29-10-2023, 01:13 PM
ভ্যাম্পায়ার! রক্তচোষা! কত নামই রয়েছে এই ভুতুড়ে ভাবনার। বিদেশী ভূত এবং এবং বিদেশী প্রেক্ষাপট। খুব সুন্দর গল্প। বাঘের ছেলে বাঘ হয় আর রক্তচোষার মেয়ে রক্তচোষা! আর পাপ বাপ মানে না। সবগুলো মিলে মিশে গেছে এই গল্পে।
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
|
29-10-2023, 01:13 PM
ভ্যাম্পায়ার! রক্তচোষা! কত নামই রয়েছে এই ভুতুড়ে ভাবনার। বিদেশী ভূত এবং এবং বিদেশী প্রেক্ষাপট। খুব সুন্দর গল্প। বাঘের ছেলে বাঘ হয় আর রক্তচোষার মেয়ে রক্তচোষা! আর পাপ বাপ মানে না। সবগুলো মিলে মিশে গেছে এই গল্পে।
29-10-2023, 06:13 PM
(27-10-2023, 09:55 AM)Somnaath Wrote: থ্যাঙ্ক ইউ
![]() (28-10-2023, 05:50 PM)Chandan Wrote: good one .. থ্যাঙ্ক ইউ
![]() (29-10-2023, 12:11 AM)Baban Wrote: বেশ ভালো লাগলো গল্পটা। তবে যদি এমন কোনো গল্প পান যার প্রেক্ষাপট হলো বন্ধুরা বা বয়স্ক কেউ ছোটদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা বলে তবে সেসব দিলে আরও জমে উঠবে। এই ধরণের পরিবেশ আরও মজা বাড়িয়ে দেয়। ❤ থ্যাঙ্ক ইউ
![]() (29-10-2023, 01:13 PM)লম্পট Wrote: থ্যাঙ্ক ইউ
![]()
31-10-2023, 11:25 AM
|| গল্প, তবু গল্প নয় ||
লেখা :- অলোকানন্দা চ্যাটার্জী
১
সময়টা ১৮৯৭।প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল চারপাশ।মাত্র কয়েক মূহুর্ত্তের কম্পন,তবে তীব্রতা যথেষ্ট।প্রবল শব্দে ভেঙে পড়ল মসজিদের অনেকখানি অংশ।ক্ষতিগ্ৰস্ত প্রায় পুরো নির্মানটাই। ধাতস্থ হতে দেখা গেল,আশ্চর্যজনক ভাবে একেবারে অক্ষত রয়েছে কেবল একটি দেওয়াল আর সিঁড়ি সহ সেই কবরটি।এতটুকু আঁচড়ও পড়েনি। ২
যুবকটির চোখদুটো নীল।সুঠাম শরীরের প্রতিটা খাঁজ।তীব্র পুরুষালী গন্ধ এসে ঝাপটা মারছে ওই পুরুষের শরীর থেকে।একদৃষ্টে ওর দিকে চেয়ে আছেন বেগম।কিন্তু যুবকটি আড়ষ্ঠ।দৃষ্টি মাটির দিকে।কি এক মায়া জড়ানো যেন নীল চোখদুটোয়।মায়া হল বেগমের,খুব মায়া। নিজের পালঙ্ক ছেড়ে উঠে এলেন উনি।যুবকের ডানহাতের একটা আঙুল স্পর্শ করলেন।একটু যেন কেঁপে উঠল যুবকটি।আঙুল ধরে টেনে আনলেন সামনের আরাম কেদারায়। - বোসো এখানে।ক্ষুধার্ত তুমি?কিছু খাবে? আচমকা বসিয়ে দেওয়ার ফলেই হয়তো তখনও থতমত ভাব কাটেনি যুবকের।কোনওরকমে ঘাড় নেড়ে না বোঝাল সে। - লজ্জা করছে?লজ্জা কিসের? আর সম্মতির অপেক্ষা করলেন না বেগম।পাশে রাখা রেকাবি থেকে কিছু ফল দিলেন যুবককে।ভয়েই হোক,খিদেতেই হোক,সেও খেতে শুরু করল।ওর খাওয়ার দিকে ঠায় তাকিয়ে রইলেন বেগম। যুবকটি আলো আঁধারিতে মিশে যাচ্ছে।ক্রমশই আবছা হয়ে যাচ্ছে।নিজের কক্ষের জানলা দিয়ে দেখছেন বেগম এবং যতক্ষণ দেখতে পেলেন তাকিয়ে রইলেন ওর চলে যাওয়ার দিকে।আগামীকাল ঠিক এই সময়ের চিন্তাটা মাথায় খেলে গেল তাঁর।মৃদু হেসে চলে গেলেন ভেতরে। ৩
বহুদিন হল নবাবের কোনও সংবাদ নেই।উতলা হলেও কিছু করারও তো নেই।অনেক চেষ্টা করেও কোনও খবর জানতে পারেননি বেগম।একটু অন্যমনস্ক ছিলেন উনি। - বেগম!শুনলেন? নূরীর ডাকে সম্বিত ফিরল। - কি হয়েছে? - গজরা বেঁধে দিই? - হুম। - আর সুর্মা?ঘন করে আঁকি? - হুম।প্রতিবার এক কথা বলতে হবে কেন? - গুস্তাখি মাপ করবেন বেগম। নূরী যত্ন করে গজরা বাঁধতে লাগল বেগমের লম্বা বেণীতে।পরণের সবুজ রঙের পোশাকে সোনালী জরির কাজ।তাতে সুগন্ধি ঢেলে তারপর তা দিল ঘাড়ে,গলায়,স্তন বিভাজিকায়।ঘন কালো সুর্মা এঁকে দিল এমনভাবে,মনে হল এখুনি কথা বলে উঠবে চোখদুটো। - দেখুন।পছন্দ হয়? আরশিতে নিজেকে দেখে মুগ্ধ বেগম।সেই গ্ৰীক দেবতার মতো যুবককে কল্পনা করে একটু যেন লজ্জাও পেলেন। - পছন্দ হবে? পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন নূরীকে।নূরী,বেগমের খাস বাঁদী।তাকে অমন অনেককিছু বলা যায় বৈকি! - জন্নত থেকে এসেছেন ভেবে না বসে! হালকা হেসে উঠলেন দুজনেই। ৪
টিমটিমে একটা বাতি জ্বলছে কক্ষে।ওইটুকু বাতি আলোকিত করতে পারেনি কক্ষ।যথেষ্ট ছায়া ছায়া অন্ধকার চারপাশে।বেগমের পছন্দ না এরকমটা।উনি ভালোবাসেন আলো।উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পুরো কক্ষটাই।প্রাণভরে ওই মায়াভরা নীলচোখ না দেখলে শান্তি হয়?কিন্তু ওর কথা ভেবেই সব বাতি নিভিয়েছেন। - কতদিন সংবাদ পাওনি? যুবকটি এখন অনেক সহজ।পালঙ্কে বসেছেন দুজন,মুখোমুখি। - সে বহুদিন। - উনি আসেননা? - সেই ওড়িশায় থাকেন তো কর্মসূত্রে,তাই অতদূর থেকে খুব বেশি আসতে পারেননা। - ও। মাথা নামিয়ে নিল যুবক।বোধহয় বেগমের দুঃখের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করল।বেগম ওকে দেখছেন আবার,একভাবে।কি মায়া মাখানো চোখদুটোয়! - কিছু পান করবে তুমি? - নাহ্।থাক। - এখনও এত লজ্জা কিসের? - আচ্ছা দাও তবে। বেগম রুপোর গ্লাসে সোনালী পানীয় ঢেলে আনলেন।এগিয়ে দিলেন যুবকের দিকে। পুরো প্রাসাদ গভীর নিদ্রায়।কক্ষের বাইরেই নূরী আছে,জানেন বেগম।কিন্তু ভুলে গেছেন হয়তো।যুবকটির ঠোঁট যখন স্পর্শ করছে বেগমের ঠোঁট,মুখবন্ধ থাকা স্বত্তেও মৃদু শব্দ আসছে গলা ঠেলে।যুবকের আঙুল যখন খেলছে বেগমের শরীর জুড়ে,অস্ফুটে আসছে কিছু গোঙানির মতো শব্দ।ইচ্ছেমতো খেলছে যুবক।বেগম দিচ্ছেন খেলতে।উনি চাইছেন ও খেলুক,ওর মতো করে শুষে নিক সমস্তটা।আহা!বড্ড মায়া।সব দাবদাহ জুড়িয়ে নিক ও এই একরাতে।দুটো শরীরে যখন শঙ্খ লেগেছে শেষমেশ,শিৎকারের শব্দ যখন কক্ষের এক দেওয়াল থেকে অন্য দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরছে,বাইরে তখন রাত শেষের দিকে প্রায়। ক্লান্ত,ঘর্মাক্ত যুবকটির কপালে ঠোঁট ছোঁওয়ালেন বেগম।পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।বড্ড মায়া! ৫
- ভালো করে সাফাই কর নূরী।মাছি হচ্ছে ভীষণ। - করছি বেগম।চিন্তা করবেন না। - ওই পোশাকটাও ফেলে দিস। নূরী তাকালো ওই সবুজ সোনালী পোশাকের দিকে।নাহ্!ফেলে দেওয়া ছাড়া গতি নেই। - জি বেগম। - জল ঢাল,আরও জল ঢাল।প্রয়োজনে ওই আতরের শিশি উপুর করে দে। মেঝে ঘষতে ব্যস্ত তখন নূরী।প্রাণপণে ন্যাতা ঘষছে মেঝেয়। - আগামীকাল আনব ওকে বেগম? - কেন?কাল কেন?আজই আনবি। - মানে আজ... - আজ মানে আজ।আর হ্যাঁ,এরকমটাই দেখেশুনে আনবি। - ভিন্ন জায়গায় খোঁজ করতে হবে এবার বেগম।খবরটা ছড়িয়েছে কিনা!চট করে কাউকে সন্ধের পর দেখা যায়না। - প্রয়োজনে তাই করবি। - জি বেগম। - উফ্!এত মাছি কেন বলতো?কেমন ভনভন করে উড়ছে দেখ আমার চারপাশে। - ঘুরবেনা?রক্তের গন্ধ পেয়েছে যে!একটু অপেক্ষা করুন,আপনাকে পরিষ্কার করিয়ে দিচ্ছি। নাহ্ এত মাছির মধ্যে শোওয়া যায়না।নূরী ততক্ষণ সাফাই করুক।পালঙ্ক থেকে উঠলেন বেগম।গুনগুন করতে করতে পায়ে পায়ে এগিয়ে এলেন জানলার সামনে।বাইরে আলো ফুটেছে সদ্য।নরম আলো মোড়ানো চারপাশে।ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে একটা।কিন্তু এখানেও ভনভন করছে মাছিগুলো।উফ্!ওরা কি শান্তি দেবেনা?এরকম করছে কেন ওরা?ঘুরে গিয়ে চোখ রাখলেন বেগম,উল্টোদিকের প্রকান্ড আরশিতে.... ঠোঁট জোড়া,থুতনি,গলার কিছুটা অংশ,বুকের কাছের পুরো কাপড়টাই লাল।কোথাও শুকিয়ে যাওয়া রক্তে কালচে লাল,কোথাও থেকে তখনও টপটপিয়ে পড়ছে লাল তরল তখনও। ভিজে আঁশটে গন্ধ আসছে টের পেলেন একটা।আরেকবার তাড়া দিলেন নূরীকে। - তাড়াতাড়ি কর নূরী।স্নান সেরে ঘুমোবো।এখন ঘুম দরকার। এখন - মুর্শিদাবাদ ছিল তখন বাংলা,বিহার,উড়িষ্যার রাজধানী।এ সমস্ত ইমারত তৈরি সে আমলেই।এই যে কাটরা মসজিদ দেখছেন... গাইড লোকটাকে থামিয়ে দিল মেয়েদের দলটা।ওদের এসব ইতিহাসে একেবারেই উৎসাহ নেই।ওদের চোখ ওই কবরের দিকেই। - বলুন না দাদা,ওই কবরের ঘটনাটা ঠিক কি? গাইড ভদ্রলোক জানেন,এতবছরে উনি বুঝে গেছেন ট্যুরিস্টদের এই মসজিদ সম্পর্কে কম,ওই কবর নিয়ে আগ্ৰহ বেশি।উনি শুরু করলেন, - এটি নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ র আদরের কন্যার কবর।যিনি ছিলেন নবাব সুজাউদ্দিনের বেগম।নাম ছিল আজিম উন্নিসা বেগুম।কবরটি এনারই।প্রচলিত আছে,নবাব কর্মসূত্রে উড়িষ্যায় থাকতেন।আসতেন না বড় একটা।বেগম নিজের যৌনসুখ চরিতার্থ করার জন্য প্রতিদিন একজন করে যুবককে আনাতেন।ভোগ করা হয়ে গেলে ওই যুবককে মেরে তার কলিজা খেতেন।একসময় সবটাই জেনে ফেলেন মুর্শিদকুলী খাঁ।মেয়ের এহেন জঘন্য অপরাধের দন্ড ঘোষণা করেন এবং সেই অনুযায়ী বেগমকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়। - যৌন ইচ্ছা চরিতার্থ বোঝা গেল।কিন্তু কলিজা খেত কেন? - সম্ভবত যৌবন রক্ষার্থে। যৌবন যাতে অটুট থাকে সেজন্যই... তেমনটাই কথিত আছে। ইস কি জঘন্য! বাবা গো! মহিলা না রাক্ষসী... মেয়েদের দল নিজেরাই আলোচনায় মত্ত। চুপ করলেন গাইড ভদ্রলোক। দেখলেন অবাক চোখে তাকিয়ে মেয়েগুলো কবরটার দিকে,মুখময় ঘেন্না। মনে মনে ভাবলেন, আচ্ছা, এই কলঙ্কের ইতিহাস আরও কতজনের মধ্যে ছড়াতে হবে? ভেবে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাসও বোধহয় পড়ল তাঁর। || সমাপ্ত ||
তথ্য ও চিত্র - লোককথা, মুর্শিদাবাদ ট্যুরিস্ট গাইডকুল
01-11-2023, 12:19 AM
(12-08-2023, 06:10 PM)Sanjay Sen Wrote: mon chuyee gelo
01-11-2023, 09:02 AM
(31-10-2023, 11:25 AM)Sanjay Sen Wrote: ভালো লাগলো
![]()
02-11-2023, 09:17 AM
02-11-2023, 09:19 AM
|| সেই ঘড়িটা ||
লেখা :- সুষমা ভট্টাচার্য
বসের সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে সিদ্ধার্থ। তার বস মিস্টার দত্ত তার ওপর চিৎকার করে বলছেন- " তোমার কোন আক্কেল নেই? তুমি তো জানতে আজ একটা মিটিং আছে তাহলে এতো দেরী করে এলে কেন? তোমার কাছেই তো মূল প্রেজেন্টেশন আছে। তুমিই দেরী করে ঢুকলে? কি ভেবেছো কি তোমার নাম প্রমোশনের জন্য রেকমেন্ড করেছি বলে তোমার যা ইচ্ছা হবে তুমি তাই করবে?এইরকম করলে কিন্তু তোমার প্রমোশন আটকে যাবে সিদ্ধার্থ। " একটানা কথা বলে একটু দম নিলেন মিস্টার দত্ত। এই সুযোগে রাহুল তার নিজের কথাটা বলল। তবে তার গলার স্বর ক্ষীণ। " না স্যার মানে আজ সাড়ে আটটার বাসটা পাইনি তাই আসতে......... " সিদ্ধার্থর কথা শেষ হল না তার আগেই তার বস আবার বলে উঠলেন। " এই শুরু হল। অজুহাত, বাস চলছিল না, মাথাব্যাথা বাড়িতে কেউ অসুস্থ এই অজুহাতগুলো তোমাদের তৈরী থাকে। আচ্ছা তোমরা এই বস্তাপচা অজুহাত তৈরী করতে যা মাথা ঘামাও তার অর্ধেক মাথা যদি কাজে ঘামাতে তাহলে কতো উন্নতি করতে ভেবে দেখেছো কখনও? " সিদ্ধার্থ এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল শুধু তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিস্টার দত্ত বললেন - " আবার হাঁ করে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন যাও নিজের কাজে মন দাও। এমনিতেই দেরী করে ঢুকেছো অফিসে। -----------------------------------------
বসের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে সিদ্ধার্থ মনে মনে তার বাড়ির বারান্দায় টাঙানো ওই পুরোন ঘড়িটার। সিদ্ধার্থ কোনদিনই নিজে থেকে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। আগে থেকে অ্যালার্ম দেওয়া থাকলেও না। তাই রোজ তার মা তাকে সকালবেলা ঘুম থেকে ডেকে তোলে। আর এই কাজটা তিনি করেন বারান্দার ওই ঘড়িটা দেখে। যেটা কোন অদ্ভুত কারণবশত ঠিক আটটা বাজতে দশে বন্ধ হয়ে যায়। নানান কাজকর্মের মধ্যে থাকার জন্য সিদ্ধার্থর মা ব্যাপারটা খেয়াল করেননি। একটা হিসাব করে রান্নার মাঝখানে তিনি যখন বারান্দায় এসে ঘড়ির দিকে তাকান, তখন সময়টা দেখে তার সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরে গিয়ে নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলেন তখন প্রায় আটটা বাজে। আর একটুও সময় নষ্ট না করে তিনি সিদ্ধার্থর ঘরে গিয়ে তাকে প্রায় ঘুম থেকে টেনে তুললেন। আর বললেন - " ওরে সর্বনাশ হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি ওঠ এরপর আর বাস পাবি না। " সিদ্ধার্থ মায়ের কথা শুনে আধ বোজা চোখে মোবাইলটা হাতে নিতেই লাফিয়ে উঠে বসল তারপর সোজা ছুটল বাথরুমের দিকে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে কোনরকমে জামাকাপড় পড়ে অফিসের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সিদ্ধার্থ যখন নিজের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে ছুট লাগল তখন তার মা বলল - " সকালবেলা মুখে কিছু না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিস সিধু একটু কিছু খেয়ে যা। " " আমার সময় নেই মা। আজ খেতে বসলে আর সারা মাস মুখে অন্ন জুটবে না। " সিদ্ধার্থর কথার উত্তরে তার মা আরও কিছু বলেছিল হয়তো কিন্তু সেকথা সিদ্ধার্থর কানে যায়নি। বাইরে বেরিয়ে আরও এক হয়রানি। প্রথম বাসটা মিস হলই পরের বাসেরও দেখা নেই। সিদ্ধার্থ কোন উপায় না দেখে ক্যাব বুক করল। অফিস টাইম তাই ক্যাব আসতে দেরী হল। ক্যাব এলেও সে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে আনল। তাকে জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল অন্য রাস্তায় কিসব গন্ডগোল তাই এই রাস্তা ধরেছে। সব মিলিয়ে অফিস আসতে দেরী হয়ে গেল সিদ্ধার্থর। আজ সারাদিন সিদ্ধার্থর মন ভালো রইল না। সকাল সকাল বসের বকা খেলে কারই বা মন ভালো থাকে। সারাদিন অফিসে কাজ করে সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে ফেরার জন্য যখন সিদ্ধার্থ বাস ধরল তখন মনে মনে সে ঠিক করল আজ সে বাড়িতে বলবেই - " অনেক হয়েছে আর ওই ঘড়ির মায়া করে লাভ নেই। যেই মানুষটা নেই তার ঘড়ি আঁকড়ে ধরে লাভ কি? আজ ওই ঘড়ির জন্য তার চাকরি যেতে বসেছিল ওই ঘড়িকে সে আজই বাড়ি থেকে বিদায় করবে। এইসব নানান কথা ভাবছিল সিদ্ধার্থ। উল্টোদিকের বাস তাই এইসময় ফাঁকাই থাকে। নিজের সিটে বসে জালনার থেকে বাইরে তাকিয়ে সিদ্ধার্থ দেখল বাস অন্য রুট দিয়ে যাচ্ছে। কনডাক্টারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করাতে সে যা বলল সেটা শুনে সিদ্ধার্থর শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। ব্যাপারটা হল এইরকম -" যেই রুট দিয়ে এই বাসটা যায় সেই রুটে আজ সকাল পৌনে নটা নাগাদ দুটো বাসের মধ্যে অফিস টাইমের প্যাসেঞ্জার তোলার জন্য রেষারেষি হচ্ছিল। এই রেষারেষির ফলে একটা বাস সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যায় একটু আগে আর সোজা গিয়ে পড়ে একটা লরির মুখে। " " সেকি কান্ড। কি বলব আপনাকে। পচুর লোক এনজিওর আর দু চারজন তো মারাও গেছে। রুটে পুলিশ, মিডিয়া নিয়ে হেব্বি ক্যাচাল তাই আমরা রুট ঘুরিয়ে দিয়েছি। " সিদ্ধার্থকে কথাটা বলে এগিয়ে গেল কনডাক্টার। সিদ্ধার্থ সারা রাস্তা আর একটিও কথা বলল না। সে শুধু ভাবতে থাকল ওই বাসে থাকলে আজ তার কি অবস্থা হতো। ------------------------------------------
নানান চিন্তা নিয়ে সিদ্ধার্থ বাড়িতে ঢুকল তার সমস্ত হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে ঢুকে অফিসের জামা খুলতে খুলতে সিদ্ধার্থ তার মাকে এক গ্লাস জল দিতে বলল - " মা জলের গ্লাস টেবিলে রেখে বললেন। এই কিছুক্ষন আগে আমি তোর জ্যাঠার বাড়ি থেকে ফিরলাম। ওরা তোর খাবার সঙ্গে দিয়েছে আজ ওটাই ডিনার রাত্রে আর আমি রান্না করিনি। " মায়ের কথা শুনে সিদ্ধার্থ অবাক হয়ে বলল - " জ্যাঠার বাড়ি থেকে খাবার পাঠাল কেন? আজ কোন অনুষ্ঠান ছিল নাকি?' সিদ্ধার্থর প্রশ্ন শুনে তার মা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন - " বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আমাকে যখন কোন উত্তর দিসনি। তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল আমার কোন কথা তোর কানে যায়নি। আজ তোর দাদুর বাৎসরিক কাজ ছিল তোর জ্যাঠার বাড়িতে । তোকে অফিসেও ফোন করেছিলাম যদি ম্যানেজ করে তাড়াতাড়ি আসতে পারিস সেইকথা বলার জন্য। কিন্তু তুই ফোন তুললি না। " মায়ের কথা শুনে নিজে থেকেই সিদ্ধার্থর চোখ বারান্দায় টাঙানো পুরানো আমলের দম দেওয়া ঘড়িটার দিকে চলে গেল। ঘড়িটা একদম ঠিক সময় দেখাচ্ছে। তাকে ওইদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিদ্ধার্থর মা বলল- " ও তোকে তো বলা হয়নি ভারী অদ্ভুত ব্যাপার জানিস। তুই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলি এদিকে আমারও বেরোনোর তাড়া ছিল তাই আমিও রেডি হতে চলে গেলাম। বাড়ি থেকে বেরোচ্ছি তখন ঘড়ির দিকে নিজে থেকেই চোখটা চলে গেল। কি দেখি জানিস! ঘড়িটা আবার নিজে থেকে চলতে শুরু করেছে। কি অদ্ভুত কান্ড ভেবে দেখ। আমি কাউকে বললে সে ভাববে আমার বাড়িতে বোধহয় ভুতুড়ে কান্ড হয়। || সমাপ্ত ||
04-11-2023, 02:41 PM
গল্প, তবু গল্প নয়টা সত্যিই দারুন এবং একইসাথে পৈশাচিক। দারুন লেখনী।
কিন্তু সেই ঘড়িটা গল্পটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগলো। এই ধরণের সাধারণ লেখার আলাদা গুরুত্ব ও ভালোলাগা আছে। মূল বিষয়টাও খুব ভালো। ♥️
06-11-2023, 09:56 AM
(02-11-2023, 01:54 PM)Chandan Wrote: (03-11-2023, 08:56 AM)Somnaath Wrote: (04-11-2023, 02:41 PM)Baban Wrote: গল্প, তবু গল্প নয়টা সত্যিই দারুন এবং একইসাথে পৈশাচিক। দারুন লেখনী। সবাইকে থ্যাংকস
![]() ![]() ![]()
06-11-2023, 09:59 AM
|| প্র্যাঙ্ক ||
লেখা :- স্বর্ণদীপ রায়
সূর্য অস্ত গিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। আকাশ জুড়ে লালচে আলোর আভা অবশ্য এখনও রয়েছে। অল্প অল্প ঠান্ডা হাওয়া বইছে। আবহাওয়া বেশ মনোরম। স্যান্ডি তার বাইকের স্পিডটা বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিল। সন্ধ্যার সময় এই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বিশেষ থাকে না। তাই বেশ আরামে বাইক চালানো যায়। এখন কুয়াশা তেমন নেই, তবে রাত যত বাড়বে এই পাহাড়ি পথ ক্রমশ কুয়াশায় ঢেকে যাবে। তখন অবশ্য এই পথ বাইক কিংবা গাড়ি চালানোর পক্ষে খুব একটা নিরাপদ হবে না । তবে সেটাই সূর্যাস্তের পরে এই পথে গাড়ি না চলার একমাত্র কারণ নয়। এর আরো একটা কারণ আছে, আর সেটাই প্রধান। ব্যাপারটা আর কিছুই না, স্রেফ কুসংস্কার, অন্তত স্যান্ডির তেমনটাই ধারণা। আসলে, তাদের গ্রামে ঢোকার একটু আগে, এই পথের এক পাশে রয়েছে লম্বার্ডি সিমেট্রি, এই পাহাড়ি অঞ্চলের সবচেয়ে বড়ো গোরস্থান। এরকম নিরিবিলি জায়গায় কবরখানা থাকলে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাকে ঘিরে গড়ে ওঠে ভূতের গল্প। লম্বার্ডি সিমেট্রি-কে নিয়েও এই ধরনের অনেক গল্প চালু রয়েছে। আর তাই সাধারণ মানুষ সূর্যাস্তের পরে এই পথটা পারতপক্ষে এড়িয়ে চলে। অবশ্য স্যান্ডি কোনোকালেই এসবের তোয়াক্কা করেনি। কলেজে ডাকাবুকো ও সাহসী বলে তার যথেষ্ট সুনাম আছে। সে গুনগুন করে একটা গান গাইতে গাইতে বাইক নিয়ে নিরুদ্বিগ্নভাবে এগিয়ে চলেছিল। হঠাৎ… বাইকের হেডলাইটের আলোয় স্যান্ডি লক্ষ্য করল একটু এগিয়ে পথের ধারে কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটি তরুণী! স্যান্ডি বাইকের গতি কমালো। তারপর মেয়েটির সামনে এসে বাইক থামিয়ে দিল। -"হাই, এনি প্রব্লেম ?" স্যান্ডির কথা শুনে মেয়েটি মুখ তুলে তাকালো। তার চেহারাটা ভারী মিষ্টি, কিন্তু দৃষ্টিটা যেন একটু উদাস। মনে হয় সেও স্যান্ডির মতোই একজন কলেজ স্টুডেন্ট। -"আই….আই ওয়ান্ট টু গো হোম" মেয়েটি বলে উঠলো। -"কোথায় তোমার বাড়ি ?" মেয়েটি সামনের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো। -"ও, আমিও তো ওদিকেই যাচ্ছি। ?" স্যান্ডি বলে উঠলো " চলো, তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দেবো।" মেয়েটির মুখে একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। "থ্যাংকস" সে অস্ফুট স্বরে বলল। তারপর বাইকের পিছনের সিটে উঠে বসলো। -" আমার কাছে কিন্তু কোনো এক্সট্রা হেলমেট নেই" স্যান্ডি বলল। -"doesn't matter" মেয়েটি সংক্ষেপে জানালো। -"ওকে ফাইন" স্যান্ডি বাইক স্টার্ট দিলো। দেখতে দেখতে আকাশ থেকে সূর্যের শেষ রক্তিম আভাটুকুও মুছে গেল। অন্ধকার ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠতে লাগল। হেডলাইটের আলোয় অন্ধকার ভেদ করে স্যান্ডির বাইক এগিয়ে চলল। -"তুমি ওই নির্জন জায়গায় একা একা কি করছিলে ? ইটস্ নট সেফ, ইউ সি ?" মেয়েটি স্যান্ডির কথার কোনো উত্তর দিল না। স্যান্ডি মেয়েটিকে আর কিছু বলল না। কিছুক্ষণ চলার পরে একটা মোর ঘুরতেই পথের ধারে একটা বিশাল লোহার গেট আর উঁচু পাঁচিল দেখা গেল । লম্বার্ডি সিমেট্রি ! -"স্টপ দ্য বাইক " মেয়েটি তীক্ষ্ণস্বরে বলে উঠলো। স্যান্ডি বাইক থামালো। -"কী ব্যাপার ?" মেয়েটি বাইক থেকে নেমে স্যান্ডির দিকে জ্বলজ্বলে চোখে তাকাল। তারপর ফিসফিস করে বলল…. -"দিস ইজ মাই হোম !" স্যান্ডি তার হেলমেটের কাঁচের মধ্যে দিয়ে মেয়েটির দিকে কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর সেও বাইক থেকে নেমে স্ট্যান্ডের সাহায্যে বাইকটাকে দাঁড় করালো। তারপর মেয়েটির দিকে ফিরে বলল " ওঃ রিয়েলি ? তাহলে চলো, তোমার বাড়িতে গিয়ে এক কাপ কফি খেয়ে আসা যাক।" মেয়েটি যেন একটু থমকাল। তারপর খুব আস্তে আস্তে কেটে কেটে বলল "আমার বাড়িতে জীবিত মানুষের প্রবেশ নিষেধ" তারপর সে ধীরে ধীরে গোরস্থানের লোহার গেটটার দিকে এগিয়ে গেল। স্যান্ডি ওকে অনুসরণ করল। মেয়েটি গেট-এর কাছে পৌঁছোতেই, সেটা কর্কশ শব্দ করে আপনা আপনি খুলে গেল ! পরমুহূর্তেই একঝাঁক কালো বাদুড় শনশন করে স্যান্ডির মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল ! স্যান্ডি কিন্তু এসব দেখেও বিন্দুমাত্র ভয় পেয়েছে বলে মনে হল না। তার স্নায়ু বোধহয় ইস্পাতের তৈরি। মেয়েটি এবার স্যান্ডির দিকে ফিরলো । -"চলে যাও" ফিসফিস করে সে বলল। স্যান্ডি একটু হাসল । তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই। -"নাঃ, তোমার বাড়িটা না দেখে ফিরছি না।" -"আমার সাথে এই গেট পেরিয়ে একবার যদি সিমেট্রি-তে ঢোকো, তাহলে আর জীবিতদের জগতে ফিরে যেতে পারবে না" মেয়েটি চাপা স্বরে বলে উঠলো। -"doesn't matter" স্যান্ডি বলল। কয়েক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। তারপর…. হঠাৎ কিছু একটা ঘটলো। কতগুলো উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠলো । -"ব্রাভো ব্রাভো" বলতে বলতে গোরস্থানের মধ্যে থেকে একটা লোক বেড়িয়ে এলো। আর তার পিছন পিছন আরো একজন লোক, যার হাতে রয়েছে একটা অত্যাধুনিক মুভি ক্যামেরা। -"আপনি সত্যিই খুব সাহসী" প্রথম লোকটি স্যান্ডির পিঠ চাপড়ে বলল "আসলে এটা একটা প্র্যাঙ্ক শো, মিউ টিভির 'Foolstop' ! আর আমি হচ্ছি এই শোয়ের অ্যাঙ্কর, আমন আহুজা।" -"জানি" স্যান্ডি বলল "আমি টিভিতে আপনাদের শো দেখেছি। আপনারা মানুষকে বিভিন্নভাবে বোকা বানান, আর ক্যামেরায় সেগুলো রেকর্ড করেন। তারপর ওই ফুটেজগুলোই আপনাদের শো-তে টেলিকাস্ট করা হয়।" -"ওয়েল ওয়েল, তার জন্য ওই মানুষগুলোকে আমরা মোটা টাকা কম্পেনসেশন দিয়ে থাকি" মিঃ আহুজা বললেন "ওদের কোনোরকম ক্ষতি করা হয় না।" -"তাই বুঝি ?" স্যান্ডি ঠান্ডা গলায় বলল "কিন্তু আমি যেন শুনেছিলাম কয়েকদিন আগে এরকম একটা ঘোস্টলি প্র্যাঙ্ক করার সময় একটি ছেলের মৃত্যু হয়েছিল।" কথাটা শুনে আমন আহুজা স্পষ্টতই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তিনি ইশারায় পিছনের লোকটিকে ক্যামেরা বন্ধ করতে বললেন। তারপর স্যান্ডির দিকে একটা কঠিন দৃষ্টি হেনে বললেন "দেখুন মিস্টার, পুরোটা না জেনে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না। নেহাত আপনি আমাদের আজকের শোয়ের উইনার, তাই আপনার এসব কথাবার্তা টলারেট করছি।" -"শোয়ের উইনার !" স্যান্ডি হাসল "সেই ছেলেটির সাথেও আপনারা আজকের মতই প্র্যাঙ্ক করেছিলেন, তাই না ?" -"ইয়েস" আমন আহুজা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন "সো হোয়াট ? সে তো আমরা অনেকের সাথেই করে থাকি, যেমন আজ করলাম আপনার সাথে। আপনি তো ভয় পেলেন না। যদিও এসবক্ষেত্রে ৯৯ শতাংশ লোকই ভয় পায় আর বোকা বনে যায়।" -"আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাণও হারায়।" স্যান্ডি বলল। -"দেখুন" আমন আহুজা বললেন "ইট ওয়াজ অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট। ছেলেটির হার্টে সমস্যা ছিল। তাই সে উত্তেজনাটা নিতে পারেনি। এতে আমাদের দোষ কোথায় ?" -"তাহলে প্র্যাঙ্ক-এর কারণে কারোর প্রাণ চলে গেলে যে প্র্যাঙ্ক করছে তার কোনো দোষ নেই বলছেন ?" -"সার্টেনলি নট, এরকম সামান্য কারণে যদি কারোর হার্ট ফেল করে তাহলে দোষ তার হার্টের অন্য কারো নয়।" -"আই সি" স্যান্ডি বলল "আপনি ছেলেটাকে দেখেছিলেন নিশ্চয়ই।" -"হ্যাঁ দেখেছিলাম, সো হোয়াট ?" আমন আহুজা উদ্ধতভাবে বলে উঠলেন। তারপর একটু নরম স্বরে বললেন "দেখুন ভাই, অবান্তর কথায় শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আপনি আমাদের আজকের শোয়ের উইনার। আপনাকে অন ক্যামেরা প্রাইজ দেওয়া হবে, তারপর একটা বাইট দিয়েই আপনার ছুটি।" -"ওকে ফাইন" স্যান্ডি বলল। পিছনের লোকটিকে ইশারায় ক্যামেরা অন করতে বলে আমন আহুজা স্যান্ডিকে বললেন "ভাই হেলমেটটা খুলুন দয়া করে, ওটা পরে নিশ্চয়ই ক্যামেরায় বাইট দেওয়ার কথা ভাবছেন না।" স্যান্ডি হেলমেটটা খুলে ফেলল, তারপর আমন আহুজার দিকে তাকালো। স্যান্ডির অনাবৃত চেহারায় চোখ পড়তেই আমন আহুজা বিদ্যুৎপৃষ্টের মতো ছিটকে গেলেন। -"তু…তু…তুমি ?" -"ইয়েস, আমি" স্যান্ডি শীতল স্বরে বলল "চিনতে পারছেন আমায়? আমিই আপনাদের প্র্যাঙ্কের সেই ভিকটিম !" -"নোওওওওও……ইটস্…..ইটস্ ইম্পসিবল্ !" আমন আহুজা সহসা বুকের বাঁদিকে একটা তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করলেন। তারপর তাঁর চোখের ওপর ধীরে ধীরে একটা অন্ধকার পর্দা নেমে এল … টিভিতে নিউজ চলছে। একটি অল্পবয়সী ছেলে খুব মন দিয়ে সেটা দেখছে। একটা ব্রেকিং নিউজ দেখানো হচ্ছিল। বিখ্যাত টেলিভিশন অ্যাঙ্কর আমন আহুজা আজ তাঁর প্র্যাঙ্ক শোয়ের শুট্যিং চলাকালীন হঠাৎ হার্টফেল করে মারা গিয়েছেন। ছেলেটির মুখে একটা ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে দেয়ালে টাঙানো একটি ছবির দিকে তাকালো। ছবিটি তার মৃত জমজ ভাইয়ের, যার চেহারা ছিল হুবহু তার নিজের মতো। -"আমি পেরেছি অ্যান্ডি" ছবিটির দেখে তাকিয়ে ছেলেটি বলে উঠলো "তোর ভাই আজ তোর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পেরেছে।" এই ছেলেটির নাম স্যান্ডি ডিমেলো। আমন আহুজার প্র্যাঙ্ক শোয়ের কারণে যার প্রাণ গিয়েছিল, সেই অ্যান্ডি ডিমেলো ছিল স্যান্ডির জমজ ভাই। দেওয়ালের ছবিটা তারই। একটা প্র্যাঙ্ক-এর কারণে স্যান্ডি তার ভাইকে হারিয়েছিল। আর আজ সেই প্র্যাঙ্ক-এর মাধ্যমেই সে তার ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিল ! || সমাপ্ত ||
08-11-2023, 01:20 AM
বাহ্! বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু লাস্টের লাইন গুলো যুক্ত না করলেই লেখক ভালো করতেন। পাঠকদের এতো বেশি স্পষ্ট বুঝিয়ে দেবার মনে হয় প্রয়োজন নেই। তারা আগেই বুঝে যাবে। কিন্তু মোটের ওপর অবশ্যই ভালো। ♥️
09-11-2023, 09:52 PM
(06-11-2023, 07:18 PM)Somnaath Wrote: (07-11-2023, 04:20 PM)Chandan Wrote: gd one (08-11-2023, 01:20 AM)Baban Wrote: বাহ্! বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু লাস্টের লাইন গুলো যুক্ত না করলেই লেখক ভালো করতেন। পাঠকদের এতো বেশি স্পষ্ট বুঝিয়ে দেবার মনে হয় প্রয়োজন নেই। তারা আগেই বুঝে যাবে। কিন্তু মোটের ওপর অবশ্যই ভালো। ♥️ thank you
![]()
11-11-2023, 11:23 AM
|| রঙ ||
কলমে :- অমৃতা বিশ্বাস সরকার
নামটা তার বাবা খুব আদরের সঙ্গে রেখেছিল মেয়ে হওয়াতে - উমা। তাদের বনেদী বাড়ি। কত লোকজন সারাক্ষন তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করে। কত কাজের লোক আছে তাদের। তার ঠাকুরদা,ঠাকুমা,কাকারা,কাকিরা,ভাই বোনেরা সবাই আছে...নেই শুধু বাবা। সে শুনেছে তার জন্মের মাসখানেকের ভেতরই নাকি বাবার কঠিন অসুখ করে ও তিনি মারা যান। তাকে ও মাকে সবাই তাড়িয়ে দেয়নি বটে তবে খুব যে যত্নে রেখেছে সেটাও না। তারা প্রায় একঘরে হয়েই পরে আছে এই সুবিশাল বাড়িটায়। তাকে সবাই একটু এড়িয়েই চলে। সে নাকি অপয়া। জন্মেই নাকি বাবাকে খেয়েছে,বাকিদের ও খাওয়ার তালে আছে। সে তো বুঝতেই পারেনা যে কি এমন করেছে সে? আর কি করেই বা এত বড় বড় মানুষদের সে খেয়ে নিতে পারবে? তার তো সেই মায়ের কাছে শোনা গল্পের রাক্ষসদের মত বড় বড় দাঁত নেই,তার চোখ দিয়ে আগুন ও বের হয়না- তাহলে??? অনেক ভেবেও এইটা মাথায় আসে না উমার। তার নাম উমা হলেও তার গায়ের রঙ বেশ চাপা। তার বাবা নাকি তাদের বাড়ির আর সকলের মতই ছিল-খুব ফরস,আর তাই যখন প্রেম করে তার মায়ের মত কালো একজনকে বিয়ে করে আনেন তিনি তখন অশান্তিও নাকি খুব হয়েছিল। তবে তার বাবার জেদের কাছে হার মেনে ও বংশের নামের কথা চিন্তা করে ওই নিম পাতা গেলার মত করে তার মাকে মেনে নিয়েছিল তাদের বাড়ির লোকেরা। তবে মাকে এই রঙের খোঁটা সারা জীবন শুনতে হয়েছে। আর সেও যখন মায়ের গায়ের রঙ নিয়ে জন্মালো তখন তাকেও বাদ দেয়নি তারা। তাকে কেউ নাকি দেখতেও যায়নি হাসপাতালে, শুধু বাবা যেতেন।খুব আদর করতেন, খুব ভালোবাসতেন তাকে…সবই তার শোনা কথা-কিছুটা মার মুখে,কিছুটা বাড়ির কাজের লোক হরিদাদুর মুখে। হরি দাদু নাকি বাবার ছোট বয়স থেকে বাবাকে কোলে পিঠে মানুষ করে ছিল। বাবাকে খুব ভালো বাসতো এবং তাই তার মেয়ে বউকেও খুব ভালোবাসে। উমার কাছে মায়ের পর এই হরিদাদুই সব। উমাদের বাড়িতে দুর্গা পূজো হয় খুব বড় করে,কত লোক পূজো দেখতে আসে,ভোগ খেতে আসে। তার দাদা-দিদি,ভাই বোনরা কত সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়,খেলা করে। বাড়ির সবাই কত রকমের সাজে,চাকরাও নতুন জামা কাপড় পায়, শুধু পায় না উমা ও তার মা। তাতে অবশ্য উমার কষ্ট হয়না,সে দিব্বি দিদিদের পুরানো জামা পড়ে কাটিয়ে দেয়। তবে মা যখন শুধু বাবার পুরানো ঝাপসা হয়ে যাওয়া ছবির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলেন, তখনই খুব কষ্ট হয় উমার। মার কষ্ট তার মন খারাপ করে দেয় যে বড্ড। উমা তাদের চিলে কোঠার ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে বসে থাকে,জলে ভরা থাকে তারও দুটো চোখ। দুর্গা ঠাকুর এলে তাদের বিশাল বারান্দায় পূজো হয়। সবাই বরন করে,কত আয়োজন পূজোর,কত মন্ত্রপাঠ হয়। তবে পূজোতে যাওয়ার অনুমতি নেই তার ও তার মায়ের । তাই উমা লুকিয়ে বসে সিঁড়ি থেকে সব লক্ষ্য করে। খুব ভালো লাগে তার। ইচ্ছে করে ঠাকুরকে একটু ছুঁয়ে দেখে, কিন্তু ঠাকুরের সামনে তার যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সাহস নেই। কেউ দেখতে পেলে তাকে ও তার মাকে খেতে হবে বিস্তর বকুনি। অনেক ভেবে একটা বুদ্ধি বের করেছে উমা। গভীর রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে তখন একবার যাবে সে ঠাকুরের কাছে,ছুঁয়ে দেখবে। সবাই বলে দুর্গা ঠাকুর নাকি সকলের মা, তার কাছে কিছু চাইলে নাকি কাউকে খালি হাতে ফিরতে হয়না। উমাও চাইবে ঠাকুরের কাছে-তার ও তার মায়ের জন্য একটু শান্তি আর ভালোবাসা। তাদের যেন সবাই সমান-সমান ভাবে বাকিদের মত। মায়ের পাশে শুয়ে শুয়ে এইসব কথাই ভাবছিল উমা। মা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে, দালানের বড় ঘড়িটায় ঢং ঢং করে ৩টে বাজলো। উমা চুপি চুপি উঠে পরে মায়ের পাশ থেকে, পা টিপে টিপে দরজার আগলটা খোলে, তারপর বেরিয়ে পরে বাইরে। এক দৌড়ে চলে যায় সিঁড়ি বেঁয়ে সোজা নিচে - ঠাকুরের সামনে। দুর্গা ঠাকুরের মুখের দিকে তাকায় একবার উমা। এই প্রথম এত কাছ থেকে দুর্গা মাকে দেখলো সে। মুখটা কি সুন্দর মায়ের, মমতা মাখানো চোখ দুটো ,ঠিক তার নিজের মায়ের মত...কি সুন্দর হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে, সাহস করে উমা ঠাকুরের পায়ে হাত দিতে যায়...আর ঠিক তখনই তার হাতটা কেউ চেপে ধরে। ভয় পেয়ে ঘুরে তাকায় উমা... একজন মহিলা। বেশ সুন্দর দেখতে। সে ধরেছে উমার হাতটা। উমা বকুনি খাওয়ার ভয়ে কাঁপতে থাকে। চোখ দিয়ে জল বের হয়ে পরে। আমতা আমতা করে উমা বলতে চেষ্টা করে যে সে ঠাকুরের গায়ে হাত দেয়নি। তার চোখে জল দেখে মহিলাটা তাকে কোলে তুলে নেয। মিষ্টি করে হেসে তার নাম জিজ্ঞাসা করে । উমা নিজের নাম বলে। মহিলাটি তার গাল টিপে বলে : "ভারী মিষ্টি নাম তো তোমার! কে দিয়েছে নামটা?" উমার মহিলাটিকে খুব ভালো লেগে যায়। সব কথা বলতে থাকে এক এক করে। ভদ্রমহিলাটি মন দিয়ে শুনতে থাকে। ওনার কাছে সব বলতে ভালোও লাগে উমার। কি সুন্দর মমতা মাখা মুখখানি। গায়ে খুব সুন্দর একটা গন্ধ - মা মা গন্ধ। উমা ওনার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকে। তার মনের সব ইচ্ছার কথা বলতে থাকে। উনিও শোনেন,নিজের মত করে উমাকে উনিও কত কথা বলেন। উমাও বিভোর হয়ে শুনতে থাকে ওনার কথা। উমা ওনাকে বলে : "ঠাকুরকে বললে আমাকে ফর্সা করে দেবে গো?"। উনি হেসে ফেলেন ,জিজ্ঞাসা করেন : "ফর্সা হতে চাও কেন?" উমা বলে : "আমি ফর্সা হলে আর কেউ আমাকে বা মাকে কথা শোনাবে না।আমাদের কেও ভালোবাসবে...."। উনি বলেন : "গায়ের রঙে কিচ্ছু এসে যায়না মা আমার। মানুষের কর্মই মানুষকে শ্রেষ্ঠ বা নিম্ন করে।" উমা হাঁ করে শোনে...উনি বলতে থাকেন : "আমার এক বোন আছে জানো...তোমার মত গায়ের রঙ,কিন্তু তাকে সবাই চেনে,তাকে নিজেদের ঘরে নিয়ে যায়,ভালোবাসে,সম্মান ও করে খুব...তাকে কতজন ডাকে নিজেদের কাজের জন্য..." উমা : "তাই!" মহিলা : "হ্যাঁ"। উমা : "কালো বলে কেউ কথা শোনায় না?" মহিলা : "না কারন তার রুপ নয় তার কাজই তার পরিচয়।কত শত মানুষকে সে রক্ষা করেছে।এখনও করে। কতজন মানুষের উপকার করেছে। সবাই তাকে মা বলেই ডাকে।" উমা জিজ্ঞাসা করে : "নাম কি গো তার?" মহিলা : "নাম বললে তুমি চিনবে না।" উমা : "বল না।" মহিলা : "তার নাম শ্যামা। মনে রেখো তোমার কাজই তোমার পরিচয়। রুপ বা রঙ না। আজ যারা তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে,ভালোবাসছে না,বাজে কথা বলছে, তারাই তোমাকে মাথায় তুলে রাখবে। কর্ম করে যাও,ফলও পাবে তুমি ঠিক একদিন।" ভদ্রমহিলা আরো কত কথা বলে চলে। শুনতে শুনতে উমা কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভেঙে দেখে যে সে তার মায়ের পাশেই শুয়ে আছে নিজেদের ঘরের বিছানায়। তবে উমার আর মন খারাপ লাগছে না কেন জানি। সে এত ছোট বয়সেই যেন নিজের মনের রাস্তা ঠিক করে ফেলেছে। সে জেনে গেছে তাকে কি করতে হবে। ৩০ বছর কেটে গেছে তারপর...আজ উমা নাম করা ডাক্তার। বাড়ির কারুর টাকা তার লাগেনি। নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করে সে প্রতিটা ক্লাসে বৃত্তি নিয়ে পাশ করেছে। তার এখন চারিদিকে কত নামডাক। সে কালো হলেও তার কাছে প্রচুর মানুষ আসে দূর দূর থেকে চিকিৎসা করানোর জন্য। ঠাকুরদার অত বড় অসুখটা যেটা প্রায় কোনো ডাক্তারই সারাতে পারছিল না,সে যখন সেটা সারিয়ে দিল তখন তাকে তার বাড়ির লোকেরাও আর অবহেলা করতে পারেন। উমার নাম এখন সবার মুখে মুখে,সবাই তাকে নিজেদের পরিচিত বলতে পেরে যেন খুশি হয়,গর্ব করে তাকে নিয়ে তার বাড়ির লোকেরা। তার মাকেও এখন সবাই সম্মান দেয়। চিলেকোঠার ঘরটার জায়গায় তারা ফিরে এসেছে তার বাবার ঘরে। তাদের ভাগে এখন শুধুই সম্মান ও ভালোবাসা। আবার আজকে এক দুর্গা পূজো। উমার মনে পরে সেই মা মা গন্ধওলা ভদ্রমহিলাটার কথা। তার কথাই তো উমার জীবনের মানে বদলে দিয়েছিল সেই রাতে। আজীবন কৃতজ্ঞ উমা তার কাছে। আজ উমা বোঝে যে সত্যি রুপ - রঙ না, মানুষের কর্মই তার সঠিক পরিচয়। দুর্গা ঠাকুরের আরতির সময় কি মনে হতে একবার চোখ খোলে উমা। চোখ খুলে আবার আজকে উমা দেখতে পায় সেই ভদ্রমহিলাকে। তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে মহিলাটি মিশে যায় দুর্গা ঠাকুরের প্রতিমার ভেতরে। সারা শরীর একবার কেঁপে ওঠে উমার। চোখ দিয়ে বইতে থাকে আনন্দাশ্রু। || সমাপ্ত ||
|
« Next Oldest | Next Newest »
|