Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 2.8 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
প্রথম_প্রেম
#21
পর্ব-০৫ শেষ পর্ব 
banana banana banana banana

পেছনে তাকিয়ে দেখি রাদিফ।

ওকে দেখে মেজাজটা একদম বিগড়ে গেলো।

---- এই ফাজিল পোলা,এভাবে কেউ চিল্লায়।আমার সাধের ফোনটা গেলো।

রাদিফ আমার ফোনটা তুলে নিয়ে বলল

---- কিছু হয়নাই দেখ।তুই এতরাতে ছাদে কী করিস।যদি পেত্নী ধরে নিয়ে যেত।

---- তুই কী দেখেছিস পেত্নীকে কখনো পেত্নী ধরে।ভূত হলে অবশ্য ঠিক ছিল।

নিবির ভাইয়ের এমন ফোড়নকাটা কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম।এই লোক এখানে কী করে।

---- একদম  ঠিক বলেছো, নিবির ভাইয়া।

---- এই পোলা, আমাকে তোর পেত্নী মনে হয়।মানলাম নিবির ভাইয়ার চোখ খারাপ তাই কি তোরও চোখ খারাপ।

---- কী বললি তুই, আফরা।আমার চোখ খারাপ।

---- অবশ্যই।না হলে কেউ হীরে রেখে কাঁচ নিয়ে পরে থাকে।

---- কী বললি তুই। 

----না কিছুনা।আমি নিচে যাচ্ছি,রাদিফ।তোরা থাক।

---- তোকে যেতে বলেছি আমি?
রাদিফ তুই যা আফরার সাথে আমার কথা আছে।

"নিবির ভাইয়ার কথায় চোখগুলো ছোটোছোটো করে তার দিকে তাকালাম। আমাকে আবার ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাতো।"

---- কিছু বলবেন ভাইয়া।

----  এতরাতে একা একা ছাদে বসে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলি মনে হয়।

---- আমার আর বয়ফ্রেন্ড কই হলো।এই দুবছর আপনার পিছনে যদি ঘুরে টাইমপাস না করতাম তাহলে এতদিনে হাজার খানেক বয়ফ্রেন্ড জুটে যেতো আমার।

" নিবির ভাইয়ার মুখ দেখেই বোঝা গেল সে আমার এমন জবাব আশা করেনি।"

---- তা আমার ওপর যে এত ভালোবাসা ছিল তা কি বাতাসে উবে গেলো।

---- উবে যায়নি তো ভাইয়া শুধু নিজের আত্মসম্মান জাগ্রত হয়ে গেছে।

---- তাই নাকি।

---- হুম।আমি নিচে যাচ্ছি ভাইয়া।

---- নিহান কে,আফরা।

" নিবির ভাইয়ার কথা শুনে মাথাটা যেন ঘুরতে শুরু করেছে।বারবার কেন এই নামটা আমার সামনে আসে। এই কালো অতীতটাকে আমি যত ভুলে যেতে চাই ততই এই জিনিসটা আমার সামনে চলে আসে।"

---- আমি কিছু জানতে চাইলাম,  আফরা।

নিবির ভাইয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারছিনা।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।শরীরটাও অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে।চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছি আমি।

---- তোর কী শরীর খারাপ লাগছে, আফরা।তোর,,

নিবির ভাইয়ার পরবর্তী কথা শোনার আগেই তার বুকে লুটিয়ে পড়লাম।

------------

চোখ খুলেই দেখি সকাল হয়ে গেছে।
এটা অবশ্য নরমাল।যখনই আমার এ সমস্যা হয় তখন আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। আমার
ব্রেনকে এমনসময় শান্ত করার একটাই উপায় হলো লম্বা ঘুম। লাস্ট দু বছরে এমনটা অনেক বার হয়েছে।
মাথাটা এখনো প্রচন্ড ধরে আছে।

একটু পরেই আম্মু আর মামা রুমে এলো।
মামা আমার মাথায় হাত রেখে বলল-

---- কাল কী হয়েছিল, মামনি।আমি জানি নিবির নিহানের কথা জানতে চেয়েছিল।তাই বলে তুই এত দুর্বল হলে হবে।নিজেকে শক্ত করতে হবে, মামনি।সবকিছু ভুলতে হবে তোকে।

---- আমি পারিনা গো,মামা।কিছুতেই ঐ রাতটাকে ভুলতে পারিনা।

---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আফিয়া তুই খাবার নিয়ে আয়।মামনি তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি আজ তোকে খায়িয়ে দিবো।

---- আচ্ছা।

মামা আমায় খায়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।একটু পরে নাকি নানীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে।কিন্তু আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন নিবির ভাইয়া নিহানের ব্যাপারে কী করে জানলো।কোনো ভাবে কী আরাব ভাইয়া বলেছে।কিন্তু আরাব ভাইয়া বললে তো সবটাই বলতো।

ঘরে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম তাই বাইরে গেলাম।রাদিফ এসে বলল-

---- এই আফরা, নদীরধারে যাবি অনেক কাশফুল হয়েছে ওখানে।

রাদিফের কথাশুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।এখানকার নদীটা খুব সুন্দর।যদিও ৪-৫ বছর আগে এসেছিলাম এখানে।সবাই কাশফুলের সাথে এতএত ছবি পোস্ট করেছে।আমি একটাও ছবি দিতে পারিনি বলে মন খারাপ হয়েছিল।এবার অনেক ছবি তুলব। আর এফবিতে পোস্ট করব।ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।

--------------

বিকেলে আমি আরাব ভাইয়া,নিবির ভাইয়া, রাদিফ আর রাদিফের এক কাজিন তাহা মিলে ওখানে গেলাম।

বেশ সুন্দর জায়গাটা।অনেক ছবি তুললাম সবাই মিলে।আমি একটা কাশফুল ছেড়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।একটা ডাল ধরে টানতেই বেশ খানিকটা হাত ছিলে গেলো।
তখন নিবির ভাইয়া এসে কয়েকটা ফুল ছিড়ে আমার হাতে দিলো।আর বলল

---- এখনো একটা ফুল ছেড়ার শক্তি হয়নি তুই আবার আমায় বিয়ে করতে চাস।বিয়ের পর আমার ভারটা সামলাবি কী করে।

কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো।তার কথাটা বুঝতে খানিকক্ষন সময় লাগল আমার।বোঝা মাত্র আমার চোখদুটো গোল গোল হয়ে গেলো।

খানিকক্ষণ ঘুরে ফিরে চলে এলাম।

---------

সন্ধ্যেবেলা সবাই মিলে নানার ঘরে বসে ছিলাম।নানার নাকি খুব জরুরী কোনো কথা আছে।

---- দেখো আমি বুঝতেই পারছি আমি আর বেশিদিন বাচবোনা।আর আফরা হলো এ বংশের একমাত্র মেয়ে।আর আমি চাইনা ও বাইরে কোথাও যাক।(নানী)

---- তুমি ঠিক কী বলতে চাচ্ছো, মা।(মামা)

---- আমি জানি আফরার বয়সটা কম, তবুও আমি চাই আরাব আর আফরার বিয়ে দিতে।

নানীর কথা শোনামাত্র আমার আর আরাব ভাইয়ার মাথায় আকাশ ভেঙো পড়ল।আরাব ভাইয়া বলল

---- এটা সম্ভব না, নানী।আমি আফরাকে সবসময় নিজের বোনের মতো দেখছি।

---- আমি কিছু জানতে চাইনা।আমার কথাই শেষ কথা।

বাকিদের কথা শোনার আগেই ওখান থেকে উঠে চলে এলাম।
কেন জানি নানীর এই কথাটা কিছুতেই মানতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।যদি নানী আরাব ভাইয়ার জায়গায় নিবির ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইত তাহলে কী খুব ক্ষতি হতো।আচ্ছা নিবির ভাইয়া কী খুশি হয়েছে এ খবরে?

সেই যে রুমে এসেছি,এখনো বের হইনি।কেঁদে কেঁদে একদম চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি।রাত প্রায় বারোটা বাজে।সবাই খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে।

আমি ঠিক করেছি আজ কিছুতেই বের হবোনা।খানিকপর নিবির ভাইয়ার গলা পেলাম

---- আফরা, দরজাটা খোল।না খেয়ে থেকে কী বোঝাতে চাইছিস তুই।আরাবকে বিয়ে করবিনা সরাসরি বললেই তো পারিস।এত নাটক করার কী আছে।

"নিবির ভাইয়ার কথায় খুব কষ্ট পেলাম।সবটাই উনার নাটক মনে হচ্ছে।উনি কী জানেনা আমার মনে কী আছে।কেন বোঝেননা উনি সেটা নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।"

পরদিন সকালে আমি ভাইয়ার সাথে ঢাকা ফিরে এলাম।ওখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরেই যেতাম।পুরো রাস্তা চুপ করে ছিলাম।ভাইয়াও কোনো প্রশ্ন করেনি। সে তো সবটাই জানে।

--------------

বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে ছাদে বসে ছিলাম।রাহাকে সেই কখন ফোন করছি এখনও আসছেনা।

মা ফোন করেছিল।তারা নাকি রওনা দিয়েছে।আব্বু আর নিবির ভাইয়া নাকি মানা করে দিয়েছে।তারা এখনই আমার বিয়ে দিতে চাই না। আর আমার মতের বিরুদ্ধে তো একদম না এ নিয়ে নাকি আব্বুর সাথে নানার ছোটোখাটো একটা ঝামেলাও হয়েছে।
আব্বুর ব্যাপারটা তো বুঝলাম কিন্তু নিবির ভাইয়া এমন কেন করল।

---- কী ভাবসিস, আফরা।

---- তুই, ইডিয়েট এত দেরি করে এলি কেন।

---- একটুই তো দেরি করছি।তুই কী বলবি বলছিলি।

"রাহাকে সবকিছু খুলে বললাম।"

---- আফরা,আমার মনে হয় তোর এভাবে নিবির ভাইয়ার পেছনে পরে থাকা উচিত না।উনি তোকে এত অপমান করে।

---- কী করবো বলতো।নিহানকে ভুলে থাকার একমাত্র উপায় তো নিবির ভাই।

---- নিহানকে মনে রাখা নিতান্তই তোর বোকামি।

---- কী  করব বল।কোনো ভাবেই তো ঐ বেইমানকে আমি ভুলতে পারিনা।

---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আন্টিরা কখন আসবে।

---- রাত হবে।

কিছু সময় থেকে রাহা চলে গেলো।সন্ধ্যা নেমে গেছে বলে আমিও নিচে নেমে এলাম।

এসে দেখি ফোনে অনেকগুলো মিসডকল।আমি কল ব্যাক করলাম কিন্তু প্রথমবার রিসিভ হলো না।দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো।ওপাশের লোকের কথা শুনেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো।

আমি বুঝি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে ফেললাম।

------------

দেড় ঘন্টা ধরে হাসপাতালে বসে আছি।
নানী বাড়ি থেকে আসার সময় আব্বু-আম্মুর গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে।দুজনের অবস্থাই খুব খারাপ।

অপারেশন থিয়েটারে আছে তারা।ভাইয়াও ভেতরে আছে।
কিছুক্ষন পড়ে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এলো।
তাকে দেখেই তার দিকে ছুটে গেলাম।

ডাক্তার বলল-  ওরা নাকি দুজনের কাউকেই বাচাতে পারেনি।

কথাটা আমার কানে প্রবেশ মাত্রই আমার পুরো শরীর কেপে উঠল।আমার পুরো দুনিয়াটাই যেন থেমে গেল।
"আব্বু" বলে  একটা চিৎকার দিয়েই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লাম।

বাবা- মাকে ছেড়ে বেচে থাকার মতো কঠিন কাজ দুনিয়াতে হয়ত আর নেই।আর এই কঠিন কাজটাই যে আমাকে করতে হবে।

আমার সামনেই আব্বু-আম্মুর কাফনে মোড়ানো লাশ রাখা।বাড়ি ভর্তি মানুষ কিন্তু দিনশেষে তো তারা সবাই চলে যাবে।আমরাও একা হয়ে যাবো।

ছোট ছোট ব্যাপারে কঁদে ভাসিয়ে ফেলা এই আমি আজ একটুও কাঁদতে পারছিনা।খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে"বাবা-মা তোমরা ফিরে আসোনা"।কিন্তু আমি পারছিনা।নিজেকে বড্ড অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে।

আব্বু- আম্মুর দাফন শেষ হয়েছে ঘন্টা দু'য়েক।বাকিরা সবাই চলে গেছে।শুধু আমাদের পরিবারের কিছু লোক রয়ে গেছে।

কিছুক্ষণ পরে খালামনি ও আংকেল আমার কাছে এলো।আংকেল মামাকে গিয়ে বলল

---- আবির তো বড় হয়ে গেছে ভাইজান। কিন্তু আফরা ও তো এখনো ছোটো।ওর দায়িত্ব কে নিবে।আবিরের বউ এলে তো ও বেশিদিন এখানে টিকতে পারবেনা।

উনি কিছুক্ষন থেমে আবার ও বললেল

---- দেখেন ভাইজান,নিবির যে আফরাকে পছন্দ করেনা সেটা তো সবাই জানে।তাই আফরা যে আপনাদের বাড়ি থাকতে পারবেনা সেটা আমি জানি।তাহলে নিশ্চয় ওর দায়িত্ব আমাদের ঘারে এসেই পড়বে।আমি কিন্তু ওসব ঝামেলা নিতে পারবোনা।

আংকেলের কথা শেষ হতেই ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল

---- কাউকে নিতে হবেনা আফরার দায়িত্ব।যতদিন আমি আছি ততদিন ওকে নিয়ে আপনাদের না ভাবলেও চলবে।

আংকেল বেশ অপমানিত হলেন ভাইয়ার কথায়। নানীও মুখ বুঝে সব শুনছে।ওখানে আর একমুহুর্ত না থেকে ঘরে চলে গেলা।গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।

নিজের আপন মানুষগুলোকেও আমার বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে।সবারই এখন আমাকে বোঝা মনে হচ্ছে।একদিন হয়ত ভাইয়ারও আমাকে বোঝা মনে হবে।

বাইরে থেকে সবাই দরজা খুলতে বলছে।

---- তোমরা প্লিজ যাও এখান থেকে।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

--------------

আব্বু- আম্মুকে ছাড়া পুরো একদিন কেটে গেছে।তখন থেকে এখন পর্যন্ত কিছু মুখে তুলিনি আমি।

---- একটু তো খেয়ে নে, মা।এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি।

---- আমি খাবনা, মামি। তুমি খাবারটা রেখে এসো।

মামিকে কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।আমি একদমই ক্ষুদা সহ্য করতে পারিনা।কিন্তু আজ একদমই খেতে ইচ্ছে করছেনা।শরীরটাও বড্ড দুর্বল লাগছে।হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতেই কেউ আমায় ধরে ফেলল।

চোখ খুলে দেখলাম মামি আর নিবির ভাইয়া বসে আছে।ভাইয়া হয়ত কোথাও গেছে।

আমাকে উঠতে দেখেই নিবির ভাইয়া মামিকে খাবার আনতে বলল।মামিও খাবার আনতে চলে গেলো।নিবির ভাইয়া আমার পাশে বসে বলল

----এভাবে না খেয়ে থাকলেই কী তোর বাবা,মা ফিরে আসবে।না খেয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে কী, আফরা। তোর জন্য আবির ও না খেয়ে আছে ।

---- আচ্ছা   ভাইয়া খুব কী ক্ষতি হতো যদি বাবা মা আমাকেও তাদের সাথে নিয়ে যেত।

---- আফরা! তারা যখন তোকে সাথে  নেয়নি তখন নিশ্চয় তারা চায় তুই এই দুনিয়ায় থাক। তোকে বাচতে হবে আফরা, আবিরের জন্য বাচতে হবে, নিজের জন্য বাচতে হবে, আমাদের জন্য বাচতে হবে।

একটু পরে মামি আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো। আমিও খেয়ে নিলাম।নয়ত আমার জন্য ভাইয়াও না খেয়ে থাকবে।

বিকেলে আমাদের কিছু প্রতিবেশী এলো বাড়িতে।তারা এসেই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল।

---- শোনো নিবিরের মা তোমরা বরং আফরার বিয়ে দিয়ে দাও।তাছাড়া কে নেবে ওর দায়িত্ব।

অন্য একজন বলে উঠল

---- তাছাড়া তোমার ঘরেও তো জোয়ান একটা ছেলে আসে।আফরা তো ছোট,বলা যায়না যদি তারা কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।

উনার কথা শুনেই কেদে দিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া বাড়িতে ঢুকছিল।হয়ত সে সব কিছুই শুনেছে।
নিবির ভাইয়া উনাদের সামনে গিয়ে বলল

---- আফরাকে নিয়ে এতটা ভাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।কিন্তু ওকে নিয়ে যদি আপনারাই সব ভেবে ফেলেন তাহলে আমরা কী করব বলেন। আমাদের জন্য কিছু রাখেন।
আর শোন আফরা একদম মানুষের এসব উল্টোপাল্টা কথায় কান দিবি না।

তখনই আরেকজন বলে উঠল

---- সবই বুঝলাম গো নিবিরের মা।শেষ পর্যন্ত এই ঝামেলা তোমাদের ঘাড়েই জুটবে।তোমার ছেলের তো  ভাব খারাপ।

আর কোনো কথা শোনার আগেই রুমে চলে গেলাম। ওখানে একপাতা ঘুমের ঔষধ ছিল। সেটা থেকে অনেকগুলো ঔষধ খেয়ে নিলাম। জানি আমি অনেক বড় পাপ করছি কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিনা।আমি কারো ওপর ঝামেলা হয়ে থাকতে চাইনা।

---------------

চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম । তখনই ভাইয়া ঠাস করে একটা চড় মারল আমায়।
প্রচন্ড কষ্ট পেলাম ঘটনাটায়। জীবনে প্রথম ভাইয়া আমার গায়ে হাত তুলল।
একটু পরেই ভাইয়া আমার দুইগালে হাত রেখে বলল

---- মেরে ফেলবি আমায়, বনু।কেন এমন করলি।তুই জানিস না তোর কিছু হলে আমি বাচবোনা।কেন লোকের কথায় নিজেকে শেষ করবি তুই।তুই নিজের যোগ্যতায় দেখিয়ে দিবি যে তুই আমাদের বোঝা না অহংকার।

--------------

কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।এখন আমি যথেস্ট নরমাল।
পড়াশোনায় ও বেশ মনোযোগ দিয়েছি।আম্মুর খুব শখ ছিল আমি ঢাবিতে পড়ব।সে অনুযায়ী প্রিপারেশন নিচ্ছি।সামনেই এডমিশন টেস্ট।
নিবির ভাইয়াও এব্যাপারে খুব সাহায্য করে আমায়। একদিন উনি আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করেননি।

অনেকদিন ঘরবন্দি ছিলাম। তাই আজ ঠিক করলাম মামাদের বাড়িতে যাবো।

সকালে হাসপাতালে যাওয়ার সময় ভাইয়া আমায় মামা বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।

ভিতরেই এসে দেখলাম নিবির ভাইয়া আর কথা আপু একসাথে বসে কী যেন করছে। তাদেরকে একসাথে দেখেই পুরোনো ক্ষতটা যেন জেগে উঠল। কিন্তু আমি সে সবকে পাত্তা দিলাম না।

নিবির ভাইয়া যেন আমাকে দেখেও দেখলনা।আমিও কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেলাম।কিন্তু মামিকে কোথাও পেলাম না। তাই নিবির ভাইয়াকেই গিয়ে জিঙ্গেস করলাম

---- ভাইয়া, মামি কই।

---- আম্মু তো মামার বাসায় গেছে।

---- ওহ। তাহলে বরং আমি যায়।

---- এখনই যাবি।

---- হুম। থেকেই কী করব।

----আচ্ছা যা।

আমিও বেরিয়ে এলাম। নিবির ভাইয়া একবার জিঙ্গেস ও করল না যে একা যেতে পারব কিনা।অবশ্য করবেই কেন।কথা আপু সাথে থাকলে তো তার দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না।

বাসায় গিয়ে এখন একা বোর হওয়া ছাড়া কোনে কাজ নেই।নিবির ভাইয়াদের বাসার কাছাকাছি একটা ছোটোখাটো একটা লেক আছে।তাই ভাবলাম ওখান থেকে ঘুরে আসি।

যেই ভাবা সেই কাজ।একা একা লেকের পাড়ে হাটছি।এখন সকাল ১১ টা বাজে।এখন অফিস টাইম বলে খুব একটা ভিড় নেই।এখন মানুষ নেই বললেই চলে।কিন্তু বিকেল বেলা অনেক ভিড় থাকে। বাবার সাথে আগে অনেকবার এসেছি।

কিছু সময় পরে আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো
" একা একা থাকতে বুঝি খুব ভালো লাগে শুভ্রপরী"।

মেসেজটা ঐ প্রহরই পাঠিয়েছে।আজকাল আর এগুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করেনা।সব আবেগ গুলো যেন সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে।

হঠাৎই আজানের শব্দ কানে এলো।কখন যে এত সময় কেটে গেছে বুঝিনি।তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলাম নিবির ভাইয়া এদিকেই আসছে।উনার চোখ-মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।

উনি আমার কাছে এসেই বেশ জোরে একটা চড় মারল।আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।

উনি আমাকে তুলে আমার হাত ধরে বললেন

---- তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আফরা।বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে এখানে আসবি বলে আসতে পারলি না।তুই বেড়োনোর আধ ঘন্টা পর যখন আরশিকে ফোন করে জানতে পারলাম তুই বাড়ি যাসনি তখন আমার কী অবস্থা হয়েছিল জানিস।দুঘন্টা কত খুজেছি তোকে।ফোনটাও তো ধরিসনি।

আসলেই তখন আমার ভাইয়াকে বলে আসা উচিত ছিল।আর তখন  মেসেজের জন্য ফোনটাও সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।কিন্তু আমায় নিয়ে উনার এত চিন্তা কেন?

---- চল তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।আর সরি, এমন বিহেব করার জন্য।

আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম।
তখনই ভাইয়া এমন একটা কথা বলল যেটা শুনে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভাইয়া বলল

---- আমায় বিয়ে করবি,আফরা।

এসব কী বলছ তুমি নিবির ভাইয়া।

---- আমি ঠিকই বলছি।আগে তুই রোজ আমাকে বিরক্ত করতি,আমিও বিরক্ত হতাম।কিন্তু ইদানিং তোর ঐ বিরক্তি গুলোকে বড্ড মিস করি।

---- তুমি তো কথা আপুকে ভালোবাসো, তাইনা।

---- জানিনা।আমি কথার সাথে থাকলেও আমার মন বারবার শুধু তোকেই খোঁজে।তুই জানিস,যখন প্রহর আমাকে বলেছিল ও তোকে ভালোবাসে তখন এক মুহূর্তেরর জন্য মনে হয়েছিল আমি বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলবো।

---- আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসতেই পারে কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা।

---- তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা,আফরা।

---- ভালোবাসতাম হয়ত এখনো বাসি।কিন্তু আপনার প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসা আপনার করা অপমান অবহেলার নিচে চাপা পরে গেছে।

---- আফরা!

---- দেখুন নিবির ভাইয়া একটা সময় আমি আপনার জন্য পাগলামি করছি,রাতের পর রাত কেঁদে কাটিয়েছি ঠিকই । কিন্তু এখন এসব পাগলামি আমায় মানায় না।
আমি এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি এখন আমার পুরো ফোকাসটা আমার ক্যারিয়ারের ওপর দিতে চাই।

---- কিন্তু আফরা,,,

---- আপনি কী আমায় বাড়ি দিয়ে আসবেন নাকি আমি একাই যাবো।

---- না, চল আমি দিয়ে আসছি।

--------------

সেদিন এভাবে নিবির ভাইয়াকে রিজেক্ট করে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তবুও নিজের পড়াশোনায় যথেষ্ট ফোকাস করেছি।

আজ এডমিশন টেস্ট।ভাইয়ার সাথে এসেছি কেন্দ্রে।চারিদিকে এত মানুষ দেখে সত্যি খুব ভয় হচ্ছে।এত সব ট্যালেন্টটেড মানুষের মাঝে কী নিজের জায়গাটা করে নিতে পারব।

অবশেষে পরীক্ষাটা দিয়েই দিলাম।একদম ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে পরীক্ষাটা।
হলে ঢোকার আগে নিবির ভাইয়া ফোন দিলেও ফোনটা ধরিনি।

আজ এডমিশনের রেজাল্ট দিবে।সকাল থেকে প্রচন্ড টেনশনে আছি।বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।
আর ভাইয়া নেটে রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।অনেকজনের পরে অবশেষে লিস্টে আমার নামটা পাওয়া গেলো।
লিস্টে নিজের নামটা দেখা মাত্রই আনন্দে কেঁদে দিলাম।এবার হয়ত আমি আম্মুর স্বপ্নটা পূরণ করতে পারব।

------------
আজ ভার্সিটি তে প্রথম দিন।ভাইয়া আমায় রেখে গেছে।

দিনটা বেশ ভালোই কাটল।অনেক জনের সাথে বেশ ভালোই পরিচিত হয়েছি।

ক্লাশ শেষে গেটের বাইরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম নিবির ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া আর কথা আপু যথেষ্ট ক্লোজ হয়ে বসেছিল।ওদেরকে দেখেই বোঝা যায় তাদের সম্পর্কটা কী।

বেশ কিছুদিন হলো ভার্সিটি যাচ্ছি।এই কয়দিন নিবির ভাইয়া অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি প্রতিবারই তাকে ইগনোর করেছি।
যদি সে আমাকে সত্যি ভালোবাসতো তাহলে এখনও কথা আপুর সাথে এতটা ক্লোজ থাকতোনা।

খুব চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে যাওয়ার কিন্তু পারিনি।কারন সে যে আমার প্রথম প্রেম।
মাঝে অবশ্য প্রহর অনেকবার তার মনের কথা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি এখন এসবে জড়াতে চাই না।

এই কয়দিন একদমই মামা বাড়ি যায়নি।খালামণিরাও আর যোগাযোগ করেনি তবে আরাব ভাইয়া আর রাদিফের সাথে প্রায়ই কথা হয়।

মাঝে মাঝে আরশি আর রাহা এসে আমার সাথে থাকে।তবুও যে দিনশেষে বাবা - মায়ের শূন্যতাটা বেশ উপলব্ধি করতে পারি।

আজ যদি তারা থাকত তাহলে হয়ত আমার জীবনটাই অন্যরকম হতো।

-----------

আজ আমাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
নিবির ভাইয়া তো এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।তাই অন্য সবার মতো তার ওপরও অনেক কাজের দায়িত্ব পড়েছে।আমি আর রাহা দুজনেই এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।

আজ রাহার কথায় একটা নীল শাড়ি পড়েছি।অবশ্য দুজনেই একরকম শাড়ি পরেছি।

স্টেজের সামনে বসায় নিবির ভাইয়ার চোখে খুব সহজেই পরেছি।ভাইয়া বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।সেটা আমি দেখেছি।তবুও এমন একটা ভান ধরে আছি যেন আমি ভাইয়াকে চিনি না ।

ভার্সিটিতে নিবির ভাইয়া সবার ক্রাশ বয়।  সবাই তার পিছনে লেগে থাকে।আর নিবির ভাইয়াকে আমার এভাবে ইগনোর করাটা আমার নতুন বন্ধুদের ঠিক হজম হচ্ছেনা।

---- আচ্ছা, নিবির ভাইয়ার জন্য যেখানে সবাই পাগল সেখানে তুই উনাকে এভাবে ইগনোর করিস কেন।?(দিয়া)

---- হ্যা, তাই তো। এমন করিস কেন, আফরা।(মাহি)

---- আরে তোরা জানিস না আমার সবসময় আনকমন জিনিস পছন্দ। আর নিবির ভাইয়াকে তো সবাই পছন্দ করে আমি নাহয় অন্য কাউকে পছন্দ করলাম।

আমার এমন উত্তরে যেন ওরা একটুও খুশি হয়নি।দিয়া আবারো বলল

---- জানিস নিবির ভাইয়া আর কথা আপু নাকি একে অপরকে ভালোবাসে।তারা নাকি সামনে মাসেই বিয়ে করবে।

দিয়ার এমন কথা শুনে বুকের বা পাশে একটা চিনচিন ব্যাথ্যা অনুভব করলাম।ওখানে আর একমুহূর্ত দাড়ালাম না।রাহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির জন্য।

মাঝে কেটে গেছে সাতদিন।আজ আরাব ভাইয়ার বিয়ে।মেয়ে অবশ্য ভাইয়ারই পছন্দ করা।আমাদের দাওয়াত করা হলেও আমরা যাবোনা ঠিক করেছি।আমাদের দাওয়াত দেওয়ার আসল কারন অবশ্য তারা কতটা যোগ্য মেয়ে পেয়েছে সেটা দেখানো।সেদিন আব্বুর 'না' টা আজও মেনে নিতে পারেনি আংকেল।
ভাইয়া আমাকে নিষেধ করে গেছে যেন এসব নিয়ে একদম না ভাবি।তবুও শত ভাবনার মাঝে বারবার একজনের কথাই মনে পড়ে " নিহান"।

আমার কিশোরী বয়সের আবেগ।ছোটো ছিলাম কিন্তু প্রচন্ড আবেগী ছিলাম।তখন সবটাই আবেগ দিয়ে ভাবতাম।
সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি আমি।তখম নিহানের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষন কাজ করত আমার।কিন্তু সেটা শুধুই একপ্রকার মোহ ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে কেটে যায়।কিন্তু নিহান আমার পিছু ছাড়েনি। সে আমার পিছনেই পড়ে থাকত।ভাবত আমি হয়ত রূপের অহংকারে তাকে ইগনোর করছি।

তাই সে আমার রূপ নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিল।একদিন সন্ধ্যেবেলা কোচিং শেষে ফেরার পথে নিহান আর ওর বন্ধুরা আমার পথ আটকায়।
নিহান আমার মুখে এসিড ছুড়ে মারে।কিন্তু সৌভাগ্য বশত কিছুটা এসিড আমার হাতে আর বাকিটা মাটিতে পরেছিল।
চোখের সামনে নিজের ঝলসে যাওয়া চামড়া দেখে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম।

জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেছিলাম।দীর্ঘদিন সাফার করেছিলাম।অনেকগুলো সার্জারির প্রয়োজন হয়েছিল।

বাবারা নিহানের নামে মামলা করেছিল।ওকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।

ঐ ঘটনার পর নিজেকে একদম ঘরবন্দি করে নিয়েছিলাম।তখন আমরা চট্টগ্রাম থাকতাম।তাই এব্যাপারে নিবির ভাইয়া কিছু জানেনা।পরে অবশ্য আমার জন্যই সবাই ঢাকা শিফট করেছিল।

অনেকদিন পরে শুনেছিলাম নিহানের জামিন হয়ে গেছে।তার কিছুদিন পরেই ও সুইসাইড করেছিল।কিন্তু কোন তা এখনো অজানা।

আমি এতদিন ভাবতাম হয়ত নিহানই আমার প্রথম প্রেম ছিল।কিন্তু পরে বুঝেছি যে ও আমার মোহ ছিল আর নিবির ভাইয়া ছিল আমার প্রথম প্রেম।

নিহানকে যে আমি পুরোপুরি ভুলতে পেরেছি তা না।আজও সেই রাতের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে ওঠে আমার।কী অসহ্য ছিল সে যন্ত্রনা।সেদিনের সবকিছু হয়ত আমি সহ্য করে ছিলাম।কিন্তু আজ যদি নিবির ভাইয়া আমায় কোনো কষ্ট দেয় তাহলে সেটা আমি সামলাবো কী করে।

নিহান সুইসাইড করার আগে আমার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছিল।যেটা আমি অনেক পরে পেয়েছিলাম।
ওখানে ও বলেছিল যে আমার ওপর করা অন্যায় নাকি ওকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে।তাই সে আর সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।

এখনো মাঝেমাঝে নিহানের মৃত্যর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয়।

--------------

আজ ভার্সিটি শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি।আজ ভাইয়া নিতে আসবে না।আর আজ একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।তাই খানিকটা রাস্তা হেঁটেই এগিয়ে গেলাম।

ওখানেই দেখলাম কথা আপু আর নিবির ভাইয়া একসাথে হাত ধরে হাঁটছে।না চাইতেও চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
আমাকে দেখেই নিবির ভাইয়া কথা আপুর হাত ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল

---- আমাকে যখন কথার সাথে দেখে এতটাই খারাপ লাগছে তাহলে সেদিন না করে দিলি কেন?
নাকি তুই কখনো আমায় ভালোই বাসিসনি।আমি কী শুধুই তোর মোহ ছিলাম।

---- না,,,,আপনি আমার মোহ ছিলেন না। আপনি আমার ভালোবাসা ছিলেন আমার প্রথম প্রেম ছিলেন।কিন্তু আমি শুধুই আপনার মোহ ছিলাম।ক্ষণিকের মোহ।যা কিছু সময়ের জন্য আমার প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল।কিন্তু তা তো স্থায়ী ছিলনা।কখনো হতো না।
বরং আপনাকে বিয়ে করলে নিজেকে পস্তাতে হতো।

আমার কথাগুলো শুনেই নিবির ভাইয়া মাথা নামিয়ে নিলেন।আমার কথাগুলো যে ভুলনা সেটা উনি বুঝেছেন।

নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।খানিকক্ষণ পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। আমি দ্রুত ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে নিলাম।

সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি ছেলে ও মেয়ে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, এরা নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে এরা।

আকাশের দিকে তাকিয়ে এই বৃষ্টিফোটাকে সাক্ষী করে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই চাইলাম যেন,এদের প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পায়।

(সমাপ্ত)
[+] 2 users Like Yourpriya's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
অপূর্ব !!

অপরূপ গল্প !!

clps clps
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#23
এরকম আরো চাই !! Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#24
দিনশেষে যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে নীড়ে ফেরে তখন বুঝি গোধূলি টাকে এত সুন্দর লাগে।
সবে সূর্য ডুবেছে।চারিদিকে এখনো সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান।

---- আফরা!

বিকেলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।তখনই রাহাকে দেখে বেশ অবাক হলাম।

---- রাহা,তুই এসময়।

---- তুই এমন কেন রে?

---- কেমন!

---- নিবির ভাইয়া তো তোকে জন্মেও কোনোদিন পাত্তা দেয়নি।অথচ তার পিছনে তো আঠার মতো লেগে থাকতি। আর প্রহর ভাইয়া এতদিন ধরে তোর সাথে শুধু একটু কথা বলতে চাচ্ছে । আর তুই তার সাথে কথা তো বলিসনি উল্টো ফোনটাকেও বন্ধ করে রেখেছিস।

---- আমি এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায়না,রাহা।

---- আসলে কী জানিস তো, তুই প্রচন্ড বড় একটা ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছিস।হতে পারে নিবির ভাইয়া তোর প্রথম প্রেম কিন্তু সে কখনোই তোকে বোঝেনি।তুই শুধু তাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছিস।তুই তো একবার প্রহর ভাইয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারিস।

---- আমি প্রচন্ড ক্লান্ত, রাহা।এই ভালোবাসা,প্রেম এগুলো যে আমার জন্য না।

---- তোর সাথে তো কথা বলাই বৃথা।

--------------

রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে।ভাইয়া এখনো আসেনি।ভাইয়া কখনোই এত রাত করে বাড়ি ফেরেনা।কিন্তু আজ এত লেট কেন করছে?
হাসপাতালে কোনো ইমার্জেন্সি থাকলে আমাকে ফোন করে বলে দেয়।কিন্তু আজ ভাইয়ার ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।

প্রায় এগারোটার দিকে ভাইয়া আসল।

---- তুই কিরে ভাইয়া,এত রাত করে ফিরবি একবার ফোন করে বলতে তো পারতি।

---- সরি বনু, ফোনটা না বন্ধ হয়ে গেছে।আমি একটা ঝামেলায় পড়ে গেছিলাম।আমি ফোনটা চার্জিং এ দিয়ে আসি।

---- তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খাবার গরম করে আনছি।

রান্নাবান্না কখনোই পারতাম না।একমাত্র মেয়ে বলে কখনোই কিছু করতে হয়নি।তবে এখন টুকটাক পারি।ভাইয়া একটা মেয়েকে রেখেছে।সে রান্নাসহ ঘরের সব কাজ করে দিয়ে যায়।

আমি আর ভাইয়া বসে খাবার খাচ্ছিলাম।তখনই ভাইয়ার ফোনটা বেজে উঠল।আমি চার্জিং থেকে ফোনটা নিয়ে এলাম।

ওপাশ থেকে কী বললো তা শুনিনি তবে ভাইয়ার কথাটা এমন ছিল

---- লিসেন,আমারও একটা পরিবার আছে, পারসোনাল লাইফ আছে।আপনার মেয়ের জন্য তো আমি সেগুলো স্পয়েল করতে পারবনা।

বেশ রেগে কথাগুলো বলে ভাইয়া ফোনটা কেটে দিল।

---- কী হয়েছে ভাইয়া।

---- আরে আমাদের হাসপাতালে একটা মেয়ে এসেছে নতুন।এবছর ই চাকরিতে ঢুকেছে।মেয়েটা তো একদম পিছনে পড়ে আছে। আজ তো আমাকে সবার সামনে প্রোপোজ করছিল। রিজেক্ট করেছি বলে সুইসাইডই করে নিয়েছে।

---- মেয়েটা ভালো হলে তো বিয়ে করে নিতে পারিস।

---- আর যাই হোক ঐ সাইকো মেয়েটাকে তো আমি বিয়ে করব না।

-------------

রাতে শুয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি।ঘুম আসছেনা।
বারবার বিকেলে রাহার বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে।ভালোবাসার মানুষের থেকে অবহেলা পাওয়ার কষ্টটা আমি জানি, সেই একই কষ্ট কী আমি প্রহরকেও দিচ্ছি।
অবশেষে সবকিছু সাইডে রেখে প্রহরকে একটা মেসেজ করলাম।উনি দেখলেন ঠিকই কিন্তু কিছু বললেন না।
এবার আমি উনাকে কল করলাম।উনি খুব দ্রুত ফোনটা ধরলেন,যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলেন।

আমি সরাসরি উনাকে বললাম

---- আমার সাথে একবার দেখা করবেন, প্লিজ।আমি লোকেশন বলে দিবো।

উনাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।আমি জানি উনি আসবেন।

আজ ভার্সিটি নেই।তাই ঠিক করেছি বিকেলে প্রহরের সাথে দেখা করতে যাবো।

কিছুক্ষন আগে ভাইয়া ফোন করেছিল, একটা ফাইল রেখে গেছে সেটা যেন হাসপাতালে দিয়ে আসি।

আমিও ফাইলটা নিয়ে গেলাম।উদ্দেশ্য ঐ মেয়েটাকে দেখা।

ভাইয়ার কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছি।ভেতরে কিছু লোক আছে।যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা বুঝতেছি না।ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি ধরছেও না।

অবশেষে ঢুকেই গেলাম।কতক্ষন এভাবে থাকব।

---- ভাইয়া আসব।

কথাটা বলা মাত্রই ওখানে উপস্থিত সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি একটা এলিয়েন।

---- হুম,আয়।

ভাইয়া সবাইকে বাইরে চলে যেতে বলতেই সবাই চলে গেলো।

---- ওরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন ভাইয়া।

---- তুই তো জানিস আমি কাজের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস।তাই এরা আমাকে ভয় পায়।তুই এতটা ফ্রি হয়ে কথা বলায় একটু অবাক হয়েছে।

---- একটা কথা বলব, ভাইয়া।

---- বল।

---- আমাকে কালকের ঐ আপুটার সাথে দেখা করাবি।

---- তুই পাগল নাকি,আমি এখন ওখানে গেলে ও আবার পাগলামি শুরু করবে।

---- তোর যাওয়া লাগবেনা।আমি একাই যাবো।আর এটাও বলব না যে আমি তোর বোন।

---- কিন্তু,,,

---- কোনো কিন্তু না।

---- আচ্ছা, ৩০২ নাম্বার কেবিনে আছে।

আমি ভাইয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে ৩০২ নং রুমে ঢুকলাম।ওখানে ঐ আপুটা আর একজন ছিল।আপুটা বেশ সুন্দর, ভাইয়ার জন্য একদম পারফেক্ট।
ওরা আমায় দেখে বেশ অবাক হলো।আমায় বলল

---- তুমি কাউকে খুঁজছো?

---- না,আমি আসলে একজনের সাথে এখানে এসেছিলাম।সে তার কাজে ব্যস্ত তাই আমি ভাবলাম কারো সাথে গল্প করে আসি।তাই এখানে এলাম।আপনাদের সমস্যা হলে চলে যাচ্ছি।

---- না না।চলে যাবে কেন?
বসো আমরা গল্প করি।

বেশ খানিকক্ষন ওদের সাথে বসে গল্প
করলাম। আপুটার নাম অনন্যা।আমার তো ওকে বেশ ভালোলেগেছে।

কেবিন থেকে বেড়িয়ে ভাইয়ার রুমের সামনে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গেলাম।পাশে থাকা টেবিলে লেগে কপালে বেশ খানিকটা কেটে গেলো।মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠলাম।তখনই ভাইয়া রেড়িয়ে এলো।

ছোটোবেলা থেকে শারীরিক আঘাতটা পায়নি বললেই চলে।আমার কপালে রক্ত দেখে ভাইয়া পুরো হাসপাতাল মাথায় তুলল।

" চাকরির পাশাপাশি আব্বু একটা বিজনেসও করত।কিন্তু ভাইয়ার পক্ষে হাসপাতাল, বিজনেস একসাথে মেনটেইন করা সম্ভব নয় বলে, ঐ বিজনেসের সব টাকা এই হাসপাতালে ইনভেস্ট করেছে।তাই এখানে ভাইয়ার যথষ্ট পাওয়ার আছে।"

ভাইয়া রাগী হলেও ভাইয়াকে কেউ এরআগে এতটা রেগে যেতে দেখেনি।

-----------

ভাইয়া আমায় নিয়ে বাসায় চলে এলো।বাসা থেকে বেড়োতে একদম নিষেধ করছে।
তাই আর প্রহরের সাথেও দেখা করতে যাওয়া হবেনা।তাই উনাকে ফোন করলাম।

---- আমি আজ আপনার সাথে দেখা করতে পারবনা।

---- কেন শুভ্রপরী,কী হয়েছে?

---- আসলে, আমি পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পেয়ে,,,,,

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।উনার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো আমার বেশ ভালোলাগে।

রাতে বসে বসে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া আর কথা আপুর একটা ছবি সামনে এলো।
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু এই মন খারাপকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা।নিজেকে শক্ত হতে হবে।

অনেকদিন প্রহর কোনো মেসেজ দেয়না।অবশ্য আমি না করেছিলাম।সে আবার আমার সবকথা খুব মানে।

মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল।আজ আব্বু- আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।রাতে আব্বু দুই-তিনবার দেখতে আসতো আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
কেনো আব্বু- আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।

-------------- 

পরদিন সকালে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম।সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা।কীভাবে যে একবছর কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।

বাড়ি থেকে বেড়োতেই যাচ্ছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া এসে বললেন-

---- কোথায় যাচ্ছিস, আফরা।

---- ভার্সিটি।

---- ভার্সিটি যেতে হবেনা।আমার সাথে হাসপাতালে চল।

----হাসপাতালে কেন, ভাইয়া।

---- আম্মুর শরীরটা খারাপ।তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।

----মামির আবার কী হয়েছে।

হাসপাতালে মামির কাছে বসে আছি।মামির একটা ছোটখাটো হার্টএটাক হয়েছে।তবে এখন সুস্থ।মামি আমার হাতটা ধরে বলল

---- আমার একটা কথা রাখবি, আফরা।নিবিরকে বিয়ে করবি?

মামির কথার উত্তরে কী বলা উচিত বুঝতে পারলাম না।তখনই,,,,

(চলবে)

পর্ব-০১


( গল্পটা যেমন আপনারা পড়তে ভালোবাসেন তেমনি আমি এই গল্পটা লিখতে ভালোবাসি।না লিখে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।তাই লিখেই ফেলাম।নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করব তবে একদিন পরপর দেওয়ার চান্স বেশি।এবার হ্যাপি এন্ডিং দেবো,প্রমিস।
গল্পটা সিজন ১ না পড়লে বুঝবেন না।যারা নতুন তারা আগে সিজন ১ পড়বেন।ধন্যবাদ।)
[+] 1 user Likes Yourpriya's post
Like Reply
#25
পর্ব-০২ +০৩


তখনই মামি আবারও বলল

---- আমি জানি আফরা তুই নিবিরকে ভালোবাসিস। কিন্তু আমি চায়না তুই ওকে বিয়ে কর।ওর সাথে তুই কখনো ভালো থাকবিনা আফরা।

---- তুমি কী করে জানলে,মামি।

---- আমি সব বুঝিরে,মা।কথা যে খারাপ মেয়ে না সেটা আমি জানি কিন্তু ইদানিং ও যেটা করছে সেটা ও ঠিক করছেনা।

---- কথা আপু কী করেছে, মামি।

---- আমার ছেলেটার মাথাটা খারাপ করে দিয়েছে ও। দেখলিনা আমার এমন সময় ও ছেলেটা কেমন কথার সাথে চলে গেলো।

মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম।

---- আফরা,দুপুর তো হয়ে গেলো তুই বরং বাড়ি চলে যা। দাঁড়া আমি প্রহরকে বলি ও তোকে দিয়ে আসবে।

---- উনি এখানে আছে।

---- হুম।

------------

প্রহরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
যেহেতু এসেছি তাই ভাবলাম কথা বলেই যাই।

---- কী খাবে বল, শুভ্রপরী।

---- আমাকে আফরা বলে ডাকলে ভালো হতো।

---- আচ্ছা।কী খাবে বল।

---- কফি।

---- এখন তো দুপুর।দুপুরবেলা কে কফি খায়।

---- আমি।কোল্ড কফি ওর্ডার করেন।

---- আচ্ছা।
তুমি কাল কিছু বলতে চেয়েছিলে তাইনা।

---- হুম,সরি।

---- সরি কেন?

---- আপনাকে এতদিন ধরে এত বাজে ভাবে ইগনোর করার জন্য।আর মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে খারাপ বিহেব করার জন্য।

উনি খানিকক্ষন চুপ থেকে বললেন

---- নিবিরকে তুমি খুব ভালোবাসো, তাইনা।

---- হয়তো বা। কিন্তু আমি খুব চেষ্টা করছি তাকে ভুলে যাওয়ার।

---- লিসেন আফরা, সব মানুষের লাইফেই প্রথম ভালোবাসাটা স্পেশাল হয়।কিন্তু তাই বলে যে মানুষ দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারেনা, সেটা নয়।আমি তোমাকে বলছিনা যে তুমি আমাকে একটা চান্স দাও।আমি বলছি তুমি নিজেকে একটা চান্স দাও।
তোমার লাইফে সত্যি এমন একজনের দরকার যে তোমাকে অন্তত মেন্টাল সাপোর্ট দিবে।

----আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি,কিন্তু আমি সত্যি নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা।

---- তুৃমি টাইম নাও।নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলে দেন বিয়ে নিয়ে ভেবো।বাট এখন তোমার সত্যি একজনকে দরকার।

---- আমরা কী বন্ধু হতে পারি।

---- সিরিয়াসলি?

---- হুম।

---- আমাকে তুমি বন্ধু হিসেবে সবসময় নিজের পাশে পাবে।আমি নিবিরের মতো তোমার ফিলিংস নিয়ে কখনো অবহেলা করব না।

 তার কথার উত্তরে আমি শুধু মুচকি হাসলাম।তারপর বললাম

----আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?

---- বলো না।

---- আপনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?

---- নিবিরদের বাসায়।

---- কিন্তু আপনার সাথে যেদিন আমার দেখা হয়েছিল তারও অনেক আগে থেকেই তো আপনি আমায় মেসেজ পাঠাতেন।

---- আমি সেদিনের কথা বলিনি।তোমার মনে আছে নিবিরের বার্থডের কথা।যেদিন তোমার থেকে কথার গায়ে পানি পড়েছিল।ঐদিন দেখেছিলাম।

---- আপনি তখন ওখানে ছিলেন।

---- হুম। আমি তখন এখানেই ছিলাম।বাবা- মা পরে এসেছিল।

---- ওহ্।আমার মনেহয় এখন বাড়ি ফেরা উচিত।

---- হুম,চলো তোমাকে রেখে আসি।

প্রহর আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।কেন জানি এই মানুষটার সাথে কথা বললেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়।বারবার এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে মন চায়।এটা কী নতুন কোনো অনুভূতির সূচনা?

----------------

বাসায় এসেছি দীর্ঘক্ষন। দুপুরে ভাইয়া বাসায় আসেনি।রাতেও ফিরতে দেরি হবে।

বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে সোফায় বসে মাত্র টিভিটা অন করেছি।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দেখি নিবির ভাইয়া।প্রচন্ড বিধ্বস্ত চেহারা উনার।চোখ মুখ ফুলে একদম লাল হয়ে আছে।

ভেতরে ঢুকেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।

---- নিবির ভাইয়া,কী হয়েছে আপনার।

---- আফরা,কথা আমাকে ঠকিয়েছে।

---- মানে?

---- কথা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে।

----কিন্তু কথা আপু এটা কেন করল।

---- কারন ই ছেলের প্রচুর টাকা।তুই তো জানিস কথা একটা মিডিলক্লাস ফ্যামিলি থেকে আসে।ওর বাবা,মা ওর পড়ার খরচ দেয় না।এতদিন আমি ওর সব খরচ দিতাম।এখন ওর পড়া শেষ তাই নাকি আমাকে আর লাগবেনা ওর।

কথাটা বলেই নিবির ভাইয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।ঠিক কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে এভাবে কাঁদে তা আমার জানা নেই।

---- আমায় বিয়ে করবি, আফরা।

---- এসব আপনি কী বলছেন?

---- আমিও কথাকে দেখাতে চাই যে আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচতে পারি।

---- বেশ সুন্দর একটা কারণ দেখালেন।আপনি আমাকে কী মনে করেন বলুনতো যখন আপনার প্রয়োজন হয় তখন আমাকে কাছে টেনে নেন।আর যখন মনে হয় ছুড়ে ফেলে দেন।
যখন আপনার কাছে কথা আপু ছিল তখন আমাকে আপনার প্রয়োজন হয়নি।আজ কথা আপু নেই বলেই আপনি এমন করছেন।

---- আফরা!

---- একদম আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না, নিবির ভাই।

---- আফরা তুই,,,

---- আপনি খুব ভালো করেই জানেন নিবির ভাইয়া যে আপনার সামনে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।গত তিন বছর তো কম কষ্ট, অবহেলা দেননি আমায়।আজ যখন আপনার ভালোবাসা আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তখন আপনার আমার কথা মনে পড়ছে।
আপনি হয়ত ভাববেন যে আমি স্বার্থপর।তবে তাই।একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার পেছনে কীভাবে ঘুরেছি আমি।আর আপনি কী করেছেন আমার সাথে।

---- আমাকে কী একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?

---- না।আপনি এখন থেকে চলে যান।কেউ দেখলে ভুল ভাববে।

,,,,,,,,,,,,

মনটা আজ বড্ড পুড়ছে।যত যাই হোক নিবির ভাইয়ার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারিনা।প্রথম ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।আমি কী কখনো নিবির ভাইয়াকে ভুলতে পারব।

রাত হয়ে গেছে।খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিবির ভাইয়া এখন কী করছে।
একাএকা থাকতে ভালোলাগছিল না।তাই আরশিকে ডেকে পাঠালাম।

আরশির সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম।কেন জানি এখন আরশির এখানে আসাটা ওর মা পছন্দ করেনা।তবুও ও আসে।

রাতে আমি আর ভাইয়া একসাথে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম।

একদম ঘুম আসছেনা।যত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে পারি ততই ভালো।ঘুম না আসলে বারবার বাবা- মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে।বড্ড কষ্ট হয় তখন।আচ্ছা কেমন হতো যদি সন্তানের আগে বাবা মা মারা না যেতো।

তখনই প্রহরেরর ফোন এলো।না চাইতেও মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল।এখন আমার মন ভালো করতে এটাই দরকার।

---- কী ব্যাপার ম্যাডাম,মন খারাপ নাকি?

---- নাতো।

---- তাহলে যে অন্য দিনের মতো বকা দিলেন না।

---- এমনি।আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?

---- বলো।

---- আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কী?

---- ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা মুখে বলে বোঝানো যায় না।ভালোবাসা ফিল করে নিতে হয়।

---- আপনি কী আমাকে ভালোবাসেন নাকি আপনার আমাকে ভালোলাগে।

---- আমার তোমাকে ভালোলাগে এটা ঠিক তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা।কিন্তু তোমার প্রতি আমার ফিলিংটা ভালোবাসার থেকেও অনেক বেশি কিছু।

---- আপনি কী কোনো জন্মে সাহিত্যিক ছিলেন।

---- সাহিত্যিক হতে যাবো কেন আমি তো ডাক্তার।

---- আপনিও ডাক্তার!

---- হুম।

---- আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে রাখি।

---- গুড নাইট।

---------------

সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে এসে দেখি চারিদিকে রক্ত ছিটিয়ে আছে।সামনে তাকিয়ে দেখি,,,,

( চলবে)

#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৩
লেখিকা- #খেয়া 

সামনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার হাতেও রক্ত লেগে আছে।

আমাকে দেখে ভাইয়া বলল

---- ভয় পাসনা, বনু।এগুলো এমনি রক্ত।

---- মানে?

---- ব্লাডগুলো একটা টেস্টের জন্য হসপিটালে এসেছিল।আমি একটা দরকারে বাসায় নিয়ে আসছিলাম।কিন্তু কীভাবে যেন পড়ে গেল।

---- টেস্টর জন্য এত ব্লাড?

---- হুম।

--- আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

---- তুই যা। আমি এগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছি।

---- আচ্ছা। 

-----------------

ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম।একটাও রিক্সা পাচ্ছি না।তখন ই একটা গাড়ি এসে থামল আমার সামনে।গাড়িটা প্রহরের ছিল।

---- আমি নামিয়ে দিয়ে আসি।

---- আপনি?

---- হুম।আসতে পারো, খেয়ে ফেলবোনা তোমায়।

---- আচ্ছা।

---- আচ্ছা তুমি কী সত্যি আফরা না তার জমজ বোন।

---- মানে?

---- আমি তো জানতাম আফরা অনেক বাঁচাল আর চঞ্চল ছিল।

---- আফরা চঞ্চল ছিল।কিন্তু এখন নেই।

---- ভালো।আমার কিন্তু শান্ত বাচ্চা পছন্দ।তুমি শান্ত হলেই তো আমার বাচ্চা শান্ত হবে।

---- আমার সাথে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক কী?

---- মা যেমন বাচ্চা তো তেমনই হবে।

---- আপনার কী এসব কথা বলতে বাধে না।

---- অবিয়েসলি না।বাধঁলে তো আর বোলতাম না।
যাইহোক আপনার ভার্সিটি এসে গেছে।

---- হুম।বাই।

----------------

ভার্সিটিতে এসেই দেখি সবার মুখে একই কথা " কথা আপুর বিয়ে"।ইতিমধ্যে পুরো ভার্সিটি জানাজানি হয়ে গেছে।

 রাহা এসে বলল

---- আমি অনেক খুশি হয়েছি জানিস।বেশ হয়েছে, এবার নিবির ভাইয়া বুঝবে মজা।

---- এভাবে বলিস না, রাহা।

---- রাখ তো তোর আবেগ।এখন বুঝবে ভালোবাসা না পাওয়ার কী কষ্ট।

---- আচ্ছা রাখ এসব। চল ক্লাসে যায়।

---- চল।

 ভার্সিটি শেষে আমি রাহাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।আজ নাকি ভাইয়া আমাদের ট্রিট দিবে।খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে আছি।দেখলাম পাশের একটা টেবিলে অনন্যা আপু ও আরো অনেকে বসে আছে।আমাদেরকে ভাইয়ার সাথে ওরা বারবার কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিল।
 তখন ভাইয়ার একটা ফোন আসায় ভাইয়া বাইরে চলে গেলো।

তখনই অনন্যা আপুর কিছু ফ্রেন্ড আমাদের কাছে এসে বলল

---- এইযে পিচ্চি বাবুরা একদম আবির ভাইয়ার থেকে দূরে থাকবে।এইযে এই মেয়েটাকে দেখছো না ও অনন্যা।আবিরের ওয়াইফ।

কথাটা শোনা মাত্র আমার আর রাহার রিয়েকশনটা যাদুঘরে তুলে রাখার মতো।

"অনন্যা আপু যেহেতু আমায় আগে থেকে চিনতো তাই ও বারবার সবাইকে নিষেধ করছে এসব বলতে কিন্তু ওরা তো বলেই যাচ্ছে।"

তখন ভাইয়াও এসে গেছে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম

---- দ্যাট'স নট ফেয়ার, ভাইয়া। তুই বিয়ে করে ফেললি একবার বললিও না।কেন রে তোর বউকে কী আমি খেয়ে ফেলতাম।

---- আমার বউ! তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে,আফরা।

---- আরে না,দেখো ওরাই তো বলল যে এই অনন্যা আপু তোমার বউ।

রাহার কথায় ভাইয়া অনন্যা আপুর দিকে তাকাতেই তার সব ফ্রেন্ডরা হাওয়া হয়ে গেলো।

অনন্যা আপু তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে।অনেক সাহস সঞ্চার করে ভাইয়াকে প্রশ্ন করল

---- আফরা আপনার কেমন বোন লাগে?

---- নিজের বোন লাগে, তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে?

---- না,না।আমার তো ভালোই লেগেছে। বিয়ের পর তো আপনার বাড়িতে একা থাকা লাগবেনা।

আপুর কথার বিপরীতে ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো।

---------------

বিকেলে বাসায় বাসে বোর হচ্ছিলাম তাই রাহাকে নিয়ে ফুচকা খেতে বেড়োলাম।

রাহাকে প্রহরের ব্যাপারে অল্প কিছু বলছি আজ ভাবলাম ওকে সবকিছুই বলব।ওর থেকেই জানতে চাইব যে আমার কী প্রহরের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ।

 ফুসকার দোকানে ফুসকা খেয়ে রাহাকে নিয়ে একটা মলে গেলাম।টুকটাক কিছু কেনার জন্য।
মলে একটা চুড়ির দোকানে প্রহরকে দেখলাম।ওকে ওখানে দেখে খুশি হয়েও যেন হতে পারলামনা। কারন ওর সাথে একটা মেয়েও ছিলো।দুজন পছন্দ করে চুড়ি কিনছিল।

এতদিনে প্রহরের প্রতি যে বিশ্বাস জন্মেছিল তা যেন নিমিষেই ভেঙে গেল।সব ছেলেরা বুঝি একই রকম হয়?

ওখান থেকে সরে আসছিলাম তখনই প্রহর আমাদের দেখে নেয়।ও আমাকে বলে

---- আফরা তুমি ভুল বুঝছো।আমি তোমাকে সবটা,,,,

 ওর কোনো কথা না শুনেই বাইরে চলে এলাম।প্রহর ও আমার পিছন পিছন বাইরে চলে এলো।

বাইরে ভাইয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।আমি কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে গেলাম।

ভাইয়া রাহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি আমাদের বাড়ির রাস্তায় ঘুরিয়ে নিলো।কিছুক্ষন পর আমায় বলল

---- ছেলেটা কে ছিল, আফরা।

---- আমি ভাইয়াকে প্রহরের ব্যাপারে সবটা খুলে বললাম একদম শুরু থেকে।

ভাইয়া আমায় শুধু বলল

---- তোর মনে হয় ওকে একটা চান্স দেওয়া উচিত।আর নিবিরকে মনে রাখাটা তোর বোকামি হবে।

---------------

পরেরদিন ভার্সিটি তে ঢোকা মাত্র নিবির ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বলল

----আফরা, প্লিজ আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।

---- হাতটা ছাড়ুন , নিবির ভাইয়া।

ইতি মধ্যে মাঠে প্রচুর লোক জমা হয়েছে। সবাই তামাশা দেখতে ব্যস্ত।আমি অনেক চেষ্টা করেও যখন হাত ছাড়াতে পারলাম না তখন নিবির ভাইয়াকে একটা চড় মেরে ওখান থেকে চলে এলাম।
নিবির ভাইয়া যেন এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।

প্রচন্ড খারাপ লাগছিল কাজটা করে।মনটাই খারাপ হয়েগেছিল। তাই ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম।রিক্সা না পাওয়ায় হেঁটেই যাচ্ছিলাম।তখনই আমায় পেছন থেকে কেউ ডাকল।

লোকটাকে চিনতে আমার বেশ সময় লাগলেও ঠিকই চিনলাম।ও রাফাত, আমার ক্লাসমেট ছিল একসময়।নিহানের বেস্টফ্রেন্ডও ছিল।

---- আমাকে চিনতে পেরেছিস, আফরা।

---- রাফাত, তুই এখানে।

---- আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমায় চিনবিনা।

---- না তা কেন।

কথা বলতে বলতে দুজন রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলাম তখনই একটা গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে গিয়ে াা জোরে ব্রেক কসল। গাড়িরা প্রহরের।কিন্তু উনি এখানে কেন?

উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে এসে বললেন

---এই ছেলেটা কে?

---- আমার ফেন্ড রাফাত।

উনি রাফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন

---- হ্যালো।আমি প্রহর,,আফরার উডবি।আমার একটু কাজ আছে ওর সাথে তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি।

বলেই উনি হাত টেনে আমায় গাড়িতে বসালেন।

---- আপনি আমার কোন জন্মের উডবি হন।

---- স্টপ।

---- স্টপ কী হ্যা।আপনি আমার নামে এগুলা কী বলে বেড়ান হ্যা।

---- আর একটাও বাজে কথা বললে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলব।বুঝলে।

---- আপনি তো খুব ডেঞ্জারাস।

---- সেটা আজ বুঝলে।আমি কিন্তু খুব রোমান্টিকও।ডেমো দেখাবো নাকি।

---- একদম না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?

---- আমার শ্বশুরবাড়ি।

---- মানে?

---- তোমাকে বাসায় রাখতে যাচ্ছি, ইডিয়েট।আর তুমি ঐ ছেলেটার সাথে কী করছিলে?ও নিহানের ফ্রেন্ড ছিল না, যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে দিত।

---- ও এমন ছেলেনা।

---- তবুও তোমার ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই, না আফরা।

উনার এই একটা কথায় আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।এ যে এক নাম না জানা অদ্ভুত অনুভূতুি।

(চলবে)

(কারো কী বোনাস পার্ট লাগবে?)
[+] 1 user Likes Yourpriya's post
Like Reply
#26
Rainbow 
পর্ব-৪(বোনাস)

প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে যাওয়া খুব কঠিন একটা কাজ জানি।তবুও আমি তোকে বলব তুই নিবিরকে ভুলে যা।ও তোর জন্য ঠিক না।

---- কিন্তু ভাইয়া প্রহর কী আমার জন্য ঠিক।

---- বনু, সেটা নাহয় তুই নিজেই দেখে নে।ওর সাথে টাইম স্পেন্ড কর, ওকে বোঝার চেষ্টা কর।

---- হুম।

---- আমি যাচ্ছি।

---- আচ্ছা।

আজ ভাইয়ার কথা শুনে ঠিক করলাম আমি প্রহরকে একটা চান্স দিব।হয়ত সে ভালোবাসার প্রতি আমার ধারনাটাই পাল্টে দিবে।

রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।প্রহর নাকি আজ আমায় নিয়ে কোথাও যাবে।প্রায় দশ মিনিট পর উনি আসলেন।

---- উঠে এসো।

---- আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন?

---- তোমাকে মেরে ড্রেনে ফেলে দিব আজ।

---- এগুলা কেমন কথা!

---- তো এমন বিহেব করছ কেন।আমি কী তোমাকে কিডনাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।

---- আমি তো নরমালি,,,

---- পুরো রাস্তা যদি আর একটাও কথা বলেছো তো,,,,

---- আচ্ছা একদম চুপ করে থাকব।

---------------

ঘন্টাখানিক পরে উনি আমায় একটা নদীর পাড়ে নিয়ে এলেন।জায়গাটা বেশ সুন্দর,নিরিবিলি।অনেকটা গ্রাম টাইপ।

এতদিন পরে এমন খোলা হাওয়া পেয়ে মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।

---- ধন্যবাদ, আমার মনটা ভালো করে দেওয়ার জন্য। এই ভালোটা কতক্ষন স্থায়ী হবে জানিনা তবে ধন্যবাদ।

---- সারাজীবন এভাবে তোমার মনটা ভালো রাখার অধিকার দিবে আমায়,আফরা।

তার কথার পরিপেক্ষিতে আমি চুপ রইলাম।

---- ভয় পেয়োনা,আফরা।তুমি আমার ক্ষণিকের মোহ নও। তুমি আমার ভালোবাসা।তোমাকে আমি ভালোবাসি, আফরা।প্রচন্ড ভালোবাসি।

---- এত কম সময়ে কী কাউকে এতটা ভালোবাসা যায়?

---- ভালোবাসা মন থেকে আসে।এখানে সময়টা ফ্যাক্ট না।
 তুমি কি এখনো আমায় বিশ্বাস করতে পারছোনা, আফরা। তোমার কী আমার প্রতি এ কদিনে একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?

---- হ্যা জন্মেছে তবে সেটা ভালোবাসা কিনা তা আমি জানি না।আপনার সাথে থাকতে আমার ভালোলাগে।আপনাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।আর আপনি যদি আমাকে এতটাই ভালোবাসেন তাহলে কাল ঐ মেয়েটা,,,,

---- মেয়েটা রাহি ছিল।আমার কাজিন।তোমার জন্য চুড়ি কিনতে গিয়েছিলাম কিন্তু একটাও চয়েস হচ্ছিল না।তাই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।আর ও অনেক ছোট।

---- সরি।

---- আমি কিন্তু আবার কাজিনকে ভালোবেসে বাঁশ খায়না।

---- আপনি সবকিছুতে নিবির ভাইয়াকে কেন টানেন বলুনতো।

---- আচ্ছা সরি।আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরটা পায়নি।

---- আমার একটু সময় লাগবে।

---- তুমি সময় নাও কিন্তু এতটাও সময় নিও না যেন পরে পস্তাতে হয়।

---- হুম।

----------------

একটু আগে মামি ফোন করেছিল।নিবির ভাইয়া আর প্রহরের মাঝে যেন ঝামেলা হয়েছে। তারা নাকি মারপিট ও করেছে।
আমি ঠিকই বুঝলাম যে ঝামেলাটা আমার কারনেই হয়েছে।

এতকিছু না ভেবে আমি নিবির ভাইয়াকে ফোন করলাম।

---- বল,আফরা।

---- আপনার সমস্যাটা কী, নিবির ভাই।

---- মানে?

----প্রহরের সাথে ঝামেলা বাধিয়েছেন কেন?

---- ওর জন্য কষ্ট লাগছে বুঝি।ও কোন সাহসে আমার থেকে তোকে কেড়ে নিতে চাই।

----আমি কখনো আপনার ছিলাম না নিবির ভাইয়া।তাই আপনার থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না।

---- কিন্তু আমি তো তোকে আমার বানাতে চাই।

----কিন্তু আমি আপনার হতে চায়না।একটা সময় তো আপনার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি কী করেছিলেন।

---- প্রতিশোধ নিচ্ছিস।

---- হয়ত।নিবির ভাই প্লিজ নতুন করে আর কোনো ঝামেলা করেন না।আপনি নিজেও ভালো থাকেন আর আমাকেও ভালো থাকতে দেন।

ফোনটা রেখেই দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বিছানায় বসে পড়লাম।আর নিতে পারছিনা এসব।আজ যদি বাবা- মা থাকত তাহলে হয়ত এত কষ্ট পেতে হতো না।

একটা ভুল মানুষকে ভালোবাসলে বুঝি এত কষ্ট পেতে হয়।

 পরেদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে মামার বাসায় গেলাম।মামি ফোন দিয়েছিল, নিবির ভাইয়া নাকি কী পাগলামি শুরু করেছে।

মামির বাসায় গিয়ে সোজা নিবির ভাইয়ার রুমে গেলাম।চারিদিকে সবকিছু উল্টোপাল্টা হয়ে পড়ে আছে।মেঝেতে কাচের টুকরো ছিটানো।নিবির ভাইয়ার হাত থেকেও রক্ত ঝরছে।

---- এসব কী নিবির ভাইয়া।

---- আফরা, প্লিজ আমার হয়ে যা।তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।

---- হঠাৎ এতো ভালোবাসা কই থেকে এলো, নিবির ভাই।আপনি এসব শুধু মাত্র জেদের বসে করছেন।কথা আপুকে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য আমার সাথে এমন কেন করছেন?

---- আফরা!

---- বাস্তবে ফিরে আসুন নিবির ভাই।বাস্তবতা বড় কঠিন।বুঝতে শিখুন।শুধু অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করার জন্য অন্যের লাইফ নিয়ে খেলা বন্ধ করুন প্লিজ।  

---- তুই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আফরা।

----এখানে চলে যাওয়ার কোনো কথা আসছেনা ভাইয়া।আপনার জীবনে যার কেনো অস্তিত্ব নেই তার চলে যাওয়া নিয়েও আপনার কোনো প্রবলেম হবে না।

দ্বিতীয়বার আর ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস হলোনা।ঐ চোখে যে আমাকে মেরে ফেলার বিষ আছে।

আমি সরাসরি মামির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম

---- নিবির ভাইয়া এসব কেন করছে, মামি।

মামি আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

---- প্রহরের মা ফোন করেছিল।বলল ওদের নাকি তোকে খুব পছন্দ। ওরা তোকে প্রহরের বউ বানাতে চায়।প্রহর ও নাকি তোকে পছন্দ করে।আমাদের কোনো সমস্যা ছিলনা এটাতে।
কিন্তু নিবিরকে জানানোর পর থেকেই ও এসব উল্টোপাল্টা কাজ করছে।

---- তুমি একটু নিবির ভাইয়াকে বোঝাও। 

---- আমার ছেলেটার আজ ঐ অবস্থা শুধু কথার জন্য।ঐ মেয়েটা কখনো ভালো থাকবেনা দেখিস।

---- মামি,এখন তুমিও যদি তার খারাপ চাও তবে তোমার আর তার মধ্য পার্থক্য রইল কই।

---- তুই হয়ত ঠিকই বলেছিস।

---- আমি আসছি, মামি।

---- সাবধানে যাস।

---- হুম।

----------------

নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় এসেই দেখলাম কথা আপুকে।সাথে একটা ছেলেও আছে।হয়ত ওর হাসবেন্ট হবে। দুজন কী সুন্দর হাসছে।

মানুষকে ঠকানো মানুষগুলোই বুঝি দিনশেষে ভালো থাকে।নিবির ভাইয়া তো সত্যি কথা আপুকে খুব ভালোবাসতো।তাহলে কথা আপু এমনটা কেন করল?

আর নিবির ভাইয়া এমন পাগলামি কেন করছে।আমার জন্য নিবির ভাইয়া আর প্রহরের সম্পকর্টা খারাপ হয়ে গেল।এরপর এসব কতদিন চলবে।

এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম তখনই কেউ" আফরা " বলে চিৎকার করে উঠল।
তার চিৎকারে ধ্যান ভাঙল আমার। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ট্রাক খুব দ্রুতগতিতে আমার দিকেই আসছে।

আমার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো।এই বুঝি আফরা নামক মানুষটার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলো।এবার বুঝি সব সমস্যা মিটে যাবে।

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা আমার,,,,,

(চলবে)
[+] 1 user Likes Yourpriya's post
Like Reply
#27
পর্ব-০৫
  

ট্রাকটা আমার কাছে আসতেই কেউ আমায় টেনে সরিয়ে নিলো।
আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
মাথা তুলে সামনের দিকে তাকানো মাত্রই একটা থাপ্পর পড়ল আমার গালে।

অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকাতেই সামনে প্রহরকে দেখলাম।আমি কিছু বার আগেই সে বলা শুরু করল

---- তোমার কী কোনো সেন্স নেই।এভাবে কেউ রাস্তায় হাঁটে। মন কোথায় থাকে তোমার।

---- আমি,,,,,

---- জাস্ট সাটআপ।আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।চলো আমার সাথে চলো, হসপিটালে যেতে হবে।

---- হহহ,,,হসপিটালে কেন যাবো।

---- সাধে কী তোমাকে ইডিয়েট বলি।হাতটা যে কতটা কেটে গেছে দেখেছো।

" আসলেই হাতটা অনেকটা কেটে গেছে।খুব যন্ত্রনাও হচ্ছিল।আমার প্রতি উনার এত কেয়ার ভালোলাগলেও আজ উনার ওপর খুব অভিমান হলো।এমন অবস্থায় উনি আমায় থাপ্পর মারতে পারল।"

--------------

প্রহর আমাকে একটা হসপিটালে নিয়ে গেল।

---- এত হাসপাতাল থাকতে এখানেই নিয়ে আসা লাগল আপনার।

---- এখানে কী প্রবলেম?

----ভাইয়া আমায় এ অবস্থায় দেখলে খুব রেগে যাবে।

---- তাহলে তো ঠিকই আছে।তোমার ভাইয়ারও জানা উচিত যে তুমি রাস্তায় কেমনে হাঁটো।

---- ধুর।

ভেতরে গিয়ে একটা নার্স আমার ড্রেসিং করতে নিলেই প্রহর বললেন

---- গিয়ে ভালো কোনো ডাক্তারকে ডেকে আনুন।

---- এইটুকু তো উনি করে নিতে পারবেন।

---- স্টপ,আফরা আমি তোমার ব্যাপারে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।

"নার্স গিয়ে একটা ডাক্তারকে নিয়ে এলো।ওটা অনন্যা আপু ছিল।"
অনন্যা আপু খুব সুন্দর করে আমার ড্রেসিং করে দিলো।এখানে কম-বেশি সবাই আমাকে চিনে।
আমিও অনন্যা আপুকে বলে দিয়েছি যেন ভাইয়াকে কিছু না বলে।

কিন্তু ঐ নার্সটা গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এসেছে।আমার তো নার্সটাকে কাচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।

---- কী হয়েছে, বনু।

----কিছু হয়নি ভাইয়া, হাটতে গিয়ে পা স্লিপ করে পড়ে গেছিলাম।

আমার কথা শুনে প্রহর আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল

---- একদম মিথ্যে বলছে, ভাইয়া।আজ রাস্তায় এক্সিডেন্ট করতে মরতে বসেছিল।আমি না থাকলে এতক্ষণ স্বর্গে চলে যেতো।

---- এসব কী, আফরা। তুই এতটা বেখেয়ালি হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করিস।

---- ভাইয়া আমি আসলে,,,

---- তুই রাস্তায় কী করছিলি?

---- আরে ভাইয়া আপনার বোনের মনে হয় বাসায় থাকতে ভালোলাগেনা।তাই এইভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন।

প্রহরের কথায় ভাইয়া সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাট দিকে তাকালো।এতক্ষন অনন্যা আপু শুধু নিরব দর্শক থাকলেও এবার বলল

---- একদম না।ও শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে আমি গিয়ে কার সাথে থাকবো।

" অনন্যা আপুর কথায় ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু একদম মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাড়িয়ে গেলো।"
ভাইয়া প্রহরকে বলল

---- প্রহর, আমার না এখন একটা ওটি আছে।তুমি কী একটু আফরাকে বাসায় পৌছে দিবে।

---- অবশ্যই।

--------------

প্রহর আমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।

বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।এত টেনশন আর নিতে পারছিনা।

বিকেলে ঘুম ভাঙল রাহার ডাকে।ওকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম।

---- তুই এখানে।

---- কেন আসতে পারি না?

---- সেটা কখন বললাম।

---- তোকে খুব ভালো একটা খবর দিতে এলাম।

---- কী খবর?

---- তুই জানিস কথা আপুর হাজবেন্ডকে আজ পুলিশ এরেস্ট করেছে। তাও মাদকের মামলায়।

---- তো! দেখবি পুলিশকে টাকা খায়িয়ে যে কোনো সময় বেড়িয়ে আসবে।

---- তো কী?জানিস আজ কথা আপুর মুখটা দেখার মতো ছিল।

---- তুই আবার উনাকে দেখতে গিয়েছিলি।

---- হুম।তুই তো জানিস আপুর শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাড়ির কাছে।

---- হুম।

---- তুই নাকি আজ মরতে মরতে বেঁচে গেছিস।

---- তোকে কে বললো এসব।

---- কেন প্রহর ভাইয়া। আর প্রহর ভাইয়া এলাকার সবাইকে ও বলেছে যেন তোকে একটু দেখে রাখে।আর তোকে দেখলেই যেন সাবধানে চলাফেরা করতে বলে।

---- কীহহহহ।

---- হুম।কত ভালোবাসে তোকে দেখেছিস।

---- এই লোকটা আমায় নির্ঘাত পাগল বানিয়ে ফেলবে।

---------------

কেটে গেছে সপ্তাহখানেক।এর মাঝে প্রহরের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে আমার।নিবির ভাইয়াও এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।
কথা আপুর হাজবেন্টের দশ বছরের জেল হয়েছে।কথা আপু আবার নিবির ভাইয়ার কাছে ব্যাক করতে চাইলেও নিবির ভাইয়া না করে দিয়েছে।

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে দেখলাম বাইরে গাড়ি নিয়ে নিবির ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখেই বললো

---- আমি ড্রপ করে দিয়ে আসি, আফরা।

আমি বেশি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম।

---- সরি, আফরা।এতদিন তোর সাথে এমন বিভেব করার জন্য।

---- ঠিক আছে, ভাইয়া।একটা কথা বলব আপনাকে?

----বল।

---- আপনার কাছে পাত্তা পায়নি বলেই তো আমি প্রহরকে সুযোগ দিয়েছি।তেমনি আপনারও উচিৎ নিজের জন্য পারফেক্ট কাউকে খুঁজে নেওয়া।
আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন, ভাইয়া।

---- হুম।

----------------

নিবির ভাইয়া বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।বাড়িত গেলোনা।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে প্রহরকে ফোন দিলাম।আজ সকাল থেকে উনি একবারও ফোন দেয়নি।তাই আমি দিলাম।আজকাল উনার সাথে কথা না বললে ভালোই লাগেনা।

---- কী ব্যাপার! আজ তুমি নিজে থেকে ফোন করলে।

---- হুম।আপনি দিলেন না তাই আমি দিলাম।

---- তুমি কতদিন গোসল করোনা বলোতো,আফরা।

---- এসব কী প্রশ্ন?

---- না তোমার শরীর থেকে অনেক গন্ধ আসছে।

---- কী! আপনি মোবাইলে গন্ধ পাচ্ছেন।

---- হুম।

---- তা কেমন গন্ধ পাচ্ছেন।

---- প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।

---- আপনি তো প্রচন্ড অসভ্য লোক।

----সেটা তো তুমি জানোই।

---- ধুরর।আপনাকে আর জীবনেও ফোন দিবোনা।

 প্রহরকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।

এখন আবার কে এলো?

নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম খালামণি আর আংকেল।ওরা আবার এখন কেন এলো।

আমি উনাদেরকে ভিতরে আসতে বললাম। কিছুক্ষণ পর মামা - মামিও চলে এলো।তারপর ভাইয়া আর নিবির ভাইয়াও চলে এলো।

মামি বলল," আংকেল নাকি সবাইকে এখানে ডেকেছে,আংকেলের নাকি আমার ব্যাপারে সবার সাথে কোনো কথা আছে।"

উনি আবার আমার ব্যাপারে কী বলবে?

(চলবে)
[+] 1 user Likes Yourpriya's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)