Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#61
এরকম গল্প আগে কোনদিন পড়িনি ।তাই কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছিনা।আমি রোমান্টিক লাভ স্টোরি কোনোদিন পছন্দ করিনি।কারণ আমি যখন রোমান্টিক লাভ স্টোরি মুভি দেখি তখন আমি মুভির ভিতর চলে যায় ,তারা খুশি হলে আমিও খুশি হয় আবার তারা কষ্ট পেলে আমিও কষ্ট পাই।বেশির মুভি/স্টোরিতে দুজন দুজন কে কখনো বলে না যে তারা একে অপরকে ভালোবাসে ।আমি জানিনা এরকম কেনো হয় কেনো তারা সরাসরি ভাবে কথা বলেনা আমি জানিনা।আপনার গল্পে আমিও এরকম স্বাদ পেয়েছি।আমি কোনোদিন incomplete লাভ স্টোরি দেখতে/পড়তে পছন্দ করিনা কারণ দেখলে আমার মন ভেঙে যায় ।আপনার গল্পটা পড়ছি যে কখন রিয়া আর রুদ্র একে অপরকে ভালোবাসবে। আদও কি তাদের মিল হবে । এটা জানার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।আশা করি গল্পটা শেষ করবেন ।শেষে কি হবে এটা জানতে চাই।


আমার কথা গুলো পড়ে মনে হয় আপনার হাঁসি পাচ্ছে ।।।।আমি যখন কোনো কিছু লেখি আমার এরকম মনে হয় কারণ আমি কোনো কথা সাজিয়ে গুছিয়ে লেখতে পারিনা এজন্য আমি দুঃখিত।

এতো সুন্দর গল্প উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
আরো একটা কথা আপনি গল্পটা Main Forum এ না পোস্ট করে এখানে করলেন কেনো।Main Forum পোস্ট করলে আপনার পাঠক এর সংখ্যা বেশি হতো।
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
#63
(18-06-2023, 09:55 AM)Naim_Z Wrote: এরকম গল্প আগে কোনদিন পড়িনি ।তাই কি মন্তব্য করবো ভেবে পাচ্ছিনা।আমি রোমান্টিক লাভ স্টোরি কোনোদিন পছন্দ করিনি।কারণ আমি যখন  রোমান্টিক লাভ স্টোরি মুভি দেখি তখন আমি মুভির ভিতর চলে যায় ,তারা খুশি হলে আমিও খুশি হয় আবার তারা কষ্ট পেলে আমিও কষ্ট পাই।বেশির মুভি/স্টোরিতে দুজন দুজন কে কখনো বলে না যে তারা একে অপরকে ভালোবাসে ।আমি জানিনা এরকম কেনো হয় কেনো তারা সরাসরি ভাবে কথা বলেনা আমি জানিনা।আপনার গল্পে আমিও এরকম স্বাদ পেয়েছি।আমি কোনোদিন incomplete লাভ স্টোরি দেখতে/পড়তে  পছন্দ করিনা কারণ দেখলে আমার মন ভেঙে যায় ।আপনার গল্পটা পড়ছি যে কখন রিয়া আর রুদ্র একে অপরকে ভালোবাসবে। আদও কি তাদের মিল হবে । এটা জানার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।আশা করি গল্পটা শেষ করবেন ।শেষে কি হবে এটা জানতে চাই।


আমার কথা গুলো পড়ে মনে হয় আপনার হাঁসি পাচ্ছে ।।।।আমি যখন কোনো কিছু লেখি আমার এরকম মনে হয় কারণ আমি কোনো কথা সাজিয়ে গুছিয়ে লেখতে পারিনা এজন্য আমি দুঃখিত।

এতো সুন্দর গল্প উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।




প্রথমে আমার ভালোবাসা নিবেন। 

আর এ-তো সুন্দর করে বলবার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে, 
আরহু আমি নিয়মিত ভাবে পোস্ট করার জন্য চেষ্টা করবো 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#64
পর্বঃ২৬
  

        "ভাইভা কেমন হলো?"
       "চারবছর যেমন দিয়ে এসেছি।" ইরিনা বসতে বসতে রুদ্রকে বলল। সে আবার বলল, "তোর কেমন হয়েছে?"
       "মোটামুটি, আলহামদুলিল্লাহ।" রুদ্র বলল।
       "চা খাবি? নাকি খেয়েছিস?"
       "খাবো। মাথাটা খুব ধরেছে। আচ্ছা তুই বস, আমি অর্ডার দিয়ে আসছি।"
       "আচ্ছা।"

       রুদ্র উঠে গিয়ে চায়ের অর্ডাল দিলো। একটা সিগারেট ধরালো। তারপর সে চা টা তাদের কাছে দিয়ে আসতে বলে ফিরে এলো। 

       "এখন বল, তোর কি খবর?" রুদ্র বসতে বসেতে ইরিনাকে জিজ্ঞেস করলো।
       "কি আর খবর থাকবে। চলছে সবকিছু এলোমেলো।"
       "ফাহিমের কথা জিজ্ঞেস করছি? কিছু কি হয়েছে? 
       "না, কি হবে?" 
       "তাহলে সবকিছু ঠিকঠাক?"
       "হ্যাঁ, ঠিকঠাক। কি ব্যাপার? আজ হঠাৎ ফাহিমের কথা জিজ্ঞেস করছিস?" 
       "এমনিতেই, তোদের দেখে মনে হলো তোদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে। একজন আরেকজনকে এড়িয়ে চলছিস।" 

       ইরিনা আর কিছু বলল না। চা চলে এসেছে। সে চায়ে চুমুক দিলো।
       রুদ্রও চা হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে, সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সেটা ফেলে দিলো।
       "তেমন কিছু হয় নি। গতকাল একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। তাই আমাকে দেখলেই ফাইম এড়িয়ে চলছে।" ইরিনা চা খেতে খেতে কথাগুলো বলল।
       "শেয়ার করা যাবে? যদি কোনো সমাধান দিতে পারি।" রুদ্র বলল।
       "তেমন কিছু না রুদ্র। বাসায় বিয়ের কথা চলছে। আমার জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে। সেই বিষয় নিয়ে ফাহিমের সমস্যা। কেনো আমার জন্য ছেলে দেখা হবে। কেনো আমি সেজেগুজে ছেলেদের সামনে যাবো। এই সামান্য বিষয় নিয়ে, অকারণে ফাহিম রাগ দেখাচ্ছে। কত বুঝিয়েছি কিন্তু ফাহিম বুঝতেই চাচ্ছে না। এদিকে ওকে আমি বলেছি, বাবার সাথে দেখা করার জন্য। ও সেটাও করবে না। চাকরি না পেয়ে, বাবার সাথে দেখা করবে না। সবকিছু নিয়ে আমি প্রচন্ড হতাশ। বিরক্ত!" ইরিনা রাগে ক্ষোভে কথাগুলো এক সুরে বলে গেলো রুদ্রকে।
        রুদ্র মনোযোগ দিয়ে শুনলো। ইরিনার কথার মাঝে সে তাকে বিরক্ত করে নি। সে বলল, "দেখ ইরিনা, এই সময়টা এরকমই। আমাদের পড়াশোনা শেষ। এখন চাকরি পাওয়াটা খুব জরুরি। এদিকে তোদের বাবা-মা এখন চাইবে তোদের বিয়েটা দিয়ে দেওয়ার জন্য। আমাদের বাবা-মা চায়, আমরা একটা চাকরি পেলে তারা বিশ্রামে যাবে। আর বর্তমানে চাকরির বাজারে চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন। এদিকে ইন্টারভিউ উপর ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া একটা বেকার ছেলে কীভাবে তার গার্লফ্রেন্ডের বাবার সাথে দেখা করতে যেতে পারে তুই বল? তোকে বুঝতে হবে ফাহিমের বিষয়টা।"
       "হ্যাঁ, আমি না-হয় বুঝলাম। কিন্তু ওকে ও তো আমার বিষয়টা বুঝতে হবে। তুই কি বলিস?"
       "হ্যাঁ, অবশ্যই। একটা সম্পর্কে দুইজনকেই একে অন্যকে বুঝতে হয়। তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকে না।" 
       "আমিই সবসময় বুঝে, সবকিছু মেনে নিয়ে, চুপ থেকে ঝামেলা ঠিকঠাক করি। কিন্তু ফাহিম আমাকে বুঝতেই পারে না। আমি দিনদিন বিরক্ত হয়ে উঠছি। এই রোজকার ঝগড়া, ঝামেলা, মান-অভিমান আর ভালো লাগছে না।"
       "তাহলে কি করবি? ব্রেকআপ করার কথা ভাবছিল?" 
       "ফাহিমকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? রাগের মাথায় মনে হয়, ব্রেকআপ করে ফেলি। কিন্তু রাগ কেটে গেলে একমুহূর্ত ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না। তুই দোয়া কর, যাতে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে যেনো চলে যায়।"
       "সেটা কি আর বলতে। আমি-তো চাই সবসময় তুই সুখে থাক, ভালো থাক।" 
       "আমিও চাই, তুই ভালো থাক। কিন্তু তোর সেই একটাই জেদ, তরুকে খুঁজে বের করবি! তারপর বল, তরুর কোনো খোঁজ পেলি?"

       হঠাৎ তরুর প্রসঙ্গ আসতেই রুদ্রের মুখ কালো হয়ে উঠলো। সে বলল, "আশা ছেড়ে দিয়েছি। সবটা এখন ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি।"
       "মন খারাপ করিস না। তরুর নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও ভালো আছে। এখন তোর করনীয়, নিজেকে গুছিয়ে নেও। পিছুটান ছেড়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া।" 
       "হ্যাঁ, সেটাই করছি। তরুর বিষয়টা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি।" 
       "সাব্বাশ!" রুদ্রের পিঠে আলতো করে থাপ্পড় দিয়ে ইরিনা কথাটা বলল। সে আবার বলল, "রিয়ার খবর কি?"
       "রিয়ার খবর?" রুদ্র মুখে বিষময় ভাব ফুটে উঠলো। 
       "রিয়ার সাথে তো তোর প্রায়ই দেখাসাক্ষাৎ হয়। তোরা একসাথে ভালোই সময় কাটাস।"
       "তেমন না, কিন্তু হ্যাঁ রিয়ার সাথে মাঝেমধ্যে সময় কাটাই। যখন তোরা সবাই ব্যস্ত ছিলি, তখন রিয়া আমাকে অনেক সময় দিয়েছে। মেয়েটা আসলে ভালো। লক্ষী একটা মেয়ে।"
       "তোর মুখে রিয়ার এতো প্রসংশা? তা প্রেমে টেমে পড়ে গেলি নাকি আবার?" কথাটা বলেই ইরিনা হাসতে থাকলো।
       "ধুর! রিয়া আমার খুব ভালো বন্ধু। এইটুকুই।"
       "কিন্তু, রিয়া তোকে ভীষণ ভালোবাসে।"
       "হ্যাঁ, সেটা বুঝতে পারি। মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট দিতে আমারও ভালো আগে না। কিন্তু, আমি কি করবো? রিয়াকে সেভাবে কখনো দেখিনি, মানে বন্ধুর বাইরে।" 
       "শোন, প্রেম এমন একটা জটিল বিষয়, যে কখনো কেউ তাকে বুঝে উঠতে পারে নি। কখন কাকে ভালোবেসে ফেলি আমরা, নিজেরাই বুঝতে পারি না।"
       "শেষ হইছে তোর ফিলোসোফি?" 
       "ওকে, আমি আর জ্ঞান দিচ্ছি না তোকে। তুই এই সব বিষয়ের উপর পিএইচডি ডিগ্রির অর্জন করে রেখেছিস। আমি তোকে আর কি বলব।"

       সাত্যকিকে হেঁটে এসে পাশে দাঁড়াতে দেখে রুদ্র বলল, "ভাইভা কেমন হলো?" 
       "ভালো হয়েছে। তোদের কেমন হলো?" রুদ্র এবং ইরিনাকে উদ্দেশ্য করে সাত্যকি জিজ্ঞেস করলো।
       "ভাইভার কথা বাদ দে। যেমন হওয়ার হয়েছে।" ইরিনা কর্কশ গলায় বলল। 
        "এভাবে বলছিস কেনো? তোর কি মন মেজাজ খারাপ?" ইরিনাকে জিজ্ঞেস করলো সাত্যকি। 
       "আরে না। ওর ভাইভা ভালো হয় নি। এদিকে আমাদের সবার ভালো হয়েছে, তাই মুড অফফ ওর।" রুদ্র বলল।
       "আরে ব্যাপার না দোস্ত।" ইরিনার পাশে বসতে বসতে সাত্যকি বলল।

       সবাই চুপ। হঠাৎ সাত্যকিই বলল, "তোরা সবাই বিয়েতে আসছিস তো?"
       "হ্যাঁ, অবশ্যই। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে প্রথম কারো বিয়ে হচ্ছে আমরা সবাই না এলে কি হবে?" রুদ্র বলল।
       "কিরে ইরিনা, সেই কখন থেকে চুপসে আছিস। সত্যি করে বল তো তোর কি হয়েছে?" ইরিনার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে সাত্যকি জিজ্ঞেস করলো।
       "ফাহিমকে দেখছিস?" ইরিনা জিজ্ঞেস করলো।
       "না, দেখিনি। ভাইভা শেষ হওয়ার পরে আর দেখা হয় নি। আমি-তো ভেবেছি এখানেই থাকবে।" সাত্যকি বলল।
       "আচ্ছা, তোরা আড্ডা দে। আমি আসছি।" কথা শেষ হতেই ইরিনা উঠে হাঁটা শুরু করলো।
       সাত্যকি অবাক হলো কিছুটা। সে রুদ্রকে বলল, "কিরে রুদ্র, ইরিনার আবার কি হয়েছে।" 
       রুদ্র বলল, "ফাহিমের সাথে ঝগড়া হয়েছে।" 
       "ওহ আচ্ছা। এই ব্যাপার। এই জন্য মুড অফফ।" 
       "কি করবি এখন?" রুদ্র কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে সাত্যকিকে জিগ্যেস করলো।
       "কি আর করবো। কেউই নেই। ভেবেছিলাম আজ জমিয়ে আড্ডা দিবো। কিন্তু...!" এটুকু বলে সাত্যকি থেকে আবার বলল, "আচ্ছা, আমি হলের দিকে যাবো। তুই কি করবি?"
       "আলিফ আসতাছে। ও এলে একসাথে বাসার দিকে যাবো।" 
       "আচ্ছা। তাহলে আমি চললাম।" 
       "আচ্ছা। ওহ হ্যাঁ, তুই বাড়ি যাবি কবে?"
       "কাল বা পরশুদিন। বাসা থেকে বারবার কল দিচ্ছে যাওয়ার জন্য, বিয়ের তো এক সপ্তাহ ও বাকী নেই।"
       "হ্যাঁ, সেটা অবশ্য ঠিক। তাহলে একবারে বিয়েতে দেখা হচ্ছে তোর সাথে?"
       "হ্যাঁ, সম্ভবত।" 
       "তুই চিন্তা করিস না। তোকে ঝালাতে বিয়ের আগের দিন আমরা দলবল বেধে চলে আসবো।" 
       "আচ্ছা আসিস। কোনো সমস্যা নেই। তোদের থাকার জন্য সকল ব্যবহার করে রাখবো।"
       "তাহলে তো চিন্তাই নেই। এছাড়া * ধর্মের সকল রীতি মেনে বিয়ে হচ্ছে তোদের। এর আগে * দের বিয়ে কাছ থেকে দেখিনি। শুনেছি অনেক মজা হয়। আমি-তো খুব এক্সাইটেড।" 
       রুদ্রের আগ্রহ দেখে সাত্যকি হাসলো। সে বলল, "আমার তো টেনশন হচ্ছে।" 
       "ধুর, কিসের টেনশন। এছাড়া জয় মানুষটা খুব ভালো। তোরা তো চুটিয়ে প্রেম করেছিস এতোদিন। এখন চিন্তা কিসের? ভয় কিসের? যে মানুষটাকে তুই পুরোটা চিনিস তাকে বিয়ে করতে কিসের ভয়?" 
       "তবুও, একটা টেনশন হয়ই। তুই বুঝবি না।" 
       "আচ্ছা, আমার বুঝতে হবে না।" 
       "হ্যাঁ! দেখ কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি যাই। তুই থাক। আলিফকে কল দে, দেখ ও কখন আসবে।" 
       "আচ্ছা, তুই যা।" 
       "ওকে, বাই।" সাত্যকি বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

       সাত্যকি চলে যাওয়ার দশ মিনিট পরেই আলিফ এলো। সে এসে রুদ্রকে বলল, "ক্যাম্পাস লাইফ তাহলে শেষ তোর?"
       "হ্যাঁ, দোস্ত। তোদের ভাইভা কবে?" রুদ্র বলল।
       "পরশুদিন।"
       "তাহলে তো তোর ও প্রায় শেষ এর দিকেই।" 
       "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।" 
       "চল উঠি। অনেকটা সময় ধরে এখানে বসে আছি।" 
       "আচ্ছা চল, একবারে বাসার দিকে যাই।" 

       আলিফ ও রুদ্র রিকসা করে যাচ্ছিল। হঠাৎ রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, "নদীর কি খবর? কবে অফিসিয়ালি প্রপোজ করছিস ওকে? এভাবে আর কতদিন প্রেম করবি?" 
       "নদীর মতিগতি আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা, রুদ্র। কোনো কোনো সময় মনে হয়, ও আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। আবার কোনো কোনো সময় মনে হয়, ও আমার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায় না। সবকিছু থেকে পালাতে চায়।" আলিফ হতাশ গলায় বলল।
       রুদ্র কোনো কথা বলল না। আলিফ নিজেই আবার বলল, "আমিও যে নদীকে ভালোবাসি, ও সেটা বুঝে। কিন্তু আমাদের মাঝে ক্ষুদ্র একটা বালুকণা আছে। শুধু মাত্র এই একবিন্দু বালুর কারণে দুইজন সম্পূর্ণভাবে এক হতে পারছি না। আমি নদীকে বুঝে উঠতে পারছি না।" 
       আলিফের কাঁধে হাত রেখে রুদ্র বলল, "এতো চিন্তা করিস না। একটু সময় দে। তুই নিজেই দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। এই সামন্য বালুকণা ভালোবাসার বাতাসে দূর হয়ে যাবে। তারপর শুধু তোরা দুইজন।" 
       "সেটাই যেনো হয়।" আলিফ বলল।
       "সেটাই হবে। চিন্তা করিস না।" 

       বিকালের সময়টা রুদ্র আজকাল ছাঁদে বসে থাকে। তাদের বাসার ছেলেটার সাথে তার ভাব হয়েছে। দুইজনে প্রায়ই আড্ডা দেয়। ছেলেটার নাম হাসান। 
       হাসানের কাছ থেকে রুদ্র অনেককিছু জানতে পারেছে। তারা যে বাসায় এখন আছে সেই বাসায় আগে রুদ্র নামে একজন ছিল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। হাসানের কাছ থেকে সে তরুর ব্যাপারেও অনেক কিছু জানতে পেরেছে। তরু এই বাসায় প্রায়ই আসতো। হাসান তরুকে দেখেছে। সে প্রায়ই তরুর ব্যাপারে হাসনকে জিজ্ঞেস করে। তরু দেখতে কেমন? তরুর চুল গুলো কেমন? তরুর চোখ কেমন? তরুর সুন্দর নাকি কালো? তরু, তরু, তরু! তরুর সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেই হাসান বিরক্ত হয়। তবুও সুযোগ পেলেই রুদ্র জিজ্ঞেস করে। হাসানের বলা বর্ণনা দিয়ে, রুদ্র তার নিজের মনের মধ্যে তরুর একটা ছবি এঁকেছে। তরুকে দেখতে ইচ্ছে করলেই সে দুই চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ বন্ধ করার সাথেসাথেই তরুর একটা ছবি তার চোখের সামনে ভেবে উঠে। রুদ্র তখনই মনে মনে বলে, হ্যাঁ, এটাই তরু। 
       হাসানের কাছ থেকে রুদ্র যতটুকু জেনেছে, ততটুকু দিয়ে তরু বা রুদ্রকে খোঁজ সম্ভব না। কিন্তু হাসান বলেছে, রুদ্রের বাবা-মা এক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পরেই রুদ্র হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে চলে যায়। কোথায় যায় কেউ জানেনা। রুদ্রের আত্মীয় স্বজনরা রুদ্রের খোঁজে আগে প্রথম কয়েকমাস প্রায়ই এই বাসায় আসতো। বাসাটাও ওভাবেই পড়ে ছিলো দীর্ঘ কয়েকমাস। তারপর একদিন রুদ্রের মামা এসে বাসা ভাড়া মিটিয়ে বাসার মাল জিনিস সব ট্রাকে ভরে নিয়ে যায়। তারপর আর কেউ আসেনি, রুদ্রের খোঁজে। তরুও কখনো আসেনি। রুদ্র চলে যাওয়ার পরে তরুকে আর কখনো দেখেনি হাসান। 
       হাসানের কাছ থেকে রুদ্র এটুকু জানতে পেরে অনেক খুশি। তরুকে পাওয়া না গেলেও, তরু আছে, কোথাও না কোথাও আছে, এটাই রুদ্রের জন্য যথেষ্ট। সে এখনো আশা করে, সে একদিন ঠিকই তরুর সন্ধান পাবে।

       রুদ্র ছাঁদে বসে একা একা তরুর কথা ভাবছিল। কিন্তু ফোনের রিংটোন তাকে বিরক্ত করলো। সে পকেট থেকে অলস ভঙ্গিতে ফোন বের করলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো রিয়ার নাম্বারটা স্ক্রিনে ভেসে আছে। সে কলটা রিসিভ করবে কি করবে না চিন্তা করতে করতে কলটা কেটে গেলো। কলটা কেটে গেলে, সে ফোনটা যেই পকেটে রাখতে যাবে ঠিক তখনই আবার ফোনটা বেজে উঠলো। সে জানে, রিয়া আবার কল দিয়েছে। সে ফোনটা রিসিভ করলো।

       "হ্যালো, রুদ্র।" ফোনের ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে রিয়া বলল। 
       "হ্যাঁ রিয়া বলো।" রুদ্র নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলল। 
       "তুমি কি একটু নিচে আসতে পারবে?" বিয়ার কন্ঠে অদ্ভুত অনন্দ। রিয়া কোনো একটা কারণে অনেক খুশি, সেটা তার কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে।
       "তুমি কি বাসার নিচে?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল। 
       "বাসার নিচে না থাকলে, তোমাকে বাসার নিচে আসতে বলব কেন? আজব প্রশ্ন কেনো করছ? তুমি দ্রুত নিচে আসো, প্লিজ!" রিয়ার কন্ঠ অনুরোধ।
       "আচ্ছা আমি আসছি।" রুদ্র এই বলে ফোন কেটে দিল। 

       রুদ্র নিচে গিয়ে দেখল, রিয়ার হাতে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ ফুল। রুদ্র কিছুই বুঝতে পারলো না। সে রিয়ার সামনে এসে দাড়ালো। 
       রিয়ার হাতে থাকা কাঠগোলাপ ফুল গুলো সে রুদ্রের দিকে বাড়িয়ে দিল। তারপর সে বলল, "এই নেও তোমার প্রিয় ফুল।"
       "আমায় প্রিয় ফুল?" রুদ্র অনেকখানি অবাক হলো। 
       "হ্যাঁ, আজ থেকে এটাই তোমার প্রিয় ফুল।" রিয়া বলল।
       "রিয়া, এরকম অদ্ভুত কথা কেনো বলছ?" রুদ্রের চোখে-মুখে কৌতুহল। সে রিয়ার কাজকর্ম বুঝে উঠতে পারছে না। 
       "আমি আরেকটা অদ্ভুত কথা বলবো বলেই, আগেই আরেকটা অদ্ভুত কথা বলে নিলাম। যাতে পরের কথাটা অদ্ভুত মনে না হয়।" রিয়া হাসিমুখে কথাগুলো বলল।
       "কি অদ্ভুত কথা বলবে?" রুদ্র আরো অবাক হলো।
       "আমি যে কথাটা বলল, সেই কথাটা তুমি জানো। তবুও আজ আমি নিজের মুখে বলতে চাই।" রিয়া বলল।
       "কি কথা আমি জানি? যা আবার বলতে চাও?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
       "এই যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি।" রিয়া কথাটা বলে থামলো। সে আবার বলল, "রুদ্র, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।" রিয়ার কথাগুলো নরমাল সুরের চেয়ে অনেকটা জোরে বলল। সে চেয়েছিলো চিৎকার করে বলতে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে গিয়ে আর বলেনি।
       "কিন্তু রিয়া..!" রুদ্রকে কথা শেষ করতে দিলো না রিয়া।
       রিয়া বলল, "কোনো কিন্তু নেই। তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। আমাকে ভালোবাসতে হবেও না। এভাবে বন্ধু হয়ে পাশে থেকো।" রিয়া কথা শেষ করে হেসে দিলো। 

       রিয়ার হাসিটা অদ্ভুত সুন্দর। এই সন্ধ্যার সময় এমন প্রাণখোলা হাসি দেখে রুদ্র মুগ্ধ হলো। তার মনে হলো, রিয়ার হাসিটা ক্রমশ তাকে তার দিকে টানছে। সে নিজেকে আটকাতে পারছে না। আকাশ ক্রমশ মাটিতে নেমে আসছে। রুদ্রের হৃদয় তীব্র বেগে ছুটে চলেছে অজানা এক গন্তব্যের দিকে। এ কেমন অনুভূতি? রুদ্র এই অনুভূতির কাছে ক্রমশ হার মেনে যাচ্ছে। যেটা রুদ্র চায় না। কোনো কিছুতেই চায় না। 

       রিয়ার মুখের হাসিটা আরো দীর্ঘ হলো। সে মুখে হাসি নিয়েই, ছোট্ট পাখির মত ছুটে এসে রুদ্রকে অবাক করে দিয়ে জড়িয়ে ধরল। 
       এক মুহুর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনায় রুদ্র পুরো ভেঙে পড়লো। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে রিয়াকে সরিয়ে দিতেও পারছে। কোনো এক প্রবল মায়া তাকে জড়িয়ে নিচ্ছে। তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলছে। সে কি করবে? 

       সন্ধ্যা নেমে গেছে। দূর থেকে একটা পাখির ডাক ভেসে আসছে। রাস্তার পাশে থাকা সোডিয়াম লাইটগুলোতে আলো জ্বলছে। দুই একটা রিকসার টিং টং শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই সব হাজারো শব্দের মধ্যেও রুদ্র অন্য আরেকটা শব্দ শুনতে পাচ্ছে। এটা কিসের শব্দ? কোথা থেকে আসছে? রুদ্র মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেই সে বুঝলো, রিয়ার বুকের ভেতর থেকে শব্দটা আসছে। কী শান্ত, গভীর এক মায়া জড়িয়ে আছে এই শব্দে। হৃদয়কে মুহুর্তে শীতল করে তোলে। রুদ্র এক মুহুর্তে জন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে রিয়া নামক এক মায়ায় নিজেকে জড়িয়ে নিলো। তার এখন ভালো লাগছে। এক অদ্ভুত শান্তি তার বুকে এসে বাঁধা বেঁধেছে। এটা কি? এটাই কি ভালোবাসা? রুদ্র জানেনা! 

চলবে....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#65
পর্বঃ২৭


        ঢাকার প্রধান নদী বন্দর সদরঘাট। সদরঘাট বাংলাদেশ-এর আদি ঢাকা শহরের একটি নদীবন্দর যাকে ঘিরে উনিশ শতকে একটি ব্যবসায়িক জনপদ গড়ে ওঠে। এই নদীবন্দরটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। একবিংশ শতকের শুরুতেও এটির গুরুত্ব অক্ষুণ্ন রয়েছে। এর সন্নিহিত এলাকা পুরান ঢাকা নামে প্রসিদ্ধ। এর অতি নিকটে রয়েছে পুস্তক প্রকাশনার ঘাঁটি বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বলধা গার্ডেন এবং আহসান মঞ্জিল এবং, সর্বোপরি, বিভিন্ন নদী পরিবাহিত পণ্য, বিশেষ করে মাছ ও ফলের সুবিশাল সব আড়ত। সারাদেশ, বিশেষ করে, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা শহরের নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকেন্দ্র এই সদরঘাট।

        এই মুহুর্তে রুদ্র সদরঘাটে লঞ্চের সামনে ফোন হাতে পায়চারি করছে। সে আলিফকে কম করে হলেও পনেরো বার কল দিয়েছে। কিন্তু আলিফ একবারও ফোন রিসিভ করে নি। এখন নয়টা বেজে তিরিশ। তাদের লঞ্চ ছাড়তে আর পনেরো মিনিট বাকী। রুদ্র বুঝে উঠতে পারছে না, আলিফ লঞ্চ ছাড়ার আগে এসে পৌঁছাতে পারবে কি-না! 
        এক ঘন্টা আগেও আলিফের সাথে রুদ্রের কথা হয়েছে। রুদ্রই ফোন দিয়েছিল। আলিফ বলেছিস, সে সময়মত সদরঘাটে পৌঁছে যাবে। রুদ্র চেয়েছিল, আলিফকে সঙ্গে করে, তারা একসাথে আসবে। কিন্তু সেই মুহুর্তে ইরিনা রুদ্রকে কল দেয়। সে বলে, তাকে এবং রিয়াকে এসে নিয়ে যেতে। তখন রুদ্র চলে যায় ইরিনার বাসায়। সে সেখান থেকে ইরিনা ও রিয়াকে নিয়ে সরাসরি চলে আসে এখানে। অবশ্য আলিফকে ফোন করে বারবার রুদ্র বলেছে, সময়মত চলে আসার জন্য। আলিফ বলেছিল, সে চলে আসবে। তাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। 

        "আলিফ ফোন ধরছে না?" ইরিনা এসে রুদ্রের কাছে জানতে চাইলো।
        "না, ও ফোন ধরছে না। কি যে হলো ওর, কে জানে? রাস্তায় আবার কোনো বিপদ হলো কি-না বুঝতে পারছি না।" রুদ্রের মধ্যে অস্থিরতা। 
        "আল্লাহ ভরসা।" পাশে থাকা রিয়া বলল। সে আবার বলল, "আশা করি আলিফের কিছু হয় নি। সম্ভবত, ওর ফোন সাইলেন্স।" 
        "লঞ্চ ছাড়ার সময় হয়ে গেছে প্রায়। ও সময়মত না এলে তো বিপদ। ওকে ছাড়া চলে যাওয়াটা কেমন হবে না?" ইরিনা বলল।
        "ওকে রেখে যাওয়া মূল কথা না। কিন্তু ওর কিছু হলো কি-না সেটাই বুঝতে পারছি না। রাস্তায় কোনো বিপদ হলো কি-না সেটাও বুঝছি না।" রুদ্র হতাশ গলায় বলল। 

        লঞ্চ লেট করলো পনেরো মিনিট। কিন্তু আলিফ এলো না। আলিফের সাথে কেউ যোগাযোগ করতে পারলো না৷ কারো কলই রিসিভ করলো না আলিফ। সে কখনো এমন করে না।

        বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে লঞ্চ ছুটে চলেছে বরিশালের দিকে। রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে কেবিনের বাইরে। আকাশ ঘুটঘুটে কালো হয়ে আছে। রাতের অন্ধকারের কারণে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, আকাশে কতটা মেঘ জমে আছে। রুদ্র পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালো। গলগল করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লো বাতাসে। মৃদু আলোয় সিগারেটের সাদা ধোঁয়াটা ভীষণ সুন্দর লাগলো রুদ্রের কাছে। সে সেই ধোঁয়ার দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে। নদীর ঢেউয়ের মৃদু শব্দটা, রুদ্রের ভালো লাগছে। কিন্তু তার মনটা অস্থির হয়ে আছে। তারা একটা শুভ কাজে যাচ্ছে, কিন্তু যাওয়া পথেই এই বাঁধাটার কারণে তার মনে কু ডাক দিচ্ছে৷ বিপদে আশংকা করছে।

        রুদ্র পাশে ফিরতেই দেখলো রিয়া দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত সিগারেটটা নদীর পানিতে ফেলে দিলো। মুখে থাকা ধোঁয়া ছেড়ে রিয়াকে জিজ্ঞেস বলল, "কখন এলে?" 
        "তুমি যখন সিগারেট ধরাও ঠিক তখন।" রিয়া উত্তর দিলো।
        "ডাকলে না কেনো?" 
        "ডাকিনি কারণ দেখলাম অন্যমনস্ক আছো। কি ভাবছিলে?" 
        "আলিফের কথাই ভাবছিলাম। বেচারা আসতে পারলো না। আমরা কত প্লান করে রেখেছিলাম এই ট্রিপটা নিয়ে৷ সাত্যকির বিয়ে নিয়ে। কিন্তু এখন..!" রুদ্র কথা শেষ করতে পারলো না।
        রিয়া বলল, "মন খারাপ করো না প্লিজ।" 
        "মন খারাপ করছি না। আসলে চিন্তা হচ্ছে। আলিফের কোনো বিপদ হলো কি-না সেটা ভেবেই অস্থির লাগছে। ও না এলে ফোন করে তো বলবে। এটলিস্ট ফোনটা তো রিসিভ করবে।" রুদ্রের কন্ঠে রাগ। আলিফের উপর তার এখন রাগ হচ্ছে। সে পকেট থেকে আবার সিগারেটের প্যাকেটটা বের করলো।
        রিয়া বলল, "মাত্র ই তো একটা খেলে।" 
        রুদ্রের খেয়াল ছিলনা, রিয়ার তার সামনেই। সে ভদ্র ছেলের মত সিগারেটটা আবার প্যাকেটে রেখে, পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো।
        "ধন্যবাদ।" রিয়া বলল।
        "ধন্যবাদ কেনো?" রুদ্র জানতে চাইলো।
        "এই যে আমার কথা রাখার জন্য।" 

        দুইজনে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো লঞ্চের এক কোনে। ঠান্ডা বাতাস বসে চলেছে। নদীর কলকল, আকাশে মেঘ ধমধমে, পরিবেশটা কেমন গুমোট করে রেখেছে। 

        "ক'টা বাজে?" রুদ্রের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রিয়া জিজ্ঞেস করলো।
        রিয়ার প্রশ্ন শুনে রুদ্র ঘড়ির দিকে তাকালো। সে বলল, "বারোটা" 
        "ভালোই রাত হয়েছে।"
        "হুম।" রুদ্র কথায় সম্মতি জানালো।
        রিয়া এই মুহুর্তে আর কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছে না। সে রুদ্রের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ঘড়িটা সুন্দর। সে বলল, "তোমার ঘড়িটা সুন্দর।" 
        রুদ্র আবার ঘড়ির দিকে তাকালো। সে বলল, "তরু দিয়েছে।" তরুর নামটা বলার সময় রুদ্রর কন্ঠ কিছুটা কেপে উঠলো। 
        রিয়া বলল, "আসলেই ভীষণ সুন্দর ঘড়িটা।" সে কথা শেষ করে রুদ্রের আরেকটুখানি কাছে সরে এলো। সে আবার বলল, "পরতে পারি?"
        "কি?"
        "কি আবার? তোমার হাতে থাকা ঘড়িটা।" 
        "ওহ, আচ্ছা। হ্যাঁ, অবশ্যই।" রুদ্র কথা শেষ করে হাতে থাকা ঘড়িটা খুলতে শুরু করলো। 
        "আমিই খুলে নিচ্ছি।" রিয়া কথাটা বলেই রুদ্রের হাত ধরে ঘড়িটা সে নিজেই খুলে নিলো।
        রিয়া নিজের ডান হাতে ঘড়িটা পরলো। তার হাতে ঘড়িটা কিছুটা ঢিলাঢালা হয়েছে। ঘড়িটা ভীষণ পছন্দ হয়েছে রিয়ার। 

        মেঘ গর্জে হুট করে বৃষ্টি শুরু হলো। লঞ্চের সবাই ছুটাছুটি করে যারা যার কেবিনে চলে যাচ্ছে। কিন্তু রুদ্র এবং রিয়া সেই একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনেই চুপচাপ। ক্রমশ বৃষ্টি আরো বেগ বাড়চ্ছে। রিয়া আর রুদ্র, দুইজন একে অন্যের দিকে দুই একবার তাকালেও কেউ কিছু বললো না। তারা দুইজনেই বুঝে নিয়েছে তাদের মনের কথা।
        নদীর পানিতে বৃষ্টির শব্দ অদ্ভুত এক সুরের সৃষ্টি করেছে। নদীর স্রোত, বৃষ্টি, অন্ধকার রাত; সবকিছু মিলে পরিবেশটা বেশ ছমছমে হয়ে উঠেছে। 
        রিয়া এবং রুদ্র ধীরে ধীরে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। তাদের কোনো তারা নেই। কোনো চিন্তা নেই। হঠাৎ রিয়া ডাকল, "রুদ্র!"
        রিয়ার ডাকে সাড়া দিলো রুদ্র, "উঁহু!"
        "তোমার কি মন খারাপ?" 
        রুদ্র কোন উত্তর দিলো না। তবে কিছুটা সময় পরে সে মাথা নেড়ে বলল, "না!" 
        রিয়া এবার বলল, "তুমি কি তরুকে ভালোবাস?"
        রিয়া এরকম প্রশ্ন করবে রুদ্র ভাবেনি। সে কিছুটা সময় ভেবে বলল, "ভালোবাসা কি? ভালোবাসা কি আমি ঠিক জানিনা। আর আমি তরুকে ভালোবাসি কি-না তাও জানিনা। কিন্তু এটুকু জানি, আমি মানুষটাকে একবার হলে দেখতে চাই। শুধু একবার! সে আমাকে ভালোবাসুক সেটাও চাই না। শুধু তরু নামের অসাধারণ মেয়েটার সাথে আমি একটিবার দেখা করতে চাই। আমি তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। অনেককিছু!" শেষ কথাগুলো কেমন অদ্ভুত বিষাদময় শোনালো।
        রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রের পাশে। বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে কাক ভেজা ভিজে গেছে। রিয়া আবার রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি কি আমাকে একটুও পছন্দ করো না?"
        "তোমাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। তুমিও খুব ভালো একজন মানুষ। তোমার সাথে না মিশলে, তোমাকে না জানলে, আমি কখনোই বুঝতাম না তুমি এতোটা অসাধারণ।"

        "তুমি আমাকে কি কখনো ভালোবাসতে পারবে?" রিয়া অনেকসয় চুপ ছিলো। হঠাৎ মৌনতা ভেঙে এরকম অদ্ভুত একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো রুদ্রকে।

        রিয়ার কন্ঠ কেমন অদ্ভুত শোনালো। সেই কন্ঠে কি এমন ছিল রুদ্র জানেনা। কিন্ত রুদ্রের কেবল মনে হলো, রিয়ার বুকের মধ্যে লুকানো একটা কষ্ট জমে আছে। সেই কষ্টটা কি তার দেওয়া? রুদ্র ভাবনার জগৎ এলোমেলো হয়ে গেলো মুহুর্তেই। রুদ্র ঘুরে রিয়ার দিকে তাকালো। রিয়া কি কাঁদছে। রিয়ার চোখ ভেজা। বৃষ্টির কারণে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না রিয়া কাঁদছে কি-না! 
        রিয়া আর কিছু বলল না। সে ভিজে যাচ্ছে একাকী। তার পাশে অবশ্য রুদ্রও ভিজছে। কিন্তু দুইজনের ভেজার মধ্যে অনেক পার্থক্য। একজন ভিজছে মন খারাপে আরেকজন ভিজছে কান্না লুকাতে। 
        "তুমি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসো, তাই না?" রুদ্র এবার রিয়াকে সরাসরি ভাবেই জিগ্যেস করলো। 
        কিন্তু রিয়া উত্তর দিলো না। সে তাকিয়ে আছে নদীর দিকে। নদীতে টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। নদীর বুক ক্রমশ শীতল হয়ে উঠছে। কিন্তু তার বুক? তার বুকে কেবল উত্তাপ, কষ্ট, কান্না আর যন্ত্রণা!

        রুদ্র ডাকলো, "রিয়া, এই রিয়া।"
        "উঁহু!" রিয়া ভেজা কন্ঠে উত্তর দিলো।
        "তুমি কি কান্না করছ?" 
        "কান্না করবো কেনো?" কান্না জড়ানো কন্ঠে রিয়া উত্তর দিলো। সে চেষ্টা করেছে কন্ঠটা ঠিক রাখার কিন্তু পারে নি।
        "কি হয়েছে? আমাকে অন্তত বলো।" রিয়াকে এভাবে দেখে রুদ্রের ভালো লাগছে না। তারও মন খারাপ করছে।
        "কি হবে?" অভিমানী কন্ঠে উত্তর দিলো রিয়া।
        "তাহলে কান্না করছ কেনো?" 
        "আমি কাঁদছি না।" 
        "আমাকে মিথ্যে বলবে না। আমি বুঝতাছি।"
        "তুমি বুঝো আমাকে?" 
        "কেনো বুঝবো না?" 
        "তুমি যদি আমাকে বুঝতে তাহলে বুঝতে পারতে আমি তোমাকে...!" রিয়া কথাটা শেষ করতে পারলো না।
        "এমন কেনো করছ?"
        "কেমন?"
        রুদ্র আর কিছু বলল না। সে এখন আর কথা খুঁজে পাচ্ছে না। রিয়াকে সে এভাবে কখনো দেখেনি। এতোটা ভেঙে পড়তে। রুদ্র রিয়ার হাত ধরে তার দিকে ফিরালো। রিয়া ফিরলো। রুদ্র হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ভেজা চোখের পানিটা মুঁছে দিলো। কিন্তু মুছলো কিনা সে জানেনা কারণ মুহূর্তে আবারো বৃষ্টি এসে রিয়ার দুচোখ ভিজিয়ে দিলো।
        "আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?" রিয়া ঘোর লাগা কন্ঠে রুদ্রকে বলল।
        রিয়ার কন্ঠ শুনে রুদ্র ঠিক থাকতে পারলো না। সে রিয়াকে তার বুকের ভেতর জড়িয়ে নিলো। রিয়াও বাচ্চা পাখির মত রুদ্রের ভেজা বুকের মধ্যে ওম খুঁজে নিতে থাকলো। তার চোখের পানিতে রুদ্রের শার্ট ভিজে গেলো কিন্তু রুদ্র বুঝলো না কোনটা বৃষ্টি পানি আর কোনটা রিয়ার চোখের পানি। 

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#66
আজও রুদ্র উত্তরটা দিলনা । আর কত অপেক্ষা করতে হবে এই উত্তরের জন্য জানিনা
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
#67
(19-06-2023, 10:43 AM)Naim_Z Wrote: আজও রুদ্র উত্তরটা দিলনা । আর কত অপেক্ষা করতে হবে এই উত্তরের জন্য জানিনা

পড়তে থাকুন উত্তর পেয়ে যাবেন।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#68
পর্বঃ২৮


        "ফাহিম, এই ফাহিম।" ইরিনা ডাকলো।
        ফাহিম ঘুম জড়ানো কন্ঠে উত্তর দিলো, "উঁহু!"
        "কত ঘুমাবে?" ইরিনা বিরক্ত কন্ঠে বলল।
        "মাত্রই তো ঘুমালাম।" ফাহিমের চোখে ঘুম।
        "লঞ্চে উঠেই তো ঘুমাই গেলে। এদিকে আমি একা বসে আছি। আমার ভাল লাগছে না।" 
        "একা কেনো? রিয়া ও রুদ্র কোথায়?" ফাহিম মাথা উঠিয়ে, চোখ ডলতে ডলতে জিজ্ঞেস করলো। সে ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে। 
        "তারা কেউ নেই। কোথায় আছে তাও জানিনা।" 
        "জানো না মানে? বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে।" 
        "সেটা তো আমিও জানি।" 
        "তাহলে, কোথায় ওঁরা?"
        "হয়তো, ভিজছে দুজনে!" 
        "এই সময়? জ্বর আসবে তো।" 
        "এলে আসবে।" 
        "কি হয়েছে তোমার?"
        "কি হবে?"
        "এরকম ভাবে কথা বলছ কেনো?"
        "কেমন করে?"
        "আচ্ছা বাদ দেও। ভাল লাগছে না এখন ঝগড়া করতে।"
        "আমি ঝগড়া করছি?" ইরিনা এবার আরো বেশি রেগে গেল।
        "আমি সেভাবে বলিনি।" 
        "তাহলে কীভাবে বলেছ? আমি সবসময় ঝগড়া করি, এটা বুঝাতে চাচ্ছ?" 
        "আমি সেটাও বলিনি।" 
        "তুমি সেটাই বুঝিয়েছ। আমার কাজ তো ঝগড়া করা।" 
        ফাহিম আর কিছু বলল না। সে চুপচাপ রইলো। ইরিনার কোনো কারণে মুড খারাপ, ফাহিম সেটা বুঝতে পারছে। সে এটাও জানে, এখন সে কথা বাড়ালে একটা ঝামেলা হয়ে যাবে। তারচেয়ে বরং চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
        "কি হলো, কথা বলছ না কেনো? ইরিনা বলল।
        "কেবিনের মধ্যে আর ভালো লাগছে না। চলো বাইরে থেকে হেঁটে আসি। বৃষ্টি কমে গেছে।" ফাইম কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে কথাটা বলল।
        ইরিনাও আর কথা বাড়ালো না। তারও ইচ্ছে করছে বাইরে যেতে। সে তো এটাই চেয়েছিল। কিন্তু তাকে একা রেখে ফাহিম এসেই ঘুম। সে বোকার মত বসে ছিল এতো সময়। এই কারণেই তার মুড অফ হয়ে আছে। তার একটুও ভালো লাগছে না।

        ইরিনারা বাইরে বেরুতেই রুদ্র ও রিয়াকে দেখলো। তারা একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনেই ভিজে একাকার। রিয়ার হাতটা রুদ্রের হাতের ভেতর রাখা।
        ইরিনা ডাকলো, "রিয়া!" 
        রুদ্রের হাতের ভেতর থেকে রিয়া দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। দুইজনে সামান্য সড়ে দাঁড়ালো। তারপর নিজেদের গুছিয়ে নিলো।
        "হ্যাঁ বল ইরিনা।" রিয়া বলল।
        "তোরা তো একদম ভিজে গেছিস। ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে নে, নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে৷" ইরিনা বলল।
        "ওহ হ্যাঁ। এইতো যাচ্ছি।" রিয়া বলল।
        'রুদ্র, তুইও।" ইরিনা বলল।
        রিয়া এবং রুদ্র কেবিনের দিকে গেলো। ফাহিম ও ইরিনা রেলিংএর দিকে হেঁটে এসে দাঁড়ালো। বাইরে বাতাস ঠান্ডা। শরীরে কাটা দিচ্ছে। সামান্য শীত শীত করছে। ফাহিম হঠাৎ ইরিনার হাত ধরে টেনে নিয়ে মুঠোয় ভরে নিলো। ইরিনা কিছু বলল না। সে এগিয়ে এসে ফাহিমের সাথে মিশে দাঁড়ালো। 

       রিয়া এসেই ওয়াশরুমে চলে গেলো ভেজা কাপড় চেঞ্জ করতে। এই ফাঁকে রুদ্র কেবিনের মধ্যেই দ্রুত কাপড় চেঞ্জ করার জন্য শার্ট খুললো। যখনই প্যান্ট খুলতে যাবে তখনই হঠাৎ রিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। তাৎক্ষণিক ঘটনায় রিয়া রুদ্রকে দেখে লজ্জা পেয়ে সে আবার ওয়াশরুমে ঢুলে গেলো। রুদ্রও অনেক লজ্জা পেলো। ভাগ্য ভাল, সে প্যান্টটা তখনও খুলেনি। সে ভেবেছিল, রিয়ার চেঞ্জ হতে সময় লাগবে। কিন্তু রিয়া চেঞ্জ না করেই বেরিয়ে এসেছে। 

       "ভেতরে আসতে পারি?" রিয়া ওয়াশরুমের ভেতর থেকে রুদ্রকে বলল। 
       "হ্যাঁ, অবশ্যই।" রুদ্র ইতিমধ্যেই ব্যাগ থেকে লুঙ্গি বের করে ল্যান্ট পরে নিয়েছে। সেই সাথে একটা টি-শার্টও গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে। 
       রিয়া আবার বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। সে বলল, "সরি!" 
       "সমস্যা নেই।" রুদ্র লজ্জাজড়িত কন্ঠে বলল। সে আবার বলল, "তুমি চেঞ্জ করো নি কেনো?"
       "একটা কাপড় নিতে ভুলে গেছি। তাই তখন সেটা নিতেই বের হয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এখানেই চেঞ্জ করবে।" রিয়া বলল।
       "কি কাপড়?" কথার প্রসঙ্গে রুদ্র জিজ্ঞেস করল। সে আর আগের প্রসঙ্গে গেলো না। 
       "মেয়েদের কাপড়।" রিয়া ভদ্রতার সাথে উত্তর দিলো।
       রুদ্র বুঝতে পেরে আর কিছুই বলল না। 
       রিয়া তার ব্যাগ থেকে তার প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে আবার ওয়াশরুম দ্রুত ঢুকে গেলো। 
       রুদ্র অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। কেনো লাগছে সে জানেনা।
       রিয়া বেড়িয়ে এলো মিনিট দশেক পরে। হলুদ রঙের একটা ড্রেস পরেছে রিয়া। ভেজা চুল। রিয়াকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। রুদ্র এক দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়া সেটা বুঝতে পেরেও সে একবারও রুদ্রের দিকে তাকায় নি। সে সোজা তার খাটের দিকে হেঁটে গেলো। ব্যাগ থেকে একটা টিপ বের করে কপালে পরলো। ঠোঁটে হালকা লিপিস্টিক দিলো। মুখে ক্রিম মাখালো। তারপর চিরুনি বের করে চুল আছড়াতে আছড়াতে রুদ্রের দিকে ফিরলো। রুদ্র তখনও তাকিয়ে আছে তার দিকে। তাদের চোখাচোখি হলো। 
       রুদ্র কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি দরজা দিয়ে ইরিনা আর ফাহিম ঢুকলো৷ সে কথাটা আর বলল না।
       "অনেক রাত হয়েছে। তোদের ঘুম আসে নি?" ইরিনা বলল।
       রিয়া বলল, "আমার প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।"
       "ঘুমিয়ে পড়ো। ভালো লাগবে।" রুদ্র বলল।
       "তাহলে তোরা ঘুমা। আমি আর রুদ্র চলে যাচ্ছি। ব্যাগ-ট্যাগ এখানেই থাকুক।" ফাহিম বলল।
       "আচ্ছা। সকালে দেখা হবে।" ইরিনা বলল।
       "সকালে তো আমরা পৌঁছে যাবো।" ফাহিম বলল। 
       "শুভ রাত্রি।" ইরিনা বলল।
       "শুভ রাত্রি।" একসাথেই ফাহিম ও রুদ্র বলে বেরিয়ে গেলো।

       হুট করে টিকেট কাটার জন্য তারা একটা কেবিন পেয়েছে। বাকীগুলো আগে থেকেই বুকিং করা ছিল। তখন রিয়া এবং ইরিনার জন্য কেবিন নিলেও রুদ্র, ফাহিম ও আলিফের জন্য রুদ্র নিজেই ডেকে টিকিট কেটেছে। এক রাতের ব্যাপার, তাই এতো প্যারা নেয় নি। কিন্তু আলিফ শেষ পর্যন্ত এলো না।

       রুদ্র কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেই একটা সিগারেট ধরালো। তার পাশে ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্রের অর্ধেক সিগারেট খাওয়া হলে ফহিম বলল, "আমাকে একটু দে তো।" 
       "সিগারেট খাবি?" রুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। সে আবার বলল, "হঠাৎ, তুই তো সিগারেট খান না!" 
       "ইচ্ছে করছে।" 
       রুদ্র সিগারেটটা ফাহিমকে দিয়ে বলল, "তোর কি মন খারাপ? 
       "মন খারাপ না। প্যারায় আছি রে। রিলেশন মানেই ভীষণ একটা প্যারা। আর ভালো লাগে না।" 
       "ইরিনার সাথে আবার ঝামেলা হয়েছে?"
       "কি আর বলন। ঝামেলা আমাদের ছাড়েই না। সম্পর্কটা এই ভালো, এই খারাপ।" 
       "কি হয়েছে?" 
       "মধ্যবিত্ত ভালোবাসায় যা হয়।" 
       "এই সব হবেই। মান অভিমান ছাড়া কি ভালোবাসা পূর্ণতা পায়?" 
       "না রে, সেটা বেপার না। কিন্তু ইরিনা চাচ্ছে এখনই ওর বাবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতে। তুই বল রুদ্র, আমি এখন কিভাবে ইরিনার বাবার সাথে দেখা করি। এদিকে ওর জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে। দুঃসম্পর্কের এক কাজিনের সাথে ওর বিয়ের কথাবার্তা প্রায় ঠিক। এখন আমি কি করবো? আমি এদিকেও যেতে পারছি না, ওদিকেও যেতে পারছি না। ঠিক মাঝে আটকে পড়েছি।" এটুকু বলে ফাহিম থামলো।
       রুদ্র আরেকটা সিগারেট বের করে ধরালো। 
       ফাহিম অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, "একটা কথা এখনো ইরিনাকে বলিনি।"
       "কি কথা?" রুদ্র জানতে চাইলো। 
       "আমি স্কলারশিপ পেয়েছি। এপ্লাই করেছিলাম, ভাবিনি যে পেয়ে যাবো।" ফাহিম বলল।
       "কনগ্রাচুলেশন!"
       "এখন আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না। স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে চলে গেলে আমাদের সম্পর্কে পরিণতি কি হবে? ইরিনার কি হবে? এতোদিন ইরিনা কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে? এমনিতেই ইরিনার বাবা-মা চাচ্ছে দ্রুত ওর বিয়েটা দিয়ে দিতে। এই জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার কথাটা আমি ইরিনাকে কয়েকবার বলতে চেয়েও পারি নি।" 
       "কি বলব আমি বুঝে উঠতে পারছি না। তবে আমি বলল, স্কলারশিপ পাওয়ার খবরটা তুই ইরিনাকে বল। ইরিনা বুঝবে। এটা আমার বিশ্বাস। এতো খুশির একটা খবর। এভাবে কাউকে না বলে আছিস কীভাবে?" 
       "আমি নিজেই সিন্ধান্ত নিতে পারছি না, এই মুহুর্তে আমার করনীয় কি!" 
       "তোর মন কি চাচ্ছে?"
       "সত্যি বলতে আমি স্কলারশিপটা নিতে চাচ্ছি। কিন্তু এটা চাইলে, ইরিনাকে ছেড়ে দেওয়া লাগে। আমি সেটা করতে পারবো না। আমি ওকে প্রচন্ড ভালোবাসি।" 
       "সেটা আমরা সবাই জানি। তুই আগে ইরিনাকে সবকিছু ভেঙে বুঝিয়ে বল। তুই দেখ ও কি বলে। তারপর সিন্ধান্ত নিস।" 
       "হুম সেটাই করবো। ঢাকায় ফিরেই ইরিনাকে সবকিছু ভেঙে বুঝিয়ে বলবো।" 
        "হ্যাঁ, সেটাই কর।"
       "চল, গিয়ে একটু রেস্ট নেই।" 
       "আচ্ছা চল।" 

       রুদ্ররা বরিশাল পৌঁছালো সকালে। বরিশাল নেমেই সাত্যকিকে কল করলো ইরিনা। সাত্যকির বলা ঠিকানায় যাওয়া জন্য একটা অটো ঠিক করলো। 
       অটো চলছে। সকালের মৃদু বাতাস এসে সবাইকে শীতল করে দিচ্ছে। তিরিশ মিনিটের মধ্যে তারা যথাস্থানে পৌঁছে গেলো। অটো থেকে নেমে ইরিনা আবার সাত্যকিকে ফোন দিলো। 
       "আমরা চলে এসেছি। এখন কি করবো?" ইরিনা বলল।
       "তোরা যেখানেই আছিস সেখানে একটু অপেক্ষা কর। আমার এক কাজিন গেছে, তোদের নিয়ে আসার জন্য। আমিই আসতাম, কিন্তু আজ গায়ে হলুদ তাই আমাকে বের হতে দেই নি।" সাত্যকি বলল।
       "আরে সমস্যা নেই।" ইরিনা বলল। 
       "আচ্ছা, ফোন রাখ। আমি ওকে তোর নাম্বার দিয়েছি। তোকে কল দিবে।" 
       "আচ্ছা।" 
       ইরিনা ফোন কাটতে কাটতে তার ফোনে ফোন এলো। সে রিসিভ করলো।
       "হ্যালো!" ইরিনা বলল।
       "নমস্কার। ইরিনা দিদি বলছেন?"
       "হ্যাঁ।"
       "আমি রাকিব। সাত্যকি দিদি আপনার নাম্বার দিয়েছে।" রাকিব বলল।
       "ওহ, আচ্ছা। কোথায় তুমি?" ইরিনা বলল।
       "আমিতো স্ট্যান্ডেই। আপনারা কোথায়?" রাকিব বলল।
       "অটো যেখানে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে সেখানেই।" ইরিনা আশেপাশে তাকালো। সে আবার বলল, "বিসমিল্লাহ ভাতের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।" 
       "ওহ আচ্ছা। আপনারা ওখানেই থাকেন। আমি এক মিনিটের মধ্যে আসছি।" 
       "আচ্ছা, আসো।" 

       রাকিব এক মিনিটের আগেই চলে এলো। সে এসেই হাঁপাচ্ছে। সবাই বুঝতে পারলো, রাকিব দৌড়ে এসেছে। 
       "পানি খাও।" রুদ্র হাতে থাকা পানির বোতলটা রাকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল।
       রাকিব পানি খেলো। তারপর সবাইকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা করলো। 
       "কত সময় লাগবে?" ফাহিম জিজ্ঞেস করলো।
       "হেঁটে যেতে পাঁচ মিনিট লাগবে।" রাকিব উত্তর দিলো। 

       বাড়ির কাছে যেতেই দেখলো গেটে সাত্যকি দাঁড়িয়ে আছে। ইরিনা ছুঁটে গিয়ে সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো। তার পিছে সবাই এলো। রিয়াও সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো।
       "আলিফ কোথায়?" সাত্যকি জিজ্ঞেস করল।
       "ও আসে নি।" রুদ্র উত্তর দিলো।
       "আসে নি মানে?" 
       রুদ্র সংক্ষেপে সবটাই বলল সাত্যকিকে।
       সাত্যকি সবটা শুনে মন খারাপ করলো। 
       "আলিফকে একটা কল দিয়ে চলে আসতে বল। আজ তো গায়ে হলুদ। কাল বিয়ে। অন্তত বিয়েতে যেনো আসে।" সাত্যকি বলল।
       "ওকে তো ফোনেও পাচ্ছি না।" রুদ্র বলল।
       "তবুও একটা কল দিয়ে দেখ।" সাত্যকি বলল।
       আলিফের নাম্বারে রুদ্র কল দিলো। নাম্বার বন্ধ। রাতে কল ঢুকেছে। এখন নাম্বার বন্ধ বলছে। রুদ্রের রাগ হলো। আলিফ এমন করবে কেউই ভাবেনি। রুদ্র কয়েকবার কল দিয়ে ফোন বন্ধ পেয়ে রাগে আর ফোন দিলো না। 
       "আচ্ছা, ওকে না হয় পরে কল দেওয়া যাবে। তোরা ভেতরে চল। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে। সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।"

       সাত্যকির গায়ে হলুদ শুরু হলো সন্ধ্যার দিকে। রুদ্র, রিয়া, ইরিনা এবং ফাহিম এগারোটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে। ঘুম থেকে উঠলে সাত্যকি এসে তাদের নিয়ে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তারপর তারা বাড়িটা ঘুরেফিরে দেখেছে। রাকিব সবাইকে নিয়ে তাদের এলাকাটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। রাকিব বয়সে ছোট হলেও অল্প সময়ে সবার সাথে ভাল একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে হয়েছে। 
       গায়ে হলুদ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নাচ গান আয়োজন করা হয়। বরকে ও নিতবরকে সারা গায়ে যে হলুদ মাখানো হয় সেটা দিয়েই কন্যাকে হলুদ মাখানো হয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হয়ে যায়। তারপরও নাচা-গানা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। রুদ্র, রিয়া, ফাহিম নাচলেও ইরিনা একটা গান পরিবেশন করে। ইরিনার গান শুনে সবাই দারুণ প্রসংশা করেছে৷ সাত্যকির এক মামা মুগ্ধ হয়ে ইরিনাকেও বকশিসও দিয়েছে। ইরিনা নিবেনে, তবুও সবার অনুরোধে নিতে বাধ্য হয়েছে। 

       রাতটা হাসি আনন্দে দ্রুত চলে গেলো৷ রুদ্র সন্ধ্যার দিকে আলিফকে আরো কয়েকবার কল দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। আলিফের ফোন বন্ধ। রুদ্রের রাগটা এখন টেনশনে রুপান্তর হলেও সে সেটাকে তেমন গুরুত্ব দেয় নি। আলিফ মাঝেমাঝে এমন করে। মন খারাপ থাকলে ফোন বন্ধ করে রাখে। 
       পরদিন সকাল থেকেই বিয়ের আমেজ শুরু হয়। পুরো বাড়ি লোকে ভর্তি। সবাই বিভিন্ন কাজ করছে। শুধু রুদ্রদের কোনো কাজ নেই। তারা ঘুরেফিরে সবকিছু দেখছে। শুধু রিয়া এবং ইরিনা সাত্যকিকে নিয়ে পার্লারে গিয়েছে।  

       বর বরণের মাধ্যমে বিবাহের মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো বিকালে। তারপর একে একে সাত পাক, বিভাহোমা, শুভদৃষ্টি, মালা বদল, সম্প্রদান, অঞ্জলি, সিঁদুর দানের মাধ্যমে বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেছে। সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে সাত্যকির বিয়ে দেখেছে৷ সবাই অনেক মজা করেছে।  

        রুদ্রদের লঞ্চের টিকেট কাটা। তার আজ রাতেই ঢাকায় ফিরবে। সাত্যকি চলে গেলে তারাও বেরিয়ে পরলো ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তারা সাত্যকির বাসা থেকে বেরিয়ে বাজারে এসে চা খেতে বসলো। ঠিক তখন চায়ের দোকানের টিভিতে নিউজের চ্যানেলে একটা খবর দেখে রুদ্র, রিয়া, সাত্যকি ও ফাহিমের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো। তারা তাদের চোখ কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। টিভিতে এই মুহুর্তে এক যুবকের ছবি ভেসে উঠেছে এবং বলা হচ্ছে, "প্রেমিক প্রেমিকাকে জিম্মি করে প্রেমিকাকে গন''. এবং প্রেমিককে ভয়ংকর ভাবে মারধর করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ভয়ংকর কাজ কারা করেছে এখনো সেটা স্পষ্ট ভানে জানা যায় নি। দুইজনেই এই মুহুর্তে হাসপাতালে ভর্তি। তারা মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।"
       খবরটা শুনে রুদ্র স্থির থাকতে পারছে না। টিভিতে দেখানো ছবিটা আলিফের। তাহলে আলিফের সাথে নদী ছিল। নদীকে কিছু অমানুষ গন''. করেছে। কথাটা ভাবতেই রুদ্রের সম্পূর্ণ শরীর রাগে ঘিনঘিন করে উঠলো সেই সব অমানুষের প্রতি। অন্য দিকে বুক ফেটে তার কান্না আসছে আলিফের জন্য, নদীর জন্য। রুদ্র সত্যি সবাইকে অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেললো। রিয়া, ইরিনা ও ফাহিম সবাই-ই রুদ্রকে শান্তনা দিলেও কাজ হলো না। তারাও সবাই শোকে কাতর। কে কাকে সামলাবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। 

       রুদ্র দ্রুত ঢাকায় যেতে চাচ্ছে। কয়েকবার সে বলেছে, "সে বাসে করে চলে যাবে।" কিন্তু রুদ্রকে একা কেউ ছাড়েনি। এছাড়াও ঘন্টাখানেক পরে তাদের লঞ্চ। তাই সবাই রুদ্রকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রেখে দিলো। তারা এখন সবাই-ই চাচ্ছে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছাতে।

চলবে.....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#69
পর্বঃ২৯


        রুদ্র বসে আছে আলিফের পাশে৷ আলিফ বেডে ঘুমাচ্ছে। তাকে কড়া ডোজের ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে৷ এলোপাতাড়ি মারধর করার ফলে আলিফের অবস্থা ভীষণ খারাপ। একটানা দুইদিন বেহুশ থাকার পরে আজ সকালে তার হুস ফিরেছে৷ আলিফের হুস ফেরার পরে, সে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করলে ডাক্তার এসে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে যায়। ডাক্তার বলেছে, "রোগীকে কয়েকদিন এভাবেই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হবে। শরীরের নানা জায়গার হাড় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেহেতু জেগে থাকলে রোগী ব্যথার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে না। ডাক্তার আরো বলেছে, সপ্তাহ খানেক রোগীকে ঘুম রেখে চিকিৎসা করা হবে। আমরা যখন দেখবো সে সুস্থ হয়ে উঠছে, শরীর নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত স্থান গুলোকে রিকভারি করছে, ব্যথার যন্ত্রণা কমে আসছে তখন সে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং পরবর্তীতে তার অবস্থা দেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে৷ তবে এখন আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটু সময় লাগবে, তবে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে। বিপদ কেটে গেছে।" 

        রুদ্র বেশকিছু সময় আলিফের পাশে বসে রইলো৷ তারপর সে আলিফের রুম থেকে বের হয়ে নদীর কেবিনের দিকে গেলো। অবশ্য নিচে নামার জন্য তাকে এদিক দিয়ে যাওয়া লাগবে৷ সে যখন নদীর কেবিনের সামনে এলো ঠিক সেই মুহুর্তে দুইটা পুলিশ এসে দাঁড়ালো। তারা দুইজনে কিছু একটা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা করছে। রুদ্র সেদিকে লক্ষ না করে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। সে সরাসরি হাসপাতালে নিচে এসে একটা চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়ালো। এক কাপ চা নিলো সাথে একটা সিগারেট। চা এবং সিগারেট খাওয়া শেষ হলে সে আবার হাসপাতালে ভেতরে ঢুকলো। নদীর কেবিনে সামনে এলে সে দেখলো পুলিশ দুইজন নেই। চলে গেছে ভেবে রুদ্র সোজা আলিফের কেনিনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। কেবিনে এসে দেখলো পুলিশ দুইজন ভেতরে আলিফের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে ডাক্তার। রুদ্র হেঁটে ভেতর ঢুকলো। ডাক্তারের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আলিফের জ্ঞান ফিরেছে। পুলিশ আলিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

       "আপনি কি তাদের দেখলে চিনতে পারবেন?" দুইজন পুলিশের মধ্যে গোঁফওয়ালা লোকটা আলিফকে জিজ্ঞাসা করলো। 
       রুদ্র আলিফের দিকে তাকালো। আলিফকে আগে কি কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে রুদ্র জানেনা। 
       আলিফ মাথা নাড়িয়ে পুলিশকে উত্তর দিলো সে তাদের দেখলে চিনতে পারবে। 
       "আমরা তদন্ত করছি। যারা আপনাদের সাথে এমনটা করেছে তাদেরকে আমরা দ্রুতই সনাক্ত করে গ্রেফতার করবো।" ফর্সা লোকটা বলল। তার পাশে থাকা গোঁফওয়ালা লোকটাও মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। 
       রুদ্র আলিফের দিকে তাকালো। আলিফ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। রুদ্র বুঝতে পেরে ডাক্তারকে ইশারা করলো। 
       আলিফকে দেখে ডাক্তার পুলিশদের বলল, "আজকে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। রোগীর অবস্থা এখনো ভালো না।" 
       "তাহলে আজ আমরা চললাম। আবার কথা হবে আলিফ সাহেব। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। আপনার সুস্থ হয়ে উঠে এখন খুব জরুরি।" গোঁফওয়ালা পুলিশটা বলল।

       পুলিশ বেড়িয়ে গেলে রুদ্র তাদের পিছে পিছে বেড়িয়ে এলো। সে ডাকলো, "শুনুন।" 
       দুইজনই রুদ্রের ডাক শুনে ঘুরে তাকালো।
       "আমি রুদ্র। আলিফের বন্ধু।" রুদ্র কথাটা বলে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার জন্য।
       "আমি আবির। কিছু বলবেন?" 
       "হ্যাঁ।" রুদ্র বলল।
       "জি বলুন।"
       "আসলে জানতে চাচ্ছিলাম কেসের অগ্রগতি কতদূর।"
       "আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত আসামীদের সনাক্ত করার।" আবির বলল। 
       রুদ্র বুঝতে পারলো পুলিশ তাকে এই মুহুর্তে কোনো তথ্য বলতে চাচ্ছে না। সে বলল, "আপনাদের উপর বিশ্বাস আছে। এই রকম জঘন্য কাজ যারা করেছে আশা করি আপনারা তাদের দ্রুত গ্রেফতার করবেন।"
       "ধন্যবাদ।" কথা বলেই তারা হেঁটে চলে গেল। 
       রুদ্রের বিষয়টা ভাল লাগলো না। তার মনে হলো পুলিশ কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। সে ঘটনা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আলিফের রুমে ফিরে এলো। এসে দেখে আলিফ আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাক্তার তাকে আবার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে। মাত্রই ডাক্তার বেরিয়ে গেলো। 

       বিকালে রিয়া এবং ইরিনা এলো আলিফকে দেখতে। হাসপাতালের নিচেই রুদ্রের সাথে তাদের দেখা হয়ে গেলো। রুদ্র হাসপাতালে পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। রুদ্রকে দেখেই ইরিনা এসে বলল, 'আলিফ আর নদীর কি খবর?"
       ইরিনাকে বসতে বলে রুদ্র বলল, "ভাল না৷ কারোই হুস নেই। আলিফের হুস ফিরলে যন্ত্রণায় চিৎকার করে। তাই ডাক্তার ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পারিয়ে রাখে। অন্য দিকে নদীর হুস ফিরলেও সজ্ঞানে থাকে না। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। ডাক্তার বলেছে একটু সময় লাগবে দুইজনেরই সুস্থ হতে।" 
       "তোমার কি খবর?" ইরিনার পাশে বসে থাকা রিয়া বলল।
       "ভালো।" রুদ্র নিষ্প্রাণ ভাবে উত্তর দিলো।
       "তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে না তুমি ভালো আছো? সারাদিন খাওয়া দাওয়া হয়ছে?" রিয়া আবার বলল।
       "হ্যাঁ, খেয়েছি।" রুদ্র সংক্ষেপে উত্তর দিলো।
       "কি খেয়েছ? চা আর সিগারেট?" 
       রুদ্র আর কোনো উত্তর দিলো না। রিয়াই বলল, "পুরোটা সময় কি হাসপাতালেই ছিলে?" 
       "উঁহু!" রুদ্র উত্তর দিলো।
       "তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।" রিয়া থামলো। সে হাতটা বাড়ির টেবিলের উপর থাকা রুদ্রের হাতের উপর হাত রেখে বলল, "তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে? এভাবে চলতে থাকলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে।" 
       "আমার কিচ্ছু হবে না।" রুদ্র কথাটা ভেঙে ভেঙে বলল। সে আবার বলল, "রিয়া, আলিফ আর নদীর এটা কি হয়ে গেলো? কেনো এমনটা হলো? মানুষ কি করে এতো পশু হতে পারে। ওদের বুকে কি কোনো দয়ামায়া নেই? এভাবে দুইটা মানুষকে প্রায় মেরেই ফেললো।" রুদ্র কন্ঠ এবার ভাড়ী শুনালো। 
       "মন খারাপ করিস না রুদ্র। সব ঠিক হয়ে যাবে।" ইরিনা বলল।
       "কিচ্ছু ঠিক হবে না ইরিনা। আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিস না। আলিফের জ্ঞান ফিরলে বা ও সুস্থ হলে ওকে কি বলে বোঝাবো? ও নদীকে ভীষণ ভালোবাসে। নদীকে-ই বা কি করে স্বাভাবিক করবো। কিছুই ঠিক হবে না। কিছুই না!" রুদ্র প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সে নিজেকে সামলে নিয়েছে।
       রুদ্রের এই কথায় সবাই নিরব হয়ে গেলো।

       "চলো রুদ্র!" রিয়ার কথায় নিরবতা ভাঙলো।
       "কোথায় যাবো?" রুদ্র জানতে চাইলো৷ 
       "তোমার বাসায়। বাসায় গিয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে আবার আসবো।" রিয়া বলল।
       রুদ্র কিছু বলার আগেই ইরিনা বলল, "হ্যাঁ রুদ্র, বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। ভালো লাগবে। তোরা না আসা পর্যন্ত আমি এখানে আছি। চিন্তার কিছুই নেই।" 
       রিয়া ও ইরিনার জোড়াজুড়িতে রুদ্র অবশেষে যেতে বাধ্য হলো। একটা রিকসা ঠিক করে রিয়া ও রুদ্র চলে গেলে ইরিনা প্রথম গেলো নদীর রুমে। নদী ঘুমিয়ে আছে। তার পাশে তার মা বসে আছে। ইরিনা এগিয়ে গিয়ে বলল, "কেমন আছেন আন্টি?"
       "ভালো না মা। তুমি কে? ঠিক চিনতে পারলাম না" নদীর মা জানতে চাইলো। 
       "আন্টি আমি ইরিনা, নদীর ফ্রেন্ড।" 
       "ওহ আচ্ছা। তুমি ভালো আছো?" 
       "হ্যাঁ, আন্টি আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?" ইরিনা কিছু না ভেবে আবারও আগের প্রশ্নটা করলো।
       "কি আর বলবো মা। আমার জন্য আজ আমার মেয়ের কি থেকে কি হয়ে গেলো।" নদীর মা কেঁদে দিলো।
       ইরিনা বলল, "আন্টি এভাবে ভেঙে পড়বেন না। আমাদের হাতে তো কিছুই নেই। তবে যারা এই কাজ করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।" 
       "তারা শাস্তি পেলেই কি আমার মেয়েটা আগের জীবনটা ফিরে পাবে? পাবে না!" নদীর মা কান্নায় ভেঙে পড়লো। 
       ইরিনা আরো কাছে এসে নদীর মাকে জড়িয়ে ধরলো। 
       নিরব কান্নায় কিছুটা সময় কেটে গেলে ইরিনা রিয়াকে দেখে আলিফের রুমে এলো। আলিফও ঘুমিয়ে আছে। ইরিনার মন খারাপ হলো। দুইটা ভালোবাসার মানুষকে এভাবে, এই অবস্থায় দেখে যে কারোই চোখে জল চলে আসবে। ইরিনার চোখও ভিজে গেলো। কিন্তু সেই ভেজা চোখে আরো খানিকটা দুঃখ ঢেলে দিলো ফাহিমের বলা কথাগুলো। ইরিনা তার চোখের জল ধরে রাখতে পারলো না। আলিফের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদলো সে। সে তাকিয়ে আছে দূরের আকাশের দিকে। 

       ফাহিমের সাথে বেশকিছু দিন ধরেই ইরিনার ঝামেলা চলছিল। সেই ঝামেলা আরো বাড়ে যখন ইরিনার বাসা থেকে ইরিনার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলে। ইরিনা বারবার বলেছিল ফাহিমকে তার বাবার সাথে গিয়ে দেখা করার জন্য। কিন্তু ফাহিম রাজি হয় নি। ইরিনাও বাসায় ফাহিমের কথা বললে বাসা থেকে বিয়ের জন্য ইরিনাকে প্রেসার দেওয়া শুরু করে। সে কোনো ভাবেই বাসায় রাজি করাতে পারছিল না। অবশেষে যখন সে তার বাবাকে মোটামুটি রাজি করিয়ে ফেলল তখনই ফাহিমের কথাগুলো তার সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলো। 
       ঢাকা ফিরেই পরের দিন ইরিনাকে দেখা করতে বলে ফাহিম। ইরিনা দেখা করতে এলে ফাহিম তাকে জানায়, সে স্কলারশিপ পেয়েছে। সে জার্মানি যেতে চায়। কথাটা শুনে প্রথমে ইরিনা খুশি হলেও পরক্ষণেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সে সেটা ফাহিমকে বুঝতে দেয় না। ফাহিমের চোখে মুখে উত্তেজনা, আনন্দ এবং তার হাসিমুখ দেখে সে আর জানাতে পারে না যে সে তার বাবাকে রাজি করিয়েছে তাদের বিয়ের জন্য।
       "কংগ্রাচুলেশন।" ইরিনা নিষ্প্রাণ ভাবে ফাহিমকে বলে। 
       "তুমি কি খুশি হয়েছো?" ফাহিম জিজ্ঞেস করে।
       "আমি কেন খুশি হবো না? আমি অনেক খুশি হয়েছি।"
       "সত্যি বলছো?"
       "মিথ্যা কেন বলব!" 
       "আমি ভেবেছিলাম তুমি মন খারাপ করবে।"
       "এত খুশির একটা সংবাদ শুনে কেউ মন খারাপ করে?"
       "তুমি সত্যি খুশি তো?"
       "হ্যাঁ, আমি ভীষণ খুশি।" ইরিনা আবার বলল, "তাহলে কবে যাচ্ছো?" 
       "কাগজপত্র ঠিক করতে দুই মাস তো লাগবে আনুমানিক।"
       "ওহ আচ্ছা।" 

       সেদিন ফাহিমের সাথে ইরিনার আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কথা হয় নি। ফাহিম একটিবারও বলেনি, "তুমি কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে?" ফাহিম ধরেই নিয়েছে, ইরিনা অপেক্ষা করবে না। এই বিষয়টাই ইরিনাকে তীব্র কষ্ট দিয়েছে। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ফাহিম তো তাকে একবার হলেও জিজ্ঞেস করবে, সে অপেক্ষা করবে কি-না? কিন্তু ফাহিম তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।
       ইরিনার কান্না বেড়ে গেলো। ফাহিম কি করে এতো বদলে গেলো? যে মানুষটা তাকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারতো না সে আজ তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ইরিনা বহুকষ্টে নিজেকে সামলে নিলো। সে বাইরে বেরিয়ে এলো। খোলা বাতাসে তার একটু ভালো লাগছে। সে বাইরেই হাঁটাহাঁটি করলো বেশকিছু সময়। রুদ্র আর রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।

       "আমি এখানেই অপেক্ষা করছি। তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে এসো।" রিকসা থেকে নেমে রিয়া কথাগুলো রুদ্রকে বলল। 
       "এখানে থাকবে মানে? বাসায় চলো। এখানে থেকে অপেক্ষা করতে হবে না।" রুদ্র জোর গলায় বলল।
       "আমার কোন সমস্যা হবে না। হুট করে তোমার বাসায় গেলে কে কি ভাববে?"
       "কেউ কিছু ভাববে না। এখানে একা একা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে না।"

       রুদ্রের জোড়াজুড়িতে রিয়া প্রথমবারের মতো রুদ্রের বাসায় গেল। বাসায় যাওয়ার পর রুদ্র সবার সাথে রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিল। সবাই বলতে তার মা আর তার বোন।
       রিয়াকে বসতে বলে রুদ্র ফ্রেস হতে চলে গেল। রিয়া ডাইনিং রুমের সোফায় বসে ছিল। তার পাশে বসে আছে মিলি। সে রিয়াকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখছে। জাহানারা রান্নাঘরে গেছে খাবার রেডি করতে। 

       "তুমি কি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো?" মিলি আচমকা প্রশ্ন করে বসে রিয়াকে। 
       মিলির কাছ থেকে এরকম একটা প্রশ্ন রিয়া আশা করেনি৷ সে কিছু সময়ের জন্য থতমত হয়ে গেল। সে বলল, "তোমার কি মনে হয়?"
       "আমার মনে হয় তুমি রুদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসো!" মিলি মুখে হাসি এনে কথাটা বলল। 
       মিলির কথা শুনে রিয়া হেসে দিলো। সে বলল, "তোমার রুদ্র ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না!" কথাটা বলার সময় রিয়ার বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা কষ্ট হল। 
       "তাহলে কাকে ভালোবাসে?" মিলি আবার প্রশ্ন করল। 
       "আমিতো জানিনা।"
       "তাহলে তুমি কি আমার রুদ্র ভাইয়ের বন্ধু?"
       "তেমনটা ও না।"
       "তাহলে?"

       রিয়ার উত্তর দেওয়ার আগেই রুদ্র চলে এলো। রুদ্রের চুল ভেজা। তাকে দেখতে আগের থেকে অনেকটা ফ্রেশ লাগছে। সে যে টি-শার্টটা পরেছে সেটা এখানে সেখানে ভেজা। রুদ্র দ্রুত গোসল করে ভালোভাবে শরীরটাও মুছে নি। রুদ্রকে দেখতে অনেক আকর্ষনীয় লাগছে। রিয়া হঠাৎ রুদ্রের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। এত সুন্দর কারও দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায় না। 
       রুদ্র হেঁটে এসে মিলির পাশে বসলো। সে রিয়াকে বলল, "তোমরা কি নিয়ে গল্প করছিলে?"
       "তোমাকে নিয়ে।" রিয়া উত্তর দিলো। 
       "আমাকে নিয়ে?" রুদ্র আশ্চর্য হল। সে আবার বলল, "আমার নামে কি কি বদনাম করলে।" 
       "তোমাকে বলা যাবে না ভাইয়া।" মিলি কথাটা শেষ করে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে গেল। 

       "রুদ্র, তোরা খেতে আয়।" জাহানারা ডাকলো। 
       "রিয়া, চলো খাবে।" রুদ্র বলল।
       "আমি খাব না, আমি খেয়েই এসেছি।" রিয়া বলল।
       "এটা বললে হবে না, তুমি প্রথম এসেছ আমাদের বাসায়। একটু তো খেতেই হবে।"
       "প্লিজ রুদ্র রিকোয়েস্ট করো না।"
       "তুমি কিছু না খেলে মা মন খারাপ করবে।"
       রুদ্রের শেষের কথাটা রিয়া ফেলে দিতে পারল না।

       রিয়া আর রুদ্র খাওয়া শেষ করেই বেড়িয়ে গেলো। খাওয়ার সময় রিয়ার সাথে জাহানারার দুই একটা কথা হল। জাহানারা তাকে আবার আসতে বলল। রিয়া আসবে বলে কথা দিয়েছে। 
       রিয়া আর রুদ্র হাসপাতালে পৌঁছেই খবরটা পেলো। যে চারজন নদী এবং আলিফের সাথে এরকম জঘন্য কাজ করেছে তাদের মধ্যে পুলিশ দুইজনকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করেছে। খবরটা শুনে সবাই খুশি হলো। কিন্তু পুরো ঘটনাটা শোনার জন্য সবাই আলিফ এবং নদীর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে থাকলো।

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#70
পর্বঃ৩০


        ইন্সপেক্টর আবির দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে বসে আছে থানার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। সে নদীর সাথে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বর্ননা দিচ্ছে।
        "স্যার, ঘটনাটি ঘটে আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিক। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় নদী এবং আলিফ নামে ছেলেটি এগারোটার দিকে বাসা থেকে বের হয়। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তারা দুইজনে একই বাসায় ভাড়া থাকে এবং তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। নদীর মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, "সে সেদিন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন সাহায্যের জন্য নদী তার বন্ধু আলিফকে ডাকে। এবং একটা সময় তার অবস্থা গুরুতর হলে তারা দুইজনে ডাক্তার ডাকতে বাসা থেকে বের হয়। তারপর তারা আর বাসায় ফিরে আসে নি।" এছাড়াও আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তাদের বাসার কাছাকাছি যে দুইটা ফার্মেসী ছিল সেদিন সেই দুইটা ফার্মেসিই দশটার দিকে বন্ধ করে দিয়েছিল। ফার্মেসির লোকদের সাথে কথা বলে সত্যতা যাচাই করেছি। আমরা ধরণা করেছি, তারা উপায় না পেয়ে বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আরেকটা ফার্মেসির দিকে যাওয়ার পথেই একদল ছেলে তাদের অপহরণ করে পাশে একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিং এ নিয়ে যায়। সেখানেই নদীকে গণ;., করা হয় এবং নদীর সাথে থাকা ছেলেটিকে কিল ঘুসি লাথি সহ বাশ দিয়ে সবাই মিলে এলোপাথাড়ি মারধর করে।" 
        ইন্সপেক্টর আবির প্রাথমিক ঘটনাটা সংক্ষেপে বলে থামলো। বসে থাকা অফিসাররা কোনো কথা বলল না। তারা আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। 

        ইন্সপেক্টর আবির তার সামনে থাকা ল্যাপটপে ক্লিক করতেই তার পিছনে থাকা প্রজেক্টরের পর্দায় চারজনের ছবি ভেসে উঠলো। ঘরের মধ্যে থাকা সবাই সেই ছবির দিকে তাকালো। আবির ছবিগুলোর দিকে লক্ষ করে বলল, "স্যার, তদন্ত কার্যক্রমে আমরা মোট চয়জনের বিভিন্ন ধরনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে যাওয়ার পথে একটা পুরনো গ্যারেজ বাঁধে, ভাগ্যক্রমে সেই গ্যারেজের গেটের সামনেই একটা সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। আমরা সেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। সেই ফুটেজে দেখা যায়, চারটা ছেলে নদী এবং আলিফের কাঁধে হাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সেই ফুটেজ দেখে চারজনের মধ্যে দুইজনকে সনাক্ত করে গতকাল গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তাদের জবানবন্দি নিয়েই সারা রাত অভিযান চালিয়ে আজ ভোরের দিকে বাকী দুই আসামিকেও আমরা গ্রেপ্তার করি। এদের মধ্যে ডিএনএ টেস্টে ঈষান, বিপুল এবং মোহন্ত বিশ্বাসের নমুনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া ;.,ের স্বীকারোক্তি দিয়েছে বাকী একজন।"

        ইন্সপেক্টর আবিরের কথা শেষ হলে ঘরের লাইট জ্বলে উঠলো। অনেকটা সময় মৃদু অন্ধকারে থাকার ফলে হঠাৎ লাইটের আলোটা সবার চোখে লাগলো। 
        মিটিং শেষ হলে সবাই একে একে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগল। সেই সময় আবির হেঁটে এসে থানার এসপি আতাহারকে সালাম দিয়ে বলল, "স্যার, কিছু জরুরি কথা ছিল।"
        আতাহার বলল, " কিছুসময় পরে আমার অফিসে আসুন।" 
        আবির বলল, "আচ্ছা স্যার।"

        ইন্সপেক্টর আবির মিনিট দশেক পরে এসপি স্যারের অফিসে গেলো। এসপি আতাহার তাকে দেখেই ভেতরে আসতে বলল এবং তাকে বসতে বলল। আতাহার ফোনে কথা বলছে। তাকে ব্যস্ত দেখে আবির চুপচাপ চেয়ারে বসল।

        আতাহার কথা শেষ করে আবিরের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল, "বুঝলেন আবির সাহেব, নেতারা যখন সমস্যায় পড়ে তখন আমাদের মত চুনোপুঁটিদের গুরুত্ব বেড়ে যায়। এই দেখুন না, সকাল থেকে বারবার ফোন দিয়েই যাচ্ছে আমাদের এমপি সাহেব।"
        আবির চুপ রইলো। আতাহার আবার বলল, "হ্যাঁ, কি এমন জরুরি কথা বলতে চান আমাকে বলে ফেলুন দ্রুত। আমি আবার বেরোবো। দুপুরে একটা লান্সের দাওয়াত আছে।"
        আবিরের বুঝতে সমস্যা হলো না আতাহার সাহেব এমপি স্যারের সাথে দেখা করতে যাবে। আবির বলল, "স্যার আসলে...।" আবির তোতলানো মত করে বলল।
        "ভয়ের কিছু নেই, বলে ফেলুন।" আতাহার বলল।
        "নদী মেয়েটার ;.,ের মামলাটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।" আবির বলল।
        আতাহারের চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে উঠলো। সে বলল, " চারজনের নামে প্রামান সহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে দেও। এই কেস নিয়ে আর আগানোর দরকার নেই। আগে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছি সেভাবেই কাজ করুন। কোনো ঝামেলা হোক সেটা আমি চাই না।" 
        "স্যার, তবুও বিষয়টা আমরা এভাবে এড়িয়ে যেতে পারি না। ভিকটিম বিষয়টা তুললে আমরা কি করবো?" আতাহারের ধমকে আবির আর কিছুই বলতে পারলো না।
        "আপনি আসতে পারেন। আর হ্যাঁ, আমাকে না জানিয়ে নিজ থেকে কোনো কিছু করতে যাবেন না। আজকের মধ্যেই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে দিন। বাকীটা আদালত দেখবে। আমাদের কাজ এখানেই সমাপ্ত। এবার আপনি আসতে পারেন।" 

        আবির হতাশ হয়ে এসপি স্যারের রুম থেকে বেরুলো। সে জানতো এটাই হবে। তবুও শেষ একটা চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিল সে। আবির ঘামছে। নদী নামের বোবা মেয়েটার জন্য তার কষ্ট হচ্ছে। হতভাগা একটা মেয়ে। অবশ্য এদেশের সব মেয়েরাই হতভাগা। এখানে ধর্ষকদের শাস্তি কবে আর ঠিকমতো হয়েছে? আবির দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তার এই চাকরির বয়সে সে অনেক কিছু দেখেছে। দেখেও তাকে সবসময় নিশ্চুপ থাকতে হয়েছে। এখন তার এইসব সয়ে গেছে। এখন তার বেশি মন খারাপ হয় না। সে জানে, নদীর ;.,ের মামলাটা দীর্ঘ দিন আদালতে ঝুলে থাকবে। সে এ-ও জানে এই মামলার রায় কি হবে। সে এতোটা নিশ্চিত কারণ এই মালার সাথে রাঘব বোয়াল জড়িত। 

        আবির বিকালের দিকে একবারে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। তার মন আজ ভাল না। সে এসপি স্যারের কথামতো চার্জশিট জমা দিয়ে কি মনে করে হাসপাতালে দিকে গেলো সে নিজেও জানে না। সে হাসপাতালে সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রইল। সে মূলত সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সে কি ভিকটিমের সাথে দেখা করবে কি করবে না বুঝে উঠতে পারছে না। তার মন যাচ্ছে একবার দেখা করে আসতে কিন্তু এভাবে দেখা করা উচিত হবে কিনা সে বুঝতে পারছে না। সে অবশেষে যখন চলে যাবে সিন্ধান্ত নিলো তখন তাকে কেউ পিছন থেকে ডাকলো। সে ঘুরে তাকালো। 

        "কেমন আছে?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
        "জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল। আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।" আবির বলল।
        "আমি আলিফের বন্ধু।" রুদ্র উত্তর দিলো।
        "ওহ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমাদের সেদিন কথা হয়েছিল।" 
        "হ্যাঁ, হঠাৎ এদিকে? জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছেন?" 
        "না, জিজ্ঞাবাদের তেমন কিছু নেই। আসামী ধরা পড়েছে এবং তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছে।" 
        কথাটা শুনে রুদ্রের মন ভাল হয়ে গেল। সে বলল, "কবে?" 
        "চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছি। আমাদের কাজ শেষ। এখন বাকীটা আদালত দেখবে।" আবির বলল।
        "আপনাকে ধন্যবাদ। আসামীদের এতো দ্রুত সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করার জন্য।"
        "আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমাদের ভাগ্য ভালো যে একটা সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট ভাবেই আসামিদের সনাক্ত করা গেছে। তাই দ্রুতই কেসটা সমাধান হয়ে গেছে।" 
        "তবুও আপনাকে ধন্যবাদ। আজকাল পুলিশদের উপর একটুও বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু আপনাদের মত কিছু নিষ্ঠাবান পুলিশ আছে বলেই মানুষের বিশ্বাস এখনো বেঁচে আছে।" 

        রুদ্রের শেষ কথাগুলো আবিরের মন খারাপ করে দিলো। সে জানে কেনো এতো দ্রুত কেসটা সমাধান হয়েছে, কেনো-ই বা আসামি এতো দ্রুত গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু সে সেইসব কথা রুদ্রকে না বলেই সে বলল, "আজ চলি। আশা করি আদালত সঠিক ভাবে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে।" আবির কথাটা শেষ করে দ্রুত হেঁটে চলে গেল। তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। তার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বুকের ভেতর জমানো রাগ ক্ষোভ তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। তার কেবল মনে হচ্ছে, বোবা না হয়েও বোবার মত বেঁচে থাকা জীবন সবচেয়ে নোংরা।  

        রুদ্র বসে আছে আলিফের পাশে। আলিফ এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। নদীও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে আজকাল নদী কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না। সে সারাক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকে। তার যেনো আর কিছু বলার নেই। তার সব কথা হারিয়ে গেছে। কথা বলার ইচ্ছেটা মরে গেছে। সে মৃত মানুষের মত বেঁচে আছে।

        এখন সন্ধ্যা। আলিফ কেবিনে একা বসে আছে। এতোক্ষণ রুদ্র তার পাশেই ছিল। জরুরি কাজে সে একটু বাইরে গেছে। আলিফ হাত বাড়িয়ে টিভির রিমোটটা হাতে নিয়ে তার রুমে থাকা টিভিটা চালু করলো। চ্যানেল পরবর্তী করতে করতে একটা খবরে তার চোখ স্থির হয়ে রইল। তার চোখেমুখে তীব্র ক্ষোভ ফুটে উঠছে। তার ভেতর প্রচন্ড রেগ জমা হচ্ছে। ঠিক তখনই রুদ্র রুমে ঢুকলো। সে রুদ্রকে দেখেই চিৎকার করা বলল, "ওরা চারজন ছিলো না পাঁচজন ছিল। খবরে কেনো শুধু চারজনের কথা বলছে রুদ্র? কেনো?" 

চলবে...

( এই পর্বে ভুল ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷ আসলে আমার সীমিত জ্ঞানে যতটুকু পেরেছি লিখছি। ) 
(লেখকঃসবুজ আহম্মেদ মুরসালিন)
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#71
Next আপডেট তাড়াতাড়ি চাই
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
#72
এই গল্পের আর বেশি পর্ব পাবেননা এই গল্পের সিজন দুই এর বই বাহির করবে বলছে লেখক।

এ-ই খন দুইটা বইয়ের কাজ চলছে এইটি শেষ হলে ুইটা শুরু করবে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#73
আমি এই গল্প খুঁজে 36 পর্ব পর্যন্ত পড়েছি।।এর পরের পার্ট লেখক পর পাবলিশ করেনি
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply
#74
(21-06-2023, 09:59 AM)Naim_Z Wrote: আমি এই গল্প খুঁজে 36 পর্ব পর্যন্ত পড়েছি।।এর পরের পার্ট লেখক পর পাবলিশ করেনি



হুম আর কোনো পর্ব পাবলিশ করেনি লেখক তার সাথে কথা হয়েছে লেখা শুরু করবে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#75
পর্বঃ৩১



        আলিফ অস্থির হয়ে আছে। তার চোখমুখ লাল। সে ঘামছে। রুদ্র ছুঁটে এসে আলিফের পাশে বসল। সে বলল, "তুই এমন করছিস কেনো? কি হয়েছে?"
        আলিফ নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। তার বারবার ওই পশুদের কথা মনে পরছে। সে উত্তেজিত হয়ে রুদ্রকে বলল, "ওরা মোট পাঁচজন ছিলো, রুদ্র। কিন্তু খবরে বলছে চারজন। কেনো? কেনো?" শেষের কেনোটা একটু চিৎকার করেই বলল আলিফ।
        রুদ্র কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। সে আগে আলিফকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। ঠিক সেই মুহুর্তে আলিফের মা এলো। সে আলিফকে এই অবস্থায় দেখে ছুঁটে এসে জিজ্ঞেস করল, "কি হয়েছে খোকা? তুই এমন করছিস কেনো?"
        আলিফ বলল, "মা, খবরে কেনো মিথ্যে বলছে? ওরা পাঁচজন ছিলো। পাঁচজন মিলে আমাকে আর নদীকে....!" আলিফ কথাটা শেষ করতে পারলো না। সে কেঁদে দিলো। তার চোখ বেয়ে নিরব আর্তনাদ বেড়িয়ে এলো। তার অসহায় লাগছে। সে বাঁচতে চায় না। সে নদীর সামনে কিভাবে দাঁড়াবে? আলিফ কেঁদেই গেলো। তার মা এবং রুদ্র কোনো কথা বলল না। তারাও চাচ্ছে আলিফ কাঁদুক। ওর মনটা হালকা হোক। 
        মিনিট দশেক পরে নিরবতা ভেঙে রুদ্র বলল, "তোর কি খুব খারাপ লাগছে?"
        আলিফ মুখে কিছু বলল না। তবে রুদ্রের চোখের দিকে তাকালো। রুদ্র বাকীটা নিজেই বুঝে নিলো।
        রুদ্র আলিফের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "আন্টি আপনি টেনশন করবেন না। আমি আছি ওর পাশে। এখন ও একটু ভালো বোধ করছে।" 
        আলিফের মায়ের মুখ মলিন। তার চোখও ভেজা। সে কিছু না বলে বেড়িয়ে এলো। বাইরে আসতেই আলিফের বাবা মিনহাজের সাথে দেখা হলো তার। 
        মিনহাজ জিগ্যেস করলো, "ছেলের কি অবস্থা?" 
        "এখন একটু ভালো। তুমি কি অফিস থেকে সরাসরি এখানে এসেছ?" 
        "হ্যাঁ, মনটা অস্থির হয়ে ছিল সারাদিন। তাই ভাবলাম এসে ছেলেকে দেখে যাই।" 
        "ভালো করেছ। যাও দেখে এসো। তারপর একসাথে বাসায় যাই। রাতে আবার আসতে হবে।" 

        মিনহাজ ভেতরে ঢুকে ছেলেকে দেখে দ্রুতই বেরিয়ে এলো। রুদ্রের সাথে তার দুইএকটা কথা হলো সেই সাথে আলিফের সাথেও। 

        আলিফ এখন একটু স্বাভাবিক। তার শরীরটাও আগের থেকে ভালো। আলিফ বলল, "নদীর কি খবর?"
        রুদ্র ঠিক কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। তবে সে আলিফকে সান্ত্বনা দিতে বলল, "আগের থেকে অনেকটা ভালো।"
        "রুদ্র, আমাদের সাথেই কেনো এমটা হলো? কি এমন দোষ করেছি যে সেই দোষের শাস্তি পাচ্ছি এভাবে? আমি এখন নদীর সামনে কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবো? আমি যে ওকে প্রচন্ড ভালোবাসি।" কথাগুলো বলাতে বলতে আলিফের চোখ বেয়ে অশ্রু বেরিয়ে এলো।
        রুদ্র আলিফকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, "তুই কেনো বলছিস ওরা পাঁচজন ছিল? সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চারজন।" 
        "হ্যাঁ, ওরা প্রথমে চারজনই ছিল। চারজন মিলে আমাদের জিম্মি করে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে আগে থেকেই আরেকজন ছিল।" 
        "আচ্ছা তুই আমাকে প্রথম থেকে সবটা খুলে বল। তারপর আমি দেখি কি করা যায়।'

        আলিফ পুরো ঘটনাটা প্রথম থেকে রুদ্রকে বলতে শুরু করলো। 
        "তুই দ্বিতীয়বার যখন আমাকে ফোন দিস তখন আমি বাসা থেকে বের হই। আমি সবেমাত্র নিচে নেমেছি ঠিক সেই সময় নদীর মেসেজ এলো। মেসেজে লেখা ছিল, "আলিফ, আম্মার শরীরটা হটাৎ খুব খারাপ হয়ে গেছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। তুমি কি একটু বাসায় আসবে?"
        আমি মেসেজটা দেখে বাসায় ব্যাগটা রেখে তাৎক্ষণিক নদীর বাসায় যাই। ওখানে গিয়ে দেখি আন্টির অবস্থা আসলেই খারাপ। প্রথমে ভেবেছিলাম প্রেসার বেড়েছে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও প্রেসার কমাতে পারছিলাম না। তার মধ্যে তুই বারবার কল দিয়েই যাচ্ছিলি। বারবার রিং বাজছিল বলে আমি ফোনটা সাইলেন্স করে রাখি। আমি মনে মনে ভেবছিলাম, আন্টির শরীরটা আগে স্বাভাবিক হোক। নদীকে এই অবস্থায় একা রেখে আমি কোথাও যেতে পারবো না। যদি আন্টি একটু সুস্থ হয় তাহলে আজকে যেতে না পারলেও কাল ভোরে গাড়িতে করে চলে আসতে পারবো। তাই যাওয়া নিয়ে চিন্তা করছিলাম না। কিন্তু এদিকে রাত যত বাড়তে থাকলো তত আন্টির শরীরটা খারাপ হতে থাকলো। আমরা বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কি করবো। পরে নদী বলল, "আলিফ, চলো কোনো ফার্মেসি থেকে ডাক্তার ডেকে আম্মাকে দেখাই। আমার খুব ভয় করছে। যদি আম্মার কিছু একটা হয়ে যায়, তখন কি হবে?" প্রথমে আমি নদীকে বলেছিলাম, "আমি একা যাই তুমি আন্টির পাশে থাকো।" নদী বলল, "ফার্মেসি তো বাসার কাছেই। চলো একসাথে যাই। সমস্যা নেই।"  
        আমি আর নদী ডাক্তার আনতে বাসা থেকে বের হই। নিচে নেমে দেখি প্রথম ফার্মেসিটা বন্ধ। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখি পরেরটাও বন্ধ। আমরা চিন্তাই পরে যাই। তখন নদী বলল, "একটু সামনেই আরেকটা ফার্মেসি আছে। ওখানে গিয়ে দেখি খোলা আছে কি-না।" আমি নদীকে বলি, "ওটা তো অনেক দূর। আর ওদিকটা মানুষের আনাগোনা একদম কম।" নদী আমার কথা শুনে হেসে হাত নাড়িয়ে বলে, "ভয় পাচ্ছ? ঢাকা শহরে এগারোটা কি কোনো রাত? তুমি সাথে আছ না, আমার ভয় কিসের?" আমিও জানি কোনো সমস্যা হবে না। তবুও কেনো জানি মন সায় দিচ্ছিলো না ওদিকে যাওয়ার জন্য। তবুও নদীর মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। ও অনেক টেনশন করছিল আন্টির জন্য। তাই আমি ওকে বাঁধা দিলাম না। কিন্তু বিপদ তো আর জানিয়ে আসে না।" 

        আলিফ এটুকু বলে থামলো। ওর মুখ মলিন। রুদ্র কোনো কথা বলল না। সে জানে, কিছুটা সময় নিয়ে আলিফ নিজ থেকেই বাকীটা বলবে। 

        "আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম। প্রায় ফার্মেসির কাছে চলে এসেছিলাম। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম ফার্মেসিটা খোলা আছে। ঠিক তখনই কোথা থেকে একদল ছেলে এসে আমাদের ঘিরে ধরলো। আমরা কিছু বোঝার আগেই দুইটা ছেলে আমাদের দুইজনের গলায় ব্লেড চেপে ধরলো। আর বলল, " নড়াচড়া করলে এটা সোজা গলায় চালিয়ে দিবো।" আমি দুইবার ছোটার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। তৃতীয়বার যখন চেষ্টা করি তখন গলায় যে ছেলেটা ব্লেড চেপে ধরেছিলো সে আমার গলায় পোচ দিতেই গলা বেয়ে তাজা রক্ত বের হয়ে আমার শার্ট ভিজে গেলো মুহুর্তে। প্রচন্ড ব্যথায় আমি সম্পূর্ণ হুসে থাকলাম না। মাথাটা ঘুরছিল শুধু। আর বুঝতে পারছিলাম ওরা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে কোনো এক জায়গায়। অন্য দিকে নদী এমনিতেই কথা বলতে পারে না। ওর কেমন লাগছিল ও-ই জানে। তবে আমি যে কয়বার ওর দিকে তাকিয়েছি সেই কয়বার দেখেছি ওর চোখ অশ্রুতে ভেজা।" 

        আলিফের চোখ ভিজে উঠেছে। সে কিছুটা সময় নিলো নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার। তারপর আবার বলল, "বাকীটা তো জানিস। ওরা কি করেছে আমাদের সাথে। কী নির্মম ভাবে আমাকে মেরেছে। একটা সময় পর আমার আর হুস ছিলো না৷ তবুও ওরা আমাকে মেরেছে। আর নদীকে একজনের পর একজন ইচ্ছেমতো ভোগ করেছে৷ বোমা একটা মেয়ে কিছু বলতেও পারেনি চিৎকার ও করতে পারেনি। ওরা মানুষ না, ওরা পশু, জানোয়ার। কিন্তু খবরে কেনো বলছে ওরা চারজন? ওরা মোট পাঁচজন আর বাকী যে ছিল সে ওদের লিডার। ও-ই প্রথমে নদীকে.....!" আলিফ হঠাৎ চিৎকার শুরু করলো। রাগে ক্ষোভে গালাগালি দিতে থাকলো ওদেরকে। 
        "একটু শান্ত হ আলিফ। আমি দেখছি কি করা যায়। আমি ইন্সপেক্টর আবিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি। প্লিজ তুই এরকম পাগলামি করিস না।" রুদ্র বলল।
        আলিফ চিৎকার থামিয়ে নিরবে কান্না করতে থাকলো। সে রুদ্রকে বলল, "রুদ্র, আমি একটু একা থাকতে চাচ্ছি।" 
        রুদ্র বলল, "আমি আশেপাশেই আছি। কোনো দরকার হলে আমাকে কল দিস।"

        রুদ্র বেরিয়ে এসে ঠিক করলো সবার আগে ইন্সপেক্টর আবিরের সাথে সে দেখা করবে। সে সরাসরি থানার দিকে রওনা করলো।
        থানায় পৌঁছে রুদ্র জানতে পারলো, আবির থানায় নেই। বিকালেই ছুটি নিয়ে একবারে চলে গেছে। সে আবিরের ঠিকানা সংগ্রহ করলো। সে ঠিক করলো বাসায়ই তার সাথে দেখা করবে। 
        ইন্সপেক্টর আবিরের বাসায় পৌঁছাতে রুদ্রের অনেকটা দেরি হয়ে গেলো। দেরি হওয়ার মূল কারণ রাস্তায় জ্যাম। কিন্তু রুদ্রের মনে আশা ছিল দেরি হলেও বাসায় এসে ইন্সপেক্টর আবিরের সাথে দেখা হবে তার৷ কিন্তু সে আশাহত হলো। ইন্সপেক্টর আবির বাসায় নেই। সে বাসায়ই ফেরে নি। তাহলে ইন্সপেক্টর আবির গেলো কোথায়? তাকে কোথায় খুঁজবো? রুদ্র কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। সে উদ্দেশ্যেবিহীন ভাবে রাস্তায় হাঁটতে থাকলো। এবং নানা কিছু ভাবতে থাকলো। তার হঠাৎ সবকিছু কেমন গোলমেলে লাগছে। বিকালে হঠাৎ ইন্সপেক্টর আবিরের হাসপাতালে আসা। এই কেসটা এতো দ্রুত সমাধান হওয়া। রুদ্রের এখন মনে হচ্ছে, সবকিছু কেমন যেনো আগে থেকেই ঠিক করা। নিশ্চিত এখানে অন্য কিছু লুকিয়ে আছে। আমরা যা দেখছি তা পুরোপুরি সত্য নয়। আমরা মিথ্যের মধ্যে আছি। এবং কেউ সত্যটা সামনে আসতে দিচ্ছে না। সে চাচ্ছে দ্রুত কেসটা সমাধান হয়ে যাক। সেই কারণেই সবকিছু এতো দ্রুত ঘটছে। রুদ্রের হঠাৎ মনে হলো কেসটা আদালতে গেলে প্রথম দিনই সমাধান হয়ে যাবে। এবং কি হতে পারে রুদ্র সেটা স্পর্শ ধারনা করতে পারছে। এরকম কেসের রায় সে আগেও পত্রিকায় পড়েছে। আসামি যদি নেশাগ্রস্ত থাকে এবং সেটা প্রমানিত হয় তাহলে তার অপরাধ সেভাবে মূল্যায়ন হয় না। তাহলে আলিফ এবং নদীর সাথে যারা এরকম করেছে তাদের কি শাস্তি হবে না?

        রুদ্রের রাগ হচ্ছে। ঠিক কার উপর সে জানেনা। সে এখন রিকসায়। রিকসাওয়ালাকে সে কোথায় নিয়ে যেতে বলেছে সে ভুলে গেছে। সে মনে করতে পারছে না। সে মনে করতে চায় ও না। যেখানে ইচ্ছে তাকে নিয়ে যাক। শুধু সে চায় তাকে অনেক দূরে কোথাও নিয়ে যাক। যে সমাজে ক্ষমতার জোরে জানোয়ারদের কোনো শাস্তি হয় না, সেই সমাজে সে আর থাকতে চায় না। কিন্তু সে জানে সে কোথাও পালাতে পারবে না। তাকে এই নোংরা সমাজেই থাকতে হবে। নোংরা মানুষগুলোর সাথে বাঁচতে হবে। এবং চিৎকার করে সে কিছু বলতেও পারবে না। যেভাবে বলতে পারবে না ইন্সপেক্টর আবিরও। রুদ্রের হঠাৎ মনে হলো, নদীরাই ভালো। অনন্ত বোমা সেজে অভিনয় করতে হয় না।

        রিকসাওয়ালা হঠাৎ রিকসা থামালো। সে বলল, "মামা চলে এসেছি নামেন।"
        রুদ্র আশেপাশে তাকালো। সে প্রথমে কিছুই চিনতে না পারলেও কিছুক্ষণ পরে সে বুঝতে পারলো সে কোথায়। সে রিকসা থেকে নেমে ভাড়া মিটিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইল।

        রুদ্র এখন দাঁড়িয়ে আছে রিয়ার বাসার সামনে৷ সে এখানে কেনো এসেছে? সে কি রিকসাওয়ালাকে এখানেই আসার কথা বলেছিলো? সে পুরোপুরি মনে করতে পারলো না। তাহলে কি তার অবচেতন মন এখন রিয়াকে দেখতে চাচ্ছে? রুদ্র কি করবে সিন্ধান্ত নিতে পারছে না৷ সে ঘড়ি দেখল এখন প্রায় মধ্যরাত। কিছুক্ষণ পরেই নতুন দিন শুরু হবে। সে একবার ভাবলো রিয়াকে একটা কল দিবে পরক্ষণেই ভাবলো এই সময় কল দেওয়া ঠিক হবে না। তার এমন লাগছে কেনো? বুকের মধ্যে অদ্ভুত, অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। সে এই মুহুর্তে নিজেকে বুঝে উঠতে পারছে না। সে এখন নিজের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। 
        রুদ্র কোথাও পড়েছিল," মানুষ যখন প্রচন্ড হতাশার মধ্যে থাকে তখন অবচেতন মন তার প্রিয় মানুষটিকে খোঁজে। তার বুকে আশ্রয় নিতে চায়।" কিন্তু রিয়া কি তার প্রিয় মানুষ? সে কি রিয়াকে ভালোবাসে? রুদ্র এই প্রশ্নের উত্তর জানেনা। ঠিক তখনই তরুর কথা মনে পড়লো তার। তরুর কথা মনে পড়তেই সে অবাক হলো। অনেকদিন পর আজ হঠাৎ তরুর কথা মনে পড়েছে তার। সে কি তরুকে দিনদিন ভুলে যাচ্ছে? রুদ্র এই প্রশ্নের উত্তরও জানে না। সে আজ কিচ্ছু জানেনা। সে জানেনা সে কাকে ভালোবাসো? যাকে সে কখনো দেখেনি, শুধু তার কয়েকটা চিঠি পড়েছে কিন্তু চিঠিগুলো অন্য এক রুদ্রকে লেখা, তাকে? নাকি যে তাকে বাস্তবে প্রচন্ড ভালোবাসা, তাকে? 

        দ্বিধান্বিত একটা জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে রুদ্র। কিন্তু সে আর দ্বিধার মধ্যে থাকতে চায় না। এটাও সত্যি সে এখনো জানে না সে কাকে ভালোবাসে! কিন্তু তার মায়া হয় তরু মেয়েটার জন্য। মেয়েটাকে সে একবার হলেও দেখতে চাই। শুধু একবার। কিন্তু তরু কোথায় আছে? কত দূর আছে? তাকে সে কোথায় খুঁজবে? রুদ্রের হঠাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হলো। সে আর কিছুই ভাবতে চাচ্ছে না। 
        রিয়াকে এই সময় ফোন দেওয়া ঠিক হবে না ভেবে রুদ্র চলে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই পিছন থেকে রুদ্র বলে কেউ তাকে ডাকলো। কণ্ঠটা তার পরিচিত। সে জানে, পিছনে রিয়া দাঁড়িয়ে আছে। 
        রিয়া দৌড়ে এলো। ততক্ষণে রুদ্র পিছন ফিরে তাকিয়েছে। রিয়া তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি এই সময় এখানে?"
        রুদ্র এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। রিয়াই আবার বলল, "আচ্ছা বলতে হবে না। কিন্তু যখন এলেই তখন আমাকে কল না দিয়ে কেনো চলে যাচ্ছিলে?"
        "তোমাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে কি-না বুঝতে পারছিলাম না।" 
        "তুমি সবসময় একটু বেশি বুঝো। যদি আমি বারান্দা থেকে তোমাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে না দেখতাম তাহলে তুমি চলেই যেতে।" 
        "সরি!"
        "সরি কেনো বলছ? আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি?" রিয়া কিছুক্ষণ থেমে সে আবার বলল, "তোমার কি হয়েছে রুদ্র? তোমার কি মন খারাপ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?" রিয়া আগে কখনো রুদ্রকে এভাবে বিধ্বংসী অবস্থায় দেখেনি।
        "আমার ভালো লাগছে না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না রিয়া। মরে যেতে ইচ্ছে করছে। বুকের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার কোথাও যাওয়ার নেই। আমি পুরোপুরি নিজেকে চিনতে পারছি না।" 
        রুদ্রকে এভাবে কথা বলতে রিয়া আগ কখনো দেখেনি। রিয়ার বুকের মধ্যে হঠাৎ কেমন করে উঠলো। সে নিজেই বুঝতে পারলো না তার কেনো এমন লাগছে। রুদ্রের মরে যাওয়ার কথা শুনে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এই মানুষটা না থাকলে সে বাঁচবে কি করে?
 
        রুদ্র আকস্মিক রিয়াকে বলল, "রিয়া, আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? একটু, অতি সামান্য!" 
        রুদ্রকে আগে কখনো এভাবে কথা বলতে রিয়া দেখেনি। এই রুদ্র তার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। তবুও সে কিছু না ভেবে এগিয়ে গিয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরলো। 
        রিয়ার বুকের মধ্যে রুদ্র বাচ্চা শিশুর মত গুটিয়ে রইলো। সে পরম মায়ায় কিছুক্ষণ ডুবে রইলো। একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ ক্রমশ তাকে আসক্ত করে রাখলো। সে কিছুসময়ের জন্য সব ভুলে গেলো। তার হতাশা, যন্ত্রণা, মাথাব্যথা ক্রমশ বিলীন হয়ে গেলো। 

        রিয়া সবকিছু ভুলে বেশকিছু সময় রুদ্রকে জড়িয়ে রাখলো তার বুকে। সে এই মুহুর্তে স্থান কাল ভুলে গেছে। সে এখনো জানে না, দূর থেকে দুটো চোখ তাকে দেখছে!

চলবে....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#76
(21-06-2023, 09:57 PM)Bangla Golpo Wrote: হুম আর কোনো পর্ব পাবলিশ করেনি লেখক তার সাথে কথা হয়েছে লেখা শুরু করবে।

উনি আর লেখবেন না আমারও কথা হয়েছে এই গল্পের 3টা পার্ট বাকি ছিল শুধু তাহলে শেষ হয়ে যেত গল্পটা
—͟͟͞͞?⁀➷ᏁᎪᎥm_Ꮓ ᭄✭✭
"The End Is The Beginning And The Beginning Is The End."
[+] 1 user Likes Naim_Z's post
Like Reply




Users browsing this thread: 15 Guest(s)