Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
আমি ভালোবাসতে ভালোবাসি !
কিন্তু কাকে বা কি জিনিসকে  বাসবো ভালো?
আজ জীবনের এক পর্যায়ে এসে শিখেছি 
ভালোবাসা জিনিষটা অতীব কালো !
বৌকে ভালোবাসো খাবে তুমি গালাগালি !
বন্ধু আছে সাথে তাইতো বাড়ে গলাগলি !
ছেলেমেয়ে ? কঠিন পৃথিবী ভাই !
তোমাদের শারীরিক সুখের জন্য 
কেন আমাদের জন্ম ভেবে দেখো তাই !
সত্যি করে ভালোবাসা কি ভেবে দেখি এই জীবনে 
মায়ের রক্ত নিঃসৃত দুধ আর বাবার 
অকুন্ঠ পরিশ্রম, এখন জানছি প্রতিক্ষণে
 
 
Dada_of_India
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
[Image: 11.jpg]

জীবন শুধুই যোগ বিয়োগের খেলা
মিথ্যে মিথ্যে ভালো থাকার ছল
মুখোশ ঘেরা আলগা হাসির রেশ
দিনান্তে সেই দু চোখ ভরা জল
এই জীবনের খেলনাবাটির ঘরে
ভাঙছি আমি একটু করে রোজ
এই যে এত ভিড়ের মাঝে একা
কেউ রাখে না ভেতর ঘরের খোঁজ।
জীবন এমন নিছক খেলাঘর?
জিতে যাওয়ার নিখুঁত অভিনয়?
এই যে দেখো স্বজন ঘেরা জীবন
ভেঙে যাওয়ার মুহূর্তদের নয়?
তবুও জীবন আবেগের ঘনঘটা
'লড়াই' যে জীবনের এক নাম।
নিজেকে গোপনে বিরহ নামে ডাকি
বিরহদের মেটায় না কেউ দাম।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
মানুষের কথা বলি বন্ধু

জীবনের পথে চলি বন্ধু
সকল কালো প্রিয় আমার
সকল ভালো হিয়া আমার
সকল আঁধার আমার আলো
সকল কে আমি বাসি ভালো !
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
এখনো বাকি অনেক পথ চলার !

এখনো বাকি অনেক কথা বলার !
এখনো বাকি দেখা সন্ধ্যার ধ্রুবতারা !
এখনো বাকি মানুষের মাঝে হতে সর্বহারা !
এখনো বাকি শুনতে ভোরের পাখিদের গান
এখনো বাকি বুঝতে শৈশবের কলতান !
এখনো বাকি পৃথিবীর দিতে হিসাব !
বাকি আছে জীবনের সকল হিসাব কিতাব
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
*ফিল্মস্টার দিলীপকুমার* বিমানে উঠলেন। বিজনেস ক্লাসে তেমন লোক নেই আজ। তাঁকে বিমানে তুলে দিতে কয়েকজন এসেছিলেন সঙ্গে। আজকাল সঙ্গে লোক না থাকলে চলাচল করা মুশকিল। এয়ারপোর্ট থেকে ট্রেন, স্টেশনে ভক্তেরা অতিষ্ঠ করে তোলে। এদের কিছু বলাও যায় না। যাইহোক দিলীপকুমার ওরফে ইউসুফ বিমানের সিটে গা এলিয়ে দিলেন।  কিছু সময় পরে বিমানসেবিকা হাসি হাসি মুখে বললেন, "স্যার জুস নেবেন ?"

মেয়েটিকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে দিলীপকুমার-কে দেখে তার বুকের ভেতরটা উথলে উঠছে। একগাল হেসে দিলীপকুমার 'হ্যাঁ' বলতেই মেয়েটি তাঁর পাশের সিটের লোকটিকে একই প্রশ্ন করল। ইউসুফ এতক্ষণ লোকটাকে লক্ষ্য করেননি। লোকটি তাঁর পাশে জানলার দিকের সিটে বসে খবরে কাগজ পড়ছিলেন। বিমানসেবিকার প্রশ্নে লোকটি কাগজ থেকে মুখ তুলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছেন, সে বলতে কী চাইছে ? এবার ইউসুফ তাঁর মুখ দেখলেন। এয়ার ইন্ডিয়ার বিজনেস ক্লাসের টিকিট বেশ দামী। অথচ লোকটাকে একেবারেই সাধারণ বলে মনে হচ্ছে। জৌলুসহীন হাফ হাতা জামা লোকটা না গুঁজে পড়েছেন। সঙ্গে ছাই রঙের প্যান্ট। মনে হচ্ছে এই জামা প্যান্টের কাপড় অতি সাধারণ দোকান থেকে কেনা। ইউসুফ এও লক্ষ্য করলেন, তাঁর পায়ে জুতো নেই, রয়েছে সাধারন একটা চামড়ার চটি। আর রয়েছে কাপড়ের একটা ঝোলা ব্যাগ। তাঁর বড় কৌতূহল হচ্ছে, এমন একটা লোককে বিজনেস ক্লাসের টিকিট কেটে দিল কে ?
এমন মানুষরা বিমানে উঠে হাভাতের মতো খেতে শুরু করেন, ইউসুফ দেখেছেন। তাই এই লোকটা যখন বিমানসেবিকার প্রস্তাব শুনে বললেন, 'অনলি ওয়াটার উইল ডু।' তখন তাঁর কৌতুহল বেড়ে গেল। ছোট করে ছাঁটা চুল আর ছোট গোঁফের এই মানুষটার বয়স কত হবে ? মনে হচ্ছে পঞ্চাশ পার করেছেন। বেশ লম্বা। হাতের কাগজটা ইংরেজি। খুব মন দিয়ে তিনি সেটা পড়ছেন। মাঝে মধ্যে পেন্সিল দিয়ে লেখার নীচে দাগ দিচ্ছেন। এখন অভিনয়ের কাজ এত বেড়ে গেছে যে, ইউসুফ প্রতিদিন খবরের কাগজ পড়ার সময় পান না। আগে খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস ছিল। কিন্তু তিনি এমন কাউকে চেনেন না, যিনি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে পেন্সিল দিয়ে আন্ডারলাইন করেন। জুসের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে গোয়েন্দার মতো ইউসুফ লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। হাতে ঘড়ি নেই। কব্জিতে কোন দাগও নেই। কাজেই ঘড়ি পরার অভ্যাস লোকটার নেই। কথাটা মাথায় আসতেই নিজের ঘড়ির দিকে নজর গেল তাঁর। সম্প্রতি ভারত সরকার এইচ এমটি নামে একটা ঘড়ির কারখানা খুলেছে ব্যাঙ্গালোর শহরে। এটা সেই কোম্পানির একটা দামী মডেল। বিমান ছাড়ার সময় হয়েছে। সেবিকা জুসের গ্লাস নিতে এসে বুঝিয়ে বললেন বিমানের ভেতর কি কি সাবধানতা নিতে হবে। ইউসুফ দেখলেন পাশের লোকটি মন দিয়ে সেবিকার কথা শুনছেন। এই সুযোগে লোকটার সঙ্গে তার চোখাচোখি হল। অথচ লোকটার দৃষ্টিতে কোনও পরিবর্তন এলো না। ইউসুফ বুঝলেন এই মানুষটা দিলীপকুমার কে চেনেন না। বিমানসেবিকা একটা খাতা এগিয়ে দিয়েছেন। সে দিলীপকুমারের অটোগ্রাফ নিতে চায়। ইউসুফ সই দিলেন, কিন্তু তাঁর ভেতরটা কেমন যেন করছে। পাশের মানুষটিকে তিনি কিছুতেই ধরতে পারছেন না।
বিমানসেবিকা কিছু খাবার আর চা দিতে এসেছিল। এতক্ষণে ভদ্রলোকের কাগজ পড়া শেষ হয়েছে। তিনি কাগজ গুটিয়ে রেখে চা নিলেন, আর কিছু খেতে রাজি হলেন না। পাশাপাশি বসে চা খাওয়ার সুবাদে মহম্মদ ইউসুফ খান সুযোগ পেলেন মানুষটার সঙ্গে দুটো কথা বলার।
'আপনি কি বোম্বাই যাচ্ছেন ?'
ইউসুফের এই প্রশ্নে ভদ্রলোক 'হ্যাঁ' সূচক মাথা নেড়ে জানতে চাইলেন, 'আপনিও বোম্বাইয়ে থাকেন ?'
এই প্রশ্নে ধাক্কা খেলেন  ইউসুফ। বাইশ বছর বয়সে প্রথম রূপোলী পর্দায় এসেছিলেন তিনি, দেখতে দেখতে দশ বছর কেটে গেছে। এখন ভারতের যে কোনও শহরে তাঁকে দেখতে হিড়িক পড়ে যায়। আর এই লোকটা কিনা প্রশ্ন করছে, সে কোথায় থাকে !  নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ইউসুফ বললেন, 'হ্যাঁ, বোম্বাইয়ে থাকি। আমি সিনেমা করি। আপনি দিলীপকুমারের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন।'  অনেক সময় মানুষ আশা করেন না, তাঁর পাশের সিটে বিখ্যাত অভিনেতা এসে বসবেন। তাই চিনতে পারেন না। পরে আফসোস হয়, ইশ্, যদি আলাপ করতাম। এই সব সাতপাঁচ ভেবে নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ইউসুফ। তাঁর খুব আশা ছিল, নাম শুনে লোকটা তাকে নিশ্চয়ই চিনবেন। আশার সেই আয়না ভেঙে পড়ল যখন লোকটা বললেন, 'মাফ করবেন। আমার সিনেমা দেখা হয় না।'
ইউসুফ খান বললেন, 'এক দশকের বেশি সময় ধরে সিনেমায় অভিনয় করছি। অনেকেই আমাকে বোম্বাইয়ের এক নম্বর নায়ক বলেন।'
   জ্বলন্ত অঙ্গারে জল দেওয়ার মতো করে লোকটা বললেন, 'ওঃ আচ্ছা।' তাঁর চা খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। ব্যাগ থেকে একটা বই বার করে তিনি এবার সেখানে ডুবে গেলেন।
   পাইলট ঘোষণা করলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান বোম্বাইয়ে নামবে। আকাশ পাতাল ভাবছেন ইউসুফ। লোকটার যথেষ্ট টাকা আছে। নইলে বিমানের বিজনেস ক্লাসে উঠতে পারতেন না, অথচ তিনি দিলীপকুমারের নাম জানেন না ! এক যুগ অভিনয় করার পরেও যদি এমন হয় তাহলে নিজের উপর বিশ্বাস টলে যায়। ভদ্রলোক তাঁর কাগজ বই গুছিয়ে নিচ্ছেন। বিমান মাটিতে নেমে পড়েছে। গতিবেগ কমছে ধীরে ধীরে। এবার থেমে যাবে। সৌজন্যের খাতিরে হাত বাড়িয়ে দিয়ে দিলীপকুমার বললেন, 'আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো।'
   ভদ্রলোক হাসি মুখে হাত মেলালেন। আর ঠিক তখনই দিলীপকুমার করলেন সেই আকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নটা, 'আপনার নামটা যদি....।'
 ভদ্রলোক উঠতে উঠতে বললেন, *'জে আর ডি টাটা।'*
   ইউসুফ নিজেও উঠতে যাচ্ছিলেন। ভদ্রলোকের নাম শুনে আবার বসে পড়লেন। মনে হচ্ছে তিনি সিটের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছেন। ফেরার পথে গাড়ি থামালেন বইয়ের দোকানে। কিনলেন  *জে আর ডি টাটা*-র উপর লেখা একটা বই। লেখক তার লেখা শুরু করেছেন টাটা সাহেবের একটি উক্তি দিয়ে, *"গভীর চিন্তা ও পরিশ্রম ছাড়া কখনোই সার্থক কিছু পাওয়া যায় না ( Nothing worhwhile is achieved without deep thought and hard work ).*
 
   পরবর্তীকালে মধুবালাকে এই গল্পটা বলতে বলতে দিলীপ কুমার বলেছিলেন, 'আমি ভাবছিলাম লোকটা আমাকে চিনতে পারছেন না কেন !  এখন ভাবছি, আমি তাঁকে কেন চিনতে পারিনি !'  জিজ্ঞাসা না করলে তিনি তাঁর নামটা পর্যন্ত বলতেন না।
 

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
বড় অপুর্ব লেখা,

 
বেলুড় /সুবোধ সরকার 
--------------------------------
 
আমি একটা কোনায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ।
 
দুটি ছেলে গেরুয়া বসন পরে
মন্দিরের সিঁড়ি মুছছিল।
এত মন দিয়ে
আমি কাউকে সিঁড়ি মুছতে দেখিনি
এত ভালবাসা দিয়ে
আমি কাউকে ধুলো তুলতে দেখিনি।
সিঁড়ি নয়
যেন জননীর ত্বক থেকে
ধুলো তুলছিল।
এভাবে কেউ সিঁড়ি থেকে
ধুলো মুছতে পারে
আমি কোথাও দেখিনি।
 
স্থিতপ্রজ্ঞ  মহারাজকে  জিজ্ঞাসা করলাম
এই ছেলে দুটি কে?
মহারাজ মৃদু হেসে বললেন
একজন নিউক্লিয়ার ফিজিসিস্ট
একজন আইবিএম-এর ছ লাখ টাকার চাকরি ছেড়ে এখানে এসেছে।
সিঁড়ি ধুতে এসেছে,যেসিঁড়ি দিয়ে মানুষ ওপরে ওঠে
তা যেন পরিস্কার হয়।
 
মহারাজ চলে গেছেন, সন্ধ্যা নেমে আসছে গঙ্গায়
আমার ভেতরেও নামছে সন্ধ্যা
সারা পৃথিবীতে এত সিঁড়ি 
সিঁড়িতে সিঁড়িতে এত দাগ
এত ক্রোধ
এত অপমান ?
 
আরতি শুরুর আগে মনে হল
যে সিঁড়ি মুছতে পারে না, সে
কোনদিন
মানুষের চোখের জল মুছতে পারবে না।
 
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
মাস্টার মশাই, আপনি সব দেখেছেন!
ক্লাস ফাইভে সবার মাথায় চক ছুঁড়েছিলাম, ক্লাস সেভেনে লুকিয়ে আনন্দলোক এনে টিফিন টাইমে দেখাচ্ছিলাম,
ক্লাস নাইনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম,
আর এই সবকটা ঘটনার কোনোটাই আপনার নজর এড়ায়নি, মাস্টারমশাই।
আপনি গার্জেন অর্থাৎ অভিভাবকদের কল করেননি!


হেড মাস্টার মশাইয়ের কাছে নিয়ে যাননি, কলেজ থেকে সাসপেন্ড করেননি…
কান ধরে বেঞ্চে দাঁড় করিয়েছিলেন দু’বার, আর একবার নিল ডাউন, তার সাথে প্রবল ধমক তো ছিলোই।
সেই শাসনে আপনাকে বা আমাকে, কাউকেই মা বাবাকে ধরে টানতে হয়নি।

মাস্টারমশাই, আমার কখনো মনে হয়নি আপনি কেন মারছেন, আপনারও শাসন করতে সংকোচ হয়নি।
বাবা মা আর আপনি . এরাই তো আমার বাল্য-কৈশোরের ঠিক বেঠিক চিনিয়ে বাকি জীবনের রাস্তায় রওনা করিয়ে দিলেন।

শাস্তি দিয়ে শুরু করলাম বটে, তাই বলে স্মৃতির আলমারিতে ওইগুলোই শুধু গুছানো নেই।
সেইসব দিনগুলো আপনার ওপরে বড় রাগ হতো, মাস্টারমশাই, আমার সব প্রিয় কাজে বাধা ওই বাড়ির দু’জন আর আপনি।
আজ বুঝি, কতখানি আপন ভাবলে অমন করে ফিরিয়ে আনা যায় ভুল রাস্তা থেকে।
অনিন্দ্য যেদিন হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো, সেদিন আপনি ওকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালে, ওর মা বাবা নেই,
মামার বাড়ির এককোণে পড়ে থাকা এক অবলা কিশোর,

সেটা কি আপনি জানতেন, মাস্টারমশাই?
আজও জানিনা সেটা, শুধু জানি সেদিন রাতে আর কেউ নয়, আপনিই ছিলেন ওর পাশে জেগে, সব ওষুধ কিনে দিয়ে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন আপনিই।

একথা আপনি কোনোদিন বলেননি, মাস্টারমশাই,
অনিন্দ্য বলেছে গত রিইউনিয়নে হিউস্টন থেকে এসে।

শুধুই পড়ানো আপনার কাজ ছিলোনা, মাস্টারমশাই।
রেজাউল যে অভাবের তাড়নায় বাড়ি থেকে না খেয়ে আসে, আপনি জানতেন।
তাই দুটো টিফিনবাক্স আসতো আপনার সাথে,
আর ওর বাড়ি ফেরা হতো আপনার বাড়ি ঘুরে। রেজাউল আজও খুব কেউকেটা কেউ না,
তবে জিতু চাকরিতে সচ্ছল , আর পাঁচটা অনাথ বাচ্চার খাওয়াপড়ার অভিভাবক।

ওই পাঁচটা অনাথ আপনার নাম জানে মাস্টারমশাই।
আসলে আপনি সব কিছু দেখতেন মাস্টারমশাই।
আমাদের গুণগুলো আপনার হাতে তীক্ষ্ণমুখ হয়ে বর্তমানের তূণে আগামীর সাথে লড়ার বাণ হয়ে যেতো, আমাদের দোষগুলো মাথাচাড়া দেওয়ার আগে দশবার ভাবতো,
আপনার চোখে পড়ে গেলে কি হবে, আপনি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা কিছু ছাত্র তৈরি করেননি, মানুষ করতে চেয়েছেন আমাদের প্রত্যেককে।
এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা কলেজে পড়ে, কেউ বা সেই গণ্ডী পার হয়ে কলেজে।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখন কেমন শিঁটিয়ে থাকেন, নিজের বিষয় ছাড়া আর কিছু আগ বাড়িয়ে বলতে যাননা,
কারণ অভিভাবক তথা ‘গার্জেন’রা সেটা পছন্দ করেন না নাকি।

এখন আর আপনি কারো গার্জেন হতে পারতেন না মাস্টারমশাই,
মানুষ গড়ার কারিগর আর এ সমাজ চায় না, তার চাহিদা বেশি নম্বরের উপায় বলে দেওয়া পেশাদার শিক্ষাজীবী,
যেখানে ফেলো কড়ি মাখো নম্বরটাই মূলমন্ত্র। আমরা মানুষের বদলে কিছু রোবট তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে গেছি, মাস্টারমশাই।

উত্তর প্রজন্মের কাছে আপনারা ফসিল মাস্টারমশাই। এখন আপনার কিচ্ছু দেখা বারণ, আর দেখলেও সেটা ছাত্র বা বাবা মা কে দেখানো তো ভয়াবহ অপরাধের মধ্যে পড়ে!
এই সব দেখি, আর মনে মনে ্প্রনাম জানাই আপনাকে।

ভাগ্যিস আপনি সব দেখতেন , মাস্টারমশাই!
[+] 2 users Like আমিও_মানুষ's post
Like Reply
এসির বাতাস খেতে মার্কেটে ঢুকে মেয়েদের পোশাক নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। হঠাৎ কর্মচারী বললো, "এভাবে নাড়াচাড়া না করে বউ বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসুন। শপিং করতে মজা পাবেন। "

নিজেকে অপমানিত বোধ করছি, তবুও সামান্য ভাব নিয়ে বললাম, " আমার গার্লফ্রেন্ডের জন্য আমি কিনতে এসেছি তোমার সমস্যা কি? "
- স্যরি স্যার, তবে আমি বলছিলাম কারণ আপনি পছন্দ করে নিলে ঝামেলা হবে। ৭০% এর বেশি তার পছন্দ হবে না, তখন আবার রিটার্ন কিংবা পরিবর্তন করতে আসতে হবে।
- বললাম, আমার গার্লফ্রেন্ড এখানেই আসছে তাই অপেক্ষা করছি।
লোকটা আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি খুব বুদ্ধিমানের মতো হাঁটতে লাগলাম, কিন্তু এখন গার্লফ্রেন্ড কীভাবে আনবো। কারণ আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড তো দুরের কথা, মেয়ে বান্ধবীও নেই।
এমন করে আমি যখন চিন্তার সাগরে ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছি তখন হঠাৎ করে একটা মেয়ে সেখানে প্রবেশ করলো। আমি তার কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলাম।
- কেমন আছেন?
- কে আপনি?
- একটা উপকার করবেন?
- যেমন।
আমি তাকে সবকিছু খুলে বললাম। মেয়েটা তখন আমার সঙ্গে গার্লফ্রেন্ডের মতো অভিনয় করতে লাগলো। তারপর তার যা যা লাগবে সবকিছু সে কিনতে লাগলো। সবকিছু কেনা শেষ করে মেয়েটা আমাকে বললো,
- একটা কথা বলতে চাই।
- বলেন।
- আপনি যেহেতু কিছুই কিনবেন না তাহলে শুধু শুধু এখানে কেন এসেছেন?
- এসির বাতাস খেতে। বাহিরে প্রচুর গরম তাই ভাবলাম কিছুক্ষণ ফ্রী ফ্রী এসির ভেতরে বাতাস উপভোগ করি।
মেয়েটা খুব হাসতে লাগলো। তার হাসি দেখে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইল, আমি অনেকটা গর্ব নিয়ে বুক টানটান করলাম।
- ঠিক আছে তাহলে আপনি আরো কিছুক্ষণ বাতাস খেতে থাকুন আমি চলে গেলাম।
- আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু আমিও আপনার সঙ্গে বের হতে চাই। কারণ এরা ভাববে গার্লফ্রেন্ড চলে গেছে বয়ফ্রেন্ড যাচ্ছে না কেন?
- না না তাহলে সমস্যা হবে, বাহিরে আমার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আর তিনি আপনার সঙ্গে বের হতে দেখলে বকাঝকা করবেন।
মেয়েটা চলে গেল ক্যাশিয়ারের কাছে। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো।
আমি ভাবলাম বাহহ কত বুদ্ধি তার। আমাকে আরও কিছুক্ষণ বাতাস খাবার ব্যবস্থা করে চলে গেল।
কিন্তু আর না, এবার বের হতে হবে।
বের হতে যাবো এমন সময় আমাকে তারা ধরে ফেললো।
- ভাই টাকা না দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
- কিসের টাকা?
- আপনার গার্লফ্রেন্ড ১৩৭৯০ টাকার পোশাক নিয়ে গেল সেই টাকা।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম। ফ্রীতে বাতাস খেতে এসে আমি আমার ২২ হাজার টাকা দামের মোবাইল জমা রেখে বের হতে চাইলাম। কিন্তু সেই প্রথম যে লোকটার সঙ্গে কথা হয়েছে সে আমার কাছে এসে বললো,
- এখানে অপেক্ষা করুন, আর আপনার পরিচিত কাউকে টাকা নিয়ে আসতে বলেন।
- আশ্চর্য, এতক্ষণ আমি কি করবো?
- কেন? ফ্রী ফ্রী এসির বাতাস খাবেন।
[ সেদিন রাতে আমি বাসায় ফিরেছিলাম রাত বারোটার দিকে। ]
[+] 2 users Like আমিও_মানুষ's post
Like Reply
*বাঁচতে শেখা*

"কিপটে বুড়ি, আমি আর কাজ করবো না তোমার বাড়িতে । হাড়-মাস জ্বালিয়ে খেল, নতুন বছরে দুশো টাকা মাত্র বোনাস চাইছি, তাও দেবে না ! ওই টাকা নিয়ে তুমি কি স্বর্গে যাবে ? তিন কুলে তো কেউ নেই ? কী করবে ওই টাকা দিয়ে তুমি ?"
"দরকার হলে, রাস্তার ভিখিরিদের দান করে দেব তবু এগারোশো টাকা মাইনের এক পয়সা বেশি পাবি না, এই বলে রাখলাম ।"
"এই শেষ, নাক-কান মুললাম, তোমার বাড়িতে যদি আর কাজে আসি তবে নাম বদলে দিও ।চললাম আমি ।"
এই নিয়ে প্রায় বার চল্লিশেক কাজ ছেড়েছে টুম্পা । প্রত্যেক বারই আর না আসার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে চলে গেছে, কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর, খুব বেশি হলে দুপুর ছেড়ে বিকেল, এই হল তার রাগের সীমারেখা । বহু চেষ্টা করে একবার সন্ধ্যে ছয়টা অবধি আসেনি সে, কিন্তু  সাড়ে ছয়টায় মৃণালিনী দেবীর একটা ওষুধ আছে । তাই আবার সে ছুটতে ছুটতে গ্যাছে । ওই ওষুধ না খেলে বুড়ি সারা রাত দু-চোখের পাতা এক করতে পারবে না ।
মৃণালিনী ভবনের এই মস্ত প্রাসাদের মতো বাড়িটার বিশাল গেটটা ঠেলে প্রতিদিনের মতো ভিতরে ঢোকে টুম্পা । তার শরীরে সকালের ঝগড়ার কোন রেশ নেই আর । ঘরে ঢুকেই একেবারে দিদিমনির কায়দায় শাসন শুরু করে দেয় সে -
"এই বুড়ি, দুপুরে খেয়েছো ?"
- "না খেয়ে কি তোর জন্যে বসে থাকবো মুখপুড়ি ? আসতে এত দেরি হলো যে ? সিরিয়ালের প্রথম পার্টটা তো হয়েই গেল ।"
- "সে হোক গে, ওষুধ খেয়েছো ?"
- "না ।"
- "দেখলে, একদিন একটু দেরিতে এসেছি অমনি অনিয়ম শুরু ।"
- "এই, মেলা জ্ঞান দিস না তো । বক্ বক্ না করে মুড়ি চানাচুরটা মেখে নিয়ে আয় দেখি । কুচি কুচি করে পিঁয়াজ দিস আর হ্যাঁ, একটা কাঁচা লঙ্কা চিরে আনবি ।"
- "খালি হুকুম আর হুকুম । এই নাও ওষুধ, গিলে আমায় শান্তি দাও ।"
- "হুম, আমি গেলে তুই তো শান্তিই পাস । বুড়ি মরলে তোকে দেখবে কে রে মুখপুড়ি ?"
- "ও নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না, আমাকে দেখার লোক অনেক আছে ।"
- "কেন রে প্রেম টেম করছিস নাকি ? বলিস নি তো !"
- "থামবে তুমি ?"

চলতে থাকে তাদের আবোলতাবোল বক বক । প্রতিদিন প্রায় এভাবেই সন্ধ্যে কাটে দু-জনের । দিন শুরু হয় ঝগড়া দিয়ে, শেষও হয় ঝগড়া দিয়ে । মাঝে লেগে থাকে এক রাশ অভিমান, আবদার, অভিযোগ আর খুনসুটি । দুজনের বয়সের পার্থক্য কম করে হলেও পঞ্চাশ-বাহান্ন হবে, অথচ বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে দুই বান্ধবী বসে ছেড়া পুতুলের মুন্ডু নিয়ে ঝগড়া করছে ।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ! দু-জনের ভাগ্য বোধহয় ঈশ্বর একই কলমে লিখে ছিলেন । টুম্পার স্বামী বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাকে ছেড়ে সৌদি আরব চলে যায় । আজ প্রায় সাত বছর হয়ে গেছে আর ফেরেনি সে । গত কয়েক বছর হলো টুম্পা অপেক্ষা করাও ছেড়ে দিয়েছে  । উত্তর প্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে 'গুতেল মুন্সি' নামের এক দূর সম্পর্কের কাকু তাকে কলকাতায় নিয়ে আসে মাত্র দুই বছর বয়সে । তাই উত্তর প্রদেশের গ্রামের বাড়ি অথবা তার নিজের মা-বাবার মুখও মনে নেই তার । এবং না থাকাটাই স্বাভাবিক ।
গুতেল মুন্সি মদ খেয়ে খেয়ে নিজের শরীরটাকে শেষ করে ফেলেছিল, তাই  কেউ আর তাকে কাজে নিতে চাইতো না । তাই খুব ছোট বয়স থেকেই এর ওর বাড়িতে কাজ করে, দু দুটো পেট চালাতে হতো টুম্পাকে । তারপর হঠাৎ একদিন রাত তিনটের দিকে খবর এলো তার ভিটেমাটির একমাত্র সাক্ষী, তার ওই গুতেল কাকু মদ্যপ অবস্থায় লরির নীচে পরে পার্থিব কষ্ট থেকে মুক্তিলাভ করেছে । খুব কেঁদেছিল সেদিন টুম্পা, যাও বা কিছু মাত্র শিকড় ছিল তাও সমূলে উপড়ে গেল । এবার সে সম্পূর্ণ উদ্বাস্তু হয়ে গেল । উত্তরপ্রদেশের কোথায় তার বাড়ি ? কে তার মা-বাবা ? কিছুই যে জানে না সে ।

অপর দিকে মৃণালিনী দেবীর স্বামী এলাকার বিখ্যাত উকিল উপেন স্যান্যাল, অগাধ সম্পত্তির মালিক । কিন্তু ভগবান সব দিক থেকে দু-হাত ভরে দিলেও মৃণালিনী দেবীর কোল ফাঁকা করে রেখেছিলেন । পার্কে বা কলেজের সামনে সব মায়েদের তাদের নিজের বাচ্চাদের আদর করতে দেখলে তার বুকটা হু হু করে উঠতো, কিন্তু কিছুই করার ছিল না তার । জরায়ুতে টিউমার অপারেশনের সময় ডাক্তার বলেই দিয়েছিলেন সেই নির্মম সত্যটা । তারপর জীবনের একমাত্র সঙ্গী এই বৃদ্ধ বয়সে এসে, তার হাত ছেড়ে দিয়ে আকাশের বুকে জায়গা করে নিলো তা আজ প্রায় তিন বছর । যৌবন তাও বা কেটে যায় নেশায় নেশায়, বার্ধক্যের ব্যালকনিতে এলে প্রকৃত ভালোবাসার যে অর্থ উপলব্ধি করা যায়, তা তিনি প্রতিটা রাতেই ওপাশের ফাঁকা বালিশটাতে হাত বুলিয়ে অনুভব করতেন ।
এই ভাবেই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে দুই পথ হারানো নাবিক, দিকশূন্য সাগরের মাঝে একটা ছোট্ট দ্বীপ খুঁজে নিয়েছে নিজেদের জন্য ।
- "শোনো বুড়ি, বেশী রাত অবধি বই পড়ো না কিন্তু । ঘুম ঠিক করে না হলে কাল সারাদিন কিন্তু মাথা ব্যথা করবে, বুঝলে ?"
- "হুম বুঝেছি, অনেক রাত হয়ে গেল, যা এবার বাড়ি যা ।"
- "ধুর-র কোথায় রাত ? সবে সাড়ে নটা বাজে । যাই হোক শোনো, টেবিলের উপর ওষুধ রইলো রাতের, ঘুমাবার আগে খেয়ে নিও । আর গরম জল করে ফ্ল্যাক্সে রেখে গেলাম । ঠান্ডা জল খেয়ে আবার সর্দি বাঁধিয়ে বসো না কিন্তু ।"
- "আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, প্রতিদিন একই কথা মুখস্থের মতো আওড়িয়ে যাস । আমার কথা তো আর শুনবিও না ।"
- "তোমার আবার কি কথা ?
- "কত করে বলি, রাতটা এখানেই থেকে যা । না, রাতে তারকা রাক্ষসীর ঝুপড়িতে না গেলেই নয় । এই কে আছে রে তোর বাড়িতে ?"
- "দেখো বুড়ি ।"
- "এই থাম থাম ! আবার জ্ঞান দেবে । যা তুই যেদিকে মন চায়, কাল সময় মতো চলে আসিস ।"

প্রতিদিনই রাতে গেট দিয়ে বেরোনোর সময়, ভীষণ খারাপ লাগে টুম্পার । একা বয়স্ক মহিলা এত বড় বাড়িতে থাকে, রাত বিরেতে কিছু হয়ে গেলে কেউ জানতেও পারবে না ।
সত্যিই একদিন তেমনটাই হলো, রাতে উঠে বাথরুমে গিয়ে আর শোওয়ার ঘরে ফেরা হলো না মৃণালিনী দেবীর । পরদিন সকালে কাজে এসে টুম্পাই প্রথম জানতে পারে । যেদিন গুতেল কাকু মরে গেল সেদিনও এতটা কষ্ট হয়নি তার, যতটা আজ হচ্ছে । তার মনে হচ্ছিল ঈশ্বর যেন তার বুকের বাঁদিক থেকে একটা বড় অংশ কেটে নিয়ে গেলেন । মাকে পায়নি সে, কিন্তু ভগবান মা হারানোর কষ্টটা তার ভাগ্যের খাতায় সন্তর্পনে লিখতে ভুল করেননি । আজ যেন সম্পূর্ণ অনাথ হলো টুম্পা । সময়ের কাটা থেমে থাকেনি, চোখের জলের রেখাও বইতে বইতে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেছে আজ প্রায় পাঁচ মাস হতে চললো । বিশাল প্রাসাদের মতো সাদা ওই বাড়িটা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে তার দিকে । গেটে তালা ঝোলে, ওপাশে কেউ নেই, এপাশের মানুষটাও কেমন যেন পাথর হয়ে যায় দিন কে দিন ।
হঠাৎ একদিন বস্তির মোড়ে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ালো আর তার থেকে নেমে এলো কোট-টাই পড়া এক ভদ্রলোক । বস্তিতে কোনও বড় গাড়ি দেখলে এমনিতেই সকলে ভিড় করে দাঁড়ায়, এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি । লোকটি কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে করে সোজা টুম্পার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো । বাইরের চেঁচামেচি শুনে টুম্পাও ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে । লোকটি জিজ্ঞেস করলো -
"আপনি মিস টুম্পা সরকার ?"
- "হ্যাঁ ।"
- "আচ্ছা, আপনার ভোটার অথবা আধার কার্ডটা একবার একটু দেখতে পারি ?"
- "হ্যাঁ, কিন্তু.....মা...মা নে...আমি তো আপনাকে চিনি না আর টিভিতে যে বলে অচেনা কাউকে দরকারি কাগজ পত্র কিছু দিতে নেই ।"
- "না না, আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি আমার পরিচয় বলছি । আমি স্বর্গীয় মিস্টার উপেন স্যান্যালের স্ত্রী স্বর্গীয়া মিসেস মৃণালিনী স্যান্যালের উকিল ছিলাম । আসলে মৃণালিনী দেবী নিজের স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে আপনাকে মনোনীত করে গেছেন । এখন আপনাকে এখানে একটা সই করতে হবে আর সেজন্যই একটা প্রমাণ থাকা তো জরুরি যে আপনিই আসল টুম্পা সরকার । ও হ্যাঁ, এর সাথে একটা চিঠিও রেখে গিয়েছেন ।"

কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা ধরলো টুম্পা । আগে হলে হয়তো এটা পড়ার সাধ্যি তার হতো না, কিন্ত মৃণালিনী দেবী তাকে পড়তে শিখিয়েছেন, পনের দিনে একটা গল্পের বই পড়তে হতো তাকে । তারপর তার থেকে মৃণালিনী দেবী প্রশ্ন করতেন । এইসব পুরোনো কথা মনে পড়লেই টুম্পার চোখের জল কোন বারণ না শুনেই অবাধে নেমে আসে । চিঠির ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করলো সে.....
- "শোন মুখপুড়ি, তোর দায়িত্বে সব রেখে গেলাম । জানি তুই হেলায় নষ্ট করার মতো মেয়ে নোস, তবু মনে রাখিস আমি আর উনি কিন্তু উপর থেকে সব দেখছি । আমার বাড়িটা আজ থেকে তোকে দিলাম, আগের মতোই গুছিয়ে যত্ন করে রাখিস । আর শোন, আবার একটা বিয়ে করিস । একা একা সারা জীবন বেঁচে থাকা যায় না, ঝগড়া করারও একটা লোক চাই । আজ তো এই বুড়িটাও নেই যে গাল ফুলিয়ে সকাল সন্ধ্যে ঝগড়া করবি । ভাল থাকিস, নিজের একটু যত্ন নিস, চলি রে !"
ইতি,
তোর ঝগড়ুটে বুড়ি

থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে মাটির উপর বসে পড়ে টুম্পা । প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার সম্পত্তি পেয়েও নিজেকে তার পৃথিবীর সব চাইতে নিঃস্ব ব্যক্তির থেকেও নিঃস্ব মনে হচ্ছিল ।
~~~~~
তিন তিনটে বছর কেটে গেছে তারপর, এখন মৃণালিনী ভবন শুধু একটি বাড়ি নয়, এটি একটি বৃদ্ধাশ্রম । এখানে টুম্পা মৃণালিনী দেবীর মতো এমন পঁয়ত্রিশ জনকে নিয়ে এসেছে যাদের সমাজ, পরিবার এমন কি ঈশ্বরও দূরে ঠেলে দিয়েছে । তাদেরই দু-হাতে বুকে টেনে নিয়েছে টুম্পা, জায়গা করে দিয়েছে মৃণালিনী ভবনে যাতে শেষ কটা দিন তারা যেন একাকিত্বে না বাঁচেন । টুম্পা যেন একা না থাকে, একটা ঝগড়া করার লোক খুঁজে নেয় এই তো ছিল মৃণালিনী দেবীর শেষ ইচ্ছে । সেটাই খুঁজে নিয়েছে সে, একটা দুটো নয় পঁয়ত্রিশটা ঝগড়ুটে বুড়ি । এখন সারাটা দিন মন খুলে সে তাদের সঙ্গে ঝগড়া করে ।।। [Image: 1f64f.png]
[+] 2 users Like আমিও_মানুষ's post
Like Reply
মহিলাদের চেয়ে পুরুষের লজ্জা বেশী!
একবার এক কলেজে স্থানীয় মহিলারা একটি সাধারণ সভার আয়োজন করেছিলেন।
সেখানে কথা বলতে যেয়ে এক মহিলা বললেন যে, "মহিলাদের চেয়ে পুরুষের লজ্জা বেশী।"
কথাটা শেষ করতে না করতেই একজন ভদ্রমহিলা উঠে দাঁড়ালেন। প্রতিবাদের সুরে বললেন, 'আপা, আপনার কথাটা মানতে পারলাম না। পুরুষ মানুষের আবার লজ্জা দেখলেন কোথায়?
ওরা তো বেশরম- বেলাজ।
প্রথম মহিলা দ্বিতীয় মহিলাকে থামিয়ে বললো, "আপা, আপনি কি করেন?
তিনি বললেন, এই কলেজে শিক্ষকতা করি।
প্রথম মহিলা বললেন, কয়জন পুরুষ আর কয়জন মহিলা শিক্ষক আছেন এই কলেজে?
তিনি বলেন, আমরা সমান সমান- চার জন পুরুষ চার জন মহিলা। হাসি মুখে উত্তর দিলেন ভদ্রমহিলা।
প্রথম মহিলা বললেন, "আপা আপনি কি কোন দিন আপনার পুরুষ সহকর্মীদের পেট-পিঠ দেখেছেন?"
ভদ্রমহিলা ভ্রু কুচকে তাকালেন।
বললেন তার মানে..?
প্রথম মহিলা বললেন, "দেহ প্রদর্শন করা নির্লজ্জতা। কিন্তু এই কাজটা সাধারণত পুরুষেরা করে না। আপনার যদি কখনো ইচ্ছে হয়, আপনার কোন পুরুষ সহকর্মীর পেট কিংবা পিঠ দেখবেন, তাহলে তাকে ডেকে বলতে হবে ভাই আপনার শার্ট কিংবা পাঞ্জাবীটা একটু উপরে তুলুন তো, আমি আপনার পেট কিংবা পিঠ তা একটু দেখব।
সেই ভাই তখন নির্ঘাত আপনাকে পাগল মনে করবে।
আর আপনার পেট-পিঠ কতভাবে কত এ্যাংগেলে কত শত পুরুষ- মহিলা দেখছে তার কি কোন হিসাব আছে?
 
পুরুষেরা পেট/পিঠ বের করা পোষাক পরে বাইরে কিংবা অফিস-আদালতে যাবে না, এটা তাদের স্বাভাবিক লজ্জা। যা থাকা উচিত ছিল মেয়েদের। অথচ মেয়েরা কিভাবে গলাটা আর একটু বড় করে কাঁধ এবং বুকের উপরি অংশ বের করা যাবে, কিভাবে জামার হাতার উপরি অংশ কেটে মাসেল দেখানো যাবে- সেই
চেষ্টা করে।
 
লজ্জাহীনতা মেয়েদের অস্থিমজ্জায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যে, এ বিষয়টাকে তারা লজ্জার বিষয় বলে মনেই করে না!
 
#অনুগল্প : #লজ্জা
Like Reply
[Image: IMG-20230415-WA0000.jpg]
Like Reply
দে  বাবু কোথায় গেলেন?
Like Reply
এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেলো। ঊর্মিলাকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছেনা চুমু খেলেই বাচ্চা হয়ে যায়না।ও শুধু এক কথায় বলে যাচ্ছে,'তুমি জানোনা নয়ত তুমি আমাকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছো।' না মানে আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় একমাস হতে চলল।যেহেতু আমাদের দেখাশোনা করে বিয়ে তাই আমি ওকে থিতু হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়েছি।আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা আর একটু ভালো হোক।আমরা একে অপরকে আর একটু জানি,তারপর নাহয় কাছাকাছি আসা যাবে।এমনিতে ঊর্মিলা খুবই ভালো মেয়ে।শান্তশিষ্ট। ঘরোয়া কাজে পটু।খুব মিষ্টি স্বভাবের।মানে যেকোনো মানুষেরই ভালো লাগতে বাধ্য।আমিও তাই দেখতে গিয়েই প্রেমে পড়েছিলাম।বিয়ের কিছু সপ্তাহ অবধি তো আবেগে আত্মহারা হয়ে ভেসে গিয়েছিলাম।আহা কি মিষ্টি বউ আমার।একেবারে পুতুলের মতো।খটকাটা সেদিন লাগল যেদিন উনচল্লিশতম বারের জন্য টাইটানিক দেখে আবেগতাড়িত হয়ে আমি ওর পাশে গিয়ে বসি।হাতের উপর আলতো করে হাত রাখি।তারপর যেইনা চুম্বনের জন্য ওর ঠোঁটের দিকে এগিয়েছি,ও তখন ছিটকে সরে বসে,বলে,"এখন না।আমরা এখনও প্রস্তুত নই।আগে সংসারটা আর একটু গুছিয়ে নিই।"
আমার কপালে ভাঁজ পড়লো,আমি স্বাভাবিক গলাতেই প্রশ্ন করলাম,"একটা চুমু খাওয়ার সাথে প্রস্তুত হওয়ার কি আছে! হ্যাঁ তোমার যদি অস্বস্তি হয় সেটা আলাদা ব্যাপার! তাহলে দরকার নেই।"
ঊর্মিলা করুন মুখ করে উত্তর দিল,"না অস্বস্তি না।আমিও চাই।কিন্তু আমরা প্রস্তুত না।এখনই।"
আমার কপালে ভাঁজের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলো,"তুমিও যখন চাইছো,তাহলে আপত্তি কোথায়?"
ঊর্মিলা মুখ নামিয়েই আবার বলল,"আমি কিছুটা সময় শুধু তোমার সাথেই কাটাতে চাই।এক্ষুনি আমাদের মাঝে তৃতীয় কাউকে আনতে চাইনা।"
আমি বুঝতে না পেরে বললাম,"হ্যাঁ ঠিক আছে।আমি শুধু চুমুই খেতাম,তার বেশি কিছু না।"
ঊর্মিলা যেন এবার একটু আশ্চর্য হয়ে বলল,"হ্যাঁ তো চুমু খেলেই তো সে চলে আসবে।"
আমি তখনও কিছু বুঝিনি।আমার মনে হল ও হয়ত ভয় পাচ্ছে আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারবো কিনা।আমি ওকে আশ্বস্ত করলাম,"তুমি চিন্তা করোনা,আমি চুমুর বেশি একপাও যাবোনা।"
ঊর্মিলা একটু বিরক্ত হয়েই জানালো,"আরে চুমু খেলেই তো সে চলে আসবে।"
আমি কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে চুপচাপ বসে থাকলাম।বোঝার চেষ্টা করলাম ও কি বলতে চাইছে।ও,কি আমার সাথে ঠাট্টা করছে।ওর মুখের অভিব্যক্তি দেখে আমার সেটা মনে হলনা।ভাবভঙ্গি বেশ সিরিয়াস।আমি মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করলাম,"ইয়ে মানে বুঝলাম না।চুমু খেলেই কি করে সে চলে আসবে।"
ঊর্মিলা আরও বিরক্ত হয়ে বলল,"আঃ! বইটই কিছু পড়োনি নাকি!চুমু খেলেই বাচ্চা হয়ে যায় জানোনা।" আমার মাথায় বাজ পড়লো। আমি শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম,"তুমি বাচ্চা হওয়া সম্পর্কে ঠিক কি জানো বলোতো।"
এবার ঊর্মিলা ভুরু কুঁচকে বলল,"কেন সবাই যেটা জানে,আমিও সেটাই জানি।ছেলেদের ঠোঁটে বিষ থাকে।ছেলেরা যখন একটা মেয়েকে চুমু খায়,তখন সেই বিষ মেয়েদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আর তারপর সেই বিষ থেকে আসতে আসতে মেয়েদের পেটে ঘা হয়,সেই ঘা থেকেই আসতে আসতে বাচ্চা হয়।"
'ছেলেদের ঠোঁটে বিষ থাকে?" আমি আকাশ থেকে পড়লাম।শালা আমরা মানুষ না সাপ? এতকাল জীবনবিজ্ঞান পড়ে কি শিখলাম। আমি আমতাআমতা করে ঊর্মিলাকে জিজ্ঞেস করলাম,"তোমাকে এসব কে বলেছে?"
ঊর্মিলা স্বাভাবিক গলায় উত্তর দিল,"আমার দিদি।আমি ছোটবেলায় একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম।তখন আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছিল।" আমার ঠোঁট থেকে কথা সরছেনা।আমি তাও আর একবার প্রশ্ন করলাম ঊর্মিলাকে,"তুমি জীবনবিজ্ঞানে কোনোদিন জননতন্ত্র বলে চ্যাপ্টারটা পড়োনি।"
ঊর্মিলা চোখমুখ বেঁকিয়ে এমন একটা অভিব্যক্তি দেখালো,আমার নিজেকেই কেমন পাপী পাপী মনে হল।মুখ দিয়ে একটা বিচ্ছিরি রকমের আওয়াজ বের করে ঊর্মিলা বলল,"ছিঃ ওসব কেউ পড়ে? আমাদের একজন স্যার পড়াতেন জীবন বিজ্ঞান।তিনি কোনোদিনও আমাদের ওই চ্যাপ্টারটা পড়াননি।আমাদের পড়ে নিতে বলতেন।আর আমি পড়িনি। ব্যাপারটাতো জানতামই। পড়ার কি আছে! আমার ভাবলেই তখন কেমন গা ঘিনঘিন করতো।"
আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে।আমার বলার মতো কোনো শব্দ নেই।বর্ণনা করার মতো কোনো বিশেষণ নেই।ঊর্মিলা প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য জিজ্ঞেস করলো,"চা করবো?"
আমি বললাম,"হ্যাঁ করো।তবে পারলে একটু বিষ ঢেলে দিও।"
ঊর্মিলা ক্ষেপে উঠলো, "বালাই ষাট। এসব আবার কি কথা? আমার এরকম মজা একেবারেই পছন্দ না।"
আমি ওর দিকে শুকনো আবেগহীন মুখে তাকিয়ে বললাম,"এগজ্যাক্টলী আমিও একই কথা বলতে চাইছি।"
ঊর্মিলা গজগজ করতে করতে উঠে গেলো।পরের দুদিন তো আমার ঘোরের মধ্যেই কেটে গেলো। কিন্তু তারপর আমি নিজেকে একটু শক্ত করলাম।ঊর্মিলার কাছে ক্লাস টেনের জীবনবিজ্ঞান বইটা নিয়ে গিয়ে,জননতন্ত্রের চ্যাপ্টারটা খুলে ওর হাতে দিয়ে বললাম,"তুমি পারলে একবার এই চ্যাপ্টারটা পড়ো।অনেক কিছু জানতে পারবে।" ঊর্মিলা বইটা একবার হাতে নিয়ে আবার বিরক্তিভরে আমার হাতে ফেরত দিয়ে বলল,"পড়ার কি আছে?আমি জানি।"
আমি একটু জোর দিলাম,"না তুমি জানোনা।তুমি একবার পড়ো।"
ঊর্মিলা রেগে গিয়ে বলল,"এই শোনোতো।আমার এসব ভালো লাগেনা।আমি পড়তে পারবোনা কিছু।" বলেই খুন্তি দিয়ে তরকারি নাড়তে লাগলো।আর আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন মুখ নিয়ে। তারপর আবার চেষ্টা করে দেখলাম,"আচ্ছা যদি বই নাই পড়ো,তোমার সেই দিদিকে আর একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করে দেখো।আমি সিওর তোমার দিদি তোমাকে অনেক নতুন কিছু বলবে।"
ঊর্মিলা কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,"তুমি কি পাগল সায়ন।এত বড়ো হয়ে যাওয়ার পর,বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমি ওসব জিজ্ঞেস করবো দিদিকে।তুমি কি লজ্জার মাথা খেয়েছো?"
আমি মনে মনে বললাম,'আমি লজ্জার মাথা না হাত-পা-কনুই-হাঁটু সব খেয়ে ফেলেছি।'
এই মেয়েকে আমি কি ভাবে বোঝাবো!নিজেকেই কেমন অপরাধী অপরাধী মনে হতে লাগল।এরকম নিষ্পাপ নিষ্কলুষ একটা মেয়েকে আমি কি শেখাতে চাইছি!আমার নিজের উপর ধিক্কার জানানো উচিৎ। কিন্তু এভাবেই বা কতদিন চলতে পারে।আর কয়েকমাস পর যখন ও সত্যিই প্রস্তুত হবে আমাকে চুমু খাওয়ার জন্য,আর তারপর যখন লজ্জা লজ্জা মুখে ক্যালেন্ডারে লাল কালি দিয়ে দাগ কেটে দিন গুনবে,কবে বিষক্রিয়া থেকে ঘা হবে।আর তার 'সে' আসবে,আমি কি জবাব দেবো? সবটা জানলে না ও ছাদ থেকে ঝাঁপই দিয়ে দেয়!আমার রাত কাটেনা।জেগে জেগে শুয়ে থাকি আর উপায় ভাবি একটা একটা করে,কি করে ওকে বোঝাবো,অথচ ওর কিছু হবেনা।একদিন জননতন্ত্রের একটা টিউটোরিয়াল ভিডিও ডাউনলোড করে পেনড্রাইভে করে টিভিতে চালিয়ে আমি স্নানে চলে গেলাম।ভাবলাম,ওর পুজো দেওয়া শেষ হয়ে গেছে প্রায়। ও দোতলার ঠাকুরঘর থেকে নেমেই টিভিতে সেটা দেখবে।ওর মনে তাহলে প্রশ্ন জাগবে।ও আমাকে এসে জিজ্ঞেস করবে।আমি ওকে তখন হেসে হেসে বলবো,"ধুর বোকা মেয়ে,তুমি তো জানতেই না কিছু, শোনো..."
আমি বাথরুমে ঢুকে হালকা আওয়াজে, শাওয়ার চালিয়ে দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে আছি।সিঁড়িতে প্রথমে পায়ের আওয়াজ পেলাম।তারপর একটু কিছুক্ষণ নিঃস্তব্ধতা।তারপর নিঃস্তব্ধতা বেড়েই চলল।তারপর দ্রুত পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম।আমি তো অপেক্ষায় আছি,কখন ঊর্মিলা আমাকে ডাকবে।কিন্তু ঊর্মিলার কোনো ডাক শুনতে পেলাম না।আমি অগত্যা স্নান শেষ করে বেরিয়ে এলাম।এসে দেখি টিভি বন্ধ।আমার কপালে ঘাম জমা হল। ঊর্মিলার কাছে গিয়ে খোঁজ নিলাম,"টিভিটা তুমি বন্ধ করেছো?"
ও খুব স্বাভাবিক গলাতে বলল,"হ্যাঁ।কিসব একটা দেখাচ্ছিল।আমি কিছুই বুঝলাম না।তাই বন্ধ করে দিলাম।কেন তুমি দেখতে? "
আমি ভেজা গামছা পরেই মাটিতে ধড়াস করে বসে পড়লাম।ভাবলাম,আমি আর দেখে কি করবো? ঊর্মিলা কি না কি ভাবলো কে জানে।


তারপর অনেক ভেবে আমি একটা উপায় বের করলাম।ঘটনাটা হয়ত আমাকে ঊর্মিলার কাছে খারাপ করে দেবে,কিন্তু অন্তত ও সত্যিটা জানবে।কেষ্ট পেতে গেলে কষ্ট করতেই হয়।প্ল্যানমাফিক আমি একদিন সন্ধ্যেবেলা হঠাৎ করেই ওকে না জানিয়েই একটা চুমু খেয়ে ফেললাম।ঘটনার আকস্মিকতায় ও এতটাই চমকে গিয়েছিল যে প্রতিবাদ করতেই ভুলে যায়।আর তারপর ঠিক আমার কল্পনামাফিক ও ভীষণ রেগে ওঠে,তারপর কেঁদে ফেলে।আমাকে দু-চারটে কথা শুনিয়ে বলে,"তোমার কাছে আমার ইচ্ছের কোনো দাম নেই।আমি আজই বাপের বাড়ি চলে যাবো।"
আমি প্ল্যানমাফিক আটকানোর ছোটখাটো প্রয়াস করলাম।কিন্তু আটকালাম না।ও বাড়িতে যাক।ওর মা নিশ্চয় কারণ জিজ্ঞেস করবে।ও তখন সব বলবে,সেটা শুনে ওর মাও নিশ্চয়ই হেসে ওর সব ভুল ভাঙিয়ে দেবে।তখন আমি ওকে গিয়ে নিয়ে আসবো। পারফেক্ট প্ল্যান। নিজেকে কেমন জিনিয়াস জিনিয়াস মনে হল। চার-দিন আমি ওকে বেশ কয়েকবার ফোন করি,ও ফোন তোলেনা।শেষে পাঁচ দিনের দিন সকালবেলা ও নিজেই এসে হাজির।দরজা খুলে প্রথমে আমি কিছুটা চমকে উঠি।ওর মুখে অদ্ভুত হাসি।ও বেশ শান্ত গলায় আমাকে বলল,"সরো। ভিতরে ঢুকবো।"
আমি কিছু না বলেই সরে দাঁড়ালাম।কিছুক্ষণ পর ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"কি ব্যাপার বলোতো চারদিন কোনো ফোন তুললে না।আজ হঠাৎ হাসি মুখে বাড়ি চলে এলে।কেসটা কি?"
ঊর্মিলা হাসি হাসি মুখে বলল,"ভাবলাম তোমার উপর বেকার রাগ করে আছি।রাগ করে থাকার কোনো কারণ নেই।"
আমি ভাবলাম যাক তাহলে অবশেষে ওর মা ওকে সব বুঝিয়েছে। তারপর প্রায় একসঙ্গেই দুজনে দুটো কথা বলে উঠলাম।প্রথমে আমি আর তারপরে ও..নীচে দুটোই দিলাম..

"তাহলে কি তোমার সব ভুল ভেঙে গেছে!"
"শোনোনা তুমি বাবা হতে চলেছো।"

আমার তো মুখের সব রঙে উড়ে গেলো।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো মনে হল।আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, "কি?  কিভাবে? কবে?"
ঊর্মিলা লজ্জা লজ্জা মুখে বলে উঠল,"ধুর! জানেনা যেন,দুষ্টু। নিজেই সব করে! নিজেই জিজ্ঞেস করছে।"
আমার প্রায় কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা।আমি কবে কি করলাম শালা!অবচেতন মনে কি কিছু করে ফেলেছি।আমি ওর শাড়ি ধরে বসে পড়লাম।তারপর শুকনো মুখে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,"তোমার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে?"
ঊর্মিলা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,"কিসের রিপোর্ট? "
আমি আরও আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"তুমি যে মা হয়েছো তার রিপোর্ট? "
ঊর্মিলা হেসে বলল,"ধুর বোকা।রিপোর্টের কি আছে?আমি মেয়ে আমি বুঝবোনা।"
"কিভাবে বুঝলে তুমি?", আমি প্রশ্নটা না করলেই ভালো করতাম।
ঊর্মিলা মুখে তৃপ্তির হাসি এনে বলল," কাল রাত থেকে পেটটা জ্বালা করছে।বুঝতে পারলাম ঘা হয়েছে। "
আমার শুকনো মুখে ওর দিকে তাকিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলাম,"কাল রাতে কি খেয়েছো?"
ও ভুরু দুটো কুঁচকে উত্তর দিল,"কেন! ফুলকপি। "
.
.
.
.
.
গলায় দড়ি দিতে যাচ্ছিলাম বন্ধুরা।পাশের বাড়ির ছেলেটা হঠাৎ রূপমের গান চালিয়ে দিল,
"আমি ভালবাসি যাকে
সে বিষাক্ত মানুষ
সবুজ তার শিরা
ফ্যাকাশে আঙুল
নীলাভ তার ঠোঁটে
সাপের ছোবল..."

ছেলেদের ঠোঁটে বিষ থাকে? দাঁড়ান। মালটাকে পেঁদিয়ে আসি।তারপর মরবো..[Image: 1f642.png]
লেখা ~ অর্ক ব্যানার্জী
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
দে দাদা ঈদের বাসী শুভেচ্ছা নেবেন ।
[+] 1 user Likes cuck son's post
Like Reply
(25-04-2023, 04:12 PM)cuck son Wrote: দে দাদা ঈদের বাসী শুভেচ্ছা নেবেন ।

দে দাদাকে আবার ব্যান করেছে এখানে !
Like Reply
“ *শিল* *কাটাওওও* , *শিল* *কাটাওওও* ।”

দক্ষিন কলকাতার রাস্তায় সচরাচর শোনা যায় না এই আওয়াজটি। উত্তর কলকাতার ভাড়াবাড়ি ত্যাগ করে আবিররা যেদিন দক্ষিন কলকাতার দুই কামরার ফ্ল্যাট বাড়িতে আসল, তখন আবিরের পঞ্চাশোর্দ্ধ বয়সি মা সুমিতা পড়ল মহা বিপাকে। উত্তর কলকাতায় মানুষের কৌতুহলী মনোভাব, সুখে-অসুখে পাশে থাকা, এপাড়া-ওপাড়ার কুটকচালি তাকে ব্যস্ত রাখত সর্বদা। আর এখানে মানুষ অন্য মানুষের সাথে বিশেষ কোনো দিন ছাড়া কথা বলে না।
সুমিতা “শিল কাটাওওও” শুনে নিজের খুশি আর ধরে রাখতে পারল না। প্রায় একবছর হয়ে গেল শিলটা কাটানো হয়নি। স্বামী-ছেলের শতবার বলা সত্ত্বেও সুমিতা মিক্সি ব্যবহার করে না।
“শিল কাটাওওও, শিল …”
“এই শিল, একটু উপরে এসো না?”
“শিল কাটাওওও” ডাক বন্ধ হল। একজন শীর্ণ বুড়ো লোক হাতে চটের ব্যাগ ঝুলিয়ে তাকাল চারদিকে। দেখতে পেল তিনতলার বারান্দা থেকে তার ডাক পড়েছে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসে বুড়োটি বসে পড়ল তিনতলায় সিঁড়ির ঠিক কাছটায়। সুমিতা তাকে অনুরোধ করে ভেতরে আসতে বললে প্রথমে সংকোচ করলেও সে সুমিতার অনুরোধ ফেলতে পারল না। সুমিতা শিল আর নোড়া এনে দিলে জল ছিটিয়ে নিপুন হাতে তাতে করতে লাগল নকশাকাটা কাজ। মনে হল লোকটা কথা বলতে জানে না, হাতেই তার কথা বেরোয়।
“এই নিন মা। দেখুন ঠিক হয়েছে কিনা।”
সুমিতা হাত বাড়িয়ে নিল সদ্য নকশাকাটা শিল আর নোড়া। বুড়ো লোকটি তার জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে অপেক্ষা করছে টাকার জন্য। দেখতে পেল সুমিতা নিয়ে এল একটি প্লেটে করে দুটি লাল বাতাসা আর এক গ্লাস জল। একটু অবাক হল লোকটি এই ভেবে যে, তার পারিশ্রমিক যদি এটা হয় তাহলে তো তার এতক্ষণের কষ্ট বৃথা যাবে।”
“আচ্ছা, তোমার মজুরি কত?”-সুমিতা এগিয়ে দিল বাতাসার প্লেট আর জল।
আশ্বস্ত হল লোকটি। সে তার মজুরি জানিয়ে খেতে লাগল বাতাসা আর জল। মনে মনে আশীর্বাদ জানালো সুমিতাকে। সকালের জলখাবারের খরচ বেঁচে গেল তার।
মজুরি মিটিয়ে সুমিতা বলল –“আবার ঠিক তিনমাস পরে এসো। তোমার কাছেই কাটাবো কিন্তু”।
শীর্ণকায় বুড়ো লোকটি মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।
এরপর মাঝে মাঝেই সুমিতা “শিল কাটাও, শিল কাটাও” শুনতে পায়। ডাক পেলেই বারান্দায় এসে দেখতে পায় বুড়ো লোকটিকে। শেষপর্যন্ত যতদূর দেখা যায় দেখতে থাকে। ঠিক তিনমাস পরে লোকটি নিজেই বেল বাজিয়ে শিলটা কাটিয়ে দিয়ে চলে গেল। খেয়ে গেল বাতাসা আর জল।
পরেরদিন একইভাবে সুমিতা “শিল কাটাও” ডাকের অধির অপেক্ষায় বসে থেকেও ডাকটি শুনতে পেল না। একইভাবে কেটে গেল একমাস। নাঃ, পাচ্ছে না তো সেই বিকৃত গলায় “শিল কাটাও, শিল কাটাও?” তাহলে কি কিছু হল বুড়ো মানুষটার? প্রতিদিনের শিল-নোড়ায় মশলা বাটা মনে করিয়ে দিতে লাগল তাকে মানুষটার কথা।

“শিল কাটাওও, শিল কাটাওওও”।
আরো প্রায় দুমাস পর সুমিতা শুনতে পেল এই ডাক। ছুটে গেল বারান্দায়। খুঁজে পেল না হাতে চটের ব্যাগ নিয়ে চলা বুড়ো লোকটাকে। রাস্তার এদিক-ওদিক খেয়াল করার পর দেখল একটি ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সি ভালো স্বাস্থ্যের ছেলে “শিল কাটাও” ডাক দিতে দিতে যাচ্ছে। সুমিতা তাকে ডাকবে মনস্থির করতেই দেখতে পেল সেই ছেলেটি ঢুকছে তাদের বিল্ডিংএর গেট দিয়ে। ফ্ল্যাটের বেল বাজার পরে সুমিতা দরজা খুলতেই শুনতে পেল হাসি হাসি মুখ করে ছেলেটি তাকে বলছে “মা, আপনার শিল কাটানোর সময় হয়ে গেছে না?”
একটু অবাক হল সুমিতা। বলল- “হ্যাঁ, কিন্তু আমার শিল-নোড়া তো একজন বয়স্ক মানুষ কেটে দিয়ে যায়। অনেকদিন আসছে না।”
“মা, আমি তারই ছেলে। বাবা তো আর আসবে না?”
বুকটা একটু ধড়াস করে উঠল সুমিতার। বলল –“কেন? কি হয়েছে তার?”
হাসল ছেলেটি। বলল-“কিছু হয়নি মা। আমার বাবা কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে।
সুমিতার মনটা দমে গেল একটু। বলল –“ওঃ, তার বদলে তুমি কাজ করবে?”
“না মা। শুধুই আপনার বাড়িটা করব। আজকাল আর কতজন শিল-নোড়া কাটে? কিন্তু, বাবা বলল আপনি নাকি ভালোবাসেন শিল-নোড়াকে। তাই শুধু আপনারটাই করে দেব। আর সেদিন যদি আর কেউ ডাকে তো তাদেরটাও করে দেব।”
সুমিতা একটু অবাক হল। বলল –“তাতে তোমার, বাবার চলবে কি করে?”
ছেলেটি আবার হেসে ফেলল - “শিল-নোড়া কেটেই বাবা সংসার চালাত আর মা লোকের বাড়ি কাজ করে। নিজেরা কিছু না খেয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিত যাতে আমি পড়াশোনা করে মানুষ হতে পারি। গ্রামের পৈত্রিক ভিটে *বিক্রি* করে আমাকে *মাস্টার* *ডিগ্রি* পর্যন্ত পড়াল। আমি কিছুমাস আগেই রেলে চাকরি পেয়েছি। এতবছর যাদের চোখের সামনে মুখে রক্ত তুলে খাটতে দেখেছি, তাদের কি আবার এত পরিশ্রমের কাজ করতে দেখলে ভালো লাগে? আর এখন তো তাদের বিশ্রামের সময়।”
সুমিতা ছেলেটিকে ঘরে ডাকল। ছেলেটি বসে পড়ল দোরগোড়ায় ঠিক তার বাবার মতন। সুমিতা শিল আর নোড়া এনে দিলে টের পেল রক্ত কথা বলছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে সুমিতা তাকেও একটি প্লেটে বাতাসা আর এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলে সে ঠিক তার বাবার মতন আয়েশ করে বাতাসা খেয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল।
যাওয়ার আগে বলল –“তাহলে মা আসি? আবার ঠিক তিনমাস পরে আসব।”
সুমিতা বলল –“তুমি রেলে চাকরি পেয়েও শিল কাটছ কেন? এতে তো তোমার সম্মানে লাগতে পারে।”
“মা, এই *শিল* *কাটানোটাই* তো *আমাকে* *পড়িয়েছে* , *রেলে* *চাকরি* দিয়েছে। আর রেলে তো আমরা সরকারের চাকর। সেখানে সরকার আমাদের শুধু টাকা দেয়। আর আপনি টাকাও দিলেন আবার ভালোবাসাও দিলেন। তাহলে কোনটা সম্মানের বলুন মা? আর বাবা বলে, শিল কাটানোটা বাঙালি রন্ধনশিল্পের ঐতিহ্য। মশলা পাথরের সঙ্গে মিশে একটি অপূর্ব গন্ধ তৈরী করে যা রান্নার গুণ আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনার মতন কিছু মানুষ যতদিন আছেন ততদিন আমরাও আছি। আর বাবার শিল্পী গুণকে মর্যাদা ছেলে ছাড়া আর কে দেবে বলুন?”
মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সুমিতা। ছেলেটি আজ্ঞা নিয়ে দ্রুতপায়ে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে। দরজা বন্ধ করে সুমিতা ধীরপায়ে গেল বারান্দার দিকে।
“শিল কাটাওওও, শিল কাটাওও, শীল কাটাওওও, শীল কাটাওওও” ডাকটা কি আর বাঙ্গালী শুনতে পাবে আর কিছু বছর পরেও?’
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
- চাল, ডাল, চিনি, জিরে, আটা... এই এটা কি? এটা কেন এনেছো? এটা তো আমি লিস্টে লিখিনি!
বাজারের ব্যাগ থেকে লিস্ট দেখে সদাই নামাচ্ছিল ছিল নম্রতা তার মধ্যে দেখতে পাই লিস্টে না লেখা একটা জিনিস, আলতা; তাই প্রশ্নটা কিছুটা উচ্চস্বরেই ছুড়ে দেয় প্রকাশের দিকে। প্রকাশ জামাকাপড় বদলে এসে সবে বসেছিল।
সে গলা ঝেড়ে আমতা আমতা করে বলল - ওই... হ্যাঁ লেখা ছিল না... তো কি... আমি নিজেই নিয়ে এসেছি।
- তো কি মানে! কেন এনেছো? একেই সংসারের এই অবস্থা তার উপর কি এসব বাড়তি খরচ নয়! এই টাকায় বকুনের একটা খাতা তো হয়ে যেত নাকি!
- উমম... তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমি কি নিজে একটা জিনিস আনতে পারি না নাকি?
- আহা তা কখন বললাম! আলতাটা তো আর তুমি নিজে পড়ার জন্য আনোনি নিশ্চয়ই! তাহলে কে এসব বাজে খরচ করতে বলেছিল শুনি?
- বাজে খরচ না হয় একটু হলোই! আর তাছাড়া আমি আমার আসার অটো ভাড়াটা বাঁচিয়ে ওটা নিয়ে এসেছি, তাই বাড়তি খরচ কিছু হয়নি। আর সংসারের অভাবের জন্য কি তুমিই শুধু নিজের শখগুলো বিসর্জন দেবে?
নম্রতার গলার স্বর নরম হয়ে আসে। প্রকাশ তার জন্য আলতা কিনতে নিজে হেঁটে বাড়ি ফিরেছে ভেবেই মনের মধ্যে তার শীতল স্রোত বয়ে যায়। একদিকে ভালোলাগা কাজ করে আর অন্য দিকে খারাপ লাগা। তবে মুখে কিছুই প্রকাশ করে না।
সে শুধু চোখ নামিয়ে আস্তে আস্তে বলে - খালি খালি এতটা পথ হাঁটতে গেলে কেন বলতো? আর আমার আলতা পরার শখ তা আমি কখন তোমায় বললাম?
- তুমি কি ভাবো বলতো আমায়? এত বছর তোমার সাথে সংসার করার পর যদি তোমার শখগুলো খেয়াল না করতে পারি তাহলে কি হয়! হ্যাঁ মানছি কাজের চাপে সংসারের দিকে তেমন খেয়াল দিতে পারি না। তবে তুমি কি ভালোবাসো না বাসো, তুমি কি পছন্দ করো না করো এগুলো কি জানিনা ভেবেছো! আর তাছাড়া তুমিও তো সেলাইয়ের কাজ করার পাশাপাশি সংসার সামলাও, আমাদের ভালো-মন্দ, পছন্দ-অপছন্দ খেয়াল রাখো। তাহলে আমি এটুকু করতে পারি না? কোথায় ভাবলাম তুমি খুব খুশি হবে তা না। মানছি এখন আমার সামর্থ্য...


সে আর কিছু বলে ওঠার আগেই নম্রতা এসে নিজের হাতদিয়ে তার মুখটা আটকে দেয়। দুজনে চুপটি করে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর নম্রতা মৃদু হেসে প্রকাশের হাত ধরে বলে - দেখো একদিন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে শুধু হয়তো একটু সময় লাগবে। আর কে বলেছি আমি খুশি হ‌ইনি? খুব খুশি হয়েছি! তুমিতো বোঝো বলো, সংসারের কথা ভেবেই মাঝে মধ্যে একটু কঠোর হয়ে পড়ি...
- থাক আর কিছু বলতে হবে না বুঝেছি। শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছিলাম যে তুমি খুশি হয়েছো। আর তাছাড়া, এই ওপরকার কঠোর মানুষটার ভেতরটা যে একেবারে নরম, তা আমার থেকে ভালো আর কে জানে হুমম।

নম্রতা মৃদু হাসে। এবার প্রকাশ তার হাত ধরে টেনে তাকে চেয়ারে বসায়। পাশ থেকে আলতাটা তুলে নিয়ে খুলতে থাকে। এই দেখে এবার নম্রতা আবার বলে - এই কি করছো তুমি বলতো?
- কেন দেখতে পাচ্ছ না আলতাটা বার করছি।
নম্রতা উঠে তার হাত থেকে ওটা কেড়ে নিতে গেলে সে তাকে বসিয়ে দিয়ে আবার বলে - চুপ,চুপ করে বসো এখানে।
- তোমার মাথায় কী‌ চলছে বলতো? আর আমার মেলা কাজ পড়ে আছে।
প্রকাশ উত্তর দেয় না। আলতাটা খুলে সে নীচে বসে নম্রতার পা টা নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে বলে - সে আমি সব‌ জানি। এখন দেখি পা টা দাও।
নম্রতা ঝুঁকে আপত্তি জানিয়ে বলে - এই না না, তুমি পায়ে হাত দিচ্ছ কেন? আমার পাপ লাগবে!
- চুপ করে বসো। লাগুক পাপ অমন পাপ লাগা ভালো।

ততক্ষণে সে নম্রতার ডান পা টা নিয়ে আলতাটা পড়াতে শুরু করেছে। নম্রতা আর কিছু বলতে পারে না। তার মনে প্রকাশের কথাটা বাজে। মনে মনে ভাবে - সত্যি এমন পাপ লাগা মাঝে মধ্যে ভালো। অভাবে না পড়লে কি কোনদিন সে বুঝতে পেত যে এই মানুষটা‌ও এমন ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ভাবপ্রবণ হতে পারে!
নম্রতা গালে হাত দিয়ে দুচোখ ভরে তার মানুষটাকে দেখতে থাকে।

একে অপরের ভালো-মন্দের খেয়াল রেখে, একে অপরের ভালো লাগা খারাপ লাগা গুলোর দিকে একটু নজর দিয়ে, দুজনেই একটু একটু সেক্রিফাইস করে একে অপরের পাশে থাকলে প্রচন্ড খারাপ সময়গুলোও সামলে ওঠা যায়। এর মাঝেও ছোটখাটো সুখ খোঁজা যায়, আর এক সময় সমস্ত ঝড় কাটিয়ে ওঠা যায়। ঠিক যেমন ওরা‌ও উঠবে।

কলমে অলিগলি_রুপা সাহা।
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
- কাল তাহলে দেখা করছিস তো?
- হ্যাঁ ! অবশ্যই ম্যাডাম।
- হ্যাঁ, দেখা কর অনেক দরকার আছে, অন্তত কাল সামনাসামনি বসে একটা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারবো। এটা বলে ফোন কেটে দেয় দিশারী।
ঋষভ আর দিশারীর সম্পর্ক প্রায় এক বছরের, কিন্তু  দিশারী পড়াশুনোর জন্য কলকাতাতে নেই প্রায় নয় মাস হতে চললো। সম্পর্কের প্রথমে দেখা করা সম্ভব হলেও বিগত নয় মাস আর তা হচ্ছে না এবং দুজনের মধ্যে একটা দেওয়াল তৈরী হচ্ছে এই টুকু দুজনেই বুঝতে পারে। নববর্ষ উপলক্ষে পরশু দিন দিশারী কলকাতায় এসেছে। কিছুক্ষন পর দিশারী ঋষভ কে ফোন করে বলে - কাল তো তোর বাড়িতে পুজো আছে !
- হুঁ! তুই তো জানিস।
- আজ বিকেলে তোর বাড়িতে একটা পার্সেল যাবে ওটা রিসিভ করিস।
- কিসের পার্সেল? তুই আবার কি অর্ডার দিলি।
- অত জানি না । পার্সেল নিয়ে নিবি। আর কাল আমি যাবো।
- বলছি শোন না। কেমন জানি লাগছে কথা টা বলতে।
- বল তাড়াতাড়ি। জানিস একেই এমন কাজ করে আছিস তোর উপর আমার মাথা গরম হয়ে আছে। নাটক করিস না বেশি।
- সব সময় এই রকম রেগে থাকিস না । জানিস তো নতুন অফিস । তাই আমি সময় দিতে পারি নি। আর এত রাগ করিস না । আর হ্যাঁ ! যেটা বলছিলাম কাল আমাদের বাড়িতে তুই লাল শাড়ি টা পড়ে আসবি। যেটা আমি তোকে পুজোতে দিয়েছিলাম।
একসাথে ছিলাম না বলে তো আমার বউটা কান্নাকাটি করে গেলো , কাপড় টা পরলো না ।
- বউ কি রে। একদম বউ বলবি না , খুব ঝগড়া করিস আমার সাথে। বউ হলে কি আর এত ঝগড়া করতিস, অফিস এর অছিলায় একটু কথাও না বলে ঘুমিয়ে পড়তিস। ঠিক আছে পড়বো। কাল হয়তো সব শেষ হয়ে যাবে ।
- দেখা যাক! কি হয়। কাল লাল শাড়ি টা পরে আসবি । ব্যাস আমি আর কিছু জানি না।
পরের দিন দিশারী ঋষভ এর দেওয়া লাল শাড়ি পড়েছে আর ভাবছে যত এই অল্প দিনের সম্পর্ক হোক ওরা তো ভালোবাসে, আলাদা ভাবে থাকবে কি করে। ঋষভ এর সাথে ঝগড়া হলে তো ওর কাজে মন বসে না। দিশারী ঋষভ কে ফোন করে বললো - তুই পাঞ্জাবী টা পেয়েছিস , পছন্দ তো।
- হুম! পছন্দ । কিন্তু তোকে এত পাকামি কে করতে বলেছে। বাইরে থাকিস, বাড়ি থেকে যা টাকা যায় সেই খান থেকেও টাকা জমিয়ে আমায় কিনে দিচ্ছিস এটাওটা। ভালোবাসিস সেটা আমি জানি , সব সময় বাচ্চাদের মত এত অবুঝ হলে হয় , বাচ্চাদের মত হলে তো ঝগড়া হবেই । আর রাগ করিস না । জানি সময় দিতে পারি না সেই ভাবে তার জন্য sorry বলছি আর রাগ করিস না ।
- না করছি না আর রাগ। জানিস তো একবার ভেবেছিলাম আজ সব শেষ করে দেবো। বিশ্বাস কর সব শেষ হবে শুনলে না কেমন যেনো বুকের ভিতরে চিন চিন করে ওঠে।
- সব জানি আমি। এই সব ছাড়। আমাদের ঝগড়াও হবে আবার আমাদের একসাথে থাকতেও হবে। ভুলে যাস না আমি তোর বর। তুই আমার সব কিছু শুনে চলবি।
- বর না ! তুই হলি আমার বর্বর।
- সে বর এই বল আর বর্বর এই বল আজ একটু তাড়াতাড়ি আসিস। তোর সাজগোজ করতে যা সময় লাগে আমার বাড়ির পুজো শেষ হয়ে যাবে , আর তোর  আর আসার সময়  হচ্ছে না ।
- হুম। এই বার ফোন রাখ। রেডি হতে দে।
- হ্যাঁ। রেডি হয়ে লক্ষ্মী মেয়ের মতো ছবি দিবি । আর তাড়াতাড়ি আসিস। সাবধানে আসবি।
দিশারী ঋষভের বাড়িতে গিয়ে পুরো অবাক। নববর্ষের পুজো হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেই খানে উকিল বাবু ও এসেছে। আর সাথে আছে দিশারীর বাড়ির লোক । দিশারী মা বাবা আর সবাই কে দেখে অবাক। ঋষভ এর মা দিশারী কে ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাতে কিছু গয়না দিয়ে বলে এই গুলো পড়ে আয়।
ঋষভ দিশারী কে লাল শাড়ি পরে দেখে কিছুক্ষন হা করে তাকিয়ে দেখে বলে ওঠে- উকিল বাবু কোথায় সই করতে হবে বলুন।
- এই সব কি রে ঋষভ। আমায় আগে বলিস নি তো। একেই আমরা থাকি আলাদা জায়গায়। তুই কলকাতা আমি দিল্লি। এর মধ্যে রেজিস্ট্রি, পাগল হয়ে গেছিস।
- না আগে তুই সই কর ! তার পর সব বলছি। এত ভাবিস না । সই কর।
সই সাবদ হওয়ার পর আইনত এখন দিশারী আর ঋষভ স্বামী স্ত্রী। - এবার কি হবে ? আমি তো পরশু দিল্লি চলে যাচ্ছি । এই বার তো তুই বর আরো বেশি করে ঝগড়া করবি।
- তুই একা যাবি এটা তোকে কে বললো। আমিও যাবো।
- পাগল ! তবে এই খানের তোর অফিস কে করবে।
- আমার অফিস এখন দিল্লি তে ম্যাডাম। আর আমি আপনার সাথে এই থাকবো এক বাড়ি তে । আমার শশুর মশাই আমায় আজকের এই সব বুদ্ধি দিয়েছে এবং আমাদের এক সাথে সারা জীবন থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।
- কি বলিস !
- হ্যাঁ গো গিন্নি। চলো এইবার সবাই কে প্রণাম করে আমাদের নতুন বছর শুরু করি ।
- শোন এই সব গিন্নি বলবি না ,মেরে দেবো।
- বিয়ে করে বউ হয়ে গেলি কিন্তু ঝগড়া টা করছিস দেখ বাচ্চাদের মত। বাড়ির সবাই কি ভাবছে বলতো, দেখ সবাই হাসছে।
- চল সবাই কে প্রণাম করে আশির্বাদ নিয়ে নতুন পথ চলা শুরু করি।


          অন্তরীপা পাল
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
ভিজে ন্যাতা দিয়ে সপসপ করে ঘর মুছছিল রুমকি ! বেশ কিছুদিন হল মা ওকে এই বৌদির বাড়ি কাজে লাগিয়েছে | যদি বৌদিকে সামনে বৌদি বলা নিষেধ ! প্রথমবার এসে বৌদি বলায় গম্ভীর গলায় উত্তর এসেছিল বৌদি নয়, তুমি আমায় ম্যাডাম বলবে | মাস গেলে হাজার পাঁচেক সঙ্গে চারবেলা খাওয়া ! সকাল সাতটায় এসে রাত আটটায় বাড়ি ফেরা ! বৌদি খুব স্মার্ট | ছ'মাস কাজ করেছে রুমকি এর মধ্যে দাদাকে মোটে দু-চারদিনই দেখেছে | বৌদি তেমন একটা কথা বলে না ! চুপচাপ ! সারাক্ষণ ফোন ঘাঁটছে ! মাঝে মাঝে পরিপাটি ড্রেস করে কোথায় যেন যায় ! সেদিন রুমকির একাই এই বিরাট ফ্ল্যাটে থাকে‌ | ইচ্ছেমত টিভি দেখে, ফ্রিজ থেকে বার করে ঠান্ডা জল খায় | রুমকির খুব ইচ্ছে করে বৌদি এত সেজেগুজে কোথায় যায় জিজ্ঞেস করতে কিন্তু ভয় করে বৌদি একেবারে অনধিকার চর্চা পছন্দ করে না | মায়ের মুখে শুনেছে বৌদির নাকি ব্যবসা আছে, বিরাট ব্যবসা | বৌদির মাথার চুল থেকে পায়ের নখ অবধি নিখুঁতভাবে সাজানো ! হাত-পায়ের চামড়া মাখনের মত, রুমকি মনে মনে ভাবে হবে না কেন ? সারাদিন শুধু ঘষছে আর ঘষছে | ঘরের একটা কাজও করে না ! আহা ! রুমকি যদি অমন একটা জীবন কাটানোর সুযোগ পেত,‌ রুমকির চামড়াতেও চেকনাই দিত ! কিন্তু মোটর মেকানিক দিলুর কি সাধ্যি আছে রুমকির চামড়ায় চেকনাই ফোটাবে ? তবু রুমকি দিলুকে পাত্তা দেয় ! সিনেমা দেখা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, অ্যাপ দেখে দেখে পছন্দ করে কেনা কমদামী অথচ স্টাইলিশ জামাকাপড়, একটু অনামী ব্র্যান্ডের স্নো-পাউডার-পমেটম দিলুর পয়সায় হয়ে যায় |

আজকাল রুমকি আর ফুটপাতের জামাকাপড় পড়ে না ! কেন পড়বে ? দুমাস আগে বৌদি নিজের বাতিল করা টাচস্ক্রিন মোবাইলটা ওকেই দিয়েছে যে ! দিলুর সঙ্গে গিয়ে একটা নতুন নম্বর নিয়েছে, প্রতিমাসে দিলু ওই নম্বরে রিচার্জ করিয়ে দেয় | কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে রুমকি শপিং অ্যাপে রকমারি সাজপোশাক দ্যাখে | কসমেটিকসও দ্যাখে | কত রকমারি ব্র্যান্ড, কত তার নাম ! বৌদির ফোনেই অ্যাপগুলো ইন্সটল করা ছিল | বৌদি তো এসব অ্যাপগুলো থেকেই নিজের রকমারি জামাকাপড়, কসমেটিকস কেনে | এই আজ ড্রেস আসছে তো, কাল বয়ফেন্ড জিন্স, পরশু আবার হুডা বিউটির কসমেটিক্স ! এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম জেনে গেছে রুমকি ! বউদির ব্যবহার করা একটা লিপস্টিকের দাম আড়াই হাজার শুনে দিলু তো পড়েই যাচ্ছিল, বেচারার দশদিনের রোজগার বলে কথা ! আজকাল তো অর্ডার করলে হোম ডেলিভারিতে নামীদামী রেস্টুরেন্টের খাবার পর্যন্ত দিয়ে যায় | বৌদির কাছেই রুমকি প্রথম বড় হোটেলের সুস্বাদু বিরিয়ানি খেয়েছিল | বৌদি মাঝেমধ্যে ফুড অ্যাপে অর্ডার দেয় | রুমকিও ভাগ পায় | সেদিন মাসমাইনে পেয়ে অ্যাপ থেকে অর্ডার করে রুমকি দিলুকে বিরিয়ানি খাইয়েছে | চেটে চেটে দিলু তো হাতটা খেয়ে ফেলতেই বাকি রেখেছিল | সামনে বসে রুমকির যা হাসি পাচ্ছিল |
মা সেদিন বলছিল বৌদি নাকি পাত্র-পাত্রীর ব্যবসা করে | রুমকি শুনে অবাক হয়েছে | মেয়েরা আবার ঘটকালি করে নাকি ! মা বলল ব্যপারটা ঘটকালিই বটে তবে নাকি এ কাজে বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয় না | সব কাজ কম্পিউটারেই হয় ! দেশ-বিদেশ থেকে যেসব ছেলেমেয়েরা কলকাতায় বিয়ে করতে আসে, বৌদি নাকি তাঁদের পছন্দমত ছেলেমেয়ে খুঁজে দেয় | বিয়েটা সেরে তারা আবার যেখানে থাকে সেখানে হুশ করে উড়ে যায় ! ঘোষবাড়ির মেয়েটা কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করে ও রুমকির মাকে এসব কথা বুঝিয়ে বলেছে |  রুমকির মাথায় তেল লাগাতে লাগাতে ওর মা বলছিল তুই তো সেকেন্ড ডিভিশনে মাধ্যমিক পাশ করলি | বৌদিকে বলেছি যদি তোর জন্য একটা সাদামাটা ছেলে খুঁজে দেয় | তাহলে অন্ততঃ তোকে আর আমার মত গতর খাটাতে হয় না | দেখতে শুনতে তো তুই মন্দ নোস ! পোশাক আশাকও ভালোই পড়িস ! কথাটা শুনেই রুমকির মনটা গভীর আনন্দে ভরে গেল | সত্যি যদি বৌদি ওর জন্য একটা ছেলে দেখে দেয় | তাহলে রুমকিও সারাদিন শপিং করবে আর পা থেকে মাথার নখ অবধি নিজেকে সাজিয়ে রাখবে |
একমাস, দু'মাস কেটে যায় | রুমকির বৌদি এ ব্যপারে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করে না | ইতিমধ্যেই রুমকির মা ওর তিন/চারটে ভালো ছবি বৌদিকে দিয়ে এসেছে | কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না | ধীরে ধীরে রুমকির আশা মরে আসছে, ও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে ওর কপালে মোটর মেকানিক দিলুই নাচছে | বৌদির বাড়ি থেকে ফিরে ভাঙা ঘরের এক কোণে বসে রাতের রুটি পাকাচ্ছিল রুমকি হঠাৎ দেখে মা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকল | প্রতিদিন চার-পাঁচ বাড়ির কাজ সেরে ফেরা মায়ের ক্লান্ত মুখ দেখতেই রুমকি অভ্যস্ত ! সে মুখে হঠাৎ এমন হাসি দেখে রুমকি ডাগর চোখে চাইল | বিদেশের পাত্তর তোকে পছন্দ করেছে রে পোড়ারমুখী ! বৌদি আজ আমায় ডেকেছিল | ওখান থেকেই আসছি | ছেলে পরশু তোকে দেখতে চায় ! সামনাসামনি দেখে পছন্দ হলেই বিয়ে ফাইনাল |
সারা রাত ধরে রুমকির ঘুম হল না | পরের দিন সকাল সকাল রুমকি বৌদির কাছে যেতেই বৌদি নিজের অল্পস্বল্প ব্যবহার করা একবাক্স কসমেটিকস ওর হাতে দিয়ে বলল, শোন এই দুদিন তোর ছুটি | নিজেকে ঘষেমেজে চকচকে কর | বিদেশে চাকরি করা ছেলের আমাদের মেয়েকে যেন অপছন্দ না হয় | বৌদির মুখে একথা শুনে রুমকি আহ্লাদে গলে গেল ! সেদিন থেকেই শুরু হল নিজেকে ঘষামাজার পালা | দুদিন বাদে নিজের বেস্ট ড্রেসটা পড়ে সেজেগুজে রুমকি যখন আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ও যেন নিজেই নিজেকে চিনতে পারে না ! কবে ও এত সুন্দরী হল !‌ গিয়ে দেখে ব্লু জিন্স, হোয়াইট শার্ট, রে-ব্যানের সানগ্লাস পড়া হ্যান্ডস্যাম প্রতুল রেস্টুরেন্টের সামনে মডেলের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে | আহা এ ওর বর হবে ! বৌদি আগেই ফোনে ওকে ছেলের ছবি দেখিয়েছে, বলে দিয়েছে ছেলের নাম প্রতুল রায় | রেস্টুরেন্টের আলোছায়ায় দুজনের আলাপ পরিচয় হল | রুমকি কাঁটাচামচে খেতে পারে না শুনে প্রতুল হাসল তুমি হাত দিয়েই খাও‌ ! কোন অসুবিধা নেই | কাঁটাচামচের মধুর টুংটাংয়ের সঙ্গে প্রতুলের কাছ থেকে রুমকি উপহার হিসেবে পেল একটা দামী ব্যাগ ও একবাক্স বিদেশি চকোলেট | কথা হল এই রবিবার প্রতুলের বাবা-মা আসবেন রুমকিকে দেখতে !
বাড়ি ফিরে রুমকি তো ভয়ে মরে | এই এক চিলতে টালির ঘরে প্রতুল কোথায় বসবে ? প্রতুলের মা-বাবাই বা কোথায় বসবে ? ওদের খাওয়াবে কি ? সমস্যার সমাধান করে দিলেন বৌদি ! বললেন ওদের তিনজনকে আমার ফ্ল্যাটে আসতে বল | এখানেই রুমকির দেখাশোনা হবে | নির্দিষ্ট দিনে সপরিবারে প্রতুলরা বৌদির ফ্ল্যাটে এসে পড়ল | প্রতুলের মা-বাবার কি মিষ্টি ব্যবহার ! ছেলেও নম্র-ভদ্র | এমন ঘরে রুমকির বিয়ে হবে ? রুমকির মা আনন্দে পাগল হয়ে গেল | প্রতুলের মা আশির্বাদ করার সময় নিজের গলার বড় হারটা রুমকির‌ গলায় পড়িয়ে দিলেন, আজ থেকে তুমি আমাদের | রুমকির হবু শ্বশুরমশাই বললেন, আমাদের ছেলের তামঝাম করে বিয়ে করা পছন্দ নয়, তাই বিয়েটা কেবল দুই পরিবারের উপস্থিতিতে হবে | বৌদিও থাকবেন নাহয় | পনেরো দিনের বাদে একটা ভালো বিয়ের দিন আছে, কথা হল সেইদিনই রুমকির সঙ্গে প্রতুলের বিয়ে হবে | বিয়ে করার দিন কয়েক বাদে প্রতুল রুমকিকে আমস্টারডামে উড়িয়ে নিয়ে যাবে | ওদের বিয়েটা আপাতত মন্দিরে হবে | প্রতুল বলল এ দেশের রেজেস্ট্রি বিয়ে তো বিদেশে গ্রাহ্য হবে না, তাই আমস্টারডামে পৌঁছে ওরা দুজন সেদেশের আইনানুসারে রেজেস্ট্রি বিয়েটা সেরে নেবে | কথা শেষ করে প্রতুলের মা-বাবা উঠে পড়লেন | আমটারডাম না কি জায়গা...অতদূরে কি রুমকির মা কখনো গেছে ? ও কেবল বৌদির দুহাত ধরে বলছিল ম্যাডাম আপনার দয়া জীবনে ভুলব না !
একটা মন্দিরে নমঃ নমঃ করে রুমকির বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে | বর-কনে-পুরোহিত ছাড়াও রয়েছে রুমকির মা, বৌদি, প্রতুলের মা-বাবা | হঠাৎ এক দল পুলিশ মন্দিরে ঢুকে পড়ল | অফিসার সোজা বৌদির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন, ম্যাডাম এই মেয়ে পাচারের ব্যবসা কতদিন ধরে চালাচ্ছেন ? বৌদির মুখ নিমেষে লাল, আপনি কি বলছেন অফিসার ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না | থানায় গিয়ে থার্ড ডিগ্ৰী দিলেই সব বুঝতে পারবেন | পুলিশ অফিসার রুমকির মাকে বললেন, এই যে ছেলেটার সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন জানেন কি এর মা-বাবা সব সাজানো, থিয়েটার থেকে ভাড়া করে আনা | রুমেলা মুখার্জির ' ম্যারেজ ডট কম ' কোম্পানিটা নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত | এই প্রতুল ছেলেটা রুমেলা মুখার্জির কোম্পানিতে কাজ করে | এর নাম প্রতুল নয়, এর আসল নাম রণজিৎ বিশ্বাস | এর কাজ হল বড়লোক পাত্র সেজে গরীব মেয়েদের বিয়ে করা | মন্দিরে লোকদেখানো বিয়ের পর এরা মেয়েদের দেশে-বিদেশে পাচার করে দেয় |  এদের হাত অনেক লম্বা | আমরা চেষ্টা করেও নাগাল পাচ্ছিলাম না | আপনার মেয়ে ভাগ্যিস কিছু একটা আঁচ করে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল | হাতকড়া পড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৌদির জ্বলন্ত দৃষ্টিটা যেন রুমকিকে ভস্ম করে দিচ্ছিল | ওদের চারজনকে পুলিশ ভ্যানে তুলে ভ্যান থানার দিকে এগিয়ে চলল |
রুমকির দিকে চেয়ে ইন্সপেক্টর বললেন, আপনার কেন সন্দেহ হল এটা একটা ট্র্যাপ ? আসলে ওদের আশির্বাদের ধরণটা দেখে মনে হল গল্পটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে ! প্রতুল কেবল মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করতে চাইল, রেজিস্ট্রি করতে চাইল না | ভারতের রেজেস্ট্রি তো সবদেশেই স্বীকৃত ! আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল | ক্রাইম সিরিয়ালে এমনটাই দেখায় না ! আমিও কি তবে বিদেশে পাচার হতে চলেছি ? ব্যপারটা আমায় ভাবাচ্ছিল | আমি আমার বন্ধু দিলুর সঙ্গে প্রতুলের মায়ের দেওয়া আশির্বাদী হারটা পরীক্ষা করাতে সোনার দোকানে যাই | ওরা দেখেই বলে হারটা নকল ! আমার সন্দেহ দৃঢ় হয় | তারপরই আমি দিলুর সঙ্গে থানায় যাই‌ আর আপনাকে সব কথা খুলে বলি |
অফিসার হাসলেন, আপনি বেশ বুদ্ধিমতী কিন্তু মনে রাখবেন এদের নেটওয়ার্ক ভীষণ স্ট্রং ! তাই কদিন একটু সাবধানে থাকবেন | আর চোখকান খোলা রাখবেন | অফিসার জিপের দিকে এগিয়ে গেলেন | রুমকির মা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন তুই দিলুকে ভালোবাসিস তাই না মা ! আমি ওর সঙ্গেই তোর বিয়ে দেব | দিলু একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল | রুমকির মায়ের কথা শুনে সামনে এগিয়ে এসে নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল | গোধুলি নামছে চরাচর জুড়ে, সেই কনে দেখা আলোয় ওরা তিনজন ধীরপায়ে অদেখা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল |

অনিন্দিতা
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
[Image: IMG-20230701-WA0012.jpg]
Like Reply




Users browsing this thread: 17 Guest(s)