Posts: 40
Threads: 8
Likes Received: 117 in 30 posts
Likes Given: 8
Joined: Dec 2022
Reputation:
14
22-12-2022, 12:08 PM
আমি যে প্রচন্ড খারাপ, নিলজ্জ বেহায়া একটা মেয়ে সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন,নিবির ভাই।
---- এই তোর লজ্জা করেনা বড়দের মুখে মুখে এভাবে তর্ক করতে। আর তোকে না বলেছিলাম এই বাড়িতে না আসতে, তাহলে কেন এসেছিস।
---- আমার মামার বাড়ি তাই এসেছি।
---- মামার বাড়িতে এসেছিস ভালো কথা। আমার রুমে কী করছিলি তুই।
---- মামি আপনাকে ডাকছিল।আমি আসতে চাইনি তাও আমায় পাঠিয়েছে।
---- তুই আমার ঘরে আসতে চাসনি।সিরিয়াসলি?তুই তো শুধুই আমার আশেপাশে আসার বাহানা খুজিস তাইনা, আফরা।
---- আপনার এত অপমানের পরও বারবার কেন আপনার কাছে আসি সেটা জানতে চাইবেন না?
---- একদম না।তোর এসব আজাইরা কথা শোনোর ইচ্ছা বা টাইম কোনোটাই আমার নেই। তোকে যেন আর আমার ঘরে না দেখি।
"আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি। এই লোক একটুও ভালোমতো কথা বলতে পারেনা।আমি আফরা আর নিবির ভাইয়া আমার মামাতো ভাই।ভাইয়াকে আমি অনেক ভালোবাসি কিন্তু ভাইয়া সেটা বুঝতেই চাই না।সবসময় বাজে ব্যবহার করে আমার সাথে।নিষ্ঠুর একটা।"
আমি সোজা মামির কাছে চলে গেলাম।
------------------------
আচ্ছা মামি নিবির ভাইয়ার জন্মের সময় কী মামা খুব অর্থসংকটে ভুগছিল।
---- এসব কী কথা, আফরা।
---- তাহলে একটু মধু কিনে নিজের ছেলের মুখে দেয়নি কেন?
---- বুঝেছি,আবার কিছু বলেছে ও তোকে।
---- কিছু মানে, অনেক কিছু বলছে। কথা শুনে তো মনে হচ্ছিল যেন উনার ঘরে ডাকাতি করতে গেছি আমি।
---- রাগ করিস না, মামনি। জানিস তো ওর ঘরে ও কাউকে এলাউ করেনা না।
---- সেই তো।একটু খেয়াল রেখো ঘরে আবার বউ -টও লুকিয়ে রাখতে পারে।আচ্ছা, আমি বাসায় যাচ্ছি।
---- সে কী এখনই চলে যাবি।বিকেলে গেলে হয় না।
---- না গো।এখানে থাকার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
---- আচ্ছা সাবধানে যাস।
--------------
নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে এসে মন খারাপ করে বসে ছিলাম।ভাইয়াযে কেন এমন করে আমার সাথে।
মুড ঠিক করারর জন্য বিকেলে রাহা আর আরশি কে নিয়ে বাইরে বের হলাম।রাহা হলো আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী আর আরশি আমার কাজিন।সবাই মিলে ফুচকা খেতে যাবো বলে ঠিক করলাম।সাথে টুকটাক কিছু শপিং করব।
---------
শপিং শেষ করে তিনজন এসেছি ফুচকা খেতে।ভেবেছিলাম হয়ত ফুচকা খেলে মনটা ভালো হয়ে যাবে।কিন্তু এখানে এসে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।
দেখলাম নিবির ভাইয়া কথা আপুকে ফুচকা খায়িয়ে দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া সবার সামনে কথা আপুকে নিজের বেস্টফ্রন্ড বলে দাবি করলেও যে ওদের ভেতরে অন্য কিছু আছে সেটা আমি ভালো করেই জানি।বেস্টফ্রেন্ডকে বুঝি কেউ এখাবে ট্রিট করে।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।চোখে পানি টলমল করছে।ওদেরকে নিয়ে ফুচকা না খেয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।রাহা নিবির ভাইয়ার ব্যাপারে সব জানে বলে কোনো প্রশ্ন করল না আমায়।কিন্তু আরশি একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।শরীর খারাপ লাগছে বলে চলে এলাম।
--------------
বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।কেন জানিনা আজ খুব কান্না পাচ্ছে।
নিবির ভাইয়া আর কথা আপুকে আমি আগেও অনেক বারর একসাথে দেখেছি। তখনও খারাপ লেগেছে।কিন্তু কেন জানিনা আজ কষ্টটা খুব বেশি হচ্ছে।
এসে থেকে ঘরেই বসে আছি।রাতে খাবারের জন্য আম্মু - আব্বু ডাকতে এলেও শরীর খারাপ বলে কাটিয়ে দিয়েছি।প্রচুর কেদেছি এতক্ষণ।চোখমুখ একদম ফুলে গেছে, মাথাটাও খুব ধরেছে।
মাথা ব্যাথা কমাতে এই রাতেই একবার গোসল করলাম।রাত প্রায় তিনটা বাজে। এত রাতে ঘোসল করেছি তাহলে নির্ঘাত ঠান্ডা লাগবে।তাই ভালোমতো চুল মুছেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
-----------
রাতে শরীর কাপিয়ে জ্বর এসেছে। ভালোমতো চুল শুকিয়ে ঘুমানোর পরও কীভাবে জ্বর এলো সেটায় মাথায় ঢুকছেনা।
মা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।বাবা ডাক্তার আনতে গেছে।সকাল মাত্র ছয়টার কাছাকাছি,ইতিমধ্যে আমার চৌদ্দগুষ্টি হাজির হয়েছে আমার সামনে।খবর পেয়েই সবাই চলে এসেছে।সামান্য একটু জ্বর হওয়ায় এভাবে সবাইকে ডেকে আনার কী মানে বুঝিনা।
আমার জ্বরকে অবশ্য সামান্য বলা চলে না।আমার খুব একটা জ্বর হয়না কিন্তু যখন হয় তখন একদম হসপিটালে এডমিট হওয়া লাগে।
এত মানুষের মধ্যেও আমার চোখ শুধু নিবির ভাইয়াকেই খুজছে।আমার এত জ্বর জেনেও কী উনি আসবেন না।
দুপুরের দিকে জ্বর একটু কমেছে।সবাই চলে গেলও মামি থেকে গেছে। নিবির ভাইয়া নাকি মামিকে নিতে আসবে।এই সুযোগে নিবির ভাইয়াকে একটু দেখব বলে ড্রয়য়িংরুমে এসে বসে আছি।
কালকের ব্যাপারটা নিয়ে উনার ওপর অভিমান হয়েছিল তবুও এই বেহায়া মনটা যে উনাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।
একটু পরে মামি আমার জন্য কীসের যেন রস নিয়ে আসলো।জ্বরের সময় নাকি এগুলো খেলে ভালো লাগে। আমি খাবোনা খাবোনা করেও খেয়েই ফেললাম।
প্রচন্ড তিতা ছিল এটা।
---- কেমন খেতে এটা।
---- নিবির ভাইয়ার মতো।মানে খুব তিতা একদম রসকসহীন।
আমার কথ শুনে মামিও হেসে দিলো।সাথে সাথে আমিও হেসে উঠলাম। আম্মুর পর মামি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।মামির একটা মেয়ের খুব শখ ছিল কিন্তু নিবির ভাইয়া হওয়ার পর মামি আর কনসিভ করতে পারেনি তাই আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে।
মামা বাড়ির সবাই আমাকপ খুব ভালোবাসে।শুধু নিবির ভাইয়াই আমাকে সহ্য করতে পারেনা।
একদিন বশত আমার হাত থেকে একটু পানি কথা আপুর গায়ে পড়ে গেছিল বলে খুব বকেছিল আমায়। একটা থাপ্পর ও মেরেছিল।সেদিন বাড়ি এসে খুব কেদেছিলাম,সেদিনও অবশ্য এমন জ্বর এসেছিল।তারপর তিনমাস মামা বাড়ি যায়নি।
অবশেষে নিবির ভাইয়া এসে আমার কাছে মাফ চেয়েছিল।
বসে বসে এসব স্মৃতিচারণ করছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া চলে এলো।কিন্ত উনার সাথে আবির ভাইয়াও ছিল।আবির ভাইয়া আমার নিজের ভাই।ভাইয়া একজন ডাক্তার।কিছুদিন আগে কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিল।কিন্তু ভাইয়া যে আজ আসবে সেটা আমাকে বলনি তাই রাগ করে ওখানেই বসে রইলাম।
ঠিক করছি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলব না।
ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল
---- কী হয়েছে,বনু।ভাবলাম আজ এসে তোকে চমকে দিবো কিন্তু তুই তো জ্বর বাধিয়েই বসে আছিস।
" ভাইয়ার এই মিষ্টি কথায় আমি একদম গলে গেলাম।এই মানুষটার ওপর তো আমি রাগ কর থাকতেই পারিনা।"
---- আমি কী ইচ্ছে করে জ্বর বাধিয়েছি, বল।
---- হ্যা,সেই তো। তুই তো কিছুই করিসনা বরং সমস্যারা তোকে খুজে তোর ঘাড়ে এসে ঝুলে যায়,তাইনা।
নিবির ভাইয়ার এই কথাটা শুনেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।কোথায় আমি অসুস্থ আমাকে শান্তনা দিবে তা করে আমায় জালাচ্ছে।
এই মানুষটা কী কখনো আমায় একটু বুঝবেনা।কেন আমাকে উনি এত কষ্ট দেন।
রাগ কর ওখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলাম তখন উনি বললেন
---- দাড়া,আফরা। তোর সাথে আমার কথা আছে।
"উনি আবার কী বলবেন। কাল যে আমি উনাকে দেখেছি সেটা জেনে গেলো নাতো।"
----উপরে তোর রুমে আয়, কথা আছে।
আমাকে রুমে যেতে বলেই উনি সিড়ি দিয়ে উঠে আমার ঘরে চলে গেলেন।
আমারও কী যাওয়া উচিত।না আমি যাবোনা।এমনিতে তো আমাকে উনার আশেপাশে যেতেও মানা করেছে, এখন উনার প্রয়োজন বলে ডাকছে।আমি যাবোনা।
এসব ভাবসিলাম তখনই কেউ,,
#পর্ব-০১
Posts: 40
Threads: 8
Likes Received: 117 in 30 posts
Likes Given: 8
Joined: Dec 2022
Reputation:
14
22-12-2022, 12:09 PM
পর্ব-০২
এসব ভাবছিলাম তখনই কেউ মানে নিবির ভাইয়া আমার হাত টেনে আমার ঘরে নিয়ে যেতে লাগল।
যাহ বাবা উনি আবার কখন নিচে এলো।
---- কী বলবেন ভাইয়া।
----তোর জ্বর এলো কী করে?
----মানে।
---- কাল তুই আমাকে আর কথাকে একসাথে দেখেছিলি তাই বাড়ি এসে কেদে কেদে জ্বর বাধিয়েছিস তাইনা।
---- আপনি কি করে জানলেন ভাইয়া?
---- সেটা তোর নাজানলেও চলবে।কেন কটিস তুই এসব
---- আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া।আপনার সাথে অন্যকাউকে সহ্য করতে পারিনা আমি।
---- থাপরে তোর গাল লাল করে দিবো আমি।তোকে ভালোবাসি না আমি বুঝেছিস।
---- আপনি কথা আপুকে ভালোবাসেন, তাইনা।
---- হ্যা,আমি ভালোবাসি ওকে।হয়েছে শান্তি।
"কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো।আমিও দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম "
আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।ভালোবাসা কেন এত কষ্ট দেয়।
ছাদ থেকেই দেখলাম নিবির ভাইয়ারা চলে গেলো।একটু পরেই বেশ জোড়ে বৃষ্টি শুরু হলো।আজ আমার চোখের জলের মতো বৃষ্টির পানিও বাধ মানছেনা।
একেই জ্বর তারওপর বৃষ্টিতে ভেজায় শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছে।দাড়িয়ে থাকারও শক্তি পাচ্ছিনা।হঠাতই মাথা ঘুরে ছাদেই পড়ে গেলাম।
---------------
জ্ঞান ফিরতেই ফিনাইলের কড়া গন্ধ নাকে এলো।বুঝতে বাকি রইল না যে আমি হাসপাতালে।চোখ খুলতেই মায়ের মলিন মুখটা চোখে পড়ল।পাশে ভাইয়া আর মামি বসে ছিলো।
আম্মু আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল
----এরকম পাগলামি কেউ করে।তোর মাথায় কী একটুও বুদ্ধি নেই।মরার শখ হয়েছে।
---- আম্মু চুপ করো তো।
ভাইয়া আম্মুকে চুপ করতে বলে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
----এরকম কেউ করে।জানিস আমরা কত টেনশনে ছিলাম।নিজের সাথে সাথে আমাদের ও কষ্ট দিলি তো।আমরা তো ভেবেছিলাম আজ রাতে তোর জ্ঞান ফিরবেই না।
"ভাইয়ার কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত দেড়টা বাজে।আমি যখন ছাদে ছিলাম তখন ১০ টা বেজে ছিল।আমি এতক্ষণ অঙ্গান ছিলাম।আমি কি নিবির ভাইয়ার জন্য নিজেকে একটু বেশি কষ্ট দিচ্ছি। "
আম্মু খাবার খাইয়ে ওষধ খায়িয়ে চলে গেল।বাকি সবাইকেও ভাইয়া বাসায় পাঠিয়ে দিলো।
একটুপর ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল
---- কী হয়েছে বনু।তুই কোন কোন ব্যাপারে এত কষ্ট পেয়েছিস, আমায় বল।
"আমি আর না থাকতে পেরে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম।"
---- আমি নিবির ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমি বাচব না।
---- তুই সত্যি নিবিরকে ভালোবাসিস।আমায় আগে কেন বলিসনি।
---- আমি চাইনি এটা নিয়ে তোদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক।
---- ঝামেলা কেন হবে?
---- নিবির ভাইয়া যে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
---- আচ্ছা তুই এগুলা আমার ওপর ছেড়েদে।আমি দেখে নেবো।তুই এখন ঘুমিয়ে পড়।
-------------
দুইদিনপর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলাম।এই দুইদিন নিবির ভাইয়া একবারও আমার খবর নেয়নি।আমি কি এতই ফেলনা।
আমি এবার এইচএসসি দিয়েছি।এখনো রেজাল্ট দেয়নি।তাই পড়াশোনার চাপও নেই।সারাদিন শুয়ে-বসেই কাটে।আম্মু রান্না করে,আব্বু অফিসে আর ভাইয়া হাসপাতালো আর আমি একা বসে বসে বোর হচ্ছি।
টাইম পাস করার জন্য মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম।এই দুদিন ফোনের কোনো খবরই ছিল না।ফেসবুকে ঢুকেই চোখে পড়ল নিবির ভাইয়ার হাস্যজ্জল ছবি।তাদের ফ্রেন্ডস গ্রপের সবাই মিলে ট্যুরে গেছে।সবার গ্রুপ ছবি হলেও ভাইয়া তার আর কথা আপুর দুটো ক্লোজ ছবিও পোস্ট করেছে।ছবি গুলো দেখতেই চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।
মোবাইলটা রেখে বাইরে চলে গেলাম।
বিকেলে ভাইয়া এসে বলল আজ নাকি আমায় নিয়ে শপিং এ যাবে।কথাটা শুনেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।
-------------
সন্ধ্যায় ভাইয়ের সাথে শপিং এ গেলাম।ভাইয়া আমার পছন্দ মতো সবকিনে দিল।
রাতে বাইরে খাওয়ার কথা থাকলেও ভাইয়ার একটা ইমার্জেন্সি আসায় ভাইয়া আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হাসপাতলে চলে গেলো।
বাসায় এসে দেখি মামি আর নিবির ভাইয়া এসেছে।
আমাকে দেখে মামি বলল
---- এই তিনদিনে আমার মেয়েটা কতটা শুকিয়ে গেছে।এই কদিন হাসপাতালে নিশ্চয় ভালো খাওয়া হয়নি।তোর পছন্দের সব রান্না করে নিয়ে এসেছি।
মামির কথা শুনে নিবির ভাইয়া মামিকে প্রশ্ন করল
---- ওযে হাসপাতালে ছিল আমাকে তো বলোনি।
---- তুমি বিজি মানুষ, তোমাকে তো সেদিন কত ফোন করলাম তুই বিজি বলে কেটে দিলি।তারপর তো ট্যুরে চলে গেলি।
ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই আম্মু এসে ভাইয়াকে খেতে নিয়ে গেলো।আর আমাকে বলল
---- ফ্রেশ হয়ে আয় আফরা খাবার দিচ্ছি।
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে এলাম।নিবির ভাইয়া তাহলে এতটাই বিজি ছিল কথা আপুর সাথে।
ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখলাম অনেকগুলো মেসেজ এসেছে।একটা মেসেজ ওপন করতেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।
মেসেজে লেখা ছিল-"তুমি কী জনো শুভ্রপরী তোমার শুভ্রতায় আমি প্রতিনিয়ত ডুবে মরছি"
আমাকে এমন মেসেজ কে পাঠাবে।তখনই আম্মুর ডাকাডাকিতে নিচে গেলাম।বাকি মেসেজগুলো আর দেখা হলোনা।
টেবিলে নিবির ভাইয়ের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে বসেছি।
---- এডমিশনের ব্যাপারে কী ভাবলি,আফরা।
নিবির ভাইয়ার কথায় তার দিকে তাকিয়ে বললাম
---- এখনো কিছু ভাবিনি ভাইয়া।
---- মাথা থেকে উল্টোপাল্টা সব চিন্তা ঝেরে ফেলে পড়ায় মনোযোগ দে।
ভাইয়ার কথার কোনো উওর দিলাম না।ভাইয়া যে আমাকে তার কথা ভুলে যেতে বলছে সেটা আমি ভালোই বুঝেছি।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে হঠাতই ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।এতরাতে আমায় কে ফোন করল।
ফোনটা ধরতেই কেউ একজন বলল
---- কেমন আছো শুভ্রপরী।
---- কে আপনি আর আমার নাম্বার কই পাইছেন আর এত রাত ফোন করেছেন কেন?
---- আমি তোমার খুব পরিচিত একজন।
---- মানে?
---- গেস কর আমি কে?
---- প্লিজ বলবেন কে আপনি?
---- আমি হলাম তোমার,,,,,,,
(চলবে)
(গল্পটা কেমন লাগছে আপনাদের কাছে।)
Posts: 40
Threads: 8
Likes Received: 117 in 30 posts
Likes Given: 8
Joined: Dec 2022
Reputation:
14
পর্ব-০ ৩
আমি তোমার খুব কাছের একজন।
----আচ্ছা,ছোটোবেলায় কী আপনার আকিকা দেওয়া হয়েছিল।
---- এইগুলো কেমন প্রশ্ন।অবশ্যই দেওয়া হয়েছিল।
---- তাহলে আকিকা দিয়ে যে নাম রাখা হয়েছিল সেটা বলেন। নয়ত ফোন রাখেন।
---- আরে বাহ্।আমার নাম জানার এত আগ্রহ।আচ্ছুা শোনো তাহলে আমার নাম প্রহর।এবার দেখি আমায় কেমন খুজে বের করতে পারো।
" কথাটা বলেই লোকটা ফোন কেটে দিলো।আজব লোক তো,আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো।
আমিও আর সাতপাচ না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।"
------------
কেটে গেছে সাতদিন।সবকিছুই তার আপন গতিতে চলছে। তেমনি আমার জীবনও।
একদিনে একবারও আমার নিবির ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি।মামাবাড়ি যাওয়াটাও কমিয়ে দিয়েছি।বেশ কিছু দিন ধরেই মামি বারবার ফোন করছে ওবাড়ি যাওয়ার জন্য।তাই ঠিক করছি আজ বিকেলে যাবো।তবুও নিবির ভাইয়ার মুখোমুখি হতে চাচ্ছিনা।
বিকেলে নিবির ভাইয়াদের বাসায় গিয়ে বেল বাজাতেই নিবির ভাইয়া এসে দরজা খুলে দিলো।
---- কী চায়?
----বাথরুম পরিস্কার করতে আসছি।
---- What!!!
---- কী হোয়াট।আমাকে দেখে আপনি বুঝেন নাই যে আমি এখানে কী করতে আসি।যত্তসব সরেন দেখি,ভেতরে যেতে দেন।
" নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম।বাড়ি থেকেই ঠিক করে আসছি এখন থেকে নিবির ভাইয়াকে একদম ইগনোর করব আমি। তাকেও বোঝাবো যে আমারও আত্মসম্মান আছে।"
আমিও সোজা মামির কাছে চলে গেলাম।অনেকক্ষন গল্প করলাম দুজন।রাত প্রায় ৮ টা বাজে। রাতে ভাইয়া বাসায় যাওয়ার সময় আমায় নিয়ে যাবে।
কিছুক্ষন পর মামির এক প্রতিবেশী এসে মামিকে ডেকে নিয়ে গেলো তার কী যেন সমস্যা হয়েছে তাই।বাড়িতে এখন আমি একাই।নিবির ভাইয়াও আছে তার ঘরে।
আমি সিড়ি দিয়ে নেমে নিছে যাচ্ছিলাম তখনই কিছু একটার সাথে বেধে পড়ে যেতে নিলেই কেউ আমাকে ধরে ফেলে কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা।দুজনেই নিচে পড়ে গেলাম।
কোমরটা বুঝি ভেগেই গেলো।পরক্ষনেই মনে পড়ল নিবির ভাইয়া তো আমাকে ধরবেনা তাহলে কে ধরল।ভূত না তো আবার।
তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। বেশ সুদর্শন।
---- এই আপনি কে হ্যা।আর আমাকে কেন ধরলেন।
---- জী আর বলি বলুনতো ভাবলাম আপনাকে ধরে হিরোদের মতো পরার হাত থেকে বাচিয়ে নিবো।কিন্তু তা আর হলো কই। মাঝখান থেকে নিজেও পরে গেলাম।
---- বেশ হয়েছে পড়ে গেছেন।খুব শখ না হিরো হওয়ার।
কী হচ্ছে এখানে।
নিবির ভাইয়ার কথা শুনে দুজনেই তার দিকে তাকালাম।উনি ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
---- প্রহর,ঘরে আয়।কাজ আছে।
নিবির ভাইয়ার কথা শুনেই মনে পড়ল ঐ লোকটার কথা।সেও নিজের নাম প্রহর বলেছিল।গত সাতদিনেও আমার ফোনে এমন অনেক মেসেজ এসেছে যদিও আমি সেগুলোকে একদম ইগনোর করছি।
আচ্ছা,এই লোকটাই কী সেই লোক।না সেটা কীভাবে সম্ভব।
----এখানে দাড়িয়ে এত কী ভাবছিস,আফরা।
মামির কথায় ধ্যান ভাঙল।
---- আচ্ছা মামি তোমাদের বাড়িতে এসছে ঔ ছেলেটা কে?
----ওহ,প্রহর।ও তো আমার বড় ভাইয়ের ছেলে।
---- ওহ।আমি কেন তাকে আগে দেখিনি।
---- ওরা সবাই তো দেশের বাইরে থাকত।তাই হয়ত দেখিসনি।গত কালই দেশে এসেছে।
আচ্ছা আবিরের আসার সময় হয়ে গেছো, চল তোকে খেতে দিয়ে দেয়।
---- হুম,চলো।
-------------
রাতে ভাইয়ার সাথে বাড়ি ফিরছিলাম।তখন ভাইয়া আমায় জিঙ্গেস করল
---- আফরা,তোর সাথে কি নিবিরের আর কোনো কথা হয়েছে।
---- না ভাইয়া।আচ্ছা তোর তো আজকে অফডে ছিলো।তাহলে হসপিটালে কেন গেলি।
---- তুই ছিলি না তাই।তোকে ছাড়া বাসায় থাকতে আমার একদম ভালোলাগেনা।
---- তুই একটা বিয়ে কেন করিসা।বউ থাকলে সব ভালো লাগবে।
---- তুই খুব পেকে গেছিস তাইনা।
---- সবই তোর অবদান।
---- তাই বুঝি।
আজ শুক্রবার।আজ আমাদের বাসায় মামা আর মামির বড় ভাইদের দাওয়াত করা হয়েছে।মামির বড় ভাই নাকি আব্বুর খুব ভালো বন্ধু ছিল।অথচ আমি কিছুই জানতাম না।
সকাল থেকেই খুব বোর হলাম।মামি সকাল সকাল এসেই মায়ের সাথে কাজ করছে।আমাকে কোনো কাজে আমায় হাত লাগাতে দিচ্ছে না।অসুস্থ থাকায়।যদিও অন্য সময়ও কোনো কাজ করিনা।
পাশেই আরশিদের বাড়ি।তাই ভাবলাম বোর হওয়ার চেয়ে আরশিকে জ্বালিয়ে আসি।
আরশিদের বাড়িতে এসে দেখলাম ওর ভাই খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু লিখছে।ওর নাম আহির।মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে।
---- কী লিখিস পিচ্ছি।
---- আরে আপুনি তুমি আসছো।একটু সুন্দর করে চিঠিটা লিখে দাও তো।
---- কিসের চিঠি?
----আরে আমার গার্লফ্রেন্ড রাগ করেছে তার রাগ ভাঙানোর জন্যই এই চিঠিটা লিখছিলাম।
"আহিরের কথা শুনে যেন আমি শূন্যে ভাসছি।ছেলে বলে কী।"
---- এই ছেলে,বয়স হয়নাই দশ বছর এখনই গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিস।
---- হ্যা আপু।আমাদের দুই বছরের রিলেশন।
আচ্ছা আপু আমি যাই আম্মু ডাকছে।তোমাকেই বললাম কিন্তু কাউকে বলো না।
এখন মনে হচ্ছে জীবনে কী করলাম।জীবনটাই বৃথা।এতবছরে ও নিবির ভাইয়াকে পটাতে পারলাম না আর এদের দুই বছরের রিলেশন।
---------------
আরশির সাথে খানিক্ষণ গল্প করে বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়ে নিলাম।
সবাই হয়ত নামাজ পর আসবে।এদিকে পেটের মধ্যে ইদুর দৌড়াচ্ছে।এখন আম্মু জীবনেও খেতে দিবেনা।
তাই মোবাইলটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম।
একটু পরে ঘরে এসে দেখি বিছানায় বেশ সুন্দর একটা প্যাকেট রাখা।সুন্দর কাগজে মোড়া। কিন্ত এটা কে দিলো।আব্বু বা ভাইয়া দিলো তো আমাকে বলতোই।
আমি কি এটা খুলে দেখবো।
বক্সটা খুলে দেখি একটা কালো জামদানি শাড়ি আর একজোড়া ঝুমকা।
কালো জিনিস বরাবরই আমার খুব পছন্দ।তাই শাড়িটাও বেশ ভালো লাগল।
তখনই আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো।
"শুভ্রপরী তোমার শুভ্রতায় কালো রংটা বড্ড মানায়।সবাই তো নীল শাড়ি পরে তুমি নাহয় কালোই পড়লে।"
আমার কী গিফটা নেওয়া উচিত।কে না কে দিয়েছে।
আচ্ছা রেখে দি যদি কখনে তাকে পাই তাইলে ফেরত দিয়ে দিবো।
মেহমানরা চলে এসেছে।মামির ভাইয়ের বউ বেশ সুন্দর দেখতে অনেকটা বিদেশিদের মতো দেখতে।
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল-
----বাহ্।মেয়েটা তো মাশাল্লহ।এমন একটা মেয়েই খুজছিলাম প্রহরের জন্য।
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। তখনই,,,,,
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এই ধরণের গল্পগুলো আমার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে।
লাইক আর রেপু দিলাম প্রত্যেকটা পর্বেই !!
Posts: 40
Threads: 8
Likes Received: 117 in 30 posts
Likes Given: 8
Joined: Dec 2022
Reputation:
14
(22-12-2022, 12:23 PM)ddey333 Wrote: এই ধরণের গল্পগুলো আমার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে।
লাইক আর রেপু দিলাম প্রত্যেকটা পর্বেই !!
Thanks for supporting
Posts: 273
Threads: 0
Likes Received: 106 in 86 posts
Likes Given: 2,260
Joined: Mar 2020
Reputation:
2
Darun likhchhen apni!!!
Khub sundor lagchhe !!!
Poroborti update er opekkhay...
Posts: 161
Threads: 0
Likes Received: 253 in 144 posts
Likes Given: 1,320
Joined: Sep 2022
Reputation:
44
ঘটনার তীব্রতায় আমি হারিয়ে গেছি।।।
আমি ভাষাহীন।।।
প্রেম বিনে ভাব নাহি,
ভাব বিনে রস;
ত্রিভুবনে যত দেহ,
প্রেম হস্তে বশ।।
By: Syed alaol(1607-1680)
Modified
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,406 in 973 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
রীতিমতো একটা ভালো গল্প
Posts: 40
Threads: 8
Likes Received: 117 in 30 posts
Likes Given: 8
Joined: Dec 2022
Reputation:
14
পর্ব-০৪(বোনাস)
তখনই বাকি সবাই চলে আসায় কথার প্রসঙ্গ পাল্টে যায়।
সবার সাথে বাবা পরিচয় করিয়ে দিলো।নিবির ভাইয়ের মামামামি বেশ ভালো মানুষ।
কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করে সবাই খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে নিলো।
একটা জিনিস বেশ খেয়াল করছি যে এই প্রহর মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল।এই লোকটাকে আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে।
সবাই মিলে আবার গল্পে বসেছে।এত গল্প কই থেকে আসে কে জানে। আমার তো প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।তবুও ভদ্রতার খাতিরে মুখে একফালি হাসি ঝুলিয়ে বসে আছি।তখন নিবির ভাইয়া বললেন
---- সামনে তো রেজাল্ট দিবে, আফরা।এডমিশন কোথায় দিবি কিছু ভেবেছিস।
"নিবির ভাইয়ার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লাম।জীবনে প্রথম নিবির ভাইয়া আমার সাথে এত ভালো করে কথা বলেননি।আমি কিছু বলব তার আগেই ভাইয়া বলল"
---- ওর তো ভালো একটা ভার্সিটিতে এডমিশন চায়।
---- আমিও বলেছি ওকে ঢাকা ভার্সিটিতে ই পড়তে হবে।(আম্মু)
---- কিন্তু ফুফু ঢাকা ভার্সিটিতে শুধু পড়ব বললেই তো হয়না,সেজন্য পড়াশোনাও করতে হয়।আর এজন্য আফরার আটো আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল।
আচ্ছা আফরা তুই আমার সাথে ওপরে চল।তোকে কিছু বই সাজেস্ট করি।এডমিশনে কাজে লাগবে।
" নিবির ভাইয়ার কথায় আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।যদি রুমে গিয়ে আমায় গলা টিপে মেরে ফেলে।আমি করুন মুখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম যার অর্থ আমি যাবোনা।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যেতে বলল।"
--------------
রুমে গিয়ে দেখি নিবির ভাইয়া বিছানায় বসে ফোন টিপছে।আমি চুপচাপ গিয়ে উনার সামনে দাড়ালাম।
উনি ফোনের দিকেই তাকিয়ে বলল
---- প্রহরের সাথে তোর কী চলে, আফরা?
---- উনার সাথে আবার আমার কী চলবে?
---- তাহলে ও বারবার তোর দিকে তাকিয়ে হাসছিল কেন?
---- আমি কী করে জানব সেটা।বায় দ্যা ওয়ে,আপনি কী জেলাস ভাইইইয়া,,,
" আমার এমন কথা শুনে নিবির ভাইয়া তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।"
---- একটা থাপ্পর মারব ফাজিল মেয়ে।আমি কেন জেলাস হতে যাবো।তোর এখন পড়াশোনার বয়স তার তা করে তুই এসব আজাইরা চিন্তা করিস।
আবার যদি এসব কান্ড আমার আমার চোখে পড়ে তাহলে ফুফুকে বলব একদম ধরে বিয়ে দিয়ে দিতে।
বলেই উনি চলে গেলেন।যাহ বাবা,আমি করলাম টা কী।যাইহোক উনি কি আমায় নিয়ে জেলাস নাকি বিরক্ত!
সন্ধ্যেবেলা সবাই চলে গেলে রুমে এসে ফোন নিয়ে বসলাম।দেখি নিবির ভাইয়া কতগুলো বইয়ের নাম মেসেজ করছে।আমিও ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিলাম আসার সময় বইগুলো নিয়ে আসতে।
হঠাত নিবির ভাইয়ার এত পরিবর্তন যেন হজম হচ্ছেনা।
একটুপর নিবির ভাইয়ার আরেকটা মেসেজ
" বইগুলো শুধু কিনে ঘরে সাজিয়ে রাখিস না।ঢাবিতে চান্স পেতে হলে পড়তেও হবে।"
আমিও খুব ভেবেচিন্তে একটা রিপ্লে দিলাম
"আমি ঢাবিতে চান্স পেলে আপনার কষ্ট হবেনা।না মানে আপনার তো আবার আমার থেকে এলার্জি আছে।"
মেসেজটা দিয়ে আমি ফোনটা রেখে এশার নামাজটা পড়ে এলাম।
এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি নিবির ভাইয়া আমাকে ব্লক মেরে দিয়েছে।হয়ত আমার কথাটা তার হজম হয়নি।এটা অবশ্য আমার জন্য নতুন কিছুনা। বছরে বেশিরভাগ সময় আমি ভাইয়ার ব্লকলিস্টেই থাকি।
তার মনে জায়গা করে নিতে না পারলেও তার ব্লকলিস্টে আমার জায়গাটা খুব সহজেই হয়।
একটু পরে দেখি ভাইয়া একগাদা বই নিয়ে রুমে ঢুকছে।এক-একটা বইয়ের সাইজ দেখেই আমার পড়ার ইচ্ছে মাটিচাপা সরি বইচাপা পড়ে গেছে।
---- এভাবে কী দেখছিস।
---- আচ্ছা ভাইয়া,আমি তো একটা ভার্সিটিতে এডমিশন নিব তার জন্য কী দেশের অর্ধেক বই পড়া দরকার।
---- এমনভাবে বলছিস যেন আগে কখনো এত বই পড়িসনি।
---- আরে,আমি তো এমনি বললাম তুই সিরিরাস হচ্ছিস কেন।
---- আচ্ছা বনু তুই নিচে গিয়ে আম্মুকে খাবার দিতে বল। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে।
---- আচ্ছা যাচ্ছি, তুই আয়।
--------------
সবাই একসাথে খেতে বসেছি।তখন আব্বু ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল
---- তা আবির, তোমার তো যথেষ্ট বয়স হয়েছে।নিজের পায়েও দাড়িয়েছো।তো বিয়ে সাদী নিয়ে কিছু ভেবেছো।
---- না আব্বু। আমি তো সবে চাকরিটা জয়েন করেছি।আগে নিজের একটা ভালো পজিসন বানাতে চায়, তারপর বিয়ে নিয়ে ভাববো।
---- গুড।আচ্ছা তোমাদের মনে হয়না আফরা ইদানিং আমাদের সাথে একদম কথা বলেনা। ওর মনে হয় এবাড়িতে থাকতে ভালোলাগেনা।ওকে বরং বিয়ে দিয়ে শ্বশুড়বাড়ি পাঠিয়েদি।
---- মোটেও না।তুমি আর ভাইয়া তো সারাদিন বাইরেই থাকো শুধু এই রাতেই তোমাদের দেখা পাওয়া যায়।আর আম্মুর সাথে কথা বলতে গেলেই তো কাজের বাহানা করে চলে যায়।
" আমার কথা শেষ হতেই দেখি আম্মু আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।যেন এখনই আমার বারবিকিউ বানিয়ে খেয়ে ফেলবে।
---- এটা কিন্তু একদম ঠিকনা আবিরের মা।
---- হ্যা সেই তো।আমার কাজ তো শুধু বাহানা লাগে তোমার মেয়ের তাইনা।
------------
গল্পে পল্পে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এলাম।মাত্র দশটা বাজে এখন আমার ঘুম ধরবেনা।
কী আর করার আবার ফোন নিয়ে বসলাম।বেলকনির দরজাটা খোলা রেখেছি।হালকা হালকা ঠান্ডা বাতাস আসছে।আরশিদের বাড়ির শিউলি গাছের ফুলের গন্ধ রুম পর্যম্ত এসে গেছে।সবমিলিয়ে বেশ সুন্দর একটা পরিবেশ।
খানিকক্ষন ফেসবুক স্ক্রলিং করার পর দেখি নিবির ভাইয়া মেসেজ পাঠিয়েছে।উনি এবার এত দ্রুত আমায় আনব্লক করলেন।
মেসেজটা ওপেন করলাম
"এতরাতে অনলাইনে কী,আফরা।"
উনি আমাকে এরকম একটা মেসেজ দিয়েছেন।মাত্র সাড়ে দশটা বাজে।তবুও ঠিক।আগে তো পড়াশোনার ফাকে বেশি সময় পেতাম না অনলাইনে থাকার।তারপর অবশ্য সারাদিন রাত নিবির ভাইয়ার চিন্তায় কেটে যেতো।ইদানিং অবশ্য নিবির ভাইয়াকে নিয়ে ওতো চিন্তা আমি করিনা।তার চিন্তা যে আমার মাথায় আসেনা তা নয়।তবুও চেস্টা করি এরিয়ে চলার।
আমি নিবির ভাইয়ার মেসেজের রিপ্লাই না দিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
---------------
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছি।মানে আম্মু ডেকে তুলেছে।আজ নাকি আমরা নানার বাড়ি যাবো।হঠাত করেই নাকি নানীর শরীরটা খারাপ হয়ে পড়েছে।
সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে আমি একটা লং টপস আর জিন্স প্যান্ট পড়ে নিলাম।
---- এগুলা কর পড়েছিস তুই।জানিস না ওখানে কেউ এগুলো পছন্দ করেনা।
---- উফ,,,আম্মু এখন আমি আর চেন্জ করতে পারবোনা। যাও তো।
" আমার নানা বাড়ি গ্রামে।সেখানে শহুরে ছোয়া লাগলেও তা খুব কাম।আমরা,মামারা সবাই শহরে থাকা সত্তেও নানা - নানিকে কেউ শহরে আনতে পারেনি।তাদের কাছে তাদের গ্রামই ভালো।অবশ্য ওখানে আমার এক খালামনিও থাকে।
নানার বাড়ি আমরা খুব কমই যায়।আমার আঠারো বছরের জীবনে আমি মাত্র দুবারই ওখানে গেছি।"
নিবির ভাইয়ারাও চলে এসছে।এখান থেকে সবাই একসাথে রওনা দিবো।আমরা আমাদের গাড়ি আর নিবির ভাইয়ারা তাদের গাড়িতে করে যাবেন।প্রায় সাত-আট ঘন্টা লেগে যাবে ওখানে পৌছাতে।আমার অবশ্য জার্নি করতে সমস্যা হয়না।কিন্তু আম্মুকে নিয়ে যত টেনশন।
প্রায় সাতঘন্টা জার্নি করে নানাবাড়ি এসে পৌছোলাম।আমরা খালামনিদের বাসায় উঠেছি।নানা- নানীও এখানেই আছে।আম্মু আর মামাতো কান্নাকাটিতে ব্যস্ত।জানি তাদের মা তবুও অসুস্থ মানুষের সামনে এভাবে কান্না করা উচিত না।
খালামণি আমাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলো।আমিও ফ্রেশ হতে গেলাম।খালামনির দুই ছেলে।এ বংশে অবশ্য আমি একাই মেয়ে।
ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসলাম।এখন আমার একটা লম্বা ঘুম দরকার। তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
জানো এসময় কেউ ডাকবেনা আমায়।আমার ঘুম পুরো হওয়ার আগে ভেঙে গেলে খুব মাথা ব্যাথা করে আমার।এটা সবাই জানে
একেবারে সন্ধ্যার আগে ঘুম ভেঙে গেল।প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে যেন এখন না খেতে পেলে মরেই যাবো।
ফ্রেশ হয়ে নিচে এলাম কিন্তু কাউকে খুজে পেলাম না।তখন দেখি আবার ভাইয়া বাসায় ঢুকছে।আরাব ভাইয়া হলো মামনির বড়ছেলে।আমার থেকে বছর সাতেকের বড়।
---- কাউকে খুজছিস, আফরা।
---- হুম।সবাই কোথায় গেছে,ভাইয়া।
---- সবাই তো নানার ঘরে।তোর কী কিছু লাগবে।
---- আমার না খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
---- আচ্ছা তুই দাড়া আমি আম্মুকে পাঠাচ্ছি।
---- আচ্ছা।
---------------
একা একা খালামনিদের ছাদে বসে আছি।খুব বোর হচ্ছি। সবাই ব্যস্ত।আরাব ভাইয়া থাকলেও হতো।কিন্তু নিবির ভাইয়া নাকি তাকে নিয়ে কোথায় বেরিয়েছেন।রাদিফ ও নেই।রাদিফ হলো খালামনির ছোটো ছেলে।আমার সমবয়সী।আমাদের মাঝে সম্পর্কটা বেশ ভালো।একদম বন্ধুর মতো।ও নাকি ওর বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেছে।কী আর করার একা একা মোবাইল নিয়ে বসে আছি।ঠিকমতো নেটও পাচ্ছেনা।তাই ফোনটাকে এদিক সেদিক করছিলাম।
হঠাৎই কেউ " ভাউ" বলে চিৎকার দিলো।সাথে সাথে আমার ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল।
পিছনে তাকিয়ে দেখি,,,,,
(চলবে)
( এটা খুবই কমন একটা থিমের গল্প তবুও অন্যভাবে লেখার চেস্টা করব।গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন।ধন্যবাদ)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আগেই বলেছি খুব ভালো লাগছে , লাইক আর রেপু রইলো।
Posts: 14
Threads: 5
Likes Received: 35 in 11 posts
Likes Given: 0
Joined: Oct 2022
Reputation:
2
Tomar shathe Kotha bola jabe
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০৫ + ০৬
লেখিকা-#খেয়া
পেছনে তাকিয়ে দেখি রাদিফ।
ওকে দেখে মেজাজটা একদম বিগড়ে গেলো।
---- এই ফাজিল পোলা,এভাবে কেউ চিল্লায়।আমার সাধের ফোনটা গেলো।
রাদিফ আমার ফোনটা তুলে নিয়ে বলল
---- কিছু হয়নাই দেখ।তুই এতরাতে ছাদে কী করিস।যদি পেত্নী ধরে নিয়ে যেত।
---- তুই কী দেখেছিস পেত্নীকে কখনো পেত্নী ধরে।ভূত হলে অবশ্য ঠিক ছিল।
নিবির ভাইয়ের এমন ফোড়নকাটা কথায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম।এই লোক এখানে কী করে।
---- একদম ঠিক বলেছো, নিবির ভাইয়া।
---- এই পোলা, আমাকে তোর পেত্নী মনে হয়।মানলাম নিবির ভাইয়ার চোখ খারাপ তাই কি তোরও চোখ খারাপ।
---- কী বললি তুই, আফরা।আমার চোখ খারাপ।
---- অবশ্যই।না হলে কেউ হীরে রেখে কাঁচ নিয়ে পরে থাকে।
---- কী বললি তুই।
----না কিছুনা।আমি নিচে যাচ্ছি,রাদিফ।তোরা থাক।
---- তোকে যেতে বলেছি আমি?
রাদিফ তুই যা আফরার সাথে আমার কথা আছে।
"নিবির ভাইয়ার কথায় চোখগুলো ছোটোছোটো করে তার দিকে তাকালাম। আমাকে আবার ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাতো।"
---- কিছু বলবেন ভাইয়া।
---- এতরাতে একা একা ছাদে বসে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলি মনে হয়।
---- আমার আর বয়ফ্রেন্ড কই হলো।এই দুবছর আপনার পিছনে যদি ঘুরে টাইমপাস না করতাম তাহলে এতদিনে হাজার খানেক বয়ফ্রেন্ড জুটে যেতো আমার।
" নিবির ভাইয়ার মুখ দেখেই বোঝা গেল সে আমার এমন জবাব আশা করেনি।"
---- তা আমার ওপর যে এত ভালোবাসা ছিল তা কি বাতাসে উবে গেলো।
---- উবে যায়নি তো ভাইয়া শুধু নিজের আত্মসম্মান জাগ্রত হয়ে গেছে।
---- তাই নাকি।
---- হুম।আমি নিচে যাচ্ছি ভাইয়া।
---- নিহান কে,আফরা।
" নিবির ভাইয়ার কথা শুনে মাথাটা যেন ঘুরতে শুরু করেছে।বারবার কেন এই নামটা আমার সামনে আসে। এই কালো অতীতটাকে আমি যত ভুলে যেতে চাই ততই এই জিনিসটা আমার সামনে চলে আসে।"
---- আমি কিছু জানতে চাইলাম, আফরা।
নিবির ভাইয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমি দিতে পারছিনা।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।শরীরটাও অস্বাভাবিক ভাবে কাপছে।চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছি আমি।
---- তোর কী শরীর খারাপ লাগছে, আফরা।তোর,,
নিবির ভাইয়ার পরবর্তী কথা শোনার আগেই তার বুকে লুটিয়ে পড়লাম।
------------
চোখ খুলেই দেখি সকাল হয়ে গেছে।
এটা অবশ্য নরমাল।যখনই আমার এ সমস্যা হয় তখন আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। আমার
ব্রেনকে এমনসময় শান্ত করার একটাই উপায় হলো লম্বা ঘুম। লাস্ট দু বছরে এমনটা অনেক বার হয়েছে।
মাথাটা এখনো প্রচন্ড ধরে আছে।
একটু পরেই আম্মু আর মামা রুমে এলো।
মামা আমার মাথায় হাত রেখে বলল-
---- কাল কী হয়েছিল, মামনি।আমি জানি নিবির নিহানের কথা জানতে চেয়েছিল।তাই বলে তুই এত দুর্বল হলে হবে।নিজেকে শক্ত করতে হবে, মামনি।সবকিছু ভুলতে হবে তোকে।
---- আমি পারিনা গো,মামা।কিছুতেই ঐ রাতটাকে ভুলতে পারিনা।
---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আফিয়া তুই খাবার নিয়ে আয়।মামনি তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি আজ তোকে খায়িয়ে দিবো।
---- আচ্ছা।
মামা আমায় খায়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।একটু পরে নাকি নানীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে।কিন্তু আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন নিবির ভাইয়া নিহানের ব্যাপারে কী করে জানলো।কোনো ভাবে কী আরাব ভাইয়া বলেছে।কিন্তু আরাব ভাইয়া বললে তো সবটাই বলতো।
ঘরে বসে বিরক্ত হচ্ছিলাম তাই বাইরে গেলাম।রাদিফ এসে বলল-
---- এই আফরা, নদীরধারে যাবি অনেক কাশফুল হয়েছে ওখানে।
রাদিফের কথাশুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো।এখানকার নদীটা খুব সুন্দর।যদিও ৪-৫ বছর আগে এসেছিলাম এখানে।সবাই কাশফুলের সাথে এতএত ছবি পোস্ট করেছে।আমি একটাও ছবি দিতে পারিনি বলে মন খারাপ হয়েছিল।এবার অনেক ছবি তুলব। আর এফবিতে পোস্ট করব।ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।
--------------
বিকেলে আমি আরাব ভাইয়া,নিবির ভাইয়া, রাদিফ আর রাদিফের এক কাজিন তাহা মিলে ওখানে গেলাম।
বেশ সুন্দর জায়গাটা।অনেক ছবি তুললাম সবাই মিলে।আমি একটা কাশফুল ছেড়ার চেষ্টা করছি।কিন্তু পারছি না।একটা ডাল ধরে টানতেই বেশ খানিকটা হাত ছিলে গেলো।
তখন নিবির ভাইয়া এসে কয়েকটা ফুল ছিড়ে আমার হাতে দিলো।আর বলল
---- এখনো একটা ফুল ছেড়ার শক্তি হয়নি তুই আবার আমায় বিয়ে করতে চাস।বিয়ের পর আমার ভারটা সামলাবি কী করে।
কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো।তার কথাটা বুঝতে খানিকক্ষন সময় লাগল আমার।বোঝা মাত্র আমার চোখদুটো গোল গোল হয়ে গেলো।
খানিকক্ষণ ঘুরে ফিরে চলে এলাম।
---------
সন্ধ্যেবেলা সবাই মিলে নানার ঘরে বসে ছিলাম।নানার নাকি খুব জরুরী কোনো কথা আছে।
---- দেখো আমি বুঝতেই পারছি আমি আর বেশিদিন বাচবোনা।আর আফরা হলো এ বংশের একমাত্র মেয়ে।আর আমি চাইনা ও বাইরে কোথাও যাক।(নানী)
---- তুমি ঠিক কী বলতে চাচ্ছো, মা।(মামা)
---- আমি জানি আফরার বয়সটা কম, তবুও আমি চাই আরাব আর আফরার বিয়ে দিতে।
নানীর কথা শোনামাত্র আমার আর আরাব ভাইয়ার মাথায় আকাশ ভেঙো পড়ল।আরাব ভাইয়া বলল
---- এটা সম্ভব না, নানী।আমি আফরাকে সবসময় নিজের বোনের মতো দেখছি।
---- আমি কিছু জানতে চাইনা।আমার কথাই শেষ কথা।
বাকিদের কথা শোনার আগেই ওখান থেকে উঠে চলে এলাম।
কেন জানি নানীর এই কথাটা কিছুতেই মানতে পারছিনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।যদি নানী আরাব ভাইয়ার জায়গায় নিবির ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইত তাহলে কী খুব ক্ষতি হতো।আচ্ছা নিবির ভাইয়া কী খুশি হয়েছে এ খবরে?
সেই যে রুমে এসেছি,এখনো বের হইনি।কেঁদে কেঁদে একদম চোখ-মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি।রাত প্রায় বারোটা বাজে।সবাই খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে।
আমি ঠিক করেছি আজ কিছুতেই বের হবোনা।খানিকপর নিবির ভাইয়ার গলা পেলাম
---- আফরা, দরজাটা খোল।না খেয়ে থেকে কী বোঝাতে চাইছিস তুই।আরাবকে বিয়ে করবিনা সরাসরি বললেই তো পারিস।এত নাটক করার কী আছে।
"নিবির ভাইয়ার কথায় খুব কষ্ট পেলাম।সবটাই উনার নাটক মনে হচ্ছে।উনি কী জানেনা আমার মনে কী আছে।কেন বোঝেননা উনি সেটা নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে।"
পরদিন সকালে আমি ভাইয়ার সাথে ঢাকা ফিরে এলাম।ওখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরেই যেতাম।পুরো রাস্তা চুপ করে ছিলাম।ভাইয়াও কোনো প্রশ্ন করেনি। সে তো সবটাই জানে।
--------------
বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে ছাদে বসে ছিলাম।রাহাকে সেই কখন ফোন করছি এখনও আসছেনা।
মা ফোন করেছিল।তারা নাকি রওনা দিয়েছে।আব্বু আর নিবির ভাইয়া নাকি মানা করে দিয়েছে।তারা এখনই আমার বিয়ে দিতে চাই না। আর আমার মতের বিরুদ্ধে তো একদম না এ নিয়ে নাকি আব্বুর সাথে নানার ছোটোখাটো একটা ঝামেলাও হয়েছে।
আব্বুর ব্যাপারটা তো বুঝলাম কিন্তু নিবির ভাইয়া এমন কেন করল।
---- কী ভাবসিস, আফরা।
---- তুই, ইডিয়েট এত দেরি করে এলি কেন।
---- একটুই তো দেরি করছি।তুই কী বলবি বলছিলি।
"রাহাকে সবকিছু খুলে বললাম।"
---- আফরা,আমার মনে হয় তোর এভাবে নিবির ভাইয়ার পেছনে পরে থাকা উচিত না।উনি তোকে এত অপমান করে।
---- কী করবো বলতো।নিহানকে ভুলে থাকার একমাত্র উপায় তো নিবির ভাই।
---- নিহানকে মনে রাখা নিতান্তই তোর বোকামি।
---- কী করব বল।কোনো ভাবেই তো ঐ বেইমানকে আমি ভুলতে পারিনা।
---- আচ্ছা বাদ দে এসব।আন্টিরা কখন আসবে।
---- রাত হবে।
কিছু সময় থেকে রাহা চলে গেলো।সন্ধ্যা নেমে গেছে বলে আমিও নিচে নেমে এলাম।
এসে দেখি ফোনে অনেকগুলো মিসডকল।আমি কল ব্যাক করলাম কিন্তু প্রথমবার রিসিভ হলো না।দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো।ওপাশের লোকের কথা শুনেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো।
আমি বুঝি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারিয়ে ফেললাম।
------------
দেড় ঘন্টা ধরে হাসপাতালে বসে আছি।
নানী বাড়ি থেকে আসার সময় আব্বু-আম্মুর গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে।দুজনের অবস্থাই খুব খারাপ।
অপারেশন থিয়েটারে আছে তারা।ভাইয়াও ভেতরে আছে।
কিছুক্ষন পড়ে একজন ডাক্তার বেড়িয়ে এলো।
তাকে দেখেই তার দিকে ছুটে গেলাম।
ডাক্তার বলল- ওরা নাকি দুজনের কাউকেই বাচাতে পারেনি।
কথাটা আমার কানে প্রবেশ মাত্রই আমার পুরো শরীর কেপে উঠল।আমার পুরো দুনিয়াটাই যেন থেমে গেল।
"আব্বু" বলে একটা চিৎকার দিয়েই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লাম।
(চলবে
#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০৬
লেখিকা-#খেয়া
বাবা- মাকে ছেড়ে বেচে থাকার মতো কঠিন কাজ দুনিয়াতে হয়ত আর নেই।আর এই কঠিন কাজটাই যে আমাকে করতে হবে।
আমার সামনেই আব্বু-আম্মুর কাফনে মোড়ানো লাশ রাখা।বাড়ি ভর্তি মানুষ কিন্তু দিনশেষে তো তারা সবাই চলে যাবে।আমরাও একা হয়ে যাবো।
ছোট ছোট ব্যাপারে কঁদে ভাসিয়ে ফেলা এই আমি আজ একটুও কাঁদতে পারছিনা।খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে"বাবা-মা তোমরা ফিরে আসোনা"।কিন্তু আমি পারছিনা।নিজেকে বড্ড অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে।
আব্বু- আম্মুর দাফন শেষ হয়েছে ঘন্টা দু'য়েক।বাকিরা সবাই চলে গেছে।শুধু আমাদের পরিবারের কিছু লোক রয়ে গেছে।
কিছুক্ষণ পরে খালামনি ও আংকেল আমার কাছে এলো।আংকেল মামাকে গিয়ে বলল
---- আবির তো বড় হয়ে গেছে ভাইজান। কিন্তু আফরা ও তো এখনো ছোটো।ওর দায়িত্ব কে নিবে।আবিরের বউ এলে তো ও বেশিদিন এখানে টিকতে পারবেনা।
উনি কিছুক্ষন থেমে আবার ও বললেল
---- দেখেন ভাইজান,নিবির যে আফরাকে পছন্দ করেনা সেটা তো সবাই জানে।তাই আফরা যে আপনাদের বাড়ি থাকতে পারবেনা সেটা আমি জানি।তাহলে নিশ্চয় ওর দায়িত্ব আমাদের ঘারে এসেই পড়বে।আমি কিন্তু ওসব ঝামেলা নিতে পারবোনা।
আংকেলের কথা শেষ হতেই ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল
---- কাউকে নিতে হবেনা আফরার দায়িত্ব।যতদিন আমি আছি ততদিন ওকে নিয়ে আপনাদের না ভাবলেও চলবে।
আংকেল বেশ অপমানিত হলেন ভাইয়ার কথায়। নানীও মুখ বুঝে সব শুনছে।ওখানে আর একমুহুর্ত না থেকে ঘরে চলে গেলা।গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।
নিজের আপন মানুষগুলোকেও আমার বড্ড অচেনা মনে হচ্ছে।সবারই এখন আমাকে বোঝা মনে হচ্ছে।একদিন হয়ত ভাইয়ারও আমাকে বোঝা মনে হবে।
বাইরে থেকে সবাই দরজা খুলতে বলছে।
---- তোমরা প্লিজ যাও এখান থেকে।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
--------------
আব্বু- আম্মুকে ছাড়া পুরো একদিন কেটে গেছে।তখন থেকে এখন পর্যন্ত কিছু মুখে তুলিনি আমি।
---- একটু তো খেয়ে নে, মা।এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি।
---- আমি খাবনা, মামি। তুমি খাবারটা রেখে এসো।
মামিকে কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।আমি একদমই ক্ষুদা সহ্য করতে পারিনা।কিন্তু আজ একদমই খেতে ইচ্ছে করছেনা।শরীরটাও বড্ড দুর্বল লাগছে।হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতেই কেউ আমায় ধরে ফেলল।
চোখ খুলে দেখলাম মামি আর নিবির ভাইয়া বসে আছে।ভাইয়া হয়ত কোথাও গেছে।
আমাকে উঠতে দেখেই নিবির ভাইয়া মামিকে খাবার আনতে বলল।মামিও খাবার আনতে চলে গেলো।নিবির ভাইয়া আমার পাশে বসে বলল
----এভাবে না খেয়ে থাকলেই কী তোর বাবা,মা ফিরে আসবে।না খেয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে কী, আফরা। তোর জন্য আবির ও না খেয়ে আছে ।
---- আচ্ছা ভাইয়া খুব কী ক্ষতি হতো যদি বাবা মা আমাকেও তাদের সাথে নিয়ে যেত।
---- আফরা! তারা যখন তোকে সাথে নেয়নি তখন নিশ্চয় তারা চায় তুই এই দুনিয়ায় থাক। তোকে বাচতে হবে আফরা, আবিরের জন্য বাচতে হবে, নিজের জন্য বাচতে হবে, আমাদের জন্য বাচতে হবে।
একটু পরে মামি আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো। আমিও খেয়ে নিলাম।নয়ত আমার জন্য ভাইয়াও না খেয়ে থাকবে।
বিকেলে আমাদের কিছু প্রতিবেশী এলো বাড়িতে।তারা এসেই বিভিন্ন কথা বলতে লাগল।
---- শোনো নিবিরের মা তোমরা বরং আফরার বিয়ে দিয়ে দাও।তাছাড়া কে নেবে ওর দায়িত্ব।
অন্য একজন বলে উঠল
---- তাছাড়া তোমার ঘরেও তো জোয়ান একটা ছেলে আসে।আফরা তো ছোট,বলা যায়না যদি তারা কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।
উনার কথা শুনেই কেদে দিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া বাড়িতে ঢুকছিল।হয়ত সে সব কিছুই শুনেছে।
নিবির ভাইয়া উনাদের সামনে গিয়ে বলল
---- আফরাকে নিয়ে এতটা ভাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।কিন্তু ওকে নিয়ে যদি আপনারাই সব ভেবে ফেলেন তাহলে আমরা কী করব বলেন। আমাদের জন্য কিছু রাখেন।
আর শোন আফরা একদম মানুষের এসব উল্টোপাল্টা কথায় কান দিবি না।
তখনই আরেকজন বলে উঠল
---- সবই বুঝলাম গো নিবিরের মা।শেষ পর্যন্ত এই ঝামেলা তোমাদের ঘাড়েই জুটবে।তোমার ছেলের তো ভাব খারাপ।
আর কোনো কথা শোনার আগেই রুমে চলে গেলাম। ওখানে একপাতা ঘুমের ঔষধ ছিল। সেটা থেকে অনেকগুলো ঔষধ খেয়ে নিলাম। জানি আমি অনেক বড় পাপ করছি কিন্তু আমার কিছু করার নেই।আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিনা।আমি কারো ওপর ঝামেলা হয়ে থাকতে চাইনা।
---------------
চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম । তখনই ভাইয়া ঠাস করে একটা চড় মারল আমায়।
প্রচন্ড কষ্ট পেলাম ঘটনাটায়। জীবনে প্রথম ভাইয়া আমার গায়ে হাত তুলল।
একটু পরেই ভাইয়া আমার দুইগালে হাত রেখে বলল
---- মেরে ফেলবি আমায়, বনু।কেন এমন করলি।তুই জানিস না তোর কিছু হলে আমি বাচবোনা।কেন লোকের কথায় নিজেকে শেষ করবি তুই।তুই নিজের যোগ্যতায় দেখিয়ে দিবি যে তুই আমাদের বোঝা না অহংকার।
--------------
কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।এখন আমি যথেস্ট নরমাল।
পড়াশোনায় ও বেশ মনোযোগ দিয়েছি।আম্মুর খুব শখ ছিল আমি ঢাবিতে পড়ব।সে অনুযায়ী প্রিপারেশন নিচ্ছি।সামনেই এডমিশন টেস্ট।
নিবির ভাইয়াও এব্যাপারে খুব সাহায্য করে আমায়। একদিন উনি আমার সাথে একটুও খারাপ ব্যবহার করেননি।
অনেকদিন ঘরবন্দি ছিলাম। তাই আজ ঠিক করলাম মামাদের বাড়িতে যাবো।
সকালে হাসপাতালে যাওয়ার সময় ভাইয়া আমায় মামা বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।
ভিতরেই এসে দেখলাম নিবির ভাইয়া আর কথা আপু একসাথে বসে কী যেন করছে। তাদেরকে একসাথে দেখেই পুরোনো ক্ষতটা যেন জেগে উঠল। কিন্তু আমি সে সবকে পাত্তা দিলাম না।
নিবির ভাইয়া যেন আমাকে দেখেও দেখলনা।আমিও কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেলাম।কিন্তু মামিকে কোথাও পেলাম না। তাই নিবির ভাইয়াকেই গিয়ে জিঙ্গেস করলাম
---- ভাইয়া, মামি কই।
---- আম্মু তো মামার বাসায় গেছে।
---- ওহ। তাহলে বরং আমি যায়।
---- এখনই যাবি।
---- হুম। থেকেই কী করব।
----আচ্ছা যা।
আমিও বেরিয়ে এলাম। নিবির ভাইয়া একবার জিঙ্গেস ও করল না যে একা যেতে পারব কিনা।অবশ্য করবেই কেন।কথা আপু সাথে থাকলে তো তার দিন দুনিয়ার খেয়াল থাকে না।
বাসায় গিয়ে এখন একা বোর হওয়া ছাড়া কোনে কাজ নেই।নিবির ভাইয়াদের বাসার কাছাকাছি একটা ছোটোখাটো একটা লেক আছে।তাই ভাবলাম ওখান থেকে ঘুরে আসি।
যেই ভাবা সেই কাজ।একা একা লেকের পাড়ে হাটছি।এখন সকাল ১১ টা বাজে।এখন অফিস টাইম বলে খুব একটা ভিড় নেই।এখন মানুষ নেই বললেই চলে।কিন্তু বিকেল বেলা অনেক ভিড় থাকে। বাবার সাথে আগে অনেকবার এসেছি।
কিছু সময় পরে আমার ফোনে একটা মেসেজ এলো
" একা একা থাকতে বুঝি খুব ভালো লাগে শুভ্রপরী"।
মেসেজটা ঐ প্রহরই পাঠিয়েছে।আজকাল আর এগুলো নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করেনা।সব আবেগ গুলো যেন সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে।
হঠাৎই আজানের শব্দ কানে এলো।কখন যে এত সময় কেটে গেছে বুঝিনি।তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখলাম নিবির ভাইয়া এদিকেই আসছে।উনার চোখ-মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে।
উনি আমার কাছে এসেই বেশ জোরে একটা চড় মারল।আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
উনি আমাকে তুলে আমার হাত ধরে বললেন
---- তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে, আফরা।বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে এখানে আসবি বলে আসতে পারলি না।তুই বেড়োনোর আধ ঘন্টা পর যখন আরশিকে ফোন করে জানতে পারলাম তুই বাড়ি যাসনি তখন আমার কী অবস্থা হয়েছিল জানিস।দুঘন্টা কত খুজেছি তোকে।ফোনটাও তো ধরিসনি।
আসলেই তখন আমার ভাইয়াকে বলে আসা উচিত ছিল।আর তখন মেসেজের জন্য ফোনটাও সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।কিন্তু আমায় নিয়ে উনার এত চিন্তা কেন?
---- চল তোকে বাড়ি দিয়ে আসি।আর সরি, এমন বিহেব করার জন্য।
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম।
তখনই ভাইয়া এমন একটা কথা বলল যেটা শুনে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভাইয়া বলল
---- আমায় বিয়ে করবি,আফরা।
(চলবে)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০৭(শেষ)
লেখিকা- #খেয়া
এসব কী বলছ তুমি নিবির ভাইয়া।
---- আমি ঠিকই বলছি।আগে তুই রোজ আমাকে বিরক্ত করতি,আমিও বিরক্ত হতাম।কিন্তু ইদানিং তোর ঐ বিরক্তি গুলোকে বড্ড মিস করি।
---- তুমি তো কথা আপুকে ভালোবাসো, তাইনা।
---- জানিনা।আমি কথার সাথে থাকলেও আমার মন বারবার শুধু তোকেই খোঁজে।তুই জানিস,যখন প্রহর আমাকে বলেছিল ও তোকে ভালোবাসে তখন এক মুহূর্তেরর জন্য মনে হয়েছিল আমি বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলবো।
---- আপনার ভাই আমাকে ভালোবাসতেই পারে কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা।
---- তুই তো আমাকে ভালোবাসিস তাইনা,আফরা।
---- ভালোবাসতাম হয়ত এখনো বাসি।কিন্তু আপনার প্রতি আমার তীব্র ভালোবাসা আপনার করা অপমান অবহেলার নিচে চাপা পরে গেছে।
---- আফরা!
---- দেখুন নিবির ভাইয়া একটা সময় আমি আপনার জন্য পাগলামি করছি,রাতের পর রাত কেঁদে কাটিয়েছি ঠিকই । কিন্তু এখন এসব পাগলামি আমায় মানায় না।
আমি এখন এসব কিছু নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমি এখন আমার পুরো ফোকাসটা আমার ক্যারিয়ারের ওপর দিতে চাই।
---- কিন্তু আফরা,,,
---- আপনি কী আমায় বাড়ি দিয়ে আসবেন নাকি আমি একাই যাবো।
---- না, চল আমি দিয়ে আসছি।
--------------
সেদিন এভাবে নিবির ভাইয়াকে রিজেক্ট করে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।তবুও নিজের পড়াশোনায় যথেষ্ট ফোকাস করেছি।
আজ এডমিশন টেস্ট।ভাইয়ার সাথে এসেছি কেন্দ্রে।চারিদিকে এত মানুষ দেখে সত্যি খুব ভয় হচ্ছে।এত সব ট্যালেন্টটেড মানুষের মাঝে কী নিজের জায়গাটা করে নিতে পারব।
অবশেষে পরীক্ষাটা দিয়েই দিলাম।একদম ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে পরীক্ষাটা।
হলে ঢোকার আগে নিবির ভাইয়া ফোন দিলেও ফোনটা ধরিনি।
আজ এডমিশনের রেজাল্ট দিবে।সকাল থেকে প্রচন্ড টেনশনে আছি।বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।
আর ভাইয়া নেটে রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।অনেকজনের পরে অবশেষে লিস্টে আমার নামটা পাওয়া গেলো।
লিস্টে নিজের নামটা দেখা মাত্রই আনন্দে কেঁদে দিলাম।এবার হয়ত আমি আম্মুর স্বপ্নটা পূরণ করতে পারব।
------------
আজ ভার্সিটি তে প্রথম দিন।ভাইয়া আমায় রেখে গেছে।
দিনটা বেশ ভালোই কাটল।অনেক জনের সাথে বেশ ভালোই পরিচিত হয়েছি।
ক্লাশ শেষে গেটের বাইরে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম নিবির ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া আর কথা আপু যথেষ্ট ক্লোজ হয়ে বসেছিল।ওদেরকে দেখেই বোঝা যায় তাদের সম্পর্কটা কী।
বেশ কিছুদিন হলো ভার্সিটি যাচ্ছি।এই কয়দিন নিবির ভাইয়া অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি প্রতিবারই তাকে ইগনোর করেছি।
যদি সে আমাকে সত্যি ভালোবাসতো তাহলে এখনও কথা আপুর সাথে এতটা ক্লোজ থাকতোনা।
খুব চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে যাওয়ার কিন্তু পারিনি।কারন সে যে আমার প্রথম প্রেম।
মাঝে অবশ্য প্রহর অনেকবার তার মনের কথা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু আমি এখন এসবে জড়াতে চাই না।
এই কয়দিন একদমই মামা বাড়ি যায়নি।খালামণিরাও আর যোগাযোগ করেনি তবে আরাব ভাইয়া আর রাদিফের সাথে প্রায়ই কথা হয়।
মাঝে মাঝে আরশি আর রাহা এসে আমার সাথে থাকে।তবুও যে দিনশেষে বাবা - মায়ের শূন্যতাটা বেশ উপলব্ধি করতে পারি।
আজ যদি তারা থাকত তাহলে হয়ত আমার জীবনটাই অন্যরকম হতো।
-----------
আজ আমাদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান।
নিবির ভাইয়া তো এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।তাই অন্য সবার মতো তার ওপরও অনেক কাজের দায়িত্ব পড়েছে।আমি আর রাহা দুজনেই এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি।
আজ রাহার কথায় একটা নীল শাড়ি পড়েছি।অবশ্য দুজনেই একরকম শাড়ি পরেছি।
স্টেজের সামনে বসায় নিবির ভাইয়ার চোখে খুব সহজেই পরেছি।ভাইয়া বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছে।সেটা আমি দেখেছি।তবুও এমন একটা ভান ধরে আছি যেন আমি ভাইয়াকে চিনি না ।
ভার্সিটিতে নিবির ভাইয়া সবার ক্রাশ বয়। সবাই তার পিছনে লেগে থাকে।আর নিবির ভাইয়াকে আমার এভাবে ইগনোর করাটা আমার নতুন বন্ধুদের ঠিক হজম হচ্ছেনা।
---- আচ্ছা, নিবির ভাইয়ার জন্য যেখানে সবাই পাগল সেখানে তুই উনাকে এভাবে ইগনোর করিস কেন।?(দিয়া)
---- হ্যা, তাই তো। এমন করিস কেন, আফরা।(মাহি)
---- আরে তোরা জানিস না আমার সবসময় আনকমন জিনিস পছন্দ। আর নিবির ভাইয়াকে তো সবাই পছন্দ করে আমি নাহয় অন্য কাউকে পছন্দ করলাম।
আমার এমন উত্তরে যেন ওরা একটুও খুশি হয়নি।দিয়া আবারো বলল
---- জানিস নিবির ভাইয়া আর কথা আপু নাকি একে অপরকে ভালোবাসে।তারা নাকি সামনে মাসেই বিয়ে করবে।
দিয়ার এমন কথা শুনে বুকের বা পাশে একটা চিনচিন ব্যাথ্যা অনুভব করলাম।ওখানে আর একমুহূর্ত দাড়ালাম না।রাহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির জন্য।
মাঝে কেটে গেছে সাতদিন।আজ আরাব ভাইয়ার বিয়ে।মেয়ে অবশ্য ভাইয়ারই পছন্দ করা।আমাদের দাওয়াত করা হলেও আমরা যাবোনা ঠিক করেছি।আমাদের দাওয়াত দেওয়ার আসল কারন অবশ্য তারা কতটা যোগ্য মেয়ে পেয়েছে সেটা দেখানো।সেদিন আব্বুর 'না' টা আজও মেনে নিতে পারেনি আংকেল।
ভাইয়া আমাকে নিষেধ করে গেছে যেন এসব নিয়ে একদম না ভাবি।তবুও শত ভাবনার মাঝে বারবার একজনের কথাই মনে পড়ে " নিহান"।
আমার কিশোরী বয়সের আবেগ।ছোটো ছিলাম কিন্তু প্রচন্ড আবেগী ছিলাম।তখন সবটাই আবেগ দিয়ে ভাবতাম।
সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ি আমি।তখম নিহানের প্রতি একটা প্রবল আকর্ষন কাজ করত আমার।কিন্তু সেটা শুধুই একপ্রকার মোহ ছিল, যা সময়ের সাথে সাথে কেটে যায়।কিন্তু নিহান আমার পিছু ছাড়েনি। সে আমার পিছনেই পড়ে থাকত।ভাবত আমি হয়ত রূপের অহংকারে তাকে ইগনোর করছি।
তাই সে আমার রূপ নষ্ট করারও চেষ্টা করেছিল।একদিন সন্ধ্যেবেলা কোচিং শেষে ফেরার পথে নিহান আর ওর বন্ধুরা আমার পথ আটকায়।
নিহান আমার মুখে এসিড ছুড়ে মারে।কিন্তু সৌভাগ্য বশত কিছুটা এসিড আমার হাতে আর বাকিটা মাটিতে পরেছিল।
চোখের সামনে নিজের ঝলসে যাওয়া চামড়া দেখে এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলাম।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেছিলাম।দীর্ঘদিন সাফার করেছিলাম।অনেকগুলো সার্জারির প্রয়োজন হয়েছিল।
বাবারা নিহানের নামে মামলা করেছিল।ওকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল।
ঐ ঘটনার পর নিজেকে একদম ঘরবন্দি করে নিয়েছিলাম।তখন আমরা চট্টগ্রাম থাকতাম।তাই এব্যাপারে নিবির ভাইয়া কিছু জানেনা।পরে অবশ্য আমার জন্যই সবাই ঢাকা শিফট করেছিল।
অনেকদিন পরে শুনেছিলাম নিহানের জামিন হয়ে গেছে।তার কিছুদিন পরেই ও সুইসাইড করেছিল।কিন্তু কোন তা এখনো অজানা।
আমি এতদিন ভাবতাম হয়ত নিহানই আমার প্রথম প্রেম ছিল।কিন্তু পরে বুঝেছি যে ও আমার মোহ ছিল আর নিবির ভাইয়া ছিল আমার প্রথম প্রেম।
নিহানকে যে আমি পুরোপুরি ভুলতে পেরেছি তা না।আজও সেই রাতের কথা মনে পড়লেই গা শিউরে ওঠে আমার।কী অসহ্য ছিল সে যন্ত্রনা।সেদিনের সবকিছু হয়ত আমি সহ্য করে ছিলাম।কিন্তু আজ যদি নিবির ভাইয়া আমায় কোনো কষ্ট দেয় তাহলে সেটা আমি সামলাবো কী করে।
নিহান সুইসাইড করার আগে আমার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে গেছিল।যেটা আমি অনেক পরে পেয়েছিলাম।
ওখানে ও বলেছিল যে আমার ওপর করা অন্যায় নাকি ওকে প্রতিমুহূর্তে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে।তাই সে আর সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করেছে।
এখনো মাঝেমাঝে নিহানের মৃত্যর জন্য নিজেকে দায়ী মনে হয়।
--------------
আজ ভার্সিটি শেষে গেটের বাইরে দাড়িয়ে আছি।আজ ভাইয়া নিতে আসবে না।আর আজ একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।তাই খানিকটা রাস্তা হেঁটেই এগিয়ে গেলাম।
ওখানেই দেখলাম কথা আপু আর নিবির ভাইয়া একসাথে হাত ধরে হাঁটছে।না চাইতেও চোখ দিয়ে দু'ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
আমাকে দেখেই নিবির ভাইয়া কথা আপুর হাত ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- আমাকে যখন কথার সাথে দেখে এতটাই খারাপ লাগছে তাহলে সেদিন না করে দিলি কেন?
নাকি তুই কখনো আমায় ভালোই বাসিসনি।আমি কী শুধুই তোর মোহ ছিলাম।
---- না,,,,আপনি আমার মোহ ছিলেন না। আপনি আমার ভালোবাসা ছিলেন আমার প্রথম প্রেম ছিলেন।কিন্তু আমি শুধুই আপনার মোহ ছিলাম।ক্ষণিকের মোহ।যা কিছু সময়ের জন্য আমার প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করেছিল।কিন্তু তা তো স্থায়ী ছিলনা।কখনো হতো না।
বরং আপনাকে বিয়ে করলে নিজেকে পস্তাতে হতো।
আমার কথাগুলো শুনেই নিবির ভাইয়া মাথা নামিয়ে নিলেন।আমার কথাগুলো যে ভুলনা সেটা উনি বুঝেছেন।
নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।খানিকক্ষণ পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে। আমি দ্রুত ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে নিলাম।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি ছেলে ও মেয়ে হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, এরা নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে এরা।
আকাশের দিকে তাকিয়ে এই বৃষ্টিফোটাকে সাক্ষী করে সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই চাইলাম যেন,এদের প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পায়।
(সমাপ্ত)
( সবাই হ্যাপি এন্ডিং চান।সবার গল্পেই কী হ্যাপি এন্ডিং হয়।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায় আর সেসব ভালোবাসার গল্পগুলো রয়ে যায় অজানা।)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
দিনশেষে যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে নীড়ে ফেরে তখন বুঝি গোধূলি টাকে এত সুন্দর লাগে।
সবে সূর্য ডুবেছে।চারিদিকে এখনো সূর্যের লাল আভা বিদ্যমান।
---- আফরা!
বিকেলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।তখনই রাহাকে দেখে বেশ অবাক হলাম।
---- রাহা,তুই এসময়।
---- তুই এমন কেন রে?
---- কেমন!
---- নিবির ভাইয়া তো তোকে জন্মেও কোনোদিন পাত্তা দেয়নি।অথচ তার পিছনে তো আঠার মতো লেগে থাকতি। আর প্রহর ভাইয়া এতদিন ধরে তোর সাথে শুধু একটু কথা বলতে চাচ্ছে । আর তুই তার সাথে কথা তো বলিসনি উল্টো ফোনটাকেও বন্ধ করে রেখেছিস।
---- আমি এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায়না,রাহা।
---- আসলে কী জানিস তো, তুই প্রচন্ড বড় একটা ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছিস।হতে পারে নিবির ভাইয়া তোর প্রথম প্রেম কিন্তু সে কখনোই তোকে বোঝেনি।তুই শুধু তাকে ভালোবেসে কষ্ট পেয়েছিস।তুই তো একবার প্রহর ভাইয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারিস।
---- আমি প্রচন্ড ক্লান্ত, রাহা।এই ভালোবাসা,প্রেম এগুলো যে আমার জন্য না।
---- তোর সাথে তো কথা বলাই বৃথা।
--------------
রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে।ভাইয়া এখনো আসেনি।ভাইয়া কখনোই এত রাত করে বাড়ি ফেরেনা।কিন্তু আজ এত লেট কেন করছে?
হাসপাতালে কোনো ইমার্জেন্সি থাকলে আমাকে ফোন করে বলে দেয়।কিন্তু আজ ভাইয়ার ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।
প্রায় এগারোটার দিকে ভাইয়া আসল।
---- তুই কিরে ভাইয়া,এত রাত করে ফিরবি একবার ফোন করে বলতে তো পারতি।
---- সরি বনু, ফোনটা না বন্ধ হয়ে গেছে।আমি একটা ঝামেলায় পড়ে গেছিলাম।আমি ফোনটা চার্জিং এ দিয়ে আসি।
---- তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।আমি খাবার গরম করে আনছি।
রান্নাবান্না কখনোই পারতাম না।একমাত্র মেয়ে বলে কখনোই কিছু করতে হয়নি।তবে এখন টুকটাক পারি।ভাইয়া একটা মেয়েকে রেখেছে।সে রান্নাসহ ঘরের সব কাজ করে দিয়ে যায়।
আমি আর ভাইয়া বসে খাবার খাচ্ছিলাম।তখনই ভাইয়ার ফোনটা বেজে উঠল।আমি চার্জিং থেকে ফোনটা নিয়ে এলাম।
ওপাশ থেকে কী বললো তা শুনিনি তবে ভাইয়ার কথাটা এমন ছিল
---- লিসেন,আমারও একটা পরিবার আছে, পারসোনাল লাইফ আছে।আপনার মেয়ের জন্য তো আমি সেগুলো স্পয়েল করতে পারবনা।
বেশ রেগে কথাগুলো বলে ভাইয়া ফোনটা কেটে দিল।
---- কী হয়েছে ভাইয়া।
---- আরে আমাদের হাসপাতালে একটা মেয়ে এসেছে নতুন।এবছর ই চাকরিতে ঢুকেছে।মেয়েটা তো একদম পিছনে পড়ে আছে। আজ তো আমাকে সবার সামনে প্রোপোজ করছিল। রিজেক্ট করেছি বলে সুইসাইডই করে নিয়েছে।
---- মেয়েটা ভালো হলে তো বিয়ে করে নিতে পারিস।
---- আর যাই হোক ঐ সাইকো মেয়েটাকে তো আমি বিয়ে করব না।
-------------
রাতে শুয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করছি।ঘুম আসছেনা।
বারবার বিকেলে রাহার বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে।ভালোবাসার মানুষের থেকে অবহেলা পাওয়ার কষ্টটা আমি জানি, সেই একই কষ্ট কী আমি প্রহরকেও দিচ্ছি।
অবশেষে সবকিছু সাইডে রেখে প্রহরকে একটা মেসেজ করলাম।উনি দেখলেন ঠিকই কিন্তু কিছু বললেন না।
এবার আমি উনাকে কল করলাম।উনি খুব দ্রুত ফোনটা ধরলেন,যেন এটারই অপেক্ষায় ছিলেন।
আমি সরাসরি উনাকে বললাম
---- আমার সাথে একবার দেখা করবেন, প্লিজ।আমি লোকেশন বলে দিবো।
উনাকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।আমি জানি উনি আসবেন।
আজ ভার্সিটি নেই।তাই ঠিক করেছি বিকেলে প্রহরের সাথে দেখা করতে যাবো।
কিছুক্ষন আগে ভাইয়া ফোন করেছিল, একটা ফাইল রেখে গেছে সেটা যেন হাসপাতালে দিয়ে আসি।
আমিও ফাইলটা নিয়ে গেলাম।উদ্দেশ্য ঐ মেয়েটাকে দেখা।
ভাইয়ার কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছি।ভেতরে কিছু লোক আছে।যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা বুঝতেছি না।ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি ধরছেও না।
অবশেষে ঢুকেই গেলাম।কতক্ষন এভাবে থাকব।
---- ভাইয়া আসব।
কথাটা বলা মাত্রই ওখানে উপস্থিত সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি একটা এলিয়েন।
---- হুম,আয়।
ভাইয়া সবাইকে বাইরে চলে যেতে বলতেই সবাই চলে গেলো।
---- ওরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলো কেন ভাইয়া।
---- তুই তো জানিস আমি কাজের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস।তাই এরা আমাকে ভয় পায়।তুই এতটা ফ্রি হয়ে কথা বলায় একটু অবাক হয়েছে।
---- একটা কথা বলব, ভাইয়া।
---- বল।
---- আমাকে কালকের ঐ আপুটার সাথে দেখা করাবি।
---- তুই পাগল নাকি,আমি এখন ওখানে গেলে ও আবার পাগলামি শুরু করবে।
---- তোর যাওয়া লাগবেনা।আমি একাই যাবো।আর এটাও বলব না যে আমি তোর বোন।
---- কিন্তু,,,
---- কোনো কিন্তু না।
---- আচ্ছা, ৩০২ নাম্বার কেবিনে আছে।
আমি ভাইয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে ৩০২ নং রুমে ঢুকলাম।ওখানে ঐ আপুটা আর একজন ছিল।আপুটা বেশ সুন্দর, ভাইয়ার জন্য একদম পারফেক্ট।
ওরা আমায় দেখে বেশ অবাক হলো।আমায় বলল
---- তুমি কাউকে খুঁজছো?
---- না,আমি আসলে একজনের সাথে এখানে এসেছিলাম।সে তার কাজে ব্যস্ত তাই আমি ভাবলাম কারো সাথে গল্প করে আসি।তাই এখানে এলাম।আপনাদের সমস্যা হলে চলে যাচ্ছি।
---- না না।চলে যাবে কেন?
বসো আমরা গল্প করি।
বেশ খানিকক্ষন ওদের সাথে বসে গল্প
করলাম। আপুটার নাম অনন্যা।আমার তো ওকে বেশ ভালোলেগেছে।
কেবিন থেকে বেড়িয়ে ভাইয়ার রুমের সামনে আসতেই একজনের সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পড়ে গেলাম।পাশে থাকা টেবিলে লেগে কপালে বেশ খানিকটা কেটে গেলো।মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠলাম।তখনই ভাইয়া রেড়িয়ে এলো।
ছোটোবেলা থেকে শারীরিক আঘাতটা পায়নি বললেই চলে।আমার কপালে রক্ত দেখে ভাইয়া পুরো হাসপাতাল মাথায় তুলল।
" চাকরির পাশাপাশি আব্বু একটা বিজনেসও করত।কিন্তু ভাইয়ার পক্ষে হাসপাতাল, বিজনেস একসাথে মেনটেইন করা সম্ভব নয় বলে, ঐ বিজনেসের সব টাকা এই হাসপাতালে ইনভেস্ট করেছে।তাই এখানে ভাইয়ার যথষ্ট পাওয়ার আছে।"
ভাইয়া রাগী হলেও ভাইয়াকে কেউ এরআগে এতটা রেগে যেতে দেখেনি।
-----------
ভাইয়া আমায় নিয়ে বাসায় চলে এলো।বাসা থেকে বেড়োতে একদম নিষেধ করছে।
তাই আর প্রহরের সাথেও দেখা করতে যাওয়া হবেনা।তাই উনাকে ফোন করলাম।
---- আমি আজ আপনার সাথে দেখা করতে পারবনা।
---- কেন শুভ্রপরী,কী হয়েছে?
---- আসলে, আমি পড়ে গিয়ে একটু আঘাত পেয়ে,,,,,
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই উনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।উনার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলো আমার বেশ ভালোলাগে।
রাতে বসে বসে নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম।তখনই নিবির ভাইয়া আর কথা আপুর একটা ছবি সামনে এলো।
মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু এই মন খারাপকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা।নিজেকে শক্ত হতে হবে।
অনেকদিন প্রহর কোনো মেসেজ দেয়না।অবশ্য আমি না করেছিলাম।সে আবার আমার সবকথা খুব মানে।
মাঝরাতে ঘুমটা ভেঙে গেল।আজ আব্বু- আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।রাতে আব্বু দুই-তিনবার দেখতে আসতো আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা।
কেনো আব্বু- আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।
--------------
পরদিন সকালে ভার্সিটি যাচ্ছিলাম।সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা।কীভাবে যে একবছর কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি।
বাড়ি থেকে বেড়োতেই যাচ্ছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া এসে বললেন-
---- কোথায় যাচ্ছিস, আফরা।
---- ভার্সিটি।
---- ভার্সিটি যেতে হবেনা।আমার সাথে হাসপাতালে চল।
----হাসপাতালে কেন, ভাইয়া।
---- আম্মুর শরীরটা খারাপ।তোকে নিয়ে যেতে বলেছে।
----মামির আবার কী হয়েছে।
হাসপাতালে মামির কাছে বসে আছি।মামির একটা ছোটখাটো হার্টএটাক হয়েছে।তবে এখন সুস্থ।মামি আমার হাতটা ধরে বলল
---- আমার একটা কথা রাখবি, আফরা।নিবিরকে বিয়ে করবি?
মামির কথার উত্তরে কী বলা উচিত বুঝতে পারলাম না।তখনই,,,,
(চলবে)
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া
( গল্পটা যেমন আপনারা পড়তে ভালোবাসেন তেমনি আমি এই গল্পটা লিখতে ভালোবাসি।না লিখে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।তাই লিখেই ফেলাম।নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করব তবে একদিন পরপর দেওয়ার চান্স বেশি।এবার হ্যাপি এন্ডিং দেবো,প্রমিস।
গল্পটা সিজন ১ না পড়লে বুঝবেন না।যারা নতুন তারা আগে সিজন ১ পড়বেন।ধন্যবাদ।)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০২ +০৩
লেখিকা-#খেয়া
তখনই মামি আবারও বলল
---- আমি জানি আফরা তুই নিবিরকে ভালোবাসিস। কিন্তু আমি চায়না তুই ওকে বিয়ে কর।ওর সাথে তুই কখনো ভালো থাকবিনা আফরা।
---- তুমি কী করে জানলে,মামি।
---- আমি সব বুঝিরে,মা।কথা যে খারাপ মেয়ে না সেটা আমি জানি কিন্তু ইদানিং ও যেটা করছে সেটা ও ঠিক করছেনা।
---- কথা আপু কী করেছে, মামি।
---- আমার ছেলেটার মাথাটা খারাপ করে দিয়েছে ও। দেখলিনা আমার এমন সময় ও ছেলেটা কেমন কথার সাথে চলে গেলো।
মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম।
---- আফরা,দুপুর তো হয়ে গেলো তুই বরং বাড়ি চলে যা। দাঁড়া আমি প্রহরকে বলি ও তোকে দিয়ে আসবে।
---- উনি এখানে আছে।
---- হুম।
------------
প্রহরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
যেহেতু এসেছি তাই ভাবলাম কথা বলেই যাই।
---- কী খাবে বল, শুভ্রপরী।
---- আমাকে আফরা বলে ডাকলে ভালো হতো।
---- আচ্ছা।কী খাবে বল।
---- কফি।
---- এখন তো দুপুর।দুপুরবেলা কে কফি খায়।
---- আমি।কোল্ড কফি ওর্ডার করেন।
---- আচ্ছা।
তুমি কাল কিছু বলতে চেয়েছিলে তাইনা।
---- হুম,সরি।
---- সরি কেন?
---- আপনাকে এতদিন ধরে এত বাজে ভাবে ইগনোর করার জন্য।আর মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে খারাপ বিহেব করার জন্য।
উনি খানিকক্ষন চুপ থেকে বললেন
---- নিবিরকে তুমি খুব ভালোবাসো, তাইনা।
---- হয়তো বা। কিন্তু আমি খুব চেষ্টা করছি তাকে ভুলে যাওয়ার।
---- লিসেন আফরা, সব মানুষের লাইফেই প্রথম ভালোবাসাটা স্পেশাল হয়।কিন্তু তাই বলে যে মানুষ দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারেনা, সেটা নয়।আমি তোমাকে বলছিনা যে তুমি আমাকে একটা চান্স দাও।আমি বলছি তুমি নিজেকে একটা চান্স দাও।
তোমার লাইফে সত্যি এমন একজনের দরকার যে তোমাকে অন্তত মেন্টাল সাপোর্ট দিবে।
----আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি,কিন্তু আমি সত্যি নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা।
---- তুৃমি টাইম নাও।নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলে দেন বিয়ে নিয়ে ভেবো।বাট এখন তোমার সত্যি একজনকে দরকার।
---- আমরা কী বন্ধু হতে পারি।
---- সিরিয়াসলি?
---- হুম।
---- আমাকে তুমি বন্ধু হিসেবে সবসময় নিজের পাশে পাবে।আমি নিবিরের মতো তোমার ফিলিংস নিয়ে কখনো অবহেলা করব না।
তার কথার উত্তরে আমি শুধু মুচকি হাসলাম।তারপর বললাম
----আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
---- বলো না।
---- আপনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?
---- নিবিরদের বাসায়।
---- কিন্তু আপনার সাথে যেদিন আমার দেখা হয়েছিল তারও অনেক আগে থেকেই তো আপনি আমায় মেসেজ পাঠাতেন।
---- আমি সেদিনের কথা বলিনি।তোমার মনে আছে নিবিরের বার্থডের কথা।যেদিন তোমার থেকে কথার গায়ে পানি পড়েছিল।ঐদিন দেখেছিলাম।
---- আপনি তখন ওখানে ছিলেন।
---- হুম। আমি তখন এখানেই ছিলাম।বাবা- মা পরে এসেছিল।
---- ওহ্।আমার মনেহয় এখন বাড়ি ফেরা উচিত।
---- হুম,চলো তোমাকে রেখে আসি।
প্রহর আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।কেন জানি এই মানুষটার সাথে কথা বললেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়।বারবার এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে মন চায়।এটা কী নতুন কোনো অনুভূতির সূচনা?
----------------
বাসায় এসেছি দীর্ঘক্ষন। দুপুরে ভাইয়া বাসায় আসেনি।রাতেও ফিরতে দেরি হবে।
বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে সোফায় বসে মাত্র টিভিটা অন করেছি।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দেখি নিবির ভাইয়া।প্রচন্ড বিধ্বস্ত চেহারা উনার।চোখ মুখ ফুলে একদম লাল হয়ে আছে।
ভেতরে ঢুকেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।
---- নিবির ভাইয়া,কী হয়েছে আপনার।
---- আফরা,কথা আমাকে ঠকিয়েছে।
---- মানে?
---- কথা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে।
----কিন্তু কথা আপু এটা কেন করল।
---- কারন ই ছেলের প্রচুর টাকা।তুই তো জানিস কথা একটা মিডিলক্লাস ফ্যামিলি থেকে আসে।ওর বাবা,মা ওর পড়ার খরচ দেয় না।এতদিন আমি ওর সব খরচ দিতাম।এখন ওর পড়া শেষ তাই নাকি আমাকে আর লাগবেনা ওর।
কথাটা বলেই নিবির ভাইয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।ঠিক কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে এভাবে কাঁদে তা আমার জানা নেই।
---- আমায় বিয়ে করবি, আফরা।
---- এসব আপনি কী বলছেন?
---- আমিও কথাকে দেখাতে চাই যে আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচতে পারি।
---- বেশ সুন্দর একটা কারণ দেখালেন।আপনি আমাকে কী মনে করেন বলুনতো যখন আপনার প্রয়োজন হয় তখন আমাকে কাছে টেনে নেন।আর যখন মনে হয় ছুড়ে ফেলে দেন।
যখন আপনার কাছে কথা আপু ছিল তখন আমাকে আপনার প্রয়োজন হয়নি।আজ কথা আপু নেই বলেই আপনি এমন করছেন।
---- আফরা!
---- একদম আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না, নিবির ভাই।
---- আফরা তুই,,,
---- আপনি খুব ভালো করেই জানেন নিবির ভাইয়া যে আপনার সামনে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।গত তিন বছর তো কম কষ্ট, অবহেলা দেননি আমায়।আজ যখন আপনার ভালোবাসা আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তখন আপনার আমার কথা মনে পড়ছে।
আপনি হয়ত ভাববেন যে আমি স্বার্থপর।তবে তাই।একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার পেছনে কীভাবে ঘুরেছি আমি।আর আপনি কী করেছেন আমার সাথে।
---- আমাকে কী একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?
---- না।আপনি এখন থেকে চলে যান।কেউ দেখলে ভুল ভাববে।
,,,,,,,,,,,,
মনটা আজ বড্ড পুড়ছে।যত যাই হোক নিবির ভাইয়ার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারিনা।প্রথম ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।আমি কী কখনো নিবির ভাইয়াকে ভুলতে পারব।
রাত হয়ে গেছে।খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিবির ভাইয়া এখন কী করছে।
একাএকা থাকতে ভালোলাগছিল না।তাই আরশিকে ডেকে পাঠালাম।
আরশির সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম।কেন জানি এখন আরশির এখানে আসাটা ওর মা পছন্দ করেনা।তবুও ও আসে।
রাতে আমি আর ভাইয়া একসাথে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম।
একদম ঘুম আসছেনা।যত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে পারি ততই ভালো।ঘুম না আসলে বারবার বাবা- মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে।বড্ড কষ্ট হয় তখন।আচ্ছা কেমন হতো যদি সন্তানের আগে বাবা মা মারা না যেতো।
তখনই প্রহরেরর ফোন এলো।না চাইতেও মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল।এখন আমার মন ভালো করতে এটাই দরকার।
---- কী ব্যাপার ম্যাডাম,মন খারাপ নাকি?
---- নাতো।
---- তাহলে যে অন্য দিনের মতো বকা দিলেন না।
---- এমনি।আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
---- বলো।
---- আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কী?
---- ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা মুখে বলে বোঝানো যায় না।ভালোবাসা ফিল করে নিতে হয়।
---- আপনি কী আমাকে ভালোবাসেন নাকি আপনার আমাকে ভালোলাগে।
---- আমার তোমাকে ভালোলাগে এটা ঠিক তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা।কিন্তু তোমার প্রতি আমার ফিলিংটা ভালোবাসার থেকেও অনেক বেশি কিছু।
---- আপনি কী কোনো জন্মে সাহিত্যিক ছিলেন।
---- সাহিত্যিক হতে যাবো কেন আমি তো ডাক্তার।
---- আপনিও ডাক্তার!
---- হুম।
---- আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে রাখি।
---- গুড নাইট।
---------------
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে এসে দেখি চারিদিকে রক্ত ছিটিয়ে আছে।সামনে তাকিয়ে দেখি,,,,
( চলবে)
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৩
লেখিকা- #খেয়া
সামনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার হাতেও রক্ত লেগে আছে।
আমাকে দেখে ভাইয়া বলল
---- ভয় পাসনা, বনু।এগুলো এমনি রক্ত।
---- মানে?
---- ব্লাডগুলো একটা টেস্টের জন্য হসপিটালে এসেছিল।আমি একটা দরকারে বাসায় নিয়ে আসছিলাম।কিন্তু কীভাবে যেন পড়ে গেল।
---- টেস্টর জন্য এত ব্লাড?
---- হুম।
--- আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
---- তুই যা। আমি এগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
---- আচ্ছা।
-----------------
ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম।একটাও রিক্সা পাচ্ছি না।তখন ই একটা গাড়ি এসে থামল আমার সামনে।গাড়িটা প্রহরের ছিল।
---- আমি নামিয়ে দিয়ে আসি।
---- আপনি?
---- হুম।আসতে পারো, খেয়ে ফেলবোনা তোমায়।
---- আচ্ছা।
---- আচ্ছা তুমি কী সত্যি আফরা না তার জমজ বোন।
---- মানে?
---- আমি তো জানতাম আফরা অনেক বাঁচাল আর চঞ্চল ছিল।
---- আফরা চঞ্চল ছিল।কিন্তু এখন নেই।
---- ভালো।আমার কিন্তু শান্ত বাচ্চা পছন্দ।তুমি শান্ত হলেই তো আমার বাচ্চা শান্ত হবে।
---- আমার সাথে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক কী?
---- মা যেমন বাচ্চা তো তেমনই হবে।
---- আপনার কী এসব কথা বলতে বাধে না।
---- অবিয়েসলি না।বাধঁলে তো আর বোলতাম না।
যাইহোক আপনার ভার্সিটি এসে গেছে।
---- হুম।বাই।
----------------
ভার্সিটিতে এসেই দেখি সবার মুখে একই কথা " কথা আপুর বিয়ে"।ইতিমধ্যে পুরো ভার্সিটি জানাজানি হয়ে গেছে।
রাহা এসে বলল
---- আমি অনেক খুশি হয়েছি জানিস।বেশ হয়েছে, এবার নিবির ভাইয়া বুঝবে মজা।
---- এভাবে বলিস না, রাহা।
---- রাখ তো তোর আবেগ।এখন বুঝবে ভালোবাসা না পাওয়ার কী কষ্ট।
---- আচ্ছা রাখ এসব। চল ক্লাসে যায়।
---- চল।
ভার্সিটি শেষে আমি রাহাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।আজ নাকি ভাইয়া আমাদের ট্রিট দিবে।খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে আছি।দেখলাম পাশের একটা টেবিলে অনন্যা আপু ও আরো অনেকে বসে আছে।আমাদেরকে ভাইয়ার সাথে ওরা বারবার কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিল।
তখন ভাইয়ার একটা ফোন আসায় ভাইয়া বাইরে চলে গেলো।
তখনই অনন্যা আপুর কিছু ফ্রেন্ড আমাদের কাছে এসে বলল
---- এইযে পিচ্চি বাবুরা একদম আবির ভাইয়ার থেকে দূরে থাকবে।এইযে এই মেয়েটাকে দেখছো না ও অনন্যা।আবিরের ওয়াইফ।
কথাটা শোনা মাত্র আমার আর রাহার রিয়েকশনটা যাদুঘরে তুলে রাখার মতো।
"অনন্যা আপু যেহেতু আমায় আগে থেকে চিনতো তাই ও বারবার সবাইকে নিষেধ করছে এসব বলতে কিন্তু ওরা তো বলেই যাচ্ছে।"
তখন ভাইয়াও এসে গেছে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
---- দ্যাট'স নট ফেয়ার, ভাইয়া। তুই বিয়ে করে ফেললি একবার বললিও না।কেন রে তোর বউকে কী আমি খেয়ে ফেলতাম।
---- আমার বউ! তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে,আফরা।
---- আরে না,দেখো ওরাই তো বলল যে এই অনন্যা আপু তোমার বউ।
রাহার কথায় ভাইয়া অনন্যা আপুর দিকে তাকাতেই তার সব ফ্রেন্ডরা হাওয়া হয়ে গেলো।
অনন্যা আপু তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে।অনেক সাহস সঞ্চার করে ভাইয়াকে প্রশ্ন করল
---- আফরা আপনার কেমন বোন লাগে?
---- নিজের বোন লাগে, তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে?
---- না,না।আমার তো ভালোই লেগেছে। বিয়ের পর তো আপনার বাড়িতে একা থাকা লাগবেনা।
আপুর কথার বিপরীতে ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো।
---------------
বিকেলে বাসায় বাসে বোর হচ্ছিলাম তাই রাহাকে নিয়ে ফুচকা খেতে বেড়োলাম।
রাহাকে প্রহরের ব্যাপারে অল্প কিছু বলছি আজ ভাবলাম ওকে সবকিছুই বলব।ওর থেকেই জানতে চাইব যে আমার কী প্রহরের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ।
ফুসকার দোকানে ফুসকা খেয়ে রাহাকে নিয়ে একটা মলে গেলাম।টুকটাক কিছু কেনার জন্য।
মলে একটা চুড়ির দোকানে প্রহরকে দেখলাম।ওকে ওখানে দেখে খুশি হয়েও যেন হতে পারলামনা। কারন ওর সাথে একটা মেয়েও ছিলো।দুজন পছন্দ করে চুড়ি কিনছিল।
এতদিনে প্রহরের প্রতি যে বিশ্বাস জন্মেছিল তা যেন নিমিষেই ভেঙে গেল।সব ছেলেরা বুঝি একই রকম হয়?
ওখান থেকে সরে আসছিলাম তখনই প্রহর আমাদের দেখে নেয়।ও আমাকে বলে
---- আফরা তুমি ভুল বুঝছো।আমি তোমাকে সবটা,,,,
ওর কোনো কথা না শুনেই বাইরে চলে এলাম।প্রহর ও আমার পিছন পিছন বাইরে চলে এলো।
বাইরে ভাইয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।আমি কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে গেলাম।
ভাইয়া রাহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি আমাদের বাড়ির রাস্তায় ঘুরিয়ে নিলো।কিছুক্ষন পর আমায় বলল
---- ছেলেটা কে ছিল, আফরা।
---- আমি ভাইয়াকে প্রহরের ব্যাপারে সবটা খুলে বললাম একদম শুরু থেকে।
ভাইয়া আমায় শুধু বলল
---- তোর মনে হয় ওকে একটা চান্স দেওয়া উচিত।আর নিবিরকে মনে রাখাটা তোর বোকামি হবে।
---------------
পরেরদিন ভার্সিটি তে ঢোকা মাত্র নিবির ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বলল
----আফরা, প্লিজ আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।
---- হাতটা ছাড়ুন , নিবির ভাইয়া।
ইতি মধ্যে মাঠে প্রচুর লোক জমা হয়েছে। সবাই তামাশা দেখতে ব্যস্ত।আমি অনেক চেষ্টা করেও যখন হাত ছাড়াতে পারলাম না তখন নিবির ভাইয়াকে একটা চড় মেরে ওখান থেকে চলে এলাম।
নিবির ভাইয়া যেন এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
প্রচন্ড খারাপ লাগছিল কাজটা করে।মনটাই খারাপ হয়েগেছিল। তাই ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম।রিক্সা না পাওয়ায় হেঁটেই যাচ্ছিলাম।তখনই আমায় পেছন থেকে কেউ ডাকল।
লোকটাকে চিনতে আমার বেশ সময় লাগলেও ঠিকই চিনলাম।ও রাফাত, আমার ক্লাসমেট ছিল একসময়।নিহানের বেস্টফ্রেন্ডও ছিল।
---- আমাকে চিনতে পেরেছিস, আফরা।
---- রাফাত, তুই এখানে।
---- আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমায় চিনবিনা।
---- না তা কেন।
কথা বলতে বলতে দুজন রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলাম তখনই একটা গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে গিয়ে াা জোরে ব্রেক কসল। গাড়িরা প্রহরের।কিন্তু উনি এখানে কেন?
উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে এসে বললেন
---এই ছেলেটা কে?
---- আমার ফেন্ড রাফাত।
উনি রাফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন
---- হ্যালো।আমি প্রহর,,আফরার উডবি।আমার একটু কাজ আছে ওর সাথে তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই উনি হাত টেনে আমায় গাড়িতে বসালেন।
---- আপনি আমার কোন জন্মের উডবি হন।
---- স্টপ।
---- স্টপ কী হ্যা।আপনি আমার নামে এগুলা কী বলে বেড়ান হ্যা।
---- আর একটাও বাজে কথা বললে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলব।বুঝলে।
---- আপনি তো খুব ডেঞ্জারাস।
---- সেটা আজ বুঝলে।আমি কিন্তু খুব রোমান্টিকও।ডেমো দেখাবো নাকি।
---- একদম না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?
---- আমার শ্বশুরবাড়ি।
---- মানে?
---- তোমাকে বাসায় রাখতে যাচ্ছি, ইডিয়েট।আর তুমি ঐ ছেলেটার সাথে কী করছিলে?ও নিহানের ফ্রেন্ড ছিল না, যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে দিত।
---- ও এমন ছেলেনা।
---- তবুও তোমার ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই, না আফরা।
উনার এই একটা কথায় আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।এ যে এক নাম না জানা অদ্ভুত অনুভূতুি।
(চলবে)
(কারো কী বোনাস পার্ট লাগবে?)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-৪(বোনাস)
লেখিকা-#খেয়া
প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে যাওয়া খুব কঠিন একটা কাজ জানি।তবুও আমি তোকে বলব তুই নিবিরকে ভুলে যা।ও তোর জন্য ঠিক না।
---- কিন্তু ভাইয়া প্রহর কী আমার জন্য ঠিক।
---- বনু, সেটা নাহয় তুই নিজেই দেখে নে।ওর সাথে টাইম স্পেন্ড কর, ওকে বোঝার চেষ্টা কর।
---- হুম।
---- আমি যাচ্ছি।
---- আচ্ছা।
আজ ভাইয়ার কথা শুনে ঠিক করলাম আমি প্রহরকে একটা চান্স দিব।হয়ত সে ভালোবাসার প্রতি আমার ধারনাটাই পাল্টে দিবে।
রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।প্রহর নাকি আজ আমায় নিয়ে কোথাও যাবে।প্রায় দশ মিনিট পর উনি আসলেন।
---- উঠে এসো।
---- আমাকে নিয়ে কোথায় যাবেন?
---- তোমাকে মেরে ড্রেনে ফেলে দিব আজ।
---- এগুলা কেমন কথা!
---- তো এমন বিহেব করছ কেন।আমি কী তোমাকে কিডনাপ করে নিয়ে যাচ্ছি।
---- আমি তো নরমালি,,,
---- পুরো রাস্তা যদি আর একটাও কথা বলেছো তো,,,,
---- আচ্ছা একদম চুপ করে থাকব।
---------------
ঘন্টাখানিক পরে উনি আমায় একটা নদীর পাড়ে নিয়ে এলেন।জায়গাটা বেশ সুন্দর,নিরিবিলি।অনেকটা গ্রাম টাইপ।
এতদিন পরে এমন খোলা হাওয়া পেয়ে মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।
---- ধন্যবাদ, আমার মনটা ভালো করে দেওয়ার জন্য। এই ভালোটা কতক্ষন স্থায়ী হবে জানিনা তবে ধন্যবাদ।
---- সারাজীবন এভাবে তোমার মনটা ভালো রাখার অধিকার দিবে আমায়,আফরা।
তার কথার পরিপেক্ষিতে আমি চুপ রইলাম।
---- ভয় পেয়োনা,আফরা।তুমি আমার ক্ষণিকের মোহ নও। তুমি আমার ভালোবাসা।তোমাকে আমি ভালোবাসি, আফরা।প্রচন্ড ভালোবাসি।
---- এত কম সময়ে কী কাউকে এতটা ভালোবাসা যায়?
---- ভালোবাসা মন থেকে আসে।এখানে সময়টা ফ্যাক্ট না।
তুমি কি এখনো আমায় বিশ্বাস করতে পারছোনা, আফরা। তোমার কী আমার প্রতি এ কদিনে একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?
---- হ্যা জন্মেছে তবে সেটা ভালোবাসা কিনা তা আমি জানি না।আপনার সাথে থাকতে আমার ভালোলাগে।আপনাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।আর আপনি যদি আমাকে এতটাই ভালোবাসেন তাহলে কাল ঐ মেয়েটা,,,,
---- মেয়েটা রাহি ছিল।আমার কাজিন।তোমার জন্য চুড়ি কিনতে গিয়েছিলাম কিন্তু একটাও চয়েস হচ্ছিল না।তাই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।আর ও অনেক ছোট।
---- সরি।
---- আমি কিন্তু আবার কাজিনকে ভালোবেসে বাঁশ খায়না।
---- আপনি সবকিছুতে নিবির ভাইয়াকে কেন টানেন বলুনতো।
---- আচ্ছা সরি।আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তরটা পায়নি।
---- আমার একটু সময় লাগবে।
---- তুমি সময় নাও কিন্তু এতটাও সময় নিও না যেন পরে পস্তাতে হয়।
---- হুম।
----------------
একটু আগে মামি ফোন করেছিল।নিবির ভাইয়া আর প্রহরের মাঝে যেন ঝামেলা হয়েছে। তারা নাকি মারপিট ও করেছে।
আমি ঠিকই বুঝলাম যে ঝামেলাটা আমার কারনেই হয়েছে।
এতকিছু না ভেবে আমি নিবির ভাইয়াকে ফোন করলাম।
---- বল,আফরা।
---- আপনার সমস্যাটা কী, নিবির ভাই।
---- মানে?
----প্রহরের সাথে ঝামেলা বাধিয়েছেন কেন?
---- ওর জন্য কষ্ট লাগছে বুঝি।ও কোন সাহসে আমার থেকে তোকে কেড়ে নিতে চাই।
----আমি কখনো আপনার ছিলাম না নিবির ভাইয়া।তাই আপনার থেকে আমাকে কেড়ে নেওয়ার প্রশ্ন আসে না।
---- কিন্তু আমি তো তোকে আমার বানাতে চাই।
----কিন্তু আমি আপনার হতে চায়না।একটা সময় তো আপনার হতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি কী করেছিলেন।
---- প্রতিশোধ নিচ্ছিস।
---- হয়ত।নিবির ভাই প্লিজ নতুন করে আর কোনো ঝামেলা করেন না।আপনি নিজেও ভালো থাকেন আর আমাকেও ভালো থাকতে দেন।
ফোনটা রেখেই দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে বিছানায় বসে পড়লাম।আর নিতে পারছিনা এসব।আজ যদি বাবা- মা থাকত তাহলে হয়ত এত কষ্ট পেতে হতো না।
একটা ভুল মানুষকে ভালোবাসলে বুঝি এত কষ্ট পেতে হয়।
পরেদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে মামার বাসায় গেলাম।মামি ফোন দিয়েছিল, নিবির ভাইয়া নাকি কী পাগলামি শুরু করেছে।
মামির বাসায় গিয়ে সোজা নিবির ভাইয়ার রুমে গেলাম।চারিদিকে সবকিছু উল্টোপাল্টা হয়ে পড়ে আছে।মেঝেতে কাচের টুকরো ছিটানো।নিবির ভাইয়ার হাত থেকেও রক্ত ঝরছে।
---- এসব কী নিবির ভাইয়া।
---- আফরা, প্লিজ আমার হয়ে যা।তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবনা।
---- হঠাৎ এতো ভালোবাসা কই থেকে এলো, নিবির ভাই।আপনি এসব শুধু মাত্র জেদের বসে করছেন।কথা আপুকে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য আমার সাথে এমন কেন করছেন?
---- আফরা!
---- বাস্তবে ফিরে আসুন নিবির ভাই।বাস্তবতা বড় কঠিন।বুঝতে শিখুন।শুধু অন্যের কাছে নিজেকে জাহির করার জন্য অন্যের লাইফ নিয়ে খেলা বন্ধ করুন প্লিজ।
---- তুই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি, আফরা।
----এখানে চলে যাওয়ার কোনো কথা আসছেনা ভাইয়া।আপনার জীবনে যার কেনো অস্তিত্ব নেই তার চলে যাওয়া নিয়েও আপনার কোনো প্রবলেম হবে না।
দ্বিতীয়বার আর ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস হলোনা।ঐ চোখে যে আমাকে মেরে ফেলার বিষ আছে।
আমি সরাসরি মামির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম
---- নিবির ভাইয়া এসব কেন করছে, মামি।
মামি আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
---- প্রহরের মা ফোন করেছিল।বলল ওদের নাকি তোকে খুব পছন্দ। ওরা তোকে প্রহরের বউ বানাতে চায়।প্রহর ও নাকি তোকে পছন্দ করে।আমাদের কোনো সমস্যা ছিলনা এটাতে।
কিন্তু নিবিরকে জানানোর পর থেকেই ও এসব উল্টোপাল্টা কাজ করছে।
---- তুমি একটু নিবির ভাইয়াকে বোঝাও।
---- আমার ছেলেটার আজ ঐ অবস্থা শুধু কথার জন্য।ঐ মেয়েটা কখনো ভালো থাকবেনা দেখিস।
---- মামি,এখন তুমিও যদি তার খারাপ চাও তবে তোমার আর তার মধ্য পার্থক্য রইল কই।
---- তুই হয়ত ঠিকই বলেছিস।
---- আমি আসছি, মামি।
---- সাবধানে যাস।
---- হুম।
----------------
নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় এসেই দেখলাম কথা আপুকে।সাথে একটা ছেলেও আছে।হয়ত ওর হাসবেন্ট হবে। দুজন কী সুন্দর হাসছে।
মানুষকে ঠকানো মানুষগুলোই বুঝি দিনশেষে ভালো থাকে।নিবির ভাইয়া তো সত্যি কথা আপুকে খুব ভালোবাসতো।তাহলে কথা আপু এমনটা কেন করল?
আর নিবির ভাইয়া এমন পাগলামি কেন করছে।আমার জন্য নিবির ভাইয়া আর প্রহরের সম্পকর্টা খারাপ হয়ে গেল।এরপর এসব কতদিন চলবে।
এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম তখনই কেউ" আফরা " বলে চিৎকার করে উঠল।
তার চিৎকারে ধ্যান ভাঙল আমার। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ট্রাক খুব দ্রুতগতিতে আমার দিকেই আসছে।
আমার চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো।এই বুঝি আফরা নামক মানুষটার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলো।এবার বুঝি সব সমস্যা মিটে যাবে।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকটা আমার,,,,,
(চলবে)
( এই বোরিং গল্পটার জন্য বুঝি এত মানুষ অপেক্ষা করে!!!)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম_2
পর্ব-০৫+৬
লেখিকা-#খেয়া
ট্রাকটা আমার কাছে আসতেই কেউ আমায় টেনে সরিয়ে নিলো।
আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
মাথা তুলে সামনের দিকে তাকানো মাত্রই একটা থাপ্পর পড়ল আমার গালে।
অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকাতেই সামনে প্রহরকে দেখলাম।আমি কিছু বার আগেই সে বলা শুরু করল
---- তোমার কী কোনো সেন্স নেই।এভাবে কেউ রাস্তায় হাঁটে। মন কোথায় থাকে তোমার।
---- আমি,,,,,
---- জাস্ট সাটআপ।আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।চলো আমার সাথে চলো, হসপিটালে যেতে হবে।
---- হহহ,,,হসপিটালে কেন যাবো।
---- সাধে কী তোমাকে ইডিয়েট বলি।হাতটা যে কতটা কেটে গেছে দেখেছো।
" আসলেই হাতটা অনেকটা কেটে গেছে।খুব যন্ত্রনাও হচ্ছিল।আমার প্রতি উনার এত কেয়ার ভালোলাগলেও আজ উনার ওপর খুব অভিমান হলো।এমন অবস্থায় উনি আমায় থাপ্পর মারতে পারল।"
--------------
প্রহর আমাকে একটা হসপিটালে নিয়ে গেল।
---- এত হাসপাতাল থাকতে এখানেই নিয়ে আসা লাগল আপনার।
---- এখানে কী প্রবলেম?
----ভাইয়া আমায় এ অবস্থায় দেখলে খুব রেগে যাবে।
---- তাহলে তো ঠিকই আছে।তোমার ভাইয়ারও জানা উচিত যে তুমি রাস্তায় কেমনে হাঁটো।
---- ধুর।
ভেতরে গিয়ে একটা নার্স আমার ড্রেসিং করতে নিলেই প্রহর বললেন
---- গিয়ে ভালো কোনো ডাক্তারকে ডেকে আনুন।
---- এইটুকু তো উনি করে নিতে পারবেন।
---- স্টপ,আফরা আমি তোমার ব্যাপারে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।
"নার্স গিয়ে একটা ডাক্তারকে নিয়ে এলো।ওটা অনন্যা আপু ছিল।"
অনন্যা আপু খুব সুন্দর করে আমার ড্রেসিং করে দিলো।এখানে কম-বেশি সবাই আমাকে চিনে।
আমিও অনন্যা আপুকে বলে দিয়েছি যেন ভাইয়াকে কিছু না বলে।
কিন্তু ঐ নার্সটা গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এসেছে।আমার তো নার্সটাকে কাচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।
---- কী হয়েছে, বনু।
----কিছু হয়নি ভাইয়া, হাটতে গিয়ে পা স্লিপ করে পড়ে গেছিলাম।
আমার কথা শুনে প্রহর আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল
---- একদম মিথ্যে বলছে, ভাইয়া।আজ রাস্তায় এক্সিডেন্ট করতে মরতে বসেছিল।আমি না থাকলে এতক্ষণ স্বর্গে চলে যেতো।
---- এসব কী, আফরা। তুই এতটা বেখেয়ালি হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করিস।
---- ভাইয়া আমি আসলে,,,
---- তুই রাস্তায় কী করছিলি?
---- আরে ভাইয়া আপনার বোনের মনে হয় বাসায় থাকতে ভালোলাগেনা।তাই এইভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন।
প্রহরের কথায় ভাইয়া সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাট দিকে তাকালো।এতক্ষন অনন্যা আপু শুধু নিরব দর্শক থাকলেও এবার বলল
---- একদম না।ও শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে আমি গিয়ে কার সাথে থাকবো।
" অনন্যা আপুর কথায় ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু একদম মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাড়িয়ে গেলো।"
ভাইয়া প্রহরকে বলল
---- প্রহর, আমার না এখন একটা ওটি আছে।তুমি কী একটু আফরাকে বাসায় পৌছে দিবে।
---- অবশ্যই।
--------------
প্রহর আমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।
বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।এত টেনশন আর নিতে পারছিনা।
বিকেলে ঘুম ভাঙল রাহার ডাকে।ওকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম।
---- তুই এখানে।
---- কেন আসতে পারি না?
---- সেটা কখন বললাম।
---- তোকে খুব ভালো একটা খবর দিতে এলাম।
---- কী খবর?
---- তুই জানিস কথা আপুর হাজবেন্ডকে আজ পুলিশ এরেস্ট করেছে। তাও মাদকের মামলায়।
---- তো! দেখবি পুলিশকে টাকা খায়িয়ে যে কোনো সময় বেড়িয়ে আসবে।
---- তো কী?জানিস আজ কথা আপুর মুখটা দেখার মতো ছিল।
---- তুই আবার উনাকে দেখতে গিয়েছিলি।
---- হুম।তুই তো জানিস আপুর শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাড়ির কাছে।
---- হুম।
---- তুই নাকি আজ মরতে মরতে বেঁচে গেছিস।
---- তোকে কে বললো এসব।
---- কেন প্রহর ভাইয়া। আর প্রহর ভাইয়া এলাকার সবাইকে ও বলেছে যেন তোকে একটু দেখে রাখে।আর তোকে দেখলেই যেন সাবধানে চলাফেরা করতে বলে।
---- কীহহহহ।
---- হুম।কত ভালোবাসে তোকে দেখেছিস।
---- এই লোকটা আমায় নির্ঘাত পাগল বানিয়ে ফেলবে।
---------------
কেটে গেছে সপ্তাহখানেক।এর মাঝে প্রহরের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে আমার।নিবির ভাইয়াও এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।
কথা আপুর হাজবেন্টের দশ বছরের জেল হয়েছে।কথা আপু আবার নিবির ভাইয়ার কাছে ব্যাক করতে চাইলেও নিবির ভাইয়া না করে দিয়েছে।
ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে দেখলাম বাইরে গাড়ি নিয়ে নিবির ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখেই বললো
---- আমি ড্রপ করে দিয়ে আসি, আফরা।
আমি বেশি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
---- সরি, আফরা।এতদিন তোর সাথে এমন বিভেব করার জন্য।
---- ঠিক আছে, ভাইয়া।একটা কথা বলব আপনাকে?
----বল।
---- আপনার কাছে পাত্তা পায়নি বলেই তো আমি প্রহরকে সুযোগ দিয়েছি।তেমনি আপনারও উচিৎ নিজের জন্য পারফেক্ট কাউকে খুঁজে নেওয়া।
আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন, ভাইয়া।
---- হুম।
----------------
নিবির ভাইয়া বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।বাড়িত গেলোনা।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে প্রহরকে ফোন দিলাম।আজ সকাল থেকে উনি একবারও ফোন দেয়নি।তাই আমি দিলাম।আজকাল উনার সাথে কথা না বললে ভালোই লাগেনা।
---- কী ব্যাপার! আজ তুমি নিজে থেকে ফোন করলে।
---- হুম।আপনি দিলেন না তাই আমি দিলাম।
---- তুমি কতদিন গোসল করোনা বলোতো,আফরা।
---- এসব কী প্রশ্ন?
---- না তোমার শরীর থেকে অনেক গন্ধ আসছে।
---- কী! আপনি মোবাইলে গন্ধ পাচ্ছেন।
---- হুম।
---- তা কেমন গন্ধ পাচ্ছেন।
---- প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।
---- আপনি তো প্রচন্ড অসভ্য লোক।
----সেটা তো তুমি জানোই।
---- ধুরর।আপনাকে আর জীবনেও ফোন দিবোনা।
প্রহরকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।
এখন আবার কে এলো?
নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম খালামণি আর আংকেল।ওরা আবার এখন কেন এলো।
আমি উনাদেরকে ভিতরে আসতে বললাম। কিছুক্ষণ পর মামা - মামিও চলে এলো।তারপর ভাইয়া আর নিবির ভাইয়াও চলে এলো।
মামি বলল," আংকেল নাকি সবাইকে এখানে ডেকেছে,আংকেলের নাকি আমার ব্যাপারে সবার সাথে কোনো কথা আছে।"
উনি আবার আমার ব্যাপারে কী বলবে?
(চলবে)
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৬
লেখিকা-#খেয়া
লোভ! বড্ড খারাপ এটা।লোভে পড়ে যে মানুষ কত কী করতে পারে তা আজ আংকেল কে না দেখলে বুঝতাম না।
মাথায় আপাতত কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটায় ঘুরছে।
কিছুক্ষণ আগে,,,,
---- আমার আপনাদের সাথে কিছু কথা আছে।
তোমরা তো জানোই রাদিফ আর আফরার সম্পর্কটা কত ভালো।জানি ওরা এখন ছোট তবুও আমি চাই ওদের বিয়ে দিতে।
" আংকেলের কথায় সবাই অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলে।মামা বলে উঠল"
---- তুমি যে এতটা নিচে নেমে যাবে আমি ভাবিনি।তুমি এইসব আফরার ভাগের সম্পত্তির জন্য করছো, তাইনা।
আংকেল প্রথমে মামার কথা মানতে নারাজ হলেও পরে উনি স্বীকার করেন।আমার বাবার সম্পত্তির পাশাপাশি আমার মায়ের ভাগের যে সম্পত্তি আমি পায় সেটাও তাদের চায়।আর এজন্য এরা এমন করছে।
আংকেল না বাইরের লোক কিন্তু খালামণি কেন আমার সাথে এমন করছে।
অনেক কথা কাটাকাটির পর আংকেলরা চলে গেলেন।পরে বাকি সবাই ও চলে গেলো।মামি আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চাইল কিন্তু আমি যায়নি।
বাসায় ভালো লাগছিল না তাই রাহাদের বাসায় চলে গেলাম।
----------------
রাহার ঘরে বসে আছি।ও কোথায় যেন গেছে।ফোন করেছিলাম, বলল আসছে।
রাহার টেবিলে দেখলাম বেশ কিছু গল্পের বই।সেগুলো দেখতে গিয়েই ওখান থেকে একটা ডাইরি নিচে পরে গেলো।ডাইরির ভেতর থেকে কতগুলো ছবি বের হলো।ছবিগুলো নিবির ভাইয়ার ছিল।
এখানে নিবির ভাইয়ার ছবি দেখে অবাক হলেও আরো বেশি অবাক হলাম ডাইরির লেখাগুলো পড়ে।
পুরো ডাইরি জুড়ে খুব গভীর আবেগের প্রকাশ।সবটাই নিবির ভাইয়াকে ঘিরে।
আর এই লেখাটা যে রাহার সেটা বুঝতে অসুবিধা হলোনা।আমি ডাইরির কয়েক পেজ পড়ে ডাইরিটা রেখে দিলাম।
---- আরে আফরা,সরি ইয়ার এতক্ষন ওয়েট করানোর জন্য।তুই আর একটু ওয়েট কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
---- হুম,যা।
---- কিরে আফরা,কিছু বলছিস না যে।
---- নিবির ভাইয়াকে এতটা পছন্দ করতি?
" আমার কথাশুনে রাহা একদম চুপ করে গেলো
ওর উত্তর না পেয়ে আমি আবার বললাম"
---- যখন নিবির ভাইয়াকে এতটাই পছন্দ করিস তাহলে বলিসনি কেন। শুধু আমি তাকে পছন্দ করতাম বলে।তুই এমনটা কী করে করতে পারলি।
---- আফরা,তুই আমাকে প্লিজ ভুল বুঝিস না,প্লিজ।আমি তোকে সবটা,,,
---- আমি কিছু শুনতে চায়না।আমি এতদিন আমার সব কথা তোর সাথে শেয়ার করেছি আর তুই এতবড় একটা কথা আমার থেকে লুকিয়ে গেলি।
---- আমি মানে,,,,
---- আমি কিন্তু তোর জায়গায় থাকলে মোটেও এটা লুকিয়ে রাখতাম না।নিজের ভালোলাগাটা প্রকাশ করতে শিখ, রাহা।
আমার কথা শুনে যেন রাহার দেহে প্রাণ ফিরল।ও ভেবেছিল হয়ত আমি এটা জানলে রাগ করব। ও বলল
---- প্রকাশ করেই বা কী হতো।উনার থেকে তো তুই পাত্তা পাসনি আর আমি?
----আমি পায়নি বলে যে তুইও পাবিনা, এটা কেমন কথা।
----থাক বাদ দে এসব।তুই আগে বল তোর আংকেল কেন এসেছিল?
" রাহাকে সবটাই খুলে বললাম।"
---- সত্যিরে,বাবা-মা না থাকলে যে দুনিয়া কতটা কঠিন সেটা তোকে না দেখলে বুঝতাম না।
আরো কিছুক্ষন রাহাদের বাসায় থাকলাম।তারপর বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
বেশ খানিকটা রাস্তা আসতেই আমার পথ আটকালো প্রহর।হঠাত উনাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম।
---- আপনি এখানে?
---- তোমায় দেখতে এলাম।
---- আপনি প্লিজ আমার পেছনে আসবেন না।রাস্তার মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে।
---- সো হোয়াট! আমি মানুষের কথা শুনি না।
---- কিন্তু আমাকে শুনতে হয়।
---- আচ্ছা, বাবা রেগে যাচ্ছো কেন?যাবো না তোমার সাথে।ওকে।তুমি সাবধানে বাসায় যাও।
---- হুম।
------------------
বাসায় এসে দেখলাম পুরো বাসাটা একদম অন্ধকার। আমি বুঝলাম না এমন কেন?
দুপা এগোতেই সব লাইট একসাথে জ্বলে উঠল।সবাই একসাথে বলে উঠল" হ্যাপি বার্থডে, আফরা।"
আনন্দে আমার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেলো।
সবাই আছে এখানে এমনকি রাহা আর প্রহরও। এরা কখন এলো।আর আমার আগেই বা কী করে এলো?
ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- আজ আর কাঁদিস না বনু।চল কেকটা কাটবি।
বাবা- মা থাকতে তারা সব সময় আমার বার্থডে পালন করতেন।তারা চলে যাওয়ার পরেও এমন একটা সারপ্রাইজ পাবো ভাবিনি।আজ যে আমার জন্মদিন সেটা আমার মাথায় ছিলনা।মামা- মামি এমনকি প্রহরের মা- বাবাও ছিলেন।ভাইয়া নাকি তাদের ইনভাইট করেছিল।প্রহরের বাবা ভারি রাসিক মানুষ।উনি একাই সবাইকে মাতিয়ে রাখলেন।
সবাই মিলে একসাথে অনেক মজা করলাম। গত একবছর পর আজ প্রাণখুলে হাসলাম।
নিবির ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
---- এই সবকিছু কিন্তু প্রহরের জন্য হয়েছে।সবটাই ওর প্ল্যান ছিল।
---- তাহলে উনি রাস্তায় কী করছিলেন?
---- আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই তুই চলে আসতি তাই ও তোকে আটকাতে গেছিল।
--- ও।
নিবির ভাইয়া আর প্রহরের মাঝে সব ঝামেলা মিটে গেছে দেখে ভালো লাগল।নিবির ভাইয়া মানুষটা ওতটাও খারাপ না।যদি রাহা আর নিবির ভাইয়া এক হতো তাহলে হয়ত সব ঝামেলা মিটে যেতো।
----------------
রাতে শুয়ে শুয়ে তখনকার কথা ভাবছিলাম।অনেকদিন পরে যেন একটু স্বস্তি পেয়েছি আজ।ভাবলাম এতকিছুর জন্য প্রহরকে আমার একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
তাই উনাকে ফোন করলাম।
---- কী ব্যাপার,সেদিন তো খুব বললে আর ফোন করবেনা তাহলে
---- আপনাকে ফোন করাটাই ভুল হয়েছে আমার।
---- সরি, রাগ করোনা।কেন ফোন করেছে বলো।
---- ধন্যবাদ।অনেকগুলো ধন্যবাদ।আমাকে এত সুন্দর একটা সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য।
---- শুধু এটাতেই এত খুশি।তোমার জন্য তো আরো অনেক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে,ডিয়ার।
---- মানে?
---- এত মানে বুঝতে হবেনা। অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাও।
---- আজ আর কথা বলবেন না।
---- নাহ।তোমার সাথে যত কথা বলব তত তোমার মায়ায় জড়িয়ে যাবো।এমনিতেই তোমার মায়ায় ডুবে আছি।এবার নির্ঘাত মরে যাবো।
"তোমার ঐ কথার মায়ায় পড়লে যে আমার আর নিস্তার নেই।"
প্রহর ফোনটা কেটে দিলো।অন্যদিন তো কথা বলার জন্য পাগল হয়ে থাকে। আজ এত তাড়াতাড়ি কেটে দিলো।
আমি আর এটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
---------------
সকালে ফ্রেশ হয়ে বাইরে গিয়ে দেখলাম ভাইয়ার ঘরে কিছু ভাঙার আওয়াজ হলো।
আমি দ্রুত ভাইয়ার ঘরে ঢুকতে গেলেই দরজার সামনে থাকা কাঁচের টুকরোয় লেগে পা কেটে যায়।আমি মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠি।সামনে তাকিয়ে দেখি পুরো ঘরে সবকিছু ভেঙেচুরে পরে আছে।
আমার চিৎকার শুনে ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এলো
---- কী হয়েছে, আফরা।একটু দেখে চলবি তো,কতটা পা কেটে গেছে।
ভাইয়া আমাকে ঘরে নিয়ে করে সুন্দর করে ড্রেসিং করে দিলো।ভাইয়ার মুখ দেখেই বুঝলাম সে খুব রেগে আছে।সাথে অনেক টেনশনেও আছে।
ভাইয়া হসপিটালে ফোন করে বলে দিলো যে আজ সে যাবেনা।
আজ কাজের মেয়েটাও আসেনি।তাই ভাইয়া রান্না করবে।ভাইয়া রান্নাবান্না মোটামুটি পারে।
ভাইয়া আমার জন্য আমার পছন্দের আলুর পরোটা বানালো।দুজনেই একসাথে নাস্তা করে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম।ধীরে ধীরে যেন সেই আগের দিনগুলো ফিরে পাচ্ছিলাম।
সারাদিন ভাইয়া বাসায় ছিল।আমাকে তো একদম বিছানা থেকে নামতে নিষেধ করে দিয়েছে।আমিও একজায়গায় বসে বসে বোর হচ্ছিলাম।
বিকেলের দিকে হসপিটাল থেকে ভাইয়ার একটা কল এলো।খুব নাকি ইমার্জেন্সি আছে।ভাইয়া যেতে না চাইলেও আমি জোর করে পাঠিয়ে দিলাম।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।মাগরিবের আজানও দিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষন পরেই কারেন্ট চলে গেলো।এখানে তেমন লোডশেডিং হয়না।হঠাত মনে হলো দরজার কাছে কেউ দাড়িয়ে আছে।
---- কে ওখানে? কে?
কেউ সাড়া দিলো না।ছায়ামুর্তিটা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
আমি বিছানা থেকে নেমে সেদিকে এগিয়ে যেতে নিলেই স্লিপ করে পড়ে গেলাম।প্রচন্ড ব্যাথা পেলাম পায়ে।আবার ব্লিডিং শুরু হয়েছে।জানালা দিয়ে দূরের আবছা আলো আসছে কিন্তু সেটা দিয়ে কিছু ভালোমতো বোঝা যাচ্ছেনা।মানুষটা ক্রমেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি ওঠার শক্তিও পাচ্ছিনা।এবার যেন প্রচন্ড ভয় হচ্ছে।
আমি অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াতে গিয়েও পড়ে গেলাম।অসহ্য যন্ত্রনায় চোখ- মুখ খিঁচে আছি।এবার লোকটা আমার একদম কাছাকাছি চলে এলো।আবছা বলোয় লোকটাকে দেখে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলো। চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসার আগেই অস্ফুষ্ট সুরে বললাম
" নিহান "
( চলবে)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৭(স্পেশাল)+৮
লেখিকা-#খেয়া
সময় চলেছে তার আপন গতিতে।দিনও কারো জন্য থেমে থাকেনা।সেও তার আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে।
আমার পায়ের ক্ষত অনেকটাই সেরে গিয়েছে।সেদিন অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারনেই এতটা সময় লাগল।
সেদিন আমি অযথাই এত ভয় পেয়েছিলাম।আমার মাথায় সেদিন এটা আসেইনি যে ওটা নিহান না হয়ে রুহানও হতে পারে।রুহান হলো নিহানের ছোট ভাই।রুহান ছোটো হলেও ওর চেহারা একদম নিহানের মতো।খুব কাছে থেকে কেউ না দেখলে ওদের পার্থক্য করতে পারত না।
ওনাকি নিহানের ঘরে আমার কিছু জিনিস পেয়েছিল তাই দিতে এসেছিল।তবে সেগুলো এতদিন পরে দিতে আসার কারণটা ধরতে পারিনি।
মাঝে কেটেছে তিনদিন।একদিন আমার প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।ফোনটাও বন্ধ।মামির থেকে জেনেছি সে নাকি দেশের বাইরে গেছে।
মামির কথা শুনে একটু খারাপ লেগেছিল, সে আমায় বলে তো যেতে পারতো।
---------------
সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা তাই মনপ্রাণ দিয়ে পড়ছি।আপাতত দুনিয়ার সবকিছু মাথা থেকে বের করে দিছি।
পরীক্ষা শেষ হতে প্রায় দুইসপ্তাহ লেগে গেলো।একদিন প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।উনিও কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেননি।
পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।একদিন টেনশনে একদম ঘুম হয়নি।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।
ঘুমের মাঝেও আজ বারবার প্রহরকে দেখতে পারছি।এই লোকটা এখন স্বপ্নেও এসে জ্বালায় আমায়।অসহ্য লোক একটা।
ঘুম থেকে উঠে কিচেনে যাচ্ছিলাম কফি বানাতে।ড্রয়িংরুমে এসে দোখি এখানেও প্রহর বসে আছে।এখন তো জেগে জেগে ও উনাকে দেখতে পাচ্ছি।
----কী ম্যাডাম, এত কী ভাবেন।
----আপনি কি এখানে সত্যি আছেন।
----বাহ,মাথার সাথে কী এখন চোখটাও খারাপ হয়ে গেছে।
" উনার এই রসকসহীন কথা শুনে বুঝলাম যে উনি সত্যি আছেন।তবে উনি এখানে কেন?"
---- আপনি কখন এসেছেন?
---- তিনঘন্টা আগে।
---- তো এতক্ষন কী করলেন আর আমায় ডাকেননি কেন?
---- তোমায় ডাকতে ডাকতে গলা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার অথচ তোমার ঘুম ভাঙার নামই নেই।
শেষে বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম।কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে খেলাম।তারপর টিভি দেখলাম।তারপর ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেলাম। আর এখন অবশেষে তোমার ঘুম ভাঙল।
---- কীহহ! আপনি আইসক্রিম কেন খেয়েছেন হ্যা,ওগুলো তো ভাইয়া আমার জন্য এনেছিল।
---- এই মেয়ে এত ছোটোলোকি করো কেন তুমি।তোমাকে আমি পুরো আইসক্রিমের দোকান কিনে দিবো।
----আপনি কেন এসেছেন? আর একদিন কই ছিলেন? আমার সাথে যোগাযোগ কেন করেননি?
---- তোমার এক্সাম কেমন হয়েছে?
---- খুব ভালো।
---- আমি তোমার কাছাকাছি থাকলে তুমি কখনো এতটা ভালোমতো পরীক্ষা দিতে পারতে না।আর আমি এখানে থাকলে তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারতাম না।তাই চলে গিয়েছিলাম।
---ওহ। তাহলে আজ কেন এলেন?
---- তোমাকে দেখার তীব্র আকাঙ্খাটা আর দমিয়ে রাখতে পারিনি।
যাইহোক তুমি রেডি হয়ে নাও।
---- কোথায় যাবো?
---- সেটা সারপ্রাইজ।
---- আমি যাবনা।যদি আমায় নিয়ে গিয়ে আপনি আমায় মেরে ফেলে।
---- আমি পাপ করিনা।জানোতো আত্মহত্যা মহাপাপ।আর তোমাকে মেরে ফেলা মানে নিজেকে নিজে মেরে ফেলা।আর এই কাজ আমি কখনো করতে পারব না।আর তুমি স্টুপিটের মতো সারাদিন এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘোরো কেন?
---- আচ্ছা বাবা,আপনি দাঁড়ান আমি তৈরি হয়ে আসছি।
_________
অন্যদিকে "
---- নিবির ভাইয়া, আমার কথাটা একটু শোনেন না।
---- রাহা প্লিজ,তোমাকে না নিষেধ করেছি আমার পিছনে আসবেনা।তোমার কী সেলফ রেসপেক্ট বলতে কিছু নেই।তোমার এই ধরনের কাজে আমি প্রচন্ড বিরক্ত, রাহা।দয়াকরে আর আমার পেছনে এসোনা।আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতো দাও, প্লিজ।
" কথাগুলো বলেই চলে যায় নিবির।নিবিরের এহেন কথায় খুব কষ্ট পেলো রাহা।ও তো ওর ভালোবাসা গোপনই রাখতে চেয়েছিল।শুধু মাত্র আফরার কথায় ও নিবিরকে ওর মনের কথাটা বলেছিল, বাকিটা তো জানেনই।"
রাহাও বাড়ি চলে যায়।ও ঠিক করেছে আর কখনো ও নিবিরের সামনে যাবেনা।
_________
----আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
---- ভয় পাচ্ছো নাকি,আফরা।
---- মোটেও না। আমি তো এমনি বললাম রাত হয়ে যাচ্ছে তাই। আর ভাইয়াও তো টেনশন,,,
---- করবে না।তোমার ভাইয়াকে বলেই এসেছি।
---- ওহ।
প্রহর আমাকে একটা ফাঁকা মাঠে নিয়ে এলো। চারিদিকে অন্ধকার।আমি একটু সামনে এগিয়ে গেলাম।একটু পরে পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর নেই।
খানিকক্ষণ পরেই আকাশে অনেক গুলো ফানুস দেখতে পেলাম।চারিদিকে আলো ছড়িয়ে গেলো।অনেকগুলো আতসবাজি একসাথে ফুটে উঠল।আমার চারপাশে অনেক বেলুন উড়ে উঠল।কিন্তু এগুলো কীভাবে হচ্ছে।আর কে করছে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে।উনি আমার হাতটা ধরে বললেন
---- আর পাঁচজনের মতো কথার মায়ায় জড়িয়ে তোমাকে প্রপোজ করার সাধ্য আমার নেই।তবু শুধু তোমাকে নিজের বলে দাবি করার অধিকারটা চাইব তোমার থেকে।মানুষের জন্য নিঃশ্বাস যতটা জরুরী আমার কাছে তুমিও ঠিক তেমনই অপরিহার্য।তোমাকে ছাড়া নিজেরে অস্তিত্ব কল্পনা করতে গেলেও আমি ভয় পায়।
জানি না আমি মানুষটা কেমন তবুও তোমাকে ভালোরাখতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করব না।আমি তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ করব,আমার ভালোবাসাটাকে একটু অনুভব করো, আফরা।ভালোবাসা বোঝাবুঝির ব্যাপার না।এটা অনুভবের ব্যাপার।
"উনার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।খানিক থেমে উনি আবারও বলতে লাগলেন"
---- আমি জানি তোমার বয়সটা কম।তবুও তোমাকে ছাড়া আর একটা দিনও কাটানো আমার পক্ষে সম্ভবনা।তোমার একটু ইগনোরেন্স যে আমাকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে, আফরা।তোমাকে একদিন সামনাসামনি না দেখলে যে দম বন্ধ হয়ে আসে।তোমার মাঝে আমি আমার নিজের অস্তিত্বটা অনুভব করতে চাই,আফরা।আমাকে বুঝি আজ তুমি ফিরিয়ে দিবে।
তোমার কাছে আমি কী সেটা আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে তুমি এমনকিছু যা আমি বলে বোঝাতে পারব না।জানি প্রথমপ্রেম স্পেশাল হয়।প্রথম প্রেম ভুলেও কিন্তু ভালো থাকা যায়।তুমিও তো আমার প্রথম প্রেম।তোমার প্রেমটা পূর্ণতা পায়নি বলে কী তুমি আমার প্রেমটাকেও পূর্ণতা দিবেনা,আফরা।
" উনার প্রতিটি কথা যেন আমার শিঁরা- উপসিরায় প্রবেশ করছে।শরীর- মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে।সত্যি কী প্রথম প্রেমকে এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়।
আমার প্রথম প্রেম পূর্ণতা পায়নি।তাই বলে কী প্রহরের প্রথম প্রেমকে তার থেকে কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার আছে আমার?"
---- তোমার মৌনতায় কী তোমার সম্মতির লক্ষণ?
---- হয়ত বা।আপনার ভালোবাসটাকে আমিও অনুভব করতে চাই, প্রহর।প্রথম প্রেম নয়, সত্যিকার ভালোবাসা চায় আমার।
" আমার উত্তরে প্রহর যে কী পরিমান খুশি হয়েছে তা বলে বোঝানোর মতো না।কোনো মানুষ বুঝি কাউকে সত্যি এতটা ভালোবাসতে পারে।"
প্রহর আমার হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন।আর বললেন
---- তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখার তীব্র আকাঙ্খা জাগে আমার মনে।কিন্তু এখননা।খুব শীঘ্রই তা হবে।সেদিন তুমি সম্পূর্ণরূপে আমার হবে।একদম হালাল ভাবে।
" এই মানুষটাকে যে এখন আমার বড্ড প্রয়োজন।বড্ড বেশি প্রয়োজন।সবাই তো আমায় ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু এই মানুষটা নাহয় একান্তই আমার থাকল।তাতে ক্ষতি কী?
----চলো তোমাকে বাসায় রেখে আসি।অনেক রাত হয়ে গেছে।
---- হুম চলেন।
----------------
বাসায় এসে দেখি ন'টা বাজে।কিন্তু ভাইয়া এখনো আসেনি।
অনেকবার কল করলাম কিন্তু ধরল না।হয়ত বিজি আছে।
মাঝে কেটে গেছে চারদিন।এই চারদিন আমার কাছে খুব দীর্ঘ একটা সময় লেগেছে।ইদানিং সবকিছুই খুব ভালোলাগে।রংহীন জিনিসগুলো রঙিন লাগে।মনে ভালোবাসার রং লেগেছে যে।
বসে বসে কার্টুন দেখছিলাম তখনই নিবির ভাইয়ার ফোন এলো।দেরি না করে ফোনটা ধরলাম।
---- কেমন আছিস,আফরা।
---- ভালোই আছি।
---- ওহহ।তোর বান্ধবী রাহার কী খবর।
---- আপনি আবার ওর খবর কেন নিচ্ছেনন।
---- না মানে ওর ফোনটা বন্ধ তো, তাই।
---- আপনি আবার ওকে ফোনও করেন। কী কেস বলেনতো।
---- তুই তো সবই জানিস, আফরা।চারদিন ধরে ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
---- টেনশনে ছিলেন বুঝি।যাইহোক, আমি ওর খবর নিয়ে তোমাকে জানাচ্ছি।
---- আচ্ছা।
নিবির ভাইয়া ফোন রাখতেই দরজার বেল বেজে উঠল।আমি দরজা খুলে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
দেখলাম ভাইয়া,,,,
( চলবে)
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৮
লেখিকা-#খেয়া
এসব কী ভাইয়া!
তুই বিয়ে করে ফেললি। আমাকে একবার বললিও
না।তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিসনা।
---- আফরা,এমন করিসনা প্লিজ।এমনিতেই প্রচুর ঘেটে আছি।
---- তুই বিয়ে কেন করলি।
---- না হলে আজ জেলে চলে যেতাম।এই স্টুপিটটা আজ আবার মরতে বসে ছিল।
---- এভাবে বলিসনা ভাইয়া, অনন্যা আপু সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসে।
আচ্ছা তুই ঘরে যা আমি আপুকে নিয়ে ভেতরে যাচ্ছি।
---- হুম।
" আমি অনন্যা আপুকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।'
---- থ্যাংক গড! আমি তো ভেবেছিলাম তুমি ভয়ে সব গুলিয়ে ফেলবে।
---- সিরিয়াসলি, তোমার আইডিয়া যে এভাবে কাজ করবে বুঝতেই পারিনি।
কিন্তু এখন কী হবে।
---- তুমি একদম চিন্তা করো না।ভাইয়া যে তোমায় পছন্দ করে সেটা আমি জানি।কিন্তু ও জীবনেও এটা স্বীকার করত না।বিয়েটা তো হয়ে গেছে, বাকিটা আমি দেখে নিবো।
---- লাইক সিরিয়াসলি, আমি তো ভাবতেও পারিনি যে তুমি মাথায় এত দুস্টু বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরো।
----- আমি কিন্তু এমনই।
---- তাই নাকি!
---- হুম।
---- তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি ভাইয়াকে দেখে আসি।
---- আচ্ছা।
"আসলে অনন্যা আপুকে এসব করতে আমি বলেছিলাম। নাহলে ভাইয়া যা মানুষ কখনোই নিজের মনের কথা বলতোনা।"
---- আসব, ভাইয়া।
---- হুম আয়।
---- মুখটাকে এমন করে রেখেছিস কেন? নতুন নতুন বিয়ে করেছিস একটু চিল মুডে থাকতে পারিস না।
---- আফরা"
---- তুই তো অনন্যা আপুকে পছন্দ করতি তাহলে বিয়ে কেন করতে চাসনি।
---- তোর জন্য।বাবা-মা চলে যাওয়ার পর তোকে ভালোরাখার দায়িত্ব আমার।আমি চায়না অন্য কারোর জন্য তোর কোনো কষ্ট হোক।
অনন্যা তোকে কেমন ভাবে এক্সেপ্ট করবে সেটা আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা।
" বাবা- মা চলে যাওয়াট পর ভাইয়া ই আমাকে আগলে রেখেছে।আমার সব ভুল গুলোকে দুনিয়ার থেকে লুকিয়ে রেখেছে।ছোটোবেলা থেকেই ভাইয়া সবসময় আমায় বেস্ট জিনিসটাই দিয়েছে।আজ আমিও তাকে তার পছন্দের জিনিসটা দিলাম।আমার কষ্ট হলে হবে তবুও সে তো খুশি হবে।আর আমি জানি অনন্যা আপু এমন মেয়ে না।"
---- তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া।অনন্যা আপু আমাকে একদম তার নিজের বোনের মতোই দেখবে।
" নিচে দরজায় বেল বাজার শব্দ হলো।আমি নিচে চলে গেলাম সাথে ভাইয়াও এলো।"
দরজা খুলে দেখি মামা - মামি আর প্রহরের বাবা,মা।
---- তোমরা সবাই এখানে।
---- আবিরের বউ দেখতে এলাম।
---- তোমাদের কে বলল এসব?
---- কেন প্রহর।
---- উনি কীভাবে জানলেন?
----ও তো আবিরের বিয়েতে সাক্ষী ছিল।
" মামির কথা শুনে কটমট দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।"
---- এটা কী ঠিক হলো, ভাইয়া।তুই উনাকে বিয়ের সাক্ষী বানালি আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলিনা।
ভাইয়া আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
---------------
দুপুরবেলা মাত্রই একটু ঘুমিয়েছিলাম তখনই ফোন বেজে উঠল।না দেখেই ফোনটা তুললাম।
---- কে?
----কে কী হ্যা,তুই কী রে আফরা।বললি যে রাহার সাথে কথা বলাবি অথচ এখনও কিছু করলি না।
---- নিবির ভাইয়া, রাহা আপনার সাথে কথা বলতে চায়না তো আমি কী করতে পারি।
---- প্লিজ আফরা,কিছু একটা কর।আমি সত্যি সেদিনের বিহেবের জন্য দুঃখিত। একবার কথা বলানোর ব্যবস্থা করে দে।
---- আচ্ছা দেখছি।
ভর দুপুরবেলা যাচ্ছি রাহাদের বাড়ি।মহারানীকে কত ফোন করলাম ধরলোনা।আর এদিকে তো নিবির ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে।
রাহাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে গেলাম নিবির ভাইয়ার সাথে দেখা করাতে।ওরা দুজন কথা বলছে।আমি খানিকটা দূটে দাঁড়িয়ে আছি।ইদানিং নিবির ভাইয়ার সাথে কাউকে দেখলে আর খারাপ লাগেনা।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোর হচ্ছিলাম তাই প্রহরকে ফোন করলাম।উনি মহারাজ ফোন তো ধরলেন না উল্টো কেটে দিলেন।প্রচন্ড রাগ হলো উনার এমন কাজে।
অসহ্য লোক একটা।এদিকে এরা দুজন এমনভাবে কথা বলছে যা আজ আর শেষ হবেনা।
ওদেরকে বলে আমি সামনের লেকটার দিকে গেলাম।
বিকেল হয়ে এসেছে, চারিদিকে সুন্দর বাতাস।বাতাসে কিছু একটার মিষ্টি গন্ধ ভাসছে।
একা একা হাঁটতে মাঝেমধ্যে ভালোও লাগে।কিন্তু এমন জনসমাগমের জায়গায় একা হাঁটা মানে লোকের বিনোদনের মাধ্যম।
হঠাতই কেউ পিছন থেকে আমার চুল টেনে ধরল।প্রচন্ড রাগ নিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি " রাদিফ"।
---- তুই? এখানে কীভাবে। আর এভাবে পাবলিক প্লেসে চুল টেনে ধরে,মাথাটা ধরে গেলো আমার।
---- আরে, চুপ কর, মা। এতকথা একবারে কেউ বলে। তুই তো বাচালই থেকে গেলি।
---- তুই হঠাৎ এখানে কেন?
---- আবির ভাইয়ার বউ দেখতে আসছি।বাই দ্যা ওয়ে,আমি কিন্তু সব জানি।
---- কী জানিস।
---- এটাই যে সবকিছু তোর প্ল্যান ছিল।প্রহর ভাইয়া আমাকে সব বলে দিয়েছে।
---- তুই প্রহরকে চিনিস?
---- হুম।আমার একটা মাত্র দুলাভাই বলে কথা।তাকে না চিনলে হয়।আর যাই বলিসনা কেন মানুষটা কিন্তু তোর জন্য একদম পারফেক্ট।
---- কী বলিস তুই এসব।
" আমি আর রাদিফ কথা বলছিলাম তখনই রাহা ফোন করে বলল নিবির ভাইয়া নাকি ওর প্রোপোজালটা নিয়ে ভেবে দেখবে বলেছেন।ওরা নাকি বাসায় চলে গেছে।আমি আর রাদিফও বাসায় চলে এলাম।"
------------------
দিন চলেছে তার আপন গতিতে।আজ আমার ফাস্ট ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।বসেবসে নখ কামড়াচ্ছি।সামনে অনন্যা আপু খাবার নিয়ে বসে আছে।আর ভাইয়া আমাকে টেনশন করতে মানা করছে।
খানিকক্ষন পরে রেজাল্ট জানতে পারলাম।প্রথম হয়নি কিন্তু বেশ ভালো পজিশনে আছি।
মনটা একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।ভাইয়া আর অনন্যা আপুর সম্পর্ক বেশ ভালো চলছে সাথে রাহা আর নিবির ভাইয়াও।প্রথমে অনন্যা আপুর বাড়ির লোক না মানলেও পড়ে তারা সব মেনে নেয়।
কিন্তু ইদানিং প্রহর আমাকে খুব কম টাইম দেয়।
চারদিন পর আজ দেখা করবে বলেছে।
কতক্ষন ধরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।অথচ উনার আসার নাম নেই।
---- সরি, একটু লেট হয়ে গেছে।
---- এতদিন কই ছিলেন?
----চাকরি খুঁজছিলাম।বউকে মেনটেন করার জন্য তো একটা চাকরি দরকার।
---- তো চাকরি পেয়ে গেছেন।
---- হুম।একটা হসপিটালে জেনারেল সার্জন এর।
---- ও আপনি কী নিবির ভাইয়ার চেয়ে বড়।
---- হুম। দুই বছরের।
---- তাহলে তো আপনি বুড়ো। শেষ পর্যন্ত একটা বুড়ো বড় জুটল আমার কপালে।
---- আর আমার কপালে যে একটা পিচ্চি বউ জুটল তার কী।
---- আহারে।
---- চলো আজ তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।
---- কোথায়?
---- আমাদের বাড়ি, মা নিয়ে যেতে বলেছে তোমায়।
প্রহরদের বাসায় এসেছি।প্রহরের মা খুব ভালো মানুষ একদম নিজের মেয়ের মতো দেখে আমায়।
আমি ওদের পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখছিলা।প্রহরের রুমে ঢুকেই আমার চোখ আটকে গেলো সামনের দেয়ালের দিকে।পুরো দেয়াল জুড়ে আমার বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি।কিন্তু এত ছবি উনি কোথায় পেয়েছেন।
ছবিগুলো খুব সুন্দর আর যত্ন করে রাখা।সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উনার রুমের সবকিছু খুব সুন্দর সাজানো গোছানো।নরমালি ছেলেদের ঘর এতটা পরিপাটি হয়না।আমি খুব মনোযোগ দিয়ে ঘরের সবকিছু দেখছিলাম।তখনই প্রহর রুমে এলো আর বলল
---- ভালো করে দেখো কিছু পছন্দ না হলে বদলে ফেলবো।তাছাড়া বিয়ের পর তো এখানে শুধু তোমার সাজগোজের জিনিসই থাকবে।
---- আমি মোটেও এত সাজিনাএত কী আমি তো একটুও সাজিনা।
" প্রহর বিছানায় বসে একটান দিয়ে আমাকে উনার কোলে বসিয়ে বললেন"
---- তোমার যা রূপ আছে তা কারো হৃদয় ঝলসে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর কিসের দরকার বলো।
---- হু হয়েছে,আর তেল দিতে হবেনা।আমি জানি আমি কতটা সুন্দর।
---- হোয়াট! তুমি সুন্দর, লাইক সিরিয়াসলি। তোমার মতো পেত্মীকে সুন্দর কে বলেছে।
" উনার এই সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলানোর স্বভাবটা আমার মোটেও পছন্দ না।আমি রাগ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলাম।"
আন্টি রান্না ঘরে ছিল।আমি উনার কাছে গিয়ে উনাকে সাহায্য করতে চাইলও উনি না করে দেন।
উনি আমাকে উনার ঘরে নিয়ে গেলেন।খুব সুন্দর একটা চেন আমার গলায় পড়িয়ে দিলেন আর বললেন
---- এটা আমার মেয়ের ছিলো।কিন্তু এটা বেশিদিন পড়ার সৌভাগ্য ওর হয়নি।তাই তোমায় দিলাম।আমার ছেলের মতো এটাকেও আগলে রেখো,আফরা।
---- আপনার একটা মেয়েও আছে।প্রহর তো কখনো বলেনি আমায়।
---- আমার মেয়ে ছিলো।এখন নেই।আমার পরি আর নেই আমার কাছে।
---- মানে?
---- চারবছর আগে ও মারা গেছে।আমাদের একটা ভুল সিদ্ধান্ত ওকে শেষ করে দিয়েছে।
আমি চাইনা আমার পরির মতো প্রহরও আমাদের ছেড়ে চলে যাক।তাই ওর কোনো কাজে ওকে না করিনা।
---- আপনার মেয়ে কী মারা গেছে, আন্টি।
---- না ও মারা যায়নি।শুধু আমাদের থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।
---- মানে?
---- মানে চারবছর আগে,,,,,
(চলবে)
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 18 in 8 posts
Likes Given: 1
Joined: Jan 2022
Reputation:
1
#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৯(শেষ)
লেখিকা- #খেয়া
আমার মেয়েটা চারবছর আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।সে আর কখনো ফিরবেনা আমার কাছে।
---- আপনি যে বললেন উনি মারা যাননি।তাহলে,,,
---- ও তো মারা যায়নি,ওকে মেরে ফেলা হয়েছিল। জানোতো ও একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।ছেলেটা ভালো ছিল না।অনেকগুলো সম্পর্ক ছিল ওর।এজন্য তোমার আংকেল তাকে মেনে নেয়নি।কিন্তু পরি লুকিয়ে সেই ছেলেটাকে বিয়ে করে নিয়েছিল।
" কথাগুলো বলতে গিয়ে প্রহরের মা বারবার কেঁপে উঠছেন।উনার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে।উনি আবারও বলতে শুরু করলেন"
----বিয়ের কিছুদিন ভালো গেলেও তারপর থেকেই ঝামেলা শুরু হয়।খুব অত্যাচার করত আমার মেয়েটাকে ওরা।ওকে কত বললাম তুই ফিরে আয়।এলো না।ওর একটাই কথা ও কোন মুখে ফিরে যাবে।
টানা তিনবছর ওদের অত্যাচার সহ্য করে চারমাস আগে আমার পরিটা সুইসাইড করেছিল।কিন্তু আমি জানি ওদের জন্যেই আমার মেয়েটা এমন করতে বাধ্য হয়েছে।
এখানে থেকে আর এসব সহ্য করতে পারিনি বলে তোমার আংকেল আমাদের এখানে নিয়ে এলো। অবশ্য এখানে না এলে তোমার মতো আরেকটা মিষ্টি মেয়ে পেতাম নাকি।
---- আচ্ছা আন্টি, আপনারা কোনো পুলিশকেস করেননি।
---- করেছিলাম কিন্তু ওরা খুব প্রভাবশালী ছিল বলে সব চাপা পড়ে যায়।
আরো কিছুক্ষন আন্টির সাথে কথা বলে বাসায় চলে এলাম।আন্টির কথাগুলো শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো।
--------------------
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ অনন্যা আপুর সাথে গল্প করলাম। তারপর রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসলাম।
রাতে ভাইয়া এলে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলাম।তখন ভাইয়া বলল
---- আফরা!আসলে প্রহরের বাবা- মা চাচ্ছিলো তোদের বিয়েটা খুব শীঘ্রই দিতে।
আমি জানি তোর বয়সটা কম।আমি তোর ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চায়না। তোরর যা ভালোমনে হয় তুই সেটাই করবি।
আর ওরা এখন শুধু কাবিন করিয়ে রাখবে।বাকি তুই যেখানে থাকতে চাস সেখানেই থাকবি।
---- আমাকে একটু টাইম দে ভাইয়া।আমি ভেবে তোকে বলল।
---- হুম।কোনো চাপ নিস না, বনু।তোর যেটা ভালো মনে হবে তুই সেটাই করবি।
---- হুম।
" ভাইয়াকে আর কিছু না বলে চলে এলাম।আমার এটা নিয়ে ভাবার জন্য সত্যি একটু টাইম দরকার।"
রাতে অনেক ভাবার পরও আমি কোনো ডিসিশন নিতে পারলাম না। আমার আসলে কী করা উচিৎ?
পরদিন সকালে উঠে ভার্সিটি গেলাম।আজ রাহার সাথে বিয়ের কথাটা শেয়ার করব।
কিন্তু রাহা আজ ভার্সিটি এলোই না।
আমিও দুটো ক্লাস করেই চলে এলাম।
ভাইয়া আর অনন্যা আপু দুজনেই হাসপাতালে গেছে।অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম বিয়েটা আমার করে নেওয়া উচিত।আমি প্রহরকে ছাড়া ভালোথাকতে পারব না।
রাতে ভাইয়াকেও বলে দিলাম আমি বিয়েটাতে রাজি।
ভাইয়াও সে মতো প্রহরের বাবা- মায়ের সাথে কথা বলল।
রাতে নিবির ভাইয়া ফোন দিলো।এতরাতে নিবির ভাইয়ার কল দেখে বেশ অবাক হলাম।বেশিকিছু না ভেবে ফোনটা তুললাম।
---- বিয়ে করছিস, আফরা!
---- নিবির ভাইয়া আসলে,,,
---- কী জানিসতো আফরা,কথাকে আমি হয়ত সত্যি ভালোবাসতাম।ও আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল হয়ত প্রথম প্রেম ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। তখন আমি তোকে চেয়ে ছিলাম শুধু কথাকে ভুলে থাকার জন্য।তুই ঠিকই বলে ছিলি, তোর প্রতি আমার যা ছিল তা শুধুই মোহ ছিল।কিন্তু রাহা আমার লাইফে আসার পট বুঝেছি মানুষ প্রথম প্রেম ভুলেও নতুন করে প্রেমে পড়তে পারে।
তোর হয়ত মনে হতে পারে আমি এত রং কেন বদলায়।কিন্তু বিশ্বাস কর ভালোবাসা মন থেকে আসে।সেটা জোর করে হয়না।
---- আমি জানি ভাইয়া,ভালোবাসা মন থেকে হয়।আমি যেমন প্রহরকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে খুশি থাকি আর তুমিও রাহাকে নিয়ে খুশি থাকবে।
---- হুম।ভালো থাকিস, আফরা।আর মাঝের ঘটনাগুলোর জন্য ক্ষমা করে দিস।প্রহর খুব ভালো ছেলে, তোকে খুব ভালো রাখবে।
---- হুম।
নিবির ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গিয়ে অনেক রাত হয়ে গেলো।আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম।আজ আর প্রহরের সাথে কথা হলোনা।
-----------------
প্রহরের বাড়ির লোক আগামী শুক্রবার বিয়েটা সেরে নিতে চাই।কালই শুক্রবার।বাড়িতে তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে।ভাইয়া আর অনন্যা আপুও ছুটি নিয়েছে।
ভাইয়া তো খুব ব্যস্ত। তার একমাত্র বোনের বিয়েতে সে কোনে ত্রুটি রাখতে চায় না।
সকাল থেকেই রাহা আমার পিছনে পড়ে আছে।তার সাথে নাকি পার্লারে যেতে হবে।কিন্তু সকাল থেকেই মনটা বড্ড খারাপ।
আজ যদি বাবা - মা থাকত তাহলে তারা কত খুশি হতো।তারা থাকলে হয়ত আজকের দিনটা অন্যরকম হতে পারত।
সকাল থেকে বিশবার প্রহর ভিডিও কল করেছে।এত লোকের মাঝে কল ধরাটা মোটেও ভালো লাগেনি আমার।তাি ধরিনি।
কিন্তু এবার ধরেই ফেললাম।যতক্ষণ না ধরব ততক্ষণ কল করতেই থাকবে।
---- কী চাই?
---- তোমাকে।একটু দেখতেই তো চায়ছি তোমাকে।
---- রোজই তো দেখেন। আজ আবার নতুন করে দেখার কী আছে।
---- এতদিন তোমাকে শুধু আফরা হিসেবে দেখেছি কিন্তু এখন তো মিসেস প্রহর হিসেবে দেখবো।
---- তাই নাকি।আচ্ছা আমাকে না নিচে ডাকছে ।
আমি পরে কথা বলছি, বাই।
---- ওকে।
বিকেল হয়ে এসেছে।সন্ধ্যেবেলা কাবিন।খুব সাধারণভাবে সব হবে।বাসায় খুব অল্প মানুষই আছে।
খালামণিদেরও বলা হয়েছিল কিন্তু আসেনি।তবে আরাব ভাইয়া ফোন করে বলেছিল আসবে।
কিছুক্ষন পর রাদিফ আর আরাব ভাইয়া এলো।আরাব ভাইয়ার সাথে একটা মেয়েও এসেছিল।হয়ত আরাব ভাইয়ার ওয়াইফ হবে।
ভাইয়া মেয়েটার সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো।ওর নাম প্রীতি।প্রীতি ভাবি প্রচুর মিশুক মানুষ।খুব সহজেই আমাদের সাথে মিশে গেলো।
আমি রাদিফকে জিঙ্গেস করলাম
---- তোরা যে এখানে এলি, আংকেল রাগ করবেনা।
---- তোকে এতকিছু নিয়ে ভাবতে হবেনা।তুই শুধু তোর ফিউচার নিয়ে ভাব।বাই দ্যা ওয়ে, তোর কোনো ননদ থাকলে বলিস কিন্তু।ট্রাই করে দেখতাম আরকি।ভেবেছিলাম তোর ঐ বোন আরশিকে একটি পটাবো। কিন্তু সে তো আমাকে পাত্তায় দেয় না।
---- সিরিয়াসলি, রাদিফ। ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।
---- তো ব্রেকআপ করিয়ে দে না।
---- রাদিপ!
সন্ধ্যেবেলা প্রহররা এলো।অল্প কিছু লোক এলো ওদের সাথে।তবে আন্টি আসেনি।আংকেলকেও খুব হাসিখুশি লাগছে।উনাদের ভিতরে যে এতো কষ্ট লুকানো আছে তা উনাদের দেখলে বোঝায় যায়না।
সব নিয়ম ঠিকমতোই হলো।কাজী সাহেব প্রহরকে কবুল বলতে বললেই সে কবুল বলে দিলো।যেন এই মুহূর্তেরর জন্য উনি কতযুগ অপেক্ষা করতেছিল।
আমি প্রায় ঘন্টা খানিক সময় নিয়ে কবুল বলে দিলাম।"কবুল" এই ছোট্টো শব্দটার মধ্যে যে ঠিক কতটা প্রশান্তি লুকিয়ে আছে তা আজ বুঝলাম।হয়ত পবিত্র জিনিসের ক্ষমতা এটাই।
দুটি মন আজ এক হলো।প্রহরের মুখে আজ খুব সুন্দর একটা হাসি দেখলাম।এতদিন কখনো তাকে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখিনি।
রাতের খাবার খেয়ে বাকি সবাই চলে গেলো।শুধু প্রহর আর ওর দুটো কাজিন থেকে গেলো।
আমাদের বাড়িতে বাসরের আয়োজন করা হয়েছে।
রাতে প্রহর আমাকে নিয়ে ছাদে গেলো।
---- এতরাতে আমরা ছাদে কেন এসেছি।
---- এই রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে তোর হৃদস্পন্দন টাকে অনুভব করতে চাই।
জানো তো আফরা, সবার জীবনেই প্রথম প্রেমটা স্পেশাল হয়।জানি প্রথম প্রেম ভুলে যাওয়া কঠিন।তবুও প্রথম প্রেম ভুলে কিন্তু মানুষ ভালো থাকতে পারে।নতুন ভাবে কাউকে ভালোবেসে ভালো থাকার মাঝে কিন্তু কোনো ভুল নেই।
---- আমার প্রথম প্রেমম পূর্ণতা পায়নি তো কী আপনার প্রথম প্রেম তো পূর্ণতা পায়নি।
আর আমি তো আমার আসল ভালোবাসা পেয়েছি।
---- উহু,,, আপনি না তুমি।
---- আচ্ছা,তুমি।আমার তুমি।
---- হুম।খুব ভালোবাসবো তোমায় দেখেনিও।তোমার আমার ভালোবাসা দেখে লোকেরা জ্বলবে দেখো।
---- হুম।জানেন তো প্রথম প্রথম নিবির ভাইয়ার বিহেবে খুব খারাপ লাগত। কিন্তু যখন আমি আপনার সাথে থাকতাম তখন সেগুলো মনেই থাকত না।আমার জন্য তো তোমার আর রাহার প্রথম প্রেমটা পূর্ণতা পেলো।এটাই আমার আনন্দ।
---- প্রথম প্রেমটা আসল না ভালোবাসাটাই আসল।
---- হুম।খুব ভালোবাসি তোমায়।
----আমিও।সারাজীবন এভাবেই আমার হয়ে থেকো।যদি কখনো ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছো তো।
---- একদম না,,, জানি তুমি কতটা ফাজিল পিচ্চি বউ।
---- কীহহ,,আমি ফাজিল।আবার পিচ্চি।
---- হুম।আমার পিচ্চি বউ।
আমি নিঃশব্দে উনার কাঁধে মাথা রাখলাম।একটা শান্তির হাসি দিলাম।অবশেষে কেউ তো আমার হলো।একান্তই আমার হলো।যাকে আমার বড্ড প্রয়োজন।
জীবনে প্রথম প্রেম না আসল ভালোবাসার দরকার।
( সমাপ্ত)
( একটা থিম মাথায় নিয়ে গল্পটা লিখতে শুরু করেছিলাম।মাঝে লিখছি একরকম।আর শেষ করছি আরেকভাবে।পুরো গল্পটাই অগোছালো ছিল।অনে জায়গায় বানান ভুল ছিল।তবুও এতটা সাপোর্ট আর ভালোবাসা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
পরীক্ষার একমাসও বাকি নেই তাই গল্প কান্টিনিউ করা সম্ভব নয়।তাই শেষ করে দিলাম।যারা নিবির আর আফরা কে চেয়েছিলেন তাদের জন্য অন্য কোনো গল্প নিয়ে আসবো।পুরো গল্পটা নিয়ে গঠনমুলক মন্তব্য চাচ্ছিলাম।ভালো - খারাপ দিকগুলো ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।ধন্যবাদ।)
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,406 in 973 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
অসাধারণ একটা কাহিনী উপহার পেলাম আমরা সবাই। মন ভরে গেল। লাইক এবং রেপু রইলো আপনার জন্য।
|