Thread Rating:
  • 30 Vote(s) - 2.63 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে)
#41
 পর্ব- ১৪



 

        রিয়া ক্লাস শেষ করে সবেমাত্র ক্যান্টিনে ঢুকলো। ভেতরে যেতেই সে দেখলো, রুদ্র এক কোনে বসে আছে। কোনো কিছু ভাবার আগেই সে রুদ্রের টেবিলের সামনে গিয়ে বসতে বসতে বলল, "কেমন আছো, রুদ্র।" 
        "ভালো আছি। তুমি?"
        "এইতো চলে যাচ্ছে। মন খারাপ?"
        "না!" 
        "তোমাকে দেখে কিন্তু সেরকমটা মনে হচ্ছে না।"
        "দেখে কি মনে হচ্ছে?" 
        "তোমার মন খারাপ।" 
        "আসলে তেমন কিছু না।"
        "কোনো সমস্যা থাকলে তুমি চাইলে আমাকে বলতে পারো। তোমার সাহায্যে আসলেও আসতে পারি। মাঝেমধ্যে আমরা আকস্মিক ভাবে এমন কারো থেকে সাহায্য পেয়ে যায়, যেটা আগে কখনো আমরা ভাবতে পারি না। তাই...!" 
        রিয়া কথা শেষ করতে পারলো না। রুদ্র বলল, "আসলে তেমন কিছুই না। আর তোমার কোনো সাহায্য লাগছে আমি নিজেই সেটা বলবো।" 
        "চা খাওয়াবে তো আমাকে?" কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে রিয়া বলে।
        "অবশ্যই, কেনো নয়।" রুদ্র হাসিমুখে উত্তর দেয়।

        রুদ্র চায়ের অর্ডার দিলো। রিয়াকে দেখে রুদ্র আজকাল অবাক হয়। মেয়েটার মধ্যে হঠাৎ এতো কনফিডেন্স কিভাবে এলো? যে মাসখানেক আগে তাকে দেখে নার্ভাস হয়ে যেতো, সে ইদানিং কি দারুণ আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলে। ব্যাপারটা রুদ্র হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে লক্ষ করেছে। রুদ্রের অবশ্য ভালোই লাগে এই রিয়াকে। রিয়ার এই পরিবর্তন রিয়ার ব্যক্তিত্বকে অনেকটা পরিবর্তন করে দিয়েছে।

        রিয়া অবশ্য সবার সাথে এমনই ছিলো। একমাত্র রুদ্রের কাছে এলেই সে শিশু হয়ে যেতো। কিন্তু সে ধীরে ধীরে এটা কাটিয়ে উঠেছে। যাকে ভালোবাসি তাকে দেখা নার্ভাস হলে কি চলে? রিয়ার হঠাৎ একদিন কথাটা মনে হল। সেদিন থেকেই সে ঠিক করল, না সে আগে রুদ্রের ভালো বন্ধু হয়ে উঠবে। তাকে কাছ থেকে আরো জানবে, বুঝবে। এভাবে সারাক্ষণ ভয় পেয়ে থাকলে সে কখনোই রুদ্রের কাছাকাছি আসতে পারবে না। সেই জন্যই তার এই পরিবর্তন। 

        রিয়া একদিন রুদ্রকে হঠাৎ তুমি করে বলতে শুরু করে। রুদ্র তারপরও কয়েকবার আপনি বললেও, তার কাছে বিষয়টা বেমানান লাগছিল। তাই সেও আবার তুমি বলতে শুরু করে। 

        আজকাল রিয়া নিজ থেকেই রুদ্রকে মেসেজ দেয়, ফোন করে। রুদ্র বিরক্ত হলো কি হলো না, সেই ব্যাপারে সে ভাবে না। যাকে ভালোবাসি, তাকে যদি একটু বিরক্তই না করতে পারলাম তাহলে ভালোবেসে লাভ কি? রিয়া আর কোনো কিছু নিয়ে ভাবে না। ভয় পায় না। 

        "আজকের মত ক্লাস শেষ?" রুদ্র জিজ্ঞেস করল।
        রিয়া তখনো চা খাচ্ছিল। সে বলল, "হ্যাঁ, আজকের মত ক্লাস শেষ। তোমার ক্লাস নেই।"
        "একটা আছে, কিন্তু সেটা করার ইচ্ছে নেই।" 

        "চলো তাহলে নিউমার্কেটের দিক থেকে ঘুরে আসি। আমার কিছু বই কেনা দরকার। কিন্তু একা একা বলে কয়দিন ধরে যাওয়া হচ্ছে না। প্লিজ রুদ্র, না বলো না।" 

        রিয়া রিতীমত অনুরোধ করে যাচ্ছিল। রুদ্র শেষমেষ রাজি হয়ে গেলো। তারা দুইজন ক্যাম্পাসের ভেতর থেকেই একটা রিকসা নিয়ে নিলো। রিকসায় উঠে রিয়া এটা সেটা নিয়ে নানা কথা বলে যাচ্ছিলো। হঠাৎ আগের বারের একসাথে রিকসায় যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ে গেলো রুদ্রের। সে বলল, "গতবার কি কান্ড ঘটিয়েছিলে মনে আছে?" 

        রিয়া তাৎক্ষণিক বুঝলো না। সে জিজ্ঞেস করল, "কোন বার?"
        "ভুলে গেলে, ইরিনাকে দেখে হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পাসে রিকসায় আসার কথা।" 
        রিয়ার সেই ঘটনা মনে পড়তেই তার খানিকটা লজ্জা লাগলো। সে বলল, "হ্যাঁ, আমি প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। প্রথমবার তোমার সাথে রিকসায় উঠেছিলাম কি-না।" 
        "এখন নার্ভাস লাগছে না?"
        "না!" ছোট্ট করে রিয়া তাৎক্ষণিক উত্তর দিলো।
        "কেনো?" 
        রুদ্রের এই প্রশ্নের উত্তর রিয়ার কাছে নেই। কিন্তু তার এখন রুদ্রকে দেখলে নার্ভাস লাগে না। ভয় লাগে না। কোনো জড়তা কাজ করে না। সে এখন সবার মতই রুদ্রের কাছেও সাবলীল। 

        "তোমাকে শাড়িতে সুন্দর লাগে।" 
রিয়া কথাটা তাৎক্ষণিক ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। সে তো শাড়ি পরেই নেই। তখনই তার মনে পড়লো, সে সেদিন শাড়ি পরে ছিল। রুদ্র হয়তো সেদিনের কথাই বলছে। 
        "শাড়ি বুঝি তোমার পছন্দ?"
        "কোন ছেলের শাড়ি পছন্দ নয়? ছেলেদের তো ওই একটাই দূর্বলতা, শাড়ি।" 

        তারা চলে এসেছে নীলক্ষেত। রিয়া দোকান ঘুরে ঘুরে বই দেখছে। রুদ্রও দুই একটা বই হাতে নিয়ে দেখছে। হঠাৎ রিয়া বলল, "তুমি বই পড়তে পছন্দ করো?" 
        "তেমন একটা পড়া হয়না।" রুদ্র বলল। 
        "আমি আবার ভীষণ পছন্দ করি। প্রতি মাসেই বই কেনা হয় আমার। অবসর সময়টা বই পড়ে কাটাতে ভালো লাগে।" রিয়া আগ্রহ নিয়ে কথাগুলো রুদ্রকে বলে। 
        "ওহ আচ্ছা।" রুদ্র ম্লান গলায় বলে। 

        রুদ্রের ভালো লাগছে না। সেটা সে রিয়াকে বলতেও পারছে না। মেয়েটা এতো আগ্রহ নিয়ে বই দেখছে, এই মুহুর্তে চলে যাওয়ার কথা বলাটা কেমন দেখায়। রুদ্র বিরক্ত হলেও রিয়াকে কিছু বলল না। 

        রিয়া বেশকিছু বই কিনেছে। রুদ্র সে সব বইয়ের নাম আগে কখনো শুনেনি। আসলে তার গল্প-উপন্যাসের বইয়ের প্রতি আগ্রহ কম। মানুষ কিভাবে এতোটা সময় নিয়ে বই পড়ে তার বুঝে আসে না। 

        "এই বই দুইটো তোমার।" তারা রিকসা করে রিয়ার বাসার দিকে যাচ্ছে। তখনই রিয়া দু'টো বই রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে কথাটা বলল। 
        "এইসবের কোনো দরকার নেই। আর আমি বই তেমন একটা পড়ি না। বাসায় বেশকিছু বই পড়ে আছে, সেগুলো উপর শুধু ধুলো জমছে, কখনো খুলে দেখা হয়নি। এগুলো নিলে, এগুলোর অবস্থাও হয়তো ওদের মতই হবে। তারচেয়ে বরং তোমার কাছেই যত্নে থাকুক।" রুদ্র বলল। 
        "এগুলো তোমার জন্যই কিনেছি। এই দু'টো বই আমার পড়া, এবং আমার ভীষণ পছন্দেরও। সেই কারণেই তোমাকে দিচ্ছি। প্লিজ না করবে না। পড়তে হবে এমন না, তবে পড়লে আমি ভীষণ খুশি হবো। এছাড়াও বই দু'টো পড়লে তোমারও ভালো লাগছে।" 

        রিয়ার জোরাজোরিতে রুদ্র শেষমেশ বই দুটো নিলো। তারপর তাদের মধ্যে পরে তেমন একটা কথা হলো না। রিয়া আগ্রহ নিয়ে কয়েকটা কথা বললেও রুদ্রের নিষ্প্রাণ উত্তরে রিয়া আগ্রহ হারিয়ে ফেলল। 

        রুদ্র এখন দাঁড়িয়ে আছে রিয়ার বাসার সামনে। রিয়া বিদায় নিয়ে চলে যেতে যেতে কিছু একটা ভেবে রুদ্রকে আবার ডেকেছে। রুদ্র হেঁটে কিছুটা দূরে চলে গিয়েছিল। রিয়ার ডাক শুনে সে ফিরে এসে বলল, "কিছু বলবে?"
        "উঁহু।"
        "কী?"
        "তোমাকে সেদিন কুরিয়ারের অফিসের ওদিকটায় দেখেছিলাম। কোনো কাজে গিয়েছিলে?"
        "হ্যাঁ, কুরিয়ার অফিসে একটা কাজ ছিলো। অবশ্য আমিও তোমাকে দেখেছি সেদিন।"
        "তাই!" রিয়া অবাক হলো। সে আবার বলল, "আমাকে-তো ডাকলেই পারতে।" রিয়ার কিছুটা আপসেট হয়ে শেষ কথাটা বলল।
        "আসলে তখন মন মেজাজ বড্ড খারাপ ছিলো।"
        "কি দরকারে গিয়েছিলে?" রিয়া সরাসরি জানতে চাইলো।

        রুদ্রের এখন ইচ্ছে করছে না সেই সব কথা রিয়েকে বলতে। তার কারণ কথা বাড়ালে তরুর প্রসঙ্গ চলে আসবে। এবং রিয়া সেটা ভাল ভাবে নিবে না।

        "কি হলো?" রুদ্রকে আবার জিজ্ঞেস করে সে কিছুটা সময় থামলো। তারপর সে নরম কন্ঠে আবার বলল, "কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো। আমার পরিচিত একজন আছে ওখানে জব করে। যদি তোমার কোনো সাহায্যে আসতে পারি, তাহলে আমি খুশি হবো। বরং আমার ভালোই লাগবে৷" 

        রিয়ার কথা শুনে রুদ্র হঠাৎ কিছুটা আশার আলো দেখলো। সে প্রথমেই রিয়াকে জিজ্ঞেস করল, "সে তোমার কি রকম পরিচিত?"
        "আমার কাজিন, ওখানে জব করে।" 

        রুদ্র তার মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিলো। সে বলল, "আসলে সেদিন আমি গিয়েছিলাম ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে। কিন্তু সকাল থেকে অপেক্ষা করে গেলেও ম্যানেজার সেদিন আসে নি। পরে রাগ করে আর যায়নি। কাল পরশু আরেকবার যাবো বলে ভেবে রেখেছিলাম।" 
        "কি জন্য ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে চাচ্ছো?" রিয়া আবারো সরাসরি রুদ্রকে জিজ্ঞেস করল।
        "একটা মেয়ে নিয়মিত আমাকে চিঠি দেয়, সেটা নিশ্চয়ই তুমি জানো?"
        "হ্যাঁ, তরু নামের একটা মেয়ে।" 
        "হ্যাঁ। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে...!" রুদ্র থামলো। সে তার কথাগুলো গুছিয়ে আনতে পারছে না অদ্ভুত কারণে। কীভাবে গুছিয়ে রিয়াকে কথাগুলো বলবে সেটাই ভাবছে। রিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে রুদ্রের সামনে। সে বুঝতে পেরে রুদ্রকে তাড়া দিলো না। 

        "তরু আগে রেগুলার চিঠি দিলেও ইদানিং অনিয়মিত ভাবে চিঠি দিচ্ছিলো। কোনো মাসে একটা আবার কোনো মাসে একটা ও না। আমি কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। সেই কারণে তরুর খোঁজে কুরিয়ার অফিসে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখান থেকে কিছুই জানতে পারিনি। অনেক রিকোয়েস্ট করার কারণে, সেখানের একজন ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে বলে। আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সেদিন উনি আসে নি। আসলে তরুর ঠিকানা জানাটা আমার খুব দরকার।" রুদ্র সম্পূর্ণ কথা রিয়াকে জানালো না। যতটা প্রয়োজন মনে করেছে ততটুকু জানালো। 
        রিয়া সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। সে বলল, "তুমি চাইলে আমি আমার কাজিনকে বলে দেখতে পারি। যদি কোনো ভাবে কিছু জানা যায়।"
        "হ্যাঁ, অবশ্যই।" রুদ্রের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। 

        রুদ্র যে খুশি হয়েছে, সেটা তাকে দেখে রিয়া বুঝতে পারল। তরুকে খুঁজতে রুদ্রকে সাহায্য করতে তার খারাপই লাগবে। যতই হোক, সে রুদ্রকে ভালোবাসে। কেউ জেনে শুনে তার ভালোবাসার মানুষকে হাতছাড়া করতে চায় না। কিন্তু রিয়া এটা নিয়ে অনেক ভেবেছে। সেদিন সে রুদ্রকে কুরিয়ার অফিসে সামনে দেখেই বিষয়টা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছিলো। সে রুদ্রকে সাহায্য করবে কি করবে না? এটা নিয়ে অনেক ভেবে অবশেষে সিন্ধান্ত নিয়েছে, সে এটার শেষ দেখতে চায়। তরু কে? এই প্রশ্নের উত্তর সেও জানতে চায় রুদ্রের মত করে। 

        "এখনই এতো খুশি হলে পরে তরুর ব্যাপারে কিছু জানতে না পারলে হতাশা হবে। তাই আগে থেকে বেশি আশা করা উচিত না।" রিয়া ম্লান গলায় বলল। 
        "উঁহু!" রুদ্র বলল। 
        "আচ্ছা, এবার তাহলে আমি যাই!"
        "আচ্ছা, ফোনে কথা হবে।" 
        "হ্যাঁ, অবশ্যই।" 
        "তরুর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে নির্দ্বিধায় জিজ্ঞেস করতে পারো। যদি ওকে খুঁজতে সাহায্য হয় তাহলে আমি বলল যতটুকু জানি।"
        "আচ্ছা করবো।" 

        রিয়া বিদায় নিয়ে চলে গেলেও রুদ্র কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। রিয়া তাকে এভাবে সাহায্য করবে সে ভাবতেই পারে নি। সে বুঝতে পেরেছে রিয়ার মুখ দেখে বিষয়টা হজম করতে তার একটু কষ্ট হচ্ছে। তবুও রিয়া তাকে সাহায্য করছে এটাই বড় ব্যাপার। রিয়ায় প্রতি তার মনোভাব অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেলো মুহুরর্তেই। 

        রুদ্র সরাসরি বাসায় না গিয়ে আলিফের বাসায় এলো। বেশকিছু দিন ধরে আলিফের খোঁজ নেই। ফোন করলে ধরে না, মেসেজের উত্তর দেয় না। রুদ্র আলিফের ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জেনেছে সে ক্লাসেও যায় না। বিষয়টা রুদ্রের কাছে ভালো লাগে নি। আলিফের নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। সেই কারণে সে আজ আলিফের সাথে দেখা করার জন্য সরাসরি চলে এসেছে তার বাসায়। 

        আলিফ বসে আছে রুদ্রের সামনে। চোখ লালা। ক্লান্ত। অনেক দিন ভালো করে ঘুমায় না, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মুখ শুকিয়ে গেছে। রুদ্র আলিফকে এভাবে দেখে সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। 

        "কিরে কি হয়েছে তোর?" রুদ্র জানতে চাইলো।
        "কি হবে? কিছু হয়নি-তো!" আলিফের কন্ঠ কেমন ভাড়ী। 
        "কিছু হয়নি বললেই হবে? ক্যাম্পাসে যাস না। ফোন দিলে ধরিস না। মেসেজের রিপ্লাই করিস না। তোকে দেখে মনে হচ্ছে, রাতে ঠিকঠাক ঘুমাসও না। কি হয়েছে বল আমাকে।" 

        রুদ্র বেশকিছু সময় ধরে আলিফকে বুঝানোর পর সে তাকে সবটা খুলে বলল। আলিফ সবটা শুনে বলল, "নদীকে কিছুটা সময় দে। সব মানুষের নিজস্ব অতীত থাকে। আমরা তাদের দেখে অনেক সময় বুঝতে পারি না। হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা কষ্টটা দেখতে পাই না। নদীর জীবনে সেরকম কোনো কালো অধ্যায় থাকতেই পারে। তুই-তো ওর ব্যাপারে সবটা জানিস না, জানিস?"
        "নদী অতীত সম্পর্কে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা। আমি দুই একবার জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু তেমন কিছুই বলেনি।" 
        "ওকে একটু সময় দে আলিফ। ওর পাশে থাক। ওকে বুঝতে দে, তুই ওর পরিস্থিতি বুঝতে পারছিস, ওকে বুঝতে পারছিস। দেখবি, ও যখন তোকে বিশ্বাস করবে তখন সবকিছু খুলে বলবে।"
        "হ্যাঁ, আমি সেটাই করবো। কিন্তু আমি ওকে কীভাবে যেনো অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আমি আগে বুঝিনি রুদ্র। এখন খুব কষ্ট হচ্ছে।" 
        "আমি জানি, এই কষ্টটা সহ্য করা যায় না। তবুও আমাদের হাতে-তো কিছুই করার নেই।" 

        দুইজনে চুপচাপ একে অন্যের পাশে বসে রইল। দুইজনের বুকের ভেতর অসংখ্য প্রশ্ন। সেই সব প্রশ্নের উত্তর তাদের জানা নেই। মুহুর্তে ঘরটা দীর্ঘশ্বাস ভরে উঠলো। দুইটা মানুষ প্রায় একই রকম দুঃখ নিয়ে বসে আছে। 

        "ক্যাম্পাসে আয়, সবার সাথে দেখা কর, ক্লাস কর, দেখবি ভালো লাগবে। এভাবে নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখলে কষ্ট আরো বাড়বে।" রুদ্র বলল।
        "উঁহু!" আলিফ নিষ্প্রাণ ভাবে উত্তর দিলো। 

        তারা দুইজন আরো বেশকিছু বসে রইল পাশাপাশি। নিজেদের দুঃখ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করলো। কিন্তু পৃথিবীর কারো দুঃখের ভাগ কেউ নিতে পারে না। যার যতটুকু দুঃখ তাকে ততটুকু উপলব্ধি করতে হয়। 

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
কি আর বলবো কিছু বলার নেই !!

লাইক আর রেপু রইলো।


Heart Heart
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#43
(31-12-2022, 11:35 AM)ddey333 Wrote: কি আর বলবো কিছু বলার নেই !!

লাইক আর রেপু রইলো।


Heart Heart



Heart ধন্যবাদ আপনাকে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#44
দাদা আপনার গল্পগুলো খুব সুন্দর কিন্তু  পড়তে খুব অসুবিধা হয় কারণ আপনি text  এলাইনমেন্ট মাঝখানে ( center )  রাখেন।

দয়া করে লেফট  এলাইনমেন্ট করে দিন যেরকম নরমাল লেখা হয়ে থাকে।   Namaskar
  
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#45
চেষ্টা করবো ভাই চেন করবার।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#46
 পর্ব-১৫

 

        ফাহিম বসে আছে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় বটগাছটার নিচে। এই জায়গাটা শান্ত। অন্য সব জায়গায় চেয়ে এখানে মানুষের আনাগোনা কম। তাই জায়গাটা তার প্রিয়। 

        ফাহিম টিউশনি শেষ করে মেসে যায় নি। সরাসরি এখানে চলে এসেছে। এখানে আসার কারণ ইরিনা। সে তাকে মেসেজ দিয়ে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছে। 

        ইরিনা এখন অনেকটা সুস্থ। হাঁটাচলা করতে পারে। দীর্ঘ এক মাস বাসায় বিশ্রামে থাকার পর ইদানিং ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছে সে। 

        হাসপাতালে থাকতে ফাহিম প্রতিদিন গিয়ে একবার করে দেখে আসতো ইরিনাকে। প্রথম ক'টাদিন দুইজনে একে অন্যের উপরে রাগ করে থাকলেও তা সময়ের সাথে ক্রমশ বিবর্ণা হয়েছে। 

        ফাহিম ইদানিং লক্ষ করেছে, ইরিনা সেই আগের মত তাকে অবহেলা করে না। তাকে বেশ গুরুত্ব দেয়। আগ্রহ নিয়ে কথা বলে। বরং সে মেসেজের রিপ্লাই দিতে দেরি করলে রেগে যায়, কল না দিলে রেগে যায়। ফাহিম বুঝে ইরিনা কেনো এমন করে। কিন্তু সে কিছু বলে না তাকে। তারও বেশ ভালো লাগে এই খুনসুটি গুলো। 

        একটা বিষয় এখন পর্যন্ত ইরিনা তাকে বলেনি, সেবার সে মেসেজে ফাহিমকে কি বলেছে। ফাহিম যতবার এই বিষয় নিয়ে কথা শুরু করে ইরিনা ততবার এড়িয়ে যায়। ফাহিম এটা নিয়ে একবার কিছুটা রেগে গেলেও সেই রাগ সে দীর্ঘ সময় ধারণ করতে পারে নি। তারপরে সে আর রাগ করেনি। ইরিনা বলতে না চাইলে সে জোর করে শুনতেও চায় না। 

        "সরি, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালাম তোকে!" 
        ইরিনার কথা শুনে ফাহিম সম্বিত ফিরে পেলো। সে বলল, "বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাতে পারিস নেই।" 
        "তাহলে আমি বরং চলে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করাই, কি বলিস?"
        "তোর ইচ্ছে।" 

        ইরিনা এগিয়ে এসে ফাহিমের পাশে বসল। সে বলল, "কি ব্যাপার, তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?"
        "কেমন?" ফাহিম জানতে চাইলো।
        "কেমন জানি!" রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলল ইরিনা।
        "কেমন সেটাই তো আমি জানতে চাচ্ছি।"
        "হুম...!" ইরিনা কিছু একটা ভেবে বলল, "রোমান্টিক, রোমান্টিক।"
        "ধুর! শুধু ফাজলালি।" 
        "প্রেমিক, প্রেমিক একটা ব্যাপার এসেছে তোর মধ্যে। কারো সাথে প্রেমটেম করছিস নাকি?"
        "তুই-তো আমাকে ফিরিয়ে দিলি। আমার সেই কবেকার প্রশ্নের উত্তরটা এখন পর্যন্ত দিলি না। অবশ্য দিয়েছিস কি-না জানিনা। দূর্ভাগ্যবশত সেই মেসেজ আমি দেখতেই পাই নি। অবশ্য একটা দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে, তোর কাছ থেকে নেগেটিভ উত্তর এলে আমি অনেক কষ্ট পেতাম। সেই কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আল্লাহ যা করে হয়তো ভালোর জন্য করে।" 
        "হয়তো!" আনমনে ইরিনা বলল। 

        "কি হয়েছে জানিস?" দুইজনে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ফাহিম হঠাৎ ইরিনাকে বলে।
        "পাগল, না বললে জানবো কি করে?" ইরিনা তাকে জিজ্ঞেস করে।
        "হ্যাঁ, তাই তো।" ফাহিম থামলো। তার কথাগুলো গুছিয়ে নিয়ে সে বলল, "গতকাল একজন আমাকে প্রপোজ করেছে। আমি তো হতবাক। প্রথম ভেবেছিলাম মজা করছে। কিন্তু না, বিষয়টা সিরিয়াস। অবশ্য সরাসরি প্রপোজ করে নি, মেয়ে মানুষ বলে কথা। কিন্তু সে বুঝিয়েছে আমাকে পছন্দ করে, ভালোও বাসে।" 
        "তা তুই কি বলছি।" ইরিনার অভিব্যক্তি পরিবর্তন হয়ে গেছে নিমিষেই। 
        "আমি আর কি বলবো? বললাম, আমাকে একটু সময় দেওয়ার জন্য। বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার। হুট করে-তো আর হ্যাঁ বলে দিতে পারি না।"
        "হ্যাঁ, বলে দেওয়ার জন্য ভাবার সময় নিছিস?" ইরিনার কন্ঠে রাগ, কেমন কথাগুলো জড়িয়ে এলো।
        ফাহিমের চোখ কিছুই এড়ালো না। সে বলল, "হ্যাঁ, নিবো না? হুট করে কি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?"
        "ভাবার কি আছে। তখনই না করে দিবি না!" এই কথাগুলো বলতে ইচ্ছে করলেও ইরিনা বলল না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে সে বলল, "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক। হুট করে তো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।" এবার ইরিনার কন্ঠটা কেপে কেপে উঠলো। ফাহিমের চোখ এবারও এড়ালো না সেটা। 

        ফাহিম অবশ্য হুট করে এই বিষয়টা ইরিনাকে বলল। ইরিনা কিভাবে কথাটা নেয় সেটাও সে দেখতে চাচ্ছিলো। সে যা ভেবেছিলো, সেটাই হয়েছে। কথাগুলো শুনে ইতোমধ্যে ইরিনার চোখমুখ শুকিয়ে গেছে, কালো হয়ে উঠেছে। সে তাকে আরো রাগিয়ে দিতে বলল, "ওকে একটা কল দেই। এখনি হ্যাঁ বলে দেই। তুই কি বলিস?" 
        "তোর যা ইচ্ছে কর। আমি কি বলবো?"
        "তুই কি বলবি মানে? তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তোর মতামত আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।" এটা বলেই ফাহিম হাসলো। 

        ইরিনা কিছু বলল না। তার সব কথা এলোমেলো হয়ে গেলো মুহুর্তেই। তার এখন ভালো লাগছে না। সে শুধু চুপচাপ বসে রইল। ফাহিম নানা কথা বলে যেতে লাগল, সেই মেয়েটার ব্যাপারে। অন্য দিকে সবকিছু শুনে ইরিনার ক্রমশ মন খারাপ হতে থাকলো। সে তার রাগটা প্রকাশও করতে পারছে না। এভাবে সে ফাহিমের কাছে ধরা দিবে না। কিন্তু ফাহিমের কথাগুলো শুনতে তার কষ্ট হচ্ছে। 

        "ওকে একটা কল দেই, কি বলিস?" কথাটা বলে ফাহিম পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নাম্বারে ডায়াল করতে করতে বলল, "আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে রে।" এটুকু বলে এক হাত বুকের বাম দিকে রেখে ইরিনাকে দেখালো। 

        "ধুর! এই সময় ফোনের ব্যালেন্স শেষ হওয়া লাগলো।" ফাহিমের চোখেমুখে রাগ। সে বলল, "দোস্ত, তোর ফোনটা একটু দিবি?"
        ইরিনা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার ফোনটা ফাহিমের দিকে বাড়িয়ে দিল।
        "ফোনের লক খুলে না দিলে কল দিবো কীভাবে?" ফাহিমের মুখে হাসি। 

        ইরিনা ফোনের লক খুলে দিলে ফাহিম তার ফোন থেকে নাম্বারটা নিয়ে সেই নাম্বারে কল দিলো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করলে ফাহিম বলল, "হ্যালো!"
"আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?" কিছুক্ষণ পর ফাহিম উত্তরে বলল। 
"হ্যাঁ একটা কথা বলার জন্য তোমাকে ফোন দিয়েছি। আসলে...!" ফাহিম কথাটা বলতে বলতে বসা থেকে উঠে কিছুটা দূরে সরে গেলো। ইরিনা আর শুনলো না ফাহিম ঠিক কি বলছে এই মুহুর্তে। 

        ইরিনা মন খারাপ করে যেভাবে ছিল সেভাবেই বসে রইল। সে এখন ফাহিমকে লক্ষ করছে না। রাগে ফাহিমের দিকে তার তাকাতেও ইচ্ছে করছে না। তার এখন থেকে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। এক মুহুর্তের জন্যেও ফাহিমের সাথে সে আর কথা বলতে চায় না। 

        ফাহিম মিনিট চারেক পর ফিরে এসে ফোনটা ইরিনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বলল, "ও প্রচন্ড খুশি হয়েছে।" ফাহিমের ঠোঁটে হাসি। 

        "অভিনন্দন।" ইরিনা কথাটা বলে ফোনটা নিয়ে সাথেসাথে উঠে হাঁটা শুরু করলো। ফাহিম তাকে বারকয়েক বার ডাকলেও সে তাকালো না। কোনো কথার উত্তর দিলো। দ্রুত ফাহিমের চোখের দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যেতে লাগল। 

        ইরিনা বাসায় ফিরলো অস্থির হয়ে। তার এখন কিছুই ভালো লাগছে না। ফাহিম শয়তান সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। ও কি বুঝেনা তার কাছের কেউ তাকে এতোটা ভালোবাসে। ইরিনা মনে মনে প্রলাপ করতে থাকলো। 

        পুরো বিকাল এবং সন্ধ্যাটা সে এক মুহুর্তের জন্য স্থির হতে পারে নি। এর মধ্যে দুইবার রিয়াকে ফোন দিয়েছে। রিয়া রিসিভ করে নি। এখন কারো সাথে কথা বললে তার ভালো লাগতো। ভেবে যাচ্ছে এই বিষয়টা নিয়ে কার সাথে সে কথা বলবে। তখনই সাত্যকি নামটা মাথায় এলো তার। সে ফোন হাতে নিয়ে সাত্যকিকে কল দিলো। 

        "হ্যালো, ইরিনা।" সাত্যকি ফোন রিসিভ করেই বলল।
        "হ্যাঁ, সাত্যকি। তুই কোথায়?" ইরিনা দ্রুতগতিতে৷ জিজ্ঞেস করল।
        "আমি আবার কই থাকবো? ক্লাস শেষ করে বিকালে হলে এসেছি, আর বাইরে যাই নি। অবশ্য জয় ফোন দিয়েছিল, ও এলে একটু বাইরে যাবো। কেনো কি হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়েছে? হঠাৎ ফোন দিলি?" সাত্যকি বলল।
        "হ্যাঁ, সমস্যা। আচ্ছা তুই কি জানিস ফাহিম কোন মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন কথা বলছে।" ইরিনা তালবাহানা না করে সরাসরি প্রশ্নটা করলো।
        "তোর কথা বুঝছি না। কি বলতে চাচ্ছিস?" 

        ইরিনা সংক্ষেপে খুব দ্রুততার সাথে আজকের বিকালের ঘটনা সাত্যকিকে বলল। সাত্যকি সবটা শুনে অবাক হলো। সে বলল, "তুই কি বলছিস? এমন কিছু তো আমরা কেউ জানিনা। তুই কি শিওর?"
        "শিওর কেনো হবো না? ওর ফোনে হঠাৎ ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলো, তখন ও তো আমার নাম্বার থেকেই মেয়েটাকে কল দিলো।" 
        "তাহলে তো সমস্যা মিটেই গেলো!"
        "মানে? কীভাবে?"
        "আরে তুই-ই তো মাত্র বললি, ফাহিম তোর ফোন থেকে মেয়েটাকে কল দিছে। তাহলে মেয়েটার নাম্বার নিশ্চয়ই তোর ফোনে আছে। ওই নাম্বারে একটা কল দিয়ে কথা বললেই তুই শিওর হয়ে যাচ্ছিস, ফাহিম কি সিরিয়াসলি কোনো সম্পর্কে গেলো না-কি তোকে একটু...!" সাত্যকি কথা শেষ করতে পারলো না। 
        ইরিনা হঠাৎ প্রচন্ড খুশি হয়ে উঠলো। তার খেয়ালই ছিলো না মেয়েটার নাম্বার তার ফোনে আছে। সে চাইলেই সেই নাম্বারে কল দিয়ে জানতে পারবে ফাহিম তার সাথে মজা করছে না-কি সে সিরিয়াসল কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে। ইরিনা বলল,"থ্যাংকস দোস্ত। আমার খেয়ালই ছিল না ফাহিম আমার ফোন দিয়ে কথা বলেছে সেহেতু মেয়েটার নাম্বারটা আমার ফোনেই আছে। থ্যাংক রে।"
        "আচ্ছা, ব্যাপার না।" এই শোন, জয় কল দিচ্ছে। মনে হয় চলে এসেছে। আমি রাখছি। আমাকে জানাস বিষয়টা।"
        "আচ্ছা, আচ্ছা।" কথাটা দুইবার বলে ইরিনা কল কেটে দিলো। 

        ইরিনা বেশকিছুটা সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও সে শেষমেশ ফাহিম যে নাম্বারে কল দিয়েছিলো সেই নাম্বারে কল দিলো। কল দেওয়ার পর সে যথেষ্ট অবাক হলো। অবাক হওয়ার কারণ, ওপাশ থেকে একজন মহিলা সুন্দর কন্ঠে বলেছে, আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। ইরিনা তাৎক্ষণিক কিছুই বুঝতে পারলো না। সে আরো দুইবার সেই নাম্বারে কল দিল। কিন্তু দুইবারই সেই একই কথা বলল ওপাশের মহিলাটা। 

        ইরিনা বসে আছে ব্যালকনিতে। সাত্যকিকে বিষয়টা জানানোর জন্য কল দিলেও সাত্যকি কল ধরেনি৷ ইরিনার বুঝতে অসুবিধা হলো না সাত্যকি এই মুহুর্তে জয়ের সাথে প্রেম করছে। তবুও ইরিনা কিছুই বুঝতে পারছে না। সে ওই নাম্বারের কল ডিটেইল এ গিয়ে দেখেছে ফাহিম আসলে কারো সাথে কথা বলেনি। তাহলে এভাবে অভিনয় করার কি ছিলো? অভিনয় যেহেতু করবে তাহলে তার ফোন কেনো নিবে? নিজের ফোন দিয়েই তো কল করার অভিনয় করা যায়! 

        ইরিনা অন্ধকারে শুয়ে আছে। হঠাৎ সে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতেই শোয়া থেকে উঠে ঘরের লাইট জ্বালালো। তার চোখে মুখে উত্তেজনা। মুখে প্রাঞ্জল হাসি। এই ব্যাপারটা তার মাথায় আগে কেনো এলোনা এটা ভেবেই সে অবাক হচ্ছে। ফাহিম খুব কৌশলে তার ফোনটা নিয়েছে। ফাহিম যে নাম্বারে কল দিয়েছিল সেই নাম্বারে সে কল দেওয়া পর থেকেই ভেবে যাচ্ছে তার ফোন থেকে কেনো কল করার বাহানা করতে হবে, যদি ভুল একটা নাম্বারেই কল দেয়। তার ফোন কেনো নিলো? অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের কোনো উত্তর সে পায়নি। রাতে খেয়ে কিছুক্ষণ আগেই রুমের লাইট বন্ধ করে বিরক্ত হয়ে শুয়ে পড়ে সে। শুয়ে আনমনে ফাহিমের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বিষয়টা তার মাথায় আসে। ফাহিম নিশ্চয়ই এই একটা কারণেই কৌশলে তার কাছ থেকে ফোন নিয়েছে। হ্যাঁ, এটা কারণেই!

        ফাহিমের উপর রাগ করে চলে আসার পর সে আর তাকে ফোন দেয় নি। ফাহিম একবার কল দিলেও সে রিসিভ করেনি। এখনকার মত তখন তার মন ভাল ছিলো না। এখন তার মন ভালো। তার সবকিছু মিলে যাচ্ছে এক এক করে। হুট করে খারাপ লাগাটা উধাও হয়ে গেলো। ইরিনা খুব আশ্চর্য হলো। মানুষের মন আসলেই অদ্ভুত। এই ভালো, এই প্রচন্ড খারাপ। জীবনে কেউ একজন থাকাটা খুব দরকার, যে হুটহাট মন খারাপ করে দিলেও, একইরকম ভাবে মন ভালো করে দিবে। 

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#47
(31-12-2022, 04:57 PM)ddey333 Wrote: দাদা আপনার গল্পগুলো খুব সুন্দর কিন্তু  পড়তে খুব অসুবিধা হয় কারণ আপনি text  এলাইনমেন্ট মাঝখানে ( center )  রাখেন।

দয়া করে লেফট  এলাইনমেন্ট করে দিন যেরকম নরমাল লেখা হয়ে থাকে।   Namaskar
  



এইটা থিক আছে এইভাবে কি চলবে লেখা।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#48
পর্ব-১৬




 

        "রুদ্র, এই রুদ্র! কি ভাবছিস?"
         ফাহিমের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো রুদ্র। সে ফাহিমের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ সবাই কি নিয়ে কথা বলেছে তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে অস্ফুট কন্ঠে বলল, "কি?"
        ফাহিম আবার বলল, "কি ভাবছিস এতো? চা খাবি তো?"
        "হ্যাঁ, খাওয়া যায়।" 
        "আচ্ছা।" বলেই ফাহিম হেঁটে গেলো চায়ের অর্ডার দিতে। 

        "তোর কি হয়েছে? আজকাল তোকে তোর মধ্যে থাকতে দেখি না। সারাক্ষণ কেমন ঘোরের মধ্যে থাকিস। আমরা বন্ধু তো? কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার কর। দেখবি মন হালকা হবে।" ইরিনা কথাগুলো রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল।
        "হ্যাঁ, রুদ্র। ইরিনা ঠিক বলেছে। তুই আজকাল প্রায় সময় অন্যমনস্ক থাকিস। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?" পাশ থেকে সাত্যকি বলল।
        "আরে তোরা এতো টেনশন করছিস কেনো আমাকে নিয়ে? আমি ভালো আছি। সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল। এই সেমিস্টারে ভাল করে স্টাডি করিনি। ক্লাসও ঠিকভাবে করি নি। পরীক্ষা কেমন হবে সেটা নিয়েই চিন্তিত। এছাড়াও পরীক্ষার পর ইন্টার্নি। কোথায় করলে ভালো হবে সেটাও ভাবছি।" রুদ্র খানিকটা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে বলল।
        "এটা একটা সমস্যা। ডিপার্টমেন্ট থেকে সুপারিশ করে দিলেও নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোথায় করবো।" ফাহিম ইতোমধ্যে চায়ের অর্ডার দিয়ে চলে এসে রুদ্রের পাশে বসতে বসতে কথাগুলো বলল।
        "তোরা এতো আগে থেকেই কেনো এই সামান্য বিষয় নিয়ে টেনশন করছিস?" ইরিনা বলল।
        "তোর-তো চিন্তা নেই। তোর বাবার অনেক পরিচিত মানুষ আছে। কোনো একজায়গায় তুই ঢুকে যেতে পারবি। আমাদের-তো সেভাবে পরিচিত কেউ নেই।" ফাহিম বলল।
        "আমি ইন্টার্নি করতে পারবো না। থিসিস করবো।" সাত্যকি বলল।
        "ভালো বলেছিস। আমিও ভেবে দেখি কি করবো।" ফাহিম কথাটা বলে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই কি করবি? আমার মতে থিসিস করাই ভালো। একটু ঝামেলা হলেও বাসায় বসে নিজের ফ্রি টাইমে করা যাবে। সকাল সন্ধ্যা অফিস তো করা লাগবে না।" 
        "এটা নিয়ে এখনো ভাবি নি। দেখি কি করি।" রুদ্র বলল।

        "দুলাভাইয়ের অফিসে জয়েন্ট হয়ে যা। একসাথে কাজ করবি, প্রেম করবি। ইন্টার্নি করা হয়ে যাবে, সেই সাথে প্রেম করাও হয়ে যাবে।" সাত্যকিকে কাঁধে ধাক্কা দিয়ে ইরিনা কথাটা বলার সাথেসাথে সবাই সম্মতি দিয়ে হেসে দিলো। 
        "তোরা আছিস সবসময় ফাজলামো মুডে।" সাত্যকি বলল।
        "ভালো একটা আইডিয়া দিলাম, ধন্যবাদ দিবি কিন্তু তা-না ফাজলামো ভাবছিস। আমিও দেখতে চাই শেষমেশ কি করিস তুই।" ইরিনা কাটাকাটা শব্দে বলল।

       "হ্যাঁ রে রুদ্র। আলিফকে আজকার আড্ডায় তেমন দেখি না। ওর কি কিছু হয়েছে?" রুদ্রের কাছে ইরিনা জানতে চাইলো।
       "অনেকদিন হলো ওকে ক্যাম্পাসেও দেখি না। অনলাইনে তেমন আসে না। মেসেজ দিলে রিপ্লাই দেয় না।" ইরিনার কথার সাথে ফাহিম যুক্ত করলো।
       "ও একটা বিষয় নিয়ে খুব আপসেট আছে। আজকাল তেমন ঘর থেকে বের হয় না। সেদিন দেখা করতে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। ওকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি, বাইরে বের হওয়ার জন্য, ক্যাম্পাসে আসার জন্য, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারপরও আলিফ নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। ওকে নিয়ে কি যে করি বুঝতাছি না।" রুদ্র খানিকটা ম্লান এবং হতাশ ভাবে কথাগুলো বলল।
       "কি হয়েছে? কি নিয়ে আপসেট আছে?" সাত্যকি প্রথমে প্রশ্নটা করলো।

       রুদ্র সংক্ষেপে বিষয়টা সবাইকে খুলে বলল। সবাই শুনে অবাক হলো। আলিফকে তার সবাই যতটুকু চিনে সে এরকম ছেলে না। আলিফ অনেকগুলো রিলেশন করেছে। চার মাস, ছয় মাসের বেশি কোনোটা যায় নি। কিন্তু কখনো কেউ আলিফকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি। এতোটা কষ্ট পেতে দেখেনি।

       "চল সবাই মিলে ওকে একদিন দেখতে যাই। ও খুশি হবে। এছাড়া সবাই গিয়ে ওকে বুঝালে ও নিশ্চয়ই বুঝবে।" ইরিনা সবার উদ্দেশ্য বলল।
       সবাই ইরিনার কথায় সম্মতি দিলো। সাত্যকি প্রথমে বলল, "যাওয়া যায়।"
       "হ্যাঁ, যাওয়া যায়। কিন্তু কবে যাবি?" ফাহিম বলল।
       "পরশুদিন যাই চল।" ইরিনা বলল।
       "কাল গেলেই তো হয়।" রুদ্র বলল।
       "কাল আমার একটু কাজ আছে রুদ্র। পরশুদিন আমাদের ক্লাস নেই। সবাই ফ্রি আছি।" ইরিনা বলল।
       "হ্যাঁ, আমার কোনো সমস্যা নেই।" ফাহিম বলল।
       "আমিও ফ্রি আছি।" সাত্যকি বলল।
       "আচ্ছা তাহলে পরশু দিন-ই যাই। আমার কোনো সমস্যা নেই।" সবশেষে রুদ্র রাজি হলো। 
       "সবাই মিলে কিছু টাকা দিয়ে কিছু খাবারদাবার কিনে নিয়ে গেলাম। আড্ডা দিলাম, একসাথে খেলাম, হইচই করলাম।" ইরিনা সবার উদ্দেশ্য বলল।
       "সেটা করাই যায়। কিন্তু ও কোন পরিস্থিতিতে আছে সেটা আমরা ঠিক জানিনা।" রুদ্র বলল।
       "এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। ওখানে গেলে ওকে ম্যানেজ করে ফেলবো।" ইরিনা আস্বস্ত করলো। 
       "চা খেয়ে কিছুই হলো না। ক্ষুধা লাগছে। তোরা কি অন্য কিছু খাবি?" ফাহিম সবাইকে জিজ্ঞেস করল।
       "আমি কিছু খাবো না।" রুদ্র বলল।
       "তোর কিছু খেতে ইচ্ছে করলে অর্ডার দিয়ে আয়। সমস্যা নেই।" ইরিনা বলল। 

       ফাহিম উঠে চলে গেলো। তখনই রিয়াকে দূর থেকে হেঁটে আসতে দেখলো ইরিনা। রিয়াকে দেখেই সে বলে ফেলল, "কিরে রুদ্র তোরা কি আজ ডেটিং এ যাবি?" 
       ইরিনার কথা রুদ্র ঠিক বুঝতে পারলো না। হঠাৎ এই প্রশ্ন কোথাথেকে এলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইরিনা বলে উঠল, "রিয়া, তোকে কিন্তু আজ শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।" 
       "ধন্যবাদ।" ফাহিমের সিটে বসতে বসতে রিয়া বলল।
       রিয়াকে দেখেই রুদ্র বুঝতে পারলো একটু আগে ইরিনা কেনো তাকে ওই কথাটা বলেছে।
       ইরিনা একইভাবে রুদ্রকে করা প্রশ্নটা রিয়াকে করলো। রিয়া উত্তর দিতে যাবে তার আগে রুদ্র রিয়াকে বলল, "তোমার কাজিন কখন আসবে?" 
       রুদ্রের প্রশ্নে কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন হয়ে গেলো। 
       "ভাইয়া ক্যাম্পাসে আসতে পারবে না।" রিয়া উত্তরে বলল
       "ক্যাম্পাসে আসার কথা ছিলো না?" রুদ্র জানতে চাইলো।
       "হ্যাঁ, কিন্তু ধানমন্ডির দিকে ভাইয়ার একটা কাজ পরে গেছে। কাজ শেষ করে এখানে আসতে দেরি হবে। তাই ভাইয়া বলল, ধানমন্ডি লেকের ওদিকটায় আমরা যদি যাই তাহলে ভাইয়ার জন্য সুবিধা হয়। সরি আমি তোমাকে না জানিয়ে ভাইয়াকে বলেছি, সমস্যা নেই, আমরা ওদিকটাতে সময়মত চলে আসবো। তোমার যেতে কোনো সমস্যা নেই তো?"
       "না, কোনো সমস্যা নেই।" রুদ্র হাসিমুখে উত্তর দিলো। 

       রিয়া এবং রুদ্রের কথোপকথন সবাই পাশে থেকে চুপচাপ শুনলো। কেউ বুঝতে পারলো না কোন বিষয় নিয়ে তারা কথা বলছে। ইরিনার মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন এলেও সে বুঝতে পারছে না কোন প্রশ্নটা আগে করবে। সাত্যকি এবং ফাহিম ও অবাক হলো কিছুটা। তারা যতটুকু জানতো রুদ্র এবং রিয়ার মধ্যে একটু মনোমালিন্য ছিলো। কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলত না। তাদের ক্যাম্পাসে কিংবা আড্ডায় দেখা হলে তারা একে অন্যকে এড়িয়ে যেত। কেউ কারো সাথে তেমন একটা কথা বলত না। আজ হঠাৎ কি হলো? কীভাবে? সবার মনে এই প্রশ্নটা এলেও কে আগে প্রশ্নটা করবে সেই অপেক্ষাতে সবাই আছে। 

       ইরিনা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগে রুদ্র সবাইকে বলল, "আচ্ছা, তোরা তাহলে থাক। আমি আর রিয়া চলে যাচ্ছি। একটু কাজ আছে। তোদের সাথে পরে কথা হবে।" 
       "কোথায় যাচ্ছিস?" ইরিনা জিজ্ঞেস করল।
       "একটু আগে তো রিয়া বলল-ই।" রুদ্র বলল।
       "হ্যাঁ, তা বলেছে। কিন্তু কেনো? কোনো সমস্যা?" ইরিনা চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলো।
       "কোনো সমস্যা নেই। আমার একটা জরুরি কাজে রিয়ার কাজিন আমাকে সাহায্য করছে। সেদিন হুট করে রিয়ার সাথে দেখা হয়ে গেলে বিষয়টা ওকে বলি। তখন ও বলল ওর কাজিন আমাকে সাহায্য করতে পারবে। তাই ওকে বলেছিলাম ওর কাজিনের সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য।" রুদ্র দ্রুত কথাগুলো বলল।
       "কি কাজ?" ইরিনা জিজ্ঞেস করল।
       "তোদের পরে খুলে বলি, কেমন? এখন যাই।" রুদ্র কথা বলে রিয়ার হাত ধরে রিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো দ্রুত। এই মুহুর্তে সে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছে না। 

       রুদ্রের এই ব্যবহারে সবাই অবাক হলো। রিয়াকে হাত ধরে নিয়ে যাবে এটাও সবাইকে অবাক করলো। 

       "কি হলো এটা?" ইরিনার দিকে তাকিয়ে ফাহিম জানতে চাইলো।
       "আমার দিকে তোরা এভাবে তাকাচ্ছি কেনো? আমি কি করে বলব কি হলো?" ইরিনা বলল।
       "তুই না জানলে কে জানবে? রুদ্র আর রিয়া দুইজনই তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।" ফাহিম বলল।
       "আমি কিছু জানিনা। ওরা আমাকে কিছুই বলেনি।" হতাশ কন্ঠে বলল ইরিনা।
       "আচ্ছা বাদ দে এই বিষয়। রিয়া কিংবা রুদ্রের কাছ থেকে পরে জেনে নেওয়া যাবে।" সাত্যকি বলল। 
       "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।" ইরিনা সম্মতি জানালো।
       "কি করবি এখন?" সাত্যকি বলল।
       "আমি বাসায় যাবো। সকালে খাইনি। বাইরের এইসব হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরছে না। এছাড়া এখন প্রায় বিকাল। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিবো।" ফাহিম বলল।
       "ইরিনা, তুই কি বাসায় চলে যাবি? না-কি আমার রুমে যাবি?" সাত্যকি জানতে চাইলো।
       ইরিনা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "সাত্যকি, চল তোর রুমে যাই। একটু ফ্রেশ হয়ে নেই। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেই। রোদ'টা পড়ে গেলে সন্ধ্যার দিকে বাসায় যাবো।" 
       "আচ্ছা তাহলে চল।" সাত্যকি কথা বলে ফাহিমের দিকে তাকালো। সে আবার বলল, "ফাহিম তাহলে তুই রুমে যা। শাওয়ার নিয়ে খেয়ে বিশ্রাম নে।" 

       "সন্ধ্যার দিকে আমি কি তোকে বাসায় পৌঁছে দিবো?" ফাহিম উঠতে উঠতে ইরিনাকে বলল।
       "তুই আবার কষ্ট করবি কেনো? দরকার নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।" ইরিনা নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলল। তার কন্ঠে এই না এর মাঝে কোথাও যেনো হ্যাঁ ছিল। সেটা সে লুকাতে পারলো না। কিংবা দরকার নেই এটা অতোটা জোর দিয়ে বলতে পারলো না ইরিনা।
       "আমি বিকালে কল দিবো। চলে যাস না একা একা।" ইরিনার না এর মধ্যে কোথাও হ্যাঁ ছিলো। সেটা ফাহিম স্পষ্ট বুঝতে পারলো। সে তাকে পৌঁছে দিবে বলে হেঁটে চলে গেলো। 

       ফাহিম চলে যাওয়ার পরে ইরিনাকে নিয়ে সাত্যকি তার হলে চলে এলো। রুমে আসতে আসতে দুই একটা কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। ইরিনা মূলত ফাহিমের বিষয়টা নিয়ে কথা বলার জন্য সাত্যকির সাথে এসেছে। সে কি করবে সেটা সাত্যকির সাথে কথা বলে সিন্ধান্ত নিতে চায়। সে আর ফাহিমের সাথে কোনো লুকোচুরি করতে চায় না। যা বলার এবার সে সরাসরি বলে দিবে ফাহিমকে।  

চলবে...!





গল্প টা  ভালো লাগেনা মনে হয় পাঠক দের কাছে ,
তাই কেও রিপ্লে দেয়না লাইক দেয়না।

তাই আমি মনে করেছি যে এই গল্পের বাকি অংশ গুলো আর পোস্ট করবো না।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#49
(14-01-2023, 05:20 PM)Bangla Golpo Wrote: পর্ব-১৬




 

        "রুদ্র, এই রুদ্র! কি ভাবছিস?"
         ফাহিমের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো রুদ্র। সে ফাহিমের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ সবাই কি নিয়ে কথা বলেছে তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে অস্ফুট কন্ঠে বলল, "কি?"
        ফাহিম আবার বলল, "কি ভাবছিস এতো? চা খাবি তো?"
        "হ্যাঁ, খাওয়া যায়।" 
        "আচ্ছা।" বলেই ফাহিম হেঁটে গেলো চায়ের অর্ডার দিতে। 

        "তোর কি হয়েছে? আজকাল তোকে তোর মধ্যে থাকতে দেখি না। সারাক্ষণ কেমন ঘোরের মধ্যে থাকিস। আমরা বন্ধু তো? কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার কর। দেখবি মন হালকা হবে।" ইরিনা কথাগুলো রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল।
        "হ্যাঁ, রুদ্র। ইরিনা ঠিক বলেছে। তুই আজকাল প্রায় সময় অন্যমনস্ক থাকিস। কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?" পাশ থেকে সাত্যকি বলল।
        "আরে তোরা এতো টেনশন করছিস কেনো আমাকে নিয়ে? আমি ভালো আছি। সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল। এই সেমিস্টারে ভাল করে স্টাডি করিনি। ক্লাসও ঠিকভাবে করি নি। পরীক্ষা কেমন হবে সেটা নিয়েই চিন্তিত। এছাড়াও পরীক্ষার পর ইন্টার্নি। কোথায় করলে ভালো হবে সেটাও ভাবছি।" রুদ্র খানিকটা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে বলল।
        "এটা একটা সমস্যা। ডিপার্টমেন্ট থেকে সুপারিশ করে দিলেও নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোথায় করবো।" ফাহিম ইতোমধ্যে চায়ের অর্ডার দিয়ে চলে এসে রুদ্রের পাশে বসতে বসতে কথাগুলো বলল।
        "তোরা এতো আগে থেকেই কেনো এই সামান্য বিষয় নিয়ে টেনশন করছিস?" ইরিনা বলল।
        "তোর-তো চিন্তা নেই। তোর বাবার অনেক পরিচিত মানুষ আছে। কোনো একজায়গায় তুই ঢুকে যেতে পারবি। আমাদের-তো সেভাবে পরিচিত কেউ নেই।" ফাহিম বলল।
        "আমি ইন্টার্নি করতে পারবো না। থিসিস করবো।" সাত্যকি বলল।
        "ভালো বলেছিস। আমিও ভেবে দেখি কি করবো।" ফাহিম কথাটা বলে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই কি করবি? আমার মতে থিসিস করাই ভালো। একটু ঝামেলা হলেও বাসায় বসে নিজের ফ্রি টাইমে করা যাবে। সকাল সন্ধ্যা অফিস তো করা লাগবে না।" 
        "এটা নিয়ে এখনো ভাবি নি। দেখি কি করি।" রুদ্র বলল।

        "দুলাভাইয়ের অফিসে জয়েন্ট হয়ে যা। একসাথে কাজ করবি, প্রেম করবি। ইন্টার্নি করা হয়ে যাবে, সেই সাথে প্রেম করাও হয়ে যাবে।" সাত্যকিকে কাঁধে ধাক্কা দিয়ে ইরিনা কথাটা বলার সাথেসাথে সবাই সম্মতি দিয়ে হেসে দিলো। 
        "তোরা আছিস সবসময় ফাজলামো মুডে।" সাত্যকি বলল।
        "ভালো একটা আইডিয়া দিলাম, ধন্যবাদ দিবি কিন্তু তা-না ফাজলামো ভাবছিস। আমিও দেখতে চাই শেষমেশ কি করিস তুই।" ইরিনা কাটাকাটা শব্দে বলল।

       "হ্যাঁ রে রুদ্র। আলিফকে আজকার আড্ডায় তেমন দেখি না। ওর কি কিছু হয়েছে?" রুদ্রের কাছে ইরিনা জানতে চাইলো।
       "অনেকদিন হলো ওকে ক্যাম্পাসেও দেখি না। অনলাইনে তেমন আসে না। মেসেজ দিলে রিপ্লাই দেয় না।" ইরিনার কথার সাথে ফাহিম যুক্ত করলো।
       "ও একটা বিষয় নিয়ে খুব আপসেট আছে। আজকাল তেমন ঘর থেকে বের হয় না। সেদিন দেখা করতে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। ওকে অনেক বুঝিয়েছি। বলেছি, বাইরে বের হওয়ার জন্য, ক্যাম্পাসে আসার জন্য, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারপরও আলিফ নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রেখেছে। ওকে নিয়ে কি যে করি বুঝতাছি না।" রুদ্র খানিকটা ম্লান এবং হতাশ ভাবে কথাগুলো বলল।
       "কি হয়েছে? কি নিয়ে আপসেট আছে?" সাত্যকি প্রথমে প্রশ্নটা করলো।

       রুদ্র সংক্ষেপে বিষয়টা সবাইকে খুলে বলল। সবাই শুনে অবাক হলো। আলিফকে তার সবাই যতটুকু চিনে সে এরকম ছেলে না। আলিফ অনেকগুলো রিলেশন করেছে। চার মাস, ছয় মাসের বেশি কোনোটা যায় নি। কিন্তু কখনো কেউ আলিফকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখেনি। এতোটা কষ্ট পেতে দেখেনি।

       "চল সবাই মিলে ওকে একদিন দেখতে যাই। ও খুশি হবে। এছাড়া সবাই গিয়ে ওকে বুঝালে ও নিশ্চয়ই বুঝবে।" ইরিনা সবার উদ্দেশ্য বলল।
       সবাই ইরিনার কথায় সম্মতি দিলো। সাত্যকি প্রথমে বলল, "যাওয়া যায়।"
       "হ্যাঁ, যাওয়া যায়। কিন্তু কবে যাবি?" ফাহিম বলল।
       "পরশুদিন যাই চল।" ইরিনা বলল।
       "কাল গেলেই তো হয়।" রুদ্র বলল।
       "কাল আমার একটু কাজ আছে রুদ্র। পরশুদিন আমাদের ক্লাস নেই। সবাই ফ্রি আছি।" ইরিনা বলল।
       "হ্যাঁ, আমার কোনো সমস্যা নেই।" ফাহিম বলল।
       "আমিও ফ্রি আছি।" সাত্যকি বলল।
       "আচ্ছা তাহলে পরশু দিন-ই যাই। আমার কোনো সমস্যা নেই।" সবশেষে রুদ্র রাজি হলো। 
       "সবাই মিলে কিছু টাকা দিয়ে কিছু খাবারদাবার কিনে নিয়ে গেলাম। আড্ডা দিলাম, একসাথে খেলাম, হইচই করলাম।" ইরিনা সবার উদ্দেশ্য বলল।
       "সেটা করাই যায়। কিন্তু ও কোন পরিস্থিতিতে আছে সেটা আমরা ঠিক জানিনা।" রুদ্র বলল।
       "এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। ওখানে গেলে ওকে ম্যানেজ করে ফেলবো।" ইরিনা আস্বস্ত করলো। 
       "চা খেয়ে কিছুই হলো না। ক্ষুধা লাগছে। তোরা কি অন্য কিছু খাবি?" ফাহিম সবাইকে জিজ্ঞেস করল।
       "আমি কিছু খাবো না।" রুদ্র বলল।
       "তোর কিছু খেতে ইচ্ছে করলে অর্ডার দিয়ে আয়। সমস্যা নেই।" ইরিনা বলল। 

       ফাহিম উঠে চলে গেলো। তখনই রিয়াকে দূর থেকে হেঁটে আসতে দেখলো ইরিনা। রিয়াকে দেখেই সে বলে ফেলল, "কিরে রুদ্র তোরা কি আজ ডেটিং এ যাবি?" 
       ইরিনার কথা রুদ্র ঠিক বুঝতে পারলো না। হঠাৎ এই প্রশ্ন কোথাথেকে এলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইরিনা বলে উঠল, "রিয়া, তোকে কিন্তু আজ শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।" 
       "ধন্যবাদ।" ফাহিমের সিটে বসতে বসতে রিয়া বলল।
       রিয়াকে দেখেই রুদ্র বুঝতে পারলো একটু আগে ইরিনা কেনো তাকে ওই কথাটা বলেছে।
       ইরিনা একইভাবে রুদ্রকে করা প্রশ্নটা রিয়াকে করলো। রিয়া উত্তর দিতে যাবে তার আগে রুদ্র রিয়াকে বলল, "তোমার কাজিন কখন আসবে?" 
       রুদ্রের প্রশ্নে কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন হয়ে গেলো। 
       "ভাইয়া ক্যাম্পাসে আসতে পারবে না।" রিয়া উত্তরে বলল
       "ক্যাম্পাসে আসার কথা ছিলো না?" রুদ্র জানতে চাইলো।
       "হ্যাঁ, কিন্তু ধানমন্ডির দিকে ভাইয়ার একটা কাজ পরে গেছে। কাজ শেষ করে এখানে আসতে দেরি হবে। তাই ভাইয়া বলল, ধানমন্ডি লেকের ওদিকটায় আমরা যদি যাই তাহলে ভাইয়ার জন্য সুবিধা হয়। সরি আমি তোমাকে না জানিয়ে ভাইয়াকে বলেছি, সমস্যা নেই, আমরা ওদিকটাতে সময়মত চলে আসবো। তোমার যেতে কোনো সমস্যা নেই তো?"
       "না, কোনো সমস্যা নেই।" রুদ্র হাসিমুখে উত্তর দিলো। 

       রিয়া এবং রুদ্রের কথোপকথন সবাই পাশে থেকে চুপচাপ শুনলো। কেউ বুঝতে পারলো না কোন বিষয় নিয়ে তারা কথা বলছে। ইরিনার মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন এলেও সে বুঝতে পারছে না কোন প্রশ্নটা আগে করবে। সাত্যকি এবং ফাহিম ও অবাক হলো কিছুটা। তারা যতটুকু জানতো রুদ্র এবং রিয়ার মধ্যে একটু মনোমালিন্য ছিলো। কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলত না। তাদের ক্যাম্পাসে কিংবা আড্ডায় দেখা হলে তারা একে অন্যকে এড়িয়ে যেত। কেউ কারো সাথে তেমন একটা কথা বলত না। আজ হঠাৎ কি হলো? কীভাবে? সবার মনে এই প্রশ্নটা এলেও কে আগে প্রশ্নটা করবে সেই অপেক্ষাতে সবাই আছে। 

       ইরিনা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগে রুদ্র সবাইকে বলল, "আচ্ছা, তোরা তাহলে থাক। আমি আর রিয়া চলে যাচ্ছি। একটু কাজ আছে। তোদের সাথে পরে কথা হবে।" 
       "কোথায় যাচ্ছিস?" ইরিনা জিজ্ঞেস করল।
       "একটু আগে তো রিয়া বলল-ই।" রুদ্র বলল।
       "হ্যাঁ, তা বলেছে। কিন্তু কেনো? কোনো সমস্যা?" ইরিনা চিন্তিত হয়ে জানতে চাইলো।
       "কোনো সমস্যা নেই। আমার একটা জরুরি কাজে রিয়ার কাজিন আমাকে সাহায্য করছে। সেদিন হুট করে রিয়ার সাথে দেখা হয়ে গেলে বিষয়টা ওকে বলি। তখন ও বলল ওর কাজিন আমাকে সাহায্য করতে পারবে। তাই ওকে বলেছিলাম ওর কাজিনের সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য।" রুদ্র দ্রুত কথাগুলো বলল।
       "কি কাজ?" ইরিনা জিজ্ঞেস করল।
       "তোদের পরে খুলে বলি, কেমন? এখন যাই।" রুদ্র কথা বলে রিয়ার হাত ধরে রিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো দ্রুত। এই মুহুর্তে সে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছে না। 

       রুদ্রের এই ব্যবহারে সবাই অবাক হলো। রিয়াকে হাত ধরে নিয়ে যাবে এটাও সবাইকে অবাক করলো। 

       "কি হলো এটা?" ইরিনার দিকে তাকিয়ে ফাহিম জানতে চাইলো।
       "আমার দিকে তোরা এভাবে তাকাচ্ছি কেনো? আমি কি করে বলব কি হলো?" ইরিনা বলল।
       "তুই না জানলে কে জানবে? রুদ্র আর রিয়া দুইজনই তোর বেস্ট ফ্রেন্ড।" ফাহিম বলল।
       "আমি কিছু জানিনা। ওরা আমাকে কিছুই বলেনি।" হতাশ কন্ঠে বলল ইরিনা।
       "আচ্ছা বাদ দে এই বিষয়। রিয়া কিংবা রুদ্রের কাছ থেকে পরে জেনে নেওয়া যাবে।" সাত্যকি বলল। 
       "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।" ইরিনা সম্মতি জানালো।
       "কি করবি এখন?" সাত্যকি বলল।
       "আমি বাসায় যাবো। সকালে খাইনি। বাইরের এইসব হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরছে না। এছাড়া এখন প্রায় বিকাল। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিবো।" ফাহিম বলল।
       "ইরিনা, তুই কি বাসায় চলে যাবি? না-কি আমার রুমে যাবি?" সাত্যকি জানতে চাইলো।
       ইরিনা কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "সাত্যকি, চল তোর রুমে যাই। একটু ফ্রেশ হয়ে নেই। কিছুটা সময় বিশ্রাম নেই। রোদ'টা পড়ে গেলে সন্ধ্যার দিকে বাসায় যাবো।" 
       "আচ্ছা তাহলে চল।" সাত্যকি কথা বলে ফাহিমের দিকে তাকালো। সে আবার বলল, "ফাহিম তাহলে তুই রুমে যা। শাওয়ার নিয়ে খেয়ে বিশ্রাম নে।" 

       "সন্ধ্যার দিকে আমি কি তোকে বাসায় পৌঁছে দিবো?" ফাহিম উঠতে উঠতে ইরিনাকে বলল।
       "তুই আবার কষ্ট করবি কেনো? দরকার নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।" ইরিনা নিষ্প্রাণ কন্ঠে বলল। তার কন্ঠে এই না এর মাঝে কোথাও যেনো হ্যাঁ ছিল। সেটা সে লুকাতে পারলো না। কিংবা দরকার নেই এটা অতোটা জোর দিয়ে বলতে পারলো না ইরিনা।
       "আমি বিকালে কল দিবো। চলে যাস না একা একা।" ইরিনার না এর মধ্যে কোথাও হ্যাঁ ছিলো। সেটা ফাহিম স্পষ্ট বুঝতে পারলো। সে তাকে পৌঁছে দিবে বলে হেঁটে চলে গেলো। 

       ফাহিম চলে যাওয়ার পরে ইরিনাকে নিয়ে সাত্যকি তার হলে চলে এলো। রুমে আসতে আসতে দুই একটা কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। ইরিনা মূলত ফাহিমের বিষয়টা নিয়ে কথা বলার জন্য সাত্যকির সাথে এসেছে। সে কি করবে সেটা সাত্যকির সাথে কথা বলে সিন্ধান্ত নিতে চায়। সে আর ফাহিমের সাথে কোনো লুকোচুরি করতে চায় না। যা বলার এবার সে সরাসরি বলে দিবে ফাহিমকে।  

চলবে...!





গল্প টা  ভালো লাগেনা মনে হয় পাঠক দের কাছে ,
তাই কেও রিপ্লে দেয়না লাইক দেয়না।

তাই আমি মনে করেছি যে এই গল্পের বাকি অংশ গুলো আর পোস্ট করবো না।

ভাই গল্পটা বন্ধ করবেন না, চলতে থাকুক, আমি সাধারণত কোথাও কমেন্ট করি না, কিন্তু আপনার গল্প ভালো লাগে বিধায় করলাম।
[+] 1 user Likes Rudroneel's post
Like Reply
#50
(14-01-2023, 08:26 PM)Rudroneel Wrote: ভাই গল্পটা বন্ধ করবেন না, চলতে থাকুক, আমি সাধারণত কোথাও কমেন্ট করি না, কিন্তু আপনার গল্প ভালো লাগে বিধায় করলাম।



ধন্যবাদ আপনাকে।
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#51
 পর্ব-১৭
 

        রুদ্র বসে আছে রিকসার বা পাশে, ডান পাশে বসে আছে রিয়া। সে সাবলীল ভাবে রুদ্রের সাথে কথা বলে যাচ্ছে। তাকে নানান প্রশ্ন করছে। কিন্তু রুদ্র আজ পুরোটা প্রাঞ্জল নয়। তার নার্ভাস ফিলিং হচ্ছে। সে ধীরে ধীরে ঘামছে। তার মূল কারণ রুদ্রের ডান হাতের ঊর্ধ্ববাহু রিয়া ধরে আছে। সে বেশ কিছুক্ষণ ধরে হাতটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য রিয়াকে বলবে ভেবেও বলতে পারছে না৷ সে-ও রিয়ার হাতটা সরিয়ে দিতে পারছে না। তার শরীরের মধ্যে একটা মৃদু কম্পন অনুভব হচ্ছে। ক্রমশ ঘেমে যাচ্ছে। 
        একটা সামান্য কথার প্রসঙ্গে রিয়া তার হাতের ঊর্ধ্ববাহু ধরে বসে। তারপর কথা শেষ হয়ে, সেই প্রসঙ্গ শেষ হয়ে গেলেও রিয়া যেভাবে রুদ্রের ঊর্ধ্ববাহু ধরে ছিলো সেভাবে এখনো ধরে আছে। চক্ষুলজ্জার খাতিরে সে কিছু বলতে পারছে না, করতেও পারছে না। একটা অস্বস্তি ঝেঁকে বসেছে তার মধ্যে। সে দুই একবার হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু রিয়া তখন আরো শক্ত করে চেপে ধরে। রিয়া কি ইচ্ছে করে তার হাতের ঊর্ধ্ববাহু ধরে আছে?
        রিয়া কথা বলছে। তার হালকা লাল রংয়ের ঠোঁট কথার তালে তালে কাপছে। নাকের ঠিক উপরে ছোট্ট একটা টিপ। ডান কানের দুলটাও নড়ছে। বাতাসে দুই একটা অবাধ্য চুল উড়ে এসে মুখের উপর পরছে। রিয়া সেই চুলগুলো ডান হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। বাম হাত দিয়ে রুদ্রের ঊর্ধ্ববাহু ধরে আছে। রিয়া আজ খোপা করে নি। রুদ্রের খোলা চুল পছন্দ। রিয়া কি সে-টা জানে? বাতাসের কারণে চুল থেকে একটা ঘ্রাণ আসছে। এই ঘ্রাণটা তার চেনা। কিন্তু এটা ঠিক কি শ্যাম্পুর ঘ্রাণ এই মুহুর্তে তার মনে আসছে না। রিয়া বাসন্তী রং-এর একটা শাড়ি পরে আছে। সেই সাথে ম্যাচিং করে ব্লাউজ, চুড়ি পরেছে। রিয়াকে সুন্দর লাগছে। কিন্তু ঠিক কতটা সুন্দর লাগছে রুদ্র বুঝতে পারছে না। এই সব সৌন্দর্য ছাড়িয়ে রিয়ার কাজলে ডুবে থাকা চোখ দুটোর দিকে রুদ্রের চোখ স্থির হয়ে রইল। কাজলের রেখাটা চোখের কোনা ছাড়িয়ে কিছুটা বক্ররেখা মত এগিয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে রেখাটা মিলিয়ে গেছে। সামান্য কাজল চোখ দু'টোকে কী ভীষণ সুন্দর করে তুলেছে। আল্লাহর কি অপরুপ ক্ষুদ্র সৃষ্টি। 

        "ইরিনা যদি জিজ্ঞেস করে আজকের ব্যাপারে তাহলে তরুর ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলে খুশি হবো।" পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করতে রিয়াকে রুদ্র বলল। 
        "তাহলে কি বলবো?" রিয়া জানতে চাইলো।
        "ইরিনা বা অন্য কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমরা কি কাজে এসেছি তাহলে অন্য কিছু একটা বলে দিও৷ যে কোনো কিছু।" 
        "কিন্তু কি বলবো সেটা আগে থেকে ভেবে না রাখলে দুইজনের কাছে জিজ্ঞেস করলে যদি আমরা দুইজন দুই রকম উত্তর দেই তাহলে বিষয়টা কেমন হয়ে যাবে না!" 
        "হ্যাঁ, সেটা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা যেতে যেতে দুইজনেই ভাবতে থাকি। একটা না একটা বুদ্ধি মাথায় এসেই যাবে।" 
        "আচ্ছা।" 

        রুদ্র ভেবেছিল রিয়া অন্তত এবার তার হাতটা ছেড়ে দিবে। সে সেই কারণে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু রিয়া হয়তো ভুলেই গেছে, সে রুদ্রের হাত ধরে আছে। 
        রুদ্রের আগের মত এখন আর অতোটা অস্বস্তি কিংবা নার্ভাস ফিলিং হচ্ছে না। বিষয়টা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তবুও একটা সুন্দরী মেয়ে এভাবে হাত ধরে থাকলে যে কেউ-ই কিছুটা নার্ভাস হয়ে যাবে। 

        "আমাকে একটা মালা কিনে দিবে?"
        রুদ্র খানিকটা অন্যমনস্ক ছিল। তরুর খোঁজ পাওয়া যাবে কি-না সেটা ভাবছিল আনমনে। তখনই রিয়ার কথা শুনে সে সম্বিত ফিরে পেয়ে রিয়ার দিকে তাকালো। তাদের রিকসা থেমে আছে। আশেপাশে সব গাড়ি, রিকসা, সিএনজিও থেমে আছে। তারা জ্যামের ঠিক মাঝে আছে। সে এতোটাই তার ভাবনায় ডুবে ছিল যে সে খেয়াল করে নি। 
        "কি হলো? জ্যাম ছেড়ে দিবে তো। একটা বেলী ফুলের মালা কিনে দিবে?" 
        রুদ্র দেখলো, রিকসার পাশে ছোট একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে বেলী ফুলের মালা। রুদ্র কথা বাড়ালো না। সে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দুইটা বেলী ফুলের মালা কিনে রিয়াকে দিলো।
        তখনি জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। রিকসা চলতে শুরু করেছে। রিয়ার মুখে খুশি। সে হাসছে। মালা দুটো সে ডান হাতে পরলো। তারপর হাতটা বাড়িয়ে রুদ্রের সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলো, "সুন্দর না?"
        "হ্যাঁ!" রুদ্র ছোট্ট করে উত্তর দিলো। 
        "ধন্যবাদ।" রিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। 

        "আচ্ছা, তোমার প্রিয় ফুল কি?" রিয়া আবার প্রশ্ন করলো।
        "প্রিয় ফুল!" কথাটা আনমনে বলে রুদ্র কিছু একটা ভাবছে।
        রুদ্রকে ভাবতে দেখে রিয়া বলল, "কি ভাবছ?"
        "আমার প্রিয় ফুল কি সেটাই।" 
        "ধরো, কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার প্রিয় ফুল কি? তাহলে প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই আমার উত্তর হবে বেলী। এটা বলার জন্য আমাকে ভাবতে হবে না। এভাবে ভেবে প্রিয় জিনিসটা বাছাই করা যায় না। কোনো মানুষ কিংবা কোনো বস্তু প্রিয় হওয়ার কোনো কারণ থাকে না। শুধু ভালো লাগে, তাই প্রিয়।" 
        "তাহলে আমার কি কোনো প্রিয় ফুল নেই?"
       "অবশ্যই আছে। কিন্তু তুমি কনফিউজড, কোন ফুলটা তোমার প্রিয়। যখন কোনো কিছুতে মানুষ কনফিউজড থাকে তখন সেই সময়টাতে যেটা আমরা প্রিয় মনে করি সেটা অনেক সময় আমাদের প্রিয় না-ও হতে পারে। এবং পরে আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারি। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।"
        "আচ্ছা, তাহলে আমি ভেবে, কনফিউজড মিটিয়ে, অন্য কোনো সময় তোমাকে বলব, আমার প্রিয় ফুল কি!" 
        "আচ্ছা বলো। সমস্যা নেই।" 

        তারা বসে আছে ধানমন্ডি লেকের পাশে একটা গাছের নিচে। রিয়ার কাজিন এখনো আসে নি। রিয়া ফোন করলে সে বলেছে, দশ মিনিট সময় লাগবে।
        "পেয়ারা খাবে?" রিয়া জিজ্ঞেস করলো।
        "এখন?" রুদ্র উল্টো প্রশ্ন করলো।
        "হ্যাঁ! আমি খাওয়াবো।" বলেই রিয়া হাসলো। 

        তারা যেখানে বসে আছে তার থেকে কিছুটা দূরে একটা ছেলে পেয়ারা বিক্রি করছিল। রিয়া সেদিকে উঠে গেলো। একটা পেয়ারা দেখিয়ে সেটাকে কেটে বেশি ঝাল দিয়ে মাখিয়ে দিতে বলে আগের জায়গায় ফিরে এলো। 

        "বোরিং লাগছে?" রিয়া ফিরে এসে রুদ্রের পাশে বসতে বসতে কথাটা বলল।
        "হঠাৎ এই প্রশ্ন?" রুদ্র জানতে চাইলো।
        "তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তাই জিজ্ঞেস করলাম!"
        "তেমন না। আসলে...!" রুদ্র কথা শেষ করতে পারলো না।
        "আমার সঙ্গ কি তোমাকে বিরক্ত করছে? না-কি আমার এই ছটফটানি চঞ্চলতা তোমাকে বিরক্ত করছে?"
        "রিয়া, তেমন কিছু না।" 
        "কিছুটা তেমন। আমি তো কিছুটা হলেও বুঝি যে তুমি বিরক্ত হচ্ছ। আসলে, আজকে কেনো জানি বাচ্চাদের মত পাগলামি করতে ইচ্ছে করছে। জানো, এখন কি ইচ্ছে করছে..?" 
        রিয়া তার সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই যে ছেলেটা পেয়ারা বিক্রি করছিল সে এসে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। তার হাতে একটা বাটি। সেটাতে পেয়ারা ভর্তা। ছালেটা পেয়ারার বাটি'টা এগিয়ে দিয়ে বলল, "আপা, আপনাদের পেয়ারা।" 
        রিয়া হাত বাড়িয়ে পেয়ারাটা নিলো। ছেলেটা চলে গেলে রিয়া বলল, "আমার এই রকম ব্যবহারের জন্য সরি।" কথাটা বলে হেসে দিয়ে সে আবার বলল, "পেয়ারা খাও। আমার-তো দেখেই জিভে পানি চলে আসছে।" 
        রুদ্র এক পিচ পেয়ারা নিয়ে গালে দিলো। তারপর সে বলল, "আমি তোমার ব্যবহারে বা তোমার কারণে বিরক্ত হচ্ছি না। আসলে, আমি তরুর ব্যাপারে ভাবছি। যদি এবারও তেমন কিছু জানা না যায় তাহলে আর কোনো আশা থাকবে না। তরুর শেষ চিঠিটা পড়ার পর একবারের জন্য হলেও আমি মানুষটাকে দেখতে চাই। কেনো দেখতে চাই, তাও জানিনা। শুধু তাকে দেখতে চাই। সরাসরি তার সাথে একবার কথা বলতে চাই। আমি মানুষটার সম্পর্কে জানতে চাই। তার গল্পটা জানতে চাই। একটা মানুষ দীর্ঘ আট মাসের বেশি সময় ধরে আমাকে চিঠি দিয়ে আসছে। সরি, আমাকে না কিন্ত চিঠিগুলো আমার কাছেই আসছে। অদ্ভুত ভাবেই একটা কৌতুহল এবং মায়া জন্মে গেছে মানুষটার উপর। এছাড়া মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্ন যেগুলোর উত্তর আমার জানা নেই। আমি সেগুলোর উত্তর জানতে চাই। এবং সেই সব প্রশ্নের উত্তর আমাকে একমাত্র তরুই দিতে পারবে। তাই হয়তো আমি কিছুটা আপসেট, যদি শেষ মুহুর্তে তরুর দেখা না পাই?" রুদ্র দীর্ঘ সময় কথা বলে থামলো। সে আবার বলল, "আমাকে এরকম লাগার কারণ এটাই। তুমি যেটা ভাবছ সেটা ভুল। তারচেয়ে বড় কথা, একমাত্র তুমি-ই আমাকে সাহায্য করছ। এতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। তাহলে, আমি কেনো বিরক্ত হবো? বিরক্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।" রুদ্র কথা শেষ করে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিলো। 

        রিয়া পেয়ারা খেতে খেতে রুদ্রের কথা শুনছিল। সে আর কিছু বলতে পারলো না। তার মধ্যে তার কাজিন চলে এসেছে। সে এসেছি সৌজন্য বজায় রেখে রিয়াকে "হাই" বলল।
        রুদ্রের সাথে তার কাজিনের পরিচয় করিয়ে দিতে হলো না। খালেদ বসতে বসতে নিজেই বলল, "হাই, আমি খালেদ।"
        রুদ্র হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "আমি রুদ্র। রিয়ার বন্ধু।" 
        "হ্যাঁ জানি, রিয়া তোমার ব্যাপারেই বলেছে।"
        রুদ্র অবাক হলো। তার ব্যাপারে ঠিক কি বলেছে? কিন্তু সেটা জানা চেয়ে তার কাছে তরুর খোঁজ জানা জরুরি। সে সরাসরি বলল, "রিয়া নিশ্চয়ই আপনাকে তরুর ব্যাপারে বলেছে?"
        "হ্যাঁ, বলেছে।"
        "তরুর কোনো ঠিকানা জানতে পেরেছেন, কিংবা ফোন নাম্বার?" 
        "আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে..!" কথাটা বলে খালেদ কিছুক্ষণ থামলো। সে তার কথা গুছিয়ে নিয়ে আবার বলল, "আপনাকে তরু নামের একটা মেয়ে দীর্ঘ সময় চিঠি দিয়ে আসছে।" 
        "হ্যাঁ!" রুদ্র বলল।
        "আপনি নিশ্চয়ই জেনেছেন যে চিঠিগুলো একদিনে মানে একবারে আমাদের কুরিয়ারে জমা দেওয়া হয়েছিল। এবং প্রতিটা চিঠির উপরে যে তারিখ ছিলো আমাদের শুধু সেই তারিখেই চিঠিগুলো ডেলিভারি দিতে বলা হয়েছিলো।" 
        "হ্যাঁ, এতটুকু আপনাদের অফিসের লোকেরাই বলেছে।" 
        "আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, যে আপনাকে চিঠিগুলো দিয়েছে সে কোনো ঠিকানা কিংবা তার নাম্বার দেয় নি। এমনকি সে বলেছে, যদি চিঠিগুলো কোনো কারণে ফেরত আসে তাহলে সেগুলো তার কাছে পৌঁছে দেওয়া লাগবে না। সে কোনো ভাবেই তার পরিচয় কাউকে জানায় নি। তার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সে কেনো এতোটা গোপনীয়তা বজায় রেখেছে জানিনা। কিন্তু...! " 
        খালেদের কথার মাঝে রুদ্র বলল, "কোনো ভাবেই কি তরুর কোনো তথ্য জানা সম্ভব না?" রুদ্র কথাটা বলার সময় তার কন্ঠটা খানিকটা কেপে উঠলো।
        "এই কথাগুলো আমি রিয়াকেও বলেছিলাম। কিন্তু ও প্রচুর রিকোয়েস্ট করতেছিলো আমাকে। যদি কোনো উপায় থাকে তরুর ঠিকানা জানার। তখন আমি অনেক ভেবেছি আসলেই কোনো উপায় আছে কি-না। হঠাৎ একদিন রাতে ব্যাপারটা মাথায় আসে। মেয়েটা আপনাকে চিঠি পাঠানোর সময় পরিচয় গোপন করেছে, তার মানে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। কিন্তু অন্য কাউকে যদি কখনো চিঠি কিংবা পার্সেল পাঠায় তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে ঠিকানা গোপন করার প্রসঙ্গ আসবে না। তখন পরের দিন সকালে আগেই অফিসে চলে যাই। অনেকটা সময় নিয়ে আমাদের কম্পিউটারে বিগত দিনের যত ডাটা ছিল তার মধ্যে তরু নামের কেউ কি কখনো কোনো পার্সেল কিংবা চিঠি পাঠিয়েছে কি-না বা তার নামে কোনো কিছু এসেছে কি-না সেটার খোঁজ করি।" খালেদ এটুকু বলে থামলো। সে একটানা কথা বলার কারণে হাপিয়ে উঠেছে। তার পিপাসা পেয়েছে। 
        রিয়া এবং রুদ্র দুইজনে অধীর আগ্রহ নিয়ে কথাগুলো শুনছিল। দুই জনের মধ্যে কৌতুহল কাজ করছিল৷ এমন সময় খালেদকে থেমে যেতে দেখে দুইজনই বিরক্ত হলো। 
        "কি হলো? তরুর কোনো খোঁজ পেয়েছিস?" রিয়া কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করল।
        "গলাটা শুকিয়ে গেছে। একটু পানি খাওয়া দরকার।" 
        তাদের কারো কাছেই পানি ছিলো না। কিন্তু একটু দূরেই একজন মহিলা লেবুর শরবত বিক্রি করতেছিলো। রুদ্র উঠে গিয়ে তিন জনের জন্য তিন গ্লাস ঠান্ড লেবুর শরবত নিয়ে এলো। 
        "অনেক তথ্য। অনেক সময়ের কাজ। এদিকে অফিসের ব্যস্ততা। তখন খোঁজ করা সম্ভব ছিলো না। অফিস শেষে বাকী তথ্যগুলো খুজে দেখি।" ফাহিম বলল।
        "খালেদ, তুই কথা এতো ঘুরাচ্ছিস কেনো?" রিয়া এবার কিছুটা রাগী কন্ঠে বলল।
        "হ্যাঁ কিছু একটা পেয়েছি।" খালেদ বলল।
        "তরুর সম্পর্কে?" রুদ্র জানতে চাইলো।
        "এই তরু কি-না সেটা জানিনা। তবে অনেক দিন আগে তরু নামে একজনের কাছে একটা পার্সেল আসে। সেটা আমরা ডেলিভারি দেই। সেখানে প্রাপকের ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার ছিলো। কিন্তু যে নাম্বার ছিলো সেই নাম্বারে আমি ফোন দিয়েছি কয়েকবার। নাম্বারটা বন্ধ।" 
        রিয়া এবং রুদ্রের মুখে আবার হতাশার ছাপ ফুটে উঠলো। রুদ্র বলল, "ঠিকানাটা এনেছেন?"
        খালেদ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "এখানে ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার আছে।" 
        রুদ্র কাগজটা পকেটে পুড়ে নিলো। তারপর সে বলল, "ধন্যবাদ।" 
        খালেদ বলল, "ধন্যবাদ দিতে হবে না। আসলে এটা আপনার কাজে আসবে কি-না সেটা আমি ঠিক জানিনা।"
        "আরেকটা ব্যাপার।" রুদ্র বলল।
        "হ্যাঁ, বলন।" খালেদ বলল।
        "যে পার্সেলটা পাঠিয়েছিল তার ঠিকানাটা বা ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে? যদি এই ঠিকানায় তরুর কোনো খোঁজ না পাই তাহলে তার সাথে যোগাযোগ করে যদি কিছু জানা যায়।"
        "পার্সেলটা আসে চট্রগ্রাম থেকে। যে পাঠায় তার সেভাবে কোনো ঠিকানা নেই। নাম ছিলো, ফোন নাম্বার ছিলো ঠিকানায় শুধু চট্রগ্রাম ছিলো। আসলে পার্সেলটা হোম ডেলিভারি জন্য পাঠিয়েছিলো বলে তরুর বাসার ঠিকানা জানা সম্ভব হয়েছে। সেটা না হলে আরো বিপদে পড়ে যেতাম। আজকাল তো ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে পার্সেল ডেলিভারি দেওয়া হয়। যদি না কেউ কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা না দিয়ে থাকে। ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আপনি বুঝেন।" খালেদ বলল।
        "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।" রুদ্র বলল।
        "এছাড়া আপনার চিঠিগুলোর ঠিকানা দেখেছি। আমি আশ্চর্য হয়েছে। সেখানে নির্দিষ্ট করে বাসার ঠিকানা দেওয়া আছে। এবং ফ্লোর নাম্বার ও দেওয়া আছে। যেহেতু কোনো ফোন নাম্বার নেই তাই এতোটা নির্দিষ্ট করেই ঠিকানা দিয়েছে। আরেকটা কারণ হতে পারে, মেয়েটা নিশ্চিত করতে চেয়েছে চিঠিগুলো যেনো সঠিক ঠিকানায়, ঠিক বাসায় যায়। কেউ যাতে ফিরিয়ে না দেয়। এই জন্য এভাবে চিঠিগুলো পাঠিয়েছে। কিন্তু বিষয়টা আসলেই অদ্ভুত। এরকম কোনো কিছু আমি কখনো দেখিনি।" খালেদ কথাটা বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। 
        রুদ্র এবং রিয়াও দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এতো হতাশার মধ্যেও রুদ্র কিছুটা আশার আলো দেখছে। তরুর ঠিকানা তার কাছে আছে। সে অবশ্য জানেনা, এই তরুই সে কি-না। যে তাকে চিঠি দেয়। 
        "আমাকে যেতে হবে। একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি।" খালেদ বলল।
        "এখনই চলে যাবি? কিছু খেয়ে যা।" রিয়া বলল।
        "হ্যাঁ, চলুন। কোথাও বসে কিছু খাওয়া যাক। আপনি এতোটা কষ্ট করলেন আর আপনাকে এভাবে চলে যেতে দেই কি করে?" রুদ্র বলল।
        "আজ আমাকে যেতেই হবে। অন্য কোনো দিন ট্রিট দিলে হবে। প্লিজ, অনুরোধ করবেন না।" 

        রিয়া এবং রুদ্র তবুও খালেদকে অনুরোধ করলো। কিন্তু সে শেষমেশ চলে গেলো। অন্য কোনো দিন ক্যাম্পাসে আসবে বলে কথা দিয়ে গেলো।
        খালেদ চলে যাওয়ার পরে তারাও উঠে গেলো। সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। তারা একটা রিকসা নিলো। 
        সন্ধ্যার শহরটা বড্ড এলোমেলো। চারদিকে কোলাহল। অফিস ফেরত মানুষ বাসায় ফেরার তাড়া। সেই সাথে বড্ড জ্যাম রাস্তায়। তারা দীর্ঘ সময় জ্যামের মধ্যে বসে আছে। তারা এখনও ধানমন্ডির ভেতরেই।
        "আমি এখানে নেমে যাই।" হঠাৎ রুদ্র বলে উঠল।
        "এখানে? কেনো?" রিয়া অবাক হলো।
        "তরুর ঠিকানায় খোঁজ নেওয়া দরকার।" 
        "এই রাতে? ক'টা বাজে দেখেছ? কাল একসাথে যাওয়া যাবে। এক রাতই তো।" 
        রুদ্র তবুও জোরাজোরি করলো। কিন্তু রিয়া তাকে যেতে দিলো না। তারা সেই থেকে নিশ্চুপে রিকসায় বসে আছে।
        "কাল আমাকে রেখে আবার একা চলে যেও না।" রিয়া মৌনতা ভেঙে বলল।
        "তুমি কেনো যাবে?" 
        "তরুকে আমিও দেখতে চাই।" 
        রুদ্র কিছুক্ষণ ভেবে বলল, "আচ্ছা যেও।" 
        "কথা দিচ্ছো তো, একা যাবে না, সঙ্গে নিবে?"
        "আচ্ছা, কথা দিলাম।" 

        রিয়ার বাসায় তারা চলে এসেছে। রিয়া চাচ্ছিলো আজ রুদ্রকে সে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে কিন্তু রুদ্র এটা শুনলো না। তাই তাকে এখন তার বাসায় নামতে হলো। সে চলে যেতে যেতে বলল, "আমাকে রেখে একাই চলে যেও না।" 
        রুদ্র মুখে হাসি এনে বলল, "যাবো না।" 



চলবে...!



.


===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#52
 পর্ব:১৮ 

আসছে। 
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

Like Reply
#53
 পর্ব:১৮

 

        সাত্যকির হল থেকে ইরিনা বের হলো সন্ধ্যার ঠিক কিছুক্ষণ আগেই। সে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ ফোনের রিংটোনের শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে যায়। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফাহিমের কল। সে অলস ভাবে ফোনটা রিসিভ না করে বালিশের পাশে রেখে দেয়। তার কিছুক্ষণ পরেই ফাহিমের মেসেজ আসে। ইরিনার ততক্ষণে ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। সে আবার ফোন হাতে নিয়ে মেসেজটা পড়ে। ফাহিম লিখেছে, "আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। তারাতাড়ি নিচে আয়।" 
        ইরিনা শোয়া থেকে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সাত্যকি নেই। জয়ের সাথে দেখা করতে গেছে নিশ্চয়ই, এটা ভেবে সে আর সাত্যকিকে কল দিলো না। সে উঠে, গাঁ'য়ের পোশাকটা ঠিকঠাক করলো। চুলগুলো ঠিক করলো। টেবিলে আয়না রাখা ছিলো, সেটাতে নিজেকে একটু দেখে নিলো। তারপর বেরিয়ে এলো রুম থেকে। 
       সে নিচে এসে দেখে ফাহিন নেই। অথচ বজ্জাতটা মেসেজে লিখেছে, নিচে অপেক্ষা করছে। ইরিনার অল্প একটু অভিমান হলো। সে ভেবেছিল, নিচে নেমেই ফাহিমকে দেখতে পাবে। তার হাতে একটা গোলাপ থাকবে। সে এগিয়ে এসে তাকে...! ইরিনা এই পর্যন্ত ভেবে থামলো। সে কি সব ভাবছে। চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে সে ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলো আনমনে।  
        ফাহিম ঠিক ইরিনার পিছে। সে তাকে হল থেকে বের হতে দেখেছে। ইরিনা বেরিয়ে তাকে এদিক ওদিক খুঁজেছে, বিষয়টা তার ভাল লেগেছে। সেদিন সে ইরিনার ফোনে তাকে পাঠানো পুরনো মেসেজটা দেখেই সে নিশ্চিত হয়েছে, ইরিনা তাকে ভালোবাসে। তার তখনি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, ইরিনা আমিও তোকে ভালোবাসি, ভালোবাসি! কিন্তু সে অনেক কষ্টে নিজের অভিব্যক্তি চেপে স্বাভাবিক থেকেছে। সে ইরিনাকে বুঝতেও দেয় নি বিষয়টি। সেই মুহুর্তটা ছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। সে এটা কখনো ভুলবে না।
        একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে ইরিনার পিছে পিছে হাঁটতে ফাহিমের ভালো লাগছে। অন্য রকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে তার মধ্যে। সে আজকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে, ইরিনাকে তার মনের কথা বলবে। সে আগেও বহুবার বলেছে, কিন্তু প্রতিবার ইরিনা তাকে এড়িয়ে গেছে। কিন্তু আজ সে এড়িয়ে যাবে না, তার মন বলছে। 
        ফাহিমের হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। সে এখানে আসার আগে কিনে এনেছে। সে ভেবেছিল, ইরিনা হল থেকে বেরুলেই তাকে ফুলগুলো দিবে। কিন্তু হঠাৎ তার মন পরিবর্তন হয়ে গেলো। আর এখন সে ইরিনাকে লক্ষ করে তার পিছে পিছে হাঁটছে। 

        ইরিনা হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে পড়লো। ফাহিম তার নিজের ভাবনায় ডুবে ছিলো বলে তাৎক্ষণিক সে লুকিয়ে যেতে পারলো না। ইরিনার কাছে ধরা পরে সে বোকার মত হেসে দিলো। 
        ইরিনার বেশ কিছুক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিলো কেউ তাকে ফলো করছে। কিন্তু সে ইচ্ছে করে তাকায় না। তার কেনো জানো মনে হচ্ছিল, লোকটা ফাহিমই হবে। তাই সে নিসন্দেহে হেঁটে যাচ্ছিলো। 

        চারদিক অন্ধকার হতে শুরু করেছে৷ মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে। চড়ুই পাখিদের ডাকাডাকি শুরু হয়েছে। একটা গাছে একগুচ্ছ চড়ুই পাখি কিচিরমিচির করে উড়ে বেড়াচ্ছে। এই সবকিছুকে উপেক্ষা করে ইরিনা এক ভাবে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে। তার অন্য কোনো দিকে খেয়াল নেই। 
        ফাহিম এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। তার হাত দুটো পিছনে। হাতে মুষ্টি বদ্ধ একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। ইরিনা তার দিকে ফিরতেই সে ফুলগুলোকে পিছে লুকিয়ে ফেলতে সফল হয়েছিলো। সে হেঁটে এসে ইরিনাকে বলল, "তোকে সুন্দর লাগছে।"
        "এতোক্ষণ ধরে চুপিচুপি পিছে পিছে আসছিস কেনো? ডাক দিলেই পারতি?" ইরিনা বলল।
        "দূর থেকে তোর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিলো। তোকে দেখতে ভালো লাগছিল। তাই আর ডাকিনি।" কথাটা শেষ করে ফাহিম হাসলো।
        "বোকার মত হাসছিন কেনো?"
        ফাহিম আবার হাসলো। তার হাসি পাচ্ছে। সে বলল, "ভালো লাগছে। তোকে দেখেই বুকের মধ্যে খুশি খুশি অনুভব হচ্ছে।" 
        ইরিনাও হাসলো। সে বলল, "পাগল!"
        "চল, ওদিকটাতে গিয়ে বসি। ওদিকটা নিলিবিলি।" 
        "আচ্ছা, চল।" 

        ইরিনা পাশাপাশি ফাহিম হাঁটছে। হঠাৎ ইরিনা বলল, "হাতে কি?" 
        "কই কিছু না তো!" ফাহিম এলোমেলো ভাবে না ভেবেই উত্তর দিলো।
        "তাহলে ওভাবে হাত পিছে ধরে রেখেছিস কেনো?" কথাটা বলে ইরিনা পিছে ঘুরে হাত দেখতে গেলে ফাহিম ঘুরে গেলো।
        "তোর জন্যই এনেছি। তোকেই দিবো। এতো অস্থির হতে হবে না। চল, আগে ওখানে যাই।" 
        "আচ্ছা।" বাধ্য মেয়ের মত করে বলল ইরিনা। 

        তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। ইরিনাকে বসতে বলে ফাহিম তার সামনে দাঁড়ালো। তারপর একটা গোলাপ এগিয়ে দিলো তার সামনে। ইরিনা গোলাপটা দেখেই খুশি হয়ে উঠলো। সে হাত বাড়িয়ে গোলপ ফুলটা নিলো। তখনি ফাহিম আরেকটা, তারপর আরেকটা, এভাবে একটা একটা করে গোলাপ এগিয়ে দিতে থাকলো। ইরিনা অবাক-খুশিতে ফুলগুলো নিলো। শেষ গোলাপি দেওয়ার সময় ফাহিম হাটু গেড়ে বসল ইরিনার সামনে। তারপর গোলাপটা তার মুখের সামনে ধরে কোনো দ্বিধাহীন, সংকোচ হীন ভাবে বলে দিলো, "ভালোবাসি।" 
        ইরিনা ফুল সহ ফাহিমের হাতটা ধরল বেশ শক্ত করে। তারপর সেও তাকে বলল, "আমিও ভালোবাসি।" তার মধ্যেও কোনো সংকোচ নেই। যেনো কথাটা তারা আগেও বহুবার বলেছে একে অন্যকে।
        ফাহিম বলল, "কি বললি? আমি শুনিনি।"
        "ভালোবাসি।"
        "একটু জোরে বলল।"
        ইরিনা এবার ধীরে ধীরে বলল, "আই লাভ ইউ!"
        ফাহিম উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "হচ্ছে না।"
        "হচ্ছে না মানে?" ইরিনাও উঠে দাঁড়ালো।
        "ভালো ভাবে শুনতে পাচ্ছি না। এতোটা দূর থেকে বললে শোনা যায়!"
        ইরিনা খানিকটা দূরত্ব ঘুচিয়ে এনে ফাহিমকে অবাক করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে নিলো তার বাহুডোরে। ফাহিমও তাকে ছড়িয়ে ধরলো।
        "আই... লাভ... ইউ!" প্রতিটা শব্দ ভেঙ্গে ভেঙ্গে ধীরে ধীরে বলল ইরিনা। 
        "আমিও তোকে ভীষণ ভালোবাসি।" ইরিনাএ কানের কাছ থেকে তার চুলগুলো সরিয়ে ফাহিম ফিসফিস করে বলল।
        "কি করছিস, কানে সুড়সুড়ি লাগছে।" কথাটা বলেই ফাহিমকে ছেড়ে দিয়ে সে বসে পড়লো। তার খানিকটা লজ্জা লাগছে।
        ফাহিম তার পাশে বসতে বসতে বলল, "আমাকে এতোটা অপেক্ষা কেনো করালি?"
        "আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি এটা-তো আমরা জানি। আমরা একে অন্যকে কেয়ার করি। খোঁজ খবর নেই। একজনের প্রতি আমাদের এই যে আগ্রহ। ভালোবাসি না বলেও ভালোবেসে যাচ্ছিলাম। আমাদের এই খুনসুটি, এই টুকরো অনুভূতি, অভিমান, রাগ, এ-সবকিছু আমার ভালো লাগছিল। এছাড়া ভয় হচ্ছিলো, যদি ভালোবাসি বলে দেই তাহলে যদি আমাদের সম্পর্কটা এরকম না থাকে। যদি পরিবর্তন হয়ে যায়। সেই কারণে ভেবেছি, কিছু না বলেই তোকে ভালোবাসা যাক। কিন্তু তুই-তো সেটা করতে দিলি না। কৌশলে আমার কাছ থেকে ফোন নিয়ে তোকে পাঠানো মেসেজটা দেখে নিলি। ফাজিল কোথাকার।" ইরিনা কথাগুলো বলে একটু থামলো। তারপর সে আবার বলল, "জানিস, তোর ফোন হারিয়ে যাওয়াতে আমি খুশি হয়েছিলাম একটা সময় গিয়ে। প্রথম অনেক রাগ হয়েছিল কিন্তু তুই প্রতিদিন হাসপাতালে আমাকে দেখতে আসছি। আমাদের মধ্যে রাগ ছিলো, ভালোবাসা ছিলো। আমরা অভিমানী হয়ে একে অন্যের সাথে কথার যুদ্ধ করতাম। এই সবকিছু আমার ভালো লাগতে শুরু করে। তুই চলে গেলে, হাসপাতালের শেষের দিনগুলোতে আমি অপেক্ষায় থাকতাম কখন সকাল হবে, তুই কখন আসবি। আচ্ছা, এই অনুভূতির নাম কি? নিশ্চয়ই ভালোবাসা! আমি আসলে এই ভালোবাসাটুকুই সবসময় চাইতাম এবং তোর থেকে সেটা পেয়েছিও।" 
        ইরিনার হাত ধরে আছে ফাহিম। সে মনোযোগ দিয়ে ইরিনার কথা শুনছিলো। সে বলল, "আমাদের সম্পর্ক সবসময় এরকমই থাকবে।" 
        "সত্যি?" 
        "উঁহু।" 

        নিভে যাওয়া দিনের আলোয় তারা দুইজন আরো বেশকিছু সময় পাশাপাশি হাত ধরে বসে রইল। এই অন্ধকার তাদের আরো কাছে আসতে সাহায্য করলো। যতটুকু দূরত্ব ছিলো তা অন্ধকার দূরে করে দিলো। একটা সময় একজনের ঠোঁট নেমে এলো আরেকজনের ঠোঁটের উপর। তারা ডুবে যেতে থাকলো অপার্থিব এক অনুভূতির সমুদ্রে। যেখানে কোনো আলো নেই, অন্ধকারও নেই। সবকিছু শূন্য। 

        তাদের হুশ ফিরলো ফোনের রিংটোনের শব্দে। হটাৎ ইরিনার ফোন বেজে উঠলো। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার মা কল দিয়েছে। তখনি তার চোখ গেলো ফোনের বাম দিকে কর্ণারে থাকা সময়ের দিকে। রাত বাজে আটটা। সে ফোন রিসিভ করে কথা বলল। কথা শেষ করে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বলল, "ফাহিম, আমাকে বাসায় যেতে হবে।"
        "হ্যাঁ, অনেকটা দেরি হয়ে গেলো।" ফাহিমও সম্মতি দিয়ে বলল।
        "তাহলে চল উঠি।"
        "আচ্ছা৷" 

        তারা হেঁটে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে আসতেই সাত্যকির সাথে দেখা হয়ে গেলো তাদের। ইরিনাকে দেখতে পেয়ে সাত্যকি এগিয়ে এসে অবাক হয়ে বলল, "তুই এখনো যাস নেই?" 
        "আড্ডা দিতে দিতে দেরি হয়ে গেলো। তুই কোথায় গিয়েছিলি।" 
        "কোথাও না। আশেপাশেই হাঁটছিলাম।" 
        "তোর সে কোথায়?" সাত্যকিকে প্রশ্নটা করতেই জয় সামনে এসে দাঁড়ালো।
        জয় হাত বাড়িয়ে দিয়ে ফাহিমকে বলল, "কি খবর ইয়াং ম্যান?" 
        "এইতো আছি, দাদা। আপনার কি খবর?" ফাহিম বলল।
        "এই চলে যাচ্ছে।" ফাহিমের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইরিনার দিকে তাকিয়ে জয় বলল, "তোমার কি খবর ইরিনা? পায়ের কি অবস্থা?"
        "এইতো দাদা, এখন অনেকটা ভালো। সুস্থ বলতে পারেন।" 
        "সাত্যকির কাছ থেকে তোমার খবর শুনে খারাপ লেগেছিলো খুব। ব্যস্ততার কারণে আর দেখতে যেতে পারি নি।" 
        "সমস্যা নেই। সাত্যকি-তো প্রায়ই দেখা করতে আসতো।" 
        "বাসায় যাচ্ছো?"
        "হ্যাঁ। আজ সেই সকালে এসেছি, এখন পর্যন্ত বাসায় যেতে পারি নি।" 
        "ওহ আচ্ছা। যাও তাহলে। আজ তাহলে তোমাকে দেরি না করাই।" জয় কথাটা বলে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আবার বলল, "আবার দেখা হবে।"
        "অবশ্যই দাদা।" ফাহিম কথাটা শেষ করে জয়ের সাথে হাত মেলাল।
        "যাই দোস্ত।" সাত্যকিকে লক্ষ করে ইরিনা বলল। সেই সাথে ফাহিমও কথাটা বলে বিদায় নিলো। 

        ইরিনা এবং ফাহিম চলে গেলে জয় আর সাত্যকি হলের দিকে রওনা করলো। যেতে যেতে জয় বলল, "ওরা কি রিলেশনে আছে?"
        "কারা?" তাৎক্ষণিক প্রশ্নটা ধরতে না পেরে সাত্যকি বলল।
        "আরে ফাহিম আর ইরিনার কথা বলছি।"
        "রিলেশন আবার রিলেশন না। দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ মুখে সেটা বলে না।" 
        "দুইজনকে একসাথে ভালোই মানায়।"
        "উঁহু!" 

        তারা দুইজন চলে এসেছে হলের সামনে। সাত্যকি বিদায় নিয়ে চলে গিয়েও জয়ের ডাকে সে আবার ফিরে এলো। 
        "কিছু বলবে?" সাত্যকি এসেই জিজ্ঞেস করলো।
        "না.." জয় উত্তর দিলো।
        "তাহলে ডাকলে যে।"
        "ইচ্ছে হলো তোমার নাম ধরে ডাকতে।" 
        "তুমিও না।" সাত্যকি হেসে কথাটা বলল।
        জয় হঠাৎ সাত্যকির হাত দুটো ধরে বলল, "সাত্যকি!"
        "উঁহু।"
        "চলোনা বিয়েটা করে ফেলি। বিয়ে করে ঢাকায় ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নেই। আমাদের টুনি টোনার ছোট্ট সংবাদ হোক। ধীরে ধীরে দুইজনে মিলে সংসারটা গুছিয়ে নিতে পারবো। এছাড়া বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে। আমার বাবা শরীরটা ভালো না। কখন কি হয়ে যায়। আমার না খুব টেনশন হয়। বাবা বলছিল, বিয়েটা করে নিতে। তারপর না হয় তোমার পড়াশোনা শেষ করা যাবে।" 
        সাত্যকি আর জয় আবারো হাঁটতে হাঁটতে হলের থেকে খানিকটা দূরে চলে এলো। সাত্যকি বলল, "এতোদিন যেহেতু অপেক্ষা করলে আর-তো ক'টা মাস। সামনের মাসেই আমার সেমিস্টার ফাইনাল। তারপর ইন্টার্নি। প্লিজ, এই কয়টা মাস একটু কষ্ট করে বাসার সবাইকে ম্যানেজ করো।" 
        জয়ের মুখ কালো হয়ে উঠলো। সে চুপচাপ সাত্যকির হাত ধরে খুব ধীরে হেঁটে চলেছে।
        জয়কে চুপচাপ থাকতে দেখে সাত্যকি আবার বলল, "কি হলো? কিছু বলছো না কেনো? একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমি-তো পালিয়ে যাচ্ছি না।"
        "উঁহু! তোমাকে পালাতে দিলে তো!" জয় কথাটা বলে সাত্যকিকে আরো খানিকটা কাছে টেনে নিলো। 
        "কি করছো? রাস্তায় মানুষজন আছে।"
        "আমি আমার বউকে একটু কাছে টেনে নিচ্ছি। এর বেশিকিছু-তো করছি না।"
        "যখন বউ হবো তখন শুধু কাছে না, একবারে বুকের মধ্যে টেনে নিও। আমি বাঁধা দিবো না।" 
        "এই দূরত্বটুকু আমাকে প্রচন্ড কষ্ট দেয়।" মন খারাপ করে কথাটা বলল জয়।
        সাত্যকি বুঝতে পারলো জয় মন খারাপ করেছে। প্রায়ই জয় বিয়ের কথাটা তুলে। সাত্যকির বাসা থেকেও তাকে বিয়েটা করে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সাত্যকির একটাই কথা, সে পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করবে না। 

            "একটু সহ্য করে নেও প্লিজ। আর-তো ক'টাদিন। তারপর তো সম্পূর্ণ ভাবে আমি তোমার।" সাত্যকি কথাটা বলে হাসলো। 
        "আচ্ছা তোমার জন্যই না হয় এখনকার এই কষ্টটুকু সহ্য করে নিলাম। কিন্তু বিয়ের পর সুদে-আসলে উসুল করে নিবো।" জয় কথাটা বলেই বাকা ঠোঁটে হাসলো। 
        "তখন দেখা যাবে কে কতটা আসল বা সুদ তুলতে পারে।" কথাটা বলে সাত্যকিও হাসলো। 

        তারা দুইজন আরো কিছুক্ষণ একসাথে পাশাপাশি হাঁটলো। তারপর সাত্যকি চলে যেতেই জয়ের আবার মন খারাপ হলো। সে মন খারাপ করেই বাসায় ফিরলো। যতক্ষণ সে সাত্যকির সাথে থাকে ততক্ষণ তার সময়টা ভালো কাটে। সে শুধু চায়, সাত্যকির সাথে আরো দীর্ঘ সময় থাকতে। কিন্তু সাত্যকি কেনো বুঝতে চায় না। জয়ের মন খারাপ বাড়লো। 

চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#54
 পর্ব:১৯


 

        রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে পুরনো একটা বিল্ডিংয়ের সামনে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। বাড়ির মেইন গেট তালাবদ্ধ। বাড়িটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে বহুদিন ধরে অযত্নে পড়ে আছে। বাড়িটায় কেউ থাকে না, সেটা দুইজন প্রথম দেখায়ই বুঝে গিয়েছিল। তবুও রুদ্র অনেকটা সময় ধরে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। 
        রুদ্র তার পকেট থেকে কাগজটা বের করে আবার দেখে মিলিয়ে নিলো। হ্যাঁ, এই বাড়িটাই। কাগজে এই যে ঠিকানা লেখা আছে সেটা এই বাড়ির ঠিকানা। 
        একটা লোক হেঁটে তাদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল। রুদ্র তাকে সালাম দিয়ে কাগজটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, "আসসালামু আলাইকুম আংকেল। এই ঠিকানাটা কি এটাই?" 
       লোকটা কাগজটা দেখে বলল, "ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যাঁ, আপনারা ঠিক ঠিকানায় এসেছেন। কিন্তু এখানে তো কেউ থাকে না।" 
       রুদ্র জানে তারা ঠিক ঠিকানায় এসেছে। বাড়ির গেটের পাশের দেয়ালে যে ঠিকানা ছিল সেটার সাথে কাগজে লেখার ঠিকানা মিলিয়ে দেখেছে। তবুও সে জিজ্ঞেস করলো এটা ভেবে যদি কোনো তথ্য জানা যায়। 
       "আমাকে তো এই ঠিকানা দিয়ে এখানে আস্তে বলল।" রুদ্র একটু চালাকি করে মিথ্যা বলল।
       "আপনাকে তাহলে ভুল ঠিকানা দিয়েছে। অনেক দিন আগেই এই বাড়িতে যারা ছিল তারা বাড়িটা বিক্রি করে চলে যায়।" বয়স্ক লোকটা বলল।
       "কি বলেন?" রুদ্র কৌতুহল হওয়ার ভঙ্গি করলো। সে বাড়িটা দেখেই বুঝেছে অনেক দিন ধরে বাড়িটায় কেউ থাকে না। সে আবার বলল, "ঠিক কতদিন আগে বাড়িটা বিক্রি করে সবাই চলে গেছে?"
       "এই ধরুন সাত আট মাস হবে। তারও বেশি হতে পারে। আমার ঠিক মনে নেই।"
       "তাহলে তো অনেক দিন আগে।" লোকটার সামনে রুদ্র হতাশ হওয়ার অভিনয় করলো। সে আবার বলল, "তাহলে তরু মেয়েটা আমাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছে!" মিথ্যে করে বলে রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।
       "কি নাম বললেন?" 
       "তরু! কেনো?"
       "এই নামেই একটা মেয়ে এখানে থাকতো।" লোকটা কথাটা বলে আনমনে আবার বলল, "মেয়েটার বাবার নাম যেনো কি?" আস্তে করে বললেও রুদ্র এবং তরু ঠিকই কথাটা শুনতে পেলো।
       "তরুর বাবার নাম কি?" রুদ্র এবার লোকটিকে সরাসরি জিগ্যেস করলো।
       লোকটি কিছুক্ষণ ভাবলো। ভুলে যাওয়া একটা কথা মনে পড়তেই তার মুখে হাসি ফুটে এলো। সে বলল, "আফজাল হোসেন। হ্যাঁ, এটা আফজাল হোসেনর বাড়ি। লোকটা ভাল মানুষ ছিলো। মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। একবার মসজিদে বড় করে মিলাদ দিয়েছিল। উনার মেয়ে অসুস্থ ছিলো, তার সুস্থতা কামনা করে সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলো।" লোকটা এই পর্যন্ত বলে থামলো। সে আবার বলল, "হুট করে লোকটা মসজিদে নামাজ পড়তে আসা বন্ধ করে দিলে, একদিন খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে বাড়িটা বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। লোকটা এভাবে চলে যাওয়াতে খুব খারাপ লেগেছিলো। খুব ভালো মানুষ ছিলো।" লোকটা পরের কথাগুলো আনমনে বললেও রুদ্র এবং রিয়া শুনলো। 
       "বাড়ি বিক্রি করে কোথায় গেছে আপনি কি জানেন?" রুদ্র আবার জানতে চাইলো।
       "কোথায় গেছে তা-তো জানিনা। তবে লোকমুখে শুনেছিলাম মেয়ের চিকিৎসা করানোর জন্যই বাড়িটা বিক্রি করেছে। মেয়েটার চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছে এটাও শুনেছিলাম। আসলে কার কোন কথা সঠিক কেউ জানেনা। লোকমুখে নানা কথা বলা বলি হতো, হঠাৎ এভাবে নিজের বাপদাদার জমি বিক্রি করে চলে যাওয়া পর। কিন্তু একটা সময় পর লোকটাকে সবাই ভুলেই গেলো।" 
       বয়স্ক লোকটা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কথা বলছে কিন্তু আজ রুদ্রের সেটা শুনতে ভাল লাগছে। প্রশ্ন করা ছাড়াই লোকটা অনেক তথ্য বলে দিচ্ছে। 
       "আফজাল হোসেন কোথায় থাকে এখন বলতে পারবেন?" 
       "সেটা-তো বলতে পারবো না, বাবা।"
       "তার পরিচিত কেউ কি এই এলাকায় থাকে?"
       "না, তেমন কেউ নেই। আফজাল হোসেনের কোনো ভাই বোন নেই। এছাড়া তেমন কাউকেই চিনিনা আমি।"
       "লোকটা কি করতো? কোথায় চাকরি করতো? কিছু কি জানেন?"
       বয়স্ক লোকটা হঠাৎ রুদ্রকে ভাল করে লক্ষ করলো। তার মনে সাহসা কিছুটা সন্দেহ জেগেছে। ছেলেটা এতো প্রশ্ন করছে কেনো? সে সন্দেহের চোখে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কে? তাকে কেনো খুঁজছেন?" 
       লোকটার কাছ থেকে এরকম একটা প্রশ্ন অনেক আগে থেকেই রুদ্র আশা করেছিলো। তাই প্রথম থেকেই সে কিছুটা মিথ্যে বলেছে যাতে করে বানিয়ে একটা গল্প বলতে পারে। সে বলল, "তরু নামের মেয়েটার সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয়। সে-ই আমাকে অনেক দিন আগে এই ঠিকানাটা দিয়েছিলো। তারপর হটাৎ মেয়েটার কোনো খোঁজ খবর নেই। অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার জন্য কিন্তু পারি নি। তারপর হঠাৎ মনে পড়লো আমাকে সে বাসার ঠিকানা দিয়েছিল। তাই আজ এখানে খুঁজতে এলাম।" রুদ্র দ্রুত একটা মিথ্যে গল্প বানিয়ে বানিয়ে লোকটাকে বলে দিলো।
       "ওহ আচ্ছা।" লোকটা বলল।

       লোকটা রুদ্রের কথা বিশ্বাস করলো কি-না সে জানেনা। অবশ্য তার বিশ্বাস অবিশ্বাস, সেটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার। রুদ্র আবার বলল, "লোকটার ব্যাপারে আপনি কি কিছু জানেন? প্লিজ, যদি কিছু জেনে থাকেন আমাকে বলুন। আমার খুব উপকার হবে।" 
       বয়স্ক লোকটা পুরোপুরি রুদ্রের কথা বিশ্বাস করলো না, আবার অবিশ্বাসও করলো না। রুদ্রকে দেখে তার খারাপ মনে হয় নি। সে বলল, "আমি তেমন কিছুই জানিনা, বাবা। জানলে অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করতাম।" লোকটা এবার হঠাৎ তুমি করে রিয়া এবং রুদ্রকে উদ্দেশ্যে করে কথাগুলো বলল। 
       "এমন কেউ কি আছে, যে খোঁজ দিতে পারবে বলে আপনার মনে হয়।" রুদ্র বলল।
       "আমার জানামতে তেমন কেউ নেই।" লোকটা ফ্যাকাসে মুখে উত্তর দিলো।
       লোকটা বিরক্ত হচ্ছে রুদ্র বুঝতে পারলো। বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। লোকটা অনেক সময় দিয়েছে তাদের। পুরোটা সময়জুড়ে রিয়া একটা কথাও বলে নি। সে শুধু শুনেছে। রুদ্রের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে সে আরো একবার মুগ্ধ হলো। রুদ্র পরিস্থিতি খুব ভালো ভাবে সামলে লোকটার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলে অনেক কিছু জেনে নিয়েছে।
       "আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।" রুদ্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
       "তোমাদের সাহায্য করতে পারলে খুশি হতাম।" লোকটা বলল। সে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার আগে আবার বলল, "আসসালামু আলাইকুম। ভালো থেকো।"
        "ওয়ালাইকুম আসসালাম। ধন্যবাদ আংকেল।" রুদ্র সালামের উত্তর দিয়ে বলল। 

       লোকটা চলে গেলে রিয়া বলল, "কি করবে এখন?"
       "বুঝছি না। হয়তো আর কিছুই করার নেই। আর কোনো আশা নেই। ভাগ্যের উপর সবটা ছেড়ে দিতে হবে।" রুদ্র হতাশাজনক ভাবে কথাগুলো বলল। তার মুখ মলিন হয়ে গেছে। 
       রুদ্রকে এভাবে দেখে রিয়ার খারাপ লাগছে। সে কি-ই বা বলবে? সেও জানে, তরুর খোঁজ পাওয়া এখন অসম্ভব। যদি না তরু নিজ থেকে তার খোঁজ দেয়। কিন্তু তরু কি তা করবে? এই প্রশ্নের উত্তর তাদের কারো কাছেই নেই। আসলেই সবটা এখন ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হবে। 

       "চলো যাওয়া যাক। এখানে থেকে আর লাভ নেই। লোকটা যা জানার সবটাই বলেছে। লোকটা বেশ ভালো ছিল।" রুদ্র মনে মনে লোকটাকে ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।
       "হ্যাঁ, এখনো এরকম মানুষ আছে। তবে সেটা সংখ্যায় খুব কম।" রিয়া বলল। 

       তারা যাওয়ার জন্য রিকসা খুঁজছিলো। ঠিক তখন রিয়া বলল, "আমার না প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। সকালে না খেয়ে বেরিয়ে গেছি। তুমি এতো সকালে ফোন দিবে ভাবতে পারি নি। তোমার ফোন পেয়ে তারাহুরো করে রেডি হয়ে বেরিয়ে এসেছি। এদিকে এখন দুপুর।" 
       "তুমি সকালে কিছুই খাও নেই?"
       "টেবিলে একটা পরটা ছিল সেটার অর্ধেকটা কোনো রকম খেয়ে পানি খেয়ে বেরিয়ে এসেছি।" 
       "ওহ, সরি। আমারই ভুল। তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো। আসলে...!"
       রুদ্রকে কথা শেষ করতে দিলো না রিয়া। সে বলল, "সরি কেনো বলছ? কোনো সমস্যা নেই। সকালে এমনিতে বেশিকিছু খাই না আমি।" 
       "ওহ আচ্ছা। ডায়েট করছো?" 
       রিয়া হাসলো। সে বলল, "আমাকে দেখে কি তাই মনে হয়?"
       রিয়াকে ভাল করে দেখলো রুদ্র। সে বলল, "হ্যাঁ, তাই-ই মনে হচ্ছে। দিনদিন তো সুন্দরই হচ্ছো!"
       "তোমাকে বলেছে! দিনদিন মোটা হচ্ছি।" 
       "আমি-তো দেখছি না। ঠিকই আছো।" 
       "তোমাকে আর দেখতে হবে না। চলো, কিছু খেয়ে নেই।" 
       "আচ্ছা, চলো।" 

       রিয়া ভেবেছিলো পরিবেশটা গুমোট থাকবে। রুদ্রের মন প্রচন্ড খারাপ থাকবে। কিন্তু না, রুদ্র অনেকটা প্রাঞ্জল। যতটা খারাপ পরিস্থিতি হবে ভেবেছিল রিয়া ততটা হয়নি। 

       তারা একটা হোটেলে ঢুকে পড়লো। রিয়াকে জিজ্ঞেস করতেই সে সাদামাটা খাবার অর্ডার দিতে বলল। রুদ্র সাদা ভাত, সবজি, সমুদ্রের মাছ আর ডাল অর্ডার দিলো। 
       "এতোকিছু অর্ডার দিলে?" রিয়া বলল।
       "তুমিই তো বললে।" রুদ্র উত্তর দিলো।
       "অল্প কিছু অর্ডার দিতে বলেছিলাম।" 
       "দুপুরের লান্সে কি কেউ নাস্তা করে?"
       "আচ্ছা, সমস্যা নেই। আমি না পারলে তুমি তো আছোই। আমারটা না হয় তুমি খেলে।" 
       রুদ্র হাসলো। সে বলল, "আচ্ছা, সমস্যা নেই।" 

       খাবার দ্রুতই চলে এলো। তারা নিরবে খেলো। খাবারের সময় তাদের মধ্যে তেমন একটা কথা হলো না। রুদ্র যতটা পারে হাসিখুশি থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সে চায় না, রিয়া বুঝতে পারুক সে আসলে বেশি ভালো নেই। 

       পুরো পথে তাদের মধ্যে দুই একটা দরকারি কথা ছাড়া তেমন কোনো কথা হলো না। রিয়াও জোর করে কথা বলেনি। দুইজনে নিরব ছিলো। রিয়া যতটা ভেবেছিল, রুদ্র ঠিক আছে আসলে সে ততটা ঠিক নেই। সে এখন বুঝতে পারছে। রুদ্র শুধু ঠিক থাকার বাহানা করে যাচ্ছে। 
       আজকে রিয়াই রুদ্রকে নামিয়ে দিলো। রুদ্র একবার বলেছিল, সে রিয়াকে পৌঁছে দিবে। কিন্তু সেই বলার জোর ছিলো না। রিয়াও চাচ্ছিলো না রুদ্র তাকে পৌঁছে দিক। রুদ্রকে নামিয়ে দিয়ে সে সেই রিকসা নিয়েই চলে গেলো।
       রুদ্র বাসায় এসে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তার দাদী ছাড়া এই মুহুর্তে বাসায় কেউ নেই। জাহানারা কাজে, মিলি কলেজে। 

       রুদ্রের ঘুম ভাঙলো জাহানারা ডাকে। সে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে তার খেয়াল নেই। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছিল বলে সে শুয়ে ছিলো। ঘুম ভেঙেই দেখে তার মা চেয়ার টেনে তার পাশে বসে আছে। এক হাত দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুদ্রের খুব ভালো লাগল। কতদিন তার মা তাকে এভাবে আদর করে না। অবশ্য এতে সে অভিমান করে না। সে সবটাই বুঝে, এই পুরো সংসার তার মা'ই সামলায়।
       "তোর কি শরীর খারাপ?" জাহানারা জিজ্ঞেস করল।
       রুদ্র তার মায়ের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গালের নিচে রেখে হাতের তালুর উপরে মুখ রেখে শুয়ে রইল। সে বলল, "ভালো লাগছে না। মাথাটা ব্যথা করছে।" 
       "তোর কি কিছু হয়েছে? আজকাল তোকে অন্য রকম লাগে। সবসময় মন খারাপ করে থাকিস কেনো?"
       "কই মন খারাপ করে থাকি?" 
       "মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া কি এতো সহজ?"
       "সরি মা।" আহ্লাদী কন্ঠে রুদ্র বলল। সে আবার বলল, "অনেক কিছু নিয়ে একটু সমস্যায় আছি। সবকিছু সামলাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।" 
       "ধৈর্য রাখ। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।" জাহানারা থাকলো, তারপর সে আবার বলল, "যদি আমাকে বলার মত কথা হয় তাহলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারিস। তোর ভালো লাগবে। মন হালকা হয়ে যাবে।" 
       "আচ্ছা, মা। রুদ্র কথাটা বলে হাসলো। 
       "দুপুরে খেয়েছিস?" 
       "হ্যাঁ, খেয়েছি।" 
       আচ্ছা তাহলে বিশ্রাম কর। আমি যাই, রাতে রান্না করতে হবে।" 
       "এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকো না প্লিজ। আমার ভালো লাগছে৷" 
       "আচ্ছা.." বলেই জাহানারা তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। 

       "আমি-তো কেউ না। ভাইয়ার মত করে আমাকে একটুও ভালোবাসো না।" 
       রুদ্র এবং জাহানারা কথা শুনে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো মিলি দাঁড়িয়ে আছে।
       "এদিয়ে আয়।" জাহানারা ডাকলো।
        ছোট্ট চড়ুই পাখির মত মিলি ছুঁটে এসে তার মায়ের কোলের মধ্যে ডুকে গেলো। এভাবেই তারা তিনজন কিছুক্ষণ আধো আলো অন্ধকারের মধ্যে রইলো। 

       সারা বিকাল ঘুমানোর কারণে রুদ্রের রাতে ঘুম এলো না। সে এলোমেলো নানা কাজ করে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে এটা সেটা গুছিয়ে রাখছে। রিয়ার দেওয়া বইটা একবার পড়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু তার কোনো কিছুতে মন বসছে না। অবশেষে সে টেবিলের ড্রয়ার খুলে তরুর সব চিঠিগুলো একে একে বের করলো। সেই চিঠির ভেতর থেকে তরুর পাঠানো শেষ চিঠিটা খুঁজে বের করে সে সেটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো। 
       বাইরে জোছনার আলোয় ঝলমল করছে। আকাশে মস্ত বড়ো একটা চাঁদ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বেশকিছুটা সময় একা চাঁদটাকে দেখলো। তারপর সে সাহস করে তরুর শেষ চিঠিটা খুললো। সে প্রথম লাইন পড়তেই চিঠিতে ডুবে গেলো। 

"রুদ্র, কেমন আছিস? আমি ভালো নেই। সত্যি আমি ভালো নেই। তুই কি জানিস, আমার প্রিয় ঘ্রাণ কি? আমি-না ভুলে গেছি। কিন্তু আজকাল আমার মনে হয় হাসপাতালের ফিনাইলের ঘ্রাণই আমার প্রিয়। আমি পাগল হয়ে গেছি ভাবছিস? কি করবো বল? এখন তো হাসপাতালই আমার বাড়ি, আমার ঘর, আমার পুরো জগৎ। এই জগৎটা খারাপ না৷ কিন্তু এখানে শুধু তুই নেই। তুই নেই মানে, সত্যি কোথাও নেই, তোর ছায়াও নেই, তোর আলোও নেই! 

যদি এমন একটা পৃথিবী হতো, শুধু তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই। তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো? পরক্ষণেই ভাবি, বড্ড অন্যায় হতো। তোকে একা রেখে সেই আমাকে চলেই যেতে হতো৷ তুই বড্ড খারাপ থাকতি। 

আজকাল আমার কেবল মনে হয় জীবনে অনেক ভুল করেছি। এখন তার কোনোটাই শোধরানো সম্ভব না। আর আমি শোধরাতেও চাই না। আচ্ছা, তুই বল, মানুষ হয়ে জন্মেছি সেহেতু জীবনে একটা দুইটা ভুল জেনে বুঝে ইচ্ছে করে না করলে কি হয়? আমার না এতে কোনো আফসোস নেই। বরং এই ভুলগুলো করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ভুল না করলে তোর দেখা পেতাম কি করে? তোর মত একটা ছ্যাবলা ছেলেকে ভালোবাসতাম কি করে? 

আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তাই না রুদ্র? তুই ভুল বুঝিস না, আমি সেই সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবো না। যাকে এতোটা ভালোবাসি তাকে একটু কষ্ট দেওয়াই যায়। কি আমি ভুল বললাম? 

রুদ্র, মহাদেব সাহা'র মত করে আজ তোকে বলতে ইচ্ছে করছে, "তোকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার। আর এক কোটি বছর হয় তোকে দেখি না। এক কোটি বছর হয় তোকে দেখি!" 

মানুষ মনের মধ্যে, কি ভীষণ অভিমান, কি ভীষণ রাগ, কি ভীষণ ঘৃণা জমিয়ে রাখে। কিন্তু আমি কেনো পারি না? আমার সবটা সময় কেনো চলে যায় শুধু তোকে ভালোবাসায়? কিন্তু এতো ভালোবাসা দিয়ে আমি কি করবো? সবটা-তো সাথে করে নিয়ে চলে যেতে হবে দূরে, বহুদূরে। 

এই রুদ্র, আমার আজ কেনো এতো কান্না পাচ্ছে? কী ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে! জোছনার মত করে গলে গলে চোখ বেয়ে পড়ছে দুঃখ'রা। এ যে থামার নাম নেই। তুই এসে একটি ছুঁয়ে দিবি; আমার ভেজা চোখ, ভেজা গাল, ভেজা ঠোঁট? 

আমি জানিনা, তোকে আর চিঠি লিখতে পারবো কি-না। আমি-তো এ-ও জানিনা, চিঠিগুলো তোর কাছে পৌঁছাচ্ছে কি-না। আমার আজকাল মনে সংশয় জাগে, তুই আগের ঠিকানা থাকিস তো? যদি আমার পাঠানো চিঠি তোর কাছে না-ও পৌঁছায় তাহলে আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি শুধু শেষ সময়ে তোকে আরেকটু কষ্ট দিতে চেয়েছি। তুই কষ্ট পেলে আমার ভালো লাগে, ভীষণ আনন্দ হয়, ভীষণ! 

রুদ্র, হাত কাপছে৷ আমি লিখতে পারছি না৷ তবে তোকে শেষ একটা অনুরোধ করতে চাই, রাখবি তো? আসলে একটা না দুইটা অনুরোধ করতে চাই। একটা হলো, আমাকে ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখিস। পরেরটা হলো, আমাকে খুঁজিস না, কোথাও খুঁজিস না। আমি নেই, কোথাও নেই। প্রথমেই বলেছিলাম, আমার জগতে তুই নেই। তুই নেই মানে, সত্যি কোথাও নেই, তোর ছায়াও নেই, তোর আলোও নেই! 

ইতি, তরু "
       
       রুদ্রের চোখ ভিজে উঠেছে অশ্রুতে। এই চিঠিটা সে যখনই পড়ে ততবারই তার চোখ থেকে অশ্রু বেড়িয়ে আসে। কেনো আসে সে জানেনা। যাকে সে কখনো দেখেনি তার জন্য তার কেনো এতো মায়া হয়? তার জন্য কেনো তার মনে এতো স্নেহ, ভালোবাসা? কে তরু? সে তার কে হয়? রুদ্রের কাছে কোনো উত্তর নেই। তবুও তার মনে তরুকে এবার দেখতে চাওয়ার সে যে কি আকুলতা তা বোঝানো সম্ভব নয়!

       রুদ্র চিঠিটা ভাজ করে রাখলো। সে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে অদ্ভুত চাঁদ৷ তরুও কি এই একই চাঁদ দেখছে? 

       রুদ্র ক্রমশ জোছনায় মিশে যেতে থাকলো। তার সকল কষ্ট, আকুলতা বেরিয়ে এলো চোখ বেয়ে। তারপর সে আনমনে মহাদেব সাহার 'এক কোটি বছর তোমাকে দেখি না' কবিতাটা পড়তে থাকলো। 

"এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার
হবো ভরা দামোদর
… কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর,
ছুটে যবো নাগরাজ্যে পাতালপুরীতে
কিংবা বোমারু বিমান ওড়া
শঙ্কিত শহরে।
যদি জানি একবার দেখা পাবো তাহলে উত্তপ্ত মরুভূমি
অনায়াসে হেঁটে পাড়ি দেবো,
কাঁটাতার ডিঙাবো সহজে, লোকলজ্জা ঝেড়ে মুছে
ফেলে যাবো যে কোনো সভায়
কিংবা পার্কে ও মেলায়;
একবার দেখা পাবো শুধু এই আশ্বাস পেলে
এক পৃথিবীর এটুকু দূরত্ব
আমি অবলীলাক্রমে পাড়ি দেবো।
তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন বৃহস্পতিবার
আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।" 

চলবে....!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#55
পর্ব:২০

 

        "কখন এলে?" নদী ছাঁদে আসতেই আলিফের সাথে তার চোখাচোখি হয়ে গেলে সে তাকে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে জিজ্ঞেস করলো।
       আলিফ ছাঁদে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে নদীকে বলল, "এইতো মাত্রই।" 
       নদী হেঁটে তার সামনে দাঁড়ালো। সে বলল, "কেমন আছো?"
       "ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?" আলিফ উত্তরের সাথে নদীকেও প্রশ্নটা করলো।
       "ভালো আছি।" নদীও নিরবে হাত নেড়ে তাকে উত্তর দিলো। 

       তারপর নিরবতা নেমে এলো। কেউ কাকে কিছু বলল না। একে অন্যের দিকে তাকালো। দুইজন দুইজনকে দেখলো। 
       নদী অনেক দিন পর আলিফের সাথে দেখা করতে এসেছে। সে গতকাল রাতেই আলিফকে আজ ছাঁদে আসার জন্য বলেছে। 
       সেই ঘটনার পরে আলিফকে ক্রমাগত উপেক্ষা করাতে একটা সময় আলিফও নদীকে বিরক্ত করা কমিয়ে দেয়। তাদের দেখা হলে আলিফ প্রথমে কথা বলার চেষ্টা করলেও, নদী আগ্রহ দেখাত না। একটা সময় পর আলিফও আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে কথা বলা কমিয়ে দিলো। দুই এক সময় হাতের ইশারায় হাই দিলেও নদীর কোনো উত্তর আসতো না। তারপর আলিফও আগাতো না। নদীর সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করলে সে তাকে মেসেজ দিতো কিন্তু নদী হুটহাট ভাগ্যের জোরে দুইএকটা রিপ্লাই দিলেও বেশিরভাগ সময় মেসেজগুলো উত্তর বিহীন অবহেলায় পড়ে থাকতো৷ 

       নদী আলিফকে খোলাসা করে কিছুই বলেনি। সে কেনো এমন করছে তা বলেনি। আলিফ জিজ্ঞেস করেনি এমন না। নদী বলেছে, "তোমার কোনো কারণে এমন করছি না। আমি চাই না আমার এরকম একটা জীবন কারো সাথে জড়াতে। আমি আর মা ভালো আছি। এভাবেই একদিন নদী আলিফকে কথাগুলো বলেছিল। 

       নদী ছাঁদের কর্ণারে দূরে তাকিয়ে ছিলো। আলিফ তার হাত ছুঁয়ে তাকে ডাকলো। নদী ফিরলে আলিফ বলল, "মন খারাপ?" 
       "হ্যাঁ।" নদী উত্তরে বলল।
       "অনেক বেশি?"
       "অনেকটা!"
       "কেনো? কিছু হয়েছে?"
       "কিছুই হয় নি। এমনিতেই ভালো লাগছে না। খুব খারাপ লাগছে৷" 
       "তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।" 
       নদী কিছু সময় চুপ থেকে বলল, "এখন বলতে ইচ্ছে করছে না। অন্য সময় বলবো। তুমি আমার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ?"
       "আচ্ছা..." বলে আলিফ নদীর পাশে দাঁড়িয়ে রইল। সে আর কোনো কথা বলল না। নদীকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। 

       নদী আর আলিফ অনেকটা সময় একে অন্যের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। একটা সময় সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নদীর হাতটা ধরলো আলিফ। আলিফের ওইটুকু স্পর্শ, নদী কেমন করে হঠাৎ বদলে গেলো। বুকের ভেতর জমে থাকা একখন্ড বরফ গলে গেলো। সেই গলে যাওয়া বরফ তার চোখ বেয়ে নেমে এলো।

       আলিফ হাত বাড়িয়ে নদীর গালে লেগে থাকা অশ্রু মুঁছে দিলো। সে তাকে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না।
       অনেকটা সময় পর নদী কান্না থামালো। আলিফ তার পাশে বটবৃক্ষের মত পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে রইলো। 

       তাদের মধ্যে তেমন আর কোনো কথা হলো না। সন্ধ্যা নামলেই তারা চলে গেলো। কিন্তু তারপর থেকে তাদের মাঝে বেড়ে উঠা অদৃশ্য দেয়ালটা ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হতে থাকলো। তারা আবারো কথা বলা শুরু করলো, দেখা করা শুরু করলো। এবার আলিফ আগের চেয়ে অনেক শান্ত। বন্ধুর মত নদীর পাশে রইলো। তার জন্য এটুকুই অনেক। সে শুধু নদীর পাশে থাকতে চায়। 

       আলিফ অনেকদিন ক্যাম্পাসে যায় না। সে ঠিক করলো আবার সবকিছু আগের মত ঠিকঠাক করে নিবে। অনেকদিন রুদ্রের সাথেও তার ভাল করে কথা হয় না। মূলত অন্য সবার সাথেই সে যোগাযোগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছিল। রুদ্রের জন্য তার অনেক কথা জমে আছে। 
       আলিফের খারাপ লাগতে শুরু করলো। এভাবে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে নিজেকে চার দেয়ালের মধ্যে আঁটকে রাখা তার উচিত হয় নি। সে বেলকনিতে বসে ছিলো। হঠাৎ রাস্তার দিকে চোখ যেতেই তার মন ভালো হয়ে গেলো। সে বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। 

       "আলিফ, ওই আলিফ...!" আলিফকে বেলকনিতে বসে থাকতে দেখে নিচ থেকেই রুদ্র জোরে জোরে তাকে ডাকলো।
       "তোরা সবাই এখানে?" আলিফ বেলকনি থেকেই জিজ্ঞেস করলো।
       "তোকে দেখতে এলাম। আমাদের-তো খোঁজ খবর নিবি না, তাই আমরাই এলাম।" রুদ্র বলল। 

       আলিফ ছুটে নিচে চলে এলো। সাত্যকি, ইরিনা, ফাহিম এবং রুদ্রকে দেখে সে প্রচন্ড খুশি হয়েছে। তার মন চাচ্ছিলো, সবার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে। তার চাওয়াটা এভাবে পুরোন হয়ে যাবে সে ভাবতে পারে নি। 

       "এতোকিছু এনেছিস কেনো?" আলিফ কৌতুহল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো। 
       "সবাই মিলে ছোটখাটো একটা পার্টির আয়োজন করলাম।" হেসে উত্তর দিলো ফাহিম।
       "আন্টি আবার কিছু বলবে না-তো?" ইরিনা জানতে চাইলো।
       "আরে না। আম্মু কি বলবে। আম্মু বরং তোদের সবাইকে দেখে খুশিই হবে।" আলিফ উত্তর দেয়।
       "আমাদের রাস্তায় এভাবে দাড় করিয়ে রাখবি?" রুদ্র ঠাট্টা করার ভঙ্গিতে বলে।
       "কি যে বলিস। বাসায় চল।" আলিফ হেসে বলে।
       "হ্যাঁ, চল। আগে ফ্রেশ হতে হবে।" সাত্যকি বলে। 

       সবাই হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আলিফের রুমে এসে বসলো। ঠিক তখন আলিফের মা রুমে এলো। আলিফই তার মাকে আসতে বলেছে, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।
       আলিফ একে একে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবার সাথে প্রয়োজনীয় দুই একটা কথা বলল তার মা। আলিফের মা বলল, "রাতে কিন্তু তোমরা খেয়ে যাবে।" 
       "আন্টি আপনার শুধু শুধু কষ্ট করতে হবে না। দেখেন, আমরা কত খাবার দাবার নিয়ে এসেছি।" ইরিনা বলল।
       "এগুলো বললে হবে না। আমি এখনই রান্না বসাচ্ছি৷ তোমরা আড্ডা দেও।" এটা বলেই আলিফের মা চলে গেলো। 

       "আলিফ, আন্টিকে শুধু শুধু কষ্ট করতে নিষেধ কর।" রুদ্র বলল।
       "তোরা কি যে বলিস। এই প্রথম সবাই একসাথে বাসায় এলি, তোদের কিছু না খাইয়ে ফেরত পাঠাতে পারি? আম্মুর কোনো কষ্ট হবে না। তোরা চিন্তা করিস না।" আলিফ সবার উদ্দেশ্য বলল। 

       রুদ্রকে ইশারায় ইরিনা কিছু একটা বলতেছিলো দেখে ফাহিম জিজ্ঞেস করলো, "কিছু বলবি?" 
       "না না, কিছু না।" ইরিনা বলল।
       "আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো? বলে দে।" রুদ্র মাঝখান থেকে বলল।
       "কিছু বলতে চাইলে বলতে পারিস। সমস্যা নেই।" ফাহিম আবার বললো।
       "তোর মন ভালো আছে?" পাশ থেকে ফাহিম জিজ্ঞেস করলো।
       "হঠাৎ এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছিস কেনো? আমাকে দেখে কি তোদের মন খারাপ মনে হচ্ছে?" আলিফ জানতে চাইলো।
       "না, তা মনে হচ্ছে না।" এবার সাত্যকি বলল।
       "তাহলে?" আলিফ আবার জানতে চাইলো।
       "আসলে হয়েছে কি?" এটুকু বলে ইরিনা রুদ্রের দিকে ফিরে বলল, "রুদ্র, তুই বল।"
       "কিছু কি হয়েছে রুদ্র?" আলিফ এবার কৌতুহল বোধ করছে।
       "আরে তেমন কিছু না৷ তোর আর নদীর ব্যাপারটা সেদিন সবাইকে জানিয়েছি। তাই ওই ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে সবাই।" অবশেষে রুদ্র বলল।
       রুদ্র ভেবেছিল আলিফ রাগ করবে। কিন্তু আলিফ রাগ করলো না। সে বলল, "এই ব্যাপার। আমি আবার ভয় পেয়ে গেছিলাম, সিরিয়াস কিছু হলো কি-না।" 
       "তাহলে...!" নদীর ব্যাপারে বলতে ইরিনা ঈঙ্গিত দিলো।
       "একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়ে গয়েছিলো। এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।" আলিফ বলল।
       "তাহলে তো খুশির খবর।" ফাহিম বলল।
       "তোকে আগে কিন্তু এরকম দেখিনি। একজনের প্রেমে হাবুডুবু খেতে।" ইরিনা বলল।
       "আমিও জানিনা কখন কীভাবে কি হয়ে গেলো। যখন বুঝলাম, তখন দেখলাম আমি সত্যিই ওকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে। আগে এই রকম ফিলিং কখনো হয় নি।"
       "এবার তাহলে একবারে ফেসে গেছিস।" ফাহিম বলল।
       "যাক, তাহলে ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে রুদ্র বাদে সবারই একটা হিল্লে হয়ে গেলো। কি বলিস ইরিনা।" সাত্যকি হঠাৎ কথাটা মুখ ফুসকে বলে ফেললো।
       "রুদ্র বাদে সবার মানে?" আলিফ বিস্মিত হয়ে প্রশ্নটা করলেও রুদ্রের মুখেও একই কৌতুহল। 

       ইরিনার এবার লজ্জা লাগছে। সাত্যকিকে কথাটা বলা ঠিক হয় নি সে ভাবলো। 
       "তুই এখনো অন্য কাউকে বলিস নেই, আমি জানতাম না ইরিনা। আমি ভেবেছিলাম সবাই জানে।" সাত্যকি লজ্জিত বোধ করছে।
       "আরে কি যে বলিস। একটু সময় নিয়ে সবাই কে-ই জানাতান। তুই বলে দিয়ে ভালোই হয়েছে।" ইরিনা হাসার চেষ্টা করলো।
       "কনগ্রাচুলেশন, ফাহিম।" রুদ্র এবং আলিফ একসাথে বলে উঠলো। 
       ফাহিম লজ্জা পেলো। সে কোনো রকম ভাবে বলল, "ধন্যবাদ।" 

       "এবার রুদ্রের একটা কিছু হয়ে গেলেই হয়।" পরিবেশটা স্বাভাবিক করতে ইরিনা বলল। 
       "আমার কিছু হবে না। মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে একবারে বিয়ে করে নিয়ে আসবো।" রুদ্র বলল।
       "কখন প্রেম এসে হৃদয়ে বাঁধিবে ঘর, সখা তুমি জানিতে পারিবে না। একবার প্রেমের জালে আটকে গেলে ছুটিতে পারবে না।" রুদ্রকে গানের সুরের মত করে ইরিনা বলল। 

       তারা সবাই নানা বিষয় নিয়ে আড্ডা দিলো। হাসি তামাশা করলো। হঠাৎ ইরিনা বলল, "ফাহিম, নদীকে একটা মেসেজ দে।" 
       "ওকে মেসেজ দিয়ে কি করবো? আলিফ বলে।
       "আরে বুদ্দু, আসতে বলবি।" ইরিনা বলল।
       "হ্যাঁ, আলিফ। নদীকে নেসেজ দিয়ে আসতে বল। আমরা কেউ ওকে দেখেনি। ও আমাদের দেখেনি। এছাড়া ও এলে ভালোই হবে।" রুদ্র বলল।
       "কিন্তু...!" 
       "কিন্তু কি?" আলিফের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ফাহিম বলল।
       "তোরা নিশ্চয় জানিস, ও আসলে....!" কথা বলতে গিয়ে বলতে পারল না আলিফ।
       "তাতে কি হয়েছে? আমাদের কি অবুঝ মনে হয়, যে ওকে বুঝবো না। তুই কোনো চিন্তা করিস না। ওকে মেসেজ দিয়ে বল আসলে। দেখ ও কি বলে।" ইরিনা বলল।
       "আচ্ছা, বলছি।" ফাহিম কথা শেষ করে উঠে গেলো।
       "দেখছিস রুদ্র। শুধু মেসেজ দিবে তবুও অন্য রুমে চলে গেলো।" হতাশ গলায় ইরিনা বলল। 

       আলিফ অন্য রুমে চলে গেলে ইরিনা আর ফাহিম বসা থেকে উঠে বেলকনির দিকে গেলো। সাত্যকিও উঠে রুমটা ঘুরে-ঘুরে দেখছে। রুদ্র একা বসে আছে ফোন হাতে। 

       আলিফকে ঘরে ঢুকতে দেখেই রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, "কি বললো? আসবে?"
       "হ্যাঁ আসছে। তবে একটু সময় লাগবে।" আলিফের মুখে হাসি ফুটে এলো।
       ফাহিম এবং ইরিনা বেলকনিতে থেকে ফিরে এসে আলিফের হাসি দেখেই বুঝে নিলো নদী আসছে। 

       নদী এলো কিছুসময়ের মধ্যেই। অল্প সময়ে সামান্য সাজগোজ করেছে সে। তাকে দেখেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। কপালে টিপ দিয়েছে, ঠোঁটে হালকা করে লিপিস্টিক, চোখেকাজল, চুলগুলো সিঁথি করে আঁচড়ানো, হাতে পুরনো স্টাইলের একটা ঘড়ি, যে থ্রিপিসটা পরেছে সেটা ইস্ত্রি কর, ভাজ দেখে বোঝা যাচ্ছে। 
        সবাই অবাক চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। নদীকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সবাই মনে মনে কথাটা ভাবলো। সেই সাথে সবাই খানিকটা অবাকও হয়েছে, কারণ শ্যামলা বর্নের একটা মেয়ে বাস্তবে এতো সুন্দর। নদীকে কোনো গল্প-উপন্যাসের নাইকাদের মত লাগছে। তাছাড়া চেহারার মধ্যে এতো মায়া। আলিফ কেনো এতোটা ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটাকে সবাই এবার বুঝতে পারলো। চাইলেও পৃথিবীতে কিছু মানুষকে উপেক্ষা করা যায়, ভালো না বেসে থাকা যায় না। সেই অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে নদী একজন। 

       নদী এসে দাঁড়িয়েই আছে। তাকে দেখেই সবাই চুপ হয়ে গেছে, একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নদীর লজ্জা লাগছে। ভীষণ লজ্জা করছে। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। 
       ইরিনা হাতের ইশারায় নদীকে ডাকলো।
       নদী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। ইরিনা ডাকতেই সে ভেতরে ঢুকলো।
       ইরিনা আবার হাতের ইশারায় তাকে তার পাশে বসতে বলল।
       নদী এসে ইরিনার পাশে বসলো।
       "তোমাকে সুন্দর লাগছে।" ইরিনা এবারও হাতের ইশারায় তাকে বলল।
       নদী হেসে তার ভাষায় বলল, "ধন্যবাদ।"
       "হ্যাঁ, ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমাকে।" পাশ থেকে সাত্যকি বলল। 
       সাত্যকি ঠিক কি বলল নদী বুঝলো না। সে শুধু কিছু অস্পষ্ট শব্দ শুনে সাত্যকির দিকে তাকালো। তার মুখ নড়তে দেখলো। সে প্রায়ই মুখের বাচনভঙ্গি লক্ষ করে। যখন কেউ কথা বলে তখন সে ভালো করে কথা বলা লোকটার ঠোঁটের দিলে লক্ষ করলে প্রায় সময় আজকাল ঠোঁটের ভাষা বুঝতে পারে। কারণ সে আজকাল ঠোঁটের বাচনভঙ্গি শেখার চেষ্টা করছে। তাহলে যে কারো কথা সে কানে স্পষ্ট ভাবে না শুনলেও সে তার ঠোঁট দেখেই বুঝতে পারবে। এই ইচ্ছেটা হয়েছে, আলিফের সাথে পরিচয় হওয়ার পরে। সে চায় আলিফ তার ভাষায় কথা বলুক। সে তার ঠোঁট দেখেই তার কথা বুঝুক।
       নদীকে চুপচাপ থাকতে দেখে আলিফ বলল, "সাত্যকি, তুই কি বলেছিস নদী মনে হয় বুঝেনি। কেউ কোনো কথা বললে নদী স্পষ্ট সেটা শুনতে পায় না। হ্যাঁ, কেউ কিছু বলছে সেটা বুঝতে পারে। আমরা যে শব্দগুলো দিয়ে একটা বাক্য বলি, নদী তার মধ্যে কিছু শব্দ অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পারে। মানে, ধর কেউ লোহাতে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। তখন আমরা যে শব্দটা শুনতে পাই, তেমন নদীরকাছে মানুষের কথাগুলো সেরকম লাগে। শুধু বুঝতে পারে কেউ কথা বলছে।" 
       "সরি। আমি বলেছি তোমাকে সুন্দর লাগছে।" সাত্যকি অনেক চেষ্টা করে শেষমেশ ইশারায় নদীকে বোঝাতে সক্ষম হলো। 
       নদী এবারও ছোট্ট কোরে বলল, "ধন্যবাদ।" 

       নদী এবং আলিফ বেলকনিতে গেলো তারো অনেক পরে। ঘরের মধ্যে বাকী সবাই নানা বিষয় নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। আড্ডা দিচ্ছে। একে অন্যকে খেপাচ্ছে। কেউ কারো সিক্রেট জানলে সেটা বলে দিচ্ছে। 

       "তোমার বন্ধু গুলো ভীষণ ভালো।" নদী বলল।
       "হ্যাঁ, ওরা সবাই খুব ভালো।" আলিফ বলল।
       "আজ হঠাৎ সবাই একসাথে তোমার বাসায় এলো। আজ কি কোনো বিশেষ দিন?" 
       "তেমন কোনো কারণ নেই। আমি অনেকদিন ক্যাম্পাসে যাই না। ওদের সাথে ভাল করে যোগাযোগ করি না। তাই হঠাৎ সবাই আজ একসাথে চলে এসেছে আমার সাথে আড্ডা দেওয়া জন্য।" 
       "কেনো যাও না?" নদী বলল।
       "ক্যাম্পাসে?" আলিফ বুঝতে পেরে বলল।
       "হ্যাঁ।" নদী উত্তর দিলো।
       "এমনিতেই।" আলিফ বলতে পারলো না কেনো সে নিজেকে এভাবে একা করে রেখেছে। এতোদিন সে একটুও ভালো ছিলো না। সবসময় তার মন খারাপ থাকতো। সবসময় নদীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করতো, দেখা করতে ইচ্ছে করতো। আলিফ সে-সব কিছুই বলল না নদীকে।
       "আমার জন্য?" 
       নদীর কাছ থেকে সরাসরি এরকম প্রশ্ন আলিফ আশা করে নি। সে রীতিমতো ভেবাচেকা খেয়ে গেছে। সে বলল, "এমনিতেই। ভালো লাগে নি কোথাও যেতে।"
       "সরি।" নদী আলিফের হাতের উপর হাত রাখলো।
       আলিফ বেলকনিতে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। তার হাতের উপরই নদী হাত রেখেছে। এটুকুতেই তার হার্টবিট ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সে কোনো রকম ভাবে কাপা কন্ঠে বলল, "সরি কেনো বলছ। আমি বললাম না, এমনিতেই যাই নি।" 
       নদী আর কিছু বল না। চুপচাপ আলিফের হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। 

       "আলিফ, খেতে আয়।" রুদ্র ডাকলো।
       আলিফ আর নদী ঘরের ভেতর চলে গেলো। সবাই মিলে যা যা এনেছিলো সেই সব কিছু বের করে খাটের উপর সাজানো গুছানো।
       "তুই তো প্রেম করায় ব্যস্ত ছিলি। তাই আন্টির কাছ থেকে পেলেট চেয়ে সবকিছু সাজিয়ে ফেলেছি।" ইরিনা সবার সামনে সরাসরি কথাগুলো বলল। 
       আলিফ লজ্জার হাত থেকে বাঁচলো। কারণ সে জানে নদী বুঝতে পারেনি ইরিনা তাদের নিয়ে কথা বলেছে। বুঝতে পারলে তার অনেক লজ্জা লাগতো।
       ইরিনা কথা বলার সময় নদী তার ঠোঁটের দিকে ভাল করে তাকিয়ে ছিল। সে ঠোঁট পড়ার চেষ্টা করে অর্ধেক কথা বুঝেছে যে ইরিনা আসলে তাদের দুইজনের সম্পর্কে কথা বলেছে। নদী বুঝতে পেরেও তেমন কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করলো না। তাই কেউ সেদিকে লক্ষ করলো না। 

       সবাই নাস্তা করে আরো একদফা আড্ডা দিলো। সবাই ট্রুট এন্ড ডেয়ার খেললো। হাসি-তামাশায় পুরো সময়টা কেটে গেলো। অনেকদিন পর সবাই মিলে একটা ভালো সময় কাটলো। 

       তারা সবাই ডিনার করে ন'টার দিকে বেরিয়ে পড়লো। আলিফ এবং নদী সবাইকে এগিয়ে দিতে নিচ পর্যন্ত এলো। একে একে সবাই চলে গেলে নদী আর আলিফ নিচে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। 
       আলিফের দরজার সামনে এসে নদী বলল, "ধন্যবাদ।" 
       আলিফ জিজ্ঞেস করলো, "কীসের জন্য?"
       "আজকের জন্য। অনেক দিন পর সবার সাথে এতো সুন্দর কিছু সময় কাটালাম। আসলে আমার তো কোনো বন্ধুবান্ধব নেই। সারাজীবন একাই কেটেছে। তা-ই আজ সবার সাথে সময় কাটিয়ে ভালো লাগলো।" 
       "তুমি চাইলে মাঝেমধ্যে আমার ক্যাম্পাসে আসতে পারো। আমরা প্রায় সময় ক্লাস শেষ করে কড্ডা দেই। তুমি মাঝেমধ্যে যুক্ত হলে সবাই খুশিই হবে।"

       "ছাঁদে যাবে?" আলিফের সেই কথা উপেক্ষা করে নলী বলে।
       "এই সময়?" নদীর কথা শুনে আলিফ কিছুটা অবাক হয়।
       "হ্যাঁ, কোনো সমস্যা? আমাদের ছাঁদ তো সবসময় খোলাই থাকে।" 
       আলিফ কিছু সময় ভেবে বলল, "তোমার বাসায় যেতে দেরি হলে আন্টি কিছু বলবে না?"
       "না, আম্মুকে বলেই এসেছি তোমাদের বাসায় এসেছি।" 
       "আচ্ছ, তাহলে চলো যাই।" 

       তারা দুইজনে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে মস্ত বড়ো চাঁদ। চাঁদের আলোয় পুরো ছাঁদটা মৃদু আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। গাছের পাতায় চাঁদের আলো পড়ে প্রতিফলন হচ্ছে। নদীর সবকিছু ভীষণ ভালো লাগলো। আলিফের এই সময়টা নদীকে পাশে পেয়ে ভালো লাগছে। 

       তারা দুইজন পাশাপাশি অনেক সময় দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো সময় চুপচাপ, কোনো সময় দুই'একটা কথা বলতে বলতে দূরের চাঁদটাকে গভীর মনোভাব দিয়ে দেখলো। 

       "চাঁদটা কি ভীষণ সুন্দর, তাই না?" নদী বলল।
       "হ্যাঁ, ভীষণ সুন্দর।" আলিফ তার কথার সাথে একমত পোষণ করল। 

       "তোমাকেও আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে।" এবার আলিফ বলল।
       নদী হাসলো। সে বলল, "আমার মত কালো একটা মেয়েকে সুন্দর লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না।মিছেমিছি প্রশংসা করতে হবে না।"
       নদীর এরকম কথায় আলিফের মন খারাপ হলো। তার চোখে নদী মোটেও কালো নয়। তার দেখা সবচেয়ে সুন্দর তম মানুষ। 
       "অন্য মানুষের কাছে তুমি কেমন আমি জানিনা। তবে আমার কাছে তুমি সুন্দর। আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে, কাজল আর টিপটার কারণে।" আলিফ বলল।
       নদী দ্বিমত পোষন করল না। সে বলল, "টিপ কিংবা কাজল পরলেই কি বেশি সুন্দর লাগে?"
       "তোমাকে টিপে মানায়। সুন্দর লাগে।"
       "আচ্ছা, তাহলে দেখি টিপে তোমাকে কেমন লাগে।" নদী কথটা বলেই তার কপাল থেকে টিপটা উঠিয়ে আলিফের কপালে লাগিয়ে দিলো। তারপর সে বলল, "বাহ! তোমাকে তো ভীষণ সুন্দর লাগছে।" 
       আলিফ একগাল হাসি দিয়ে বলল, "ধন্যবাদ।"
        "ওয়েলকাম।" 
       "এই টিপ কিন্তু আমি আর দিচ্ছি না।" 
       "কেনো?" অবাক কন্ঠে নদী বলে।
       "আমাকে যেহেতু সুন্দর লাগছে, আমি মাঝেমধ্যে পরবো।" আলিফ কথা শেষ করে হাসলো।
       নদীও হাসলো। সে বলল, "আচ্ছা রেখে দেও।"
       "অনেক রাত হয়ে গেছে। চলো এবার বাসায় যাই।" আলিফ কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করলো।
       আলিফের হাত ধরে তাকে থামালো নদী।
       একমুহূর্তে নদীর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে বলল, "কি হয়েছে? কিছু বলবে?"
       "হ্যাঁ। তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার।"
       "তোমার সম্পর্কে?" 
       নদী মাথা নাড়ালো।
       "তাহলে দরকার নেই। পুরনো কথা বললে তোমার মন খারাপ হবে। তারপর বাচ্চাদের মত কান্নাকাটি করবে। সেটা দেখতে আমার ভালো লাগবে না।" 
       "তবুও কথাগুলো তোমাকে বলা দরকার।" 
       "কোনো দরকার নেই। আমি কিছু শুনতে চাই না।" 
       "তুমি এমন কেনো?" 
       "কেমন?"
       "এইযে এমন। এতো ভালো। আমি তোমাকে কখনো কোনো কষ্ট দিতে চাই না। তাই, কথাগুলো তোমাকে আগেই বলা উচিত।" 
       "আমাকে মন খারাপের কোনো কথা বলতে হবে না। আমি শুনতে চাই না।" আলিফ কথাটা বলে আবার হাঁটা শুরু করলো। 
       নদী দাঁড়িয়ে আছে। আলিফ আস্তে করে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ সে দৌড়ে গিয়ে আলিফকে পিছনে থেকে জড়িয়ে ধরলো। 
       আলিফ মুহুর্তে বরফের মত জমে গেলো। সে দাঁড়িয়ে রইলো। পিছনে ঘুরে তাকালো না। সে জানে, নদী এখন কান্না করছে। তার পরনের শার্টের পিছনের একটা আংশ ইতিমধ্যে ভিজে গেছে নদীর চোখের অশ্রুতে।
       আলিফের চোখ'টাও হঠাৎ ভাড়ী হয়ে উঠলো। গলার কাছে কিছু একটা এসে আটকে রইলো। সে ওই অবস্থায় রইলো। তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ এইভাবেই রইলো।

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#56
পর্ব:২১


        আলেয়া মারা গেছে৷ এই খবরটা রুদ্রের কাছে পৌছালো তার পরীক্ষার তিরিশ মিনিট আগে৷ সে ঘড়ি দেখলো, ইতিমধ্যে দশ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেছে। সময় এতো দ্রুত যাচ্ছে কেনো? রুদ্র সিন্ধান্ত নিতে পারছে না, সে কি করবে? বিশ মিনিট পরেই তার সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষাটা৷

        "রুদ্র, এই রুদ্র।" 
        ইরিনার ডাকে রুদ্র সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল, "হ্যাঁ, কিছু বলছিস?"
        "কি হয়েছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?" 
        "দাদী মারা গেছে।" কথাটা বলতে রুদ্রের বুক ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো। একটা তীব্র কষ্ট দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে আটকে রইলো।
        "কি বলিস?" ইরিনা প্রচন্ড অবাক হলো। সে মনে মনে বলল, "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন!" সে আবার বলল, "কখন মারা গেছে? হঠাৎ কীভাবে কি হলো?" 
         "আমি কিছু জানিনা। আম্মু কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানালো।" 
        "কি করবি এখন?"
        "বুঝতে পারছি না। একটু পরেই পরীক্ষা।" 
        "এটাই শেষ পরীক্ষা। আমার মনে হয় পরীক্ষাটা না দেওয়া বোকামি হবে। একটা বছর লস হয়ে যাবে।"
        "কিন্তু..!" রুদ্র আর কিছু বলতে পারলো না।
        "আমি জানি, আমি স্বার্থপরের মত কথা বলছি কিন্তু তুই-ই ভেবে দেখ। পরীক্ষাটা না দিলে, পুরো একটা বছর লস।" 
        "হ্যাঁ, সেটা অবশ্য ঠিক বলেছিস।" 
        "আমি কি বলেছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। তুই নিজে ভেবেচিন্তে সিন্ধান্ত নে কি করবি।" 
        "আমি-তো কিছুই ভাবতে পারছি না৷ বুকের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণাটা ক্রমশ বাড়ছে। কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে।" 
        "এভাবে ভেঙে পড়িস না। এই সময় শক্ত থাকতে হবে। তোকেই সবকিছু সামলাতে হবে।" 
        "হ্যাঁ, আমি জানি। কিন্তু এভাবে একটা মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। সেটা মেনে নেওয়া কি সহজ?" 
        "বড্ড কঠিন। তবে আমাদের মানিয়ে নিতে হয়। ভুলে যেতে হয়। মানুষ ভুলে যায়। সৃষ্টিকর্তা মানুষের মনে যেমন ভালোবাসা দিয়েছে, তেমন ভুলে যাওয়া ক্ষমতা দিয়েছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিয়েছে।" 
        "উঁহু।" রুদ্র আর কিছু বলল না।
        "তুই দ্রুত ভেবে দেখ। হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই। এছাড়া তুই চাইলে দুইঘন্টায় কোনো রকম পরীক্ষা দিয়ে চলে যেতে পারিস, যদি যাওয়াটা জরুরি হয়।"
        "আচ্ছা। তুই থাক আমি একটু আসছি।" 
        "কোথায় যাচ্ছিস?"
        "মা'কে একটা কল করবো। এছাড়া ওয়াশরুমে যাবো।" 
        "আচ্ছা, যা। কিন্তু প্লিজ, যতই কষ্ট হোক পরীক্ষাটা মিস দিস না। এই শেষ সময়ে এসে এভাবে মিস দেওয়া উচিত হবে না।" 
        "আচ্ছা।" বলে রুদ্র হেঁটে ওয়াশরুমের দিকে যেতে লাগল।

        "হ্যালো, রুদ্র।" জাহানারা ফোন রিসিভ করেই বলল।
        "হ্যাঁ, আম্মু। শুনতে পাচ্ছো?" রুদ্র বলল। 
        "হ্যাঁ, পাচ্ছি।"
        "আমার কি এখনোই আসতে হবে? যদি জরুরি না থাকে তাহলে পরীক্ষা শেষ করেই সোজা চলে আসছি।" কথাগুলো ভীষণ কষ্ট করে বলল রুদ্র।
        "সেটাই করো। আমিও ফোন দিয়ে তোকে খবরটা দেওয়ার পরে আমার খেয়াল এসেছে আজ তোর পরীক্ষা। পরে খারাপ লাগতেছিলো৷ তোকে ফোন দেওয়া উচিত হয় নি আমার। আসলে হুট করে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।" 
        "মা...!"
        "কি?"
        "একটু শান্ত হও। কিছু হয়নি। আমি কিছুক্ষণ পরেই আসছি৷ ততক্ষণ তুমি একটু একা হাতে সামলে নেও।" 
        "আচ্ছা।" জাহানারা এটুকু বলতে কান্না করে দিলো।
        "একটুও কান্না করবে না। আমি না আসা পর্যন্ত কাঁদবে না।" 
       জাহানারা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিতে নিতে বলল, "আচ্ছা। তুই ভালো করে পরীক্ষা শেষ কর।" 
        "আচ্ছা মা, রাখছি তাহলে। সময় নেই হাতে।" 
        "আচ্ছা।" জাহানারা ফোন কেটে দিলো। কিন্তু সে তার কথা রাখতে পারলো না। সে আবার কাঁদতে লাগল।

        পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। স্যার প্রশ্ন দিয়ে দিয়েছে। ক্লাসের সবাই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে প্রশ্ন দেখছে। কোন প্রশ্নটা আগে লিখবে সেটাই ভাবছে। সকলের মধ্যে একজন এখনো প্রশ্নের দিকে তাকায় নি। তার হাতে প্রশ্ন কিন্তু তার চোখ ক্লাসের দরজার দিকে। রুদ্র আসছে না বলে সে বিচলিত হচ্ছে। তার চিন্তা হচ্ছে। রুদ্র কি চলে গেলো? ইরিনা নানা সম্ভাবনার কথাই
 ভাবছে, তার মধ্যেই হাত মুখ ভেজা অবস্থায় রুদ্র দরজার সামনে এলে দাঁড়ালো। স্যার ইশারায় তাকে আসতে বললে সে ঢুকে তার সিটে গিয়ে বসলো। 
        ইরিনার উত্তরপত্র লেখার চেয়ে বেশি মনোযোগ রুদ্রের দিকে। সে খাতায় লিখছে, আর কিছুক্ষণ পরপর রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। রুদ্রকে খেয়াল করছে। রুদ্র ঠিক আছে কি-না এটা দেখছে।
        রুদ্রও লেখায় মনোযোগ দিতে পারছে না। বারবার তার মনোভাব এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। বাসার কি অবস্থা? সবাই কি পরিস্থিতিতে আছে? এই সব ভাবনাই তার মাথায় ঘুরেফিরে বারবার আসছে। 
        ইরিনাও কিছুক্ষণ পর পর রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে। তারও ভাল লাগছে না। রুদ্র ভাল নেই সেটা সে বুঝতে পারছে। তবুও এই পরিস্থিতিতে সে ভালই শক্ত রয়েছে।

        দুই ঘন্টা হলেই রুদ্র খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে এলো। সে যা লিখছে তাতে পাশ হয়ে যাবে। রেজাল্ট অবশ্য ভাল হবে না৷ কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা নিয়ে সে ভাবছে না।
        রুদ্র কোথাও সময় নষ্ট না করে বাসায় চলে এলো। বাসায় এসেই সে অনেক লোক দেখতে পেলো। মানুষ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সব মানুষের মধ্যে তার পরিচিত কিছু মুখ আছে৷ সে মানুষগুলো একদিন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। তাদের টেলে ফেলে দিয়েছিল রাস্তায়। তার বাবা মারা যাওয়ার পরের প্রতিটা দিন তার এখনো মনে আছে। সম্পত্তির লোভ মানুষকে কতটা পশুতে পরিণত করতে পারে সে সেই সবদিনে নিজের চোখে দেখেছে। সে সেই সব দিনের কথা ভাবতে চাচ্ছে না। সে কখনোই সেই সব দিনের কথা মনে করতে চায় না। কিন্তু আজকের সেই সব মানুষের মুখ তাকে মনে করতে বাধ্য করছে। 
        রুদ্র ভীড় ঢেলে তার মায়ের কাছে গেলো। তার মায়ের মুখ মলিন হয়ে আছে। চোখ ফুলে গেছে। তার বুঝতে বাকী রইলো না, এই মানুষটা কতটা কেঁদেছে। সে এটাও জানে এখন সবকিছু দ্রুত ঘটতে থাকবে। সেই সাথে অনেকে খাতা-কলম নিয়ে হিসাব করতে বসে যাবে। দুনিয়াতে মানুষ বড্ড লোভী।
        রুদ্র যা ভেবেছিল তাই হলো। সবকিছু দ্রুত ঘটতে লাগল। তার দাদীকে এম্বুলেন্স করে গ্রামে নেওয়া হলো। তারা এম্বুলেন্স গেলো। আত্মীয় স্বজনকে ফোনে জানানো হলো, যারা এখনো জানতো না। 
        সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে আলেয়াকে কবর দেওয়া হলো। তারপর শুরু হলো আসল হিসাবনিকাশ। তার ভাগের সম্পত্তির হিসাবনিকাশ। কিন্তু রুদ্ররা সেই সন্ধ্যার পরেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলো। তাদের এই ফিরে আসাতে সবাই অখুশি হলো। কিন্তু জাহানারা সেইসব কিছুরই তোয়াক্কা করলো না৷ সে কোনো ভাবে সেখানে থাকতে রাজি হলো না। সে বলে এলো, "আমি এই সব হিসাবনিকেশর মধ্যে নেই। আগেও ছিলাম না, এখনও নেই।" 

        পরীক্ষা শেষ হলেই ইরিনা সবাইকে খবরটা জানালো। বিকালের দিকে সবাই মিলে রুদ্রের বাড়ি এলেও তাকে পেলো না। ততক্ষণে রুদ্র তার দাদীকে নিয়ে গ্রামে দিকে রওনা করেছিল।
        রুদ্রের সাথে ইরিনার যোগাযোগ হলো রাতে। তখন রুদ্র বাসে। তারা ঢাকায় ফিরছে।
        "কেমন আছিস? আন্টি কেমন আছে? ইরিনা বলল।
        "ভাল আছি। আম্মুও এখন অনেকটা ভাল।" রুদ্র মিথ্যে করে বলল।
        "সত্যি ভালো আছিস তো?"
        "উঁহু।" 
        "কোথায় আছিস? বিকেলে আমরা সবাই তোর বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্তু ততক্ষণে তোরা চলে গিয়েছিলি। আশপাশের সবাই বলল, তোর দাদীকে নিয়ে গ্রামে গেছিস।"
        "হ্যাঁ, দাদীর ইচ্ছে ছিল গ্রামেই তাকে দাদার পাশে কবর দেওয়া হোক।" 
        "এখন কি গ্রামের বাড়ি?"
        "বাসে, ঢাকায় ফিরছি।"
        "আজই! কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে?"
        "ইরিনা?"
        "হ্যাঁ, বল।"
        "তোর সাথে পরে কথা বলি। এখন ভাল লাগছে না। একটু চোখ বুঝবো। মাথাটা ব্যথা করছে।" 
        "আচ্ছা। সাবধানে আসিস। আর আন্টির খেয়াল রাখিস।" 
        "আচ্ছা।" 

        আলের শোক সপ্তাহ খানেক মিলি, জাহানারা এবং রুদ্রকে আচ্ছন্ন করে রাখলো। তারপর ক্রমশ তারা সেই শোক থেকে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসতে শুরু করলো। মিলি আবার কলেজে যাওয়া শুরু করেছে। জাহানারা নিয়মিত অফিস যাচ্ছে। শুধু রুদ্রের কোনো কাজ নেই। ভার্সিটি আপাতত বন্ধ। সে সারাদিন ঘরে থাকে। কিন্তু হুটহাট তার প্রচন্ড খারাপ লাগে। কয়দিন আগেও এই ঘরে জলজ্যান্ত একটা মানুষ থাকতো। আজ সে নেই। কেউ কাশতে কাশতে তাকে এখন আর দাদু বলে ডাকে না। আলেয়ার কথা মনে পড়লেই রুদ্রের বুকের মধ্যে শূন্যতা ভরে উঠে। কী অদ্ভুত এক জীবন। সেই জীবন যখন-তখন এক নেনো সেকেন্ডের ব্যবধানে একদিন সমাপ্ত হবে। তারপর কি? রুদ্র আজ-কাল এইসব চিন্তা করে, তাকে ভাবায়। তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। 

        রুদ্রের একাকীত্ব দূর করতে হুট করেই আলিফের আগমন হয়। সে মাঝেমধ্যে আসে৷ আলিফের পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নি। তবুও আলিফ সময় করে এসে তার সাথে গল্প করে, আড্ডা দেয়। রুদ্রের এই সময়টা ভালো লাগে। তারা দুইজন সিগারেট টানতে টানতে তাদের জীবনে দুঃখ ভুলে যাওয়ার মিছেমিছি অভিনয় করে। দুনিয়াটা মাত্রই অভিনয় স্টেজ। আমাদের প্রত্যেকের যে কাজটা সেই কাজটাই আমরা করি। শুধু পার্থক্য এখানে আমরা বিবেকবুদ্ধি দিয়ে নিজেদের পথ নিজেরাই বেছে নেই। তারপর এগিয়ে চলি মৃত্যুর পথে। 

        সময় যেমন থেমে থাকে না। তেমন জীবনও থেমে থাকে না। আমরা যেমনই থাকি, জীবন জীবনের নিয়মে চলতে থাকে। আমাদের চলতে হয়। সেই ভাবে সবাই নিজেদের ব্যস্ততা নিয়ে আজকাল ব্যস্ত। ইরিনা একটা ব্যাংকে ইন্টার্নি করছে। ফাহিম থিসিস করবে বলেও সে একটা কর্পোরেট কোম্পানিতে আছে। সবাই যেটা ভেবেছিল সাত্যকির ব্যাপারে সেটাই সঠিক হয়েছে। সে জয়ের অফিসে জয়েন্ট করেছে। জয়ই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এদিকে রুদ্রের সবকিছু এলোমেলো। সে ইন্টার্নশিপ করার জন্য কোথাও তার সিভি জমা দেয় নি। শেষমেশ সে থিসিস পেপারের কাজ করছে। বর্তমানে এটা নিয়েই তার ব্যস্ততা, দৌড়াদৌড়ি। বলা যায়, সে তার দাদীর শোক কাটিয়ে উঠেছে। ব্যস্ততায় সে তরুকে কিছুটা সময় ভুলে থাকতে পারছে। সে ভাল আছে। আজকাল তার অতোটা মন খারাপ হয় না। অতোটা বিষাদ জমে না বুকের কোনে। তবুও কোথাও যেনো কেউ নেউ। ব্যস্ততা কমে এলে, রাত নেমে এলে, শূন্যতা নেমে আসে বুকের কোনে।

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#57
Lightbulb 
 পর্ব:২২




        "কেমন আছো?" রুদ্র ফোন রিসিভ করতেই রিয়া সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।
       "ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?" রুদ্র উত্তরে বলল।
       "আমিও ভালো আছি? কোথায় তুমি?"
       "আমিতো বাসায়। হঠাৎ এই প্রশ্ন?"
       "একটু নিচে আসবে?"
       "কেন?" রুদ্র জিজ্ঞেস করে পরক্ষণেই আবার বলল, "তুমি কি বাসার নিচে?"
       "উঁহু!"
       "এই সময় এখানে?"
       "এদিকে একটা কাজে এসেছিলাম।" রিয়া মিথ্যে করে বলল। সে আবার বলল, "এদিকে যেহেতু এসেছি, তাই ভাবলাম তোমাকে একটা কল দেই।"
       "ওহ, আচ্ছা৷ একটু অপেক্ষা করতে পারবে?"
       "হ্যাঁ, অবশ্যই। কেন পারবো না।" 
       "আচ্ছা, আমি আসছি।" কথাটা শেষ করেই রুদ্র ফোন কেটে দিলো। 

       রুদ্রের জন্য রিয়া তার বাসার নিচে অপেক্ষা করতে থাকলো। সে মূলত রুদ্রের সাথে দেখা করার জন্য এই সন্ধ্যায় এসেছে। অনেকদিন রুদ্রের সাথে তার দেখা হয় না। গতকাল থেকেই রুদ্রকে দেখার ভীষণ তীব্র ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু কীভাবে দেখা করবে সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছিল না। আজ দুপুরেই হঠাৎ সে সরাসরি এখানে আসার কথা ভাবতেই চলে আসে। তবে সে আসবে কি আসবে না সেই সিন্ধান্ত নিতে নিতে বিকাল হয়ে যায়। তবুও সে চলে এসেছে। রুদ্রকে দেখার ইচ্ছের কাছে সবকিছু মলিন হয়ে গেছে। সব যুক্তি তর্ক বাদ দিয়ে সে চলে এসেছে।

       "অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।" রুদ্র এসেই রিয়াকে বলল।
       "কোনো সমস্যা নেই।" রিয়া উত্তরে বলল।
       "কি কাজে এসেছিলে?"
       "একটা ফ্রেন্ডের কাছে এসেছিলাম।" রিয়া বলল।
       "কাজ শেষ?" 
       "উঁহু।" 
       "আচ্ছা, চলো। এদিকে যেহেতু এসেছ, এদিকে ভালো একটা কফি-শপ আছে। সেখানে বসে কফি খাই।" 
       "তুমি খাওয়াবে?"
       "হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদের এলাকায় এসেছ আমিই না-হয় ট্রিট দিলাম।" 
       "আচ্ছা, তাহলে চলো।" 

        তারা দুইজন মিনিট দশেক হাঁটার পরেই কফিশপে পৌঁছে গেলো। তারা কফি অর্ডার দিয়ে দুইজনে বসে আছে।

       "তারপর?" রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।
       "এইতো। তোমার?" রিয়া বলল।
       "চলে যাচ্ছে। ক্যাম্পাস নেই। পেপার নিয়ে টুকটাক ব্যস্ত আছি। তোমাদের-তো পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নি?"
       "হ্যাঁ। দুইটা পরীক্ষা আটকে আছে। একটা বিষয় নিয়ে ডিপার্টমেন্টের জুনিয়ররা আন্দোলন করছে। তাই আপাতত পরীক্ষা স্থগিত।" 
       "কবে হওয়ার সম্ভাবনা আছে?"
       "আজ শুনলাম আমাদের চেয়ারম্যান স্যার দাবী মেনে নিবে। খুব সম্ভবত পরের সপ্তাহে পরীক্ষার ডেট দিয়ে দিবে।"
       "তাহলে-তো ভালো।" 
       "হ্যাঁ, এই সামান্য সমস্যার কারণে দুইমাস পিছিয়ে গেলাম।" 
       "কি আর করা।" 
       "হ্যাঁ, তাও ঠিক।" 

       কফি চলে এলে তারা দুইজনে কফিতে চুমুক দিলো। প্রথম চুমুক দিয়ে রিয়া বলল, "কফিটা আসলেই ভালো।" 
       "হ্যাঁ, বলেছিলাম না।"
       "তাহলে এই কফি খাওয়ার জন্য এখানে প্রায়ই আসতে হবে।" রুদ্রের সাথে দেখা করার একটা কারণ পেয়ে রিয়া খুশি হলো। সে কথাটা এই কারণেই বলল।
       "অবশ্যই আসবে।" 
       "কিন্তু...!"
       "কিন্তু কি?" 
       "একা একা কি কফি খাওয়ার যায়।" 
       "একা খাবে কেনো? এদিকে এলে আমাকে কল দিও। আমি-তো আজকাল সারাক্ষণ বাসায়ই থাকি। আজ আমি খাওয়ালাম পরের দিন না-হয় তুমি ট্রিট দিও। আড্ডাও দেওয়া হয়ে যাবে।"
       রিয়ার মন চট করে ভাল হয়ে গেলো। সে মনে মনে এটাই চেয়েছিল। মাঝেমধ্যে রুদ্রকে দেখতে পেলে তার ভীষণ ভালো লাগে। এই সামান্যটুকুই সে চায়। এটুকু তার জন্য অনেক। সে বলল, "আচ্ছা, তাই-ই হবে।"
       "আচ্ছা।" 

       তারা আরও কিছুক্ষণ বসে আড্ডা দিলো। তারপর রিয়া চলে এলো বাসায়। তার মন আজ ভীষণ ভালো। এতোদিনের মনের মধ্যে জমে থাকা শূন্যতা আজ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। তার ভীষণ ভালো লাগছে।

       তারা আরেকদিন সএখানে বসে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিল। তখন রিয়া হঠাৎ বলল, "তরু কি আর কোনো চিঠি দিয়েছে?"
       "না, আর কোনো চিঠি আসে নি।" রুদ্র জানে তরু আর চিঠি দিবে না। সে শেষ চিঠিতে সেটা লিখেছিল।
       "তরুর ব্যাপারে আর কিছু জানতে পেরেছো?"
       হুট করে তরুর প্রসঙ্গ আসতেই রুদ্রের মুখ সামান্য মলিন হয়ে গেলো। সে বলল, "না, কোনো খোঁজ নেই। আশাই ছেড়ে দিয়েছি।"
       "এতো হতাশ হয়েও না!"
       "হতাশার কিছুই নেই। যা সত্য, যা বাস্তব সেটা আমাদের মেনে নেওয়া শিখতে হবে।"
       "তরুর আর খোঁজ করোনি?"
       "মাঝে একদিন গিয়েছিলাম তরুর ঠিকানায়। চায়ের দোকানদার আর এলাকার দুই-একজনকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু কেউ তেমন কিছু জানাতে পারে নি। আগে যতটুকু জেনেছিলাম, ততটুকুই।"
       "ওহ!" রিয়ার কন্ঠেও কেমন দুঃখের সুর।

       তারা দুইজনে বেশকিছু সময় চুপ রইলো। তারপর রুদ্র বলল, "আমি জানিনা রিয়া, তরুর সাথে আমার কখনো দেখা হবে কি না। দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না তাও জানিনা। কিন্তু আমি অপেক্ষা করবো। আমি শুধু একটিবার তরুর দেখা পেতে চাই। এরচেয়ে বেশি কিছুই চাই না।" 
       "তোমার চাওয়াটা পূর্ণ হবে।"
       "সত্যি বলছ?"
       "সত্য কি মিথ্যা আমি জানিনা। তবে আমি এটুকু বিশ্বাস করি, একটা মানুষ যদি মন থেকে কিছু চায়, তাহলে সে সেটা পায়।"
       "জানো রিয়া, তরুর ব্যাপারে ভাবলে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ভেবে পাইনা, মানুষটা কেমন? কতটা অদ্ভুত, কতটা সুন্দর। তারচেয়ে বড় ব্যাপার তরুর একটা গল্প আছে। সেই গল্পটা কি? কি হয়েছিল তার জীবনে? এই রকম নানা প্রশ্ন আমার ভেতর কৌতুহল জাগায়। এই সব কারণে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনা। জেগে থাকি। কোনো কোনো দিন কখন সকাল হয়ে যায় আমি জানিনা। আবার কোনো কোনো দিন চিঠিগুলো পড়তে পড়তে সকাল হয়ে যায়। আজকাল বড্ড ক্লান্ত লাগে। ভীষণ যন্ত্রণা হয়। আমি একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই রিয়া।"
       রিয়ার চোখ জলে ছলছল করছে। তার কেনো হঠাৎ কষ্ট হচ্ছে? সে বলল, "যদি তরুর কোনো খোঁজ না পাও তাহলে কতদিন এভাবে তাকে মনে রাখবে?"
       "সত্যি বলতে কি, আমিও চাই সবকিছু ভুলে যেতে। তরু কেউ না। তরুর কোনো অস্তিত্ব নেই। সে শুধু মাত্র আমার কল্পনা। কিন্তু আমি পারি না। আমি কিছুই পারি না। চিঠিগুলো ফেলে দিতে পারি না। এই যে তরুর দেওয়া হাতের ঘড়িটা সারাক্ষণ পরে থাকি, আমার কেবল মনে হয় তরুর আমার সাথেই আছে। আমাকে দূর থেকে দেখছে।" রুদ্র এটুকু বলে থাকলো। সে আবার বলল, "জানো, তরু কি বলেছে? বলেছে, আমাকে কষ্ট না পেতে। সবকিছু ভুলে এগিয়ে যেতে। কিন্তু সেটা আমি পারছি না।" 
       "তরু আর কি বলেছে?" রিয়া হঠাৎ তরুর ব্যাপারে আরো জানতে চাইলো।
       "তরু বলে, আমরা যেহেতু মানুষ হয়ে জন্মেছি, সেহেতু জীবনে দুই একটা ভুল ইচ্ছে করে করলে ক্ষতি নেই, করাই যায়! সেই জন্য আফসোস করতে হয় না। সে তার ভুলের জন্য কোন আফসোস করে না"
       "আমরা যেহেতু মানুষ হয়ে জন্মেছি, সেহেতু দুই একটা ভুল ইচ্ছে করে করা যায়।" এই কথাটা হঠাৎ রিয়ার মনে গেঁথে রইলো। তাহলে সে কি ইচ্ছে করেই রুদ্রকে ভালোবেসে ভুল করেছে? এই যে রুদ্রকে সে প্রতিনিয়ত ভালোবেসে যাচ্ছে, এটা কি তার ভুল না? সে-তো জানে, রুদ্র তাকে কখনো ভালোবাসবে না। তবুও সে রুদ্রকে ভালোবাসে। মন থেকে ভালোবাসে। তাকে মন থেকে চায়। সেই-ই একটু আগে বলেছে, মন থেকে কিছু চাইলে সেটা পাওয়া যায়। তাহলে সে কি রুদ্রকে পাবে? রিয়া আর কিছু ভাবতে পারে না। শুধু জানে, তার সামনে বসে থাকা মুখে খোচাখোচা দাঁড়ি, এলোমেলো লম্বা চুলের এই মানুষটাকে সে ভালোবাসে। তার জন্য এটুকুই চিরন্তন সত্য। সূর্য যেমন পূব দিকে উঠে এটা সত্য, তেমন করে সে এই মানুষটাকে ভালোবাসে।
       "কি ভাবছো?" রিয়াকে চুপচাপ দেখে রুদ্র জিজ্ঞেস করে।
       "তেমন কিছু না।" রিয়া বলে।
       "চলো এখন উঠি। অনেকটা সময় পেড়িয়ে গেছে। ভালো লাগলো তোমার সাথে আড্ডা দিয়ে। এখন নিজেকে কিছুটা হলেও হালকা লাগছে।" 
       "আমারও!"
       "তোমার কি?" রুদ্র বুঝতে না পেরে বলে।
       "তোমার সাথে আড্ডা দিয়ে আমারও খুব ভালো লেগেছে।" রিয়া বলে।

       তারা দুইজন বেড়িয়ে এলো। বাইরে তখন রাত। রিয়ার দিকে তাকিয়ে রুদ্র বলল, "তুমি কি সরাসরি বাসায় যাবে? তোমাকে রিকসা ঠিক করে দেই।"
       "একটা রিকোয়েস্ট রাখবে?"
       "কি?"
       "আমার সাথে রিকসায় কিছুক্ষণ ঘুরবে?"
       রুদ্র একটু ভেবে বলল, "কোথায় যাবে?"
       "কোথাও না। রিকসায় উঠবো, রিকসা যেদিকে যায়, সেদিকে যাবো। উদ্দেশ্যবিহীন ঘুরাঘুরি।"
       "আচ্ছা চলো।" 

       একটা রিকসা ঠিক করে তারা রাতের শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। রিকসায় উঠে তাদের মধ্যে তেমন একটা কথা হলো না। দুইজনই নিজস্ব ভাবনার ডুবে আছে। মানুষ দেখছে। তাদের ব্যস্ততা, ছুটে চলা। এতো কোলাহলের ভীড়ে নিজেকে কেনো এতো একা লাগে? এই প্রশ্নের উত্তর রিকসায় বসে থাকা মানুষ দুটোর কাছে নেই। তারা জানেও না কি তাদের ভবিষ্যৎ। জীবনের এই নানা গলির মায়াজালে নিজেকে আঁটকে ফেললে সঠিক পথ চিনে বেড়িয়ে আসা বড্ড কঠিন। বড্ড কঠিন!

       "তোমাকে আরেকটু রিকোয়েস্ট করবো!" নিরবতা ভেঙে রিয়া বলে উঠে।
       রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে রুদ্র জানতে চায় কি রিকোয়েস্ট। 
       রিয়া ঠিক ভেবে পায় না, রুদ্রকে কথাটা বলবে কি না। সে বলে, "না থাক। কিছু না।"
       রিয়ার এই রকম আচরণে রুদ্র খানিকটা অবাক হয়। সে বলে, "আরে বলো। কোনো সমস্যা নেই।" 
       রিয়া তবুও ভাবে। সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চায়। কিন্তু সেটা পারে না।
       রিয়ার হাতের উপর হাত রেখে আস্বস্ত করে রুদ্র বলে, "বলেই দেখো। যদি সম্ভব হয়, আমি অবশ্যই রাখবো।"
       রিয়া এবার খানিকটা ভরসা পায়। সে বলে, "তোমার মুখে তরুর নানা কথা শুনে, তরুর চিঠি পড়ার ভীষণ আগ্রহ হচ্ছে। যদি আমাকে কিছু চিঠি দেও, তাহলে আমি পড়ে আবার তোমাকে ফেরার দিয়ে দিবো।" 
       "এই ব্যাপার। কোনো সমস্যা নেই। নিও আমার কাছ থেকে। তবে..!" রুদ্র হঠাৎ থেমে যায়।
       "তবে কি?" রিয়া জানতে চায়।
       "শুধু তুমিও পড়ো। অন্য কাউকে চিঠির ব্যাপারে বলো না কিংবা দিও না।"
       "অন্য কাউকে কেনো দিবো। এটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আর চিঠিগুলো আমি ভীষণ যত্নে রাখবো।"
       "সেটা আমার বিশ্বাস আছে।" 
       "আচ্ছা, তাহলে দিচ্ছ তো?"
       "হ্যাঁ, পরের বার এদিকে এলে নিয়ো।"
       "অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।"
       "ধন্যবাদ দিতে হবে না। আসলে তরুর ব্যাপারে তুমি ছাড়া অন্য কেউ এতো কিছু জানেনা। তোমার সাথেই তরুকে নিয়ে নির্দ্বিধায় গল্প করতে পারি।" 
       রিয়া আর কিছু বলল না। হেসে রুদ্রকে বুঝালো সে কৃতজ্ঞ এবং অনেক খুশি।

       রিয়াকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিলো রুদ্র। রুদ্রকে বিদায় করে দিয়ে রিয়া রাস্তায়ই দাঁড়িয়ে রইল রুদ্রের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে। 

       রিয়া বাসায় ফিরে, ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসলো। পরশুদিনই তার শেষ পরীক্ষাটা। সে অনেকটা সময় ধরে বইতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারলো না। তার মাথার মধ্যে রুদ্রের বলা সেই কথাটা ভেসে উঠছে। "যেহেতু মানুষ হয়ে জন্মেছি, সেহেতু জীবনে কিছু ভুল ইচ্ছে করে করাই যায়।" হ্যাঁ, আসলেই আমরা কিছু ভুল ইচ্ছে করেই করি। আমরা জানি কাজটা ভুল, তবুও করি। কিন্তু কখনো সেই ভুলের জন্য আফসোস হয় না। তারও কখনো আফসোস হবে না, সে কেনো রুদ্রকে এতো ভালোবেসেছে। রুদ্র কেনো তাকে ভালোবাসে না। এইসব ব্যাপারে তার কখনো আফসোস হবে না। বরং সে রুদ্রকে ভালো না বাসলে তার আফসোস হতো, কেনো সে ভালোবাসে না? ভালোবাসা মানেই কি সবকিছু পাওয়া? ভালোবাসলেই কি সবকিছু পেতে হবে? রিয়া কাছে এই প্রশ্নের উত্তর সহজ। সে টেবিল থেকে উঠে খাটে শুয়ে পড়লো।
       শুয়ে, চোখ বন্ধ করে, রিয়া মনে মনে বলল, "আমি কখনও আফসোস করবো। আমি আফসোস করতে চাই না বলেই, আমি তোমাকে ভালোবাসি রুদ্র।" 
       
চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#58
পর্ব -২৩

  
        নদী বসে আছে। আলিফ দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে৷ সে একজনের সাথে কথা বলছে৷ সে ফিরে এলে নদী বলল, "কে ছিলো?"
        "এক বড় ভাই।"
        "ওহ আচ্ছা।"

        নদী আজ প্রথম আলিফের ক্যাম্পাসে এসেছে। আলিফ বহুবার অনুরোধ করার পর আজ নদী তার সাথে ক্যাম্পাসে আসতে রাজি হয়েছে। 
        এখন সন্ধ্যা। আলিফ অফিস শেষ করে নদীকে নিয়ে বের হয়েছিল। নদী আজ শাড়ি পরেছে। সেটাও অবশ্য আলিফের অনুরোধে।
        নদী আজকাল আলিফের অনুরোধ ফেলতে পারে না৷ প্রথমে সে রাজি না হলেও একটা সময় সে আর না বলতে পারে না। আলিফের কথা রাখতে নদীর ভালো লাগলেও সে সেটা মুখে প্রকাশ করে না। 
        নদী আজকাল ক্রমশ আলিফের প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে কোনো ভাবেই আঁটকাতে পারছে না। সে কখনোই চায় না আলিফের সাথে সিরিয়াস কোনো রিলেশনে যেতে। কিন্তু তার অনুভূতিগুলো সত্য। আলিফের প্রতি তার তীব্র একটা ভালো লাগা কাজ করে। এটা কি ভালোবাসা? মূলত আলিফের কেয়ারিং, তার প্রতি সততা, ভালোবাসা তাকেও ভালোবাসতে বাধ্য করছে। আলিফ এমন কেনো? নদী আর কিছু ভাবে না। সে কেবল ডুবে যায় অচেনা এক সমুদ্রের অতল গহ্বরে। সে কি এখান থেকে সাঁতরে পার হতে পারবে? কিন্তু তাকে জেগে উঠতেই হবে। যেভাবেই হোক সাঁতরে তাকে তীরে ফিরতে হবে। একই ভুল সে জীবনে দ্বিতীয়বার করতে চায় না। বরং এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি সে জানে। সবকিছু জেনেও সে ফিরতে পারছে না তীরে। কোনো এক মায়ার বাঁধনে সে আঁটকা পড়েছে।

        আলিফের ভালোবাসার গভীরতা এতোটা যে কেউ চাইলেও ডুবে যাওয়া থেকে নিজেকে আঁটকে রাখতে পারে না। নদীও পারছে না। কিন্তু এটাই তাদের দুইজনকে ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতে। 
        "কি ভাবছো?"
        আলিফের কথা শুনে নদী সম্বিত ফিরে পেলো। সে বলল, "তেমন কিছু না।" 
        "আমাকে বলবে না?"
        "বললাম তো, তেমন কিছু না।" 
        "আমি সেটাই শুনতে চাই।" আলিফ জোর গলায় বলে।
        "কি বলবো?" নদী হতাশ ভাবে বলে।
        "এখন যা ভাবছো সেটাই।"
        "আমাদের কথা ভাবছিলাম।" নদী আত্মসমর্পণ করে বলে।
        "আমাদের কথা!" আলিফ খুশি হয়ে নদীর কথাটা রিপিট করে। 
        "হ্যাঁ।" নদী বলে।
        "তা কি ভাবছিলে?" 
        "তেমন কিছু না।"
        "আবার বলছ তেমন কিছু না। আমাকে বলতে না চাইলে থাক। আমার সাথে কথা বলতে হবে না।" আলিফ অভিমান করে মন খারাপের কন্ঠে বলে।
        "মন খারাপ করছো কেনো?"
        "মন খারাপ করবো কেনো? আমি কে? এছাড়া মন খারাপ হবে বা কেনো?"
        "তুমিও না। একদম বাচ্চাদের মত জেদ করো।"
        "আমি-তো বাচ্চাই। এইটুকু।" আলিফ হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে।
        "হ্যাঁ, হয়েছে। তুমি একটা শিশু।"
        "তাই-তো। আচ্ছা এখন বলো কি ভাবছিলে?"
        "শুনলে, তোমার মন খারাপ হবে। শুধু শুধু আজ এই সুন্দর একটা দিনে মন খারাপের কথা বলে সময়টা নষ্ট করতে চাই না।" 
        "আচ্ছা, তাহলে থাক। এখন বলতে হবে না। কিন্তু পরে অবশ্যই শুনবো।" 
        "আচ্ছা।" 
        "লক্ষীমেয়ে।" আলিফ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে।
        "হয়েছে, এতো নেকামো করা লাগবে না।" 
        "করা লাগবে না?" এই বলে আলিফ আরেকটু নদীর কাছে সরে এসে বসে।
        "খবরদার, কাছে আসবে না। কাছে এলে আবার সেদিনের মত কিছু একটা করে বসবে।" নদী সামান্য সরে গিয়ে বলে।
        "কি করবে?" আলিফ দুষ্টু সুরে বলে।
        "সেবার ছাঁদে কি করতে গেছিলে মনে নেই?"
        "কই কিছুইতো করি-নি। কিছু করার আগেই আমাকে এমন ভাবে ধাক্কা দিলে আমি...!" এটুকু বলে আলিফ থামে। সে কপালে হাত দিয়ে দেখিয়ে আবার বলে, "এই দেখো, এখনো দাগ রয়ে গেছে।" 
        "ভালো হয়েছে। একদম ঠিক কাজ করেছি।"
        "তাই। আচ্ছা আবারও ঠিক কাজটাই করো। আমি কিছুই মনে করবো না।" এটা বলে আলিফ আবার নদীর আরো কাছে সরে আসে।
        নদী এবার সরে যায় না। সে আর কিছু বলেও না। আলিফের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে, দূরে একটা পাখি বসে আছে তার দিকে তাকায়। তার এই মুহুর্তটা ভালো লাগে। জীবনের অন্ধকার কানাগলির পথ ভুলে সে এই মুহুর্তটা উপভোগ করতে থাকে। তার কাছে জীবন সুন্দর মনে হয়। জীবন আসলেই সুন্দর। হাজারও দুঃখ কষ্টের ভীড়ে এই সামান্য আনন্দ, ভালো লাগার মুহূর্তগুলোই জীবনকে সুন্দর করে তোলে। বেঁচে থাকার আশা জোগায়। কিন্তু এই ভালো থাকার মুহুর্ত ক্ষনস্থায়ী। তবুও মানুষ বাঁচে, আশায় বাঁচে। হোপ ইস অ্যা গুড থিংকস!

        নদীর হাত ধরে আলিফ ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে হাঁটছিল। হঠাৎ ইরিনা আর ফাহিমের সাথে দেখা হয়ে গেলো তাদের। 
        "তোরা এখানে?" আলিফকে দেখেই ইরিনা বলল।
        "নদীকে ক্যাম্পাস দেখাতে নিয়ে এলাম। তোরা এখানে?" আলিফ উত্তর দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে।
        "অনেকদিন দেখা হয় না। আজ হঠাৎ ফাহিম বলল অফিস শেষে দেখা করার জন্য। তাই ক্যাম্পাসের দিকেই এলাম।" 
        "তারপর কি খবর তোর?" 
        "এইতো আছি। ব্যস্ততায় চলে যাচ্ছে। তোর কি খবর?" 
        "আমারও একই অবস্থা। ক্যাম্পাসের লাইফটা মিস করি ভীষণ। কতদিন যে একসাথে আড্ডা দেওয়া হয় না।" 
        "হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক। আগের মত আর সচারাচর একসাথে আড্ডা দেওয়া এখন হয়ে উঠবে না। ব্যস্ত লাইফে ঢুকে গেলে আর ফ্রি সময় পাওয়া যায় না। তারপর রুদ্রের কি খবর? রুদ্রতো ভুলেই গেছে সবাইকে।" 
        "ও আছে ওর মত। সারাদিন ঘরেই থাকে। মাঝেমধ্যে বের হয় তাও থিসিসের কাজে। অফ ডে ছাড়া আগের মত দেখা হয় না।"
        "হ্যাঁ, ওর সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। শুক্রবারে তো সবাই ফ্রি থাকি। চল, একদিন সবাই মিলে দেখা করি, আড্ডা দেই।"
        "হ্যাঁ, সেটা করা যায়। আচ্ছা, আমি রুদ্রকে বলবো। তারপর, ফাহিম তোর কি খবর?" 
        "সবার মতই। অফিস, কাজ, ব্যস্ততা, বসের ঝাড়ি শোনা। এইতো চলে যাচ্ছে সবকিছু।" ফাহিম বলে।

        ইরিনা নদীকে লক্ষ করে বলে, "কেমন আছো নদী?" ইরিনা ইশারায় বুঝাতে চেষ্টা করলো।
        আলিফ বলল, "নদী এখন আমাদের কথা বুঝতে পারে। ও এখন ঠোঁট দেখেই বুঝতে পারে আমরা কি বলি। ঠোঁট ডাবিং ল্যাঙ্গুয়েজ শিখেছে।"
        "বাহ, দারুণ তো।" ইরিনা অবাক হয়ে বলে।
        "আমি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?" নদী সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে বলে। নদীর বলা কথা আলিফ ট্রান্সফার করে ফাহিম এবং ইরিনাকে বলে।
        "আমরা সবাই ভালো আছি।" তাদের হয়ে উত্তর দেয় ইরিনা।
        "এখন কোথায় যাবি?" আলিফ বলে।
        "ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ দু'জনে হেঁটে বাসায় চলে যাবো। তোরা?" ফাহিম বলে।
        "আমরা বেশকিছু সময় হলো এসেছি।" আলিফ উত্তর দেয়।
        "চল, কোথাও বসে কিছু খাই।" ইরিনা বলে।
        আলিফ ভেবে বলে, "আচ্ছা চল, যাই। আবার কবে দেখা হবে কে জানে।"

        তারা চারজন ক্যাম্পাসের দক্ষিণ দিকে চলে আসে। এখানে কিছু টং দোকান, ফুসকা-চটপটি ছাড়াও বেশকিছু দোকান আছে। ফাঁকা একটা টেবিল দেখে তারা বসে।
        "নদী।" ইরিনা ডাকে।
        নদী মাথা নেড়ে সাড়া দেয়।
        "তুমি কি জানো? শাড়িতে তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগে।" 
        নদী মুচকি হাসে। সে বলে, "ধন্যবাদ।"
        "সত্যি। তোমাকে একদম পুরনো দিনের নায়কাদের মত লাগছে। আমি ছেলে হলে তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম।" ইরিনা হাসে।
         নদীর লজ্জা লাগে। সে আর কিছু বলে না।
        "আলিফ অনেক ভাগ্যবান যে তোমাকে পেয়েছে।" 
        আলিফ এবং নদী একে অন্যের দিকে তাকায়। আলিফ বলে, "ইরিনা, সেরকম কিছু না। আমরা ভালো বন্ধু।"
        নদী মাথা নেড়ে আলিফের কথায় সম্মতি প্রকাশ করে।
        "নিজেদের কেনো মিথ্যে বলছিস? তোদের চোখে একে অন্যের জন্য যে ভালোবাসা আছে সেটা কেনো মিথ্যে বলে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছিস?"
        "তুই ভুল বুঝতাছিস।" আলিফ বলে।
        "আমাকে আর বুঝাতে হবে না। আমি সবটা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি। শোন...!" ইরিনা এটুকু বলে থামে। সে আবার নদীকে উদ্দেশ্য করে বলে, "শোনো, আমি জানি তোমরা একে অন্যকে ভালোবাসো। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে কিংবা কি সমস্যা সেটা আমি জানিনা। আমি জানতেও চাচ্ছি না। কিন্তু শুধু এটুকুই বলতে পারি, আলিফের মত করে তোমাকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না। এই ভালোবাসাটা উপেক্ষা করো না। হেলায় হারিয়ে ফেলো না। এছাড়াও আমি জানি, তুমিও আলিফকে ভালোবাসো।" 
        নদী মনোযোগ দিয়ে ইরিনার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলিফও মনোযোগ দিয়ে ইরিনার কথাগুলো শুনে। তারা কেউ কথা বলে না। দুই-একবার একে অন্যের মুখের দিকে তাকায়। কিন্তু পরক্ষণেই লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।

        ইরিনা এবং ফাহিমকে বিদায় করে দিয়ে নদী এবং আলিফ আরও কিছুক্ষণ হাঁটলো। তারা নানা কথা বললেও ইরিনার বলা কথাগুলো উঠালো না। সেই বিষয়ে কেউ কাউকে কিছুই বলল না। তবুও তারা একে অন্যের মনের কথা, অনুভূতি, ভালোবাসা বুঝে নিলো রাতের ল্যাম্পপোস্টের নিয়নের আলোয়। কোনো একটা পাখি তার কন্ঠে সুর তুলে তাদের কথা একে অন্যকে বলে দিলো। এভাবে তারা একে অন্যের আরও কিছুটা কাছে চলে এলো, নিজেদের অজান্তেই। ভালোবাসা এমনই। ভালোবাসা এলে আমরা সেটাকে শত চেষ্টা করেও উপেক্ষা করতে পারি না। শুধু ভালোবাসার গভীরে ডুবে যেতে থাকি।

        নদী রিকসায় বসে আছে। তার পাশে আলিফ। রিকসার হুট তোলা। বাইরে অন্ধকার। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলো আর ছুটে চলে গাড়ির হেডলাইটের আলো ছাড়া অন্ধকারই। 
        নদীর মুখের সামনে কিছু চুল উড়ে এলো বাতাসে। আলিফ সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ করলো। সে হঠাৎ হাত বাড়িয়ে চুলগুলো নদীর কানে কাছে গুজে দিলো। নদী আলিফের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে পড়লো। কিন্তু সে কিছু বলল না। তার অবশ্য ভালো লাগলো। বুকের মধ্যে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলেও সে সেটা ভাল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করল। কিন্তু বাতাস আবারও চুলগুলো উড়িয়ে এনে মুখের উপর ফেলল। আলিফ এবারও আলতো করে চুলগুলো ছুঁয়ে সরিয়ে দিলো। এবার সে আগের মত দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো না। 
        নদী তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। লজ্জায় আলিফের দিকে তাকাতে পারছে না। আলিফের স্পর্শে এতোটা মমতা, ভালোবাসা কেনো? নদীর রাতের অন্ধকারে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেলো না।

        আলিফ বসে আছে নদীর বা পাশে। নদীর ঘড়টা ঢেকে আছে চুলে। আলিফ আরো কিছুটা সরে নদীর কাছে আসার চেষ্টা করলো কিন্তু ছোট্ট রিকসার ভেতর তারা এমনিতেই অনেকটা কাছাকাছি ছিল তাই তেমন লাভ হলো না। নদীর খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। আলিফ নদীর ঘাড়টা উন্মুক্ত করে দিলো, ঘাড়ের কাছে থাকা চুলগুলো পিছনে সরিয়ে দিয়ে। তারপর সে তার অধর নামিয়ে আনলো নদীর ঘারে। 
        নদী কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। আলিফকে বাঁধা দিলো না। সে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত ঝড় শুরু হয়েছে। সে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। তার শরীর কাপছে। 
        আলিফের অধর নদীর ঘাড় স্পর্শ করতেই সে সরে এলো। সে নিজেকে সংবরণ করলো। নিজের আবেগ, ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখে সে যতটা পারে সরে এসে বসল। কিন্তু তার মন নদীকে আরো কাছাকাছি চাচ্ছে। কিন্তু সে তার মনের কথা উপেক্ষা করলো।
        নদীর বিরক্ত লাগছে। কেনো লাগছে সে জানেনা। তার মন কি আরো কিছু চাচ্ছে? আলিফ এভাবে সরে যাওয়াতে তার রাগ হচ্ছে। আলিফ এমন কেনো? যখন কাছে আসা দরকার নেই, তখন কাছে আসে। আর এখন তার মন তাকে কাছে যাচ্ছে কিন্তু সে দূরে সরে যাচ্ছে। নদীর রাগ হলো। তার মুখ মলিন হয়ে উঠলো। সে আলিফকে আর কিছু বলল না। আলিফের কোনো কথার উত্তর দিলো না। এই মুহুর্তে তার প্রচন্ড রাগ লাগছে। 
        নদীর মুখ মলিন, নদী রাগ করেছে দেখে আলিফ হতাশ হলো। সে বলল, "আমি কি কোনো ভুল করেছি? সরি। আমি আর এমন কিছু কখনোই করবো না। এই তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি।"
        আলিফ নদীর হাতের উপর হাত রেখেছিল। নদী সেই হাত সড়িয়ে দিলো। আলিফের কথা শুনে তার রাগ আরো বেড়ে গেলো। আলিফ কেনো কিছু বুঝে না? নদী কিছু বলল না। সে মুখ ভাড় করে বসে রইল।
        আলিফের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। সে কি কোনো ভুল করেছে? নদী এভাবে রাগ করেছে কেনো? নদীকে ওভাবে দেখে সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। তার করণী কি? সে কয়েকবার নদীকে ডাকলেও নদী সাড়া দেয় নি। সে সরি বললেও নদী কোনো কিছু বলেনি রবং তার রাগ বেড়েছে। আলিফের হাসফাস লাগছে। নদীর হঠাৎ কি হলো? সে সবসময় ভুল করে কেনো? আলিফেরও মন খারাপ হলো। ঠিক তখন দূরের আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠল।

        তারা পৌঁছানোর আগেই আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি নামল। রাতের আকাশে কতটা মেঘ জমেছিল সেটা বোঝা যায় নি, বৃষ্টি আসার আগে। রিকসাওয়ালা বৃষ্টি এলেই একটা পলিথিন বের করে তাদের দিয়েছে। সেটার দুই মাথা দুইজন ধরে আছে। কিন্তু যেমন বৃষ্টি তেমন বাতাস। পলিথিন বারবার উড়ে যাচ্ছে। বাতাসের কারণে বৃষ্টির গতিপথ ঠিক থাকছে না। অল্প-অল্প করে বৃষ্টি তাদের ভেজাচ্ছে। রিকসাওয়ালা ইতিমধ্যে ভিজে একাকার। তবুও সে ক্রমশ রিকসা টেনে যাচ্ছে। ভেজা রাস্তা দিয়ে রকেট গতির মত তাদের রিকসা ছুটে চলছে। বৃষ্টি আসার আগে রিকসার যতটা গতি ছিল, এখন তারচেয়ে দ্বিগুণ।

        আলিফ আবার নদীর হাতে উপর হাত রাখলো। নদী এবার ফিরে তাকালো। তবে তার চাহনি দেখে আলিফ যা বলতে চেয়েছিল তা বলতে পারলো না। শুধু ব্যর্থ একটা চেষ্টা করলো।

        নদীরা যখন পৌছালো তখন বৃষ্টির গতি সর্বোচ্চ। শহরে এতোটা বৃষ্টি শেষ কবে হয়েছে ঠিক জানা নেই। আজ মনে হয় শহর ডুবিয়ে দিবে, সেরকম লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি দেখে। 
        রিকসাওয়ালা অবশ্য বলল, "আপনারা চাইলে রিকসায় বসে বৃষ্টি কমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন।"
        নদী তা শুনলো না। সে নেমে গেলো বৃষ্টির মধ্যে। তারপর দৌড়ে গেট দিয়ে ঢুলে গেলো ভেতরে।
        আলিফ রিকসার ভাড়া মিটিয়ে, সেও দৌড়ে চলে এলো ভেতরে। সে ভেবেছিল নদী রাগ করে তাকে কিছু না বলেই চলে যাবে বাসায়। কিন্তু নদীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে যেমন খুশি হলো, তেমন কিছুটা অবাক হলো। নদী তাহলে রাগ করে নেই। আলিফ মনে মনে ভাবলো।

        দৌড়ে ভেতরে আসতে যতটা সময় লেগেছে তারা ততটুকুই ভিজেছে তারা। বলতে গেলে সামান্য।
        আলিফ হেঁটে এসে নদীর পাশে দাঁড়ালো। চুলগুলোতে জমে থাকা বৃষ্টিটুকু নদী হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছে। নদীকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। চুলগুলো সামান্য ভেজা, মুখে বিন্দু বিন্দু পানি, পরনের শাড়িটাও বৃষ্টির সেচে এখানে সেখানে ভিজে গেছে। নদী শাড়ির আচল দিয়ে হঠাৎ তার মুখটা মুঁছতে থাকল। আলিফ সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বাইরের ঝড়ের চেয়ে তীব্র একটা ঝড় তার বুকের ভেতর শুরু হলো। সে ক্রমশ এলোমেলো হয়ে যেতে থাকলো। আলিফের চোখদুটো হঠাৎ নদীর কোমরে স্থির হয়ে রইলো। সে সবকিছু ভুলে নেশাগ্রস্ত হয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে। 
        আলিফ কোমরের থেকে চোখ সরিয়ে নদীর দিকে তাকাতেই দেখলো নদী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আলিফ লজ্জিত বোধ করলো এবং সেটা তার মুখে ফুটে উঠলো। সে কিছু বলতে যাবে এই মুহুর্তে নদী সিঁড়ি বাইতে শুরু করলো। আলিফও নদীকে অনুসরণ করলো। 

        তারা এখন দাঁড়িয়ে আছে আলিফের বাসার দরজার সামনে। আলিফ ইতিমধ্যে একবার বিদায় নিয়েছে কিন্তু নদী কিছু বলেনি বলে সে দ্বিধায় আছে সে কলিংবেল চাপবে কি-না। নদী কি তাকে কিছু বলতে চায়? নদী চলেও যাচ্ছে না, কিছু বলছেও না। আলিফের আজ সবকিছু কেমন উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। সে কি ভাবছে, কি করছে, তার কিছুই ঠিক নেই।
        নদী একই ভাবে আলিফকে আরও কিছুসময় কৌতুহলের মধ্যে রেখে দাঁড়িয়ে রইল। সে দেখতে চাচ্ছে আলিফ কি করে। 
        আলিফ যখনই কলিংবেল চাপতে যাবে ওমনি নদী তার হাত ধরে তাকে থামালো। তারপর তাকে কিছু না বলে টেনে নিয়ে গেলো ছাঁদে। দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে নদী বলল, "চলো ভিজি।"
        নদীর কথায় আলিফ প্রচন্ড শক খেলো। সে বিশ্বাস করতে পারছে না, নদী এমন কিছু তাকে বলেছে। সে কৌতুহল হয়ে বলল, "এখন ভিজবে?"
        "হ্যাঁ, কেনো কোনো সমস্যা? আমার কোনো সমস্যা নেই। যদি তোমার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তুমি চলে যেতে পারো।" নদী কাটাকাটা শব্দে বলল। 
        "আমার কোনো সমস্যা নেই।"
        "আচ্ছা তাহলে ফোন মানিব্যাগ এখানে রেখে চলো ছাঁদের ভেতরে যাই।"

        নদী আনন্দে ভিজতে লাগল। চারদিকে একদম অন্ধকার। বিদ্যুৎ নেই বোঝাই যাচ্ছে। ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ চলে গেছে। তবুও আবছা একটা আলো চারদিকে ছড়িয়ে আছে। স্পষ্ট না দেখা গেলেও সবকিছু বোঝা যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় অন্ধকারে থাকলে ধীরে ধীরে আন্ধকারের ঘনত্ব ক্রমশ কমতে থাকে। আন্ধকারের মধ্যেও মানুষ দেখতে পায়।

        আলিফ চুপচাপ ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। নদী মনের আনন্দে ভিজছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে বৃষ্টিকে। বৃষ্টি ক্রমশ নদীর সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকালে নদীকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে আলিফ। এই মানুষটা এতো সুন্দর কেনো? সে মনে মনে নিজেকে প্রশ্নটা করলেও এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলো না। সে জানে, এই প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।
        নদীর বৃষ্টি বিলাস শেষ হলে সে আলিফের পাশে এসে দাঁড়ালো। তারা দুইজন পাশাপাশি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। নদী বলল, "এভাবে পাথরের মত হয়ে আছো কেনো?"
        অন্ধকারের মধ্যেও নদীর সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে, হাত নেড়ে বলা কথাটা বুঝতে সমস্যা হলো না আলিফের। কারণ এখনে অতোটাও অন্ধকার না। 
        আলিফকে চুপ থাকতে দেখে নদী আবার বলল, "কি হলো?" 
        নদী জোর করে আলিফকে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো ছাঁদের মাঝে। কিন্তু আলিফ হঠাৎ থেমে গেলো। নদীও থেমে গেলো। তখন আলিফ নদীকে টেনে কাছে টেনে আনলো। নদীও বাধ্য মেয়ের মত চলে এলো আলিফের কাছে। তারা দুইজনই ভিজে জবজব।
        নদীকে মন ভরে দেখলো আলিফ। তার ভেজা মুখমণ্ডলের মধ্যে অদ্ভুত একটা মায়া এসে জড় হয়েছে। কিছু অবাধ্য ভেজা চুল মুখে উপর জাপ্টে আছে। আলিফ হাত বাড়িয়ে সেই চুলগুলো সরিয়ে দিলো। তারপর নদীর মুখটা দুই হাত দিয়ে আলতো করে ধরলো। ভেজা চোখ দু'টো ছুঁয়ে দিলো। ভেজা ঠোঁটের উপর হাত বুলালো। তারপর নদীকে চমকে দিয়ে সে বলল, "ভালোবাসি!" 
        আলিফের ঠোঁট দেখেই নদী বুঝলো আলিফ কি বলেছে। সেও ঠোঁট নেড়ে ভালোবাসি বলতে চাইলো কিন্তু তার গলার ভেতর দিয়ে কোনো শব্দ বেরুলো না। তখনই তার প্রচন্ড কষ্ট হলো। সে কখনোই তার কন্ঠে আলিফকে বলতে পারবে না সেও তাকে ভালোবাসে। প্রচন্ড ভালোবাসে।
        নদী কান্না করছে। তার চোখের অশ্রু আকাশের অশ্রুতে মিশে একাকার। আলিফ কি বুঝছে, সে যে কান্না করছে? কিন্তু কেনো সে কান্না করছে? তার জীবনটা অন্য পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক না, সে সেটা জানে। তবুও তার কেনো কষ্ট হয়? তার কেনো ইচ্ছে করে, সে যাকে ভালোবাসে তাকে চিৎকার করে সেই কথাটা বলতে? আলিফ যেভাবে তাকে বলেছে, সেভাবেই তাকে বলতে।
        নদী বিভিন্ন এলোমেলো কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ আলিফের ঠোঁট সে তার ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিলো। 
        আলিফের একমুহূর্তের জন্য মনে হলো সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। সে নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে। সে এখনই অক্সিজেনের শূন্যতায় মারা যাবে। সে সত্যি ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে তবে সেটা অক্সিজেনের অভাবে না। ভালোবাসার অভাবে। কিংবা অন্য কিছুর অভাবে, ঠিক কিসের অভাবে এই মুহুর্তে তার জানা নেই। সে আর কিছু ভাবতে চায় না। সেও হঠাৎ তার অধর নামিয়ে আনলো নদীর ঠোঁটে।

        এই অন্ধকারে, বৃষ্টির মধ্যে, তারা একে অন্যের দুঃখ শুষে নিতে লাগলো। একে অন্যকে ভালোবাসায় ডুবিয়ে দিতে থাকলো। শুধু তারা বিহীন আকাশ সেটার সাক্ষী হয়ে রইল।

        অন্য কোথাও অন্য দুটি মানুষও নদী এবং আলিফের মত একে অন্যের প্রেমে ডুবে রইল। ইরিনা এবং ফাহিমও আজ ভিজছে। একে অন্যকে ভালোবাসছে।

        এই একই বৃষ্টিতে অন্য কেউ তার কষ্ট লুকিয়ে ফেলতে ব্যস্ত। রুদ্র তার চোখের অশ্রু বৃষ্টিকে উপহার দিচ্ছে। কিন্তু তার সেই সামান্য লবনাক্ত চোখের পানিটুকু কি বৃষ্টি মনে রাখবে?

        অন্য দিকে বেলকনি দিয়ে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিচ্ছে রিয়া। সে বৃষ্টির মাধ্যমে রুদ্রকে ছুঁয়ে দিতে চাচ্ছে। এই মুহুর্তে রুদ্রকে বৃষ্টি এসে ছুঁয়ে দিলে, রুদ্র কি বুঝবে, সে তাকে ছুঁয়ে দিয়েছে? রিয়া জানেনা, তবুও সে এই আশায় বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিতে থাকল।

        এই একই বৃষ্টিতে হাজারো মানুষের গল্প জমা হচ্ছে। প্রতিটা গল্প ভিন্ন, একটা থেকে অন্যটা আলাদা। প্রতিটা মানুষের অনুভূতি ভিন্ন এবং আলাদা। কেউ ভালোবেসে ছুঁয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি। কেউ ভালোবাসার মানুষকে ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ছুঁয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি। কেউ-বা লুকাচ্ছে চোখের অশ্রু। কেউ-বা দুঃখগুলো ভেজাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে বৃষ্টি। কেউ-বা একে অন্যকে ভালোবাসার সাগরে ডুবিয়ে দিতে ভিজছে বৃষ্টিতে।

চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply
#59
পর্ব -২৪


আমি তোমাকে চেয়েছি,
সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে।
আমি তোমাকে চেয়েছি,
মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে। 

আমি তোমাকে চেয়েছি,
আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে।  
আমি শুধু তোমাকে চেয়েছি,
আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে!  

আমি তোমাকে চেয়েছি, 
আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে। 
আমি শুধুই তোমাকে চেয়েছি, 
আমার সকল ভালোবাসাতে! 

রুদ্র, 
তোকে কখনো বলিনি, আমি কেমন আছি। আমি কেমন আছি সেটা অবশ্য বলার দরকার পরে না। আমি নিশ্চিত, আমার চিঠি পড়ে তুই বুঝে যাস আমি কেমন থাকি, কেমন আছি, কেমন থাকবো? তবে আজ আমি ভালো আছি। প্রচন্ড রকম ভালো আছি। ভালো থাকার কারণ কি জানিস? আজ আমার মন ভালো। ভীষণ রকম ভালো। সেটা অবশ্য তোর জন্যই। হঠাৎ আজ পুরনো ডায়রিটা খুলতেই একটা পুরনো চিরকুট পাই। সেখানে গোটাগোটা অক্ষরে তোর হাতের লেখায় উপরের লাইনগুলো লেখা ছিল। 

রুদ্র, তোর কি সেদিনের কথা মনে আছে? যেদিন আমি তোকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তার পরের দিন তুই আমার হাতে গুজে দিয়েছিলি একটা নীলরঙা চিরকুট। তখন সেই চিরকুট আমি রেগে ফেলে দিয়েছিলাম রাস্তায়। তারপর তুই চলে যেতেই আমি আবার কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। কি ভেবে কুড়িয়ে নিয়েছিলাম তখন বুঝিনি। এখন জানি, আসলে তোর মত একটা ইডিয়টকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কেনো ভালোবাসলাম তোকে? পৃথিবীতে এতো এতো মানুষ থাকতে তোকেই কেনো ভালোবাসতে গেলাম? তুই-বা আমাকেই কেনো ভালোবাসলি? এই সব কথা ভেবেছিস কখনো? আচ্ছা, এই সব কথা বাদ দিয়ে আজকের কথা বলি। আজ হঠাৎ চিরকুটটা পেয়েই সেই পুরনোদিনের স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। সেই সব দিন ছিলো বৈচিত্রময়, ছিলো ভালোবাসায় মুড়ানো এক একটা দিন। 

রুদ্র,
আজ আমি চিরকুটের লেখাটা আমি ভীষণ ভাবে অনুভব কর‍তে পারছি। আজকে চিরকুটটা পড়ে যতটা অনুভব করতে পেরেছি, তখন এতোটা পারিনি। কি সুন্দর করেই না তুই বলেছিস; তোমাকে চাই, সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে। তোমাকে চাই, মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে। কত সহজ দুইটা লাইন কিন্তু যতটা সহজ সরল ততটা কি? সকাল ছাড়া যেমন দুপুরের অস্তিত্ব নেই, দুপুর ছাড়া রাত্রীর, রাত ছাড়া সকালে, মেঘ ছাড়া বৃষ্টির, আমাকে ছাড়া তোর। তারপর বলেছিস; তোমাকে চাই, আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে। আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে! আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে। আমার সকল ভালোবাসাতে! আমাকে কি করে তুই এতোটা ভালোবাসলি, যে আমাকে ছাড়া তোর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না? আমি আসলেই বোকা। আমি তোর ভালোবাসার মূল্য দিতে পারি নি! 

রুদ্র, আজ কোনো মন খারাপের কথা বলবো না। চিঠি জুড়ে আজ শুধু ভালোবাসার কথাই হোক, ক্ষতি কি? ভালোবাসার কথা এলেই, কি মনে পড়ে জানিস? মনে পড়ে, সেই সব দিনের কথা। একটা পাগল প্রেমিক, আর একটা পাগলী প্রেমিকা, শহর জুড়ে কি সব কান্ড টা-ই না ঘটাচ্ছিল।  

এই মুহুর্তে আমার চিঠি পড়ে তোর ঠিক কোন ঘটনার কথা মনে পড়ছে? যদি আমাকে জিজ্ঞেস করিস, তাহলে আমি বলবো যেদিন ভ্যানের পিছে বসে শহর ঘুরেছিলাম, সেদিনের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। সেবার কি কান্ড ঘটিয়েছিলি তুই, মনে আছে তোর? আমরা-তো সবসময় রিকসায় ঘুরি। সেবার ঠিক করলাম ভ্যান গাড়িতে করে শহর ঘুরবো। তারপর দুইজনে একটা ভ্যান ঠিক করলাম। কিন্তু ভ্যান চালক বলল, সামনে খালি রেখে পিছে বসা যাবে না। তখন বহুকষ্টে ছোট্ট দুইটা ছেলেকে নিয়ে এসে ওদের সামনে বসিয়ে আমরা দুইজন বসলাম পিছে। তারপর ঘুরে বেড়ালাম শহরের অলিগলির পথ ধরে অজানা গন্তব্যে। তখন প্রায় সন্ধ্যা ছিলো। আকাশে তখনও দিনের শেষ আলোটুকু রয়ে গেছে। হঠাৎ তুই আমার আরেকটু কাছে সরে এলি। তারপর যেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখলি তুই, ওমনি রাস্তা দিয়ে উল্টোদিকে যাওয়া দুইটা ছেলে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে। আমার তখন ভীষণ লজ্জা লাগছিল। আমি হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলাম। তোর দিকেও তাকাতে পারছিলাম। তুইও না, হুটহাট কি করিস নিজেই বুঝিস না। আস্ত একটা পাগল।

রুদ্র, এখন আর কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে না। এখন আমি ডুব দিবো আমাদের স্মৃতিতে। তারপর হারিয়ে যাবো এই পৃথিবী থেকে বহুদূরে অন্য এক জগতে। যাওয়া আগে হঠাৎ দেখা কবিতার মত করে তোকে আজ বলতে ইচ্ছে করছে, "আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে- কিছুই কি নেই বাকি?" নাকি, "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে৷" 

ইতি তরু। 

        রিয়া চিঠিটা পড়া শেষ করে চোখ বন্ধ করলো। সে সকাল থেকে তরুর চিঠি পড়ে যাচ্ছে। গতকাল রুদ্রের সাথে দেখা করতে গেলে, সে তাকে তরুর লেখা পাঁচটা চিঠি দিয়েছে। রিয়া-ই আগেরবার বায়না ধরেছিল, তরুর চিঠি পড়বে। সে প্রথমে ভেবেছিল রুদ্র আপত্তি করবে। কিন্তু তার এক কথায় রুদ্র রাজি হয়ে যাওয়াতে রিয়া খানিকটা অবাক হয়েছিলো। 

        দীর্ঘ সময় চোখ বন্ধ করে থেকে অবশেষে রিয়া চোখ খুললো। সে বুকের মধ্যে কেমন অদ্ভুত একটা কষ্ট অনুভব করছে। সেটা কার জন্য সে বুঝে উঠতে পারছে না। এছাড়াও তার মনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। সে যতটুকু জানে, রুদ্রের সাথে তরুর কখনো দেখা হয় নি। তাহলে তরুর চিঠিগুলোতে সে কোন রুদ্রের কথা বারবার বলেছে। তরু কোন রুদ্রকে ভালোবাসে? রুদ্রকে প্রশ্নগুলো করলে সে কি মনে করবে। সে সবসময় দেখেছে, তরুর প্রসঙ্গ এলেই রুদ্রের মন খারাপ হয়ে যায়।

        রিয়া চিঠিগুলো ভাজ করে সুন্দর ভাবে রেখে দিলো। চিঠিগুলো রুদ্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু সে ফিরিয়ে দেওয়া আগে আরেকবার চিঠিগুলো পড়বে। এতো সুন্দর করে কীভাবে মানুষ চিঠি লিখে? তরুর চিঠিগুলো আসলেই ভীষণ সুন্দর। যে-ই পড়ুক না কেনো, চিঠিগুলো পড়ার পরে তরুর প্রতি অজান্তেই একটা মায়া জন্মে যাবে। রিয়ারও মায়া লাগছে তরুর জন্য। সেও কৌতুহল বোধ করছে। এতোদিন সে শুধু রুদ্রের মুখে তরুর কথা শুনেছে। আজ তরুর নিজের কথা চিঠিতে পড়ে মেয়েটার প্রতি তার ভীষণ মায়া হচ্ছে। তার ও ইচ্ছে করছে তরুকে একবার দেখতে। তার সাথে কথা বলতে। তার গল্পটা জানতে। 
        রিয়ার এই প্রথম মনে হলো, রুদ্রকে দোষ দেওয়া যায় না। রুদ্রের জায়গায় অন্য কেউ হলে সেও তরুর খোঁজ করতো। তার নিজেরই এখন তরুর সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা অদ্ভুত। আজকাল সময়ে এই রকম মানুষ আছে তার ভাবতেই অবাক লাগছে। কিন্তু আসলেই আছে। এতো এতো মানুষের ভীড়েও কিছু মানুষ আছে যারা ভালোবাসতে পারে। কিন্তু এতো ভালোবেসে কেনো তরুর প্রতিটা চিঠিতে বিচ্ছেদের করুন সুর? রিয়ার মাথায় এলোমেলো হাজারও ভাবনা এসে জড় হচ্ছে একে একে। সে আর কিছু ভাবতে চাচ্ছে না, তবুও তরুর চিঠিগুলো বারবার তাকে ভাবতে বাধ্য করছে। তরুর কথা, রুদ্রের কথা, সে ক্রমাগত ভেবে যাচ্ছে। 

        রিয়া তার পরের দিনই রুদ্রের সাথে দেখা করলো। সে নিজের কৌতুহল নিজের ভেতর চেপে রাখতে পারলো না। 

        "একটা প্রশ্ন আছে?" রিয়া বলল।
        "একটাই?" রুদ্র জিজ্ঞেস করলো। 
        "আসলে...! রিয়া কথা শেষ করতে পারলো না।
        "আচ্ছা বলো। আমি উত্তর দিবো।" রুদ্র নিজ থেকেই বলল।

        রিয়া আর রুদ্র বসে আছে একটা পার্কের বেঞ্চে। তারা আজ কফিশপে যায় নি। রুদ্র নিজ থেকেই বলেছে, চলো আজ অন্য কোথাও বসি। প্রতিদিন একজায়গায় যেতে ভালো লাগে না।

        "কি ভাবছো?" রিয়া প্রশ্ন করবে বলেও তাকে চুপচাপ দেখে রুদ্র জানতে চাইলো।
        "কোন প্রশ্নটা আগে করবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।" রিয়া সহজ সরল ভাবে বলল।
        "একটা দিয়ে শুরু করলেই হয়।" 
        "আচ্ছা, রিয়া কি তোমাকেই চিঠি লিখছে? মানে আমি বোঝায়ে চাচ্ছি...!" এটুকু বলে রিয়া থামলো। তাকে আর কিছুই বলতে হলো না।
        "তরুর চিঠিগুলো আমার কাছে, আমার ঠিকানায় আসছে ঠিকই। কিন্তু চিঠিগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে লেখা না।"
        "তাহলে...?" রিয়ার মধ্যে কৌতুহল। 
        "আসলে আমিও প্রথমে ভেবেছিলাম, কেউ মজা করে আমাকে ঠিঠি পাঠাচ্ছে। কিন্তু কয়েকটা চিঠি পড়ার পরে আমার ভুল ভাঙে। আর যত দিন যেতে থাকলো, তত আমি বুঝতে পারলাম কেউ আমার সাথে মজা করছে না। হয়তো, তরুর চিঠিগুলো ভুল করে আমার ঠিকানায় আসছে।"
        "কিন্তু, চিঠিতে যে রুদ্র নাম লেখা।"
        "সেটা কাকতালীয়। হয়তো, তরু যাকে চিঠি লিখছে তার নামও রুদ্র। আমাদের নামটা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।" 
       "তোমরা এখন যে ফ্লাটে থাকো, সেই ফ্লাটে আগে কারা থাকতো খোঁজ নিয়েছিলে?" 
       "কি বলতে চাচ্ছ?" হঠাৎই রুদ্রের ভিতর ভীষণ কৌতুহল জাগলো। সে আবার বলল, "তুমি কি বলতে চাচ্ছ? আমার এখন যে বাসায় আছি, সেই বাসায় আগে তরুর চিঠিতে লেখা যে রুদ্র, সে থাকত?"
       "হ্যাঁ, সেটা হতেই পারে। আর সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি।" 
       "বিষয়টি আগে আমার মাথায়ই আসেনি। হ্যাঁ, এটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।"
       "কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো, যদি কোন খোঁজ পাও। রুদ্রকে পাওয়া গেলে, তরুকেও পাওয়া যাবে।" 
       "আমরা এবাসায় এসেছি প্রায় দুইবছর হয়ে গেছে। এই বাসায় আসার ছয় মাস পরে হুট করে একদিন তরুর চিঠি আসা শুরু হয়। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহের বুধবারে রেগুলার চিঠি আসতেই থাকলো। আনুমানিক আট মাসের মত তরুর চিঠি এসেছে। তারপর দেখতে দেখতে আরো অনেক মাস কেটে গেছে, তবুও তরুর আর কোনো চিঠি আসে নি।" রুদ্রের মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। শেষের কথাগুলো বলার সময় তার কন্ঠের সুর কেমন অদ্ভুত ক্লেশকর শোনালো।
       "হতাশ হয়ো না। একদিন আমরা ঠিকই তরুর খোঁজ পাবো। তুমি দেখো। আমার বিশ্বাস, আমরা তরুর খোঁজ পাবোই।" রুদ্রকে মনমরা দেখে রিয়া তাকে আত্মবিশ্বাস দেওয়ার জন্য কথাগুলো বলল। কিন্তু সে মিথ্যে বলেনি। তার মন বলছে, তারা একদিন ঠিকই তরুর খোঁজ পাবে।
       "আশা করাই সবচেয়ে সুন্দরতম চিন্তা। আমরা আশা করি বলেই বারবার চেষ্টা করি। বারবার ব্যর্থ হয়েও মানুষ চেষ্টা করে। যদি মানুষের মধ্যে আশা না থাকতো, তাহলে পৃথিবীটা এতো সহজ সুন্দর হতো না।" 
       "উঁহু, একদম ঠিক বলেছ।" রুদ্রের কথাগুলো রিয়ার ভীষণ ভালো লাগল। সেও আশা করে একদিন সে ঠিকই রুদ্রকে পাবে। এই আশাটাই তাকে ভালো রাখে, সুখে রাখে।

       "চলো, উঠি।" 
       "কোথায় যাবে?"
       "সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না।" 
       "রিকসায় ঘুরবে?" রিয়া আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো। 
       "আজও?" 
       "উঁহু! তোমার সাথে রিকসায় ঘুরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। সারাটা জীবন যদি রিকসায়ই কেটে যেত, তাহলে মন্দ হতো না। দুইজনে গল্প করতে করতে জীবনটা কাটিয়ে দিতাম।" 
       রিয়ার কথা শুনে রুদ্র হেসে দিলো 
       "হাসছো কেনো?" রিয়া অভিমানী কন্ঠে জানতে চাইলো।
       "এমনিতেই।" রুদ্র বলল।
       "মিথ্যে বলবে না। আমার কথা শুনে হাসছো, তাই না? আচ্ছা, বোকার মত কথা বলার জন্য সরি।" রিয়ার মন খারাপ হলো। রুদ্র প্রায় সময় তার কথা শুনে হাসে। সেও হুটহাট বাচ্চাদের মত উল্টাপাল্টা কথা বলে। কিন্তু তার মনে তাৎক্ষণিক যা আসে সে সেটাই বলে দেয়। এই সামান্য কারণে হাসতে হবে? রুদ্রের প্রতি তার অভিমান ক্রমাগত বাড়ছে।

       "মন খারাপ কেনো করছো? কেউ কি সারাজীবন রিকসায় কাটাতে পারে? হ্যাঁ ধরলাম পারবে কিন্তু রিকসা যে চালাবে সে কীভাবে সারাজীবন শুধু রিকসা চালিয়ে যাবে? এই কথা ভেবেই হুট করে হাসি পেয়ে গেলো। আচ্ছা, সরি। আর হাসবো না। মন খারাপ করো না, প্লিজ।" 
       "আমি মোটেও মন খারাপ করিনি। মন খারাপ কেনো করবো? আমি কে?"
       "আচ্ছা আজ তুমি যতক্ষণ চাইবে, ততক্ষণ দুইজন রিকসা করে শহর ঘুরবো।" 
       "আমি কোথাও যাবো না। তুমি থাকো, আমি বাসায় চললাম।" রিয়া এটা বলেই বসা থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলো৷ 

       রুদ্র অবাক হলো। এই সামান্য কারণে রিয়া রাগ করবে সে বুঝতে পারে নি। সেও উঠে দ্রুত হেঁটে রিয়ার কাছে গেলো। সে তাকে ডাকলো। তাকে থামতে বলল। কিন্তু রিয়া সে সব কথা শুনলো না। সে হাঁটার গতি আরো বাড়িয়ে দিলো।
       রুদ্র ছুঁটে গিয়ে রিয়ার হাত ধরে রিয়াকে থামালো। সে বলল, "এভাবে মন খারাপ করে চলে যেও না। তাহলে আমার নিজেরই প্রচন্ড খারাপ লাগবে এটা ভেবে যে আমি কারো মন খারাপ করে দিয়েছি।" 
       "আমি মন খারাপ করি নি। আমি শুধু বাসায় যেতে চাচ্ছি।" রিয়া সোজাসাপ্টা বলল।
       "একটু আগেই না বললে, রিকসায় ঘুরবে।"
       "হ্যাঁ, বলেছিলাম। কিন্তু এখন ইচ্ছে করছে না।"
       "আচ্ছা, এখন কি ইচ্ছে করছে?"
       "আমি শুধু বাসায় চলে যেতে চাচ্ছি।"
       "এখনো অভিমান করে আছ, তাই এরকম ভাবে কথা বলছ। আমি বললাম তো সরি। এবার অন্তত আমাকে মাফ করে দেও।" 
       "আমিও তো বললাম আমি রাগ করে নেই।"
       "না, আছো। আমি সেটা বুঝতে পারছি। আচ্ছা বলো কি করলে রাগ কমে যাবে?"
       "যা করতে বলব সেটা করবে?"
       "হ্যাঁ, যদি তাতে তোমার রাগ কমে গিয়ে মন ভালো হয়।"
       "আচ্ছা, তাহলে চলো আজ ভ্যানে করে শহরটা ঘুরি।"
       "ভ্যানে করে? ভ্যান কেনো? রিকসায় করে ঘুরলেই তো হচ্ছে।"
       "না, আমি রিকসায় ঘুরতে চাচ্ছি না। তুমি কি ভ্যানে করে আমাকে ঘুরাবে? না ঘুরালে আমি চললাম।"
       "আচ্ছা, চলো। তুমি যা বললে সেটাই।"

       রিয়া এবং রুদ্র একটা ভ্যান ঠিক করলো। এই সন্ধ্যা রাতে ভ্যান পেতে তাদের অনেক কষ্ট হলো। তবুও শেষ মুহুর্তে তারা একটা ভ্যান পেতেই রিয়া ভীষণ খুশি হলো। সে মনে মনে এটাই চেয়েছিল।
       রিয়া বসে আছে ভ্যানে। সে তার ভাবনায় ডুবে আছে। রুদ্র মাঝেমধ্যে দুই একটা কথা বলছে। কিন্তু তার সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার নিজস্ব জগতে ডুবে আছে। সে জগতে রুদ্রও তার মত করে তাকে ভীষণ ভালোবাসে। 

চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 2 users Like Bangla Golpo's post
Like Reply
#60
পর্ব -২৫

        "রুদ্র তো এখনো এলো না।" সাত্যকি বলল।
        "ইরিনা, রুদ্রকে একটা কল দিয়ে দেখ, ও কোথায় আছে।" ফাহিম বলল।

        রুদ্রের নাম্বার বের করে ইরিনা রুদ্রকে কল দিলো। 
        রুদ্র ফোন রিসিভ করেই বলল, "হ্যাঁ, বল।"
        "তুই কোথায়?" ইরিনা জিজ্ঞেস করলো।
        "প্রায় চলে এসেছি। আরেকটু অপেক্ষা কর।"
        "সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। তোর কোনো খোঁজই নেই।"
        "সরি, একটু দেরি হয়ে গেলো।"
        "একটু বলছিস? প্রায় তিরিশ মিনিটিরে মত তোর জন্য সবাই অপেক্ষা করছি।" 
        "সরি দোস্ত, আর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগবে।" 
        "আচ্ছা, দ্রুত আয়। ওহ হ্যাঁ, তোর সাথে কি রিয়া আছে? আলিফও তো এলো না এখনো।" 
        "দুইজনকে নিয়ে আসতে গিয়েই তো দেরি হলো আমার।" 
        "যাক ভালো হয়েছে। আচ্ছা আয় তুই। আমরা অপেক্ষা করছি।" 
        "আচ্ছা, আসছি।" রুদ্র বলেই ফোন কেটে দিলো।

        রুদ্র এসে পৌছালো আরো দশ মিনিট পর। সবাই ক্যাম্পাসে মিলিত হলো। অনেকদিন পরে সবাই আবার একসাথে একত্রিত হলো, সাত্যকির জন্মদিন উপলক্ষে। 
        আজ সাত্যকির জন্মদিন। সে-ই সবাইকে ফোন করে একত্রিত করেছে। আজ শুক্রবার বলে সবাই আসতে পেরেছে। সবাই-ই মনে মনে চাচ্ছিলো ক্যাম্পাস লাইফের মত আবার একসাথে জমিয়ে আড্ডা দিতে। কিন্তু কয়েকবার কেউ কেউ উদ্যোগ নিলেও সবাইকে পাইনি। কেউ না কেউ মিসিং থাকতোই।

        "জয় দাদা কোথায়?" সাত্যকিকে উদ্দেশ্য করে রুদ্র বলল।
        "সেখানে যাবো বলে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি। এদিকে সে আমাকে ফোন দিয়ে পাগল করে ফেলছে কখন আসবো।" সাত্যকি বলল।
        "দাদা ক্যাম্পাসে আসবে না?" রুদ্র বলল।
        "আমি বলেছিলাম, কিন্তু সে বলল, সে সবকিছু ব্যবস্থা করবে। আমাদের শুধু সময়মত যেতে হবে।" সাত্যকি বলল।
        "তাহলে তো ভালোই হলো। আচ্ছা তাহলে চল, আর দেরি করা উচিত হবে না।" রুদ্র বলল।

        একটা অটো ঠিক করে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলো। পার্টি সেন্টারের ভেতর ঢুকতেই সবাই রীতিমতো বাকরুদ্ধ। কি বিরাট আয়োজন। চারদিকে বাহারি রকম ফুল ও লাইটিং দিয়ে জাঁকজমক অবস্থা। 
        সাত্যকিকে দেখতে পেয়েই জয় ছুঁটে এলো। তার হাতে বড় একটা ফুলের তোরা। সে সেটা সাত্যকির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে তাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানালো। তারপর সে সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
        মাঝারি একটা টেবিল ফুল দিয়ে চারদিকে সাজানো। তার মাঝে বড় একটা চকলেট কেক। সাত্যকির চকলেট কেক পছন্দ, সেটা জয় ভুলেনি। সেই কবে একবার সে জয়কে কথাটা বলেছিলো। 
        সাত্যকি এতোটা সারপ্রাইজ আগে কখনো হয় নি। সে ভীষণ অবাক হয়েছে। সে কখনো ভাবেই নি জয় এরকম কিছু করবে। সে নিজেকে স্পেশাল অনুভব করছে। সেই সাথে তার বুকের ভেতর ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। সে আজ অবাক-খুশি।
        সবাই মিলে কেক কাটলো। সবাই কেক খেতে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় জয় তার পকেট থেকে একটা এনগেজমেন্ট রিং বের করে সাত্যকির সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তখনই সবাই তাদের দুইজনের চারপাশে এসে জড় হলো। সবাই উৎফুল্ল। 
        এনগেজমেন্ট রিংটা সাত্যকির দিকে বাড়িয়ে জয় বলল, "উইল ইউ ম্যারি মি?"
        সাত্যকি উত্তর না দিয়ে সে অন্য প্রসঙ্গে বলল, "আমাদের তো বিয়ে ঠিক হয়েই আছে?"
        "বিয়ে ঠিক হয়ে থাকলে কি প্রপোজ করা যায় না? ওটা তো ফ্যামিলিগত ভাবে ঠিক হয়েছে। কিন্তু এখানে আমার একটা কর্তব্য আছে না? তুমি এই সব বাদ দিয়ে, এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।"
        সাত্যকি আর কিছু বলল না। সে খানিকটা সময় নিরব থেকে অবশেষে বলল, "ইয়েস, আই উইল।"
        জয় এবং সাত্যকিকে ঘিরে থাকা তার বন্ধুরা সবাই জয়ধ্বনি দিতে থাকলো। সেই সাথে হাত তালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানালো। সবার মুখেই হাসি। একমুহূর্তে পরিবেশটা আনন্দে ভরে উঠলো। 
        জয় উঠেই সাত্যকিকে জড়িয়ে ধরলো। সাত্যকির লজ্জা লাগলেও সে কিছু বলল না। সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। 

        হাসি আড্ডায় অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো। সবাই গল্পগুজব করল। অনেকদিন পর সবাই মন খুলে হাসলো, নিশ্বাস নিলো। এই মুহুর্তটা সবার কাছেই খুব স্পেশাল হয়ে উঠলো।

        জয় এবং সাত্যকির বিয়ে ইতিমধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। আসছে যে মাস, সেই মাসের শেষ সপ্তাহের শুক্রবার তাদের বিয়ে। সবাই সেটা আজই জানতে পেরেছে। সাত্যকিই ইচ্ছে করে আগে কাউকে জানায় নি। সে চেয়েছিলো সবাইকে একসাথে জানাতে। সেই জন্য আজকের দিনটা ছিলো শ্রেষ্ঠ। কিন্তু সাত্যকিও আগে থেকে বুঝতে পারেনি আজকের দিনটা তার জন্য এতোটা শ্রেয় হয়ে উঠবে। জয়ও তাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে আগে থেকে কিছুই জানায় নি। সবমিলিয়ে আজকের দিনে সবাই সবার দুঃখ ভুলে জয় এবং সাত্যকির খুশিতে মিশে গেলো। 

        এই মাসে তাদের অনার্স কমপ্লিট হয়ে যাবে। টার্ম পেপার জমা এবং ভাইভা হলেই সবকিছু শেষ। অবশ্য সাত্যকি চেয়েছিল মাস্টার কমপ্লিট করেই বিয়ে করার জন্য। কিন্তু সেটা সম্ভব হয় নি। দুইজনের পরিবারের সবাই চাচ্ছিলো বিয়েটা হয়ে যাক। এদিকে জয়ও আর দেরি করতে চাচ্ছিল না। অবশ্য সাত্যকির নিজেই চাচ্ছিল তাই তার না এর মধ্যে কোনো জোর ছিলো না। 

        "জয় দাদা, একটা গান হলে কেমন হয়?" আড্ডার মাঝে হঠাৎ ফাহিম বলল।
        "হ্যাঁ দাদা, একটা গান হয়ে যাক। সাত্যকি অবশ্য আপনার গানের গলার অনেক প্রশংসা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনার গলায় গানই শোনা হলো না। আজকে আর না শুনছি না।" ইরিনা বলল।
        ইরিনা এবং ফাহিমের কথায় সবাই সম্মতি জানালো। সবার জোড়াজুড়িতে জয় আর না করতে পারল না। সে বলল, "আমি তো প্রায় সবসময়ই ইংরেজি গান শুনি। তাই একটা ইংরেজি গান গাইতে চাচ্ছি। কোনো সমস্যা আছে?"
        "আমদেরও কম বেশি ইংরেজি গান শোনা হয়। আপনি যেটায় কম্ফর্ট ফিল করেন সেটাই গান।" ইরিনা বলল।
        "আচ্ছা।" জয় বলল।

        জয় গানের লিরিক মনে করার চেষ্টা করছে। কোন গানটা গাইবে সেটাই ভাবছে। অন্য দিকে সবাই চুপচাপ। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। অবশেষে জয় খুকখুক শব্দে কাশি দিয়ে গান ধরলো। 

"Who knows how long I've loved you
You know I love you still
Will I wait a lonely lifetime
If you want me to, I will

For if I ever saw you
I didn't catch your name
But it never really mattered
I will always feel the same

Love you forever and forever
Love you with all my
Love you whenever we're together
Love you when we're apart

And when at last I find you
Your song will fill the air
Sing it loud so I can hear you
Make it easy to be near you
For the things you do endear you to me
You know I will.... I will......!"

        সবাই মুগ্ধ হয়ে জয়ের কন্ঠে The Beatles এর "I will" গানটা শুনলো। সবাই হতবাক। জয়ের এতো সুন্দর গানের গলা কেউই বুঝতে পারেনি। সাত্যকির মুখে শুনে কেউ ভাবেনি সত্যিই এতোটা চমৎকার। 
        সবাই আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো। সময়ও দ্রুত অতিবাহিত হতে থাকলো। ফেরার সময় সবারই মন খারাপ হচ্ছিলো। এভাবে হয়তো সবাই মিলে আর কখনো আড্ডা দেওয়া হবে না। একসাথে মজা করা সম্ভব হবে না। সবাই সবার ব্যস্ত জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। 
       সবাই মন খারাপ করেই যার যার গন্তব্যে ফিরলো। এই সময়টুকু এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে। আজকের দিনটা সবাই বহুদিন মনে রাখবে। মনে রাখার মত একটা সন্ধ্যা সবাই মিলে কাটালো।

        মানুষের জীবনে এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতিই সবচেয়ে মূল্যবান। কোনো এক সময় মানুষ এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতির কথা ভেবে হাসে। অন্য মানুষের কাছে আগ্রহ নিয়ে তার গল্প করবে। এটাইতো জীবন। ক্ষুদ্র একটা জীবন। তবুও মানুষ হতাশ হয়। হাজারও মানুষ বেঁছে নেয় মৃত্যু মত পন্থা। আসলে আমরা সবসময় সুখে থাকতে চাই। কিন্তু যখনই আমরা মেনে নিতে পারবো কষ্ট জীবনের একটা ক্ষুদ্রতম অংশ তখন মনে হবে জীবন সুন্দর। জীবন আসলেই সুন্দর। জীবন চড়ুই পাখির মত হলেও ভীষণ সুন্দর। 

চলবে......!
===========================
পড়তে থাকুন  চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।


Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.



( Post By- Kam Pagol) 

[+] 1 user Likes Bangla Golpo's post
Like Reply




Users browsing this thread: 9 Guest(s)