Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
শুনতে বাজে লাগলেও সত্যিই লিভ টুগেদার একটা ওপেন সিক্রেট এখন!  

এক বাসায় থাকছে, সংসার করছে কিন্তু বিয়ে করছে না! 
এমন অনেক ঘটনা দেখেছি। 
মানুষ হিসাবে একটা সাধারণ প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। এদের যদি সংসার, শারীরিক সম্পর্কে আপত্তিই না থাকে তাহলে বিয়েটাতেই এতো আপত্তি কেন? !
 
আধুনিক হবার পরেও এই ব্যপার টা আমার ঘেন্না লাগে। একেবারেই মানতে পারি না।
একটা ছেলে আমাকে বিয়ে করলো না, কিন্তু আমি তাকে বিবাহিত জীবনের সমস্ত আনন্দ দিলাম। 
এটাকে আমার আধুনিতকা মনে হয় না। 
বরং এটাকে আমি মানুষের ব্যক্তিসত্বার চরম অপমান বলেই মনে করি।
 
যে মানুষ টা অফিসিয়ালি আমার দায়িত্ব নিতে ভয় পায়, সামাজিক ভাবে আমাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না, তার হাতে নিজেকে কেন তুলে দেব!  
 
অনেকেই দেখি বলে, ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না। 
কিসের ভালোবাসা রে ভাই? ফাইজলামিরও একটা লেভেল থাকে!  
বিবাহিত জীবন সুখের হোক বা না হোক, যে আপনাকে ভালোবাসে, সে যে কোন মুল্যে আপনাকে বিয়ে করতে চাইবে।
যেখানেই দেখবেন বিয়ে নিয়ে অনাগ্রহ, 
একদম শিওর হয়ে যান সে বসন্তের কোকিল। বসন্ত ফুরালেই পালিয়ে যাবে। 
 
বি দ্র: আমি এখানে পুরুষ কে ছোট করিনাই। নারীকেও না। একজন মানুষ হিসেবে নিজের মতামত দিয়েছি। প্রতিটি মানুষেরই সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। মানুষ লুকিয়ে অপমানিত হয়ে কেন বাঁচবে! 
যেখানে তার মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ আছে
 
Dada_of_India

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(21-03-2023, 01:11 PM)ddey333 Wrote:  
যে মানুষ টা অফিসিয়ালি আমার দায়িত্ব নিতে ভয় পায়, সামাজিক ভাবে আমাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না, তার হাতে নিজেকে কেন তুলে দেব!  
 

লিভ ইন খারাপ না ভালো সেই নিয়ে আমার কোন কথা নেই । আমি এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিও না যে সেটা নিয়ে আলোচনা করবো । তবে এই লাইনটা পড়ে আমার মনে একটা কথা এসেছে । সেটাই বলছি ।

এই ব্যাপার গুলো , "দায়িত্ব নেয়া" "স্বীকৃতি দেয়া" "নিজেকে তুলে দেয়া" এগুলো থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার । বিয়ে মানে নিজেকে তুলে দেয়া হওয়া ঠিক না । বিয়ে মানে কারো কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া হওয়া ঠিক না , বিয়ে মানে কেউ একজন আমার দায়িত্ব নেবে এটাও ঠিক না ।
[+] 1 user Likes cuck son's post
Like Reply
পতিতালয়, পুরুষ এবং নারী ! 

এক ব্যক্তি কলকাতার সোনাগাছি বস্তিতে এক পতিতা মহিলার কাছে এসেছেন। ব্যক্তিটি জিজ্ঞাসা করলেন
- নাম কি তোমার ?
- কেন নাম দিয়ে ধুয়ে খাবেন,, স্বপ্না আমার নাম।
- বয়স কত ?
- কেন বাবু, বয়স শুনলে ২০০ আরো বেশি দেবেন ?
- এমন ভাবে কথা বলছো কেন ?
- ভালো ভাবে কথা বলার জন্য তো এক্সট্রা পয়সা দেননি বাবু !
- তা বলে এইভাবে কথা বলার জন্যও তো কম পয়সা নাওনি ?
- বাবু, পয়সা তো শুধু শরীরের জন্যই, কেনোই বা সময় নষ্ট করছেন, শুরু করুন !
- সিগারেট খেতে পারি একটা ?
- খান না, আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন !
- না মানে, যদি সমস্যা থাকে .…
- বাব্বা, পারি না গো পারিনা, লাগাতে এসে এতো ন্যাকামো আসে কিভাবে আপনার !
- এমন কেন বলছো ? সমস্যা তো থাকতেই পারে অনেকের সিগারেটে !
- বাবু, সমস্যা তো প্রাণীর থাকে, আমরা তো জড়পদার্থ
- একটু বেশিই বাজে বকছো, সমস্যা আছে কিনা তাই জিজ্ঞেস করলাম !
- তবে রে, অনেকক্ষন ধরে বড্ডো চোদাচ্ছেন, এবার নিজের সমস্যা দূর করে বিদায় হন তো, শুরু করুন !
- আচ্ছা।
- খুলবো ? না নিজেই খুলবেন ?
- হ্যাঁ ..না…হ্যাঁ আমিই..না…
- ওহ বুঝেছি, সোনাগাছিতে প্রথমবার ?
- হ্যাঁ ।
- কেনো ? গার্লফ্রেন্ড দেয়নি ?
- না না, গার্লফ্রেন্ড টালফ্রেন্ড নেই ।
- এমন গা জ্বালানো পাবলিক হলে গার্লফ্রেন্ড হবেই বা কি করে !
- না না, আমি বিবাহিত !!
- তো ? বউ কি রাতে ডিস্কো গেছে ? আর আপনি এলেন সোনাগাছি ? সত্যিই মাইরি, আপনারা বড়লোকরাই পারেন এমন নাটক চোদাতে !
- না না, আমি ওই জন্য আসিনি, বউ কে খুঁজতে এসেছি ।
- মানে ?
- হ্যাঁ, জানেন.... রাতে শপিং করে ফিরছিলাম দুজনেই, আমি আর আমার স্ত্রী উত্তরা , হঠাৎ ৪ জন এলো, আমাদের দুজনের মুখে রুমাল চেপে ধরলো, জ্ঞান ফিরলো যখন, পরদিন সকালে আমি স্থানীয় একটা হসপিটালে বেডে শুয়ে আছি , উত্তরা নেই, অনেক খুঁজেছি জানেন, কোথাও পাইনি।
- তা, হটাৎ আজ রাতে সোনাগাছিতে একরাতের জন্য বউ খুঁজতে এলেন বুঝি ?
- নাহঃ, বলছি, প্লিজ পুরোটা শুনুন, ওই রাতের ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় মানে গতকাল স্ত্রীর ফোন আসে, শুধু বললো সোনাগাছিতে এসে আমাকে নিয়ে যেও, নাম আমার নিশা…. আমি কিছু বলার আগেই ফোন টা কেটে দিলো উত্তরা। বুঝতে পেরেছিলাম হয়তো ৫ সেকেন্ডের সুযোগটাই পেয়েছিলো আমাকে জানানোর জন্য। তারপর কাল থেকে যতবার ফোন করেছি ওই নম্বরে, ফোন লাগে নি আর.… তাই আমি খুঁজতে এসেছি উত্তরাকে !! জানি এতো বড় সোনাগাছিতে আমার স্ত্রীকে খোঁজা সম্ভব নয়, শুধু চাই তোমার মতো একজন বন্ধু যে আমার স্ত্রীকে খুঁজে বের করে দেবে এই নরক থেকে। প্লিজ তুমি খুঁজে দাও উত্তরাকে, যা লাগবে আমি তোমাকে দেবো !
- আমার কি লাগবে সে দাবি না হয় আপনাকে পরেই বলবো, তবে পারবেন নিজের স্ত্রীকে এখান থেকে ফিরিয়ে নিতে সব কিছু জেনেও ?
- কেনো পারবো না ? আমি তো বেশ্যা নিশাকে কিনতে আসিনি, স্ত্রী উত্তরা কে ফেরাতে এসেছি! তুমি তো কত দালাল, কত মাসি কে চেনো…. প্লিজ ফিরিয়ে দাও আমার উত্তরা কে !!
- আচ্ছা, আপনার নম্বর টা দিয়ে যান, আমি আপনাকে জানাবো কথা দিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
(৩ দিন পর ব্যক্তিটিকে ফোন করে স্বপ্না)
- শুনছেন ? নিশার খবর পেয়েছি.... আমার বিল্ডিঙের ডান দিকের ৩ নং বিল্ডিয়েই নিশা থাকে, এখানে নতুন তো তাই হাতে ফোন পায়না, আর হ্যাঁ, হয়তো কোনো বাবুর ফোন থেকেই আপনাকে সেদিন ৫ সেকেন্ডের জন্য ফোন করতে পেরেছিলো, নিয়ে যান আপনার নিশা কে !!


সাথে পুলিশ নিয়ে গিয়েই ব্যক্তিটি উদ্ধার করলো নিশা ওরফে তার স্ত্রী উত্তরা কে এবং ফেরার পথে দেখা করতে যান ওই স্বপ্না নামক বেশ্যার সাথে।
- কি বলে ধন্যবাদ দেবো তোমায়, নিজেও জানিনা, এবার বলো তোমার কত টাকা লাগবে ?
- টাকা লাগবে না, টাকার থেকেও অনেক বেশি কিছু আপনি আমাকে দিয়ে গেলেন বাবু !!
- মানে ? কি বলতে চাইছো ? কিছুই বুঝলাম না.…
- জানেন বাবু ? আজ থেকে ৩ বছর আগে গ্রামেরই একটা ছেলে কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, খুব ভালোবাসতাম !! বাবা মা মানে নি তাই পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম…. জানেন বাবু ? বিয়ের ১৯ দিনের মাথায় আমাকে এই নরকে বিক্রি করে দিয়ে যায় ১৩ হাজার টাকায়..!! অনেকবার এখান থেকে পালিয়ে যাবার চান্স পেয়েছিলাম, কিন্তু কোথায় যাবো বলুন, বাবা-মার সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো, রাস্তায় নামলেও তো সেই আমাকে ছিঁড়েই খাবে সমাজের বাবুরা রাতের অন্ধকারে , আর দিনের বেলায় খেপি সাজিয়ে রাখবে রেল স্টেশনের চাঁতালে..!! তার থেকে বরং এখানে দিব্যি খেতে বাঁচতে তো পারছি!! বিশ্বাস করুন বাবু, সেদিন থেকে কোনো পুরুষ কে মন থেকে সহ্য করতে পারি না, কোনো পুরুষ কে বিশ্বাস করতেও পারিনা, শুধু এটাই মনে হতো সব পুরুষ সমান…. ৩ দিন আগে আপনি আমার সেই ভুল ভাঙলেন। নতুন করে বিশ্বাস করতে শিখলাম, একটা পুরুষ যেমন তার স্ত্রীকে বিক্রি করতেও পারে সোনাগাছিতে, তেমন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেও পারে সোনাগাছি থেকে..!! গতর খাটিয়ে পয়সা তো ৩ বছরে অনেক রোজগার করেছি বাবু, তবে ৩ বছরে যে ভুল টা রোজ ভেবে এসেছি, সেই ভুল টা আপনি ৫ মিনিটেই ভেঙে দিলেন.. যেটা পয়সার থেকেও অনেক দামি..!! যান বাবু, ভালো থাকবেন আপনার উত্তরা কে নিয়ে..!! আর অনেক ধন্যবাদ এই সত্যিটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে যাবার জন্য “সব পুরুষ সমান নয়”….. কেউ রেখে যায়, কেউ নিয়ে যায়….!! কেউ রাখতে আসে, কেউ ফেরাতে আসে….!!
[+] 2 users Like আমিও_মানুষ's post
Like Reply
(21-03-2023, 04:33 PM)cuck son Wrote: লিভ ইন খারাপ না ভালো সেই নিয়ে আমার কোন কথা নেই । আমি এমন বিজ্ঞ ব্যক্তিও না যে সেটা নিয়ে আলোচনা করবো । তবে এই লাইনটা পড়ে আমার মনে একটা কথা এসেছে । সেটাই বলছি ।

এই ব্যাপার গুলো , "দায়িত্ব নেয়া" "স্বীকৃতি দেয়া" "নিজেকে তুলে দেয়া" এগুলো থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার । বিয়ে মানে নিজেকে তুলে দেয়া হওয়া ঠিক না । বিয়ে মানে কারো কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া হওয়া ঠিক না , বিয়ে মানে কেউ একজন আমার দায়িত্ব নেবে এটাও ঠিক না ।

দাদার লেখা তাই দাদাই জবাব দেবে।

আমি আজকাল কোনো তর্ক বিতর্ক থেকে দূরে রাখছি নিজেকে।

Namaskar Smile
Like Reply
(21-03-2023, 08:54 PM)ddey333 Wrote: দাদার লেখা তাই দাদাই জবাব দেবে।

আমি আজকাল কোনো তর্ক বিতর্ক থেকে দূরে রাখছি নিজেকে।

Namaskar Smile

যদি এই বিষয়ের জবাব দিতে হয় তাহলে বলবো কুকুর আমাদের থেকে অনেক ভালো ! এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
আর হ্যাঁ ! একটা কথা ! একটা ভীষণ সমস্যায়  ফেঁসে ছিলাম ! মুক্তি পেয়ে গেছি ! তাই পরশু শিরডি যাচ্ছি ! ফিরে এসে কথা বলবো ! 
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
(21-03-2023, 09:13 PM)আমিও_মানুষ Wrote: আর হ্যাঁ ! একটা কথা ! একটা ভীষণ সমস্যায়  ফেঁসে ছিলাম ! মুক্তি পেয়ে গেছি ! তাই পরশু শিরডি যাচ্ছি ! ফিরে এসে কথা বলবো ! 

পরকীয়া ছাড়লে তাহলে অবশেষে। Big Grin

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো দাদা। Namaskar Heart
Like Reply
দরিয়া

 
আজকাল পরিশ্রম কম হচ্ছে বলে রাতে ঘুম আসতে চায় না জিনিয়ার। আগে অফিস টাইমের পরে জার্নিতেই যেন শরীর কাবু হয়ে যেত ওর। বাড়ি ফিরে রান্নাবান্নার বালাই থাকত না বেশিরভাগ দিনই। টেক অ্যাওয়ে দিয়েই কাজ চালিয়ে নিত। আর, ওদের কোম্পানি যেমন স্যালারি দেয়, তেমনি খাটিয়েও মারে। তাই উইক ডেজ গুলো যে কিভাবে কাটত,বুঝতেই পারত না জিনিয়া। আর উইক এন্ড তো এলো আর গেল। সেই ছোটবেলায় পড়া 'সোম মঙ্গল বুধেরা সব আসে তাড়াতাড়ি' র মতো আর কি! তাও ভাল, বাড়ির কাছেই রাজারহাটের মল, তাই মুভি যেতে, শপিং এ যেতে অসুবিধা হয়না।
একটা কনটেন্টের ওপর কাজ করছে ও এখন। আজকের মধ্যে সাবমিট করতে হবে। লিখতে লিখতেই মনে হলো একটু কফি খেলে ভাল হয়। ক্লান্তু লাগছে খুব। স্ট্রেসড লাগছে। ক্যাফাইন মাথায় গেলে হয়ত ভাল আইডিয়া আসবে। কনটেন্ট টা বেটার হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, ল্যাপটপ টা টেবিলে রেখে বেডরুম থেকে বেরিয়ে কিচেনের দিকে এলো ও।
নিউটাউনে একটা কিছুদিন আগে কমপ্লিট হওয়া হাউজিং এ থাকে জিনিয়া। রেন্টেড অ্যাপার্টমেন্ট। কলকাতার এই দিক টা বরাবর ই খুব প্রিয় ওর। সন্ধ্যেবেলা তো মনে হয় এক টুকরো বিদেশ যেন। তাই এবার আগের ফ্ল্যাটের এগ্রিমেন্ট শেষ হবার আগেই বিভিন্ন প্রপার্টি অ্যাপে খোঁজ করছিল এই এলাকায় ফ্ল্যাটের জন্য। শেষমেষ পুজোর পরে সন্ধান পেল এই কমপ্লেক্সের। ওর ফ্ল্যাটটা একজন এন আর আই এর, যিনি রেন্ট আউট করে দিতে চাইছিলেন। একটু বাজেট বেশি হলেও হাতছাড়া করেনি জিনিয়া।
বেডরুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে যেতে গিয়ে ড্রয়িংরুমে রাখা সোফার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াল ও। বাবা আবার সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। খাটে না শুয়ে সোফায় শুলে হয়, ঘাড়ে ব্যথা হবে না? আস্তে আস্তে বাবার দিকে এগিয়ে গেল জিনিয়া।
বাবা কিছুতেই ওর এই ফ্ল্যাটে আসতে চাননি। আসলে বাবা রিটায়ার করার কিছুদিন পরেই মা চলে গেলেন। তারপর থেকেই বাবা একটু যেন চুপচাপ হয়ে গেছেন। কলকাতা আসতেই চান না,বলেন বর্ধমানেই ভাল আছেন। মেয়েকে যেন একটু সমীহ ও করে চলেন। তারপর এই ঝাঁ চকচকে ফার্নিশড ফ্ল্যাট। প্রথমদিন বারবার ওকে জিজ্ঞেস করছিলেন 'ঝুনু, এই খাট, সোফা, রান্নাঘরের জিনিস সব তুই কিনেছিস?' আর জিনিয়া বুঝিয়ে পারে না যে এগুলো সব আগে থেকেই ছিল। এবার ও তো জনতা কার্ফুর আগেরদিন বাবাকে এনেছিল ও, ওদের অফিস ওয়ার্ক ফ্রম হোম ঘোষনা করে দেওয়ায়। ভাগ্যিস এনেছিল, নইলে বাবা ওখানে একা একা কি যে করতেন!
একটু বেশি করে কফি বানিয়ে দুটো মাগে নিয়ে বাবার কাছে এলো জিনিয়া। দেখে বাবার কোলে রাখা নিউজ পেপারের কটা পাতা পড়ে গিয়ে উড়ে গেছে সেন্টার টেবিলের নীচে। আর বাবা কেমন হাঁ করে ঘুমোচ্ছেন...ঘামে চকচক করছে মুখটা।
ঘাম দেখে ওপরের দিকে তাকালো জিনিয়া। যা ভেবেছে তাই! বাবা একা ঘরে থাকলেই ফ্যান বন্ধ করে দেন, দেখেছে জিনিয়া। কি,না ইলেক্ট্রিসিটির বিল বেশি আসবে। এদিকে নিজে কষ্ট পাবেন, সে বেলা কিছু না! গরম ও পরে গেছে যথেষ্ট।
ভাবতে ভাবতেই চোখ টা কেমন কড়কড় করে উঠল জিনিয়ার। প্রাইভেট কোম্পানির একাউন্টেন্ট ছিলেন বাবা। অর্থের অভাব ছিল বাড়িতে, ভালবাসার না। একটাই স্বপ্ন ছিল...মেয়েকে যেন কষ্ট পেতে না হয়! মেয়ে যেন নিজের পায়ে দাঁড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছে জিনিয়াও। আজ, বারো বছরের কেরিয়ারের পরে মোটামুটি একটা জায়গায় এসে পৌঁছেছে ও। কিন্তু...এত কিছুর মধ্যে হয়ত হারিয়ে গেছে বাবার সেই দুষ্টু মেয়েটা, যে বাবা ফিরলেই নানারকম দুষ্টুমি শুরু করে দিত বাবার সাথে। আর মা বকে উঠলে বাবা ই ওকে প্রশ্রয় দিতেন...,মা কে বলতেন 'না না আমি টায়ার্ড না...একটু চা দাও তো...'
বাবার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে একটা দুষ্টু বুদ্ধি জেগে উঠল ওর মধ্যে। টুক করে নিজের ঘরে ঢুকে নিজের টিপ রাখার বাক্স খুলে একটা লাল টিপ বের করে পরিয়ে দিল বাবার কপালে। একদম ছোটবেলার মতো। একবার তো বাবা সেইভাবে বাজারেও চলে গেছিলেন! ঘটনা টা মনে পড়ে যেতেই হেসে ফেলল ও। তারপর সেন্টার টেবিলে রাখা কফির মাগ টা হাতে নিয়ে বলল 'ও বাবা, ওঠো, কফি খাও!'
বাবা একটু চমকেই উঠলেন যেন 'অ্যাঁ...হ্যাঁ' বলে।
'এসো বাবা, ব্যালকনিতে এসো...কফি খাও...' বলে স্লাইডিং দরজাটা খুলে বারান্দায় গিয়ে বলল ও।
একটু শ্লথ পায়ে এলেন বাবা। কপালে টিপ পরা বাবা। হঠাৎ দেখে পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসা মারাঠি আঙ্কেল -আন্টি বাবার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। বাবা ও একটু সৌজন্যের হাসি হাসলেন দেখে। আন্টি বলে উঠলেন 'হ্যালো দাদা, ইয়োর ডটার ইজ ভেরি নটি...দেখিয়ে আপকে ফোরহেড পে বিন্দি লাগা দি হ্যায়..'
চমকে উঠে বাবা কপালে হাত দিলেন, আর আর ও কপট রাগে আন্টিকে বলে উঠল 'ইস আন্টি, তুমি বলে দিলে? আই ওয়াজ প্লেইং আ গেম উইথ হিম...'
হঠাৎ শোনে, বাবা পাশ থেকে বলছেন 'মেরি বেটি যব ছোটি থি, তব অ্যায়সি হি করতি থি...আভি ভি বড়ি নেহি হুয়ি হ্যায়...' বলে হাসতে হাসতে ওর মাথায় হাত রাখলেন...।
বাবা কতদিন পর এভাবে বললেন ওকে, মাথায় হাত রাখলেন!
আনন্দে শরীর জুড়ে কাঁপুনি আসছে জিনিয়ার।
না, জিনিয়া না, 'পাপা কি পরী' - ঝুনুর।।
 
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: 111.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
অন্য রূপকথা

 
 
একগাদা জামাকাপড় ইস্ত্রি করতে দেওয়া ছিল, সেগুলো নিয়ে আসার জন্য পাড়ার লন্ড্রিতে গেছিলাম।। আমার স্লিপটা নিয়ে দোকানের দাদা দোকানের পিছনের একচিলতে জায়গায় ঢুকে গেলেন। এদিকে, আমার আগেই দোকানে আরও দুজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। মানে, একজন 'ছিল', অন্যজন 'ছিলেন'। একজন তো বাচ্চা মেয়ে, কলেজ - টলেজ পড়ে, আরেকজন মেয়েটির মা...টিপিক্যাল 'মা' 'মা' চেহারা।
তা যাই হোক, মিনিট পাঁচেক কেটে গেল, দোকানের দাদা আসেন না। ভদ্রমহিলা বেশ উসখুশ করছিলেন, একবার জোরে ডাকলেন ও "ও শান্তিদা, কি হলো তোমার?" ভেতর থেকে উত্তর এলো "বৌদি, এইঘরটা একটু রং হলো তো, মাল ওলোট-পালোট হয়েছে। তবে আছে, হারায় নি কিছু, একটু দাঁড়ান।"
উনি একবার মোবাইল টিপে সময়টা দেখলেন, তারপর মেয়েকে বললেন "তুই জামা ক'টা নিয়ে বাড়ি চলে আসবি? আমি চলে যাই?"
মেয়ে বেশ অসন্তুষ্ট হয়ে বলল "উফ মা, দাঁড়াও তো চুপচাপ। গিয়ে তো দেখবে ওই অখাদ্য বাংলা সিরিয়াল গুলো! যত কূটকাচালি শেখায়। লাউড মিউজিক! মেক আপ! অসহ্য! ওসব দেখার দরকার নেই। তুমি দাঁড়াও।"
খুব সাধারণ কথা। আমরা সবাই কম বেশি বলেই থাকি। কিন্তু যে উত্তরটা শুনলাম, সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি একেবারেই।
ভদ্রমহিলা একটু চুপ করে রইলেন। তারপর বলে উঠলেন "হ্যাঁ, কূটকাচালি... লাউড মিউজিক, মেক আপ, সব ই ঠিক। তাও আমি দেখব। কারণ আমার ভালো লাগে। কিছুক্ষণের জন্য আমি ওই জগতের বাসিন্দা হয়ে যাই। মনে হয়, আমি একা না, আমার থেকেও খারাপ অবস্থায় কেউ আছে, আর সে জিতেও যায়। এতে আমার মনের জোর বাড়ে। আর তোরা যে মোবাইলে রাতদিন মুখ গুঁজে পড়ে থাকিস? আমাকে তো একদিন দেখালি...কি মির্জাপুর না কি নাম ছিল। গালিগালাজ, বীভৎস দৃশ্য, খুনোখুনি...কি নেই সেখানে! সেগুলো দেখা যদি তোর চয়েস হয়, আমার বাংলা সিরিয়াল দেখাও আমার চয়েস!"
আমি ঘুরে তাকালাম মেয়েটির দিকে। দেখলাম, মেয়েটি মাথা নীচু করে রেখেছে। 'মাই চয়েসের' সপাট চপেটাঘাতেই বোধহয়।
অদ্ভুত লাগছিল আমার।
বাংলা সিরিয়াল, বা, হিন্দি সিরিয়াল নিয়েও কত কথা শুনি। 'কথা' না বলে 'খিল্লি' বলাই ভালো। আর, তার যে একটা উল্টোদিক আছে, থাকতে পারে...যেখানে জীবনের নেগেটিভ দিক সরিয়ে আশার আলো দেখা যায়... এভাবে তো ভাবিনি কখনও, সত্যি।
আর চয়েস! নিজেরা বড় হয়ে গিয়ে বাবা - মায়ের চয়েস নিয়ে অনেক কথাই বলি বা ভাবি আমরা। নিজেদের মতটা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করি কম বেশি সবাই। কিন্তু কতটা ভাবি ওঁদের নিজস্ব ইচ্ছে - অনিচ্ছের কথা? চয়েসের কথা? আবার, উল্টোটাও হয়। অন্যের চাপে নিজের ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিই আমরা প্রায়শই। নিজেদের মনে কষ্ট পাই, গুমরে মরি...তাও, মুখ খুলি না।
কেন খুলি না? কেন ভাবি না?
আজ একজন তথাকথিত ছাপোষা মানুষ আমাকে সেই প্রশ্নটাই করলেন।
ভাবছি আমি। দেরি করে ফেলেছি বড্ড, তাও ভাবছি।
সাধে কি আর সেই জ্যোতিষ্কের মতো মানুষটি বলেছিলেন "ভাবুন, ভাবুন, ভাবা প্র‍্যাকটিশ করুন।"
ভাবছি আমি। ভাবছি।
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
~পতিতালয়ের মেয়েটি যখন খদ্দের থেকে হাজার টাকার নোট নিয়ে ঘৃণার চোখে বলে- এই সমাজ আমাকে বেশ্যা বানিয়েছে! 

 
..ঠিক তখনই দেশের কোন প্রান্তে আরেকটি মেয়ে পরিশ্রম করে ১০০টাকার তিনটা নোট নিয়ে বলে- ধন্যবাদ সমাজকে! এই সমাজ আমাকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে।
 
..রাতের অন্ধকারে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বেকার ছেলেটি যখন ভাগ্যকে অভিশাপ দিয়ে দেশ ব্যবস্থাকে গালি দেয়! 
 
..ঠিক তখনই দেশের কোন প্রান্তে আরেকটি ছেলে সিগারেটের সেলসম্যান হয়ে ঘাম ঝরাচ্ছে! প্রশ্নের বিপরীতে তার জবাব- পরিশ্রমই আমাকে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে!
 
..কোন নিষ্ঠুর সকালে কোটিপতি সন্তান যখন বৃদ্ধা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে যায়! 
 
>>ঠিক তখনই একই শহরের অন্য প্রান্তে গরীব ছেলেটি অসুস্থ মায়ের মুখে একটা রুটি তুলে দিতে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে এবং মায়ের চিকিৎসার জন্য সবার কাছে হাত পাতছে!প্রশ্নের বিপরীতে তার জবাব- "মা পাশে না থাকলে আমি কিভাবে বাঁচব"?
 
>>এই জায়গায় এসে মনীষীদের দুটি উক্তি লিখতে আমার বড্ড ইচ্ছে হয়-
 
..সত্যিকার অর্থে জীবনে কিছু করতে চাইলে; একটা রাস্তা খুঁজে পাবে, আর না করতে চাইলে পাবে শুধুই অজুহাত!পৃথিবীটা ঠিক তেমনি; যেভাবে আমরা দেখি!
 
..সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য রাস্তার অভাব নাই, কিন্তু আমরা সে রাস্তাটা খুঁজে নিতে আগ্রহী নই বরং সব সময় ভাগ্যকে দোষারোপ করি!
 
..কোটিপতি সন্তানটার কাছে মা হয়ত বোঝা! কিন্তু গরীব ছেলেটির কাছে 'মা'ই সব। আর এখানে এসে দ্বিতীয় উক্তিটি একদম মিলে যায়!
 
যে, পৃথিবী। ঠিক তেমনি; যেভাবে আমরা দেখি!
উদ্যোক্তা হন।পরিশ্রম করুন। ভাগ্যকে দোষারোপ করে নয়।বরং কর্মের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করুন...!!


Dada_of_India
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
রাঁধুনী

বাড়িতে ভেটকি পাতুরি বানিয়েছি। তারই একটু বাটিতে নিয়ে হাজির হলাম মায়া বউদির বাড়ি। কলিং বেল টিপতেই "কোঁকরো ককো".... কয়েক সেকেন্ড পর ফটাস করে দরজা খুলে বউদি হাজির
" আরে মিলি এসো এসো। আসোই তো না।"
"হ্যাঁ গো আসবো আসবো করে আর সময় হয়ে ওঠে না।"


 বাটিটা দিলাম।  বউদি অবাক!
"এসব আবার কী এনেছো? "
আমি বিনীত কণ্ঠে,  
"ওই একটু বানিয়েছিলাম।"

  বউদিরা মাস কয়েক হলো এসেছে পাড়ায়। যেমনি সুন্দরী দেখতে। তেমনি কর্তাকে শাসনে রাখে। ওদের রান্নাঘরটা তো আমার বেডরুমের জানালা দিয়ে দেখা যায়। সেখানেই অমলদাকে মানে মায়া বউদির বরকে রাঁধতে দেখি। বউদি নিশ্চই তখন সোফায় বসে সিরিয়াল দেখে, নয়তো মুখে ফেসপ্যাক লাগিয়ে বসে থাকে। নয়তো অমন ফর্সা টকটকে গাল থাকে কি করে? ফর্সা আমিও বৈকি কম কিছু ছিলাম না। অভিই তো বিয়ের আগে গাল টিপে বলতো, "ওগো তোমার গালগুলো ঠিক যেন আপেল।" সেই আপেলই এখন ছোপে ছাপে সবেদা হয়ে গেছে।
সময় পেলেই অভিকে জানলার সামনে ডেকে এনে দেখাই
"ওগো দেখো, দেখো, দেখে কিছু শেখো। পাড়ায় আড্ডা দিতে যাও যখন, দাদার থেকে একটু রান্না শিখলেও তো পারো। "

  তবে আমার কর্তাটি সেই প্রাইমারি কলেজ টু বিয়ের আগের দিন অবধি যা শেখার শিখে নিয়েছিলো। তারপর আর নতুন কিছু সে শিখবেই না । সম্ভবত বিয়ের দিন মন্ত্র আউড়েছিলো, "যাহা শিখিবার শিখিয়া নিয়াছি। আর নতুন কিছু শিখিবোনা।"
শুধু শেখা না, তিনি কিছু ভোলেনও না। যেমন রোজ রাতে নিয়ম করে ঘরত ঘরত করে নাক ডাকেন, ঘন্টায় ঘণ্টায় সিগারেট ফোঁকেন, বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দেন, পকেটে দুটাকা খুচরো রাখলেও মনে রাখেন। কিন্তু আমি বাজার থেকে দশটাকার বাসন মাজার সাবান আনতে বললে ভুলে যান। এই কটা বছর সংসার করার পর আমি বুঝে গেছি এ ব্যাটার ভোলাভুলির রুটিন আছে, রীতিমতো চার্ট মেনে চলে। আর কিছু বলতে গেলেই অশান্তি।

  তাই এই মায়া বউদির সাথে কথা বলার প্রবল ইচ্ছে হওয়াই স্বাভাবিক। কিভাবে কর্তাকে দিয়ে খাটাচ্ছে  কৌশলটা জানা দরকার। কিন্তু নতুন এসেছে, দুম করে বাড়ি গিয়ে তো জিজ্ঞেস করা যায়না, "তোমার বরকে দিয়ে কি করে কাজ করাও গো, আমাকে শেখাও গো..."  ভদ্রতা সভ্যতা বলেও একটা ব্যাপার আছে। তাই তক্কে তক্কে ছিলাম। তো আজ আমার অফিস ছুটি। হাতে সময় নিয়ে সেই কারণেই আসা।
  বউদি হাত চেপে ধরে সোফায় বসালো। না চাপলেও কায়দা করে বসে যেতাম অবশ্য। আহা বউদি তো নয় যেন সাক্ষাৎ দেবী। কি ভাবে কথাটা শুরু করবো ভেবে ভেবে ঠ্যাং নাচাচ্ছি। ওমনি বউদিই বলে উঠলো
"তোমার দাদাকে নিয়ে আর পারিনা। সুযোগ পেলেই রান্নাঘরে ঢুকবে। " সুযোগটা লুফে নিয়ে বললাম
"দাদা কতো ভালো গো। দেখি তো জানালা দিয়ে। কতো কিছু রাঁধে আহা! আমার বর তো ঘরের কোনো কাজে হাতই দেবেনা। ভাগ্য করে বর পেয়েছো তুমি বউদি। অভিকে তো বলি দাদাকে দেখে কিছু শেখো..."
  ওমনি সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি আর পাজামা পরে হাসিমুখে অমলদা এসে হাজির। আমি গদগদ ভঙ্গীতে বলে ফেললাম,
"দাদা আপনার মতো দেবতুল্য মানুষ আর হয়না। রোজই দেখি কতো কী রাঁধছেন। আপনার ভাইটিকে একটু শিখিয়ে যদি দেন।  "
"হ্যাঁ অবশ্যই শেখাবো। আগে দাঁড়াও একটু চা বানিয়ে আনি। "
বউদি আর্তনাদ করে বলে উঠলো
"না...আমি বানাচ্ছি। তুমি বসো। "
   সেই আর্তনাদকে তুচ্ছ করে দাদা ঢুকে গেলেন রান্নাঘরে। বউদি বেজার মুখে বসে রইলো। স্বাভাবিক, বাড়িতে অতিথি এলে গৃহকর্তার চা বানানোটা শোভা পায়না।

   দু'মিনিট পর দাদা চায়ের ট্রে এনে হাজির।
বললেন
"খেয়ে দেখো মিলি, স্পেশাল চা।"
 নাকের কাছে কাপটা নিতেই অদ্ভুত রকম গন্ধ পেলাম। তারপর মুখে দিতেই হেঁচকি উঠে নাক দিয়ে বেরিয়ে গেলো। "
দাদা মুচকি হেসে বললেন
" প্রথম প্রথম খেতে অসুবিধা হবে, তারপর সয়ে যাবে। তোমার বউদিরও এমন হতো। অভিকে শিখিয়ে দেবো। চিন্তা নেই। "
"এটা চা?"
"হ্যাঁ, হিঙচা। প্রথমে তেজপাতা দিয়ে একটু গরমমশলা দিতে হবে গরমজলে, তারপর চা পাতা আর কাসৌরি মেথি দিয়ে ফুটিয়ে সামান্য হিং। ব্যস রেডি। "

বউদি বললো
" এই দিন কয়েক আগে বাড়িতে ইলিশ মাছ হয়েছিলো।  ওর আবার সেদিন পেট খারাপ। পেঁপে কাঁচকলা দিয়ে সেদ্ধ ভাত গিলবে। কিন্তু রাঁধবেই। "
বললাম
"আসলে, বউকে খুব ভালোবাসেন তো তাই।"
বউদি বললো
"রেসিপিটা শোনো আগে। নুন, চিনি,দই, সর্ষে, তেজপাতা, ধনেগুঁড়ো,পেঁয়াজ, রসুনবাটা, পাঁচফোড়ন, বড়ি, ঝিঙে আর বেগুন দিয়ে রান্না করলো। শেষে আবার পাকা আম চটকে ছড়িয়ে দিলো।
 বিস্ময়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো
"ওটা খাওয়া গেলো? "
"হ্যাঁ, উপায় কি? খাওয়ার জিনিস ফেলা আমার ধাতে নেই। "
দাদা বলে উঠলেন
"আহা! ওভাবে বোলোনা। শখে রাঁধি একটু... "
বউদি বললো
"শখ? পেট খারাপ মাথায় উঠে গেলেও লোকে ওর থেকে ভালো রাঁধে। আবার সেই ইলিশ এ বাড়ির মাসিমাকেও দিয়েছিলাম। বাটিটা ফেরত দিতে এসে বললেন, এরপর থেকে ইলিশ আনলে আমাকে বলো মা। আমি না হয় রেঁধে দিয়ে আসবো।"
 অমলদার দিকে তাকিয়ে দেখি অম্লান বদনে মোবাইল ঘাঁটছেন। বউদি বললো
" শুধু এক ছিলো আমার আদরের হুলো বেড়ালটা। যা দিতাম ল্যাজ তুলে চেটে পুটে খেতো। তো সেদিন ঝোল আর কাটাকুটো আর একটু মাছ ভেঙে দিয়ে ভাত মেখে দিলাম। দুবার গন্ধ শুঁকে কোথায় যে গেলো! আজ পাঁচদিন হলো তার দেখা নেই!"

  অমলদা উঠে গেলেন। বুঝলাম লজ্জা পেয়েছেন। পাওয়াই স্বাভাবিক। বসে বসে নিজের নিন্দে শোনা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু খানিক বাদেই হাতে একটা বাটি এনে বললেন
"সকালে বানিয়েছিলাম খেয়ে বলো তো কেমন? তোমার বউদির তো আমার কোনো রান্নাই পছন্দ নয়। আগে কিছুই করতাম না সেটাও পছন্দ ছিলোনা। এখন রাঁধছি সেটাও পছন্দ না। কী যে চায় বোঝাই দায়। "
     অনিচ্ছা ভরে বাটির দিকে তাকাতেই দেখি কালো কুটকুটে থকথকে একটা বস্তু। ভাবলাম এর থেকে বিষ দিলেই পারতো, খেয়ে মরে গিয়েও শান্তি পেতাম। কিন্তু এ খাবার মুখে দিলে আজন্ম হতাশায় ভুগতে হবে। এদিকে দাদা বউদি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। চামচ দিয়ে খানিকটা তুলে জিজ্ঞেস করলাম
"এটা কি?
দাদা বললেন
"পায়েস? "
"অ্যা!!!পায়েস? "
"হুম, জাম-বেগুনের পায়েস। প্রথমে বেগুনটা সেদ্ধ করে চটকে নিয়ে তারপর..."
আর রেসিপি শোনার ইচ্ছে রইলো না। মিনমিনে গলায় বললাম
"এটা বাড়িতে নিয়ে যাই? অভিকেও দেবো একটু। "
দাদা খুশি হয়ে আরও অনেকটা দিয়ে দিলেন পায়েস।

    ফেরার সময় মায়া বউদি গেট অবধি এগিয়ে দিতে এলো। আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম
"দাদা কি বরাবরই এমন রাঁধতে ভালোবাসেন? "
"না গো, আগে তো রান্নাঘরে ঢুকতোই না। আগে যে পাড়ায় ছিলাম সেখানে এক প্রতিবেশী ভদ্রলোক প্রায়ই রাঁধতেন। সেই দেখেই আমিও ওকে কদিন বলেছি। ব্যস তারপর এই কমাস থেকে তোমার দাদার হঠাৎ যে কী হলো! এখন রাঁধতে না দিলেই বরং ক্ষেপে যাচ্ছে। আর এই উৎকট রেসিপিগুলো তো তাঁর থেকেই নেওয়া। "

  প্রায় ছুটতে ছুটতে বাড়ি এলাম। দেখি অভি রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে। আর্তনাদ করে উঠলাম,
"সেকি! তুমি কেন? বাড়িতে তো হিং নেই!"
অভি অবাক হয়ে বললো
"হিং কেন? "
মিনিট দুয়েক চুপ থেকে ভগবানকে ধন্যবাদ দিলাম। উফফ খুব জোর বেঁচে গেছি। ভাগ্গিস এখনও অমলদার রেসিপি শেখেনি।
   খুশি মনে সোফায় বসে চায়ের চুমুক দিলাম। একী ! এমন বিশ্রী গন্ধ কেন? অভি মুচকি হেসে বললো
"ওতে দুচামচ পাঁচফোড়ন দিয়েছি। স্পেশাল চা। অমলদার রেসিপি। আরও অনেক আছে। একে একে সবই বানিয়ে খাওয়াবো। একটু ধৈর্য্য ধরুন।

  বেডরুমের জানালাটা বন্ধ করে দিয়েছি। ইদানীং বাড়িতে অশান্তিও হয়না। হবেই বা কি করে? অভি তো রাঁধে। আর আমি দুবেলা ঠাকুর ঘরে জপ করি "ওর রান্নার বাতিকটা ছাড়াও ঠাকুর... "।
[+] 2 users Like আমিও_মানুষ's post
Like Reply
" Sr Citizen প্রেম পত্র "

 
গিন্নি ,
          আমি ভাল আছি। সারাদিন তোমার মুখঝামটা না খেয়ে বেশ স্বাধীনভাবে দিন কাটাচ্ছি। তুমি বাবলির মেয়ে মাস-দুয়েকের হলেই ফিরে আসবে, এই কথা ছিল। আজ ঠিক চার মাস আঠারো দিন। কথার খেলাপ করা তোমার চিরকালের স্বভাব। তুমি না থাকাতে আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু বলে রাখি দিল্লিতে কিন্তু সাংঘাতিক ঠান্ডা পড়ে। 
সেই সময় যদি কলকাতা ফিরে না এসে ওখানেই থেকে যাও এবং ঠান্ডা লাগাও পরে তার ঝক্কি এই বয়সে আমি পোহাতে পারব না। তোমার তুলসীগাছে রোজ জল দিতে আর সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালাতেও আমি আর পারছি না......আমার ভাল লাগছে না, এই বলে দিলাম। তাই বলে ভেবো না যে, আমি তোমার দুঃখে কাতর হয়ে পড়েছি। মোটেও তা নয়। শুধু তুলসীগাছ শুকিয়ে গেলে আমাকে যাতে দোষ দিতে না পার, তাই আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম।
আরও  জেনে রাখো যে, আমি কিন্তু মনে করে লাইট-ফ্যানের সুইচ বন্ধ করে বাইরে যাচ্ছি না......সারাদিন ওগুলো চলুক, যা ইচ্ছে হোক। তুমি না থাকাতে এসব নিয়ে কেউ আমাকে খিচ্ খিচ্ করছে না, তাই বেশ শান্তিতেই আছি। শুধু  ভোরবেলা রান্নাঘরেের পাশে যে কাকগুলোকে তুমি বিস্কুট ভেঙে ভেঙে খেতে দাও, তারা তোমাকে দেখতে না পেয়ে প্রবল ডাকাডাকি করছে,সকালবেলা ঘুমের দফারফা। অসহ্য লাগছে আমার.....তোমার অনুপস্থিতির জন্য মোটেই নয়, কাকগুলোর কর্কশ চিৎকারের জন্য। 
আমাদের নাতনিটিকে নিয়ে তুমি খুবই ব্যস্ত বুঝতে পারছি। যে মিনতির মার উপর আমার দেখ্ভালের দায়িত্ব দিয়ে গেছ, সে প্রায়শই রান্নায় নুন বেশী দিচ্ছে। কাল রাত্রে তো দুধ দিয়ে রুটি খেলাম, তরকারি মুখে তুলতে পারি নি। অবশ্য দুধ-রুটি খেতে আমার কোনো অসুবিধা নেই, তবে মিনতির মার হাতের রান্না নিয়ে তোমার  আদিখ্যেতা দেখলে আমার মাঝে মাঝে হাড় পিত্তি চটে যায়,তাই ঘটনাটা জানালাম।
শোনো গিন্নি, তোমার সঙ্গে প্রেমালাপ করার ইচ্ছে বা সময় কোনটাই আমার নেই। তবে সাবধান করে দিচ্ছি, আগামী দশ দিনের মধ্যে তোমার ফিরে আসার খবর যদি না পাই তবে আমি প্রেশারের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেব এই বলে রাখলাম।তোমাকে জব্দ করার উপায় আমার জানা আছে।
একটা কথা বড় জানতে ইচ্ছে করছে। বাবলি তো এখন চাকরি করছে না। ওদের রাতদিনের একটি কাজের মেয়ে রয়েছে.....তবুও তোমাকে এতো প্রয়োজন ? নাকি দিল্লিতে তুমি নতুন কোন প্রেমিকের সন্ধান পেয়েছ?
সন্ধ্যে হয়ে এল। তোমার জন্য দুটি পুজোসংখ্যাও কিনে রেখেছি। বাবলি, জামাই ও ছোট্ট দিদিভাইকে আমার আশীর্বাদ দিও।
 
ইতি___
 
বাবলির বাবা
 
 
 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
বাবা পুলিশ, মা চোর

---------------------------------
আমার বাবা ছিলেন পুলিশ, আর মা চোর। রোজ সকালে, বাবা স্নানঘর গেলেই দেখতাম, মাকে সন্তপর্ণে, শোওয়ার ঘরে ঢুকে গোপনে রুমালের নিচে চাপা দেওয়া খুচরো পয়সাগুলো নিজের আঁচলে বেঁধে নিতে। ভাত খেয়ে বাবা অফিসের দিকে রওনা হলে, মা যত্ন করে চুরির পয়সা লাল রঙের মাটির ভাঁড়ে জমা করে রাখত। আমি ভাবতাম মা একেবারে দস্যু মোহন - বাবার এতো পয়সা চুরি করে রোজ, আর আমার অবোধ বাবা কিছুই টের পায়না। মার উপর মাঝে মাঝে রাগ হতো। ক্রিস্টিয়ান ইশকুলে লেখাপড়া শেখা আমার নৈতিকতায় রোজকার এই বেহায়া পকেটমারি বড়ো বিতশ্রদ্ধ লাগত।
এই ভাবেই দিন কতেক যাওয়ার পর, একদিন স্নান শেষে শোওয়ার ঘর থেকে হুংকার আসত, " আরে আমার খুচরো গুলো কোথায়? " চোরের মন বোঁচকার দিকে থাকায় সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর উত্তর দিত, " আমি কি করে জানব!"
"না, তুমি জানো না আর। রোজ রোজ অটোওয়ালা নোট ভাঙ্গিয়ে দেবে না। আমার পয়সাগুলো ফেরত দাও। "
চুরি ধরা পড়ে যাওয়াই, অপরাধী মা কেঁদে কেঁদে পয়সা ফেরত দিত - " সব নিয়ে নাও আমার কাছ থেকে। আর কোনদিনও তোমার পার্সে হাত দেবো না। " পয়সার ঠুং-ঠ্যাংর সঙ্গে জড়িয়ে থাকত কেমন একটা অপাপবিদ্ধ অসহায়তাও।
সেইদিন সকালে অফিসের ভাত বাড়ার মধ্যে যদিও লুকিয়ে থাকত রাগ- অভিমান- অভিযোগ , আমি জানতাম, সেইদিন সন্ধ্যেবেলায় বাড়ী ফিরে বাবা কোথা থেকে জোগাড় করে আনা ১টা ৫টাকার কয়েন, মার ঝাঁপিতে আলতো করে ফেলে দেবে। মাও বোধহয় জানত তা। তাই মুখে কিছু না বললেও পর্দার ফাঁক থেকে তার উঁকি চোঁখের মুচকি হাঁসি জানান দিত সব। ঠিক যেমন করে বাবাও জানত পরের দিন সকালে আবার অটোর খুচরো পাওয়া যাবে না।
আমি ভাবতাম এহেন একুশে আইন তো ভালো বটে - পকেট কাটলে সাঁজা নাই। সাঁজার বদলে গজা আছে যখন, তখন আমিও বা পকেট কাটি না কেন। এক সকালে, তাই দস্যু মোহনের আগে আমি নিজেই বাবার পাঞ্জাবিতে সিঁধ কেটে ফেলি। যদিও চুরির মাল উপভোগ করার আগেই আসামি সিধে জেলে আটক। বন্দী দশায় মার হাতের খুন্তির third degree না হয় আজ এখানে নাই মনে করলাম। বুঝলাম দাম্পত্যের নিয়ম বাৎসল্যে খাটে না। অভিযোগী গলায় মাকে বলেছিলাম " তুমি যে রোজ নাও, তাতে কিছু হয় না বুঝি। " মা আরেকবার খুন্তি ঘা মেরে বলেছিল, " গরিবের ঘরে মা বাবার পকেট না কাটলে সংসার চলে না। "
কথাটার মানে তখন (অবশ্যই) বুঝিনি। বুঝেছিলাম ঘটনাটার ১০-১৫ বছর পর, যখন আমার IIT যাওয়া প্রায় বন্ধ টাকার অভাবে। আমার অন্নপূর্ণা মা, সেইদিন, তার দস্যু মোহনের খুলি গুহা থেকে সব গুপ্তধন বেড় করে দিয়েছিল - এই ১০ বছরে জমানো ৫টা লাল মাটির ভাঁড় - আমার বাবার পকেট মেরে জমানো। সাকুল্যে এই ১০ বছরে ১০ হাজার টাকা - সত্যি বলছি বিশ্বাস করুন। IITর ভর্তি পুরো টাকাটা না হলে, অনেকটাই এসেছিল সেই থরে থরে রাখা মাটির ভাঁড়গুলো থেকে। কসবার এঁদো গলির, এক ফেলি বারান্দায় যার পৃথিবীর পরিধি শেষ - সেই মার ১০ বছরের সবটুকু সঞ্চয় ঢেলে পাঠিয়েছিল আমাকে IIT তে পড়তে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত সব বাড়ীতেই নাকি এইরকমই হয় - আমার, আপনার বেড়ে ওঠার গল্প প্রায় একই - কোন এক বাবা- মার চোর-পুলিসি সঞ্চয়- সম্বল আছে তার পেছনে।
হাতে টোনার কালো leather walletটা নিয়ে এই সব হ-য-ব-র-ল ভাবছি, আর ওইদিক থেকে কেউ একজন walletর জন্যে চেঁচিয়ে মরছে। মার মতন স্বামীর পকেটমারি করার guilty pleasureএ পার্সের মধ্যে সদ্য হাতটি ঢুকিয়েছি - কিন্তু কোথায় কি!!! ডলার তো না হয় ছেঁড়েই দিলাম, এক খানি কুঁচো পেনিও তো হাতে এলো না। পার্সের ১০১ খাপ থেকে শুধু উঁকি মারছে ১০২টি ক্রেডিট কার্ড - লাল, নীল, হলুদ, সবুজ- রথের মেলা মতন। কিন্তু এখানে শুধু রথ দেখেই দিন কাবার, কলা বেচা আর হল না । মনে মনে ভাবি আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর আমার সন্তানের প্রয়োজনে আমি কোথা থেকে নিয়ে আসব সেই যক্ষপূরীর ধন। কোথা থেকে আসবে সেই ঐন্দ্রজালিক লক্ষ্মীর ঝাঁপি?
হায় নরেন্দ্র মোদী, অভাগা এই দেশের লক্ষ্য কটি বাবাদের cashless
করার আগে তুমি কি শুনেছিলে অগুনতি দস্যু মোহন মায়ের আক্ষেপ, তাকিয়ে ছিলে তার লাল মাটির ভাঁড়ের দিকে?
        
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
উত্তরণ

 
 
"পিউ,
কেমন আছ?
ভাবছ, এতদিন পরে কেন লিখছি?
অনেকদিন ধরেই ভেবেছি লিখব, জানো? কিন্তু পারিনি।
অপরাধবোধ হয় সেজন্য রোজ।
থাক সেসব কথা।
এখন গান করো না, পিউ?
"যেতে দাও আমায় ডেকো না" শুনেছিলাম একবার পাড়ার ফাংশানে। মায়ের একটা সবুজ শাড়ি পরেছিলে…
যাই হোক, আজ এখানেই থামি।
আবার লিখব।
ইতি,
'আমি'।
সকাল সকাল পোস্টকার্ডে চিঠিটা দেখেই অবাক হয়ে যান ইন্দ্রজিৎ। 'পিউ' মানে দিদি! দিদিকে আবার কে এমন চিঠি লিখতে পারে?
তবে চিঠিটা দেখে, ভাষা দেখে তো খুব চেনা কেউ মনে হচ্ছে! দিদির গানের কথা জানে… মায়ের শাড়ি… হুম, মায়ের শাড়ি তো দিদি পরতেই পারে…
কে ইনি?
দিদির প্রেমে পড়েছিল কেউ?
"মহুয়া, মহুয়া? এদিকে এসো…" হাঁক দিয়ে বৌকে ডাকলেন ইন্দ্রজিৎ।
"কি? সকাল সকাল এত ডাকাডাকি কেন? আমি কিন্তু এখন আর চা করতে পারব না, একবার করে চা দিয়েছি। সব কাজ তো একাই করতে হয়। মিনতিদি না আসা অব্দি বসারও চান্স পাই না।" আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলেন মহুয়া।
সত্যি তো, বয়স তো থেমে থাকে না, তারমধ্যে এখন থেকেই মহুয়ার পায়ে আর্থারাইটিস ধরা পড়েছে। হাঁটু মুড়ে বসতে কষ্ট হয়। বাড়ির কাজ নিয়ে রেগেও থাকে প্রায় সবসময়। আজকাল কথায় কথায় 'আইবুড়ি দিদি' নিয়েও খোঁটা দেয়। অথচ বিয়ের আগে থেকেই তো জানত দিদির কথা…
"এই চিঠিটা… আজ পেলাম লেটারবক্সে।"
"কিসের চিঠি?"
"পড়েই দেখো।"
পড়তে পড়তে ভুরু কুঁচকে গেল মহুয়ার। তারপর বলল "দিদি গান করত? ফাংশানে? সে তো আদ্যিকালের কথা। এখন আবার কে এসব লিখল?"
"চেনা কেউই হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু কোনো নাম লেখেনি…"
"লুকোনো প্রেমিক! ফর্টি ফাইভ ক্রশ করল দিদি আগের বছর… আর এখন এইসব…"
"এইসব মানে? কী আশ্চর্য কথা মহুয়া!"
"দিদি বিয়ে করেনি, এই বয়সে এইসব চিঠি… দেখে তো আমিই আশ্চর্য হচ্ছি।"
"দেখো, চিঠি এসেছে ঠিকই, কিন্তু তাতে তো কোনো অশোভন কিছু লেখা নেই? তাহলে তুমি রিয়্যাক্ট কেন করছ?"
"তুমিও তো রিয়্যাক্ট করছ! তাই তো অফিস যাবার আগের এই ব্যস্ত সময়েও আমাকে ডেকে দেখালে…"
"ভুল হয়েছে! একটা চিঠি দেখে অবাক হলাম তাই শেয়ার করার জন্য ডাকলাম।"
কিছু উত্তর দেবার আগেই কলিংবেল বেজে উঠল।
"এখন আবার কে?"
"প্লিজ তুমি দেখো, আমি স্নানে যাচ্ছি, নইলে দেরি হয়ে যাবে। এমনিতেই সোমবার লেট হলে অসুবিধা হয় খুব।"
"হুঁ, আমার যেন খুব সময় আছে হাতে!" গজগজ করতে করতে দরজার দিকে এগিয়ে যান মহুয়া।
দরজার কাছে যাবার আগেই দেখেন ইন্দ্রজিতের দিদি, সুমেধা দরজা খুলে কিছুর একটা ডেলিভারি নিচ্ছেন। পিছনে ঘুরে ওকে দেখতে পেয়ে হাসলেন।
আজ একটা হাল্কা গোলাপী রঙের শিফন শাড়ি পরেছেন। গলায় একছড়া মুক্তোর হার। মাথার চুল ভিজে।
"আজ একটু বেশিই সাজগোজ! কী ব্যাপার, কারো সাথে দেখা করার আছে নাকি?" না চাইতেই বেশ একটু অন্যরকম হয়ে গেল মহুয়ার গলা।
ছেচল্লিশ হতে চলল, মহুয়ার থেকে ছ বছরের বড়, তাও চিঠি আসছে বাড়িতে!
"হ্যাঁ, আজ অফিস যাব না, একটা জায়গায় যাবার আছে" হাসিমুখে বললেন সুমেধা।
"শাড়িটা নতুন গো? খুব সুন্দর।"
"হ্যাঁ, পরশুদিনই ডেলিভারি পেলাম… এই যে এখনও পিকো করা হয়নি! ভেবেছিলাম আজ পরব না, তারপর ভাবলাম পরেই ফেলি…" হাসতে হাসতে বললেন সুমেধা।
"তোমাকে আজ একদম অন্যরকম লাগছে!"
"তাই?" আবার একমুখ হাসি সুমেধার।
"দিদি, তোর একটা চিঠি এসেছে। আজ বাজার থেকে আসার পথে লেটারবক্সে পেলাম।"
"চিঠি? জানি?"
"জানিস? কে লিখেছে বুঝতে পেরেছিস?" কৌতূহলী চোখে জিজ্ঞেস করেন ইন্দ্রজিৎ।
"হ্যাঁ রে… অনেকদিন, অনেক পরিকল্পনার পরে লেখা চিঠি… জানব না?"
"তারসাথেই আজ দেখা করতে যাবে বুঝি? তাই এত্ত সাজ?"
"নাহ্, তার সঙ্গে ক'দিন আগেই দেখা হয়েছে। তাই তো আজ অফিস ছুটি নিলাম"।
"দিদি, কিছু মনে করো না, নিজের বয়সের কথাটা একবার ভেবে যা করার করো।"
"বয়সের কথা ভেবেই তো করছি গো… সব ফুরিয়ে যাবার আগেই সব ফিরে পেতে হবে…"
"দিদি, প্লিজ কোনো ভুল করিস না। তুই চাকরি করিস, বাবা চলে যাবার আগে বাড়ির দোতলাটা তোকেই লিখে দিয়েছেন… তোকে এসবের জন্যে যেন কেউ না ঠকায় রে…" অসহায় গলা ইন্দ্রজিতের।
"ঠকাবে কেন কেউ? কী যে বলিস!"
"দিদি, তোমাকে এইবয়সে কেউ সত্যিকারের ভালবাসলে তো ভালোই, কিন্তু সোসাইটি তো খুব একটা ভাল জায়গা না! অনেক লোভী মানুষ আছে। তাই তোমার ভাই বলছে…"
একটু হাসেন মহুয়া। তারপর ডাইনিং টেবিলটার একটা চেয়ার টেনে বসেন। হাতে রাখা প্যাকেটটি টেবিলের ওপর রাখেন।
"জানিস ভাই, মহুয়া, ভেবেছিলাম তোদের সঙ্গে একটা খেলা খেলব। ক'মাস ধরেই নিজেকে কেমন ফুরিয়ে গেছি বলে মনে হচ্ছিল। আমি বিয়ে করিনি, সেটা আমার ইচ্ছে ছিল, সে নিয়ে অনেকদিন কোনো আক্ষেপও ছিল না আমার। কিন্তু চল্লিশ পেরোবার পর থেকেই কষ্ট হতো… ভেবেছিলাম পেপারে বিজ্ঞাপন দেব। ভাই যা যা বললি, সেই চাকরি, বাড়ি, এসব লিখেই। কিন্তু, ভয় লাগল! তারপর… মনে হল তোরা নিজেদের জীবন নিয়ে এত ব্যস্ত, আমাকে পাত্তাও দিস না…"
"সেটা ঠিক না দিদি, তুমিও জানো…"
"জানি মহুয়া, জানি। সবাই আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। আমি বুঝি! কিন্তু মাঝে মাঝে মেঘলা দিন তো আসে, বলো? নিজেকে একা মনে হয় খুব? সেরকমই একটা দিনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এইরকমভাবে নিজেকে চিঠি লেখার! এমনকি এই শাড়িটা অর্ডার করেছিলাম…"
"নিজেকে চিঠি লেখা?" অবাক গলা ইন্দ্রজিৎ আর মহুয়ার।
"হ্যাঁ, আরও একটা চিঠি পোস্ট করেছি। তাতে আরেকটু প্রেম প্রেম ভাব। ভেবেছিলাম তোরা সেসব পড়বি। পোস্টকার্ডে তো লেখাই সেজন্য। আর আমার গুরুত্ব বাড়বে তোদের কাছে… তোরা আর ইগনোর করবি না আমাকে…"
"দিদি…"
"জানি… ভুল করছিলাম। তবু খেলাটা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু… কাল হঠাৎ ভাবলাম - কেন? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি! শুধু নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছি। গান করতাম, ছেড়ে দিয়েছিলাম, আবার শুরু করতে চাই। আর সেজন্য একজন কাল্পনিক অ্যাডমায়ারার তৈরি করে, তার বকলমে চিঠি লেখা, নিজের ডাকনামে… হ্যাঁ, দুজন মানুষ, যারা আমার আপনজন, তাদের কাছে গুরুত্ব পাবার জন্য এতকিছু করতে যাচ্ছিলাম আমি! আর তখনই বুঝলাম, এভাবে নিজের কাছেই গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছি! তাই আজ সবটা স্বীকার করলাম রে, ভাই, মহুয়া!" হাসিমুখে, ক্লান্ত গলায় বলেন সুমেধা।
"দিদি, প্লিজ আবার গানটা শুরু কর… সত্যি তো ভাল গাইতিস, কেন ছাড়লি?"
"কেউ শুনতেই চাইত না তো আর! ক'টা আর ফাংশান হয় এখন বল? আর আমাকেই বা তারা ডাকবে কেন? সেভাবেই ভুলে গেলাম রে সব আস্তে আস্তে…"
"দিদি, এটা কি গো?" এতক্ষণে টেবিলের দিকে চোখ গেল মহুয়ার।
"এটা একটা কেক গো। আজ আমার একটা নিজের একটা নতুন দিন, এসো আমরা কেকটা কাটি…" সেই হাসিমুখ সুমেধার।
"সেসব তো বুঝলাম, কিন্তু তুই আজ কোথায় যাচ্ছিস অফিস কেটে?"
"একটা হারমোনিয়াম কিনব রে! একটা গানের কলেজে ভর্তি হব আজ।"
"দিদি…" বলে জড়িয়ে ধরল মহুয়া, সুমেধাকে।
কত বাজে কথা ভেবেছে ও! শুধু আজ নয়, আগেও। বিরক্ত ও হয়েছে। কিন্তু সেটা যে কত ভুল ছিল…
দিদি নতুন করে গান শুরু করছেন। ওর এত পায়ে ব্যথা... কতবার ভেবেছে, কিন্তু যোগাসন শুরু করেনি... 'সময় কোথায়' ভেবে কাটিয়ে দিয়েছে। অথচ... মাত্র চল্লিশ ও... শুরু তো করতেই পারে!
জড়িয়ে ধরল সুমেধাও।
আহা, আজকের দিনটা খুব ভাল! চারিদিকে কেমন একটা নতুন আলো!
ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ… নতুন করে জোয়ার আসছে…
ভালো থাকার, ভাল রাখার ক্ষণ এসে গেছে…
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
মাঝরাতে হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে গেল আজও অমিতবাবুর, লাবণ্যপ্রভার আঃ উঃ শুনে। সাতষট্টি বর্ষীয়া লাবণ্যপ্রভা আমিতবাবুর উনপঞ্চাশ বছরের জীবন সঙ্গিনী, সুখ দুঃখের ভাগীদার। জীবনের নাগরদোলায় দুজনে এক সাথে পেরিয়েছেন অনেকগুলো দিন, স্মৃতির দেওয়ালে আজও ঝলমল করছে কত শত অম্লমধুর অনুভূতি। বেলাশেষের ক্ষণে এসে আজকাল বড্ড মনে পড়ে সেসব। হয়ত মনের এখন অখণ্ড অবসর বলেই। তাই এই ছাড় ছুট। নইলে এতগুলো বছরে সময়ই কোথায় হয়েছে আর সুযোগই বা কোথায় মিলেছে, দায়িত্ব কর্তব্যকে লক্ষ বানিয়ে অবিরত ছুটে চলাই তো ছিল অভ্যাস! আজ আর সে তাড়া নেই, নেই ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার দুশ্চিন্তাও। ঈশ্বরের কৃপায় যা আছে, যতটুকু আছে, কত্তা গিন্নীর চলেই যাবে হেসে খেলে। ছেলেমেয়েরাও নিজের নিজের মত সুপ্রতিষ্ঠিত। এখন শুধু বসে জিরিয়ে, গড়িয়ে যাওয়া সেই অন্তিম ক্ষণের দিকে।

চলে যাওয়ার কথা ভাবলেই বুকটা যেন টনটন করে আজকাল অমিতবাবুর। লাবণ্যপ্রভার জন্য। উনপঞ্চাশটা বছর কম কথা তো নয়। অষ্টাদশী লাবু আজ তার অস্তিত্বে মিশে একাকার। তাকে ফেলে যান কি করে! তাকে রেখেই বা যান কোন ভরসায়!এই একটা ভাবনাই আজকাল দুশ্চিন্তা হয়ে জ্বালায় অমিতবাবুকে। আর এমনই জ্বালা, মন খুলে কাউকে বলতেও পারেন না এ কথা। লাবুকে তো নাই, সে বেচারী শুনে নিশ্চিত প্রেসার বাড়িয়ে ফেলবে চাড্ডি। ছেলেমেয়েরা শুনলেও বুঝতে পারবে না এ যাতনা! অগত্যা মনের ভেতরেই ডালপালায় বাড়ে ভাবনাগুলো। অতএব, মনে মনেই তাদের ছেঁটে কেটে ফেলার জন্য "আজ"টাকে আঁকড়ে ধরার অভ্যাস করেন অমিতবাবু। যা গেছে তা ফিরে পাবার উপায় নেই যখন, যেটুকু বেঁচে বর্তে আছে, তার শেষ বিন্দু নির্যাসও নিংড়ে নেওয়া আর কি!
যাপনের এই নতুন অভ্যাসে আর একজনও মহা খুশী, লাবণ্যপ্রভা। হবে না, এই যে এত খেয়াল রাখে আজকাল মানুষটা, ঘুমের মধ্যে আঃ উঃ করলেও লাইট জ্বালিয়ে উৎকন্ঠিত গলায় বলে, "কি হয়েছে লাবু, কষ্ট হচ্ছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে, বলো আমায়"... এমনটা শোনার অপেক্ষা নিয়েই তো কেটে গেছে এতগুলো বছর। কিন্তু সদা ব্যস্ত মানুষটা বরাবর যেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নিশ্চিন্ত নিজের স্ত্রীয়ের প্রতি। নিশ্চিন্ত নাকি বেখেয়ালী? এমন প্রশ্নও লাবণ্যর মনে আসেনি তা নয়, উত্তরও পেয়েছেন সময়ের হাত ধরে। হ্যাঁ, প্রথম দিকে কষ্ট পেলেও ক্রমশঃ স্বামীর এই নির্লিপ্ততা আর উদাসীনতার অভ্যাস হয়ে গেছে লাবণ্যর। বুঝেছেন বলেই হয়তবা।
কত সময় এমন হয়েছে, ছেলেমেয়েরাও রেগে গেছে বাবার বেখেয়ালীপনায়, সামলেছে লাবণ্যই। এইত সেবার বাবি ফোন করেছে সিডনি থেকে। বোন টুসিদেরকেও নিয়েছে গ্রুপ কলে। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে জামাই যমজ নাতি, নাতনি সবাই ঠেলাঠেলি করছে মোবাইলের সাড়ে সাত ইঞ্চি পর্দায়। সবার এক প্রশ্ন এক অভিযোগ! বাবা কই মা, এখনও আসে নি? আজকের দিনেও? আজ গেলই কেনো অফিসে? এত কিসের কাজ কাজ? উফফ, বাবাকে নিয়ে আর পারা যায় না!বাবাকে না দেখে হই হই করে উঠেছে দুই ভাই বোন।
আর যথারীতি রক্ষণাত্মক হয়েছে লাবন্য। বলেছে, "তাতে হয়েছেটা কি শুনি। কাজ কম্মো মাথায় তুলে অফিস ছুটি করে কি সকাল থেকে নাচবে আমায় মাথায় করে? বিয়ের দিন বলে? বিয়ের দিন তো কি ? তিন যুগ আগের কথা! আজও কি সেই আনন্দে হাত পা তুলে ধেই ধেই করতে হবে? আজ বাদে কাল রিটায়ার করবে। এত দায়িত্বশীল পদ! হুট পুট ছুটি নেব বললেই হলো। তোরাও হয়েছিস যেমন। ঘুরতে ফিরতে খালি এই দিন, ওই দিন... জম্মো দিন, বিয়ের দিন, প্রেমের দিন, কবিতার দিন,...বাপরে বাপ! আসলে, হুল্লোড় করার ফন্দি ফিকির যত!"
পিছন থেকে এসে স্ত্রীয়ের কথার কিছুটা শুনে ফেলে অমিতবাবু। দরজা আলগা ভেজানো ছিল। স্বামী এক্ষুণি ফিরবে ভেবেই এমন ব্যবস্থা লাবুর। খেটেখুটে এসে মানুষটাকে যেন অপেক্ষা করতে না হয় দুদণ্ড। এতটাই খেয়াল লাবুর। কিন্তু তার নিজের? এত ভুল হয় কি করে বারবার? ভুল নাকি এ তার ইচ্ছাকৃত অভ্যাস? সত্যিই তো, কেন মনে ছিল না আজকের দিনটার কথা? বিশেষ একটা দিন, বিশেষ ভাবে পালন করা, সেটাই ত স্বাভাবিক। তবু কেমন ওকে আগলেই ঢাল হয়েছে লাবু। বরাবরের মত। সেই প্রথম বছর বিবাহ বার্ষিকীর দিন থেকেই।
খবর না দিয়ে সেবার আচমকা চলে এসেছিল লাবুর বাবা মা ভাই বোন। একরাশ উপহার নিয়ে। মেয়ে জামাইকে চমকে দিতে। অফিস থেকে ফিরে তাদের মুখোমুখি হয়ে ভারী বিব্রত বোধ করছিল অমিতবাবু। কেউই কিছু বলে নি, প্রশ্ন করে নি তাও। নিশ্চই কিছু গল্প বানিয়ে বলেছে লাবু ওদের, তাই প্রশ্নের বদলে সম্ভ্রম তাদের চোখে মুখে। রাত্রে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই চলে যেতে বউকে বুকে জড়িয়ে আদর করেছিল হৈম। লাবণ্যর শাশুড়ি। বড় বউকে এজন্যই আজীবন চোখে হারাতো অমিতবাবুর মা। গর্ব করে বলত, "সংসারের ছোট ছোট ফুটিফাটা বড় হতে দিতে নেই, এভাবেই রিফু করে নিতে হয় ক্ষমা, দয়া, প্রশ্রয় ভালোবাসা দিয়ে। এক সুতোয় সবাইকে বেঁধে রাখা কি যে সে কথা! তবে বড় বউ পারবে, নিঃসন্দেহে। আরে বাবা জহুরীর মেয়ে আমি, এমন রত্ন চিনতে কি আর আমার ভুল হয় কখনো?"
ঠিকই বলত মা। রত্ন বলেই তো এত অযত্নেও তার এমন দ্যুতি! এতগুলো বছর কি আর পেল লাবু? পিতৃহীন পরিবারে মায়ের দায়িত্ব, ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব সবটাই ছিল তার একার কাঁধে। সেসব সামলে জন্মদিন বিয়ের দিন পালন ছিল নিতান্ত বিলাসিতা। ওসব তো পরের কথা, মধুচন্দ্রিমাতে নতুন বউকে কোথায় নিয়ে গেছিল সে, না দেশের বাড়ী চণ্ডীপুরে, তাও মাকে সাথে নিয়ে। তবু কি খুশিই না হয়েছিল লাবু। শহরের ইট কাঠের ঘড়ি বাঁধা জীবন থেকে ছুটি পেয়ে কটা দিন যেন স্বপ্নের মতই কেটেছিল ওদের। দীঘির জলে পা ডুবিয়ে নিটোল গোল চাঁদকে সাক্ষী রেখে প্রথমবার সাহসী হয়েছিল লাবু। এদিক ওদিক তাকিয়ে ঠোঁট ছুঁয়েছিল স্বামীর ঠোঁটে, আর অমিতবাবু? তার যেন বুকে হাতুড়ি পিটছিল কে দুম দুম করে। "এমন করেই ভালো বাসবে ত আমায় সবসময়? আমার কিন্তু অনেক দোষ। সব থেকে বড় দোষ বোধহয় বেখেয়াল। মা বলে।" পরম আশ্লেষে বউকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলেছিল সে। উত্তরে হেসেছিল লাবন্য। বলেছিল "সে ঠিক আছে, তোমার ভাগের খেয়াল আমিই রেখে নেব, আমি আছি তো!"
আমি আছি ! এই ভরসাটাকেই উপভোগ করে এতগুলো বছর এমন চোখ বুঁজে কাটিয়ে দিল অমিতবাবু, একি নির্ভরতার অভ্যাস না বেখেয়ালের বদভ্যাস?? ছুটি না নিলেও আধ ঘন্টা আগে বেরিয়ে আসা, যেতেই তো পারতো! আর আসার সময় মনে করে বিশুর থেকে একটা জুঁই এর মোটা মালা নিয়ে আসলেই তো ঝলমলিয়ে উঠত ও মুখ, হাজার বাতির রোশনাইয়ের মত, তবে...
না, মুখে কোনোদিন এসব নিয়ে কিছু বলেনি লাবু ঠিকই, কোন অভিযোগ অসন্তোষও করেনি। হাসিমুখেই মেনে নিয়েছে স্বামীর যত অপারগতা। কিন্তু মনে মনে নিশ্চই আশা করেছে, নিশ্চই ভেবেছে, এবার হয়ত মনে পড়ে যাবে মানুষটার। ইস,ভারী অন্যায় হয়েছে তার প্রতি। ঘটাপটা আদিখ্যেতা, আড়ম্বর না হলেও এটুকু তো করাই যেত। ভালোবাসাও কিন্তু সবাক হতে চায় কখনও কখনও। উপহারের ভাষায়। আদরের ছোঁয়ায়। কেন যে বোঝেনি আগে অমিতবাবু!!
নির্ভেজাল আনন্দে হৈ হুল্লোড় করার দিন আসলে খুবই সীমিত জীবনের পরিক্রমায়। সময়ের অভাব, সুযোগের অভাব, অর্থের অভাব, ইচ্ছের অভাব... অভাব একটা না একটা থেকেই যায় ঠিক, যদি না ইচ্ছেটা অভ্যাস করা হয়। প্রথমদিন থেকেই যারা ছোট ছোট আনন্দ উদযাপনের জন্য খুব সাদামাটা হৈ হুল্লোড় করারও ফন্দি ফিকির খুঁজে নেয়, তাদের অভ্যাস হয়ে যায় আমোদ করার, জীবনকে উপভোগ করার। থোর বড়ি খাড়া জীবন চিরহরিৎ তাদের জন্য। দীর্ঘতম টেস্ট ইনিংসের প্রতিটি দিনই আসলে এক একটা টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচ। বিনা আফসোসে, বিনা হাহাকরে বিদায় নিতে হলে সব কটা ম্যাচই সমান উৎসাহে খেলে যেতে হয় তাই হয়ত। সেঞ্চুরি হোক বা শূন্যে আউট সব মিলিয়ে তুমিই তখন ম্যান অফ দি সিরিজ এই জীবনের!!
আজ বুঝেছে অমিতবাবু, দাম্পত্যের ছত্রিশটা বসন্ত অযত্নের অভ্যাসে কাটিয়ে দেবার পর। সব সম্পর্কেই একটা যত্ন লাগে, একটা সুন্দর বোঝাপড়া হওয়ার জন্য। তবেই স্থায়ী হয় সম্পর্ক। কিন্তু ওনার ভাগে তো শুধুই ফাঁকির হিসেব। সে ইচ্ছে অনিচ্ছে যে কারণেই হোক। তবু ওনার ভাগের যত্নের অভাবটা কখনো বুঝতেই দেয় নি লাবু। উল্টে দ্বিগুণ যত্নে, প্রশ্রয়ে ভরিয়ে রেখেছে, বিপদে আপদে ঢাল হয়ে দাড়িয়েছে টান টান হয়ে। কিন্তু মনের অগোচরে কোথাও কি কোনো ক্ষোভ জমে আছে লাবুর? নাকি সইতে সইতে এভাবে সইয়ে নেওয়াকেই অভ্যাস করে নিয়েছে সে!! বুঝতেই হবে আমায়, নইলে যে চিরকালের মত অপরাধী হয়ে থাকতে হবে লাবণ্যর কাছে। একান্তে বিড়বিড় করেন অমিতবাবু।
নিয়তির এমন পরিহাস সুখ এলেও তার যাবার তাড়া বড় বেশি চিরকালই। বাষট্টিতে রিটায়ার করে অমিতবাবু যখন ভাবলেন এবার চুটিয়ে উসুল করে নেবেন জীবনের না পাওয়া আনন্দের অনুভূতিগুলো লাবুর সাথে নির্ঝঞ্ঝাট, একাধিক রোগের একশো হাত যেন আস্টে পৃষ্ঠে ঘিরে ধরল লাবণ্যকে। আজ রক্তে চড়চড় করে বাড়ছে চিনি তো কাল হাঁটু অবশ, পরশু থাইরয়েড, তরশু উচ্চ রক্তচাপ। তবে সব কিছুর চেয়ে ভয়ের হল তার বিস্মৃতির অসুখ।ডাক্তার বলল বয়সের দোষ। এমন হয় অনেকেরই। আদর, ভালোবাসা আর যত্নে সেরে উঠতেও পারেন রোগী। অমিতবাবু কিন্তু জানেন এ রোগের কারণ তিনিই। তার ভাগের দায় দায়িত্ব, ভালো মন্দ, মনে রাখতে রাখতেই আজ জবাব দিয়েছে লাবুর মন। কত আর সইবে? কত আর সামাল দেবে স্বামীর বেখেয়ালী পনার? আর কত?
অনেককিছুই আজকাল ভুলে যায় লাবণ্য। খেই হারিয়ে ফেলে কিছু বলতে বলতে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফ্যালফ্যাল করে। তাড়াতাড়ি সামলায় অমিতবাবু। অন্য কিছু মজার কথা বলে, হাসিয়ে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে। কি আশ্চর্য ভাবে উল্টে পাল্টে গেছে সব হিসেব! চিরকালের বেখেয়ালী মানুষটা আজ ভীষন ভাবে মনে রাখে সংসারের প্রতিটা খুঁটি নাটি, লাবুর ওষুধ,পথ্য,পছন্দ অপছন্দও। পুরোন অভ্যাসগুলো চলে যেতে যেতে কিছু নতুন অভ্যাসও রপ্ত হয়েছে আজকাল অমিতবাবুর।
উপলক্ষ ছাড়াই বাজার থেকে আজকাল অর্কিড আনেন অমিতবাবু। সাজিয়ে রাখেন বসার ঘরের কাঁচের লম্বা ফুলদানিটায়। কিংবা অনিতা রাতের খাবার রেঁধে বেড়ে যাবার পরেও উনি হঠাৎ করেই বানিয়ে ফেলেন এক বাটি ঝুরঝুরে আলুভাজা। ছোট ছোট পদক্ষেপ, তবু উনি খেয়াল করে দেখেছেন লাবণ্যর চোখ মুখ যেন জ্বল জ্বল করে খুশিতে।
এভাবেই চলছিল দিন। নিয়ম অনিয়ম যাই হোক না কেন, নিয়মিত চলতে চলতেই তো অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় একদিন। এ গল্পেও তাই হলো। কিন্তু নতুন অভ্যাসে দক্ষ হবার আপ্রাণ চেষ্টা স্বত্ত্বেও সেই ফাঁকিতেই পড়তে হলো অমিতবাবুকে। পঞ্চাশ বছর পূর্তির ঠিক একদিন আগেই সারাজীবন সাথে থাকার প্রতিশ্রুতিকে ফাঁকি দিয়ে রাতে ঘুমের মধ্যেই চির ঘুমের দেশে চলে গেল লাবণ্যপ্রভা। একবার অস্ফুট আঃ উঃ করেই। রোজকার মত ধড়মড় করে জেগে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে কি হয়েছে লাবু, কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো, বলো আমায়, বললেও উত্তর এলো না আর। নিথর নিস্পন্দ মানুষটার ঠোঁটের কোণায় যেন যুদ্ধ জয়ের সুখ। যেন নিঃশব্দে বলছে, "আমার কাজ শেষ। এবার তোমার পালা। তোমায় খেয়াল রাখার অভ্যাস হয়ে গেছে, ব্যাস এবার নিশ্চিন্ত আমি।"
সাতদিন হলো মানুষটা ছাই হয়ে গেছে তবু রোজ মাঝরাতে নিয়ম করে ঘুম ভেঙে যায় অমিতবাবুর। ঘুমের মধ্যেও লাবুর আঃ উঃ শুনতে পান উনি। আর জেগে ওঠেন ধড়মড়িয়ে। তারপর সারাটা রাত জেগেই কাটান। জল খান, পায়চারি করেন, লাবণ্যর ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করেন, বকবক করেন, কখনো সুখের কথা, কখনো দুঃখের, হাসেন, কাঁদেন, মনে হয় এইত পাশেই আছে লাবু, কোথাও যায় নি তো তাকে ছেড়ে।চোখ ভারী হয়ে আসে তবু ঘুমোন না আর। রাত হলেই এই এক ঘটনা চলছে বিগত এক সপ্তাহ। কোনক্রমে চোখে পড়ে গেল একদিন টুসির। জল খেতে উঠে বাবাকে এমন করতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে দাদাকে ডেকে দেখালো সে। ভাই বোনে আলোচনা হল নিচু গলায়। ঠিক হল সকাল হলে বুঝিয়ে বলবে বাবাকে।নিজের নিজের জায়গায় ফিরে যেতে হবে ওদেরও শিগগির।এভাবে বাবাকে একা রেখে যাওয়া তো অসম্ভব!
সেদিন সকালে যখন ছেলে মেয়েরা বুঝিয়ে বলল, বিনা প্রতিবাদে ওদের পুরো কথা শোনেন অমিতবাবু। হ্যাঁ, চিন্তা হওয়ারই কথা ওদের। কিন্তু এই যে রোজ রাতে স্ত্রীয়ের সাথে মন খুলে সুখ দুখের গপ্পো করার সদ্য এক নতুন অভ্যাস পেয়ে বসেছে তাকে, তার কি হবে ওদের সাথে চলে গেলে ? লাবু যে একেবারে হারিয়ে যাবে তার থেকে।এই বাড়ি, এই বিছানা, এই বালিশ সব কিছুতেই যে লাবুর গন্ধ। আর সেই গন্ধকে বুকে আঁকড়ে বেঁচে থাকার অভ্যাসটাও তো আর আজকের কথা নয়। তাই তার একটাই উত্তর "না"। আজ নয়ত কাল চলেই যেতে হবে যখন, তখন আর কিসের চিন্তা! রাতে ঘুম না হলে তেমন, দিনেই ঘুমিয়ে নেবেন। ক্লান্তি এলে ঘুমও আসবে ঠিক আপনা আপনি। কিন্তু লাবণ্যকে এখানে এভাবে ছেড়ে, কোথাও যেতে পারবেন না তিনি। এই যাপন শুধু অভ্যাস নয়, এ এক অনুভূতি যাকে শব্দ দিয়ে বা অক্ষরে বোঝানো যায় না, মন দিয়ে স্পর্শ করতে হয় বুঝতে চাইলে।

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: 22.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
উষ্ণতা খুঁজেছিলাম আমি
কিন্তু তুমি অধপতনের পথে নিয়ে গেলে 
তোমার শরীরের গরম দিয়ে !
দগ্ধ করে আমায় এখন প্রশ্ন করো 
"অমাবস্যা তোমার মুখে ?"
নষ্ট কি করোনি তুমিও আমায় 
কলঙ্কিত আমার হৃদয় !
ওগো দোষ  শুধু একা  আমার নয় 
তুমিও তো চেয়েছিলে কলংকিত হতে !
ভাগিদার যে তুমিও !
তোমাকে ছেড়ে যাবো কোথায় 
একমাত্র মরণ ছাড়া !
হৃদয় জুড়ে আছো তুমি 
তাইতো আমি ছন্নছাড়া !
 
Dada_of_India
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
অন্য রূপকথা

 
ভিজে ভিজে একটা সকাল আজ!
আর, ভিজে চোখ আর ভিজে মন নিয়েই সকালের শুরুটা হয়েছিল।
হয়, হয়, এমনি হয় এক একদিন!
আজ সকাল থেকেই একটা "কিচ্ছু ভাল্লাগছে না" ব্যাপার ছিল। নির্ধারিত সময়েই ঘুম থেকে উঠে পড়েছি, তবু জিমে যাইনি আজ। বরং, একটু হাঁটতে গেছিলাম।
তা, ফেরার সময় আমার বাড়ির কাছেই রাস্তার ওপরে যে একচিলতে বাজার বসে, সেখানে একজন বয়স্ক দোকানির কাছে গেছিলাম, কিছু জিনিস কেনার ছিল…
এখন পাতিলেবুর কী দাম! তারসঙ্গে বাকি কিছু তরি-তরকারি ও নেবার ছিল, সবমিলিয়ে মাসের শেষদিনেই 'ত্রাহি মাম' অবস্থা! তা, তার মধ্যেই একটি অত্যন্ত… অপরিশীলিত শব্দচয়নে ঠিক আমার পাশে দাঁড়িয়েই নারীকন্ঠে কেউ বলে উঠলেন "বুড়ো হয়ে মরতে বসেছ, এখনও লোক ঠকানোর ইচ্ছে, তাই না? মরেও শান্তি পাবে না!"
শুধুমাত্র শব্দচয়নেই না, কথা বলার ভঙ্গিটিও… অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আমার জন্যেই পীড়াদায়ক, তাহলে যাকে বলছেন, সেই বয়স্ক মানুষটির কিরকম লাগছিল…
অবাক হয়ে দেখলাম, উনি একবার তাকালেন সেই ভদ্রমহিলার দিকে। তারপর শান্ত গলায় বললেন "কি হয়েছে, মা?"
"এক্ষুণি বাজার নিয়ে গেলাম না? দশ টাকার নোটটায় ছেঁড়া ছিল।"
"দেখতে পাইনি গো মা! দাও, পালটে দিচ্ছি।" কিন্তু কিন্তু করে বললেন দোকানী দাদু।
"দেখতে পাও নি? না ইচ্ছে করে ঠকালে? ধরা পড়ে গিয়ে এখন অজুহাত। দাও, দাও, পালটে দাও!"
টাকা পালটে নিয়ে ভদ্রমহিলা চলে যাবার পরে ওই দাদু আমার ফিরতি টাকাটা দিচ্ছিলেন। দেখলাম, দেবার আগে ভাল করে একবার টাকা গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন। তারপর, সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে দিলেন।
তখন চোখাচোখি হল।
একটু যেন জল লেগে আছে চোখে!
স্বাভাবিক! দিনের এক্কেবারে শুরুতেই, সকাল সাতটায় কারই বা অপমান গায়ে মাখতে ইচ্ছে করে?
"এই যে মা! দেখে দিয়েছি তোমার টাকা!" বলে উঠলেন উনি।
"থ্যাংকইউ! আচ্ছা দাদু, তোমাকে উনি এভাবে বললেন, তুমি কিছুই বললে না কেন?" অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা প্রশ্নটা করে ফেললাম।
"থাক…"
"উফ, সকাল সকাল যে কেন মানুষ এভাবে কথা বলে! একই কথা তো একটু ভাল ভাবেও বলা যেত?" খুব বিরক্ত হয়েই বলছিলাম আমি।
"রাগ করো না মা! আমি ইচ্ছে করেই ওনাকে কিছু বললাম না।" শান্তগলায় বললেন দাদু!
"বলা উচিৎ ছিল, দাদু। প্রতিবাদ না করলে…" আমি আরও কিছু অগ্নিবর্ষী কথা বলতে যাচ্ছিলাম, দাদুটি আমাকে সেইরকম শান্তগলাতে বললেন "উনি মা হতে চলেছেন গো মা! তারমাঝেই এই সকালে বাজারে এসেছে, হয়ত মাথা গরম ছিল… তারপরে আমি যদি দুটো কথা শোনাতাম, ওনার ভেতর যে আছে, সে সবটা শুনতে পেত না? কী ভাবত সে, এই পিথিবী সম্পক্কে? ওরা তো সব শুনতে পায় গো মা! ওদের মাঝে তো ভগবান আছেন, উনিও সব শুনতে পেতেন তো!"
স্তব্ধ হয়ে গেলাম!
যেন সেই "তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন" র বাস্তব চিত্র!
অন্য একজন খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে আমাকেও করতে হবে? তাহলে তো সত্যিই পৃথিবী অসহনীয় হয়ে উঠবে!
আমার মায়ের অন্যতম একটি প্রিয় কবিতা ছিল 'ছাড়পত্র।' মাঝে মাঝেই বিড়বিড় করে বলতেন "চলে যাব, তবু আজ যতক্ষণ এ দেহে আছে প্রাণ / প্রাণপণে এ বিশ্বের সরাব জঞ্জাল / এ বিশ্বকে এ শিশুর বা
সযোগ্য করে যাব আমি / নবজাতকের কাছে এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।"
পরিবেশ, পরিস্থিতির কত্ত ফারাক! তিথি অনুযায়ী আজকের দিনেই সাত বছর আগে আমার মা আকাশের তারা হয়ে গেছিলেন। মা কে ছাড়া সাত - সাতটা বছর কাটিয়ে দিলাম! কেমন ঊষর লাগে! নিঃস্ব লাগে নিজেকে! মনে হয়, আমি খর রোদে দাঁড়িয়ে আছি, একা আমি!
আর এমনি একটা দুটো মানুষের সঙ্গে আমার হঠাৎ করে দেখা হয়, আর মনে হয় মরুভূমির মতো আমার জীবনটাতে মরুদ্যানের ছায়া আছে! বুকভরা মায়া আছে!
ভিজে চোখ আর মন থেকে তখন ভিজে ভাব সরে যাচ্ছিল! ব্লটিং পেপার দিয়ে দুঃখ শুষে নিচ্ছিল যেন কেউ!
ওই রোগাসোগা, সবজি বিক্রেতা, বয়স্ক মানুষটি!
ভগবান নন, মানুষ! বড্ড ভাল একজন মানুষ!
ফেরার সময় গুনগুন করে গান গাইছিলাম "মেঘের কোলে রোদ হেসেছে…"

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: 22.jpg]
Like Reply




Users browsing this thread: 20 Guest(s)