Thread Rating:
  • 40 Vote(s) - 2.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance স্মৃতি সুন্দরী
#41
(27-08-2023, 09:07 PM)a-man Wrote: নিয়তির উপরে কারো হাত নেই - চিরন্তন সত্য বাণী।

hum na samjhe thiy baat itni si, khwab sishe ke dunia patthar ki ....... https://www.youtube.com/watch?v=3CcFe3ks7S8

কোন নিয়তির কথা বলছেন ?

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
স্মৃতি সুন্দরী ২.১

বিদ্যা আর দোকান খোলেনি । সেই গোলাপ ফুলটা যেমন ছিল তেমনি রেখে দিয়ে সে নিচে নেমে এসেছিল । একজনকে পরশুদিন ব্লাউজ দেওয়ার কথা বলা আছে । তাই সে ভেবেছিল এক ঘন্টার জন্যে দোকান খুলে ব্লাউজের কাপড় মাপ মত কেটে রাখবে । এখন সে ভাবলো থাক , আগামীকাল বানিয়ে নেওয়া যাবে । অসুবিধা হবে না । তাই সে আর দোকান খুললো না ।

কিছুক্ষন মেয়ের সাথে কথা বলে বিদ্যা মেয়ে জামাইয়ের জন্য চা জল খাবার বানিয়ে দিয়েছিল । তারপর রাতের খাবার বানাতে রান্নাঘরে ঢুকে গেছিল । আজ সে একা খাবেনা । একা খেতে হবেনা । গত তিন মাস এই শূণ্যপুরিতে সে একা একাই খাচ্ছে। তিন বেলা কোনদিনও খাওয়া হয়নি । সকাল দুপুর না হলে রাতের বেলা কোন না কোন এক বেলা মিস যেতই । তার গলা দিয়ে খাবার নামতো না যে !

রান্নাঘরেই ছোট ডাইনিং টেবিল রাখা আছে । এখানেই খাওয়া দাওয়া করে সবাই । রাতে খাওয়ার সময় রান্নাঘরে শুধু থালা চামচের আওয়াজ , ভাত চেবানোর আওয়াজ আর সিলিং ফ্যানের আওয়াজ ছাড়া ঘরে আর কোন শব্দের অস্তিত্ব নেই । গোল ডাইনিং টেবিলের তিন দিকে তিন জন বসে রাতের খাবার খেয়ে নিচ্ছিল । ঘরটা ছিল শান্ত নিরব কোলাহলপূর্ণ । দিব্যাই প্রথম নিরবতা ভাঙলো , “ তোমরা দুজনেই ইন্ট্রোভার্ট চরিত্রের । কেউই প্রয়োজন ছাড়া কথা বলো না । তোমাদের জমবে ভালো । „

নতুন জামাইয়ের সামনে মেয়ের কথায় লজ্জা পেয়ে বিদ্যা বিক্রমকে বললো , “ তোমাকে আর এক পিস দেবো ? „

“ না না আমি নিয়ে নেব । এমনিতেও আমার হয়ে গেছে । „

“ এমা ! তুমি তো কিছুই খেলে না । „ বিদ্যা বললো , “ তুমি এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এলে কিন্তু আমি মাছ ছাড়া কিছু করতে পারিনি ....

বিদ্যার কথা শেষ হওয়ার আগেই বিক্রম বললো , “ এটাই আমার কাছে রাজভোগের সামিল । আমি অল্পই খাই। এর বেশি কিছু রান্না করলে আমি খেতে পারতাম না । „

এবার বিদ্যা মেয়েকে বললো , “ কাল থেকে তোর আর ডিউটিতে যেতে হবে না । বাড়িতেই থাকবি । কোন খাটাখাটনি করবি না । „

“ উফ্ এক কথা কতবার বলবে তুমি ! আমি মেটার্নিটি লিভ নিয়ে নিয়েছি । কাল থেকে যেতে হবে না । „

এরপর আর কেউ কথা বললো না । খাওয়া হয়ে গেলে সবার এঁটো কাঁটা বিদ্যা নিজের এঁটো থালায় জড়ো করলো । তারপর থালাটা নিয়ে এসে বাইরে উঠোনে এসে দুইবার মিনি মিনি বলে ডাকতেই যেন হাওয়ার ভিতরে থেকেই একটা সাদা কালো মিনি বেড়াল দেওয়ালের উপর এসে দাঁড়ালো। তারপর বিক্রমের গাড়ির ছাদে লাফ কেটে একেবারে বিদ্যার পায়ের কাছে এসে ম্যাও ম্যাও করে ডাকতে লাগলো । বিদ্যার সাইকেলের পাশে একটা প্লাস্টিকের ছোট থালা মত রাখা ছে । সেটাতেই এঁটো কাঁটা গুলো দিয়ে দিল । আর মিনি সেগুলো খেতে লাগলো ।

মিনিকে মাছের কাঁটা এবং এঁটো গুলো দেওয়া হয়ে গেলে বিদ্যা রান্নাঘরে এসে দেখলো বিক্রম ডাইনিং টেবিল থেকে এঁটো বাসন নিয়ে বেসিনে রাখছে বিদ্যা বললো , “ তুমি করছো কেন ? আমি করে নেব । „

বিক্রম হেসে বললো , “ আমার অভ্যাস আছে । আমিই বাড়িতে করি এসব । „

কথাটার মধ্যে যেন বিদ্যা নিজের ব্যর্থতার একটা ঝলক দেখতে পেল । বিদ্যা ভাবলো দিব্যা লিভিংয়ে থাকাকালীন সমস্ত কাজ বিক্রমকে দিয়ে করিয়েছে । হ্যাঁ এ ছাড়া আর কোন অপশন নেই । কারন দিব্যা রান্না করতে পারেনা , ঘর মোছা , ঝাঁট দেওয়া , কাপড় কাচা কিছুই করতে পারেনা । এটাই বিদ্যার ব্যার্থতা । সে তার মেয়েকে সাংসারিক জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ গুলো শেখাতে পারেনি ।

বিদ্যা আর কিছু বললো না । বিক্রমকে বাসন মাজতে দিল । এতদিন যে প্রশ্ন গুলো সে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছিল নিজের লজ্জার মাথা খেয়ে বিদ্যা সেই প্রশ্নগুলোর একটা করেই ফেললো , “ এত তাড়াতাড়ি সন্তান নিয়ে নিলে ! „

বিক্রম কিছু মুহূর্ত নিরব থেকে বললো , “ যেদিন দিব্যা এসে বললো আমি বাবা হতে চলেছি সেদিন কতোটা খুশি হয়েছিলাম আমি বলে বোঝাতে পারবো না । হয়তো ওই মুহূর্তটা আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত ছিল । „ তারপর আরো কিছুক্ষন চুপ থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো , “ আমি অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছি । আমি জানি না আমার বাবা মায়ের নাম কি । তাদের দেখতে কেমন । তারা আদেও বেঁচে আছে কি না , আদেও আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ আছে কি না আমি জানি না । তাই দিব্যা যখন বললো আমি বাবা হতে চলেছি তখন ভাবলাম ফাইনালি আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ একজন আসছে । „

বিক্রমের কথা শুনতে শুনতে বিদ্যার চোখে জল চলে এসেছিল । সে যে প্রশ্নটি করেছিল সেটার উত্তর এটা নয় । কিন্তু দিব্যার অন্তঃস্বত্তা হওয়ার কথাটা বিক্রমের কাছে কতোটা মূল্যবান তা তার কথাতেই বোঝা যাচ্ছে ।

বিক্রম থালা বাসন মেজে এক পাশে রাখছে আর বিদ্যা তার পাশে দাঁড়িয়ে ধোয়া থালা বাসন বাটি তুলে রাখছে । বিক্রম পড়ে আছে একটা হাফ হাতা গেঞ্জি। বিক্রমের শক্ত শরীরের বলিষ্ঠ কাঁধ থেকে দুই বাহু শক্ত পেশী নিয়ে গেঞ্জি থেকে বেরিয়ে আছে । বিদ্যার মনে হলো যেন কোন গম্বুজ দাড়িয়ে আছে তার পাশে । সেই গম্বুজের বাইরেটা যতো শক্ত এবং কঠিন তার ভিতরটা ততোটাই কোমল , নরম এবং আন্তরিকতায় ভরা । এমন পুরুষই তো সকল নারী জাতির আকাঙ্ক্ষা। তার মেয়ে একজন পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে পেরেছে এটা ভেবে বিদ্যার মাতৃ হৃদয়গর্বে ভরে উঠলো ।

এতদিন সে যে একটা অমূলক ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করছিল সেটা সে বুঝতে পারলো । এবং তার জন্য কিছুটা লজ্জাও পেল । কিছুক্ষন পর বিদ্যা মাথা নিচু করে আর একটা প্রশ্ন করলো , “ বিয়ে কবে করবে সেটা ভেবেছো ? „

দিব্যার সাথে বিদ্যার সম্পর্ককে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক বলা যায়না । এক মধ্যবিত্ত ঘরের মা মেয়ের সম্পর্ক যতোটা দৃঢ় ও অটুট বন্ধনের হয় তা বিদ্যা আর দিব্যার মধ্যে নেই । তাই যে প্রশ্ন গুলো দিব্যাকে জিজ্ঞাসা করার কথা সেগুলো জামাইকে জিজ্ঞাসা করতে হচ্ছে। দিব্যা কে জিজ্ঞাসা করলে সে এড়িয়ে যেত কিংবা সোজা মুখে উত্তর দিত না । তাই প্রশ্ন গুলো বিক্রমকে জিজ্ঞাসা করা যতোটা সহজ ততোটা দিব্যার কাছে নয় । তাই বিদ্যা বাধ্য হয়ে নিজের মাথা খেয়ে এই সদ্য পরিচিত যুবককেই প্রশ্ন গুলো করতে হচ্ছে ।

“ হ্যাঁ এই নিয়ে আপনার মেয়ের সাথে কথা হয়েছে । ও বললো বেবি আসুক তারপর বিয়ে করবো । „ তারপর হেসে বললো , “ যখন আমাদের বেবি বড় হয়ে দেখবে তার বাবা মায়ের বিয়ের ফটোতে সেও আছে তখন আর সে বলবে না তোমাদের বিয়েতে আমাকে নিয়ে যাওনি কেন ? „

কথাটা শুনে বিদ্যাও মুচকি হেসে ফেললো । হ্যাঁ এটা হয় । সন্তান কয়েক বছর বড় হলে সে বাবা মায়ের বিয়ের অ্যালবাম দেখে জিজ্ঞেস করে --- তোমাদের বিয়েতে আমাকে নিয়ে যাওনি কেন তোমরা ? বলে কেঁদেকেটে বাড়ি মাথায় তোলে ।

বাসন মাজা হয়ে গেলে বিক্রম নিজের ঘরে চলে এলো । এসে দেখলো দিব্যা ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে । বিছানায় শুয়ে বিক্রম দিব্যাকে জিজ্ঞেস করলো , “ বাইরে একটা সাইকেল দেখলাম ওটা কার ? „

“ ওটা আমারই ছিল । আমি ওটা চড়ে কলেজে যেতাম। এখন মা ব্যাবহার করে । „

বিক্রম জিজ্ঞাসা করলো , “ কি জন্য ? „

“ মূলত বাজার করতে যায় , মাঝে মাঝে ব্যাঙ্কেও যায় ....

বিক্রম দিব্যার কথা শেষ হওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো , “ এখানে বাজার কোথায় ? „

“ ওই যে আসার সময় একটা চার মাথার মোড় পড়লো না ! মাঝখানে ছোট বিবেকানন্দের মূর্তি আছে । ওখানেই বাজারটা বসে । „

“ ও । „

“ কেন জিজ্ঞেস করছো ? „

“ কালকে বাজার করবো তাই । „

দিব্যা আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না । কিছুক্ষন পরেই সে ঘুমিয়ে পড়লো । থালা বাসন মেজে সমস্ত লাইট বন্ধ করে দরজায় তালা দিয়ে নিজের ঘরে উঠে এসেছিল বিদ্যা । বাসন মাজায় বিক্রম সাহায্য করায় অন্যান্য দিনের থেকে আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে এলো সে । বিছানা ভালো ভাবে ঝেড়ে তাতে বসে ভাবলো নাইটি পড়বে কি না । না থাক বলে বিছানায় কোমল শরীরটা এলিয়ে দিল । মাথার ধারে টেবিল থেকে স্বামীর ফটোটা নিয়ে সে বললো তোমার মেয়ে ভালো ছেলেকে বেছে নিয়েছে । খুব সুখে থাকবে ও । দিব্যা মানিয়ে চলবে কিনা জানি না কিন্তু তোমার জামাই ঠিক মানিয়ে নেবে । ছেলেটা খুব ভালো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফটোটা আবার টেবিলে রেখে দিল । বাকি কথা আর সে বললো না । এটা বললো না যে এই ছেলেটাই তাকে এগারো বার বছর আগে গোলাপ দিয়েছিল । এমনকি ছেলেটাকে মনে মনে সে পছন্দও করতো এটাও আর বললো না । লুকিয়ে গেল নিজের স্বামীর থেকে । মশারি টাঙিয়ে লাইট নিভিয়ে সে শুয়ে পড়লো । অনেক দিন পর খুব ভালো ঘুম হলো বিদ্যার ।

বিক্রমের কাকভোরে ওঠার অভ্যাস। এখানেও সেটা বজায় রইলো । উঠলো ছটা বাজার কিছু আগে । দিব্যাকে না জাগিয়ে কোনরকম সাড়াশব্দ না করে বিক্রম ঘর থেকে বেরিয়ে এলো । হাতে তার ব্রাশ আর কোলগেট । বাড়ির ভিতরের বাথরুমে ঢুকে ব্রাশ করে বেরিয়ে এলো । রান্নাঘরে ঢুকে এক বোতল জল খেয়ে বেরিয়ে এলো । দেওয়ালের পেরেকে টাঙানো ঘরের চাবি দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো । বিদ্যার লেডিস সাইকেলটা নিয়ে মেন গেট খুলে বেরিয়ে গেল বাজার করতে ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বিদ্যা নিজেকে নতুন রূপে আবিষ্কার করলো । এতদিন যে কথাটা তাকে ভাবাইনি সেই কথাটাই তাকে নতুন ভাবে বাঁচার রসদ দিল । কয়েক মাস পর তার নাতি কিংবা নাতনী হবে । আবার তার ঘরে এক শিশুর কান্না , খিলখিল হাসির আওয়াজ শোনা যাবে । এই সুখানুভুতিটাই সে এতদিন উপলব্ধি করতে পারেনি । রাতে ঘুমের সময় কেউ যেন তার নিভু নিভু প্রাণপ্রদীপে নতুন করে বাঁচার জন্য এই উপলব্ধির তেল দিয়ে দিয়েছে । মন হাল্কা তাই আজকে তার খুব গান গাইতে ইচ্ছে করছে । যেমন ভাবা তেমন কাজ । সে খাট থেকে নেমে মশারি গুটিয়ে গুছিয়ে রাখলো । নিচে নেমে ব্রাশ করে মুখ ধুয়ে আবার উপরে উঠে এলো । খাটের নিচ থেকে টেনে হারমোনিয়াম বার করে তার ধুলা ঝেড়ে নিল । তারপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গান গাইতে শুরু করলো ।

বাজার করে ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেল । মেইন গেট খুলে বাড়ির উঠোনে ঢুকতেই একটা মধুর সুরেলা কন্ঠের গান শুনে বিক্রম থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো । এই স্বর আশপাশের পরিবেশকে হাল্কা করে দিয়েছে । এই কন্ঠ বাতাসে এক মাদকতার সৃষ্টি করছে । বিক্রম উঠোনে দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে শুনলো গানটা আসছে ছাদের ঘর থেকে ।  

খোলো দ্বার বধুয়া রয়েছে সে দাঁড়ায়ে
দেখ পরান উছলি যায় রয়েছে সে দাঁড়ায়ে

খোলো দ্বার বধুয়া রয়েছে সে দাঁড়ায়ে

আজ দখিন হাওয়ার সাথে সে হৃদয়ে নাচিয়া যায়
আজ বধুয়া রাখি পাতে কোন‌ স্বপন এলো হায়

খোলো দ্বার বধুয়া রয়েছে সে দাঁড়ায়ে

পিহু পিহু পিহু কাহার বলে যায়
ঐ মনেরই বাঁধনে, অনেক যতনে
রেখেছি ধরিয়া তারে

স্বপন ঘোরে ছুঁইয়া মোরে
বাঁধিবে মায়ারও ডোরে

খোলো দ্বার বধুয়া রয়েছে সে দাঁড়ায়ে
দেখ পরান উছলি যায় রয়েছে সে দাঁড়ায়ে

গান শুনতে শুনতে বিক্রম বিভোর হয়ে গেছিল ।  হ্যাঁ এই সেই গলা যা এগারো বছর আগে সে শুনেছিল । তারপরেই তো বিদ্যাকে নিজের The woman বানিয়ে ছিল সে । সেই কন্ঠের গান শুনে এগারো বছর আগের স্মৃতি আবার তরতাজা হয়ে জেগে উঠলো । চোখের সামনে যেন সেই পুরানো ঘটনা গুলো দেখতে পেল ।

শোভাবাজার রাজবাড়ীর রাস্তা ধরে রাজবাড়ী ছাড়িয়ে আরো কিছুটা যাওয়ার পর একটা পুরানো বড় সাবেকি আমলের দুতলা বাড়ি পড়ে । মাঝখানে উঠোন ফাঁকা রেখে চারিদিকে বর্গাকারে বাড়ি । উপর নীচ মিলিয়ে প্রায় কুড়িটা ঘর আছে এই বাড়িতে । এটাই সেই অনাথ আশ্রম যেখানে বিক্রম জ্ঞান হওয়া ইস্তক আছে । এই অনাথালয়ের নাম “ কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন । „  বাড়িটা বড় হলেও প্রায় পঁয়ত্রিশ জন অনাথ আর ছয় জন সদস্য থাকে যারা এই অনাথদের দেখাশোনা করে ।

সিনেমার চরিত্র গুলোর যেমন অনাথকে আপন করে নেওয়ার একটা গুন দেখতে পাওয়া যায় বাস্তব চরিত্র গুলো কিন্তু ঠিক তার উল্টো । দিদি কিংবা দাদার সন্তানদের আপন করে নেওয়ার দৃষ্টান্ত ভূরি ভূরি থাকলেও পর কে আপন করে নেওয়ার ঘটনা সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না । তাই এই আবাসিকের বাচ্চারাও কচি থেকে কিশোর হয়ে যায় কিন্তু ঘর পায় না । কালেভদ্রে এক আধ জন আসে , এসে দেখে চলে যায় । বেশিরভাগ খালি হাতে গেলেও এক দুই জন কোন অনাথকে আপন করে নেয় । তখন সেই অনাথের উপর বাকিদের খুব হিংসে হয় ।

তাদের মধ্যেই একজন বিক্রম । বিক্রমের বয়সি আরো চার জন আছে । এরা সবাই পাশের এক সরকারি কলেজে একসাথে পড়ে । প্রতি বছরেই সরস্বতী পূজায় একটা বড় করে অনুষ্ঠান হয় । বিক্রম তখন উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে বসে আছে । তার বয়স সতেরো হতে আর দুই মাস বাকি । সেই অনুষ্ঠানেই এলো বিদ্যা গান গাইতে । আর মায়ের সাথে এলো নয় দশ বছরের দিব্যা ।

বিক্রমের কোন আগ্রহ নেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে । কিন্তু আবাসিকের নিয়ম সবাইকে থাকতেই হবে । তাই সে আছে । প্রথম প্রথম সে খেয়াল করেনি কিন্তু চারিদিকে দৃষ্টি ফেলতে সে দেখলো সামনের দিকে মাসির পাশেই এক মহিলা বসে আছে । লাল পাড় সাদা শাড়ি , টগর ফুলের মালা খোঁপায় বাঁধা । সৌন্দর্যের এমন নিদর্শন সে আগে কখনো দেখেনি। তাই তার মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এলো , “ এটা কে ? „

প্রশ্নটা তার পাশে বসে থাকা সৈকত আর ভূপেন শুনতে পেল । তারা জিজ্ঞেস করলো , “ কার কথা বলছিস ? „

“ ওই যে লাল পাড় সাদা শাড়ি , মাসির পাশে বসে আছে । „

“ ও । আমাদের মনীষা ম্যামের বান্ধবী । ম্যাম এনেছে গান গাওয়ার জন্য । „ তারপর সৈকত ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো , “ কেন পছন্দ হয়েছে নাকি তোর । „

বিক্রম কিছু বললো না বটে কিন্তু সে ড্যাবড্যাব করে মহিলার দিকে তাকিয়েই রইলো । বিদ্যা কিছুক্ষন পরেই বিক্রমের দৃষ্টি দেখতে পেল । ছেলেটা একভাবে তার দিকেই তাকিয়ে আছে ।

কিছুক্ষন পরেই বিদ্যা মঞ্চে উঠে গান গাইতে শুরু করলো । বিদ্যা গান গাওয়ার সময় বিক্রমের দুই পাশেই বসে ছিল ভূপেন আর সৈকত । তারা কনুই দিয়ে বিক্রম কে খুঁচিয়ে বললো , “ যদি পছন্দ হয় তাহলে বলে ফেল । হ্যাঁ বলে ফেল । পেটে কথা চেপে রাখতে নেই । „

বিক্রম লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো । সেটা দেখে সৈকত আর ভূপেন নিজেদের মধ্যে চোখাচুখি করলো । তারপর বললো , “ যাকে পছন্দ হয় তাকে কি দিতে হয় জানিস ? „

“ কি ? „

“ আরে পাগলা এটাও জানিস না । গোলাপ ফুলরে গোলাপ ফুল । একটা গোলাপ ফুল দিয়ে দে । „

“ গোলাপ ফুল আমি কোথায় পাবো ? „

“ কেন , মোড়ের মাথায় একজন বসে দেখিস নি তুই ? ওখান থেকেই নিয়ে আয় । „

বিক্রম সত্যি সত্যি উঠে চলে যেতে দুজনে অট্টহাসি হেসে উঠলো । বিক্রম আবাসিক থেকে বেরিয়ে মোড়ের মাথায় এলো । একটা ল্যাম্পপোষ্টের তলায় ফুল বিক্রেতা কে দেখতেও পেল । তার সামনে গিয়ে বিক্রম জিজ্ঞেস করলো , “ গোলাপ আছে ? „

“ হ্যাঁ আছে । কটা নেবে ? „

“ একটাই নেব । „

“ তিন টাকা দাও । „

বিক্রম পকেট থেকে একটা পাঁচ টাকার কয়েন বাড়িয়ে দিল । আবাসিকের কারোর কাছেই টাকা থাকার কথা নয় । জামা কাপড় , বই খাতা , থাকা খাওয়া সবই আবাসিক থেকে দেওয়া হয় । তবুও বাচ্চাদের মাঝে মাঝে বাইরের খাবার খেতে ইচ্ছে করে তাই আবাসিকের প্রধান প্রতিভা দেবী আবাসিকের রান্নার মাসির কাছে টাকা দিয়ে রাখেন । কারোর কিছু খেতে ইচ্ছে হলে সে মাসির কাছে থেকে চেয়ে নেয় । পরে সেটা হিসাব করা হয় । অবশ্য কাউকেই পাঁচ দশ টাকার বেশি দেওয়ার নিয়ম নেই । প্রতিভা সমাদ্দার বাইরে খুব গম্ভীর প্রকৃতির আচরণ করলেও ভিতরে তিনিও একজন মা ।

দু টাকা আর একটা গোলাপ নিয়ে সে ফিরে এলো । গোলাপ ফুল তো কিনলো কিন্তু দেওয়ার সাহস তার হলো না ।

বিদ্যা কোন বড় গায়িকা নয় । মণীষা তাকে রিকোয়েস্ট করায় সে এসেছে । তাই মনীষার দায়িত্ব তাকে ছেড়ে আসার । তাই একরকম বিদ্যা বেরিয়ে আসার সময় দিব্যা আর মণীষা ছাড়া কেউই নেই । যখন বিদ্যা একাবারে গেটের কাছে পৌঁছে গেছে তখন বিক্রম বিদ্যার পিছনে গিয়ে বললো , “ এটা আপনার জন্য । „

বিদ্যা পিছন ঘুরতে বিক্রম তার ডান হাতে ধরা গোলাপ ফুলটা এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি গলায় বললো , “ এটা আপনার জন্য । „

বিদ্যা ছেলেটাকে চিনতে পারলো । এই ছেলেটাই তাকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছিল । সে গোলাপ ফুলটা নিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলো , “ তোমার নাম কি ? „ গোলাপ ফুলটা নেওয়ার সময় বিদ্যার হাত স্থির থাকলেও তার মন মৃদু মন্দ কেঁপে কেঁপে উঠছিল । কারন বিক্রমের চোখে সে ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে । হ্যাঁ ঠিক এইভাবেই একদিন দিব্যার বাবা তাকে গোলাপ ফুল দিয়েছিল । সেই দিনও সে গান গেয়েছিল আর মুগ্ধ হয়েছিল সবাই । আর যখন দিব্যার বাবা তাকে গোলাপ দিয়েছিল তখন দিব্যার বাবার চোখও ঠিক এই ছেলেটার মত জ্বলজ্বল করছিল ।

তখন ট্যাক্সির ভিতরে বসে থাকা মণীষা গলায় তীব্র ব্যাস্ততা ফুটিয়ে তুলে বললো , “ এই বিদ্যা ! চল এবার , না হলে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে তো ! „

বিদ্যা তার বান্ধবীর দিকে ফিরে , “ আসছি „ বললো । বিদ্যার ‘ আসছি , বলার সাথে সাথে বিক্রম তার নামটা বললো , “ আমার নাম বিক্রম রায় । „

নামটা শুনে বিদ্যার মৃদু মন্দ কেঁপে ওঠা মনে ঝড় বইতে শুরু করলো। বিদ্যা কিছু না বলে মেয়েকে নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়লো । হাতে তার গোলাপ ফুলটা সযত্নে ধরা ।

বিদ্যার গান শেষ হতেই বিক্রমেরও স্মৃতিমন্থন শেষ হলো । সে বর্তমানে ফিরে এলো । বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও এই গান তার পুরানো স্মৃতিকে তরতাজা করে তুললো । তার সাথে জেগে উঠলো অধিকার । পুরানো অধিকার যা সে বিদ্যা কে গোলাপ ফুল দিয়ে অর্জন করেছিল । সাইকেলটা রেখে , তার থেকে বাজারের ব্যাগ বার করে ঘরে ঢুকতেই দেখলো দিব্যা হাই তুলতে তুলতে ঘর থেকে বার হচ্ছে। বিক্রম কে দেখে সে বললো , “ মা গান গাইছে । বহুদিন মা গান গায় না । আজ হঠাৎ গাইছে কেন বুঝতে পারছি না...

“ হয়তো তুমি ফিরে এসছো সেই খুশিতে গান গাইছে । „

দিব্যা কোন কথা না বলে গত কালকে আনা ব্যাগ থেকে ব্রাশ আর কোলগেট বার করে বাথরুমে চলে গেল । বিক্রম বাজারের থলিটা রান্নাঘরে রেখে এসে লিভিংরুমের সোফায় এসে বসলো ।

সোফায় বসতেই বিদ্যা সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো । কিন্তু এ কে ? কাকে দেখছে বিক্রম ? কাল যে মহিলাকে সে দেখেছে আর এখন যাকে দেখছে তারা যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই নারী । এক রাতেই বিদ্যার চোখের নিচে কালো ছাপ মুছে গেছে । মুখে ক্লান্তির ছাপ নেই । এক রাতেই যেন তার মুখের হারিয়ে যাওয়া জেল্লা ফিরে এসেছে । আর শরীরে যৌবনের ঢেউ খেলেছে । সুডোল পাছা জোড়া , বেঁকে যাওয়া কোমর , মানানসই দুটো নিটোল স্তন , সরু পেলব রসালো ঠোঁট সবই যেন আগের থেকে বেশি যৌবন বহন করছে ।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই বিদ্যা বিক্রমকে দেখতে পেল । দেখে বিক্রমের উদ্দেশ্যে বললো , “ আমি ঘর ছাট দিয়ে এক্ষুনি চা করছি  । আজ একটু গান গাইতে ইচ্ছে হলো ...

বিক্রম নিজের চোখকে এমনকি নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারলো না । সে তো এমন ছিলনা । সে তো কখনোই কোন মেয়ের শরীরের দিকে তাকাতো না । তাহলে আজ হঠাৎ বিদ্যার নারী শরীরের সৌন্দর্য কেন দেখলো ? বিক্রম নিজের এহেন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে পড়লো । কিন্তু বিদ্যার করার প্রদুত্তরে কিছু বলতে হয় । তাই সে বললো “ না না ঠিক আছে । আমি শুনছিলাম আপনার গান । খুব ভালো গলা আপনার ...

বিদ্যা বিক্রমের প্রশংসার কোন জবাব না দিয়ে বিদ্যা দরজার কোনায় রাখা ঝাঁটা হাতে নিয়ে উপরে চলে গেল । নিজের ঘর ঝাঁট দিয়ে সিড়ি ঝাট দিতে দিতে সে নিচে নেমে এলো ।

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর ছেলেদের মনের কামনা একটু বেড়ে যায় । আর সেই কামনা তাদের লিঙ্গের আকার বেড়ে যাওয়া দেখে বোঝা যায় । এখন নিজের জীবনের প্রথম ভালোবাসাকে দেখতে পেয়ে বিক্রমের বুকের কামনা আরো হাজারগুণ বেড়ে গেল । এখন সেই কামনার কারনেই হোক কিংবা পুরানো অধিকারের কারনেই হোক বিক্রমের চোখ বিদ্যার শরীরের আনাচে কানাচে ঘুরতে লাগলো ।

বিক্রম সোফায় বসে বসেই গুরু নিতম্বিনী বিদ্যার পাছার দুলুনি দেখতে পেল । সাধারণত বাঙালি মেয়েদের পাছায় উচ্চতা থাকে না । কিন্তু কয়েকজন ব্যাতিক্রমি হয় । বিদ্যা তাদের মধ্যে একজন । শরীরের সাথে মানানসই পাছা জোড়া তার শারিরীক সৌন্দর্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে । না চাইতেও শাড়ি ব্লাউজের উপর দিয়েই বিদ্যার শরীরের খুঁটিনাটি দেখে নিয়ে বিক্রম চোখ নামিয়ে নিল । এবং নিজের এরুপ আচরণে বিস্মিত হলো ।

কিছুক্ষনের মধ্যেই সকালের জলখাবার খেয়ে নিল । বিদ্যা দোকান খোলার আগে দোকানের সামনের রাস্তায় জল ছিটিয়ে একটু ঝাঁট দিয়ে নেয় । বিদ্যা উঠোনের কলঘর থেকে ছোট জল ভর্তি বালতি নিয়ে বার হতেই বিক্রম বললো , “ আমাকে দিন । „

“ আমি পারবো । „

“ আমাকে দিন না । „ বলে বিদ্যার বাঁধা একরকম অগ্রাহ্য করেই বিদ্যার হাত থেকে বালতি নিয়ে বললো , “ রাস্তায় দেবেন ? „

“ হ্যাঁ । „

বিক্রম দোকানের সামনের অংশটুকু জল ছিটিয়ে দিলে বিদ্যা ঝাঁট দিতে শুরু করলো । বিদ্যার ঝাঁট দেওয়া হয়ে গেলে বিক্রম দোকানের শাটারের তালা খুলে শাটার তুলে দিল । বিদ্যা দোকানে ঢুকলে বিক্রম দোকানের ভিতরটা দেখতে লাগলো । দোকানের তিন দিকেই ছোট বড় কাঠের তৈরী শাড়ির তাক । তারমধ্যে আছে অজস্র লাল সবুজ হলুদ গোলাপী নিল কমলা ডোরাকাটা বিভিন্ন রঙের শাড়ি । না , শুধু শাড়ি নয় । প্রথম দেখায় সব শাড়ি মনে হতে পারে কিন্তু এর মধ্যে শাড়ি বাদেও আছে গামছা , তোয়ালে , মশারি , বিছানার চাদর । আর মেঝেতে আছে একটা বড় খাট । খাটটা মেঝে থেকে আট নয় ইঞ্চি উঁচু। খাটে একটা সাদা চাদর বেছানো। বোঝাই যাচ্ছে এই খাটে কাস্টমারদের শাড়ি খুলে দেখানো হয় । প্রায় সব শাড়ি বা জামা কাপড়ের দোকানেই বিক্রম এরকম খাট থাকতে দেখেছে । আর আছে একটা সেকেলের সেলাই মেশিন আর তাতে বসে কাজ করার জন্য একটা উঁচু টুল । মেশিনের পাশে চোখ পড়তে বিক্রম দেখলো সেখানে দুটো কার্ড বোর্ডের বাক্সে সুতোর গুলি ভর্তি । আর ঠিক তার পাশেই আছে থাক থাক কাপড় । নানা রঙের কাপড় । মনে হয় এই কাপড় গুলো দিয়েই ব্লাউজ বানানোর কাজ হয় ।

বিদ্যা দোকানে ঢুকে একটা তাক থেকে পছন্দ মত ব্লাউজের কাপড় বার করতে লাগলো । আর বিক্রম বসলো খাটের উপর । বসতে না বসতেই এক মধ্য বয়স্ক লোক এসে দোকানের সামনে দাঁড়ালো । দাঁড়ালো না বলে থমকে দাঁড়ালোই বলা ভালো । লোকটার দৃষ্টি দোকানের খাটের উপর বসে থাকা বিক্রমের দিকে । একটা অচেনা অজানা লোককে এইভাবে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিক্রম বেশ বিরক্ত হলো । বিক্রম ভালো ভাবে দেখলো লোকটাকে । একটা ফুল প্যান্ট , আর সাদার উপর ঘীয়ে রঙের ডোরাকাটা হাফ হাতা জামা । জামা প্যান্ট দুটোই হাতে বানানো । পায়ে কালো চামড়ার জুতো । লোকটার বয়স আনুমানিক চল্লিশের উপরেই হবে । মাথার চুল ডান দিকে সিঁথে কাটা আর নাকের নিচে একটা হুশুড় মুশুড়ের মত গোঁফ।

লোকটার ভুরু কুঁচকে থাকা চোখের চাহনি দেখে বিক্রম বুঝলো যে লোকটা বলতে চাইছে তুমি কে হে ছোকরা আগে তো এখানে দেখিনি । আর এখানে কিই বা করছো তুমি ?

লোকটার চাহনিতে বিরক্ত প্রকাশ না করে বিক্রম জিজ্ঞেস করলো , “ কিছু বলবেন ? „

বিক্রমের প্রশ্নে লোকটার কিছু বলার আগে বিদ্যা পিছন ঘুরে লোকটাকে দেখলো তারপর হাঁসি মুখে বললো , “ বাইরে দাঁড়িয়ে কেন , ভিতরে আসুন । „

লোকটা বিক্রমের দিকে দৃষ্টি রেখেই ভিতরে ঢুকে কাঠের টুলটায় বসলো । বিদ্যা লোকটার দৃষ্টি বুঝতে পেরে বললো , “ এ হলো আমার জামাই । কালকেই এসেছে । সন্ধ্যাবেলায় । „

এবার লোকটা যেমন মুখ করলো সেটার সাথে কিছুক্ষন আগের চাহনি মিল খায়না । লোকটা হে হে করে হেসে বললো , “ তুমিই আমাদের দিব্যার বর । আরে আগে বলবে তো ! আমি খামোখাই ভাবছিলাম কে না কে বসে আছে । „ তারপর মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বললো , “ এ হে আমারই বোঝা উচিত ছিল ! „

বিক্রম লোকটার এইরকম কথায় কি উত্তর দেবে বুঝতে পারলো না । তাই সে শুধু নমস্কার জানিয়ে নিজের নামটা বললো , “ আমার নাম বিক্রম । „

“ নাম তো আগেই শুনেছিলাম তোমার । চাক্ষুস এই প্রথম দেখছি । সবাই বৌ দেখতে যায় আর আজ আমার জামাই দেখা হলো । „ বলে হে হে করে হেসে উঠলো তারপর হঠাৎ হাসি থামিয়ে বললো , “ আমার নামটাই তো বলা হলো না । আমার নাম তীর্থঙ্কর দেবনাথ । সম্পর্কে আমি তোমার খুড়শশুড় হই । ও হে এটা তিলোত্তমার বিয়ের কার্ড । তোমাদের সপরিবারে নেমতন্ন রইলো । „

এতক্ষণ পর বিদ্যা হাসিমাখা মুখে জিজ্ঞেস করলো , “ কবে ঠিক হলো ? „

“ এই তো অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে । পনেরোই ডিসেম্বর পড়ছে । আসতে হবে কিন্তু সকলকে । „

“ অবশ্যই আসবো । চা খাবেন ?  „

“ হ্যাঁ হলে মন্দ হয় না । „

বিদ্যা চা বানানোর জন্য উঠে চলে যেতেই তীর্থঙ্কর একটু কেশে নিয়ে মুখে কৃত্রিম গাম্ভীর্য ধারন করে বললো , “ তোমাকে আপন ভেবেই বলছি । তুমি বিয়ে করেছো তুমি বুঝবে । ঘরে বউ না থাকলে ঘরকে ঘর মনে হয় না । আমার স্ত্রী তিন মাস আগে মারা গেছে । „ কয়েক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে আবার বললো , “ তোমার শাশুড়িকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি । হ্যাঁ বা না কিছুই বলেনি । তুমি আর দিব্যা একটু বুঝিয়ে বললে ও ঠিক রাজি হবে । বুঝতেই পারছো ঘরে একজন গৃহিণী না থাকলে চলে না । যতোই জয়েন্ট ফ্যামিলি হোক বড্ড একা একা লাগে । „ বলে তীর্থঙ্কর থেমে গেল । আর তীর্থঙ্করের কথা শুনে বিক্রম কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মত হতভম্ব হয়ে বসে রইলো । কিছুক্ষন পরেই বিদ্যা চা নিয়ে এলো । তীর্থঙ্কর সেটা খেয়ে উঠতে উঠতে বললো , “ আমার দোকানে এসো একদিন । আমার কলেজ স্ট্রিটে একটা বইয়ের দোকান আছে । ভালো ডিসকাউন্ট দেব । „

“ হ্যাঁ আসবো । „

বিদ্যা একটা ছোট পেয়ালাতে তে চা আর মেরি বিস্কুট আনলো । তির্থঙ্কর সেটা নিয়ে খেতে শুরু করলো । এক চুমুক চা খেয়ে তীর্থঙ্কর বললো , “ মনীষার খুব আগ্রহ ছিল এই বিয়েতে । শখ করে কয়েকটা শাড়িও কিনেছিল পড়বে বলে । কিন্তু দেখে যেতে পারলো না । শাড়ি গুলোও আলমারিতে পড়ে আছে । সবই কপাল । „

এর উত্তরে বিদ্যা কিংবা বিক্রম কেউই কিছু বললো না । কিন্তু বিক্রম বুঝতে পারলো যে এই লোকটার স্ত্রী মণীষাই হলো তাদের আবাসিকের মণীষা ম্যাম । বিক্রমের মনটা কিছুটা হলেও খারাপ হয়ে গেল । সেই মণীষা ম্যামের খবর সে এতদিন পর পেল তার তার মৃত্যুর পর । চা খেয়ে মেঝেতে পেয়ালা রেখে তীর্থঙ্কর বললো দিব্যা মার সাথে একটু দেখা করে আসছি । „

বিদ্যা বললো , “ ও টিভির সামনে বসে আছে । আপনি যান । „

তীর্থঙ্কর দোকানের পিছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো । কিছুক্ষন পর দিব্যার সাথে দেখা করে তীর্থঙ্কর এবার দোকানের পিছনের দরজা দিয়ে না ঢুকে বাড়ির মেন গেট দিয়ে বেরিয়ে আসলো। দোকানের সামনে এসে বিক্রমের উদ্দেশ্যে বললো , “ আমি আসছি বিক্রম । তুমি একবার আমার দোকানে যেও । „ বলে হনহনিয়ে চলে গেল ।

বিক্রম এই লোকটার চরিত্রটা ঠিক বুঝতে পারলো না । কেমন লোক ইনি ? জামাইকে বলছে শাশুড়িকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য রাজি করাতে । আর শেষের ওই দোকানে এসো ডিসকাউন্ট দেব কথাটা এমন ভাবে বললো যেন তুমি তোমার শাশুড়িকে দাও আর ডিসকাউন্টে বই নাও এরকম একটা ডিল করছে ।

বই পড়ার শখ বিক্রমের তেমন নেই । খবরের কাগজ পড়ার শখ আছে কিন্তু সেটাকে বইপোকা বলা যায় না । সব মানুষের বেঁচে থাকার জন্য শরিরের খোরাকের সাথে মনের খোরাকেরও প্রয়োজন। বিক্রমের মনের খোরাক বলতে ছিল একজন কে খোঁজা। আবাসিক থেকে বার হওয়ার পর তার স্মৃতিতে বসবাস করে এমন এক সুন্দরীকে খোঁজাই ছিল তার উদ্দেশ্য ।

বিক্রমের সুখ বর্তমানে নেই । সে বর্তমানে সুখ খুঁজে পায়না । তাই নিজের স্মৃতির মাধ্যমে অতীতের দিনে ডুব দিয়ে সুখ খোঁজে। এটা এখন বদঅভ্যাসে পরিনত হয়েছে সেটা বিক্রমও বুঝতে পারে । কিন্তু কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারেনা । তাই সে চেষ্টা করে সব সময় কোন না কোন কাজ করে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে । কিন্তু এখন তো অঢেল ফাকা সময় । তাই এখনো সে আবাসিক থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জীবন সংগ্রামে কিভাবে সংগ্রাম করেছে তারই স্মৃতিতে ডুব দিল । কিভাবে সে এই কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছে এবং সেই সংগ্রামে জয়ী হয়েছে সেটাই এখন সে ভাবতে লাগলো ।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 8 users Like Bichitro's post
Like Reply
#43
আবাসিকে নিজের শেষ সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানের কয়েক মাস পরেই সে আবাসিক থেকে ছাড়া পেল । তারপর সে পেল স্বাধীনতা। আবাসিক থেকে স্বাধীনতা। আবাসিক থেকে বার হলে আবাসিকের ঠিক করে দেওয়া কোথাও কাজ করতে হয় । সেখানে কিছু দিন কাজ করার পর অনেকেই দূরে দূরে চলে যায় । কেউ কেউ যোগাযোগ রাখলেও বেশিরভাগই যোগাযোগ রাখেনা । বিক্রম আবাসিক থেকে বেরিয়ে একজনকে খুঁজতে শুরু করলো । তার স্মৃতিতে যে সুন্দরী বাস করে তার খোঁজ। বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সে খুঁজতে লাগলো বিদ্যাকে ।

প্রথম কয়েক মাস সে শোভাবাজারের আশেপাশে ভোরবেলা বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ দিয়ে আসতো । এইসময় আবাসিক থেকে তাকে ওপেন কিংবা ডিসটেন্সে গ্রাজুয়েশন এর পড়াশোনা করার জন্য বলা হয়েছিল । আবাসিক থেকে গ্রাজুয়েটের পড়াশোনার জন্য উদ্বুদ্ধ বা উৎসাহ দেওয়া হলেও কখনো বাধ্য করা হতো না । তাই বিক্রম ও উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করলো না ।

কয়েক মাস খবরের কাগজ দেওয়ার পর খবরের কাগজের সাথে বাড়ি বাড়ি প্যাকেট দুধ ও দিতে শুরু করলো । কাজ করলেও তার মন পড়ে রইলো বিদ্যার উপর । একদিন হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি এলো যে এই ভাবে রাস্তায় রাস্তায় না খুঁজে বেড়িয়ে মণীষা ম্যামকে জিজ্ঞেস করলে তো বিদ্যার ঠিকানা যাবে । আর আবাসিক থেকে মণীষা ম্যামের ঠিকানা পাওয়া যাবে ।

যেমন ভাবা তেমন কাজ । সে সঙ্গে সঙ্গে আবাসিকের দিকে রওনা দিল । আবাসিকে ঢুকেই একটা খটকা লাগলো । মণীষা ম্যামের ঠিকানা নিয়ে যদি ম্যামের বাড়িতে সে চলেও যায় তাহলে সেখানে গিয়ে সে বলবেটা কি ? এমন তো বলা যায় না যে ম্যাম আপনার সেই বান্ধবীকে আমার পছন্দ হয়েছে ভালো লেগেছিল তাই তার ঠিকানা যদি দিতেন কিংবা ম্যাম আপনার বান্ধবীর ঠিকানা ...

যতোটা উৎসাহ নিয়ে সে আবাসিকে এসেছিল এটা ভেবে সে তার থেকেও কয়েকগুণ সে হতাশ হলো । প্রতিভা ম্যামের অফিসে ঢুকে এদিক ওদিকের কথা বলে বিক্রম বললো , “ ম্যাম আমি কয়েকটা ফটো চাই । „

“ ফটো ? ফটো নিয়ে তুই কি করবি ? „

“ স্মৃতি । এই আবাসিকের স্মৃতি আপনাদের স্মৃতি । আমার অন্যান্য ভাইদের স্মৃতি । „

কথাটা শুনে প্রতিভা দেবী খুব খুশি হলো । একটা মোটা অ্যালবাম বার করে বললো , “ নে এর থেকে বেছে নে । „

বিক্রম খুব ভালো ভাবে অ্যালবামে লাগানো ফটো গুলো দেখতে লাগলো । তার চোখ দুটো এক মহিলাকে খুঁজছে। একদম শেষের দিকে সে সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানে তোলা কয়েকটা ফটোর মধ্যে একটা গ্রুপ ফটো বার করলো । বিদ্যার ফটো তাতে বিদ্যমান। আরো কয়েকটা ফটোর সাথে এই গ্রুপ ফটোটাও সে নিল । প্রতিভা দেবী বুঝতে পারলো না বিক্রমের আসল উদ্দেশ্য। সে ভাবলো গ্রুপ ফটোতে সবাই আছে তাই নিচ্ছে । প্রতিভা দেবী হাসি মুখেই ফটো গুলো দিয়ে দিল ।

এরপর রাজাবাজারে দিন মজুর খাটা, একটা রেস্টুরেন্টে হোম ডেলিভারি বয়ের কাজ করা , এরকম নানা কাজের মাধ্যমে সে অনেক অর্থ উপার্জন করলো । প্রথম এক বছর রাস্তাঘাটে তার স্মৃতি সুন্দরী কে খুঁজলেও খুব শীঘ্রই এই সমাজের রুক্ষ বাস্তবতার সম্মুখীন হলো । দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার উদ্দামতাও কমতে লাগলো । তার অনুসন্ধানে ভাটা পড়লো । কিছু সময় পর তার স্মৃতিসুন্দরী স্মৃতিতেই বসবাস শুরু করলো ।

নিজের প্রথম আয়ের পুরোটাই সে আবাসিকে দিয়ে দিয়েছিল । দ্বিতীয় আয়ের কিছুটা নিজের কাছে রেখে একটা খুব দরকারি জিনিস সে কিনলো । দরকারি জিনিসটা হলো একটা নোকিয়ার ২৬২৬ ফোন । তারপর হিসাব করে চলার পর আর একটা জিনিস কিনলো । সেটা হলো একটা পিত্তি রঙের সাইকেল ।

আর বছরে নিজের জন্য দুটো জামা প্যান্ট আর দুবেলা দুমুঠো খাওয়া আর একটা ছোট ঘর ভাড়া ছাড়া তেমন কোন খরচাই তার ছিল না । এই সবের কাজ করার পর মাঝে মাঝে সে ছুটি পায় এবং ছুটি নিয়েও নেয় । এইসব ছুটিতে তার একমাত্র কাজ হলো সাইকেল চড়ে কলকাতার অলিগলি চষে বেড়ানো । তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত হলো পৃথিবীর যে মানুষ নিজের শহরের রাস্তাঘাট চেনেনা তার কাছে জীবিকা নির্বাহের অনেক পথ অজানাই থেকে যায় ।

দেখতে দেখতে বিক্রমের বয়স ছাব্বিশ বছর হয়ে গেল । এখন সে একটা হোটেলের রিসেপশনে কাজ করে । একদিন বিকালে সে তার সাইকেল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কলকাতার একদম দক্ষিনে চলে এলো । টালিগঞ্জ গল্ফকোর্স ছাড়িয়ে আরো কয়েক কিলোমিটার আসার পর রাস্তার পাশে একটা বড়  গ্যারেজে একজনকে দেখে  হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো  , “ আরে প্রফুল্ল দা না ! „

এক যুবক নিজের নাম শুনে বিক্রমের দিকে তাকালো । সেও বিক্রম কে চিনতে পেরে বললো , “ আরে তুই , কতদিন পর দেখা , ভালো আছিস তো ?  এখন কি করছিস ? „

“ আমি তো ভালোই আছি । কিন্তু তুমি যে সেই বার হলে আর একবারও এলে না তো । আমাদের মনে পড়তো না বুঝি ? „

“ খুব মনে পড়তো । এখনো মনে পড়ে কিন্তু কাজের চাপে যাওয়া হয়ে উঠলো না । „

তারপর এদিক ওদিকের কথা হওয়ার পর প্রফুল্ল বিক্রম কে এই গ্যারাজে কাজের অফার করলো । প্রফুল্ল বললো , “ আরে এতে অনেক টাকা ভাই । „

“ কিন্তু আমি তো কিছুই জানিনা । „

“ তুই চিন্তা করিস না , আমি শিখিয়ে দেব । „

“ কিন্তু রোজ অতো দূর থেকে এখানে আসা সম্ভব হবে না । „

“ তুই এখানে একটা ঘর ভাড়া নে খুঁজে দেখ । ঠিক পেয়ে যাবি । আমিও তো পাশেই থাকি । বেশি ভাড়া না । „

“ আচ্ছা আগে ঘর খুঁজে পাই তারপর বলছি । „

ঘর বিক্রম খুঁজে পেল । সেদিনকেই পেল । সাইকেল করে বাড়ি ফেরার পথে সে একটা দেওয়ালে সাদা কাগজে কালো হরফে লেখা একটা পোস্টার দেখতে পেল । এখানে ঘর ভাড়া দেওয়া হয় । সে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির চৌহদ্দির ভিতর চলে এলো । ঢুকেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো । উঠোনে মস্ত বড় এক পাতকুয়া । জীবনে প্রথম সে কুয়া দেখছে । বাড়িটা অনেকটা ইংরেজি L আকৃতির । L এর ছোট অংশটায় একটাই ঘর সেটা বাইরে থেকে তালা দেওয়া । আর বড় অংশটায় কটা ঘর সেটা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু একটা বড় দরজা আছে । কুয়া থেকে কিছু দূরেই খালি জায়গায় নানারকম ফুল গাছের বাগান । জায়গাটা তার খুব মনে ধরলো ।

নিজের কুয়া দেখার কৌতুহল সে দমন করতে পারল না । তাই কুয়ার সামনে এসে কুয়ার ভিতর তাকিয়ে কুয়ার গভীরতা দেখলো । বেশ গভীর আছে । জল ও স্বচ্ছ । আর দড়ি বাঁধা বালতি দেখে বুঝলো যে কুয়াটা ব্যাবহার করা হয় । বিক্রম যখন কুয়ার ভিতরে তাকিয়ে তার গভীরতা মাপতে ব্যাস্ত তখন পিছন থেকে এক গম্ভির আওয়াজ ভেসে এলো , “ কি চাই ? „

বিক্রম থতমত খেয়ে পিছন ঘুরে আমতা আমতা করে বললো , “ বাইরে একটা পোস্টার ....

বিক্রমের কথা শেষ করতে না দিয়েই লোকটা বললো , “  হ্যাঁ , এসো , ভিতরে এসো । „

বিক্রম ভিতরে গিয়ে একটা লাল প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলে লোকটা বললো , “ কি করা হয় ? „

“ আজ্ঞে এখন ধর্মতলায় একটা হোটেলে রিসেপশনে কাজ করি । এখানে একটা গ্যারাজে কাজ নিলাম তাই ভাবছি ...

বিক্রমের অসম্পূর্ণ কথা লোকটাই সম্পূর্ণ করে দিল , “ তাই আশেপাশে থাকতে চাও । „

“ হ্যাঁ স্যার। „

“ মদ খাও ?

“ না স্যার , ও জিনিস কখনো স্পর্শ করিনি । „

“ আর মেয়ে ? „

বিক্রম প্রথমে একটু লজ্জা পেল । তারপর দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে না বললো ।

“ ঠিক আছে , কাল কিংবা পরশু যখন খুশি নিজের আইডি প্রুফ নিয়ে এসো । ঘর ভাড়া কিন্তু তিন হাজার । অগ্রীম দুই মাসের এডভান্স দিতে হবে । আর চুক্তি হবে এগারো মাসের । „

মাত্র তিন হাজার ভাড়া । জায়গাটা শহর থেকে একটু বাইরে হলেও ভাড়াটা খুবই কম । তাই বিক্রম সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল , “ আমি কালকেই এসে দেখা করবো একবার । „

লোকটা আরো বললো , “ ওই ঘরে তুমি থাকবে । „

পাকা কথা বলে সে বেরিয়ে এলো । সে তো আর জানতো না যে এখানে তার সাথে কি ঘটতে চলেছে ! তার বিন্দুমাত্র আভাস পেলে সে এখানে থাকতো না । সেই ঘটনাটাই দুঃস্বপ্ন হয়ে বারবার ফিরে আসে । ভাবলেই কেঁপে ওঠে সে ... চোখের সামনে এখনো ভেসে ওঠে সেই বিভৎস দৃশ্য ... চারিদিকে রক্ত আর কাটা মাংসের টুকরো । এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে আছে টাটকা লাশ । তার মধ্যে থেকে গলগল করে বার হচ্ছে লাল গরম রক্ত....

বিক্রম আর স্মৃতিমন্থন করতে পারলো না । কারন তার স্মৃতিমন্থনে সে একটা মেয়ের গলার স্বরে ব্যাঘাত পেল , “ দিদি তোমাল জামাই দেখতে এসছি । „
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#44
Valolagar golpo
[+] 1 user Likes Kam pujari's post
Like Reply
#45
পড়ে খুব ভালো লাগলো, লেখার হাত খুবই সুন্দর, এর পরের আপডেটের জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।
[+] 1 user Likes pradip lahiri's post
Like Reply
#46
(02-09-2023, 10:05 AM)Kam pujari Wrote: Valolagar golpo

এটা ভালোলাগা ভালোবাসার গল্প  Heart 

(02-09-2023, 01:01 PM)pradip lahiri Wrote: পড়ে খুব ভালো লাগলো,  লেখার হাত খুবই সুন্দর,  এর পরের আপডেটের জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।

হাতে গোনা দুই তিন জন পড়ছে তাই ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে লিখছি । তাই আপডেট দিতে সময় লাগবে ।  Namaskar

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
#47
বেশ ভালো উত্তেজনাপূর্ণ আপডেট। লেখায় গতি আসছে ক্রমেই, এটা ভালো।
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
#48
(02-09-2023, 07:55 PM)Bichitro Wrote: হাতে গোনা দুই তিন জন পড়ছে তাই ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে লিখছি । তাই আপডেট দিতে সময় লাগবে ।  Namaskar

❤️❤️❤️

নিজের সময় সুবিধামত লিখুন। দু চারজন থেকে আস্তে ধীরে ৪ * ৪ = ১৬ জনে চলে আসবে। লেখক হিসেবে অবশ্যই ধৈর্য ধরার প্রয়োজন আছে। চিন্তা ভাবনা করে না পাওয়ার ভালোবাসা কাহিনীটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলুন।
[+] 1 user Likes a-man's post
Like Reply
#49
(02-09-2023, 01:01 PM)pradip lahiri Wrote: পড়ে খুব ভালো লাগলো,  লেখার হাত খুবই সুন্দর,  এর পরের আপডেটের জন্যে অপেক্ষায় রইলাম।

লেখার হাত বেশ ভালো এব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই  Shy
Like Reply
#50
(02-09-2023, 10:34 PM)a-man Wrote: বেশ ভালো উত্তেজনাপূর্ণ আপডেট। লেখায় গতি আসছে ক্রমেই, এটা ভালো।

লেখার গতি কমতেও পারে  Tongue

(02-09-2023, 10:37 PM)a-man Wrote: নিজের সময় সুবিধামত লিখুন। দু চারজন থেকে আস্তে ধীরে ৪ * ৪ = ১৬ জনে চলে আসবে। লেখক হিসেবে অবশ্যই ধৈর্য ধরার প্রয়োজন আছে। চিন্তা ভাবনা করে না পাওয়ার ভালোবাসা কাহিনীটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলুন।

পাঠক সংখ্যা নিয়ে মাথাব্যথা নেই । সমালোচনা মূলক কমেন্ট পেলেই হলো  Shy

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
#51
(03-09-2023, 10:45 AM)Bichitro Wrote: লেখার গতি কমতেও পারে  Tongue

বাড়তেও তো পারে, বলা তো যায়না
Like Reply
#52
বেশ ভালো হচ্ছে  clps চলতে থাকুক  horseride

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
#53
(03-09-2023, 11:56 AM)a-man Wrote: বাড়তেও তো পারে, বলা তো যায়না

দেখা যাক কি হয়

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#54
(03-09-2023, 05:36 PM)Somnaath Wrote:
বেশ ভালো হচ্ছে  clps চলতে থাকুক  horseride

ধন্যবাদ

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
#55
আপনার গল্প খুব ভালো এগিয়ে চলছে আস্তে আস্তে।। তবে একটা কথা মানতেই হবে যে ভবিষ্যতে গল্পের মোড় কোনদিকে ঘুরবে সেটার সাসপেন্স টা খুব সুন্দর ভাবে বজায় আছে।। 
আপনি অনেক পুরানো স্বনামধন্য লেখক আর আমার থেকে বয়সেও বড় হবেন তাই শুধু একটাই কথা বলতে পারি যে দয়া করে মাঝপথে লেখা ছেড়ে যাবেন না।। প্রতি মাসে দুটো করে আপডেট দিলেও আমাদের পাঠক গন খুশি হবেন।।
এই গল্পটাও শুরু থেকেই ফলো করছি কিন্তু এটাই আমার প্রথম কমেন্ট, তাই মনে হয় ওই হাতে গোনা দুই তিনজনের মধ্যে আমিও আছি।।
আপনার আরো একটি উপন্যাস মিষ্টি মুহুর্ত এটাও পড়েছি খুবই ভালো লেগেছে ওটাও।।
[+] 1 user Likes Ballterrain's post
Like Reply
#56
(05-09-2023, 06:33 PM)Ballterrain Wrote: আপনার গল্প খুব ভালো এগিয়ে চলছে আস্তে আস্তে।। তবে একটা কথা মানতেই হবে যে ভবিষ্যতে গল্পের মোড় কোনদিকে ঘুরবে সেটার সাসপেন্স টা খুব সুন্দর ভাবে বজায় আছে।। 
আপনি অনেক পুরানো স্বনামধন্য লেখক আর আমার থেকে বয়সেও বড় হবেন তাই শুধু একটাই কথা বলতে পারি যে দয়া করে মাঝপথে লেখা ছেড়ে যাবেন না।। প্রতি মাসে দুটো করে আপডেট দিলেও আমাদের পাঠক গন খুশি হবেন।।
এই গল্পটাও শুরু থেকেই ফলো করছি কিন্তু এটাই আমার প্রথম কমেন্ট, তাই মনে হয় ওই হাতে গোনা দুই তিনজনের মধ্যে আমিও আছি।।
আপনার আরো একটি উপন্যাস মিষ্টি মুহুর্ত এটাও পড়েছি খুবই ভালো লেগেছে ওটাও।।

কিছুদিন ব্যস্ত ছিলাম বলে আসতে পারিনি । এসে দেখলাম আপনার কমেন্ট। ভালো লাগলো । গল্প যখন শুরু করেছি তখন শেষ করবোই । মাসে দুটো না , সপ্তাহে একটা করে আপডেট দেওয়ার ইচ্ছা আছে । আশা করছি কাল পরশুর মধ্যে একটা আপডেট দিতে পারবো ।

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#57
খুব সুন্দর হয়েছে।সাবলীল ভাষার গল্পের মজাই আলাদা।
কিন্তু লেট আপডেট।তাও সমস্যা নেই ঠিক মত আপডেট পেলেই চলবে।
বিক্রমের খুড়শ্বশুর অতি চালাক ব্যাক্তি আমার মনে হয়।তার স্ত্রীর দরকার নেই তার প্রয়োজন বাড়ীটি।
আসলে আমি সবরকম গল্পই পড়ি।কিন্তু আমার প্রিয় গল্প অজাচার,থ্রিলার ও গোয়েন্দা গল্প।
পরবর্তী আপডেট এর অপেক্ষায়।
লাইক ও রেপু।(আমি অনেক চেষ্টা করেও রেটিং দিতে পারছিনা।)


-------------অধম
Like Reply
#58
(09-09-2023, 08:52 PM)অভিমানী হিংস্র প্রেমিক। Wrote: খুব সুন্দর হয়েছে।সাবলীল ভাষার গল্পের মজাই আলাদা।
কিন্তু লেট আপডেট।তাও সমস্যা নেই ঠিক মত আপডেট পেলেই চলবে।
বিক্রমের খুড়শ্বশুর অতি চালাক ব্যাক্তি আমার মনে হয়।তার স্ত্রীর দরকার নেই তার প্রয়োজন বাড়ীটি।
আসলে আমি সবরকম গল্পই পড়ি।কিন্তু আমার প্রিয় গল্প অজাচার,থ্রিলার ও গোয়েন্দা গল্প।
পরবর্তী আপডেট এর অপেক্ষায়।
লাইক ও রেপু।(আমি অনেক চেষ্টা করেও রেটিং দিতে পারছিনা।)


-------------অধম

রেটিং না দিলেও চলবে । শুধু মাঝে মাঝে কমেন্ট করলেই হলো ।

❤️❤️❤️
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#59
স্মৃতি সুন্দরী ২.২

মেয়েটার কথায় বিক্রমের শুধু হুঁশ-ই ফিরলো না , সে বেঁচেও গেল । বেঁচে গেল তার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মত এক সত্য ঘটনার স্মৃতিচারণের হাত থেকে । যা মনে পড়লেই তার বুক কাঁপিয়ে দেয় , গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যায় , হাত পা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে । দরদর করে ঘামতে থাকে সে । মনে করতে না চাইলেও বারেবারে ফিরে আসে দুঃস্বপ্নের আকারে ।

মেয়েটার কথায় বিদ্যা ঘুরে চাইলো , তারপর হাসি মুখে বললো , “ ও , শবনম , আয় বোস ...

বিক্রম বিদ্যার হাসিটা দেখলো । কিছুক্ষন আগে যখন তীর্থঙ্কর এসেছিল তখনও বিদ্যা হেসেছিল । কিন্তু তখন যেন সেই হাসিটা মেকি লাগছিল । বরং এখন এই শবনম নামের মেয়েটা আসার পর বিদ্যার মুখে যে হাসিটা দেখা দিল সেটাই যেন আসল ,  কোন ভেজাল নেই এই হাসিতে । বিক্রমের মনে হলো এটাই বিদ্যার খাঁটি হাসি ।

বিদ্যার খাঁটি মিষ্টি হাসি দেখে বিক্রমের মনে এক শীতল মিষ্টি প্রানবন্ত হাওয়া বয়ে গেল । কিছুক্ষন আগে এক ভয়াবহ স্মৃতি তার গলা চেপে ধরে তার শ্বাস রোধের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল  , আর এখন বিদ্যার হাসি যেন তাকে এক তাজা মুক্তো হাওয়া দিয়ে তাকে তরতাজা করে তুললো ।

বিক্রম নবাগত মেয়েটার দিকে তাকালো । বিদ্যার মুখেই মেয়েটার নাম সে শুনতে পেয়েছিল । মেয়েটার নাম ‘ শবনম , । প্রথমেই যেটা বিক্রমের চোখে পড়লো সেটা শবনমের পেট । মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা । বিক্রমের তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো গতকাল বিকালে এই মেয়েটাকেই সে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল । বিক্রম ভালোভাবে দেখলো দিব্যার পেটের তুলনায় শবনমের পেট বেশি বড় । শবনমের পেট দেখে সে ধারনা করলো প্রায় ছয় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তো হবেই । মেয়েটার পরনে আছে একটা ময়লা নিল রঙের সুতির শাড়ি , তাতে সবুজ ফুল আঁকা আর সবুজ ব্লাউজ । গায়ের রঙটাও তার পড়নের শাড়ির মতই ময়লা । বয়স তেইশ চব্বিশ তো হবেই । চুল খোঁপা করে বাঁধা । নাকে , কানে , গলায় কোন অলংকার নেই । দুই হাতেও কোন কিছু নেই , এমনকি সাধারণ কাঁচের দুটো চুড়িও না । গায়ে অলংকার নামক শৃঙ্গারের অস্তিত্ব না থাকলেও ঠোঁটে এক মন ভোলানো মিষ্টি হাসি লেগে আছে যা তার মুখের সৌন্দর্য কে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

শবনম দোকানের ভিতর ঢুকে কিছুক্ষন আগে তীর্থঙ্কর যে টুলটায় বসেছিল সেই টুলে বসলে বিদ্যা বললো , “ ওখানে বসছিস কেন ? তোকে বলেছিনা খাটে বসবি । „

“ না , আমি এখানেই ঠিক আছি দিদি । „

বিদ্যা এবার একটু রাগী স্বরেই বললো , “ খাটে বসতে বলছি । „

শবনম বিদ্যার রাগী কন্ঠের কথা শুনে টুল থেকে উঠে বিক্রমের থেকে একটু দূরে খাটেই বসলো । বিক্রম বুঝলো কেন শবনম খাটে বসতে চাইছিল না । কারন শবনেমর শাড়ি নোংরা । এই এগারো বছরে বিক্রম হরেক রকমের , বিভিন্ন মানসিকতার এবং বিভিন্ন জাতের মানুষ দেখেছে । তাদের সাথে মিশেছে , কথা বলেছে । এই হরেক রকম মানুষের মধ্যে শবনমও একধরনের মানুষ যারা নিজেদের পোষাক পরিচ্ছদ দেখে সমাজে নিজেই নিজেদের একটা স্থান দিয়ে দেয় । এরা বড় কোন বাড়িতে গেলে সোফা কিংবা খাটে বসতে চায় না । কোন নেমতন্ন বাড়িতে গেলে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায় । সবার শেষে একটা কোনা দেখে খেতে বসে । ঠিক তেমনি শবনমও নিজের ময়লা শাড়ির জন্য বিদ্যার দোকানের খাটের উপর পাতা সাদা পরিষ্কার চাদরের উপর বসতে চাইছিল না । যাতে নিজের শাড়ির জন্য চাদরটা না নোংরা হয়ে যায় !

শবনম খাটে বসলে বিদ্যা তার সেলাই মেশিনের সামনে বসতে বসতে বললো , “ এখন চলে এলি যে বড়ো ! রান্না হয়েছে ? „

মেয়েটা মিষ্টি সুরে বললো , “ লান্না কলিনি । পান্তা ভাত খেয়ে ও কাজে চলে গেছে । ঘলে একা বসে বসে ভালো লাগছিল না তাই তোমাল জামাই দেখতে চলে এসছি । „ তারপর বিক্রমকে উদ্দেশ্য করে সে বললো , “ এই দাদাটাই তোমাল জামাই ! „

বিক্রম মেয়েটাকে ভালো ভাবে দেখলো এবং বুঝলো যে , শবনমেরর বাকি সব ঠিক থাকলেও ‘ র , বর্ণ ঠিক নেই । ‘ র , এর জায়গায় সে ‘ ল , উচ্চারণ করে । শবনমের কথাবার্তা শুনে তার চরিত্রের একটা দিক বিক্রম বুঝতে পারলো । সেটা হলো শবনমের সাহস । কি সুন্দর অকপটে লজ্জা এবং দ্বিধাহীন ভাবে সে বলছে যে সে জামাই দেখতে এসেছে । লজ্জা নেই মানে তাকে কিন্তু কোন ভাবেই নির্লজ্জ বলা যায় না । বরং এই লজ্জাহীনতাই শবনমেরর চরিত্রকে এক দৃঢ়তা প্রদান করছে । শবনমের এই গুনে বিক্রম মুগ্ধ হয়ে গেল ।

“ হ্যাঁ কিন্তু তুই যে সম্পর্কের জগাখিচুড়ী করে দিলি । „ কথাটা বলার পরেই বিদ্যার মুখটা শুকিয়ে গেল । বিদ্যার কথার মানে বুঝতে শবনম এবং বিক্রম দুজনেরই বিন্দুমাত্র সময় লাগলো না  । কথাটা হলো শবনম বিদ্যাকে দিদি বলে ডাকে আর এখন বিক্রমকে দাদা বলে ডেকেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যাপারটাকে অতোটাও গুরুত্ব না দিয়ে বিদ্যা বললো , “ বস । তোর জন্য চা আনি । „

“ আমি সকালে চা খেয়েছি । „

“ বোস তো । „ বলে বিদ্যা দোকানের পিছনের দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল ।

বিদ্যা চলে যাওয়ার পর শবনম বিক্রমকে বললো , “ দাদা তোমায় একটা কথা বলছি । খালাপ ভেবোনা কো । „

কথাটা শুনে বিক্রম একটু হকচকিয়ে গেল । পাঁচ মিনিট ও হয়নি তাদের আলাপের । এইটুকু সময়ের মধ্যে একে অপরকে বলার মত কোন কথা তো তৈরি হতে পারেনা । আর কিইবা এমন এমন কথা যার জন্য সে শবনমকে খারাপ ভাবতে পারে । বিক্রম শবনম কে আশ্বস্ত করে বললো , “  হ্যাঁ বলো না । খারাপ ভাববো কেন ! „

“ তুমি তো দিব্যা দিদিমনিকে নিয়ে চলে গেলে । দিব্যা দিদিমনি যাওয়াল পল দিদি খুব একা হয়ে গেছিল । এই এত্ত বলো বালিতে একা একা থাকা যায় না দাদা । আর দিদি তো তিন মাস একা কাটিয়েছে । „ কথা গুলো বলতে বলতে শবনমের গলায় কিছু একটা আটকে গেল । চোখের কোনায় দেখা দিল মুক্তোর মত স্বচ্ছ শুদ্ধ অশ্রুকণা। যা তার দুই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো । কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার , “ আমি লোজ আসতাম । এসে দিদিল সাথে যতোক্ষন থাকা যায় ততক্ষণ থাকতাম কিন্তু দিব্যা দিদিমনিল জায়গা নিতে পালিনি । তোমাল দুটো পায়ে পলি দাদা , দিদিকে একা ফেলে আর কোথাও যেও না। যদি দিদিল কোন অসুখ বিসুখ হতো তাহলে কে দেখতো বলো তো ? আল্লা দিদিকে লক্ষা কলেছেন ....

কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের তোতলা কথা শুনলে অনেকেই হেসে ফেলে কিন্তু এখন শবনমের এই তোতলা শব্দ গুলো শুনতে শুনতে বিক্রম পাথর হয়ে গেল । সে জানে একা থাকার যন্ত্রণা কতোটা । তাই বিদ্যার এতদিনের একাকিত্বের যন্ত্রণা তার মনের সবথেকে কোমল এবং দূর্বল স্থানে গিয়ে আঘাত করলো । বিক্রম কিছু বলবে তার আগেই উঠোন থেকে বিদ্যার চটির আওয়াজ পাওয়া গেল । সেই শব্দ শুনে শবনম নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে দ্রুত চোখের জল মুছে নিল ।

বিক্রমের মনে হলো চা করতে তো এত কম সময় লাগে না । বিদ্যা এসে চা ভর্তি পেয়ালা শবনম কে দিয়ে আবার সেলাই মেশিনের সামনে রাখা চেয়ারে গিয়ে বসলো । তারপর একটা সবুজ রঙের কাপড় ফিতে দিয়ে মেপে কাটতে শুরু করলো । শবনম চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে বিক্রমের মনে থাকা প্রশ্নটা করলো , “ এত তালাতালি কি কলে চা আনলে ? „

বিদ্যা বললো , “ কিছুক্ষন আগে তীর্থঙ্কর এসেছিল , তখন ওর জন্য চা  করেছিলাম । অল্প ছিল সেটাই আনলাম । এখনো গরম আছে । তুই না আসলে আমিই চা টা খেয়ে নিতাম । „

শবনম চা খেতে খেতে ইয়ার্কি করে বললো , “ দিব্যা দিদি তো দুধেল মত ফস্সা আর তোমাল জামাই তো কালো ! „

এই কথাটা শুনে বিক্রম আর একটু হলে অট্টহাসি হেসে ফেলতো । কারন সে অতোটাও কালো নয় যতোটা শবনম তাকে বলছে । নিজের হাসিটাকে খুব কষ্ট করে সংবরন করলো বিক্রম । হাসি চাপার জন্য বিক্রম খুকখুক করে কেশে ফেললো ।

বিদ্যা মুখ দিয়ে “ আগে „ শব্দটা বলে চেপে গেল । আর একটু হলে মুখ ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিল যে ‘ আগে যখন আবাসিকে দেখেছিলাম তখন এতো কালো ছিল না । রোদে পুড়ে এমন হয়েছে । ‚

মুখে আসা কথাটা না বলে বিদ্যা নিজেকে সামলে নিয়ে , শবনমের পাকামি দেখে মুখ ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো , “ খুব যে আমার মেয়ের বরের দিকে নজর দিচ্ছিস । তোর স্বামি তো আরো কালো । „

বিক্রম এর আগে অনেকবার রাস্তাঘাটে , দোকানপাটে , বাসের মধ্যে দুই মেয়ের কথোপকথন শুনেছে । কিন্তু কখনো তাদের কথাবার্তার বিষয়বস্তু হয়নি । এখন যখন তাকে নিয়ে দুই অসমবয়সী নারী কথা বলছে তখন নিজেকে তার খুব মূল্যবান মনে হলো । দুজনের কথাবার্তা সে খুব উপভোগ করতে লাগলো ।

আরো কিছুক্ষন এদিক ওদিকের কথা বলে শবনম চলে গেল । বললো , “ যাই , ঘল গোছাতে হবে । আমি আসি দিদি । „ বলে সে উঠে চলে গেল । বিক্রম দেখলো দোকানের পাশে কাঠগোলাপ গাছের গা ঘেঁসে যে গলিটা চলে গেছে শবনম সেই গলিতে ঢুকে পড়লো ।

শবনম চলে যাওয়ার পর বিদ্যা একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বললো , “ এই অবস্থায়ও বাড়ির সব কাজ নিজেই করে । কতোবার বারন করেছি । বারন শুনলে হয় ! বলে নাকি ও ওর আম্মিকে কোলে পেটে দুটো বাচ্চা নিয়ে এইসব কাজ করতে দেখেছে । ও কেন পারবে না ? „

কথাটা শুনে বিক্রমের খুব খারাপ লাগলো। সেও যখন কম খরচের জন্য বিভিন্ন বস্তিতে থাকতো তখন এরকম দেখেছে । অল্প বয়স , মাথায় মোটা লম্বা করে সিঁদুর দেওয়া । গর্ভে একজন সন্তান আছে এবং কোলের সন্তান কাঁদছে , সেই অবস্থায় সে বাড়ি ঝাঁট দিচ্ছে । দৃশ্যটা আর একবার মনে পড়ে গেল ।

বিদ্যা আরো বললো , “ শবনম এই চার পাঁচ মাস হলো এখানে এসেছে । „ বিদ্যার কথায় বিক্রম বিদ্যার মুখের দিকে তাকালো । বিদ্যা তার দিকে না তাকিয়ে কাপড় কাটতে কাটতে বলে চলেছে , “ পাশের বস্তিতে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে । ওর বর ট্যক্সি চালায় । মাঝে মাঝেই অকারনে গায়ে হাত তোলে । মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া হয় । „

বিক্রম কথাটা না বলে থাকতে পারলো না , “ এই অবস্থায়ও মারে ? মানে বাচ্চা পেটে তবুও ! „

বিদ্যা উদ্রেক প্রকাশ করে মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে বললো , “ তাহলে আর বলছি কি তোমায় ! কোন বড় কিছু হলে কি হবে বলোতো ? একটা মেয়ের কাছে মাতৃত্বের সুখ তার হৃদয়ের , তার জীবনের কতোটা অংশ জুড়ে থাকে সেটা‌ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । ভয় হয় খুব । „ একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে আবার বললো , “ ও একবার বলেছিল , আগে যেখানে ছিল সেখানেও নাকি গায়ে হাত তুলতো । ওখানকার লোকেরা তাড়িয়ে দিয়েছে । থাকতে দেয়নি । তাই এখানে চলে এসেছে । „

বিক্রম মুখে কিছু না বললেও তার মনের ভিতর এখন বহু কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুক্ষন আগে বিক্রম বিদ্যার জন্য শবনমকে কাঁদতে দেখেছিল আর এখন শবনমের জন্য বিদ্যাকে হাহুতাশ করতে দেখলো । চার পাঁচ মাসের মধ্যে দুই ভিন্নধর্মী অসমবয়সী নারী একে অপরকে কতোটা আপন করে নিয়েছে সেটা বিক্রম বুঝতে পারছে ।

এর সাথে সে এটাও বুঝলো যে বিদ্যা তার কাছে এখন খুব সহজ হয়ে গেছে । মেনে নিয়েছে তাকে নিজের জামাই হিসাবে। আর সম্ভবত , না , সম্ভবত না , বিক্রম পুরোপুরি নিশ্চিত যে সেই এগারো বছর আগের  ফুলের কথাটা বিদ্যার মনে নেই । তাই সে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো ।

বিক্রম নিজের মনে এইসবই ভাবছিল । ঠিক তখন সে বিদ্যার এক অপরূপ মনমোহিনী রূপের দর্শন লাভ করলো । কাপড় কাটা হয়ে গেলে বিদ্যা পাশ থেকে একটা চশমা বার করে সেটা পড়লো । নীল রঙের একটা আধুনিক চশমা । শুধু একটা চশমা যে কাউকে এতোটা সুন্দর করে তুলতে পারে , কারোর মুখের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে , সেটা বিক্রম এই প্রথম দেখলো । মনে হলো বিদ্যার এ সৌন্দর্য বাস্তব নয় । কোন স্বপ্নপুরীর মায়াবী সুন্দরী । যা যেকোন পুরুষকে ভুলিয়ে নিজের পিছনে অন্ধের মত ধাওয়া করাতে পারে । বিক্রম নিজের চক্ষু বিস্ফোরিত করে , মুখ হাঁ করে বেশ কিছুক্ষন এই স্বপ্নসুন্দরীর সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিল । বিক্রম দেখলো চশমা পড়া হয়ে গেলে বিদ্যা সবুজ রঙের সুতো সেলাই মেশিনের সূচে পড়িয়ে নিল । তারপর পা চালিয়ে সেলাইয়ে মন দিল । সেলাই মেশিনের আওয়াজে বিক্রম নিজেকে সংবরণ করে আবার রাস্তার দিকে তাকালো ।

খাটের উপর তার পাশে রাখা একটা পুরানো হিসাবের খাতা ছিল । সে হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে খুলে দেখতে লাগলো । এক আধ ঘন্টা ধরে খাতাটায় বিভিন্ন হিসাব দেখে বিক্রম খাতাটা আবার রেখে দিল । গোটা কয়েক মাসের হিসাব অনুযায়ী বিদ্যার মাসিক আয় গড়ে পনের হাজারের একটু বেশি। আর বেশিরভাগ আয় হয় সেলাইয়ের কাজ থেকে । দুই জনের সংসারে পনের হাজার টাকায় আরামসে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু বিক্রমের কেমন একটা লাগলো । বাড়িতে বড় টিভি নেই , বড় ফ্রিজ নেই । এমনকি এই দোকানটাও বেশ পুরানো , কয়েক জায়গায় দেওয়াল ফেটে গেছে । অনেক বছর নতুন রঙ করানো হয়নি  । তাহলে টাকা গুলো যায় কোথায় ? কথাটা ভাবতে ভাবতে বিক্রম দোকান বন্ধ করার শাটারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো , “ এই শাটার বন্ধ করতে অসুবিধা হয়না আপনার ? „

বিক্রম যখন খাতা দেখছিল তখন বিদ্যা ব্লাউজ তৈরীতে ব্যস্ত ছিল । এখনো কিছুটা বাকি । সেলাই মেশিন বন্ধ করে চাপা স্বরে বললো , “ অসুবিধা আর নতুন করে কি হবে ! ওই মতিদা আছে , মতিদাই শাটার নামিয়ে দেয় তুলে দেয় । „ বিক্রম অজান্তেই বিদ্যার মনের গভীরে আঘাত করেছে । তাই যে কথাটা সে কাউকে বলে বেড়ায়না সেটাই সে বিক্রম কে বলে ফেললো । সে বললো , “ শাটারে একটা চেন লাগানোর ইচ্ছা ছিল খুব । কিন্তু দিব্যার নার্সিং পড়ার খরচের জন্য ব্যংক থেকে থেকে লোন নিতে হয়েছে । ওর স্কুটি কিনতে গিয়েও সব গয়না বেচে দিতে হয়েছে ... „ শেষ কথাটা বলতে গিয়ে বিদ্যার গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে এলো তাই কথাটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল ।

বিক্রম বুঝলো যে বিদ্যা কাঁদছে। তাই সে আর কথা বাড়ালো না । চুপ করে বসে রইলো । দিব্যার যে স্কুটি কেনার জন্য বিদ্যা সব গয়না বেচে দিয়েছে সেই স্কুটি এখন বিক্রমের বাড়ির বারান্দাতে দাঁড়িয়ে আছে ।

বিদ্যা এই কথা গুলো বিক্রমকে বলতে চাইনি । কাউকে সে কখনোই বলতে চায়না । নিজের দুঃখের কথা শুনিয়ে কাউকে দুঃখিত করা বা সহানুভূতি আদায় করা বিদ্যার চরিত্রের গুন নয় । সে চাপা স্বভাবের , মিতভাষী গৃহীনি ।  

কথা গুলো বিক্রমকে বলার পর বিদ্যা নিজের আচরণে অবাক হলো । এই কয়েক ঘন্টার আলাপে বিক্রম যে তার মনে এতোটা স্থান দখল করে নিয়েছে সেটা সে বোঝেনি । তাই নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার মনের গভীরে জমে থাকা দুটো কষ্টের কথা সে বিক্রমকে বলে ফেলেছে । কিন্তু কি করে বিক্রম তার মনে এই স্থান দখল করলো সেটাই বিদ্যাকে ভাবিয়ে তুললো । হয়তো কাল রাতে বাসন মাজার সময় বিক্রমের কথা শুনতে শুনতে বিক্রমের উপর একটা দূর্বলতা এসে গেছে । বিক্রমকে সে মন থেকে নিজের জামাই মেনে নিয়েছে । তাই তাকে নিজের পরিবারের একজন সদস্য ভেবে নিজের মনের দূর্বল অনুভূতি থেকেই কথাগুলো সে তাকে বলে ফেলেছে । নিজেকে সামলে নিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে নিয়ে বিদ্যা বললো , “ পরের মাসেই পূজা । এখনো অনেক কাজ বাকি । দোকানে কি কি আছে সেটা গুনে নিয়ে নতুন কাপড় কিনতে হবে । „

বিদ্যার অশ্রু দেখে বিক্রম বিচলিত হয়ে পড়লো । এই মহিলার কিছুটা দুঃখ লাঘব করার জন্য সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো , “ আপনি বলুন কিভাবে গুনতে হবে আমি গুনে দিচ্ছি । „

“ তুমি করবে ? „

“ চুপচাপ বসে থাকতে আমার ভালো লাগে না । আপনি বলুন কিভাবে গুনতে হবে , আমি সেইভাবেই গুনে দিচ্ছি । „

বিদ্যা বিক্রমের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো , “ কোন কোন শাড়ি কত পিস আছে সেটা গুনলেই হবে । „ তারপর একটা প্রশ্ন করলো , “ তুমি শাড়ি চেনো তো ? „

“ হ্যাঁ চিনি । „ বলে নিজের শাড়ি সম্পর্কে জ্ঞান দিতে লাগলো , “ সুতি তাঁত সিল্ক বেনারসি ঢাকাই .....

বিদ্যা মুচকি হেসে বললো , “ ঠিক আছে । গুনে এই খাতাটায় লিখলেই হবে । „

বিদ্যার কথা মত বিক্রম দোকানে থাকা সমস্ত শাড়ির হিসাব করলো ।

বিক্রমের শাড়ি গোনা হয়ে গেলে বিদ্যাও তাকে কাপড় গুনতে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো । বিদ্যা রঙ অনুযায়ী কাপড়ের পিস বলতে শুরু করলো আর বিক্রম সেটা খাতায় লিখে রাখতে লাগলো । দিব্যার সাথে লিভিংয়ে থাকার সময় এইভাবে দুজনে মিলে কোন কাজ তারা করেনি । তাই কিছুক্ষন পরেই বিক্রমের মনটা এক অদ্ভুত ভালো লাগায় ভরে উঠলো । তার ঠোঁটের কোনায় এক লজ্জার হাসি দেখা দিলো যা বিদ্যা দেখতে পেল না । বিক্রমের মনে হলো সে যেন তার স্ত্রীকে দোকানের কাজে সাহায্য করছে । প্রায় দুই ঘন্টা ধরে দুইজন দোকানের সমস্ত শাড়ি , বিছানার চাদর , গামছা , তোয়ালে , মশারি , ব্লাউজের কাপড় হিসাব করলো ।

দুপুর বারোটা নাগাদ দুজনে দোকান বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে চলে এলো । বিদ্যা ঘরে ঢুকেই রান্না করতে চলে গেল । আর বিক্রম বাড়িতে ঢুকে দেখলো যে দিব্যা লিভিং রুমে বসে কালকের রাতের হিন্দি সিরিয়ালের রিক্যাপ দেখছে । এটা বিক্রম লিভিং থাকাকালীনই লক্ষ্য করেছে । দিব্যা টিভি দেখার পোকা । যত রাজ্যের হিন্দি সিরিয়াল , রিয়্যালিটি শো , বিগ বস , খাতরো কে খিলাড়ি সে সব দেখে । শুধু টিভির সামনে বসিয়ে দিলেই তার আর কিছু চাইনা ।

বিক্রম দেখলো দিব্যার চুল ভিজে । মানে তার স্নান হয়ে গেছে । তাকেও স্নান করতে হবে । ব্রাশ করা , হাত মুখ ধোয়া , কিংবা এমার্জেন্সি বাথরুম করার জন্য বাড়ির ভিতরের বাথরুম ব্যাবহার করা হলেও স্নান করার জন্য আগাগোড়াই উঠোনের বাথরুম ব্যাবহার করা হয় । বিক্রম সেটাতেই স্নান করার জন্য ঢুকলো ।  

বাথরুমে এসে দেখলো দুটো ছোট ছোট ড্রাম আর একটা‌ বড় বালতিতে জল ভর্তি করা আছে । নিশ্চয়ই কোন এক ফাঁকে বিদ্যা এসে মিউনিসিপ্যালিটির জল ভরে গেছে ।

বাথরুমের দরজা বন্ধ করে , কোমরে গামছা জড়িয়ে প্যান্ট খুলতে খুলতে বিক্রম দেখলো বাথরুমের মেঝেতে শ্যাওলা জমে স্যাদলা পড়ে আছে । শ্যাওলা দেখে বিক্রমের মনে হঠাৎ এক দায়িত্ববোধ জেগে উঠলো । পুরুষ হওয়ার দায়িত্ববোধ। এই বাড়ির জামাই সে , সেই অর্থে এই বাড়ির বা এই পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য । তাই একটা বাড়ির পুরুষ সদস্যের যা যা করণীয় সবকিছু করার সিদ্ধান্ত সে নিল । বাথরুমের মেঝের স্যাদলা পরিষ্কার করা পুরুষ সদস্যের কাজ কিনা সেটা আলোচনা সাপেক্ষ । কিন্তু সেটা পরে ভেবে দেখা যাবে । আপাতত নিজেকে এ বাড়িতে আরো খাপ খাইয়ে নিতে হবে ।

এটা ভেবেই সে চারিদিকে তাকিয়ে স্যাদলা পরিষ্কার করার জন্য কিছু একটা খুঁজতে লাগলো । বাথরুমের এক কোনায় দুটো নারকেল মালাও পেয়ে গেল । তাতে ছাই রাখা আছে । বিক্রম বুঝলো এই ছাই কালি পড়া হাড়ি কড়াই পরিষ্কার করার জন্য রাখা আছে । দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর বাথরুম একটু অন্ধকার হয়ে গেছিল । বাথরুমের মেঝে আরো ভালো ভাবে দেখার জন্য সে বাথরুমের দরজাটা খুলে দিয়ে আর কিছু না ভেবে ওই দুটো মালার ছাই এক কোনায় ঢেলে দিয়ে সে বাথরুমের মেঝে পরিষ্কার করতে শুরু করলো ।

দিব্যা তখন সোফায় বসে সেলফি তুলতে ব্যাস্ত । সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত নিজের প্রেগনেন্সির আপডেট দেয় সে । বিক্রম এসব কিছুই জানে না । তার যে স্মার্টফোন নেই , দেখবে কি করে ? প্রফুল্লদা একবার বলেছিল স্মার্টফোন কেনার জন্য। কিন্তু বিক্রম রাজি হয়নি । পাউট করে , দুই আঙুল দেখিয়ে সেলফি তুলতে তুলতে স্নানঘর থেকে আসা খসখসের আওয়াজ দিব্যা শুনতে পেল । সেই আওয়াজ বিদ্যাও রান্নাঘর থেকে শুনতে পেল । রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মেয়ের উদ্দেশ্যে বললো , “ দাঁড়া দেখছি । „

স্নানঘরের দরজায় এসে দাঁড়াতেই বিদ্যার চোখে এক নেশার ছায়া দেখা দিল । বিক্রম খালি গায়ে শুধুমাত্র কোমরে একটা গামছা পড়ে মালা দিয়ে শ্যাওলা পরিষ্কার করছে । বহুদিন পর বিদ্যা কোন পুরুষ মানুষকে অর্ধ উলঙ্গ দেখছে । বিক্রমের প্রশস্ত ছাতির ঘন কালো লোম যা সরু হয়ে পেটের মাঝ বরাবর গিয়ে তার গামছার ভিতর অবধি চলে গেছে । মালা দিয়ে মেঝে ঘষার জন্য তার হাতের পেশি বারবার ফুলে উঠছে । আর তার গামছা পাছার সাথে লেগে আছে , যার জন্য বিক্রমের বৃহৎ গম্বুজের মতো দুটো থাই আর বৃহৎ পাছা বিদ্যার সামনে দৃশ্যমান। বিক্রমকে এই অবস্থায় দেখে বিদ্যার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠলো । হৃৎপিণ্ড ধুকপুকানি বেড়ে গেল । নিজেকে সামলে নিয়ে মাথা ঝাড়া দিয়ে বিদ্যা ওখান দিয়ে চলে আসলো ।

ঘরে ঢুকে মেয়েকে শুধু বললো , “ ও শ্যাওলা পরিষ্কার করছে । „

দিব্যা শুনলো কি শুনলো না সেটা লক্ষ্য না করেই বিদ্যা আবার রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো । রান্না করতে করতে বারেবারেই তার চোখের সামনে বিক্রমের লোমশ প্রশস্ত ছাতি , ফুলে ওঠা হাতের পেশী আর গম্বুজের মতো দুই থাই আর পাছা ভেসে উঠতে লাগলো ।

মেঝে পরিষ্কার করে স্নান করে এসে বিক্রম ঘরে ঢুকলো । জামা প্যান্ট পড়ে সোফায় বসে খবর দেখতে লাগলো । কিছুক্ষন পর রান্না শেষ হয়ে গেলে বিদ্যা স্নান করতে এলো । এসে দেখলো বাথরুমের মেঝে ঝকঝকে পরিষ্কার। নিজের মুখ দেখা যাচ্ছে বললেও বাড়াবাড়ি হবে না । বিদ্যার মনটা এক অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে উঠলো । তার মেয়ে যে একজন ভালো কর্তব্যশীল জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পেরেছে সেটা ভেবেই তার মাতৃ হৃদয় গর্বে ভরে উঠলো ।

পাশের বস্তিতে থাকা অন্য মহিলাদের মত বিদ্যা শাড়ি পড়ে স্নান করে না । সে শাড়ি খুলে রেখে তার কোমল অতৃপ্ত নারী শরীরে জল ঢালতে লাগলো । নিমেষের মধ্যে জলে ভিজে তার শায়া ব্লাউজ তার শরীরে লেপ্টে গেল । প্রাচীন কালের সাহিত্যে তখনকার গ্রামের নবযৌবনা কুমারী নারী স্নান করে পরনে শুধুমাত্র একটা শাড়ি জড়িয়ে কোমরে জল ভর্তি কলসি নিয়ে আঁকা বাঁকা পথে বাড়ি ফেরার যে সৌন্দর্য বর্ণনা আছে তা হুবহু বিদ্যার এই স্নানরত সৌন্দর্যের সাথে মিলে যায় । আর তার এই সৌন্দর্য প্রতিফলিত হলো বিক্রমের সদ্য পরিষ্কার করা মেঝেতে । এতদিনের অপরিচ্ছন্ন নোংরা মেঝে পরিষ্কার হওয়ার পর যেন একটু বেশি বেহায়া লম্পট হয়ে উঠলো । বিদ্যার কোমল শরীরের বিভিন্ন খাঁজ , তার ব্লাউজের ভিতর উত্থিত সুডৌল পিন্নোনত স্তন , বৃহৎ কটিদেশের খাঁজে ঢুকে যাওয়া শায়া , তার গভীর নাভী , নরম মাংসল পেট , তার শরীরের উপর বিন্দু বিন্দু জলকণা সবই সেই মেঝেতে প্রতিফলিত হতে লাগলো ।

কালিদাসের মেঘদূত কাব্যে যেমন এক আষাঢ়ের মেঘ অভিশাপ প্রাপ্ত যক্ষের বার্তা তার বিরহী প্রিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা আছে ঠিক তেমনি বিক্রমের পরিষ্কার করা মেঝে বিদ্যার এই অপরূপ মনমোহিনী রূপের বর্ণনা বিক্রমের কাছে পৌঁছে দিতে চায় ।

বিদ্যা স্নান করে এসে ঘরে ঢুকলো । তার পরনে একটা সাদা শাড়ি , শাড়ির উপর দেবনাগরীতে কিছু লেখা আছে । আর নীল ব্লাউজ । লম্বা ভেজা চুল শোকানোর জন্য গামছা বাধা । হাতে একটা বালতি । তাতে ভেজা শাড়ি শায়া ব্লাউজ আছে । ঘরে ঢুকে বিক্রমের পাশ দিয়েই বিদ্যা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল । বিদ্যার ভিজে পায়ের ছাপ দেখতে দেখতে বিক্রমের পুরানো কিছু স্মৃতি মনে পড়লো ।

যখন সে আগে সারাদিন কাজ করতো । তখন রাতে খেয়ে দেয়ে এসে ঘুমানোর পর রোজ একধরনের স্বপ্ন দেখতো । সেই স্বপ্নে তার ছোট একটা বাড়ি আছে । তাতে সে তার স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে থাকছে । তার স্ত্রী এইভাবেই স্নান করার পর ভেজা চুলে গামছা বেঁধে থাকে । আর যখন সে তার এই স্বপ্নের মধ্যেকার স্ত্রীর মুখটা কল্পনা করতো তখন সেই স্বপ্নের স্ত্রীর মুখের জায়গায় বিদ্যার মুখ বসানোর চেষ্টা করতো । সেই স্বপ্নটার কথাই এখন তার মনে পড়লো ।
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 6 users Like Bichitro's post
Like Reply
#60
দুপুরে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ টিভি দেখলো তারপর শুয়ে বিশ্রাম করে নিল । তারপর বিকাল বিকাল দোকান খুললো । শাটার তুলে দেওয়ার সময় সকালের বিদ্যার গয়না বিক্রি করে দেওয়ার কথাটা আর একবার মনে পড়লো । তার মাথাতে এখনো গয়না বিক্রির কথাটা ঘুরপাক খাওয়ার একটা কারন আছে ।

আবাসিক থেকে বার হওয়ার পর বিভিন্ন কাজের সুবাদে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় হওয়ার এবং তাদেরকে জানার সুযোগ হয়েছে । তখন রাস্তায় বাসে অনেক মেয়েদের কথোপকথন না চাইতেও সে শুনতে পেত । সেই কথোপকথন গুলোর বিষয়ের মধ্যে একটা সাধারন সর্বজনীন বিষয় হলো গহনা । কার বিয়েতে কে কতো গয়না কিনেছে । কাকে তার স্বামী কতো ভরির , কত গ্রামের গয়না দিয়েছে এসবই মহিলারা খুব উত্তেজিত হয়ে কথা বলতো । সেইসব মেয়েদের খুশীর উচ্ছাস তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠতো । এইসব মুখ বিক্রমের চোখ এড়াতো না । তাই এই কথোপকথন গুলো শোনার পর সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে যখন বিয়ে করবে কিংবা যখন তার জীবনসঙ্গী আসবে তখন তাকে সে সোনায় মুড়িয়ে রাখবে ।

এই সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করে সে নিজের আয়ের একটা ছোট অংশ আলাদা জমিয়ে রাখতো । বিক্রম আবাসিক থেকে বার হওয়ার পর এগারো বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছে । এই এগারো বছর তার দৈনন্দিন খরচা যৎসামান্য হলেও তার আয় কখনোই যৎসামান্য ছিল না । সে তার আয়ের যে অংশ জমে যেত সেটা বিভিন্ন জায়গায় জমিয়ে রাখতো । এই জায়গা গুলোর মধ্যে যেমন ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিস ছিল তেমনই ছিল একটা সোনার বা গহনার দোকান । দোকানটা তাদের আবাসিকের পাশেই । দোকানের মালিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী আবাসিকের ছেলেদের খুব ভালোবাসেন ‌। যখনই আবাসিকের ছেলেদের কাউকে দেখেন তখন মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে আফসোসের স্বরে বলেন , “ বেচারার দল । নিজের বাপ মায়ের নামটা পর্যন্ত জানে না এরা । „

বিক্রম দোকান খুলে দিয়ে খাটের উপর বসে ভাবছিল সেই সোনার দোকানে যতো টাকা জমেছে তা দিয়ে কি কিনলে সবথেকে ভালো হবে । আংটি কিংবা সোনার চেইন কেনা যেতে পারে কিন্তু এগুলোতে খরচা কম । বালা দিলে কেমন হয় ? তার চিন্তনের মাঝে ঠিক সকালের তীর্থঙ্কর আর শবনমের মতই এক বয়স্ক বৃদ্ধা মহিলা দোকানের সামনে এসে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো , “ এটাই তোমার জামাই ? „

বিদ্যা সকালের অসম্পূর্ণ ব্লাউজটাতেই কাজ করছিল । মুখ তুলে বললো , “ হ্যাঁ পিসিমা । এসো বসো । দুদিন এলে না যে ? „  

বৃদ্ধা মহিলা দোকানে ঢুকে খাটের উপর বসতে বসতে বললো , “ আর বলো না বৌমা । হাঁটুর বাতের কথা তো জানোই । আজকাল বড্ড ভোগাচ্ছে । „ তারপর বিক্রমকে প্রশ্ন করলো , “ তোমার নাম কি ? „

বিক্রম জবাবে বললো , “ আমার নাম বিক্রম । „

বৃদ্ধা বিস্ফোরিত নেত্রে বললো , “ কি অলুক্ষণে কান্ঠ দেখো । দিব্যার বাবার নামও তো বিক্রম । কেউ নিজের বাবার নামের ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় ? কি অনাসৃষ্টি বলো দেখি ! „

বিক্রম বিদ্যা দুজনেই চুপ করে রইলো । এই কথায় কি করবে কি বলবে তা তারা দুজনেই ভেবে পেলোনা । বৃদ্ধা বলে চলেছে , “ তোমাদের শুনলাম বিয়েও হয়নি । কি আজকাল লিভিং ফিভিং করে বেড়াচ্ছো । আমাদের সময়ে তো বিয়ের আগে মুখ দেখা দেখি পর্যন্ত হতো না । কি বাবা তোমাদের যুগ তোমরা বোঝো । „

বিদ্যা মিথ্যাবাদী মিথ্থুক না । তাহলে সে এই সত্য গোপন করে যেত । তার মেয়ে যে বিয়ে না করে একটা ছেলের সাথে লিভিংয়ে গেছে সেটা বলতো না । সে বলে বেড়ায়ও নি । যে জিজ্ঞেস করেছে শুধু তাকেই সত্য কথাটা বলেছে । বৃদ্ধার এইসব কথা শুনতে বিক্রমের একটুও ভালো লাগছিল না । তাই সে উঠে বাড়ি চলে এলো । তার এই আচরণে কে কি মনে করলো তাতে তার কোন কিছু যায় আসেনা ।

বাড়ি এসে ঢুকে দেখলো দিব্যা সেই টিভির সামনেই বসে আছে । সেও তার সন্তানের মায়ের পাশে বসে টিভির হিন্দি ধারাবাহিক দেখতে লাগলো । উশখুশ করে দিব্যাকে বললো , “ তোমার আর তোমার মায়ের দুটো চুড়ি দাওতো । „

“ কি করবে ? „

“ দাও না । দরকার আছে । „

দিব্যা তার আর তার মায়ের দুটো কাঁচের চুড়ি দিয়ে দিল । দিব্যার কাছে থেকে চুড়ি দুটো নিয়ে , বিক্রম তার ব্যাগ থেকে একটা ছোট পকেট খাতা বার করে নিয়ে সেই সোনার দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা হলো । বিদ্যার দোকান পেড়িয়ে দশ পনের মিনিট হেঁটে এসে রাজভবনের কাছ থেকে শোভাবাজার গামী একটা বাসে উঠে পড়লো । খালি বাস হওয়ায় একটা উইন্ডো সিট দখল করে বসে পড়লো । বাস চালু হতেই একটা দমকা হাওয়া তার মুখে লাগলো । সন্ধ্যা বেলার শীতল হাওয়া তার মুখে লাগতেই একটা নতুন প্রশ্ন তার মাথায় এসে ঘুরতে লাগলো ।

সে কার জন্য গহনা কিনতে যাচ্ছে ? তার আগত সন্তানের মা দিব্যার জন্য ? নাকি এগারো বছর আগে তার পছন্দ হওয়া এক সুন্দরী যে এখন তার শাশুড়ি সেই বিদ্যার জন্য ? যদি দিব্যার জন্য হবে তাহলে সে এতদিন কেনেনি কেন ? আজকে বিদ্যার গহনা বিক্রি করে দেওয়ার কথা শোনার পরেই তো সে গহনা কিনতে যাচ্ছে । এটা ঠিক যে সে দিব্যার জন্য গহনা কিনতে যাচ্ছে না । সে বিদ্যার জন্যই কিনতে যাচ্ছে । কিন্তু এটা কি ঠিক ? বিদ্যার জন্য তার এই অনুভূতি কি পাপ নয় ?

নিজের মনে এইসব ক্ষুদ্র গভীর অনুভূতির প্রশ্ন উত্তরের খেলা খেলতে খেলতে সে শোভাবাজার সিগন্যালে পৌঁছে গেল । বাস থেকে নেমে হেঁটে দোকান অব্দি যেতে বেশিক্ষণ লাগলো না । দোকানে ঢুকতেই বিশ্বজিৎ জিজ্ঞেস করলো “ অনেক দিন পর এলি যে ? „

“ ওই একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই আসা হয়নি । আজকে কিন্তু টাকা জমা করবো না । „

“ তাহলে ? কিছু কিনবি নাকি ? „

“ হ্যাঁ বালা কিনবো । এই চুড়ি দুটোর সাইজের বালা দেখাও তো । „

“ এতো একই সাইজ । „ বিক্রম এতক্ষণ লক্ষ্য করিনি যে বিদ্যা আর দিব্যার চুড়ির সাইজ একই। 

বাসের মধ্যে মনের মধ্যে চলা দ্বন্দের নিস্পত্তির জন্য বিক্রম দুটো আলাদা ধরনের বালা কিনলো । একজোড়া মোটা বালা কিনলো দিব্যার জন্য আর একজোড়া সরু বালা নিলো বিদ্যার জন্য । বালা কেনার পর হিসাব করে দেখলো এখনো যা টাকা আছে তা দিয়ে একটা বড় নেকলেস কিনতে পারবে । হিসাব করে হাতে গয়নার দোকানের ব্যাগ নিয়ে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে বাস ধরলো । বাড়ি যখন ঢুকলো তখন রাত নটা বেজে কুড়ি মিনিট। বিদ্যা বললো “ তুমি একটু বসো । দশ মিনিট পরেই আমি দোকান বন্ধ করছি । „

বিদ্যার দোকান বন্ধ করার সময় হয়ে এসেছে । বিক্রম বিদ্যার দোকানের সাটার নামিয়ে দিয়ে তারা বাড়িতে ঢুকে এলো । বিক্রম দরজা পেরিয়ে লিভিং রুমে ঢুকে দেখলো দিব্যা টিভি দেখছে । সে দিব্যার পাশে এসে বসে সোনার দোকান থেকে দেওয়া ব্যাগ থেকে দুটো বালার কৌটো বার করলো । বিদ্যা তখনও রান্না ঘরে ঢোকেনি । বিদ্যা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো । বিক্রম মোটা বালার কৌটোটা খুলে দিব্যার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো , “ এটা তোমার জন্য আনলাম । „

সোনার বালা দেখে দুজনেরই চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসার জোগার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বালা দুটো খুবই দামী । দিব্যা কৌটোটা ধরলে বিক্রম এবার সরু বালার কৌটোটা খুলে বিদ্যার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো , “ এটা আপনার জন্য । „

বিদ্যা পাথর হয়ে গেল । থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো । বিক্রম হাতে ধরা কৌটোটা আর একটু এগিয়ে দিলে বিদ্যা কাঁপা হাতে কৌটোটা ধরলো । কিছুক্ষন কৌটোর ভিতরে বালা দুটোর দিকে তাকিয়ে থেকে একটা বালা বার করে দেখলো । সুন্দর সূক্ষ কারুকাজ করা ২২k সোনার বালা। বাংলা জোড়া তার খুব পছন্দ হয়েছে । সৌজন্য বশে সে বললো , “ আমার জন্য কেন কিনতে গেলে ? „

“ আর কার জন্য কিনবো ? আপনারা দুজনেই তো আমার পরিবারের একমাত্র সদস্য। „

বিদ্যা তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে । দিব্যা এক দৃষ্টিতে সোনার বালার দিকে তাকিয়ে আছে । তার মুখে খুশির কোন উচ্ছাস নেই । যে উচ্ছাস বিক্রম রাস্তাঘাটে বাসে মেয়েদের আলোচনায় দেখতে পেত । সেই উচ্ছাস দিব্যার মুখে অনুপস্থিত। বিদ্যার খুব রাগ হলো মেয়ের উপর । স্বামী ভালোবেসে সোনার বালা দিচ্ছে আর সে চুপচাপ বসে আছে । বিদ্যা মনে মনে ভাবলো , ‘ একটু বেহায়া হ । জড়িয়ে ধর বিক্রম কে । ‚

হঠাৎ দিব্যা সোফা থেকে উঠে মায়ের হাত থেকে কৌটো নিয়ে বললো “ এটা আমার বেশি পছন্দ হচ্ছে । আমি এটা নেবো । „ বলে নিজের হাতে ধরা মোটা বালার কৌটোটা বিদ্যার হাতে ধরিয়ে দিল ।

বিদ্যা আগেই নির্বাক হয়ে গেছিল । এখন তার মাথা কাজ করছে না । তার মেয়ে মোটা বালা ফিরিয়ে দিয়ে সরু বালা পছন্দ করছে । মেয়ের এমন কান্ডজ্ঞান হীনতার কোন কারণ বিদ্যা বুঝতে পারলো না । দিব্যার এই বালা বদলে বিক্রম ও কিছুটা অবাক হলো । তবে সে ভাবলো ‘ হয়তো সত্যি সরু বালা ওর বেশি পছন্দের। ‚

খাওয়ার সময় দিব্যা বললো “ কেন বিয়েটা করছো না বলো তো । „

দিব্যার এমন কথাতে দুজনেই অবাক হলো । সকালে তীর্থঙ্কর তার আর বিদ্যার সাথে দেখা করার পরেই দিব্যার সাথেও দেখা করেছিল । বিক্রমের বুঝতে বাকি রইলো না যে তীর্থঙ্কর যেমন তাকে বিদ্যাকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে বলেছিল ঠিক তেমনি সে দিব্যাকেও তার মাকে বিয়ে জন্য কথা বলতে বলেছে । তাই দিব্যা এখন এই কথাটা তুলছে ।

বিদ্যা জামাইয়ের সামনে এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবে সেটা বুঝতে পারলো না । তাই সে মেয়ের দিকে তাকালেও কিছু বললো না । তাই দিব্যা আরো দু একবার কথা বলে থেমে গেল । নিঃশ্চুপ মানুষের সাথে বেশিক্ষণ কথা বলা যায়না যে ।

রাতে ঘুমানোর সময় বিদ্যার এক মিশ্র অনুভূতি হলো । আগের রাতের মত শুধু নিশ্চিন্তের ঘুম আজকে হলো না । আজকে দিব্যার মুখে তীর্থঙ্করের বুলির জন্য কিছুটা অসুন্তুষ্ট , বিক্রমের সোনার বালা এনে দেওয়ার জন্য অফুরন্ত খুশি , এবং মেয়ে যে এরকম একটা ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে সেটার জন্য মন হালকা করার আনন্দ। সব অনুভূতি মিলে মিশে আজকের ঘুমটাও ভালোই হলো তার ।
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply




Users browsing this thread: 21 Guest(s)