01-10-2023, 03:38 PM
এটাতো ভৌতিক গল্প নয়, তবে এইরকম গল্প আমার বেশ লাগে।

ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
|
01-10-2023, 03:38 PM
এটাতো ভৌতিক গল্প নয়, তবে এইরকম গল্প আমার বেশ লাগে।
![]()
01-10-2023, 04:29 PM
(This post was last modified: 01-10-2023, 04:30 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
হতে পারে এটা ভৌতিক গল্প নয়, কিন্তু তার থেকেও হাজার গুন বেশি সাংঘাতিক! মুহুর্তটা কল্পনা করলেই কেমন গা টা কেঁপে উঠছে উফফফ কি বীভৎস! পিয়ালী ম্যাডাম দুর্দান্ত বা বলা উচিত পৈশাচিক একটা কাহিনী লিখেছেন। ভয় যেখানে আসল আকর্ষণ, সেখানে এই জাতীয় গল্প আসায় আমি ভুল কিছু দেখছিনা। ভালো কালেকশন।
01-10-2023, 06:02 PM
(30-09-2023, 10:26 PM)মহাবীর্য দেবশর্মা Wrote: যিনি লিখেছেন তাকে সহস্র কোটি প্রণাম। পিঁপড়ে বিষম ব্যাপার এবং ভীষম সাঙ্ঘাতিক। লেখার হাত পিয়ালীর অসাধারণ। তবে এটা ঠিক ভৌতিক নয়, একটু থ্রিলার এবং সাসপেন্স গোছের। (01-10-2023, 09:05 AM)Somnaath Wrote: (01-10-2023, 03:38 PM)Bumba_1 Wrote: এটাতো ভৌতিক গল্প নয়, তবে এইরকম গল্প আমার বেশ লাগে। (01-10-2023, 04:29 PM)Baban Wrote: হতে পারে এটা ভৌতিক গল্প নয়, কিন্তু তার থেকেও হাজার গুন বেশি সাংঘাতিক! মুহুর্তটা কল্পনা করলেই কেমন গা টা কেঁপে উঠছে উফফফ কি বীভৎস! পিয়ালী ম্যাডাম দুর্দান্ত বা বলা উচিত পৈশাচিক একটা কাহিনী লিখেছেন। ভয় যেখানে আসল আকর্ষণ, সেখানে এই জাতীয় গল্প আসায় আমি ভুল কিছু দেখছিনা। ভালো কালেকশন। (01-10-2023, 05:25 PM)Chandan Wrote: one of the best সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
![]()
03-10-2023, 02:21 PM
|| সে দেখে ||
কলমে :- ঋতুপর্ণা দত্ত
মনিভা এই বাড়িটায় ভাড়া এসেছে আজ চার দিন হলো। এখনো সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেনি।। একে নতুন জায়গা,নতুন চাকরি তার ওপর সে একা মানুষ । কলকাতা থেকে বেশ কিছু টা দূরে ডায়মন্ড হার্বার এর কাছ কাছি এই জায়গায় একটা সরকারি কলেজের শিক্ষিকা র চাকরি পেয়ে সে এসেছে, কলেজ থেকে এই বাড়ি টার দুরত্ব হেঁটে গেলে মিনিট পনেরো মাত্র। জায়গা টা বেশ নিরিবিলি শান্ত, খুব গায় গায় সেরকম বাড়ি ঘর নেই। এই পাড়ায় প্রতিটা বাড়ির সাথেই আছে কিছু টা করে ফাঁকা লাগোয়া জমি আর প্রতি টা বাড়ি র সামনের জমিতে রয়েছে সুন্দর সাজানো একটা করে বাগান। জমি পেয়ে গাছ গুলো কি সুন্দর বেড়ে উঠেছে, হলুদ বেগুনি কত রঙের সব ফুল। তার বাড়ির সামনেও রয়েছে এমন একটা বাগান। সাদা রঙের একটা দোতলা বাড়ি। কমলা আর গোলাপী রঙের মিশ্রণে একটা লম্বা ধরনের ফুল গাছ বেড়ে দোতলার বারান্দা কে স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে থাকবে এই বাড়ির দোতলায়। মুখো মুখি দুটো বেডরুম। মাঝে রয়েছে ডাইনিং রুম, রান্নাঘর,বাথরুম পাশাপাশি। আর বারান্দা টা আছে তার শোওয়ার ঘর এর সাথে লাগোয়া। এখান থেকেই নিচে বাগানটা কি অপূর্ব দেখা যায়। তবে এই বারান্দা থেকে বেশ কিছু টা দুরে এক্দম মুখোমুখি রয়েছে পুরনো আমলের ধাঁচের একটি বাড়ি। এই পাড়াতে খুব বেশি না হলেও মোটা মুটি যে কটা বাড়ি আছে, প্রতি টাই খুব বেশী পুরনো নয়, এবং বেশ মেইনটেন্ড। কেবল এই একটি বাড়ি কে কেমন চোখে পরে, বড্ড বেমানান যেনো। মনিভা র বাড়ি ওয়ালা থাকেন কোলকাতা য় তাঁর পরিবার নিয়ে। পেশায় চিকিত্সক। অনেক সাধ করে এই বাড়ি টা কিনলেও ব্যস্ততার জন্য ইচ্ছে থাকলেও মোটেই আসা হয় না এখানে। তাই বাড়িটা খালি পড়ে পরে যাতে ভুতুড়ে না হয়ে যায় তাই এই ব্যাবস্থা। বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপের পর মনিভা কে সমস্ত বুঝিয়ে দিয়ে তিনি আবার ফিরে গেছেন কলকাতা য়। এই বাড়ির এক তলায় থাকেন ওঁনার এক দুর সম্পর্কের আত্মীয় দম্পতি। এই চার দিনে সাধারণ কিছু কথা বার্তা আর পরিচয় ঘটেছে মনিভা র সাথে তাদের মাঝ বয়সীয় দম্পতি, ওনাদের একটি মেয়ে আছে, নাম পাখি, বাড়ি তেই পড়াশোনা করে। যদিও মনিভা তাকে এখনো দেখেনি। আজ বিকেলে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে একটু চা বানিয়ে বারান্দা য় এসে দাঁড়াতে মনিভা দেখলো আকাশ টা কি সুন্দর দেখতে লাগছে, মেঘলা অথচ একটা অদ্ভুত রহস্যময় রঙ ছড়িয়ে আছে গোটা আকাশ জুড়ে। চার দিক কি শান্ত, মোহময় এখন শ্রাবণ মাস চলছে, তাই সারা দিন আজ বৃষ্টি হয়ে এখন একটু বিরাম নিচ্ছে প্রকৃতি। গাছ গুলো সব ভিজে চুপ চুপে হয়ে পাতা গুলো থেকে টুপ টুপ করে জল পরছে। কীসের যেনো প্রতীক্ষা য় চার পাশ থম থম করছে, কি যেনো ঘটবে আজ! মনিভা র হঠাৎ চোখ গেলো তার বাড়ি থেকে সোজাসুজি কিছু টা দুরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পুরনো বাড়ি টার দিকে। বাইরে থেকে দেখেই মনে হয়ে এই বাড়ি তে বহু বছর কেউ থাকে না। অর্ধেক জানলা দরজা নেই, বাইরের কিছু টা অংশ ভেঙে পরেছে, আর এক জায়গায় বট গাছ গজিয়ে বাড়ি র ভিতর ঢুকে গেছে, মন দিয়ে বাড়ি টিকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে তার মনে হলো বাড়ি টার দো তলার একটা ছোট্ট জানলা থেকে কেউ যেনো দেখছে তাকে, এক ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। খুব ভালো করে দেখলে বোঝা যায় কোনো পুরুষ। কিরকম কাঠের পুতুল এর মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। মনিভা মোহ গ্র্স্থের মতো সেদিকে তাকিয়ে খানিক ক্ষন দেখে, এর পর কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে তারপর নিজের অজান্তেই হঠাৎ গা ছমছম করে ওঠে ওর। ঘরে ঢুকে আসে সে। এমন একটা প্রাণ হীন বাড়ি তে যে কোন মানুষ থাকতে পারে এ কল্পনা ও করা যায় না। ওর বুকের ভিতর টা এখন ও ঢিপ ঢিপ করছে, তবু মনে হলো আরেকবার তাকিয়ে দেখে সেদিকে। ঘরের ভিতর জানলার পর্দা টা অল্প সরিয়ে নিজেকে আড়াল করে সে দেখলো সেই পুরুষ মূর্তি টি এখনো এক ভাবেই সেখানে দাঁড়িয়ে এবং মনিভা র ঘরের দিকে তার দৃষ্টি। পর্দা টা ভালো করে ঢেকে দেয় মনিভা। নতুন কলেজ এ তার সহকর্মী শ্রাবণী র সাথে বেশ সক্ষতা গড়ে উঠেছে। মেয়ে টা খুব মিশুকে। আজীবন অন্তর্মুখী মনিভা র সাথে সে যেচে ই এগিয়ে এসেছে আলাপ করতে। তারপর ধীরে ধীরে তাদের মধ্য ঘনিষ্ঠ তা বেড়েছে । শ্রাবণী র বাড়ি কলেজ থেকে বেশ অনেক টাই দূর। সে বাস এ করে যাতায়াত করে। তাই এত দিন আসবে আসবে করেও ওর বাড়িতে আসা হয়নি। সময় এর অভাবে। নতুন জায়গায় দেখতে দেখতে মনিভা র কেটে গেছে প্রায় এক মাস। জন্ম থেকে বড়ো হয়ে ওঠা পর্যন্ত কলকাতার বাইরে কোথাও কখনো যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ছোট বেলাতে মা বাবা কে চিরদিনের মতো হারিয়ে মাসি র কাছেই তার বেড়ে ওঠা, আজ মাসি মেসোমশাই কেউ ই নেই! মাসতুতো দাদা বিয়ে করেছে দু বছর। তার সাথে একটা দুরত্ব ছোট থেকেই ছিলো, এখন আরও বেড়েছে। বহু দিন ধরেই সে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইছিল ওখান থেকে। বিশেষ করে মাসি চলে যাওয়ার পর থেকেই অন্য কোথাও চাকরি নিয়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছিল। এরপর তার ধৈর্য্য, মেধা, আর পরিশ্রম এর ফল আজকের এই চাকরি। তবে এখানে এসেও কি সে সম্পূর্ণ টা ভাল থাকতে পারছে? যত ক্ষন কলেজ এ থাকে ততক্ষণ ভাল থাকে,নিশ্চিন্ত থাকে। সারা দিন ব্যস্ততার মধ্যে কোথা দিয়ে যে দিন টা কেটে যায়!! কিন্তু সমস্যা শুরু হয় বাড়ি ফেরার পর। সন্ধ্যে হলেই বাড়ি টায় একটা অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে আসে। এই এক মাস এ প্রতিদিন রাতে শুতে যাওয়া র আগে যতবার মনিভা বারান্দায় কিংবা জানলার সামনে গেছে সেই পুরুষ মূর্তি টিকে তার জানলা য় স্থির ভাবে ওর ঘরের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। লোক টা যে কি চায়!! কেনো যে ঐ ভাবে চেয়ে থাকে। ওর বেশ ভয় ভয় করে আজকাল। সব সময় মনে হয় কেউ যেনো ওকে লক্ষ্য করছে, ওর প্রতি টা গতিবিধি কেউ নজরবন্দী করছে। শ্রাবণী কে কিছু টা বলেছে, কিন্তু ও সেই ভাবে জিনিস টাকে পাত্তা না দিয়ে উল্টে বললো, ওসব কিছু না লোক টার নির্ঘাত মাথা খারাপ, আর না হলে চোখ খারাপ,ঐ জন্য লোক এর বাড়ির দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এক তলায় সুমিত দা আর শর্মি দি কে এই ব্যাপারে বলবে বলবে করেও বলে উঠতে পারেনি। কিরকম একটা সংকোচ বোধ কাজ করে। আসলে শর্মি দিরা এই তিন মাসে তেমন ভাবে ওর সাথে মেলা মেশা কখনো করেই নি। বরং ওকে যেনো এড়িয়েই চলে। খুব দরকার ছাড়া কথা বলেনা, চোখে চোখ পরলে মাথা ঘুড়িয়ে চলে যায়, কোনো সময়ই ওকে দেখে সৌজন্যতার হাসি টুকু ও হাসে না। ভীষণই অদ্ভুত। কিন্তু এই ভাবে কাউকে কিছু না জানিয়েই বা কতদিন! নিশ্চিন্তে রাত এ ঘুম টুকু পর্যন্ত হয় না। রাত যতই হোক সে যখন ই জানলার এক পাশে নিজেকে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে সেই দিকে তাকায়, দেখে সেই লোক টি জানলা য় এক ভাবে দাঁড়িয়ে। এমন কি আজ যখন বাড়ি তে ফিরে মনিভা জানলা য় দাঁড়ায়, তখন দেখে উল্টো দিকের সেই অচেনা রহস্যময় ব্যক্তি টি তার দিকে সরাসরি চেয়ে আছে, তারপর হঠাৎ করেই হাত তুলে কিছু একটা যেন ইশারা করে বোঝাতে চায়। না আর না, এবার সুমিত দা আর শর্মি দি কে জানাতেই হবে। এই স্নায়ুচাপ, দুশ্চিন্তা আর ও নিতে পারছে না। ঠিক সন্ধ্যা সাত টা নাগাদ সে নিচে নেমে দেখে ভিতর থেকে মেইন দরজা বন্ধ, দরজায় নক করলো, কিন্ত প্রায় দশ মিনিট এর ওপর হয়ে গেলেও কেউ দরজা খুললো না। কিছু ক্ষন পরে আবার আসবে ভেবে সে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে মনে মনে স্থির করলো শর্মি দি দের ফোন নম্বর টা আজ চেয়ে নেবে। ডিনার সেরে রাত ন টা নাগাদ যখন সে আবার নিচে নামলো, দেখলো যেই দরজা টা তখন বন্ধ ছিলো ভিতর থেকে। সেটা এখন খোলা, আলগা ভাবে ভেজানো, ভিতর টা প্রায় অন্ধকার,শুধু সবুজ রঙের ক্ষীণ একটা আলো জ্বলছে,তাতে কেমন যেনো আলো আঁধারি একটা পরিবেশ এর সৃষ্টি হয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করে এগিয়ে গেল মনিভা, এই প্রথম সে নিচের ঘরে এলো, কাওর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না, চার দিক কি নিস্তব্ধ, মনে হচ্ছে যেনো গভীর রাত নেমে এসেছে এখানে। সামনের বড় বারান্দা টা পেরিয়ে একটা ঘরের সামনে আসতে দেখলো দরজায় একটা পর্দা টাঙানো এবং শুনতে পেলো ভিতর থেকে ভীষণ করুণ সুরে একটা গান ভেসে আসছে, তবে খুব নীচু গলায়। কোনো শব্দ কানে আসছে না। পর্দা টা অল্প সরিয়ে ঘরের ভিতর এ চোখ রাখল মনিভা। একটা বড়ো ঘর, হলুদ রঙ এর একটা বাল্ব এর আলো জ্বলছে, ঘর টার চারদিকের দেওয়াল এ অসংখ্য ছোটো বড়ো,সাদা কালো ,রঙিন কাদের যেনো সব ছবি ঝুলছে। দরজা থেকে এক্দম সোজাসুজি দেওয়াল টায় ঝোলানো রয়েছে একজন মৃত মানুষের ছবি। এক্দম অন্তিম যাত্রার ছবি,ফুল মালা দিয়ে সাজানো খাটে শোয়ানো। আর তার পাশে কিছু লোক জন ঘিরে তাকে ঝুঁকে পরে দেখছে। ছবি টা এতো টাই বড়ো করে বাঁধানো যে, ঘরের বাইরে থেকেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ভীষণ উগ্র গন্ধের একটা ধূপ জ্বলছে ঘরে, সেই গন্ধ বাইরের বারান্দা পর্যন্ত ছড়িয়ে রয়েছে। ঘরে ও কীরকম ধোঁয়া ধোঁয়া একটা ভাব ছড়িয়ে আছে, এদিক ওদিক তাকাতে সে দেখলো ঘরের এক কোনে মেঝেতে শর্মি দি পিছন ঘুরে বসে কিছু একটা যেনো করছে, থেকে থেকে দুলছে আর কি একটা গান গুন গুন করে গাইছে , সুমিত দা ঘরে কোথাও নেই। মনিভা খুব সাবধান এ, একটাও আওয়াজ না করে, ঘরের ভিতর ধীরে ধীরে কিছু টা ঢুকলো, দেখলো এক পাশে সরু নীচু মতো এক চিলতে একটা খাট, তাতে এক খানা ময়লা সাদা চাদর পাতা । এছাড়া আর তেমন কোনো আসবাব নেই। সমস্ত ঘর টা জুড়েই কেমন যেনো অশুভ একটা আভাস ছড়িয়ে আছে। চার দিক কি নিস্তব্ধ , কি নিঝুম , যেনো নিশুতি রাত নেমে এসেছে। মনিভা কি করবে বুঝতে পারছে না, শর্মি দি কে কি পিছন থেকে একবার ডাকবে? কিন্তু ওর শরীর টা ঠিক ভালো লাগছে না, মাথাটা ঝিমঝিম করছে ,কি রকম যেনো সব কিছু লাগছে, ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ওকে জানান দিচ্ছে এখানে এই ঘর থেকে এখুনি তার চলে যাওয়া উচিৎ। এখানে আর থাকা ঠিক নয়, এমন কিছু ঘটবে যা ওর দেখা উচিৎ নয়। গুন গুন করে গান টা থেমে গেছে, সাহস করে আর একটু এগিয়ে গিয়ে কিছু টা ঝুঁকতে ই দেখলো শর্মি দি একটা বেশ বড় সড় পুতুল কে নিজের কোল এ শুইয়ে ঘুম পারাচ্ছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,বারবার কপালে চুমু খাচ্ছে। ঠিক শিশু দের যেমন তার মায়ে রা ঘুম পাড়ায়। এখন গান থামিয়ে অল্প হাসতে হাসতে কি একটা গল্প বলছে,কোনো রূপকথা হবে হয় তো। মনিভা আর দাঁড়ালো না। কোনো মতে ওপরে এসে বেশ খানিক ক্ষণ নিজের মনে কিছু চিন্তা করলো। তারপর জানলার কাছে গিয়ে দেখলো সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি টি এখন নেই। একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। অনেক রাত এ যখন ওর ঘুম ভাঙলো, ঘড়ি তে দেখলো আড়াইটে বাজে। নিচে কিছু একটা আওয়াজ হচ্ছে , কোনো ভারী জিনিস ঘষটে ঘষটে সরানোর আওয়াজ। ও পাশ ফিরে চোখ বুঝিয়ে শুয়ে রইলো কিছুক্ষন, ভাবলো একটু পর ই হয়তো থেমে যাবে। কিন্তু প্রায় দশ মিনিট কেটে গেলেও থামার কোনো নাম নেই, উলটে শব্দ টা এখন আরো তীব্র হয়ে উঠেছে, এই ভাবে ঘুম তো দুরে থাক , বসে থাকলেও বিরক্ত লাগছে। এই রাত দুপুরে এইসব বিদ্ঘুটে আওয়াজ সহ্য হয়? মনিভা আর থাকতে না পেরে সোজা নীচে নেমে গেলো। নীচের দরজা আলগা ভাবে ভেজানো। আওয়াজ টা এখানে আর ও স্পষ্ট। আরো কানে লাগছে,মাথা ব্যথা করছে। ও দরজা টা সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে সেই উগ্র ধুপ এর গন্ধ টা এসে নাকে লাগলো, এখানে নীল রঙের একটা রাত বাতি জ্বলছে, চারিদিকে যেনো একটা নিলাভ অন্ধকার ছড়িয়ে আছে। তবু মনিভা এগিয়ে গেল, বারান্দা পেরিয়ে সেই ঘর টির সামনে যখন এলো তখনো একটা পর্দা ঝুলছে দরজায়। ভিতরে সেই হলুদ আলো টা জ্বলছে। তবে ভারী জিনিস সরানোর আওয়াজ টা এখন আর হচ্ছে না। কিন্তু তার বদলে কিরকম অদ্ভুত একটা আওয়াজ হচ্ছে যেনো, খুব সাবধানে পর্দা টা অল্প একটু সরিয়ে ভিতরে তাকাতে প্রথমে কিছু চোখে পরলো না, কাওকে দেখ্তে পেলো না। কিন্তু হঠাৎ এই নিঝুম রাতে এক অদ্ভূত অস্বাভাবিক মুহূর্তের সে সাক্ষী হয়ে রইলো, এমন আবস্তব দৃশ্য সে নিজের চোখে দেখলেও তার মনে হলো এসব কিছু তার কল্পনা, মিথ্যা। মনিভা দেখলো শর্মি দি আর সুমিত দা ঘরের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত হামাগুড়ি দিয়ে চলছে, দুজন কেউ কাওর দিকে তাকাচ্ছে না। আর বিদঘুটে একটা আওয়াজ তারা মুখ দিয়ে অনবরত করে চলেছে। এরপর আচমকা সুমিত দা থেমে গিয়ে ঘরের এক কোণের দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকে ঠুকে সশব্দে ক্রমশ আঘাত করতে থাকে। আর শর্মি দি যেনো আরো তীব্র গতি তে হামাগুড়ি দিয়ে ঘরের চার দিকে চলতে শুরু করে এবং তার চিত্কার আরো তীব্রতর হতে থাকে। এরপর অল্পক্ষণের জন্য একটু থেমে ঠিক ঐ ভাবেই চলতে চলতে ঘরের এক জায়গা থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে আসে, সেই প্যাকেট এ ভর্তি গাঢ় লাল রঙ এর তরল, এরপর সেই তরল হাঁ করে মুখে ঢালতে শুরু করে, ধীরে ধীরে ওর সারা মুখে ,গলায়, জামায় লাল এ লাল হয়ে মাখামাখি হয়ে যায়। চেটে চেটে খেতে থাকে। মনিভা কাঁপতে শুরু করেছে, হাত পা বরফ এর ন্যায় শীতল। এখান থেকে এক্ষুনি এই মুহুর্তে তার চলে যাওয়া উচিত কিন্তু ওর পা দুটো যেনো অলীক শক্তি দ্বারা মেঝে তে শক্ত হয়ে গেঁথে গেছে। কোনো ভাবেই নাড়াতে পারছে না। এরপর অনেক কষ্ট করে নিজেকে যেনো টানতে টানতে সে ওপর এ নিজের ঘরে নিয়ে এসেছে। পরের দিন সকালে তার বাড়ি ওয়ালা কে বহু বার সে ফোন করেছে, কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে কোনো উত্তর পায়নি। রিং হয়ে গেছে শুধু। কলেজ এ সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকলেও সারাক্ষণ গত রাতের চিন্তা তার মন কে ঘিরে থেকেছে। কাওকে যদি একটু খুলে বলতে পারতো তবে মন টা হাল্কা হতে পারতো। কিন্তু কাকে বলবে,এখানে তেমন ভাবে চেনেই বা কাকে সে, আর চিনলে ই বা সেকি বিশ্বাস করবে? শ্রাবণীর মতো হয়তো মন এর ভুল ভেবে উড়িয়ে দেবে। নতুন জায়গা,নতুন চাকরি, সারা জীবন সে চেয়ে এসেছে স্বনির্ভর থাকতে, একটা চাকরি করবে, নিজের মতো থাকবে। নিজের সমস্ত দায়িত্ব নিজে বহন করবে। আজ তার সেই ইচ্ছে পুরণও হয়েছে। কিন্তু যেখানে সে থাকছে সেখানে কি আর তার পক্ষে থাকা সম্ভব??? তবে কি পালিয়ে যাবে?? কিন্তু কোথায় যাবে? অনেক স্বপ্ন নিয়ে সে এখানে এসেছিল। তবে আজ কিসের জন্য সে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে? ভয়?? কিসের ভয়? ওসব সব মনের ভুল,সব মিথ্যা। বিকেলে কলেজ থেকে বাড়ি ঢোকার সময় দেখলো নীচে সুমি দি দের বারন্দা র দরজা য় তালা ঝুলছে, কোথাও হয়তো বেরিয়েছে। আগামিকাল এদিকে বনধ আছে , তাই কলেজ বন্ধ থাকবে। মনিভা একটু ফ্রেশ হয়ে চিন্তা করলো যা করতে হবে ওকে নিজেকেই করতে হবে। তাই আর দেরী করে লাভ নেই, আগামিকাল সকাল সকাল সে নিজেই ঐ উল্টো দিকের বাড়ি টিতে যাবে,এবং সেই অদ্ভুত অচেনা লোক টি র সাথে দেখা করে সরাসরি তার সাথে কথা বলবে। পরের দিন জলখাবার খেযে একটু বেলার দিকে সেই উদ্দেশ্যে বেরোয়। এবং সেই ভাঙা পোড়ো বাড়ি টির সামনে এসে যখন দাঁড়ায় , দেখে বাড়ি টার ভিতরে ঢোকার একসময়ের দুই পাল্লার যে বিশাল দরজা এখন তা ভগ্নপ্রায় দশা, বহুকাল এর জঙ্ ধরা একটা তালা মধ্যিখানে ঝুলছে, এবং তার ওপর গজিয়েছে অসংখ্য ঝুল। তবে সেই দরজার পাশ দিয়ে এতটাই ফাঁক তৈরি হয়েছে যে একজন বড়ো সড় মানুষ ঢুকে যাবে সেখান দিয়ে। মনিভা ও সেই ফাঁক দিয়ে ঢুকে ভিতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে ঢুকেই প্রথমে দেখলো একটা বিশাল উঠোন, ওপরে তাকালে খোলা আকাশ। সেখানে মেঝে তে গাছের শুকনো পাতা, ছেঁড়া দড়ি, কবেকার ভাঙা ঝুড়ি, লোহার বালতি এসব নানা জিনিস চারিদিকে ছড়িয়ে আছে । এই উঠোন এর দুপাশে আরও কত গুলো সারি বেঁধে ঘর আছে,কোনো টায়ে দরজা আছে কোনো টায়ে নেই। আর সোজাসুজি উঠে গেছে একটা ভাঙাচোরা কাঠের রেলিং দেওয়া সিঁড়ি। মনিভা সেদিকে এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যায়। ওপরে উঠে দেখে এখানের অবস্থা ও শোচনীয়,দেওয়ালের এক পাশের বিশাল অংশ খসে পরেছে, সেখান দিয়ে কিসব গাছপালা গজিয়ে গেছে, এত টাই দুস্থ ভাঙা অবস্থা যে কোন টা ঘর কোন টা বারন্দা কিছুই বোঝার উপায় নেই আজ। কত কাল আগে এখানে মানুষ থাকতো কে জানে! তবে বেশিরভাগ জানলা তেই কোনো কপাট না থাকলেও কোনো ঘরেই দিনের আলো সেই ভাবে ঢুকছে না, তাই চারদিকে একটা কেমন অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে চাপা গুমোট ভাব। দিনের বেলাই এই অবস্থা রাতের অবস্থা তো কল্পনার অতীত। কোথাও কোনো ইলেকট্রিসিটি র ব্যাবস্থা ই নেই। কিন্তু যে লোক টি এখান থেকে তার ঘরের দিকে চেয়ে থাকে,মনিভা স্পষ্ট দেখেছে সেই ঘরে একটা হলুদ আলো জ্বলে। কিন্তু এই বাড়িতে ঢোকার পর থেকে মনিভা একটা জিনিস অনুভব করতে পারছে , এখানে এই ভাবে এই পরিস্থিতি তে কোনো মানুষ এর পক্ষে থাকা সম্ভব নয়, এমন কি এই বাড়ি তে বহু বছর কোনো মানুষের পা ও পড়েনি। এতো টাই প্রাণ হীন। কিন্তু তাহলে যাকে সে দেখতে পায়ে এই বাড়ি র জানলা দিয়ে, তা কি পুরোটাই টাই তার মনের ভুল?কল্পনা? শুধু তো দিনে নয়, রাতের গভীর এও তাকে দেখেছে। তাহলে কে সে? হঠাৎ করেই যেনো কোথা থেকে কিছু মহিলার কণ্ঠস্বর সে শুনতে পায়। হমম্,ঠিকই তো শুনেছে, সে এখন যেই হলঘর টায় দাঁড়িয়ে আছে তার এক্দম কোণের শেষ ঘর টা থেকেই ভেসে আসছে সেই আওয়াজ। কী বলছে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এক নাগাড়ে কোনো মন্ত্রপাঠ করছে কেউ। অদ্ভুত তো,একটু আগেই বাড়ি টা জুড়ে ছিলো পিন পতন নিস্তব্ধতা। কিন্তু হঠাৎ করে এই ভাবে,,, মনিভা নিজের কৌতূহল নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সে এগিয়ে যায়, এবং ঘর টার সামনে যখন সে আসে,দেখে পরিস্কার, দেওয়াল এ সাদা রঙ করা একটা ঘর। ভিতরে এক রকম সাদা লাল পারের শাড়ি পরা কত গুলো মহিলা মাথায় ঘোমটা দিয়ে পাশা পাশি বসে আছে, কেউ কেউ কিছু কাজ করছে, কেউ গল্প করছে, আবার কোনো মহিলা যেনো বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদছে, এবং সেখানে কাওর একটা শ্রাদ্ধশান্তি র ক্রিয়া কর্ম চলছে, তবে যার শ্রাদ্ধ চলছে তার বেশ বড়ো মাপের বাঁধানো ফটো ফ্রেম টা উল্টো করে রাখা, আর তার সামনে বেনারসি শাড়ি, প্রচুর গয়না, আর মেয়ে দের মাথার লম্বা লম্বা অনেক পরচুল সাজানো। এছাড়া আরো যেনো কিসব রয়েছে মনিভা বুঝ্তে পারলো না। তবে এই ঘরে সকলেই মহিলা। উল্টো করে রাখা ফটো টার সামনে বসে মাথায় ঘোমটা দেওয়া এক জন মহিলা সমানে দুলে দুলে মন্ত্র পাঠ করে চলেছে। মনিভা কিন্তু নিজেকে কোনো রকম আড়াল করে রাখেনি, কিন্ত তবুও ওকে কেউ দেখছে না, সবাই জে যার মতো রয়েছে। কার ও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এরপর আবার হলঘর এ আসতে উল্টো দিকের একটা ফাঁকা ঘরের জানলায় ওর চোখ যেতেই দেখলো সাদা ধব ধব এ এক ই রকম পাঞ্জাবী পরে অনেক গুলো পুরুষ বাইরে থেকে ওর দিকে চেয়ে আছে। বাড়ি টা দো তলা, এবং মনিভা এখন দো তলার ই একটি ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে , আর তার উল্টো দিকের জানলার বাইরে থেকে দেখছে কত গুলো পুরুষ মূর্তি। কিন্তুএই ভাবে মাটি থেকে দোতলা সমান উঁচু তে দাঁড়িয়ে থাকা কাওর পক্ষে কোনো ভাবে সম্ভব কী? মনিভা সেখানে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বিদ্যুত এর বেগে ছুটে সিঁড়ির সামনে আসতে চায়, কিন্তু একি!! কোথায় সিঁড়ি?? এখনে সিঁড়ি বলে তো কোথাও কিছু নেই। সে পাগলের মতো দৌড়ে একবার সোজা, ডান, বাঁ, পিছন সমস্ত দিক খুঁজে দেখলো, কিন্তু এই দু তলা থেকে নীচে নামার যে সিঁড়ি, তার চিন্হ মাত্র খুঁজে পেলো না। বরং সে যতো সামনে এগোয় দেখে সারি বেঁধে বিশাল বিশাল শুধু ঘর, কিন্তু ও প্রথম এ এসেই দেখেছিল নিচের মতই এখানেও কেবল চার টি ঘর, তাহলে এ কোন মায়া বল এ এই খানিক ক্ষণ এর মধ্যে বাড়ি টার ভিতর এইরূপ অভূত পরিবর্তন ঘটল!!! সে যতো এগোয় শুধু লম্বা লম্বা বারান্দা আর তার দু পাশ ঘিরে অগণিত ঘর। এই গোলোক ধাঁধা থেকে মুক্তি পাওয়ার কি কোন পথ নেই?? এর পর একটা ঘরের সাথে লাগোয়া একটি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়, নিজের মন কে শান্ত করার চেষ্টা করে, নিজেকে বোঝাতে চায় , তাকে এখান থেকে যে কোনো উপায় বেরনোর পথ খুঁজে বার করতেই হবে। ভয় পেলে চলবে না। সেখানে দাঁড়িয়ে চারপাশ এ তাকিয়ে দেখে, বড়ো অচেনা লাগে তার, এদিকে গাছ পালা বাড়ি ঘর তেমন কিছুই নেই, অনেক দুর পর্যন্ত ফাঁকা বিস্তর জমি পরে রয়েছে। এটা ঠিক তাদের পাড়ার কোন দিক টা সে ঠাহর করতে পারে না। এই এক মাস এ এই পাড়া দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে করতে কোথায় কি আছে ওর পুরো মুখস্ত হয়ে গেছে। খানিক টা দূরে মনে হলো একটা বেশ বড়ো সরো হাট বাজার বসেছে, অনেক মানুষ এর ভীড়। সব্জি,মাছ,মাটির বাসন, মুখোশ,পাখি, এই সব নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে সেখানে। এই রকম পরিস্থিতিতে এই বাড়ি থেকে বাইরে মানুষ গুলোর দেখা পেয়ে মনিভা যেনো বুকে বল ফিরে পেলো। ওকে এই ভয়ংকর অদ্ভুত বাড়ি টা থেকে বেরোতে হলে ঐ মানুষ গুলোর সাহায্য নিতেই হবে। এত ক্ষণ মনে হয়েছিল যেনো এই পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন আলাদা একটা জগৎ এ সে চলে এসেছে। প্রাণ পনে সে চীত্কার করে ডাকতে থাকল তাদের কে। নানা ভাবে হাত নেড়ে তাদের দৃশ্টি আকর্ষণ করতে চাইল। কিন্তু কি আশ্চর্য,এমন কিছু যে তারা দূরে আছে মনিভার থেকে তাও নয়, কিন্তু এত চিত্কার চেঁচামেচি করার পর ও ওরা কেউই কিছু শুনতে পায়ে না। যে যার মতো কাজ করে চলেছে, কাওর কোনো হেল দোল নেই। এমন কি এই বাড়ির এক জায়গায় পরে থাকা একটা পুরনো ইট জোগার করে এনে মনিভা সেটা এখান থেকে সজোরে এবং সশব্দে সেই দিকে ছুঁড়ে ফেলে কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয় না। এই চরম ভয়াবহ এবং বিপদ এর মুখেও সে হঠাৎ একটা জিনিস লক্ষ করলো হাটের মানুষ গুলো সকলেই বড় অদ্ভুত ধরনের পোশাক পরেছে। মহিলা দের পরনে এক ই রকম খয়েরি মতো রঙের গাউন জাতীয় পোশাক,এবং ছোটো বড়ো সকলের ই মাথার দুপাশে লম্বা করে দুটো বিনুনী বাঁধা, আর পুরুষ রা পরেছে সকলেই সাদা পাঞ্জাবি সাথে ধুতি আর মাথায় পরেছে লম্বা সরু ফানেলের মতো দেখতে এক ধরনের টুপি। মনিভার গা শিউরে উঠলো। ওখান থেকে বেরিয়ে এসে আরো অনেক গুলো ঘর পেরিয়ে আরেকটা বারান্দায় এসে দাঁড়াতে দেখলো এদিক টায় চারপাশ এ প্রচুর বিশাল বিশাল বাড়ি। বারন্দা থেকে মাথা বার করে ওপর এ তাকালে মনে হয় বিল্ডিং গুলো আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতো টাই উঁচু। এবং প্রতি টা একে অপরের সাথে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। মনিভা এবার দেখলো প্রতি টা বিল্ডিং এর জানলায়,বারান্দায় কারা যেনো সব দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাতছানি দিয়ে ওকে যেনো ডাকছে তাদের কাছে, চারদিকে যতো বিল্ডিং আছে,প্রতি টাতেই এরকম কেউ না কেউ দাড়িয়ে। সকলের ই এক রকম করে তাকিয়ে,এক ই রকম ভঙ্গিমা। ধীরে ধীরে যেনো মনে হচ্ছে আর আকাশ বলে কিছু দেখা যাচ্ছে না,অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, এবং সেই বিশাল বিল্ডিং গুলো আরও এগিয়ে এসেছে, চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরছে। ওকে যেনো ক্ষুদ্র পতঙ্গ এর মতো পিষে মেরে ফেলবে এবার। দম বন্ধ হয়ে এসেছে ওর। আর নিশ্বাস নিতে পারছে না। সবকিছু অন্ধকার। কেবল অন্ধকার। ঠিক রাত দশ টা নাগাদ ওর জ্ঞান ফেরে। নিজে কে খুঁজে পায় সেই পোড়ো বাড়ি টার এক তলার উঠোনে । পরের দিন সকালে সেই এক ই পথ দিয়ে কলেজ এ যাওয়া র সময় দেখলো সব কিছু ঠিক ঠাক । সব কিচু স্বাভাবিক। কোথাও কোনো হাট বাজার বসেনি, যেখানে যে বাড়ি টা থাকার কথা ছিলো তাই আছে। এবং সেই পোড়ো ভাঙা চোরা বাড়ি টাও এক ই ভাবে দাড়িয়ে। যেমন টা সে প্রথম দিন থেকে দেখে আসছে। *************************************** মাঝখানে কেটে গেছে আরও অনেক গুলো মাস, তবে আজকাল মনিভা আর কলেজ যায় না পড়াতে,ছেড়ে দিয়েছে চাকরি। ওর ভালো লাগে না অতো হৈচৈ, এমনকী ওর ভাড়া নেওয়া সেই বাড়ি টাও ছেড়ে দিয়েছে। ও এখন থাকে সেই পোড়ো বাড়ি টার দোতলার সেই ঘর টায়, যার জানলা দিয়ে কে যেনো দিবারাত্র ওকে দেখত এক সময়। এখন ওর সেই ভাড়া বাড়ি র ঘর টায়ে নতুন কেউ এসেছে ভাড়া। তাই মনিভা এখন দিবারাত্র তাকে দেখে পোড়ো বাড়ির এই জানলা টা দিয়ে। || সমাপ্ত ||
04-10-2023, 03:17 PM
এই গল্পটি যে লিখেছে, সে একটা ইংরেজি নভেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছে।
05-10-2023, 03:56 PM
05-10-2023, 06:20 PM
একটু অন্যরকম কিন্তু বেশ ক্রিপি একটা গল্প। ভালো লাগলো। ♥️
05-10-2023, 06:25 PM
দ্রোহ গল্পটার কনসেপ্ট সত্যিই দারুন লেগেছিলো সেটা আগেই কমেন্টে বলেছিলাম। কিছু গল্পের গুণগত মান এতটাই উন্নত হয় যে মূল থিমের একটা চিত্র মস্তিষ্কে ফুটে ওঠে। সেটাই তুলে ধরলাম আমার মত করে। সত্যিই গল্পটা বাধ্য করলো।
![]()
06-10-2023, 09:02 AM
08-10-2023, 02:36 PM
|| রাগ ||
কলমে:- রিয়া মুখার্জী
চৈতালী এইবার একটু উঁচু স্বরেই শান্তনু কে বলে উঠলো... এক কথা আর বারবার বলতে পারছি না ফোনটা রেখে দেখো রান্নাঘরে, আমি রোজ পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি এখনও আসছে। শান্তনু আবার চোখ উল্টে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল কাল অ্যাপইন্টমেন্ট নিতে হবে ডক্টর সরকারের, তোমার এই রোজকার পাগলামি আর সত্যি সহ্য হচ্ছে না। চৈতালী রাগ করে উঠে গেছিল জল নিতে, ফ্রিজের দরজা খুলেছিল ...পাশে মেঝেতে পায়ের ছায়া। শান্তনু........ এইবার বাধ্য হয়ে শান্তনু এসে দেখেছিল চৈতালী বোতলটার ছায়া একবার মাটিতে দেখে আঁতকে উঠছে, একবার তার নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠছে। বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছিল, বিদ্যুতের আলোয় ঘরময় সত্যি কেমন বিভীষিকা লাগছিল, যেমন ভূতের সিনেমায় লাগে। চৈতালী এইবার ইশারা করে ওকে নিজের কাছে ডাকছিল, ওর ঠোঁটের কোণে কেমন এক অদ্ভুত লোকাতীত হাসির রেখা। ...বাবাই রাগ করে আছো আমার ওপর? শান্তনুর চৈতালীর গলার স্বর শুনে কেমন অসস্তি বোধ হচ্ছিল, গলাটা যেন একটি ১৫-১৬ বছরের মেয়ের, তার নিষ্পলক দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারছিল না। চৈতালী বোতল থেকে খানিকটা জল খেয়ে বলেছিল... আহঃ বহুদিন পর রক্তের স্বাদ পেলাম। শান্তনু মনে মনে গভীর চিন্তায় চলে গেছিল, তার স্ত্রীয়ের এই ভয়ানক মানসিক রোগ কি আদৌ চিকিৎসা করা যাবে? একটা ভয়ঙ্কর জোরে বাজ পড়াতে চৈতালী দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল। .....তুমি আমাকে পাগল ভাবো নাগো? বিশ্বাস করো আমি পাগল না, সত্যি কেউ আছে এইখানে। .....তুমি আর আমি ছাড়া এইখানে কেউ নেই, গোপালের মা সিড়িতে ঘুমোচ্ছে। চলো শোবে এখন, কাল ডাক্তার বাবুকে খবর দেওয়া হবে। ডাক্তারের নাম শুনে চৈতালী আবার কেমন হিংস্র হয়ে উঠেছিল, এইবার সে শান্তনুর কলার ধরে তাকে ঝাঁকাতে শুরু করে। জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলে... তুমি আমাকে পাগল বানাতে চাও যাতে কোর্টে আমি পাগল বলে তুমি ডিভোর্স পেয়ে যাও আর তারপর আমার বোন রিমা কে বিয়ে করতে পারো। তুমি কি ভাবো আমি বুঝিনা!! এতো আওয়াজে গোপালের মা চোখ মুছতে মুছতে সেখানে এসে বলেছিল... ও বৌদি, রাতের ওষুধ আবার খাওনি নাকি? গোপালের মাকে দেখে চৈতালী খুব বিরক্ত হয়, মুখ ঘুরিয়ে বলে আবার সে এইখানে হাঁটছিল গোপালের মা, আমি ঘুমাই কি করে। হাতে ধরা কাঁচের বোতল গোপালের মা কে দেখিয়ে স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করে... আর রক্ত লেগে আছে নাকি? গোপালের মা এগিয়ে এসে হাত থেকে বোতলটা নিতে যায় কিন্তু চৈতালী সেটা আরো মুঠোয় চেপে ধরে...চলো বৌদি ঘুমোবে, সকালে থানা থেকে আবার জেরা করতে আসবে, না ঘুমোলে ঠিকমত উত্তর দিতে পারবে না। নাহ্ গোপালের মা তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো আজ আমি একটা সমাধান করে শোবো, রোজ রোজ রাতে আমাকে এইভাবে ভয় দেখাতে পারবে না সেই অশরীরী! চৈতালীর চোখ যেন রক্তের গোলক, সে ফিসফিস করে শান্তনু কে বললো... আর রেগে থেকো না আমার ওপর, আমাকে ক্ষমা করে দাও। এই বলে সে হাত জোড় করে শান্তনুর সামনে কাঁদতে শুরু করে। এইবার শান্তনুর স্বর যেন একটু রুক্ষ হয়ে ওঠে, সে চেঁচিয়ে বলে ওঠে নো, নেভার!! তুমি নিজের অন্যায় স্বীকার না করা অব্দি প্রতি রাতে এইই হবে। চৈতালী আবার সেই রণমূর্তি হয়ে গিয়ে হাতের কাঁচের বোতলটা দিয়ে শান্তনুর মাথায় বারম্বার ঘা করতে শুরু করে.... শান্তনুর অট্টহাসি সারা ঘরে প্রতিধ্বনি তে পরিণত হয়.... চৈতী কবার মারবে আমাকে?? পরদিন সকালে আবার থানা থেকে এসেছিল, হল ঘরে চৈতালীকে নিয়ে এসেছিল গোপালের মা, অফিসারের সঙ্গে রিমা ছিল। ইন্সপেক্টর রিমাকে প্রশ্ন করলেন আর ইউ সিউর ডাক্তার সরকার যে আপনার পেশেন্ট নিজের স্বামীর খুন করেছে? রিমা চৈতালীর দিকে একটা অপলক ঠান্ডা চাউনি দিয়ে বলেছিল ... হ্যাঁ, ও আমার মামাতো বোন সিভিয়ার স্কিৎজোফ্রনিয়া আছে। ওই ওর স্বামীর সাথে আমাকে নিয়ে সন্দেহ করত, ওর স্বামী আমার কাছে চিকিৎসা করানোর জন্যে আনার পর থেকে। ইন্সপেক্টর এইবার চৈতালীকে জিজ্ঞেস করে মিসেস মিত্তির আপনার ডাক্তার যা বলছেন সেটা কি সত্যি? চৈতালী মুখ খুলে না বলতে গিয়েও আটকে যায়, তার চোখ চলে যায় ফ্রিজের দিকে...আবার আরেকটা রাত আসবে আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে...শান্তনু তাকে ছাড়বে না। কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলে হ্যাঁ ইন্সপেক্টর আমি খুনী!! আমি রাতে ভয় পেলেই শান্তনু রিমা কে ফোন করতো, আমার রাগ হতো... খুব রাগ! সেই রাগে সেদিন কাঁচের বোতল দিয়ে আমি নিজের স্বামীর মাথায় এত জোরে আঘাত করেছিলাম যে উনি মারা যান। বাকি আপনাদের যা বলেছিলাম সেটা আমার নিজের কল্পনা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না রোজ রাতে শান্তনু আসে....আমায় গ্রেপ্তার করুন আমি অপরাধী!! চৈতালীকে পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়, রিমা এসে গোপালের মাকে বলে এইবার আপনি মুক্ত আর নিজের বাড়িতে কাজের লোক সেজে থাকতে হবে না। আপনার ছেলের আত্মার শান্তি কামনা করি। এই বলে নমস্কার করে রিমা রওনা হয়। গোপালের মা শান্তনুর ছবিটা বুকে আগলে ধরে বলে... গোপাল সোনা এবার শান্তিতে ঘুমা!!! || সমাপ্ত ||
08-10-2023, 09:19 PM
(This post was last modified: 08-10-2023, 09:26 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাহ্ বেশ সুন্দর। এই টুইস্ট ব্যাপারটা আমার দারুন লাগে। সেটা আপনিও জানেন। নিজেও তো কয়েকটা গল্পে এনেছি ওটা সেজন্য। খুব ভালো লাগলো। লেখিকার মাথা ভালোই খেলে। ♥️
10-10-2023, 02:26 PM
(08-10-2023, 08:28 PM)Bumba_1 Wrote: ছোটর মধ্যে কিন্তু বেশ ভালো লাগলো (08-10-2023, 09:19 PM)Baban Wrote: বাহ্ বেশ সুন্দর। এই টুইস্ট ব্যাপারটা আমার দারুন লাগে। সেটা আপনিও জানেন। নিজেও তো কয়েকটা গল্পে এনেছি ওটা সেজন্য। খুব ভালো লাগলো। লেখিকার মাথা ভালোই খেলে। ♥️ (08-10-2023, 10:22 PM)Somnaath Wrote: (09-10-2023, 09:27 AM)Chandan Wrote: small but nice .. thank you সবাইকে
![]()
11-10-2023, 10:28 PM
সন্দেহ কভু করেনি ক্ষমা ইতিহাস তাহার সাক্ষী আছে
চৈতালীও আজ পরাজিত সেই সন্দেহেরই নাগপাশে শান্তনু আজ শান্ত হইল, বিচার পাইল আত্মা তাহার গল্প শেষে ক্ষণিক আমি ভাবিলাম ছিল দোষ কাহার সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে তবু ভাঙ্গে বহু গৃহ সন্দেহের আগুনে। অনবদ্য একটী কাহিনী তাহাতে সন্দেহ নাই। পড়িয়া বড় আনন্দ পাইলাম দাদা।
12-10-2023, 06:09 PM
(11-10-2023, 10:28 PM)মহাবীর্য দেবশর্মা Wrote: সন্দেহ কভু করেনি ক্ষমা ইতিহাস তাহার সাক্ষী আছে ধন্যবাদ
![]() |
« Next Oldest | Next Newest »
|