10-02-2023, 01:04 PM
Indian Private Cams | Porn Videos: Recently Featured XXXX | Most Popular Videos | Latest Videos | Indian porn sites Sex Stories: english sex stories | tamil sex stories | malayalam sex stories | telugu sex stories | hindi sex stories | punjabi sex stories | bengali sex stories
কিছু মনের সত্যি কথা
|
10-02-2023, 01:23 PM
(10-02-2023, 01:04 PM)Baban Wrote: অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবান ভাই। পুরোনো অনেক বন্ধুদের এক এক করে ছেড়ে চলে যেতে দেখলাম চোখের সামনে। আমরা কজনায় টিকে আছি শুধু।
10-02-2023, 10:41 PM
(This post was last modified: 10-02-2023, 10:41 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(10-02-2023, 01:23 PM)ddey333 Wrote: অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবান ভাই। ব্যাক্তিগত অসুবিধা হলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু সেটা না হলে তারা কিন্তু আবারো ফিরে আসতে পারতো। আমাকেও কিছু কিছু মজার ব্যাপার দেখতে হয়েছে। কিন্তু আমি টিকে আছি। তুমিও আছো। ওরাও যদি আবারো আসে ফিরে আমাদের মাঝে উফফফফ ♥️♥️
11-02-2023, 11:03 AM
(This post was last modified: 11-02-2023, 11:03 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(10-02-2023, 10:41 PM)Baban Wrote: ব্যাক্তিগত অসুবিধা হলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু সেটা না হলে তারা কিন্তু আবারো ফিরে আসতে পারতো। আমাকেও কিছু কিছু মজার ব্যাপার দেখতে হয়েছে। কিন্তু আমি টিকে আছি। তুমিও আছো। ওরাও যদি আবারো আসে ফিরে আমাদের মাঝে উফফফফ ♥️♥️ পিনুরাম , তুমি যে আমার , রাজদীপ , লেখক ... এনাদের তেমন কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নেই কিন্তু এই ফোরামের আবহাওয়া তাদের পছন্দ নয় আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। দাদা অফ ইন্ডিয়া আর বোরসেস এর কিছু সাময়িক সমস্যা আছে হয়তো ফিরে আসলেও আসতে পারেন কোনোদিন। নন্দনা দিদির সঙ্গে এখন কোনো যোগাযোগ নেই।
14-02-2023, 07:45 PM
ভ্যালেন্টাইন ডে!!
একজন একটু ঠেস দিয়ে বলেছিলো যে আপনাদের সময়ে ভ্যালেন্টাইন ডে ছিলোনা বলে আপনার বেশ ঈর্ষা হচ্ছে। সবিনয়ে জানাই আজ্ঞে না। এখনতো বছরে মোটে একদিন হয় ভ্যালেন্টাইন ডে , আমাদের সময়ে বেশ ঘন ঘন হতো। তাইলে হিসাব দিয়ে দি। - সরস্বতী পুজোর ভোরে ফুল চুরি করতে গেছি। সে বারান্দায় বসে ফুলের পাহারা দিচ্ছে। আমাকে ফুল চুরি করতে দেখেও বাবাকে ডাকছে না। উল্টে আঙ্গুল দিয়ে দুরের বড় লাল গোলাপ দেখিয়ে দিলো। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - তার দিদির বিয়েতে কোমরে গামছা বেঁধে রসগোল্লা সার্ভ করছি , সে আমার পিছন পিছন সন্দেশ দিয়ে যাচ্ছে। ভাবুন দেখি ৩০০ লোকের নেমন্তন্ন বাড়ির লোক খাইয়ে কি মজা পেয়েছি । সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - ওর ঠাকুমার বাতের ওষুধ আনার জন্য আমায় নিয়ে গেছে কবিরাজের বাড়ি। কবিরাজ ওষুধের মশলা বানাচ্ছেন খল নুড়িতে। আমি বারান্দায় বসে ওর সঙ্গে। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - পাড়ার রবীন্দ্র জয়ন্তীতে ওর গান শুনতে শুনতে যত জোরে হাত তালি দিয়েছি , তত চওড়া হয়েছিল ওর হাসি। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - ভর সন্ধ্যায় অষ্টমীর রাত্রে , রিক্সায় বসে বেপাড়ায় ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখেছি। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - একাডেমিতে নাটক দেখতে গিয়ে , যত না নাটক দেখেছি তার চেয়ে বেশি , সামনের চায়ের দোকানে গল্প করে কাটিয়েছি। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - ২৫ বৈশাখের সকাল থেকে সারা দুপুর কাটিয়েছিলাম রবীন্দ্রসদনের মাঠে। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - অনাদির মোগলাই , গোলবাড়ির কষা মাংশ , সাবিরের রেজালা আর সূর্য্য সেন স্ট্রিটের তেলেভাজা খাওয়া। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - সিনেমা হলের সাইডের দুটো টিকিট চেয়ে কাউন্টারের লোকটার মুখে শোনা " চিরকাল তো সিনেমা সাইডে বসে দেখলে।, একদিন মাঝখানে বসে দেখো কেমন লাগে। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - পর্দা ফেলা রেস্তোরার কেবিনে বসে , বাইরে খাবার হাতে আসা বেয়ারার গলাখাঁকারি শুনে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - কফি হাউসের চা পাকোড়া খেতে খেতে আঁতলামোর আলোচনার নামে চোখে চোখ রেখে সময় কাটানো। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। - নবমীর রাতে ওদের বাড়িতে খেতে বসে , টেবিলের তলায় চিমটি কাটা। সেটা ছিলো ভ্যালেন্টাইন ডে। আর কত হিসাব দেবো। খালি মনে পড়ে "নীরা, তোমায় দেখে হঠাৎ নীরার কথা মনে পড়লো। আমি তোমায় লোভ করিনি, আমি তোমায় টান মারিনি সুতোয় আমি তোমার মন্দিরের মতো শরীরে ঢুকিনি ছল ছুতোয় রক্তমাখা হাতে তোমায় অবলীলায় নাশ করিনি; দোল ও সরস্বতী পূজোয় তোমার সঙ্গে দেখা আমার–সিঁড়ির কাছে আজকে এমন দাঁড়িয়ে রইলে নীরা, তোমার কাছে আমি নীরার জন্য রয়ে গেলাম চিরঋণী।"-সংগৃহীত
17-02-2023, 12:58 PM
একুল-ওকুল
অর্ক যে ওকে আর ভালবাসে না, জানে বিদিশা। আজ না, অনেকদিন থেকেই। খারাপ লাগত আগে খুব। অর্কর নৈর্ব্যক্তিকতা, ঔদাসীন্য সবটাই মনটা ভেঙে দিত বড্ড। খালি মনে হতো -"কেন এরকম হলো?" বা, "আমি কি এতই খারাপ?" তখন কাঁদত বিদিশা। অভিমান, ঝগড়াও করেছে কতবার! প্রথম প্রথম অর্ক অস্বীকার করত সবটা। বলত "পাগল নাকি?" বা, "সেরকম কিছু না"। বলত, কিন্তু সেটা যে শুধু বলার জন্যই, বুঝতে পারত বিদিশা। অফিস থেকে ফিরেও দায়সারা একটা দুটো কথার পরেই মোবাইল নিয়ে খুটুরখাটুর, দশটা প্রশ্নের একটার উত্তর দেওয়া, তিরিক্ষি মেজাজ… আর রাত হলেই অন্ধকার ঘরে মোবাইলের আলোর জ্বলা -নেভা… বুঝেছিল বিদিশা। নাহয় চাকরি বাকরিই করে না, কিন্তু বোকা তো নয় ও? এতবছর ধরে দেখছে অর্ককে, বুঝতে পারবে না? তবে বুঝতে পারলেও তারপরে কি করবে ভাবতে পারছিল না। ওই বাড়ি চলে যাবে? ডিভোর্স নেবে? বাবা মা দুজনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ভাই-রত্না-শিমুলকে নিয়ে ভর ভরন্ত সংসার। সেখানে এক দুদিন গিয়ে থাকা যায়, কিন্তু সারাজীবনের মতো, তা যতই বাবার তৈরি বাড়িতে ওর ও অধিকার থাকুক না কেন - সম্ভব হতো না। আর, নিজস্ব একটা আর্থিক সংস্থান থাকলেও নাহয় কথা ছিল… সেটাও তো নেই… 'নেই' যে, তার কারণটা কিন্তু অর্কই। একটা চিটফান্ড কোম্পানির মিডিয়া - পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে চাকরি করত বিদিশা। গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কোর্স করা ছিল, কোম্পানির বিভিন্নরকম ব্রোশিওর, লিফলেট, হোর্ডিং এর ডিজাইন, নিউজপেপারে বিজ্ঞাপনের ক্রিয়েটিভ - এসব বানাত। কিন্তু কোম্পানির ব্যবসা ডুবল আর ডামাডোলে পড়ে চাকরিটাও খোয়া গেছিল বিদিশার, সেইসময়ের আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মতোই। তারপর অনেক চেষ্টা করেছে চাকরির। কিন্তু ডাক আসত না। এলেও ইন্টারভিউ বোর্ডে এমন ভাব করত সবাই যেন চিটফান্ডের টাকা ও ই নিয়ে নিয়েছে! এমনি গোটা কয়েক ব্যর্থ ইন্টারভিউয়ের পরেই অর্কও বলেছিল ও বাড়িতে থাকলেই ভাল - বাড়িটা নাকি 'বাড়ি বাড়ি' লাগে। ও রাজি ছিল না। বারবার বলেছিল সব কোম্পানি কি একরকম হবে নাকি! কিন্তু, অর্ক জোর করছিল। আর, ওর শ্বশুরমশাইয়ের সেই সময়ই শরীর খারাপ হলো, সবমিলিয়ে আর কোথাও জয়েন করাই হলো না। অথচ এখনও মাঝেমাঝেই ফটোশপ, কোরেল ড্র, প্রিমিয়ার প্রো র স্বপ্ন দেখে বিদিশা। একটা আদ্যিকালের ল্যাপটপ আছে, তাতে প্র্যাকটিশ করে। ফ্রিলান্সিং এর চেষ্টা করেছে, কিন্তু এতবছর পরে ওর পোর্টফোলিও দুর্বল হয়ে গেছে তাই ভাল কাজ কিছুই পায়নি। ছূটকোছাটকা কাজ - লিফলেট ডিজাইন করার এসেছিল, কিন্তু টাকা বড্ড কম - খাটনিতে পোষাত না। এদিকে সব জেনেও অর্ক মাঝেমাঝেই বড্ড কথা শোনায়। পান থেকে চুন খসলেই। বিদিশা ভাবত, বয়স হচ্ছে, তাই হয়ত মেজাজটাও খারাপ থাকে। শ্রীরূপা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল অর্ক। তার স্বামী একদিন ফোন করে সে কি গালাগাল অর্ক কে! আর পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিশা যেন লজ্জায় নুইয়ে পড়েছিল। যত না অর্কর লজ্জা, তারচেয়েও বেশি বিদিশার। কিছু না জেনে, না করেও যেন ও ই অপরাধী। মনে হতো আত্মীয় স্বজন সবাই বোধহয় জেনে গেল! সবাই বোধহয় ওদের নিয়েই কথা বলছে! রাগে - দুঃখে বিদিশা কথা বলতে গেছিল এই নিয়ে, কিন্তু অর্ক ওকে ব্লক করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটাই লক করে দিল। যেন, নিজের কৃতকর্মটি দোষের না, শুধু বিদিশার জেনে যাওয়াটাই অপরাধ! তবে আবার তেমনই কিছু ঘটাচ্ছে অর্ক। রাতে খুটুরখাটুর চলতেই থাকে ফোন নিয়ে। তবে এবার একটু কম মাতামাতি… রাতেও এক দুবারই আলো জ্বলে মোবাইলের। মাঝে মাঝে বিদিশা ভাবে, যা খুশি কর বাবা, 'স্বামীর অধিকার' চাইতে আসিস না… না পেয়ে পেয়ে ঘেন্না ধরে গেছে! এখন আর ভাল লাগে না! এভাবেই দিন কাটে। অর্ক মেসেজ করে, মেসেজ পেয়ে আত্মহারা। বিদিশা সংসার নিয়ে, আর বাকি সময় ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। এই তো জীবন - চারকোণা দুনিয়ায় বন্দী! ভ্যালেন্টাইনস ডে এসে গেল। এটা নাকি প্রমিক-প্রেমিকাদের বিশেষ দিন। তা অর্কও কি ওর নতুন প্রেমিকাকে কিছু দেবে? কি দেবে? শাড়ি- গয়না? নাকি টাকা? ভাবতে ভাবতে হাসে বিদিশা। ফুলে ফুলে হাসে। ওদিকে অফিসে বসে অর্কর তখন বুকে লাবডুব! মধ্য ফেব্রুয়ারি তে খুব বেশি গরম পড়েনি এখনও, তাও ঘামে ভিজে যাচ্ছে কপাল। ক'মাস আগে ইন্সটাগ্রামে আলাপ হয়েছিল একটি মেয়ের সঙ্গে। জুঁই দাশগুপ্ত। আদতে কলকাতার মেয়ে, বেলজিয়ামে পড়াশোনা করতে গেছিল, ওখানেই চাকরি করে এখন। বেশ সুন্দরী, আর চাবুক ফিগার! নিজে থেকেই মেসেজ করেছিল অর্ককে। বলেছিল, ওর নাকি বয়ফ্রেন্ডের নামও 'অর্ক' ছিল, যে ব্যাটা ওকে ঠকিয়েছিল। বেচারা মেয়েটা! আর, অর্কর প্রিয় ফুলও জুঁই! চ্যাট করত রোজ ওরা। তবে টাইমের ডিফারেন্সের জন্য সবসময় চ্যাট হতো না। জুঁই নিজের ছবি, ব্রাসেলসের ছবি পাঠাত। ভাল লাগত অর্কর। এমনি একটা মেয়ে ওকে ভালোবাসে! উফ! কী মারাত্মক ব্যাপার! পাশে শুয়ে থাকা বিদিশার দিকে তাকিয়ে তখন ঘেন্না আসত অর্কের। কোথায় জুঁই, আর কোথায় বিদিশা! যেন চাঁদে আর পা*দে! তা, ক'দিন আগে জুঁই বলল ও নাকি একটা গিফট দিতে চায় অর্ককে। ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষ্যে। একটা আইফোন! ওর থেকে অফিসের ঠিকানাও নিল। পার্সেলের ছবিও পাঠাল… আনন্দ হচ্ছিল অর্কর খুব। জুঁই ওকে এত, এত এত ভালবাসে? আস্ত একটা আইফোন!!?? কিন্তু দু'দিন ধরে মোটা গলার একটা লোক ফোন করে রোজ বলছে এয়ারপোর্টের কাস্টমস ডিপার্টমেন্টে আইফোনটা আটকে আছে। হাজার কুড়ি জমা দিতে হবে। কাগজ পড়ে অর্ক। তাই বুঝে গেছে এটা একটা চাল! পুরো ব্যাপারটাই সাজানো ছিল! জুঁই দাশগুপ্ত! বেলজিয়ামে থাকে… ব্রাসেলসের ছবি - সবটা সাজানো… ঠকানো হলো ওকে… উফ! এ যে কী যন্ত্রণা! যে ভালবাসে ভেবেছিল, সে ই এমন 'ফেক' হলো! যদি অফিসে চলে আসে! উফ! কী যে হবে! মান-সম্মান সব যাবে! আর এইভাবে ঠকার কথাটা তো কাউকে বলতেও পারবে না! নাহ্, অনেক হয়েছে - আর চ্যাট করবে না কখনও। ভগবান জাস্ট এইবারটা বাঁচিয়ে দিক… ইনস্টাগ্রাম খুলে জুঁইকে ব্লক করতে গিয়ে দেখে অ্যাকাউন্টটাই নেই! ফেক শা*লী! না, শা*লা বোধহয়! লোক ঠকিয়ে আর ক'দিন চলবে! ছিঃ! মনে মনে অভিশাপ দেয় অর্ক, 'জুঁই'কে! তাতে অবশ্য বিদিশার কিচ্ছু এসে যায় না! ইনস্টাতে 'জুঁই'য়ের অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাটিভেট করতে করতে হাসে ও! বিদিশার ট্যালেন্ট কেমন - জানলই না অর্ক! সারাজীবন "তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না" ই বলে গেল! গ্রাফিক ডিজাইনার হবার সুবাদে ইন্টারনেটে পাওয়া হাই রেজলিউশান ছবিতে মুখ আর পোষাক সুপার ইম্পোজ করা, বিদেশী শহরের ছবি দেওয়া, পার্সেলের ছবি দেওয়া - ওর কাছে খুব শ্রমসাধ্য কাজ ছিল না! আর, কলেজের বন্ধু অমিতকে "এই, আমার বরকে একটা প্র্যাংক কল করবি? একটু মজা করব" বলতেই ও ফোন করে দিল! আর কিছু না হোক, বিদিশা জানে, অর্ক কেমন নার্ভাস লোক। পুলিশে জানানো তো দূর, কলব্যাক করতেও পারবে না… ঠিক হয়েছে! জব্দ হয়েছে! ফুলে ফুলে হাসছিল বিদিশা… তবু, চোখের কোণে জল… জুঁইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময় কেমন আগের অর্ককে খুঁজে পেত ও… তেমনি দায়িত্ববান, নরম… উইটি… বেলজিয়ামের সময়ের ব্যবধান মেনে মেসেজ করত ও… আর অপেক্ষা করত অর্কর মেসেজের… নিষিদ্ধ অপেক্ষা যেন এক… সব বন্ধ হয়ে গেল… আবার এক বাড়িতে দুজন মানুষ… যেন দুটি পৃথক দ্বীপ..! খুব কান্না পাচ্ছিল বিদিশার… খুব… খুব…।।
18-02-2023, 08:00 AM
আমাকে হয়তো আবার ব্যান করিয়ে দেবে ওই বিশেষ লোকেরা।
এবার আর ফিরে আসতে চাই না , তাই শুধু লাইক আর রেপু দিয়ে আমার অভিব্যক্তি জানাবো।
19-02-2023, 11:18 AM
(18-02-2023, 08:00 AM)ddey333 Wrote: আমাকে হয়তো আবার ব্যান করিয়ে দেবে ওই বিশেষ লোকেরা। কেন ব্যান করিয়ে দেবে আপনাকে সেটা বুঝতে পারলাম না। তাহলে আমাদেরও কি এই ফোরাম ছাড়তে হবে? মানালী দিদিভাইয়ের লেখা একটা পর্ব দেখলাম মুছে দেওয়া হয়েছে। কি যে হচ্ছে কে জানে?
20-02-2023, 11:06 AM
জীবনে বড় হওয়ার দরকার আছে।
এতটাই বড় হতে হবে, যাতে গোস্বামী বাবুর মেয়ের বিয়েতে শহরের নামী কোনও পাঁচতারা হোটেলে ভেটকি পাতুড়ি এবং মটন কষা খেয়ে নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করা যায়, ঠিক তেমনি ও পাড়ার হারাধনের ছোট নাতির বৌভাতে মাছ ভাত আর শাক চচ্চড়ি খেয়েও দিব্যি স্বস্তির ঢেকুর তোলা যায়। জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, উডল্যান্ডসের জুতো পরে যেমন মুম্বাই শহরের 'Altamount Road' বরাবর হাঁটা যায়, তেমনি হাওয়াই চপ্পল পরে গ্রামের মেঠো রাস্তায় হাঁটতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ হয়। জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, কোলকাতার মিত্র ক্যাফেতে যেমন চিংড়ির কাটলেট তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায়, ঠিক তেমনি পাড়ার যতীনের চায়ের দোকানে অনায়াসে গরম চায়ে চুমুক দেওয়া যায়। জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, 'Ray and dale' ব্র্যান্ডের পোশাক পরে শুধু মহানগরীর দুর্গা পুজো পরিক্রমা করলেই হবে না, পাজামা স্যান্ডো পরে গ্রামের সরস্বতী পূজোর বিসর্জনেও সামিল হতে হবে। জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, এয়ার এশিয়া কিংবা ইন্ডিগোর উড়ানে যেমন রাজস্থান ট্যুরে যেতে হবে, তেমনি অফিস ফিরতি বাড়ির পথে রবীনের টোটোতে ঠেসাঠেসি করে তিনজনের সীটে চারজন বসতে কুণ্ঠিত হওয়া চলবে না। জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, বাড়ির ওয়াশ রুমে গীজারের জলে স্নান যেমন উপভোগ করা যায়, তেমনি প্রয়োজনে গ্রামের এঁদো পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করতেও যেন দ্বিধা বোধ না হয়। জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, কোলকাতার বুক ফেয়ারে ভিক্টর হুগোর 'লা মিজারেবল' খুঁজলেই চলবে না, রেলস্টেশনের বাইরের বইয়ের দোকানে ঝুলতে থাকা চটি বইটাও পড়তে হবে বইকি! জীবনে এতটাই বড় হতে হবে যে, বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে যেমন নামী রেস্তোরাঁয় হুল্লোড় করা যায়, তেমনি পাড়ার হরিনাম সংকীর্তনের শেষ দিনে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে সিন্নি প্রাসাদ খেতেও পিছপা না হতে হয়। জীবনে বড় হতে হবে। কিন্তু এতটাও বড় হওয়া বোধ হয় নিষ্প্রয়োজন যাতে, পার্ক অ্যাভিনিউয়ের বডি স্প্রে করেছি বলে, ভিড় লোকাল ট্রেনে পাশের ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত ঘর্মাক্ত লোকটিকে দেখে নাক সিঁটকোতে হবে। জীবনে এতটা বড় না হওয়ায় বাঞ্ছনীয় যাতে শৈশবের সহপাঠী যারা আজ ভাগ্যের পরিহাসে জীবন যুদ্ধে খানিকটা ব্যাকফুটে আছে তাদের দেখেও পরিচয় না দিয়ে না দেখার ভান করতে হয়। জীবন তো একটাই। তাই শুধু বড় হলেই চলবে না। জীবনে ছোট হওয়ার স্বাদ অনাস্বাদিত থেকে যাবে যে ; কী, তাই তো? Bourses
22-02-2023, 10:57 AM
ভাষা দিবসে একটা সার্ভে করে দেখা গেল যত দোকানের নাম সবকিছুর মধ্যেই ইংরেজি আছে...
এমন কোন দোকানের নাম নেই যেখানে পুরোপুরি বাংলায় লেখা। যেমন -- রাজু সার্ভিস স্টেশন জ্যোতি আই হসপিটাল বসুন্ধরা মেডিকেল স্টোর বিজয় ফটো কপি সেন্টার বাবলু হেয়ার কাটিং তারকেশ্বর বার কাম রেস্টুরেন্ট গণেশ লজ্ সেন্টু ওয়াচ্ সার্ভিসিং তাজ কাটারিং সুমন টুরস্ এন্ড ট্রাভেলস গাঙ্গুরাম সুইটস্ এস কে চিকেন সেন্টার দোয়েল সাউন্ড আকাশ টেলার্স টিপটপ ড্রাই ক্লিন্ রাজা রোল এন্ড ফাস্ট ফুড বাংলার এই দশা দেখে মনটা বড়ই হতাশ হয়ে গেল । অবশেষে একটা বোর্ড চোখে পড়ল যেটা পুরোপুরি বাংলায় লেখা -- " *দেশী মদের দোকান্* " মনটা হালকা হল... যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো যে অন্তত নেশারুদের কাছে বাংলা ভাষা এখনও বেঁচে আছে।
22-02-2023, 01:18 PM
পাপ-পূণ্য
-"হ্যাঁ গা বাছা, মন্দিরে না ঢুকে বাইরের রোয়াকে বসে আছ কেন?" -"এমনি।" -"জল ঢালা হয়ে গেছে বুঝি?" -"না… ঢালব না।" -"সেকি বাছা! মন্দিরে এয়েছ, বসেও আছ, জল ঢালবে না?" -"না" -"কেন?" -"এমনি।" -"অ! মানো না, তাই না?" -"মানলেই বা কী! না মানলেই বা কী!" -"তা বটে, তোমার আর তাঁর কারোরই কিছু যায় আসে না।" -"আমার জন্য কারোরই যায় আসে না।" -"এ কী কথা বাছা! বাপ-মা-বৌ-ছাওয়াল শুনলে কি ভাববে?" -" যা ভাবা উচিত, তাই ভাববে। আমি একটা অপদার্থ, একটা… কীট!" -"ওমা, কেন?" -"কারণ আছে দাদু, তুমি বুঝবে না!" -"দিব্যি চোকের সামনে মানুষ বসে আছে দেখতে পাচ্ছি…" -"কেউ দেখতে পায় না আমাকে দাদু। তাই তো…যাক গে, ছাড়ো!" -"আহা, বলোই না। মনের কথা চেপে রাখতে নেই, জানো না? পেটে বায়ূ হয়!" -"আর সারা দুনিয়া যে পায়ের তলায় চেপে রেখেছে?" -"তা যারা রেকেছে, রেকেছে। আবার কেউ তো ভালোওবাসে, তাই না?" -"নাহ্, কেউ ভালবাসে না।" -"এ কেমন কতা বাছা!" -"তুমি বুঝবে না দাদু! দিব্যি আছ, দাঁড়াও গেস করি… রিটায়ার করে গেছ, তাই না? তাই রবিবার দুপুরে, লাঞ্চ-টাঞ্চ করে এই বুড়োরাজ মন্দিরে বসে বিড়ি টানছ?" -"রিটায়ার? নাহ্ রে বাবা, তার উপায় আছে নাকি? কাজ করে যেতেই হয়!" -"এখনও কাজ করতে হয় দাদু? আহা রে?" -"কেন বাছা, 'আহা রে' কেন?" -"না, তোমার তো বয়স হয়েছে অনেক… এখনও কাজ করতে হয়? এখন তো বিশ্রামে থাকার কথা…" -"সে আমার দ্বারা হয় না রে বাপধন!" -"আর দ্যাখো দাদু, আমি সেরকম কিছুই করে উঠতে পারলাম না জীবনে। চেষ্টা করছি, অ্যাপ্লাই করছি বিভিন্ন জায়গায়… কিন্তু ভাল কিছু হচ্ছেই না।" -"ভাল কিছু মানে?" -"মানে ধরো, এমন কিছু যাতে একটু ভাল ভাবে বাঁচতে পারি…" -"মানে গাড়ি, বাড়ি…?" -"হ্যাঁ…" -"আর?" -"আর? ধরো ব্যাঙ্কে দেদার টাকা। যাতে কোনোরকম খরচা করার সময় এতালবেতাল ভাবতে না হয়।" -"আর?" -"আবার কি! একটু দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো…এই তো!" -"আর?" -"আর কিছু না! এইটুকু হলেই তো হয়ে গেল।" -"আর কিচ্ছু না, দাদুভাই?" -"আর ওই তো…" -"ভালবাসা?" -"হুম, কিন্তু এসব আর পাচ্ছি কোথায়? মাঝে মাঝে মনে হয়, আর বেঁচে থেকে কী হবে!" -"আচ্ছা বাছা, আমি তো অনেকক্ষণ ধরেই এখানে বসে আছি, তা দেখলাম তুমি যেন দুটো কুকুরকে কিসব খাওয়ালে? তুমিই ছিলে তো?" -"কুকুরকে? ওহ্, ওরা তো কালু আর ভুলু! ওরা আমার বন্ধু!" -"তারমানে ওরা তোমাকে ভালবাসে, তাই তো?" -"হ্যাঁ, তা বাসে! যেদিন বিস্কুট টিস্কুট কিছু দিতে পারি না, সেদিনও ওরা দৌড়ে দৌড়ে আসে, আদর খাবার জন্য।" -"সেই তো…। তা বাছা, তুমি কি চাগরি করো কিছু?" -"না দাদু, বললাম না, অনেক জায়গায় দরখাস্ত পাঠাচ্ছি, কিন্তু কিছু পাইনি এখনও…" -"তাও তুমি ওদের বিস্কুট খাওয়াতে পারছ… হাতখরচ পাও তার মানে?" -"বাবা দেন দাদু! আমার নিতে খারাপ লাগে, তাও নিয়ে নিই…" -"এই যে বললে কেউ ভালবাসে না?" -"না দাদু, ভালবাসে, বাবা - মা দুজনেই! তাই তো নিজেকে অপরাধী মনে হয়।" -"বাবা-মা-কালু-ভুলু - এখানেই চারজন হয়ে গেল! তারপর ধরো আমি! আমিও ভালবাসি তোমাকে… সেটাই কী যথেষ্ট নয়?" -"তুমি তো আমাকে চেনোই না দাদু!" -"আমি চিনি না? তাও কী হতে পারে!" -"ও বাবা, তুমি সবাইকেই চেনো নাকি দাদু! তুমি মানুষ, না গুগল ডট কম?" -"নাহ্! দুটোর কোনোটাই নয়! তবে, আমি বিভূতিভূষণ, বুঝলে? আমি সব জানি!" -"বিভূতিভূষণ! বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি! তিনি আমার প্রিয় লেখক…" -"নাহ্, আমার কোনো পদবী নেই। আমি শুধুই নাম।" -"শুধুই নাম? কোনো পদবী নেই?" -"না গো বাছা! তুমিই দাদু' বললে, নইলে সবাই তো 'বাবা' বলেন!" -"বাবা বলেন!" -"আর তাই বলছি বাছা, তুমি ভাল থাকবে! তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে…" -"বিভূতিভূষণ! 'বাবা' বলে সবাই আপনাকে!" -"তা বলে বাছা! আচ্ছা, এবার যাই। অন্য একজনের কাছে যেতে হবে।" বলেই উঠে চলে যান উনি। আর স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেটি। ছোটবেলায় 'তালনবমী' গল্পটি পড়ে ঝরঝর করে কেঁদেছিল। তারপর 'পুঁইমাচা', 'আম আঁটির ভেঁপু' আরও কত কী! তখন থেকেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওর প্রিয় লেখক। আর, তাই ও জানে, 'বিভূতিভূষণ' আসলে কার নাম! শ্মশানচারী মহাদেবের অলঙ্কার ছাই বা বিভূতি যে!এটা যে 'বুড়োরাজ' মন্দির! আর, সবাই 'বাবা' বলে ডাকে! তবে কী স্বয়ং 'তিনি'ই ছিলেন? আর বলে গেলেন সব ভাল হবে ওর? পলক পড়ছিল না ছেলেটির! এই একটু আগেই মনে হচ্ছিল সব বৃথা - এ জীবন রেখে আর লাভ কী… আর এখন ভাললাগায় ভরে আছে মন… বাবা! বাবা স্বয়ং বলেছেন ওকে ভালবাসেন! এদিকে তখন হনহন করে হাঁটছিলেন ভুজঙ্গধরবাবু। মাঝে মাঝেই মন্দির বা হাসপাতাল চত্বরে চলে যান উনি। কথা বলে বলে ভেঙে পড়া মানুষগুলোকে একটু ভরসা দেন, সেজন্য কখনও একটু ছলনাও করতে হয় বইকি! তবে জানেন, ভাঙা মন জোড়া লাগাতে একটু মিথ্যের প্রলেপ থাকলেও তাতে পাপ নেই! কারণ, উনি প্রতারক নন, শুধুই কবিরাজ মাত্র - মন ভাল করার জন্য ওষুধ দেন শুধু। এখন তো নিজে থেকেই বুঝে যান কার একটু কথা বলার দরকার। যেমন আজ ছেলেটিকে দেখেই কেমন একটা লাগল! উন্মনা - চোখের দৃষ্টিতে পাগলাটে ভাব। অথচ তারমাঝেও কেমন একটা খড়কুটো পেলেই আঁকড়ে ধরবে - এমন একটা বেপরোয়া ভাব! বহুবছর থিয়েটারে অভিনয় করেছেন, তাই কথার প্যাঁচে ফেলে ছেলেটিকে 'সব ভাল হবে' বিশ্বাস করাতে বেগ পেতে হয়নি। যেমন গতবছরও অন্য একটি মন্দিরে একটি মেয়েকে হাপুশ নয়নে কাঁদতে দেখে সামনে গিয়ে বলেছিলেন "মা গো, আমি প্রণাম করছিলাম, কিন্তু মনে হল কে যেন আমাকে বলে উঠলেন - ওই মেয়েটিকে গিয়ে বল, ওর সব মনের ইচ্ছে পূরণ হবে!" আর মেয়েটির শুনে সে কী খুশি আর সেই খুশিতে আবার কান্না! এই নিয়েই আছেন ভুজঙ্গধর, থুড়ি, 'কবিরাজ বাবু!" পাপী? না প্রতারক? না কি সেসবের বাইরের একজন 'মানুষ'? কে জানে! (আংশিক সত্যঘটনা অবলম্বনে)
23-02-2023, 12:11 PM
#অন্য_রূপকথা
আগামীকাল মহাশিবরাত্রি, তাই আজ আমার 'সংযম' - অর্থাৎ, নিরামিষ খাবার পালা। সেইমতো দুপুরে অফিসের খাবার না খেয়ে বাড়ি থেকে বানিয়ে নিয়ে যাওয়া খিচুড়ি খেয়েছিলাম লাঞ্চে। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় খুউউব খিদে পেয়ে গেছিল। এতটাই, যে মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরছে। তা, মাথার আর দোষ কি, একেই লাঞ্চের পরিমান অল্প ছিল, তারমধ্যে অফিসেই বিকেলে একটু ব্যয়াম করেছিলাম। তাই, খিদে তো পাবেই! আর আমি সেই ছোট্টবেলা থেকেই খিদে একদম সহ্য করতে পারি না। মানে, খিদে পেলে সমানুপাতিক হারে মাথাও গরম হয়ে যায়! আগে তো দিদির সঙ্গে মারপিট করতাম, এখন তো আর সেটা পারি না, তাই ঝটপট খেয়ে নিই। কিন্তু ডায়েট মেনে চলছি বলে অনেকদিন ধরেই বাইরের খাবার খাচ্ছি না। তাই… কী করি ভাবতে ভাবতেই সমাধান পেলাম। আমাদের নাগেরবাজারের কাছেই একটি চায়ের দোকান আছে, সেখানে মুখ দিয়ে 'আহ্' বেরিয়ে আসবেই, এইরকম ওয়ার্ল্ড ফেমাস চা বানায়। তাই, সেখানেই গেলাম। চিনি ছাড়া চা বানাতে বলে একটু পাশের দিকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি, চোখ পড়ল একজনের দিকে! সাধারণ চেহারার একজন বৃদ্ধা - শাড়ি আর গায়ে একটা হাল্কা চাদর দেওয়া। ঠিক আমাদের ঠাকুমা - দিদিমাদের মতোই। আর একহাতে চায়ের ভাঁড়। মুখে কুঞ্চন! একপলক দেখেই বুঝলাম, চায়ের ভাঁড়টি বড্ড গরম - তাই ধরতে অসুবিধা হচ্ছে ওনার। আমিও পারিনা ধরতে। তাই একটু হেসে, বিস্কুট- কেকের বয়ামের পাশের একটুকরো জায়গা দেখিয়ে বলেছিলাম "খুব গরম না? এখানে রাখতে পারেন।" উনিও একগাল হেসে বললেন "থ্যাংকইউ, দিদিভাই!" আমার অনেক সমস্যার মধ্যে একটা হলো, আমি এইধরণের সম্বোধন, মানে কেউ আমাকে 'মা' বা 'দিদিভাই' বলে ডাকলে বুকের মাঝে পাগলাঝোরা বয়ে যায় আমার। হাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করে মুহূর্তটাকে। আর ফিসফিস করে বলতে ইচ্ছে করে "আবার বলবে? আর একবার?" আর হয়ত সেজন্যই ওনার সঙ্গে আলাপ জমালাম। আর কী ভাগ্যিস, আলাপটা জমালাম! বাহাত্তর বছর বয়স ওঁর, বাড়ি নাগেরবাজারের কাছেই সাতগাছি এলাকাতে। 'বয়সের ধর্ম' অনুযায়ী বেশ কিছু রোগ আছে। আর আছে, একাকীত্বের অনুভব! তাই সবমিলিয়ে বয়সের তুলনাতেও বেশি নেতিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু, ওই 'ছিলেন' এখন অতীত! "উনি চলে যাবার পর থেকেই দিনগত পাপক্ষয় করছি মনে হতো গো দিদিভাই! ছেলে বাইরে থাকে, তারা যেতে বলে কিন্তু আমারই আর ইচ্ছে করে না! এমনি কাজের লোকজন আছে, কিন্তু বুকটা খাঁ খাঁ করত! অথচ আমার বয়সে কতমানুষ স্ট্রং থাকে কত! কিন্তু এইবছরের শুরু থেকে একটু গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছি গো মা! এতবছর তো ঘরের কোণেই রয়ে গেলাম, কিছুই করলাম না, দেখলাম না! তাই যা যা করিনি আগে, অথচ এখনও করতে পারব, সেসব করা শুরু করেছি। যেমন, এবার পাড়ার ছোট ছেলেদের সরস্বতী পুজোয় ফল কেটেছি। আগে কোনোদিন করিনি। এখন বিকেলে একটু হাঁটতে বেরোই। আগে কোনোদিন একা একা রাস্তার চায়ের দোকান থেকে চা কিনে খাইনি, ওনার সঙ্গে কখনও বেরোলে খেয়েছি। তবে একা একা - না! কিন্তু এই ক'দিন হলো খাচ্ছি। এবার একদিন ফুচকা খাব! রাস্তার খাবার বলে খাইনি কতবছর হয়ে গেল! একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না!" কেমন জ্বলজ্বলে মুখে বলে গেলেন উনি। অদ্ভুত একটা আনন্দ - একটা তেজ বিচ্ছুরিত হচ্ছিল যেন ওনার অবয়ব থেকে! কত সাধারণ মানুষ, সাধারণ ইচ্ছে - চা খাওয়া, ফুচকা খাওয়া - কিন্তু এই ছোট্ট ছোট্ট কিছুর মাঝে যে আনন্দধারা আছে, বুঝতে পারছিলাম। আমি নিজে আনন্দের পথযাত্রী। একটু একমুখীও। একা একা ঘুরতে, সিনেমা দেখতে, রেস্তোরাঁয় খেতে ভালবাসি। ইনবক্সে উপচে পড়া "আপনি কি সিঙ্গল" এর উত্তরে অনায়াসে বলতে পারি "আই অ্যাম আ লোনার, আমার নিজের সাহচর্য বেশি পছন্দ"। কিন্তু আমি বহুবছর ধরেই এরকম। আর ইনি! কথাবার্তা শুনেই মনে হচ্ছিল, বহুবছর ওঁর স্বামী-সংসারের মাঝেই নিজস্ব অস্তিত্বটুকু গচ্ছিত ছিল। আর তারপরে গ্রাস করেছিল প্রবল একাকীত্ব। কিন্তু এখন, নিজের চেষ্টায়, নিজের জন্য বাঁচছেন উনি। ছোট্ট ছোট্ট 'বাকেট লিস্ট আইটেম' এ 'টিক' দিয়ে বোঝাচ্ছেন - বেঁচে আছেন শুধু না, প্রতিদিন নতুন করে বেঁচে ওঠেন - হয়ত, জীবনে প্রথমবার! আর তাই, ওঁর কথায় এত তেজ! সেই কথাগুলি বলার সময় এত দীপ্তি! এমনিভাবে, জীবনের প্রান্তিক-পর্বে পৌঁছে বেঁচে ওঠা - এ যদি রূপকথা না হয়, তবে 'রূপকথা' আসলে কি…!
28-02-2023, 07:45 AM
"যে নদী যত গভীর, তার বয়ে যাওয়ার শব্দ ততই কম "
দীর্ঘ প্রায় ত্রিশ বছর পর হোটেল লবিতে পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা। শৈশবের অতি সাধারণ শান্ত, শিষ্ট , ভদ্র, বিনয়ী বন্ধুটি দেখতে এখনো সেই আগের মতো।চলাফেরা একেবারেই সাধারণ। কুশলাদি বিনিময়ের পর-বললাম- আমি ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারি। ওকে যতনা বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার আগ্রহ তার চেয়ে গোপন আগ্রহ আমার দামী মার্সিডিজ গাড়িটি দেখানো। ও ধন্যবাদ জানিয়ে বললো- ও নিজের গাড়িতেই যেতে পারবে। পার্কিং লটে দুজনে পাশাপাশি হেঁটে হেঁটে আসলাম। সাধারণ একটা গাড়ি চালিয়ে ও ফিরে গেলো। পরের সপ্তাহে ওকে ডিনারে আমন্ত্রণ জানালাম। ফ্যামিলি নিয়ে আসলো। মার্জিত একটা পরিবার। একেবারেই আড়ম্বরহীন। তবে, মনে হলো-বেশ সুখি। আমার মনের কোনো একটা জায়গা থেকে বারবার ওকে দেখাতে চাচ্ছিলাম— দেখো- আমার কী সুন্দর অভিজাত বাড়ী। দামী বাড়ির সব আসবাবপত্র। নানা রকমের লাক্সারিয়াস সংগ্রহ। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে বুঝাচ্ছিলাম-অফিস ট্যুরে কত দেশে দেশে ঘুরতে হয়। ইশারা ইঙ্গিতে এও বুঝাচ্ছিলাম- ও চাইলে বিজন্যাসে আসতে পারে। কত ধনী মানুষের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে। বড় একটা বিজনেস লোন ম্যানেজ করে দেয়া কোনো ব্যাপারই না। এসব নিয়ে ওর তেমন আগ্রহ আছে বলে মনে হলোনা। বিশ্বের নানা দর্শনীয় স্থান, বিখ্যাত যাদুঘর প্রদর্শনের ছবি দেখিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করলাম- জীবন আমাদের কত মোহনীয়। কত কিছু দেখেছি। আর্ট গ্যালারিতে পরবর্তী প্রদশর্নীর সংবাদ ওকে জানিয়ে বুঝালাম -শুধু দামী বাড়ি আর গাড়ি না। একটা সুন্দর শৈল্পিক মনও আমাদের রয়েছে। এ্যালবামের ছবিগুলো ওরা খুব আগ্রহের সাথে দেখলো। আমাদের সবকিছুর প্রশংসা করলো। বুঝা গেলো আমার জীবন সাফল্যে ‘ও আসলেই খুব মুগ্ধ। তারপর বললো- এসব দেখার পাশাপাশি সুযোগ পেলে শৈশবের পুরোনো বন্ধু , বয়স হয়ে যাওয়া স্যার, নিজের আত্মীয় স্বজনদের দেখো। দেখতে না পারলে অন্তত একটু সময় বের করে খোঁজ খবর নিও। বিজন্যাস আলাপ তেমন গুরুত্ব পেলোনা। শুরু হলো শৈশবের নানা গল্প । স্যাররা সবাই কেমন আছেন। কোন কোন স্যারের সাথে এখনো যোগাযোগ আছে ইত্যাদি । জীবনের ঋণ পরিশোধের আগেই বেশ কয়েকজন স্যার জান্নাতবাসী হয়েছেন-শুনে হৃদয়ে ক্ষরণ হলো। কয়েকজন বন্ধুর চির বিদায়ের খবর জেনে দুজনের মনটাও বেশ আদ্র হলো। আমার বউয়ের এসব গল্প তেমন পছন্দ হলোনা। স্পষ্টভাষী বউ পাশ থেকে বললো- শুধু শৈশব আর শৈশব আর নানা নীতিশাস্ত্র নিয়ে পড়ে থাকলে জীবনে আগানো যায়না। সবারই শৈশব আছে। এটা এমন আহামরি কিছুনা। আমি একটু আড়ষ্ট হলাম। এরপর আর তেমন গল্প জমলোনা। একসময় ওরা বিদায় নিলো। কয়েক সপ্তাহ পর- ওর কাছ থেকে ফোন আসলো। বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বললো- দুপুরে একসাথে খেতে। আমার বউয়ের তেমন আগ্রহ আছে বলে মনে হলোনা। তারপরও আমার জোড়াজুড়িতে রাজি হলো। বন্ধুর বাড়ি এসে দেখলাম- দামি না হলেও বেশ সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো গোছানো একটা বাড়ি। আভিজাত্যের কোনো চমক নেই কিন্তু বেশ একটা শান্ত আর স্নিগ্ধতার পরশ আছে। বসার ঘরে টেবিলের ওপর দেখলাম- আমি যে কোম্পানিতে চাকুরি করি সেই কোম্পানি থেকে পাঠানো সুন্দর একটা গিফট বক্স। আমার কৌতুহল বাড়লো- বললাম- আমিতো এই কোম্পানিতেই চাকুরি করি। তুমি কি এখানে কাউকে চিনো নাকি? ও বললো- ডেভিড পাঠিয়েছে? ডেভিড মানে কোন ডেভিড? ডেভিড থমসন। কি বলো - মিঃ ডেভিড থমসন !! আমাদের কোম্পানীর এমডি? তুমি ওনাকে চিনো? কীভাবে, কেমন করে- আমার নানা প্রশ্ন। আমি জানতাম আমাদের কোম্পানীর ৩০% মালিক ডেভিড। আর বাকি ৭০% মালিক ডেভিডের কোনো এক বন্ধু। শুধু তাইনা বিশাল বড় এই কোম্পানীর পুরো ভূসম্পত্তির মালিকও নাকি সেই বন্ধু। এক সেকেন্ড আগেও কি কল্পনা করেছিলাম- কত বড় বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। মনের যে সব জায়গা থেকে ওকে বারবার আমার দামি মার্সিডিজ, দামি গৃহ, দামি আসবাবপত্র ইত্যাদি দেখিয়ে আভিজাত্য আর জৌলুসের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম- সেই জায়গা থেকে কখন ওকে স্যার ডাকা শুরু করেছি-বুঝতে পারছিনা। এক মন বলছে- বন্ধুকে স্যার ডাকতে নেই। আরেক মন বলছে-যে আমার এমডি স্যারের বন্ধু আর যে নিজেই কোম্পানীর ৭০% মালিক সহ পুরো ভূ-সম্পদের মালিক ওকে স্যার না ডেকে এখন আমি কি ডাকবো। দম্ভ, অহংকার আর আভিজাত্য প্রদর্শনের বেলুন মনে হলো এক মুহুর্তেই চুপসে গেলো। একসাথে লান্চ শেষ করে ঘরে ফিরছি। গাড়িতে বসে আছি চুপচাপ। আমার স্ত্রী আমার চেয়ে আরো বেশি শান্ত আর নীরব। স্পষ্টই বুঝতে পারছি- তার মনের গভীরে এখন কি চলছে? আমাদের দম্ভ, গরীমা আর অহঙকার যত বেশী - যার কাছ থেকে আমার বেতনের টাকা আসে তার এসব তত কম। সে কত অনাড়ম্বর , কত বিনয়ী আর কত সাধারণ তার জীবন যাপন। শৈশবে স্যারের বলা একটা কথা বারবার মনে পড়ছে - "যে নদী যত গভীর তার বয়ে যাওয়ার শব্দ ততই কম।"। Indeed Deeper Rivers Flow In Majestic Silence! কথাগুলো কত সত্য!! কত সত্য !!!! আমি কারুকার্যে খচিত এক ঘটের মাঝে তোলা জল আজ এক গভীর নদী দেখে ঘরে ফিরলাম। ( একটি ইংরেজি গল্পের ভাবানুবাদ) ”collected”
28-02-2023, 11:21 PM
(This post was last modified: 01-03-2023, 10:55 AM by ddey333. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
২৬০০০ লাইকস
২৭০০ রেপু অনেক কিছু জ্বলছে , কিন্তু কিছু করার নেই l আমি বাংলা ফোরামে আর নতুন করে কিছু দেবো না , নিজেকে সরিয়ে দিচ্ছি l শুধু প্রিয় লেখকদের প্রিয় গল্পের ব্যাপারে কিছু বলার থাকলে বলবো ব্যাস l But my postings in English Forum will continue for the time being before I completely withdraw myself from this platform here .
01-03-2023, 07:16 AM
বিপন্ন বার্ধক্য
অফিস ফেরত মনিকাকে প্রায় রোজ বাপের বাড়ি হয়ে শ্বশুর বাড়ি ফিরে ঘর-সংসার সামলাতে হয় । নিজের বাবা, মা যদিও সুস্থ শরীরে রয়েছেন, কিন্তু মাঝে-মাঝেই বার্ধক্য জনিত সমস্যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে । সেটা মাথায় রেখে মনিকা মনে-মনে ঠিকই করে রেখেছিল, বাবা-মা অসুস্থ হলে বেলেঘাটায় নিজের কাছে নিয়ে আসবে । শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় । এক সময় হলোও তাই । বাবা হঠাৎ বিছানা থেকে পড়ে পিঠের শিরদাঁড়া ভেঙ্গে শয্যাশায়ী হতেই মনিকা আর দেরি করেনি । সন্ধ্যার পর বাপের বাড়ি থেকে ঘরে ফিরেই জয়ন্তকে সব কিছু আগাগোড়া জানিয়ে বলেছিল, "আমাকে খুব রূঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে । আমার মায়ের এমনিতে হাটু-কোমরের ব্যাথায় নড়া-চড়া করতে পারে না, তার উপর বাবা হটাৎ শিরদাঁড়া ভেঙ্গে বেড-পেশেন্ট । আমি যেটা বলতে চাই, মা-বাবাকে এ বাড়িতে শিফট করলে আমি অন্তত নিশ্চিন্ত হয়ে যে কটা বছর বাকি আছে, সরকারি অফিসে চাকরিটা বজায় রাখতে পারবো ।" "তোমার বাবা, মা-কে আমাদের বাড়ি শিফট করবে ?" জয়ন্ত হতভম্ব হয়ে বলেছিল, "কিন্তু আমার মা এখানে রয়েছে, তার কথা না ভেবে তুমি ---- !" জয়ন্তর কথার মাঝে ইন্টারাপ্ট করে মনিকা বলেছিল, "আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করেই কথাটা বলছি । বলতে নেই, তোমার মায়ের শরীর-স্বাস্থ্য এখনো ভাল । হ্যাঁ, দুবেলা পেট পুরে খাওয়া-দাওয়া করলে তার কোন চিন্তার কারণ দেখছি না। কাল-ই আমি খোঁজ-খবর নেব, শুনেছি বেহালায় দু-তিনটে মাঝারি খরচের বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে । দু-এক দিনের মধ্যেই ফাইনাল করে নিতে চাই ।" রিটায়ার্ড জয়ন্ত স্ত্রীকে চাপে ফেলতে বলেছিল, "কেনো, তোমার ছোটভাই স্বস্ত্রীক সল্টলেকে তিন কামরার ফ্লাটে রয়েছে । তার-তো উচিৎ নিজের অসুস্থ্য মাকে সঙ্গে রাখা ! আমায় বলার আগে তাকে কথাটা বলেছ ?" "হুঁ, তুমি কি ভাবছো আমি বলিনি, কোন লাভ হয়নি ! এক সময় ভাইকে মা আঁচলের তলায় রেখে মানুষ করেছিল, এখন বউয়ের আঁচল চিনেছে ।" নিজের হতাশা কাটিয়ে মনিকা বলেছিল, "মায়ের সব কথা শুনে ভাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যত টাকা লাগবে সে দিতে রাজি, কিন্তু মাকে সঙ্গে রাখা সম্ভব নয় ।" "সব মানছি," নিরুপায় হয়ে জয়ন্ত বলেছিল, "তোমার বাবা, মা-কে এখানে এনে রাখলে তুমি যদি শান্তি পাও, আমার তাতে কোন আপত্তি নেই । কিন্তু আমার বৃদ্ধা মাকে ঠেলে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে হবে কেন ?" "পাঠাতে হবে কেন ?" মনিকা বেশ উত্তেজিত হয়ে বলেছিল, "শোনো, আট্যাচড বাথরুমের ঘরটা বাবা, মা-র জন্য ভেবে রেখেছি । বাকি রইলো আমাদের থাকার ঘর । ছেলে আমার ধানবাদ থেকে প্রতি শনিবার রাতে এখানে এসে সোমবার ভোর রাতে ফিরে যায় । তাকে আমি ড্রইং-রুমের মেঝেতে শুতে দেব, ভাবলে কি করে ?" জয়ন্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিল, "ঠিক আছে, আস্তে কথা বলো, প্লিজ । মা পাশের ঘরে রয়েছে ।" মনিকা স্বামীর প্রাথমিক সম্মতির আঁচ টের পেয়ে আর দেরি করেনি । দু-এক দিন নিজের দায়িত্বে সব কিছু চূড়ান্ত করে পরের দিনই স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে শাশুড়ির সামনে এসে দাঁড়াল । প্রতিমা দেবী সদ্য সন্ধ্যা আরতি সেরে বিছানায় বসে ছেলেকে দ্বিধাগ্রস্থ হতে দেখে চরম বিস্ময়ে বললেন, "এমন ভাবে চুপ করে রইলি, আমায় কিছু বলবি ?" স্ত্রীর কনুইয়ের খোঁচা খেয়ে জয়ন্ত মায়ের পায়ের পাশে বসে কথাটা ছেঁড়া-ছেঁড়া বলতেই অভিমানের আদ্র-ছোঁয়ায় প্রতিমা দেবীর চোখের কানায় টল-টল করে উঠলো অশ্রু-বিন্দু, এই বুঝি দু-গাল বেয়ে ঝরে পড়বে ! নিজেকে সামলে নিয়ে হতাশ নয়নে বললেন, "এরজন্য কেন এতো চিন্তা করছিস বাবা ? আমি কয়দিন ধরে কানাঘুষো শুনছি । জানি আমায় যেতে হবে, শুধু আমার একটা কথা রাখবি ? আমার রাহুল-সোনাকে শেষ বারের মতো চোখের দেখা দেখে এই বাড়ি ছাড়বো ।" জয়ন্ত মায়ের হাতদুটো ধরে অপরাধী কন্ঠে বলেছিল, "তাই হবে মা, নাতিকে দেখার পরই তোমায় পাঠাবো ।" মনিকা শনিবার সকাল থেকেই শাশুড়ির ব্যবহৃত সব কিছু গুছিয়ে রাখছে । প্রতিমা দেবীর কোন ভাবান্তর নেই । বিকেল গড়াতেই ধীর-স্থির হয়ে বসে রয়েছেন শেষ বারের মতো নয়নের মণি নাতিকে চাক্ষুস দেখবে । রাত নটা নাগাদ রাহুল বাড়ি ফিরতেই মনিকা তাকে পাশের ঘরে টেনে নিয়ে গেল, তার মন বুঝতে । তারপর, ছেলেকে নিয়ে শাশুড়ির ঘরে ঢুকেই মনিকা বেশ নিশ্চিন্ত মনে বললে, "মা আপনার কথা আমরা রেখেছি । নাতিকে এবার দু-চোখ ভরে দেখুন । আপনাকে কাল বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে বলে আমাদের অপরাধ নেবেন না ।" রাহুল প্রণাম করে ঠাম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললে, "ঠাম্মা, তুমি শান্ত মনে আমায় দেখার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছো । তোমাকে কাল এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে, সত্যি করে বলতো, তোমার মন খারাপ হচ্ছে না ?" প্রতিমা দেবী নাতির মুখে স্নেহের চুম্বন এঁকে নিরাশ হয়ে বললেন, "তোর সাথে দেখা হলো, আমি নিজের জন্য আর কিছু চাইনা ।" "তোমার কিছুই চাইনা ? কিন্তু আমার অনেক চাওয়ার আছে ।" রাহুল এবার সপ্রতিভ হয়ে মা-কে বললে, "ঠাম্মা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে ঠিকই । কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে নয়, আমার কাছে । আমি নতুন ফ্লাট নিয়েছি । তোমাদের কোন আপত্তি আছে ?" "তার মানে !" মনিকা অবিশ্বাস্য কন্ঠে অভিমান করে বললে, "তোকে আমরা কতো কষ্ট সয়ে মানুষ করে তার এই প্রতিদান দিচ্ছিস !" "মা তুমি আমায় জন্ম দিয়েছো ঠিকই, কিন্তু এই বাড়িতে বড় হওয়ার সাথে-সাথে দেখেছি, তোমরা দুজনে দিনের আলোয় অফিস, সন্ধ্যার পর পার্টি, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব করে কাটিয়েছো । এই ঠাম্মা আমায় মায়ের স্নেহ, বন্ধুর সহচার্য্য দিয়ে বুকে আগলে রেখেছিলেন, আর বলেছিলেন মানুষের মতো মানুষ হতে । আমি স্রেফ সেই কাজটাই করছি মা !" "মানবতার কথা বলছিস ? কিন্তু ভেবে দেখেছিস, এই বৃদ্ধাশ্রম বুক করতে বাবাকে কতো টাকা জমা দিতে হয়েছে ?" রাহুল ঠাম্মাকে জড়িয়ে ধরে মার পানে তাকিয়ে বললে, "বাবা যে টাকাগুলো ওখানে জমা দিয়েছে, থাকতে দাও মা । অদূর ভবিষ্যতে হয়তো তোমাদের ওই বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হতে পারে, তখন নয়তো ওই টাকাটা কাজে আসবে ! বরেন দাস
01-03-2023, 05:43 PM
(This post was last modified: 01-03-2023, 05:43 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাঁচতে গেলে লড়তে হবে !
লড়তে গেলে মরতে হবে ! জীবন মরণ সব কিছুই তাই এইখানেতেই লুটিয়ে যাই ! তাই বলে মারব মানুষ ? হারাইনি এখনো মান আর হুঁস ! ধর্মের নামে অন্ধ যারা ! মনবতার শিকারী তারা ! তাদের মারতে নেইকো ভয় ! মানবতার হবেই জয় ! ধর্মের নামে অবিচার অনেক হয়েছে নয়তো আর ! ধর্ম ধুয়ে জল খা ! সব ভুলে একবার মানুষ হয়ে যা ! নইলে মরতে হবে তোদের বুঝবি সেদিন বিভেদ কাদের ! মানুষ হয়ে বাঁচতে শেখ ! ছার ধর্মের সকল ভেক ! হোক ভালবাসার জয় ! মনুষ ই হোক মোর পরিচয়! লেখা : দাদা অফ ইন্ডিয়া
02-03-2023, 10:05 AM
*পাপের বাপ কে ?*
এক শহরে এক ব্রাহ্মন বাস করতেন। তাঁর একটি সন্তান ছিল। বিদ্যা শিক্ষার জন্য তাকে গুরুকুলে পাঠানো হল। কিছু বছর শিক্ষা সম্পূর্ণ করে সে বাড়ি ফিরে এল। এসে তাঁর পিতা কে বলল- পিতা আমি সকল শাস্ত্র তথা বেদ ,পুরান , ভাগবত , ন্যায়, স্মৃতি সব অধ্যায়ন করে এসেছি। কোনও কিছুই আর বাকি নেই। আপনি আমায় পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তখন ব্রাহ্মন বললেন- সে ঠিক আছে , তো ওসব নয় পরে জিজ্ঞাসা করে দেখা যাবে, তুমি এত শিখে এসেছ যখন তখন তোমায় একটা প্রশ্ন করি তার যদি উত্তর দিতে পারো তবে জানবো তোমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। তখন ব্রাহ্মন পুত্র বলল- বেশ আপনি জিজ্ঞাসা করুন। তখন ব্রাহ্মন বললেন- আচ্ছা পাপ কি জানো তো? পুত্র বললে- হ্যাঁ। তখন ব্রাহ্মন বললেন- বলতো পাপের বাপ কে ? পাপের বাপ!! শুনে তো ব্রাহ্মন পুত্র অনেক চিন্তা করলেন , কিন্ত কিছুতেই উত্তর খুঁজে পেলেন না। তখন সে তার লোটা কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন আর পিতা কে বলে গেলেন- আমি যাচ্ছি এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে , যত দিন না এর উত্তর পাই ততদিন আমি আমি এই গৃহে ফিরবো না। এই বলে ব্রাহ্মন পুত্র দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো আর সকল কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো – পাপের বাপ কে? কিন্ত কারোর কাছেই এর সদুত্তর পেলো না। একদিন ঘুরতে ঘুরতে এক গ্রামে উপস্থিত হল। দেখে সামনেই এক সুন্দর বাড়ি। সারা বাড়ি সুন্দর করে মাটি দিয়ে নিকানো। সামনে তুলসী মঞ্চ। এদিকে ব্রাহ্মন পুত্রের খুব তেষ্টা পেয়েছে , তাই ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই এক সুশীলা রমণী বেরিয়ে এসে বললেন- হে ঠাকুর আমার গৃহে আপনার পদস্পর্শে ধন্য হল। বলুন আপনার কি সেবা করতে পারি? তখন ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- আমি খুব তৃষ্ণার্ত আমায় একটু জল দিতে পারেন? রমণী বললেন- সে কি ঠাকুর ! সামান্য জল , সে আর দিতে পারব না। দাঁড়ান আমি এখুনি এনে দিচ্ছি। বলে ভিতর থেকে পরিস্কার নির্মল এক পাত্র ঠাণ্ডা জল এনে দিল ব্রাহ্মন পুত্র কে। পরম তৃপ্তি তে সেই জল পান করে পাত্র টি ওই রমণীর হাতে দিয়ে ব্রাহ্মন পুত্র জিজ্ঞাসা করলেন- আচ্ছা , এই গৃহের মালিক কে? সেই ব্রাহ্মন বৈষ্ণব কে দেখছি না তো? কারণ ব্রাহ্মন পুত্র ভেবেছে যে , যে বাড়িতে তুলসী মঞ্চ আছে সেই বাড়ি নিশ্চয়ই কোনও বৈষ্ণবের বাড়ি। যাই হোক ব্রাহ্মন পুত্র এর প্রশ্নের উত্তরে ওই রমণী বললেন- ঠাকুর , এ কোনও ব্রাহ্মন এর গৃহ নয় এ হল বেশ্যার গৃহ। আমি এই গৃহের মালিক। এই শুনে ব্রাহ্মন পুত্র তিন লাফ খেয়ে উঠে বলল- ছিঃ ছিঃ! হায় রাম! এ কি করলাম আমি? পাপের বাপ খুঁজতে এসে নিজেই পাপ করে বসলাম! বেশ্যার হাতে জল খেয়ে আমি এ কি পাপ করলাম!! হায় ভগবান আমায় এখন গঙ্গা স্নান ও প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে! ওরে ও হতভাগী কুলটা! তোর এত টুকু বুক কাঁপল না আমাকে জল দিতে? আমি তোকে অভিশাপ দেব। সঙ্গে সঙ্গ রমণী বললেন- ঠাকুর আমার একটি নিবেদন আছে। পাপ তো যা হবার হয়েছেই। বলি কি আমি আপনার ভোজনের ব্যবস্থা করি , আপনি দুটো খেয়ে যান।আপনি না হয় একটার বদলে দুটো ডুব দেবেন গঙ্গায় আপনার পাপ ধুয়ে যাবে। আর আপনার ভোজন দক্ষিণা হিসাবে আমি আপনাকে পাঁচটি স্বর্ণ মুদ্রা দেব। ব্রাহ্মন পুত্র মনে মনে ভাবলেন , তাই তো পাপ যা হবার হয়েইছে যদি ভোজন করে একেবারে প্রায়শ্চিত্ত করি ক্ষতি কি উল্টে দক্ষিনাও মিলবে। তখন ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- ঠিক আছে চাল , ডাল ইত্যাদি এনে দাও আমি স্বপাকে ভোজন করবো। তখন আবার রমণী বললেন- ঠাকুর একটা নিবেদন আছে , যদি আমি স্বহস্তে আপনাকে রান্না করে দিই। আপনি ভোজন করবেন। আমি না হয় ২০ স্বর্ণ মুদ্রা আপনাকে দেব দক্ষিণা স্বরূপ। আপনি না হয় গঙ্গায় তিনটে ডুব দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে নেবেন। ব্রাহ্মন পুত্র অনেক ভেবে সম্মত হলেন। তখন ওই রমণী কিছুক্ষণ পর ভোজন প্রস্তুত করে ব্রাহ্মন পুত্র এর সামনে রাখলেন।ব্রাহ্মন পুত্র আচমন করে খেতে যাবেন অমনি ওই রমণী বলে উঠলেন- ঠাকুর ! আমার একটি নিবেদন ছিল। আমার খুব সাধ আমি আপনাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিই। অবশ্য এর জন্য আপনাকে ৫০ স্বর্ণ মুদ্রা আমি দক্ষিণা স্বরূপ দেব। আর আপনি একেবারে গঙ্গায় গিয়ে পাঁচ ডুব লাগাবেন আর আপনার সব পাপ ও ধুয়ে যাবে। তা ব্রাহ্মন পুত্র চিন্তা করে রাজি হলেন। তখন ওই রমণী এসে নিচু হয়ে মুখে খাবার তুলে দেবার পরিবর্তে সজোরে এক চড় মারলেন। তখন ব্রাহ্মন পুত্র ক্রোধে আসন ছেড়ে উঠে বললেন- কুলটা !! তোর এত সাহস! তুই আমার গালে চড় মারিস!! তোর সমুহ সর্বনাশ হবে। তখন ওই রমণী বললেন- ঠাকুর!তুমি যে আমার হাতে খেতে চাইলে , এক কুলটার হাতে খেতে চাইলে কেন বলতে পারো? ব্রাহ্মন পুত্র বললেন- তোমার ভক্তি ভাবে আমি রাজি হয়েছিলাম। রমণী বললেন- ভুল। তুমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে দেখ!! কোনও ভাব , প্রেম নয় তুমি স্বর্ণ মুদ্রার লোভে রাজি হয়েছিলে। শোন ঠাকুর তুমি দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিলে পাপের বাপ কে জানতে? শোন পাপের বাপ হল লোভ। পৃথিবীতে যত পাপ সংঘটিত হয় সব লোভের দ্বারা পরিচালিত হয়ে। তুমি ব্রাহ্মন পুত্র তবুও তোমার লোভ তোমাকে পাপের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। লোভ কে জয় করো তাহলে পাপ ও দূরীভূত হবে। জেনে রাখবে পাপের বাপ হল লোভ। ব্রাহ্মন পুত্র অধোবদনে সব শুনে আস্তে আস্তে ওই গৃহ পরিত্যাগ করে নিজ গৃহের দিকে যাত্রা করলেন । (সংগৃহীত.. )
02-03-2023, 05:49 PM
*ঋতু বিহারী*
১ নদীর ধারে দাড়িয়ে বাবা দলছুট কয়েকটি পাখির দিকে আঙ্গুল তুলে আমাকে বললেন, -- 'এরা আর কোন দিন তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে না। কেন জানিস?' আমি বললাম: -- 'জানি না বাবা। কেন ফিরে যেতে পারবে না?' -- 'এদের সঙ্গী, শিকারির হাতে ধরা পড়েছে। এরা এখনো তার সন্ধানে আছে। যদি কখনো খুঁজে পায় তাহলে একসাথে যাবে।' বাবা বললেন। -- 'যদি খুঁজে না পায়?' আমি জানতে চাইলাম। -- 'খুঁজে না পেলে এরাও একদিন কোন শিকারির হাতে ধরা পড়বে, বাজারে বিক্রি হবে।' বাবার মুখ তখন বিষণ্ণ লাগে দেখতে। ছোট বেলায় আমাকে নিয়ে বাবা শীতের অথিতি পাখি দেখতে নিয়ে যেতেন। শীতের শেষে না ফেরা পাখি গুলোর জন্য তার অনেক মায়া হত। শীত চলে যাচ্ছে, তাই পাখি দেখতে গ্রামে যেতে চাইছে। গ্রামের বাজার থেকে কিছু দূর হেটে রাস্তার পাশে একটা শত বছরের পুরনো বট গাছ। বাবা সেই বটতলার মাচায় বসে পাখি দেখবেন। আমিও বলেছি বাবাকে সময় করে নিয়ে যাবো।
02-03-2023, 05:51 PM
২
রাত বারোটর সময় দরজায় টোকা শুনে বিছানা থেকে উঠে আসি। দরজা খুলে দেখি বাবা দাড়িয়ে আছেন দরজার সামনে। এতো রাতে বাবার রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে হল। আমি বললাম, -- 'বাবা তোমার সুগার লেবেল অনেক বেশী মনে আছে? ডাক্তর...' -- 'তুই কি আমাকে রসগোল্লা খাওয়াবি না? হ্যা কিংবা না বল।' বাবা একটু রেগে গেলেন মনে হচ্ছে। আমি ফ্রিজ থোকে মিষ্টি বের করে খেতে দিলাম। বাবা খাবে না। দোকানে গিয়ে বসে খাবেন। আমি বললাম, -- 'এতো রাতে কোন মিষ্টির দোকান খোলা নেই বাবা।' এবার আরেকটু বেশী রেগে বাবা বললেন, -- 'দোকান কোথায় খোলা আছে জানি না। আমি দোকানে বসে, রসে ডুবানো রসগোল্লা খাবো।' বাবার সাথে আমার এই কথা গুলো আমাদের শোবার ঘর থেকে শুনছে মলি। আমি প্যান্ট পড়ে গাড়ির চাবি নিয়ে তৈরী হলাম। মলি বিরক্ত হয় নি বোঝা গেল, যখন সে আমাকে বললো, -- 'স্টেশন রোডে একটা দোকান খোলা পেতে পারো।' বাবা লুঙ্গী পড়েই গাড়িতে উঠলেন। স্টেশন রোডের সেই দোকানে বসে বাবার মিষ্টি খাওয়া দেখে চোখে জল এসে গেল আমার। কি শিশু সুলভ আচরণ! মনে পড়ে শৈশবে বাবা রাতে বাড়ী ফিরে মাঝ রাতে আমাকে আর বুবুকে ঘুম থেকে তুলে মিষ্টি খাইয়ে দিতেন। মুখে অর্ধেকটা মিষ্টি নিয়ে চোখ ঘুমে ঢলে পড়তাম আমরা দুই ভাই বোন। বাবা আলতো করে দুই গালে হাতের স্পর্শ দিতেন। পুরোটা খাওয়া শেষ করে জল খাইয়ে মুখ মুছে দিত গামছা দিয়ে। তখন বাবার চোখে কি আনন্দ! আমারো তেমনই আনন্দ লাগছিলো বাবার রসগোল্লা খাওয়া দেখে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে দেখে বুঝতে পারলাম মানুষ কিভাবে শিশু থেকে বড় হয়ে আবার শিশু হয়ে যায়। আটাত্তুর চলছে বাবার। বছর খানেক হল এমন পাগলামি বেড়েছে। মা মারা যাওয়ার পর থেকে। মা মারা যাওয়ার পর একা গ্রামে রাখা সম্ভব ছিল না বাবাকে। বাবা গ্রাম ছেড়ে আসতেও রাজী হচ্ছিলেন না। রান্না বান্না কে করবে? দেখা শোনা কে করবে? এইসব বুঝিয়ে শুনিয়ে বাবাকে আমার কাছে নিয়ে এলাম। প্রথম কয়েকদিন খুব সমস্যা হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাগলের মত হয়ে যেত হাটার জন্য। সকালে তিন চার কিলো মিটার না হাটলে তার ভালো লাগে না। সেক্টরের পার্কে হাঁটতে নিয়ে যাই। তাতে বাবার মন ভরে না। সকালে উঠে প্রায় প্রতিদিন শুনতে হত, -- 'আমাকে এভাবে কতোদিন খাঁচায় বিন্দি করে রাখবি? বনের পাখি বনে ছেড়ে দে বাবা।' রাতে বাবা ঘুমায় না। সারারাত জেগে থাকে। শোবার ঘর থেকে রান্নাঘর হাঁটাহাটি করে। রাতের বেলা বসে বসে সিগারেট খায়। দিনের বেলা দারোয়ানকে দিয়ে সিগারেট আনিয়ে বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। মলি প্রতিদিন রান্নার আগে বাবার কাছে জানতে চায়, -- 'বাবা আজ আপনার কি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে?' বাবা হয়তো বলবে পাবদা মাছ অথবা মৌরলা মাছ। বাবার পছন্দের খাবার গুলো ঘরে মজুদ রাখে মলি। মলির বাচ্চা হবে মাস চারেক পর। এই শরীর নিয়ে নিজ হাতে বাবার পছন্দের খাবার রান্না করে। কথায় কিংবা কাজে বাবা মনে কষ্ট পাক আমি মনে প্রাণে চাই না। বাবার প্রতি বিরক্ত হতে আমি কখনোই চাই না। কিন্তু আমি অনুভব করলাম ক্রমে ক্রমে আমার মনের মধ্যে বাবার প্রতি বিরক্তির জন্ম নিচ্ছে। এমন গোপন বিরক্তি যা মানুষ কথায় কিংবা কাজে প্রকাশ করে না। পৃথিবীর সব ভালো মানুষের মনেও হয়তো এমন গোপন বিরক্তি ঘাপটি মেরে থাকে। আমি কতোটা ভালো মানুষ তা আমি জানি না, কিন্তু আমি একজন ভালো সন্তান। তারপরেও আমাকে কেন গোপন বিরক্তি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমি হয়তো আর ভালো সন্তান নেই। আমিও মন্দ সন্তান হয়ে গেছি। পৃথিবীর সব ভালো মানুষ গুলোই কি আমার মতো এমন মন্দের সাথে লড়তে লড়তে হেরে যায়? আমি কি হেরে গেছি? |
« Next Oldest | Next Newest »
|
Users browsing this thread: 25 Guest(s)