Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[৪৭]
বাংলোর অফিসে বসেই কাজ করছেন এস পি সাহেব। ফোন আসছে ফোন ধরছেন।
রতি লাঞ্চ সেরে চলে গেছে, বলে গেছে আসবে। তবু না-আসা অবধি ভরসা নেই। খেয়ালি ছেলে মুডের উপর চলে। ওর খুশীদিকে অন্য কেউ কিছু করুক ও চায়না, সোসাইটিতে যাবো বলতে যেভাবে পা জড়িয়ে ধরেছিল ভেবে রক্তিম হয় খুশবন্ত। অতীতের স্মৃতি চারণায় মন ডুবে যায়। প্রথম ওকে দেখেছিল যোগা ক্লাসে। চোখ বুজে ধ্যান করছিল দেখে মনে হচ্ছিল সন্ত, সেদিনই ওকে ভাল লেগে যায়। পরে আলাপ হয়েছে। একদিন রাত্রিবালা ট্যাক্সির জন্য ছোটাছুটি করছে, যখন বলল, দাড়া আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। অবাক হয়ে বলেছিল তুমি গাড়ী চালাবে? সেই রাত্রে ওর বৌদিকে শিশুমঙ্গলে পৌছে দিয়েছিল খুশবন্ত। খুশবন্ত লক্ষ্য করেছে তার ডানপিটে ভাব রতির খুব পছন্দ। উদার মন সরল তবে পর নির্ভরশীল। ওকে একা ছাড়া কি ঠিক হল? পুলিশ পারেনা হেন কাজ নেই।
বাপুর কলকাতায় পোস্টিং হলে প্রথমে ভবানীপুর তারপর ঐ পাড়ায় চলে আসে। তখন খুশবন্ত গোখেলে বি.এ পড়ছে। তার বরাবর স্বপ্ন ছিল আই পি এস হবে। পাড়ায় বাঙালী ছেলেদের সঙ্গে মিশে গেল। দুর্গাপুজো পিকনিক এমন কি সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাকে নেমন্তন্ন করা হত। বাঙালী মেয়েদের মত সে অতটা মুখচোরা ছিলনা। একবার পিকনিক করতে গিয়ে, কয়েকজন ব্যাডমিণ্টন খেলছিল। ছেলেরা কোথা থেকে ঘুরে এসে খুব হাসাহাসি করছিল, একজন মজা করে বলেছিল, রতির সম্পদ দেখেছিস? রতির লজ্জায় চোখ মুখ লাল, সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করছিল কিন্তু খুশবন্ত অনুমান করেছিল কি বলতে চাইছে ওরা। আজ স্বচক্ষে দেখল সেই সম্পদ, সত্যি বেশ বড় রতির ঐটা। ফোন বাজতে কানে লাগিয়ে বলল, এখন রাউণ্ডে বের হবো। এসপি খুশবন্ত সিং কাউর বেরিয়ে গেলেন।
উধমসিং পিছনে উঠে বসল। এর আগে আরো অনেকের সঙ্গে কাজ করেছে কিন্তু এই এসপি ডেয়ার ডেবল আছে। রেইড উচ্ছেদ খোদ স্পটে দাঁড়িয়ে থাকেন। কই আউরত এত সাহসী হয় উধমসিং দেখেনি আগে। মগর সাচ্চা লোককে কেউ পরসন্দ করেনা।
রতির মোবাইলে ফোন আসে, অন করে কানে লাগাতে মেয়েলী গলা শুনে কেটে দেয়। এইভাবে ভেসে যাচ্ছিল ছেলেটা।
রত্নাকরকে দেখে মিস্ত্রীরা অবাক হয়। রত্নাকর বুঝতে পারে রাতে ফেরেনি বলে ওদের চোখে কৌতুহল।
কাল রাতে বিয়ে বাড়ীতে আটকা পড়েছিলাম। উপযাচক হয়ে বলল রত্নাকর।
আসেননি ভাল করেছেন। একজন কাজ থামিয়ে বলল।
রত্নাকর অবাক হয়। আরেকজন বলল, দু-দুবার পুলিশ এসেছিল। রাতে এসেছিল আবার সকালেও।
বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কি বলছিল পুলিশ?
কি একটা লোকের খোজ করছিল।
ভুল করেছে মনে হয়। রত্নাকর দোতলায় উঠে গেল।
ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ঘাম মুছল। খুশীদি কি এইজন্য পীড়াপিড়ী করছিল? কি করবে এখন? বিছানা নেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু বাক্স নিয়ে ওদের সামনে দিয়ে বেরোতে গেলে সন্দেহ করবে। এর পিছনে আম্মাজীর হাত নেই তো? তাকে ছেলের মত মনে করে মা হয়ে ছেলের কেন ক্ষতি করতে চাইবে? বারবার জানলা দিয়ে উকি দেয়, জানলায় দাঁড়িয়ে রাস্তা দেখা যায়। পুলিশ কেন তার খোজ করছে তার অপরাধ কি? অসহায় বোধ করে। হঠাৎ নজরে পড়ল, মিস্ত্রীরা রাস্তা দিয়ে গল্প করতে করতে চলেছে। কিছুটা গিয়ে রায়বাহাদুর রোডের দিকে বাক নিল। মনে হয় টিফিন করতে যাচ্ছে। আর দেরী করা ঠিক হবেনা, এইবার বেরিয়ে পড়া যাক। বাক্স নিয়ে নীচে নামতে দেখল একটা অটো রায়বাহাদুর রোড থেকে বের হচ্ছে। পিছনে লোক ভর্তি ড্রাইভারের পাশে বাক্স কোলে নিয়ে বসল। অটো স্টার্ট করতে মনে হল ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। খুশীদির ওখানে আর কদিন তারপর কোথায় যাবে? খুশীদি অরবড় চাকরি করে ইচ্ছে করলে তার একটা ব্যবস্থা করতে পারে না? বেকার ছেলের চাকরি দরকার মুখ ফুটে বলতে হবে কেন? চাকরি থাকলে আজ কি তাকে ঐসব করতে হতো? পুজোর আগে তাদের ফ্লাট হয়ে যাবে শুনেছে কিন্তু এদিকের ঝামেলা না মিটলে ফ্লাটেই বা যাবে কি করে? আম্মাজীকে ধরা ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না। কিন্তু আম্মাজী যদি ঐসব করতে বলে? খুশীদিকে কথা দিয়েছে আর ঐসব করবে না। অটোর ইঞ্জিনের শব্দ আরো জোরে হোক যাতে চিন্তাগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
অটো থেকে নেমে বাস রাস্তার দিকে হাটতে থাকে। বাস স্টপে দেখল কৃষ্ণকলি দাড়িয়ে, তাকে দেখে মৃদু হাসলেন। অগত্যা রত্নাকরকেও হাসতে হল। অধ্যাপিকা কাছে ঘেষে এসে জিজ্ঞেস করেন, সোসাইটিতে যাচ্ছেন?
আবার চিন্তাটা ধরিয়ে দিল। রত্নাকর সম্মতিসুচক হাসল। ইতিমধ্যে বাস এসে পড়তে কৃষ্ণকলি চট করে বাসে উঠে পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করল, উঠবেন না?
রত্নাকর বলল, পরে যাবো।
এতবড় পৃথিবীতে তার জন্য কি একটু জায়গা হবেনা? নিজেকে ভীষণ একাকী মনে হয়। বাস আসতে উঠতে যাবে কণ্ডাকটর গতিরোধ করে, বাক্স যাবেনা।
ভাই ভাড়া দেবো। কণ্ডাকটরের মায়া হয়, পথ ছেড়ে দিল।
বাক্সটা বসার জায়গার নীচে ঢুকিয়ে দিয়ে জানলা ঘেষে বসল। কেউ জানেনা তার বাক্সে কত টাকা। যখন টাকা ছিল না, ভাবনা ছিলনা। তার সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসতো। এখন টাকা হয়েছে কিন্তু তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। খান্না সিনেমার কাছে বাস বাক নেয়। মনে পড়ল ছবিদির কথা। এদিক ওদিক খুজল চোখ, কোথাও নজরে পড়লনা। এখন হয়তো সাজগোজ করছে ঘরে, সন্ধ্যেবেলা বের হবে। বিধানগরে ঢুকে ট্র্যাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে গেল বাস। তার সামনেই এক মহিলার কাট আউট, প্যাণ্টি ব্রা পরা কোন বিজ্ঞাপনের ছবি সম্ভবত। মহিলা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ছবিটা এমনভাবে আকা যে দেখবে তারই মনে হবে তার দিকে তাকিয়ে, দেখতে দেখতে খুশীদির কথা মনে পড়ল। খুশীদির ফিগারটাও এরকম, খুব ভয় পেয়ে গেছিল। বাস নড়ে উঠল, ধীর গতিতে এগোতে থাকে। মহিলার দৃষ্টি তার দিকে। একসময় মিলিয়ে যায় দূরে।
কনডাকটর হাক পাড়ে এসপি বাংলো। রত্নাকর বাক্স নিয়ে নেমে স্বস্তি বোধ করে। গেটের কাছে যেতে একজন সিপাহী তেড়ে এল, কাঁহা যায়গা?
এসপি-।
আভি নেহি, রাউণ্ডমে হ্যায়।
রত্নাকর বুদ্ধি করে বলল, জানকি মাসী আমাকে চেনে।
বোলা না সাম মে আইয়ে।
গোলমাল শুনে জানকিমাসী বেরিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। রত্নাকরের মাথায় একটা ব্যাপার ঝিলিক দিয়ে গেল। যখনই কোনো বিপদে পড়ে তাকে উদ্ধার করে কোনো না কোনো মহিলা। তাকে যে ঘরটায় বসতে বলা হল, সেটি স্টোর রুম। দুপুরে যাবার সময় দেখে গেছে ফাইল-পত্তরে ঠাষা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকা ভাঙ্গাচোরা ঝুলকালিতে জড়ানো আসবাব। সেসব একদিকে সরিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। দেওয়াল ঘেষে একটা ক্যাম্প খাট। ঘরে দু-একটা পোকা-মাকড় থাকলেও এখানে পুলিশ ঢুকে তাকে বিব্রত করতে পারবেনা ভেবে আশ্বস্থ বোধ করে রত্নাকর। জানকি মাসী চা নিয়ে ঢুকল।
সামনে জীপে কয়েকজন সিপাই সহ ওসি সিকদারবাবু পিছনে এসপি সাহেবের জীপ এসে দাড়ালো সোসাইটির নীচে। খুশবন্ত সিংকাউর জীপ থেকে নেমে চারপাশ ঘুরে দেখলেন। সিকাদারবাবু জিজ্ঞেস করল, স্যার ভিতরে যাবেন?
খুশবন্ত সিং কাউর সানগ্লাস খুলে হাসলেন।
আম্মাজী ধর্মপ্রাণ মহিলা দেখলেও পুণ্যি স্যার। ক্যালানের মত হেসে বলল সিকদারবাবু।
আপনে বহুৎ পুন্য কামায়া?
হে-হে-হে আসি মাঝে সাঝে। বিব্রত স্বরে বলল সিকদারবাবু।
খুশবন্ত জীপে উঠে স্টার্ট করতে সিকদারের জীপ অনুসরন করে। উধম সিং পিছনে বসে সিকদারকে ইঙ্গিত করে বলল, বাঙালী লোক বহুৎ হারামী।
হারামী সব মুলুকেই পাবেন। খুশবন্ত বললেন।
জী সাব।
রতি ফিরেছে কিনা কে জানে। যোগ ক্লাসে ওকে দেখে ভাল লেগেছিল। তারপর ঘণিষ্ঠতা হয়। লাজুক মুখচোরা স্বভাব। ওকে দিয়ে বলিয়ে না নিলে নিজে মুখ ফুটে কিছু বলবেনা।
জানকীর সঙ্গে রতির বেশ ভাব জমে গেছে। বহুকাল জানকি এমন মনোযোগী শ্রোতা পায়নি। তার জীবনের কথা কেউ এমন গুরুত্ব দিয়ে শুনবে ভাবেনি। জানকি তার মনের মধ্যে জমে থাকা অতীতকে তুলে ধরে তৃপ্তি পায়।
ভরত মহাপাত্র উড়িষ্যা হতে কলকাতায় এসেছে। প্লাম্বারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। ভরত এবং জানকির একমাত্র মেয়ে সুভদ্রার বিয়ের উড়িষ্যায় থাকে। ভরতের মৃত্যুর পর অসহায় জানকি জনৈকের সহায়তায় এসপি বাংলোয় রান্নার কাজ পেলেও মনে শান্তি ছিলনা। এসপি ভদ্রলোক নেশা করতেন, রাতে দরজা ধাক্কাতেন।
উনি বিয়ে করেননি? রতি জিজ্ঞেস করে।
বিয়ে করেছে ছেলেমেয়ে আছে। সবাই দেশে থাকে।
দেশ কোথায়?
মুঙ্গের জেলার লোক, বিহারী।
জানকি আবার শুরু করে। অন্যত্র যাবার জন্য একেতাকে বলা শুরু করেছে। এমন সময় এসপি বদলি হয়ে গেলেন তার জায়গায় এলেন খুশবন্ত শিং কাউর। জানকি সিদ্ধান্ত বদলে এখানেই থেকে যাওয়া স্থির করে। এসপি তাকে মৌসী বলে সম্বোধন করেন, বয়স কম বাজে নেশা নেই। খুব মেজাজি এই যা দোষ। গল্প করতে করতে রত্নাকর জানকি মাসীর সম্পর্কে অনেক কথা জানল।
এই ম্যাডম খুব ভাল?
মেয়ে মানুষ একা একা থাকে। খুব খারাপ লাগে।
বাইরে জীপের শব্দ পেয়ে জানকি উঠে পড়ে বলল, মনে হয় ম্যাডম আসিছে। আপনে এইসব কথা ম্যাডমরে বলবেননা। জানকি চলে গেল। জানকি খুশীদির নিঃসঙ্গতার প্রতি ইঙ্গিত করে গেল। ঠিকই খুশীদি তো বিয়ে করতে পারে।
পুলিশিপোশাকে খুশীদি ঢূকে বলল, এসেছিস? কোথায় তোর জিনিসপ্ত্র?
রত্নাকর বাক্স দেখিয়ে দিল। খুশীদির বুক দেখে কে বলবে মেয়ে। আড়চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে। খুশবন্ত বলল, খোল দেখি কি সম্পদ আছে?
রত্নাকর বাক্স খুলতে খুশবন্ত হাতড়ে দেখতে থাকে। কয়েক প্রস্থ জামা প্যাণ্ট লুঙ্গি কয়েকটা খাতা আর কয়েকগোছা টাকা। হঠাৎ বালা জোড়া নজরে পড়তে জিজ্ঞেস করে, এগুলো কোথায় পেলি?
রত্নাকর লাজুক মুখে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকে। খুদশীদি টাকাগুলো হাতে নিয়ে বলল, এগুলো নোংরা টাকা বুঝতে পারছি কিন্তু এদুটো কোথায় পেলি?
আমার মা দিয়েছে।
তাহলে এগুলো বেচলেই টাকা পেতিস ঐসব করতে গেলি কেন?
রত্নাকর চুপ করে থাকে। খুশবন্ত বলল, অপরাধের অজুহাত?
না মোটেই না। ওগুলো মা আমাকে দেয়নি। বলেছে বউকে দিবি।
খুশবন্তের হাসি পেলেও হাসেনা। বালা জোড়া ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল, বিছানা কোথায়?
এই কত কষ্ট করে এনেছি। দুবার পুলিশ খুজতে গেছিল জানো?
খুশবন্তের এই আশঙ্কা ছিলনা তা নয়। রতিকে বলল, তুই বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিস। এবার বুঝতে পারছিস কেন তোকে এখানে আসতে বলেছিলাম? কই দেখি তোর উপন্যাস?
রত্নাকর একটা খাতা এগিয়ে দিল। খুশবন্ত পড়তে চেষ্টা করে, অবিয়।
রত্নাকর বলল, অব্যক্ত প্রেম। মানে যে কথা বলা হয়নি।
যে কথা বলা হয়নি। এটা শুনতে আরো ভাল লাগছে। ঠিক আছে একটূ বিশ্রাম করে আমার ঘরে আয়। ভাবছি আজ আর বেরবো না।
খুশবন্ত খাতা আর বালাজোড়া নিয়ে চলে গেল। রত্নাকর বুঝেও কিছু বলতে পারেনা। হয়তো ভুল করে নিয়ে গেছে খেয়াল হলে দিয়ে দেবে। অন্যের বালা খুশীদি নিতে যাবে কেন?
[৪৮]
ঘরে এসে চেঞ্জ করল খুশবন্ত কাউর। ড্রয়ার টেনে বালাজোড়া রেখে খাতাটা নিয়ে বালিশে বুক দিয়ে পড়তে শুরু করল। পড়তে পড়তে পুরানো পাড়ার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অঞ্চলের বিখ্যাত ডাক্তার সমর মুখার্জির একমাত্র মেয়ে শুচিস্মিতা ওরফে সুচিকে ভালবাসে দেবাঞ্জন পাল। দেবাঞ্জন নিম্নবিত্ত পরিবারের অতি সাধারণ যুবক। সুচি কলেজ যায় আসে তার নজরে পড়ে দেব তাকে সর্বত্র ছায়ার মত অনুসরণ করছে। সুচি বাড়ীর ব্যালকনিতে দাড়ালে নজরে পড়ে দূরে দাঁড়িয়ে চাতকের মত তাকিয়ে আছে দেব। রাস্তায় ফুচকাওলাকে দাড় করিয়ে নীচে নেমে এল। আশা দেব হয়তো এই সুযোগে ফুচকা খাবার অজুহাতে তার পাশে এসে কিছু বলতে পারে। সুচীর ফুচকা খাওয়া শেষ হয় ঘাড় ঘুরিয়ে দেবের দিকে তাকাতে দেখল অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কি যেন দেখছে। সুচীর রাগ হয় দপদপিয়ে বাড়ীতে ঢূকে যায়।
একদিন কলেজ যাবার সময় একটা কাগজে বড় বড় করে লিখল "কিছু বলার থাকলে বলুন" তারপর ভাজ করে বইয়ের ভাজে রেখে কলেজ যাবার জন্য বের হল। লক্ষ্য করল পিছনে পিছনে আসছে দেব। একবার পিছন ফিরে তাকালো। নিরীহ মুখ করে অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছিল কাছে গিয়ে আচ্ছা করে শুনিয়ে দেয়। কিছু যদি নাই বলবি পিছন পিছন ঘুরছিস কেন? কৌশলে বইয়ের ভিতর থেকে কাগজটা ফেলে দিল। কিছু পড়ে গেছে যেন বুঝতে পারেনি। কিছুটা যেতে দেব ছুটতে ছুটতে এসে সামনে দাড়ালো। সুচি বুঝতে পারে এতদিনে কাজ হয়েছে। সুচি অবাক হবার ভান করে জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবেন?
দেব একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা পড়ে গেছিল।
ওটা কি দেখেন নি?
না ভাবলাম কোনো দরকারী কোনো কিছু হবে তাই?
আর কিছু বলবেন?
না ঐটা দিতে এলাম।
সুচি কাগজটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে হন হন করে কলেজের দিকে হাটতে থাকে। চোখ ফেটে জল আসার জোগাড়। মাসের পর মাস গেল বছরের পর বছর। এক ঋতু যায় আর এক ঋতু আসে কিন্তু দেবের কোনো পরিবর্তন নেই। মেয়ে বড় হয়েছে ডা.মুখার্জি বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। তারই এক বন্ধুর ছেলে, জয়ন্ত সবে ডাক্তারী পাস করেছে। ডা.মুখার্জি এফ আর সি এস করার জন্য তাকে বিলেত পাঠাবার দায়িত্ব নিলেন। জয়ন্ত সুচির নামে কার্ড ছাপা হল। দেবও আমন্ত্রিত ছিল বিয়েতে। পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করছে। ঘোমটার ফাক দিয়ে লক্ষ্য করে বাথরুম যাবার প্যাসেজে দাঁড়িয়ে জুলজুল তাকিয়ে আছে। বিয়ে শেষ হতে বাথরুম যাবার নাম করে দেবের পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল, এদিকে এসো।
আড়ালে নিয়ে সুচি জিজ্ঞেস করে, সত্যি করে বলতো কেন পিছন পিছন ঘুর ঘুর করো?
আর করব না।
তুমি কি আমায় ভালবাসো?
দেব মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সুচি অবাক হয়ে বলল, তাহলে বলোনি কেন? না বললে কি করে বুঝব?
না মানে।
সুচির ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় বলল, না মানে কি?
তোমরা কত বড়লোক তোমার বাবা কতবড় ডাক্তার আবার ',।
এত বোঝো তাহলে পিছন পিছন ঘুর ঘুর করছিলে কেন?
তোমাকে একটু দেখব বলে।
হায় ভগবান, শুধু একটু দেখা আর কিছু নয়? জিজ্ঞেস করল, আমার বিয়ে হয়ে গেল। এখনো ভালবাসো?
দেব ম্লান হাসল। সুচি ব্যঙ্গ করে বলল, ভালোবাসা ভ্যানিস?
দেব বলল, "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।"
ফুপিয়ে কেদে ফেলে শুচিস্মিতা তারপর দ্রুত বাথরুমে ঢুকে গেল।
চারশো পাতার উপন্যাসের এই সংক্ষিপ্তসার। পিকনিক পুজো অনেক কিছু আছে। খুশবন্ত লুঙ্গি দিয়ে চোখ মুছে হাসল। এই সুচিস্মিতাটা কে? ড.ব্যানার্জির মেয়ে সোমলতা নয়তো?
মনের মধ্যে কেমন একটা উশখুশ ভাব অনুভব করে। রতিকে আসতে বলেছিল এলনা কেন? রতির লেখার স্টাইলটা বেশ, শব্দ চয়ন উপমা অলঙ্কার সমৃদ্ধ। সন্ধ্যেবেলা একবার ভাবছে বেরোবে। পুজো এসে গেল, যদি কোনো পুজো সংখ্যায় লেখাটা প্রকাশ করা যায়। এটার ব্যবস্থা করে মহীয়সী আম্মাজীর একটা ব্যবস্থা করবে।
রত্নাকর একবার উকি দিয়েছিল, দরজা বন্ধ দেখে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। খুশবন্ত উকি দিয়ে দেখল ঘুমিয়ে পড়েছে রতি। পোশাক পরে বেরোবার জন্য তৈরী হয়। জানকি এসে জিজ্ঞেস করল, ম্যাডম খাবার করব?
না এসে খাবো।
সীতারাম ঘোষ স্ট্রীটে সন্দীপন পত্রিকা দপ্তরে ব্যস্ত বাদলবাবু। এখনো কয়েকটা লেখা আসেনি। প্রথম প্রথম দপ্তরে এসে বসে থাকত একটু নাম হলেই টিকিটা পর্যন্ত দেখা যায়না। বিশেষ করে পুজো সংখ্যার লেখা জোগাড় করতে ঘাম ছুটে যায়। সম্পাদক মশাই ওকে করেই দায়িত্ব শেষ, হ্যাপা সামলাতে হয় ম্যানেজার বাদল বোসকে।
বাদলদাদা কেমন আছেন?
বাদলবাবু চশমাটা নাকের ডগায় তুলে তাকিয়ে একগাল হেসে বললেন, আরে পথ ভুলে নাকি?
কেন আসতে নেই নাকি?
লম্বা জিভ কেটে বাদলবাবু বললেন, আপনাদের আসায় বাধা দেবে কার সাধ্য? তবে কি না খাকি আর লেখালিখি হে-হে-হে।
খাকি বাদ দিয়ে গোয়েন্দা উপন্যাস হয় নাকি?
কি ব্যাপার বলুন তো? আপনি আবার গোয়েন্দা উপন্যাস লিখছেন নাকি?
না রোমান্স।
বলেন কি? দাড়ান-দাড়ান একটু দম নিতে দিন। চা খাবেন তো? চেয়ার থেকে উঠে জানলা দিয়ে মুখ বের করে, এ্যাই কেষ্ট উপরে দু-কাপ চা পাঠা। নিজের জায়গায় এসে বললেন, হ্যা বলুন অনেকদিন পর কি মনে করে?
খুশবন্ত কাউর একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললেন, একটু পড়ে দেখবেন।
বাদল বাবু ফাইল খুলে দেখলেন মোটা করে লেখা-যে কথা হয়নি বলা/ রত্নাকর সোম।
বাদলবাবুর কপালে ভাজ পড়ে, নামটা কেমন চেনা মনে হচ্ছে।
রত্নাকর সোম কে?
আমার বিশেষ বন্ধু।
হ্যা মনে পড়েছে। এর লেখা আমাদের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। হঠাৎ কোথায় ডুব দিলেন। আপনি যখন দিলেন নিশ্চয়ই দেখব।
কেষ্ট চা দিয়ে গেল। বাদলবাবু চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, দেখি সুকেশ আচার্য পাস করে দিলে শারদীয়াতেই বের করে দেবো। দরজায় দরজায় ঘোরা আর পোষায় না।
সুকেশ আচারিয়া কে?
উনি এবারের শারদীয়ার সম্পাদনার দায়িত্বে। শুনুন ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলি। লেখার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই, ভুল বুঝবেন না।
বুঝেছি বিজ্ঞাপন তো?
হা-হা-হা। ঘর কাপিয়ে হাসলেন বাদলবাবু। একেই বলে সাপের হাঁচি বেদেয় চেনে।
আমার দপ্তরে কটা ফর্ম পাঠিয়ে দেবেন।
রত্নাকর ছেলেটার লেখার হাত ভাল। একটু বেশি সেণ্টমেণ্টাল। দেখা যাক এখন সম্পাদকের মর্জি।
বাদলদা লেখাটার কোনো কপি নেই, একটু সাবধানে রাখবেন।
কোনো চিন্তা করবেন না আপনার নম্বর আমার কাছে আছে। বাদলবাবু আশ্বস্থ করলেন।
খুশবন্ত কাউর নমস্কার করে পত্রিকা দপ্তর হতে নীচে নেমে এল। বাদলবাবু লোকটা মহা ধড়িবাজ। লেখা মনোনীত হলে তবে বিজ্ঞাপন। প্রেমচাদ বড়াল স্ট্রীটে একবার তার খপ্পরে পড়েছিল। বয়স্ক লোক বিয়ে-থা করেন নি আবার পত্রিকার সঙ্গে আছেন জেনে ছেড়ে দিয়েছিল।
হাতের কাজ রেখে বাদলবাবু লেখাটায় চোখ বোলাতে লাগলেন। লেখার স্টাইল খারাপ নয়। সুকেশবাবু লোকটা পাগলাটে ধরণের কখন কি মর্জি হয়, টাকা পয়সা যোগাড় করা লেখা সময়মত ছাপাসব বাদলবাবুকে করতে চিব পদে ছিলেন শুনেছেন। শিখ হলেও বাংলা বলা শুধু নয় পড়তেও পারে। সাহিত্যের নিরাপত্তার স্বার্থে এদের সাহায্যও দরকার বাদলবাবু জানেন। হাড়কাটায় পারুলের ঘরে একবার এর খপ্পরে পড়েছিল, হাজতে ভরে দিলে লজ্জায় পড়তে হত। পরিচয় পেয়ে ভদ্রমহিলা সেদিন ছেড়ে দিয়েছিল।
ঘুম থেকে উঠে রত্নাকর খুশীদিকে দেখতে না পেয়ে জানকিমাসীর কাছে খোজ নিয়ে জানতে পারে বেরিয়েছে। একবার বলল বেরোবে না আবার বেরিয়ে গেল?
সংসার না থাকলে ঘরে মন টেকেনা। জানকি মাসীর সহজ সমাধান।
জানকিমাসীর কথায় গুরুত্ব না দিলেও রত্নাকরের মনে হয় খুশীদি একটু চাপা স্বভাবের। মনের মধ্যে ভাঙচুর চললেও বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। সব সময় হাসিখুশী। খুশী নামটা সার্থক। ভীষণ জিদ্দি বরাবর, বাবার আপত্তি সত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল। হঠাৎ বাংলা শেখার ঝোক চাপতেই সেই বাংলা শিখে ছাড়ল। রত্নাকরের মানূষের ভিতরটা সম্পর্কে বেশি আগ্রহ কিন্তু খুশীদিকে আজও ভাল করে চিনতে পারল না। আজ একটা ফয়শলা করতে হবে। এখানে কতদিন থাকবে আর কেনই বা থাকবে, আম্মাজীর ওখানে যাবেনা তাহলে কি চিরজীবন খুশীদির অনুগ্রহের পাত্র হিসেবে থাকতে হবে? খুশীদির বিয়ে হলে সব কিছু খুশীদির মর্জি মত হবেনা। খুসীদির স্বামী তাকে অপছন্দও করতে পারে। সময় থাকতে থাকতে আত্মসম্মান বাচিয়ে এখান থেকে সরে পড়াই ভাল। খুশীদি উপন্যাসটা পড়তে নিয়েছে, পড়েছে কিনা জানা হয়নি। দেখা হলে জিজ্ঞেস করবে কেমন লাগল? একজন মহিলার মতামত এক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ।
সন্ধ্যে হয়ে এসেছে এবার বাসায় ফেরা যাক। খুশবন্তের ভাল লেগেছে গল্পটা কিন্তু সব সময় গল্প বিবেচিত হয়না গল্পকারকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝছে দেরীতে হলেও প্রতিভা একদিন তার স্বীকৃতি আদায় করে নেবে।
বাংলোর সামনে গাড়ী থামতেই জানকি গ্যাসে কড়াই চাপিয়ে দিল। তরকারি হয়ে গেছে পুর ভরে লেচি করে রেখেছে ম্যাডম এলেই ভাজতে শুরু করবে।
খুশবন্ত ঘরে ঢুকে চেঞ্জ করল। লুঙ্গির উপর পাতলা কুর্তা। দরজায় রতিকে দেখে ডাকল, ভিতরে আয়।
রত্নাকর বিছানার একপাশে বসে ভাবে কিভাবে কথাটা শুরু করবে? খুশবন্ত বলল, শোন রতি তোকে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, মন দিয়ে শোন।
ভালই হল খুশীদিই শুরু করেছে। রতি মাথা নীচু করে শুনতে থাকে। খুশবন্ত বলল, এখানে থাকতে হলে শুয়ে বসে কাটালে চলবে না। তোকে কাজ করতে হবে।
কি কাজ বলো?
জানকি করছে আমি করছি। চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা করছি, তুই বসে বসে লিখবি।
আমি বিছানায় বসে লিখতে পারি।
কিভাবে লিখবি তোর ব্যাপার তবে লিখতে হবে। বছরে অন্তত দুটো বড় লেখা চাই। হাসছিস কেন? আমি কি তোর সঙ্গে মজা করছি?
মজা করছো না কিন্তু মজার কথা বলছো।
জানকি দু-প্লেট কচুরি নিয়ে ঢুকল। খুশবন্ত একটা প্লেট নিয়ে কচুরি খেতে লাগল।
জানকি দারুন করেছে তাই না? খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল।
রত্নাকর জবাব দিল না। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল, মজার কথা কি বললাম শুনি?
শোনো খুশীদি ফরমাস করে তুমি জানকিমাসীকে দিয়ে ভাল কচুরি করাতে পারো কিন্তু সাহিত্য হয়না।
তাহলে কিভাবে হয় শুনি?
লেখা ব্যাপারটা মুডের ব্যাপার।
হ্যা তুই টো-টো করে ঘুরে বেড়াবি আর যখন মুড আসবে লিখবি? এসব ফাকিবাজি চলবে না। তুই প্রতিদিন অন্তত পনেরোনা দশ পৃষ্ঠা করে লিখবি। যা মনে আসে খালি লিখে যাবি, পছন্দ নাহলে ছিড়ে ফেলবি।
এটা মন্দ নয়। কিন্তু এতো আমার কাজ তোমার কাজ কি বললে নাতো?
খুব তোমার-আমার শিখে গেছিস? তুই তো এরকম ছিলি না। আমি তোদের সবার জন্য কাজ করছি জানকি আমাদের সবার জন্য কাজ করছে। কাজ হচ্ছে কাজ, আমার-তোমার কিরে?
এবার আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
ক্ষেপিয়ে দেবার মত কিছু বললে ভাল হবে না কিন্তু।
রত্নাকর এবার খুশীদির গলায় মেয়েলি সুর শুনতে পেল। মেয়েলিপনাকে সব সময় চেপে রাখার চেষ্টা করে। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, তুমি লেখাটা নিলে পড়েছো?
জানকি চা দিয়ে গেল। খুশীদি চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, শোন রতি সত্যি করে বলবি। ঐ যে সঞ্চিতা মেয়েটা কে?
শুচিস্মিতা।
হ্যা সুচি। ওকি ডাক্তারবাবুর মেয়ে?
ওর বাবা ডাক্তার।
কথা ঘোরাবি না। কি যেন নাম? সোমলতা হ্যা সোমলতাই কি সুচি?
এরপর জিজ্ঞেস করবে দেবাঞ্জন আমি কিনা?
তুই আমাকে বলেছিলি জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে লেখকের লেখায় পারিপার্শ্বিক এসে যাবেই।
খুশীদি আশপাশের চরিত্র লেখার মধ্যে আসে। একজনের মধ্যে একাধিক চরিত্রের মিশ্রণ থাকতে পারে। আবার ব্যক্তি না এসে ভাবও আসতে পারে। যেমন দেবাঞ্জন আভিজাত্যের বেড়া পেরিয়ে মুখ ফুটে মনের কথা বলতে পারেনি। এর বিপরীতও হতে পারত। তোমাকে আজ একটা সত্যি কথা বলছি, সবাই সোমলতাকে জড়িয়ে আমাকে ঠাট্টা করত সেজন্য আমার মনে হয়তো দুর্বলতা জন্মে থাকতে পারে তার মানে এই নয় আমি সোমলতাকে ভালবাসি। বিজ্ঞান বলছে পদার্থের যা শক্তি আছে তার সামান্য অংশ আমরা দেখতে পাই তেমনি মানুষকে আমরা যেভাবে দেখি তারও বাইরে আছে অন্য মানুষ। কখনো কোনো কারণে সেদিকটা প্রকট হয় আবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেদিকটা উন্মোচিত নাও হতে পারে।
খুশবন্ত সব কথা না বুঝলেও রতির কথা শুনতে ভাল লাগে। রতির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই কি সত্যিই কাউকে ভালবাসিস নি?
আগেই বলেছি নিজের মন ঠিক কি চায় মানুষ সব সময় বুঝতে পারেনা। ইচ্ছে কারো মনে নানা কারণে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তখন সেই ইচ্ছেকে সনাক্ত করা যায়না। সাধারণভাবে আমার মনে হয় বেলাবৌদি মনীষাবৌদি পারমিতা তুমিসবাইকে আমি ভালবাসি। কিন্তু সব ভালবাসাকে যদি এক পংক্তিতে ফেলে বিচার করি তা ভুল হবে। ভালবাসার নানা চরিত্র আছে, প্রেম প্রীতি শ্রদ্ধা স্নেহ বাৎসল্য ইত্যাদি।
তোর কথা শুনতে শুনতে মাথা ধরে গেল। রাত হয়েছে ওঠ। আর মনে রাখবি রোজ দশ পৃষ্ঠা।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[৪৯]
খাবার টেবিলে বসে একটু আগে বলা রতির কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে খুশবন্ত। দেবাঞ্জন আভিজাত্যের বেড়া ডিঙোতে পারেনি এর উল্টোটাও হতে পারত। সুচী অন্তরাল ছিন্ন করে বেরোতে পারেনি কিম্বা মানুষের অনেক ইচ্ছে আমরণ সুপ্তই থেকে যায় বাস্তবের মাটিতে অঙ্কুরিত হয়না। “রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে”। মনকে উদাস করে দেয় কথাটা। রত্নাকর আড়চোখে খুশীদিকে দেখে আনমনাভাবে যখন হাত ভাজ করে মুখে খাবার তুলছে হাতের গুলি ফুলে উঠছে ছেলেদের মত। চোখাচুখি হতে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল, রতি তোর রাতে রুটি খেতে অসুবিধে হয়?
কিছু একটা খেতে পেলেই হল, আমার ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করল, খুশীদি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছো, জরুরী ফোনও তো আসতে পারে। বিয়েতে যাইনি উমাদাও ফোন করতে পারে।
খেয়ে ওঠ, জরুরী ফোন দেখাচ্ছি।
খাওয়া সেরে রত্নাকর ঘরে ঢুকে বিছানা ঠিক করে শোবার উদ্যোগ করছে, খুশবন্ত ঢূকে ওর হাতে মোবাইল দিয়ে বলল, কথা বল।
রত্নাকর মোবাইল কানে দিয়ে হ্যালো বলতে ওপার হতে মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে এল, সোম হিয়ার?
হ্যা, আপ?
এ্যাড্রিয়ান, ভেরি হরনি প্লীজ টু-মরো।
কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখল খুশীদি তার দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে, লজ্জা পেয়ে রত্নাকর ফোন ফিরিয়ে দিল। খুশবন্ত বলল, শুয়ে পড়। তোকে একটা অন্য সিম দেবো। তুই উমানাথকে ফোন করে নতুন নম্বর জানিয়ে দিবি। গুড নাইট।
রিলিফ সোসাইটি থমথম করছে। মনিটরে চোখ রেখে আম্মাজী ওরফে আন্না পিল্লাই বসে দেখছেন মিথিলা ইলাজ করছে। ফোন বাজতে ধরে বললেন, আমার বাচ্চা।
আম্মাজী কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছি কিন্তু সুইচ অফ।
আপনার জন্য দুইচ অন করে রাখবে? রাবিশ।
ডেরাতে নেই, নজরদারি চলছে। নিত্যানন্দ ঘোষ বলল।
একটা মানুষ হাবিস হয়ে গেল? খবর না থাকলে ফোন করবেন না। বিরক্ত আম্মাজী ফোন কেটে দিলেন। ল্যাণ্ড লাইন বেজে উঠল, বলছি....শুনুন মিসেস আগরবাল, ওভাবে হয়না কে ইলাজ করবে সোসাইটি ঠিক করবে....আনন্দ বিজি আছে...ফোনে নয় অফিসে এসে কথা বলবেন...গুড নাইট।
আম্মাজী "ল্যাসিবিয়াস আউতর" বলে গজগজ করতে করতে খাস কামরায় ফিরে মনিটরে চোখ রাখলেন। মিথিলা খাটে চিত হয়ে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। দুই উরুর ফাকে মুখ গুজে লোকটা চুষছে। দেখতে দেখতে আম্মাজীর বাচ্চার কথা মনে পড়ল। যখন চুষতো জরায়ুতে শুরশুর করত। অমৃত রসের জন্য কি করতো। এখন মনে হচ্ছে ওকে এখানে ঘর দিয়ে রাখলে আজ এমন হতনা। একটা ছেলে সোসাইটির নীচে ঘুরঘুর করছিল সিকদার বলল, তাকে এ্যারেস্ট করেছে। ছেলেটি . বলেই সন্দেহ হয়েছিল। পুজোর মুখে আরো সতর্ক হতে হবে।
সকাল হতে ঠেলা গাড়ীতে আরেক ঠেলা বাঁশ এল। প্যাণ্ডাল বাধা শুরু হয়ে গেছে। এবারে পুজোর দায়িত্ব নিয়েছে মেয়েরা। বেলাবৌদি সম্পাদক হয়েছে। শুভ একটা বেসরকারী ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে। হুগলীতে ব্যাঙ্ক যাতায়াতে অনেক সময় লেগে যায়। বেসরকারী ব্যাঙ্ক বলে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত দেবযানী আণ্টি বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। পুজোর ঠিক পরেই নভেম্বরে বিয়ে ঠীক। বিয়ে ঠিক হবার পর রোজির সঙ্গে ফোনে যা একটু কথা হয় কিন্তু চাক্ষুষ দেখা হয়না। রতিদের ফ্লাট সম্পুর্ণ হয়নি তারই মধ্যে দোতলার একটা ফ্লাট তাগাদা দিয়ে বাসযোগ্য করে দিবাকর সপরিবারে সত্যনারায়ন পুজো করে ঢূকে পড়েছে। আল্পনাবৌদিও মেয়েদের সঙ্গে চাঁদা তুলতে বের হয়। একরকম নিরুদ্দেশ হলেও এখনো মাঝে মাঝে ঠাকুর-পোকে নিয়ে আলোচনা হয়, তখন অস্বস্তি বোধ করে আল্পনাবৌদি। মনীষা একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, ওর দাদা খোজখবর নিয়েছে কিনা? কোথায় খোজ নেবে, দাদার সঙ্গে কোনোদিন যোগাযোগ রাখতো? তা ছাড়া তার নিজের সংসার আছে, কোনদিক দেখবে বলুন? ঠাকুর-পোর আক্কেল দেখুন, আরে দাদা কি তোর শত্রূ?
নণ্টূকে কলেজ বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে গেল উশ্রী। বিয়ের পর এই দায়িত্ব নিজে যেচে নিয়েছে। উশ্রীর ইচ্ছে চাকরি করার, উমানাথ আপত্তি করেনি। কোনো কলেজে যদি চাকরি হয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খুশবন্ত কাউর খবর পেয়েছে তার একজন খবরি গ্রেপ্তার হয়েছে। ছিচকে পকেট্মার এলাকার খবরাখবর দিত। সোসাইটির উপর নজর রাখতে বলেছিল। কদিন পর মহালয়া, তার আগেই সন্দীপন প্রকাশিত হবে। পুজো সংখ্যায় রতির উপন্যাস থাকবে আগেই জানিয়েছিল বাদলবাবু। বিজ্ঞাপন যোগাড় করে দিয়েছে খুশবন্তকাউর। রতি নিয়মিত লিখছে, খুশবন্ত বাস্কেটে ফেলে দেওয়া বাতিল কাগজগুলো কুড়িয়ে পড়ে রতি জানেনা। একদিন একটা লেখায় নজর আটকে যায়। "স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছিল তখন এক জলপরী টেনে তুলে তাকে নব জীবন দেয়।" জলপরী কে, কার কথা বলছে তার কথা কি? সময় পেলে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করবে ভেবে রেখেছে। গুরু নানকের ছবিতে প্রণাম করে বেরিয়ে গেল খুশবন্ত কাউর।
রত্নাকর ঘরে বসে লিখছে। জানকি মাসী ঢুকে জিজ্ঞেস করল, সাহেব চা দেবো?
খুশীদির সঙ্গে একটু আগে চা খেয়েছে, তাহলে এখনই আবার চায়ের কথা বলছে কেন? মনে হয় মাসী তার সঙ্গে গল্প করতে চায়। রতি লেখা থেকে মুখ তুলে হেসে বলল, দাও। জানকি চা নিয়ে এসে টেবিলে রেখে মেঝেতে বসে পড়ল।
রত্নাকর চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল, মাসী কিছু বলবে?
জানকি ইতস্তত করে আঁচলের গিট খুলে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, একটু পড়ে দেবেন?
রত্নাকর দেখল ইংরেজিতে লেখা একটা চিঠি। অনেক ভুল থাকলেও বুঝতে অসুবিধে হয়না। নীচে স্বাক্ষর সুভদ্রা। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, সুভদ্রা কে?
আমার মেয়ে।
তোমার মেয়ে কতদুর লেখাপড়া করেছে?
বেশি না, এটা জামাই লিখে দিয়েছে। জানকি বলল।
ছোটো কয়েক লাইনের চিঠি, রত্নাকর পড়ে বলল, মাসী ভাল খবর। তোমার মেয়ে মা হতে চলেছে, তোমাকে পুজোয় যেতে লিখেছে, সবাই ভাল আছে।
জানকি চুপ করে কোন ভাবনায় ডুবে যায়। রত্নাকর ভাবে মাসীর কি মন খারাপ হয়ে গেল? তুমি খুশি হওনি?
খুশি হবনা কেন, ম্যাডমরে বলি ছুটি নিতে হবে, যাতায়াতের খরচ পুজোয় তো খালি হাতে যাওয়া যায়না। আপনি বসেন আমি আসিছি।
জানকি মাসী চলে যাবার পর রত্নাকর লিখতে বসে কিন্তু লেখা এগোয় না। মনটা পুরানো দিনে ঘোরাফেরা করে। কত মুখ মনে পড়ে, পাড়ায় এখন পুজোর ব্যস্ততা। কল্পনায় দেখতে পায় দল বেধে চাদা তুলতে বেরোচ্ছে সবাই। চ্যারিটিকে কেন্দ্র করে পাড়া আরো সংগঠিত। কেউ কি তার কথা ভাবছে? নাকি আর পাচটা ঘটনার মত হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে। বিয়ের পর উমাদা কি আগের মত সময় দেয়? ফ্লাট অনেকটা হয়েছিল দেখে এসেছে এখন কি অবস্থা কে জানে। সরদার পাড়ায় সে থাকেনা বাবুয়া এতদিনে নিশ্চয় জেনে গেছে। দাদাও জানবে, খোজাখুজি করছেনা তো? দাদা বরাবর এমন ছিল না, এখন রাতারাতি কেমন বদলে গেছে। খুশীদির সঙ্গে দেখা না হলে এতদিনে কোন অন্ধকারে তলিয়ে যেত ভেবে শিউরে ওঠে। নতুন জীবনের আস্বাদ পেয়েছে কিন্তু ভয় হয় কতদিন স্থায়ী হবে? এবারের শারদীয়ায় তার লেখা বেরোবে, পারমিতা বা সোমলতার হাতে পড়তেও পারে। বেলাবৌদির ম্যাগাজিন কেনার অভ্যাস আছে, তার নাম দেখে ভাববে একী সেই রত্নাকর? ম্লান হাসি ফোটে মুখে। খুশীদির আসার সময় হয়ে এসেছে, এখন আবার জানকি কোথায় গেল?
মনে হল জানকি এল। একটা প্লেটে দুটো রসগোল্লা সাজিয়ে জানকি এসে বলল, সাহেব মিষ্টিমুখ করেন।
এসব আনতে গেলে কেন?
এতবড় একটা খপর দেলেন। জানকির শরীর থেকে যেন উচ্ছ্বাস চুইয়ে পড়ছে।
সোসাইটীতে উপাসনা মন্দিরে সাজসজ্জা সম্পুর্ন। প্রদীপ জ্বলছে চন্দন ধুপের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। একে একে লোকজন আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন খবর আম্মাজীর মনকে আলোড়িত করলেও বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়না। শান্ত সমাহিত স্মিত হাসিতে ভরা মুখ। চারতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে কয়েকজন মহিলা বসে আছে। এক একজনের এক একরকম উপসর্গ ইলাজ করাতে এসেছে। অফিসের দায়িত্বে রাগিনী। কিছু কিছু খবর তার কানে এসেছে। রঞ্জাও খোজ করছিল আনন্দ এখানে আসে কিনা? ব্রহ্মানন্দ মেঘানন্দ সিদ্ধানন্দ এসে গেছে, সবাই এরা পুরানো। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এদের আনা হয়েছে, এখানে তাদের নতুন নামকরণ করা হয়। সবার নামের শেষে আনন্দ, আনন্দ বিতরন করাই এদের কাজ। বয়স সবারই চল্লিশের নীচে তার বেশি হলে চলে যেতে হয়।
ব্রহ্মানন্দকে তিন নম্বরে এবং সিদ্ধানন্দকে পাঁচ নম্বরে যেতে বলল রাগিনী। ব্রহ্মানন্দ পেশেণ্টের ইতিহাস দেখে বিরূপ। বয়স পঞ্চাশের উপর, কিন্তু এ ব্যাপারে তার মতামতের গুরুত্ব নেই। আম্মাজী মনিটরে চোখ লাগিয়ে দেখছেন। তিন নম্বরের ভ্যাজাইনা বেরিয়ে এসে ঝুলছে। খাটে ভর দিয়ে পাছা উচু করে রয়েছে। ব্রহ্মানন্দ নিজের লিঙ্গটা নাড়িয়ে মহিলার মুখের কাছে ধরতে ঘুরে বসে চুষতে শুরু করল। ব্রহ্মানন্দ মহিলার চুলের মুঠি চেপে ধরে নিজের দিকে চাপ দিচ্ছে। ডান হাত দিয়ে গালে ঠাষ ঠাষ করে চাপড় দিচ্ছে। আম্মাজী পাঁচের দিকে দেখলেন সিদ্ধানন্দ মেয়েটার পা তুলে ধরেছে মেয়েটি কেদরে গেছে। সিদ্ধানন্দ ওই অবস্থায় ঢূকিয়ে ঠাপাতে শুরু করেছে। আম্মাজী চমকে ওঠেন, কারা ঢুকল ঘরে? এরা তো সোসাইটির কেউ বলে মনে হচ্ছেনা। সোসাইটিতে পুলিশ ঢুকেছে ছড়িয়ে পড়ে খবর। আম্মাজী মুহূর্তে কোথায় অদৃশ্য হলেন, কারো জানার উপায় নেই।
জানকির এই একটিমাত্র সন্তান, ভরত মিস্ত্রী মেয়ের বিয়ে দিয়ে গেছেন। কত বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে হয়েছে? সুভদ্রাকে দেখেনি রত্নাকর। জানতে ইচ্ছে হয় যখন বিয়ে হয় তার মনে কি বিয়ের বাসনা জেগেছিল নাকি বাপ-মায়ের বাধ্য সন্তান হিসেবে তাদের ইচ্ছে মেনে নিয়ে সম্মত হয়েছে? একটা মেয়ের মনে বিয়ের ইচ্ছে জন্মে কত বছর বয়সে? খুশীদিকে দেখে তো মনে হয়না তার মধ্যে বিয়ের জন্য ব্যাকুলতা আছে। সারাক্ষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চিন্তা। সামাজিক অবস্থান ভেদে বিয়ের ইচ্ছের বয়সের তারতম্য হয় কি? রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, মাসী তোমার মেয়ের বয়স কত হবে?
এককুড়ি পার হয়ে গেছে কবে।
এত অল্প বয়সে।
রত্নাকরের উদবেগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠল মাসী। হাসি থামিয়ে বলল, আপনে বুঝবেন না। বাচ্চা বিয়োনেতে যে কি সুখ মেয়ে হলে বুঝতেন।
নতুন কথা শেখা হল। সন্তান জন্ম দিয়ে মেয়েরা সুখ পায়। মনে হয় ম্যাডম এল। জানকি চলে গেল।
খুশবন্ত ঢুকল বেশ খুশি খুশি ভাব। হাতে একটা বই। ঘরে ঢুকে হাতের বইটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে চেঞ্জ করল। জানকি এক গেলাস সরবৎ নিয়ে উপস্থিত। খুশবন্ত হাত বাড়িয়ে গেলাসটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, সাহেব কি করছে?
লিখতেছে। জানকি বানিয়ে বলল।
ওকে পাঠিয়ে দাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি তুলে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছল। রত্নাকর দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, খুশীদি ডাকছো? খাটের উপর সন্দীপন পত্রিকাটা পড়ে থাকতে দেখে বলল, ছেপেছে?
ছাপবেনা মানে? ছাপা হয়েছে ছাপ্পা মারা হয়েছে। খুশবন্তের গলায় আত্মবিশ্বাস।
রত্নাকর বুঝতে পারেনা খুশীদির কথা। মোবাইল বাজতে টেবিল থেকে ফোন তুলে কানে লাগায়। খুশবন্তের চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে....এর মধ্যে আদালতে জামীন হয়ে গেল? .....ঠিক আছে ঠিক আছে সিসিটিভির ফুটেজ আছে অসুবিধে হবেনা. ..নানা আপনি কি করবেন...রাখছি?
খুসীদির মুখ থমথমে রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
খুশীদি মুখে হাসি টেনে যা বলল, আজ দুপুরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সোসাইটী থেকে কজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। আম্মাজীকে খুজে পায়নি। একটু আগে সবাই জামীনে মুক্ত হয়ে গেল।
রত্নাকর শুনে কোন কথা বলল না। খুশীদি বলল, তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে।
আমার মন খারাপ হবার কি আছে? তুমি যা ভাল বুঝেছো করেছো।
রতির কথায় খুশবন্ত বিরক্ত হয়। গলা চড়িয়ে বলল, জানকি খানা লাগাও।
হাসিখুশি খুশীদিকে গম্ভীর দেখতে ভাল লাগেনা। রত্নাকরের খারাপ লাগে। খুশীদি যা করেছে জীবনেও সে ঋণ শোধ করতে পারবেনা। খেতে বসে জিজ্ঞেস করল, খুশীদি তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
তুই কে? তোর উপর আমি কেন রাগ করব?
কেউ না? তাহলে তুমি আমার জন্য এত করছো কেন?
বাজে কথা থাক। খাওয়া হলে লেখাটা পড়। কোনো বদল করতে হলে করবি। বাদলদা বলল, ঘোষ এ্যাণ্ড বোস পাব্লিশার্স লেখাটা বই হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। ওরা আসবে টাকা পয়সার কথা যা বলার বলে ঠিক করে নিবি।
আমি কি বলব, তুমি যা বলার বলবে।
তোর ব্যাপার তুই যা ভাল বুঝবি বলবি।
রত্নাকর মনে মনে হাসে, খুশিদি তার কথা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এখন না মেজাজ শান্ত হোক পরে কথা বলা যাবে। খুশবন্ত খেয়ে উঠে পড়ল। ঘরে এসে ভাবছে ঘোষবাবুর কাছে সিসি টিভির ফুটেজ রয়েছে নষ্ট করে ফেললে তার হাতে কিছু থাকবেনা। আম্মাজী বেশ প্রভাবশালী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার কাছে খবর ছিল আম্মাজী সোসাইটিতে আছে কিন্তু কোথায় গা-ঢাকা দিল? তন্ন তন্ন খুজেও পাওয়া গেলনা। কোনো চোর কুঠরি আছে হয়তো। হতে পারে মহিলা হয়তো মুখোস পিছনে আছে আসল মুখ।
খুশীদি আসব? খুশবন্ত তাকিয়ে দেখল দরজায় রতি দাঁড়িয়ে।
রত্নাকর ঘরে ঢুকে বলল, একটু বসবো?
তোকে বললাম না, অদল বদল কিছু করার থাকলে কর। কয়েকদিনের মধ্যেই ওরা আসবে।
আমি একটা অন্য কথা বলতে এসেছি।
খুশবন্ত লুঙ্গি হাটূ পর্যন্ত তুলে খাটে আসন করে বসে বলল, বল কি বলবি?
গদার মত খুশীদির পা গুলো। রত্নাকর খাটে মুখোমুখি বসে শুরু করল, আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে সবই হয়তো আমাদের মনোপুত নয়। না ঘটলেই বুঝি ভাল হতো।
তুই কি আজকের ব্যাপারে বলছিস?
বিশ্বাস করো খুশীদি তোমার পরাজয় দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
জয়-পরাজয়ের কথা আসছে কেন?
সোসাইটিতে কি হয় তুমি কি ভাবছো কেউ জানেনা?
আমি মনে করি সোসাইটি একটা প্রস্টিট্যুট।
আমি কি অন্যকথা বলেছি?
তোর খুব দরদ দেখছি। রেইড করেছি সামাজিক স্বার্থে।
তাতে বন্ধ হয়ে যাবে তুমি মনে করো?
বন্ধ হল কি থাকল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই, অন্যায় বুঝেছি করেছি।
তোমার স্বার্থ আছে।
কি বললি? আমার স্বার্থ আছে? সেদিন তোকে রাগাবার জন্য বলেছিলাম, আমি সোসাইটিতে যাবো।
আজ তুমিই রেগে যাচ্ছো।
রতি এবার কিন্তু ঠাষ করে একটা চড় মারব।
রত্নাকর হেসে বলল, তা তুমি পারো। আমাকে শেষ করতে দাও। সোসাইটির শেকড় অনেক গভীরে তা তুমি আমার থেকে ভাল জানো। দুই-একজনকে গ্রেপ্তার করে কিছুই করতে পারবে না তাও তুমি জানো না তা নয়। তাহলে তুমি কেন করছো? নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য আকাঙ্খ্যা তোমার মনে। কড়া অফিসার সৎ অফিসার শুনতে তোমার ভাল লাগে। গীতায় আছে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন, দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ ধন্নজয়। বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ। ।
মতলব?
কাম্য কর্ম নিষ্কাম কর্ম অপেক্ষা নিতান্ত নিকৃষ্ট। অতএব কামনাশূণ্য হয়ে সমত্ব বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ কর। ফলাকাঙ্খী হয়ে যারা কাজ করে তারা অতি হীন।
খুশবন্ত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে রত্নাকরের দিকে। এক সময়ে হেসে ফেলে বলল, রতি কি বই বললি, বইটা আমাকে দিস তো, পড়বো।
খুশীদি এইজন্য তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে। জানার ইচ্ছে জীবনের লক্ষণ। যে মুহূর্তে এই ইচ্ছে লুপ্ত হয় মানুষ তখন বেচে থেকেও মৃত।
খুশবন্তের মনের সমস্ত গ্লানি যেন স্বেদবিন্দুর মত শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। রত্নাকর খাট থেকে ম্যাগাজিনটা তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
খুশবন্ত অন্য মনস্কভাবে চিন্তা করে। ভাল কাজ করার অন্তরালে কি রয়েছে তার আত্মপ্রতিষ্ঠার উদগ্র আকাঙ্খ্যা? আপন মনে হাসল। যেখানে মেয়েদেরই প্রশ্রয় আছে সেখানে বেশ্যাবৃত্তি দূর করে সাধ্য কার। রতিকে যারা ফোন করছে তাদের সঙ্গে বেশ্যাদের ফ্যারাক কতটুকু? সব অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে বউ সব, কেউ তো তাদের বাধ্য করেনি। কল খুলে রেখে জল সেচে কি লাভ? আগে বন্ধ করতে হবে কল। ধরা পড়ার পরমুহূর্তে কিভাবে জামীন পেয়ে গেল?
[৫০]
বেলা পড়ে এসেছে একবার বেরোতে হবে। খুশবন্ত মনে মনে ভাবে রতি বছর চার-পাঁচ ছোট হবে বয়সে কিন্তু কথা বলে বিজ্ঞের মত। ওর সঙ্গে কথা বলে মনটা বেশ হালকা মনে হয়। রতির কথাটা মিথ্যে নয়, সত্যি হয়তো খ্যাতির জন্য একটু বেশি লালায়িত হয়ে পড়েছিল। আমিই ভাল আর সবাই খারাপ এই চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়। গুরু নানকের হাসি-হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করে বিশাল এই পৃথিবী, তুলনায় মানুষ অতি ক্ষুদ্রজীব। রতিকে এখন বাইরে বেরোতে দেওয়া যাবে না।
জানকি চা নিয়ে ঢুকল। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে, সাহেব কি করছে?
বই পড়তেছে। ডাকবো?
কি ভেবে বলল, না থাক। ফিরে এসে টিফিন করব।
অবস্থাটা সামলে নিতে হবে, এরা অত্যন্ত প্রভাবশালী সহজে ওকে ছেড়ে দেবে মনে হয়না। খুশবন্ত বেরিয়ে গেল। জানকি চা নিয়ে রত্নাকরের ঘরে যেতে জিজ্ঞেস করে, ম্যাডম বেরিয়ে গেল? কখন আসবে কিছু বলেছে?
বলল ফিরে এসে টিফিন করবে।
রত্নাকর বই থেকে মুখ তুলে হেসে বলল, তোমার ম্যাডম কেমন মানুষ?
মানুষ খারাপ না। তবে এক জায়গায় সুস্থির বসে থাকতে পারেনা। সবাই যদি আপনেরে যমের মত ভয় পায় আপনের ভাল লাগবে?
রত্নাকর অবাক হয়ে জানকিকে দেখে। লেখাপড়া জানেনা একজন সাধারন বিধবা কত সুন্দর একটা কথা বলল নিজেই জানেনা। রত্নাকর বলল, মাসী তুমি সুন্দর কথা বলো।
সুন্দর কথা বললি সে সুন্দর হয়না।
মানে?
সুন্দর মুখ সুন্দর কথা সব বাইরে ভিতরে যে কে ঘাপটি মেরে বসে আছে যতক্ষণ না বেরোচ্ছে বুঝবার উপায় নাই।
রত্নাকরের মনে হয় মাসী কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা বলল। রত্নাকর জানকিকে তাতিয়ে দেবার জন্য বলল, তোমার কথা শুনতে ভাল লাগে।
জানকি উৎসাহিত হয়ে বলল, এইযে আমারে দেখে আপনের কেমন মনে হয়?
ভাল মানুষ।
আমিও প্রেত্থম তাই ভেবেছিলাম। জানকি হাসল।
জানকি কি যেন ভাবছে লক্ষ্য করে রত্নাকর। সম্ভবত মনের দ্বিধা কাটিয়ে বলল, কদিন পর মেয়ের কাছে যাবো, আবার দেখা হবে কিনা জানিনা।
দেখা হবেনা কেন?
সব কি আমার উপর নিবভর করে, জগন্নাথের ইচ্ছে। বুকের মধ্যে চাপা একটা কথা আজ পর্যন্ত কাউরে বলিনি। আপনেরে বলে ময়লাটা বের করে দিতে চাই।
রত্নাকর বইটা পাশে সরিয়ে রাখে। জানকি কিছু ইঙ্গিতে কিছু শব্দে তার কাহিনী বলতে শুরু করল। সুভদ্রার বাবা মারা যাবার পর চোখের সামনে অন্ধকার নেমে এল। সেই সময় একজন মানুষ দেবদুতের মত পাশে এসে দাড়িয়েছিল। মানুষটা জানকির মুখ চেনা। ভরত বেচে থাকতে কয়েকবার এসেছিল বাড়ির কল সারাবার জন্য। প্লাম্বার হিসেবে ভরতের বেশ খ্যাতি ছিল মহল্লায়। লোকটি পাশে বসে সান্ত্বনা দিয়েছে। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে।
অসহায় জানকির মনে হয়েছিল যার কেউ নেই তার ভগবান আছে। শ্রাদ্ধ মিটে গেলেও লোকটি আসতো, আলুটা মুলোটা দিয়ে যেত, জানকি রান্না করত লোকটা পাশে বসে গল্প করতো। জানকি তাকে দাদা বলত। একদিন রান্না করতে করতে দেখল হাটু মুড়ে এমনভাবে বসেছে লুঙ্গির ফাক দিয়ে ল্যাওড়া বেরিয়ে আছে। জানকির মনে হল দাদার হয়তো খেয়াল নেই। মেয়ে মানুষের মন নজর ঘুরে ফিরে ল্যাওড়ার দিকে পড়ে। আপনে বলেন সোমত্ত বয়স মাথার ঠিক থাকে? মজা করে হাতে জল নিয়ে ল্যাওড়ার উপর ছিটিয়ে দিলাম যাতে বুঝতে পেরে ঢেকে বসে। ফল হল উলটো দাদা বলল, এই অসভ্য। আমার আঁচল টেনে ল্যাওড়াটা মুছতে লাগল। আমি আঁচলটা টেনে নিলাম। কি ইচ্ছে হল আঁচল নাকের নীচে ধরতে ঝাজালো গন্ধে শরীর কেমন করে উঠল।
তারপর?
তারপর আবার কি? ভিতরের আসল মানুষটা বেইরে এসে আমারে ঠেষে ধরে ঐটূক জায়গা তারই মধ্যে।
তুমি চিৎকার করতে পারতে?
কি বোঝলেন? ভিতরের মানুষটা বেরিয়ে এসে চিৎকার করতে দিলে তো? তবে মিথ্যে বলব না ঐ দাদাই এই বাংলোয় কাজ ঠিক করে দিয়েছে।
জানকির কাহিনী ধীরে ধীরে রত্নাকরের মাথায় ঢোকে। সেই লোকটি এবং জানকি দুজনের ভিতরের মানুষ সুযোগ পেয়ে বেরিয়ে এসেছিল। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, কবে যাবে?
অষ্টমী পার করে যাব ইচ্ছে আছে। এখন টীকিট পেলি হয়।
ম্যডম জানে?
আভাস দিয়েছি, টিকিট পেলি বলব। যাই টিফিন করিগে ম্যাডমের আসার সময় হয়ে গেল। কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে সাবধান করে গেল, আপনে এসব ম্যাডমরে বুলবেন না।
রত্নাকরের মাথায় নানা ভাবনা খেলা করে। নতুন লেখা শুরু করতে পারছেনা, খুশীদি বলে গেছে উপন্যাসটা পড়ে দেখতে। প্রয়োজনে যদি কিছু অদল বদল করতে হয়। জানকির কথা অনুযায়ী মেয়েরা একটা সময় অবধি বাধা দিতে পারে তারপর নিজেই ইনভল্ভড হয়ে বাধা দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
কেসের দিন পড়েছে ৯ তারিখ, ঐদিন মহাসপ্তমী। তারপর পুজোর ছুটি পড়ে যাবে আদালত বন্ধ। নিত্যানন্দ ঘোষ লোকটা মিনমিনে শয়তান। সিকদারই বা শয়তান কম কি? একটা অফিসারও তার সঙ্গে নেই। যারা অসৎ ঘুষখোর তারাই সমাজে সংখ্যা গরিষ্ঠ, এইকথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় খুশবন্ত কাউর। বাসায় ফেরার পথে নজরে পড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নতুন জামা কাপড় পরে ফূর্তিতে মেতে আছে। পবিত্র শিশু মনকে সমাজের কলুষ স্পর্শ করতে পারেনা। জীপ থামিয়ে একটা মণ্ডপে গিয়ে একটি বাচাকে কোলে নিয়ে আদর করে। পুলিশী ধড়াচূড়া দেখে শিশুটী অস্বস্তি বোধ করে। অবোধ শিশু বুঝতে পারেনা উর্দির আড়ালে প্রচ্ছন্ন এক মাতৃহৃদয়ের আকুলতা। উধম শিং পাশে দাঁড়িয়ে স্যারের কাজ দেখে মুচকি হাসছে। খুশবন্ত কাউর দূরে দাঁড়ানো বেলুনঅলাকে ডেকে মণ্ডপের সব বাচ্চাকে একটি করে বেলুন দিতে বলল। বেলুনের দাম মিটিয়ে জীপে উঠে বসল। জীপ স্টার্ট করতে মনে হল মোবাইল বাজছে। রাস্তার পাশে জীপ দাড় করিয়ে মোবাইল কানে দিয়ে বলল, হ্যালো?
রত্নাকর? আমি স্যাণ্ডি বলছি।
মহিলা সম্ভবত তার গলার আওয়াজ বুঝতে পারেনি। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে, এই নম্বর আপনি কোথায় পেলেন?
এটা রত্নাকরের নম্বর নয়? স্যরি।
রত্নাকরের নম্বর কিন্তু আপনি কোথায় পেলেন?
ওপারের মহিলা সম্ভবত ঘাবড়ে গিয়ে থাকবেন বললেন, না মানে উনি আমাকে একসময় পড়াতেন।
আপনি নম্বরটা কোথায় পেলেন বলেন নি।
সন্দীপন পত্রিকা দপ্তর থেকে আমাকে এই নম্বর দিয়েছে। তাহলে হয়তো ভুল হয়েছে।
না ভুল হয়নি। শুনুন আপনি ওর সঙ্গে কথা বলতে হলে এই নম্বরে আধ ঘণ্টা পরে ফোন করুন।
আচ্ছা ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
ব্যাপারটা জলের মত পরিষ্কার হয়, প্রথমে ভেবেছিল রতির কোনো ক্লায়েণ্ট। পরে বুঝতে পারে এটা তার নম্বর পত্রিকা দপ্তরে দিয়েছিল, ক্লায়েণ্ট জানবে কি করে? রতি মেয়েটিকে একসময় পড়াত ভেবে মনে মনে হাসে খুশবন্ত। অনেক ঘাটের জল খেতে খেতে রতি শেষে এই ডোবায় এসে পড়েছিল।
ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। কলকাতা এখন হাওয়ায় ভাসছে, দুর্গা পুজো বাঙালীদের বড় উৎসব। একসময় সেও দরজায় দরজায় ঘুরে চাদা তুলেছে। বিসর্জনের মিছিলে সামিল হয়ে নেচেছে। মেয়েরা তখন নাচতো না সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতো। বাপুর জিদে পাড়া ছাড়তে হল। কিন্তু সেও জিদ করে আইপিএস পরীক্ষায় বসেছে। নিয়োগ পত্র পেয়ে যখন মুসৌরীতে ট্রেনিং নিচ্ছে খবর পেল বাপুজী গুজর গয়া। রাতের ট্রেনে পাঞ্জাব, শেষ কৃত্য সেরে আবার মুসৌরী। অতীতের কথা ভেবে মনটা উদাস হয়। আম্মী বিয়ের কথা বলেছিল খুশবন্ত বলেছিল চাকরিতে থিতু হয়ে ভাববে। সেসব দিন কোথায় হারিয়ে গেছে। রতির সঙ্গে আবার দেখা হবে কখনো ভাবেনি। বাংলোর সামনে গাড়ী থামিয়ে নেমে পড়ল খুশবন্ত কাউর।
আপনি পুজোয় দেশে যান না?
ছট পুজাতে যাই। উধম সিং বলল।
আমার সঙ্গে থেকে আপনার খাটনি বেড়ে গেছে।
না স্যার এখন দেখছি আপনি জলদি বাসায় আসছেন। উধম শিং হেসে বলল।
উধম সিং-র কথায় খুশবন্তের খেয়াল হয় ঠিকই ইদানীং একটু তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে আসছে।
ঘরে ঢূকে চেঞ্জ করল। সোসাইটীর কেস নিয়ে এখন আর মাথা ব্যথা নেই। রতি ঠিক বলেছে সে একলা কি করতে পারে? অঞ্চলের লোকেরা একটা ম্যাস পিটিশন করতে পারতো। কই গাড় খুলে রাখলে দুসরা কই গাড় মারলে তাকে দোষ দিয়ে লাভ কি? শালা খিস্তি কি আপনি আপনি আসে?
জানকি জিজ্ঞেস করে, ম্যাডম টিফিন দিই?
সাহেব কই?
সাহেব সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে।
ওকে এখানে পাঠিয়ে টিফিন দিয়ে যাও।
রত্নাকর ম্যাগাজিন নিয়ে ঢুকল। খুশবন্ত ওকে দেখে জিজ্ঞেস করল, তোর পুজো দেখতে ইচ্ছে করেনা?
তুমি তো বেরোতে মানা করেছো।
ঠিক আছে অষ্টমীর দিন তোকে নিয়ে তোর যতীনদাস পাড়ায় যাবো।
সত্যিই? খুশীদি তোমাকে দেখলে সবাই অবাক হয়ে যাবে। রত্নাকর উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল।
জানকি টিফিন দিয়ে গেল। দুজনে টিফিন খেতে লাগল। রত্নাকর বলল, কতদিন আগে লিখেছি এখন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে যেন সব নতুন।
কোনো চেঞ্জ করার থাকলে।
কোনো চেঞ্জ করার দরকার নেই। চেঞ্জ করতে গেলে সবটাই বদলাতে ইচ্ছে হবে। তার চেয়ে নতুন উপন্যাস শুরু করব ভাবছি।
নব জীবন কেমন নাম হয়?
ঐ রকম কিছু ভাবছি। রত্নাকরের খটকা লাগে খুশীদি নব জীবন কেন বলল? জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তুমি নব জীবন কেন বললে?
মোবাইল বেজে উঠতে স্পীকার অন করে রতিকে দিয়ে বলল, কথা বল।
হ্যালো কে বলছেন?
রত্নাকর সোম?
হ্যা বলুন।
আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি স্যাণ্ডী।
রত্নাকর তাকিয়ে দেখল খুশিদি মুচকি হাসছে।
ওহ তুমি? স্যাণ্ডি তুমি এখন কি করো?
সেণ্ট জেভিয়ার্সে ইংলিশ অনার্স নিয়ে পড়ছি। তোমার লেখাটা আমি বার কয়েক পড়েছি।
কেমন লাগলো?
বলতে পারব না কিন্তু পুরানো কথাগুলো ভীষণভাবে মনে পড়ছিল। আচ্ছা তুমি কি বানিয়ে বানিয়ে লিখেছো?
এই পৃথিবীর মাটি নিয়ে তাকে মূর্তিরূপ দিয়েছি।
দারুণ বলেছো। আমারও তাই মনে হয়েছে বাস্তবের বাগানে ফুটে থাকা ফুল নিয়ে তুমি মালা গেথেছো।
তুমিও দারুণ বলেছো।
হি-হি-হি তোমার কাছে শেখা।
তোমার মা আণ্টি সব ভালো আছেন?
সবাই ভাল আছে। সোম তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
তোমার যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারো।
স্যাণ্ডিকে তুমি ভুলে যাওনি তো?
তোমার কাছে যেটুকু পেয়েছি সযত্নে রেখে দিয়েছি।
আচ্ছা এমন কোন কথা কি আছে যা আমাকে বলতে চেয়েছ কিন্তু বলতে পারনি?
অবশ্যই আছে। সব সময় সব কথা কি বলে ওঠা যায়?
কি কথা? নিঃসঙ্কোচে বলতে পারো।
সেসব হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে।
ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া যায়না। রত্নাকর বলল, কি হল স্যাণ্ডি?
কিছুনা। পরে তোমায় ফোন করতে পারি?
খুব আনন্দ পাবো।
রত্নাকর ফোন ফিরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, খুশীদি তুমি স্পীকার অন করেছিলে কেন? তুমি ভেবেছো সেইসবতাই না?
খুশবন্ত বলল, না। এটা আমার নম্বর, সেইসব এখানে আসবে না। একটু আগে এই মেয়েটী ফোন করেছিল, কেন যেন কৌতুহল হল। তুই রাগ করেছিস?
খুশীদি আমি চেষ্টা করেছি তবু তোমার উপর রাগ করতে পারিনা কেন বলতো?
চেষ্টা করে যা একদিন না একদিন পারবি। খুশবন্ত হাসতে হাসতে বলল।
খুশবন্ত গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করল, স্যাণ্ডিকে তুই ভালবাসিস?
খুশীদি তুমি নাসব সময় ইয়ার্কি ভাল লাগেনা।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[৫১]
মহাসপ্তমীর সকাল। আদালতে সোসাইটির কেস ওঠার কথা। বিষয়টা নিয়ে খুশবন্ত কাউর আগের মত আগ্রহী নয়। আসামী শাস্তি পেল কি মুক্তি পেল তাতে তার কি আসে যায়। রতি বলছিল কাজ করে যাও। রেজাল্ট নিয়ে ভাবার দরকার নেই। তবু চিন্তাটা নাকের ডগায় ঘুরে ফিরে আসছে। অনেক শুনেছে আম্মাজীর কথা, স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়নি। সেদিন কোথায় গায়েব হল, পেলে দেখিয়ে দিত দৈবী ক্ষমতারেণ্ডির বাচ্চা।
আম্মাজীর অপার ক্ষমতা সবাই জানে। তা হলেও সিদ্ধানন্দ ব্রহ্মানন্দ একটু নার্ভাস। আদালতে আজ তাদের কেস ওঠার কথা। মিথিলার কোনো চিন্তা নেই। অলৌকিক ক্ষমতাবলে আম্মাজী কিই না করতে পারে। আম্মাজী সহায় মানে ভগবান সহায়। সকাল সকাল স্নান সেরে আদালতে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়। খাস কামরায় ধ্যানস্থ সকাল থেকে আম্মাজী। বাচ্চাকে ফিরে পাবার আশা নেই বুঝতে পারছেন। এখন ভগবানের প্রতি তার অপরিসীম ক্ষোভ, দিয়ে কেন আবার ফিরিয়ে নিল। আউরতটা শিখ হলেও বহুকাল এই মুলুকে বসবাস করছে, আম্মাজী খবর নিয়েছে। নিমীলিত চোখের কোলে জল চিকচিক করে।
কাল মহাষ্টমী। দুর্গা পুজো নাহলেও এইদিনটি ঘটা করে পালিত হয় রিলিফ সোসাইটিতে। তার আয়োজন ঝাড়পোছ সাজসজ্জা চলছে রিলিফ সোসাইটিতে। প্রতিবারের মত এবারও ভিন রাজ্য হতে অতিথি সমাগম হবার কথা। কয়েকজন বিদেশী অতিথিও উপস্থিত থাকতে পারেন শোনা যাচ্ছে।
ঘুম ভাঙ্গলেও শেষরাতের আমেজ রত্নাকর চাদরে আপাদ মস্তক ঢেকে শুয়ে আছে রত্নাকর। জানকি ঘরে ঢুকে বাক্স ধরে টানতে রত্নাকর মুখের চাদর সরিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হল মাসী?
বাক্সটা ওইদিকি সরায়ে দিচ্ছি। জানকি থতমত খেয়ে বলল।
কি দরকার পায়ের কাছেই থাকনা।
ওঠেন। চা দিচ্ছি। জানকি চা আনতে গেল।
স্নান সারা, গুরু নানকের ছবির সামনে খুশবন্ত ধ্যানস্থ। মন দিয়ে নিজের কাজ করে যাও, ফলাফল বাইগুরুর হাতে। আম্মীর মুখটা মনে পড়ল। একসময় উঠে আসন তুলে রাখল খুশবন্ত। জানকি চা দিয়ে গেল।
সাহেব কি করছে? খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল।
ডেকে দিচ্ছি। জানকি চলে গেল।
রত্নাকর চায়ের কাপ নিয়ে ঢুকতে দেখল, খুশীদি ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে, হাতের ইশারায় বসতে বলল। মর্নিং...না যেমন আছে ...দশ? কিন্তু রয়ালটি কম হয়ে যাচ্ছেনা? ...পরের এডিশন হলে বাড়াবে? ....চেক আমার নামে হলে ভাল হয়...ও সই করে দেবে... থ্যাঙ্ক ইউ রাখছি...শুভ সপ্তমী।
ফোন রেখে রতির তাকিয়ে হাসল, কার ফোন বলতো?
রত্নাকর হাসল, খুশীদিকে বেশ সুন্দর দেখতে লাগছে। মনে শান্তি থাকলে মানুষকে সুন্দর লাগে।
বাদল বোস ফোন করেছিল। দশ হাজার দেবে তার উপর রয়াল্টি। এবার তোর নামে একটা ব্যাঙ্ক এ্যাকাউণ্ট খুলতে হবে। চেক দিতে আসলে সই করে নিয়ে নিবি।
খুশীদি নতুন উপন্যাস শুরু করেছি, নাম দেবো "নবজন্ম।"
খুশবন্ত উদাস হয়ে কি যেন ভাবে। আচমকা প্রশ্ন করল, স্যাণ্ডি কি বাঙালী?
রত্নাকর হেসে বলল, হ্যা বাঙালী। ওর বাবার নাম সুনীল গুপ্ত।
সুনীল গুপ্ত? নামটা শোনা-শোনা লাগছে। কোথায় থাকে?
সল্ট লেক।
সমজ গেয়া। ওর সিস্টার ইন ল সোসাইটির সঙ্গে কানেকশন আছে।
রত্নাকর বুঝতে পারে রঞ্জার কথা বলছে, খুশীদিকে সেকথা চেপে গিয়ে বলল, সোসাইটিতে অনেক অভিজাত ফ্যসামিলির লোকজন যায়।
সোসাইটি উপরে তোর বহুৎ দরদ? খুশবন্ত মজা করে বলল।
রত্নাকর কোনো উত্তর দিলনা। খুশবন্ত বলল, গুসসা হল?
রত্নাকর চোখ তুলে তাকাল, চোখের পাতা ভিজে বলল, তুমি দু-তিন বছরের বড়।
চার-পাঁচ বছর।
তুমি যা করেছো আমার মায়ের মত।
সাদি হলনা মা বানিয়ে দিলি?
ভালো চাকরি করছো, এবার সাদি করো।
খুশবন্তকে উদাস মনে হয়, অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, লেড়কা ঠিক হয়ে গেছে। পাঞ্জাবে ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস। তোর পাড়ায় মঞ্জিত আছে, ওর কেমন রিলেটিভ।
ট্রান্সপোর্টের বিজিনেস? রত্নাকর অবাক হয়ে বলল।
খুশবন্ত হেসে ফেলল, বহুৎ মালদার লোক, তোর খুশীদির মত কয়েকটাকে কিনে নিতে পারে। তোর পছন্দ নয়?
আমার পছন্দে কি এসে যায়? তোমার ইচ্ছেটাই আসল।
খুশবন্তকে বিষণ্ণ মনে হল বলল, সব কি আমার ইচ্ছেতে হবে?
তোমার আম্মীকে বলে দাও।
ধুর বোকা। আমি ভাবছি আজকের মামলার কথা। এই শালা আম্মাজী বহুৎ জাহাঁবাজ আউরত আছে। ওয়াই গুরুর ইচ্ছে।
আদালত চত্বরে ভীড় বাড়তে থাকে ক্রমশ। পুজোর আগে আজ শেষ দিন। ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পুলিশের জীপ। একটা এ্যাম্বাসাডোরে এসেছে মিথিলা সিদ্ধানন্দ ব্রহ্মানন্দ। মামলা ঊঠতে উঠতে বেলা গড়িয়ে গেল। মিথিলার উকিল দাঁড়িয়ে বলল, মে লার্ড আমরা এখনো চার্জশিট পাইনি। আইও পরেশবাবু আমতা আমতা করে। জজ সাহেব বিরক্ত হয়ে পুজোর পর শুনানির দিন ধার্য করে দিলেন। ব্রহ্মানন্দ সিদ্ধানন্দ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কাঠগড়া থেকে নেমে গেল। নিত্যানন্দ ঘোষ শেষ মুহূর্তে জীপ থেকে নেমে যখন আদালতে পৌছালো তখন অন্য মামলার শুনানি শুরু হয়ে গেছে। পরেশবাবুর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানল ওসি সাহেব। এস আই পরেশবাবুকে জীপে উঠতে বলে জিজ্ঞেস করল, স্যার এসেছিলেন?
এসপি সাহেব?
তাছাড়া আবার কে স্যার? মুচকি হেসে বলল নিত্যানন্দ।
না ওনাকে দেখিনি।
আর দেখতে হবেনা। ঐযে বলেনা পীপিলিকার পাখা ওঠে, শালা আম্মাজীর সঙ্গে টক্কর।
ড্রাইভারকে বলল, চালা।
খুশবন্ত চিঠি পাবার পর ডিআইজি আইজি স্বরাষ্ট্র সচিব সবার কাছেই ছুটোছুটি করেছে। স্যার আমার এখানে একবছরও হয়নি যুক্তি দেখিয়েছে। সবার এককথা আমার হাতে নেই। কার হাতে তাও কেউ খোলসা করে বলল না। একে একে সব অফিস বন্ধ হতে শুরু করে, জীপে বসে খুশবন্ত পকেট থেকে চিঠিটা খুলে আরেকবার দেখল, দার্জিলিং।
রাত হয়েছে, এত রাত হবার কথা নয়। খুশীদি আসছেনা দেখে রত্নাকর অপেক্ষা করতে করতে টিফিন খেয়ে নিল। জানকি বলল, ম্যাডম ঐরকম। এই মাসখানেক একটু তাড়াতাড়ি ফিরছিল।
আদালতে আজ সোসাইটির মামলা ওঠার কথা। এত রাত অবধি আদালত খোলা থাকার কথা নয়। কি হতে পারে খুশীদির কিছু অনুমান করতে পারেনা। রাগ হয় খুশীদির স্বেচ্ছাচারিতার জন্য। মাথার উপর কেউ বলার নেই একা একা যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে।
সপ্তমী পুজোর আরতি শুরু হয়েছে। উশ্রীর কি রকম বোন ছন্দা এসেছে দিদির বাড়ী বেড়াতে। মণ্ডপে ভীড়, বঙ্কা ঢাক বাজাচ্ছে। নজর ছন্দার দিকে। মঞ্জিত ঢাকের কাঠি কেড়ে নিয়ে বঙ্কাকে সরিয়ে বাজাতে শুরু করল। শুভ বলল এই হচ্ছে ঢাকের আওয়াজ, সাবু খেয়ে ঢাক বাজানো যায়। শুভর কথা গায়ে মাখেনা বঙ্কা। বেলাবৌদি উশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, কর্তা কই?
সে তো আমার থেকে আপনার ভাল জানার কথা। উশ্রী হেসে বলল।
বেলাবৌদি সম্পাদিকা হলেও উমানাথকে সবদিক সামলাতে হয়। বেলাবৌদি কালকের পুজো নিয়ে চিন্তিত, একশো আটটা পদ্ম দরকার। সোমলতা আসতে পারমিতার মনে পড়ল রতির কথা। কোথায় উধাও হল কে জানে। ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে উল্টোপাল্টা ভাবতে পারে। রতির সঙ্গে সোমলতার কি সত্যিই কিছু ছিল? দেবযানী আণ্টির গা-ঘেষে দাঁড়িয়ে রোজি। উল্টো দিকে শুভ দাঁড়িয়ে, কদিন পরেই তো বিয়ে। তবু কেমন দেখছে যেন আশ মেটেনা। আরতি শেষ হতে সুদীপ ধুনুচি নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচতে শুরু করে। তনিমার সঙ্গে কেটে যাবার পর সুদীপকে এখন সঞ্জনার সঙ্গে দেখা যায়। তনিমার নিরুদ্দেশ রহস্যময় রয়ে গেল। কেউ বলছে ফেল করে পালিয়েছে আবার কারো ধারণা কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। রাত বাড়তে থাকে, উমানাথকে দেখে বেলাবৌদি জিজ্ঞেস করল, পেয়েছো?
এইমাত্র জগন্নাথ ঘাট থেকে পদ্ম নিয়ে ফিরলাম। কি অবস্থা হিমেশ জানে।
যাক বাবা শান্তি। বেলাবৌদি বলল।
রত্নাকরের মনে শান্তি নেই। খুশীদি বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে, বেরিয়ে খোজ খবর করবে তার উপায় নেই। সেই সকালে লাঞ্চ করে বেরিয়েছে, এতরাত হল কোথায় যেতে পারে? হঠাৎ একটা কথা মনে হতে চমকে উঠল। আম্মাজী কিছু করেনি তো? শুনেছে এরা বাণ-ফান মারতে পারে। কান্না পেয়ে যায়।
জানকি বলল, সাহেব আপনি বেকার বেকার চিন্তা করছেন, ম্যাডম ঐরকম। টেবিলে খাবার দিয়েছি খেয়ে নেন।
রত্নাকরের ইচ্ছে হল ঠাষ করে এক চড় কষিয়ে দেয়। টেবিলে দুটো প্লেট সাজানো। সেদিকে তাকিয়ে চোখ ছাপিয়ে জল চলে আসে। খুশীদিকে বহাল তবিয়তে আবার দেখতে পাবে তো? আম্মাজী অলৌকিক ক্ষমতার অধীকারী, কিইনা করতে পারে?
বাইরে জীপের আওয়াজ হতে সজাগ হয়। খুশবন্তর বিধ্বস্ত চেহারা ঢূকে রতিকে দেখে বলল, তুই খেয়ে নে। রাতে আমি খাবোনা। খুশবন্ত নিজের ঘরে ঢুকে গেল।
রত্নাকরের যেন ধড়ে প্রান এল, কোন কথা বলার সাহস হয়না। টেবিলে বসে কিছু খেল কিছু খেলনা। খুশীদির কি হয়েছে না জানা অবধি শান্তি পাচ্ছেনা।
সিকদারবাবু থানাতেই মালের বোতল নিয়ে বসে আছে। আজ নাইট ডিউটী। কাল সোসাইটিতে নেমন্তন্ন। মিথিলার দিকে অনেক দিনের নজর, আম্মাজীকে বলে যদি ব্যবস্থা হয় মাগীটাকে জম্মের শোধ চুদবে। যখন গাড় দুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় প্যাণ্টের ভেতর বাড়াটাও দুলতে থাকে তালে তালে। আনন্দকে না পেয়ে আম্মাজী তার উপর খচে আছে। এসপি মাগীটা বিদায় হলে ঐ বোকাচোদাকে খুজে বের করতে অসুবিধে হবেনা। এর আগে অনেকে ভেগেছে কিন্তু এই ছেলেটার বেলায় আম্মাজী কেন এত মরীয়া হয়ে উঠল বুঝতে পারেনা। সাধু সন্তদের ব্যাপারই আলাদা। কখন কার উপর কৃপা হয় কে বলতে পারে। ফোন বেজে উঠতে রিসিভার কানে লাগায়।
ঘোষবাবু? প্লেনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি বলুন।
আর দাদা বলবেন না হা-হা-হা।
দাত না কেলিয়ে কি হয়েছে বলবেন তো? সিকদার খিচিয়ে ওঠে।
মনে হচ্ছে মাল পেটে পড়েচে? হা-হা-হা।
এইবার ফোন রেখে দেবো।
না না অমন কম্মটি করবেন না তাহলে রসের কথা হতে বঞ্চিত হবেন।
মনে হচ্ছে রস একেবারে উথলে উঠছে?
চিঠি পাবার পর একবার যদি সুন্দরীর মুখটা দেখতেন হা-হা-হা।
কাউর ম্যাডাম?
মাদী না মদ্দা প্যাণ্টুল খুলে দেখতে ইচ্ছে হয়। হা-হা-হা।
সিকদার ফোন রেখে দিল। চোখের সামনে খুশবন্ত কাউরের মুখটা ভেসে ঊঠল। অত্যন্ত সৎ অফিসার তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দীর্ঘ চাকরি জীবনে অভিজ্ঞতা তো কম হলনা। একটাই দোষ ভদ্রমহিলা কল্পনার জগতে বাস করছেন। নিত্যানন্দ ক্যালাচ্ছে অথচ এই নিত্যানন্দকে যখন অন্যায়ভাবে কুল্পিতে বদলি করেছিল এই মিস কাউরই সেটা রদ করেছিলেন বলেই কলকাতায় বসে দাত ক্যালাতে পারছে। আম্মাজী মহিয়ষী মহিলা ধর্মকর্ম নিয়ে থাকেন সিকদারবাবুর তার বিরুদ্ধে কিছু বলার নেই কিন্তু সেখানে ইলাজের নামে যা হয় তাকি খুব ভাল কাজ? মিস কাউর তাহলে বদলি হয়ে গেলেন?
আম্মাজী মনিটরে চোখ লাগিয়ে দেখছেন, কিভাবে বাড়া বেরিয়ে আবার গুদের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চারটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। কদিন ধরে একটা অন্য চিন্তা মাথায় এসেছিল কিন্তু তার আগেই সব ওলোট পালোট হয়ে গেল। চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন।
ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে। খুশবন্ত উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কাদছে কিনা দেখে বোঝা যায় না। দূর থেকে মাইকে গান ভেসে আসছে।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[৫২]
রত্নাকর ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আসেনা। অন্ধকারে পা-টিপে টিপে খুশীদির দরজা ঠেলতে খুলে গেল। ডিম লাইটের আলোয় দেখল খুশীদি আগোছালোভাবে শুয়ে আছে। দরজা ভেজিয়ে ভিতরে ঢুকল। লুঙ্গি উঠে গেছে হাটুর উপর, টেনে নীচে নামিয়ে দিল। নীচু হয়ে দেখল চোখের পাতা বন্ধ। হাতের তালু কপালে রাখে, খপ করে হাত চেপে ধরে খুশবন্ত পাশ ফিরে চোখ মেলে হাসল। ভক করে নাকে গন্ধ এসে লাগে।
তুমি নেশা করেছো?
খুশবন্ত কোনো উত্তর না দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে। হারামীতে ছেয়ে গেছে দুনিয়া, একটা লোক খুজে পেলনা পাশে দাড়াবার মত। কত সিপাই সান্ত্রী তবু তার মধ্যে নিজেকে বড় একা মনে হয়। একবার মনে হয় চাকরি-বাকরি ছেড়ে দেশে গিয়ে আম্মীর কোলে শুয়ে পড়ে। বেজম্মা ঘোষ কেমন নিরীহভাব করে দাড়িয়েছিল, স্পষ্ট বুঝতে পারছিল মনে মনে খুব হাসছিল। অথচ ওই বোকাচোদার জন্য ডিআইজিকে বলে সেই বদলি আটকেছিল। রতিটা বড় সরল কেমন বলদের মত দাঁড়িয়ে আছে। খুশীদির চিন্তায় ওর ঘুম হচ্ছেনা।
বিছানার একপাশে বসে খুশীদির চুলে হাত বোলায় রত্নাকর। খুশবন্তের ভাল লাগে, চন্দ্রতালু হতে কি এক ভাললাগা অনুভুতি সারা শরীরে চারিয়ে যাচ্ছে।
খুশীদি তোমার কি হয়েছে?
তার কি হয়েছে রতিকে কি বলবে? খুশবন্ত বলল, আমার খুব কষ্ট হচ্ছেরে।
কোথায় কষ্ট আমাকে বলো। ম্যাসাজ করলে ভাল লাগবে।
খুশবন্ত ভাবে বোকা ছেলে ওকে কি করে বোঝাবে তার বুকের মধ্যে কি যন্ত্রণা হচ্ছে। কয়েকটা লম্পট জানোয়ার তাকে নিয়ে মাজাক করেছে। সব শুয়োরের বাচ্চা একদিকে। তার পাশে কেউ নেই, সে বড় একা। তার নিষ্ঠা সততার কোনো মূল্য দিলনা হারামীর বাচ্চারা। ওয়াইগুরুর কি বিচার!
তোমার খাবার নিয়ে আসব? তুমি তো কিছু খাওনি।
খেতে ইচ্ছে করছে না, তুই এসেছিস ভাল লাগছে।
ঠিক আছে তুমি ঘুমাও, আমি পাশে বসে আছি।
রত্নাকর লক্ষ্য করে খুশীদি চোখ মেলছেনা, মনে হয় আলো সহ্য করতে পারছেনা। জিজ্ঞেস করল, আলো নিভিয়ে দেবো?
না থাক। তুই ঘুমোবি না?
আমার অভ্যেস আছে তুমি ঘুমাও। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
চুলের মধ্যে আঙুল সঞ্চালিত করতে থাকে খুশবন্তের শরীর জুড়িয়ে যায়। রত্নাকর নিজের মনে বলতে থাকে, এবার তুমি একটা বিয়ে করো। শরীর খারাপ-টারাপ হলে দেখাশুনার জন্যও একজন লোক দরকার। ঐ যে ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা না কি তোমার মা ঠিক করে রেখেছে তুমি বললে, ওনাকে খবর দাও। খুশবন্ত শুনতে শুনতে মনে মনে হাসে, কে শুনছে ওর কথা তবু বকে যাচ্ছে। রতি বলে, একা একা কারই বা ভাল লাগে। তোমাকেও বলি এইসব মারদাঙ্গা কাজ মেয়েদের পোষায়। কলেজ কলেজে পড়ানো এক তা না যত চোর ডাকাতের পিছনে দিনরাত ছুটে বেড়াও। খুশবন্ত ভাবে খুশীদির চিন্তায় ওর ঘুম আসছে না, বকেই চলেছে। জানো খুশীদি বিয়ে করলে আজ কেউ না থাকুক অন্তত একজন। খুশীবন্ত পালটি খেয়ে রতির হাত সরিয়ে চোখ মেলে তাকায়, মুখের দিকে অপলক চেয়ে থাকে। রত্নাকর অস্বস্তিতে অন্যদিকে মুখ ফেরায়। খুশবন্ত বলল, তুই আনন্দ করজ মানে বিয়ে করবি?
আবার ইয়ার্কি? এরকম করলে আমি কিন্তু চলে যাবো।
খুশবন্ত হাতে ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে, রত্নাকর পিঠের নীচে হাত দিয়ে খুশীদিকে সোজা হতে সাহায্য করে।
ইয়ার্কি কিরে? তুই আমার ইয়ার্কির পাত্র?
না তা নয়, দেখো বিয়েটা ছেলেখেলা নয়।
সে তোকে শেখাতে হবেনা। ছেলে খেলা নয় আমি জানি। শোন রতি তোকে আজ একটা কথা বলি। যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমার। ভেবেছিলাম একটা কথা হয়তো কোনোদিন বলা হবে না, আজ বলছি। প্রথম যেদিন নীরেনদার যোগ ক্লাসে গেছিলাম, দেখলাম খালি গায়ে চোখ বুজে একটা ছেলে গভীর ধ্যান মগ্ন। চারপাশে কোনকিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। আমার মনে হয়েছিল যেন এক দেবশিশু বসে আছে। ভগবান যেন আমারই জন্য একে গড়েছে, ভালবেসে ফেললাম। ছেলেটা কে তখন না জানলেও পরে জেনেছিলাম আমাদেরই পাড়ায় থাকে তার নাম রত্নাকর সোম।
তাই-ই? কোনোদিন বলোনি তো? রত্নাকর হাসল।
বলিনি ভয়ে।
ওঃ বাব্বা তুমি আমাকে ভয় পাও? রত্নাকর ফিক করে হাসল।
আমি শিখ তুই বাঙালী তার উপর বয়সে চার-পাঁচ বছরের ছোটো, যদি প্রত্যাখ্যাত হই? এই আশঙ্কায় বলা হয়ে ওঠেনি। আমি তোকে ভালবাসি বিশ্বাস কর। তুই আমাকে ভালবাসিস না সত্যি করে বলতো?
খুশীদি আমি তোমাকে কত ভালবাসি কি করে বোঝাবো কিন্তু, কিন্তু।
কিন্তু কি?
মানে সেটা এইরকম ভালবাসা কিনা বুঝতে পারি না।
আমার জন্য না খেয়ে বসেছিলি কেন? এতরাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তুই কেন জেগে বসে আছিস? আমার জন্য কাউকে কিছু করতে হবেনা। যা ভাগ এখান থেকে-।
ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি কি বলেছি বিয়ে করব না?
তাহলে বল, মেনো তেরে না প্যার ওয়া।
তার মানে?
আমি তোমাকে ভালবাসি।
ঠিক আছে মেনো তেরে না প্যার ওয়া কিন্তু খুশিদি সেই ট্রান্সপোর্টের।
থাপ্পড় খাবি? সে তার পছন্দমত মেয়ে খুজে নেবে। আমার নিজের একটা পছন্দ আছে না? তুই উঠে ড্রয়ারটা খোল।
রত্নাকর উঠে টেনে ড্রয়ার খুলল।
এবার কোনের দিকে হাত ঢুকিয়ে বালাজোড়া বের কর।
রত্নাকর বালা নিয়ে আসতে খুশবন্ত বলল, আমার ডানদিকে বোস।
রত্নাকর ডানদিকে গা ঘেষে বসতে খুশবন্ত হাত বাড়িয়ে বলল, মনে মনে ওয়াইগুরুর নাম করে পরিয়ে দে।
রত্নাকর বাচ্চা ছেলের মত কেদে ফেলল। খুশবন্তের খটকা লাগে সে কি জোর করছে? জিজ্ঞেস করে কাদছিস কেন?
খুশীদি মায়ের কথা মনে পড়ে গেল। তুমি জানোনা মার কাছে শিখ খ্রীষ্টান কিছু না শুধু তার ছেলের সুখের জন্য মা সব পারতো। আজ থাকলে কি খুশী যে হত।
খুশবন্ত রতিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, আণ্টি নেই তো কি হয়েছে আমি আছি না? বোকা ছেলে, ওয়াইগুরুর নাম করে দে পরিয়ে দে।
রত্নাকর হাতটা নিয়ে বালা পরাতে থাকে। রতির মাথায় গাল ঘষতে লাগল।
রত্নাকর বিরক্ত হয়ে বলল, এরকম করলে পরানো যায়?
আচ্ছা ঠিক আছে আর করব না, তুই পরা।
বালাজোড়া পরাবার পর দু-হাত চোখের সামনে তুলে ধরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে ভাবে খুশবন্ত, আমি কি বন্দী হয়ে গেলাম?
খুশীদি একটা কথা বলবো?
এই খুশীদি, খুশীদি করবি নাতো? আপনা বিবিকে কেউ দিদি বলে?
অনেকদিনের অভ্যেস আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক আছে কি বলছিলি বল? খুশবন্ত ভাবে রতি এবার তার মর্দাঙ্গী দেখাবে। নিজেকে সমর্পণের জন্য প্রস্তুত করে।
না মানে আমি বেকার, তুমি যদি একটা চাকরি।
একদম ওসব বলবি না। তুই চাকরি করলে তোর বিবিকে দেখবে কে, পাড়ার লোক? তুই লিখবি শুধু লিখবি, একদিন সবাই আমাকে বলবে লেখকের বউ, খুশবন্ত সোম কাউর। আমায় একটু আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছেনা তোর?
লজ্জায় রাঙা হয়ে রত্নাকর বলল, বিয়ের আগে?
খুশবন্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যে রতি নির্বিচারে যৌন সংসর্গে নিঃসঙ্কোচ অথচ তার খুশীদির ক্ষেত্রে এত দ্বিধা, এই অদ্ভুত নীতিবোধ খুশবন্তকে বিস্মিত করে। আরেকবার উপলব্ধি করল তার ভুল হয়নি। রতির প্রতি আকর্ষণ আরো তীব্রতর হয়। খুশবন্ত ওর মাথা টেনে নিয়ে ঠোটজোড়া মুখে নিয়ে চুষতে থাকে। রত্নাকর ঠোট ছাড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, খুশীদি এখন তোমার মনে কোনো কষ্ট নেইতো?
আবার খুশীদি?
ভুল হয়ে গেছে খুশী।
দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আয়।
রত্নাকর খাট থেকে নেমে দরজা বন্ধ করে হাসতে হাসতে বলল, স্বামীকে কেউ তুই-তোকারি করে? অবশ্য এখনো আমাদের বিয়ে হয়নি।
কে বলল বিয়ে হয়নি? তুমি বালা পরিয়ে দাওনি? দার্জিলিং গিয়ে রেজিস্ট্রি করব।
কেন দার্জিলিং কেন?
সব বলব কাছে এসে বোসো।
রত্নাকর খাটে গিয়ে বসতে খুশবন্ত কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। রত্নাকর তর্জনী দিয়ে খুশির কপালে নাকে গালে বোলাতে থাকে। খুশবন্ত বলল, আমাকে এখান থেকে বদলি করে দিয়েছে দার্জিলিং।
আমি জানতাম এরকম কিছু হবে। শুনেছি আম্মাজীর নাকি মন্ত্রী-সান্ত্রী অনেকের সঙ্গে জানাশোনা। তুমি না থাকলে আমার যে কি হতো।
আমি তো হেরে গেলাম রতি।
এরকম বলে না সোনা। নাক টেনে দিয়ে বলল, এভাবে হারজিতের বিচার হয়না।
কি আছে রতির কথায় কে জানে কিন্তু শুনলে মনে এক উৎসাহ সৃষ্টি হয়। খুশবন্ত বলল, তুমি বলেছিলে ম্যাসাজ করার কথা।
তুমি উপুড় হয়ে শোও।
খুশবন্ত উপুড় হয়ে রতির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। জামাটা খুলে পাশে সরিয়ে রেখে দু-হাতে পিঠের মাংস চেপে চেপে ম্যাসাজ করতে লাগল। কোমরের দু-পাশে চাপ দিতে সুখে সারা শরীর শিউরে উঠল। পাল্টি খেয়ে চিত হতে রতি দেখল বুকের উপর ছোট লেবুর মত একজোড়া স্তন।
কি দেখছো?
তোমার স্তনগুলো খুব ছোট। কারো কারো এত বড় হয় হাত দিয়ে পুরোটা ধরা যায়না।
খুশবন্ত বুঝতে পারে অভিজ্ঞতার কথা বলছে। তার ভালোবাসা দিয়ে সব মালিন্য ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবে। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা তোমার কি মনে হয়, আম্মাজীর কাছে আমি হেরে গেছি?
উফস তুমি কিছুতেই ভুলতে পারছো না ওই মহিলার কথা। তোমার প্রতিদ্বন্দ্বি হবার কি যোগ্যতা আছে ঐ কামূকী মহিলার?
কামু্কী?
তা নয়তো কি? অবস্থার সুযোগ নিয়ে মন্ত্র-ফন্ত্র করে আমাকে দিয়ে কিইনা করিয়েছে কিন্তু আমার মনটাকে কি বশীভুত করতে পেরেছে?
রত্নাকর দু আঙুলে খুশীর স্তন বৃন্তে শুরশুরি দিতে দিতে বলল, তোমাকে একটা ঘটনা বলি, শিখগুরু তেগ বাহাদুরের কথা।
খুশবন্ত অবাক হয় রতি কোন ঘটনার কথা শোনাবে? স্তনে শুরশুরি দিতে পিঠ উচু হয়ে যায়, খুশবন্ত বলল, এরকম করলে কি করে শুনব?
রত্নাকর বোটা ছেড়ে দিয়ে শুরু করল, একবার ঔরংজেব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য তেগবাহাদুরকে চাপ দিতে লাগল। তিনি সম্মত হলেন না। বাদশাহের নির্দেশে তার শিরশ্ছেদ করা হল। ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা হয়ে গেল। তার গলায় ঝুলছিল একটি কাগজ, কি লেখা ছিল তাতে জানো?
কি লেখা ছিল?
"শির দিয়া সার না দিয়া।" গায়ের জোরে বাইরেটা হাতে পাবে কিন্তু তার মন?
খুশবন্ত নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা রতির স্পর্শ পাবার জন্য তার প্রতিটি অঙ্গ যেন আকুল, প্রতিটী রোমকুপ হতে নির্গত হচ্ছে উষ্ণ বাষ্প। লুঙ্গি টেনে খুলে ফেলল। তলপেটের নীচে উরুসন্ধিতে মৌচাকের মত এক থোকা বাল। খুশীর মাথা কোল থেকে নামিয়ে রত্নাকর বলল, ইস জঙ্গল হয়ে আছে, দাড়াও সাফা করে দিচ্ছি।
না সাফা করতে হবেনা।
করতে হবে এখুনি সাফা করব।
খুশবন্ত বলল, ব্যাস মর্দাঙ্গি শুরু হয়ে গেল?
রত্নাকরের মুখ ম্লান হয়ে যায় বলে, ঠিক আছে তোমার উপর আমি জবরদস্তি করব না।
খুশবন্ত হেসে বলল, ঠিক আছে, ড্রয়ার থেকে কাচি এনে ছেটে দাও।
রত্নাকর কাচি এনে বালের নীচে বা-হাত রেখে ধীরে ধীরে বাল ছাটতে লাগল। তারপর ফু-দিয়ে পরিস্কার করে বলল, দেখোতো কি সুন্দর লাগছে। নীচু হয়ে চুমু খেলো।
ঈষৎ ফোলা ত্রিভুজাকৃতি এক কোনে চেরা, দুই পাড় পরস্পর চেপে আছে। একেবারে বাচ্চাদের মত।
রতির লুঙ্গি ধরে টান দিল খুশবন্ত, তারপর সবলে জড়িয়ে ধরল। যেন সাপের শঙ্খ লেগেছে। সারা বিছানায় গড়াগড়ি দিতে লাগল। তলপেটে রতির বাড়ার খোচা লাগে। খুশবন্ত বাড়াটা ধরে নিজের যৌনাঙ্গে প্রবিষ্ট করার চেষ্টা করে। রত্নাকর খুশীকে উপুড় করার চেষ্টা করতে খুশবন্ত বলল, না না তুমি আমার বুকে উঠে করো। মুখ না দেখলে সুখ হয়না।
অগত্যা খুশীকে চিত করে পাছার কাছে বসে রত্নাকর খুশীর পা-দুটো বুকের দিকে ঠেলে ল্যাওড়াটা চেরার কাছে নিয়ে মুণ্ডিটা ঠেলতে "ওয়াইগুরু" বলে কাতরে উঠল খুশবন্ত। রত্নাকর থমকে যায় ভাবে কি করবে? খুশবন্ত রতির বগলের তলা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে পিঠ ধরে নিজের দিকে টানতে লাগল। রত্নাকর ইঙ্গিত বুঝে জোরে ঠাপ দিল। দাতে দাত চেপে ঠোট প্রসারিত করে আম্মি-ই-ই-ই-ই বলে ককিয়ে উঠল। খুশবন্ত ঘেমে গেছে, রত্নাকর বিছানার চাদর দিয়ে মুখটা মুছে দিল। খুশীর মুখে আবার হাসি ফুটল। রতি ঠাপাতে লাগল।
খুশবন্তের মুখে কথা নেই অনুভব করে শরীরের মধ্যে দীর্ঘ ল্যাওড়ার আনাগোনা। গুদের দেওয়াল ঘেষে যখন ঢুকছে মনে হচ্ছে যেন সুখ সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আবার মনে হল সে ভুল করেনি। চোখাচুখি হতে খুশবন্ত মৃদু হাসল। রতি নীচু হয়ে ঠোটে চুমু খেল। খুশীর রস ক্ষরণের ফলে পচ-পচাৎ শব্দ হতে থাকে। এই শব্দ রতিকে আরো উত্তেজিত করে। ঠাপের গতি বাড়িয়ে দিল। খুশবন্তের চোখমুখের ভঙ্গী দেখে অনুমান করা কঠিন তা কষ্ট না সুখের প্রকাশ। প্রায় মিনিট কুড়ি পর রত্নাকরের উষ্ণ ঘন বীর্যে খুশীর যৌণাঙ্গ পুর্ণ করে দিল। খুশী দুহাতে জড়িয়ে ধরে রতিকে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর খুশবন্তের বুকে উষ্ণ শ্বাসের স্পর্শে বুঝতে পারে রতি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। পাছে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাই আলতো করে রতিকে পাশে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমে ডুবে যায়। রাত তখন প্রায় শেষ হতে চলেছে।
মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। হাত বাড়িয়ে মোবাইল কানে দিয়ে উঠে বসল খুশবন্ত।
পাশে ঘুমে অচৈতন্য রতি। তলপেটের নীচে নেতিয়ে আছে দীর্ঘ ল্যাওড়া। খুশবন্ত চাদর টেনে ঢেকে দিয়ে খাট থেকে নেমে বলল, হ্যালো?
কনগ্রাটস মিস কাউর। ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠ ভেসে এল।
কে বলছেন?
আন্না পিল্লাই, আম্মাজী। কোথায় পোস্টিং হল?
খুশবন্তের চোয়াল শক্ত হয়। শ্লেষের স্বরে বলল, আপনার অসীম ক্ষমতা, জানেন না কোথায় পোস্টিং হল?
বাট ইউ ওন দা গোল্ড।
মানে?
আমার বাচ্চাকে গ্র্যাব করে নিলে।
খুশবন্ত ঘুমন্ত রতির দিকে তাকালো। মাদার চোদ হোর আমার বাচ্চা? বুঝতে পারে মাগী রতির প্রেমে পড়েছিল। খুশবন্তের মুখে হাসি ফোটে বলে, আপনার হাত অনেক লম্বা।
হি-হি-হি বাট ইট কাণ্ট ডু এগেইন্সট গড'স উইল। অল দা বেস্ট।
থ্যাঙ্ক ইউ। খুশবন্ত তৃপ্তি বোধ করে।
চটচট করছে দেখে খেয়াল রাতে ওয়াশ করা হয়নি। বাথরুমে গিয়ে ওয়াশ করে চোখে মুখে জল দিয়ে জানকির খোজ করে। ঘরে উকি দিয়ে দেখল জানকি নেই। এত ভোরে গেল কোথায়? গেটের কাছে যেতে একজন কন্সটেবল এগিয়ে এসে বলল, স্যার কিছু বলবেন?
কাজের মহিলা।
কিছুক্ষণ আগে চলে গেল। বলল দেশে যাচ্ছে।
জানকি চলে গেছে? যাবার কথা বলছিল কিন্তু আজই যাবে বলেনি তো? খুশবন্ত রান্না ঘরে গিয়ে চায়ের জল চাপায়। আজ তাহলে হোটেল থেকে খাবার আনতে হবে। আম্মাজী বলছিল গডস উইল। হয়তো হবে না হলে এতদিন পর রতিকে কেন ফিরে পাবে? হোটেল থেকে খাবার নয়, আজ স্বামীকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে। চা করে রতিকে ঘুম থেকে টেনে তুলে বলল, চা নেও।
রত্নাকর নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়, দ্রুত চাদরে নিজেকে ঢেকে চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল, বোসো।
বসলে হবেনা। জানকি নেই রান্না করতে হবে।
জানকি নেই মানে?
দেশে চলে গেছে।
তাহলে রান্না করবে কে? তুমি পারবে?
তাহলে তুমি করো। খুশবন্ত চলে গেল।
রত্নাকর লুঙ্গি পরে নিজের ঘরে গিয়ে অবাক। বাক্স হাট করে খোলা। হাতড়ে দেখল টাকা নেই। জানকি বলেছিল, সুন্দর কথা বললেই সুন্দর হয়না। ভিতরে অন্য মানুষ থাকে। রত্নাকরের মুখে হাসি ফোটে। অনৈতিকভাবে উপার্জিত টাকা গুলো নিয়ে অস্বস্তি ছিল একটা সদ্গতি হল। রান্না ঘরে গিয়ে বলল, খুশীদি জানো জানকি মনে হয় আমার টাকাগুলো নিয়ে গেছে। ভাগ্যিস বালাজোড়া তুমি সরিয়ে রেখেছিলে।
রত্নাকরের মুখ দেখে মনে হয় বুঝি কোনো খুশীর খবর দিতে এসেছে। খুশবন্ত বলল, আবার খুশীদি?
খুশী বলতে গেলেই দি এসে যায়, আমি কি ইচ্ছে করে বলি?
ঠিক আছে আমার মা আমাকে মুন্নি ডাকে, তুমি মুন্নি বলবে।
রত্নাকর খুব আনন্দ পায় দু-হাতে খুশবন্তের গাল চেপে বলতে থাকে মুন্নি-মুন্নি। খুশবন্ত অবাক হয়ে ভাবে একেবারে ছেলেমানুষ। অথচ এক এক সময় কত গভীর চিন্তা থেকে কথা বলে। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল, জানকি কত টাকা নিয়ে গেছে? ভেবেছে ওকে কেউ খুজে পাবেনা?
গেছে ভাল হয়েছে। মুন্নি ঐ টাকায় পাপ লেগে ছিল। এই জীবনে পাপের স্পর্শ দিতে চাইনা। তুমি বলেছিলে পাড়ায় নিয়ে যাবে। আজ অষ্টমী এইদিন আমাদের ভাত হতনা, মা লুচি ভাজত, গরম গরম ফুলকো লুচি।
খুশবন্ত অবাক হয়ে রতিকে দেখে জিজ্ঞেস করে, লুচি তোমার পছন্দ?
ধ্যেৎ। একদিন একরকম রোজ এক জিনিস ভাল লাগে?
যাও ঘরে গিয়ে বোসো। আমি টিফিন নিয়ে যাচ্ছি।
রত্নাকর চলে গেল। খুসবন্ত ভাবতে থাকে কাকে নিয়ে কাটাতে হবে জীবন।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[৫৩]
রতির যা বয়স তাকে ছেলে মানুষ বলা যায়না। বয়স হলেও বাচপনা যায়নি। খুশবন্ত ভাত রান্না করবে ভেবেছিল এখন ভাবছে চাপাটি করবে। আম্মি বিয়ের জন্য তাগাদা দিত, সবাই বিয়ে করে সেও করতো। কিন্তু বিয়ের চেয়ে নিজের কেরিয়ারের দিকেই ছিল তার বেশি নজর। রতিকে বিয়ে করে মনে হল একটা খেলার সাথী পাওয়া গেল। খেলখুদ তার খুব পছন্দ। ভেজিটেবল স্যাণ্ড উইচ করে এক ফ্লাক্স চা নিয়ে রতির কাছে গেল। ঘরে ঢুকে দেখল সকালের কাগজ নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছে। প্লেটে স্যাণ্ড উইচ এগিয়ে দিয়ে পাশে বসল। রতির মুখে লাজুক হাসি।
ভ্রু কুচকে তাকালো খুশবন্ত। রতি কাগজটা এগিয়ে দিয়ে একটা জায়গা দেখিয়ে দিল।
খুশবন্ত কাগজ নিয়ে এটা ওটা দেখতে দেখতে এক জায়গায় নজর আটকে যায়। শারদীয়া পত্রিকার পর্যালোচনা বেরিয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় কি কি লেখা আছে কোন লেখা উল্লেখযোগ্য ইত্যাদি। সন্দীপন পত্রিকা সম্পর্কে লিখেছে এক নতুন লেখকের কথা, রত্নাকর সোম। খুশবন্ত ভাল করে পড়ে। সম্ভাবনাময় লেখক, ....পাঠককে দর্পণের সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে....পত্রিকাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে ইত্যাদি। এতক্ষন এইসব মন দিয়ে পড়ছিল। খুশবন্ত ভাবে এইসব পড়ে রতির মনে যেন কোনোভাবে আত্মসন্তুষ্টির মনোভাব না জন্মায়। তা হলে ওর মনের ক্ষিধেটা নষ্ট হয়ে যাবে। খুশবন্ত কাগজটা অবজ্ঞাভরে সরিয়ে রাখল। লক্ষ্য করল রতির ভাল লাগেনি। স্যাণ্ডউইচ শেষ করে বলল, চা দাও।
ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে দিয়ে খুশবন্ত বলল, কোন পত্রিকা কি লিখলো তার চেয়ে বড় কথা পাঠক কিভাবে নিয়েছে।
এই সমালোচনা ফালতু?
আমি তাই বললাম? কেউ সফল হলে কার বেশি আনন্দ হবে?
রত্নাকর বুঝতে পারে না খুশীর কথা।
খুশবন্ত বলল, মায়ের চেয়ে বেশি আপন কেউ নেই।
রতির মন খারাপ হয়, মায়ের কথা মনে পড়ে। তাকে নিয়ে কত চিন্তা ছিল। খুশবন্ত বলল, আজ আণ্টি নেই। আজ সবচেয়ে কে খুশী হবে?
রতি হেসে বলল, মুন্নি।
লোকে পত্রিকা কেনে বিশেষ কোনো লেখক দেখে নয়। একটা পত্রিকায় অনেকের লেখা থাকে। কিন্তু বই কেনে বিশেষ লেখকের লেখা পড়ার জন্য।
থাক আর বলতে হবেনা, সমজ গিয়া। রতি বলল।
খিল খিল করে হেসে উঠল খুশবন্ত। হাসি থামলে রতি বলল, সকাল থেকে একটা কথা ভাবছি। আচ্ছা আমরা পাড়ায় যাবো এক সঙ্গে না আলাদা আলাদা?
আলাদা আলাদা কেন?
এক সঙ্গে গেলে ওরা যদি সন্দেহ করে? তুমি তো ওদের চেনো না?
কি সন্দেহ করবে? আমরা একসঙ্গে যাবো হাজব্যাণ্ড-ওয়াইফ।
হাজব্যাণ্ড-ওয়াইফ? রতির চোখ গোল হয়।
কেন আমাকে ওয়াইফ বলতে লজ্জা করছে?
ধ্যৎ তুমি আমার সোনা মনা। রতি আচমকা জড়িয়ে ধরল খুশবন্তকে। ওদের সামনে তোমাকে মুন্নি বলতে পারব না।
তোমার যা ইচ্ছে হয় তাই বলবে। যাই রান্না করিগে।
আর একটা কথা, তুমি ওখানে কি পরে যাবে?
তুমি বলো।
পুলিশের পোশাক পুজোর সময় ভাল লাগেনা, তুমি সালোয়ার কামিজ পরবে।
ঠিক আছে তাই পরবো। আর কিছু?
রতি বোকার মত হাসল। খুশবন্ত বলল, আমার অনেক কাজ পড়ে আছে, জানকি নেই।
আমি হেল্প করবো?
খুশবন্ত ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি নিজের কাজ করলেই খুশী হবো।
পুরোহিত মশাই পুজো শুরু করে দিয়েছে। পল্টু মাইকে ঘোষণা করছে সকাল সাড়ে-নটায় অঞ্জলি শুরু হবে। যারা অঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক মণ্ডপে চলে আসুন। বেলাবৌদি হন্তদন্ত হয়ে কাকে খুজছে। উশ্রীকে দেখে জিজ্ঞেস করল, উমা কোথায়?
মনীষাকে আসতে দেখে বলল, ঐ তো দিদি আসছে দিদি বলতে পারবে ওর খবর। উশ্রীর কথায় অভিমানের সুর।
বেলা চৌধূরি এগিয়ে গিয়ে মনীষাকে হাতে ধরা শারদীয়া পত্রিকাটা দেখালো। মনীষা এক পলক দেখে বলল, আমাদের রতি?
ও ছাড়া কে হবে? এমন অদ্ভুত নাম কটা আছে?
তুমি কি যে বলনা, রত্নাকর খারাপ কি? পড়েছো?
পড়েছি বলেই বলছি এ রতি ছাড়া কেউ নয়। কিছু কিছু চরিত্র হুবহু আমার চেনা।
তোমার হলে আমাকে দিও। দেখব কি লিখেছে।
সে না হয় দেব। আমি ভাবছি ছেলেটার কথা। পাড়ার কথা একেবারে ভুলে গেছে? আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো উমা ওকে কত ভালবাসতো?
মনীষা বলল, জানো বেলা রতি একদিন আমাকে বলেছিল বৌদি দূর থেকে দেখে কোনো কিছু ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। কি জানি কেন আসেনি।
শোনো মণীষা রতিকে আমি কম ভালবাসিনা। সেজন্যই রাগ হচ্ছে তোর একবার ইচ্ছে হলনা পাড়ায় কি হচ্ছে? লেখক হয়ে সব ভুলে যেতে হবে?
বঙ্কা চিৎকার করে, বৌদি আসুন অঞ্জলি শুরু হচ্ছে।
শুরু করে দে। আমরা পরেরবার দেবো। উমা থাকলে পাঠিয়ে দেতো। বেলা গলা চড়িয়ে বলল।
মণ্ডপে দাড়াবার জায়গা নেই। একদিকে মেয়েরা আরেক দিকে ছেলেরা দাঁড়িয়ে গেছে। শরদিন্দু ব্যানার্জিকে দেখে কমলেশবাবু ডাকলেন, আসুন ডাক্তার বাবু। সোমলতা মায়ের সঙ্গে মেয়েদের দিকে চলে গেল। পারমিতা আড়চোখে দেখে ভীড় থেকে বেরিয়ে গেল। পরেরবার দেবে এই ভীড়ে ভাল করে শুনতে পাওয়া যায়না। ভুলভাল মন্ত্র উচ্চারণ করে দেওয়ার থেকে অঞ্জলি না দেওয়াই ভাল।
শুভ চায়ের ভাড় হাতে নিয়ে মণ্ডপের দিকে আসছে, পিছনে দেবযানী আণ্টি সঙ্গে মেয়ে রোজি। হিমেশ মণ্ডপে দাঁড়িয়ে শুভকে দেখে বলল, কিরে চা খাচ্ছিস অঞ্জলি দিবি না?
তোরা দে আমার অত পুণ্যের দরকার নেই। শুভ বলল।
কেন অঞ্জলি দেবে না কেন? শুভ ঘাড় ঘুরিয়ে দেবযানী আণ্টিকে দেখে ভাড় ফেলে দিল। রোজি ফিক করে হেসে ফেলে। দেবযানী আণ্টি বলল, চা খেলে দোষ নেই তুমি হাত মুখ ধুয়ে এসো।
শুভ রোজির দিকে চোখ পাকিয়ে হাত ধুতে চলে গেল। বঙ্কা কোথা থেকে এসে বলল, কিরে শ্বাশুড়ি দাবড়ি দিয়েছে?
এবার তোকে থাবড়া দেবো।
পারমিতাকে বেরিয়ে আসতে দেখে সঞ্জনা জিজ্ঞেস করল, কিরে চলে এলি? অঞ্জলি দিবি না?
পরের বার দেব, এত ভীড়। ফাটুসটাকে দেখেছিস? বাপ মায়ের গুডি গাল।
সোমলতার কথা বলছিস? ওই জন্য বেরিয়ে এলি? সঞ্জনা জিজ্ঞেস করে।
কেন ওর জন্য কেন? পুজো কি ওর একার? এতদিন খেলিয়ে এখন এক ডাক্তারের সঙ্গে নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।
সুলতাকে আসতে দেখে সঞ্জনা বলল, ওই দেখ খবরি আসছে। দেখ কি নতুন খবর নিয়ে আসছে।
পাড়ার সব খবর সুলতার নখ দর্পনে অবশ্য তার অর্ধেকই ভুল খবর। বন্ধু মহলে সবাই ওকে বলে খবরি, অবশ্য প্রকাশ্যে নয়। সুলতার মুখকে সবাই ভয় পায়। সুলতা এসেই বলল, রাতে হেভি জমবে।
জমবে মানে?
হেভি নাচানাচি হবে। বাইরে থেকে একটা ছেলে আসছে হেভি নাচে।
তোকে কে বলল বঙ্কিম?
সঞ্জনা আমার সঙ্গে লাগতে আসিস না, সুলতা ভালর ভাল মন্দের মন্দ।
আচ্ছা পারু তুই বল, আমি খারাপ কিছু বলেছি?
তুই বঙ্কিমের কথা বলিস নি? একদম কথা ঘোরাবি না।
হ্যা তাতে হয়েছে কি?
দেখ সঞ্জনা সবাই ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না। তুই ওর কথা কেন বললি? আমি কি সুদীপের কথা বলেছি? পারু তুই বল তনু কেন সুদীপকে ফুটিয়ে দিল বলেছি?
মোটেই না ঐ তনুকে ফুটিয়ে দিয়েছে।
দূরে বঙ্কাকে দেখে পারমিতা বলল, এই মনে হয় তোকে ডাকছে।
ডাকুক, ডাকলেই যেতে হবে নাকি? সুলতা চলে গেল।
সুলতাকে দেখে বঙ্কা গলির দিকে হাটতে লাগল। সুলতা একবার পিছন ফিরে ওদের দেখে গলিতে ঢুকে গেল।
পারমিতা সঞ্জনা চোখাচুখি করে হাসল। বঙ্কা গলিতে ঢুকে কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
সুলতা এসে বলল, কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
ওদের সঙ্গে কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?
সুদীপের নতুন লাভারের কথা বলছো?
কে কার লাভার তোমার তাতে কি?
এইজন্য ডেকেছো? উষ্ণ গলায় বলল সুলতা।
কি মুস্কিল তোমার সঙ্গে দেখছি কথা বলাই যাবেনা।
কথা বোলনা। কে তোমায় মাথার দিব্যি দিয়েছে?
তুমি আমার সঙ্গে এরকম ব্যবহার করো কেন বলতো?
সুলতা ফিক করে হেসে বলল, একটু বাজিয়ে দেখলাম। কি বলছিলে বলো?
না কিছুনা।
সঞ্জনা খুব বাড় বেড়েছে। আমি বলে দিয়েছি তোমাকে নিয়ে বললে আমি ছাড়বো না।
আঃ কি হচ্ছে কি? পুজোপালির মধ্যে কি দরকার ঝামেলা করার?
ঝামেলা আমি করছি?
বঙ্কা অবস্থা সামাল দিতে বলল, মনে হচ্ছে অঞ্জলি শেষ হল।
এ্যাই আমি যাই। সকাল থেকে কিচ্ছু খাইনি, এই ব্যাচে নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে। কিছুটা গিয়ে পিছন ফিরে বলল, রাতে দেখা হবে?
সুলতার বঙ্কা নামটা পছন্দ নয়। এই নামের জন্য ওকে কেউ পাত্তা দেয়নি। সুদীপ শুভ কি সুন্দর নাম তা না বঙ্কিম। ও বলছিল বঙ্কিম চন্দ্র সাহিত্য সম্রাট। কিসে আর কিসে চাঁদে আর পাদে। আপন মনে হাসে সুলতা। তা হলেও বঙ্কিমকে ভাল লাগে সুলতার, বেশ মজার মজার কথা বলে। তনুর মত ও কোনোদিন ওকে দাগা দেবেনা। মাঝে মাঝে একটু খেলায়, যখন "কথা বলতে হবেনা" বলল ওর মুখের চেহারাটা দেখে খুব মজা লেগেছিল।
অঞ্জলি শেষ হয়ে আরেক দফা শুরু হতে চলেছে। এবারের ব্যাচে মেয়েরাই বেশি। দেবযানী আণ্টি আগেরবার দিতে পারেনি, এবার দেবে। শুভ ছেলেদের দিকে দাড়িয়ে, দেখে মনে হয় প্রতিমা সামনে নয় ওর বা-দিকে। বারবার ঘুরে বা-দিকে রোজিকে দেখছে।
রান্না শেষ করে খুশবন্ত স্নানে গেল। দরজা বন্ধ করে নিজেকে উলঙ্গ করল। গায়ে সাবান ঘষতে ঘষতে তলপেটের নীচে নজর যেতে রাতের কথা মনে পড়ল। রতি ছেটে দিয়েছে। একেবারে কামিয়ে দিতে চেয়েছিল খুশবন্তের ভাল লাগেনা। মনে হয় কেমন নেড়া-নেড়া।
ঝাট জায়গাটা মিস্টেরিয়াস করে। এটুকু থাকলে অসুবিধে কোথায়? ভিতরটা কেমন লাগছে। প্রথমবার বলেই হয়তো। আম্মিকে এখনই কিছু বলার দরকার নেই। রইয়ে সইয়ে বলতে হবে। রতির বইটা প্রকাশ হলে একটু নাম হবে তখন হয়তো অতটা আপত্তি করবে না। খাও-পিও জিন্দেগি তার ভাল লাগেনা। যাদের ভগবান অঢেল টাকা দিয়েছে তাদের দিল দেয়নি। পুলিশগিরি করতে করতে নারীত্ব হারিয়ে ফেলেছিল, রাতে পেয়েছে সেই নারীত্বের স্বাদ। এই সময় জানকি থাকলে ভাল হতো। ও আর ফিরবে মনে হয়না। রতির টাকা জানকিই নিয়েছে। ও যদি না নিত তাহলে নিজের বেতন না নিয়ে যাবে কেন? এতগুলো টাকা অথচ রতি কেমন নির্বিকার। এই জন্য ওকে ভাল লাগে।
খাবার টেবিলে রুটি দেখে রত্নাকর জিজ্ঞেস করল, এটা কি?
আলু কুলচা বলি আমরা। বক বক না করে খেয়ে দেখো ভাল না লাগলে খাওয়ার দরকার নেই। খুসবন্ত বলল।
সারাদিন খেটে সব বানিয়েছে আর ক্ষেপানো ঠিক হবেনা। রত্নাকর মুখ বুজে খেতে লাগল।
কুলচা না কি খেতে দারুন হয়েছে। এক সময় আদিবাসীদের খাবার খেয়েছে এবার তাকে পাঞ্জাবী খানায় অভ্যস্থ হতে হবে।
লেখা শুরু করেছো?
হুউম।
আমি আছি?
তোমাকে তো বাদ দিতে পারব না, তবে তুমি এখানে বাঙালী।
সে কি পুলিশে কাজ করে?
না। একটা এনজিও মানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। একটা সমস্যা ছিল, মিটে গেছে।
সমস্যা?
সেরকম কিছু না। আসল নাম নাদিয়ে নামের আদ্যক্ষর দিয়ে চরিত্রের নামকরণ করব।
খ-দিয়ে বাংলায় ভাল নাম পাচ্ছিলাম। তুমি মুন্নি বলতে ম-দিয়ে সুন্দর নাম দিয়েছি।
কি নাম?
রত্নাকর গভীর দৃষ্টি মেলে খুশবন্তকে দেখে। খুশবন্ত খাবারে মন দেয় জিজ্ঞেস করে, আর একটা রুটি দিই?
দেও। নাম দিয়েছি মেঘমায়া সেন। দুর দুরান্ত হতে অমৃত বয়ে এনে মা যেমন সন্তানকে।
মা যেমন সন্তানকে কথাটায় খুশবন্ত আরক্তিম হয় রুটি এগিয়ে দিয়ে বলল, আর বলতে হবেনা। চুপ করে খাও। শুরু করলে থামতে পারেনা।
শারদীয়া সন্দীপন-এ রতির লেখা বেরিয়েছে বিষয়টা পরিচিত মহলে ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। বেলা চৌধুরি ছাড়া কারো কাছে সন্দীপনের কপি নেই। মনীষা ঘোষ আগেই চেয়ে রেখেছে। দুপুরবেলা আরেকবার রতির উপন্যাসটা পড়া শুরু করল। সোমলতার সঙ্গে সুচির কিছুটা মিলছে মিল পেলেও দেবের সঙ্গে কাউকে মেলাতে পারে না। অথচ পড়তে পড়তে মনে হয় বিষয়টা ছোওয়া যায় কিন্তু ধরা যায়না। শরীরে কেমন অস্বস্তি হয়।
খুশবন্ত শুয়ে পড়েছে পাশে রতি শুয়ে শুয়ে বই পড়ে। দুপুরে ঘুমায় না রতি। একসময় পাশ ফিরে খুশবন্ত হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে পা-টা পেটের উপর তুলে দিল। লুঙ্গি উরু পর্যন্ত উঠে গেছে। আড়চোখে দেখল মুন্নি ঘুমোচ্ছে। রতি বইটা মাথার কাছে সরিয়ে রাখল। একবার ভাবল পা-টা ধরে নামিয়ে দেবে আবার মনে হল মুন্নির যদি এভাবে শুতে ভাল লাগে তাহলে থাক। পায়ের উপর হাত বোলায় রতি। পায়ের গুলিতে মৃদু চাপ দিল। পা-টা আরও চেপে বসে। মনে হয় মুন্নির ভাল লাগছে। রতি টিপতে টিপতে আরো উপরে উঠতে থাকে। উরুর নরম মাংসে চাপ দেয়। হাত দিয়ে আরো জোরে চেপে ধরল। রতির মজা লাগে। খুশবন্তের মুখ রতির গলার কাছে। উষ্ণ নিশ্বাস লাগছে গলায়। রতি দু-হাতে মুন্নির উরু টিপতে লাগল।
তন্দ্রা জড়িত গলায় মুন্নি বলল, কি করছো?
তুমি ঘুমোও নি?
এভাবে কি ঘুমানো যায়?
তোমার ভাল লাগছে না?
হু-হু-ম।
রতি উৎসাহিত হয়ে লুঙ্গি কোমরে তুলে আরো জোরে জোরে টিপতে লাগল। মুন্নি চিত হয়ে অন্য পা এগিয়ে দিল। রতি উঠে বসে দুটো পা ম্যাসাজ করতে থাকে। প্যাণ্টি ধরে নীচে টানতে একটা হাত এসে হাত চেপে ধরে বলল, ন-না এখন নয়।
চোখ বুজে থাকলেও হুশ আছে, হাত সরিয়ে নিয়ে রতি হাসল।
দুপুরের দিকে মণ্ডপ ফাকা হয়ে গেলেও বিকেল হতে আবার লোক জমতে থাকে। রাত যত বাড়ে আলোকসজ্জা তত স্পষ্ট হয়। এক পাশে চেয়ার নিয়ে উমানাথ তার দলবল নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে। মেয়েরা এবার দায়িত্ব নিলেও পরিশ্রম ওদের কমেনি বরং বেড়েছে। ঠাকুর আনা বাজার করা সবই ছেলেরা করেছে। তবে চাদা উঠেছে এবার বেশি। পল্টু বলল, কেন বেশি উঠেছে?
রতি থাকলে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিত। বঙ্কা কথাটা বলতেই সবাই হো-হো করে হেসে ওঠে। উমানাথ হাসিতে যোগ দেয়না।
হাসি থামলে শুভ বলল, যাই বলিস ও কিন্তু আমাদের থেকে আলাদা।
দূরে উশ্রীকে দেখে বঙ্কা হাক দেয়, বৌদি এদিকে।
আবার ওর পিছনে কেন? উমানাথ বলল।
আচ্ছা মানা করে দিচ্ছি। বঙ্কা বলল।
এবার কিন্তু গাড়ে লাথি দেব। উমানাথের কথা শুনে সবাই বঙ্কাকে দেখে। উমানাথ সাধারণত এভাবে কথা বলেনা।
উশ্রী আসতেই হিমেশ একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বলল, বসুন বৌদি।
বসতে বসতে উশ্রী বলল, আমি বসলে তোমাদের অসুবিধে হবে নাতো?
ইঙ্গিতটা উমানাথের দিকে। উমানাথ জিজ্ঞেস করল, তুমি একা, নণ্টূ কোথায়?
সাজগোজ করছে, দিদির সঙ্গে আসবে।
বলুন বৌদি, আমাদের পুজো কেমন লাগছে? শুভ জিজ্ঞেস করল।
পুজো সবার আমাদের-তোমাদের কি?
না মানে আগে তো অন্য পাড়ায় পুজো দেখেছেন।
পুজো একই, অঞ্চলের মানুষ পরিবেশানুযায়ী এক-একরকম মাত্রা পায়। উশ্রী বলল।
বঙ্কা পাশ থেকে বলে, আমাদের পাড়ার লোকজন কেমন?
ভাল তবে? উশ্রী ইতস্তত করে।
খারাপ কি? বঙ্কা জিজ্ঞেস করে।
খারাপ নয়। বাড়ী থেকে বেরোচ্ছি এক অদ্ভুত মানুষের সঙ্গে আলাপ হল।
কুঞ্জবাবু?
ভদ্রমহিলা নতুন ফ্লাটে এসেছেন, মিনিট দশেক কথা হল তার মধ্যে খালি প্রশ্ন, কি করি কোথায় থাকি কিভাবে বিয়ে হল।
ও হো রতির বৌদি, আল্পনা বৌদি। সুদীপ বলল।
আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব এই রতি কে? এ পাড়ায় থাকে না?
বঙ্কা আড়চোখে উমানাথকে দেখে। উমানাথ বলল, তোমার ওর সঙ্গে কথা বলতে যাবার কি দরকার হল?
বারে আমি কি কথা বলতে গেছি নাকি? ডাকলে কি শুনব না?
উনি রতির বৌদি। আগে এ পাড়ায় থাকতেন। রতিও থাকতো। ঠিক আছে? উমানাথ এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল।
বিয়ের দিন থেকে শুনে আসছি নামটা তাই। মেয়েদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়, কাল বেলাবৌদির সঙ্গে দিদি ওকে নিয়ে কথা বলছিল।
মেয়েদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেম হয়নি। বঙ্কা বলল।
খুব দাম্ভিক? উশ্রী জিজ্ঞেস করে।
উমানাথ বলল, ওর মত বিনয়ী ভদ্র ছেলে হয়না। আলাপ হলে বুঝতে পারতে।
আসলে কি জানেন বৌদি, মেয়েদের বাইরের সৌন্দর্যের চেয়ে অন্তরে দিকটা বুঝতে চায়। কোন মেয়ে ওর সঙ্গে প্রেম করবে বলুন?
ইণ্টারেস্টিং। আমার কৌতুহল বাড়িয়ে দিলে।
এখন আর ওকে পাবেন কোথায়? আগে সারাক্ষণ উমাদার সঙ্গে ঘুরঘুর করতো। এখন বেটা লেখক হয়েছে।
এই তোরা আর বিষয় পেলিনা? বঙ্কাকে থামিয়ে দিয়ে উমানাথ বিরক্তি প্রকাশ করে। তুই ব্যাণ্ডপার্টির সঙ্গে কথা বলেছিস?
এ্যাডভান্স হয়ে গেছে। বঙ্কিম নিজের দায়িত্ব ফেল করেনা।
চলি ভাই। মনে হচ্ছে আমার যাওয়া উচিত। উশ্রী উঠে পড়ল। বঙ্কা কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, উমাদা রতির উপর খচে আছে।
রাত হয়েছে, চা টিফিন খেয়ে বেরোবার জন্য প্রস্তুত। খুশবন্ত সালোয়ার কামিজ পরেছে। রত্নাকর লক্ষ্য করে মুন্নি কোমরে রিভলবার গুজছে।
আমরা কোথায় যাচ্ছি? রতি জিজ্ঞেস করল।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে রতি হেসে বলল, যেভাবে সাজগোজ করছো মনে হচ্ছে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি।
বাজে না বকে জীপে গিয়ে বোসো।
আজ অনেকদিন পর বাইরে বের হচ্ছে। রত্নাকরের মন খুশী-খুশী। বাংলোর বাইরে জীপ দাঁড়িয়ে আছে। রত্নাকর ধীর পায়ে এগোতে থাকে। এখানে আর কদিন, ওকে বদলি করে দিয়েছে। আচমকা দুটো লোক কোথা থেকে এসে দু-হাত ধরে টেনে তাকে একটা গাড়ীতে তোলার চেষ্টা করে। সম্বিত ফিরতে রত্নাকর বলল, এই-এই তোমরা কারা? একী হচ্ছে? মুন্নি, মুন্নি।
বোকাচোদা তোর মুন্নির। লোকদুটো হাত ছেড়ে দিয়ে দ্রুত গাড়ীতে উঠে পালিয়ে গেল। তাকিয়ে দেখল মুন্নি দাঁড়িয়ে হাতে রিভলবার। রত্নাকর বুঝতে পারে ওকে ফেলে কেন ওরা পালিয়ে গেল? এইরূপে খুশবন্তকে আগে দেখেনি। ড্রাইভারের সিটে বসে বলল, দাঁড়িয়ে কি দেখছো? উঠে এসো।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[৫৪]
ভারী অসভ্য তো লোকগুলো, দেখেছো ইস্ত্রি করা জামাটা কুচকে-টুচকে কি করে দিয়ে গেল। রত্নাকর টেনেটুনে জামার ভাজ ঠীক করতে থাকে। অনুমান করার চেষ্টা করে এরা কারা? তাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছিল।
কি হল, শুনতে পাচ্ছো না? খুশবন্ত ডাকল।
রতি জীপে উঠতে উঠতে বলল, দেখেছো আজ সবে বের করেছি জামাটা, কি অবস্থা করেছে জানোয়ারগুলো?
খুশবন্ত গাড়ীতে স্টার্ট দিয়ে বলল, আজ সবে বরটাকে বের করেছি কি অবস্থা হত তাই ভাবছি।
সব ব্যাপারে তোমার ঠাট্টা।
ধরে নিয়ে গেলে বুঝতে পারতে কেমন ঠাট্টা। জীপ টার্ণ নিল।
তোমার বডিগার্ডকে দেখলাম না?
সব উইথড্র করে নিয়েছে। উনি আমার পারশোন্যাল নয় এসপির বডিগার্ড ছিল।
এদিকে কোথায় যাচ্ছো?
ঠাকুর দেখতে।
পাড়ায় যাবে না?
চুপ করে বোস। এত বকবক করো কেন? আমি ভাবছি তুমি এত অমূল্য হলে কি করে? রেণ্ডিটা হাল ছাড়েনি?
সোসাইটিতে এত লোক সমাগমেও উপাসনা মন্দির একেবারে শান্ত। সবাই ধ্যানস্থ। অন্যান্য দিনের তুলনায় লোকজন অনেক বেশি। বিশেষ অতিথিদের জন্য তিনতলায় ব্যবস্থা। রুদ্ধদ্বার কক্ষে আম্মাজীর সঙ্গে কয়েকজন বৈঠকে বসেছে। একজন বয়স্ক পাকা চুল মাথায় টুপি আম্মাজীকে পাশে নিয়ে বসে, হাত আম্মাজীর উরুতে। মোবাইল বাজতে আম্মাজী ফোন তুলে এক্সকিউজ মী বলে কানে লাগালেন, কিচ্ছুক্ষন পর ওকে অল ট্র্যাসি বলে ফোন রেখে দিলেন। পাকাচুল জিজ্ঞেস করে, কৌন? আম্মাজী মুখ তুলে বললেন, বোগাস। পাকাচুল বলল, ফিকর মৎ করো আন্না, ম্যায় হু না। আম্মাজীর উরুতে করতলে চাপ দিলেন। পাকাচুলের মুখের দিকে তাকিয়ে আম্মাজী লাজুক হাসলেন।
স্থুলদেহী নাকের নীচে মোটা গোফ পাকাচুলের দিকে তাকিয়ে বলল, গেলহট সাব, এখুন আপনার মত শুনতে চাই।
মি.গেহলট শুরু করলেন, আম্মাজীর মত ভি হামারি মত। মনে রাখবেন মোহ আদমী লোগকো অন্ধা বানায়ে দেয়। উসিকো কুছ দিখাই নেহি দেতা। পথ চলতে দুশরেকো সাহারা লেনে পড়তা। ইস লিয়ে মোহ ছোড়ো তো সব কুছ ক্লিয়ার।
আম্মাজী শুনতে শুনতে ভাবছেন, উনি এসব কেন বলছেন? ইঙ্গিত মনে হচ্ছে তার দিকে? কেউ কি ওকে কিছু বলেছে? সোসাইটীতে ওর স্পাই আছে শুনেছেন। তিনি তো মোহ-টোহর ব্যাপারে কিছু বলেন নি। এখানে মোহর কথা আসছে কেন? সবার ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় আনন্দর ক্ষেত্রেও তাই নেওয়া হয়েছে।
পুজো শেষ করে পুরোহিত মশাই চলে গেছেন। বয়স্ক যারা ছিলেন তারাও একে একে বিদায় নিচ্ছেন। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটা দশটার ঘর পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। বঙ্কা লোকজন নিয়ে এক কোনে বোসে নারকেল ছোবড়া কাটছে। এক পাশে সারি সারি ধুনুচি সাজানো। সুদীপ খোচাচ্ছে হিমেশকে, কিরে তোর লোক কোথায়?
হিমেশ এদিক-ওদিক তাকায় ঝণ্টে শালার পাত্তা নেই। তাসাপার্টির সঙ্গে নাচতে দেখেছে হেভি নাচে। ধুনুচি নাচ কেমন নাচবে কে জানে। শালা মনে হচ্ছে ডোবাবে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপে লোক বাড়তে থাকে। খেয়ে দেয়ে একে একে সব আসে। মুন্মুন আণ্টি চেয়ার নিয়ে সামনে বসে আছে আগেভাগে। আসবার আগে জয়কে খুশি করতে হয়েছে। মেয়েটার জন্য ভালভাবে করার যো আছে। অবশ্য অল্প সময়ে ওর হয়ে যায় এই যা রক্ষা। লাইন ধারের মেয়েদের মধ্যে ললিতাও আছে। শুভ বলল, কিরে শুরু করে দে আর কত রাত করবি?
বঙ্কা জিজ্ঞেস করে, হিমেশ কোথায়?
দূর থেকে একটা জীপ আসছে দেখে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যায়, ঝণ্টে শালা এল মনে হয়। মণ্ডপের ভীড় চঞ্চল হয়। জীপ কিছুটা কাছে আসতে হিমেশের মনে হল পুলিশের জীপ। দ্রুত ভীড়ে সেধিয়ে গেল। পুলিশ কেন? উমানাথ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। শুভ গিয়ে বেলা চৌধুরিকে বলল, বৌদি বিজুদাকে খবর দিন।
বেলা চৌধুরী হাত তুলে আশ্বস্থ করে, আগে দেখি কি ব্যাপার?
কিছুটা দূরে জীপ দাড়ালো। সালোয়ার কামিজ পরা এক মহিলা নামলো জীপ হতে। তারপর মণ্ডপের দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। এতো পুলিশ মনে হচ্ছে না। বঙ্কা ভীড় থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে যায়। হিমেশ ভাবে ব্যাটার বেশি ওস্তাদী। সুলতা খচে গেছে কেউ যাচ্ছে না উনি সাহস দেখাচ্ছেন। হঠাৎ বঙ্কা পিছন ফিরে চেচিয়ে উঠল, খুশীদি।
স্তব্ধ ভীড় আন্দোলিত হল। শুভ এগিয়ে গিয়ে দেখল তাই তো খুশীদি। উমানাথ এগিয়ে যেতে খুশবন্ত হাত বাড়িয়ে দিল, উমানাথ হাত চেপে ধরে বলল, অনেকদিন পর। কেমন আছো?
আছি একরকম। পাড়ার কথা সব সময় মনে পড়ত, ভুলিনি। খুশবন্ত হেসে বলল।
উশ্রী অবাক হয়ে ভাবে ছেলেদের মত ছাটা চুল মহিলা কে? সোমলতাকে দেখে খুশবন্ত বলল, কেমন আছিস? ডাক্তারবাবুর কেমন আছেন?
ভাল, বাবা কিছুক্ষন আগে চলে গেল। তুমি কেমন আছো খুশীদি?
পারমিতা এগিয়ে এসে বলল, চিনতে পারছো?
পারোকে চিনব না? কি ঠিক বলেছি তো?
তুমি চুল এত ছোটো করেছো কেন?
আমার বরেরও পছন্দ নয়। দু-হাত কাধ পর্যন্ত তুলে বলল, এবার এতটা রাখবো।
ধ্যৎ তুমি সেই আগের মতই আছো।
সারি দিয়ে চেয়ারে বসা বেলা বৌদি মনীষাবৌদিদের দেখে বলল, আরে ভাবীলোগ সব এখানে বসে?
বর কি বলছিলে, সত্যি বিয়ে করেছো নাকি? বেলা চৌধুরী জিজ্ঞেস করে।
হি-হি-হি। বচপনের পেয়ার বিয়ে করে ফেললাম।
সকলে পরস্পর মুখ টিপে হাসে। খুশী সেই আগের মতই আছে।
জীপে বসে ঘামছে রত্নাকর। মুন্নি বলে গেছে যতক্ষন না ডাকবে জীপ থেকে যেন না নামে। রিভলভার হাতের তালুতে ঘামছে। মুন্নি বলেছে লক আছে, গুলি চলবে না। মুন্নিকে পেয়ে জীপের দিকে তাকাচ্ছে না কেউ।
খুশবন্ত মজা করতে ভালবাসে মনীষা জানে। কারো সঙ্গে প্রেমট্রেম ছিল বলে শোনেনি। যে মজা করতে ভালবাসে তার সঙ্গে মজা করে আনন্দ। মনীষা বলল, সরদারজীকে আনতে পারতে। মনীষা মুখ টিপে হাসে।
খুশবন্ত বলল, আপনাদের কি যেন বলে, ওগো? তারপর গলা তুলে জীপের দিকে তাকিয়ে বলল, ওগো মেহেরবানি করে একবার আসবে? তোমাকে আমার ভাবীলোক দেখতে চায়।
বুকের মধ্যে ছ্যৎ করে ওঠে, রত্নাকর কি করবে নামবে কি নামবেনা ইতস্তত করে। ইচ্ছে করছে নেমে উল্টোদিকে দৌড় লাগায়। ভীড়ের চোখ জীপের দিকে। মণীষার দিকে তাকিয়ে খুশবন্ত বলল, বহুৎ সরম। বঙ্কা জীপের দিকে যাচ্ছিল খুশবন্ত বলল, এই বঙ্কা মৎ যানা-যাস না।
অষ্টমী পুজোর রাত খুশীই জমিয়ে দিল। সত্যিই মেয়েটা খুব জলি। মনীষা মনে মনে ভাবে। চেহারায় আগের থেকে অনেক বেশি জেল্লা এসেছে।
সুদীপ বলল, খুশীদি পাড়ায় থাকলে হেভি জমতো। পিকনিকে যাবার সময় সারা পথ বাসে খুশীদির জন্য বোর হতে হতো না।
বেলা চৌধুরি বলল, শান্ত হয়ে বোসো খুশী। দরকার নেই তোমার বরের, তুমি এখন কোথায় থাকো?
কি বলছেন বৌদি? শান্ত হয়ে বসবো? তারপর গলা চড়িয়ে বলল, ওগো তুমি আসবে নাকি আমি যাবো? আমি গেলে নসিবে বহুৎ দুঃখ আছে।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল। মহিলাকে উশ্রীর বেশ লাগে। রত্নাকর ভাবল বসে থাকা সমীচীন হবেনা। মুন্নিকে বিশ্বাস নেই, গুণ্ডাগুলোর সঙ্গে যা করল। ধীরে ধীরে জিপ থেকে নামে। হাতে রিভলবার চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। পাড়ায় আসার জন্য যে উৎসাহ ছিল এখন মনে হচ্ছে না এলেই ভাল ছিল। পারমিতা অল্প আলোতেও চিনতে পারে। হাতে রিভলবার দেখে উমানাথ ভাবে রতি কি গুণ্ডাদলে ঢুকেছে? খুশী ওকে কোথায় পেল? খুশবন্তের মুখে কৌতুকের হাসি উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে মজা দেখছে। রতিকে চিনতে পেরে মনীষা বলল, এতো আমাদের রতি। তুমি যে বললে।
রত্নাকর ততক্ষণে মুন্নির কাছে দাড়িয়েছে। খুশবন্ত বলল, মনীষাবৌদি বিশ্বাস করছে না, আমাদের সাদি হয় নাই? রত্নাকর ঘাড় নাড়ে।
আমি তোমার বউ আছি কি না?
রত্নাকর আবার ঘাড় নাড়ে। পারমিতার চোখে জল এসে যায়। খুশবন্ত সবার দিকে তাকিয়ে বলল, কই শক?
রত্নাকর অস্বস্তিতে পড়ে যায়। বঙ্কা এসে জড়িয়ে ধরে বলল, কিরে রিভলবার নিয়ে ঘুরছিস? আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
এটা ওর। ও পুলিশের এসপি।
এই ও-ও কি করছো? তুমি আমাকে কি নামে ডাকো বলো।
রত্নাকরের মাথা গরম হয়ে যায় বলে, না বলবো না।
খুশবন্ত চোখ বড় করে মনীষাবোদিকে বলল, গোসসা হয়েছে। বহুৎ জিদ্দি।
বেলাবৌদি বিস্ময়ে হতবাক, খুশী কি সত্যিই রতির বউ?
একটা রিক্সায় দুটো ছেলে এসে নামতে হিমেশ বলল, এইতো এসে গেছে। এত দেরী করলি?
যুব সঙ্ঘ ক্লাবে ছিলাম। কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না, কিরে বটাই বল।
ওরা বলছিল হোলনাইট পোরগাম করবে। বটাই বলল।
ধুর বোকাচোদা প্রোগ্রাম। ঝণ্টূ বলল।
এ্যাই খিস্তি করবি না। হিমেশ থামাতে চেষ্টা করে।
স্যরি দোস্ত। খোচরের গাড়ী মনে হচ্ছে কি ব্যাপার কোনো ঝামেলা নেই তো?
না না খুশীদির গাড়ী।
ফিস ফাস আলোচনায় সবাই জেনে যায় খুশবন্ত আই পি এস অফিসার। উমানাথ একটু একা পেতে চাইছে রতিকে। সবাই এখন নাচ নিয়ে মেতে, খুশবন্তের ইচ্ছে সেও নাচে। বঙ্কা ছোবড়ায় আগুন দিয়ে ধুনো ছিটিয়ে দিল। ধোয়ার কুণ্ডলি পাকিয়ে ধুমায়িত মণ্ডপ। ঢাকীরা ঢাক নিয়ে তৈরী। ঝণ্টূ জামা খুলে ফেলেছে, পরণে স্যাণ্ডো গেঞ্জী হাফ প্যাণ্ট। মাথায় রুমালের ফেট্টী। এক নজর মেয়েদের উপর চোখ বুলিয়ে নিল। রতিকে ডেকে পাশে বসালো বেলা চৌধুরী। ব্যাপারটা খুশবন্তের নজর এড়ায় না। একটু সরে গিয়ে দাড়ালো, যাতে ওদের নজরে না পড়ে।
ঝণ্টূ নাচ শুরু করেছে বটাই মাঝে মাঝে ধুনোচিতে ধুনো ছিটিয়ে দিচ্ছে। বাস্তবিক ছেলেটি নাচছে ভালই। শরীরটাকে এমনভাবে বাকাচ্ছে যেন হাড়পাজড়া নেই। হিমেশ খুব খুশী সেই এনেছে ঝণ্টূকে। সবাই রুদ্ধশ্বাসে নাচ দেখছে।
বেলাবৌদি জিজ্ঞেস করে, তুই খুশীকে বিয়ে করেছিস?
কি করবো বলো, ও না থাকলে জীবনটা শেষ হয়ে যেতো।
তুই পারবি একটা পাঞ্জাবী মেয়েকে সামলাতে?
খুশবন্তের কান খাড়া, কি বলে রতি শোনার জন্য। রতি বলল, আমি না পারি ও আমাকে সামলাবে। একজন পারলেই হল।
খুশবন্তের ইচ্ছে হল আনন্দে হাততালি দিতে। উত্তরটা সম্ভবত বেলা চৌধুরির পছন্দ হয়নি। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল, এবারের সন্দীপনে তোর উপন্যাস ছাপা হয়েছে?
হ্যা তুমি পড়েছো? ওটা বই আকারে বের হবে।
ঝণ্টূকে ঘিরে অন্যরাও নাচছে বটাই তাদের সরিয়ে দিচ্ছে। কেননা ঝণ্টূর নাচতে অসুবিধে হয়। ঝণ্টূ ঘামে ভিজে গেছে, মেয়েদের দেখে তার একশো শতাংশ উজাড় করে দিচ্ছে। ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভাংড়া নাচের ভঙ্গীতে কোমর দোলাচ্ছে খুশবন্ত। বঙ্কা এসে ডাকে খুশীদি চলে এসো। খুশবন্ত আড়চোখে রতির দিকে তাকাতে ইশারায় নিষেধ করল রতি। বেলাবৌদি নজর এড়ায় না, মনে মনে ভাবে কদিন থাকে দেখব স্বামী আনুগত্য।
একসময় সোমলতা কাছে এসে বলল, অভিনন্দন।
রত্নাকর মুচকি হাসল। সোমলতা বলল, তোমাকে জামাইবাবু বলব না খুশীদিকে বৌদি বলব?
আমি ঘরের ছেলে ও পাঞ্জাবের মেয়ে।
সোমলতা খিলখিল করে হেসে উঠল। বেলাবৌদি জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা সুচি কে রে?
বিষয়টা নিয়ে কানাঘুষো সোমলতার কানেও এসেছে, প্রসঙ্গটা উঠতে সে স্থানত্যাগ করল।
সুচি মানে পবিত্র। একটা সুন্দর মেয়ে।
সুচি মানে জানতে চাইনি। বাস্তবের কেউ তো?
অবশ্যই। বাস্তব থেকেই নিয়েছি না হলে আমার সাধ্য কি?
হেয়ালি না করে বল কে সে?
রত্নাকর হাসল। বেলাবৌদি জিজ্ঞেস করল, হাসছিস যে?
বৌদি যেমন ধ্বনি পাশাপাশি সাজিয়ে একটা পদ কিম্বা সুর সাজিয়ে হয় একটা সঙ্গীত হয় তেমনি কিছু ভাবের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠে একটা চরিত্র।
তাহলে বলছিস সুচি আমাদের পাড়ার কেউ নয়?
তা কখন বললাম? সবার মধ্যে সুপ্তভাবে সুচি আছে। আমি সেগুলোকে চয়ন করে সুচিকে লোক সমক্ষে এনেছি।
আমার মধ্যে সুচি আছে?
নেই? তোমার কি মনে হয়?
কি জানি, আছে হয়তো। বেলাবৌদির মুখটা করুণ মনে হল।
বঙ্কা এসে বলল, তুই এখানেই বসে থাকবি? উমাদা তোকে ডাকছে।
বৌদি আমি আসি?
আবার আসিস। তোদের ফ্লাট তো হয়ে গেছে।
উশ্রী নাচ দেখতে খেয়াল করে রতি ওর দিকে যাচ্ছে। রতি অত্যন্ত সঙ্কুচিত, উমাদাকে বলল, নাচ দেখছো না এখানে বসে আছো?
জীবনে অনেক নাচ দেখেছি। উমানাথের গলায় অভিমান।
আমাকে ক্ষমা কোরো। হাতজোড় করে বলল রতি।
উশ্রী এসে উপস্থিত। উমানাথ বলল, কি হল চলে এলে, নাচ দেখলে না?
আপনি উশ্রী? আমার নাম।
জানি রত্নাকর সোম।
আপনি খুব সুন্দর। রতি বলল।
বাইরে দেখে বলে দিলেন? উশ্রী হেসে বলল।
রত্নাকর ঠেক খায়। বেশ কথা বলে উশ্রী।
উমানাথ বিরক্তি নিয়ে বলল, আমি ওকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব ডেকেছি।
উশ্রী থাকুক না। তুমি জিজ্ঞেস করবে এতদিন কোথায় ছিলাম?
উমানাথ চোখ তুলে তাকালো। রত্নাকর বলল, নরকের পথ এত মসৃন, এত মোহময় চিক্কণ জানা ছিল না। গরলকে অমৃতময় অন্ধকারকে আলো বলে ভ্রম হয়। সেই পথে চলতে চলতে, না বরং বলব নামতে নামতে পূতিগন্ধময় পাঁকে মাখামাখি। এমন সময় মাতৃরূপে।
উশ্রী জিজ্ঞেস করল, মাতৃরূপে?
নয় কেন? নারী অন্তরে উকি দিলে বুঝতে পারবেন সেখানে সুপ্ত মাতৃসত্তা।
মনে ছিলনা আপনি তো আবার ভিতরে উকি দেন। উশ্রী খিলখিল করে হাসল।
খুশবন্ত এসে পাশে দাড়ালো। রত্নাকর বলতে থাকে, মাতৃরূপে এল এক জলপরী।
যেভাবে দস্যু রত্নাকরকে উদ্ধার করতে এসেছিল ছদ্মরূপে বিষ্ণু? উশ্রী যোগ করল।
রত্নাকর চমকে উশ্রীর দিকে দেখল। উমানাথ বলল, খুশবন্ত বিসর্জনের দিন এসো।
স্যরি উমা ঐদিন দার্জিলিং যাচ্ছি। একাদশীর দিন আমাকে জয়েন করতে হবে।
সবার কাছে বিদায় নিয়ে খুশবন্ত জিপে উঠল। হাত নেড়ে বিদায় জানালো। কলকাতা এলে আবার আসবে।
জিপে উঠে রতি বলল, মুন্নি খুব খারাপ লাগছে। খুশবন্ত বলল, সেদিন আমারও খুব কষ্ট হয়েছিল যতীন দাস ছেড়ে যেতে। তোমার সঙ্গেও দেখা হয়নি।
[৫৫]
খুশবন্ত স্টিয়ারিং-এ বসে চোখ রাস্তার দিকে, মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন বিজকুড়ি কাটছে। রতির সঙ্গে সম্পর্ক আজ প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিল। লক্ষ্য করেছে অনেকের চোখে বিস্ময় আবার কারো চোখে ঈর্ষা। রতি ঠিকই বলে মানুষের সব ইচ্ছে বাইরে আসতে পারে না। মনে জন্ম নেয় আবার মনেই লীন হয়ে যায়। বেলাভাবীকে দেখে অন্তত তাই মনে হয়েছে। পারমিতা নাচ না দেখেই চলে গেল। সবাই ওকে কত বলল কিন্তু শরীর খারাপের অজুহাতে কারো কথা শুনলো না। খুশবন্তের মনে হয়েছে শরীর নয় পারমিতার মন খারাপ। রত্নাকর দেখল মুন্নি চুপচাপ গাড়ী চালাচ্ছে। ও চুপচাপ থাকার মেয়ে নয়। ওকে চুপচাপ দেখতে ভাল লাগেনা। রতি জিজ্ঞেস করল, কি ভাবছো?
খুসবন্ত মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, যতীনদাস কেমন লাগলো?
পাড়াটা অনেক বদলে গেছে। গুরুদ্বারের রাস্তাটা সিমেণ্ট দিয়ে বাধিয়ে দিয়েছে, দেখেছো?
ক্ষিধে লাগেনি?
রতি হাসল, ভাবখানা তুমি যা করবে।
রাত বাড়তে থাকে, উসখুস করে সুলতার মন। যারা রাত পাহারা দেবে তারা ছাড়া সবাই একে একে বাড়ী চলে যায়। মেয়েরা কেউ নেই। সুলতা যাবো যাবো করে যেতে পারেনা। বঙ্কিম এসে জিজ্ঞেস করল, তুমি যাওনি?
আমাকে একটু পৌছে দেবে? একা একা ভয় করছে।
বাস্তবিক সুলতা এপাড়ার মেয়ে নয়, অনেকটা পথ পেরিয়ে জঙ্গলের ওপারে ওদের বাড়ী। বঙ্কিম বাধ্য হয়ে ওর সঙ্গে হাটতে থাকে।
তোমার বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে নাতো?
কে রতি? ও একটা পাগল।
ঠোটে ঠোট চেপে আড় চোখে বঙ্কিমকে দেখল সুলতা। কানের কাছে দপদপ করছে। সুলতা বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করব, কিছু মনে করবেনা?
মনে করবো কেন?
তোমার বন্ধুর ঐটা নাকি একহাত লম্বা?
বঙ্কিমের শরীর শিরশির করে উঠল বলল, কে বলল তোমাকে?
বলেছে একজন। আহা বলোনা।
এর আগে সুলতার সঙ্গে এই ধরণের কথাবার্তা হয়নি। মনে মনে সুলতাকে নিয়ে কত কল্পনার জাল বুনেছে কিন্তু কোনোদিন ওর শরীর স্পর্শ করেনি। শুনেছে সুদীপ নাকি তনিমাকে।
কি হল বললে নাতো?
বঙ্কিমের নিশ্বাস ঘন হয়। জিজ্ঞেস করে, সত্যি করে বলতো কেউ বলেছে নাকি তুমি বানিয়ে বানিয়ে এসব কথা বলছো?
আহা আমি কেন বানাতে যাবো, তনু বলেছিল তাই।
তনু মানে তনিমা? একহাত নয় তবে একটু বড়।
সুলতা বা-দিকে জঙ্গলের পথ ধরে। বঙ্কিম জিজ্ঞেস করল, ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
রাস্তা দিয়ে ঘুরে ঘুরে যাবো নাকি? এদিক দিয়ে গেলে অর্ধেক পথ।
কথাটা মিথ্যে নয় দিনের বেলা সবাই এই পথে যায় কিন্তু এই রাতে সাপখোপ থাকতে পারে। অনিচ্ছা সত্বেও বঙ্কিম রাস্তা থেকে নেমে সুলতার পিছু নেয়। একটু এগোতে দেখল সুলতা একটা ঝোপের মধ্যে বসে। বঙ্কিম জিজ্ঞেস করে, ওখানে কি করছো, সাপখোপ থাকতে পারে।
এই সময় মানুষের বাঘর ভয়ও থাকেনা। ভীষণ মুত পেয়েছিল।
বঙ্কিমে গা ছমছম করে। শুকনো পাতায় পড়ে পেচ্ছাপের ছরর-ছরর শব্দ হচ্ছে। আবছা আলোয় দেখা না গেলেও কল্পনায় সুলতার ঐ জায়গাটা ভেসে উঠল। সুলতা উঠে দাড়ালো পায়জামা প্যাণ্টি নামানো হাটু অবধি বলল, আমাকে একটা কিস করবে?
বুকের মধ্যে দ্রিমি দ্রিমি শব্দ হয়, কানের দু-পাশ থেকে আগুন ঝরতে থাকে বঙ্কিমকে যেন কিছু ভর করেছে। এগিয়ে গিয়ে সুলতাকে জড়িয়ে ধরে হা-করে মুখটা এগিয়ে যায়। সুলতা কপ করে ঠোট ঠোটের মধ্যে নিয়ে চুষতে থাকে। বঙ্কিম হাত দিয়ে সুলতার পিঠ খিমচে ধরল। সুলতা বলল, তোমারটা কত বড়? বঙ্কিম তখন নিজের মধ্যে নেই। সুলতা প্যাণ্টে উপর দিয়ে বঙ্কিমের বাড়াটা চেপে ধরে। পায়জামা ছেড়ে দিতে পায়ের কাছে পড়ে। সুলতা প্যাণ্টের বোতাম খুলতে থাকে। চোখের সামনে উন্মূক্ত পাছা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারেনা। ঝুকে দু-হাতে দুটো গোলক পিষ্ট করতে থাকে। ততক্ষণে বঙ্কিমের প্যাণ্ট খুলে সুলতা ল্যাওড়াটার ছাল ছাড়িয়ে ফেলে নাড়তে লাগল। বঙ্কিমের পা কাপে বলে, কি করছো বেরিয়ে যাবে।
সুলতা ঘাসের উপর চিত হয়ে শুয়ে দু-পা মেলে দিয়ে বলল, আমাকে চোদ সোনা আমাকে চোদো। আর্তস্বর শুনে বঙ্কিম হাটু গেড়ে লিঙ্গ প্রবেশ করাতে চেষ্টা করে।
ধুর বোকাচোদা কোথায় ঢোকাচ্ছো? সুলতা বাড়াটা ধরে নিজ যোণীতে লাগাবার চেষ্টা করে। বঙ্কিম দু-হাত দিয়ে সুলতার হাটূ ধরে কোমর এগিয়ে নিয়ে যায়।
উউহ মারে-এ-এ ঢূকেছে এবার ঠাপাও। সুলতা বলল।
বঙ্কিম পচাৎ-পচাৎ করে ঠাপাতে লাগল। সুলতা বলল, দাড়াও। পিঠ উচু করে বলল, দেখোতো পিঠের নীচে কি ফুটছে?
বঙ্কিম পিঠের নীচে হাতড়ে একটা শুকনো গাছের ডাল বের করে দূরে ছুড়ে দিল। সুলতা বলল, থামলে কেন ঠাপাও।
বঙ্কিম আবার পাছা নেড়ে ঠাপাতে শুরু করল। মিনিট পাচেকের মধ্যে তলপেটের নিচে মৃদু বেদনা বোধ হল। উ-হু-উ-উ লতা-আআআআআআ বলে কাতরে উঠল বঙ্কিম। সুলতার পাছায় চেপে বসেছে বঙ্কিমের তলপেট।
সুলতা বলল, থেমো না করে যাও-করে যাও।
একটু দম নিয়ে বঙ্কিম আবার ঠাপাতে সূরু করল। সুলতা উর-ই-উর-ই করে একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়ল।
বীর্যপাতের পর বঙ্কিমের সম্বিত ফেরে, বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয় মন। একী করল, লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারেনা। সুলতা উঠে পাতা ছিড়ে গুদ মুছে পায়জামা কোমরে গিট দিয়ে বলল, বসে আছো কেন, চলো।
বঙ্কিম ছায়ার মত সুলতার পিছু পিছু চলতে থাকে মুখে রা নেই। জঙ্গল পেরিয়ে রাস্তায় উঠে সুলতা বলল, এত কি ভাবছো বলতো? আমরা তো বিয়ে করবো।
বঙ্কিম ম্লান হাসলো।
জীপ একটা হোটেলের সামনে দাড়ায়, হোটেল মালিক মনে হয় চিনতে পেরেছে। এগিয়ে এসে বলল, আসুন স্যার।
রুটি কষা হবে?
ভদ্রলোক লজ্জিত হয়ে বলল, রুটি এখানে হয়না স্যার। বিরিয়ানি আছে স্যার-হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আছে।
ঠীক আছে দুটো পার্শেল রেডী করুন। সঙ্গে গ্রেভি কিছু দেবেন। খুশবন্ত কথা বলতে বলতে রতির দিকে নজর রাখে। জামা তুলে কোমরে বেল্টে বাধা ব্যাগ বের করে টাকা দেবার জন্য। রিভলবারের দিকে নজর পড়তে হোটেল মালিক বলল, টাকা দেবেন?
তাহলে ফোকটে খাবো? গুনে গুনে টাকা দিয়ে জিপে এসে বসে বলল, বিরিয়ানি নিলাম। কিছুক্ষণ পর হোটেল মালিক নিজে পার্শেল ক্যারিব্যাগে করে নিয়ে এল। খুসবন্ত জীপ স্টার্ট করে, হোটেল মালিক জিজ্ঞেস করল, শুনলাম স্যার আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন?
খবর দুনিয়া জেনে গেছে, খুশবন্ত হাসলো।
ভালো মানুষদের কেউ পছন্দ করেনা। হোটেল মালিক সহানুভুতি জানায়।
খুশবন্ত জীপ স্টার্ট করে দিল। লোকটা হয়তো তাকে তোয়াজ করে কথাটা বলেছে তবু শুনে খুব ভাল লাগল। রতি বাইরে তাকিয়ে আছে। খুশবন্ত বলল, রতি তুমি আমাকে পছন্দ করো না?
রতি মুখ ফিরিয়ে হেসে বলল, মুন্নি আমার ইচ্ছে করে সারাক্ষন তোমাকে ছুয়ে থাকি। ইচ্ছে হলেই তো হবেনা।
অত দূরে বসে কেন, কাছে এসে বোসো।
রতি সরে বসতে বা হাত ধরে কোলের উপর রাখল খশবন্ত। ডান উরুতে চাপ দিল। খুশী ঘাড় ঘুরিয়ে হাসল। জিজ্ঞেস করল, কেমন লাগলো পাড়ার মানুষজন?
তুমি লক্ষ্য করেছো বৌদি আমাকে দেখছিল কিন্তু কথা বলল না।
কে দিবাদার বৌ? লজ্জা পাচ্ছিল হয়তো। বেলাবৌদি কি বলছিল?
কি আবার? আমার লেখাটা নিয়ে আলোচনা করছিল।
খুশবন্ত জোরে হেসে উঠল। রতি জিজ্ঞেস করল, হাসছো কেন?
তুমি ঝুট বলছো তবু তোমাকে ভাল লাগে। তুমি কাউকে ছোটো করতে চাওনা। চিন্তা কোরনা পাঞ্জাবী আউরত তোমাকে সামলে নেবে।
রতির কান লাল হয়, মুন্নি হয়তো কিছু শুনে থাকবে। খুশবন্ত কিছুক্ষণ পর বলল, উমানাথের বউকে কেমন লাগল।
সুন্দর কথা বলে।
ব্যাস?
মনীষাবৌদিও সুন্দর কথা বলে। দুই জায়ে জমবে।
তুমি একজনের নাম বলো যে সুন্দর কথা বলে না। তোমার কাছে সবই সুন্দর। সেইখানে আমার ডর। আমিও বুঝি ওদের মত সুন্দর।
রতি বুঝতে পারে মুন্নি কি বলতে চাইছে। ঝট করে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি সুন্দর না। তুমি বিচ্ছিরি তুমি পচা তুমি তুমিমুন্নি তুমি এক্কেবারে আলাদা। সবার থেকে আলাদাতুমি অন্য রকম। আমার জলপরী।
কি হচ্ছে দুজনেই মরবো। খুশবন্ত স্টিয়ারং ধরে বা দিকে বাক নিল। আচ্ছা আমি শিখ এ জন্য তোমার মনে কোনো আক্ষেপ নেই?
তুমি বেলাবৌদির কথায় কিছু মনে কোরনা। কাল রাতে আমি তোমার সারা শরীর তন্ন তন্ন করে দেখেছি কোথাও বাঙালী গুজরাটী তামিল মহারাস্ট্রিয়ান রাজস্থানী এমন কি বিদেশিনীর সঙ্গেও কোনো ফ্যারাক নজরে এলনা তো। মুন্নি তুমি যে আমার কি তুমি, তুমি না থাকলে আজ আমি, উফস ভাবতেই পারছি না।
খুশবন্ত লজ্জায় রাঙা হয়। রতি নানা ভাষীর সঙ্গে সম্পর্ক করেছে। শরীরগত ভাবে কোন পার্থক্য পায়নি। বেশরমের মত সে কথা আবার বলছে। মেরি জান ইমোশনাল হয়ে গেছে।
বাংলো এসে গেল। খুশবন্ত নেমে চাবি দিয়ে গেটের দরজা খুলল। পার্শেল নিয়ে রতিও ঢুকে গেল। খাবার টেবিলে পার্শেল নামিয়ে রেখে রত্নাকর চেঞ্জ করে বাথরুম গেল।
বেলাবৌদি শুয়ে পড়লেও ঘুম আসেনা। পাশে বিজু গভীর ঘুমে ডুবে আছে। কোনোদিন এরকম হয়নি আজ কেন মনটা এমন চঞ্চল লাগছে। রতির সঙ্গে ওর দাদার ব্যবহার ভাল লাগেনি, ওর প্রতি একটা সহানুভুতি ছিল। খুশবন্তকে বিয়ে করেছে জানবার পর থেকেইতাহলে কি রতির প্রতি মনের কোনে কোনো দুর্বলতা বাসা বেধেছিল যা টের পায়নি। কেন মনে হচ্ছে এ বিয়ে রতির ভাল হবে না। খুশবন্ত আই পি এস অফিসার কদিন পর রতিকে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেবে। দেয় দেবে তাতে তার কি? আল্পনা বলছিল, ছি-ছি করছিল। দুঃখ করে বলছিল ওদের বংশে এমন অনাচার স্বপ্নেও ভাবেনি। ভাগ্যিস মা নেই, বেচে থাকলে কি কষ্টটাই না পেতো। আল্পনার ঠিক নজরে পড়েছে খুশবন্তের হাতে তার শ্বাশুড়ির বালাজোড়া। শ্বাশুড়ীর মৃত্যুর পর ঐ বালাজোড়া তন্ন তন্ন করে খুজেছিল আজ স্বচক্ষে দেখল। ঠাকুর-পোই সরিয়েছিল এখন বুঝতে পারছে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখল মুন্নি পোশাক বদলে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। রত্নাকরের খারাপ লাগে বাইরে দৌড়ঝাপ করে এসে আবার বাসায় ফিরেও বিশ্রাম নেই।
খুশবন্ত বলল, চলে এসো, খাবার রেডি।
মুন্নি একটা কথা বলবো শুনবে?
কথাটা আগে বলো।
একটা রান্নার লোক রাখো।
আমার রান্না ভাল হচ্ছেনা?
রান্না করবে চাকরি করবে একা সব হয়? আমার খারাপ লাগেনা বল?
খুশবন্তের বুকের মধ্যে মোচড় অনুভব করে, নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তুমি বুঝবেনা। আউরত হলে বুঝতে। রান্না করতে আমার ভাল লাগে। খুশবন্ত প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল, খেয়ে নেও।
এত? একটা আনলেই হতো। রত্নাকর প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল।
যতটা পারো খাও। রাইস না খাও মাংসটা খেয়ে নিও।
পাড়ার আড্ডায় পিকনিকে যে খুশীদিকে চিনতো তার মধ্যে এমন মমতাময়ী মুন্নি থাকতে পারে কখনো ভাবেনি। হেসে চোখের জল আড়াল করে রত্নাকর।
মাংস খেতে খেতে একটা হাড়ের নলা পেল মুখে দিয়ে হুস হুস করে কয়েকবার টেনে মজ্জা বের করতে না পেরে বিরক্ত হয়ে রেখে দিল। মুন্নি দেখেছে প্লেট থেকে তুলে দু-বার ঠুকে মুখ দিয়ে টানতে দেখল কেচোর মত মুন্নির ঠোট থেকে ঝুলছে মজ্জা। ঠোট এগিয়ে নিয়ে বলল, নেও।
রতি ঠোট মুন্নির মুখে ঠেকিয়ে শুরুক করে টানতে মজ্জা মুখে ঢুকে গেল।
খুশবন্ত বলল, আমি বের করে দিলাম তুমি পুরোটা খেয়ে ফেললে?
রত্নাকর লাজুক হাসল। মনে মনে বলে ভালবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবো।
আম্মাজী অনুমান করেছিল গেহলট সাহেব কি চায় কিন্তু লোকটার সঙ্গে শুতে ঘেন্না করে। মিটিং-এ বসে যেভাবে উরু টিপছিল মনে হচ্ছিল যেন শুয়োপোকা হেটে বেড়াচ্ছে। কায়দা করে তবিয়ত আচ্ছা নেহি বলে মিথিলার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। মনের সায় না থাকলে শরীরও সহযোগ দেয় না। বাচ্চাটা গায়েব হয়ে গেল, সিকদার কিছুই করতে পারল না। ফোন বন্ধ একবার কথা বলতে পারলে অমৃত রসের লোভ দেখিয়ে ঠিক ফিরিয়ে আনতে পারতো।
খুশবন্ত কাত হয়ে ডান পা রতির কোমরে তুলে দিয়ে বাম হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে মাথা উচু করে রতিকে জিজ্ঞেস করল, বিকেলে যারা তোমাকে ধরেছিল, তাদের আগে কোথাও দেখেছো?
আমি ভাবছি কি সাহস এসপির বাংলোয় কত পুলিশ থাকে এখানে এসেছে?
ওরা খবর নিয়ে এসেছে। কি বলছিল তোমাকে?
বিচ্ছিরি-বিচ্ছিরি গালি দিচ্ছিল। ওদের থেকে আমার শক্তি অনেক বেশি। না হলে গাড়ীতে তুলে নিত।
রতিকে বলা হয়নি আম্মাজী ভোরে ফোন করেছিল। ইউ ওন দা গোল্ড। রতির মুখের দিকে তাকিয়ে নাকটা ধরে নেড়ে দিয়ে বলল, গোল্ড। খুশবন্ত বলল, আমার মনে হয় আম্মাজীর কাজ।
না না আম্মাজী আমার সঙ্গে এরকম করবে না।
কেন তোমার এরকম মনে হল?
আমাকে খুব ভালবাসত। বলতো তুই আমার বাচ্চা।
তোমাকে সবচেয়ে কে বেশি ভালবাসে?
রতির চোখ ছলছল করে ওঠে বলল, জানো মুন্নি মায়ের কথা মনে পড়ল। মা আমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতো।
আণ্টী তো নেই। এখন-?
রতি ফিক করে হেসে কাত হয়ে মুন্নিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আমার মুন্নিসোনা।
আম্মাজীর সঙ্গে কিছু করেছো?
রতির মুখ কালো হয়ে গেল মুন্নির সঙ্গে চোখাচুখি হতে বলল, বিশ্বাস করো, আম্মাজী হিপ্নোটাইজ করতে পারে। আবার অলৌকিক বিদ্যে জানে।
কি করে বুঝলে, কি বিদ্যে দেখিয়েছে?
আমার লজ্জা করছে।
নিজের বউয়ের কাছে লজ্জা?
না মানে যোনী হতে অমৃত রস বের হয়।
হোয়াট?
মিষ্টি চিনির মত, আমিও বিশ্বাস করিনি প্রথমে।
খুশবন্ত খাট থেকে নেমে বাইরে চলে গেল। মুন্নি তো জানে কি তার অতীত জীবন, সব জেনেশুনেই তাকে বিয়ে করেছে। কিছুক্ষন পর মুন্নি ফিরে এল। নিজেকে অনাবৃত করে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে রত্নাকর। স্লিম ফিগার কোমরের নীচে তানপুরার মত নিতম্ব। খুশবন্ত খাটে উঠে চিত হয়ে শুয়ে পা ছড়িয়ে দিয়ে বলল, এ্যাই আমারটা একটু চুষে দেবে?
রত্নাকর বুঝতে পেরেছে আম্মাজীর কথা শুনে ওর ইচ্ছে হয়েছে। দুপায়ের মাঝে বসে নীচু হয়ে পশম সরিয়ে যোনীতে জিভ প্রবিষ্ট করে লেহন করতে লাগল। খুশী সুখে শরীর মোচড় দেয়। কিছুক্ষন পর বিস্মিত রতি মুখ তুলে মুন্নির দিকে তাকালো। মুন্নি মিট্মিট করে হাসছে। রতি আবার যোনীতে মুখ চেপে ধরে, মুখ তুলে বলল, মুন্নি অমৃত রস।
খাটে উঠে বসে জিজ্ঞেস করল, অমৃতের স্বাদ কি রকম?
বিশ্বাস করছো না? একেবারে মধুর মত। তুমি দেখো।
খুশবন্ত খাট থেকে নেমে বাইরে থেকে একটা শিশি এনে বলল, দেখো তো এরকম স্বাদ কি না?
রতি শিশিতে তর্জনী ডুবিয়ে জিভে লাগিয়ে বোকার মত বসে থাকে। খুশবন্ত বলল, তোমার দোষ নেই বুজ্রুকরা এরকম নানা কৌশল করে মানুষকে প্রতারিত করে। আম্মাজী নিজ কামচরিতার্থ করতে এই কৌশল করেছিল।
কৌশল করার দরকার ছিল না।
নিজ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে কৌশলের দরকার ছিল। না হলে সাধারণ কামুকীর সঙ্গে ভেদ থাকবে কিভাবে? আমরা স্বামী-স্ত্রী পরস্পর ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ। গুণ্ডা পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বেধে আনতে হয়না আমাদের। রতি তোমার মুন্নিকে একটু আদর করবে না?
রতি দুহাতে মুন্নিকে বুকে চেপে ধরল। পিঠের কাছে গিয়ে দুই কাধ ম্যাসাজ করতে থাকে। খুশবন্তের চোখ বুজে যায়। পিঠে কোমরে স্তনে তারপর উরুতে ম্যাসাজ করে। কুচকিতে আঙুল বোলাতে খুশবন্ত হিসিয়ে ওঠে, কি করছো? রাতে কি ঘুমাবে না?
রতি নীচু হয়ে যোনীতে মুখ রাখে তারপর নাভি ধীরে উপরে স্তনে, খুশবন্ত ঘাড় তুলে দেখছে পাগলের কাণ্ড। তলপেটের নীচে কুটকুট করছে বলতে পারছে না লজ্জায়। হা করে মুখ এগিয়ে আনছে খুশী জিভ ভরে দিল মুখে। দুহাতে রতিকে জড়িয়ে ধরে। পা দিয়ে বেড় দেয়। দুই শরীরের ফাকে হাত ঢুকিয়ে খুশী হাত দিয়ে রতির লিঙ্গ চেপে ধরে নিজ যোনীতে সংযোগের চেষ্টা করে। রতি পাছা উচু করে সাহায্য করে। চেরার মুখে লাগাতে রতি চাপ দেয়, খুশী বলে, আইস্তা আইস্তা জান। অনুভব করে দেওয়াল ঘেষে পুরপুর করে ঢুকছে, দম চেপে থাকে খুশবন্ত। রতির তলপেট তার পেটে সেটে যেতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
মুন্নি তোমার আম্মী যদি।
আভি বাত নেহি, করো ডার্লিং।
রত্নাকর ঠাপাতে লাগল। খুশবন্ত নীচে থেকে পাছা নাড়াতে লাগল। আলুথালু বিছানা, কুস্তি হচ্ছে যেন। মিনিট দশের মধ্যে খুশীর পানী নিকাল গিয়া, কেয়া ডার্লিং। খুশীকে কাত করে একটা পা উপরে তুলে পাশ থেকে ঠাপাতে থাকে। খুশীরও সুবিধে হয় সেও রতিকে ধরে পালটা ঠাপ দিতে লাগল। এক সময় রতি, মুন-নি-ই-ই বলে খুশীকে বুকে চেপে ধরে পিচিক পিচিক বীর্য প্রবেশ করে। ঊষ্ণ বীর্য নরম নালিতে পড়তে খুশীর আবার জল খসে গেল।
খুশি ফিস ফিস করে বলল, পেটে বাচ্চা এসে গেলে আম্মী কিছু করতে পারবেনা।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
[উপসংহার]
খবর ছিল, নেপাল সীমান্ত দিয়ে ঢুকতে পারে। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। স্থানীয় থানায় খবর দিয়েছে। বাহাদুরকে বাদ দিলে মোহন ছেত্রী সহ তারা ছ'জন। হঠাৎ নজরে পড়ে চার-পাঁচজনের একটা ছোটো দল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসছে। তাদের দেখতে পেয়ে উল্টোদিকে হাটতে থাকে। কনস্টেবলরা ধেয়ে যায় ওরাও গতি বাড়ায়। খুশবন্তের অভিজ্ঞতা আছে ফাদে পড়লে এরা রিটালিয়েট করতে পারে। সেইমত সে অন্যদিক দিয়ে ওদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। যা ভেবেছিল তাই ওরা গুলি চালাতে শুরু করল। কিন্তু পিছন দিক থেকে গুলি আসবে ভাবতে পারেনি। একজনের গুলি লেগেছে, ধরা পড়ে চারজন। কতজন ছিল জানা যায়নি। কয়েককোটি টাকার চরস কিছু আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেল। একজন কনস্টেবলের পায়ে গুলি লেগেছে। ইতিমধ্যে ওসি দলবল সহ হাজির।
কনস্টেবল আর চোরাচালানকারীদের একজনকে হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা করে থানার হাতে দায়িত্ব দিয়ে কালিম্পং-র পথ ধরল খুশবন্ত। ওসি সদানন্দ অবাক হয়ে খুশবন্তকে দেখে, এ কেয়া আউরত হ্যায়? দ্রুত জীপে উঠে জীপকে অনুসরন করেন।
মোহন ছেত্রী বলল, স্যার আকেলা ঐভাবে যাওয়া ঠিক হয়নাই।
খুশবন্ত হেসে বলল, আকেলা আয়া আকেলাই যানে হোগা।
ওহ ত সহি বাত।
পাহাড়ী পথে জীপ ছুটে চলেছে। রতির মুখটা মনে পড়ল। মুন্নির জন্য বড় চিন্তা ওর।
আলো কমে এসেছে।
সন্ধ্যে হবার মুখে রত্নাকর লেখা থামিয়ে ভাবল আম্মী তো এলনা? রোজ হাটতে যায় আজ কি হল?
আম্মীর ঘরে উকি দিয়ে দেখল বিছানায় শুয়ে আছেন। রতি জিজ্ঞেস করে, আম্মি শুয়ে আছেন?
দলজিৎ পাশ ফিরে হাটু দেখিয়ে বলল, পুত্তর বহুৎ দর্দ হোতা।
ম্যাসাজ করে দেবো? ভাল লাগবে।
দলজিৎ হাসলেন। রতি একটা লুঙ্গি এগিয়ে দিয়ে বলল, পায়জামাটা খুলে ফেলুন।
কান্তা কো বলো। দলজিৎ বললেন।
রত্নাকর বুঝতে পারে আম্মী একা পারবেন না। কান্তা কে পাঠিয়ে দিয়ে বলল, আম্মীকে দিয়ে এসে একটু রসুন তেল গরম করে দিও।
জি সাব। কান্তা বড়ি মেমসাবের ঘরে গেল।
কান্তা ফিরে এসে তেল গরম করে। রতি ঘরে ঢূকে দেখল আম্মী লুঙ্গি পরে পা ঝুলিয়ে বসে কাতরাচ্ছেন। রতি নীচু হয়ে পা-টা ধরে বিছানায় তুলে দিয়ে বলল, পা ঝুলিয়ে বসবেন না।
এত যন্ত্রণার মধ্যেও দলজিতের মন জুড়িয়ে যায়। জিজ্ঞেস করেন, পুত্তর তুই আমাকে বহুৎ পেয়ার করিস?
কেন করব না, আপনি আমার মা না?
দলজিৎ হেসে বললেন, জরুর পুত্তর।
কান্তা তেলের বাটি নিয়ে এল, রতি হাত থেকে তেলের বাটি নিয়ে পরীক্ষা করে উষ্ণতা।
কান্তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সাহেবের কাজ। তেল হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দলজিতের যে পায়ে যন্ত্রনা সেটা কোলে রেখে লুঙ্গি হাটু পর্যন্ত তুলে তেল নিয়ে মালাইচাকিতে লাগিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে লাগল। প্রথমে একটু "আহা-উহু" করলেও ধীরে ধীরে দলজিতের বেশ আরাম হতে থাকে।
কালিম্পং-এ জীপ থামিয়ে অর্কিড হাউসে ঢূকল খুশবন্ত। পছন্দ মত টব সমেত একটা গাছ কিনে পয়সা দিতে গিয়ে গোলমাল। কিছুতেই পয়সা নেবে না, খুশবন্ত পয়সা ছাড়া গাছ নেবে না। মোহন ছেত্রী বোঝাতে শেষে বাধ্য হয়ে পয়সা নিল। বাংলোর কাছে আসতে খুশবন্তের মন খারাপ হয়। মোহন ছেত্রী বলল, স্যার পেপারঅলা বাতচিত করতে চায়।
বিরক্ত হয়ে খুশবন্ত বলল, সদানন্দকে কথা বলতে বলুন।
পিছন পিছন ওসি এসেছিল, খুশী হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে রোমাঞ্চকর অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকে।
খুশবন্ত ঘরে ঢুকে দেখল যা ভেবেছিল তাই, বাড়ী ফাকা। নিজের ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করল।
কান্তাও নেই নাকি? দুবার কান্তা, কান্তা বলতেই দরজায় দেখা গেল চা নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্তা।
কান্তার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল, ওরা কখন বেরিয়েছে?
আজ বাইর হয় নাই। বড়ি মেমসাবের তবিয়ত আচ্ছা নেহি।
আম্মীর শরীর খারাপ? জিজ্ঞেস করল, সাহেব একা বেরিয়েছে?
সাহেব দাওয়া দরু করছে।
দাওয়া দরু? খুশবন্তের কপালে ভাজ জিজ্ঞেস করে, তুমি কি করছিলে?
আমি দেখছিলাম।
খুশবন্ত সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। রতি চিকিৎসা করছে? ও গড একী শুনছে? ঘর থেকে বেরিয়ে আম্মীর ঘরে গিয়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। রতি পিছন ফিরে বসে, কোলের উপর আম্মীর পা, পাঁচ আঙুলে মালাইচাকি ধরে নাড়ছে। চোখাচুখি হতে মুচকি হাসলেন দলজিৎ। পায়জামা নেই লুঙ্গি পরেছে উরু অবধি লুঙ্গি তোলা। মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল। একটু হলেই চা চলকে পড়ছিল। খুশবন্ত নিজের ঘরে ফিরে এল। কান্তাও ঘরে ছিল, খুশবন্ত চায়ে চুমুক দেয়।
একটু পরে রতি ঢুকে জিজ্ঞেস করল, মুন্নি কখন এলে?
তোমার ডাক্তারী বিদ্যে জানা আছে জানতাম না তো?
আম্মীর খুব কষ্ট হচ্ছিল তোমার হলে বুঝতে।
এটা কি তোমার কাজ?
রতি থতমত খায় পরে বুঝতে পেরে বলল, তুমি দশ পৃষ্ঠা বলেছিলে দাড়াও দেখাচ্ছি।
রত্নাকর নিজের লেখার ঘরে গিয়ে কাগজপত্র গোছাতে থাকে। খুশবন্ত দেখল আম্মী দরজায় এসে দাড়িয়েছে, লুঙ্গি বদলে পায়জামা পরেছেন।
কেমন আছো?
আভি থোড়া আরাম মেহশুস হচ্ছে।
তোমার বহুৎ নাফা হল?
মতলব?
বেটা পেলে ডাক্তার ভি পেলে?
দলজিৎ খিল খিল করে হেসে উঠল। হাসি থামতে বলল, তোর বাপু বলত দলজিতে বেটার জন্য আফশোস কোরোনা। মুন্নি তোমার বেটা আছে আউর লেড়কি ভি আছে। আভি সচমুচ হামার বেটা ভি মিলে গেল।
খুশবন্ত চোখ তুলে আম্মীর দিকে তাকিয়ে থাকে, চোখে মুখে কি তৃপ্তি।
দলজিত বললেন, যাই ঘরের মধ্যে একটূ হাটি। দলজিৎ চলে গেলেন।
হন্তদন্ত হয়ে রতি ঢুকলো, হাতে একরাশ কাগজ। খুশবন্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখো নিজের চোখে দেখো।
খুশবন্ত কাগজগুলো নিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরে। রত্নাকর বাধ্য ছাত্রের মত পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। খুশবন্ত পড়তে থাকে তিস্তা নামে একটি মেয়ে কলেজ যাবার পথে কিছু বকাটে ছেলে বিরক্ত করত। বাড়ীতে দারিদ্র্য বাইরে উপদ্রব সব কিছু উপেক্ষা করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। মনে স্বপ্ন একদিন কোনো প্রশাসনিক পদে পৌছে। খুশবন্ত চোখ তুলে রতিকে দেখে জিজ্ঞেস করল, তিস্তা কে?
কে আবার একটা সাধারণ ঘরের মেয়ে।
খুশবন্ত কাগজগুলো ফিরিয়ে দিয়ে বলল, রেখে এখানে এসো।
কান্তা এসে বলল, মেমসাব আপনাকে অফিসে ডাকছে।
আচ্ছা। তুমি সাহেব আর আমাকে টিফিন দিয়ে যাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি পরেই অফিসে ঢুকলো। সদানন্দ স্যালুট করে বলল, আমি আসি স্যার?
হাসপাতালে খোজ নিয়ে ফোন করে জানাবেন সেণ্ট্রি কেমন আছে? মোহন জী আপনি বিশ্রাম করুন। সকালে দেখা হবে।
রতি ঘরে ঢুকে দেখল টেবিলের উপর একটা গাছে সুন্দর ফুল ফুটেছে। নাক এগিয়ে নিয়ে সুন্দর গন্ধ পেল। খুসবন্ত দরজায় এসে দাড়িয়েছে। রতি জিজ্ঞেস করে, কি ফুল সুন্দর গন্ধ?
একটা নাম বলেছিল মনে নেই। অর্কিড, পরগাছা। ফুল সুন্দর কিন্তু অন্য গাছে ভর করে বেচে থাকে।
রত্নাকরের মুখটা করুণ হয়ে উঠল, চোখদুটো ছলছল করে। খুশবন্ত অবাক হয়, কাছে এসে জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে অস্থির করে তোলে। কাদছো কেন?
রত্নাকর হাসল চোখ মুছে বলল, আমিও একটা পরগাছা।
খুশবন্ত বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরে বলল, ইউ আর মাই পার্ট, আমার অংশ। তুমি-আমি কি আলাদা? ফুল ফোটাবার জন্য আমি জনম জনম তোমাকে ধরে রাখবো জান।
কান্তা ঢুকতেই রতিকে ছেড়ে দিল। কান্তা দুটো প্লেট নামিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কদিন আগে উমানাথ এসেছে শুভর সঙ্গে দেখা হয়নি। একজন বলল ম্যালে যান ওখানে দেখা হতে পারে। উশ্রীর বায়নায় একদিন টাইগার হিল গেছিল কিন্তু সূর্যাস্ত দেখা হয়নি। ম্যালে অনেকক্ষন অপেক্ষা করেও শুভ্র দেখা পায়নি। ওরা অন্য কোথাও চলে যায়নি তো?
উশ্রী বিরক্ত হয়ে বলল, তুমি কি দার্জিলিং-এ শুভকে দেখতে এসেছো? জিওলজিক্যাল পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন কিছুই দেখা হয়নি।
ওর সঙ্গে কথায় পারেনা উমানাথ। সব ঘুরে ঘুরে দেখতে চায়। কিন্তু কাল সকালে এসপির বাংলোয় যাবো বলতে খুব উৎসাহ।
শোবার সময় খাটে উঠতে গিয়ে খুশবন্ত কোমর চেপে ল্যাংচাতে থাকে। কোমরে আবার কি হল রত্নাকর ভাবে। এতক্ষন তো ভালই ছিল জিজ্ঞেস করল, তোমার কোমরে কি হয়েছে মুন্নি?
কিছু না।
ধ্বন্দ্বে পড়ে যায় রতি। খুশবন্ত উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে। রত্নাকর লুঙ্গি নামিয়ে কোমরে ম্যাসাজ করতে লাগল। বালিশে মুখ গুজে খুশী মিট্মিট করে হাসে। রতি জিজ্ঞেস করে, ভাল লাগছে?
আরেকটু নীচে করো।
রত্নাকর বুঝতে পারে, লুঙ্গি আরো নামিয়ে পাছার বল দুটো টিপতে টিপতে থাকে। দু’ পায়ের ফাকে হাত ঢুকিয়ে যোনীতে হাত বোলায়। কোমর নড়ে উঠল।
খুশবন্তের মধ্যে একটা পুরুষালী ভাব লক্ষ্য করতো। কোথাও গোলমাল হলে এগিয়ে যেতো। একবার ডায়মণ্ড হারবারে পিকনিকে কয়েকটি ছেলে আমাদের দলের মেয়েদের টিটকিরি করায় খুসবন্ত যেভাবে তাদের শায়েস্তা করেছিল ভাবলে এখনো হাসি পায়। সেই খুশবন্তের মধ্যে যে এরকম একটা নারীসত্তা লুকিয়েছিল ভেবে অবাক হয় রতি। আম্মীকে ম্যাসাজ করেছে বলে কৌশল করে তাকে দিয়ে ম্যাসাজ করাচ্ছে। সত্যিই নারীর কত রূপ।
মুখে বললেই হত, কৌশল করার দরকার ছিল না। আমার চিন্তা হয়না বুঝি? রতি বলল।
খুশবন্ত পালটি খেয়ে হাসে। বলল, আমার শরম করেনা?
রতি লক্ষ্য করল যোনীর দুপাশে কিছু পশম রেখে সুন্দর করে সেভ করেছে। নীচু হয়ে পেটে চাপ দিতে আতকে উঠে বলল খুশী, পেটে চাপ দিও না। বুকে করো।
বিস্ময়ের সীমা থাকেনা যেন পেটে এখনই বাচ্চা এসে গেছে। রতি স্তনে মোচড়াতে লাগল। নাক কুচকে চোখ বুজে উপভোগ করে। স্তনের বোটায় মোচড় দিতে কাধ উঠে গেল।
করলে করো। ছ'মাস টাচ করতে দেবোনা। আগের মত ভয় পায়না খুশবন্ত। নিতে নিতে সয়ে গেছে।
রতি দুই হাটুর কাছে হাটুতে ভর দিয়ে বসে খুশী হাটু ভাজ করে দুহাত দিয়ে ধরে থাকে। হঠাৎ উপুড় হয়ে হাটু মুড়ে শুয়ে বলল, পিছন দিক থেকে করো, এটা সেভ।
দুই উরুর ফাক দিয়ে উকি দিচ্ছে যোনী। রতি বলল, মানে?
পেটে চাপ পড়বে না।
রতি উপলব্ধি করে এক অঙ্গে দুই রূপ পত্নীসত্তা এবং মাতৃসত্তা। পিছন থেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে যোনীতে লিঙ্গ স্থাপন করে চাপ দিতে ঢুকে গেল। যতদুর সম্ভব সাবধানে ঠাপ শুরু করল। কনুইয়ে ভর দিয়ে মুন্নি পাছা উচু করে আছে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ফুচুক-ফুচুক শব্দ হয়। খুশীও পাছা নাড়তে নাড়তে বলল, তোমার বেশী টাইম লাগে। জোরে করো।
রতি মিনিট কুড়ি পর বীর্যপাত করল।
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
•
Posts: 298
Threads: 13
Likes Received: 118 in 85 posts
Likes Given: 193
Joined: Jan 2019
Reputation:
31
02-06-2019, 01:17 PM
(This post was last modified: 02-06-2019, 01:18 PM by stallionblack7. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
উশ্রী লক্ষ্য করেছে উমা বেশি কায়দা কানুন জানে না। কতরকম চোদনের কথা শুনেছে। কিন্তু ওর একই কায়দা পাছার কাছে বসে, দু কাধ ধরে। মাই টিপতে পারে কিস করতে পারে। মেয়ে হয়ে কি করে। এসব বলে? পাঁচ-সাত মিনিট পর বেরিয়ে যায়। কোনো কোনো দিন তার বেরোয় না।
অফিস এসপির বাংলো লাগোয়া, পিছনের দরজা দিয়ে বাংলো যাবার পথ। সকাল বেলা চা টিফিন খেয়ে খুশবন্ত পোশাক পরেই অফিসে আসে। খাতা পত্তর দেখে রাউণ্ডে বের হবে।
ফোন করে খবর নিল হাসপাতালে আহত কনস্টেবল কেমন আছে। রাউণ্ডে বেরিয়ে একবার দেখতে যাবে। টেবিলে চাপা দেওয়া স্লিপে চোখ বোলায়, উমানাথ ঘোষ। চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে এল। উমানাথ উঠে দাড়ালো। উশ্রী এই প্রথম খুশবন্তকে পুলিশী পোশাকে দেখল। দারুন লাগছে দেখতে। খুশবন্ত জিজ্ঞেস করে, কতক্ষন? এটা অফিস, বাংলোয় যাবে তো।
বেশিক্ষন না।
এসো ভিতরে এসো। এই দরজা দিয়ে চলে যাও। রতিকে ডাকবে। আমি আসছি।
উমানাথ ভিতরে গিয়ে ইতস্তত করে, একজন মহিলা এসে জিজ্ঞেস করল, কুছু বলবেন?
উমানাথ বলল, রতি আছে?
পিছন থেকে ততক্ষনে দলজিৎ এসে কিছুক্ষন দেখে জিজ্ঞেস করেন, উমা আছে না?
উমানাথ চিনতে পারে বলল, হ্যা আণ্টি আমি।
দলজিৎ গলা চড়িয়ে ডাকলেন, পুত্তর তোমার দোস্ত এসেছে।
রতি লিখছিল, আম্মীর গলা পেয়ে বেরিয়ে এসে বলল, আরে উমাদা? এসো ভিতরে এসো।
উশ্রী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। দুজনকে ভিতরে নিয়ে বসালো। জিজ্ঞেস করল, মুন্নি মানে খুশী জানে তোমরা এসেছো? আম্মী আপনি উমাদাকে চেনেন না?
আণ্টী তো তোকে ডাকলেন। উমানাথ বলল।
কান্তা একটু চা বানাও। কেমন আছেন বৌদি?
ভাল আছি। আপনি স্থির হয়ে বসুন। উশ্রী বলল।
ইতিমধ্যে খুশবন্ত এসে পড়ে। একটা চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করল, কবে এসেছো?
দিন পাঁচেক হয়ে গেল।
কদিন আছো তো? ছোটা জিলা তোমাকে সব ঘুরে দেখাবো।
ছুটি শেষ, কাল সন্ধ্যেবেলার ট্রেনে ফিরব।
তাহলে আজ এখানে খাবে।
উমানাথ উশ্রীর দিকে তাকায়, উশ্রী বলল, অবশ্যই এসপির আমন্ত্রন বলে কথা।
তোমরা গল্প করো, এসপি একটা রাউণ্ড দিয়ে আসছে।
খুশবন্ত তুমি কেমন আছো?
রতির দিকে তাকিয়ে বিষন্ন গলায় বলল, ভাল না, বিয়ে করে খুব অশান্তিতে আছি।
উশ্রী আড়চোখে রতিকে দেখে, এমনভাব করে বসে আছে যেন এসবের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। উমানাথ উশ্রী দুজনেই ধ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
রতিকে ডেকে অন্য ঘরে নিয়ে গেল খুশবন্ত। মাথা ধরে চুমু খেয়ে বলল, দেখো ওদের যত্নে যেন ত্রূটি না হয়, শেষে পাড়ায় গিয়ে বদনাম করবে। ফিরে এসে বলল, আসি উমানাথ, আসি ম্যাডাম।
উমানাথ শুভ সোমলতা বঙ্কা সবার কথা একে একে বলে। চ্যারিটির সভা সেখানে ড. ব্যানার্জী কি বলছেন সব কথা। সুরঞ্জনা মুখার্জির মৃত্যুর কথাও বলতে ভোলে না। রতি চুপ করে শুনে যায়। রঞ্জনা আণ্টী বেচে নেই। নিশ্চয়ই পলি মলিরা এসেছিল। বঙ্কা এখন কম্পাউণ্ডারি করছে বাড়ি ছেড়ে বস্তিতে ভাড়া থাকে শুনে ব্যথিত হয়।
আচ্ছা উমাদা বঙ্কা তো ওষূধের নামটাম এখন শিখেছে। একটা ওষূধের দোকান করতে পারেনা?
ওষুধের দোকান করতে কম করে লাখ খানেক টাকার ধাক্কা।
রতি নীরবে কি যেন ভাবে।
বেড়াতে এসে এইসব কথা বলে ঠাকুর-পোর মন খারাপ করে দিলে। উশ্রী বলল।
রত্নাকর উশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাসল। কান্তা চা সঙ্গে স্যাণ্ড উইচ নিয়ে ঢুকে বলল, সাহেব আপনাকে শুধু চা দিলাম।
রত্নাকর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তোমরা চা খাও, আমি এখুনি আসছি।
রতি চলে যাবার পর উশ্রী বলল, হোটেলে খেয়ে তৃপ্তি হত না। ভালই হল কি বলো?
বউয়ের কথা উমানাথের কানে ঢোকেনা। সে খুশবন্তের কথা ভাবছে। বিয়ে করে খুব অশান্তিতে আছি তাও আবার বলল রতির সামনে?
রত্নাকর এক কপি "যে কথা বলা হয়নি" নিয়ে ঢুকল। সোফায় বসে মলাট খুলে লিখল, যার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে সেই মনীষা বৌদিকেরতি। বইটা উমাদাকে দিয়ে বলল, বৌদিকে দিও।
উমানাথের হাত থেকে বইটা নিয়ে উশ্রী কি লিখেছে দেখল, হেসে বলল, আর কাউকে দেবেন না?
সবই যদি বিলি করে দিই তাহলে আমার চলবে কি করে?
শোন রতি একটু এ্যাডজাস্ট করে চলতে শেখ। গম্ভীরভাবে বলল উমাদা।
-মানে? তারপর হেসে বলল, তুমি মুন্নির কথা বলছ? ঐ পাগলের কথা আমি ধরি না। ও হল তিস্তা নদীর মত খেয়ালী। তুমি তো জানো কেমন ডাকাবুকো? যতক্ষন বাইরে থাকে খুব দুশ্চিন্তা হয়, বাসায় না ফেরা অবধি শান্তি পাইনা।
বউকে আপনি মুন্নি বলেন? উশ্রী জিজ্ঞেস করল।
ওর ডাক নাম মুন্নি, ওর মা ওকে এইনামে ডাকে। উমাদা তুমি ঠিকানাটা লিখে দিও। আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবো, বাকীটা ম্যানেজ করে বঙ্কাকে একটা দোকান করে দিও।
সে না হয় ব্যাঙ্ক লোন-টোন করে ম্যানেজ করা যাবে। তুই পঞ্চাশ হাজার দিবি?
কেন দেবোনা বল? দুরবস্থা কাকে বলে জীবন দিয়ে শিখেছি। মুন্নি না থাকলে আমার যে কি অবস্থা হত।
উশ্রীর সব তালগোল পাকিয়ে যায়। এদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা কিছুতেই বুঝতে পারে না।
আত্মীয় স্বজন নয় একজন বন্ধুর জন্য এককথায় এতগুলো টাকা? উপলব্ধি করে রতি আর পাচজনের থেকে স্বতন্ত্র। মেয়ে মহলে কেন তাকে নিয়ে এত কৌতুহল? উশ্রী জিজ্ঞেস করে, পারমিতার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো?
তাই? কোথায় বিয়ে হচ্ছে?
বোম্বে থাকে ছেলে।
রত্নাকর উদাস দৃষ্টি মেলে কি যেন ভাবে। উশ্রী ভাবে পারমিতার বিয়ে শুনে হয়তো রতির মন খারাপ।
জানো বৌদি মেয়েদের আমি কেন এত শ্রদ্ধা করি? পারু বোম্বে চলে যাবে। বাবা-মাকে ছেড়ে নতুন পরিবেশ স্বামী শ্বাশুড়ি ননদ দেওর সব আলাদা আলাদা মেজাজ সবার সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নেবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য বইতে পড়েছি এ্যাডজাস্টমেণ্ট বাংলায় বলে সঙ্গতি সাধন। মেয়েরা এই শিক্ষা নিয়ে জন্মায়। অথচ সংসারে তারা কোনো দাম পেল না। সব চেয়ে বড়কথা সে জন্য তাদের কোন অভিযোগ বা অভিমান নেই, এটাই তাদের মহত্ব।
রতির চোখের পাতা ভিজে যায়, চোখ মুছে লাজুক হেসে বলল, উমাদা জানে আমার কথায় কথায় চোখে জল এসে যায়।
খুশবন্ত ঢুকে বলল, অনেক দেরী হয়ে গেল। কান্তা।
দলজিৎ এসে বললেন, কান্তা স্নানে গেছে।
রান্না কতদুর?
হয়ে গেছে, আমিই করেছি। দলজিৎ বললেন।
ওরা স্নান করেই বেরিয়েছিল। রতি স্নানে গেল। কান্তা টেবিল গোচ্ছাছে। উমানাথ উশ্রী টেবিলে বসে দলজিতের সঙ্গে কথা বলছে। স্বামীর কথা বলতে বলতে দলজিতের চোখে জল এসে গেল। রতি বাথ্রুম থেকে বের হল। উমা জিজ্ঞেস করে, আণ্টি আপনার জামাই কেমন হল?
দলজিৎ উঠে রতিকে বুকে চেপে ধরে বলল, আমার বেটা মানি আছে মানি।
খুশবন্ত বিরক্ত হয়। আদর করে নাম দিয়েছে মানি। মানি আগে কি করেছে জানে না তো। চেয়ার টেনে বসে বলল, আম্মী ভুখ লেগেছে।
রতিকে ছেড়ে দিতে ঘরে গিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে। মুন্নির আচরণ রতির নজর এড়ায় নি। আম্মীকে নিয়ে মুন্নির মনোভাব রোগে না দাঁড়িয়ে যায়।
মানিকে মতলব কি জানো? শিউজী আছে। দলজিৎ আপন উচ্ছ্বাসে বললেন।
কান্তা চারটে প্লেট দিয়ে গেল। রতি এসে মুন্নির পাশে বসল। তরকারি মিশ্রিত ভাত দেখে উশ্রী জিজ্ঞেস করে, এটা কি?
রতি বলল, আলু গোবি পোলাও। আম্মী বানিয়েছে খেয়ে দেখুন। রতি বলল।
খেতে খেতে আরেকবার বঙ্কার কথা বলল, উমানাথ। খুসবন্ত বিস্ময় প্রকাশ করে। বঙ্কার এই আচরণ প্রত্যাশিত নয়। রতি বলল, অবস্থা পরিবেশ মানুষকে চালিত করে। খুশবন্ত আড়চোখে দেখল রতিকে। উমানাথ বলল, দোকান করার জন্য রতি টাকা দেবে। খুশবন্ত বলল, ও টাকা কোথায় পাবে?
উমানাথ রতির দিকে তাকালো। রতি মাথা নীচু করে খেয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পদ খুব তৃপ্তি করে খেলো ওরা। কথা হল কাল সন্ধ্যেবেলা খুশবন্ত স্টেশনে পৌছে দেবে। উমানাথ মৃদু আপত্তি করল।
পরের দিন সন্ধ্যেবেলা জিপে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছে দিল। মালপত্তর তুলে উমানাথ প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নিজের জায়গায় বসে উশ্রী জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রতির সঙ্গে কথা বলছে। খুশবন্ত মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখে। ট্রেনের হুইশল বাজতে উমানাথ ট্রেনে উঠে পড়ল। খুশবন্ত পকেট থেকে একটা খাম বের করে উমার হাতে দিল। ট্রেন ছেড়ে দিল। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে।
জায়গায় বসে উমানাথ খামটা খুলল, পঞ্চাশ হাজারের চেক তার নামে। সঙ্গে একটা চিরকুট। চিরকুট খুলে চোখের সামনে মেলে ধরল। "উমানাথ, রতি ছিল না ভাল ছিলাম কোনো চিন্তা ছিলনা। বিয়ের পর চিন্তা পয়দা হল, এই বুঝি হারিয়ে গেল? কলকাত্তা গেলে দেখা হবে। খুশবন্ত সোম কাউর।"
[সমাপ্ত]
All the contents posted by me have been downloaded from the internet. Credit goes to the original uploaders. Anyone having any issues with pictures posted, please message for removal.
Posts: 180
Threads: 0
Likes Received: 100 in 73 posts
Likes Given: 21
Joined: Jan 2019
Reputation:
8
একটা সত্য ঘটনার প্লট ও গল্প আমার কাছে আছে । যদি কেউ এই গল্প নিয়ে একটা সিরিজ লিখতে চায় আমি তাকে সমস্ত ঘটনা, কাহিনী শেয়ার করতে পারি । ঘটনার মধ্যে সাসপেন্স, ইনস্টেস, ফাকিং, রিভেঞ্জ, থ্রিলিং, নুডিটি আছে ।
•
Posts: 1,199
Threads: 24
Likes Received: 9,882 in 1,156 posts
Likes Given: 18
Joined: Nov 2019
Reputation:
2,681
(26-02-2019, 09:29 AM)stallionblack7 Wrote: Vebechilam no one interested... Puro ta sesh korbo
লিখেছেন গল্পটি সংগৃহীত যেখান থেকে সংগ্রহ করেছেন সেখানে কি লেখকের নাম ছিল না?সেটি বর্জন না করলে শোভন হত।
•
|