Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
[Image: FB-IMG-1697350890314.jpg]

|| শুদ্ধিস্নান ||

লেখা :- আদর্শ মাইতি

" আমার মা বাবাকে ফেরত দাও, আমাদের ধান ফেরত দাও... " কথাগুলো কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বরে ভেসে এলো বছর সাতেকের মেয়েটার দিক থেকে।
উঠোনে ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে টকটকে লাল রঙের ময়লা একটা জামা পরে জমিদারের দিকে হাত বাড়িয়ে কথাগুলো বারবার আওড়াচ্ছে মেয়েটা।
" আমার মা বাবাকে ফেরত দাও, আমাদের ধান ফেরত দাও... আমার মা বাবাকে ফেরত দাও, আমাদের ধান ফেরত দাও... "

নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য তাঁর লাঠিয়ালকে জিজ্ঞাসা করলেন, " কে রে মেয়েটা ? তখন থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করছে। "
"বাবু এটাই ওই ভানু আর জবার মেয়ে" উত্তর দিল লাঠিয়াল।

কিছুক্ষণ কটমট করে মেয়েটাকে দেখে নিয়ে নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য তাঁর হিসেবরক্ষককে বললেন, "একটা জামা আর কিছু মিষ্টি দিয়ে মেয়েটাকে বিদায় করো।"
আদেশ পাওয়া মাত্রই জমিদারের একুশ বছরের বিশ্বস্ত ভৃত্যটি একবিন্দু সময় অপচয় না করে তড়িঘড়ি একটা নতুন আকাশী রংয়ের ফ্রক আর এক প্যাকেট মিষ্টি মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজেই টেনে বাইরে নিয়ে এলেন। বললেন, "আর এই চত্বরে আসবিনা। তোর মা বাপ এখানে নেই, মা দুগ্গার কাছে চলে গেছে। সেখানে গিয়ে খোঁজ কর।" কথাটা শেষ করেই তিনি আবার উঠোনের ভিড়ের মাঝে ঢুকে পড়লেন। আজ গ্রামের মানুষদের মধ্যে নতুন শাড়ি, শাল, জামা, মিষ্টি ইত্যাদি বিলি করা হচ্ছে। এখন তাঁর অনেক কাজ, অযথা সময় নষ্ট করলে চলবেনা। এর মধ্যে এইসব উটকো ঝামেলায় যাতে জমিদারের ওপর আবার কোনো দাগ না পড়ে সেটাও তাঁকেই দেখতে হয়।

বাইরে দাঁড়িয়ে মেয়েটা কিছুক্ষণ ভিড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে পিছু ফিরলো। লোকটা বলেছে ওর বাবা মা চলে গেছে মা দুগ্গার কাছে। ওকেও যেতে হবে। কিন্তু কোথায় পাবে মা দুগ্গাকে ? কোথায় তার বাড়ি ? কেমন দেখতে তাকে ?
ওর বাবা মা তো ওকে ছেড়ে কোথাও যায়না। তাহলে এইবার কেমন করে ওকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলো।
ওর অভিমান হলো খুব। ও যে কাল থেকে এই বাড়ি ওই বাড়িতে ভাত খেয়ে কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছে তাতে কি মা বাবার কিছু এসে যায়না ?

এসব ভাবতে ভাবতে প্যাকেট থেকে বার করে দুটো মিষ্টি খেলো সে। ভীষণ জল তেষ্টা পেয়েছে এইবার। হাতটাও চিটচিট করছে। সামনেই বট পুকুর। কী সুন্দর জল। বট গাছের ছায়ায় জলটা নিশ্চই অনেক ঠান্ডা হয়ে আছে ! ভেবেই গলাটা আরও জল জল করে উঠলো। কিন্তু ও জানে, ওদের তো এই পুকুরে নাম বারণ। একবার ঘাটে এসে বসেছিল বলে ওর মা কি মারটাই না মেরেছিল ওকে। পরে অবশ্য আদরও করেছিল। কোলে নিয়ে হাঁসের ডিম সেদ্ধ করেও খাইয়েছিল সেদিন।

কিন্তু এখন এই তেষ্টায় সে জল পাবে কোথায় ? ওর মা জল আনতে যেত গ্রামের বাইরে মুচিদের পাড়ায়। সে তো এখনও অনেক দূর।
এমনসময় কেউ যেনো বললো, "এই নাও জল খাও।"
ও পিছনে ফিরে দেখলো কাদের একটা নতুন বউ ওর দিকে এক গ্লাস জল বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন বউয়ের মুখে কী সুন্দর হাসি, সিঁথিতে টকটকে সিঁদুর, হয়ে নতুন সুতির শাড়ি।
নতুন বউ গ্লাসটা আরও একটু বাড়িয়ে দিলেন ওর দিকে। ও এইবার জল খেলো। আহ, কত্ত মিষ্টি ঠান্ডা জল।
এক চুমুকে জল শেষ করে গ্লাস ফেরত দিয়ে বললো সে জিজ্ঞাসা করলো, "নতুন বউ ! তোমার নাম কি মা দুগ্গা ?"
"না মা, আমি নলিনী। ওই যে ওই দূরের বাড়িতে থাকি। তুমি মা দুগ্গাকে খুঁজছো?"
" হ্যাঁ, ওই বাড়ির লোকটা বলেছে আমার মা বাবা নাকি তার কাছেই গেছে।"

নতুন বউ চুপ করে গেলো। তার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে কোনরকমে গলার স্বর স্বাভাবিক করে বললো, "তোমার খিদে পেলে আমাদের বাড়িতে আসবে।"
এই বলে সে চলে গেলো। নতুন বউদের এসব নিয়ে কথা বলতে শুনলে বিপদ আছে।

তার লাল জামায় জলের বিন্দুগুলো মুছে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগলো মেয়েটা। পরশু থেকে বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে। কেউ নেই। শুধু পোষা কুকুরটা আছে। তাই একটু কম ভয় লাগে।

..............

নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য তাঁর লোহার সিন্দুক খুলে বসলেন। গোটা সিন্দুক ভরে আছে সোনা, রূপার গহনা আর নোটের বান্ডিলে।
বছরে একদিন দানধ্যান করলে ভাবমূর্তিও বজায় থাকে আর কোষাগারে তেমন চাপও পড়েনা।
এইবার তিনি তাঁর আলমারি থেকে নতুন গামছা, ধুতি, গেঞ্জি আর সবচেয়ে প্রিয় পাঞ্জাবিটা বার করে নিলেন।

এখন বাজে রাত সাড়ে তিনটা। এখন তিনি স্নানে যাবেন বট পুকুরে। প্রতি বছর মহালয়ার দিন ভোর রাতে তিনি স্নানে যান ওই পুকুরেই। তারপর বট গাছের তলায় বাঁধানো চাতালে বসে বস্ত্র পরিধান করে বাড়ি আসেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির সামনে ভিড় জমে গ্রামবাসীর। এই ভিড় জমিদার বাবুর রেডিওতে মহালয়া শোনার ভিড়। এই ভিড় ভোরের শিশিরে মা কে আহ্বানের ভিড়। আজকের দিনটা বড়ই বিশেষ।

আর দেরি করলেন না তিনি। নতুন বস্ত্র কাঁধে ফেলে একহাতে ছড়ি আর একহাতে হ্যারিকেন নিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। মিনিট দশেকের মধ্যেই বট পুকুরের পাড়ে এসে উপস্থিত হলেন। এই পুকুর গ্রামের মানুষের জন্য প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন তাঁর প্রপিতামহ। তিনি নিজে অবশ্য এই পুকুর শুধুমাত্র খাজনা প্রদানকারী মানুষদের জন্য সীমাবদ্ধ রেখেছেন। যারা খাজনা দিতে পারেনা তারা এর জলস্পর্শ করার সুযোগও পায়না।

নতুন জামা কাপড় আর হ্যারিকেনটা বট গাছের তলায় চাতালে রেখে জলে নেমে এলেন তিনি। পরপর দশটা ডুব দিতে দিতে তাঁর গুরুমন্ত্র উচ্চারণ শেষ করলে তবেই তাঁর স্নান সম্পূর্ন হবে।

সবেমাত্র একটা ডুব দিয়ে উঠে মন্ত্রোচ্চারণ শুরু করবেন এমন সময় শুনতে পেলেন, " আমার মা বাবাকে ফেরত দাও, আমাদের ধান ফেরত দাও... "

পরের ডুব দিয়ে উঠতেই আবার, " আমার মা বাবাকে ফেরত দাও, আমাদের ধান ফেরত দাও... "

এমন করে পাঁচটা ডুব দেওয়ার পর বিরক্ত হয়ে মন্ত্রোচ্চারণ থামিয়ে উঠে এলেন তিনি। চাতালে রাখা হ্যারিকেন এর পাশে বসে মেয়েটা একই খ্যানখ্যানে সুরে একই কথা বলে চলেছে বারবার।
নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য আর মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না। রাগে তাঁর চোখ লাল হয়ে উঠলো। ভেজা কাপড়ে উঠে এসেই সজোরে মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে বললেন, "মা বাবাকে চাই, দাঁড়া তোকে মা বাপের কাছে পাঠাচ্ছি। শালা বছর বছর খাজনা দিবিনা, জমি চাষ করবি, বসে বসে খাবি ! চাবকে তোর বাপের ছাল তুলে নিয়েছি রে মাগী। আর তোর মা ! শালীর গায়ে এমন কালি লাগিয়েছি না, মাগী নিজেই লটকে গেছে শ্মশানের গাছে। যা দেখে আয়, শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খেলো এতক্ষণে।"
ভট্টাচাজ্জী মশাইয়ের রাগ এখন সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে গেছে। এইবার চুল মুঠি ধরে মেয়েটার মাথাটাকে চাতালে ঠুকে দিলেন সজোরে। সঙ্গে সঙ্গে ঠং করে আওয়াজ হল। যেমন হয় লোহায় লোহায় ধাক্কা খেলে। জমিদারের বুকটা কেঁপে উঠলো। কিন্তু আবার সেই রাগ জাহির করতে পরপর পাঁচবার মেয়েটার মাথাটা ঠুকে দিলেন চাতালে। আর পরপর পাঁচবারই ঠং, ঠং করে ভোর রাতের শীতল ভারী হওয়া কেঁপে উঠলো।
জমিদার বিস্ফারিত চোখে দেখলেন মেয়েটা হাসছে !
বড়ো বড়ো সাদা সাদা চোখ বার করে হাসছে ! ধবধবে সাদা দাঁতের ফাঁকে লাল টকটকে জিভ বার করে সে হাসছে !
এ হাসি যে কোনো জমিদারি রক্ত শীতল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য আর হাত চালাতে পারলেন না। তাঁর সমস্ত শরীর যেন পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে আসছে ধীরে ধীরে।
তখনই তাঁর চোখে পড়লো বট গাছের পিছনে দুটো উজ্জ্বল চোখ। হিংস্র, জ্বলন্ত দুটো চোখ।

অবয়বটা এগিয়ে আসতেই দেখা গেলো তার বিরাট চেহারা, স্ব দন্ত আর লম্বা লম্বা দুলতে থাকা কেশর।
নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য তাঁর যৌবনে বাঘ শিকার করেছেন এক সময়। কিন্তু এই জন্তু শিকার করার মতো নয়।
অতশত ভাববার আগেই, চোখের পলক ফেলবার আগেই জন্তুটা ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁর ঘাড়ের ওপর। বট পুকুরের চাতাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত রাঙিয়ে দিল পুকুরের শীতল জল।

এমন বিভীষিকাময় রাতে গ্রামের একটা কুঁড়ে ঘরে ঘুমোচ্ছিল একটা একা মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বাইরে কারুর অপেক্ষা করতে করতে শিউলি গাছের তলায় তার পোষা কুকুরের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। তার গায়ে আকাশী রংয়ের ফ্রক। সেই ফ্রক ঢেকে যাচ্ছে ভোরের খসে পড়া শিউলি ফুলের চাদরে। কুঁড়ে ঘরের দুয়ারে যেন আস্ত একটা আকাশ নেমে এসেছে। ভোরের ঠান্ডা হাওয়া মাঝে মধ্যে ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছে তার। সে ঘুম জড়ানো আধবোজা চোখে দেখতে পাচ্ছে সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। নতুন বউয়ের মতো, নতুন শাড়ি, ঘন কালো চুল বাতাসে উড়ছে। এই বুঝি মা দুগ্গা নিতে এলো তাকে, তার মা বাবার কাছে।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 6 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
বাহ্ উপযুক্ত সময়ের উপযুক্ত গল্প  clps

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
খুব ভালো লাগলো  Namaskar
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(15-10-2023, 06:35 PM)Somnaath Wrote:
বাহ্ উপযুক্ত সময়ের উপযুক্ত গল্প  clps

(15-10-2023, 10:30 PM)Bumba_1 Wrote: খুব ভালো লাগলো  Namaskar
 
থ্যাংকস  thanks thanks
Like Reply
good one ..
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(16-10-2023, 02:53 PM)Chandan Wrote: good one ..

thanks thanks
Like Reply
বাহ্ অসাধারণ লাগলো শুদ্ধিস্নান ❤❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(18-10-2023, 08:49 PM)Baban Wrote: বাহ্ অসাধারণ লাগলো শুদ্ধিস্নান ❤❤

thanks thanks
Like Reply
শুভ ষষ্ঠীর আগাম শুভেচ্ছা। প্রথম তিনটি গল্প পড়লাম, কীসের এত ভয়, ফাঁদ এবং জীবনবীমা। তিনটি গল্পই খুব সুন্দর। তবে ফাঁদ এবং কীসের এত ভয় একটু বেশীই ভাল লাগল। ফাঁদ পড়তে গিয়ে বুঝতে পারছিলাম হয় অনিমেষ দে কিম্বা উপেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের কেউ একজন অশরীরী হবেন। আর কীসের এত ভয় গল্পে মাস্টার ট্যুইস্ট দেওয়া খুব ভাল লাগল। জীবনবীমার গল্পটা মনে হল অন্যভাবে পড়েছি কোথাও এর আগে। 
আপনার এই থ্রেড খুবই সুন্দর Heart । আমি আসব এখানে মাঝে মাঝে ।
[+] 1 user Likes লম্পট's post
Like Reply
(19-10-2023, 09:34 PM)লম্পট Wrote: শুভ ষষ্ঠীর আগাম শুভেচ্ছা। প্রথম তিনটি গল্প পড়লাম, কীসের এত ভয়, ফাঁদ এবং জীবনবীমা। তিনটি গল্পই খুব সুন্দর। তবে ফাঁদ এবং কীসের এত ভয় একটু বেশীই ভাল লাগল। ফাঁদ পড়তে গিয়ে বুঝতে পারছিলাম হয় অনিমেষ দে কিম্বা উপেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের কেউ একজন অশরীরী হবেন। আর কীসের এত ভয় গল্পে মাস্টার ট্যুইস্ট দেওয়া খুব ভাল লাগল। জীবনবীমার গল্পটা মনে হল অন্যভাবে পড়েছি কোথাও এর আগে। 
আপনার এই থ্রেড খুবই সুন্দর Heart । আমি আসব এখানে মাঝে মাঝে ।

অবশ্যই আসবেন  Namaskar ভালো থাকবেন 
[+] 1 user Likes Sanjay Sen's post
Like Reply
[Image: FB-IMG-1697979551013.jpg]

|| দেবীপক্ষ ||

লেখায:- সৌম্যজিত

     "কি গো বুড়ি মা! শিউলি ফুলের ঝুড়িটা যে একেবারে ফাঁকা।".......শাকের আঁটিগুলোর ওপর জল ছেটাতে ব্যস্ত বৃদ্ধা কমলিনী কথাগুলো শুনে মুখ তুলে চেয়ে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় বছর উনিশের একটি মেয়ে। পরনে তার লাল পেড়ে সাদা শাড়ী। তার ডান হাতে ধরা রয়েছে একটি পদ্ম। মাথার উন্মুক্ত কালো কেশরাশি যেন হাঁটু ছুঁয়েছে তার। চাঁদের আলোর মতোই উজ্জ্বল তার মুখশ্রী। তার চোখের স্নিগ্ধ চাহনি যেন সকল বিষন্নতা মোচন করতে সক্ষম। সমগ্র জগতের সুখ শান্তি যেন তার ওই দু ঠোঁট জুড়ে লেগে থাকা এক টুকরো হাসিতেই বিরাজমান। সেই সঙ্গে তার সর্বাঙ্গ থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সূর্যের কিরণের ন্যায় এক উজ্জ্বল দ্যুতি।

       অপার মহিমামণ্ডিত মুখ খানির দিকে মুগ্ধ নয়নে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বৃদ্ধা কমলিনী বলে ওঠে... "তুমি কে মা? এ গাঁয়ে তো তোমাকে এর আগে কখনও দেখিনি!"

      "তুমি আমাকে চিনবে না গো বুড়ি মা। আমি কাত্যায়নী গো। ওই বড়ো মন্দিরের কাছেই আমি থাকি। কিন্তু.... আমি যে খুব আশা করে এসেছিলাম তোমার কাছে বুড়ি মা।".......মেয়েটার কথা শুনে বড্ডো মায়া হয় বৃদ্ধার। 'আহারে! এতো দূর থেকে এসেছে মেয়েটা! তাও কটা শিউলি ফুলের জন্য! আর সে কিনা তাকে এই সামান্য সাহায্যটুকু ও করতে পারছে না!'..... মনে মনে কথা গুলো ভেবে বড্ড ব্যথিত হয় কমলিনী।

     "আমার একমাত্র নাতনি জয়া-ই ওই শিউলি ফুল কুড়িয়ে আনত। শিউলি ফুল যে বড় প্রিয় ওর। কিন্তু গত এক মাস ধরে মেয়েটা যে বড্ড অসুস্থ। একবার গ্রামের প্রধানদের বাড়ির ওই বিশাল বাগানটিতে ফুল কুড়োতে গিয়েছিল ও। বেশ কিছুক্ষণ পর উদভ্রান্তের মত ছুটতে ছুটতে এসে সেই যে ঘরে ঢুকল আজ পর্যন্ত সে ওই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোয়নি। কিসের একটা ভয়ে সবসময় কুঁকড়ে থাকে মেয়েটা। কিছু একটা যেন বলতে চায় কিন্তু পারে না। ওর মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা অব্যক্ত ভাষাগুলো আমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারি গো মা। বছর পনের বয়স ওর। জন্ম থেকেই বোবা। মা নেই। বাপটাও দিনভর নেশায় ডুবে থাকে। মা হারা মেয়েটার আমি ছাড়া কেউ নেই। আর আমার কাছে ওই আমার একমাত্র পৃথিবী গো মা। আমি কি করব? কার কাছে যাব? কিই বা সামর্থ্য আছে আমার? আমি জানিনা আমার এই নাতনি টা আদৌও কোনোদিন সুস্থ হয়ে উঠবে কিনা।"...... ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে কথাগুলো বলতে বলতে দু চোখ জলে ভরে ওঠে বৃদ্ধার। কাত্যায়নী হাঁটু গেঁড়ে বসে। বৃদ্ধার দু চোখের কোল বেয়ে নেমে আসা অশ্রুধারা মুছিয়ে দিয়ে সে বলে......" চিন্তা কোরো না গো বুড়ি মা। মহামায়ার আশীর্বাদে জয়া সেরে উঠবে গো।" এরপর সে তার হাতে থাকা পদ্ম ফুলটা বৃদ্ধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে... "এই পদ্মফুল প্রতি রাতে শোবার সময় জয়ার মাথার পাশে রেখে দিও। দেখবে ও দিন কয়েকের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তবে হ্যাঁ! জয়া সুস্থ হওয়ার পর ওই বড়ো মন্দিরে গিয়ে মা কে শিউলি ফুল উপহার দিয়ে আসতে ভুলো না যেন! এবার আমি আসি গো বুড়ি মা। ওদিকে যে আমার মেলা কাজ। ভালো থেকো। মা মহামায়া তোমাদের মঙ্গল করুন।"......কথাগুলো বলে কাত্যায়নী নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। তার চোখের কোণে তখন জমা হয়েছে ক্রোধের অশ্রুবিন্দু। মায়াময় ওই চোখ দুটির স্নিগ্ধ দৃষ্টি বিলীন হয়ে সেখান থেকে ঝরে পড়ছে রোষের আগুন।

*******************

      ভোরের আলো ফুটতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। প্রধানদের বাগানে শিউলি ফুল কুড়োনোর এটাই একমাত্র উপযুক্ত সময়। এরপর দেরি হয়ে গেলে তখন আর ফুল কুড়োনো সম্ভব হবে না। তাই কাল বিলম্ব না করে জয়া অন্ধকারের মধ্যেই বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু প্রধানদের বাগানের সম্মুখে আসতেই তার বুকটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে। তার আরও একবার মনে পড়ে যায় সেই অভিশপ্ত ভোরের কথা। সেদিন যদি সে দেরি না করতো তাহলে হয়তো ওরকম একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হতো না তাকে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে দুরু দুরু বুকে বেড়া দিয়ে ঘেরা বাগানের একটা খোলা অংশ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে জয়া। চারিদিকে তখন অমাবস্যার ঘুটঘুটে নিকষ কালো অন্ধকার। তবে এই অন্ধকারে চোখ সয়ে গেছে জয়ার। বেশ খানিকটা এগিয়ে সে দেখে বাগানের ঘাস জমির ওপর বিছিয়ে রয়েছে শিউলি ফুলের সাদা আস্তরণ। এই অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেগুলোকে। জয়া দ্রুত হাতে তার শাড়ীর আঁচলে মুঠো মুঠো শিউলি ফুল তুলতে থাকে। পর্যাপ্ত মতো শিউলি ফুল তোলা হয়ে গেলে আঁচলে গিঁট বেঁধে সে উঠে দাড়ায়।........ কিন্তু পেছন ফিরতেই তার সমস্ত শরীরটা যেন ভয়ে হিম হয়ে আসে। পুরোনো ভয়টা আবারও যেন দলা পাকিয়ে বুকের মাঝে এসে জমাট বাঁধে। সে দেখে তার সম্মুখে তখন হাতে লণ্ঠন উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রধানের ছোটো ছেলে রঞ্জন। লণ্ঠনের আলোয় তার বাঁ গালের কাঁচা গোলাকৃতি ক্ষতটা থেকে কষ গড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে এবং তার ঠোঁটের কোণে লেগে রয়েছে একটা ক্রূর বাঁকা হাসি। হেন কোনও অপরাধ নেই যা সে করেনি। গ্রামের মেয়ে-বৌ দের দিকে সর্বক্ষণ কুদৃষ্টি তার, সুযোগ পেলে তাদের সর্বনাশ করতেও ছাড়ে না সে। জয়ার সাথে ঘটে যাওয়া সেদিনের ঘটনার পেছনে এই নরপিশাচেরই হাত রয়েছে। কথা বলতে না পারায় প্রতিবাদটুকুও করতে পারেনি সে। কারোর কাছে প্রকাশ করতে না পারা এই ঘটনার স্মৃতি সর্বক্ষণ অভিশাপের এক কালো ছায়ার মতো বিরাজ করতো তার চারপাশে। তবে মায়ের সেই আশীর্বাদী ফুলের পবিত্র স্পর্শে একসময় তার জীবনে আবারও স্বাভাবিকতার আলো ফুটে ওঠে। সেদিন সে পালিয়ে এসেছিলো ঠিকই। কিন্তু আজ? তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বিভীষিকার হাত থেকে কিভাবে সে নিজেকে রক্ষা করবে? তবে কি তাকে আবারও এক ভয়ঙ্কর সর্বনাশের মুখে পড়তে হবে?

     "হাঃ হাঃ হাঃ!! কি রে জয়া? এতদিন পর এলি যে? এতগুলো দিন আমি যে তোর অপেক্ষায় বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম রে। তবে এখন আর আমার শরীরে কোনোরকম ক্লান্তিভাব নেই বরং আছে এক অনিয়ন্ত্রিত পৈশাচিক উত্তেজনা। আমি জানতাম তুই আসবি। আর সে কারণেই তো ওই বেড়ার একটা অংশ আমি অনেক আগে থেকেই ভেঙে রেখেছি।" .......একটা নিষ্ঠুর হাসি হেসে ঠান্ডা গলায় কথাগুলো বলতে বলতে জয়ার দিকে এগিয়ে আসে রঞ্জন। রঞ্জনের আসুরিক রূপ দেখে বুকের রক্ত যেন শুকিয়ে আসে জয়ার। এক পা এক পা করে পেছনে সরতে থাকে সে।

     "এ কি ? ভয় পাচ্ছিস কেন জয়া? কোনও ভয় নেই তোর। আমি তো আছি। তোর খেয়াল রাখবো আমি বিশ্বাস কর। তবে তোর কামড়ে যে এতটা বিষ থাকবে তা আমি বুঝতে পারি নি। ক্ষতটা এখনও শুকোয়নি দেখ। তাই এর শোধটুকু যে আজ আমাকে তুলতেই হবে জয়া।"..... কথাগুলো বলে রক্তাভ চোখ দুটোতে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে রঞ্জন দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসতে থাকে জয়ার দিকে। জয়ার তখন পিঠ ঠেকে যায় একটি গাছের সাথে। একটা অস্পষ্ট চাপা কান্না বেরিয়ে আসে তার কণ্ঠ থেকে। কিন্তু কয়েক পা এগোনোর পরই হঠাৎ রঞ্জন কিছু একটা দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। সে দেখে জয়ার থেকে বেশ কিছুটা দূরত্বে গাছ গাছালির আড়াল থেকে একটা সোনালী আলোর ছটা নির্গত হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেই আলো আরও উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে। পরক্ষনেই মেঘের গর্জনের ন্যায় গম্ভীর এক ভয়ঙ্কর গর্জন ভেসে আসে তার কানে। রঞ্জন সভয়ে তাকিয়ে দেখে জঙ্গলের অন্ধকার ভেদ করে বেরিয়ে আসছে হলদে-সোনালী রঙের মিশ্রনের ভীমকায় একটা জীব।

       সে রজঃগুণের অধিকারী। সেই সঙ্গে প্রচন্ড শক্তি ও উচ্ছাসের প্রতীক। তার চোখ দুটি যেন অসীম বীরত্বের পরিচয় বহন করে। মাথার উপরিভাগ থেকে বুকের তল পর্যন্ত নেমে আসা কেশর রাশি বহন করে তার পুরুষত্বের পরিচয়। তার শরীরের ওই সোনালী দীপ্তি যেন তেজরশ্মির প্রতীক। সে পশুরাজ। সে মা মহামায়ার বাহনকেশরী। এমন একটা অকল্পনীয় দৃশ্যের সম্মুখীন হওয়ার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না রঞ্জন। সে দেখে ভীমকায় এক পুরুষ সিংহ এসে দাঁড়িয়েছে এক মনে মা মহামায়াকে স্মরণ করতে থাকা ভীত জয়ার পাশে। জয়ার ভীত মুখটার দিকে একবার চেয়ে নিয়ে পশুরাজ তার হলুদ চোখ দুটি থেকে হিংস্রতার আগুন ঝরাতে ঝরাতে এগিয়ে যেতে থাকে রঞ্জনের দিকে। পশুরাজের মাথার দিকে চোখ পড়তেই রুপোলি মুকুটটা দেখতে পায় রঞ্জন। মুকুটটা যেন খুব চেনা লাগে তার। ঠিক এরকমই একটা রুপোর মুকুট তো প্রতি বছর বড়ো মন্দিরের মা দুর্গার বাহন কে পরানো হয়ে থাকে। কথাগুলো ভেবে ভয়ে রঞ্জনের সমস্ত শরীরটা যেন এবার আড়ষ্ঠ হয়ে আসতে থাকে। হাতের লণ্ঠনটা মাটিতে পড়ে গিয়ে ততক্ষনাৎ নিভে যায় সেটি। অন্ধকারের মধ্যে দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে সে প্রাণপণে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে বাগানের বেড়ার ওই ভাঙা অংশটার দিকে। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই আকাশ কাঁপানো এক হুঙ্কার ছেড়ে পশুরাজ ঝাঁপিয়ে পড়ে রঞ্জনের ঘাড়ের ওপর। ভীত স্বরে কেবল মাত্র একটা আর্তনাদ করে ওঠে রঞ্জন। ওদিকে ভীত সন্ত্রস্ত জয়া প্রচন্ড ভয়ে তার দু চোখ বন্ধ করে ফেলে। পরমুহূর্তেই পশুরাজের মারণ কামড়ে একটা মট্ শব্দে রঞ্জনের ঘাড় ভেঙে যাওয়ার শব্দটা শুনতে পায় সে। এমনকি তার বিশাল বিশাল থাবার শাণিত নখের আঁচড়ে রঞ্জনের পাঁজরের হাড়গুলো পর্যন্ত ভেঙে যাওয়ার শব্দ ভেসে আসে জয়ার কানে।

     বেশ কিছুটা সময় কেটে গিয়েছে। চারিদিক আবারও নিস্তব্ধ। ধীরে ধীরে এবার চোখ মেলে জয়া। দেখতে পায় তার সম্মুখে তখন এসে দাঁড়িয়েছে সেই পশুরাজ। অন্তরের সমস্ত ভয় ভীতি দূরে সরিয়ে রেখে এবার পশুরাজের চোখে চোখ রাখে জয়া। নিজের অজান্তেই যেন তার হাতটা উঠে আসে পশুরাজের কপালের ঠিক মাঝে। পশুরাজও তার  মাথা খানিকটা ঝুঁকিয়ে দেয় সামনের দিকে। যেন সে মাথা পেতে স্বয়ং দেবীর কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করছে। এদিকে রাতের আঁধার কেটে ভোরের আকাশে আলো ফুটতে শুরু করেছে। জয়া লক্ষ্য করে ধীরে ধীরে পশুরাজের শরীরটা যেন বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে সেইসময় ভেসে আসছে শঙ্খধ্বনি। সেই সঙ্গে মহালয়ার প্রাণ জুড়োনো চণ্ডীপাঠ মন্ত্র। অর্থাৎ সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের। জাগরিত হয়েছেন দেবী দশপ্রহরণ ধারিণী। জয়া আর দেরি করে না। কারণ মা যে স্বয়ং নিজে এসে আবদার করে গেছেন। তাই মায়ের চক্ষুদান পর্ব সারা হলে মা যখন দু'চোখ মেলে সর্বপ্রথম তার প্রিয় শিউলি ফুলগুলোকে দেখবেন তখন মা নিশ্চয়ই তার এই ছোট্ট মেয়েটির ওপর বেশ খুশিই হবেন। আঁচলে বাঁধা শিউলি ফুলগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরে জয়া তখন রওনা দেয় গ্রামের প্রান্তের বড় মন্দিরের উদ্দেশ্যে।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 6 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
good one  clps
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
দুষ্টের বিনাশ! একটু অন্যরকম গল্প। অলৌকিক গোছের। পুজোর আবহে ভাল লাগল পড়তে। ফন্ট একটু বড় করে দেবেন।
[+] 1 user Likes লম্পট's post
Like Reply
দেবীপক্ষ গল্পটিও খুব খুব সুন্দর লাগলো। দৃশ্য গুলো কল্পনা করলে শিহরণ খেলে যায় শরীরে। দারুন। ♥️♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
খুব ভালো লাগলো এই গল্পটা।  Namaskar

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
(23-10-2023, 09:40 AM)Chandan Wrote: good one  clps

(23-10-2023, 07:34 PM)লম্পট Wrote:
দুষ্টের বিনাশ! একটু অন্যরকম গল্প। অলৌকিক গোছের। পুজোর আবহে ভাল লাগল পড়তে। ফন্ট একটু বড় করে দেবেন।

(23-10-2023, 09:05 PM)Baban Wrote: দেবীপক্ষ গল্পটিও খুব খুব সুন্দর লাগলো। দৃশ্য গুলো কল্পনা করলে শিহরণ খেলে যায় শরীরে। দারুন। ♥️♥️

(24-10-2023, 09:10 AM)Somnaath Wrote:
খুব ভালো লাগলো এই গল্পটা।  Namaskar

অনেক ধন্যবাদ সবাইকে   thanks
Like Reply
[Image: images.jpg]

|| রক্তচোষা ||

লেখা :- শ্রীতমা সেনগুপ্ত

     অস্ট্রিয়া আর জার্মানির সীমানার কাছাকাছি একটি শহর সলসবার্গ,তার কিছু দূরে একটি গ্রামে এই কাহিনী শুরু। গ্রামটি অস্ট্রিয়ার দিকে, পশ্চিমদিকে আল্পস পর্বত পূর্বদিকে ঢালু হয়ে গিয়ে এক উপত্যকা সৃষ্টি করেছে যার অন্যধারে একটি ছোট্ট নদী বয়ে যাচ্ছে, ঘন সবুজ ঘাসে ছাওয়া মাঠ, বসতি খুব বেশী না।একটু দূরে উত্তর দিকে এক কাস্ল যার মালিক ব্যারন হেইনৎজ যিনি গ্রামের কোন বিষয়েই থাকেন না, সাদাটে ফর্সা, লম্বা, চোখা চোখা নাকমুখ, এবং অত্যন্ত উন্নাসিক। একটি ক্রাইসলার গাড়িতে  মাঝেমাঝে ভিয়েনা যান।  গ্রামের বুড়োবুড়িরা জানেন, এই ব্যারন, যুবক বয়স কালে একবার রোমানিয়া গেছিলেন। সেখান থেকে অসম্ভব রূপসী   একটি মেয়েকে নিয়ে আসেন,অজ্ঞাত কূলশীল  মেয়েটি বুখারেস্টের রাস্তাঘাটে নাচ দেখাত , জিপসি টাইপ, ধরে নিয়ে আসেন বললেই হয়, ভিয়েনায়  নিয়ে এসে সমাজের চাপে বিয়ে করেন।কিন্তু ওই মেয়েকে  অস্ট্রিয়া র অভিজাত সমাজ কিছুতে মানতে রাজি হয়না-তাই সপরিবারে  এই পৈতৃক বাড়ী তে এসে ওঠেন, সঙ্গে ছিল মা আর ভাই ফ্রানৎজ, সে বোধহয় এখন ইতালি তে থাকে।

 অলস নিস্তরঙ্গ গ্রামে হঠাৎ একদিন দুপুরে হাজির হল ব্যারনের মেয়ে, ক্লারা, সঙ্গে একটি ঘোড়া ও দুটি কুকুর নিয়ে,সে ভিয়েনায় থেকে বড় হয়েছে। আশ্চর্যকথা হল এই যে ব্যারনের যে মেয়ে জন্মেছিল সে কথা কারোর মনেও নেই। বাপের মত সাদাটে, রোগা, উন্নাসিক, কিন্ত মুখশ্রী  অন্যপ্রকার। যেমন সুন্দরী তেমনি তার শহুরে সাজপোশাক তেমনি তার হাবভাব।তাকে দুএকদিন এদিকওদিক ঘুরতে দেখে তরুণ রা অতিমাত্রায় উৎসুক এবং তরুণী রা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ল।

ছোট শান্ত গ্রামে একমাত্র বিনোদন পালে-পার্বনে নাচের আসর।এহেন এক নাচের আসরের আগে পানশালা য় ছেলেমেয়ে দের জমায়েত সবে শুরু হয়েছে, এমন সময় ক্লারা এসে হাজির, মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করল,এই গন্ডগ্রামে ভাল নাচের পার্টনার পাওয়া যায় না,সে ভিয়েনার সব শিক্ষা ভুলে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করল,তারপর উঠে ছেলেদের টেবিলে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করল-

"কে ভালো নাচে এই গ্রামে?"

শহুরে মেয়ের এহেন সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ছেলেরা বোকা বনে গেল,কলেজে যেটুকু নাচ শিখেছে তা সাধারণ ওয়াল্টজ, ভিয়েনায় বড় হওয়া মেয়ে কত উচ্চ স্তরের ওয়াল্টজ শিখেছে কে জানে!! উত্তরে সবাই কার্ল কে দেখিয়ে দিল।
ক্লারা ঝটপট প্রস্তাব করল কার্লকে, তাদের কাসল এ গিয়ে তার সঙ্গে প্র‍্যাক্টিস করার জন্য।

--"তা হলে কাল বিকেলবেলা তিনটে নাগাদ চলে এস।"  উত্তরের অপেক্ষা না করেই সোজা পিছন ফিরে নিজের ঘোড়ায় উঠে চলে গেল।

এতক্ষণ সবাই রুদ্ধশ্বাস হয়ে দেখছিল এখন ফেটে পড়ল উত্তেজনায়।

পরদিন বিকেল তিনটের আগেই কার্ল পৌঁছে গেল ব্যারনের কাসলে।  কুয়াশা জমছে মনে হয়,বেশ ঠাণ্ডা ঘরগুলো, একজন বাটলার তাকে একটা বড় ঘরে বসতে দিল,এটা বলরুম নয়,  আগে  খাওয়ার ঘর ছিল হয়ত, ঘরের একদিকে টেবিল চেয়ার আছে,বাকী টা ফাঁকা, খোলা দরজা দিয়ে পিছনের বাগান-টাগান দেখা যাচ্ছে,।ভৃত্য টি বলে গেল

"--ফ্রলাইন ক্লারা এখন ঘোড়া আর কুকুর দের দেখাশুনা করতে গেছেন, বসতে হবে।"

  দু'চার মিনিট বসার পর এক দারুণ সুন্দরী মেয়ে ঘরে ঢুকল,কার্ল উঠে দাঁড়াতেই তার কাছে এসে খুব ফিসফিস করে যতক্ষণ না ক্লারা আসে তার সঙ্গে নাচার ইচ্ছে প্রকাশ করল।মেয়েটি দেখতে অনেকটা ক্লারার মতই,কিন্তু নরম সরম,সাজপোশাকও অতটা উগ্র নয়।

কার্ল হড়বড় করে ভুল বাও করল,তারপর নাচতে শুরু করল,কোথাও ধীর আওয়াজে সুর বাজছে।তিরিশ বিট এর স্লো ওয়াল্টজ, কার্ল ভালো চালাচ্ছিল, মেয়েটির পায়ের কাজ নিখুঁত, নাচতে নাচতে সে কার্লের খুব কাছে এসে পড়েছে, কাঁধের উপর মাথা রেখে গলায় মুখ রেখে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলছে।কার্লের শরীর যেন অবশ হয়ে এল, কিন্তু নাচের ব্যাঘাত হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে চালিয়ে যেতে থাকল।

হঠাৎ ঘরটির সামনের দিকে অনেকগুলো কুকুরের ডাক শোনা গেল, আর মেয়েটি তার গলা ছেড়ে দিয়ে পিছনদিকের বাগানের দরজা দিয়ে পালাল।
ক্লারা ঘরে ঢুকে প্রথমেই বাজনার আওয়াজ আর সুর পাল্টে দিয়ে ষাট বিটের ওয়াল্টজ চালিয়ে দিল আর সটান কার্লের হাত ধরে নাচতে শুরু করে দিলো।  কার্ল গ্রামে মানুষ হলেও কলেজে পড়েছে সলসবার্গে, সে ভালো নাচতে গাইতে জানে,তবুও এ  মেয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে তার কষ্ট হচ্ছিল।এদিকে ক্লারা খুব কাছে এসে গেছে,কার্ল বেশ অবাক হল,তাদের গ্রামের মেয়েরা,নাচের সময় একটু দূরত্ব বজায় রাখে,এরা দুই বোন- আগের মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেছে-শুরুতেই একেবারে গায়ের উপর এসে যাচ্ছে।  তার গলার উপর ক্লারার মুখ,ছোঁয়া লাগতেই নার্ভাস হয়ে গেল কার্ল আর স্টেপ ভুল করে বসল!!  ছিটকে সরে গেল ক্লারা আর মুখে তুবড়ি ছুটল

 --"কোথাকার গ্রাম্য অশিক্ষিত ছেলেরা সব,সুন্দরী মেয়ে দেখলে জিভে জল আসে, "এই জাতীয় কথা।
 কার্ল দৌড়ে পালায়,--সে নিজে তো আসতে চায়নি,জমিদারের মেয়ে যদি নিজে থেকে ডাকে তারপর দুর্ব্যবহার  করে--  অপমানে তার মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। হাতে পায়ে জোর পায়না সে! কি হয়ে গেল!!
 সেই রাতে কার্ল কে মাঠের ধারে পাওয়া গেল,অজ্ঞান অবস্থায়, পুরো শরীর সাদা হয়ে গেছে। নরমসরম কার্ল ছিলই,কিন্তু এই ধাক্কা তার বেশ জোরেই লাগল,কদিন  শুয়ে থাকার পর সে সুস্থ হল কিন্তু তার ফ্যাকাসে ভাব কাটল না আর মস্তিষ্কের কিছু রোগ দাঁড়াল।

এই ঘটনায় গ্রামের তরুনকূল অবাক হল,সবাই নানারকম ফিসফাস শুরু করে দিলো।
অস্কার মাঝেমধ্যে অসুস্থ কার্লের সঙ্গে দেখা করতে আসতো, ধীরে ধীরে সে কার্লের কাছ থেকে পুরো ঘটনা জেনে নিল।  অস্কার শক্তপোক্ত মানুষ।  কার্লের ঘটনায় সে কিছু গন্ডগোল আঁচ করেছিল, কিন্তু বুঝে উঠতে পারছিল না যে কি করে সে ব্যারন কাসলে ঢুকবে,দিন দশেক পরে হটাৎ সুযোগ এসে গেল। ব্যারন কাস্ল থেকে যখন আবার ডাক এল নিজে থেকে নাচের পার্টনার হবার জন্য এগিয়ে এল অস্কার।

 সে শক্তপোক্ত ছেলে,তবুও কার্লের অবস্থা দেখে মনে মনে সতর্ক হয়ে রইল।
বিকেলবেলা যখন অস্কার ব্যারন কাসলে এল ভিতরে যাওয়ার সময়ে উঁকি মেরে ড্রয়িং রুম,বলরুম দেখেটেখে নিলো।  ভৃত্যের সঙ্গে যে ঘরে কার্ল বসেছিল সেই ঘরেই এল আর চেয়ারে না বসে দেওয়ালে ঝুলন্ত ছবিগুলো দেখতে থাকল

।হঠাৎ পিঠের দিকে কি যেন শিরশিরানি  অনুভব করে পিছনে তাকাল, পুরোপুরি নিঃশব্দে এক্কেবারে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে   সেই মোহময়ী সুন্দরী, রূপ দেখলে সত্যি ই মাথা ঘুরে যাওয়ারই কথা!!
 মেয়েটি এসে দাঁড়াল আর ফিসফিস করে তার সঙ্গে নাচার প্রস্তাব দিলো। অস্কার মেয়েটির সঙ্গে বাও করে  প্রথামত পরিচয় করতে চাইল --তার নাম গ্রেটা, এইটুকু বলেই অস্কারের হাত ধরে গ্রেটা নাচ শুরু করে দিল। অস্কারের ধারনা হল যে মেয়েটি ক্লারার কাকার মেয়ে ,নাচতে ভালোবাসে কিন্তু বোনকে ভয় পায়।

নাচ শুরু হওয়ার পরপরই গ্রেটা খুব কাছে চলে এল আর অস্কার এর কাঁধে মাথা রাখল,একটু অবাক হলেও সে ভেবে নিল বড় শহরে হয়ত এইরকম ই নিয়ম,এ তো গ্রামের মেয়ে না! গ্রেটা তার মুখ অস্কারের গলার উপর রেখে কিছু বলছিল মনে হয়,কতক্ষণ যে কেটে গেল এইভাবে, ঠিক বোঝা গেল না,অস্কার যেন ঘোরের মধ্যে ছিল হঠাৎ ক্লারার চেঁচানি কানে এল

 "কাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছ,আমি তোমাকে আমার সঙ্গে নাচতে ডেকেছি আর তুমি কোন সাহসে নিজের বান্ধবী নিয়ে এসেছ!!  এই পিছনের দরজা খুলল কে?" আরও অনেক কিছু বলে চলল সে,কিচ্ছু কানে গেলনা,  গলায় একটা তীক্ষ্ণ ব্যাথা নিয়ে জ্ঞান হারাল অস্কার।

জ্ঞান ফেরার পর অস্কার হতবাক!

"গ্রেটা মেয়েটি কোথায় গেল!"সে জিজ্ঞাসা করল। ইতিমধ্যে  ব্যারন এসে উপস্থিত হয়েছেন আর দুজন বাটলার দাঁড়িয়ে আছে,  একজনের হাতে স্মেলিং সল্ট। এরাই অস্কারকে তুলে সোফায় শুইয়ে দিয়েছে মনে হয়। ক্লারা জানাল ওর গ্রেটা নামে কোন বোনই নেই!  আর ফ্রানৎজ কাকা! তিনি তো ইতালি তে থাকেন না, তিনি বহুদিন হল মৃত। গ্রেটা নামটি শোনার পর ব্যারন কোনো কথা না বলে সটান ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।ক্লারাও ঘটনাপরম্পরায় অবাক হয়ে গেছে, সে আসলে বুঝতেই পারেনি মেয়েটি কোথায় গেল। খোলা দরজা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখে এসে জানালো পিছনের  যে দরজাটি খোলা ছিল সেটা  ওদের পারিবারিক কবরস্থান এর দিকের, ওটা বন্ধই থাকে।

 অস্কারের বারবার বারন না শুনে  ব্যারন নিজে গাড়ি করে দুর্বল  অস্কারকে বাড়ি দিয়ে এলেন। কার্লের ঘটনায় তার খুব শিক্ষা হয়েছে, তাছাড়া তাকে একবার গ্রামের যাজকের বাড়িও যেতে হবে।  তাকে পৌঁছে  তখনি  ব্যারন হেইনৎজকে অ্যাবের (abbey) দিকে যেতে দেখা গেল।

অস্কার বুদ্ধিমান, ধরে নিলো স্থানীয়
গীর্জার বৃদ্ধ  যাজক নিশ্চয় কিছু জানবেন,  পরদিন সকালেই অস্কার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা গীর্জার দিকে চলল,আকাশের মুখ গোমড়া, বেশ শীত,  গিয়ে বৃদ্ধ যাজক কে ধরে পড়ল,তিনি প্রথমেই অস্কারের মুখ,ঘাড়, গলা ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরীক্ষা করে দেখেশুনে একটা রূপোর  ক্রস পরিয়ে দিয়ে দিলেন।

  "ফাদার,সত্যি কথাটা বলে দিন,কি হচ্ছে এসব?"
  "না, বাবা,কিছুনা, তুমি ভেবো না।ঈশ্বর করুণাময়, তার দয়ায় এই গ্রামের কারো কিচ্ছু হবেনা।"
 " তার মানে ক্ষতি হওয়ার মত কিছু আছে?
বলুন ফাদার, বলুন, কি! কে ঐ গ্রেটা!!

    নিরুপায় হয়ে যাজক এক কাহিনী শোনাতে শুরু করলেন ।
হেইনৎজ এর স্ত্রী ছিল গ্রেটা,-রুমানিয়া থেকে আসার পর তার এই নামই রাখা হয়,-আকর্ষণীয়া এবং অদ্ভুত। সে ছিল অত্যন্ত গায়ে পড়া,বিশেষত সুন্দর পুরুষ দেখলে তার মাথার ঠিক থাকতো না। কিছু একটা সামাজিক কেলেঙ্কারির জন্য ওরা ভিয়েনা থেকে গ্রামে চলে আসে।

এই গ্রামে এসেও সে যখন তখন বাইরে বেরিয়ে যেত, বিশেষত রাতে! এক কন্যা সন্তান জন্মের পরও তার কুস্বভাব ঠিক হলনা। এদিকে তাদের বাড়িতে নানারকম কু-লক্ষন দেখা যেতে শুরু করে,  বাড়ি র গরু, ঘোড়া একটি দু'টি করে মরে যায়। তিনটে কুকুর,তারাও যেন চুপচাপ, কুঁকড়ে থাকে।এদিকে ব্যারন এসব ঘটনাকে বেশী পাত্তা দিতে চাননি।কিন্তু একটি বিষয় তার মাথা খারাপ করে দিচ্ছিল, তা হল ভাই   ফ্রানৎজ এর সঙ্গে গ্রেটার ঘনিষ্ঠতা,মাঝে মাঝে রাতে গ্রেটা চুপিসারে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত, তিনি নিজে ওদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছেন।

 পুরো গ্রাম জুড়ে অদ্ভুত সব কান্ড ঘটছিলো। মাঝেমধ্যে রাতের আকাশে বড় ডানাওয়ালা বাদুড় উড়তে দেখা যেত, কাসলের উপর গোল গোল ঘুরছে। গ্রামের গরু আর ঘোড়াগুলোও অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে, কয়েকটি মারাও যায়। এজন্য যাজক গ্রামে ঘুরে ঘুরে মন্ত্রপূত জলও ছড়াতেন। একবার ব্যারন কয়েকদিনের জন্য বার্লিন যান,ফিরে এসে দেখেন মা রক্তাল্পতা রোগে মৃত্যুশয্যায়, ভাইয়ের মুখ শুকনো, ফ্যাকাসে, শুধু গ্রেটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি স্ত্রীর চরিত্র বিষয়ে যাজকের সঙ্গে পরামর্শ করতে আসেন। এইসময় কোন এক দিন হেইনৎসের মার মৃত্যু হয়।ব্যারন ঠিক করেন ভাই ফ্রানৎজকে ইতালি পাঠিয়ে দেবেন কিন্তু যাওয়ার আগের দিন হঠাৎই সে মারা যায়। প্রথমে আত্মহত্যা  মনে হয়েছিল, কিন্তু সৎকার এর সময় যাজক সত্যিটা বুঝতে পারেন- তার শরীরে একটুও রক্ত ছিলোনা,  ফাদারের বুঝতে বাকি রইলো না যে গ্রেটা যে স্বাভাবিক মানুষ না, ওর মধ্যে ভ্যাম্পায়ার বাস করে।  প্রথমে স্বীকার না করলেও এই কথা ব্যারনও পরে  মেনে নিতে বাধ্য হন।
 পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার দিকে যাওয়ার আশংকা হতে থাকে। গ্রেটা প্রায়শই চুপিচুপি রাতে বাড়ির বাইরে বেরোত,  এমনইএকদিন রাতে সে  গ্রামের দিকে যাচ্ছিল  তখন যাজকের দেওয়া রূপোর গুলি দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করেন ব্যারন, আর গ্রেটার সমাধির উপরে রূপোর ক্রস লাগানো হয়,-যাতে সে কবর থেকে বেরোতে না পারে। আর এসব কথাই  খুব গোপনে রাখা হয়। এখন ওই অভিশপ্ত আত্মা কি করে কবর থেকে বাইরে এল সেটাই দেখার।

এরিমধ্যে কখন ব্যারন ঘরে এসেছেন অস্কার টের পায়নি।  যাজক কে সঙ্গে নিয়ে তিনি রওনা দিলেন  কাসলের পারিবারিক সমাধিভূমি তে।

 ব্যারনের প্রাসাদের পিছন দিকে সেই সমাধিভূমি।  ওরা যখন সেখানে পৌঁছল তখন চারধার কুয়াশায় ভরে গেছে, নদীর দিক থেকে কেমন একটা অস্বস্তিকর প্রবল ঠাণ্ডা হাওয়া উঠে আসছে।  অস্কার কেঁপে উঠল, ব্যারন আর যাজকের পিছন পিছন গিয়ে দেখতে পেল গ্রেটার কবরের উপর লাগান রূপোর ক্রস জলে -হাওয়ায় ক্ষয়ে পড়ে গেছে। যাজক সঙ্গে করে নিয়ে আসা  নতুন ক্রস টি মন্ত্র পড়ে লাগিয়ে দিলেন।

নীচে শুয়ে থাকল এক সুন্দরী রোমানীয় নারী আবারো ক্রস টি নষ্ট হওয়ার অপেক্ষায়।

ব্যারন যখন  গাড়ী নিয়ে  প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে ফাদারকে নিয়ে চার্চে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন তখন প্রাসাদের তিনতলার একটা ঘর থেকে দেখছিল ক্লারা, বারবার দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়াচ্ছিল সে।

গ্রেটা তার মা হোক আর যে-ই হোক, দু - দুটো শিকার  মুখের সামনে থেকে কেড়ে নিয়েছে। থাক কবরে শুয়ে।

আজকাল তার শ্বদন্ত বড় সুড়সুড় করে। হাত দুটো দুপাশে ছড়িয়ে  খুব সহজে বাতাসে ভেসে যেতে পারে আজকাল।

   || সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 6 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
দারুন লাগলো গল্পটা  clps

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
good one ..
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
বেশ ভালো লাগলো গল্পটা। তবে যদি এমন কোনো গল্প পান যার প্রেক্ষাপট হলো বন্ধুরা বা বয়স্ক কেউ ছোটদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে ভৌতিক অভিজ্ঞতার কথা বলে তবে সেসব দিলে আরও জমে উঠবে। এই ধরণের পরিবেশ আরও মজা বাড়িয়ে দেয়। ❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply




Users browsing this thread: