Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
|| এক্কাদোক্কা ||

 
সৌরভ ভট্টাচার্য 
==============
কপালে শেষ ট্রেনই ছিল কাঁচরাপাড়ায় নামলাম ঠাণ্ডা জাঁকিয়ে পড়েছে যা ভেবেছিলাম তাই কিচ্ছু নেই আমার গন্তব্য হাঁটাপথে আধঘন্টা এখন 
 
     প্লাটফর্ম থেকে নেমে আগে একটা লাঠি খুঁজলাম কুকুরগুলো জ্বালিয়ে মারবে নইলে পেয়েও গেলাম হাঁটা শুরু করলাম 
 
     সামনেই রেলের হাস্পাতাল এদিকটায় আসতে একটু গা ছমছম করে রাতে অল্প কুয়াশা কুয়াশা পড়েছে হাঁটার স্পিড বাড়িয়ে দিলাম 
 
     সবে ফার্স্ট এভিনিউটা ধরেছি, হঠাৎ পাশে আলো এসে পড়ল টোটো একটা 
 
     কোথায় যাবেন?
 
     দরকার নেই দাদা.. এগিয়ে যান..
 
     আরে কোথায় যাবেন বলুন না
 
     চাকলা 
 
     আসুনআমিও ওদিকেই যাব.. ছেড়ে দিইপঞ্চাশ টাকা দেবেন 
 
      আসলে সমস্যাটা হল সেইখানেই টাকা নেই একটা দশ টাকা পড়ে আছে বললাম, যান না দাদালাগবে না বললাম তো….
 
     চলে গেল 
 
                          =======
 
     আমার সমস্যাটা হল হিসাবের কাঁকিনাড়াতে মামাদের চশমার দোকান নতুন করে সাজানো হচ্ছে আমার উপর দায়িত্ব দোকান বন্ধ করে ফেরার আজ মিস্ত্রি দেরি করল কাজ শেষ করতে খিদে পেয়ে গিয়েছিল এটা সেটা খাওয়ায় পর এই পড়ে আছে পকেটে 
 
     ফার্স্ট এভিনিউয়ের শেষে টোটোটা দাঁড়িয়ে চালক মুখটা বার করে আমার দিকে তাকিয়ে
 
    আসুন না দাদাআচ্ছা তিরিশ দেবেন….
 
    নেই... দশ আছেহবে? তাছাড়া সেটাই বা দেব কেনযাব না তো বললামহ্যাজাচ্ছেন কেন?
 
     যা শালা!
 
     চলে গেল 
 
     আমি ডানদিকে ঘুরে ফিফথ এভিনিউয়ের দিকে এগোলাম বেশ কনকন করছে পা কিটো পায়ে মোজাটা কেন যে আনলাম না ইচ্ছা করছে জ্যোৎস্নার সঙ্গে কথা বলি থাক প্রচুর লোক ওদের বাড়ি ওর দাদার বিয়ে কাল আমাকে সময় দিয়েছে চার বছর তার মধ্যে দোকান দাঁড় করিয়ে দেব বড়মামা হেল্প করবে তিরিশ বছর হবে তখন আমার আজকাল বিয়ের জন্য এমন কিছু দেরী নয় জোনপুরে দোকান ভাড়া পাওয়া যাবে 
 
     ফিফথ এভিনিউয়ের সামনে আবার দাঁড়িয়ে টোটোটা 
 
     আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম রাস্তা চেঞ্জ করব? একটু ঘুর হবে এই ফোর্থ এভিনিউ ধরে এগোলে যাব? কিন্তু কেন? ব্যাটার কোনো বদ মতলব আছে কি? কিন্তু কি নেবে আমার কাছে? মাল খেয়ে আছে?
 
     এগোলাম সে টোটো থেকে নেমে দাঁড়ালো আমার মুখোমুখি রাস্তা আটকে দাঁড়ালো খপ্ করে আমার হাতটা ধরে বলল, টাকা লাগবে না…. বোনটা মর্গেসুইসাইড…. লাশ কাল দেবেবড্ড ভয় লাগছেআমি বেরিয়েছিলাম সুইসাইড করতে….. মনে মনে ভেবেছিলাম রাস্তায় যদি কাউকে দেখি.. তবে জানব ঠাকুর চাইছেন আমি বাঁচিকেউ না থাকলে ভাবব.. তাই ইচ্ছা করে রেলকলোনিতে এলামজানি কেউ থাকে না এই সময়ে…  আপনি বলুন তো ঠাকুর আমায় কেন বাঁচতে বলছেন….
 
                         =======
 
     কেন মরলেন উনি?
 
     বরটার অন্য মেয়ের সঙ্গে লাফড়া ছিলআমার বোনও কিছু ধোয়া তুলসীপাতা ছিল না দাদাকিন্তু হাজার হোক বোন তোকি জানি হঠাৎ সেন্টি খেয়ে কেন গলায় দড়ি দিয়ে দিল….
 
     আমি আর বিশ্বজিৎ সামনা সামনি বসে বোনের নাম বলেনি 
 
     হঠাৎ নেমে গেল টোটোর মাথায় হাত দিয়ে বলল, কি শিশির পড়েছে দেখুনআসুন 
 
     অন্য সময় হলে হাত দিতাম না এখন নামলাম হাত শিশিরে ভিজল বললাম, বাড়িতে কে আছে?
 
     মা, বাবা, আমিব্যস...
 
     সুইসাইড করে নিই? আসলে বোনটা আমার জান ছিলআমার বাইক ছিল জানেনগায়ের রক্ত জল করে কিনেছিলামমালটার বিয়ের জন্য বেঁচে দিলাম…..
 
     হুস্ করে কেঁদে ফেলল স্বাভাবিক না কান্নাটা রাস্তায় উবু হয়ে বসে চালকের আসনে হাতটা দিয়ে কাঁদছে কি সব বলছে 'টা কুকুর ঘেউঘেউ করে তেড়ে এলো আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম কি করব, চলে যাব
 
                         =======
 
     ঠক্ করে একটা আওয়াজ হল বিশ্বজিৎ সিট থেকে মাথাটা তুলে বলল, এখনই! দাদার সঙ্গে একটু কথা বলছিলাম যে
 
     আমি কিছু বুঝতে না পেরে হাঁ করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কুকুরগুলো অসম্ভব ডাকছে রেললাইনটা খুব দূরে নয় মনে হচ্ছে একটা মালগাড়ি যাচ্ছে 
 
     বিশ্বজিৎ আমার সামনে এসে টোটোর ছাদে দুটো হাত দিয়ে আমার মুখের কাছে মুখ এনে বলল, বোনটা এসেছে খেলবে বলছে আপনি একটু বসবেন?
 
     আমি 'হ্যাঁ, না' কিছু বলার আগেই দেখলাম ফোর্থ এভিনিউয়ের পীচের রাস্তার ওপর খসখস করে এক্কাদোক্কার ছক কাটা হয়ে গেল
 
     বিশ্বজিৎ ওদিকে তাকিয়ে বলল, প্রথমে তোর দান তুই খেল আমি আসছি
 
     আমার কপাল ঘামে ভিজছে তলপেটে মাংসপেশিগুলো খামচে ধরছে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যা দেখছি বিশ্বজিৎ হাসছে খেলছে আমি আর কাউকে দেখছিও না, কথাও শুনতে পারছি না 
 
                         =======
 
     হঠাৎ "দাদা একটু আসছি", বলে বিশ্বজিৎ অন্ধকারে মিলিয়ে গেল আমি উঠতে চাইছি, কিন্তু শরীরে ওঠার শক্তি নেই মামাকে ফোন করব? থাক টোটো থেকে নামলাম বলতে গেলে জোর করে নামালাম নিজেকে দুটো পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরে টোটোটা ধরে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ যতক্ষণ না পায়ে সাড় আসে প্রায় ছুটতে শুরু করলাম
 
     চাকলা ঢোকার মুখে হঠাৎ মনে হল পিছন থেকে টোটোটা আসছে দেখলাম প্রচন্ড স্পীডে টোটো চালিয়ে আসছে বিশ্বজিৎ একবার ভাবলাম দৌড়াই লাভ নেই ধরে ফেলবে যা থাকে কপালে দাঁড়িয়ে পড়লাম নিজের বুকের আওয়াজ রেলের চাকার মতোন ঘটাশ ঘটাশ করছে
 
      বিশ্বজিৎ টোটোটা সামনে দাঁড় করাল বলল, সরি দাদা আপনাকে অকারণে অনেকটা বিব্রত করে ফেললাম আপনি একটা কথা শুধু আমায় বলুন, আমি কি বোনের সঙ্গে যাব, না থাকব? বোন বলল, মদনপুর থেকে ডাউনে একটা মালগাড়ি আসছে অপেক্ষা করছে রেলের হাস্পাতালের সামনে রেললাইনের ধারটায় ওখানে আমি আর বোন লাইনের ওপর পাথর রেখে, পয়সা রেখে দেখতাম লাইনে চাপা পড়লে কি হয় গলাটা রেখে দেব দাদা? নইলে বোনটা একা হয়ে যাবে
 
       আমার মাথাটা সম্পূর্ণ চিন্তাশূন্য কিচ্ছু ভাবতে পারছি না বুকের মধ্যে ভুটভুটি কাটার শব্দ স্পষ্ট নয় বিশ্বজিৎ ফ্যালফ্যাল করে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে যেতেই তো পারে আমিও যেতেই পারি এই গলি, এই মাটি, এক আকাশ তারা --- এরাই তো থাকবে অনন্তকাল আমাদের থাকায় কি আসে যায়?
 
     টোটোটা দাঁড়িয়ে থাক রাস্তায় ডাউনে আসুক মালগাড়ি ছিন্ন হয়ে যাক, শেষ হয়ে যাক সব কার কি ক্ষতি?
 
     বললাম, বিশ্বজিৎ, কেন যাবেন... থাক না
 
     ফিরে এলাম তাকালাম না পিছনে টোটোর শব্দ মিলিয়ে গেল মাথার মধ্যে অঙ্কুরিত হচ্ছে দ্বন্দ্ব ভুল করলাম
 
     পরের দিন ভোরে মামার বাইকটা নিয়ে ছুটলাম লাইনের দিকে কি দেখতে চাইছি? কি দেখলে খুশি হবো
 
     আকাশ অল্প অল্প ফরসা হচ্ছে কয়েকজন এই ভোরেও মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে এত ঠান্ডাতেও বাঁচার কি প্রবল তাগিদ মানুষের! বাজার বসেনি এখনও মাছের গাড়ি ঢুকছে শাক-সব্জি আসছে ভ্যানে 
 
     কেউ কাটা পড়ে নি

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
কানায় কানায় ভর্তি, গেঁজে ওঠা ফেনিল খেজুর রসের গ্লাস গলায় ঢেলে #গ্যাঁড়া বলে উঠলো,

—'শুন মাষ্টার, #ফিস্টি আর #পিকনিক কিন্তু এক নয়৷ এমনকি, ফিস্টির সাথে পিকনিকের দূরদূরান্তের কোন সম্পর্কই নেই৷ দুটোই আলাদা বিষয়, আলাদা প্রসিডিওর, আলাদা ভাবাবেগ, আলাদা চেতনা এবং সম্পূর্ণ আলাদা ঐতিহ্যের৷ তাই দয়া করে এদের এক করে দিস না৷ বরং আয়, দেখে নিই ফিস্টি আর পিকনিকের মধ্যে আসলে পার্থক্যটা ঠিক কোথায়৷
 
ফিস্টিপ্রথমেই বলি, বিনা প্ল্যানে যেটা হয় সেটা ফিস্টি৷ সকালবেলা দুই বন্ধুর দেখা হল বাজারে, হুট করে বাইকে বসে বসেই ঠিক হল ' মাড়া' তারপর ফোনে ফোনে আর পাঁচ সাত দশ বিশজন মিলে শুরু হয়ে যাওয়ার নাম ফিস্টি৷
পিকনিকসবসময় প্ল্যান করে হয়৷ তিন চার মাস আগে থেকে ডেট এডজাস্ট করতে হয়৷ কার অফিস ছুটি থাকবে, কার কলেজ বন্ধ থাকবে, কার মামাশ্বশুর আসবে, কার ডাক্তার দেখানোর ডেট, কার ক্লায়েন্ট মিটিং৷ এই সবকিছু এডজাস্ট করে তবে পিকনিকের ডেট ঠিক হয়৷
ফিস্টিতে সবসময় নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে লোক বেশি হয়৷ মাঝরাস্তায় "কি বে, আমাকে বল্লিনি মাড়া' বলে কেউ বাইকের পিছনে উঠে বসলে তাকে নামানোর নিয়ম নেই৷
পিকনিকতে অবশ্যই লোকসংখ্যা কমবে৷ সেই নির্দিষ্ট দিনে নিশ্চই কারও মামার শালীর বিয়ে পড়বে, অথবা অফিসের চাপ, বা বৌয়ের শরীরখারাপ, গাড়ি সার্ভিসিং, ছেলের কলেজের এনুয়াল প্রোগ্রামের প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন সেরিমনি৷
ফিস্টি কোন নির্ধারিত জায়গা থাকে না৷ হতে পারে ঘরের পাশের জঙ্গল, কারও কনস্ট্রাকশন সাইট, বাসস্ট্যান্ডের পিছনের ফাঁকা জায়গা, পাথর খাদানের সাইড, ক্লাবের ছাদ, দূর্গামন্ডপ এমনকি বৌ বাপের বাড়ি গেলে সেই ঘরেও ফিস্টি করা যায়৷
পিকনিকএর জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট জায়গা থাকে৷ কোন পপুলার পার্ক, ট্রাভেল সাইট, দর্শনীয় স্থান, দামি রেস্তোঁরা, নিদেন পক্ষে হোটেল বুক করে পিকনিক করতে হয়৷
ফিস্টি নির্দিষ্ট টাইম থাকে না৷ দুপুর বারোটায় শুরু হয়ে তিনটের মধ্যেও শেষ হতে পারে, আবার রাত্রি আটটায় শুরু হয়ে পরের দিন দুপুর পর্যন্তও চলতে পারে৷ মোটামুটি ঘরে ঢোকার আগে যেন  মুখে গন্ধ না থাকে৷
পিকনিকনির্দিষ্ট টাইম মেনে হয়৷ পিকনিকের টাইম ঠিক হয় ট্রেনের টাইম ধরে, বাসের টাইম ধরে, ড্রাইভারের টাইম ধরে৷ পিকনিকে যাওয়ার টাইম নির্দিষ্ট, ফেরার টাইমও নির্দিষ্ট৷
ফিস্টিতে কোন ডেকোরাম মেইনটেন হয় না৷ ডি'লেভেলের কর্মচারিও ' লেভেলকে নিঃসংকোচে #সুদীরভাই বলতে পারে৷
পিকনিকডেকোরাম মেনে হয়৷ সবাই ভদ্রকথা বলে, স্ট্যাটাস অনুযায়ী দুরত্ব বজায় রাখে একে অপরের সাথে৷
ফিস্টি কোন ড্রেসকোড থাকে না৷ দলে সাতজনের বারমুন্ডা, তিনজনের থ্রিকোয়ার্টার, প্রায় সবারই টিশার্ট যেগুলো অকুস্থলে গিয়ে আর গায়ে থাকেনা৷ পাঁচজনের জিনস্, চারজনের গামছা, বগলকাটা গেঞ্জি৷ গায়ে ঘাম আর আদা রসুন তেজপাতার গন্ধ৷
পিকনিক গায়ে জ্যাকেট থাকে, পায়ে দামি শ্যু থাকে, গায়ে দামি পারফিউমের সুবাস, পিঠখোলা বগলকাটা ব্লাউজ, দামি হাফপ্যান্ট, খোলা চুল অথবা ডিজাইন করে বাঁধা, চোখে জানলার কাঁচের সাইজের চশমা৷ হাতে প্রজাপতির মত ঝলমলে বাচ্চা, মুখে কথা কম...ট্যুইঙ্কেল ট্যুইঙ্কেল বেশি৷
পিকনিকএর মাঝে সবাই সাইটসিনে যায়৷
ফিস্টি মাঝে নুন ফুরিয়ে গেলে পাশের কারো ঘরে ঠোঙা নিয়ে হাজির হয়, তেল ফুরিয়ে গেলে পনের টাকা নিয়ে দোকানে৷
পিকনিক কালচারাল প্রোগ্রাম হয়৷ বাচ্চারা নাচ, গান, রাইমস্ করে৷ আঙ্কেল আন্টিরা হাততালি দেয়৷ আবার আন্টিরা রবিঠাকুর করে, আঙ্কেল আর বাচ্চারা হাততালি দেয়৷ এটাই নিয়ম৷
ফিস্টিতে একটাই প্রোগ্রাম৷ শু বা...বাঁ..আমার পাতে মুরগির পু#টা কে দিলি বে? আমার পাতে খাসির বি# এল কোত্থেকে?
পিকনিক রান্নার ঝামেলা থাকে না৷ ক্যাটারার টিম থাকে, অথবা রান্নার লোক যায়৷ আমসত্ত্ব খেজুর নারকেল পেঁপে কিসমিস বেদানা আপেল কাজু কিসমিস দিয়ে ফ্রুট চাটনি হয়৷
ফিস্টিতে সবাই রাঁধুনি, সবাই৷ চাটনিতে বাঁধাকপির পাতা, ফুলকপির গোড়া, আড়াইশো কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, গরম মশলা এমনকি হেডফোনের স্পিকারও থাকতে পারে৷
পিকনিক সকালে টিফিন থাকে, স্ন্যাক্স থাকে, কফি মেশিন থাকে৷ চিকেন মটনের আলাদা বাটি থাকে, ডেজার্ট থাকে, মকটেল থাকে, ককটেল থাকে৷
ফিস্টিতে মটনের গায়ে খাসির কালো লোম থাকে, চিকেনের গায়ে মুরগির সাদা পালক থাকে, ডালের বালতিতে বিঁড়ির টুকরো থাকে৷
পিকনিক জি'পে থাকে, পেটিএম থাকে, ফোন'পে থাকে, নেট ব্যাঙ্কিং থাকে৷
ফিস্টিতে পিছনের পকেট থাকে, সামনের পকেট থাকে, জিনসের চোরা পকেট থাকে৷ বাপের পকেট থাকেই থাকে৷
পিকনিক দুটো সান্টাক্লজ ক্লাউন থাকে৷ দাড়ি মুখোশ আর লালটুকটুকে টুপি, ঢোলা পোশাক৷
ফিস্টি মাঝপথে অন্তত তিনজনের ওপর ডাইরেক্ট সান্টা ভর করে৷ কোমরে গামছা, লালটুকটুকে জাঙ্গিয়া মাথার ওপর৷
পিকনিক ডিএসএলআর থাকে, আইফোন থাকে৷ সেলফি থাকে, গ্রুপফি থাকে৷ নাচের ভিডিও, গানের ছবি, নেভা ওভেনে খালি কড়ায় খুন্তি হাতে পোজ থাকে৷ মিঃ সামন্তের ফিশ ফ্রাইয়ের ডিশ হাতে ছবি থাকে, মিসেস চ্যাটার্জির স্টিলের বালতি হাতে দই পরিবেশনের ছবি থাকে৷
ফিস্টিতে 'এই মাড়া ফোন টোন সব ত্রিপলে তলায় রাখ, ফিস্টি করতে করতে যে ফোন বের করবি, আর এই সব ছবি ফবি যে তুলবি শুনে রাখ, একটা ছবিও যদি বাইরে যায়...দুম করে পোঁ# মেরে দেব বাঁ# 
পিকনিক অরিজিৎ এর গলায় 'দে দোল দোল দোল, তোল পাল তোল' চলে৷
ফিস্টিতে 'মেঘা রে মেঘা টুকু বর্ষে দে,
আমার প্রেমিকা কে, পহিলা ছিঁটায় ভিজাইন দে', বারো মিনিটে চারবার৷
পিকনিকশেষে উদ্বৃত্ত খাবার অকুস্থলে ঘুরে বেড়ানো আদুল গায়ের বাচ্চারা পায়, 'এই শোন, থালাবাসনগুলো ধুয়ে দে, তারপর খাবারগুলো নিয়ে যা', অথবা নষ্ট হয় ডাস্টবিনে৷
ফিস্টিতে খাবার বাড়তি হয় না, বরং কম পড়ে৷ তিনবার ঝগড়ার পর ফয়সলা হয়, 'পরেরবার থেকে কেলা মাংস কম আনবি, চাল বেশি করে লিবি৷'
পিকনিকথেকে ফেরার পথে৷
'মিঃ ঘোষের বউয়ের দিকে অমন হাঁ করে তাকিয়েছিলে কেন? মনে হচ্ছিল যেন গিলে খাবে! কেন, আমায় আর পোষাচ্ছে না?/ মিসেস পাল কে দেখছিলে, শাড়িটা আমরা সেবার আমাদের কাজের মেয়ের বিয়েতে দিয়েছিলাম৷/ মিঃ চৌধুরী মেয়ে কে নিয়ে যে এত বড়াই করছে, গুণধর কণ্যা কটা ছেলের সাথে দীঘা গেছে সেটা জানে? আজ যদি হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতাম!/ মিসেস মন্ডল যেন বাড়িতে ডিপ ফ্রিজে থাকে, এই ডিসেম্বরের রোদেও গায়ে ফোস্কা পড়ছে৷/সরলা বৌদিকে দেখেছিলে, বয়স কি কমছে না কি বলতো? অমন ভাবে কাপড় পরার চেয়ে না পরেই আসতে পারতি, এতই যদি দেখানোর সখ পুরোটা খুলে দেখা না৷/ এই অমলের ছেলেটা কোন মাষ্টারের কাছে পড়ে দেখো তো, দরকার হলে দুশো টাকা বেশি দেবে তাকে নিয়ে এসো তো!/ বাব্বা, রঞ্জনার ছেলেটা কি খায় গো!! টুকু ছেলে যা খায়, আমাদের ড্রাইভারটা এত খেতে পারে না৷/ পিন্টুর জ্যাকেটটা দেখেছিলে, ওটা ওর কোম্পানীর, স্টিকারটা কেটে ফেলে দিয়েছে৷/ এবার বুঝলে তো তাপস বছরে দুবার প্রমোশন পায় কেন! আরে, ওর বৌকে দেখছিলে না, বসের সাথে কিভাবে ঢলে ঢলে কথা বলছিল?
ফিস্টিাথেকে ফেরার পথে৷
 'ধ্যের বাঁ#... বিকাল হতে হতে সব কেটে গেল৷ বার বার বলেছিনুম বাঁ# অত দামি আনুনু৷ এই....রাত্রে বেলা আবার ফিস্টি লাগা ব্বাঁ... আমি একটা সাড়ে সাতশ দিচ্চি, বাকিটা তরা ম্যানেজ কর৷ সে'বেলার বাঁধাকপিটা দিয়েই মেরে দুব৷
 
© দীপেন ভূঞ্যা, চন্দ্রকোণা৷

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
অসমাপ্ত...

 
'দিন আগেই জিয়া একটা অ্যাপ ইনস্টল করে দিয়েছে ফোনে। আর বলেছে "মা, এই অ্যাপটাতে এন্ড অফ দ্য ইয়ার সেল চলছে গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে। লিপস্টিক টিপস্টিক সবেতেই প্রচুর ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। তুমি কেনো না কিছু।"
মেয়ের কথা শুনে হেসেছেন সঞ্চারী।
যখন সময় ছিল, নতুন বিয়ের গন্ধ লেপ্টে ছিল গায়ে - সেই আটের দশকের শেষের দিকে, তখনই সেভাবে কিছু কেনেন নি কখনও। সঙ্গতিও ছিল না অবশ্য। নইলে, ইচ্ছে কি হতো না! তারপর তো একের পর ঝড় গেল। আর সেইসব ঝড় সামলাতে সামলাতেই সুনামি বয়ে গেল জীবন ভর! আর কি, "যে যেমন ভাগ্য নিয়ে আসে!" ভাবেন সঞ্চারী।
জিয়া অবশ্য রাগ করে আজকাল। বড় হচ্ছে তো, কুড়ি সালের ওই বিচ্ছিরি সময়েও চাকরি পেয়ে গেছিল, দেখে তো মনে হয় ভালোই কাজ করছে। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস খুব বেড়েছে মেয়ের। প্রায়ই দাপটের সঙ্গে বলে ওঠে "মা, তুমি তো এমন কিছু গাঁইয়া না, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়স। আমাদের বম্বে অফিসের একজন সিনিয়র ভি পি ম্যাডামের বয়স পঁয়তাল্লিশ - এই নভেম্বর মাসে বিয়ে করলেন। আর তুমি! সারাজীবন ওই হাল্কা লিপস্টিক আর একটা টিপের বাইরে কিচ্ছু পরলে না।"
"আমার ভাল লাগে না সাজতে, জিয়া।" ক্লান্ত স্বরে বলে ওঠেন সঞ্চারী। যতই নিজেকে খুব বড় হয়েছে ভাবুক না কেন, আদতে তো সংসারের মারপ্যাঁচ এখনও কিছুই দেখেনি মেয়ে! বম্বেতে ওদের কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাডাম যেটি করতে পারেনওনার পক্ষে এখানে সম্ভব? আর, যখন বয়স কম ছিল তখন বেঁচে থাকাটাই ছিল তীব্র অনিশ্চিত। কুড়িতে বিয়ে, পঁচিশে বিধবা! তখন জিয়া আড়াই। ব্রতীন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন, খুব বড় কোম্পানি নয়, কিন্তু কমপেনসেটারি গ্রাউন্ডে চাকরি পেয়েছিলেন উনি। তবে, টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকায় স্যালারি ছিল খুব কম। তারমাঝেও শ্বশুরবাড়ি থেকে কাজ করা নিয়ে আপত্তি ছিল। অশান্তিও হতো মাঝেমাঝেই পরে শাশুড়ি মা গত হবার পরে ভাসুরের প্রস্তাব মেনে বাড়ির ভাগ ছেড়ে দিয়ে, পাওনা টাকা থেকে ফ্ল্যাট কেনাতারমাঝেই মেয়ের পড়াশোনা, কাজকর্ম সব দেখা - পঁচিশ যে কখন আটচল্লিশ হয়ে গেল!
আর, বিপদও তো ছিল কতরকমের। সাধারণ দেখতে ছিলেন, তবু কত চাউনিই যে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেত। বেশিরভাগ দৃষ্টিতেই অবশ্য লালসা লেখা থাকত। তাই তো বড্ড গা ঘিনঘিন করত। নিজেকে প্রায় লুকিয়েই রাখতেন তখন সঞ্চারী। মেয়ে যে লিপস্টিকের কথা বলছে, সে তো অবরে সবরেই পরতেন আজকালকার কথা আলাদাতবে সেইসময় কেউ দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেনইনি ওঁর জন্য। উনিওমাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগতকাঁচাবয়সের আকুলতাও ছিল যথেষ্ট। মেয়েকে আঁকড়ে ধরে কত যে নিদ্রাহীন রাত কেটেছে কিন্তু কারো লালসাকে প্রশ্রয় দেবার কথা ভাবলেই ঘেন্না হতো। আর সেই করতে করতেইকখন যে মনের কষ্টের সীমাবদ্ধতা পালটে 'লোয়ার ব্যাক পেইন' হয়ে গেল
আজ জিয়ার জন্য একটা অন্যরকম টিফিন বানিয়েছেন সঞ্চারী। সুজি আর টকদই মিক্সিতে মিশিয়ে, সেই দিয়ে ব্যাটার তৈরি করে ধোসার মতো। মেয়েটা একটু পালটে পালটে খাবার খেতে ভালোবাসে। ওঁকে তো কেউ করে দেবার ছিল না
"উফ মা, কি বানাচ্ছ গো আজ? বেশ স্মোকি একটা গন্ধ ছাড়ছে?" জিয়ার স্নান হয়ে গেছে।
"এই একটু ধোসার মতো। তেল ছাড়াই বানাচ্ছি।"
"আরে জিও মাই মাস্টার শেফ! তা একটা বা দুটো বেশি দিতে পারবে? মানে, তোমার হবে?"
একটু থমকে গেলেন সঞ্চারী। তারপর জিজ্ঞেস করলেন "বেশি? তুই খেতে পারবি? এটা কিন্তু আজই প্রথম করলাম - যদি খেতে সেরকম না হয়?"
"আরেএএ মাম্মিজান! আমার বস তো তোমার জন্য ফিদা!"
"আমার জন্য?" লাল হতে হতে বলেন সঞ্চারী।
"হ্যাঁ! রোজই লাঞ্চের সময়ে আমার খাবার টেস্ট করেন তো। বলেন তোমার হাতে নাকি জাদু আছে।"
"ধ্যাত, ওসব কিছু না।" তাড়াতাড়ি পুদিনাপাতা আর বাদাম দিয়ে ধনেপাতার একটা চাটনি বানাতে বানাতে বলেন সঞ্চারী।
"না গো শাক্য খুব খেতে ভালবাসে। আর তুমি তো কত কম জিনিস দিয়েও কত কিছু বানিয়ে দাও।" তাড়াতাড়ি রেডি হতে হতেই বলে জিয়া।
"বস? শাক্য? কি ব্যাপার ম্যাডাম?" হাল্কা একটা উৎকন্ঠা নিয়ে বললেন সঞ্চারী।
"আরে চিল মম! আমাদের অফিসে সবাই সবাইকে নাম ধরে ডাকে। স্যার ম্যাম বলার রেওয়াজ নেই এখানে, যদি না কোম্পানির ডিরেক্টর লেভেলের কেউ হন।"
"আমি জানি শাক্য কে" বলতে গিয়েও চুপ করে যান সঞ্চারী।
সবাইকে সবকথা বলতে নেই। মেয়েকে তো নয়ই।
আর কীই বা বলতেন! যে, জিয়ার ফেসবুক পোস্ট দেখে দেখে ওর সব কলিগদের প্রোফাইল খুলে দেখেছেন উনি? আর এখন এটাই ওনার একটা বড় পাসটাইম?
এমনকি'দিন আগে একটা পোস্টে ওদের একসঙ্গে লাঞ্চ করার ছবি দিয়েছিল জিয়া। নিচে লিখেছিল "হোয়েন অফিস ইজ লাইক ইয়োর এক্সটেনডেড ফ্যামিলি।" সেই ফটোর নিচে শাক্যর কমেন্ট ছিল "দেন লেট আস ইনক্লুড ইয়োর গর্জিয়াস মম ইন দিস ফ্যাম! রোজ রোজ ডিলিশিয়াস খাবার পাব তবে আমরা…"
কমেন্টটা দেখে হেসেছিলেন উনি। তারপর শাক্যবাবুর প্রোফাইলে ঢুঁ মেরেছিলেন একবার।
বেশ কায়দা করে তোলা ছবি সব। কোনোটায় মুখ বোঝা যায়, তো কোনোটায় হাতের এক একটা বিশেষ ভঙ্গিমা। মোটা ফ্রেমের কালো চশমা পরা একজনছবি দেখে মনে হয় বছর পঁয়ত্রিশ হবে।
নেই কাজ তো খই ভাজ! তাই জিয়ার আর কোনো ছবিতে কমেন্ট আছি কিনা দেখতে গিয়ে প্রথমেই নজরে পড়ল জিয়ার প্রোফাইলের ছবিটা। সেই মে মাসে, মাদার্স ডে তে তোলাবাড়ির কাছের মলটার ফুডকোর্টে। জিয়া ওঁর কাঁধের ওপরে মুখ রেখে সেলফি তুলেছিল। আর সেই ছবির কমেন্টে লেখা "কী সুন্দর ছবিটা। তোর মা খুব সুন্দরী।" তার উত্তরে জিয়া লিখেছে "আর আমি?" তার উত্তর এসেছে "তুই তো একটা উচ্চিংড়ে! শি ইজ রিয়্যাল বিউটি।" মেয়ে আবার তার উত্তরে লিখেছে "আমার মা কে লাইন মেরে লাভ নেই বস! শি ইজ নান!"
লেখাটা পড়েই কান গরম হয়ে গেছিল সঞ্চারীর।
মেয়ে লিখল উনি নাকি একজন 'নান'...সন্ন্যাসিনী! সে তো এখন হয়েছেনকিন্তু একটা সময়
কিছুক্ষণ পর থেকেই অন্য একটা কথা মনে এলো। একটা ভাল কোম্পানির ম্যানেজার ্যাঙ্কে কাজ করা কেউ তাঁকে 'গর্জিয়াস', 'সুন্দরী' বলেছেন! তো বড় পাওনা।
কেন জানি না, সেটা জানার পর থেকেই শিরশির করছে ভেতরটা।
আর সেদিন থেকেই জিয়াকে একটু বেশি বেশি করেই খাবার পাঠাচ্ছেন সঞ্চারী। মেয়ে তো খেয়ালও করেনিতবু কেন জানি না মনে হয়েছে আহা সবাই মিলে খাবে
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
কোভিডের সময়েই সঞ্চারীর অফিস থেকে কয়েকজনের ছাঁটাই হয়েছিল। উনিও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। তবে মোটামুটি একটা কমপেনসেশান পাওয়া গেছিল। জিয়াও চাকরি পেয়ে গেছিল। তাই খুব বেশি চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়নি। এখনও তাই মোটামুটি ঠিকই আছেন সঞ্চারী। শুধু দুপুরগুলোই বড্ড বড় যেন। কাটতেই চায় না। বইপত্র পড়ার সেভাবে অভ্যাস নেই ওঁর, তাই এদিক ওদিকের ভিডিও দেখেই সময় কাটান। আজ ফোন করলেন একবার মেয়েকে।

"হ্যালো? বলো?" তাড়া লাগানো গলায় বলল জিয়া।
"কি করছিস?"
"এই একটা মিটিং থেকে বেরোলাম। কিছু হয়েছে? শরীর ঠিক আছে তো তোমার?" একনিঃশ্বাসে বলে মেয়ে।
একটু থমকে যান সঞ্চারী।
সত্যি তো, উনি অফিসে থাকাকালীন ফোন এলে উনিও তো বিরক্ত আর উৎকন্ঠিত হতেন
"না না এমনি। লাঞ্চ করেছিস?"
"মা! জাস্ট একটা বাজে। আরেকটু পরে করব। রাখি?"
কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিয়েছিল মেয়ে। রেগে গেল কি? এভাবে ফোন না করলেও পারতেন
বসে থাকতে থাকতেই তন্দ্রা মতো এসেছিল ওঁর। কিন্তু ফোনের আওয়াজে কেটে গেল।
জিয়া।
"হ্যালো?"
"মা? কি করছিলে?"
"তেমন কিছু না। এই একটু…"
"আচ্ছা শোনো না! তোমার এই নতুন ধোসা তো সুপারহিট। খুব ভাল খেয়েছি"
"তাই? বাহ!"
"আর তুমি ভাবছিলে কেমন না কেমন হবে! আচ্ছাশোনো একটু ফোনটা ধরো, একজন কথা বলবে…" জিয়া বলার সঙ্গে সঙ্গেই আরেকটি গভীর কন্ঠ ভেসে এলো "হ্যালো মিসেস সোম! ডিস্টার্ব করছি না তো আপনাকে?"
"না না" তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন সঞ্চারী।
"আমার নাম শাক্য মুখার্জী। আমি জিয়ার কলিগ।"
".. আচ্ছা…" কি বলবেন বুঝতে পারছেন না সঞ্চারী।
"আসলে আমি রোজ জিয়ার টিফিনে ভাগ বসাই। আপনি আমাদের লোকাল মাষ্টারশেফ!"
"আরে না না, আমি তেমন কিছু পারিনা।"
"বলেন কি মিসেস সোম! আপনি পারেন না? জিয়ার কাছে শুনেছি আপনি কত ফাইট করে ওকে বড় করেছেন। তাই হয়ত, ইভেন শী ইজ ফাইটার। নইলে আমাদের অফিসের ডেডলাইন আর টার্গেটের চাপ সহ্য করা বেশ শক্ত।"
"কী যে বলিথ্যাংকইউ! " লজ্জা লজ্জা গলায় বলেন সঞ্চারী।
"আচ্ছা, একটা কথা বলার ছিল আপনাকে। আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি?"
"ওকে। নাইন এইট থ্রি…" বলতে বলতে কাঁপছিলেন ভেতর ভেতর সঞ্চারী।
"থ্যাংকইউ। প্লিজ, জিয়া কে বলবেন না আমি আপনার নাম্বারটা নিয়েছি। আর, আমি আপনাকে একটু পরে ফোন করতে পারি একবার? একটা কথা বলার ছিল।"
কোনোরকমে "হ্যাঁ" বলে ফোনটা রেখে দেন সঞ্চারী।
বুকের মাঝে লাবডুব হচ্ছে একটা।
ফোন কেন করতে চান উনি?
আর নিজেকে এতটা অচেনাই বা লাগছে কেন? মনে হচ্ছে যেন আঠেরোর যুবতী! চেনেন না শোনেন নাসামান্য 'টা ফেসবুকের ছবি দেখে
কিন্তু 'গর্জিয়াস' বলেছেন এই শাক্যবাবু ওঁকে।
কোনোদিন এই কথাটা কেউ বলেনি
আপন মনেই জিয়ার ইনস্টল করে দেওয়া অ্যাপটা খুললেন সঞ্চারী। এখনও অ্যাপ থেকে কেনাকাটা করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না উনি। বরং পাড়ার দোকানই বেশি প্রিয়। তাও দেখতে ভাল লাগছিল। জিয়ার তো সবই এখন অনলাইন শপিং। পুজোর জামাটাও
ভাবতে ভাবতেই ফোন এলো "হ্যালো? মিসেস সোম? আমি শাক্য।"
"হ্যাঁ, বলুন।"
"আসলে, অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম আপনার সাথে কথা বলব। সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আজ পেলাম।"
"বলুন…"
"একবার দেখা করা যায়, প্লিজ?"
"দেখা? কেনো বলুন তো?" উফ! এই হতচ্ছাড়া হার্টটা আজ ফেইল করবেই।
"প্লিজ, কারণটা ফোনে জানতে চাইবেন না। আই নিড টু স্পিক টু ইউ। প্লিজ।"
"আচ্ছাওকে…"
"আজ হবে? আপনার সুবিধা মতো?"
"আজই কেন?"
"আমি আর লেট করতে চাই না তাই। এমনিতেই আমার জন্যই দেরি হয়ে গেছে অনেকটা। বছরের শেষটা ভাল হোক, সেটাই চাই।"
"আচ্ছাকোথায়? আসলে আমি এভাবে কখনও দেখা করিনি কারো সাথে.."
"আমি বুঝতে পারছি। আপনার বাড়ির কাছেই একটা ক্যাফে আছে না? সেখানে আসি? 'টা নাগাদ? প্পিজ?"
"আচ্ছা.."
'আচ্ছা' বলেও বিপদে পড়লেন সঞ্চারী মাত্র ঘন্টাতিনেক সময় আছে হাতে। কি যে পরবেন
আচ্ছা, এত ভাবছেন বা কেন? যা খুশি একটা পরলেই তো হয়
কিন্তু যা খুশি না, সাদা চিকনের শাড়িটাই পরেন উনি। একটা ঝুটো মুক্তোর হার গলায়। হাতে ঘড়িব্যস। আর, হাল্কা গোলাপী লিপস্টিক

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ক্যাফেতে ঢোকার সময়েই দেখেন শাক্য বসে আছেন। ওঁকে দেখেই তাড়াতাড়ি উঠে সামনের চেয়ার টেনে দেন বসার জন্য।

একটু হাসেন সঞ্চারী। এটাকেই ভদ্রতা বলে! ওঁর জীবনে কেউ এমনি করেনি আগে কখনও
"থ্যাংকইউ ফর কামিং, মিসেস সোম। থ্যাংকইউ সো মাচ।"
"আপনি এভাবে ডাকলেন, তাই এলাম… "
"থ্যাংকইউ। আমি আসলে আপনাকে ফেসবুকে একটা মেসেজও করেছিলাম, আপনি দেখেননি।"
"না তো?"
"স্প্যাম ফোল্ডারে চলে গেছিল বোধহয়! আচ্ছা, কি খাবেন? চা না কফি? আচ্ছা, আপনি তো আইসড টী পছন্দ করেন, তাই না?"
"আপনি কিভাবে জানলেন?"
"পছন্দের মানুষ সম্পর্কে সব খবর রাখতে হয় যে…" মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলেন শাক্য।
'পছন্দের মানুষ!' কান, গাল গরম হচ্ছে সঞ্চারীর।
"হ্যাঁ…" তারপর একটু থেমে বলেন "আমার নাম তো শুনেইছেন - শাক্য মুখার্জী। এই কোম্পানিতে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি, সামনে আরেকটা প্রোমোশন আছে পাওনা। হয়ত অন্য কোথাও চলে যাব… "
"আচ্ছা…"
"তার আগেই মিট করতে চাইছিলাম। আসলেআমি ওকেআমি খুলেই বলি সব, আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। কিছু কারণে টেকে নি সেটা। আমি তার দোষ দিই না, ইট ওয়াজ মিউচুয়াল ডিসিশান।"
"ওহ"
"আমার বয়স থার্টি সিক্স। হয়ত একটু বেশি। বাট আজকালকার দিনে এটা কি ম্যাটার করে খুব একটা?"
"ম্ মানে?" ভয় হচ্ছে সঞ্চারীর! ছেলেটি বুকের আওয়াজ শুনে ফেলবে না তো?
আর এরকম হচ্ছেই বা কেন? অদ্ভুত তো! বয়সকালে কখনও হয়নিআর এখনএই মেনোপজের সময়ে
"মিসেস সোম? আর ইউ হিয়ার? প্লিজ বলুন, আপনার মত আছে?" 'গভীর গলা' কানে এলো আবার।
"মত? কিসের?"
"ওই যেটা বললামজিয়াকেও আসতে বলেছিলাম, কিন্তু শী ইজ টুউ শাই! বলছে আপনি যদিও ওর বন্ধুর মতো,,তাও আপনাকে কিছুতেই বলতে পারেনি আমাদের ব্যাপারে। আপনি নাকি আজও জিজ্ঞেস করেছিলেন? আসলে 'মা' তো, বুঝেছিলেন সবই, তাই না? দেখুন, আমার আর জিয়ার কিছু এজ গ্যাপ থাকলেও, আই লাভ হার লট! আমার পাস্টের কোনো ছায়া আমি পড়তে দেব না ওর মধ্যে।" একটানা বলে চলেন শাক্য।
আর বারবার একটাই কথা কানে আসে "জিয়াআই লাভ হার লট!"
এটাই তো হবার ছিল!
সামান্য 'টা কমেন্ট দেখে ভেবে নিয়েছিলেননাহ্!
আর মেয়েটাও কিচ্ছু বলেনি! 'শাই' নাকি! হুহ্!
আর ওঁরও বোঝা উচিৎ ছিলপোষাকী 'জিনিয়া' নয়, 'জিয়া' বলে ডাকবাড়ির কাছের কফি শপটার কথা জানা
চেনাশোনা, মেলামেশা না থাকলে হয়?
কিন্তু, বুকের লাবডুব যে মরেও না!
আত্মজার জন্য হিংসে নয়আবার বাঁধভাঙা খুশিও নাকেমন থম মেরে যাচ্ছেন উনি
একটা ডিপ ব্রেথ নেন সঞ্চারী। আহ্!
"দেখুন, মেয়েটাকে সেভাবে কিছুই দিতে পারিনি। ভাল টিউটার না। যতটুকু পেরেছে নিজের চেষ্টায়। তবে খুব আদরের মেয়ে। তাই একটু ভাবতে দিন আমাকে…" ধীর গলায় বলেন সঞ্চারী।
উল্টোদিকে শাক্য চুপ।
"আপনার বাড়িতে কে কে আছেন? একদিন আসুন না আমাদের বাড়িতে। বসে কথা বলা যাবে?" একটু হাসেন বলতে বলতে উনি।
"ইজ দ্যাট 'ইয়েস'? মিটিমিটি হাসেন শাক্য।
কিচ্ছু বলেন না সঞ্চারী। একটু হেসে উঠে পড়েন। তারপর বেরিয়ে আসেন কফি শপ থেকে।
বিলটাও দেওয়া হলো না
অন্তত অফারটুকু করা উচিৎ ছিল
পিছন ফিরে তাকালেন একবার। ফোনে কথা বলছেন শাক্য, হাসিমুখে।
হয়ত অপরপ্রান্তে জিয়া
সে হাসছে নিশ্চয়ই
আহা! হাসুক!
সঞ্চারীর তো জাস্টওই কি বলে? 'মিড লাইফ ক্রাইসিস' ছিল একটা
চারিদিকে এত 'ক্রাশ ক্রাশ' শোনেন, তাই একটা...
কিছু নয়...
কিচ্ছু নয়...
মাথা নাড়তে নাড়তে বাড়ির পথ ধরেন সঞ্চারী
কতকিছুর আওয়াজ পাওয়া যায়, শুধু মন ভাঙাই শব্দহীন
"জুড়িয়ে দিল চোখ আমার
পুড়িয়ে দিল চোখ
বাড়িতে এসে বলেছিলাম
ওদের ভাল হোক…"।।
 
 
রূপান্বিতা রায়

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
[Image: 20221231-222313.jpg]

[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
[Image: IMG-20230101-WA0037.jpg]
Like Reply
আজকেরই এই দিনে
সবকিছু হোক নতুন করে,
সুখের স্মৃতিটুক থাক কাছে
দু:খগুলো যাক দুরে
জরা জীর্ণ অতীতটাকে
রেখোনা আর মনে
নব উদ্যমে  কাজ করো
নতুন এই  বছরে  
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
[Image: IMG-20230103-WA0002.jpg]

এই মানুষটিকে সবাই চেনেন। নাম - #ক্রিস_গেইল। ক্রিকেট দুনিয়া তাকে বলে - ইউনিভার্সাল বস। টেস্ট ম্যাচে ১৫টি শত রান, একদিনের খেলায় ২৫ টি শত রান, বর্ণময় এক ব্যাটসম্যান। মাঠে নেমে রানের বন্যা বইয়ে দিতেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিপক্ষের যেকোনো বোলারকে উড়িয়ে দিয়ে বল পাঠিয়ে দিতেন স্টেডিয়ামের বাইরে। টেস্ট ম্যাচে দুবার তিনশত রান করেছিলেন গেইল। আর আইপিএল এর বিনোদনকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

 
বিতর্কও পিছু ছাড়েনি গেইলের, মাঠের বাইরের বেহিসেবি জীবন, মদ, মহিলাসঙ্গ সব কিছু যেন গেইলের সাথে জুড়ে থাকতো।
২০২১ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেবার পরে আর্জেন্টিনাতে গেইল স্বামীজির একটি বই হাতে পান, বইটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাড়তে পারেন নি। কি কথা, কি তার তেজ, ভিতরটাকে নাড়া দিয়ে দিচ্ছে, ভেবেছিলেন  ৪২ বছর বয়সের জ্যামাইকার ক্রিকেটেরটি। তারপরই গেইলের ধ্যান জ্ঞান হয়ে যায় স্বামী বিবেকানন্দ।
বিবেকানন্দ মানে ঝড়। যার পরতে পরতে মিশে আছে রুদ্রময় তেজ। স্বাভাবিকভাবে এমন চরিত্রের প্রতি গেইল যে আকৃষ্ট হবেন সেটাই স্বাভাবিক। ২২ গজে তিনিও যে ঝড় তোলেন। রুদ্র মূর্তিতে সংহার করেন প্রতিপক্ষের বোলারদের।
 
ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি খবরের কাগজের সাংবাদিককে গেইল বলেছেন, বিবেকানন্দ আমার ভিতরের আলো জ্বেলে দিয়েছেন সম্প্রতি। এখন গেইলের কাজ স্বামীজির কথা ছড়িয়ে দেওয়া। 
ওয়েস্ট ইন্ডিজে যে খুব স্বামীজি চর্চা হয় তা নয়। রামকৃষ্ণ মিশনের কোনো শাখা কেন্দ্র সেখানে নেই। কিন্তু গেইল এখন জমাইকাতে নতুন এক মানুষ, রামকৃষ্ণ মিশনের একটি ছোট্ট আশ্রম খুলেছেন। ওয়েস্টইন্ডিজের ক্যালিপসো সুরে মিশে গেছে - খণ্ডন ভব বন্ধন জগ বন্দন বন্দি তোমায়।
 
রোমা রলা বলেছেছিলেন  Vivekananda's words are great music. জর্জ হ্যারিসন-ও তাই মনে করেছেন। আর গেইলকে আকৃষ্ট করে স্বামীজির এক জোড়া চোখ, ব্যক্তিত্ব আর মানুষের প্রতি সীমাহীন দরদ। 
গেইল গতিকে ভালোবাসেন। মাঠে নেমে ঝড়  তুলতেন, বন্যা বয়ে যেত রানের। সব সময় উত্তেজনা চাই। সেই গেইল আজ ধীর, শান্ত, নিজের ভিতরে খুঁজে পেয়েছেন এক আনন্দের জগৎকে।
এগিয়ে যাও, থেমে থেকো না, পিছনের দিকে তাকিও না, স্বামীজির জীবন্ত এই বাণী নতুন জীবন দিয়েছে গেইলকে।
একবার স্বামীজি পড়তে শুরু করো, দেখবে নতুন করে নিজেকে চিনতে আর বুঝতে পারবে।  ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে বেলুড় মঠে বসিয়ে স্বামীজি বলেছিলেন এখান থেকেই ঠাকুরের আদর্শ গোটা জগৎকে প্লাবিত করবে, মানুষের জীবন গতি পাল্টে দেবে।

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
মাথায় এক বাটি তেল দেওয়া একটা মেয়েকে সেদিন প্রপোজ করেছিলাম।মেয়েটার নাম রূপা।দেখতে কালো একেবারে যে কুচকুচে কালো তা না।কুচকুচে কালোর চেয়ে একটু ফর্সা।কাপড় পড়েছে ঢিলেঢালা।আমি যখন প্রেম নিবেদনের জন্য রূপার সামনে একটা গোলাপ নিয়ে হাজির হয়েছি আমার দিকে ঢেপঢেপ করে তাকিয়ে আছে।আর বার বার অপ্রস্তুত ভাবে ওড়নাটা ঠিক করছে।সেদিন আমি ফুলটা হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আগেই সে দ্রুত গতিতে চলে গেল।ফুলটা আর দেওয়া হলো না।

পরেরদিন একই সময়ে একই পথে আবার দাঁড়িয়েছি।হাতে একটা তরতাজা গোলাপ
"দাঁড়াও"
"পথ ছাড়ুন আমার"
"আগে ফুলটা নাও"
"না"
"সমস্যা কোথায়?"কি হলো চুপ হয়ে আছো কেন?জবাব দাও!"
রূপা অনেকটা ইতস্ততা নিয়ে বলল
"আপনার মত এত সুন্দর একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসতে যাবে কেন?নিশ্চয় গরমিল আছে কোথাও"
আমি অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হেসে আবার রূপার দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিয়ে বললাম
"এক্ষুনি নাও।না হলে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাব"
ধমকে কাজ হয়েছে।ফুলটা হাতে নিয়ে কাপতে কাপতে চলে গেল।প্রপোজ করার আগে অনেকদিন ধরে রূপাকে অব্জার্ভ করছিলাম মেয়েটা ভীষণ ভীতু অল্পতে ভয় পায় আর একটু আগে আমি সেটার সুযোগ নিলাম!
রূপা দেখতে বড্ড সেকেলে।কথা বলার ধরণ,হাটা-চলা,সহজে ছেলেদের সাথে না মিশা সব মিলিয়ে একটু আলাদা।
যে রাস্তায় রূপার জন্য আমি অপেক্ষা করি সেই রাস্তা দিয়ে রূপা টিউশনে যায়।যেদিন ফুল দিয়েছি তার পরেরদিন রূপার আর কোনো দেখা পাইনি।অকেক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম।মহারাণীর আসার কোনো নাম নেই।ভাবলাম হয়তো আমার জন্যই যাচ্ছে না।
পরেরদিন আবার সেই একই অপেক্ষা।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মহারাণীর দেখা পেলাম।রূপাকে দেখে ভিতরটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠলো।হৃদস্পন্দনটাও বেড়ে গেল।আমাকে দেখে রূপা একটা মুচকি হাসি দিল।রূপার মুচকি হাসি দেখেই আমার ভিতরটা আরো মোচড় দিয়ে উঠলো।বুঝলাম প্রেমের প্রস্তাবে সে রাজি।মুচকি হাসিটা ছিল গ্রিন সিগনাল!
রূপার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করলাম
"কাল দেখলাম না কেন?ব্যস্ত ছিলে?"
"হুম"
"কি নিয়ে?"
"নিজেকে নিয়ে!"
"মানে?"
"আপনি কি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না?"
খেয়াল করলাম রূপার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।
"ও বুঝেছি আজ তেল দাওনি তাই তো?"
"হু"
"কেন দাওনি?"
"ছেলেরা মেয়েদের উড়ন্ত চুল পছন্দ করে তাই"
আমি একটু হেসে বললাম
"কে বলল?"
"আমার বান্ধবী"
পরেরদিন খেয়াল করলাম রূপার পোশাকে পরিবর্তন এসেছে।আস্তে আস্তে কথাবার্তায় ও আধুনিকতার ছোয়া।দিন দিন রূপার পরিবর্তন আমি উপলব্ধি করছি।
রূপাকে আগের মত তেল দিতে দেখি না।শালীনতার ভিতরে থাকলেও কিছুটা আধুনিক জামা কাপড় পড়ছে।সব কিছু কেমন যেনো উলটপালট মনে হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন পর রূপার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চাকরি আমার সব কিছু দেখে রূপার পরিবার আমাকে মেনে নিল।বিয়েটাও হলো।
বিয়ের দিন রাতে রূপা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ভরা পূর্ণিমা।জানালার গ্রিল ছোয়ে পূর্নিমার আলো রূপার গায়ে আচড় কাটছে।আবছা আলোয় রূপাকে বউয়ের সাজে কি যে মায়াবতী লাগছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না আমি!
আমাকে দেখতে পেয়ে রূপা বলল
"এমন বিশেষ দিনে তুমি আমার কাছে কি চাও?"
"আমার পুরনো রূপাকে"
রূপা অনেকটা অবাক হয়ে বলল
"মানে?"
"মানে অনেক সহজ!সেই এক বাটি তেল মাথায় দেওয়া মেয়েটাকে আমার চাই,সেই ঢিলেঢালা কাপড় পড়া মেয়াটাকে আমার চাই,কথাবার্তায় আর চাল চলনে বড্ড সেকেলে মেয়েটাকেই আমার চাই।অবশেষে আমি আমার পুরনো রূপাকে ফিরে পেতে চাই।"
রূপার চোখে পানি টলমল করছে।আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রূপা বলল
"এতটা পরিবর্তন আমি তোমার জন্য হয়েছি।আমি ভেবেছি আমি সেকেলে হয়ে থাকলে তুমি অন্য কারো হয়ে যাবে।আমি ভেবেছি তুমি আমাকে আর ভালোবাসবে না।ক্ষমা করো আমায়"
রূপাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললা
" সব পুরুষ মানুষ এক হয় না।সবাই রূপের জন্য ভালোবাসে না।কোনো কোনো পুরুষ মানুষ কালো রঙের মাঝে হালকা ফর্সা রঙটাকে ভালবেসে ফেলে,কোনো কোনো পুরুষ মানুষ ঢেপঢেপিয়ে তাকিয়ে থাকার মায়ায় পড়ে যায়,কোনো কোনো পুরুষ মানুষ হঠাৎ দেখায় মুচকি হাসিটাই আজীবন সুখে থাকার একমাত্র কারণ বানিয়ে নেয়।"
বিয়ের ৪৫ বছর পর ও আমি রূপার মাথায় তেল দিয়ে দিই।রূপা যখন ঢেপঢেপ করে তাকিয়ে থাকে তখন আমি রূপার প্রেমে পড়ি।মেয়েটার নাম হয়তো রূপা কিন্তু সে আমার জন্য হীরার টুকরো ছাড়া আর কিছুই না।
 
       (সমাপ্ত)
 
ভালোবাসা_এমনি_হয়
লেখক_মাহমুদ

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
: ## কাজের মাসি 

                  ? দেবকমল চক্রবর্তী 
                       ( সম্পূর্ণ নতুন গল্প)
 
" একটু কম দামের মধ্যে কিছু শাড়ি দেখান তো।এই বড়জোর চারশো পাঁচশোর মধ্যে।"
     দেবাংশুর প্রশ্নের উত্তরে অভিজ্ঞ সেলসম্যান 
এক মুহূর্ত চিন্তা করেনি---" আর বলতে হবে না দাদা।বাড়ির কাজের মাসির জন্য পুজোর শাড়ি
চাচ্ছেন তো?"--- বলেই এক গাদা শাড়ির একটা লট নামিয়ে দেয় দেবাংশু আর মধুজার দিকে।
   পুজোর আগের আলোকজ্বল বাজার। সবাই পুজোর কেনাকাটা সারতে ব্যস্ত। দেবাংশুর ছুটি খুব কম।তাই এক রোববার দেখেই বেরিয়েছিলো মধুজা কে নিয়ে।একমাত্র মেয়ে টিকলির পোশাক আগেই কেনা হয়ে গেছিল, তাই দুজনেরই ইচ্ছে ছিল ওকে ঠাম্মার কাছে রেখে আসার।এই সময় প্রচন্ড ভীড় হয় দোকানে। কিন্তু বাধ সেধেছিলো টিকলি নিজেই,
----- ওর একটাই ইচ্ছে সবার জিনিস ও নিজে  দেখে কিনবে।মাত্র ফোরে পড়লে কি হবে?টিকলি যাকে বলে একটা চলমান বিশ্বকোষ। হেন কোন বিষয় নেই,যা নিয়ে ও কথা বলে না। তাই দশটা ক্যাডবেরির প্রলোভন ও ওকে বিরত করতে পারলো না।
    তা টিকলি কোন গোলমাল ও করেনি।দুজনের মাঝে শান্ত হয়ে বসেছিলো।কিন্তু বাবার এই কথা শুনে মুখ খুলতে দেরি করলো না---" কি বলছো গো তুমি বাপি? নিজের, মায়ের, ঠাম্মির, পিসিমণির জন্য এত দামী দামী পোশাক কিনলে আর মাসি ঠাম্মির জন্য মাত্র চারশো? কেন বাপী? মাসি ঠাম্মির তো মোটেই দুটো কাপড়,তাও কত জায়গায় ছিড়ে গেছে।তুমি একটা ভাল শাড়ি মাসি ঠাম্মির জন্য এখুনি কেনো।"
    মুখের ওপর কে যেন এক পোচ কালি বুলিয়ে দিয়েছিলো দেবাংশুর। পাশে মধুজার মুখ ও চুণ।মেয়ের কাছ থেকে যে এই এক হাট লোকের মধ্যে এমন একটা প্রতিবাদ আসবে বুঝতেই পারেনি----" ঠিক আছে বেটা,আর একদিন নয় আমরা তিনজনে এসে তোমার মাসি ঠাম্মির জন্য ভাল শাড়ি কিনে নিয়ে যাবো "   ---- এই বলে কোনমতে সে যাত্রা সামলাতে পেরেছিলো।
    বস্তুত জ্ঞান হবার পর থেকেই বাড়িতে দুটো বয়স্কা মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করে এসেছে টিকলি--- এক তার ঠাম্মি আর একজন মাসি ঠাম্মি।এই মাসি ঠাম্মি-- নামটা অবশ্যই তার নিজস্ব উদ্ভাবন। সত্যি বলতে কি এই মাসির নাম কোনদিনই জানার চেষ্টা করেনি দেবাংশু।
তার কলেজ লাইফের সময় থেকেই মাসি এ বাড়ির সর্বক্ষণের কাজের লোক। মায়ের দেখাদেখি সেও মাসিই বলতো।তারপর কলেজ, কলেজ চাকরির গন্ডী পেরিয়ে যখন মধুজা ঘরে এলো--- সেও তো সেই মাসি বলতে অজ্ঞান।পরে একবার অবশ্য মায়ের কাছে জেনেছিলো দেবাংশু--- যে মাসির নাম আশালতা বাউরি।কিন্তু সেই নাম কোনদিনই মাসির কাজের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় নি।মাসি সেই মাসি হিসেবেই বহাল ছিল এই ঘরে--- মায়ের সামান্য ছুতমার্গ ছাড়া।
   তারপর বছর দুয়েক পরে যখন টিকলি এলো,
তখন মাসির আনন্দ দেখে কে---" কি দাবাবু,
তোমার পিঠে ব্যাথা ট্যাথা হলে কেমন তেল ডলে ঠিক করে দি।আজ থেকে মনার তেল মাখানোর কাজ কিন্তু আমার। দেবাংশুর মা তখন বাতের ব্যাথায় শয্যাশায়ী।মধুজাও এই সব ব্যাপার গুলোর সাথে তেমন পরিচিত ছিল না।কিন্তু সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলো মাসি।দু পা সামনে মেলে দিয়ে যখন সদ্যোজাত টিকলি কে ঘষে ঘষে তেল মাখাতো--- সে এক দেখার মত ব্যাপার। 
   সেই থেকেই মাসির সাথে টিকলির নাড়ির সম্পর্ক। ক্লাস থ্রি তে পড়ার সময় টিকলি এক মজার কান্ড বাঁধালো।সেদিন মাসি একটু দেরি করেই কাজে এসেছে।হাঁটাটাও ঠিক স্বাভাবিক নয়।একটু যেন পা টেনে হাঁটছে।
   টিকলি কি বুঝলো কে জানে,একটা বাটিতে করে কিছুটা সরষের তেল এনে সরাসরি মাসির পায়ে তেল মালিশ করতে বসলো--- " নিশ্চয়ই তোমার পায়ে ব্যাথা হয়েছে তাই না মাসি ঠাম্মি, এসো তেল মালিশ করে তোমার ব্যাথা কমিয়ে দি।মা আমাকে বলেছে যে ছোটবেলায় আমাকে নাকি তুমি অনেক তেল মাখিয়েছো। এসো এসো। "
    এক হাত জিভ কেটে ছিটকে সরে গেছিল মাসি।বামুন বাড়ির মেয়ে,সে যতোই ছোট হোক,
তাই বলে বাউরির পায়ে হাত দেবে।নরকেও তো স্থান হবে না তার।
   কিন্তু টিকলি ও নাছোড়বান্দা--- তেল সে লাগাবেই।ব্যাপার টা সামলে নিলো মধুজা---
---- " মাসি তুমি চুপ করে বসো তো ওখানে।নে মা,এইবার তুই তেল লাগা ভাল করে।"
   আড়াল থেকে দেবাংশু বারবার চোখের ইশারা করে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলো মা আর মেয়ে কে।কিন্তু তার কথা ধোপে টেকেনি।
   মাসির তখন ডাক ছেড়ে কাঁদার অবস্থা।বৌদিমণির কড়া আদেশের সামনে পা ছড়িয়ে বসতেই হলো। আর টিকলি তার ছোট্ট হাতে একটু তেল নিয়ে যেই মাসির পায়ে ঠেকিয়েছে, 
মাসির তড়াং করে এক লাফ--- " দেখ লো মনা,
আমার পা কেমন এক বারেই স্যারে গেলো "----
বলে মাসির সে কি সোজা হয়ে হাঁটার কষ্টকর প্রচেষ্টা।
   এইভাবেই চলছিলো।একজন বয়স্কা মহিলার ওপর টিকলির অবাধ শাসন।কেন মাসি এ বাড়িতে চায়ে ভিজিয়ে রুটি খাবে,কেন তার মতো দুধ কর্ণফ্লেক্স আর বয়েল এগ খাবে না, এই নিয়ে টিকলির মাথা ব্যথার শেষ ছিল না।কেন মাসি সবসময়ই মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাখে এই ব্যাপারেও ছিল টিকলির অদম্য কৌতূহল। সে মাঝেমধ্যেই চেষ্টা করতো মাসির মাথা থেকে ঘোমটা টা নামিয়ে দিতে,আর মাসিও চেষ্টা করতো সাত তাড়াতাড়ি ঘোমটা টা উঠিয়ে দিতে। 
   ঠাম্মা কে বেশি পেতো না টিকলি।বাতের ব্যাথায় বড্ড কষ্ট পেতো মানুষ টা।তাই তার সমস্ত আবদার গুলো গিয়ে পড়তো মাসি ঠাম্মির ওপর। মাঝে মাঝে টিকলি গান শোনানোর আবদার করতো মাসির কাছে।মাসির হাজার কাকুতি মিনতি ও ধোপে টিকতো না।শেষে গানের একটা হাস্যকর চেষ্টা করতো মাসি:---
       " টিপির টিপির জলে
           চিটা মাটি গলে
         আমি সড়ক্যে গেলি গ
         আমি পিছলে গেলি গ
            তুকে ভাল্যে ভাল্যে "
এই গানটাই মাসি ফিসফিস করে সুর করে গাইতো।আর টিকলি বসে বসে থালা বাজাতো।
   কিন্তু টিকলি হঠাৎই বড় হয়ে গেল ক্লাস সিক্সে
ঠাম্মা হঠাৎই চলে যাওয়ার।রাতে ঠাম্মাই ছিল তার শোওয়ার সঙ্গী।ঠাম্মার মলিন বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তো টিকলি।
    সেই ঠাম্মাই চলে গেল--- টিকলিকে অনেক টা বড় করে দিয়ে।কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল টিকলি।মাসির গান শোনার ইচ্ছেটাও মরে গেছে। মাসি ও কেমন চিন্তিত হয়ে পড়লো।বার বার ছুটে গেল দেবাংশুর কাছে---" উহাকে তোমরা হাঁসানোর চিষ্টা করো দাবাবু।বডো কষ্ট পায়েছ্যে মনা।
    মা চলে যাওয়ার কয়েক মাস পরের কথা।কি যেন একটা কাজে বেলা নটা নাগাদ বেরোতে হলো মধুজা কে।মাসি তখন কাজে চলে এসেছে।বেরোনোর আগে পইপই করে মাসিকে বুঝিয়ে দিলো মধুজা---" আমি ঠিক দশটার মধ্যেই ফিরে টিকলি কে রেডি করে ওকে নিয়ে ওর কলেজে যাবো। আমি আসা পর্যন্ত তুমি কিন্তু থাকবে।এরমধ্যে তোমার দাবাবু আবার সাড়ে নটা নাগাদ অফিস বেরোবে।আমি আসা পর্যন্ত টিকলির দায়িত্ব কিন্তু তোমার। "
    পড়িমরি করে বেরিয়ে গেল মধুজা।কিন্তু খেতে বসে দেবাংশু পড়লো মহা গেরোয়।তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেছে মধুজা।কিছুই গুছিয়ে যায়নি।গুছিয়ে দিলে সে খেতে পারে, কিন্তু গুছিয়ে কি করে নিতে হয় তা তার জানা নেই।নিজে যে থালাটায় খায় সেটাও দেখা যাচ্ছে না।অগত্যা একটা ডিশ টেনে নিয়ে হাড়ি থেকে দু মুঠো ভাত বের করলো দেবাংশু।তারপর পট থেকে হাতা করে ডাল নেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্ত মাপ ঠিক না হওয়ায় সেই ডাল ভেসে চলে এলো টেবিলে।কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না দেবাংশু।একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে মাসি। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে  আপ্রাণ ইচ্ছে হচ্ছে এগিয়ে এসে খাওয়ার টা ঠিক করে বেড়ে দেওয়ার। কিন্তু পারছে না।একটা সহজাত বোধ তাকে ',ের হেঁসেলে ঢুকতে বাঁধা দিচ্ছে।বাউরি সম্প্রদায় ভুক্ত সে---- কিছুতেই বেড়া টা ডিঙোতে পারছে না।
   টিকলি পড়ছিলো,কি বুঝলো কে জানে? এক ছুটে এগিয়ে এলো---" যাও না মাসি ঠাম্মি,বাপি কে খাবার টা গুছিয়ে দাও।বাপি তো তোমার ও ছেলের মতো তাই না? তা দেখছো যখন বুড়ো ছেলেটা পারছেনা,তখন মা হয়ে এগিয়ে যাবে না? এ কি,মাসি ঠাম্মি,কাঁদছো কেন তুমি? যাও যাও,বাপির খাওয়া তো শেষ হয়ে যাবে।"
   ছুটে গিয়ে হাত দুটো সাবান দিয়ে ধুয়ে এলো মাসি।তারপর সামনে বসে খাওয়ালো তার দাবাবুকে।খাওয়াবে কি,কেঁদেই অস্থির অতো বড়ো মানুষ টা।চোখের কোণ টা ভিজে আসছিলো দেবাংশুর ও।সত্যিই মেয়েটা এই বারো তেরো বছর বয়সেই বড্ড বড় হয়ে গেল।
   কিন্তু টিকলির থেকে অনেক শেখা বাকি ছিল দেবাংশুর। টিকলির সেবার অ্যানুয়াল পরীক্ষা।
ঠাম্মা চলে যাওয়ার পর এটাই তার প্রথম পরীক্ষা।প্রতিবার ই বেরোনোর আগে প্রথমে ঠাম্মি আর তারপর মা বাপি কে প্রণাম করে পরীক্ষা দিতে বেরোয় টিকলি। এবার জাস্ট একটু চেঞ্জ করে দিলো।মধুজা কপালে দইয়ের ফোঁটা একে দেওয়ার পর এক ছুটে গিয়ে প্রথমে মাসি ঠাম্মি কে গড় হয়ে প্রণাম করলো।তারপর মা আর বাপিকে প্রণাম করে কলেজ ভ্যানের দিকে হাঁটা দিলো।
   ভয়ে শিউরে উঠে মাসি কিছু বলতে যাচ্ছিলো।সে বুঝতেও পারেনি যে এমন অভাবনীয় কান্ড কোনদিন ঘটতে পারে।কিন্তু তাকে থামিয়ে দিলো টিকলি--- " ঠাম্মি তো নেই গো,তাই সেই জায়গাতেই তোমাকে বসিয়েছি।ঠাম্মি তো আমাকে পরীক্ষা দিতে বেরোনোর আগে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করতো।তুমি করবেনা?"
   হাউ হাউ করে কান্নার ভেঙে পড়েছিল পাকা চুলের বুড়িটা।সে কোনদিন মনেহয় প্রণাম পায়নি।কি করে আশীর্বাদ করে তাও জানে না।তাও টিকলির মাথায় হাত দিয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বললো,তারপর আঁচলের খুট খুলে একটা মলিন দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিলো টিকলির হাতে--" কাল তুমার বাপি কে বইলব্যে ডাব আইনত্যে।"
   অবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো দেবাংশু আর মধুজা।দর্শকের চোখের আড়ালে কি সুন্দর একটা সিনেমা সংগঠিত হয়ে গেলো কেউ জানতেও পারলো না।"
   টিকলি গাড়িতে ওঠার আগে এগিয়ে গেল মধুজা।মুখটা নামিয়ে আনলো টিকলির কানের কাছে----" এই দশ টাকা তুই কোনদিন খরচ করিস না মা।এর মূল্য তুই বড় হলে ঠিক বুঝবি।"
         
                                       ( শেষ )

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#মর্নিংওয়াক_সিরিজ


#অর্পিতা_সরকার

আজ ভোরে রাস্তায় বছর বিয়াল্লিশের একজন ভদ্রমহিলা দেখি রয়‍্যাল এনফিল্ড চালানো শিখছেন। 
পিছনে তার হাজবেন্ড। 
এক ভদ্রলোক বললেন, কী ব্যাপার বৌদি স্কুটি ছেড়ে একেবারে এনফিল্ডে শিফট করলেন যে?
ভদ্রমহিলা কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক বললেন, তখন আমি সাইকেল নিয়ে টিউশন করতে যেতাম হে নবারুণ। তখন উনি আমায় বলেছিলেন, আমার খুব ইচ্ছে তুমি বুলেট কিনবে আর আমায় সেই বুলেট চালানো শিখিয়ে দেবে। আমি পাড়ার মধ্যে দিয়ে বুলেট চালাবো। 
এতদিনে মহারানীর সে ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারলাম। সস্তার একটা স্কুটি কিনে দিয়েছিলাম আগেই ওকে। 
কিন্তু বুলেট কিনে দিতে পারিনি এতদিন। বাড়িঘর করতে করতে হয়ে ওঠেনি আর। বেচারি এত বছরে নিজের সেই ইচ্ছের কথা ভুলেও গিয়েছিলো। কিন্তু টিউশন করা ছেলেকে বিশ্বাস করে বিয়ে করেছিল যখন তখন ইচ্ছেপূরণের দায়িত্বটা আমি ভুলি কী করে!
ভদ্রমহিলার মুখে লজ্জা জড়ানো হাসি। 
মহিলা বললেন, আর বলবেন না দাদা, সেই কবে বলেছিলাম। এখন কী আর সে বয়েস আছে! কিন্তু কে শোনে কার কথা, পাগল মানুষ একটা। আমায় শিখিয়ে তবেই ছাড়বে। 
আমি পাশ থেকে বলেই ফেললাম, শিখুন না। এমন সৌভাগ্য কজন পায়?
ভদ্রমহিলা হেসে বললেন, ঐজন্যই তো চেষ্টা করছি। আমি শিখতে না পারলে ও কষ্ট পাবে। ভাববে কিনতে দেরী করে ফেলেছে।
 
© এক চিলতে রোদ্দুর-কলমে- অর্পিতা সরকার

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
অপেক্ষা


বছরের প্রথমদিনেই একটা মজার কথা শুনলাম
তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসো, সৌর?
দীপ্তিকে নাকি বলেছ, "তুলি
এমন কেন?
কবে থেকে ভালবাসি ওকে,
স্টেটাস - টাকা, কি নেই আমার?
আর আমার নতুন বুক করা
ফ্ল্যাট? যেখানে আমরা সংসার পাততে পারি..?"
দীপ্তি আমাকে বকাবকি করল, জানো?
আমি নাকি "হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলছি।"
তা হতে পারে!
আসলে কি জানো?
টাকা
স্টেটাস
নতুন বাড়ি
কিচ্ছু না…
আমি শুধু 'অপেক্ষা' চাই…
অনেকদিন পরে শহরে ফিরে
হাওড়া ব্রিজ দেখার অপেক্ষা…
গ্রীষ্মের দুপুরে মাটির কুঁজোর
জল খাবার অপেক্ষা…
সন্ধ্যে নামলে তুলসীতলায় পিদ্দিম দেবার পরে
শাঁখ বাজানোর মতো অপেক্ষা…
আসন পেতে জলের গেলাস দেবার পরে
ভাতের থালা পাবার মতো অপেক্ষা…
তেমনি পাগল-পারা, নিদ্রাহীন আকুল অপেক্ষা…
পারবে দিতে, সৌর?
তাহলে ফোন করো কাল…
আমি অপেক্ষায় থাকব…

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#অণুগল্প

 
জানেন, এই দুনিয়ায় কেউ কারো হয় না।
বিশেষ করে ছেলেরা।
নইলে, যে মানুষটার জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে দিলাম, এমনকি বাবা মা কে ও ছেড়ে চলে এলাম, সে কিনা এরকম করল আমার সঙ্গে?
অথচ কী করিনি আমি ওর জন্য?
যখন প্রায় এক কাপড়ে চলে এসেছিলাম ওর কাছে – কী অবস্থায় ছিল ও? একটা সামান্য শাড়ির দোকানের কর্মচারী। তাও সারাদিন মালিকের মুখঝামটা খেয়ে কাটায়। ক'টা টাকাই বা মাইনে পেত তখন? বস্তির ভাড়া বাড়িতে থাকত।
এক কাপড়ে চলে এসেছিলাম, কিন্তু গয়না গুলো আনতে ভুলিনি। হতভাগা মিনসে তো সেই দেখেই ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছিল। গয়না বিক্কিরির ব্যবস্থা তো একা হাতে আমিই করেছিলাম। আর সেই টাকা দিয়েই তো ব্যবসা শুরু করেছিলাম আমি। শাড়ির ব্যবসা।
চোদ্দবছর ধরে এত খাটুনির পরে একটু দাঁড়িয়েছে ব্যবসাটা। আগে বাড়ি বাড়ি গাঁটরি ভরে নিয়ে যেতে হতো… এখন তো একটা দোকানও হয়েছে। না, নতুন দোকান না, যে দোকানটায় একসময় ও কাজ করত, সেটাই আমাদের এখন। কিভাবে? থাক, চোদ্দটা বছর ধরে কী কী করেছি সবকিছু আপনাদের বলে দেব নাকি? ইল্লি রে!
তবে, দোকানটা পাবার পর থেকেই মুখপোড়াটা কেমন পালটে গেছে। আগে আমার খেয়াল রাখত খুব। চোখের দিকে তাকালেই বুঝে যেত আমার কিছু চাই কিনা। আর এখন? তাকিয়েই দেখে না আমার দিকে! আর তাকালেও, কেমন একটা ভয়ে ভয়ে… যেন আমি ওকে খেয়ে ফেলব!
মরণ!
একেই বলে "যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।"
আরে, আমি কি নিজের কথাই ভাবি নাকি সারাক্ষণ? তুমি ছাড়া আমার আছে কে শুনি? তা, তোমাকে ভাল রাখার জন্য যদি আমাকে একটু বাঁকা পথ ধরতে হয়, হবে! সেজন্য তুমি আমাকে এত ভয় পাবে?
আর, ভয় পেয়ে কি করছে? ওই নেকি মাগির কাছে ঘেঁষে ঘেঁষে থাকছে। ওকে দামী দামী শাড়ি দিচ্ছে দোকানের। অথচ আগে যখন মহাজনের কাছ থেকে শাড়ি কিনে আনতাম, এক একটা শাড়ি বিক্কিরি করতেই চাইত না ও। বলত ওগুলো নাকি আমাকে বেশি মানায়! মনখারাপ করত। বারবার বলত "কেন যে তুমি আমার দোকানে এলে আর সেদিনই আমাকে মালিক অপমান করছিলেন সেটা দেখে নিলে…"। আমি থামিয়ে দিতাম ওকে, আমার নিজস্ব উপায়ে।
তখন অভাব ছিল, তবু জানতাম আমিই ওর জীবনে একমাত্র। নারী -টারী না, একমাত্র সবকিছু।
আর সেই লোকটা এখন… আমার থেকে দূরে চলে গেছে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়েই সেদিন মাগিটার কাছে গেল। আমি তাকিয়ে আছি… তারমধ্যেই আমারই দোকানের একটা শাড়ি পরিয়ে দিল… ছিঃ! ঘেন্না ঘেন্না!
বাপের বাড়ি যাবার মুখ নেই আমার, নাহলে একটু কাঁদাকাটির জায়গা অন্তত থাকত। কাকেই বা বলতাম আমার এই কষ্টের কথা। স্বামী ভয় পায়, আবার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে একটা বেলাজ মেয়েছেলেকে নিয়ে পড়ে থাকে… বলতে তো লজ্জাও লাগে, নাকি?
তাও হাল ছাড়িনি। আমাদের এখানের কালীমন্দিরে গেছিলাম, পুরুতমশাই হাত দেখেন ভাল। সব জানালাম। উনি পাত্তাই দিলেন না। বললেন "তোর মাথা খারাপ হয়েছে, তুই বাড়ি যা।"
কেউ মানতেই চায়না ওর সব কান্ডের কথা। চোদ্দবছর ধরে দেখছে তো ওকে, আর আমাকেও। তাই…
তবে অনেক সহ্য করেছি। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন।
আমার সামনে এতদিন নোংরামো করে এসেছে। আজ আমি সব শেষ দেখব। ধুতরোর বিষ কি করে, আমিও জানি…
আরে, প্রণব সমাদ্দারের মতো ঝুনো ব্যবসায়ী কিছু বুঝতে পারল না আর বাদল সরকার তো নস্যি!
আমার সামনে অন্য একজনকে নিয়ে মাতামাতি!
বোঝ শালা এবার!
আমি কিচ্ছু চাইনি কোনোদিন। যা করেছি সব নিজে। সব।
আর এবারেও নিজেই করলাম।
হতভাগা, আমার বদলে অন্য কাউকে ভালবাসবি? শাড়ি খুলবি আবার পরাবি?
কিছুতেই মানব না।
সে যতই দোকানের… ওই কি যেন বলে… ম্যানে..ম্যানি…ম্যানিকুইন হোক না কেন!
 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
# অন্য_রূপকথা

 
একটা দরকারে গেছিলাম গড়িয়াহাট।
তা, এতোই তাড়াহুড়ো ছিল যে, পকেটে, ইয়ে, ওয়ালেটে যে যথেষ্ট নগদ টাকা নেই, দেখিইই নি! এদিকে গড়িয়াহাট মানেই তো এক 'সব পেয়েছির দেশ'। হাজারও জিনিস... কলেজবেলা থেকে এই এত্ত বড় বয়স - প্রতিবার গড়িয়াহাটে গেলেই মনে হয় রূপকথার রাজ্যিতে চলে এসেছি। কিন্তু, কেনাকাটা করতে গেলে তো টাকা লাগবেই! সব দোকানে কি ডিজিটাল পয়সা চলে?
তাই, গড়িয়াহাট মোড় থেকে আমার কলেজের (আমি মুরলীধর গার্লস কলেজের ছাত্রী) দিকে দু' পা যেতেই যে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এটিএম টি আছে, সেখানে গেছিলাম। তা, কাজ মিটিয়ে বেরোনোর আগে গুনেগেঁথে টাকা রাখছিলাম ব্যাগে, হঠাৎ অত্যন্ত সুললিত কন্ঠে শুনতে পেলাম "না, আমি আরেকটু থাকি... দেখি বেলা বাড়লে আর ক'টা বিক্কিরি হয় কিনা।
হ্যাঁ, হাওয়া আছে ভালোই...
না না, দুটো পর্যন্ত দেখি, তারপর ফিরব... যা ঠান্ডা, দুটো কম্বল কেনার টাকা না হলে কিভাবে যাই! "
শেষ বাক্যটা... মনটা তোলপাড় করে দিল!
ঠান্ডা! দুটো কম্বল! আর তার জন্য টাকার প্রয়োজন...
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে দেখি লাগোয়া ব্যাঙ্কের সিঁড়িতে বসে আছেন একজন ভদ্রমহিলা। দোহারা, অভিজাত চেহারা, কপালে এত্ত বড় একটা লাল টিপ। আর হাতে অনেকগুলো কলম।
এগিয়ে গেলাম। ভাব জমালাম।
উনি নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা। চাকরিও করেন একটি। আর ছুটির দিনে রাজপথের রাস্তায় কলম বেচেন - যা থেকে সংগৃহীত অর্থ যায় কোনো একটি অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের কাছে।
"আমি সামান্য টাকা মাইনে পাই, মা। একা মানুষ, কোনোক্রমে নিজের চলে। আমার টাকা দেবার ক্ষমতা তো নেই, তাই একটু চেষ্টা করি যাতে বাচ্চাগুলোর অন্য কোনোভাবে কাজে লাগতে পারি। আজ তো ছুটি... তাই বেরিয়ে পড়েছি...
যা ঠান্ডা... যদি কোনোভাবে একটুও সাহায্য করতে পারি ওদের...। ওদের তো কেউ নেই... আমিই নাহয় থাকি একটু..."।
পারব আমরা, এভাবে ভাবতে?
নিজের অক্ষমতার ঊর্ধে গিয়ে কোনোভাবে, যে কোনোভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে?
যদি পারতাম...
গড়িয়াহাটে তো কতকিছু, সবকিছু পাওয়া যায়, আর, আমি শুধুই ক'টা কলম কিনে ফিরেছি আজ...
তবু, সব পাওয়ার আনন্দ ভরে আছে আজ আমাকে...
সামান্যই ক্ষমতা আমার... তবু হয়ত ক'টি বাচ্চার কম্বল কেনা যাবে...
এত ঠান্ডা বাইরে, তবু হৃদয়ে আজ উষ্ণতার পরশ...
আহ্... জীবন... কত সুন্দর!
(কেউ যদি ওইদিকে যান আর অন্তত একটি বা দুটি কলমও কেনেন... আমাদের তো কাজে লাগেই কলম, তাই না?
কিনবেন কেউ? প্লিজ?
'টা বাচ্চা, যারা কিছুই পায়নি... বাবা মায়ের ভালবাসার ওম টুকুও না... তাদের একটু সাহায্য হতো তবে...।)

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
" বলি ও হারাণ, এট্টু তেল দে দিনি বাপ।আজ দত্তদের পুকুর পাড় দিয়ে আসছিলাম সকাল বেলা।রাতে ভাল ঘুম হয়না তো,তাই ভোর থাকতেই বেরিয়ে পড়ি।তা দেখি কি,মাছ ধরা চলতেছে।জালের মধ্যি খলবল করতেছে টাটকা মাছ গুলো। দেখে বড্ড নোভ হলো রে, তা ওরা আমারে নিরাশ করেনি।শালপাতার মধ্যি এত্তগুলো চুনোমাছ দেসে।আজ ভাবতেছি একটু কাঁচা মরিচ কেটে বাটি চচ্চড়ি করবো খন।কিন্তু বাড়িতে তেলের বড্ড আকাল রে বাপ "----- বলেই বুড়ি তার কোচড়ের মধ্যে থেকে একটা ছোট্ট শিশি বের করে হারাধনের দিকে এগিয়ে দেয় ----" আর পারলে কটা আলু ও দিস বাছা।নতুন আলু উঠতেসে তো।গরম ভাতের সাথে আলু সেদ্ধ মেখে খেতি দারুণ লাগে।" 

     মোড়ের মাথায় ছোট্ট একটা দোকান-----
 
                 " ভ্যারাইটি স্টোর "
                  প্রো:---- হারাধন দাস
 
তা ভ্যারাইটি স্টোর ই বটে।
সকালের চা থেকে রাতের গুড নাইট কয়েল--- সবই হারাধনের দোকানে পাওয়া যায়।ঐ ছোট্ট ঘুপচি দোকানের মধ্যেই হারাধন সব কিছু পরিপাটি করে সাজিয়ে রেখেছে।সকালের অবসরে মাঝে মাঝেই আসি হারাধনের ইস্পেসাল কাটিং চা খেতে।দোকানের সামনে কয়েকটা নড়বড়ে বেঞ্চি আর ময়লার আস্তরণ ফেলা টেবিল। কিন্তু চা টা অপূর্ব বানায় হারাধন। সাথে লেড়ো বিস্কুট। মুড ভালো থাকলে ডিম টোস্ট ও বানিয়ে দেয়।কিন্তু আজ বোধহয় হারাধনের মুড ভালো ছিলো না।বুড়ির আবদার শুনে রীতিমত খেঁকিয়ে উঠলো----" সকাল বেলা এই সবে দোকান খুলেছি বুড়িমা।এখনই চাওয়া শুরু কোরো না তো।সারাদিন খালি এটা দাও আর ওটা দাও।বলি তেল কি মাগনা পাওয়া যায়।খালি দাও আর দাও।"
    " চুপ কর ড্যাকরা, তোর কাছে কি বিনি পয়সায় তেল চাইছি। আজ হলো গে মাসের আঠারো তারিখ। তিরিশ তারিখ এলে গুণে গুণে হিসাব বুঝে নিস রে হতচ্ছাড়া।আন্নাকালী বামনী কে পয়সা দেখাচ্ছে।রাখ তোর তেল,চাই নে আমার।
   সবে চায়ের কাপে প্রথম চুমুক টা দিয়েছিলাম, 
বুড়ি দেখলাম ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল দোকান থেকে। তাকিয়ে ছিলাম বুড়ির যাওয়ার দিকে।বয়সের ভারে একটু ঝুঁকে হাঁটছে।একটু কেন বেশ অনেকটাই কুজো।মাথায় তেল বিহীন শনের মতো সাদা চুল।পরণে একটা মলিন সাদা শাড়ি।মন টা সকাল সকাল কেমন বিষণ্ণ হয়ে গেল।
    " দিতেই পারতে হারাধন সামান্য তেল, বুড়ির বড্ড লোভ হয়েছিল "--- বলেই ফেললাম কথাটা হারাধন কে।
     " ও আপনি বুঝবেন না দাদা,এর পেছনে অনেক ঘটনা আছে।সারাদিন খালি এটা দাও আর ওটা দাও "---- হারাধন চা ছাঁকতে ছাঁকতে মুখ তোলে।
   " আরে উনি তো দিয়ে দেবেই বলছে, নিশ্চয়ই মাসের শেষে হাতে সামান্য টাকা আসবে।এখন তো আবার সরকার থেকে অনেক ভাতা টাতাও দেয়।ওনার কি কেউ নেই? থাকেন কোথায় উনি?" 
    আমার একগাদা প্রশ্নের সামনে হারাধন যেন একটু বিরক্ত হলো----" অতো শত জানিনা দাদা,
একাই তো থাকে শুনেছি।মনেহয় এক ছেলে ছিলো।সে তো বিয়ের পর বউ কে নিয়ে সটকান দিয়েছে।এই মুখরা বুড়ির সাথে আর কোন বৌ ই বা থাকবে? ঐ ছেলেই নাকি মাসে মাসে মানি অর্ডার করে কিছু টাকা পাঠায়।ঐ টাকার জোরেই বুড়ির দেমাক। রোজই এটা ওটা এসে নিয়ে যায়।আর কাজের চাপে অতো লিখে রাখতেও পারি না।ঐ বুড়িই আমার দোকান লাটে তুলবে দাদা।"
    তারপর বেশ কিছুদিন যাওয়া হয়নি ভ্যারাইটি স্টোরে।সেদিন কি যেন একটা কারণে ছুটি ছিল। বাজার থেকে ফেরার পথে কাটিং চা কে এড়াতে পারলাম না।দোকানে এসে দেখি হারাধন কোন এক খরিদ্দার কে ডিমের দাম নিয়ে কি যেন বোঝাচ্ছে।আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো--- " বসুন দাদা,এখুনি আপনার চা বানিয়ে দিচ্ছি।ততক্ষণ একটু খবরের কাগজে চোখ বোলান। 
   খবর পড়েছিলাম আর দেখছিলাম যে হারাধন কাজের মধ্যেও বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে।একটু যেন চিন্তিত মুখ।
    " ব্যাপার কি হারাধন, কেউ আসার আছে নাকি?
    " আর বলবেন না দাদা "---- হারাধন চায়ের কাপ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো---" আজ তিন দিন হয়ে গেল বুড়ির কোন পাত্তা নেই। যে মানুষ টা রোজ এসে ঘ্যান ঘ্যান করতো তার হঠাৎ হলো কি? যাক গে,মরুক গে।আমার অতো খোঁজ খবরের দরকার কি?"
    কিন্তু একটু পরে কি যেন ভেবেই হারাধন সটান বেরিয়ে এলো দোকান থেকে---" চলুন তো দাদা,একটু খোঁজ নিয়ে দেখে আসি।বুড়িটা বেঘোরে পড়ে আছে কিনা?এই তো সামনেই। মিনিট চারেক লাগবে হয়তো হেঁটে যেতে। তাছাড়া আমার এই মাসের টাকাটা পুরোই বাকি পড়ে আছে।চলুন চলুন। "
    প্রথমে ভেবেছিলাম মানবিকতার তাগিদে যাচ্ছে হারাধন কিন্তু ওর শেষের কথাটা দৃষ্টিভঙ্গি টা পাল্টে দিলো।
   গিয়ে দেখলাম তেমন কিছুই নয়।তবে হালকা জ্বরের মতো হয়েছিল বুড়ির। কিন্তু হারাধন কে দেখেই একদম তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো বুড়ি----" বলিহারি যাই রে তোকে হতচ্ছাড়া।মাস
শেষ হতে এখনও যে তিনদিন দেরি আছে রে।
টাকা চাইতে একেবারে ঘরে এসে জুটলি?তা এলিই যখন তখন দুটি চাল আনতে পারলি নে?
এই দুদিন তো পেটে বালিশ বেঁধে পড়ে আছি।"
    হারাধন কি যেন ভেবে---" আপনি দু মিনিট বসুন তো দাদা "---- বলেই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল।আমি চুপচাপ বসে বসে বুড়ির গজগজ শুনছি---" বড্ড দরদ দেখাতে এসেছে শালা।ও ছোড়া দেখাবে দরদ? ও এসেছে টাকার খোঁজে।"
    ঠিক সাত মিনিটের মাথায় হারাধন আবার এসে জুটলো---- হাতে দুটো ক্যারিব্যাগ। ঠকাস করে বুড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো---" এই দুটো জিনিস নিয়ে এ মাসে মোট আট শো বিরাশি টাকা হয়েছে বুড়িমা।এক দু তারিখের মধ্যেই যেন পুরোটা পেয়ে যাই।চলুন দাদা,এবার ওঠা যাক।"
    তারপর বেশ কয়েকদিন যাওয়া হয়নি ভ্যারাইটি স্টোরে।একঘেয়ে নিত্যযাত্রা আর সংসারের চাপে জীবনের সুতো টা লাটাই এর মধ্যে কেমন জট পাকিয়ে গেছিলো।
   সেদিন অফিস ফেরতা যেতেই হলো ভ্যারাইটি স্টোরে।সিগারেট ফুরিয়ে গেছিলো।তখন সন্ধ্যে প্রায় সোয়া সাতটা।গিয়ে দেখি হারাধন একমনে বসে বসে একটা মানি অর্ডার ফর্ম ফিল আপ করছে।আমাকে দেখেই তড়িঘড়ি করে সেটা লুকানোর চেষ্টা করলো।
    " কাকে টাকা পাঠাচ্ছো গো হারাধন? আর এতে অতো লুকানোর বা কি আছে? "
   আমার প্রশ্নের উত্তরে হারাধন মুখ তুললো---
---- " ঠিকই বলেছেন দাদা।লুকানোর মতো তেমন কোন ব্যাপার ই নয়।তবে কি জানেন, এইসব জিনিস প্রচার করতেও তেমন ভাল লাগে না।আসলে সব গোলমালের মূলে ঐ বুড়ি। রাখতেও পারি না আবার ফেলতেও পারি না।ছেলে তো ভুলেও খোঁজ নেয় না।মাঝে আমি চেষ্টা চরিত্র করে বুড়ির ছেলের নাম্বার জোগাড় করে ফোন করেছিলাম।বেশ কিছু টাকা বাকি পড়ে গেছিলো সেইজন্য। তা এমন ধমকে কথা বললো যে বলার নয়।তা আজকের দিনে আর কেই বা বুড়ো মা বাবা কে দেখে বলুন? এরা তো সংসারের বোঝা,তাই না।আমার নয় অনেক কাল আগেই মা বাবা চলে গেছে।থাকলে হয়তো আমিও এমন আচরণ করতাম। 
 তখনই ডিসিশন নিলাম বুঝলেন।ঐ তো বুড়ি, সে আর মাসে কত টাকার ই বা জিনিস নেবে।ও টুকু আমি ঠিক ম্যানেজ করতে পারবো।মুখে এমন ভাব দেখাতাম যে আমি যেন জিনিস দিতে মোটেই পছন্দ করি না।বুড়িও তখন তার ছেলের কথা বলতো যে সে নাকি মাসে মাসে টাকা পাঠায়।বুড়ির এই শেষ বয়সে বুড়ি কে আর এই অপ্রিয় কথাটা বলতে চাইনি দাদা,যে ছেলে তার খোঁজ ই নেয় না।কতদিন ই বা বাঁচবে বলুন। শেষ জীবনে এই শোক টা নয় নাই পেলো মানুষ টা।তাই নিজেই পোস্ট অফিস থেকে মানি অর্ডার ফর্ম এনে মিছিমিছি ফিল আপ করে মাসে দু হাজার টাকা বুড়ির ঘরে পাঠিয়ে দিতাম ডাক পিয়নের হাত দিয়ে।বুড়ি ভাবতো ওর ছেলেই পাঠিয়েছে।পরের দিনই বুড়ি যখন টাকা শোধ করতে দোকানে আসতো,তখন ওর সে কি মেজাজ। ঐ মেজাজ টুকুই তারিয়ে আরিয়ে উপভোগ করতাম দাদা।আমার টাকা আবার আমার কাছেই ফিরে আসতো দাদা।মোটে তো দু হাজার টাকা।ও টুকু ভগবানের আশীর্বাদ ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবো।মানুষ টাকে ভাল রাখার জন্যই এই মিথ্যাচার টুকু প্রতি মাসে করে চলেছি।এ কথাটা আপনি ছাড়া আর যেন কেউ না জানে দাদা... প্লিজ। ওওও ভুলেই গেছি।এই নিন আপনার গোল্ড ফ্লেক।"
    দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। ছোট্ট ভ্যারাইটি স্টোর এক লহমায় অনেক বড় হয়ে গেল আমার কাছে......
 
সংগৃহীত ( লেখকের নাম পাই নি)

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
ঘূনপোকা

 
অন্যদিনের তুলনায় আজ অনেকটা আগে উঠে পড়েছে মিলি।
আজ অফিস ছুটি নিয়েছে, তাও।
আসলে আজ যে ওর প্রাণের বন্ধু প্রীতি আসছে ওদের বাড়ি। আজ, কাল থেকে, একেবারে পরশু, রবিবার বাড়ি ফিরবে। ওর জন্যই মিলি আজ ছুটি নিল। একসঙ্গে দুই বন্ধু নতুন বছরকে 'ওয়েলকাম' করবে।
প্রীতির জন্য এত কষ্ট হয়, মিলির।
মেয়েটা তো জীবনে কিছুই পেল না! অথচ… সম্ভাবনা ছিল অনেক।
মিলি আর প্রীতি কলেজের বন্ধু। সেই দুহাজার চারে দুজনেই এক সাবজেক্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিল কলেজে। আর মাসদুয়েকের মধ্যেই জমে গেছিল বন্ধুত্বটা। কলেজে যেমন হয় আর কি! এমনকি মিলির যে প্রথম প্রেম, দিব্যেন্দু - তার ব্যাপারে সবার আগে প্রীতিই জেনেছিল। ক্লাসে প্রক্সি দেওয়া, লাইব্রেরি তে নোট বানানো, নন্দন--রবীন্দ্রসদনে ঘোরা - সবেতেই দুই বন্ধু একত্রে। তারপর মাস্টার্সে অবশ্য আলাদা আলাদা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে দুজন। মিলি মাস্টার্সের পরে এম বি এ করেছে। প্রীতি একটা প্রাইভেট কলেজে চাকরি পেয়েছে। তখন থেকেই যোগাযোগ টা একটু করে কমছিল। ওই, সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলে যা হয় আর কি! তারমধ্যে মিলির তো আবার কর্পোরেট জব। যেমন মাইনে বেশি, তেমনি খাটনিও।
ফেসবুকের হাত ধরেই দুই বন্ধুর আবার কাছাকাছি আসা। ততদিনে প্রীতির বিয়ে হয়ে গেছে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে শ্বশুরবাড়ি। মিলি তখন দিল্লিতে, অদ্রীশের সঙ্গে প্রেমপর্ব চলছে। সেইসময় মিলিই একটু ব্যস্ত হয়ে গেছিল। অদ্রীশ আর ও দিল্লি থেকে কলকাতা ফিরল। বিয়ে হল। বিয়ের পরে চিনার পার্কের কাছে এই ফ্ল্যাটটা বুক করেছিল, কোভিডের জন্য পজেশান পেতে দেরি হয়ে গেল। এইবছরেই পজেশান পেয়ে, বেশ মনের মতো করে সাজিয়েছে বাড়িটা। টু বি এইচ কে - কিন্তু দু' দুটো ব্যালকনি, ড্রয়িংরুম আর মিলির বেডরুমটার লাগোয়া। ড্রয়িংরুমের লাগোয়া ওপেন কিচেন - সেখানে আবার এমন স্টাইল করে একটা স্ল্যাব লাগিয়ে বার স্টুল দিয়ে সাজিয়েছে মিলি যে গেস্টরা কিচেন পার্টে বসে গল্প করতেই ভালবাসে। প্রীতিরও ভাল লাগবে নিশ্চয়ই।
আজ অবশ্য প্রীতি আসার আগেই রান্না সেরে রাখবে ও। বিশেষ কিছু করবে না, একটু বাটার গার্লিক হার্ব রাইস, ম্যাশড পোট্যাটো, বয়েলড ভেজিস আর হার্ব চিকেন। ছিমছাম কন্টিনেন্টাল খাবার। করতেও বেশি সময় লাগবে না, প্লেটিং করার পরে দেখতেও সুন্দর লাগবে। আবার দুইবন্ধুর গল্প করার মাঝে কোনো বাধাও আসবে না।
তাছাড়া, বেচারা প্রীতি… যে জীবনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে… কন্টি খাবার কি খায় খুব একটা? কে জানে! একেবারেই ছাপোষা জীবন ওর। সকালে কলেজ, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে। তারপর একটু রেস্ট নেয়, ফেসবুক- টুক দেখে, হোয়াটসঅ্যাপে আড্ডা মারে ওর সাথে কখনও। সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়েই পড়ে…আবার পরেরদিন কলেজ।
ওর বরটা, কি যেন নাম ছিল… প্রীতম… ঘোর অমানুষ ছিল একটা। বউকে বাড়িতে রেখে অফিসে লীলাখেলা চালাচ্ছিল। তা সে মেয়েও ঘোড়েল ছিল যথেষ্ট। ফেসবুক থেকেই প্রীতির নাম্বার জোগাড় করে ফোন করে সব কীর্তি ফাঁস করে দিয়েছিল। প্রীতি অবশ্য বরকে ছাড়তে চায়নি। কান্না-কাটি, এমনকি তাবিজ-জলপড়া-উপোস-রত্নধারণ সব ই করেছে। কিন্তু, শেষপর্যন্ত সম্পর্কটা আর টেকে নি। এইবছরই গোড়ার দিকে সইসাবুদ হয়ে গেছে। এখন প্রীতি আবার পাইকপাড়া ফিরে এসেছে। এখন অবশ্য কাকু আর নেই, ও আর কাকিমাই থাকে। আর কী যে পরিশ্রম যায় মেয়েটার! মাত্র ছত্রিশেই মোটা হয়ে গেছে অনেকটা। চোখের নিচে কালি। আর হবে না? এরকম থোড়-বড়ির জীবন ভাল লাগে কারো? তাই তো এবার মিলি জোর করে বলল তিরিশ তারিখ চলে আসতে ওদের বাড়ি। অদ্রীশ এমনিতেই বাড়ি থাকবে না। আর ওর ও অনেক ছুটি জমে আছে। শুক্র-শনি দুই বন্ধু নিজেদের মতো পার্টি করবে। প্রীতি গাঁইগুঁই করছিল। বলছিল "মায়ের কি হবে?" কিন্তু মিলি নিজেই কাকিমার সঙ্গে কথা বলেছে। কাকিমা বলেছেন "মেয়েটা কেমন একটা হয়ে গেছে রে। কোত্থাও যেতে চায় না। ছুটির দিনে অনেকক্ষণ ঘুমোয়, ওইটুকুই যা। বাকিসময় মোবাইল আর নইলে বই। আমি চোখ বুজলে যে কি হবে?"'
কাকিমার সঙ্গে কথা বলে মিলি বুঝেছিল দুটো রাত্তির কাকিমা একা থাকতেই পারবেন। আর ওরা থাকে একতলায়, প্রীতির জ্যেঠু -জ্যেঠিমা-দাদা-বৌদি থাকেন দোতলায়, একই বাড়ি। তাই কোনো অসুবিধাই নেই। আর চিনার পার্ক থেকে পাইকপাড়াও এমন কিছু দূরে না। তাই প্রীতির কোনো আপত্তিই ধোঁপে টেকে নি। শেষমেষ ওকে মত দিতেই হয়েছে। আজ কলেজ করে চলে আসবে, আর মিলি ততক্ষণে রান্না সেরে, ওর এমনিতেই ঝকঝকে বাড়িটা আরেকটু চকচকে করে নেবে। প্রীতি খায় না হয়ত, তাও একটা রেড ওয়াইন এনে রেখেছে। দুপুর বেলা ফ্রেশ ফুল অর্ডার করে দেবে, ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখবে। দুই বন্ধু মিলে আনন্দ করবে সারা রাত, আর পরের দিনও…
অদ্রীশ বেরিয়ে গেল নিজের মতো। বাড়িতে এখন মিলি একা। কাজ সারতে সারতেই প্রীতির ফোন। চিনার পার্কে এসে গেছে, ফ্ল্যাটটা কোনদিকে বুঝতে পারছিল না। ওকে ডিরেকশান দিয়ে, বাড়িতে, বাথরুমে আরেকপ্রস্থ রুম ফ্রেশনার দিতে দিতেই কলিং বেল বাজল।
"প্রীতিইইইইইই!!! শেষ পর্যন্ত আমাদের দেখা হলো!" জড়িয়ে ধরল মিলি বন্ধুকে।
"হ্যাঁ বাবু… কবে থেকে প্ল্যান… সিনেমা যাব, মলে দেখা করব… আর এখন এক্কেবারে তোর বাড়ি।" একগাল হাসল প্রীতি।
"একদম… আর এটাই বেশি ভাল হলো, বল? কোনো ঝামেলা নেই। দুই বন্ধু নিজেদের মতো করে টাইম কাটাব।"
"তা ঠিক বলেছিস। উফ, কী সুন্দর ফুল! আর তোর বাড়িটাও কী সুন্দর!" মুগ্ধ গলায় বলল প্রীতি।
আনন্দে গলে যাচ্ছিল মিলি।
বাড়িটা ওর বড্ড প্রিয়। অদ্রীশ আর ও দুজনেই ইএমআই দেয়। তবে সাজানোর খরচ সবটাই ওর। অদ্রীশ বলেই দিয়েছে "যার সখ সে করো বাবা"। তবে, কেউ ভাল বললে সব পুষিয়ে যায় এক্কেবারে।
"আগে বস তো। ব্যাগটা রাখ। চেঞ্জ করবি তো আগে?"
"হ্যাঁ, সেই সকালের সালোয়ার কামিজ…ছেড়ে আসি। বাথরুমটা কোথায় রে?"
"তুই আমার ঘরেই যা। নাইটি দিই একটা? ফ্রি হয়ে যা একদম" বলে বন্ধুকে ওর ঘরে ঢুকিয়ে দেয় মিলি। তারপর মাইক্রোওয়েভে ফিঙ্গার- ফুড গুলো গরম করতে থাকে। মেয়েটা সারাদিন পড়িয়ে এসেছে, খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই…
দেখতে দেখতে যে কিভাবে কেটে যাচ্ছিল সময়টা। কলেজের গল্প, ফেলে আসা সময়টার গল্প, নন্দনের ফিল্ম ফেস্ট আর ময়দানের বইমেলার গল্প… সেইসব সোনালী দিনকে ছুঁয়ে দেখা… কথা যেন আর শেষ হয় না!
আর বারবারই মিলির মনে হচ্ছিল একটাই কথা "মাত্র ছত্রিশ বছর বয়স… কীই বা এমন বয়স! তবু আমাদের সমাজে 'ডিভোর্সি' এখনও একটা ট্যাবু। কাকিমার পরে যে কি হবে মেয়েটার! আহা রে!"
আজ অবশ্য প্রীতিও একটা গুগলি দিয়েছে। ওয়াইনের কথা বলায় বেশ আগ্রহ নিয়েই রাজি হয়েছে। তাই ক'টা মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই বন্ধু দুটো গ্লাস নিয়ে বসেছে ব্যালকনির বেতের দোলনাটায়।

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
দূরের আলোগুলোর দিকে তাকিয়ে, এতক্ষণের চেপে রাখা কথাটা বলেই ফেলে মিলি।

"বাবু, একটা কথা বলি? তুই আবার রাগ করিস না শুনে। কাকিমা তোকে নিয়ে খুব ওরিড থাকেন রে।"
"ও মা! কেন?" অবাক গলা প্রীতির।
"বুঝিসই তো… মা তো… কাকিমার তো চিন্তা হবেই। কাকিমা না থাকলে তোর কি হবে…"
"হুম… বুঝি রে…"
"প্রীতমটা যে এমন বদমাইশ হবে।" দাঁতে দাঁত চাপে মিলি।
"ছাড়…যা হবার তো হয়েই গেছে।" ক্লান্ত স্বর প্রীতির।
"তা বলে তোর মতো একজনের সঙ্গে… আর তুই ও একটা বোকার হদ্দ… অ্যালিমনি নিলি না কেন?"
"কেন নেব ওর দয়ার দান? আমি তো নিজের পেট চালাতে পারি…"
"তাও… একটা ভবিষ্যতের জন্য নিতে পারতিস।"
"আমার লজ্জা লাগে রে… ও তো আমার ছিল না, তাহলে ওর টাকায় আমারই বা অধিকার থাকে কি করে?"
"হুম! কিছু জমাচ্ছিস তো?"
"তেমন কিছু না রে। জানিসই তো, আমার মাইনে খুব বেশি না… তারমধ্যে সংসার খরচ, মায়ের ওষুধ, ডাক্তার - চলে যাচ্ছে সেটাই অনেক…"
আহা, কী বিপন্ন কন্ঠ!
তবু, মিলিকে আজ কথা বলতেই হবে।
বন্ধু হয়ে বন্ধুকে না বললে হয়?
"তুই আরেকবার জীবন শুরু কর প্রীতি। তোর তো কোনো পিছুটান নেই… আবার শুরু কর! প্লিজ!"
এর আগেও একবার দুবার এই কথা বলেছে মিলি। জানে, প্রীতির উত্তর কি হবে। "তুই কী পাগল হলি?" বা "বাবা,,একবার সুযোগ দিয়েই হলো না, আবার!"
কিন্তু, এবার চুপ করে আছে কেন প্রীতি?
"কি রে, রাগ করলি? আই অ্যাম স্যরি। আসলে…" ও কথা শেষ করার আগেই প্রীতি একটু হাসল। তারপর বলল "আসলে.. কিভাবে বলব জানি না… মানে… একজনের সঙ্গে কিছুদিন আগে আলাপ হয়েছে। বেশ ভাল লেগেছে আমার।"
"আচ্ছা? সে কে? কি করে? কোথায় থাকে?"
অনেক প্রশ্ন মিলির বুকে এখন।
"বলছি বাবা, বলছি। সব বলব বলেই তো আরো এলাম আজ। ওঁর নাম শিবেন্দু। ঢাকুরিয়ায় বাড়ি। আই টি কোম্পানিতে আছে।"
"কিভাবে আলাপ?"
"ফেসবুকে। আমি মাঝে মাঝে একটা দুটো লেখা লিখি তো…সেটা পড়েই মেসেজ করেছিল… তারপর কথা হতো। দেখাও হয়েছে।"
"তারপর?"
"আই ডোন্ট নো, মিলি। বাট, অনেক, অনেকদিন পর কারো কথা, কারো শিক্ষা আমার ভাল লেগেছে।" লাজুক গলায় বলে প্রীতি।
"ও ও কি ডিভোর্সি?"
"না… বিয়ে করেনি। আমার থেকে একটু ছোটোও… বছর দুয়েকের…"
"আর ইউ শিওর ও তোর সাথে খেলছে না? আর তোর রিলেশানশিপ স্টেটাস জানে?" তীক্ষ্ণ হচ্ছে মিলির স্বর।
"হ্যাঁ হ্যাঁ, সব জানে। তুই তো জানিসই, আমি স্ট্রেইড ফরোয়ার্ড, কিছুই লুকোতে চাই না। তবে… আমার তো ওকে খুবই সিরিয়াস মনে হয়েছে। ওর মা বাবার সাথেও আলাপ হয়েছে।"
"ওঁরা মেনে নিয়েছেন তোকে?"
"হ্যাঁ… ওনারা নাকি ভাবতেই পারেননি, ওনাদের ভ্যাবলাকান্ত ছেলে কাউকে এ জীবনে নিজে নিজে পছন্দ করবে!" গলে যাওয়া হাসি এখন প্রীতির মুখে।
শেষ চেষ্টা করে মিলি।
"আর ইউ শিওর, এটা কোনো ফাঁদ না? বা, জাস্ট তোর শরীরের জন্য…"
এবার জোরে হাসে প্রীতি।
"ধ্যাত! বোকা মেয়ে। সেসব না। এই দু হাজার বাইশে, নিছক শরীরের জন্য সম্পর্কও কি কম হয়? এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার তো ঘূনপোকার মতো ছেয়ে গেছে সমাজে… তবে জানি না ভবিষ্যতে কি হবে। আপাতত তো আমি জীবন যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে ভাসছি…"।
থমথম করছে মিলির বুক!
এক্সট্রা ম্যারিটাল! হুঁহু!
অদ্রীশ কোথায় থাকবে এই দু'দিন, ও কি জানে না?
সব জানে।
না চাইলেও মেনে নিতেও হয়।
কিন্তু তা বলে যাকে 'বেচারা' ভাবে, ভেবে এসেছে - সে কিনা টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাবে? আর, এমনি লাল -লাল, ব্লাশ করা মুখে, অনাবিল হাসতে হাসতে বলবে নতুন মানুষটির কথা?
পুড়ে যাচ্ছিল বুকটা, মিলির।
সময় নিয়ে, একটু থেমে, বলল "ওয়াও প্রীতি! আই অ্যাম। সো হ্যাপি! আয় এই খুশিতে আমরা আজ ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করি… আমি খাবার গরম করে আনছি এখানেই…"
হ্যাঁ, এখানেই ডিনার হোক আজ।
বড় আলো না, মোমবাতির আড়ালটুকুই বড্ড দরকার এখন মিলির…
নিজের জন্যও…
নিজের জন্যই....

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ইউটোপিয়া

 
-"কি গো, রাগ করেছ?"
-"হুম!"
-"প্লিজ, রাগ করো না।"
-"..."
-"অ্যাই, প্লিজ, রাগ করো না! আমি কি করব বলো? দেরি হয়ে গেল তো.."
-"হ্যাঁ, তোমার তো আমার কথা মনেই থাকে না। আমি আর কে…"
-"উফ, কত্ত অভিমান! তুমিই তো আমার সব!"
-"তাই আমার কাছেই আসতে চাও না তুমি… সবার জন্যে তোমার সময় আছে, আমার জন্যই নেই…"
-"আহা রে, যত বোকা বোকা কথা। কত কাজ ছিল তুমি তো জানো… আমারও তো ইচ্ছে করে তোমার কাছে কাছে থাকতে সবসময়… কিন্তু কাজ ছেড়ে…"
-"রাখো তো তোমার কাজ! সবসময় আমার কাছেই থেকো! জানো তো, পতিই পরমেশ্বর! তাই, আমার কাছে থাকাই তোমার সবচেয়ে বড় কাজ…"
-"আহা রে! অ্যাই ছাড়ো, কি করছ… ছাড়ো… কেউ এসে পড়বে… উফ, অনি… ধ্যাত!"
-"ছাড়বই না… এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য… এখন আর ছাড়াছাড়ি নেই…"
কোনোমতো অনির্বাণের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় নিবেদিতা।
উফ, পাগল বটে, বরটা ওর!
ছুটির দিনগুলোতে একটুখানি সময় ওকে দেখতে না পেলেই যেন মাথাখারাপ হয়ে যায় ওর। বাচ্চাদের মতো অভিমান করে, ঠোঁট ফোলায়। যেন চল্লিশ পেরোনো, গম্ভীর মানুষটা নয়, জাদুমন্ত্র দিয়ে নিজেকে সেই কুড়ির কোঠায় আটকে রেখেছে।
অভিমান করে, আবার পলকে সেই অভিমান ভেঙে প্লাবনও আসে। তখন আবার নিবেদিতার বড্ড লজ্জা লাগে… ইস! কেউ দেখে ফেললে কি হবে! কী ভাববে সবাই! যে, এত বয়স হলো, এতবছর একসঙ্গে কাটিয়ে দিল ওরা, তাও ওর বর এখনও ওকে ছাড়া থাকতে পারে না! সবসময় ওকেই চাই!
ধ্যাত!
বড় লজ্জা!
আর, বড় আনন্দও!
কাছের মানুষ, নিজের মানুষ ভালবাসবে, আদর করবে, আঁকড়ে রাখবে, তবেই না! কতলোক তো আছে পান থেকে চুন খসলেই বৌয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। কী খারাপ খারাপ কথা বলে! জোর জবরদস্তিও করে। ভেবে যে কী খারাপ লাগে নিবেদিতার! মেয়েগুলো যে কিভাবে পারে ওইসব বর্বর লোকের সঙ্গে জীবন কাটাতে…।
হয়ত তাদের কোনো যাবার জায়গা নেই, নিজস্ব উপার্জন নেই - তাই পারে, পারতে হয়।
অবশ্য, নিবেদিতারও কোনো যাবার জায়গা নেই। মা আর বাবা দুজনেই নেই, বাড়িটা ছিল, অনি একদিন বলল শুধু শুধু বাড়িটা রেখে লাভ নেই, মেইনটেইন করা সমস্যা। বিক্রি করে দেওয়াই ভাল। আর দালাল লাগিয়ে বিক্রিও করে দিয়েছে। তাই সে অর্থে অন্য কোনো জায়গা নেই নিবেদিতার যাবার।
আবার, একটা কথা মনে পড়ে গেল। যেদিন বাড়িটার রেজিস্ট্রি হয়ে গেল, কেঁদে ফেলেছিল নিবেদিতা। অনি এসেছিল ওর কাছে। জড়িয়ে ধরে বলেছিল "মহারানির চোখে জল কেন?"
"এমনি।"
"উঁহুঁ, এমনি এমনি না… বাড়ির জন্য, তাই না?"
"হুম.."
"কিন্তু তুমিই তো মত দিলে…"
"তুমি বললে, তাই…"
"আমি বললেই কি সেটা ঠিক হয়, পরী? হয় না তো! তোমাকে তো মুখ ফুটে বলতে হবে!"'
"আমি বলতে চাইই না, তুমি বুঝে নাও নি কেন?"
"স্যরি বাবু… আচ্ছা, আমার দিকে তাকাও… তাকাও, প্লিজ…"
"হুম…"
"এবার থেকে তোমার সবকথা বুঝে নেব আমি। আর এমন ভুল করব না…"
"..."
"আর শোনো, এটা তো তোমার বাড়ি… আমি বরং এইবাড়িটা তোমার নামে ট্রান্সফার করে দিই।"
"এই না না.."
"না না কেন? যা আমার সবই তো তোমার। আমি আইন জানি না ঠিক, গিফট ডিড করে ট্রান্সফার করে দেওয়া যায় মনে হয়। কথা বলে দেখি…"
"না না না। একদম না।"
"কেন, পরী?"
"ওই যে, যা তোমার সব আমার! তাই…"
"আচ্ছা বেশ! তাহলে এবার একটু হাসো, প্লিজ! না না… ওইরকম হাসি না, একটু বেশি বেশি হাসি… নইলে এমন কাতুকুতু দেব না…"
শুধু কাতুকুতুতেই থামেনি সেদিন অনি। ওর মন ভাল করার জন্য সঙ্গেসঙ্গেই অনলাইনে অর্ডার করে দিয়েছিল একটা সুন্দর শাড়ি।
পাগল এক্কেবারে ওর বরটা!
নইলে সবাই ওকে 'নিবেদিতা' বলেই ডাকে, বা ওর ডাকনাম 'শম্পা' বলে। কিন্তু অনি ওকে আদর করে 'পরী' নামে ডাকে। তাতেও লজ্জা লাগে ওর। প্রথম প্রথম তো ব্লাশ করত খুব। আর… মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকত অনি।
এই ক'দিন আগেই একটা জড়ানো মুহূর্তে বলেছিল "আচ্ছা, তুমি আমাকে পরী কেন বলো?"
"কারণ তুমি তো পরীই… এঞ্জেল অন আর্থ!"
"ধ্যাত!"
"ধ্যাত না, সত্যি… এত ভাবো তুমি মানুষের জন্য, এতবড় মন তোমার… আমার তো নিজেকে ভীষণ লাকি মনে হয়, এই এত্তবড় পৃথিবীতে তুমি আমাকেই বেছে নিয়েছ নিজের মানুষ বলে.."
"আহা"... লজ্জা পেয়ে অনির বুকে মাথা গুঁজে দিয়েছিল নিবেদিতা।
এভাবেই ভাল আছে ওরা দুটিতে। ভালোয় - মন্দয়, হাসিতে-কান্নায়…
ভাল আছে! খুউউব ভাল আছে!
হ্যাঁ, বাইরে থেকে লোকে তো কতকিছুই বলে! ওদের বাচ্চা হলো না, সেই নিয়ে বাইরের লোকের যত সমস্যা! ওপরের ফ্ল্যাটের মাসিমা সেদিন কেক বানিয়েছিলেন, দিতে এসে বলে গেলেন "তোমাকে দেখে বুকটা ফেটে যায় বৌমা! যখন বিয়ে হয়ে এলে, আমরা বলেছিলুম, 'চাঁদের মতো বৌ'। তখন কি আর জানতুম গো বৌমা, কার মনে কী আছে! বাপ মা ও নেই… বাড়িটাও বেচে দিলে… লেখাপড়া জানো, কেন যে একটা চাকরি করলে না বৌমা! এখনও সময় আছে, চেষ্টা করো না একটা কাজের।"
একটু বিরক্ত হয়েছিল ও। তাই বলে উঠেছিল "না না, মাসিমা, আমি ভাল আছি খুব। আসলে ও চায় না আমি চাকরি বাকরি করি… আমি সেভাবে রাস্তায় চলতে ফিরতে পারি না তো… আর প্রাইভেট অফিসে চাকরি মানেই তো অনেক খাটনি… আমার কষ্ট একদম সহ্য করতে পারে না তো ও…"
চুপ করে ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েছিলেন মাসিমা।
হাসতে হাসতে ও বলছিল "কিছু বলতে গেলেই বলে, 'পরী, আমি আছি তো, তোমার কি লাগবে আমাকে বলো, সব এনে দেব, তুমি বললে আকাশের চাঁদটাও এনে দিতে পারি!' খালি 'পরী আর পরী'... হি হি…"।
"আচ্ছা… ভাল… তোমার শরীর ঠিক আছে তো বৌমা?" জিজ্ঞেস করেছিলেন মাসিমা।
"হ্যাঁ হ্যাঁ মাসিমা, খুব ভাল আছি। একটু রোগা হয়ে গেছি, তাতেই ওর মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়! খালি বলে 'ডাক্তার দেখাও, ওষুধ খাও।' আমার কিছু হলেই অস্থির হয়ে যায় একেবারে…"
"তা ডাক্তার দেখাও একবার বৌমা… এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ কেন?"
"কষ্ট? কিসের কষ্ট মাসিমা? এখন লোকে পয়সা খরচ করে রোগা হতে চায়, আর আমি তো এমনি এমনি হয়েছি। হি হি! আমি লাকি! ও আবার বলে এই এত্তবড পৃথিবীতে ওকেই আমি বেছে নিয়েছি, ও ই নাকি লাকি… হি হি!"
"আমি যাই মা… তুমি সাবধানে থেকো। কেকটা খেয়ো…" কেন জানি না চোখের জল চাপতে চাপতে চলে গেছিলেন মাসিমা।
সেদিকে তাকিয়ে খারাপ লাগছিল নিবেদিতার!
আহা রে, বয়স্ক মানুষ। তারমধ্যে আবার অনির্বাণের মায়ের বন্ধু ছিলেন উনি। এমনকি বিয়ের পরে ওকে বরণ করেছিলেন মাসিমাই, শাশুড়িমা বিধবা ছিলেন বলে বরণ করেন নি। তারপর, বিয়ের চারমাসের মাথায় তো শাশুড়ি মা ও চলে গেলেন…
সে ও কতবছর হয়ে গেল…
কতকিছু পালটে গেল…
দূরের মানুষেরা আরও দূরের হয়ে গেল…
কাছের মানুষেরা আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেল…
"ইস! কী পোড়া পোড়া গন্ধ! কি পুড়ছে?" কর্কশ গলার স্বর শুনে ঘুরে তাকালো নিবেদিতা।
"উফ, রান্নাঘরে ডাল চাপিয়ে রেখে ভুলে গেছ? পুড়ে ঝামা হয়ে গেল সব। "
"স…স্যরি…আসলে… একটা কথা ভাবছিলাম…"
"এই তুমি আর তোমার ভাবনা! উফ, জীবনটা শেষ করে দিল আমার! শা লা! আমার কপাল! পাগলি ছাগলি আমার ঘাড়ে ফেলে বাপ মা দুটো ড্যাং ড্যাং করে কেটে পড়ল… এখন মা গীর যাবার জায়গা নেই, আর আমার ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছে দাচ্ছে, আর 'ভাবছে!"
চুপ করে থাকে নিবেদিতা।
বলেই চলে অনির্বাণ। "একটা ডাইনি কে নিয়ে এসেছিলাম। আমার মা কে খেল… একটা বাচ্চা দিতে পারল না… কোনো কাজের না কিছু না। শা লা, দেখেই ঘেন্না লাগে… মরতে পারো না তুমি?"
"মরব?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিবেদিতা।
"তা মরবে কেন? আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আরও শেষ করতে হবে না? সারাদিন পরে দুটো ডালভাত ও খেতে পারব না, সব পুড়িয়ে দিল… জিনিসের দাম জানিস তুই মা গী? একপয়সা রোজগারের মুরোদ নেই…"
বলেই চলে, বলেই চলে অর্নিবাণ। রোজের মতো।
এরপরেই চুলের মুঠিও ধরবে, চড়চাপড় মারবে।
রোজের মতো।
কিচ্ছু বলে না নিবেদিতা।
চোখে বুজে থাকে।
না, কাঁদবে না একটুও…
'অনি' খুব কষ্ট পায় ও কাঁদলে…
বারবার বলে "সোনা মেয়ে পরী, তুমি জানো না, তোমার চোখে জল দেখলে আমার বুকে সুনামি আসে? প্লিজ, কেঁদো না… প্লিজ…"।
তাই তো কাঁদবে না নিবেদিতা একটুও। সে অর্নিবাণ যতই চুলের মুঠি ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলুক "শা লা, ঠান্ডা লা শ একটা! এত মারি, তবু একটু আওয়াজ পর্যন্ত করে না! বাপ মা দুটোই শয়তান ছিল, লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছে বাঁ…"
কান বন্ধ করে নেয় নিবেদিতা…
ওকে যা খুশি বলুক, বাবা মায়ের নামে কিছু শুনলে…
এবার 'পরী' হয়ে যেতে হবে…
অর্নিবাণ না, ওর অনি…অনির কা
ছে যেতে হবে…
ইউটোপিয়া?
হোক স্বপ্নরাজ্য… সেখানেই শান্তি পরীর…

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
সোয়েট-শার্ট

 
রবিবারের সকাল। একটু একটু করে হিমেল হচ্ছে সকালগুলো। কমলালেবু রঙের রোদ্দুর উঠেছে… পাশের বাড়ির দিদুর পুজো হয়ে এই সকালেই, শাঁখ বাজাচ্ছেন। এক্ষুণি মা এসে যাবেন এই ঘরে, আর ঢুকেই বলবেন "এই রিমি, উঠে পড়! সাড়ে আটটা বেজে গেল। কফি খাবি?"
প্রায় এক রুটিন প্রতি রবিবারের। সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। কফি খাওয়া। খবরের কাগজ পড়া, পড়তে পড়তেই মা লুচি বা পরোটা কিছু একটা বানিয়ে দেন। সেই জলখাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়া। বাড়ির কাছেই একটি বৃদ্ধাশ্রম আছে, 'বিকেলে ভোরের ফুল' নামের। সেখানে প্রতি রবিবার যায় রিমি। ওখানের দাদু দিদাদের সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে আসে। গল্প করে, ছবি তোলে, আড্ডা মারে। আসলে, মানুষগুলো খুব একা। বেশিরভাগ দাদু বা দিদারই নিজেদের পার্টনারেরা আকাশের তারা হয়ে গেছেন। ছেলে বা মেয়ে প্রবাস বা বিদেশে থাকেন। তাই তাঁরা বড্ড একা! আর কোভিডের ওই বিচ্ছিরি দিনগুলোর পরে রিমি বুঝেছে একা থাকার মতো অসহায়তা আর কিছুতেই নেই! তাই গতবছর থেকেই প্রতি রবিবার এই বৃদ্ধাশ্রমে আসে ও। একটু সঙ্গ দেওয়া… এইটুকুই আর কি! নইলে তো, রবিবার গুলো কোনো কিছু না করেই কেটে যেত এতগুলো বছর। সেই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা, জলখাবার খাওয়া, স্নান, দুপুরের খাওয়া, ঘুম… এক বাঁধা গত! আর রবিবারের বিকেল হলেই মনে হতো আবার একটা সোমবার আসছে! ভাল্লাগেনা একটুও! ধ্যাত!
কিন্তু এখন... সোমবার গুলোর জন্য অপেক্ষা করে থাকে রিমি। রবিবারেই গুছিয়ে রাখে সোমবারের জামা- কানের দুল- ব্যাগ...
আর এসব শুধুই সাহিলের জন্য! সাহিল ওর টিম হেড। দেখতে আহামরি কিচ্ছু না, কিন্তু ভীষণ গভীর চোখ আর অগাধ পড়াশোনা মানুষটার! বোরোলিনের লোগোতে হাতি কেন থাকে থেকে শুরু করে স্যামসাং - আই ফোনের ব্র‍্যান্ড পজিশনিং এর লড়াই - সবটাই যেন নখদর্পনে সাহিল স্যারের! যদিও, প্রথমদিনেই বলে দিয়েছিলেন "স্যার ট্যার না, উই আর টিম মেটস! আর সবাই জানো তো, টিম মানে কি? টুগেদার উই অ্যাচিভ মোর! এসো, একসাথে মিলে এমন কাজ করি যে গোটা অফিস আমাদের দেখে নিজেদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর অনুপ্রেরণা পাক।" সত্যি বলতে কি, এর আগে দুটো কোম্পানিতে কাজ করেছে রিমি। কিন্তু এখানে এসে এতকিছু শিখতে পারছে, সাহিলের কাছ থেকে মার্কেটিং, ব্র‍্যান্ডিং এর খুঁটিনাটি… প্রতিটা দিন কাজে যেতে ভাল লাগে ওর। জানে, প্রচুর কাজ থাকবে। ডেডলাইনের আগে কাজ শেষ করার মরিয়া চেষ্টা থাকবে। আর, তারপরেই সাহিল সেনগুপ্তের কাছ থেকে "ওয়েল ডান" বা "গুড জব" মেসেজ আসবে। আর ওইটুকুর জন্যই গাধার খাটুনিতেও রাজি এখন রিমি।
এই মাস ছয়েক স্বপ্নের মতোই কাটছিল ওর। প্রতিদিনের স্প্রিন্ট মিটিং এ ঠিক হয় সেদিনের কাজের লিস্ট। সেই অনুযায়ী কাজ করতে হয়। তাই সকালগুলো বড্ড ভাল কাটে রিমির। আর, স্প্রিন্ট মিটিং শুধুই কাজের কচকচি না, প্রতি শুক্রবার একটা মিনি আড্ডা মিটিং ও হয়। যেদিন ওদের টিমের সবাই নিজেদের উইকেন্ড প্ল্যান, কি সিনেমা দেখবে, কোথায় শপিং এ যাবে - এইসব নিয়ে আলোচনা করে। সাহিলই এটার শুরু করেছে। কারণ, শুধুই কাজ করলে ওরা নাকি রোবট হয়ে যাবে। তাই। আর, সেজন্যই, শুক্রবার গুলো বড্ড প্রিয় রিমির।
মানে, এই শুক্রবারের আগেও ছিল। শুক্রবারের পর থেকেই একেবারে নিমপাতার মতো হয়ে গেছে সবটা।
হয়েছে কি, ওদের টিমের কাঁকন বলেছিল "এই শোনো না, চলো আমরা সবাই রবিবার মিট করি? ইকো পার্কের ওখানে হস্তশিল্প মেলা হচ্ছে। যাবে সবাই? একটু তাড়াতাড়ি মিট করে লাঞ্চ টাঞ্চ করে যাই? বেশ ভাল কাটবে?"
সবুজ আর আরিফ রাজি ছিল। হাসি হাসি মুখে মাথা নাড়ছিল। কিন্তু সাহিল বলে উঠল "তোমরা যেতেই পারো। আমার হবে না গো। রবিবার আমার অনেক কাজ থাকে।"
"একদিন ম্যানেজ করতে পারবে না?" বলেছিল আরিফ।
"না, আরিফ। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে গো। আর শুধু আমি না, আরেকজন তাতে ইনভলভড! তাই আমার হবে না গো। কিন্তু তোমরা প্লিজ যাও, মজা করো।"
"ও হো! আরেকজন! গার্লফ্রেন্ড নাকি?" কাঁকন জিজ্ঞেস করেছিল।
উত্তর দেয়নি সাহিল। একটু হেসেছিল শুধু।
কলকল করে উঠেছিল সবাই। সাহিল সেনগুপ্তের গার্লফ্রেন্ড আছে, বলেনি তো!
একটা কাঠপিঁপড়ে কামড়েছিল রিমিকে। তাও কিছু না বললে খারাপ দেখাবে বলে, বলে উঠেছিল "না না, শুধু শুধু আরেকজনের মনখারাপ করিয়ো না।"
"তার মনখারাপ করানোর কথা আমি ভাবতেও পারি না। এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের মনখারাপ হলে তো কলকাতায় নিম্নচাপ আসবে…"।
এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে… যতবার মনে পড়ছে কথাগুলো, রিমির মনেই নিম্নচাপ নামছে। সেই কলেজ জীবনের পরে কাউকে ভাললেগেছিল - আজকাল বেশিরভাগ ছেলেগুলোই কেমন বোকা বোকা! কোনো গভীরতা নেই বলে মনে হয়। পাঁচমিনিটও কথা বলা যায় না! তাই, এতদিন সেভাবে কাউকে পছন্দ হয়নি রিমির। সেলিব্রিটি ক্রাশ আছে অবশ্য ওর কয়েকজন। কিন্তু রিয়্যাল লাইফে এইপ্রথম এতটা উতলা হয়েছিল ও…
যাই হোক, কিছু কিছু জিনিস… হবার নয়! ডেস্টিনি!
আর, সাহিল আসবে না তো কি হয়েছে, ওরা তো যেতেই পারে মেলায়! আর অন্যকেউ না গেলে ও একাই যাবে। লাঞ্চের পরেই নাহয় যাবে! তাই ওদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কাঁকন, আরিফ আর সবুজকে ট্যাগ করে মেসেজ করল "তোরা চাইলে আজ হস্তশিল্প মেলায় আসতে পারিস। আমি যাচ্ছি, চারটে নাগাত। সাতটা পর্যন্ত থাকব।" প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কাঁকন লিখে দিল "আমি রাজি। চারটে পারব না, পাঁচটা করবি?"
"ওকে।" লিখেছিল রিমি। তারপর বেরিয়ে গেছিল ওর কাজে।
সেন দাদু এই বিকেলে ভোরের ফুল বৃদ্ধাবাসের সেক্রেটারি। গিয়ে দেখে উনি বেজার মুখে বসে আছেন।
"কি হয়েছে দাদু, মুখ গোমড়া কেন আজ?" হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিল রিমি।
"আর বলো কেন রিমলি মা! একতলার বাথরুমের পাইপ গুলো থেকে জল পাস হচ্ছে না। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। "
"আহা, মাথাখারাপ করো না, আমি দেখছি।" বলে গুগল থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে কল করল প্লাম্বারকে। উনি এলেন, কাজে লাগলেন, কাজ শেষ হলো, তারপর রিমি বাড়ি ফিরল। আর স্নান খাওয়া সারতে সারতেই এত বেলা হয়ে গেল… আর বেরোতেই ইচ্ছে করছে না!
ওদের গ্রুপে সবুজ আর আরিফ মেসেজের কোনো উত্তর দেয় নি। তারমানে ওরা যাবে না। তাই কাঁকনকে ফোন করে রিমি। ওর বলতে খারাপ লাগছিল, কিন্তু বুঝিয়ে বলার পর কাঁকন বলে উঠল "আরে ইটস ওকে, চিল! আমিও ঘুমিয়ে নিই তাহলে একটু। কাল অফিসে দেখা হচ্ছে।"
রিমির ঘুম আসছে না… জানলা দিয়ে দেখছে মিঠেল দুপুর গড়িয়ে বিকেল আর বিকেল মুছে নেমে আসছে সন্ধ্যে। শীতল। একাকী।
ঠিক রিমির মতোই।
আসলে, বাবা মা, বন্ধুবান্ধব থাকলেও মাঝেমাঝে খুব একা লাগে রিমির। মনে হয় কারো আঙুল যদি ছুঁয়ে থাকা যেত! কাঁধে মাথা রাখা যেত! মনখারাপের দিনে ভিজিয়ে দেওয়া যেত কারো সোয়েট শার্টের বুক!
"আমাকে খুঁজে দে জলফড়িং!"... ওর রিংটোন শুনে চমক ভাঙল রিমির।
সাহিলের ফোন!
"হ্যালো?" অবাক হয়ে ফোন তোলে ও।
"রিমলি, তুমি কোথায়?" অনেক আওয়াজ ফোনের ওইদিকে।
"আমি? বাড়িতে।" আরও অবাক হয়ে বলে রিমি।
"বাড়িতে, মানে? তুমি হস্তশিল্প মেলায় আসোনি?"
"না গো, আমার আজ… একটু প্রবলেম ছিল। কেন?"
"শিট! এদিকে আমি এসে দাঁড়িয়ে আছি।"
"এমা, কেন? শুধু কাঁকন লিখেছিল ও আসবে, আমি তাই ওকে ফোন করে বলে দিয়েছিলাম।"
"অদ্ভুত মেয়ে তো! গ্রুপে লেখোনি কেন?"
"স্যরি গো…" বলতে বলতেই ভাবল রিমি, খামোকা স্যরি কেন বলবে? সাহিল তো আসবে না বলেছিল! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের মনখারাপ হলে নাকি কলকাতায় নিম্নচাপ হবে!
"কেন? পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের কি হলো? কলকাতায় আর নিম্নচাপ এনো না বাবা…" বলে ওঠে রিমি। কাঠপিঁপড়েটা জোরে জোরে কামড়াচ্ছে!
"আহ! পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে…"
"হ্যাঁ…সেখানেই যাও। ইকো পার্কে কেন?" রাগ রাগ গলায় বলে রিমি।
কাঁহাতক আর পিঁপড়ের কামড় সহ্য করা যায়?
"যে শুধু চূড়ান্ত এফিসিয়েন্ট তাই না, যে শুধু নিজের না, চারপাশের আর পাঁচজনের কথাও ভাবে… সেই মেয়েটা তো? যে আমি অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বললে আড়চোখে নজর রাখে, আবার চোখে পড়লে অন্যদিকে তাকায়… আমার সব মেইল যে ফোল্ডার করে সেভ রাখে আর প্রতিদিন নিজেকে ছাপিয়ে যাবার চেষ্টা করে… হ্যাঁ, সেই মেয়েটাই তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে, আমার কাছে…"।
"মানে…" কানটা গরম হয়ে যাচ্ছে রিমির… হাত কাঁপছে…
"রিমলি বসুমল্লিক, যেদিন শুনেছিলাম, রবিবারে আমার মতো ল্যাদ খেয়ে, ওয়েব সিরিজ দেখে না কাটিয়ে তুমি একটি বৃদ্ধাশ্রমে যাও… কিছু ভাল মুহূর্ত তাঁদের উপহার দিতে, সেদিন থেকেই আমি দিওয়ানা হয়ে গেছি তোমার জন্য।"
"সাহিল…"
"আর হ্যাঁ, কখনও তোমার চোখে জল দেখলে বাণভাসি হব আমিও…"
ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে এবার রিমি।
ভেজানোর মতো সোয়েট শার্ট পেয়ে গেছে যে…

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 24 Guest(s)