Thread Rating:
  • 16 Vote(s) - 3.31 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
বুম্বাদার লেখা গপ্পো গুলোয় আরেকবার চোখ বুলোনো হয়ে গেলো। সাথে পেলাম প্যারত।

ব্যাপক গল্প! ঘাড় মটকে দেওয়া শুনেছি, রূপ নিয়ে ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়াও শুনেছি, এমন কি মিলিত হয়ে তারপরে ভবলীলা সাঙ্গও শুনেছি কিন্তু এটা সত্যিই বেশ ইউনিক প্লট। সুচিস্মিতা দারুন লিখেছেন। ❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(11-09-2023, 12:02 PM)Somnaath Wrote:
ভালো লাগলো   clps

thanks   thanks  

(11-09-2023, 01:34 PM)Baban Wrote: বুম্বাদার লেখা গপ্পো গুলোয় আরেকবার চোখ বুলোনো হয়ে গেলো। সাথে পেলাম প্যারত।

ব্যাপক গল্প! ঘাড় মটকে দেওয়া শুনেছি, রূপ নিয়ে ভুলিয়ে নিয়ে যাওয়াও শুনেছি, এমন কি মিলিত হয়ে তারপরে ভবলীলা সাঙ্গও শুনেছি কিন্তু এটা সত্যিই বেশ ইউনিক প্লট। সুচিস্মিতা দারুন লিখেছেন। ❤

thanks   thanks 
Like Reply
[Image: FB-IMG-1695007388117.jpg]

|| অ্যারোমা ||

লেখা :- জাকিয়া হাসান

আজকাল মাঝেই মাঝেই অদ্ভুত অদ্ভুত গন্ধ পায় নিধি।  একটু পর পরই গন্ধগুলো ধ্বক করে এসে নাকে ধাক্কা দেয়।  ভিরের বাসে, ট্রামে, মেট্রোতেই হোক আর  ক্লাসরুমেই হোক বলা নেই কওয়া নেই একেবারে ঠিক যেন বিনা নিমন্ত্রনে এসে যাওয়া বেহায়া অতিথির মতো পিছু নেয় ওর । আর ওটা এতো তীব্র আর ঝাঁঝালো যে কেমন জ্বালা করে উঠে নাকটা। কখনো অনেকটা হসপিটালের ভেতরে নানান ধরণের কেমিক্যাল আর ওষুধের গন্ধের মিশ্রনে তৈরী কটু গন্ধটার মতো, কখনো রক্ত আর মাংশ পচা গন্ধের অত্যন্ত কদর্য মিশেল।  আজ হটাৎ খাওয়ার টেবিলে পাশে এসে দাঁড়াতেই তাজা রক্তের গন্ধটা নাকে এলো তার,  ভীষন তীব্র আর গা গুলোনো।  টেবিলের উপর সাজানো চিংড়ির মালাইকারী,  চিকেন মাসালা,  বেগুন ভাজা, ডিমের কষা আর ইলিশ পোলাও।  আজ বাড়িতে অলকের অফিসের বস এসেছেন। নাহ..  তিনি আসেন নি আসলে বলা ভালো তাকে বহু কাঠ-খর পুড়িয়ে ঘরে আনতে পেরেছে অলোক অবশেষে। সামনেই তো প্রমোশনের সময়, এসময় বসদের একটু হাতে রাখতেই হয় আপন স্বার্থে। সারা সপ্তাহ নিজের কলেজের ডিউটি সেরে এসে রবিবারের এই ছুটির সারাটা দিন আজ তাই রান্নাঘরের ভেতরেই পার করতে হয়েছে তাকে। ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে বের হতেই আবার অলোকের তাড়া ;
:যাও... যাও... দেরী করো না স্নান সেরে কাপড়টা বদলে ফেলো গিয়ে।  স্যার এলেন বলে।  
সবকিছু ঠিকই চলছিলো শুধু খাবার টেবিলে পরিবেশনের জন্য দাঁড়াতেই সেই কাঁচা রক্তের কুৎসিত
গন্ধে অন্নপ্রাশনের ভাত উগরে ওঠতে চাইলো তার গলা দিয়ে। কোনমতে দায়সাড়া গোছের আলাপচারিতা সেরে নিয়ে,  খাবার পরিবেশনের দায়িত্বটা মহুয়ার উপর দিয়ে সে কোনক্রমে পালিয়ে এলো ওখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো  বমি করতে যাবার জন্য।  কিন্তু কি অদ্ভুত ঐ রুমের বাইরে পা রাখতেই গন্ধটা হটাৎই একেবারে ভোজবাজির মতো উবে গেলো যেন।  
রাতে শোবার সময় অলোকের গোমড়া মুখ আর অন্যপাশে ফিরে শোয়া দেখেই ও বুঝে গেল, বাবুর রাগ হয়েছে। রাগ ভাঙানোর জন্য বললো ;
: কি হলো শুনছো... সারাটা দিন এতো খাটা-খাটনি করে আয়োজন করলাম। তারপরও এমন মুখটা ভার করে আছ কেন?
: এতোটাই যখন কষ্ট করলে নিধি তাহলে শেষ মুহূর্তে পরিবেশনটা মহুয়াকে দিয়ে না করালেই কি চলছিলো না! স্যার ব্যাপারটা ভালো ভাবে নাও নিতে পারেন।।।
: আরে আর বোলো না,  তোমার স্যার কে একটু বুঝিয়ে বোলো হটাৎ করেই তখন ভীষন বমি-বমি পাচ্ছিলো,  তাই ফ্রেশ হবার জন্যই..
: কি গো কোন সুখবর আছে নাকি? তাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়েই  উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো অলোক।
: না গো জানিনা এখনো সেরকম কিছু হলে তো বুঝতাম অন্তত। যদিও  আজকাল প্রায়ই এমন হচ্ছে।  ভাবছি একবার ডক্টরের কাছে যাবো।
: হ্যাঁ...  একদম অবহেলা নয় নিজের প্রতি,  পারলে কালই চলে যাও।
:আচ্ছা মশাই যাবো। এখন ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে সারাদিন যা ঝক্কি গেছে আজ।

----------------------

পরদিন সকাল।
নামকরা গাইনোকোলোজিস্ট ডক্টর এস. কে. মিশ্রের চেম্বারের সামনে বসে আছে নিধি ডাক আসার অপেক্ষায়।  একসময় ডাক এলো। ঘরের দরজার সামনে যেয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবার কেমন একটা ব্বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে এসে তার স্নায়ুটাকে অবশ করে দিলো যেন। গন্ধটা কেমন তা বর্ণনা দেবার মতো সাধ্যি তার নেই সেটা ঠিক। তবে মনে হচ্ছে কেমন করে যেন একটা পুরো জন্মের পাপ  জমে  স্তুপ হয়ে আছে এই ঘরটার ভেতর,  এক কথায় নারকীয় একটা গন্ধ। ঠান্ডা এসির মাঝেও কেমন যেন গুমোট হাওয়ায় ভাসছে সেই দুর্গন্ধ । কিন্তু সবাই সবার মতো কাজ করে যাচ্ছে এরই ভেতর ,  কারো মাঝে কোন হেলদোল নেই। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সবার অবাক চোখের সামনে দিয়ে প্রায় ছুটেই পালিয়ে এলো সে সেখান থেকে।

-----------------------

দুপুর তিনটে।
ওর সাথে যা ঘটছে শেষ কটা দিন ধরে অলোক আসলে ওকে সবটা খুলে বলবে ঠিক করে রেখেছিলো নিধি। অলোক ফিরলো ভীষন থমথমে মুখ নিয়ে  নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই।  ওর মুখের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো সে।  কিছু যে একটা হয়েছে তা তো নিশ্চিত।  এক গ্লাস পানি ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হালকা স্বরে প্রশ্ন করলো ;
: কি হয়েছে? এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
: জানো নিধি কাল আমাদের এখান থেকে ডিনার সেরে ফেরার পথে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে সুধীন স্যারের সাথে।  একটা লরীর মুখোমুখি ধাক্কায় তার গাড়িটা পুরো উল্টে গিয়েছিলো।মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো ঠিকই।  আজ দুপুর বারোটায় ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করে দিয়েছে ডক্টররা। কি ভয়াবহ ব্যাপার বলো তো কাল রাত্রেই দুজনে একসাথে বসে খেলাম কতো কি বিষয়ে কথা বলছিলেন মানুষটা নেই....
অলোকের কথাগুলো শুনে এক অন্যরকম দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো নিধি...

------------------------

দুদিন পর।
টেবিলে রাতের খাবার সার্ভ করছিলো নিধি আর অলোক টেলিভিশনটা বেশ জোর ভলিয়ুমে ছেড়ে  দিয়ে শুনছিলো নিউজ আপডেট গুলো। অলোককে ডিনারের জন্য ডাকতে যেতেই শুনতে পেল টেলিভিশনে সংবাদ পাঠিকা তখন পড়ে চলেছে আজকের ব্রেকিং নিউজ  "বিখ্যাত গাইনোকোলোজিস্ট এস. কে. মিশ্রকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে তার প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে৷  এতোদিন সেখানে মেটারনিটি কেসের নামে জনসেবা করার আড়ালে তার চাইতেও বেশি অবৈধ্য ভাবে মেয়েদের অ্যবরশন করতেন তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। আজ সকাল দশটায় এক যুবকের কল আসে থানায়। যুবকটি জানান যে তার ভালোবাসার মানুষটিকে তার জীবন থেকে সরিয়ে নেবার জন্য তার পরিবারের লোকজন তাকে অমুক ক্লিনিকে নিয়ে গেছে,  মেয়েটির প্রেগনেন্সির অলরেডি পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেছে। প্রেমিকাকে রক্ষা করার জন্য করা যুবকের সেই আর্তি ভরা কল পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান চালায় পুলিশ সদস্যরা। আর সেখান থেকেই মেলে বৈধতার মুখোশের আড়ালে অবৈধ্য কারবারের সব তথ্য-প্রমাণ।
নিজের মুখে হাত চাপা দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে নিধি।

-----------------------

পরদিন সকাল।
স্নান ঘর থেকে বের হয়ে অফিস যাবার জন্য রেডি হতে  আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তীব্র পোড়া একটা গন্ধে স্নায়ু অবশ হয়ে এলো নিধির। পুরো ঘরটাই যেন ছেয়ে গেছে সেই তিক্ত গন্ধে। পাশেই নিজের অফিসের ফাইলে ডুবে আছে অলোক।  ও ডাকলো ;
: অ্যাই শুনছো,  তুমি কি কোন গন্ধ পাচ্ছো?  
: গন্ধ...! কিসের গন্ধ!  না তো কোন গন্ধ নেই তো... আমি নামলাম,  তুমি রেডি হয়ে নিচে এসো।  কাঁধে ব্যাগটা ফেলতে ফেলতে জবাব দিলো অলোক।

------------------------

সেদিন বিকেল।
আজ মেট্রোতে পাশের সিটের যাত্রীটির গতিবিধি বড্ড সন্দেহজনক। কালো চাদরে প্রায় ঢাকা শরীর। কেমন যেন  জুবুথুবু হয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে। বেশ কিছুক্ষণ খুটিয়ে খুটিয়ে লোকটাকে দেখার পরই হটাৎ ব্যাগের ভেতর রাখা সেলফোনটা ভাইব্রেট করে উঠতে দেখার আগ্রহটা হারিয়ে ফেললো নিধি। কলটা অলোকই করেছে, আজ ওদের আবার একটু বের হবার কথা আছে,  অলোকেরই এক বন্ধুর ছেলের জন্মদিন আজ। সেখানেই যেতে হবে তাই মনে করিয়ে দিলো গিফট নেবার ব্যাপারটা। কি নেবে , কি পড়বে এসব নিয়েই টুকটাক কথা হচ্ছিলো অলোকের সাথে। ফোন কেটে পাশের সিটের দিকে তাকাতেই দেখলো সেই সন্দেহজনক যাত্রীটি কখন যেন চুপচাপ নেমে পড়েছে আগের স্টেশনে।  তবে নামার সময় ভুলে তার ধুলোমাখা ব্যাগখানা ফেলে রেখে গেছেন শুন্য সিটটিতে। এদিক-সেদিক চোখ ঘুরিয়ে খুঁজলো ন্সে লোকটিকে। তার গচ্ছিত সম্পদটি ফিরিয়ে দেবার আশায় । এমন সময়  ট্রেনের কামরায় একটা চাপা অস্থিরতা লক্ষ্য করে অবাক হয়ে গেল নিধি।  সবাই কেমন নেমে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে একসাথে। বেশ খানিক্ষন এই ছোটাছোটি দেখার পর  একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো ;
: এই যে দাদা,  আচ্ছা কি হচ্ছে ব্যাপারটা বলুনতো চারপাশে এতো ছোটাছুটি কিসের?
: আরেহ দিদি,  আপনি শোনেনি নাকি খবরটা,  আজ একটু আগেই শেয়ালদহ পুলিশ স্টেশনে কল করে অজ্ঞাত কেউ নাকি হুমকী দিয়েছে' কিছুক্ষণের মধ্যে এই এলাকায় একটা বোম ব্লাস্ট হবে, পারলে ঠেকাতে।  এজন্য এলাকা খালি করতে শুরু করেছে পুলিশ৷ কথাগুলো শুনতেই মুহূর্তের মধ্যে অনেকগুলো দৃশ্য খেলে যায় নিধির চোখের সামনে।  সেদিন সন্ধ্যেয় প্রথমে রক্তের গন্ধ তারপর কার অ্যাক্সিডেন্টে সুধীন স্যারের মৃত্যু, তারপর ডক্টরের চেম্বারে পাপের নারকীয় গন্ধের পর ভ্রুণ হত্যার মতো নোংরা কেলেংকারী ফাঁস
হওয়া । আর আজ সকালে নিজের চারপাশে  তীব্র পোড়া গন্ধ।  হটাৎ খপ করে পাশের সিটের ব্যাগটা তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে লাফিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে নিধি। কানে আসা হালকা টিকটিক শব্দ জানান দিচ্ছে সময়ের স্বল্পতাটুকু। ব্যাগটা বুকে চেপে ধরে দিগবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে ছুটে বের হলো সে স্টেশন ছেড়ে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে পৌঁছাতে হবে কোন একটা ফাঁকা জায়গায় যেখানে ক্ষতির পরিমাণটা অন্তত কিছুটা হলেও সামান্য হবে। আজ সকালে নিজের শরীরে পাওয়া সেই বিদঘুটে পোড়া গন্ধটুকু নাহয় শুধু ওর নিজের হয়েই থাক।
 
                                 || সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 5 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
বেশ ভালো  Heart Heart
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
(18-09-2023, 09:00 AM)Sanjay Sen Wrote:
[Image: FB-IMG-1695007388117.jpg]

|| অ্যারোমা ||

লেখা :- জাকিয়া হাসান

আজকাল মাঝেই মাঝেই অদ্ভুত অদ্ভুত গন্ধ পায় নিধি।  একটু পর পরই গন্ধগুলো ধ্বক করে এসে নাকে ধাক্কা দেয়।  ভিরের বাসে, ট্রামে, মেট্রোতেই হোক আর  ক্লাসরুমেই হোক বলা নেই কওয়া নেই একেবারে ঠিক যেন বিনা নিমন্ত্রনে এসে যাওয়া বেহায়া অতিথির মতো পিছু নেয় ওর । আর ওটা এতো তীব্র আর ঝাঁঝালো যে কেমন জ্বালা করে উঠে নাকটা। কখনো অনেকটা হসপিটালের ভেতরে নানান ধরণের কেমিক্যাল আর ওষুধের গন্ধের মিশ্রনে তৈরী কটু গন্ধটার মতো, কখনো রক্ত আর মাংশ পচা গন্ধের অত্যন্ত কদর্য মিশেল।  আজ হটাৎ খাওয়ার টেবিলে পাশে এসে দাঁড়াতেই তাজা রক্তের গন্ধটা নাকে এলো তার,  ভীষন তীব্র আর গা গুলোনো।  টেবিলের উপর সাজানো চিংড়ির মালাইকারী,  চিকেন মাসালা,  বেগুন ভাজা, ডিমের কষা আর ইলিশ পোলাও।  আজ বাড়িতে অলকের অফিসের বস এসেছেন। নাহ..  তিনি আসেন নি আসলে বলা ভালো তাকে বহু কাঠ-খর পুড়িয়ে ঘরে আনতে পেরেছে অলোক অবশেষে। সামনেই তো প্রমোশনের সময়, এসময় বসদের একটু হাতে রাখতেই হয় আপন স্বার্থে। সারা সপ্তাহ নিজের কলেজের ডিউটি সেরে এসে রবিবারের এই ছুটির সারাটা দিন আজ তাই রান্নাঘরের ভেতরেই পার করতে হয়েছে তাকে। ঘেমে নেয়ে একসা হয়ে বের হতেই আবার অলোকের তাড়া ;
:যাও... যাও... দেরী করো না স্নান সেরে কাপড়টা বদলে ফেলো গিয়ে।  স্যার এলেন বলে।  
সবকিছু ঠিকই চলছিলো শুধু খাবার টেবিলে পরিবেশনের জন্য দাঁড়াতেই সেই কাঁচা রক্তের কুৎসিত
গন্ধে অন্নপ্রাশনের ভাত উগরে ওঠতে চাইলো তার গলা দিয়ে। কোনমতে দায়সাড়া গোছের আলাপচারিতা সেরে নিয়ে,  খাবার পরিবেশনের দায়িত্বটা মহুয়ার উপর দিয়ে সে কোনক্রমে পালিয়ে এলো ওখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে ছুটলো  বমি করতে যাবার জন্য।  কিন্তু কি অদ্ভুত ঐ রুমের বাইরে পা রাখতেই গন্ধটা হটাৎই একেবারে ভোজবাজির মতো উবে গেলো যেন।  
রাতে শোবার সময় অলোকের গোমড়া মুখ আর অন্যপাশে ফিরে শোয়া দেখেই ও বুঝে গেল, বাবুর রাগ হয়েছে। রাগ ভাঙানোর জন্য বললো ;
: কি হলো শুনছো... সারাটা দিন এতো খাটা-খাটনি করে আয়োজন করলাম। তারপরও এমন মুখটা ভার করে আছ কেন?
: এতোটাই যখন কষ্ট করলে নিধি তাহলে শেষ মুহূর্তে পরিবেশনটা মহুয়াকে দিয়ে না করালেই কি চলছিলো না! স্যার ব্যাপারটা ভালো ভাবে নাও নিতে পারেন।।।
: আরে আর বোলো না,  তোমার স্যার কে একটু বুঝিয়ে বোলো হটাৎ করেই তখন ভীষন বমি-বমি পাচ্ছিলো,  তাই ফ্রেশ হবার জন্যই..
: কি গো কোন সুখবর আছে নাকি? তাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়েই  উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো অলোক।
: না গো জানিনা এখনো সেরকম কিছু হলে তো বুঝতাম অন্তত। যদিও  আজকাল প্রায়ই এমন হচ্ছে।  ভাবছি একবার ডক্টরের কাছে যাবো।
: হ্যাঁ...  একদম অবহেলা নয় নিজের প্রতি,  পারলে কালই চলে যাও।
:আচ্ছা মশাই যাবো। এখন ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে সারাদিন যা ঝক্কি গেছে আজ।

----------------------

পরদিন সকাল।
নামকরা গাইনোকোলোজিস্ট ডক্টর এস. কে. মিশ্রের চেম্বারের সামনে বসে আছে নিধি ডাক আসার অপেক্ষায়।  একসময় ডাক এলো। ঘরের দরজার সামনে যেয়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবার কেমন একটা ব্বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে এসে তার স্নায়ুটাকে অবশ করে দিলো যেন। গন্ধটা কেমন তা বর্ণনা দেবার মতো সাধ্যি তার নেই সেটা ঠিক। তবে মনে হচ্ছে কেমন করে যেন একটা পুরো জন্মের পাপ  জমে  স্তুপ হয়ে আছে এই ঘরটার ভেতর,  এক কথায় নারকীয় একটা গন্ধ। ঠান্ডা এসির মাঝেও কেমন যেন গুমোট হাওয়ায় ভাসছে সেই দুর্গন্ধ । কিন্তু সবাই সবার মতো কাজ করে যাচ্ছে এরই ভেতর ,  কারো মাঝে কোন হেলদোল নেই। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সবার অবাক চোখের সামনে দিয়ে প্রায় ছুটেই পালিয়ে এলো সে সেখান থেকে।

-----------------------

দুপুর তিনটে।
ওর সাথে যা ঘটছে শেষ কটা দিন ধরে অলোক আসলে ওকে সবটা খুলে বলবে ঠিক করে রেখেছিলো নিধি। অলোক ফিরলো ভীষন থমথমে মুখ নিয়ে  নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই।  ওর মুখের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলো সে।  কিছু যে একটা হয়েছে তা তো নিশ্চিত।  এক গ্লাস পানি ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হালকা স্বরে প্রশ্ন করলো ;
: কি হয়েছে? এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
: জানো নিধি কাল আমাদের এখান থেকে ডিনার সেরে ফেরার পথে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে সুধীন স্যারের সাথে।  একটা লরীর মুখোমুখি ধাক্কায় তার গাড়িটা পুরো উল্টে গিয়েছিলো।মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো ঠিকই।  আজ দুপুর বারোটায় ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করে দিয়েছে ডক্টররা। কি ভয়াবহ ব্যাপার বলো তো কাল রাত্রেই দুজনে একসাথে বসে খেলাম কতো কি বিষয়ে কথা বলছিলেন মানুষটা নেই....
অলোকের কথাগুলো শুনে এক অন্যরকম দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো নিধি...

------------------------

দুদিন পর।
টেবিলে রাতের খাবার সার্ভ করছিলো নিধি আর অলোক টেলিভিশনটা বেশ জোর ভলিয়ুমে ছেড়ে  দিয়ে শুনছিলো নিউজ আপডেট গুলো। অলোককে ডিনারের জন্য ডাকতে যেতেই শুনতে পেল টেলিভিশনে সংবাদ পাঠিকা তখন পড়ে চলেছে আজকের ব্রেকিং নিউজ  "বিখ্যাত গাইনোকোলোজিস্ট এস. কে. মিশ্রকে আজ গ্রেফতার করা হয়েছে তার প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে৷  এতোদিন সেখানে মেটারনিটি কেসের নামে জনসেবা করার আড়ালে তার চাইতেও বেশি অবৈধ্য ভাবে মেয়েদের অ্যবরশন করতেন তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে। আজ সকাল দশটায় এক যুবকের কল আসে থানায়। যুবকটি জানান যে তার ভালোবাসার মানুষটিকে তার জীবন থেকে সরিয়ে নেবার জন্য তার পরিবারের লোকজন তাকে অমুক ক্লিনিকে নিয়ে গেছে,  মেয়েটির প্রেগনেন্সির অলরেডি পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেছে। প্রেমিকাকে রক্ষা করার জন্য করা যুবকের সেই আর্তি ভরা কল পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান চালায় পুলিশ সদস্যরা। আর সেখান থেকেই মেলে বৈধতার মুখোশের আড়ালে অবৈধ্য কারবারের সব তথ্য-প্রমাণ।
নিজের মুখে হাত চাপা দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে নিধি।

-----------------------

পরদিন সকাল।
স্নান ঘর থেকে বের হয়ে অফিস যাবার জন্য রেডি হতে  আয়নার সামনে দাঁড়াতেই তীব্র পোড়া একটা গন্ধে স্নায়ু অবশ হয়ে এলো নিধির। পুরো ঘরটাই যেন ছেয়ে গেছে সেই তিক্ত গন্ধে। পাশেই নিজের অফিসের ফাইলে ডুবে আছে অলোক।  ও ডাকলো ;
: অ্যাই শুনছো,  তুমি কি কোন গন্ধ পাচ্ছো?  
: গন্ধ...! কিসের গন্ধ!  না তো কোন গন্ধ নেই তো... আমি নামলাম,  তুমি রেডি হয়ে নিচে এসো।  কাঁধে ব্যাগটা ফেলতে ফেলতে জবাব দিলো অলোক।

------------------------

সেদিন বিকেল।
আজ মেট্রোতে পাশের সিটের যাত্রীটির গতিবিধি বড্ড সন্দেহজনক। কালো চাদরে প্রায় ঢাকা শরীর। কেমন যেন  জুবুথুবু হয়ে বসে আছে সেই কখন থেকে। বেশ কিছুক্ষণ খুটিয়ে খুটিয়ে লোকটাকে দেখার পরই হটাৎ ব্যাগের ভেতর রাখা সেলফোনটা ভাইব্রেট করে উঠতে দেখার আগ্রহটা হারিয়ে ফেললো নিধি। কলটা অলোকই করেছে, আজ ওদের আবার একটু বের হবার কথা আছে,  অলোকেরই এক বন্ধুর ছেলের জন্মদিন আজ। সেখানেই যেতে হবে তাই মনে করিয়ে দিলো গিফট নেবার ব্যাপারটা। কি নেবে , কি পড়বে এসব নিয়েই টুকটাক কথা হচ্ছিলো অলোকের সাথে। ফোন কেটে পাশের সিটের দিকে তাকাতেই দেখলো সেই সন্দেহজনক যাত্রীটি কখন যেন চুপচাপ নেমে পড়েছে আগের স্টেশনে।  তবে নামার সময় ভুলে তার ধুলোমাখা ব্যাগখানা ফেলে রেখে গেছেন শুন্য সিটটিতে। এদিক-সেদিক চোখ ঘুরিয়ে খুঁজলো ন্সে লোকটিকে। তার গচ্ছিত সম্পদটি ফিরিয়ে দেবার আশায় । এমন সময়  ট্রেনের কামরায় একটা চাপা অস্থিরতা লক্ষ্য করে অবাক হয়ে গেল নিধি।  সবাই কেমন নেমে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে একসাথে। বেশ খানিক্ষন এই ছোটাছোটি দেখার পর  একজনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো ;
: এই যে দাদা,  আচ্ছা কি হচ্ছে ব্যাপারটা বলুনতো চারপাশে এতো ছোটাছুটি কিসের?
: আরেহ দিদি,  আপনি শোনেনি নাকি খবরটা,  আজ একটু আগেই শেয়ালদহ পুলিশ স্টেশনে কল করে অজ্ঞাত কেউ নাকি হুমকী দিয়েছে' কিছুক্ষণের মধ্যে এই এলাকায় একটা বোম ব্লাস্ট হবে, পারলে ঠেকাতে।  এজন্য এলাকা খালি করতে শুরু করেছে পুলিশ৷ কথাগুলো শুনতেই মুহূর্তের মধ্যে অনেকগুলো দৃশ্য খেলে যায় নিধির চোখের সামনে।  সেদিন সন্ধ্যেয় প্রথমে রক্তের গন্ধ তারপর কার অ্যাক্সিডেন্টে সুধীন স্যারের মৃত্যু, তারপর ডক্টরের চেম্বারে পাপের নারকীয় গন্ধের পর ভ্রুণ হত্যার মতো নোংরা কেলেংকারী ফাঁস
হওয়া । আর আজ সকালে নিজের চারপাশে  তীব্র পোড়া গন্ধ।  হটাৎ খপ করে পাশের সিটের ব্যাগটা তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে লাফিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে নিধি। কানে আসা হালকা টিকটিক শব্দ জানান দিচ্ছে সময়ের স্বল্পতাটুকু। ব্যাগটা বুকে চেপে ধরে দিগবিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে ছুটে বের হলো সে স্টেশন ছেড়ে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে পৌঁছাতে হবে কোন একটা ফাঁকা জায়গায় যেখানে ক্ষতির পরিমাণটা অন্তত কিছুটা হলেও সামান্য হবে। আজ সকালে নিজের শরীরে পাওয়া সেই বিদঘুটে পোড়া গন্ধটুকু নাহয় শুধু ওর নিজের হয়েই থাক।
 
                                 || সমাপ্ত ||

ভালো লাগলো 

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
gud one ...
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(18-09-2023, 09:58 AM)Bumba_1 Wrote: বেশ ভালো  Heart Heart

(18-09-2023, 12:14 PM)Somnaath Wrote:
ভালো লাগলো 

(18-09-2023, 10:06 PM)Chandan Wrote: gud one ...

thanks   thanks 
Like Reply
বাহ্! অ্যারোমাখুব সুন্দর লাগলো। এমন গন্ধ নিয়ে একটা ছোট ইরোটিক ভৌতিক গল্প আমিও অনেক আগে ভেবেছিলাম। যদিও এর সাথে তার কোনো মিল নেই। কিন্তু বেসিক আইডিয়াটা গল্পকারে গুছিয়ে তোলা আর হয়ে ওঠেনি।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
[Image: FB-IMG-1695792908103.jpg]

|| দ্রোহ ||

কলমে :- ইন্দিরা দাশ 

শহরের একটু বাইরে বেশ ফাঁকা একটা জায়গায় একতলা এই  বাড়িটা চট করে কারও চোখে পড়ে না। অবশ্য বলা ভাল, তেমন ভাবে খেয়াল করা যায় না। আসলে জায়গাটা একটু বেশীই ফাঁকা। আশে পাশে পাঁচিল দিয়ে ছোট ছোট করে কিছু প্লট ঘিরে রাখা আছে বটে ভবিষ্যতের বাড়ি বা ফ্ল্যাট বানাবার জন্য, কিন্তু আপাতত এলাকাটি কোলাহল মুক্ত। বিয়ের আগে অমিত বলেছিল, " আমার চাকরী বলতে তো এই ফার্মা কোম্পানিতে একটা ছোটখাটো পদ। তো, শহরের বড় জায়গায় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার আপাতত ক্ষমতা নেই, তাই এখানেই এই বাড়িতে ভাড়ায় থাকি। বাড়ির মালিক খুব সজ্জন মানুষ। কথাবার্তা খুব ভাল, যদিও এইদিকে খুব একটা আসেন না। আশা করি তোমার কোন সমস্যা হবে না অনন্যা। আমরা আমাদের জীবনটা এখান থেকেই শুরু করতে পারব।"
অনন্যা সেদিন কিছু না বলে আমিতের হাতদুটো ধরে একটু হেসেছিল। তার মনে হয়েছিল, হয়তো স্বপ্ন এমনটাই হয়। বাড়ির নাম রাখা হয় “স্বপ্ননীড়”। এসব প্রায় এক বছর আগের ঘটনা।
সন্ধ্যের পর এই এলাকা এত্ত শুনশান হয়ে যায়। তখন ক্কচিৎ-কদাচিৎ দুএকটা সাইকেল বা বাইকের আওয়াজ ছাড়া বাকি সময়টা ঝিঁঝিঁর ডাকই একমাত্র ভরসা। মাঝে মাঝে মনে হয়, সন্ধ্যের পর যেন এই বাড়ি এক অন্য দুনিয়ার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
সেদিন রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি হবে। চাবি দিয়ে বাড়ির সদর দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে অমিত। বাড়ির ভিতর কোথাও আলো নেই। লোডশেডিং নাকি? ঠিক তাই!! সারা বাড়িটা যেন একটা অন্ধকারের সমুদ্রে ডুবে গেছে। মোবাইলের আলোটাও যেন ফিকে লাগছিল। কিন্তু অনন্যা কোথায়? এতবার তার নাম ধরে ডাকা সত্ত্বেও সে সাড়া দিচ্ছে না কেন? এবারে একটা সন্দেহ জাগে অমিতের মনে। আস্তে আস্তে সে পা বাড়ায় বেড্রুমের দিকে। বাইরে যাওয়ার আগে যেখানে সে অনন্যাকে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে গেছিল।
কিন্তু বেডরুমে ঢূকে কোন কিছুই যেন ঠাহর করা যাচ্ছে না। এদিকে অমিতের মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুইচ অফ হয়ে যাবে। এবং হলও তাই। আর ঠিক তখনই একটা দলা পাকানো অন্ধকার যেন তাকে গিলে খেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারের গহ্বরে সে যেন সম্পূর্ণ একা, কেউ কোথাও নেই। কিন্তু সত্যিই কি কেউ নেই সেখানে? অমিত কিন্তু ওর আশেপাশেই কারও উপস্থিতি যেন টের পাচ্ছে, কেউ হয়তো খুব কাছ থেকে তাকে এই অন্ধকারের মধ্যেও লক্ষ্য করে যাচ্ছে। এখুনি হয়তো সে অমিতকে স্পর্শ করবে। কিন্তু সেই অন্ধকারের জালটা ভেদ করে কাউকেই তো দেখা যাচ্ছে না। ভয়টা যেখানে অজানা, আতঙ্কটা সেখানেই সবথেকে বেশী। আচমকাই পট পরিবর্তন, হঠাৎ সেই অন্ধকারের গহ্বর থেকে তারস্বরে এক নারীকন্ঠের বিকট চিৎকার ভেসে আসে আর সাথে সাথেই অমিতের ওপর ঘটে এক অতর্কিত হামলা। সে বুঝতে পারে যে কেউ তাকে পিছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরে ডানদিকের কাঁধের কাছে ধারাল কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। তীব্র যন্ত্রণায় অমিত চেঁচিয়ে ওঠে কিন্তু কেউ সেটা শোনার নেই। বাইরের রাস্তাঘাট জনমানবহীন। এই আচমকা অসম লড়াইতে অমিত ধীরে ধীরে পরাজয় স্বীকার করতে থাকে এবং একটা সময় পর পুরো দুনিয়ার অজ্ঞাতে “স্বপ্ননীড়” থেকে ভেসে আসা সব চিৎকার, সব গোঙানি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অন্ধকারে অতর্কিতে কে-ই বা আক্রমণ করে বসে অমিতকে? সে-ই বা কি করে দেখতে পাচ্ছে চারপাশটা? আর শুধু আক্রমণ করাই নয়, ভয়ঙ্কর সেই ছায়ামূর্তি এরপর মেতে ওঠে এক পৈশাচিক উল্লাসে। অমিতের শরীরের ওপর ঝুঁকে পড়ে ধারালো দাঁত দিয়ে গলার পাশের এক খাবলা মাংস ছিঁড়ে নেয় সে। রক্তে ভেসে যেতে থাকে ঘরের মেঝে। বাইরে তখন রাতের নিস্তব্ধতাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে যাচ্ছে রাতপাখিদের ডাক। কেউ জানতেও পারছে না স্বপ্ননীড়ের ঘটমান বিভীষিকার কথা। কেটে যায় আরও বেশ কিছুটা সময়। এদিকে ছায়ামূর্তিটা নিজের ক্ষিদে মিটিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে। এরপর অমিতের মৃতদেহকে টেনে - হিঁচড়ে সে বের করে নিয়ে যায় ঘরের বাইরে। তার ক্ষতবিক্ষত এবং জায়গায় জায়গায় খাবলানো শরীরটাকে এক প্রকার দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় রাস্তার পাশের ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে। এরপর সেই জীবন্ত পিশাচ কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে যায়।
ঘটনার দু’দিন পর,
======
- “তোকে কতবার বলেছিলাম যে বলটা ওই দিকে মারবি না।শুনলি না তো? এখানে খেলতে এসেছি জানতে পারলে মা আমাকে আর আস্ত রাখবে না।”
বছর দশেকের ছেলেটার কথা শুনে তার আরও চারজন খেলার সঙ্গীর মধ্যে একজন বলে ওঠে,
- “তুই ভয় পাচ্ছিস কেন? চল আমরা সবাই যাব বলটা আনতে।”
কথামতো সবাই দল বেঁধে সরু রাস্তার পাশের ওই জংলা জায়গায় গাছপালা সরিয়ে ক্রিকেট বলটা খুঁজতে শুরু করে। সবাই যে যার মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ ওদের মধ্যে একজনের মর্মভেদী চিৎকারে বাকিরা সেখানে একত্রিত হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতেই বাকিদের অবস্থাও তথৈবচ। তীব্র আতঙ্কে আঁতকে ওঠে সকলে।
ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে একটা মানুষের বীভৎস মৃতদেহ। সারা শরীরে একাধিক জায়গা থেকে যেন মাংস কামড়ে - খুবলে তুলে নেওয়া হয়েছে। সেটা দেখেই আঁতকে ওঠার মতো। দেখেই মনে হচ্ছে এটা কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। তবে কি? কোন জন্তু? কিন্তু এই এখানে এই রকম ছোটোখাটো ঝোপঝাড়ের মধ্যে কি ভাবে কোন জন্তু আসবে? আর যদি কোন জানয়ারের উপদ্রব হয়েও থাকে তাহলে সেটা কতটা হিংস্র?
এই রকম বহু প্রশ্নের জন্ম দিল এই মৃতদেহ। এখুনি পুলিশকে খবর দেওয়া দরকার। কালবিলম্ব না করে ছেলের দল ছুটল পাড়ার বড়দের খবর দিতে।
========================================
- “দেখুন, আমি সরাসরি কথা বলতে ভালবাসি। তাতে আমাদের সকলের সুবিধা তাই না? আসলে আপনার ভাগ্নীকে আমি বিয়ে করতে চাই। ওকে আমার খুব পছন্দ।”
- “সে তোমার পছন্দ হতেই পারে। তোমার মতো অনেকেরই তো ওকে পছন্দ হয়। কিন্তু তাই বলে তো সবার সঙ্গে বিয়ে দেবো না। ওর মা - বাপ মরে যাওয়ার পর ওর পিছনে কত টাকা খরচ হয়েছে সেটা তোমার ধারণা আছে? ও চাকরি করলে সেই টাকা উসুল করার পর ওর বিয়ে দেওয়ার কথা ভাববো।”
- “আচ্ছা এই ব্যাপার? মানে অনন্যার এখানে থাকার একটাই উদ্দেশ্য, আর সেটা হল আপনাকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা!! বা বলা ভাল আপনার ঋণ মেটানো!!”
- “হুম।”
- “ আচ্ছা বেশ, আর যদি টাকাটা আমি দিই?
- “মানে? তুমি কি টাকা দিয়ে অনন্যাকে বিয়ে করবে?”
- “হ্যাঁ!”
- “না মানে কতটাকা দিতে পারবে?”
- “আগে আপনাদের হিসাবটা তো শুনি! না মানে ওর পিছনে খরচের পরিমাণটা।”
- “ না মানে… সেটা তো ওই ভাবে পুরোপুরি হিসাব হয় না। তা প্রায় দু চার লাখ তো হবেই……”
- “তবে তাই হোক। চার লাখই ধরলাম। আমি এখন আপাতত পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবো। তারপর একটু একটু করে আপনি আপনার টাকা পেয়ে যাবেন সময় মতো।”
- “ঠিক আছে। আমার খরচা ওঠা নিয়ে কথা! তাহলে বল বিয়ের দিন ক্ষন কবে ঠিক করা যায়। আমি কিন্তু  কোন অনুষ্ঠান করতে পারব না।”
- (মুচকি হেসে) অনুষ্ঠান করার দরকার নেই। আমি এক কাপড়েই অনন্যাকে নিয়ে যেতে চাই। আর সেটা আজকেই। আপনাদের কোন আপত্তি আছে?”
- “যাকে নিয়ে যাবে তার কোন সমস্যা না থাকলে আমি আটকাবার কে? তোমরা কি আগেভাগে একে অন্যকে চিনতে?”
- “ সে আলোচনা থাক, টাকার জন্য নিজের ভাগ্নীকে একজন অপরিচিতের কাছে এক কথায় তুলে দিতে রাজি হয়ে গেলেন আপনি। আমার মনে হয়না এসব প্রশ্নের উত্তর শুনে আপনার কোন লাভ হবে। আপনি অনন্যাকে ডেকে দিন।”
- “ জ্ঞানটা আমাকে না দিলেও চলবে। এখানে বস, আমি অনন্যাকে ডেকে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ, টাকাপয়সার কথাটা যেন মাথায় থাকে।”
- “ নিশ্চয়ই থাকবে। “
উপরের কথোপকথনটি অমিত এবং অনন্যার মামার। অমিত একটি ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিতে চাকরী করে। কিন্তু ঠিক কি ধরণের কাজ সেটা জানা যায় না। ওদের কোম্পানি অনেক নতুন রকমের ড্রাগস নিয়ে গবেষণা করে। এদিকে অনেক ছোটবেলায় মা - বাবাকে হারানোর পর অনন্যা তার মামার কাছেই মানুষ হয়। পড়াশুনা শেষ করে সে এখন চাকরীর পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে আর তার সাথে প্রাইভেট টিউশন করে চলেছে নিজের হাত খরচের ব্যবস্থা করার জন্য। এই সময়েই অমিতের সাথে পথচলতি কোথাও আলাপ হয় অনন্যার, সেখান থেকে কথাবার্তা, ভালোলাগা এবং ভালোবাসা। অমিত অনন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে ওর মামার কাছে আসে। গল্পটা এই পর্যন্ত ঠিক সিনেমার মতো মনে হচ্ছে তাই না? মনে হচ্ছে হয়তো মেয়েটা জীবনে ভালবাসার স্বাদ পাবে। তাই তো? হ্যাঁ, এই সব কিছুই হতে পারতো, কিন্তু হল না। কারণ, বাস্তবটা ছিল বড়ই কঠিন।
ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্টের স্মৃতি পিছনে ফেলে অমিতের  হাত ধরে পায়ে পায়ে মেয়েটা এগিয়ে গেল সুন্দর এক ভবিষ্যতের টানে। শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পর ঘরে গিয়ে সত্যি সারপ্রাইজড হয়ে যায় অনন্যা। শ্বশুরবাড়ি বলাটা একটু ভুল হবে কারণ অমিতের তিনকুলে কেউ নেই। ছোট্ট একটা বাড়িতে ও একাই থাকে। অমিত নিজের হাতে অনন্যার পছন্দের ছোট বড়ো জিনিস আর অনেক ফুল দিয়ে ঘরটা সাজিয়েছে অনন্যাকে ওয়েলকাম করার জন্য। অনন্যা সত্যি ভীষণ খুশি। প্রতিটা মেয়ে তো এই রকমই একজন জীবন সঙ্গী চায়। ঘরে ঢুকে অমিত অনন্যার হাতের ওপর হাত রেখে বলে,
- “আমার এই একার জীবনে আর শূন্য সংসারে তোমাকে স্বাগত। এখন এই ভাড়া বাড়িতে থাকছি বটে,  কিন্তু তুমি পাশে থাকলে আমি একদিন অনেক বড় একটা বাড়ি কিনতে পারব দেখো। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিন থেকেই আমি মন থেকে স্থির করে ফেলেছিলাম যে তুমি শুধুই আমার….। দেখেছো, আমি একাই বকে যাচ্ছি। আরে তুমি তো কিছু বল?”
অনন্যা লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নেয়। চোখে তার নতুন স্বপ্নের ভীড়। সত্যিই তো, মা - বাবা মারা যাবার পর এমন করে কেউ ওর কথা ভাবেনি।
এই ভাবেই শুরুর কয়েকমাস যে কিভাবে কেটে যায় অনন্যা বুঝতেই পারলো না। এরপর আস্তে আস্তে একটা একাকীত্ব যেন ওকে ঘিরে ফেলতে থাকে। অমিত সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে। সেই সময়টা  অনন্যার ওই বাড়িতে একা কিছুতেই সময় কাটে না। তাই ও ঠিক করে অমিতকে এবার বলবে যদি আবার পড়াশোনা শুরু করা যায়। মানে চাকরীর চেষ্টা শুরু করার কথা।
একদিন সন্ধ্যের পর অমিত বাড়ি ফিরতেই অনন্যা হাসি মুখে দরজা খোলে। সেটা দেখে অমিতের প্রশ্ন,
- “আজ মনে হচ্ছে আমার বৌ একটু বেশীই খুশি? তা খুশির কারণটা কি আমি জানতে পারি?”
- “আসলে তুমি তো সারাদিন থাকো না। আমি এই বাড়িতে একা একা খুব বোর হয়ে যাই। কতক্ষণ টিভি দেখে সময় কাটাবো বল? তাই ভাবছিলাম আমি আবার পড়াশোনা শুরু করবো আর পাশাপাশি একটা চাকরির জন্যও চেষ্টা করবো। আর তাছাড়া আমি একটা চাকরি পেয়ে গেলে আমাদের দুজনের পক্ষেই তো ভাল বল?”
কথা গুলো শোনার পর অমিতের মুখ থেকে যেন সব হাসি উবে গেল। খুব শান্ত গলায় বলল,
- “ দেখো আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। আমি চাই না যে তুমি বাইরে বাইরে থাকো আমার মতো। তাছাড়া আমি যা ইনকাম করি সেটা তে নিশ্চয়ই তোমার কোন অসুবিধা হয় না। ”
অনন্যা মুখ নিচু করে মাথা নেড়ে ‘না’ উত্তর দেয়। তার অনেক কিছু বলার থাকলেও সেগুলো না বলাই থেকে যায়। তারপর অনন্যা অমিতকে আর কিছু বলেনি কখনও। একা লাগলেও নিজের সব ইচ্ছাকে মেরে মানিয়ে নেয়। কেন না মানিয়ে নেওয়া যে সে সেই ছোটবেলা থেকে শিখেছে।
এর মাঝে একদিন অনন্যাকে ডেকে অমিত বলে, “ শোনো! কাল আমার কিছু অফিস কলিগ আসবে সন্ধ্যেবেলা। আসলে বিয়েতে তো কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি, তাই এবারে আর কেউ শুনছে না। সবাই আমার বৌ’টাকে দেখতে চায়।” হালকা খুনসুটি ভরা চালে দু’জনের কথাবার্তা চলতে থাকে। ঠিক হয় দু’দিন পরে শনিবার। ওইদিন সন্ধ্যাবেলা অমিত অফিস থেকে ওর তিনজন কাছের বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে আসবে। একটু খানাপিনা হবে ওই আর কি। অনন্যা শুধু জানতে চাইল, “মাত্র তিনজন বন্ধু কেন? তোমার তো আরও অনেক বন্ধু আছে!” উত্তরে অমিত জানায় যে কাছের বন্ধু বলতে মাত্র এই তিনজনই আছে, বাকিদের সাথে সম্পর্কটা একটু বেশী প্রফেশানাল। সেদিন বেশ রাত জেগে আলোচনা চলতে থাকে আগামী শনিবারের ব্যবস্থাপনা নিয়ে। অনন্যার বেশ ভালোই লাগছিল। অনেক দিন পর বেশ কিছু মানুষের সান্নিধ্যে আসবে সে। বিয়ের পর থেকে মামার কাছেই যা এক - দু’দিন গেছে, এখন আর তা’ও  প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।
শনিবার সন্ধ্যের একটু পরেই বাড়ির কলিং বেলটা বেজে ওঠে। অনন্যা সেদিন বিকেলের পর থেকেই সুন্দরভাবে সেজে অপেক্ষা করছিল অমিতের জন্য। ছুট্টে গিয়ে হাসিমুখে দরজা খুলে দেখে আমিতরা চারজন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। অনন্যা সাথে সাথে সকলকে আপ্যায়ন করে ঘরে নিয়ে আসে। অমিতের তিনজন বন্ধুদের মধ্যে প্রিয়ম এবং সাব্বির ওর সমবয়সী এবং শ্রীধরণ ওদের থেকে বেশ কিছুটা সিনিয়র। তিন জনের সাথেই বেশ ভারী ভারী তিনটে ব্যাগ। ব্যাগগুলো সব বসার ঘরের এক কোনায় রেখে সোফাতে সবাই গা এলিয়ে দেয়। অবশ্য বসার আগে অনন্যাকে ডেকে ওরা গিফটটা দিতে ভোলে না। শ্রীধরণ লোকটা একটু বেশি মাত্রায় গম্ভীর হলেও বাকি দু’জন বেশ আমুদে। ওরা একথা সেকথায় সন্ধ্যেটা পুরো মাতিয়ে রাখল।
এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। ছন্দপতনটা ঘটল ডিনারের পর। রান্নাঘরের কাজকর্ম সেরে বসার ঘরে এসে অনন্যা দেখে কেউ সেখানে নেই। এমনকি অতিথিদের ব্যাগগুলোও না। তবে কি তারা চলে গেলেন? অমিত তাকে ডাকল না কেন? এরকম ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে হল শোবার ঘর থেকে যেন কিছু মানুষের কথাবার্তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সেদিকে যেতেই অনন্যা বুঝল যে তার মনে হওয়াটাই ঠিক। অমিত তার সব বন্ধুদের নিয়ে ওদের বেডরুমে উপস্থিত হয়েছে। দরজাটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে সেটা হালকা করে ভেজানো ছিল এখন তা একটু খুলে গেছে। অনন্যা দরজার বাইরে থেকেই শুনতে পেল শ্রীধরণ ভদ্রলোকটি ওদের সকলের সাথে কি সব যেন বলে যাচ্ছে আর অমিত মাঝে মাঝে তার কথার উত্তর দিচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে সকলেই দরজার দিকে পিছন ফিরে থাকায় অনন্যার উপস্থিতি কারও নজরে আসল না। কথোপকথন সব ইংরাজিতে হচ্ছিল। যার সারবত্তা ছিল কিছুটা এরকম,
(অমিত) “ আমার কথাটা বিশ্বাস করতে পারেন স্যার। কোন সমস্যা হবে না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। এই ড্রাগটা অফিসিয়ালি হিউম্যান ট্রায়ালে নিয়ে গেলে কিছু সমস্যা হতে পারে। রিসার্চ টিম এখনও একশো শতাংশ নিশ্চিত নয়, কিন্তু আমাদের কাছে আর সময়ও নেই। আপনিই তো আগের দিন বলছিলেন যে চীন ইতিমধ্যে এমন একটা ড্রাগের ওপরে ট্রায়াল শুরু করে দিয়েছে। তার আগে আমাদের কাজ শেষ করে ফেলতে না পারলে এত কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট, এত প্রস্তুতি সব শেষ হয়ে যাবে। এটা আমার ড্রিম প্রোজেক্ট স্যার। এত সহজে তো হার মানা যাবে না। অফিসিয়াল ট্রায়ালের ব্যপারটা পরে আমরা ম্যনাজ করে নিতে পারি। আগে প্রাথমিকভাবে ট্রায়ালটা শুরু তো হোক!! “
(শ্রীধরণ) “ এটা আমারও ড্রিম প্রোজেক্ট অমিত। আমি তোমার আবেগটা বুঝতে পারছি, কিন্তু আমার চিন্তা এর সাইড এফেক্টস নিয়ে। কাল ভেঙ্কটেশ আমার কাছে সেই নিয়েই কিছু সন্দেহ প্রকাশ করেছে। “ইন্টারফেরন এক্স” একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার সেটা সন্দেহ নেই। মানুষের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে এক ধাক্কায় বেশ কয়েকগুণ হাইপার অ্যাক্টিভ করার পরিকল্পনা করছি আমরা। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে সেই সাইড এফেক্টস নিয়ে। ভেঙ্কটেশ বলছিল, এই ড্রাগ প্রয়োগের ফলে সাব্জেক্টের মধ্যে এক্সট্রীম লেভেলে ইনসমনিয়া ডেভেলপ করার চান্স খুব বেশী, আর শুধু তাই নয় সাব্জেক্টের শরীরে স্বাভাবিক ব্যথা - যন্ত্রণা এমনকি ক্ষিদে - ঘুমটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”
(প্রিয়ম) “ তাহলে এটা তো আর ড্রাগের ট্র্যায়াল থাকবে না, সরাসরি হিউম্যান এক্সপেরিমেন্টের দিকে এগোচ্ছি আমরা। আমার মনে হয় আমাদের আরও অপেক্ষার প্রয়োজন আছে। “
(অমিত) “ কোন প্রয়োজন নেই। এসব ‘হয়তো’, ‘যদি’-কে ধরে বসে থাকলে শুধু সময়টাই নষ্ট হবে, আর কিছু না। একবার ভাবুন স্যার, যদি কোন সমস্যা না হয়, যদি কোন ম্যাসিভ সাইড এফেক্টস দেখা না যায়, তাহলে আমাদের অর্থ সময় সব বরবাদ হবে। এই ড্রাগ আমরা আর মার্কেটে নিয়ে আসতে পারব না। আমি আপনাদের চিন্তাটা বুঝতে পারছি। বাদুড়ের স্যালাইভা এই ড্রাগের প্রধান উপকরণ। আর বাদুড় অনেক রকম বিপজ্জনক ভাইরাসের হোস্ট সিস্টেম হিসাবে কাজ করে। আমি এই সব সংশয়ের কথা বুঝতে পারছি কিন্তু আমার কথাগুলোও একটু বোঝার চেষ্টা করুন। “
(সাব্বির) “ তোমার স্ত্রী কি রাজী হবে? আগে তাকে বোঝাও। “
(অমিত) “ সেটা নিয়ে সমস্যা হবে না। “
(সাব্বির) “ তাহলে কি আজ রাতেই….!! “
এই পর্যন্ত কথাবারতাটা চলতে খুব বেশী হলে তিন মিনিট লেগেছিল। অনন্যা ওর নিজের দিকের ইঙ্গিতটা বুঝতে না পেরে দরজায় টোকা মেরে ঘরে ঢোকে এবং অমিতকে সরাসরি প্রশ্ন করে।
(অমিত) আমার ওপরে কীসের ট্রায়াল হবে? ”
অমিত কিছুক্ষণ অনন্যার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “তেমন কিছু না, তুমি আসলে আগের দিন বলছিলে যে তোমার শরীরটা আজকাল দুর্বল লাগে তাই ভাবছিলাম একটা ইঞ্জেকশন দেব আজকে। ঠিক হয়ে যাবে। সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম।
(অনন্যা) “ আমি কিন্তু সব শুনতে পেয়েছি অমিত। পুরোটা না বুঝলেও এটা বুঝতে পেরেছি যে একটা বেআইনি কাজের মধ্যে ঢুকে পড়েছ তোমরা। “
অমিত আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে এবারে ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দেয়, “সব শুনতে পেলে ন্যাকামো করে সময় নষ্ট করছ কেন? তবু যখন জিজ্ঞেস করলে তাহলে বলি শোনো, একটা ড্রাগের ট্রায়াল হবে। এটা ইঞ্জেক্ট করার পর তোমার রক্তের ইমিউনিটি পাওয়ার অনেক বেশি বেড়ে যাবে। তোমার শরীরের যে কোন বড় আঘাত খুব সামান্য বলে মনে হবে, বা মনেই হবে না। এখন এই যে মাঝে মাঝেই শরীর খারাপের কষ্টটা পাচ্ছ সেটা হয়তো আর পাবে না। এটাকে তুমি ড্রাগ না বলে এনার্জি বুস্টার বলতে পারো। “
(অনন্যা)  “ কিন্তু আমি কেন? তুমি আমার ওপর কেন ট্রায়াল করবে? ”
অনন্যার সরল মনে প্রশ্ন শুনে অমিত ক্রূরভাবে হেসে উত্তর দেয়, “ আরে তুমিই তো আমার গিনিপিগ। এটা যদি সফল হয়ে যায় তাহলে তো আমাকে আর দেখতে হবে না।” এসব শুনে অনন্যা একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে যায়। কোন কথা বলার যেন ক্ষমতা থাকে না ওর। এতবড় ভুল সে কি করে করতে পারে? একটা মানুষকে চিনতে এত ভুল তার হল কি করে? ভয়মিশ্রিত গলায় অনন্যা বলে, “ আমি মামার সাথে কথা বলতে চাই। আমি মামার বাড়ি যাব। এখানে আমি থাকব না। “
এবারে অমিত অনন্যার দিকে কয়েক মুহূর্ত এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর জোরে শব্দ করে হেসে ওঠে। অনন্যা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, “ আমি হাসির কথা কি বললাম তোমাকে? আমি মামার কাছে যেতে চাই কদিনের জন্য। ” এবার অমিতের উত্তর, “কে তোমার মামা? এই আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে তোমার  আর কেউ নেই অনন্যা। তোমার ওই মামাকে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি।” এবারে অনন্যার মাথায় যেন একটা বাজ পড়লো।
(অনন্যা)  “ কি সব ফালতু কথা বলছ? আমি এই সব বিশ্বাস করি না। আমি এখনই মামাকে জিজ্ঞাসা করবো”
এই বলে অনন্যা নিজের মোবাইল থেকে ওর মামাকে ফোন করলে ফোনের ওপার থেকে কিছুক্ষণ পর  উত্তর আসে,
- “হ্যালো, কে?”
- “মামা আমি অনু।”
- “হ্যাঁ বল, এই অসময়ে ফোন করছিস যে?”
- “না আসলে একটা বিষয়ে তোমার কাছে একটু জানার ছিল মামা।”
- “ আমি এখন কাজে খুব ব্যস্ত আছি, তুই বরং পরে ফোন করিস।”
নাছোড়বান্দা অনন্যা এবার প্রশ্নটা করেই ফেলল,
- “মামা তুমি অমিতের থেকে টাকা নিয়েছ?”
- “সংসার করতে গেছিস ওটা কর ভাল করে। সব কথার কৈফিয়ত তোকে আমি দিতে যাবো না।”
- “তার মানে তুমি আমাকে বিক্রি করে দিলে মামা? মা বেঁচে থাকলে করতে পারতে এটা?”
ফোনের ওপার থেকে সোজাসুজি উত্তর এল, “তোর মা বেঁচে থাকলে তো আমি বেঁচে যেতাম। আর আমি তোকে বিক্রি করলাম কোথায়? এত দিন যে তোর পিছনে খরচ করলাম সেটা আমি উসুল করার চেষ্টাও করবো না? তাও তো পুরো টাকাটা আমি এখনও পাইনি। রাখ তো। যত্তসব।”
মোবাইল ফোনটা কান থেকে নামিয়ে নির্বাক অনন্যা শূন্য একটা দৃষ্টি নিয়ে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিঃশব্দে তার দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। অমিতের সাথে ওই ঘরে উপস্থিত বাকি তিনজন ততক্ষণে সিরিঞ্জ বের করে তৈরী হয়ে পড়েছে। অমিতের সাহায্যে এবারে তারা অনন্যার শরীরে ঢুকিয়ে দেয় সেই অজানা বিষ!! অনন্যা আটাকাবার চেষ্টা করলেও লাভ হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমে চোখদুটো জুড়ে আসে তার।
এই ঘটনার দুদিন পর। রাত তখন প্রায় দেড়টা বাজে। চারদিকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। পাশে শুয়ে থাকা অমিতের দিকে ভাল করে চেয়ে দেখল অনন্যা। অমিত অঘোরে ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগ এই নরক থেকে মুক্তি পাওয়ার। খাট থেকে নেমে পা টিপে টিপে খুব সাবধানে ঘরের দরজা খুলে বাইরে যায় সে। বাড়ির মূল দরজা খুলতে গিয়ে দেখে সেটা তালা লাগানো। খুব সাবধানে অমিতের মাথার কাছে টেবিলের ওপর রাখা চাবিটা নিয়ে এসে দরজা খুলে বেরিয়ে যায় অনন্যা। আর কোন দিকে তাকানো নয়। বাইরের সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে খালি পায়ে দিশাহারা হয়েই দৌড়াতে থাকে সে। কিন্তু পড়ে থাকা একটা কাচ বা পাথরের টুকরো পায়ে বিঁধে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে যায় সে। কোন রকম উঠে দাঁড়ালেও বেশি জোরে হাঁটার ক্ষমতা নেই আর। তবুও অনন্যা পা টেনে টেনে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগে। আচমকা অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর বলে ওঠে, “আমার হাতটা ধরো দেখো কষ্ট হবে না।”
একি!!  এটা তো অমিতের গলা। সেই রাতে অমিত ওকে রাস্তা থেকে একপ্রকার টেনে হিঁচড়ে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং মারতে মারতে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে এই ড্রাগ আর অত্যাচার, এই দুটোই যেন অনন্যার সঙ্গী হয়ে যায়। কিছুদিন পর থেকে পুরো ব্যপারটা কেমন একটা গা - সওয়া হয়ে যায় ওর। অত্যাচারটা শুধুমাত্র অভ্যেসের জন্য নয়। ড্রাগের এফেক্টটা পরীক্ষা করার জন্য অমিত এমনিতেই অনন্যাকে নানা রকম ভাবে শারীরিক অত্যাচার করতে থাকে। এবং তার একটা রিপোর্ট নিয়মিত শ্রীধরণের টিমকে দিতে থাকে। এদিকে ড্রাগের প্রভাবে অনন্যার শরীর ভাঙতে শুরু করে একটু একটু করে। এখন চাইলেও তার ঘুম আসে না, ক্ষিদেও তেমন পায় না। তারা সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত। দিনের পর দিন না খেয়ে , না ঘুমিয়ে দিন কাটে মেয়েটার।
কিছুদিন পর একটা বিশেষ কাজের জন্য অমিতের বাইরে যাবার প্রয়োজন পড়ে। অবশ্য সেটা দুদিনের জন্য। তাই অমিত ঠিক করে দুদিনের জন্য অনন্যাকে একটু বেশি মাত্রায় ইঞ্জেক্ট করে যাবে। ড্রাগটা এখন ভালভাবেই কাজ করছে। সাবজেক্ট এখন খাবারের ওপরে নির্ভরশীল নয়। ঘুমটাও তার কাছে আর প্রয়োজনীয় নয়। আর তাছাড়া, সাব্জেক্টের শরীরে ব্যথা বেদনার অনুভূতিটাও প্রায় নেই বললেই চলে। প্রাথমিকভাবে ড্রাগের এক্সপেরিমেন্ট সফল বলেই মনে হচ্ছে। এটা অমিতকে নিজে গিয়ে চেন্নাই অফিসে  রিপোর্ট করতে হবে। তারপর অফিসিয়াল ট্রায়ালের একটা লোক দেখানো ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সেটা অবশ্য প্রিয়ম আর সাব্বির দেখে নেবে। এই দু’দিনের জন্য অনন্যার বরাদ্দ শুধুমাত্র ড্রাগের হাই ডোজ ইঞ্জেকশন।  যেমন ভাবা তেমন কাজ। ইঞ্জেকশন দিতে দিতে সে অনন্যাকে বলে,
“আমি দুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। তোমার এই  দুই দিনের ডোজ একসাথে দিয়ে গেলাম। কোন অসুবিধা হবে না দেখো। আর যেন দুষ্টুমি করে বাইরে যেও না। যদিও বাড়ির সব চাবি আমি নিয়ে গেলাম। পরশু পর্যন্ত তুমি শুধু বিশ্রাম নেবে কেমন? আমি চলি। ”
অনন্যার যেন কথা বলার শক্তি টুকু হারিয়ে গেছে। একদৃষ্টে অমিতের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেটাকে তোয়াক্কা না করে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে বেরিয়ে যায় অমিত।
তবে কি এবার এই নরক থেকে মুক্তি পাবে অনন্যা? নাকি সেই রাস্তাটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল?
=============
বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা। শহরের একটু বাইরে বেশ ফাঁকা একটা জায়গায় একতলা একটা বাড়িকে নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল আর উত্তেজনা এখন চরমে। বাড়ির মালিক রাধেশ্যাম ঘোষ উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখছেন শুধু। পুলিশি নজর এড়িয়ে ঘরের ভিতরে যাওয়ার কোন উপায় নেই। দু’একজন সাংবাদিককেও দেখা গেল ঘটনাস্থলে। পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, পাড়ার কিছু লোকজন বাড়িটির উল্টোদিকে রাস্তার পাশের ঝোপের মধ্যে, একটি ক্ষতবিক্ষত মানুষের মৃতদেহ দেখে থানায় ফোন করে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ ছিল এই মৃতদেহ এবং ওই বাড়িটার মধ্যে হয়তো কোন যোগসূত্র আছে। তাতে শিলমোহর দেন বাড়ির মালিক রাধেশ্যাম বাবু নিজে। তিনি জানান যে মৃতদেহটি অমিত সরকারের যে কিনা এই বাড়িতে তার স্ত্রী’কে নিয়ে ভাড়ায় থাকতো। ঘটনার পর থেকে অমিতের স্ত্রী অনন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফরেনসিক টিম কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে। বাড়ীর বেডরুমের সর্বত্র শুকিয়ে আছে রক্তের দাগ এবং মেঝেতে পড়ে থাকা টুকরো টুকরো জিনিসগুলো কি মানুষের কাঁচা মাংসের টুকরো?
সেদিন রাতে কি অনন্যাই আক্রমণ করেছিল অমিতকে এবং তারপর তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঝোপের মধ্যে ফেলে মাংস খুবলে খেতে শুরু করেছিল? প্রশ্ন তো এখন অনেক!!
অনন্যা কোথায়?
ড্রাগের প্রভাবে যার ক্ষিদে নষ্ট হয়ে গেছিল সে এইভাবে অমিতের শরীর থেকে মাংস খুবলে নিল কেন?
তাহলে কি ড্রাগের কারণে অন্য কোন সাইড এফেক্টের সূচনা হয়েছে যা আগে ধারণা করা যায়নি?
অনন্যার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কি এখনও অটুট আছে নাকি সেখানেও ড্রাগের প্রভাব দেখা দিয়েছে?
এতগুলো প্রশ্নের উত্তর যে সবথেকে ভালভাবে দিতে পারত, সে হল অমিত নিজে। পুলিশের পক্ষে দীর্ঘ অনুসন্ধান ছাড়া কখনই হয়তো বোঝা সম্ভব নয় যে এই “স্বপ্ননীড়”-এর মধ্যে কি ভয়ঙ্কর এক উন্মত্ততা চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। অনন্যার ওপরে দিনের পর দিন ধরে ভয়ঙ্কর “ইন্টারফেরন এক্স” ড্রাগ প্রয়োগের ফলে ধীরে ধীরে সে এক মানবী থেকে দানবীতে পরিণত হয়েছে। আজ তার শরীরে ঘুম বা ব্যথা - বেদনার মতো কোন অনুভূতিই নেই। সে এক জীবন্ত লাশে পরিণত হয়েছে যেন!! কিন্তু একটাই খটকা এখনও রয়ে গেল। ড্রাগের প্রাথমিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তো ক্ষিদে না থাকাটাই প্রধান লক্ষণ ছিল। সেটা কি করে পরিবর্তন হয়ে গেল? এর কোন উত্তর এখনও তো কেউ জানে না। আর অনন্যার এখনকার পরিস্থিতি যদি ড্রাগের অন্তিম পরিণতি হয়ে থাকে, তবে সামনে এখন সমূহ বিপদ।
তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অনন্যাকে এখন আর কোন স্বাভাবিক মানুষের শ্রেণীতে নিশ্চয়ই ফেলা যায় না। তাকে খুঁজে বার করাটাই এখন পুলিশের প্রথম কাজ। এই শহর অজান্তে এক নরখাদকের জন্ম দিয়ে ফেলেছে যে !!  এখুনি তাকে থামাতেই হবে।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 5 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
দারুন লাগলো।  clps

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
দুর্দান্ত কনসেপ্ট। এমন বিষয় নিয়ে তো ফিল্ম হওয়া উচিত। ❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
ফাটাফাটি  Namaskar
Like Reply
good one
[+] 1 user Likes Chandan's post
Like Reply
(27-09-2023, 01:20 PM)Somnaath Wrote:
দারুন লাগলো।  clps

thanks   thanks  

(27-09-2023, 03:09 PM)Baban Wrote: দুর্দান্ত কনসেপ্ট। এমন বিষয় নিয়ে তো ফিল্ম হওয়া উচিত। ❤
 
একদম, আমারও তাই মনে হয় 

(27-09-2023, 03:17 PM)Bumba_1 Wrote: ফাটাফাটি  Namaskar

thanks   thanks  

(28-09-2023, 10:10 AM)Chandan Wrote: good one

   thanks   thanks 
Like Reply
ইহার পরেও লোকে কহিবে মহাবীর্য্য খামোখা গোঁসা করিতেছে! কিন্তু এমন অন্যায় স্বচক্ষে শুধু যে দেখিয়াছি তাহা নহে বিলক্ষণ অনুভব অবধি করিয়াছি তাহার পরেও গর্জিয়া উঠিব না।
সঞ্জয়দা, ভাল করিয়া জানেন মহাবীর্য্য ভূতকে কায়াতুল্য ভালবাসে সে ভূত যতই কায়াহীন হউক! তাহার সহিত আমার লায়লা তুল্য প্রেম! তাহা হইলে একটী বার আমারে আমন্ত্রণ জানানো যাইত না? আমন্ত্রণ যদি নাও হয় নিতান্ত জ্ঞাতার্থে এই থ্রেডের হদিশ দিয়া যাইত না?
যদি আমি এই সাবফোরামে না আসিতাম তাহা হইলে জানিতাম অবধি না যে শুধু এক ভূতের নহে বহুবিধ ভূতের সঙ্কলণ আনিয়া আপনি এক্কেরে দৈনিক ভূতচতুর্দশী খুলিয়া বসিয়া আছেন! মেইন ফোরামের দেন নাই! কেহই কিছু কহিত না মেইন ফোরামে দিলে পরে। সাবফোরামে দেওয়ার ফলে আমাদের ভূতপ্রেমীদের ইহা খুঁজিয়া পাইতে সমস্যা যেমন তেমন আপনিও বিস্তর পাঠক হারাইতেছেন। ইহা অনৈতিক এবং আমি ইহার ঘোর তিরস্কার করিতেছি। এইযাত্রা বড়দা বলিয়া ছাড়িয়া দিলুম ফের যদি ভূতের আমদানি করিয়াছেন আর সেই আম খাইতে আমারে না ডাকিয়াছেন তবে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ থুতনির তলে লাগাইয়া আপনার সহিত আড়ি ঘোষণা করিয়া দিব।
                            Namaskar
[Image: 20230923-133529.png]
Like Reply
(28-09-2023, 10:42 PM)মহাবীর্য্য দেবশর্ম্মা Wrote: ইহার পরেও লোকে কহিবে মহাবীর্য্য খামোখা গোঁসা করিতেছে! কিন্তু এমন অন্যায় স্বচক্ষে শুধু যে দেখিয়াছি তাহা নহে বিলক্ষণ অনুভব অবধি করিয়াছি তাহার পরেও গর্জিয়া উঠিব না।
সঞ্জয়দা, ভাল করিয়া জানেন মহাবীর্য্য ভূতকে কায়াতুল্য ভালবাসে সে ভূত যতই কায়াহীন হউক! তাহার সহিত আমার লায়লা তুল্য প্রেম! তাহা হইলে একটী বার আমারে আমন্ত্রণ জানানো যাইত না? আমন্ত্রণ যদি নাও হয় নিতান্ত জ্ঞাতার্থে এই থ্রেডের হদিশ দিয়া যাইত না?
যদি আমি এই সাবফোরামে না আসিতাম তাহা হইলে জানিতাম অবধি না যে শুধু এক ভূতের নহে বহুবিধ ভূতের সঙ্কলণ আনিয়া আপনি এক্কেরে দৈনিক ভূতচতুর্দশী খুলিয়া বসিয়া আছেন! মেইন ফোরামের দেন নাই! কেহই কিছু কহিত না মেইন ফোরামে দিলে পরে। সাবফোরামে দেওয়ার ফলে আমাদের ভূতপ্রেমীদের ইহা খুঁজিয়া পাইতে সমস্যা যেমন তেমন আপনিও বিস্তর পাঠক হারাইতেছেন। ইহা অনৈতিক এবং আমি ইহার ঘোর তিরস্কার করিতেছি। এইযাত্রা বড়দা বলিয়া ছাড়িয়া দিলুম ফের যদি ভূতের আমদানি করিয়াছেন আর সেই আম খাইতে আমারে না ডাকিয়াছেন তবে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ থুতনির তলে লাগাইয়া আপনার সহিত আড়ি ঘোষণা করিয়া দিব।

এটাতো সংগৃহীত গল্পের থ্রেড, তাই মেইন ফোরামে দেওয়া যেত না। ওখানে দিলে কেউ রিপোর্ট মারলেই মডারেটর পুরনো সংগৃহীত গল্প নামের এই sub forum এ এটাকে পাঠিয়ে দিত। তাছাড়া আমি কোনদিনই আমার গল্প (অবশ্যই সংগৃহীত) পড়তে কাউকে আমন্ত্রণ জানাইনা। আসলে ওটা আমি পারিনা করতে। তবে আপনি যখন একবার দেখেই ফেলেছেন, তখন মাঝে মাঝে সময় করে ঢুঁ মেরে যাবেন, আর নতুন নতুন গল্প পড়বেন।  Smile

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

Like Reply
Rupokpolo দাদার প্ল্যানচেট নামক ভৌতিক গল্পটা কোথাও পেলে ভালো হতো।
Like Reply
[Image: Polish-20230930-203449821.jpg]

|| বাসা || 

কলমে :- পিয়ালী ঘোষ  


অপরাজিতা আরও ভালো করে দেখবার জন্য চশমা পরলেন। মনোযোগ দিয়ে দেখলেন, হাসপাতাল এর বালিশ এর উপর একটি লম্বা লাল রঙের সরু, মিহি, দাগ। প্রথমে বালিশের দাগ ভেবে গুরুত্ব দেন নি, কিন্তু চশমা পরে দেখতে পেলেন দাগটি খুব আস্তে সরে সরে যাচ্ছে। আতঙ্কিত অপরাজিতা দেবী ওয়ার্ড বয়কে বেল বাজিয়ে ডাকলেন এবং দাগটি দেখালেন। সেও খুব অবাক হয়ে বললো, যে কিছুই জানেনা, এরকম প্রথম বার দেখেছে, সে বালিশের ওয়াড় আর বেড শীট বদলে দিচ্ছে এখুনি। তাড়াতাড়ি নতুন শীট আর ওয়াড় সমেত গায়ে চাপা দেওয়ার চাদর আর কম্বলটিও সে বদলে দিলো। দেখতে দেখতে মল্লিকার ফিরে আসবার সময় হয়ে গেল।
..
দেবু আর ওর বাবা,পালিতবাবু, এতক্ষণ স্ক্যান রুমের বাইরে ছিলেন, এবার মল্লিকার স্ট্রেচার এর সাথে রুমের দিকের পথ ধরলেন। রুমে ফিরে মল্লিকাকে বালিশে শুইয়ে দিলো নার্স এবং অ্যাটেন্ডেন্ট মিলে। কিছুক্ষণ পরে একজন টেকনিশিয়ান দৌড়ে এলো স্ক্যান প্লেটস গুলো নিয়ে ড:পাটির এর কাছে। প্লেটসগুলো ভালো করে দেখালো, ডাক্তারকে। উনিও সাথে সাথে ড: ব্যানার্জীকে কল করলেন আর ওনার রুমে আসতে বললেন। দুই স্পেশালিস্ট এ মিলে হতভম্ব হয়ে গভীর আলোচনায় বসলেন। আলোচনা যত বাড়তে থাকলো, ততই ওনাদের মুখের ভাব গম্ভীর হতে থাকলো। টেকনিশিয়ান রিপোর্টও দিয়েছে সাথে, সেটা দেখে ওনারা ঘন ঘন মাথা নাড়তে থাকলেন।
..
পালিতবাবু বারবার অপরাজিতাকে বলতে থাকলেন, বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আসবার কথা, কিন্তু অপরাজিতা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। মেয়ের অ্যানেস্থেসিয়ার রেশ না কাটা অবধি কোথাও যাবেন না বলে দিলেন। এবার অপরাজিতা খুব ভালো করে গিয়ে মল্লিকার মাথার কাছে বসলেন, আর মোবাইল এর টর্চটা মল্লিকার কান এর কাছ থেকে চুল এর ভিতর অবধি ফেলে ধরলেন। কিছুই চোখে পড়লো না। তাই অন্যদিকে গিয়েও উনি একইভাবে দেখার চেষ্টা করলেন। দেবু আর ওর বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন এভাবে উনি কি দেখছেন? অপরাজিতা জবাব না দিয়ে দেবুকে ডাকলেন, "এই দেবু এদিকে আয় তো, দেখ তো, আমি যা দেখছি তুইও তাই দেখতে পাচ্ছিস কি না?" ..
দেবু তাড়াতাড়ি অপরাজিতার দিকে এগিয়ে গেল, অপরাজিতা উঠে পড়লেন আর দেবু ওনার মোবাইলটা নিয়ে মল্লিকার কানের পাশে আলো ফেলে, ভালো করে দেখে বলে, "হ্যাঁ কাকিমা, দেখতে পাচ্ছি, খুব মিহি একটা সরু লাল দাগ ওর ঘাড়ের কাছ থেকে কান অবধি চলে গিয়েছে, কানের গর্তের ভিতর, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সেটা যেন খুব আস্তে সরে সরে যাচ্ছে, কিসের দাগ ঠিক বুঝতে পারছিনা।"
..
অপরাজিতা বললেন, "কি জানি, কিছুক্ষণ আগে এই একই দাগ আমি ওর বালিশের ওয়াড় এ দেখতে পেয়েছিলাম। খুব রাগ করে ওয়ার্ড বয়কে বকা দিয়ে সব বদলিয়েছি, বেড শীট কম্বল অবধি। কিন্তু এই দাগটা ওর গায়ে আছে সেটা আগে দেখিনি। ডাক্তারকে বলতে হবে বুঝলি ?" দেবুর বাবাও চিন্তিত হয়ে বললেন, "দিদি, আপনি শান্ত হন, একটু পরেই তো স্ক্যান রিপোর্টগুলো এসে যাবে আর ডাক্তাররা নিজেরাই আসবেন এই রুমে, তখন সব কথা হবে না হয়।"
..
বলতে বলতেই ড: ব্যানার্জি আর ড: পাটির একজন নার্স এর সাথে এসে ঢুকলেন রুমে। নার্সকে ড্রিপ বদলে দিতে বলে, তাতে মাইল্ড ঘুমের ইঞ্জেকশান পুশ করতে বললেন। মল্লিকা একটু একটু হুঁশ এলেই, উফফ, আঃআঃ করে ব্যাথার অভিব্যক্তি করছে। তাই ওকে আবার স্ট্র্যাপ করে রাখা হয়েছে। দুই ডাক্তার তখন মল্লিকার মাকে আর পালিতবাবুর সাথে আলাদা করে কথা বলবেন, তাই জানালেন। দেবুকে মল্লিকার পাশে থাকতে আর কড়া নজরদারি করতে বললেন ওনারা। অপরাজিতা দুইজন ডাক্তারকেই জানালেন ওনারা কিছু  দেখেছেন আর সেটা ওনারা একবার দুই ডাক্তারকে দেখাতে ইচ্ছুক। দুইজন ডাক্তার অপরাজিতার অনুরোধে মল্লিকার কানের বরাবর লাল দাগটা দেখলেন আর কিছু না বলে অপরাজিতা আর দেবুর বাবাকে নিয়ে আলোচনা করতে চলে গেলেন । নার্সকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন যে মল্লিকাকে যেন তৎক্ষণাৎ স্যানিটাইজ করে দেওয়া হয়।
..
সবাই বসলে, কথা শুরু হল। অপরাজিতা ভয়ে, পাংশু মুখে বসেছিলেন, দেখে, ড: ব্যানার্জি বললেন, "আপনাকে দিয়েই শুরু করবো, যেহেতু আপনি মল্লিকার মা। আপনাকে শক্ত হতে হবে আর ঘাবড়ে গেলে বা হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ট্রিটমেন্ট বহুদিন চলবে। কিওর হবে, কিন্তু শুধু ইঞ্জেকশান বা ট্যাবলেট এ না, সার্জারিও করতে হবে।"  
.
ড: পাটির ড: ব্যানার্জির কথার সূত্র ধরে বললেন, "বেশ কিছু টাকার ব্যাপার আছে। আমরা যেহেতু মিস্টার পালিতকে অনেকদিন ধরে চিনি, উনি আমাদের ট্রাস্ট এর প্যানেল এ আছেন, তাই ওনার খাতিরে অনেকটাই ছাড় দেব সার্জারিতে, তবে ওষুধপত্রের টাকা আপনার পুরোটাই লাগবে। আমরা লিস্ট লিখে দিলে আপনি বাইরে থেকেও কিনে দিতে পারেন ডিস্কাউন্টেড রেট এ। আর যেহেতু ব্যাপারটা অনেকদিন এর হয়ে গিয়েছে, আমরা আগামীকাল থেকেই মল্লিকার ট্রিটমেন্ট শুরু করতে চাই।"
..
মল্লিকার মা অধ্যৈর্য্য হয়ে বললেন, "প্লিজ, আমার এবার আতঙ্ক হচ্ছে। কি হয়েছে আমার মেয়ের একটু বলবেন ? আমি যে আর টেনশন নিতে পারছি না।"
পালিতবাবুও বললেন, "হ্যাঁ ডাক্তার একটু তাড়াতাড়ি বলুন না।"
.
ডাক্তার পাটির  বললেন, "দেখুন, খুব কমন না হলেও, এইরকম কেস খুব একটা আনকমনও নয়। তবে নর্মালি আমরা ভাবতে পারিনা এরকম হয় বলে, তাই অনেকেই জানেনা।" অপরাজিতা ওনাকে থামিয়ে দিয়ে একটু বিরক্ত হয়েই বললেন, "কি জানেনা? কি আনকমন?"
-- "আপনার মেয়ের মাথাতে পিঁপড়ের বাসা হয়েছে, ম্যাম। আর ওরা.. "
-- "কি হয়েছে? কি হয়েছে বললেন?," অপরাজিতা চেঁচিয়ে ওঠেন।
-- "দেখুন, প্লিজ শান্ত হন, এই নিন, জল খান। আপনি ঠিকই শুনেছেন, আপনার মেয়ের মাথাতে পিঁপড়ের বাসা হয়েছে। ওই যে লাল দাগটা দেখছেন, ওটা একদম এক দুদিনের জন্মানো পিঁপড়ের বাচ্চা, যা এখন ওর শরীর থেকে বেরিয়েছে। তাই  ওকে রিপিটেডলি স্যানিটাইজ করতে হবে আর মেডিকেটেড স্প্রে করে রাখতে হবে। তাতে সম্পূর্ণ মুক্ত না হলেও, সার্জারির পরে মুক্ত হবে এই সমস্যার থেকে, সেটা বলতে পারি।  আসল ঘাঁটিটা মনে হয় ওর চুল এর মধ্যেই, কিন্তু আরো অনেক বড় কলোনি ওর ব্রেন এর মধ্যে বাসা করেছে। সারাক্ষণ ওর মাথার ভিতরে হাঁটাচলা করছে আর মাঝে মাঝেই কুরে কুরে সেলস আর টিস্যু গুলো খাচ্ছে। বলতে পারেন এটাই ওদের খাদ্য হয়েছে এখন। ওর এই মাথা ব্যাথা আর মাথার ভিতরে সড়সড় করার কারণ এটাই। যেহেতু এতো মাস কেটে গিয়েছে, ওরা রেপ্লিকেট করতে করতে অগুন্তি হয়ে গিয়েছে। অপারেশন করতে হলে মাথা ন্যাড়া  করে ফেলতে হবে। অলরেডি ৬ মাস হয়ে গিয়েছে, আর দেরি করা ঠিক হবেনা, ট্রিটমেন্ট তাড়াতাড়ি করতে হবে।"
অপরাজিতা ও পালিতবাবুর মুখে কথা সরেনা। ওনারা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। ঠিক কি হয়েছে সেটা বুঝে উঠতেই ওনাদের সময় লেগে যায়।
..
ডাক্তার পাটির স্ক্যান প্লেটসগুলো ওনাদের দেখান। সাথে বুঝিয়ে বলতে থাকেন, "ব্রেন এর অনেকখানি জুড়ে তৈরী হয়েছে পিঁপড়ের বাসা। ভাগ্য ভালো যে সিস্ট ফর্ম করেনি। তবে ওর সার্জারিটা লাগবে, কারণ ব্রেন এর যে জায়গায় ওরা ঘাঁটি গেড়েছে, সেখানে হয়তো ডিম্ থাকতে পারে, সে ডিম্ রে দিয়ে শেষ করা যায়, কিন্তু তাতেও প্রচুর সেল আর টিস্যু পুড়ে যাবে, এবং সম্পূর্ণ নির্মূল হবে কি না এখনই বলা যাচ্ছেনা। তাই ওখানটা বাদ দিতেই হবে। ফাইনাল ট্রিটমেন্ট এর স্টেজ এ অর্থাৎ কিওর হয়ে যাওয়ার পরেও, ওর কিছু ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ আর স্পিচ ইত্যাদির মধ্যে তফাৎ হতে পারে যা জীবনভর নাও সারতে পারে। আর..."
.. ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে শুনছিলেন অপরাজিতা, তার মাথাতে কিছুই ঢুকছিল না। অবশেষে আর নিতে পারলেন না, উনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ওনাকে সুস্থ করতে করতে ড: ব্যানার্জি পালিতবাবুকে  বললেন, অপরাজিতাকে বোঝাতে আর ধাতস্থ করতে। প্রয়োজনে, পরিবারের কোনো একজন মহিলাকে ডেকে নিতে।
...
অপরাজিতার জ্ঞান ফিরতে ওনাকে রুমে পৌঁছে দিয়ে, পালিতবাবু কল করে তিনটে হট কফি আনতে বললেন রুমে। অপরাজিতা ছলছল চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বসে আছেন, ওদিকে দেবু ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছেনা। পালিতবাবু কফি শেষ করে দেবুকে নিয়ে বাইরে গেলেন আর পুরো ব্যাপারটা খুলে বললেন। দেবপ্রিয়া ভয়ে-শকে চেঁচিয়ে উঠলো, অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে, এই প্রথম, এতদিনে, বন্ধুর কষ্টে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। এরপর উনি দেবপ্রিয়ার মাকে ফোন করলেন আর পুরো ব্যাপারটা যে অনেক গুরুতর সেটা বোঝাতে চেষ্টা করলেন। মিস্টার পালিত বললেন, "আমি এখুনি বাড়ি পৌঁছে যাবো, বিস্তারিত বাড়ি গিয়ে বলবো। তুমি আমাদের জন্য কিছু রান্না করেছো তো? একটু বসো আর নিজের কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে রাখো। আর দেবু আমার সাথে আসছে বাড়িতে।" দেবুর মা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, মিস্টার পালিত থামিয়ে দিয়ে ফোনটা রেখে দিলেন।  
..
অপরাজিতার থেকে বিদায় নিয়ে ওনারা বাড়িতে ফিরে এলেন। স্নান খাওয়া সেরে পালিতবাবু নিজের স্ত্রীকে সমস্ত কথা বিস্তারিত বললেন। জয়া কিছুক্ষণ বিশ্বাস করতে পারলেন না, তারপর, বলেন, "কিভাবে হল? মানে এরকম কিভাবে হতে পারে?? শরীরে পিঁপড়ে ঢুকলে টের পাওয়া যায় না বুঝি? কখনো কি মল্লিকাকে কামড়ায়নি?"
-- "যে পিঁপড়েগুলো ঢুকেছে, সেগুলো ঢোকার সময় ছোট ছিল, তাই মল্লিকা কান কুটকুট করলে চুলকেছে হয়তো, কিন্তু বুঝতে পারেনি আসল ব্যাপারটা কি। বা ঘুমের মধ্যে হয়তো বুঝতেই পারেনি কখন পিঁপড়েগুলো ঢুকে গিয়েছে... আর হ্যাঁ, কামড়েছে, অজস্র বার, অনেক পিঁপড়ে কামড়েছে। তখন মল্লিকার মাথা সাংঘাতিক ব্যাথায় ছিঁড়ে গেছে। ও বারবার মাথা বা গলা কেটে ফেলতে চেয়েছে, নাহলে ছুরি দিয়ে মাথাটা খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। ওর কষ্টটা কি তুমি বুঝতে পারছো জয়া?"
-- "থামো.. থামো, আমি আর শুনতে পারছিনা। আজ যে রাত্রিবেলা ওদের একলা ছেড়ে চলে এলে কোনো ক্ষতি হবেনা?" জয়া জিজ্ঞেস করলেন।
-- "আগামীকাল মেয়েটার মাথার অপারেশন, আমি তোমাকে নিতে এসেছি কেবলমাত্র। আজ রাত্রে আমরা দুজনে ওখানে থাকবো। দেবু ঘুমিয়ে নিয়ে সকালে আসবে হাসপাতালে। সার্জারি সকাল ৯টায়, তার আগেই দেবুকে কিছু জলখাবার নিয়ে পৌঁছে যেতে হবে।" কিছুক্ষন পর, ওনারা দেবপ্রিয়াকে দরজা বন্ধ করতে বলে, সবটা বুঝিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন। হাসপাতালে যখন পৌঁছালেন, তখন বাজছে রাত ১১টা। ওনারা 'ভিসিটর'স লাউঞ্জ' এ বসে অপেক্ষা করতে থাকলেন। জয়া দুটো রুটি আর তরকারি এনেছিলেন, অনেক কষ্টে অপরাজিতাকে একটা রুটি খাওয়াতে পারলেন। একদিনেই অপরাজিতার চোখ মুখ বসে গিয়েছে, ক্লান্তি, উদ্বেগ আর চিন্তা মিলিয়ে চোখমুখের সাংঘাতিক অবস্থা হয়েছে। ঘুমের মধ্যেও মল্লিকার শরীর ব্যাথায় কেঁপে উঠছে থেকে থেকেই। কেমন নেতিয়ে পড়ে রয়েছে মেয়েটা। জয়া ওর দিকে তাকাতেও পারছিলেন না।
..
পরেরদিন সকাল ৮টায় দেবপ্রিয়াও জলখাবার কিনে নিয়ে পৌঁছে গেলো হাসপাতালে। খবর পেয়ে,অপরাজিতার বাড়ির কিছু আত্মীয়রাও এসেছেন। কিন্তু এতজনকে ভিতরে অ্যালাউ করেনি। তারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা অদ্ভুত এই অসুখ নিয়ে আলোচনা করছেন চাপা স্বরে। যদিও রক্ত লাগবেনা, তবুও স্ট্যান্ডবাই হিসাবে মল্লিকার ব্লাড গ্রুপ মিলিয়ে ওর নিকটতম দুই মাসতুতো ভাইকে রাখা হয়েছে। সার্জারি ঠিক ৯টায় শুরু হয়ে গিয়েছে। মল্লিকার মাথায় যেটুকু চুল অবশিষ্ট ছিল, তা ডাক্তারের নির্দেশে অপারেশন থিয়েটার এই কেটে একদম প্লাষ্টিক ব্যাগ এ করে নিয়ে গিয়ে ইলেকট্রিক মেশিনে এ জ্বালিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ডাক্তাররা। ক্ষত সেরে গেলেও, ন্যাড়া মাথায় ক্ষত এর দাগগুলো স্পষ্ট আর জায়গায় জায়গায় পিঁপড়ে কামড়ানোর ফলে চামড়া কুরে কুরে তুলে দিয়েছে, ঠিক যেন খুশকির ফ্লেক্স মনে হচ্ছে। ওনারা মাথাটাকে ডিসিনফেক্ট করলেন প্রথমে। তারপর সার্জারি শুরু হল। মাথার ভিতরে ইনস্ট্রুমেন্ট ঢোকাতেই, স্ক্রিন এ ভিতরের অবস্থা দেখে নার্স আর সহযোগী ডাক্তার যতজন ছিলেন, চমকে উঠলেন। একটা পুরো কলোনি তৈরী করেছে পিঁপড়েরা। তারা নড়ছে, যাতায়াত করছে। যে জায়গায় বেশি গভীর বাসা ছিল, ব্রেন এর সেই অংশটা নিপুন ভাবে সরিয়ে দিলেন নিউরোসার্জন ড:পাটির। সকাল ৯টা থেকে ১২টা বাজলো অপারেশন শেষ হতে।
...
অবশেষে ড: পাটির স্টিচ করে দিলেন মল্লিকার স্ক্যাল্প। বাকি ট্রিটমেন্ট ইঞ্জেকশান আর ওষুধে হবে। মল্লিকাকে রিকভারি রুমেই রাখা হবে আপাতত ৪৮ ঘন্টার মত, অবজারভেশন এ রাখতে হবে। তারপর বেড এ দেবেন। ড: পাটির বাইরে এসে মল্লিকার উদ্বিগ্ন পরিজনদের অপারেশন সফল হওয়ার খবর দিলেন। অপরাজিতা একটু ধাতস্থ হলেন এবং এক কাপ চা আর দেবুর আনা জলখাবার খাবেন জানালেন। সবাই একটু নিশ্চিন্ত হলেও, অপরাজিতা বুঝেছেন সামনে বিশাল লড়াইয়ের দিন আসতে চলেছে। তখনও মেয়েকে চোখে দেখেননি তাই ওনার উদ্বিগ্নতা কাটেনি।
..
৬ ঘন্টা পরে মল্লিকার জ্ঞান ফিরলো। ড: পাটির এসে মল্লিকা-মল্লিকা করে ডাকলেন ও মল্লিকার হাসিমুখের সাড়া পেয়ে, বুঝলেন যে মল্লিকা জ্ঞানে ফিরছে। অপরাজিতা আগে দেখতে গেলেন মেয়েকে। ২মিনিটের বেশি সময় দেয়না কাউকেই। মল্লিকাকে হাফ শোয়া করে বসিয়ে রাখা হয়েছে, যেভাবে সচরাচর ব্রেন সার্জারির পরে পেশেন্টকে রাখা হয়। মাথাতে হাত দেওয়াও বারণ। মল্লিকা ওনাকে দেখে এক গাল হাসলো। কিন্তু হাতে পায়ে যথারীতি স্ট্র্যাপিং করাই আছে। মেয়েকে দেখে অপরাজিতার চোখের জল বাঁধ মানলোনা কিছুতেই। ওনার পরে দেবপ্রিয়া ভিতরে গিয়ে মল্লিকার হাত ধরে চুপ করে তাকিয়ে রইলো। অদ্ভুত দেখতে লাগছে, ন্যাড়া মাথা আর মাথায় অনেক ওষুধ লাগানো আর মাথার পিছন থেকে নিয়ে উপর অবধি ড্রেসিং করে টেপ দিয়ে ঢাকা। মল্লিকাকে বসিয়ে রাখা হয়েছে, আধ শোয়া অবস্থায় মল্লিকা বসে আছে। দেবপ্রিয়া দুই বার মল্লিকা বলে ডাকলো। ওষুধের প্রভাবে মল্লিকা ঘুমিয়ে পড়েছে, দেবপ্রিয়াকে দেখতেও পারলোনা। দেবুর মা আর বাবা কিছুতেই ভিতরে যেতে রাজি হলেন না। ওনারা মল্লিকাকে এইভাবে দেখতে চান না। দেবপ্রিয়া বাইরে এসে নিজের বাবার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদেই ফেললো। দিনেরবেলায় আত্মীয়রা একে একে যে যার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। তারা এই সময় কেউই ছিলেন না, কিন্তু ফোন করে ক্রমাগত দেবু আর জয়ার থেকে খোঁজ নিচ্ছিলেন, কারণ অপরাজিতা কথা বলার মতন অবস্থায় ছিলেন না।
..
পালিতবাবু আর জয়া রাত ৮টার সময় নিজেদের বাড়ি রওনা দিলেন। অপরাজিতা কিছুতেই বাড়ি ফিরতে রাজি হলেন না। বাড়ি যাওয়ার আগে, হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে পালিতবাবু, দেবু  আর অপরাজিতার জন্য খাবার কিনে এনে দিয়ে গেলেন। দেবু আজ রাতটা অপরাজিতার সাথে থাকবে এখানে। রুমে একজন অ্যাটেন্ডেন্ট এর থাকার ব্যবস্থা আছে কিন্তু খাবার হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকেই খেতে হয়। দেবপ্রিয়া বাইরে ভিসিটর'স লাউঞ্জ এ বসে খেয়ে নিলো। অসম্ভব ক্লান্ত অপরাজিতা, রুমেতে, মেয়ের ফাঁকা বেড এর পাশের সোফাটায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। দেবপ্রিয়া সারা রাত ওনাদের দুজনকেই মাঝে মাঝে গিয়ে নজরদারি করে আসলো।
...
নির্বিঘ্নে কেটে গেল ৪৮ ঘন্টা। মল্লিকাকে ওর রুম এ শিফট করা হলো। সকালে একটু চা খেয়েছেন অপরাজিতা। পালিতবাবু নিজের মেয়েকে ফোন করে সকালেই মল্লিকার আর অপরাজিতার খোঁজ নিয়েছেন আর জলখাবার আর জয়াকে নিয়ে আসছেন সেটা জানিয়েছেন। মল্লিকাকে বেড এ দেখে অপরাজিতা শান্তি পেলেন। ওদিকে দেবপ্রিয়ার বাবা মা এসে পৌঁছালেন আর ড: পাটিরও একসাথে রুমে এসে ঢুকলেন। সব ডিটেলস নার্স এর থেকে জেনে নিয়ে বলেন, "ওষুধের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ওর বডি রেস্পন্ড করছে। তাড়াতাড়িই রিকভার হয়ে যাবে, চিন্তা করবেন না। তবে সম্পূর্ণ জ্ঞান না ফিরলে ওর কণ্ডিশন কেমন আছে বোঝা যাবেনা। আর তিন সপ্তাহ পর সেলাই শুকিয়ে এলে, ওর রেডিয়েশন শুরু করবো, তবে যতদিন না নির্মূল হচ্ছে ওর ইচিং থাকবে আর সেখানেই আমাদের সাবধানে থাকতে হবে। ও যেন এখন কাঁচা স্টিচ এ যেন হাত না দেয়, একদম চুলকাবেনা। যদিও আমরা কিছুটা ইচিং ইফেক্ট কমাবার ওষুধ দিয়েছি, তবে মাথা ব্যাথা আর ইচিং অনেকদিন থাকবে এখন, কারণ পিঁপড়েগুলো এখনো সম্পূর্ণ রূপে মারা যায়নি, প্রচুরসংখ্যক পিঁপড়ে এখনো বেঁচে, তারা পালাবার চেষ্টাও করছে, যে কারণে খুব অ্যাকটিভিটি বেড়ে যাবে। ওর মাথাতে এখন একটা বিশাল ক্যাওস বা বিশৃঙ্খলা চলছে। আপাতত সময়ের উপর ভরসা করতে হবে।"
...
পালিতবাবু অফিস এ যাবেন তাই ওখান থেকেই বেরিয়ে গেলেন। জয়া, দেবপ্রিয়া আর অপরাজিতা রুমের ভিতরে বসে রইলেন। মল্লিকা ঘুমাচ্ছে দেখে, অপরাজিতাকে অনেক বুঝিয়ে, একটুপরেই দেবপ্রিয়া একটা উবার  বুক করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। ওনার এবার ঠিক করে একটু ঘুমানো দরকার, নাহলে আগামীদিনের ধকল টানতে পারবেন না। অপরাজিতার এখন অনেক কাজ। পুরো বাড়ি পেস্ট কন্ট্রোল করতে হবে, মল্লিকার বিছানা ফেলে দিয়ে নতুন বিছানা আর খাট এর অর্ডার দিতে হবে। আরও অনেক অনেক কাজ আছে, তাই বাড়ি যাওয়াটা দরকার ছিল।
..
ওদিকে দেবু নিজের মায়ের সাথে রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে, হাতলটা ধরে, দরজা অল্প ফাঁক রেখে কথা বলছিলো, আর মাঝে মাঝেই চোখের জল মুছছিলো, এই ভেবেই, যে কতটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল ড: যামিনী দাস এর কাছে মল্লিকাকে নিয়ে যাওয়া। জয়াও মেয়েকে বোঝাচ্ছিলেন যে সে তো কোনো দোষ করেনি, ভালো ভেবেই সাহায্য করতে গিয়েছিলো। আর এরকম কিছু যে হয়, সেটাই তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ক্রমে ক্রমে দুজনেই কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
..
ওদিকে রুমের ভিতর মল্লিকা চোখ খুললো, আসে পাশে ভালো করে দেখলো, কিছুই চিনতে পারলো না। কেউ কথা বলছে খুব কাছেই, কিন্তু তাদের দেখতে পাচ্ছেনা মল্লিকা। চোখ দুটো কচলিয়ে নিলো। কিন্তু কি আবছা আবছা সব দেখা যাচ্ছে। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেনা কেন? সে কে? এখানে কোথায় আছে? ভালো করে বুঝতে গিয়ে নিজের ড্রিপযুক্ত হাত তুলে দেখলো। কিছু বুঝতে পারলো না। একটা হালকা জ্বালা হচ্ছে মাথার উপরে। মল্লিকা আসতে আসতে হাত তুলে মাথার উপরে রাখলো। কাপড় দিয়ে বাঁধা রয়েছে মাথা। এদিকে মাথাতে একটা যন্ত্রনা, জ্বালা আর অস্বস্তি বেড়েই চলেছে। কিছু বুঝতে পারছেনা সে। কাউকে ডাকবে কি? জোর করে মল্লিকা চেঁচিয়ে উঠলো, "শুনুন, কে আছেন?" কিন্তু আশ্চর্য্য, ঘড়ঘড় শব্দ হল শুধু, গলা দিয়ে এক ফোঁটা আওয়াজ বেরুলো না। মরিয়া হয়ে, মল্লিকা বারবার চেষ্টা করলো, কিন্তু স্তব্ধতা ছাড়া কিছুই বের হলো না গলা দিয়ে। চেষ্টা করলো হাত নাড়তে, কিন্তু স্ট্র্যাপে বাঁধা থাকায়, হাত দুটো নাড়তে পারলো না। অপারেশন এর ফলে মল্লিকার গলার স্বর আর স্মৃতির বেশ কিছুটা হারিয়ে গিয়েছে। ক্ষণিকের তরে অপারেশন এর পরপর স্মৃতি কিছুটা ফ্ল্যাশ করলেও, পরে সেটা বেমালুম চেপে গিয়েছে। সে চিনতেই পারছেনা নিজেকে বা হাসপাতাল এর এই রুমটা। মনে করতে পারছেনা কেন সে এখানে আছে ...
..
এদিকে মাথার জ্বালাযন্ত্রণা বেড়েই চলেছে। চুলকানিও থামছেনা। আর নেওয়া যাচ্ছেনা। মাথার পিছনে ঘাড়ের কাছে একটা কিছু হয়েছে মনে হয়। মল্লিকা অনেকটা জোর লাগিয়ে ইলাস্টিক স্ট্র্যাপ থেকে ডান হাতটা বের করে ফেললো। ওই হাতটি, ক্যানুলা আছে বলে, খুব শক্ত করে বাঁধা হয়নি।  হাতটা অনায়াসে বেরিয়ে আসতেই মল্লিকা মাথার উপরে হাত দিলো। আরে, এখানে তো পট্টি বাঁধা ! কেন? কি হয়েছে আমার? এটা কার বাড়ি? আমি নিজেই খুঁজে নেবো, আগে হাতের এই ছুঁচ খুলে ফেলি।" মল্লিকা লিকুইড অ্যান্টিবায়োটিক এর বোতলের ড্রিপটা ক্যানুলা থেকে সরিয়ে দিলো। তারপর ক্যানুলাটা এক টানে খুলে ফেললো। হাত থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এলো। মল্লিকার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, সেই ব্যাথা অনুভব করার মতন তার ক্ষমতা নেই তখন, কারণ তার মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে আর চুলকানিতে টেকা যাচ্ছেনা। মল্লিকা দুই হাত দিয়ে ব্যান্ডেজ টেনে খুলে ফেললো, ঘাড়ের কাছে করা সদ্য কাঁচা সেলাই ধরে জোরে জোরে চুলকাতে থাকলো। রক্তাক্ত কাণ্ড হলেও মল্লিকা কিছুতেই চুলকানি থামাতে পারছেনা। ক্যানুলার ছুঁচ তুলে খুবলে খুবলে চুলকাতে থাকে মল্লিকা, সাথে প্রচন্ড ব্যাথায় অব্যক্ত চিৎকার করতে থাকে, কিন্তু গলার আওয়াজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সেই চিৎকার গলার ভিতরেই চাপা পড়ে থেকে যায়। দেখতে দেখতে মল্লিকার স্ক্যাল্পের চামড়া সেলাইয়ের জায়গা থেকে আলাদা হয়ে দুই ধারে ঝুলতে থাকে।
..
সমাপ্তি
======
খাটের ধারে, রক্তাক্ত মল্লিকা, বীভৎস অবস্থায়, স্থানু হয়ে বসে আছে। বাইরে থেকে, দরজা খুলে মল্লিকা ঠিক আছে কি না দেখতে গিয়ে, হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন জয়া ও দেবপ্রিয়া । জয়া দৃশ্য দেখে চেঁচাতেও ভুলে গিয়েছেন আর দেবপ্রিয়া চেঁচিয়ে উঠে ভয়ে নড়তে পারছেনা। দেবপ্রিয়ার চিৎকার শুনে নার্স ডেস্ক থেকে দুজন নার্স দৌড়ে এসে দৃশ্যেও দেখে চমকে উঠেছে। ডাক্তার পাটিরকে কল করেই দুজনে মল্লিকার রক্ত বন্ধ কররার জন্য গজ আর টেপ নিয়ে দৌড়েছে। মল্লিকা শুধু মাথা নিচু করে রয়েছে, হুঁশে আছে কি না বোঝা যাচ্ছেনা।
.
বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গিয়েছে, তাও রক্তে ভেসে যাচ্ছে মল্লিকার পিঠ, জামা, সব। নার্স, ডাক্তার দৌড়াদৌড়ি করছেন। অপরাজিতাকেও হাসপাতাল থেকে কল দেওয়া হয়েছে। দেবু কোনোমতে নিজের বাবাকে কল করে ডাকতে পেরেছে। এই ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতচকিত।  শুধু মল্লিকার হুঁশ নেই, হাত দুটো ক্রমাগত ছেঁড়া স্ক্যাল্পের উপর খুঁচিয়ে চলেছে, মল্লিকা চুলকোচ্ছে, ওর যন্ত্রনাতেও আরাম হচ্ছে ...

==================================

বি:দ্র: ফেইডোল (Pheidole) পিঁপড়ে মানুষের মাথায় বাসা বানাতে পছন্দ করে। খুব রেয়ার হলেও, এই জিনিস ঘটা সম্ভব। তারা আসতে আসতে মাথার চুল খেয়ে নেয় আর অ্যালোপেসিয়া এনে দেয়। কান বা নাক দিয়ে লাল পিঁপড়ে বাসা বানাতে পারে মানুষের শরীরের ভিতর। টেপওয়ার্ম ছাড়াও আরও অনেক রকমের পোকা বা বাগ (BUG) মানুষের চামড়া দিয়ে বা কাল দিয়ে শরীরে বসবাস করে এবং এদের ট্রিটমেন্ট করে শেষ করতে হয়। এ ছাড়া , উকুন, মাছি, বা অন্য নানা পোকা কিন্তু মাথায় বসবাস করতে পারে যদি একবার ঢুকে যায়। শাক, বাঁধাকপি বা এই জাতীয় সব্জি, খুব ভালো করে ধুয়ে খাবেন। Tapeworm একজন লোকের মাথাতে প্রায় ২০ বছর বাসা করেছিল।

|| সমাপ্ত ||

[Image: Shocked-Open-Asianpiedstarling-size-restricted.gif]

[+] 6 users Like Sanjay Sen's post
Like Reply
যিনি লিখেছেন তাকে সহস্র কোটি প্রণাম। পিঁপড়ে বিষম ব্যাপার এবং ভীষম সাঙ্ঘাতিক। লেখার হাত পিয়ালীর অসাধারণ। তবে এটা ঠিক ভৌতিক নয়, একটু থ্রিলার এবং সাসপেন্স গোছের।
                                            Namaskar

[Image: 20230928-215610.png]
Like Reply
দুর্দান্ত  clps

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply




Users browsing this thread: