Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
04-08-2023, 02:52 PM
(This post was last modified: 16-11-2023, 09:28 AM by Sanjay Sen. Edited 54 times in total. Edited 54 times in total.)
শুরু করতে চলেছি আমার নতুন থ্রেড ভৌতিক গল্প সংকলন .. এখানে বিভিন্ন নামকরা এবং উদীয়মান লেখকের ছোট বড় মিলিয়ে বেশ কিছু ভৌতিক গল্প থাকবে। প্রতিটি গল্পের ক্ষেত্রেই লেখক অথবা লেখিকার নাম উল্লেখ করা থাকবে। আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
|| কিসের এতো ভয় ||
লেখনীতে: সমন্বয় সেনগুপ্ত ও দেবসীমা সেনগুপ্ত
(গল্পটি সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য)
"ট্যাক্সি" সোনিয়ার চিৎকার শুনে অবশেষে একটি ট্যাক্সি দাঁড়ায়, যাক এই ঝড়বৃষ্টির রাতে একটা ট্যাক্সি পেয়ে কিছুটা আশ্বস্ত হয় সোনিয়া। সেই বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, প্রায় ৩ ঘন্টার ওপর মুশলধারে বৃষ্টি হয়েই চলেছে তবু থামার কোনো নামগন্ধ নেই। বেরোনোর সময়ে একবার মোবাইলে সোনিয়া দেখেছে যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে জল জমে যাওয়ার জন্য, কি ভাবে সে বাড়ি ফিরবে সেটা নিয়ে চিন্তিত ছিলো কিন্তু এখন ট্যাক্সি পেয়ে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেলো, হয়তো অনেক টাকা চেয়ে বসবে ট্যাক্সি ড্রাইভার কিন্তু তাতে কোনো অসুবিধা নেই। সোনিয়া দৌড়ে ট্যাক্সির কাছে আসতেই দেখে অন্য দিক থেকে আরেকজন লোক ট্যাক্সির ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে, এটা দেখে সোনিয়া একটু বিরক্ত হয় কারন এক তো ট্যাক্সিটা সে থামিয়েছে আর তার ওপরে লোকটি রং সাইড থেকে এসে ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে। সোনিয়া একটু গম্ভীরভাবে লোকটির উদ্দেশ্যে বলে, "এই যে মিস্টার, এই ট্যাক্সিটা কিন্তু প্রথমে আমি দাঁড় করিয়েছি, আপনি হঠাৎ ভুল দিক থেকে এভাবে এসে দখল করতে পারেন না।" লোকটি কিছু বলার আগেই ড্রাইভার বলে, "আমি আপনাদের কাউকেই নিয়ে যেতে পারবো না, আমার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে, এই বৃষ্টি বাদলার রাতে আপনাদের ছাড়তে গেলে আমার আর হয়তো বাড়ি ফেরাই হবেনা।
নেহাত এই লোকটি ট্যাক্সির একদম সামনে চলে এলো তাই বাধ্য হয়ে থামাতে হলো নাহলে একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। আমি সেটাই ওনাকে বলছিলাম কিন্তু উনি বলছেন যে এক্ষুনি ওনার কোথাও একটা যাওয়া দরকার আর সেজন্য আমি যতো টাকা চাইবো উনি দেবেন।" এবারে লোকটি কাদো কাদো স্বরে বলে, "প্লিজ ভাই আমার হাসপাতালে যাওয়াটা খুব জরুরী, একজনের জীবন মরণের ব্যাপার, ঠিক সময়ে না পৌঁছালে জানিনা কি হবে। যতো টাকা চাইবে আমি দেবো কিন্তু প্লিজ না কোরো না, এত রাতে এই বৃষ্টিতে আর কোনো গাড়ি পাবো না, তুমিই শেষ ভরসা। আর ম্যাডাম আপনি যদি কিছু মনে না করেন তো আমার সাথে শেয়ারে ট্যাক্সিটা বুক করে নিন না, খুব অসুবিধায় পড়েছি নাহলে বলতাম না। আমি পুরো ভাড়াটা দিয়ে দেবো আর আপনি চাইলে আগে আপনাকে ড্রপ করা হবে।" লোকটির কথা শুনে সোনিয়া ভাবে যে তার হয়তো সত্যি কোনো এমারজেন্সি রয়েছে, এই বৃষ্টিতে হাসপাতালে যাবে আর কারো জীবন মরণের ব্যাপার বলছে মানে হয়তো কোনো কাছের মানুষ ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে, এই অবস্থায় লোকটার সাহায্য করা উচিৎ। সে বলে, "ঠিক আছে আপনি যেতে পারেন আমার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু ভাড়া আমি আর আপনি অর্ধেক অর্ধেক দেবো আর ড্রাইভার দাদা আপনি আগে হাসপাতালে চলুন, বেশি দূর তো নয়, ওনাকে ছেড়ে আমাকে ড্রপ করে দেবেন না হয়। আমার অতো তাড়া নেই।" এই কথা বলে সোনিয়া ছাতা বন্ধ করে ট্যাক্সিতে উঠে বসে, লোকটিও ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়ে, ছাতা থাকা সত্ত্বেও দুজনেই ভিজে গেছিলো।
ড্রাইভার আবার বিরক্ত হয়ে বলে, "আপনাদের তো বললাম যে আমি এখন যেতে পারবো না, কেনো জোর জবরদস্তি করছেন? নামুন তো।" এই কথা শুনে লোকটি দুটো করকরে ৫০০ টাকার নোট বের করে ড্রাইভারের মুখের সামনে ধরে বলে, "এটা রাখো অ্যাডভান্স, তোমাকে তো বলছি যতো টাকা চাইবে দেবো শুধু আমাদের পৌঁছে দাও। এখান থেকে হাসপাতাল যেতে খুব বেশি হলে ৩০ মিনিট লাগবে, বৃষ্টির জন্য সেটা ১০-১৫ মিনিট বেশি লাগতে পারে। ম্যাডামের বাড়ি কতদূর?" সোনিয়া তার বাড়ির ঠিকানা জানিয়ে বলে তার বাড়ি বেশি দূর না, সেটা শুনে লোকটি বলতে থাকে, "খুব বেশি হলে তোমার ১ ঘন্টা মতো লাগবে আমাদের ছাড়তে আর সেজন্য যতো টাকা চাইবে দেবো বলছি তো, তাহলে কেনো এতো ন্যাকামি করছো ভাই?" ড্রাইভার টাকাটা নিয়ে নিজের জামার পকেটে পুরে আর কোনো কথা না বলে ট্যাক্সি স্টার্ট করে।
ট্যাক্সি চলতে শুরু করলে লোকটি সোনিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, "আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম, আমার নাম রাজা সেন, নাইস টু মিট ইউ।" সোনিয়া লোকটার সাথে হাত মিলিয়ে নিজের পরিচয় দেয়, লোকটা এবারে ড্রাইভারকে বলে, "তোমার নাম কি ভাই? এভাবে ড্রাইভার ভাই বলতে ভালো লাগছেনা। আর কোনো গান থাকলে চালাও তো, এই বৃষ্টির আওয়াজ শুনতে শুনতে কান খারাপ হয়ে যাচ্ছে যে।" ড্রাইভার বলে তার নাম জাহির আর এটাও জানায় যে তার কাছে কোনো গান নেই। রাজা লোকটি এই কথা শুনে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মোবাইলে একটি আজব রকমের ইংরেজি গান চালিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে গুনগুন করতে থাকে, গানটির কথাগুলি এরকম-
"Baby, I'm preying on you tonight
Hunt you down, eat you alive
Just like animals, animals, like animals"
সোনিয়ার একটু আজব লাগে ব্যাপারটা, যে কিনা একটু আগেই বললো কারো জীবন মরণের ব্যাপার আর হাসপাতালে যাচ্ছে সে কিনা এখন এইরকম আচরণ করছে? মনে মনে লোকটাকে তার একটু সন্দেহ হয়। হঠাৎ তার চোখ পড়ে যায় ট্যাক্সির রিয়ার ভিউ মিররের দিকে, সে দেখে ড্রাইভার জাহির তার দিকে খুব খারাপ ভাবে তাকিয়ে আছে। সোনিয়া একটা সাদা রঙের শার্ট পড়েছিলো, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ফলে শার্টটি তার শরীরের সাথে মিশে গেছে আর কোনোভাবে শার্টের প্রথম বোতামটি খুলে গেছে, জাহির সেদিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো। সোনিয়া সাথে সাথে বোতামটি লাগিয়ে নিয়ে নিজের ব্যাগটা দিয়ে বুক ঢেকে বসে, সেটা দেখে জাহির একবার হেসে চোখ সরিয়ে নেয়। সোনিয়া এই ব্যাপারটায় খুব ভয় পেয়ে যায়, সে বুঝতে পারে যে জাহির লোকটা মোটেও সুবিধার নয়, রাজা লোকটা একটু পাগলাটে হতে পারে কিন্তু এখন অবধি ওর আচরণ দেখে মনে হয়নি তার কোনো কুমতলব রয়েছে। কিন্তু সে যদি আগে হাসপাতালে নেমে যায় তারপর তো সোনিয়াকে একা ট্যাক্সিতে করে যেতে হবে, জাহির যদি তখন তার সাথে কিছু করতে চায় তাহলে কি হবে?
এই বৃষ্টির রাতে তো কেউ সাহায্য করতেও আসবেনা, কোনো এক ফাঁকা জায়গায় হয়তো সে লাশ হয়ে পড়ে থাকবে আর কাল সকালে সারা শহর ওর খবর শুনবে। না না এটা তো হতে দেওয়া যায়না, তার এক্ষুনি রাজার সাথে কথা বলতে হবে যাতে আগে তাকে বাড়িতে ছেড়ে দেওয়া হয় আর তারপর যেনো রাজা হাসপাতালে যায়। সে তো প্রথমে এটাই বলেছিলো সোনিয়াই তো পাকামি করে আগে হাসপাতালে যেতে বললো। সোনিয়া রাজাকে একবার আসতে করে ধাক্কা মেরে বলে, "মিস্টার রাজা, একটু শুনবেন?" রাজা গুনগুন করতে করতে চোখ মেলে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ ট্যাক্সির লাইট নিভে মিশকালো অন্ধকারে চারিদিক ঢেকে যায় আর জাহির ট্যাক্সি থামিয়ে দেয়, সোনিয়া ভয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে, "এ কি হলো? লাইট নেভালেন কেনো হঠাৎ?"
জাহির বলে, "আরে ম্যাডাম বলবেন না, বৃষ্টির জন্য মনে হয় ইঞ্জিনে জল ঢুকে কিছু একটা হয়েছে তাই মাঝে মাঝে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর লাইট নিভে যাচ্ছে, এজন্য তো আপনাদের ট্যাক্সিতে তুলতে চাইনি। একটু সময় দিন, স্টার্ট হয়ে যাবে।" এই কথা বলে জাহির আবার ট্যাক্সি স্টার্ট করতে শুরু করে। রাজা বলে, "জাহির ভাই তোমার গাড়ির ডিকিতে কি কিছু আছে?কেমন একটা আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।" জাহির বলে, "ও কিছু না দাদা, আজ আমার ছেলের জন্মদিন তাই একটা খেলনা কিনেছি, সেটাই রয়েছে, বৃষ্টির জল ঢুকে মনে হয় আওয়াজটা হচ্ছে।" রাজা এবারে সোনিয়াকে বলে, "আপনি কি কিছু বলবেন? ডাকলেন যে আমাকে।" সোনিয়া বলতে যাবে তখন হঠাৎ একজন লোক বাইরে থেকে ট্যাক্সির বন্ধ কাঁচের জানালায় আওয়াজ করে ডাকতে থাকে, সোনিয়া ভয়ে চিৎকার করে রাজার দুই হাত চেপে ধরে।
লোকটার আচমকা এভাবে এসে পড়ায় রাজা আর জাহিরও ভয় পেয়ে যায়, অন্ধকারে তার মুখ দেখা যাচ্ছিলো না, জাহির জানলা থেকে মুখ বের করে জিজ্ঞেস করে, "কে তুমি? কি চাই? এভাবে কাঁচে মারছো কেনো?" লোকটি বলে, "সামনে একটা গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ আছে, আমিও যেতে পারছিনা কারন গাছটা সরানো আমার একার কাজ না, আপনারা একটু সাহায্য করবেন? নাহলে কিন্তু আপনারাও যেতে পারবেন না।" লোকটির কথা শুনে জাহির ট্যাক্সি থেকে নেমে এগিয়ে দেখতে যায়। এই সুযোগে সোনিয়া রাজাকে বলে যে তাকে যদি আগে ড্রপ করা হয় তাহলে খুব ভালো হয় কারন অনেকটা রাত হয়ে গেছে বলে তার বাড়ির লোক খুব চিন্তা করছে। রাজা এক কথায় রাজি হয়ে যায়, সোনিয়া রাজার হাত ধরে বলে, "আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমি বুঝতে পারছি যে আপনার জলদি হাসপাতালে যাওয়াটা খুব দরকার তবু আপনি আমার কথাটা শুনলেন। দেখবেন ভগবান ঠিক আপনাকে সাহায্য করবেন, আপনার যে কাছের মানুষ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনি খুব জলদি সুস্থ হয়ে যাবেন।" রাজা এই কথা শুনে হেসে বলে, "না না আমার কোনো কাছের মানুষ ভর্তি নেই, আসলে ব্যাপারটা একটু জটিল, গতকাল যে ঘটনাটা হয়েছে শুনেছেন আশা করি, সেই ঘটনার সাথেই জড়িত।" রাজা আরো কিছু বলতো কিন্তু তার আগে জাহির এসে বলে, "দাদা শুনুন না একটু সাহায্য লাগবে, সামনে গাছের ডাল পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে আর আমরা দুজন মিলেও সেটা সরাতে পারছিনা, আপনি একটু হাত লাগাবেন?" রাজা এটা শুনে ট্যাক্সির দরজা খুলে বেরোতে গেলে সোনিয়া বলে যে সেও যাবে কিন্তু জাহির বারন করে, রাজাও তাকে ট্যাক্সি থেকে বেরোতে বারণ করে বলে যে তারা কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে, অগত্যা সোনিয়া ট্যাক্সিতেই বসে থাকে। রাজা ও জাহির এগিয়ে গেলে সে মোবাইল বের করে দেখে টাওয়ার নেই, একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি কমার কোনো লক্ষণ নেই, বরং মেঘ ঝলকানির ভ্রুকুটি যেনো জানান দিয়ে যাচ্ছে যে এখনো আরো বৃষ্টি হওয়া বাকি।
কিছুক্ষন পরে রাজা ও জাহির ফিরে আসে, তাদের কথা শুনে সোনিয়া বুঝতে পারে যে তারা গাছের ডালটা সরাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু একটা মুশকিল হয়ে যায়, যে লোকটি ওদের ট্যাক্সির জানালায় ধাক্কা মারছিলো আর যার সাহায্যে ওরা ডালটা সরিয়েছে সে জাহিরকে বলে যে তাকে তার বাড়ি অবধি ছেড়ে দিতে আর সেজন্য সে টাকা দিতেও প্রস্তুত। তার নিজের বাইক আছে কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার দরুন এখন সেটা আর স্টার্ট হচ্ছেনা। জাহির এটা শুনে সোনিয়া আর রাজাকে জিজ্ঞেস করে তাদের অসুবিধা আছে কিনা, রাজা লোকটির বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করে, লোকটি নিজের ঠিকানা বললে রাজা সোনিয়াকে বলে, "হাসপাতালের একটু আগেই ঠিকানাটা, আপনার যদি অসুবিধা না থাকে তো ওনাকে বসিয়ে নি ট্যাক্সিতে? আগে আপনাকে ড্রপ করে তারপর আমরা আমাদের ঠিকানায় চলে যাবো।" সোনিয়াকে আগে ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে জাহির বলে, "সে কি আপনারা যে বললেন আগে হাসপাতালে যেতে?" রাজা একটু জোর দিয়ে বলে, "না আগে ওনাকে ছেড়ে দাও, ওনার বাড়ির লোক চিন্তা করছে, যতোই হোক উনি একজন মহিলা।" জাহির আর কোনো কথা না বলে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ট্যাক্সি স্টার্ট করার চেষ্টা করে, অন্ধকারে তার মুখ দেখতে না পেলেও সোনিয়া ভালো করেই বুঝতে পারে যে সে এটা শুনে একটু নিরাশ হয়েছে, হয়তো তার মনে হয়েছে যে শিকারটা হাত ফস্কে গেলো। লোকটি ট্যাক্সিতে উঠে জাহিরের পাশের সিটে বসে নিজের নাম বলে রঘু।
কিছুক্ষন চেষ্টা করার পরে ইঞ্জিন স্টার্ট হয় আর ট্যাক্সির আলোটাও জ্বলে ওঠে, আলোতে এবার লোকটির মুখ দেখতে পায় সোনিয়া, তার মুখ দেখে মনে হয় কোনো ছিচকে চোর। রাজা তখন রুমাল বের করে নিজের মাথা ও মুখ মুছতে ব্যস্ত ছিলো, রঘু আলো জ্বলতেই সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে তাকে ভালো করে মাপতে থাকে, সেটা দেখে সোনিয়ার গা ঘিনঘিন করে ওঠে ও সে নিজের মুখ সরিয়ে নেয়। সত্যি এখনের দিনে বেশিরভাগ লোকই এরকম, একটু সুযোগ পেলেই মেয়েদের খারাপ নজরে দেখতে শুরু করে, রাজার মতো লোক খুব কমই রয়েছে। এটা ভেবে সে রাজার দিকে তাকায়, সে দেখে মুখ মুছে রাজা রুমালটা দিয়ে মুখ ঢেকে সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে, মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা দেখে সোনিয়ার একটু ভয় লাগে, এখন যদি রঘু আর জাহির ওকে কিছু করে তাহলে কি হবে? সে একবার রাজাকে ডাকতে যায় কিন্তু নিজেকে আটকে নেয়। তার মনে হয় যে এভাবে ওনাকে বারবার বিরক্ত করা ঠিক হচ্ছেনা, উনি হয়তো খুব ক্লান্ত তাই একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। তার মনে হয় যে সে হয়তো একটু বেশিই ভাবছে, এসব কিছুই হবেনা। আর কিছু না ভেবে সোনিয়া নিজের মোবাইলে একটা গেম খেলতে শুরু করে।
কিছুদূর যাওয়ার পরে হঠাৎ রঘু বলতে শুরু করে, "বৃষ্টির জন্য রাস্তাঘাটে লোকজন কম কিন্তু এই সময়ে পুলিশ পাহারা থাকা উচিত, নাহলে যে কোনো মানুষের মৃত্যু হতে পারে। অবশ্য আমি শুনেছি কিছু পুলিশ সিভিল ড্রেসে ঘুরে বেড়াচ্ছে খুনিকে ধরার জন্য। ও ধরা না পড়লে জানিনা আর কতজনকে খুন করবে।" জাহির জিজ্ঞেস করে, "কেনো কি হয়েছে?" সোনিয়াও কৌতুহলী দৃষ্টিতে রঘুর দিকে তাকায়। রঘু বলে, "সে কি খবর শোনো নি? গতকাল রাতেও খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো, কোনো কারণে শহরের একটা বড় অ্যাসাইলেমে শর্ট সার্কিট হয়ে যায় আর অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে কয়েকজন কয়েদি পালিয়ে যায়। ওদের মধ্যে একজন সাইকো সিরিয়াল কিলার রয়েছে যে কিনা আজ অবধি অনেক লোককে খুন করেছে। পুলিশ অনুমান করছে যে সে সাধারণ মানুষের বেশেই শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।" এতটা শুনে সোনিয়া খুব ভয় পায়, সাধারণ মানুষের বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানে তো সে রাজা, জাহির বা রঘুও হতে পারে। রাজা হঠাৎ মুখে রুমাল চাপা অবস্থায় বলে, "শুধু এটাই না, সে সাইকো হলেও যথেষ্ট সেয়ানা। পুলিশ ওর ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেনি কারন পালানোর সময়ে অ্যাসাইলেমের রেকর্ড রুমে আগুন লাগিয়ে দেয় আর নিজের ব্যাপারে সমস্ত তথ্য নষ্ট করে দিয়ে যায়। এমনকি যে ডাক্তার ওর চিকিৎসা করতো তাকে ও দুজন গার্ডকেও মেরে ফেলে, এরা ছাড়া আর তেমন কেউ ওর ব্যাপারে জানতো না। পুলিশ শুধুমাত্র একটা চান্স নিয়েই ওকে খুঁজছে, সিরিয়াল কিলার তো তাই বেশিক্ষণ কাউকে না মেরে থাকতে পারবেনা, কোথাও যদি অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাওয়া যায় এই আশা নিয়েই তার খোঁজ চলছে। কিন্তু জাহির ভাই তুমি এই ব্যাপারে জানো না কেনো? আজ সকাল থেকে তো প্রতিটা খবরের চ্যানেলে এটাই দেখানো হচ্ছে আর সকালে পুলিশ তো প্রতিটা ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে গিয়ে সব ড্রাইভারকে সাবধান করেছে কারন খুনি গতরাতে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে খুন করেছে। আসলে তোমাদের তো রাতের দিকে বাইরে থাকতে হয় তাই তোমাদের টার্গেট করা খুব সহজ, কেউ একটু বেশি টাকার লোভ দেখালে তোমরা তাকে বিশ্বাস করে ট্যাক্সিতে বসিয়ে নাও আর তারপর সে সুযোগ বুঝে নিজের কাজ করে ফেলে। এত সহজে কি আর কাউকে মারতে পারবে খুনি?" এই কথা শুনে জাহির একটা জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে বলে, "আমার বাড়ির টিভি খারাপ আর আজ সকালে আমার শরীরটা ভালো ছিলো না বলে আমি বেরোইনি তাই এই ব্যাপারে কিছুই জানিনা।" রঘু একটু অবাক হয়ে রাজাকে জিজ্ঞেস করে, "আপনি খুনির ব্যাপারে এতকিছু জানলেন কি করে? খবরে তো এতকিছু বলা হয়নি।" তখনই আবার ট্যাক্সির লাইট অফ হয়ে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়, অন্ধকারে সোনিয়া তার ব্যাগটা নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। কিছুক্ষন সম্পূর্ন নিস্তব্ধতা, বৃষ্টির আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যায়না, তারপর হঠাৎ কয়েকটি চাপা আওয়াজ ও রঘুর আর্তনাদে নিমেষের মধ্যে সমস্ত নিস্তব্ধতা কেটে যায়। জাহির অনেক চেষ্টা করে আবার লাইট জ্বালিয়ে নিজের পাশের সিটে রঘুর গলাকাটা লাশ দেখে ভয়ে চিৎকার করে ট্যাক্সির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। সোনিয়া রঘুর লাশ দেখে ভয়ে চিৎকার করে রাজার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে, রাজা তখন নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটি পিস্তল বের করে বলে, "আপনি একদম ভয় পাবেন না ম্যাডাম।" সোনিয়া এটা দেখে ভয়ে দূরে সরে গিয়ে তাড়াতাড়ি ট্যাক্সির দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসে জাহিরের কাছে গিয়ে বলে, "ওই লোকটাই খুনি, পিস্তল বের করেছে, ও আমাদেরও মেরে ফেলবে।"
জাহির ওর কথা শুনে ভয়ে পালাতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। তখনই রাজা ট্যাক্সি থেকে বেরিয়ে জাহিরের দিকে পিস্তল তাক করে বলে, "একদম নাটক করবেনা, আর এক পা এগোলে গুলি করবো। আমি জানি এই ট্যাক্সিটা তোমার না, সত্যি করে বলো তুমি কে আর ট্যাক্সির ডিকিতে কার লাশ আছে?" সোনিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, "মানে? কি বলছেন আপনি? আপনার কাছে পিস্তল এলো কোথা থেকে? আপনি কে আগে সেটা বলুন।" রাজা বলে, "আমি DCP সমন্তক সেনগুপ্ত আর এটা আমার সার্ভিস রিভলভার। খুনিকে ধরতে আমরা পুলিশরা সিভিল ড্রেসে ঘুরে বেড়াচ্ছি। গতকাল রাতে খুনি যে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে মারতে চেয়েছিলো সে বেঁচে আছে। কিছুক্ষন আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে আর তাই তার বয়ান নিতে আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। আমি ট্যাক্সিতে উঠে এই ট্যাক্সির নাম্বারটা আমার একজন সহকারীকে পাঠাই, সে খোঁজ নিয়ে জানিয়েছে যে এটা ইমাদ নামের কোনো ড্রাইভারের, এই জাহির আদৌ কোনো ট্যাক্সি ড্রাইভার না। তারপর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না নাহলে আমি এতক্ষণে খুনির ব্যাপারে জেনে যেতাম। আমার সন্দেহ যে এই জাহিরই খুনি। কি জাহির সত্যিটা বলবে?" জাহির উঠে দাঁড়িয়ে বলে, "এটা ঠিক যে এই ট্যাক্সিটা আমার না, আমার বন্ধু ইমাদের। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি খুনি নই। আমি শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে একটা গ্যাংয়ের হয়ে আর্মস পাচার করি। ওরা যেখানে বলে সেখানে কখনো আমি আর কখনো ইমাদ ট্যাক্সির ডিকিতে ভরে পৌঁছে দিয়ে আসি। আজ ইমাদ নিজে আসেনি আর আমাকেও আসতে বারণ করছিলো কিন্তু আমি টাকার লোভে ওর কথা না শুনেই ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আর্মস ডেলিভার করতে। যদি জানতাম এসব সাইকো কিলারের ব্যাপার স্যাপার তাহলে বেরোতামই না। আপনি চাইলে আমার ডিকি চেক করতে পারেন স্যার।" সমন্তক বলে, "হ্যাঁ দেখাও দেখি কি আছে। আপনি ভয় পাবেন না সোনিয়া ম্যাডাম, আমি আছি আপনার সাথে।" এটা বলে সমন্তক জাহিরের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ওর সাথে ডিকির দিকে এগোতে থাকে। সোনিয়া কিছু না বলে ভয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো ও কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। গাড়ির ডিকিটা খুলতেই সমন্তক দেখে তার মধ্যে একটা বড়ো কালো রঙের ব্যাগ, জাহির সেটা বের করতে যাবে তখনই সমন্তকের মোবাইলে এক এক করে মেসেজ আসতে থাকে, মেসেজ টোন শুনে সে মোবাইল বের করে দেখে তুহিন ওকে ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, টেক্সট কিছুতেই মেসেজ করতে বাকি রাখেনি, এছাড়া ওর ২০টা মিসকলের একটা মেসেজও আসে।
সমন্তক বুঝতে পারে যে এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে তাই আর দেরি না করে সে তুহিনকে কল করে। কল রিসিভ করে তুহিন বলে, "তুমি কোথায় আছো স্যাম? চিন্তা হচ্ছিলো আমাদের তোমাকে ফোনে না পেয়ে। কতক্ষনে আসছো? বাবিনের জ্ঞান ফিরেছে আর ওকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি খুনির ব্যাপারে।" সমন্তক বলে, "প্রায় চলেই এসেছি ভাই, মনে হচ্ছে খুনিকে পেয়ে গেছি তাই একটু আটকে পড়েছি। এই তো স্টার গ্যারেজের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।" তুহিন বলে, "খুনিকে ধরে ফেলেছো? তা ম্যাডামকে দেখতে কেমন? বাবিন তো বলছে একদম নায়িকার মতো দেখতে আর চোখের নিচে একটা কাটা দাগ রয়েছে।" সমন্তক এটা শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়, চোখের নিচে কাটা দাগ তো সে একটু আগেই একজনের দেখেছে, সে তুহিনকে বলে, "কি বলছো? খুনি একজন মহিলা?" তুহিন বলে, "হ্যাঁ সেটাই তো শুনলাম, কেনো তুমি আবার কাকে ধরলে?"
সমন্তক কিছু বলার আগেই জাহির ব্যাগটা খুলে বলে, "এই দেখুন স্যার, শুধু বন্দুক পিস্তল আর বুলেট রয়েছে। আমি তো বললাম আমি খুনি নই।" সমন্তক সেটা দেখে পেছনে তাকাতে যাবে তার আগেই কেউ একটা পাথর দিয়ে ওর মাথায় সজোরে আঘাত করে, ব্যাথার চোটে সে রাস্তায় পড়ে যায়, পিস্তলটা হাত থেকে পড়ে যাওয়ায় কেউ সেটাকে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয়। জাহির এটা দেখে অবাক হয়ে আক্রমণকারীর দিকে তাকিয়ে বলে, "একি ম্যাডাম আপনি হঠাৎ ওনাকে মারলেন কেন?" এটা শুনে সোনিয়া হাসতে হাসতে বলে, "এটা না করলে তোকে মারবো কি করে? ও তো পুলিশ, আমাকে আটকাবে তাই না? তোর চোখ দুটো আমাকে যেভাবে দেখেছে তাতে তোকে না মারলে যে আমার রাতে ঘুম আসবেনা, স্বপ্নে তোর চোখদুটো আমাকে ভয় দেখাবে। কিসের এতো ভয়? ভয়কে তো জয় করতেই হবে।" সমন্তক কোনোমতে বলে, "জাহির পালাও এখান থেকে।" জাহির কিছু বুঝে ওঠার আগেই সোনিয়া চোখের নিমেষে নিজের হাতে ধরা একটা ছুরি দিয়ে ওর গলা কেটে দেয়, ছটফট করতে করতে জাহির রাস্তায় পড়ে যায়, ফিনকি দিয়ে রক্তের স্রোত বইতে থাকে আর ভেজা রাস্তায় বৃষ্টির জলে রক্ত মিশে লাল হয়ে যায়। জাহিরকে ছটফট করতে দেখে হাসতে হাসতে সোনিয়া সমন্তকের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে শুরু করে, "তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার।"
সমন্তক নিজের আসন্ন মৃত্যুকে অনুভব করে সোনিয়াকে বলে, "আমাকে মেরে ফেললেও তুমি কিন্তু বাঁচতে পারবেনা, একদিন তো ধরা পড়বে আর এবারে সোজা ফাঁসিকাঠে উঠবে। আর পাগলামির দোহাই দিয়ে অ্যাসাইলেমে পাঠানো হবে না তোমায়।" সোনিয়া সমন্তকের কাছে এসে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, "কে বলেছে তোমাকে মেরে ফেলবো আমি? অনেকদিন পর কোনো পুরুষ পেলাম যে আমাকে খারাপ নজরে দেখে নি। তোমার ছোঁয়াটা কতো পবিত্র, মানুষের লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয় কিন্তু আমার যে লাভ অ্যাট ফার্স্ট টাচ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাগ্য কতোটা খারাপ দেখো, তুমি কিনা পুলিশ আর আমি একজন খুনি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসতে পারবে না? সেই ছোটবেলা থেকে আমি শুধুমাত্র একটু ভালোবাসাই খুঁজেছি জানো কিন্তু কখনো কেউ আমাকে ভালোবাসেনি, সবাই আমাকে শুধু ব্যবহার করেছে। ছোটবেলায় বাবা মা মারা যাওয়ার পর আমি জ্যেঠু আর জ্যেঠির কাছেই থাকতাম, জ্যেঠু আমাকে রোজ রাতে রেপ করতো, খুব ব্যথা হতো আমার কিন্তু চিৎকার করতে গেলে জ্যেঠু আমার মুখ চেপে ধরতো। তখন আমার মাত্র ৭ বছর বয়স, ওসব বুঝতামও না। যেদিন বুঝতে পারলাম আমি জ্যেঠিকে গিয়ে বলি কিন্তু উনি উল্টে আমাকেই মারধর আর গালিগালাজ করেন। এরপর ওরা আমাকে একটা অনাথ আশ্রমে রেখে আসে, সেখানেও একজন সিকিউরিটি গার্ডের খারাপ নজর আমার ওপরে পড়ে। কি দোষ ছিলো আমার? দেখতে সুন্দর হওয়াটাই কি আমার দোষ? দীর্ঘদিন এগুলো চলার ফলে আমি স্বপ্নে ওদের লালসায় ভরা চোখ দেখতে পেতাম আর ভয়ে আমার ঘুম ভেঙে যেতো। ঘুমাতে না পারলে যে আমি মরে যেতাম তাই একদিন ওদের দুজনকেই আমি খুন করি, তারপর গিয়ে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি। খুনের দায়ে আমাকে অ্যারেস্ট করা হয় কিন্তু আমার মানসিক অবস্থা দেখে আমাকে অ্যাসাইলেমে পাঠানো হয়, সেখানেও ডাক্তার আর দুজন গার্ড আমাকে বাজেভাবে টাচ করতো, আমার সাথে নোংরামি করতো। গতকাল ওদের মেরে অনেকদিন পর আবার শান্তিতে ঘুমিয়েছি জানো? এছাড়া আরো অনেককে আমি খুন করেছি যাদের চোখ আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয়নি। আজ এই দুজনকে না মারলেও আমার ভয়ে ঘুম আসতো না। কিন্তু আজ খুব ভালো ঘুম আসবে আমি জানি, স্বপ্নে তোমাকে দেখতেও পারি। শুধুমাত্র একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্যই আমি খুনগুলো করেছি। আচ্ছা আমি এবারে আসি কেমন? খুব ঘুম পেয়েছে। খুব জলদি আবার ফিরে আসবো তোমার কাছে। তুমি ভেবে দেখো আমাকে ভালোবাসতে পারবে কিনা।" এতটা বলে মেয়েটি তুমি যে আমার গানটা গাইতে গাইতে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চলে যেতে থাকে। সমন্তক ওঠার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যাথার চোটে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। কিছুক্ষন পর মেয়েটি অন্ধকারে মিলিয়ে গেলে সে পুলিশ জিপের আওয়াজ শুনতে পায়, ওর কাছে এসে জিপটা থামলে সেটা থেকে তুহিন নেমে ওকে জিপে তুলে বলে, "ফোনে হঠাৎ একটা মারের আওয়াজ আর তোমার আর্তনাদ শুনে বুঝতে পারি যে তুমি বিপদে পড়েছো, তাই সাথে সাথে আমরা রওনা হই। খুনিকে কি তুমি দেখেছো?" সমন্তক হেসে বলে, "সবথেকে বড় খুনি হলো আমাদের সমাজ। মানুষ তো শুধু একটা মানুষের শরীরকে খুন করে কিন্তু সমাজ একটা মানুষের আত্মাকে খুন করে ফেলে আর তখনই একজন খুনির জন্ম হয়।"
|| সমাপ্ত ||
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
04-08-2023, 03:44 PM
(This post was last modified: 04-08-2023, 03:46 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দুর্দান্ত! দারুন একটা গল্প। অনেক কিছু বলে দিলো গল্পটা। আসলে থ্রিলার বা হরর হলো সেরা উপায় সমাজটাকে তুলে ধরার জন্য। অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও এমন একটা থ্রেড খোলার জন্য। ভয় মানেই যে সেটা ভুতের হবে তার কোনো কথা নেই। মানুষের থেকে ভয়ঙ্কর বোধহয় তারাও নয়। তবে আশা করি তাদের গল্পও পাবো এখানে।
আপনি জানেনই এই বিশেষ ব্যাপারে আমার দুর্বলতা আছে। তাই ওদের গল্প লিখতে ও পড়তে দুই ভালোবাসি। অপেক্ষায় থাকবো নতুন গল্পের।
লাইক রেপু রেটিং সব রইলো আপনার এই থ্রেডের জন্য ♥️
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
(04-08-2023, 03:44 PM)Baban Wrote: দুর্দান্ত! দারুন একটা গল্প। অনেক কিছু বলে দিলো গল্পটা। আসলে থ্রিলার বা হরর হলো সেরা উপায় সমাজটাকে তুলে ধরার জন্য। অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও এমন একটা থ্রেড খোলার জন্য। ভয় মানেই যে সেটা ভুতের হবে তার কোনো কথা নেই। মানুষের থেকে ভয়ঙ্কর বোধহয় তারাও নয়। তবে আশা করি তাদের গল্পও পাবো এখানে। আপনি জানেনই এই বিশেষ ব্যাপারে আমার দুর্বলতা আছে। তাই ওদের গল্প লিখতে ও পড়তে দুই ভালোবাসি। অপেক্ষায় থাকবো নতুন গল্পের।
অনেক ধন্যবাদ এই থ্রেডে যে গল্পগুলো পোস্ট করব, ভবিষ্যতে সেগুলো নিয়ে একটা বই ছাপানোর ইচ্ছা আছে আমার। এখানে যে গল্পগুলো পোস্ট করছি/করব, সেগুলো সব অরিজিনাল লেখকের অনুমতি নিয়েই করছি/করব। যদিও আপনার দুটো গল্পই এই ফোরামে আছে, তবুও আমি কি আপনার ভয় ১ এবং ভয় ২ গল্পদুটো এখানে পোস্ট করতে পারি?
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(04-08-2023, 03:50 PM)Sanjay Sen Wrote: অনেক ধন্যবাদ এই থ্রেডে যে গল্পগুলো পোস্ট করব, ভবিষ্যতে সেগুলো নিয়ে একটা বই ছাপানোর ইচ্ছা আছে আমার। এখানে যে গল্পগুলো পোস্ট করছি/করব, সেগুলো সব অরিজিনাল লেখকের অনুমতি নিয়েই করছি/করব। যদিও আপনার দুটো গল্পই এই ফোরামে আছে, তবুও আমি কি আপনার ভয় ১ এবং ভয় ২ গল্পদুটো এখানে পোস্ট করতে পারি?
এটা বেশ ভালো একটা সিদ্ধান্ত। আমিও চাই আবারো বৌ পড়ার আকর্ষণ বৃদ্ধি পাক। বই পড়ার মজা আলাদাই। আচ্ছা ঠিক আছে। পোস্ট করুন এখানে আমার ওই গল্প দুটো। ❤ আমার গল্প যে এখানে স্থান পাচ্ছে এটাই কি কম আনন্দের ব্যাপার। ♥️
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
(04-08-2023, 04:01 PM)Baban Wrote: এটা বেশ ভালো একটা সিদ্ধান্ত। আমিও চাই আবারো বৌ পড়ার আকর্ষণ বৃদ্ধি পাক। বই পড়ার মজা আলাদাই। আচ্ছা ঠিক আছে। পোস্ট করুন এখানে আমার ওই গল্প দুটো। ❤ আমার গল্প যে এখানে স্থান পাচ্ছে এটাই কি কম আনন্দের ব্যাপার। ♥️
অনেক ধন্যবাদ
Posts: 847
Threads: 3
Likes Received: 668 in 432 posts
Likes Given: 1,421
Joined: Dec 2022
Reputation:
51
good one need more like this
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,406 in 973 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
ভালো লাগলো, খুব সুন্দর প্রচেষ্টা। এই ধরনের গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
যৌনতায় ভরা এই ফোরামে হয়তো খুব বেশি পাঠক পাবে না। কিন্তু যারা শুধুমাত্র যৌনতার নেশায়় মেতে না থেকে এই ধরনের গল্প পড়তে চায়, তারা ঠিকই পড়বে। চালিয়ে যাও গুরু
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
•
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
|| ফাঁদ ||
কলমে :- সোমনাথ চক্রবর্তী
পোস্টার :- সম্পিতা চক্রবর্তী
জ্যৈষ্ঠ মাসের দুপুর, বেলা প্রায় সাড়ে বারোটা। বাসের জানলার ধারে বসে ঘুমটা প্রায় এসেই গেছিল শম্ভুবাবুর। যদিও এ ঘুম আরামের ঘুম নয়। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে শম্ভুবাবুর। শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরের একজন মধ্য স্তরের কর্মী। তার কাজ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে গিয়ে সেখানকার অধিবাসিদের স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেওয়া , কোন বাড়িতে যদি কারুর জ্বর হয় তাহলে তাদের পরামর্শ দেওয়া নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর , পরিদর্শন করা এলাকায় কোথাও জমা জল আছে কিনা , প্রয়োজন মত ওষুধ পত্র সরবারহ করা স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে , গ্রামবাসীরা যাতে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম না করে সে ব্যাপারে গ্রাম্ বাসীদের অবগত করা ইত্যাদি । সবশেষে কোলকাতা অফিসে গিয়ে রিপোর্ট করা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে । তবে এই ধরনের কাজের জন্য বন্ধু মহলে তাকে নিয়ে যে বেশ কিছুটা রঙ্গ রসিকতা চলে তা শম্ভুবাবু বেশ বোঝেন। এই তো সেদিন শম্ভু বাবু তার কাঁধের ঝলা ব্যাগ টা নিয়ে সবে বের হয়েছেন অফিস যাবেন বলে । তখনই ছোটবেলার বন্ধু ভোলা বলে উঠল
-“ব্যাগ তো বেশ ভারি মনে হচ্ছে রে , তা আজ আবার কোন গ্রামে? মাঝে মাঝেই কি আর এত হাঁটা হাঁটি পোষায় , বয়েস হচ্ছে তো নাকি ? তুই বরং একটা কাজ করনা কেন! কোন একটা গ্রমে পার্মানেন্ট ভাবে একটা ডাক্তার খানা খুলে বসে পড় আর ওষুধ বলে নকুল দানার গুড়ো চালিয়ে যা । দু দিনে ধ্ননন্তরি । শম্ভুবাবু একটা কাষ্ঠ হাসি হেসে হাঁটা লাগান। আর একদিন হরেন বলে ওঠে
- “ তা হ্যাঁরে সব লোকজন শৌচালয় ব্যবহার করছে তো? আচ্ছা তুই কি গ্রামে গিয়ে ঝোপে ঝাড়ে ওঁত পেতে বসে থাকিস ! যেই কেউ গাড়ু হাতে ঝোপে বসবে সঙ্গে সঙ্গে হারে রে রে করে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে শৌচালয়ে চালান করবি? অ্যাঁ ” ।
শম্ভু বাবু যথারীতি একটা কাষ্ঠ হাসি হেসে নির্বিকার ভাবে পাস কাটিয়ে চলে গেলেন । এসব টিটকিরি এখন তার গা সওয়া হয়ে গিয়েছে । শম্ভুবাবু জানেন , ওরা এসব করে তার প্রতি কিছুটা হিংসা থেকে , হাজার হলেও শম্ভুবাবু একজন সরকারী চাকুরে । তবে এই সব ব্যাপার স্যাপার দেখে এবং শুনে শম্ভুবাবু বেশ মজা পান । নিজের কাজ টাকে শম্ভুবাবু সত্যিই বড়ই ভালোবাসেন । এইসব প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ গুলি সত্যিই বড়ই দরিদ্র। অথচ এত দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করেও তাদের মুখের হাসিটি অবিচল । অত্যন্ত অল্প জিনিষ পেয়েও যে খুশী থাকা সম্ভব তা এদের না দেখলে বিশ্বাস করা কোঠিন । এদের সাথে মিশে শম্ভুবাবু এক অদ্ভুত আনন্দ লাভ করেন। তার মন তৃপ্ত হয়ে ওঠে যখন এই মানুষ গুলি তাকে – “ডাক্তার বাবু” বলে সম্বোধন করেন । শম্ভুবাবু বেশ কয়েকবার ওদের এই ভুল শোধরানোর চেষ্টা করেছেন যে তিনি ডাক্তার নন । কিন্তু কোন ফল হয়নি । কেন যে তাকে ওরা “ডাক্তার বাবু“ বলে ডাকে সেই ব্যাপারটা শম্ভুবাবুর কাছে এখনো ঠিক পরিস্কার নয়।
আজ শম্ভুবাবুর গন্তব্য হুগলী জেলায় মারোখানা নামের একটি গ্রাম , তার দায়িত্ব পড়েছে সেখানকার হেলথ সেন্টারটিতে অবসার্ভার হিসাবে যাওয়ার এবং তার পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রামে সার্ভে করার যে গ্রামগুলির সার্বিক স্বাস্থ্য কিরকম। শম্ভুবাবুর ঘুমের চটকটা ভাঙ্গল বাস কনডাক্তারের ডাকে
-“ ও দাদা মারোখানা পিএইচসি যেতে হলে পরের স্টপে নামতে হবে। ”
সজাগ হয়ে ওঠেন শম্ভুবাবু । সোজা হয়ে বসেন সিটে । চলন্ত বাসের জানলা দিয়ে বাইরে তাকান । সূর্যের প্রখর তাপ যেন ঝলসে দিচ্ছে চারদিক। বাসের জানলা দিয়ে যতদূর দেখা যায় , শুধু খোলা প্রান্তর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। বাসটা চাকায় একটা ঘড় ঘড় আওয়াজ তুলে রাস্তার উত্তপ্ত ধুলো উড়িয়ে এগিয়ে চলেছে। শম্ভুবাবু পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে চাপা দিলেন ধুলো থেকে বাঁচার জন্য। ঠিক তখনই বাসটা একটা ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল , কন্ডাক্টরের গলায় বিশেষ রকম স্বরে একটা ডাক ভেসে এল
– “ এই মারোখানা পিএইচসি ... মারোখানা পিএইচসি ... মারোখানা পিএইচসি।”
শম্ভুবাবু এবার প্রস্তুত হন বাস থেকে নামার জন্য। কাঁধের ঝোলা ব্যাগটা নামিয়ে আনেন বাসের সিটের উপরে অবস্থিত বাঙ্কের থেকে। বাসের গেটের দিকে এগিয়ে যান শম্ভুবাবু। তিনি খেয়াল করেন এই স্টপে নামার আর কোন যাত্রী নেই, একমাত্র তিনিই সিট ছেড়ে উঠেছেন নামার জন্য।কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞেস করেন
-“ভাই মারোখানা পিএইচসির অফিস কোন দিকে হবে?” অভ্যস্ত কন্ঠে কন্ডাক্টর জবাব দেয়
-“ নেমে সোজা গিয়ে বা হাতে পড়বে”। বলে আবার নিজের কাজে মননিবেশ করে।
বাস থেকে নেমে শম্ভুবাবু বেশ বুঝতে পারেন যে এরকম সাঙ্ঘাতিক দুপুর মনেহয় তিনি অনেকদিন দেখেননি। রাস্তা থেকে যেন আগুনের হল্কা বেরুচ্ছে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করছে উত্তপ্ত বাতাস। রাস্তার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত একটি মানুষেরও দেখা নেই। শম্ভুবাবু ব্যাগ থেকে জলের বোতলটি বের করে প্রায় আধ বোতল জল নির্দ্বিধায় ঢেলে দিলেন গলায়। শরীরটা জুড়িয়ে এল যেন খানিকটা। ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে মেলে ধলেন মাথার উপরে। শম্ভুবাবুকে নামিয়ে দিয়ে বাসটি বেশ খানিকটা ধুলোর রাশি বাতাসে মিশিয়ে দিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে চলে গেল নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। শম্ভুবাবুর মনে হতে থাকে তার আজকের অভিযান ছোটবেলাতে গল্পের বইয়ে পড়া বিভিন্ন এডভেঞ্চার কাহিনীর চাইতে কোন অংশে কম রোমাঞ্চকর নয়। একে মাথার উপর উত্তপ্ত রবিকিরন , তার উপর অচেনা জায়গা , তার উপর অচেনা গন্তব্যস্থল। আরও ভালো ব্যাপার রাস্তায় একটা জমনিষ্যির দেখা নেই যে কাউকে প্রাইমারি হেলথ সেন্টার এর দিক নির্দেশ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা যাবে। রাস্তার দুদিকে বিস্তৃত ধানক্ষেত , বাতাসের দোলায় সামান্য ধেউ খেলছে ধানগাছ গুলিতে। কিছুদুরে ছোট্ট পুকুরে খেলে বেড়াচ্ছে কতগুলি হাঁস। শম্ভুবাবু দুবার “দুর্গা” বলে হাঁটা লাগালেন। কন্ডাক্টর বলেছিল মারোখানা পিএইচসি সেজা গিয়ে বাঁ দিকে । বাসটি তাকে যেখানে নামাল তার একদম সোজা সোজি যে কাঁচা রাস্তাটা চলেগেছে সেইদিক বরাবর হাঁটতে থাকেন। তার জুতোর আঘাতে রাস্তায় উত্তপ্ত ধুলার রাশি উড়তে থাকে পাক খেয়ে । একটি দৃশ্য দেখে শম্ভুবাবুর গরম বোধটা আরও বেড়ে গিয়ে তার মনে হতে থাকল যেন তিনি চারদিকের জ্বলন্ত মশালের মাঝখান দিয়ে হেঁটে চলেছেন। তিনি দেখলেন দূরে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে তার মাঝে দাড়িয়ে আছে কি একটা গাছ । সেই গাছটার স্বল্পমাত্র ছায়াটুকুতে বসে আছে একটি কুকুর। সেই মুহূর্তে শম্ভুবাবুর মনে হল ওই কুকুরটিও তার চাইতে বেশি ভাগ্যবান, অন্তত এই প্রখর সূর্য কিরণে কুকুরটিকে অজ্ঞাত কোন গন্তব্যের দিকে পদচালনা করতে হচ্ছেনা। প্রায় মিনিট কুড়ি হাঁটার পর শম্ভুবাবু প্রায় আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন । কিছুদুরে একটা সাইন বোর্ড দেখা যাচ্ছে , তাতে বাঁ দিকে দিক নির্দেশ করে একটা তীর চিহ্ন , সেই চিহ্নের নিচে বেশ বড় অক্ষরে লেখা আছে “মারোখানা প্রাইমারি হেলথ সেন্টার” । অর্থাৎ তার গন্তব্য থেকে তিনি অল্পই দূরে। একটি নিচু একতলা টালির চালের বাড়িতে গড়ে উঠেছে এই হেলথ সেন্টারটি । সামনে খানিকটা খোলা জায়গা , সেখানে কিছু ফুল গাছ লাগান হয়েছে , যদিও যত্নের অভাবে সেগুলির অবস্থা খুব ভাল নয় । দুদিকের খোলা জায়গার মাঝখান দিয়ে মোরাম বিছানো রাস্তা পেরিয়ে হেলথ সেন্টারের বারান্দায় উঠলেন শম্ভুবাবু । দরজা খোলাই ছিল , ভিতরে একজন মধ্য বয়সী মানুষ কাজ করছেন চেয়ারে বসে, তার মাথাটা ঝুঁকে আছে সামনের টেবিলটার উপরে। একবার দরজায় টোকা দিলেন শম্ভুবাবু , চেয়ারে বসা ভদ্রলোক মাথা না তুলেই - “ আসুন” বলতে শম্ভুবাবু ভিতরে প্রবেশ করেন এবং বল্লেন
– “ নমস্কার আমি শম্ভুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় , কোলকাতা থেকে আসছি” ।
এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান লোকটি। সম্ভ্রমের সুরে বলেন
-“ আরে আসুন আসুন , বসুন মিস্টার ব্যানার্জি ” । চেয়ার টেনে বসেন শম্ভুবাবু , জিজ্ঞেস করেন
–“আপনি ই আনিমেষ দে !” মাথা নেড়ে সম্মতি জানান উল্টোদিকে বসে থাকা ভদ্রলোক। দেখে মনে হয় ভদ্রলোকের বয়স আন্দাজ পয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে হবে। দ্রুত কাজের কথা গুলি সেরে নেন শম্ভুবাবু , দিয়ে দেন কোলকাতা অফিস থেকে আনা বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিষ।
দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে গেছিল বেশ খানিক্ষন । শম্ভুবাবু এবং অনিমেষ বাবু অফিস ঘরের টেবিলে বসেই দুপুরের খাবার খেতে খেতে কথা বলছিলেন । অনিমেষ দে বল্লেন
-“ আমি কাজে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম একজন পর্যবেক্ষকের সামনে বসে আছি ।” শম্ভুবাবু জিজ্ঞেস করেন
-“কতদিন হল এখানে জয়েন করেছেন আপনি ? ”
-“এই সাড়ে আট বছর হল।” একটা স্মিত হাসি খেলে যায় শম্ভুবাবুর ঠোটে , তিনি বলেন
-“ ও আপনিও তো প্রায় আমার সঙ্গেই জয়েন করেছেন । কিন্তু একটা ব্যাপার ভারি আশ্চর্য লাগছে । এই সাড়ে আট বছরে আর কোন পর্যবেক্ষক আসেননি কেন এখানে?” ঠোঁটের কনের স্মিত হাসিটা মিলিয়ে যায় অনিমেষ বাবুর , গম্ভীর কণ্ঠে বলেন
-“হ্যাঁ , এটা একটু আনফরচুনেট । আসলে আজ থেকে প্রায় নয় বছর আগে এই মারোখানা পিএইচসি তে সার্ভে করতে এসে এক অবসার্ভারের সাথে গ্রামবাসীদের সাংঘাতিক বচসা হয় । দুঃখের বিষয় তারপর ওনাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি , পাঁচ দিন পর ওনার দেহ পাওয়া যায় রুপনারায়নের চরে। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল ওনার দেহে কোথাও কোন আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। তার পর থেকে এখানে আর কোন অবসার্ভার আসেননি । নয় বছর পর আপনি প্রথম । তবে এই ঘটনা আমার শোনা , যখনকার ঘটনা তখন আমি জয়েন করিনি । পুলিশ তদন্ত করেছিল বেশ কিছুদিন,কিন্তু কিছুই হয়নি, মানে কোন কিনারা করা যায়নি এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর । পরে শোনা যায় উনি সুইসাইড করেছিলেন । তবে এ সবই আমার শোনা কথা , আর তখন খবরের কাগজ থেকে যে টুকু জানার জেনেছি ”।এতখানি বলে থামেন অনিমেষ দে । শম্ভুবাবু এতক্ষন কোন কথা বলেননি , চুপ করে শুনছিলেন অনিমেষবাবুর কথা গুলো। আরও খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে শম্ভুবাবু বল্লেন
-“ হ্যাঁ এরকম একটা ঘটনার কথা আমিও শুনেছি । তবে আমিও ওই লোক মুখে , এই চাকরীতে আমিও জয়েন করিনি তখন। সত্যিই খুবই আনফরচুনেট ।” এরপর আর কিছু কথা এগোয়না সেরকম। শম্ভুবাবু উঠে পড়েন , পদচালনা করেন তার পরবর্তী গন্তব্যের দিকে।
দক্ষিন হস্তের কাজটা সম্পূর্ণ হওয়ার পর এই প্রখর রৌদ্র তাপে হাঁটতে কষ্টটা যেন একটু বেশিই অনুভূত হতে থাকে শম্ভুবাবুর। অনিমেষ দে এর কথা মত এখান থেকে আরও প্রায় আধঘণ্টার হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হবে পাশের গ্রামে। অনিমেষ দে তার সাইকেলটা দিতে চেয়েছিলেন , কিন্তু শম্ভুবাবু আবার সেটা চালানোর বিদ্যেটা রপ্ত করেননি। বেশ খানিকক্ষণ সাইকেল ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করে বুঝেছেন সে ভাগ্য তার নেই। এই গরমে কে আর এখন ভ্যান নিয়ে বেরোবে। পরবর্তী ভ্যান আসতে আসতে বাড়ি ফেরার সময় না হয়ে যায়। তাই সময় নষ্ট না করে শম্ভুবাবু হাঁটা লাগালেন তার পরবর্তী গন্ত্যব্যের দিকে।
হাঁটতে হাঁটতে একটু আগে শোনা কথা গুলি বারংবার নাড়া দিয়ে যায় তার অন্তঃকরনে । আজ থেকে নয় বছর আগে তাঁরই মতন একজন অবসার্ভার হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান , তার মতন একই কাজ করতে এসে, একই জায়গা থেকে। তিনিও বেশ কয়েকবার শুনেছেন বটে অফিসে এই ঘটনা টা তবে সে অনেক দিন আগে। কখনো তলিয়ে ভাবেননি , ভাবার প্রয়োজন পড়েনি। কালের নিয়মে সবাই ভুলে গেছে লোকটাকে। কখনো নামটাও জানা হয়নি সেই হতভাগ্য মানুষটির। অবশ্য তার পর থেকে এখানে কাউকে পাঠানো হয়নি ডিউটিতে । অবশ্য কাউকে না পাঠানোর কারন যে ওই ঘটনা টা তার কোন সঠিক প্রমান নেই। আজ নয় বছর পরে তিনি প্রথম। শম্ভুবাবুর কিরকম একটা মমত্ব বোধ জেগে ওঠে এই সম্পূর্ণ অদেখা, অচেনা, পরম অনাত্মীয় মানুষটির প্রতি। তার মনে হয় , আসলে যার মৃত্যু যেখানে , নিয়তি তাকে সেখানেই টেনে নিয়ে আসে। কথাটা মনে হতে এই গরমেও শম্ভুবাবু অনুভব করলেন তার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত যেন ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে নিচের দিকে। তিনিও তো আজ একই জায়গাতে এসেছেন, একই কাজে । তবে কি আজ তার পালা ? আর একটি ব্যাপারে তার মনে একটা খটকা লেগে আছে , কোনও মানুষকে যদি সুইসাইড করতেই হয়, তাহলে খামোখা এত দূরে এসে করতে যাবে কেন সেই কাজ ! আর গ্রাম বাসীদের সাথে যদি হাতাহাতি হয়ে থাকে , তাহলে বডিতে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি কেন ! এসব ভাবতে ভাবতে শম্ভুবাবু খেয়াল করেননি যে কখন তিনি চলে এসেছেন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সুউচ্চ গাছের খুব কাছাকাছি ।
এখনো বেশ অনেকটা পথ বাকি। শম্ভুবাবু গাছটির শীতল ছায়ায় বসলেন খানিকক্ষণ , শরীর মন জুড়িয়ে গেল তার। বোতল থেকে জল খেলেন খানিকটা। কিছু দূরে দেখা যাচ্ছে একটা ডোবা রয়েছে । যদিও গ্রীষ্মের প্রখর তাপে তাতে জল গিয়েছে শুকিয়ে । অনিমেষ বাবুর কথা মত ওই ডোবা টা পার করে , ডান দিকে ঘুরে আরও প্রায় মিনিট কুড়ি হাঁটা পথে পৌছতে হবে পরবর্তী গ্রামে। শম্ভুবাবু দ্বিতীয়বার বোতল থেকে আরও খানিকটা জল গলায় ঢালতে যাবেন , ঠিক তখনই তার চোখে পড়ল দৃশ্যটা । রাস্তাটা বেশ কিছুটা দূরে যেখানে ওই ডোবাটাকে পেরিয়ে চক্রাকারে ডান দিকে বাঁক নিয়েছে তার পাশেই রয়েছে একটি মাঠ । মাঠের একধারে বেশ কিছু সু উচ্চ বৃক্ষ রাজি থাকার ফলে বেশ কিছুটা অংশ ছায়াছন্ন । বিস্তীর্ণ ফাঁকা জমি সবুজ ঘাসে ঢাকা । এই ফাঁকা প্রান্তরের শেষে অনেক দূরে ছোট ছোট খড়ে ছাওয়া যে বাড়ি গুলির অবয়ব দৃষ্টি গোচর হয় , সেটাই গ্রাম , সেটাই শম্ভুবাবুর পরবর্তী গন্তব্য। শুধু দেখে মনে হয় মাঠটির মাঝামাঝি প্রায় পুরো অঞ্চল টাতেই যেন অনেক পাথর জাতীয় কোন জিনিষ রাখা রয়েছে। আশেপাশে কেউ কোথাও নেই । শম্ভুবাবুর মনটা এক অজানা আনন্দে ভরে উঠল এই ভেবে যে ওই মাঠ ধরে আড়াআড়ি ভাবে চলতে থাকলে দুরের ওই গ্রামে তিনি খুব অল্প সময়ে পৌছতে পারবেন । অতখানি ঘুর পথে তাকে আর হেঁটে যেতে হবে না এই প্রখর সূর্যের তাপে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শম্ভুবাবু উঠে পরলেন, রাস্তাটা পার করে অপর প্রান্তে গিয়ে পিচ ঢালা রাস্তার প্রান্তের ঢালু জমি বেয়ে নেমে পড়লেন ওই বিস্তীর্ণ সবুজ তৃণ ভূমিতে ।
এবার তার চোখে পড়ল তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন , তার ডান হাতে বেশ কিছুটা দূরে একটা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ । না বাড়ি বললে ভুল হবে , ওটা কোন বসত বাড়ি নয় । দেখে বোঝা যায় ওটা একটা পরিত্যক্ত কারখানা। ওই যে তার চিমনিটা দেখা যাচ্ছে , যেন আকাশে গিয়ে ঠেকেছে প্রায়। মাঠটার এই দিকে বেশ কিছু সু উচ্চ বৃক্ষ সারি দিয়ে থাকার ফলে বড় রাস্তা থেকে ঠিক দৃষ্টি গোচর হয়না ওই পরিত্যক্ত কারখানার ধ্বংসাবশেষ । আর একটু ভাল করে চেয়ে দেখার চেষ্টা করলেন শম্ভুবাবু । শুধুমাত্র চিমনিটাই পুরনাঙ্গ রুপে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে । বাকি সবই প্রায় পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে । শম্ভুবাবু ভাবলেন একটা সময়ে হয়ত এই অঞ্চলের মানুজন কাজ করত এখানে । সারাদিন গমগম করত পুরো চত্বরটা। মুখরিত হয়ে থাকত মানুষের কোলাহলে । আর আজ শুধু পড়ে আছে তার কঙ্কালসার দেহটা। আজ আর প্রহরে প্রহরে সাইরেন বাজে না । আজ আর ওই চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া পাক খেয়ে উপরে উঠে জানান দেয় না তার গৌরবময় অস্তিত্বের । শম্ভুবাবুর মনে পড়ে যায় তার নিজের ছোটবেলার কথা , তার বাবার কথা। তার বাবাও এরকমই কোন কারখানায় কাজ করতেন । সেটি হঠাৎ বন্ধ হওয়ার পর শম্ভুবাবু দখেছিলেন তার সদা কর্মব্যস্ত বাবাকে কেমন গুটিয়ে যেতে। আর দেখেছিলেন কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তার বাবাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে। আরও দেখেছিলেন, দেখেছিলেন চোখের সামনে তার বাবার সুঠাম স্বাস্থ্য ওই কঠোর পরিশ্রমের ফলে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে গিয়ে একটা কঙ্কালসার মানুষে পরিনত হতে। একটা দীর্ঘস্বাস ফেলেন শম্ভুবাবু , সে সময় কত পরিবার যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন কল কারখানা বন্ধের কারনে , সে হিসাব কে আর রেখেছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই সেই বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে হাটছিলেন শম্ভুবাবু । একটা ব্যাপার বেশ আশ্চর্য করে তুলেছিল তাকে , এই গরমেও ওই পরিত্যক্ত কারখানার দিক থেকে মাঝে মাঝেই একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা এসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল ছিল তার মুখে। জুড়িয়ে দিচ্ছিল শম্ভুবাবুর সারা শরীর।
প্রায় হঠাৎই শম্ভুবাবু খেয়াল করেন যে তিনি এসে পরেছেন প্রান্তরের মাঝের সেই জায়গাটিতে যে জায়গাটিকে দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাথর ফেলা রয়েছে । কিন্তু সামনে এসে বুঝলেন সেটি পাথর নয় , ছাই এর স্তুপ । এবং কিছু নোংরা আবর্জনা ফেলা রয়েছে ওখানে। শম্ভুবাবু বুঝতে পারলেন ওনাকে ওই ছাইয়ের স্তূপের উপর দিয়েই এই প্রান্তর অতিক্রম করতে হবে , কারন মাঝে পুরোটাই ওই ছাই এর স্তূপ ছড়িয়ে রয়েছে। শম্ভুবাবু তার প্যান্ট গুটিয়ে নিলেন খানিকটা এবং হাঁটতে শুরু করলেন ওই ছাইয়ের স্তূপের উপর দিয়ে। শুধুমাত্র পায়ের তলায় ছাইয়ের উপরে পা ফেলে হাঁটার খস খস শব্দ ছাড়া আর কোথাও কোন শব্দ নেই । বেশ কিছুদুরে চলে এসেছেন শম্ভুবাবু । এই পর্যন্ত এসে শম্ভুবাবুর মনে হল পায়ের নিচে ছাইয়ের স্তূপ যেন ধীরে ধীরে নরম হতে শুরু করেছে । ঠিক যেন তার পা প্রবেশ করতে চাইছে সেই নরম ছাইয়ের স্তূপের গভীরে । এ আবার কি মুশকিল রে বাবা , আশে পাশে কোন শক্ত জিনিষও নেই যে শম্ভুবাবু সেটা ধরে এগোবেন । কিছুক্ষন এক জায়গাতে দাঁড়ালেন শম্ভুবাবু , উনি বুঝতে পারছেন তার পা দুটো ক্রমেই প্রবেশ করতে চাইছে ওই নরম স্তূপের গভীরে। কনরকমে ডান পা তুলে আরও এক পা এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেন সঙ্গে সঙ্গে তার ডান পা প্রায় হাঁটু পর্যন্ত নরম ছাইয়ের স্তুপে ডুবে গেল । এবার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল তার , তিনি বুঝতে পারছেন এই মুহূর্তে তিনি সাংঘাতিক বিপদ গ্রস্ত। তার যে ঠিক কি করা উচিৎ তা তিনি বুঝতে পারছেন না। ডান পা টা তুলে নিয়ে পিছতে যাবেন এমন সময় পিছন থেকে একজন মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন শম্ভুবাবু
-“ ও দাদা , পিছনে আসবেন না । আপনার বাঁ দিকে ঠিক দুই পা মেপে সরে যান”।
আগন্তুক কে দেখার কোন উপায় এই মুহূর্তে শম্ভুবাবুর নেই। কারন কথা গুলো এসেছে তার পিছন থেকে। আর পিছনে ঘুরে তাকানো এই মুহূর্তে সম্ভব নয় শম্ভুবাবুর পক্ষে।ততক্ষনে শম্ভুবাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিয়েছে । তার পিছন থেকে ভেসে আসা পরামর্শটা শম্ভুবাবুর কাছে তখন যেন একটা আশীর্বাদের মত মনে হল। আগন্তুকের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করলেন শম্ভুবাবু , খুব সাবধানে এবং অতি কষ্টে বাঁ পায়ের উপরে শরীরের ভর রেখে কোন ক্রমে ডান পা টেনে তুল্লেন ওই নরম পাঁকের মত ছাইয়ের গাদা থেকে । দুই পা বাঁ দিকে সরে দাঁড়ালেন। এবং বুঝতে পারলেন বাঁ দিকে দুই পা সরে দাঁড়িয়ে পায়ের তলার অংশে যে ছাইয়ের স্তূপ রয়েছে , তা অতটা নরম নয় । আবার আগন্তুকের কণ্ঠস্বর ভেসে এল
-“হ্যাঁ , এবার পিছনে ঠিক এক পা”।
আবার অক্ষরে অক্ষরে নির্দেশ পালন করলেন শম্ভুবাবু।এবারও তার পা ওই নরম ছাই এর গাদায় ডুবে গেলনা। আবার নির্দেশ
-“ এবার আপনার পিছনে কনাকুনি দুইপা ”
আরও প্রায় তিন বারের নির্দেশ সঠিক ভাবে পালন করার পর এবার শম্ভু বাবু বুঝতে পারলেন যে তিনি ওই ঘাসে ঢাকা জমিতে অবতরন করেছেন । একটা স্বস্তির নিঃশাস ফেলে শম্ভুবাবু এবার পিছনে তাকালেন। তার চোখ পড়ল আগন্তুকের দিকে। বেঁটে খাট চেহারার একজন ভদ্রলোক। বয়েস আন্দাজ পঞ্চাশ, মাথার চুল কোঁকড়ানো , চোখে পুরু ফ্রেমের চশমা , ঠোঁটের উপরে একটি পুরু গোঁফ রয়েছে। যেটা চোখে পড়ার মত, টা হল ভদ্রলোকের বাঁ ভুরুর উপরে বেশ লম্বা একটা কাঁটা দাগ রয়েছে। ভদ্রলোক শম্ভুবাবুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন। শম্ভুবাবু করজোরে বলতে গেলেন
-“আপনাকে যে কি বলে... ” কথা শেষ করতে পারলেন না শম্ভুবাবু । আগন্তুক বলে উঠলেন
-“না না ধন্যবাদ দেওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই । এটুকু যদি না করি তাহলে আর কি। দেখে তো কোলকাতার লোক বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনি ওখানে গেছিলেন কি করতে? ওটা একটা মরন ফাঁদ । আসলে ওর নীচে বিরাট বড় এক দীঘি আছে । ওই যে পরিত্যক্ত কারখানা দেখছেন , ওর একটা অংশ মানে যে অংশ টা দেখা যাচ্ছে , বেশ কিছুদিন হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আর যে অংশ টা চালু আছে সেই অংশের ছাই এবং নানা আবর্জনা এই দিঘিতে এসে পড়ে। তবে শুধু কারখানার দোষ দিয়ে লাভ নেই । আশ পাশের গ্রাম বাসীরাও বিভিন্ন নোংরা ফেলে যায় মাঝে মাঝে । ওই যে দেখতে পাচ্ছেন , দূর থেকে দেখে মনে হয় পাথরের ঢিপি , কিন্তু আসলে ওটা ছাইয়ের স্তূপ । ওর নীচে শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে আছে এক বিরাট এবং গভীর দিঘী। যার ঘুম ভাঙ্গে শুধু ওর উপরে কোন মানুষ বা জন্তু জানোয়ার উঠলে । ওই নরম ছাইয়ের ভিতরে ডুবে যাওয়া যতটা সহজ , উদ্ধার পাওয়া ঠিক ততটাই কঠিন । আপনাকে যদি আর একটু পরে দেখতে পেতাম , তাহলে কি যে হত সে কহতব্য নয় ”। এই পর্যন্ত বলে একটু থামলেন আগন্তুক । শম্ভুবাবু ভাবছেন কোন নিঃসীম পাতালে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি , তাকে যেন টেনে তুলেছেন এই ভলদ্রলক । আবার বলে চলেন আগন্তুক
-“ তা মশাইকে কোলকাতার মানুষ বলে মনে হচ্ছে , এখানে কি মনে করে ? আচ্ছা চলুন হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা যাক । তা আপনি যাবেন কোথায় ? ” এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলেন আগন্তুক । শম্ভুবাবু বল্লেন
-“ ওই দূরে যে গ্রাম টা দেখা যাচ্ছে ওখানে যাব , আসলে এই মাঠ টা দেখে ভাবলাম আড়াআড়ি ভাবে চলতে থাকলে অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যাবে । তাই এ পথে আসা। আপনি ঠিক ই ধরেছেন , আমি কোলকাতা থেকে আসছি । কাজের সুত্রে এখানে আসা আরকি । আমি স্বাস্থ্য দপ্তরে চাকরি করি , সেই ব্যাপারে কিছু সার্ভে করার ছিল। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব তার কোন ভাষা খুজে পাচ্ছিনা । আপনার নাম টা জানতে পারি । ” আগন্তুক বল্লেন
-“ আমি উপেন্দ্রনাথ প্রামানিক । এখানেই থাকি । ঠিক সময়ে আপনাকে দেখতে পেয়েছিলাম মশাই । না হলে আজ একটা বিপদ ঘটতে পারত” । গম্ভীর ভাবে শম্ভু বাবু বল্লেন
-“ হ্যাঁ তা যা বলেছেন , ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে । আচ্ছা ওটাকে “মরন ফাঁদ” কেন বলছেন ? ” খানিকটা নিরাসক্ত কণ্ঠে উপেন্দ্রনাথ প্রামানিক বল্লেন
-“ তা বলব না ! দুটো এরকম ঘটনা ঘটেছে তো । একবার ওই গ্রামেরই কিছু ছেলে খেলছিল এখানে , ওদের বলটা চল যায় ওই ঢিপির উপরে , একটা বারো তেরো বছরের ছেলে দৌড়ে উঠে যায় ওই ছাইয়ের ঢিপির উপরে ,সে আর ফিরে আসেনি । আর একবার , আপনারই মতন একজন সার্ভেআর এসেছিলেন কোলকাতা থেকে , উনিও শুনেছি এই কাজই করতেন । সে ও আপনার মতন এই মাঠ পার হতে গিয়ে তলিয়ে যান । দুজনেরই বডি দিন পাচেক পর পাওয়া যায় রুপনারায়নের চরে। আসলে ওই দীঘির সাথে রুপনারায়নের যোগ আছে । সাধে কি আর মরন ফাঁদ বলছি মশাই ! ”
এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন শম্ভুবাবু । মাথটা কেমন যেন ফাঁকা লাগছে তার । খানিক্ষন আগে যার কথা ভাবছিলেন মানে তার অফিসের সেই বহুল চর্চিত মানুষটি , সে তলিয়ে গেছিল ওই একই জায়গা তে ! যেখানে আর একটু হলেই শলিল সমাধি ঘটতে চলেছিল তারও । শম্ভুবাবু ধীর কণ্ঠে বল্লেন
-“ তবে যে শুনেছিলাম , গ্রাম বাসীদের সাথে তার বেশ ঝামেলা হয় এবং তার পর কে আর খুঁজে পাওয়া যায়না ? “
একটু হেসে উপেন্দ্রনাথ প্রামানিক বলেন -“ ওই অনিমেষ বলেছে তো ? ব্যাটা এক নম্বরের ধড়িবাজ । সবাইকে তাই বলে বেড়ায় , আসলে ওর শ্যালক কোলকাতায় বড় প্রমোটার , এই জমিটা ও কিনে নিয়েছে। এখন ধান্দায় আছে এক বড় ব্যবসায়ী কে বেচবে । সেই ব্যবসায়ী নাকি এক রিসোর্ট বানাবে এখানে । কিন্তু এই সব ঘটনার কথা জানলে যদি সে না কেনে তাই বিশেষ করে বাইরের , এবং যে কোন নতুন লোকের কাছে ওই কথাই রটায় । ঠিক আছে আমি চলি এবার , বেলা অনেক হল। আর আপনি নির্দ্বিধায় গ্রামে যান অখানকার মানুষেরা খুবই ভাল । ”
কথা বলতে বলতে প্রায় বড় রাস্তার কাছে চলে এসেছিলেন ওরা দুজনে। ততক্ষনে শম্ভুবাবু একবার থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে দেখছিলেন জায়গাটাকে । বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেছেন তিনি । দূরে দেখা যাচ্ছে গাছের ছায়াতে শান্ত ভাবে বিস্তৃত হয়ে আছে সেই “মরন ফাঁদ” একটা মূর্তিমান শয়তানের মতই যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবাইকে প্রখর রৌদ্র তাপে তার স্থির , শান্ত কোলে খনিকটা বিশ্রাম করার জন্য । একটু আগে যেভাবে ডেকেছিল তাকেও । পরিত্যক্ত কারখানার দিক থেকে বয়ে আসা ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগছে শম্ভুবাবুর মুখে । মনে হচ্ছে যেন কি এক অব্যক্ত হাহাকারের আর্তনাদ ছুটে এসে কিছু যেন বলতে চাইছে তাকে । গায়ে কাঁটা দিল শম্ভুবাবুর ।
আবার হাঁটতে শুরু করবেন বলে বড় রাস্তার দিকে ঘুরলেন । কিন্তু উপেন্দ্রনাথ প্রামানিক কে আর দেখতে পেলেন না। মনে পড়ল উনি বলছিলেন বেলা হয়েছে , বাড়ি ফিতে হবে।
সেদিন গ্রামের কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হল শম্ভুবাবুর । মনে মনে ভাবলেন , কি সাংঘাতিক ফাঁড়া থেকে তিনি বেঁচে ফিরেছেন আজ। মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিলেন উপেন্দ্রনাথ প্রামানিককে যিনি আজ প্রায় পুনর্জীবন দান করেছেন শম্ভুবাবুকে।
পরদিন যথারীতি অফিস জয়েন করলেন শম্ভুবাবু । আগের দিনের সার্ভে রিপোর্ট তৈরি করলেন এবং তা জমা দিলেন । শুধু আগের দিনের ঘটনার ব্যাপারে কাউকে কিচ্ছু বল্লেন না । কিন্তু তার স্মৃতি থেকে ঘটনা টা মুছেও গেল না। দিন যায় , জীবন চলতে থাকে তার আপন গতিতে।
প্রায় মাস দুয়েক পর একদিন শম্ভুবাবুর থেকে প্রায় সাত বছরের সিনিয়র অফিস কলিগ কমলাকান্ত রায়ের ছোট মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রন খেতে গেছেন শম্ভুবাবুদের ডিপার্টমেন্টের অনেকেই । সঙ্গে গেছেন শম্ভুবাবুও । হই , হুল্লোড় , মজা, আড্ডা তার সঙ্গে বিভিন্ন রকমের খাওয়া দাওয়া চলেছে কমলাকান্ত রায়ের নিজের বাড়িতেই । দুতলার বসার ঘরে বিয়ের ব্যবস্থা , ছাদে প্যান্ডেল করে খাওয়া দাওয়া এবং নিচের বসার ঘরে আমন্ত্রিতদের অভ্যর্থনা । এই বিয়েবাড়িতে শম্ভুবাবুর সব থেকে যেটা ভালো লাগছে তা হল কমলাকান্ত রায়ের রুচি বোধ। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সাজ সজ্জা সবেতেই সেই রুচির ছাপ রয়েছে । আর একটি অভিনব ব্যাপার বড় ভাল লাগছে শম্ভুবাবুর । ছোট মেয়ের বিয়েতে প্রদর্শিত হচ্ছে কমলাকান্ত রায়ের বড় মেয়ের বিয়ের ভিডিওগ্রাফি । অন্য সবার সাথে বসে শম্ভুবাবুও দেখছিলেন । সময়ের সাথে মানুষের চেহারা কিরকম পালটে যায় সেটাই ভাবছিলেন শম্ভুবাবু । প্রায় বছরদশেক আগের ভিডিও , কমলাদার তখনো মাথা ভর্তি টাক ছিলনা। পাশ থেকে সাধন সরকার বলে উঠলো
-“ আরে ও কেরে? নির্মল না? দেখো কাণ্ড , মাত্র এই কয় দিনে এত বড় ভুঁড়ি বাগালি কি করে রে?”
নির্মল ঘোষ বলে ওঠেন
– “দশ বছর সময়টাকে তোর মাত্র এই কয় দিন বলে মনে হচ্ছে ? নিজের পেট টার দিকে তাকিয়ে দেখ একবার।”
শম্ভু বাবু এদের থেকে বয়সে বেশ ছোট , তাই এদের ঠাট্টা ইয়ার্কির মধ্যে থাকছিলেন না খুব একটা। খানিকক্ষণ পরে আরো একবার কফির পেয়ালা আর খান তিনেক ফিশ ফিঙ্গার তুলে নিলেন শম্ভুবাবু । গরম কফিতে একবার চুমুক দিয়েছেন সবে । ঠিক তখনই শম্ভুবাবুর চোখটা আটকে গেল সোজা সুজি থাকা বড় টিভি স্ক্রীনটাতে এবং গরম কফিতে তার জিভ গেল পুড়ে। একটা দৃশ্য ফুটে উঠেছে স্ক্রীনে , চারজন মানুষ কনেকে একটা পিরিতে তুলে নিয়ে বরের চারদিকে প্রদক্ষিণ করাচ্ছেন । খুবই পরিচিত একটা দৃশ্য যেকোনো বিয়ে বাড়িতে। কিন্তু শম্ভুবাবু ঠিক সেই দৃশ্য দেখছেন না , ওনার চোখ আটকে আছে ওই চারজন মানুষের একজনের দিকে। বেঁটে খাট চেহারা , মাথায় কোঁকড়ান চুল , চোখে বেশ মোটা ফ্রেমের চশমা আর তার বাঁ ভুরুর উপরে একটা লম্বা কাঁটা দাগ রয়েছে।শম্ভুবাবু পাশে দাঁড়ানো নির্মল ঘোষের জামার হাতাটা খামচে ধরলেন । তাকে জিজ্ঞেস করলেন
-“নির্মল দা ,ওই মাথায় কোঁকড়ান চুল ভদ্রলোক কে?” ।
গলার স্বর সামান্য নিচু করে নির্মল বাবু জবাব দেন
– “ও হল প্রামানিক , উপেন্দ্রনাথ প্রামানিক । আজ থেকে সাড়ে আট বছর আগে মারোখানা গেছিল।কিন্তু খুবই আনফরচুনেট ব্যাপার। ওখানে ও সুইসাইড করে । পাঁচদিন পরে বডি পাওয়া যায় রুপনারায়নের চরে।”
শম্ভুবাবুর চোখের সামনে পৃথিবীটা যেন আবছা হয়ে আসতে শুরু করে হঠাৎ করে। মাথাটা হঠাৎ ঘুরিয়ে যায় যেন , হাতের কফির পেয়ালাটা সশব্দে পড়ে যায় মাটিতে। শম্ভুবাবু বুঝতে পারেন তার অত্যন্ত ঘাম হচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো নির্মল ঘোষ এবং সাধন সরকার যদি সময় মত ধরে না ফেলতেন তাহলে হয়ত মাটিতে পরেই যেতেন শম্ভুবাবু । ওনার মনে পড়েছিল মাস দুয়েক আগের একটা ঘটনা। মনে পড়েছিল ওই মানুষটিই যার মাথায় কোঁকড়া চুল, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, বাঁ ভুরুর উপরে একটা লম্বা কাঁটা দাগ বাঁচিয়েছিলেন তাকে এক নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে । ঠিক ওই একই রকম ভাবে ইহজগৎ ত্যাগ করে চলে গেছেন ওই মানুষটিও , যার নাম উপেন্দ্রনাথ প্রামানিক। ধীরে ধীরে শম্ভুবাবুর মনে হতে থাকে চারিদিকের আলো গুলো হঠাৎ নিভেগিয়ে জায়গটা হঠাৎ কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে । কিছু নয় খানিকটা অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন শম্ভুবাবু , সুস্থ হতে সময় লেগেছিল কিছুটা । তবে হ্যাঁ হসপিটালে থাকতে হয়েছিল তাকে কিছুদিন । পরে এক বর্ষণমুখর ছুটির সকালে জানলার ধারে বসে ভেবেছিলেন যে মানুষটা মৃত্যুর ওপার থেকে ফিরে এসে তাকে জীবন দান করেছেন সেই তো পরম বন্ধু । যদি পরজন্ম বলে কিছু থাকে তবে শম্ভুবাবু চাইবেন ওই উপেন্দ্রনাথ প্রামানিকের বন্ধু হয়ে থাকতে , তারা একসাথে গাইবেন জীবনের জয়গান ।
|| সমাপ্ত ||
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
কি সব কালেকশন দিচ্ছ গুরু! ফাটিয়ে দিচ্ছ তো
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
এই হলো লেখনী জাদু। কত সুন্দর ভাবে গল্পটা ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।♥️
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,406 in 973 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
ভালো লাগলো
Posts: 847
Threads: 3
Likes Received: 668 in 432 posts
Likes Given: 1,421
Joined: Dec 2022
Reputation:
51
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
(06-08-2023, 11:42 AM)Bumba_1 Wrote: কি সব কালেকশন দিচ্ছ গুরু! ফাটিয়ে দিচ্ছ তো
এরকম আরও আসবে, অপেক্ষা কর
(06-08-2023, 12:55 PM)Baban Wrote: এই হলো লেখনী জাদু। কত সুন্দর ভাবে গল্পটা ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।♥️
হ্যাঁ ঠিকই
(06-08-2023, 02:13 PM)Somnaath Wrote: ভালো লাগলো
(06-08-2023, 09:18 PM)Chandan Wrote: good one
•
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
|| জীবন বীমা ||
কলমে:- রুমা পঞ্চাধ্যায়ী
বাসের একেবারে পিছনের সিটে বসে কানে হেডফোন গুঁজে একমনে গান শুনে যাচ্ছে উজান। বেসরকারি চাকরির মাইনেটা যেমন বেশি, খাটনিও অনেক। তাই বাড়ি ফেরার সময় নিজের পছন্দের গান শুনে মাথাটা হালকা করে নেয় উজান। বাসে লোক বলতে তিন কি চারজন। বাইরে শ্রাবণের ধারা বয়ে চলেছে। এতক্ষণ চোখ বুজে বসেছিল ও, এবার চোখটা খুলতেই অবাক হল। এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি একগাল হাসি নিয়ে ওর মুখের দিকেই চেয়ে রয়েছে। কান থেকে হেডফোনটা খুলে উজান লোকটিকে বলল, "কিছু বলবেন কাকাবাবু?"
লোকটি একেবারে আপ্লুত হয়ে ওর পাশেই ধপাস করে বসে পড়ল। "হ্যা! বলব তো! অনেক কথা আছে! আসলে আমি অনেকক্ষন ধরে লক্ষ্য করছিলাম তুমি কেমন চুপটি করে বসে আছ, শরীর টরির খারাপ নাকি?"
"কৈ না তো? আসলে আমি তো আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না!"
"আরে! চিনবে কি করে? আমিও তো তোমাকে চিনিনা! তাতে কি হয়েছে? চেনা না হলে কি কথা বলতে নেই?"
"না না! তা কেন! আমি সেটা বলতে চাইনি!"
"কতটুকু জীবন আমাদের! এরমধ্যে যতটা পারি লোকের সাথে নিজের পরিচয় বাড়াই! চলে তো যাবই একদিন, তাও কিছু লোকের তো মনে থেকে যাবে। কি তাই না? আমি নেতাই সামন্ত! তোমার নাম কি বাবা?"
"নমস্কার! আমি উজান মিত্র!"
"তা কলেজ থেকে ফেরা হচ্ছে নাকি!"
"আজ্ঞে না! অফিস থেকে!"
"অফিস? বাঃ বাঃ! তোমায় তো আমি কলেজের ছাত্র ভেবেছিলাম হে!"
একটু লাজুক হেসে উজান হেডফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। আজ আর গান শোনা হবে না। এই দেখে লোকটা যেন আরো আনন্দ পেল। আবার অদ্ভুতভাবে হেসে বলে উঠল, "গান শুনছিলে নাকি?"
"হ্যাঁ! অফিস থেকে ফেরার পথে রোজ গান শুনি। সময়টা কেটে যায়।"
"বাঃ! তা ভালো! তোমার বাড়িতে কে কে আছে?"
"বাবা, মা আর আমি।"
"বিয়ে হয়নি?"
এবার অদ্ভুতভাবে লোকটার দিকে তাকালো উজান। ঘটক নাকি? মুখে বলল, "আজ্ঞে না!"
"শোনো! বাসে ট্রামে যাতায়াত করো, জীবনের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই তোমার কিছু হয়ে গেলে তোমার বাবা মায়ের কি হবে, সেটা ভেবেছো? তাই বলছি আজই একটা জীবন বীমা করে নাও। দেখবে তুমি চলে গেলেও তোমার বুড়ো বাবা মায়ের কোনোদিন ভাতের অভাব হবে না।"
"কথাটা আপনি মন্দ বলেননি। তবে এখন আর বীমা করে লাভ নেই। দুমাস আগে যদি আপনার সাথে দেখা হত, খুব ভালো হত জানেন!"
"মানে? ঠিক বুঝলাম না বাবা!"
"দুমাস আগে এই বাসটায় করে অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। বাসে আমি ড্রাইভার এর কন্ডাক্টর ছাড়া আর কেউই ছিল না। হঠাৎ কোথা থেকে একটা লরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এসে এই বাসটায় ধাক্কা মারে। বাসচালক কোনোভাবে বুঝতে পেরে আগেই চম্পট দেয়। কিন্তু আমি আর কন্ডাক্টর দাদা প্রাণ হারাই!"
উজানের কথা শেষ হতেই নেতাই সামন্ত উচ্চস্বরে হেসে ওঠেন, যেন কত না মজার কথা তিনি শুনেছেন। হাসতে হাসতে নিজের চশমা খুলে চোখ মুছে সবেমাত্র কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ দেখলেন, ওনার পাশের সিটটা এখন ফাঁকা, উজান নেই সেখানে।একটু আগে যেই বাসে উনি বসেছিলেন মুহূর্তে তার চেহারা পাল্টে একটা ভগ্নস্তুপের রূপ নিয়েছে। একটু আগেই যেখানে ঝা চকচকে সিট ছিল, চারিদিকে আলো জ্বলছিল, এসি চলছিল সেই বাস এখন ভাঙাচোরা কঙ্কালসম পড়ে আছে!
নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন নেতাই সামন্ত। বাইরের দিকে বেরোতেই যাবেন হঠাৎ একটা অট্টহাসি ওনার বুক কাপিয়ে দিল। ওনার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে কেউ হাসছে! গলার কাছে যেন আটকে রয়েছে প্রাণটা। একটা ঢোক গিলে পিছনে ফিরতেই ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড় হলো নেতাইয়ের। ওনার সামনে এখন যে উজান দাড়িয়ে আছে তার চেহারা আর সৌম্য নয়, বিভৎস। মাথার একপাশ থেতলে গেছে, কাধের হাড়টা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এসেছে, গায়ে পড়ে থাকা সাদা জামাটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে! ওর ঠিক পাশেই দাড়িয়ে আছে আরেকটি বছর ষোলো কি সতেরোর ছেলে, খুব মায়া ভরা চেহারা। তারও ঘাড়টা মটকে একপাশে কাত হয়ে রয়েছে, পা টা ভেঙে উল্টে গেছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। কি বিভৎস সেই রূপ। ভয় আর করুণা মিশে অদ্ভুত একটা অনুভুতি হল নেতাই সামন্তর। গা গুলিয়ে বমি আসল ওনার। টলমলে পায় কোনোমতে বাসের বাইরে বেড়িয়ে এসেই জ্ঞান হারালেন নেতাই সামন্ত।
জ্ঞান ফিরতে নিজেকে ব্যাস টার্মিনালের ভিতরে একটা বেঞ্চের উপর উদ্ধার করলেন নেতাই। আশেপাশে ভিড় জমেছে। তার মধ্যে থেকেই একটা অল্পবয়সী ছেলে বলে উঠল, "কি কাকা! ভূত দেখে ভিমড়ি খেয়েছ নাকি?"
নেতাই তার কোনো উত্তর করলেন না। শুধু ঈশ্বরের এই অদ্ভুত নিয়তির খেলার এক নির্বাক দর্শক হয়ে রয়ে গেলেন।
|| সমাপ্ত ||
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,178 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
এই ধরনের গল্প আগেও পড়েছি। যিনি লিখেছেন তিনিও অন্য জায়গা থেকে নিয়েই লিখেছেন। তবে বেশ ভালো।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,067 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
ছোটোর মধ্যে বেশ। এই টুইস্ট দেওয়া গল্প গুলো বেশ লাগে।♥️
Posts: 1,237
Threads: 2
Likes Received: 2,209 in 1,011 posts
Likes Given: 1,613
Joined: Jul 2021
Reputation:
654
(08-08-2023, 11:52 AM)Bumba_1 Wrote: এই ধরনের গল্প আগেও পড়েছি। যিনি লিখেছেন তিনিও অন্য জায়গা থেকে নিয়েই লিখেছেন। তবে বেশ ভালো।
ও আচ্ছা
(08-08-2023, 09:19 PM)Baban Wrote: ছোটোর মধ্যে বেশ। এই টুইস্ট দেওয়া গল্প গুলো বেশ লাগে।♥️
হ্যাঁ সেটাই
•
|