Thread Rating:
  • 29 Vote(s) - 2.69 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#1
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প এইটা এই গল্পে কোনো সেক্স এর কোনো কাহিনী নাই ।
আমার কাছে গল্পটা ভালো লেগেছে তাই আমি পোস্ট করছি আপনাদের কাছে কেমন লাগবে জানিনা ।
ভালো না লাগলে বলবেন আর পোস্ট করবো না,আর ভালো লাগে তাহলে জানাবেন পোস্ট করবো।

গল্প-দেয়ালের ওপারে

[b]পর্ব-০১[/b]



লেখক-সবুজ আহম্মদ মুরসালিন







        "অবহেলা এসো, আমাকে শিখিয়ে দেও,
       অবহেলা করে কীভাবে ভালো থাকতে হয়!"

প্রিয় রুদ্র,
     একটা সুন্দর সকালে বেলকনিতে বসে চা খেতে খেতে উপরের দু'লাইন হঠাৎ মনে এলো। সেই থেকে ভাবছি, অবহেলা করতে শিখে গেলে কি ভালো থাকা যায়? কথাটা ঠিক নাকি বেঠিক সেটা ভাবতে ভাবতে মনে হলো তোকে একটা চিঠি লেখা উচিত। তাই আরেক কাপ চা বানিয়ে কাগজ কলম নিয়ে এখন বেলকনিতে বসে আছি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কি জানিস, কাগজ কলম নেওয়ার আগে যা লিখবো ভেবেছিলাম এখন তার কিছুই গুছিয়ে লিখে উঠতে পারছি না। আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এখন সুন্দর সকালটাকে আর সুন্দর মনে হচ্ছে না। হুট করে পরিবেশটা কেমন গুমোট হয়ে উঠেছে। কেমন নিশ্চুপ চারদিক। বাতাস নেই, পাখিদের গান নেই, কোথাও কেউ ভালো নেই, সুখ নেই, হাসি নেই, কিচ্ছুটি নেই!

রুদ্র, এই অসুন্দর সকালে বেলকনিতে বসে দালাই লামার একটা কথা খুব মনে পড়ছে। উঁনি বলেছিলেন; "আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হ'ল সুখ খোঁজা।" আসলেই তাই। মূলত মানুষ সারাজীবন সুখ খুঁজে বেড়ায়। সেভাবেই আমরা সুখ খুঁজবো বলে একদিন একসাথে পথে নেমেছিলাম। অত:পর, কি হলো? হ্যাঁ আজ অবশ্য আমরা সুখি। দুইজন আলাদা ভাবেই সুখি। আজ আমরা সফল। এই যে দুজনেই সুখ খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু এই সুখের কাছে পৌঁছাতে আমাদের একত্রে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, তাই না?

রুদ্র, আমাদের অনেক দিন দেখা হয় না। কথা যে হয় সেটাও না। তবে আমরা সবসময় দেখা না হওয়াটা বেশি মনে রাখি। যদি প্রশ্ন করি, আমাদের আবার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? তুই কি উত্তর দিবি জানিনা, তবে আমাকে যদি কেউ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তাহলে আমি না ভেবেই বলে দিতে পারি শূন্য পার্সেন্ট। তুই-তো জানিস শূন্য আমার সবচেয়ে প্রিয় সংখ্যা। এখানে কোনো আশা নেই। তাই এখানে হতাশাও নেই। কিছুক্ষেত্রে চিরন্তন সত্যকে আমরা মেনে নিতে চাই না। মানুষের এটা একটা দোষ। মানুষ শুধু আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু আমি ভিন্ন। আমি কখনো আশা করি না যে আমাদের আবার দেখা হবে। আমি এই চিরন্তন সত্যকে মেনে নিয়েছি। হয়তো এতো সহজে মেনে নিতে পারার কারণ, এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

আজকের চিঠিটায় কেমন একটা দুঃখ দুঃখ ঘ্রাণ আছে, তাই না রুদ্র? চিঠিটা লেখার আগে ভেবেছিলাম আগের চিঠিগুলোর মত আজকের চিঠিটাও তোর কথা লিখবো। আমার কথা লিখবো। আমাদের কথা লিখবো। কিন্তু হুট করে যে কি হলো আমার। জানিনা রুদ্র, কি হলো। আজকাল আমার প্রায়ই এমন হয়। এই মন ভালো, এই মন খারাপ। এই-যে আমার এই কথায় তুই এখন ভাববি আমি কষ্টে আছি। কিন্তু আমি কষ্টে নেই। তোর থেকে অনেক ভালো আছি। আর ভালো কেনো থাকবো না? ভালো থাকার জন্যই-তো আমরা আলাদা হয়েছিলাম। সরি, তুই না, আমিই বিচ্ছেদ টেনে দিয়েছিলাম।

রুদ্র, এইসব দুঃখের ঘ্রাণ আসা চিঠিগুলো তোকে পাঠানো হয় না। আগেও কিছু চিঠি লিখেছি। সেগুলো আমার কাছেই পড়ে আছে। যদি তোকে এই চিঠিটা পাঠায় তাহলে চিঠিটা পড়ে ভাবতেই পারিস কেনো এমন একটা দুঃখের ঘ্রাণ আসা চিঠি তোকে পাঠালাম। আমার এখন মনে হয়, আমাদের সবসময় ভালো থাকা উচিত নয়। মাঝে মাঝে খারাপ থেকে ভালো থাকার সময়গুলোকে মূল্যবান করে তুলতে হয়। যদি কখনো খারাপই না থাকি তাহলে ভালো থাকার মূল্যটা আমরা উপলব্ধি করতে পারবো না। সেই সাথে আমাদের ভালো মুহুর্তগুলোও স্মরনীয় হয়ে উঠবে না। তাই মাঝেমধ্যে মন খারাপ করা ভালো। কিছুটা খারাপ থাকা মন্দ নয়, তুই কি বলিস?

তোকে চিঠি লিখতে গেলে প্রথমে কোনো কথা খুঁজে না পেলেও শেষের দিকে এসে আমার কথা ফুরায় না। ক্রমশ বেড়েই যায়। তখন করার কিছু থাকে না। একটা সময় গিয়ে বাধ্য হয়ে কথাগুলোকে থামিয়ে দিয়ে চিঠি শেষ করতে হয়। আজ এই চিঠিটা শেষ করার আগে তোকে দুইটা কথা বলতে চাই। প্রথম কথাটা হলো; আমার আজকাল সত্যি মনে হয়, "যারা একবার অবহেলা করতে শিখে যায়, তারা আর কখনো কারো কাছ থেকে কষ্ট পায় না?" দ্বিতীয় কথাটা হলো; "আমি এখনও তোকে অবহেলা করতে শিখিনি। শুধু তোর জন্য তোকে দূরে ঢেলে দিয়েছি। অবহেলা আমাকে স্পর্শ করেনি। আমাকে শেখায়নি কীভাবে কাউকে অবহেলা করতে হয়।"

ইতি, তরু।

       সকালের রোদটা এসে রুদ্রের মুখে পড়তেই চিঠিটা সঙ্গে নিয়ে সে বেলকনি থেকে উঠে রুমে ঢুকে টেবিলে বসতে বসতে উচ্চ কন্ঠে বলল; "মা, এক কাপ চা দিবে? বড্ড চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে।" কথাটা শেষ করে সে টেবিলের একটা ড্রয়ার খুলল। সেখানে ছোট-বড় নানা রঙের অসংখ্য কাগজ। তার মধ্যেই সে চিঠিটা রেখে ড্রয়ারটা আবার আগের মত বন্ধ করে দিলো।

       রুদ্রের মায়ের নাম জাহানারা আকবর। দীর্ঘ বারো বছর সে একাই এই সংসারটা সামলে যাচ্ছে। তার স্বামী ওসি ইসমাইল আকবর বারো বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তখন সে দুই মাসের গর্ভবতী। তার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়া পরে সে আর বিয়ে করেনি। সে এই ছোট্ট সংসারটা অনেক কষ্টে সামলে নিয়েছে।
অভাব কি সেটা সে কখনোই তার দুই সন্তানকে বুঝতে দেয়নি। একটা সংগ্রামী জীবন কাটিয়েছে দীর্ঘ বারো বছর। বর্তমানে সে একটা নার্সিং হোমে চাকরি করে। স্বামীর পেনশন এবং তার বেতন দিয়ে এখন ভালো ভাবেই তার সংসারটা চলে যায়।

       রুদ্রের টেবিলে চা এবং বিস্কুট রাখতে রাখতে জাহানারা জিজ্ঞেস করল; "আজ এতো সকাল সকাল উঠেছিস?"
"একটা পরীক্ষা আছে।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"প্রিপারেশন কেমন?"
"ভালো।"
"কখন বেরুবি?"
"ন'টার দিকে।" ছোট্ট করে জবান দিয়ে রুদ্র পড়ায় মনোযোগ দিলো। জাহানারা এটা দেখে তাকে আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অনেক কাজ বাকী। অফিসে যাওয়ার আগে তাকে সেগুলো শেষ করতে হবে।

       মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করল রুদ্র। একটা সময় পর সে ব্যর্থ হলো। পড়ায় তার মনোযোগ নেউ। সে আবার ড্রয়ারটা খুলল। সেখানে অসংখ্য কাগজ। তার একপাশে অনেকগুলো চিঠির খাম। সবগুলোই তরুর দেওয়া। রুদ্র চিঠিগুলো যত্ন করে রেখে দিয়েছে। সে ড্রয়ারটা পুরোপুরি খুলল। ভিতরে থাকা সব কাগজ বের করে টেবিলের উপরে রাখল। রঙিন কাগজগুলো তার নিজের লেখা। সে বিভিন্ন বই পড়তে পছন্দ করে। সেই সব বইয়ের প্রিয় লাইনগুলো সে রঙিন কাগজে লিখে জমা করে রাখে। মন খারাপের সময় সেই সব লেখা পড়তে রুদ্রের অনেক ভালো লাগে।

       রঙিন কাগজগুলো গুছিয়ে ড্রয়ারে এক কোনে রেখে দিয়ে সাদা কাগজগুলো গোছাতে লাগল। এগুলো তার নিজের লেখা। যে কথাগুলো সে কাউকে বলতে পারে না সেই সব কথাগুলো সে লিখে জমা করে রাখে। এটা করলে তার মন হালকা হয়। সবশেষে সে চিঠিগুলো গোছাতে গিয়ে সে অবাক হলো। সে নিজের অজান্তে বলে উঠল, "তরু, এতোগুলা চিঠি দিয়েছে!"

       চিঠিগুলোর তারিখ অনুযায়ী গোছানো শেষ হলে সে সেখান থেকে একটা চিঠি তুলে নিয়ে খামের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করল। সে এটা আগেও পড়েছে। একবারের বেশিই পড়েছে। তবুও সে আবার পড়তে শুরু করল।

                "তোকে ছুঁয়ে থাকি রোজ
                    বাতাসে গানে বৃষ্টিতে
                   তোকে মনে রাখি রোজ
                নিশ্বাসে, দীর্ঘশ্বাসে, স্মৃতিতে!"

রুদ্র,
    আজ সকালে ঘুম ভেঙেই দেখি বাইরে ঝড় বাতাস। তার কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি। আকাশটা মন খারাপ করে ছিলো বেশ কিছুক্ষণ। আমিও আকাশের মন খারাপের সঙ্গী হতে চলে গেলাম ছাঁদে। আকাশের কান্নায় ভিজলাম অনেকক্ষণ।

সে কি শীতল অনুভূতি। মুহুর্তেই মনটা জুড়িয়ে গেলো। ভীষণ ভালো লাগছিলো। আর এই ভীষণ ভালো লাগার মধ্যে হঠাৎ তোর কথা মনে পড়লো। সে যে কি বিচ্ছিরি ভাবে মনে পড়লো তুই না দেখলে বুঝবি না।

তোর কথা মনে পড়তেই বৃষ্টি আরো বেড়ে গেলো। তারপর আর কি? আমি ভিজলাম, তোকে মনে করলাম, তোকে বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় রেখে দিলাম। বাতাসকেও বলে দিলাম তোর আমার সব গোপন কথা। সে কি নির্লজ্জ ভাবে যে বাতাসকে কথাগুলো বললাম তখন বুঝতে পারি নি। এখন সে সব কথা মনে পড়তেই নিজেরই লজ্জা হচ্ছে। আমাদের সব গোপন কথা বাতাস জেনে গেলো, বৃষ্টি জেনে গেলো, কী হবে এবার?

রুদ্র, তুই কি আজকাল বৃষ্টিতে ভিজিস?

ইতি, তরু।

       রুদ্র চিঠিটা এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করল। তারপর সে সময় নিয়ে দম নিলো। ঘনঘন নিশ্বাস ছাড়তে লাগল। সে আনমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বাইরে রোদ ঝলমল করছে। সকালের মৃদু রোদে গাছের কচিপাতাগুলো খেলা করছে। পাতাগুলোর সে যে কি আনন্দ। রুদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে। সে পাতা দেখছে, নাকি রোদ দেখছে, নাকি কিছুই দেখছে না সেটা বলা মুশকিল। তবে সে চোখের পলক না ফেলে পাতাগুলোয় দিকে তাকিয়ে আছে।

       "ভাইয়া, ভাইয়া, মা ডাকছে তোমাকে।"
রুদ্র চমকে উঠে ঘুরে তাকিয়ে দেখল তার ছোট বোন মিলি দাঁড়িয়ে আছে। সে তাকে ইশারায় কাছে ডাকতেই মিলি ছুটে এলো। রুদ্র মিলির চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল, "বুড়িটা ঘুম থেকে কখন উঠেছে?"
"একটু আগে উঠেছি, ভাইয়া।"
"ঘুম ভালো হয়েছে?"
"মোটেও না। আম্মু আমাকে ঘুমাতেই দিলো না। আমি উঠবো না তবুও আম্মু আমাকে জোর করে ডেকে তুলল।"
"আম্মু এটা ঠিক করেনি। কিন্তু কেনো ডেকে তুলল?"
"স্কুলে যাওয়া জন্য। আমার স্কুলে যেতে একটু ভালো লাগে না। স্কুলের সবাই ভীষণ দুষ্টু।"
"তোমার সাথে আবার কেউ দুষ্টুমি করেছে?"
"হুম করেছে।"
"কি করেছে?"
"ভাইয়া, তুমি তো জানো টিকটিকিকে আমি ভয় পাই।
"জানি তো আমি। কিন্তু কি হয়েছে?"
"গতকাল যখন আমাদের টিফিন দিলো তখন আমি বেঞ্চে বসেছিলাম। দূর থেকে একটা ছেলে আমার ব্যাগের উপর একটা টিকটিকি ছুড়ে মরলো। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে উঠে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে গেলাম। আর সবাই আমাকে দেখে হেসে দিলো। আমার লজ্জা লাগছিল ভীষণ। তারপর এই দেখো পায়েও ব্যথা পেয়েছি।" মিলি তার ভাইকে পা দেখালো।

       "ওটা কি আসল টিকটিকি ছিলো?"
"না, আসল না। কিন্তু যখন আমার ব্যাগের উপর টিকটিকি পড়লো তখন আমি দেখেই ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। সেই সময় আমি কি করে বুঝব ওটা নকল?"
"ঠিকই-তো, তখন হুট করে কি করে বুঝবে। তারপর কি হলো?" রুদ্র আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

       "আমাকে কান্না করতে দেখে ইংরেজি ম্যাম আমাকে হেড মিসেসের কাছে নিয়ে গেলো।"
"ওই দুষ্ট ছেলেদের হেড মিসেস কিছু বলেনি?"
"বলেছে-তো।"
"তাহলে এখন সমস্যা কী? স্কুলে কেনো যাবে না?"
"তবুও আমার স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। ওরা সবাই অনেক দুষ্টু। কেউ আমার বন্ধু না।" মিলি কথাটা মন খারাপ করে বলল।

       রুদ্র বলল, "এভাবে মন খারাপ করে না। আমি আজ গিয়ে ওই ছেলেটাকে বকে দিবো। আর কখনো কেউ তোমার সাথে দুষ্টুমি করবে না। সবাইকে এটাও বলে দিবো, সবাই যেনো তোনার বন্ধু হয়ে যায়।"

       রুদ্রের কথা শুনে মিলির মন ভালো হয়ে গেলো। সে হাসিমুখে বলল, "আচ্ছা ভাইয়া। তাহলে আমি স্কুলে যাবো। তুমি কিন্তু আমাকে নিয়ে যাবে? আর আমাকে একটা আইসক্রিম কিনে দিবে!" কথাটা বলেই মিলি হেসে দিলো। কী নিষ্পাপ সেই হাসি।
"আচ্ছা, কিনে দিবো।" রুদ্র কথাটা বলে মিলিকে আদর করতে করতে আবার বলল, "আমার লক্ষী বোন।"

       "ভাইয়া, এইগুলো কি?" রুদ্রের টেবিলে থাকা খামগুলোর দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে মিলি জিজ্ঞেস করল।
"এগুলো চিঠি।" রুদ্র উত্তরে বলল।
"তোমার?"
"হ্যাঁ, আমার।"
"কে দিয়েছে।"
"তোমার একটা বড় আপু।"
"আপুটার নাম কি?"
"তরু।"
"তরু আপু কি তোমাকে ভালোবাসে?"

       মিলির কাছ থেকে এরকম প্রশ্ন রুদ্র আশা করেনি। সে যথেষ্ট অবাক হয়েছে। সে বলল, "তোমাকে কে বলল, কেউ কাউকে চিঠি দিলে সে তাকে ভালোবাসে।"
"তুমি জানো না বুঝি?" একটু বলে মিলি হাসলো। সে আবার বলল, "আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে একটা মেয়েকে চিঠি দিয়ে বলেছে সে তাকে ভালোবাসে। তাই-তো আমি জানি।"

       রুদ্র এবারও অবাক হলো। আজকাল বাচ্চাকাচ্চা অল্প বয়সে একদম পেঁকে গেছে।  

       "ভাইয়া, বলো না, তরু আপু কি তোমাকে ভালোবাসে?"

       রুদ্র হঠাৎ দোটানায় পড়ে গেলো। সে কি বলল বুঝে উঠতে পারছে না। সে মিলির প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিলে উলটো তাকে বলল, "তুমি দিন দিন বেশি দুষ্টু হয়ে যাচ্ছ।" এই বলে যেই মিলিকে কাতুকুতু দিতে যাবে ওমনি মিলি ছুটে পালিয়ে গেলো। মিলি চলে যাওয়া পর রুদ্র দ্রুত চিঠিগুলো ড্রয়ারে রেখে সেটা বন্ধ করে দিলো।  

       রুদ্রের ছোট বোন মিলি। বয়স বারো বছর। ক্লাস সিক্সে পড়ে। একটা সমস্যার কারণে বছর শেষ হওয়ার আগেই তাকে আগের স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। এই জন্য নতুন স্কুলে এখনো কেউ তার ভালো বন্ধু হয়ে উঠে নি। তাই সে তার নতুন স্কুলে যেতে চায় না।

       রুদ্র গোসল সেরে রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে তার দাদী সোফায় বসে আছে। সে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, "দাদী, কেমন আছো?"

       আলেয়া বেগম কাশতে কাশতে উত্তর দিলো, "ভালো না দাদু। মনে হচ্ছে আর বেশিদিন বাঁচবো না। তোর দাদা প্রায় স্বপ্নে আসে। আমাকে ডাকে।"
আগেকার দিনে মানুষ বিশ্বাস করতো মৃত মানুষ স্বপ্নে কাউকে ডাকলে সে দ্রুত তার কাছে চলে যায়।

       "এই সব বাজে কথা বলবে না তো। দাদাকে নিয়ে যেতে দিলে তো। তোমার কিচ্ছু হবে না। আমাদের কাছ থেকে তোমাকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না।"

       রুদ্রের কথা শুনে আলেয়া হেসে দিলো। মুখে ভাজ পড়া চামরাটাও সেই হাসির সৌন্দর্য একবিন্দু নষ্ট করতে পারল না। সেই পুরনো, যৌবনে হাসিটা রুদ্র আলেয়ার মুখে দেখল। রুদ্রের বাবা যেদিন জন্মগ্রহণ করে সেদিনের একটা সাদাকালো ছবি তাদের ছবির এলবামে আছে। রুদ্র প্রায়ই দেখে। যখম সে তার বাবাকে অনেক মিস করে তখন তাদের পারিবারিক যত ছবি আছে সে-তা দেখে। সে চায় না তার বাবার মুখটা ধীরে ধীরে তার স্মৃতি থেকে মুছে যাক। সে সারাজীবন তাকে মনে রাখতে চায়। অবশ্য তার বাবার পুলিশের চাকরির কারণে সেভাবে তার বাবাকে সে কাছে পায়নি। তারপর সে ছোট থাকতেই মানুষটা অকালে তাদের সবাইকে রেখে চলে গেল দূরে। বহুদূরে! রুদ্রের মাঝেমধ্যে বাবার প্রতি অভিমান হয়। তবুও সে তার বাবাকে অনেক ভালোবাসে।

       "রুদ্র।"
আলেয়া ডাক শুনে রুদ্র উত্তর দিলো, "জি দাদি।"
"আমার কাছে একটু আয়।"

       রুদ্র কাছে যেতেই আলেয়া তার কপালে চুমু এঁকে দিলো। রুদ্র লজ্জা পেলো। সে এখন অনেক বড় হয়েছে। রুদ্রের মুখ দেখে আলেয়াও সেটা বুঝল কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কিছু বলল না।
আলেয়া বলল, "তুই দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেছি।"
"মানুষ কি সারাজীবন ছোট থাকে?"
"হ্যাঁ রুদ্র, জীবন শুধু এগিয়ে যায়!"
"হুম দাদি।"
"রুদ্র, জীবনে যত কিছুই ঘটুক, কখনো থেমে থাকবি না। নিজের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাবি। মানুষের জীবন কখনো একরকম থাকে না৷ ক্ষণেক্ষণে সেটা পরিবর্তন হয়। জীবনের দুঃখ কষ্ট আসে। আবার তা চলেও যায়। তাই সবসময় যে কোনো পরিস্থিতিতে শক্ত থাকতে হয়। সেই সময়টাকে হাসিমুখে মোকাবেলা করতে হয়। তাহলে ভালো থাকা যায়।"

       রুদ্র মাথা নেড়ে তার দাদীক আশ্বাস দিলো। সে এগিয়ে যাবে। সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবে। তার সম্পূর্ণ পৃথিবীতো এই কয়জন মানুষকে ঘিরে।

       পরীক্ষা শেষ করে চায়ের দোকানে যাওয়ার পথে আলিফের সাথে দেখা হয়ে গেলো রুদ্রের। রুদ্রকে দেখতে পেয়েই আলিফ বলল, "কি করে দোস্ত। পরীক্ষা কেমন হলো?"
রুদ্র ছোট্ট করে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই হয়েছে।'
"কোথায় যাচ্ছিস?"
"চা'য়ের দোকানে।"
"ক্লাস নেই আর?"
"একটা আছে। করতে ইচ্ছে করছে না।"
"আচ্ছা, তাহলে চল চা খাওয়া যাক একসাথে।"

       দুইজনে চা খেতে খেতে নানা কথা বলার মাঝে আলিফ হঠাৎ বলল, "তোর কি মুড অফফ?"
"সামান্য!"
"কি হয়েছে?"
"তেমন কিছু না।"
"আরে বল। আমাকে না বললে কাকে বলবি।"

       রুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড আলিফ। ক্লাস নাইন থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। একই কলেজে পড়েছে। কিন্তু এখন একই ভার্সিটি পড়লেও তাদের বিভাগ ভিন্ন। কিন্তু তারা খুশি, তারা একই ভার্সিটিতে পড়ছে। প্রতিদিন আড্ডা দিতে পারছে। একসাথে থাকতে পারছে। যদি কোনো একজন অন্য কোথাও চলে যেতে তাহলে তারা কীভাবে থাকত? তারা এটা ভাবতে চায় না। তবুও যদি কেউ একজন অন্য কোথাও চলে যেতো, হয়তো সবকিছু ধীরে ধীরে তারা মানিয়ে নিতো। কিন্তু মন খুলে চায়ের সাথে আড্ডা দিতে দিতে সব কথা খুলে বলার একজন বন্ধু হারাত। চাইলেও এভাবে প্রতিদিন দেখা করতে পারতো না।

"কি হলো, বল কি হয়েছে?"
"তরু চিঠি...!" রুদ্র কথা শেষ করতে পারলো না।
আলিফ বলল, "মেয়েটা আবারও চিঠি পাঠিয়েছে।"
"হুম।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"আরে এটা নিয়ে মন খারাপ করা কি আছে। এখন বাদ দে তো এই সব। ভুলে যা সব। শুধু শুধু মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই!"

       রুদ্র এই বিষয় নিয়ে আলিফের সাথে আর কথা বাড়ালো না। সে জানে এটা নিয়ে কথা বাড়ালে আলিফ তাকে এখন বড় একটা লেকচার দিবে। কিন্তু তার এখন কিছুতেই লেকচার শুনতে ইচ্ছে করছে না। সে চা শেষ করে আলিফ কে বলল, "দোস্ত, বাসায় যাবো। ভালো লাগছে না। রাতে ঘুম হয়নি। বাসায় গিয়ে লম্বা একটা সাওর নিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিতে হবে।"
"আচ্ছা যা। আর এই সব নিয়ে মন খারাপ করবি না।"
"আচ্ছা।" রুদ্র বাধ্য ছাত্রের মত উত্তর দিলো।

       রুদ্র বাসায় এসে একটা লম্বা সাওর নিলো। তারপর খেয়েই শুয়ে পড়ল। দিনে তার ঘুম আসে না। সে যত চেষ্টা করুক দিনের আলোয় সে ঘুমাতে পারে না। তবুও তার ঘুমানো দরকার। মাথা ব্যথাটা তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। ঘুমালে ভালো লাগবে। তাকে অবাক করে দিয়ে শোয়া মাত্রই ঘুম এসে তাকে গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে নিলো।




চলবে....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
সুন্দর হচ্ছে দাদা
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
#3
ভালো লাগছে
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#4
(19-11-2022, 06:23 AM)Ari rox Wrote: সুন্দর হচ্ছে দাদা




ধন্যবাদ আপনাকে
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#5
(19-11-2022, 09:27 AM)ddey333 Wrote: ভালো লাগছে



তাহলে পোস্ট করবো দাদা
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#6
(19-11-2022, 12:46 PM)Bangla Golpo Wrote: তাহলে পোস্ট করবো দাদা

thanks
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#7
(19-11-2022, 12:48 PM)ddey333 Wrote: thanks


আপনাকে দেয়া দরকার আপনার মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো পুরাতন গল্প পড়তে পারছি।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#8
দেয়ালের_ওপারে
পর্ব-০২
লেখক-সবুজ আহম্মদ মুরসালিন



===================



আলিফ তার মা'য়ের সাথে ঝগড়া করে, রেগে বাসা থেকে বেড়িয়ে, হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে ছিলো। ঠিক সেই মুহুর্তে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা একটা কিশোরী মেয়ের সাথে তার জোরেসোরে ধাক্কা লাগে এবং সাথেসাথে তারা দু'জনেই পড়ে যায়। আলিফের কিছু না হলেও, সে দেখলো কিশোরী মেয়েটার কপাল কিছুটা কেটে গেছে। মেয়েটার হাতে কিছু শপিং ব্যাগ ছিলো, সেগুলো পড়ে সিঁড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।

আলিভ দুঃখিত বলে, পকেট থেকে টিস্যু বের করে মেয়েটার হাতে দেয়। সে টিস্যুটা দিতে দিতে আরেকবার দুঃখিত বলে নেয়। সে লজ্জিত সেটা প্রকাশ করে। মেয়েটা কিছু বলে না। সে শুধু গভীর ভাবে আলিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। কপালের ক্ষত থেকে রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে ভ্রুর কাছে আসতেই মেয়েটা আলিফের দেওয়া টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে।

সিঁড়িতে পড়ে থাকা মেয়েটার ব্যাগগুলো তারাহুরো করে আলিফ উঠিয়ে মেয়েটার হাতে দেয়। মেয়েটা এখন পর্যন্ত তাকে কিছুই বলেনি। আলিফ ভেবেছিলো মেয়েটা চেচামেচি করবে। কিন্তু মেয়েটা একদম চুপ। সে আলিফের হাত থেকে তার ব্যাগগুলো নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে থাকে। আলিফ তাকে ডাকে। মেয়েটা ডাক শুনেনা। আলিফের দিকে ফিরেও তাকায় না। আলিফ সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেয়েটা চলে গেলে সে নিচে নেমে আসে। একবার ভাবে ফার্মাসি থেকে ব্যান্ডেজ কিনে দিয়ে আসবে। কিন্তু সে তা করে না। মেয়েটাকে চিনলে সেটা করা যেতো কিন্তু সে তাকে চিনে না। আজই প্রথম দেখেছে। মেয়েটার কথা ভাবতে ভাবতে সে তার আড্ডাখানায় চলে আসে।

এখানে এসে সে রুদ্রকে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়। অবাক হওয়ার কারণ গতকাল রাতেই সে মেসেজে তাকে বলেছে, একটা প্রেজেন্টেশনের কাজে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থাকবে। সন্ধ্যার আগে দেখা হবে না। তাই এই ভর দুপুরে তার চায়ের দোকানে বসে থাকার কথা না। সে এগিয়ে রুদ্রের কাছে যায়। রুদ্রের পাশে বসতে বসতে বলে, "কিরে দোস্ত, এই সময় এখানে। ক্যাম্পাসে যাস নেই?"

রুদ্রের ডান হাতের আঙুলের মাঝে সিগারেট। সে শেষ বারের মত সেটাতে দীর্ঘ টান দিয়ে সেটা আলিফের দিকে বাড়িয়ে দেয়। তারপর সে বাতাসে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে, "ভোরের দিকে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখি। সেই থেকে খুব অস্থির লাগছে। ভালো লাগছে না। ক্যাম্পাসে যেতে ইচ্ছে করল না, তাই আর যাই নি।"

আলিফ সিগারেটটায় শেষ টান দিয়ে সেটা পায়ের কাছে ফেলে পা দিয়ে আগুনটা নিভিয়ে দিতে দিতে বলল, "এখন কেমন লাগছে?"
"আগের মতই।" রুদ্র উত্তর দিলো।
"বাজে স্বপ্ন মানে কেমন? আই মিন, স্বপ্নে কি দেখেছিস?"
আলিফের করা প্রশ্ন উপেক্ষা করে রুদ্র বলল, "চা খাবি তো?" আলিফের উত্তরের অপেক্ষা না করে সে দোকানদারকে বলল, "মামা, দুইকাপ রঙ চা।"

স্বপ্নটা তরুকে নিয়ে। এই কারণে রুদ্র সেটাকে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে। আজকাল তরুর কথা বা তার চিঠির কথা কারো সাথে শেয়ার করতে ভাল লাগে না তার। অবশ্য প্রথম দিকে সে তার বন্ধু মহলে তরু এবং তার চিঠির কথা শেয়ার করত। কেনো জানি আজকাল সেটা করতে আর একটুও ভালো লাগে না। সে চায়, তরু এবং তার লেখা চিঠি সবটাই শুধু তার মধ্যে থাকুক। কেউ না জানুক। কারো জানার দরকার নেই!

আলিফ বুঝতে পারলো, রুদ্র চাচ্ছে না তার স্বপ্নের কথা তার সাথে শেয়ার করতে। তাই জোর করে শোনার কোনো কারণ দেখল না সে। সেও এই বিষয়টা উপেক্ষা করে বলল, "কি করবি এখন?"
"জানিনা, এখানে বসে আছি, বসেই থাকবো।" রুদ্র উদাস ভঙ্গিতে জবাব দিলো।

রুদ্র পকেটে থাকা সিগারেট প্যাকেটটা বের করল। সেখান থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে আলিফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "যা চা'টা নিয়ে আয়, আর সিগারেট ধরিয়ে আন।"

চা খাওয়ার মধ্যেই রুদ্রে ফোনে একটা কল এলো। নাম্বারটা তার পরিচিত। সেভ করা নেই। তবুও চেনা। এই নাম্বার থেকে প্রায়ই কল আসে। তাই নাম্বারটা সেভ করা না থাকলেও পরিচিত হয়ে উঠেছে। সে ফোনটা রিসিভ করল না। চা'টা শেষ করল। তারপর উঠে দোকানের বিল পরিশোধ করে আলিফের উদ্দেশ্যে বলল, "দোস্ত, আমি বাসার দিকে যাবো। তুই কি এখানে থাকবি কিছুক্ষণ?"
"হ্যাঁ, একটু কাজ আছে। আচ্ছা তুই তাহলে যা, সমস্যা নেই।" আলিফ বলল।

আলিফের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুদ্র বাসার দিকে রওনা করল। গেট দিয়ে বাসায় চুকবে সেই মুহুর্তে অপরিচিত এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করল, "এটা কি এই গলির ২২ নাম্বার বাসা?"
"জি, এটাই। কোনো দরকার?" রুদ্র বলল।

লোকটা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র আবার বলল, "কাউকে খুঁজছেন?"
লোকটা তার হাতে থাকা খামটা রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "এই ঠিকানাটা খুঁজছি।"

রুদ্র খামটা ধরে ঠিকানার দিকে চোখ দিতেই চোখ দুটো স্থির হয়ে রইল। খামের বাম দিকে ছোট্ট করে লেখা, "প্রেরক, তরু"। এটুকুই। প্রেরকের সম্পর্কে আরো কোনো তথ্য নেই। ঠিকানাও নেই। কিচ্ছু নেই। তবুও রুদ্র এটুকু দেখেই বুঝে গেলো এটা তারই চিঠি। তাই চিঠির ডান দিকে থাকা প্রাপকের ঠিকানা পড়তে হলো না তাকে। সে জানে সেখানে কি লেখা আছে। সে ভদ্র লোকটিকে বলল, "হ্যাঁ, এটা এই বাসারই ঠিকানা।"
"ধন্যবাদ।" ভদ্র লোকটি বলল।

রুদ্র আর কিছু না বলে সোজা সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে গেলো। সে চাইলেই লোকটাকে বলতে পারতো চিঠিটা তার কাছেই এসেছে। কিন্তু সে সেটা করল না। কারণ তার আগের অভিজ্ঞতা ভালো না। গত মাসেও ঠিক এরকম হঠাৎ এক ভদ্রলোকের সাথে গেটের বাইরে তার দেখা হয়েছিলো। সেবার রুদ্র তাকে বলেছিল, "চিঠিটা তার কাছেই এসেছে।" তার এই কথা লোকটা বিশ্বাস করেনি। সে আরো বলেছিলো, "আপনি চাইলে এখান থেকেই চিঠিটা আমাকে দিয়ে দিতে পারেন। আপনার কষ্ট করে উপরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।"

এই কথা শুনে লোকটা তাকে বলেছিল, "স্যার, এটা একটা কনফিডেনসিয়াল চিঠি। নির্দেশনা আছে, চিঠিতে যে ফ্লাট নাম্বার উল্লেখ আছে সেখানেই ডেলিভারি করার। তাই আপনার চিঠি হলেও এখানে আপনাকে চিঠিটা দিতে পারছি না।" লোকটা আরো বলেছিল, "সরি, স্যার। আশা করি আমাদের পলিসি আপনি বুঝবেন।"

ভদ্রলোকটার কথা শুনে রুদ্র বলেছিল, "দেখুন, ওখানে ২০৩ নাম্বার ফ্লাট উল্লেখ আছে। ওই ফ্লাটে আমিই থাকি। এবং আমিই রুদ্র।" তবুও ভদ্র লোকটা তাকে চিঠি দেয় নি। তার সাথে উপরে এসে তাকে রুমে ঢুকতে দেখে তারপর চিঠিটা দেয়। তাই সে চায় নি আগের মত আজও সেরকম কোনো ঘটনা ঘটুক।

ভদ্রলোকটি এই মুহুর্তে চিঠিতে উল্লেখিত ২০৩ নাম্বার ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে যথেষ্ট অবাক হয়েছে। নিচে যে ভদ্রলোকটির সাথে তার কথা হয়েছে সেই ভদ্রলোকটি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তাই তাকে কলিংবেলের বাজাতে হলো না।

রুদ্র তার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো লোকটা বেশ অবাক হয়েছে। চোখে মুখে প্রশ্ন। তবে ভদ্রলোকটির কিছু বলার আগেই রুদ্র বলল, "চিঠিটার প্রাপক আমিই।"

ভদ্রলোকটি চিঠিটা বুঝিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। সে কোনো প্রশ্ন করলো না। কিছুটা কৌতুহল জেগেছিল তবুও সেটা নিজের মধ্যেই রেখে দিলো।

রুদ্র চিঠিটা নিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে টেবিলের পাশে থাকা চেয়ারে বসে পড়ল। চিঠিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। গত সপ্তাহে আসা চিঠিটা খুব ছোট ছিলো। সে আশা করছে এই চিঠিটা যেনো দীর্ঘ হয়। তরুর ছোট চিঠিগুলো পড়ে রুদ্র প্রতিবার হতাশ হয়। তাখন তার কেবল মনে হয় চিঠিটা আরো বড় হওয়া দরকার ছিলো। তরু ইচ্ছে করে অনেক কথা উপেক্ষা করে গেছে। কিন্তু তার এটা করা উচিত হয়নি। রুদ্র আজকাল তরুর সব কথা শুনতে চায়। দীর্ঘ সময় ধরে চিঠি পড়তে চায়। সে চিঠিটা খুলতে চেয়েও শেষ মুহুর্তে খুললো না। সেটা একটা বইয়ের নিচে চাপা দিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল।

সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। আজ বুধবার। প্রতি সপ্তাহে এই দিনেই তরুর একটা চিঠি আসে তার ঠিকানায়। সে সপ্তাহে বাকী ছয়টা দিন অপেক্ষা করে। তরুর চিঠির অপেক্ষা। এবং যখন অপেক্ষার সময়টা শেষ হয় তখন রুদ্রের ভালো লাগে। কিন্তু এই ভালো লাগাটা দীর্ঘ হয়না। চিঠিটা পড়া শেষ হলেই পরবর্তী চিঠির অপেক্ষা শুরু হয়। এই অপেক্ষা তাকে মাঝেমধ্যে কষ্ট দেয়। ভীষণ পিড়া দেয়। তরুর কথা ভাবতে ভাবতে রুদ্র ঘুমিয়ে পড়ল। রাতে তার ভাল ঘুম হয়নি। তাই এই অসময়ে ঘুমটা তাকে বেশ ভালো ভাবেই পেয়ে বসল।

আলিফ সন্ধ্যা হওয়ার আগ মুহুর্তে বাসায় ফিরে এসে দেখলো বাসায় কেউ নেই। দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। সে আজ চাবি নিয়ে বের হয়নি। সে গেট খুলে ঢুকতে পারলো না। তাই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে নেই, এটা ভেবে সে সিন্ধান্ত নিলো ছাঁদে গিয়ে অপেক্ষা করা যাক।
সে সোজা ছাঁদে চলে এলো। ছাঁদে এসে দেখে সকালে যে মেয়েটা সাথে তার ধাক্কা লেগেছিল সে দাঁড়িয়ে আছে। সে চুপিসারে এগিয়ে মেয়েটা পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

আলিফ পাশে দাঁড়াতেই মেয়েটা বুঝতে পেরে অল্প সময়ের জন্য আলিফের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো। মেয়েটা কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো না। কোনো কৌতুহল দেখালো না।

আলিফ দেখলো, মেয়েটার মাথার ক্ষত স্থানে অন-টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো। হঠাৎ করে তার মধ্যে আবার অপরাধবোধ কাজ করলো। তার জন্যই সকালে ওভাবে মেয়েটা আঘাত পেয়েছি। সে অপরাধবোধ থেকে মেয়েটাকে আবার দুঃখিত বলল।
মেয়েটা এইবারও কোনো উত্তর দিলো না।

আলিফ কিছুক্ষণ চুপচাপ রইল। মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করল। মেয়েটা খুব শান্ত প্রকৃতির। মেয়েটার চোখের মধ্যে এক ধরণের গভীরতা আছে। সেই গভীরতা দীর্ঘ। সমুদ্রের তলদেশের মত। মেয়েটার গায়ের রঙ সামান্য ময়লা। নিসন্দেহে তথাকথিত ভাষায় শ্যামলা বলা যায়। কিন্তু সম্পূর্ণ মুখে একটা মায়া আছে। চুলগুলো দীর্ঘ, সিল্কি। সন্ধ্যার বাতাসে সেগুলো উড়ছে।

"আপনার নাম কি?" আলিফ অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল।
মেয়েটা উত্তর দিলো না। চুপচাপ রইল।
"আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?" মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে আলিফ আবার কথাটা বলল।

মেয়েটা এবারও চুপ। আলিফের দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ দূরের একগুচ্ছ কবুতরের উপর। সেগুলো আকাশে উড়ছে। এই বাসাটা থেকে আট-দশটা পরে যে বাসাটা আছে সেই বাসার ছাঁদকে ঘিরে কবুতরগুলো উড়ছে।

"আপনি কি সত্যি আমার উপর রেগে আছেন? আমার কাজের জন্য আমি সত্যি লজ্জিত। আসলে তারাহুরো করে নামতে যেয়ে আপনাকে লক্ষ করিনি। আমি সকালের ঘটনার জন্য সত্যিই মন থেকে দুঃখিত। আমাকে এবারের মত ক্ষমা করে দেওয়া যায় কি?"

আলিফ কথাগুলো একটানা বলে গেলেও মেয়াটা আবারো কোনো রেসপন্স করল না। ঠিক সেই মুহুর্তে পাশের একটা মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান ভেবে এলো।

আলিফ মেয়েটাকে আর কিছু বলল না। তার রাগ এতোক্ষণে চরম লেভেলের উঠে গেছে। এতোবার দুঃখিত বলার পরেও মেয়েটার কোনো রেসপন্স নেই। কোনো কথার উত্তর পর্যন্ত দিলো না। মেয়েটার মধ্যে কোনো ভদ্রতাও নেই।

আলিফ এটা মেনেই নিতে পারছে না। সে এমনিতেই কখনো কাউকে দুঃখিত বলেনা। তার ভুল থাকলেও সে বলেনা। কিন্তু এবার সে আসলে মন থেকে লজ্জিত। মেয়েটার মাথায় আঘাত পেয়েছে বলে তার মন এতোটা নরম হয়েছে। এছাড়া সকালে তার ভুলের জন্য সে কোনো চেচামেচি করেনি। আলিফের মনে হয়েছিলো মেয়েটা ভদ্র, মার্জিত। কিন্তু এভাবে তাকে উপেক্ষা করা, সে মেনে নিতে পারলো না।

সন্ধ্যা নেমে এলে মেয়েটা নিচে নেমে যায়। আলিফ শেষ পর্যন্ত আশা রেখেছিল যে মেয়েটা যাওয়া আগে কথা বলবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না। সে হতাশ হলো। রেগে ছাঁদের উপরে থাকা ছোট একটা ইটের টুকরোয় লাথি মারতেই সে নিজেই আঙুলে ব্যথা পেলো। মনে মনে নিজেকেই বলল, "যা সালা ,আজকের দিনটাই খারাপ।"

জাহানারার ডাকে রুদ্রের ঘুম ভাঙলো রাত ন'টায়। ঘুম ভেঙে ঘড়ির দিকে তাকাতেই সে চমকে উঠলো। "এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি।" কথাটা নিজেকেই শুনিয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসতেই দেখল মিলি বসে আছে খাটে। তার হাতে ফোন। রুদ্রের বুঝতে বাকী রইলো না যে মিলি গেম খেলছে। সে প্রতিদিন রাতে পড়াশোনা শেষ করে দৌড়ে এসে বলবে, "ভাইয়া, আমি সব পড়া শেষ করেছি।"
রুদ্র জানে এই কথার মানে কি। মিলি এখন তার ফোন চাচ্ছে। সে গেম খেলবে।

রুদ্র তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মিলিকে বলল, "পড়াশোনা শেষ?"
"জি ভাইয়া, শেষ।" মিলি উত্তর দিলো।
"আজকে স্কুলে কেউ কি আমার বুড়িটাকে বিরক্ত করেছে?"
"না, ভাইয়া। ভাইয়া জানো, আমার নতুন একটা বন্ধু হয়েছে।" মিলি আগ্রহ নিয়ে কথাটা রুদ্রকে বলল।
"নতুন বন্ধুটির নাম কি?"
"ওর নাম জেবিন।"
"বাহ, সুন্দর নাম তো।"
"কি করে আমরা বন্ধু হলাম সেটা শুনবে?"
"হ্যাঁ, শুনবো।"

মিলি আগ্রহ নিয়ে গল্পটা রুদ্রকে শোনানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সেই মুহুর্তে জাহানারা এসে বাঁধা দৃষ্টি করল। সে ডিনার করার জন্য দু'জনকেই ডাকল। এবং মিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল, "খেয়েই ঘুমাতে হবে। সকালে স্কুল আছে।"

মিলিকে মন খারাপ করতে দেখে রুদ্র বলল, "আমার বুড়িটা কি মন খারাপ করল? দেখি দেখি।" এই বলে মিলিকে কোলের ভেতর টেনে নিয়ে তাকে আদর করতে করতে রুদ্র আবার বলল, "গল্পটা কাল শুনবো, কেমন।"

"আচ্ছা, ভাইয়া। কাল কিন্তু শুনতেই হবে।"
"আচ্ছা, আচ্ছা। চলো এখন খেতে যাই।"

রুদ্র বেলকনিতে বসে আছে। তার হাতে তরুর চিঠি। বাইরের চাঁদের আলো। তারায় আকাশ ঝিকমিক করছে। রুদ্র খামের ভেতর থেকে চিঠিটা বের করে পড়া শুরু করল।

রুদ্র
আমি হাসপাতালে। শরীরটা ভালো না। আলস বিকালে বসে তোর কথা মনে পড়ছে। তোকে ভীষণ মিস করছি। ঠিক তখনি বাইরে তাকিয়ে দেখি শহর ভিজছে বৃষ্টিতে। মনে পড়ে গেলো আমরা ঠিক এভাবে একদিন ভিজেছিলাম। একটা কবিতা লিখে আমাকে ভেজার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলি। কিন্তু আমার কাছে সেটা শুধু কবিতা ছিলো না। ওটা আমি ছিলাম। তোর ওইটুকু লেখায় পুরোটা জুরে এক অন্য আমি ছিলাম। লেখাটুকু এতোবার পড়েছিলাম যে মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। এখন কেউ আমাকে বলতে বললে এক নিশ্বাসে বলে দিতে পারবো। তোর ওই লেখাটুকুই ঘুরিয়ে তোকেই লিখতে ইচ্ছে করছে। তাই তোর লেখাটা তোকেই দিলাম।

রুদ্র, একটু থাম, একটু জিড়িয়ে নে।
অনন্তমূলের নিচে একটু দাঁড়া,
একটু দেখ—ঝড়ে পড়ছে পাতা।
বিষণ্ণ হলুদ, সন্ধ্যা বেলা, পাখিরাও ফেরে ঘরে৷
এতো তারাহুরো, এতো ব্যস্ততা, জীবনকে কি দিবে?
একটু নিশ্চয়তা, একটা পাকা ছাঁদ।
বৃষ্টি হলে ভিজবে না ঘর, ভিজবে না সুখ।
এইটুকুই-তো? তাহলে আমায় কেনো বললি না?
তোর আকাশের সবটা কালো মেঘ শুষে নিতো আমার হৃদয়।
বৃষ্টি তোকে আর ভেজাতো পারতো না।

রুদ্র, একটু দেখ, একটু নিজেকে বোঝ।
ভয় কিসের? কেনো লুকিয়ে রাখিস নিজেকে?
কে দেখবে? কে করবে উপহাস?
চেয়ে দেখ চারপাশে, মানুষ শুধু হৃদয়ে দুঃখ লুকায়।

তুই-তো ওদের মত না।
যারা হেরে গেলে লুকিয়ে পড়ে।
তুই রুদ্র, তুই শিকল ভাঙা মানুষ।
গুহার ভেতর শিকলে বাঁধা তোকে মানায় না।
আজ বরং তুই বেরিয়ে আয়।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, তুমুল এই বৃষ্টিতে;
আমাদের দু-হাত খুঁজে নিক তাদের শেষ গন্তব্য।
আমরা তাদের বারণ করার কে?

রুদ্র, সেদিনের মত আরেকটা দিন কখনোই আসবে না জানি। তবুও চাই আরেকটা দিন আসুক। দুজনে ভিজি শহুরে বৃষ্টিতে। আরেকবার ভিজি। আরেকবার!

ইতি তরু

রুদ্রের চোখে মুখে অতৃপ্তির আভাস। তরু চিঠিটা হুট করেই শেষ করে দিয়েছে। রুদ্র জানে, তরুর বলার আরো অনেক কিছু ছিলো। কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সে কিছুই লিখেনি। আচ্ছা, তরু কি কাঁদছিলো? তরু এখন কেমন আছে? এরকম নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতে থাকলো রুদ্রের মনে। কিন্তু সে জানে এই অহেতুক প্রশ্নের উত্তর সে কখনোই পাবে না। কখনোই না!




চলবে....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#9
অপরূপ দুন্দর !!!!


Heart Heart Heart Heart
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#10
(19-11-2022, 01:08 PM)ddey333 Wrote: অপরূপ দুন্দর !!!!


Heart Heart Heart Heart



ধন্যবাদ
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#11

পর্ব-০৩
 

       রিয়া বসে আছে ক্যান্টিনে। ইরিনার ক্লাস শেষ হলে সরাসরি তার এখানে আসার কথা। রিয়া তার জন্যই অপেক্ষা করছে। কিন্তু ইরিনার আসার কোনো সম্ভাবনাই আপাতত দেখছে না সে। ক্লাস শেষ হওয়ার কথা বারোটায়। এখন একটা বাজে। যেহেতু এতোক্ষণে আসে নি সেহেতু তার আর আসার সম্ভাবনা নেই। তবুও রিয়া বসে আছে। এখানে বসে থাকতে তার ভালো লাগছে। ভালো লাগার কারণ রুদ্র।

       ক্যান্টিনের পূর্ব দিকের শেষ টেবিলে রুদ্র বসে আছে। রিয়া দূর থেকে রুদ্রকে দেখছে। সে চাইলেই কাছে গিয়ে কথা বলতে পারে কিন্তু সেটা সে করছে না। তার মধ্যে জড়তা কাজ করছে। সে এরকম স্বভাবের মানুষ না। সে লাজুক না, ভীতুও না। সে বরং অনেকটা তরল, চটপটে স্বভাবের। কিন্তু এই একটা মানুষের কাছে গেলেও সে শান্ত গভীর নদীর মত হয়ে যায়। কোথা থেকে যে জড়তা আছে, ভয় কাজ করে, বুকের ভেতর ঝড়তুফান হয়, সে নিজেই জানে না।

       প্রথম দিকে অবশ্য এরকমটা ছিলো না। স্বাভাবিক ছিলো সবকিছু। আর পাঁচটা মানুষের মতই, বন্ধুর মতই ভাবতো সে রুদ্রকে। কিন্তু সমস্যা ঘটেছে তখন থেকে যখন রিয়া বুঝতে পারে এই মানুষটাকে সে ভীষণ পছন্দ করে। এটা বোঝার পর থেকেই সে রুদ্রের সামনে গিয়ে আর কখনো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারেনি। ভালোবাসলে কেনো এমন হয়? না-কি একপাক্ষিক ভালোবাসা বলে সে একটু বেশি সর্তক। তার মধ্যে একটা ভয় কাজ করে, যদি রুদ্র দূরে চলে যায়? রিয়া শুধু জানে, সে রুদ্রকে পছন্দ করে। খুব পছন্দ করে। এই মানুষটা তার না হলে সে বাঁচবে কি করে?

       একটা মানুষের দিকে কেউ কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে অদ্ভুত ভাবেই সে বুঝতে পারে কেউ তাকে দেখছে। কিন্তু রুদ্র কি সেটা বুঝতে পারে না? রিয়ায় মন খারাপ হয়। রুদ্র তার দিকে একবারও তাকায় না। সে যে এখানে আছে সেটাই হয়তো বুঝতে পারছে না রুদ্র। কিন্তু সে দীর্ঘ সময় ধরে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র একবারও তার দিকে তাকায় নি বরং সে বুঝতেই পারেনি দূর থেকে তাকে কেউ এভাবে দেখছে। রুদ্র এমন কেনো? কেনো আমাকে বুঝে না? রিয়ার আরো খানিকটা মন খারাপ হয়।

       রুদ্র আজ নীল রঙের একটা শার্ট পরে এসেছে। রিয়ার সাথে যেদিন রুদ্রের প্রথম দেখা হয় সেদিন রুদ্র এই শার্টটাই পরেছিল। সেদিন ছিলো ইরিনার জন্মদিন। ইরিনা আর রিয়া দীর্ঘ দিনের বন্ধু। ছোট বেলা থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। এখন তারা একই ভার্সিটিতে পড়ে। এসএসসি দুইজনে সাইন্সে থাকলেও এইচএসসিতে ইরিনার রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় সে বিভাগ পরিবর্তন করে ইন্টারে কমার্স নেয়। কিন্তু এতে তাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। এখন তারা একই ভার্সিটিতে ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পড়ছে।

       সেদিন ছিলো ইরিনার জন্মদিন। সে তার ক্লাসের কিছু বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিল। সেই বন্ধুদের মধ্যে রুদ্রও ছিলো। সেদিনই রুদ্রের সাথে রিয়ার পরিচয় হয়। তারপর প্রায় তাদের দেখা হতো। যেহেতু সে ইরিনার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো, অন্য দিকে রুদ্রও ইরিনার খুব ভালো বন্ধু ছিলো। এই ভাবেই নানা কাজে বা আড্ডায় তাদের দেখা হত। টুকটাক কথাও হত।

       একদিন একটা কাজে ইরিনা তাকে আসতে বলে। ওদিকে রুদ্রকেও আসতে বলেছিল। কিন্তু তাদের দুজনকে আসতে বলে ইরিনার কোনো খোঁজ ছিলো না। সেদিনই প্রথম বারের মত তাদের দীর্ঘ সময় কথা হয়। সেদিন সে বোকার মত একটা প্রশ্ন করেছিল রুদ্রকে। সে হঠাৎ বলেছিল, "আপনার কথাবার্তায় কখনো প্রকাশ পায়না আপনি * !"

       রুদ্র কথাটা শুনে অনেক হেসেছিলো। সে কোনো রকম হাসি থামিয়ে রিয়াকে বলেছিল, "আপনাকে কে বলল আমি * ?"

       রুদ্রকে এভাবে হাসতে দেখে রিয়ার অনেক লজ্জা লাগছিলো। চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। কিছুটা সময় নিয়ে সে বলল, "আসলে...!" রিয়া কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না।

       রুদ্র বলল, "এই যে আমি হাসি থামিয়েছি। এবার বলুন হঠাৎ আপনার কেনো মনে হলো আমি * ।"

       রিয়া বলল, "ইরিনার বার্ডে পার্টিতে আপনি মাংশ খেলেন না, এছাড়াও আমার গ্রামের পাশের বাসার এক * ছেলের নাম রুদ্র। আপনার নামও রুদ্র, তাই হঠাৎ মনে হলো আপনি হয়তো * । জানিনা, বোকার মত কেনো এটা মনে হলো। এদিকে আপনার কথাবার্তায় কখনোই সেরকম প্রকাশ পায় না। আমি একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম। কৌতুহল থেকে কথাটা বলেছি। সরি, কিছু মনে করবেন না।"

       "উঁহু! আমি কিছু মনে করিনি। আসলে আমার গরুর মাংশে এলার্জি আছে। অল্প খেলে সমস্যা হয়না, কিন্তু বেশি খেলে সমস্যা হয়। সেদিন সকালে বাসায় গরুর মাংশ খেয়েছিলাম। তাই তখন ইচ্ছে করেই খায় নি। আর আমার পুরো নাম ইয়াসিন আকবর রুদ্র। আসলে রুদ্র নামটা বাবা রেখেছে। বাবার এই নামটা পছন্দ ছিলো অনেক। কিন্তু কি কারণে এতো পছন্দ সেটা কখনো সে কাউকে বলেনি।"

       রিয়াকে এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে রুদ্র আবার বলল, "একটা মজার ঘটনা শুনবেন?"

       রিয়া বলল, "হ্যাঁ বলেন।"
       "বাসায় আমাকে ইয়াসিন নামেই সবাই ডাকতো। কিন্তু বাবা এটা পছন্দ করতো না। তার ইচ্ছে সবাই যেনো আমাকে রুদ্র বলে ডাকে। একদিন মায়ের সাথে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া। মা কিছুতেই আমাকে রুদ্র বলে ডাকবে না। তার এই নামটা পছন্দ না। এদিকে বাবা চায় মা জেনো আমাকে রুদ্র বলেই ডাকে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে গিয়ে মা বাবাকে বলে, "রুদ্র নামের প্রতি এতো অবেগ কেনো আমি কি বুঝিনা।" বাবা রেগে বলে, "কি বুঝো তুমি? হ্যাঁ, বলো আজ শুনি। প্রতিদিন এই এক কথা ভালো লাগে না।" মা বলে, "তুমি তোমার প্রথম প্রেমিককে ভুলতে পারো না-ই এখনো। তাই-তো তার দেওয়া নামটাই রেখেছ। আমার ছেলেকে আমি কিছুতেই এই নামে ডাকবো না।" সেবার মা রাগ করে আমাকে নিয়ে নানী বাড়ি চলে আসে। এক সপ্তাহ পর বাবা মা'য়ের রাগ ভাঙাতে সক্ষম হয়।

       রুদ্র দীর্ঘ সময় কথা বলে থামে। তারপর সে আবার বলে, "এই এক নাম নিয়ে সেবার যে কি কান্ড ঘটেছিল। আসলে শুধু সেবারই না। বাবার সাথে এই নাম নিয়ে প্রায়ই মা'য়ের ঝগড়া হতো।"

       "আপনার মা-বাবার কি অরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে?"
       "বলতে পারেন।"
       "মানে?"
       "মানে হলো এক পক্ষের দিক থেকে আরেঞ্জ ম্যারেজ, অন্য জনের দিক থেকে লাভ ম্যারেজ।"
       "কার দিক থেকে লাভ ম্যারেজ?"
       "আমার মায়ের দিক থেকে।"
       "আমার মা-বাবা দুইজনে প্রতিবেশী। বাবা যখন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে দেবদাস তখন আমার দাদা জোর করে আমার মায়ের সাথে বাবাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার মাকে আমার দাদা ভীষণ পছন্দ করতো, এটা সবার মুখেই শুনেছি। দাদা সবসময় চাইতো আমার মা'কে তার বাড়ির বউ করতে। আসলে আমার দাদা এবং নানা দুইজন বন্ধু ছিলো।"

       "এখনও কি আপনার নাম নিয়ে আপনার বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়? আপনার মা এখন আপনাকে কি নাম ডাকে?" রিয়া প্রশ্ন করলো রুদ্রকে।

       রুদ্রের চেহারা হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো। রিয়া বুঝলো তার প্রশ্নের কারণে এটা হয়েছে। রুদ্র বলল, "আমার বাবা মারা যাওয়া পর থেকে মা আমাকে সবসময় রুদ্র বলেই ডেকেছে। ভুলেও ইয়াসিন বলে ডাকেনি।"

       "আই এম সরি।" রিয়া বলল।
       "সরি বলতে হবে না। ইট'স ওকে।"

       রুদ্রের সাথে সেদিন রিয়ার কথোপকথন আর দীর্ঘ হলো না। রুদ্রের মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেছিলো। রিয়া বুঝতে পেরেছিলো বাবার কথা তুলে সে-ই মানুষটার মন খারাপ করে দিয়েছে। সেদিন ইরিনার কাছ থেকে রুদের ফেসবুক আইডি নেয়। তারপর থেকে রিয়া নিজ থেকেই রুদ্রকে মেসেজ দিতো। খোঁজ খবর নিতো। এভাবেই কথা বলতে বলতে হঠাৎ রিয়া মনে হলো সে ভীষণ রকম ভাবে রুদ্রকে পছন্দ করা শুরু করেছে। সে তার এই পছন্দের কথা প্রথমে ইরিনাকে জানায়। ইরিনা জানায় রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্রের কাছ থেকে সেরকম কোনো পজিটিভ ইঙ্গিত পায় নি। বরং তারপর থেকে রুদ্র নানা ভাবে রিয়াকে উপেক্ষা করতে শুরু করে। সে রিয়ার মেসের ঠিকমতো উত্তর দেয় না। ফোন দিলে সবসময় ফোন ধরে না।

       রিয়ার এটা নিয়ে কোনো রাগ কিংবা অভিমান নেই। তাকে পছন্দ করতে হবে এমনও না। কিন্তু রুদ্র যখন তাকে উপেক্ষা করে তখন কিছু সময়ের জন্য তার অনেক খারাপ লাগে। কষ্ট হয়। তবে সেটা সে দ্রুতই ভুলে যায়। সে রুদ্রকে পছন্দ করে ঠিক আছে কিন্তু এটা কি ভালোবাসা নাকি মায়া সে জানেনা। এটা নিয়ে সে তেমন ভাবেও না। ভাবতে গেলেই সবকিছু জটিল হয়ে যায়। তাই সে চায় সবকিছু সহজ সরল রাখতে। সামনে কি হবে না হবে সে সব নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। এই যে সে দীর্ঘ সময় ধরে রুদ্রকে দেখছে। তার ভালো লাগছে। এটুকুই তার জন্য যথেষ্ট। সে বেশি কিছুর প্রত্যাশা করে না। কারণ সে বিশ্বাস করে, মানুষ যত বেশি প্রত্যাশা করে তত বেশি হতাশ হয়।

       "তুই এখনো অপেক্ষা করছিস?" ইরিনা তার পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলে।

       রিয়া রুদ্রের দিকেই তাকিয়ে ছিল। কিন্তু রুদ্রকে সে এখন দেখতে পাচ্ছে না। রুদ্র যে টেবিলে বসা ছিলো সেখানে এখন অন্য কেউ বসে আছে। পাশেপাশে চোখ বুলালো। কোথাও রুদ্র নেই। পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে সে খেয়ালই করেনি রুদ্র কখন চলে গেছে।

       "কিরে কি হলো তোর?" ইরিনা জিজ্ঞেস করে।
       "কই কিছু না।" রিয়া পাশে তাকিয়ে দেখে ইরিনা বসে আছে। সে আবার বলল, "উঁহু, তুই। কখন এলি?"
       "কখন এলাম মানে? কি ভাবছিস তুই? কোনো দিকেই দেখি খেয়াল নেই তোর?"
       "তেমন কিছু না।"
       "রুদ্রের কথা ভাবছিলি নিশ্চয়ই।"

       ইরিনার এই একটা দোষ। যখন তখন সে রুদ্রকে টেনে আনে তাদের কথার মাঝে। রিয়ার এটা ভালো লাগে না। সে বলল, "থামবি তুই! এটা বল, কই ছিলি এতোক্ষণ? না জানিয়ে কারো সাথে প্রেম টেম করছিস নাকি?" রিয়া প্রসঙ্গ পাল্টাতে কথাগুলো বলে।

       "প্রেম! আমার কপালে প্রেম-টেম নেই রে।"
       "এমন ভাব করছিস যেনো তোকে কেউ পছন্দ করে না।  তোকে কি কম ছেলে পছন্দ করে। প্রায়ই লাভ লেটার পাস। এছাড়া তোর ক্লাসে ওই ছেলেটার নাম কি রে? ও-তো তোকে সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে পছন্দ করে। ওর সাথে ঝুলে যা।"
       "দরকার নেই বাবা। তোর যে হাল দেখতাছি, তাতে আমার প্রেম করার স্বাদ মিটে গেছে।"
       "আমার আবার কি হাল?" রিয়া কিছুটা রেগে জিজ্ঞেস করল। ইরিনা সেটা বুঝতে পেরে এই বিষয়ে কথা আর বাড়ালো না।

       "চল।" ইরিনা বলল।
       "কোথায়।" রিয়া জানতে চাইল।
       "তোর প্রেমিকার কাছে।"
       "আবার এটা নিয়ে মজা করছিস!"
       "সরি বাবা, ভুল হয়েছে। বাসায় যেতে হবে না? ক'টা বাজে খেয়াল আছে?"
       হাতে থাকা ঘড়ির দিকে রিয়া তাকালো। তারপর অবাক হয়ে বলল, "দু'টো বেজে গেছে?"
       "হ্যাঁ, দু'টো বাজে।"

       ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় গেটে রুদ্রের সাথে দেখা হলো তাদের। রুদ্রকে দেখেই ইরিনা জিজ্ঞেস করল, "কিরে আজকাল তোকে ক্লাসে দেখাই যায় না। ক্লাস করিস না কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে? শরীর ভালো?"

       "আসলে কিছুদিন ধরে আপসেট আছি। মন মেজাজও পুরোপুরি ভালো নেই। ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করে না।" রুদ্র বলল।

       ইরিনা বলল, "সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা। এখন এভাবে ক্লাস মিস দেওয়া ঠিক হচ্ছে না তোর।"

       রুদ্র হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে বুঝতে পেরেছে। তারপর রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, "কেমন আছো রিয়া?"

       "ভালো আছি।" রিয়া এইটুকু বলেই পালটা কোনো প্রশ্ন করলো না রুদ্রকে।

       রুদ্র এবার ইরিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "বাসায় যাচ্ছিস?"
       "হ্যাঁ!"
       "আচ্ছা যা তাহলে। কাল ক্লাসে দেখা হবে।"
       "আচ্ছা।" বলে ইরিনা আর রিয়া হেঁটে চলে গেলো।

       রুদ্র ক্যাম্পাসেই ছিলো। আজ একটাও ক্লাস করেনি। ইচ্ছে করেই ক্লাসে যায় নি সে। আজকাল কেনো জানি তার হই হুল্লোড় ভালো লাগে না। গত ছয় মাসে সে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তার ব্যবহার, পছন্দ অপছন্দ, অন্য মানুষের সাথে কথাবার্তার ধরণ, সবকিছুর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সে নিজেই লক্ষ করতে পারছে। আগে যা ভালো লাগত এখন সেটা ভালো লাগে না। সে আগে যেভাবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো এখন সবাই ডাকলেও সে নানা অযুহাত দেখিয়ে যায় না। আগে অল্পতে রেগে যেতো, এখন সে আরো শান্ত।

       রুদ্র তিন বছর কাটিয়ে দিয়েছে এই ক্যাম্পাসে। সামনেই তার ফাইনাল পরীক্ষা। তারপর ফাইনাল ইয়ারে উঠে যাবে সে। তবুও আজকাল তার কেবল মনে হয় এই তিনটা বছরে হাতে গোনা দুই একজন ছাড়া তার কোনো ভালো বন্ধু হয়নি, যাদের কাছে সে সবকিছু খুলে বলতে পারে। তার বন্ধু নেই তেমন না। বরং তার ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক বড়। তাদের পাঁচ ছয়জনের একটা গ্রুপ আছে। সবসময় একসাথেই থাকে। কিন্তু আজকাল রুদ্র কেমন ছন্নছাড়া। আলাদা এক প্রাণ। তার একা থাকতে ভালো লাগে। সে কখনো ভাবেনি একটা মানুষ তার জীবনে এতোটা প্রভাব ফেলবে। যাকে সে কখনো দেখেনি, যাকে সে চিনে না, যার কোনো ঠিকানা জানেনা, যার আজও কোনো অস্তিত্ব আছে কি-না সে জানেনা, সেরকম একটা মানুষ তার জীবনে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মানুষ খুব অদ্ভুত। মানুষ নিজেকেই সহজে চিনে উঠতে পারে না। মাঝেমধ্যে নিজেকেই অপরিচিত লাগে। মনে হয়, এই আমিটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি।

       রুদ্র নিজেকে নিয়ে নানা কিছু ভাবছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে ফোনে তার মা'র নাম্বার ভেসে উঠতেই সে কিছুটা অবাক হলো। এই সময় তাকে ফোন দেওয়ার কোনো কারণ নেই। সে দ্রুত ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জাহানারা বলল, "হ্যালো, রুদ্র। তুই এখন কোথায়?"

       "ক্যাম্পাসে। কোনো সমস্যা হয়েছে, আম্মু?" রুদ্র বলল।

       "তোর দাদী হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমাকে ফোন দিয়েছিল কিন্তু ভাল করে কথা বলতে পারেনি। মনে হয় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। পাঁচটার আগে আমি-তো যেতে পারবো না। তুই দ্রুত বাসায় গিয়ে দেখ তো মানুষটার কি অবস্থা। জরুরি হলে এম্বুলেন্স ফোন দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিস। আমি সরাসরি অফিস শেষে ওখানে চলে আসবো।"

       "উঁহু। আমি এখনোই বাসায় যাচ্ছি। তুমি টেনশন করো না।"
       "আচ্ছা, আমাকে জানাস কি অবস্থা।"
       "ওকে আম্মু। জানাবো।" কথাটা বলে ফোন কেটে দিয়ে রুদ্র সরাসরি বাসায় দিকে রওনা করল।

       বাসায় গিয়ে দেখলো তার দাদীর অবস্থা আসলে ভালো না। সে খাটে শুয়ে আছে তার পাশে ছোট্ট মিলি দাঁড়িয়ে আছে। মিলি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছে সেটা রুদ্র তাকে দেখেছি বুঝতে পারলো। সে মিলির কাছে গিয়ে বলল, "আমার বুড়িটা দেখি অনেক সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে। আর ভয়ের কিছু নেই। ভাইয়া চলে এসেছে না।"

       মিলি এইটুকু নির্ভরতা পেয়ে ভাইয়ার কোলে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, "ভাইয়া, ভাইয়া, দাদী!" কোনো রকম ভাবে এটুকু বলতে পারলো মিলি। আর কিছু বলল কি না বোঝা গেলো না কান্নায় শব্দে।

       রুদ্র এম্বুলেন্স কল করেছিলো। এম্বুলেন্স আসতেই আলেয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। রুদ্র তার মা'কে ফোন করে সবটা জানালো। সে ইচ্ছে করেই মিলিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। এমনিতেই মিলি অনেক ভয় পেয়েছে, তাই রুদ্র চায়নি বারো বছরের একটা মেয়েকে এই অবস্থায় বাসায় একা রেখে আসতে। এমনিতেই এ বাসায় কোনো সমস্যা নেই। মিলি মাঝেমধ্যে একাই থাকে। তারা যখন বছর খানেক আগে এই বাসা ভাড়া নেয় তখন থেকে কিছুদিনের মধ্যেই আশেপাশে সবার সাথে তাদের ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এদিকে মিলিও খুব মিশুক। এই বাড়ির তার বয়সী ছেলে মেয়েদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায়।

       জাহানারা যত দ্রুত সম্ভব অফিস থেকে হাসপাতালে চলে এলো। আলেয়াকে ভর্তি করানো হয়েছে। মাওকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশানের কারণে আলেয়া হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। হাসপাতালে আনতে আরো কিছুক্ষণ বিলম্ব হলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যেতো বলে ডাক্তার জানিয়েছে। রাতে রুদ্র হাসপাতালে থেকে গেলো। জাহানারা মিলিকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। এবং যাওয়া আগে রুদ্রকে বলে গেলো রাতে সে আরেকবার আসবে।

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#12
বুকে চিনচিন করা ব্যাথার গল্প এগুলো , তাও না পড়ে থাকা যায়না !! 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#13
(20-11-2022, 03:10 PM)ddey333 Wrote: বুকে চিনচিন করা ব্যাথার গল্প এগুলো , তাও না পড়ে থাকা যায়না !! 




মাঝে মধ্যে চটি গল্প এর পাশাপাশি এই গুলো গল্প পরলে হয়।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#14
অনেক বেশি সুন্দর হচ্ছে
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
#15
(20-11-2022, 10:38 PM)Bangla Golpo Wrote: মাঝে মধ্যে চটি গল্প এর পাশাপাশি এই গুলো গল্প পরলে হয়।

আমার এগুলোই অনেক বেশি ভালো লাগে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#16
অসাধারণ।
[+] 1 user Likes Raj Bai 23's post
Like Reply
#17
 পর্ব-০৪

 

        পরীক্ষা শেষ হতেই কোথাও না দাঁড়িয়ে সরাসরি বাসার চলে এলো রুদ্র। আজ বুধবার। আজ রুদ্রের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বিষয়টা আজ সকালে পরীক্ষার রুটিন দেখতেই সে খেয়াল করল। পরীক্ষার চাপে সে ভুলেই গিয়েছিলো তরুর চিঠির কথা। গত দুই বুধবারে তরুর কোনো চিঠি আসে নি। বিষয়টা খেয়াল হতেই সে তার মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছিল তার নামে কোনো চিঠি এসে কি না। জাহানারা উত্তরে রুদ্র খুশি হতে পারে নি। তরুর কোনো চিঠিই আসেনি। দুই সপ্তাহ তরুর কোনো চিঠি আসে নি। নিজের অজান্তেই দুইবার বাক্যটা মনে মনে উচ্চারণ করল রুদ্র।

        রুদ্রের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলে সে পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। প্রথম পরীক্ষাটা খারাপ হলে সে পড়ালেখায় আরো বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ে। এই কারণে কোনো দিকে খেয়াল ছিলো না তার। এমনকি তরুর চিঠির কথাও বেমানান সে ভুলে গেছে। কি করে সে ভুলে গেলো?

        রুদ্র এখন রিকসায় বসে আছে। তার মনে নানা প্রশ্ন। তরুর শেষ চিঠিতে সে লিখেছিল, সে এখন হাসপাতালে। তরু এখন কেমন আছে? এখনও কি হাসপাতালে? কি হয়েছে তরুর? যে মানুষটা দীর্ঘ ছয় মাস ধরে নিয়মিত চিঠি পাঠায় সে হঠাৎ দুই সপ্তাহ কোনো চিঠি পাঠায় নি? তরুর কোনো বিপদ হয়েছে কি? রিকসায় যেতে যেতে রুদ্র এরকম নানা সম্ভাব্য প্রশ্ন ভাবতে লাগল। কিন্তু সে জানে এই সব প্রশ্নের উত্তর সে কিছুতেই জানতে পারবে না। 

        রুদ্র বাসায় এসে তার দাদীকে চিঠি আসার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। তার উত্তরে রুদ্র খুশি হতে পারলো না। তবে আজকের দিনটা এখনো বাকী আছে। যে কোনো সময়ই চিঠি আসতে পারে। সে অপেক্ষা করতে থাকলো। 

        রুদ্র স্থির থাকতে পারছে না। এক জায়গা বসে থাকতে পারছে না। তার মন ছটফট করছে। সে এ ঘর থেকে ও ঘর হাঁটা হাঁটি করছে। রুদ্রকে এভাবে অস্থির হতে আলেয়া আগে কখনো দেখেনি। সে জিজ্ঞেস করল, "দাদু, কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এরকম লাগছে কেনো?"

        "একটা জরুরি চিঠি আসার কথা। কিন্তু আসছে না। সেই চিঠিটার অপেক্ষা করছি।" রুদ্র উত্তর দিলো।

        "এতো অস্থির হয়ো না। আসার কথা থাকলে অবশ্যই আসবে। আজ না এলে কাল আসবে। কিন্তু এভাবে অস্থির হলে কি চলবে?"

        "আচ্ছা, দাদী।" এটুকু বলে রুদ্র নিজের ঘরে এসে টেবিলে বসল। সে জানে সে তার দাদীকে বোঝাতে পারবে না কেনো সে এতো অস্থির। চিঠিটা তার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তরুর জন্য তার প্রচুর চিন্তা হচ্ছে। চিঠিটা এলে সে এটুকু শিওর হতে পারবে তরু ভালো আছে। সুস্থ আছে। 

        কলিংবেলের শব্দ শোনা মাত্রই রুদ্র দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলল। সে ভেবেছিল ডেলিভারির লোক এসেছে। কিন্তু দরজার বাইরে তার বোন মিলি দাঁড়িয়ে আছে। 

        রুদ্রকে দেখেই মিলি "ভাইয়া" বলে তাকে জড়িয়ে ধরল। রুদ্র তাকে ঘরে যেতে বলে সে অনেকক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। বিকাল গড়িয়ে যতই সন্ধ্যা নেমে আসছে, ততই রুদ্রের প্রত্যাশা কমতে শুরু করল। সে হতাশ গলায় মনে মনে বললো, "না, আজকেও তরুর কোনো চিঠি আসবে না।" এই সামান্য কথাটুকু বলতে তার ভীষণ কষ্ট হলো। তার মনে হলো, একদল কান্না দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে জড় হয়েছে। গলাটা ভাড়ি হয়ে উঠেছে। তার কি কান্না পাচ্ছে? 

        সন্ধ্যার কিছু সময় পরেই সে আলিফকে ফোন দিয়ে চায়ের দোকানে আসতে বলল৷ এই মুহুর্তে সে একা থাকতে চাচ্ছে না। আলিফের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলে ভালো লাগবে এই আশায় তাকে আসতে বলা। 

        রুদ্র যাওয়ার আগে আলিফ এসে হাজির তাদের পরিচিত চায়ের দোকানে। এখানেই বসে তারা সবসময় চা খায়, আড্ডা দেয়। রুদ্র এসে কোনো কথা না বলে দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে সেটা ধরিয়ে দ্রুত টানতে লাগল। রুদ্রকে দেখেই আলিফ বুঝতে পারলো ওর কিছু একটা হয়েছে। সে কিছুটা সময় দিলো রুদ্রকে। হুট করে কিছু জিজ্ঞেস করল না। রুদ্র নিজ থেকেই কথাটা শেয়ার করবে তার সাথে। সেই জন্যই আমাকে এতো জরুরি ভাবে আসতে বলেছে। আলিভ ভাবলো।

        সিগারেটটা রুদ্র একাই শেষ করে ফেলল। আলিফ থাকতে সে কখনো এরকমটা করে না। সিগারেট শেয়ার করবেই তারা। আজকে কি হলো? আলিফ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাকে বোঝার চেষ্টা করতে থাকলো।

        "কি হয়েছে?" আলিফ জিজ্ঞেস করল। 

        রুদ্র আরো কিছুটা সময় নিলো। বলল, "তিন সপ্তাহ তরুর কোনো খোঁজ নেই। ওর কোনো চিঠি আসছে না। ও শেষ চিঠিতে লিখেছিল, ও হাসপাতালে। তারপর ওর আর কোনো চিঠি আসে নি। এদিকে আমার পরীক্ষা শুরু হলো, ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তাই বিষয়টা এতোদিন খেয়াল করি নি।"

        "এতো চিন্তা করছিস না। ও সুস্থ আছে।"
        "কিভাবে বুঝবো?" 

        রুদ্রের এই প্রশ্নের উত্তর আলিফের কাছে যেমন নেই রুদ্রের কাছেও নেই। তরুর সাথে যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম নেই। আলিফ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আলিফকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রই বলল, "আমিও জানি, তরুর বর্তমান অবস্থা জানার কোনো উপায় নেই। তবুও নিজেকে কোনো কিছু বলে বোঝাতে পারছি না, আলিফ। এই ব্যাপারটা মনে পড়লে ভালো লাগে না। তরুর ব্যাপারটা ভুলে যাওয়ায় চেষ্টা তো কম করলাম না। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমিও কেমন করে যেনো দিনদিন...!" রুদ্র নিজের অনুভূতিটুকু বুঝিয়ে বলতে না পেরে এখানেই থামলো। 

        আলিফ বলল, "চল, এক কাজ করি। আমাদের পরীক্ষা শেষ। বন্ধুবান্ধব মিলে একটা ডে ট্যুর দেই। দেখবি মন মেজাজ ভালো হয়ে যাবে।" 

        আলিফের আইডিয়াটা ভালো লাগল রুদ্রের। সে বলল, "হ্যাঁ, এটা করা যায়। একঘেয়েমি কিছুটা হলেও কেটে যাবে।' 
        "তাহলে সবাইকে বলি, কেমন?" 
        "আচ্ছা।" 

        রুদ্র পকেট থেকে সিগারেট প্যাকেটটা বের করে সেখান থেকে আরেকটা সিগারেট জ্বালাল। আলিফ বলল, "আজকাল তুই কিন্তু অতিরিক্ত স্মোকিং করছিস। " 
        "কমিয়ে দিবো।" উদাস ভঙ্গিতে বলল রুদ্র। 

        "দোস্ত।" আলিফ খানিকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল।
        "হ্যাঁ বল।" রুদ্র বলল। 

        আলিফ চুপচাপ। হাতে থাকা রঙ চায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র ব্যাপারটা লক্ষ করে বলল, "কিছু হয়েছে কি? কিছু বলবি?"

        "আসলে...!" বলে কিছুটা সময় থামলো। "ব্যাপারটা হচ্ছে, গত মাসে সিঁড়িতে হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। পড়ে গিয়ে মেয়েটার কপাল কেটে যায়। তারপর সেদিন আমাদের ছাঁদে দেখা হয়। তারপরও বেশ কিছুদিন ছাঁদে দেখে হয়েছে।" 

        "সমস্যা টা কি সেটা বল!"
        "সমস্যা কিছু না। আবার অনেক কিছু। মেয়েটার কাছে আমি এতোবার ক্ষমা চাইলাম। কথা বলার চেষ্টা করলাম। এই পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা-তো করল না, বরং একবার ভদ্রতার দেখিয়ে কথাও বলল না।" 

        "কি বলিস? মেয়েটা দেখতে কেমন রে?"
        "শ্যামলা। অতো সুন্দর না। কেনো?" 
        "কেনো মানে কি? আমার জানতে হবে না আমার বন্ধু যাকে পছন্দ করেছে সে দেখতে কেমন?"

        "ফাজলামো করবি না। আসলে ব্যাপার তেমন কিছুই না। কিন্তু এতোবার ক্ষমা চাইলাম। কথা বলার চেষ্টা করলাম। মেয়েটার একবার হলেও কি কথা বলা উচিত ছিলো না?"

        "অবশ্যই উচিত ছিলো। আমার বন্ধুকে এভাবে এভয়েড করছে। না, আমি বিষয়টা মেনে নিতে পারছি না।'
        "তুই কিন্তু আবারও...!"

        আলিফ কে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে রুদ্র বলল, "আচ্ছা আমি সরি।" কথাটা বলে রুদ্র কিছুক্ষণ ভাবলো। বলল; এমনটা কি হতে পারে না, মেয়েটা শুনতে পায় না?"

        রুদ্রের কথাটা আলিফ একদম ফেলে দিতে পারলো না। সে বলল, "হতে পারে কিন্তু...!"

        "কিন্তু কি? হতেই পারে। মেয়েটা যদি তোর কথা শুনতে পেতো তাহলে অবশ্যই উত্তর দিতো। যেহেতু শুনতে পায় না সেহেতু সে কথাও বলতে পারে না।"
        "তুই কি বলতে চাচ্ছিস? মেয়েটা বোবা?"
        "রাগছিস কেনো? হতেই পারে। আমি শুধু সম্ভাবনার কথা বললাম।"

        রুদ্রের কথাগুলো আলিফের পছন্দ হচ্ছে না। আলিফের চোখ মুখ মেঘে ডেকে গেছে। সে চুপচাপ। রুদ্রের চোখে বিষয়টা ধরা পরল। সে বলল, "আলিফ, বিষয়টা নিয়ে তুই আরেকটু ভেবে দেখ। পৃথিবীতে মানুষের নানা রোগ থাকে। বোবা এটাও একটা রোগ। আর সৃষ্টিকর্তার উপরে-তো কারো হাত নেই। আমি বলছি না মেয়েটা জন্মগত ভাবেই এমন, আবার সেটাও হতে পারে। তুই বরং মেয়েটার সাথে আরেকবার কথা বলে দেখ। একটু অন্য ভাবে চেষ্টা কর।" 

        আলিফ বলল, "কি ভাবে?"
        "আবার কখনো ছাঁদে দেখা হলে একটা কাগজ এবং কলম নিয়ে যাস। কাগজে লিখে মেয়েটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করিস।"

        "হ্যা সেটা করা যায় কিন্তু যদি মেয়েটা অপমানিত হয়? মানে বলতে চাচ্ছি, হতেই পারে মেয়েটা রাগ করে হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। যদি মেয়েটার কোনো সমস্যা না থাকে আর আমি এভাবে কথা বলি তাহলে যদি বিষয়টা অন্য ভাবে নেয়। তাহলে কি হবে?"

        "তুই কথাটা মন্দ বলিস নেই। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতেই পারিস। প্রেমে একটু রিক্স নিতেই হয় বন্ধু।" 

        "তুই আবারও মজা নিচ্ছিস।" 
        "আরে না না। মজা নিবো কেনো? কিন্তু আমার বন্ধু যে প্রেমে পড়েছে এটা আমি নিশ্চিত।"
        "ধুর, আমি গেলাম।" কথাটা বলেই আলিফ উঠে হাঁটা শুরু করলো।
        "আলিফ, ওই আলিফ কই যাস?" উত্তর না পেয়ে রুদ্র আবার বলল, "আচ্ছা, যা যা, এখন তো বন্ধুকে দেওয়ার মত সময় নেই হাতে। তবে বন্ধু, তোর জন্য শুভ কামনা রইলো।" শেষে কথাটা একটু শব্দ করেই বলল রুদ্র। 

        আলিফদের ছাঁদটা সুন্দর। বিভিন্ন প্রকারের ফুলের টব দিজে সাজানো পুরো ছাঁদ। পূব দিকে বড় একটা টবে বড় সাইজের একটা আম গাছ। তার পাশে একটা লেবু গাছ। সেখানে সে দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ সময়। এই মুহুর্তে বিকালের আকাশ দেখা ছাড়া তার করার কিছু নেই। সে অন্যমনস্ক হয়ে আকাশ দেখছে। সেই সাথে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা ভাবছে। মূলত সে সিন্ধান্ত হীনতার ভুগছে। রুদ্রে কথাগুলো সে একবারে ফেলে দিতে পারেনি। এদিকে মেয়েটার সাথে কথা বলতেও তার ইচ্ছে করছে। মেয়েটার চোখে মুখে এক ধরনের মায়া আছে। অন্য মেয়েদের চেয়ে ভিন্ন এক ধরণের সৌন্দর্য আছে মেয়েটার মধ্যে। কিন্তু মেয়েটা খানিক অদ্ভুতও বটে। কিন্তু যত কষ্টই হোক সে এই মেয়েটার সাথে একবার হলেও কথা বলতে চায়। তার অজান্তেই মনের ভেতর মেয়েটাকে জানার একটা আগ্রহ ভীষণ ভাবে তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেনো? এই পশ্নের যুতসই কোনো উত্তর আলিফ খুঁজে পায়নি। অবশ্য তার সাথে তার এই রকম ব্যবহার যায় না। সে ও কিছুটা অবাক, তার হঠাৎ এই সামান্য পরিবর্তন দেখে। মেয়েটাকে সে পছন্দ করে এরকমটা না। কিন্তু তার চোখ, কাজল কালো শ্যামলা মুখের মায়ায় আটকে গেছে সে। এটার নাম কি সে জানেনা। সে এর আগেও কয়েকটা রিলেশন করেছে, কিন্তু এই রকম কথা বলার আগ্রহ কিংবা এই অদ্ভুত অনুভূতি কখনোই হয়নি তার। 

        মেয়েটা কখন ছাঁদে এসেছে আলিফ খেয়াল করেনি। মেয়েটার তার ডান দিকে, খানিকটা দূর দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার পরনে কালো রঙের একটা থ্রিপিস, কপালে ছোট্ট কালো টিপ, ডান হাতে পুরনো একটা হাত ঘড়ি। ঘড়িটা দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরনো। তাদের চোখে চোখ পড়তেই, আলিফ দূর থেকে হাত তুলে হাই দিলো। মেয়েটা ছোট্ট করে হাসি দিয়ে সেটার উত্তর দিলো। আলিফ অবশ্য সেটা আশা করেনি। এই প্রথম মেয়েটা রেসপন্স করলো। তার মনে কিছুটা আশার আলো জাগল। সে খানিকটা কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটা একবার দেখে চোখ সরিয়ে নিলো। তারা নিশ্চুপ ভাবে বেশকিছু দাঁড়িয়ে রইল। কেউ কারো দিকে তাকালো না। কেউ কিছু বলল না। 

        আলিফ অবশেষে তার পকেট থেকে একটা হলুদ রঙের ছোট কাগজটা বের করে মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিলো। 

        মেয়েটা খানিকটা সময় নিয়ে, কিছু একটা ভেবে কাগজটা নিলো। হাতে নিয়ে কাগজে চোখ বুলালো। সেখানে লেখা, "হাই!" এবং তার পাশে একটা হাসির ইমোজি আঁকা। 

        মেয়েটা কাগজের থেকে চোখ উঠিয়ে আলিফের দিকে তাকাতেই সে দেখলো আলিফের হাতে আরেকটা একই সাইজের গোলাপি রঙের কাগজ। সে সেটা তার দিকে ধরে আছে। মেয়েটা সেটা নিলো। সেখানে লেখা, "কালো ড্রেসে আপনাকে সুন্দর লাগছে।" এই চিরকুটটা পড়ে মেয়েটা অবাক হলো। 

        মেয়েটার কালো ঠোঁটে মৃদু একটা হাসি জ্বলজ্বল করছে। সে আবার আলিফের দিকে তাকালো। আলিফের হাতে আরেকটা লাল রঙের কাগল ছিলো। এবার সে দ্রুত কাগজটা আলিফের হাত থেকে নিয়ে নিলো। সেখানে আলিফ লিখেছে, "নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন? অবাক হওয়ার মত কিছুই নেই। আপনি যদি আকাশী, মেরুন, বেগুনি, হলুদ, কমলা, নীল কিংবা সবুজ রঙের কোনো একটা ড্রেস পরতেন তাহলে সেই রঙের চিরকুটটাই আপনাকে দিতাম।" 

        মেয়েটার চোখেমুখে বিস্ময়। মুখের হাসিটা আরো খানিকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সে আলিফের দিকে আবার তাকাতেই তার হাতে আরেকটা রঙিন কাগজ। সে সেটা নিলো। সেখানে লেখা, "আপনার চোখদুটো ভীষণ সুন্দর। সেখানে এক সমুদ্র মায়া।" 

        মেয়েটার চিরকুট পড়া শেষ হতেই আলিফ আরেকটা কাগজ এগিয়ে দিলো। সেখানে লেখা, "মিছেমিছি প্রসংশা করছি প্লিজ এটা ভাববেন না। আমি শুধু সুন্দরের প্রশংসা করেছি মাত্র।" 

        "আপনি কি আমার উপর সেই ঘটনার জন্য এখনো রেগে আছেন?" এই চিরকুট পড়া শেষ করে মেয়েটা মাথা নেড়ে উত্তর দিলো, "না!" 

        "আমি অবশ্য ভেবেছিলাম আপনি রেগে আছেন। সেই ঘটনার পর অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হলাম কি-না তাই!" মেয়েটার হাসিমাখা মুখটাতে কিছুটা মেঘ এসে জড় হলো। আলিফ দেখেই সেটা বুঝলো। 

        "সবকিছুর জন্য আবারো সরি। নতুন করে পরিচয় হতে পারি?" মেয়েটা মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ...!" 

        "আমি আলিফ" এই চিরকুটের সাথে আলিফ তার পকেট থেকে একটা কলম বের করে মেয়েটাকে দিলো। 

        মেয়েটা সেই চিরকুটের উলটো পিঠে লিখল, "আমি নদী।" 

        আলিফ পকেট থেকে আরেকটা কলম বের করে একটা খালি কাগজে লিখলো, "ভীষণ সুন্দর নাম।" 

        মেয়েটা সেই চিরকুটের অন্য পাশে লিখল, "আমাকে বোঝার জন্য ধন্যবাদ।" 

        আলিফ এই লেখাটা পড়ে বুঝলো রুদ্রের কথাই তাহলে ঠিক। মেয়েটা কথা বলতে পারে না। আলিফের মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু সে চেষ্টা করলো নদী যাতে সেটা বুঝতে না পারে। 

        "আমরা বন্ধু হতে পারি?" আলিফ লিখল।
        "অবশ্যই।" নদী লিখল। 

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 3 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#18
পর্ব -০৫


 

        রুদ্র, আলিফ, ইরিনা, রিয়া, ফাহিম এবং সাত্যকি, সবাই মন খারাপ করে ঢাকায় ফিরলো। কারোই মন ভাল নেই। ক্লান্ত তারা। আকস্মিক ঝগড়ার কারণে তাদের ট্যুরটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। 

গতকাল সবাই মিলে সিন্ধান্ত নেয় সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়ার। একদিনের ডে ট্যুর। রাতে কমলাপুর থেকে তারা ট্রেনে উঠবে, সকালে পৌঁছে পরের দিন ঘুরে সেদিনই বিকালে ঢাকায় ব্যাক করবে। ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড, ট্রেনে যেতে মোটামুটি ছয় ঘন্টার মত সময় লাগে। অবশ্য বাসে গেলে আরো এক ঘন্টা কম সময়ে পৌছানো যায়। কিন্তু তারা চাচ্ছিল রাতে রওনা দিয়ে সকালে পৌঁছে কোনো এক হোটেলে ঘন্টা দুই রেস্ট নিয়ে বিকাল পর্যন্ত ঘুরে আবার সেদিনই ঢাকায় ফিরে আসবে। 

        রুদ্র, আলিফ, ইরিনা, রিয়া, ফাহিম, সাত্যকি, তারা সকলেই তাদের পরিকল্পনা মত কমলাপুর থেকে রাত ১১টার ট্রেনে উঠল এবং তারা সীতাকুণ্ডে পৌঁছালো পরদিন সকাল ৬ টায়। সীতাকুণ্ড পৌঁছে দুই ঘন্টার জন্য একটা হোটেলে চেক ইন করে সেখানে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। 

        সীতাকুন্ড বাজার থেকে ১২০ টাকা দিয়ে তারা একটা সিএনজি ঠিক করল। সিএনজি তাদের নামিয়ে দিবে পাহাড়ের প্রবেশ ফটকে। সেখান থেকেই তারা ট্রেকিং শুরু করবে। ট্রেকিং শুরু করার আগে পাহাড়ের ফটকের সামনে থাকা একটা দোকান থেকে তারা সবাই বাঁশের কঞ্চি ভাড়ায় নিলো। এক একটা কঞ্চি ২০ টাকা করে নিলো এবং দোকানদার জানালো, নেমে সেগুলো ফেরত দিলে সে তাদের ১০ টাকা ফেরত দিবে। তারা সেই দোকানেই তাদের ভাড়ি ব্যাগগুলো রেখে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে অবশেষে ট্রেকিং শুরু করল। সাধারণত ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে তাদের পাহাড়ের চূড়ায় পৌছাতে। 

        চন্দ্রনাথ পাহাড় এর উচ্চতা আনুমানিক ১০২০ ফুট। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্যে ২টা রাস্তা আছে। ডানদিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁ‌ড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ, কিছু ভাঙ্গা সিঁ‌ড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁ‌ড়ির পথ দিয়ে নামা সহজ। তাই তারা সকলে বাম দিকের পথ দিয়ে উঠতে থাকলো। 

        প্রায় ১ ঘণ্টা – ১.৫ ঘণ্টা ট্রেকের পর তারা শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির দেখতে পেলো। তারা সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো। সকলেই ক্লান্ত। ঘেমে একাকার। কেউ কেউ আর উঠতে চাচ্ছে না। কিন্তু রুদ্র সবাইকে উৎসাহ দিলো। সেই মন্দিরে এক পুরোহিতের সাথে তারা বেশ খানিকটা সময় কথা বলল এবং এই মন্দির সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারল। 

        মূলত প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী * ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন। 

        বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে ১৫০ ফুট দূরেই রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির, যা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে। তারা সকলেই খুব সর্তকতা সাথে কষ্টকর পথটা পাড়ি দিয়ে যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌছালো, ঠিক সেই মুহুর্তে তাদের সকল কষ্ট নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো আশপাশের সৌন্দর্য দেখে। 

        চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে তারা সকলেই দেখতে পেলো একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো সবাই উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে গেলো সকলের চোখ। 

        দুপুরের মধ্যে তারা চন্দ্রনাথ ঘুরে নিচে নেমে এলো। দুপুরের খাবার খেয়ে দুই একজন সিন্ধান্ত দিলো গুলিয়াখালী যাওয়ার। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উলটো দিকে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। মোটামুটি ঘন্টাখানেক সময় লাগে সেখানে পৌঁছাতে। সবাই ক্লান্ত। তারা আর কোথাও যেতে চাচ্ছিলো না কিন্তু শেষমেশ হাতে যেহেতু সময় ছিলো তাই তারা যাওয়ার সিন্ধান্ত নিয়ে নেয়। 

        গুলিয়াখালীতে পৌঁছে সমস্যাটা হয়। গুলিয়াখালীর সৌন্দর্য দেখে সবাই বিমোহিত। সবাই যার যার মত সমুদ্র বিলাস করতে থাকে। ঠিক সেই সময় ইরিনা এসে রুদ্রকে বলল, "রিয়াকে তুই এভাবে আর কতদিন ঘুরাবি?"
        "আমি রিয়াকে ঘুরাচ্ছি, মানে?" রুদ্র বলল। 
        "মানে কি বলতে চাচ্ছি তুই বুঝছিস না?"
        "না, একটু ক্লিয়ার করে বলল!"
        "রিয়া তোকে পছন্দ করে, তুই জানিস।"
        "কেউ পছন্দ করলে তাকে পছন্দ করতে হবে এমন কোনো কথা লিখা আছে কোথাও?"
        "না নেই। কিন্তু রিয়া দেখতে ভালো। ওর ফ্যামিলি ভালো। এছাড়া একটা মেয়ে হয়ে নিজে তোকে পছন্দ করে বলেছে।"
        "হ্যাঁ বলেছে। আমি তো বলছি না ও বলেনি। কিন্তু ওকে আমি শুধু বন্ধু হিসাবে পছন্দ করি। এর বাইরে কিছুই মনে করিনা।"
        "কেনো?"
        "কেনো মানে কি? পছন্দ অপছন্দ সবটাই-তো মনের ব্যাপার। ওকে পছন্দ হয়না। আমি কি করবো?"
        "সমস্যাটা ঠিক কোথায়?"
        "কি সমস্যা? 
        "ওকে পছন্দ না হওয়ার কারণ কি তরু?"
        "এখানে তরুর কথা আসছে কোথা থেকে?" ইরিনা হঠাৎ তরুর প্রসঙ্গ টেনে আনার কারণে রুদ্রের মেজাজটা হালকা বিগড়ে গেলো।

        "আসবেই তো। ওর জন্যই তুই রিয়াকে এভাবে এভয়েড করছিস। মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস। এছাড়া যাকে তুই কখনো দেখিস নেই, চিনিস না, কই থাকে, কি করে, কিছুই জানিস না, এরকম কারো জন্য রিয়াকে কেনো ঘুরাচ্ছিস?"

        "ঘুরাচ্ছি মানে কি? আবার তুই একই কথা বলছিস। আমি কি ওকে বলেছি আমার পিছে ঘুরতে? আমি ওকে সরাসরি বলেই দিয়েছি, ওকে আমি বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবি না। ভবিষ্যতে ভাববো সেরকম কোনো সম্ভাবনাও নেই। তারপরও যদি ও আমাকে পছন্দ করে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমার করার কিছুই নেই।" 

        ইরিনা মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। রুদ্রর কথা শেষ হলে সে কিছুটা সময় নিরব থেকে অবশেষে বলল, "তোর করার কিছু নেই বললেই সব সমাধান হয়ে যায় না রুদ্র। প্রথম দিকে তুইও তো রিয়ার সাথে প্রচুর কথা বলতি। ফোনে, মেসেজে। ও যখন তোকে পছন্দ করলো সেই মুহুর্তেই তুই পিছিয়ে গেলি। এখানে তোর কোনো দোষ নেই এটা বললে আমি মানছি না।
শোন, এক হাতে কখনো তালি বাজে না। তুই ভালো করে জানিস।"

        "আমি প্রথমে ওর সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করেছি, এখনো সেরকমই করি। কিন্তু যখন ও বলল, ও আমাকে পছন্দ করে আমি চাইনি এই ব্যাপারটাকে আগাতে কিংবা ঘোলাটে করতে। শুধু সেই কারণে আমি ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি। এটা ওর কথা ভেবেই করেছি।" 

        ইরিনা সবটাই বুঝে কিন্তু রিয়া কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছে না। সে রিয়াকে বুঝিয়েছে কিন্তু রিয়ার সেই এক কথা, রুদ্রকে সে পছন্দ করে। রুদ্র জন্য অপেক্ষা করবে। তার বিশ্বাস রুদ্র একদিন ঠিকই তাকে পছন্দ করবে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। ইরিনা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। রিয়ার কষ্ট সে কি করে মেনে নিবে? রিয়া তার সবচে ভালো বন্ধু। 

        ইরিনা বলল, "রুদ্র, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। তার কথা ভেবে রিয়া মেয়েটাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছিস?"
        "আমি রিয়াকে কষ্ট দিচ্ছি? তুই ঘুরিয়ে পেচিয়ে সেই একই কথা বলছিস। ভাল লাগছে না। তোর সাথে আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। প্লিজ!"
        "তাহলে কি বলল? তরুর ব্যাপারে তুই কিছু জানিস? শুধু ওই ফালতু কয়টা চিঠি ছাড়া!"
        "ফালতু চিঠি! ইরিনা প্লিজ, তুই তরুকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবি না। তোর মুখ থেকে তরুর নামটাও শুনতে চাচ্ছি না।" রুদ্র এবার রেগে গিয়ে চিৎকার করে ইরিনাকে কথাগুলো বলল। 

        ইরিনাও কিছুটা রেগে গেল। সে চুপ রইল না। সেও রাগী কন্ঠে বলল, "হ্যাঁ ফালতু। ফালতু একটা মেয়ে কোথাকার। যদি তোকে সত্যিই পছন্দ করে, ভালোবাসে তাহলে এভাবে নিজের পরিচয় গোপন করে চিঠি লিখবে কেনো? আসলে কি জানিস, ও তোকে নিয়ে খেলছে। লুকিয়ে তোকে দেখে হাসছে। আর তুই ও বোকা, ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। শুনে রাখ, যেদিন ও তোকে ছুড়ে ফেলে দিবে, ওর খেলা শেষ হবে, চিঠি দেওয়া বন্ধ করে দিবে, সেদিন বুঝবি কেউ ফিরিয়ে দিলে কতটা কষ্ট হয়।" 

        ইরিনার কথাগুলো একদমই পছন্দ হলো না রুদ্রের। সে রুক্ষ কন্ঠে, ইরিনার উপর চিল্লাতে চিল্লাতে বলল, "আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার তুই একটুও নাগ গলাবি না। আমি কিন্তু এটা কিছুতেই টলারেট করবো না।" 

        দূরে থেকে ফাহিম রুদ্রকে এভাবে ইরিনার উপর চিল্লাতে দেখেই ছুটে এলো। সে বলল, "ইরিনার সাথে এভাবে কথা বলবি না, রুদ্র। ভালো হবে না কিন্তু।" 

        ফাহিমের কথায় রুদ্র আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। সে বলল, "কি করবি তুই? হ্যাঁ কি করবি?" 
        "আমি কি করতে পারি তুই সেটা ভাল করেই জানিস।" ফাহিম বলল।

        রুদ্র প্রচন্ড রেগে ফাহিম কে গালি দিয়ে বলল, "হ্যাঁ জানি তুই কি করতে পারিস। সালার চামচা কোথা কার। যখন তোকে বলেছিলান ট্যুরে যাবো তুই সরাসরি আমাদের না করে দিলি। কিন্তু যেই শুনলি ইরিনা আসবে বেহায়ার মত ওর বডিগার্ড হতে চলে আসলি। তোর তো কোনো পার্সোনালিটি নেই।" 

        রুদ্রের কথায় ফাহিম প্রচন্ড অপমানিত বোধ করল। সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে রুদ্রের শার্টের কলার ধরল। ফাহিম যেই রুদ্রকে আঘাত করতে যাবে পাশে থাকা ইরিনা দ্রুত ওকে থামালো। ফাহিমকে টেনে নিয়ে গেলো কিছুটা দূরে। কিন্তু এবার ফাহিমকে মারার জন্য রুদ্রও এগিয়ে গেলো। 

        চিৎকার, চিল্লাচিল্লিতে এতোক্ষণে সবাই সেই জায়গায় জড়ো হয়ে গেছে। আলিফ দৌড়ে এসে রুদ্রকে ধরে থামাল। আর বলল, "রুদ্র কি করছিস এ-সব? বন্ধুদের মধ্যে সামান্য কথা-কাটাকাটি হতেই পারে। তাই বলে মারামারি করবি?" 

        "যে শুরু করেছে তাকে বলল। আমি কি শুরু করেছি। আর সবার সামনে ফাহিম কিছু না জেনে হঠাৎ এসে আমার কলাট ধরবে আর আমি চুপচাপ সেটা দেখে যাবো?" রুদ্র কথাগুলো বলতে বলতে ফাহিমকে মারবেই সেই জন্য আলিফের হাত থেকে মুক্ত হতে আলিফকে কিছুটা জোরে ধাক্কা দিলো। আলিফ সঙ্গে সঙ্গে ছিটে মাটিতে পরে গেলো। 

        সাত্যকি এগিয়ে এসে আলিফকে মাটি থেকে উঠতে সাহায্য করল। সে রুদ্র, ফাহিম এবং ইরিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, "হঠাৎ কি হয়েছে তোদের মধ্যে, যে এভাবে মারামারি করতে হবে?" 

        ইরিনা সংক্ষেপে ঘটনাটা বলে গেলো। ততক্ষণে রুদ্র কিছুটা শান্ত হলো। এদিকে ফাহিমকে ইরিনা বুঝিয়ে শান্ত করল। কিন্তু রিয়া সবটা শুনতেই তার মন খারাপ হলো। তার এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে, তার জন্যই আজ এই ঝগড়ার সূচনা। সে ইরিনাকে বলল, "আমি কি তোকে আমার হয়ে উকালতি করতে বলেছি?" 

        ইরিনা বলল, " না বলিস নেই। কিন্তু...!"

        ইরিনাকে কথা শেষ করতে দিলো না রিয়া। সে বলল, "তাহলে আমার জন্য কেনো তোরা তোদের মধ্যে ঝগড়া করছিস? আমি কখনোই চাই না আমার জন্য তোদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক। আর যদি সেটা হয় তাহলে সেটা আমাকে অনেক কষ্ট দিবে। আসলে আমার তোদের সাথে আসা উচিত হয়নি। তুই ওভাবে জোর না করলে আমি আসতামই না। আর আমি আজ এখানে না এলে এই ঝগড়াটাও হতো না।"

        "তুই এভাবে কেনো ভাবছিস। তেমন কিছুই হয়নি। আমি শুধু রুদ্রের সাথে কথা বলছিলাম। আমার একটা কথায় রুদ্র কিছুটা রেগে গেলে, ও কিছুটা রাগী কন্ঠে আমাকে ক'টা কথা বলছে। আমি এতে কিছুই মনে করিনি। কিন্তু ফাহিম সবটা না বুঝে এভাবে হঠাৎ রিয়েক্ট করবে কে জানতো।" 

        সবাই ফাহিমের দিকে তাকালো। ফাহিম হঠাৎ ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। সে তার নিজের কাজের জন্য লজ্জিত বোধ করছে এখন। সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে সরি বলে রাগে গজগজ করতে করতে সেখান থেকে চলে গেলো। কেউ অবশ্য তাকে থামালো না। 

        এদিকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুদ্রের সামনে গিয়ে রিয়া হাত জোর করে বলল, "প্লিজ, ইরিনার কথায় আপনি কিছু মনে করবেন না। আসলে ভুলটা আমারই। আমার উচিত হয়নি আমার সবকথা ওর সাথে শেয়ার করা। ও সবটা শুনে ভুল বুঝে আজ আপনার সাথে এটা নিয়ে তর্ক করেছে। আমি ওকে আগেই নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু...!" রিয়া কিছুটা সময় থেমে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে আবার বলল, " আজ আমি সবার সামনে কথা দিচ্ছি, আমি আপনার সামনে আর কখনো আসবো না। আমি চাইনা, আমার জন্য আপনি বিরক্ত হোন। সবকিছুর জন্য আমি সত্যি লজ্জিত। আমাকে ক্ষমা করবেন।" শেষ পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও রিয়া নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না। তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বেরিয়ে এলো। 

        রিয়াকে কাঁদতে দেখে সবার মুখই মলিন হয়ে উঠল। কেউ এটা আশা করেনি। তাৎক্ষণিক এরকম পরিস্থিতিতে কি বলবে কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। 

        রুদ্র বলল, "আসলে এখানে আমারও ভুল কম না। এভাবে হুট করে রেগে যাওয়া আমার একদমই চিন্তা হয়নি।" কথাগুলো বলে রুদ্র থেমে সবার উদ্দেশ্যে আবার বলল, "সরি!" 

        সাত্যকি আর ইরিনা দুইজন মিলে রিয়াকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। 

        রিয়া কেনো হঠাৎ এভাবে কেঁদে দিলো? রিয়া একদমই এভাবে সবার সামনে কাঁদতে চায় নি। কিন্তু তখন রুদ্রকে কথাগুলো বলার সময় তার বুকের মধ্যে অদ্ভুত একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল। অনেক চেষ্টা করেও সে নিজেকে সামলাতে পারে নি। সবার সামনে কেঁদে ফেলার জন্য তার এখন লজ্জা লাগছে। সে কারো মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। তাই ইরিনা আর সাত্যকিকে বলল, "আমি কিছুটা সময় একা থাকতে চাচ্ছি।" 

        সাত্যকি বলল, "রিয়া, তুমি চাইলে ওই পাশ দিয়ে একা হেঁটে আসতে পারো। আশা করি তোমার ভালো লাগবে।" 

        রুদ্র আলিফকে জড়িয়ে ধরে বলল, "সরি দোস্ত।" 
"ধুর পাগল আমাকে কেনো সরি বলছিস। আমি কিছু মনে করিনি। রাগের মাথায় একটু আধটু ভুল সবার-ই হয়।" আলিফ কথাগুলো বলে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরল। 

        এক মুহুর্তে তাদের ট্যুরটা নষ্ট হয়ে গেলো। কেউ আর অনন্দ করার মুডে নেই। এই মুহুর্তে সবার-ই মন খারাপ। সেই কারণে তারা গুলিয়াখালীতে বেশিক্ষণ থাকলো না। সবাই মোটামুটি স্বাভাবিক হলে সেখান থেকে সরাসরি সীতাকুণ্ড বাস স্ট্যান্ডে চলে এলো। তাদের ভাগ্য অবশ্য সহয় হলো। দশ মিনিট পরেই একটা বাস পেয়ে গেলো। সেই বাসে ছয়টা টিকেট কেটে সেই সময়ই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। সবার চাচ্ছে খুব দ্রুত যার যার বাসায় ফিরে যেতে। 

        অবশেষে ট্যুর থেকে সবাই মন খারাপ করে রাত দশটার দিকে ঢাকায় এসে পৌছাল। আলিফ, ইরিনা, রিয়া, ফাহিম, সাত্যকি এবং রুদ্র কারোই মন ভাল নেই৷ বাসের মধ্যে যে যার মত চুপচাপ রইল। বাস থেকে নেমেও প্রয়োজনীয় দুই একটা কথা ছাড়া কেউ কারো সাথে তেমন একটা কথা বলল না। 

        সাত্যকি হলে থাকে এবং ফাহিম ভার্সিটির ওদিকে একটা মেসে থাকে। তাই সে বলল, আমি সাত্যকিকে হলে পৌঁছে দিয়ে চলে যেতে পারবো। এটা বলেই তারা দুইজন চলে গেল। 

        রিয়া আর ইরিনার বাসা একই এলাকাতে। আলিফ চাচ্ছিলো তাদের পৌঁছে দিতে। কিন্তু ইরিনা শুনলো না। 
        "আমরা দুইজনে চলে যেতে পারবো। আমাদের এগিয়ে দেওয়া লাগবে না।" ইরিনা বলল। 
      আলিফ জোর করল না। রুদ্র একটা রিকসা ঠিক করে দিলো। সেটাতে করেই ইরিনা এবং রিয়া চলে গেলো। 

        ইরিনারা চলে গেলে আলিফ বলল, "চল এবার বাসার দিকে যাই।" 
        "এই মুহুর্তে এক কাপ চা'য়ের সাথে একটা সিগারেট লাগবে আমার মাথা ঠিক করতে। মাথা একদমই কাজ করছে না। মেজাজটাও একদম বিগড়ে আছে।"
        আলিফ বলল, "আচ্ছা চল। আগে তোর মেজাজ ঠিক করি। তারপর না হয় বাসায় যাওয়া যাবে।" 

        রুদ্র চা শেষ করে কিছুটা সময় নানা বিষয় নিয়ে আলিফের সাথে আলাপ করে বাসায় এলো রাত এগারোটার পরে। রুদ্রকে দেখে জাহানার খানিকটা অবাক। একদম ছন্নছাড়া অবস্থা। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। জাহানারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুদ্র বলল, "মা, আমি গোসল করে ঘুমাবো। রাতে খেয়ে এসেছি।" শেষের কথাটা মিথ্যে বলল। রুদ্রের এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না। তার একটা ঘুম দরকার। দীর্ঘ ঘুম। 

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#19
অদ্ভুত সুন্দর
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#20
Bahh clps
[+] 1 user Likes Fardin ahamed's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)