Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
অন্ধকারের গান --- রাখাল হাকিম
#21
আমি দেখলাম, মিনার পরনের কামিজটা শুধু টাইটই নয় বেশ জীর্ণ। যা দেখে অনুমান হলো, তা কোন ফ্যাশন কিংবা, নিজ দেহের বাড়তি মাংশপিণ্ড দুটুর সৌন্দর্য্য প্রকাশের জন্যে মিনা এমন একটি পোশাক পরেনি। বরং পুরনো একটা কামিজ, বাড়ন্ত দেহে ঠিক মতো লাগছে না। কোথাও কোথায়ও ফেটে ভেতরের লালচে ব্রাটার অস্তিত্বও প্রকাশ করছে। হয়তোবা অভাবের কারনেই দেহটা বাড়তে থাকলেও, নুতন কোন পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই। আমি বললাম, বলেছিলে, দু হাজার টাকায় তোমাদের সংসার চলে যায়। সত্যিই কি চলে?
মিনা বললো, সমস্যা হয়না। মা আর মেয়ে, বাড়তি খরচ নেই। টেনে টুনে চলে যায়।
আমি বললাম, নিজের দিকে একবার খেয়াল করেছো? তোমার যা বয়স, কলেজেও পড়ো, একটু ভালো পোশাক না পরলে কি চলে?
মিনা নিজ পরনের জীর্ণ কামিজটার দিকে একবার লজ্জিত হয়েই তাঁকালো।
মিনার লজ্জাটা দূর করার জন্যেই বললাম, তোমার পরনের কামিজটা অনেক পুরনো। মনে তো হয় দু তিন বছরের পুরনো। কোথাও কোথাও ছিড়েও গেছে।
মিনা স্পষ্ট গলায় বললো, পুরনো, ছেড়া হতে পারে, ন্যাংটু তো আর থাকছি না। নুতন পোশাক কেনার মতো, বাড়তি টাকা মা রোজগাড় করতে পারতো না।
আমি বললাম, তুমি শিক্ষিতা মেয়ে, দুটু টিউশনি করেও তো এর চেয়ে ভালো রোজগার করতে পারো। দু হাজার টাকার জন্যে আমার বাড়ীতে কাজ করছো কেনো?
মিনা বললো, আমার ইচ্ছে ছিলো না। কলেজে ভর্তি হয়েছি মাত্র। টিউশনিও খোঁজছি। মা করতে দিতে চায়নি। কিন্তু মাসের টাকাটা না হলে সংসারই চলছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই এসেছিলাম, মায়ের অসমাপ্ত মাসটা শেষ করতে।
আমি বললাম, বেশ তো, কাজ তুমি করো। আমি আপত্তি করবো না। তবে, এই বাড়ীর কাজর মেয়ে রূপে নয়। এই বাড়ীর একজন সদস্যের মতো। তোমাকে কিছু ভালো পোশাক কিনে দেবো।
মিনা হঠাৎই উদাস হয়ে গেলো। বললো, না মামা, মা কখনো আমাকে করুনা ভিক্ষা নিতে শেখায়নি।
আমি বললাম, এটাকে তুমি করুনা বলছো কেনো? বলো বিনিময়। তুমি সুন্দর করে কাজ করছো, তার পারিশ্রমিকও বলতে পারো। তা ছাড়া মামা বলেই যখন ডাকছো, তখন মামা হিসেবে তো তোমাকে কিছু উপহারও করতে পারি।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
মিনা কিছু বললো না। শুধু অন্যত্র তাঁকিয়ে রইলো। আমি মিনার চমৎকার মুখটার দিকেই কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইলাম। সত্যিই খুব মায়াবী একটা চেহারা। মনে হয় অনেক দিনের চেনা। অনেক অনেক আপন কেউ। বললাম, তাহলে তাহলে রেডী হয়ে নাও। কোন একটা শপিং সেন্টারে গিয়ে নিজেই পছন্দ করে নেবে।
মিনা বললো, আপনি শুধু শুধুই আমাকে নিয়ে ভাবছেন। আপনাকে কাজে যেতে হবে। ঠিক আছে, আগামী মাসে আমার পারিশ্রমিক একটু বাড়িয়ে দেবেন। আমি নুতন একটা কামিজ কিনে নেবো।
আমি বললাম, না, যা কিনবে, তা আমারও পছন্দ হতে হবে। তুমি খেয়ে, রেডী হয়ে নাও।
 
তানিয়া, আমার বিয়ে করা বউ। যতই বোকা সোকা, অবুঝ একটা মেয়ে হুক, তাকে এক নজর না দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। সকাল এগারটা, ম্যানেজার এক গাদা ফাইল এনে আমার চোখের সামনে ফেললো। বললো, ইটালীর হোটেলে খুবি মন্দাভাব। তাইওয়ানে পর্যটকরা আমাদের হোটেলে উঠতে চাইছে না। কর্মচারীদের বেতন তো দিতে হবে। সাইন করে দিন।

আমি এক এক করে সাইন করে বেড়িয়ে পরলাম হোটেল থেকে। সোজা তানিয়াদের বাড়ী।
উঠানেই তানিয়া। বিধাতা কি নিজ হাতে তানিয়াকে বানিয়েছে নাকি? কি ডাগর ডাগর চোখ। হাসলেই দাঁতে যেনো মুক্তো ঝরে। এমন মেয়েদের জন্যেই বুঝি সুবীর নন্দী গেয়েছিলো, ওই দুটি চোখ যেনো, জলে ফুটা পদ্ম, হাসলেই ঝরে পরে জ্যোসনা। আমি তানিয়ার কাচাকাছি গিয়ে বললাম, তানিয়া? আজ তুমি খেয়েছো?
তানিয়া জিনস এর হাপ প্যান্টটার পকেটে আঙুল ডুবিয়ে বললো, পারুটি, গরম চায়ে চুবিয়ে চুবিয়ে খেয়েছি।
আমি বললাম, বেশ করেছো, এখন আমার মাথাটা চুবিয়ে চুবিয়ে খাবে না তো?
তানিয়া মুক্তো দাঁতের হাসিতে বললো, আপনার মাথায় তো পারুটি নেই। চুবিয়ে খাবো কি করে?
আমি বললাম, আমার মাথায় পারুটি নেই, তবে মাথাটা খুব গরম! পারলে তোমার?
তানিয়া খিল খিল করে হাসলো। বললো, আপনার মাথাটা কি গরম? তাহলে পানিতে চুবিয়ে নিন না। বাথরুমে পানি আছে তো!
আমি বললাম, ঠিক তাই করবো।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#23
চোখের সামনে দেখতে দেখতে রিমিও কত বড় হয়ে গেছে। রিমিকে দেখলে নিজেরও মনে হয়, বুঝি বয়স বাড়ছে। কলেজ থেকেই বুঝি ফিরছিলো। তানিয়ার অপরিপক্কতার আঘাত মাথায় নিয়ে অন্যমনস্কভাবেই বাড়ী ফিরছিলাম। হঠাৎই রিমির গলা শুনতে পেলাম, ভাইয়া!


রিমি আমাকে খুব ছোটকাল থেকেই ভাইয়া বলে ডাকতো। অথচ, কেনো যেনো রিমির মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনলে, আমার বুকটা হু হু করে উঠে। বয়সের ব্যবধান খুব বেশী না, মাত্র চৌদ্দ। তারপরও, কিছু কিছু ব্যাপার থাকে। আমি ফিরে তাঁকালাম রিমির দিকে।
ঠিক মায়ের চেহারা পেয়েছে রিমি। তবে, মায়ের চাইতে একটু বেশী দীর্ঘাঙ্গী। ঠোটগুলো যেমনি সরু, চৌকু, দাঁতগুলোও ঠিক দুধে সাদা।
উর্মি কিংবা শর্মি অতটা লম্বা ছিলো না। তিন বোনের মাঝে উর্মিই বুঝি ছিলো সবচেয়ে খাট, আর রিমি একটু অতিরিক্ত লম্বা। মাঝে মাঝে মনে হয়, ঠিক আমার গড়নই পেয়েছে।

শর্মিও যখন আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো, তারপর দীর্ঘদিনই উর্মিদের বাড়ীতে যাওয়া হয়নি। রিমির সাথে কুশলাদী বিনিময় হয় পথে ঘাটেই, কদাচিৎ। আমি বললাম, কলেজ থেকে ফিরছো বুঝি?
রিমি ঘাড়টা বাঁকিয়ে আহলাদী হাসিই হাসলো চক চক করা সাদা দাঁতগুলো বেড় করে। বললোজী ভাইয়া। শুনলাম, মিনা নাকি তোমাদের বাড়ীতে থাকে?
মিনা? কোথায় যেনো নামটা শুনেছি! হ্যা, নুতন সেই কাজের মেয়েটার নামই তো মিনা। আমি বললাম, হ্যা, চিনো নাকি মিনাকে?
রিমি বললো, ভাইয়া, কি যে বলো? মিনাকে চিনবো না? আমার বান্ধবী, খুব তোখোর ছাত্রী! এস, এস, সি, তে বোর্ডে স্ট্যাণ্ড করা!
আমি বললাম, তাই নাকি?
রিমি রাস্তার পাশের, কাঠের রেলিংটার উপরই চেপে বসলো। খিল খিল করে হেসে বললো, ভাইয়া, তুমি নিজে খুব ব্রিলিয়্যান্ট তো, তাই অন্য কোন ব্রিলিয়্যান্টদের খুব পাত্তা দিতে চাও না। এবার বলো, মিনা কলেজে যায়নি কেনো?
আমি বললাম, মিনা কলেজে যায়নি, তা আমি কি করে বলবো? আমি কি বাড়ীতে ছিলাম নাকি? আমার কত কাজ!
রিমি বললো, তোমার আবার কাজ, গাড়ী থাকতে পায়ে হেঁটে চলো, অযথা সময় নষ্ট করো।
আমি বললাম, না রিমি, অযথা সময় নষ্ট করিনা। হাঁটলে অনেক কিছু চিন্তা করার সুযোগ থাকে। গাড়ী চালালে সব সময় মাথার ভেতর একটা ঝুকি চেপে থাকে। কখন এক্সিডেন্ট করে ফেলি।
রিমি বললো, তা না হয় বুঝলাম। তো একটা কথা বলি। দিন দিন কিন্তু তোমার মাথাটা এক্কেবারে যাচ্ছে।
আমি অবাক হয়েই বললাম, মানে?
রিমি বললো, আর কত? অহনা আপুর কথা শুনেছি। দেখেছিও। একটা মেয়ে হলো? তুমি বরং মিনাকে বিয়ে করে ফেলো।

রিমির কথায় আমি হঠাৎই থতমত খেয়ে গেলাম। বিয়ে তো আমি করেছি, গোপনে। এমন একটা অপরিপক্ক মেয়েকে বিয়ে করেছি যে, সামাজিক ভাবে প্রকাশও করতে পারছিলাম না। আমি অন্যমনস্ক ভাবে বিড় বিড় করেই বললাম, বিয়ে?
রিমি বললো, হ্যা বিয়ে! মিনা গরীব ঘর এর মেয়ে হতে পারে, বাট, ভেরী বিউটিফুল, ব্রিলিয়্যান্ট! তোমার জন্যে অমন একটি মেয়েই দরকার, যে তোমাকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে পারবে।

রিমি মিথ্যে বলেনি। এই কয়দিনে মিনা যেভাবে বাড়ীটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখছিলো, খাবার দাবার সহ আমাকে মদের নেশা থেকেও বারণ করছিলো, তাতে করে মনে হয়, এমন একটি মেয়েকেই বুঝি আমার বিয়ে করা উচিৎ ছিলো। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে, বিয়ে তো আমি করেই ফেলেছি। তানিয়া নামের অপরিপক্ক একটা মেয়েকে, যে কিনা রিমি কিংবা মিনার চাইতেও তিন চার বছরের ছোটই হবে।
আমি মাথা নীচু করে চুপ চাপ দাঁড়িয়েই ছিলাম। রিমি হঠাৎই কাঠের রেলিংটার উপর থেকে নেমে আমার সামনা সামনি এসে দাঁড়ালো। ফিক ফিক করেই হাসলো সাদা চক চক করা দাঁত গুলো বেড় করে। ঠিক তার মায়ের মতোই সুন্দর সুদৃশ্য দাঁত! পাগল করা এক ফালি দাঁত! হঠাৎই আমার ঠোটে একটা চুমু দিয়ে বললো, মিনাকে বিয়ে না করলে, আমিই কিন্তু তোমাকে বিয়ে করে ফেলবো।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#24
রিমির নরোম ঠোটের স্পর্শে আমার দেহটা উষ্ণ হয়ে উঠেছিলো ঠিকই। কিন্তু, পরক্ষণেই আমার বুকটা হঠাৎই ধক ধক করে উঠলো। আমার ভেতর মনটা বলতে থাকলো, রিমি, তুমি জানো না তোমার সঠিক পরিচয় কি? সবাই জানে তোমরা তিন বোন এক ভাই। তোমার অন্য তিন ভাই বোন এর বাবা আর তোমার বাবা ভিন্ন!

অথচ, মুখে কিছুই বলতে পারি না আমি। রিমি আমার দু ঘাড়ের উপর হাত রেখে বললো, কি ভাবছো ভাইয়া? আমি সব জানি। বড় আপুও তোমাকে ভালোবাসতো, ছোট আপুও। কেউ তোমাকে পায়নি।

আমি মনে মনেই বললাম, শুধু তাই নয় রিমি? তোমার মাও আমাকে ভালোবাসতো। তারই পাপের ফসল তুমি। তুমি পথে পা বাড়িও না। অথচ, মুখে কিছুই বলতে পারি না। রিমি হরবর করেই বলতে থাকে, মিনাকে বিয়ে করতে বলেছি, তা কিন্তু মন থেকে বলিনি। মিনাকে তুমি অনেক দামী দামী পোশাক কিনে দিয়েছো। মিনার ধারনা, তুমি মিনাকে খুব ভালোবাসো। কিন্তু কেনো ভাইয়া? আমি কি তোমার অনুপযোক্ত ছিলাম?
আমি কি করে বলি, রিমি, তুমি আমার ঔরসজাত কন্যা! তোমার সাথে আমার বিয়ে, প্রেম, ভালোবাসা এসব হতে পারে না। সামাজিক নীতীর দেয়াল, কিছুই মুখ খুলে বলতে পারি না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাঁকিয়ে থাকি শুধু রিমির নিষ্পাপ মুখটার দিকে। রিমি বলতে থাকে, আসি ভাইয়া। তার আগে মিনা কলেজে যায়নি কেনো সেটা বলে যাচ্ছি। মিনার পরনে এত দামী পোশাক দেখে আমার হিংসে হয়েছিলো। মিনাকে আমি যথেষ্ট অপমান করেছি।
রিমি কথায় আমার মাথায় এক প্রকার আগুন ধরে গেলো। বাড়ী ফিরে এলাম হন হন করে। উঁচু গলাতেই ডাকতে থাকলাম, মিনা! মিনা!
মিনার কোন জবাব পেলাম না। আমি মিনার ঘরেই চুপি দিলাম। দেখলাম, মিনা ঘুমিয়ে আছে। ঠিক ঠিকই পুরনো একটা টাইট জামা তার পরনে, যেটা ঠিক মতো তার গায়ে না লেগে, বুকের দিকের অনেকাংশই বেড়িয়ে আছে। আমি রাগ সামলাতে না পেরে, আরো উঁচু গলাতেই ডাকলাম, মিনা, তোমার পরনে পুরনো জামাগুলো কেনো?
মিনা ঘুম ঘুম চোখেই বললো, আমার নাম তাহলে মনে রাখতে পেরেছেন?
আমি রাগ করেই বললাম, আমাকে কি মনে করো তুমি? আমার স্মরণ শক্তি কি খুবই কম?
মিনা বললো, তা না, মায়ের কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি। একবার যা শুনেন, তা আর ভুলেন না। একবার যা দেখেন, তা কখনোই ভুলেন না। তারপরও।
আমি বললাম, তারপরও মানে?
মিনা বললো, মানুষ তার পছন্দের জিনিষগুলোই শুধু মনে রাখে। কিন্তু অপছন্দের জিনিষগুলো খুব একটা মনে রাখতে পারে না।
আমি বললাম, খুব কথা জানো, তাই না। তুমি যে আমার অপছন্দের তা তোমাকে কে বললো। তুমি অপছন্দের হলে কি, এতগুলো পোশাক আমি তোমাকে উপহার করতাম? ওসব না পরে, একটা পুরনো জামা পরে আছো কেনো?
মিনা শুয়ে থেকেই আমতা আমতা করতে থাকলো। বললো, না মানে, সারাদিন ঘরে ছিলাম। তা ছাড়া, এখনো পরার উপযুক্ত আছে। ঘরে তো আর কেউ দেখছে না।

আমি বললাম, ঘরে কেউ দেখছেনা, তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু কলেজে যাওনি কেনো?
মিনা আমতা আমতা করতে থাকলো। বললো, না মানে, এমনিই।
আমি বললাম, এমনিতেই নয়। সত্যি কথাটা বলো। নইলে তোমার অবাধ্য হয়ে এক্ষুণি মদ টানতে শুরু করবো। তুমি খুশী হবে?
মিনা অন্যত্র তাঁকিয়ে বললো, সত্যি বলছি মামা। শরীরটা ভালো লাগছিলো না, তাই। গত রাতে অনেক রাত জেগে পড়ালেখা করেছিলাম।
আমি বললাম, তুমি যে এমন একটা ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্রী সেটাও তো কখনো বলো নি। তুমি আমার সাথে আর কত মিথ্যে বলবে?
মিনা বললো, আমি ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্রী, সে কথা আপনাকে কে বললো? আপনি কি আমার কলেজে গিয়েছিলেন?
আমি বললাম, সব কথা জানার জন্যে কলেজে যেতে হয় না। তোমাকে কলেজে কেউ টিটকারী করে অপমান করেছে, তার জন্যেই তো তুমি কলেজে যাওনি।
মিনা অপ্রস্তুত হয়ে বললো, না মানে, রিমি? এমনই, আমার খুব ভালো বন্ধু। ওর কথায় আমি কিছু মনে করিনি। সত্যিই আমার শরীরটা খারাপ।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#25
আমি মিনার কথা বিশ্বাস করলাম। তার মাথার কাছেই বসলাম। ডান হাতটা তার কপালেই রাখলাম। কি? জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে! আমি বললাম, কি ব্যাপার? তোমার গায়ে তো অনেক জ্বর! আমাকে বলোনি কেনো?

মিনা অভিমান করেই বললো, বলার সুযোগ দিলেন কোথায়?
আমি বললাম, স্যরি মিনা, নিশ্চয়ই ঔষধও খাওনি। আমি টেলিফোন করে দেখছি, কোন ডাক্তার পাওয়া যায় কিনা।
মিনা বললো, ডাক্তার লাগবে না। গরীবদের জ্বর বেশীক্ষণ থাকে না। একটু ঘুমুলেই সেরে যায়।
আমি বললাম, তুমি একটা মেধাবী মেয়ে, এমন কথা বলতে পারো? অসুখকে না সারালে, সেটা পরবর্তীতে আরো বড় অসুখ হয়ে ধরা পরে।
মিনা আব্দার করেই বললো, না মামা, বললাম তো, ডাক্তার লাগবে না।
আমি মিনার কথা শুনলাম না। ডাক্তার ডেকে, তার চেক আপটা করিয়ে নিলাম। ডাক্তার যকন নিশ্চিত করলো, সাধারন জ্বর, তখনই আমি আশ্বস্ত হলাম। মিনা বললো, দেখলেন তো? শুধু শুধুই এত গুলো টাকা নষ্ট করলেন।
আমি মিনার নাকটা টিপে বললাম, এত গুলো টাকা নষ্ট করিনি। তোমার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমার দেখাশুনা করবে কে?
মিনা উঠে বসতে চাইলো, বললো, মামা দুপুরের রান্না বান্না তো কিছুই হয়নি। আপনি হাত মুখটা ধুয়ে আসেন। আমি খাবার রেডী করছি।
আমি মিনার থুতনীটা টিপে আদর করে বললাম, তোমার এই শরীর নিয়ে রান্না বান্না করবে? শোন মেয়ে, যখন আমিও ছাত্র ছিলাম, নিজ হাতেই রান্না করতাম। আজ আমি রান্না করবো, আর আমিই তোমাকে খাইয়ে দেবো।
মিনা অনুযোগ করে বললো, মামা, আমি একটা বস্তির মেয়ে! আপনি আমার জন্যে?
আমি বললাম, চুপচাপ শুয়ে থাকো। তুমি বস্তিতেই থাকতে আর রাজমহলেই থাকতে, ওসব আমি জানতে চাই না। এখন তুমি আমার বাড়ীতে থাকো। এই বাড়ীরই একজন। সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে তাকার জন্যেই তো মানুষ! নাকি?
মিনা আবারো শুয়ে পরলো। আমার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখ মেলেই তাঁকিয়ে রইলো। আমি এই তো গুড গার্ল।
মিনা বিড় বিড় করেই বললো, মামা, মা ঠিকই বলতো, তোমার সেবা করাতেও অনেক পূণ্য!
আমি রান্না ঘরের দিকেই এগুতে থাকি।
রান্না ঘরের টুকরি গুলোতে খোঁজা খোঁজি করে দেখলাম, করলা, পটল, হরেক রকমের সব্জিই আছে। জ্বরের মাঝে করলার সাথে আলুর ভাজিটাই আমার ভাল লাগতো। আমি করলা আর আলু কুটতে থাকলাম। তারপর একটা পাতিলে আমার পছন্দের পুই শাকের সাথে ঘন ডাল বসিয়ে দিলাম।
খাবার রেডী করে, মিনার ঘরেই সব নিয়ে গেলাম। মিনা ঘাড়টা কাৎ করে বললো, মামা, আপনি খেয়েছেন?
আমি বললাম, আজকে এক সাথেই খাবো। এক লোকমা তোমাকে খাইয়ে দেবো, আরেক লোকমা আমি খাবো।
এই বলে এক লোকমা খাবার হাতে তুলে, মিনার মুখে বাড়িয়ে দিলাম। মিনা খাবার গুলো মুখে নিয়ে বললো, জীবনে বাবার স্নেহ কখনো পাইনি। আমার যদি বাবা থাকতো, তাহলে বোধ হয় এমনি করেই খাইয়ে দিতো।
আমি এক লোকমা খাবার নিজের মুখেও পুরে দিয়ে বললাম, তোমার বুঝি বাবা নেই?
মিনা বললো, জী মামা, জন্মের আগেই মারা গেছে। কখনো দেখারও সুযোগ হয়নি।
আমি মিনার মুখে আরেক লোকমা খাবার তুলে দিয়ে বললাম, ভেরী স্যাড, নাও খাও।
মিনার মুখে আবারো খাবার তুলে দিয়ে বললাম, একটা সত্য কথা বলবে?
মিনা আমার চোখে চোখ রেখে বললো, আপনি সব সময়ই আমাকে অবিশ্বাস করেন। আমি মিথ্যে বলি না।
আমি বললাম, হুম, বুঝলাম। রিমি তোমাকে কেমন অপমান করেছিলো?
মিনা জ্বরের মাঝেই হাসলো। আদুরে গলায় বললো, ওসব কিছু না মামা। তুমি আমাকে ওই নুতন জামাগুলো কিনে দিলে না? তার একটা গতকাল পরেছিলাম। রিমি দেখেছিলো। ভালোই তো নাগর জুটিয়েছো! নুতন নুতন জামা। কলিকালে আরো কত কি দেখবো!
রিমির এত বড় সাহস? মিনাকে এমন আমাকে জড়িয়ে এমন বিশ্রী কথ বলেছে? আমার মুখে আর খাবার রোচলো না। প্লেটের বাকী খাবারগুলো মিনার মুখেই তুলে দিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিতে থাকলাম। মিনা বললো, মামা, আপনি খাচ্ছেন না যে?
আমি বললাম, তুমি আগে সুস্থ হয়ে নাও, তারপর, তুমিও এমন করে আমাকে খাইয়ে দিও।
মিনা মিষ্টি করেই হাসলো। মিনার দাঁতও গেঁজো। দুপাশের দুটি গেঁজো দাঁত অদ্ভুত মিষ্টি লাগে।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#26
মিনাকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে, এক ঢোক মদ গিলে নিলাম। তারপর হন হন করে এগুতে থাকলাম উর্মিদের বাড়ী।

উর্মিদের বাড়ীতে যাইনা, ধরতে গেলে অনেকদিন। এতগুলো বছরেও, উর্মির মা ফরিদা বেগম একটুও বদলায়নি। আমাকে দেখা মাত্রই মুচকি হেসে বললো, খোকা তুমি? আমার কথা মনে পরলো তাহলে?
আমি গম্ভীর গলায় বললাম, রিমি কোথায়?

ফরিদা বেগম ঈষৎ ক্ষুন্ন হয়ে বললো, রিমির কাছে তোমার কি? এতগুলো বছর রিমিকে আমি বুকে আগলে রেখেছি। ওর সব ব্যাপার আমি গোপন রেখেছি। সাবধান, সব সম্পর্ক আমার সাথে। রিমির সাথে তোমার কোন সম্পর্কই নেই। রিমি শুধু আমার মেয়ে।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, না চাচী, আমি সেই অধিকারে রিমির সাথে দেখা করতে চাইছি না। রিমি ওর ক্লাশ মেইট যে আমার বাড়ীতে এখন আশ্রিতা, তাকে অপমান করেছে।
ফরিদা বেগম গম্ভীর গলায় বললো, ঠিক আছে, আমি বলে দেবো।
আমি বললাম, আপনি বুঝতে পারছেন না। মিনা একটা নিষ্পাপ মেধাবী মেয়ে।
ফরিদা বেগম বললো, রিমিও কম মেধাবী না।
ফরিদা বেগম এমন স্বার্থপর কেনো? আমি বললাম, জানি, রিমিও খুব মেধাবী। কখনো ক্লাশে সেকেণ্ড হয়নি। কিন্তু মিনা বোর্ডে স্ট্যাণ্ড করা মেয়ে। একটা বস্তিতে থেকে সারা জীবন লেখাপড়া করেছে।
ফরিদা বেগম চোখ কুচকেই বললো, একটা বস্তির মেয়ের পক্ষ নিয়ে আমার মেয়েকে শাসন করতে এসেছিলে? রিমি তো তোমারই মেয়ে!
আমি আমতা আমতাই করতে থাকলাম। বললাম, না মানে, মিনা কলেজে পরে। তার অধিকাংশ পোশাকই ছেড়া, মলিন। আমি কিছু ভালো পোশাক কিনে দিয়েছিলাম শুধু। অথচ, রিমি মিনাকে কি বিশ্রী বিশ্রী কথা!
ফরিদা বেগম বললো, রিমি এতটুকুন মেয়ে, বয়স আর কতই হয়েছে? এই বয়েসে মেয়েরা কত কথাই তো বলে! ওসবে কান দিতে আছে নাকিঅনেক দিন পরে এলে। বসো, চা করছি। চা খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো।
আমি বললাম, না, চা খাবো না।
ফরিদা বেগম বললো, চা না খাও, ঠিক আছে। শান্ত হয়ে বসো। আমার কথা শোনো।
আমি বসলাম নিজের অজান্তেই। বললাম, কি কথা?
ফরিদা বেগম বললো, বুড়ী হয়ে গেছি। এখন কি আমার কথা শুনার ধৈর্য্য তোমার আছে?
আমি ফরিদা বেগম এর দিকে তীক্ষ্ম চোখেই তাঁকালাম। কিছু কিছু মেয়েই বুঝি আছে, তারা জীবনে কখনো বুড়ী হয়না। চল্লিশ পয়তাল্লিশ পেরিয়ে গেলেও নুতন যৌবনে পা দেয়। ফরিদা বেগমও তেমনি এক মহিলা।
ফরিদা বেগম মেঝের উপর বসার উদ্যোগ করেহাত দুটি মাথার পেছনে ঠেকিয়ে, বুকটা খানিক উঁচু করে ধরে বললো, যৌবনে অনেক মস্ত ভুল করে ফেলেছি। শেষ বয়সে নিসংগতা সত্যিই কষ্টের।
আমি বললাম, কি যে বলেন চাচী? শেষ বয়স হবে কেনো? আপনার দেহে এখনো যা ভরা যৌবন! যে কোন উঠতি বয়সের যুবক ছেলেও কিন্তু আপনার প্রেমে পরে যেতে পারে।
ফরিদা বেগম আফশোস করেই বললো, তারপর, দুদিন পর সব কিছু লুটে পুটে খেয়ে আমার কথা ভুলে যাবে।
আমি আহত হয়েই বললাম, সে সব দিন গুলোর কথা ভুলিনি চাচী। আসলে ইউনিভার্সিটি ভর্তি হবার পর, সব কিছু কেমন যেনো উলট পালট হয়ে গেলো। উর্মিরও বিয়ে হয়ে গেলো, শর্মিরও।
ফরিদা বেগম বললো, উর্মির মেয়েটাও অনেক বড় হয়েছে। ক্লাশ নাইনে পড়ছে।
আমি মনে মনেই ভাবলাম, দিনগুলো বুঝি এমনি করেই খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই সেদিনই বুঝি আমি ক্লাশ নাইনে পড়তাম। উর্মিও নুতন করে ক্লাশ নাইনে ভর্তি হয়েছিলো। নুতন করেই দুজনে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎই সব কিছু কেমন যেনো উলট পালট হয়ে গিয়েছিলো। আমি বললাম, তাই নাকি? কেমন আছে উর্মি?
ফরিদা বেগম মন খারাপ করেই বললো, উর্মিও সুখে আছে, শর্মিও সুখে আছে। সুখে নেই শুধু আমি।

Like Reply
#27
Tumi je amar
 
 
পৃথিবীতে তুমি সুখী, সেই ছেলেটা সুখী, সেই মেয়েটা সুখী, সবাই সুখী !
শুধু আমিই সুখী নই !!
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#28
Next update
[+] 1 user Likes sam102's post
Like Reply
#29
এ নামে রাখাল হাকিমের গল্প ছিল বলে তো মনে পরছে না
Like Reply
#30
গল্পটা কি অসমাপ্ত??
Like Reply
#31
গল্পের বাকী পাট গুলান দেন
Like Reply
#32
ddey333   ভাই
রাখাল হাকিম কত গুলো গল্প লিখেছিলেন।কোন গল্প কি তিনি শেষ করেছিলেন। সবগুলো গল্প কি একসাথে কোথাও পাওয়া যাবে?
লাইক দিলাম।


-------------অধম
Like Reply
#33
এই আর একটা অসমাপ্ত গল্প।
Like Reply
#34
এত সুন্দর গল্পটা অসমাপ্ত হয়ে রয়ে গেল এটা ভাবতেই অবাক ও খারাপ লাগছে। যদি গল্পের অবশিষ্ট অংশ পোস্ট করা সম্ভব হয় তবে অত্যন্ত আনন্দিত হব।
Like Reply




Users browsing this thread: