20-08-2023, 08:52 PM
খুব ভালো এই গল্পটা 

ভৌতিক গল্প সংকলন (সমাপ্ত)
|
22-08-2023, 08:45 AM
|| ফ্রিজ খুলবেন না ||
লেখা :- পার্থ মুখার্জী
আপনাকে যখন জানোয়ারটা পিছনের দিক থেকে আঘাত করলো তখন কিছু বুঝতে পারেন নি ? পাশের গোল টিপ পরা ফর্সা মহিলা উত্তর দিলো...না দিদি, কিছু বুঝে ওটার আগেই এতো জোড়ে মাথায় আঘাত লাগলো যে আর জ্ঞান ছিলো না। যখন জ্ঞান হোলো তখন দেখছি শীত শীত করছে আর এখানে রয়েছি। আর আপনি এখানে কি ভাবে ? ট্যাক্সিতে উঠেছিলাম বাড়ি ফিরবো বলে। কিছু পরেই হঠাৎ একটা স্প্রে করে অজ্ঞান করে দিলো। কিছু পর যন্ত্রনায় ছটফট করলাম আর তার পরেই চোখ খুলে দেখলাম আপনার পাশেই রয়েছি এই ঠান্ডায়। আমার মেয়েটা বোধহয় এখনো অপেক্ষা করছে। বনি অনেকক্ষণ থেকেই ফিস ফিস করে আওয়াজ পাচ্ছিলো। এখন ও নিশ্চিত এটা কোথা থেকে আসছে। পা টিপে টিপে ও এসে দাড়িয়েছে কিছু দিন আগেই কেনা নতুন বড়ো ফ্রিজটার সামনে। আস্তে আস্তে খুললো ওটা। ভিতরের ঠান্ডা হাওয়া যেন শিকারির মতো ঝাঁপিয়ে পরলো তার ওপর, গা সির সির করে উঠলো তার। ফ্রিজের ভিতরের ধোঁয়া মাখা মিষ্টি আলোতে সে দেখলো পাশাপাশি রাখা দুটো কাটা মুন্ডু নিজেদের মধ্যে কথা বলেচলেছে। কপালে ঘাম দিয়েছে বনির। টিপ পরা মুন্ডুটা কট কট করে তাকিয়ে আছে তার দিকেই।মুন্ডু গুলো থেকে রক্ত পরতে শুরু করেছে। সেই রক্তে ভরে যাচ্ছে মেঝে। বনির গোটা গা যেন রক্তে মাখা মাখি হচ্ছে । চিৎকার করে ওঠে সে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় বনির। ঘামে চান করেগেছে । স্বপ্ন দেখছিলো সে।দুঃস্বপ্ন তার জীবনেরই অঙ্গ।মাথার পাশে রাখা জল ঢক ঢক করে গলায় ঢালে বনি ওরফে বাণীব্রত। রাজাপুরের এই গলির শেষপ্রান্তে তার দু কামরার ঘর। একা থাকে। বাবা গত হয়েছেন। মা নিরুদ্দেশ। ট্যাক্সি চালায়। পাড়ার সবাই ওকে ভালো ছেলে বলেই জানে। পড়াশোনাও করেছে কিছুটা। মার্জিত ব্যবহার আর মুখে সর্বদা স্মিত হাসি বনিকে সবার কাছেই অল্পসময়ে জনপ্রিয় করে তোলে। তবে ও কিছুটা গুটিয়ে রাখে নিজেকে। মিশতে পারে না তেমন।চোখ দেখলেই বোঝা যায় ওর ভিতরে কতো না বলা কথা আর অজানা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।খাট থেকে নেমে ফ্রিজ খোলে সে। না সব ঠিক আছে। ফ্রিজের ভিতরে হাত গলিয়ে টিপ পরা ফর্সা মুন্ডুটা বার করে সে। পাশের টেবিলে রাখে। ড্রয়ার থেকে ছুঁচ সুতো বার করে নিপুন হাতে কাটা মুন্ডুটার চোখ দুটো আর ঠোঁটটা সেলাই করে সে।মেয়েদের বেশি কথা বলা সে পছন্দ করে না সে স্বপ্নেই হোক বা বাস্তবে। বাবা রোজ রাতে নেশা করে এসে ওকে আর ওর মাকে বেদম মারধোর করতো। ছোটো বনিকে বাঁচাতে সে সব অত্যাচার তার মা ই সহ্য করতো বেশি। ভালো করে খেতে পরতে না দিক অত্যাচারে কোনো কার্পণ্য করতো না ওর বাবা। মা ছিলো একমাত্র আশ্রয়।দিনের পর দিন মায়ের ওপর অত্যাচার দেখতে দেখতে ভিতরটা তার পাথর হয়ে গেছে। কিন্তু সেই মা কি করলো তার সাথে ? মাত্র পনেরো বছর বয়সেই তাকে ছেড়ে পালিয়ে গেলো সংসার থেকে। তাকে এই নরকের আগুনে ঝলসাতে দিয়ে নিজে স্বর্গ সুখ পেতে চলে গেল অন্য কোথাও।বাবার মুখেই শুনেছিলো তার মা নাকি পালিয়েছে পাড়ার এক কাকুর সাথে। তার পর থেকেই নরক কি জিনিস তা নিজের ঘরেই টের পেতে শুরু করে বনি। সামান্য সামান্য ভুল ত্রুটি তে যে মার সে খেত তা পুলিশের থার্ড ডিগ্ৰী কেও লজ্জা দেবে।একদিন সহ্যর সব সীমা অতিক্রম করলো বনির। তাকে মারধোর করে রাতে মদ খেতে বসেছিল বাবা ছাদের ওপর। চুপি চুপি গিয়ে ঠেলে নিচে ফেলেদিয়েছিল সে। পরেই মৃত্যু হয়েছিল।তার প্রথম খুনে হাতে খড়ি এটাতেই।মাতাল বলে পুলিশও তেমন গুরুত্ব দেয় নি। তার পর থেকেই একা জীবনযুদ্ধ চালিয়ে গেছে সে। দিন গুনেছে মা এর ফিরে আসার কিন্তু কেউ আসে নি। আস্তে আস্তে মনের অন্ধকার কোনে মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃণা বাঁসা বেঁধেছে তার। বাবার ওপর যা যা রাগ জমেছিলো তার মনে তা সবই গিয়ে পরলো মায়ের ওপর।কোনো মহিলা দেখলেই তার মধ্যে নিজের মা কে দেখতে পায় সে। নিজেকে সামলাতে পারে না। খুন করে তাকে।নির্জন জায়গাতে নিয়ে গিয়ে মুন্ডুটা কেটে বাড়ি আনে। নতুন বড়ো ফ্রিজটায় একটা তাক সে বরাদ্দ করেছে এই মুন্ডু গুলোর জন্যেই।মাঝে মাঝেই একটা করে বার করে চোখ মুখ সেলাই করে সে,যেমন এই মুন্ডুটার করে চলেছে। তার পর সেটার সাথে সারারাত গল্প করে। সারা দিনের কিংবা সারা জীবনের না বলা কথা গুলো, দুঃখ গুলো, অভিমানগুলো এক মনে বলে চলে সে কোনো উত্তরের আশা না করেই। এভাবে কিছু দিন চলতে চলতে যখন একঘেয়ে হয়ে যায় তখন বাড়ির পিছনের নির্জন ছোটো বাগানে এক কোনের গর্তে সেগুলোকে পুঁতে দিয়ে নতুন শিকারের সন্ধানে বেরোয় সে।তবে ইদানীং নতুন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাতের দিকে একটা কালো ছায়া ঘুরে বেড়াতে দেখেছে সে। তার উপস্থিতি নানা ভাবে টের পায় বনি। একটু যেন গা টা ছমছম করে ওঠে। খুন করার সময় কিন্তু বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না সে। এখনো পর্যন্ত চারটে খুন করেছে বনি । সবগুলোই শহরের আসে পাশে।পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে। খুবই সাবধানে কাজ সারে সে। কোনো প্রমান রাখে না। সিসিটিভি এড়িয়ে চলে। ফোন তেমন ব্যবহার করে না।কাল সকালেই বেরোবে সে। সারাদিন ঘুরবে। রাতে শিকার করবে। পাকা শিকারির মতো সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সে। বেশি ঝুঁকি নেয় না। বৃষ্টি বাদলার আবহওয়া তার সবচেয়ে প্রিয়। নিম্নচাপ হয়েছে কদিন হোলো। আদর্শ সময়। সেলাই শেষ। এক নিঃশ্বাসে মনের কথা বলে চলে বনি। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে তার। জানেন মা কে খুব ভালো বাসতাম। এই যে চোখ থেকে জল পরছে, মা থাকলে আঁচলে মুছতাম। কলেজে ভর্তি হয়েও শেষ করতে পারি নি। মা থাকলে ঠিক শেষ করতাম। ক্লাসে একটা মেয়ে কে বেশ ভালো লেগেছিলো, কিন্তু আমার চুপচাপ স্বভাব তার ভালো লাগে নি। মুখের ওপর না বলেদিলো। কোনো মেয়েই আমায় পছন্দ করে না। অবশ্য আমিও ঘেন্না করি আপনাদের। এই চোখ দিয়েই তো বশ করেন সব ! আর এখন ? কথা গুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে বনি। নিমেষে দুঃখ ভাবটা উধাও হয়ে যায়। হঠাৎ ঘাড়ের কাছে ঠান্ডা কিছু একটার স্পর্শ অনুভব করে কেঁপে ওঠে সে। চমকে পিছনে ফিরে তাকায়। একটা লম্বা কালো ছায়া দরজার কোনে ঢুকে যায়। হাতে একটা কাঁচি কে ছুরির মতো ধরে এগিয়ে যায় বনি। কিন্তু কোথায় কি ? চোখের ভুল ভেবে ফিরে আসে সে। ভোর হয়ে আসছে। মুন্ডুটা কে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে সে। ফ্রিজ বন্ধ করতে করতে বলে.. কাল তোমাদের বন্ধু আসবে। ই এম আই তে মাস তিনেক হোলো ফ্রিজ টা কিনেছে সে। বেশ বড়ো। ওটার ডেলিভাড়ির সময় পাশের বাড়ির কাকিমা টেরা চোখে তাকিয়ে বলেছিলো একার সংসারে আবার এতো বড়ো ফ্রিজের কি দরকার ? বনি ভাবে, ওই কাকিমার মুন্ডুটা কে এটার ভিতর রাখলে বুঝতে পারতো কি দরকারে বনি ওটা কিনেছে। মনে মনে হাসি পায় ওর।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমে চোখ ঢুলে আসে ওর। হঠাৎ পায়ের কাছে কিছু একটার স্পর্শ পায় সে। চোখটা ভালো করে কচলে দেখার চেষ্টা করে। জিরো ল্যাম্প এর আলোয় একটা আবছায়া নারী মূর্তি দেখতে পায় সে। যেন সাদা কুয়াশায় ঘেরা। হাত দুটো সে বারাচ্ছে বনির দিকে। প্রথম এতো টা ভয় পেলো সে। চোখটা বন্ধ করে নিলো বনি । গায়ের কাছে যেন কেউ নিঃশ্বাস নিচ্ছে, সেই হাওয়া এসে পরছে বনির গায়ে।খুলতে পারছে না সে চোখ গুলো। মনে মনে ভাবছে ওর চোখ গুলোও কি কেউ বাইরে থেকে সেলাই করতে চলেছে। কিছু পরে ভয়ে আতঙ্কে চোখ দুটো কিছুটা খুললো সে। কোথাও কেউ নেই। সকাল হচ্ছে। রাতের সব ঘটনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ট্যাক্সি নিয়ে বেরোলো সে। সারা দিন ঘুরে হোটেলে দুমুঠো ভাত খেয়ে ট্যাক্সিতেই একটু জিরিয়ে নিলো বনি। ডিক্কি খুলে একবার অস্ত্র গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলো। কাটার জন্য করাত, ছোড়া, মাথায় মারার জন্য রড, অজ্ঞান করার স্প্রে, হাতের গ্লাভস, পলিথিন প্যাকেট সবই মজুত রয়েছে। বিকাল থেকে বৃষ্টির পরিমান বারতে শুরু করলো।রঘুপুরের নির্জন রাস্তায় কয়েকবার চক্কর লাগালো সে। পাশেই কলেজ রয়েছে। বৃষ্টিতে তার ট্যাক্সি চড়ার একটা বড়োলোক স্টুডেন্ট নিশ্চই পাবে সে। টোটোর যা উৎপাত। সামনের সিসিটিভি লাগানো ল্যাম্পপোস্টটা এড়িয়ে একটু দূরে দাড়ালো সে। ছেলে মেয়ে গুলো জটলা করে বড়োরাস্তায় উঠছে। একটি মেয়ে এই ট্যাক্সি ট্যাক্সি বলতে বলতে কাছে এলো। কাঁচ নামিয়ে ভালো করে দেখে নিলো বনি। ঠিক যেমন ভাবে ঝোপের আড়াল থেকে চিতা হরিণ সাবককে দেখে। কোথায় যাবেন দিদি ? চন্দনপুরের মোড় মাথায় যাবে ? হ্যা যাবো, উঠে পরুন। আগুনের দিকে পতঙ্গ যেমন এগিয়ে আসে তেমন ভাবেই মেয়েটি উঠেপড়লো ট্যাক্সি তে। গুনগুনিয়ে গান করতে করতে ট্যাক্সি ছেড়ে দিলো বনি।এ রাস্তা তার হাতের তালুর মতো চেনা। বৃষ্টি ঝরে চলেছে অবিরত। মেয়েটা উঠে থেকেই ফোনে বোকে চলেছে। বোধহয় বয়ফ্রেন্ড আছে। থাকবে নাই বা কেন, সবার কপাল কি বনির মতো !রাগে সারা গা টা রি রি করে ওঠে ওর। বৃষ্টির তোড়ে চারদিকটা ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে আছে।গাড়ি টা স্লো হয়ে নির্জন মাঠের ধারে দাড়ায়। মেয়েটির কোনো হুঁশ নেই। ফোন ঘেটেই চলেছে। দিদি গাড়ি টা প্রবলেম করছে, একটু বসুন দেখছি। নিচে নেমে আসে বনি। চারদিকটা দেখে নেয়। লোকজন নেই বললেই চলে। শুধু কয়েকটা গাড়ি জল ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। ডিক্কিটা খুলে কটা জিনিস হাতে নেয় সে। তার পর পিছনের দরজা খুলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোহার রডের বাড়ি পর পর মাথায় পরে মেয়েটার।লুটিয়ে পরে সিটেই। রক্ত ধুয়ে যেতে থাকে বৃষ্টির জলেই। তার পর বডিটা টেনে সে মাঠের বেনা ঝোপের ভিতরে নিয়ে যায়। করাত চলতে থাকে গলা বরাবর। অল্প সময়েই শরীর থেকে মাথা টা আলাদা হয়ে যায়। মাথাটা কাটার সময় বোধহয় মেয়েটা বেঁচেই ছিলো। গলা থেকে অদ্ভুত চি চি আওয়াজ বেরোচ্ছিলো শুধু। বনির বেশ হাসি পাচ্ছিলো। এসব কাজে সে নিজেকে বেশ দক্ষ শিল্পী ভাবে। বডিটা আরেকটু টেনে ভিতরে ফেললো সে। যত দেরী তে ওটা পাওয়া যাবে ততই সুবিধা ওর। টিভি তে নিজের কীর্তির বাহবা নিতে সে অতটা পছন্দ করে না। মুন্ডুটা একটা থলেতে ভরে সিটের নিচে রাখলো সে। রওনা দিলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। সারা দিনের ক্লান্তিতে শরীর টা অবসন্ন হয়ে আছে রনির। থলে টা খুলে মুন্ডুটা টেবিলে রাখলো সে। মেয়েটা দেখতে ভালো।বয়স বেশি নয়। এককালে তার নিজের কলেজ প্রেমের কথা মনে পরে যায় বনির। লজ্জা পায় মনে মনে। ফ্রিজটা খুলে মুন্ডুটা রাখে। তবে পাশের বেশি বয়সের মহিলার মুন্ডু গুলো যেন এটার পাশে বেশি বেমানান লাগছে বনির। সে ঠিক করে আজ রাতেই আগের দুটো বাগানে পুঁতে ফেলবে। ভালো করে চান করে রান্না বসায় সে। বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে একটু জিরিয়ে নেয়। হঠাৎ যেন তার পাশে একটা কালো ছায়া এসে দাড়িয়েছে মনে হয় ওর। একটু শীত শীত ও লাগছে। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এলো নাকি ? ভাবতে ভাবতেই চোখ খুলে চমকে ওঠে সে। মুখের সামনে কালো কুয়াশা ঘেরা আর একটা আবছা মুখ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। তার কি কোনো মানসিক রোগ দেখা দিলো ? না কি যেগুলোকে মেরেছে তাদের কারোর আত্মাই ওর ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছে। ভেবে পায় না সে কিছুই। কুকারের সিটি তে হুঁশ ফেরে ওর। চোখ খুলে কিছুই পায় না বনি। খেয়ে দেয়ে আবার ফ্রিজ খোলে সে। চুলের মুঠি ধরে দুটো মুন্ডু বার করে। অন্য হাতে একটা কোদাল নিয়ে বাগানে যায় সে। অন্ধকার রাতে তার এই অপরাধের সাক্ষী শুধু ভেজা মাটি আর গাছ পালা গুলো। চারিদিকে একটা নিশুতি ভাব বিরাজ করছে। নতুন একটা গর্ত খোলার কথা ভাবে সে। মাটিও বেশ নরম। বাবা একটা কলকে ফুলের গাছ বসিয়েছিল। গতমাসে ওটা মরে গেছে। গাছ টা আগেই উবড়ে ফেলেছিলো সে। খুব ফুল দিতো গাছটা বেঁচে থাকতে যেমন ওর মা ওর কাছে থাকতে ওকে ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলতো ঠিক তেমন ই।এখনো ওর মনে আছে ওই গাছ বসাতে বসাতেই ওর বাবা প্রথম ওর মায়ের পালিয়ে যাবার খবর দিয়েছিলো। চোখের জল গড়িয়ে পরে রনির। রাগে জোরে জোরে কোপ বসাতে থাকে মাটিতে। কিন্তু কিছু পরেই কোদালের ঘায়ে অন্য একটা আওয়াজ আসতে থাকে। কিছু কি আছে ? আর একটু খুঁড়েই কিছু একটা দেখতে পায় সে। এমার্জেন্সি আলোটা এনে জ্বালে। কঙ্কাল রয়েছে একটা। এটাতো তার পোতা নয়। কঙ্কালের আঙ্গুলটায় একটা আংটি দেখে স্থির হয়ে যায় বনি। মা !! তাহলে বাবা মা কে খুনকরে এখানেই পুঁতে দিয়েছিলো ?এতো বছর মায়ের ওপর মিথ্যে দোষারোপের বোঝা সে চাপিয়ে এসেছিলো। হাউ হাউ করে বাচ্ছা শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করে বনি। যে মা এর ওপর রাগ তাকে এই জানোয়ারে পরিণত করেছে সে কি না তার এতো কাছেই শুয়ে ছিলো ! হঠাৎ তার পিছনে সেই ছায়ার উপিস্থিতি টের পায় বনি। মা এসেছো ? বুঝতে পারে বনি। মা নিতে এসেছে তাকে। ভয় দেখিয়ে সে বনি কে জানোয়ার হতে আটকাতে পারে নি। মা হবার আগে সে নিজে মেয়েও। কি করে সে সহ্য করে মেয়েদের প্রতি তার সন্তানের এইরূপ প্রতিহিংসা।একটা মিষ্টি গন্ধ পায় বনি। মায়েদের গায়ে একটা গন্ধ থাকে যা শুধু সন্তানেরাই পায়। বনিও চিনতে পেরেছে। মা এর কবরে আস্তে আস্তে শুয়ে পরে সে বাধ্য ছেলের মতো। যেমনটা সে ছোটবেলায় করতো। জড়িয়ে ধরে তার মা কে। ওপর থেকে মাটি পরতে শুরু করে একটু একটু করে। কিছু দিন পর পচা গন্ধের অভিযোগে যখন পুলিশ বাড়িতে ঢোকে তখন ফ্রিজ খুলেই সেটা বন্ধ করে ফেলেন থানার বড়োবাবু।বমি করতে করতে বাগানে চলে আসেন তিনি । এখানের মুন্ডু দুটো তার দিকেই চেয়ে আছে। আর বাগানের এক কোনে আলগা মাটির ওপর নতুন আর একটা কলকে চারা গজিয়ে উঠেছে।বড়ো বাবু তখন চেঁচিয়ে বাকিদের বলেচলেছেন "ফ্রিজ খুলবেন না"। || সমাপ্ত ||
22-08-2023, 06:33 PM
(This post was last modified: 22-08-2023, 06:35 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এই থ্রেডের সেরা গল্পের একটা হয়ে থাকবে এটা। জাস্ট দুর্দান্ত! লেখককে স্যালুট এমন একটা ব্রুটাল বিষয় ডিটেলে লেখার জন্য। পিতার রক্ত কথা বলেই। সেটাই প্রমাণিত হলো। পরিস্থিতি শুধু আয়নার সামন এনে দাঁড় করায় বাকিটা যা করার দুই রক্তেমাখা হাতই করে। তবে ওই শেষের দিকের অংশের লেখাটা অর্থাৎ মা হবার আগে সেও মেয়ে। তাই মেয়েদের ওপর একজন পুরুষের অত্যাচার থেকেও বোধহয় সোনার টুকরো আপন সন্তান, যাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল সেই ছেলেই জীবন্ত পিশাছে পরিণত হয়েছে সেটা বেশি ভয়ানক এবং এই ব্যাপারটা বেশি কষ্ট দিয়েছে। মায়েদের কাছে এই পুরুষ নারী ভেদাভেদ বলে কিছু থাকে বলে জানিনা। তাই আপন সন্তানকে শাস্তি দেবার থেকেও বেশি ওকে বাঁচাতে বোধহয় হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে গেলো সে।
22-08-2023, 06:51 PM
(This post was last modified: 22-08-2023, 06:51 PM by Somnaath. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এটা ব্যাপক
![]()
23-08-2023, 08:13 AM
ভৌত্তিক সেক্স গল্পের কালেকশন দেওয়া যায় না এভাবে
23-08-2023, 07:05 PM
(22-08-2023, 04:14 PM)Bumba_1 Wrote: থ্যাঙ্ক ইউ
![]() (22-08-2023, 06:33 PM)Baban Wrote: এই থ্রেডের সেরা গল্পের একটা হয়ে থাকবে এটা। জাস্ট দুর্দান্ত! লেখককে স্যালুট এমন একটা ব্রুটাল বিষয় ডিটেলে লেখার জন্য। পিতার রক্ত কথা বলেই। সেটাই প্রমাণিত হলো। পরিস্থিতি শুধু আয়নার সামন এনে দাঁড় করায় বাকিটা যা করার দুই রক্তেমাখা হাতই করে। তবে ওই শেষের দিকের অংশের লেখাটা অর্থাৎ মা হবার আগে সেও মেয়ে। তাই মেয়েদের ওপর একজন পুরুষের অত্যাচার থেকেও বোধহয় সোনার টুকরো আপন সন্তান, যাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল সেই ছেলেই জীবন্ত পিশাছে পরিণত হয়েছে সেটা বেশি ভয়ানক এবং এই ব্যাপারটা বেশি কষ্ট দিয়েছে। মায়েদের কাছে এই পুরুষ নারী ভেদাভেদ বলে কিছু থাকে বলে জানিনা। তাই আপন সন্তানকে শাস্তি দেবার থেকেও বেশি ওকে বাঁচাতে বোধহয় হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে গেলো সে। সেটাই
![]() (22-08-2023, 06:51 PM)Somnaath Wrote: ![]() ![]() (23-08-2023, 08:13 AM)Shuhasini22 Wrote: ভৌত্তিক সেক্স গল্পের কালেকশন দেওয়া যায় না এভাবে সেরকম পেলে অবশ্যই দেব
25-08-2023, 11:39 AM
|| সেই চোখ ||
লেখা :- অন্নপূর্ণা ঠাকুর চক্রবর্তী
অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা অপর্ণা। হঠাৎ লোডশেডিং হয়ে গেল মাঝরাতে। সারা শহর এখন ঘুমিয়ে আছে। একটা অলৌকিক পরিবেশ আচ্ছন্ন করে রেখেছে বাড়িটাকে। খুব গরম লাগছে পলাশের বাহুবন্ধনে। পলাশ ওর যৌবনভরা বুকের ওপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। যতক্ষণ পেরেছে ওকে উন্মত্তের মতো আদর করে অস্থির করে দিয়েছে। এসিতে থেকেও অপর্ণা গলে,গলে নিজেকে সংযত রেখেছে ঠোঁট কামড়ে। তারপর ক্লান্ত হয়ে অপর্ণার খোলা শরীরটার ওপর হাত রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘরের সংলগ্ন ছোট্ট ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায় অপর্ণা। একটা ঠান্ডা বাতাস এসে ওর সারা শরীর জুড়িয়ে দিয়ে গেল যেন সহসা। এতক্ষণের দুর্বিসহ ক্লান্তি যেন এক নিমেষে শীতল হয়ে গেল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো অন্ধকারে ডুবে গেছে গোটা শহরটা। আকাশে একফালি চাঁদ নিস্তব্ধ যেন। পাশাপাশি কয়েকটা বাড়ি প্রায় একই রকমের। হঠাৎ পাশের বাড়ির বারান্দায় একবিন্দু আলো লাল হয় জ্বলছে ধক্ধক্ করে। অপর্ণার দৃষ্টি সেদিকে যেতেই এক পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল। অপর্ণাকে উদ্দেশ্য করে বললো বোধহয়, আপনি এতো রাতে দাঁড়িয়ে আছেন? অপর্ণা আন্দাজ করে নিয়ে বললো, আমাকে বলছেন! পুরুষ কন্ঠ বললো হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। তারপর নিজেই বললো, লোডশেডিং বলেই ঘুম আসছেনা বুঝি? অপর্ণা বললো, ঠিক বলেছেন। ভীষণ গরম লাগছিল তাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। আটফুট পার্থক্য মাত্র দুটো বাড়ির মাঝখানে। অন্ধকার ক্রমশ চোখ সওয়া হয়ে যাচ্ছে। অপর্ণা দেখলো এক লম্বাকৃতি পুরুষ একটা পাতলা জামা গায়ে মনে হলো কিন্তু অবয়ব ছাড়া স্পষ্ট কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শুধু ওই ধকধকে জলন্ত গোলাকৃতি আলোটা ছাড়া। তারই আলো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছিল এতক্ষণ! অপর্ণা ভাবলো ভদ্রলোক হয়তো স্মোক করছেন। ভদ্রলোক অপর্ণাকে বললো, আপনার স্বামী কি ঘুমোচ্ছে? অপর্ণা বললো হ্যাঁ, উনি একটু ঘুমকাতুরে। আমার ঘুম আসছিলনা তাই… ভদ্রলোক যেন একটু হাসলেন। বললেন, আমিও প্রায় সারারাত জেগেই থাকি বলতে পারেন! রাতে আমার ঘুম হয়না। অপর্ণা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কোনো অসুখ….! কথাটা শেষ করার আগেই ভদ্রলোক বললেন না,না সেসব কিছু নয়। আসলে আমি রাতে ঠিক ঘুমোতে পারিনা। একাই থাকি, সঙ্গী বলতে ওই ছবির ক্যানভাস, আর বাবার আমলের এক বৃদ্ধ কেয়ার-টেকার। আঁকা আমার নেশা। এভাবেই ভালো আছি। অপর্ণাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনারা তো কদিন হলো ভাড়া এসেছেন এই বাড়িটায় কেমন লাগছে? অপর্ণা বললো, ঠিকই আছে। ওর অফিসের কাছাকাছি বলেই এখানে আসা। ভদ্রলোক একটা খোলা হাসি হাসলো এমন উচ্চস্বরে, নিঝুম রাত চিড়ে তাল মিলিয়ে একটা রাতজাগা পাখি যেন সামনে দিয়ে উড়ে গেল একই রকম বিকট সুরে। জলন্ত আলোটা কিন্তু ধিকধিক করে একইভাবে জ্বলছে অনেক্ষণ ধরে। অপর্ণা শিহরিত হয়ে উঠলো। আচমকা একটা ভয়ে বুকটা ধক্ করে উঠলো। অপর্ণা ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘরে চলে যেতে উদ্যোগ নিতে যাবে, এমন সময় ভদ্রলোক অদ্ভুত একটা আবেগের কন্ঠে ওর নাম ধরে ডাকলেন। ‘অপর্ণা’ আবেগটা এমন আকর্ষণীয় ছিল,অপর্ণা চমকে উঠে ঘুরে দাঁড়ালো বিস্ময় হতবাক হয়ে; অস্পস্ট অবয়ব তখনও ওই জলন্ত একটা আলো ছড়িয়ে মনে হলো ওর দিকেই চেয়ে আছে। অপর্ণা ভয়ে ভয়ে বললো, আপনি আমাকে চেনেন? ভদ্রলোক বললেন নিশ্চয়ই! তুমি আমার আঁকার প্রেরণা; তোমার ছবিটা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। তুমি আবার একটিবার আসবে আমার স্টুডিও ঘরে? অসম্পূর্ণ ছবিটা তাহলে সম্পূর্ণ করতে পারবো। নইলে যে আমার শান্তি নেই, মুক্তি নেই, যন্ত্রণা নিয়ে আজও অপেক্ষা করে আছি। এতদিন পর আমি আবার তোমার দেখা পেলাম। অপর্ণা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল আমি!! আমি কখনো আপনাকে দেখিনি, চিনিনা! আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। লোকটি বললো, না…আমি বহুদিন অপেক্ষা করে আছি তোমার জন্য! আমি শান্তি পাচ্ছিনা। এমন সময় কারেন্ট এসে গেল। পলাশ বাইরে এসে দাঁড়ায় অপর্ণার পেছনে। পলাশ বললো, এখানে একাএকা দাঁড়িয়ে আছো কেন? চারিদিকে অন্ধকারে ডুবে আছে ভয় করছেনা!! অপর্ণা সামনের বাড়ির বারান্দার দিকে তাকিয়ে বললো, ওইযে ওখানে একজন ছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন! কিন্তু আর দেখতে পেলনা সেই অবয়ব ছায়াছায়া মূর্তিটাকে! হয়তো পলাশকে দেখে চলে গেছে। পরেরদিন ওই একই সময়ে অপর্ণাকে কে যেন বারান্দায় নিয়ে গেল। দেখল, অন্ধকারে সেই লোকটি দাঁড়িয়ে। অপর্ণাকে দেখে বলল, আমি জানতাম তুমি আসবে আবার। অপর্ণা যেন অনুগত হয়ে গেল লোকটির কথায়। বললো, আমি সত্যি আপনাকে চিনিনা। লোকটি বললো, আমার সব ছবি তোমাকে নিয়ে। তুমি যদি আমার ঘরে আসো দেখতে পাবে সত্যি বলছি কিনা! অপর্ণা আজো লোকটিকে স্পষ্ট দেখতে পেলনা। অথচ রাস্তার আলোয় সবকিছু মোটামুটি দেখা যাচ্ছে। অপর্ণা বললো, আপনাকে ঠিকমত দেখতে পাচ্ছিনা আমি। লোকটি আবার হেসে বললো, তুমি একবার আমার বাড়ি এসো। আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। বলেই চলে গেল। কিন্তু কোথায় কিভাবে ফট করে চলে গেল অপর্ণার বোধগম্য হলোনা; অপর্ণা বিছানায় ফিরে এলো। দেখলো পলাশ বেশ গাঢ়ো ঘুমোচ্ছে। ঘরের নীলাভ আলোটা যেন এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। খানিক্ষণ আকাশ পাতাল ভেবেও ছবি আঁকার সঙ্গে নিজে কখনো যুক্ত ছিল কিনা মনে করতে পারলোনা। একদম ছোট বেলায় ড্রইং করতো, সেতো সব বাচ্ছারাই করে থাকে। তবে…নাহ্ ভাবতে পারছেনা কিছুতেই, ওই লোকটার সাথে কখনো ওর জানাশোনা ছিল কিনা! ভাবনায় বিঘ্ন হলো হঠাৎ পলাশের বাহু বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে; এরপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি। পলাশ অফিসে চলে যাওয়ার পর অপর্ণার সময় কাটে কিছু রান্নাবান্না কিংবা ঘর সাজানো নিয়ে। দুপুরে পলাশের ফোন আসে কিছু খুনসুটি হয় ওর সাথে। তারপর ফেসবুক বন্ধুদের সাথে চ্যাটিং করে। আজ ওসব কিছুই ভালো লাগলোনা অপর্ণার। বারবার ব্যালকনিতে যাচ্ছে আর পাশের বাড়িটা দেখছে। মনে হচ্ছে কেউ নেই বাড়িটায়। সারাদিনে কি একবারও ভদ্রলোক বারান্দায় আসেন না!! নিস্তব্ধতায় ভরে রেখেছে যেন বাড়িটাকে। উৎসুক মন বড় বিচিত্র হয় মানুষের। যেখানে রহস্য সেখানেই টান বেশি। অপর্ণারও তাই হলো। অনেকবার মনকে বোঝালো, নাহ্ ও বাড়িতে যাবোনা! তবুও বড্ড আকর্ষণ অনুভব করছে মনেমনে। কি-যেন একটা অদৃশ্য চুম্বকের টান। সন্ধ্যায় পলাশ অফিস থেকে আসার কিছুক্ষণ পর অপর্ণা বললো, এই শোনোনা একটা কথা; পলাশ ওকে জড়িয়ে ধরে বললো, একটা কেন অনেক কথা শুনবো। চল একটু বাইরে কোথাও ঘুরে আসি। চটপট সেজে নাও। দারুণ সাজবে কিন্তু, একদম ছবির মত! অপর্ণা যেন চমকে উঠল বললো, ছবির মত কেন বললে? পলাশ অপর্ণার গালটা টিপে দিয়ে বললো, আমার বৌকে সকলের চোখে সেরা দেখতে চাই! যেমন শকুন্তলা, উর্বসী, রম্ভা ওদের দেখে কেউ চোখ ফেরাতে পারেনা! অপর্ণা বললো, শোনো আজ একটু পাশের বাড়ি বেড়াতে যাই চলো। পাশাপাশি থাকি একটু আলাপ পরিচয় করে আসি! তাছাড়া সেদিন রাতে আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হয়েছে ভদ্রলোকের সঙ্গে। আমাকে যেতে বলেছেন ওনার বাড়িতে। পলাশকে এর বেশি আর কিছু বললো না অপর্ণা। পলাশ কিছুক্ষণ ভাবলো বিষয়টা, তারপর বললো হঠাৎ গেলে যদি কিছু মনে করে ওরা? অপর্ণা বললো, না-না কিছু মনে করবেনা! ভদ্রলোক একাই থাকেন। বরঞ্চ খুশি হবেন আমরা গেলে। অগত্যা,, পলাশ সুন্দরী স্ত্রীকে আদর করে বললো, চলো তাহলে যাই। তবে বেশীক্ষণ থাকবোনা ওখান থেকে বেরিয়ে হোটেলে খেয়ে আসবো। অপর্ণা রাজি, দুজনে বেরোবার সময় কাজের মেয়েটিকে বলে গেল রাতে রান্না করতে হবেনা। দেরী হলে তুই খেয়ে নিবি। ওরা পাশের বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াতেই একজন বয়স্ক ভৃত্য গোছের লোক দাঁড়িয়ে ছিল, যেন জানতো ওরা আসবে এমন ভাব করে। ওদের দেখেই বললো, এসো,এসো তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি। অপর্ণা একটু বিস্মিত হয়ে বললো, আমরা আসবো আগে থেকে জানতেন আপনি? বৃদ্ধ ঘাড় নাড়িয়ে পিটপিট চোখে চেয়ে মুখে মিটমিট হাসি হেসে বললো, আমি জানবোনা! আমিতো সেই কবে থেকে অপেক্ষা করে বাড়ি পাহারা দিচ্ছি তোমাদের জন্য বলেই হে,হে,হে করে হাসছে। পলাশকে দেখে বললো, দাদাবাবুর এতোদিনে তাহলে আসা হলো? অপর্ণা হতবাক; কিন্তু পলাশ সহজ ভাবে চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখতে দেখতে বললো, হ্যাঁ…..। এরপর পলাশের আচরণ যেন অপর্ণাকে বিহ্বল করলো। পলাশ যেন অন্য জগতে চলে গেছে! নিজের বাড়ির মত এঘর ওঘর ঘুরে কি একটা খুঁজচ্ছে। অপর্ণা পলাশকে চুপিচুপি বললো, দাঁড়াও বাড়ির মালিককে ডাকতে বলি আগে। যিনি আমাকে আসতে বলেছিলেন! বলেই, অপর্ণা বৃদ্ধকে বললো, আপনার মালিককে বলুন আমরা এসেছি ওনার সঙ্গে দেখা করতে। বৃদ্ধটি অবাক হয়ে বললো, মালিকতো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বৌমনি! ততক্ষণে পলাশ একটা পুরনো ফুলদানী দেখিয়ে বললো, এটা একটু ঝাড়পোছ করতে পারনি কেউ? এতো ধুলো জমেছে! বলতে বলতে ঘরের সমস্ত জিনিস দেখে উত্তেজিত হয়ে গিয়ে বলছে, কি নোংরা করে রেখেছে সব। আমি একদম নোংরা পছন্দ করিনা জানোনা? বৃদ্ধ ভৃত্যটি অপরাধীর মতো মুখ করে বলছে আমার বয়স হয়েছে আমি এত কাজ করতে পারিনা দাদাবাবু। পলাশ হঠাৎ দোতলার একটা ঘরের সামনে গিয়ে দরজাটা ঠেলে খুলে দিল। বৃদ্ধটি হাসি মুখে বললো, এইতো দাদাবাবুর পছন্দের ঘরে এসেছে এতদিন পরে একবারে বৌমনিকে সঙ্গে নিয়ে! অপর্ণা দুজনের আচরণে অবাক, বিস্ময়কর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। একটা দুর্গন্ধ বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। বহুদিন ব্যাবহার হয়নি ঘরটা গুমোট ভ্যাপসা নোংরা মনে হলো। পলাশ মরিয়া ততক্ষণে। অপর্ণা পলাশকে রুখতে পারছেনা। পলাশের যেন সবকিছু চেনা; দরজার পাশে হাত বাড়িয়ে লাইটের সুইচ টিপে দিল, কিন্তু লাইট জ্বললোনা। পলাশ বিরক্ত হয়ে ঘরের একটা কোনে টেবিলের ড্রয়ার থেকে মোমবাতি আর দেশলাই বার করে জ্বালিয়ে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরটা একটা রহস্যময় আলোকিত হয়ে গেল। অপর্ণা দেখলো ঘরের চারিদিকে ক্যানভাস ঢাকা দেওয়া কাপড়ে। দুটো টেবিল, একটা ছোট যেখান থেকে পলাশ মোমবাতি নিল, আরও একটা বড় টেবিল তাতে শুকিয়ে যাওয়া রঙের কৌটো, তুলি, প্যালেট, ব্রাশ আরো নানান রকম আঁকার সরঞ্জাম। সবই অতি প্রাচীন ধূলো-ময়লার আস্তরণ পরে আছে। অপর্ণার গা-ছমছম করছে এতক্ষণে। পলাশকে ডাকছে পলাশ যেন অন্য জগতে তখন। অপর্ণা বলছে চলো আমরা বেরিয়ে যাই এই বাড়ি থেকে। পলাশ বলছে দাঁড়াও একটু, তোমাকে সেদিন বললামনা আমার একটা ছবি অসম্পূর্ণ রয়েছে! সেটা শেষ করতে হবেতো! এই বলে রঙ তুলিগুলো নাড়াচাড়া করছে। এবার অপর্ণা সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। সেই বৃদ্ধ ভৃত্যটিকেও আর দেখতে পাচ্ছেনা। পলাশকে যেন নিজের মনে হচ্ছেনা! ভালো করে পলাশের মুখটা দেখতেও পাচ্ছেনা। শুধু একটা লাল গোলাকৃতি আলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। অপর্ণার গলা শুকিয়ে আসছে বদ্ধ ঘরটার মধ্যে। সন্ধ্যেবেলায় বাড়িটা অদ্ভুত রকমের অন্ধকারে গ্ৰাস করে রেখেছে। প্রচন্ড গরমে আর ভয়েতে অপর্ণা ঘেমে গেছে। পলাশকে ভয়ার্ত কন্ঠে ডেকে বলছে, পলাশ চলো আমরা পালাই। মনে হচ্ছে এখানে কোনো অশরীরী আত্মার বাস। আমার খুব ভয় করছে। না এলেই ভালো হতো! মোমবাতির আলোয় পলাশকে সেদিনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির মতো দেখাচ্ছে যেন। অচেনা পলাশ। হঠাৎ একটা ক্যানভাসের ঢাকনা সরিয়ে দিয়ে তার সামনে মোমবাতিটা তুলে ধরতেই অপর্ণা চিৎকার করে উঠলো, না…..কে ইনি কে! এতো আমারই ছবি! নগ্ন অবস্থায় অর্ধেক উপুর করে শায়িত! চোখে-মুখে কামনার হাসি! পলাশ একটা অবয়ব ছাড়া এখন আর কিচ্ছু নয়। সেই অবয়ব থেকে একটা বিকট হাসিতে সারাঘর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। অপর্ণা কান্নায় ভেঙে পড়ল। সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে গিয়ে গলায় স্বর বেরোচ্ছেনা কিছুতেই। পলাশের কন্ঠস্বরটাও বদলে গেছে মনে হলো ভয়ংকর রকমের। পলাশ একটা বীভৎস গলায় বললো, দেখ অপর্ণা, আমার এই ছবিটা এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে। শুধু তোমার জন্য। অপর্ণা বললো, না…আমি নই অন্য কেউ ছিল হয়তো আমার মতো দেখতে! তাছাড়া তুমি তো আমার স্বামী, তুমি কেন বুঝতে পারছোনা এটা আমাদের বাড়ি নয়! চলো আমরা পালাই এই অভিশপ্ত বাড়ির থেকে। পলাশ ততধিক হেসে বললো, না অপর্ণা, এটাই আমার বাড়ি। আমার আত্মা সেদিন তোমাকে বারান্দায় অন্ধকারে দেখে চিনতে পেরেছিল। শোনো আমি ছিলাম এই বাড়ির এটমাত্র ছেলে। ছবি আঁকা ছিল আমার নেশা। তুমি ছিলে আমার ছবির মডেল। তোমাকে আমি একটা বস্তি থেকে পেয়েছিলাম। প্রায় সত্তর বছর আগে। তোমার রূপে আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার বাবার কাছ থেকে অনেক টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলাম। তোমার বাবা নেশারু ছিল। টাকার বিনিময়ে মেয়েকে বেচে দিয়েছিল বড়লোক এক লম্পটের কাছে। আমি তোমাকে আলাদা একটা বাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলাম আর সেটাই এই বাড়ি! আমি তোমাকে মডেল বানিয়ে ছবি আঁকতাম। তোমার মনে পড়ছে? অপর্ণা কান্নায় ভেঙে পড়ছে অথচ গলায় শুধু গোঙানী ছাড়া কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছেনা। পলাশ বলে চলেছে .. সেদিনের সেই বৃষ্টির রাতে তুমি এইভাবে বলে ছবিটার দিকে দেখিয়ে বললো, এই ভঙ্গিতে ছিলে। আমি তোমাকে দেখে নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে, তোমার শরীর উপোভোগ করতে উদ্যত হই! তুমি আমাকে বাধা দিতে চেষ্টা কর! আমি তোমার ওই লাবন্য মাখা শরীরের সুধারস পান করতে করতে আচ্ছন্ন হয়ে মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি আমাকে সেদিন ঘৃণা করে আহত করেছিলে! যখন তোমার ওষ্ঠ আমার অষ্ঠকে উত্তাপ করছিল, তখন তোমার তর্জনীর তীক্ষ্ণ ধারালো নখ আমার এই বাঁ-চোখের মধ্যে গুঁজে দিয়েছিলে। সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ থেকে রক্ত পড়তে লাগলো। তোমাকে ছেড়ে দিলাম আমার কবল থেকে। তুমি ছুটে ঘর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলে। যাবার আগে বলে ছিলে লম্পট; তোমার মৃত্যু কামনা করছি তোমার মৃত্যু সংবাদ যেদিন পাবো, সেদিন আমার শান্তি হবে। আর কখনো আমাকে পাবেনা। তখন আমার উনত্রিশ বছর তোমার ছাব্বিশ। আমিও বলেছিলাম তুমি যতদূরেই যাওনা কেন, একদিন ঠিক তোমাকে আমি এখানে নিয়ে আসবোই! কেননা আমার ছবিটা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এই জনমে না পেলেও পরের জনমে আমি তোমাকে ঠিকই পাবো। এখন আমার উনত্রিশ, তোমার ছাব্বিশ। পলাশ হঠাৎ অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। অপর্ণার শরীর প্রায় অবশ হয়ে যেতে লাগলো উষ্ণতায় নয়, শীতলায়। কি সাংঘাতিক ঠান্ডা অধর পলাশের। এরপর অপর্ণাকে বিবস্ত্র করার জন্য জোর খাটাতে ধস্তাধস্তি করছে। অপর্ণা বুঝতে পারছে পলাশের শরীরে কোনো অশরীরী আত্মা ভর করেছে। কিন্তু কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা। পলাশকে কিছুতেই বোঝাতে পারছেনা ওই ছবিটা ওর নয়। হঠাৎ মনে হলো তবেকি ওই ছবির মেয়েটির নামও অপর্ণা ছিল! পলাশ তো অপর্ণা বলেই ডাকছে! তাহলে আমি কি আগের জন্মে এরকম ছিলাম! কিন্তু আমার তো কিছু মনে পরছেনা! না-না এটা কখনো হতে পারেনা! হঠাৎ অপর্ণা দেখলো মোমবাতির আলোটা কেঁপে উঠছে থিরথির করে। প্রায় শেষের হয়ে যাবার দিকে! ও কোনোরকমে হাত বাড়িয়ে বাতিটা তুলে নিল নিজের হাতে! এরপর সজোরে ছুঁড়ে মারল ছবিটার ওপর। এতোদিনের পুরনো ক্যানভাস শুকনো মরমরে হয়ে গেছে। তাই মোমবাতির আগুনে ধপ করে জ্বলে উঠলো ক্যানভাসটা। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরপর সমস্ত ছবিগুলো দাউদাউ করে জ্বলছ। তাতেই যেন এক বিস্ময়কর পরিস্থিতি তৈরী হতেই, পলাশের গায়ের জামাটা বাঁদিকটা ধরে গেল। তাই দেখে অপর্ণা পলাশের হাতের কব্জিটা ধরে টানতে টানতে ঘরের বাইরের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আশ্চর্য ভাবে পলাশের চোখেমুখে একটা ভয়ের ছাপ পরেছে যেন। দেহও অনেকটা শিথিল। এই সুযোগে অপর্ণা পলাশকে হিরহির করে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে এলো এবং অনেক কষ্টে বহুক্ষণ চেষ্টার পর একেবারে বাড়ির বাইরে বার করে আনলো। ততক্ষণে পলাশ আবার যেন আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে। উদভ্রান্তের মতো চারিদিকে চেয়ে আছে যেন পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখছে! অপর্ণা পলাশকে বললো তুমি ঠিক আছোতো? পলাশ স্বাভাবিকভাবেই বললো কেন আমি তো ঠিকই আছি। এরপর অপর্ণার ঘুমটা আচমকা ভেঙে যেতেই দেখলো পলাশ ওকে বুকের মধ্যে জাপটে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। ঘরের বেডলাইটটা যেন একটা নীল আতঙ্কের সংকেত দিচ্ছে নিস্তব্ধ নিঝুম ভোর রাতে! অপর্ণা ভয়ে পেয়ে পলাশকে আঁকড়ে ধরল চেপে। পরের দিন রবিবার ছিল। অনেক বেলায় ঘুম ভাঙল দুজনের। কাজের মেয়েটি ডাইনিং হলে চায়ের কাপ রেখে ডেকে বললো, জানো বৌদি-কাল রাতে পাশের ওই বাড়িটায় হঠাৎ আগুন লেগে গেছে! প্রতিবেশীরা দমকলে খবর দিয়ে তবে আগুন নিভিয়েছে। দেখ এখনো পুলিশভ্যান দাঁড়িয়ে বাড়িটার সামনে। একজন বয়স্ক চাকর ছিল সেও ঘুমের মধ্যে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। অপর্ণা অবাক বিস্ময় ছুটে এলো বারান্দায়। দেখলো সত্যিই বাড়িটার অনেকটা পুড়ে গেছে। আবছা আবছা মনে পরছে গতকাল রাতের স্বপ্নের কথা! তবেকি…….!! ততক্ষণে পলাশ ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। এবং আফসোস করে বলে ইস্ বয়স্ক মানুষটা বোধহয় একাই থাকত! এরপর পলাশ বাইরে বেরিয়ে সমস্ত খবর সংগ্ৰহ করে আনলো। বাড়িটায় বহুদিন কোনো লোকজন ছিলনা, ইলেকট্রিক লাইন কেটে দিয়েছে একজন বয়স্ক চাকর গোছের লোক বাড়িটা আঁকড়ে পরে থাকতো। গতকাল রাতে হয়তো মোমবাতির আগুনে একটা বইয়ের বা অন্য কোনো সামগ্ৰীর ঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পরে গোটা বাড়িটা পুড়ে গেছে। পুলিশ তদন্ত করছে ব্যাপারটা। অপর্ণার অবাক দৃষ্টি পলাশের চোখের ওপর নিবদ্ধ হয়ে আছে। পলাশের বাঁদিকের চোখটা কেমন যেন লাল হয়ে ফোলা ফোলা লাগছে। তবেকি সেই চোখ……!! || সমাপ্ত ||
25-08-2023, 02:25 PM
এই থ্রেডটা ধীরে ধীরে একটা রত্নের সম্ভার হয়ে উঠছে .. এইটুকুই বলতে পারি।
28-08-2023, 09:06 AM
|| কৃত ||
কলমে :- দীপান্বিতা মিত্র নাথ
বিস্মৃতি বড্ড তীক্ষ্ণ আঘাত হানে। মুহূর্তে সবটা অসাড় হয়ে যায় যেন। অন্তঃসারশূন্য এক অদৃশ্য মায়া গোলকে নিজেকে বন্দী মনে হয় তখন ! যা-র মধ্যে আবদ্ধ থাকতে গিয়ে স্ব-অস্তিত্বের উপর বিরাট সংকটের খাড়া ঝুলতে প্রত্যক্ষ করা যায় ! বড্ড উত্তেজনায় পূর্ন। কিন্তু বোধহীনতা এমন ভাবে গ্রাস করে যে সে মুহূর্তে কোন্ পদক্ষেপ যে সঠিক, সেটাই চিহ্নিত করবার ক্ষমতা থাকে না ! আর এ'খেলা খেলতে হয় ঠিক তখনই। সেই মুহূর্ত থেকেই। যখন পূর্ব সমস্ত কিছু বিলুপ্তির যজ্ঞে আহুতি দেওয়া সম্পূর্ন হয়। লড়াই-লড়াই, লড়াই চাই ! লড়াই করেই বাঁচা … এ'টাকে বাঁচা বলে ? নাকি বেঁচে ওঠার প্রয়াস এ'টা..? কে জানে ? ভাবনার সময় তো নেই। যদিও ভাবনা যে কী, সেটাই তো জানা নেই ! এখন একটাই লক্ষ্য, এগোতে হবে যে… আশেপাশে প্রতিপক্ষের ভিড় ঠেলে। অগুনতি-অজস্র সে'সব কে পিছনে ফেলে ! মরিয়া প্রয়াসে ছুটছে যে তারাও, একই লক্ষ্যে ! কতটা লড়াই? কত বৃহৎ বা অল্প পথ? শুধুমাত্র এগিয়ে চলাই কি কর্ম?… আর পরিশেষে, যদি এগিয়ে যাওয়া যায় সব চাইতে পূর্বে, তবেই নির্দিষ্ট করে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় ? নচেৎ এই মায়াপথেই ইতির লিখন ?! আর এতটা প্রয়াসের পরও , গ্রহণযোগ্যতা মিলবে কিনা, সন্দেহ রয়ে যায় অধিক মাত্রায়..! তাও যে ছুটছি সকলে… এ' কোন্ মায়াজালের কারিগরি ? যাইহোক, নিজস্ব এই স্বল্পমেয়াদী বাসস্থানে পৌঁছে গিয়েও আবারও অপেক্ষা। এবং সে অপেক্ষায় দিন গুনে চলা যে কীসের লক্ষ্যে, তখনও অধরা । তবুও প্রয়াস থামে না ! কী আশ্চর্য্য জাদুকরি ! তারপর, নয়মাস অতিক্রান্ত হতেই, অতল সাগরের নিস্তব্ধতা ভেঙে কয়েক মুহূর্তের অন্তরালে এক মহা রণাঙ্গনে অবতরণ ! সবই মারাত্মক তীব্র যেথায়। ভীষণ প্রগাঢ় ! চোখ মেলে চাওয়াই দূরহ তো বাকি কোনো কিছু নিয়ে ভাবনার অবকাশ কই ? হঠাৎই এক উজ্জ্বল প্রভায় উদীয়মান এক দিব্য সত্ত্বা, হয়ত ! একদম সম্মুখ্যে এসে কানের গোড়ায় সে জানান দেয় , " খেলার মুখ্য চরণে স্বাগত ! তোমার জীবন চক্রের ধাঁধার ছক তৈরি .. চল, তৈরি হও। এ'টিকে গ্রহণ করার থেকে সমাধান করার পন্থা অন্বেষণ, সবটাই যে শুরু করতে হবে !" " কিন্তু এটা তো একটা ফাঁকা ক্যানভাস ! এখানে করণীয় কীই বা আছে..?!" " যা চাইবে !, যেমনভাবে চাইবে ! সেটাই করণীয়, একান্ত তোমার করণীয় কর্ম সেটাই..!" " কিন্তু কীভাবে ? কী জানি আমি ? এ'তো অসম্ভব …!" " এই তো শুরু করে দিয়েছ… এই অনুসন্ধিৎসা থেকেই পরবর্তী এসে ধরা দেবে ! এগিয়ে যাও…শুভেচ্ছা রইল.." "কেমন মিটি-মিটি চাইছে দ্যাখ ! এর মধ্যেই হাত-পা ছুড়তে শুরু করে দিল ! এ'খুব শিগগিরই ওলোটপালোট খেল বলে… তারপর তো চোখের পলকে ছুটতে শুরু করবে…" কে যে বলল জানি না। মানে এখনও চিনি নি তাকে… আশপাশের কাউকেই নয় ! তবে এদের গঠন তো আমারই মত ! শুধু আকারে অনেকটা বড় ! আর অনেক কিছুই করে বেড়াচ্ছে যেগুলো আমি ঠিক কীভাবে যে করে…ধুর অস্থির লাগছে ভাবতে ! তখনই চোখে পড়ল, সাদা ক্যানভাসের নিচের একদম কোণে কয়েকটা ছোট্ট আঁকিবুঁকি ফুটেছে। যেগুলোর মুখ ঊর্ধ্বে গমন করছে এমন ধারার… আচ্ছা… তাহলে এই হল সেই মায়জালের আসল কারসাজি । যা-কে কেটেকুটে এঁকেবেঁকে বেরোতে হবে তবেই প্রস্ফুটিত হবে আগামী ?! বেশ তবে, তাই হোক… আপাতত একটু ঘুমিয়ে নি, অনেকটা পথের ব্যাপারস্যাপার তো… || সমাপ্ত ||
28-08-2023, 09:43 AM
28-08-2023, 07:11 PM
ফ্রিজ খুলবেন না এটা দারুণ গল্প। অনেকগুলো জঁরকে একসাথে মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরী হয়েছে এবং প্রত্যেকটার অনুপাত মোটামুটি ঠিকঠাক। কৃত গল্পটার আগাপাশতলা কিছুই মাথায় ঢুকল না, আর অপর্ণার গল্পটা পড়ে মনে হল লেখক নিজেই কনফিউজড যে ঠিক কী ঊপান্ত আসবে, ছবির অপর্ণা আর এই অপর্ণা একই নাকি অপর্ণার বর্তমান স্বামী পলাশ আর ভূতকালের অপর্ণার ধর্ষক একই? সেক্ষেত্রে একই লোকের দুটো আত্মা কোথা থেকে আসে! মগাধীরার গল্প নাকি জাতিস্মর!
আর আপনার কী সমস্যা বলুন তো, শনিবারের বারবেলা-রাতবেলা পড়ে থাকতে সোমবার সকালবেলা কে ভূতের গল্প শোনায়! জোকস এ্যপার্ট, গল্পগুলো কিন্তু দারুণ। একটা গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল গোছের আগ বাড়ানো পরামর্শ দিচ্ছি, বহু জায়গাতে প্রচুর বানান ভুল নজরে আসছে। ভরসা রাখুন, হেডমাস্টার সেজে গল্প পড়ি না নাকের ডগায় চশমা লাগিয়ে, জাস্ট নজরে পড়ে যায় (কী বলব মশাই আমি নিজেও আধ-বাঙ্গালী, লেখাপড়া আর পড়াশোনা সবই হিন্দী মিডিয়াম!!)। আপনি যখন কপি করছেন তখন প্রতিটা গল্প শেষে ছোট্ট করে বন্ধনীতে লিখে দিন, "মূল বানান অপরিবর্তিত।"
28-08-2023, 08:57 PM
সেই চোখটা বেশ লাগলো। একটা ইরোটিক ব্যাপার ছিল গল্পটায়। এটা কিন্তু আরেকটু বড়ো হলে মন্দ হতোনা। মানে ডিটেলে কিছু লাইন আরকি হেহে!
আর কৃতটাও ব্যাপক। জীবন যুদ্ধে জন্ম থেকেই লড়াই শুরু, শুধুই কি তাই? জীবনের জন্য যে দেহটা প্রয়োজন সেই দেহের আবরণের কাছে পৌঁছতেও বহু লড়াই করতে হয় শুক্রকে। তারপরে মেলে দেহ আর শুরু হয় নতুন যুদ্ধ প্রস্তুতি। ক্যানভাস রঙিন করার পালা।
28-08-2023, 09:39 PM
(28-08-2023, 08:57 PM)Baban Wrote: সেই চোখটা বেশ লাগলো। একটা ইরোটিক ব্যাপার ছিল গল্পটায়। এটা কিন্তু আরেকটু বড়ো হলে মন্দ হতোনা। মানে ডিটেলে কিছু লাইন আরকি হেহে! কৃত থিমটা একদমই মাথায় ঢোকেনি প্রথমে। এমন সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে নিবেদন মোর করকৃতপুটে কৃতাঞ্জলী। ![]()
29-08-2023, 09:31 AM
একটু বড় গল্প দেওয়ার চেষ্টা করো এবার থেকে সেন মহাশয়। এত ছোট ছোট গল্প পড়ে কি আর মন ভরে?
29-08-2023, 10:48 AM
(This post was last modified: 29-08-2023, 10:50 AM by Sanjay Sen. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(28-08-2023, 07:11 PM)Akash23 Wrote: আর আপনার কী সমস্যা বলুন তো, শনিবারের বারবেলা-রাতবেলা পড়ে থাকতে সোমবার সকালবেলা কে ভূতের গল্প শোনায়! জোকস এ্যপার্ট, গল্পগুলো কিন্তু দারুণ। একটা গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল গোছের আগ বাড়ানো পরামর্শ দিচ্ছি, বহু জায়গাতে প্রচুর বানান ভুল নজরে আসছে। ভরসা রাখুন, হেডমাস্টার সেজে গল্প পড়ি না নাকের ডগায় চশমা লাগিয়ে, জাস্ট নজরে পড়ে যায় (কী বলব মশাই আমি নিজেও আধ-বাঙ্গালী, লেখাপড়া আর পড়াশোনা সবই হিন্দী মিডিয়াম!!)। আপনি যখন কপি করছেন তখন প্রতিটা গল্প শেষে ছোট্ট করে বন্ধনীতে লিখে দিন, "মূল বানান অপরিবর্তিত।" থ্রেডের শুরুতেই লিখে দিয়েছি, এখানে যেসব লেখক এবং লেখিকাদের তাদের গল্প আমি পোস্ট করছি, তাদের পারমিশন নিয়েই করছি। সুতরাং ভুল বানানের দায়িত্বটাও গল্পগুলোর লেখক/লেখিকারাই নিক। ![]() ঠিক আছে আপনার কথা মেনে এবার থেকে রাতের বেলায় গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব। ![]() (28-08-2023, 08:57 PM)Baban Wrote: সেই চোখটা বেশ লাগলো। একটা ইরোটিক ব্যাপার ছিল গল্পটায়। এটা কিন্তু আরেকটু বড়ো হলে মন্দ হতোনা। মানে ডিটেলে কিছু লাইন আরকি হেহে! খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন
![]()
29-08-2023, 10:52 AM
30-08-2023, 10:18 PM
|| মৃতের কুয়ো ||
ছান ছান! ছান ছান! --- নূপুরের শব্দ। ঘুঘুরুঘুউ!! --- ঘুঘু পাখির সাথে প্যাঁচার পরিত্রাণ কর্কশ চিৎকার --- খেরাও!! জঙ্গলের মধ্যে থেকে ভেসে আসছে এক দল শিয়ালের রাক্ষসী হাঁসি আর সবশেষে এই ভৌতিক পরিবেশকে দেশে দেশে ছড়িয়ে দিতে উড়ে গেলো এক ঝাঁক কাকের দল। তাদের ডানা ঝাপটানোর শব্দে কেঁপে উঠলো সমস্ত অঞ্চল। সেই অঞ্চলেই কুয়াশায় ঘেরা বাংলাদেশের বুক ছিঁড়ে প্রায় দেড়শ বছর ধরে ইতিহাসকে সঙ্গী করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই রাজবাড়ী। যার ডানা দুটো ছেঁটে গেছে অনেককাল আগেই। ডানা ছাড়া এই রাজবাড়ী আজ বিশাল এক ধ্বংসস্তূপের থেকে কম কিছুই নয়। রাজবাড়ীর প্রায় অংশ ধ্বসে পরেছে মাটির উপর। কত কাল যে পরিক্রম করে গেছে তা ওই ধ্বসে পরা ধ্বংসাবশেষের দিকে নজর দিলেই বোঝা সক্ষম। গাছ শ্যাওলা গজিয়ে আজ হয়তো তার মধ্যে খাঁটি নামক বস্তুটাই উধাও পেয়েছে। আবার নূপুরের শব্দ! নূপুর পরা পায়ে আওয়াজ তুলে গোটা রাজবাড়ী হেঁটে চলেছে হয়তো কোনো মেয়ে। মধ্যরাতে যেখানে দেশের সমস্ত মানুষ গভীর নিদ্রায় মগ্ন সেখানে কোন মেয়ে এতো রাতে এই পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে হেঁটে চলে বেরোচ্ছে তা অজানা। মেয়েটি বা কোথায়? ওই শব্দ কানে রেখে সঠিক পথে এগিয়ে গিয়ে দৃষ্টি রেখেও চোখে বাঁধল না কিছুই। সবই পরিষ্কার, সবই ঠিকঠাক, তবুও আওয়াজ আসে কোথা থেকে? আকাশে চাঁদ উঠেছে, তার জ্যোৎস্নায় পুরো ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ীর প্রতিটি কোণা মায়াবী হয়ে উঠেছে। দেখা গেলো পশ্চিমের গগণ ভেদ করে উড়ে আসছে এক গুচ্ছ মেঘ। হঠাৎ-ই বইতে আরম্ভ করেছে হাওয়া। শোঁশোঁ শব্দে কান পাতা বড় দায়। সেই হাওয়ার আঘাতে গাছপালা দুলছে। তারা দুলে দুলে ফেলে দিচ্ছে আলগা হয়ে আসা পাতা। সেই পাতা উড়ে গিয়ে পড়ছে এক গর্তে। গর্তটি পাথর দিয়ে বাঁধানো। দেখলেই বোঝা যায় এযে গর্ত নয়, রাজার কালে তৈরি একটি কুয়ো। যার ভিতরদিক অনেক গভীর, পড়লে বাঁচার সম্ভবনা একদমই নেই। গর্তের অতল তলে ভাসছে জল, তার উপর গিয়ে পড়ছে পাতাগুলো। শোঁশোঁ শব্দ বাতাসকে সাথে নিয়ে বেগ বাড়িয়েই চলেছে। আকাশে মেঘ এসে কখন যে চাঁদটিকে আড়াল করে দিয়েছে বোঝার জো নেই। আচমকা মেঘের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো বৈদ্যুতিক শরনিক্ষেপ! আর মুহূর্তে বেজে উঠলো কর্ণ বিদীর্ণ করা দামাবা গর্জন! সেই আলোক ছটায় মুহূর্তের জন্য দেখা গেলো, কুয়োর কাছে এসে কে জেনো দাঁড়িয়েছে। তার দৃষ্টি হারিয়ে গেছে ওই কুয়োর গভীরে। গভীরে কিছু একটা আছে, হয়তো আছে ইতিহাস। আছে মেয়েটির ইতিহাস। বেশিক্ষণ যেতে না যেতেই আবার বৈদ্যুতিক শরনিক্ষেপ আর সেই বৈদ্যুতিক আলোয়ে দেখা গেলো মেয়েটি উঠে বসেছে সেই কুয়োর পারের উপর। বসে বসে পা দুলচ্ছে আর মাথা দুলিয়ে সঙ্গীত ধরেছে। সে এক অশরীরী সঙ্গীত যা শুনলে গায়ের লোম নিমেষে খাঁড়া হতে বাধ্য। বাধ্য শরীরের শিরদাঁড়া জমাট বেঁধে যেতে- ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা আমার কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা...’ গানের শেষে সে এক অশরীরী হাঁসি! ভয়ঙ্কর রূপে পাতাল থেকে অশরীরীরা এসে জেনো সেই গানের তালে নৃত্য করতে চায়। খিলখিলে সেই হাঁসি দেহের রক্ত চলাচলকে নিমেষেই ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। রক্ত হয়ে ওঠে সলিল। উফ! সেই হাঁসি কানের পর্দায় এসে ধূমধাম ধাক্কা মারে, ভেঙে ছিঁড়ে ফেলতে চায় কানের পর্দা! বুকের হৃৎপিণ্ডকে পাঁজর ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে। সমস্ত ইন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রকে চোখের পলকে চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলতে চায়, আঃ!! কি ভয়ঙ্কর! কি ভয়ঙ্কর!!! আবার অখিলের বক্ষস্থলে বৈদ্যুতিক শরনিক্ষেপ আর সেই বৈদ্যুতিক তুচ্ছে যা দেখা যায় তা দেখলে যেকোনো সুস্থ মানব দৌড়ে পালানোই আবশ্যক। নয়তো স্নায়ুর উপর এতোটাই চাপ সৃষ্টি করবে যে তাতে তার চেতনা হারানো নিশ্চিত। ওই মেয়ের কুঞ্চিত কেশ হাওয়ার তালে এতোটাই ভয়ঙ্কর ভাবে উড়ে চলেছে যে তাকে সর্ব বিনাশিনী ছাড়া আর কিছুই লাগছে না। তার খিলখিলে হাঁসিতে তার বড় বড় দুটি দাঁত খুবই প্রখরভাবে নয়নপথগামী হবেই। সেই দাঁতের উপর থেকে বেয়ে বেয়ে পড়ছে রক্তের ধারা। তার চোখদুটো সূর্যের মতন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে রক্তবর্ণ হয়ে। সেই দৃষ্টি যাকে তাকে অন্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পরমুহূর্তেই আবার এক তীব্র বজ্রপাতের সাথে সাথে দেখা গেলো সেই নারী ঝাঁপ দিয়েছে ওই কুয়োয়। ভেসে আসছে তার খিলখিলে হাঁসি! সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হল বর্ষণ। ভিজে যেতে থাকলো ভাগ্য, এই দৃশ্য এই রাজবাড়ী। আর ওই নারী? সেই নারী অতো সহজে ভিজবে না। হাজার বছর ধরে পাপের সাঁজার জন্য রয়ে যাবে ওই রাজবাড়ীতে। পাপীর বুক চিঁরে রক্ত পান করে নিজের রক্তপিপাসা সমাপ্তি না করা পর্যন্ত সে অমর! তার ঠাই নেই নরক কি স্বর্গে। |
« Next Oldest | Next Newest »
|