায় ঝুলাতে চাইছেন।তবে হেমলতাকে না বুঝিয়ে নয়নতারাকে বোঝালে লাভ হয় বেশি।কিন্তু ওমেয়ে কিছু বোঝার অবস্থায় নেই।অবশ্য তিনি নিজেও সোহমের এমন কান্ডে ধাক্কা টা আচমকাই খেয়েছেন।তবে ধাক্কা টা সামলেনিতে তার বেশ দেরি হয়নি। মিনতী দেবী হেমলতাকে ডেকে তার পাশে বসালেন।এমন সময় বাইরে থেকে দেবু ডাকে হেমলতাকে উঠতে হল।যখনে ভেতর বাড়িতে আসলো তখন তার সাথে আসলো অচেনা দুই নারী।তাদের পেছন পেছন দেবু আসলো মাথা এক বিশাল বোঝা নিয়ে।প্রাথমিক পরিচিত পরে জানা গেল,এই দুই রমণী মা ও মেয়ে।তারা থাকে দুই ঘরে পরেই।আজকে যাবার সময় সঞ্জয় তাদের বলে গেছিল এখানে আসতে।উদেশ্য শাড়ি ও মেয়েদের প্রয়োজনীয় বাকি যা কিছু লাগে তাই দেখানো।
এ গ্রামের সঞ্জয়ের সাথে সবারই মিষ্টি সম্পর্ক।অবশ্য সম্পর্কে মিষ্টাভাবটা না রেখে উপায় নেই।কারণ কেউ বিপদে পরলে একমাত্র ভরশা সঞ্জয়।গ্রামে আর প্রভাবশালী লোক আছে বটে,তবে তাদের সাহায্য যে বড্ড মুল্যবান।আর সে মূল্য চুকাতে গ্রাম বাসিদের যে কি সমস্যার মধ্যে পরতে হয়,তা সবারই জানা। দেবুর মাথা থেকে বোঝাটা নামিয়ে কার কি লাগবে সেই আলোচনায় বসলো।তবে নয়নতারার চিন্তিত মনে চিন্তা আরো বারলো।কেন! তা না হয় পরবর্তী পর্বে আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে প্রশ্ন আসে! গল্প কি চলবে??!!
The following 21 users Like বহুরূপী's post:21 users Like বহুরূপী's post
• bad_boy, bluesky2021, crappy, dpbwrl, FreeGuy@5757, jktjoy, kapil1989, kinkar, Lustful_Sage, Monkey D. Dragon, mozibul1956, ojjnath, poka64, Pothbhola007, PouniMe, Ptol456, raikamol, ray.rowdy, san1239, sumaiya20, •°৹৴°【সামিউল】°৲৹°•
Posts: 46
Threads: 0
Likes Received: 39 in 25 posts
Likes Given: 10
Joined: Jan 2020
Reputation:
0
গল্প পড়ে শরৎ বাবুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। চালিয়ে যান।
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(11-04-2024, 07:32 AM)evergreen_830 Wrote: গল্প পড়ে শরৎ বাবুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। চালিয়ে যান।
উনি লিখতেন নাকি এখানে, লিংক থাকলে দিন।
ধন্যবাদ
•
Posts: 44
Threads: 0
Likes Received: 20 in 14 posts
Likes Given: 6,600
Joined: Jun 2023
Reputation:
0
চলুক গল্পটা ......... ভালোই তো লাগছে ..........
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(11-04-2024, 07:14 PM)kapil1989 Wrote: চলুক গল্পটা ......... ভালোই তো লাগছে ..........
ওহ রিয়েলি!!!........থ্যাংস ব্রো
•
Posts: 91
Threads: 0
Likes Received: 13 in 11 posts
Likes Given: 305
Joined: Dec 2023
Reputation:
1
Posts: 732
Threads: 4
Likes Received: 1,743 in 449 posts
Likes Given: 945
Joined: Apr 2024
Reputation:
558
(12-04-2024, 10:06 AM)san1239 Wrote: choluk choluk
সাথে থাকলে অবশ্যই ব্রো,থ্যাংস...
•
Posts: 2,110
Threads: 24
Likes Received: 3,887 in 1,136 posts
Likes Given: 5,006
Joined: Sep 2023
Reputation:
848
গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।
Posts: 784
Threads: 0
Likes Received: 350 in 286 posts
Likes Given: 1,597
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
|